দি  ইন্সটিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন (ইক্বরা)

লক্ষ্য

ইক্বরার লক্ষ্য হলো বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য স্রষ্টার ঐশী বাণীর সমন্বিত অধ্যয়ন ও সার্বজনীন প্রয়োগের জন্য জ্ঞানদীপ্ত অনুশীলন।

উদ্দেশ্য

ইক্বরার উদ্দেশ্য হলো কুরআনের বাণীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধ অনুধাবনের জন্য টেকসই ভিত্তি প্রস্তুত করা এবং জীবন ও সমাজের প্রায়োগিকতার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানভিত্তিক ফ্রেমওয়ার্ক বা কাঠামো নির্মাণ।

প্রকাশিত বইসমূহ

আনুষ্ঠানিক নামাজের উৎস সন্ধানে

১.
বাঙ্গালী মুলকের একটা মসজিদে জামাতের নামাজ খেয়াল করেন। একজন ইমামের পেছনে অনেকগুলো মানুষ নামাজ পড়ছে। প্রায় সকল জামাতেই যারা পেছনে নামাজ পড়ছেন তাদের কেউই --- কি পড়া হচ্ছে, সেই আরবী বাক্যে কি উপদেশ, পরামর্শ, আদেশ নিষেধ আছে কিছুই বুঝতে পারছে না। অনেক ইমামও দেখা যায় কি পড়ছে তার স্বর উচ্চারন করছে বটে, কিন্তু তিনিও অর্থ বুঝতে পারছেন না।

যারা একাকী ঘরে নামাজ পড়ছে তাদের অবস্থাও তথৈবচ। রমজান মাসের তারাবীরও একই বাস্তবতা।

২.
নবী মুহাম্মদ সা. এর জামানায় নামাজ কেমন ছিলো? এর সূচনাটাই বা কিভাবে হলো? কেনই বা নামাজ? এই প্রশ্নগুলার গড় উত্তর আপনি মোল্লা-মাওলানাদের কাছে পাবেন বিভিন্ন কেচ্ছা কাহিনীর আবরণ এবং প্রশ্নবিদ্ধ হাদীসের জোড়াতালি দিয়ে।

কিন্তু আপনি যদি একটু ঘেঁটে দেখেন দেখবেন নামাজ বিষয়ে অনেক গ্যাপ আছে।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটা গ্যাপ হলো:
এক// নামাজ কিভাবে আসলো মুহাম্মদ সা. এর কাছে তার পিছনে যে মিরাজের হাদীস বলা হয় তা কোন মেক সেন্স করে না। ৫০ ওয়াক্ত থেকে কমায়ে কমায়ে ৫ ওয়াক্তের যে গল্প তাতে স্রষ্টার তুলনাহীন সন্মান ও মর্যাদা ও প্রজ্ঞাকে আন্ডার এস্টিমেট করে মুসা নবীকে আল্লাহর থেকেও বেশি প্রজ্ঞাবান দেখানো থেকে পুরাই স্পষ্ট যে এই কাহিনী তালমুদিক প্রভাবে প্রভাবিত এবং সম্ভবত যোরোয়াস্ত্রিয়ান আলেমদের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে প্রসবিত।

দুই// এখন যেভাবে আনুষ্ঠানিক নামাজ পড়া হয় মূল গ্রন্থ কুরআনে সেই রিচুয়ালের কোনো কাঠামো স্পষ্ট না। কুরআনে সালাত তা অনেক প্রসস্ত অর্থে ব্যবহৃত একটি টার্ম - সকল রাসুলই সালাত করেছেন বলা হচ্ছে। মুসার কওম যে কাঠামোতে সালাত করে, ইসার কওম ভিন্ন কাঠামোতে করে। তার মানে সালাতের একটা এসেন্স আছে, রূহানিয়াত আছে। সালাত কেবলমাত্র বাহ্যিক কাঠােমোবদ্ধ না।

তাই পুরা কুরআনে কাঠামোবদ্ধ ‍রিচুয়ালের তেমন অস্তিত্ত্ব বা এম্ফাসিস নাই। আপনার পরিচিত মাওলানাকে সালাত শব্দের অর্থ জিজ্ঞেস করলেই তাদের জ্ঞানপুকুরের খোঁজ পেয়ে যাবেন। ম্যাক্সিমাম টাইটেল পাশ মাওলানা সালাত শব্দের সঠিক অর্থ আরবী থেকে বলতে পারে না।

তিন// সহীহ হাদীসের কালেকশন থেকে একটা বা একাধিক কোন হাদীস খুঁজে পাবেন না যেখানে দাড়ানো থেকে শুরু করে সালাম ফিরানো পর্যন্ত যত অঙ্গভঙ্গি করা হয় তার সম্পূর্ণ বর্ণনা পাবেন। অর্থাৎ পুরা নামায কিভাবে পড়া হতো রাসুলের সময়ে তার কোন কন্টিনুয়াল বর্ণনা নাই। রাসুলও তা বলে যায় নাই। বলার প্রয়োজনও ছিলো না, কারন আল্লাহ তা সীমাবদ্ধ করে দেন নাই।

চার// জুমুয়া বা জুম্মা মানে জমায়েত - যেদিন কমিউনিটি জমায়েত হতো। সেখান থেকেই জুম্মার নামাজ যা শুক্রবার দুপুরে পড়া হয়। জুম্মার নামাজের আগে গুরুত্ব দিয়ে খুতবা পড়া হয়। রাসুলের তরফ থেকে একটা খুতবাও কোন হাদীসে লিপিবদ্ধ নাই। খুতবার সামান্য অংশ নাই। অথচ তাঁর বেডরুমের বিষয়ও হাদীসে লিপিবদ্ধ। বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ গ্যাপ।

এরকম বিভিন্ন খটকা থেকে ২০২০ সালের দিকে আমি একটা ব্যক্তিগত প্রজেক্ট হাতে নেই। ব্যক্তিগত এই কারনে যে এখানে নিজের জন্য সত্য অনুসন্ধান থেকেই শুরু করা। যে ধর্মে আমার জন্ম তা যদি কুশিক্ষিত, অর্ধ-শিক্ষিত কিছু মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হয় তা আমার নিজের আখেরাতকে রিস্কে ফেলে দিবে। এমনিতেও ইসলামের ফর্মেশন পিরিয়ডে প্রচুর সেন্সরশিপ, মারামারি, কাটাকাটি, আইডিওলজিক্যাল জেনোসাইড সবই হইছে। সুতরাং ঢালাও যেকোন কিছু মেনে নেওয়া যেকোন বুদ্ধিমান মুসলিমের জন্য রিস্কি।

তো এই ব্যক্তিগত প্রজেক্টের বিষয়টা ছিলো এরকম: কোন রকম সেকেন্ডারী সোর্স ছাড়া, কেবলমাত্র কুরআন থেকে ফার্স্ট প্রিন্সিপ্যাল পদ্ধতি অনুসরন করে আসলে রাসুলের কাছে সালাত, যাকাত, সিয়াম ইত্যাদি বিষয়ে কি নির্দেশ এসেছিলো স্রষ্টার তরফ থেকে সেটা অনুসন্ধান করা। এই প্রজেক্টের নাম দি ইক্বরা বা The Institute for Quranic Research & Application. ওয়েবসাইটি দি ইক্বরা ডট অর্গ (The IQRA . org)। এই ওয়েবসাইটে গবেষণা ও লেখালিখির সব কিছু পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত। গবেষনায় সামনে থেকে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন শওকত জাওহার।

৩.
রাসুলের জীবদ্ধশায় কোন হাদীসের অস্তিত্ব ছিলো না, ফিকহের দ্বন্দ্ব ছিলো না, তাফসির বা হুজুরের বানোয়াট ওয়াজের প্রভাব ছিলো না - হাদীসে এসেছে ২৫০ থেকে ৩০০ বছর পর; ফিকহের জন্ম তারও পরে (ফিকহ শাস্ত্র স্টেবল হয় বেশ পরে)।

সুতরাং অরিজিনাল নামাজের কাঠামো কেমন ছিলো সেটা বোঝার জন্য যদি হাদীস ও তাফসীর বাদ দেন তাহলে নামাজ / সালাত নিয়ে একটা অন্য ধরনের সম্ভাবনা তৈরী হয়। সম্ভাবনা এই কারনে বলছি যে যারা ইতিহাস নিয়ে গবেষনা করেন তারা নিরপেক্ষভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌছে গেছেন যে রাসুলের জীবন ও সেই সমাজ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠভাবে এবং নিশ্চিত করে তথ্য জানা সম্ভব নয়। আর অমুকে বলেছে তমুকে শুনেছে সেই তমুক আবার ঘমুকের কাছে শুনেছে যে তিনি এটা বলেছেন বা বলে থাকতে পারে বলে আমরা ধরে নিচ্ছি - স্টাইলে যে হাদীস আমাদের কাছে এসেছে তার গ্রহনযোগ্যতা মাকড়সার বাসা থেকেও দূর্বল।


যে প্রশ্নের অনুসন্ধান থেকে এই সূচনা সেটা হলো: রাসুল সা. এর মসজিদে সালাতের অধিবেশনের আসলে ভূমিকা কি ছিলো?

এখন যারা প্রতিদিন এই যে বারবার নামাজ পড়েন - তারা পড়েন কারন হুজুর বলছে, বাপ দাদারা করেছেন। অর্থাৎ যে গনেশের পূজা করে; সেও কিন্তু কেন করে বললে ঠাকুর বলেছে, বাপ দাদারা করেছেনে। বস্তুগত দুই কর্মের - কেন করিটা বরাবর সেইম।

যেটাকে ফার্সি শব্দে আমরা নামাজ বলি, কুরআনের পরিভাষায় যেটা সালাত, সেটা কি প্রথম থেকেই রিয়েলিটি বিবর্জিত একটা শূণ্য ও শুস্ক রিচুয়াল ছিলো যার সাথে বাস্তবতার, উপযোগিতার কোন সম্পর্ক নাই? থাকলে কি সেই উপযোগিতা ও প্রয়োজনীয়তা, সেটা থেকে কি লাভ হতো? - এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টায় এই ২য় পর্ব।

সালাত সম্পর্কে কেবলমাত্র কুরআন থেকে গভীর অধ্যায়ন, যেসব আয়াতে সালাত ও একই ধাতুর অন্যান্য শব্দ সকল উপস্থিতি - সেই আয়াত এবং সে আয়াতের আগে পরের কনটেক্সট সব মিলিয়ে সত্যিকারের অধ্যায়নের চেষ্টায় নতুন অনেক পর্যবেক্ষন পাওয়া যায়।

আমি প্রথমে এর সারাংশ ভার্ষন, একদম সংক্ষিপ্ত থিসিস বর্ণনা করবো। তারপর অন্যান্য পোস্টে ধারাবাহিকভাবে আমার থিসিস বা প্রস্তাবনার পেছনে কার্যকারন, যুক্তি, কুরআন থেকে ভ্যালিডেশন দিতে থাকবো।

৫.
রাসুলের সা. কাছে যখন নিয়মিত ওহী নাযিল হতো, তিনি ঘরে ঘরে গিয়ে সেটা প্রচার করতেন না। বরং তিনি তার কার্যালয় - ইয়াসরিব বা মদীনার মসজিদে-নববীতে নির্দিষ্ট সময়ে দাড়িয়ে সেই আয়াতগুলো / ওহীগুলো পাঠ করতেন, ধীরে ধীরে শুনাতেন।

এই অধিবেশনের নির্দিষ্ট সময়গুলো স্রষ্টার তরফ থেকে হিন্টেড ছিলো প্রাকৃতিক রিদমের সাথে মিল করে যেমন: সুর্যাদয়ের আগে (কাজ শুরুর আগে), সুর্য ঢলে গিয়ে সন্ধ্যায় যখন মানুষ কর্ম-বিরতি নেয় তখন ইত্যাদি সময়ে। খেয়াল করবেন সমাজে বিভিন্ন পেশার মানুষ থাকে। সবাই সব অধিবেশনে আসতে পারবে না। তাই একাধিক অধিবেশনের ব্যবস্থা ছিলো।

মানুষ ব্যাচে ব্যাচে এসে রাসুল যেমন দাড়িয়ে পাঠ করতেন, তেমনি তার পেছনে দাড়িয়ে শুনতেন এবং চলে যেতেন। অনেকে ওহী পাঠের সময়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলতো, তাই কুরআনে পাবেন যখন স্রষ্টার ওহী পাঠ করা হয় তখন চুপ থাকতে এবং মনোযোগ দিয়ে শুনার আয়াতও (৭:২০৪) আছে।

রাসুল যখন স্রষ্টার ওহী পাঠ করছেন, নিজের কথা বলছেন না, এটা বোঝার জন্য রাসুল শুরুতে বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম বলে নিতেন যা এক ধরনের নির্দেশক ছিলো যে এরপর যা বলা হবে সেটা মানুষ মুহাম্মদের নয়, বরং স্রষ্টার তরফ থেকে আসা বার্তা।

আমরা জানি যে কোন গুরুত্বপূর্ণ এনাউন্সমেন্ট, রাজা-বাদশার ফরমান ইত্যাদি যখন পাঠ করা হয়; তখন বাণীর গুরুত্বের কারনে সেটা দাড়িয়ে পাঠ করাই ছিলো রীতি। রাসুল যখন স্বয়ং স্রষ্টার বাণী পাঠ করতেন, তিনি স্মৃতি থেকে করতেন (লিখিত পাতা বা বই থেকে নয়) এবং সেটা পাঠ করতেন দাড়িয়ে, স্রষ্টার বাণীর প্রতি প্রাপ্য শ্রদ্ধার কারনে। খেয়াল করবেন এখনো নামাজে বসা অবস্থায় কোন কুরআনের আয়াত পাঠ করা হয় না।

রাসুল যখন দাড়িয়ে কুরআন শুনাতেন, তখন তাঁর পেছনে নিরপেক্ষ, নতুন বিশ্বাসী, বিদ্রুপকারী, মুনাফেক ও অবিশ্বাসী অথচ কৌতুহলী - সব ধরনের মদীনাবাসীরাই সেখানে উপস্থিত হতো।

মুনাফিকরাও যে রাসুলের ধর্ম অধিবেশনে আসতো তার প্রমাণ:

৪:১৪২ :: নিশ্চয় মুনাফিকগণ আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়, অথচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় রেখেছেন। এবং যখন তারা সালাতের জন্য দাঁড়ায়, তখন তারা দাঁড়ায় অনাগ্রহ-অলসতার সাথে, মানুষকে দেখানোর জন্য। এবং তারা আল্লাহকে অত্যন্ত অল্পই স্মরণ করে।

মদীনার ইহুদীদেরও আপনি খুজে পাবেন কুরআনে সালাতের আয়াতে কারন রাসুলের যে কমিউনিটি সেটা ছিলো সব ধরনের বিশ্বাসীদের মিশেল। আধুনিক স্কলারাও এখন একমত যে রাসুলে কমিউনিটি ছিলো সকল রকম মানুষের সমাহার। ধর্মহীন, ইহুদী, প্রাকৃতিক ধর্মে বিশ্বাসী সবাই। আবারও প্রমান দিচ্ছি:

৪:১৬২ :: কিন্তু তাদের (ইয়াহুদদের) মধ্যকার জ্ঞানে সুগভীর ব্যক্তিবর্গ (রাছিখূনা ফিল ইলম) এবং মু’মিনগণ তাতে বিশ্বাস করে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছিলো (তাওরাত) এবং (তারা) সালাত প্রতিষ্ঠাকারী এবং যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী। তারাই এমন লোক আমি শীঘ্রই যাদেরকে মহাপুরস্কার দেবো।

আবার পল্লী বেদুয়িনরাও আসতো, অন্য এলাকার মানুষরাও আসতো।

খেয়াল করবেন মদীনায় রাসুল দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন এবং সেখানে এই অধিবেশন তার কার্যালয়ে তিনি নিয়মিত করতেন কেননা সেটাই ছিলো তার আশেপাশের মানুষকে স্রষ্টার বিধান পড়ে শুনানোর একমাত্র পদ্ধতি। এভাবেই কুরআন ও তার মিশন মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।

যে সমাজে কোন আইন কানুনের বালাই নেই সেখানে তিনি প্রিমিটিভ আইনের বিষয়ে সিটিজেনদের শিখাচ্ছেন।

এই পদ্ধতিতে যারা অনুপ্রাণিত হতো, তারা আবার সেই বাণী নিজেদের গোত্র, পরিবারকে দুইলাইন, পাঁচ আয়াত আকারে পড়ে শোনাতো। যে সমাজে মানুষ মানুষের দাস, সেখানে সব মানুষ আল্লাহর দাস কথাটা বিপ্লবী বাণীর চেয়ে কম না। যেখানে কুসংস্কার সমাজের পড়তে পড়তে সেখানে সামান্য সভ্য সংস্কার ছিলো তাদের জগতে মহাজাগতিক উল্কাপিন্ডের আছড়ে পড়া থেকেও অভূতপূর্ব।

এভাবেই রাসুলের কাছে যে বার্তা আসে সেটা প্রচারিত হয়। সেখানে আর কোন মিডিয়া নাই, ছাপাখানা ছিলো না, কাগজ সহজলভ্য কিছু নয় তখনও।

আপনি যখন কাছের এবং দূরের অনেক মানুষকে কিছু পৌছাতে চান, তখন আপনাকে সেটা নিরবিচ্ছিন্ন, নির্দিষ্ট স্থানে, সুনির্দিষ্ট সময়ে করে যাওয়াই সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর। রাসুল সা. সেটাই করতেন তার মসজিদে দাড়িয়ে। এই অধিবেশনের শৃঙ্খলার জন্য বাকিরা সারিবদ্ধভাবে দাড়াতো। নিশ্চুপভাবে শুনতো। এই যে শৃঙ্খলভাবে দাড়ানো এটাও অনেক পল্লী বেদুয়িনদের জন্য বিশাল আশ্চর্যের এক ডিসিপ্লিন প্রদর্শনী ছিলো।

সবাই যে ঐ আসরে চুপ থাকতো তা নয়। কিছু কিছু মানুষ উচ্চস্বরে হট্টগোল করতো, কেউ কেউ বিদ্রুপও করতো। কেউ সালাতে রাসুলকে দাড়িয়ে রেখে বাইরে কেনা কাটা, গল্পগুজব, ক্রিড়া কৌতুক দেখতে চলে যেত; পড়ুন সুরা জুমুয়ায়: যখন তারা কোন লেনদেন / ব্যবসা বা খেল-তামাশা দেখে তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে ওর দিকে ছুটে যায়। - ৬২:১১

রাসুলের অধিবেশনগুলো কখন করবেন, সেটা সময়ের সাথে সাথে বিভিন্ন নির্দেশনা পেয়েছেন ঐশী তরফ থেকে। এটাই স্বাভাবিক। এটাই ব্যাখ্যা করে যে সালাতের অধিবেশনের সময় কখনো দুই সময়ে, কখনো ভিন্ন সময়ে। যেমন: ১১:১১৪ :: সালাত প্রতিষ্ঠা করো দিনের দুই প্রান্তে এবং রাতের কাছাকাছি লগ্নে। নিশ্চয় ভালো কাজ মন্দ কাজকে অপসারিত করে। এটা স্মরণকারীদের জন্য স্মরণীয় বিষয়।

আরেক জায়গায় আবার সালাতের অধিবেশনের টাইমিং একটৃু ভিন্ন:
১৭:৭৮ :: সালাত অধিবেশন প্রতিষ্ঠা করো দুলুকিশ শামস (মধ্যাহ্নে সূর্য ঢলে পড়া) থেকে গাছাক্বিল লাইল (রাতের তমসাচ্ছন্নতা) পর্যন্ত সময়কালে। এবং ফজরের কুরআন পাঠ (খুবই গুরুত্বপূর্ণ)। নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ (বিশেষ) প্রত্যক্ষণীয় বিষয়।

খেয়াল করেন কুরআনে একসাথে কোথাও পাঁচ বার ওয়াক্ত নেই। বরং এমন সময় বলা হয়েছে যে সময়ে কৃষক কৃষিতে ব্যস্ত না, ব্যবসায়ী ব্যবসা থেকে অবসর, দাসের তার মনিবের মেষ পালন থেকে ছুটি। আর কুরআন পাঠ ও সেই পাঠকে অন্যদের শুনানোই যে সালাতের মূল উদ্দেশ্য ছিলো সুরা ১৭ এর ৭৮ আয়াতের শেষ অংশ তারই নিদের্শক।

হুজুররা গোজামিল দিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত শুকনা রিচুয়াল বানিয়েছে এবং এটা সম্ভবত আব্বাসী উমাইয়া আমলের কাহিনী। অতিভক্তি চোরের লক্ষ্ন যার অনেক কিছু উমাইয়া ও আব্বাসী আমলে রিচুয়ালে ঢুকানো হয়েছে।

৬.
তার মানে বর্তমান যে মসজিদের ওয়াক্তিয়া নামায তার মূল উৎস রাসুলের সেই দাড়িয়ে কুরআনের আয়াত পাঠ। উদ্দেশ্য ছিলো সরাসরি যা নাযিল হয়েছে তা সবাইকে জানানো, শেখানো। এর ফলে ঐ সমাজ একটি বিশৃঙ্খল সমাজ থেকে শৃঙ্খল সমাজে পরিণত হয় কেননা প্রতিটি সিটিজেন যখন সিটিজেন চার্টার জানেন ও মানেন তখন সেই সমাজ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেই।

আমরা এখন কাঠামোটাকে বজায় রেখেছি সম্পুর্ণ উদ্দেশ্যকে ইগনোর করে।

এটা অনেকটা এরকম যে একজন ছাত্র প্রতিদিন স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যায়, ক্লাস করে - কিন্তু কোন লেখা পড়া হয় না। আপনি বলতে পারেন, স্কুল কি তাহলে উঠিয়ে দিতে হবে। না, কিন্তু লেখাপড়া না হলে স্কুলে যাওয়া আসাই নিশ্চই কেবলমাত্র স্কুলের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ঠিক তেমনি মসজিদে যাওয়া আসা আর না বুঝে সিজদা দিয়ে চলে আসা নামাজের উদ্দেশ্য নয়।

একইভাবে আমাদের মসজিদে নামাজের কাঠামো আছে কিন্তু উদ্দেশ্য বিহীন সম্পুর্ণ ব্যর্থ একটি রিচুয়াল। বিশেষ করে মসজিদে জামাতে পড়ানো নামায।

৭.
আসমানী ধর্মগুলো প্রধানত ইহকালীন সমস্যা সমাধানের জন্য যুগে যুগে এসেছে। রাসুলের কুরআনের বাণীও ঐ সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হিসেবে এসেছে। যাদের জন্য এসেছে তাদের মধ্যে সেই বাণীর প্রচারের জন্য নবী মুহাম্মদ সা. ঘরে ঘরে গিয়ে কড়া নাড়তেন না, তাবলীগের কায়দায় ব্যবসাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিরক্ত করে সো কলড নসিহত করতেন না, সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপে নতুন নাজিল হওয়া ওহী কপি পেস্ট করতেন না, তার কোন পাবলিক রিলেশন অফিসার ছিলো না। তিনি নিজে বার্তাবাহক হিসেবে যা বার্তা পেতেন তা পড়তেন, বাকিরা শুনতো। Plain and simple but the only thing that worked over a long period of time.

এই প্র্যাক্টিসটাই কি কি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আজকের নামাযে পরিণত হয়েছে তার পুরোটা আবিস্কার করা মুশকিল। তবে সালাত শব্দের অর্থ যে কেবল রিচুয়াল নামাজ নয়, এটা আরবী গ্রামার থেকেই প্রমান করা যায়।

আমাদের গড় হুজুররা সালাত শব্দের অর্থটাও জানেন না। এটাও একটা প্রমান যে নামাজ কেন, এর মাধ্যমে কি ঘটার কথা ছিলো, কি ট্রান্সফরমেশন হওয়া উচিত ছিলো - তা সম্পর্কে তাদের গভীর অজ্ঞতা ও উদাসীনতা।

কুরআনে সালাত শব্দটির প্রয়োগ এবং আরবি ভাষারীতি অনুসারে সালাত শব্দটির যেসব অর্থ পাওয়া যায় তা হলো:
(১) নিবিড় অনুসরণ - To Follow Closely
(২) সংযোগ - Connection
(৩) যোগাযোগ - Communication
(৪) আনুকূল্য/ অনকূলতা - Favor
(৫) সমর্থন, সহযোগিতা - Support
(৬) অনুগ্রহ - Grace
(৭) দুআ বা আশীর্বাদ প্রার্থনা - Prayer, Supplication, Seeking blessing
ইত্যাদি।

সালাতের দুই ধরনের অর্থ হয়: ব্যাপক অর্থ (ভাববাচক, যা স্রষ্টার নির্দেশনার নিবীড় অনুসরণ, বিবেক অনুসারে চলা, যা স্রষ্টা প্রদত্ত, প্রাকৃতিক ও কল্যানময় তার দিকে একনিষ্ট থাকা)

এবং নির্দিষ্ট অর্থ (মনোদৈহিক প্রার্থনা অধিবেশন, সামিষ্টিক ধর্মসভা বা কুরআন শোনার অধিবেশন বা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে পার্সোনাল প্রেয়ার যা স্রষ্টা বা হাইয়ার পাওয়ারের সাথে সংযোগ ও একই সাথে বাণীর স্মরণ অনুশীলন)।

তবে সব ছাপিয়ে সালাত শব্দের মূল অর্থ হলো ‘আল্লাহর বিধানের নিবিড় অনুসরণ’।

সালাত শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ বিষয় নয় এবং আনুষ্ঠানিক সালাতের শিক্ষা বাস্তবায়ন না করলে শুধুমাত্র অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে কোনো পুণ্য ও কল্যাণ নেই (২:১৭৭)।

ঐতিহাসিকভাবে জানা যায় যে, কুরআন নাযিল হওয়ার পূর্বে বা শুরুর দিকে রাসুল মুহাম্মদ সা. কা’বায় সালাত করতেন তার মক্কী জীবনে। সুতরাং মিরাজের আগে নামাজ ছিলো না এটা ভুল তথ্য। গোজামিল দেওয়ার জন্য বানানো একটা ন্যারেটিভ।

আনুষ্ঠানিক বা রিচুয়াল সালাত বলতে স্রষ্টার স্মরণ অনুশীলন বুঝায়, যা সর্বযুগে সর্বকালে সকল সমাজে প্রচলিত ছিলো। স্রষ্টার আরাধনা বিভিন্ন মহাপুরুষ, অবতার, রব্বানী, নবী ও রাসুলরা করে এসেছেন বিভিন্ন ফর্মে ও তাদের স্ব স্ব মাতৃভাষায়।

কুরআন নাযিল হওয়ার বহু আগে নাযিল হয়েছে তাওরাত। বনী ইসরাইলের প্রতিও সালাতের নির্দেশ তথা স্রষ্টার আরাধনা, উপাসনার নির্দেশ ছিলো। ঈসা আ. নিজেও যেমন স্রষ্টার আরাধনা করেছেন, সালাত করেছেন, তেমনি তাঁর অনুসারীরা তাঁর নির্দেশনানুসারে স্রষ্টার কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করতো।

সালাত যে কুরআন নাযিলের মাধ্যমে বা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর সমকাল থেকে শুরু হয়েছে তা নয়। বরং কুরআন থেকে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী নবীদের সময়ও সালাতের নির্দেশ ও অনুশীলন ছিল। নবী ইবরাহীমের সালাত ১৪:৩৭, ১৪:৪০ / নবী ইবরাহীম, লূত, ইসহাক, ইয়াকুব প্রমুখের সালাত ২১:৭৩ / নবী ইসমাইলের সালাত ১৯:৫৫ / নবী মূসার সালাত ২০:১৪ / নবী যাকারিয়ার সালাত ৩:৩৯ / নবী ঈসার সালাত ১৯:৩১

এছাড়াও ২:৮৩ আয়াতে বনী ইসরাইলের সালাত এবং ৩১:১৭ আয়াতে লুকমান এর সালাত প্রসঙ্গ বর্ণিত হয়েছে। ৯৮:৫ আয়াত অনুযায়ী, অতীতে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের সবাইকে সালাতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

কুরআনে সালাতের কঠোর কোনো ফর্ম বা কাঠামো দেওয়া হয়নি। প্রকৃতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বরং আমাদের বলা হয়েছে, কেবল মানুষ নয় অন্যান্য সৃষ্টিও সালাত করে কিন্তু আমরা তাদের সেই সালাত বুঝতে পারি না। এ থেকেও বোঝা যায় যে, সালাত কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাঠামোর নয়। তবে কেউ যদি প্রচলিত কাঠামোতে থেকে সালাত করে সেটিও অনির্দিষ্ট কাঠামোগুলোর মধ্যে একটি কাঠামো হিসেবে বিবেচ্য হতে পারে। তবে যেহেতু স্রষ্টা কুরআনে সালাতের কাঠামো সম্পর্কে কঠোরতা দেননি, তাই আমাদের পক্ষে এই কাঠামো বিষয়ে কেবল এক রকম কাঠমো হতেই হবে এ ধরনের সংকীর্ণতা পরিহার করাই কুরআনের শিক্ষার নিকটবর্তী।

সালাতের কাঠামোর সাথে সংশ্লিষ্ট যতগুলো পরিভাষা রয়েছে যেমন রুকূ’, ‍সিজদা এর প্রত্যেকটির উৎসগত ও ভাবগত অর্থ ব্যাপক, যা কেবল অনুষ্ঠান বা অঙ্গভঙ্গির সাথে জড়িত বা সীমিত নয়। রুকূ’ শব্দের মূল অর্থ বিনয়ী হওয়া। সিজদা শব্দের মূল অর্থ মান্য করা। তবে আনুষ্ঠানিক অর্থে ঝুঁকে দাঁড়ানো ও দেহকে লুটিয়ে দিয়ে ভক্তি জানানো যথাক্রমে রুকূ’ ও সিজদা শব্দের মধ্যে রয়েছে বললে ভুল হবে না।

সালাত মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ থেকে শুরু হওয়া বিধান নয়, বরং পূর্ববর্তী নবীগণও সালাত করেছিলেন। সুতরাং সালাত একটি পরম্পরাগত অনুশীলন। প্রকৃতিগতভাবে ও পরম্পরাগত অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ সালাত পদ্ধতির শিক্ষালাভ করেছে ও পরিজ্ঞাত রয়েছে। এই যে যা মানুষ প্রাকৃতিকভাবে শিখে, পরম্পরা থেকে শিখে সেটাই কুরআনের পরিভাষায় - ‘স্মরণ করো যেভাবে আল্লাহ তোমাদের শিখিয়েছেন’ ২:২৩৯।

৮.
সালাতের সুনির্দিষ্ট ফর্ম কুরআনে না দেওয়া ইঙ্গিত করে যে স্রষ্টার সাথে সংযোগ / প্রার্থনা / মেডিটেশন, ধ্যান বিভিন্ন কালচারে বিভিন্ন রকম হবে এটাই স্বাভাবিক।

তুমি কি দেখনা যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা এবং উড্ডীয়মান বিহংগকূল আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে? তারা প্রত্যেকেই জানে তাঁর সালাত এবং পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণার পদ্ধতি এবং তারা যা করে সেই বিষয়ে আল্লাহ সম্যক অবগত। ২৪:৪১

সালাতের উদ্দেশ্য হিসেবে পরিস্কার যে এটা স্রষ্টার স্মরণ - স্রষ্টার বাণী স্মরণ যেন সেই শিক্ষা পুুরো জীবনে করা যায় ধারন। মুসা নবীর বরাতে সালাতের উদ্দেশ্য বলা হয়েছে স্রষ্টার স্মরণ।

‍‍‍‍"… এবং আমার স্মরণের (অনুশীলনের) জন্য সালাত প্রতিষ্ঠা করো”। - ২০:১৪

যে নামাজে আপনি কি পড়লেন বুঝলেন না, জায়নামাজে হাই স্পিড রেসিং কার চালিয়ে ভাবলেন আজকে কখন অফিস থেকে বাসায় ফিরবেন বা বাজারের আইটেম সব কিনতে পারবেন না - সেটা কি স্রষ্টার স্মরন?

নাকি তার বদলে শান্তভাবে দুই দন্ড বসে বা দাড়িয়ে, বুক ভরা কৃতজ্ঞতা নিয়ে স্রস্টাকে ধন্যবাদ জানানো হবে সালাতের স্পিরিটের কাছাকাছি?

নিয়মিত প্রার্থনা, স্রষ্টাকে স্মরন করার বিভিন্ন রিচুয়াল পৃথিবীর সকল ধর্মেই আছে। How Jews Pray দিয়ে ইউটিউবে সার্চ করলে চমকে যাবেন মুসলিমদের নামাজ আর ইহুদিদের নামাজ কত মিল।

নামাজ কেবলমাত্র মুসলিমদের রিচুয়াল নয়। সালাত একটা ব্যাপক অর্থ ধারনকারী শব্দ সেটারই নীচের আয়াত একটি প্রমান।

৮:৩৫ :: এবং তাদের সালাত কিছুই নয় ‘আল বাইতের’ (অনন্য প্রতিষ্ঠানের) কাছে শিস / উলুধ্বনি দেয়া এবং করতালি / অনর্থক ব্যস্ততা ছাড়া। সুতরাং তোমরা যে কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করতে তার কারণে তোমরা শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করো।

এখানে কাবার চারপাশে মুর্তিপুজারীদের শিষ ও হাতে তালিকেও কুুরআনে সালাত বলা হয়েছে।

একজন নেটিভ আমেরিকান যখন প্রকৃতির মধ্যে স্রষ্টার চিহ্ন আবিস্কার করে প্রার্থনা করে, কুরআনের ভাষায় সেটাও তার সালাত। একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী যখন তার ঘরে সন্ধ্যায় আরতি জ্বালায়, ঈশ্বরকে স্মরণ করে, ওংকার ধ্বনী পাঠ করে, গীতা পাঠ করে - কুরআনের ভাষায় সেটাও সালাত।

একজন স্রষ্টায় বিশ্বাসী, সে যেভাবেই স্রষ্টাকে স্মরণ করুক না কেন, যেভাবেই তার বিবেকানুসারে স্রষ্টার বিধানকে অনুসরণে লিপ্ত থাকুক - তার ধর্মকে মানুষ যে ভাষায় ডাকুক না কেন - কুরআনের স্রষ্টা সেটাকে সালাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

কুরআনের এই যে ইউনিভার্সাল, সার্বজনীন আউটলুক তার আরেকটা প্রমান এই আয়াতে:

তাদেরকে অন্যায়ভাবে গৃহ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে শুধু তাদের এ কথা বলার কারণে যে, ‘একমাত্র স্রষ্টা আমাদের প্রতিপালক।’ আল্লাহ যদি মানুষদের এক দলের দ্বারা অন্য দলকে প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রীষ্টান সংসারত্যাগীদের উপাসনালয়, গির্জা ও ইয়াহূদীদের উপাসনার স্থান আর মাসজিদসমূহ যেখানে আল্লাহর নাম অধিকহারে স্মরণ করা হয়। আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে, আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রান্ত। - ২২:৪০

অর্থাৎ ধর্মের ও ধর্মের থিওলজীকাল পরিচয়ের ভিন্নতা স্রষ্টার স্মরণ তথা সালাতকে কেবল এক সম্প্রদায়ে ভিতর সীমাবদ্ধ করে না। এই চেষ্টা সাম্প্রদায়িক বিকৃতি যা কুরআনের অসাম্প্রদায়িক বাণীর পুরো বিপরীত। অথচ খ্রিষ্টানদের গীর্জা, ইহুদীদের ধর্মমন্দির সবজায়গায়ই যে আল্লাহর স্মরণ করা হয় সেটা স্বয়ং কুরআনের বার্তা এবং স্রষ্টার স্মরণের সুনির্দিষ্ট অধিবেশনই সালাতের একটা অর্থ।

অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক ধর্মব্যবসায়ীরা বলবে চার্চে আল্লাহ নাই, ইহুদি মন্দিরে ওরা যাকে ডাকে সেও আল্লাহ নয়! তারা আবার ২২ নম্বর সুরার ৪০ নম্বর আয়াতের ১০টা অনুবাদ পড়ে দেখুক মূল আরবী সহ।

৯.
সালাত নিয়ে এত কথাবার্তার পর আপনার প্রশ্ন: What is in it for me? আমার এই সবে কি ফায়দা?

ঈসা নবী বলতেন যে সত্যই তোমাকে প্রকৃত মুক্তি দান করবে। মোল্লাদের মিথ্যার শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করে ফেলতে পারবেন যখন আপনি ধর্মের নামে চলে আসা মাইন্ড কন্দ্রোল এবং ডকট্রিনাল করাপশন :ধরে ফেলতে পারবেন। তখন প্রকৃত মেসেজ, নীতিমালা এবং আনুষ্ঠানিকতা সব কিছুর প্রকৃত অবস্থান আপনি নিজেই বুঝে নিজের জীবনে কাজে লাগাতে পারবেন।

প্রথম ফায়দা হলো এটা বুঝা যে আল্লাহ বা তার ফেরেশতারা আপনার বা আমার নামাজের রাকাত গুনে না। সালাতের কোন আয়াতে কোন বান্দা দেখাতে পারবে না যে আল্লাহ রাকাত সংখ্যা নিয়ে কোন বিধান দিচ্ছেন।

দ্যাট ওয়াজ নেভার দা পয়েন্ট। পয়েন্ট হলো স্রষ্টার বিধান জানা, বুঝা, পালন করা, স্রষ্টার সাথে এমন সংযোগ রাখা যেন তাঁর দেখানো পথই হয়ে উঠতে পারে আপনার জীবনের ধ্রুবতারা - এ জীবন সমুদ্রে আর কভু যেন না হন পথহারা!

নামাজে যা বিড়বিড় করতেছেন, ফিসফিস করতেছেন বা মাইকে শুনছেন, বলতেছেন - তা না বুঝলে এটা নামাজ বা সালাত না। বরং কি বলতেছি সেটা না বুঝলে সালাতের ধারে কাছেও যাইতে নিষেধ। প্রমান:

হে মুমিনগণ, সুকারা / মস্তিষ্ক স্বাভাবিক নয় এমন অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা বুঝতে পার যা তোমরা বল। ৪:৪৩

সুকারা মানে কেউ কেউ অর্থ করেন মাতাল। এর আরো কয়েকটা অর্থ আছে যেমন: আড়ষ্ট মনে, বোধহীন অবস্থা - তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো: “যতক্ষন না তোমরা বুঝতে পারো…” তার মানে আনুষ্ঠানিক নামাজে আপনি কি বলছেন সেটা বুঝে বলা কুরআনের নির্দেশ।

নামাজে যা পড়ছেন তা না বুঝলে - এটা নামাজ নয়।

আনুষ্ঠানিক সালাতের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো স্রষ্টার বিধান নতুন সমাজের নাগরিকরা বুঝতে পারবে - তবেই না সবাই ল এবাইডিং সিটিজেন হবে। এভাবেই ঐ সমাজ ট্রান্সফর্ম হইছিলো।

আজকে দুনিয়ার যেকোন আধুনিক দেশ আর আমাদের মতো ফকিরন্নী দেশের মধ্যে মুল পার্থক্য হলো ঐ সমাজগুলো ল এবাইডিং (law abiding), সেখানে আইনের শাসন (rule of law) আছে- সেখানের জেলখানা খালি গরীব দিয়ে ভর্তি না যেমনটা মুসলিম দেশের জেলখানাগুলো ভর্তি। আইনের শাসনের যে শুরু সেটা তোরাহ, কুরআনে আগমনে ঐ সমাজগুলো প্রিমিটিভ আকারে শুরু হয়। Rule of Law এর যাত্র্রা কিন্তু ইহুদী, মুসলিম সমাজের শুরু দিতে সমৃদ্ধশালী হওয়ার পেছনে একটি বড় কারন ছিলো।

এখন আসেন, আপনার কি করনীয়। নামাজে কুরআনের বাণী যা আপনি বুঝতে পারেন সেটাই পড়া উচিত অথবা নিজ ভাষায় সেই বাণীর প্রার্থণা করা উচিত।

অথবা কুরআন নিজ ভাষায় পাঠ করে, নামাজটিতে পুরো নিজের মতো করে প্রার্থনা করা। মোল্লারা হয়তো পাথর মারতে তেড়ে আসবে এটা শুনে অথচ আল্লাহ আপনার মনের কথাই শুনতে চাই।

কুরআনে যাকারিয়ার সালাত/ নামাজ, ঈসার নামাজের যে টুকরা টুকরা ট্রেইলার আপনার, আমার জন্য রেখে দিছে তা এটা মনে করাইতে যে আপনার হৃদয়ের প্রার্থনা আপনার মন থেকেই আসতে হয়। কারো মুখস্ত করা বাক্য দিয়ে হৃদয়ের উপশম ও আরশের অধিপতি তার কাছে পৌছানো যায় না।

আল্লাহর আয়াত আবার তাঁকেই শুনাবেন এজন্য নামাজ দেয় নাই, রবং তিনি আপনাকে তাঁকে স্মরনের জন্য বাণী দিয়েছেন, আপনার জীবন সুন্দর করার নিদের্শ দিয়েছেন আপনার জন্য। সেটা আল্লাহকে মাইকে শুনানোর মতো বেকুবি দ্বিতীয়টি নাই যেখানে মানুষ নিজেই সেটা বুঝছে না। যার জন্য বাণী পাঠানো, সেটা বোঝা ছাড়া বাকি সব কাজ হাজির; আসল উদ্দেশ্য বেহাজির।

আপনার নিবেদন আবেদন ও তার উপদেশ আদেশ নির্দেশ আপনি আমি আমাদের অধম নিজকে নিজে মনে করিয়ে দিবো, সেটাই নামাজের উদ্দেশ্য। আমরা এখন যা করছি তারাবীর নামাজে, জামাতের নামাজে - কু্রানের উপমায় তা পিঠে কিতাবের ভারবহনকারী গাধার চাইতেও বেকুবি।

৬২:৫ যাদের উপর তাওরাতের দায়িত্বভার দেয়া হয়েছিল, অতঃপর তা তারা বহন করেনি (অর্থাৎ তারা তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করেনি) তাদের দৃষ্টান্ত হল গাধার মত, যে বহু কিতাবের বোঝা বহন করে (কিন্তু তা বুঝে না)।

১০.
এবার আসেন কোয়ালিটি ওভার কোয়ান্টিটি ফ্যাক্টরে

আপনি ১০০ বার বা ১০০ রাকাত নামাজ নামের অভিনয় করতে পারেন। নিজেকে বুঝাতে পারেন আমি তারাবীতে কুরআন খতম! করে দিচ্ছি। ওয়াহ! কনগ্রাচুলেট মি!

সালাতের মূল ঐতিহাসিকতা, কারন ও উদ্দেশ্য বুঝলে আপনি ১ বার হলেও স্রষ্টার সাথে সংযোগে দাড়াবেন বা বসবেন।

We are human being, not human doing. Prayer, Salaat is the practice of being. Prayer, Meditation, Salaat is when you come back to your Source. You center yourself. It is your centering mechanism.

কোয়ান্টিটি (উনি অনেক নামাজ পড়েন, উনি জামাত কাযা করেন না, উনি মাশাল্লাহ ইশরাকসহ ও নফল সুন্নত ওয়াযিব কিছুই বাদ দেন না), ওয়াক্ত, রাকাত এই সব চক্করে কবেই যে আমরা নামাজের ট্রান্সফরমেশন থেকে খারিজ হয়ে গেছি আমি জানি না। তবে কুরআন এ বিষয়ে সজাগ:

১৯:৫৯ :: তারপর তাদের পরে পরবর্তীরা স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। পরবর্তীরা সালাতকে নষ্ট করেছে এবং কামনা বাসনার অনুসরণ করেছে। তারপর শীঘ্রই তারা বিপথগামিতার সম্মুখীন হবে।

আমরা কি সেই গ্রুপে নেই যারা নামাজ / সালাতকে নষ্ট করে ফেলেছি। এর মূল উদ্দেশ্য ভুলে গেছি?

সুতরাং কোয়ান্টিটির বাসনা না, কোয়ালিটি সংযোগ হোক। সেখানে নিজের প্রকৃত সমর্পনের মহড়া হোক যেন বৃহত্তর যে জীবন সেখানেও আমরা অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারি, মিথ্যাকে পরিত্যাগ করতে পারি, করাপশন থেকে নিজেকে বাচিয়ে রাখতে পারি। সেই বৃহত্তর জীবনে যখন পরীক্ষা আসে সেখানে যে আনুষ্ঠানিক সালাতে শেখা বানী আমাদের ধ্রুবতারার দিকে নির্বিষ্ট রাখে।

আনুষ্ঠানিক সিজদায় বিজাতিয় ভাষা যা আপনি বুঝেন না, সেটা না পড়ে বরং মনে মনে নিজ ভাষায় বলুন: হে মালিক আমি আমাকে আপনার কাছে সমর্পিত করছি, আমাকে আপনার সমর্পিত বান্দাদের মধ্যে অর্ন্তভূুক্ত করুন। আবার এটাকেই মুখস্ত করিয়েন না।

যা আপনার তাঁকে বলার - সেটা একান্তই আপনার আর তাঁর মধ্যে হোক। এর থেকে বড় সাইকোস্পিরিচুয়াল থেরাপী সেশন এই দুনিয়ায় নাই।

রুকু যার অর্থ বিনত বা বিনয়ী হওয়া সেখানে আপনি আবার একই বাক্যাংশ, শব্দ আজীবন যান্ত্রিক ভাবে না আউড়ে বরং নিজের মন খুলে স্রষ্টাকে সেটাই বলেন যেটা আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে, যা আপনি অর্জন করতে চান, নিজের সেই ত্রুটি যা থেকে আপনি পরিশুদ্ধ হতে চান তারই নিবেদন হোক। রুকুতে শুধু গর্দান আর মাথাই নোয়াচ্ছেন না, বরং কাধের সব ভার তাঁর কাছে সপে দিচ্ছেন। এই হওয়া উচিত রুকু ও সিজদার হাল। মুখস্ত ও ভিন্ন ভাষায় সে হালে পৌছানো অসম্ভব।

আপনি অনেকদিন নামাজ পড়েন নি। হঠাৎ জায়নামাজে দাড়ালে কেমন দেখায়? কোন সমস্যা নেই। সকালে বা সন্ধায় ছাদে চলে যান। সব দিকে স্রষ্টার উপস্থিতি হাজির জেনে স্রষ্টাকে স্মরণ করুন, সুরা ফাতিহা নিজের ভাষায় পড়ুন, আরবীতে পড়ুন, মনে মনে প্রার্থনা করুন। রুকু, সিজদা কিছুর দরকার নেই। ওগুলো না করলে সালাত হবে না এমন কোন কথা কুরআন বলে না। শুধু দাড়িয়েও সালাত হয়, শুয়ে বসে কাত হয়ে স্রষ্টার স্মরণের অনুমতি স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে দিয়েছেন (৩:১৯১)। আর কারো পারমিশন কি জরুরাত নেহি হ্যায়!

মাতৃভাষা স্রষ্টার এক নিয়ামত (মানুষের ভাষার বৈচিত্র্য তার আয়াত / নিদর্শন ৩০:২২), তার মাধ্যমেই হবে প্রকৃত সংযোগ স্রষ্টার সাথে। সেই সংযোগের আনুষ্ঠানিক মহড়ার নাম নামাজ, নিয়মিত হওয়ার স্ট্রাকচার হলো নামাজ। তবে কুরআনে সালাত তার থেকেও অনেক কিছু বেশি।

আশা রাখাই যায় যে, ১ বারের কোয়ালিটি নামাজ যা আপনার হৃদয় উৎসারিত হবে, তা আপনার যান্ত্রিক শতবার পড়া (সত্য কথা বললে অভিনয় করা, তাও আবার বস্তাপঁচা, লো-কোয়ালিটির) নামাজের থেকে অনেক প্রশান্তির ও কাজের হবে। কোয়ালিটি ইজ অলওয়েজ বেটার দ্যান কোয়ান্টিটি। এটা এই জগতের নিয়ম হলে মনে রাখবেন এটা আলমে আরওয়ার বা আল্লাহর রূহানিয়াতের জগতের আর্কিটাইপাল নিয়ম বলেই সেটা এখানে পাওয়া যায়।

সালাতের প্রকৃত বাস্তবতা, এটা থেকে স্রষ্টার আকাংখা কি সেটা বুঝলে আপনি হুজুরদের মনগড়া ও বানানো রাকাত, ওয়াক্ত নিয়ে মাথাই ঘামাবেন না। বরং আপনি আপনার শিডিউলে (নিয়মিত হওয়া বাঞ্চনীয়) একবারও যদি দিনে আনুষ্ঠানিক সালাত করেন - সেটা কুরআনের নীতি অনুসারে পুরা ঠিক।

জানি আমাদের দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা ঈমান ঈমান অভিনয়ে অভ্যস্ত মন এটা মানবে না। তবু বলে যাই যেটা বলা কর্তব্য।

ব্যক্তিগত প্রার্থনা বা সালাত অধিবেশন আপনার শিডিউলকে মেনেই করতে পারেন। রাসুলের ধর্ম অধিবেশনে ওয়াক্তের তাৎপর্য ছিলো এই যে ঐ সময়ে ব্যাচে ব্যাচে মানুষ আসতো। তারা আগে থেকে জানতো কখন সালাত হবে। সেখানে কোন এলার্ম নাই, কোন নোটফিকেশন ছিলো না। কেবলমাত্র ওয়ার্ড অফ মাউথ।

সামষ্টিক জমায়েতে নির্দিষ্ট সময় আগে থেকে ঠিক থাকার জন্য ওয়াক্ত। ব্যক্তিগত সালাত পুরোটাই ব্যক্তিগত প্রার্থনা। সামাজিক বা জমায়েতের মতো স্ট্রিক্ট রুলসে সেখানে এপ্লাই হওয়ার কোন কারন নেই।

রাষ্ট্রীয় একটি মিটিং কখন কবে হবে সেটা আগে থেকে জানা এক জিনিস, আর সেই সময়ে মিল করে আপনি ঘরে একই সময়ে ঐ মিটিংয়ের মহড়া দিবেন - এটা নিশ্চই কোন কাজের কাজ না। অথচ আমরা রাসুলের কুরআনে পাঠের ঐ অনুষ্ঠানের টাইমকে ব্যক্তিগত প্রার্থনার উপরে আরোপিত করছি। আমার ব্যক্তিগত মতামত ও কুরআন পাঠের উপলব্ধি হলো: এটা অপ্রয়োজনীয় ও অকুরানিক ও কমনসেন্স বিরোধী।

আপনার ব্যক্তিগত সালাত গভীর রাতেও যেমন হতে পারে, তেমনি অন্য সময়েও হতে পারে। বরং সেই সময়টিতে সালাত করা উচিত যখন আপনি আপনার ইহকালীণ দায়িত্বের কারনে অমনোযোগি নন। সমাজে মানুষ যখন কর্ম করে সেটা কখনো সালাতের সময় নয়, ব্যতিক্রম একমাত্র জমায়েতের দিন। সেটারও সময় কবে কখন সেটাও কুরআন কমিউনিটির সিদ্ধান্তে ওপেন রেখেছে ৬২:৯।

ব্যক্তিগত সালাতের ক্ষেত্র্র - সকল সময়ে, সকল যুগে সাধকদের সাধনা, স্রষ্টার নৈকট্য লাভের জন্য সেরা সময় রাতের শেষ প্রহর। রাসুলকেও রাতের ঐ সময়ে সালাতরত পাওয়া যেতো কিয়ামুল লাইলে (৭৩:২০)। এখন তাহাজ্জুদ নামের অভিনয় হয়, স্রষ্টার সাথে সংযোগ ও তার বাণীর উপরে ধ্যান কতখানি হয় সেটা আমার জানা নেই।

সালাতের আরেকটা অর্থ হলো ডিউটি (duty) বা দায়িত্ব। যে যে পদে বা কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত তার সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে, নিষ্ঠার সাথে পালন করাও কুরআনের স্পিরিটে সালাত।

একজন ট্রেন চালক কখনোই ট্রেন চালনার দায়িত্ব বাদ রেখে আনুষ্ঠানিক সালাত করবে না। একজন ট্রাফিক পুলিশ ট্রাফিক কনট্রোল বাদ দিয়ে নামাজে দাড়াবে না। একজন সৈনিক সীমান্ত পাহাড়া বাদ দিয়ে মসজিদে ঢুকে যাবে না। একজন শিক্ষক ছাত্র ছাত্রী পড়ানো রেখে আজান শুনেই মাথায় টুপি দিয়ে দৌড় দিবে না। বরং তার যে দায়িত্ব সেটাও সঠিক ও নিষ্ঠার সাথে পালন করাও কুরআনে সালাতের শিক্ষা। আমরা উল্টা যেটা করি সেটার নাম ভার্চূ সিগনালিং (Virtue Signaling), দায়িত্ব ফাঁকি দিয়ে লোক দেখানো নামায যেটা কুরআনে ভৎসনা / তিরস্কার করা হয়েছে। ঐ সালাতের আয়াতের সাথে ডিউটিও যখন কেউ লোক দেখানোর জন্য করে সেটাতেও স্রস্টার এপ্রুভাল নেই।

১০৭:৪ :: সুতরাং ঐ সালাতকারীদের জন্য ধ্বংস।
১০৭:৬ :: যারা প্রদর্শনীর জন্য কর্ম সম্পাদন করে।

নামাজ নামে আমাদের সমাজের এবং আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে রাতদিন চলে আসা মিথ্যাচার ও অভিনয় বন্ধ হোক। স্রষ্টা আমাদের ক্ষমা করুন তার বাণীকে বুঝতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য।

.

.

.
.
কৃতজ্ঞতা শওকত জাওহার, রিসার্চ ফেলো, দি ইক্বরা। তার সংকলিত বই, আল কুরআনের আলোকে সালাত থেকে আমি সরাসরি কিছু অংশ এই পোস্টে ব্যবহার করেছি।

ট্যাগ / কী-ওয়ার্ড:

অন্যান্য প্রবন্ধ

January 31, 2025
The Quran Beheld by Nuh Ha Mim Keller - Reviews

The Quran Beheld is a new english translation of the Quran by Nuh Ha Mim Keller About The Book This work solves an enigma that has puzzled many readers first coming to Islam through English translations of the Quran. The Arabic original stunned hearers in their own language with its unutterable evocative power, incisive arguments, […]

January 31, 2025
Translating the Qur’an for Today with Professor Abdel Haleem

The Quran is the majestic word of Allah (swt), it gives Muslims life. In the Quran, Allah speaks to all human beings and those that read the Quran revere the majesty of its style and prose. Professor Muhammad A. S. Abdel Haleem is the Professor of Islamic Studies and director of the Centre for Islamic […]

January 24, 2025
আল-কুরআনের ভাষা শিক্ষা - আরবি ব্যাকরণ

আল-কুরআনের ভাষা শিক্ষা কোর্সে আপনাকে স্বাগতম! আরবি ভাষা শিখুন ও আরবি ব্যাকরণ শিখুন এই কোর্সের মাধ্যমে । আপনি যদি একজন নতুন শিক্ষার্থী হন অথবা আপনার আরবি ভাষার দক্ষতা বাড়াতে চান, তাহলে ক্লাসগুলোতে জয়েন করুন যা আরবি ব্যাকরণ এবং শব্দভান্ডারের মৌলিক বিষয়গুলি শেখাবে। মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা তার প্রেরিত সর্বশেষ কিতাব আল-কোরআনের অর্থ নিজে নিজে বুঝতে ও […]

January 17, 2025
কুরানিক এ্যারাবিক ল্যাংগুয়েজ - কুরআনের ভাষা ও ব্যাকরণ শিখার অনলাইন কোর্স

Learning Arabic Language in Bangla. কুরআনের ভাষা শিক্ষা।Course: Quranic Arabic Language Course | Class 1-88 (কুরআনিক অ্যারাবিক ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স | ক্লাস ১-৮৮)Lecturer: Professor Mokhter Ahmad (প্রফেসর মোখতার আহমাদ) সম্পূর্ন টিউটোরিয়াল প্লে-লিস্ট Courtesy: Dawah TV YouTube Channel সবগুলো পর্ব আলাদা আলাদা দেখার জন্য পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬ পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ […]

January 14, 2025
কুরআনে হিকমাহ বা প্রজ্ঞা কি?

আভিধানিক অর্থ হিকমাহ / প্রজ্ঞা যেমন: সুরা নাহালের ১২৫ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর প্রজ্ঞা ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাতে তর্ক করবে উত্তম পন্থায় । এ আয়াতে প্রজ্ঞা বা হেকমত অবলম্বন করে এবং সৎ উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর পরে আহ্বান করার আদেশ দেয়া হয়েছে । পারিভাষিক অর্থ যাবতীয় […]

January 4, 2025
আহমেদ আল রাইসুনির "আল-শুরা" বইয়ের রিভিউ

আহমেদ আল রাইসুনি আধুনিক ইসলামী চিন্তাবিদদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর লেখা "আল-শুরা" (Al-Shura: The Qur'anic Principle of Consultation) বইটি ইসলামী রাজনৈতিক, সামাজিক এবং নৈতিক দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বইটি বিশেষভাবে ইসলামে পরামর্শমূলক শাসনব্যবস্থা বা শুরার ধারণা, এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং আধুনিক প্রাসঙ্গিকতাকে বিশ্লেষণ করে। বইয়ের মূল বিষয়বস্তু বইয়ের বিশেষত্ব উপসংহারের মূল বিষয়বস্তু আহমেদ আল রাইসুনি তার […]

December 31, 2024
Mathematical Miracles in the Qur'an: A Measured Approach with Amin Lessan via Blogging Theology

Timestamps:00:00 - Introduction00:17 - Background of the Guest: Amin Lessan00:56 - Interest in the Qur'an mathematical patterns01:41 - Today's Topic02:32 - Introduction04:14 - Caveats & Considerations about the Qur'an09:05 - Case Study: The Qur'an & the Moon Landing12:20 - Analysis & Critique of Loose Connections16:03 - Context of the Quran's Transmission18:59 - Non-Contiguous Revelation of […]

April 22, 2024
গঠন রীতি ও শব্দের ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে কুরআনের সুরার ক্রম

কুরআনের ক্রম বের করার অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে এবং বিভিন্ন মতামত রয়েছে। স্কলার মার্ক ডুরি কুরআনের শব্দ ও গঠন শৈলি ব্যবহার করে একটি ভিন্ন সুরার ক্রমে উপনিত হয়েছেন যা এই প্রবন্ধের বিষয়বস্ত