তাক্বদীর

বইটির পিডিএফ কপি ডাউনলোড

আল কুরআনের আলোকে তাক্বদীর

সৃষ্টিজগতে বিশ্বপ্রভুর প্রাকৃতি নিয়ম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ

ভূমিকা

‘ভাগ্যে যা লেখা আছে তাই হবে’, ‘কপালে যা ছিলো সেটাতো হবেই’ - এ ধরনের কথা আমাদের সমাজে খুব প্রচলিত। ধর্মের পরিভাষায় ‘তাক্বদীরের ভালো-মন্দে বিশ্বাস’ সুন্নী ইসলামে একটি আর্টিকেল অফ ফেইথ বা ধর্মের অঙ্গ।মুসলিম জাতির কালেক্টিভ কনশাসনেস বা সামগ্রিক চেতনার মধ্যে যতগুলো থিওরী বা মতবাদ প্রচলিত আছে তার মধ্যে সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাবক মতবাদের মধ্যে একটি হলো অদৃষ্টবাদ / ভাগ্য বা তাক্বদীর প্রসঙ্গে যেটি প্রচলিত রয়েছে। ধর্মের প্রধান স্তম্ভ হিসেবে থাকার ফলে ইসলাম ধর্মের বিশ্বাসের সাথে পরিচয়ের সাথে সাথে একজন মানুষ এই অদৃষ্টবাদ নামক অকুরআনিক মতবাদে বিশ্বাস করতে শুরু করে।

আমরা মনে করি এই অদৃষ্টবাদ নির্ভর বিশ্বাস মুসলিমদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদের গড়া থেকে যেমন বিরত রেখেছে তেমনি ইসলামের আদিপর্বে মুসলিমদের সেন্টিমেন্টকে ম্যানিপুলেট করার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়েছে ভ্রষ্ট শাসক ও তার তাবেদার তথাকথিত দরবারী আলেমদের দ্বারা। এর ফলে ‘কপালে আল্লাহ যা লিখে রেখেছে তাতো হবেই’ এই ধরনের একটা সম্মোহিতকর কালেমা মুসলিমদের বিভিন্ন অন্যায়, অবিচার, জুলুমবাজ শাসক রাজা, প্রাণহানী, গৃহযুদ্ধ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যার উপরে কৃত্রিম প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। এখনও এই সমসাময়িক সময়ে এসে আমরা শুনি, যখন দায়িত্ববান মানুষ দায়িত্ব অবহেলা করছে, তার বিপরীতে জবাবদিহিতা বা অবস্থার পরিবর্তনের বদলে তারা বলেন, “আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে”। এ ধরনের উদাহরণ আমাদের চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে আমাদের সামষ্টিক ধর্মীয় মনস্তত্বে কতখানি গভীরে এই অকুরআনিক ও অপ্রাকৃতিক মনোভাব প্রোথিত আছে।

কুরআনের আয়াতের অধ্যায়ন, বিশ্লেষণ, তাক্বদীর শব্দটির ব্যবহার থেকে এটি স্পষ্ট যে, প্রচলিত ধর্মের বিশ্বাসের কাঠামোতে তাক্বদীর শব্দটিকে ঘিরে যে মতবাদের জন্ম দেওয়া হয়েছে, প্রকৃত বাস্তবতা ও সত্য তা থেকে অনেক দূরে। আসল কথা হলো তাক্বদীর শব্দটার ভুল ব্যাখ্যা থেকে শুরু করে এই প্রসঙ্গে যা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ধর্মের আর্টিকেল অফ ফেইথে তার পুরোটাই কুরআন বিরোধী।

যেখানে স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে মানুষের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তার নিজের কর্মের দায়িত্ব নিজে গ্রহণ করা এবং যে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তার জবাবদিহিতা করতে হবে - এবং সেই দায়িত্বশীলতা (responsibility) -র মূল শর্ত হলো তার কর্মের জন্য সে নিয়ে দায়ী, অন্য কেউ নয়। অথচ অদৃষ্টবাদ, ভাগ্য, তথাকথিত তাক্বদীরের নামে যে বিকৃত মতবাদ প্রচলিত সেটি পুরোটাই দায়িত্বশীলতার বিপরীত কথা বলে। একটু গভীর দার্শনিক জায়গা থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে অদৃষ্টবাদের মাধ্যমে স্রষ্টার যে অসাধারণ ও অতুলনীয় ন্যায়নীতির মানদন্ডে পুরো জগৎ পরিচালিত, সেটিও অস্বীকার করা হয়। অদৃষ্টবাদ স্রষ্টাকে ন্যায়বিচারকের জায়গা থেকে একজন স্বৈরাচারী স্রষ্টায় পর্যবসিত করেন যা স্রষ্টা সম্পর্কে মিথ্যা বলার মতো মারাত্মক অপরাধ। অথচ ধর্মীয় পরিভাষার মারপ্যাঁচে তাক্বদীরের নামে এরকম বানোয়াট মতবাদই হাজার বছর ধরে মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত হয়ে আসছে এবং এ ধরনের বানোয়াট মতবাদ অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমদের মধ্যে দু:খজনকভাবে প্রবল।

তাক্বদীরের সঠিক অর্থ বোঝা, এ সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর প্রকৃত অর্থ অনুধাবন মুসলিমদের অগ্রসরতা, উন্নয়ন, প্রগতি এবং যুগের জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে নিজেদের সামনের কাতারে নিয়ে যাওয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে খুবই জরুরী একটি বিষয়। কেননা অন্যথায় অদৃষ্টবাদ, ভাগ্যের মতো নেতিবাচক মতবাদের শয়তানী ও তার চোরাবালিতে তারা কেবল পশ্চাদপদ, অলস ও নিষ্ক্রিয়ই থেকে যাবে। এই কু-মতবাদের প্রভাবে না তারা ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্বশীল হবে, না তারা সামাজিকভাবে এবং সর্বোপরি না তারা বৈশ্বিকভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারবে।

তাক্বদীর সম্পর্কে মুসলিম সমাজ দুটি মতবাদের দ্বন্দ্বের ইতিহাসে পূর্ণ। কর্মবাদ (ক্বাদরিয়্যাহ) ও ভাগ্যবাদ (জাবরিয়্যাহ)। ধরে নেয়া হয় যে, কথিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বা সুন্নীরা এ বিষয়ে সঠিক সমন্বয় সাধন করেছে। অন্যদিকে শিয়ারা দাবি করে যে, এ বিষয়ে তাদের চিন্তায় সঠিক সমন্বয় রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের সবার সামগ্রিক বক্তব্য এ বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে স্পষ্ট নয় এবং অসংলগ্নও বটে। কারণ তথাকথিত সহীহ হাদীসের কিছু অযৌক্তিক বক্তব্যকে সঠিক ধরে নিয়ে তাক্বদীরের বিষয়ে যতো ভালো সমাধানের চেষ্টাই করা হোক, তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অন্যদিকে একমাত্র কুরআনকে ধর্মবিচারের মানদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করলে তাক্বদীরসহ যেকোনো ধর্মীয় প্রশ্নের সঠিক সমাধানে উপনীত হওয়া সম্ভব, সহজ ও অবশ্যম্ভাবী। তাই আমরা এ বইয়ে একমাত্র কুরআনকে মানদণ্ড হিসেবে প্রয়োগ করে তাক্বদীর সমস্যার সমাধানের প্রয়াস পেয়েছি। আমরা চেষ্টা করছি প্রথমত এই শব্দটার অর্থ বিশ্লেষণের সাথে সাথে কুরআনের আয়াতে প্রসঙ্গ অনুসারে শব্দটির বিভিন্ন মাত্রার অর্থ সনাক্ত করা এবং পরিশেষে কুরআন থেকে তাক্বদীর বলতে আমরা আসলে কি বুঝতে পারি সেই সত্যে উপনীত হওয়া।

পরিশেষে আমরা মহাজ্ঞানী স্রষ্টার সাহায্য কামনা করি তাক্বদীর শব্দের প্রকৃত বাস্তবতা ও এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম মহাবিজ্ঞানকে আমাদের জন্য সহজবোধ্য করে দেন। যারা এই সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াতসমূহ অধ্যায়ন করবেন, আমাদের প্রার্থনা থাকবে আল্লাহ যেন উত্তরোত্তর সে আয়াতগুলোর গভীর মর্মবাণী আমাদের বুঝতে সাহায্য করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম সাহায্যকারী এবং যারা তাঁর উপর নির্ভর করেন তিনি তাদের পথ দেখান। এবং নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য।

তাক্বদীর শব্দ ধারণকারী আয়াতসমূহ

আল কুরআনের আলোকে তাক্বদীর সম্পর্কে উপলব্ধির জন্য প্রথমে আমাদেরকে তাক্বদীর শব্দ (ও এর বিভিন্ন শব্দরূপ) ধারণকারী আয়াতসমূহের অনুবাদ দেখে নিতে হবে। আর সেজন্য প্রথমে তাক্বদীর শব্দের (ও এর বিভিন্ন শব্দরূপের) নির্ঘণ্ট জেনে নেয়া ভালো হবে।

তাক্বদীর শব্দের নির্ঘণ্ট (Concordance):

তাক্বদীর শব্দটির মূল অক্ষরসমূহ হলো ‘ক্বফ দাল র’। তাক্বদীর শব্দটি ক্রিয়ারূপ ১, ক্রিয়ারূপ ২ ও ক্রিয়ারূপ ৮ থেকে নির্গত বিভিন্ন শব্দরূপে (মোট ১০ টি শব্দরূপ) কুরআনের যেসব আয়াতে ব্যবহৃত হয়েছে নিম্নে তার তালিকা উল্লেখ করা হলো।

এক: ক্রিয়ারূপ ১
১. ক্বাদারা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ২৫ স্থানে: ২:২৬৪:২৯, ৫:৩৪:৭, ৬:৯১:২, ১৩:২৬:৬, ১৪:১৮:১৪, ১৬:৭৫:৭, ১৬:৭৬:৮, ১৭:৩০:৭, ২১:৮৭:৯, ২২:৭৪:২, ২৮:৮২:১৫, ২৯:৬২:৮, ৩০:৩৭:৯, ৩৪:৩৬:৮, ৩৪:৩৯:১০, ৩৯:৫২:৯, ৩৯:৬৭:২, ৪২:১২:৯, ৪৮:২১:৩, ৫৪:১২:৯, ৫৭:২৯:৬, ৬৫:৭:৭, ৭৭:২৩:১, ৮৯:১৬:৫, ৯০:৫:৪।

২. ক্বাদর (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৭ স্থানে: ৬:৯১:৫, ২২:৭৪:৫, ৩৯:৬৭:৫, ৬৫:৩:২১, ৯৭:১:৫, ৯৭:২:৫, ৯৭:৩:২।

৩. ক্বাদার (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১১ স্থানে: ২:২৩৬:১৭, ২:২৩৬:২০, ১৩:১৭:৭, ১৫:২১:১০, ২০:৪০:৩৩, ২৩:১৮:৫, ৩৩:৩৮:২১, ৪২:২৭:১১, ৪৩:১১:৬, ৫৪:৪৯:৫, ৭৭:২২:২।

৪. মিক্বদার (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৩ স্থানে: ১৩:৮:১৫, ৩২:৫:১৩, ৭০:৪:৮।
[দ্র. ক্বাদর, ক্বাদার ও মিক্বদার শব্দ তিনটি সমার্থক শব্দ। তবে শব্দগুলোর সূক্ষ্ম তাৎপর্যগত পার্থক্য নির্ণয়ের ক্ষেত্রে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।]

৫. ক্বা-দির (কর্তৃবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১৪ স্থানে: ৬:৩৭:১১, ৬:৬৫:৩, ১০:২৪:২৬, ১৭:৯৯:৯, ২৩:১৮:১৩, ২৩:৯৫:৭, ৩৬:৮১:৬, ৪৬:৩৩:১২, ৬৮:২৫:৪, ৭০:৪০:৭, ৭৫:৪:২, ৭৫:৪০:৩, ৭৭:২৩:৩, ৮৬:৮:৪।

৬. ক্বাদীর (কর্তৃবিশেষ্য, ক্বা-দির এর সমার্থক শব্দ, প্যাটার্ন অনুসারে এটি গুণগত স্থায়ীত্বের অর্থ দেয়, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪৫ স্থানে: ২:২০:২৫, ২:১০৬:১৯, ২:১০৯:৩৩, ২:১৪৮:১৯, ২:২৫৯:৬৭, ২:২৮৪:২৮, ৩:২৬:২৫, ৩:২৯:২২, ৩:১৬৫:২০, ৩:১৮৯:৯, ৪:১৩৩:১২, ৪:১৪৯:১৪, ৫:১৭:৪২, ৫:১৯:২৮, ৫:৪০:১৯, ৫:১২০:১১, ৬:১৭:১৭, ৮:৪১:৩৩, ৯:৩৯:১৬, ১১:৪:৮, ১৬:৭০:২০, ১৬:৭৭:১৯, ২২:৬:১৩, ২২:৩৯:১০, ২৪:৪৫:৩১, ২৫:৫৪:১২, ২৯:২০:১৯, ৩০:৫০:১৯, ৩০:৫৪:২৪, ৩৩:২৭:১৩, ৩৫:১:২৪, ৩৫:৪৪:৩০, ৪১:৩৯:২২, ৪২:৯:১৬, ৪২:২৯:১৬, ৪২:৫০:১১, ৪৬:৩৩:২২, ৪৮:২১:১৪, ৫৭:২:১১, ৫৯:৬:২৫, ৬০:৭:১২, ৬৪:১:১৭, ৬৫:১২:১৮, ৬৬:৮:৪৫, ৬৭:১:১৯।

৭. মাক্বদূর (কর্মবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ১) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১ স্থানে: ৩৩:৩৮:২২।

দুই: ক্রিয়ারূপ ২
৮. ক্বাদ্দারা (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ২) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ১৬ স্থানে: ১০:৫:৮, ১৫:৬০:৩, ২৫:২:১৮, ২৭:৫৭:৫, ৩৪:১১:৪, ৩৪:১৮:১০, ৩৬:৩৯:২, ৪১:১০:৮, ৫৬:৬০:২, ৭৩:২০:১৭, ৭৪:১৮:৩, ৭৪:১৯:৩, ৭৪:২০:৪, ৭৬:১৬:৪, ৮০:১৯:৪, ৮৭:৩:২।

৯. তাক্বদীর (ক্রিয়াবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ২) ব্যবহৃত হয়েছে ৫ স্থানে: ৬:৯৬:১০, ২৫:২:১৯, ৩৬:৩৮:৬, ৪১:১২:১৭, ৭৬:১৬:৫।

তিন: ক্রিয়ারূপ ৮
১০. মুক্বতাদির (কর্তৃবিশেষ্য, ক্রিয়ারূপ ৮, ক্বাদীর শব্দের সমার্থক) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ৪ স্থানে: ১৮:৪৫:২৩, ৪৩:৪২:৭, ৫৪:৪২:৭, ৫৪:৫৫:৬।

[উল্লেখ্য: এছাড়া ‘ক্বফ দাল র’ মূল অক্ষরসমূহ থেকে গঠিত আরেকটি বিশেষ্য (ক্বুদূর) কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে (৩৪:১৩:১০), তবে তা ‘তাক্বদীর’ শব্দের শ্রেণিভুক্ত নয়, সেটি ভিন্ন শ্রেণিভুক্ত।]

তাক্বদীর শব্দটি বিভিন্ন শব্দরূপে ব্যবহৃত হওয়া আয়াতসমূহের সমন্বিত তালিকা :
২:২০, ২:১০৬, ২:১০৯, ২:১৪৮, ২:২৩৬, ২:২৫৯, ২:২৬৪, ২:২৮৪, ৩:২৬, ৩:২৯, ৩:১৬৫, ৩:১৮৯, ৪:১৩৩, ৪:১৪৯, ৫:১৭, ৫:১৯, ৫:৩৪, ৫:৪০, ৫:১২০, ৬:১৭, ৬:৩৭, ৬:৬৫, ৬:৯১, ৬:৯৬, ৮:৪১, ৯:৩৯, ১০:৫, ১০:২৪, ১১:৪, ১৩:৮, ১৩:১৭, ১৩:২৬, ১৪:১৮, ১৫:২১, ১৫:৬০, ১৬:৭০, ১৬:৭৫, ১৬:৭৬, ১৬:৭৭, ১৭:৩০, ১৭:৯৯, ১৮:৪৫, ২০:৪০, ২১:৮৭, ২২:৬, ২২:৩৯, ২২:৭৪, ২৩:১৮, ২৩:৯৫, ২৪:৪৫, ২৫:২, ২৫:৫৪, ২৭:৫৭, ২৮:৮২, ২৯:২০, ২৯:৬২, ৩০:৩৭, ৩০:৫০, ৩০:৫৪, ৩২:৫, ৩৩:২৭, ৩৩:৩৮, ৩৪:১১, ৩৪:১৮, ৩৪:৩৬, ৩৪:৩৯, ৩৫:১, ৩৫:৪৪, ৩৬:৩৮, ৩৬:৩৯, ৩৬:৮১, ৩৯:৫২, ৩৯:৬৭, ৪১:১০, ৪১:১২, ৪১:৩৯, ৪২:৯, ৪২:১২, ৪২:২৭, ৪২:২৯, ৪২:৫০, ৪৩:১১, ৪৩:৪২, ৪৬:৩৩, ৪৮:২১, ৫৪:১২, ৫৪:৪২, ৫৪:৪৯, ৫৪:৫৫, ৫৬:৬০, ৫৭:২, ৫৭:২৯, ৫৯:৬, ৬০:৭, ৬৪:১, ৬৫:৩, ৬৫:৭, ৬৫:১২, ৬৬:৮, ৬৭:১, ৬৮:২৫, ৭০:৪, ৭০:৪০, ৭৩:২০, ৭৪:১৮, ৭৪:১৯, ৭৪:২০, ৭৫:৪, ৭৫:৪০, ৭৬:১৬, ৭৭:২২, ৭৭:২৩, ৮০:১৯, ৮৬:৮, ৮৭:৩, ৮৯:১৬, ৯০:৫, ৯৭:১, ৯৭:২, ৯৭:৩।

তাক্বদীর শব্দভিত্তিক কুরআনের আয়াতসমূহের অনুবাদ :
নিম্নে তাক্বদীর ও এর বিভিন্ন শব্দরূপ ধারণকারী আয়াতসমূহের অনুবাদ ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো এবং তাক্বদীর শব্দের অর্থ অনুধাবনের জন্য ঐ শব্দরূপের অর্থকে আন্ডারলাইন করা হলো। (কিছু ক্ষেত্রে পূর্ণ বক্তব্য অনুধাবনের সহায়ক হিসেবে পূর্বাপর আয়াতও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে)।

২:২০ :: যেন শীঘ্রই বিদ্যুৎচমক তাদের (মুনাফিক্বদের) দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেবে। যখনি (বিদ্যুৎ) তাদের জন্য (তাদের চলার পথ) আলোকিত করে, তারা তাতে (সেই আলোতে) চলতে থাকে। আর যখন তাদের উপর অন্ধকার হয়, তারা দাঁড়িয়ে যায়। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে অবশ্যই তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২:১০৬ :: আমরা কোনো আয়াত রহিত করি না অথবা তা ভুলিয়েও দিই না, (যতক্ষণ না) আমরা তার চেয়ে উত্তম বা তার অনুরূপ (আয়াত) প্রদান করি। তুমি কি জানো না যে, নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২:১০৯ :: আহলে কিতাবের মধ্যে অনেকে চায় যদি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে পারতো তোমাদের ঈমানের পরবর্তী পর্যায়ে কুফর করার দিকে; তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে (তোমাদের প্রতি) হিংসাবশতঃ, তাদের জন্য সত্য (সঠিক তথ্য) সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পরেও। সুতরাং তোমরা তাদেরকে উদারতা প্রদর্শনপূর্বক (মাফ করে দাও এবং) উপেক্ষা করো যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২:১৪৮ :: আর প্রত্যেকের জন্য আছে একটি অভিমুখ যেদিকে সে মুখ ফিরায়। সুতরাং তোমরা কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো। তোমরা যেখানেই থাকো, আল্লাহ তোমাদের সকলকে জমায়েত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২:২৩৬ :: তোমাদের উপর দোষ নেই, যদি তোমরা (কোনো বিশেষ কারণে) তোমাদেরকে স্ত্রীদেরকে তালাক দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার আগেই অথবা মোহরানা ধার্য করার আগেই। আর এ অবস্থায় তোমরা তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিতে হবে। স্বচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে এবং অস্বচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে। ন্যায়সঙ্গত ভোগসামগ্রী। এটা উত্তমরূপে কর্মসম্পাদনকারীদের (বা পরোপকারী ও পরার্থে ত্যাগ স্বীকারকারীদের) উপর একটি দায়িত্ব।

২:২৫৯ :: অথবা (তুমি কি দেখনি) ঐ ব্যক্তির মতো কাউকে (কারো অবস্থা), যে অতিক্রম করেছে একটি জনপদের উপর দিয়ে আর উহা (ঐ জনপদ) ধ্বসে পড়েছে উহার ভিত্তির উপর? সে বললো, কিরূপে আল্লাহ ইহাকে (= এ জনপদকে) পুনর্জীবিত করবেন উহার মৃত্যুর পর? তখন আল্লাহ তাকে মৃত রাখলেন একশত বছর। তারপর আবার তাকে অভ্যুত্থিত করলেন। তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘কতকাল তুমি অবস্থান করেছো?’ সে বললো, ‘আমি অবস্থান করেছি একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ’। তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘বরং তুমি অবস্থান করেছো একশত বছর। সুতরাং লক্ষ্য করো তোমার খাদ্যের দিকে ও তোমার পানীয়ের দিকে, তা বিকৃত হয়নি, আরো লক্ষ্য করো তোমার গাধার দিকে। আর (তোমার উপর দিয়ে যা ঘটে গেলো তা এজন্য যে,) যেন আমরা তোমাকে মানবজাতির জন্য নিদর্শনে পরিণত করি। আর লক্ষ্য করো হাড়গুলোর দিকে কিরূপে আমরা উহাকে সংযোজিত করি তারপর আমরা উহাকে গোশত দিয়ে ঢেকে দিই’। সুতরাং যখন (বিষয়টি) তার নিকট সুস্পষ্ট হলো, সে বললো, ‘আমি জানি যে, নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।”

২:২৬৪ :: হে যারা ঈমান এনেছো, তোমরা তোমাদের সদাক্বাতকে নষ্ট করো না, অনুগ্রহর খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে, ঐ ব্যক্তির মতো যে মানুষকে দেখানোর জন্য ব্যয় করে এবং আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না। সুতরাং তার উপমা একটি পাথরের চাতালের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো, যার উপর ছিল মাটি, তারপর তাতে বর্ষিত হয়েছে প্রবল বৃষ্টি, ফলে উহাকে ধুয়ে সাফ করে ছেড়েছে। তারা যা উপার্জন করেছে তা থেকে (শ্রমলব্ধ ফল থেকে) সামান্য কিছুও লাভ করতে সক্ষম হবে না। আর আল্লাহ কাফের ক্বওমকে হিদায়াত করেন না।

২:২৮৪ :: আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবই আল্লাহর আয়ত্তে। আর যদি তোমরা তোমাদের মনে যা আছে তা প্রকাশ করো অথবা তা গোপন করো (উভয় অবস্থায়) আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে তার হিসাব নিবেন। তারপর তিনি যাকে ইচ্ছা করেন ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন শাস্তি দিবেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩:২৬ :: বলো, ‘হে আল্লাহ, সমস্ত আধিপত্যের অধিপতি। আপনি আধিপত্য দান করেন যাকে আপনি (আধিপত্য দানের) ইচ্ছা করেন। আর আপনি আধিপত্য কেড়ে নেন যার থেকে আপনি (আধিপত্য কেড়ে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি সম্মানিত করেন যাকে আপনি (সম্মানিত করার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি অপমানিত করেন যাকে আপনি (অপমানিত করার) ইচ্ছা করেন। আপনার হাতেই সমস্ত কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩:২৯ :: বলো, “যদি তোমরা তোমাদের মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে (নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী অন্তরে) যা আছে তা গোপন রাখো অথবা তা প্রকাশ করো (উভয় অবস্থায়ই) আল্লাহ তা জানেন। আর তিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুই জানেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩:১৬৫ :: কি হলো যখন তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হয়েছো, (অথচ) নিশ্চয় (আগের যুদ্ধে) তোমরা তাদের উপর ঘটিয়েছিলে উহার দ্বিগুণ মুসিবত, (তবুও) তোমরা বলেছো, ‘এটা কোথা থেকে এলো?’ বলো, ‘উহা তোমাদের নিজেদের নিকট থেকে (= তোমাদের কার্যকলাপের কারণে)। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩:১৮৯ :: আর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য আল্লাহরই আয়ত্তে রয়েছে। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪:১৩৩ :: যদি তিনি (আল্লাহ) ইচ্ছা করেন, তোমাদেরকে সরিয়ে দেবেন, হে মানুষ, এবং অন্যদেরকে নিয়ে আসবেন। আর তিনি তা করতে সক্ষম ও শক্তিমান এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী।

৪:১৪৯ :: যদি তোমরা প্রকাশ্যে উত্তম কাজ করো অথবা তোমরা তা গোপনে করো অথবা অন্যের দোষ ক্ষমা করার ক্ষেত্রে উদারনীতি অবলম্বন করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ উদার এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:১৭ :: নিশ্চয় তারা কুফর করেছে যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই মাসীহ ইবনে মারইয়াম’। বলো, ‘তবে কে সক্ষম হবে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে, কিছুমাত্রও; যদি তিনি ধ্বংস করতে ইচ্ছা করেন মাসীহ ইবনে মারইয়ামকে এবং তার মাকে এবং যারা আছে পৃথবীতে তাদের সবাইকে?’ আর আল্লাহরই জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মাঝে যাকিছু আছে সবার আধিপত্য। তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:১৯ :: হে আহলে কিতাব, নিশ্চয় তোমাদের কাছে আমাদের রসূল এসেছে। রসূলগণের প্রেরণে বিরতির পর (পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের শিক্ষা ম্লান হবার শেষ পর্বে) সে (এসে) তোমাদের জন্য স্পষ্টভাবে তথ্য প্রকাশ করে, যেন তোমরা না বলতে পারো, “আমাদের কাছে কোনো সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী আসে নি।” সুতরাং নিশ্চয় তোমাদের কাছে সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী এসেছে। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:৩৪ :: তবে যাদের উপর তোমরা নিয়ন্ত্রণ লাভ করার পূর্বে তাওবাহ করেছে। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল-দয়ালু।

৫:৪০ :: তুমি কি জানো না, নিশ্চয় আল্লাহ এমন যে, তাঁরই অধিকারভুক্ত আসমানসমূহ ও যমিনের আধিপত্য? তিনি আযাব/ শাস্তি দেন যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর তিনি মাগফিরাত/ ক্ষমা করেন যাকে তিনি (ক্ষমা করার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:১২০ :: আল্লাহরই অধিকারভুক্ত আসমানসমূহ ও যমিনের এবং যা আছে উহাদের মধ্যে সেই সবকিছুর আধিপত্য। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬:১৭ :: আর যদি আল্লাহ তোমার ক্ষতিসাধন করেন, তাহলে কেউ নেই উহার অপসারণকারী তিনি নিজে ছাড়া। আর যদি তিনি তোমার কল্যাণসাধন করেন, তবে তিনিই সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬:৩৭ :: আর তারা বলে, ‘কেন নাযিল করা হয় না তার উপর কোন আয়াত/ নিদর্শন তার রবের পক্ষ থেকে?’ বলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সক্ষম আয়াত/ নিদর্শন নাযিল করতে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই (আসমানী কিতাবের) ইলম রাখে না’।

৬:৬৫ :: বলো, ‘তিনি সক্ষম পাঠাতে তোমাদের উপর আযাব তোমাদের উপর থেকে (= আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে (= জমিন থেকে) অথবা তোমাদেরকে বিভক্ত করতে বিভিন্ন শিয়া/ দলে আর আস্বাদন করাতে তোমাদের কতিপয়কে কতিপয়ের শক্তিমত্তার ফল’। নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপে আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি যেন তারা ফিকহ/ উপলব্ধি করতে পারে।

৬:৯১ :: আর তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয়নি যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত (বা তিনি যেরূপ মর্যাদার হক্বদার বা তাঁকে মর্যাদা দেয়ার হক্ব আদায় করে যথাযথভাবে)। যখন তারা বলেছে, ‘আল্লাহ নাযিল করেননি কোন মানুষের উপর কোন কিছু’। বলো, ‘কে নাযিল করেছেন কিতাব যা নিয়ে এসেছিলো মূসা নূর/ আলোস্বরূপ ও হুদাল্লিন্নাছ/ মানবজাতির জন্য হিদায়াতস্বরূপ? তোমরা উহা রেখে থাকো তোমাদের কাগজসমূহে, তোমরা উহার কিছু প্রকাশ করে থাকো আর অনেক কিছু গোপন করে রাখো। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো যা না জানতে তোমরা আর না জানতো তোমাদের বাপদাদা। বলো, ‘আল্লাহই (নাযিল করেছেন)’। তারপর তাদেরকে ছেড়ে দাও তাদের অর্থহীন আলোচনার মধ্যে তারা খেলতে থাকুক।

৬:৯৬ :: তিনিই প্রভাতের উদ্ভাবক/ উন্মেষক/ বাহির করনেওয়ালা। আর তিনি রাতকে বানিয়েছেন বিশ্রামের সময় আর সূর্য ও চাঁদকে করেছেন (বর্ষ, মাস ও তিথি) হিসাবের উপায়। উহা আযীযুল আলীম/ মহাশক্তিমান মহাজ্ঞানীর (= আল্লাহর) নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law)।

৮:৪১ :: আর তোমরা জেনে রাখো নিশ্চয় তোমরা মাগানিম/গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ হিসাবে যা লাভ করেছো যে কোন কিছু থেকে; নিশ্চয় উহাতে পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহর জন্য (= আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাদির জন্য), আর রসূলের জন্য (= মুসলিম উম্মাহর রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের জন্য), আর যিল কুরবা/ (শহীদদের) আত্মীয় স্বজনদের জন্য, আর ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের জন্য, আর মিসকিনদের জন্য, আর ইবনে সাবীলের/ ছিন্নমূলদের জন্য। যদি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো আল্লাহর প্রতি আর তাহাতে (= কুরআনে) যাহা (= কুরআন) আমরা নাযিল করেছি আমাদের এক বান্দার প্রতি (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর প্রতি) ইয়াওমুল ফুরক্বানে/ সত্যমিথ্যা পার্থক্য করে দেয়ার দিনে, যেদিন দুটি সেনাবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৯:৩৯ :: যদি তোমরা বের না হও তিনি তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেবেন, আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। আর বদলস্বরূপ আনবেন অন্য এক কওম তোমাদেরকে বাদ দিয়ে। আর তোমরা তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

১০:৫ :: তিনিই সেই সত্তা, যিনি সূর্যকে করেছেন দিয়াউন/ তেজস্বী আলোকময়, আর চাঁদকে করেছেন নূর/ স্নিগ্ধ আলোকময়। আর উহার জন্য প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন মনজিলসমূহ। যেন তোমরা জানতে পারো বছরসমূহের গণনা আর (তারিখের) হিসাব। আল্লাহ সৃষ্টি করেননি এসবকিছু উদ্দেশ্যহীনভাবে। তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেন আয়াতসমূহকে এমন কওমের জন্য, যারা জ্ঞান রাখে।

১০:২৪ :: নিশ্চয় হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের উদাহরণ হচ্ছে ঐ পানির সাথে সম্পর্কিত ঘটনার মতো, যা আমরা নাযিল করি আকাশ থেকে, তারপর উহা দ্বারা সংমিশ্রিত হয়ে উদ্গত হয় পৃথিবীর উদ্ভিদ, উহা থেকে খায় মানুষ আর গবাদি পশু, শেষ পর্যন্ত যখন পৃথিবী ধারণ করেছে উহার ভূষণ আর চাকচিক্যময় হয়েছে আর ধারণা করেছে উহার অধিবাসীরা যে, তারা উহা ভোগ করতে সক্ষম হবে, তখন উহার উপর এসে গেছে আমাদের চূড়ান্ত নির্দেশ রাতে অথবা দিনে। তখন আমরা উহাকে বানিয়ে দিয়েছি কর্তিত ফসল, যেন সেখানে কিছুই ছিলো না গতকাল। এভাবেই আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে সেই কওমের জন্য যারা ফিকির/ চিন্তা গবেষণা করে।

১১:৪ :: আল্লাহরই কাছে তোমাদের ফিরে যাবার স্থান। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

১৩:৮ :: আল্লাহ জানেন যা গর্ভে ধারণ করে প্রত্যেক (গর্ভবতী) নারী, আর গর্ভসমূহে (ভ্রুণের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, শক্তি-সামর্থ্য, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার) যা হ্রাস পায় আর যা বৃদ্ধি পায়, আর প্রত্যেক বিষয়ই তাঁর কাছে (নির্ধারিত) আছে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত (সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ) পরিমাণ/ মাত্রা সহকারে।

১৩:১৭ :: তিনি নাযিল/ বর্ষণ করেন আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি, ফলে প্লাবিত হয় উপত্যকাসমূহ তার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো। তারপর বহন করে প্লাবন, (বহন করে) ফেনাকে, উপরিভাগে। আর উহার উপরও (ফেনা হয়) যেসব ধাতুকে তারা প্রজ্জ্বলিত করে আগুনের মধ্যে, এ উদ্দেশ্যে যে তা দিয়ে বানাতে চায় অলংকার বা তার মতো কোন তৈজসপত্র। এভাবেই আল্লাহ দৃষ্টান্ত পেশ করেন হক ও বাতিলের/ সঠিক ও বেঠিকের/ যৌক্তিক ও অযৌক্তিকের। তারপর ফেনা চলে যায় অকেজো হয়ে। আর যা মানুষের জন্য উপকারী তা টিকে থাকে পৃথিবীতে। এভাবেই আল্লাহ পেশ করেন আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।

১৩:২৬ :: আল্লাহ প্রচুর করে দেন রিযিক যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। আর তারা আনন্দিত হয়েছে পার্থিব জীবন নিয়ে। অথচ পার্থিব জীবন কিছুই নয় আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ সামগ্রী ছাড়া।

১৪:১৮ :: তাদের দৃষ্টান্ত (দেয়া হচ্ছে) যারা কুফর করেছে তাদের রবের প্রতি। তাদের কাজসমূহ যেন ভষ্ম, যাকে উড়িয়ে দিয়েছে বায়ুপ্রবাহ, এক ঝটিকাপূর্ণ দিনে। তারা (ইচ্ছানুরূপ প্রভাব বিস্তারমূলকভাবে) নিয়ামকরূপে নির্ধারণ করতে পারবে না যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুকে কোনো ক্ষেত্রের উপর। উহাই দূরবর্তী বিভ্রান্তি।

১৫:২১ :: এর অনুবাদ: আর কোন কিছুই নেই এছাড়া যে, আমাদেরই কাছে আছে তার ধনভান্ডার। আর আমরা উহা নাযিল করি না সুপরিজ্ঞাত বা জানা-বোঝার উপযোগী নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) ছাড়া।

১৫:৫৮-৬০ :: তারা (ফেরেশতারা) বললো, “নিশ্চয় আমরা প্রেরিত হয়েছি অপরাধী ক্বাওমের প্রতি। লূতের পরিবার-পরিজন ছাড়া। নিশ্চয় আমরা মুক্তি দেবো তাদের সকলকে। তার স্ত্রীকে ছাড়া। আমরা এরূপই প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছি। নিশ্চয় সে পিছে থেকে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত।

১৬:৭০ :: আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে মৃত্যু দিবেন। আর তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে ফিরিয়ে নেয়া হয় হীন বয়সের দিকে, যেন সে জানে না, জানার পরও; কিছুই (অর্থাৎ সে জানার পরও সব ভুলে যায়)। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞানী এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

১৬:৭৫ :: আল্লাহ পেশ করছেন একজন দাসের দৃষ্টান্ত, সে অন্যের মালিকানাধীন, সে ক্ষমতা রাখে না কোনো কিছুর উপর; আর এমন এক ব্যক্তির (দৃষ্টান্ত) যাকে আমরা রিযিক দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে, উত্তম রিযিক, তারপর সে ব্যয় করে উহা থেকে গোপনে আর প্রকাশ্যে। এ দুজন কি সমান হতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বরং তাদের অধিকাংশই (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান রাখে না।

১৬:৭৬ :: আর আল্লাহ পেশ করছেন দুজন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত। তাদের দুজনের একজন বোবা, সে ক্ষমতা রাখে না কোনো কিছুর উপর, আর সে তার মনিবের উপর বোঝা, যেদিকেই তাকে পাঠায় সে ভালো কিছু আনে না, সমান হতে পারে কি সে আর সে-ই ব্যক্তি যে আদেশ দেয় ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে আর সে আছে সরল-সঠিক পথের (সিরাতুল মুসাতাক্বীম) উপর?

১৬:৭৭ :: আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত (অর্থাৎ আল্লাহরই জ্ঞানে ও নিয়ন্ত্রণে আছে) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর গায়েবসমূহ (অদৃশ্য বিষয়সমূহ)। আর প্রলয়-মুহুর্তের বিষয়টি আসবে চোখের এক পলকে অথবা উহা তার চেয়ে নিকটবর্তী হবে। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

১৭:৩০ :: নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক-প্রভু প্রশস্ত করে দেন রিযিককে, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তিনি হলেন তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দেখেন)।

১৭:৯৯ :: তারা কি ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, তিনি অবশ্যই সক্ষম সৃষ্টি করতে উহাদের অনুরূপ? আর তিনি নির্ধারণ করেছেন তাদের জন্য আজাল/ শেষ বিচারের সময়সীমা, উহাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও যালিমগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, কুফর করাকে ছাড়া।

১৮:৪৫ :: আর পেশ করো তাদের জন্য হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। যেমন, বৃষ্টির পানি, আমরা উহাকে নাযিল/ বর্ষণ করি আকাশ থেকে। তখন উদ্গত হয় উহা দ্বারা পৃথিবীর উদ্ভিদ। তারপর তা পরিণত হয় শুকনো গুঁড়োতে, বাতাস উহাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ হলেন সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২০:৪০ :: (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন চলছিলো তোমার বোন। তারপর সে বলেছে, ‘আমি কি তোমাদের সন্ধান দেবো এ বিষয়ে যে, কে তাকে লালন-পালনের ভার নিতে পারে?’। তখন আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি তোমার মায়ের কাছে; যেন তার চোখ শীতল হয় আর সে দু:খিত না হয়। আর (স্মরণ করো যে,) তুমি কতল/ হত্যা করেছো এক ব্যক্তিকে। তারপর আমরা তোমাকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি দুশ্চিন্তা থেকে। আর আমরা তোমাকে পরীক্ষা করেছি, যথাযথ পরীক্ষা। তারপর তুমি অবস্থান করেছো কয়েক বছর আহলে মাদিয়ানে/ মাদিয়ানবাসীদের মধ্যে। তারপর তুমি এসেছো প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত যথোপযোগী সময়ে, হে মূসা।

২১:৮৭ :: আর যূন নূনকেও/ ইউনুসকেও (সাহায্য করেছি)। যখন সে চলে গিয়েছে ক্রুদ্ধ হয়ে। তখন সে ধারণা করেছে যে, আমরা সক্ষম হবো না তাকে দায়ী করতে। তারপর (= স্বীয় ভুল বুঝতে পারার পর) সে ডেকেছে অন্ধকারের মধ্যে এ কথা বলে যে, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা, সুবহানাকা, ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন’/ ‘নেই কোন ইলাহ আপনি ছাড়া, আপনি পবিত্র, আর নিশ্চয় আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’।

২২:৬ :: উহা প্রমাণ করে যে, আল্লাহই আল হাক্ব/ পরম সত্য। আরো প্রমাণ করে যে, তিনিই মৃতকে জীবিত করেন। আরো প্রমাণ করে যে, তিনিই সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২২:৩৯ :: তাদেরকে (কিতালের/ সশস্ত্র সংগ্রামের) অনুমতি দেয়া হলো যাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা হচ্ছে। কারণ, তারা মজলুম/ নির্যাতিত। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম।

২২:৭৪ :: তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয়নি যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত (বা তিনি যেরূপ মর্যাদার হক্বদার বা তাঁকে মর্যাদা দেয়ার হক্ব আদায় করে যথাযথভাবে)। নিশ্চয় আল্লাহ মহাশক্তিমান, মহাক্ষমতাধর।

২৩:১৮ :: আর আমরা নাযিল/ বর্ষণ করেছি আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো। তারপর আমরা তা সংরক্ষণ করি পৃথিবীতে। আর নিশ্চয় আমরা উহাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সক্ষম।

২৩:৯৫ :: আর আমরা তোমাকে দেখাতে যা তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে (= তাদের শাস্তি) অবশ্যই সক্ষম।

২৪:৪৫ :: আর আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন প্রত্যেক দাব্বাতকে/ জীবকে, (সাগরের) পানি থেকে। তারপর তাদের মধ্য থেকে কেউ চলে তার পেটের উপর ভর দিয়ে। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ চলে তার দুই পায়ের ভর দিয়ে। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ চলে চার (পা) এর উপর ভর দিয়ে। আল্লাহ সৃষ্টি করেন, যা তিনি ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২৫:২ :: তাঁরই জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রাজত্ব। আর তিনি গ্রহণ করেন নি কোনো সন্তান। আর রাজত্বে তাঁর কোনো শরিক/ অংশীদার নেই। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন সবকিছুকে। তারপর উহার প্রাকৃতিক আইন (natural law) নির্ধারণ করেছেন।

২৫:৫৪ :: আর তিনিই মানুষকে পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তাকে স্থাপন করেছেন বংশগত সম্পর্কের মধ্যে ও বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে। আর তোমার রব হলেন প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২৭:৫৭ :: তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম তাকে ও তার আহালকে/ পরিবারকে, তার স্ত্রীকে ছাড়া। আমরা তাকে (= তার স্ত্রীকে) প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম পিছনে সরে থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে।

২৮:৮২ :: আর তারা (নিজেদের) প্রভাত করলো যারা তামান্না/ কামনা করেছিলো তার মাকান/ অবস্থান (সমমর্যাদা) গতকালও, তারা (এ কথা) বলতে বলতে (যে,) ‘বড়ই আফসোস, আল্লাহ রিযিককে সম্প্রসারিত করে দেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। যদি না আল্লাহ অনুগ্রহ করতেন আমাদের উপর, তাহলে তিনি ধ্বসিয়ে দিতেন আমাদেরকেও। আর উহার ব্যাপারে বড়ই আফসোস (যা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে,) কাফেররা সফল হয় না’।

২৯:২০ :: বলো, ‘তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। তারপর লক্ষ্য করো কিরূপে তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন, তারপর আল্লাহ (উহাকে) আবার সৃষ্টি করবেন আখিরাতে। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

২৯:৬২ :: আল্লাহ প্রশস্ত করেন রিযিককে তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন আর তার জন্য তা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করেন (যখন ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।

৩০:৩৭ :: তারা কি (ভেবে) দেখেনি যে, আল্লাহ প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।

৩০:৫০ :: সুতরাং লক্ষ্য করো আল্লাহর রহমতের প্রভাবের প্রতি। কিরূপে তিনি সঞ্জীবিত/ প্রাণবন্ত করেন পৃথিবীকে/ ভূমিকে উহার মৃত্যুর/ শুষ্কতার পর। নিশ্চয় এভাবে তিনি মৃতকে জীবনদানকারী। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩০:৫৪ :: আল্লাহ সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বলতা থেকে। তারপর তিনি ব্যবস্থা করেছেন এ দুর্বলতার পর শক্তি সামর্থের। তারপর তিনি ব্যবস্থা করেছেন এ শক্তি সামর্থের পর দুর্বলতার ও বার্ধক্যের। তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি আলীম/ সর্বজ্ঞানী প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩২:৫ :: তিনিই সমস্ত বিষয়ের/ কাজের ব্যবস্থাপনা করেন আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত। তারপর তাঁর দিকে উত্থিত হয় এমন এক দিনে যার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ তোমাদের গণনায় এক হাজার বছর।

৩৩:২৭ :: আর তিনি তোমাদেরকে ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করেছেন তাদের ভূমির আর তাদের ঘরবাড়িসমূহের আর তাদের মালসম্পদের আর এমন ভূমির এখনো তোমরা যাতে পদচারণা করোনি আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩৩:৩৮ :: নবীর উপর কোন সংকীর্ণতা নেই ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ তার জন্য ফরজ/ নির্ধারিত করেছেন। ইহাই আল্লাহর সুন্নাত, তাদের (= সেই নবীদের) ব্যাপারেও (ছিলো), যারা আগে গত হয়ে গেছে। আর আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত (বিধানগত) প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণস্বরূপ।

৩৪:১১ :: (তার প্রতি এ নির্দেশসহ যে,) ‘তুমি পূর্ণমাপের বর্মসমূহ নির্মাণ করো, আর কড়াগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ রক্ষা করো’। ‘আর তোমরা আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করো। নিশ্চয় আমি তোমরা যা আমল করো উহার প্রতি বাসীর/ দৃষ্টিবান’।

৩৪:১৮ :: আর (উহার আগে) আমরা স্থাপন করেছিলাম তাদের ও ঐ জনপদের মধ্যে, যাতে আমরা বরকত দিয়েছিলাম (০৩:৯৬), (স্থাপন করেছিলাম) দৃশ্যমান জনপদসমূহ, আর আমরা উহাতে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম ভ্রমণ দূরত্ব। (আমি বলেছিলাম,) ‘তোমরা উহাতে ভ্রমণ করো রাতসমূহে আর দিনসমূহে, নিরাপত্তাসহকারে’।

৩৪:৩৬ :: বলো, ‘নিশ্চয় আমার রব প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য ইচ্ছা করেন)। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ইলম (= আসমানী কিতাবের জ্ঞান) রাখে না’।

৩৪:৩৯ :: বলো, নিশ্চয় আমার রব প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে; আর (কখনো) তিনি তার জন্য উহাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন। আর যা তোমরা ইনফাক্ব/ ব্যয় করো কোন কিছু থেকে, তখন তিনিই উহার স্থলে আরো দেন। আর তিনি খায়রুর রাযেক্বীন/ উত্তম রিযিকদাতা।

৩৫:১ :: আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে রসূল/ দূত হিসাবে নিয়োগকারী; যারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার বাহু (= কর্মের মাত্রা উপযোগী শক্তি) বিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টিতে বাড়িয়ে দেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩৫:৪৪ :: তারা কি ভ্রমণ করেনি পৃথিবীতে, ফলে তারা দেখবে কিরূপ হয়েছিলো তাদের পরিণাম যারা তাদের আগে ছিলো? আর তারা ছিলো অধিক শক্তিশালী তাদের চেয়েও শক্তিসামর্থে। আর আল্লাহ এমন নন যে, তাঁকে অক্ষম করতে পারে কোন সত্তা/ কোন কিছু আকাশমন্ডলীতে আর পৃথিবীতেও (কেউ তাঁকে অক্ষম করতে পারবে) না। নিশ্চয় তিনি আলীম/ সর্বজ্ঞাতা এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৩৬:৩৮ :: আর সূর্য, উহা আবর্তন করে উহার নির্দিষ্ট অবস্থানে (কক্ষপথে)। উহা আযীয/ মহাশক্তিমান ও আলীম/ মহাজ্ঞানী সত্তার নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন।

৩৬:৩৯ :: আর চন্দ্র আমরা উহার জন্য প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছি মনজিলসমূহ। (চাঁদ প্রতিবার উহার মনজিলসমূহ অতিক্রম করতে থাকে) যতক্ষণ না উহা ফিরে যায় খেজুর গাছের পুরাতন ডালের মতো দৃশ্যমান আকৃতিতে।

৩৬:৮১ :: তিনি কি নন, যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, সক্ষম এক্ষেত্রে যে, তিনি সৃষ্টি করবেন উহাদের সদৃশ। কেন নয়? আর তিনি খাল্লাক্ব/ সৃষ্টিকর্তা ও আলীম/ মহাজ্ঞানী।

৩৯:৫২ :: তারা কি জানেনি যে, আল্লাহ প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াত/ নিদর্শন সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।

৩৯:৬৭ :: আর তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয় নি যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত (বা তিনি যেরূপ মর্যাদার হক্বদার বা তাঁকে মর্যাদা দেয়ার হক্ব আদায় করে যথাযথভাবে)। আর সমস্ত পৃথিবী তাঁর মুঠিতে থাকবে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে, আর আকাশমন্ডলী পেঁচানো অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতের দ্বারা। সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। আর তিনি উহার অনেক ঊর্ধ্বে যে শিরক তারা করে।

৪১:১০ :: আর স্থাপন করেছেন উহাতে পর্বতমালা উহার উপরে আর বরকত দিয়েছেন উহাতে আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন উহাতে উহার খাদ্যসম্ভার চারদিনে, প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনের সমপরিমাণে।

৪১:১২ :: তারপর সেগুলোকে পরিণত করেছেন সাত আকাশে দুইদিনে। আর ওহী করেছেন প্রত্যেক আকাশে উহার জন্য প্রযোজ্য বিধি-ব্যবস্থা। আর আমরা সুসজ্জিত করেছি দুনিয়ার আকাশকে প্রদীপমালা (= তারকারাজি) দিয়ে। আর সুসংরক্ষিত করে। উহা আযীয/ মহাশক্তিমান ও আলীম/ মহাজ্ঞানী সত্তার (= আল্লাহর) নির্ধারিত প্রাকৃতিক ব্যবস্থা।

৪১:৩৯ :: আর তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে এও যে, তুমি ভূমিকে দেখ অবনমিত। তারপর যখন আমরা নাযিল/ বর্ষণ করি উহার উপর (বৃষ্টির) পানি, তখন উহা উথলিয়ে উঠে ও স্ফীত হয় (শস্য জন্মে)। নিশ্চয় যিনি উহাকে জীবন্ত করেন, তিনিই মৃতকে জীবিত করবেন। নিশ্চয় তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪২:৯ :: নাকি তারা গ্রহণ করেছে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে? অথচ আল্লাহ, তিনিই ওলি/ অভিভাবক আর তিনিই মৃতকে জীবিত করেন, আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪২:১২ :: তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ। তিনি প্রশস্ত করে দেন রিযিক, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তিনি সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞানী।

৪২:২৭ :: আর যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জীবিকা প্রশস্ত করে দিতেন, তাহলে তারা বিদ্রোহ করতো পৃথিবীতে। কিন্তু তিনি নাযিল করেন নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী, যা তিনি ইচ্ছা করেন (তদনুসারে)। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের পূর্ণ অবগত, সম্যক দ্রষ্টা।

৪২:২৯ :: আর তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি, আর যা কিছু তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন এ উভয়ের মধ্যে দাব্বাত/ জীবজন্তু থেকে। আর তিনি তাদেরকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে যখনি তিনি ইচ্ছা করবেন তখনি সক্ষম।

৪২:৫০ :: অথবা তাদেরকে মিলিয়ে দেন পুত্র সন্তান ও কন্যাসন্তান। আর তিনি করে দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন বন্ধ্যা। নিশ্চয় তিনি আলীম/ সর্বজ্ঞানী ও প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪৩:১১ :: আর যিনি নাযিল/ বর্ষণ করেছেন আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি, নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী। তারপর আমরা সঞ্জীবিত করি উহার মাধ্যমে মৃত/ শুষ্ক ভূখন্ডকে। এভাবে তোমাদেরকে বের করা হবে।

৪৩:৪২ :: অথবা আমরা তোমাকে দেখাব যা আমরা তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছি। তবে নিশ্চয় আমরা তাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।

৪৬:৩৩ :: তারা কি ভেবে দেখেনি যে, আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, আর তিনি ক্লান্ত হননি উহাদেরকে সৃষ্টি করতে, তিনিই সক্ষম মৃতকে জীবিত করার ব্যাপারে। কেন নয়? নিশ্চয় তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪৮:২১ :: আর অন্যটি, যার উপর তোমরা এখনো সক্ষমতা লাভ করনি, নিশ্চয় আল্লাহ উহা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫৪:১২ :: আর আমরা ভূমিকে ফাটিয়ে বের করেছিলাম ঝর্ণাসমূহ। তারপর সমস্ত পানি প্রবাহিত করা হয়েছিল একটি নির্দেশ অনুসারে যা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছিলো।

৫৪:৪২ :: তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল আমাদের সকল আয়াতকে/ নিদর্শনকে। তখন আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম, মহাপরাক্রমশালী এবং প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বময় নিয়ন্ত্রণকারী মহাশক্তিমান সত্তার (= আল্লাহর) পাকড়াও।

৫৪:৪৯ :: নিশ্চয় আমরা প্রত্যেক জিনিসকে সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন সহকারে।

৫৪:৫৫ :: সত্য (মর্যাদার) আসনে, প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বময় নিয়ন্ত্রণকারী মহাশক্তিমান মালিকের নিকট।

৫৬:৬০ :: আমরা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছি তোমাদের মধ্যে মওত/ মৃত্যু। আর আমরা অক্ষম হব না।

৫৭:২ :: তাঁরই আয়ত্তে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫৭:২৯ :: যেন জানতে পারে আহলে কিতাব যে, তারা ক্ষমতা রাখে না কোন কিছুর উপর আল্লাহর ফযলের/ অনুগ্রহের মধ্য থেকে। আর নিশ্চয় সমস্ত ফযল/ অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে। তিনি উহা দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

৫৯:৬ :: আর যা আল্লাহ ফায়স্বরূপ দিয়েছেন তাঁর রসূলের কাছে তাদের থেকে, তোমরা উহার ব্যাপারে দৌড়াওনি কোন ঘোড়া আর কোন উটও না। কিন্তু আল্লাহ ছাড়পত্র/ শক্তি দেন তাঁর রসূলদেরকে যার উপর তিনি ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬০:৭ :: আশা করা যায় আল্লাহ স্থাপন করে দেবেন তোমাদের ও তাদের মধ্যে যারা তোমাদের প্রতি শত্রুতা করেছে তাদের মধ্য থেকে, (স্থাপন করে দেবেনে) বন্ধুত্ব। আর আল্লাহ প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৬৪:১ :: আল্লাহর তাসবীহ/ পবিত্রতা প্রকাশ করছে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। তাঁরই আয়ত্তে মুলক/ আধিপত্য আর তাঁরই জন্য হামদ/ প্রশংসা। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬৫:৩ :: আর তিনি তাকে রিযিক দেবেন এমন স্থান/উৎস/উপায় থেকে, যা সে হিসাব/ ধারণাও করে না। আর যে তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে আল্লাহর উপর, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাজকে পরিপূর্ণতায় পৌঁছান। নিশ্চয় আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন সকল সত্তা ও বিষয়ের জন্য প্রাকৃতিক পরিমাপ।

৬৫:৭ :: যেন ইনফাক/ ব্যয় করে স্বচ্ছল ব্যক্তি তার স্বচ্ছলতা অনুযায়ী আর যাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেয়া হয়েছে তার রিযিক সে যেন ইনফাক/ ব্যয় করে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা অনুযায়ী। আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। আল্লাহ শীঘ্রই দিবেন কষ্টের পর সহজতা।

৬৫:১২ :: আল্লাহ সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আকাশ আর উহার অনুরূপ পৃথিবী। আমর/ আদেশ নাযিল হয় সেগুলোর মধ্যে, যেন তোমরা জান যে, আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬৬:৮ :: হে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ, তোমরা তাওবা কর আল্লাহর দিকে, তাওবাতুন নসূহা/ খাঁটি তাওবা। আশা করা যায় তোমাদের রব মোচন করে দেবেন তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দগুলো, আর তিনি তোমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। সেদিন আল্লাহ লাঞ্চিত করবেন না নবীকে আর তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তার সাথে। তাদের নূর/ আলো দৌড়াবে তাদের সামনে ও তাদের ডানে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য পূর্ণ করে দিন আমাদের নূরকে/ আলোকে, আর আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬৭:১ :: বড় বরকতময় সে সত্তা যাঁর হাতে মুলক/ আধিপত্য। তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬৮:২৫ :: আর তারা সকাল সকাল চলেছিল যেন তারা সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সক্ষম হয়।

৭০:৪ :: ঊর্ধ্বারোহন করবে মালায়েকা/ ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরীল) তাঁর দিকে এমন এক দিনে যার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর।

৭০:৪০ :: সুতরাং না। আমি কসম করি সূর্যোদয়স্থলসমূহের ও সূর্যাস্তসমূহের রবের। নিশ্চয় আমরা সক্ষম।

৭৩:২০ :: নিশ্চয় তোমার রব জানেন যে তুমি কিয়াম কর/ দাঁড়িয়ে থাক রাতের প্রায় তিনভাগের দুই ভাগ, আর (কখনো) উহার অর্ধেক, আর (কখনো) উহার তিনভাগের এক ভাগ। আর যারা তোমার সাথে আছে তাদের একটি দলও (অনুরূপ করে)। আর আল্লাহই প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করেন রাতকে ও দিনকে। তিনি জেনেছেন যে, তোমরা উহার নিখুঁত হিসাব রক্ষা করতে পারবে না। তারপর তাঁর দিকে তোমাদের ফিরে থাকাকে তিনি কবুল করেছেন। সুতরাং তোমরা পাঠ কর যতটুকু সহজসাধ্য হয় কুরআন থেকে। তিনি জেনেছেন যে, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ হবে অসুস্থ। আর অন্য অনেকে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করবে। আর অন্য অনেকে কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করবে। সুতরাং তোমরা পাঠ কর যতটুকু সহজসাধ্য হয় উহা থেকে (= কুরআন থেকে)। আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা কর। আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান কর। আর আল্লাহকে করজ/ ঋণ দাও, করজে হাসানা/ উত্তম ঋণ। আর যা তোমরা আগে পাঠাবে তোমাদের নিজেদেরই কল্যাণের জন্য উত্তম বিষয় থেকে, তোমরা উহাকে পাবে আল্লাহর কাছে। উহাই উত্তম আর প্রতিফল হিসাবেও মহিমান্বিত। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৭৪:১৮ :: নিশ্চয় সে ফিকির/ চিন্তাগবেষণা করেছে আর মূল্যায়নমূলক কথা নির্ধারণ করেছে।

৭৪:১৯ :: সুতরাং সে অপহত হোক! সে কিরূপ মূল্যায়নমূলক কথা নির্ধারণ করেছে?

৭৪:২০ :: আবার (বলি), সে অপহত হোক! সে সে কিরূপ মূল্যায়নমূলক কথা নির্ধারণ করেছে?

৭৫:৪ :: কেন নয়? আমরা তো তার আঙ্গুলসমূহের অগ্রভাগের রেখাসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।

৭৫:৪০ :: তিনি কি সক্ষম নন মৃতকে জীবিত করতে?

৭৬:১৬ :: রূপার স্বচ্ছ কাঁচ, তারা উহাকে (চাহিদাগত) প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো (পরিবেশন) করবে, যথাযথ নির্ধারণের মাধ্যমে।

৭৭:২০-২২ :: আমরা কি তোমাদেরকে সৃষ্টি করি নি তুচ্ছ পানি থেকে? তারপর আমরা তা স্থাপন করেছিলাম সংরক্ষিত স্থানের মধ্যে। একটি সুপরিজ্ঞাত বা জানা-বোঝার উপযোগী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত যথোপযোগী সময় পর্যন্ত।

৭৭:২৩ :: সুতরাং আমরা প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণে সক্ষম হয়েছিলাম। সুতরাং কত উত্তম ক্ষমতাবান প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী!

৮০:১৮-১৯ :: কী জিনিস থেকে তিনি তাকে (মানুষকে) সৃষ্টি করেছেন? এক ফোঁটা বীর্য থেকে। তিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তাকে প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

৮৬:৮ :: নিশ্চয় তিনি তার (মানুষের) প্রত্যাবর্তনে সক্ষম।

৮৭:৩ :: আর যিনি প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণ করেছেন, তারপর (তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ) পথনির্দেশ করেছেন।

৮৯:১৬ :: আর যখন তাকে পরীক্ষা করেন তার উপর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে তার রিযিককে/ জীবিকাকে, তখন সে বলে, ‘আমার রব আমাকে হেয় করেছেন’।

৯০:৫ :: সে কি হিসাব/ ধারণা করেছে যে, কেউ কখনো তার উপর নিয়ন্ত্রণকারী হবে না?

৯৭:১ :: নিশ্চয় আমি তা (কুরআন) নাজিল করেছি মূল্য (Value) নির্ধারণ করার রাতে।

৯৭:২ :: আর তোমাকে কিসে জানাবে মূল্য (Value) নির্ধারণ করার রাত কী?

৯৭:৩ :: মূল্য (Value) নির্ধারণ করার রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।

>>  পরবর্তী পৃষ্ঠায় যাওয়ার জন্য ক্লিক করুন