আল কুরআনের আলোকে হিজাব

নারী-পুরুষের পোশাক ও পারস্পরিক যোগাযোগ শালীনতা ও শিষ্ঠাচারের নির্দেশনা

বইটি সম্পর্কে

আল কুরআনের আলোকে হিজাব বইটি হিজাব সম্পর্কিত একটি ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা, যাতে এ সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণাগুলোকে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং আল কুরআনের বিধান অনুসারে প্রকৃত নির্দেশনা উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে।

হিজাব ইস্যু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলিম জাতির একটি ধর্মীয় স্বাধীনতা সংরক্ষিত থাকা না থাকার প্রতীক হিসেবে আলোচিত। কোনো দেশে হিজাব নিষিদ্ধ করা মুসলিম নারীদের ধর্মীয় ড্রেস কোড পরিধানের ধর্মীয় স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক আলোড়ন এবং ঘাত-প্রতিঘাতের সৃষ্টি হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে হিজাব সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনা অনুসন্ধান সমকালের একটি বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু কুরআনই মুসলিমদের জন্য ধর্মীয় তথ্য ও বিধিনিষেধের একমাত্র পরিপূর্ণ নির্ভুল সূত্র, তাই ইসলামের যেকোনো বিষয়ের মতো হিজাব সম্পর্কেও কুরআনের মানদণ্ডে প্রকৃত বিধিনিষেধ সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরি। তাহলেই এই নির্দেশ পরিপালন এবং বিশ্বব্যাপী হিজাব ইস্যুতে মুসলিমদের করণীয় নির্ধারণে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

আলোচ্য বইটিতে হিজাবের সাথে সম্পর্কিত বিষয়াদিতে কুরআনের আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়নের মাধ্যমে নারী-পুরুষের পোশাক এবং পারস্পরিক যোগাযোগে শালীনতা ও শিষ্টাচারের নির্দেশনাসমূহ বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যায়, বইটি এ বিষয়ে বহু যুগ ধরে চলমান বিভিন্ন বিতর্কের যথাযথ সমাধান নির্ণয়ে অত্যন্ত সহায়ক হবে।

বইটিতে কোনো ক্ষেত্রে কোনো তথ্যগত বা বিশ্লেষণগত ত্রুটি চিহ্নিত হলে অবশ্যই তা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

এক নজরে মূল প্রতিপাদ্য

১. মানব সভ্যতার অন্যতম মানদন্ড হলো লজ্জা নিবারন বা পোশাকের ব্যবহার। শালীনতা মানব সভ্যতার মৌলিক বৈশিষ্ট্য এবং কুরআনের হিজাব সংক্রান্ত একটি মুলনীতি হলো অশ্লীলতার নিষিদ্ধতা। হিজাব সম্পর্কিত আয়াতসমূহে প্রদত্ত নির্দেশনার মূল কারণ হলো অশ্লীলতার প্রসার রোধ করা।

২. মানুষের লজ্জা নিবারণ এবং সৌন্দর্য বিধানের জন্য আল্লাহ পোশাকের উপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি মানুষকে পোশাক পরিধানের মাধ্যম গোপনীয়তার হেফাযত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

৩. নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতিযোগী নয়, বরং পরিপূরক। তাদের মানবিক মর্যাদা সমান কিন্তু সৃষ্টি-প্রকৃতিগত পার্থক্যের ভিত্তিতে দায়-দায়িত্বে কিছু ভিন্নতা রয়েছে।

নারী প্রকৃতিগতভাবে সন্তান গর্ভধারণ ও তাকে দুধপান করানোর দায়িত্ব পালন করতে হয় এবং সেই প্রেক্ষিতে তার দায়িত্বের কেন্দ্রস্থল হলো পরিবার। । তবে তার উপার্জনের অধিকার ও সমাজকর্মে তৎপরতার দায়িত্বও রয়েছে। পরিবারের জন্য উপার্জনের মূল দায়িত্ব পুরুষের। তাই স্বাভাবিকভাবে পরিবার ও সমাজের মূল নেতৃত্বের দায়িত্ব পুরুষকেই পালন করতে হয়। সেইসাথে এক্ষেত্রে নারীদেরকেও যথোপযোগী অবদান রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

৪. নারী-পুরুষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও সমাবেশ নিষিদ্ধ নয়, তবে নারীর প্রতি সন্মানজনক পরিবেশ বজায় রাখার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

৫. পুরুষ ও নারী উভয়কে তাদের দৃষ্টি সংযত করতে এবং গোপনীয়তার হেফাযত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দৃষ্টি সংযত করার অর্থ ‘আই কন্টাক্ট’ বা ‘চোখে চোখ রেখে কথা বলা থেকে বিরত থাকাকে’ বুঝায় না। বরং এর দ্বারা অশোভন দৃষ্টিপাত থেকে বিরত থাকাকে এবং যা দেখা উচিত নয় তা দেখা থেকে বিরত থাকাকে বুঝানো হয়েছে।

৬. নারীর পর্দার বিষয়ে কিছু বাড়তি নির্দেশনা হলো:

[ক] তারা তাদের রূপসৌন্দর্য থেকে যে অংশ সবার সামনে স্বাভাবিকভাবে উন্মুক্ত থাকতে পারে তা ছাড়া বাকি অংশের গোপণীয়তা রক্ষা করার নির্দেশ রয়েছে। । তবে সেক্ষেত্রেও আবার পিতা-ভাই-পুত্র প্রমুখের সামনে কিছুটা ছাড় রয়েছে।

[খ] নারীকে সাধারণভাবে সুবিধামতো ওড়না বা কোনো অতিরিক্ত বস্ত্রখণ্ডের মাধ্যমে বক্ষদেশের আকৃতিকে ঢেকে দেয়া হয় এমনভাবে ঢেকে রাখতে হবে।

[গ] নবী স্ত্রীরা সাধারন নারীদের মতো নয়, এই বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের বিশেষ স্ট্যাটাস এবং প্রোটোকল সম্পর্কে স্বীকৃতির প্রমান পাওয়া যায়। প্রোটোকল হিসেবে বিশেষ পোশাক ব্যবহারের যে আধুনিক রীতি তা আমরা কুরআনেও উপস্থিত দেখতে পাই। যেমন রাষ্ট্র প্রধান ও তার সহযোগীদের সহধর্মীনি বা পরিবারের নারীদের ক্ষেত্রে যে বিশেষ পোশাক পরার নির্দেশ কুরআনে রয়েছে তার কারন হিসেবে স্পষ্ট বলা হয়েছে "যেন তাদের চিনতে পারা যায়।" এই কারনটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

[ঘ] অত্যন্ত বয়স্করা যারা যৌন আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত হয়ে গেছে, তারা তাদের বাড়তি পোশাক খুলে রাখলে দোষ হবে না, তবে শর্ত হলো যেন তাদের রূপসৌন্দর্যের প্রদর্শনী হয়ে না পড়ে, অবশ্য তাদেরও বাড়তি কাপড় ব্যবহার করাই উত্তম।

[ঙ] নারী-পুরুষের স্বাভাবিক সাক্ষাত ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখতে হবে। নারী-পুরুষের অনাবশ্যক স্পর্শ থেকে সাবধান থাকতে হবে। পুরুষের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে নারীদেরকে নমনীয়তার পরিবর্তে স্বাভাবিকতা বজায় রেখে কথা বলতে হবে।

[চ] নবীর স্ত্রীদের কাছ থেকে কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের গৃহের অভ্যন্তরীণ কক্ষের পর্দার (হিজাব) আড়াল থেকে চাইতে হবে, সরাসরি তাদের ব্যক্তিগত কক্ষে ঢুকে যাওয়া যাবে না মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এটা থেকে অন্যান্য নারীদের ক্ষেত্রেও শিক্ষণীয় রয়েছে। তবে তাদের অভিভাবক এবং যাকে প্রয়োজনে অনুমতি দেয়া হয় তাদের কক্ষে যেতে পারবে। অনুমতি সাপেক্ষে পিতা-ভাই-পুত্র প্রমুখ সচরাচর তাদের কক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।

৭. নারী ও পুরুষ পরস্পরের বন্ধু ও অভিভাবক। তারা ন্যায়ের নির্দেশ দিবে ও অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। মারইয়ামকে নারীদের উপর মনোনীত করা হয়েছিল এবং তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যেন রুকুকারীদের সাথে রুকু করে। সুতরাং নারী-পুরুষ যৌথ সমাবেশে ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মাদি সম্পন্ন করতে পারবে। নারীরা প্রয়োজনে যুদ্ধও করতে পারবে বা তাদেরও যুদ্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। তাই তাদেরকেও সামরিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত।

৮. নারী সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্বের, নির্বাহী কর্মকাণ্ড পরিচালনার ও পরামর্শ প্রদানের ক্ষেত্রে যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সম্ভব। সাধারণভাবে এ দায়িত্ব পুরুষের উপর অর্পিত হলেও তা নারীর জন্য অবৈধ করা হয়নি। নারী যেমন পারিবারিক ক্ষেত্রে তার পিতাকে পরামর্শ দিতে পারে, তেমনি সর্বত্র সে এরূপ পরামর্শ প্রদানে যোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে।

৯. নারীর চেহারা ঢাকার কোনো নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং তাকে এমনভাবে শালীন পোশাক পরতে হবে, যাতে তাকে নারী ও ভদ্র নারী এবং অনুরূপভাবে তার মর্যাদাগত অবস্থানসহ চিনতে পারা যায়। নারীর চেহারা খোলা থাকার স্বাভাবিকতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যাতে তাদেরকে দেখে মুগ্ধ হওয়া না হওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া হজ্জের প্রচলিত অনুষ্ঠান থেকেও প্রতীয়মান হয় যে, যেখানে স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় তাতে নারী-পুরুষ কোনো বিশেষ পর্দা ছাড়াই একসাথে ধর্মকর্ম ও সমাজকর্ম সম্পাদন করতে পারে।

১০. সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য শালীনতা অবলম্বনের নির্দেশের পাশাপাশি অপবাদ ও অশ্লীলতার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট দণ্ডবিধি প্রদান করা হয়েছে। আর নারীদেরকে যৌন হয়রানি করার শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেয়া হয়েছে।

ভূমিকা

মুসলিমদের ধর্মীয় পরিচয়ের ক্ষেত্রে বাহ্যিক বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান হলো মুসলিমদের পোশাক। মানুষের পোশাক যদিও তার বসবাসের ভৌগোলিক অবস্থান, আবহাওয়া এবং সংস্কৃতির উপর নির্ভরশীল, তারপরেও মুসলিমরা পোশাকের ব্যাপারে কিছু বিধিনিষেধ অনেকটা স্বআরোপিত করেছে। এর কিছুটা কুরআনের নির্দেশনার মাধ্যমে প্রভাবিত হলেও, বৃহতাকারে তা আরব সংস্কৃতি ও রাসুলের পরবর্তী সময়ে তাঁর নামে প্রচলিত হাদীস থেকে উদ্ভূত।

কুরআনের অন্য অনেক বিধানের মতোই পোশাক ও শালীনতার ক্ষেত্রে স্রষ্টার বিধান অনেক উদার, প্রশস্ত এবং মানুষের বিবেচনার জন্য ছাড় দেওয়া একটি বিষয়। দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো, কুরআনকে পরিত্যাজ্য করে ফেলা মুসলিম জাতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে যেমন অগুরুত্বপূর্ণ করে ফেলেছে তেমনি অনেক প্রশস্ত বিষয়কে করে ফেলেছে সংকীর্ণ। নারীর পোশাক, পোশাকের নির্দিষ্টতা আরোপ করা এরকম সংকীর্ণ করে ফেলা একটি বিষয়।

মুসলিম জাতির ইতিহাস অনুসারে আরব সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার এবং কুরআনের মূলনীতি থেকে মুসলিম জাতির দূরে সরে যাওয়ার ঘটনা প্রায় সমান্তরালভাবে ঘটেছে। এরই পাশাপাশি যখন ফিকহ শাস্ত্রের জন্ম ও বেড়ে ওঠা, সে সময়েই নারীর পোশাক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির প্রভাব ইসলাম ধর্মের বিধানের মতো করে মুসলিমদের ভিতরে প্রচলিত হয়েছে। আরবভূমি থেকে ইসলাম আস্তে আস্তে যতই অনারব ভূমি ও সংস্কৃতিতে পৌছেছে, ইসলামের মূলনীতির ভাবগত আদর্শের পরিবর্তে স্থূল ও তুলনামূলক আক্ষরিক বিষয়গুলো মানুষের চেতনায় ধর্মবোধের জায়গা দখল করে নিয়েছে। পোশাক এ ধরনের আক্ষরিক প্রভাবের একটি বিষয়।

প্রতীক হিসাবে পোশাক বেশ শক্তিশালী। ইসলাম ধর্মকে যদি কেবল আরবদের ধর্ম মনে করা হয়, স্রষ্টার ভাষা হিসাবে যদি শুধু আরবী মনে করা হয় তা হলে যেমন ভুল হবে, ঠিক তেমনি আরবদের পোশাকই ইসলামী পোশাক মনে করাও একই ধরনের ভুল। এই ভুলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পোশাকের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নারীর পোশাক কি হবে, কতটুকু শরীর ঢেকে রাখতে হবে, কতটুকু খোলা রাখা যাবে - এ বিষয়ে অসংখ্য এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ স্কুল অব থটস রয়েছে। প্রাক্টিসের দিক থেকেও বিভিন্ন মুসলিম দেশে আমরা ভিন্ন ভিন্ন অবস্থা দেখতে পাই। আবার একই মুসলিম অধ্যুষিত দেশে বিভিন্ন মাযহাব ও প্রভাব বলয়ে বিভিন্ন আচরণ দেখতে পাই।

ইক্বরা থেকে আমরা যখন এই বইটিতে কাজ করছি (ফেব্রুয়ারী / মার্চ ২০২২) ঠিক তখন ভারতের কেরালা রাজ্যে হিজাব নিয়ে নতুন বিতর্কের ডামাডোল চলছে। ভারতীয় হাইকোর্ট রায় দিয়েছে যে হিজাব ইসলামের অত্যাবশ্যক অংশ নয়, সুতরাং যেসব মুসলিম মেয়েরা স্কুল ড্রেসের উপরে হিজাব পরছে তারা তা করতে পারবে না। স্কুলে সবাইকে একই ইউনিফর্ম পরতে হবে। এর আগে আমরা জানি ইউরোপের কিছু কিছু দেশে নিকাব নিষিদ্ধ হয়েছে।

সমসাময়িক এ ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা ইক্বরা থেকে যতটা সম্ভব নির্মোহভাবে হিজাব তথা ড্রেস কোড সম্পর্কে কুরআনের আয়াত ভিত্তিক গবেষণা ও পর্যালোচনা করতে সচেষ্ট হয়েছি। আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে চাই না যে আমরা যে পাঠ করার চেষ্টা করেছি, যতখানি বুঝতে পেরেছি এবং যে সিদ্ধান্ত এখানে ব্যক্ত হয়েছে সেটাই চূড়ান্ত। বরং এটি একটি চলমান পাঠ এবং অন্যান্যরা তাদের নিজস্ব পাঠ অব্যাহত রাখবেন; সেটাই কুরআনের দাবী। কুরআন কখনো পুরোহিত তন্ত্র, মোল্লা তন্ত্র বা পেশাজীবি ধর্মীয় শ্রেণিকে অনুমোদন বা প্রশ্রয় দেয় না।

কুরআন সকল মানুষের জন্য হেদায়েত এবং যে পথের দিশা চায় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি যে তিনি তাকে পথের দিশা দেখাবেন। আর সেই দিশা পাওয়ার জন্য প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন নিজ দায়িত্বে কুরআন অধ্যয়ন করা। প্রত্যেকের বিবেক ও বুদ্ধি অনুসারে কুরআন পাঠ ও বোঝা চলমান থাকা উচিত। আর বারংবার কুরআন পাঠের মাধ্যমেই মানুষের জীবনের যাবতীয় বিষয় প্রত্যেক মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে এটাই আমরা বিশ্বাস করি, কেননা কুরআনের মাধ্যমে স্রষ্টা সেই প্রতিশ্রুতিই প্রদান করেন।

শালীনতা, পোশাক ও কার কি পোশাক পরতে হবে সেটা এমন একটি বিষয় যেটা সব মানুষের মধ্যেই কমনসেন্স বা সাধারন জ্ঞান হিসেবেই বিদ্যমান। এ কারণেই মানুষ কি খাবে সেটা যেমন মোটা দাগে বলা আছে যে যা উত্তম তাই খেতে হবে, নিষিদ্ধ খাবার মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি বিষয় - ঠিক তেমনি কি পোশাক পরবে সেটা নিয়ে কুরআন খুব ডিটেইলসে যায় নি। বরং শালীনতা, শ্লীল-অশ্লীলকে কুরআন মানুষের বিবেকের বিষয় হিসেবে প্রশস্ততা দিয়েছে।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে পোশাক, এর উদ্দেশ্য, অশ্লীলতা প্রচার ইত্যাদি নিয়ে কিছু আয়াত কুরআনে এসেছে যার আলোকে এই বইতে কিছু আলোচনা এসেছে। তার থেকেও বড় কথা যে পোশাক, বিশেষ করে নারীর পোশাক নিয়ে যে বাড়াবাড়ি ইসলামের নাম দিয়ে প্রচলিত তাকে খণ্ডন করতে গিয়ে কু্রআনের অনেক শব্দ ও আয়াতকে বিশ্লেষণ করতে হয়েছে। অন্যথায় এই বইয়ের কলেবর আরো কম হওয়াই কাম্য ছিলো।

যেহেতু আমরা সরল পথ থেকে অনেক বিচ্যুত, যেহেতু আমরা আমাদের কমনসেন্সকে অনেক আগে ত্যাগ করেছি, যেহেতু আমরা সহজ দ্বীনকে জটিল করেছি নিজেদের নির্বুদ্ধিতায় - সেহেতু আমাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে। যে বিষয় আল্লাহ সহজ এবং কমনসেন্স হিসেবে আমাদের জন্য ছেড়ে রেখেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে পেশাদার ধর্মীয় চিন্তাবিদ ও আইনপ্রণেতারা সেগুলো প্রসঙ্গে প্রচুর খুঁটিনাটি তৈরী করেছেন যা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিলো।

নবী মুসা আ. এর জাতি যেমন গরু কুরবানীর ঐশী নির্দেশের পর কি গরু, কেমন গরু, বয়স কেমন, রঙ কেমন, সব গরু আমাদের কাছে একই রকম মনে হয় ইত্যাদি অনেক বাহানা আর অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলো, মুসলিম জাতিও তার বিভিন্ন প্রসঙ্গে একই ভাবে বাকারা সিন্ড্রোমে ভুগে থাকে। যার ফলাফল হলো পেশাদার মুফতিদের দ্বারা হাজার হাজার এটা কিভাবে করবো, ওটা কিভাবে করবো টাইপ মাসালার জন্ম হয়। অথচ কুরআনে যেগুলো প্রশস্ত বিষয় সেগুলোতে নীতিমালা বলে দেওয়া আছে যে নীতিমালা অনুসরণ করতে আর সমস্যা বা প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

মরুভূমির পোশাক আর বরফের দেশের পোশাক এক হওয়া সম্ভব নয়। একজন জেলের পোশাক এবং একজন চাষীর পোশাক ভিন্ন হবে। এটাই কমনসেন্স বা সাধারন জ্ঞান যা শিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত সকলের জন্যই। কৃষির মাঠে যে মহিলা কাজ করবে বনাম যে মহিলাকে কোনো কায়িক পরিশ্রম করতে হয় না তাদের দুজনের পোশাক দুরকম হতেই পারে। কিন্তু শালীনতা প্রত্যেকেই বজায় রাখতে পারে। এখানে নীতিমালা গুরুত্বপূর্ণ। তারপর বাকিটা পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে।

নারীর পোশাকের সাথে সর্ম্পকিত আয়াতসমূহের মধ্যে কিছু আয়াত যে একজন রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রী অর্থাৎ ফার্স্ট লেডিদের প্রোটোকল সর্ম্পকিত সেটাও আমরা বুঝতে অক্ষম। তাদের যে বিশেষভাবে নিজেদের পোশাকের প্রোটোকল বজায় রাখতে বলেছেন এবং কেন বলেছেন সেটাও আয়াতে পরিস্কার থাকা সত্ত্বেও এ আয়াতকে আমরা জেনারেলাইজ করে ওভার রিয়্যাক্ট করি।

মাথায় হয়তো স্কার্ফ আছে কিন্তু স্কিন টাইট জিন্সও পরনে আছে। আমাদের সমাজে অনেকেই সো কলড হিজাব ব্যবহার করলেও শালীনতার বেসিকে যে আমরা খুবই উদাসীন সেটা দৃশ্যমান। মাথা ঢেকে রাখার জন্য অনেক বাহারী কাপড় পড়ার পরও প্রদর্শনী করে বেড়ানোর যে প্রবণতা তার লাগাম না টানলে হিজাবের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়। একটি বিষয়ে মূল নীতিমালা ও উদ্দেশ্য না জানলে যে আমরা পদে পদে হোঁচট খেতে পারি, হিজাবের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুব স্পষ্ট।

এ বইটি রচনার ক্ষেত্রে আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো এ বিষয়টি অধ্যয়ন এবং এ প্রসঙ্গে একটি প্রামাণ্য কাজ রেখে যাওয়া। আমরা সে উদ্দেশ্যে কতখানি সফল বা ব্যর্থ তা পাঠকই ভালো বিচার করতে পারবেন। বইটি রচনা ও বিশ্লেষণে কোনো ত্রুটি হলে তার জন্য অগ্রিম ক্ষমা প্রার্থী। বইটিতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার বিস্তারিত রয়েছে। সুতরাং কোনো ত্রুটি লক্ষ্য করলে জানানোর জন্য অনুরোধ রইলো।

হিজাবের বিধান সম্পর্কিত আয়াতসমূহ


ক. অশ্লীলতার নিষিদ্ধতা

قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

৬:১৫১ :: বলো, “আসো আমি তোমাদেরকে পাঠ করে শুনাই যা তোমাদের প্রভু তোমাদের নিষিদ্ধ করেছেন। তাহলো: তোমরা তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করো না। আর পিতামাতার প্রতি সুন্দর ও উত্তম আচরণ করো। দরিদ্রতার কারণে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। আমিই তোমাদেরকে জীবিকা দিয়ে থাকি এবং তাদেরকেও। আর অশ্লীলতার ধারে কাছেও যেও না, তা প্রকাশ্য হোক বা গোপন হোক। আর সত্য বিধানসঙ্গত কারণে ছাড়া তোমরা কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করো না, যাকে হত্যা করাকে আল্লাহ নিষিদ্ধ করেছেন। এগুলোই তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন, হয়তো তোমরা বিবেকবুদ্ধি (আক্বল, Commonsense) প্রয়োগ করবে।

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

৭:৩৩ :: বলো, নিশ্চয় আমার প্রভু হারাম করেছেন অশ্লীলতা, তা প্রকাশ্য হোক বা গোপন হোক এবং পাপাচার এবং বাড়াবাড়ি, যা সত্য সঙ্গত নয়, এবং আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করা, যে অংশীদারিত্ব সাব্যস্ত করার পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি এবং আল্লাহর নামে এমন কিছু বলা যা (সত্য কিনা তা) তোমরা জানো না।

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

১৬:৯০ :: নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ করেন ন্যায় আচার ও ন্যায় বিচার (আদল) এবং উত্তম আচরণ ও পরোপকার (ইহসান) এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার জন্য। এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা এবং অন্যায় এবং সীমালঙ্ঘন থেকে। তিনি তোমাদেরকে সদুপদেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করতে পারো।
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

১৭:৩২ :: তোমরা ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেও না। নিশ্চয় তা অশ্লীলতা এবং অত্যন্ত মন্দ পথ।

إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

২৪:১৯ :: নিশ্চয় যারা পছন্দ করে যে, বিশ্বাসীদের (মু’মিনদের) মধ্যে অশ্লীলতা (ফাহিশাত) ছড়িয়ে পড়ুক, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে কষ্টদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।

وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ وَأَنَّ اللَّهَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ

২৪:২০ :: আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো (তাহলে তোমরা অশ্লীলতা থেকে মুক্ত থাকতে পারতে না)। আর নিশ্চয় আল্লাহ স্নেহশীল, দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

২৪:২১ :: হে যারা ঈমান এনেছো, তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। আর যে ব্যক্তি শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে, তবে নিশ্চয় সে অশ্লীলতা ও অন্যায় কর্মের আদেশ দেয়। আর যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো, তাহলে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কখনো পরিশুদ্ধ থাকতো না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে পরিশুদ্ধ করেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।


খ. পোশাকের উদ্দেশ্য ও মৌলিক নীতিমালা

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

৭:২৬ :: হে আদম সন্তানেরা, নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য পোশাকের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে ঢেকে রাখবে এবং ‘দেহিক শোভা বর্ধন ও দেহসৌষ্ঠব সংরক্ষণের উপায়’ (রীশ) হবে। আর স্রষ্টা-সচেতনতার আভরণ (মনকে স্রষ্টা-চেতনতা দ্বারা সজ্জিত করা এবং তার প্রতিফলনস্বরূপ নৈতিক গুণসম্পন্ন পরিচ্ছদ পরিধান করা), সেটাই শ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকর। এটা আল্লাহর আয়াত, সম্ভবত তোমরা স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করবে।

يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ

৭:২৭ :: হে আদম সন্তানেরা, শয়তান যেন তোমাদেরকে ফেতনায় না ফেলে, যেভাবে সে তোমাদের (আদি) পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করিয়ে নিয়েছে, তাদের দুজনের থেকে তাদের পোশাক খুলিয়ে নিয়ে, যেন তাদের দুজনকে তাদের দুজনের লজ্জাস্থান দেখাতে পারে। নিশ্চয় সে এবং তার সরাসরি দলবল তোমাদেরকে এমন স্থান থেকে দেখতে পায় যেখানে তোমরা তাদেরকে দেখো না। নিশ্চয় আমরা শয়তানকে তাদের বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছি যারা ঈমান আনে না।

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ كَذَٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

১৬:৮১ :: আর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড় থেকে তোমাদের জন্য আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছেন যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও (ব্যবস্থা করেছেন) যা তোমাদেরকে রক্ষা করে তোমাদের যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামতাকে পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পিত হও।

وَعَلَّمْنَاهُ صَنْعَةَ لَبُوسٍ لَّكُمْ لِتُحْصِنَكُم مِّن بَأْسِكُمْ فَهَلْ أَنتُمْ شَاكِرُونَ

২১:৮০ :: আর আমরা তাকে (দাউদকে) তোমাদের জন্য বর্ম (যুদ্ধের পোশাক) তৈরি শিক্ষা দিয়েছি যেন তা তোমাদেরকে তোমাদের (যুদ্ধের) কঠিন আঘাত থেকে রক্ষা করার ঢালস্বরূপ হয়, সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে?

قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ

২৪:৩০ :: মু’মিন পুরুষদেরকে বলো তাদের দৃষ্টিসমূহকে সংযত রাখতে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাজত করতে। এটাই তাদের জন্য সর্বাধিক পরিশুদ্ধ নিয়ম। নিশ্চয় তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত।

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِن زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

২৪:৩১ :: এবং মু’মিন নারীদেরকে বলো, তাদের দৃষ্টিসমূহকে সংযত রাখতে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাযতে রাখতে এবং তাদের রূপসৌন্দর্য (যীনাত) প্রকাশ না করতে তা ছাড়া তাদের রূপসৌন্দর্য থেকে যা (স্বাভাবিকভাবে) প্রকাশিত হয়/ (বিধিসঙ্গতভাবে) প্রকাশযোগ্য, এবং তাদের বক্ষদেশের উপর (উহার) আকৃতিকে ঢেকে দেয়ার মতো ওড়না বা বস্ত্রখণ্ড (খুমূর) জড়িয়ে রাখতে এবং তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজের পুত্র, স্বামীর পুত্র, নিজের ভাই, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, তাদের নিজেদের (ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বিশ্বস্ত) নারী, তাদের কর্তৃক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির আওতায় অধীনস্তগণ, সেইসব অনুসারী/অধীনস্ত পুরুষ যারা যৌনকামনাসম্পন্ন নয় এবং সেইসব বালক যাদের কাছে এখনো নারীদের আওরাত (নারীত্বের গোপনীয়তা) প্রকাশমান নয়/ যে বালকেরা এখনো নারী বিষয়ক অনুভূতির বয়সে উপনীত হয়নি, এই শ্রেণিগুলো ব্যতীত অন্যদের সামনে তাদের রূপসৌন্দর্য প্রকাশ না করতে। এবং তাদের রূপসৌন্দর্য থেকে যা তারা গোপন রেখেছে তা জানান দিতে (গোপনীয় রূপসৌন্দর্য প্রকাশ হয়ে পড়ার মতো) পদচালনা/ পদাঘাত না করতে। আর তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে তাওবাহ (প্রত্যাবর্তন) করো, হে মু’মিনগণ, যেন তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারো।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِيَسْتَأْذِنكُمُ الَّذِينَ مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ وَالَّذِينَ لَمْ يَبْلُغُوا الْحُلُمَ مِنكُمْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ مِّن قَبْلِ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَحِينَ تَضَعُونَ ثِيَابَكُم مِّنَ الظَّهِيرَةِ وَمِن بَعْدِ صَلَاةِ الْعِشَاءِ ثَلَاثُ عَوْرَاتٍ لَّكُمْ لَيْسَ عَلَيْكُمْ وَلَا عَلَيْهِمْ جُنَاحٌ بَعْدَهُنَّ طَوَّافُونَ عَلَيْكُم بَعْضُكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

২৪:৫৮ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যেন তোমাদের অনুমতি নেয় তোমাদের কর্তৃক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির আওতায় অধীনস্তগণ, এবং তোমাদের মধ্যকার যারা এখনো বয়ঃসন্ধিকালে বয়সে পৌঁছেনি তারা, তিনটি সময়সীমায়: সালাতিল ফজরের আগে এবং দুপুরে (যহীরাতে) তোমাদের পোশাকাদি সরিয়ে রেখে (বিশ্রাম নেয়ার) সময়কালে এবং রাতের (ইশা) সালাতের পরে পরে। এ তিনটি (সময়) তোমাদের আওরাত (ব্যক্তিগত ও গোপনীয়তার সময়)। এগুলোর পরে অন্য সময় তোমাদের একে অপরের প্রসঙ্গে (পারস্পরিক প্রয়োজনে) তোমাদের কাছে সচরাচর যাতায়াতকারী হলে তাতে তোমাদের উপর এবং তাদের উপর দোষ নেই। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য আয়াতসমূহকে স্পষ্টভাবে বিশদ বর্ণনা করেন। এবং আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।

وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

২৪:৫৯ :: আর যখন তোমাদের শিশুরা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে তখন তারা যেমন তাদের মতোই অনুমতি নেয় যারা তাদের পূর্বে (বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছে)। আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বিশদ বর্ণনা করেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।

وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

২৪:৬০ :: আর যেসব নারী যৌবনকাল অতিবাহিত করেছে-এখন আর বিবাহ করার আকাঙ্ক্ষা রাখে না- তাদের দোষ হবে না যদি তারা তাদের বহির্বাস (মূল পোশাকের উপর পরিধেয় বাড়তি পোশাক) সরিয়ে রাখে, তাদের রূপসৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী হওয়া ব্যতীত, আর (এরূপ করা থেকে) বিরত থাকাই তাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।

وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَـٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

২:২২১ :: আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং নিশ্চয় মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর (তোমাদের নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে করাবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর নিশ্চয় একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

لَّا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِن بَعْدُ وَلَا أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا

৩৩:৫২ :: তোমার (মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর) জন্য এর পরবর্তীতে কোনো নারীকে বিয়ে করা বা কোনো স্ত্রীর বদলে অন্য কোনো নারীকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা হালাল (বৈধ) নয়, যদিও তাদের কারো (চেহারাগত বা স্বভাবগত) সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু ‘মা মালাকাত ইয়ামীনুকা’ (যাদেরকে তোমার প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা প্রদায়ক ডানহাত পূর্ণরূপে অধিকৃত করেছে তারা) এ বিধানের ব্যতিক্রম। আর আল্লাহ সব বিষয়েই পর্যবেক্ষণকারী।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَـٰكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمًا

৩৩:৫৩ :: হে মু’মিনগণ, তোমরা নবীর গৃহসমূহে প্রবেশ করো না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া ছাড়া, (এবং) খাদ্য গ্রহণের জন্য তা প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়াই। কিন্তু যখন তোমাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় তখন (যথাসময়ে) প্রবেশ করো। তারপর যখন খাদ্যগ্রহণ শেষ করো, তখন তোমরা চলে যাও। আর তোমরা হাদীসের/কথার উদ্দেশ্যে মশগুল হয়ো না। নিশ্চয় এসব নবীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু সে তোমাদের কাছে তা প্রকাশ করতে লজ্জিত হয়। আর আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জিত হন না। আর যখন তোমরা তাদের কাছে (তথা নবীর স্ত্রীদের কাছে) কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য বা জিনিসের প্রার্থী হও, তখন হিজাবের (গৃহের অভ্যন্তরীণ কক্ষের পর্দার) আড়াল থেকে প্রার্থিতা প্রকাশ করো। সেটাই অধিক পবিত্র নিয়ম তোমাদের মনের জন্য এবং তাদের মনের জন্য। আর তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া সঙ্গত নয়। আর এও সঙ্গত নয় যে, তোমরা তার পরবর্তীতে কখনো তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করবে। নিশ্চয় তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বড় পাপপ্রবণতা।

إِن تُبْدُوا شَيْئًا أَوْ تُخْفُوهُ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

৩৩:৫৪ :: তোমরা কোনো কিছু প্রকাশ করো অথবা তা গোপন করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই পরিজ্ঞাত।

لَّا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي آبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ أَخَوَاتِهِنَّ وَلَا نِسَائِهِنَّ وَلَا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ وَاتَّقِينَ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا

৩৩:৫৫ :: তাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাইয়ের পুত্র, বোনের পুত্র, তাদের নিজেদের (ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও বিশ্বস্ত) নারী এবং তাদের কর্তৃক নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির আওতায় অধীনস্তগণের ক্ষেত্রে (অনুমতি সাপেক্ষে হিজাবের ভিতর সচরাচর যাতায়াতে) তাদের কোনো দোষ নেই। আর (হে নবীর স্ত্রীগণ) তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও। নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়েই সাক্ষী।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِن جَلَابِيبِهِنَّ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا

৩৩:৫৯ :: হে নবী, তোমার স্ত্রীদেরকে এবং তোমার কন্যাদেরকে এবং মু’মিনদের নারীদেরকে বলো, যেন তারা তাদের উপর তাদের জিলবাব/ চাদর জড়িয়ে রাখে। এটাই এ সম্ভাবনার নিকটতর যে, তাদেরকে (উন্নত ব্যক্তিত্বসম্পন্না হিসেবে) চিনতে পারা যাবে, ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া (যৌন বা অন্যভাবে হয়রানি করা) হবে না। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

৫:৬ :: হে যারা বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা দাঁড়াও সালাতের দিকে (সালাতের প্রস্তুতিপর্বে), তখন তোমরা ধৌত করো তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ, এবং তোমাদের হাতসমূহ কনুইসমূহ পর্যন্ত, এবং তোমরা মুছে নাও তোমাদের সমগ্র মাথাসমূহ এবং তোমাদের পাসমূহ টাখনুসমূহ পর্যন্ত। এবং যদি তোমরা অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাকো, তাহলে তোমরা পরিচ্ছন্ন হও। এবং যদি তোমরা অসুস্থ থাকো; অথবা সফর অবস্থায় থাকো অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ শৌচাগার থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো তারপর পানি না পাও, তাহলে তোমরা তায়াম্মুম (অনুসন্ধান) করো পবিত্র উচ্চভূমি। তখন তা থেকে (সেই উপাদানের মাধ্যমে) তোমরা মুছে নাও তোমাদের মুখমন্ডলসমূহকে এবং তোমাদের হাতসমূহকে। আল্লাহ ইচ্ছা করেন না তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা রাখতে। কিন্তু তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে পবিত্র করতে, এবং তোমাদের উপর তাঁর নিয়ামত (অনুগ্রহ) সম্পূর্ণ করতে। যেন তোমরা শোকর (কৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করতে পারো।

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

৭:৩১ :: হে আদম সন্তানেরা, তোমরা প্রত্যেক মাসজিদের (ধর্মসভা / বিধানের সমাবেশ) ক্ষেত্রে তোমাদের শোভা-সৌন্দর্যের উপকরণ গ্রহণ করো। আর তোমরা খাও ও পান করো এবং অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে ভালবাসেন না।

قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

৭:৩২ :: বলো, কে আল্লাহ প্রদত্ত শোভা-সৌন্দর্যের উপকরণকে ও পবিত্র জীবিকাকে হারাম করেছে যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি (বা বাহির) করেছেন? বলো, তা দুনিয়ার জীবনে তাদের জন্য (অধিক সঙ্গত) যারা ঈমান এনেছে এবং আখিরাতে তো তাদের জন্যই সুনির্দিষ্ট। এভাবেই আমরা আয়াতসমূহকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করি সেই জনগোষ্ঠীর জন্য যারা জ্ঞান অর্জন করে।


গ. নারী-পুরুষের স্বাভাবিক কর্মক্ষেত্র ও পারস্পরিক যোগাযোগ

নারী-পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক, বন্ধু ও অভিভাবক

وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

৩০:২১ :: আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের সমজাতীয় উপাদান থেকে জোড়াদেরকে (স্বামী-স্ত্রীকে) সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَـٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

৯:৭১ :: আর মু’মিন পুরুষগণ ও মু’মিন নারীগণ, তারা একে অন্যের বন্ধু ও অভিভাবক (আওলিয়া)। তারা ন্যায়ের আদেশ করে এবং অন্যায় থেকে নিষেধ করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। তারাই এমন ব্যক্তিবর্গ, যাদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

>>  পরবর্তী পৃষ্ঠায় যাওয়ার জন্য ক্লিক করুন