দি  ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন (ইক্বরা)

লক্ষ্য

ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।

উদ্দেশ্য

ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।

প্রকাশিত বইসমূহ

ইসলামে দাসীদের সাথে বিয়ে ছাড়াই কি দৈহিক বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে?

একটি বহুল প্রচলিত মিসকনসেপশন বা ভূল ধারনা মুসলিম সমাজে রয়েছে যেটা ধর্মের বিশেষজ্ঞরা খুব একটা সম্বোধন করেন না যেটি হলো দাসীদের সাথে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বৈধতা বা অবৈধতা প্রসঙ্গে।

কুরআনে মা মালাকাত আইমান বলে একটি টার্ম আছে যার শাব্দিক অর্থ হলো ‘তোমাদের ডান হাতের অধিকারভুক্ত’ বা ’ডান হাতের নিরাপত্তা প্রদানকারী’ অথবা ‘যাদেরকে অধিকৃত করেছে তোমাদের ডানহাতসমূহ’। এটি দিয়ে প্রাচীন সমাজে যে দাস প্রথা প্রচলিত ছিলো সেই দাস-দাসীদের বোঝানো হয় এমনটাই প্রচলিত। কুরআন যেহেতু সব মানুষকে স্রষ্টার বান্দা বা দাস হিসেবে সম্বোধন করে, সে কারনে ’মা মালাকাত আইমান’ টার্মটির মাধ্যমে যারা অধিনস্ত তাদেরকে সম্বোধনেও এক ধরনের সন্মান প্রদান করা হয়েছে এবং এই সম্বোধনের মধ্যে সেই অধিনস্তের নিরাপত্তা ও মানব অধিকারকে এক রকম মনে করিয়ে দেওয়ার বিষয়টাও রয়েছে।

এটা লক্ষ্যনীয় যে কুরআনে অনেক আপত্তিকর বা ট্যাবু সাবজেক্টে খুব শালীন শব্দ চয়ন করা কুরআনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

মিস কনসেপশন বা ভুল ধারনার উৎস কি?

কুরআন থেকেই কিছু আয়াত আছে যেগুলো বিচ্ছিন্নভাবে পড়লে মনে হতে পারে ‘মা মালাকাত আইমান’-এর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন, বিশেষ করে বিবাহ বন্ধনের বাইরে - সেটি কুরআন সমর্থন করে। যেমন লক্ষ্যনীয় ৭০নং সুরার ২৯-৩১ আয়াত।

আর যারা তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাযতকারী। তাদের আযওয়াজের/ স্ত্রীর ব্যাপারে ছাড়া। অথবা ‘মা মালাকাত আইমানুহুমের’/ ‘যারা তাদের প্রভাবাধীনে থেকে তাদের দ্বারা স্বীয় রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তাদের অধীনস্থ হয়েছে’ তাদের অন্তর্ভুক্ত নারীর ব্যাপারে ছাড়া। নিশ্চয় সেক্ষেত্রে তারা নিন্দনীয় নয়। - সুরা মায়ারিজ

প্রায় একই ধরনের আয়াত আমরা পাই ২৩ নং সুরার ৫ থেকে ৭নং আয়াতে।

আর যারা তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাযতকারী হয়। তাদের আযওয়াজের/ স্ত্রীর ব্যাপারে ছাড়া। অথবা ‘মা মালাকাত আইমানুহুমের’ নারীর ব্যাপারে ছাড়া। নিশ্চয় সেক্ষেত্রে তারা নিন্দনীয় নয়। সুতরাং যে তালাশ করে উহার বাইরে কিছু, সেক্ষেত্রে তারাই সীমালংঘনকারী। - সুরা মু’মিনুন

কুরআন নাজিলের পূর্বে আরব সমাজে দাস-দাসীদের সাথে প্রচলিত আচার-আচরন এবং বিভিন্ন হাদীস, ওয়াজেয়ানদের বানানো কিচ্ছা কাহিনী এবং উপরোক্ত কুরআনের আয়াতের ভুল পাঠ - তার বাইরে এ বিষয়ে বর্তমানে প্রচলিত ধর্মবেত্তাদের নিরাপতা বা সঠিক ব্যাখ্যার অভাব - সবগুলো মিলিয়ে এক ধরনের কম্পাউন্ড এফেক্ট তৈরী করেছে এই মিসকনসেপশনটি তৈরী এবং তা জারি থাকার পেছনে।


এই প্রবন্ধটি দি ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন থেকে প্রকাশিতব্য বই, কুরআনের আলোকে বিবাহ -এর একটি অধ্যায়, মা মালাকাত আইমান’কে বিবাহ করার প্রসঙ্গ থেকে সংকলিত।

‘মা মালাকাত আইমান’কে বিবাহ করার প্রসঙ্গ

কুরআনে বিবাহের বিধানের মধ্যে দাস-দাসীর বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। কুরআনের বস্তুনিষ্ঠ অধ্যয়নের পরিবর্তে এক শ্রেণির মোল্লার অপব্যাখ্যার ভিত্তিতে একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, ইসলামে দাসীদের সাথে বিয়ে ছাড়াই দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ কুরআন থেকে এটা স্পষ্ট যে, নারী-পুরুষের মধ্যে যৌনসম্পর্ক স্থাপিত হতে পারে শুধুমাত্র বিয়ের মাধ্যমে, অন্য কোনোভাবে নয়। বিয়ে ছাড়া যৌনসম্পর্ক যদি নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মতিক্রমেও ঘটে তবুও তা অবৈধ এবং সেটা ব্যভিচার নামে অভিহিত, যা একটি দণ্ডযোগ্য সামাজিক অপরাধ। স্বাধীন-স্বাধীনা বা দাস-দাসী কেউ এ বিধানের বাহিরে নয় এবং দাসীর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাকে বিয়ে করতে হবে এবং তার জন্য বিধিবদ্ধ মোহরানাও প্রদান করতে হবে।

কুরআনে দাস-দাসীকে ব্যাপকভাবে ‘মা মালাকাত আইমান’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে ‘মা মালাকাত আইমান’ শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কেও জানা প্রয়োজন। তাই দাস-দাসী ও ‘মা মালাকাত আইমান’ এবং তাদেরকে বিয়ে করার প্রসঙ্গে উল্লেখিত নির্দেশনার বিভিন্ন দিক নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

স্বাধীন নারী-পুরুষ ও দাস-দাসী বুঝাতে ব্যবহৃত শব্দাবলির তাৎপর্য

তৎকালীন দাসপ্রথাকে শক্তিপ্রয়োগে উৎখাত করার পরিবর্তে কুরআনে দাসমুক্তির জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান ও সংস্কার কর্মনীতির প্রবর্তন করা হয়। তাই স্বাধীন নারী-পুরুষ ও দাস-দাসী বুঝাতে বিভিন্ন শব্দাবলি ব্যবহৃত হয় এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এই প্রেক্ষিতে কুরআনে স্বাধীনা নারী ও দাসী প্রসঙ্গে থাকা শব্দগুলোর তাৎপর্য নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

স্বাধীনা নারী বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত মূল শব্দটি হচ্ছে ‘মুহসনাত। আর দাসী বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত মূল শব্দটি হচ্ছে ‘আমাতুন’ (বহুবচনে ইমাউন)। অন্যদিকে ‘মুহসনাত এর বিপরীতে ‘মা মালাকাত আইমান’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হয়েছে (৪:২৪-২৫)। আবার ‘মা মালাকাত আইমান শব্দগুচ্ছ ‘আজওয়াজ’ এর বিপরীতেও ব্যবহৃত হয়েছে (২৩:৫-৭, ৭০:২৯-৩১)। নিম্নে এসব শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহৃত হওয়া আয়াতগুলোর বক্তব্যস্থান / বক্তব্য কাঠামো অনুসারে শব্দগুলো যে ধরনের অর্থ প্রকাশ করে তা উল্লেখ করা হলো।

১. মুহসনাত শব্দটি যেসব অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো হলো: (ক) সতী নারী, হোক বিবাহিত বা অবিবাহিত, হোক স্বাধীনা বা ‘মা মালাকাত আইমান’; (খ) স্বাধীনা নারী, হোক বিবাহিত বা অবিবাহিত। (গ) স্বাধীনা অবিবাহিতা / তালাকপ্রাপ্তা / বিধবা নারী।

যখন বলা হয় যে, “মুহসনাত নারী হারাম কিন্তু মা মালাকাত আইমান নয়” তখন এর অর্থ হচ্ছে স্বাধীনা বিবাহিতা (সধবা) নারীকে বিয়ে করা হারাম, কিন্তু সধবা ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করা হারাম নয়।

যখন বলা হয় যে, মুহসনাতকে বিয়ে করতে না পারলে সে ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীকে তার আহলের/ অভিভাবকের অনুমতিক্রমে বিবাহ করবে, তখন এর অর্থ হচ্ছে স্বাধীনা অবিবাহিতা /তালাকপ্রাপ্তা / বিধবা নারীকে বিয়ে করতে না পারলে সে ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীকে বিয়ে করবে তার অভিভাবকের অনুমতিক্রমে।

মা মালাকাত আইমান’ যখন বিবাহিত হয়, তখন সে ‘মুহসনাত মা মালাকাত আইমান’ হয়, তথা ‘বিবাহিত ও স্বাধীনতাপ্রাপ্ত মা মালাকাত আইমান’ হয়। তারপর যদি সে অশ্লীল কাজ করে তবে তার শাস্তি হচ্ছে ‘মুহসনাতের অর্ধেক’ তথা ‘স্থায়ী স্বাধীনা নারীর অর্ধেক, সে স্বাধীনা নারী বিবাহিতা হোক, বা অবিবাহিতা হোক’।

একজন পুরুষের জওজ বলতে বুঝায় তার স্ত্রীকে তথা বিবাহিতা স্বাধীনা নারীকে (মুহসনাত মুহসনাতকে)।

২. আমাতুন (বহুবচনে ইমায়ি) অর্থ হচ্ছে ‘দাসী’ (২:২২১, ২৪:৩৩)। ২৪:৩৩ আয়াতে আছে ‘ইমায়িকুম যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘তোমাদের দাসী’। এখানে তোমাদের দাসী মানে তোমাদের সমাজস্থ দাসী। অর্থাৎ বৃহত্তর পরিসরে সমাজকে তাদের নিজেদের বলয় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে মু’মিনদের নিজেদের সরাসরি আয়ত্তে যারা আছে তাদেরকে বলা হয়েছে ‘মা মালাকাত আইমান’ (২৪:৩৩), যাদেরকে মুক্ত করে দেয়ার প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছিল। আর সমাজে অন্য যাদের অধীনে তখনো দাসী ছিল তাদের থেকে জোর করে দাসদাসীদেরকে দাসত্ব মুক্ত করানো হয় নি, বরং মু’মিনরা ক্রয়ে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে দাসদাসীকে মুক্ত করার ফর্মুলাই দেয়া হয়েছে, যাতে সমাজ সংস্কার হয়, গঠনমূলক পরিবর্তন হয়, ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়ায় বিপ্লব না হয়। কিন্তু মু’মিনরা কাউকে নিজের আবদ/ দাস এবং আমাত/ দাসী বানিয়ে রাখতে পারে না, কারণ আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ ও জিনকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে (৫১:৫৬)।

মা মালাকাত আইমান’ শব্দের তাৎপর্য: এর দ্বারা কাদেরকে বুঝায়?

‘মা মালাকাত আইামান এর অর্থ নির্ণয়ের জন্য যা জানা প্রয়োজন তা হলো, ‘মা মালাকাত আইমানের দুটি বিশেষ অবস্থা হলো:

(১) ‘মা মালাকাত আইমান’ হলো তারা যারা অপ্রাপ্তবয়স্ক স্তরে রয়েছে (২৪:৫৮)।

(২) ‘মা মালাকাত আইমানকে স্বাধীনভাবে উপার্জনের সীমিত সুযোগ দিয়ে তার যোগ্যতার বিকাশের সুযোগ দিতে হবে যাতে সে স্বাধীন হবার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায় (২৪:৩৩)।

সুতরাং ‘মা মালাকাত আইমান এর মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যথা: (ক) মু’মিনদের কাছে থাকা তাদের পূর্ববর্তী ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী, (খ) যুদ্ধবন্দী নারী-পুরুষদের মধ্য থেকে যাদেরকে কোনো মু’মিনের তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়েছে, কারণ তাদের মধ্যে তখনো স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহের যোগ্যতা তৈরি হয়নি, (গ) অনুরূপভাবে কাফির আত্মীয়দেরকে ত্যাগ করে হিজরত করে আসা নারী-পুরুষদের মধ্য থেকে যাদেরকে কোনো মু’মিনের তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়েছে, কারণ তাদের মধ্যে তখনো স্বাধীনভাবে জীবিকা নির্বাহের যোগ্যতা তৈরি হয়নি। এ বিষয়টি পরবর্তী ‘আনুষঙ্গিক ধারাসমূহ’ অনুচ্ছেদের আলোচনায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে।

‘মা মালাকাত আইমান’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘যাদেরকে অধিকৃত করেছে তোমাদের ডানহাতসমূহ’। ডানহাত কথাটি ইতিবাচক তৎপর্য বহন করে, যার অর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা বিধানের প্রতিশ্রুতি দানকারী বা চুক্তি সম্পাদনকারী শক্তিসম্পন্ন হাত। এভাবে মু’মিনদের নিজেদের আওতাধীনে থাকা তৎকালীন দাস-দাসী যেন একটা নিরাপত্তা বলয়ে থাকে এবং যেন তাদের যোগ্যতার সমৃদ্ধি সাধনের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করে দেয়া যায় বা তাদেরকে বিয়ে করে নিয়ে স্বাধীনা করে দেয়া যায় সেরূপ বিধানও প্রদান করা হয়েছে।

মা মালাকাত আইমানুকুম’ এর একটি অবস্থা হচ্ছে ‘আল্লাযীনা আক্বাদাত আইমানুকুম’ (তোমাদের ডানহাত যাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, দ্র: ৪:৩৩)। সুতরাং ‘মা মালাকাত আইমান’কে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য উপযুক্ত হয় এরূপ পরিমিত পরিমাণে (নাসীব) প্রদান করতে হবে।

‘মা মালাকাত আইমান কথাটি নিরাপত্তাবিধানের অর্থে মানবসম্পদের মালিকানার সাথে জড়িত, তাদের ব্যক্তিসত্তাকে বস্তুসত্তার মতো সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে তার মালিক হয়ে যাওয়া হিসেবে সাব্যস্ত নয়। তাই ‘মামলূকুকুম’ বা ‘তোমাদের অধিকৃত’ বলার পরিবর্তে বলা হয়েছে ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’ তথা ‘যাদেরকে তোমাদের ডান হাত নিরাপত্তা প্রদানের প্রতিশ্রুতির আওতায় অধিকৃত করেছে’।

মা মালাকাত আইমানের’ সাথে দৈহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিবাহের আবশ্যকতা

প্রচলিত ধারণা হলো ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীকে বিয়ে করা ছাড়াই তার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার অনুমতি রয়েছে এবং এ বিষয়ে তথ্যসূত্র হিসেবে ২৩:৫-৭ ও ৭০:২৯-৩১ আয়াতের উল্লেখ করা হয়। অথচ এ প্রচলিত ধারণা সম্পূর্ণরূপে কুরআনবিরুদ্ধ ধারণা। আল কুরআনে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ককে যিনা হিসেবে সাব্যস্ত করে তাকে একটি ফৌজদারি অপরাধের অন্তর্ভুক্ত করে দণ্ডবিধি দেয়া হয়েছে। ৪:৩ এবং ৪:২৪-২৫ আয়াত অনুসারে ‘মা মালাকাত আইমানকে’ বিয়ে করা ছাড়া তাদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা নিষিদ্ধ।

আর যদি তোমরা আশংকা করো যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে, তাহলে নিকাহ/ বিবাহ করো যারা তোমাদের পছন্দনীয় হয়, ইয়াতিম ছেলে মেয়ে আছে এমন বিধবা নারীদের মধ্য থেকে (৪:১২৭) দুই দুই, তিন তিন, চারচার। কিন্তু যদি তোমরা আশংকা করো যে, তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে আদল/ ইনসাফ/ সমান আচরণ করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (= একজন মুহসনাতকে) অথবা ‘মা মালাকাত আইমানুকুমকে’/ ‘যে তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে’ এরূপ (একজন) নারীকে। উহাই অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা ঔদ্ধত্য/ সীমালংঘন করবে না (৪:১২৯)। - ৪:৩

আর নারীদের মধ্যকার (সধবা তথা যে নারীর স্বামী জীবিত কিন্তু স্বামী তাকে তালাক দেয়নি অথবা সে নিজেও তার স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দেয়নি এরূপ) মুহসানাতকে (= বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারিনী নারীকে)। ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’/‘যারা তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে’ এরূপ নারী ছাড়া। ইহা তোমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব/ বিধিবদ্ধ আইন। আর হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য এ তালিকার বাহিরের সকল নারীদেরকে (যদি না তারা হয় মুশরিক বা যিনাকারিনী বা কাফির ০২: ২২১, ২৪:৩, ৬০: ১০)। এ শর্তে যে, তোমরা তালাশ করবে তোমাদের মালসম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে, মুহসিনীন (বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারী পুরুষ) হিসাবে, মুসাফিহীন (অর্থের বিনিময়ে সাময়িক/ নিছক যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষ) হিসাবে নয়। সুতরাং তোমরা যা (যে অধিকার) লাভ করেছো তাদের নিকট থেকে তার ফলে (আল্লাহর বিধান অনুসারে ৪:৪) তাদেরকে দিয়ে দাও তাদের উজূর/ চুক্তির দ্বারা সাব্যস্ত প্রাপ্য, ফরজ হিসাবে। আর তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই ঐ অংশ কম করাতে তোমরা পরস্পর রাজি হও যে অংশ কম করার ক্ষেত্রে দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে যাবার পর। নিশ্চয় আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। - ৪:২৪-২৫

তাই নিম্নে ২৩:৫-৭ এবং ৭০:২৯-৩১ আয়াতের প্রকৃত তাৎপর্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

২৩:৫-৭ :: এবং যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী (সংরক্ষণকারী)। তাদের স্বাধীনা স্ত্রী এবং ‘মা মালাকাত আইমান’ স্ত্রী (যাদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা প্রদায়ক ডানহাত পূর্ণরূপে অধিকৃত করেছে এরূপ স্ত্রী) প্রসঙ্গে ছাড়া। এক্ষেত্রে তারা নিন্দিত হবে না। সুতরাং যারা সেটার বাইরে কাউকে তালাশ করবে, তারাই সীমালংঘনকারী হবে।

৭০:২৯-৩১ :: এবং যারা তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী (সংরক্ষণকারী)। তাদের স্বাধীনা স্ত্রী এবং ‘মা মালাকাত আইমান’ স্ত্রী (যাদেরকে তাদের প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তা প্রদায়ক ডানহাত পূর্ণরূপে অধিকৃত করেছে এরূপ স্ত্রী) প্রসঙ্গে ছাড়া। এক্ষেত্রে তারা নিন্দিত হবে না। সুতরাং যারা সেটার বাইরে কাউকে তালাশ করবে, তারাই সীমালংঘনকারী হবে।

আয়াতসমূহের তাৎপর্য নির্ণয়র জন্য প্রথমেই জ্ঞাতব্য যে, ‘মা মালাকাত আইমানুকুম শব্দগুচ্ছের দুটি অর্থ রয়েছে। বৃহত্তর পরিসরে এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের (মু’মিনদের) তত্ত্বাবধানে থাকা ‘মা মালাকাত আইমান। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে সীমিত পরিসরে তথা বক্তব্য প্রসঙ্গ অনুসারে ‘তোমাদের (মু’মিনদের) নিজ নিজ বিবাহকৃত মা মালাকাত আইমান। এর প্রমাণ হচ্ছে, ‘আজওয়াজুকুম শব্দটিরও দুটি অর্থ আছে। বৃহত্তর পরিসরে এর অর্থ হচ্ছে, ‘তোমাদের (পুরুষদের) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ বা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার যোগ্য জোড়া শ্রেণি / পরিপূরক শ্রেণি নারীগণ’। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নারী পুরুষ নিয়ে সাধারণ বক্তব্য দেয়া হয়, কিন্তু এই আজওয়াজকে যৌন সম্পর্কে পেতে হলে তাকে বিয়ে করে নিজের বিবাহকৃত আজওয়াজে পরিণত করতে হবে (এ বিষয়ে ৩০:২১ আয়াত দ্রষ্টব্য)। আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে সীমিত পরিসরে তথা বক্তব্য প্রসঙ্গ অনুসারে ‘তোমাদের নিজ নিজ বিবাহকৃত স্বাধীনা নারীগণ’ (এ বিষয়ে ৪:১২ আয়াত দ্রষ্টব্য) ।

২৩:৫-৭ এবং ৭০:২৯-৩১ আয়াতে “মা মালাকাত আইমানুহুম” শব্দগুচ্ছ “তাদের বিবাহিত মা মালাকাত্ আইমান” অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। এ আয়াতসমূহে ‘আজওয়াজ’ বলতে ‘মুহসনাত মুহসনাত’ তথা বিবাহকৃত স্বাধীনা নারী এবং ‘মা মালাকাত আইমান’ বলতে ‘মুহসনাত মা মালাকাত আইমান’ তথা ‘বিবাহকৃত মা মালাকাত আইমানকে’ বুঝানো হয়েছে। ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করলে সে ‘মুহসনাত তথা স্বাধীনা হয়ে যায়’ কিন্তু তার পূর্ববর্তী অবস্থা বিবেচনায় রেখে তার জন্য অশ্লীল আচরণে পূর্ব থেকেই স্বাধীনা এরূপ নারীর অর্ধেক শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে (৪:২৫)। আর তাই তাকে বিবাহকৃত অবস্থায়ও ‘মা মালাকাত আইমান’ শব্দগুচ্ছ দ্বারাই উল্লেখ করা হয়েছে।

মা মালাকাত আইমানকে বিয়ের প্রসঙ্গে আনুষঙ্গিক ধারাসমূহ

(১) যদি নিজেই ‘মা মালাকাত আইমানের’ আহল বা অভিভাবক হয়, তাহলে শুধু ‘মা মালাকাত  আইমানের’ সম্মতিক্রমে তাকে বিবাহ করতে পারবে। আর যেখানে “তোমাদের মা মালাকাত আইমানকে তার আহলের অনুমতিক্রমে বিবাহ করো” বলা হয়েছে, তার অর্থ হলো, মু’মিনদের অভিভাবকত্বে থাকা ‘মা মালাকাত আইমান’ কিন্তু যে মু’মিনের বিবাহের প্রসঙ্গ আলোচিত স্বয়ং তার অভিভাবকত্বে নয়, বা সে নিজে তার আহল/ অভিভাবক নয়। যেহেতু সে মুহসনাত বা স্বাধীনা নারীকে বিবাহের সামর্থ্য নেই বা সেরূপ স্বচ্ছল নয়, তাই তার অভিভাবকত্বে আগে থেকে ‘মা মালাকাত আইমান’ থাকা সম্ভবও নয়।

(২) ৫৯:৬-৭ আয়াত অনুযায়ী যুদ্ধ ছাড়াই কাফিরদের থেকে যে সম্পদ রসূল ও মু’মিনদের অধিকৃত হয়েছে সেটাকে “আল্লাহ রসূলকে ফায় দিয়েছেন” বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৩:৫০ আয়াতে রসূলের “মা মালাকাত ইয়ামীন (ডান হাত যাকে অধিকৃত করেছে) সম্পর্কেও বলা হয়েছে, “যাদেরকে আল্লাহ রসূলকে ফায় দিয়েছেন”। সুতরাং “ফায় হলো সেই সম্পদ যা যুদ্ধ ছাড়াই কাফিরদের থেকে মু’মিনদের হস্তগত হয়। অনুরূপভাবে “ফায়” হলো সেই লোকজন যারা প্রথমে কাফিরদের কাছে ছিল, কিন্তু পরে তাদেরকে পরিত্যাগ করে মু’মিনদের কাছে চলে এসেছে। আমরা ৬০:১০-১১ আয়াতে এর প্রমাণ পাই যে, অনেক স্ত্রীলোক তাদের কাফির স্বামীর সাথে আনুষ্ঠানিক তালাক ছাড়াই তাদেরকে পরিত্যাগ করে মু’মিনদের কাছে চলে এসেছে। এ ধরনের নারীদের মধ্য থেকে কাউকে যখন কোনো মু’মিনের পূর্ণকালীন তত্ত্বাবধানে দেয়া হয় তখন সে ঐ মু’মিনের “মা মালাকাত আইমান হিসেবে সাব্যস্ত হয়।

এই প্রেক্ষিতে যে সধবা মা মালাকাত আইমানকে বিয়ে করা যাবে সে হলো যার স্বামীর সাথে তার বাস্তব দূরত্ব তৈরি হয়েছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে নি। কারণ নারীর ক্বাওয়াম/ দায়িত্বশীল একাধিক হবে না, তাই মা মালাকাত আইমান সধবা নারীর স্বামীর সাথে বাস্তব সম্পর্ক বজায় থাকা অবস্থায় তাকে বিয়ে করা যাবে না। আবার বিয়ে করার পর সে নতুন করে ‘মুহসনাত’ (বিবাহিতা ও স্বাধীনা) হয়ে যাবে, সুতরাং এই বিয়ের বৈধতা একবারই প্রযোজ্য, দ্বিতীয়বার প্রযোজ্য নয়।

(৩) পিতা তার যে ‘মা মালাকাত আইমানকে বিয়ে করবে, বিয়ের পরে তাকে তালাক দিলেও বা পিতার মৃত্যু ঘটলেও সে নারী পুত্রের জন্য মা ও মুহাররমা (যাকে বিয়ে করা হারাম বা অবৈধ এরূপ) হিসেবে সাব্যস্ত হবে (৪:২২)। আর যারা মনে করেন যে, নিকাহ মানে যৌন সম্পর্ক, এজন্য বিয়ে আবশ্যক নয়, তাদের মতবাদ কুরআনের জিনা (ব্যভিচার) ও তালাক সম্পর্কিত বিধি-বিধানের বিরোধী। (দ্র. ৩৩:৪৯)। সুতরাং ‘মা মালাকাত আইমানকে’ বিয়ে করার পর সে পুরুষটির স্বাধীনা স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানেরও সৎমা হয়ে যায়।

(৪) “যে ব্যক্তি ‘মুহসনাতকে (স্বাধীনা অবিবাহিতা/তালাকপ্রাপ্তা/বিধবা নারীকে) বিবাহ করার সামর্থ রাখে না সে ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করবে” (দ্র: ৪:২৫) নির্দেশনাটির দ্বারা এ কথা বুঝায় না যে, ‘মুহসনাতকে বিবাহ করার সামর্থ থাকলে ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করা যাবে না। বরং এ কথার কারণ হচ্ছে- সাধারণত স্বাধীন পুরুষের প্রবণতা থাকে মুহসনাতকে বিবাহ করার জন্য। কিন্তু যে ব্যক্তি মুহসনাতকে বিবাহ করার সামর্থ রাখে না সে যেন মুহসনাতকেই বিবাহ করার মানসিকতা লালন করতে না থাকে বরং তার উচিত ‘মা মালাকাত আইমানকে’ বিবাহ করা। যেহেতু ‘মুহসনাত ও ‘মা মালাকাত আইমান’ উভয়ে ঈমান অবলম্বনের দিক থেকে সমমর্যাদার। এছাড়া, ৪:৩ ও ৩৩:৫০ আয়াতে কোনোরূপ শর্ত ছাড়াই স্বাধীনা নারী ও ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করার সমান সুযোগ দেয়া হয়েছে। এমনকি ২৪:৩২ ও ২:২২১ আয়াত অনুসারে দাস-দাসীকে বিবাহ করাও মহৎ গুণ।

(৫) ৪:২৫ আয়াতে যে সবর করার কথা বলা হয়েছে ২৪:৩৩ আয়াত অনুসারে উহার সম্পর্ক হচ্ছে ঐ ব্যক্তির স্বীয় অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার সাথে। যে মুহসনাতকে বিবাহ করার সামর্থ রাখে না কিন্তু ‘মা মালাকাত আইমানকে’ বিবাহ করার সামর্থ রাখে সে ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করবে। যে মুহসনাতকে বিবাহ করার সামর্থ রাখে সে মুহসনাতকে বা ‘মা মালাকাত আইমানকে’ বিবাহ করবে। আর যে শুধু ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করার সামর্থ রাখে সেও  ‘মা মালাকাত আইমানকে বিবাহ করার তুলনায় অধিকতর সামর্থ্য  অর্জনের পর ‘মুহসনাতকে’ বা ‘মা মালাকাত আইমানকে, যাকে সে বিবাহ করতে চায়, বিবাহ করা তার জন্য অধিকতর কল্যাণকর।

মনে রাখতে হবে যে, সব মুহসনাতই ‘মা মালাকাত আইমানের’ চেয়ে ভাল, তা নয়। বরং কিছু ‘মা মালাকাত আইমান’ মুহসনাতের চেয়ে ভাল হয়। কিন্তু ‘মা মালাকাত আইমানের’ পরিস্থিতিগত জটিল অবস্থান বিবেচনায় তার অশ্লীল কাজের ক্ষেত্রে তার শাস্তি মুহসনাতের তুলনায় অর্ধেক ধার্য করা হয়েছে। আয়াতের বক্তব্য এরূপ নয় যে, ‘মা মালাকাত আইমানের তুলনায় মুহসনাতকে বিবাহ করা অধিক উত্তম।

অনেকে ৪:২৫ এর শেষ অংশের ‘যালিকা’ সর্বনামের ভুল ব্যাখ্যা করে থাকে, যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। অথচ ‘যালিকা দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে ২৪:৩৩ আয়াতের প্রথম অংশ পড়লে তা বুঝতে কোনো জটিলতা থাকে না। আয়াতটির সাপেক্ষে এবং অন্যান্য আয়াতের তথ্য সমন্বয়ের ভিত্তিতে বুঝা যায় যে, ৪:২৫ আয়াতে ‘যালিকা অর্থ হচ্ছে ‘অধিকতর সামর্থ্য অর্জনের আগেই বিবাহ করা’। এটি তাদের জন্য ব্যবস্থাপত্র যারা আত্মসংযম হারানোর ভয় আছে।

স্বাধীনা ও ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীর পার্থক্যের বাস্তব কার্যকারণ

আমাত (দাসী) এবং “মা মালাকাত আইমান” নারীকে স্বাধীনা নারীদের থেকে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের প্রসঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে বিধানগত ভিন্নতা রয়েছে।

সর্বপ্রধান দৃষ্টি আকর্ষণের বিষয় হলো, ‘মা মালাকাত আইমান’ এবং সমাজস্থ  দাস-দাসীকে মু’মিন হিসেবে স্বাধীন নারী-পুরুষের সমমর্যাদা (আদর্শিক ও মানবিক মর্যাদা) দেয়া হয়েছে। আদর্শগতভাবে মু’মিন দাস ও দাসীকে মুশরিক স্বাধীন পুরুষ ও নারীর চেয়ে উত্তম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। কারণ একজন মুশরিক আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও অধিকারে অংশীদার স্থাপন করে, যেখানে একজন মু’মিন এসব ক্ষেত্রে আল্লাহর একত্বের প্রতি বিশ্বাসী।

মু’মিনদের দায়িত্ব হলো তারা স্বীয় অর্থব্যয়ের মাধ্যমে দাসত্বের জিঞ্জিরে আবদ্ধ ঘাড়কে তথা দাস-দাসীকে মুক্ত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে, যা তাদের পুণ্যকর্ম ও সৎকাজে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।

‘মা মালাকাত আইমান’ যেন স্বাধীনভাবে কিছু জীবিকা উপার্জন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন করে নিজের ও সমাজের কল্যাণের জন্য কাজে আসতে পারে সে সুব্যবস্থা করে তাকে স্বাধীন হয়ে যাওয়ার যুক্তিসঙ্গত প্রক্রিয়া হিসেবে অভিভাবকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার সুব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া মু’মিন সমাজের উপর দাস-দাসীদের জন্যও উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়ার সুযোগ তৈরিতে তাকে সাহায্য করার দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে।

স্বাধীনা স্ত্রী ও ‘মা মালাকাত আইমান’ স্ত্রীকে আলাদাভাবে উল্লেখ করার তথা স্বাধীনা ও ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীর মধ্যে পার্থক্য করার অন্যতম কার্যকারণ হলো ‘মা মালাকাত আইমান’ নারীর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি হ্রাসের বিধান। এক্ষেত্রে ‘মা মালাকাত আইমানের’ তুলনামূলক নাজুক সামাজিক জীবন পদ্ধতির বিবেচনায় তাদের প্রতি বিশেষ মহানুভবতা প্রদর্শন করা হয়েছে।


আশা করা যায় উপরোক্ত আলোচনা থেকে পাঠকের কাছে এটা স্পষ্ট হবে যে কুরআনে দাসীদের সাথে বিবাহ বহির্ভূতভাবে যৌন সম্পর্কে স্থাপনের কোন অবকাশ দেয় নি। বরং স্বাধীন অথবা কারো তত্বাবধানের থাকা নারী যেই হোক না কেন, কুরআন বিবাহের মাধ্যমে তাকে স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানকে আবশ্যক করেছে।

ট্যাগ / কী-ওয়ার্ড:

অন্যান্য প্রবন্ধ

January 31, 2025
The Quran Beheld by Nuh Ha Mim Keller - Reviews

The Quran Beheld is a new english translation of the Quran by Nuh Ha Mim Keller About The Book This work solves an enigma that has puzzled many readers first coming to Islam through English translations of the Quran. The Arabic original stunned hearers in their own language with its unutterable evocative power, incisive arguments, […]

January 31, 2025
Translating the Qur’an for Today with Professor Abdel Haleem

The Quran is the majestic word of Allah (swt), it gives Muslims life. In the Quran, Allah speaks to all human beings and those that read the Quran revere the majesty of its style and prose. Professor Muhammad A. S. Abdel Haleem is the Professor of Islamic Studies and director of the Centre for Islamic […]

January 24, 2025
আল-কুরআনের ভাষা শিক্ষা - আরবি ব্যাকরণ

আল-কুরআনের ভাষা শিক্ষা কোর্সে আপনাকে স্বাগতম! আরবি ভাষা শিখুন ও আরবি ব্যাকরণ শিখুন এই কোর্সের মাধ্যমে । আপনি যদি একজন নতুন শিক্ষার্থী হন অথবা আপনার আরবি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে চান, তাহলে ক্লাসগুলোতে জয়েন করুন যা আরবি ব্যাকরণ এবং শব্দভান্ডারের মৌলিক বিষয়গুলি শেখাবে। মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা তার প্রেরিত সর্বশেষ কিতাব আল-কোরআনের অর্থ নিজে নিজে বুঝতে ও […]

January 17, 2025
কুরানিক এ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ - কুরআনের ভাষা ও ব্যাকরণ শিখার অনলাইন কোর্স

Learning Arabic Language in Bangla. কুরআনের ভাষা শিক্ষা।Course: Quranic Arabic Language Course | Class 1-88 (কুরআনিক অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স | ক্লাস ১-৮৮)Lecturer: Professor Mokhter Ahmad (প্রফেসর মোখতার আহমাদ) সম্পূর্ন টিউটোরিয়াল প্লে-লিস্ট Courtesy: Dawah TV YouTube Channel সবগুলো পর্ব আলাদা আলাদা দেখার জন্য পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬ পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ […]

January 14, 2025
কুরআনে হিকমাহ বা প্রজ্ঞা কি?

আভিধানিক অর্থ হিকমাহ / প্রজ্ঞা যেমন: সুরা নাহালের ১২৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাতে তর্ক করবে উত্তম পন্থায় । এ আয়াতে প্রজ্ঞা বা হেকমত অবলম্বন করে এবং সৎ উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর পরে আহ্বান করার আদেশ দেয়া হয়েছে । পারিভাষিক অর্থ যাবতীয় […]

January 4, 2025
আহমেদ আল রাইসুনির "আল-শুরা" বইয়ের রিভিউ

আহমেদ আল রাইসুনি আধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর লেখা "আল-শুরা" (Al-Shura: The Qur'anic Principle of Consultation) বইটি ইসলামী রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বইটি বিশেষভাবে ইসলামে পরামর্শমূলক শাসনব্যবস্থা বা শুরার ধারণা, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আধুনিক প্রাসঙ্গিকতাকে বিশ্লেষণ করে। বইয়ের মূল বিষয়বস্তু বইয়ের বিশেষত্ব উপসংহারের মূল বিষয়বস্তু আহমেদ আল রাইসুনি তার […]

December 31, 2024
Mathematical Miracles in the Qur'an: A Measured Approach with Amin Lessan via Blogging Theology

Timestamps:00:00 - Introduction00:17 - Background of the Guest: Amin Lessan00:56 - Interest in the Qur'an mathematical patterns01:41 - Today's Topic02:32 - Introduction04:14 - Caveats & Considerations about the Qur'an09:05 - Case Study: The Qur'an & the Moon Landing12:20 - Analysis & Critique of Loose Connections16:03 - Context of the Quran's Transmission18:59 - Non-Contiguous Revelation of […]

April 22, 2024
গঠন রীতি ও শব্দের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কুরআনের সুরার ক্রম

কুরআনের ক্রম বের করার অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে এবং বিভিন্ন মতামত রয়েছে। স্কলার মার্ক ডুরি কুরআনের শব্দ ও গঠন শৈলি ব্যবহার করে একটি ভিন্ন সুরার ক্রমে উপনিত হয়েছেন যা এই প্রবন্ধের বিষয়বস্ত