ক) বাধ্যতামূলক অংশ / প্রত্যক্ষ বক্তব্যভিত্তিক যেসব বিষয় সম্পর্কিত
১. ক্বিয়াম (৩:৩৯, ৪:১০২)
২. সাজদাহ (৪:১০২)
৩. ক্বওল (৪:৪৩, ১৭:১১০, ৮৬:১৩)
খ) পরোক্ষ বক্তব্যভিত্তিক যেসব বিষয় সম্পর্কিত
১. ক্বিবলাহ (২:১৪২-১৫০, ১০:৮৭)
২. সফ (কাতার / সারি) (৩৭:১)
৩. ক্বিয়াম অবস্থায় তাসবীহ (৫২:৪৮)
৪. ক্বিয়াম অবস্থায় কুরআন থেকে ক্বিরায়াত (৭৩:২০)
৫. সূরা ফাতিহা এবং কুরআনের অন্য অংশ থেকে ক্বিরায়াত (১৫:৮৭)
৬. প্রার্থনামূলক আয়াত তিলাওয়াত বা প্রার্থনা (২:৪৫, ২:১৫৩) এবং তাকবীর, তাসবীহ, হামদ
৭. ক্বিয়াম ও সাজদাহর মধ্যবর্তীতে রুকূ'র অবস্থান (২২:২৬)
৮. কুরআন ক্বিরায়াতের পর সাজদাহ (৮৪:২০-২১, ৩২:১৫, ৩:১১৩)
৯. সাজদাহয় তাসবীহ (১৭:১০৭-১০৯, ৩২:১৫, ১৫:৯৮)
গ) অন্তরের/ মন-মস্তিষ্কের দিক
১. ক্বুনূত (২:২৩৮)
২. খুশু (২৩:২)
৩. যিকর (২০:১৪)
৪. সালাতের বক্তব্যের পরিজ্ঞান/ অনুধাবন (৪:৪৩)
ঘ) সাজদাহর পরপর বা সালাতের সমাপ্তির অব্যবহিত পরের পর্যায়
১. তাসবীহ (৫০:৪০)
২. (দাঁড়িয়ে, বসে বা শুয়ে) যিকর (৪:১০৩)
(১) ক্বিয়াম
ক্বিয়াম শব্দটির অর্থ হলো “দাঁড়ানো, উদ্যোগ, প্রতিষ্ঠিত হওয়া, (নেতিবাচক অর্থে) থমকে যাওয়া’। যখন সালাতের জন্য দাঁড়ানো এবং সাজদাহর পরবর্তীতে তথা সালাত সমাপ্ত হলে সরে যাওয়া বা কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হয় তখন ‘ক্বিয়াম’ শব্দটি তার প্রাথমিক অর্থে বা আক্ষরিকভাবে দাঁড়ানো অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে সাব্যস্ত হয়। ৩:৩৯ ও ৪:১০২ আয়াত অনুসারে ‘ক্বিয়াম’ (দাঁড়ানো) আনুষ্ঠানিক সালাতের একটি অপরিহার্য শারীরিক অবস্থান এবং দাঁড়ানোর মাধ্যমে সালাত শুরু হয়।
(২) সাজদাহ
সাজদাহ শব্দের অর্থ হলো: মাথা নত করা, ষষ্ঠাংগ প্রণিপাত করা, উপাসনামূলক সম্মান / ভক্তি প্রদর্শন করা, কোনো কর্তৃত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, কোনো কর্তৃত্বকে স্বীকৃতি প্রদানমূলক ভূমিকা পালন করা, কোনো কর্তৃত্বের পক্ষ থেকে আসা তথ্য নির্দেশ গ্রহণ ও ভক্তিভরে মান্য করা। ৪:১০২ আয়াতে যেমন ক্বিয়ামের মাধ্যমে সালাত শুরু করার কথা রয়েছে তেমনি সাজদাহর মাধ্যমে সালাত সমাপ্ত করার কথা রয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, আনুষ্ঠানিক সালাতে ক্বিয়াম যেমন আক্ষরিকভাবে দাঁড়ানোকে বুঝায়, সাজদাহ দ্বারাও তেমনি আনুষ্ঠানিক সাজদাহকে বুঝায়। উপাসনামূলক আনুষ্ঠানিক সাজদাহ হিসেবে ষষ্ঠাংগ প্রণিপাত (বসা অবস্থা থেকে সামনের দিকে ঝুঁকে আভূমি নত হওয়া) রীতি প্রচলিত রয়েছে। কুরআনে সাজদাহ এর একটি সুনির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিক রূপ চিহ্নিত করা হয়নি। আরবি ভাষারীতিতে ‘চিবুকের উপর সাজদাহ’ শব্দটির মাধ্যমে আভূমি নত হওয়ার বা প্রণিপাত করার রীতিকে বুঝানো হয় এবং কুরআনেও বাগধারাটি ব্যবহৃত হয়েছে (১৭:১০৭)। নবী মূসার সাথে প্রতিযোগিতাকারী যাদুকরেরা নিজেদের স্বত:প্রণোদিত পদ্ধতিতে যে সাজদাহ করেছিলো সেটাকে সাজদাহ হিসেবেই গ্রহণ করা হয়েছে (৭:১২০, ২০:৭০, ২৬:৪৬)। সুতরাং সাজদাহর আক্ষরিক রূপ নিয়ে বাড়াবাড়ির অবকাশ নেই এবং এটিকে হুবহু নির্দিষ্ট করে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। পরম্পরাগত রীতিতে যেভাবে সাজদাহ করা হয় সেভাবেই সাজদাহ করা যেতে পারে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে সালাত করার ক্ষেত্রে ব্যক্তির বিবেচনাবোধ দ্বারা এবং জামায়াতের সাথে সাজদাহ করার ক্ষেত্রে ইমামের অনুসরণে সাজদাহর আনুষ্ঠানিক রূপ নির্ধারণ করা যেতে পারে।
(৩) ‘ক্বওল’ (বক্তব্য/ কিছু বলা)
‘ক্বওল’ মানে কিছু বলা। ৪:৪৩ আয়াতে সালাতে যা বলা হয় তার পরিজ্ঞান না রাখা পর্যন্ত সালাতের ধারে কাছেও যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এবং ১৭:১১০ আয়াতে সালাতে (ক্বওলের ক্ষেত্রে) স্বরের মধ্যমাত্রা অবলম্বন তথা মধ্যম স্বরে বলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুরআনের একটি গুণবাচক নাম হলো ‘ক্বাওলুন ফাসলুন’ বা ‘মীমাংসাকারী বক্তব্য’ (৮৬:১৩)। এছাড়া কুরআনের অনেক আয়াত শুরু হয়েছে ‘ক্বুল’ বা ‘বলো’ শব্দ দিয়ে, যার পর কী বলতে হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং বলার বিষয়ের ক্ষেত্রে (ক্বওল হিসেবে) কুরআনের আয়াত অন্যতম গুরুত্ববহ হিসেবে সাব্যস্ত। প্রকৃতপক্ষে সালাতের সাথে কুরআনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কারণ কুরআনের মাধ্যমেই আল্লাহ তাঁর আদেশ-নিষেধ ও তথ্যসমূহ জানিয়েছেন। ২৯:৪৫ আয়াতে কিতাবের ওহীকে তিলাওয়াত করার এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং সালাতের মধ্যে নিজের ভাষায় আল্লাহর তাসবীহ (পবিত্রতা জ্ঞাপন), হামদ (প্রশংসা) এবং আল্লাহর কাছে দুআ করার অবকাশ থাকা সত্ত্বেও বলার বিষয় (ক্বওল) হিসেবে কুরআনের আয়াতই অগ্রাধিকার লাভ করবে। এছাড়া সালাত করতে হবে আল্লাহর যিকিরের জন্য (২০:১৪)। এবং কুরআনই আল্লাহর যিকিরের তথা আল্লাহর জানানো আদেশ-নিষেধ ও তথ্য স্মরণ করার নির্ভুল মাধ্যম। তাই সালাতে আল্লাহর যিকির স্বরূপ যেমন তাসবীহ, হামদ ও দুআ করার অবকাশ রয়েছে, তেমনি তাতে কুরআন থেকে তিলাওয়াত করারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে ‘সালাত’ বা ‘আল্লাহর বিধানের নিবিড় অনুসরণ’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ‘আল্লাহর বিধানগ্রন্থ’ সম্পর্কে জানার প্রক্রিয়া হিসেবে কুরআন তিলাওয়াতের প্রাসঙ্গিকতা স্বত:সিদ্ধভাবে প্রতীয়মান হয়। মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর নিকট কুরআন নাযিলের পর তিনি মু’মিনদেরকে সেই মোতাবিক প্রশিক্ষিত করার ক্ষেত্রে এবং মু’মিনদের মাধ্যমে সর্বত্র তার প্রচারের ক্ষেত্রে সালাতকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। এবং তাই তিনি মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে কুরআন ভিত্তিক সমাজ-সংগঠন ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সফল মহানায়ক হিসেবে তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
সংক্ষেপে বলা যায়, সালাতে কিছু বলার বিষয় রয়েছে। এ বলা যেমন হতে পারে কুরআন থেকে বলা, তেমনি তা হতে পারে কুরআনের আলোকে বলা। সালাতে কুরআন তিলাওয়াতের বাহিরেও আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজ ভাষায় নিজের অভিব্যক্তি বলা যেতে পারে। এছাড়া সালাতকারীরা নিজেদের মধ্যে কুরআনের বক্তব্য বিষয়ে বা কুরআনের আলোকে প্রয়োজনীয় কথা বলতে পারেন।
পরোক্ষ বক্তব্যমূলক আয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সালাতের কাঠামো সম্পর্কিত প্রমাণ:
আনুষ্ঠানিক সালাতের কাঠামো প্রত্যক্ষ বক্তব্যমূলক আয়াতের চেয়ে পরোক্ষ বক্তব্যমূলক আয়াতের উপর বেশি নির্ভরশীল। নিম্নে পরোক্ষ বক্তব্যমূলক আয়াতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক সালাতের কাঠামো সম্পর্কিত প্রমাণ উপস্থাপন করা হলো।
১.ক্বিবলাহ
ক্বিবলাহ মানে যাকে কেন্দ্র হিসাবে কবুল করা হয়েছে। কোনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অফিস / পরিষদ কার্যালয় হচ্ছে ঐ ইউনিয়নের একটি ক্বিবলা, যেখান থেকে ঐ ইউনিয়নের কার্যাদি পরিচালিত হয়। অফিসে যেমন লোকজন আসে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পাদন করে ক্বিবলা তেমনই। ব্যাপার এ নয় যে, অফিসের দিকে ফিরে থাকতে হয় বা অফিসের দিকে ফিরে কাজ করতে হয়। বরং অফিসে গিয়ে কাজ করতে হয় এবং অফিস থেকেই নির্দেশনা গ্রহণ ও সমস্যার সমাধান করতে হয়। এটিকেই ভাবগতভাবে অফিসের দিকে ফেরা বলা হয়। কিন্তু সেই সাথে যদি অফিসের একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে এটি ঠিক করা হয় যে, প্রতিদিন অফিসের কার্যক্রম শুরুর পর্যায়ে অফিসের দিকে ফিরে কোনো প্যারেড অনুষ্ঠান করা হবে, তাহলে সেটা অফিসের একটি শৃঙ্খলাগত রীতিতে পরিণত হয়ে যায়। সে অবস্থায় সে রীতির অনুশীলনই ঐ অফিসের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধদের করণীয় হয়ে দাঁড়ায়।
১০:৮৭ আয়াত অনুসারে বলা যায় যে, সালাতের সাথে ক্বিবলার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ২:১৪২-১৫০ আয়াত অনুসারে মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তাদের ক্বিবলা (সাংবিধানিক মূল কেন্দ্র) হিসেবে ‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে মুখ ফিরাতে হবে। তবে ‘সাতরাল মাসজিদিল হারাম’ শব্দের মাধ্যমে হুবহু স্থানিক দিককে না বুঝিয়ে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ নামক প্রতিষ্ঠানের দিকে আদর্শিক ও মানসিক সংযোগ স্থাপনের (Alignment) উপরই মূল গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শাতরা শব্দটি আপেক্ষিকতার এবং মনোসংযোগমূলক বিষয়টি প্রকাশ করে, হুবহু দিক অর্থ নয়। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আল মাসজিদুল হারামের’ মুখ ফিরানোর সময়ও হুবহু কোণ নির্ণয়ের প্রয়োজন নেই, মানসিক সংযোগের জন্য যথেষ্ট এরূপভাবে মুখ ফিরানোই করণীয়, কারণ পৃথিবীর ভৌগলিক কারণে হুবহু স্থানিক দিকে মুখ ফিরানো অসম্ভব। পৃথিবী গোলাকার হওয়ায় পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ যেদিকেই ফিরা হোক, তাকে আল মসজিদুল হারামের দিকে ফেরা হয়েছে বলা যায়। কিন্তু আপেক্ষিকভাবে যেখানে (পূর্ব-পশ্চিম) কোনো নির্দিষ্ট দিকে মুখ ফিরালে ‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে মুখ ফিরানো হিসেবে প্রতীয়মান হয়, সেখানে এ কথা প্রযোজ্য নয়। এছাড়া কোনো স্থান থেকে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ যেদিক থেকে তুলনামূলক নিকটবর্তী সেই স্থান থেকে সেই দিককে আল মাসজিদুল হারামের দিক হিসেবে সাব্যস্ত করা যেতে পারে।
সালাতে ইমাম ও মুক্তাদিরা একই দিকে ফিরবে নাকি ইমাম মুক্তাদিদের দিকে ফিরবে?
২:১৪২-১৫০ আয়াতের শিক্ষা অনুসারে সালাতে ইমাম ও মুক্তাদিরা একই দিকে ফিরে সালাত করা সঙ্গত বলে সাব্যস্ত হয়। যেহেতু সালাত একটি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, তাই আমরা বাস্তব দৃষ্টান্ত থেকেও এর উদাহরণ দেখতে পাই। যখন সেনা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, পি.টি করা হয়, তখন যিনি প্রশিক্ষণ দেন তিনি এবং প্রশিক্ষণার্থীগণ একই দিকে ফিরে পি.টি করার একটি নমুনাও দেখতে পাই। এটা আনুষ্ঠানিক সালাতের দিক। পক্ষান্তরে নির্বাহী পরামর্শ বা আলোচনামূলক মজলিশের ক্ষেত্রে বক্তা ও শ্রোতা পরস্পরের দিকে ফিরে বসা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
ইমামের অনুসরণ নিশ্চিত করনার্থে ইমাম ও মুক্তাদি একই দিকে ফিরে আনুষ্ঠানিক সালাত করা গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়। যেমন কোনো সেনা ট্রেনিংয়ে ট্রেনিংদাতা যাদেরকে ট্রেনিং করায় তাদের দিকেও ফিরে থাকতে পারে, আবার তাদের সামনে থেকে তাদের মতো একই দিকে ফিরেও ট্রেনিং করাতে পারে। এ দুটি মডেলের মধ্য থেকে একটিকে আনুষ্ঠানিক সালাতের ক্ষেত্রে অনুসরণযোগ্য পদ্ধতি (ইমাম ও মুক্তাদি একই দিকে ফেরা) হিসেবে এবং অন্যটিকে সালাতের শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রয়োজনে নির্বাহী অনুষ্ঠানাদিতে অনুসরণযোগ্য পদ্ধতি (ইমাম মুক্তাদিদের দিকে এবং মুক্তাদিরা ইমামের দিকে ফেরা) হিসেবে অনুশীলন করা যেতে পারে। কারণ আমরা যেখানেই থাকি না কেন ‘আল মাসজিদুল হারামের’ দিকে মুখ ফেরানোর নির্দেশকে যখন আনুষ্ঠানিক সালাতের মধ্যে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়া হবে তখন এক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি (ইমাম ও মুক্তাদি একই দিকে ফেরা) গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ও বাস্তব / কর্মপ্রকৃতিগত উভয় অর্থে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
আল মাসজিদুল হারাম হলো কা’বাকে পরিবৃত করে বা কা’বার আঙ্গিনায় প্রতিষ্ঠিত মাসজিদ। আল মাসজিদুল হারামের মধ্যে সেটার মধ্যস্ত প্রতীক কা’বার দিকে ফিরে আনুষ্ঠানিক সালাত করা হয় এবং কা’বার মধ্যে সাধারণত সালাত করা হয় না। তবে কা’বার মধ্যে সালাত করার ক্ষেত্রেও বৃত্তাকার সারি করে সালাত করা যেতে পারে। অথবা একাকী সালাত করার ক্ষেত্রে যে কোনো দিকে ফিরে এবং জামায়াতে সালাত করার ক্ষেত্রে ইমামের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোনো দিকে ফিরে সালাত করা যেতে পারে। কারণ যে ক্ষেত্রে কোনো একটি বিষয়কে বিধান হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয় না, সেক্ষেত্রে নিজ বিবেচনা বা পরামর্শের মাধ্যমে কর্ম সম্পাদনের অবকাশ রয়েছে।
যেখানে ‘আল মাসজিদুল হারাম’ কোনদিকে তা নির্ণয় করা সম্ভব নয় বা আল মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব নয়, সেখানে সে অবস্থায় যেকোনো দিকে ফিরে সালাত সম্পাদন করা যাবে। কারণ যেদিকেই মুখ ফিরানো হোক তাতে আল্লাহর দিকেই ফেরা হয়। তাই আল মাসজিদুল হারামের দিকে ফেরার নির্দেশ স্বাভাবিক অবস্থার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং কুরআনে বিশেষ অবস্থায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ব্যতিক্রম করার অবকাশ দেয়া হয়েছে। যেমন ২:২৩৮-২৩৯ আয়াতে বিশেষ অবস্থায় পদচারী বা আরোহী হয়ে সালাত করার এবং অবস্থা স্বাভাবিক হলে স্বাভাবিক নিয়মে সালাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ক্বিবলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ ফিরানোর দিক হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে স্মরণীয় বিষয় হলো, বস্তুত সকল দিকই আল্লাহর দিক এবং যেদিকেই মুখ ফিরানো হোক সেদিকেই আল্লাহর সত্তা উপস্থিত। তাই আল মাসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশ আল্লাহর দিকে মুখ ফিরানোর জন্য নয়, বরং তা শুধুমাত্র আমাদের মধ্যে কার্যগত শৃঙ্খলা বিধানের জন্য। এবং তাই যে ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বিধানের স্বাভাবিক অবস্থা বিদ্যমান থাকে না সেক্ষেত্রে নিজ বিবেচনা অনুসারে ব্যতিক্রমের অবকাশ রয়েছে।
২. সফ (সারি/কাতার)
৩৭:১ আয়াতে সারিবদ্ধতাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই সালাতেও শৃংখলার স্বার্থে সারি বাঁধা উত্তম সাব্যস্ত হয়।
৩. ক্বিয়াম অবস্থায় তাসবীহ
৫২:৪৮ আয়াতে ক্বিয়াম অবস্থায় তাসবীহ করার নির্দেশ রয়েছে। তাই সালাতে ক্বিয়াম বা দণ্ডায়মান হওয়ার পর শুরুতে তাসবীহ করার রীতি ঐ আয়াতের নির্দেশেরই বাস্তবায়ন। আয়াতটি নিম্নরূপ :
৫২:৪৮ :: এবং তুমি সবর করো (ধৈর্য ধরো) তোমার প্রভুর হুকুমের জন্য। নিশ্চয় তুমি আমাদের চোখের সামনে আছো। এবং তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ পবিত্রতা জ্ঞাপন করো, তুমি ক্বিয়াম করার (তাঁর উদ্দেশ্যে দাঁড়াবার) সময়।
প্রচলিত তাসবীহ হলো “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাছমুকা, ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা”। এ তাসবীহটি কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত বাক্যাবলি বা তার শিক্ষা অনুসারে তৈরি করা হয়েছে। তাই এ তাসবীহটিতে আপত্তির কিছু নেই। নিম্নে এর চারটি বাক্যের কুরআনিক অবস্থান তুলে ধরা হলো :
“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা” –এর অর্থ হলো “আপনার পবিত্রতা ব্যক্ত করছি হে আল্লাহ আপনারই সপ্রশংস কৃতজ্ঞতাসহ”। এটি ১০:১০, ২:৩০, ১৫:৯৮, ১৭:৪৪, ২০:১৩০, ২৫:৫৮, ৩২:১৫, ৩৯:৭৫, ৪০:৭, ৪০:৫৫, ৪২:৫, ৫০:৩৯, ৫২:৪৮, ১১০:৩ আয়াতের নির্দেশ ও নির্দেশনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
“ওয়া তাবারাকাছমুকা” –এর অর্থ হলো “আর আপনার নাম বরকতময় বা সমৃদ্ধিবহ”। এটি ৫৫:৭৮ আয়াতের বিবৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
“ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা” –এর অর্থ হলো “আর সমুচ্চে আপনার সত্তা”। এটি ৭২:৩ আয়াতের বিবৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
“ওয়া লা ইলাহা গায়রুকা” –এর অর্থ হলো “আর কোনো ইলাহ (সর্বময় প্রয়োজন পূর্ণকারী উপাস্য ও সার্বভৌম সত্তা) নেই আপনি ছাড়া”। এটি ৬:৪৬, ৭:৫৯, ৭:৬৫, ৭:৭৩, ৭:৮৫, ৭:১৪০, ১১:৫০, ১১:৬১, ১১:৮৪, ২৩:২৩, ২৩:৩২, ২৮:৭১, ২৮:৭২, ৫২:৪৩ আয়াতের বিবৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
৪. ক্বিয়াম অবস্থায় কুরআন পাঠ এবং তারপর সাজদাহ
৭৩:২০ আয়াত অনুযায়ী, কুরআন পাঠ হচ্ছে ক্বিয়ামের একটি অনুষঙ্গ। এবং ৮৪:২০-২১, ৩২:১৫, ৩:১১৩ এবং ১৭:১০৭ আয়াত থেকে তিলাওয়াতের পর সাজদাহ করার নির্দেশনা পাওয়া যায়। তাই ক্বিয়াম বা দাঁড়ানো অবস্থায় কুরআন পাঠ এবং তারপর সাজদাহ এর রীতি এসব আয়াতের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
১৫:৯৮ আয়াতে বলা হয়েছে- ‘সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ পবিত্রতা জ্ঞাপন কর’। ২৬:২১৮-২১৯ আয়াতে সাজদাহকারীদের সাথে রসূলের উঠাবসা প্রসংগ উল্লেখিত হয়েছে। সুতরাং যিনি তিলাওয়াত করবেন তাঁর তিলাওয়াত শুনার পর যেমন অন্যরা সাজদাহ করতে হবে, তেমনি তিনি নিজেও সাজদাহ করতে হবে।
প্রচলিত তারাবির নামাজে দেখা যায় যে, কুরআনের কিছু কিছু আয়াত তিলাওয়াত করার পর রুকূ' না করে সরাসরি সাজদাহ করা হয়। একে তারা তিলাওয়াতে সাজদাহ বলে থাকে। আমরা কুরআন থেকে বুঝি যে, কোনো কোনো আয়াত তিলাওয়াত করার পর নয়, বরং কুরআন থেকে যা-ই তিলাওয়াত করা হোক, তিলাওয়াত শেষে সাজদাহ করতে হবে।
‘কুরআন তিলাওয়াত এবং সালাত’ (২৯:৪৫, ৩৫:২৯) প্রসঙ্গে যেসব আয়াত রয়েছে তার দ্বারা যেমন কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি সালাত প্রতিষ্ঠা করা বুঝায় তেমনি তা থেকে এটাও বুঝায় যে, ‘কুরআন তিলাওয়াত করে তার ভিত্তিতে ভিত্তিতে কর্মসম্পাদনই সালাত’। এবং এ থেকে পরোক্ষভাবে আনুষ্ঠানিক সালাতের জন্য বা সালাতের আনুষ্ঠানিক কাঠামোতে কুরআন তিলাওয়াতকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়।
সালাতের কাঠামোতে মুল যে তিনটি দিক নির্দিষ্ট (ক্বিয়াম, ক্বওল ও সাজদাহ) এর ভিত্তিতে বলা যায় যে, যদি সালাত হিসেবে দাঁড়িয়ে কুরআন থেকে কথা বলা হয় (যেমন ইমাম কুরআন তিলাওয়াত করলো এবং মুক্তাদীদের সাথে তা নিয়ে আলোচনা করলো) এবং তারপর সাজদাহ করে সালাত সমাপ্ত করা হয় তাহলেই সালাত সম্পাদিত হয়ে যায়। সাধারণভাবে যে কোনো সময় কুরআন নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু যখন ‘সালাত’ এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম হিসেবে তা করা হবে তখন তা ‘সালাত’ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
অবশ্য কেউ ইচ্ছা করলে সরাসরি কুরআন তিলাওয়াত ছাড়া শুধুমাত্র কুরআনসঙ্গত ক্বওল হিসেবে তাসবীহ, হামদ ও দুআর মাধ্যমেও সালাত সম্পাদন করতে পারে, অথবা কুরআনসঙ্গত আলোচনার মাধ্যমেও সালাত সম্পাদন করতে পারে। যেমন, রসূলুল্লাহ মূসাকে প্রথমবার যখন রসূল হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয় তখন (তাওরাত নাযিল করার আগেই) তাঁকে আল্লাহর স্মরণের জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো (দ্রষ্টব্য ২০:১৪)।
৫. সূরা ফাতিহা এবং অন্য সূরা বা আয়াত তিলাওয়াত
কুরআন পাঠের ক্ষেত্রে প্রথমে সূরা ফাতিহা, তারপর কুরআনের অন্য যে কোনো অংশ থেকে পড়ার রীতি চালু হয়েছে ১৫:৮৭ আয়াত অনুসারে। সূরা ফাতিহা হচ্ছে কুরআনের ভূমিকা, তাই তা সমগ্র কুরআনের এক বিশেষ অংশ। আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে দিয়েছেন পুন:পুন আবৃত্তিকৃত সূরা ফাতিহার সাত আয়াত এবং তাসহ মহান কুরআন। এতে সূরা ফাতিহার বিষয়টি স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করার কারণ হিসেবে সাধারণ জ্ঞানে যা বুঝা যায় তাহলো: যেহেতু এটি মানবজাতির সংবিধান সম্বলিত গ্রন্থ কুরআনের মুখবন্ধ, সূচনা বা ভূমিকা (কুরআনের বিষয়বস্তুর মৌলিক মর্ম বা মূলভাব), তাই তা কুরআনের অংশ হওয়া সত্ত্বেও স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখযোগ্য বা বিশেষভাবে পুন:পুন আবৃত্তিযোগ্য। কারণ এটি এতে রয়েছে আত্মসমর্পণকারীর আত্মসমর্পণের অঙ্গীকার ও পথনির্দেশ লাভের প্রার্থনা। কুরআন পাঠ করলে দেখা যায় যে, সূরা ফাতিহায় হিদায়াতের প্রার্থনা এবং পরবর্তী সূরায় কুরআনকে হিদায়াত হিসেবে উপস্থাপন। অন্য কথায় কুরআনের বাকি অংশ হচ্ছে সূরা ফাতিহাতে থাকা প্রার্থনার জবাব। তাই সালাত সম্পাদনের একটি নির্বাহী কর্মকান্ড হিসাবে প্রত্যেক সালাতে সূরা ফাতিহার সাত জোড়া শব্দবিশিষ্ট সাত আয়াত এবং তার সাথে কুরআনের অন্য যে কোনো অংশ থেকে পাঠ করার রীতি চালু হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে, ছোট আয়াত হলে অন্তত ৩ আয়াত পড়তে হবে। কিন্তু এ কথাটি মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে, যেহেতু কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩ আয়াত দ্বারা একটি বক্তব্য পূর্ণ নাও হতে পারে, আবার কোনো ক্ষেত্রে ১ আয়াত দ্বারাই একটি বক্তব্য পূর্ণ হতে পারে। তাই কোনো সূরা থেকে ক্বিরায়াতের ক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে অর্থ বুঝে ন্যুনতম একটি একক বক্তব্য পূর্ণ হওয়ার উপযোগী এক বা একাধিক আয়াত পড়তে হবে।
৬. তাকবীর, সাব্বিহ (তাসবীহ), হামদ, দুআ
কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে তাকবীর, সাব্বিহ, হামদ ও দুআর নির্দেশ রয়েছে। সালাতের সাথে সম্পর্কিত করে তাকবীর, সাব্বিহ, হামদ ও দুআর নির্দেশ না থাকলেও সালাত সম্পাদনের নির্বাহী কর্মকান্ড হিসাবে এসবের সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে যেমন কুরআনে থাকা তাকবীর, সাব্বিহ, হামদ ও দুআ পড়া যেতে পারে, তেমনি কুরআনসঙ্গত প্রচলিত সানা, দুআ মাসুরা, দুআ ক্বুনূত ইত্যাদিও পড়া যেতে পারে, এমনকি নিজের মাতৃভাষায়ও সাব্বিহ, হামদ ও দুআ করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে, কুরআনের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয় এমন কোনো কথা যেন না থাকে।
সাজদাহর মাধ্যমে সালাত সমাপ্ত হয় (৪:১০২) এবং সাজদাহর পর (বসে বা দাঁড়িয়ে যেভাবেই হোক) তাসবীহ করার নির্দেশ রয়েছে (৫০:৪০)। সাজদাহতে আল্লাহর হামদসহ তাসবীহ করতে হবে (৩২:১৫), বিশেষত ১৫:৯৮ আয়াতে বলা হয়েছে- ‘সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে তোমার প্রভুর হামদসহ তাসবীহ কর’।
১০:১০ আয়াতের শিক্ষা অনুসারে ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা’ বলে সালাত শুরু করা যেতে পারে এবং সালাতের পরবর্তী তাসবীহ সমাপ্ত করা যেতে পারে ‘আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন’ বলার মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সালাতের প্রধান বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহর যিকর (২০:১৪) এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা (২:৪৫, ২:১৫৩)।
৭. ক্বিয়াম ও সাজদাহর মধ্যবর্তীতে রুকূ'র অবস্থান
প্রচলিত রীতিতে দেখা যায় যে, ক্বিয়াম ও সাজদহার মধ্যবর্তীতে রুকূ' করা হয়। এ রীতিটি গ্রহণ করা হয়েছে ২২:২৬ আয়াতে ক্বিয়ামকারী ও সাজদাহকারী শব্দের মাঝখানে রুকূ'কারীদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করার প্রেক্ষিতে। অর্থগতভাবে এবং শারীরিক অঙ্গভঙ্গির দিক থেকে তুলনামূলক অবস্থান বিবেচনার প্রেক্ষিতেও ক্বিয়াম ও সাজদাহর মধ্যবর্তী স্তর হিসেবে রুকূ'কে বিবেচনা করা যায়। কারণ ক্বিয়াম অর্থ উদ্যোগস্বরূপ দাঁড়ানো, সাজদাহ অর্থ পরম প্রণতি বা প্রণিপাত, কোনো কর্তৃত্বের প্রতি পূর্ণ সম্মান জ্ঞাপন বা কোনো তথ্য-নির্দেশকে সম্পূর্ণ ঐকান্তিকভাবে মেনে নেয়া এবং রুকূ' অর্থ স্বীয় পূর্বমত বা রীতি বা সাধারণ অবস্থা বাদ দিয়ে প্রাপ্ত তথ্য-নির্দেশ মেনে নেয়া, স্বীয় দুর্বলতার স্বীকৃতি দিয়ে সঠিক ব্যবস্থা বা পথনির্দেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়ার মনোবৃত্তি, কুর্নিশ করা, কোনো কিছু বিনীতভাবে সম্পাদন করা।
যেহেতু ক্বিয়ামের মাধ্যমে সালাতের শুরু এবং সাজদাহর মাধ্যমে শেষ (৪:১০২) তাই ক্বিয়াম সালাতের প্রাথমিক শারীরিক অবস্থান এবং সাজদাহ চূড়ান্ত শারীরিক অবস্থান, এমতাবস্থায় রুকূ' এ দুয়ের মধ্যবর্তী একটি শারীরিক অবস্থান হওয়াই স্বত:সিদ্ধভাবে প্রতীয়মান হয়। এজন্য বিষয়টির চিত্ররূপ বুঝাতে গিয়ে বলা হয় যে, মানুষ আদম (আরবি শব্দ আদম যেভাবে লেখা হয়: ‘আলিফ দাল মীম’) হালে (অঙ্গভঙ্গিগত অবস্থায়) ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদাহ করে থাকে। একজন ব্যক্তির বসে থাকা অবস্থায় কিছুটা ঝুঁকে থাকার মাধ্যমে রুকূ' করতে পারে, যখন কোনো ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত করতে অক্ষম হয়, তখন বসে সালাত করার ক্ষেত্রে এরূপ রুকূ' করা হয়। কিন্তু যখন দাঁড়িয়ে সালাত করা হয় তখন সাধারণত যেভাবে রুকূ'র শারীরিক অবস্থান গ্রহণ করা হয় তাহলো হাঁটুতে ভর দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা। কুরআনে রুকূ', সাজদাহ ব্যাপকভাবে ভাবার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সালাতে সাজদাহ বাধ্যতামূলক হলেও সালাতের মধ্যেই রুকূ'কে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে রুকূ'কারীদের সাথে রুকূ' করার আদেশ দেয়া হয়েছে এবং রুকূ'কে একটি স্বতন্ত্র বিশেষত্বসম্পন্ন কাজ বা গুণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সালাতে ক্বিয়াম ও সাজদাহর মধ্যবর্তীতে রুকূ' সম্পাদন করার মাধ্যমে রুকূ' করার আদেশটিকে ভাবার্থে পালনের পাশাপাশি ক্বিয়াম ও সাজদাহর আনুষ্ঠানিক রূপের মতো আনুষ্ঠানিকভাবেও সম্পাদন করা হয়, যা আপত্তিকর নয়।
কুরআনে সালাতের শুধুমাত্র মৌলিক কাঠামোর নির্দেশনা দিয়ে সালাত সম্পাদনের বিষয়টি ব্যাপকভাবে নির্বাহী কর্মকান্ডের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাই সালাতে দুআ, তাসবিহ ইত্যাদির সমন্বয় সাধন করা নির্বাহী কর্মকান্ডের অন্তর্ভুক্ত। সালাতে যেমন তাকবীর, সাব্বিহ, হামদি ও দুআর সমন্বয় সাধন করা যেতে পারে তেমনি রুকূ'র সমন্বয় সাধন করাও কোন ত্রুটিযুক্ত বিষয় নয়। তবে এসবকে বাধ্যতামূলক মনে করা যাবে না।
৮. কুরআন ক্বিরায়াতের পর সাজদাহ
৮৪:২০-২১, ৩২:১৫ এবং ৩:১১৩ আয়াতের নির্দেশনার ভিত্তিতে কুরআন ক্বিরায়াতের পরে সাজদাহ করার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য সালাতে ক্বিয়াম অবস্থায় কুরআন ক্বিরায়াত করার পর সাজদাহ করা হয়ে থাকে। যারা ক্বিরায়াত শুনবে তারা যেমন সাজদাহ করবে, তেমনি যিনি ক্বিরায়াত করবেন ১৫:৯৮ আয়াত অনুযায়ী তাঁকেও সাজদাহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে এবং ২৬:২১৯ আয়াত অনুযায়ী রসূল সাজদাহকারীদের সাথে মুভমেন্ট বা দৈহিক অবস্থানের পরিবর্তন করতেন।
আয়াত তিলাওয়াতের পরে সাজদাহ করার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে কান্না (১৯:৫৮, ১৭:১০৭-১০৯)। আয়াত তিলাওয়াত করে বা শুনে কৃত্রিমভাবে কান্না করার নির্দেশ নেই কিন্তু নবীগণ এবং যারা সঠিক জ্ঞান অবধারণ করে তারা আয়াত তিলাওয়াতের পরে সাজদাহ করে এবং কান্না করে বলে জানানো হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, ঈমান ও ইলমের (বিশ্বাস ও জ্ঞানের) গভীরতা অনুসারে আয়াত তিলাওয়াত করে বা শুনে কান্না আসে। সুতরাং এটিকে নিজেকে ঈমান ও ইলমের দিক থেকে যোগ্য করার ক্ষেত্রে একটি লক্ষণীয় বিষয় হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
৯. রুকূ'-সাজদাহতে তাসবীহ
১৭:১০৭-১০৯, ৩২:১৫ এবং ১৫:৯৮ আয়াতের তথ্য অনুসরণে সাজদাহতে তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতা জ্ঞাপন) করা হয়ে থাকে। যদিও সালাতে সাজদাহ অবস্থায় তাসবীহ করার জন্য প্রত্যক্ষ নির্দেশ দেয়া হয়নি, তবুও আয়াতসমূহ থেকে পরোক্ষভাবে সাজদাহ অবস্থায় তাসবীহ করার নির্দেশনা পাওয়া যায়।
বর্তমানে সাজদাহতে যে তাসবীহ করার রীতি বহুল প্রচলিত তা হলো, “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” (আমি আমার সমুচ্চ সুমহান প্রভুর পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি)। এটি গৃহীত হয়েছে ৮৭:১ আয়াত অনুসারে। সুতরাং অবশ্যই সাজদাহতে এ তাসবীহ করা যেতে পারে। বিশেষ করে সর্বোচ্চ সত্তার প্রতি সবচেয়ে অবনমিত অবস্থায় এ তাসবীহ করাটা বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত বলে প্রতীয়মান হয়। তবে ১৭:১০৮-১০৯ আয়াতে বর্ণিত সাজদাহ করা এবং ক্রন্দন করার পাশাপাশি যে তাসবীহটি আমাদের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে বিবৃত হয়েছে সাজদাহতে তাসবীহ করার জন্য সেটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে অনুশীলন করা উচিত। তা হলো: “সুবহানা রব্বিনা ইন কানা ওয়া’দু রব্বিনা লামাফঊলা” (আমাদের রব পবিত্র, যদি কোনো ক্ষেত্রে আমাদের প্রভুর কোনো ওয়াদা থাকে, তা কার্যকর হবেই)। এছাড়াও সাজদাহতে যে কোনো তাসবীহ করা যেতে পারে। তাসবীহ ও হামদ হিসেবে চর্চা করার জন্য কুরআনের অনেক আয়াত থেকে সাহায্য নেয়া যেতে পারে, আবার নিজের ভাষায়ও আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা ও প্রশংসা করা যেতে পারে।
আবার বর্তমানে রুকূ'তে যে তাসবীহ করার রীতি প্রচলিত রয়েছে তা হলো: “সুবহানা রব্বিয়াল আযীম” (আমি আমার শক্তিমান সুমহান প্রভুর পবিত্রতা জ্ঞাপন করছি)। যেহেতু রুকূ' এর তাৎপর্য হলো দুর্বলতাজনিত কারণে বা স্বীয় দুর্বলতার স্বীকৃতিস্বরূপ দুর্বলতামুক্ত সত্তার নির্দেশনাকে গ্রহণ করে নেয়ার অভিব্যক্তি হিসেবে কুর্নিশ করা, তাই রুকূ’তে এ তাসবীহ করার রীতিটিও তাৎপর্যমণ্ডিত। এ তাসবীহ গৃহীত হয়েছে ৫৬:৭৪, ৫৬:৯৬ ও ৬৯:৫২ আয়াত অনুসারে। রুকূ'তে মানুষ অত্যন্ত দুর্বল শারীরিক অবস্থানে থাকে, যখন পেছন থেকে একটি ছোটো বালকও যদি একজন শক্তিশালী যুবককে হাল্কা ধাক্কা দেয়, সে পড়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় শক্তিমান সুমহান প্রভুর পবিত্রতা জ্ঞাপন করা রুকূ'র অভিব্যক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে অবশ্যই রুকূ'তেও এছাড়াও যে কোনো তাসবীহ করা যাবে।
যদি যে তাসবীহটি রুকূ'তে প্রচলিত তা সাজদাহতে করা হয় এবং যে তাসবীহটি সাজদাহতে প্রচলিত তা রুকূ'তে করা হয় তাতেও কোনো দোষ নেই। বরং উভয়টিতে উভয় তাসবীহ এবং আরো অন্যান্য তাসবীহ করা যেতে পারে।
১০. নিদা (আযান), ইক্বামাত (জামায়াতে সালাত শুরু করার জন্য দাঁড়ানো), ক্বিয়াম-সাজদাহ এর অবস্থান্তরে যাওয়ার সময়ের দুআ/তাকবীর
নিদা (আযান), ইক্বামাত (জামায়াতে সালাত শুরু করার জন্য দাঁড়ানো), ক্বিয়াম-সাজদাহ এর অবস্থান্তরে যাওয়ার সময়ে যে দুআ বা তাকবীর করা হয় তা নির্ধারণ একটি নির্বাহী বিষয়। পূর্ববর্তী উলিল আমরের সময় গৃহীত নির্বাহী রীতি পরবর্তী উলিল আমরের সময় বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণীয় নয়, তবে ধারাবাহিক বাস্তব অনুশীলনের মাধ্যমে চলে আসা নির্বাহী রীতিতে কোনো ত্রুটি না থাকলে বা পরিবর্তিত বাস্তব পরিস্থিতির কারণে পরিবর্তনের প্রয়োজন না হলে তা সাধারণভাবে অনুশীলনযোগ্য বা অনুসরণযোগ্য। আমরা বিশ্বাস করি যে, দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা বিভিন্ন নির্বাহী রীতির মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে ত্রুটি পরিলক্ষিত হয় মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ তা হুবহু প্রচলিত রীতিতে বাস্তবায়ন করেননি, বরং তাঁর বাস্তবায়িত রীতির সাথে কালক্রমে মধ্যবর্তী কোনো পর্যায়ে ত্রুটিযুক্ত বিষয়ের সংযোজন ঘটেছে। যেমন মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ নিজে এভাবে দরুদ পড়ার কথা নয় যে, ‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ’। সহজ কথায় বলা যায়, যেহেতু নির্বাহী বিষয় কোনো চিরন্তন বিধান নয়, তাই উহাকে হুবহু সংরক্ষণের প্রয়োজন নেই এবং প্রচলিত নির্বাহী রীতি অবশ্যই পর্যালোচনা সাপেক্ষে সংস্কারযোগ্য। যেমন প্রচলিত আত্তাহিয়্যাতু, দুরুদে ইবরাহিম ও দাজ্জাল সম্পর্কিত দুআ মাছুরা পর্যালোচনা করলে সেগুলো কুরআনের শিক্ষার বিপরীত হিসেবে প্রতীয়মান হয় বিধায় এসব থেকে বিরত থাকতে হবে।
কুরআন নাজিল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে রসূলুল্লাহর সালাত
একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো, কুরআন নাযিল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ কিভাবে সালাত সম্পাদন করেছেন? যদি তিনি পূর্ব থেকে প্রচলিত রীতিতে সালাত সম্পাদন করে থাকেন, তাহলে আমাদেরও কি এটাই উচিত নয় যে, আমরা সালাতের পদ্ধতি বিষয়ে কুরআন থেকে কোনো কাঠামো নির্ণয় করার চেয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে সালাত সম্পাদন করবো?
এ প্রশ্নের জবাব হলো: প্রথমে কুরআনের সকল আয়াত (বা সালাত সম্পর্কিত সকল আয়াত) নাজিল সমাপ্ত হওয়ার পরেই রসূল সালাত শুরু করেছেন তা বলা যায় না। স্বাভাবিকভাবে সালাতের নির্দেশ নাযিলের পর তিনি পূর্ব থেকে প্রচলিত রীতির মধ্যে কোনো অংশ অগ্রহণযোগ্য সাব্যস্ত না হলে তদনুসারে সালাত সম্পাদন করেছেন অথবা কোনো ক্ষেত্রে তাঁকে স্বতন্ত্রভাবে সাময়িকভাবে অনুসরণীয় কোনো নির্দেশনাও দেয়া হয়ে থাকতে পারে। তারপর কুরআনের মাধ্যমে যখন যা নির্দেশনা এসেছে তিনি তখন তা বাস্তবায়ন করেছেন। এভাবে কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ক্রমান্বয়ে সালাতের সবদিক নির্দেশিত বা অনুমোদিত হয়েছে। সমগ্র কুরআন নাযিল হওয়ার পর এতে যা কিছু বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা-ই বাধ্যতামূলক। সুতরাং প্রচলিত রীতিতে কুরআনে থাকা বাধ্যতামূলক দিকগুলোর যে স্বরূপ পাওয়া যায়, কোনো আয়াতের তথ্যের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তা ঐ বাধ্যতামূলক কাজের ধরন হিসেবে অনুশীলনযোগ্য। এবং কোনো বাধ্যতামূলক কাজের ব্যতিক্রম বা ঘাটতি পরিলক্ষিত হলে ঐ ক্ষেত্রে কুরআনে থাকা বাধ্যতামূলক কাজটিকে বাস্তবায়ন রীতিতে নিয়ে আসতে হবে। তারপর প্রচলিত রীতির কোনো দিক যদি কুরআনের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যশীল হয় তা পরিগ্রহণ করতে হবে এবং কোনো দিক যদি কুরআনের নির্দেশনার সাথে অসামঞ্জস্যশীল হয় তাহলে তা অগ্রহণযোগ্য হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
কুরআন নাযিলের সমাপ্তির পর প্রচলিত রীতিকে কুরআন দ্বারা যাচাই করা অত্যাবশ্যক, কুরআন দ্বারা যাচাই ছাড়া সরাসরি প্রচলিত রীতিকে গ্রহণ করা যেতে পারে না।
জামায়াতের সাথে সালাত সম্পাদনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কাঠামো
একটি প্রশ্ন হলো, সালাতের কাঠামোর ক্ষেত্রে যদি মতভেদ থাকে, যেমন কেউ এক রাকায়াতে একটি সাজদাহ করাকে যথেষ্ট মনে করে, কেউ এক রাকায়াতে দুইটি সাজদাহ করাকে সঠিক রীতি সাব্যস্ত করে। আবার কেউ সালাতে আনুষ্ঠানিক রুকু’ করার রীতি পালন করে এবং আনুষ্ঠানিক রুকূ’ ছাড়াই সালাত সম্পাদন করে। তাহলে জামায়াতের সাথে সালাত সম্পাদনের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কাঠামো কিভাবে নির্ধারিত হবে?
এ প্রশ্নের জবাব হলো, জামায়াতে সালাত সম্পাদনের ক্ষেত্রে কাঠামোগত রীতির বিভিন্নতা নিরসনের উপায় হিসেবে ইমামের অনুসরণকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং অধিক উত্তম পদ্ধতি বিষয়ে অনির্দিষ্টকালের ধারাবাহিক আলোচনা পদ্ধতি অবলম্বন করলে এ বিষয়ে অন্তর্কোন্দলের কোনো অবকাশ থাকবে না।
আনুষ্ঠানিক সালাতের নির্দেশ শুধুমাত্র সালাতের অনুষ্ঠান করার জন্য নয়, বরং অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষা নেয়ার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠান করার জন্য। এ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা নিম্নরূপ:
২:১৪৩ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তুমি যে ক্বিবলার দিকে ছিলে তাকে ক্বিবলা নির্ধারণ করেছিলাম শুধু এটা জানার জন্য যে, কে রসূলের অনুসরণ করে এবং কে পিছনের (পূর্বাবস্থার) দিকে ফিরে যায়?
আয়াতটিতে জানানো হয়েছে যে, ক্বিবলা সম্পর্কিত নির্দেশের উদ্দেশ্য নিছক ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানো নয়, বরং এর মাধ্যমে রসূলের অনুসরণের শিক্ষা দেয়াই উদ্দেশ্য। রসূলের অনুসরণ বলতে বুঝায় আল্লাহ তাঁর রসূলের মাধ্যমে যে নির্দেশ দিয়েছেন রসূল নিজে তা অনুসরণ করেছেন এবং অন্যদেরকে তা অনুসরণের জন্য বলেছেন। এমতাবস্থায় রসূলের সাথে বা রসূলের মতো নিজেরা আল্লাহর নির্দেশ পালন করাই হলো রসূলের অনুসরণ। অন্যদিকে কেউ যদি একবার যে নির্দেশনা পালন শুরু করেছে পরবর্তীতে রসূলের মাধ্যমে ভিন্ন নির্দেশনা আসা সত্ত্বেও পূর্বের অনুশীলনই অব্যাহত রাখে, তাহলে সে মূলত কোনো আনুষ্ঠানিকতায় আটকে গেলো, অনুষ্ঠানের সামনে থাকা উদ্দেশ্যকে হারিয়ে ফেললো। এবং অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যকে হারিয়ে ফেলে অনুষ্ঠানের মধ্যে আটকে যাওয়াকে কুরআনের ভাষায় ‘পিছনের দিকে ফিরে যাওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং সালাতের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য ও রসূলের অনুসরণের শিক্ষা দেয়া হয়েছে যাতে আনুষ্ঠানিক সালাতের বাহিরেও আল্লাহর আনুগত্য ও রসূলের অনুসরণ করার মনমানসিকতা গড়ে উঠে ও মজবুত থাকে।
২:১৭৭ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে ‘পূর্ব ও পশ্চিম ক্বিবলামুখী হওয়ার মধ্যে কল্যাণ নেই’। অর্থাৎ শুধুমাত্র অনুষ্ঠান করার মধ্যে কল্যাণ নেই। সুতরাং অনুষ্ঠান করার পাশাপাশি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন তথা অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষা নেয়ার মাধ্যমেই কল্যাণ অর্জিত হতে পারে।
৫:৬ আয়াতে আনুষ্ঠানিক সালাতের পূর্বশর্ত হিসেবে ওজু (গোসল) ও তায়াম্মুমের বিধান দেয়ার উদ্দেশ্য জানিয়ে বলা হয়েছে, “আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না, বরং তোমাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পরিপূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো”।
আয়াতটি থেকে বুঝা যায় যে, আনুষ্ঠানিক সালাতের আগে ওজু (গোসল) ও তায়াম্মুমের বিধানের কারণে মানুষ নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে পারবে এবং তার মাধ্যমে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে তথা বিভিন্ন রোগজীবাণু থেকে মুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারবে। ওজু (গোসলের) একটি শিক্ষা হলো যখন অতিরিক্ত ধুলাবালি বা দুর্গন্ধযুক্ত ঘামের মাধ্যমে সমগ্র শরীর অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন সমস্ত শরীর ধৌত করার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে, যেন রোগজীবাণু থেকে মুক্ত থাকার কল্যাণ অর্জন করা যায়। মানুষ যেন পরিচ্ছন্ন হওয়ার রীতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে পারে তার উপায় হিসেবে যখন পানি পাওয়া যায় না তখন তায়াম্মুম করার বিধান দেয়া হয়েছে।
১০৭:৪-৭ আয়াতে যে সালাতকারীগণ সালাতের যথাযথ অনুশীলন থেকে উদাসীন থাকে, প্রদর্শনীর জন্য কাজ করে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা উপকরণ সহজলভ্যকরণকে রোধ করে তাদের জন্য দুর্ভোগের কথা বলা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, এ ধরনের সালাতকারী যথাযথ সালাতকারী নয়। আনুষ্ঠানিক সালাত প্রসঙ্গে তথ্যটির প্রযোজ্য তাৎপর্য হলো: আনুষ্ঠানিক সালাতের মাধ্যমে যে ধরনের শিক্ষা লাভ করা উদ্দেশ্য সেটার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে- সালাতের যথাযথ অনুশীলন, প্রদর্শনীর জন্য কাজ না করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সত্যনিষ্ঠার সাথে কাজ করা, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা উপকরণকে সহজলভ্য করা। সুতরাং সালাতের অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে সঠিক মনমানসিকতা গঠন করলে সেই সালাতকারী সালাতের যথাযথ অনুশীলন থেকে উদাসীন থাকবে না, প্রদর্শনীর জন্য কাজ করবে না, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা উপকরণ সহজলভ্যকরণকে রোধ করবে না।
৬২:৯ আয়াতে বলা হয়েছে যে, জুমুয়ার দিনে সালাতের জন্য আহবান করলে তখন বেচা-কেনা স্থগিত রেখে আল্লাহর স্মরণের একটি বিশেষ রূপ ‘সালাত’ সম্পাদনের জন্য দ্রুত গমন করতে হবে এবং সালাত সম্পাদন শেষে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে হবে। সঠিক পরিজ্ঞান আয়ত্ত করতে পারলেই তা কল্যাণকর হবে। অর্থাৎ যদি আনুষ্ঠানিক সালাত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা হয় তাহলেই তা হবে শুধুমাত্র ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকার চেয়ে উত্তম। কিন্তু যদি শিক্ষা গ্রহণ করা না হয় ঐ অবস্থায় আনুষ্ঠানিক সালাতের জন্য ব্যবসায়-বাণিজ্য স্থগিত রেখে কোনো কল্যাণ নেই।
২০:১৪ আয়াতে আল্লাহর স্মরণের অনুশীলনের জন্য সালাত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং আনুষ্ঠানিক সালাত থেকে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, গুণাগুণ ইত্যাদি স্মরণ করা ও স্মরণ রেখে যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
সালাতের অনুষ্ঠান থেকে আমরা যেসব শিক্ষা লাভ করতে পারি তার মধ্যে রয়েছে: আল্লাহর আদেশ মানার মানসিকতা গঠন, সময় ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা, শরীর-পোশাক-পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, শারীরিক ও মানসিক সচেতন তৎপরতার অনুশীলন, আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, নেতৃত্ব-আনুগত্য কাঠামো ও পদ্ধতির অনুশীলন, বক্তব্য বিষয়ে যথোপযুক্ত জ্ঞানার্জন এবং পঠিত, শ্রুত বা নিজের পক্ষ থেকে পেশকৃত বক্তব্য, প্রার্থনা বা অঙ্গীকারের ভিত্তিতে বাস্তব জীবন নির্বাহের শিক্ষা।
সালাতের ওয়াক্ত বা সময়সীমা নির্ধারণ সম্পর্কে আলোচনাটি কয়েকটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। (ক) দিন-রাতের বিভিন্ন সময়সীমা, (খ) সালাতের ওয়াক্ত সংখ্যা ও ওয়াক্তের পরিসীমা, (গ) ‘আস সালাতুল উসতা’ প্রসঙ্গ, (ঘ) তাসবীহের ওয়াক্তসংখ্যা ও সালাতের ওয়াক্তসংখ্যার তুলনামূলক অবস্থান এবং (ঙ) সালাতের ওয়াক্ত সম্পর্কে কুরআন গবেষকদের ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধির বিষয়ে আমাদের পর্যালোচনা।
নাহার (দিন): নাহার (দিন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৫৭ স্থানে: ২:১৬৪:৮, ২:২৭৪:৫, ৩:২৭:৪, ৩:২৭:৬, ৩:৭২:১৩, ৩:১৯০:৮, ৬:১৩:৬, ৬:৬০:৮, ৭:৫৪:১৭, ১০:৬:৫, ১০:২৪:৩২, ১০:৪৫:৯, ১০:৫০:৮, ১০:৬৭:৮, ১১:১১৪:৪, ১৩:৩:১৮, ১৩:১০:১৪, ১৪:৩৩:৯, ১৬:১২:৪, ১৭:১২:৩, ১৭:১২:১০, ২০:১৩০:১৮, ২১:২০:৩, ২১:৩৩:৫, ২১:৪২:৫, ২২:৬১:৭, ২২:৬১:৯, ২৩:৮০:৮, ২৪:৪৪:৪, ২৫:৪৭:১০, ২৫:৬২:৫, ২৭:৮৬:৮, ২৮:৭২:৭, ২৮:৭৩:৬, ৩০:২৩:৫, ৩১:২৯:৮, ৩১:২৯:১০, ৩৪:৩৩:৯, ৩৫:১৩:৪, ৩৫:১৩:৬, ৩৬:৩৭:৬, ৩৬:৪০:১১, ৩৯:৫:৮, ৩৯:৫:১০, ৪০:৬১:৮, ৪১:৩৭:৪, ৪১:৩৮:৯, ৪৫:৫:৩, ৪৬:৩৫:২১, ৫৭:৬:৪, ৫৭:৬:৬, ৭১:৫:৭, ৭৩:৭:৪, ৭৩:২০:১৯, ৭৮:১১:২, ৯১:৩:১, ৯২:২:১।
লাইল (রাত) শব্দের বিভিন্ন শব্দরূপের ব্যবহার সম্পর্কিত পরিসংখ্যান:
লাইল (রাত) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৮১ স্থানে: ২:১৬৪:৭, ২:১৮৭;৪৭, ২:২৭৪:৪, ৩:২৭:২, ৩:২৭:৮, ৩:১১৩:১২, ৩:১৯০:৭, ৬:১৩:৫, ৬:৬০:৪, ৬:৭৬:৪, ৬:৯৬:৪, ৭:৫৪:১৬, ১০:৬:৪, ১০:২৪:৩০, ১০:২৭:২০, ১০:৬৭:৫, ১১:৮১:১৩, ১১:১১৪:৭, ১৩:৩:১৭, ১৩:১০:১২, ১৪:৩৩:৮, ১৫:৬৫:৫, ১৬:১২:৩, ১৭:১:৫, ১৭:১২:২, ১৭:১২:৭, ১৭:৭৮:৭, ১৭:৭৯:২, ১৯:১০:১২, ২০:১৩০:১৫, ২১:২০:২, ২১:৩৩:৪, ২১:৪২:৪, ২২:৬১:৫, ২২:৬১:১১, ২৩:৮০:৭, ২৪:৪৪:৩, ২৫:৪৭:৫, ২৫:৬২:৪, ২৭:৮৬:৫, ২৮:৭১:৭, ২৮:৭২:১৭, ২৮:৭৩:৫, ৩০:২৩:৪, ৩১:২৯:৬, ৩১:২৯:১২, ৩৪:৩৩:৮, ৩৫:১৩:২, ৩৫:১৩:৮, ৩৬:৩৭:৩, ৩৬:৪০:৯, ৩৭:১৩৮:১, ৩৯:৫:৬, ৩৯:৫:১২, ৩৯:৯:৫, ৪০:৬১:৫, ৪১:৩৭:৩, ৪১:৩৮:৮, ৪৪:২৩:৩, ৪৫:৫:২, ৫০:৪০:২, ৫১:১৭:৪, ৫২:৪৯:২, ৫৭:৬:২, ৫৭:৬:৮, ৭১:৫:৬, ৭৩:২:২, ৭৩:৬:৩, ৭৩:২০:৯, ৭৩:২০:১৮, ৭৪:৩৩:১, ৭৬:২৬:২, ৭৬:২৬:৬, ৭৮:১০:২, ৭৯:২৯:২, ৮১:১৭:১, ৮৪:১৭:১, ৮৯:৪:১, ৯১:৪:১, ৯২:১:১, ৯৩:২:১।
লায়াল (লাইল এর বহুবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৩৪:১৮:১৫, ৬৯:৭:৪, ৮৯:২:১।
লাইলাত (লাইল এর স্ত্রীলিঙ্গ) ব্যবহৃত হয়েছে ৮ স্থানে: ২:৫১:৫, ২:১৮৭:৩, ৭:১৪২:৪, ৭:১৪২:১১, ৪৪:৩:৪, ৯৭:১:৪, ৯৭:২:৪, ৯৭:৩:১।
বায়াত (লাইল এর প্রতিশব্দ) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৭:৪:৭, ৭:৯৭:৭, ১০:৫০:৬।
আনাআল লাইল (‘আনাআ’ শব্দটি ‘ফি’লুন’ এর বহুবচন ‘আফআল’ এর প্যাটার্নে গঠিত, এর মূল অক্ষরসমূহ Root Letters হলো ‘আলিফ নূন ইয়া’) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৩:১১৩:১১, ২০:১৩০:১৪, ৩৯:৯:৪।
কাওকাব ও কাওয়াকিব: ‘কাওকাব’ শব্দের অর্থ হলো ‘গ্রহ’। ‘কাওয়াকিব’ হলো ‘কাওকাব’ শব্দের বহুবচন। রাতের সূচনা কখন ঘটে তা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কাওকাব শব্দের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে।
কাওকাব শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৬:৭৬:৬, ১২:৪:১০, ২৪:৩৫:১৫ এবং কাওয়াকিব শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৩৭:৬:৬, ৮২:২:২।
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَائِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالْآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
২:১৮৭ :: তোমাদের জন্য সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি দাম্পত্য-আবেগ উদ্দীপক ঘনিষ্ঠতা বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের প্রতি খিয়ানত করছো। তারপর তিনি তোমাদের তাওবাহ কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং এ পর্যায়ে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করো এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন তা অন্বেষণ করো। এবং তোমরা খাও ও পান করো যতক্ষণ না তোমাদের জন্য দিগন্তের কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়। তারপর তোমরা তোমরা রাত (রাতের সূচনা) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। এবং তোমরা যখন মাসজিদে আকিফূন (ই'তিকাফরত/আত্মনিয়োজিত, ধ্যান ও গভীর চিন্তামগ্ন এবং অবস্থানকারী) থাকো, তখন (ই'তিকাফের দিনগুলোতে দিনে-রাতে কখনো) তাদের সাথে সহবাস করো না। এগুলো আল্লাহর স্থিরিকৃত সীমাসমূহ। সুতরাং তোমরা তা লংঘনের কাছেও যেও না। এভাবে আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানবজাতির জন্য সুষ্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তারা স্রষ্টা-সচেতন হতে পারে।
تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَتَرْزُقُ مَن تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
৩:২৭ :: আপনি রাতকে দিনে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতে প্রবেশ করান। এবং মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন এবং জীবন্ত থেকে মৃতকে বের করেন। এবং যাকে ইচ্ছা হিসাবের বাইরে (তথা তার ধারণাতীত উৎস থেকে ও ব্যাপক পরিমাণে) জীবিকা প্রদান করেন।
لَيْسُوا سَوَاءً مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ أُمَّةٌ قَائِمَةٌ يَتْلُونَ آيَاتِ اللَّهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ
৩:১১৩ :: তারা সকলে সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্য থেকে আছে একটি (ন্যায়ের উপর) প্রতিষ্ঠিত উম্মাহ (উম্মাতুন ক্বায়িমাতুন)। তারা রাতের বিভিন্ন প্রহরে আল্লাহর আয়াতসমূহ অধ্যয়ন করে। এবং তারা (আল্লাহকে) সাজদাহ করে।
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَىٰ كَوْكَبًا قَالَ هَـٰذَا رَبِّي فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ
৬:৭৬ :: তারপর যখনি তার উপর রাত আচ্ছন্ন হলো, তখনি সে (ইবরাহীম) একটি ক্বাওকাব / গ্রহ (সন্ধ্যাতারা) দেখলো। সে বললো, “এটাই আমার প্রভু”। তারপর যখন সেটা অস্ত গেলো তখন সে বললো, “আমি অস্তগামীদেরকে ভালবাসি না”।
فَالِقُ الْإِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
৬:৯৬ :: তিনিই প্রভাতের উন্মেষক। এবং তিনি রাতকে বানিয়েছেন বিশ্রামের সময় এবং সূর্য ও চাঁদকে করেছেন হিসাবের উপকরণ। এটা মহাশক্তিমান মহাজ্ঞানীর (আল্লাহর) নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (তাক্বদীর)।
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
৭:৫৪ :: নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিবসে, তারপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন আরশে। তিনি রাত দিয়ে দিনকে ঢেকে দেন এবং তা (রাত) সেটাকে (দিনকে) দ্রুত অনুসরণ করে। সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্রসমূহ তাঁরই নির্দেশক্রমে নিয়োজিত রয়েছে। প্রশ্নাতীতভাবে, সৃষ্টিও তাঁর, আদেশও তাঁর। বড়ই সমৃদ্ধিময় আল্লাহ রব্বুল আলামীন।
وَالَّذِينَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَاءُ سَيِّئَةٍ بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ مَّا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ كَأَنَّمَا أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
১০:২৭ :: এবং যারা মন্দ উপার্জন করেছে তারা তাদের মন্দের প্রতিফল পাবে ঐ মন্দের অনুরূপ। এবং তাদেরকে অপমান আচ্ছন্ন করবে। তাদের জন্য আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে কোনো ত্রাণকর্তা নেই। যেন তাদের মুখমণ্ডলসমূহ রাতের অন্ধকারের কোনো টুকরা ঢেকে ফেলেছে। তারাই ‘আসহাবুন নার’ (যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
১০:৬৭ :: তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য রাতকে বানিয়েছেন যেন তোমরা স্বস্তি পাও এবং দিনকে বানিয়েছেন দেখার উপযোগী। নিশ্চিয় এতে নিদর্শন রয়েছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা (মনোযোগ দিয়ে) শুনে।
আলোচনা : দিন দেখার উপযোগী। এর মানে এ নয় যে, রাতে মোটেই আলো দেখা যাবে না। রাত অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে, এর মানে এ নয় যে, রাতের কোনো অংশে কোনো প্রকার আলো থাকবে না। পূর্ণিমার রাতে আলো থাকা সত্ত্বেও “রাত অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে” তথ্যটি যথাস্থানে ঠিক থাকে।
قَالُوا يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن يَصِلُوا إِلَيْكَ فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنكُمْ أَحَدٌ إِلَّا امْرَأَتَكَ إِنَّهُ مُصِيبُهَا مَا أَصَابَهُمْ إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ
১১:৮১ :: তারা (আগমনকারীগণ) বললো, “হে লূত, নিশ্চয় আমরা তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে প্রেরিত। তারা তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার সহকারে রাতের একাংশে ভ্রমণ করো, এবং তোমাদের মধ্য থেকে কেউই পিছনে তাকাবে না; (তোমরা যাও) তোমার স্ত্রী ছাড়া। নিশ্চয় তার উপর তা-ই আপতিত হবে যা তাদের উপর আপতিত হবে। নিশ্চয় তাদের ব্যাপারে ওয়াদাকৃত (নির্ধারিত) সময় হচ্ছে প্রভাতবেলা (সোবহ)। প্রভাত (সোবহ) কি নিকটবর্তী নয়?
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ
১১:১১৪ :: সালাত প্রতিষ্ঠা করো দিনের দুই তরাফে (ভাগে) এবং রাত থেকে যুলাফায় (কাছাকাছি পর্যায়ের লগ্নসমূহে)। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে অপসারিত করে। এটা স্মরণকারীদের জন্য স্মরণীয় বিষয়।
وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
১৩:৩ :: এবং তিনিই সেই সত্তা যিনি পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন এবং তাতে পাহাড়-পর্বত ও নদ-নদী স্থাপন করেছেন; এবং (সৃষ্টি করেছেন) প্রত্যেক প্রকার ফলমূল, তিনি সেটার মধ্যে দুই প্রকারে জোড়া সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাত দিয়ে দিনকে ঢেকে দেন। নিশ্চয় সেটার মধ্যে সেই সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে, যারা বৈজ্ঞানিক চিন্তা-গবেষণা (তাফাক্কুর) করে।
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ آيَتَيْنِ فَمَحَوْنَا آيَةَ اللَّيْلِ وَجَعَلْنَا آيَةَ النَّهَارِ مُبْصِرَةً لِّتَبْتَغُوا فَضْلًا مِّن رَّبِّكُمْ وَلِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ وَكُلَّ شَيْءٍ فَصَّلْنَاهُ تَفْصِيلًا
১৭:১২ :: এবং আমি রাতকে ও দিনকে দুটি নিদর্শন করেছি। এবং আমি রাতের নিদর্শনকে করেছি নিষ্প্রভ এবং দিনের নিদর্শনকে করেছি দেখার উপযোগী, যেন তোমরা তোমাদের প্রভুর অনুগ্রহ (জীবিকা, শিক্ষা প্রভৃতি) অন্বেষণ করতে পারো এবং যেন তোমরা বর্ষসংখ্যা ও হিসাব জানতে পারো। এবং আমি সবকিছুই বিস্তারিত বিবৃত করেছি।
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
১৭:৭৮ :: সালাত প্রতিষ্ঠা করো ‘দুলুকিশ শামস’ (মধ্যাহ্নে সূর্য ঢলে পড়া) থেকে ‘গাছাক্বিল লাইল’ (রাতের তমসাচ্ছন্নতা) পর্যন্ত সময়কালে। এবং ফজরের কুরআন পাঠ (খুবই গুরুত্বপূর্ণ)। নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ (বিশেষ) প্রত্যক্ষণীয় বিষয়।
وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَىٰ أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا
১৭:৭৯ :: এবং রাতের কিছু সময় তাসহ (কুরআনসহ) তাহাজ্জুদ করো (জেগে উঠে কাটাও) (সালাত/ কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণা/ নির্বাহী দায়িত্বপালনের জন্য)। এটা তোমার জন্য অতিরিক্ত দায়বদ্ধতা (নাফিলাহ)। আশা করা যায় যে, তোমার প্রভু তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে (মাক্বামে মাহমূদ) সমুত্থিত করবেন।
قَالَ رَبِّ اجْعَل لِّي آيَةً قَالَ آيَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَ لَيَالٍ سَوِيًّا
১৯:১০ :: সে (যাকারিয়া) বললো, “হে আমার প্রভু, আমাকে কোনো নিদর্শন নির্ধারণ করে দিন”। তিনি (আল্লাহ) বললেনন, “তোমার জন্য নিদর্শন হচ্ছে এই যে, “তুমি (ইঙ্গিতে ছাড়া) মানুষের সাথে ক্রমাগতভাবে / ধারাবাহিকভাবে তিনটি রাত কথা বলবে না”।
فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا وَمِنْ آنَاءِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضَىٰ
২০:১৩০ :: তারা যা বলে সে বিষয়ে ধৈর্য ধরো এবং তোমার প্রভুর প্রশংসাসহ পবিত্রতা জ্ঞাপন (হামদ ও তাসবীহ) করো সূর্য উদয়ের আগে এবং সেটার (সূর্যের) অস্তের আগে। এবং রাতের বিভিন্ন প্রহরে (আনাআল লাইলে) এবং দিনের বিভিন্ন ভাগে (আতরফান্নাহার), যেন তুমি সন্তুষ্ট হতে পারো।
يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ
২১:২০ :: তারা (ফেরেশতাগণ) তাঁর তাসবীহ / পবিত্রতা বর্ণনা করে রাতে ও দিনে। এবং তারা তাতে অলসতা করে না।
আলোচনা: এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, সাধারণভাবে সারা দিন বুঝাতে ‘রাতে ও দিনে’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কুরআনে কখনো কখনো ‘সকালে ও বিকালে’ এবং ‘সকালে ও সন্ধ্যায়’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘রাতে ও দিনে’ শব্দের সাথে ‘সকালে ও বিকালে’ এবং ‘সকালে ও সন্ধ্যায়’ শব্দের মিল-অমিল হলো: ‘সকালে ও বিকালে’ বা ‘সকালে ও সন্ধ্যায়’ শব্দের দ্বারাও সারা দিন বুঝাতে পারে। তবে শব্দ দুটি দ্বারা নির্দিষ্টভাবে ‘সকালে ও বিকালে’ এবং ‘সকালে ও সন্ধ্যায়’ও বুঝানো হয়। ‘সকালে ও বিকালে’ শব্দের অর্থ হলো ‘দিনের শুরুতে ও দিনের শেষে’। এবং ‘সকালে ও সন্ধ্যায়’ শব্দের অর্থ হলো ‘দিনের শুরুতে ও রাতের শুরুতে’। যেখানে যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে সেভাবে বিশেষ সময়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই সারাদিন তাসবীহ করার ভাবার্থ গ্রহণের পাশাপাশি ‘সকালে, বিকালে ও সন্ধ্যায়’ বিশেষভাবে তাসবীহ করার নির্দেশটিও যেন পরিপালন করা হয়, সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি। সেই সাথে অন্য আয়াতের মাধ্যমে ঐ দুটি/তিনটি সময় ছাড়াও আরো কিছু সময়ে (যেমন, যোহরসহ দিনের অন্যান্য ভাগে এবং রাতের বিভিন্ন প্রহরে) তাসবীহ করারও নির্দেশনা রয়েছে।
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
২২:৬১ :: এটা এজন্য যে, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِبَاسًا وَالنَّوْمَ سُبَاتًا وَجَعَلَ النَّهَارَ نُشُورًا
২৫:৪৭ :: এবং তিনি সেই সত্তা যিনি তোমাদের জন্য রাতকে বানিয়েছেন আবরণস্বরূপ এবং ঘুমকে বিশ্রামস্বরূপ এবং দিনকে বানিয়েছেন পুনরুত্থানস্বরূপ।
أَلَمْ يَرَوْا أَنَّا جَعَلْنَا اللَّيْلَ لِيَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
২৭:৮৬ :: তারা কি দেখে না যে, আমি রাতকে বানিয়েছি যেন তারা তাতে স্বস্তি লাভ করে এবং দিনকে (বানিয়েছি) দেখার উপযোগী? নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে সেই ক্বওমের জন্য যারা ঈমান রাখে।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَـٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِضِيَاءٍ أَفَلَا تَسْمَعُونَ
২৮:৭১ :: বলো, “তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তোমাদের উপর ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত রাতকে সুদীর্ঘ করে দেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দেবে? তোমরা কি শুনো না?”
আলোচনা : এ আয়াতে ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত রাতকে সুদীর্ঘ করার কথা বলা হয়েছে, যার অর্থ অন্যদিকে বিপরীত গোলার্ধে ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত দিনকে সুদীর্ঘ করে দেয়া (যা পরের আয়াতটিতে বলা হয়েছে)। এমতাবস্থায় এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, পৃথিবীর ঘূর্ণন থামিয়ে দিয়ে ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত তাকে স্থির রাখা। এখান থেকে বুঝা যায় যে, রাতকে ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী করার মানে হলো, রাত দিনের উপর অগ্রগামী (সাবেক্ব) হওয়া বা দিবসকে পিছনে ফেলে স্থায়ীভাবে চলতে থাকা (দ্র. ৩৬:৪০)। একই সাথে এর মানে হলো অন্য গোলার্ধে দিন রাতের উপর অগ্রগামী (সাবেক্ব) হওয়া। কিন্তু ৩৬:৪০ আয়াতটিতে বক্তব্য উপস্থাপনে উপযোগিতার মাত্রা বিবেচনায় সূর্য ও চন্দ্র প্রসঙ্গে এবং রাত ও দিন প্রসঙ্গে একটি দিক উল্লেখ করে তার অনিবার্য বিপরীত দিকটি অনুল্লেখিত রাখা হয়েছে মাত্র।
রাত যদি ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ হয় তাহলে ‘আলো’ পাওয়া যাবে না। এর কারণ সূর্যকে আলোর উৎস বানানো হয়েছে। দিনের আলো শেষে রাতের প্রথমাংশে যে আলো তা সূর্যের কারণেই হয়। চন্দ্রও সূর্যের আলোতেই প্রতিবিম্বিত হয়। “রাত যদি ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ হয়, তাহলে আলো পাওয়া যাবে না” তথ্যটির অর্থ হলো, যেহেতু দিনের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সূর্যালোক থাকা এবং রাতের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সূর্যালোক অপসারিত হয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া, তাই রাতকে ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ করলে তথা রাতের বেলায় পৃথিবীর ঘূর্ণন থামিয়ে দিলে দিন ফিরে আসবে না বিধায় আলো পাওয়া সম্ভব নয়। এ আয়াতের সূত্র অনুসারে কোনো রাতে কোনোভাবে আলো থাকতে পারে না, সে দাবি করা যায় না।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِن جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ النَّهَارَ سَرْمَدًا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَـٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِلَيْلٍ تَسْكُنُونَ فِيهِ أَفَلَا تُبْصِرُونَ
২৮:৭২ :: বলো, “তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তোমাদের উপর ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত দিনকে সুদীর্ঘ করে দেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ আছে কি, যে তোমাদেরকে রাত এনে দেবে? যেন তোমরা তাতে প্রশান্তি পেতে পারো। তোমরা কি দেখো না?”
وَمِن رَّحْمَتِهِ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
২৮:৭৩ :: এবং তিনি তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য রাত ও দিনের ব্যবস্থা করেছেন, যাতে তোমরা তাতে (রাতের বেলায়) স্বস্তি লাভ করতে পারো এবং (দিনের বেলায়) তাঁর অনুগ্রহ (জীবিকা, শিক্ষা ইত্যাদি) অন্বেষণ করতে পারো এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারো।
وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَابْتِغَاؤُكُم مِّن فَضْلِهِ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
৩০:২৩ :: এবং তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে রাতে ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং (আরো আছে) তাঁর অনুগ্রহ (জীবিকা, শিক্ষা ইত্যাদি) অন্বেষণ। নিশ্চয় সেটির মধ্যে নিদর্শন আছে সেই কওমের জন্য যারা (মনোযোগ দিয়ে) শুনে।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
৩১:২৯ :: তুমি কি দেখোনি যে, আল্লাহ রাতকে প্রবেশ করান দিনের মধ্যে এবং দিনকে প্রবেশ করান রাতের মধ্যে। এবং তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই চলছে সুনির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার (আজালুম মুসাম্মা) দিকে। এবং নিশ্চয় তোমরা যা করছো আল্লাহ তা সম্যক অবগত।
يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ لَهُ الْمُلْكُ وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ مَا يَمْلِكُونَ مِن قِطْمِيرٍ
৩৫:১৩ :: তিনি প্রবেশ করান রাতকে দিনের মধ্যে এবং তিনি প্রবেশ করান দিনকে রাতের মধ্যে। এবং তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই চলছে সুনির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার (আজালুম মুসাম্মা) দিকে। আল্লাহই তোমাদের প্রভু। তাঁরই কর্তৃত্বাধীন সমস্ত রাজত্ব-আধিপত্য। এবং তাঁকে ছাড়া যাকে যাকে তোমরা ডাকো, তারা খেজুরের আঁটির পর্দা পরিমাণও ক্ষমতা রাখে না।
وَآيَةٌ لَّهُمُ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ
৩৬:৩৭ :: এবং তাদের জন্য একটি নিদর্শন হলো রাত। আমি তা থেকে (রাত থেকে) দিনকে অপসারিত করি। সুতরাং তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়।
لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ
৩৬:৪০ :: সূর্যের ক্ষমতা নেই চাঁদের নাগাল পাওয়ার। এবং রাত পারে না দিনের অগ্রগামী (সাবেক্ব) হতে। এবং প্রত্যেকেই মহাশূন্যে সাঁতার কাটছে।
আলোচনা : আয়াতটিকে ২৮:৭১-৭২ আয়াতের সাথে সমন্বিতভাবে অধ্যয়ন করলে বুঝা যায় যে,রাত দিনের উপর অগ্রগামী (সাবেক্ব) হওয়ার অর্থ হলো ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত রাত স্থায়ী হওয়া তথা পৃথিবীর ঘূর্ণন থেমে যাওয়া। অনুরূপভাবে এ ঘটনার ক্ষেত্রে বিপরীত গোলার্ধে দিন ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যাবে তথা দিন রাতের উপর অগ্রগামী (সাবেক্ব) হয়ে যাবে। অর্থাৎ আল্লাহ চাইলে দিনের উপর রাতকে এবং রাতের উপর দিনকে অগ্রগামী করতে তথা পৃথিবীতে দিন ছাড়া রাতকে এবং রাত ছাড়া দিনকে ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী করে দিতে সক্ষম। কিন্তু তিনি তা করেন না। অন্য কথায় রাত-দিনের আবর্তন আল্লাহর তৈরি নিয়মে হচ্ছে এবং তিনি চাইলে এর চেয়ে ভিন্নরূপ (আবর্তনহীনতা) হতে পারতো। সূর্যের ক্ষমতা নেই চাঁদের নাগাল পাওয়ার। এ তথ্যের অনিবার্য বিপরীতক্রমিক তথ্য হচ্ছে, চাঁদের ক্ষমতা নেই সূর্যের নাগাল পাওয়ার। রাত পারে না দিনের সাবেক্ব হতে, এ কথারও অনিবার্য বিপরীতক্রমিক তথ্য হচ্ছে, দিন পারে না রাতের সাবেক্ব হতে। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে একটি তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে এবং বিপরীতক্রমিক তথ্যটি অনুল্লেখিত রয়েছে। যে তথ্যটি উল্লেখ করার উপযোগিতা অধিক তা-ই উল্লেখিত হয়েছে এবং বিপরীতক্রমকিটি অনুল্লেখিত রাখা হয়েছে।
وَإِنَّكُمْ لَتَمُرُّونَ عَلَيْهِم مُّصْبِحِينَ
৩৭:১৩৭ :: এবং তোমরা গমন করে থাক তাদের (ক্বওমে লূতের ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকার) পাশ দিয়ে সকালে (সুবহের সময়)।
وَبِاللَّيْلِ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
৩৭:১৩৮ :: এবং রাতের বেলায়। তোমরা কি বিবেক-বুদ্ধি (আক্বল) প্রয়োগ করবে না?
خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ
৩৯:৫ :: তিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সত্যসহকারে / যথাযথভাবে। তিনি দিনকে রাতের উপর জড়িয়ে দেন। এবং তিনি সূর্যকে ও চন্দ্রকে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই চলছে নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার (আজালুম মুসাম্মা তথা প্রলয় মুহুর্তের) দিকে। জেনে রাখো, তিনিই মহাশক্তিমান, ক্ষমাশীল।
أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَاءَ اللَّيْلِ سَاجِدًا وَقَائِمًا يَحْذَرُ الْآخِرَةَ وَيَرْجُو رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَالَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ
৩৯:৯ :: নাকি সে (তার মতো) যে বিনয়ী (ক্বানিতূন), রাতের বিভিন্ন প্রহরে সাজদাহকারী ও ক্বিয়ামকারী, যে আখিরাতকে ভয় করে এবং যে তার প্রভুর দয়ার আশা করে? বলো, “তারা কি সমান হতে পারে যারা জ্ঞান অর্জন করে এবং যারা জ্ঞান অর্জন করে না? নিশ্চয় উপদেশ স্মরণ রাখে (যথাযথভাবে) চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ (উলুল আলবাব)”।
اللَّهُ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
৪০:৬১ :: তিনিই আল্লাহ, যিনি তোমাদের জন্য রাতকে বানিয়েছেন যেন তোমরা তাতে স্বস্তি লাভ করো এবং দিনকে (বানিয়েছেন) দেখার উপযোগী। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের উপর মহাঅনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না।
فَإِنِ اسْتَكْبَرُوا فَالَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ يُسَبِّحُونَ لَهُ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَهُمْ لَا يَسْأَمُونَ
৪১:৩৮ :: তারপর যদি তোমরা অহংকার করো, তবে (জেনে রাখো,) যারা তোমার প্রভুর কাছে আছে তারা তাঁর পবিত্রতা জ্ঞাপন (তাসবীহ) করে রাতে ও দিনে, এবং তারা ক্লান্ত হয় না।
فَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا يَقُولُونَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ الْغُرُوبِ
৫০:৩৯ :: সুতরাং তারা যা বলে ঐ ব্যাপারে (প্রতিক্রিয়া হিসেবে) তুমি ধৈর্য ধরো (সবর করো)। এবং তোমার প্রভুর প্রশংসা (হামদ) সহকারে তাঁর পবিত্রতা জ্ঞাপন (তাসবীহ) করো সূর্য উদয়ের আগে ও সূর্য অস্তের আগে।
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَأَدْبَارَ السُّجُودِ
৫০:৪০ :: এবং রাতের কিছু অংশে তাঁর পবিত্রতা জ্ঞাপন (তাসবীহ) করো এবং সাজদাহসমূহের পরেও (তাসবীহ করো)।
وَاصْبِرْ لِحُكْمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعْيُنِنَا وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ حِينَ تَقُومُ
৫২:৪৮ :: এবং তোমার প্রভুর হুকুমের জন্য ধৈর্য ধরো (সবর করো), নিশ্চয় তুমি আমার চোখের সামনে আছো। এবং তোমার প্রভুর প্রশংসা (হামদ) সহকারে পবিত্রতা জ্ঞাপন (তাসবীহ) করো, যখন তুমি দাঁড়াও (ক্বিয়াম করো)।
وَمِنَ اللَّيْلِ فَسَبِّحْهُ وَإِدْبَارَ النُّجُومِ
৫২:৪৯ :: এবং রাতের কিছু অংশেও তুমি তাঁর পবিত্রতা জ্ঞাপন (তাসবীহ) করো। এবং নক্ষত্রসমূহের অস্তগমনের সময়ও (তাঁর তাসবীহ করো)।
يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَهُوَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
৫৭:৬ :: তিনিই রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং তিনিই দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান। এবং তিনিই মস্তিষ্কসমূহের (সদরসমূহের) চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে জ্ঞাত।
وَأَمَّا عَادٌ فَأُهْلِكُوا بِرِيحٍ صَرْصَرٍ عَاتِيَةٍ
৬৯:৬ :: এবং আদকে ধ্বংস (হালাক) করা হয়েছিল প্রচণ্ড ঝঞ্জা বায়ু দিয়ে।
سَخَّرَهَا عَلَيْهِمْ سَبْعَ لَيَالٍ وَثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ حُسُومًا فَتَرَى الْقَوْمَ فِيهَا صَرْعَىٰ كَأَنَّهُمْ أَعْجَازُ نَخْلٍ خَاوِيَةٍ
৬৯:৭ :: তিনি তা তাদের উপর প্রবাহিত করেন সাত রাত ও আট দিন ক্রমাগতভাবে। (যদি তুমি সেখানে থাকতে তবে) তুমি দেখতে সেই কওমকে সেটার মধ্যে পড়ে থাকা অবস্থায়, যেন তারা পরিত্যক্ত খেজুর গাছের কাণ্ডসমূহ।
قَالَ رَبِّ إِنِّي دَعَوْتُ قَوْمِي لَيْلًا وَنَهَارًا
৭১:৫ :: সে (নূহ) বলেছিলো, “হে আমার প্রভু, নিশ্চয় আমি আহবান করেছি (দাওয়াত দিয়েছি) আমার ক্বওমকে রাতে ও দিনে।
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ
৭৩:১ :: হে যোগ্য সংগঠক (মুযযামমিল)।
قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا
৭৩:২ :: রাতে দাঁড়াও (ক্বিয়াম করো), কিছু অংশ ছাড়া।
نِّصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا
৭৩:৩ :: সেটির (রাতের) অর্ধেক অংশ অথবা তা (রাত) থেকে কিছু কম করো।
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
৭৩:৪ :: অথবা সেটির উপর (অর্ধরাতের উপর) কিছু বাড়িয়ে নাও। এবং আল কুরআনকে (নির্দেশনা অনুসারে) যথাযথ বিন্যাসে বিন্যস্ত করো।
إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا
৭৩:৫ :: নিশ্চয় আমি তোমার উপর শীঘ্রই অর্পণ করি ভারী বাণী।
إِنَّ نَاشِئَةَ اللَّيْلِ هِيَ أَشَدُّ وَطْئًا وَأَقْوَمُ قِيلًا
৭৩:৬ :: নিশ্চয় রাতের বেলায় জেগে উঠা পদক্ষেপ গ্রহণে (ও প্রবৃত্তি দলনে) প্রবলতর এবং কথা বুঝার ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর।
إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا
৭৩:৭ :: নিশ্চয় তোমার জন্য আছে দিনের বেলায় দীর্ঘ ব্যস্ততা।
إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِّنَ الَّذِينَ مَعَكَ وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৭৩:২০ :: নিশ্চয় তোমার প্রভু জানেন যে, তুমি দাঁড়িয়ে থাক রাতের প্রায় তিনভাগের দুইভাগ এবং (কখনো) রাতের অর্ধেক এবং (কখনো) রাতের তিনভাগের একভাগ। এবং যারা তোমার সাথে আছে তাদের একটি দলও (অনুরূপ করে)। এবং আল্লাহ রাত ও দিনের পরিমাপ নির্ধারণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা হুবহু হিসাব করতে পারো না। সুতরাং তিনি তোমাদের উপর (ওজরের ক্ষেত্রে) ক্ষমাপরবশ। সুতরাং তোমরা কুরআন থেকে পাঠ করো, যতটুকু সহজসাধ্য হয়। তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অসুস্থ হবে। এবং অন্য অনেকে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা, শিক্ষা প্রভৃতি) তালাশ করতে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে। এবং অন্য অনেকে আল্লাহর পথে যুদ্ধাভিযানে থাকবে। সুতরাং তোমরা তা (কুরআন) থেকে পাঠ করো, যতটুকু সহজসাধ্য হয়। এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে ঋণ দাও, উত্তম ঋণ। এবং তোমরা নিজেদের কল্যাণে কল্যাণকর্ম থেকে যা আগে পাঠাবে তোমরা আল্লাহর কাছে তা (তার শুভ প্রতিফল) পাবে। সেটাই উত্তম এবং প্রতিফল হিসেবে মহিমান্বিত। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
كَلَّا وَالْقَمَرِ
৭৪:৩২ :: কখনো নয়। কসম চাঁদের।
وَاللَّيْلِ إِذْ أَدْبَرَ
৭৪:৩৩ :: এবং রাতের, যখন তা ফিরে যায়।
وَالصُّبْحِ إِذَا أَسْفَرَ
৭৪:৩৪ :: এবং প্রভাতের (সোবহের), যখন তা ফর্সা হয়।
وَاذْكُرِ اسْمَ رَبِّكَ بُكْرَةً وَأَصِيلًا
৭৬:২৫ :: এবং তোমার প্রভুর স্মরণ (যিকর) করো সকালে ও বিকালে।
وَمِنَ اللَّيْلِ فَاسْجُدْ لَهُ وَسَبِّحْهُ لَيْلًا طَوِيلًا
৭৬:২৬ :: এবং রাতের কিছু অংশে তাঁরই উদ্দেশ্যে সাজদাহ করো এবং তাঁরই পবিত্রতা জ্ঞাপন (তাসবীহ) করো দীর্ঘ রাত।
وَجَعَلْنَا اللَّيْلَ لِبَاسًا
৭৮:১০ :: এবং আমি রাতকে বানিয়েছি পোশাকস্বরূপ।
وَجَعَلْنَا النَّهَارَ مَعَاشًا
৭৮:১১ :: এবং আমি দিনকে বানিয়েছি জীবিকা অর্জনের সময়।
وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا
৭৯:২৯ :: এবং সেটির রাতকে (অন্ধকারে) আচ্ছন্ন করেছেন এবং সেটির পূর্ণ সূর্য দীপ্তিকালকে (দুহাকে) বের করেছেন।
وَاللَّيْلِ إِذَا عَسْعَسَ
৮১:১৭ :: শপথ রাতের, যখন তা বিদায় নেয়।
وَالصُّبْحِ إِذَا تَنَفَّسَ
৮১:১৮ :: এবং প্রভাতের (সোবহের), যখন তা শ্বাস নেয়।
فَلَا أُقْسِمُ بِالشَّفَقِ
৮৪:১৬ :: সুতরাং না। আমি কসম করি দিগন্তের লালাভার (শাফাক্বের)।
وَاللَّيْلِ وَمَا وَسَقَ
৮৪:১৭ :: এবং রাতের এবং তা (রাত) যা কিছুকে সমন্বিত করে তার।
وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّاهَا
৯১:৩ :: শপথ দিনের যখন তা (দিন) সেটিকে (সূর্যকে) প্রকট করে।
وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَاهَا
৯১:৪ :: শপথ রাতের, যখন তা (রাত) সেটিকে (সূর্যকে) আচ্ছন্ন করে।
وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَىٰ
৯২:১ :: শপথ রাতের, যখন তা (অন্ধকারে) আচ্ছন্ন করে।
وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّىٰ
৯২:২ :: শপথ দিনের যখন তা আলোকিত করে।
وَالضُّحَىٰ
৯৩:১ :: শপথ পূর্ণ সূর্য দীপ্তকালের (দুহার)।
وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَىٰ
৯৩:২ :: এবং রাতের, যখন তা নিঝুম হয়।
سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ
৯৭:৫ :: শান্তি (সালাম), তা (লাইলাতুল কদর) ফজরের উদয় মুহুর্ত পর্যন্ত।
নিম্নে দিন-রাতের বিভিন্ন সময়সীমা নির্ণয়ের সাথে সম্পর্কিত শব্দাবলির (মূল অক্ষরসমূহ থেকে গঠিত) বিভিন্ন শব্দরূপের নির্ঘণ্ট উল্লেখ করা হলো:
১. (ক) দুহা (অর্থ: পূর্ণ সূর্য দীপ্তিকাল/ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬ স্থানে: ৭:৯৮:৭, ২০:৫৯:৮, ৭৯:২৯:৪, ৭৯:৪৬:৯, ৯১:১:২, ৯৩:১:১।
১. (খ) তাদহা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ১) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ২০:১১৯:৬।
২. (ক) ফজর (অর্থ: সকাল) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬ স্থানে: ২:১৮৭:৪২, ১৭:৭৮:৯, ১৭:৭৮:১২, ২৪:৫৮:১৮, ৮৯:১:১, ৯৭:৫:৫।
২. (খ) মাতলায়ে ফজর (অর্থ: ফজরের উদয় মুহুর্ত) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৯৭:৫:৪-৫। [উল্লেখ্য: মাতলা’ শব্দটি সময়বাচক।]
৩. (ক) সুবহ (অর্থ: সকাল) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৫ স্থানে: ১১:৮১:২৬, ১১:৮১:২৮, ৭৪:৩৪:১, ৮১:১৮:১, ১০০:৩:২।
৩. (খ) সবাহ (অর্থ: সকাল) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩৭:১৭৭:৫।
৩. (গ) মুসবিহীন (মুসবিহ এর বহুবচন, কর্তাবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ৪) ব্যবহৃত হয়েছে ৫ স্থানে: ১৫:৬৬:৯, ১৫:৮৩:৩, ৩৭:১৩৭:৪, ৬৮:১৭:১০, ৬৮:২১:২।
৩. (ঘ) ইসবাহ (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ৪) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৬:৯৬:২।
৩. (ঙ) আসবাহা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪) ব্যবহৃত হয়েছে ২৮ স্থানে: ৩:১০৩:১৭, ৫:৩০:৭, ৫:৩১:২৩, ৫:৫২:২২, ৫:৫৩:১৪, ৫:১০২:৭, ৭:৭৮:৩, ৭:৯১:৩, ১১:৬৭:৫, ১১:৯৪:১৫, ১৮:৪০:১৩, ১৮:৪১:২, ১৮:৪২:৩, ১৮:৪৫:১৪, ২২:৬৩:৯, ২৩:৪০:৪, ২৬:১৫৭:২, ২৮:১০:১, ২৮:১৮:১, ২৮:৮২:১, ২৯:৩৭:৪, ৩০:১৭:৬, ৪১:২৩:৭, ৪৬:২৫:৬, ৪৯:৬:১৩, ৬১:১৪:৩৪, ৬৭:৩০:৪, ৬৮:২০:১।
৩. (চ) হীনা তুসবিহূনা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩০:১৭:৫-৬।
৪. (ক) বুকরাত (অর্থ: সকাল) ব্যবহৃত হয়েছে ৭ স্থানে: ১৯:১১:১০, ১৯:৬২:১০, ২৫:৫:৮, ৩৩:৪২:২, ৪৮:৯:৭, ৫৪:৩৮:৩, ৭৬:২৫:৪।
৪. (খ) ইবকার (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ৪, অর্থ: সকাল) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৩:৪১:২০, ৪০:৫৫:১২।
৫. (ক) গাদাত (অর্থ: সকাল) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৬:২৫:৬, ১৮:২৮:৭।
৫. (খ) গুদুব্ব (গাদাত এর বহুবচন, অর্থ: সকালসমূহ) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৭:২০৫:১১, ১৩:১৫:১০, ২৪:৩৬:১৩।
৫. (গ) গুদুব্ব (একবচন হিসেবে, অর্থ: সকাল) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৩৪:১২:৩, ৪০:৪৬:৪।
৫. (ঘ) গাদাআ (অর্থ: সকালের নাস্তা) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১৮:৬২:৬।
৫. (ঙ) গাদাওয়া (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ১, অর্থ: সকালে যাত্রা করা) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৩:১২১:২, ৬৮:২২:২, ৬৮:২৫:১।
উল্লেখ্য: গুদুব্ব হচ্ছে সেই সময় যখন বস্তুর ছায়া প্রথম সাজদাহ করে তথা এটা হচ্ছে সূর্যোদয়ের অব্যবহিত পরের সময়। (১৩:১৫)
৬. হীনা তাছরাহূনা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ১, অর্থ: সকাল) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১৬:৬:৬-৭।
৭. (ক) শারক্বিয়্য (অর্থ: সূর্যোদয়ের দিক) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১৯:১৬:১০।
৭. (খ) শারক্বিয়্যাত (শারক্বিয়্য এর দ্বিবচন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ২৪:৩৫:২৩।
৭. (গ) মাশরিক্ব (অর্থ: সূর্যোদয়ের স্থান) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৬ স্থানে। ২:১১৫:২, ২:১৪২:১৪, ২:১৭৭:৭, ২:২৫৮:৩১, ২৬:২৮:৩, ৭৩:৯:২।
৭. (ঘ) মাশরিক্বাইন (মাশরিক্ব এর দ্বিবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৪৩:৩৮:৯, ৫৫:১৭:২।
৭. (ঙ) মাশারিক্ব (মাশরিক্ব এর বহুবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ৭:১৩৭:৬, ৩৭:৫:৭, ৭০:৪০:৭।
৭. (জ) আশরাক্বা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪, অর্থ: উদ্ভাসিত হওয়া) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩৯:৬৯:১।
৭. (ঝ) মুশরিক্বীন (মুশরিক্ব এর বহুবচন, কর্তাবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ৪) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ১৫:৭৩:৩, ২৬:৬০:২।
৭. (ঞ) ইশরাক্ব (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ৪, ‘তুলুয়িশ শামস’ এর প্রতিশব্দ, অর্থ: সূর্য উদয়ের মুহুর্ত) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩৮:১৮:৭।
যাহীরাত / হীনা তুযহিরূনা (দুপুর)
৮. (ক) যহীরাত (যহীর শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ, অর্থ: দুপুর) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ২৪:৫৮:২৩।
৮. (খ) আযহারা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪) ব্যবহৃত হয়েছে ৭ স্থানে: ৯:৩৩:৮, ৩০:১৮:৮, ৪০:২৬:১৫, ৪৮:২৮:৮, ৬১:৯:৮, ৬৬:৩:১১, ৭২:২৬:৪।
৮. (গ) হীনা তুযহিরূনা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩০:১৮:৭-৮।
আসীল / আসাল (বিকাল)
৯. (ক) আসীল (অর্থ: বিকাল) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে: ২৫:৫:৯, ৩৩:৪২:৩, ৪৮:৯:৮, ৭৬:২৫:৫।
৯. (খ) আসাল (আসীল এর বহুবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে: ৭:২০৫:১২, ১৩:১৫:১১, ২৪:৩৬:১৪।
উল্লেখ্য: আসাল হচ্ছে সেই সময় যখন বস্তুর ছায়া শেষ সাজদাহ করে তথা এটা হচ্ছে সূর্যাস্তের অব্যবহিত পূর্বের সময়। (১৩:১৫)
১০. আসর (অর্থ: প্রবহমান কাল / সময়)শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১০৩:১:১।
১১. দাহর (অর্থ: মহাকাল) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৪৫:২৪:১২, ৭৬:১:৭।
১২. হীনা তুমছূনা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪, অর্থ: প্রায় সন্ধ্যা) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩০:১৭:৩-৪।
১৩. রওয়াহ (অর্থ: সন্ধ্যা) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩৪:১২:৫।
১৪. হীনা তুরীহূনা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪, অর্থ: সন্ধ্যা) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে। ১৬:৬:৪-৫।
১৫. (ক) আশিয়্য (অর্থ: রাতের প্রথম ভাগ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১০ স্থানে: ৩:৪১:১৯, ৬:৫২:৭, ১৮:২৮:৮, ১৯:১১:১১, ১৯:৬২:১১, ৩০:১৮:৬, ৩৮:১৮:৬, ৩৮:৩১:৪, ৪০:৪৬:৫, ৪০:৫৫:১১।
১৫. (খ) আশিয়্যাত (আশিয়্য শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৭৯:৪৬:৭।
১৫. (গ) ইশা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ১২:১৬:৩, ২৪:৫৮:২৭।
১৭. তুলুয়িশ শামস (ক্রিয়াবিশেষ্য, অর্থ: সূর্য উদয় মুহুর্ত) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ২০:১৩০:৯, ৫০:৩৯:৯।
১৮. দুলুকিশ শামস (ক্রিয়াবিশেষ্য, অর্থ: দ্বিপ্রহরে প্রথমবার সূর্য ঢলে পড়ার মুহুর্ত) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১৭:৭৮:৩।
১৯. (ক) গারবিয়্য (অর্থ: পূর্বদিক) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ২৮:৪৪:৪।
১৯. (খ) গারবিয়্যাত (গারবিয়্য এর স্ত্রীলিঙ্গ, অর্থ: পূর্বদিক) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ২৪:৩৫:২৫।
১৯. (গ) মাগরিব (অর্থ: সূর্যাস্তের স্থান) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৭ স্থানে: ২:১১৫:৩, ২:১৪২:১৫, ২:১৭৭:৮, ২:২৫৮:৩৫, ১৮:৮৬:৪, ২৬:২৮:৪, ৭৩:৯:৩।
১৯. (ঘ) মাগরিবাইন (মাগরিব এর দ্বিবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৫৫:১৭:৪।
১৯. (ঙ) মাগারিব (মাগরিব এর বহুবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৭:১৩৭:৮, ৭০:৪০:৫।
১৯. (চ) গারাবা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ১, অর্থ: অস্ত যাওয়া) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ১৮:১৭:১১, ১৮:৮৬:৭।
১৯. (ছ) গুরূব (গুরুবিশ শামস বুঝাতে ব্যবহৃত, ক্রিয়াবিশেষ্য) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ২০:১৩০:১২, ৫০:৩৯:১২।
২০. (ক) গাছাক্বিল লাইল (ক্রিয়াবিশেষ্য, অর্থ: রাতের গাঢ় অন্ধকার) শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১৭:৭৮:৬।
২০. (খ) গাছিক্ব (কর্তাবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ১) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১১৩:৩:৩।
২১. শাফাক্ব (অর্থ: সূর্যোদয় পূর্ববর্তী ও সূর্যাস্ত পরবর্তী দিগন্তের লালাভা) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৮৪:১৬:৩।
২২. (ক) তরাফ (অর্থ: ভাগ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩:১২৭:২।
২২. (খ) তরাফাইন (তরাফ এর দ্বিবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১১:১১৪:৩।
২২. (গ) আতরাফ (তরাফ এর বহুবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ১৩:৪১:৮, ২০:১৩০:১৭, ২১:৪৪:১৬।
২৩. (ক) যুলফাত (অর্থ: নিকটবর্তী) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৬৭:২৭:৩।
২৩. (খ) যুলাফ (যুলফাত এর বহুবচন, অর্থ: নিকটবর্তী অংশসমূহ) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ১১:১১৪:৫।
২৩. (গ) যুলফা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে: ৩৪:৩৭:৮, ৩৮:২৫:৭, ৩৮:৪০:৪, ৩৯:৩:১৬।
২৩. (ঘ) আযলাফা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৪) ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে: ২৬:৬৪:১, ২৬:৯০:১, ৫০:৩১:১, ৮১:১৩:৩।
২৪. (ক) ছাহার (অর্থ: রাতের শেষ লগ্ন) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৫৪:৩৪:৯।
২৪. (খ) আছহার (ছাহার এর বহুবচন) ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ৩:১৭:৬, ৫১:১৮:১।