ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।
উদ্দেশ্য
ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।
প্রকাশিত বইসমূহ
পশু কুরবাণী প্রসঙ্গে কুরআনের পাঠ ও চিন্তা
ঈদুল আজহা মানেই পশু কুরবাণী প্রসঙ্গ।
অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তির প্রশ্ন থাকে যে মুসলিমরা বাংলাদেশ সহ পাক-ভারত উপমহাদেশে যে বিশেষ ধুমধাম করে পশু কুরবাণী করে থাকে, সেটি কতখানি স্রষ্টা নির্দেশিত আর কতখানি লৌকিক আচার-আচরণের অংশ?
যারা কুরআনের পাঠক এবং ইসলামের আদি ইতিহাস থেকে এটুকু সচেতন যে উমাইয়া আব্বাসী চক্রান্তে রাসুলের নামে প্রচলিত তথাকথিত হাদীসগুলো আসলে অথেনটিক নয়, তাদের নতুন প্রশ্ন যে কুরআন থেকে পশু কুরবাণীর বিষয়টি আসলে আমরা পাই কি? পেলে সেটি কি আঙ্গিকে আছে? কুরআনের সমন্বিত অধ্যায় ও চিন্তাশীল পাঠ থেকে কি সত্যিই পশু কুরবাণীর বিধান যেমনটি বাপ-দাদার ঐতিহ্য হিসাবে পালিত হচ্ছে তেমনটি পাওয়া যায়?
এই আলোচনার জন্য আমরা ”কুরবাণী” শব্দটি কুরআনের যেসব আয়াতে আছে সেগুলো অধ্যায়ন করতে পারি, এর পাশাপাশি পশু জবাই এবং তা থেকে গোস্ত-মাংস বিতরন খাওয়া প্রসঙ্গের আয়াত এবং একই সাথে উৎসর্গ করা, ত্যাগ অর্থে অন্যান্য আয়াত পর্যালোচনায় আসতে পারে।
উপরোল্লেখিত প্রসঙ্গগুলো যে সব অধ্যায় ও আয়াতে পাওয়া যায় সেগুলো এখানে তুলে ধরা হলো (অনুবাদ নেওয়া হয়েছে কুরআনান আ’জাবান অনুবাদ সংকলন থেকে, অনুবাদক তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী):
৫:২৭ ওয়াতলু = তিলাওয়াত/ পাঠ করো। আলাইহিম = তাদের কাছে। নাবাআবনাই আদামা = আদমের দুই পুত্রের সংবাদ। বিল হাক্কি = যথাযথভাবে। ইয = যখন। ক্বাররাবা ক্বুরবানান = তারা দুজন কুরবান (আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা) পেশ করেছে। ফাতুক্বুব্বিলা = তখন কবুল করা হয়েছে। মিন আহাদিহিমা = তাদের দুজনের একজন থেকে। ওয়া = আর। লাম ইউতাক্বাব্বাল = কবুল করা হয়নি। মিনাল আখারি = অন্যজন থেকে। ক্বলা = (যার কুরবান কবুল করা হয়নি) সে বলেছে। লাআক্বতুলান্নাকা = নিশ্চয় আমি তোমাকে হত্যা করবো। ক্বলা = (যার কুরবান কবুল করা হয়েছে) সে বলেছে। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইয়াতাক্বাব্বালুল্লাহু = আল্লাহ কবুল করেন। মিনাল মুত্তাক্বীন = মুত্তাকীদের থেকে।
পাঠ করো তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে। যখন তারা দুজন কুরবান (আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা) পেশ করেছে, তখন কবুল করা হয়েছে তাদের দুজনের একজন থেকে আর কবুল করা হয়নি অন্যজন থেকে। (যার কুরবান কবুল করা হয়নি) সে বলেছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে হত্যা করবো’। (যার কুরবান কবুল করা হয়েছে) সে বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কবুল করেন মুত্তাকীদের থেকে।
৩:১৮৩ আল্লাযীনা = যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আহিদা = আহদ/ বিশেষ নির্দেশদান করেছেন। ইলাইনা = আমাদের প্রতি। আল্লা নু’মিনা = এই যে। আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না। লিরসূলিন = কোন রসূলের প্রতি। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়া’তিয়ানা = সে আমাদের কাছে আসবে। বিক্বুরবানিন = সেই কুরবান/ আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা নিয়ে। তা’কুলুহুন্নারু = আগুন যেটিকে খেয়ে ফেলবে। ক্বুল = বলো। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছিলো। রুসুলুন = অনেক রসূল। মিন ক্বাবলী = আমার আগে। বিলবাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। ওয়া = আর। বিল্লাযী = তা নিয়ে যা। ক্বুলতুম = তোমরা বলেছো। ফালিমা = তাহলে কেন। ক্বাতালতুমূ = তোমরা হত্যা করেছো। হুম = তাদেরকে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিক্বীন = সাদিকীন/ সত্যবাদী।
যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিশেষ নির্দেশদান করেছেন আমাদের প্রতি এই যে, আমরা বিশ্বাস করবো না কোন রসূলের প্রতি যতক্ষণ না সে আমাদের কাছে আসবে সেই কুরবান (= ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা’) নিয়ে, আগুন যেটিকে খেয়ে ফেলবে। বলো, ‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছিলো অনেক রসূল আমার আগে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আর তা নিয়ে যা তোমরা বলেছো (= তারা অগ্নিদগ্ধ কুরবানের রীতি পালন করতো।)। তাহলে কেন তোমরা হত্যা করেছো তাদেরকে, যদি তোমরা হও সাদিকীন/ সত্যবাদী?’
৪৬:২৮ ফালাও লা নাসারাহুমুল্লাযীনাত তাখাযূ = তারপর কেন তাদেরকে তারা সাহায্য করল না যাদেরকে তারা গ্রহণ করেছিল। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ক্বুরবানান আলিহাতান = কুরবান/ আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত ইলাহরূপে। বাল = বরং। দল্লূ = তারা হারিয়ে গেছে। আনহুম = তাদের থেকে। ওয়া = আর। যালিকা ইফকুহুম = উহাই তাদের মিথ্যার পরিণতি। ওয়া = আর। মা কানূ ইয়াফতারূনা = (উহার পরিণতি) যা তারা (মিথ্যাভাবে) রচনা করছিল।
তারপর কেন তাদেরকে তারা সাহায্য করল না যাদেরকে তারা গ্রহণ করেছিল আল্লাহকে বাদ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত ইলাহরূপে? বরং তারা হারিয়ে গেছে তাদের থেকে। আর উহাই তাদের মিথ্যার পরিণতি আর (উহার পরিণতি) যা তারা (মিথ্যাভাবে) রচনা করছিল।
২২:৩৩ লাকুম ফীহা = উহাতে (= গবাদি পশুগুলোতে) তোমাদের জন্য আছে। মানাফিউ ইলা আজালিম মুছাম্মা = আজালিম মুসাম্মা/ নির্ধারিত শেষ সময়সীমা পর্যন্ত (= হজ্জ উপলক্ষ্যে যথাস্থানে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত) বিভিন্ন উপকারলাভের সুযোগ। ছুম্মা = তারপর। মাহিল্লুহা = উহার মাহিল্লু/ জমা দেয়ার যথাস্থান হচ্ছে। ইলাল বায়তিল আতীক্বি = বায়তুল আতীকের/ প্রাচীন গৃহের (= কা’বা ঘরের) দিকে (পথিমধ্যে/ সন্নিকটে)।
উহাতে (= গবাদি পশুগুলোতে) তোমাদের জন্য আছে নির্ধারিত শেষ সময়সীমা পর্যন্ত (= হজ্জ উপলক্ষ্যে যথাস্থানে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত) বিভিন্ন উপকারলাভের সুযোগ। তারপর উহার জমা দেয়ার যথাস্থান হচ্ছে বায়তুল আতীকের/ প্রাচীন গৃহের (= কা’বা ঘরের) সন্নিকটে।
২২:৩৪ ওয়া = আর। লিকুল্লি উম্মাতিন = প্রত্যেক উম্মাতের জন্য। জাআলনা = আমরা নির্ধারিত করেছি। মানছাকান = মানছাক (= )। লিইয়াযকুরুছমাল্লাহি = যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। আলা মা রযাক্বাহুম = ঐগুলোর উপর যা তিনি তাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছেন। মিম বাহীমাতিল আনআমি = বাহীমাতিল আনআমের/ গবাদিপশু ধরনের বিচরণশীল জন্তুগুলোর মধ্য থেকে। ফাইলাহুকুম = সুতরাং তোমাদের ইলাহ। ইলাহুন ওয়াহিদুন = একই ইলাহ। ফালাহু = সুতরাং তাঁরই উদ্দেশ্যে। আছলিমূ = তোমরা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করো। ওয়া = আর। বাশশিরিল মুখবিতীনরা = সুসংবাদ দাও (আল্লাহর প্রতি) বিনীতদেরকে।
আর প্রত্যেক উম্মাতের জন্য আমরা নির্ধারিত করেছি মানছাক (= ) (২২:৬৭)। যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে ঐগুলোর উপর যা তিনি তাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছেন গবাদি পশু প্রকৃতির বিচরণশীল চতুষ্পদ পশুসমূহের মধ্য থেকে (অর্থাৎ আল্লাহর নামে পশু জবেহ করার জন্য)। সুতরাং তোমাদের ইলাহ (উপাস্য) একই ইলাহ। সুতরাং তাঁরই উদ্দেশ্যে তোমরা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করো। আর সুসংবাদ দাও (আল্লাহর প্রতি) বিনীতদেরকে।
২২:৩৫ আল্লাযীনা = যারা এমন যে। ইযা = যখন। যুকিরাল্লাহু = আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। ওয়াজিলাত = তখন কেঁপে উঠে। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ। ওয়াস সাবিরীনা আলা মা = আর যারা উহার উপর সবরকারী হয় যা। আসাবাহুম = তাদের উপর আপতিত হয়। ওয়াল মুক্বীমিস সালাতি = আর সালাত কায়েমকারী হয়। ওয়া = আর। মিম্মা রযাক্বনাহুম = যা আমরা তাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছি তা থেকে। ইউনফিক্বূনা = তারা ইনফাক/ ব্যয় করে।
যারা এমন যে, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন কেঁপে উঠে তাদের কলবসমূহ। আর যারা উহার উপর সবরকারী হয় যা (যে বিপদাপদ) তাদের উপর আপতিত হয়, আর সালাত কায়েমকারী হয় আর যা আমরা তাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছি তা থেকে তারা ইনফাক/ ব্যয় করে।
২২:৩৬ ওয়াল বুদনা জাআলনাহা = আর কুরবানির উপযোগী মাংসল/হৃষ্টপুষ্ট পশুগুলোকে আমরা করেছি। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিন শায়ায়িরিল্লাহি = শায়ায়েরাল্লাহ/ আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। লাকুম ফীহা = তোমাদের জন্য উহাতে আছে। খায়রুন = ব্যাপক কল্যাণ। ফাযকুরুছমাল্লাহি আলাইহা = সুতরাং তোমরা উহার উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো। সাওয়াফফা = সারিবদ্ধ করা অবস্থায়। ফাইযা = তারপর যখন। ওয়াজাবাত জুনূবুহা = উহাদের পার্শ্বদেশ মাটিতে ঠেকে যায় (= নিষ্প্রাণ হয়ে যায়)। ফাকুলূ মিনহা = তখন উহা থেকে তোমরাও খাও। ওয়া = আর। আতয়িমুল ক্বানিআ ওয়াল মু’তাররা = সেসব অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও যারা আবেদন করে না এবং যারা আবেদন করে। কাযালিকা = এভাবে। ছাখখারনাহা = আমরা সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করেছি। লাকুম = তোমাদের জন্য। লায়াল্লাকুম = যেন তোমরা তাশকুরূন = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
আর কুরবানির উপযোগী মাংসল/হৃষ্টপুষ্ট পশুগুলোকে আমরা করেছি তোমাদের জন্য আল্লাহর উদ্দেশ্যে নির্ধারিত নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। তোমাদের জন্য উহাতে আছে ব্যাপক কল্যাণ। সুতরাং তোমরা উহার উপর আল্লাহর নাম স্মরণ করো (উৎসর্গের জন্য) সারিবদ্ধ করা অবস্থায়। তারপর যখন উহাদের পার্শ্বদেশ মাটিতে ঠেকে যায় (= নিষ্প্রাণ হয়ে যায়), তখন উহা থেকে তোমরাও খাও আর সেসব অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও যারা আবেদন করে এবং যারা আবেদন করে না। এভাবে আমরা সেগুলোকে নিয়ন্ত্রিত করেছি তোমাদের জন্য, যেন তোমরা শোকর/কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
২২:৩৭ লাইঁ ইয়ানাল্লাহা = আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না (= মূল্যায়ন পায় না)। লুহূমুহা ওয়া লা দিমাউহা = উহাদের গোশত ও রক্ত। ওয়ালাকিইঁ ইয়ানালুহুত তাক্বওয়া মিনকুম = কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে (= মূল্যায়ন পায়) তোমাদের তাকওয়া। কাযালিকা = এভাবে। ছাখখারাহা = তিনি উহাকে নিয়োজিত করেছেন। লাকুম = তোমাদের কল্যাণের জন্য। লিতুকাব্বিরুল্লাহা = যেন তোমরা আল্লাহর তাকবীর/ শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। আলা মা হাদাকুম = তাঁর হিদায়াত অনুযায়ী। ওয়া = আর। বাশশিরিল মুহসিনীনা = মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে সুসংবাদ দাও।
আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না (= মূল্যায়ন পায় না) উহাদের গোশত ও রক্ত। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে (= মূল্যায়ন পায়) তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি উহাকে নিয়োজিত করেছেন তোমাদের কল্যাণের জন্য। যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো তাঁর হিদায়াত অনুযায়ী। আর উত্তম আচরণকারীদেরকে সুসংবাদ দাও।
২২:৬৭ লিকুল্লি উম্মাতিন = প্রত্যেক উম্মাতের জন্য। জাআলনা = আমরা নির্ধারিত করেছি। মানছাকান = মানছাক (= )। হুম = তারা। নাছিকূহু = উহাকে মানছাকরূপে পালন করে। ফালা ইউনাযিউন্নাকা = সুতরাং তারা যেন তোমার সাথে মতবিরোধ না করে। ফিল আমরি = এই ব্যাপারে। ওয়াদউ = আর তুমি দোয়া করো তোমার রবের কাছে। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লাআলা হুদাম মুসতাক্বীমা = হুদাম মুসতাক্বীমের/ সরল সঠিক হিদায়াতের উপর আছো।
প্রত্যেক উম্মাতের জন্য আমরা নির্ধারিত করেছি মানছাক (= ) (২২:৩৪), তারা উহাকে মানছাকরূপে পালন করে। সুতরাং তারা যেন তোমার সাথে মতবিরোধ না করে এই ব্যাপারে। আর তুমি দোয়া করো তোমার রবের কাছে। নিশ্চয় তুমি সরল সঠিক হিদায়াতের উপর আছো।
৩৭:১০২ ফালাম্মা = তারপর যখন। বালাগা = সে পৌঁছলো। মাআহুছ ছা’ইয়া = তার সাথে দৌড়াদৌড়ির বয়সে। ক্বলা = তখন সে বলেছিলো। ইয়া বুনাইয়া = হে আমার পুত্র। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আরা = দেখেছি। ফিল মানামি = আমার স্বপ্নের মধ্যে। আন্নী = যে, আমি। আযবাহুকা = তোমাকে জবেহ করছি। ফানযুর = তাই লক্ষ্য করো। মাযা তারা = তুমি কী দেখো? ক্বলা = সে (= তার পুত্র) বলেছিলো। ইয়া আবাতিফআল = ‘হে আমার আব্বা, আপনি করুন। মা তু’মারু = যা করতে আপনি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ছাতাজিদুনী = আপনি আমাকে পাবেন। ইন শাআল্লাহু = ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। মিনাস সবিরীনা = সবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
তারপর যখন সে পৌঁছলো তার সাথে দৌড়াদৌড়ির বয়সে, তখন সে বলেছিলো, ‘হে আমার পুত্র, নিশ্চয় আমি দেখেছি আমার স্বপ্নের মধ্যে যে, আমি তোমাকে জবেহ করছি। তাই লক্ষ্য করো তুমি কী দেখো?’ সে (= তার পুত্র) বলেছিলো, ‘হে আমার আব্বা, আপনি করুন যা করতে আপনি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনি আমাকে পাবেন, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, সবরকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৩৭:১০৩ ফালাম্মা = তারপর যখন। আছলামা = তারা দুজন আত্মসমর্পণ করলো। ওয়া = আর। তাল্লাহু = সে (= ইবরাহীম) তাকে (= ইসমাইলকে) শায়িত করলো/ শোয়ায়ে দিল। লিল জাবীনি = কপালের উপর।
তারপর যখন তারা দুজন আত্মসমর্পন করলো। আর সে (= ইবরাহীম) তাকে (= ইসমাইলকে) শায়িত করলো/ শোয়ায়ে দিলো কপালের উপর।
৩৭:১০৪ ওয়া = আর। নাদায়নাহু = আমরা তাকে ডেকে বললাম। আইঁ ইয়া ইবরাহীমু = যে, ‘হে ইবরাহীম।
১০৮:১ ইন্না আ’তোয়ায়নাকালকাওসার = নিশ্চয় আমরা তোমাকে দিয়েছি আল কাওসার/ প্রচুর কল্যাণের উপকরন (= আল কুরআন)।
নিশ্চয় আমরা তোমাকে দিয়েছি আল কাওসার/ প্রচুর কল্যাণের উপকরন।
১০৮:২ ফাসল্লি লিরব্বিকা ওয়ানহার = সুতরাং তোমার রবের (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সালাত কর ও নহর কর (= জ্ঞানের গভীরতা ও দূরদর্শিতা অর্জন ও প্রয়োগ, সামষ্টিক কল্যাণার্থে ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে উৎসর্গ এবং আদর্শিক আপোষহীনতা অবলম্বনমূলক কর্মরীতি প্রবর্তন কর)।
সুতরাং তোমার রবের (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সালাত কর ও নহর কর (= জ্ঞানের গভীরতা ও দূরদর্শিতা অর্জন ও প্রয়োগ, সামষ্টিক কল্যাণার্থে ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে উৎসর্গ এবং আদর্শিক আপোষহীনতা অবলম্বনমূলক কর্মরীতি প্রবর্তন কর)।
উপরোল্লেখিত আয়াত সমূহ অধ্যায় থেকে যে বিষয়গুলো বোঝা যায় যে:
এক. কুরবানির জন্য সাধারণত “কুরবান” এবং “মানসাক” শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আমরা কুরবানি বলতে যা বুঝি বা যা করি তা কুরআনে মূলত “মানসাক” হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। মানসাক অর্থ অনুষ্ঠান, রিচুয়াল, পালনীয় রীতিনীতি ইত্যাদি।
দুই. পশু কুরবানী মূলত হজ্জের অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত। হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কুরআনে প্রাচীন গৃহের (বায়তুল আতীক) নিকট পশু কুরবানির নির্দেশ রয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যারা হজ্জ করবে না তাদের জন্য কুরবানী কোন আবশ্যক নির্দেশ নয়। তবে যারা হজ্জের সাথে সংহতি করে পশু কুরবাণী দিতে চায় এটি তারা করতে পারে।
তিন. প্রত্যেক সম্প্রদায়ের (উম্মাহ) মধ্যে কুরবানির যে বিধানের কথা কুরআনে রয়েছে, তা দ্বারা সর্বত্র, সকল সামর্থবান ব্যক্তি কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট সময়ে কুরবানি করার বাধ্যবাধকতা প্রতিষ্ঠিত হয় না।
চার. তবে যে কোন সামর্থবান ব্যক্তি পশু জবাই করে নিজে খেতে পারে এবং আত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃখিকে তা বিতরণ করতে পারে।
পাঁচ. নবী ইবরাহীম কর্তৃক সন্তানকে জবেহ করা সংক্রান্ত ঘটনাটিকে প্রচলিত কুরবানির সূত্রপাত বা ভিত্তি হিসেবে ধরে নেয়া কুরআন সমর্থিত নয়। বরং আধুনিক স্কলাররা জবেহ শব্দটা খত্নার দিক নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এর জন্য নীচের ভিডিওটি দিখতে পারেন।
ছয়. সূরা কাওছারে “অনহার” দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে প্রচলিত কুরবানিকে বোঝায় না। এর দ্বারা সর্বোচ্চ ত্যাগ, উৎসর্গীকরণ ইত্যাদি বোঝায়। অনেকটা সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে স্রষ্টার প্রদেয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পাওয়ার দিকে এটি আহ্বান করে।
প্রত্যেক পরিবার, প্রতি বছরেই কি কুরবানী করবে? কুরআন কি বলে?
আল্লাহ প্রত্যেক সম্প্রদায় (উম্মাত) -কে কুরবানী (মানাসিক, এখানে কনটেক্স অনুসারে যার অর্থ কুরবানী) নিয়ম দিয়েছেন। সুরা হজ্জ ২২:৩৪। সুতরাং স্রষ্টাকে নিবেদন করে পশু উৎসর্গ একটি সার্বজনীন আচার-অনুষ্ঠান যা সকল সম্প্রদায়ের / সমাজে পাওয়া যায়।
হজ্জ অনুষ্ঠানে হাদিয়ার পশুগুলোকে উৎসর্গ করার নিদির্ষ্ট স্থান হলো বায়তুল আত্বিক বা কাবা। ২২:৩৩। সুতরাং যারা হজ্জ পালন করবে তাদের মধ্যে সামর্থবানরা কাবার ব্যবস্থাপকদের কাছে হাদিয়া প্রদান করবে এবং এই নিদির্ষ্ট স্থানটি হজ্জের কনটেক্সটে বায়তুল আত্বিক। এর অর্থ এই নয় যে অন্য কোথাও পশু উৎসর্গ করা যাবে না।
হজ্জে অংশগ্রহণকারী ছাড়া অন্যদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান এবং নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া নেই। তবে সংহতি প্রকাশ করার জন্য হজ্জের সাথে মিল করে অন্যান্য স্থানে যারা হজ্জে যায় নি তারাও কুরবানী করলে তাতে আপত্তি নেই।
প্রত্যেক পরিবার, প্রত্যেক বছর হজ্জের সময় যে কুরবানী করতেই হবে এমনটি কুরআন বাধ্য করে না। এবং এটি Environmentally sustainable নয়, প্রাকৃতিকও নয়। স্রষ্টার কিতাব কুরআনে প্রাকৃতিক নিয়মের লংঘন হবে এরকম কোন বিধান নেই।
একটি বস্তিতে ২০টি ঘর আছে, তারা সবাই মিলে একটি গরু কুরবানী দিতে পারবে যদি তারা চায়, না পারার কোন বাধা কুরআনে নেই। কুরবানী পশু যেমন একটি গরুর ভাগ: ৭ ভাগ বা তার নীচে হতে হবে এরকম লিমিটেশন মানুষের সৃষ্ট, কুরআনের নয়। বরং এরকম স্বআরোপিত লিমিটেশনের ফলে অনেক গরীব কুরবানীর আনন্দ ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাস্তবতা হলো যে কুরবানী বরং গরীবদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। যারা দুই দিন অন্তর অন্তর গরুর গোস্ত কিনে খেতে পারে তার থেকে ঐসব গরীব মানুষের জন্য কুরবানী বেশি কল্যানকর। কেননা কুরবানীর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বঞ্চিত ও যার প্রয়োজন আছে তাকে কুরবানীর গোস্ত খাওয়ানো (২২:২৮, ২২:৩৬)।
এক কথায়: প্রত্যেক পরিবারের প্রতি বছর কুরবানী করা কুরআনিক কোন আদেশ ও হুকুম নয়।
ইব্রাহীম আ. এবং তার সন্তানের তথাকথিত কুরবাণী প্রসঙ্গে নতুন কুরআনিক গবেষণা
ড. হানী তার মার্ভেলাস কুরআন নাম ইউটিউব চ্যানেলে ইব্রাহীম আ. এর ঘটনাটির সম্পূর্ণ নতুন এক বিশ্লেষণ করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে সেখানে জবিহা নামে যে শব্দটি আছে তার অর্থ আমরা যে অর্থেই জবাই বুঝি তা করা নয়, বরং আরবীতে এর অর্থ ছেদন করা (incision), ত্বক ছেদন এবং সেটি আসলে পুরুষের খত্নার দিকে নির্দেশক (যেটি তার ছেলে সন্তানের সংশ্লিষ্টতা থেকে আরো পরিস্কার হয়)।
এই ঘটনা থেকেই বণী ইসরাইলরা খত্নার প্রথা ধরে রেখেছে যা পরবর্তীদের জন্য আল্লাহ রেখে দিবেন বলে অঙ্গীকার করেছেন ৩৭:১০৮ আয়াতে। সুতরাং সন্তানকে জবাই নয়, বরং ত্নকের ছেদনই ছিলো সেই ঘটনা - এটাই ড. হানীর উপস্থাপনা। বিষয়টি নতুন হলেও বেশ যুক্তিসংগত বলে মনে হয়েছে আমাদের কাছে।
১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক পেশ করা হয়েছে তাতে অন্যতম তিনটি মূলনীতি হলো, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’। বস্তুত এই মূলনীতিসমূহ […]
নাসর হামিদ আবু যায়েদ: এক মুক্তচিন্তার কুরআন গবেষকের জীবনচিত্র পূর্ণ নাম: নাসর হামিদ আবু যায়েদ (Nasr Hamid Abu Zayd)জন্ম: ১০ জুলাই ১৯৪৩, তানতা, মিসরমৃত্যু: ৫ জুলাই ২০১০, কায়রো, মিসরপরিচয়: কুরআন গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, ধর্মতাত্ত্বিক ও মুক্তচিন্তার ইসলামী চিন্তাবিদ 🎓 শিক্ষা ও পেশাজীবন নাসর হামিদ আবু যায়েদ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ […]
In this interview, the host discuss with Dr. Munther Younes of Cornell University to discuss his research on the transmission and evolution of the Qur'anic text. Dr. Younes is Reis Senior Lecturer of Arabic Language and Linguistics at Cornell University and a renowned expert in the Arabic language. They discuss the Arabic of the Qur'an, […]
আর রহমান দয়াময় সত্তা আল্লামাল ক্বুরআন তিনি শিক্ষা দিয়েছেন পঠন ক্ষমতা খালাক্বাল ইনসান তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ আল্লামাহুল বায়ান তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্পষ্টভাবে বিবৃত করার ভাষা। - সুরা আর-রাহমান, আয়াত ১-৪ সুরা আর-রাহমান কুরআনের ৫৫তম সুরা এবং মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সুরা। এই সুরার সুচনায় আমরা মানুষের পাঠ করার ক্ষমতা এবং কথা বলার […]
The concept of fractals in the Quran can be explored through the lens of recurring patterns in nature, self-similarity, and divine order. While the Quran does not explicitly mention "fractals" (a term coined in modern mathematics), it frequently describes natural patterns that align with fractal geometry, reinforcing the idea of a unified and recursive design […]
Did you think Siyam صيام was only for "Muslims" who don't eat and drink for 30 days? Think again. This video explore 'Mominoon مؤمنون' and 'Al-lazina Amanoo الذين آمنوا'—and see how these terms fit in with Siyam. This is an exercise in understanding an action through knowing its doers. Major Take Away Siyam is an […]