পাঠসূচী

কাজের পরিধি

ইক্বরার কাজের পরিধির মধ্যে রয়েছে: কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণা, প্রকাশনা ও সংযোগ, সমসাময়িক বিশ্লেষণ ও পরামর্শ এবং সমাজ কল্যাণ। নিম্নে এ কর্মসূচীগুলো সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।


১. কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণা

১৪:১ :: আলিফ-লাম-রা; এটি একটি গ্রন্থ, যা আমরা তোমার প্রতি নাযিল করেছি- যাতে তুমি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারো- তাদের পরাক্রান্ত, প্রশংসার যোগ্য পালনকর্তার অনুমতিক্রমে তাঁরই পথের দিকে।

২:১২১ :: যাদেরকে আমি কিতাব দিয়েছি তাদের মধ্যকার যারা যথাযথভাবে (সঠিক নীতিমালা অনুসরণ করে) তা অধ্যয়ন করে (হাক্বক্বা তিলাওয়াত) তারাই তাতে ঈমান রাখে। আর যারা (এর দায়বদ্ধতাকে) প্রত্যাখ্যানকারী, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

৪৭:২৪ :: তবে কি তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা (তাদাব্বুর) করে না, নাকি (তাদের) অন্তরসমূহের উপর অনেক তালা লাগিয়ে রেখেছে?

৫৪:১৭,২২,৩২,৪০ :: নিশ্চয় আমি কুরআনকে স্মরণ ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করেছি। সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহসহ বিভিন্ন আয়াতে আল কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য এবং কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বিশ্বাস ও কর্মের ক্ষেত্রে বিশ্বপ্রভুর গ্রন্থ থেকে সঠিক তথ্য ও বিধান জানার জন্য কুরআন অধ্যয়ন এবং গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। তাই ইক্বরার কাজের পরিধির মধ্যে ‘কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণাকে’ অন্যতম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।


২. প্রকাশনা ও সংযোগ

২:১৫৮-১৫৯ :: নিশ্চয় যারা তা গোপন রাখে যা আমি সুষ্পষ্ট যৌক্তিক প্রমাণ ও পথনির্দেশ হিসেবে নাযিল করেছি, আমি তা কিতাবের মধ্যে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করার পরও, তারাই সেসব লোক যাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ এবং অভিশাপকারীদের অভিশাপ। তারা ছাড়া যারা তাওবাহ করে (সঠিক কর্মপন্থায় ফিরে আসে) এবং ইসলাহ করে (নিজেদের নীতিকে সংশোধন করে নেয়) এবং স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দেয়। তারাই সেসব লোক আমি যাদের তাওবাহ গ্রহণ করি। এবং আমি তাওবাহ গ্রহণকারী, দয়ালু।

৩:১৮৭ :: এবং উল্লেখ্য যখন আল্লাহ যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যে, “তোমরা মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করো এবং তা গোপন রেখো না”। তারপর তারা তা (কিতাব ও কিতাবের তথ্য) তাদের পিঠের পেছনে ফেলে রাখলো এবং এর বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য ক্রয় করলো। কী নিকৃষ্ট যা তারা ক্রয় করলো!

২:১৭৪ :: নিশ্চয় আল্লাহ কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন তা (তথা আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবের কোনো তথ্য) গোপন করে এবং তার বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া কিছুই ভক্ষণ করে না এবং ক্বিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত কষ্টদায়ক শাস্তি।

৭:২০৪ :: যখন কুরআন পড়া হয় তখন তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনো এবং চুপ থাকো, যাতে তোমাদেরকে দয়া করা হয়।

৫৫:১-৪ :: পরম দয়াময়। তিনিই আল কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই তাকে স্পষ্টভাবে ভাব প্রকাশ ও ভাব বিনিময়ের ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন।

৯৬:১-৪ :: পাঠ করো তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক্ব (মায়ের জরায়ুতে শক্তভাবে আটকে থাকা ভ্রুণ) থেকে। পাঠ করো, এবং তোমার প্রভু মহা মহিমান্বিত। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন (শিক্ষার বিস্তার ঘটিয়েছেন)।

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহসহ বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব তথা আল কুরআনের শিক্ষা গোপন না রেখে তা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা এবং কলম তথা বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সেই শিক্ষার বিস্তার ঘটানো ও পারস্পরিক সংযোগ ও যোগাযোগের মাধ্যমে কুরআনের শিক্ষা চর্চার নির্দেশনা রয়েছে। কুরআন গবেষণার মাধ্যমে মানব জীবনের জন্য মৌলিক প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে উন্মোচিত তথ্যের প্রকাশ ও প্রচারের জন্য প্রকাশনা ও সামাজিক যোগাযোগমূলক কাজের প্রয়োজন হয়। তাই ‘প্রকাশনা ও সংযোগকে’ ইক্বরার একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।


৩. সমসাময়িক বিশ্লেষণ ও পরামর্শ

৪:৮৩ :: আর যখন তাদের কাছে আসে নিরাপত্তার অথবা আশংকার কোন বিষয়, তখনি তারা উহা প্রচার করিতে থাকে। অথচ যদি তারা তা পৌঁছে দিতো রসূলের দিকে এবং তাদের মধ্য থেকে হওয়া উলিল আমরের দিকে, তাহলে তা জানতে পারতো তাদের মধ্য থেকে থাকা ঐ ব্যক্তিরা যারা তথ্য বিশ্লেষণ ও যাচাইয়ের মাধ্যমে সঠিক অনুসিদ্ধান্ত নির্ণয় করতে পারে, আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর (ব্যাপক) অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো তাহলে তোমরা শয়তানের অনুসরণ করতে, অল্প কয়েকজন ছাড়া।

৪৯:৬ :: হে যারা ঈমান এনেছো, যদি তোমাদের কাছে কোনো ফাসেক (দুষ্কর্ম পরায়ণ) ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তখন তোমরা যথাযথ বিশ্লেষণ ও যাচাইয়ের মাধ্যমে তার বাস্তবতা সম্পর্কে সুষ্পষ্ট হয়ে নাও, যেন না তোমরা কোনো জনগোষ্ঠীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো, অত:পর তোমরা যা করেছো তার ফলে তোমরা অনুতপ্ত হও।

৪২:৩৮ :: আর যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয় এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের নির্বাহী কার্য সম্পাদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদের মধ্যে পরামর্শ করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে (যথানিয়মে) ব্যয় করে।

৪:৮৫ :: যে ব্যক্তি ভালো কাজের সুপারিশ ও সহযোগিতা করে তার জন্য তা থেকে কল্যাণের অংশ রয়েছে এবং যে ব্যক্তি মন্দ কাজের সুপারিশ ও সহযোগিতা করে তার জন্য তা থেকে অকল্যাণের অংশ রয়েছে। আর আল্লাহ সকল বিষয়ের পর্যবেক্ষণকারী ও সকলের যথাযথ প্রাপ্য বরাদ্দকারী।

৯০:১৭-১৮ :: তারপর যে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয় যারা ঈমান আনে এবং পরস্পরকে ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে দয়া দাক্ষিণ্যের উপদেশ দেয়। তারাই ডানপন্থী।

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহসহ বিভিন্ন আয়াতে সমসাময়িক পরিস্থিতির যথাযথ বিশ্লেষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের করণীয় নির্ধারণ এবং পরস্পরকে ধৈর্য ও দয়া দাক্ষিণ্যের উপদেশ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে সমসাময়িক বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আল কুরআনের শিক্ষার প্রয়োগের জন্য ‘সমকালীন জীবন পদ্ধতি ও সমাজ সম্পর্ক নিয়ে বাস্তবমুখী বিশ্লেষণ ও পরামর্শকে’ ইক্বরার একটি বিশেষ কর্মসূচী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, যেন যুগোপযোগী যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি জনসচেতনতায় ভূমিকা পালন করা যেতে পারে।


৪. সমাজ কল্যাণ

৯০:১১-১৬ :: তারপর (যে স্রষ্টার নিয়ন্ত্রণ ও তাঁর কাছে জবাবদিহির ধারণা রাখে না) সে দুর্গম গিরিপথ অতিক্রমে সচেষ্ট হয়নি। তুমি কি জানো সেই দুর্গম গিরিপথ কী? কোনো ঘাড়কে (দাসত্ব ও অসঙ্গত শৃঙ্খল বা বোঝা থেকে) মুক্ত করা। অথবা অনাহারের দিন আহার করানো, নিকটবর্তী ইয়াতীমকে অথবা ধুলি-মলিন মিসকীনকে।

১৬:৯০ :: নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় আচার ও ন্যায় বিচার (আদল) এবং উত্তম আচরণ ও পরোপকার (ইহসান) এবং আত্মীয়-পরিজনদেরকে অনুদান প্রদান করার জন্য আদেশ দিয়েছেন এবং তিনি অশ্লীলতা এবং অন্যায় ও বাড়াবাড়ি করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে সদুপদেশ প্রদান করেন যেন তোমরা স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করো।

৩:১১০ :: তোমরা (মুসলিমরা) শ্রেষ্ঠ উম্মাহ, যাদেরকে বের করা হয়েছে মানবজাতির কল্যাণের জন্য। তোমরা ন্যায়ের আদেশ দিবে, অন্যায় থেকে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনতো অবশ্যই তা তাদের জন্যই কল্যাণকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু মু’মিন রয়েছে এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই ফাসেক (দুষ্কর্ম পরায়ণ)।

২:১৪৮ :: প্রত্যেকের একটি অভিমুখ (লক্ষ্যমাত্রা) আছে যে দিকে সে মুখ ফিরায়। সুতরাং তোমরা কল্যাণকর্মে অগ্রগামী হওয়ার প্রতিযোগিতা করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন আল্লাহ তোমাদেরকে (জবাবদিহির জন্য) একত্র করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ের প্রাকৃতিক নিয়ম নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রক।

উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহসহ বিভিন্ন আয়াতে সমাজ কল্যাণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তাই ব্যক্তিগত সচ্চরিত্র গঠনের পাশাপাশি সম্মিলিতভাবে সমাজ কল্যাণে ভূমিকা রাখার বিষয়ে কুরআনের শিক্ষা অনুসারে ইক্বরা সাধ্যমতো সমাজ কল্যাণে অবদান রাখতে বদ্ধপরিকর।