‘আল কুরআনের আলোকে বিবাহ’ বইটিতে বিবাহ সম্পর্কে কুরআনের নির্দেশনাসমূহ সংকলন করা হয়েছে। বিবাহ ব্যবস্থার কারণ, বিবাহের শর্তসমূহ, যেমন: বিবাহে বর কর্তৃক কনেকে মোহরানা দেয়ার বিধান, বিবাহের বয়স, রক্তসম্পর্ক, দুধসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কাদেরকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ, আন্তঃধর্মীয় বিয়ে প্রসঙ্গ, ইয়াতীম সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনে ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবাকে বিবাহের নির্দেশ, বিয়ের জন্য অর্থনৈতিক সামর্থ্যের শর্ত, বিবাহে অভিভাবকের ভূমিকা, একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শর্ত, বাস্তবসম্মত কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তাদের পুনর্বিবাহের ক্ষেত্রে শর্ত, দাস-দাসীর বিয়ের বিষয়ে অভিভাবকের দায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়ে কুরআনে পরিপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বইটি এসব নির্দেশনার সমন্বিত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে একটি তথ্য সহায়িকা হিসেবে কাজে আসবে বলে আশা করা যায়।
কুরআনে বিবাহকে মানব সভ্যতা বিনির্মাণের জন্য একটি মজবুত চুক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এবং ব্যভিচারকে তথা বিবাহ বহির্ভুত যৌন সম্পর্ককে দণ্ডযোগ্য সামাজিক অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই নর-নারীর পারস্পরিক সম্পর্কের সঙ্গত নিয়মাবলির আওতায় বিবাহ মানব জাতির জন্য একটি মৌলিক বিষয়। বিবাহের সঠিক নির্দেশনা পরিপালনের মাধ্যমেই বৈবাহিক সম্পর্কের সুষ্ঠু স্থিতিশীলতা বজায় থাকা সম্ভব। তাই বইটি সমাজ ও রাষ্ট্রে যুবশক্তির সচ্চরিত্র গঠনের নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং পরিবারভিত্তিক সমাজ কল্যাণ কর্মসূচীর ক্ষেত্রে অবদান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। তাই যে সকল যুবক-যুবতী বিয়ে করতে যাচ্ছেন ও যারা বৈবাহিক সম্পর্কে রয়েছেন এবং যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার ও সমাজ কল্যাণে ভূমিকা রাখতে আত্মনিয়োজিত রয়েছেন তাদের সকলের জন্য বইটি কাজে আসতে পারে।
কুরআনের আলোকে বিবাহের নির্দেশনার কিছু ক্ষেত্রে কুরআন পাঠকদের মধ্যে উপলব্ধিগত ভিন্নতা ও অনিচ্ছাকৃত ভুল থাকা অসম্ভব নয়। এমতাবস্থায় বইটিতে প্রাসঙ্গিক তথ্য নিয়ে যেভাবে আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে কুরআনের আয়াত দ্বারা বিভিন্ন উপায়ে যাচাই করে তাতে কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
১. প্রাণীজগতে সহজাত জৈবিক প্রবৃত্তি ও প্রজনন প্রক্রিয়ার জন্য বিপরীত লিঙ্গের সম্মেলন একটি প্রকৃতিগত বাস্তবতা। পশু প্রকৃতি ও মানবপ্রকৃতির মধ্যে পার্থক্যের ভিত্তিতে মানবসভ্যতা গঠনের জন্য কোনো নারী-পুরুষ নিজেদেরকে পারস্পরিক নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সামাজিক স্বীকৃতিমূলক চুক্তির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যে চুক্তির মাধ্যমে দুজন নারী-পুরুষ স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিবার গঠন করে তাকে বিয়ে বলে। আর পরিবারই মানব সভ্যতার মৌলিক ইউনিট। কুরআনের আলোকে বিয়ে হতে হবে একটি ‘মজবুত চুক্তি’।
২. বিয়ে ছাড়া দুজন নারী-পুরুষের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে কোনো যৌনসম্পর্ক তৈরি হলে তাকে ‘ব্যভিচার’ বলা হয়। কুরআনে ব্যভিচারকে অত্যন্ত নিকৃষ্ট অশ্লীলতা এবং রাষ্ট্র কর্তৃক দণ্ডযোগ্য সামাজিক অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।
৩. বিয়ের একটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো মানুষকে নর-নারী দুটি ভিন্ন শ্রেণিতে সৃষ্টি করার প্রেক্ষিতে তারা পরস্পরের পরিপূরক ও সহযোগী হয়ে পরস্পরের নিকট থেকে শান্তি ও ভালবাসা লাভ করা। এছাড়া বিয়ের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হলো মানব বংশধারা অব্যাহত রাখা। তাই নীতিগতভাবে বিয়ে না করার নীতি গ্রহণ করার অবকাশ নেই, কিন্তু যদি কেউ নীতিগতভাবে বিয়ের নীতিকে গ্রহণ করা সত্ত্বেও কোনো কারণে নিজে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকে তবে তা দোষনীয় নয়।
৪. পরিবার গঠনের মাধ্যমেই মানুষের মধ্যে রক্তসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পরিবারে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, পুত্র-কন্যা প্রমুখের প্রথম নিরাপদ আশ্রয় তৈরি হয়। মানুষের সেবা-যত্ন ও সুষ্ঠু বিকাশের সুযোগ লাভের জন্য পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. বিয়ের জন্য বর-কনের উপযুক্ত বয়স হতে হবে। কুরআনে বিয়ের জন্য বয়ঃসন্ধিকাল পরবর্তী স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়স তথা যৌবনকালে উপনীত হওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিয়ের জন্য শুধু যুবক হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং সম্পদের সঙ্গত ব্যবস্থাপনার বোধবুদ্ধিরও উন্মেষ ঘটতে হবে। সুতরাং কুরআনের আলোকে বাল্যবিবাহ বৈধ নয়। তবে যদি কোনোক্রমে বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয় সেক্ষেত্রে তা বহাল রাখা না রাখার বিষয়ে অভিভাবকদেরকে বাস্তবসম্মত কল্যাণের বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৬. ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের সমস্যার সমাধানকল্পে একটি নির্দেশনা হলো প্রয়োজনসাপেক্ষে ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবা নারীদেরকে বিয়ে করার মাধ্যমে ইয়াতীম ছেলেমেয়েকে নিজের ছেলেমেয়ে বানিয়ে নেয়া। কেউ কেউ এ সম্পর্কিত আয়াতটিতে ইয়াতীম মেয়েকে বিয়ের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে ভুল ধারণা পোষণ করে। কিন্তু এ বিষয়ক আয়াতসমূহের সমন্বিত অধ্যয়ন থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এতে ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবা নারীদেরকে বিবাহের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ইয়াতীম মেয়েদেরকে নয়।
৭. সমাজে প্রচলিত একটি ভুল কথা হলো: বিয়ের সময় নবীপত্নী আয়েশার বিয়ে হয়েছিল ছয় বছর বয়সে এবং বাসর হয়েছিল নয় বছর বয়সে। কিন্তু এ ধারণাটি যে বর্ণনাসূত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তার একজন বর্ণনাকারীর স্মৃতিশক্তিগত সমস্যা ছিল বলে অভিযোগ আছে। এমতাবস্থায় সে বয়স উল্লেখের ক্ষেত্রে ভুল করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন হিসাব থেকে তাঁর বয়স বিয়ের সময় ষোল বছর এবং বাসরের সময় উনিশ বছর ছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়, অবশ্য এক্ষেত্রেও বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। তবে যেহেতু কুরআন অনুযায়ী বাল্যবিয়ের অবকাশ নেই, তাই বিয়ের সময় তিনি যে একজন তরুণি ছিলেন এতে সন্দেহর অবকাশ নেই।
৮. বিয়ের জন্য শারীরিক ও মানসিক শক্তিসামর্থ্যের পাশাপাশি পুরুষদের ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্যও থাকতে হবে। কারণ তাকে বিয়ের শর্ত হিসেবে মোহরানা পরিশোধ করা ছাড়াও পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর্থিক সামর্থ্য অর্জিত হওয়ার আগে বিয়ে থেকে বিরত থাকতে হবে এবং একইসাথে চারিত্রিক সংযমও বজায় রাখতে হবে।
৯. কুরআনে পরিপূর্ণভাবে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম (নিষিদ্ধ) তাদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে উল্লেখিত তালিকার বাহিরে যে কাউকে বিয়ে করা বৈধ।
১০. বিয়ে হতে হবে স্থায়ী দাম্পত্য সম্পর্কের অভিপ্রায়সম্পন্ন চুক্তি। তাই ‘মুতয়া’ নামক ‘সাময়িক বিয়ে’ কুরআন অনুযায়ী অবৈধ।
১১. বিয়ে গোপনীয় রাখা যাবে না, বিয়ের জন্য দুইজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রাখতে হবে। বিয়ে রেজিস্ট্রি করা স্বামী-স্ত্রী এবং সমাজের জন্য বিভিন্নভাবে কল্যাণকর হয়ে থাকে।
১২. অভিভাবক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের একটি কর্তব্য হলো যাদের বিয়ে হচ্ছে না এমন অবিবাহিত নারী-পুরুষ, বিধবা ও বিপত্নীক এবং তালাকপ্রাপ্তাদের বিয়ের ব্যবস্থা করা এবং প্রয়োজনে অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদান করা। বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের কল্যাণকর ভূমিকা পালনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তবে পাত্র-পাত্রীর পারস্পরিক পছন্দ ছাড়া বিয়ে সম্পাদন উচিত নয়। কোনোক্রমে এরূপ বিয়ে সম্পাদন হলে সে বিয়ে বজায় রাখা না রাখার বিষয়ে বাস্তবসম্মত কল্যাণকর দিকগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
১৩. বিয়ের একটি শর্ত হলো পাত্র কর্তৃক পাত্রীর জন্য আবশ্যিক মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে এবং তা আদায় করতে হবে। তবে মোহরানা নির্ধারণের পরে স্বামী-স্ত্রীর যৌথসম্মতিক্রমে এর মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধি করা দোষনীয় নয়।মোহরানার পরিমাণ পাত্রের আর্থিক সামর্থ্যের বিবেচনায় নির্ধারণ করা উচিত। মোহরানার পরিমাণের একটি মডেল হলো ‘স্বামীর আট বছরের উপার্জন থেকে অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় পরবর্তী উদ্বৃত্তের সমমূল্যের মোহরানা’।
১৪. নারীর বহুবিবাহ করার অবকাশ নেই, কিন্তু পুরুষদের জন্য বাস্তবসম্মত কারণে বহুবিবাহকে বৈধ করা হয়েছে। বহুবিবাহের ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত হলো স্ত্রীদের মধ্যে যথাসাধ্য ইনসাফ করতে হবে।
১৫. তালাকপ্রাপ্তা ও বিধবারা পুনর্বিবাহ করার ক্ষেত্রে তাদের ইদ্দাত (অপেক্ষার জন্য বিধিবদ্ধ সময়কাল) অতিবাহিত হতে হবে। এরপর তারা নিজেদের বিষয়ে যে সঙ্গত সিদ্ধান্ত নিবে তাতে অন্যরা বাধা দেয়া উচিত নয়।
১৬. কিছু অসাধু ফতোয়াবাজদের মাধ্যমে তালাকপ্রাপ্তা নারীদের ক্ষেত্রে ‘হিল্লা বিয়ে’ নামে যে কুপ্রথার উদ্ভব ঘটেছিল, কুরআনের আলোকে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
১৭. কুরআনে দাসীদেরকে ব্যাপকভাবে ‘মা মালাকাত আইমান’ (নিরাপত্তা প্রদায়ক চুক্তির হস্ত বা ডানহাতের আশ্রিতা) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো দাসীকে বিয়ের ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের তথা সে যার আশ্রিতা তার অনুমতিক্রমে বিয়ে করতে হবে। কোনো দাসীর সাথে তাকে বিয়ে করা ছাড়া দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করা বৈধ নয়। কোনো দাসী অন্যের অধীনস্থ হোক বা নিজের অধীনস্থ হোক উভয় অবস্থায় তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিয়ের কোনো বিকল্প নেই, কোনো দাসীকেও উপপত্নী বা নিছক প্রণয়িনী বানানো যাবে না।
وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ أُولَـٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ
২:২২১ :: আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং নিশ্চয় মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর (তোমাদের নারীদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে করাবে না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর নিশ্চয় একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে, আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহবান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَٰلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
২:২২৮ :: তালাকপ্রাপ্তা নারীরা তিন কুরু (অর্থাৎ তিনটি পূর্ণ সময়ান্ত হায়েজ) পর্যন্ত প্রতীক্ষা করবে। আর যদি তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে তাহলে আল্লাহ তাদের গর্ভে যা সৃষ্টি করেছেন তা গোপন করা তাদের পক্ষে বৈধ নয়। তাদের স্বামীরা যদি সংশোধনের ইচ্ছা করে তাহলে তারা উক্ত সময়ের মধ্যে তাদেরকে দাম্পত্য সম্পর্কে ফিরিয়ে নেয়ার অধিক হকদার। আর নারীদের অধিকার রয়েছে যেমন তাদের উপর পুরুষদের অধিকার রয়েছে। আর নারীদের উপর পুরুষদের (অধিকার ও পদমর্যাদাগত) উচ্চমান রয়েছে। আর আল্লাহ মহাশক্তিমান ও মহাবিজ্ঞ।
الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
২:২২৯ :: তালাক দুই দফা, তারপর (এ দুইবারের প্রত্যেক বারের পর তোমাদের জন্য সুযোগ আছে যে) তোমরা স্বীয় স্ত্রীদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে রেখে দিবে অথবা উত্তম আচরণের সাথে বিদায় দিবে। আর তোমরা তাদেরকে মোহরানা বাবদ যা কিছু দিয়েছো তা থেকে কিছু ফেরত নেয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে যে, যদি স্বামী স্ত্রী উভয়ে আল্লাহর সীমাসমূহ রক্ষা করতে পারবে না বলে আশংকা করে তখন যদি তোমরাও আশংকা করো যে তারা উভয়ে (যৌথভাবে) আল্লাহর সীমাসমূহ রক্ষা করতে পারবে না, তখন স্ত্রী (তালাক সংঘটনের জন্য) দেনমোহরের কোনো অংশ ফিদইয়াস্বরূপ ফিরিয়ে দিলে তাতে তাদের উভয়ের জন্য কোনো দোষ নেই। এগুলো আল্লাহর সীমা, তোমরা তা লংঘন করো না। আর যারা আল্লাহর সীমা লংঘন করে তারাই জালিম।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
২:২৩০ :: অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয় তাহলে এরপরে (অর্থাৎ তৃতীয়বার তালাকের পরে) সে নারী তার জন্য বৈধ হবে না, যতক্ষণ না সে নারী অন্য কাউকে বিয়ে করে এবং সে (অর্থাৎ পরবর্তী স্বামী) তাকে তালাক দেয়। তখন যদি তারা দুজন (অর্থাৎ নারীটি এবং তাকে পূর্বে তালাক দেয়া স্বামী) আল্লাহর সীমাসমূহ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে বলে ধারণা করে তবে তারা পুনরায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়াতে তাদের দুজনের কোনো গুনাহ হবে না। এগুলো আল্লাহর সীমা। তিনি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَلَا تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوا وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ وَلَا تَتَّخِذُوا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُم بِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
২:২৩১ :: যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও (প্রথমবার বা দ্বিতীয়বার) এবং তারা তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন হয় তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে রেখে দাও, না হয় ন্যায়সঙ্গতভাবে বিদায় দাও। আর তাদেরকে যাতনা দেয়ার উদ্দেশ্যে ফিরিয়ে নিয়ে আটকে রেখো না। কেননা এতে বাড়াবাড়ি করা হয়। আর যে এরূপ করে সে অবশ্যই তার নিজ সত্তার প্রতিই জুলুম করে। আর তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে হাসি তামাশার বিষয় হিসাবে গ্রহণ করো না। আর তোমরা স্মরণ রেখো আল্লাহ তোমাদের উপর যে অনুগ্রহ করেছেন তা এবং তিনি কিতাব ও হিকমাত থেকে তোমাদের উপর যা নাজিল করেছেন তা। তিনি তা দ্বারা তোমাদেরকে উপদেশ দেন। আর তোমরা আল্লাহ সচেতন হও। আর নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞানী।
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ ذَٰلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ مِنكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَٰلِكُمْ أَزْكَىٰ لَكُمْ وَأَطْهَرُ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২:২৩২ :: আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও তারপর তারা তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে, তখন তোমরা তাদেরকে তাদের (প্রস্তাবিত) স্বামীকে বিবাহ করতে বাধা দিও না, যখন তারা পরস্পরে ন্যায়সঙ্গতভাবে সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হয়। এ উপদেশ তাকে দেয়া হচ্ছে তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। এটাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও সবচেয়ে পবিত্র নিয়ম। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।
وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَٰلِكَ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَن تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا وَإِنْ أَرَدتُّمْ أَن تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُم مَّا آتَيْتُم بِالْمَعْرُوفِ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
২:২৩৩ :: যে পিতা ইচ্ছা রাখে যে, তার সন্তান পূর্ণ মেয়াদ দুধ পান করুক, সেক্ষেত্রে মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর দুধপান করাবে। এ অবস্থায় পিতার দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে জীবিকা ও পোশাকাদি দিতে থাকবে। আর কারো প্রতি তার সামর্থ্য ব্যতীত বোঝা চাপানো যাবে না। মাকেও এ প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না যে, সন্তান তারই; আর পিতাকেও এ প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না যে, সন্তান তারই। আর দুধপান করানো মায়ের এ অধিকার যেমন সন্তানের পিতার উপর তেমনি সমান পরিমাণে তার ওয়ারিসদের উপরও বর্তাবে। তারপর যদি (পিতা-মাতা) উভয়ে পারস্পরিক সম্মতি ও পরামর্শক্রমে (পূর্ণ মেয়াদের পূর্বে) সন্তানকে দুধ ছাড়াতে ইচ্ছা করে তাহলে তাতে তাদের কারো গুনাহ নেই। আর যদি তোমরা ইচ্ছা করো যে, তোমরা অন্য কোনো নারী দ্বারা তোমাদের সন্তানদেরকে দুধপান করাবে তাহলে তোমরা তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে খরচাদি দিয়ে তার হাতে অর্পণ করা সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে এতে তোমাদের গুনাহ নেই। আর আল্লাহ সচেতন হও। আর নিশ্চয় তোমরা যা করো আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
২:২৩৪ :: তোমাদের মধ্য হতে যারা স্ত্রীদেরকে রেখে মারা যাবে সে অবস্থায় স্ত্রীরা নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় রাখবে। তারপর যখন তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌছে, তখন তারা নিজেদের সম্বন্ধে ন্যায়সঙ্গতভাবে যা করবে তাতে তোমাদের কোনো গুনাহ নেই। আর তোমরা যা কিছু করছ, আল্লাহ সে বিষয়ে পরিজ্ঞাত।
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَـٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ
২:২৩৫ :: আর তোমরা (বিধবা) নারীদের বিয়ে প্রসঙ্গে তোমাদের কথাবার্তায় যা (যে ইচ্ছা) প্রকাশ করো বা নিজেদের মনে তা গোপন রাখো সে বিষয়ে তোমাদের উপর গুনাহ নেই। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা তোমাদের আলোচনায় তাদের বিষয় রাখবে। কিন্তু তোমরা তাদেরকে গোপনে ওয়াদা দিও না। কিন্তু তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের সাথে কথা বলতে পারবে। আর যতক্ষণ না বিধিবদ্ধ বিষয় (অর্থাৎ ইদ্দাত) তার শেষ সীমায় পৌছে ততক্ষণ তোমরা বিয়ের সিদ্ধান্ত করো না। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের মনে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তোমার তাঁর প্রতি সচেতন থেকো। আর জেনে রাখ যে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও সহনশীল।
لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ
২:২৩৬ :: যদি (বিশেষ কোনো কারণে) তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করার আগে এবং মোহরানা ধার্য করার আগে তালাক দাও তাতে তোমাদের গুনাহ নেই। তবে এ অবস্থায় তোমাদের তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিতে হবে। স্বচ্ছল তার সাধ্যমতো এবং অস্বচ্ছল তার সাধ্যমতো। ন্যায়সঙ্গত ভোগসামগ্রী। এটা উত্তম আচরণকারীদের উপর একটি দায়িত্ব।
وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ وَأَن تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ وَلَا تَنسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
২:২৩৭ :: আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও তাদেরকে স্পর্শ করার আগে আর তাদের জন্য মোহরানা ধার্য করার পরে তাহলে ধার্যকৃত দেনমোহরের অর্ধেক তাদেরকে দিতে হবে। কিন্তু যদি স্ত্রী অনুগ্রহ করে (অর্থাৎ কম নেয়) অথবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন (অর্থাৎ স্বামী বা তালাক বিভাগের কর্মকর্তা বা আইনগত অভিভাবক) সে যদি অনুগ্রহ করে তা ভিন্ন কথা। অবশ্য তোমরা (অর্থাৎ পুরুষরা) অনুগ্রহ করলে (অর্থাৎ বেশি বা পূর্ণ পরিমাণ দিলে) তা আল্লাহ সচেতনতার নিকটতর। আর তোমরা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহপূর্ণ আচরণ করতে ভুলে যেও না। নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
৪:১ :: হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্স থেকে। আর তা থেকে (তার সমজাতীয় উপাদান থেকে) সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন থাকো, যাঁর দোহাই দিয়ে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাকো এবং রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়তার প্রতিও সচেতন থাকো। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।
وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا
৪:২ :: আর তোমরা ইয়াতীম ছেলেমেয়েদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও এবং তোমরা মন্দ বস্তুকে ভালো বস্তু দ্বারা বদল করে নিও না(১) আর তোমাদের সম্পদের সাথে মিলিয়ে তাদের সম্পদ ভক্ষণ করো না। নিশ্চয় তা মহাপাপ।
(১) তোমাদের মন্দ বস্তু তাদের জন্য রেখে তার বদলে তাদের ভালো বস্তু নিয়ে নিও না।
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا
৪:৩ :: আর যদি তোমরা ভয় করো যে, তোমরা ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে বিয়ে করে নাও (ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা) নারীদের মধ্য থেকে যে তোমাদের জন্য পছন্দনীয় হয়, দুই-দুই এবং তিন-তিন এবং চার-চার। তবে যদি তোমরা ভয় করো যে, তোমরা আদল (ইনসাফ / সমানাধিকার প্রদান) করতে পারবে না, তাহলে একজনকেই বিয়ে করো অথবা তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে এরূপ নারীদেরকে। এটাই তোমরা অবিচার না করার নিকটবর্তী।
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
৪:৪ :: আর তোমরা স্বত:স্ফূর্তভাবে নারীদেরকে তাদের সদুক্বাত (বৈবাহিক উপহার বা মোহরানা) দিয়ে দাও। তবে যদি তারা তা থেকে কিছু অংশ তোমাদের জন্য সন্তুষ্টচিত্তে ছেড়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা পরিতৃপ্তির সাথে স্বাচ্ছন্দে খেতে পারো।
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
৪:৫ :: আর তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের সম্পদ প্রত্যর্পণ করো না, যেটাকে আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রতিষ্ঠা (জীবনে প্রতিষ্ঠিত থাকার উপকরণ) বানিয়েছেন। আর তোমরা তাদেরকে তার মধ্যে (সম্পদের সুষম ব্যবস্থাপনার মধ্যে) জীবিকা সরবরাহ করো এবং পোশাকাদি প্রদান করো। এবং তোমরা তাদের সাথে ন্যায়সঙ্গত কথা বলো।
وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَن يَكْبَرُوا وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا
৪:৬ :: আর ইয়াতীম ছেলেমেয়েদেরকে পরীক্ষা করো যখন তারা বিয়ে করার বয়সে পৌঁছে যায়। তারপর যদি তোমরা তাদের মধ্যে সঠিক বোধবুদ্ধি (সম্পদের সঙ্গত ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা) অনুভব করো তাহলে তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দাও। আর তোমরা তাদের সম্পদ খেয়ো না অপচয় করে এবং তারা বড় হওয়ার আগে তাড়াহুড়া করে। আর যে ধনী সে যেন সংযত থাকে, আর যে দরিদ্র সে যেন ন্যায়সঙ্গতভাবে খায়। অতঃপর যখন তোমরা তাদের ধন-সম্পদ তাদের নিকট সোপর্দ করবে তখন তাদের উপর তোমরা সাক্ষী রাখবে। আর হিসাব গ্রহণকারী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
৪:১৯ :: হে মু’মিনগণ, তোমাদের জন্য বলপ্রয়োগপূর্বক নারীদের ওয়ারিস হওয়া বৈধ নয়। আর তোমরা তাদেরকে (মোহরানা বাবদ) যা দিয়েছো তার কোনো অংশ কেড়ে নেয়ার জন্য তাদেরকে (সামাজিক কর্মকান্ডে) বাধা দিও না। কিন্তু তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় জড়িত হলে (বাধা দিতে ও দেনমোহরের অংশবিশেষ ফেরত নিয়ে তালাক দিতে পারবে)। আর তোমরা তাদের সাথে জীবন যাপন করো ন্যায়নীতি অনুযায়ী। যদি তোমরা কোনো কারণে তাদেরকে অপছন্দ কর, তাহলে হতে পারে যে, তোমরা অপছন্দ করছো এক সত্তাকে (অর্থাৎ নিজের স্ত্রীকে) অথচ আল্লাহ রেখেছেন তার মধ্যে অনেক কল্যাণ। (অর্থাৎ কোনো স্ত্রীর একটি বিষয় অপছন্দের হলেও সামগ্রিকভাবে তার মধ্যে অনেক কল্যাণ থাকা সম্ভব)।
وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
৪:২০ :: আর যদি তোমরা আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তার বদলে অন্য স্ত্রী পেতে চাও, সেক্ষেত্রে তোমরা তাদের একজনকে (তথা আগের স্ত্রীকে) অঢেল সম্পদ দিয়ে থাকলেও তা থেকে কিছুই ফেরত নিও না। তোমরা কি গ্রহণ করবে (তথা ফিরিয়ে নিবে) অপবাদ দিয়ে আর স্পষ্ট পাপে জড়িত হয়ে?
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَىٰ بَعْضُكُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا
৪:২১ :: আর তোমরা তা কিরূপে ফেরত নিবে অথচ তোমরা একে অন্যের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছো? আর তারা তোমাদের থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।
وَلَا تَنكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا
৪:২২ :: আর তোমরা বিবাহ করো না নারীদের মধ্য থেকে যাদেরকে বিবাহ করেছে তোমাদের বাপদাদাগণ। যা অতীতে হয়ে গেছে তা ভিন্ন। নিশ্চয় তা হল অশ্লীলতা ও ঘৃণিত বিষয় এবং নিকৃষ্ট পথ।
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
৪:২৩ :: তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিঝিদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের অভিভাবকত্বে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাকো তবে তোমাদের উপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে। এবং দুই বোনকে একত্র করা, যা অতীতে হয়ে গেছে তা ভিন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
৪:২৪ :: আর (হারাম করা হয়েছে) নারীদের মধ্য থেকে সধবাদেরকে, তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তারা ছাড়া। এটি তোমাদের উপর আল্লাহর বিধান। এবং এরা ছাড়া সকল নারীকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের অর্থের বিনিময়ে তাদেরকে অন্বেষণ করবে বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিত হিসেবে, নিছক/সাময়িক যৌনসঙ্গিনী গ্রহণকারী হিসেবে নয়। সুতরাং তোমরা (বিয়ের মাধ্যমে) তাদের থেকে যা উপভোগ করবে তার বিনিময়ে তাদেরকে তাদের আবশ্যিক নির্ধারিত পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করো। আর (মোহরানা) নির্ধারণের পর যা (কমবেশি করার) বিষয়ে তোমরা পরস্পর সম্মত হবে তাতে তোমাদের উপর কোনো অপরাধ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
وَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنكُمْ طَوْلًا أَن يَنكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُم مِّن فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِكُم بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ فَإِذَا أُحْصِنَّ فَإِنْ أَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ الْعَنَتَ مِنكُمْ وَأَن تَصْبِرُوا خَيْرٌ لَّكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
৪:২৫ :: আর তোমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি স্বাধীনা (অবিবাহিতা/তালাকপ্রাপ্তা/বিধবা) মুমিন নারীদেরকে বিবাহ করার সামর্থ্য রাখে না, তাহলে (সে বিবাহ করবে) তোমাদের মুমিন যুবতীদের মধ্য থেকে তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডান হাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তাদের কাউকে। আর আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত। (বিশ্বাসগত অবস্থানে) তোমরা একে অন্যের সম পর্যায়ে রয়েছেো। সুতরাং তোমরা তাদেরকে বিবাহ করো তাদের অভিভাবকের (আহলের) অনুমতিক্রমে এবং তাদেরকে তাদের পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করো ন্যায়সঙ্গতভাবে, বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিতা হিসেবে, নিছক / সাময়িক যৌনসঙ্গী গ্রহণকারিনী হিসেবে নয় এবং উপপতি গ্রহণকারিনী (উপপত্নী / গোপন প্রেমিকা) হিসেবে নয়। সুতরাং যখন তারা (বিবাহের মাধ্যমে) বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিতা/স্বাধীনা হয়, তারপর যদি কোনো অশ্লীল কাজ করে, তাহলে তাদের উপর শাস্তি প্রযোজ্য হবে স্বাধীনা নারীদের উপর প্রযোজ্য শাস্তির অর্ধেক। উহা (স্বাধীনা নারী বা অন্যের অধীনস্থ নারীর মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে বিবাহ করার সামর্থ্য অর্জনের আগে শুধু অন্যের অধীনস্থ নারীকে বিবাহের সামর্থ্য থাকা অবস্থায় তাকে বিবাহ করার ব্যবস্থা) তার জন্য, তোমাদের মধ্য থেকে যে আত্মসংযম হারানোর ভয় করে। কিন্তু যদি তোমরা সবর করো, তা-ই তোমাদের জন্য উত্তম। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল,দয়ালু।
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
৪:৩৪ :: পুরুষরা নারীদের উপর সামগ্রিক দায়িত্বশীল। এজন্য যে আল্লাহ তাদের এককে অন্যের উপর বিশিষ্টতা দিয়েছেন এবং এজন্য যে পুরুষরা তাদের সম্পদ থেকে (নারীদের জন্য) ব্যয় করে। সুতরাং সৎকর্মশীলা নারীরা বিনয়ী হয় এবং আল্লাহর হেফাজতের আওতায় অদৃশ্যে থাকা বিষয়ের (স্বীয় সতীত্ব ও সন্তানের পিতৃপরিচয়গত বিষয়ের) সংরক্ষণকারিনী হয়। আর যাদের ব্যাপারে তোমরা আশংকা করো যে, তারা দাম্পত্য চুক্তি লংঘন করছে, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে বিছানায় পরিত্যাগ করো এবং তাদেরকে (বিছানায় একা রেখে দেয়া থেকে) ভিন্ন অবস্থায় বের করে আনো (অর্থাৎ সম্পর্ককে স্বাভাবিকতায় ফিরিয়ে আনো) / তাদেরকে (সমাধানে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের) সামনে উপস্থাপন কর। তারপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে, তাহলে তোমরা তাদের বিপক্ষে অন্য কোনো ব্যবস্থা তালাশ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত, সর্বশ্রেষ্ঠ।
وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ وَمَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ فِي يَتَامَى النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا تُؤْتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُونَ أَن تَنكِحُوهُنَّ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَأَن تَقُومُوا لِلْيَتَامَىٰ بِالْقِسْطِ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِهِ عَلِيمًا
৪:১২৭ :: তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায় (ইয়াতীম ছেলেমেয়ে আছে এমন) নারীদের বিষয়ে। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বিষয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন। আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) যা তোমাদের কাছে এই কিতাবে আবৃত্তি করা হচ্ছে, ঐ বিধবা নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের বিষয়ে, যাদেরকে (ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের যে মায়েদেরকে) তোমরা তা দিচ্ছো না যা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকার হিসেবে, অথচ তোমরা আগ্রহ করছো তাদেরকে বিবাহ করতে। আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) দুর্বল শিশুদের বিষয়ে। আর তোমরা কার্যনির্বাহে প্রতিষ্ঠিত থাকো ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের বিষয়ে ন্যায়বিচারের সাথে। আর কল্যাণকর কাজ থেকে তোমরা যা-ই করো নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।
وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا وَالصُّلْحُ خَيْرٌ وَأُحْضِرَتِ الْأَنفُسُ الشُّحَّ وَإِن تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
৪:১২৮ :: আর যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর পক্ষ থেকে দাম্পত্য চুক্তি লংঘনের (অর্থাৎ ইনসাফপূর্ণ আচরণে ব্যত্যয় ঘটার) অথবা উপেক্ষার আশংকা করে তাহলে তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়ে নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিলে তাদের দুজনের কোনো গুনাহ হবে না। আর মীমাংসাই উত্তম। আর মানবমনে সংকীর্ণতা বিদ্যমান রয়েছে। আর যদি তোমরা উত্তম কাজ করো ও আল্লাহ সচেতনতা অবলম্বন কর তবে তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা সম্যক অবগত।
وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ وَإِن تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
৪:১২৯ :: আর তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে হুবহু আদল (ইনসাফ) করতে সক্ষম হবে না যদিও তোমরা প্রয়াস পাও। সুতরাং তোমরা কারো দিকে সম্পূর্ণ ঝুঁকে পড়ো না যার ফলে তাকে (অর্থাৎ অন্য স্ত্রীকে) ঝুলন্ত অবস্থার মতো রাখা হয়। আর যদি তোমরা আত্মসংশোধন করো এবং আল্লাহ সচেতনতা অবলম্বন করো তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল।
الْيَوْمَ أُحِلَّ لَكُمُ الطَّيِّبَاتُ وَطَعَامُ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حِلٌّ لَّكُمْ وَطَعَامُكُمْ حِلٌّ لَّهُمْ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ مُحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ وَمَن يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
৫:৫ :: আজ তোমাদের জন্য পরিচ্ছন্ন জিনিসসমূহকে হালাল করা হলো। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং মু’মিনদের মধ্যকার সচ্চরিত্রা নারীদেরকে এবং যাদেরকে তোমাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যকার সচ্চরিত্রা মেয়েদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো; যখন তোমরা তাদেরকে তাদের পারতোষিক (মোহরানা) প্রদান করো, বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিত হিসেবে, নিছক/সাময়িক যৌনসঙ্গিনী গ্রহণকারী হিসেবে নয় এবং উপপত্নী গ্রহণকারী হিসেবেও নয়। আর যে ব্যক্তি ঈমানের প্রতি কুফর করে, নিশ্চয় তার কর্মসমূহ বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ فَلَمَّا أَثْقَلَت دَّعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ
৭:১৮৯ :: তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক ব্যক্তি থেকে এবং তার থেকে বানিয়েছেন তার সঙ্গিনীকে, যাতে সে তার নিকট প্রশান্তি লাভ করে। অতঃপর যখন সে তার সঙ্গিনীর সাথে মিলিত হলো, তখন সে হালকা গর্ভ ধারণ করলো এবং তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকলো। অতঃপর যখন সে ভারী হলো, তখন উভয়ে তাদের প্রভুকে আল্লাহকে ডাকল, ‘যদি আপনি আমাদেরকে সুসন্তান দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো’।
الزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوْ مُشْرِكَةً وَالزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَا إِلَّا زَانٍ أَوْ مُشْرِكٌ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
২৪:৩ :: ব্যভিচারী বিয়ে করবে না ব্যভিচারিনীকে বা মুশরিক নারীকে ছাড়া। আর ব্যভিচারিনীকে বিবাহ করবে না ব্যভিচারী বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া। আর এদেরকে মু’মিনদের উপর হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে।
الْخَبِيثَاتُ لِلْخَبِيثِينَ وَالْخَبِيثُونَ لِلْخَبِيثَاتِ وَالطَّيِّبَاتُ لِلطَّيِّبِينَ وَالطَّيِّبُونَ لِلطَّيِّبَاتِ أُولَـٰئِكَ مُبَرَّءُونَ مِمَّا يَقُولُونَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
২৪:২৬ :: দুশ্চরিত্রা নারী দুষ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং দুষ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী। এবং সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী। তারা (অপবাদদাতারা) যা বলে তা থেকে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।
وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ وَالصَّالِحِينَ مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمَائِكُمْ إِن يَكُونُوا فُقَرَاءَ يُغْنِهِمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
২৪:৩২ :: আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও তোমাদের সমাজস্থ দাস-দাসীদের মধ্যকার সৎকর্মশীলদেরকে বিয়ে করাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী।
وَلْيَسْتَعْفِفِ الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ نِكَاحًا حَتَّىٰ يُغْنِيَهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَالَّذِينَ يَبْتَغُونَ الْكِتَابَ مِمَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ فَكَاتِبُوهُمْ إِنْ عَلِمْتُمْ فِيهِمْ خَيْرًا وَآتُوهُم مِّن مَّالِ اللَّهِ الَّذِي آتَاكُمْ وَلَا تُكْرِهُوا فَتَيَاتِكُمْ عَلَى الْبِغَاءِ إِنْ أَرَدْنَ تَحَصُّنًا لِّتَبْتَغُوا عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَن يُكْرِههُّنَّ فَإِنَّ اللَّهَ مِن بَعْدِ إِكْرَاهِهِنَّ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
২৪:৩৩ :: আর যাদের বিবাহের সামর্থ্য নেই আল্লাহ তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে অভাবমুক্ত না করা পর্যন্ত তারা যেন সংযম অবলম্বন করে। আর তোমাদের (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবক-সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে, তাদের মধ্যে যারা চুক্তিপত্র সন্ধান করে, তাদেরকে চুক্তিপত্রের ব্যবস্থা করে দাও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে কল্যাণ আছে বলে জানতে পারো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে যে সম্পদ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা তাদেরকে দাও। আর তোমাদের যুবতীদেরকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করো না। যদি তারা বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিতা হতে চায় (তাহলে তাদের বিয়ের ব্যবস্থা না করা সঙ্গত নয়)। (তাদেরকে পতিতা হতে বাধ্য করো না) পার্থিব জীবনের স্বার্থ তালাশের জন্য। আর যাদেরকে (যে যুবতীদেরকে) বাধ্য করা হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে (সেই যুবতীদেরকে) বাধ্য করার পর (সেই যুবতীদের প্রতি) ক্ষমাশীল, দয়ালু।
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
২৪:৫৯ :: যখন তোমাদের শিশু-কিশোররা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে, তখন (তোমাদের ব্যক্তিগত কক্ষে যাতায়াতের ক্ষেত্রে) তারা যেন অনুমতি চায়, যেভাবে অনুমতি চায় যেভাবে অনুমতি চায় যারা তাদের পূর্ববর্তী / বয়ঃজ্যেষ্ঠ। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَن يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَن يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَّهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
২৪:৬০ :: আর নারীদের মধ্য থেকে যারা যৌবন অতিক্রম করে বসে পড়েছে, যারা বিবাহের আশা রাখে না (অর্থাৎ বৃদ্ধা নারী), তারা সৌন্দর্য প্রদর্শনকারিনী না হয়ে তাদের বাড়তি পোশাক সরিয়ে রাখলে তাতে তাদের উপর দোষ নেই। আর তারা সংযত থাকাই তাদের জন্য কল্যাণকর। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ مِنَ الْمَاءِ بَشَرًا فَجَعَلَهُ نَسَبًا وَصِهْرًا وَكَانَ رَبُّكَ قَدِيرًا
২৫:৫৪ :: আর তিনিই পানি থেকে মানুষ সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তাকে বংশগত ও বৈবাহিক সম্পর্কযুক্ত করেছেন। আর তোমার প্রভু সর্বশক্তিমান।
وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
২৫:৭৪ :: আর যারা (দয়াময়ের বান্দাগণ) বলে, “আমাদের প্রভু! আমাদেরকে এমন স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানাদি দান করুন যাদেরকে দেখে আমদের চোখ প্রশান্তি পায়, আর আমাদের স্রষ্টা সচেতনতা অবলম্বনকারীদের ইমাম (অনুসরণযোগ্য) বানিয়ে দিন।
قَالَ إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ عَلَىٰ أَن تَأْجُرَنِي ثَمَانِيَ حِجَجٍ فَإِنْ أَتْمَمْتَ عَشْرًا فَمِنْ عِندِكَ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أَشُقَّ عَلَيْكَ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّالِحِينَ
২৮:২৭ :: সে (অর্থাৎ মেয়ে দুটির পিতা) বললো, “নিশ্চয় আমি ইচ্ছা করি যে, আমি তোমার সাথে আমার এ দুই কন্যার একজনকে বিবাহ দিবো, এ শর্তে যে, তুমি (মূসা) আমার মজুরি/চাকুরি করবে আট হিজাজ (অর্থাৎ আট হজ্জ মওসুম বা আট চান্দ্রবর্ষ)। আর যদি তুমি দশ বর্ষ পূর্ণ করো তা হবে তোমার পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে কষ্টে রাখার ইচ্ছা করি না। ইনশাআল্লাহ (অর্থাৎ আল্লাহ চাহেন তো) তুমি আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে পাবে।
قَالَ ذَٰلِكَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ أَيَّمَا الْأَجَلَيْنِ قَضَيْتُ فَلَا عُدْوَانَ عَلَيَّ وَاللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ
২৮:২৮ :: সে (মূসা) বললো, ‘এ চুক্তি আমার ও আপনার মধ্যে রইল। দু’টি মেয়াদের যেটিই আমি পূরণ করি না কেন, তাতে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে না। আর আমরা যে বিষয়ে কথা বলছি, আল্লাহ তার কর্মবিধায়ক’।
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
৩০:২১ :: আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের তোমাদের সমজাতীয় উপাদান থেকে জোড়াদেরকে (স্বামী-স্ত্রীকে) সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য, যারা চিন্তা করে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نَكَحْتُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ثُمَّ طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ فَمَا لَكُمْ عَلَيْهِنَّ مِنْ عِدَّةٍ تَعْتَدُّونَهَا فَمَتِّعُوهُنَّ وَسَرِّحُوهُنَّ سَرَاحًا جَمِيلًا
৩৩:৪৯ :: হে মু’মিনগণ, যখন তোমরা কোনো মু’মিন নারীকে বিবাহ করো, তারপর তোমরা তাদেরকে স্পর্শ করার আগেই তাদেরকে তালাক দাও, তখন তোমাদের জন্য তাদের উপর ইদ্দাত পালনের দায়িত্ব আরোপের কোনো অধিকার নেই, যা তোমরা গণনা করবে। (অর্থাৎ এ ধরনের তালাকপ্রাপ্তার জন্য কোনো ইদ্দাত নেই)। তবে তাদেরকে (কিছু) ভোগসামগ্রী দিয়ে দাও আর তাদেরকে সুন্দরভাবে বিদায় দাও।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَحْلَلْنَا لَكَ أَزْوَاجَكَ اللَّاتِي آتَيْتَ أُجُورَهُنَّ وَمَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ مِمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَيْكَ وَبَنَاتِ عَمِّكَ وَبَنَاتِ عَمَّاتِكَ وَبَنَاتِ خَالِكَ وَبَنَاتِ خَالَاتِكَ اللَّاتِي هَاجَرْنَ مَعَكَ وَامْرَأَةً مُّؤْمِنَةً إِن وَهَبَتْ نَفْسَهَا لِلنَّبِيِّ إِنْ أَرَادَ النَّبِيُّ أَن يَسْتَنكِحَهَا خَالِصَةً لَّكَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ قَدْ عَلِمْنَا مَا فَرَضْنَا عَلَيْهِمْ فِي أَزْوَاجِهِمْ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ لِكَيْلَا يَكُونَ عَلَيْكَ حَرَجٌ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
৩৩:৫০ :: হে নবী, আমি তোমার জন্য (বিয়ে বন্ধনে রাখা) হালাল করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে- যাদেরকে তুমি তাদের পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করেছো; এবং (বিয়ে করা হালাল করেছি) তোমার (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে- যাদেরকে আল্লাহ তোমার কাছে ফায় (যুদ্ধবন্দিনী না হয়েও কাফিরদেরকে ছেড়ে চলে আসা নারী) হিসেবে দিয়েছেন; এবং তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকে- যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে; এবং কোনো মুমিন নারী যদি নিজেকে হেবা (মোহরানা ছাড়াই বিয়ের জন্য সমর্পণ) করে নবীর জন্য- যদি নবী ইচ্ছা করে যে, তাকে বিয়ে করবে, এটা তোমার জন্যই খালেস (সুনির্দিষ্ট), মু’মিনদের জন্য এ ব্যবস্থা নেই, নিশ্চয় আমি জানি যা আমি তাদের উপর ফরজ (আবশ্যিক নির্ধারণ) করেছি তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে এবং তাদের (নিরপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা ও আশ্রিতা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তাদের বিষয়ে। যেন তোমরা উপর কোনো সংকীর্ণতা না থাকে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
تُرْجِي مَن تَشَاءُ مِنْهُنَّ وَتُؤْوِي إِلَيْكَ مَن تَشَاءُ وَمَنِ ابْتَغَيْتَ مِمَّنْ عَزَلْتَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكَ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَن تَقَرَّ أَعْيُنُهُنَّ وَلَا يَحْزَنَّ وَيَرْضَيْنَ بِمَا آتَيْتَهُنَّ كُلُّهُنَّ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي قُلُوبِكُمْ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَلِيمًا
৩৩:৫১ :: তাদের (তোমার স্ত্রীদের) মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা করো দূরে সরিয়ে রাখতে পারো আর যাকে ইচ্ছা করো তোমার কাছে রাখতে পারো। আর যাদেরকে তুমি দূরে রেখেছো তাদরে মধ্য থেকে যাকেই তুমি (কাছে নিয়ে আসার) কামনা করো, তাতে তোমার উপর দোষ নেই। এটাই নিকটতর যে, তাদের চক্ষু প্রস্বস্তিকর হবে এবং তারা দুঃখিত হবে না এবং তুমি তাদের প্রত্যেককে যা দিয়েছ তাতে তারা সন্তুষ্ট হবে। আর তোমাদের অন্তরে যা আছে আল্লাহ তা জানেন এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।
لَّا يَحِلُّ لَكَ النِّسَاءُ مِن بَعْدُ وَلَا أَن تَبَدَّلَ بِهِنَّ مِنْ أَزْوَاجٍ وَلَوْ أَعْجَبَكَ حُسْنُهُنَّ إِلَّا مَا مَلَكَتْ يَمِينُكَ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ رَّقِيبًا
৩৩:৫২ :: এর পরবর্তীতে (উল্লেখিত নারীরা ছাড়া) তোমার জন্য কোনো নারী হালাল নয় এবং কোনো (স্বাধীনা) স্ত্রীকে বদল করাও (এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা) হালাল নয়, যদি তাদের (তথা অন্য কোনো নারীর) (ব্যক্তিত্বের) সৌন্দর্য তোমাকে মুগ্ধ করে তবুও; তোমার (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তাদেরকে ছাড়া (অর্থাৎ এরূপ কোনো স্ত্রীকে তালাক দিয়ে এরূপ অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা যাবে)। আর আল্লাহ সব বিষয়ে পরিদর্শক।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَـٰكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنكُمْ وَاللَّهُ لَا يَسْتَحْيِي مِنَ الْحَقِّ وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ ذَٰلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ وَمَا كَانَ لَكُمْ أَن تُؤْذُوا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا أَن تَنكِحُوا أَزْوَاجَهُ مِن بَعْدِهِ أَبَدًا إِنَّ ذَٰلِكُمْ كَانَ عِندَ اللَّهِ عَظِيمًا
৩৩:৫৩ :: হে মু’মিনগণ, তোমরা নবীর গৃহসমূহে প্রবেশ করো না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া ছাড়া খাদ্য গ্রহণের জন্য তা প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়াই। কিন্তু যখন তোমাদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় তখন (যথাসময়ে) প্রবেশ করো। তারপর যখন খাদ্যগ্রহণ শেষ করো, তখন তোমরা চলে যাও। আর তোমরা হাদীসের / কথার উদ্দেশ্যে মশগুল হয়ো না। নিশ্চয় এসব নবীকে কষ্ট দেয়। কিন্তু সে তোমাদের কাছে তা প্রকাশ করতে লজ্জিত হয়। আর আল্লাহ সত্য প্রকাশে লজ্জিত হন না। আর যখন তোমরা তাদের কাছে (তথা নবীর স্ত্রীদের কাছে) কোনো প্রয়োজনীয় তথ্য বা জিনিসের প্রার্থী হও, তখন (ঘরের) পর্দার আড়াল থেকে প্রার্থিতা প্রকাশ করো। সেটাই অধিক পবিত্র নিয়ম তোমাদের মনের জন্য এবং তাদের মনের জন্য। আর তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া সঙ্গত নয়। আর এও সঙ্গত নয় যে, তোমরা তার পরবর্তীতে কখনো তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করবে। নিশ্চয় তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত বড় পাপপ্রবণতা।
ثُمَّ قَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِم بِرُسُلِنَا وَقَفَّيْنَا بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ وَآتَيْنَاهُ الْإِنجِيلَ وَجَعَلْنَا فِي قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَأْفَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا فَآتَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا مِنْهُمْ أَجْرَهُمْ وَكَثِيرٌ مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ
৫৭:২৭ :: তারপর আমি আমার রাসূলদেরকে তাদের (আমার মনোনীত পূর্ববর্তী রসূলদের) শিক্ষার উপর অনুগামী করেছিলাম এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকেও অনুগামী করেছিলাম। আর আমি তাকে ইনজীল দিয়েছিলাম এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে স্নেহ ও দয়া দিয়েছিলাম। তারা নিজেরাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের ওপর বিধিবদ্ধ করিনি। কিন্তু তারা তা করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। তারপর তারা তা যথাযথভাবে রক্ষা করেনি। তারপর তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল আমি তাদেরকে তাদের প্রতিদান দিয়েছিলাম আর তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ফাসিক।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا جَاءَكُمُ الْمُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ اللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِهِنَّ فَإِنْ عَلِمْتُمُوهُنَّ مُؤْمِنَاتٍ فَلَا تَرْجِعُوهُنَّ إِلَى الْكُفَّارِ لَا هُنَّ حِلٌّ لَّهُمْ وَلَا هُمْ يَحِلُّونَ لَهُنَّ وَآتُوهُم مَّا أَنفَقُوا وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَلَا تُمْسِكُوا بِعِصَمِ الْكَوَافِرِ وَاسْأَلُوا مَا أَنفَقْتُمْ وَلْيَسْأَلُوا مَا أَنفَقُوا ذَٰلِكُمْ حُكْمُ اللَّهِ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
৬০:১০ :: হে যারা ঈমান এনেছো, যখন তোমাদের কাছে মু’মিন নারীরা হিজরত করে আসবে, তোমরা তাদেরকে পরীক্ষা করবে। আল্লাহ তাদের ঈমান সম্পর্কে অধিক জানেন। অতঃপর যদি তোমরা (তোমাদের সাধ্য অনুসারে) জানো যে, তারা মুমিন নারী, তাহলে তাদেরকে কাফিরদের নিকট ফেরত পাঠিও না। (কাফিরদেরকে ছেড়ে চলে আসার প্রেক্ষিতে) তারা কাফিরদের জন্য হালাল নয় এবং কাফিররাও তাদের জন্য হালাল নয়। তারা (তাদের কাফির স্বামীরা) যা (মোহরানাবাবদ) ব্যয় করেছে, তা তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তোমাদের উপর দোষ নেই যে, তোমরা তাদেরকে বিয়ে করবে, যখন তোমরা তাদেরকে তাদের পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করো। আর তোমরা কাফির নারীদেরকে (তারা কাফিরদের কাছে চলে যেতে ইচ্ছুক হওয়া সত্ত্বেও) বৈবাহিক বন্ধনে আটকে রেখো না। তোমরা যা (মোহরানা বাবদ) ব্যয় করেছো, তা তোমরা (কাফিরদের কাছে) ফেরত চাও। আর তারা (কাফিররা) যা (মোহরানা বাবদ) ব্যয় করেছে, তা তারা (তোমাদের কাছে) ফেরত চেয়ে নিক। এটাই আল্লাহর হুকুম (বিধান)। তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করেন। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
وَإِن فَاتَكُمْ شَيْءٌ مِّنْ أَزْوَاجِكُمْ إِلَى الْكُفَّارِ فَعَاقَبْتُمْ فَآتُوا الَّذِينَ ذَهَبَتْ أَزْوَاجُهُم مِّثْلَ مَا أَنفَقُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي أَنتُم بِهِ مُؤْمِنُونَ
৬০:১১ :: আর যদি তোমাদের স্ত্রীদের থেকে কিছু কাফিরদের কাছে তোমাদের হাতছাড়া হয়ে থাকে (অর্থাৎ তোমাদের কারো কাফির স্ত্রী তোমাদেরকে ছেড়ে কাফিরদের কাছে চলে গেলে যদি তাকে দেয়া মোহরানা কাফিরদের থেকে ফেরত পাওয়া না যায়), তারপর তোমরা (মু’মিনরা) সুযোগ পাও, তাহলে তোমরা (মু’মিনরা) যাদের স্ত্রীরা চলে গেছে (অর্থাৎ যে মু’মিনদের কাফির স্ত্রীরা তাদেরকে ছেড়ে কাফিরদের কাছে চলে গেছে), তাদেরকে উহার সমপরিমাণ প্রদান করো যা তারা ব্যয় করেছে (অর্থাৎ ঐ মু’মিনরা তাদের স্ত্রীদেরকে মোহরানা বাবদ যা ব্যয় করেছিলো, তার সমপরিমাণ তাদেরকে প্রদান করো)। আর আল্লাহর প্রতি সচেতন থাকো, যাঁর প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِن بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَٰلِكَ أَمْرًا
৬৫:১ :: হে নবী, যখন তোমরা নারীদেরকে তালাক দাও তখন তাদেরকে ইদ্দাতের শর্ত পূরণ করে তালাক দিও। আর তোমরা ইদ্দাত গণনা করো। আর আল্লাহকে ভয় করো যিনি তোমাদের প্রতিপালক। স্পষ্ট অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া ছাড়া (প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে) তোমরা তাদেরকে তাদের ঘর থেকে বের করে দিও না, আর (কোনো যথার্থ কারণ ছাড়া) তারাও যেন বের না হয়। আর এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। আর যে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘন করে নিশ্চয় সে নিজ সত্তার উপরই জুলুম করে। তুমি জান না হয়তো এরপর আল্লাহ কোনো (মীমাংসার) উপায়ের উদ্ভব ঘটাবেন।
فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِّنكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ ذَٰلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
৬৫:২ :: সুতরাং যখন তারা তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে যায় তখন তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে রেখে দাও অথবা তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে পৃথক করে দাও। আর (তালাক, ইমছাক বা রেখে দেয়া এবং মুফারাক্বাত বা বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ক্ষেত্রে) তোমরা তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখ। আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যকে প্রতিষ্ঠা কর। এ উপদেশ তাকে দেয়া হচ্ছে যে আল্লাহর প্রতি ও আখিরাত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আর যে আল্লাহ সচেতন হয় তিনি তার জন্য (সংকট থেকে) বের হবার উপায় করে দিবেন।
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
৬৫:৩ :: আর তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দিবেন যা সে হিসাবও করে নি। আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাজ সম্পন্ন করেই থাকেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর জন্য প্রাকৃতিক বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا
৬৫:৪ :: আর তোমাদের নারীদের মধ্য থেকে যারা মাসিক রজ:স্রাব থেকে নিরাশ হয়েছে, (তাদের ইদ্দাতের প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি সম্পর্কে) যদি তোমরা সন্দেহ করো, তাহলে (জেনে নাও যে), তাদের ইদ্দাত হচ্ছে তিন মাস। আর তাদের জন্যও (ইদ্দাত হচ্ছে তিনমাস) যাদের (কোনো জটিলতার কারণে) মাসিক রজ:স্রাব হয়নি। আর গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে তাদের (ইদ্দাতের) নির্ধারিত শেষ সময়সীমা হচ্ছে তাদের সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত। আর যে আল্লাহ সচেতন হয় তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।
لِيُنفِقْ ذُو سَعَةٍ مِّن سَعَتِهِ وَمَن قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنفِقْ مِمَّا آتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا
৬৫:৭ :: স্বচ্ছল ব্যক্তি যেন তার স্বচ্ছলতা অনুযায়ী ব্যয় করে আর যাকে তার রিজিক পরিমিত করে দেয়া হয়েছে সেও যেন আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা অনুযায়ী ব্যয় করে। আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। আল্লাহ কঠিনতার পর শীঘ্রই সহজতার উদ্ভব ঘটাবেন।(২)
(২) এক নজরে নিকাহ সম্পর্কিত আয়াতনাম্বার: ২:২২১, ২:২২৮-২৩৭, ৪:১-৬, ৪:১৯-২৫, ৪:৩৪, ৪:১২৭-১২৯, ৫:৫, ৭:১৮৯, ২৪:৩, ২৪:২৬, ২৪:৩২-৩৩, ২৪:৫৯-৬০, ২৫:৭৪, ২৮:২৭-২৮, ৩০:২১, ৩৩:৪৯-৫৩, ৫৭:২৭, ৬০:১০-১১, ৬৫:১-৪।
“আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের ঘরগুলোকে নিরাপদ অবস্থানের জায়গা করেছেন…” (১৬:৮০)। প্রথম যে দুজন মিলে এ নিরাপদ অবস্থানের জায়গায় একটি পরিবার গঠন করে তারা হলো স্বামী-স্ত্রী। অর্থাৎ সবচেয়ে ছোট পরিবারের সদস্যসংখ্যা দুজন, তারা হলো স্বামী-স্ত্রী। এ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের কাছে শান্তি পাবে এবং তারা তাদের জন্য বৈধ দাম্পত্য স্বাদও আস্বাদন করবে। এভাবেই এক জোড়া মানব-মানবী থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। এই নারী-পুরুষ সমজাতীয় মৌলিক উপাদানে গঠিত এবং তাই তারা একই মানবিক মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ মানুষের মধ্যে রক্তসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। কোন কোন নারীকে বিয়ে করা যাবে না কুরআনে তার বিস্তারিত বিধি-বিধান রয়েছে। বিয়ের মাধ্যমেই মানব সভ্যতার প্রাথমিক ইউনিট পরিবার গঠিত হয়। মানবসভ্যতা হলো বিয়েভিত্তিক সভ্যতা। বিয়ে ছাড়া নর-নারীর কোনোরূপ যৌনসম্পর্ক মানবসভ্যতার ভিত্তিমূলকেই ধ্বংস করে দেয় এবং তাই সেটাকে দণ্ডযোগ্য সামাজিক অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। সমকামিতাও নর-নারী দুই বিপরীত লিঙ্গের পরিপূরক জোড়া সৃষ্টির প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক এবং তাও অবৈধ যৌনসম্পর্কের মতোই মানব সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই সমকামিতাও অবৈধ যৌন সম্পর্কের মতো সমান সামাজিক অপরাধ। অন্যদিকে নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ে হলো মানব সভ্যতা বিনির্মাণের জন্য মজবুত দাম্পত্য চুক্তি। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের জোড়া বা পরিপূরক ও সহযোগী হয়ে সংসার ধর্ম পালন ও সভ্যতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিবাহ বন্ধন একটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।
শুধুমাত্র বৈধভাবে দাম্পত্য স্বাদ আস্বাদন করাই বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বরং এ দাম্পত্য মিলনের মাধ্যমেই তাদেরকে সন্ধান করতে হয় ‘সন্তান’, যার মাধ্যমে মানব সভ্যতার ধারা অব্যাহত থাকবে। তাই তারা তাদের ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হবে। যদি একটি সন্তান হয় তবে তার দুধপানের পূর্ণতার কাল হলো দুই বছর। সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে যেন এ মধ্যে আরেকটি সন্তান গর্ভে এসে এ সন্তানের দুধ পানের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি না হয়। একটি মা অনেক কষ্ট করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, প্রসব করে এবং পিতামাতা সন্তানকে তার শৈশবে লালনপালন করে, জীবন গড়ার জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তাই সন্তানের উচিত বৃদ্ধ পিতামাতার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা যে, যেন তারা তাকে তার শৈশবে যেভাবে লালন পালন করেছেন আল্লাহও তাদেরকে সেভাবে রহম করেন। সুতরাং বিয়ের মাধ্যমে যে পরিবার গঠিত হয় তা হলো শিশু-বৃদ্ধ সবার জন্য নিরাপদ আশ্রয়। আর যৌবন হলো সবাইকে ভালবাসা ও আশ্রয় নিরাপত্তা দেয়ার জন্য মধ্যবর্তী শক্তিসাম্যকাল।
এতিমের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এতিমের মাকে বিয়ে করার নির্দেশনাও নারীর মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করার এক চমৎকার ব্যবস্থাপনা। মানুষের যৌন জীবনের বিষয়ে না অবদমন আর না সীমাহীনতা, বরং স্রষ্টার অনুমোদিত সীমা ও প্রদত্ত যৌন নীতিমালা অনুসারে যৌন সম্পর্ক নিয়ন্ত্রিত হবে। এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে নারীর কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য। যেমন, নারীর হায়েয বা মাসিক ঋতুস্রাব হচ্ছে তার জন্য কষ্টকর অবস্থা, এ সময় দাম্পত্য মিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫৭:২৭ আয়াত অনুযায়ী বৈরাগ্যবাদ আল্লাহর বিধানে নেই। কিছু লোক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ নিয়মের উদ্ভাবন করেছে, তবে তারা তা যথাযথভাবে তা পালন করেনি। বস্তুত আল্লাহ মানুষকে নারী-পুরুষ আকারে সৃষ্টি করাকে তাদের জোড়া সৃষ্টি তথা তাদের পরস্পরের পরিপূরকতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং বিয়ে সৃষ্টিপ্রকৃতির স্বাভাবিক দাবি। কেউ কোনো কারণে বিয়ে না করা দোষনীয় নয়, তবে নীতিগতভাবে বিয়ে না করার নীতি প্রকৃতিসম্মত নয়।
৩০:২১ আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে একে অন্যকে ভালবাসার সম্পর্ক, একে অন্যের প্রতি দয়া অনুভব করার সম্পর্ক হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং একে অন্যের পরিপূরক।
২:১৮৭ আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ককে পোশাকের উপমায় প্রকাশ করা হয়েছে যে, স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পোশাক। পোশাককে স্থায়ীভাবে শরীর থেকে পৃথক রাখা যায় না, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেও স্থায়ীভাবে কোনো দূরত্ব আরোপ করা যেতে পারে না।
পোশাক মানুষের শরীরকে ঢেকে রাখে, তার লজ্জাস্থানের গোপনীয়তা সংরক্ষণ করে বা লজ্জা ধরে রাখার জন্য মানুষ পোশাক পরে থাকে। তেমনি স্বামী-স্ত্রী একে অন্যকে লজ্জাস্কর কর্মকাণ্ড থেকে বেঁচে থাকতে সহায়ক উপকরণ হয়ে থাকে।
পোশাক শরীরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তেমনি স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কের কারণে পারিবারিক জীবনের সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি তথা সুন্দর সমাজ-সভ্যতার বিকাশ ঘটে।
পোশাক শীত-গ্রীষ্মের আবহাওয়ার বিপরীতে স্বাচ্ছন্দের উপকরণ এবং বর্ম স্বরূপ হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও তাদের জন্য নৈতিক পরিবেশ বজায় রাখার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে থাকে।
তাই তাক্বওয়ার চর্চার জন্য সাময়িকভাবে স্বামী-স্ত্রীর বিশেষ সম্পর্কের উপর কোনো বিধিনিষেধ আরোপ হলেও তাদের সম্পর্কের মধ্যে কোনো দীর্ঘস্থায়ী দূরত্ব না থাকাটাও তাক্বওয়া বা আল্লাহ সচেতনতা অবলম্বনের অন্যতম উপায়ে পরিণত হয়। এজন্য যেমন একদিকে এরূপ সাময়িক দূরত্বের বিধি-নিষেধ রয়েছে তেমনি অন্যদিকে ঐ সময় পার হলে ঐ দূরত্বকে অতিক্রম করে পরস্পরে ঘনিষ্ঠ হওয়ারও নির্দেশ রয়েছে।
২:২২৩ আয়াতে স্ত্রীকে স্বামীর শস্যক্ষেত্র বলার মাধ্যমে নারীর মাতৃত্বের মর্যাদাকেই সমুন্নত করা হয়েছে। নারীর মাতৃত্বের যথাযথ যত্ন নিতে হবে যেন তার মাধ্যমে উত্তম উত্তর প্রজন্ম বিকাশ লাভ করতে পারে। কবির ভাষায় স্ত্রীর কাছে স্বামীর প্রত্যাশা- “তোমার থেকে আমার প্রেমের এমন ফসল চাই, যার সৌন্দর্যে চক্ষু জুড়াই (আমি) মরিতে সুখ পাই”। বস্তুত দাম্পত্য সম্পর্কের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সন্তানের আকাঙ্ক্ষা। তবে একজন কৃষক যেমন শস্য উৎপাদন ছাড়াও তার শস্যক্ষেত্র ভ্রমণ করতে পারে, তেমনি স্বামী-স্ত্রীর নিবিড় সম্পর্কের উপরও সংকীর্ণতা আরোপ করা হয়নি।
পরিবারে স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক ও সহযোগী। তবে পারিবারিক ব্যবস্থাপনার জন্য স্বামীকে স্ত্রীর সামগ্রিক দায়িত্বশীল নিযুক্ত করা হয়েছে এবং সে নিজ আয়-উপার্জন থেকে স্ত্রীর ভরণপোষণ নির্বাহ করতে হবে।
(সম্পর্কিত আয়াতসমূহ- ৪:১-৩, ৩০:২১, ২৫:৫৪, ৪:২২-২৫, ২:১৮৭, ২:২২২-২২৩, ১৭:২৩-২৪, ২:২৩৩, ৩১:১৪, ৪৬:১৫)
বিয়ের প্রধানতম শর্ত হলো আবশ্যিক মোহরানা নির্ধারণ করতে হবে, তা বিয়ের পূর্বে বা বিয়ের সময় তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারণ করা হোক বা বিয়ের অব্যবহিত পরেই নির্ধারণ করা হোক।
৪:৪, ৪:২৪-২৫, ৫:৫. ৬০:১০-১১ আয়াতে বিয়ের জন্য মোহরানাকে আবশ্যিক বিধান হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে। বস্তুত মোহরানা হলেো কনের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত একটি অধিকার বা বরের উপর একটি আবশ্যকীয় দায়িত্ব। মোহরানা কনের প্রাপ্য, কনের অভিভাবকের নয়। মোহরানা কনের ব্যক্তিগত সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং যে কোনো বৈধ খাতে তা খরচ করার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রয়েছে।
৩৩:৪৯, ২:২৩৬-২৩৭ আয়াত অনুযায়ী বিবাহের পর মোহরানা ধার্য করার আগে বা পরে তালাক সংঘটিত হলে এবং তখনো স্ত্রীকে স্পর্শ না করলে সেক্ষেত্রে মোহরানা প্রদানের নিয়মাবলি উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং মোহরানা বিয়ের একটি আবশ্যিক শর্ত হলেও মোহরানার পরিমাণ বিয়ের অব্যবহিত পরেও নির্ধারিত হতে পারে।
মোহরানা বরের সাধ্য অনুযায়ী নির্ধারণ করা উচিত। কারণ ৬৫:৭ আয়াত অনুযায়ী যে অধিক সামর্থ্যবান তাকে তার সাধ্য অনুযায়ী এবং যে কম সামর্থ্যবান তাকে তার সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করার জন্য দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছে।
মোহরানার কোনো আর্থিক মূল্য সুনির্দিষ্ট করার সুযোগ নেই। কারণ ৪:২০ আয়াত অনুযায়ী সামর্থ্যবান ব্যক্তি অঢেল পরিমাণ মোহরানাও প্রদান করতে পারবে।
বর্তমান সমাজে অনেক সময় দেখা যায় যে, শুধুমাত্র প্রদর্শনেচ্ছার জন্য অত্যন্ত বেশি পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা হয় অথচ বাস্তবে তা আদায় করা হয় না বা আদায় করা যায় না। এভাবে বরের সাধ্যের বাহিরে সামাজিক প্রথাগত চর্চা উচিত নয়, কারণ তা বাস্তব কল্যাণকর নয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর বিধান পরিপালন করার পরিবর্তে তার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ পায়।
আবার কেউ কেউ বলে যে, কনেকে কুরআনের কোনো সূরা শিখিয়ে দেয়াকে মোহরানা ধার্য করেও ধর্মীয় বিয়ে হতে পারে। অথচ কুরআনে মোহরানা হিসেবে ‘আমওয়াল’ তথা অর্থসম্পদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, সুতরাং অর্থসম্পদ ছাড়া কোনো সূরা শিখানো মোহরানা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
মোহরানার পরিমাণ একেবারে নামকাওয়াস্তে হওয়া উচিত নয়। মোহরানার পরিমাণের বিষয়ে একটি মডেল বা নমুনা পাওয়া রসূলুল্লাহ মূসার বিয়ের ক্ষেত্রে। তাঁর বিয়ের শর্ত ছিল তিনি আট বা দশ বছর তাঁর শশুরের শ্রমিক হিসেবে কাজ করবেন। অর্থাৎ অন্তত আট বছর কাজ করবেন বলে চুক্তি হয় (২৮:২৭-২৮)। সুতরাং অন্তত আট বছরের পারিশ্রমিক থেকে যা তাঁর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যয়নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত সেটাই তাঁর মোহরানা। সুতরাং মোহরানার একটি আদর্শ পরিমাণ হচ্ছে ‘আট বছরের আয় থেকে সাধারণ ব্যয়ের পর থাকা উদ্বৃত্তের হিসাবের সমমূল্য”। যদিও এটি সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়, তবুও এটা থেকে মোহরানার একটা মানসম্মত পরিমাণ বিষয়ক নমুনা পাওয়া যায়।
মোহরানা নির্ধারিত হবার পর বর ও কনের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতাক্রমে এর পরিমাণে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটার সুযোগ আছে। যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় কিছু অংশ ছেড়ে দেয় তবে স্বামী তা থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে নিষ্কৃতি পাবে।
বর্তমানে সমাজে যৌতুক প্রথা হিসেবে কুপ্রচলন রয়েছে অর্থাৎ কনেপক্ষের কাছে বরের বা বরপক্ষের চাহিদা থাকা এবং কনে পক্ষ কর্তৃক আবশ্যিকভাবে বরপক্ষকে উপহার দেয়া, এটা কোনোক্রমেই বৈধ নয়। যে কেউ তার পছন্দ অনুসারে কাউকে আন্তরিকভাবে কোনো উপহার দিতে পারে, এটা আপত্তিকর নয়। কিন্তু যখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এরূপ চাহিদা ব্যক্ত করা হয় বা এজন্য কোনোরূপ চাপ তৈরি করা হয়, তখন তা অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। যেহেতু আল্লাহ কনেকে মোহরানা দেয়া আবশ্যক করেছেন, তাই বর কর্তৃক কনেকে মোহরানা (তথা যৌতুক) দেয়া ফরজ। অন্যদিকে যেহেতু বর তার কনে থেকে মোহরানার প্রাপক হতে পারে না, তাই বর কর্তৃক কনে থেকে যৌতুক গ্রহণ অবৈধ।
কুরআনে ‘বিয়ের বয়স’ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ৪:৬ আয়াতে ইয়াতীম ছেলেমেয়েকে তাদের সম্পদ প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে তারা ‘বালাগুন নিকাহ’ তথা ‘বিয়ের বয়সে পৌঁছার’ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে, যখন আঁচ করা যাবে যে, তারা ‘বিয়ের বয়সে’ পৌঁছেছে তখন তা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতাও যাচাই করতে হবে। যদি তাদের মধ্যে ‘রুশদা’ অর্থাৎ সঠিক বোধবুদ্ধি (এক্ষেত্রে সম্পদের সঙ্গত ব্যবস্থাপনার যোগ্যতা) অনুভব করা যায়, তাহলে তাদের সম্পদ তাদের কাছে প্রত্যর্পণ করতে হবে। অন্যথায় নির্বোধদের হাতে তাদের সম্পদ প্রত্যর্পণ করা যাবে না, বরং তাদের সম্পদ থেকে তাদের জন্য ভরণপোষনের ব্যবস্থাপনা করতে হবে, কিন্তু সম্পদের ব্যবস্থাপনা অন্য অভিভাবক করবে, যা ৪:৫ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং ৪:৫-৬ আয়াত অনুযায়ী বিয়ের একটি সুনির্দিষ্ট বয়স আছে, যার সাথে শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সম্পর্ক রয়েছে। শারীরিকভাবে এ বয়সটি হলো যৌবনকাল, যা হলো স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়স। এ বিষয়টি বুঝা যায়, ইয়াতীমের যৌবন বা স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়স পর্যন্ত তার সম্পদের ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা থেকে। অন্য কথায়, ইয়াতীম বিয়ের বয়সে উপনীত হওয়ার অর্থ হলো ইয়াতীম যৌবনে উপনীত হওয়া। ইয়াতীমের যৌবন পর্যন্ত তার সম্পদের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত দুটি আয়াত নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
৬:১৫২ :: আর তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের নিকটবর্তী হয়ো না, সুন্দরতম পন্থা ছাড়া।(৩) যতক্ষণ না সে যৌবনে / স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়সে <আশুদ্ধা> উপনীত হয়, আর পরিমাপ ও ওজন পূর্ণ করবে ইনসাফের সাথে। আমি কাউকে তার সাধ্য ছাড়া দায়িত্ব অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বলবে, তখন ন্যায়সঙ্গত কথা বলো, যদিও সে (অভিযোগের যোগ্য ব্যক্তি) আত্মীয় হয় এবং আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি পূর্ণ কর। এগুলো তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।
(৩) অর্থাৎ ইয়াতীমের সম্পদ ব্যবহার করতে হবে তার ভরণপোষণের জন্য এবং তার সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিনিয়োগের জন্য। আর যদি অভিভাবকত্ব গ্রহণকারী দরিদ্র হয়, তাহলে সে ইয়াতীমের সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য ইয়াতীমের সম্পদ থেকে ন্যায়সঙ্গত বেতন গ্রহণ করতে পারবে।
১৭:৩৪ :: আর তোমরা ইয়াতীমের সম্পদের কাছে যেয়ো না, সুন্দরতম পন্থা ছাড়া, যতক্ষণ না সে যৌবনে / স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়সে <আশুদ্ধা> উপনীত হয়। আর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো, নিশ্চয় প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জবাবদিহি করা হবে।
‘আশুদ্দা’ বা ‘যৌবন’ তথা ‘স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়স’ এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা যায় যে, এটি হলো শিশু-কিশোর ও প্রৌঢ়-বৃদ্ধের মধ্যবর্তী শক্তিসাম্যের বয়স (সম্পর্কিত আয়াত- ২২:৫, ৪০:৬৭)। এছাড়া ১৮:৮২ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, সাধারণত অপ্রাপ্ত বয়স্ক ইয়াতীম সন্তানরা এ বয়সে উপনীত হবার পর তাদের জন্য তাদের পিতা কর্তৃক সঞ্চিত গুপ্তধন উদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত শক্তিসামর্থ্যের অধিকারী হয়।
সুতরাং ‘বালাগান নিকাহ’ বা ‘বিয়ের বয়সে পৌঁছা’ মানে হলো ‘বালাগাল আশুদ্ধা’ বা ‘যৌবনকালে পৌঁছা, স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়সে পৌঁছা’। অন্যদিকে এর পূর্বে রয়েছে বালাগাল হুলুমা’ বা ‘বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছা’, যে সম্পর্কে ২৪:৫৯ আয়াতে আলোকপাত করা হয়েছে। অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকাল হলো কৈশোর ও যৌবনের মধ্যবর্তী পর্যায়। সাধারণত ছেলেদের বীর্যস্খলন শুরু হওয়া এবং মেয়েদের মাসিক রজ:স্রাব শুরু হওয়াকে বয়সন্ধিকালে পৌঁছার (সাবালক বা সাবালিকা হওয়ার) লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। অবশ্য কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো কারণে বয়ঃসন্ধিকালের শুরুতে বীর্যস্খলন বা রজ:স্রাব নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছার বিষয়টি অন্যান্য লক্ষণ দ্বারা চিহ্নিত হয়।
ধাত্রীবিদ্যা (Obstetrics) অনুযায়ী, নয় দশ বছর বয়সে মেয়েরা রজঃমতী হলেও তখন থেকেই তারা যথাযথ প্রজনন-শক্তিসম্পন্না হয় না। একে বয়োসন্ধির অনুর্বরতা (Adolescent sterility) বলা হয়। অন্যদিকে বেশি বয়সে প্রথম গর্ভধারণ (elderly primi) বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন, বেশি বয়সের মায়েদের জরায়ুর আয়তন যথাযথভাবে বৃদ্ধি পেতে চায় না। ফলে ভ্রুণের মাথার উপর চাপ পড়ে, যা সন্তানের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে। দ্বিতীয়ত: বেশি বয়সের মায়েদের স্তনে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে, ফলে শিশুরা পর্যাপ্ত মাতৃদুগ্ধ পায় না। তৃতীয়ত: সুষ্ঠুভাবে সন্তান পরিপালনের জন্য যে ধরনের ধৈর্যের প্রয়োজন অনেক সময় দেখা যায় যে, বেশি বয়সের মায়েদের মধ্যে তা যথাযথভাবে থাকে না, বরং তারা অল্পতেই বিরক্ত হয়ে পড়ে। এসব কারণে মেয়েদের বিয়ে যেন খুব দেরিতে না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। অধিক বয়সের পরিবর্তে বয়ঃসন্ধিকাল শেষ হওয়ার পর মেয়েদের বিয়ে যথাসম্ভব দ্রুত হলে জরায়ুর টিউমার ও ক্যান্সার, ব্রেস্ট টিউমার, হরমোনাল সমস্যা, ঋতুজনিত সমস্যা ইত্যাদির সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
কোনো ছেলে বা মেয়ের দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধির সমাপ্তির মাধ্যমেই বয়ঃসন্ধিকালের তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার জৈবিক প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে বা পরিপক্কতা অর্জিত হয় এবং এটিই যৌবনকাল বা স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়স হিসেবে বিবেচিত হয়। আর কুরআনেও বয়ঃসন্ধিকালের পরিবর্তে যৌবনকাল বা বা স্থিতিশীল শক্তিসামর্থ্যের বয়সকেই ‘বিয়ের বয়স’ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদিও বয়ঃসন্ধিকাল সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের মতো দৈহিক আগ্রহ-অনুভূতি ও জৈবিক প্রক্রিয়া সম্ভব, তবুও তা উভয়ের পরবর্তী যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বা দীর্ঘমেয়াদি তারুণ্যের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকে।
কোনো ছেলে বা মেয়ের বিয়ের বয়স নির্ধারণে শারীরিক বিকাশের সাধারণ অবস্থার পাশাপাশি তার বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতাকেও বিবেচনা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার বিষয়টি শারীরিক নিদর্শনের চেয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাচাই করা যেতে পারে। একেকজনের ক্ষেত্রে বুদ্ধিমত্তার বিকাশ একেক সময়ে ঘটতে পারে। আবার কার ক্ষেত্রে কিরূপ বুদ্ধিমত্তাকে তার সাথে পরিস্থিতি সাপেক্ষে যথেষ্ট সাব্যস্ত করা হবে সেটা অভিভাবকদের সুবিবেচনার সাথে সম্পর্কিত। কারণ তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, যখন তারা (তাদের সুবিবেচনা অনুসারে) সঙ্গত বুদ্ধিমত্তা অনুভব করে তখন তারা বিয়ের বয়সে উপনীত হয়েছে মর্মে সিদ্ধান্তে পৌঁছবে এবং সম্পদ প্রত্যর্পণ করবে। তবে এক্ষেত্রে ‘আশুদ্ধা’ বা ‘জৈবিক প্রক্রিয়াগত শক্তির পরিপক্কতার বয়স’ (যৌবন) এর পূর্বশর্ত কার্যকর থাকবে। অন্যকথায়, শারীরিক বিকাশ হলো প্রথম শর্ত এবং মানসিক বিকাশ হলো দ্বিতীয় শর্ত।
সম্পদের সঙ্গত ব্যবস্থাপনাগত বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার প্রশ্নটি পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে হুবহু সমান পর্যায়ে বিবেচ্য নয়। কারণ পুরুষকে নারীর সামগ্রিক দায়িত্বশীল হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং নিজ সম্পদ থেকে নারীর জন্য ব্যয় করতে হবে। অন্যদিকে নারীর সম্পদের মালিকানা এবং বিনিয়োগ বা আয়-উপার্জনের অধিকার রয়েছে, কিন্তু তার অর্থনৈতিক দায়িত্ব পুরুষের তুলনায় কম। তাই যদিও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাগত যোগ্যতা নারীরও থাকতে হবে, তবুও তা পুরুষের সমপর্যায়ের হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। আবার বিয়ের মাধ্যমে স্বামী তার স্ত্রীর সামগ্রিক দায়িত্বশীল হয় এবং নিজ সম্পদ থেকে স্ত্রীর জন্য ব্যয়ভার বহন করতে হয় বিধায়, বিয়ের বয়সের জন্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাগত বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতা একটি স্বত:সিদ্ধ শর্ত হিসেবেও প্রযোজ্য বলে প্রতীয়মান হয়।
এমনকি ২৪:৩৩ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, শারীরিক ও মানসিকভাবে যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও অর্থনৈতিক সামর্থ্যের পূর্বে যৌনসংযম অবলম্বন করতে হবে। এ থেকেও বুঝা যায় যে, অপরিণত বয়সে বিয়ে গ্রহণযোগ্য নয়।
৪:২১ আয়াতে বিয়েকে ‘মজবুত চুক্তি’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অপরিণত বয়সে এই মজবুত চুক্তি সম্পাদিত হতে পারে না।
২:২২১ আয়াতে মুশরিক নারী-পুরুষকে বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে, অন্যদিকে মু’মিন নারী-পুরুষকে বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরিণত বয়সে কেউ বুঝে শুনে মু’মিন বা মুশরিক হয় না। এটিও বিয়ের জন্য একটি উপযুক্ত বয়সের নির্দেশনা প্রদান করে।
৪:১৯ আয়াত অনুযায়ী কোনো নারীর প্রতি বলপ্রয়োগপূর্বক তার উত্তরাধিকারী হওয়া বৈধ নয়, যার একটি রূপ হলো, তার সম্মতি ছাড়া তাকে বিয়ে করা যাবে না। সুতরাং বুঝে শুনে সম্মতি প্রকাশের পূর্বের বয়সে বিয়ে হতে পারে না।
৬৫:৪ আয়াতে তালাকপ্রাপ্তা নারীর ইদ্দাত (তালাক পরবর্তীতে পুন:বিবাহের পূর্বে বাধ্যতামূলক অপেক্ষার সময়কাল) প্রসঙ্গে একটি ধারা উল্লেখ করা হয়েছে যে, “যাদের রজ:স্রাব হয়নি তাদের ইদ্দাত হচ্ছে তিন মাস”। এটিকে অনেকে বাল্যবিবাহের পক্ষে একটি তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ পূর্বে উল্লেখিত আয়াতসমূহের ভিত্তিতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বিয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট বয়স রয়েছে। সুতরাং ৬৫:৪ আয়াতে ‘নাবালিকা’ বা ‘যাদের রজ:স্রাব হওয়ার মতো বয়স হয়নি’ তাদের কথা বলা হয়নি। বরং যাদের কোনো জটিলতার কারণে রজ:স্রাব হয়নি তাদের কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং কোনোক্রমেই বাল্যবিবাহ বৈধ নয়। তবে কোনোভাবে বাল্যবিবাহ সংঘটিত হলে তা বহাল রাখা হবে কিনা সেটা সংশ্লিষ্ট অভিভাবক ও আইনগত কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাস্তব পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে পরামর্শের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
৪:৩ আয়াতে ইয়াতীম সমস্যার সমাধানে বিধবা বিবাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ কেউ আয়াতটিকে ইয়াতীম মেয়েকে বিবাহ করাকে তথা বাল্যবিবাহকে বৈধ সাব্যস্ত করার তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করেন। অথচ আয়াতটিতে ‘ইয়াতীম মেয়েদেরকে’ বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবা নারীকে বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিম্নে বিষয়টি আলোচনা করা হলো:
৪:৩ আয়াতে প্রথমেই বলা হয়েছে যে, “ওয়া ইন খিফতুম আল্লা তুক্বছিতূ ফিল ইয়াতামা ফানকিহূ মা তবা লাকুম মিনান নিছায়ি”। ((আর যদি তোমরা ভয় করো যে, তোমরা ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে বিয়ে করে নাও (ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা) নারীদের মধ্য থেকে যে তোমাদের জন্য পছন্দনীয় হয়))।
নিম্নে এর প্রতিটি শব্দের শব্দার্থ দেয়া হলো:
ওয়া = আর।
ইন = যদি।
খিফতুম = তোমরা ভয় করো।
আন = যে,
লা তুক্বছিতূ = তোমরা সুবিচার করতে পারবে না।
ফিল ইয়াতামা = ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের প্রতি।
ফানক্বিহূ = তাহলে বিয়ে করো।
মা তবা লাকুম = যে তোমাদের জন্য পছন্দনীয় হয়।
মিনান নিছায়ি = নারীদের মধ্য থেকে।
আয়াতটিতে যাদেরকে বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে ‘আননিসা’ (নারীগণ) শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে, সরাসরি ‘ইয়াতীম নারী’ বা ‘ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবা নারী’ কোনোটিই বলা হয়নি। কিন্তু পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এটি ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের প্রতি সুবিচারের উদ্দেশ্যে একটি ব্যবস্থাপনা। সুতরাং এই নারীদের সাথে ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের একটি সম্পর্ক রয়েছে, তারা স্বয়ং ‘ইয়াতীম নারী’ হোক বা “ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবা নারী’ হোক।
এখানে কি “ইয়াতীম নারী’ বুঝানো হয়েছে, নাকি “ইয়াতীম ছেলেমেয়ে থাকা বিধবা নারী’ বুঝানো হয়েছে নাকি উভয় শ্রেণিকে বুঝানো হয়েছে তা নির্ণয় করা সম্ভব হয় ৪:১২৭ আয়াত থেকে।
৪:১২৭ আয়াতে প্রথমাংশে বলা হয়েছে, “ওয়া ইয়াছতাফতূনাকা ফিন নিসায়ি, ক্বুলিল্লাহু ইউফতীকুম ফীহিন্না ওয়া মা ইউতলা আলাইকুম ফিল কিতাবি ফী ইয়াতামান নিছায়িল্লাতী লা তু’তূনাহুন্না মা কুতিবা লাহুন্না ওয়া তারগাবূনা আন তানকিহূহুন্না”। অর্থাৎ “তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায় (ইয়াতীম ছেলেমেয়ে আছে এমন) নারীদের বিষয়ে। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বিষয়ে ফতোয়া দিচ্ছেন। আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) যা তোমাদের কাছে এই কিতাবে আবৃত্তি করা হচ্ছে, ঐ বিধবা নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের বিষয়ে, যাদেরকে (ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের যে মায়েদেরকে) তোমরা তা দিচ্ছো না যা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকার হিসেবে, অথচ তোমরা আগ্রহ করছো তাদেরকে বিবাহ করতে”।
নিম্নে এর প্রতিটি শব্দের শব্দার্থ দেয়া হলো:
ওয়া = আর।
ইয়াছতাফতূনাকা = তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায়।
ফিন নিসায়ি = নারীদের বিষয়ে।
ক্বুল = বলো।
আল্লাহু = আল্লাহ।
ইউফতীকুম = তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন।
ফীহিন্না = তাদের বিষয়ে।
ওয়া = আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন)।
মা = যা।
ইউতলা = আবৃত্তি করা হয়।
আলাইকুম = তোমাদের কাছে।
ফিল কিতাবি = কিতাবে / বিধানে।
ফী ইয়াতামান নিছায়ি = বিধবা নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের বিষয়ে।
আল্লাতী = যে বিধবা নারীরা এরূপ যে,
লা তু’তূহুন্না = তোমরা তাদেরকে (ঐ বিধবা নারীদেরকে) প্রদান করো না।
মা = যা।
কুতিবা = বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।
লাহুন্না = তাদের জন্য (তাদের অধিকার হিসেবে)।
ওয়া = অথচ।
তারগাবূ = তোমরা আগ্রহ করছো।
আন = যে,
তানকিহূহুন্না = তোমরা তাদেরকে বিবাহ করবে।
এ আয়াতে “ইয়াতামান নিসায়ি” (নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়ে) শব্দটি হলো “কী ওয়ার্ড” (Key Word) যার মাধ্যমে এ প্রশ্নের সমাধান জানা যায। এতে ‘ইয়াতীম ছেলেমেয়েকে” বলা হয়েছে “নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়ে”। অর্থাৎ ঐ নারীরা হলো “ইয়াতীম ছেলেমেয়ের মা”। অর্থাৎ ঐ বিধবা নারীরা যাদের সাথে তাদের ইয়াতীম ছেলেমেয়ে আছে।
সুতরাং ৪:৩ আয়াতে যে “আন নিসা” বা “নারীদেরকে” বিবাহ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে তারা হলো “বিধবা নারীগণ”। অর্থাৎ “যে বিধবা নারীদের সাথে তাদের ইয়াতীম ছেলেমেয়ে আছে” তাদেরকেই বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, স্বয়ং ইয়াতীম মেয়েদেরকে বিয়ে করার নির্দেশ নয়। অন্যকথায় ইয়াতীম মেয়েদেরকে স্ত্রী বানাতে নয়, বরং ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের নিজের ছেলেমেয়ে বানিয়ে নিতেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুতরাং ৪:৩ আয়াতকে বাল্যবিয়ের তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করার কোনো অবকাশ নেই। বরং ৪:৩ আয়াতে ইয়াতীম সমস্যার সমাধানের জন্য বিধবা বিবাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিয়ের জন্য পুরুষদের জন্য একটি আবশ্যিক শর্ত হলো তাদের অর্থনৈতিক সামর্থ্য অর্জন করতে হবে। প্রথমত বিয়ে করার ক্ষেত্রে বরের পক্ষ থেকে একটি আবশ্যিক পারিতোষিক বা উপহার (মোহরানা) প্রদান করতে হবে। দ্বিতীয়ত বিয়ের মাধ্যমে যে নতুন সংসার তৈরি হবে, তাতে স্বামীকে স্ত্রীর সামগ্রিক দায়িত্বশীল হিসেবে ভূমিকা পালন করতে হবে এবং নিজের অর্থ থেকে স্ত্রীর ভরণপোষনের ব্যয়ভার বহন করতে হবে। তাই সামর্থ্য অর্জনের পূর্বে বিয়ে করা যাবে না, বরং সংযম অবলম্বন করতে হবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান তথা অর্থনৈতিক সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। তবে যদি সংযম হারানোর আশংকা থাকে, তাহলে কোনো স্বাধীনা নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য তৈরির আগেই বিয়ে করতে হলে কোনো ‘মা মালাকাত আইমান’ (যে কারো পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রাপ্তির প্রতিশ্রুতির আওতায় তার পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হয়েছে) পর্যায়ের নারীকে বিবাহ করতে পারে। অন্যদিকে যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীনা নারীকে বিয়ে করার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য রাখে, সে ইচ্ছা করলে স্বাধীনা মু’মিন নারীকে বিবাহ করবে, অথবা ইচ্ছা করলে আশ্রিতা মু’মিন নারীকে বিবাহ করবে, এক্ষেত্রে সে স্বাধীন। কারণ ঈমানের প্রশ্নে স্বাধীনা মু’মিন নারী এবং আশ্রিতা মু’মিন নারী সমপর্যায়ের। অন্যদিকে যেহেতু মুশরিক নারীকে বিবাহ করা অবৈধ করা হয়েছে, তাই বিয়ের ক্ষেত্রে একজন মুশরিক স্বাধীন নারীর চেয়ে একজন মু’মিন দাসীকে উত্তম হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
অবশ্য যাদের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে অথচ তার বিয়ে হচ্ছে না এরূপ কুমার-কুমারী এবং তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা ও বিপত্নীকদের বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য সাধারণভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা তাদের অভিভাবকদের ও মু’মিন সমাজের প্রতি সাধারণভাবে প্রযোজ্য। এরূপ ক্ষেত্রে বিয়ের পর তাদেরকে আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানের কর্মকাণ্ডে সমৃদ্ধি দান করা হবে মর্মে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই সমৃদ্ধির ব্যবস্থাপনা হিসেবে যেমন তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে চেষ্টা সাধনার বিশেষ উদ্যমের প্রাকৃতিক নীতি কার্যকর রয়েছে, তেমনি মু’মিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যারা চুক্তিপত্র তালাশ করে (যার মধ্যে বৈবাহিক চুক্তিপত্রও অন্তর্ভুক্ত) তাদেরকে চুক্তিপত্রের ব্যবস্থা করে দিতে এবং আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে তাদেরকে সহযোগিতা করতে।
(সম্পর্কিত আয়াতসমূহ: ৪:২৫, ৪:৩৪, ২৪:৩২-৩৩)।
৪:২২-২৪ আয়াতে রক্তসম্পর্ক, দুধসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে তাদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। আয়াতসমূহ অনুসারে তালিকাটি নিম্নরূপ:
১. পিতা, দাদা, নানা প্রমুখ যাদেরকে বিয়ে করেছে এরূপ নারীগণ (এর মাধ্যমে সৎ মা, সৎ দাদী, সৎ নানী প্রমুখকে হারাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
২. মাতাগণ (এর মধ্যে নিজের মা, দাদী, নানী প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত)।
৩. কন্যাগণ (এর মধ্যে নিজের মেয়ে, নাতিন, পুতিন প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত)।
৪. ভগ্নীগণ (এর মধ্যে পূর্ণ আপন বোন, মাতৃশরিক বোন, পিতৃশরিক বোন প্রমুখ অন্তর্ভুক্ত)।
৫. ফুফু।
৬. খালা।
৭. ভাতিঝি।
৮. ভাগ্নী।
৯. দুধমা।
১০. দুধবোন।
১১. শ্বাশুড়ী।
১২. যে স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছে সেই স্ত্রীর পূর্বস্বামীর ঔরসজাত কন্যা।
১৩. নিজ ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী।
১৪. দুই বোনকে একত্র করা। অর্থাৎ স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় বা তাকে তালাক দেয়ার পূর্বে তার বোনকে বিয়ে করা বৈধ নয়। (এক্ষেত্রে আয়াত নাযিলের পূর্বে যা হয়ে গেছে সেটা বাতিল করা হয়নি)।
১৫. সধবা নারী অর্থাৎ যে নারীর স্বামী জীবিত আছে এবং তাদের মধ্যে তালাক সংঘটিত হয়নি। (এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হলো, ‘মা মালাকাত আইমান’ তথা যেসব নারী তাদের কাফির স্বামীকে ছেড়ে মু’মিনদের কাছে চলে এসেছে এবং কোনো মু’মিনের কাছে পূর্ণকালীন আশ্রিতা হিসেবে আছে, এরূপ নারীদের পূর্ব স্বামীর সাথে আনুষ্ঠানিক তালাক না ঘটা সত্ত্বেও তাদেরকে কোনো মু’মিন পুরুষ বিয়ে করতে পারবে। এ বিষয়ে ৬০:১০-১১ আয়াতে বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে।)
৪:২২-২৪ আয়াতে রক্তসম্পর্ক, দুধসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে তাদের বিস্তারিত তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “এ তালিকার বাহিরে অন্যদেরকে বিয়ে করাকে বৈধ করা হয়েছে”। যেহেতু এ তালিকায় ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালোতো বোনদেরকে হারাম হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়নি, তাই অবশ্যই চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো ভাই-বোনের বিয়ে সম্পূর্ণ হালাল বা বৈধ।
৩৩:৫০ আয়াতে রসূলের জন্য যাদেরকে হালাল (বৈধ) করা হয়েছে তাদের তালিকায় ‘চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো, খালাতো বোনদের’ কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে কেউ কেউ ৩৩:৫০ আয়াতে থাকা একটি বিশেষ প্রসঙ্গে ‘শুধু রসূলের জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়’ ধারাটি থেকে সংশয়ে পতিত হয় যে, চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা সাধারণ মু’মিনদের জন্য বৈধ কিনা? তাই আয়াতটির বক্তব্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত জানা প্রয়োজন।
৩৩:৫০ :: হে নবী, আমি তোমার জন্য (বিয়ে বন্ধনে রাখা) হালাল করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে- যাদেরকে তুমি তাদের পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করেছো; এবং (বিয়ে করা হালাল করেছি) তোমার (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে- যাদেরকে আল্লাহ তোমার কাছে ফায় (যুদ্ধবন্দিনী না হয়েও কাফিরদেরকে ছেড়ে চলে আসা নারী) হিসেবে দিয়েছেন; এবং তোমার চাচার কন্যা, ফুফুর কন্যা, মামার কন্যা, খালার কন্যাকে- যারা তোমার সাথে হিজরত করেছে; এবং কোনো মুমিন নারী যদি নিজেকে হেবা (মোহরানা ছাড়াই বিয়ের জন্য সমর্পণ) করে নবীর জন্য- যদি নবী ইচ্ছা করে যে, তাকে বিয়ে করবে, এটা তোমার জন্যই খালেস (সুনির্দিষ্ট), মু’মিনদের জন্য এ ব্যবস্থা নেই, নিশ্চয় আমি জানি যা আমি তাদের উপর ফরজ (আবশ্যিক মোহরানা নির্ধারণ) করেছি তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে এবং তাদের (নিরপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা ও আশ্রিতা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তাদের বিষয়ে। যেন তোমরা উপর কোনো সংকীর্ণতা না থাকে। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।
আয়াতটিতে রসূলের জন্য যাদেরকে হালাল করা হয়েছে তাদের তালিকায় যারা আছে তাদের তালিকা এবং সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং নবীর জন্য সুনির্দিষ্টতা হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার সারণি নিম্নরূপ:
যারা হালাল (বিয়ে বন্ধনে রাখা বা বিয়ে করার জন্য) | সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য | নবীর জন্য সুনির্দিষ্টতা |
১. নবীর স্ত্রীগণ | ১. তাদেরকে নবী ইতোমধ্যেই তাদের মোহরানা প্রদান করেছেন। | |
২. নবীর আশ্রিতা | ২. আল্লাহ তাদেরকে নবীর কাছে ফায়স্বরূপ দিয়েছেন তথা তারা তাদের কাফির আত্মীয়দেরকে ছেড়ে নবীর কাছে চলে এসেছে এবং নবীর কাছে পূর্ণকালীন আশ্রিতা হিসেবে আছে। | |
৩. নবীর চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোন | ৩. তারা হিজরত করে এসেছে। | |
৪. যে মু’মিন নারী নিজেকে নবীর কাছে হেবা করে তথা মোহরানা ছাড়াই বিয়ে করার জন্য সমর্পণ করে। | ৪. নবীও তাকে বিয়ে করার ইচ্ছা রাখে। | এরূপ নারীকে বিবাহ করার ব্যবস্থা নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট। সাধারণ মু’মিনরা কোনো নারীকে মোহরানা না দেয়ার পূর্বসিদ্ধান্তক্রমে বিয়ে করা বৈধ নয়। কারণ তাদের জন্য ৪:২৪-২৫ আয়াতে তাদের স্ত্রী ও আশ্রিতাদেরকে বিয়ে করা বৈধ করা হয়েছে ‘মোহরানা’ প্রদানের চুক্তির শর্তে। যদিও পরবর্তীতে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে পরিমাণে হ্রাসবৃদ্ধি হতে পারে। কিন্তু মোহরানা ছাড়াই বিয়ে হবে এরূপ পূর্বসিদ্ধান্তক্রমে বিয়ে করাকে বৈধ করা হয়নি। |
আয়াতটিতে নবী যাদেরকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ রাখা বা বিয়ে করা নবীর জন্য বৈধ করা হয়েছে তাদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকের উল্লেখ করার পাশাপাশি তাদের কোনো না কোনো সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, নবীর স্ত্রীদের ক্ষেত্রে উল্লেখ করা বৈশিষ্ট্য থেকে জানা যায় যে, নবী তাঁর স্ত্রীদের মোহরানা পরিশোধ করে দিয়েছেন। আর ৩৩:৫২ আয়াতে নবী তাঁর স্ত্রীদের মধ্য থেকে কাউকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করাকে নবীর জন্য অবৈধ করে দেয়া হয়েছে।
কেউ কেউ ৩৩:৫০ আয়াত অনুসারে ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট, অন্য মু’মিনরা চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ’ বলে মনে করেন। নিম্নে তাঁদের উপলব্ধির সঠিকত্ব পর্যালোচনা করা হলো:
১. আয়াতটিতে চারটি গ্রুপের নারীর মধ্য থেকে চতুর্থ গ্রুপ অর্থাৎ যে মু’মিন নারী নিজেকে নবীর কাছে হেবা করেছে (মোহরানা ছাড়াই বিয়ের জন্য সমর্পণ করেছে) তাকেই নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। অন্য মু’মিনরা এরূপ কোনো নারীকে তার প্রস্তাবনা অনুসারে মোহরানা ছাড়াই বিয়ে করে নেয়া হালাল (বৈধ) নয়। এ সুনির্দিষ্টতা যে একমাত্র এই চতুর্থ গ্রুপের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তার প্রমাণ হলো, আয়াতটিতে ঐ নারী সম্পর্কে থাকা ‘ইমরাআতান মু’মিনাতান’ (মু’মিন নারী) শব্দটি এবং তার পরবর্তী ক্রিয়া ‘হাবাত’ (যে হেবা করেছে) এবং ‘নাফসাহা’ (তার নিজেকে) শব্দে থাকা সর্বনাম ‘হা’ প্রভৃতি হলো স্ত্রীলিঙ্গ একবচন।
অনুরূপভাবে তাকে নবীও বিয়ে করার ইচ্ছা রাখার বিষয়টি ব্যক্ত করার জন্য ব্যবহৃত শব্দ ‘ইয়াছতানকিহাহা’ (তাকে বিয়ে করতে) এর সর্বনাম ‘হা’ হলো স্ত্রীলিঙ্গ একবচন। আর সে নবীর জন্য বিশেষ (ব্যতিক্রমমূলক অবস্থানে) থাকার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য যে বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো ‘খালিসাতান’ (বিশেষ), এটিও স্ত্রীলিঙ্গ একবচন। সুতরাং পূর্ববর্তী তিন গ্রুপের নারী যাদের কথা বহুবচনে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের সাথে এই সুনির্দিষ্টতা সম্পর্কিত নয়। অন্য কথায় এ সুনির্দিষ্টতা আয়াতটিতে উল্লেখকৃত সকল গ্রুপের নারীদের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং একমাত্র চতুর্থ গ্রুপের নারীর সাথে তথা হেবাকারিনী নারীর সাথে সম্পর্কিত। আর তাই নবী যেমন তাঁর কাছে হেবাকারিনী কোনো নারীকে বিয়ে করতে পারবেন, সাধারণ মু’মিনরা অনুরূপভাবে কোনো হেবাকারিনী নারীকে বিয়ে করতে পারবে না।
২. আয়াতটিতে উল্লেখিত সুনির্দিষ্টতা যে একমাত্র হেবাকারিনী নারীর সাথে সম্পর্কিত তার একটি প্রমাণ হলো, আয়াতটিতে হেবাকারিনী নারীর প্রসঙ্গ উল্লেখের পরপরই বলা হয়েছে যে, “এটা তোমার জন্যই খালেস (সুনির্দিষ্ট), মু’মিনদের জন্য এ ব্যবস্থা নেই, নিশ্চয় আমি জানি যা আমি তাদের উপর ফরজ (আবশ্যিক নির্ধারণ) করেছি তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে এবং তাদের (নিরপত্তার প্রতিশ্রুতি প্রদায়ক) ডানহাত যাদেরকে (পূর্ণকালীন সেবিকা ও আশ্রিতা ও আশ্রিতা ও আশ্রিতা হিসেবে) অধিকৃত করেছে তাদের বিষয়ে।” এটা থেকে দুটি বিষয় জানা যায়, (ক) হেবাকারিনী নারী বলতে এমন নারীকে বুঝানো হয়েছে যে নারী নিজেকে মোহরানা ছাড়াই বিয়ে করার জন্য সমর্পণ করে। কারণ, মু’মিনদের স্ত্রীদের ও আশ্রিতাদের বিষয়ে যে বিধান দেয়া হয়েছে তা হলো তারা তাদেরকে বিয়ে করতে হবে আবশ্যিক মোহরানা প্রদান করার শর্তে। সুতরাং হেবা করার বিষয়টি মোহরানা প্রদান না করার অবকাশের সাথে সম্পর্কিত। (খ) যেহেতু ৪:২৪-২৫ আয়াতে মু’মিনরা তাদের স্ত্রী ও আশ্রিতাদেরকে বিয়ের মোহরানা প্রদান করা আবশ্যক, আর সেটাকেই মু’মিনদের জন্য কী বিধান দেয়া হয়েছে তা আল্লাহ জানেন হিসেবে উল্লেখ করে নবীর জন্য যাকে বিবাহ করা বৈধ তার সাথে তুলনা করা হয়েছে, তাই এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এই সুনির্দিষ্টতা শুধুমাত্র হেবাকারিনী নারীর সাথে সম্পর্কিত।
৩. কেউ কেউ বলেন যে, এ সুনির্দিষ্টতা শুধুমাত্র হেবাকারিনীর সাথে সম্পর্কিত হবে কেন? তবে কি মু’মিনরা নবীর স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে? পারবে না। সুতরাং নবীর স্ত্রীদের থেকে শুরু করে আয়াতে বর্ণিত সকল গ্রুপের নারী নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট। আর তাই চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করাও শুধুমাত্র নবীর জন্য বৈধ। অন্য মু’মিনরা চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করতে পারবে না।
এ কথার জবাবে প্রথমেই উল্লেখ্য যে, নবীর স্ত্রীদেরকে আল্লাহ মু’মিনদের মা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন (৩৩:৬) এবং নবীর পরে তাদেরকে বিয়ে করা মু’মিনদের জন্য অবৈধ করেছেন (৩৩:৫৩)। এটি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। কিন্তু ৩৩:৫০ আয়াতে উল্লেখিত “নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট, মু’মিনদের জন্য নয়” বলতে আয়াতে থাকা সকল গ্রুপের নারী “শুধুমাত্র নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট, মু’মিনদের জন্য নয়” বুঝায় না, বরং শুধুমাত্র চতুর্থ গ্রুপের নারী তথা হেবাকারিনী নারীকে বিয়ে করার অনুমোদন নবীর জন্য সুনির্দিষ্ট বুঝায়, যা পূর্বের যুক্তিসমূহে আলোচিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও যদি ধরা হয় যে, এতে ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করার’ বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত, তাহলে বলতে হয়, “নবীর চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে’ বিয়ে করা অন্য মু’মিনদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু এর দ্বারা কোনো মু’মিনের জন্য নিজের চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ হয় না।
৪. সূরা নিসা ৪:২২-২৪ আয়াতে রক্তসম্পর্ক, দুধসম্পর্ক ও বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে যাদেরকে বিবাহ করা হারাম (নিষিদ্ধ) করা হয়েছে তাদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোন’কে বিবাহ নিষিদ্ধ এর তালিকাভুক্ত করা হয়নি। আয়াতসমূহে উল্লেখিত তালিকার পর বলা হয়েছে যে, “এ তালিকার বাহিরে অন্যদেরকে মোহরানা প্রদান করার শর্তে বিবাহ করা বৈধ”। সুতরাং চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা বৈধ। এমতাবস্থায়, ৩৩:৫০ আয়াতে চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা শুধু নবীর জন্য বৈধ, মু’মিনদের জন্য বৈধ নয় বলা হলে তা ৪:২২-২৪ আয়াতের সাথে স্ববিরোধ তৈরি করতো। কিন্তু কুরআনে কোনো স্ববিরোধ নেই। সুতরাং আয়াতটিতে চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে মু’মিনদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে মর্মে যে উপলব্ধি তা সঠিক নয়। বস্তুত আয়াতটিতে চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা অবৈধ করা হয়নি।
৫. সূরা নিসা ৪:২৩ আয়াতে যাদেরকে বিয়ে করা অবৈধ তাদের মধ্যে উল্লেখিত “বোনগণ’ শব্দের আওতায় “চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনেরা” অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ, ৩৩:৫০ আয়াত অনুসারে চাচাতো বোন হলো “বানাতি আম্মি’, ফুফাতো বোন হলো “বানাতি আম্মাতি”, মামাতো বোন হলো “বানাতি খালি” এবং খালাতো বোন হলো “বানাতি খালাতি”। ৪:২৩ আয়াতে যাদের বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে তাদের তালিকায় এদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
৪:২৩ আয়াতে ‘উম্মাহাতু’ (মাতাগণ) এর মধ্যে “আম্মাতু” (ফুফু) এবং “খালাতু” (খালা) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই মাতাগণকে হারাম করার পাশাপাশি ফুফুগণকে এবং খালাগণকে বিয়ে করা হারাম করার বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তেমনি “বানাতু” (কন্যাগণ) এর মধ্যে ‘বানাতুল আখি’ (ভাতিঝি) এবং ‘বানাতু উখতি’ (ভাগ্নী) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তাই কন্যাগণকে হারাম করার পাশাপাশি ভাতিঝি ও ভাগ্নীকে হারাম করার বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, বোনগণের মধ্যেও ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোন’ অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই যদি ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোন’কে হারাম করা হতো তাহলে তা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হতো। যেহেতু তাদেরকে হারাম এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, তাই চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনকে বিয়ে করা হালাল (বৈধ)।
৬. সাধারণ মু’মিনদের জন্য রক্তসম্পর্কের যাদেরকে হারাম করা হয়েছে তাদের মধ্যে যদি ‘চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোন’ থাকতো এবং এমতাবস্থায় নবীর ক্ষেত্রে একই রক্তসম্পর্কের কাউকে বিয়ে করা হালাল করা হতো, তাহলে রক্তসম্পর্কের একই ক্যাটাগরির মধ্যে এরূপ দ্বৈতনীতি বাস্তব যুক্তিসঙ্গত বলে প্রতীয়মান হতো না। বস্তুত চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা নবীর জন্যও বৈধ এবং সাধারণ মু’মিনদের জন্যও বৈধ।
৭. সর্বশেষ যে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তা হলো মু’মিনদের জন্য যদি চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করা বৈধ হয়, তাহলে তা তো নবীর জন্য স্বত:সিদ্ধভাবে হালাল হওয়ার কথা, এমতাবস্থায় তা নবীর জন্য বৈধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা কী? এর জবাব হলো, মু’মিনদের জন্যও তাদের স্ত্রীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করা বৈধ, তেমনি নবীর জন্যও নিজ স্ত্রীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করা বৈধ। তা সত্ত্বেও নবীর জন্য তাঁর স্ত্রীদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করাকে বৈধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বৈশিষ্ট্য করা হয়েছে যে, তিনি তাদেরকে তাদের মোহরানা দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং বস্তুত আয়াতটিতে নবীর জন্য যাদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করা বা যাদের সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক তৈরি করা বৈধ তার পূর্ণাঙ্গ তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে, আর তাই এতে তাঁর চাচাতো ফুফাতো খালাতো মামাতো বোন, যারা তাঁর সাথে হিজরত করেছে, তাদেরকে বিয়ে করা বৈধ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ৩৩:৫২ আয়াত অনুযায়ী ৩৩:৫০ আয়াতে উল্লেখিত তালিকার বাহিরে কোনো নারীর সৌন্দর্য রসূলকে মুগ্ধ করলেও তাকে বিয়ে করা নবীর জন্য অবৈধ করা হয়েছে। সুতরাং নবীর জন্য যে বিশেষ বিধান তার পূর্ণাঙ্গ তালিকার জন্য আয়াতটিতে তাঁর চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদের মধ্য থেকে যারা তাঁর সাথে হিজরত করেছে তাদেরকে বিয়ে করার বৈধতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে এরূপ কোনো চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনকে বিয়ে করার বিষয়ে এক প্রকার অনুপ্রেরণাও রয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, নবীর চাচা, ফুফু, মামা, খালা ছিলো এবং তাঁর এমন চাচাতো, ফুফাতো, মামাতো ও খালাতো বোন ছিল যারা তাঁর সাথে হিজরত করেছে। তবে আয়াতটিতে কোনোভাবে মু’মিনদের জন্য নিজ চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো বোনদেরকে বিয়ে করার বিষয়ে নিষেধ করা হয়নি। উপরিউক্ত বিশ্লেষণ অনুসারে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, চাচাতো ফুফাতো মামাতো খালাতো ভাই-বোনের বিয়ে সম্পূর্ণ হালাল (বৈধ)।
২:২২১ এবং ২৪:৩ আয়াতে ধর্মাদর্শ ও চরিত্রগত কারণে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম তাদের তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্মাদর্শের কারণে মুশরিকদেরকে বিয়ে করা হারাম এবং চরিত্রগত কারণে যিনাকারীদেরকে বিয়ে করা হারাম।
২৪:২৬ আয়াতে বলা হয়েছে যে, দুশ্চরিত্রা নারী দুষ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং দুষ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী; এবং সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযোগী। কেউ কেউ এ আয়াত থেকে মনে করেন যে, “বিয়ে আল্লাহ কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত যে, কার সাথে কার বিয়ে হবে এবং কোনো সচ্চরিত্র পুরুষের সাথে দুশ্চরিত্রা নারীর বিয়ে হয় না এবং কোনো সচ্চরিত্রা নারীর সাথে দুশ্চরিত্র পুরুষের বিয়ে হয় না। যেনাকারীর সাথে যেনাকারিনীরই বিয়ে হয়”। অথচ তাদের এ উপলব্ধিটি সঠিক নয়। কারণ আয়াতের তাৎপর্য হলো, দুশ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর সাথে বিয়ের যোগ্যতা রাখে না, তাই তার জন্য উচিত নয় যে, সে কোনো সচ্চরিত্রা নারীকে বিয়ে করবে। অনুরূপভাবে দুশ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের সাথে বিয়ের যোগ্যাত রাখে না, তাই তার উচিত নয় যে, সে কোনো সচ্চরিত্র পুরুষকে বিয়ে করবে। অনুরূপভাবে, ২৪:৩ আয়াতে বিধান দেয়া হয়েছে যে, যিনাকারী পুরুষ যিনাকারিনী নারীকে ছাড়া বা কোনো মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করতে পারবে না। অনুরূপভাবে., যিনাকারিনী নারী কোনো যিনাকারী পুরুষকে ছাড়া বা কোনো মুশরিক পুরুষকে ছাড়া বিয়ে করতে পারবে না। মু’মিনদের জন্য যিনাকারী ও মুশরিক নারী-পুরুষকে বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে।
যিনাকারী ও মুশরিক নারী-পুরুষকে বিয়ে করা মুমিনদের জন্য হারাম করা এবং মুশরিক নারী-পুরুষকে বিয়ে করার চেয়ে মু’মিন দাস-দাসীকে বিয়ে করা উত্তম সাব্যস্ত করা হয়েছে। যদি বিয়ে পূর্বনির্ধারিত হতো, যেমনটি বলা হয় যে, “বিয়ে শাদি খোদার হাতে খোদার হুকুম নড়ে না, খোদা যদি কলম মারে সেই কলম আর ফিরে না”, তাহলে যিনাকারী ও মুশরিক নারী-পুরুষকে বিয়ে করা হারাম করা হতো না বা বিয়ে করতে নিষেধ করা হতো না। কারণ আল্লাহ পূর্বনির্ধারিত রাখলে তো সে বিয়ে হবেই অন্যথায় তো হতে পারবে না, সে অবস্থায় হারাম করা বা নিষেধ করা অর্থহীন হয়ে যায়।
অনুরূপভাবে, কোনো যিনাকারী যাকে বিয়ে করেছে সেও নিশ্চয় যিনাকারিনী ছিল এরূপ ধারণা করার কোনো অবকাশ নেই। বাস্তবে কোনো যিনাকারী কোনো সচ্চরিত্রা নারীকে বিয়ে করতে পারে, কিন্তু যিনাকারী এ বিষয়ের নৈতিক যোগ্যতা বা মর্যাদা রাখে না, তার উচিত নয় যে, নিজে যিনাকারী হওয়া সত্ত্বেও কোনো যিনাকারিনীকে বাদ দিয়ে কোনো সচ্চরিত্রা নারীকে বিয়ে করা। যিনাকারী কোনো সচ্চরিত্রা নারীকে বিয়ে করা মানে ঐ নারীর অধিকার লঙ্ঘন করা। কারণ একজন সচ্চরিত্রা নারীর অধিকার হলো কোনো যিনাকারী যেন তাকে বিয়ে না করে। একজন যিনাকারীর জন্য উপযুক্ত হলো একজন যিনাকারিনী এবং একজন যিনাকারিনীর জন্য উপযুক্ত হলো একজন যিনাকারী।
২৪:২-৬ আয়াতে যিনাকারী এবং কারো উপর মিথ্যা অপবাদদাতার ক্ষেত্রে দুই ধরনের দণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, যিনাকারীর জন্য প্রথম দণ্ড হলো, তাকে ১০০ বেত্রাঘাত করতে হবে। দ্বিতীয় দণ্ড হলো, তাকে কোনো মু’মিন বিয়ে করবে না, বরং সে যিনাকারিনীকে বা কোনো মুশরিককে বিয়ে করতে পারবে। মিথ্যা অপবাদদাতার (যে চারজন সাক্ষী উপস্থিত করে তার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারে না) প্রথম দণ্ড হলো, তাকে ৮০ বেত্রাঘাত করা হবে। দ্বিতীয় দণ্ড হলো, পরবর্তীতে কখনো তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না। এর মধ্য থেকে যেটি প্রথম শাস্তি তথা বেত্রাঘাত তার কার্যকারিতা কোনোভাবে রহিত হতে পারে না। কিন্তু দ্বিতীয় দণ্ড (যিনাকারী কোনো মু’মিনকে বিবাহ করতে না পারা এবং অপবাদদাতার ক্ষেত্রে পরবর্তীতে সাক্ষ্য গ্রহণ না করা) রহিত হবে, যদি পরবর্তীতে তাদের কার্যক্রম থেকে দৃঢ় আস্থা তৈরি হয় যে, তারা তাওবা করেছে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করেছে।
৪:২২-২৪ আয়াতে যাদেরকে বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে তা তাদের অপরিবর্তনীয় অবস্থান। অন্যদিকে মুশরিক ও যিনাকারীর অবস্থান পরিবর্তনশীল। অর্থাৎ শিরক ও যিনা ত্যাগ করলে তারা আর মুশরিক ও যিনাকারী থাকে না। তাই যারা স্থায়ীভাবে হারাম বা যাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন অসম্ভব (মা, বোন, কন্যা প্রমুখ) এরূপ কোনো নারীকে বিয়ে করলে ঐ বিয়ে বিয়ে হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হবে না এবং তা অবশ্যই বাতিল বলে গণ্য হবে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এরূপ বিয়ে করে যৌনসম্পর্ক স্থাপিত হলে তাতে একটি সামাজিক অপরাধের দন্ডবিধি হিসেবে জিনার শাস্তিও প্রযোজ্য হবে।
মুশরিকদের সাথে মু’মিনদের আদর্শগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে ব্যবধানের বিষয় রয়েছে এর মধ্যে মু’মিন ও মুশরিকদের মধ্যে পারস্পরিক বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে মু’মিনদের কিছু বিশেষ সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, যেসব নারীকে হারাম তালিকাভুক্ত করে তার বাহিরের সকল নারীকে হালাল করা হয়েছে সেই তালিকায় (৪:২২-২৪) মুশরিক নারী অন্তর্ভুক্ত নয়। পক্ষান্তরে মুশরিক নারীকে হারাম করা হয়েছে আদর্শগত কারণে এবং তাতে মু’মিন নারীর সাথে তার আদর্শগত তুলনা উপস্থাপন করা হয়েছে (২:২২১)। একজন মুশরিক নারী তার শিরক ত্যাগ করলে তখন আর সে মুশরিক থাকে না। সুতরাং এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর হারামকে অমান্য করে কেউ যদি কোনো মুশরিক নারীকে বিয়ে করে তাহলে সে একটি ধর্মীয় বিধি অমান্য করার কারণে কবীরা গুনাহগার হিসেবে সাব্যস্ত হবে অথবা তার মানসিকতার ধরণ অনুসারে কাফির ও মুশরিক হিসেবে সাব্যস্ত হবে। কিন্তু বিয়ে নামক সামাজিক চুক্তিটি স্বয়ং অকার্যকর হয়ে যাবে না। এছাড়া কোনো মু’মিন যদি কোনো মুশরিক নারীকে বিয়ে করে তাহলে বিয়ের পর সে মু’মিনের তাওবাহ করার পদ্ধতিস্বরূপ মুশরিক স্ত্রীকে তালাক দেয়ারও কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এরূপ ব্যক্তিকে মু’মিন হিসেবে সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে অন্য মু’মিনরা তার অন্যান্য কার্যাবলিকে বিবেচনা করবে।
কোনো ব্যক্তিকে নিজেদের ইচ্ছামতো কোনো কাজের ক্ষেত্রে অভিযুক্ত করে মুশরিক সাব্যস্ত করার অবকাশ নেই। বরং যে ব্যক্তি তার কথা ও কাজের মাধ্যমে নিজেকে মুশরিক হিসেবে প্রকাশ করে, তাওহীদের পরিবর্তে শিরককে সঠিক হিসেবে সাব্যস্ত করে, যেমন স্পষ্টভাবে দাবি করে যে, কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে আল্লাহ শাফায়াতের ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন যে শাফায়াতের মাধ্যমে নিজ ইচ্ছামতো ব্যক্তিদেরকে মুক্তি পাইয়ে দিতে পারবে, তাহলে সে মুশরিক। অন্যদিকে যে শিরকী কথা ও কাজের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়, বরং কোনো না কোনোভাবে সে মুশরিক কিনা এ বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকে, তাকে মুশরিক করা সঠিক হবে না। কারণ আমাদেরকে তার স্পষ্ট অবস্থান সাপেক্ষেই মূল্যায়ন করতে হবে যেন আমরা কাউকে অযথা অভিযুক্ত করা থেকে দায়মুক্ত থাকতে পারি।
যখন কোনো ব্যক্তির সামনে সত্য স্পষ্ট হয় কিন্তু কোনো অগ্রহণযোগ্য কারণে সে সত্যকে গ্রহণের বিষয়ে অনচ্ছিুক হয় তখনই সে ঈমানকে প্রত্যাখ্যান করেছে হিসেবে সাব্যস্ত হয়। প্রকৃত মু’মিন ও কাফির একমাত্র আল্লাহর পক্ষেই জানা সম্ভব। অন্যদিকে মানুষকে এ বিষয়ে তাদের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাউকে মু’মিন ও কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। যারা নিজেকে মু’মিন বলে দাবি করে এবং সম্ভাব্য যাচাইয়ের মাধ্যমে তাদেরকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করার কোনো প্রমাণ পাওয়া না যায়, তাদেরকে মু’মিন হিসেবে মেনে নিতে হবে। অনুরূপভাবে যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে (বাস্তবে তার কাছে সত্য সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন) এবং তাদের কাছ থেকে এমন লক্ষণ প্রকাশ পায় যার মাধ্যমে সত্যের প্রতি তাদের অনীহা এবং বিরোধিতা প্রতীয়মান হয়, তাদেরকে কাফির হিসেবে সাব্যস্ত করতে হবে। অন্যদিকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেনি কিন্তু তারা পর্যবেক্ষণ করছে বলে প্রতীয়মান হয় তাদেরকে কাফির সাব্যস্ত করা যাবে না। যাদের ক্ষেত্রে সে মু’মিন বা কাফির বা সত্য বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছে কিনা বা এ বিষয়ে অপেক্ষমান কিনা কিছু জানা নেই, তাদের বিষয়ে ‘নো কমেন্ট’ অবস্থায় থাকতে হবে, তাদেরকে কাফির সাব্যস্ত করার প্রয়োজন নেই। কাউকে দাওয়াত দিলে অথচ সে তা গ্রহণ না করলে আবার মিথ্যা সাব্যস্ত না করলে তাকেও কাফির সাব্যস্ত করার প্রয়োজন নেই। বস্তুত তাদেরকেই কাফির সাব্যস্ত করতে হবে যাদের মধ্যে স্পষ্টভাবে কুরআনে উল্লেখিত কাফিরের বৈশিষ্ট্যাবলী পাওয়া যায়, যেমন তারা কুরআনের আদর্শ ধারণ করার কারণেই মু’মিনদেরকে আক্রমণ করে থাকে।
বাস্তবসঙ্গত কারণে মু’মিনরা অন্যদেরকে মু’মিন, কাফির, মুনাফিক বা সন্দেহজনক হিসেবে সাব্যস্ত করতে হয় এবং এক্ষেত্রে তারা তাদের সাধ্যমতো অন্যদের কাজকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসতে হয় (৬০:১০, ৪:৮৮-৮৯, ৪:৯৪, ৯:১০৫, ৯:১০৭-১০৮, ৯:১১৩, ৯:৮৪, ৩:১১৮, ৩:২৮)।
কাফিরদের মু’মিন স্ত্রীরা যদি তাদেরকে ছেড়ে মু’মিনদের কাছে হিজরত করে আসে তাহলে তাদেরকে কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠানো যাবে না বরং তারা এবং কাফিররা একে অন্যের জন্য অবৈধ হয়ে যাবে এবং অনুরূপভাবে মু’মিনদের কাফির স্ত্রীরা যদি কাফিরদের কাছে চলে যেতে চায় তাহলে তাদেরকে বিয়ে বন্ধনে আটকে রাখা যাবে না (দ্রষ্টব্য ৬০:১০-১১)।
৫:৫ আয়াতে মু’মিনদের জন্য আহলে কিতাবের খাদ্য এবং আহলে কিতাব সচ্চরিত্রা নারীকে বিয়ে করাকে হালাল করা হয়েছে। ‘আহলে কিতাব নারীকে বিয়ে করা’ হালাল হওয়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে মু’মিন নারী কোনো আহলে কিতাব পুরুষকে বিয়ে করাকে কোনো আয়াতে হারাম করা হয়নি বিধায়, তা পরোক্ষভাবে হালাল সাব্যস্ত হয়।
অন্যদিকে ২:২২১ ও ২৪:৩ আয়াতে শিরকের কারণে মুশরিকদের সাথে তাওহীদ বিশ্বাসীদের বৈবাহিক সম্পর্ককে অবৈধ করা হয়েছে। অন্যদিকে কুরআনের প্রতি অমু’মিন হলেও আহলে কিতাব আল্লাহর কিতাবকেই ধারণ করছে যা কুরআনের পুর্বে নাযিল হয়েছে এবং কুরআন স্বয়ং তার সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং সেই সাথে তারা তাওহীদের উপর রয়েছে।
যদি আহলে কিতাবের মধ্যকার কেউ একই সাথে আহলে কিতাব হয় এবং একই সাথে মুশরিক হয় তবে তারা নিরেট আহলে কিতাবের তালিকা থেকে বাদ যাবে এবং মুশরিক হওয়ার কারণে তাদের নারীকে বিয়ে করা যাবে না।
এটি এভাবেও বুঝা যেতে পারে যে, যে পশুকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম জবেহ করা হয় তা অবৈধ। অন্যদিকে আহলে কিতাবের খাদ্য বৈধ। এখন কোনো আহলে কিতাব যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে তবে ঐ পশু আহলে কিতাবের দ্বারা যবেহকৃত হলেও তা অবৈধ, কারণ এক্ষেত্রে আহলে কিতাব ব্যক্তিটি তার নিরেট অবস্থানে থাকেনি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যারা আল্লাহর কিতাবের বাহিরেও রসূল কোনো মূল বা স্থায়ী বিধান দিতে পারেন বলে বিশ্বাস করে এবং সেই প্রেক্ষিতে কোনো বিধান পালন করে তারা মু’মিন ও আহলে কিতাব হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে না, তারা মুশরিক।
যারা তাওহীদে বিশ্বাসী তথা আল্লাহর সাথে শিরক করে না তারা আহলে কিতাব হলেও তাদের নারীকে বিয়ে করা যাবে। অন্যদিকে যারা তাওহীদে বিশ্বাসী নয়, তারা বাহ্যত কুরআনকে বিশ্বাস করলেও কুরআনের পাশাপাশি দ্বিতীয় কোনো গ্রন্থকে (যা আল্লাহর কিতাব পদবাচ্য হতে পারে না) দ্বিতীয় মূল ও শাশ্বত বিধানগ্রন্থের মর্যাদা দিলে সেও মুশরিক।
সংক্ষেপে বলা যায়, আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, ক্ষমতা ও অধিকারের ক্ষেত্রে কাউকে কোনোরূপ অংশীদার সাব্যস্ত করাই শিরক এবং যাদেরকে আল্লাহর শরিক করা হয় তাদেরকে বলা হয় ‘শুরাকাউ’। শিরকের অন্যতম প্রায়োগিক রূপ হলো, মূল ও শাশ্বত বিধান প্রণয়নে কাউকে অংশীদার করা। এ বিষয়ে নিম্নের আয়াতটি লক্ষণীয়:
৪২:২১ :: তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? আর ফয়সালার ঘোষণা না থাকলে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েই যেত। আর নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
৪:২৫, ২৮:২৭, ২৪:৩২-৩৩, ২:২২১ ও ২৪:৩ আয়াতে বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের অভিভাবকত্বের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যেসব নারী-পুরুষ কোনো অভিভাবকের আওতায় রয়েছে তাদের বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিভাবকের উচিত তাদের অভিভাবকত্বে থাকা অবিবাহিত নারী-পুরুষের বিয়ের ব্যবস্থা করা এবং যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সংসার জীবন গড়ে দেয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক যোগান দেয়া। যে কারো অভিভাবকত্বের অধীনে রয়েছে তার বিয়ের ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে, ‘মা মালাকাত আইমান’ (আশ্রিত / আশ্রিতা) কাউকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে তার অভিভাবকের অনুমতি জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে কল্যাণকর হয় না। তবে অভিভাবকও অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত দেমাগের চেয়ে পাত্র-পাত্রীর পছন্দ-অপছন্দসহ বিভিন্ন বাস্তব পরিপ্রেক্ষিত ও কল্যাণের দিককে বিবেচনা করা উচিত এবং কোনোক্রমে পাত্র বা পাত্রীর সরাসরি অসম্মতি সত্ত্বেও কোনো বিবাহ সংঘটিত করা উচিত নয়।
যে ক্ষেত্রে পাত্র বা পাত্রী কোনো অভিভাবকের অভিভাবকত্বের অধীনে নয়, সেক্ষেত্রে সে কোনো অভিভাবক ছাড়াই বিয়ে করা অসঙ্গত নয়। বর যেমন কনেকে বিয়ে করে, তেমনি কনেও বরকে বিয়ে করে, যদিও এক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় বর ও কনের বিয়ে প্রসঙ্গে আলাদা শব্দ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কনে তার বরকে বিয়ে করার বিষয়টি ২:২৩০ আয়াতে সুস্পষ্ট, যাতে বলা হয়েছে- “তানকিহা জাওজা” (সে নারী কোনো বরকে বিয়ে করে)।
৪:৩ আয়াতে বিয়ের ক্ষেত্রে নিজ পছন্দের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে যে, “ফানকিহূ মা তবা লাকুম” (যে তোমার পছন্দনীয় হয় তাকে বিয়ে করো)।
৪:১৯ আয়াতে বলা হয়েছে, বলপ্রয়োগ করে নারীদের ওয়ারিস হওয়া বৈধ নয়। অর্থাৎ কোনো নারীর সম্পত্তির এবং ব্যক্তিসত্তাগত যোগ্যতা ও সিদ্ধান্তক্ষমতার ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী/ দখলদার হওয়ার জন্য কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করে কৃত্রিম সম্মতি আদায় করে বিবাহ করা বা কোনো নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ রাখা বা কোনো নারীকে বিবাহ করা থেকে বিরত রাখা বা কোনো নারীর সম্পদ কেড়ে নেয়া বা সে নিজে থেকে দিয়ে দিতে তাকে বাধ্য করা বা কোনো নারীকে তার সম্পদ তার ইচ্ছানুসারে বৈধ খাতে ব্যয়ে বাধা দেয়া বা অন্যায়ভাবে তার যোগ্যতা অনুসারে কাজ করতে তাকে বাধা দেয়া বা নিজেদের ইচ্ছামতো কোনো কাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য করা ইত্যাদি তোমাদের জন্য বৈধ নয়।
বিয়ে যেহেতু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটি মজবুত দাম্পত্য চুক্তি তাই বিয়েতে অবশ্যই বর-কনে উভয়ের পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে, কারো অমতে বা কোনোরূপ চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে কৃত্রিম সম্মতি আদায়ের মাধ্যমে বিয়ের ব্যবস্থা করা আল্লাহর বিধানে নিষিদ্ধ। কোনোক্রমে এরূপ বিয়ে সম্পাদন হলে সে বিয়ে বজায় রাখা না রাখার বিষয়ে বাস্তবসম্মত কল্যাণকর দিকগুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
৪:২১ আয়াতে বিয়েকে ‘মজবুত চুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ৪:২৪-২৫ ও ৫:৫ আয়াতে বলা হয়েছে যে, মোহরানা প্রদানের শর্তে বিয়ে করতে হবে, বৈবাহিক দুর্গে সংরক্ষিত হওয়ার জন্য, নিছক/সাময়িক যৌনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণের জন্য নয়। সুতরাং নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতিক্রমে ব্যভিচার যেমন একটি অবৈধ কর্ম ও সামাজিক অপরাধ; তেমনি সাময়িক দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমঝোতাক্রমে মোহরানার বিনিময়ে বিয়ে করাও অবৈধ। অর্থের বিনিময়ে যৌনকর্মের বা পতিতাবৃত্তির সাথে এর কোনো পার্থক্য নেই।
যারা ধর্মের নামে অধর্ম তৈরি করে তারা কখনো কখনো তাদের ধর্মবিরুদ্ধ অনাচারকেও ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে বৈধতা দেয়ার অপচেষ্টা করে। এর একটি নমুনা হলো ৪:২৪ আয়াতকে ‘মুতয়া বিয়ে’ নামক সাময়িক বিয়ের পক্ষে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা। আয়াতটির যে বাক্যকে তারা এজন্য অপব্যাখ্যা করে নিম্নে তা আলোচনা করা হলো।
৪:২৪ :: … সুতরাং তোমরা (বিয়ের মাধ্যমে) তাদের থেকে যা উপভোগ করবে তার বিনিময়ে তাদেরকে তাদের আবশ্যিক নির্ধারিত পারিতোষিক (মোহরানা) প্রদান করো। …
আয়াতটির এ বাক্যটির আরবি হলো: “ফামাছতামতা’তুম বিহী মিনহুন্না ফাআতূহুন্না উজূরাহুন্না ফারীদ্বাতান”।
আয়াতটিতে থাকা “ফামাছতামতা’তুম” শব্দটিকে ‘মুতয়া’ শব্দের একটি রূপান্তর এবং ‘মুতয়া’ অর্থ ‘সাময়িক বিয়ে’ বলে দাবি করার মাধ্যমে এ অপব্যাখ্যা করা হয় যে, “তাদেরকে মুতয়া (সাময়িক বিয়ের মাধ্যমে উপভোগ) করলে তাদের মোহরানা দিয়ে দাও”।
মুতয়া শব্দটি আরবিতে ‘সাময়িক বিয়ে’ অর্থে ব্যবহার করা ‘মুতয়া’ শব্দের একটি অপপ্রয়োগ হিসেবে প্রতীয়মান হয়। কারণ, ‘মুতয়া’ শব্দটির মূল অক্ষরসমূহ হলো ‘মীম ত্ব আইন’ এবং এর অর্থ হলো ‘প্রয়োজনীয় জিনিসাদি, গৃহসামগ্রী, তৈজসপত্র, ভোগসামগ্রী, ভরণপোষণ, উপভোগ করা, উপকৃত হওয়া’।
‘মীম ত্ব আইন’ থেকে কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলো হলো, ‘মাতা’ ও এর বহুবচন আমতিয়া’ (বিশেষ্য), ‘মাত্তা’ (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ২), তামাত্তায়া’ (ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ ৫) এবং ‘ইছতামতায়া’ (ক্রিয়ারূপ ১০)।
কুরআনে একবারের জন্যও ‘মুতয়া’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি।
৪:২৪ আয়াতের যে শব্দটিকে ‘মুতয়া’ বা সাময়িক বিয়ের জন্য তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয় তা হলো ‘মীম ত্ব আইন’ মূল অক্ষরসমূহ থেকে গঠিত ক্রিয়া, ক্রিয়ারূপ-১০ ‘ইছতামতায়া’। এ শব্দটি কুরআনে এ স্থানে ছাড়া আরও ৫ স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলো হলো: ৬:১২৮:১৫, ৯:৬৯:১১, ৯:৬৯:১৩, ৯:৬৯:১৬ এবং ৪৬:২০:১২। প্রতিটি স্থানে ‘ইছতামতায়া’ শব্দটি ‘উপকৃত হওয়া’ অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে এবং শব্দটির পরে ‘বি’ (দ্বারা) অব্যয় ব্যবহৃত হয়েছে, অর্থাৎ কোনো কিছুর দ্বারা বা কারো দ্বারা উপকৃত হওয়াকে বুঝানো হয়েছে।
৪:২৪ আয়াতে ব্যবহৃত ‘ফামাছতামতা’তুম বিহী মিনহুন্না’ শব্দগুচ্ছের প্রতিটি অংশের অর্থ নিম্নরূপ:
ফা = তারপর।
মা ….. বিহী = যা এমন যে, তা দ্বারা।
ইছতামতায়া = তোমরা উপভোগ করবে, তোমরা উপকৃত হবে।
মিনহুন্না = তাদের থেকে।
এখানে, পূর্বে আলোচিত, ‘আন তাবতাগূ বিআমওয়ালিকুম’ (তাদের কাউকে) ‘তোমরা তোমাদের মালসম্পদ দ্বারা সন্ধান করবে)’ এর সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে এ আয়াতাংশে উল্লেখিত ‘মা … বিহী’ বলতে বিবাহে স্ত্রীর সম্মতিকে বুঝানো হয়েছে, যার দ্বারা স্বামী তার স্ত্রী থেকে উপকৃত হবে বা দাম্পত্য সম্পর্ক উপভোগ করবে। অর্থাৎ বিয়েতে স্ত্রীর সম্মতির বিপরীতে বিয়ের শর্ত হিসেবে তাকে মোহরানা দিতে হবে, এটাই আয়াতটির মূল বক্তব্য।
আয়াতটিতে যে ‘সাময়িক বিয়ের’ বৈধতা দেয়া হয়নি, তার প্রমাণ হলো “ফামাছতামতা’তুম বিহী মিনহুন্না” বাক্যের পূর্বেই বলা হয়েছে, “গায়রা মুছাফিহীনা” অর্থাৎ “(তোমরা তোমাদের মালসম্পদের বিনিময়ে তাদেরকে স্ত্রী হিসেবে পেতে চাইতে পারবে কিন্তু) নিছক/সাময়িক যৌনসঙ্গী গ্রহণকারী হিসেবে নয়”। অন্য কথায় পারস্পরিক যৌনসঙ্গ যদিও স্বামী-স্ত্রীর একটি বৈধ অধিকার, কিন্তু নিছক এটি যেন বিয়ের উদ্দেশ্য না হয়, বরং বিয়ে হতে হবে এমন এক দৃঢ় চুক্তি যার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়, যে সম্পর্ক একমাত্র যৌন জীবনের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং যৌনক্ষেত্রে নিরাশ হয়ে যাবার পরও মৃত্যু পর্যন্ত একটা গভীর ভালবাসার সম্পর্ক। যদিও বিশেষ কারণে সংসার জীবনে তিক্ততা ঘটলে তালাকের অনুমোদন রয়েছে, কিন্তু তালাক দেয়া হবে এটা আগেই ঠিক করে নিলে সে বিয়ে কোনোক্রমেই বৈধ নয়, এমনকি তা বিয়েই নয়। নারীকে কিছু মোহরানা দিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য বিয়ে করার নাম বিয়ে দিলেও বাস্তবে এটা অর্থের বিনিময়ে ব্যভিচার। আর ব্যভিচার হারাম ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা অর্থের বিনিময়ে হোক বা অর্থের বিনিময় ছাড়াই পারস্পরিক সম্মতিক্রমে হোক। কোনো দাসীকেও বিয়ে করা ছাড়া, প্রকৃত দাম্পত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে, নিছক যৌনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
সুতরাং কুরআন অনুযায়ী বিয়ে হতে হবে স্থায়ী দাম্পত্য সম্পর্কের অভিপ্রায়সম্পন্ন চুক্তি এবং তা হবে মজবুত চুক্তি। কিন্তু যদি কোনো বাস্তবসঙ্গত কারণে এ চুক্তি রক্ষা করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে এমনকি বিয়ের পরপর এবং পরস্পরকে স্পর্শ করার আগেও তালাক তথা বৈবাহিক চুক্তি প্রত্যাহার করার অবকাশ রাখা হয়েছে, সেটি ভিন্ন বিষয়। বিয়ের পরপর তালাকের অবকাশ থাকাকে কোনোক্রমে ‘সাময়িক বিয়ে’র প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে না। কারণ কখনো এমন হতে পারে যে, স্থায়ী সম্পর্কের অভিপ্রায়ে বিয়ে করা হলো, কিন্তু তখনি এমন কোনো তথ্য প্রকাশ পেলো, যার প্রেক্ষিতে এমনকি স্পর্শ করার আগেই এ বিয়ে করাকে দুর্ঘটনা মনে করে সম্পর্ক রক্ষা না করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। এটা একটা দুর্ঘটনা। অন্যদিকে বিয়ের সময়ই ‘সাময়িক বিয়ে’র চুক্তি করা একটা পরিকল্পিত অপরাধ।
কুরআন অনুযায়ী বিয়ের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া আল্লাহর কর্তৃক নির্ধারিত আবশ্যিক বিধান। তবে তার পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে উভয় পক্ষের পারস্পরিক পরামর্শক্রমে। মোহরানা দিতে হবে স্বামী-স্ত্রী পরস্পর বিয়ের দুর্গে সংরক্ষিত হওয়ার জন্য, সাময়িক যৌনতা চরিতার্থ করার জন্য নয় এবং উপপত্নী হিসেবে গ্রহণ করার জন্যও নয়। (সম্পর্কিত আয়াতসমূহ ১৭:৩২, ২৪:১-৪, ২৪:৩৩, ৪:২৪, ৪:২৫, ৫:৫, ৪:২১)।
২:২৩৫ আয়াত অনুযায়ী, কাউকে গোপনে বিয়ের ওয়াদা দেয়া যাবে না। বিবাহের প্রস্তাবনা হতে হবে “ক্বাওলান মা’রূফ” (ন্যায়সঙ্গত বক্তব্য) অর্থাৎ তা প্রকাশ্য, সুস্পষ্ট ও ন্যায়প্রবণ হতে হবে। আর যেসব নারী ইদ্দাত অবস্থায় আছে তাদের ইদ্দাত সমাপ্ত হওয়ার আগে বিবাহ বন্ধনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। সুতরাং বিয়ে হতে হবে যথাযথ নিয়মবিধি অনুসরণ করে এবং তা গোপনীয় হবে না। এ বিষয়ে ৪:২৫ ও ৫:৫ আয়াতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, কাউকে গোপন স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
কুরআন অনুযায়ী বিয়েতে দুজন সাক্ষী রাখার আবশ্যকতা প্রতীয়মান হয়, যদিও তা পরোক্ষ বক্তব্য থেকে নির্ধারিত হয়। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো:
(১) বিয়েকে বলা হয়েছে "মীছাক্বান গালীযা" বা "মজবুত চুক্তি" (সূরা নিসা ৪:২১)। আবার বিয়ের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়ও জড়িত (সূরা নিসা ৪:২৪)। সুতরাং চুক্তি সম্পর্কিত দুই জন সাক্ষী রাখার ধারা (২:২৮২) বিবাহের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
(২) চারজন সাক্ষী থাকলে জিনা সাব্যস্ত হয় এবং জিনাকারীকে ১০০ বেত্রাঘাতের দণ্ডবিধি রয়েছে (সূরা নূর ২৪:১-৪)। যদি যাদেরকে জিনাকারী বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তারা পরস্পর বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী হওয়ার পক্ষে সাক্ষী আনতে পারে, তবে অবশ্যই তারা জিনাকারী হিসেবে সাব্যস্ত হওয়া থেকে অব্যাহতি পাবে। অন্যথায় শুধু তাদের দাবিটুকু তাদেরকে জিনাকারী সাব্যস্ত হওয়া থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। যদিও শাস্তির পর তাদের দাবির সাপেক্ষে দুজনকে সাক্ষী রেখে তাদেরকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ করে দেয়া যেতে পারে। কারণ জিনাকারীর জন্য জিনাকারিনীই উপযুক্ত এ হিসেবেও তারা পরস্পর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সব দিক থেকে ঠিক আছে (সূরা নূর ২৪:৩)। সাক্ষী ছাড়া তাদের দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ কাউকে গোপনভাবে (তথা সাক্ষী ছাড়া) স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করা বৈধ নয়, "ওয়া লা মুত্তাখিজী আখদান" (সূরা মায়িদাহ ৫:৫)।
(৩) তালাক এবং তালাকের প্রক্রিয়া শেষে মুফারাক্বাত (বিবাহ-বিচ্ছেদ) অথবা ইমছাক্ব (বিবাহ বন্ধনে রেখে দেয়া) এর ক্ষেত্রে দুজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিকে সাক্ষী রাখতে হবে (সূরা তালাক ৬৫:১-২)।
যেহতু বিবাহ হলো ইমছাক্ব বা বিয়ে বন্ধনে রেখে দেয়ার অনুরূপ বিষয়, তাই ইমছাক্বের ক্ষেত্রে দুজন সাক্ষী রাখার নির্দেশ বিবাহের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রযোজ্য। এজন্য বিবাহের ক্ষেত্রে দুজন সাক্ষীর নির্দেশ স্বতন্ত্রভাবে দেয়া হয়নি। কিন্তু অবশ্যই উল্লেখিত আয়াতসমূহের আলোকে বিবাহের ক্ষেত্রে দুজন সাক্ষী রাখার বিষয়টি সুসাব্যস্ত।
৪:২৫ ও ৫:২৫ আয়াত অনুযায়ী কাউকে উপপত্নী বা গোপন প্রণয়িনী হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। সুতরাং বিয়ের বিষয়টি সামাজিকভাবে জানাজানি হতে হবে। এজন্য বিয়েতে দুজন সাক্ষী রাখার বিষয়টির পাশাপাশি এর রেজিস্ট্রি ব্যবস্থাও অবলম্বন করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী বিভিন্ন আইনগত ও সামাজিক সুবিধা লাভ করতে পারবে এবং নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনাও সুষ্ঠু হবে। তাই যদিও রেজিস্ট্রিকে বিয়ের শর্ত করা হয়নি, তবুও বিয়ের সময় বা পরে রেজিস্ট্রি করা একটি উত্তম রীতি এবং বিয়ের বিষয়ে সামাজিক জানাশোনার জন্য অধিক উপযোগী পদ্ধতি। ২৪:৩৩ আয়াতে উল্লেখিত ‘কিতাব’ (চুক্তিপত্র) শব্দটি যেমন পূর্বাপর প্রসঙ্গ অনুসারে দাসমুক্তির চুক্তিপত্রের বিষয়ে প্রযোজ্য, তেমনি একই সাথে তা পূর্বাপর প্রসঙ্গ অনুসারে বিয়ের চুক্তিপত্র রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আবার সামর্থ্য থাকলে বিয়ে উপলক্ষ্যে বরের বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ানোর যে সামাজিক প্রথা প্রচলিত আছে, তাও সামাজিক জানাশোনা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে থাকে। ৩৩:৫৩ আয়াতে ‘নবীর বাড়িতে দাওয়াত বা নিমন্ত্রণ গ্রহণ করে খাদ্য গ্রহণের’ প্রসঙ্গে বিধিবিধান বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং কোনো উপলক্ষ্যে সমাজের লোকদেরকে ভুরিভোজ করানোর জন্য আমন্ত্রণ করা একটা সাধারণ সামাজিক রীতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তবে এক্ষেত্রে সামর্থ্য বিবেচনা করা প্রয়োজন এবং বিয়ে উপলক্ষে যেন অপচয় করা না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
৪:৩ আয়াতে বহুবিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করার শর্তারোপ করা হয়েছে। আয়াতটিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যদি স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারবে না বলে আশংকা করো তাহলে একটিমাত্র বিয়েই করবে। আবার ৪:১২৮-১২৯ আয়াতে জানানো হয়েছে যে, স্ত্রীদের মধ্যে হুবহু ইনসাফ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না, তাই যথাসাধ্য ইনসাফ করতে হবে, যেন এমন না হয় যে, একজনের দিকে বেশি ঝুঁকে গেছে এবং অন্যজনকে ঝুলন্ত সদৃশ রাখছে। অর্থাৎ মোটামুটি ইনসাফ করতে হবে। আর স্ত্রীদেরকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, যদি তারা আশংকা করে যে, স্বামী তাকে উপেক্ষা করছে বা ইনসাফের ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটছে, তাহলে এক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে কোনো সমঝোতা বা মীমাংসা করে নিলে এটাই উত্তম হবে। অর্থাৎ হুবহু ইনসাফের জন্য বাড়াবাড়ি করার চেয়ে বাস্তবসম্মতভাবে কোনো ধরনের সমঝোতার সুযোগ রয়েছে। বলা হয়েছে যে, মানবমনে সংকীর্ণতা বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং সংসার সুখের জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়কে সংকীর্ণতা অতিক্রমের চেষ্টা করতে হবে এবং একে অন্যের বাস্তব সুবিধা অসুবিধাকে বিবেচনা করতে হবে।
ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ছাড়া সাধারণভাবে বহুববিবাহ বৈধ কিনা এ বিষয়ে কারো কারো উপলব্ধি হলো, সাধারণভাবে বহুবিবাহ বৈধ নয়। নিম্নে তাঁদের উপস্থাপিত যুক্তিসমূহ পর্যালোচনা করা হলো:
(১) ৪:৩ আয়াতে ইয়াতীম ছেলেমেয়ের প্রতি সুবিচার করতে না পারার আশংকার শর্তে বহুবিবাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, “যদি তোমরা আশংকা করো যে, তোমরা ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে …”। সুতরাং যেখানে এই “যদি” বা “শর্ত” উপস্থিত নেই, সেখানে বহুবিবাহ বৈধ নয়।
পর্যালোচনা: আয়াতটিতে “যদি” শর্তটি বহুবিবাহের একটি নির্দিষ্ট প্রসঙ্গের সাথে সম্পর্কিত, যাতে “যদি ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে না পারার আশংকা থাকে” তাহলে ইয়াতীম সমস্যার সমাধানের একটি পদ্ধতি হিসেবে বিধবা নারীদেরকে বিয়ে করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, প্রয়োজনসাপেক্ষে একাধিক বিবাহ। কিন্তু আয়াতটিতে “এই শর্ত ছাড়া অন্য কোনো কারণে বহুবিবাহ করতে পারবে না” এরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। তাই এখানের শর্তটিকে বহুবিবাহের শর্ত হিসেবে সাব্যস্ত করা যায় না, বরং এখানের শর্তটি হলো একটি বিশেষ সমস্যামূলক পরিস্থিতির সমাধানের জন্য বর্ণনামূলক শর্ত। অর্থাৎ “যদি এরূপ সমস্যা হয়, তাহলে এরূপে সমাধান করো”। কিন্তু এর মানে এ নয় যে, “যদি এরূপ পরিস্থিতি হয়, তাহলেই শুধু তোমরা বহুবিবাহ করতে পারবে”। সুতরাং ইয়াতীম সমস্যার একটি সমাধান হিসেবে বহুবিবাহের নির্দেশনা রয়েছে, কিন্তু এর মাধ্যমে অন্যক্ষেত্রে বহুবিবাহকে অবৈধ করা হয়নি। কোনো বিষয়কে অবৈধ করা না হলে তা সাধারণভাবে বৈধ। সুতরাং বহুবিবাহ সাধারণভাবে বৈধ।
৪:৩ আয়াত ছাড়াও ৪:১২৮-১২৯ আয়াতে একাধিক স্ত্রীর মধ্যে ইনসাফ করার নির্দেশ রয়েছে এবং তাতে সাধ্যমতো ইনসাফ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এমনকি স্ত্রীদেরকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত সমঝোতা উত্তম। ৪:২৩ আয়াতে “দুই বোনকে একত্র করা”কে অবৈধ করা হয়েছে। সুতরাং যদি “দুই বোন” না হয় এমন নারীদেরকে “একত্র করা” তথা যাদেরকে বিবাহ করা বৈধ এমন একাধিক নারীকে বিবাহ করা সাধারণভাবে বৈধ।
বহুবিবাহের ক্ষেত্রে যেমন একাধিক স্ত্রীর মধ্যে ইনসাফ করার শর্ত রয়েছে, তেমনি বিবাহের জন্য শারীরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি-সামর্থ্যের শর্তও এতে স্বত:সিদ্ধভাবে প্রযোজ্য।
(২) ৪:১২৮-১২৯ আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, একাধিক স্ত্রীর মধ্যে হুবহু ইনসাফ করা সম্ভব নয়। যেহেতু ৪:৩ আয়াতে বহুবিবাহের জন্য ইনসাফের শর্ত রয়েছে, আর ৪:১২৮-১২৯ আয়াতে তা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সুতরাং ৪:৩ আয়াতটি ৪:১২৮-১২৯ আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে বা বহুবিবাহ অবৈধ হয়ে গেছে।
পর্যালোচনা: ৪:৩ আয়াতে ইয়াতীম সমস্যা সমাধানের একটি পদ্ধতি হসেবে ইনসাফের শর্তে বহুবিবাহের যে নির্দেশ রয়েছে তা কোনোক্রমেই ৪:১২৮-১২৯ আয়াত দ্বারা রহিত হয়নি। বরং ৪:১২৮-১২৯ আয়াত দ্বারা ইনসাফের শর্তের স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, হুবহু ইনসাফ করা বাস্তবে সম্ভব হবে না, তাই যথাসাধ্য ইনসাফ করতে হবে। ৪:১২৮-১২৯ আয়াতে বলা হয়নি যে, যেহেতু তোমরা হুবহু ইনসাফ করতে পারবে না, তাই এখন থেকে আর বহুবিবাহ করো না। বরং আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে যে, যেহেতু তোমরা হুবহু ইনসাফ করতে পারবে না, তাই যথাসম্ভব ইনসাফ করতে হবে, যেন এক স্ত্রীর দিকে বেশি ঝুঁকে না যাও এবং অন্য স্ত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থার মতো করে না রাখো। আর স্ত্রীদেরকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাস্তবসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত ধরনের সমঝোতা উত্তম হবে। সুতরাং ৪:১২৮-১২৯ আয়াতের মাধ্যমে বহুবিবাহ অবৈধ হওয়ার ধারণা সঠিক নয়। বরং বহুবিবাহ সাধারণভাবে বৈধ।
(৩) ৪:২০ আয়াতে বলা হয়েছে যে, “এক স্ত্রীর বদলে অন্য স্ত্রী আনলে তথা এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করলে বা অন্য কাউকে বিবাহ করলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী থেকে কোনো মোহরানা ফেরত নেয়া যাবে না, যদিও তাকে অঢেল সম্পদও মোহরানা বাবদ দেয়া হয়ে থাকে”। সুতরাং এ থেকে বুঝা যায় যে, এক স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করা যাবে, এক স্ত্রীকে দাম্পত্য সম্পর্কে রাখা অবস্থায় অন্য নারীকে বিবাহ করা যাবে না তথা বহুবিবাহ অবৈধ।
পর্যালোচনা: ৪:২০ আয়াতে “এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করলে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর থেকে মোহরানার কিছুই ফেরত নেয়া যাবে না, যদিও তাকে অঢেল সম্পদও মোহরানা দেয়া হয়ে থাকে” মর্মে নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এতে এক স্ত্রী থাকা অবস্থায় তাকে তালাক না দিয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করা যাবে না বা বহুবিবাহ অবৈধ এরূপ কোনো নির্দেশনা নেই। বস্তুত বহুবিবাহ বৈধ হওয়া সত্ত্বেও এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করা যায়। কিন্তু এর মানে এ নয় যে, এক স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করা যাবে না। সুতরাং যদি এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে অন্য নারীকে বিবাহ করা হয়, সে প্রসঙ্গে আয়াতটিতে করণীয় বা উচিত-অনুচিত সম্পর্কে জানানো হয়েছে। আয়াতটির মাধ্যমে দ্বিতীয় কোনো নারীকে বিবাহ করার জন্য পূর্বের স্ত্রীকে তালাক দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়নি। যেহেতু ৪:৩. ৪:২৩ প্রভৃতি আয়াত অনুযায়ী সাধারণভাবে বহুবিবাহ বৈধ, তাই ৪:২০ আয়াতের বক্তব্য দ্বারা বহুবিবাহের ক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি।
(৪) সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, বহুবিবাহ সাধারণভাবে বৈধ হলেও চার স্ত্রীর অধিক গ্রহণ করা বা চারের অধিক বিবাহ করা বৈধ নয়। এ বিষয়ে তথ্যসূত্র হিসেবে ৪:৩ আয়াতের উল্লেখ করা হয়, যাতে বলা হয়েছে “মাছনা ওয়া ছুলাছা ওয়া রুবায়া” `(বিয়ে করবে) দুই দুই, তিন তিন, চার চার’। যেহেতু আয়াতটিতে “চার চার” এর পর আর “পাঁচ পাঁচ” বলা হয়নি, তাই চারের অধিক বিয়ে করা অবৈধ। অন্য কথায়, আয়াতটিতে বহুবিবাহকে চার বিয়েতে সীমিত করে দেয়া হয়েছে।
পর্যালোচনা: “দুই দুই, তিন তিন, চার চার” বলতে ভাষারীতি অনুযায়ী একটা গাণিতিক ধারা বুঝায়, যাতে “পাঁচ পাঁচ, ছয় ছয়, …” ইত্যাদি না বলা সত্ত্বেও অন্তর্ভুক্ত এবং তা কোনো সর্বোচ্চ সংখ্যা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। এ বিষয়ে ৩৫:১ আয়াতটি লক্ষণীয় যাতে ফেরেশতাদের ডানা সম্পর্কেও বলা হয়েছে যে, তাদের ডানা রয়েছে “মাছনা ওয়া ছুলাছা ওয়া রুবায়া” (দুই দুই, তিন তিন, চার চার)। সেখানেও “চার চার” এর পর “পাঁচ পাঁচ” বলা হয়নি। কিন্তু এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কোনো কোনো ফেরেশতার দুই ডানা, কোনো ফেরেশতার তিন ডানা, কোনো ফেরেশতার চার ডানা আছে এবং কোনো কোনো ফেরেশতার আরো অধিক ডানা থাকতে পারে, যা আয়াতটির ভাষারীতি থেকে বুঝা যায় এবং যে ফেরেশতার ডানাসংখ্যা সবচেয়ে বেশি তার ডানাসংখ্যা কত, তা আমাদের কাছে অজ্ঞাত সংখ্যা।
বস্তুত বহুবিবাহের শর্ত রক্ষা করলে দুই বিয়ে, তিন বিয়ে, চার বিয়ে সবই গ্রহণযোগ্য, অন্যদিকে বহুবিবাহের শর্ত রক্ষা না করলে শুধু তিন বিয়ে বা চার বিয়ে নয়, বরং দুই বিয়েও অগ্রহণযোগ্য। সুতরাং বহুবিবাহের বিষয়ে মোট কতটি বিবাহ করা যাবে তার গুরুত্ব নেই, বরং বহুবিবাহের ক্ষেত্রে শারীরিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য এবং স্ত্রীদের মধ্যে ইনসাফ করতে পারার শর্তই গুরুত্বপূর্ণ।
(ঙ) সাধারণত উন্নত মনমানসিকতা সম্পন্ন মানুষ এক বিয়েকে পছন্দ করে, বহুবিবাহকে নয়। তাই বহুবিবাহের সাধারণ বৈধতা নেই, শুধুমাত্র ইয়াতীম ছেলেমেয়েদের সমস্যার সমাধানের সাথে সম্পর্কিত অবস্থায় তা বৈধ।
পর্যালোচনা: কোনো বিষয়ের বৈধতা থাকার মানে তা করতেই হবে এরূপ নয়। তাই বহুবিবাহের বৈধতা থাকা সত্ত্বেও অনেক মুসলিম এক বিবাহ করে এবং এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু ইয়াতীম সমস্যার সমাধানের একটি পদ্ধতি হিসেবে যেমন বহুবিবাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তেমনি এই সমস্যাসহ বিভিন্ন বাস্তবসম্মত কারণে বহুবিবাহের বৈধতা রয়েছে। বাস্তবভিত্তিক চিন্তা করলে এর আরো যেসব যৌক্তিক কারণে বহুবিবাহের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে বলে বুঝা যায় তার মধ্যে কয়েকটি হলো:
(ক) সামাজিক কারণ:
১. নারী-পুরুষের সংখ্যাগত ভারসাম্যহীনতার কারণে এর প্রয়োজন হতে পারে,
২. যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি পুরুষ মারা গেলে এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে,
৩. অভিভাবকহীন অবিবাহিতা নারী বা বিধবাকে বিয়ে করার মাধ্যমে তার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য,
৪. বৈবাহিক সম্পর্কের প্রসারের মাধ্যমে সমাজ কাঠামোর সংহতির প্রয়োজনে।
(খ) ব্যক্তিগত কারণ:
১. স্বামী সন্তান চাইলে এবং স্ত্রী বন্ধ্যা হলে,
২. স্ত্রী দীর্ঘমেয়াদি সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে,
৩. স্ত্রী অতিরিক্ত বিরাগভাজন হলে,
৪. পেশাগত কারণে অধিক সময় প্রবাসে কাটাতে হলে,
৫. অতিরিক্ত পৌরুষের অধিকারী হওয়া এবং স্ত্রীর তুলনায় স্বামীর বার্ধক্য খুব বিলম্বিত হওয়ার প্রেক্ষিতে।
৪:২৪ আয়াত অনুযায়ী, কোনো সধবাকে বিবাহ করা অবৈধ। অর্থাৎ কোনো নারী একই সাথে (এক স্বামী জীবিত থাকতে তার সাথে তালাক হওয়া ছাড়া) একাধিক স্বামী গ্রহণ করা অবৈধ।
যদি কোনো নারী কোনো বাস্তবসম্মত কারণে তার বর্তমান স্বামী ছাড়া অন্য কোনো পুরুষকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করতে হয় তাহলে প্রথমে বর্তমান স্বামীর সাথে তালাক হতে হবে। এক্ষেত্রে যদি নারী নিজেই তালাক চায় এবং পুরুষ তা চায় না এরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে, তবে নারীটি আদালতের মাধ্যমে তালাক ঘটাতে পারে।
প্রশ্ন হলো, পুরুষকে যেমন একাধিক বিবাহের বৈধতা দেয়া হয়েছে, নারীকে তা না দেয়ার বাস্তবসম্মত যুক্তি কী? এক্ষেত্রে প্রথম কথা হলো, এর বাস্তব যুক্তি যা-ই হোক এবং তা উপস্থিত থাকুক বা না থাকুক উভয় অবস্থায় যেহেতু নারীরা বহুবিবাহ করা অবৈধ করা হয়েছে, তাই এটি অবৈধ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
তবুও চিন্তা করলে এর কিছু বাস্তবসম্মত যুক্তি বুঝা যায়। যথা:
১. সন্তানের পিতৃত্বের সমস্যা, প্রতি ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে, যা স্বাভাবিক বিশ্বাসগত সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি করবে।
২. একাধিক স্বামীর সাথে সংসার নির্বাহ করা নারীর জন্য অসুবিধার হবে।
৩. পরিবার প্রধান কে হবে? স্ত্রী নাকি একাধিক স্বামী?, এ বিষয়ে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
৪. একজন পুরুষের দ্বারা একাধিক স্ত্রী গর্ভবতী হতে পারে, কিন্তু একজন নারী শুধু একজন পুরুষের দ্বারাই গর্ভবতী হতে পারে। এ অবস্থায় একাধিক স্বামীর এক স্ত্রী হলে তারা কয়েকজন স্বামীই স্ত্রীর গর্ভকালীন সময় স্ত্রীমিলন থেকে দীর্ঘদিন বিরত থাকতে হবে।
৫. একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকার মধ্যে যৌন ব্যাধির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী হলে যৌন ব্যাধির সম্ভাবনা রয়েছে।
আল কুরআনের আলোকে বিবাহ হলো দাম্পত্য সম্পর্কের মজবুত চুক্তি। তা সত্ত্বেও কোনো বাস্তবসম্মত কারণে বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে, সেক্ষেত্রে কুরআনে বিবাহ বিচ্ছেদকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং সেজন্য বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া হিসেবে তালাকের বিধান প্রদান করা হয়েছে। তালাকের বিধান অনুসারে বিবাহ বিচ্ছেদ কোনো আকস্মিক ঘটনা হিসেবে সংঘটিত হতে পারে না। বরং তালাকের যৌক্তিকতা নিরূপণ এবং বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার একটি উপায় হিসেবে স্বামীর পরিবার-পরিজনের মধ্য থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার-পরিজনের মধ্য থেকে একজনকে ‘হাকাম’ বা বিচক্ষণ মীমাংসাকারী হিসেবে নিযুক্ত করতে হবে। তারা প্রথমে চেষ্টা করবে উভয় পক্ষের মধ্যে সংশোধন করে দেয়ার জন্য। যদি তাদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয় তাহলে তালাক প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ক্ষেত্রে তুলনামূলক প্রত্যক্ষ অধিকার রাখে এবং স্ত্রীও তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে তা হবে আদালতের অনুমোদন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষী রেখে তালাক দিতে হবে। অর্থাৎ সাক্ষীগণ অন্তত এমন হতে হবে যে, তারা কখনো আদালত কর্তৃক অন্যায়কারী বলে সাব্যস্ত হয়নি। তালাক মানেই বিবাহ বিচ্ছেদ (মুফারাক্বাত) নয়, বরং তালাক হলো বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ার সূচনা নির্দেশক দাম্পত্য চুক্তি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত।
তালাকের ক্ষেত্রে একটি প্রধান বিধান হলো, তালাক দিতে হবে ‘ইদ্দাতের শর্ত পূরণ করে’। অর্থাৎ তালাকের পর স্ত্রী যথানিয়মে ইদ্দাত পালন করতে পারে এবং ইদ্দাতকালীন সময়ে যেসব বিধিবিধান পরিপালন করতে হবে তা নিশ্চিত করে তালাক কার্যকর করতে হবে। ইদ্দাতকালীন সময়ে স্ত্রীকে স্বামীর বসবাসের অনুরূপ সুযোগসুবিধাসম্পন্ন গৃহে বা কক্ষে থাকতে দিতে হবে এবং এ সময়কালে তার ভরণপোষণের দায়িত্ব তালাকদাতা স্বামীকেই পালন করতে হবে। যদি দুগ্ধপোষ্য সন্তান থাকে তাহলে সন্তানকে দুধপান করানো বাবদ স্ত্রীকে আলাদা পারিতোষিক দিতে হবে। এছাড়া যদি কোনো দুধমায়ের মাধ্যমে দুধপান করানো হয় তাহলে ঐ দুধমাকেও ঐ সময়কালে ভরণপোষণ ও পারিতোষিক দিতে হবে। সন্তানের ভবিষ্যত কল্যাণ প্রশ্নে উভয় পক্ষের সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
তালাকপ্রাপ্তাকে মোহরানাবাবদ অঢেল সম্পদ দিয়ে থাকলেও তার থেকে তা ফেরত নেয়া যাবে না। ইদ্দাত শেষ হলে বিবাহ বিচ্ছেদ (মুফারাক্বাত) ঘটবে এবং বিদায়ের সময় স্ত্রীকে কিছু ভোগসামগ্রী দিয়ে উত্তমভাবে বিদায় দিতে হবে। ইদ্দাতকালের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী চাইলে তালাক প্রত্যাহার করতে পারে অথবা ইদ্দাত শেষে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে যাওয়ার পর নিজেদের মধ্যে পুনর্বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে। অবশ্য এক্ষেত্রে স্ত্রীর উপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, সে চাইলে তার পূর্বস্বামীর সাথে পুনর্বিবাহ নাও করতে পারে অথবা অন্য কাউকেও বিয়ে করতে পারে। তালাকের পর ইদ্দাতকালে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া বা ইদ্দাত শেষে পুনর্বিবাহ করার সুযোগসম্পন্ন স্বাভাবিক তালাক দুইবার হতে পারে। এরপরও যদি ঐ স্বামী তার ঐ স্ত্রীকে তৃতীয়বার তালাক দেয় তাহলে আর এ সুযোগ থাকবে না।(৪)
(৪) তালাকের বিষয়ে আমাদের সংকলিত, ‘দি ইনস্টিটিউট ফর কুরআনিক রিসার্চ এন্ড এ্যাপ্লিকেশন [ইক্বরা]’ প্রকাশিত ‘আল কুরআনের আলোকে তালাক’ বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে।