আল কুরআনের আলোকে সালাত বইটি সালাত সম্পর্কিত গতানুগতিক উপস্থাপনার কোনো বই নয়। বইটিতে সালাত সম্পর্কে আল কুরআনের নির্দেশনাসমূহের সমন্বিত অধ্যয়নের ভিত্তিতে সালাতের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ তথা ব্যাপকভিত্তিক ও আনুষ্ঠানিক সালাত প্রসঙ্গ, আনুষ্ঠানিক সালাতের উদ্দেশ্য, শিক্ষা, ওয়াক্ত সংখ্যা ও সময়সীমা, কাঠামো বা পদ্ধতি, পূর্বশর্ত এবং পরবর্তী করণীয় আলোচনাসহ ব্যাপকভিত্তিক বা সার্বক্ষণিক সালাত সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে।
কুরআনের তথ্য থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায় যে, সালাতকারীরাই জান্নাতবাসী হবে (৭০:২২-৩৫) এবং যারা সালাত করবে না তারা জাহান্নামবাসী হবে (৭৪:৪২-৪৩)। আবার যারা সালাত করে অথচ তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিহিত থাকে, সালাতের সময়, শিক্ষা ও নিষ্ঠা বিষয়ে উদাসীনতা থাকে এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও সহযোগিতা উপকরণের সহজ সাবলীল সরবরাহকে বাধাগ্রস্ত করে তারাও জাহান্নামবাসী হবে (১০৭:৪-৭)। কুরআনের এ সকল তথ্য থেকে স্পষ্ট যে, সালাত শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ বিষয় নয় এবং আনুষ্ঠানিক সালাতের শিক্ষা বাস্তবায়ন না করলে শুধুমাত্র অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে কোনো পুণ্য ও কল্যাণ নেই (২:১৭৭)। এ বিষয়টিকে বইটিতে ব্যাপক তথ্যভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
সালাত শব্দের মূল অর্থ হলো ‘আল্লাহর বিধানের নিবিড় অনুসরণ’। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো: আল্লাহ তাঁর বিধানগ্রন্থের (কুরআন) মাধ্যমে যেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিধান দিয়েছেন তা পরিপালন করতে হবে এবং তার সীমারেখা সংরক্ষণ করে অন্য সব বিষয়ে বিবেকসঙ্গত সিদ্ধান্ত অনুসারে স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে এবং সমষ্টিগত বিষয়ে পরামর্শের মাধ্যমে নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। যেহেতু আনুষ্ঠানিক সালাত হলো মানবজীবনে আল্লাহর বিধান পালনের প্রতীকী মহড়া, তাই আনুষ্ঠানিক সালাতের ক্ষেত্রেও আল্লাহ শুধুমাত্র মৌলিক ও সীমারেখামূলক কয়েকটি বিধান বাধ্যতামূলক করেছেন এবং সেই সীমারেখার সাথে সঙ্গতি রেখে বা তা লংঘন না করে সালাতের বিষয়বস্তু ও আকার-আকৃতির ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বাতন্ত্রিক বিবেচনা অনুসারে কার্য সম্পাদনের অবকাশ রয়েছে। এ বিষয়ে এ বইয়ে যুগান্তকারী তথ্য উন্মোচন করা হয়েছে।
বইটিতে উপস্থাপিত উপলব্ধিকে অন্যদের উপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো অবকাশ নেই বলে সংকলক, সম্পাদক ও প্রকাশক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ করা হচ্ছে। বইটিতে উপস্থাপিত উপলব্ধি হলো আয়াতসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সাধ্যমতো সমন্বিত ও পর্যালোচনামূলক অনুসিদ্ধান্ত। আয়াতভিত্তিক অধিকতর চিন্তা-গবেষণা ও যাচাইয়ের ভিত্তিতে বইটির মানোন্নয়ন, পরিমার্জন ও প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে পরবর্তী সংস্করণের জন্য আমাদের প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
বাঙ্গালী মুসলিম বিশেষ করে যারা ধর্মের জ্ঞানে পারদর্শী বা যাদের পারদর্শিতার সনদ রয়েছে ও যাদের কুরআনের ধ্রুপদী আরবী ভাষার সাথে পরিচয় আছে, তাদের মধ্যে যদি একটি সার্ভে বা জরিপ চালানো হয় - “কুরআনে ব্যবহৃত ‘সালাত’ শব্দটির অর্থ কি?”, তাদের মধ্যে কতজন সে বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারবে সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ। অনেকে সালাত অর্থ ‘নামাজ’ বলে মনে করলেও ফার্সি শব্দ ‘নামাজ’ সালাতের একটি রিচুয়াল (আচার-অনুষ্ঠান) ডাইমেনশন নির্দেশক মাত্র। কুরআনে সালাত শব্দটি ব্যবহারের পূর্বাপর সম্বন্ধ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, সালাত কেবলমাত্র আচার-আনুষ্ঠানিক নয়।
“বৃক্ষ তোমার নাম কি? ফলে পরিচয়।“ এই যে বাঙ্গালী মুসলিমের ‘সালাত’ শব্দের প্রকৃত অর্থের সাথে পরিচয়হীনতা, যেখানে সালাতকে আমরা জানি কুরআনের অন্যতম বহুল প্রচলিত শব্দ ও একই সাথে স্রষ্টার নির্দেশনা - সেটি থেকেই বোঝা যায় কুরআনের সাথে আমাদের দূরত্ব কত বেশি। ‘সালাত’ শব্দটি, এর ধারণা ও এর তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতাও স্পষ্ট করে দেয় কুরআনের শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের দেউলিয়াপনা।
যেহেতু ‘সালাত’ কুরআনের শিক্ষা ও নির্দেশনাগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমাদের এ বইয়ের সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু হলো ‘সালাত’। আমাদের এখানে প্রচেষ্টা ছিলো মৌলিকভাবে এবং কোনো ধরনের পূর্বাপর ধারণা থেকে মুক্ত হয়ে, কেবলমাত্র কুরআনের আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন থেকে সালাত শব্দের অর্থ, তাৎপর্য ও স্রষ্টার নির্দেশনার উপস্থাপন। আমরা আমাদের গবেষণায় যে প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে প্রচেষ্টা করেছি তা হলো, “কুরআনের সামগ্রিকতা থেকে সালাত বলতে আমরা কি বুঝতে পারি? এটি কি কেবলই সময় নির্ধারিত আচার-অনুষ্ঠান, নাকি সালাতের পূর্বাপর সম্বন্ধ (context) বিশ্লেষণ করলে অন্য কিছু পাওয়া যায়?”
কুরআনের সূরার ক্রমিকানুসারে সালাত শব্দটি প্রথম পাওয়া যায় সূরা বাকারাতেই, তৃতীয় আয়াতে। অনেকের কাছে প্রশ্ন উঠতে পারে সালাত কিভাবে পালন করা হবে, সালাত অর্থ কি তা ব্যাখ্যা না করেই সালাত প্রতিষ্ঠা বা সালাতে দাঁড়ানোর যে নির্দেশনা তা কেন? অন্যদিকে অন্য সূরায় আমরা পাই যে, মুশরিকদের কা’বায় উলু ধ্বনি ও তালি দেওয়াকেও সালাত নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার পূর্বের রাসূলদেরকেও উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তারাও সালাত করেছেন। রসূলুল্লাহ শোয়াইবকে বলছে তার জাতি অভিযোগ জানাচ্ছে যে, তোমার সালাত আমাদের অমুক মন্দ কাজ থেকে কি বিরত থাকতে বলে? কুরআনের সমন্বিত পাঠ ও গভীর পর্যবেক্ষণ ও চিন্তা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সালাত একটি generic বা সাধারণ শব্দ, যার অর্থের মধ্যে অনেকগুলো ডাইমেনশন বা মাত্রা বিরাজমান।
ঐতিহাসিকভাবে জানা যায় যে, কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে বা শুরুর দিকে রাসুল মুহাম্মদ সা. কা’বায় সালাত করতেন। সাধারণভাবে সালাত বলতে স্রষ্টায় নিমগ্ন হয়ে আরাধনা বুঝায়, যা সর্বযুগে সর্বকালে সকল সমাজে প্রচলিত ছিলো। স্রষ্টার আরাধনা বিভিন্ন মহাপুরুষ, নবী ও রাসুলরা করে এসেছেন বিভিন্ন ফর্মে ও তাদের স্ব স্ব মাতৃভাষায়। কুরআন নাযিল হওয়ার বহু আগে নাযিল হয়েছে তাওরাত। বনী ইসরাইলের প্রতিও সালাতের নির্দেশ তথা স্রষ্টার আরাধনা, উপাসনার নির্দেশ ছিলো। ঈসা আ. নিজেও যেমন স্রষ্টার আরাধনা করেছেন, সালাত করেছেন, তেমনি তাঁর অনুসারীরা তাঁর নির্দেশনানুসারে স্রষ্টার কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করতো।
সমন্বিত অধ্যয়ন থেকে বুঝা যায়, কুরআনে সালাতের দুইটি মাত্রা রয়েছে, যার একটি হলো অনানুষ্ঠানিক বা ভাবগত এবং অন্যটি হলো আনুষ্ঠানিক বা বস্তুগত। ভাবগত সালাত হলো স্রষ্টার নির্দেশ, আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁর স্মরণ ও সংযোগ অব্যাহত রাখা, যা হলো দায়েমী সালাত। অন্যটি হলো সময়ের প্রবাহমানতা ও প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে যথাসম্ভব সামঞ্জস্য রেখে নির্দিষ্ট সময়ে স্রষ্টা অভিমুখী আরাধনা করা।
কুরআনে সালাতের কঠোর কোনো ফর্ম বা কাঠামো দেওয়া হয়নি। প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বরং আমাদের বলা হয়েছে, কেবল মানুষ নয় অন্যান্য সৃষ্টিও সালাত করে কিন্তু আমরা তাদের সেই সালাত বুঝতে পারি না। এ থেকেও বোঝা যায় যে, সালাত কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর নয়। তবে কেউ যদি প্রচলিত কাঠামোতে থেকে সালাত করে সেটিও অনির্দিষ্ট কাঠামোগুলোর মধ্যে একটি কাঠামো হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। তবে যেহেতু স্রষ্টা কুরআনে সালাতের কাঠামো সম্পর্কে কঠোরতা দেননি, তাই আমাদের পক্ষে এই কাঠামো বিষয়ে কেবল এক রকম কাঠমো হতেই হবে এ ধরনের সংকীর্ণতা পরিহার করাই কুরআনের শিক্ষার নিকটবর্তী।
সালাতের কাঠামোর সাথে সংশ্লিষ্ট যতগুলো পরিভাষা রয়েছে যেমন রুকূ’, সিজদা এর প্রত্যেকটির উৎসগত ও ভাবগত অর্থ ব্যাপক, যা কেবল অনুষ্ঠান বা অঙ্গভঙ্গির সাথে জড়িত বা সীমিত নয়। রুকূ’ শব্দের মূল অর্থ বিনয়ী হওয়া। সিজদা শব্দের মূল অর্থ মান্য করা। তবে আনুষ্ঠানিক অর্থে ঝুঁকে দাঁড়ানো ও দেহকে লুটিয়ে দিয়ে ভক্তি জানানো যথাক্রমে রুকূ’ ও সিজদা শব্দের মধ্যে রয়েছে বললে ভুল হবে না।
অনেকে সব ধরনের রিচুয়াল বা আচার-অনুষ্ঠানের বিরোধিতা থেকে সালাতের কোনো অনুষ্ঠান বা নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি র্নিভর আচার বিরোধী। আমাদের পর্যালোচনা থেকে এটি প্রতীয়মান যে, এ ধরনের অবস্থান অনেকটা প্রতিক্রিয়াশীল। যারা ইসলামের শিক্ষার মূল ভাবকে বিনষ্ট করে ফেলেছে আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি অতিরিক্ত জোর দেওয়ার মাধ্যমে - এ প্রতিক্রিয়া অনেকটা তাদের বিরুদ্ধে। তবে এ প্রতিক্রিয়ার নেতিবাচক দিক হলো, এর মাধ্যমে মানুষের জীবনে কাঠামোর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা হয়। কুরআনে অতি-অবশ্যই আনুষ্ঠানিক সালাত রয়েছে যা বিভিন্ন আয়াত থেকে স্পষ্ট। সালাতকে সুর্নিদিষ্ট আচার-অনুষ্ঠান হিসেবে ধরে নিয়ে বলা হয়েছে, “যখন তোমারা সালাতের জন্য প্রস্তুত হবে… তখন তোমরা এভাবে নিজেদের প্রস্তত করবে…’ অথবা ‘সালাত শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে”, “রাতের একটি অংশে (সালাতে) দাড়াও..”, “এবং যখন তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো তখন তোমরা সালাতকে সংক্ষেপ করাতে তোমাদের উপর দোষ নেই”, এ ধরনের নির্দেশনা খুব স্পষ্ট ভাবে সালাতের সুনির্দিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানের নির্দেশক।
অন্যদিকে যখন বলা হয়, “নিশ্চয়ই সালাত মানুষকে অশ্লীলতা ও অন্যায় থেকে বিরত রাখে” অথবা “হে শু’আয়ব! তোমার সালাত কি তোমাকে এই হুকুম দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষ যার ইবাদাত করত আমরা তা পরিত্যাগ করি বা আমাদের ধন-সম্পদের ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছে (মাফিক ব্যয় করা) বর্জন করি..” - সেক্ষেত্রে সালাতের ব্যাপক অর্থ নির্দেশ করে।
ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড অ্যাপ্লিকেশন বা ই্বকরার একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হিসাবে আমরা আমাদের সামান্য শক্তিতে কুরআনের আলোকে সালাত অনুধাবন করার চেষ্টা করেছি। আমরা ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই এবং আমরা মনে করি কুরআন থেকে সালাতের অর্থ, তাৎপর্য ও শিক্ষা উপলব্ধির চেষ্টা অন্যদেরও অব্যাহত রাখতে হবে।
সালাতকে অন্যান্য প্রজন্ম যেভাবে নষ্ট করেছে বলে কুরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরাও সেই একই দোষে দুষ্ট। আমরাও সালাতকে পরিণত করে ফেলেছি উদ্দেশ্য ও তাৎপর্যহীন অনুষ্ঠানে। সালাতের উদ্দেশ্য ছিলো স্রষ্টার স্মরণ এবং কুরআনের শিক্ষা গ্রহণের অনুশীলন - একজন বিশ্বাসীর কুরআন পাঠের ও জানার যে আলোকিত অধিবেশন - ব্যক্তিগত বা সামষ্টিক, তারই চর্চার নাম ছিলো সালাত। অথচ আফসোস, আমরা এখন সালাতকে অর্থ না বুঝে কিছু শব্দ ও অঙ্গভঙ্গিতে পর্যবসিত করেছি। অথচ রাসুলের সময়ে যদি আমরা ফিরে যাই তাহলে বুঝতে পারবো, এই সালাতের মাধ্যমেই তিনি মানুষকে স্রষ্টার বাণী শিক্ষা দিতেন, সালাতের অধিবেশন অর্থই ছিলো দ্বীন শিক্ষা, স্রষ্টার নির্দেশ জানা ও মানার অধিবেশন, সালাত মানেই ছিলো বিভিন্ন দলের শিক্ষার পাঠচক্র।
যেকোনো কিছু্ই যখন দীর্ঘদিন উদ্দেশ্য ও তাৎপর্যবিহীনভাবে চর্চা করা হয় তখন সেই উদ্দেশ্যহীনতা ধীরে ধীরে সেই আচার-অনুষ্ঠানকে প্রাণহীন, অনুষ্ঠান সর্বস্ব অর্ন্ত:সারশূণ্য কাঠামোতে পরিণত করে তোলে। দু:খজনকভাবে আমাদের সমাজে সালাতের অবস্থা অনেকটা সেরকম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হলো প্রথমে সালাতের অর্থ ও তাৎপর্য কুরআন থেকে উপলব্ধি করা এবং ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে সালাতের ব্যাপক এবং নির্দিষ্ট অর্থ - উভয়টি প্রয়োগ করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।
সাদিক মোহাম্মদ আলম
প্রতিষ্ঠাতা, ইক্বরা
১. সালাত শব্দটি বহুমাত্রিক অর্থবোধক শব্দ। ‘সালাত’ শব্দের অর্থগুলোর তিনটি প্রধান মাত্রা (dimension) রয়েছে: (ক) ব্যাপকভিত্তিক: স্রষ্টার বিধানের নিবিড় অনুসরণ (খ) আনুষ্ঠানিক: প্রার্থনা (গ) ব্যক্তি সম্পর্কীয়: অনুগ্রহ, সহযোগিতা, যোগাযোগ, আশীর্বাদ প্রার্থনা।
২. সালাত শব্দটি কোন স্থানে কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা শব্দটির Concordance এবং সংশ্লিষ্ট আয়াতের Context এর মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। কোনো আয়াতে শব্দটির অর্থসমূহ থেকে উপযুক্ত প্রতিশব্দ চিহ্নিত করার শর্ত কী হবে তা আয়াতসমূহের বক্তব্য কাঠামো থেকে নির্ণয় করা যায়।
৩. সালাত শব্দটি মূল প্রয়োগের দিক থেকে ব্যুৎপত্তিগত (Root Letters based) অর্থে ‘স্রষ্টার বিধানকে বাস্তবে নিবিড় অনুসরণ করা’’বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। শুধুমাত্র যেখানে শব্দটি দ্বারা আনুষ্ঠানিক প্রার্থনা বা কোনো ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ, আশীর্বাদ প্রার্থনা ইত্যাদি বুঝানোর মতো শর্ত উপস্থিত পাওয়া যায়, সেক্ষেত্রে শব্দটি দ্বিতীয় বা তৃতীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
৪. আনুষ্ঠানিক সালাত যদি বাস্তব সালাতের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়, সেইরূপ আনুষ্ঠানিকতা বা অনুষ্ঠানসর্বস্বতা সম্পূর্ণ মূল্যহীন। সুতরাং আনুষ্ঠানিক সালাতের উদ্দেশ্য হলো বাস্তব সালাতের জন্য ব্যক্তি ও সমাজকে তৈরি করার একটি প্রক্রিয়া। অন্য কথায় আনুষ্ঠানিক সালাত হলো বাস্তব সালাতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচী।
৫. মানব জীবনে দুই ধরনের কাজ করতে হয়: (ক) স্রষ্টার নির্দেশ পালন (খ) স্রষ্টার নির্দেশিত সীমারেখায় নির্বাহী কার্যক্রম তথা প্রকৃতিগত প্রয়োজন ও স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে বিভিন্ন কার্যাবলি। যেহেতু আনুষ্ঠানিক সালাত হলো স্রষ্টার বিধানের নিবিড় অনুসরণমূলক প্রতীকী কর্মসূচী, তাই আনুষ্ঠানিক সালাতের ক্ষেত্রেও মৌলিক কাঠামো (ক্বিয়াম, সাজদাহ, ক্বওল / বিবৃতি) ছাড়া আনুষঙ্গিক উপাদান (বিবৃতির বিষয়বস্তু, প্রার্থনা, সূরা আবৃত্তি প্রভৃতি) ব্যক্তিক স্বাধীনতার উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
৬. ব্যক্তিগতভাবে আনুষ্ঠানিক সালাত করার ক্ষেত্রে সালাতের রাকায়াত সংখ্যা এবং কাঠামো ব্যক্তিক সিদ্ধান্তনির্ভর (Subjective)। অন্যদিকে সমষ্টিগতভাবে সালাত করার ক্ষেত্রে (যেমন ইয়াওমুল জুমুয়ার সালাত) যার উপর আহবান করা ও নেতৃত্ব দেয়ার কর্তৃত্ব ন্যস্ত রয়েছে তাঁর (ইমাম) অনুসরণ করতে হবে। এভাবে সমষ্টিগত শৃঙ্খলা রক্ষা পাবে।
৭. সালাত রসূল মুহাম্মদ (সালামুন আলাইহি) থেকে শুরু হওয়া বিধান নয়, বরং পূর্ববর্তী নবীগণও সালাত করেছিলেন। সুতরাং সালাত একটি পরম্পরাগত অনুশীলন। প্রকৃতিগতভাবে ও পরম্পরাগত অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ সালাত পদ্ধতির শিক্ষালাভ করেছে ও পরিজ্ঞাত রয়েছে।
৮. সালাত একটি সময় নির্ধারিত বিধান। সালাতের সময়সীমা দৈনন্দিন তিনটি মৌলিক পর্বে বিভক্ত। সংশ্লিষ্ট আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রতিটি পর্বের শুরু অংশে আনুষ্ঠানিক সালাত এবং তৎপরবর্তী অংশে বাস্তব সালাত সম্পাদন করার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। আনুষ্ঠানিক সালাতের পর বাস্তব সালাতের জন্য কর্মক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়তে হবে। কোথাও আনুষ্ঠানিক সালাতের ওয়াক্ত পাওয়া না গেলে সেখানে আনুষ্ঠানিক সালাত বাধ্যতামূলক নয়, তবে বাস্তব সালাত সর্বত্র সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য।
৯. সালাত ও তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতা জ্ঞাপন) দুটি ভিন্ন বিষয়। আনুষ্ঠানিক সালাতের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত ও কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি রয়েছে তাসবীহের ক্ষেত্রে তা নেই। সালাত ও তাসবীহের ওয়াক্ত সংখা সমান নয়, কারণ তাসবীহের ক্ষেত্রে দিন-রাতের সময়সীমাকে ক্ষুদ্রভাবে ভাগ করা হয়েছে, অন্যদিকে সালাতের ক্ষেত্রে সেটাকে বৃহৎভাবে ভাগ করা হয়েছে।
১০. দৈনন্দিন সালাত ব্যক্তিগতভাবে ও পারিবারিকভাবে সম্পাদন করা যেতে পারে, আবার সালাতের জন্য নির্ধারিত স্থানীয় গৃহসমূহেও (বুয়ূত) করা যেতে পারে। তবে ‘ইওয়ামুল জুমুয়াতে’ তথা ‘জমায়েতের দিনে’ সালাতের জন্য আহবান করলে ব্যবসায় বাণিজ্য ইত্যাদি স্থগিত রেখে একত্রিত হয়ে সালাত (জামায়াতে সালাত) করা বাধ্যতামূলক। জমায়েতের দিন সপ্তাহের কততম দিন হবে তা নির্বাহী পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্তক্রমে নির্ধারিত হতে পারে, যা স্থান-কালের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত হতে পারে।
এক.
একটি বহুল প্রচলিত বিভ্রান্তিকর প্রচারণা হলো, ‘কুরআনে সালাত সম্পর্কে বিস্তারিত নেই।’ যে কেউ সাধারণ বিবেকবুদ্ধি কাজে লাগালে অত্যন্ত সহজে বুঝতে পারবে যে, কথাটি কুরআনের বক্তব্য বিরুদ্ধ এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। কেননা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কুরআন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও যথেষ্ট। আবার সালাত প্রতিষ্ঠার বিষয়টি কুরআন থেকেই উৎসারিত। সুতরাং সালাত বিষয়ে কুরআনে যা-ই তথ্য আছে তা-ই হচ্ছে সম্পূর্ণ ও যথেষ্ট। সালাত বিষয়ে যে তথ্যটি কুরআনভিত্তিক নয়, সেটিকে সালাতের একটি তথ্য বা প্রসঙ্গ সাব্যস্ত করে পরে তা কুরআনে নেই, সুতরাং কুরআনে সালাতের তথ্য অসম্পূর্ণ- এ কথা বলা যেতে পারে না। বরং যে তথ্য কুরআনভিত্তিক নয়, তা গ্রহণযোগ্য তথ্যই নয়।
সালাত বিষয়ে কুরআনে থাকা তথ্যসমূহ উপলব্ধির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যারা শুধুমাত্র কুরআনকে দ্বীনের দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন তারাও পরস্পর ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে থাকেন।
এর কিছু কারণ হলো:
১. কিছু ক্ষেত্রে প্রচলিত ত্রুটিপূর্ণ অনুবাদের কারণে মতপার্থক্য তৈরি হয়।
২. কিছু ক্ষেত্রে কেউ কেউ প্রচলিত হাদীসভিত্তিক ও প্রথাগত উপলব্ধি থেকে পার্থক্য করতে গিয়ে যে ক্ষেত্রে সঙ্গত পার্থক্য নেই সেক্ষেত্রেও পার্থক্য করার চেষ্টা করেন।
৩. কেউ কেউ আনুষ্ঠানিক দিককে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সালাতের ব্যাপকতার দিককে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন আবার কেউ কেউ ব্যাপকতার দিককে গুরুত্ব দিতে গিয়ে আনুষ্ঠানিক দিককে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন।
এক্ষেত্রে সমাধানের সম্ভাব্য উপায় হলো:
১. কুরআনের আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন। কোনো ক্ষেত্রে এমন কোনো তথ্যগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না যা কোনো না কোনো আয়াতের বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক হয়।
২. কোনো বিষয়ে সাধারণভাবে যে অর্থ হয় কোনো স্থানে বক্তব্য প্রসঙ্গের কারণে বা কোনো যৌক্তিক নিয়মে তার কোনো ভিন্ন বা বিশেষ বা সীমিত অর্থ হলে সেক্ষেত্রে তা গ্রহণ করা।
৩. কোনো বিষয়ে একবার কোনো উপলব্ধিতে উপনীত হলে বা তা উপস্থাপন করলে কিন্তু পরবর্তীতে তাতে কোনো দুর্বলতা ধরা পড়লে বা অন্য কেউ ধরিয়ে দিলে ঐ উপলব্ধিকে সংশোধন করে নেয়া।
মু’মিনদের জন্য ঈমানের ভিত্তিতে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সালাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। ঘুম থেকে উঠার পর প্রথম যে বাধ্যতামূলক বিষয়টি সামনে আসে তা হলো ‘সালাতিল ফজর’। কুরআনে সালাতকে অত্যন্ত মৌলিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এমতাবস্থায় একমাত্র কুরআন থেকে সালাতের সংজ্ঞা, এর কোনো আনুষ্ঠানিক কাঠামো আছে কিনা, থাকলে তা কী, সালাতের ওয়াক্ত সংখ্যা কত ও কী কী এবং এর সাথে তাসবীহের ওয়াক্ত সংখ্যার প্রাসঙ্গিকতা কতটুকু? ইত্যাদি প্রশ্নে যারা মু’মিন তথা কুরআনকে একমাত্র বিধানগ্রন্থ হিসেবে বিশ্বাসী তাদের মধ্যে এখনো উপলব্ধিগত পার্থক্য নিরসন বা হ্রাসকরণে আন্তরিক উদ্যোগ জরুরি। এ বিষয়ে আমরা চেষ্টা করে বিশেষ কোনো উপলব্ধিতে উপনীত হলে অন্য সব উপলব্ধিকে বাতিল ঘোষণা করার কোনো প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং যা প্রয়োজন তা হলো আমাদের সাধ্যমতো প্রকৃত উপলব্ধি অর্জনের প্রচেষ্টা এবং যতটুকু উপলব্ধি অর্জিত হলো তা শেয়ার করা, কারণ তা আমাদেরকে সমন্বিতভাবে আরো ভালো উপলব্ধিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। আমাদের আন্তরিক প্রচেষ্টার তথা নিষ্ঠার মান এবং জ্ঞানচর্চার পদ্ধতি ও তথ্য সমন্বয় যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর পথে বিভিন্ন মাত্রায় হিদায়াত দান করবেনই (দ্রষ্টব্য, সূরা আনকাবুত ২৯:৬৯)।
আমাদের কাজ হলো একদিকে জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রাখা এবং সেই সাথে যতটুকু তথ্য স্পষ্ট হয় ততটুকু অনুশীলন করতে থাকা এবং অধিকতর জ্ঞানের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং নতুন করে কোনো তথ্য স্পষ্ট হলে পূর্বতন ধ্যান-ধারণা এবং কর্মকাণ্ড ইসলাহ / সংশোধন করে নেয়া। সেই সাথে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে, আমাদের স্বীয় জ্ঞানে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হবে না তার পক্ষে বা বিপক্ষে চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে লেগে যাওয়া যাবে না, অন্যের যে উপস্থাপনা আমার জ্ঞানায়ত্ত হয়নি তার অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না (দ্রষ্টব্য, ১৭:৩৬, ৯:৩১)। অনুরূপভাবে আমরা স্বীয় বুঝকে অন্যের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবো না। আমরা যদি কোনো বিষয়ে হিদায়াত (সঠিক তথ্যজ্ঞান) পেয়েও যাই, তবুও ঐ হিদায়াত অন্যকে দিয়ে দেয়া আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। কারণ হিদায়াত প্রদানের যোগ্যতা একমাত্র আল্লাহরই রয়েছে। আমরা শুধু আমাদের উপলব্ধিগত তথ্য-জ্ঞানকে শেয়ার করতে পারি মাত্র।
এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো বিষয়ে আমরা একবার যে তথ্যে উপনীত হয়েছি তা শেয়ার করার পর তার ব্যতিক্রম তথ্যকে অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বা সত্য হিসেবে পেলে তা গ্রহণে যেন আমরা অনীহা প্রদর্শন না করি বা দেমাগের বশবর্তী হয়ে স্বীয় পূর্বতন বুঝকেই ধরে না রাখি।
বিশেষ করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, কোনো বিষয়ে যে তথ্যটি আমরা কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি, সেটি যদি এরূপ হয় যে, আয়াতটি থেকে আমার বুঝজ্ঞানে এরূপ তথ্য প্রতিভাত হয়, তা ঠিক আছে। কিন্তু যদি উপস্থাপন এরূপ হয় যে, আয়াতটিতে এ তথ্যটিই দেয়া হয়েছে; তবে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বাধিক সচেতন হতে হবে যে, আমি কি সত্যিই তা নিশ্চিত হয়ে গেছি? তা না হলে, এভাবে বলতে পারি না। কারণ, আল্লাহ যে তথ্য দিয়েছেন তা ‘দেননি বলা’ এবং যে তথ্য দেননি তা ‘দিয়েছেন বলা’ এবং আল্লাহর অস্তিত্ব, সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা, অধিকার, বাক্যাবলি ও কার্যাবলি ইত্যাদি সম্পর্কে এমন কোনো তথ্য উল্লেখ করা যা আদৌ সত্য নয়; এটাই হচ্ছে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করা এবং এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম। (প্রাসঙ্গিক আয়াত ২:৮০, ২:১৬৯, ৭:২৮, ৭:৩৩, ১০:৬৮, ১৮:১৪-১৬, ৬১:৭, ৬:১৪৪, ১১:১৮-১৯, ৬:৯৩, ৭:৩৭, ৬:২১, ১০:১৭, ২৯:৬৮, ৩৯:৩২-৩৩)
সুতরাং আমরা কোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত না হয়ে সেটিকেই কোনো আয়াতের তথ্য হিসেবে চূড়ান্তভাবে দাবি করা উচিত নয়। বরং আমাদের উচিত হচ্ছে, সাধ্যমতো কুরআনের তথ্য জানার ও মানার চেষ্টা করা এবং এজন্য কোনো বিষয়ে যেভাবে বুঝতে পেরেছি তা অনুসরণ করা, শেয়ার করা, আরো জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখা, অন্যদের উপলব্ধির সাথে তুলনামূলক পদ্ধতিতে উপকৃত হওয়া, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং কোনো বিষয়ে অধিকতর যৌক্তিক বা সত্য তথ্য স্পষ্ট হলে সাথে সাথে তার দ্বারা পূর্বতন চিন্তা ও কর্মের সংশোধন করে নেয়া।
কোনো একটি বিষয়ে যেমন সালাতের বিষয়ে যদি আমাদের কাছে যাবতীয় ইখতিলাফের / মতানৈক্যের অবসান ঘটার মতো তথ্যজ্ঞান পৌঁছে যায়, সেটাই হবে আয়াতভিত্তিক প্রকৃত অবস্থান। কিন্তু সেই অবস্থানের দিকে যাওয়াই আমাদের প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। যদি আমাদের সমগ্র জীবনে তা সম্ভব নাও হয়, তবু মূলনীতি অনুসারে এ চেষ্টা জারি রাখাই এক্ষেত্রে আমাদের দায়মুক্তির উপায় হবে।
অন্য কথায়, যতক্ষণ আমরা ইখতিলাফমুক্ত বা অভিন্ন উপলব্ধিতে একত্রিত হতে পারবো না, ততক্ষণ ঐ নির্দিষ্ট বিষয়টিতে প্রত্যেকে নিজ নিজ উপলব্ধির সীমা অনুসারে অনুশীলন করবো, কিন্তু তার কারণে নিজেদের আলাদা ফিরক্বা (বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ) তৈরি করবো না। এবং যেসব বিষয়ে আমাদের অভিন্ন উপলব্ধি সেসব ক্ষেত্রে আমরা অভিন্নভাবে তা সম্পাদন করবো। এটাই হবে আমাদের কর্মনীতি। কারণ আল্লাহ আমাদেরকে নিজ জ্ঞানে না বুঝে অনুসরণ করতে নিষেধ করে দিয়েছেন।
সুতরাং আমরা ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধিকে শেয়ার করা শুরু করতে পারি, আমাদের ভিন্ন ভিন্ন উপলব্ধি হিসেবে এবং প্রত্যেকটি উপলব্ধির পর্যালোচনা করতে পারি, সিদ্ধান্তগত দুর্বলতা বা কোন কোন আয়াতের সাথে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে বা হয়নি তা আলোচনা করতে পারি। নিজের প্রথম উপস্থাপিত তথ্যকে নিজের জয় পরাজয়ের বিষয়ে পরিণত না করে বরং সত্যের খাতিরে তা থেকে ফিরে যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই আমাদেরকে এ কাজের সূচনা করতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, বিধান রচনার অধিকার একমাত্র আল্লাহর এবং আমরা শুধু তাঁর বিধানকে বুঝার ও অনুসরণ করার প্রচেষ্টা করতে পারি মাত্র।
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে যে শর্তে যতটুকু হিদায়াত করার কথা সে শর্তে সে ততটুকু হিদায়াত পাবেই এবং হিদায়াতের শর্তপূরণ ও অনুসরণে সাধ্যমতো প্রচেষ্টা করা না করার জন্যই প্রত্যেকে দায়ী থাকবে এবং কারো প্রতি আল্লাহ সামন্যতমও জুলুম করবেন না। এই শাশ্বত কাঠামোর মধ্যে সুসমঞ্জস পদ্ধতি অবলম্বনেই আমাদেরকে যাবতীয় কার্যসম্পাদনের প্রস্তুতি নিতে হবে।
সালাত বিষয়ে আমাদের বিভিন্ন ধরনের উপলব্ধির তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ও যাচাইয়ের মাধ্যমে সমন্বিত ও সর্বাধিক যুক্তিযুক্ত অবস্থানে পৌঁছার জন্য আমরা অডিও, ভিডিও এবং বই বা প্রবন্ধের মাধ্যমে আমাদের উপলব্ধি শেয়ার করতে পারি। এছাড়া, এ বিষয়ে আমাদের কোনো অনলাইন বা অফলাইন কুরআনী বৈঠকে একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা সাপেক্ষে উপস্থিত সকলে তার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে আয়াতভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে পারে, যেন তা প্রবন্ধটির সংশোধনীতে সহায়ক হয়। এবং সিদ্ধান্তের বিষয়ে কথা হলো, আলোচনার পর হতে পারে কিছু বিষয়ে সকলে একই সিদ্ধান্তে পৌঁছলো, কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য থেকে গেলো। সেক্ষেত্রেও সমস্যা নেই, আমাদের তথ্যগত সিদ্ধান্ত পরিগঠন ও পরিমার্জনের কাজ আয়াতের আরো উত্তম বুঝজ্ঞান অর্জিত হওয়ার মাধ্যমে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকবে। যদি আমরা এ বিষয়ে আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত একই সিদ্ধান্তে নাও আসতে পারি, তাতেও উদ্বিগ্নতার কিছু নেই। কারণ আমাদের প্রচেষ্টার লক্ষ্য যদি ঠিক থাকে, পদ্ধতি যদি ঠিক থাকে, তাহলে আমরা যে যতটুকু হিদায়াত তথা বুঝজ্ঞান পাবো, সেটার অনুসরণই আমাদের করণীয় হবে এবং অধিকতর হিদায়াত লাভের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে।
সংক্ষেপে কথা হলো, এখানে কেউ কাউকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিবে না, বরং উপলব্ধি শেয়ার করবে মাত্র। ফলস্বরূপ কিছু তথ্যগত সিদ্ধান্ত হবে Common এবং কিছু হবে Uncommon তথা কিছুক্ষেত্রে তথ্যগত সিদ্ধান্তের ভিন্নতা থেকে যাবে। সুতরাং আলোচনার উদ্দেশ্য হতে হবে অভিন্ন তথ্যগত সিদ্ধান্তের পরিসর বৃদ্ধি করা এবং সিদ্ধান্তের ভিন্নতার পরিসর হ্রাস করা।
দুই.
‘সালাত’সহ কুরআনের বিভিন্ন পরিভাষার অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে যে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তার একটি অন্যতম কারণ হলো শব্দের প্রাথমিক ও দ্বিতীয় ধরনের অর্থ এবং কোথায় কোন ধরনের অর্থে ব্যবহৃত তা নির্ণয়ের উপায় সম্পর্কে ভাষারীতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসরণ না করা। একটি উদাহরণের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকৃত উপায় অবলম্বনের শিক্ষার উপর আলোকপাত করার জন্য নিম্নের দুটি বাক্য লক্ষ করা যেতে পারে:
ক. তার হাতে একটি কলম আছে।
খ. তার হাতে অনেক ক্ষমতা আছে।
এ দুটি বাক্যের মধ্যে প্রথম বাক্যটিতে ‘হাত’ শব্দটি তার প্রাথমিক (Primary) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং দ্বিতীয় বাক্যে ‘হাত’ শব্দটি তার দ্বিতীয় ধরনের (Secondary) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে; অর্থাৎ দ্বিতীয় বাক্যে ‘হাতে’ মানে 'আয়ত্তে'। এক্ষেত্রে কোথায় কোন অর্থে ব্যবহৃত তা বুঝার জন্য ভাষারীতি অনুশীলনের ভিত্তিমূলক সাধারণ বোধ (Common sense) বজায় রাখাই যথেষ্ট। কারণ 'ভাষা' এর ব্যবহার সম্ভবই হয়েছে আল্লাহর কর্তৃক মানুষের মধ্যে ভাষার তাৎপর্যকে অবধারণ করার উপযোগী Common sense সৃষ্টি করা হয়েছে বিধায়। এ বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য হলো, “আল্লামাহুল বায়ান” (তিনি মানুষকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন)।
একইভাবে শব্দের প্রায়োগিক অর্থ বা স্বরূপ নির্ধারণে পরম্পরাগত প্রয়োগের বিষয়টি স্বত:সিদ্ধভাবে গ্রহণযোগ্য বলে সাব্যস্ত হবে, যদি না কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে তথ্য ও নির্দেশনার মাধ্যমে ভিন্নরূপ কোনো ব্যুৎপত্তিগত তাৎপর্য এবং নীতিগত স্ববিরোধমুক্ত অর্থ নির্ণয় জরুরি হয়। উদাহরণস্বরূপ তিনটি বিশেষ শব্দ লক্ষণীয়: মুখমণ্ডল, দাঁড়ানো ও বসা। কোনো বাক্যে 'মুখমণ্ডল, দাঁড়ানো, বসা' ইত্যাদি শব্দ লেখা থাকলে ঐ প্রবন্ধের কোথাও না কোথাও এর স্বরূপ উল্লেখ করতে হবে, এমনটি আবশ্যক নয়। কারণ পরম্পরাগত প্রয়োগ অনুসারে এর অর্থ স্বত:সিদ্ধভাবে পাঠকের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত।
এ দুটি বিষয় লক্ষ্য রাখলে আমরা 'সালাত'সহ বিভিন্ন বিষয়ে কুরআনের আয়াত বুঝার ক্ষেত্রে পরবর্তীতে পাল্টাপাল্টি দাবির মাধ্যমে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। বাক্যের দুই ধরনের অর্থের মধ্যে কোথায় কোন অর্থ গ্রহণ করা হবে সে বিষয়ে যে স্বত:সিদ্ধ মূলনীতি অনুসরণ করা সমীচীন হবে তাহলো: “বাক্যের ধরন, পূর্বাপর প্রসঙ্গ এবং একই প্রসঙ্গে অন্য স্থানের বক্তব্য দ্বারা প্রাপ্ত তথ্যের সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে কোন শব্দটি কোথায় কোন অর্থে (প্রাথমিক বা দ্বিতীয় ধরনের অর্থে) ব্যবহৃত হয়েছে'।
এই মূলনীতিকে প্রয়োগ করে আমরা সালাতের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত কয়েকটি শব্দের স্বরূপ সম্পর্কে একটি ধারণা গঠন করতে পারি। এখানে যে প্রসঙ্গটির উপর আলোকপাত করা হচ্ছে তাহলো: ‘দাঁড়ানো, বসা ও শোয়’'এবং ‘ক্বিয়াম, রুকূ', সাজদাহ’ এর স্বরূপ নির্ণয়। মানুষ প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় তিনটি মুল শারীরিক অবস্থানে থাকে যথা দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া। তাই অনেক আয়াতে ‘দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া’ অবস্থায় আল্লাহর যিকিরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেহেতু মানুষ এ তিনটি প্রধান শারীরিক অবস্থানে থাকে, তাই ‘দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া’ বলতে সার্বক্ষণিক অবস্থানকেও বুঝানো হয়। তাই ‘দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর যিকির’ বলতে সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহর যিকির বুঝার মধ্যে কোনো ত্রুটি নেই। আবার কেউ যদি আনুষ্ঠানিকভাবে দাঁড়ানো অবস্থায়, বসা অবস্থায় ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর যিকির করার নির্দেশ পালন নিশ্চিত করে তাও আপত্তিকর নয়।
আবার মানুষ যখন আল্লাহর উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক উপাসনার জন্য শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তার আত্মনিবেদন প্রকাশ করে তখন তিনটি অবস্থান গ্রহণ করতে পারে, যেমন: আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়ানো, তাঁর কাছে স্বীয় দুর্বলতার স্বীকৃতি দান এবং তাঁর প্রতি প্রণত হয়ে ভক্তি প্রকাশ। সে এটিকে আনুষ্ঠানিক ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদাহর রূপ দিয়ে বা শারীরিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে। এটাকে আমরা শারীরিক অঙ্গভঙ্গির ভাষা (Body Language) এর সাথে তুলনা করতে পারি। তাই আনুষ্ঠানিক সালাতের সাথে সম্পর্কযুক্ত ‘ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদাহ’ এর শারীরিক রূপ কিরূপ হয় তা খুব সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য বলা হয়, আরবি ‘আদম’ শব্দটি যে তিনটি বর্ণ দিয়ে লেখা হয় ‘আলিফ, দাল, মীম’ তা দেখতে যেরূপ দেখায়, সেই তিনটি রূপে তথা ‘ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদাহর রূপে’ মানুষ আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহর উপাসনা করে থাকে। কিন্তু ‘ক্বিয়াম, রুকূ', সাজদাহ’ শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক বিষয় নয়। কারণ আনুষ্ঠানিক অভিব্যক্তির ক্ষেত্রে তা আনুষ্ঠানিক রূপ লাভ করলেও কুরআনে এ শব্দগুলোকে ব্যাপকভাবে তার Secondary বা ভাবগত অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে। বরং যেখানে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়া যেতে পারে এরূপ ক্ষেত্র ছাড়া শব্দগুলো মূলত ব্যাপকভিত্তিক অর্থ প্রকাশের জন্যই ব্যবহৃত হয়েছে।
তিন.
আলোচ্য বইটি বিশেষ করে তাদের উদ্দেশ্যে রচিত হয়েছে যারা কুরআনকে কিতাবুম মুবীন (সুস্পষ্ট কিতাব) ও ফুরকান (সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী) হিসাবে বিশ্বাস করেন, যারা কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথা গীতা বা গীতাঞ্জলীতে থাকলেও তা গ্রহণযোগ্য এবং কুরআনের বিপরীত কথা সহীহ বুখারী হাদীস শরীফে থাকলেও তা মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করেন। পৃথিবীর সকল মানুষও যদি আল্লাহকে সাজদাহ দেয় তাতেও আল্লাহর কোনো লাভ নেই, এবং সবাই যদি তাঁকে সাজদাহ দেয়া থেকে বিরত থাকে তাতেও তাঁর কোনো ক্ষতি নেই। সুতরাং আনুষ্ঠানিক সালাতের বিধান হচ্ছে মানুষেরই কল্যাণের জন্য তাদেরকে প্রদত্ত আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকার নির্দেশনামূলক ও প্রশিক্ষণমূলক বিধান। খাশেয়ীন বা বিনীতদের সালাত তাদেরকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে কিন্তু ছাহূন বা উদাসীনদের সালাত তাদেরকে অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে না এবং তাদের সালাত সত্ত্বেও তারা জাহান্নামে যাবে (দ্র: সূরা মাউন ১০৭: ৪-৭)। তাই আমরা যদি খাশেয়ীন হই তথা আখিরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি রাখি, তাহলে আমাদেরকে ফুরক্বান বা সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী গ্রন্থ কুরআনের আলোকে সালাতের ওয়াক্ত ও কাঠামো কিরূপ তা যাচাই করে দেখতে হবে। প্রচলিত ওয়াক্ত ও কাঠামো কুরআনসিদ্ধ না কুরআনের বিপরীত তা যাচাই করতে হবে। যদি কুরআনের বিপরীত কথা মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহর নামে আমাদের কাছে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা হয়ে থাকে তবু যখনি আমরা বুঝবো যে, কথাটি কুরআনবিরুদ্ধ তখনি আমরা বলে দেবো যে, কথাটি মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ বলেননি। কারণ, অবশ্যই যার প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে তিনি মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ কুরআনের সর্বাগ্রে অনুসারী ছিলেন, তিনি কুরআনের নির্দেশের সামান্যতমও লংঘনকারী ছিলেন না। যারা এ মানসিকতা অর্জন করতে পেরেছেন আলোচ্য বইটি তাদের কাজে আসতে পারে বলে আশা করা যায়।
আমরা আশাবাদী যে, বইটি পড়ে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোতে অধিকতর চিন্তা গবেষণার জন্য একটা মোটামুটি সন্তোষজনক সামগ্রিক তত্ত্ব জানা যাবে:
১. আল কুরআনের আলোকে সালাতের সংজ্ঞা
৩. সালাতের মৌলিক গুরুত্ব: সালাত কি ঈমান, আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ (ইসলাম) ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা (তাসবীহ) এবং সৎকাজের (আমলে সালেহ) মতোই মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?
৩. সালাতের ব্যাপকতা ও আনুষ্ঠানিকতা
৪. সালাতের কাঠামো কি? এবং ক্বিয়াম, রুকূ' ও সাজদাহর ব্যাপক ও আনুষ্ঠানিক স্বরূপ
৫. সালাতের ওয়াক্তসমূহ
৬. সালাতের পঠিত বিষয়
৭. সমষ্টিগত সালাত (জুমুয়ার সালাত)
৮. কাঠামোর বিষয়ে একাধিক উপলব্ধির উপস্থিতিতে সমষ্টিগত সালাত (জামায়াতে সালাত) সম্পাদনের ক্ষেত্রে কোন কাঠামো অনুসরণ করা হবে?
৯. সালাত সম্পাদনের পদ্ধতির ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত কাঠামো বা পরম্পরাগত অনুশীলনের গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয়
১১. আত্মসমর্পণ ও আখিরাতে মুক্তিপ্রাপ্তির জন্য সালাতের কোনো নির্দিষ্ট কাঠামো আবিষ্কার ও অনুসরণ প্রয়োজনীয় কিনা?
১২. সালাতের কাঠামোর সাথে সালাতের উদ্দেশ্য ও ফলাফলের সম্পর্ক
১৩. কুরআন নাজিল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে (তথা সালাত সম্পর্কিত সকল আয়াত নাজিল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বে) রাসুলের সালাতের পদ্ধতি পূর্ব থেকে প্রচলিত রীতিভিত্তিক হলে বা তাঁকে কুরআন বহির্ভুত ওহীর মাধ্যমে শিখানো হলে তা থেকে শিক্ষণীয়
১৪. কুরআনিক নির্দেশনার বাধ্যতামূলক কার্যকাঠামোর স্বরূপ নির্ণয়ে পরম্পরাগত অনুশীলনের মর্যাদাগত অবস্থান এবং প্রচলিত রীতিতে বাধ্যতামূলক কাজের কতটুকু উপস্থিত এবং কতটুকু হারিয়ে গেছে তা নির্ণয়, এছাড়া প্রচলিত রীতি থেকে কতটুকু বাধ্যতামূলকের অন্তর্ভুক্ত না হলেও পরিগ্রহণযোগ্য এবং কতটুকু অগ্রহণযোগ্য?
১৫. কুরআন কেন্দ্রিক মুসলিমদের সালাত নিয়ে গবেষণার বিভিন্নতার তথ্যগত কারণ ও সমন্বিত চিন্তাধারার নমুনা
সালাত বিষয়ে আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়নের ভিত্তিতে উপলব্ধি উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আমাদের সমষ্টিগত উদ্যোগ যেরূপ হতে পারে:
১. প্রত্যেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সকল আয়াত ব্যক্তিগতভাবে অধ্যয়ন করে স্বীয় উপলব্ধি ও জিজ্ঞাসা নোট করা
২. স্টাডি ফোরামে বিভিন্ন সেশনে ধারাবাহিকভাবে গবেষণার তথ্যসমূহ উপস্থাপনা ও তার পর্যালোচনা
৩. দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কুরআনকেন্দ্রিক গবেষকদের গবেষণাসমূহের মৌলিক সিদ্ধান্তমূলক প্রকারসমূহকে পর্যালোচনার জন্য সামনে রাখা
৪. প্রচলিত নামাজের পর্যালোচনা (বিশেষ করে মুসলিম সমাজ, ইহুদি ও হিন্দুদের প্রার্থনার তুলনামূলক আলোচনা; কারণ বৌদ্ধ হিন্দুদেরই একটি শাখা এবং খৃস্টানও ঈসা নবীর সাথে সম্পর্কিত বিধায় এবং ঈসা নবী ইহুদিদের অনুরূপ করেছেন বিধায় খৃস্টানদের প্রার্থনাও ইহুদিদের প্রার্থনার সাথে মিলসম্পন্ন হওয়ার কথা)।
সালাত সম্পর্কিত উপলব্ধি পর্যালোচনায় লক্ষণীয় বিষয়সমূহ
১. এগুলো কুরআনের এ বিষয়ের সকল আয়াতকে একসাথে বিবেচনায় রাখার ক্ষেত্রে কোথায় বিচ্যুতি ঘটেছে বা কোনো একটি আয়াতেরও তথ্য বাদ গেছে কিনা বা তার ব্যতিক্রম হয়েছে কিনা?
২. যে তথ্যগত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে তার বাস্তব উপযোগিতা কী, তাতে কী সুফল দেখা যায় এবং তা না হলে কী কুফল হতো বলে বুঝা যায়?
৩. কুরআনের Concordance (নির্ঘণ্ট), Context (বক্তব্য কাঠামোর প্রসঙ্গ-পরিপ্রেক্ষিত) এবং শব্দসমূহের আভিধানিক অর্থসমূহের বিষয়ে নানাবিধ মতের উপস্থিতিতে সঠিক শব্দার্থ কোনটি হবে তার যৌক্তিক ভিত্তি কী হবে?
এই বইয়ে সালাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন এবং এ বিষয়ে উপস্থাপিত বিভিন্ন উপলব্ধির তুলনামূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা উপস্থাপনের জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। যেহেতু সালাত বিষয়ক আয়াতসমূহের উপলব্ধির ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা উপস্থিত রয়েছে তাই এই বইয়ের কিছু কিছু অংশের অনুসিদ্ধান্ত কোনো কোনো পাঠকের নিকট সর্বাধিক যৌক্তিক বলে সাব্যস্ত নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আয়াতভিত্তিক যাচাইয়ের মাধ্যমে বইটির কোনো অনুসিদ্ধান্তকে সংস্করণ করার মতো তথ্য পেলে পরবর্তীতে তা সংস্করণ করা হবে ইনশাআল্লাহ। তবে এতে যে তথ্য বিশ্লেষণ রয়েছে এবং তার মাধ্যমে যে অনুসিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে পরবর্তী পর্যালোচনার ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হতে পারে। এই বইটির মূল উন্মোচিত তথ্য হলো ‘সালাতের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক দুই ধরনের মাত্রা রয়েছে’ এবং ‘আনুষ্ঠানিক সালাতের শিক্ষা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাস্তব সালাত করা ছাড়া আনুষ্ঠানিক সালাত অর্থহীন’। এই তথ্যটি এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ, যে বিষয়ে বিভিন্ন দিক বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ও বাস্তব সালাতের মধ্যে সম্পর্ক এবং আনুষ্ঠানিক সালাতের শিক্ষা ও বাস্তব সালাতের মৌলিক দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তাই বইটি সালাত বিষয়ে একটি সর্বাঙ্গীন বোধগম্য ধারণা অর্জনে সহায়ক হতে পারে।
নিম্নে সালাত শব্দ (এর বিভিন্ন শব্দরূপসহ) ধারণকারী আয়াতসমূহের অনুবাদ উল্লেখ করা হলো। বিষয়বস্তুর সঠিক উপলব্ধির উদ্দেশ্যে ‘সালাত’ শব্দ ধারণকারী কোনো কোনো আয়াতের পূর্বাপর আয়াতসহ উল্লেখ করা হলো।
ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ
২:২ :: ঐ কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, সত্যাগ্রহী ও স্রষ্টা-সচেতনদের জন্য পথনির্দেশ।
الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
২:৩ :: যারা অদৃশ্য সত্যের প্রতি বিশ্বাস করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (১)
(১) অর্থাৎ আয়-ব্যয়ে বৈধতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখে।
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
২:৪৩ :: এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো। এবং তোমরা যাকাত প্রদান করো। এবং তোমরা রুকূ' করো রুকূ'কারীদের সাথে।
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
২:৪৪ :: তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দাও অথচ নিজেদের বেলায় ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করো। তবে কি তোমরা আক্বল (বিবেকবুদ্ধি, Common sense)প্রয়োগ করো না?
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ
২:৪৫ :: এবং তোমরা সাহায্য চাও সবরের ও সালাতের মাধ্যমে। এবং নিশ্চয় তা বড়ই (তিক্ত) বিষয়, খাশেয়ীনের (খুশুকারীদের/বিনীতদের) উপর ছাড়া।
الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ
২:৪৬ :: যারা ধারণা রাখে যে, তারা তাদের প্রভুর (কাছে জবাবদিহিতার) সম্মুখীন হবে এবং (এজন্য) তারা তাঁর কাছে ফিরে যাবে।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ
২:৮৩ :: এবং (উল্লেখ্য) যখন আমরা বানী ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছি (এ মর্মে যে), “তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দাসত্ব করো না। এবং পিতা-মাতার প্রতি, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি, ইয়াতীমদের প্রতি এবং অভাবগ্রস্তদের প্রতি উত্তম আচরণ করো। এবং মানুষকে সুন্দর কথা বলো। এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো”। তারপর তোমাদের মধ্য থেকে অল্প কিছু ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো। এবং তোমরা তো বিমুখ।
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
২:১১০ :: এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং তোমরা যাকাত প্রদান করো। এবং তোমরা তোমাদের কল্যাণার্থে যেসব কল্যাণকর কাজ অগ্রিম করে যাবে আল্লাহর নিকট তা (তার শুভ প্রতিফল) পাবে। নিশ্চয় তোমরা যা করো আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
২:১২৫ :: এবং (উল্লেখ্য) যখন আমি ‘আল বাইত’কে (অনন্য প্রতিষ্ঠানকে) স্থাপন করেছি মানবজাতির জন্য সমাবর্তনস্থলরূপে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থারূপে। এবং তোমরা ইবরাহীমের আদর্শিক অবস্থান (মাক্বামে ইবরাহীম) থেকে সালাত সম্বলিত বিষয় (মুসল্লা) গ্রহণ করো / তোমরা ইবরাহীমের আদর্শিক অবস্থানকে সালাত সম্বলিত বিষয় হিসেবে গ্রহণ করো। এবং আমি ফরমান দিয়েছি ইবরাহীমকে এবং ইসমাইলকে (এ মর্মে) যে, আমার (নির্ধারিত) প্রতিষ্ঠানকে পরিচ্ছন্ন রাখো তাওয়াফকারীদের জন্য, ই’তিকাফকারীদের জন্য, রুকূ'কারীদের জন্য এবং সাজদাহকারীদের জন্য।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
২:১৫৩ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো সবরের ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের (ধৈর্যশীল-অধ্যবসায়ীদের) সাথে থাকেন।
أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ
২:১৫৭ :: তারা (সবরকারীরা) ঐসব লোক যাদের উপর তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (বর্ষণ) করা হয় সালাওয়াত (অনুগ্রহরাজি) ও দয়া। এবং তারা সুপথপ্রাপ্ত।
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
২:১৭৭ :: পূণ্য কাজ এ নয় যে, তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম ক্বিবলার দিকে তোমাদের মুখ ফিরাও। কিন্তু পূণ্যকাজ সে-ই করে যে বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাত দিবসের প্রতি এবং ফেরেশতাদের প্রতি এবং কিতাবের (আল্লাহর বিধানের) প্রতি এবং নবীগণের প্রতি এবং তার মহব্বতের মালসম্পদ দান করে আত্মীয়-স্বজনকে, ইয়াতীমদেরকে, অভাবগ্রস্তদেরকে এবং ছিন্নমূলকে / উদ্বাস্তুকে / বাস্তুহারাদেরকে (ইবনে সাবীলকে) এবং সাহায্যপ্রার্থীকে এবং কারো ঘাড়কে (দাসত্ব/ ঋণের বোঝা / দারিদ্রের কষাঘাত থেকে) মুক্ত করার ক্ষেত্রে। এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং যখন তারা প্রতিজ্ঞা করে সেই প্রতিজ্ঞা পূরণকারী এবং অর্থ-সংকটে, দু:খ-ক্লেষে ও সংগ্রাম সংকটের সময় সবরকারী। তারাই ঐসব লোক যারা সত্যবাদী এবং তারাই সত্যাগ্রহী, স্রষ্টা-সচেতন।
حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
২:২৩৮ :: তোমরা সালাতসমূহের প্রতি হেফাযতকারী (যত্নবান) হও এবং (বিশেষভাবে) মধ্যবর্তী / কেন্দ্রস্থ সালাতের প্রতি এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয়ী হয়ে দাঁড়াও।
فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ
২:২৩৯ :: যদি তোমরা (স্বাভাবিক নিয়মে সালাত হেফাযত করতে না পারার) ভয় করো, তবে পদচারী হও বা আরোহী হও (চলন্ত অবস্থায় সালাত করে নাও/ যথাসম্ভব উপায়ে হিজরত করো)। তারপর যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন আল্লাহকে স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
২:২৭৭ :: নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে এবং সংশোধনমূলক কাজ / সৎকর্ম করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে তাদের পারিতোষিক/ পুরস্কার আছে। এবং তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দু:খিতও হবে না।
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ
৩:৩৯ :: তারপর ফেরেশতারা তাকে (যাকারিয়াকে) এ অবস্থায় ডাক দিলো যে, সে ব্যক্তিগত কক্ষে সালাত করতে দাঁড়ানো ছিলো, (তারা বললো,) “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিয়েছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে থাকা বাণীর প্রত্যয়নকারী এবং (আল্লাহর পথে) নিজেকে আবদ্ধ রাখা ব্যক্তি/ স্ত্রী-সংস্রব-আসক্তি থেকে আত্মনিবারিত এবং সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে (বাছাইকৃত) একজন নবী”।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغْتَسِلُوا وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا
৪:৪৩ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হবে না এ অব্স্থায় যে, তোমরা আড়ষ্ট মস্তিষ্ক / অন্য চিন্তায় বিভোর / সচেতন-মনোসংযোগে অপ্রস্তুত, যতক্ষণ না তোমরা যা বলো তার জ্ঞান রাখো। এবং অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়ও নয়, যদি না পথ অতিক্রমরত (অসুবিধাসম্পন্ন) হও, যতক্ষণ না তোমরা তা ধুয়ে ফেলো। এবং যদি তোমরা অসুস্থ থাকো, অথবা সফর অবস্থায় থাকো বা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ শৌচাগার থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো তারপর পানি না পাও তাহলে তোমরা তায়াম্মুম (অনুসন্ধান) করো পবিত্র উচ্চভূমি। তখন তোমরা মুছে নাও তোমাদের মুখমণ্ডলসমূহকে এবং তোমাদের হাতসমূহকে। নিশ্চয় আল্লাহ উদার, ক্ষমাশীল।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
৪:৭৭ :: তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে বলা হয়েছিলো, “তোমরা তোমাদের হাতসমূহকে গুটিয়ে রাখো, এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং তোমরা যাকাত প্রদান করো”। তারপর যখনি তাদের উপর সশস্ত্র সংগ্রামকে বিধিবদ্ধ করা হলো তখনি তাদের মধ্যকার একটি দল মানুষকে ভয় করলো যেমন ভয় করা উচিত আল্লাহকে বা তার চেয়ে কঠিন ভয়। এবং তারা বললো, “আমাদের প্রভু, কেন তুমি আমাদের উপর সশস্ত্র সংগ্রামকে বিধিবদ্ধ করলে? কেন তুমি আমাদেরকে নিকটবর্তী (আরও স্বল্পদৈর্ঘ্য) সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিলে না?” বলো, “দুনিয়ার ভোগসমাগ্রী স্বল্পকালীন। এবং আখিরাতই তার জন্য উত্তম যে সত্যাগ্রহী / স্রষ্টা-সচেতন হয়। এবং তোমাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবে না”।
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
৪:১০১ :: এবং যখন তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো তখন তোমরা সালাতকে সংক্ষেপ করাতে তোমাদের উপর দোষ নেই যদি তোমরা ভয় করো যে, যারা কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করেছে তারা তোমাদেরকে ফিতনায় (কিংকতর্ববিমুঢ় অবস্থায়/ চরম বিপদে) ফেলবে। নিশ্চয় কাফিররা তোমাদের স্পষ্ট শত্রু।
وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِن وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَىٰ لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُم مَّيْلَةً وَاحِدَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّن مَّطَرٍ أَوْ كُنتُم مَّرْضَىٰ أَن تَضَعُوا أَسْلِحَتَكُمْ وَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
৪:১০২ :: এবং (কাফিরদের কর্তৃক ফিতনায় পড়ার আশংকাগ্রস্ত অবস্থায়) যখন তুমি (রসূল) তাদের মধ্যে থাকো, এবং তুমি তাদের জন্য সালাতে দাঁড়াও, তখন তাদের মধ্য থেকে একদল যেন তোমার সাথে দাঁড়ায়, এবং তারা যেন তাদের অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র থাকে। তারপর যখন তারা সাজদাহ করবে, তখন তারা যেন তোমাদের পিছনে থাকে, এবং যেন অন্য দল আসে যারা সালাত করেনি। তখন তারা যেন তোমার সাথে সালাত করে। এবং তারা যেন গ্রহণ করে তাদের সতর্কতা ও তাদের অস্ত্র। এবং যারা কুফর করেছে তারা কামনা করে, যদি তোমরা অসচেতন হয়ে যাও তোমাদের অস্ত্র থেকে এবং তোমাদের সরঞ্জামাদি থেকে! তাহলে তারা আক্রমণ করবে তোমাদের উপর, একটাই চরম আক্রমণ। এবং তোমাদের উপর দোষ নেই, যদি বৃষ্টির কারণে তোমাদের কষ্ট হয়, অথবা তোমরা অসুস্হ হয়ে পড়ো, সে অবস্থায় তোমাদের অস্ত্র সরিয়ে রাখলে। এবং তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করো। নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের জন্য অপমানকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمْ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
৪:১০৩ :: তারপর যখন তোমরা সালাত কাযা (যথানিয়মে সম্পাদন) করো, তারপর আল্লাহকে স্মরণ করো দাঁড়িয়ে, বসে ও তোমাদের পার্শ্বদেশের উপর (কাত হয়ে শুয়ে)। অন্যদিকে যখন তোমরা নিরাপদ থাকো, তখন তোমরা (স্বাভাবিক নিয়মে) সালাত প্রতিষ্ঠা করো। নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের উপর সময় সাপেক্ষ বিধান হিসেবে বিদ্যমান (বিধিবদ্ধ)।
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا قَلِيلًا
৪:১৪২ :: নিশ্চয় মুনাফিকগণ আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়, অথচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় রেখেছেন। এবং যখন তারা সালাতের জন্য দাঁড়ায়, তখন তারা দাঁড়ায় অনাগ্রহ-অলসতার সাথে, মানুষকে দেখানোর জন্য। এবং তারা আল্লাহকে অত্যন্ত অল্পই স্মরণ করে।
مُّذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَٰلِكَ لَا إِلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ وَلَا إِلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا
৪:১৪৩ :: তারা ঐ অবস্থার মধ্যেই দোদুল্যমান। তারা এদের দিকেও না, ওদের দিকেও না। এবং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য কোনো পথ পাবে না।
لَّـٰكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُونَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أُولَـٰئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا
৪:১৬২ :: কিন্তু তাদের (ইয়াহুদদের) মধ্যকার জ্ঞানে সুগভীর ব্যক্তিবর্গ (রাছিখূনা ফিল ইলম) এবং মু’মিনগণ তাতে বিশ্বাস করে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছিলো এবং (তারা) সালাত প্রতিষ্ঠাকারী এবং যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী। তারাই এমন লোক আমি শীঘ্রই যাদেরকে মহাপুরস্কার দেবো।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
৫:৬ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা দাঁড়াও সালাতের দিকে (সালাতের প্রস্তুতিপর্বে), তখন তোমরা ধৌত করো তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ, এবং তোমাদের হাতসমূহ কনুইসমূহ পর্যন্ত, এবং তোমরা মুছে নাও তোমাদের সমগ্র মাথাসমূহ এবং তোমাদের পাসমূহ টাখনুসমূহ পর্যন্ত। এবং যদি তোমরা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকো, তাহলে তোমরা পরিচ্ছন্ন হও। এবং যদি তোমরা অসুস্থ থাকো; অথবা সফর অবস্থায় থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ শৌচাগার থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো তারপর পানি না পাও, তাহলে তোমরা তায়াম্মুম (অনুসন্ধান) করো পবিত্র উচ্চভূমি। তখন তা থেকে (সেই উপাদানের মাধ্যমে) তোমরা মুছে নাও তোমাদের মুখমন্ডলসমূহকে এবং তোমাদের হাতসমূহকে। আল্লাহ ইচ্ছা করেন না তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা রাখতে। কিন্তু তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে পবিত্র করতে, এবং তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামত (অনুগ্রহ) সম্পূর্ণ করতে। যেন তোমরা শোকর (কৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করতে পারো।
وَلَقَدْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَيْ عَشَرَ نَقِيبًا وَقَالَ اللَّهُ إِنِّي مَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَآمَنتُم بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّأُكَفِّرَنَّ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ فَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ
৫:১২ :: এবং নিশ্চয় আল্লাহ বানী ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। এবং আমি তাদের মধ্য থেকে বারো জন নকীব (অধিনায়ক / নেতা) সমুত্থিত করেছিলাম। এবং আল্লাহ বলেছিলেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আমার রসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করো এবং তাদেরকে শক্তি যোগাও এবং আল্লাহকে করজে হাসানাহ (উত্তম ঋণ) দাও। তাহলে আমি তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দ কাজগুলোকে মোচন করবো এবং তোমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করাবো যার নিচ অংশে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে এরপরও (প্রতিশ্রুতি দানের পরও) তোমাদের মধ্য থেকে যে কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করবে সে সরল পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে”।
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
৫:৫৫ :: নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু ও অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ এবং তাঁর রসূল ও তারাই যারা বিশ্বাস করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে, এ অবস্থায় যে, তারা রুকূ'কারী।
وَمَن يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
৫:৫৬ :: এবং যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে ও যারা বিশ্বাস করে তাদেরকে বন্ধু ও অভিভাবক বানাবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহর সেনাদলই বিজয়ী হবে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
৫:৫৭ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা তাদেরকে আওলিয়া (বন্ধু ও অভিভাবক) হিসেবে গ্রহণ করো না যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যকার যারা এবং যে কাফিররা তোমাদের দ্বীনকে উপহাস ও খেলতামাশারূপে গ্রহণ করেছে। এবং তোমরা স্রষ্টা-সচেতন হও যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।
وَإِذَا نَادَيْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ اتَّخَذُوهَا هُزُوًا وَلَعِبًا ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَعْقِلُونَ
৫:৫৮ :: এবং যখন তোমাদেরকে সালাতের দিকে ডাকা হয় তখন তারা সেটাকে উপহাস ও খেলতামাশারূপে গ্রহণ করে। এটা এ কারণে যে, তারা এমন এক কওম যারা আক্বল (বিবেক-বুদ্ধি, Common sense) প্রয়োগ করে না।
إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنتُم مُّنتَهُونَ
৫:৯১ :: নিশ্চয় শয়তান ইচ্ছা করে যে, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাবে, এবং আল্লাহর যিকর (স্মরণ ও স্মরণিকা) থেকে ও সালাত থেকে তোমাদেরকে বাধা দিবে। তবুও কি তোমরা বিরত হবে না?
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ حِينَ الْوَصِيَّةِ اثْنَانِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ أَوْ آخَرَانِ مِنْ غَيْرِكُمْ إِنْ أَنتُمْ ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَأَصَابَتْكُم مُّصِيبَةُ الْمَوْتِ تَحْبِسُونَهُمَا مِن بَعْدِ الصَّلَاةِ فَيُقْسِمَانِ بِاللَّهِ إِنِ ارْتَبْتُمْ لَا نَشْتَرِي بِهِ ثَمَنًا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ وَلَا نَكْتُمُ شَهَادَةَ اللَّهِ إِنَّا إِذًا لَّمِنَ الْآثِمِينَ
৫:১০৬ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যখন তোমাদের মধ্য থেকে কারো মৃত্যু সন্নিকটে এসে যায় তখন তোমরা ওয়াসিয়্যাত করার সময় তোমাদের মধ্য থেকে দুইজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখো। অথবা যদি তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো এবং এ অবস্থায় তোমাদের কাছে মৃত্যুর মুসিবত এসে পড়ে তাহলে (তোমাদের নিজেদের মধ্যকার লোক না পেলে) তোমাদের বাইরের (অন্য অঞ্চলের) দুইজনকে সাক্ষী রাখো। তাদের দুইজনকে সালাতের পরে অপেক্ষমান রাখবে। যদি তোমরা সন্দেহ করো তবে তারা উভয়ে আল্লাহর নামে কসম করবে: “আমরা কোনো মূল্যেই তা (সাক্ষ্য) বিক্রয় করবো না, যদিও আত্মীয় হয় এবং আমরা আল্লাহর নির্দেশিত সাক্ষ্যকে গোপন করবো না। নিশ্চয় তাহলে আমরা অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো”।
وَأَنْ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوهُ وَهُوَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
৬:৭২ :: এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং তাঁর (আল্লাহর) প্রতি সচেতন হও। এবং তিনিই সেই সত্তা যাঁর কাছে তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।
وَهَـٰذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلِتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ يُؤْمِنُونَ بِهِ وَهُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
৬:৯২ :: এবং এ কিতাব, আমরা তা নাযিল করেছি সমৃদ্ধিময় এবং পূর্ব থেকে তার সামনে থাকা কিতাবের প্রত্যয়নকারীরূপে এবং এজন্য যে, যেন তুমি উম্মুল ক্বুরা (জনপদ জননী) ও সেটির চারপাশের জনপদবাসীকে সতর্ক করে দাও। এবং যারা আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করে তারাই সেটিকে (এ কিতাবকে) বিশ্বাস করে। এবং তারা তাদের সালাতের উপর হেফাযতকারী।
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
৬:১৬২ :: বলো, “নিশ্চয় আমার সালাত, আমার নুসুক (ধর্মীয় বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে পশু উৎসর্গ ও সংহতিমূলক রীতি পালন করা / কুরবানি), আমার জীবন ও আমার মরণ সবই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত”।
وَالَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ
৭:১৭০ :: এবং যারা কিতাবকে আঁকড়ে ধরে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। নিশ্চয় আমি সৎকর্মশীল-সংশোধনকারীদের পুরস্কার নষ্ট করি না।
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
৮:৩ :: (তারাই মু’মিন) যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِندَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
৮:৩৫ :: এবং তাদের সালাত কিছুই নয় ‘আল বাইতের’ (অনন্য প্রতিষ্ঠানের) কাছে শিস / উলুধ্বনি দেয়া এবং করতালি / অনর্থক ব্যস্ততা ছাড়া। সুতরাং তোমরা যে কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করতে তার কারণে তোমরা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করো।
فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৯:৫ :: তারপর যখন হারাম মাসসমূহ (বিধিবদ্ধ যুদ্ধ বিরতির ও সংরক্ষিত মাসসমূহ) অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে (হারাম এলাকার) যেখানেই পাও (সম্মুখ যুদ্ধে / এনকাউন্টারে) হত্যা করো এবং তাদেরকে (সরাসরি) ধরে ফেলো এবং তাদেরকে অবরোধ ও (অগ্রাভিযান ও পারস্পরিক যোগাযোগে) বাধাগ্রস্ত করো এবং তাদেরকে (গেরিলা হামলা ও আচমকা) ধরার জন্য প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে বসো। তবে যদি তারা তাওবাহ করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
৯:১১ :: তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে, তাহলে তারা দ্বীনের (জীবনব্যবস্থার) ভিত্তিতে তোমাদের ভাই। এবং আমি আয়াতসমূহকে তফসীল আকারে (বিস্তারিত) বর্ণনা করেছি, সেই ক্বওমের জন্য যারা জ্ঞানাজর্ন করে।
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَىٰ أُولَـٰئِكَ أَن يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ
৯:১৮ :: নিশ্চয় তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহের ব্যবস্থাপনা করবে (ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে) যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায় যে, তারাই পথনির্দেশ গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
وَمَا مَنَعَهُمْ أَن تُقْبَلَ مِنْهُمْ نَفَقَاتُهُمْ إِلَّا أَنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَبِرَسُولِهِ وَلَا يَأْتُونَ الصَّلَاةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمْ كَارِهُونَ
৯:৫৪ :: এবং তাদের বিষয়ে মানা করা হয়নি তাদের থেকে তাদের নাফাক্বাত (ধর্মীয় অনুদান তহবিলে ব্যয়) গ্রহণ করতে এজন্য ছাড়া যে, তারা অবিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি এবং তারা সালাতে আসে না এ অবস্থায় ছাড়া যে তারা অনাগ্রহী-অলস, এবং তারা (ধর্ম নির্দেশিত) ব্যয় করে না এছাড়া যে, তারা (মূলত) অনিচ্ছুক ও অপছন্দকারী।
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَـٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
৯:৭১ :: এবং মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী একে অপরের আওলিয়া (বন্ধু ও অভিভাবক)। তারা ন্যায় কাজের আদেশ দেয় এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। তারাই ঐসব লোক যাদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।
وَلَا تُصَلِّ عَلَىٰ أَحَدٍ مِّنْهُم مَّاتَ أَبَدًا وَلَا تَقُمْ عَلَىٰ قَبْرِهِ إِنَّهُمْ كَفَرُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَمَاتُوا وَهُمْ فَاسِقُونَ
৯:৮৪ :: এবং তাদের (মুনাফিকদের) মধ্য থেকে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার ব্যাপারে কখনো সালাত (সংযোগ-সমর্থন ও আশীর্বাদ প্রার্থনা) করবে না এবং (বিশেষ মর্যাদায় কবরস্ত করতে বা ইতিবাচক ভাবাবেগ প্রকাশার্থে) তার কবরের পাশে দাঁড়াবে না। নিশ্চয় তারা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি অবিশ্বাস করেছে এবং ফাসিক্ব (বিধি-লংঘনকারী, দুষ্কর্মশীল) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
وَمِنَ الْأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللَّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ أَلَا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ اللَّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৯:৯৯ :: এবং আ’রাবদের (অনগরীয়দের) মধ্যে কিছু লোক রয়েছে যারা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে এবং (ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী) যা ব্যয় করে সেটাকে আল্লাহর কাছে নৈকট্যের মাধ্যম এবং রসূলের সালাওয়াত (সমর্থনপুষ্ট সংযোগসমূহ / আশীর্বাদপ্রাপ্তি) হিসেবে গ্রহণ করে। প্রশ্নাতীতভাবে সেটা তাদের জন্য (আল্লাহর) নৈকট্যের মাধ্যম। শীঘ্রই আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় দয়ার মধ্যে প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
৯:১০৩ :: তুমি তাদের মালসমূহ থেকে সদাক্বাহ গ্রহণ করো। সেটির মাধ্যমে তাদেরকে পবিত্র করো ও পরিশুদ্ধ করো। এবং তুমি তাদের ব্যাপারে সালাত করো (সমর্থন-সহযোগিতা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করো)। নিশ্চয় তোমার সালাত তাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক হবে। এবং আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
১০:৮৭ :: এবং আমি মূসাকে ও তার ভাইকে ওহী করেছিলাম (এ মর্মে) যে, “তোমরা দুজন তোমাদের ক্বওমের জন্য মিসরে কয়েকটি গৃহ স্থাপন করো এবং তোমাদের গৃহসমূহকে ক্বিবলা (কেন্দ্র, Center) বানাও এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও”।
قَالُوا يَا شُعَيْبُ أَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ أَن نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا أَوْ أَن نَّفْعَلَ فِي أَمْوَالِنَا مَا نَشَاءُ إِنَّكَ لَأَنتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ
১১:৮৭ :: তারা বললো, “হে শোয়ায়েব, তোমার সালাত কি তোমাকে নির্দেশনা দেয় যে, আমরা তাদের দাসত্ব ছেড়ে দেবো আমাদের বাপদাদারা যাদের দাসত্ব করতো? অথবা আমরা যেন আমাদের মালসম্পদের ব্যাপারে যা আমাদের ইচ্ছা হয় তা না করি? নিশ্চয় তুমি, নিশ্চয় তুমিই সহিষ্ণু, সুবোধ”।
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ
১১:১১৪ :: সালাত প্রতিষ্ঠা করো দিনের দুই তরাফে (ভাগে) এবং রাত থেকে যুলাফায় (কাছাকাছি পর্যায়ের লগ্নসমূহে)। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে অপসারিত করে। এটা স্মরণকারীদের জন্য স্মরণীয় বিষয়।
وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ
১৩:২২ :: এবং যারা সবর (ধৈর্য-অধ্যবসায়) করে তাদের প্রভুর সন্তুষ্টির অন্বেষণে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে এবং ভালো দিয়ে মন্দকে দূর করে, তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে চূড়ান্ত আবাসের শুভ পরিণাম।
قُل لِّعِبَادِيَ الَّذِينَ آمَنُوا يُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خِلَالٌ
১৪:৩১ :: বলো আমার সেই বান্দাদেরকে যারা বিশ্বাস করেছে, যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যেন আমি তাদেরকে জীবিকা হিসেবে যা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে ঐ দিন আসার আগেই যাতে কোনো বেচা-কেনা এবং বন্ধুত্ব চলবে না।
رَّبَّنَا إِنِّي أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ الْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا الصَّلَاةَ فَاجْعَلْ أَفْئِدَةً مِّنَ النَّاسِ تَهْوِي إِلَيْهِمْ وَارْزُقْهُم مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ
১৪:৩৭ :: (ইবরাহীম আরো বললো,) “আমাদের প্রভু, নিশ্চয় আমি আবাসনে রেখেছি আমার উত্তরসূরীদের মধ্য থেকে একটি উপত্যকায় যা চাষাবাদযোগ্য নয়, যা আপনার ‘আল বায়তুল মুহাররমের’ (সংরক্ষিত প্রতিষ্ঠানের) কাছে। আমাদের প্রভু, এজন্য যে, যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং মানুষের অন্তরসমূহকে এমন বানিয়ে দিন যেন তারা তাদের দিকে অনুরাগপূর্ণ হয়, এবং তাদেরকে ফলফলাদি থেকে জীবিকা দান করুন, যেন তারা শোকর (কৃতজ্ঞতা) করে”।
رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
১৪:৪০ :: (ইবরাহীম আরো বললো), “আমাকে বানিয়ে দিন সালাত প্রতিষ্ঠাকারী এবং আমার উত্তরসূরীদের মধ্য থেকেও (সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন)। আমাদের প্রভু, (আমাদের) দুআ কবুল করুন”।
أَقِمِ الصَّلَاةَ لِدُلُوكِ الشَّمْسِ إِلَىٰ غَسَقِ اللَّيْلِ وَقُرْآنَ الْفَجْرِ إِنَّ قُرْآنَ الْفَجْرِ كَانَ مَشْهُودًا
১৭:৭৮ :: সালাত প্রতিষ্ঠা করো দুলুকিশ শামস (মধ্যাহ্নে সূর্য ঢলে পড়া) থেকে গাছাক্বিল লাইল (রাতের তমসাচ্ছন্নতা) পর্যন্ত সময়কালে। এবং ফজরের কুরআন পাঠ (খুবই গুরুত্বপূর্ণ)। নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ (বিশেষ) প্রত্যক্ষণীয় বিষয়।
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَـٰنَ أَيًّا مَّا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا
১৭:১১০ :: বলো, “আল্লাহ নামে ডাকো অথবা রহমান (পরম দয়াময়) নামে ডাকো, যে নামেই ডাকো, তাঁরই জন্য আসমাউল হুসনা (সুন্দর নামসমূহ)”। এবং তোমার সালাতকে অতি উচ্চমাত্রায় প্রকাশ করো না (উচ্চস্বরে সম্পাদন করো না) এবং সেটিকে অতি নিম্নমাত্রায়ও সম্পাদন করো না এবং সেটার মধ্যম মাত্রাই অবলম্বন করো।
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
১৯:৩১ :: এবং তিনি আমাকে সমৃদ্ধিময় করেছেন যেখানেই আমি (ঈসা) থাকি, এবং তিনি আমাকে ওয়াসিয়্যাত (বিশেষ নির্দেশ প্রদান) করেছেন সালাতের ও যাকাতের প্রতি যতদিন আমি স্থায়ী (জীবিত) থাকি।
وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
১৯:৫৫ :: এবং সে (ইসমাইল) তার পরিবার পরিজনকে সালাতের ও যাকাতের প্রতি আদেশ দিতো। এবং সে তার প্রভুর কাছে পছন্দনীয় ব্যক্তি ছিলো।
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا
১৯:৫৯ :: তারপর তাদের পরে পরবর্তীরা স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। তারা (পরবর্তীরা) সালাতকে নষ্ট করেছে এবং কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে। তারপর শীঘ্রই তারা বিপথগামিতার (অমঙ্গলের) সম্মুখীন হবে।
فَلَمَّا أَتَاهَا نُودِيَ يَا مُوسَىٰ
২০:১১ :: তারপর যখনি সে সেখানে (আগুনের কাছে) আসলো, তাকে ডেকে বলা হলো, “হে মূসা,
إِنِّي أَنَا رَبُّكَ فَاخْلَعْ نَعْلَيْكَ إِنَّكَ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى
২০:১২ :: নিশ্চয় আমি তোমার প্রভু। সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেলো, যেহেতু নিশ্চয় তুমি পবিত্র তুওয়া উপত্যকায় রয়েছো।
وَأَنَا اخْتَرْتُكَ فَاسْتَمِعْ لِمَا يُوحَىٰ
২০:১৩ :: এবং আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। সুতরাং তুমি শুনো যা ওয়াহী করা হচ্ছে।
إِنَّنِي أَنَا اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدْنِي وَأَقِمِ الصَّلَاةَ لِذِكْرِي
২০:১৪ :: নিশ্চয় আমি, আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ (সার্বভৌমত্ব ও উপাসনার অধিকারী) নেই, সুতরাং আমারই দাসত্ব করো এবং আমার স্মরণের (অনুশীলনের) জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো”।
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَىٰ
২০:১৩২ :: এবং তোমার পরিবার পরিজনকে সালাতের জন্য আদেশ দাও এবং নিজেও সেটির উপর দৃঢ় থাকো। আমি তোমার কাছে কোনো জীবিকা চাই না, আমিই তো তোমাকে জীবিকা দেই। এবং সত্যাগ্রহ ও স্রষ্টা-সচেতনতার জন্যই শুভ পরিণতি।
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ
২১:৭৩ :: এবং আমি তাদেরকে (ইবরাহীম, লূত, ইসহাক, ইয়াকুব প্রমুখকে) ইমাম (নেতা, অগ্রণী) বানিয়েছিলাম। তারা আমার আদেশের মাধ্যমে সঠিক পথ প্রদর্শন করতো এবং আমি তাদেরকে ওয়াহী করেছিলাম কল্যাণকর্ম সম্পাদনের জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যাকাত প্রদানের জন্য। এবং তারা ছিলো আমারই দাসত্বকারী।
الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَالصَّابِرِينَ عَلَىٰ مَا أَصَابَهُمْ وَالْمُقِيمِي الصَّلَاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
২২:৩৫ :: যারা (বিনম্রগণ) এমন যে, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয় তখন তাদের ক্বলবসমূহ কেঁপে উঠে এবং তাদের উপর যা (মুসিবত) আপতিত হয় সে বিষয়ে তারা সবরকারী (ধৈর্যশীল-অধ্যবসায়ী) হয় এবং সালাত প্রতিষ্ঠাকারী হয় এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ
২২:৩৯ :: যাদেরকে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হলো তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো, কারণ তাদের উপর যুলুম করা হয়েছে এবং নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম।
الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّا أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ
২২:৪০ :: যাদেরকে তাদের নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বের করে দেয়া হয়েছে শুধু এ কারণে যে, তারা বলে,’রব্বুনাল্লাহ’ (আল্লাহ আমাদের প্রভু)। এবং যদি আল্লাহ (তাঁর বিধানের বা প্রাকৃতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে) মানুষকে প্রতিহত না করতেন তাদের একদল দ্বারা অন্য দলকে, তাহলে অবশ্যই বিধ্বস্ত করা হতো সওয়ামি’ (নৈতিক সংশোধন ও প্রশিক্ষণমূলক স্বল্পকালীন অবস্থানের কেন্দ্রসমূহ) এবং বিয়া’ (ক্রয়বিক্রয় চুক্তি, অঙ্গীকার ও শপথ অনুষ্ঠানের কেন্দ্রসমূহ) এবং সালাওয়াত (সালাতের বা যোগাযোগ ও সমর্থন যোগানোর কেন্দ্রসমূহ) এবং মাসাজিদ (মসজিদসমূহ বা সাজদাহ সম্পাদনের কেন্দ্রসমূহ), যেগুলোতে আল্লাহর নাম খুব বেশি স্মরণ করা হয়। এবং নিশ্চয় আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান, শক্তিমান।
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
২২:৪১ :: যারা (আল্লাহকে প্রভু হিসেবে গ্রহণকারীরা) এমন যে, যদি আমি তাদেরকে পৃথিবীতে আবাসন কর্তৃত্ব (রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা) প্রদান করি তাহলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করবে এবং ন্যায় কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে। এবং সব ব্যাপারের চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহরই আয়ত্তে আছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ارْكَعُوا وَاسْجُدُوا وَاعْبُدُوا رَبَّكُمْ وَافْعَلُوا الْخَيْرَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
২২:৭৭ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা রুকূ' করো এবং সাজদাহ করো এবং তোমাদের প্রভুর দাসত্ব করো এবং কল্যাণকর্ম সম্পাদন করো, যেন তোমরা সফল হও।
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَـٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
২২:৭৮ :: এবং তোমরা আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করো যেরূপ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে বাছাই করেছেন, এবং তিনি জীবনব্যবস্থার মধ্যে তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা চাপাননি। (অনুসরণ করো) তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত (জীবনাচরণের স্বরূপ ও প্রকৃতি)। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিমূন (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী), আগেও এবং এর (কুরআনের) মধ্যেও। যেন রসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হয় এবং তোমরা মানবজাতির উপর সাক্ষী হও। সুতরাং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে আঁকড়ে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। উৎকৃষ্ট-অনুগ্রহশীল অভিভাবক এবং উৎকৃষ্ট-অনুগ্রহশীল সাহায্যকারী।
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
২৩:১ :: নিশ্চয় সফল হয়েছে মু’মিনগণ।
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
২৩:২ :: যারা তাদের সালাতের ক্ষেত্রে খাশিয়ূন (বিনীত)।
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
২৩:৩ :: এবং যারা অনর্থক কথা-কাজ থেকে বিমুখ।
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
২৩:৪ :: এবং যারা যাকাতের জন্য সক্রিয়।
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
২৩:৫ :: এবং যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী (সংরক্ষণকারী)।
إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
২৩:৬ :: তাদের স্বাধীনা স্ত্রী এবং ‘মা মালাকাত আইমান’ স্ত্রী (যাদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা প্রদায়ক ডানহাত পূর্ণরূপে অধিকৃত করেছে এরূপ নারীদের অন্তর্ভুক্ত স্ত্রী) প্রসঙ্গে ছাড়া। এক্ষেত্রে তারা নিন্দিত হবে না।
فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
২৩:৭ :: সুতরাং যারা সেটার বাইরে কাউকে তালাশ করবে, তারাই সীমালংঘনকারী হবে।
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
২৩:৮ :: এবং যারা তাদের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তদারককারী (শাব্দিক অর্থ: রাখাল)।
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَوَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
২৩:৯ :: এবং যারা তাদের সালাতসমূহের প্রতি হেফাযতকারী (যত্নবান)।
أُولَـٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
২৩:১০ :: তারাই ওয়ারিস হবে।
الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
২৩:১১ :: যারা ফিরদাওসের (জান্নাতের) ওয়ারিস হবে। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَن تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ
২৪:৩৬ :: (ঐ আলো জ্বালানো হয়) সেই প্রতিষ্ঠানসমূহে, যা সমুন্নত করতে আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন এবং যাতে তাঁর নামকে স্মরণ করা হয় এবং যাতে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ (পবিত্রতা জ্ঞাপন) করে ...
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ
২৪:৩৭ :: এমন পুরুষগণ, যাদেরকে তিজারাত (সাধারণ ব্যবসায়) এবং বাই’ (চুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমসম্পন্ন ব্যবসায়) অসেচতন করে না আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা থেকে এবং যাকাত প্রদান থেকে। তারা সেই দিনকে ভয় করে যেদিন ক্বলবসমূহ ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে।
لِيَجْزِيَهُمُ اللَّهُ أَحْسَنَ مَا عَمِلُوا وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
২৪:৩৮ :: যেন আল্লাহ তাদের কৃত সর্বোত্তম কাজ অনুযায়ী তাদেরকে পুরস্কার দেন এবং নিজ অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে বৃদ্ধি করে দেন। এবং আল্লাহ জীবিকা দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন হিসাব ছাড়া (তথা ধারণাতীত উৎস থেকে ও অধিক পরিমাণে)।
وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَعْمَالُهُمْ كَسَرَابٍ بِقِيعَةٍ يَحْسَبُهُ الظَّمْآنُ مَاءً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَهُ لَمْ يَجِدْهُ شَيْئًا وَوَجَدَ اللَّهَ عِندَهُ فَوَفَّاهُ حِسَابَهُ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ
২৪:৩৯ :: এবং যারা কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করেছে তাদের কর্মসমূহ মরুভূমির মরিচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি সেটাকে পানি হিসেবে ধারণা করে। শেষ পর্যন্ত যখন সে সেখানে পৌঁছে, সে সেখানে কিছুই পায় না। এবং সে তার কাছে পায় আল্লাহকে। তখন তিনি তাকে তার হিসাব পূর্ণ করে দেন। এবং আল্লাহ হিসাবকরণে দ্রুততম।
أَوْ كَظُلُمَاتٍ فِي بَحْرٍ لُّجِّيٍّ يَغْشَاهُ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ مَوْجٌ مِّن فَوْقِهِ سَحَابٌ ظُلُمَاتٌ بَعْضُهَا فَوْقَ بَعْضٍ إِذَا أَخْرَجَ يَدَهُ لَمْ يَكَدْ يَرَاهَا وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ
২৪:৪০ :: অথবা তা এমন যেন গভীর সমুদ্রের মধ্যে অন্ধকার, সেটিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে একটি ঢেউ, সেটির উপর আছে আরেকটি ঢেউ, সেটির উপর আছে মেঘমালা, এক স্তরের উপর অন্য স্তরের অন্ধকার, যখন সে তার হাত বের করে সে তা আদৌ দেখতে পায় না। এবং আল্লাহ যাকে আলো দেননি তার জন্য কোনো আলো নেই।
أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُسَبِّحُ لَهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالطَّيْرُ صَافَّاتٍ كُلٌّ قَدْ عَلِمَ صَلَاتَهُ وَتَسْبِيحَهُ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ
২৪:৪১ :: তুমি কি ভেবে দেখনি যে, আল্লাহরই তাসবীহ (পবিত্রতা জ্ঞাপন) করছে যারা আছে আকাশমন্ডলীতে ও পৃথিবীতে এবং সারিবদ্ধভাবে উড়ন্ত পাখি। প্রত্যেকেই জেনেছে তার সালাত এবং তার তাসবীহ। এবং তারা যা করে আল্লাহ তা সম্যক পরিজ্ঞাত।
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
২৪:৫৬ :: এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং রসূলের আনুগত্য করো, যেন তোমাদেরকে দয়া করা হয়।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِيَسْتَأْذِنكُمُ الَّذِينَ مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ وَالَّذِينَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنكُمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ مِّن قَبْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ الظَّهِيرَةِ وَمِن بَعْدِ صَلَاةِ الْعِشَاءِ ثَلَاثُ عَوْرَاتٍ لَّكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌ بَعْدَهُنَّ طَوَّافُونَ عَلَيْكُم بَعْضُكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
২৪:৫৮ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যেন তোমাদের অনুমতি নেয় ‘আল্লাযীনা মালাকাত আইমান’ (যাদেরকে তোমাদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা প্রদায়ক ডানহাত পূর্ণরূপে অধিকৃত করেছে তারা) এবং তোমাদের মধ্যকার যারা এখনো বুঝার বয়সে পৌঁছেনি তারা, তিনটি সময়সীমায়: সালাতিল ফজরের আগে এবং যহীরাতে (দুপুরে) তোমাদের পোশাকাদি খুলে (বিশ্রাম নেয়ার) সময়কালে এবং সালাতিল ইশার পরে। এ তিনটি তোমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সময়। এগুলোর পরে অন্য সময় তোমাদের একে অপরের প্রসঙ্গে (পারস্পরিক প্রয়োজনে) তোমাদের কাছে সাধারণ যাতায়াতকারী হলে তাতে তোমাদের উপর এবং তাদের উপর দোষ নেই। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহকে স্পষ্টভাবে বিশদ বর্ণনা করেন। এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।
طس تِلْكَ آيَاتُ الْقُرْآنِ وَكِتَابٍ مُّبِينٍ
২৭:১ :: ত্বোয়া সীন। এগুলো কুরআনের ও স্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
هُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
২৭:২ :: মু’মিনদের জন্য পথনির্দেশ ও সুসংবাদ।
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
২৭:৩ :: যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এ অবস্থায় যে, তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চয়তাবোধ রাখে।
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَلَذِكْرُ اللَّهِ أَكْبَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَصْنَعُونَ
২৯:৪৫ :: তুমি তিলাওয়াত কর যা তোমার প্রতি কিতাব (স্রষ্টার বিধানগ্রন্থ) থেকে ওয়াহী করা হয়েছে। এবং তুমি সালাত প্রতিষ্ঠা কর। নিশ্চয় সালাত অশ্লীলতা থেকে ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে/ বিরত রাখে। এবং আল্লাহর স্মরণই সবচেয়ে বড় (স্মরণীয় বিষয়)। এবং তোমরা যা তৈরি করো আল্লাহ তা জানেন।
فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
৩০:৩০ :: সুতরাং তোমার মুখমণ্ডলকো/ সত্তাকে দ্বীনের (জীবনব্যবস্থার) জন্য একনিষ্ঠভাবে প্রতিষ্ঠা করো। এটাই আল্লাহর ফিতরাত (নির্ধারিত প্রকৃতি) যার উপযোগী করে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো বদল নেই (২)। এটাই সঠিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জ্ঞানার্জন করে না।
(২) অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যের জন্য যা সৃষ্টি করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যের জন্য তাই লাগবে এবং যে উদ্দেশ্যে যা সৃষ্টি করা হয়েছে সে উদ্দেশ্যেই তা প্রয়োগ করা যথাযথ।
مُنِيبِينَ إِلَيْهِ وَاتَّقُوهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
৩০:৩১ :: তাঁর (আল্লাহর) দিকে অভিমুখী হও এবং তাঁর প্রতি সচেতন হও এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং মুশরিকদের (আল্লাহর সাথে অংশীবাদীদের) অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ
৩১:২ :: এগুলো বিজ্ঞতাপূর্ণ কিতাবের আয়াত।
هُدًى وَرَحْمَةً لِّلْمُحْسِنِينَ
৩১:৩ :: মুহসিনদের (উত্তম আচরণকারীদের) জন্য পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ।
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
৩১:৪ :: যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এ অব্স্থায় যে, তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চয়তাবোধ রাখে।
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ
৩১:১৭ :: (লুকমান তার পুত্রকে আরো বলেছিলো,) “হে আমার পুত্র, সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং ন্যায় কাজের আদেশ দাও এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করো এবং তোমার উপর যা (মুসিবত) আপতিত হয় তার মোকাবেলায় সবর (ধৈর্যের সাথে তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা) করো। নিশ্চয় তা দৃঢ় সিদ্ধান্তের কাজসমূহের অন্তর্ভুক্ত”।
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
৩৩:৩৩ :: তোমরা স্বস্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করো তোমাদের ঘরসমূহে। এবং তোমরা প্রদর্শন করো না পূর্বতন জাহিলিয়্যাতের প্রদর্শনী। এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। নিশ্চয় আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের থেকে অপরিচ্ছন্নতা সরিয়ে দিতে, হে গৃহবাসী, এবং তোমাদেরকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করতে।
هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَائِكَتُهُ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا
৩৩:৪৩ :: তিনি (আল্লাহ) ও তাঁর ফেরেশতাগণ তোমাদের প্রতি সালাত করেন (অনুগ্রহ করেন বা আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন), তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনার জন্য, এবং তিনি মু’মিনদের প্রতি দয়াশীল।
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
৩৩:৫৬ :: নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত করেন (অনুগ্রহ করেন বা আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন)। হে যারা বিশ্বাস করেছো, তোমরা তার প্রতি সালাত করো (সমর্থন-সহযোগিতা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করো)। এবং তোমরা তাসলীম (নিরবচ্ছিন্নভাবে আত্মসমর্পণ) করো।
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
৩৫:১৮ :: এবং কোনো বোঝা বহনকারী অন্য কারো বোঝা বহন করবে না। এবং যদি কোনো ভারাক্রান্ত ব্যক্তি তার বোঝা বহনের দিকে ডাকে, তবুও তার পক্ষ থেকে কিছুমাত্রও বহন করা হবে না, যদিও কোনো নিকটাত্মীয় হয়। নিশ্চয় তুমি তাদেরকেই সতর্ক করতে পারো যারা তাদের প্রভুকে অদেখা সত্ত্বেও (তাঁর আদেশ লংঘনের শাস্তির) ভয় করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। এবং যে পরিশুদ্ধ হয় নিশ্চয় সে নিজ কল্যাণেই পরিশুদ্ধ হয়। এবং আল্লাহরই কাছে প্রত্যাবর্তন।
إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَّن تَبُورَ
৩৫:২৯ :: নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারাই এমন ব্যবসায়ের আশা করতে পারে যাতে কোনো লোকসান হবে না।
وَالَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَمْرُهُمْ شُورَىٰ بَيْنَهُمْ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
৪২:৩৮ :: এবং যারা তাদের প্রভুর ডাকে সাড়া দেয় এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের মধ্যে শূরার (পরামর্শের) মাধ্যমে তাদের সমষ্টিগত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
أَأَشْفَقْتُمْ أَن تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍ فَإِذْ لَمْ تَفْعَلُوا وَتَابَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
৫৮:১৩ :: তোমরা কি উদ্বিগ্নতা অনুভব করো এ ব্যাপারে যে, তোমরা (রসূলের সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে) তোমাদের একান্তে কথা বলার আগে সদাক্বাত দিবে? তারপর যখন তোমরা (সামর্থ্যের অভাবে) তা পালন করোনি এবং আল্লাহ (পূর্বে জানানো ঘোষণা অনুযায়ী) তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, সুতরাং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। এবং তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্যক অবগত।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
৬২:৯ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যখন ইয়াওমুল জুমুআতে (জমায়েতের দিনে) সালাতের জন্য (তোমাদেরকে) ডাকা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ব্যবসা কার্যক্রম (তথা পেশাগত কর্ম) ত্যাগ করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানো।
فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
৬২:১০ :: তারপর যখন তোমরা সালাত কাযা (যথানিয়মে সম্পাদন) করো, তারপর তোমরা পৃথিবীতে (তথা কর্মক্ষেত্রে) ছড়িয়ে পড়ো এবং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ (তথা জীবিকা, শিক্ষা প্রভৃতি) তালাশ করো এবং বেশি পরিমাণে আল্লাহর স্মরণ করো, যেন তোমরা সফল হও।
وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً أَوْ لَهْوًا انفَضُّوا إِلَيْهَا وَتَرَكُوكَ قَائِمًا قُلْ مَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ مِّنَ اللَّهْوِ وَمِنَ التِّجَارَةِ وَاللَّهُ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
৬২:১১ :: এবং যখন তারা ব্যবসা এবং ক্রীড়া-কৌতুক দেখলো, তখন তারা সেটার দিকে ছুটে গেলো এ অবস্থায় যে, তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় ছেড়ে গেলো। বলো, “যা আল্লাহর কাছে আছে সেটাই ক্রীড়া-কৌতুক এবং ব্যবসায়ের চেয়ে উত্তম। এবং আল্লাহই উত্তম জীবিকাদাতা”।
إِنَّ الْإِنسَانَ خُلِقَ هَلُوعًا
৭০:১৯ :: নিশ্চয় মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থিরমনা করে।
إِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوعًا
৭০:২০ :: যখন তাকে কোনো অমঙ্গল স্পর্শ করে তখন সে হয় হাহুতাশকারী।
وَإِذَا مَسَّهُ الْخَيْرُ مَنُوعًا
৭০:২১ :: এবং যখন তাকে কোনো মঙ্গল স্পর্শ করে তখন সে হয় সেটির সরবরাহ রোধকারী (মজুদদার)।
إِلَّا الْمُصَلِّينَ
৭০:২২ :: মুসল্লীগণ (সালাতকারীগণ) ছাড়া।
الَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ دَائِمُونَ
৭০:২৩ :: যারা হয় তাদের সালাতের উপর স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত।
وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَّعْلُومٌ
৭০:২৪ :: এবং যাদের সম্পদে পরিজ্ঞাত হক (স্ব-স্বীকৃত অধিকার) রয়েছে।
لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
৭০:২৫ :: সাহায্যপ্রার্থী, প্রশ্নকর্তা (উত্তর অনুসন্ধানী/গবেষক) এবং (ন্যুনতম চাহিদার যোগান থেকে) বঞ্চিতদের জন্য।
وَالَّذِينَ يُصَدِّقُونَ بِيَوْمِ الدِّينِ
৭০:২৬ :: এবং যারা বিচার দিবসকে সত্য সাব্যস্ত করে।
وَالَّذِينَ هُم مِّنْ عَذَابِ رَبِّهِم مُّشْفِقُونَ
৭০:২৭ :: এবং যারা তাদের প্রভুর শাস্তি প্রসঙ্গে উদ্বিগ্ন থাকে।
إِنَّ عَذَابَ رَبِّهِمْ غَيْرُ مَأْمُونٍ
৭০:২৮ :: নিশ্চয় তাদের প্রভুর শাস্তি থেকে নিজেকে নিরাপদ ভাবা যায় না।
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ
৭০:২৯ :: এবং যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী (সংরক্ষণকারী)।
إِلَّا عَلَىٰ أَزْوَاجِهِمْ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ
৭০:৩০ :: তাদের স্বাধীনা স্ত্রী এবং ‘মা মালাকাত আইমান’ স্ত্রী (যাদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা প্রদায়ক ডানহাত পূর্ণরূপে অধিকৃত করেছে এরূপ নারীদের অন্তর্ভুক্ত স্ত্রী) প্রসঙ্গে ছাড়া। এক্ষেত্রে তারা নিন্দিত হবে না।
فَمَنِ ابْتَغَىٰ وَرَاءَ ذَٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
৭০:৩১ :: সুতরাং যারা সেটির বাইরে কাউকে তালাশ করবে, তারাই সীমালংঘনকারী হবে।
وَالَّذِينَ هُمْ لِأَمَانَاتِهِمْ وَعَهْدِهِمْ رَاعُونَ
৭০:৩২ :: এবং যারা তাদের আমানাত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তদারককারী (শাব্দিক অর্থ: রাখাল)।
وَالَّذِينَ هُم بِشَهَادَاتِهِمْ قَائِمُونَ
৭০:৩৩ :: এবং যারা তাদের সাক্ষ্যের প্রতি (দায়িত্বশীলতার উপর) প্রতিষ্ঠিত।
وَالَّذِينَ هُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
৭০:৩৪ :: এবং যারা তাদের সালাতের প্রতি হেফাযতকারী (যত্নবান)।
أُولَـٰئِكَ فِي جَنَّاتٍ مُّكْرَمُونَ
৭০:৩৫ :: তারা থাকবে জান্নাতে সম্মানিত।
إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِّنَ الَّذِينَ مَعَكَ وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৭৩:২০ :: নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো রাতের প্রায় তিনভাগের দুইভাগ এবং (কখনো) রাতের অর্ধেক এবং (কখনো) রাতের তিনভাগের একভাগ। এবং যারা তোমার সাথে আছে তাদের একটি দলও (অনুরূপ করে)। এবং আল্লাহ রাত ও দিনের পরিমাপ নির্ধারণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা হুবহু হিসাব করতে পারো না। সুতরাং তিনি তোমাদের উপর (ওজরের ক্ষেত্রে) ক্ষমাপরবশ। সুতরাং তোমরা কুরআন থেকে পাঠ করো, যতটুকু সহজসাধ্য হয়। তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অসুস্থ হবে। এবং অন্য অনেকে আল্লাহর অনুগ্রহ (তথা জীবিকা, শিক্ষা প্রভৃতি) তালাশ করতে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে। এবং অন্য অনেকে আল্লাহর পথে যুদ্ধাভিযানে থাকবে। সুতরাং তোমরা তা (কুরআন) থেকে পাঠ করো, যতটুকু সহজসাধ্য হয়। এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে ঋণ দাও, উত্তম ঋণ। এবং তোমরা নিজেদের কল্যাণে কল্যাণকর্ম থেকে যা আগে পাঠাবে তোমরা আল্লাহর কাছে তা (তার শুভ প্রতিফল) পাবে। সেটাই উত্তম এবং প্রতিফল হিসেবে মহিমান্বিত। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ رَهِينَةٌ
৭৪:৩৮ :: প্রত্যেক ব্যক্তি যা উপার্জন করে (যে কর্ম সম্পাদন করে), সেজন্য সে দায়বদ্ধ।
إِلَّا أَصْحَابَ الْيَمِينِ
৭৪:৩৯ :: ডানপন্থীরা ছাড়া।
فِي جَنَّاتٍ يَتَسَاءَلُونَ
৭৪:৪০ :: তারা (ডানপন্থীরা) জান্নাতে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
عَنِ الْمُجْرِمِينَ
৭৪:৪১ :: অপরাধীদের সম্পর্কে।
مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ
৭৪:৪২ :: কিসে তোমাদেরকে সাক্বারে (অসহ্য উষ্ণ জাহান্নামে) ঢুকিয়ে দিয়েছে?
قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّينَ
৭৪:৪৩ :: তারা বলবে, “আমরা মুসল্লীদের (সালাতকারীদের) অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না।
وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِينَ
৭৪:৪৪ :: এবং আমরা অভাবগ্রস্তদের অন্নসংস্থান করতাম না।
وَكُنَّا نَخُوضُ مَعَ الْخَائِضِينَ
৭৪:৪৫ :: এবং আমরা নিরর্থক ও অশোভন আলোচনা-সমালোচনাকারীদের সাথে (একযোগে) আলোচনা-সমালোচনা করতাম।
وَكُنَّا نُكَذِّبُ بِيَوْمِ الدِّينِ
৭৪:৪৬ :: এবং আমরা বিচার দিবসকে মিথ্যা আরোপ করতাম।
حَتَّىٰ أَتَانَا الْيَقِينُ
৭৪:৪৭ :: যতক্ষণ না আমাদের কাছে নিশ্চিত বিষয়টি (মৃত্যু) এসে গেলো”।
فَمَا تَنفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
৭৪:৪৮ :: সুতরাং শাফায়াতকারীদের শাফায়াত (সুপারিশ) তাদের কোনো কাজে আসবে না।
كَلَّا إِذَا بَلَغَتِ التَّرَاقِيَ
৭৫:২৬ :: কক্ষণো না (তোমাদের উদাসীনতা সঙ্গত নয়)। যখন (প্রাণ) কণ্ঠ সন্ধিতে পৌঁছে যাবে।
وَقِيلَ مَنْ رَاقٍ
৭৫:২৭ :: এবং বলা হবে, “সারিয়ে উঠানোর কেউ আছে?”
وَظَنَّ أَنَّهُ الْفِرَاقُ
৭৫:২৮ :: এবং সে (মুমুর্ষু ব্যক্তি) ধারণা করবে যে, নিশ্চয় তা বিদায় বেলা।
وَالْتَفَّتِ السَّاقُ بِالسَّاقِ
৭৫:২৯ :: এবং এক পায়ের গোছার সাথে আরেক পায়ের গোছা জড়িয়ে যাবে।
إِلَىٰ رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمَسَاقُ
৭৫:৩০ :: তোমার প্রভুর দিকেই সেদিন চালিয়ে নেয়া হবে।
فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلَّىٰ
৭৫:৩১ :: অথচ সে সত্যতা প্রতিপাদন করেনি এবং সালাত করেনি।
وَلَـٰكِن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ
৭৫:৩২ :: কিন্তু সে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে এবং বিমুখ হয়ে ফিরে গেছে।
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ
৮৭:১৪ :: নিশ্চয় সে-ই সফল হয়েছে যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।
وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ
৮৭:১৫ :: এবং সে তার প্রভুর নাম স্মরণ রেখেছে। তারপর, সে সালাত করেছে।
أَرَأَيْتَ الَّذِي يَنْهَىٰ
৯৬:৯ ::তুমি কি তার ব্যাপারটা ভেবে দেখেছো যে নিষেধ করে;
عَبْدًا إِذَا صَلَّىٰ
৯৬:১০ :: এক বান্দাকে, যখন সে সালাত করে?
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
৯৮:৫ :: এবং তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়নি এছাড়া যে, যেস তারা আল্লাহর দাসত্ব করে তাঁরই জন্য জীবনব্যবস্থাকে খাঁটি করে, সত্যের প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে। এবং সেটিই (সঠিক ভিত্তির উপর) সুপ্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা।
أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّينِ
১০৭:১ :: তুমি কি তার ব্যাপারে ভেবে দেখেছো যে (সঠিক) জীবনব্যবস্থার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে?
فَذَٰلِكَ الَّذِي يَدُعُّ الْيَتِيمَ
১০৭:২ :: এরূপ লোকই ইয়াতীমকে ধাক্কা দেয়।
وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ الْمِسْكِينِ
১০৭:৩ :: এবং অভাবগ্রস্তদের অন্নসংস্থানে উৎসাহিত করে না।
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّينَ
১০৭:৪ :: সুতরাং ঐ মুসল্লিদের (সালাতকারীদের) জন্য ধ্বংস।
الَّذِينَ هُمْ عَن صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ
১০৭:৫ :: যারা তাদের সালাতের (যথোপযুক্ত অনুশীলনের) ব্যাপারে উদাসীন।
الَّذِينَ هُمْ يُرَاءُونَ
১০৭:৬ :: যারা প্রদর্শনীর জন্য কর্ম সম্পাদন করে।
وَيَمْنَعُونَ الْمَاعُونَ
১০৭:৭ :: এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা উপকরণ সহজলভ্যকরণকে রোধ করে।
إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
১০৮:১ :: নিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার (প্রচুর কল্যাণের উপকরণ) দিয়েছি।
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
১০৮:২ :: সুতরাং তোমার প্রভুর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সালাত করো এবং নহর করো (জ্ঞানের গভীরতা অর্জন ও প্রয়োগ, সমষ্টিগত কল্যাণার্থে ব্যক্তিগত উৎসর্গ এবং আদর্শিক আপোষহীনতা অবলম্বন করো) (৩) ।
(৩) নহর শব্দটি একটি বহু অর্থবোধক শব্দ। “নাহারতুশ শাইয়া ইলমা” অর্থ “আমি বিষয়টি গভীরভাবে জেনেছি”। তাই “নহর করা” শব্দের একটি অর্থ হলো “জ্ঞানের গভীরতা অর্জন ও প্রয়োগ করা”। এছাড়া শব্দটির আরো কিছু আভিধানিক অর্থ হলো: বুকের উপরের অংশে / কণ্ঠাস্থিতে আঘাত করা, আত্মাহুতি, পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করে প্রতিরোধের জন্য মুখোমুখি দাঁড়ানো, নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করা ইত্যাদি। সালাত ও কুরবানির সাথে সম্পর্কিত করে এর আরো কিছু অর্থ করা হয়, যেমন: আত্মনিবেদিত ভঙ্গিতে কোনো দিকে মুখ করে দাঁড়ানো, বুকের উপরের অংশে হাত রাখা, এক হাতের উপর অন্য হাত রাখা, কান পর্যন্ত হাত তোলা, উট কুরবানি করা ইত্যাদি।
إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
১০৮:৩ :: নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতাকারী শিকড় কাটা।