দি  ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন (ইক্বরা)

লক্ষ্য

ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।

উদ্দেশ্য

ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।

প্রকাশিত বইসমূহ

সুরা বাকারার বিষয় বিন্যাস

ফেরদৌস ফয়সাল, প্রথম আলোতে প্রকাশিত


বাকারা অর্থ গাভি। এই সুরার এক স্থানে গাভি নিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে। সুরাটি পবিত্র মদিনায় অবতীর্ণ হয়। এতে ৪০ রুকু, ২৮৬ আয়াত আছে। ‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা।

সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত ‘আয়াতুল কুরসি’ নামে পরিচিত। এটি কোরআন শরিফের প্রসিদ্ধ আয়াত। পুরো আয়াতে আল্লাহর একত্ববাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকায় আল্লাহ–তাআলা এ আয়াতের মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। এ সুরার শেষ দুটি আয়াতের (২৮৫-২৮৬) রয়েছে বিশেষ ফজিলত ও তাৎপর্য।

সুরা বাকারাকে মোটাদাগে ৯ ভাগে ভাগ করা যায়।

১ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা। (আয়াত ১-২০)

২য় ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান। (আয়াত ২১-৩৯)

৩য় ভাগ: বনি ইসরাইল জাতির প্রতি প্রেরিত আইনকানুন। (আয়াত ৪০-১০৩)

৪র্থ ভাগ: ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি। (আয়াত ১০৪-১৪১)

৫ম ভাগ: নামাজের দিক পরিবর্তন। (আয়াত ১৪২-১৫২)

৬ষ্ঠ ভাগ: মুসলিম জাতির ওপর পরীক্ষা। (আয়াত ১৫৩-১৭৭)

৭ম ভাগ: মুসলিম জাতির প্রতি প্রেরিত আইনকানুন। (আয়াত ১৭৮-২৫৩)

৮ম ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান। (আয়াত ২৫৪-২৮৪)

৯ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা। (আয়াত ২৮৫-২৮৬)

সুরা বাকারার ৭ম ভাগে এসে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, কী কী আইনকানুনের মাধ্যম তিনি মুসলমানদের পরীক্ষা নেবেন। এই আইনকানুনের মধ্যে এ অংশে তিনি কেসাস, উত্তরাধিকার, রোজা, হজ, ব্যয়, জিহাদ, মদ, জুয়া, বিবাহ, নারী ও পরিবার, তালাক, নামাজ ইত্যাদি সম্পর্কিত আইনকানুন বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ এ ভাগে পবিত্র রমজান মাসকে মুসলমানদের দিয়েছেন।

১ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা

শুরুর দিকে আল্লাহ কোরআন শরিফকে হেদায়াত ও সঠিক দিকনির্দেশনা হিসেবে মানব জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন (আয়াত ২)। এই হেদায়াতকে যারা গ্রহণ করে তারা মোমিন বা বিশ্বাসী। যারা হেদায়াতকে অস্বীকার করে বর্জন করে তারা কাফির বা অবিশ্বাসী, আর যারা অল্প কিছুটা হেদায়াত গ্রহণ করে কিন্তু নিজেদের হীন স্বার্থে কাজে লাগায় তারা মুনাফিক বা কপট।

সুরার শুরুর দিকে আল্লাহ তিন প্রকার মানুষের বর্ণনা দিয়েছেন। বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী ও কপট। তৃতীয় আয়াতে (আয়াত ৩-৫) তিনি অল্প কথায় বিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়েছেন। দ্বিতীয় আয়াতে (আয়াত ৬-৭) তিনি আরও অল্প কথায় অবিশ্বাসীদের বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর কপটদের পরিচয় দিতে তিনি ১৪ আয়াত (আয়াত ৮-২০) ব্যবহার করেছেন। যেহেতু কপটরা তাদের চিন্তাধারা গোপন রাখে, তাদের চিনতে কষ্ট হয়, তাই আল্লাহ এভাবে বিশদ বর্ণনা করে তাদের পরিচয় দিয়েছেন। এরপর ২১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ এ তিন শ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে ডেকে তাঁর নিজের পরিচয় দিয়েছেন।

২য় ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান

১ম ভাগে বর্ণিত ইমান, কুফরি ও মুনাফেকি—সৃষ্টির শুরুর দিক থেকেই বিষয়গুলো ছিল। এই ভাগে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কথা বলেছেন, মানব সৃষ্টির শুরুতে অন্য সব সৃষ্টির চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করে মানুষ আদম (আ.)–এর সময়কার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ও আল্লাহর নেওয়া পরীক্ষায় তিনি যথাযথভাবে উত্তীর্ণ না হওয়ায় তাঁর পরিণতির (পৃথিবীতে নেমে আসার ও পরে আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার) কথা বর্ণিত হয়েছে।

৩য় ভাগ: বনি ইসরাইল জাতিকে পাঠানো আইনকানুন

আল্লাহ যেমন অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে পছন্দ করে আদম (আ.)–এর মাধ্যমে দুনিয়ায় আল্লাহর খলিফা বানিয়েছেন, তেমনি আস্তে আস্তে পৃথিবীতে অনেক মানুষ হওয়ার ফলে শুধু একজন মানুষ নয়; বনি ইসরাইল নামে একটা জাতিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, যারা আল্লাহর প্রদর্শিত পথ জানার পর অন্য সব জাতিকেও পথ দেখাতে পারে। সুরার এই বড় ভাগটিতে আল্লাহ তাদের দেওয়া অনুগ্রহ ও অনুগ্রহ পাওয়া সত্ত্বেও যে তারা তাদের প্রতি সুবিচার করতে পারেনি, তা বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছেন, যার অধিকাংশেই তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এই ভাগে আল্লাহ বেশ কিছু উপদেশ ও জ্ঞান দিয়েছেন।

৪র্থ ভাগ: ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি

ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা ও তাঁর জাতি বনি ইসরাইলিরা দাবি করতে থাকে যে, তাদের ওপর আল্লাহর যে অনুগ্রহ ছিল, এর ধারাবাহিকতায় সব নবীই ইসরাইলি হবে। আরব থেকে কেন মুহাম্মদ (সা.) নবী হবেন? জবাবে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)–এর কথা তুলে ধরেন ও ইবরাহিম (আ.)–এর পরীক্ষার কথা বলেন। ইবরাহিম (আ.) সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তাঁকে মুসলিম জাতির পিতা হিসেবেও বর্ণনা করা হয়। এরপর ইবরাহিম (আ.)–এর ছেলে ইসমাইল (আ.) ও পৌত্র ইয়াকুব (আ.)–এর কথা বর্ণনা করে আল্লাহ বোঝাতে চান যে, দুই বংশেরই মূল পিতা ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁরা সবাই ছিলেন ‘মুসলিম’।

৫ম ভাগ: কিবলার পরিবর্তন

এই ভাগে ইবরাহিম (আ.)–এর তৈরি করা কাবার দিকেই কিবলা নির্ধারণ করা হয়। মুসলিমদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে। আল্লাহ এই জাতির ওপর তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন বলে অন্য সবাইকে বিভেদ ও অহংকার ভুলে এই কিবলা এবং জাতিকে মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।

৬ষ্ঠ ভাগ: মুসলিম জাতির পরীক্ষা

২য় ভাগে আদম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা, ৩য় ভাগে বনি ইসরাইলের ওপর পরীক্ষা, ৪র্থ ভাগে ইবরাহিম (আ.)–এর ওপর পরীক্ষা বর্ণনা করার পর এই ভাগে মূলত মুসলিম জাতির ওপর আল্লাহর পরীক্ষার বিষয়টি রয়েছে। আদম (আ.) পরীক্ষায় সফল হননি। বনি ইসরাইল জাতি অধিকাংশ পরীক্ষায় সফল হয়নি। ইবরাহিম (আ.) পরীক্ষায় শতভাগ সফল হয়েছেন। মুসলিম জাতির ওপরও আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছেন ও নেবেন, যেন তিনি দেখে নিতে পারেন আগের নিদর্শন থেকে শিখে তারা উত্তীর্ণ হতে পারে কি না।

৭ম ভাগ: মুসলমানদের কাছে পাঠানো আইনকানুন

৭ম ভাগে এসে আল্লাহ বর্ণনা করেছেন, কী কী আইনকানুনের মাধ্যম তিনি মুসলমানদের পরীক্ষা নেবেন। এই আইনকানুনের মধ্যে এ অংশে তিনি কেসাস, উত্তরাধিকার, রোজা, হজ, ব্যয়, জিহাদ, মদ, জুয়া, বিবাহ, নারী ও পরিবার, তালাক, নামাজ ইত্যাদি সম্পর্কিত আইনকানুন বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ এ ভাগে পবিত্র রমজান মাসকে মুসলমানদের দিয়েছেন।

৮ম ভাগ: সৃষ্টি ও জ্ঞান

এই অংশে আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির কথা বলেন। এরপর মূলত এই অংশে ৭ম ভাগেরই ধারাবাহিকতা করে পরীক্ষার অংশ হিসেবে অর্থব্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থ কীভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে আয়, ব্যয় করা যায় এবং কোন আয়ব্যয় সবচেয়ে খারাপ, তা আল্লাহ এখানে বলে দিয়েছেন। অর্থলোভের বিষয়টিও এখানে উঠে এসেছে। ২য় ভাগে আদম (আ.)–কে যেমন শয়তান লোভ দেখিয়েছিল ও কুমন্ত্রণা দিয়েছিল, তেমনি এখানে শয়তানের দেওয়া কুমন্ত্রণা ও লোভের কথা উঠে এসেছে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে মানুষকে বেশ কিছু জ্ঞান দিয়েছেন।

৯ম ভাগ: ইমান থাকা, না থাকা

এই অংশটি আসলে উপসংহার। আগের সব ভাগের সারসংক্ষেপ হিসেবে এটি উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম ভাগের ইমান, দ্বিতীয় ভাগের সৃষ্টি ও উপদেশ, তৃতীয় ভাগের পূর্ববর্তী জাতির কথা, চতুর্থ ভাগের নবীর কথা, পঞ্চম ভাগের মুসলিম জাতি (আমরা), ষষ্ঠ ভাগের পরীক্ষা, সপ্তম ভাগের আইনকানুন, অষ্টম ভাগের উপদেশের কথা এখানে আবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সূত্র: প্রথম আলো

ট্যাগ / কী-ওয়ার্ড:

অন্যান্য প্রবন্ধ

October 21, 2025
কুরআন কিভাবে পড়বেন - ড. জাসের আউদা

"কোরআন কীভাবে পড়বেন?" এই গভীর প্রশ্নটি অন্বেষণ করতে অধ্যাপক ডঃ জাসের আউদার সাথে একটি জ্ঞানগর্ভ অধিবেশন। এই ভিডিওতে, জাসের আউদার কুরআন বোঝার এবং ব্যাখ্যা করার নীতি এবং পদ্ধতি সম্পর্কে গভীরভাবে আলোচনা করেছেন, যা নতুন এবং অভিজ্ঞ উভয় পাঠকদের জন্য মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। প্রেক্ষাপটের তাৎপর্য, প্রতিফলনের গুরুত্ব এবং ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক বিকাশের উপর কুরআনের প্রভাব […]

October 20, 2025
পরকালে মানুষ যেসব আক্ষেপ করবে - কুরআন থেকে

মৃত্যুপারের অনন্ত জীবনে যখন প্রতিটি আত্মা তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে, সেদিন অপরাধীদের আক্ষেপ আর অনুশোচনার শেষ থাকবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সেই ভয়াবহ দিনের করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন, যখন পাপাচারীরা বারবার বলতে থাকবে- ১. হায়! যদি কিছু করতাম দুনিয়াতে যারা পরকালকে অস্বীকার করতো, তারা সেদিন পরকালের জন্য নেক আমল করতে না পারার জন্য […]

October 17, 2025
Disbelief: A Matter of Action - A New Understanding

The content focuses on the Islamic concept of disbelief in God's revelations (Denying it). The speaker explains that disbelief, or kufr, is not about verbal rejection but is fundamentally defined by one's actions and conduct. Using the example of misappropriating an orphan's wealth, the speaker argues that the true disbeliever is the person who acts […]

October 6, 2025
On a New Understanding of Iman, Belief and Faith according to Quran

On the Reinterpretation of Iman in Islam This video explores a provocative reinterpretation of one of Islam’s fundamental concepts: iman. The author Dr. Hal al-Sed Hassan argues that the traditional understanding of iman as “faith” or “belief” has been deliberately misconstrued over centuries, and that this misunderstanding has led to significant social and theological consequences within the Islamic […]

June 7, 2025
শেষ জামানা সম্পর্কে কুরআন কি বলে?

শেষ জামানা বা আখিরুজ্জামান সম্পর্কে কুরআনে কি বলে? বিস্তারিত জানাচ্ছেন একজন কুরআনের স্কলার

May 30, 2025
প্রচলিত কুরবানি: কুরআন থেকে পর্যালোচনা

প্রচলিত কুরবানিকে যদি আমরা কুরআন থেকে পর্যালোচনা করি, তাহলে কি পাই?

May 16, 2025
Explaining the Qur'an through the Qur'an

Introductory presentation for a series applying the intratextual approach to the exegesis of Surat al-An'am, here on CASQI's channel.

May 3, 2025
কুরআনকে কি সংবিধান বলা যেতে পারে?

সাধারন ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে একটি কমন ধারনা হলো: ইসলামের সংবিধান হলো কুরআন এবং আধুনিক সময়ে যেসব সেকুলার সংবিধান করা হয় তা হলো "তাগুত"। বিষয়টি কি সত্যিই এরকম সাদা কালো? কুরআন কি সংবিধানি? একজন ইসলামে বিশ্বাসীর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এই প্রশ্নের মিমাংসায় পৌছতে হলে আমাদের প্রথমে কয়েকটি কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে এগুতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে […]