ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।
উদ্দেশ্য
ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।
প্রকাশিত বইসমূহ
রহমানের ভাষার নিয়ামত এবং নোম চমস্কির ইউনিভার্সাল ল্যাংগুয়েজ থিওরী
আর রহমান
দয়াময় সত্তা
আল্লামাল ক্বুরআন
তিনি শিক্ষা দিয়েছেন পঠন ক্ষমতা
খালাক্বাল ইনসান
তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ
আল্লামাহুল বায়ান
তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্পষ্টভাবে বিবৃত করার ভাষা।
- সুরা আর-রাহমান, আয়াত ১-৪
সুরা আর-রাহমান কুরআনের ৫৫তম সুরা এবং মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সুরা। এই সুরার সুচনায় আমরা মানুষের পাঠ করার ক্ষমতা এবং কথা বলার ক্ষমতা - যে দুটোই মানুষের ভাষা সংক্রান্ত ইউনিক বৈশিষ্ট্য বা স্রষ্টার প্রদত্ত নিয়ামত।
জগতের সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ। সে হিসেবে সব কিছুর ক্রেডিট স্বয়ং আল্লাহর। এটা সাধারন কথা। কিন্তু সাধারনের মধ্যেও আলাদা করে আল্লাহর অসাধারন যে আয়াত বা চিহ্ন বা সাইন রয়েছে প্রকৃতিতে, তাদের সম্পর্কে কুরআনে আমরা হাইলাইট দেখতে পাই। সুরা আর-রাহমানে, রহমান রমিম আল্লাহর অন্যতম গিফট হলো মানুষের ভাষা সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং সেটাই এই সুরার ১ম থেকে ৪র্থ আয়াতের পাই। আমি এখানে "আল্লামাল কুরআন" শব্দের অনুবাদ করেছি পাঠ শিক্ষাদান। কুরআন অর্থ যা পঠিত হয়। আল-কুরআন অর্থ পাঠ করার বিশেষ ক্ষমতা।
এই ভাষা সংক্রান্ত যে আয়াত, তা সম্পর্কে অসাধারন গবেষনা মানুষের মধ্যে যিনি করেছেন তিনি হলেন নোম চমস্কি। এই প্রবন্ধে মানুষের ব্রেনে ভাষা শিক্ষার যে সহজাত ক্ষমতা তার সম্পর্কে নোম চমস্কির থিওরী সম্পর্কে মূল পয়েন্টগুলো তুলে ধরা হলো।
নোম চমস্কি (Noam Chomsky) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক, এবং রাজনৈতিক সক্রিয় কর্মী। তার পুরো নাম আভ্রাম নোম চমস্কি। তিনি ১৯২৮ সালের ৭ই ডিসেম্বর ফিলাডেলফিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞানের একজন লরিয়েট অধ্যাপক এবং ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এর একজন এমেরিটাস অধ্যাপক।
তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। হার্ভার্ড সোসাইটি অফ ফেলোতে স্নাতকোত্তর কাজের সময়, চমস্কি রূপান্তরমূলক ব্যাকরণের তত্ত্ব তৈরি করেন যার জন্য তিনি ১৯৫৫ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। সেই বছরই তিনি এমআইটিতে শিক্ষকতা শুরু করেন এবং ১৯৫৭ সালে তার যুগান্তকারী কাজ সিনট্যাকটিক স্ট্রাকচারের মাধ্যমে ভাষাবিজ্ঞানে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন, যা ভাষা অধ্যয়নের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চমস্কি মানব বিজ্ঞানে জ্ঞানীয় বিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছেন বলে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত, ভাষা এবং মনের অধ্যয়নের জন্য একটি নতুন জ্ঞান কাঠামো তৈরিতে অবদান রেখেছেন।
জীবিত লেখকদের মধ্যে সর্বাধিক উদ্ধৃত, চমস্কি ভাষাবিজ্ঞান, যুদ্ধ এবং রাজনীতির মতো বিষয়গুলিতে ১৫০ টিরও বেশি বই লিখেছেন।
ভাষাবিজ্ঞানে তার অবদানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদানসমূহ হলো:
ইউনিভার্সাল গ্রামার (Universal Grammar): চমস্কি 'ইউনিভার্সাল গ্রামার' তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। এই তত্ত্ব অনুসারে, মানুষের ভাষা শেখার ক্ষমতা জন্মগত। অর্থাৎ, প্রতিটি মানুষের মস্তিষ্কে ভাষা শেখার জন্য একটি সহজাত কাঠামো থাকে।
রূপান্তরমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ (Transformational Grammar): চমস্কি 'রূপান্তরমূলক উৎপাদনশীল ব্যাকরণ' তত্ত্বের প্রবর্তক। এই তত্ত্ব ভাষাবিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তিনি ভাষাবিজ্ঞানকে মানবমন-সংক্রান্ত গবেষণার কেন্দ্রে স্থাপন করেন।
রাজনৈতিক সক্রিয়তা:
চমস্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতির একজন কঠোর সমালোচক।
তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয়ে তার মতামত প্রকাশ করে থাকেন, যা প্রায়শই বিতর্কিত হয়।
তিনি সামাজিক ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে একজন সোচ্চার কণ্ঠস্বর।
ভাষাতাত্ত্বিক থিওরি: জেনারেটিভ গ্রামার
চমস্কির "জেনারেটিভ গ্রামার" থিওরি অনুসারে, ভাষা মানুষের মস্তিষ্কে জন্মগতভাবে বিদ্যমান একটি কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। এটি ভাষার সার্বজনীন বৈশিষ্ট্য এবং চিন্তার গঠনের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরে।
জেনারেটিভ গ্রামার সম্পর্কে বিস্তারিত
জেনারেটিভ গ্রামার হলো নোম চমস্কি দ্বারা প্রস্তাবিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্ব, যা ভাষার গঠন, ব্যাকরণ এবং মানুষের ভাষা শেখার ক্ষমতা সম্পর্কে একটি বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই তত্ত্বের মূল উদ্দেশ্য হলো ভাষার নিয়মগুলি ব্যাখ্যা করা, যা মানুষকে সীমিত সংখ্যক শব্দ ও নিয়মের মাধ্যমে অসীম সংখ্যক বাক্য তৈরি করতে সক্ষম করে। চমস্কির মতে, ভাষা শেখার ক্ষমতা মানুষের মস্তিষ্কে জন্মগতভাবে বিদ্যমান এবং এটি সকল মানুষের মধ্যে সাধারণ। নিচে জেনারেটিভ গ্রামারের মূল ধারণা, উপাদান এবং গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
জেনারেটিভ গ্রামারের মূল ধারণা
1. ভাষার সৃজনশীলতা (Generative Capacity)
জেনারেটিভ গ্রামারের কেন্দ্রীয় ধারণা হলো যে ভাষা একটি সীমিত সংখ্যক নিয়মের মাধ্যমে অসীম সংখ্যক বাক্য তৈরি করতে পারে। এর মানে হলো, ভাষার ব্যবহারকারীরা এমন বাক্য তৈরি করতে পারে যা তারা আগে কখনো শোনেনি বা বলেনি।
উদাহরণ: "আমি বই পড়ি" এবং "আমি একটি লাল বই পড়ি" – এই দুটি বাক্য একই মৌলিক নিয়মের উপর ভিত্তি করে গঠিত, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।
2. সর্বজনীন ব্যাকরণ (Universal Grammar)
চমস্কির মতে, সকল মানুষের মস্তিষ্কে একটি সর্বজনীন ব্যাকরণ বিদ্যমান, যা ভাষা শেখার ক্ষমতার ভিত্তি। এই সর্বজনীন ব্যাকরণ ভাষার মৌলিক নিয়মগুলি ধারণ করে, যা সকল ভাষায় একই রকম।
তাৎপর্য: এটি ব্যাখ্যা করে কেন শিশুরা অল্প সময়ে এবং সীমিত উদাহরণের মাধ্যমে তাদের মাতৃভাষা শিখতে পারে।
3. গভীর গঠন (Deep Structure) এবং পৃষ্ঠ গঠন (Surface Structure)
চমস্কি ভাষার গঠনকে দুটি স্তরে বিভক্ত করেন:
গভীর গঠন (Deep Structure): এটি ভাষার মৌলিক অর্থ বা ধারণা, যা সর্বজনীন ব্যাকরণের উপর ভিত্তি করে।
পৃষ্ঠ গঠন (Surface Structure): এটি ভাষার বাহ্যিক রূপ, অর্থাৎ আমরা যে বাক্যগুলি উচ্চারণ করি বা লিখি।
উদাহরণ: "কুকুরটি বিড়ালটিকে তাড়া করছে" এবং "বিড়ালটিকে কুকুরটি তাড়া করছে" – এই দুটি বাক্যের পৃষ্ঠ গঠন ভিন্ন, কিন্তু গভীর গঠন একই, কারণ উভয়ই একই অর্থ বহন করে।
গভীর গঠন থেকে পৃষ্ঠ গঠনে রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে রূপান্তরমূলক ব্যাকরণ বলা হয়। এই রূপান্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বাক্য (যেমন প্রশ্নবোধক, নেতিবাচক) তৈরি হয়।
উদাহরণ: "তুমি আসছ" থেকে "তুমি কি আসছ?" – এটি একটি রূপান্তরের ফল।
5. সিনট্যাক্সের গুরুত্ব
জেনারেটিভ গ্রামারে সিনট্যাক্স (বাক্য গঠনের নিয়ম) কে ভাষার মূল উপাদান হিসেবে গণ্য করা হয়। চমস্কি মনে করেন, অর্থ (সেমান্টিক্স) এবং ধ্বনি (ফোনোলজি) সিনট্যাক্সের উপর নির্ভরশীল।
জেনারেটিভ গ্রামারের উপাদান
জেনারেটিভ গ্রামারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান নিম্নরূপ:
ফ্রেজ স্ট্রাকচার রুলস (Phrase Structure Rules)
এই নিয়মগুলি বাক্যের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণ করে, যেমন শব্দগুলি কীভাবে একত্রিত হয়ে বাক্যাংশ তৈরি করে।
এই নিয়মগুলি গভীর গঠনকে পৃষ্ঠ গঠনে রূপান্তরিত করে।
উদাহরণ: বিবৃতি থেকে প্রশ্ন তৈরি।
লেক্সিকন (Lexicon)
ভাষার শব্দভাণ্ডার, যা শব্দের অর্থ ও ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। শব্দগুলি এখান থেকে নিয়ে বাক্য গঠন করা হয়।
জেনারেটিভ গ্রামারের গুরুত্ব
ভাষা শেখার তত্ত্ব
এই তত্ত্ব ব্যাখ্যা করে কীভাবে শিশুরা দ্রুত ভাষা শিখতে পারে। চমস্কির মতে, সর্বজনীন ব্যাকরণ এই প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
ভাষার সার্বজনীন বৈশিষ্ট্য
জেনারেটিভ গ্রামার সকল ভাষায় উপস্থিত সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি চিহ্নিত করে, যা ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
ভাষা ও মনের সম্পর্ক
এটি ভাষাকে মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতার একটি অংশ হিসেবে দেখায় এবং মনের সাথে ভাষার গভীর সম্পর্ক প্রকাশ করে।
ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণায় বিপ্লব
চমস্কির এই তত্ত্ব ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে এবং ভাষার গঠন সম্পর্কে গভীর বোঝাপড়া সৃষ্টি করে।
উপসংহার
নোম চমস্কির জেনারেটিভ গ্রামার ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্বের একটি মাইলফলক। এটি ভাষার গঠন, ব্যাকরণ এবং মানুষের ভাষা শেখার ক্ষমতা সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। ভাষাতত্ত্ব ছাড়াও এটি মনোবিজ্ঞান, দর্শন এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে, কারণ এটি মানুষের মন ও ভাষার মধ্যে সম্পর্ককে তুলে ধরে।
সর্বজনীন ব্যাকরণ (Universal Grammar) সম্পর্কে বিস্তারিত
সর্বজনীন ব্যাকরণ (ইংরেজি: Universal Grammar, সংক্ষেপে UG) হলো নোম চমস্কি প্রস্তাবিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্বের মূল ধারণা, যা জেনারেটিভ গ্রামারের কেন্দ্রীয় অংশ। চমস্কির মতে, সর্বজনীন ব্যাকরণ হলো মানুষের মস্তিষ্কে জন্মগতভাবে বিদ্যমান একটি ভাষাগত কাঠামো বা নিয়মের সেট, যা সকল মানুষের মধ্যে সাধারণ এবং যা তাদের ভাষা শেখার ক্ষমতার ভিত্তি প্রদান করে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে তিনি ব্যাখ্যা করেন কীভাবে শিশুরা স্বল্প সময়ে এবং সীমিত উদাহরণ থেকে জটিল ভাষা শিখতে পারে। নিচে সর্বজনীন ব্যাকরণের মূল ধারণা, উপাদান, তাৎপর্য এবং সমালোচনা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
From Brittanica:
Universal grammar, theory proposing that humans possess innate faculties related to the acquisition of language. The definition of universal grammar has evolved considerably since first it was postulated and, moreover, since the 1940s, when it became a specific object of modern linguistic research. It is associated with work in generative grammar, and it is based on the idea that certain aspects of syntactic structure are universal. Universal grammar consists of a set of atomic grammatical categories and relations that are the building blocks of the particular grammars of all human languages, over which syntactic structures and constraints on those structures are defined. A universal grammar would suggest that all languages possess the same set of categories and relations and that in order to communicate through language, speakers make infinite use of finite means, an idea that Wilhelm von Humboldt suggested in the 1830s. From this perspective, a grammar must contain a finite system of rules that generates infinitely many deep and surface structures, appropriately related. It must also contain rules that relate these abstract structures to certain representations of sound and meaning—representations that, presumably, are constituted of elements that belong to universal phonetics and universal semantics, respectively.
সর্বজনীন ব্যাকরণের মূল ধারণা
জন্মগত ভাষা ক্ষমতা
চমস্কি বিশ্বাস করেন যে ভাষা শেখার ক্ষমতা মানুষের জিনগতভাবে প্রোগ্রাম করা। সর্বজনীন ব্যাকরণ হলো সেই জন্মগত কাঠামো, যা মানুষকে ভাষার নিয়ম বুঝতে এবং প্রয়োগ করতে সক্ষম করে।
উদাহরণ: একটি শিশু যে ভাষার পরিবেশে বড় হয়, সে সেই ভাষা শিখে ফেলে, এমনকি যদি তাকে স্পষ্টভাবে ব্যাকরণের নিয়ম শেখানো না হয়।
সকল ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্য
সর্বজনীন ব্যাকরণের মূল দাবি হলো যে পৃথিবীর সকল ভাষার মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই জন্মগত কাঠামো থেকে উৎপন্ন। এটি ভাষার বৈচিত্র্যের মধ্যেও একটি গভীর ঐক্যের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
উদাহরণ: প্রতিটি ভাষায় বিশেষ্য (noun) এবং ক্রিয়া (verb) এর মতো মৌলিক উপাদান থাকে এবং বাক্য গঠনের একটি শৃঙ্খলা (syntax) অনুসরণ করে।
প্রকৃতি বনাম লালন (Nature vs. Nurture)
চমস্কি সর্বজনীন ব্যাকরণের মাধ্যমে ভাষা শেখার ক্ষেত্রে "প্রকৃতি" (জন্মগত ক্ষমতা) এর উপর জোর দেন। তিনি যুক্তি দেন যে শুধুমাত্র পরিবেশ (nurture) বা শিক্ষার মাধ্যমে ভাষা শেখা সম্ভব নয়, কারণ শিশুরা এমন জটিল নিয়ম শিখে যায়, যা তাদের শেখানো হয় না।
তত্ত্ব: এটি "পভার্টি অফ দ্য স্টিমুলাস" (Poverty of the Stimulus) নামে পরিচিত, যেখানে তিনি বলেন যে শিশুরা যে পরিমাণ ভাষাগত তথ্য পায়, তা তাদের শেখা জটিল ব্যাকরণের জন্য যথেষ্ট নয়।
সর্বজনীন ব্যাকরণের উপাদান
সর্বজনীন ব্যাকরণ সুনির্দিষ্ট নিয়মের একটি তালিকা নয়, বরং এটি ভাষার গঠন ও ব্যবহারের জন্য কিছু সাধারণ নীতি ও পরামিতি (parameters) নিয়ে গঠিত। এর প্রধান উপাদানগুলি হলো:
নীতি (Principles)
এগুলি সকল ভাষার জন্য সাধারণ এবং অপরিবর্তনীয় নিয়ম।
উদাহরণ: "প্রতিটি বাক্যের একটি বিষয় (subject) এবং একটি ক্রিয়া (verb) থাকবে" – এটি একটি সর্বজনীন নীতি।
পরামিতি (Parameters)
এগুলি ভাষার বৈচিত্র্যের জন্য দায়ী। প্রতিটি ভাষা সর্বজনীন নীতির মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট পরামিতি বেছে নেয়।
উদাহরণ: কিছু ভাষায় শব্দের ক্রম হয় "বিষয়-ক্রিয়া-কর্ম" (SVO, যেমন বাংলা: "আমি খাই ভাত"), আবার কিছু ভাষায় "বিষয়-কর্ম-ক্রিয়া" (SOV, যেমন জাপানি)। এই পার্থক্য পরামিতির ফল।
লেক্সিকন (Lexicon)
সর্বজনীন ব্যাকরণের অংশ হিসেবে মানুষের মস্তিষ্কে শব্দ শেখার ক্ষমতা বিদ্যমান। নির্দিষ্ট ভাষার শব্দভাণ্ডার পরিবেশ থেকে আসে, কিন্তু শব্দ গঠনের ক্ষমতা জন্মগত।
সর্বজনীন ব্যাকরণের তাৎপর্য
ভাষা শেখার ব্যাখ্যা
সর্বজনীন ব্যাকরণ ব্যাখ্যা করে কীভাবে শিশুরা দ্রুত এবং স্বাভাবিকভাবে ভাষা শিখে। এটি দেখায় যে ভাষা শেখা একটি জৈবিক প্রক্রিয়া, যা পরিবেশের উপর পুরোপুরি নির্ভর করে না।
ভাষার সার্বজনীনতা ও বৈচিত্র্য
এটি সকল ভাষার মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে এবং একই সাথে তাদের পার্থক্যের কারণ ব্যাখ্যা করে। উদাহরণস্বরূপ, সকল ভাষায় বাক্য গঠনের নিয়ম আছে, কিন্তু শব্দের ক্রম ভিন্ন হতে পারে।
মানব মনের অধ্যয়ন
সর্বজনীন ব্যাকরণ ভাষাকে মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতার একটি অংশ হিসেবে দেখায়, যা মনোবিজ্ঞান ও দর্শনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও কম্পিউটার বিজ্ঞান
এই তত্ত্ব ভাষা প্রক্রিয়াকরণ (Natural Language Processing) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় প্রভাব ফেলেছে, কারণ এটি ভাষার গাঠনিক নিয়ম বোঝার ভিত্তি প্রদান করে।
উদাহরণ দিয়ে বোঝা
শিশুর ভাষা শিক্ষা: একটি বাঙালি শিশু "আমি যাই" বলতে শিখে, যখন একটি ইংরেজি শিশু "I go" বলে। উভয় ক্ষেত্রেই বাক্যে একটি বিষয় (subject) এবং ক্রিয়া (verb) আছে, যা সর্বজনীন নীতির উদাহরণ। কিন্তু শব্দের ক্রম (SOV বনাম SVO) পরামিতির পার্থক্য দেখায়।
নতুন বাক্য তৈরি: শিশুরা এমন বাক্য বলতে পারে যা তারা আগে শোনেনি, যেমন "আমি উড়তে চাই"। এটি সর্বজনীন ব্যাকরণের সৃজনশীলতার প্রমাণ।
সর্বজনীন ব্যাকরণ নোম চমস্কির জেনারেটিভ গ্রামারের একটি মূল স্তম্ভ, যা ভাষাকে মানুষের জন্মগত ক্ষমতার প্রতিফলন হিসেবে দেখায়। এটি ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্র্য বোঝার জন্য একটি শক্তিশালী কাঠামো প্রদান করে। সমালোচনা সত্ত্বেও, এই তত্ত্ব ভাষাতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান এবং জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে গভীর প্রভাব ফেলেছে, এবং ভাষা ও মানব মনের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
সর্বজনীন ব্যাকরণের (Universal Grammar, UG) পক্ষে নোম চমস্কি এবং তার সমর্থকরা যে যুক্তিগুলো উপস্থাপন করেন, তা ভাষা শেখার জৈবিক ভিত্তি, ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের জ্ঞানীয় ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এই তত্ত্বের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো যুক্তিগুলো নিচে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:
১. পভার্টি অফ দ্য স্টিমুলাস (Poverty of the Stimulus)
যুক্তি: এটি সর্বজনীন ব্যাকরণের পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রায়শ উল্লেখিত যুক্তি। চমস্কির মতে, শিশুরা যে পরিমাণ ভাষাগত তথ্য বা উদাহরণ (input) পায়, তা তাদের শেখা জটিল ব্যাকরণের নিয়ম ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট নয়। তবুও তারা দ্রুত এবং সঠিকভাবে ভাষা শিখে ফেলে। এটি প্রমাণ করে যে মানুষের মস্তিষ্কে জন্মগতভাবে একটি ভাষাগত কাঠামো (UG) রয়েছে।
উদাহরণ:
একটি শিশু কখনো শোনেনি এমন বাক্য, যেমন "আমি কি একটি উড়ন্ত ঘোড়া দেখেছি?" তৈরি করতে পারে। তাকে প্রশ্ন গঠনের নিয়ম আলাদাভাবে শেখানো হয়নি, তবুও সে এটি বোঝে।
শিশুরা ভুল শব্দের ক্রম (যেমন "খাই আমি ভাত" বনাম "আমি ভাত খাই") এড়িয়ে চলে, যদিও তাদের এই নিয়ম স্পষ্টভাবে বলা হয় না।
তাৎপর্য: এই যুক্তি দেখায় যে ভাষা শেখা শুধুমাত্র পরিবেশ বা অনুকরণের ফল নয়, বরং একটি জন্মগত ক্ষমতার প্রকাশ।
২. ভাষা শেখার দ্রুততা ও স্বাভাবিকতা
যুক্তি: শিশুরা সারা বিশ্বে একই বয়সে এবং একই ধরনের ধাপ অনুসরণ করে ভাষা শিখে, যদিও তাদের ভাষাগত পরিবেশ ভিন্ন। এই সামঞ্জস্য বোঝায় যে ভাষা শেখার ক্ষমতা জৈবিকভাবে নির্ধারিত এবং সর্বজনীন ব্যাকরণের অংশ।
উদাহরণ:
২-৩ বছর বয়সে শিশুরা জটিল বাক্য গঠন করতে শুরু করে, যেমন "আমি যাব না কারণ বৃষ্টি হচ্ছে।"
বাংলা, ইংরেজি, চীনা—ভাষা যাই হোক না কেন, শিশুরা একই সময়ে বাক্যাংশ এবং বাক্য গঠনের ক্ষমতা অর্জন করে।
তাৎপর্য: এই দ্রুততা ও স্বাভাবিকতা বোঝায় যে মানুষের মস্তিষ্কে একটি প্রাক-প্রোগ্রামড ভাষা শেখার সিস্টেম (UG) রয়েছে।
৩. সকল ভাষায় সাধারণ গাঠনিক বৈশিষ্ট্য
যুক্তি: পৃথিবীর সকল ভাষার মধ্যে কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সর্বজনীন ব্যাকরণের উপস্থিতির প্রমাণ। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ভাষার বৈচিত্র্যের মধ্যেও অপরিবর্তিত থাকে।
উদাহরণ:
প্রতিটি ভাষায় বিশেষ্য (noun) এবং ক্রিয়া (verb) এর মতো শ্রেণি রয়েছে।
সকল ভাষায় বাক্য গঠনের একটি শৃঙ্খলা (syntax) আছে, যেমন বিষয়-ক্রিয়া-কর্ম (SVO) বা বিষয়-কর্ম-ক্রিয়া (SOV)।
প্রশ্ন গঠন, নেতিবাচক বাক্য, এবং সময় নির্দেশক কাঠামো সব ভাষায় দেখা যায়।
তাৎপর্য: এই সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলো ইঙ্গিত দেয় যে মানুষের মস্তিষ্কে একটি সর্বজনীন ভাষাগত নীলনকশা রয়েছে, যা সর্বজনীন ব্যাকরণের ভিত্তি।
৪. ভাষার সৃজনশীলতা (Creativity of Language)
যুক্তি: মানুষ সীমিত শব্দ ও নিয়ম ব্যবহার করে অসীম সংখ্যক বাক্য তৈরি করতে পারে, যা আগে কখনো শোনা বা বলা হয়নি। এই সৃজনশীলতা শুধুমাত্র বাহ্যিক শিক্ষা বা অনুকরণের ফল হতে পারে না; এর জন্য একটি জন্মগত কাঠামো প্রয়োজন।
উদাহরণ:
"আমি একটি সবুজ ড্রাগনের সাথে নাচছি" – এই বাক্যটি শিশু আগে শোনেনি, তবুও সে এটি গঠন করতে পারে।
ভাষার ব্যবহারকারীরা প্রতিনিয়ত নতুন বাক্য তৈরি করে, যা তাদের শেখানো নিয়মের বাইরে যায়।
তাৎপর্য: এই সৃজনশীলতা প্রমাণ করে যে সর্বজনীন ব্যাকরণ মানুষকে ভাষার সীমাহীন সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে সক্ষম করে।
৫. ভাষা শেখার প্রক্রিয়ার সার্বজনীন ধাপ
যুক্তি: সারা বিশ্বের শিশুরা ভাষা শেখার ক্ষেত্রে একই ধাপ অনুসরণ করে, যা সংস্কৃতি বা ভাষা নির্বিশেষে একই রকম। এটি বোঝায় যে ভাষা শেখার প্রক্রিয়া জৈবিকভাবে নির্ধারিত এবং সর্বজনীন ব্যাকরণের উপর নির্ভরশীল।
উদাহরণ:
৬-১২ মাসে শিশুরা বকবক করা শুরু করে (babbling)।
১-২ বছরে একক শব্দ ব্যবহার করে (যেমন "মা", "পানি")।
২-৩ বছরে বাক্যাংশ এবং জটিল বাক্য গঠন করে।
তাৎপর্য: এই সার্বজনীন ধাপগুলো ইঙ্গিত দেয় যে মানুষের মস্তিষ্কে একটি সাধারণ ভাষা শেখার প্রক্রিয়া রয়েছে, যা UG-এর অস্তিত্বের প্রমাণ।
৬. ভাষার জৈবিক ভিত্তি
যুক্তি: আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান এবং জিনতত্ত্ব গবেষণা দেখায় যে মানুষের মস্তিষ্কে ভাষা প্রক্রিয়াকরণের জন্য নির্দিষ্ট অঞ্চল রয়েছে (যেমন ব্রোকার এরিয়া এবং ওয়ার্নিকের এরিয়া)। এটি সর্বজনীন ব্যাকরণের জৈবিক ভিত্তির পক্ষে যুক্তি প্রদান করে।
উদাহরণ:
ভাষা-সম্পর্কিত জিন যেমন FOXP2 ভাষা শেখার ক্ষমতার সাথে যুক্ত।
মস্তিষ্কের ক্ষতি হলে নির্দিষ্ট ভাষাগত ক্ষমতা হারিয়ে যায়, যা বোঝায় যে ভাষা জৈবিকভাবে মানুষের মধ্যে প্রোগ্রামড।
তাৎপর্য: এই জৈবিক প্রমাণ সর্বজনীন ব্যাকরণকে একটি জন্মগত কাঠামো হিসেবে সমর্থন করে।
উপসংহার
সর্বজনীন ব্যাকরণের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো যুক্তিগুলো হলো "পভার্টি অফ দ্য স্টিমুলাস", ভাষা শেখার দ্রুততা ও সৃজনশীলতা, সকল ভাষার সাধারণ বৈশিষ্ট্য এবং জৈবিক ভিত্তি। এই যুক্তিগুলো একত্রে প্রমাণ করে যে ভাষা শেখার ক্ষমতা শুধুমাত্র পরিবেশ বা শিক্ষার ফল নয়, বরং মানুষের মস্তিষ্কে জন্মগতভাবে বিদ্যমান একটি সর্বজনীন কাঠামোর প্রকাশ। এই তত্ত্ব ভাষাতত্ত্ব ও জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে একটি বিপ্লবী ধারণা হিসেবে গণ্য হয়।
জেনারেটিভ গ্রামার (Generative Grammar) এবং সর্বজনীন ব্যাকরণ (Universal Grammar, UG) নোম চমস্কির ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, কিন্তু এগুলো একই জিনিস নয়—এরা আলাদা, যদিও পরস্পর সম্পর্কিত। চমস্কির তত্ত্বে জেনারেটিভ গ্রামার হলো একটি বৃহত্তর তাত্ত্বিক কাঠামো, যার মধ্যে সর্বজনীন ব্যাকরণ একটি মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে। নিচে এই দুটির পার্থক্য, সম্পর্ক এবং ভূমিকা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।
জেনারেটিভ গ্রামার (Generative Grammar)
সংজ্ঞা
জেনারেটিভ গ্রামার হলো চমস্কি প্রস্তাবিত একটি ভাষাতাত্ত্বিক তত্ত্ব বা পদ্ধতি, যা ভাষার ব্যাকরণকে এমনভাবে বর্ণনা করে যাতে সীমিত নিয়ম ও শব্দের মাধ্যমে একটি ভাষার সমস্ত বৈধ বাক্য "উৎপন্ন" (generate) করা যায়। এটি ভাষার গাঠনিক নিয়মগুলোর একটি সুনির্দিষ্ট এবং গাণিতিক বর্ণনা প্রদানের চেষ্টা করে।
মূল বৈশিষ্ট্য
উৎপন্ন করার ক্ষমতা: এটি ব্যাখ্যা করে কীভাবে একটি ভাষার স্পিকার সীমিত নিয়ম ব্যবহার করে অসীম সংখ্যক বাক্য তৈরি করতে পারে।
গভীর গঠন ও পৃষ্ঠ গঠন: এটি গভীর গঠন (Deep Structure) থেকে পৃষ্ঠ গঠন (Surface Structure) এ রূপান্তরের প্রক্রিয়া বর্ণনা করে।
নিয়ম-ভিত্তিক: এতে ফ্রেজ স্ট্রাকচার রুলস, রূপান্তরমূলক নিয়ম (Transformational Rules) এবং লেক্সিকনের মতো উপাদান রয়েছে।
উদাহরণ: "আমি বই পড়ি" থেকে "আমি কি বই পড়ি?" তৈরি করার নিয়ম জেনারেটিভ গ্রামারের আওতায় পড়ে।
উদ্দেশ্য
জেনারেটিভ গ্রামারের লক্ষ্য হলো ভাষার গাঠনিক বৈশিষ্ট্য এবং ব্যাকরণের নিয়মগুলোকে একটি সুসংগঠিত তত্ত্ব হিসেবে উপস্থাপন করা, যা কোনো নির্দিষ্ট ভাষার সমস্ত বাক্য ব্যাখ্যা করতে পারে। এটি একটি বর্ণনামূলক এবং ব্যাখ্যামূলক কাঠামো।
সর্বজনীন ব্যাকরণ (Universal Grammar)
সংজ্ঞা
সর্বজনীন ব্যাকরণ হলো জেনারেটিভ গ্রামারের একটি উপাদান বা অনুমান, যা বলে যে মানুষের মস্তিষ্কে জন্মগতভাবে একটি ভাষাগত কাঠামো রয়েছে। এটি সকল মানুষের মধ্যে সাধারণ এবং সকল ভাষার মৌলিক নীতি ও পরামিতি ধারণ করে।
মূল বৈশিষ্ট্য
জন্মগত: এটি মানুষের জৈবিক ক্ষমতার অংশ, যা ভাষা শেখার ভিত্তি।
নীতি ও পরামিতি: এতে সাধারণ নীতি (Principles) এবং ভাষা-নির্দিষ্ট পরামিতি (Parameters) রয়েছে।
সার্বজনীনতা: এটি সকল ভাষার মধ্যে সাধারণ বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করে।
উদাহরণ: সকল ভাষায় বিষয় (subject) ও ক্রিয়া (verb) থাকার নীতি UG-এর অংশ, কিন্তু শব্দের ক্রম (SVO বা SOV) একটি পরামিতি।
উদ্দেশ্য
সর্বজনীন ব্যাকরণের লক্ষ্য হলো ব্যাখ্যা করা যে কীভাবে মানুষ স্বাভাবিকভাবে এবং দ্রুত ভাষা শিখতে পারে, এবং কেন সকল ভাষায় কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি ভাষা শেখার জৈবিক ভিত্তির উপর জোর দেয়।
জেনারেটিভ গ্রামার ও সর্বজনীন ব্যাকরণের পার্থক্য
বিষয়
জেনারেটিভ গ্রামার
সর্বজনীন ব্যাকরণ
সংজ্ঞা
ভাষার ব্যাকরণের একটি তাত্ত্বিক কাঠামো।
মানুষের জন্মগত ভাষা শেখার ক্ষমতা।
আওতা
একটি সম্পূর্ণ তত্ত্ব, যা বাক্য গঠনের নিয়ম বর্ণনা করে।
জেনারেটিভ গ্রামারের একটি উপাদান বা অনুমান।
উদ্দেশ্য
কীভাবে বাক্য উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করা।
কেন ও কীভাবে ভাষা শেখা সম্ভব তা ব্যাখ্যা করা।
প্রকৃতি
বর্ণনামূলক এবং গাণিতিক।
জৈবিক এবং জ্ঞানীয়।
উদাহরণ
"আমি যাই" থেকে "আমি কি যাই?" তৈরির নিয়ম।
সকল ভাষায় বিষয়-ক্রিয়া থাকার নীতি।
দুইয়ের সম্পর্ক
অংশ-সমগ্র সম্পর্ক: সর্বজনীন ব্যাকরণ হলো জেনারেটিভ গ্রামারের একটি মৌলিক অনুমান। জেনারেটিভ গ্রামার ব্যাখ্যা করে কীভাবে ভাষার নিয়ম কাজ করে, আর সর্বজনীন ব্যাকরণ ব্যাখ্যা করে কেন মানুষ এই নিয়মগুলো শিখতে পারে।
জৈবিক ভিত্তি: UG জেনারেটিভ গ্রামারকে জৈবিক ভিত্তি দেয়। চমস্কির মতে, UG ছাড়া জেনারেটিভ গ্রামারের নিয়মগুলো মানুষের শেখার ক্ষমতার সাথে সংযুক্ত হতে পারে না।
প্রয়োগ: জেনারেটিভ গ্রামার নির্দিষ্ট ভাষার ব্যাকরণ বর্ণনা করে (যেমন বাংলা বা ইংরেজির নিয়ম), আর UG সকল ভাষার সাধারণ নীতি ও পরামিতি নিয়ে কাজ করে।
সহজ উদাহরণে
জেনারেটিভ গ্রামার হলো একটি রান্নার বই, যেখানে রেসিপি (নিয়ম) দিয়ে খাবার (বাক্য) তৈরির প্রক্রিয়া লেখা আছে।
সর্বজনীন ব্যাকরণ হলো মানুষের জন্মগত রান্না করার ক্ষমতা, যা তাদের রেসিপি বুঝতে এবং প্রয়োগ করতে সক্ষম করে।
দ্য মিনিমালিস্ট প্রোগ্রাম
নোয়াম চমস্কির দ্য মিনিমালিস্ট প্রোগ্রাম (প্রথমটি ১৯৯৩ সালে রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৯৫ সালে তার বইতে সম্প্রসারিত হয়েছিল) ভাষাবিজ্ঞানের একটি কাঠামো যা তার পূর্ববর্তী বাক্য গঠন তত্ত্বগুলিকে তাদের অপরিহার্য বিষয়গুলিতে বিভক্ত করে, যার লক্ষ্য হল কীভাবে মানুষ সহজতম সম্ভাব্য প্রক্রিয়া ব্যবহার করে ভাষা তৈরি করে তা ব্যাখ্যা করা। এটি সার্বজনীন ব্যাকরণের উপর তার দশকব্যাপী কাজের একটি সাহসী পুনর্বিবেচনা - এই ধারণাটি যে সমস্ত মানুষ ভাষার জন্য একটি সহজাত ক্ষমতা ভাগ করে নেয় - এবং এটি মার্জিত এবং ঘন উভয়ই। এখানে সারমর্ম, স্পষ্টভাবে বিভক্ত।
এর মূলে, মিনিমালিস্ট প্রোগ্রাম জিজ্ঞাসা করে: ভাষার জন্য জবাবদিহি করার জন্য আমাদের মন সম্পর্কে কমপক্ষে কী অনুমান করা উচিত? চমস্কি যুক্তি দেন যে ভাষা মস্তিষ্কের একটি একক গণনা ব্যবস্থায়, একটি "ভাষা অনুষদ" (Language Faculty), যা জৈবিকভাবে হার্ডওয়্যারড। এই সিস্টেমটি অপ্রয়োজনীয় জটিলতার সাথে জগাখিচুড়ি করে না - এটি কার্যকর হওয়ার জন্য অপ্টিমাইজ করা হয়েছে, কোডের একটি পাতলা অংশের মতো। লক্ষ্য হল অর্থ (শব্দার্থবিদ্যা) এবং শব্দ (ধ্বনিবিদ্যা) কে সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়ে সংযুক্ত করা।
এখানে মূল ভূমিকা হল Merge, একটি মৌলিক ক্রিয়াকলাপ যা দুটি ভাষাগত একক—যেমন শব্দ বা বাক্যাংশ—গ্রহণ করে এবং তাদের একটি একক কাঠামোতে একত্রিত করে। এটিকে লেগো ইটগুলিকে একসাথে ছিঁড়ে ফেলার মতো ভাবুন: "নীল" এবং "আকাশ" "নীল আকাশ"-এ মিশে যায়। মার্জ পুনরাবৃত্তিমূলকভাবে কাজ করে, যার অর্থ আপনি "নীল আকাশ" বা "উপরে নীল আকাশ"—সসীম টুকরো থেকে অসীম বৈচিত্র্যের বাক্য তৈরি করতে পারেন। চমস্কি বলেছেন যে এটি বাক্য গঠনের হৃদয়: একটি মিনিমালিস্ট ইঞ্জিন যা সমস্ত মানব ভাষাকে চালিত করে।
মিনিমালিস্ট প্রোগ্রাম সেই মোটা অংশটি কেটে দেয়, কেবল যা প্রয়োজন তা ধরে নিয়ে: মার্জ, এবং কয়েকটি সীমাবদ্ধতা। কাঠামোগুলি পূর্বনির্ধারিত নয়; এগুলি উড়ে এসে একত্রিত হয়, "অর্থনীতি নীতি" দ্বারা পরিচালিত হয় যা সংক্ষিপ্ততম পথ এবং কম পদক্ষেপের পক্ষে। উদাহরণস্বরূপ, "সে দ্রুত চলে" এর মতো একটি বাক্য তার রূপ পায় কারণ মার্জ "সে" কে "রান" এর সাথে জোড়া দেয়, তারপর "দ্রুত"-এ ট্যাক করে, যা সবই সহজতম ক্রমানুসারে কাজ করে।
দুটি স্তর গুরুত্বপূর্ণ: লজিক্যাল ফর্ম (LF), যেখানে অর্থ সাজানো হয়, এবং ফোনেটিক ফর্ম (PF), যেখানে শব্দ আকার ধারণ করে। সিস্টেমটি এই দুটির মধ্যে একটি বাক্যকে সংযুক্ত করে, নিশ্চিত করে যে এটি অর্থপূর্ণ এবং বলা যেতে পারে। বাকি সবকিছু - শব্দের ক্রম, কাল, সম্মতি - মার্জ কীভাবে একটি ভাষার নির্দিষ্ট শব্দভাণ্ডারের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে এবং নিয়ম করে, কিছু স্ফীত সার্বজনীন টেমপ্লেট থেকে নয়।
ন্যূনতম কেন? চমস্কি এটিকে বিবর্তনের সাথে সংযুক্ত করে। একটি জটিল ভাষা ব্যবস্থা কেবল রাতারাতি মানুষের মধ্যে উপস্থিত হত না - তিনি মনে করেন যে এই পাতলা সেটআপটি একটি ছোট জেনেটিক টুইক হিসাবে আবির্ভূত হতে পারত, যা আমাদের একটি বড় লাভ দেয়: সীমাবদ্ধ উপায় থেকে অসীম প্রকাশ। এটি অতি জটিল ভাষাতত্ত্বের উপরও একটি ধাক্কা, কেবল বর্ণনামূলক চার্ট নয়, জীববিজ্ঞান এবং জ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যাখ্যাগুলির জন্য চাপ দেয়।
উপসংহার
জেনারেটিভ গ্রামার এবং সর্বজনীন ব্যাকরণ একই জিনিস নয়। জেনারেটিভ গ্রামার হলো একটি বৃহৎ তাত্ত্বিক কাঠামো, যা ভাষার গঠন ও নিয়ম ব্যাখ্যা করে, আর সর্বজনীন ব্যাকরণ তার একটি অংশ, যা ভাষা শেখার জৈবিক ভিত্তি ও সার্বজনীনতার উপর জোর দেয়। চমস্কির তত্ত্বে এই দুটি একসঙ্গে কাজ করে মানুষের ভাষাগত ক্ষমতার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা প্রদান করে।
সুরা আর রাহমানে আল্লাহ যে বাস্তবতা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যে আল্লাহ মানুষকে পঠন এবং বায়ান বা ভাষাশৈলী শিখিয়েছে, আমরা আধুনিক সময়ে এসে ভাষাতত্ত্ববিদ নোম চমস্কির জেনারেটিভ গ্রামার এবং ইউনিভার্সাল গ্রামার তত্ত্বের মাধ্যমে সেই কুরআনের যে দাবী - অর্থাৎ ভাষাযে রহমানুর রহিম আল্লাহর একটি নিয়ামত, এটি মূলত মানুষের ব্রেনের একটি বায়োলজিক্যাল ক্ষমতা যেটা বিল্টইন - সেই বিষয়েরই বিস্তারিত গবেষণা হিসেবে পাঠ করতে পারি।
.
.
- এই আর্টিকেলটি প্রস্তুত করতে চ্যাট জিপিটি, গুগল জেমিনাই, গ্রক লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেলের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।সম্পাদনা ও সংকলন : সাদিক মোহাম্মদ আলম
Suggested Readings:
If you're interested in Universal Grammar (UG) and Generative Grammar, Noam Chomsky is the central figure, but there are also other influential linguists who expand on or critique his work. Here's a list of essential books by Chomsky and others, ordered from beginner-friendly to more advanced:
১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক পেশ করা হয়েছে তাতে অন্যতম তিনটি মূলনীতি হলো, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’। বস্তুত এই মূলনীতিসমূহ […]
নাসর হামিদ আবু যায়েদ: এক মুক্তচিন্তার কুরআন গবেষকের জীবনচিত্র পূর্ণ নাম: নাসর হামিদ আবু যায়েদ (Nasr Hamid Abu Zayd)জন্ম: ১০ জুলাই ১৯৪৩, তানতা, মিসরমৃত্যু: ৫ জুলাই ২০১০, কায়রো, মিসরপরিচয়: কুরআন গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, ধর্মতাত্ত্বিক ও মুক্তচিন্তার ইসলামী চিন্তাবিদ 🎓 শিক্ষা ও পেশাজীবন নাসর হামিদ আবু যায়েদ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ […]
In this interview, the host discuss with Dr. Munther Younes of Cornell University to discuss his research on the transmission and evolution of the Qur'anic text. Dr. Younes is Reis Senior Lecturer of Arabic Language and Linguistics at Cornell University and a renowned expert in the Arabic language. They discuss the Arabic of the Qur'an, […]
আর রহমান দয়াময় সত্তা আল্লামাল ক্বুরআন তিনি শিক্ষা দিয়েছেন পঠন ক্ষমতা খালাক্বাল ইনসান তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ আল্লামাহুল বায়ান তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্পষ্টভাবে বিবৃত করার ভাষা। - সুরা আর-রাহমান, আয়াত ১-৪ সুরা আর-রাহমান কুরআনের ৫৫তম সুরা এবং মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সুরা। এই সুরার সুচনায় আমরা মানুষের পাঠ করার ক্ষমতা এবং কথা বলার […]
The concept of fractals in the Quran can be explored through the lens of recurring patterns in nature, self-similarity, and divine order. While the Quran does not explicitly mention "fractals" (a term coined in modern mathematics), it frequently describes natural patterns that align with fractal geometry, reinforcing the idea of a unified and recursive design […]
Did you think Siyam صيام was only for "Muslims" who don't eat and drink for 30 days? Think again. This video explore 'Mominoon مؤمنون' and 'Al-lazina Amanoo الذين آمنوا'—and see how these terms fit in with Siyam. This is an exercise in understanding an action through knowing its doers. Major Take Away Siyam is an […]