দি  ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন (ইক্বরা)

লক্ষ্য

ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।

উদ্দেশ্য

ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।

প্রকাশিত বইসমূহ

ইমাম কে ও কি? ইমাম সম্পর্কে কুরআনের শিক্ষা

ইমাম বললে আমাদের সামনে যে পরিচয়টি আসে সে হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি মসজিদে বেতনের বিনিময়ে নামাজ পড়ান বা নামাজের ইমামতি করেন। অথচ এই ধারনাটি নবী সা. এর সময়ে একেবারে অপরিচিত একটি ধারনা ছিলো । দ্বীনের কাজে, আল্লাহর বার্তা মানুষের কাছে পৌছানোর যে কাজ, অথবা সামগ্রিকভাবে যে কাজ সত্যের দাবী সেই কাজের কোন বিনিময় বা পারিশ্রমিক হয় না। কুরআনে আমরা যদি ইমাম শব্দটি এবং তার পরিপ্রেক্ষিতগুলো অধ্যায়ন করি এইং প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখে: যে আল্লাহ ইমামের কি পরিচয় দিয়েছেন? কুরআনে ইমামের কি সংজ্ঞা ও কাজ? - সেই প্রশ্নের উত্তর আমরা এই প্রবন্ধে খুঁজতে যাচ্ছি।

ইমাম শব্দটির মূল: হামজা, মিম, মিম। শব্দটি বিভিন্ন ফর্মে এবং ভিন্ন কিন্তু সম্বন্ধযুক্ত অর্থে প্রায় ১১৯ বার কুরআনে উল্লেখিত যার মধ্যে উম্ম শব্দে ৩৫ বার, আমাম শব্দে এক বার, বিশেষ্য হিসেবে ইমাম ১২ বার, উম্মি হিসেবে ৬ বার, উম্মাত হিসেবে ৬৪ বার এবং আম্মিন হিসেবে একবার এসেছে। উল্লেখ্য যে একই শব্দমূল থেকে আরো তৈরী হয় উম্মা, উম্মি, উম্মাতান ইত্যাদি শব্দও। বিস্তারিত দেখুন কুরআন করপাসে

ইমাম শব্দের মূল অর্থ হলো ‘যাকে সামনে রাখা হয়’। সামগ্রিকভাবে কুরআনে ইমাম শব্দটি ব্যক্তি, বস্তু ও স্থান প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে।


কুরআনের আলোকে ‘ইমাম’ বিষয়ে তথ্যগত সিদ্ধান্তের জন্য নিম্নে ইমাম (এবং এর বহুবচন আয়িম্মাহ) সম্পর্কিত ১২টি আয়াত উল্লেখ করা হলো:

ইমাম শব্দটি নেতা, যাকে অনুসরণ করা হয় সেই অর্থে

২:১২৪ :: আর উল্লেখ্য, যখন ইবরাহীমকে তার প্রভু কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে তা পূর্ণ করলো (পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো)। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাকে মানুষের জন্য ‌ইমাম (অনুসরণীয়, নেতা) মনোনীত করেছি’। সে বললো, ‘আমার বংশধরদের থেকেও’? তিনি বললেন, ‘আমার প্রতিশ্রুতি (তাদের মধ্যকার) যালিমদের প্রতি প্রযোজ্য হবে না’।

১৭:৭১ :: সেদিন আমি প্রত্যেক মানবদলকে তাদের ইমামসহ (অনুসরণকৃত নেতাসহ) ডাকবো। তারপর যাকে তার কিতাব (আমলনামা) ডানহাতে দেয়া হবে, তারা তাদের কিতাব (আমলনামা) পড়বে এবং তাদের প্রতি সামান্যও যুলুম করা হবে না।

২১:৭৩ :: আর আমি তাদেরকে (ইবরাহীম, লূত, ইসহাক, ইয়াকুব প্রমুখকে) ইমাম (অনুসরণীয়, নেতা) বানিয়েছিলাম। তারা আমার আদেশের মাধ্যমে সঠিক পথ প্রদর্শন করতো এবং আমি তাদেরকে ওয়াহী করেছিলাম কল্যাণকর্ম সম্পাদনের জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যাকাত প্রদানের জন্য। আর তারা ছিলো আমারই দাসত্বকারী।

২৮:৫ :: আর আমি ইচ্ছা করলাম, পৃথিবীতে যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল (বানী ইসরাইল) তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে এবং তাদেরকে ইমাম (নেতা) বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে।

৩২:২৪ :: আর আমি তাদের (বনী ইসরাইলের) মধ্য থেকে ইমাম (অনুসরণীয়, নেতা) বানিয়েছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথপ্রদর্শন করতো। যখন তারা ধৈর্যশীলতা অবলম্বন করতো এবং আমার আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল।

৯:১২ :: আর যদি তারা তাদের চুক্তির পর তাদের শপথ ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দীন সম্পর্কে কটূক্তি করে, তাহলে তোমরা কুফরের ইমামদের (নেতাদের) বিরুদ্ধে লড়াই করো, নিশ্চয় তাদের কাছে শপথ বলে কিছু নেই। (সুতরাং লড়াই করো), যেন তারা বিরত হয়।

২৮:৪১ :: আর আমি তাদেরকে (ফিরআউন ও তার পরিষদকে) ইমাম (কাফিরদের নেতা) বানিয়েছিলাম, যারা (জাহান্নামের) আগুনের দিকে ডাকতো। আর কিয়ামাত দিবসে তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

অগ্রগামী ও অনুসরণযোগ্য অর্থে

২৫:৭৪ :: আর যারা (দয়াময়ের বান্দাগণ) বলে, “আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এমন স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানাদি দান করুন যাদেরকে দেখে আমদের চোখ প্রশান্তি পায়, আর আমাদেরকে স্রষ্টা সচেতনতা অবলম্বনকারীদের ইমাম (অনুসরণযোগ্য, অগ্রগামী) বানিয়ে দিন

মূল বিধান / প্রাথমিক ঐশি সংবিধান অর্থে

৪৬:১২ :: আর এর পূর্ব থেকে মূসার কিতাব রয়েছে ইমাম (মূল বিধান) ও রহমতস্বরূপ। আর এ কিতাব (কুরআন) তার সত্যায়নকারী, আরবি ভাষায়, যারা যুলুম করে তাদেরকে সতর্ক করার জন্য এবং উত্তম কর্ম সম্পাদনকারীদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।

১১:১৭ :: তবে কি (সমান হতে পারে) যে তার প্রভুর পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর রয়েছে এবং তা (ঐ স্পষ্ট প্রমাণ) আবৃত্তি করে তাঁর পক্ষ থেকে একজন সাক্ষী এবং তার পূর্ব থেকে রয়েছে মূসার কিতাব ইমাম (মূল বিধান) হিসেবে এবং রহমত হিসেবে; তারাই সেটার প্রতি (ঐ স্পষ্ট প্রমাণের প্রতি) ঈমান রাখে। আর যে সকল দল সেটার প্রতি (ঐ স্পষ্ট প্রমাণের প্রতি) কুফর করে, তার জন্য প্রতিশ্রুত স্থান হলো (জাহান্নামের) আগুন। সুতরাং তুমি এর মধ্য থেকে কোনো বিষয়ে সন্দেহের মধ্যে থেকো না। নিশ্চয় তা তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনে না।

প্রধান পথ (Main Road, Grand Road, the Road that other Roads follow / leads to) অর্থে

১৫:৭৯ :: সুতরাং আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম। আর এ দুটি (জনপদ- কওমে লূত ও আসহাবুল আয়কার ধ্বংসস্তুপ) সুস্পষ্ট ইমামের (প্রধান পথের) পাশেই রয়েছে

প্রধান গ্রন্থ / Main Register / মূল ডাটাবেজ / তথ্যভান্ডার অর্থে

৩৬:১২ :: নিশ্চয় আমিই মৃতকে জীবিত করি। আর লিখে রাখি যা তারা আগে সম্পাদন করে এবং যা তারা প্রভাব-প্রতিক্রিয়া রেখে যায়। আর সব কিছুই আমি সুস্পষ্ট ইমামের (প্রধান নিবন্ধন বইয়ের) মধ্যে সংখ্যায়িত (লিপিবদ্ধ) করে রেখেছি


উপরে উল্লেখিত আয়াতগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে ইমাম যেমন ব্যক্তি হতে পারে, তেমনি অনুসরণীয় নেতা হতে পারে আবার অন্য অর্থেও ইমাম শব্দ কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।

ব্যক্তি হিসেবে মুত্তাকীদের নেতাকেও ইমাম বলা হয়েছে এবং কাফিরদের নেতাকেও ইমাম বলা হয়েছে। নবী-রসূলগণ আল্লাহর মনোনীত ইমাম। এছাড়া যারাই মু’মিনদের বা কাফিরদের ইমাম হয়, তাদেরকে আল্লাহ মু’মিনদের বা কাফিরদের ইমাম বানিয়েছেন হিসেবে সাব্যস্ত হবে। তবে আল্লাহ ইমাম মনোনীত করার বিষয়টি তাঁর সুনির্দিষ্ট ঘোষণার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে আবার মু’মিনরা মুত্তাক্বী বা আল্লাহ-সচেতনদের ইমাম বা অগ্রগামী হওয়ার প্রার্থনা ও প্রচেষ্টার ফলাফলস্বরূপ তাদেরকে আধ্যাত্মিক গুণাবলিতে সমৃদ্ধ করার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে। যেমন তিনি নবী ইবরাহীমকে ইমাম বানানোর বিষয়টি ঘোষণা করেছেন এবং এটাকে তাঁর প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে লূত, ইসহাক্ব, ইয়াক্বুব প্রমুখ নবীদেরকেও ইমাম বানিয়েছেন।

ইমামের ভূমিকা বা ব্যক্তি ইমামের কাজে বর্ণনা

সুরা আম্বিয়ার ৭৩নং আয়াতে ইমামদের কাজ বর্ণিত হয়েছে:

আর আমি তাদেরকে (ইবরাহীম, লূত, ইসহাক, ইয়াকুব প্রমুখকে) ইমাম (অনুসরণীয়, নেতা) বানিয়েছিলাম। তারা আমার আদেশের মাধ্যমে সঠিক পথ প্রদর্শন করতো এবং আমি তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছিলাম কল্যাণকর্ম সম্পাদনের জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যাকাত প্রদানের জন্য। আর তারা ছিলো আমারই দাসত্বকারী।

একই ধরনের ইমামদের কাজের পরিচয় পাই সুরা আস-সাজদার ২৪নং আয়াতে:

আর আমি তাদের (বনী ইসরাইলের) মধ্য থেকে ইমাম (অনুসরণীয়, নেতা) বানিয়েছিলাম, যারা আমার নির্দেশ অনুসারে পথপ্রদর্শন করতো। যখন তারা ধৈর্যশীলতা অবলম্বন করতো এবং আমার আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিল।

সুতরাং ইমামদের বৈশিষ্ট্য ও কাজ বলতে কুরআনের সংজ্ঞা হলো:

১. তারা স্রষ্টার আদেশ ও নির্দেশের অনুসরণকারী
২. স্রষ্টার আদেশ ও নির্দেশ অনুসারে সমাজের অন্যান্যদের পথ প্রদর্শনকারী
৩. তারা কল্যানকর্ম সম্পাদনকারী
৪. ধৈর্য্যশীল
৫. সালাত প্রতিষ্ঠাকারী
৬. যাকাত প্রদানকারী
৭. আল্লাহর নিদর্শন বা আয়াতের প্রতি দৃঢ় প্রত্যয়ী
৮. আল্লাহর দাসত্বকারী


আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাবকেও ইমাম বলা হয়, যেহেতু তা সামনে রেখে জীবন যাপন করতে হয়। প্রধান পথকেও ইমাম বলা হয়, যেহেতু সেই পথকে সামনে রেখে শাখা পথগুলোকে চিহ্নিত করা হয় /অথবা অন্যান্য পথ ঐ মুল পথের সাথে মিলিত হয়, মূল পথকে সামনে রেখে বাকি পথ চালিত হয়। আমলনামাসমূহের আর্কাইভকেও ইমাম বলা হয়, যেহেতু সেটার সাথে সম্পর্কিত করে প্রত্যেকের আমলনামায় থাকা কাজের মূল্যমান নির্ধারিত হবে যে, সে যে আমল করে মৃত্যুবরণ করেছিল তারপর তা কতটুকু প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।

নিজেদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম বানানোর জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা শিখানো হয়েছেে। সুতরাং মুত্তাকীদের ইমাম বলতে ‘মুত্তাকীদের অনুসরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব ও মুত্তাক্বী হিসেবে অগ্রগামী’ হওয়া বুঝায়।

ক্বিয়ামাত দিবসে প্রত্যেক মানবদলকে তাদের ইমামসহ আহবান করা হবে। যেমন, ফেরাউন যেহেতু কাফিরদের ইমাম ছিল, তাই সে তার অনুসরণকারী জনগোষ্ঠীর সামনে থাকবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য যে ফেরাউন কুরআনে বর্ণিত অনেকগুলো আর্কিটাইপের মধ্যে স্বৈরাচারী শাসকের আর্কিটাইপ বা প্রতিনিধিত্বমূলক উদাহরন। এছাড়া ইমামসহ আহবানের একটি দিক হতে পারে যে জনগোষ্ঠী কোনো ব্যক্তিকে ইমাম হিসেবে অনুসরণ করে তাদেরকে যেমন সেই ইমামসহ আহবান করা হবে, তেমনি যে জনগোষ্ঠী কোনো বিশেষ সংবিধান, গ্রন্থ, চার্টার বা দফাকে সামনে রেখে তার সামগ্রিক কর্মকাণ্ডকে পরিচালিত করে তাকে সেই বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করে আহবান করা হবে।

১১:৯৬-৯৯ :: আর আমি মূসাকে প্রেরণ করেছি আমার আয়াতসমূহ ও সুস্পষ্ট প্রমাণসহ। ফিরআউন ও তার নির্বাহী পরিষদের কাছে। অতঃপর তারা ফিরআউনের নির্দেশ ও কার্যনীতি অনুসরণ করলো। অথচ ফিরআউনের নির্দেশ ও কার্যনীতি সত্যভিত্তিক ছিল না। সে ক্বিয়ামাত দিবসে তার ক্বওমের সামনে থাকবে এবং তাদেরকে (জাহান্নামের আগুনে) উপনীত করবে। আর যেখানে তারা উপনীত হবে তা কত নিকৃষ্ট উপনীত হওয়ার স্থান! এ দুনিয়াতেও তাদেরকে অভিশাপ তাড়া করেছে এবং ক্বিয়ামাত দিবসেও। কী নিকৃষ্ট প্রতিদান, যা তাদেরকে দেয়া হবে!

সুতরাং ভালো কাজের ক্ষেত্রে এবং মন্দ কাজের ক্ষেত্রে যাদেরকে সামনে রেখে বা যাদের আদর্শ (ideology) ও নির্দেশ (instruction) অনুসরণ করে জীবন যাপন ও কার্যক্রম করা হয় তারাই হলো ‘ইমাম’। মু’মিনরা চেষ্টা করবে ঈমান ও সৎকর্মের ক্ষেত্রে ইমাম বা অনুসরণযোগ্য হওয়ার জন্য। মু’মিনদের একটি প্রার্থনার বিষয় হলো যেন আল্লাহ তাকে মুত্তাক্বীদের ইমাম (স্রষ্টা-সচেতনদের অগ্রগামী ও অনুসরণীয় / exemplar) বানিয়ে দেন।


আমাদের সমাজের তথাকথিত ইমাম বনাম কুরআনের ইমাম

ইমামকে স্রষ্টার নির্দেশনা মেনে কল্যানকর কাজে অগ্রগামী হওয়ার কথা। অথচ আমাদের সমাজে নামাযের ইমামদের সৎকল্যানমুখী, জন-মানুষ মুখি কয়টা কাজে আমরা দেখতে পাই?

বর্তমানের দু:খজনক বাস্তবতা হলো এরা অনেকটা মসজিদ কমিটির কথায় উঠাবসাকারী ও জ্বি হুজুর টাইপ মানুষে পর্যবসিত হয়েছে। যেহেতু তাদের অর্থনৈতিক নির্ভরতা মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্তের এবং মুসল্লীদের দান খয়রাতের উপর, কাজেই তাদের নেতৃত্বদান করার মানসিকতার পরিবর্তে তাদের লালন করতে হয় অন্যকে তুষ্ট করার মানসিকতা।

সালাতের যে ব্যাপক অর্থ, অর্থাৎ স্রষ্টার বিধানকে নীবিড়ভাবে অনুসরণ তার ধারে কাছেও তারা যেতে পারে না, কারন সেটা করতে হলে সমাজে ভূমিকা রাখতে হয়, সমাজ কিভাবে চলে তা বুঝতে হয়, সাংগঠনিক হতে হয়, দূরদর্শী হতে হয়, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে যোগাযোগ ও মেলামেশা করতে হয়, সৎকাজের আদেশকারী ও অসৎকাজের নিষেধকারী হতে হয় এবং ন্যায়ের পক্ষে কথা বলতে গেলে কাজ করতে গেলে যে বিভিন্ন বাঁধা আসে তার কারনে কঠোর ধৈর্য্যও ধারন করতে হয়।

ইমামকে হতে হবে মুত্তাকীদের মধ্যে অগ্রগামী, নেতৃত্বেরগুণ সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব যাকে অনুসরণ করা যায়। আমরা কি বলতে পারি যে আমাদের বাসার পাসের মসজিদে যিনি ইমামতি করেন তাকে সমাজ অনুসরণ করে? তাকে দেখিয়ে কি আমরা আমাদের সন্তানকে বলতে পারি, তুমি বড় হয়ে ওনার মতো হবে?

অল্প বেতনের অল্প শিক্ষিত, সীমিত বাস্তব জ্ঞানের আজকের সমাজের ইমামদের মধ্যে সেই গুণ ও যোগ্যতার কোনটাই নেই। বরং এনারা অনেকটা আউটডেটে ধর্মগুলোর মধ্যে প্রচলিত পুরোহিত তন্ত্রের ইসলামী সংস্করণের পরিণত হয়েছে যার কোন স্থান কুরআনের যে ইসলাম, তার আদর্শের সাথে কম্প্যাটিবল নয়। মন্দিরের পুরোহিত যেমন অনেকটাই সমাজ বিচ্ছিন্ন, মন্দিরের পাশে তার বরাদ্দ কামরায় একাকী, পরিবার বিচ্ছিন্ন অবস্থান করেন এবং সময় সময় মন্দিরে প্রদীপ জ্বালান ও পুজার মন্ত্র পাঠ করেন - আমাদের এখনকার সমাজের ইমামের ভূমিকা কি তার থেকে ভিন্ন কিছু? এরা তথাকথিত সমাজের হিসাবে 'ইমাম' নামধারী হলেও শেষ বিচারে আল্লাহর কাছে কোন পরিচয়ে দাড়াবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন।

- ক্রেডিট: ইক্বরা থেকে প্রকাশিতব্য 'উলিল আমর' বই থেকে অংশ বিশেষ অবিলম্বনে। সংকলক শওকত জাওহার ও সাদিক মোহাম্মদ আলম

ট্যাগ / কী-ওয়ার্ড:

অন্যান্য প্রবন্ধ

June 7, 2025
শেষ জামানা সম্পর্কে কুরআন কি বলে?

The Qur'an and the End of the World | What the Qur'an Really Says | Dr. Zishan Ghaffar From the Channel: https://www.youtube.com/@ExploringtheQuranandtheBible Transcript from the Video Professor Zishan Ghaffar from the University of Paderborn discusses whether the Quran predicted the end of the world. Here is the full transcript of the video: Introduction and Thesis […]

May 30, 2025
প্রচলিত কুরবানি: কুরআন থেকে পর্যালোচনা

কুরআনের সরল বিধান ও ধর্মাচারবাদিদের জটিলতা কুরআনে সরলভাবে বিভিন্ন বিধান দেয়া হয়েছে, যা পালনের ক্ষেত্রে বিবেকবুদ্ধির প্রয়োগ অনুসারে যেভাবে উত্তম হয় সেভাবে সম্পাদন করাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধর্মাচারবাদিরা কোনো বিধান পালনের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়কে সুনির্দিষ্ট করতে চেয়ে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করে। কুরআনের শুরুর দিকে সূরা বাক্বারাহতেই এ বিষয়ে বানী ইসরাইলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শিক্ষা দেয়া […]

May 16, 2025
Explaining the Qur'an through the Qur'an

Introductory presentation for a series applying the intratextual approach to the exegesis of Surat al-An'am, here on CASQI's channel.

May 3, 2025
কুরআনকে কি সংবিধান বলা যেতে পারে?

সাধারন ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে একটি কমন ধারনা হলো: ইসলামের সংবিধান হলো কুরআন এবং আধুনিক সময়ে যেসব সেকুলার সংবিধান করা হয় তা হলো "তাগুত"। বিষয়টি কি সত্যিই এরকম সাদা কালো? কুরআন কি সংবিধানি? একজন ইসলামে বিশ্বাসীর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এই প্রশ্নের মিমাংসায় পৌছতে হলে আমাদের প্রথমে কয়েকটি কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে এগুতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে […]

May 2, 2025
কোরআন বোঝা কি কঠিন?

মুসলিমদের জীবন বিধানের সকল মূলনীতি কোরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমার ওপর যে কিতাব (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে ‎তাতে রয়েছে সকল বিষয়ের বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৮৯) দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশের মুসলিমদের কোরআন দেখে শুদ্ধ করে পড়ার প্রতি গুরুত্ব থাকলেও ইসলামি জীবন বিধানের মৌলিক উৎস […]

April 15, 2025
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার : কুরআনে সামাজিক মূল্যবোধ

১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক পেশ করা হয়েছে তাতে অন্যতম তিনটি মূলনীতি হলো, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’। বস্তুত এই মূলনীতিসমূহ […]

April 11, 2025
নাসর হামিদ আবু যায়েদ - একজন আধুনিক কুরআন স্কলারের কর্ম-পরিচিতি

নাসর হামিদ আবু যায়েদ: এক মুক্তচিন্তার কুরআন গবেষকের জীবনচিত্র পূর্ণ নাম: নাসর হামিদ আবু যায়েদ (Nasr Hamid Abu Zayd)জন্ম: ১০ জুলাই ১৯৪৩, তানতা, মিসরমৃত্যু: ৫ জুলাই ২০১০, কায়রো, মিসরপরিচয়: কুরআন গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, ধর্মতাত্ত্বিক ও মুক্তচিন্তার ইসলামী চিন্তাবিদ 🎓 শিক্ষা ও পেশাজীবন নাসর হামিদ আবু যায়েদ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ […]

April 1, 2025
Recovering Orignal Qur’anic Vocabulary - How the Qur’an Evolved?

In this interview, the host discuss with Dr. Munther Younes of Cornell University to discuss his research on the transmission and evolution of the Qur'anic text. Dr. Younes is Reis Senior Lecturer of Arabic Language and Linguistics at Cornell University and a renowned expert in the Arabic language. They discuss the Arabic of the Qur'an, […]