ইশতেহার
বিশ্বজগতের প্রতিপালকের মনোনীত, মানবজাতির ইমাম ইব্রাহিম আ. এর জীবনকেন্দ্রিক কুরআনের শিক্ষামূলক আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি ইব্রাহিম আ. কে যখন স্রষ্টার জন্য অনন্য প্রতিম প্রতিষ্ঠান স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন কাজটির পরিসর কেবল তার যুগের জন্য নয়, বরং তার পরবর্তী বংশধর এবং আগত মানবজাতির জন্য ছিলো। সেই একই উদাহরণের শিক্ষা থেকে আমরা দি ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশনের (দি ইক্বরা) অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছি।
আমরা বিশ্বাস করি কুরআনের শাশ্বত বাণী ও শিক্ষা সব যুগের উপযোগী। কুরআনের শিক্ষাকে অন্য যেকোনো অকুরআনিক উৎসের উর্ধ্বে উঠে পক্ষপাতমুক্ত পাঠ ও পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্য নিয়ে দি ইক্বরার যাত্রা। কুরআন অধ্যয়নের ক্ষেত্রে প্রথম নীতি (ফার্স্ট প্রিন্সিপ্যাল) প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা সামগ্রিক কুরআন থেকেই কুরআন অধ্যয়ন করার অঙ্গিকারবদ্ধ।
আমরা বিশ্বাস করি কুরআন কেবল অলস ও নিস্ক্রিয় পাঠের কোনো গ্রন্থ নয়। কুরআনের বাণী অনুসারে কুরআন একটি অধ্যয়ন, গবেষণা ও প্রায়োগিক নীতিমালার গ্রন্থ যা আমাদের শাশ্বত মূলনীতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় যা বিশ্বজনীন যেকোনো সময় ও স্থানে প্রয়োগ করার মতোই উদার ও সার্বজনীন।
কুরআনের অন্যতম দাবী হলো এটি নিয়ে অধ্যয়ন, গভীর ভাবনা ও গবেষণা করা এবং সেই সাথে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এর অনুশীলন করা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইক্বরার একটি দিক হলো কুরআনিক রিসার্চ এবং অন্য দিকটি হলো বাস্তব প্রয়োগ। কুরআন মানুষকে প্রদত্ত দিক নির্দেশনা ও বাস্তব জীবনে প্রয়োগের মূল নীতিমালা সমৃদ্ধ একটি সংবিধান সংবলিত গ্রন্থ যা দাবী করে আমাদের জীবনে এর বাস্তব প্রয়োগ, যেটিকে ঘিরে ইক্বরার অন্যতম প্রচেষ্টা থাকবে সমসাময়িক সময়ে কুরআনের শিক্ষার যুগোপযুগি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় বুনিয়াদি কাজ করা।
যেকোনো কাজকে টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া জরুরী যেন কাজটি কেবল এক বা একাধিক ব্যক্তির চেষ্টায় সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং সময়ের সীমাকে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। সে চিন্তা থেকেই দি ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশনের প্রস্তাবনা।
ভিশন
বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।
মিশন
কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।
কাজের পরিধি
ইক্বরার কাজের পরিধির মধ্যে রয়েছে: কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণা, প্রকাশনা ও সংযোগ, সমসাময়িক বিশ্লেষণ ও পরামর্শ এবং সমাজ কল্যাণ। নিম্নে এ কর্মসূচীগুলো সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
১. কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণা
আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে (১৪:১, ২:১২১, ৪৭:২৪, ৫৪:১৭,২২,৩২,৪০ প্রভৃতি) কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য এবং কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে বিশ্বপ্রভুর গ্রন্থ থেকে সঠিক তথ্য ও বিধান জানার জন্য কুরআন অধ্যয়ন এবং গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তাই ইক্বরার কাজের পরিধির মধ্যে ‘কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণাকে’ অন্যতম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
২. প্রকাশনা ও সংযোগ
আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে (২:১৫৮-১৫৯, ৩:১৮৭, ২:১৭৪, ৭:২০৪ প্রভৃতি) আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব তথা আল কুরআনের শিক্ষা গোপন না রেখে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা এবং কলম তথা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেই শিক্ষার বিস্তার ঘটানো ও পারস্পরিক সংযোগ ও যোগাযোগের মাধ্যমে কুরআনের শিক্ষা চর্চার নির্দেশনা রয়েছে। কুরআন গবেষণার মাধ্যমে মানব জীবনের জন্য মৌলিক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে উন্মোচিত তথ্যের প্রকাশ ও প্রচারের জন্য প্রকাশনা ও সামাজিক যোগাযোগমূলক কাজের প্রয়োজন হয়। তাই ‘প্রকাশনা ও সংযোগকে’ ইক্বরার একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
৩. সমসাময়িক বিশ্লেষণ ও পরামর্শ
আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে (৪:৮৩, ৪৯:৬, ৪২:৩৮, ৪:৮৫ প্রভৃতি) সমসাময়িক পরিস্থিতির যথাযথ বিশ্লেষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ এবং পরস্পরকে ধৈর্য ও দয়া দাক্ষিণ্যের উপদেশ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আল কুরআনের শিক্ষার প্রয়োগের জন্য ‘সমকালীন জীবন পদ্ধতি ও সমাজ সম্পর্ক নিয়ে বাস্তবমুখী বিশ্লেষণ ও পরামর্শকে’ ইক্বরার একটি বিশেষ কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, যেন যুগোপযোগী যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি জনসচেতনতায় ভূমিকা পালন করা যেতে পারে।
৪. সমাজ কল্যাণ
আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে (৯০:১১-১৬, ১৬:৯০, ৩:১১০, ২:১৪৮ প্রভৃতি) সমাজ কল্যাণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই ব্যক্তিগত সচ্চরিত্র গঠনের পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে সমাজ কল্যাণে ভূমিকা রাখার বিষয়ে কুরআনের শিক্ষা অনুসারে ইক্বরা সাধ্যমতো সমাজ কল্যাণে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর।
সহযোগিতা
ইক্বরার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী বাস্তবায়নমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন বিশেষায়িত জ্ঞানের ও দক্ষতার মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে আপনি ইক্বরার কার্যক্রমে বিভিন্ন উপায়ে সহযোগিতা করতে পারেন, যেমন: কুরআন গবেষণার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ এবং কুরআনকেন্দ্রিক বই, প্রবন্ধ বা আলোচনা আরবি থেকে বাংলা, ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজে অংশগ্রহণ। এছাড়া আমাদের কার্যক্রমের জন্য আরো বিভিন্ন সহায়তার সুযোগ রয়েছে যেমন: কারিগরি দিক, অর্থনৈতিক, প্রকাশনা ও সংযোগ ইত্যাদি।
যোগাযোগ
ইক্বরার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী বাস্তবায়নমূলক কাজের জন্য বিভিন্ন বিশেষায়িত জ্ঞানের ও দক্ষতার মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। ইক্বরার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, সহযোগিতা বা ইক্বরার সাথে যোগাযোগের জন্য আপনি নিম্নের ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন: the.iqra@yandex.com
বহুল জিজ্ঞাস্য প্রশ্নোত্তর
ইক্করা কি?
’ইক্বরা’ শব্দটি কুরআন নাজিল হওয়ার ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে নবী মুহাম্মদ স. এর নিকট আসা প্রথম নির্দেশ ছিলো যা পরবর্তীতে সূরা আলাকের প্রথম আয়াত হিসাবে সংরক্ষিত। বিশেষজ্ঞরা শব্দটিকে প্রথম নাজিল হওয়া আয়াতের অংশ বলেও ধারণা করেন। ’ইক্বরা’ যার আক্ষরিক অর্থ পাঠ করা, অধ্যয়ন করা - তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সম্পূর্ণ নাম, The Institute for Quranic Research & Application, দি ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন এর সংক্ষেপিত রূপ হিসেবে দি ইক্বরা (The IQRA) বা সংক্ষেত্রে ইক্বরা (IQRA) রাখা হয়েছে।
এটি সুউচ্চ মহান প্রতিপালক, যিনি দুর্বল বান্দার জন্য সহায়, সেই সার্বভৌমত্বের প্রকৃত অধিকারী, আল্লাহর অনুমতি ও তাঁর প্রদত্ত সামর্থ্যের উপর নির্ভরশীল একটি প্রস্তাবিত ইন্সটিটিউট বা প্রতিষ্ঠান যার কাজ কুরআনের বিধান অধ্যয়ন, গবেষণা, শিক্ষালাভ ও বাস্তব জীবন ও পৃথিবীতে প্রয়োগের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া।
ইন্সটিটিউট বা প্রতিষ্ঠান কেন?
আর আল্লাহ তাদেরকে বাড়িয়ে দিবেন হিদায়াত যারা সঠিক পথে চলে। আর স্থায়ী সৎকর্মসমূহই তোমার রবের কাছে উত্তম, প্রতিফলের বিষয় হিসাবেও আর উত্তম, পরিণতির বিষয় হিসাবেও। - ১৯:৭৬
যখন কোনো কাজ কোনো ব্যক্তি কেন্দ্রিক বা কয়েকজন ব্যক্তি নির্ভর না হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক হয় তখনি কাজটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। কুরআনে ইব্রাহিম আ. এর কাবার ভিত্তি স্থাপনের পর মহান প্রভুর কাছে যে দোয়া করেন, তা থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে তিনি আগামী দিনের দিকে লক্ষ্য স্থির রেখে সামনের মানুষদের জন্য টেকসই ও দীর্ঘস্থায়িত্বের দোয়া করেন যেন তাঁর এই প্রয়াস ভবিষ্যতের মানুষদের জন্য পাথেয় হয়, যেন তারা ঐশী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁর শুরু করা কাজে অংশগ্রহণ করতে ও উপকৃত হতে পারে।
কুরআনকে অবহেলা, অকেজো ও পেছনে ফেলে রাখার যে রূগ্নতায় আমরা আজ রুগ্ন, তা থেকে উত্তরণ একটি দীর্ঘসময়ের কাজ। এ কাজ কয়েক বছরের বা কয়েকজনের নয়, এটা দীর্ঘ এবং সম্ভবত কয়েক জেনারেশনের বটেই। সেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে আমরা মনে করছি যে এই কাজটি একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলেই সেটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। কুরআনের জ্ঞানকে যুগোপযোগী করে অধ্যয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এর বাস্তবায়নও স্বাভাবিক কারণেই চলমান থাকবে। এ কারণেই আমাদের চিন্তা ও প্রচেষ্টা ইন্সটিটিউট কেন্দ্রিক বা প্রাতিষ্ঠানিক।
ইক্বরার শুরু কবে থেকে?
২০১৯ এর শেষের দিক, তথা নভেম্বর থেকে আমাদের গবেষণামূল কাজ, অধ্যয়ন ও লেখালেখি শুরু হয়। ২০২০ সাল জুড়ে আমরা মূলত বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়ন এবং সেই অধ্যয়নের ফসল হিসেবে, প্রতিপালকের সহায়তায় কুরআনের কিছু মৌলিক বিষয়ে বই লিখতে সক্ষম হয়েছি যা এই ওয়েবসাইটে ফ্রি পাঠ ও ডাউনলোডের জন্য আপলোড করা আছে।