وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِن فَضْلِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
৪:৩২ :: আর তোমরা সেসবের আকাঙ্ক্ষা করো না যার মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের একের তুলনায় অন্যকে বিশেষ অনুগ্রহ বা বিশিষ্টতা দান করেছেন। পুরুষের জন্য সেই অংশের মালিকানা/দায়-দায়িত্ব বর্তায় যা সে উপার্জন করেছে এবং নারীর জন্য সেই অংশের মালিকানা/দায়-দায়িত্ব বর্তায় যা সে উপার্জন করেছে। আর তোমরা আল্লাহর কাছে তাঁর অনুগ্রহ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
৪:৩৪ :: পুরুষরা নারীদের উপর সামগ্রিক দায়িত্বশীল। এজন্য যে আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর বিশিষ্টতা দিয়েছেন এবং এজন্য যে পুরুষরা তাদের সম্পদ থেকে (নারীদের জন্য) ব্যয় করে। সুতরাং সৎকর্মশীলা নারীরা বিনয়ী হয় এবং আল্লাহর হেফাজতের আওতায় অদৃশ্যে থাকা বিষয়ের (স্বীয় সতীত্ব ও সন্তানের পিতৃপরিচয়গত বিষয়ের) সংরক্ষণকারিনী হয়। আর যাদের ব্যাপারে তোমরা আশংকা করো যে, তারা দাম্পত্য চুক্তি লংঘন করছে, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে বিছানায় পরিত্যাগ করো এবং তাদেরকে (বিছানায় একা রেখে দেয়া থেকে) ভিন্ন অবস্থায় বের করে আনো (অর্থাৎ সম্পর্ককে স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনো)/ তাদেরকে (সমাধানে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের) সামনে উপস্থাপন কর। তারপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে, তাহলে তোমরা তাদের বিপক্ষে অন্য কোনো ব্যবস্থা তালাশ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত, সর্বশ্রেষ্ঠ।
وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَىٰ وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ
৩১:১৪ :: আর আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতামাতার প্রতি (উত্তম আচরণ করতে)। তাকে তার মা গর্ভধারণ করে কষ্টের পর কষ্ট স্বীকার করে এবং তার দুধপান ছাড়ানো হয় দুই বছরে। (নির্দেশ দিয়েছি) এ মর্মে যে, কৃতজ্ঞ হও আমার প্রতি এবং তোমার পিতামাতার প্রতি। এবং আমার দিকেই প্রত্যাবর্তন।
وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَىٰ نِسَاءِ الْعَالَمِينَ
৩:৪২ :: এবং উল্লেখ্য যখন ফেরেশতাগণ বলেছিল, “হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন এবং তোমাকে পবিত্র রেখেছেন এবং তোমাকে বিশ্বের নারীদের উপর মনোনীত করেছেন।
يَا مَرْيَمُ اقْنُتِي لِرَبِّكِ وَاسْجُدِي وَارْكَعِي مَعَ الرَّاكِعِينَ
৩:৪৩ :: হে মারইয়াম, তোমার প্রভুর প্রতি বিনয়ী হও এবং মান্য (সাজদাহ) করো এবং বিনয়ীদের সাথে বিনীত হও।”
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّىٰ تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَىٰ أَهْلِهَا ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
২৪:২৭ :: হে যারা ঈমান এনেছো, তোমরা তোমাদের নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যদের গৃহে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমরা অনুমতি নেবে এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দিবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম ও কল্যাণকর। সম্ভবত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।
فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَىٰ لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
২৪:২৮ :: সুতরাং যদি তোমরা তাতে কাউকে না পাও, তাহলে তোমরা তাতে প্রবেশ করো না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দিয়ে রাখা হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, “ফিরে যাও”, তাহলে তোমরা ফিরে যাও। উহাই তোমাদের জন্য সর্বাধিক পরিশুদ্ধ নিয়ম। আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে বিষয়ে পরিজ্ঞাত।
لَّيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ مَسْكُونَةٍ فِيهَا مَتَاعٌ لَّكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
২৪:২৯ :: তোমাদের উপর দোষ নেই যে, তোমরা সেই গৃহসমূহে প্রবেশ করবে যাতে কেউ বাস করে না এবং তাতে তোমাদের ভোগ্যদ্রব্য ও উপকৃত হওয়ার বিষয় থাকে। আর আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ করো এবং যা তোমরা গোপন করো।
لَّيْسَ عَلَى الْأَعْمَىٰ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ وَلَا عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَن تَأْكُلُوا مِن بُيُوتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ آبَائِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أُمَّهَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ إِخْوَانِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخَوَاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَعْمَامِكُمْ أَوْ بُيُوتِ عَمَّاتِكُمْ أَوْ بُيُوتِ أَخْوَالِكُمْ أَوْ بُيُوتِ خَالَاتِكُمْ أَوْ مَا مَلَكْتُم مَّفَاتِحَهُ أَوْ صَدِيقِكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَأْكُلُوا جَمِيعًا أَوْ أَشْتَاتًا فَإِذَا دَخَلْتُم بُيُوتًا فَسَلِّمُوا عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ تَحِيَّةً مِّنْ عِندِ اللَّهِ مُبَارَكَةً طَيِّبَةً كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
২৪:৬১ :: অন্ধের জন্য কোন দোষ নেই, পঙ্গুর জন্য কোন দোষ নেই, রোগাক্রান্তের জন্য কোন দোষ নেই এবং তোমাদের নিজদের জন্যও কোন দোষ নেই যে তোমরা খাবে তোমাদের নিজদের ঘরে, অথবা তোমাদের পিতাদের ঘরে, অথবা তোমাদের মায়েদের ঘরে, অথবা তোমাদের ভাইদের ঘরে, অথবা তোমাদের বোনদের ঘরে, অথবা তোমাদের চাচাদের ঘরে, অথবা তোমাদের ফুফুদের ঘরে, অথবা তোমাদের মামাদের ঘরে, অথবা তোমাদের খালাদের ঘরে, অথবা সেসব ঘরে যার চাবি তোমাদের অধিকারে রয়েছে, অথবা তোমাদের স্বত:স্ফূর্ত অধিকার-অর্পিত বন্ধুদের (সদীক্ব) ঘরে। তোমরা একত্রে খাও অথবা আলাদা আলাদা খাও তাতে কোনও দোষ নেই। তবে তোমরা যখন কোন ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা নিজদের উপর সালাম করবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতপূর্ণ ও পবিত্র অভিবাদনস্বরূপ। এভাবে আল্লাহ তোমাদের উদ্দেশ্যে তাঁর আয়াতসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পার।
يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
৩৩:৩২ :: হে নবীর স্ত্রীগণ, তোমরা সাধারণ নারীদের মত নও। যদি তোমরা স্রষ্টা-সচেতনতা রাখো তাহলে বক্তব্যে নমনীয়তা অবলম্বন করো না যাতে যার মনে রোগ আছে সে (অর্থাৎ দুষ্টমনের ব্যক্তি) আগ্রহী হয়ে পড়ে। আর তোমরা বলো ‘স্বাভাবিক সুসঙ্গত কথা’ (ক্বাওলাম মা’রূফ)।
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
৩৩:৩৩ :: এবং (হে নবীর স্ত্রীগণ,) তোমরা নিজেদের গৃহে স্বস্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করো (১) এবং পূর্ববর্তী জাহিলিয়্যাতের প্রদর্শনী প্রদর্শন করো না (২)। এবং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং তোমরা যাকাত প্রদান করো এবং তোমরা আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। নিশ্চয় আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের থেকে অপরিচ্ছন্নতা দূরীভূত করতে, হে গৃহবাসী (আহলে বাইত), এবং তোমাদেরকে ব্যাপকভাবে পবিত্র করতে।
(১) উল্লেখ্য যে এই আয়াতটি সরাসরি নবীস্ত্রীগনের প্রতি নির্দেশনা। তবে এই আয়াতের শিক্ষা অন্য নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ থেকে নির্দেশনা পাওয়া যায় যে, নারীদের প্রথম স্বাভাবিক কর্মক্ষেত্র হলো তাদের গৃহ এবং তারা প্রকৃত প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। অবশ্য প্রয়োজনে তারা বাইরে যেতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, বরং তাদেরও উপার্জনের অধিকার ও সমাজকর্মের দায়িত্ব রয়েছে। তাই তারা প্রয়োজনে বাইরে যাওয়া একান্তই স্বাভাবিক। তবে তাদের জন্য কর্মক্ষেত্রেও ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যাতে তাদের জন্য হিজাবের বা পর্দার ব্যবস্থা রাখা যায়, যেন তাদের ব্যক্তিগত স্বস্তিবোধের ব্যত্যয় না ঘটে।
(২) অর্থাৎ আঁটসাঁট ও অত্যন্ত পাতলা এবং অর্ধনগ্নতার পোশাক পরা এবং অশালীন অঙ্গভঙ্গি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
عَسَىٰ رَبُّهُ إِن طَلَّقَكُنَّ أَن يُبْدِلَهُ أَزْوَاجًا خَيْرًا مِّنكُنَّ مُسْلِمَاتٍ مُّؤْمِنَاتٍ قَانِتَاتٍ تَائِبَاتٍ عَابِدَاتٍ سَائِحَاتٍ ثَيِّبَاتٍ وَأَبْكَارًا
৬৬:৫ :: আশা করা যায় যে, যদি সে তোমাদেরকে তালাক দেয়, তবে তিনি (আল্লাহ) তাকে বদলস্বরূপ এমন স্ত্রীদেরকে দেবেন যারা হবে তোমাদের তুলনায় উত্তম, মুসলিমা/ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারিনী, মু’মিনা/ বিশ্বাসী নারী, বিনয়ী নারী, তাওবাহকারিনী, ইবাদাতকারিনী, সামাজিক কর্মকাণ্ডে তৎপর, দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী ও তরুণী।
قُلِ ادْعُوا اللَّهَ أَوِ ادْعُوا الرَّحْمَـٰنَ أَيًّا مَّا تَدْعُوا فَلَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا
১৭:১১০ :: বলো, আল্লাহ নামে ডাকো অথবা রহমান নামে ডাকো। বস্তুত তাঁর জন্য রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। আর তোমার সালাতে কণ্ঠস্বর বেশি উঁচুও করো না এবং বেশি ক্ষীণও করো না, বরং এ দুয়ের মধ্যবর্তী মাত্রা অবলম্বন করো।
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَـٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
২:২৩৫ :: আর তোমরা (বিধবা) নারীদের বিয়ে প্রসঙ্গে তোমাদের কথাবার্তায় যা প্রকাশ কর বা নিজেদের মনে তা গোপন রাখ সে বিষয়ে তোমাদের উপর গুনাহ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তোমাদের আলোচনায় তাদের বিষয় রাখবে। কিন্তু তোমরা তাদেরকে গোপনে ওয়াদা দিও না। কিন্তু তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের সাথে কথা বলতে পারবে। আর যতক্ষণ না বিধিবদ্ধ বিষয় (অর্থাৎ ইদ্দাত) তার শেষ সীমায় পৌঁছে ততক্ষণ তোমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত করো না। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের মনে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তোমরা তাঁর প্রতি সচেতন থেকো। আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّهُ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَىٰ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
২:২৮২ :: হে যারা ঈমান এনেছো, যখন তোমরা পরস্পরের মধ্যে দাইনের (ঋণের ও ধারে ক্রয়-বিক্রয়ের) লেনদেন করো নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত, তখন তা লিখে রাখবে। আর তা লিখতে হবে তোমাদের মধ্যকার কোনো লেখক, ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর লেখকের লিখতে অস্বীকার করা উচিত নয়, যেরূপ আল্লাহ তাকে লেখা শিখিয়েছেন। সুতরাং সে যেন লেখে। আর যার উপর হক্ব (পাওনা) প্রযোজ্য হয় সে (ঋণগ্রহীতা) যেন (ঋণ গ্রহণের) শর্তাবলী বলে দেয়, এবং সে যেন তার প্রভু আল্লাহকে ভয় করে এবং সে যেন তা থেকে (শর্ত বর্ণনায় বা শর্তানুসারে প্রদানের ক্ষেত্রে) কিছুই না কমায়। তবে যদি যার উপর হক্ব (পাওনা) প্রযোজ্য হয় (ঋণগ্রহীতা) বোকা হয় অথবা দুর্বল হয়, অথবা শর্তাবলীর বলার ক্ষেত্রে পারঙ্গম না হয়, তাহলে তার (পক্ষ থেকে তার কোনো) পৃষ্ঠপোষক (ওয়ালী) শর্তাবলী বলে দেবে, ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে দুইজনকে সাক্ষী রাখো। তবে যদি দুজন পুরুষ না থাকে, তাহলে একজন পুরুষকে এবং দুজন নারীকে, সাক্ষী হিসেবে তোমরা যাদের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারো, যেন তাদের দুজনের (দুজন নারীর) মধ্য থেকে একজন (কোনো কারণে যথাযথভাবে সাক্ষ্য ব্যক্ত করতে) ভুল করলে, সেক্ষেত্রে তাদের দুজনের (দুজন নারীর) মধ্যকার অন্যজন (অন্য নারীটি) তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারে। আর সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে অস্বীকার করা উচিত নয়, যখন তাদেরকে আহবান করা হয়। আর ছোট হোক বা বড় হোক তা (ঋণ লেনদেনের দলিল) নির্দিষ্ট সময়সীমাসহ লিখে রাখতে তোমরা বিরক্ত হয়ো না (অবহেলা করো না)। এটা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক ন্যায্য এবং সাক্ষ্য প্রমাণে সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি এবং তোমরা (শর্তাবলীর বিষয়ে) সন্দেহগ্রস্ত না হওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী। তবে যদি তোমাদের মধ্যে উপস্থিত বা নগদ সাধারণ ব্যবসায়/ কেনাবেচা/ লেনদেন (তিজারাতান হাদ্বিরাহ) করে থাকো, সেক্ষেত্রে তোমরা তা না লিখলেও তোমাদের দোষ হবে না। আর যখন তোমরা চুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমসম্পন্ন অংশগ্রহণমূলক ব্যবসা (তাবাইয়া’ / বাইয়ে মুশারাকা তথা অংশীদারিত্বমূলক/ যৌথ মালিকানাধীন বা অংশীদারসম্পন্ন ব্যবসা) করো, তখন তোমরা সাক্ষী রাখতে হবে। আর লেখককেও ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না এবং সাক্ষীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। আর যদি তোমরা তা করো, তাহলে নিশ্চয় তা তোমাদের অবাধ্যতা ও দুষ্কর্ম পরায়ণতা (ফুসূক্ব)। আর আল্লাহর প্রতি সচেতন হও। আর আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে জ্ঞানী।
فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَـٰذَا قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ
৩:৩৭ :: তারপর তার প্রভু তাকে (মারইয়ামকে) উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে লালন-পালন করলেন এবং তাকে যাকারিয়্যার তত্ত্বাবধানে রাখলেন। যখনই সে (যাকারিয়্যা) তার (মারইয়ামের) কাছে ব্যক্তিগত কক্ষে (মিহরাবে) প্রবেশ করতো, সে তার কাছে জীবিকা সামগ্রী পেতো। সে বললো, “হে মারইয়াম, এ কোথা থেকে এলো?” সে (মারইয়াম) বললো, “তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার ধারণাতীত উপায়ে ও পরিমাণে জীবিকা দেন।”
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ مَرْيَمَ إِذِ انتَبَذَتْ مِنْ أَهْلِهَا مَكَانًا شَرْقِيًّا
১৯:১৬ :: স্মরণ করো এই কিতাবে উল্লেখিত মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকে এক স্থানে চলে গেলো।
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
১৯:১৭ :: তারপর সে তাদের থেকে হিজাব (পর্দার অন্তরাল) গ্রহণ করলো। তারপর আমি তার নিকট আমার রুহকে (জিবরীলকে) পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলো।
فَحَمَلَتْهُ فَانتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا
১৯:২২ :: তারপর সে (মারইয়াম) তাকে (ঈসাকে) গর্ভে ধারণ করলো। তারপর সে তাকে সহ (গর্ভস্থ শিশুসহ) এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলো।
فَأَجَاءَهَا الْمَخَاضُ إِلَىٰ جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَـٰذَا وَكُنتُ نَسْيًا مَّنسِيًّا
১৯:২৩ :: প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের তলে আসতে বাধ্য করলো। সে বললো, “হায় আমি যদি এর পূর্বেই মরে যেতাম এবং লোকের স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যেতাম!”
فَكُلِي وَاشْرَبِي وَقَرِّي عَيْنًا فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَـٰنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنسِيًّا
১৯:২৬ :: (মারইয়ামকে বলা হলো) “খাও এবং পান করো এবং চোখ জুড়াও। যদি তুমি কোনো মানুষকে দেখো তাহলে তাকে বলো, “আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি। সুতরাং আমি আজ কোনো মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবো না।”
فَأَتَتْ بِهِ قَوْمَهَا تَحْمِلُهُ قَالُوا يَا مَرْيَمُ لَقَدْ جِئْتِ شَيْئًا فَرِيًّا
১৯:২৭ :: তারপর সে (মারইয়াম) তাকে (তার পুত্র ঈসাকে) নিয়ে তার সম্প্রদায়ের নিকট এলো। তারা বললো, “হে মারইয়াম, নিশ্চয় তুমি তো এক অদ্ভুত কাণ্ড করে এসেছো।
يَا أُخْتَ هَارُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ امْرَأَ سَوْءٍ وَمَا كَانَتْ أُمُّكِ بَغِيًّا
১৯:২৮ :: হে হারূনের বোন (মারইয়াম), তোমার পিতাও মন্দ লোক ছিল না আর তোমার মাতাও অসতী ছিল না।
فَأَشَارَتْ إِلَيْهِ قَالُوا كَيْفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا
১৯:২৯ :: তখন সে (মারইয়াম) তার (সন্তানের) দিকে ইঙ্গিত করলো। তারা বললো, “কিভাবে আমরা বাক্যালাপ করবো তার সাথে যে কোলের শিশু”।
قَالَ إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا
১৯:৩০ :: সে (ঈসা) বললো, “নিশ্চয় আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং তিনি আমাকে নবী বানিয়েছেন।”
إِنِّي وَجَدتُّ امْرَأَةً تَمْلِكُهُمْ وَأُوتِيَتْ مِن كُلِّ شَيْءٍ وَلَهَا عَرْشٌ عَظِيمٌ
২৭:২৩ :: নিশ্চয় আমি (হুদহুদ) এক নারীকে পেলাম যে তাদের (সাবাবাসীদের) উপর রাজত্ব করছে, আর তাকে (রাজত্বের উপযোগী) সবকিছু থেকে দেয়া হয়েছে এবং তার জন্য এক মহা সিংহাসন রয়েছে।
قَالَتْ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي أَمْرِي مَا كُنتُ قَاطِعَةً أَمْرًا حَتَّىٰ تَشْهَدُونِ
২৭:৩২ :: সে (সাবার রাণী) বললো, “হে পারিষদবর্গ, আমার কার্যনির্বাহে তোমাদের অভিমত দাও। আমি তো কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না যতক্ষণ না তোমরা তা যথাযথ হিসেবে সাক্ষ্য প্রদান করো।”
قَالُوا نَحْنُ أُولُو قُوَّةٍ وَأُولُو بَأْسٍ شَدِيدٍ وَالْأَمْرُ إِلَيْكِ فَانظُرِي مَاذَا تَأْمُرِينَ
২৭:৩৩ :: তারা বললো, “আমরা তো শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা; তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। সুতরাং আপনি লক্ষ্য করুন কী আদেশ করবেন।”
قَالَتْ إِنَّ الْمُلُوكَ إِذَا دَخَلُوا قَرْيَةً أَفْسَدُوهَا وَجَعَلُوا أَعِزَّةَ أَهْلِهَا أَذِلَّةً وَكَذَٰلِكَ يَفْعَلُونَ
২৭:৩৪ :: সে (সাবার রাণী) বললো, “রাজারা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন সেটাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানের মর্যাদাবান ব্যক্তিদেরকে অপদস্থ করে। আর উহাই তারা করে থাকে।
وَإِنِّي مُرْسِلَةٌ إِلَيْهِم بِهَدِيَّةٍ فَنَاظِرَةٌ بِمَ يَرْجِعُ الْمُرْسَلُونَ
২৭:৩৫ :: আর নিশ্চয় আমি তাদের কাছে হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাবো, তারপর দেখবো দূতেরা কী নিয়ে ফিরে আসে।”
قِيلَ لَهَا ادْخُلِي الصَّرْحَ فَلَمَّا رَأَتْهُ حَسِبَتْهُ لُجَّةً وَكَشَفَتْ عَن سَاقَيْهَا قَالَ إِنَّهُ صَرْحٌ مُّمَرَّدٌ مِّن قَوَارِيرَ قَالَتْ رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي وَأَسْلَمْتُ مَعَ سُلَيْمَانَ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
২৭:৪৪ :: তাকে (সাবার রাণীকে) বলা হলো, “এই প্রাসাদে প্রবেশ করো।” তারপর যখন সে তা দেখলো সে উহাকে (শৈল্পিক) জলাধার/জমা জল / ডোবা (Pool of water) বলে ধারণা করলো এবং সে তার উভয় পায়ের গোছা অনাবৃত করলো। সে (সুলাইমান) বললো, “নিশ্চয় তা স্বচ্ছা কাঁচমণ্ডিত প্রাসাদ।” সে (সাবার রাণী) বললো, “হে আমার প্রভু, নিশ্চয় আমি আমার স্বীয় সত্তার উপর যুলুম করেছিলাম এবং আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের নিকট আত্মসমর্পণ করলাম।”
وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِّنَ النَّاسِ يَسْقُونَ وَوَجَدَ مِن دُونِهِمُ امْرَأَتَيْنِ تَذُودَانِ قَالَ مَا خَطْبُكُمَا قَالَتَا لَا نَسْقِي حَتَّىٰ يُصْدِرَ الرِّعَاءُ وَأَبُونَا شَيْخٌ كَبِيرٌ
২৮:২৩ :: আর যখন সে (মূসা) মাদইয়ানের কূপের নিকট পৌঁছলো, সেখানে সে একদল মানুষকে পেলো যারা তাদের পশুগুলোকে পানি পান করাচ্ছে। এবং তাদের পেছনে দুজন নারীকে দেখলো যারা তাদের পশুগুলোকে আগলিয়ে রাখছে। সে (মূসা) বললো, “তোমাদের কী ব্যাপার?” তারা বললো, “আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালেরা সরে যায় আর আমাদের পিতা বড়ই বৃদ্ধ।”
فَسَقَىٰ لَهُمَا ثُمَّ تَوَلَّىٰ إِلَى الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
২৮:২৪ :: তখন সে (মূসা) তাদের পক্ষে পশুগুলোকে পানি পান করালো। তারপর সে ছায়ার নিচে ফিরে গেলো। সে বললো, “হে আমার প্রভু, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই করবে আমি তারই কাঙ্গাল।”
فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ لِيَجْزِيَكَ أَجْرَ مَا سَقَيْتَ لَنَا فَلَمَّا جَاءَهُ وَقَصَّ عَلَيْهِ الْقَصَصَ قَالَ لَا تَخَفْ نَجَوْتَ مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
২৮:২৫ :: তারপর তাদের (নারীদ্বয়ের) একজন লজ্জা সহকারে তার নিকট আসলো। সে বললো, “নিশ্চয় আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করানোর পারিতোষিক দেয়ার জন্য।” তারপর সে (মূসা) তার নিকট আসলো এবং তার নিকট সমস্ত কাহিনী বর্ণনা করলো। সে (নারীদ্বয়ের পিতা) বললো, “ভয় করো না। তুমি জালিম সম্প্রদায়ের কবল থেকে নাজাত পেয়েছো।”
قَالَتْ إِحْدَاهُمَا يَا أَبَتِ اسْتَأْجِرْهُ إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ
২৮:২৬ :: তাদের (দুই নারীর) একজন বললো, “আব্বু, তুমি তাকে মজুর (শ্রমিক) নিযুক্ত করো, কারণ মজুর হিসেবে সেই উত্তম হবে যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।”
هَلْ أَتَاكَ حَدِيثُ ضَيْفِ إِبْرَاهِيمَ الْمُكْرَمِينَ
৫১:২৪ :: তোমার নিকট কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে?
إِذْ دَخَلُوا عَلَيْهِ فَقَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ قَوْمٌ مُّنكَرُونَ
৫১:২৫ :: যখন তারা তার নিকট প্রবেশ করলো এবং বললো, “সালাম।” সে (ইবরাহীম) বললো, “সালাম, অচেনা লোকেরা।”
فَرَاغَ إِلَىٰ أَهْلِهِ فَجَاءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ
৫১:২৬ :: তারপর সে তার পরিবারের (তার স্ত্রীর) নিকট গেলো এবং একটি মাংসল বাছুর ভাজা নিয়ে এলো।
فَقَرَّبَهُ إِلَيْهِمْ قَالَ أَلَا تَأْكُلُونَ
৫১:২৭ :: তা তাদের নিকটে রাখলো। বললো, “আপনারা খাচ্ছেন না?”
فَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا لَا تَخَفْ وَبَشَّرُوهُ بِغُلَامٍ عَلِيمٍ
৫১:২৮ :: তখন তাদের বিষয়ে সে ভয় পেয়ে গেলো। তারা বললো, “ভীত হয়ো না।” তারপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলো।
فَأَقْبَلَتِ امْرَأَتُهُ فِي صَرَّةٍ فَصَكَّتْ وَجْهَهَا وَقَالَتْ عَجُوزٌ عَقِيمٌ
৫১:২৯ :: তখন তার স্ত্রী আনন্দে চিৎকার করতে করতে তাদের সামনে এলো এবং তার (নিজের) চেহারায় থাপ্পড় দিলো এবং বললো, “এই বৃদ্ধা বন্ধ্যার সন্তান হবে!”
قَالُوا كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ إِنَّهُ هُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ
৫১:৩০ :: তারা বললো, “তোমার প্রভু তা-ই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।”
قَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّتِي تُجَادِلُكَ فِي زَوْجِهَا وَتَشْتَكِي إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ يَسْمَعُ تَحَاوُرَكُمَا إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
৫৮:১ :: নিশ্চয় আল্লাহ শুনেছেন সে নারীর কথা যে তোমার সাথে তার স্বামীর ব্যাপারে বিতর্ক করেছে আর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছে। আর আল্লাহ তোমাদের দুজনের কথোপকথন শুনছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
الَّذِينَ يُظَاهِرُونَ مِنكُم مِّن نِّسَائِهِم مَّا هُنَّ أُمَّهَاتِهِمْ إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلَّا اللَّائِي وَلَدْنَهُمْ وَإِنَّهُمْ لَيَقُولُونَ مُنكَرًا مِّنَ الْقَوْلِ وَزُورًا وَإِنَّ اللَّهَ لَعَفُوٌّ غَفُورٌ
৫৮:২ :: তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদের স্ত্রীকে যিহার করে (অর্থাৎ মায়ের মতো হিসাবে প্রকাশ করে) তাদের স্ত্রীরা তাদের মা হয়ে যায় না। যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে তারা ছাড়া কেউ তাদের মা নয়। আর নিশ্চয় তারা তো অত্যন্ত মন্দ ও অসত্য কথাই বলছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ উদার ক্ষমাশীল।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ وَلَا يَأْتِينَ بِبُهْتَانٍ يَفْتَرِينَهُ بَيْنَ أَيْدِيهِنَّ وَأَرْجُلِهِنَّ وَلَا يَعْصِينَكَ فِي مَعْرُوفٍ فَبَايِعْهُنَّ وَاسْتَغْفِرْ لَهُنَّ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৬০:১২ :: হে নবী, যখন তোমার কাছে মু’মিন নারীরা এসে বাইয়াত (শপথ) করে এ মর্মে যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক (অংশীদার সাব্যস্ত) করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না, তাদের সন্তানকে হত্যা করবে না, এবং মিথ্যা দাবি (বুহতান) নিয়ে আসবে না যা তারা রচনা/সংঘটিত করে তাদের হাতসমূহ ও পাসমূহের মধ্যবর্তীতে (অর্থাৎ স্বামীর সন্তান হিসেবে অন্যের সন্তানকে নিয়ে আসবে না), ন্যায়সঙ্গত ক্ষেত্রে তোমাকে অমান্য করবে না, তখন তাদের বাইয়াত গ্রহণ করো এবং তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِندِ اللَّهِ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ
৩:১৯৫ :: সুতরাং তাদের প্রভু তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন: “আমি তোমাদের মধ্য থেকে কোনো কর্ম সম্পাদনকারীর কর্মকে বিনষ্ট করবো না, সে পুরুষ হোক অথবা নারী। তোমাদের একে অন্যের সমস্তরের (সমান মানবিক মর্যাদার অধিকারী)। সুতরাং যারা হিজরাত করেছে এবং যাদেরকে তাদের বাড়িঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছে এবং যারা নির্যাতিত হয়েছে আল্লাহর পথে (থাকার কারণে) এবং যারা যুদ্ধ করেছে এবং যারা নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের থেকে তাদের (অতীতের) মন্দসমূহকে মোচন করে দেবো এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার নিচ অংশে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার। আর আল্লাহ, তাঁরই নিকটে আছে সর্বসুন্দর পুরস্কার।”
وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِن نِّسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنكُمْ فَإِن شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّىٰ يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا
৪:১৫ :: আর তোমাদের (মু’মিনদের) নারীদের মধ্য থেকে যারা অশ্লীল কর্ম সম্পাদন করে (৩), তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের (মু’মিনদের) মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী তলব করবে। যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তাহলে তাদেরকে (অশ্লীল কর্ম সম্পাদনকারী নারীদেরকে) তাদের ঘরে আটকে রেখো যতক্ষণ না তাদের মৃত্যু হয় (অর্থাৎ যাবজ্জীবন গৃহবন্দী রাখবে), অথবা আল্লাহ তাদের জন্য কোনো নিষ্কৃতির পথের ব্যবস্থা করেন (৪)।
(৩) অর্থাৎ যখন অশ্লীল কর্ম সম্পাদনকারী নারীটি মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু পুরুষটি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত তখন যে ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হবে এ আয়াতে সেই বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(৪) নিষ্কৃতির কোনো পথের ব্যবস্থা হতে পারে: পুরুষটি মারা যাওয়া বা স্থানান্তরে চলে যাওয়া, নারীটির সংশোধন হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হওয়া বা বিশ্বাসযোগ্য হওয়া, নারীটির সংশোধনসাপেক্ষে কোন মুমিন পুরুষের সাথে তার বিয়ের ব্যবস্থা হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنكُمْ فَآذُوهُمَا فَإِن تَابَا وَأَصْلَحَا فَأَعْرِضُوا عَنْهُمَا إِنَّ اللَّهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
৪:১৬ :: আর তোমাদেরই (মু’মিনদেরই) মধ্যকার দুজন (নারী-পুরুষ) তা (অশ্লীল কর্ম সম্পাদন) করলে, তাদের উভয়কে শাস্তি দাও। তারপর যদি তারা তাওবাহ করে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেয়, তাহলে তারপর তাদের থেকে নিবৃত্ত থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ অত্যন্ত তাওবাহ কবুলকারী, দয়ালু।
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلَا تَأْخُذْكُم بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلْيَشْهَدْ عَذَابَهُمَا طَائِفَةٌ مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ
২৪:২ :: ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, তাদের প্রত্যেককে একশতটি কশাঘাত করো। আর আল্লাহর দ্বীন (বিধান) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাদের প্রতি স্নেহ যেন তোমাদেরকে প্রভাবিত না করে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখো। আর যেন মু’মিনদের মধ্য থেকে একটি দল তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
২৪:৪ :: আর যারা সতী নারীদের উপর অপবাদ দেয় তারপর চারজন সাক্ষী উপস্থিত করতে পারে না, তাদেরকে (অভিযোগকারীদেরকে) আশিটি কশাঘাত করো (৫)। এবং পরবর্তীতে কখনো আর তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। আর তারাই ফাসেক্ব (দুষ্কর্মপরায়ণ)।
(৫) জালদা শব্দের শাব্দিক অর্থ চামড়ায় আঘাত করা যা নিদের্শ করে এই আঘাতের প্রভাব কেবলমাত্র ত্বকের উপরে সীমাবদ্ধ থাকাই বাঞ্চনীয়।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
৩৩:৫৯ :: হে নবী, তোমার স্ত্রীদেরকে এবং তোমার কন্যাদেরকে এবং মু’মিনদের নারীদেরকে বলো, যেন তারা তাদের উপর তাদের জিলবাব/ চাদর জড়িয়ে রাখে। এটাই এ সম্ভাবনার নিকটতর যে, তাদেরকে (উন্নত ব্যক্তিত্বসম্পন্না হিসেবে) চিনতে পারা যাবে, ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া (যৌন হয়রানি করা) হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।
لَّئِن لَّمْ يَنتَهِ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْمُرْجِفُونَ فِي الْمَدِينَةِ لَنُغْرِيَنَّكَ بِهِمْ ثُمَّ لَا يُجَاوِرُونَكَ فِيهَا إِلَّا قَلِيلًا
৩৩:৬০ :: যদি (এখন থেকে) মুনাফিক্বরা এবং যাদের মনে রোগ রয়েছে তারা এবং যারা শহরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভীষণভাবে কাঁপিয়ে তোলে তারা (মুরজিফুন)(যৌন হয়রানি করা থেকে) বিরত না থাকে, তাহলে আমি তোমাকে তাদের বিষয়ে তেজোদ্দীপ্ত করবো, তারপর তারা স্বল্প সময় ব্যতীত তোমার প্রতিবেশি হিসেবে থাকতে পারবে না।
مَّلْعُونِينَ أَيْنَمَا ثُقِفُوا أُخِذُوا وَقُتِّلُوا تَقْتِيلًا
৩৩:৬১ :: (তাও থাকবে) অভিশপ্ত অবস্থায়। তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, পাকড়াও করা হবে এবং একে একে তাদের সকলকে হত্যা করা হবে (মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে)।
سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا
৩৩:৬২ :: ইতোপূর্বে যারা অতীত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর সুন্নাত (দণ্ডবিধি)। আর তুমি আল্লাহর সুন্নাতে (মূলনীতি বা বিচারনীতিতে) কোনো পরিবর্তন পাবে না।
আল কুরআনে হিজাব সম্পর্কিত বিধিবিধান নারী-পুরুষের পোশাক ও পারস্পরিক যোগাযোগে শালীনতা ও শিষ্টাচারের নির্দেশনাসমূহকে প্রকাশ করে। কুরআনের যাবতীয় বিধানের মতো হিজাব সম্পর্কিত বিধানও মানুষের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল করা এবং মানুষের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যেই প্রদান করা হয়েছে। এ সকল বিধিনির্দেশকে উপেক্ষা করার অর্থ হলো নৈতিক অধ:পতন এবং তার পরিণতিতে সমাজ ও সভ্যতা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। অন্যদিকে শালীনতা ও শিষ্টাচারের স্বাভাবিক নির্দেশনাকে কৃত্রিমভাবে অতিরঞ্জিত ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত করার মাধ্যমেও মানুষ এ বিষয়ে বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়, যা প্রকৃত নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে অসচেতনতা এবং অনাবশ্যক বিষয়কে আবশ্যক মনে করা বা কম গুরুত্বের বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দেয়ার মনোভাব তৈরি করে। এটিও পরিণতির দিক থেকে মানুষকে প্রকৃত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে। তাই এ বইটি রচনার উদ্দেশ্য হলো ‘হিজাব সম্পর্কিত বিষয়াদিতে’ কুরআনের নির্দেশনা অনুসন্ধান ও তার বাস্তব স্বরূপ উদঘাটনের চেষ্টা করা, যাতে এ বিষয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তির অপনোদন হতে পারে এবং প্রকৃত নির্দেশনা অনুসরণ ও অন্যদেরকেও অনুসরণে উৎসাহিতকরণের মাধ্যমে প্রকৃত কল্যাণ অর্জন করা যেতে পারে।
মানুষ এবং পশুর মধ্যে মৌলিক পার্থক্যসমূহের অন্যতম একটি দিক হলো মানবীয় বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে শালীনতার প্রশ্ন জড়িত কিন্তু পশুর ক্ষেত্রে সেই প্রশ্নটি নেই। মানুষের চিরশত্রু শয়তান চায় মানুষ তার মানবীয় সভ্যতার থেকে অধ:পতিত হয়ে পশুর মতো আচার আচরণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ুক এবং মানুষের মধ্যে অশালীনতা বা অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক। আল্লাহ রব্বুল আলামীন প্রকাশ্য ও গোপন সব ধরনের অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন এবং শালীনতা ও শিষ্টাচারের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি মানুষের সহজাত শালীনতা ও লজ্জাবোধের ভিত্তিতে পোশাক তৈরি ও পরিধানের জন্য পোশাকের উপকরণ তৈরি ও সরবরাহ করেছেন এবং মানুষকে পোশাক তৈরির যোগ্যতা ও শিক্ষাদান করেছেন। আল কুরআনে হিজাবের সাথে সম্পর্কিত সামগ্রিক নির্দেশনা হচ্ছে মূলত শালীনতা ও শিষ্টাচারের নির্দেশনা। শয়তানের প্ররোচনায় মানুষ শালীনতা হারিয়ে ফেলে এবং অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু মহান আল্লাহ মু’মিনদেরকে অনুগ্রহ করে শালীনতা বজায় রাখতে সাহায্য করেন। যারা মু’মিনদের মধ্যে অশালীনতা বা অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক বলে কামনা করে তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি পেতে হবে। তাই মানব সভ্যতাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য শালীনতার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে এবং অশ্লীলতার প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকতে হবে।
পোশাকের ক্ষেত্রে কুরআন যে মৌলিক উদ্দেশ্যকে চিহ্নিত করে তা হলো পোশাক হতে হবে: (১) লজ্জাস্থান ঢাকার উপযোগী (Modesty) (২) দেহিক শোভা বর্ধন ও দেহসৌষ্ঠব সংরক্ষণের উপায় তথা আবহাওয়া উপযোগী (Comfort) ও সৌন্দর্যচর্চামূলক (Beauty)।
১৬:৫ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “আর তিনি তোমাদের জন্য গবাদি পশু সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উষ্ণতা এবং অন্যান্য সুবিধা এবং সেগুলি থেকে তোমরা খাও।” এর একটি তাৎপর্য হলো গবাদি পশুর চামড়া ও পশম দিয়ে তৈরিকৃত পোশাকের মাধ্যমে আমরা উষ্ণতা অনুভব করি।
এছাড়া যুদ্ধের সময় আত্মরক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের যুদ্ধের পোশাক বা বর্ম পরিধান করতে হয়। মহান আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা ও শিক্ষা অনুসারে রসূলুল্লাহ দাউদ (সা.) বর্ম তৈরি করতেন।
পোশাক পরার সাধারণ নির্দেশনা ছাড়াও পোশাককে পরিচ্ছন্ন করার/রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং শারীরিক পোশাকের পাশাপাশি সর্বোত্তম পোশাক হিসেবে ‘তাক্বওয়া’কে (আল্লাহ সচেতনতা) অবলম্বন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পোশাক পরিধানের উদ্দেশ্য ও নীতিমালা মানব জাতির ইতিহাসের সূচনা পর্ব থেকে মানব প্রকৃতি ও মানবীয় মর্যাদা বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তিশীল। আমাদের আদি পিতামাতাকে প্রথমে এমন একটি জান্নাত বা বাগানে রাখা হয়েছিল যেখানে তাঁদের জন্য ব্যবস্থা ছিল যে তাঁরা তাতে ক্ষুধার্ত থাকতে হবে না, নগ্ন থাকতে হবে না, পিপাসার্ত থাকতে হবে না এবং রৌদ্রতপ্তও থাকতে হবে না (২০:১১৮-১১৯)। তাঁরা সেখানে যেকোনো ফলফলাদি খাওয়ার অনুমতি ছিল, শুধু একটি গাছের নিকটেও যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। তাঁদেরকে বলা হয়েছিল যে, যদি তাঁরা শয়তানের প্ররোচনায় এ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেন তাহলে তাঁদেরকে নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই ঐ জান্নাত থেকে বের করে দেয়া হবে। তাই তাঁরা যেন এ বিষয়ে সতর্ক থাকেন। কিন্তু শয়তানের একের পর এক প্ররোচনার ফলে তাঁরা সেই নিষেধ লঙ্ঘন করে ঐ গাছটির ফল খেয়ে ফেলেন, যার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা পরস্পরের সামনে অনাবৃত হয়ে পড়েন। এর পর তাঁরা লজ্জাশীলতার অনুভূতিতে গাছের পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান আবৃত করেন।
এ থেকে আমরা যে মৌলিক শিক্ষা অর্জন করতে পারি তা হলো:
(১) পশু-পাখির ক্ষেত্রে যেমন শুধুমাত্র সৃষ্টিপ্রকৃতিগত প্রবণতা অনুসারে কর্ম সম্পাদিত হতে পারে, মানুষের ক্ষেত্রে তেমন নয়। বরং মানুষ যেমন ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য প্রাকৃতিক নির্বাচিত খাবার খেতে হয়, তেমনি তাকে সেক্ষেত্রে বিশ্বপ্রভুর পক্ষ থেকে থাকা নৈতিক নির্দেশনাকে বিবেচনা করতে হয়। অনুরূপভাবে আমাদের আদি পিতামাতা পরস্পরের সঙ্গী হলেও স্রষ্টার অনুমোদনের পূর্ব পর্যন্ত তাঁদের মধ্যে দৈহিক ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়নি, বরং তাঁরা পরস্পরের থেকে শারীরিক গোপনীয়তা রক্ষা করতেন।
(২) পশুর ক্ষেত্রে লজ্জাশীলতার প্রশ্নটি জড়িত নয়, তাই পশুর গায়ে থাকা পশম তার জন্য আবহাওয়া উপযোগী হয় এবং তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে কিন্তু তাতে লজ্জাস্থান ঢাকার কোনো বিষয় নেই। মানুষ যে পোশাক পরে সেক্ষেত্রেও প্রাকৃতিক কারণটি হলো বিভিন্ন আবহাওয়ায় স্বস্তি লাভ করা এবং দেহশোভা বর্ধন করা। সেই সাথে মানুষের পোশাকের নৈতিক কারণটি হলো তার লজ্জাস্থান ঢাকা, যা মানুষের মৌলিক মানবীয় গুণ লজ্জাশীলতার অনিবার্য দাবি। এই লজ্জাশীলতা সুষ্ঠু মানব প্রকৃতির অংশ। আর তাই আমাদের আদি পিতামাতা যখন নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় অনাবৃত হলেন তখন লজ্জাশীলতার অনুভূতিতে তাঁরা উপস্থিত মুহুর্তে গাছের পাতা দিয়ে লজ্জাস্থান আবৃত করতে লাগলেন।
(৩) শয়তানের অন্যতম প্রচেষ্টা হলো মানুষকে শালীন পোশাক ও শালীনতা থেকে বিচ্ছিন্ন করা, যার ফলে সে প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে এবং একমাত্র বিশ্বপ্রভুর নিরংকুশ আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাবে। তাই মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ থেকে বিরত থাকি এবং শালীন পোশাক পরিধান করি। শালীন পোশাক পরিধান করা হচ্ছে সভ্য মানুষ হওয়ার মৌলিক লক্ষণ।
সূরা নিসার ৩০-৩১ আয়াতে প্রথমে মু’মিন পুরুষদেরকে এবং তারপর মু’মিন নারীদেরকে দুটি অভিন্ন নির্দেশ দেয়া হয়েছে: (১) দৃষ্টি সংযত রাখতে হবে (২) লজ্জাস্থান হেফাযত করতে হবে।
দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশনাতে যে আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো ‘ইয়াগুদ্দু’ ও ‘ইয়াগদুদনা’। শব্দ দুটি মূলত ‘গইন দদ দদ’ মূল অক্ষরসমূহ থেকে গঠিত ‘গাদ্দা’ ক্রিয়ার দুটি রূপ। এ মূল অক্ষরসমূহ থেকে গঠিত শব্দ কুরআনে মোট চার স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে (২৪:৩০:৩, ২৪:৩১:৩, ৩১:১৯:৪, ৪৯:৩:৩)। এই প্রত্যেক স্থানে ব্যবহৃত শব্দ মূলত এই একই শব্দের বিভিন্ন ক্রিয়ারূপ। এর মধ্যে প্রথম দুটি স্থান আমাদের আলোচ্য ‘দৃষ্টি সংযত করার’ নির্দেশনার সাথে সম্পর্কিত। অন্য দুটি স্থানের বক্তব্য নিম্নরূপ:
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
৩১:১৯ :: আর তোমার চলাফেরায় মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো এবং তোমার কণ্ঠস্বরকে সংযত করো। নিশ্চয় কণ্ঠস্বরে সবচেয়ে কর্কশ হলো গাধার কণ্ঠস্বর।
إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَىٰ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ
৪৯:৩ :: নিশ্চয় যারা তাদের কণ্ঠস্বরকে রসূলের নিকট সংযত রাখে, তারাই এমন লোক যাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহ তাক্বওয়ার (স্রষ্টা-সচেতনতা) জন্য যাচাই বাছাই করে নিয়েছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।
সুতরাং ‘ইয়াগুদ্দু’ ক্রিয়ার সকল ব্যবহারের প্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে, দৃষ্টি সংযত রাখার মানে অসৌজন্যতা সহকারে না তাকানো, যা আল্লাহ পছন্দ করেন না বা যা তাক্বওয়ার (স্রষ্টা-সচেতনতা) সাথে মিল রাখে না এমনভাবে না তাকানো এবং এমন বিষয় থেকে দৃষ্টিকে ফিরিয়ে নেয়া। কিন্তু এর মানে এ নয় যে, নারী-পুরুষ পরস্পরের সাথে কথা বলার সময় ‘আই-কন্টাক্ট’ (eye contact) বা চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারবে না, যেমনটি অনেকে মনে করেন বা ভুলভাবে দাবি করেন। বস্তুত এ নির্দেশনার অর্থ এ নয় যে, দুজন নারী-পুরুষ পরস্পরের মুুখের দিকে বা চোখের দিকে না তাকিয়ে উভয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে কথা বলতে হবে। অথবা কোনো পুরুষ কোনো নারীর চেহারার দিকে এবং কোনো নারী কোনো পুরুষের চেহারার দিকে তাকাতেই পারবে না, নির্দেশনাটি এরূপ নয়।
বস্তুত কণ্ঠস্বর সংযত করা যেমন কণ্ঠস্বরে ভদ্রতা বজায় রাখার সাথে সম্পর্কিত, দৃষ্টি সংযত রাখাও তেমনি দৃষ্টিভঙ্গিতে ভদ্রতা বজায় রাখার সাথে সম্পর্কিত।
আয়াত দুটিতে দ্বিতীয় নির্দেশ হলো ‘লজ্জাস্থানের হেফাযত করা’। এর বিভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। যেমন: (১) লজ্জাস্থান পোশাক দ্বারা আবৃত করা, (২) আল্লাহর অননুমোদিত ক্ষেত্রে লজ্জাস্থানের ব্যবহার না করা তথা দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরে লজ্জাস্থানের ব্যবহার না করা, (৩) যারা লজ্জাস্থানের উপর হামলা করতে চায় তথা অশ্লীল কর্মে জড়িত করতে চায় বা যৌন হয়রানি করতে চায় তাদের থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা।
লজ্জাস্থান (ছাওয়াত) (৬) বলতে শুধুমাত্র যৌনাঙ্গকে (ফুরূজ) বুঝায় না, বরং যৌনাঙ্গের আশপাশের অঞ্চলকেও এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা মানুষ স্বাভাবিকভাবেই বুঝতে পারে। কিছু সাধারণ বোধবুদ্ধি দ্বারা এ অঞ্চলকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। মানুষের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ শরীরের মধ্যবর্তী পর্যায়ে নাভির অবস্থান, যার উপরের অংশকে ঊর্ধ্বাঙ্গ এবং নিচের অংশকে নিম্নাঙ্গ বলা হয়। পায়ের মধ্যবর্তীতে হাঁটুর অবস্থান। হাঁটু থেকে টাখনু পর্যন্ত অংশ তথা পায়ের গোছাকে মধ্যবর্তীতে ভাঁজ করা যায় না। অনুরূপভাবে হাঁটু থেকে তার উপরের অংশকেও মধ্যবর্তীতে ভাঁজ করা যায় না। তাই স্বাভাবিক বোধ অনুসারে নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ পুরুষের লজ্জাস্থানের অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়, অন্তত যতটুকু একজন পুরুষকে সাধারণভাবে সবসময় ঢেকে রাখতে হবে। অন্যদিকে নারীদের ক্ষেত্রে লজ্জাস্থান পুরুষের দ্বিগুণ। কারণ নারীদের স্তনও লজ্জাস্থানকে চিহ্নিত করে। নারীদের লজ্জাস্থানকে চিহ্নিত করতে আরবিতে যে সংজ্ঞা ব্যবহৃত হয় তাহলো ‘বায়না আয়দীহিন্না ওয়া আরজুলিহিন্না’ (তাদের হাতসমূহের ও পাসমূহের মধ্যবর্তী অঞ্চল), এ বাগধারাটি প্রসঙ্গক্রমে সূরা মুমতাহানার ৬০:১২ আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, “তারা তাদের লজ্জাস্থান বিষয়ক মিথ্যা দাবি নিয়ে আসবে না”। অর্থাৎ তারা লজ্জাস্থানের হেফাযত না করে বরং পরপুরুষের সন্তানকে নিজের স্বামীর সন্তানের পরিচয়ে পরিচিত করাবে না।
(৬) ছাওয়াত শব্দটি ৫:৩১ ‘লাশ’ (যা কবরস্থ বা মাটিচাপা দেয়া প্রয়োজন) অর্থে এবং ৭:২০, ৭:২২, ৭:২৬, ৭:২৭ ও ২০:১২১ আয়াতে ‘লজ্জাস্থান’ (যা লজ্জাশীলতার কারণে ঢেকে রাখা প্রয়োজন) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
২৪:৩১ আয়াতে নারীর পোশাক কোড হিসেবে পুরুষের চেয়ে কিছু অতিরিক্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই অতিরিক্ত নির্দেশগুলো হলো:
(১) নারীরা তাদের যীনাত (রূপসৌন্দর্য) থেকে যা (স্বাভাবিকভাবে) প্রকাশিত হয়/ (বিধিসঙ্গতভাবে) প্রকাশযোগ্য, তা ছাড়া তাদের যীনাত (রূপসৌন্দর্য) প্রকাশ করতে পারবে না।
(২) নারীরা তাদের বক্ষদেশের উপর উহার আকৃতিকে ঢেকে দেয়ার মতো ওড়না বা বস্ত্রখণ্ড (খুমুর/খিমার) জড়িয়ে রাখতে হবে।
(৩) তারা তাদের (গোপনীয়) যীনাত কারো সামনে প্রকাশ করতে পারবে না বা যীনাতের গোপনীয়তাকে শিথিল করতে পারবে না নিম্নোক্ত শ্রেণিসমূহের সামনে ছাড়া:
ক. তাদের স্বামী
খ. তাদের পিতা
গ. তাদের শ্বশুর
ঘ. তাদের পুত্র
ঙ. তাদের স্বামীর (অন্য স্ত্রীর) পুত্র
চ. তাদের ভাই
ছ. তাদের ভাইয়ের পুত্র
জ. তাদের বোনের পুত্র
ঝ. তাদের নিজেদের (ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বিশ্বস্ত) নারীগণ (যেমন: মা, বোন, কন্যা, শাশুড়ি, ভাতিজী, ভাগিনী প্রমুখ)
ঞ. তাদের কর্তৃক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির আওতায় অধীনস্তগণ
ট. সেইসব অনুসারী/অধীনস্ত পুরুষ যারা যৌনকামনাসম্পন্ন নয়
ঠ. সেইসব বালক যাদের কাছে এখনো নারীদের আওরাত (নারীত্বের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা) প্রকাশমান নয়/ যে বালকেরা এখনো নারী বিষয়ক অনুভূতির বয়সে উপনীত হয়নি
(৪) তারা তাদের রূপসৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো এবং তাদের গোপনীয় রূপসৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ার মতো করে পদচালনা/ পদাঘাত করবে না, তাতে ঐ গোপন সৌন্দর্য অনাবৃত হতে পারে অথবা অনাবৃত না হয়েও স্পষ্ট হতে পারে।
(৫) ২৪:৬০ আয়াতে অত্যন্ত বয়স্ক যারা যৌবনকাল অতিবাহিত করেছে এখন আর নিকাহের আকাঙ্ক্ষা রাখে না, এরূপ নারীদের ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি পোশাক (সিয়াব) খুলে রাখা, কিন্তু গোপনীয় যীনাত প্রকাশ না করে, এর মধ্যে দোষ নেই বলে জানানো হয়েছে। তবে তারাও ‘সিয়াব’ (বাড়তি পোশাক) পরাকেই উত্তম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, সিয়াব শিথিল করার ক্ষেত্রে বয়স্কদেরকে বিশেষ অনুমতি দেয়া হয়েছে, যা অস্বস্তিকর গরম ঝলকানিতে তাদেরকে একটি সুবিধা প্রদান করে। কিন্তু তরুণীদের ক্ষেত্রে এরূপ কোনো অস্বস্তি সত্ত্বেও সিয়াব রক্ষা করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।
‘সিয়াব’ শব্দটি ব্যবহার করে দেয়া এ নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট যে, সিয়াব বলতে মূল পোশাকের উপরে কোনো বাড়তি পোশাক, যেমন ওড়না, চাদর ইত্যাদি পরাকে বুঝায়। সিয়াব শব্দটি বাড়তি পোশাকের সাধারণ ধরনকে প্রকাশ করে, যা বিভিন্নরূপ হতে পারে। এছাড়া সিয়াব বলতে সেই বহির্বাস বা অতিরিক্ত পোশাককে বুঝায়, যা কোনো ব্যক্তি নিজেকে পাবলিক প্লেসে প্রেজেন্ট করার ক্ষেত্রে পরিধান করে থাকে। ‘সিয়াব’ ব্যক্তির ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করার সাথে সম্পর্কিত হয়ে থাকে। সিয়াব শব্দটি কুরআনে ৮ বার ব্যবহৃত হয়েছে, যথা: ১১:৫:১০, ১৮:৩১:১৬, ২২:১৯:১০, ২৪:৫৮:২১, ২৪:৬০:১৩, ৭১:৭:১১, ৭৪:৪:১ এবং ৭৬:২১:২।
নারীদের যীনাত বলতে কী বুঝানো হয়েছে তা বুঝার জন্য দুটি লক্ষণীয় বিষয় হলো:
ক. যীনাত বলতে সাধারণভাবে রূপসৌন্দর্য ও সৌন্দর্যের উপকরণ বুঝায়। মহান আল্লাহ আদম সন্তানদেরকে প্রত্যেক মসজিদের ক্ষেত্রে যীনাত বা সৌন্দর্য উপকরণ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে পোশাক ও অলংকারও অন্তর্ভুক্ত। আর আদম সন্তান বলতে পুরুষ ও নারী উভয়কেই বুঝায়। এছাড়া আল্লাহ যেসব যীনাত বা সৌন্দর্য উপকরণকে হালাল করেছেন তা হারাম করার অধিকার কারো নেই। তিনি পৃথিবীতে বিভিন্ন সৌন্দর্য উপকরণ দিয়েছেন তা গ্রহণ করার জন্য পৃথিবীতে মু’মিনদের বিশেষাধিকার রয়েছে আর আখিরাতের সৌন্দর্য উপকরণ শুধুমাত্র মু’মিনদেরই জন্য বলে জানানো হয়েছে। যে যীনাত গোপনীয় রাখতে বলা হয়েছে তার বৈশিষ্ট্য হলো তা পদচালনা বা পদাঘাতের মাধ্যমে প্রকাশিত বা স্পষ্ট হয়। অলংকার প্রকাশের জন্য পদাঘাতের প্রয়োজন নেই। তাই নারীদের গোপনীয় যীনাত বলতে অলংকারকে বুঝায় না। সুতরাং নারীরা শালীনভাবে সুন্দর পোশাক পরা এবং অলংকার পরিধান করা দোষনীয় নয়।
খ. নারীদেরকে তাদের যীনাত থেকে যা প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে তা এমন যে, পদাঘাতে তা গোপনীয়তা থেকে প্রকাশ হয়ে পড়তে পারে, অনাবৃত হওয়ার মাধ্যমে বা যৌন আকর্ষণ তৈরির মতো স্পষ্ট হওয়ার মাধ্যমে। সুতরাং আয়াতটিতে নারীদের যীনাত বলতে মূলগতভাবে তাদের দৈহিক রূপসৌন্দর্যের দিককে বুঝানো হয়েছে, যা তাদের লজ্জাস্থানের আওতাভুক্ত নয় কিন্তু লজ্জাস্থান এবং প্রকাশযোগ্য সৌন্দর্যের মাঝামাঝি অঞ্চল বিধায় তা অনাবৃত থাকলে পুরুষের মধ্যে যৌন আকর্ষণ তৈরি হতে পারে।
আয়াতটিতে (২৪:৩১) নারীদেরকে তাদের যীনাত থেকে যা (স্বাভাবিকভাবে) প্রকাশিত হয়/ (বিধিসঙ্গতভাবে) প্রকাশযোগ্য তা ছাড়া তাদের যীনাত প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে তথা তাদের গোপনীয় যীনাতকে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। ‘যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশিত হয়/ যা বিধিসঙ্গতভাবে প্রকাশযোগ্য’ বুঝাতে যে আরবি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়েছে তা হলো “মা যহারা মিনহা”। সুতরাং নারীদের পোশাক কোডের বিষয়ে “মা যহারা মিনহা” (যা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশিত হয়/ যা বিধিসঙ্গতভাবে প্রকাশযোগ্য” তার পরিসর নির্ণয় করা প্রয়োজন।
“মা যহারা মিনহা” শব্দটি এ আয়াতটি ছাড়াও আরো দুই স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। তা হলো সূরা আনআম ৬:১৫১ এবং সূরা আ’রাফ ৭:৩৩।
৬:১৫১ আয়াতে বলা হয়েছে: “ওয়া লা তাক্বরাবুল ফাওয়াহিশা মা যহারা মিনহা ওয়া মা বাত্বানা” (আর তোমরা অশালীনতার ধারে কাছেও যেও না, তা থেকে যা প্রকাশ্য এবং যা গোপন তার উভয় অবস্থায়)।
৭:৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে: “ক্বুল ইন্নামা হাররামা রব্বিয়াল ফাওয়াহিশা মা যহারা মিনহা ওয়া মা বাত্বানা” (বলো, আমার প্রভু অশালীনতাকে নিষিদ্ধ করেছেন, তা থেকে যা প্রকাশ্য এবং যা গোপন তার উভয় অবস্থায়)।
সুতরাং “মা যহারা মিনহা” অর্থ হলো: “কোনো কিছুর প্রকাশমান ও গোপনীয় রূপের মধ্য থেকে প্রকাশমান রূপ”। তাই যীনাতের ক্ষেত্রে “মা যহারা মিনহা” অর্থ হলো “যীনাতের ক্ষেত্রে প্রকাশমান অংশ”। যীনাতের গোপনীয় অংশ প্রসঙ্গে আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে, “মা ইউখফীনা মিন যীনাতিহিন্না” (তাদের যীনাত থেকে যা তারা গোপন রাখে/রাখতে হয়, গোপনীয় যীনাত)।
সুতরাং নারীর যীনাত দুই অংশে বিভক্ত: (ক) “মা যহারা মিনহা” (যীনাত থেকে যা প্রকাশমান হতে পারে) (খ) “মা ইউখফীনা মিন যীনাতিহিন্না” (তাদের যীনাত থেকে যা গোপনীয়)।
যারা “মা যহারা মিনহা” বলতে নারীর পোশাকের বাহ্যিক সৌন্দর্য অথবা নারীর গোপনীয় যীনাত থেকে হঠাৎ করে বাতাসের কারণে বা কোনো দুর্ঘটনা ও অসাবধানতাবশত কোনো অংশ অনাবৃত হয়ে যাওয়ার কথা বলেন এবং বলেন যে, নারীদেরকে পূর্ণরূপে তাদের সমগ্র দেহ আবৃত করে রাখতে হবে এবং তারা কোনো অলংকার পরতে পারবে না, তাদের এ দাবি কুরআনের নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং তাদের এ দাবি কুরআনের সামগ্রিক নির্দেশনার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।
“মা যহারা মিনহা” বা নারীর জন্য স্বাভাবিকভাবে বা বিধিসঙ্গতভাবে প্রকাশমান বা প্রকাশযোগ্য যীনাত কী বা কতটুকু এ নিয়ে কুরআনের আয়াতের ভিত্তিতে যথাযথ গবেষণা ও বাস্তবসম্মত যুক্তিকে এড়িয়ে ধর্মীয় পণ্ডিতদের নিজেদের পক্ষ থেকে কিছু মাছালা ও ফতোয়া দেয়া হয় যে, নারীকে এমনভাবে পোশাক পরতে হবে যাতে তার পূর্ণ শরীর আবৃত হয়ে যায়। কিন্তু শুধুমাত্র দেখার প্রয়োজনে দুটি চোখ এবং কারো মতে মাত্র একটি চোখ খোলা থাকতে পারবে এবং কারো মতে তাও অত্যন্ত পাতলা কাপড় দ্বারা আবৃত থাকবে যে কাপড়ের ছিদ্র দ্বারা সে দেখতে পায়। আবার কেউ কেউ “মা যহারা মিনহা” এর সীমারেখা বাড়িয়ে দুই হাতের কব্জি খোলা রাখার অনুমোদন দিয়ে থাকেন। আর যারা মুখ খোলা রাখার অনুমোদন দেন তাদেরকে সমালোচিত হতে হয়। আর মুখ ঢাকা বা খোলা রাখার বিতর্ক সত্ত্বেও মাথা ও চুল ঢেকে রাখার ক্ষেত্রে সাধারণত ধর্মীয় পণ্ডিতরা খুব জোর দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে সঠিক সমাধানে উপনীত হওয়ার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো লক্ষণীয়:
(ক) একটি আয়াতও নেই যাতে মাথা, চুল ও মুখ ঢেকে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
(খ) “মা যহারা মিনহা” বা “যীনাত থেকে যা প্রকাশমান রাখা যেতে পারে” এবং “মা ইউখফীনা মিন যীনাতিহিন্না” (যীনাত থেকে যা গোপনীয়) এর পার্থক্য বুঝার জন্য “মা ইউখফীনা মিন যীনাতিহিন্না” এর সংজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “মা ইউখফীনা মিন যীনাতিহিন্না” (যীনাত থেকে যা গোপনীয়) তা হলো “যার প্রকাশমানতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যৌন আকর্ষণ তৈরি করে”। তা গোপনীয় কারণ তা অনাবৃত ও স্পষ্ট করা মানে অশ্লীলতার চর্চা বা অবৈধ যৌন আকর্ষণ তৈরির মাধ্যম। আর এ অংশের পরিচয় এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে, পদচালনা বা পদাঘাতের মাধ্যমে তা অনাবৃত বা স্পষ্ট হয়ে পড়তে পারে। কেউ যদি শুধুমাত্র মুখ, মাথা ও চুল অনাবৃত রাখে তাহলে সেটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে যৌন আকর্ষণ তৈরি করে না, যদি না সে নিজে যৌন আকর্ষণ তৈরির জন্য কোনো বিশেষ ভঙ্গি বা রূপসজ্জা অবলম্বন করে। আর যদি কেউ নিজেই যৌন আকর্ষণ তৈরি করতে চায় তাহলে সে সমস্ত শরীর ঢেকেও তা করতে পারে। সুতরাং সাবলীলভাবে মুখ ও মাথা খোলা রাখা যেতে পারে, কারণ তা পদাঘাতে অনাবৃত বা স্পষ্ট হওয়ার সাথেও সম্পর্কিত নয় এবং যৌন আকর্ষণের সাথেও সরাসরি সম্পর্কিত নয়। বস্তুত অতিরঞ্জিত পদক্ষেপে হাঁটা শরীরের নির্দিষ্ট বাঁকগুলির দিকে লক্ষ্যযুক্ত মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে, কিন্তু এটা মাথা, চুল বা মুখের যৌন আবেদন বাড়ায় না, বরং সেগুলো সাধারণ অবস্থায় অবিচলিত থাকে।
(গ) এটা অসম্ভব নয় যে, কোনো ব্যক্তি কারো মুখাবয়ব দেখে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সে অশ্লীলতার চর্চাকারী হওয়ায় যৌন আকর্ষণও অনুভব করতে পারে। আমরা দেখি যে, রসূলুলল্লাহ ইউসুফের রূপসৌন্দর্যে বিমোহিত একদল নারী তাঁকে অশ্লীলতার জন্য উস্কানি দিচ্ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি নিজের চেহারাকে ঢেকে দেননি, বরং তিনি তাদের কবল থেকে বাঁচার জন্য জেলখানাকে পছন্দ করে নিয়েছেন। আল্লাহ পুরুষদেরকে যেমন তাদের দৃষ্টি সংযত করতে বলেছেন, নারীদেরকেও তেমনি তাদের দৃষ্টি সংযত করতে বলেছেন। পুরুষদের দৃষ্টি সংযত করতে সহায়তার জন্য যদি নারীদের চেহারা ঢাকার প্রয়োজন হয়, তবে নারীদের দৃষ্টি সংযত করতেও পুরুষদের চেহারা ঢাকার প্রয়োজন হবে। বস্তুত আল্লাহ নারী-পুরুষ কাউকেই চেহারা ঢাকতে নির্দেশ দেননি।
(ঘ) চেহারা ঢাকা বিভিন্ন বাস্তব অসুবিধার কারণ। যেমন চেহারা ঢাকার সাধারণ চর্চা থাকলে এর সুযোগ নিয়ে কোনো পুরুষ নিজ চেহারা ঢেকে নারীদের মধ্যে মিশে গিয়ে অশ্লীলতা ও যৌন হয়রানি করতে পারে। এছাড়া নারী-পুরুষ যেকেউ চেহারা ঢেকে যেকোনো সাংঘাতিক কাজ করতে পারে, অথচ চেহারা ঢাকা থাকায় তাকে চিহ্নিত করা কঠিন হবে। অন্যদিকে চেহারা ঢাকার সাধারণ চর্চা না থাকলে যে ব্যক্তি চেহারা ঢাকবে তাকে প্রথমেই সন্দেহবশত আটক করা যাবে এবং চেহারা ঢাকার কারণ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। এভাবে অপরাধ প্রতিরোধ সহজ হবে।
(ঙ) সাধারণত কেউ যৌন আকর্ষণ তৈরি হয় বিধায় লজ্জাশীলতার কারণে চেহারা আবৃত করে না। বরং অপরাধীরা যারা নিজেদের পরিচয় লুকাতে চায় তারাই নিজেদের চেহারা আবৃত করার চেষ্টা করে। এছাড়া ধর্মীয় কারণ মনে করে যে নারীরা চেহারা ঢাকে বা তাদেরকে চেহারা ঢাকতে বাধ্য করা হয়, তা নিতান্তই ধর্মীয় নির্দেশনা মনে করার ভুল ধারণাবশত। অন্যথায় স্বাভাবিক প্রকৃতিগতভাবে নিজেদের চেহারাকে যৌন আকর্ষণের বিষয় মনে করে কেউ চেহারা ঢাকার কথা নয়।
(চ) আল্লাহ নারীদেরকে এমনভাবে পোশাক পরিধান করতে বলেছেন যেন তাদেরকে চেনা সহজ হয়। চেহারা আবৃত করলে তাকে চেনা সহজ নয়। চেনার মধ্যে কোনো নারীর পরিচয়, সে কে? কার মা, বোন বা কন্যা?- তাও অন্তর্ভুক্ত। যেমন আমরা কুরআনে মারইয়ামের উদাহরণ পাই যিনি তাঁর সন্তানসহ তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলে তারা তাঁকে চিনতে পেরেছে এবং “হারুনের বোন” বলে সম্বোধন করেছে। সুতরাং শালীন নারী হিসেবে চেনার মধ্যে নারীর নিজস্ব ব্যক্তিত্বের শালীনতাগুণের পাশাপাশি তার ব্যক্তিগত পরিচয় যে, সে কে? কার মা, বোন বা কন্যা- সেই পরিচয়সহ তাকে চেনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
(ছ) “মা যহারা মিনহা” হলো নারীদের আওরাতের বাইরের অংশ। ‘আওরাত’ মানে হলো “ব্যক্তিগত বিষয়, যা নাজুক অবস্থায় থাকতে পারে”। “আওরাত” শব্দটি কুরআনে তিনটি আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে। ২৪:৩১, ২৪:৫৮ এবং ৩৩:১৩। এর মধ্যে ২৪:৫৮ আয়াতে যে সময় নারী বা পুরুষ তাদের ব্যক্তিগত কক্ষে পোশাক শিথিল করে বিশ্রাম নিতে বা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার সাথে সম্পর্কিত কার্যে থাকতে পারে সেই সময়গুলোকে ‘আওরাত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ৩৩:১৩ আয়াতে মুনাফিক্বদের একটি মিথ্যা ওজুহাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যাতে তারা তাদের বাড়িঘরকে ‘আওরাত’ তথা ‘নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, অথচ তা ‘নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ ছিল না, বরং সাধারণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আওতায় সেগুলোও মু’মিনদের বাড়িঘরের মতো সমান সুরক্ষার আওতাভুক্ত ছিল।
২৪:৩১ আয়াতে যে বালকেরা নারীদের ‘আওরাত’ বা নারীত্বের সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয় তথা যে রূপসৌন্দর্য প্রকাশিত থাকলে তাতে পুরুষের মধ্যে আকর্ষণ অনুভব হতে পারে সেরূপ রূপসৌন্দর্য প্রকাশিত থাকা না থাকার মধ্যে পার্থক্য অনুভব করার বয়সে উপনীত হয়নি তাদের সামনে গোপনীয় যীনাত প্রকাশমান রাখার ক্ষেত্রে অসুবিধা নেই বলে জানানো হয়েছে। যেহেতু নারীর চেহারা তার আওরাতের অংশ নয় তথা এটি নারীর নারীত্বের গঠনগত ভিন্নতার কাছাকাছি থাকা অঙ্গ নয়, যা বিশেষ অনুভূতি জাগাতে পারে, তাই নারীর চেহারা “মা যহারা মিনহা” বা “যা প্রকাশমান রাখা যেতে পারে” এর অন্তর্ভুক্ত। অন্যকথায় আয়াতের নির্দেশনায় নারীর চেহারা আবৃত রাখার ক্ষেত্রে আবশ্যকীয় নয়, বরং অনাবশ্যকীয়। নারীর মাথা বা চুলের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
(জ) মু’মিন পুরুষ কর্তৃক মুশরিক নারীকে এবং মু’মিন নারী কর্তৃক মুশরিক পুরুষকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে যদিও মুশরিক নারী বা পুরুষ কোনো মু’মিন নারী বা পুরুষকে মুগ্ধ করে। এ মুগ্ধতার একটি দিক হলো চেহারার সৌন্দর্য দ্বারা মুগ্ধ করা। এ থেকে বুঝা যায় যে, মু’মিনরা সমাজের সকল নারীকে মুখ ঢাকতে বাধ্য করবে না। এমনকি মু’মিন নারীদেরকেও বাধ্যতামূলকভাবে মুখ ঢাকতে হবে না। যেমন: মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে জানানো হয়েছিল যে, তিনি ৩৩:৫২ আয়াত নাযিলের পূর্বে যাদেরকে বিয়ে করেছেন তারপর আর কোনো স্বাধীনা নারীকে বিয়ে করা তাঁর জন্য বৈধ রাখা হয়নি, যদিও তাদের সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করে। এই সৌন্দর্য যেমন চারিত্রিক সৌন্দর্যকে বুঝায়, তেমনি চেহারাগত সৌন্দর্যও এর একটি দিক হতে পারে। সুতরাং সাধারণ মুগ্ধতাকে ড্রেস কোড নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়নি। অন্যকথায় নারীর চেহারাকে গোপনীয় সৌন্দর্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।