test
ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।
ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।
রব্বি আউযুবিকা মিন হামাঝাতিশ শায়াত্বীন। ওয়া আউযুবিকা রব্বি আইঁ ইয়াহদ্বুরূন। (২৩:৯৭-৯৮)
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম। (১:১)
কুরআন একাডেমি ফাউন্ডেশন (ক্বাফ) কর্তৃক আয়োজিত "কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ" শীর্ষক আজকের এ সেমিনারের সম্মানিত সভাপতি, আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ এবং উপস্থিত কুরআনপ্রিয় ভাই ও বোনেরা, সালামুন আলাইকুম। (৬:৫৪)
‘কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ” বিষয়ক কী নোটের পর্যালোচনায় এ বিষয়ে আমার উপলব্ধি শেয়ার করার তাওফীক্ব দানে আমি আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সাথে আল্লাহর মনোনীত বান্দাদের আত্মার জন্য সালাম বা শান্তি প্রার্থনা করছি, যাঁরা আল্লাহর বার্তাকে মানবজাতির সামনে নির্দ্ধিধায়-নির্ভয়ে তুলে ধরেছেন এবং মানুষকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষাদান করেছেন।
কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণের প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি এবং সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে এ বিষয়ের মূল উপস্থাপক যে ‘কী নোট’ উপস্থাপন করেছেন তাতে কুরআনের আলোকে ও বাস্তব পরিপ্রেক্ষিতে আমরা কুরআনের শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, মানুষ যেন কুরআনের বাণীকে জ্ঞানায়ত্ত করতে পারে, কুরআনের বক্তব্য বুঝতে পারে সেজন্য যা কিছু উদ্যোগ-আয়োজন করতে পারি তার বহুমুখী উপায় উঠে এসেছে।
সমাজের সর্বস্তরে কুরআন-চর্চাকে অবারিত করার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কুরআনের পরিচয় হিসেবে কুরআনে ব্যাপক বক্তব্য রয়েছে। এর একটি হলো : “রমাদানের মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানবজাতির জন্য হিদায়াত বা পথনির্দেশ, হিদায়াতমূলক স্পষ্ট প্রমাণ এবং (শাশ্বত তথ্য ও বিধানের বিষয়ে) সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী (ফুরক্বান)”। (২:১৮৫)
এ আয়াত অনুযায়ী স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, যেহেতু কুরআনকে মানবজাতির জন্য হিদায়াত হিসেবে নাযিল করা হয়েছে, তাই সমাজের সর্বস্তরে কুরআনের শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিতে হবে। যারা কুরআনের বিষয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, “তারা কি কুরআনের বিষয়ে গবেষণা করে না, যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্তার নিকট থেকে আগত হতো, তাহলে তারা তাতে অনেক স্ববিরোধ-বৈপরীত্য পেতো”। (৪:৮২)।
এ আয়াত প্রমাণ করে যে, যারা এমনকি এখনো ঈমান আনে নি, তারাও কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণার যোগ্যতা রাখে এবং এর মাধ্যমে তাদের পক্ষেও বুঝা সম্ভব যে, কুরআন আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচিত হতে পারে না। তাদের মধ্যে কুরআনের সত্যতার বিষয়ে প্রত্যয় সৃষ্টির উপায় হচ্ছে তাদেরকেও কুরআন চর্চার সুযোগ দেয়া, তাদের কাছে কুরআনের বক্তব্যগুলো তুলে ধরা।
সূরা তাওবার ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আর যদি মুশরিকদের মধ্য থেকে কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, অবশেষে যখন সে কালামুল্লাহ (আল্লাহর বাণী) শুনে, তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌঁছাও। এটা এজন্য যে, তারা এমন জনগোষ্ঠী, যারা জ্ঞান রাখে না”।
কুরআনের শিক্ষা অর্জন ও স্মরণ রাখা এবং এর উপদেশ অনুযায়ী কাজ করার জন্য কুরআনকে সহজ করা হয়েছে। সূরা ক্বামারের ১৭, ২২, ৩২ ও ৪০ আয়াতে চারবার বলা হয়েছে “নিশ্চয় আমি কুরআনকে যিকর তথা উপদেশ গ্রহণ ও স্মরণের জন্য সহজ করেছি, সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি?”
আবার সূরা বাক্বারার ১২১ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “যারা এমন যে, আমি তাদেরকে কিতাব দিয়েছি আর তারা তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করে তারাই তাতে ঈমান রাখে আর যারা তার প্রতি কুফর করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত”।
এ সকল আয়াতের ভিত্তিতে এ কথা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ একটি স্বাভাবিক ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। আর এজন্য বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদ্ধতি বা কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক এজন্য যেসব কর্মসূচী প্রস্তাব করেছেন এর মধ্যে এক নম্বরেই রয়েছে “জাতীয় কুরআন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা”।
এ বিষয়ে উপস্থাপকের “কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ” পুস্তকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে তাতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, কুরআন শেখার একমাত্র প্রথাগত স্থান মাদ্রাসা (কওমি, আলিয়া) যেখানে আমজনতা বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাইরের কারও কুরআন সম্পর্কে জানার বা তার প্রশ্নের জবাব দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। ছোট-বড় অনেক বিষয় নিয়েই একটি রাষ্ট্রের জাতীয় ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকে। আমরা এই সেমিনারের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয় তথা সরকারের কাছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন একটি “জাতীয় কুরআন কেন্দ্র” প্রতিষ্ঠার উদাত্ত আহবান জানাই। ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কমতি নেই, জাতীয় কুরআন কেন্দ্র সেরূপ বহুমুখী কাজের প্রতিষ্ঠান নয়, বরং শুধুমাত্র কুরআন কেন্দ্রিক কাজের জন্য, কুরআনের শিক্ষাকে সর্বস্তরের জনগোষ্ঠীর জন্য সহজবোধ্য, সুখপাঠ্য ও আনন্দপাঠে পরিণত করার জন্য কাজ করবে। এতে দেশের ও দেশের বাইরের সকল বিদগ্ধ কুরআন গবেষককে পর্যায়ক্রমে সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ থাকতে হবে। যে কোনো আগ্রহী ব্যক্তি কেন্দ্র পরিচালিত কোনো মেয়াদি কোর্সে নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।
এভাবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপকের আরো বিভিন্ন প্রস্তাবনা রয়েছে এবং তার সবগুলোই আমাদের দেশের বাস্তবতায় কুরআনের শিক্ষাকে সর্বস্তরে সহজবোধ্যভাবে ছড়িয়ে দেয়া এবং মানুষকে কুরআনের শিক্ষার সাথে ব্যাপকভাবে পরিচিত করানোর বিভিন্ন কার্যকর উপায়।
এ পর্যায়ে আমি কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরনের ক্ষেত্রে সংকট ও সম্ভাবনার প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরনের ক্ষেত্রে একটি সংকট হলো আলেম-ওলামাদের মতানৈক্য ও বিভক্তি এবং প্রত্যেক পক্ষ নিজেদের চিন্তাধারাকে সঠিক দাবি করার জন্য কুরআনকে ব্যবহার করা। এছাড়া রয়েছে সর্বসাধারণকে সরাসরি কুরআন অধ্যয়নের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা।
কিন্তু কুরআন এমন এক বিস্ময়কর কিতাব যে, এটি তার নিষ্ঠাবান পাঠককে ক্রমে ক্রমে প্রতিটি সমস্যা বা প্রশ্নের সুন্দর সমাধান প্রদান করে। যেমন: সূরা বাক্বারাহর ১৭৬ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “এটা এজন্য যে, আল্লাহ সত্য-সঠিক তথ্য সম্বলিত কিতাব নাযিল করেছেন আর নিশ্চয় যারা কিতাবের বিষয়ে মতভেদ করেছে তারা বিরোধবশত বহুদূর সরে গেছে”।
এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, কুরআনের আয়াতসমূহে কোনো স্ববিরোধ নেই। এমতাবস্থায় আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়নই মতভেদ নিরসনের প্রকৃত উপায়।
অনুরূপভাবে, কুরআন অধ্যয়নের মাধ্যমেই যথাযথ হিদায়াত লাভের বিষয়ে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় এ কুরআন সর্বাধিক সত্যে সুপ্রতিষ্ঠিত পথের হিদায়াত দেয় এবং যে মু’মিনগণ সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যই আছে মহাপুরস্কার”। (১৭:৯)
৪৭:২৪ আয়াতে বলা হয়েছে, “তবে কি তারা কুরআনের বিষয়ে গবেষণা করে না, নাকি তাদের অন্তরসমূহের উপর সেগুলোর তালা দেয়া রয়েছে, অনেক তালা”।
১০:৬১ আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং তোমরা যে অবস্থায়ই থাকো এবং সে অবস্থায় কুরআন থেকে যা-ই তিলাওয়াত করো এবং যে কাজই করো, আমি তোমাদের উপর স্বাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে নিমগ্ন হও”।
এ সকল আয়াত আমাদেরকে এ সম্ভাবনার জানান দেয় যে, আমরা যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের পক্ষে কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ বাস্তবায়ন করা সহজ হবে। আমরা পরস্পর যে সকল প্রশ্নে যতই বিভক্ত থাকি না কেন, কুরআনের স্পষ্ট নির্দেশ ও নির্দেশনার বিপরীতে আমাদের মতভেদকে মুখ্য গুরুত্ব দিয়ে এ ক্ষেত্রে বিভক্ত থাকতে পারি না।
বরং আমাদের কর্তব্য হবে, যেসব বিষয়ে আমাদের মতৈক্যে পৌঁছানো সময়-সাপেক্ষ এবং এখন পর্যন্ত মতানৈক্য বিদ্যমান রয়েছে সেগুলোতে নিজেদের অবস্থান আপাতত বজায় রেখে হলেও যতটুকু বিষয় আমাদের মধ্যে এক ও অভিন্ন, সেই ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
যেমন: ৩:৬৪ আয়াতে বলা হয়েছে, “বলো, ‘হে আহলে কিতাব, এসো এমন একটি কথার দিকে, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করবো না আর তাঁর সাথে কাউকে বা কোনো কিছুকে শরীক সাব্যস্ত করবো না এবং আল্লাহকে ছাড়া আমাদের কেউ আল্লাহকে ছাড়া কাউকে রব বা বিধাতা হিসেবে গ্রহণ করবো না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বলো, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম”।
একইভাবে আমরা বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলিম তথা কুরআনে বিশ্বাসী বলে দাবিদার সকল গোষ্ঠীকে কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আহবান জানাচ্ছি। এমনকি যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য কুরআনের আয়াতকে খণ্ডিতভাবে ও ভুল অর্থ আরোপের মাধ্যমে ব্যবহার করে তাদেরকে মোকাবেলার জন্য কুরআনই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। কুরআনের যথাযথ অধ্যয়ন এবং জনসমাজে এর তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে কুরআনকে ভুল মতবাদের জন্য ব্যবহারকারীদেরকে লা-জবাব করে দেয়া যেতে পারে অথবা অন্ততপক্ষে যারা সত্যানুসন্ধানী তাদের কাছে সঠিক বোধ-বিশ্বাসকে স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। কারণ কুরআনের ঘোষণা হচ্ছে, “বরং আমি হক্ব দিয়ে বাতিলের উপর আঘাত হানি, ফলে তা অপসৃত হয়ে যায়” (২১:১৮)।
তবে সত্য সমাগত হলে মিথ্যা অপসৃত হওয়ার বিষয়টি তাদের ক্ষেত্রেই ঘটবে যারা হক্বের উপর ঈমান আনে। অন্যদিকে যারা কুফর তথা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে তারা আল্লাহর আয়াতকে বিদ্রূপের বিষয় হিসেবেই গ্রহণ করে থাকে।
এ বিষয়ে ১৮:৫৬ আয়াতে বলা হয়েছে, “আর নবী নবী-রসূলদেরকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে ছাড়া প্রেরণ করি না এবং যারা কুফর করে তারা বাতিল যুক্তি দ্বারা তর্ক করে যেন তা দিয়ে হক্বকে তথা সত্য গ্রহণকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। আর তারা আমার আয়াতসমূহকে এবং তা দ্বারা ভীতি প্রদর্শনকৃত বিষয়গুলোকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করে”।
এমতাবস্থায় আমাদের কাজ হচ্ছে কাফিরদের মোকাবেলায় কুরআন দ্বারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কারণ ২৫:৫২ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না এবং তা দিয়ে তথা কুরআন দ্বারা তাদের বিরুদ্ধে জিহাদান কাবীরা বা সবচেয়ে বড় সংগ্রাম চালিয়ে যাও”।
কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ এই সংগ্রাম-সাধনার একটি মৌলিক ধাপ। তাই কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়ে আমার বক্তব্য এখানে শেষ করছি।
ওয়া মা তাওফীক্বী ইল্লা বিল্লাহি, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইহি উনীবু। (১১:৮৮)
কুরআন একাডেমী ফাউন্ডেশন (কাফ) আয়োজিত 'কুরআন শিক্ষার সামাজিকীকরণ' শীর্ষক সেমিনারে (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা, ১৯ মার্চ ২০২৩) উপস্থাপিত বক্তব্য
test
По какой причине мы обращаемся к эпизодам успеха в воображении Наш разум организован таким образом, что яркие положительные происшествия оставляют значительный марку в сознании. Мы постоянно возвращаемся к периодам триумфа, свершения и фортуны, испытывая их вновь и еще раз в своем воображении. Этот эффект обладает основательные психологические истоки и исполняет важные роли для нашего чувственного […]
По какой причине боязнь неудачи усиливает внутреннее возбуждение Опасение неудачи формирует характерный аффективный фоновой уровень, который может существенно усилить степень внутреннего напряга а также стимулировать стремление к активному шагам. Данный ход Кент казино основан на работе базовых эмоционально-психологических закономерностей, связанных с анализом опасностей, ожиданием итога и откликом тела на неопределённость. Со временем страх трансформируется в […]
Nv casino: Geschichte Unser Geschichte des Casinos Kraulen-Baden war massiv unter zuhilfenahme von ein Sage diverses Ortes Kraulen-Kraulen oder dessen Stufen zum internationalen Erholungsort zusammen.
Каким образом человеческий разум откликается на неожиданные победы исключительно выразительно Людской интеллект сконструирован так, что внезапные положительные происшествия порождают более сильную реакцию, чем прогнозируемые результаты. Этот явление обладает основательные прогрессивные истоки и играет значимую роль в создании поступков. Leon Casino становится чрезвычайно значимым элементом, влияющим на биохимические механизмы в мозгу. Актуальные анализы свидетельствуют, что Леон […]
Как переживания трансформируют повседневные события в незабываемые Человеческая память организована таким образом, что эмоциональные переживания создают в памяти более устойчивые следы, чем обычные события. Эта характеристика мозга дает возможность нам образовывать яркие воспоминания о эпизодах, которые на поверхности могут показаться простыми. Осознание принципов эмоциональной памяти помогает постичь, почему определенные дни запоминаются на всю жизнь, а […]
Как чувства превращают обычные события в запоминающиеся Наша мозг устроена таким образом, что чувственные ощущения формируют в ней более глубокие следы, чем безэмоциональные моменты. Такая характеристика мозга дает возможность нам образовывать четкие воспоминания о эпизодах, которые на первый взгляд могут показаться простыми. Осознание принципов эмоциональной памяти помогает постичь, по какой причине определенные дни фиксируются на […]
Почему личности дорожат чувственные подъемы Чувственные подъемы являются собой острые эмоции, которые выходят за край обычного ряда переживаний. Невзирая на то, что мощные ощущения умеют вызывать неудобство, человек бессознательно склонны к подобным ощущениям. Дэдди казино процессы построения эмоциональной запоминания толкают нас добиваться яркие ощущения, которые умеют изменить наш понимание бытия и расширить бытовой багаж. Органическая […]