আমি রহমতে পূর্ণ এই কিতাব নাজেল করেছি, অতএব এর অনুসরণ কর এবং সংযত হও - যেন তোমরা রহমত পেতে পার।
যেন তোমরা বলতে না পারো যে, কেবল আমাদের আগের দু'দলের জন্যই কিতাব নাযিল হয়েছিল আর আমরা তাদের পড়া বিষয় সম্বন্ধে জানতাম না।
অথবা তোমরা যাতে বলতে না পার যে, যদি আমাদের উপর কিতাব নাজেল হতে; তােবে তাদের চেয়ে আমরাই অধিক সরল পথে থাকতাম; তাই তোমাদের রবের তরফ থেকে তোমাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ নেক রাস্তা ও রহমত হাজির হয়েছে; এর পর যে আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা (কাযযাবা) বলবে ও সেগুলো থেকে ফিরে যাবে, তবে তার চেয়ে কে বেশী জালেম?
যারা আমার আয়াতগুলো থেকে ফিরে যায় তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য আমি তাদেরকে জঘন্য আজাবে প্রতিফল দেব।
সূরা আনআম, আয়াত ১৫৫-১৫৭। বাংলা তরজমা মহম্মদ পিয়ার আলী নাজির (আল কুরআনের অনুবাদ, দ্বিতীয় সংরস্করণ, ১৯৮৩)
রহিত আয়াতের নামে আয়াত প্রত্যাখ্যানের 'বৈধতা'
প্রচলিত 'ইসলামের' ফিকহ ও তাফসীর বিষয়ক শাস্ত্রে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত বিষয়ে একটা মতবাদের জন্ম হয়েছে যাকে বলা হয 'আয়াত রহিত করা'। আরবীতে নসখ / মানসুখ বা ইংরেজীতে Abrogation। কুরআনের আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করার একটি অপকৌশল হিসেবে অনেক আয়াতকে রহিত হয়ে গেছে, পরের আয়াতের মাধ্যমে পূর্বের এই আয়াত বাতিল হয়ে গেছে সুতরাং সেই আয়াতের আর প্রয়োজন নাই- এ ধরনের কথা বলা হয় এবং এটিকে একটি শাস্ত্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।। রাসুল অমুক জিনিস বলেছেন, এখন রাসুলের হাদিসের কারনে পূর্বের অমুক আয়াত রহিত ধরে নেওয়া হবে ইত্যাদি নানান থিওরী আছে। রাসুলের নামে তার ওফারেত ২৫০ থেকে ৩০০ এবং ক্ষেত্র বিশেষে আরো অনেক পরে বানোয়াট, অনির্ভরযোগ্য হাদীসের জন্ম দিয়ে এগুলো যুক্ত করা হয়েছে তথাকথিত মাযহাবসমূহে।
তথাকথিত স্কলার থেকে ভিতর এরকম আয়াত কতগুলো তা নিয়ে কোন নির্দিষ্টতা নেই, বরং এই সংখ্যা বিভিন্ন স্কুল অফ থটসে ১০ থেকে ৫০০টির মতো ধরা হয়। শয়তানের বিভাজন নীতির কি 'চমৎকার' উদাহরন। স্কলাররা যুগে যুগে নিজেরাই এই রহিত হওয়ার আয়াতের সংখ্যা একটা বড় তালিকা থেকে ধীরে ধীরে ছোট করে এনেছে। যারা কুরআনের দ্বীনের একমাত্র দলিল মনে করে, তাদের উপলব্ধি হলো, কুরআনের একটিও রহতি হওয়ার আয়াত নেই।
প্রকৃত বাস্তবতা হলো কুরআনের কোন আয়াত রহিত হয়ে গেছে এ ধরনের মতবাদের কোন স্থান কুরআনে নেই। বরং কুরআনকে একটি সম্পুর্ণ বিধান হিসেবে পাঠ করার দায়িত্ব সকলের। এই সম্পূর্ণতার মধ্যে কোন আয়াত অন্য আয়াতের পরিপূরক, একটি আয়াত অন্য আয়াতে আরো বিশদ ব্যাখ্যা পেয়েছে, একটি গুরুত্ব অন্যটি দিয়ে বিশ্লেষিত হয়েছে।
কুরআনের সিস্টেম মিনিং বা সামগ্রিকতাকে আমলে নিয়ে পড়ার যে গুরুত্ব, নখসের মাধ্যকে তাকে খাঁটৈা করা হয় এবং একই সাথে স্রষ্টার নাযিল করা বিধানের প্রতি করা হয় তাচ্ছিল্য। আল্লাহর বিধানকে যেন অনেকটা ছেলে খেলায় নামিয়ে নিয়ে আসা।
পরিতাপের বিষয় যে সুরা আনআমের ১৫৫ থেকে ১৫৭ নং আয়াত এবং কুরআনের অন্যান্য স্থানের আল্লাহ এই সতর্কতা উপস্থাপন করেছেন যে আল্লাহর বিধানের আয়াতকে যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করে ও তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার থেকে বড় সত্যের প্রতি ও আল্লাহর প্রতি জুলুমকারী আর কেউ নেই। আল্লাহর আয়াত জেনে বুঝে প্রত্যাখ্যানকারীকে সবচেয়ে বড় জালিম আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এটা বলাই যায় যে "ইসলামী হালাল পোষাকে" আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার যে চক্রান্ত তার একটি হলো "আয়াত রহিত" হওয়ার গল্প।
... (চলমান - এই আর্টিকেলটি Work in Progress Version এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পরবর্তীতে পুনরায় বর্ধন ও আপডেট করার হবে)
নখস বিষয়ক উইকিপিডিয়া আর্টিকেল