মূল প্রবন্ধটি লিখেছেন মো. আমিরুল ইসলাম
এডিটরের নোট: কুরআন পাঠক ও গবেষকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল পাঠক ও গবেষক পাওয়া যায় যারা কুরআনের সব ধরনের আয়াতকে কেবলমাত্র ভাব অর্থে গ্রহন করতে চায়। আমরা জানি যে যেকোন বিষয়ের ভাব এবং বস্তু এরকম দুই ধরনের অর্থ হতে পারে। চরম আক্ষরিকতায় দুষ্ট অনেকে সব কিছুকে যেমন আক্ষরিক অর্থ করতে চায় এবং তারা মূলত বস্তুগত অর্থকে একমাত্র অর্থ হিসেবে মেনে নিতে চায়। এরাই স্রস্টার হাত মানে ফিজিকাল বা বস্তুগত হাত অর্থ করে বসে। এই আক্ষরিকদের দাবীর বিপরীতে আরেক ধরনের কুরআন পাঠক ও গবেষক আমরা লক্ষ্য করি যারা সবকিছুকে ভাবগত এবং একমাত্র ভাবগত হিসাবে গ্রহন করতে চায়।
এই প্রবণতায় তারা যাকাতের সাথে কোন ধরনের অর্থনৈতিক লেনদেন অস্বীকার করে থাকে। অর্থাৎ তারা যাক্কা বা পরিশুদ্ধির যে মূল ভাবগত অর্থ যাকাতের জন্য কেবল সেই ধরনের অর্থকেই গ্রহন করতে চায়।
মো. আমিরুল ইসলাম তার এই বিশ্লেষণে দেখিয়েছেন যে কেন আতা বা প্রদান করা বা দেওয়া অর্থ নির্দেশ করে যে যাকাতের মধ্যে অর্থ বা সম্পদ প্রদানের বিষয়টি নিহীত। এই প্রবন্ধটি প্রদান করা বা দেওয়ার যে অর্থ সেটির অর্থ ও আয়াত ভিত্তিক বিশ্লেষন নির্ভর।
যারা বলেন যাকাত দেওয়ার জিনিস নয় তারা কি দেওয়া (آتُوا) শব্দের আরবি ভুলে গেছেন?
১. آتُوا শব্দের অর্থ দেওয়া
(ক) آتُوا حَقَّهُ নির্দিষ্ট অর্থ হক দেওয়া। ফসল কর্তনের দিন তার হক দিতে হবে (৬:১৪১)। ফসল কি সম্পদ নয়?
حَقٌّ مَعْلُومٌ –নির্দিষ্ট হক কতটুকু দিতে হবে (৭০:২৪)?
(খ) ইয়াতিমের মাল (সম্পদ) দিবে। ইয়াতিমের সম্পদ কি সম্পদ নয় (৪:২)?
(গ) স্ত্রীকে যে মাহর দেওয়া হয় (صَدُقَاتِهِنَّ) এই মাহর কি সম্পদ নয় (৪:৪, ২৪, ২৫)?
(ঘ) পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের পরিত্যাক্ত সম্পত্তি কি সম্পদ নয় (৪:৩৩)?
(ঙ) যাকাত দেওয়ার জিনিস না হলে ২:৪৩; ৪:৭৭; ৫৮:১৩ আয়াতে উল্লেখিত آتُوا শব্দের অর্থ কি হবে?
২. آتَوْا শব্দের অর্থ দেওয়া।
(ক) মানুষ যা দান করে তা কি সম্পদ নয় (২৩:৬০)?
(খ) অর্থ সাহায্যে অসমর্থ (مَا يُنْفِقُونَ)। অর্থ কি সম্পদ নয় (৯:৯১)?
গাধা, ঘোড়া, খচ্চর যদি বাহন হয়, তবে বাস, ট্রাক, কার, রেলগাড়ি কি বাহন নয়?
উক্ত বাহনগুলো সম্পদ না হলে তা কিভাবে দিতে হয় (৯:৯২)?
(গ) যাকাত যদি সম্পদ না হয় তবে যাকাত কিভাবে দিতে হয় (২:২৭৭; ৯:৫; ২২:৪১)?
৩. آت শব্দের অর্থ দেওয়া।
(ক) তাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম ( آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ)। কিতাব কিভাবে দিতে হয় (৬:২০, ৮৯; ১৯:৩০; ২০:৯)
(খ) ইবরাহীমকে যুক্তি-প্রমাণ দিয়েছিলাম ( آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ)। যুক্তি প্রমাণ কি দিয়ে দিতে হয়ে (৬:৮৩)? আনন্দ কি দিয়ে দিতে হয় (৩:১৭০)?
(গ) কৃপণ কি সম্পদ দিতে কার্পণ্য করে না (৩:১৮০; ৪:৩৭)?
(ঘ) পুরস্কার কি সম্পদ নয়? পুরস্কার কি দিয়ে দিতে হয় (৩:১৪৮; ৫৭:২৩)?
(ঙ) মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, কষ্ট দেওয়া ও সাহায্য দেওয়া-এর মধ্যে কোনটি সম্পদ (৬:৩৪)?
(চ) শাস্তি (আযাব) দেওয়া কি সম্পদ দেওয়া (৬:৪০; ১৬:২৬)?
(ছ) প্রতিনিধি দেওয়া ও মর্যাদা দেওয়ার মধ্যে কি সম্পদ নেই (৬:১৬৫)?
(জ) মূসার, সৈন্যবাহিনীর ও কিয়ামতের হাদিস যা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে তা কি সম্পদ নয় (৭৯:১৫; ৮৫:১৭; ৮৮:১)?
(ঝ) আল্লাহ আমাদের যা দিয়েছেন তা কি সম্পদ নয় (৯:৭৬; ১৪:৩৪; ৭৬:১)?
(ঞ) কারূনকে যা দেওয়া হয়েছিল তা কি সম্পদ নয় (২৮:৭৭)?
(ট) সন্তান দেওয়া-সন্তান কি সম্পদ নয় (৭:১৯০)?
(ঠ) আল্লাহর নির্দেশ দেওয়া (১০:২৪, ৫০)।
(ড) আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। এসব সম্পদ কি কি (২৭:৩৬; ৫১:১৬; ৫২:১৮)?
(ঢ) রাজ্য কি সম্পদ নয় (২:২৫১, ২৫৮; ৪:৫৪; ৫:২০)?
(ণ) বাগানই ফসল দেয়, ফসল কি সম্পদ নয় (১৮:৩৩)?
(ত) সদকা সম্পদ না হলে তা কিভাবে দিতে হবে (৯:৫৯, ৭৫)?
(থ) আল্লাহ যা মানুষকে যা দিয়েছেন তা কি সম্পদ নয় (৫:৪৮; ১১:২৮, ৬৩; ৬৫:৭)?
(দ) সম্পদ থেকে সূদ দেয় (৩০:৩৯)। সূদ যদি সম্পদ হয় তবে যাকাত কেন সম্পদ হবে না (৩০:৩৯)?
(ধ) জনপদবাসী রাসূলকে যা নিঃস্বার্থভাবে দিতেন তা কি সম্পদ নয়? রাসূল কি উক্ত সম্পদ দাতাদের মধ্যে সুষমভাবে দিতেন না (৫৯:৭)?
৪. آتَى অর্থ দেওয়া
(ক) কিতাব দিয়েছিলাম (২:৬৩, ৮৭, ৯৩, ১২১, ১৪৬, ৪:১৬৩; ৫:৪৬; ৬:২০, ১১৪, ১৫৪; ১১:১১০; ১৩:৩৬; ১৭:২, ৫৫; ২৩:৪৯; ২৫:৩৫; ২৮:৪৩, ৫২; ২৯:৪৭; ৩২:২৩; ৩৪:৪৪, ৩৫:৪০; ৩৭:১১৭; ৪১:৪৫; ৪৩:২১; ৫৭:২৭)।
(খ) যা দিয়েছিলাম (৭:১৪৪, ১৭১; ১৬:৫৫; ২৯:৬৬; ৩০:৩৪; ৩৪:৪৫)।
(গ) নিদর্শন দিয়েছিলাম (২:২১১; ৭:১৭৫; ১৫:৮১; ৪৪:৩৩;)
(ঘ) ইলম ও হিকমত দিয়েছিলাম (১২:২২; ২১:৭৪, ৭৯; ২৮:১৪,
(ঙ) কিতাব, কর্তৃত্ব ও নুবূওয়াত দিয়েছিলাম (৬:৮৯; ৪৫:১৬)।
(চ) কিতাব ও হিকমত দিয়েছিলাম (২:৫৩; ৩:৮১)।
(ছ) হিকমত দিয়েছিলাম (৩৮:২০)।
(ছ) প্রমাণ দিয়েছিলাম (২:২৫৩; ৪:১৫৩; ৪৫:১৭)।
(ঝ) পরস্কার দিয়েছিলাম (৪:৬৭; ২৯:২৭)।
(ঞ) সন্তান দেওয়া (৭:১৮৯)
(ট) রাজ্য দেওয়া (১২:১০১)।
(ঠ) শোভা ও সম্পদ দিয়েছিলাম (১০:৮৮)।
(ড) কল্যাণ দিয়েছিলাম (১৬:১২২)।
(ঢ) কুরআন দিয়েছি (১৫:৮৭)
(ণ) ফুরকান দিয়েছিলাম (২১:৪৮)।
(ত) উষ্ট্রী দিয়েছিলাম (১৭:৫৯)।
(থ) নয়টি নিদর্শন দিয়েছিলাম (১৭:১০১)।
(দ) অনুগ্রহ দিয়েছিলাম (১৮:৬৫)।
(ধ) কর্মফল দিবো (২১:৪৭)।
(ন) হিকমত দিয়েছিলাম (১৯:১২; ৩১:১২)।
(প) জ্ঞান দেওয়া (২৭:১৫)।
(প) উপদেশ দিয়েছিলাম (২০:৯৯; ২৩:৭১)।
(ফ) হক দিয়েছিলাম (২৩:৯০)।
(ব) পথ-নির্দেশ দিয়েছিলাম (৪০:৫৩)।
(ভ) সৎপথের জ্ঞান দিয়েছিলাম (২১:৫১; ২৭:১৫)।
(ম) পরিবার-পরিজন দিলাম (২১:৮৩)।
(য) প্রত্যেক বিষয়ের উপকরণ দিয়েছিলাম (১৮:৮৪)।
(র) স্ত্রীকে যা দেওয়া হয় তা কি সম্পদ নয় (৩৩:৫১)?
(ল) যাকাত যদি সম্পদ না হয় তবে যাকাত কিভাবে দিতে হয় (২:১৭৭; ৯:১৮)?
৫. يُؤْتُونَ অর্থ দেওয়া
(ক) রাজশক্তির কিয়দাংশ দেওয়া (৪:৫৩)।
(খ) আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা দেওয়া (২৩:৬০)।
(গ) পারিশ্রমিক দেওয়া (২৮:৫৪)।
(ঘ) যাকাত দেওয়া (৭:১৫৬; ৯:৭১)।
(ঙ) ১. সালাত (বিধান) প্রতিষ্ঠার সাথে যাকাত দিলে আখিরাতে বিশ্বাসী ও সফলকাম (৩১:২-৫)
২. সালাত (বিধান) প্রতিষ্ঠার সাথে রিজিক থেকে ব্যয় করলে আখিরাতে বিশ্বাসী ও সফলকাম (২:২-৫)।
৩. সালাত (বিধান) প্রতিষ্ঠার সাথে রিজিক থেকে ব্যয় করলে সফলকাম (২:২-৫)।
৪. সালাত (বিধান) প্রতিষ্ঠার সাথে যাকাত দিলে আখিরাতে বিশ্বাসী (২৭:৩; ৩১:৪)।
৫. শুধু যাকাত না দিলে আখিরাতে অবিশ্বাসী হয় (৪১:৭)?
৬. শুধু যাকাত দিলে দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ (৭:১৫৬)।
উপরোক্ত ৬টি আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে যাকাত কিভাবে দিতে হয়?
৬. يُ يُؤْتُوا / يُؤْتِيঅর্থ দেওয়া
(ক) তোমাদের মধ্যে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন শপথ গ্রহণ না করে যে, তারা আত্মীয়-স্বজন ও মিসকিনকে এবং আল্লাহর রাস্তায় যারা হিজরত করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না(২৪:২২)।
(খ) আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। তাতে প্রবেশ করবে সে-ই, যে নিতান্ত হতভাগ্য, যে অস্বীকার করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর তা হতে দূরে রাখা হবে পরম মুত্তাকীকে, যে স্বীয় সম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য এবং তার প্রতি কারো অনুগ্রহের প্রতিদানে নয়, কেবল তার মহান রবের সন্তুষ্টির প্রত্যাশায়; সে তো অচিরেই সন্তোষ লাভ করবে (৯২:১৪-২১)।
উপরোক্ত আয়াতগুলো অনুসারে লেলিহান অগ্নি থেকে বাঁচার উপায় সম্পদ দেওয়া। সম্পদ দিলে পরিশুদ্ধ (যাকাত-৯২:১৮) হয়। আপনি কি সম্পদ দেওয়ার নাম যাকাত অস্বীকার করেন?
৭. آتُو অর্থ দেওয়া
(ক) স্ত্রীকে যা দেওয়া হয় (৬০:১০)।
(খ) শস্যক্ষেত্রে বীজ দেওয়া (২:২২৩)।
(গ) যাকাত দেওয়া (২:৮৩; ২২:৭৮; ২৪:৫৫; ৫৮:১৩)।
উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কোন শর্তে স্ত্রীকে যা দেওয়া হয় তা সম্পদ; আর যাকাত দেওয়া সম্পদ নয়?
৮. সম্পদ বা টাকা-পয়সার সম্পর্কিত শব্দাবলী
নিচে ৫৮টি শব্দ দেওয়া হলো; যে শব্দগুলোর নাম শুনলেই বুঝা যায় এগুলো সম্পদ বা টাকা-পয়সার সম্পর্কিত। যেমন:
১. বেতন, ২. ভাতা, ৩. পেনশন, ৪. পি.এফ, ৫. বোনাস, ৬. বেনিফিট, ৭. ফিস, ৮. বৃত্তি, ৯. কর, ১০. শুল্ক, ১১. খাজনা, ১২. ট্যাক্স, ১৩. বিল, ১৪. চাঁদা, ১৫. জিযিয়া, ১৬. মজুরি, ১৭. ওভারটাইম, ১৮. মোহরানা, ১৯. বকশিস, ২০. নজরানা, ২১, ধার, ২২. কর্জ, ২৩. দেনা, ২৪. ঋণ, ২৫. নগদ, ২৬. অগ্রীম, ২৭. বাকি, ২৮. আর্শিবাদ, ২৯. দাদন, ৩০. সুদ, ৩১. ঘুষ, ৩২. লাভ, ৩৩. মুনাফা, ৩৪. ক্ষতি, ৩৫. জরিমানা, ৩৬. ভর্তূকী, ৩৭. ক্ষতিপূরণ, ৩৮. ফাইন, ৩৯. দান, ৪০. সদকা, ৪১. ফিতরা, ৪২. সালামি, ৪৩. যৌতুক, ৪৪. কিস্তি, ৪৫. অনুদান, ৪৬. দক্ষিনা, ৪৭. ভিক্ষা, ৪৮. মুক্তিপণ, ৪৯. পণ, ৫০. খোরপোশ, ৫১. টিপস্, ৫২. গিফট, ৫৩. উপহার, ৫৪. রসদ, ৫৫. ভাড়া, ৫৬. টিকেট, ৫৭. হাতখরচ ও ৫৮. পাওনা।
উপরোক্ত ৫৮টি শব্দের সাথে কোন টাকা-পয়সা শব্দ নেই। কিন্তু উক্ত শব্দগুলোর সাথে টাকা-পয়সার সম্পর্ক রয়েছে। আপনি কি ইহা অস্বীকার করেন? যাকাত কি সম্পদ হিসেবে দিতে অস্বীকার করেন?
নিচের আয়াতগুলোতে যাকাত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে:
২:৪৩; ২:৮৩; ২:১৭৭; ২:২৭৭; ৪:৭৭; ৪:১৬২; ৭:১৫৬; ৯:৫; ৯:১১; ৯:১৮; ৯:৭১; ২১:৭৩; ২২:৪১; ২২:৭৮; ২৪:৩৭; ২৪:৫৫; ২৭:৩; ৩০:৩৯; ৩১:৪; ৩৩:৩৩; ৫৮:১৩; ৭৩:২০; ৯৮:৫
উপরোক্ত আয়াতগুলো আল্লাহ যাকাত দিতে বলেছেন। যাকাত দেওয়ার জিনিস না হলে আল্লাহ কি মিথ্যা বলেছেন?
৯. সালাতের সাথে ব্যয় বা যাকাত দিলে সফলকাম
(ক) সালাতের সাথে ইনফাক (ব্যয়) করলে সফলকাম (২:১-৫)।
(খ) সালাতের সাথে যাকাত দিলে সফলকাম (৩:১-৫)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে কি ব্যয় করলে সফলকাম হওয়া যাবে?
১০. সালাতের সাথে ব্যয় করলে বা যাকাত দিলে মু‘মিন / বিশ্বাসী
(ক) সালাতের সাথে ইনফাক (ব্যয়) করলে মু‘মিন (৮:২-৪)।
(খ) সালাতের সাথে যাকাত দিলে মু‘মিন (৯:৭১-৭২)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে কি ব্যয় করলে মু‘মিন হয়?
১১. সম্পদ ব্যয় করলে বা যাকাত দিলে ভয় নেই, দুঃখ নেই
(ক) দিনে, রাতে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করলে ভয় নেই, দুঃখ নেই (২:২৭৪)।
(খ) সালাতের সাথে যাকাত দিলে ভয় নেই, দুঃখ নেই (২:২৭৭)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে কি ব্যয় করলে ভয় নেই, দুঃখ নেই?
১২. সম্পদ ব্যয় করলে বা যাকাত দিলে আখিরাতে বিশ্বাসী হয়
(ক) সালাতের সাথে ইনফাক (ব্যয়) করলে আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাসী (২:৪)।
(খ) সালাতের সাথে যাকাত দিলে আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাসী (২৭:৩; ৩১:৪)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে কি ব্যয় করলে আখিরাতে বিশ্বাসী হয়?
১৩. সম্পদ ব্যয় করলে বা যাকাত দিলে মু‘মিন হয়
(ক) জীবন ও সম্পদ দ্বারা জিহাদ করলে মু‘মিন হয় (৪৯:১৫)।
(খ) সালাতের সাথে ইনফাক (ব্যয়) করলে মু‘মিন (৮:২-৪)।
(গ) সালাতের সাথে যাকাত দিলে মু‘মিন হয় (২৭:৩)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে কি ব্যয় করলে আখিরাতে মু‘মিন হয়?
১৪. রিযিক থেকে ব্যয় করলে বা যাকাত দিলে জান্নাত, প্রাপ্যের অধিক পাওয়া যাবে
(ক) সালাতের সাথে রিযক থেকে ব্যয় করলে জান্নাত (১৩:২২-২৩)।
(খ) সালাতের সাথে যাকাত দিলে প্রাপ্যের অধিক পুরস্কার (২৪:৩৭-৩৮)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে কি ব্যয় করলে জান্নাত বা অধিক পুরস্কার পাবো?
১৫. সালাতের সাথে রিযিক থেকে ব্যয় করলে বা যাকাত দিলে মু‘মিন
(ক) মু‘মিনদেরকে বলো সালাত প্রতিষ্ঠার সাথে রিযিক থেকে ব্যয় করতে (১৪:৩১)।
(খ) সফল মু‘মিন সালাতের সাথে যাকাত দানে সক্রিয় হলে (২৩:১-৪)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে যাকাত সম্পদ না হলে রিযিক থেকে যা ব্যয় করতে হবে তা সম্পদ হবে কিভাবে?
১৬. সদকা সম্পদ, যাকাতও সম্পদ
(ক) আল্লাহ সদকাকে বর্ধিত করেন করেন (২:২৭৬)।
(খ) যাকাত দাতাকে করেন সমৃদ্ধিশালী (৩০:৩৯)।
(গ) যাকাত দাতার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ (৭:১৫৬)।
সদকা সম্পদ হলে যাকাত কেন সম্পদ হবে না?
১৭. সম্পদ দিয়ে ও সম্পদ নিয়ে পরিশুদ্ধ
(ক) মুত্তাকী সম্পদ দিয়ে পরিশুদ্ধ হবে (৯২:৫-১৮)।
(খ) রাসূল সম্পদ নিয়ে পরিশুদ্ধ করবেন (৯:৯৯, ১০৩-১০৪)।
আল্লাহর উক্ত আয়াতে পরিশুদ্ধ হওয়ার প্রধান মাধ্যম সম্পদ দান নয় কি?
১৮. সদকা স্বেচ্ছাধীন এবং যাকাত বাধ্যতা মূলক (৫৮:১২-১৩)
(ক) আল্লাহ যাকাত দিতে বলেছেন (২:৪৩; ২:৮৩; ২:১৭৭; ২:২৭৭; ৪:৭৭; ৪:১৬২; ৭:১৫৬; ৯:৫; ৯:১১; ৯:১৮; ৯:৭১;
১:৭৩; ২২:৪১; ২২:৭৮; ২৪:৩৭; ২৪:৫৫; ২৭:৩; ৩০:৩৯; ৩১:৪; ৩৩:৩৩; ৫৮:১৩; ৭৩:২০; ৯৮:৫)।
(খ) উপার্জন ও ফসল থেকে ব্যয় করতে বলেছেন (২:২৬৭; ৬:১৪১)।
(গ) সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করতে বলেছেন (৩:১৩৪; ২:২৩৬)।
(ঘ) আল্লাহ যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করতে বলেছেন (৬৫:৭)।
(ঙ) আল্লাহ যা কিছুর উত্তরাধিকারী করেছেন তা হতে ব্যয় করতে বলেছেন (৫৭:৭)।
যাকাত সম্পদ না হলে যা ব্যয় করতে বলেছেন তা সম্পদ হয় কিভাবে?
১৯. যাকাত দিতে হবে উপার্জনের এক-পঞ্চমাংশ
‘মা কাসাবতুম (২:২৬৭) এর সমার্থক শব্দ ‘মা গানিমতুম (৮:৪১)।
জনপদবাসী তাদের উপার্জন থেকে এক-পঞ্চমাংশ রাসূলের নিকট দিতেন (৮:৪১; ৫৯:৭)।
রাসূল যারা যাকাত দিতেন তাদের মধ্যে মাথা-পিছু বণ্টন করতেন (৫৯:৭)।
যাকাতের অর্থ দেখে রাসূল ফকির-মিসকিন চিনতেন (২:২৭৩; ৯০:১৬)।
যারা যাকাত দিতেন তাদের নিকট থেকেই রাসূল সদকা গ্রহণ করতেন (৯:৯৯, ১০২-১০৪)।
সেই সদকা দ্বারা আত্ম-কর্ম-সংস্থান (২:২৬৫) করতেন ও ৮ খাতে ব্যয় করতেন।
খাতগুলো- ১. ফকির (২:২৭৩), ২. মিসকিন (৯০:১৬; ৭৪:৪৩-৪৪; ১০৭:১-৩), ৩. আদায়কারী (৯:১০৩-১০৪), ৪. অন্তর জয়ে (৯:৫৮-৫৯), ৫. দাস মুক্তি (৯০:১৩), ৬. ঋণ পরিশোধে (৪:১১-১২), ৭. আল্লাহর পথে (৪:৭৫) ও ৮. পথিকদের জন্য (৪:৯৭-১০০) যা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ (৯:৬০)।
২০. কুরআনে উল্লেখিত রাজা-বাদশারা (নবি-রাসূলেরা) কি নিজেদের অর্থ দ্বারা রাজ্য পরিচালনা করেছিলেন?
না রাজ্য পরিচালনার জন্য ট্যাক্স (খুমুস/গণিমত/যাকাত) গ্রহণ করতেন? এবং সেই ট্যাক্স গ্রহণের হার কত ছিল?
(ক) আল্লাহ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাককে বিশাল রাজ্য দিয়েছিলেন (২:১২৪; ৪:৫৪; ১৬:১২২)।
(খ) মুসা ও হারুনকে রাজ্যাধিপতি করেছিলেন (৫:২০; ৭:১২৮-১৩৭; ৪৫:১৬)।
(গ) আল্লাহ দাঊদকে রাজ্য দিয়েছিলেন (২:২৫১; ৩৮:১৭-২০)।
(ঘ) সুলায়মানকে রাজ্য দিয়েছিলেন (২:১০২; ২৭:৩৪; ৩৮:৩৫-৩৯)।
(ঙ) ইউসুফকে রাজ্য দিয়েছিলেন (১২:১০১)।
(চ) তালূতকে রাজ্য দিয়েছিলেন (২:২৪৭)।
১. ইবরাহীম, ২. ইসহাক, ৩. ইয়া’কুব, ৪. আগে নূহ, ৫. পরে দাঊদ, ৬. সুলায়মান, ৭. আইউব, ৮. ইউসুফ, ৯. মূসা, ১০. হারূন, ১১. যাকারিয়া, ১২. ইয়াহয়া, ১৩. ঈসা, ১৪. ইলয়াস, ১৫. আরও ইসমা’ঈল, ১৬. আল-য়াসা’য়া, ১৭. ইয়ূনুস ও ১৮. লূত, … এবং শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছিলাম বিশ্বজগতের উপর প্রত্যেকে, … …আমি তাদেরকেই কিতাব, কর্তৃত্ব ও নবুওয়াত দান করেছি। … … তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের পথের অনুসরণ করো (৬:৮৩-৯০)।
আমরা কি আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে উপরোক্ত নবিদের অনুসরণ করবো না?
এখন আমাদের উপর কর্তৃত্ব (রাজত্ব) করছে কারা?
কর্তৃত্ব করার/রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য নবিদের নিকট মানুষ যাকাত বা ট্যাক্স বা জিযয়া দিতেন কি হারে?
উন্নত রাষ্ট্রের ট্যাক্সের হার দেখুন! উন্নত জীবনযাপনের জন্য যাকাত-সদকা দিন।
সুইডেন ৫৭.২%, ডেনমার্কে ৫৫.৯%, অস্ট্রিয়ায় ৫৫%, ফিনল্যান্ডে ৫৩.৬০%, আরুবায় ৫২%, নেদারল্যান্ডসে ৫১.৬০% এবং ইসরায়েল ও স্লোভেনিয়া, বেলজিয়াম যেখানে ৫০% করে আয়কর দিতে হয় (সূত্র: ২০২২, সময় মিডিয়া লিমিটেড)।
আল্লাহ বলেন, ‘আমাদের সম্পদের নির্দিষ্ট হক দিতে হবে (৭০:২৪)। নির্দিষ্ট হক কতটুকু?
আমরা আমাদের আয়ের ২০% যাকাত/গণিতমত/খুমুস এবং অতিরিক্ত সদকা না দিলে উন্নত জীবনযাপনের প্রত্যাশা করবো কিভাবে?
তৌরাতে দেখুন- (রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য নিযুক্ত কর্মচারীরা) সমস্ত ফসলের পাঁচভাগের এক ভাগ সংগ্রহ করবেন ;-পদায়েশ-৪১:৩৪, পৃষ্ঠা-১২৫।
‘ফসল কাটার পরে তোমরা সমস্ত ফসলের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ফেরাউনকে (রাষ্ট্রীয় কাজে) দিবে, আর বাকী চার ভাগ জমির বীজের জন্য এবং পরিবারের লোকদের আর ছেলেমেয়েদের খাবারের জন্য রাখবে; - পদায়েশ-৪৭:২৪, পৃষ্ঠা-১৪৬।
আল্লাহ বলেন, ‘বল, ‘হে কিতাবীগণ! তাওরাত, ইন্জীল ও যা তোমাদের রবের নিকট হতে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তোমরা তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তোমাদের কোন ভিত্তিই নেই।' তোমার রবের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও অবিশ্বাসই বর্ধিত করবে। সুতরাং তুমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্য দুঃখ করো না (সূরা-৫, মায়িদা, আয়াত: ৬৬-৬৮)।
আল্লাহ বলেন:
১. ব্যয় করতে হবে আল্লাহর সান্নিধ্য আর রাসূলের দু‘আ লাভের জন্য (৯:৯৯, ১০৩-১০৪)।
২. আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন (২:২৭৬)।
৩. দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ, তাদের জন্য নির্ধারিত করব যাকাত দেয় (৭:১৫৫-১৫৬)।
৪. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যে যাকাত তোমরা দিয়া থাকো; তারাই সমৃদ্ধিশালী (৩০:৩৯)।
৫. আল্লাহর পথে তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তার পূর্ণপ্রতিদান তোমাদেরকে দেওয়া হবে (৮:৬০)।
৬. তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। তিনিই শ্রেষ্ঠ রিযকদাতা (৩৪:৩৪)।
৭. যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তা তোমাদের নিজেদের জন্য এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থেই ব্যয় করে থাকো। যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর তার পুরস্কার তোমাদেরকে পুরাপুরিভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না (২:২৭২)।
৮. যারা নিজেদের ধনৈশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন (২:২৬১)।
৯. আল্লাহ নির্ধারিত পথে ব্যয় না করলে জাহান্নাম (৮:৩৬-৩৭)।
ফেসবুক পোস্ট থেকে