এ বইটি ‘যাকাত’ সম্পর্কে গতানুগতিক বিশ্লেষণধর্মী কোনো বই নয়, বরং এ বইয়ে আল কুরআনের আলোকে যাকাত বিষয়ে মৌলিক ও বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা উপস্থাপিত হয়েছে। বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে যে, প্রচলিত ধারণায় যাকাত বলতে যা বুঝায় এবং কুরআনের আলোকে যাকাত বলতে যা বুঝায় তা পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। প্রচলিত ধারণায় যাকাতকে একটি নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিক কাঠামোবদ্ধ অর্থনৈতিক দায়িত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। খুব সংক্ষেপে প্রচলিত ধারণাটিকে এভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে যে, “যাকাত হলো কোনো ব্যক্তির নিকট এক চান্দ্রবর্ষ বা ৩৫৪ দিন সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ সঞ্চিত থাকলে তাকে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত প্রদান করতে হয় এবং এটিকে যাকাত বলে, কারণ এর মাধ্যমে তার সঞ্চিত বাকি অর্থ পবিত্র হয়ে যায়”। অথচ কুরআনে কিছু অংশ দান করার মাধ্যমে সম্পদকে পবিত্রকরণের কথা বলা হয়নি বরং আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক্ব বা জীবিকা তথা বৈধ ও পবিত্র সম্পদ থেকে ইনফাক্ব বা আল্লাহর নির্দেশিত খাতগুলোতে ব্যয় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মু’মিনদের সম্পদে যারা জীবনযাত্রার মৌলিক চাহিদা পূরণের উপযোগী সম্পদ থেকে বঞ্চিত রয়েছে এবং যারা সাহায্যপ্রার্থী তাদের অধিকার রয়েছে। অর্থাৎ যারা অধিক সম্পদ পেয়ে থাকে মূলত আল্লাহর পক্ষ থেকে সেখানে একটা আমানত যুক্ত থাকে, যা বঞ্চিত ও অভাবগ্রস্তদের অধিকার হিসেবে পরিপূরণ করতে হয়। এজন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ বা প্রথমে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সঞ্চয় করে রাখার নির্দেশনা নেই। বরং এটি হতে পারে নিজের সাধ্য এবং অপরের প্রয়োজন পূরণের বাস্তব পরিস্থিতি অনুসারে নিজের মধ্যে উদারতা গুণকে বিকশিত করতে থেকে এবং মধ্যম পন্থায় ব্যয় ও অনুদান করা এবং সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনায় পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্তে নির্ধারিত পরিমাণে সংগ্রহ করা।
বইটিতে দেখানো হয়েছে যে, কুরআনে যাকাত শব্দটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সীমিত কোনো বিষয় নয়। বরং কুরআনে যাকাত শব্দটি তার সরাসরি অর্থে তথা পরিশুদ্ধতা, নৈতিক গুণের বিকাশ এবং সুষ্ঠু উন্নয়ন অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। এতে যাকাত বলতে ব্যক্তি ও সমাজের অপরিশুদ্ধতা ও অসুষ্ঠু অবস্থার সংশোধন করে সার্বিক পরিশুদ্ধতা ও সুষ্ঠু উন্নয়ন ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য সক্রিয় ভূমিকাকে বুঝানো হয়েছে। তাই কুরআনে যাকাত প্রসঙ্গের বক্তব্যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা, পরিশুদ্ধতার ক্ষেত্রে সক্রিয় থাকা, মু’মিনদের মধ্যে পরিশুদ্ধতার কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা বা মু’মিনদেরকে পরিশুদ্ধ করা ইত্যাদির জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে বইটিতে যাকাতের অর্থনৈতিক দিক, ইনফাক্ব, সদাক্বাত, আনফাল, মাগানিম (গনিমত) ও জিযইয়া প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত ধারণা এবং কুরআনের আলোকে সঠিক তথ্য আলোচিত হয়েছে। সেই সাথে যাকাতের নিসাব বিষয়ে প্রচলিত ধারণারও বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করা হয়েছে।
যারা আল কুরআনের আলোকে যাকাত সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে আগ্রহী, তা কুরআনের ভিত্তিতে যাকাতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য হোক অথবা অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন মতবাদের সাথে তুলনামূলক অধ্যয়নের জন্য হোক, তাদের জন্য বইটি সহায়ক হতে পারে। যারা যাকাত বিষয়ে কুরআনের নির্দেশনার পরিপূর্ণতা ও প্রায়োগিকতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী বইটি যেমন তাদের কাজে লাগতে পারে, তেমিন এ বিষয়ে শুনা কথার ভিত্তিতে এবং যথাযথ অধ্যয়ন ও গবেষণা ছাড়া তৈরি হওয়া দ্বিধাগ্রস্ততা নিরসনেও বইটি কাজে লাগতে পারে বলে আশা করা যায়। তবে কুরআনের আয়াতসমূহের তাৎপর্য উপলব্ধিতে বা তা থেকে যেসব অনুসিদ্ধান্ত উল্লেখ করা হয়েছে তাতে আয়াতভিত্তিক যাচাইয়ের মাধ্যমে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনযোগ্য।
১. যাকাত শব্দটির শাব্দিক/আক্ষরিক অর্থ হলো ‘পরিশুদ্ধতা, অধিক ফসল দেয়ার মতো উর্বরতা, খাদ্যের অধিক পুষ্টি ও স্বাদ, নৈতিক উন্নয়ন, আধ্যাত্মিক আত্মোন্নয়ন, নৈতিকতাভিত্তিক সুষম আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন’। যাকাত শব্দের এসব অর্থ সত্ত্বেও যাকাত সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা হলো এটি শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক দায়িত্ব যা একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ সঞ্চিত থাকলে নির্দিষ্ট হারে প্রদান করতে হয়। যাকাত সম্পর্কে এ প্রচলিত ধারণাটির কুরআনিক ভিত্তি নেই। বরং কুরআন অনুযায়ী যাকাত হলো আত্মিক ও সামগ্রিক তথা চিন্তা ও কর্মের সর্বক্ষেত্রে পরিশুদ্ধতা অর্জন করা।
২. যাকাত প্রদান করার নির্দেশ সম্বলিত আয়াতে শুধুমাত্র পরিশুদ্ধতামূলক অর্থনৈতিক প্রদেয় প্রদান করানোকে বুঝানো হয়নি, যদিও সেটিও যাকাত এর একটি দিক। ব্যক্তি ও সমাজজীবনে পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে কোনো যথোপযোগী কর্মসূচী বাস্তবায়নে আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা ও সামর্থ্য তথা মেধা, শ্রম, সময় ও অর্থ যোগান দিয়ে অংশগ্রহণ করাও যাকাত প্রদান বা সরবরাহ করার অন্যতম তাৎপর্য।
৩. যাকাত প্রদান করার নির্দেশের একটি দিক হলো পরিশুদ্ধতা বৃদ্ধি, পরার্থপরতার অর্থনীতি ও নৈতিকতাভিত্তিক সুষম উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক প্রদেয় প্রদান করা।
৪. নিজ উপার্জিত ও মালিকানাধীন সম্পদে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান অনুসারে বঞ্চিত ও প্রার্থীদের এবং আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে ও অভাবগ্রস্তদের অধিকার স্বীকার করে তাদেরকে সদাক্বাত প্রদান করতে হয়। সদাক্বাতকে ইয়াতীম, মিসক্বীন প্রমুখের জন্য নিজ মহব্বতের মালসম্পদ অনুদান (আতাল মাল) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষ বাধ্যতামূলক সদাক্বাত প্রদান ও আতাল মালের চেয়ে যাকাতকে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা দ্বারা পরিশুদ্ধতামূলক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার প্রদেয় প্রদান করতে থাকাকে বুঝায়। আবার যাকাতের উদ্দেশ্যে সদাক্বাত আদায় ও বন্টন বা আতাল মালের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, সদাক্বাত ও আতাল মালও যাকাতের অন্তর্ভুক্ত তবে যাকাত তার চেয়ে ব্যাপক ও স্বাভাবিক চলমান প্রক্রিয়া।
৫. যাকাত-সদাক্বাত সহ সর্বপ্রকার বৈধ ব্যয়কে ইনফাক্ব বলা হয়। নিজের ও নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয়ও ইনফাক্বের অন্তর্ভুক্ত। তবে ইনফাক্ব শব্দটি প্রয়োগ করে বিশেষত অন্যদের জন্য আল্লাহর বিধান অনুসারে ব্যয় করার বিষয়টি বুঝায়। তাই ইনফাক্ব ও যাকাতের মধ্যে কিছুটা বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য থাকলেও উভয়টির মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। ইনফাক্ব করার ক্ষেত্রে মৌলিক নির্দেশনা হলো তা হতে হবে উদারতাপূর্ণ অনুদান, উৎকৃষ্ট মানের, উপার্জন, ফল-ফসল ও সর্বপ্রকার মালসম্পদ থেকে এবং গোপনে, প্রকাশ্যে, রাতে, দিনে, স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল উভয় অবস্থায় এবং অন্যদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ও মধ্যম পন্থায় যেন নিজেও অন্যের ইনফাক্বের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মতো বিষয়ে পরিণত না হয়।
৬. ইনফাক্ব, সদাক্বাত ও যাকাতের সম্পর্ক হলো সাধারণভাবে সকল বৈধ ব্যয়কেই ইনফাক্ব বলা হয়, ইনফাক্ব যখন সত্য ব্যবস্থার প্রতি নিষ্ঠার প্রমাণবহ অনুদান হিসেবে সংঘটিত হয় তখন তাকে সদাক্বাত বলে এবং ইনফাক্ব বা সদাক্বাতের মাধ্যমে যাকাত বা আত্মিক পরিশুদ্ধি, ব্যক্তিত্বের সদ্গুণাবলির বিকাশ ও সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্য অর্জনের প্রয়াস জড়িত থাকে বিধায় প্রক্রিয়াশীলতার (Proactiveness) সাথে সদাক্বাত বা ইনফাক্ব করলে তাকে যাকাত বলে। অন্য কথায়, এ তিনটি বিষয়ের মধ্যে অর্থগত Overlapping রয়েছে, যা নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং এগুলোর পার্থক্য বিষয়গত নয় বরং একই বিষয়ের ভিন্ন ভিন্ন তাৎপর্যগত ব্যাপ্তির মধ্যে। যেমন, সদাক্বাত প্রদান করার আদেশের পাশাপাশি সদাক্বাত সংগ্রহ করা এবং নির্দিষ্ট খাতগুলোতে তা বণ্টন করার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু যাকাত প্রদান করার ক্ষেত্রে তা কোনো কর্তৃপক্ষের নিকট দেয়া বা গ্রহণ করা এবং নির্দিষ্ট খাতে বণ্টনের কথা নেই। অন্য কথায়, যাকাত প্রদান করার বিষয়টি একটি ব্যাপক ও চলমান প্রক্রিয়ার বিষয়। তাই সদাক্বাত প্রদানের মাধ্যমেও যাকাত প্রদান হয় কিন্তু বিশেষ সদাক্বাত প্রদান ছাড়াও যাকাত প্রদানের বিষয়টি অব্যাহত থাকে।
৭. যখন অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্বের বিষয় এসেছে তখন সদাক্বাতের আলোচনা এলেও সংক্ষেপে দ্বীনের (ইসলামী জীবনব্যবস্থার) মৌলিক কাঠামো উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সালাত প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদানের বিষয় বলা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, সামগ্রিক অর্থনৈতিক দায়-দায়িত্বকে একসাথে যাকাত এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সালাতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সালাত প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য হলো আল্লাহর বিধানের নিবিড় অনুসরণ এবং যাকাত প্রদান এর তাৎপর্য হলো অর্থনৈতিক অনুদানসহ বিভিন্নভাবে আল্লাহর বিধানভিত্তিক পরিবেশ গঠনে আত্মশুদ্ধি ও নিজের মধ্যে থাকা গুণাবলির বিকাশ ঘটিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।
৮. যাকাতের শিক্ষার মধ্যে এটি লক্ষণীয় যে সাদাক্বাতের জন্য একজন মুসলিম অবশ্যই তার আয়ের সাথে সাথে বাজেটিং (Budgeting) করবে এবং প্রত্যেক মুসলিমের ফাইন্যান্সিয়াল লিটারেট (Financial Literate) হতে উদ্বুদ্ধ করবে।
৯. কুরআনে নির্দিষ্ট হারে প্রদান করার বিষয়ে একমাত্র নির্দেশনা হলো ‘মাগানিমের পাঁচ ভাগের এক ভাগ’ বা ২০% প্রদান করা। মাগানিম শব্দটিকে সাধারণত এর সমার্থক শব্দ ‘গনিমত’ শব্দ দ্বারা বুঝানোর রীতি প্রচলিত রয়েছে। তবে কুরআনে ব্যবহৃত শব্দটি হলো মাগানিম যার অর্থ হলো ‘কোনো বিশেষ শর্তে (যেমন: আবাদ করা, আহরণ করা বা যুদ্ধে অংশগ্রহণ) যে সাধারণ সম্পদে অধিকার স্বীকৃত হয়, যুদ্ধলব্ধ / যুদ্ধলভ্য শত্রুসম্পদ তথা শত্রুরা যুদ্ধক্ষেত্রে যা ফেলে গেছে বা হারিয়েছে, বিনা কষ্টে অর্জিত সম্পদ, অর্জন বা লাভ’। এই প্রেক্ষিতে যে ব্যক্তি কোনো পতিত জমিতে লাঙ্গল লাগিয়ে তাকে আবাদ করেছে তাতে বা তার ফসলে তাকে মালিকানা দেয়া হবে এবং সে তা থেকে ২০% প্রদান করতে হবে, যে ব্যক্তি নদী বা সমুদ্রে মাছ ধরবে সে তা থেকে ২০% প্রদান করতে হবে, যে ব্যক্তি বন থেকে গাছ কাটবে বা মধু সংগ্রহ করবে সে তা থেকে ২০% মাগানিম বণ্টনের খাতে প্রদান করতে হবে।
১০. উপার্জন, বিনিময়, উত্তরাধিকার বা উপহারের মাধ্যমে যে সম্পদ বণ্টিত হয় তার বাহিরে অবণ্টিত জনসম্পদই আনফাল। অনুরূপভাবে মাগানিম বা যুদ্ধলভ্য সম্পদ থেকে যা জনসম্পদ (Public wealth or Commonwealth) হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় সেটাও আনফাল। আনফালের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আনফালই ‘আল্লাহর জন্য ও রসূলের জন্য’ তথা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপনার জন্য সংরক্ষিত। জনসম্পদকে ব্যাপকভাবে বেসরকারিকরণ করা যাবে না এবং তা থেকে বাস্তব প্রয়োজনে বেসরকারিকরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বা উলিল আমরের পরামর্শভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য। বন, সমুদ্র, খনি প্রভৃতি আনফালের অন্তর্ভুক্ত, যা থেকে কিছু উৎপাদন বা আহরণের অনুমতি প্রদান করলে উৎপাদিত বা আহরিত সম্পদ মাগানিম হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
১১. যখন বিনা যুদ্ধে ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থার শত্রুদের (অন্যায় যুদ্ধাভিযান পরিচালনাকারীদের) সম্পদ হস্তগত হয় তাকে ফায় বলে। ফায় এর বণ্টনের জন্য সুনির্দিষ্ট বণ্টনবিধি দেয়া হয়েছে। ফায় এর বণ্টন পদ্ধতি বর্ণনার প্রসঙ্গক্রমে ইসলামী অর্থনীতির মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে, যা হলো: “সম্পদ যেন শুধু সম্পদশালীদের মধ্যে আবর্তিত না হয়”।
১২. যে শ্রম বা সেবা দিবে তাকে পারিশ্রমিক বা পারিতোষিক দিতে হবে। পারিশ্রমিক, পারিতোষিক ও প্রতিফলকে আজর বলা হয়। যাবতীয় সৎকাজের প্রতিফল বা আজর আল্লাহর পক্ষ থেকে পৃথিবীতে ও আখিরাতে পাওয়া যাবে। পৃথিবীতে যখন এক মানুষ অন্য মানুষের সাথে কোনো পেশাগত শ্রম বা সেবার বিনিময় করে তখন সে আজর বা পারিশ্রমিক ও পারিতোষিকের প্রাপক হয়। তবে আল্লাহর কিতাবকে মানুষের কাছ থেকে আজর বা পারিশ্রমিক ও পারিতোষিক পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। তাই নবী-রসূলগণ বালাগের (কিতাবের তথ্য প্রচার) জন্য কোনো আজর বা পারিশ্রমিক ও পারিতোষিক দাবি করেননি। অনুরূপভাবে আমাদেরকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তাদের অনুসরণ করতে যারা বালাগের বা দ্বীনের প্রচারের জন্য বিনিময় চায় না, বরং নিজ দায়িত্ব হিসবে বালাগ করে এবং সেই সাথে নিজেরাও হিদায়াতপ্রাপ্ত।
১৩. কোনো নির্দিষ্ট কর্মসূচীর জন্য যে নির্দিষ্ট পরিমাণ খরচ হয় তাকে খারাজ / খরজ বলা হয়। দ্বীনের বালাগ বা প্রচারের জন্য কোনো খারাজ দাবি করা যাবে না। কোনো নির্দিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বা দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় খারাজ সংগ্রহ করা যেতে পারে। তবে যদি সরকারের তহবিল থেকে প্রকল্প ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ও সহজ হয় সেক্ষেত্রে নাগরিকদের উপর বাড়তি খারাজ আরোপ করা সঙ্গত নয়।
১৪. রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকগণ যে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে তার পুরস্কারস্বরূপ নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় তহবিলে যে প্রদেয় প্রদান করতে হয় সেটাই জিযইয়া। এই প্রেক্ষিতে নাগরিকদের কোনো বিচ্ছিন্ন গ্রুপ যদি ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে এবং জিযইয়া দেয়া পরিত্যাগ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ ত্যাগ করে জিযইয়া প্রদান করার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করা সঙ্গত। তাই কুরআনে এরূপ আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু নিতান্ত ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে কোনো ‘ধর্মীয় কর’ আরোপ করা কুরআনের বিধানের পরিপন্থী। তাই জিযইয়া কোনোক্রমেই ‘ধর্মীয় কর’ নয়, যা ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপর আরোপ করা হয়। জিযইয়া সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা কুরআনে বর্ণিত ধর্মীয় স্বাধীনতার মূলনীতি ও নাগরিক দায়িত্ব হিসেবে জিযইয়া প্রদানের যে শিক্ষা রয়েছে তার সাথে সঙ্গতিশীল নয়। প্রকৃতপক্ষে জিযইয়া হলো নাগরিকদের প্রদেয় কর, যা মুসলিম-অমুসলিম সকলেই প্রদান করতে হবে।
১৫. কুরআন অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তি তার ফল-ফসল আহরণের দিন তথা আয়-উপার্জন গ্রহণের দিন তা থেকে আল্লাহর বিধান অনুসারে অর্পিত হক্ব আদায় করতে হবে। সুতরাং জিযইয়া আদায়, সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনার সদাক্বাত প্রদান এবং ব্যক্তিগত বিবেচনায় উপস্থিত অভাবীদেরকে সদাক্বাত প্রদানের বিষয়ে আয়ের দিনকেই সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। বিগত আয় থেকে ব্যয় পরবর্তী সঞ্চয় এবং অন্যান্য সহায়-সম্পদকেও আয়ের দিনের আয়ের সাথেই বিবেচনা করতে হবে এবং আয়ের দিনই মূলত হক্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সরাসরি নির্দেশিত দিন।
(১) সরাসরি ‘যাকাত’ শব্দ ধারণকারী আয়াতসমূহ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ
২:৪৩ :: আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত প্রদান করো আর তোমরা রুকূ’ করো রুকূ’কারীদের সাথে।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ لَا تَعْبُدُونَ إِلَّا اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلَّا قَلِيلًا مِّنكُمْ وَأَنتُم مُّعْرِضُونَ
২:৮৩ :: আর (উল্লেখ্য) যখন আমরা বানী ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছি (এ মর্মে যে), “তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করো না। আর পিতা-মাতার প্রতি, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি, ইয়াতীমদের প্রতি এবং অভাবগ্রস্তদের প্রতি উত্তম আচরণ করো। আর মানুষকে সুন্দর কথা বলো। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো”। তারপর তোমাদের মধ্য থেকে অল্প কিছু ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো। আর তোমরা তো বিমুখ।
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
২:১১০ :: আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো। আর তোমরা তোমাদের কল্যাণার্থে যেসব কল্যাণকর কাজ অগ্রিম করে যাবে আল্লাহর নিকট তা (তার শুভ প্রতিফল) পাবে। নিশ্চয় তোমরা যা করো আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَىٰ حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ
২:১৭৭ :: পূণ্য কাজ এ নয় যে, তোমরা পূর্ব ও পশ্চিম কিবলার দিকে তোমাদের মুখ ফিরাও। কিন্তু পূণ্যকাজ সে-ই করে যে বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাত দিবসের প্রতি এবং ফেরেশতাদের প্রতি এবং কিতাবের প্রতি এবং নবীগণের প্রতি এবং তার মহব্বতের মাল দান করে আত্মীয়-স্বজনকে, ইয়াতীমদেরকে, অভাবগ্রস্তদেরকে এবং ছিন্নমূলকে /উদ্বাস্তুকে / বাস্তুহারাকে (ইবনে সাবীলকে) এবং সাহায্যপ্রার্থীকে এবং কারো ঘাড়কে (দাসত্ব থেকে) মুক্ত করার ক্ষেত্রে। এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং তারা যখন প্রতিজ্ঞা করে সেই প্রতিজ্ঞা পূরণকারী এবং অর্থ-সংকটে, দু:খ-ক্লেষে ও সংগ্রাম সংকটের সময় সবরকারী। তারাই ঐসব লোক যারা সত্যবাদী এবং তারাই সত্যাগ্রহী, আল্লাহ সচেতন।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
২:২৭৭ :: নিশ্চয় যারা বিশ্বাস করে এবং সংশোধনমূলক সৎকর্ম করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে তাদের জন্য তাদের প্রভুর কাছে তাদের পারিতোষিক আছে। আর তাদের কোনো ভয় থাকবে না আর তারা দু:খিতও থাকবে না।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
৪:৭৭ :: তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যাদেরকে বলা হয়েছিলো, “তোমাদের হাতসমূহকে গুটিয়ে রাখো, আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো”। তারপর যখনি তাদের তাদের উপর সশস্ত্র সংগ্রামকে বিধিবদ্ধ করা হলো তখনি তাদের মধ্যকার একটি দল মানুষকে ভয় করলো যেমন ভয় করা উচিত আল্লাহকে বা তার চেয়ে কঠিন ভয়। আর তারা বললো, “আমাদের প্রভু, কেন তুমি আমাদের উপর সশস্ত্র সংগ্রামকে বিধিবদ্ধ করলে? কেন তুমি আমাদেরকে নিকটবর্তী (আরও স্বল্পদৈর্ঘ্য) সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিলে না?” বলো, “দুনিয়ার ভোগসমাগ্রী অত্যন্ত অল্প। আর আখিরাতই তার জন্য উত্তম যে সত্যাগ্রহী/আল্লাহ সচেতন হয়। আর তোমাদের প্রতি বিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবে না”।
لَّـٰكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُونَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَاةَ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أُولَـٰئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا
৪:১৬২ :: কিন্তু তাদের (ইয়াহুদদের) মধ্যকার জ্ঞানে সুগভীর ব্যক্তিবর্গ (রাছিখূনা ফিল ইলম) এবং মু’মিনগণ তাতে বিশ্বাস করে যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছিলো এবং (তারা) সালাত প্রতিষ্ঠাকারী এবং যাকাত প্রদানকারী এবং আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী। তারাই এমন লোক আমি শীঘ্রই যাদেরকে মহাপুরস্কার দেবো।
وَلَقَدْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَبَعَثْنَا مِنْهُمُ اثْنَيْ عَشَرَ نَقِيبًا وَقَالَ اللَّهُ إِنِّي مَعَكُمْ لَئِنْ أَقَمْتُمُ الصَّلَاةَ وَآتَيْتُمُ الزَّكَاةَ وَآمَنتُم بِرُسُلِي وَعَزَّرْتُمُوهُمْ وَأَقْرَضْتُمُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا لَّأُكَفِّرَنَّ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَلَأُدْخِلَنَّكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ فَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ مِنكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ
৫:১২ :: আর নিশ্চয় আল্লাহ বানী ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। আর আমি তাদের মধ্য থেকে বারো জন নকীব (নেতা) সমুত্থিত করেছিলাম। আর আল্লাহ বলেছিলেন, “নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আমার রসূলগণের প্রতি বিশ্বাস করো এবং তাদেরকে শক্তি যোগাও এবং আল্লাহকে করজে হাসানাহ (উত্তম ঋণ) দাও। তাহলে আমি তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দ কাজগুলোকে মোচন করবো এবং তোমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করাবো যার নিচ অংশে নদীসমূহ জারি হয়। অন্যদিকে এরপরও (প্রতিশ্রুতি দানের পরও) তোমাদের মধ্য থেকে যে কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করবে সে সরল পথ থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে”।
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
৫:৫৫ :: নিশ্চয় তোমাদের বন্ধু ও অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ এবং তাঁর রসূল ও তারাই যারা বিশ্বাস করে এবং যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে বিনত (রুকূ’কারী থাকা) অবস্থায়।
وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَـٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ إِنَّا هُدْنَا إِلَيْكَ قَالَ عَذَابِي أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاءُ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ
৭:১৫৬ :: আর আমাদের জন্য দুনিয়ার ও আখিরাতের কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয় আমরা আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি। তিনি (আল্লাহ) বললেন, “আমি যাকে ইচ্ছা করি শাস্তি দিয়ে থাকি এবং সকল কিছুকেই আমার অনুগ্রহ পরিব্যাপ্ত করে আছে। তারপর শীঘ্রই আমি তাদের জন্য তা লিখে দেবো যারা আল্লাহ সচেতন হয় এবং যাকাত প্রদান করে এবং যারা আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান রাখে”।
فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৯:৫ :: তারপর যখন হারাম মাসসমূহ (বিধিবদ্ধ যুদ্ধ বিরতির ও সংরক্ষিত মাসসমূহ) অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে (হারাম এলাকার) যেখানেই পাও হত্যা (নিশ্চিহ্ন) করো এবং তাদেরকে পাকড়াও করো এবং তাদেরকে ঘেরাও করো এবং তাদেরকে ধরার জন্য প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে বসো। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَنُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
৯:১১ :: তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে,তাহলে তারা দ্বীনের (জীবনব্যবস্থার) ভিত্তিতে তোমাদের ভাই। আর আমি আয়াতসমূহকে তফসীল আকারে (বিস্তারিত) বর্ণনা করেছি, সেই কওমের জন্য যারা জ্ঞানাজর্ন করে।
إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلَّا اللَّهَ فَعَسَىٰ أُولَـٰئِكَ أَن يَكُونُوا مِنَ الْمُهْتَدِينَ
৯:১৮ :: নিশ্চয় তারাই আল্লাহর মসজিদসমূহের ব্যবস্থাপনা করবে (ব্যবস্থাপনার অধিকার রাখে) যারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায় যে, তারাই পথনির্দেশ গ্রহণকারীদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَـٰئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
৯:৭১ :: আর মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী একে অপরের আওলিয়া (বন্ধু ও অভিভাবক)। তারা ন্যায় কাজের আদেশ দেয় এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করে। তারাই ঐসব লোক যাদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।
فَأَرَدْنَا أَن يُبْدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيْرًا مِّنْهُ زَكَاةً وَأَقْرَبَ رُحْمًا
১৮:৮১ :: তাই আমরা চাইলাম যে, তাদের প্রভু যেন তাদেরকে তার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পরিশুদ্ধতায় উত্তম ও দয়া-মায়ায় ঘনিষ্ঠতর।
وَحَنَانًا مِّن لَّدُنَّا وَزَكَاةً وَكَانَ تَقِيًّا
১৯:১৩ :: আর আমাদের পক্ষ থেকে (ইয়াহইয়াকে আরো দিয়েছিলাম) অন্তরের কোমলতা ও যাকাত / পরিশুদ্ধতা। আর সে আল্লাহ সচেতন ছিলো।
وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيْنَ مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ مَا دُمْتُ حَيًّا
১৯:৩১ :: আর তিনি আমাকে সমৃদ্ধিময় করেছেন যেখানেই আমি (ঈসা) থাকি, আর তিনি আমাকে ওয়াসিয়্যাত (বিশেষ নির্দেশ প্রদান) করেছেন সালাতের ও যাকাতের প্রতি যতদিন আমি স্থায়ী (জীবিত) থাকি।
وَكَانَ يَأْمُرُ أَهْلَهُ بِالصَّلَاةِ وَالزَّكَاةِ وَكَانَ عِندَ رَبِّهِ مَرْضِيًّا
১৯:৫৫ :: আর সে (ইসমাইল) তার পরিবার পরিজনকে সালাতের ও যাকাতের প্রতি আদেশ দিতো। আর সে তার রবের কাছে পছন্দনীয় ব্যক্তি ছিলো।
وَجَعَلْنَاهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِمْ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَإِقَامَ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءَ الزَّكَاةِ وَكَانُوا لَنَا عَابِدِينَ
২১:৭৩ :: আর আমি তাদেরকে (ইবরাহীম, লূত, ইসহাক, ইয়াকুব প্রমুখকে) ইমাম বানিয়েছিলাম। তারা আমার আদেশের মাধ্যমে সঠিক পথ প্রদর্শন করতো এবং আমি তাদেরকে ওয়াহী করেছিলাম কল্যাণকর্ম সম্পাদনের জন্য এবং সালাত প্রতিষ্ঠার জন্য এবং যাকাত প্রদানের জন্য। আর তারা ছিলো আমারই দাসত্বকারী।
الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ
২২:৪১ :: যারা (আল্লাহকে প্রভু হিসেবে গ্রহণকারীরা) এমন যে, যদি আমি তাদেরকে পৃথিবীতে আবাসন কর্তৃত্ব প্রদান করি তাহলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করবে এবং ন্যায় কাজের আদেশ দিবে এবং অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সব ব্যাপারের চূড়ান্ত পরিণতি আল্লাহরই আয়ত্তে আছে।
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَـٰذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاءَ عَلَى النَّاسِ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
২২:৭৮ :: আর তোমরা আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করো যেরূপ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে বাছাই করেছেন,আর তিনি জীবনব্যবস্থার মধ্যে তোমাদের উপর কোনো সংকীর্ণতা চাপাননি। (অনুসরণ করো) তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত (জীবনাচরণের স্বরূপ ও প্রকৃতি)। তিনি (আল্লাহ) তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিমূন’ (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী),আগেও এবং এর (কুরআনের) মধ্যেও। যেন রসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হয় আর তোমরা মানবজাতির উপর সাক্ষী হও। সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে আঁকড়ে ধরো। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। উৎকৃষ্ট-অনুগ্রহশীল অভিভাবক এবং উৎকৃষ্ট-অনুগ্রহশীল সাহায্যকারী।
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ
২৩:১ :: নিশ্চয় সফল হয়েছে মু’মিনগণ।
الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ
২৩:২ :: যারা তাদের সালাতের ক্ষেত্রে খাশিয়ূন (বিনীত)।
وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ
২৩:৩ :: এবং যারা অনর্থক কথা-কাজ থেকে বিমুখ।
وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ
২৩:৪ :: এবং যারা যাকাতের (পরিশুদ্ধতার) জন্য সক্রিয়।
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ
২৪:৩৭ :: এমন পুরুষগণ, যাদেরকে তিজারাত (সাধারণ ব্যবসায়) এবং বাই’ (চুক্তিভিত্তিক কার্যক্রমসম্পন্ন ব্যবসায়) অসচেতন করে না আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা থেকে এবং যাকাত প্রদান থেকে। তারা সেই দিনকে ভয় করে যেদিন কলবসমূহ ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে।
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
২৪:৫৬ :: আর সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং রসূলের আনুগত্য করো, যেন তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পারো।
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
২৭:৩ :: যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এ অবস্থায় যে,তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চয়তাবোধ রাখে।
وَمَا آتَيْتُم مِّن رِّبًا لِّيَرْبُوَ فِي أَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا يَرْبُو عِندَ اللَّهِ وَمَا آتَيْتُم مِّن زَكَاةٍ تُرِيدُونَ وَجْهَ اللَّهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُضْعِفُونَ
৩০:৩৯ :: আর তোমরা যা দাও রিবা বাবদ, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাবে বলে, আল্লাহর কাছে (তথা প্রকৃত প্রস্তাবে) তা বৃদ্ধি পায় না। আর যা তোমরা দাও যাকাত বাবদ, তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার ইচ্ছা করে, তারাই (এই যাকাত প্রদানকারীরাই) গুণিতককারী।
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ
৩১:৪ :: যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে এ অব্স্থায় যে,তারা আখিরাতের প্রতি নিশ্চয়তাবোধ রাখে।
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَىٰ وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
৩৩:৩৩ :: তোমরা স্বস্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করো তোমাদের ঘরসমূহে। আর তোমরা প্রদর্শন করো না পূর্বতন জাহিলিয়াতের প্রদর্শনী। আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। নিশ্চয় আল্লাহ ইচ্ছা করেন তোমাদের থেকে অপরিচ্ছন্নতা সরিয়ে দিতে, হে গৃহবাসী, আর তোমাদেরকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করতে।
الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
৪১:৭ :: (দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য) যারা যাকাত প্রদান করে না এবং আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসী।
أَأَشْفَقْتُمْ أَن تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍ فَإِذْ لَمْ تَفْعَلُوا وَتَابَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
৫৮:১৩ :: তোমরা কি উদ্বিগ্নতা অনুভব করছো যে, তোমাদেরকে (রসূলের সাথে) তোমাদের গোপনীয়ভাবে কথা বলার পূর্বে সদাক্বাত প্রদান করতে হবে? তারপর যখন তোমরা (সামর্থের অভাবে) তা পালন করোনি আর আল্লাহ (পূর্বে জানানো ঘোষণা অনুযায়ী) তোমাদের উপর (ওজরের ক্ষেত্রে) ক্ষমাপরবশ হয়েছেন। সুতরাং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।
إِنَّ رَبَّكَ يَعْلَمُ أَنَّكَ تَقُومُ أَدْنَىٰ مِن ثُلُثَيِ اللَّيْلِ وَنِصْفَهُ وَثُلُثَهُ وَطَائِفَةٌ مِّنَ الَّذِينَ مَعَكَ وَاللَّهُ يُقَدِّرُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ عَلِمَ أَن لَّن تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ عَلِمَ أَن سَيَكُونُ مِنكُم مَّرْضَىٰ وَآخَرُونَ يَضْرِبُونَ فِي الْأَرْضِ يَبْتَغُونَ مِن فَضْلِ اللَّهِ وَآخَرُونَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنْهُ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَقْرِضُوا اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرًا وَأَعْظَمَ أَجْرًا وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৭৩:২০ :: নিশ্চয় তোমার প্রভু জানেন যে, তুমি দাঁড়িয়ে থাক রাতের প্রায় তিনভাগের দুইভাগ এবং (কখনো) রাতের অর্ধেক এবং (কখনো) রাতের তিনভাগের একভাগ। আর যারা তোমার সাথে আছে তাদের একটি দলও (অনুরূপ করে)। আর আল্লাহ রাত ও দিনের পরিমাপ নির্ধারণ করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা হুবহু হিসাব করতে পারো না। সুতরাং তিনি তোমাদের উপর (ওজরের ক্ষেত্রে) ক্ষমাপরবশ। সুতরাং তোমরা কুরআন থেকে পাঠ করো, যতটুকু সহজসাধ্য হয়। তিনি জানেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ অসুস্থ হবে। আর অন্য অনেকে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা, শিক্ষা প্রভৃতি) তালাশ করতে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে। আর অন্য অনেকে আল্লাহর পথে যুদ্ধাভিযানে থাকবে। সুতরাং তোমরা তা (কুরআন) থেকে পাঠ করো, যতটুকু সহজসাধ্য হয়। আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত প্রদান করো এবং আল্লাহকে ঋণ দাও, উত্তম ঋণ। আর তোমরা নিজেদের কল্যাণে কল্যাণকর্ম থেকে যা আগে পাঠাবে তোমরা আল্লাহর কাছে তা (তার শুভ প্রতিফল) পাবে। সেটাই উত্তম এবং প্রতিফল হিসেবে মহিমান্বিত। আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَٰلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ
৯৮:৫ :: আর তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়নি এছাড়া যে, তারা যেন আল্লাহর দাসত্ব করে তাঁরই জন্য জীবনব্যবস্থাকে খাঁটি করে, সত্যের প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং যেন তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত প্রদান করে। আর সেটাই (সঠিক ভিত্তির উপর) সুপ্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থা।
(২) যাকাত এর সুপারলেটিভ ডিগ্রী ‘আযকা’ (সবচেয়ে পরিশুদ্ধ)
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ ذَٰلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ مِنكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَٰلِكُمْ أَزْكَىٰ لَكُمْ وَأَطْهَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২:২৩২ :: আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও তারপর তারা তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তোমরা তাদেরকে তাদের (প্রস্তাবিত) স্বামীকে বিবাহ করতে বাধা দিও না, যখন তারা পরস্পরে ন্যায়সঙ্গতভাবে সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়। এ উপদেশ তাকে দেয়া হচ্ছে তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও সবচেয়ে পবিত্র নিয়ম। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।
وَكَذَٰلِكَ بَعَثْنَاهُمْ لِيَتَسَاءَلُوا بَيْنَهُمْ قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ كَمْ لَبِثْتُمْ قَالُوا لَبِثْنَا يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ قَالُوا رَبُّكُمْ أَعْلَمُ بِمَا لَبِثْتُمْ فَابْعَثُوا أَحَدَكُم بِوَرِقِكُمْ هَـٰذِهِ إِلَى الْمَدِينَةِ فَلْيَنظُرْ أَيُّهَا أَزْكَىٰ طَعَامًا فَلْيَأْتِكُم بِرِزْقٍ مِّنْهُ وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا
১৮:১৯ :: আর এরূপ অবস্থাতে আমি তাদেরকে সমুত্থিত করেছি যাতে তারা একে অন্যকে (পরবর্তী কর্মসূচী সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করে। (এরূপ উদ্যোগের পর্যায়ে) তাদের মধ্যকার একজন বক্তা বললো, ‘তোমরা কতদিন অবস্থান করেছো?’ তারা (কয়েকজন) বললো, ‘আমরা একদিন বা তার কিছু অংশ অবস্থান করেছি’। তারা (অন্য কয়েকজন) বললো, ‘তোমরা কতদিন অবস্থান করেছো তা সম্পর্কে তোমাদের প্রভুই ভালো জানেন। সুতরাং তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে এই মুদ্রাসহ শহরে পাঠাও। তারপর সে লক্ষ্য করুক, কোনটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ/পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য? তারপর সে তোমাদের কাছে জীবিকাস্বরূপ তা থেকে নিয়ে আসুক। আর সে যেন সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে আচরণ করে এবং তোমাদের সম্পর্কে কাউকেই টের পেতে না দেয়’।
فَإِن لَّمْ تَجِدُوا فِيهَا أَحَدًا فَلَا تَدْخُلُوهَا حَتَّىٰ يُؤْذَنَ لَكُمْ وَإِن قِيلَ لَكُمُ ارْجِعُوا فَارْجِعُوا هُوَ أَزْكَىٰ لَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
২৪:২৮ :: যদি তোমরা সেখানে (কারো গৃহে) কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও’, তাহলে ফিরে যাবেন। এটাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র নিয়ম। আর তোমরা যা করো আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
২৪:৩০ :: মু’মিন পুরুষদেরকে বলো, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। সেটাই তাদের জন্য সবচেয়ে পরিশুদ্ধ নীতি। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।
(৩) যাকাত এর কর্তৃরূপ ‘যাকিয়্য’ ও ‘যাকিয়্যাহ’ (ব্যক্তিসত্তার বিশেষণ- পরিশুদ্ধ)
فَانطَلَقَا حَتَّىٰ إِذَا لَقِيَا غُلَامًا فَقَتَلَهُ قَالَ أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ لَّقَدْ جِئْتَ شَيْئًا نُّكْرًا
১৮:৭৪ :: তারপর তারা দুজন চলতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত যখন তারা দুজন একটি বালকের সাক্ষাত পেলো, তখন সে তাকে হত্যা করে ফেললো। সে (মূসা) বললো, ‘আপনি কি একটি পরিশুদ্ধ ব্যক্তিসত্তাকে হত্যা করলেন, সে অন্য কোনো ব্যক্তিকে হত্যা না করা সত্ত্বেও? নিশ্চয় আপনি তো ভীষণ অন্যায্য কাজ করলেন’।
قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا
১৯:১৯ :: সে (রুহ/জিবরীল) বললো, ‘প্রকৃতপক্ষে আমি তোমার প্রভুর রসূল /বার্তাবাহক, যেন আমি তোমাকে এক পরিশুদ্ধ পুত্রসন্তান প্রদান করি’।
(৪) যাকাতের ক্রিয়ারূপ-১ ‘যাকা’ (পরিশুদ্ধ হওয়া)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
২৪:২১ :: হে মুমিনগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। আর কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই নির্দেশ দেয়। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতে না। তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে পরিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(৫) যাকাতের ক্রিয়ারূপ-২ ‘যাক্কা’ (পরিশুদ্ধ করা, পরিশুদ্ধ সাব্যস্ত করা)
رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
২:১২৯ :: আমাদের প্রভু, তাদের মধ্যে তাদের মধ্য থেকে একজন রসূলকে প্রেরণ করুন, যে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত (আবৃত্তি) করবে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দিবে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। নিশ্চয় আপনি মহাশক্তিমান ও মহাবিজ্ঞ।
كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ
২:১৫১ :: যেমন আমি তোমাদের মধ্যে তোমাদের মধ্য থেকে একজন রসূলকে প্রেরণ করেছি, যে তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষাদান করে। এবং তোমাদেরকে এমন বিষয় শিক্ষাদান করে যা তোমরা জানতে না।
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَـٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
২:১৭৪ :: নিশ্চয় যারা গোপন করে আল্লাহ কিতাব হতে যা নাযিল করেছেন তা এবং তার বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য গ্রহণ করে তারাই এমন লোক যারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া কিছু খায় না এবং কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না এবং তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَـٰئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
৩:৭৭ :: নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের (পারস্পরিক) প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য গ্রহণ করে তারাই এমন লোক যাদের জন্য আখিরাতে (পুরস্কারের) কোনো অংশ নেই এবং কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
৩:১৬৪ :: নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের উপর অনুগ্রহ করেছেন যখন তিনি তাদের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে একজন রসূলকে প্রেরণ করেছেন, যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষাদান করে, যদিও পূর্বে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলো।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا
৪:৪৯ :: তুমি কি তাদেরকে দেখোনি যারা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ সাব্যস্ত করে? বরং আল্লাহই পরিশুদ্ধ করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তাদের প্রতি সামান্যতম যুলুমও করা হবে না।
خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا وَصَلِّ عَلَيْهِمْ إِنَّ صَلَاتَكَ سَكَنٌ لَّهُمْ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
৯:১০৩ :: তাদের মালসম্পদ থেকে সদাক্বাহ গ্রহণ করো এবং তা দ্বারা তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করো এবং তাদের প্রতি সালাত (অনুগ্রহ-প্রার্থনা) করো। নিশ্চয় তোমার সালাত (অনুগ্রহ প্রার্থনা) তাদের জন্য প্রস্বস্তিকর হবে। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজান্তা।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
২৪:২১ :: হে মুমিনগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। আর কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই নির্দেশ দেয়। আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউই কখনো পরিশুদ্ধ হতে পারতে না। তবে আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে পরিশুদ্ধ করেন এবং আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ هُوَ أَعْلَمُ بِكُمْ إِذْ أَنشَأَكُم مِّنَ الْأَرْضِ وَإِذْ أَنتُمْ أَجِنَّةٌ فِي بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ فَلَا تُزَكُّوا أَنفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقَىٰ
৫৩:৩২ :: যারা ছোটো-খাটো ত্রুটি বিচ্যুতি ছাড়া বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে। নিশ্চয় (তাদের ক্ষেত্রে) তোমার প্রভুর ক্ষমা প্রশস্ত। তিনি তোমাদেরকে জানেন যখন তোমাদেরকে পৃথিবী থেকে উদ্ভব ঘটিয়েছেন এবং যখন তোমরা ছিলে (মাতৃগর্ভে) ভ্রূণরূপে। সুতরাং তোমরা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ বলে দাবি করো না। কে আল্লাহ সচেতন থাকে সে সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক জ্ঞাত।
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
৬২:২ :: তিনিই উম্মীদের (অ-আহলে কিতাবের) মধ্যে তাদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন যে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত শিক্ষাদান করে যদিও পূর্বে তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিলো।
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا
৯১:৯ :: নিশ্চয় সেই সফল হয়েছে যে তাকে (নিজেকে) পরিশুদ্ধ করেছে।
(৬) যাকাতের ক্রিয়ারূপ-৫ ‘তাযাক্কা’ (নিজেকে পরিশুদ্ধ করা)
جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَٰلِكَ جَزَاءُ مَن تَزَكَّىٰ
২০:৭৬ :: স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী বয়ে যায়। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর সেটাই তার পুরস্কার যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।
وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ إِنَّمَا تُنذِرُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُم بِالْغَيْبِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَمَن تَزَكَّىٰ فَإِنَّمَا يَتَزَكَّىٰ لِنَفْسِهِ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ
৩৫:১৮ :: আর কোন বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না। আর যদি কোনো ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকেও তা বহন করতে ডাকে তবে তার থেকে কিছুই বহন করা হবে না, যদিও নিকটাত্মীয় হয়। বস্তুত তুমি তাদেরকেই সতর্ক করতে পারো, যারা না দেখা সত্ত্বেও তাদের প্রতিপালকের বিষয়ে সচেতন থাকে, এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আর যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তবে নিশ্চয় সে নিজের কল্যাণেই (নিজেকে) পরিশুদ্ধ করে। আর আল্লাহর দিকেই (সকলের) প্রত্যাবর্তন।
فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَىٰ أَن تَزَكَّىٰ
৭৯:১৮ :: তারপর বলো, “তোমার কি আগ্রহ আছে যে, তুমি নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে?”
وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّهُ يَزَّكَّىٰ
৮০:৩ :: আর কিসে তোমাকে জানাবে যে, হয়তো সে নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে?
وَمَا عَلَيْكَ أَلَّا يَزَّكَّىٰ
৮০:৭ :: আর তোমার কোনো দায়-দায়িত্ব নেই যদি সে নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে।
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ
৮৭:১৪ :: নিশ্চয় সেই সফল হয়েছে যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।
وَسَيُجَنَّبُهَا الْأَتْقَى
৯২:১৭ :: আর তা থেকে (জাহান্নাম থেকে) মুক্ত রাখা হবে অত্যন্ত আল্লাহ সচেতন ব্যক্তিকে।
الَّذِي يُؤْتِي مَالَهُ يَتَزَكَّىٰ
৯২:১৮ :: যে তার মালসম্পদ দান করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার খাতিরে।
وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُ مِن نِّعْمَةٍ تُجْزَىٰ
৯২:১৯ :: অবস্থা এ নয় যে, তার নিকট কারো অনুগ্রহ আছে, যার প্রতিদান দিতে হবে (বিধায় সে তা দিয়েছে)।
إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَىٰ
৯২:২০ :: কিন্তু তার সুমহান প্রভুর সন্তুষ্টির অন্বেষণই তার উদ্দেশ্য।
وَلَسَوْفَ يَرْضَىٰ
৯২:২১ :: আর শীঘ্রই সে (এর প্রতিফল পেয়ে) সন্তুষ্ট হবে।
যাকাত শব্দটির শব্দমূল হলো ‘যা কাফ ওয়াও’। এর প্রধানত দুটি অর্থ রয়েছে, যথা: (ক) পরিশুদ্ধতা এবং (খ) সুষ্ঠু উন্নয়ন, সুষম পরিপুষ্টি। যাকাতের তাৎপর্য অনুধাবনের জন্য যাকাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন করা প্রয়োজন।এজন্য যাকাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহে যাকাত শব্দটি যে সকল শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে তার নির্ঘণ্টও (Concordance) বিশেষভাবে লক্ষণীয়।নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
(ক) যাকাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৩২ স্থানে: ২:৪৩:৪, ২:৮৩:২২, ২:১১০:৪, ২:১৭৭:৩৫, ২:২৭৭:৯, ৪:৭৭:১২, ৪:১৬২:১৮, ৫:১২:২০, ৫:৫৫:১১, ৭:১৫৬:২৬, ৯:৫:২০, ৯:১১:৬, ৯:১৮:১৩, ৯:৭১:১৪, ১৮:৮১:৭, ১৯:১৩:৪, ১৯:৩১:৮, ১৯:৫৫:৫, ২১:৭৩:১২, ২২:৪১:৯, ২২:৭৮:৩৬, ২৩:৪:৩, ২৪:৩৭:১৩, ২৪:৫৬:৪, ২৭:৩:৫, ৩০:৩৯:১৬, ৩১:৪:৫, ৩৩:৩৩:১২, ৪১:৭:৪, ৫৮:১৩:১৭, ৭৩:২০:৫৬, ৯৮:৫:১৩।
(খ) যাকাত এর Superlative Degree আযকা (সবচেয়ে পরিশুদ্ধ) ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে:২:২৩২:২৬, ১৮:১৯:২৯, ২৪:২৮:১৭ ও ২৪:৩০:৯।
(গ) যাকাত এর কর্তৃরূপ যাকিয়্য ও যাকিয়্যাহ ব্যক্তিসত্তার বিশেষণ (পরিশুদ্ধ) হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ২ স্থানে: ১৯:১৯:৯ ও ১৮:৭৪:১০।
(ঘ) যাকাতের ক্রিয়ারূপ-১ যাকা (পরিশুদ্ধ হওয়া) ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ২৪:২১:২২।
(ঙ) যাকাতের ক্রিয়ারূপ- ২ যাক্কা (পরিশুদ্ধ করা, পরিশুদ্ধ সাব্যস্ত করা) ব্যবহৃত হয়েছে ১২ স্থানে: ২:১২৯:১২, ২:১৫১:৯, ২:১৭৪:২৬, ৩:৭৭:২৪, ৩:১৬৪:১৫, ৪:৪৯:৫, ৪:৪৯:৯, ৯:১০৩:৬, ২৪:২১:২৯, ৫৩:৩২:২৬, ৬২:২:১১, ৯১:৯:৪।
(চ) যাকাতের ক্রিয়ারূপ-৫ তাযাক্কা (নিজেকে পরিশুদ্ধ করা) ব্যবহৃত হয়েছে ৮ স্থানে: ২০:৭৬:১২, ৩৫:১৮:২৮, ৩৫:১৮:৩০, ৭৯:১৮:৬, ৮০:৩:৪, ৮০:৭:৪, ৮৭:১৪:৪, ৯২:১৮:৪।
যাকাত একটি মাসদার বা ক্রিয়াবিশেষ্য এবং যাকাতের একটি প্রতিশব্দ হলো তাযকিয়া (আত্মশুদ্ধি, কাউকে পরিশুদ্ধ করা)। যাকাত শব্দটির অর্থ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ক্রিয়াবিশেষ্যের প্রয়োগ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। ক্রিয়াবিশেষ্য যেসব অর্থে ব্যবহৃত হয় তার অন্যতম দুটি হচ্ছে, ক্রিয়ার নাম এবং এমন বিষয়ের নাম যা ক্রিয়াটির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। যেমন, যিকির = (১) স্মরণ (ক্রিয়াবিশেষ্য) (২) স্মারক (স্মরণ করার জিনিস) (১)
(১) ক্রিয়াবিশেষ্য অর্থে নয়, বরং ঐ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কিন্তু বিষয়গত নাম, ক্রিয়াগত নাম নয়।
যাকাত প্রসঙ্গে দেখা যায় যে, ১৮:৮১ ও ১৯:১৩ আয়াতে যাকাত শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ব্যক্তিসত্তার (গুণগত) অবস্থা প্রকাশের জন্য (পরিশুদ্ধতায় ও পরিশুদ্ধতা অর্থে)।
সুতরাং যাকাত এর দুই ধরনের অর্থ রয়েছে, যথা: (১) পরিশুদ্ধি (ক্রিয়াবিশেষ্য), (২) এমন জিনিস, ব্যক্তিসত্তা, বিষয়, প্রদেয় বা যোগান যা পরিশুদ্ধতার সাথে সম্পর্কিত। অন্য কথায় যাকাত শব্দটি শুধু ক্রিয়াগত নাম হিসেবে নয় বরং ক্রিয়ার বৈশিষ্ট্যসূচক বিষয়গত নাম অর্থেও ব্যবহৃত হয়।
যাকাতের দ্বিতীয় প্রায়োগিক অর্থ হলো, আত্মশুদ্ধিভিত্তিক উন্নয়ন, যেমন, নিজে কম খেয়ে অন্যের খাবারের ব্যবস্থা করা, এটি ভোগবাদের দৃষ্টিতে নিজের উন্নয়ন না হলেও নৈতিক বিবেচনায় এ সামাজিক উন্নয়নই আত্মিক / ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন। যাকাতের এ দ্বিতীয় অর্থটিও আরবি ভাষায় প্রচলিত। এজন্য মেধা, যোগ্যতা / দক্ষতা শেয়ার করে যখন নৈতিক পরিবেশ এবং পরার্থপরতার অর্থনীতি ভিত্তিক সমাজতাত্ত্বিক উন্নয়নের জন্য কোনো কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়, তাও যাকাত।
যাকাত (পরিশুদ্ধতা) সম্পর্কে আল কুরআনের মৌলিক নির্দেশনা হলো: যাকাত প্রদান /সরবরাহ করা, নিজের যাকাত করা, অন্যদের যাকাত করার ক্ষেত্রেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করা এবং যাকাতের উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক অনুদান (সদাক্বাত) আদায় করা। যাকাতের বিষয়ে প্রচলিত ধারণা হলো এটি একটি অর্থনৈতিক বিষয়। কিন্তু কুরআনে যাকাত শব্দটি পরিশুদ্ধতার ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সুতরাং যাকাত অর্থনীতিতে সীমিত কোনো বিষয় হতে পারে না। আবার যেহেতু অর্থনৈতিক বিষয়ও মানবজীবনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক, তাই অবশ্যই যাকাতের অর্থনৈতিক মাত্রাও রয়েছে। তবে ব্যাপক অর্থে যাকাত শব্দটি সামগ্রিক পরিশুদ্ধতা এবং নৈতিকতাভিত্তিক বা সুষ্ঠু আর্থসামাজিক উন্নয়নের নির্দেশক।
যাকাতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আর যাকাতের সুনির্দিষ্ট কার্যগত উদ্দেশ্য হলো, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনকে বিভিন্ন ধরনের কলুষতা /অপরিচ্ছন্নতা, অসৎ ও অনৈতিক প্রবণতা এবং নৈতিক অবনমন থেকে পরিশুদ্ধ করে সুষ্ঠু /সঙ্গত /সুষম সমৃদ্ধতা নিশ্চিত করা। যাকাতের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, রিবা বা সুদের মাধ্যমে সমাজে সম্পদ বৃদ্ধি পায় না, কিন্তু যাকাতের মাধ্যমে সমাজে সম্পদ বৃদ্ধি পায় (৩০:৩৯)।
যারা নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং পরিশুদ্ধতার উদ্দেশ্যে বিনিময় ও কৃতজ্ঞতামূলক প্রতিদান প্রাপ্তির আশা ছাড়া অর্থনৈতিক অনুদান প্রদান করে তারা সঠিক জীবনব্যবস্থায় পরস্পর দ্বীনী ভাই (৯:১১) এবং তারাই জীবনের প্রকৃত সফলতা লাভ করবে। অন্যদিকে মুশরিকদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো তারা যাকাত প্রদান করে না (৪১:৭)।
মু’মিনদেরকে ব্যবসায়-বাণিজ্য আল্লাহর স্মরণ, সালাত ও যাকাত থেকে অসচেতন করে না (২৪:৩৭)। যাকাত প্রদান করাকে মাসজিদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ শর্ত হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে (৯:১৮)। যাকাত প্রদান শুধু মু’মিন পুরুষদের দায়িত্ব নয়, বরং নারীরাও যাকাত প্রদান করতে হবে (৩৩:৩৩)। এ থেকে বুঝা যায় যে, যাকাত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়ার পাশাপাশি একটি ব্যাপক ও সার্বজনীন বিষয়।
দ্বীনুল ক্বাইয়েমাহ বা সঠিক ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত জীবনব্যবস্থার মৌলিক কাঠামো হিসেবে নির্দেশিত হয়েছে, একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা এবং যাকাত প্রদান করা (৯৮:৫)। যাকাতের প্রসঙ্গে কুরআনে ‘যাকাত প্রদান কর’ এবং মু’মিদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ‘তারা যাকাতে সক্রিয়’, ‘রসূল মু’মিনদেরকে পরিশুদ্ধ করতেন’,’যে যাক্কা (আত্মশুদ্ধি সাধন) করে সে সফল, যে দাস্সা (যাকাতের বিপরীত,কলুষিত ও আত্মিক যোগ্যতা অবদমিত) করে সে ব্যর্থ’ এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সুতরাং স্রষ্টা প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার মৌলিক অবকাঠামো হিসেবে যাকাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
আল কুরআনে মুশরিকদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা যাকাত প্রদান করে না এবং আখিরাত বা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না (৪১:৭)। এর অর্থ হলো, আল্লাহ আল কুরআন যেভাবে যাকাত প্রদান করার নির্দেশনা দিয়েছেন তারা সেভাবে যাকাত প্রদান করে না এবং যেভাবে কোনো শাফায়াতের প্রভাবমুক্তভাবে বিচার দিবসে তিনি ফায়সালা করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন, তারা সেভাবে পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। যদি তাদের কেউ যাকাত প্রদানে অংশগ্রহণ করে থাকে বা পরকালে কোনো প্রকার বিশ্বাস রেখে থাকে, তবে সেটি কুরআনভিত্তিক সত্য থেকে বিচ্যুত। বস্তুত শিরক বা আল্লাহর গুণ-ক্ষমতা ও অধিকারের প্রতি বা তাঁর বিধানের প্রতি অংশীদারিত্ব আরোপ করার পেছনে পার্থিব সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিই দায়ী, যা পরকাল বিশ্বাস থেকেও বিচ্যুত করে এবং পরার্থপরতার অর্থনীতি তথা যাকাত প্রদান থেকেও বিরত রাখে।
আল কুরআনে নির্দেশিত যাকাতের প্রাণসত্তা হলো তা এরূপ জনকল্যাণের ভাবধারাসম্পন্ন হতে হবে যাতে মানুষের কাছ থেকে প্রতিদান ফেরত পাবার মনোভাব থাকে না বরং তা হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য (৯২:১৭-২১)। সুতরাং যাকাত এরূপ জনকল্যাণমূলক দান নয়, যা নিছক অন্যদের নিকট প্রশংসিত হওয়ার জন্য করা হয় বা যাতে পরবর্তীতে অনুদান গ্রহীতার নিকট থেকে প্রতিদান ফেরত পাওয়ার উদ্দেশ্য বা অন্য কোনো পার্থিব স্বার্থ নিহিত থাকে। যারা তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়, বরং শিরক তথা আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে তারা সাধারণত পরিশুদ্ধতায় আগ্রহী নয় তথা পরিশুদ্ধ মানসিকতা ও কর্মের অংশীদার নয়।
যে মুশরিকরা বারবার শান্তিচুক্তি লংঘন করেছে তারা যদি তাওবাহ করে (তথা শিরক /আল্লাহর সাথে অংশীবাদিতা থেকে ফিরে আসে) এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে (স্রষ্টার বিধান ও শিক্ষা অনুসরণ ও অন্যকে শিক্ষাদান করে) এবং যাকাত প্রদান করে (তথা পরিশুদ্ধতার চর্চা করে), তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের অবকাশ নেই, তাদের পথ ছেড়ে দিতে হবে এবং তাদেরকে দ্বীনী ভাই হিসেবে সাব্যস্ত করতে হবে (৯:৫, ৯:১১)। সুতরাং ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হলো, তাওহীদ (আল্লাহর একত্ববাদ), সালাত (আল্লাহর বিধানের নিবিড় অনুসরণ) এবং যাকাত (আল্লাহর বিধান অনুসারে পরার্থপরতার অর্থনীতি বাস্তবায়ন)। মুশরিকরা তাওহীদের পরিবর্তে শিরক করে, শিরকযুক্ত ও অনুষ্ঠানসর্বস্ব সালাত করে এবং যাকাতের বিষয়েও উদাসীন থাকে বা পরিশুদ্ধতার পরিবর্তে স্বার্থকেন্দ্রিক লৌকিকতা চর্চা করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সঠিক দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের অবকাশ নেই (২:২৫৬), কিন্তু যদি তারা শান্তিচুক্তি লংঘন করে পৃথিবীতে নৈরাজ্য-সংঘাত সৃষ্টি করে তাহলে তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে (৯:১-৫), তারপর তাদেরকে ছাড় দেয়ার শর্ত হলো, হয় তারা সঠিক জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করবে অথবা তারা যুদ্ধ থেকে নিবৃত্ত হয়ে নিরাপত্তার আশ্রয় প্রার্থনা করবে (৯:৬)।
যাকাত ও ইনফাক্ব এর সম্পর্ক বা পার্থক্য সম্বন্ধে অনুধাবনের জন্য প্রথমে ইনফাক্ব এর অর্থ এবং ইনফাক্ব সম্পর্কিত আয়াতসমূহের অনুবাদ উল্লেখ করা প্রয়োজন।
‘নূন ফা ক্বফ’ শব্দমূল থেকে গঠিত ইনফাক্ব শব্দের অর্থ হলো ‘ব্যয় করা’। নিম্নে ইনফাক্ব সম্পর্কিত আয়াতগুলোর অনুবাদ দেয়া হলো:
২:২-৩ :: ইহা সেই কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই, যা তাক্বওয়া (জীবনপদ্ধতিতে মৌলিক ত্রুটি থেকে সাবধানতা) অবলম্বনকারীদের জন্য হিদায়াত। যারা অদৃশ্য সত্যের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যা জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। (২)
(২) অর্থাৎ আয়-ব্যয়ে বৈধতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখে।
২:১৯৫ :: আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না এবং ইহসান (উত্তম আচরণ) করো। নিশ্চয় আল্লাহ উত্তম আচরণকারীদেরকে ভালবাসেন।
২:২১৫ :: তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে তারা কী ব্যয় করবে? বলো, “তোমরা যে উত্তম সম্পদই ব্যয় করো তা ব্যয় করবে পিতামাতার জন্য এবং নিকটতম আত্মীয়দের জন্য এবং ইয়াতীম ছেলেমেয়ের জন্য এবং মিসকীনদের জন্য এবং ছিন্নমূল /বাস্তুহারা / উদ্বাস্তুদের জন্য। আর তোমরা যে উত্তম কাজই করবে আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত”।
২:২১৯ :: তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলো, “এ দুটিতে রয়েছে মানুষের জন্য বড় ধরনের অপকার এবং কিছুটা উপকার। আর এ দুটির উপকারের তুলনায় অপকারই বড়”। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে তারা কী ব্যয় করবে? বলো, “উদারতাপূর্ণ অনুদান (আফওয়া)”। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা চিন্তা-গবেষণা করতে পারো।
২:২৫৪ :: হে যারা ঈমান এনেছো, আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তোমরা তা থেকে ব্যয় করো ঐদিন আসার পূর্বেই যেদিন কোনো ক্রয়বিক্রয় থাকবে না এবং বন্ধুত্বও থাকবে না এবং সুপারিশও থাকবে না। আর সত্য অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানকারীরাই অত্যাচারী।
২:২৬১-২৭৪ :: যারা আল্লাহর পথে তাদের মালসম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন একটি বীজ, তা হতে উৎপন্ন হলো সাতটি শীষ, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন গুণিতক (বর্ধিত) করে দেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
যারা আল্লাহর পথে তাদের মালসম্পদ ব্যয় করে, তারপর তারা যা ব্যয় করেছে তার পেছনে খোঁটাও দেয় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের প্রভুর নিকট আছে তাদের পুরষ্কার আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দু:খিতও হবে না।
ন্যায্য কথা এবং ক্ষমা ঐ সদাক্বাতের চেয়ে উত্তম যার পেছনে কষ্ট দেয়া হয়। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।
হে মু’মিনগণ তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের সদাক্বাতকে ব্যর্থ করে দিও না ঐ ব্যক্তির মতো যে লোক দেখানোর জন্য তার মালসম্পদ ব্যয় করে এবং সে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না। তার উপমা হলো যেমন শক্ত বৃহৎ পাথরখন্ড, যেটির উপরে রয়েছে (সামান্য) মাটির স্তর, তারপর তাতে বৃষ্টিপাত হলো, ফলে তা (পাথরখণ্ডটি) অনাবৃত (মাটির আবরণমুক্ত) হয়ে গেলো। তারা যা উপার্জন করলো তার উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ রইলো না (তারা তা কোনো কাজে লাগাতে পারলো না)। আর আল্লাহ সত্য প্রত্যাখ্যানকারী সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং (সঠিক জীবনব্যবস্থার উপর) নিজেদের মনস্তাত্ত্বিক দৃঢ়তা অন্বেষণের জন্য তাদের মালসম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা হলো যেমন একটি উচ্চভূমির বাগান, তাতে বৃষ্টিপাত হলো, ফলে সেটা দ্বিগুণ খাদ্যশস্য নিয়ে এলো; আর যদি তাতে বৃষ্টিপাত না হয়, তাহলে শিশির যথেষ্ট। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তার দ্রষ্টা।
তোমাদের কেউ কি ইচ্ছা (পছন্দ) করবে যে, তার জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের এমন একটি বাগান রয়েছে, যেটার তলদেশ দিয়ে নদী বয়ে যায়, যাতে তার জন্য সব রকমের ফল-ফলাদি রয়েছে, আর তাকে বার্ধক্য আক্রান্ত করবে অথচ তার কতক দুর্বল সন্তান-সন্ততি রয়েছে, এ অবস্থায় ঐ বাগানে আগুনের হাওয়া বয়ে গেলো এবং তা পুড়ে গেলো। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যেন তোমরা চিন্তাগবেষণা করো।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান এনেছ, তোমরা যা উপার্জন করো এবং আমি তোমাদেরকে পৃথিবী থেকে যা বের করে দিই (ফল-ফসল) তা থেকে তোমরা উৎকৃষ্ট মানে ও পরিমাণে ব্যয় করো। আর তা থেকে নিকৃষ্ট মানে ও পরিমাণে ব্যয় করার ইচ্ছা পোষণ করো না, অথচ তোমাদেরকে তা দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করতে না, যদি না তোমরা চোখ বন্ধ করে রাখতে। আর জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।
(আল্লাহর পথে ব্যয় প্রসঙ্গে) শয়তান তোমাদেরকে দরিদ্রতার প্রতিশ্রুতি দেয় (সম্ভাবনা জানায়) এবং সে তোমাদেরকে অশ্লীলতার নির্দেশ দেয়। আর আল্লাহ তোমাদেরকে তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন (আল্লাহর পথে ব্যয়ের মধ্যেই এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর ক্ষমা ও অনুগ্রহ লাভ করবে)। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।
(দানের মাধ্যমে দরিদ্রতার পরিবর্তে আল্লাহর অনুগ্রহে সমৃদ্ধি লাভ করার বিষয়টি বুঝার জন্য হিকমাতের প্রয়োজন, আর) তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে হিকমাত (প্রজ্ঞা, বিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা) দেন। আর যাকে হিকমাত দেয়া হয় নিশ্চয় তাকে মহাকল্যাণ দেয়া হয়। আর (সঠিক পদ্ধতিতে) চিন্তাশীলরা ছাড়া কেউ পুন:পুন স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ করে না।
তোমরা যা-ই ব্যয় করো বা যা-ই মানত করো (৩) , নিশ্চয় আল্লাহ তা জানেন। আর যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।
(৩) সরাসরি বাধ্যতামূলক না হওয়া সত্ত্বেও কোনো বিশেষ ভালো কাজের প্রতিজ্ঞার মাধ্যমে নিজের জন্য যা বাধ্যতামূলক করে নিয়ে তা পরিপালন করো
যদি তোমরা প্রকাশ্যে সদাক্বাত দাও তা উত্তম। আর যদি তা গোপনে দাও এবং অভাবগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক উত্তম। আর (সদাক্বাত দিলে) তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দসমূহকে ঢেকে দেবেন। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্যক অবহিত।
তোমার উপর তাদেরকে হিদায়াত করার দায়ভার নেই। কিন্তু আল্লাহই যাকে ইচ্ছা করেন হিদায়াত করেন। আর তোমরা উত্তম সম্পদ থেকে যা-ই ব্যয় করো তা তোমাদেরই কল্যাণের জন্য। আর তোমরা তো দান করছো শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণের উদ্দেশ্যে। আর তোমরা উত্তম সম্পদ থেকে যা-ই দান করবে তিনি তা তোমাদেরকে পূর্ণ করে দেবেন (তার পূর্ণ প্রতিফল দিবেন)। আর তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।
(অনুদানে অগ্রাধিকার) সেই অভাবগ্রস্তদের জন্য যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে আবদ্ধ আছে যে, তারা (উপার্জনের জন্য) পৃথিবীতে ভ্রমণ করতে পারে না (তাদের উপার্জনের সুযোগ খুবই সীমিত হয়ে পড়ে), তাদের ব্যক্তিত্বের সংযমগুণের (তায়াফফুফের) কারণে জাহেলরা তাদেরকে ধনী মনে করে, তুমি তাদেরকে চিনবে (চিহ্নিত করতে পারবে) তাদের কিছু বাস্তব লক্ষণের মাধ্যমে, তারা লোকের কাছে নাছোড় হয়ে প্রার্থী হয় না। আর তোমরা উত্তম সম্পদ থেকে যা-ই ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত।
যারা তাদের মালসম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, নিশ্চয় তাদের প্রভুর নিকট তাদের পুরস্কার রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দু:খিতও হবে না।
৩:১৭ :: তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, (আল্লাহর পথে) ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।
৩:৯২ :: তোমরা কখনোই পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা যা ভালবাসো তা থেকে ব্যয় করো। আর তোমরা যা কিছু থেকে যা-ই ব্যয় করো, নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।
৩:১১৭ :: তারা (সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা) পার্থিব জীবনে যা ব্যয় করে তার উপমা হলো যেমন হিমশীতল বায়ু (শৈত্য প্রবাহ), যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছিলো তা তাদের শস্যক্ষেতে বয়ে যায় এবং তা বিধ্বস্ত করে দেয়। আর আল্লাহ তাদের উপর যুলুম করেননি বরং তারাই নিজেদের উপর যুলুম করছিলো।
৩:১৩৪ :: (মুত্তাক্বীদের জন্য জান্নাত), যারা স্বচ্ছল অবস্থায় ও অস্বচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং রাগ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি (ক্ষমাশীলতায় ও সহযোগিতা-সহায়তায়) উদার। আর আল্লাহ উত্তম আচরণকারীদেরকে ভালোবাসেন।
৪:৩৪ :: পুরুষরা নারীদের উপর সামগ্রিক দায়িত্বশীল। এজন্য যে, আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর বিশিষ্টতা দিয়েছেন এবং এজন্য যে পুরুষরা তাদের সম্পদ থেকে (নারীদের জন্য) ব্যয় করে। সুতরাং সৎকর্মশীলা নারীরা বিনয়ী হয় এবং আল্লাহর হেফাযতের আওতায় অদৃশ্যে থাকা বিষয়ের (স্বীয় সতীত্ব ও সন্তানের পিতৃপরিচয়গত বিষয়ের) সংরক্ষণকারিনী হয়। আর যাদের ব্যাপারে তোমরা আশংকা করো যে, তারা দাম্পত্য চুক্তি লংঘন করছে, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে বিছানায় পরিত্যাগ করো এবং তাদেরকে (বিছানায় একা রেখে দেয়া থেকে) ভিন্ন অবস্থায় বের করে আনো (অর্থাৎ সম্পর্ককে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনো) / তাদেরকে (সমাধানে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের) সামনে উপস্থাপন করো। তারপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে, তাহলে তোমরা তাদের বিপক্ষে অন্য কোনো ব্যবস্থা তালাশ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত, সর্বশ্রেষ্ঠ।
৪:৩৭-৩৯ :: যারা নিজেরা বখিলি / কৃপণতা করে এবং লোকদেরকে বখিলি / কৃপণতা করার নির্দেশনা দেয় এবং আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা দান করেছেন তা গোপন করে, আর আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি। আর যারা তাদের মালসম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না; আর শয়তান যার সঙ্গী হয়, তার সঙ্গী কত মন্দ! তাদের কী হতো যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি ঈমান আনতো এবং আল্লাহ তাদেরকে যা জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করতো? আর আল্লাহ তাদের সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
৫:৬৪ :: আর ইহুদীরা বলে, ‘আল্লাহর হাত বন্ধ’। তাদের হাতসমূহই বন্ধ। আর তারা যা বলেছে সেজন্য তাদেরকে অভিশপ্ত করা হয়েছে। বরং তাঁর উভয় হাতই খোলা। তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন ব্যয় করেন। তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তা তাদের মধ্যকার অনেকের বিদ্রোহ ও সত্য প্রত্যাখ্যানকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আর আমি তাদের পরস্পরের মধ্যে কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঢেলে দিয়েছি। যখনই তারা সংঘাতের আগুন জ্বালিয়ে দেয়, আল্লাহ তা নিভিয়ে দেন। আর তারা পৃথিবীতে ফাসাদ (বিশৃঙ্খলা, বিপর্যয়) সৃষ্টিতে তৎপর থাকে। আর আল্লাহ ফাসাদকারীদেরকে ভালবাসেন না।
৮:৩ :: (মু’মিনগণ) যারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
৮:৩৬ :: নিশ্চয় যারা কুফর (সত্য অবিশ্বাস ও প্রত্যাখ্যান) করেছে তারা আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়ার জন্য তাদের মালসম্পদ ব্যয় করে। তারা তা ব্যয় করতেই থাকবে। এরপর তা তাদের আফসোসের কারণ হবে, এরপর তারা পরাজিত হবে। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদেরকে জাহান্নামে একত্রিত করা হবে।
৮:৬০-৬৩ :: আর তোমরা তাদের (কাফিরদের) মোকাবেলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি এবং রণকৌশলের প্রশিক্ষিত ঘোড়া প্রস্তুত রাখো। তোমরা এর মাধ্যমে ভীত-সন্ত্রস্ত রাখবে আল্লাহর ও তোমাদের শত্রুদেরকে এবং তারা ছাড়াও অন্য অনেককে যাদের শত্রুতা সম্পর্কে তোমরা জানো না কিন্তু আল্লাহ জানেন। আর তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছুই ব্যয় করবে তিনি তোমাদেরকে তা পূর্ণ করে দিবেন। আর তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না। আর যদি তারা শান্তিচুক্তির দিকে ঝুঁকে তাহলে তোমরাও সেদিক ঝুঁকো, আর আল্লাহর উপরই ভরসা করো। নিশ্চয় তিনি, তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আর যদি তারা তোমাকে ধোঁকা দিতে চায়, তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তাঁর সাহায্য দ্বারা ও মু’মিনদের দ্বারা তোমাকে শক্তি যুগিয়েছেন। আর তিনি তাদের (মু’মিনদের) অন্তরগুলোকে প্রীতির বন্ধনে যুক্ত করে দিয়েছেন। যদি তুমি পৃথিবীতে যা আছে তার সবই ব্যয় করতে তবুও তাদের অন্তরসমূহকে প্রীতির বন্ধনে যুক্ত করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতির বন্ধনকে যুক্ত করেছেন। নিশ্চয় তিনি মহাশক্তিমান, মহাবিজ্ঞ।
৯:৩৪-৩৫ :: হে যারা ঈমান করেছো, নিশ্চয় ধর্মীয় পণ্ডিত ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকে বাতিল উপায়ে মানুষের মালসম্পদ খায় এবং তারা আল্লাহর পথ থেকে বাধা প্রদান করে। আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জিভুত করে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সংবাদ দাও। সেদিন জাহান্নামের আগুনে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হবে, তারপর তা দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্বদেশ ও পিঠে সেঁক দেয়া হবে। এটাই তা যা তোমরা তোমাদের জন্য পুঞ্জিভুত করেছিলে। সুতরাং তোমরা যা পুঞ্জিভুত করেছো তার স্বাদ আস্বাদন করো।
৯:৫৩-৫৪ :: বলো, “তোমরা (মুনাফিক্বরা, সদাক্বাতের জন্য) স্বেচ্ছায় ব্যয় করো বা অনিচ্ছায়, তোমাদের কাছ থেকে তা (সদাক্বাত) গ্রহণ করা হবে না। নিশ্চয় তোমরা তো ফাসেক (অবাধ্য) সম্প্রদায়”। আর তাদের থেকে তাদের (সদাক্বাতমূলক) ব্যয় গ্রহণ করতে এজন্য ছাড়া অন্য কারণে মানা করা হয়নি যে, নিশ্চয় তারা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি কুফর (অবিশ্বাস) করেছে এবং তারা অলসতা ছাড়া সালাতে আসে না এবং তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে ছাড়া ব্যয় করে না।
৯:৯১-৯২ :: (ন্যায়যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করার ক্ষেত্রে) দুর্বলদের উপর অভিযোগ নয় এবং অসুস্থদের উপরও নয় এবং তাদের উপরও নয় যারা ব্যয় করার মতো কিছু পায় না, যখন তারা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকে। উত্তম আচরণকারীদের উপর (অভিযোগ আরোপের) কোনো পথ নেই। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল। এবং তাদের উপরও নয়, যারা যখন তোমার কাছে বাহন চাওয়ার জন্য এসেছিলো তখন তুমি বলেছিলে, “আমি কোনো বাহন পাচ্ছি না যার উপর তোমাদেরকে আরোহন করাবো”, তাই তারা ফিরে গেলো এবং তাদের চোখ থেকে অশ্রু ঝরে পড়ছিলো, এ দু:খে যে, তারা এমন কিছু পায়নি যা তারা ব্যয় করতে পারতো।
৯:৯৮-৯৯ :: আর কিছু আ’রাব (অ-শহরবাসী) যা ব্যয় করে সেটাকে জরিমানা মনে করে এবং তোমাদের প্রতি দুর্দিনের প্রতীক্ষা করে, আর তাদের উপরই দুর্দিনের দুর্বিপাক। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আর কিছু আ’রাব (অ-শহরবাসী) আল্লাহর প্রতি ও পরকাল দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং তারা যা ব্যয় করে সেটাকে আল্লাহর নৈকট্য এবং রসূলের আশীর্বাদ লাভের মাধ্যম মনে করে। নিশ্চয় সেটা তাদের জন্য নৈকট্যের মাধ্যম। শীঘ্রই আল্লাহ তাদেরকে তাঁর রহমতের মধ্যে দাখিল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।
৯:১২১ :: তারা এমন কোনো ছোট বা বড় ব্যয় করে না এবং এমন কোনো প্রান্তর অতিক্রম করে না যা তাদের নামে লেখা হয় না, যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের সর্বোত্তম কাজের বিনিময়ে পুরস্কার দেন।
১৩:২২ :: আর যারা তাদের প্রভুর সন্তুষ্টির অন্বেষণে ধৈর্য্য ও অধ্যবসায় করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যা জীবিকা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভালো দিয়ে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে পরকালের আবাস প্রাপ্তির শুভ পরিণাম।
১৪:৩১ :: আমার বান্দাদেরকে বলো যারা ঈমান আনে, সালাত প্রতিষ্ঠা করতে এবং আমি তাদেরকে যা জীবিকা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করতে সেই দিন আসার আগেই যাতে ক্রয়বিক্রয়ও নেই, বন্ধুত্বও নেই।
১৬:৭৫ :: আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এমন এক মালিকানাভুক্ত দাস যে কোনো কিছুর উপরই (সিদ্ধান্ত নেয়ার ও নিজ বিবেচনায় কর্ম সম্পাদনের) ক্ষমতা রাখে না, আর অন্যদিকে যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে উত্তম (জীবিকা দিয়েছি এবং সে তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে। এরা উভয়ে কি সমান? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বরং তাদের অধিকাংশই জ্ঞানার্জন করে না।
১৮:৪২ :: আর (বিপর্যয়ে) তার ফল-ফলাদি ঘিরে ফেলা হলো। ফলে সে তাতে যা ব্যয় করেছিলো সেজন্য তার হাত কচলাতে লাগলো এবং তা মাচানসহ ভূমিসাৎ হলো। আর সে বললো, “হায় আফসোস! আমি যদি আমার প্রভুর সাথে কাউকে শরীক না করতাম!”
২২:৩৫ :: যারা এমন যে, যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়, তখন তাদের মন কেঁপে উঠে। আর তাদের উপর যে বিপদাপদ আপতিত হয় সে বিষয়ে ধৈর্যশীল হয় এবং সালাত প্রতিষ্ঠাকারী হয় এবং আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে (নিজ প্রয়োজনের পাশাপাশি পরার্থে) ব্যয় করে।
২৫:৬৭ :: যারা যখন ব্যয় করে তখন অপচয়ও করে না এবং অপর্যাপ্ত ব্যয়ও (কৃপণতা) করে না এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তীতে প্রতিষ্ঠিত থাকে।
২৮:৫৪ :: তাদেরকে দুইবার পুরস্কার দেয়া হবে, যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছে এবং ভালোর দ্বারা মন্দকে দূর করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
৩২:১৬ :: তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয় (তারা শয্যা ত্যাগ করে) ভয় ও আশা সহকারে তাদের প্রভুকে ডাকতে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।
৩৪:৩৯ :: বলো, “নিশ্চয় আমার প্রভু তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার জন্য ইচ্ছা জীবিকা প্রশস্ত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছুই ব্যয় করো তিনি তার প্রতিদান দিবেন। আর তিনি শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা”।
৩৫:২৯ :: নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তারাই এমন ব্যবসায়ের আশা করে যার ক্ষয় নেই।
৩৬:৪৭ :: আর যখন তাদেরকে বলা হয়, “আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করো”, তখন যারা কুফর (সত্য প্রত্যাখ্যান) করেছে তারা যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে বলে, “আমরা কি তাকে খাওয়াবো যাকে ইচ্ছা করলে আল্লাহ খাওয়াতেন? তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছো”।
৪২:৩৮ :: যারা তাদের প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দেয় এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে এবং তাদের কার্য নির্বাহ করে তাদের নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে এবং আমি তাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে।
৪৭:৩৬-৩৮ :: বস্তুত পার্থিব জীবন হলো ক্রীড়া-কৌতুক। আর যদি তোমরা ঈমান আনো এবং আল্লাহ সচেতন হও, তাহলে তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে তোমাদের পুরস্কার দিবেন। আর তিনি তোমাদের কাছে তোমাদের মালসম্পদের প্রার্থী নন। যদি তিনি তোমাদের কাছে সেটার প্রার্থী হতেন, তারপর সেজন্য তোমাদেরকে চাপ দিতেন, তাহলে তোমরা বখিলি (কৃপণতা) করতে এবং তিনি তোমাদের বিরক্তি প্রকাশ করে দিতেন। তোমরাই তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে আহবান করা হচ্ছে, তারপর তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক বখিলি (কৃপণতা) করছে। আর যে কৃপণতা করে সে তো নিজ সত্তার প্রতিই কৃপণতা করে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। আর যদি তোমরা বিমুখ হও তাহলে তিনি তোমাদের বদলে অন্য সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন। তারপর তারা তোমাদের মতো হবে না।
৫৭:৭ :: তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আনো এবং তিনি তোমাদেরকে যা কিছুতে স্থলাভিষিক্ততা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয় করো। তোমাদের মধ্য থেকে যারা ঈমান আনে এবং ব্যয় করে তাদের জন্য মহাপুরস্কার রয়েছে।
৫৭:১০ :: তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো না? আল্লাহর জন্যই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্বত্বাধিকার। তোমাদের মধ্য থেকে যারা বিজয়ের আগে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা অন্যদের সমান নয়। (বরং) তারাই যারা (বিজয়ের) পরে ব্যয় করেছে ও যুদ্ধ করেছে তাদের তুলনায় মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ। আর আল্লাহ (উভয়ের) প্রত্যেককে কল্যাণের ওয়াদা দিয়েছেন। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
৬০:১০ :: হে যারা ঈমান এনেছো, যখন তোমাদেরকে কাছে কোনো মু’মিন নারী হিজরাত করে আসে, তখন তোমরা তাদেরকে যাচাই করে নিবে। আল্লাহই তাদের ঈমান সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। তারপর যদি তোমরা তাদের মু’মিন নারী হিসেবে জানতে পারো, তাহলে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত দিবে না। তারা তাদের (কাফির স্বামীদের) জন্য বৈধ নয় এবং তারাও তাদের (মু’মিন নারীদের) জন্য বৈধ নয়। আর তাদেরকে (কাফিরদেরকে) দিয়ে দাও তারা (মোহরানাবাবদ) যা ব্যয় করেছিলো। আর তোমরা তাদেরকে বিয়ে করাতে তোমাদের উপর দোষ নেই, যখন তোমরা তাদেরকে তাদের পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করবে। আর তোমরা কাফির স্ত্রীদেরকে বৈবাহিক অভিভাবকত্বে ধরে রেখো না (অর্থাৎ তারা কাফিরদের কাছে চলে যেতে চাইলে যেতে দাও) এবং তোমরা (তাদের জন্য মোহরানাবাবদ) যা ব্যয় করেছো (কাফিরদের কাছ থেকে) তা চেয়ে নাও আর তারাও (কাফিররাও) যা ব্যয় করেছে (তোমাদের কাছ থেকে) তা চেয়ে নিক। এরূপই আল্লাহর হুকুম। তিনি তোমাদের মধ্যে হুকুম দেন /ফায়সালা করে দেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।
৬০:১১ :: আর যদি তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে কেউ তোমাদের থেকে কাফিরদের নিকট চলে যায় (কিন্তু তারা তোমাদেরকে মোহরানা ফিরিয়ে না দেয়), তাহলে যদি তোমাদের সুযোগ হয়, তবে যাদের স্ত্রীগণ চলে গিয়েছে তাদেরকে তারা (মোহরানাবাবদ) যা ব্যয় করেছিলো তার সমপরিমাণ প্রদান করো। আর আল্লাহ সচেতন হও, যাঁর প্রতি তোমরা মু’মিন (বিশ্বাসী) হয়েছো।
৬৩:৭ :: তারাই তো (মুনাফিক) যারা বলে, “তোমরা আল্লাহর রসূলের কাছে যারা আছে তাদের জন্য ব্যয় করো না, যতক্ষণ না তারা সরে পড়ে”। অথচ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই। কিন্তু মুনাফিক্বরা বুঝে না।
৬৩:১০-১১ :: আর আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো। অন্যথায় কারো মৃত্যু এসে গেলে সে বলবে, “হে আমার প্রভু, আমাকে একটি নিকটবর্তী সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদাক্বাত (অনুদান প্রদান) করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!” অথচ যখন কোনো ব্যক্তির শেষ সময়সীমা এসে যায়, তখন আল্লাহ তাকে কোনো অবকাশ দেন না। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।
৬৪:১৬ :: তোমরা তোমাদের সাধ্যমতো আল্লাহ সচেতন হও, এবং শুনো ও আনুগত্য করো এবং ব্যয় করো, এটা তোমাদেরই জন্য কল্যাণকর। আর যাকে মনের সংকীর্ণতা (স্বার্থপরতা, কৃপণতা, লোভ, পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা-বিদ্বেষ প্রভৃতি) থেকে বাঁচানো হয়, নিশ্চয় তারাই সফল।
৬৫:৬-৭ :: তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুসারে যে ধরনের বাসস্থানে বসবাস করো তাদেরকে (তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদেরকে) সে ধরনের বাসস্থানে বসবাস করতে দাও। আর তোমরা তাদেরকে সংকটে ফেলে কষ্ট দিও না। আর যদি তারা গর্ভবতী হয়, তাহলে তারা সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করো। তারপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে দুধপান করায়, তাহলে তাদেরকে তাদের পারিতোষিক দাও আর (সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে) তোমরা নিজেদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে পরামর্শ করো। আর যদি তোমরা পরস্পরে কঠোরতা করো, তাহলে তার পক্ষে (অর্থাৎ পিতার পক্ষ থেকে নিযুক্তি ও পারিতোষিকের ভিত্তিতে) অন্য কোনো নারী শিশুকে দুধপান করাবে। স্বচ্ছল ব্যক্তি যেন তার স্বচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করে আর যাকে তার রিযক্ব (জীবিকা) পরিমিত করে দেয়া হয়েছে সেও যেন আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা অনুযায়ী ব্যয় করে। আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। আল্লাহ কঠিনতার পর শীঘ্রই সহজতার উদ্ভব ঘটাবেন।
ইনফাক্ব সম্পর্কিত উপর্যুক্ত আয়াতগুলো অধ্যয়ন করলে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, ইনফাক্ব হচ্ছে যাবতীয় বৈধ ব্যয়, এতে নিজের জন্য, নিজ স্ত্রী ও সন্তানের জন্য এবং নিজ পিতামাতা ও ভাইবোনের জন্য ব্যয়ও অন্তর্ভুক্ত। ৬০:১০-১১ আয়াতে বিয়ের সময় নারীকে যে দেনমাহর দেয়া হয় উহার প্রসঙ্গে এবং ৬৫:৬-৭ আয়াতে তালাকপ্রাপ্তা নারীর খোরপোষবাবদ ব্যয়কে এবং সন্তানকে দুধপান করানোর পারিতোষিক দেয়াকে ‘আনফাক্বা’ ক্রিয়া দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে। অনেক আয়াতে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতে ইনফাক্ব করার কথা বলা হয়েছে। ইনফাক্বের একটি দিক হচ্ছে সদাক্বাত হিসেবে ইনফাক্ব করা (২:২৬২, ২:২৬৪)।
প্রসঙ্গ অনুসারে ইনফাক্ব বলতে নিতান্ত নিজের জন্য ছাড়াও অন্য যাদের জন্য ব্যয় করা কর্তব্য তাদের জন্য ইনফাক্ব করাকে বুঝাতে পারে, এই প্রেক্ষিতে কাদের জন্য ইনফাক্ব করা হবে তার তালিকায় নিজ প্রয়োজন ছাড়া অন্য যাদের প্রয়োজনে ব্যয় করা কর্তব্য তাদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে (২:২১৫)।
‘কী ইনফাক্ব করতে হবে?’- এ প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়েছে যে, ইনফাক্ব করতে হবে ‘আফওয়া’ (২:২১৯)। ‘আফওয়া’ শব্দটি দুটি প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়, যথা দান এবং ক্ষমা। ‘ক্ষমা’ প্রসঙ্গে ‘আফওয়া’ এর তাৎপর্য বুঝলে ‘দান’ প্রসঙ্গে এর তাৎপর্য বুঝতে সহজ হবে। একটি কথা আছে, ‘ক্ষমা করেছি কিন্তু ভুলবো না’। অন্য একটি কথা হলো, ‘ক্ষমা করেছি এবং ভুলে গেছি (তার ত্রুটির বিষয়)’। এই দ্বিতীয় ধরনের ক্ষমাই হলো ‘আফওয়া’। এখানে ভুলে যাওয়া মানে বিস্মৃত হওয়া নয়, বরং ত্রুটিকে উপেক্ষা করা। এছাড়া সাধারণভাবে ক্ষমা করা হলো ‘মাগফিরাত’। আর (শর্তসাপেক্ষে) যত বেশি পরিমাণ ত্রুটিকে ক্ষমা করা যায়, তত বেশি ক্ষমা করা হলো ‘আফওয়া’। সুতরাং মূলগতভাবে ‘আফওয়া’ এর অর্থ হলো ‘উদারতা’। দানের ক্ষেত্রে ‘আফওয়া’ মানে হলো, যত বেশি দান করা সম্ভব, মানে ও পরিমাণে উত্তম তথা ভালো জিনিস এবং এতটুকু পরিমাণ যদি আমি নিজে অভাবী হতাম তাহলে সামর্থ্যবান ব্যক্তির কাছে যে মানের বা যতটুকু ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রত্যাশা করতে পারতাম, যেন আমার উপস্থিত অভাব মোচনের পাশাপাশি স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য তা কাজে লাগানো যায়, এমন পরিমাণ, যদি দাতার দ্বারা তা সম্ভব হয়। সংক্ষেপে, ‘আফওয়া’ অর্থ ‘উদারতাপূর্ণ অনুদান’ (Generous giving)। সূরা আ’রাফে রসূলকে ‘আফওয়া’ সংগ্রহ করার জন্য বা অন্যদের থেকে ‘আফওয়া’ গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে (৭:১৯৯)।
আল্লাহর বিধান অনুসারে সম্পদের উপর যে হক্ব আরোপিত হয় (দ্র. ১৭:২৬, ৩০:৩৮. ৫১:১৯, ৭০:২৪-২৫), তা পরিপূরণের জন্য ফল ফসল আহরণের / উপার্জনের / আয়ের দিন হক্ব আদায়ের প্রথম কার্যদিবস হিসেবে সাব্যস্ত হয় (দ্র. ৬:১৪১)। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরবর্তীতে (দুই আয়ের মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময়) যখনি আল্লাহর নির্ধারণকৃত কোন হক্বদার সামনে আসবে, যদি নিজে আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে রত, এখনো দরিদ্র এমন না হয়, তাহলে তাকে দিতে হবে। অন্যথায় ভদ্রভাবে বুঝাতে হবে। প্রার্থীকে ও প্রশ্নকর্তাকে ধমক দেয়া যাবে না (দ্র. ১৭:২৬-২৯, ৯৩:১০)। ইনফাক্ব করতে হবে উপার্জন ও ফল-ফসল থেকে (মানে ও পরিমাণে) উৎকৃষ্ট জিনিস এবং যা নিজের ভালবাসার জিনিস (২:২৬৭, ৩:৯২) এবং ইনফাক্ব করতে হবে দিনে, রাতে, প্রকাশ্যে গোপনে, সর্বপ্রকার মাল থেকে, শুধু উপার্জন থেকে নয় (২:২৭৪, ২:২৬১, ২:২৬৫ )।
ইনফাক্ব না করার মানে হচ্ছে হক্ব আদায় না করে জমা করা ও বখিলি / কৃপণতা করা (৭০:১৮-২৫, ১০৪:২-৩)। কৃপণতা করা এবং সম্পদ গোপন করা যাবে না (৪:৩৭)। কৃপণতা করা, সোনারূপা জমা করা এবং উপযুক্ত ব্যয় না করার জন্য শাস্তি পেতে হবে (৩:১৮০-১৮১, ৯:৩৪-৩৫)। শয়তান দরিদ্রতার ভয় দেখায় (২:২৬৮)। ইনফাক্ব করলে আল্লাহ তা ভিন্নরূপে ফিরিয়ে দিবেন (২:২৭২)। ইনফাক্বের ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে (২৫:৬৭, ১৭:২৬-২৯)। তবে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল উভয় অবস্থায় ইনফাক্ব করতে হবে (৩:১৩৪)। আনসাররা মুহাজিরদেরকে নিজেদের উপর (নিজেদের প্রয়োজন পূরণের তুলনায়) অগ্রাধিকার দেয়, নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও (৫৯:৯)। মু’মিনরা তাদের সাধ্যমত (বিধি অনুসারে প্রদেয় দেয়ার জন্য) দান করে এবং তা সত্ত্বেও তাদের প্রত্যাবর্তনের দিন বা কিয়ামাত দিবসে তাদের দান যথেষ্ট সাব্যস্ত হবে কিনা তা নিয়ে ভীত থাকে (২৩:৬০)।
সুতরাং প্রত্যেক আয়ের দিন হক্ব আদায় করতে হবে। ইনফাক্ব হবে আফওয়া বা উদারতাপূর্ণ অনুদান। কত দিন ধরে কত টাকা জমা থাকলে কত হারে দিতে হবে, এরূপভাবে বছরের কোন হিসাব প্রযোজ্য নয়। বরং আয়ের দিন (বা যথাসম্ভব দ্রুত) দিতে হবে, ঐ আয় থেকে, অতীত থেকে যা জমা ছিল তা এবং ঐ আয় উভয়টিকে একসাথে বিবেচনা করে, কি পুন:বিনিয়োগ করতে হবে, কি আগামী আয় পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট পারিবারিক ব্যয় নির্বাহ আছে, কি সরকারকে জিযইয়া / কর দিতে হবে, বিভিন্ন বিল / ফী দিতে হবে, বিভিন্ন দেনা পরিশোধ করতে হবে, আগামী আয়ের দিন ছাড়াও যদি কোনো দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট খরচের জন্য অন্য কোথাও থেকে সাহায্য পাওয়ার সুব্যবস্থা না থাকে তবে সেটি বিবেচনা ইত্যাদি সব মিলিয়ে সঞ্চয় / বিনিয়োগ / পুন:বিনিয়োগকে হিসাবে রেখে ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্ধারণকৃত অংশের একটি বাজেট করতে হবে, (চেষ্টা করতে হবে বাজেট যত সীমিত করা যায় তত উত্তম) তারপর বাজেট সাপেক্ষে যা উদ্বৃত্ত থাকে আয়ের দিন তা থেকে (৪) যত বেশি বিভিন্ন হক্বদারদেরকে দেয়া যায় তত বেশি ইনফাক্ব/ ব্যয় করতে হবে।
(৪) নিজে অভাবগ্রস্ত হয়ে না পড়ার মতো মধ্যপন্থায়
ব্যবসায়ে যা বিনিয়োগ করে ফেলা হয়, তা যখন লাভসহ ফিরে আসে তখন আদি বিনিয়োগের পরিমাণকে পুন:বিনিয়োগ করা হয়, এমনকি কখনো কখনো লভ্যাংশের একটি অংশ নতুন করে বিনিয়োগে যোগ করা হয়। বিনিয়োগ এক ধরনের সঞ্চয়, কিন্তু তা এমন সঞ্চলনশীল সঞ্চয় যা থেকে (ব্যয় নির্বাহের পর) লভ্যাংশ উৎপাদিত হয় এবং লভ্যাংশটাই মূলত ভোগের জন্য প্রাপ্ত আয়। ব্যবসায়ির জন্য আয় মানে হিসাব অনুসারে বিনিয়োগকৃত মূলধনের অংশ হিসেবে রেখে দেয়া পরিমাণের বাহিরে লভ্যাংশ হিসেবে হিসেবকৃত যে অংশ সে সংসার ব্যয় নির্বাহের জন্য গ্রহণ করে তা। অর্থাৎ যখন কোন লভ্যাংশ গ্রহণ করা হয় তাই হচ্ছে আয়ের দিন, যা দৈনিক, সাপ্তাহিক বা মাসিক হতে পারে। মূল বিনিয়োগ থেকে প্রতিবছর দান করার আলাদা প্রশ্নের অবকাশ নেই। যদি বিনিয়োগের পরিমাণ হ্রাস করেও পরিচালিত ব্যবসায় দিয়ে চলা যায়, তাহলে তা হ্রাস করে ইনফাক্ব করা যায়। অন্যথায় মধ্যপন্থা অবলম্বনের উপায় হিসেবে বিনিয়োগ ঠিক রেখে লভ্যাংশ থেকে ইনফাক্ব করতে হবে।
জরুরি অবস্থায় যখন দুর্ভিক্ষ তখন নিজের জন্য সঞ্চয়ের চিন্তা বাদ দিতে হবে। একটি রুটি দুই ভাগ করে অপর ভাইকে খেতে দিতে হবে। নিজের তুলনায় অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভাবতে হবে কত প্রাণী নিজেদের খাবার বহন করে না। সদাকা করলে তা সম্পদ বাড়াবে, এসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা উচিত, তবে নিজের চেয়ে অন্যের অগ্রাধিকার দেয়া যেন প্রাধান্য পায়। উপার্জন করতে হবে নিজে অধিক ভোগের জন্য নয়, অন্যের প্রয়োজনে ব্যয়ের জন্য। মু’মিনদের মধ্যে সম্প্রীতি সৃষ্টি হলে, সহযোগিতা সৃষ্টি হলে, বুনিয়ানুম মারসুস/ সীসাঢালা প্রাচীর হলে, আগামী দিনের জন্য বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই, কারণ আমার ভাইদের জন্য আমি, আমার জন্য আমার ভাইয়েরা আছে। এর মানে পরনির্ভরশীলতার কথা নয়, পরস্পর সহযোগিতার কথা। যে আটকে যাবে, তাকে সামনে ঠেলে দেয়া, সদাক্বাহ / হাদিয়া / যাকাত বাবদ ইনফাক্ব করে অথবা করদ বা দাইন দিয়ে সহযোগিতা করার মাধ্যমে।
ইনফাক্ব করার মাধ্যমে প্রথমেই যাদের হক্ব পূরণ করতে হবে তারা হলো, পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে, মিসকীন (অসহায় হয়ে পড়া ব্যক্তিরা) এবং ইবনে সাবীল (ছিন্নমূল/ বাস্তুহারা/ উদ্বাস্তু) (২:২১৫)।
ইনফাক্বের ক্ষেত্রে অন্যতম খাত হলো ‘ইনফাক্ব ফী সাবীলিল্লাহ’ তথা ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতে সদাক্বাহ দেয়ার মাধ্যমে ইনফাক্ব করা (৯:৬০)। এই ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতে ব্যয়ের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে, যারা ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ এর ক্ষেত্রে এমনভাবে আত্মনিয়োজিত যে, ব্যক্তিগত উপার্জনের সুযোগ খুবই সীমিত হয়ে পড়ে কিন্তু তারা মানুষের কাছে প্রার্থী হয় না বিধায় তাদের ব্যক্তিত্বের সংযমগুণের (তায়াফ্ফুফের) কারণে জাহেলরা তাদেরকে ধনী মনে করে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ফক্বির/ দরিদ্র, তবে কিছু বাস্তব লক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে চিহ্নিত করা অসম্ভব নয়।[4]
বিভিন্ন আয়াতে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতে ইনফাক্ব করাকে ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লহি বিআমওয়াল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে (৪:৯৫, ৮:৭২, ৯:২০, ৯:৪১, ৯:৪৪, ৯:৮১, ৯:৮৮, ৪৯:১৫, ৬১:১১)। বিজয়ের আগে ইনফাক্ব করা এবং বিজয়ের পরে ইনফাক্ব করা সমান মর্যাদার নয় (৫৭:১০)। তবে যারা ইনফাক্ব করতে অসমর্থ তাদের কোনো দোষ নেই (৯:৯১-৯৩)।
মানুষের ধন সম্পদ মূলত আল্লাহ প্রদত্ত রিযিক্ব / জীবনোপকরণ, আল্লাহ মানুষকে যে রিযিক্ব দিয়েছেন তা থেকে ইনফাক্ব করতে আদেশ দিয়েছেন (২:৩, ২:২৫৪, ৮:৩, ১৩:২২, ১৪:৩১, ১৬:৭৫, ২২:৩৫, ২৮:৫৪, ৩২:১৬, ৩৫:২৯, ৩৬:৪৭, ৪২:৩৮, ৫৭:৭, ৫৭:১০, ৬৩:১০)। আল্লাহ মানুষকে জীবিকার যে কম-বেশি দিয়েছেন তা মানব সভ্যতার স্থিতিশীলতা ও পারস্পরিক সেবার বিনিময়ের জন্য এভাবে দিয়েছেন। এ প্রাকৃতিক অসমতার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যার কাছে বেশি দেয়া হয়েছে তা দেয়া হয়েছে যাকে কম দেয়া হয়েছে তার প্রতি আর্থিক দায়িত্বশীলতা সহকারে, যেন তারা ইনফাক্বের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব পালন করে নিজেদেরই স্থিতিশীলতা ও প্রগতিশীলতার উপায় অবলম্বন করতে পারে। প্রাকৃতিক নিয়মে সম্পদের কম বেশি প্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষের পরীক্ষা হচ্ছে যে, সে সম্পদকে আল্লাহর দান হিসেবে কৃতজ্ঞতার আচরণ করে নাকি নিজ কৃতিত্বের মাধ্যমে প্রাপ্ত মনে করে অহংকার ও কৃপণতা করে। কাফিররা ইনফাক্বের বিষয়ে বক্র তর্ক করে যে, যাদেরকে ইচ্ছা করলে আল্লাহ নিজেই খাওয়াতে পারতেন, তাদেরকে আমরা কেন খাওয়াতে যাব? (৩৬:৪৭)। মানুষের সম্পদ প্রাপ্তিতে আল্লাহর ব্যবস্থাপনাকে অস্বীকৃতির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে দরিদ্রদেরকে দান না করে নিজেরাই সম্পূর্ণ ভোগ করার মনোবৃত্তি জেগে উঠে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হলে অনেক সময় তাদের অনেকের সম্বিত ফিরে আসে। (দ্র. ৬৮:১৭-৩৩, ১৮:৩২-৪৬)।
আল্লাহ আমাদের কাছে আমাদের সম্পদ চান না, চাইলে আমরা বখিলি করতাম, তিনি আমাদেরকে তাঁর পথে ও দরিদ্রদের জন্য ইনফাক্ব করতে বলেছেন, তা তাঁর কোন প্রয়োজনে নয়, বরং আমাদেরই কল্যাণের জন্য, তাই আমাদের বখিলি করা উচিত নয় (৪৭:৩৬-৩৮, ২:২৭২, ৬৪:১৬, ৮:৬০, ৯:১২১, ৩৪:৩৯, ৩৫:২৯)।
ইনফাক্ব না করার মানে প্রকারান্তরে নিজেদেরকে নিজেদের হাতে ধ্বংস করা (২:১৯৫)।
ইনফাক্বের নেতিবাচক ধরন সম্পর্কিত কিছু বিষয় :
(ক) ইনফাক্বের প্রকৃত উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন (২:২৬৫, ২:২৭২), তাই যারা ইনফাক্ব বা ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্য আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন না (৪:৩৮)।
(খ) যারা মুনাফিক প্রমাণিত হবে ‘সদাক্বাত’ ফান্ডে তাদের ‘নাফাক্বাত’ (অনুদানমূলক ব্যয়) গ্রহণ করা হবে না, কারণ তারা যদি কোনো কারণে তা স্বেচ্ছায়ও দেয়, তবু প্রকৃতপক্ষে তারা তা অপছন্দ সহকারেই দেয় এবং তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি অবিশ্বাসী এবং তারা অলসতার সাথেই সালাতে আসে। তাই তাদের অর্থসাহায্য নেয়া যাবে না, তারা যতই সম্পদশালী হোক না কেন। নিজেদের যা আছে তা নিয়েই কাজ করতে হবে।[5] মু’মিনরা তো ইনফাক্বকে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায় মনে করে, কিন্তু মুনাফিকরা একে মনে করে এক প্রকার অর্থদণ্ড (৯:৯৮-৯৯)।
(গ) কাফিররাও ইনফাক্ব করে ও করতে থাকবে, তবে তারা ব্যয় ও সম্পদ খরচ করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত্ত করার জন্য (৮:৩৬)।
ইনফাক্বের বিরুদ্ধে মুনাফিকদের অপতৎরতা : মুনাফিকরা বলতো যে, রসূলের কাছে যারা আছে তাদের জন্য ইনফাক্ব বা ব্যয় করো না, যাতে তারা (নিরুৎসাহিত হয়ে) সরে যায় (৬৩:৭)।
যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যথানিয়মে ইনফাক্ব করে এবং যারা দানের খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে প্রতিদান ফেরত নেয় এবং যারা কুফর করে এ উভয় শ্রেণির দানের উপমা ও পরিণতি ভিন্ন রকম হয়ে থাকে (২:২৬১-২৬৬, ৩:১১৬-১১৭)।
বস্তুত আল্লাহর দেয়া জীবিকা থেকে ইনফাক্ব করার অর্থ হলো আয়-ব্যয়ে বৈধতা ও দায়িত্বশীলতা বজায় রাখা। ইনফাক্বের মূলতত্ত্ব হলো, আল্লাহ রিযিক্বের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে যাদেরকে অধিক রিযিক্ব দেন বস্তুত তাদেরকে অন্য যারা কম রিযিক্ব সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়, তাদের জীবিকার ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতার আমানতসহ তা দেন। তাই তারা সাধ্যমতো ইনফাক্বের মাধ্যমে এ আমানতদারিতা রক্ষা করতে হবে।
ইনফাক্ব বলতে বুঝায় নৈতিক দায়িত্বশীলতা অনুসারে ব্যয় করা। আর যাকাত বা পরিশুদ্ধতার অর্থনৈতিক মাত্রা হিসেবে যাকাত প্রদান করা মানে নিজের ও সমাজের পরিশুদ্ধতার খাতিরে প্রদেয় হিসেবে কিছু প্রদান করা। সুতরাং সব ধরনের বৈধ ব্যয়ই ইনফাক্বের অন্তর্ভুক্ত। আর পরিশুদ্ধতার খাতিরে (আবশ্যক ব্যয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি) যখনই সম্পদের প্রতি মনস্তাত্ত্বিক সংকীর্ণতা (৫) অনুভব হবে, তখন তা থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য সাধ্যানুসারে যে ব্যয় করা হয় সেটাই যাকাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে। মু’মিনরা যাকাতে সদা সক্রিয় থাকে। সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্যমূলক অবস্থার নিরসনের জন্য কোনো অর্থনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সেটাও যাকাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে। উন্নয়নমূলক পরার্থপরতার অর্থনীতি (নিজের তুলনায় অন্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাজ উন্নয়নমূলক অর্থনীতি) প্রতিষ্ঠার জন্য কৃত ব্যয়ও যাকাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
(৫) লোভ, কৃপণতা, স্বার্থপরতা প্রভৃতি
সুতরাং যাকাত ও ইনফাক্বের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ যাকাতে সদা সক্রিয় থাকা এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা থেকে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে, স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল উভয় অবস্থায় যাবতীয় দায়িত্বশীলতার ভিত্তিতে ব্যয় করা তথা যাকাত প্রদান করা ও ইনফাক্ব করা একই কাজকে দুটি ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে উল্লেখ করার সমার্থক। তাই আমরা দেখি অনেক আয়াতে সালাতের (৬) সাথে যাকাতের নির্দেশনা রয়েছে এবং অনেক আয়াতে সালাতের সাথে ইনফাক্বের নির্দেশনা রয়েছে। যেসব আয়াতে সালাতের সাথে যাকাতের নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো হলো: ২:৪৩, ২:৮৩, ২:১১০, ২:১৭৭, ২:২৭৭, ৪:৭৭, ৪:১৬২, ৫:১২, ৫:৫৫, ৯:৫, ৯:১১, ৯:১৮, ৯:৭১, ১৯:৩১, ১৯:৫৫, ২১:৭৩, ২২:৪১, ২২:৭৮, ২৩:২-৪, ২৪:৩৭, ২৪:৫৬, ২৭:৩, ৩১:৪, ৩৩:৩৩, ৫৮:১৩, ৭৩:২০, ৯৮:৫। আর যেসব আয়াতে সালাতের সাথে ইনফাক্বের নির্দেশনা রয়েছে সেগুলো হলো: ২:৩, ৮:৩, ১৩:২২, ১৪:৩১, ২২:৩৫, ৩৫:২৯, ৪২:৩৮।
(৬) যাকাত যেরূপ শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং ব্যাপকতা ও বিশুদ্ধতা ধারণ করে, তেমনি সালাত শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিত ইবাদত প্রার্থনা নয়, বরং এটির ব্যাপক অর্থ স্রষ্টার বিধানের নিবিড় অনুসরণ ও অনুশীলন। এ প্রসঙ্গে ইক্বরা প্রকাশিত, কুরআনেরআলোকেসালাত বইটিতে সালাত প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে।
যাকাত ও সদাক্বাত এর সম্পর্ক বা পার্থক্য সম্বন্ধে অনুধাবনের জন্য প্রথমে সদাক্বাত এর অর্থ এবং সদাক্বাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহের অনুবাদ উল্লেখ করা প্রয়োজন।
নিম্নে সদাক্বাত সম্পর্কিত আয়াতগুলোর অনুবাদ দেয়া হলো:
২:১৯৬ :: আর তোমরা আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই হজ্জ ও উমরাহ পূর্ণ করো। তবে যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও, তাহলে হাদিয়া (উপহার) হিসেবে যা সহজ হয় (তাই যথেষ্ট)। আর তোমরা মাথামুণ্ডন করো না যতক্ষণ না হাদিয়া (উপহার) যথাস্থানে পৌঁছে। তোমাদের মধ্য থেকে যে অসুস্থ হয় বা তার মাথায় কষ্টদায়ক কিছু হয় তাহলে ফিদইয়া (বিকল্প মুক্তিপণ) হবে সিয়াম করা (অর্থাৎ রোজা রাখা) বা সদাক্বাহ দেয়া বা নুসুক করা (অর্থাৎ ধর্মীয় বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে পশু উৎসর্গ ও সংহতিমূলক রীতি পালন করা)। অন্যদিকে যখন তোমরা নিরাপদ থাক তখন যে ব্যক্তি হজ্জ পর্যন্ত উমরা করার সুযোগ নেয়, তাহলে হাদিয়া (উপহার) হিসেবে যা সহজ হয় (তাই যথেষ্ট)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা পায় না (অর্থাৎ হাদিয়া পায় না বা হাদিয়া দেয়াতে অংশগ্রহণের সামর্থ্য পায় না) তাহলে (দায়িত্ব হচ্ছে) হজ্জের মধ্যে তিন দিন সিয়াম করা (রোজা রাখা) এবং সাতদিন যখন তোমরা ফিরে যাবে তখন। (তার ক্ষেত্রে) উহাই পরিপূর্ণ দশ। এ অবকাশ তার জন্য যার পরিবার-পরিজন আল মাসজিদুল হারামের উপস্থিতি নয় (অর্থাৎ হারাম এলাকার বাসিন্দা নয়)। তোমরা আল্লাহ সচেতন হও। আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।
২:২৬৩-২৬৪ :: ন্যায় কথা ও ক্ষমা ঐ সদাক্বাতের চেয়ে উত্তম যেটির পরে কষ্ট দেয়া হয়। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল। হে মু’মিনগণ তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের সদাক্বাতকে ব্যর্থ করে দিও না ঐ ব্যক্তির মতো যে লোক দেখানোর জন্য তার মালসম্পদ ব্যয় করে এবং সে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না। তার উপমা হলো যেমন শক্ত বৃহৎ পাথরখন্ড, যেটির উপরে রয়েছে (সামান্য) মাটির স্তর, তারপর তাতে বৃষ্টিপাত হলো, ফলে তা (পাথরখণ্ডটি) অনাবৃত (মাটির আবরণমুক্ত) হয়ে গেলো। তারা যা উপার্জন করলো তার উপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ রইলো না (তারা তা কোনো কাজে লাগাতে পারলো না)। আর আল্লাহ সত্য প্রত্যাখ্যানকারী সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।
২:২৭১ :: যদি তোমরা প্রকাশ্যে সদাক্বাত দাও তা উত্তম। আর যদি তা গোপনে দাও এবং অভাবগ্রস্তদের কাছে পৌঁছে দাও তা তোমাদের জন্য অধিক উত্তম। আর (সদাক্বাত দিলে) তিনি তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দসমূহকে ঢেকে দেবেন। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্যক অবহিত।
২:২৭৬ :: আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং সদাক্বাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।
২:২৮০ :: যদি ঋণগ্রহীতা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তাহলে তাকে স্বচ্ছলতা পর্যন্ত অবকাশ দিতে হবে। আর যদি তোমরা তা সদাক্বাত করে দাও সেটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর / উত্তম, যদি তোমরা জানো।
৪:৪ :: আর তোমরা স্বত:স্ফূর্তভাবে নারীদেরকে তাদের সদুক্বাত (বৈবাহিক উপহার বা মোহরানা) দিয়ে দাও। তবে যদি তারা তা থেকে কিছু অংশ তোমাদের জন্য সন্তুষ্টচিত্তে ছেড়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা পরিতৃপ্তির সাথে স্বাচ্ছন্দে খেতে পারো।
৪:৯২ :: কোনো মু’মিনকে ভুলক্রমে (অনিচ্ছাকৃতভাবে) ছাড়া হত্যা করা অন্য মু’মিনের জন্য সঙ্গত নয়। আর যে ব্যক্তি কোনো মু’মিনকে ভুলবশত (অনিচ্ছাকৃতভাবে) হত্যা করে, তাহলে তাকে কোনো মু’মিন দাসকে মুক্ত করতে হবে এবং তার (নিহত ব্যক্তির) পরিবার-পরিজনের কাছে দিয়াত (রক্তপণ) সমর্পণ করতে হবে যদি না তারা তা সদাক্বাত করে দেয়। অন্যদিকে যদি নিহত ব্যক্তি হয় তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত অথচ মু’মিন, তাহলে কোনো মু’মিন দাসকে মুক্ত করতে হবে। আর যদি নিহত ব্যক্তি হয় সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে, তাহলে তার পরিবার-পরিজনের কাছে দিয়াত (রক্তপণ) সমর্পণ করতে হবে এবং কোনো মু’মিন দাসকে মুক্ত করতে হবে। তবে যদি তা (মু’মিন দাস বা তাকে মুক্ত করার সামর্থ্য) পাওয়া না যায়, তাহলে ধারাবাহিকভাবে দুইমাস সিয়াম করতে হবে (রোযা রাখতে হবে)। এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওবাহর পদ্ধতি। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।
৪:১১৪ :: তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই, তার ক্ষেত্রে ছাড়া যে (গোপন পরামর্শস্বরূপ) নির্দেশ দেয় সদাক্বাতের জন্য বা / এবং ন্যায়কাজের জন্য বা / এবং লোকদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়ার জন্য। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্বেষণে তা করে, আমি শীঘ্রই তাকে মহাপুরস্কার দান করবো।
৫:৪৫ :: আমি তাদেরকে বিধান দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং জখমের ক্বিসাস (তথা জখমের বদলে সমরূপ জখম)। তবে যে (আক্রান্ত) ব্যক্তি তার প্রতি (আক্রমণকারীর প্রতি) সদাক্বাত করে (তথা স্বেচ্ছায় মামলা প্রত্যাহার করে নেয় বা শাস্তিহ্রাসের অবকাশ দেয়), তবে সেটা তার (প্রত্যাহারকারীর) জন্য কাফফারাহ (পাপ মোচন) হবে। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা বিচার করে না তারাই যালিম (অত্যাচারী)।
৯:৫৮ :: আর তাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে সদাক্বাত বণ্টনের বিষয়ে তোমাকে দোষারোপ করে। তবে যদি তা থেকে তাদেকে কিছু দেয়া হয় তাহলে তারা সন্তুষ্ট হয় এবং যদি তা থেকে তাদেরকে কিছু দেয়া না হয় তাহলে তখনি তারা বিক্ষুব্ধ হয়।
৯:৫৯ :: অথচ যদি আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে তারা সন্তুষ্ট হতো এবং বলতো, “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। শীঘ্রই আল্লাহ এবং তাঁর রসূল আমাদেরকে তাঁর (আল্লাহর) অনুগ্রহ থেকে দান করবেন। আমরা আল্লাহরই প্রতি অনুরক্ত”; (তবে তা কত ভালো হতো!)।
৯:৬০ :: নিশ্চয় সদাক্বাত ফকীর/অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং মিসকীন / নিরূপায়দের জন্য এবং তার দায়িত্বে নিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এবং যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা প্রয়োজন তাদের জন্য এবং দাসমুক্তির জন্য এবং ঋণভারাক্রান্তদের জন্য এবং আল্লাহর পথে ব্যয়ের জন্য এবং ইবনে ছাবীলের (উদ্বাস্তু / বাস্তুহারা / ছিন্নমূলদের) জন্য। (সমষ্টিগত সদাক্বাত ব্যবস্থাপনায় এরূপ বণ্টন) আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ / অত্যাবশ্যক। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, মহাবিজ্ঞ।
৯:৭৫-৭৬ :: আর তাদের মধ্যে কিছু লোক আছে যে আল্লাহকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, “যদি তিনি আমাদেরকে নিজ অনুগ্রহ থেকে দান করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা সদাক্বাত করবো এবং অবশ্যই আমরা সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত থাকবো”। তারপর যখন তিনি নিজ অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে দান করলেন তখন তারা তার প্রতি বখিলি (কৃপণতা) করলো এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বিমুখ হয়ে রইলো।
৯:৭৯ :: মু’মিনদের মধ্য থেকে যারা স্বত:স্ফূর্তভাবে সদাক্বাত দেয় তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং যারা নিজ শ্রম দেয়া ছাড়া দেয়ার জন্য অন্য কিছু পায় না, তারপর তাদেরকেও যারা উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে (উপহাসকারীদেরকে) উপহাস করেন। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
৯:১০৩-১০৪ :: তুমি তাদের মালসম্পদ থেকে সদাক্বাত গ্রহণ করো, তা দ্বারা তাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এবং পবিত্র-পরিচ্ছন্ন করার জন্য। আর তাদের প্রতি সালাত (আশীর্বাদ ও যোগাযোগমূলক কার্যক্রম সম্পাদন) করো। নিশ্চয় তোমার সালাত তাদের জন্য চিত্ত স্বস্তিকর। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তারা কি জানে না যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই তাঁর বান্দাদের তাওবাহ কবুল করেন এবং সদাক্বাত গ্রহণ করেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাওবাহ কবুলকারী, পরম দয়ালু।
১২:৮৮ :: তারপর যখন তারা (ইউসুফের ভাইয়েরা) তার নিকট উপস্থিত হলো, তখন তারা বললো, “হে আযীয, আমরা ও আমাদের পরিবার-পরিজন বিপন্ন হয়ে পড়েছি, আর আমরা সহজে পরিশোধযোগ্য পণ্যমূল্য নিয়ে এসেছি, সুতরাং আমাদেরকে মাপে পূর্ণমাত্রায় দিন এবং আমাদেরকে সদাক্বাত করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সদাক্বাত দানকারীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকেন।
৩৩:৩৫ :: নিশ্চয় মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী) পুরুষ ও নারী, মু’মিন (বিশ্বাসী) পুরুষ ও নারী, বিনয়ী পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, (জবাবদিহিতার অনুভূতিতে) বিনীত পুরুষ ও নারী, সদাক্বাতকারী পুরুষ ও নারী, সিয়ামকারী (রোযাদার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অনুশীলনকারী) পুরুষ ও নারী, লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী পুরুষ ও নারী, এবং বেশি বেশি করে আল্লাহকে স্মরণকারী পুরুষ ও নারী; তাদের জন্যই আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপুরস্কার রেখেছেন।
৫৭:১৮ :: নিশ্চয় সদাক্বাতকারী পুরুষ ও নারীগণ এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ (ক্বরজে হাসানা ) দেয় (অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় অর্থসহায়তা করে) তাদেরকে তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।
৫৮:১২-১৩ :: হে যারা ঈমান এনেছো, যখন তোমরা রসূলের সাথে গোপনীয়ভাবে কথা বলবে তখন গোপনীয়ভাবে কথা বলার পূর্বে সদাক্বাত প্রদান করবে। সেটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং সর্বাধিক পবিত্র ব্যবস্থা। তবে যদি তোমরা তা না পাও, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। তোমরা কি উদ্বিগ্নতা অনুভব করছো যে, তোমাদেরকে (রসূলের সাথে) তোমাদের গোপনীয়ভাবে কথা বলার পূর্বে সদাক্বাত প্রদান করতে হবে? তারপর যখন তোমরা (সামর্থ্যের অভাবে) তা পালন করোনি আর আল্লাহ (পূর্বে জানানো ঘোষণা অনুযায়ী) তোমাদের উপর (ওজরের ক্ষেত্রে) ক্ষমাপরবশ হয়েছেন। সুতরাং তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো এবং যাকাত (পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয় / যোগান) প্রদান / সরবরাহ করো এবং আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করো। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।
৬৩:১০-১১ :: আর আমি তোমাদেরকে যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় করো। অন্যথায় কারো মৃত্যু এসে গেলে সে বলবে, “হে আমার প্রভু, আমাকে একটি নিটবর্তী সময়সীমা পর্যন্ত অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদাক্বাত (অনুদান প্রদান) করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!” অথচ যখন কোনো ব্যক্তির শেষ সময়সীমা এসে যায়, তখন আল্লাহ তাকে কোনো অবকাশ দেন না। আর তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা সম্পর্কে সম্যক অবগত।
নিম্নে সদাক্বাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহে সদাক্বাত সম্পর্কে আলোচ্য মৌলিক পয়েন্টসমূহ (আয়াতভিত্তিক) উল্লেখ করা হলো:
সদাক্বাত প্রধানত দুই প্রকার। যথা:
(১) বাধ্যতামূলক সদাক্বাত, যেমন- ক. বিয়েতে কনের মোহরানা, খ. রসূলের সাথে অন্যদের থেকে আলাদা করে নিয়ে একান্তে কথা বলার জন্য প্রদেয়, গ. ফিদইয়াস্বরূপ প্রদেয়, ঘ. আয়-উপার্জনের দিন হক্ব পরিপূরণে প্রদেয় (যা ব্যক্তিগতভাবে প্রদান করার পাশাপাশি সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ করা হলে সেই তহবিলে প্রদান করতে হবে)।
(২) ঐচ্ছিক সদাক্বাত, অর্থাৎ আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত বিশেষ হক্বদারদেরকে আয়-উপার্জনের দিন সাধ্যমতো প্রদান করার পরও সময়ে সময়ে বিভিন্ন অভাবী ব্যক্তিকে উপস্থিত সামর্থ্য অনুসারে অধিকতর সদাক্বাত দেয়া, যা প্রকাশ্যে বা গোপনে দেয়া যেতে পারে আবার সদাক্বাত দিতে না পারলেও তাদের সাথে উত্তমভাবে কথা বলতে হবে।
রসূল ও তাঁর পরবর্তীতে উলিল আমরের দায়িত্ব হচ্ছে সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সদাক্বাত সংগ্রহ করে কুরআনে নির্ধারিত বাধ্যতামূলক খাতসমূহে তা বণ্টন করা। সদাক্বাত সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো বলপ্রয়োগ করা যাবে না, বরং যারা স্বেচ্ছায় সদাক্বাত দেয়, শুধুমাত্র তাদের সদাক্বাতই সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া, রসূলকে মুনাফিকদের থেকে সদাক্বাত গ্রহণ করতে মানা করা হয়েছিলো। সেই শিক্ষা অনুসারে, যাদের পক্ষ থেকে অসঙ্গত মনোবৃত্তি প্রকাশ পায় তাদের সদাক্বাত গ্রহণ করতে অসম্মতি প্রকাশ করা যাবে।
সমষ্টিগতভাবে সদাক্বাত সংগ্রহের জন্য পরামর্শক্রমে একটা ন্যুনতম পরিমাণ কিংবা কোনো সাধারণ সূত্র অনুসরণ করা যেমন ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ আয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ নির্ধারণ করা অথবা সেটাকে একটা পার্সেন্টেজে হিসেব করা এভাবে সদাক্বাতের বিষয়ে একটি পূর্ব পরিজ্ঞাত সম্ভাব্য পরিমাণ নির্ণয় করে দারিদ্র্য বিমোচন, ভাতা প্রদান ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সহজ হতে পারে।
এছাড়া মু’মিনদের মধ্যে ‘দাইন’ বা ঋণের লেনদেনও একটি স্বীকৃত পন্থা এবং রাষ্ট্রীয় ফান্ড থেকেও ঋণ আদান প্রদান করা যেতে পারে। যদি ঋণগ্রহীতা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে তাহলে তাকে স্বচ্ছলতা পর্যন্ত অবকাশ দিতে হবে। আর যদি এমতাবস্থায় তার ঋণকে মার্জনা করা হয় তবে সেটা সদাক্বাত হিসেবে সাব্যস্ত হবে (২:২৮০)।
যেসব আয়াতে দান-সদাক্বাতের সাথে যাকাতকে সম্পর্কিত করা হয়েছে (৩০:৩৯, ৯২:১৭-২১, ৯:১০৩) সেগুলোর মাধ্যমে এটা স্থির হয়ে যায় যে, যখন দানের সাথে পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যটাই জড়িত থাকে, তখন ঐ দানের বৈশিষ্ট্যকে ‘যাকাত’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে ‘যাকাত’ শুধু দান বা অর্থনীতিতে সীমিত বিষয় নয়, বরং যাকাত আরো ব্যাপক অর্থবোধক বিষয়। যেমন, চিন্তাধারার যাকাত ও কর্মকাণ্ডের যাকাত।
যেসব আয়াতে ‘আতুয যাকাত’ (তোমরা যাকাত প্রদান / সরবরাহ করো) বলা হয়েছে, সেসব আয়াতে ‘প্রদান করা’ বা ‘সরবরাহ করা’ শব্দের প্রভাবে ‘যাকাত’ বলতে ‘পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয় বা যোগান’ বুঝায়। অর্থাৎ এমন কিছু প্রদান করতে হবে (প্রদেয়) বা সরবরাহ করতে হবে (যোগান), যাতে পরিশুদ্ধতার বৈশিষ্ট্য থাকবে। অর্থাৎ যখন ‘আতায যাকাত’ বলা হয় তখন যাকাতের অর্থনৈতিক মাত্রাটিতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়।
৯২:১৭-১৯ যাকাতের জন্য দান করার বিষয় এবং ৯:১০৩ আয়াতে যাকাতের জন্য মু’মিনদের থেকে সদাক্বাত আদায় করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং সদাক্বাতের সাথে যাকাতের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তবে ৫৮:১২-১৩ আয়াতে সুনির্দিষ্ট সদাক্বাত প্রদানের বিষয় এবং সাধারণভাবে যাকাত প্রদানের বিষয়কে স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। সদাক্বাত সম্পর্কিত আয়াতসমূহ থেকে বুঝা যায় যে, সদাক্বাতের কিছু সুনির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট প্রকার রয়েছে। বিশেষ নির্ধারিত সদাক্বাতের তুলনায় যাকাত হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া। অর্থাৎ বিশেষ নির্ধারিত সদাক্বাত এককালীন অনুদান ধরনের বিষয়, অন্যদিকে যাকাত একটি স্থায়ী প্রক্রিয়া। যাকাতের উদ্দেশ্য হলো নিজেকে মানসিক সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত রাখা। তাই সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালনের পরেও যাকাত প্রদানের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে।
সমষ্টিগত ব্যবস্থাপনায় সংগ্রহ ও বণ্টনের সদাক্বাত যেমন যাকাতের একটি প্রক্রিয়া, তেমনি নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখার জন্য মালসম্পদ দান করতে থাকাও যাকাতের একটি চলমান প্রক্রিয়া। সালাত যেমন একটি দৈনন্দিন বিষয় যাকাতও তেমনি। শুধুমাত্র আয়ের দিন একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করলেই যাকাতের দায়িত্ব পালন সমাপ্ত হয় না।
দিনে-রাতে প্রকাশ্যে-গোপনে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল অবস্থায় সদাক্বাত প্রদান করা ও ইনফাক্ব করার মাধ্যমে একই সাথে যাকাতও হয়। অভাবীদেরকে সহায়তা করার মনোভাব থেকে প্রদানের ভিত্তিতে তা সদাক্বাত এবং এক্ষেত্রে সদাক্বাত দিয়ে পরবর্তীতে খোঁটা দেয়া যাবে না এবং সদাক্বাত দিতে না পারলেও উত্তম কথা বলতে হবে। আর যাকাত হলো নিজের মনোভাবগত সংকীর্ণতার কারণে নিজেকে দান থেকে নিবৃত্ত রাখা হচ্ছে বলে অনুভব হলে ঐ সংকীর্ণতা থেকে মনকে মুক্ত করার জন্য সাধ্যমতো অনুদান প্রদান করা। সুতরাং সদাক্বাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্যটা বৈশিষ্ট্যের মাত্রাগত, কিন্তু এর একটির মধ্যে অন্যটি অনেকাংশেই জড়িত তথা এ দুটির বৈশিষ্ট্য বা প্রক্রিয়ার মধ্যে Overlapping রয়েছে।
যাকাতের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর সাথে পরিশুদ্ধি অর্জনের প্রয়াস জড়িত। যাকাত বা পরিশুদ্ধিমূলক প্রদেয় প্রদান করার বাস্তব প্রক্রিয়া হতে পারে: নিজের কর্তব্য কর্ম চুক্তিভিত্তিক সময়ঘন্টা, নিষ্ঠা, যথাপদ্ধতি ইত্যাদি অনুসারে হয়েছে কিনা তা নিয়ে বিচলিতভাব থেকে পরিশুদ্ধির জন্য আয় থেকে একটি অংশ কর্তৃপক্ষের চালু রাখা কল্যাণ ফাণ্ডে বা দরিদ্রদের মধ্যে দিয়ে দেয়া, নিজের মধ্যে অর্থের প্রতি বখিলি আসছে অনুভব করলে তা দূর করার জন্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়, যাকে সাহায্য করা হচ্ছে তার থেকে প্রতিদান প্রত্যাশা না করে ব্যয় করা প্রভৃতি।(৭)
(৭) প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহ: ৯১:৭-১০, ৩০:৩৯, ৯২:১৭-১৯