আজ ৮ জুন বিশ্ব মহাসাগর দিবস। এই প্রেক্ষিতে সমুদ্রের সাথে সম্পর্কিত আয়াতসমূহের শিক্ষা চর্চার উদ্দেশ্যে ‘বাহার’ (সমুদ্র) শব্দ সম্বলিত আয়াতসমূহের (৩৯টি আয়াত) অনুবাদ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
২:৫০ :: আর (স্মরণ করো) যখন তোমাদের (বানী ইসরাইলের) জন্য আমি সমুদ্রকে বিভক্ত করেছিলাম, অতঃপর তোমাদেরকে নাজাত দিয়েছিলাম এবং ফির‘আউন দলকে ডুবিয়ে দিয়েছিলাম, আর তোমরা দেখছিলে।
২:১৬৪ :: নিশ্চয়ই আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে, রাত ও দিনের বিবর্তনের মধ্যে, লোকের উপকারী দ্রব্যাদিসহ সমুদ্রে চলাচলকারী জলযানের মধ্যে এবং আকাশ হতে আল্লাহর বর্ষিত সেই পানির মধ্যে যদ্বারা তিনি পৃথিবীকে- মরে যাওয়ার পর আবার জীবিত করেন এবং তাতে সকল প্রকার জীব-জন্তুর বিস্তারণে এবং বাতাসের গতি পরিবর্তনের মধ্যে এবং আকাশ ও ভূমন্ডলের মধ্যস্থলে নিয়ন্ত্রিত মেঘপুঞ্জের মধ্যে বিবেকসম্পন্ন লোকেদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।
৫:৯৬ :: সমুদ্রের শিকার ও তা ভক্ষণ তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে, তোমাদের আর সফরকারীদের ভোগের জন্য। ইহরাম অবস্থায় থাকা পর্যন্ত স্থলের শিকার তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। আল্লাহকে ভয় কর যাঁর কাছে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।
৬:৫৯ :: আর তাঁর কাছে রয়েছে গায়েবের চাবিসমূহ, তিনি ছাড়া এ বিষয়ে কেউ জানে না এবং তিনি অবগত রয়েছেন স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে। আর কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন এবং যমীনের অন্ধকারে কোন দানা পড়ে না, না কোন ভেজা এবং না কোন শুষ্ক কিছু; কিন্তু রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।
৬:৬৩ :: বল, ‘কে তোমাদেরকে নাজাত দেন স্থল ও সমুদ্রের যাবতীয় অন্ধকার থেকে? তোমরা তাকে ডাক অনুনয় বিনয় করে ও চুপিসারে যে, যদি তিনি আমাদেরকে এ থেকে নাজাত দেন, আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’।
৬:৯৭ :: আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তারকারাজি, যাতে তোমরা এ দ্বারা পথপ্রাপ্ত হও স্থল ও সমুদ্রের অন্ধকারে। অবশ্যই আমি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি এমন কওমের জন্য যারা জানে।
৭:১৩৮ :: আর বনী ইসরাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম। অতঃপর তারা আসল এমন এক কওমের কাছে যারা নিজদের মূর্তিগুলোর পূজায় রত ছিল। তারা বলল, ‘হে মূসা, তাদের যেমন উপাস্য আছে আমাদের জন্য তেমনি উপাস্য নির্ধারণ করে দাও। সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা এমন এক কওম যারা মূর্খ’।
৭:১৬৩ :: তাদেরকে জিজ্ঞেস কর ঐ জনবসতি সম্পর্কে যা সমুদ্রের উপকূলে বিদ্যমান ছিল। তারা শনিবারের সীমালঙ্ঘন করেছিল। শনিবার পালনের দিন মাছগুলো প্রকাশ্যতঃ তাদের নিকটে আসত। আর যেদিন শনিবারের অনুষ্ঠান থাকত না সেদিন সেগুলো আসত না। এটা হত এজন্য যে, তারা অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকার কারণে তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছিলাম।
১০:২২ :: তিনিই তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা সামুদ্রিক জাহাজে থাক, আর তা তাদেরকে নিয়ে চলতে থাকে অনুকুল হাওয়ায় এবং তারা তা নিয়ে আনন্দিত হয়, (এ সময়) তাকে পেয়ে বসে ঝড়ো হাওয়া, আর চারদিক থেকে ধেয়ে আসে তরঙ্গ এবং তাদের নিশ্চিত ধারণা হয় যে, তাদেরকে পরিবেষ্টন করা হয়েছে। তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, ‘যদি আপনি এ থেকে আমাদেরকে নাজাত দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’।
১০:৯০ ::আর আমি বনী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে নিলাম। আর ফির‘আউন ও তার সৈন্যবাহিনী ঔদ্ধত্য প্রকাশ ও সীমালঙ্ঘনকারী হয়ে তাদের পিছু নিল। অবশেষে যখন সে ডুবে যেতে লাগল, তখন বলল, ‘আমি ঈমান এনেছি যে, সে সত্তা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যার প্রতি বনী ইসরাঈল ঈমান এনেছে। আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।
১৪:৩২ :: আল্লাহ, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন ফলে তা দ্বারা ফল-ফলাদি থেকে তোমাদের জন্য রিয্ক উৎপাদন করেন এবং তিনি সামুদ্রিক জাহাজকে তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন, যাতে তাঁর আদেশে সমুদ্রে তা চলাচল করে এবং নদীসমূহকে তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন।
১৬:১৪ :: আর তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশ্ত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে তা পানি চিরে চলছে এবং যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।
১৭:৬৬ :: তোমাদের রব্ব (প্রতিপালক ও বিধানদাতা) তিনি, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে সামুদ্রিক জাহাজ চালিত করেন, যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। নিশ্চয় তিনি তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
১৭:৬৭ :: আর যখন তোমাদেরকে সমুদ্রে বিপদ স্পর্শ করে, তখন তিনি ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাক, তারা (তোমাদের মন থেকে) হারিয়ে যায়; অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে রক্ষা করে স্থলে আনেন, তখন তোমরা বিমুখ হয়ে যাও। আর মানুষ তো খুব অকৃতজ্ঞ।
১৭:৭০ :: আর আমি তো আদম সন্তানদের সম্মানিত করেছি এবং আমি তাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে বাহন দিয়েছি এবং তাদেরকে দিয়েছি উত্তম রিয্ক। আর আমি যা সৃষ্টি করেছি তাদের থেকে অনেকের উপর আমি তাদেরকে অনেক মর্যাদা দিয়েছি।
১৮:৬০ :: স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিলঃ দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে না পৌঁছে আমি থামবনা, আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।
১৮:৬১ ::এরপর যখন তারা তাদের দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে উপনীত হল, তখন তারা তাদের মাছের কথা ভুলে গেল। ফলে মাছটি নালার মত করে সমুদ্রে তার পথ করে নিল।
১৮:৬৩ :: সে (মূসার সঙ্গী) বলল, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, যখন আমরা পাথরটিতে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখন আমি মাছটির কথা আপনাকে জানাতে ভুলে গিয়েছিলাম। আর শয়তানই আমাকে তা স্মরণ করতে ভুলিয়েছে এবং তা বিস্ময়করভাবে তার পথ করে সমুদ্রে চলে গিয়েছে’।
১৮:৭৯ :: জাহাজটির বিষয় হল, তা ছিল কিছু দরিদ্র লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করত। আমি জাহাজটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি কারণ তাদের পেছনে ছিল এক রাজা, যে জাহাজগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিতো’।
১৮:১০৯ :: বল, ‘আমার প্রতিপালকের কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায় তবে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই। যদিও এর সাহায্যার্থে অনুরূপ আরো সমুদ্র নিয়ে আসি’।
২০:৭৭ :: আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এই মর্মে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতের বেলায় বেরিয়ে পড়ো এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুস্ক পথ নির্মাণ কর; পিছন হতে এসে তোমাকে ধরে ফেলা হবে এই আশংকা করো না এবং ভয়ও করো না।
২২:৬৫ :: তুমি কি লক্ষ্য কর না যে, যমীনে যা কিছু আছে এবং সামুদ্রিক জাহাজগুলো যা তাঁরই নির্দেশে সমুদ্রে বিচরণ করে সবই আল্লাহ তোমাদের জন্য অনুগত করে দিয়েছেন। আর তিনিই আকাশকে স্থির রেখেছেন, যাতে তাঁর অনুমতি ছাড়া তা যমীনের উপর পড়ে না যায়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি বড়ই করুণাময়, পরম দয়ালু।
২৪:৪০ :: অথবা (তাদের আমলসমূহ) গভীর সমূদ্রে ঘনিভূত অন্ধকারের মত, যাকে আচ্ছন্ন করে ঢেউয়ের উপরে ঢেউ, তার উপরে মেঘমালা। অনেক অন্ধকার; এক স্তরের উপর অপর স্তর। কেউ হাত বের করলে আদৌ তা দেখতে পায় না। আর আল্লাহ যাকে আলো দেন না তার জন্য কোনো আলো নেই।
২৫:৫৩ :: আর তিনিই দুই সমুদ্রকে সমান্তরালে প্রবাহিত করেছেন, একটি মিষ্ট, সুপেয় এবং অন্যটি লোনা, খর; আর তিনি উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।
২৬:৬৩ :: অতঃপর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম, ‘তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত কর।’ ফলে তা বিভক্ত হয়ে গেল। তারপর প্রত্যেক ভাগ বিশাল পাহাড়সদৃশ হয়ে গেল।
২৭:৬১ :: বরং তিনি, যিনি যমীনকে আবাসযোগ্য করেছেন এবং তার মধ্যে প্রবাহিত করেছেন নদী-নালা। আর তাতে স্থাপন করেছেন সুদৃঢ় পর্বতমালা এবং দুই সমুদ্রের মধ্যখানে অন্তরায় সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।
২৭:৬৩ :: বরং তিনি, যিনি তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন। আল্লাহর সাথে কি অন্য কোন ইলাহ আছে? তারা যা কিছু শরীক করে আল্লাহ তা থেকে ঊর্ধ্বে।
৩০:৪১ :: মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে ফাসাদ প্রকাশ পায়। যার ফলে আল্লাহ তাদের কতিপয় কৃতকর্মের স্বাদ তাদেরকে আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আসে।
৩১:২৭ :: আর যমীনে যত গাছ আছে তা যদি কলম হয়, আর সমুদ্র (হয় কালি), তার সাথে কালিতে পরিণত হয় আরো সাত সমুদ্র, তবুও আল্লাহর বাণীসমূহ শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
৩১:৩১ :: তুমি কি দেখনি যে, সামুদ্রিক জাহাজগুলো আল্লাহর অনুগ্রহে সমুদ্রে চলাচল করে, যাতে তিনি তাঁর কিছু নিদর্শন তোমাদের দেখাতে পারেন। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।
৩৫:১২ :: আর দু’টি সমুদ্র সমান নয়; একটি খুবই সুমিষ্ট ও সুপেয়, আরেকটি অত্যন্ত লবণাক্ত আর প্রত্যেকটি থেকে তোমরা তাজা গোশত খাও এবং আহরণ কর অলঙ্কার (মুক্তা), যা তোমরা পরিধান কর। আর তুমি তাতে দেখ নৌযান পানি চিরে চলাচল করে। যাতে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।
৪২:৩২ :: তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে আরো রয়েছে সমুদ্রে চলাচলকারী পর্বতমালার মত জাহাজসমূহ।
৪৪:২৪ :: আর সমুদ্রকে স্থির থাকতে দাও, নিশ্চয় তারা (ফেরাউন ও তার দলবল) ডুবন্ত সেনাবাহিনী।
৪৫:১২ :: আল্লাহ, যিনি সমুদ্রকে তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন যাতে তাঁরই আদেশক্রমে তাতে সামুদ্রিক জাহাজসমূহ চলাচল করতে পারে এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করে বেড়াতে পার এবং যাতে তোমরা শোকর আদায় করতে পার।
৫২:৬ :: শপথ তরঙ্গায়িত সমুদ্রের।
৫৫:১৯ :: তিনি দুই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেছেন, উভয়ে সম্মিলিত হয়।
৫৫:২৪ :: সমুদ্রে বিচরণশীল পর্বত সদৃশ জাহাজসমূহ তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন।
৮১:৬ :: আর যখন সমুদ্রগুলোকে অগ্নিউত্তাল করা হবে।
৮২:৩ :: আর যখন সমুদ্রগুলোকে বিস্ফোরিত করা হবে।