কুরআন পাঠকদের কারো কারো উপলব্ধি হলো যে কুরআনে ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা আমানু - হে যারা বিশ্বাস এনেছো (অতীত কাল) বা হে যারা বিশ্বাসী - এর মাধ্যমে শুধু মাত্র আহলে কিতাবে অর্থাৎ মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহর মিশনের আগে যে কিতাবী ছিলো যারা তাওরাত ও অন্যান্য পূর্ববর্তী কিতাবে বিশ্বাসী ছিলেন তাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছে এবং কুরআনে বিশ্বাসীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে “মুসলিম” বা আত্নসর্ম্পনকারী শব্দটি।
আসুন দেখা যাক কুরআনের সমন্বিত অধ্যায়ন থেকে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা গবেষণায় কি পাওয়া যায়। সমন্বিত অধ্যায়নের অংশ হিসেবে আমরা এখানে কিছু স্যাম্পল আয়াত আলোচনা ও তুলনা করেছি।
কুরআনে হামজা মিম ও নুন রুট দিয়ে মোট ৮৭৯ বার বিশ্বাস ও বিশ্বাস শব্দের কাছাকাছি বিভিন্ন শব্দরূপ এসেছে যার মধ্যে আছে: আমানা, ইউমিনা, আমিনু, মুমিন ইত্যাদি। সম্পুর্ণ তালিকার জন্য দেখা যেতে পারে: করপাস কুরআন।
কনটেক্সট ভিত্তিতে আহলে কিতাবদের মুমিন বলার সম্ভাবনা নির্দেশিত আয়াত সমূহ:
৫৭:৮
৭১:২৮ নূহের কওমের বিশ্বাসীদের কথা
৬১:১৪ দুই ধরনের সম্ভাবনাই এখানে সম্ভব
৩:১১০ আহলে কিতাবীদের মধ্যে মুমিন থাকার সত্যায়ন, তবে সকলে নয়, সংখ্যালঘু একটি বর্গ কেবলমাত্র মুমিন
৪:১৬২ আহলে কিতাবীদের মধ্যে ইয়াহুদীদের মধ্যে যারা মুমিন
৩:৭২
৩৭:৭৫ - সালামুন আলা নূহ ছিলো বিশ্বাসীদের মধ্যে অন্যতম।
কনটেক্সটভিত্তিতে কুরআনের বাণীতে বিশ্বাসীদের মুমিন বলার সম্ভাবনা নির্দেশিত আয়াত সমূহ:
২৪:২-৩ আর যেন প্রত্যক্ষ করে তাদের আযাব/ শাস্তি মু’মিনদের একটি দল (অর্থাৎ শাস্তি হবে প্রকাশ্য জনসমক্ষে)।
ওয়াল ইয়াশহাদ = আর যেন প্রত্যক্ষ করে। আযাবাহুমা = তাদের আযাব/ শাস্তি। তয়িফাতুম মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের একটি দল।
এখানে মু’মিন বলতে রাসুলের কমিউনিটির বর্গ হওয়ার নির্দেশনাই বেশি।
২৪:১২ এখানে মুমিন বলতে মুসলিমদেরকেই নির্দেশনা করছে।
২:৭৬ আর যখন তারা তাদের সাথে মিলিত হয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি’। -- এখানে স্পষ্টতই প্রথম তারা হলো আহলে কিতাব এবং যাদের সাথে মিলিত হয় তারা মুসলিম মুমিন। পূর্বের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এটি বোঝা যায়।
৫:৯৫
২:২৮৫ মুমিনদের সংজ্ঞা এখানে পরিস্কার
২৪:৬২ মুমিনদের সংজ্ঞার আরেকটি আয়াত
৩:৬৮
৪৯:৬
৮৫:১০
৮:৭৪ মু’মিনূনা হাক্বক্বান = তারাই হক্কানী মু’মিন/ যথাযথ মু’মিন এর সংজ্ঞা
৪:১৪৪
৩৩:৫০ - এখানে বিধান নতুন বিশ্বাসীদের জন্য
৮৫:১০
উপসংহার
ইয়া আইয়্যুহাল্লাজীনা আমানু এই সম্বোধনে কেবলমাত্র আহলে কিতাবীদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর কুরআনে মুসলিমদের শুধু ’মুসলিম’ নামে সম্বোধন করা হয়েছে এটা আমাদের সমন্বিত অধ্যয়নে দৃশ্যমান হয়নি।
বরং আহলে কিতাবীদের মধ্যে যেমন মুমিন বা বিশ্বাসী বলা হয়েছে; এর বাইরে মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ ও তার প্রতি নাযিলকৃত বাণীতে বিশ্বাসীদেরও এই সম্বোধনে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।