ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।
উদ্দেশ্য
ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।
প্রকাশিত বইসমূহ
শিশুশ্রম প্রতিরোধে কুরআনের নির্দেশনা
১২ জুন ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ২০০২ সালে দিবসটির সূচনা করে, যেন বিশ্বব্যাপী শিশু শ্রমের পরিমাণ হ্রাসের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। ২০১৫ সালে বিশ্ব নেতাদের দ্বারা গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) শিশু শ্রমের অবসানের জন্য একটি নতুন প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত করে, যাতে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বে শিশু শ্রম বন্ধ করতে প্রচেষ্টা করা হবে।
শিশু শ্রম প্রতিরোধের লক্ষ্যমাত্রায় শিশুশ্রম বলতে শিশুদের দ্বারা করা সমস্ত কাজকে বুঝায় না। শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের কাজে অংশগ্রহণ যা তাদের স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে প্রভাবিত করে না বা তাদের স্কুলে হস্তক্ষেপ করে না, তাকে সাধারণত ইতিবাচক কিছু হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বাড়ির আশেপাশে তাদের বাবা-মাকে সাহায্য করা, পারিবারিক ব্যবসায় এরূপ সহায়তা করা যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশকে বিপন্ন বা বাধাগ্রস্ত করে না ইত্যাদি। সুতরাং নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে উপার্জনমূলক কাজে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে শ্রম দিতে হয়, যা শিশু বয়সের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, বরং তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে সেটাকেই “শিশুশ্রম” শব্দে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আর ১৭ বছর বয়স পর্যন্ত তাদেরকে শিশু বিবেচনা করে এ সময়ে তাদেরকে এরূপ শ্রমে বাধ্য করাকে প্রতিরোধ করাকেই শিশু শ্রম প্রতিরোধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
শিশুশ্রম তথা শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে কর্মে নিযুক্ত করা একটি অমানবিক বিষয়। তা সত্ত্বেও বিশ্বব্যাপী এখনো শিশুশ্রম বন্ধ করা যায় নি, বরং শিশুদেরকে দিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হয়। অথচ শিশুরা দুর্বল বিধায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করা তাদের সাধ্যের বাহিরে তথা তাদের উপর একটি কষ্টদায়ক বিষয়। শিশুদের অধিকার হচ্ছে যে, তাদেরকে শ্রমে খাটানো হবে না, বরং তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দিয়ে সুষ্ঠুভাবে বিকাশ লাভের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদেরকে শ্রমে নিযুক্ত করা তাদের প্রতি অবিচার এবং একই সাথে তা সমাজের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ শিশুদেরকে বিনা শ্রমে মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণের ব্যবস্থা করে তাদেরকে সঠিকভাবে শিক্ষার সুযোগ দেয়ার মাধ্যমেই তৈরি হতে পারে ভবিষ্যতের যোগ্য নেতৃত্ব, মেধাবী শিক্ষক-চিকিৎসক-বিজ্ঞানী-দার্শনিক এবং দক্ষ ব্যবস্থাপক ও শ্রমিক। তাই শিশুশ্রম প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’ পালন করা হয়।
আল কুরআনে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান বা জীবিকা উপার্জনের জন্য শ্রমের নির্দেশ রয়েছে, যার ফলে ইচ্ছাকৃত বেকারত্বের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু শ্রমের জন্য শ্রমের উপযুক্ত শক্তি-সামর্থ্যের অধিকারী হতে হবে। কুরআনে শিশুদেরকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সুতরাং তারা শ্রমের জন্য উপযুক্ত নয়। কুরআনে আল্লাহর বিধানগত নীতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত দায়িত্বভার অর্পণ করেন না।” এ থেকে “কাউকে সাধ্যাতীত দায়িত্বভার অপর্ণ না করার নীতি” সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া যায়। যেহেতু শিশুরা শ্রমের উপযুক্ত নয়, শ্রম তাদের সাধ্যাতীত বিষয়, শ্রমিক হিসেবে কাজ করার মতো শক্তিসামর্থ্যের বয়সের পূর্ব অবস্থায় রয়েছে, তাই শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে খাটানো যাবে না। বরং শিশুরা যেন শ্রমিক হিসেবে খাটা ছাড়াই তাদের জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণ করতে পারে সেজন্য সমাজ সাধারণভাবে দায়িত্বশীল, যে বিষয়টি আল্লাহ বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
শিশুকাল হলো অন্যদের আদর-যত্নে লালিত-পালিত হওয়ার বয়স। এ প্রতিপালনে প্রধানত পিতা-মাতা ভূমিকা পালন করেন, আর পিতৃহারা সন্তানের ক্ষেত্রে সমাজের কাউকে অভিভাবকত্ব গ্রহণ করতে হবে। কেউ যেন অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ না করে, কারণ তা আগুন ভক্ষণের নামান্তর। নিজ সন্তানকে দুর্বল অবস্থায় রেখে গেলে যে উৎকণ্ঠা কাজ করে সেদিকে লক্ষ্য রেখে ইয়াতীমের প্রতি সদয় হতে হবে। সুতরাং ইয়াতীম এবং অনুরূপভাবে যেসব শিশুর পিতার পক্ষে তাদের মৌলিক চাহিদা পরিপূরণ করা সম্ভব হয় না, তাদেরকে যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা করা সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। শিশুশ্রম প্রতিষ্ঠার সাথে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন ও তাদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। নিম্নে এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন আয়াত উল্লেখ করা হলো:
৬:১৫২ :: আর তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হয়ো না, সুন্দরতম পন্থা ছাড়া। যতক্ষণ না সে স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়সে উপনীত হয়, আর পরিমাপ ও ওজন পূর্ণ করবে ইনসাফের সাথে। আমি কারো উপর তার সাধ্যাতীত দায়িত্বভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ন্যায়সঙ্গত কথা বলো, যদিও সে (অভিযোগের যোগ্য ব্যক্তি) আত্মীয় হয় এবং আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।
“আল্লাহ কারো উপর তার সাধ্যাতীত দায়িত্বভার অর্পণ করেন না” তথ্যটি ২:২৩৩, ২:২৮৬, ৭:৪২, ২৩:৬২ আয়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে।
৪:১২৭ :: তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায় (ইয়াতীম ছেলেমেয়ে আছে এমন) নারীদের বিষয়ে। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বিষয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন। আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) যা তোমাদের কাছে এই কিতাবে আবৃত্তি করা হচ্ছে, ঐ বিধবা নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের বিষয়ে, যাদেরকে (ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের যে মায়েদেরকে) তোমরা তা দিচ্ছো না যা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকার হিসেবে, অথচ তোমরা আগ্রহ করছো তাদেরকে বিবাহ করতে। আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) দুর্বল শিশুদের বিষয়ে। আর তোমরা কার্যনির্বাহে প্রতিষ্ঠিত থাকো ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের বিষয়ে ন্যায়বিচারের সাথে। আর কল্যাণকর কাজ থেকে তোমরা যা-ই করো নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।
৪:৬ :: আর ইয়াতীম ছেলেমেয়েদেরকে পরীক্ষা করো যখন তারা বিয়ে করার বয়সে পৌঁছে যায়। তারপর যদি তোমরা তাদের মধ্যে সঠিক বোধবুদ্ধি (সম্পদের সঙ্গত ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা) অনুভব করো তাহলে তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দাও। আর তোমরা তাদের সম্পদ খেয়ো না অপচয় করে এবং তারা বড় হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে। আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়। অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের উপর তোমরা সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
৪:৯-১০ :: আর তারা যেন ভয় করে যে, যদি তারা তাদের পেছনে দুর্বল-অসহায় সন্তানাদি রেখে যেতো তবে তারা তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতো, সুতরাং তারা যেন আল্লাহ সচেতন হয় এবং সঙ্গত কথা বলে। নিশ্চয় যারা যুলুম সহকারে ইয়াতীমের মালসম্পদ ভক্ষণ করে, বস্তুত তারা তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে, আর শীঘ্রই তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।
১৭:২৪ :: আর তাদের (বৃদ্ধ পিতামাতার) জন্য সদয়ভাবে নম্রতার বাহু প্রসারিত করে দাও এবং বলো, “আমার প্রভু, তাদের প্রতি দয়া করুন যেমন তারা আমার ছোটকালে আমাকে লালন-পালন করেছেন।”
২৮:২৬ :: সেই দুই নারীর একজন বললো, “হে আব্বু, তুমি তাকে (মূসাকে) শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করো। নিশ্চয় তোমার শ্রমিক হিসেবে সে-ই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।”
১৬:৯০ :: নিশ্চয় আল্লাহ আদেশ দেন আদল ও ইহসান (সুবিচার ও বদান্যতা) এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার জন্য এবং তিনি নিষেধ করেন অশ্লীলতা, অন্যায় কাজ ও সীমালঙ্ঘন থেকে। তিনি তোমাদেরকে সদুপদেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করো।
২:২১৫ :: তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে তারা কী ব্যয় করবে? বলো, “তোমরা যে উত্তম সম্পদই ব্যয় করো তা ব্যয় করবে পিতামাতার জন্য এবং নিকটতম আত্মীয়দের জন্য এবং ইয়াতীম ছেলেমেয়ের জন্য এবং মিসকীনদের জন্য এবং ছিন্নমূল /বাস্তুহারা / উদ্বাস্তুদের জন্য। আর তোমরা যে উত্তম কাজই করবে আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত”।
উপরোল্লেখিত আয়াতসমূহে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসারে শিশুশ্রম প্রতিরোধ করার জন্য সঠিক শিক্ষা, সচেতনতা এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। শুধুমাত্র শিশু শ্রমিক নিয়োগ নিষিদ্ধ করাই যথেষ্ট নয়, বরং যে কারণে শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হয় সেই দারিদ্র দূরীকরণে এবং যেসব শিশুর পিতামাতা নেই বা থাকলেও তাদের মৌলিক চাহিদা পরিপূরণে সক্ষম নয়, তাদের মৌলিক চাহিদা পরিপূরণে সামাজিক সহযোগিতা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার বিকল্প নেই।
প্রথম প্রকাশ : সাপ্তাহিক প্রবাস, ভলিউম ৯, ইস্যু ৪৪৩, শুক্রবার, ১৭ জুন ২০২২
On the Reinterpretation of Iman in Islam This video explores a provocative reinterpretation of one of Islam’s fundamental concepts: iman. The author Dr. Hal al-Sed Hassan argues that the traditional understanding of iman as “faith” or “belief” has been deliberately misconstrued over centuries, and that this misunderstanding has led to significant social and theological consequences within the Islamic […]
সাধারন ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে একটি কমন ধারনা হলো: ইসলামের সংবিধান হলো কুরআন এবং আধুনিক সময়ে যেসব সেকুলার সংবিধান করা হয় তা হলো "তাগুত"। বিষয়টি কি সত্যিই এরকম সাদা কালো? কুরআন কি সংবিধানি? একজন ইসলামে বিশ্বাসীর পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে এই প্রশ্নের মিমাংসায় পৌছতে হলে আমাদের প্রথমে কয়েকটি কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে এগুতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে […]
মুসলিমদের জীবন বিধানের সকল মূলনীতি কোরআনে আল্লাহ বলে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তোমার ওপর যে কিতাব (কোরআন) নাজিল করা হয়েছে তাতে রয়েছে সকল বিষয়ের বর্ণনা, হেদায়েত, রহমত এবং মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ।’ (সুরা নাহল, আয়াত: ৮৯) দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশের মুসলিমদের কোরআন দেখে শুদ্ধ করে পড়ার প্রতি গুরুত্ব থাকলেও ইসলামি জীবন বিধানের মৌলিক উৎস […]
১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের জন্য ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে’ যে মূলনীতিসমূহ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য যে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন’ কর্তৃক পেশ করা হয়েছে তাতে অন্যতম তিনটি মূলনীতি হলো, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’। বস্তুত এই মূলনীতিসমূহ […]