ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।
উদ্দেশ্য
ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।
প্রকাশিত বইসমূহ
ঈমান : 'বিশ্বাস' অনুবাদের মুশকিল
দার্শনিক ও ঐতিহাসিক বিচারে ইসলামের বৈপ্লবিক মর্ম বুঝার চেষ্টা
মাওলানা আরিফ বিল্লাহ
ঈমান: একটা খসড়া নোট
এই খসড়া নোটটি চিন্তা পাঠচক্রের একটি চলমান কাজের খসড়া । যা ইসলাম নিয়ে তাঁদের অপরাপর কাজের সঙ্গে যুক্ত । তাঁদের এই নোটের উদ্দেশ্য হচ্ছে ধর্মচিন্তা ও দর্শনের ইতিহাসের আলােকে ইসলােমর মৌলিক প্রস্তাবনা নতুন ভাবে উপলব্ধি এবং বিদ্যমান জ্ঞানচর্চার সীমানা অতিক্রম করবার সম্ভাবনা অন্বেষণ । ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক বর্গ নিয়ে ফলপ্রসূ পর্যালোচনার ধারা গড়ে তোলা । আমাদের চিন্তার দশা-সমাজ-বাস্তবতায় এইটা খুবই জরুির কাজ । এই সময়ে তো বটেই ।
গ্রিক-খ্রিস্টিয় চিন্তা এবং সাম্প্রতিক কালের পাশ্চাত্য আধুনিক ও উত্তরাধুনিক পরিমণ্ডলে যে তর্ক-বিতর্ক চলছে, সেখানে 'ইসলাম' তার নিজের উন্মোচন, স্বাতন্ত্র্য ও সম্ভাবনা নিয়ে কিভাবে হাজির হতে পারে, সেই সম্ভাবনার বিচার একালে গুরুত্বপূর্ণ কাজ । গ্রিক-খ্রিস্টিয় চিন্তার ঐতিহাসিক অবদান অস্বীকার যেমন এই নোটের উদ্দেশ্য না, তেমনি তাকে নির্বিচারে চিন্তার সাবর্জনীন ইতিহাস হিশাবে মানাও সমস্যাজনক ।
পাশ্চাত্য ইতিহাস একান্তই ইউরোপীয় ইতিহাস । কিন্তু সেটা মুখের কথা হিশাবে বলা নিরর্থক । ইউরােপের ইতিহাসকে ‘বিশেষ’ ইতিহাস হিশাবে গণ্য করবার শর্ত হচ্ছ, ইউরােপের বাইরে চিন্তার অনুমান, ধারা ও তর্ক বিতর্কের ঐতিহ্যের বৈশিষ্ট্য সুনির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করতে পারা । পাশ্চাত্যের আধুনিক ও উত্তরাধুনিক চিন্তার চ্যলেঞ্জকেও আমরা অস্বীকার করব না । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনের ইতিহাসের দিক থেকে ভেদচিহ্নগুলা আমরা কিভাবে শনাক্ত করব ? যার দ্বারা আমরা ইসলামকে তার বিশেষ রূপে চিনতে পারি এবং বুঝতে পারি ? এই জিজ্ঞাসা সামনে রেখে এই খসড়া নোটটি চিন্তা পাঠচক্রের পক্ষ থেকে হাজির করেন তরুণ মাওলানা আরিফ বিল্লাহ ।
পাশ্চাত্য চিন্তার আধিপত্য এবং বৃত্ত অতিক্রমের আগামি ও অনাগত দুনিয়ায় প্রবেশের সূত্র সন্ধানের জন্য কোরানূল কারিম পাঠের প্রতি চিন্তা পাঠচক্রের উৎসাহে এই খসড়াটা এখানে বক্তৃতা আকারে পেশ করেছেন ।
ইসলামে ‘ঈমান’ কথাটার ভাবগত তাৎপর্য স্রেফ 'বিশ্বাস' নামক যুক্তি, জ্ঞান বা প্রজ্ঞার বিপরীত ধারণায় পর্যবসিত করা যায় না । যদিও প্রাক-ইসলামি ধর্ম ও ধর্মতত্ত্বের অনুকরণে আজ অবধি সেটাই চলছে । ইব্রাহিমী ধর্মের ইতিহাসের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, ইসলাম উত্তরাধিকার সূত্রে অনেক প্রাক-ইসলামি ধ্যান-ধারণা বহন করে । কিন্তু কোরানুল করিম স্পষ্টই ঘোষণা দেয় যে, আল্লাহ ‘গায়েব’ বা নিরন্তর অনুপস্থিত ঈমান আনতে হবে সেই গায়েবের ওপর । ‘গায়েব’ মানে অদৃশ্য না । কারণ যা অদৃশ্য তাকে দৃশ্যমান করা যায় । যা চােখের সামনে হাজির নাই, তাকে নজরের অধীন আনা অসম্ভব নয় । কিন্তু ‘আল্লাহ’ নামক চিহ্ন ‘আছে’ বা ‘নাই’য়ের অতীত যে বিশেষ প্রকার অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়, সেই আল্লার ক্ষেত্রে ‘আছে’ জাতীয় বিধেয় যেমন অথর্হীন, তেমনি ‘নাই’ বলাও নিরর্থক। কোরানুল কারিম আমাদের এই নিরন্তর অনুপস্থিতির প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের কথাই বলে ।
যদি তাই হয়, ইসলামের প্রস্তাবনা একই সঙ্গে সকল প্রকার পরাতত্ত্বের (Metaphysics) অবসান এবং মানুষের নিজের প্রতি বা নিজের ‘আমি’-র প্রতি নিষ্ঠ হওয়ার আহ্বান । যে চেতনা সবচেয়ে সচেতন ও সজ্ঞান এবং যার মধ্যে আমিত্বের সর্বোচ্চ রুহানি বিকাশ ঘটেছে । একমাত্র তার পক্ষেই নিঃশর্তে আত্ম-সমর্পণ সম্ভব ও সহজ । কারণ সে ‘মানুষ’ নামক জীবের দেশকালপাত্রাধীন ইহলৌকিক নশ্বরতা বা সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে সচেতন ও সজ্ঞান।
কিন্তু ‘ঈমান’-কে বিশ্বাস অনুবাদ করলে সেটা পাশ্চাত্য গ্রিক-খ্রিস্টিয় চিন্তা চেতনার অধীনস্থ হয়ে পড়ে । ঈমান তখন যুক্তি বর্জিত বিশ্বাস হিশাবে হাজির হয় । যার বিপরীতে হাজির হয় যুক্তি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি । অর্থাৎ গ্রিক-খ্রিস্টিয় চিন্তার ঐতিহ্য অনুযায়ী বিশ্বাস (Faith) ও জ্ঞান (Knowledge) পরস্পর বিরোধী ধারণা বা বাইনারি হিশাবে হাজির করা হয় । ইসলামের ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনের অভ্যন্তরীণ তর্ক-বিতর্কের ঐতিহ্যও এই বিভাজন দ্বারা প্রভাবিত । এই খসড়া উপস্থাপনায় এই বিভাজনকে প্রশ্ন করা হয়েছে । ‘ঈমান’কে আদৌ বিশ্বাস হিশাবে অনুমান ও অনুবাদ করা ঠিক কিনা, সেটা কোরানুল করিমের আলােকে অনুধাবনের চেষ্টা করা হয়েছে ।
এই খসড়া নোটটি ২০-২১ মে ২০২২ তারিখে রিদয়পুর বিদ্যাঘরে অনুষ্ঠিত 'ধর্ম, দর্শন ও ভূ- রাজনীত’ শীষর্ক আড্ডা-আলাপ বৈঠকে আনুষ্ঠািনক ভাবে পেশ করা হয় । এইখানে সেই আলাপের ভিডিওটা...
নোট: আরবী ‘আমন’ শব্দ থেকে ঈমান শব্দটির উৎপত্তি। আম্ন (أمن) অর্থ শান্তি, নিরাপত্তা, আস্থা, বিশ্বস্ততা, হৃদয়ের স্থিতি ইত্যাদি। ঈমান শব্দের আভিধানিক অর্থ: নিরাপত্তা প্রদান, আস্থা স্থাপন, বিশ্বাস ইত্যাদি। শব্দটির অর্থ সম্পর্কে ৪র্থ হিজরী শতকের প্রসিদ্ধ ভাষাবিদ আবুল হুসাইন আহমদ ইবনু ফারিস (৩৯৫হি) বলেন: ‘‘হামযা, মীম ও নূন: এই ধাতুটির মূল অর্থ দুটি: প্রথম অর্থ: বিশস্ততা, যা খিয়ানতের বিপরীত এবং দ্বিতীয় অর্থ বিশ্বাস করা বা কোনো ব্যক্তি বা বিষয়ের সত্যতা স্বীকার করা। আমরা দেখছি যে, অর্থ দুটি খুবই নিকটবর্তী ও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।’’ ইমাম আবূ হানীফা বলেন: 'ঈমান হচ্ছে (মুখের) স্বীকৃতি ও (অন্তরের) সত্যায়ন।' তাসদীক বা সত্যায়নকে ঈমান অর্থে নিয়ে আসা হয়েছে। এই অর্থকরণ আমরা বিশ্বাস করি অসম্পূর্ণ।
ঈমান শব্দের যে প্রথাগত অনুবাদ করা হয় যে বিশ্বাস তা অনেকটা নাকচ করে দিয়ে এই আলোচনা অনুসারে (আমার বুঝে), ইমান এর একটা অর্থ দাড়ায় "সত্যে সমর্পন", to take shelter in truth.
দি ইক্বরার পাঠ বলে ঈমান এর ব্যবহারিক অনুবাদ হবে Commitment/ অঙ্গীকার / প্রত্যয় / committed conviction। একটা উদাহরন দিয়ে বলা যায়। কেউ যদি বলে আমি পরকালের কৈফিয়তে বিশ্বাসি, এখানে বিশ্বাস খুব হালকা শব্দ। ঈমানের আভিধানিক অর্থ অনুসারে আীখতারকে স্বীকার করা, সত্য বলে মেনে নেওয়া কখনো ঈমানের অর্থের পূর্ণাঙ্গ তাৎপর্য ধারন করতে পারে না।
অন্যদিকে কেউ যদি পরকালের কৈফিয়তে কমিটেড হয়, অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়; তাহলেই শুধু আখিরাতে ঈমান অর্থ বোধ হয়। মুখে বললাম আমি আখিরাতে বিশ্বাসী; সেটা শুধু মুখে মুখে বললেই যে বিশ্বাস তার মধ্যে কোন কমিটমেন্ট নাই। সুতরাং ঈমান শব্দের মধ্যে অবশ্যই কমিটমেন্ট / অঙ্গীকার থাকা জরুরী। এ কারনে ঈমানের কাছাকাছি সঠিক অনুবাদ বলে Committed Conviction / প্রতিশ্রুতিবদ্ধ প্রত্যয় - আমরা মনে করি।
কুরআনের সরল বিধান ও ধর্মাচারবাদিদের জটিলতা কুরআনে সরলভাবে বিভিন্ন বিধান দেয়া হয়েছে, যা পালনের ক্ষেত্রে বিবেকবুদ্ধির প্রয়োগ অনুসারে যেভাবে উত্তম হয় সেভাবে সম্পাদন করাই স্বাভাবিক। কিন্তু ধর্মাচারবাদিরা কোনো বিধান পালনের সাথে সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়কে সুনির্দিষ্ট করতে চেয়ে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করে। কুরআনের শুরুর দিকে সূরা বাক্বারাহতেই এ বিষয়ে বানী ইসরাইলের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে শিক্ষা দেয়া […]
সাধারন ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে একটি কমন ধারনা হলো: ইসলামের সংবিধান হলো কুরআন এবং আধুনিক সময়ে যেসব সেকুলার সংবিধান করা হয় তা হলো "তাগুত"। বিষয়টি কি সত্যিই এরকম সাদা কালো? কুরআন কি সংবিধানি? একজন ইসলামে বিশ্বাসীর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এই প্রশ্নের মিমাংসায় পৌছতে হলে আমাদের প্রথমে কয়েকটি কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে এগুতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে […]
মুসলিমদের জীবন বিধানের সকল মূলনীতি কোরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমার ওপর যে কিতাব (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে তাতে রয়েছে সকল বিষয়ের বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৮৯) দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশের মুসলিমদের কোরআন দেখে শুদ্ধ করে পড়ার প্রতি গুরুত্ব থাকলেও ইসলামি জীবন বিধানের মৌলিক উৎস […]
১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক পেশ করা হয়েছে তাতে অন্যতম তিনটি মূলনীতি হলো, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’। বস্তুত এই মূলনীতিসমূহ […]
নাসর হামিদ আবু যায়েদ: এক মুক্তচিন্তার কুরআন গবেষকের জীবনচিত্র পূর্ণ নাম: নাসর হামিদ আবু যায়েদ (Nasr Hamid Abu Zayd)জন্ম: ১০ জুলাই ১৯৪৩, তানতা, মিসরমৃত্যু: ৫ জুলাই ২০১০, কায়রো, মিসরপরিচয়: কুরআন গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, ধর্মতাত্ত্বিক ও মুক্তচিন্তার ইসলামী চিন্তাবিদ 🎓 শিক্ষা ও পেশাজীবন নাসর হামিদ আবু যায়েদ কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা ও ইসলামি শিক্ষায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ […]
In this interview, the host discuss with Dr. Munther Younes of Cornell University to discuss his research on the transmission and evolution of the Qur'anic text. Dr. Younes is Reis Senior Lecturer of Arabic Language and Linguistics at Cornell University and a renowned expert in the Arabic language. They discuss the Arabic of the Qur'an, […]
আর রহমান দয়াময় সত্তা আল্লামাল ক্বুরআন তিনি শিক্ষা দিয়েছেন পঠন ক্ষমতা খালাক্বাল ইনসান তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষ আল্লামাহুল বায়ান তিনি তাকে শিক্ষা দিয়েছেন স্পষ্টভাবে বিবৃত করার ভাষা। - সুরা আর-রাহমান, আয়াত ১-৪ সুরা আর-রাহমান কুরআনের ৫৫তম সুরা এবং মুসলিমদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি সুরা। এই সুরার সুচনায় আমরা মানুষের পাঠ করার ক্ষমতা এবং কথা বলার […]