৪:১১ আয়াতে প্রথমেই পুত্র-কন্যার আনুপাতিক অংশ উল্লেখ করা হয়েছে। পুত্র-কন্যার আনুপাতিক অংশ অনুধাবনের জন্য প্রথমে সংশ্লিষ্ট আয়াতটিতে ব্যবহৃত কিছু শব্দের প্রয়োগগত তাৎপর্য জেনে নেয়া প্রয়োজন। তাই নিম্নে শব্দগুলো সম্পর্কে ভাষাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণাত্মক তথ্য উল্লেখপূর্বক পুত্র-কন্যার আনুপাতিক অংশ নির্ণয়ের নীতিমালা আলোচনা করা হলো:
এ বিষয়ে প্রথমে পুত্র-কন্যাকে বুঝানোর জন্য আয়াতটিতে ব্যবহৃত ‘আওলাদ’ শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। ‘আওলাদ’ শব্দটির শব্দমূল হলো: ‘ওয়াও লাম দাল’। শব্দটি ‘ওয়ালাদ’ শব্দের বহুবচন। ওয়ালাদ শব্দের অর্থ সন্তান। বাংলা ভাষায় ‘সন্তান’ শব্দটি দ্বারা যেমন পুত্রকেও বুঝায়, কন্যাকেও বুঝায়, আরবি ‘ওয়ালাদ’ শব্দটিও অনুরূপ।
উত্তরাধিকারের নির্ধারিত বণ্টন বিধি বুঝার জন্য আওলাদ, ওয়ালাদ এবং অনুরূপ কিছু শব্দের একবচন ও বহুবচন ব্যবহারের কারণ এবং কোন ক্ষেত্রে এর দ্বারা একজন, দুইজন বা বহুজনের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে তা জানা প্রয়োজন। তাই নিম্নে আরবি ভাষারীতিতে বচনের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।
একবচনের ব্যবহার:
১. সুনির্দিষ্টভাবে একবচন বুঝানোর জন্য একবচন ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যখন দ্বিবচন বা বহুবচনের সাথে তুলনামূলক অবস্থায় একবচন ব্যবহৃত হয় তখন এর দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে একবচন বুঝানো হয়।
২. সাধারণভাবে এক বা একাধিক বুঝানোর জন্য একবচন ব্যবহৃত হয়।
৩. একটি শ্রেণিভুক্ত ‘প্রত্যেক’ বা ‘কোনো’ বুঝানোর জন্য একবচন ব্যবহৃত হয়।
দ্বিবচনের ব্যবহার:
১. সুনির্দিষ্টভাবে দ্বিবচন বুঝানোর জন্য দ্বিবচন ব্যবহৃত হয়।
বহুবচনের ব্যবহার:
১. সুনির্দিষ্টভাবে বহুবচন বুঝানোর জন্য বহুবচন ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে যখন একবচন বা দ্বিবচনের সাথে তুলনামূলক অবস্থায় বহুবচন ব্যবহৃত হয় তখন এর দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে বহুবচন বুঝানো হয়।
২. যখন প্রসঙ্গ অনুসারে বহুবচনকে প্রাথমিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন হয়, যদিও বাস্তবসম্মত কারণে কখনো ঐ বহুবচনটির বদল (প্রতিনিধিত্বকারী) হিসেবে একবচন বা দ্বিবচনের অবকাশ থাকে, তখন বহুবচন ব্যবহৃত হয়।
আরবি ভাষারীতিতে বচনের ব্যবহার বিধি অনুসারে ৪:১১ আয়াতে প্রথমে ‘আওলাদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ এর অব্যবহিত প্রসঙ্গ হচ্ছে, একটি পুত্র ও দুইটি কন্যার তুলনামূলক অবস্থা তথা বহুবচন। কিন্তু পরবর্তীতে ৪:১১, ৪:১২ ও ৪:১৭৬ আয়াতে প্রতিবার ‘ওয়ালাদ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
৪:১১ আয়াতে পুত্র না থাকা অবস্থায় এক বা একাধিক কন্যাকে ‘আওলাদ’ শব্দের প্রতিনিধিত্বকারী অবস্থানে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বুঝা যায় যে, পুংলিঙ্গের বহুবচন ব্যবহৃত হলেও বাস্তবসম্মত কারণে কখনো কখনো এক বা একাধিক নারী সে শব্দের প্রতিনিধিত্বকারী হতে পারে।
দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যার অংশ বর্ণনার জন্য যে আরবি বাক্যাংশ ব্যবহৃত হয়েছে তা হলো ফাওক্বাছনাতাইনি। ফাওক্বাছনাতাইনি বাক্যাংশে দুইটি শব্দ রয়েছে, ১. ফাওক্বা ২. ইছনাতাইনি। ফাওক্বা শব্দের প্রধান দুটি অর্থ হলো, ১. উপরে (above, over), ২. সমেত তদুর্ধ্ব, অন্তত বা অন্যুন (across, above from or at least)। ইছনাতাইনি শব্দের অর্থ হলো ‘দুইজন’। ৪:১১ আয়াতের পূর্বাপর প্রসঙ্গ অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, এতে ফাওক্বা শব্দটি দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
৪:১১ আয়াতে কন্যাদের অংশ বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রথমে দুইয়ের বেশি বা দুই (ফাওক্বাছনাতাইনি) কন্যার অংশ বর্ণনা করা হয়েছে, তারপর একটিমাত্র (ওয়াহিদাতান) কন্যার অংশ বর্ণনা করা হয়েছে। আয়াতটিতে কন্যাদের সংখ্যা বর্ণনার পদ্ধতি হলো ঊর্ধ্বক্রম থেকে নিম্নক্রমে। ভাষারীতির উৎকর্ষ ও সংক্ষেপায়নের জন্য ফাওক্বাছনাতাইনি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার বিস্তৃত অর্থ হলো দুইয়ের বেশি কন্যা বা অন্তত দুই কন্যা। অর্থাৎ শব্দটিতে বহুবচনকে প্রাথমিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং দ্বিবচনের প্রসঙ্গকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে পূর্ণ বাক্যের মূল প্যাটার্ন হিসেবে বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে।
৪:১১ আয়াতটিতে পুত্র-কন্যার অংশ বর্ণনায় তিনটি ধারা প্রদান করা হয়েছে। যথা:
১. এক পুত্রের জন্য দুই কন্যার অংশের অনুরূপ।
২. পুত্র নেই, শুধু কন্যারা আছে, যাদের সংখ্যা দুই বা দুইয়ের বেশি তাহলে তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ হলো ২/৩ ।
৩. পুত্র নেই, শুধু একটি কন্যা আছে, তাহলে তার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/২ ।
প্রথম ধারাটির তাৎপর্য হলো দুই কন্যা একসাথে যে আনুপাতিক ভগ্নাংশ পায় তাদের সেই সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশই হবে এক পুত্রের আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
দ্বিতীয় ধারাটির তাৎপর্য হলো পুত্র না থাকা অবস্থায় শুধু দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যা থাকলে তারা একসাথে পাবে তথা তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ ।
প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে যে, আয়াতটিতে নিম্নোক্ত অবস্থায় পুত্র-কন্যাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আনুপাতিক ভগ্নাংশ উল্লেখ করা হয়নি:
১. যখন কন্যা নেই কিন্তু এক বা একাধিক পুত্র আছে, তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
২. যখন পুত্র ও কন্যা উভয়ে থাকে তখন তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৩. একটিমাত্র পুত্র ও একটিমাত্র কন্যা থাকলে পুত্র কন্যার মধ্যকার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৪. একাধিক পুত্র ও একটি কন্যা থাকলে তাদের মধ্যকার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতিতে কারো আনুপাতিক ভগ্নাংশ অনির্ধারিত থাকতে পারে না এবং তাই আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক পুরুষ ও নারী উত্তরাধিকারী নির্ধারিত হারে প্রাপ্য অংশ পাবে (৪:৭)।
সুতরাং উপরের চারটি সমস্যায় অবশ্যই আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারিত রয়েছে। তবে তা তথ্য ও সূত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে।
এক পুত্রের জন্য দুই কন্যার অংশের অনুরূপ তথ্যটির তাৎপর্য হলো একটি কন্যাকে দুইটি কন্যার অনুরূপ হিসেবে ধরে নিয়ে সেভাবে আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ণয় করতে হবে। যখন পুত্র-কন্যা একসাথে রয়েছে এবং যখন শুধু পুত্র বা পুত্ররা রয়েছে উভয় অবস্থায় সূত্রটি প্রযোজ্য হবে।
পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ণয়ের সূত্রটি ব্যবহার করে নিম্নে সমস্যাগুলোর সমাধান করা হলো:
(এক) যখন কন্যা নেই, তখন এক বা একাধিক পুত্র থাকলে তাকে বা তাদেরকে দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যার মতো হিসেবে ধরতে হবে। যেহেতু দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ হলো ২/৩ । সুতরাং কন্যা না থাকা অবস্থায় এক বা একাধিক পুত্র থাকলে তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ ।
(দুই) যখন পুত্র ও কন্যা উভয়ে আছে তখন পুত্রকে দুই কন্যার মতো হিসেবে ধরতে হবে। যেহেতু দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ হলো ২/৩ । সুতরাং যখন পুত্র ও কন্যা উভয়ে থাকে তখন তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ । তারপর পুত্র কন্যার মধ্যে এই ২/৩ অংশকে এভাবে বণ্টন করতে হবে যে, এক পুত্রকে দুই কন্যার মতো হিসেবে ধরে কন্যাদের সংখ্যা যোগ করে প্রত্যেক কন্যা এক ভাগ এবং প্রত্যেক পুত্র দুই ভাগ পাবে। যেমন এক পুত্র ও দুই কন্যা থাকলে নিম্নোক্তভাবে হিসেব করতে হবে:
এক পুত্র = দুই কন্যা
দুই কন্যা = দুই কন্যা
সুতরাং মোট চার কন্যা হিসেবে ধরে তাদের প্রাপ্য অংশকে চারভাগ করতে হবে। তা থেকে প্রত্যেক কন্যা এক ভাগ পাবে এবং পুত্রটি দুই ভাগ পাবে।
(তিন) একটিমাত্র পুত্র ও একটিমাত্র কন্যা থাকলে পুত্রটিকে দুইটি কন্যার মতো বিবেচনা করতে হবে। যেহেতু দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ হলো ২/৩ । তাই একটিমাত্র পুত্র ও একটিমাত্র কন্যা থাকলে তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ । তারপর পুত্র কন্যার মধ্যে এই ২/৩ অংশকে এভাবে বণ্টন করতে হবে যে, এক পুত্রকে দুই কন্যার মতো হিসেবে ধরতে হবে। সুতরাং তাদের প্রাপ্য অংশকে তিন ভাগ করতে হবে। তা থেকে কন্যাটি এক ভাগ এবং পুত্রটি দুই ভাগ পাবে।
(চার) একাধিক পুত্র ও একটি কন্যা থাকলে প্রত্যেক পুত্রকে দুইটি কন্যার মতো হিসেবে ধরতে হবে। যেহেতু দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ । তাই একাধিক পুত্র ও একটি কন্যা থাকলে তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ । তারপর পুত্র কন্যার মধ্যে এই ২/৩ অংশকে এভাবে বণ্টন করতে হবে যে, প্রত্যেক পুত্রকে দুই কন্যার মতো হিসেবে ধরতে হবে এবং সেই সাথে কন্যাটিকেও বিবেচনা করা হবে। এভাবে হিসেব করা কন্যা সংখ্যার যোগফল দিয়ে তাদের প্রাপ্য অংশকে ভাগ করা হবে। তা থেকে কন্যাটি এক ভাগ পাবে এবং প্রত্যেক পুত্র দুই ভাগ করে পাবে।
পুত্র না থাকা অবস্থায় একটিমাত্র কন্যা থাকলে তার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে ১/২ । এটি একটিমাত্র পুত্র থাকলে তার আনুপাতিক ভগ্নাংশ (২/৩ ) এর অর্ধেকের চেয়ে বেশি। তাই মূল সুত্রটিকে একটি পুত্রের জন্য একটি কন্যার অংশের দ্বিগুণ বলে উল্লেখ না করে একটি পুত্রের জন্য দুইটি কন্যার অংশের অনুরূপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ সর্বাবস্থায় একটি পুত্রের অংশ দুইটি কন্যার অনুরূপ, কিন্তু সর্বাবস্থায় একটি পুত্রের অংশ একটি কন্যার দ্বিগুণ নয়।
পুত্র-কন্যার আনুপাতিক অংশের সূত্রটি হচ্ছে একটি পুত্রের জন্য দুইটি কন্যার অংশের অনুরূপ। সূত্রটি এভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো কন্যাদের আনুপাতিক অংশ সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু পুত্রদের আনুপাতিক অংশ কন্যাদের আনুপাতিক অংশের সাথে তুলনামূলক পদ্ধতিতে নির্ণয় করতে হবে। এভাবে পুত্রদের প্রাপ্য অংশ নির্ধারণে নারীদের প্রাপ্য অংশকে ভিত্তি বানানো হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত সম্পত্তি বা উত্তরাধিকারের প্রশ্নে নারী অধিকারের গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
একটি পুত্রের জন্য দুইটি কন্যার অংশের অনুরূপ এবং দুইটি কন্যার জন্য একটি পুত্রের অংশের অনুরূপ বাক্য দুটি সমার্থক। কিন্তু সূত্রটিতে প্রথম বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে, দ্বিতীয় বাক্যটি নয়। এভাবে ভিত্তিমূলক আনুপাতিক অংশ হিসেবে নারীর প্রাপ্য অংশকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বক্তব্যভঙ্গির মাধ্যমে নারী অধিকারের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং নারীর প্রাপ্তিকে প্রথমে নিশ্চিত করা বা অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
একটি পুত্রের জন্য দুইটি কন্যার অংশের অনুরূপ হলেও সর্বাবস্থায় একটি কন্যার জন্য একটি পুত্রের অংশের অর্ধেক নয়। যেমন, পুত্র না থাকা অবস্থায় একটিমাত্র কন্যা থাকলে তার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/২ । এটি একটিমাত্র পুত্র থাকলে তার আনুপাতিক ভগ্নাংশ (২/৩ ) এর অর্ধেকের চেয়ে বেশি।
একটিমাত্র কন্যার জন্য আলাদাভাবে অংশ নির্ধারণের যৌক্তিকতা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে বুঝা যায় যে, এর মাধ্যমে যেমন সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকারকে নিশ্চিত করা হয়েছে, তেমনি অন্য কোনো পুত্র-কন্যা না থাকায় তার তুলনামূলক অসহায়ত্বের সাধারণ অবস্থাকে বিবেচনা করে তাকে উত্তরাধিকার বণ্টনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
৪:১১ আয়াতে বর্ণিত পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ সম্পর্কিত মূল ধারাসমূহ হলো:
১) মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান থাকলে তার পিতা-মাতা দুজনের মধ্য থেকে প্রত্যেকে বা দুইজনের মধ্য থেকে যে-ই থাকুক সে পাবে ১/৬ । অন্য কথায়, পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ , মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
২) মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকলে এবং এ অবস্থায় তার পিতা-মাতা তার উত্তরাধিকারী হলে তার মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ ।
৩) মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকলে কিন্তু ভাই-বোন থাকলে তার মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধারার সমন্বিত তথ্য অনুযায়ী, দ্বিতীয় ধারাটির তাৎপর্য হলো: মৃত ব্যক্তির সন্তানও নেই, ভাই-বোনও নেই, এ অবস্থায় মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ । কিন্তু মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই তবে ভাই-বোন আছে, এ অবস্থায় মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
লক্ষণীয় যে, সন্তান থাকলে মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ যেমন ১/৬ , সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে সেক্ষেত্রেও মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ । অর্থাৎ সন্তান না থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভাই-বোন জীবিত থাকা, না থাকা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। এক্ষেত্রে ভাই-বোনের প্রভাব সন্তানের প্রভাবের অনুরূপ।
তৃতীয় ধারাতে ভাই-বোন থাকা বলতে এক বা একাধিক ভাই বা বোন বা ভাই-বোন থাকাকে বুঝানো হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে যে, আয়াতটিতে নিম্নোক্ত অবস্থায় পিতা-মাতার কোনো নির্দিষ্ট আনুপাতিক ভগ্নাংশ উল্লেখ করা হয়নি:
১) মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই কিন্তু শুধুমাত্র পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী নয়, বরং স্বামী/স্ত্রীও আছে, এ অবস্থায় পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
২) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৩) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা দুজনের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৪) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৫) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে এবং পিতা-মাতা দুজনের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৬) মৃত ব্যক্তির সন্তানও নেই, ভাই-বোনও নেই কিন্তু স্বামী/স্ত্রী আছে, এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৭) মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই, ভাই-বোন জীবিত আছে এবং স্বামী/স্ত্রীও জীবিত আছে, এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতিতে কারো আনুপাতিক ভগ্নাংশ অনির্ধারিত থাকতে পারে না এবং তাই আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন যে, প্রত্যেক পুরুষ ও নারী উত্তরাধিকারী নির্ধারিত হারে প্রাপ্য অংশ পাবে (৪:৭)।
সুতরাং উপরের সাতটি পরিস্থিতির ক্ষেত্রেও অবশ্যই আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারিত রয়েছে। তবে তা তথ্য ও সূত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে।
আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ
এ প্রসঙ্গে আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতির নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লক্ষ রাখতে হবে:
ক) যখন কোনো পরিস্থিতিতে (তথা উপস্থিত ওয়ারিসদের শ্রেণিসংখ্যার প্রেক্ষিতে) শ্রেণিগত আনুপাতিক ভগ্নাংশসমূহের সমষ্টি ১ হয় তখন শ্রেণিগত আনুপাতিক ভগ্নাংশ এবং প্রকৃত প্রাপ্য অংশ একইরূপ হয়। কিন্তু যখন কোনো পরিস্থিতিতে শ্রেণিগত আনুপাতিক ভগ্নাংশসমূহের সমষ্টি ১ এর চেয়ে বেশি হয় বা কম হয় তখন নরমালাইজেশন (অর্থাৎ ভগ্নাংশগুলোর সমষ্টিকে ১ ধরে সকল অনুপাতকে তার সাপেক্ষে প্রকাশ) করতে হয়। নরমালাইজেশনের কারণে প্রত্যেকের আনুপাতিক ভগ্নাংশ একই থাকে কিন্তু আনুপাতিক ভগ্নাংশ বজায় রেখে প্রাপ্য প্রকৃত অংশকে বাহ্যত আনুপাতিক ভগ্নাংশের চেয়ে কম বা বেশি মনে হয়।
খ) যদি দুটি শ্রেণিকে প্রাপক হিসেবে নির্ধারণ করা হয় এবং তার একটি শ্রেণির আনুপাতিক ভগ্নাংশ উল্লেখ করা হয় কিন্তু অন্য শ্রেণির আনুপাতিক ভগ্নাংশ অনুক্ত থাকে, অথচ আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ সম্পদকে বণ্টন করার নির্দেশ থাকে; তাহলে উক্ত ও অনুক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশের সমষ্টি ১ ধরতে হবে। অর্থাৎ ১ থেকে উক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশকে বিয়োগ করে প্রাপ্ত বিয়োগফলই হবে অনুক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
গ) যে শর্তে কোনো আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারিত হয়, ঐ শর্তের পরিবর্তে অন্য শর্তের মাধ্যমে নির্ধারিত অন্য আনুপাতিক ভগ্নাংশ প্রযোজ্য না হলে; একই শর্তের মধ্যে থাকা অবস্থায় শ্রেণিসংখ্যার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটলেও নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ স্থির থাকে।
অনুসিদ্ধান্ত প্রয়োগের মাধ্যমে সমাধান নির্ণয়
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগত তথ্য এবং আয়াতের বক্তব্য থেকে প্রাপ্ত অনুসিদ্ধান্ত প্রয়োগের মাধ্যমে নির্ণেয় পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশসমূহের সমাধান নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
১) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই কিন্তু শুধুমাত্র পিতা-মাতাই উত্তরাধিকারী নয়, বরং স্বামী/স্ত্রীও আছে, এ অবস্থায় পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ , মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ । এ অবস্থায় মৃত ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রী জীবিত থাকা বা না থাকার কারণে পিতা ও মাতার এই আনুপাতিক ভগ্নাংশের কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না। অনুরূপভাবে পিতা-মাতা জীবিত থাকা, না থাকার কারণে স্বামী/স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশেরও কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না।
সুতরাং যখন মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান নেই তখন স্বামী/স্ত্রী জীবিত থাকলেও পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের ব্যতিক্রম ঘটবে না। তবে মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় তার ভাই-বোন থাকলে পিতা-মাতার জন্য ভিন্ন আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং প্রথম পর্যায়ে যদি তার (মৃত ব্যক্তির) কোনো সন্তান না থাকে আর তার পিতা-মাতা তার উত্তরাধিকারী হয় তথ্যটির তাৎপর্য হচ্ছে, যদি পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের প্রভাবক কেউ (ভাই-বোন) না থাকে। স্বামী/স্ত্রীকে পিতা-মাতার জন্য ভিন্নরূপ আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণের প্রভাবক করা হয়নি। তাই মৃত ব্যক্তির স্বামী/স্ত্রী জীবিত থাকলেও পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ স্থির থাকবে।
২) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে (এবং কোনো ভাই-বোনও না থাকলে) মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ হলো ১/৩ । এক্ষেত্রে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ণয়ের ভিত্তিমূলক তথ্য হলো: পিতা-মাতা তার (মৃত ব্যক্তির) উত্তরাধিকারী হয় বাক্যটিতে বুঝানো হয়েছে পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণে প্রভাবক কেউ (ভাই-বোন) না থাকা। সুতরাং এখানে মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ উক্ত (expressed) এবং পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ অনুক্ত (non expressed) রয়েছে, কিন্তু মাতা ও পিতা ছাড়া অন্য কারো আনুপাতিক ভগ্নাংশ বিবেচ্য নয়।
শর্তানুসারে, মাতার উক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশ + পিতার অনুক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১
সুতরাং, পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ - মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ
বা, পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ - ১/৩
বা, পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২/৩
৩) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা দুজনের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে পিতা-মাতা উভয়ে জীবিত থাকলে তাঁদের প্রত্যেকের আনুপাতিক ভগ্নাংশ এবং পিতা-মাতা উভয়ের মধ্য থেকে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না।
অনুরূপভাবে, মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলেও পিতা-মাতা উভয়ে জীবিত থাকলে তাঁদের প্রত্যেকের আনুপাতিক ভগ্নাংশ এবং পিতা-মাতা উভয়ের মধ্য থেকে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশের মধ্যে কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না।
সুতরাং, এ অবস্থায়, মাতা জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩
অথবা পিতা জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩
৪) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে এবং (যদি) তার পিতা-মাতা তার উত্তরাধিকারী হয় তথ্যটির বিশেষ তাৎপর্য যদি তার পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণের প্রভাবক কেউ (ভাই-বোন) না থাকে প্রযোজ্য হয় না। তাই এ অবস্থায়, মাতার উক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশ এবং পিতার অনুক্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশের সমষ্টি ১ হওয়ার নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
সুতরাং এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ণয় করার উপায় হিসেবে নিম্নের দুটি অনুসিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে হবে:
ক) সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ভাগে ফিরে যায়, যা সন্তান থাকা অবস্থায় মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের সমান। সুতরাং সন্তান না থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভাই-বোন সন্তানের সমান প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সন্তান থাকা অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ । সুতরাং সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ভাগে ফিরে যাবে। অর্থাৎ এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
খ) সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে এবং (যদি) তার (মৃত ব্যক্তির) পিতা-মাতা তার উত্তরাধিকারী হয় তথা যদি তার পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের নির্ধারণে প্রভাবক কেউ (ভাই-বোন) না থাকে শর্তটি প্রযোজ্য নয়। তাই এ ক্ষেত্রে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ না করার অর্থ হচ্ছে পিতার জন্য সন্তান থাকা অবস্থায় যে আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে সেটাই বহাল থাকবে। অর্থাৎ এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
৫) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে এবং পিতা-মাতা দুজনের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
ইতোপূর্বের সমাধানগুলোর তথ্যানুসারে, মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে এবং পিতা-মাতা দুজনের মধ্যে মাত্র একজন জীবিত থাকলে তাঁর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
৬) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তানও নেই, ভাই-বোনও নেই কিন্তু স্বামী/স্ত্রী আছে, এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
ইতোপূর্বের সমাধানগুলোর তথ্যানুসারে, মৃত ব্যক্তির সন্তানও নেই, ভাই-বোনও নেই, কিন্তু স্বামী/স্ত্রী আছে, এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ ।
৭) পরিস্থিতি: মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই, ভাই-বোন জীবিত আছে এবং স্বামী/স্ত্রীও জীবিত আছে, এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
সমাধান:
ইতোপূর্বের সমাধানগুলোর তথ্যানুসারে, মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই, ভাই-বোন জীবিত আছে এবং স্বামী/স্ত্রীও জীবিত আছে, এ অবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
১) মৃত নারীর কোনো সন্তান না থাকলে তার স্বামীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/২ ।
২) মৃত নারীর কোনো সন্তান থাকলে তার স্বামীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ ।
৩) মৃত পুরুষের কোনো সন্তান না থাকলে তার স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ ।
৪) মৃত পুরুষের কোনো সন্তান থাকলে তার স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৮ ।
কোনো পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকলে সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দুটি প্রশ্নের অবতারণা ঘটতে পারে:
১) মৃত পুরুষের কোনো সন্তান না থাকলে তার একাধিক স্ত্রীর প্রত্যেকের আনুপাতিক অংশ ১/৪ , নাকি তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক অংশ ১/৪ ?
২) মৃত পুরুষের কোনো সন্তান থাকলে তার একাধিক স্ত্রীর প্রত্যেকের আনুপাতিক অংশ ১/৮ , নাকি তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক অংশ ১/৮ ?
উত্তরাধিকার বণ্টন বিধির আয়াতগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও সূত্র বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এ দুটি সমস্যার সমাধান নির্ণয় করা যায়। নিম্নোক্ত তিনটি তথ্যগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যা দুটির সমাধান পাওয়া যায়।
এক) ৪:১৭৬ আয়াতে একটি পুরুষ সন্তানহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার কোনো বোন থাকলে সে কতটুকু পাবে তা উল্লেখ করার পর বিপরীতক্রমে তার বোন সন্তানহীনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে সে তার বোনের উত্তরাধিকারী হবে বলে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে আরবি বাক্যাংশটি হলো ওয়া হুয়া ইয়ারিসুহা অর্থাৎ আর সে (ভাইটি) তার (বোনটির) উত্তরাধিকারী হবে। এতে বক্তব্যের প্রসঙ্গ কাঠামো (Subject of context) হিসেবে একটি ভাইকে নির্ধারণ করায় একবচন ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু যদি এর পরিবর্তে একাধিক ভাই থাকে তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। অর্থাৎ শুধু এক ভাই থাকলে সে যতটুকু অংশের ওয়ারিস হয়, একাধিক ভাই থাকলে তারা সম্মিলিতভাবে পরস্পর সমান হারে ততটুকু অংশের ওয়ারিস হয়(১৯)।
(১৯) বিষয়টি ভাইবোনের আনুপাতিক অংশ অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
এই একই সূত্র পিতার, মাতার ও স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশের বিষয়েও প্রযোজ্য। যদি পিতার স্থলে দাদা ও নানা থাকে তবে তারা উভয়ে সম্মিলিতভাবে পরস্পর সমান হারে পিতার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ লাভ করবে। যদি মাতার স্থলে দাদী ও নানী থাকে তবে তারা উভয়ে সম্মিলিতভাবে পরস্পর সমান হারে মাতার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ লাভ করবে। অনুরূপভাবে, যদি একটিমাত্র স্ত্রী থাকে সে একাই স্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক অংশ লাভ করবে। আর যদি একাধিক স্ত্রী থাকে তবে তারা সম্মিলিতভাবে ঐ আনুপাতিক অংশ লাভ করবে অর্থাৎ ঐ অংশটি তাদের মধ্যে পরস্পর সমান হারে বণ্টিত হবে।
দুই) একটিমাত্র কন্যা পাবে ১/২ । দুই বা দুইয়ের অধিক কন্যা (তাদের সংখ্যা যা-ই হোক) একত্রে পাবে ২/৩ । যেহেতু কন্যারা সবাই কন্যাই, তাই একটিমাত্র কন্যা যেরূপ ১/২ পাবে, একাধিক কন্যার প্রত্যেকে সেভাবে ১/২ পেতে পারতো। কিন্তু তা না হয়ে একাধিক কন্যা একত্রে ২/৩ পাবে। অর্থাৎ ২/৩ অংশে একাধিক কন্যা পরস্পর সমান হারে অংশীদার হবে। যদি নারীরা (কন্যারা) হয় দুই বা দুইয়ের বেশি তবে তাদের জন্য ২/৩ বাক্যটির মাধ্যমে এটা বুঝায় না যে, প্রত্যেক কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ । বরং এর দ্বারা বুঝায় যে, একাধিক কন্যার সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ । তবে যেহেতু পুত্র না থাকা অবস্থায় একটিমাত্র কন্যা থাকলে তার জন্য আলাদাভাবে আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে তাই সেক্ষেত্রে সে তার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ লাভ করবে। একাধিক কন্যার সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের বণ্টনের অনুরূপ পদ্ধতিতে একাধিক স্ত্রীর সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের বণ্টন হবে। অর্থাৎ স্ত্রী সংখ্যা একাধিক হলে তাদের প্রত্যেকের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ বা ১/৮ নয়; বরং তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ বা ১/৮ । আর এই ১/৪ বা ১/৮ অংশে তারা প্রত্যেকে পরস্পরে সমান হারে অংশীদার হবে।
তিন) আর তোমাদের জন্য যা তোমাদের স্ত্রীগণ রেখে গিয়েছে তার দুই ভাগের এক ভাগ (১/২ ), যদি তাদের কোনো সন্তান না থাকে। তবে যদি তাদের কোনো সন্তান থাকে, তাহলে তোমাদের জন্য যা তারা ছেড়ে গিয়েছে তা থেকে চার ভাগের এক ভাগ (১/৪ )। ......... আর তাদের জন্য (তোমাদের স্ত্রীদের জন্য) যা তোমরা ছেড়ে গিয়েছো তা থেকে চার ভাগের এক ভাগ (১/৪ ), যদি তোমাদের কোনো সন্তান না থাকে। তবে যদি তোমাদের কোনো সন্তান থাকে, তাহলে তাদের জন্য যা তোমরা ছেড়ে গিয়েছো তা থেকে আট ভাগের এক ভাগ (১/৮ )।
আয়াতটিতে স্বামীদের ও স্ত্রীদের বিষয়ে বহুবচন ব্যবহৃত হয়েছে। পূর্বোক্ত বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যদি কোনো স্ত্রীর একাধিক স্বামী থাকা সম্ভব হতো তবে এ আয়াতের ভিত্তিতে ঐ স্বামীরা সম্মিলিতভাবে ১/২ বা ১/৪ পেতো। যেহেতু নারীদের জন্য একাধিক বিবাহ বৈধ নয়, তাই এখানে ‘তোমাদের জন্য’ শব্দটি সামষ্টিকভাবে বিবাহিত পুরুষদেরকে বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে, কোনো স্ত্রীর একাধিক স্বামীর প্রসঙ্গ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়নি।
অন্যদিকে যেহেতু পুরুষের জন্য শর্ত সাপেক্ষে একাধিক বিবাহ বৈধ, তাই স্ত্রীদের জন্য ১/৪ বা ১/৮ বলতে যেমন সামষ্টিকভাবে বিবাহিত নারীদেরকে বুঝানো হয়েছে, তেমনি কোনো পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদেরকে বুঝানোর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোনো পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ বা ১/৮ । তাদের প্রত্যেকের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ বা ১/৮ নয়, বরং সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ বা ১/৮ ।
একজন স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে তার স্বামীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ যদি ঐ স্ত্রীর কোনো সন্তান থাকে। মৃত স্ত্রীর সন্তান তার পুর্ব স্বামীর ঔরসজাত হলেও বর্তমান স্বামীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৪ ।
অনুরূপভাবে একজন স্বামী মৃত্যুবরণ করলে তার স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৮ যদি ঐ স্বামীর কোনো সন্তান থাকে। মৃত স্বামীর সন্তান তার পূর্ব স্ত্রীর গর্ভজাত হলেও বর্তমান স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৮ ।
সুতরাং যদি মৃত স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে এবং স্বামীটির সন্তান তাদের কোনো একজনের গর্ভজাত হয়, তবুও তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৮ । স্বামীটির সন্তান যেই স্ত্রীর গর্ভজাত সেই স্ত্রী ও অন্য স্ত্রীর পারস্পরিক অংশে কোনো কম বেশি হবে না, বরং তারা সবাই সমান হারে এই ১/৮ আনুপাতিক ভগ্নাংশে শরিক হবে। বিষয় এ নয় যে, তাদের প্রত্যেকের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৮ , বরং বিষয় এই যে, তাদের সবার সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৮ ।
শেষ কথা হলো, কোনো ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে তারা যৌথভাবে স্ত্রীর জন্য প্রদত্ত আনুপাতিক ভগ্নাংশ পাবে এবং তা তাদের নিজেদের মধ্যে পরস্পর সমানভাবে বন্টিত হবে।
কালালাহ শব্দটির শব্দমূল হচ্ছে ‘কাফ লাম লাম’। শব্দমূলের অর্থ হচ্ছে পরিবৃত করা (encircle), নির্ভরশীলতা। এ শব্দমূল থেকে কুরআনে পাঁচটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে: কাল্লুন, কুল্লুন, কুল্লামা, কাল্লা এবং কালালাহ।
কাল্লুন (১৬:৭৬:১২) অর্থ হলো বোঝা, সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। কাল্লুন শব্দটি এই একটি স্থানেই ব্যবহৃত হয়েছে।
কুল্লুন (২:১১৬:১২) অর্থ হলো সব, প্রত্যেক। কুল্লুন শব্দটি ৩৫৯ স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে।
কুল্লামা (২:২০:৫) অর্থ হলো সবসময়, যখনই। কুল্লামা শব্দটি ১৫ স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে।
কাল্লা (১৯:৭৯:১) অর্থ হলো কখনো না। কাল্লা শব্দটি ৩৩ স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে।
কালালাহ (৪:১২:৫৪, ৪:১৭৬:৬)। কালালাহ শব্দটি এ দুইটি স্থানেই ব্যবহৃত হয়েছে।
কালালাহ শব্দের শব্দমূল অনুসারে এর মধ্যে বিশেষ নির্ভরশীলতা তৈরি হওয়ার অর্থ নিহিত রয়েছে।
কালালাহ এর সংজ্ঞা নির্ণয় করার উপায় হচ্ছে যে দুটি আয়াতে কালালাহ শব্দ ব্যবহৃত তাতে কালালাহ প্রসঙ্গে উল্লেখিত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে কালালাহ এর সংজ্ঞা নির্ণয় করা।
৪:১২ আয়াতের বক্তব্যের বিষয়বস্তু হলো, মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন দুটি শর্তে তার উত্তরাধিকার পাবে। প্রথম শর্তটি হলো, মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরী রয়েছে এবং সেই সাথে তার ভাই-বোনও রয়েছে। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, মৃত ব্যক্তি একজন কালালাহ হওয়া।
৪:১৭৬ আয়াতের বক্তব্যের বিষয়বস্তু হলো, মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকা অবস্থায় তার ভাই-বোন থাকলে তার ভাই-বোন তার উত্তরাধিকার পাবে। এ বিষয়টিকে কালালাহর বিষয়ে সমাধান জিজ্ঞাসার জবাবে আল্লাহ প্রদত্ত সমাধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
৪:১৭৬ আয়াতে উল্লেখিত মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকলে তারা তার উত্তরাধিকার পাবে তথ্যটির অর্থ হচ্ছে এ ক্ষেত্রে সন্তান না থাকাই ভাই-বোন উত্তরাধিকার পাওয়ার কারণ, পিতা-মাতা জীবিত আছে নাকি নেই তা বিবেচনা করা হবে না। অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকলে, সে অবস্থায় পিতা-মাতা জীবিত থাকুক বা না থাকুক, উভয় অবস্থায় ভাই-বোন তার উত্তরাধিকার পাবে।
এ বিষয়টিকে নিম্নোক্ত দুটি ধারায় উল্লেখ করা যেতে পারে:
(১) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা থাকলেও ভাই-বোন ৪:১৭৬ আয়াত অনুযায়ী উত্তরাধিকারের অংশ পাবে।
(২) মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় যদি পিতা-মাতাও না থাকে, সেক্ষেত্রেও ভাই-বোন ৪:১৭৬ আয়াত অনুযায়ী উত্তরাধিকারের অংশ পাবে।
কালালাহ বিষয়টির সাথে সম্পর্কিত দুটি আয়াতেরই মূল নির্দেশনা হচ্ছে, মৃত ব্যক্তি বা তার ভাই-বোন কালালাহ হওয়া হচ্ছে মৃত ব্যক্তির ভাই-বোনকে উত্তরাধিকার প্রদানের জন্য শর্ত। কালালাহ না হলে ভাই বোনের জন্য উত্তরাধিকারের কোনো অংশ নির্ধারণ করা হয়নি। অন্যভাবে বলা যায়, কালালাহ না হলে সে অবস্থায় ভাই বোন উত্তরাধিকার পাবে না।
৪:১১ আয়াত অনুসারে, পুত্র-কন্যা ও পিতা-মাতা উভয়ে থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকা না থাকার বিষয়টি বিবেচ্য নয়। অর্থাৎ পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা উভয়ে থাকা অবস্থায় ভাই-বোন উত্তরাধিকার পাবে না। কিন্তু যদি সন্তান না থাকে, সে অবস্থায় ভাই বোন থাকা না থাকার সাপেক্ষে পিতা-মাতার প্রাপ্য অংশকে হ্রাসবৃদ্ধি করা হয়েছে।
সুতরাং ৪:১১, ৪:১২ ও ৪:১৭৬ আয়াতের সমন্বিত তথ্য অনুসারে প্রতীয়মান হয় যে, কালালাহ হচ্ছে ভাই-বোনের একটি অবস্থা, যা হচ্ছে জীবিত ও মৃত ভাই-বোনের মধ্যে এমন একটি বিশেষ সম্পর্ক যার প্রেক্ষিতে ভাই-বোন উত্তরাধিকার লাভ করবে।
কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার দুটি শর্ত রয়েছে। এর একটি হলো, মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা। এ অবস্থায় তার পিতা-মাতা থাকুক বা না থাকুক, তার ভাই-বোনের সাথে তার কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হয়, অর্থাৎ তার ভাই-বোন তার উত্তরাধিকার পাবে।
আর দ্বিতীয়টি ৪:১২ আয়াতে বর্ণিত অবস্থা, যা হচ্ছে মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরী থাকা অবস্থায় তার ভাই-বোন তার উত্তরাধিকার পাওয়ার কারণে মৃত ব্যক্তিটিকে কালালাহ বলা হয়েছে। অর্থাৎ এমন একটি অবস্থা, যার ফলে শুধু তার ভাই-বোনই যে তার কালালাহ তা নয়, বরং সে নিজেও কালালাহ। অর্থাৎ যদি এমন হতো যে, সে জীবিত থাকতো এবং তার কোনো ভাই মৃত্যুবরণ করতো, তবে সে নিজেও তার ঐ ভাইয়ের উত্তরাধিকার পেতো।
এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার জন্য নিম্নের দুটি পয়েন্ট বিশেষভাবে লক্ষণীয়:
(এক) ২:১৭৬ আয়াতে একজন ভাইয়ের মৃত্যুর প্রেক্ষিতে তার এক বোন বা দুই বোন তার কতটুকু উত্তরাধিকার পাবে তা উল্লেখ করার মধ্যবর্তীতে বলা হয়েছে, ওয়া হুয়া ওয়ারিসুহা অর্থাৎ আর সে (ভাইটি) তার (বোনটির) উত্তরাধিকারী হবে, যদি তার (বোনটির) কোনো সন্তান না থাকে। অর্থাৎ এতে বক্তব্যের সাধারণ গতি (Subject and Object) পরিবর্তন করে এরূপ তথ্য দেয়া হয়েছে যে, অন্যদিকে যদি এমন হয় যে, ঐ ভাইটি জীবিত থাকে, আর তার বোনটি মৃত্যুবরণ করে, সে অবস্থায় সে ভাইটি তার বোনটির উত্তরাধিকারী হবে। এভাবে বিপরীত অবস্থার প্রসঙ্গ উল্লেখের বিষয়টি আরবি ভাষারীতির অলংকারের সাথে সম্পর্কিত।
অনুরূপভাবে, ৪:১২ আয়াতে মৃত ভাইটিকে কালালাহ হওয়ার শর্ত উল্লেখ করার তাৎপর্য হলো, যদি মৃত ভাইটি জীবিত থাকতো এবং জীবিত ভাই মৃত্যুবরণ করতো তবে সেও তার ভাইয়ের উত্তরাধিকার পেতো, এ বিষয়টি উল্লেখ করা।
(দুই) ৪:১১ আয়াতের বক্তব্য শুরু হয়েছে সন্তানদের মধ্যে উত্তরাধিকার বণ্টনের বিধি বর্ণনার মাধ্যমে। তারপর তার সাথে পিতা-মাতার প্রাপ্য অংশের বর্ণনা যোগ করা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় তার পিতা-মাতা তার উত্তরাধিকারী হলে তাদের প্রাপ্য অংশ কত হবে তা উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে ওয়া ওয়ারিসাহু আবাওয়াহু তথা আর (যদি) তার উত্তরসূরী হয় তার পিতা-মাতা। এ অবস্থায় পিতা-মাতার জন্য যে আনুপাতিক ভগ্নাংশ বলা হয়েছে, পরবর্তী ধারায় যদি তার ভাই-বোন থাকে, তাহলে পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ তা থেকে হ্রাস করা হয়েছে। কিন্তু ভাই-বোন ছাড়া স্বামী/স্ত্রীকে পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশকে হ্রাস-বৃদ্ধির জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়নি। সুতরাং রক্তসম্পর্কের আত্মীয়দের একের উপস্থিতি অন্যকে বিবেচনা থেকে রহিত করে, বৈবাহিক সম্পর্কের আত্মীয় (স্বামী/স্ত্রী) এরূপ প্রভাবক নয়। সুতরাং পিতা-মাতা প্রসঙ্গে ওয়া ওয়ারিসাহু আবাওয়াহু কথাটির প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে, যদি পিতা-মাতা এমনভাবে ওয়ারিস হয় যে, তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশকে ভিন্নভাবে নির্ধারণের জন্য প্রভাবক কেউ (তথা ভাই-বোন) নেই।
অনুরূপভাবে, ৪:১৭৬ আয়াতে ভাইয়ের উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে থাকা ওয়া হুয়া ইয়ারিসুহা’ তথা তার ভাই তার উত্তরসূরী হবে তথ্যটির প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে, সন্তান না থাকার ফলে তার ভাই এমনভাবে ওয়ারিস হবে যে, তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশকে ভিন্নভাবে নির্ধারণের জন্য কাউকে (পিতা-মাতাকে/ স্বামী-স্ত্রীকে) বিবেচনায় নেয়া হবে না।
উপরিউক্ত দুটি বিষয় পর্যালোচনা করে বলা যায়, একজন ব্যক্তির সাধারণ উত্তরসূরী হচ্ছে তার সন্তান। তাই ৪:১২ আয়াতে বর্ণিত যে দুটি শর্তের প্রেক্ষিতে ভাই-বোন উত্তরাধিকার পায়, তার ইউরাসূ তথা যার উত্তরসূরী থাকে কথাটির স্বত:সিদ্ধ অর্থ হচ্ছে, যে মৃত ব্যক্তির সন্তান রয়েছে। কারণ যদি সন্তান না থাকে, সে অবস্থায় ভাই-বোনের প্রাপ্য অংশ ৪:১৭৬ আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, ৪:১২ আয়াতে নির্দেশিত উত্তরসূরী বলতে মুখ্যত সন্তানের উপস্থিতিকেই বুঝানো হয়েছে।
কুরআনে উত্তরাধিকারের নির্ধারিত বণ্টন বিধিতে যাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের পরিপূর্ণ তালিকা হলো: পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী, ভাই, বোন। ৪:১২ আয়াতে মৃত ব্যক্তির উত্তরসূরী থাকা বলতে সন্তান থাকা অবস্থার প্রসঙ্গ বুঝানো হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ এতে সন্তান ছাড়া বাকি তিন শ্রেণির (১. পিতা-মাতা, ২. স্বামী/স্ত্রী, ৩. ভাই-বোন) মধ্য থেকে একটি শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, একটি শ্রেণিকে প্রভাবক হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়নি এবং অন্য একটি শ্রেণিকে অন্তর্ভুক্ত করার অবকাশ রাখা হয়নি। নিম্নে এ তিনটি শ্রেণির এ তিনটি অবস্থা বিশ্লেষণ করা হলো।
(১) উত্তরসুরীর পাশাপাশি ভাই-বোনের থাকার বিষয় বলা হয়েছে বিধায় এটা স্পষ্ট যে, উত্তরসূরী হিসেবে ভাই-বোনকে বুঝানো হয়নি।
(২) স্বামী/স্ত্রীর উপস্থিতি অনুপস্থিতির প্রেক্ষিতে কারো জন্য ভিন্নরূপ আনুপাতিক অংশ নির্ধারণ করা হয়নি বিধায় এটা স্পষ্ট যে, উত্তরসূরী বলতে স্বামী/স্ত্রীকেও বুঝানো হয়নি।
(৩) আর এটাও স্পষ্ট যে, এতে (৪:১২) উত্তরসূরী বলতে পিতা-মাতাকেও বুঝানো হয়নি। কারণ মৃত ব্যক্তির উত্তরসুরী থাকার পাশাপাশি দ্বিতীয় যে শর্তটি রয়েছে তা হলো: মৃত ব্যক্তি কালালাহ হবে। মৃত ব্যক্তির সাথে তার ভাই-বোনের কালালাহ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একটি উপায় হচ্ছে, মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা (সে অবস্থায় পিতা-মাতা থাকুক বা না থাকুক), যা ৪:১৭৬ আয়াত থেকে স্পষ্ট। সুতরাং মৃত ব্যক্তি কালালাহ হওয়ার দ্বিতীয় অবস্থা একটিই হতে পারে, আর তা হলো, তার পিতা-মাতা না থাকা। কারণ পিতা-মাতা না থাকা অবস্থায় তার প্রতি তার ভাই-বোনদের এবং তার ভাই-বোনদের প্রতি তার নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। আর এর ফলে তাদের একে অন্যের উত্তরাধিকার পাওয়ার মতো সম্পর্ক তৈরি হয়।
মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা ও সন্তান উভয় শ্রেণি জীবিত থাকলে সে অবস্থায় ভাই-বোনের জন্য কোনো অংশ নির্ধারণ করা হয়নি। অন্য কথায় যখন মৃত ব্যক্তির পিতা-মাতা ও সন্তান উভয় শ্রেণি জীবিত থাকে সে অবস্থায় মৃত ব্যক্তির ভাই-বোনের সাথে তার কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হয় না বা তারা একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয় না এবং একে অন্যের উত্তরাধিকার পায় না।
একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, ৪:১৭৬ আয়াতে সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোনের জন্য সেই অংশই নির্ধারণ করা হয়েছে, ৪:১১ আয়াতে সন্তানের জন্য যে অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার, ৪:১১ আয়াতে সন্তান এবং ভাই-বোন না থাকা অবস্থায় মাতার জন্য ১/৩ অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু সন্তান না থাকলে কিন্তু ভাই-বোন থাকলে সেক্ষেত্রে আবার মাতার প্রাপ্য হিসেবে ১/৬ অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা হলো সন্তান থাকা অবস্থায় মাতার প্রাপ্য অংশের সমান। সুতরাং সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোনকে সন্তানের অনুরূপ অংশের উত্তরাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
একইভাবে ৪:১১ আয়াতে সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার জন্য যেভাবে অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, ৪:১২ আয়াতে কালালাহর ভাই-বোনের জন্য সেভাবেই অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সুতরাং বিভিন্নভাবে এটি স্পষ্ট যে, ৪:১২ আয়াতে কালালাহ বলতে তাকেই বুঝানো হচ্ছে যার পিতা-মাতা নেই, কিন্তু সন্তান আছে।
৪:১২ আয়াতে মৃত ব্যক্তি কালালাহ সাব্যস্ত হওয়ার অবস্থায় তার ভাই-বোন বলতে (সন্তান থাকলে) পিতা-মাতা উভয়ে না থাকা অবস্থায় তার পূর্ণ আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয় সকল ভাই-বোনকে বুঝানো হয়েছে। সন্তান ও পিতা-মাতা উভয় শ্রেণি থাকলে ভাই-বোন উত্তরাধিকার পায় না। কিন্তু সেক্ষেত্রে ভাই বোন পিতা-মাতার দ্বারা উপকৃত হতে পারে। তবে যেহেতু বিপিতা (সৎ পিতা) বা বিমাতা (সৎ মাতা) ওয়ারিস হয় না, তাই পিতা বা মাতা একজন জীবিত থাকলে এবং অন্যজন জীবিত না থাকলে ভাই-বোনদের মধ্য থেকে পূর্ণ আপন ভাই বোনের সাথে মৃত ব্যক্তির কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হয় না, কিন্তু বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাই ৪:১২ আয়াতে বর্ণিত, কালালাহ এর কোনো ভাই বা বোন থাকার অর্থ হলো এমন ভাই বা বোন থাকা যার সাথে তার কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
অন্যভাবে বলা যায়, সন্তানের পাশাপাশি পিতা-মাতা উভয়ে থাকলে পিতা-মাতা উত্তরাধিকার পায়, কিন্তু ভাই-বোন উত্তরাধিকার পায় না। কিন্তু শুধু পিতা থাকা অবস্থায় (তথা বিপিতার উপস্থিতির কারণে) বৈপিত্রেয় ভাই-বোন বঞ্চিত হবে না, কারণ বিপিতা ও স্ত্রীর পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত সন্তান পরস্পরের ওয়ারিস হয় না। অনুরূপভাবে শুধু মাতা থাকা অবস্থায় (তথা বিমাতার উপস্থিতির কারণে) বৈমাত্রেয় ভাই-বোন বঞ্চিত হবে না। কারণ বিমাতা ও স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান পরস্পরের ওয়ারিস হয় না।
যদি এরূপ হয় যে, একজন মৃত ব্যক্তির পিতা নেই কিন্তু মা আছে এবং সন্তান আছে এবং একজন পূর্ণ আপন ও একজন বৈমাত্রেয় ভাই আছে, তবে মৃত ব্যক্তিটি তার পূর্ণ আপন ভাইয়ের কালালাহ নয়, কিন্তু তার বৈমাত্রেয় ভাইয়ের কালালাহ; তাই এ অবস্থায় তার পূর্ণ আপন ভাই উত্তরাধিকার পাবে না, কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাই উত্তরাধিকার পাবে।
সুতরাং কালালাহ এর পরিপূর্ণ সংজ্ঞা নিম্নরূপ:
কালালাহ হলো ভাই-বোনের সাথে উত্তরাধিকারগত সম্পর্ক তথা নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে যখন কোনো ভাই বা বোন নির্ধারিত হারে উত্তরাধিকার পায় তখন তাকে কালালাহ বলে। কালালাহ সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার শর্ত নিম্নরূপ:
(ক) মৃত ব্যক্তির সন্তান নেই এবং এ অবস্থায় তার ভাই-বোন আছে, পিতা-মাতা থাকুক বা না থাকুক।
অথবা,
(খ) মৃত ব্যক্তির সন্তান আছে কিন্তু পিতা-মাতা নেই এবং এ অবস্থায় তার পূর্ণ আপন ভাই-বোন (বা/ এবং বৈমাত্রেয় তথা পিতৃশরিক ভাই-বোন বা/ এবং বৈপিত্রেয় তথা মাতৃশরিক ভাই-বোন) আছে।
অথবা,
(গ) মৃত ব্যক্তির সন্তান আছে কিন্তু পিতা নেই এবং এ অবস্থায় তার বৈমাত্রেয় তথা পিতৃশরিক ভাই-বোন আছে।
অথবা,
(ঘ) মৃত ব্যক্তির সন্তান আছে কিন্তু মাতা নেই এবং এ অবস্থায় তার বৈপিত্রেয় তথা মাতৃশরিক ভাই-বোন আছে।
এর মধ্যে ক নং অবস্থায় থাকা ভাই-বোন পাবে ৪:১৭৬ আয়াত অনুযায়ী এবং খ, গ, ঘ নং অবস্থায় থাকা ভাই-বোন পাবে ৪:১৭৬ আয়াত অনুযায়ী।
(১) পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা (২) পিতা-মাতা ও পুত্র (৩) পিতা-মাতা ও কন্যা (৪) পিতা ও পুত্র-কন্যা (৫) পিতা ও পুত্র (৬) পিতা ও কন্যা (৭) মাতা ও পুত্র-কন্যা (৮) মাতা ও পুত্র (৯) মাতা ও কন্যা ইত্যাদি যে সংমিশ্রণেই পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা উপস্থিত থাকুক, সে অবস্থায় ভাই-বোন (অর্থাৎ ভাই-বোন/ ভাই/ বোন) উত্তরাধিকার পাবে না। কারণ এ অবস্থায় মৃত ব্যক্তি বা ভাই-বোন কেউ কালালাহ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না।
Image 109 and 110
ভাই বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ দুটি প্রধান অবস্থায় বিভক্ত।
এক) যখন সন্তান জীবিত আছে কিন্তু পিতা-মাতা নেই সে অবস্থায় ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
দুই) যখন সন্তান জীবিত নেই, পিতা-মাতা জীবিত থাকুক বা না থাকুক, সে অবস্থায় ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৪:১২ আয়াতে ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশের প্রথম অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশের প্রত্যক্ষ ধারাসমূহ নিম্নরূপ:
১) একমাত্র ভাইয়ের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ । অনুরূপভাবে একমাত্র বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ ।
২) একাধিক ভাই বা বোন বা ভাই-বোন থাকলে তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ ।
প্রথম অবস্থায় ভাইবোনের প্রাপ্য অংশে পারস্পরিক অনুপাত
ভাইবোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশের প্রথম অবস্থার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত প্রশ্নের অবতারণা হয়:
যখন একাধিক ভাই-বোন একসাথে থাকে তখন ভাই-বোনের প্রাপ্য আনুপাতিক ভগ্নাংশে (১/৩ ) তাদের পারস্পরিক অনুপাত কত? অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে এক ভাই দুই বোনের সমান পাবে, নাকি এক ভাই ও এক বোন পরস্পর সমান পাবে?
এ প্রশ্নের সমাধান নিম্নোক্ত তিনটি তথ্য অনুযায়ী করা যায়:
১) সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতার জন্য যেরূপ আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা না থাকলে ভাই-বোনের জন্য সেরূপ আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা যেই থাকুক তার জন্য আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ , যার সমষ্টি হচ্ছে ১/৩ । অনুরূপভাবে সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা না থাকলে ভাই-বোন যেই থাকুক তার জন্য আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৬ । যদি একটি ভাই এবং একটি বোন থাকে তাহলে তাদেরকে এই একই নিয়মে ১/৬ আনুপাতিক ভগ্নাংশ দিলে ভগ্নাংশগুলোর সমষ্টি হয় ১/৩ । ৪:১২ আয়াত অনুসারে একাধিক ভাই-বোন ১/৩ আনুপাতিক ভগ্নাংশের অংশীদার হবে। এ থেকে বুঝা যায় যে, তারা এতে সমান হারে অংশীদার হবে।
২) একটিমাত্র ভাই থাকলে তার জন্য ১/৬ । একটি মাত্র বোন থাকলে তার জন্য ১/৬ । দেখা যাচ্ছে, ভাই বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ সমান। সুতরাং ভাই বোন একসাথে থাকলে তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ এর ক্ষেত্রেও তারা পরস্পর সমান হারে অংশীদার হবে।
৩) যেহেতু একাধিক ভাই বোন ১/৩ আনুপাতিক ভগ্নাংশে অংশীদার হওয়ার বিধান দেয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ভাইয়ের চেয়ে বোন বা বোনের চেয়ে ভাই বেশি পাওয়ার কোনো বিধান দেয়া হয়নি; তাই সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ ভাগে ভাই-বোন পরস্পর সমান হারে অংশীদার হবে। মোট ভাইবোনের সংখ্যা যত, তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশকে তত ভাগ করে প্রত্যেকে এক ভাগ পাবে।
পরিশেষে উল্লেখ্য, যদি একসাথে একাধিক ভাই এবং একাধিক বোন থাকে, তাদের মোট সংখ্যা যত বেশিই হোক, তাদের জন্য সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ । এই আনুপাতিক ভগ্নাংশ থেকে তাদের প্রত্যেকে পরস্পর সমান হারে পাবে।
৪:১৭৬ আয়াতে ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশের দ্বিতীয় অবস্থা (মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোনের প্রাপ্য) উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশের প্রত্যক্ষ ধারাসমূহ নিম্নরূপ:
১) ভাই না থাকা অবস্থায় একমাত্র বোন থাকলে তার আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/২ ।
২) এবং (বিপরীতক্রমে) সে (ভাইটি) তার (বোনটির) উত্তরাধিকারী হবে।
৩) ভাই না থাকা অবস্থায় দুই বোন থাকলে তাদের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ ।
৪) কয়েকজন ভাই-বোন থাকলে তাদের মধ্যে বণ্টনের ক্ষেত্রে এক ভাইয়ের জন্য দুই বোনের অংশের অনুরূপ সূত্রটি প্রযোজ্য হবে।
প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে যে, আয়াতটিতে নিম্নোক্ত অবস্থায় ভাই-বোনদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আনুপাতিক ভগ্নাংশ উল্লেখ করা হয়নি:
১) যখন বোন নেই, কিন্তু এক বা একাধিক ভাই আছে, তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
২) যখন ভাই ও বোন উভয়ে থাকে তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৩) একটিমাত্র ভাই ও একটিমাত্র বোন থাকলে ভাই-বোনের মধ্যকার আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
৪) একাধিক ভাই ও একটি বোন থাকলে তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশ।
লক্ষণীয় যে, পুত্র-কন্যা না থাকা অবস্থায় ভাই-বোনের জন্য সেরূপ ভগ্নাংশই নির্ধারণ করা হয়েছে ৪:১১ আয়াতে পুত্র-কন্যার যেরূপ ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। সুতরাং এ সমস্যাগুলোর সমাধানও পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ণয়ের অনুরূপ।
নিচে সংক্ষেপে সমস্যাগুলোর সমাধান উল্লেখ করা হলো:
১) যখন বোন নেই, কিন্তু এক বা একাধিক ভাই আছে, তাদের আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩
২) যখন ভাই ও বোন উভয়ে থাকে তাদের সামষ্টিক আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩
৩) একটিমাত্র ভাই ও একটিমাত্র বোন থাকলে ভাই বোনের মধ্যকার অনুপাত হলো, ভাই : বোন = ২ : ১
(অর্থাৎ একটি ভাইকে দুই বোন হিসেবে ধরতে হবে এবং তাই সে দুই ভাগ পাবে এবং বোনটি এক ভাগ পাবে)।
৪) একাধিক ভাই ও একটি বোন থাকলে তাদের পারস্পরিক অনুপাত হলো, প্রত্যেক ভাই : বোন = ২ : ১
(অর্থাৎ প্রত্যেক ভাইকে দুই বোন হিসেবে ধরতে হবে এবং তাই সে দুই ভাগ পাবে এবং বোনটি এক ভাগ পাবে)।
১) পুত্র-কন্যার আনুপাতিক অংশ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে প্রথমে দুইয়ের বেশি কন্যা ও দুই কন্যা এবং তারপর এক কন্যার আনুপাতিক অংশ বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সংখ্যার উর্ধ্ব থেকে নিম্নক্রম অবলম্বন করা হয়েছে।
ভাই-বোনের আনুপাতিক অংশ বর্ণনা করার ক্ষেত্রে প্রথমে এক বোনের আনুপাতিক অংশ, মাঝে বিপরীত অবস্থায় ভাইয়ের প্রসঙ্গ এবং তারপর দুই বোনের আনুপাতিক অংশ বর্ণনা করা হয়েছে। অর্থাৎ সংখ্যার নিম্ন থেকে ঊর্ধ্বক্রম অবলম্বন করা হয়েছে।
২) পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রথমে এক পুত্রের জন্য দুই কন্যার অংশের অনুরূপ সূত্রটি উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ বর্ণনার ক্ষেত্রে শেষে এক ভাইয়ের জন্য দুই বোনের অংশের অনুরূপ সূত্রটি উল্লেখ করা হয়েছে।
৩) পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ বর্ণনায় দুই কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশকে পরোক্ষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ তা দুইয়ের অধিক কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশের অনুরূপ এবং সংখ্যার নিম্নক্রম অনুসারে তার অবস্থান মধ্যবর্তীতে।
ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ বর্ণনায় দুইয়ের বেশি বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ তা দুই বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশের অনুরূপ এবং সংখ্যার ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে তার অবস্থান শেষে। তাই আয়াতের সর্বশেষ বর্ণিত ধারা (এক ভাইয়ের জন্য দুই বোনের অংশের অনুরূপ) থেকে দুইয়ের বেশি বোনের অংশ স্বত:সিদ্ধভাবে নির্ণিত হবে বিধায় ধারাটি উহ্য রেখে দেয়া হয়েছে।
কুরআন অনুসারে পিতাকে বুঝাতে ‘আবুন’ এবং পিতা ও দাদাকে একসাথে বুঝাতে ‘আবাওয়ায়’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে (১২:৬)। অর্থাৎ পিতা ও দাদা উভয়ে পিতৃপুরুষ এবং পিতা প্রসঙ্গে দেয়া বিধানই দাদা ও নানার প্রসঙ্গে প্রযোজ্য। অনুরূপভাবে মাতার প্রসঙ্গে দেয়া বিধানই দাদী ও নানীর প্রসঙ্গে প্রযোজ্য।
কুরআনে পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রীকে পুত্র-কন্যাদের প্রসঙ্গে প্রদত্ত বিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
কুরআনে বিবাহ ও পর্দা সম্পর্কিত বিধান (৪:২৩, ২৪:৩১) থেকে পিতা-মাতা প্রসঙ্গে দেয়া বিধানই যে দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জন্য প্রযোজ্য এবং পুত্র-কন্যা প্রসঙ্গে দেয়া বিধানই যে পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রীর জন্য প্রযোজ্য তা সহজে অনুধাবন করা যায়।
সুতরাং উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশই দাদা-দাদী ও নানা-নানীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ হিসেবে প্রযোজ্য। অনুরূপভাবে পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশই পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ হিসেবে প্রযোজ্য।
তবে দাদা-দাদী, নানা-নানী, পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ কখন কার্যকর হবে তথা কখন তারা উত্তরাধিকার পাবে তা কিছু শর্তের উপর নির্ভর করে।
৪:৭ ও ৪:৩৩ আয়াত অনুযায়ী, কুরআনে যাদের জন্য উত্তরাধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে (পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, স্বামী/স্ত্রী এবং ভাই, বোন) তারা হলো ‘আক্বরাবূন’। ‘আক্বরাবূন’ শব্দটি কুরআনে দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে: (১) সবচেয়ে নিকটতম (২) সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়। যেহেতু দাদা-দাদী, নানা-নানী পিতা-মাতার শ্রেণিভুক্ত তাই তারাও আক্বরাবূন। অনুরূপভাবে যেহেতু পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী পুত্র-কন্যার শ্রেণিভুক্ত তাই তারাও আক্বরাবূন।
সম্পদের ওয়ারিস হওয়ার ক্ষেত্রে মুল শর্ত হলো আক্বরাবূন হতে হবে (৪:৭)। আর আক্বরাবূন হিসেবে কুরআন যাদেরকে চিহ্নিত করেছে তাদের মধ্যে বৈবাহিক কারণে আক্বরাবূন হওয়া একমাত্র শ্রেণি হচ্ছে স্বামী/স্ত্রী। আর রক্তসম্পর্কের দিক থেকে আক্বরাবূন হওয়া শ্রেণি হচ্ছে তিনটি, যথা- পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা এবং ভাই-বোন। এর মধ্য থেকে ভাই-বোনকে সব অবস্থায় ওয়ারিস করা হয়নি, শুধু কালালাহ(২০) সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ওয়ারিস করা হয়েছে।
(২০) কালালাহর বিস্তারিত বিবরণ সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে দেয়া হয়েছে
সুতরাং আক্বরাবূনদের মধ্য থেকে কে কোন শর্তে উত্তরাধিকার পাবে এবং কোন শর্তে পাবে না এর উপর ভিত্তি করে আক্বরাবূনদের (সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়) শ্রেণিবিভাগ রয়েছে। যারা সব অবস্থায় উত্তরাধিকার পাবে তারা শর্তহীন আক্বরাবূন এবং যারা কোনো বিশেষ শর্তে উত্তরাধিকার পাবে তারা শর্তাধীন আক্বরাবূন। নিম্নে আক্বরাবূনের শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করা হলো।
আক্বরাবূনের (সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়) শ্রেণিবিভাগ
আক্বরাবূন দুই শ্রেণিতে বিভক্ত, যথা:
১. শর্তহীন আক্বরাবূন: যারা সকল অবস্থায় উত্তরাধিকার পাবে তারা শর্তহীন আক্বরাবূন। শর্তহীন আক্বরাবূন হলো: পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা ও স্বামী/স্ত্রী।
২. শর্তাধীন আক্বরাবূন: যারা কোনো বিশেষ শর্তে উত্তরাধিকার পাবে তারা শর্তাধীন আক্বরাবূন।
শর্তাধীন আক্বরাবূনের শ্রেণিবিভাগ
শর্তাধীন আক্বরাবূন আবার দুটি উপশ্রেণিতে বিভক্ত। যথা:
২.১ যারা কালালাহ সম্পর্কের ভিত্তিতে আক্বরাবূন: কালালাহ সম্পর্ক হচ্ছে মৃত ব্যক্তির সন্তান ও পিতা-মাতা উভয় পক্ষ জীবিত না থাকলে অর্থাৎ উভয় পক্ষ বা কোনো একটি পক্ষ মৃত হলে তখন তার ভাইবোনের সাথে তার উত্তরাধিকারগত সম্পর্ক তৈরি হয়। কালালাহ সম্পর্কের ভিত্তিতে আক্বরাবূন হচ্ছে ভাই-বোন।
২.২ ঊর্ধ্বতন বা অধ:স্তন সম্পর্কের মাধ্যমিক স্তরের প্রাপ্য আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত ওয়ারিস ধরনের আক্বরাবূন: দাদা-দাদী ও নানা-নানী হচ্ছেন পিতা-মাতা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। তবে পিতা-মাতা জীবিত থাকলে তাঁরা উত্তরাধিকার পাবেন না। আর পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে পিতা-মাতার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবেন দাদা-দাদী ও নানা-নানী। অনুরূপভাবে পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রী হচ্ছে পুত্র-কন্যা শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। তবে পুত্র-কন্যা জীবিত থাকলে তাঁরা উত্তরাধিকার পাবেন না। আর পুত্র-কন্যা জীবিত না থাকলে পুত্র-কন্যার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী।
দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে শর্তাধীন আক্বরাবূন সাব্যস্ত করার যুক্তিসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
প্রথম যুক্তি:
৪:১১ আয়াতে যেভাবে পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ বর্ণনা করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:
আর তার [মৃত ব্যক্তির] পিতা-মাতা দুইজনের মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য [তাদের দুইজনের মধ্য থেকে যেই থাকুক তার জন্য] যা সে ছেড়ে গিয়েছে তা থেকে ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬ ), যদি তার কোনো সন্তান থাকে। তবে যদি তার কোনো সন্তান না থাকে আর তার পিতা-মাতা তার উত্তরাধিকারী হয়, তাহলে তার মাতার জন্য তিন ভাগের এক ভাগ (১/৩ )। তবে যদি তার ভাই-বোন থাকে, তাহলে তার মাতার জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬ )।
এতে পিতা-মাতার প্রসঙ্গে দ্বিবচন এবং মাতার প্রসঙ্গে একবচন ব্যবহৃত হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, এতে বর্ণিত আনুপাতিক ভগাংশে দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে অংশীদার করা হয়নি। সুতরাং পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে সেক্ষেত্রেই তাঁরা পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবেন, অন্যথায় তাঁরা পাবেন না।
যদি পিতা জীবিত না থাকেন, তাহলে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশটি দাদা-দাদী লাভ করবেন। এক্ষেত্রে আবার দাদা ও দাদীর পারস্পরিক আনুপাতিক ভগ্নাংশের বণ্টনে পিতা-মাতার পারস্পরিক অনুপাতের নিয়ম প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ দাদাকে পিতা হিসেবে এবং দাদীকে মাতা হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদের পারস্পরিক বণ্টন হবে। যেমন যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে বা সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকে তবে দাদা ও দাদীর প্রাপ্যতার পারস্পরিক অনুপাত হবে ১:১। আর যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকে এবং সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোনও না থাকে তাহলে দাদা ও দাদীর প্রাপ্যতার পারস্পরিক অনুপাত হবে ২:১।
অনুরূপভাবে যদি মাতা জীবিত না থাকেন, তাহলে মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশটি নানা-নানী লাভ করবেন। এক্ষেত্রে আবার নানা ও নানীর পারস্পরিক আনুপাতিক ভগ্নাংশের বণ্টনে পিতা-মাতার পারস্পরিক অনুপাতের নিয়ম প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ নানাকে পিতা হিসেবে এবং নানীকে মাতা হিসেবে সাব্যস্ত করে তাদের পারস্পরিক বণ্টন হবে। যেমন যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে বা সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোন থাকে তবে নানা ও নানীর প্রাপ্যতার পারস্পরিক অনুপাত হবে ১:১। আর যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান না থাকে এবং সন্তান না থাকা অবস্থায় ভাই-বোনও না থাকে তাহলে নানা ও নানীর প্রাপ্যতার পারস্পরিক অনুপাত হবে ২:১।
আর যদি পিতা-মাতা উভয়ে জীবিত না থাকেন, তাহলে পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশটি দাদা-দাদী ও নানা-নানী লাভ করবেন। এক্ষেত্রেও পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবেন দাদা-দাদী এবং মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবেন নানা-নানী। কারণ দাদা-দাদী মৃত ব্যক্তির সাথে তার পিতার মাধ্যমে সম্পর্কিত এবং নানা-নানী মৃত ব্যক্তির সাথে তার মাতার মাধ্যমে সম্পর্কিত। এক্ষেত্রেও দাদা ও দাদীর পারস্পরিক অনুপাত হবে পিতা-মাতার পারস্পরিক অনুপাতের অনুরূপ এবং নানা ও নানীর পারস্পরিক অনুপাত হবে পিতা-মাতার পারস্পরিক অনুপাতের অনুরূপ।
যদি মৃত ব্যক্তির পিতা না থাকা অবস্থায় দাদী থাকে তবে পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশটি দাদীই লাভ করবেন। অনুরূপভাবে যদি মৃত ব্যক্তির মাতা না থাকা অবস্থায় নানা থাকেন তবে মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশটি নানাই লাভ করবেন। যদিও দাদী মাতৃতুল্য তবুও তিনি পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ পাবেন কারণ মৃতের সাথে তাঁর সম্পর্কসূত্র পিতার মাধ্যমে। অনুরূপভাবে যদিও নানা পিতৃতুল্য তবুও তিনি মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ পাবেন কারণ মৃতের সাথে তাঁর সম্পর্কসূত্র মাতার মাধ্যমে।
দ্বিতীয় যুক্তি:
পিতা জীবিত থাকলেও দাদা ও নানা পিতৃতুল্য এবং মাতা জীবিত থাকলেও দাদী ও নানী মাতৃতুল্য। সুতরাং সাধারণভাবে পিতা-মাতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী সকলেই আক্বরাবূন (নিকটতম আত্মীয়)। কিন্তু পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় দাদা-দাদী উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আক্বরাবূন (নিকটতম) সাব্যস্ত হন না। কারণ পিতার মাধ্যমেই দাদা-দাদীর সাথে সম্পর্কসূত্র তৈরি হয়েছে। তাই পিতার উপস্থিতিতে তিনি (অর্থাৎ পিতা নিজেই) স্তরগত নৈকট্যের কারণে পিতা-মাতা শ্রেণির মধ্যকার আক্বরাবূন বা নিকটতম হিসেবে সাব্যস্ত হন।
অনুরূপভাবে, মাতা জীবিত থাকা অবস্থায নানা-নানী উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আক্বরাবূন (নিকটতম) সাব্যস্ত হন না।
আত্মীয়তার দিক থেকে সাধারণভাবে আক্বরাবূন বা নিকটতম আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কখনো কখনো আক্বরাবূন বা নিকটতম সাব্যস্ত না হওয়ার অন্যতম উদাহরণ হলো ভাই-বোন। যেহেতু ভাই-বোন উত্তরাধিকার পায় তাই যারা কখনোই উত্তরাধিকার পায় না এমন আত্মীয় স্বজনের তুলনায় ভাই-বোন হলো আক্বরাবূন বা নিকটতম আত্মীয়। কিন্তু ভাই-বোন কোনো কোনো অবস্থায় উত্তরাধিকার পাবে এবং কোনো কোনো অবস্থায় উত্তরাধিকার পাবে না। সুতরাং সাধারণভাবে আক্বরাবূন হওয়া সত্ত্বেও উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কেউ কেউ কখনো কখনো আক্বরাবূন/নিকটতম হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে আবার কখনো কখনো আক্বরাবূন (নিকটতম) হিসেবে সাব্যস্ত নাও হতে পারে।
সুতরাং পিতা-মাতা শ্রেণির মধ্য থেকে দাদা-দাদী ও নানা-নানী স্তরগতভাবে পিতা-মাতার পরবর্তী ঊর্ধ্বতন স্তরের হওয়ার কারণে তাঁরা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে শর্তাধীন আক্বরাবূন বা নিকটতম হিসেবে সাব্যস্ত হন। কেননা, পিতা-মাতা জীবিত থাকলে তাঁরা দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে পিতা-মাতা শ্রেণির আওতায় মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে থাকেন।
দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে শর্তাধীন আক্বরাবূন করার যুক্তি একইভাবে পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রীকে শর্তাধীন আক্বরাবূন সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
১) শুধু পিতা জীবিত না থাকলে দাদা ও দাদী উত্তরাধিকার পাবেন এবং পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশটি পাবেন, কারণ পিতার অনুপস্থিতির কারণে পিতার মাধ্যমে মৃতের সাথে সম্পর্কিত ঊর্ধ্বতন পিতা-মাতা (দাদা-দাদী) মৃতের উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আক্বরাবূন (নিকটতম) হন। অনুরূপভাবে শুধু মাতা জীবিত না থাকলে নানা ও নানী উত্তরাধিকার পাবেন এবং মাতার আনুপাতিক অংশটি পাবেন, কারণ মাতার অনুপস্থিতির কারণে মাতার মাধ্যমে মৃতের সাথে সম্পর্কিত ঊর্ধ্বতন পিতা-মাতা (নানা-নানী) মৃতের উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আক্বরাবূন (নিকটতম) হন।
২) একাধিক কন্যা থাকলে কন্যা সংখ্যা যতই হোক তারা তাদের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ ভাগ পরস্পর সমান হারে পাবে। ৪:১২ বর্ণিত অবস্থায় একাধিক ভাই-বোন থাকলে তাদের সংখ্যা যতই হোক তারা তাদের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ১/৩ ভাগ পরস্পর সমান হারে পাবে। ৪:১৭৬ বর্ণিত অবস্থায় একাধিক বোন থাকলে তাদের সংখ্যা যতই হোক তারা তাদের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ ২/৩ ভাগ পরস্পর সমান হারে পাবে। ৪:১২ আয়াতে বর্ণিত স্ত্রীদের আনুপাতিক ভগ্নাংশটি একটিমাত্র স্ত্রী থাকলে সে পাবে এবং একাধিক স্ত্রী থাকলে তারা সেই আনুপাতিক ভগ্নাংশটিই যৌথভাবে পরস্পর সমান হারে পাবে।
এই একই যুক্তি অনুসারে পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে, দাদা-দাদী ও নানা-নানী পরবর্তী স্তরের পিতা-মাতা হিসেবে, পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যদিও মূল ধারা বর্ণিত হয়েছে পিতা-মাতার প্রাপ্য অংশ হিসেবে তথা দ্বিবচনে।
৩) কারো অনুপস্থিতিতে তার সমপরিমাণ আনুপাতিক ভগ্নাংশ অন্য কারো জন্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হচ্ছে ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ। ভাই-বোন সরাসরি পিতা-মাতারও স্থলাভিষিক্ত নয়, পুত্র-কন্যারও স্থলাভিষিক্ত নয়। তবে পিতা-মাতা না থাকা অবস্থায় সন্তান থাকলে ভাই-বোনের জন্য পিতা-মাতার অনুরূপ আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পুত্র-কন্যা না থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা থাকুক বা না থাকুক ভাই-বোনের জন্য পুত্র-কন্যার অনুরূপ আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
অনুরূপভাবে পিতা-মাতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় স্তরের পিতা-মাতা হিসেবে দাদা-দাদী, নানা-নানীর জন্য পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ প্রযোজ্য হবে। এর কারণ হলো: (ক) তারা পিতা-মাতা শ্রেণিভুক্ত, (খ) কিন্তু পিতা-মাতার উপস্থিতি তাদেরকে বিবেচনা বহির্ভুত রাখে।
উপরিউক্ত তথ্যানুসারে একটি অনুসিদ্ধান্ত হলো: মৃত ব্যক্তির সন্তান বা পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী এবং পিতা-মাতা বা দাদা-দাদী ও নানা-নানী এই উভয় (ঊর্ধ্বতন ও অধ:স্তন) স্তরের মধ্য থেকে প্রত্যেক স্তরের কেউ না কেউ জীবিত থাকলে ভাই-বোন উত্তরাধিকার পাবে না।
৪) ৪:১৭৬ আয়াতে বক্তব্য কাঠামোর স্বাভাবিক ধারাবাহিকতায় বলা হয়েছে, ‘ওয়া হুয়া ইয়ারিসূহা’ অর্থাৎ ‘সে [ভাইটি] তার [বোনটির] ওয়ারিস হবে’। এখানে ‘হুয়া’ একবচন হওয়া সত্ত্বেও যখন ঐ মূল ধারাটি একটি ভাইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়ে একাধিক ভাইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তথা একাধিক ভাইয়ের কোনো বোন মৃত্যুবরণ করবে, তখন তারা সম্মিলিতভাবে ঐ ভাইয়ের মতো করে বোনটির ওয়ারিস হবে। অর্থাৎ প্রসঙ্গ কাঠামো (subject of context) একটি ভাই ছিলো বিধায়, ওয়া হুয়া ইয়ারিসূহা বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু একাধিক ভাই থাকলেও বিষয়টি প্রযোজ্য যদিও বহুবচনে ‘ওয়া হুম ওয়ারিসুহা’ কথাটি স্বতন্ত্রভাবে উল্লেখ করা হয়নি। সুতরাং বচনের ব্যবহার হয়েছে প্রাথমিক বর্ণনাধারার সাথে মিল রেখে কিন্তু পূর্বাপর বক্তব্য বা কোনো ধারার মাধ্যমে বচনকে সুনির্দিষ্ট শর্ত হিসেবে নির্ধারিত করা না হলে, এটাকে প্রাসঙ্গিক স্বত:সিদ্ধ অবস্থাসমূহের সমন্বয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে না। এই যুক্তিতে পিতা-মাতার প্রসঙ্গে দ্বিবচনে দেয়া বক্তব্যকে পিতা-মাতা জীবিত না থাকায় দাদা-দাদী, নানা-নানীকে যৌথভাবে পিতা-মাতার আনুপাতিক অংশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।
১) মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের সময় তার ইয়াতীম পৌত্র-পৌত্রীরা ততটুকু আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে, যতটুকু ঐ ইয়াতীম পৌত্র-পৌত্রীর পিতা (তথা যার সম্পদ বণ্টন হচ্ছে তার মৃত পুত্র) জীবিত থাকলে পেতো। এটি আবার পৌত্র-পৌত্রীর মধ্যে এভাবে বণ্টিত হবে যে, প্রত্যেক পৌত্র : প্রত্যেক পৌত্রী = ২ : ১।
২) মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টনের সময় তার ইয়াতীম দৌহিত্র-দৌহিত্রীরা ততটুকু আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে, যতটুকু ঐ ইয়াতীম দৌহিত্র-দৌহিত্রীর মাতা (তথা যার সম্পদ বণ্টন হচ্ছে তার মৃত কন্যা) জীবিত থাকলে পেতো। এটি আবার দৌহিত্র-দৌহিত্রীর মধ্যে এভাবে বণ্টিত হবে যে, প্রত্যেক দৌহিত্র: প্রত্যেক দৌহিত্রী = ২ : ১।
৩) যদি মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস হয় তার এক পুত্রের সূত্রে দুই পৌত্র এবং অন্য পুত্রের সূত্রে এক পৌত্র তাহলে প্রথম পুত্রের সূত্রে দুই পৌত্র যা পাবে, দ্বিতীয় পুত্রের সূত্রে এক পৌত্র একাই তা পাবে। অর্থাৎ পৌত্ররা নিজ নিজ পিতা জীবিত থাকলে যে অংশ পেতো সেই অংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে।
৪) যদি মৃত ব্যক্তির কোনো পুত্রের সূত্রে একটি পৌত্রী এবং কোনো কন্যার সূত্রে একটি দৌহিত্র থাকে, তাহলে পৌত্রীটি তার পিতার (তথা মৃতের পুত্রের) আনুপাতিক ভগ্নাংশ এবং দৌহিত্রটি তার মাতার (তথা মৃতের কন্যার) আনুপাতিক ভগ্নাংশ পাবে। কারণ মৃত ব্যক্তির সাথে পৌত্রীর সম্পর্কসূত্র মৃত ব্যক্তির পুত্রের মাধ্যমে এবং দৌহিত্রের সম্পর্কসূত্র মৃত ব্যক্তির কন্যার মাধ্যমে। তাই মৃত ব্যক্তির পুত্রের প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে পুত্রের কন্যা এবং মৃত ব্যক্তির কন্যার অংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে কন্যার পুত্র।
মৃত পিতা-মাতার জন্য কিভাবে আনুপাতিক ভগ্নাংশ বিবেচনা করা যেতে পারে যা দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে দেয়া হবে? অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির জন্য কোনো আনুপাতিক ভগ্নাংশ নির্ধারণের যৌক্তিকতা আছে কিনা? অনুরূপ প্রশ্ন পুত্র-কন্যার অংশ পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রীকে দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
এ প্রশ্নটির উত্তর দাদা-দাদী ও নানা-নানী এবং ইয়াতীম পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র- দৌহিত্রীর উত্তরাধিকার নির্ণয়ের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এ প্রশ্নের উত্তরে প্রথম জ্ঞাতব্য বিষয় হচ্ছে, যদি পিতার পাশাপাশি দাদা-দাদীও মৃত হয় তাহলে ঐ পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ বিবেচনা করা হবে না। কারণ তাঁর সম্পর্কসূত্রে কোনো ঊর্ধ্বতন পিতা-মাতা উপস্থিত নেই। পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ তখনি বিবেচনা করা হবে যখন দাদা-দাদী জীবিত থাকে। কারণ দাদা-দাদী পিতা-মাতাতুল্য কিন্তু পিতা জীবিত থাকলে তাঁরা স্তরগত দূরত্বের কারণে নিকটতম হিসেবে সাব্যস্ত হন না। আর পিতা জীবিত না থাকলে তাঁরা নিকটতম সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা অপসারিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আবার তাঁরা পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশেরই স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হন, কারণ মৃত ব্যক্তির সাথে তাঁদের সম্পর্কসূত্র তৈরি হয়েছে পিতার মাধ্যমে। এমতাবস্থায় পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশকে বিবেচনা করতে হয় অর্থাৎ পিতা জীবিত থাকলে কত পেতো তা বিবেচনা করতে হয়।
কাউকে একবার জীবিত এবং একবার মৃত বিবেচনা করে উত্তরাধিকার নির্ধারণের প্রমাণ হচ্ছে ৪:১৭৬ আয়াতে একটি পুরুষ সন্তানহীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তার একটি বোন থাকলে সে কত পাবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরপরই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপরীতক্রমে তথা যদি এমন হয় যে, ভাইটিই জীবিত আছে এবং বোনটিই সন্তানহীনা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তাহলে ভাইটি বোনটির উত্তরাধিকারী হবে। এ থেকে বুঝা যায় যে, উত্তরাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে কেউ মৃত হওয়া সত্ত্বেও যদি সে জীবিত থাকতো তাহলে তার উত্তরাধিকার কত হতো তা বিবেচনা করার অবকাশ রয়েছে। আর মৃত পিতাকে সে জীবিত থাকলে কত পেতো তা বিবেচনা করতে হয় তার সম্পর্কসূত্রে সম্পর্কিত দাদা-দাদীর প্রাপ্য অংশ নির্ধারণের প্রয়োজনে, অন্যথায় এটি বিবেচনা করা প্রয়োজন হতো না।
নানা-নানী থাকা অবস্থায় মৃত মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশকে বিবেচনা করা, পৌত্র-পৌত্রী থাকা অবস্থায় মৃত পুত্রের আনুপাতিক অংশকে বিবেচনা করা এবং দৌহিত্র-দৌহিত্রী থাকা অবস্থায় মৃত কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশকে বিবেচনা করার ক্ষেত্রেও অনুরূপ কথা প্রযোজ্য।
কুরআন অনুসারে পিতাকে বুঝাতে ‘আবুন’ এবং পিতা ও দাদাকে একসাথে বুঝাতে ‘আবাওয়ায়’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ পিতা ও দাদা উভয়ে পিতৃপুরুষ এবং পিতা প্রসঙ্গে দেয়া বিধানই দাদা ও নানার প্রসঙ্গে প্রযোজ্য। অনুরূপভাবে মাতার প্রসঙ্গে দেয়া বিধানই দাদী ও নানীর প্রসঙ্গে প্রযোজ্য।
ইয়াতীম নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য যেসব যুক্তি দেয়া হয় তা নিম্নরূপ:
১) মৃত ব্যক্তির কোনো পুত্র থাকলে তার ইয়াতীম নাতি উত্তরাধিকার পাবে না। কারণ কুরআন অনুসারে উত্তরাধিকার পাওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তির আক্বরাবূন/নিকটতম হতে হবে। ইয়াতীম নাতির তুলনায় তার চাচা (তথা যার সম্পদ বণ্টন হচ্ছে তার পুত্র) আক্বরাবূন/নিকটতম। তাই ইয়াতীম নাতির চাচা জীবিত থাকার কারণে ইয়াতীম নাতি বঞ্চিত হবে।
২) যেহেতু অসহায়ত্বকে উত্তরাধিকারের ভিত্তি বানানো হয়নি বরং আক্বরাবূন/নিকটতম হওয়াকে উত্তরাধিকারের ভিত্তি বানানো হয়েছে। তাই ইয়াতীম নাতির চাচারা স্বচ্ছল হলেও তারা উত্তরাধিকার পাবে এবং ইয়াতীম নাতিরা অসহায় হলেও তারা উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।
৩) ইয়াতীম নাতি সব সময় অসহায় নাও হতে পারে। এটাও সম্ভব যে, ইয়াতীম নাতির পিতা অনেক সম্পদ রেখে গিয়েছে। তাই ইয়াতীম নাতি দাদার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হওয়াকে অমানবিক বলে দেয়া উচিত নয়। এমনকি একাধিক পুত্র তাদের বয়স, যোগ্যতা, স্বচ্ছলতার পার্থক্য সত্ত্বেও যেমন পরস্পর সমান হারে সম্পত্তি পায়, অনুরূপভাবে ইয়াতীম নাতি নিয়ম বহির্ভুত হওয়ার কারণে বঞ্চিত হয়। এক্ষেত্রে মানবিকতার চেয়ে উত্তরাধিকার বণ্টনের নিয়মকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৪) ইয়াতীম নাতিদেরকে উত্তরাধিকার দিলে যেসব নাতি ইয়াতীম নয় তাদেরকেও উত্তরাধিকার দিতে হতো। কারণ অন্যথায় নাতিদের মধ্যে বৈষম্য হতো। অন্য নাতিরা তাদের পিতার মাধ্যমে পাবে বিধায় তাদেরকে না দিয়ে শুধু ইয়াতীম নাতিকে দেয়া সঠিক হতো না। কারণ তাদের পিতা তাদের জন্য সম্পদ রেখে যাবে নাকি খরচ করে ফেলবে তা অনিশ্চিত। আবার তারা তাদের পিতা থেকে দাদার সম্পদই পাবে এমন নয়, বরং তাদের জন্য তাদের পিতা নিজ উপার্জিত সম্পদ রেখে যেতে পারে।
৫) ইয়াতীম নাতিদের জন্য ২:১৮০-১৮২ আয়াতে বর্ণিত ওয়াসিয়্যাতের বিধান অনুসারে ওয়াসিয়্যাত করা যেতে পারে। সুতরাং ইয়াতীম নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা অযৌক্তিক নয়।
৬) উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় ইয়াতীমরা উপস্থিত হলে তাদেরকে কিছু দিতে হবে বলে ৪:৮ আয়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই ইয়াতীম নাতিরা উপস্থিত হলে তাদেরকে কিছু দেয়া যেতে পারে, তাই তাদেরকে উত্তরাধিকারের কোনো নির্ধারিত অংশ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা অযৌক্তিক নয়।
ইয়াতীম নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য যেসব যুক্তি দেয়া হয় নিম্নে সেগুলো খন্ডন করা হলো:
১) কুরআনে যেমন ইয়াতীম নাতিকে সরাসরি উত্তরাধিকারী করা হয় হয়নি, তেমনি দাদাকেও সরাসরি উত্তরাধিকারী করা হয়নি। কিন্তু কুরআনে ‘আক্বরাবূন’ এবং সম্পদ বণ্টন প্রসঙ্গে যেসব তথ্য রয়েছে তার অনুসিদ্ধান্ত হিসেবে পিতার অবর্তমানে দাদা পিতার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হয়। অনুরূপভাবে পুত্রের অবর্তমানে ইয়াতীম নাতি পুত্রের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হয়।
দাদাকে পিতার জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে চাচা প্রতিবন্ধক নয়। কারণ দাদার সাথে নাতির সম্পর্ক চাচার মাধ্যমে স্থাপিত হয়নি বরং পিতার মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে। তাই যার মাধ্যমে সম্পর্ক সূত্র তৈরি হয়েছে তার উপস্থিতিতে তার পূর্বের স্তরের পিতা (অর্থাৎ দাদা) আক্বরাবূন হয় না, কিন্তু পিতার অনুপস্থিতিতে দাদা আক্বরাবূন হয়।
অনুরূপভাবে ইয়াতীম নাতির চাচা ঐ নাতিকে (তথা মৃত দাদার দ্বিতীয় স্তরের পুত্রকে) তার দাদার সম্পদে পুত্রের জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। কারণ ইয়াতীম নাতির চাচার মাধ্যমে নয়, বরং নিজ পিতার মাধ্যমেই তার দাদার সাথে তার সম্পর্কসূত্র তৈরি হয়েছে।
দাদা যেমন পিতা হিসেবে সাব্যস্ত তেমনি নানাও পিতা হিসেবে সাব্যস্ত। কিন্তু নানার সাথে সম্পর্ক হচ্ছে মাতার মাধ্যমে। তাই মাতার উপস্থিতিতে নানা উত্তরাধিকার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আক্বরাবূন হতে পারেন না। অনুরূপভাবে কন্যার উপস্থিতিতে নাতি (কন্যার পুত্র) উত্তরাধিকার পাবে না, কিন্তু কন্যা জীবিত না থাকলে ঐ কন্যার পুত্র নিজ নানার সম্পদে উত্তরাধিকার পাবে।
এক্ষেত্রে দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে, প্রচলিত নিয়মে ‘যাবিল আরমহামের’ (রক্তসম্পর্কিত আত্মীয়দের) মধ্যে বণ্টনের একটি ধারা হলো: মাতার পিতার পিতা পাবেন ২/৩ এবং মাতার পিতার মাতা পাবেন ১/৩ । কারণ তাঁরা উভয়ে মৃত ব্যক্তির সাথে তার মাতার মাধ্যমে সম্পর্কিত এবং একই স্তরে রয়েছেন।
উপরিউক্ত ধারাটিতে যে বণ্টননীতি অবলম্বন করা হয়েছে তা যথার্থ এবং একই নীতি ইয়াতীম নাতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ ইয়াতীম নাতি তার পিতা জীবিত থাকলে যে আনুপাতিক ভগ্নাংশ লাভ করতেন তার স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অথচ প্রচলিত নিয়মে ইয়াতীম নাতিকে বঞ্চিত করা হয়। বস্তুত ইয়াতীম নাতিকে বঞ্চিত করা যুক্তিসিদ্ধ নয়।
২) অসহায়ত্বকে উত্তরাধিকারের বিধানের ভিত্তি বানানো হয়নি, কিন্তু উত্তরাধিকার বণ্টন বিধির ক্ষেত্রে অবশ্যই অসহায়ত্বের সাধারণ মাত্রাগত তারতম্যকে গড় হিসেবের নিয়মে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাই পুত্র ও কন্যা উভয়ে ওয়ালাদ বা সন্তান হওয়া সত্ত্বেও পুত্রের দায়-দায়িত্ব বিবেচনায় কন্যার চেয়ে পুত্রকে দ্বিগুণ দেয়া হয়েছে। গড় তারতম্যের সাথে বাস্তবে কখনো ব্যতিক্রম হতে পারে, কিন্তু গড় তারতম্য বিবেচনায় যেভাবে স্থায়ী বণ্টন বিধি দেয়া হয়েছে সেভাবেই বণ্টন করতে হবে। এটা নিশ্চিত যে, সকল ইয়াতীম অসহায় না হলেও সাধারণভাবে ইয়াতীম নাতিরা তুলনামূলক অসহায়ত্বের অবস্থায় থাকে। এ কারণে ইয়াতীম নাতিদেরকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা উত্তরাধিকারের সাধারণ মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ইয়াতীমদের সাধারণ অসহায়ত্বকে কুরআনে বিশেষ গুরুত্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সূরা নিসা ৪:৯-১০ আয়াতের বক্তব্য হচ্ছে:
৪:৯ :: আর তারা যেন ভয় করে যে, যদি তারা তাদের পেছনে দুর্বল-অসহায় সন্তানাদি রেখে যেতো তবে তারা তাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতো, সুতরাং তারা যেন আল্লাহ সচেতন হয় এবং সঙ্গত কথা বলে।
৪:১০ :: নিশ্চয় যারা ইয়াতীমের মালসম্পদ গ্রাস করার জুলুম করে, বস্তুত তারা তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে, আর শীঘ্রই তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।
৩) ইয়াতীম নাতির পিতা অনেক সম্পদ রেখে গেলেও তাদেরকে তাদের প্রাপ্য নির্ধারিত অংশ দিতে হবে এবং সম্পদ না রেখে গেলেও ইয়াতীম নাতি তার দাদার থেকে নির্ধারিত প্রাপ্য অংশ পাবে। ইয়াতীম নাতিকে বঞ্চিত করাকে নিয়ম মনে করা একটি বহুল প্রচলিত ভুল।
৪) ইয়াতীম নাতি ছাড়া অন্য নাতির পিতা যা লাভ করবে তা খরচ করার ক্ষেত্রেও ঐ নাতিরা উপকৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কারণ তাদের পিতা তাদের জন্য খরচ করতে পারে। আর তাদের পিতা ঐ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আরো উপার্জন করার ক্ষেত্রেও ঐ সম্পদের উপযোগিতা রয়েছে। সুতরাং সেক্ষেত্রেও তারা তাদের দাদার সম্পদ থেকে পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়। এছাড়া পিতা-মাতা ও সন্তান থাকা অবস্থায় ভাই-বোন উত্তরাধিকার পায় না। এর একটি যৌক্তিকতা হচ্ছে পিতা-মাতা যা পাবে তা থেকে ভাই-বোন উপকৃত হতে পারবে। সুতরাং ইয়াতীম নাতি ছাড়া অন্য নাতি দাদার সম্পদ থেকে পরোক্ষভাবে উপকৃত হয় বিধায় তাদেরকে আলাদাভাবে ওয়ারিস সাব্যস্ত না করা কিন্তু ইয়াতীম নাতিকে তার পিতা জীবিত থাকলে যে অংশ লাভ করতো তার স্থলাভিষিক্ত করার মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। পিতার অবর্তমানে যেমন দাদা-দাদী উত্তরাধিকার পায় কিন্তু নানা-নানী উত্তরাধিকার পায় না, কারণ মৃত ব্যক্তির সাথে নানা-নানীর সম্পর্কসূত্র তার পিতার মাধ্যমে তৈরি হয়নি; তেমনি ইয়াতীম নাতি তার পিতার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হয়, কিন্তু অন্য নাতি উত্তরাধিকার পায় না কারণ তার সাথে তার দাদার সম্পর্কসূত্র তৈরি হয়েছে তার পিতার মাধ্যমে, আর তার পিতা জীবিত থাকায় সে কারো অংশের স্থলাভিষিক্ত নয়।
৫) ২:১৮০-১৮২ আয়াতে পিতা-মাতা ও আক্বরাবূনদের জন্য ওয়াসিয়্যাত করাকে মৃত্যু নিকটবর্তী ব্যক্তির উপর বাধ্যতামূলক বিধান করা হয়েছে। আয়াত অনুসারে ইয়াতীম নাতির জন্য ওয়াসিয়্যাত করার সুযোগ রয়েছে বিধায় ইয়াতীম নাতি উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে বলে দাবি করা যৌক্তিক নয়। কারণ এ আয়াত অনুসারে পিতা-মাতার জন্য এবং সন্তানদের জন্য ওয়াসিয়্যাত করা বাধ্যতামূলক। আবার উত্তরাধিকারের নির্ধারিত বণ্টন বিধিতে পিতা-মাতার এবং সন্তানদের আনুপাতিক অংশ রয়েছে। অনুরূপভাবে এ আয়াত অনুসারে দাদা-দাদীও ওয়াসিয়্যাতের আওতাভুক্ত। অথচ পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে দাদা-দাদী পিতা-মাতার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হয়। অনুরূপভাবে এ আয়াত অনুসারে ইয়াতীম নাতি ওয়াসিয়্যাতের আওতাভুক্ত। আবার ইয়াতীম নাতি মৃতের পুত্র-কন্যার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হবে।
যদিও গ্রহণযোগ্য মত নয়, তবু উল্লেখ্য যে, একটি মত অনুসারে, ২:১৮০-১৮২ আয়াত রহিত হয়ে গেছে তাই তা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক নয়। একদিকে ২:১৮০-১৮২ আয়াতকে ইয়াতীম নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবিধান হিসেবে প্রস্তাব করা এবং অন্যদিকে ওয়াসিয়্যাতের আয়াতকে রহিত বলে দাবি করার মাধ্যমে সার্বিকভাবে ইয়াতীম নাতি সর্বপ্রকার অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকে যায়।
৬) ৪:৮ আয়াতে উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীন উপস্থিত হলে তাদেরকে তা থেকে উপজীবিকা হিসেবে কিছু দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ন্যুনতম পরিমাণ হিসেবে সমাজে যে প্রস্তাবটি চালু রয়েছে তা হলো, তাদেরকে এক বেলা খাইয়ে দেয়া। এ বিষয়ে একটি প্রচলিত (তবে অগ্রহণযোগ্য) দাবি হলো, ৪:৮ আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে। আবার কারো কারো দাবি হলো, উত্তরাধিকার বণ্টনের পরে কিছু অবশিষ্ট থাকলে এ বিধান কার্যকর হবে। অথচ আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতি অনুসারে কিছু অবশিষ্ট থাকা সম্ভব নয়। সুতরাং এ দাবিটিও গ্রহণযোগ্য নয়। এসব প্রেক্ষিতে ইয়াতীম নাতিকে মিরাস থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবিধান হিসেবে ৪:৮ আয়াতের নির্দেশনা পরিপালনের প্রস্তাব বাস্তবে অকার্যকর হয়ে রয়েছে।
বস্তুত ৪:৮ আয়াতের নির্দেশনা অনুসারে ওয়ারিসদের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে ইয়াতীম নাতিকে সম্পদের একটি অংশ দেয়ার জন্য নির্ধারণ করলেও তা তাদেরকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার পক্ষে কোনো যৌক্তিক ভিত্তি হবে না।
সুতরাং ইয়াতীম নাতিকে উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য যেসব যুক্তি দেয়া হয় তা গ্রহণযোগ্য নয়। দাদা যেমন পিতার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হয়, ইয়াতীম নাতিও তেমনি পুত্রের প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হবে।
পিতা-মাতার অবর্তমানে দাদা-দাদী ও নানা-নানী পিতা-মাতার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হন। পুত্র-কন্যার অবর্তমানে পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রী পুত্র-কন্যার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হন। কারণ এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন বা অধ:স্তন সম্পর্কসূত্রের মাধ্যমিক স্তর অনুপস্থিত থাকায় তারা মৃত ব্যক্তির আক্বরারবূন বা নিকটতম হন।
কিন্তু এ স্থলাভিষিক্ততা শুধুমাত্র পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা শ্রেণির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কারণ দাদা-দাদী ও নানা-নানী পিতা-মাতাতুল্য। কিন্তু পিতা-মাতা জীবিত থাকায় তাঁরা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে আক্বরাবূন বা নিকটতম হন না বিধায় তখন উত্তরাধিকার পাবেন না। অন্যদিকে পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে আক্বরাবূন বা নিকটতম হন বিধায় তখন উত্তরাধিকার পাবেন। অনুরূপভাবে পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রী পুত্র-কন্যাতুল্য। কিন্তু পুত্র-কন্যা জীবিত থাকায় তারা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে আক্বরাবূন বা নিকটতম হয় না বিধায় তখন উত্তরাধিকার পাবে না। অন্যদিকে পুত্র-কন্যা জীবিত না থাকলে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে আক্বরাবূন বা নিকটতম হয় বিধায় তখন উত্তরাধিকার পাবে।
পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা শ্রেণি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের স্থলাভিষিক্ততা প্রযোজ্য নয়। তাই পুত্র-কন্যা ছাড়া অন্য কোনো ওয়ারিস তার সন্তান রেখে গেলে তার সন্তান তার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হবে না। যেমন, কোনো ভাই তার সন্তান রেখে গেলে ঐ সন্তান (তথা যার উত্তরাধিকার বন্টন হবে তার ভাতিজা) মৃত ব্যক্তির ভাইয়ের প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হবে না। অনুরূপভাবে, চাচা দাদার প্রাপ্য অংশের স্থলাভিষিক্ত হবে না।
একই যুক্তিতে, কোনো স্ত্রীর স্বামী না থাকলে স্বামীর জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ তার ভিন্ন স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান পাবে না এবং কোনো স্বামীর স্ত্রী না থাকলে স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ তার গর্ভধারণকৃত ভিন্ন স্বামীর সন্তান পাবে না।
৪:১১, ৪:১২ ও ৪:১৭৬ অনুযায়ী, ওয়ারিসদের মধ্যে উত্তরাধিকার বণ্টনের ভগ্নাংশসমূহের প্রত্যক্ষ ধারাসমূহ নিম্নরূপ:
১. সন্তানদের মধ্যে এক পুরুষ পাবে = দুই নারীর অংশের মতো। (অর্থাৎ এক পুত্রের অংশ = দুই কন্যার অংশের মতো)।
২. যদি সন্তানগণ হয় নারী, দুই বা দুইয়ের বেশি তবে তারা সমষ্টিগতভাবে পাবে = ২/৩ । (অর্থাৎ দুই বা দুইয়ের বেশি কন্যা পাবে = ২/৩ )।
৩. যদি সন্তানটি হয় একজনই (কন্যা) তবে সে পাবে = ১/২ । (অর্থাৎ একটিমাত্র কন্যা থাকলে সে পাবে = ১/২ )।
৪. যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান (পুত্র/কন্যা) থাকে, তাহলে পিতা ও মাতা দুজনের প্রত্যেকে পাবে = ১/৬ । (অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে, পিতা পাবে = ১/৬ , মাতা পাবে = ১/৬ )।
৫. যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান (পুত্র/কন্যা) না থাকে, তাহলে তার পিতা-মাতা তার ওয়ারিস হলে, মাতা পাবে = ১/৩ ।
৬. যদি মৃত ব্যক্তির (সন্তান না থাকা অবস্থায় তার) ভাই-বোন থাকে, তাহলে মাতা পাবে = ১/৬ । (অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সন্তান নাই কিন্তু ভাই-বোন আছে, এ অবস্থায় মাতা পাবে = ১/৬ )।
৭. যদি মৃত স্ত্রীর সন্তান (পুত্র/কন্যা) না থাকে, তাহলে স্বামী পাবে = ১/২ ।
৮. যদি মৃত স্ত্রীর সন্তান (পুত্র/কন্যা) থাকে, তাহলে স্বামী পাবে = ১/৪ ।
৯. যদি মৃত স্বামীর সন্তান (পুত্র/কন্যা) থাকে, তাহলে স্ত্রী পাবে = ১/৪ ।
১০. যদি মৃত স্বামীর সন্তান (পুত্র/কন্যা) থাকে, তাহলে স্ত্রী পাবে = ১/৮ ।
১১. যদি কোনো পুরুষ বা নারী এরূপ হয় যে, তাকে পূর্বসূরী করা হয়েছে (অর্থাৎ তার উত্তরসূরী থাকে) এবং সে [মৃত পুরষটি বা নারীটি] কালালাহ হয়, তবে তার এক ভাই বা এক বোন থাকলে, তাদের দুজনের প্রত্যেকে/ দুজনের যে-ই থাকুক সে পাবে = ১/৬ । (অর্থাৎ তার এক ভাই থাকলে ভাইটি পাবে ১/৬ অথবা এক বোন থাকলে বোনটি পাবে = ১/৬ )
১২. যদি ১১ নং ধারায় বর্ণিত অবস্থায় একাধিক ভাই/বোন থাকে, তবে ভাই-বোনেরা সম্মিলিতভাবে পাবে = ১/৩ ।
১৩. কালালাহর মধ্যে সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে, যদি কোনো মৃত পুরুষের সন্তান (পুত্র/কন্যা) না থাকে এবং তার একটি বোন থাকে, তবে বোনটি পাবে = ১/২ ।
১৪. যদি মৃত বোনের কোনো সন্তান (পুত্র/কন্যা) না থাকে, তবে তার ভাই তার ওয়ারিস হবে।
১৫. যদি মৃত ব্যক্তির বোন দুজন হয় তবে তারা সমষ্টিগতভাবে পাবে = ২/৩ ।
১৬. যদি মৃত ব্যক্তির কয়েকজন ভাই/বোন থাকে, তবে এক ভাই পাবে = দুই বোনের অংশের মতো।
১. কুরআনে যাদেরকে মাওয়ালী বা আক্বরাবূন ওয়ারিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের কেউ না কেউ জীবিত থাকা অবস্থায় অন্য কেউ ওয়ারিস হবে না।
২. কুরআনে যাদেরকে মাওয়ালী বা আক্বরাবূন ওয়ারিস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যকার যে বা যারাই জীবিত থাকুক সে বা তারা সমস্ত সম্পদ পাবে, কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
নিম্নে ৪:৭ ও ৪:৩৩ আয়াতের শর্ত অনুসারে ৪:১১, ৪:১২ ও ৪:১৭৬ আয়াতের বর্ণিত বণ্টন বিধির ভিত্তিতে এক নজরে ওয়ারিসদের আনুপাতিক ভগ্নাংশসমূহ উল্লেখ করা হলো:
পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ
১. একাধিক কন্যা, অথবা এক বা একাধিক পুত্র, অথবা পুত্র-কন্যা সম্মিলিতভাবে পাবে ২/৩ । যদি পুত্র-কন্যা যৌথভাবে থাকে, তবে এই ২/৩ অংশে পুত্র:কন্যা = ২:১ অনুপাতে বণ্টন হবে।
২. পুত্র না থাকা অবস্থায় একটিমাত্র কন্যা থাকলে সে পাবে ১/২ ।
পিতা-মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ
৩. পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে মাতা পাবে ১/৬ ।
৪. পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে পিতা পাবে ১/৬ ।
৫. কোনো সন্তান না থাকলে এবং কোনো ভাই বা বোনও না থাকলে মাতা পাবে ১/৩ ।
৬. কোনো সন্তান না থাকলে এবং কোনো ভাই বা বোনও না থাকলে পিতা পাবে ২/৩ ।
৭. কোনো সন্তান না থাকলে কিন্তু ভাই/বোন/ভাই-বোন থাকলে মাতা পাবে ১/৬ ।
৮. কোনো সন্তান না থাকলে কিন্তু ভাই/বোন/ভাই-বোন থাকলে পিতা পাবে ১/৬ ।
স্বামী/স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ
৯. স্ত্রীর কোনো সন্তান না থাকলে স্বামী পাবে ১/২ ।
১০. স্ত্রীর পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে স্বামী পাবে ১/৪ ।
১১. স্বামীর কোনো সন্তান না থাকলে স্ত্রী পাবে ১/৪ ।
১২. স্বামীর পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে স্ত্রী পাবে ১/৮ ।
ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ
১৩. মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকলে, একাধিক বোন, অথবা এক বা একাধিক ভাই, অথবা ভাই-বোন সম্মিলিতভাবে পাবে ২/৩ । যদি ভাই-বোন যৌথভাবে থাকে, তবে এই ২/৩ অংশে ভাই:বোন = ২:১ অনুপাতে বণ্টন হবে।
১৪. মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকলে, ভাই না থাকা অবস্থায় একটিমাত্র বোন থাকলে সে পাবে ১/২ ।
১৫. মৃত ব্যক্তির পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে কিন্তু পিতা-মাতা না থাকলে, একটিমাত্র ভাই থাকলে সে পাবে ১/৬ ।
১৬. মৃত ব্যক্তির পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে কিন্তু পিতা-মাতা না থাকলে, একটিমাত্র বোন থাকলে সে পাবে ১/৬ ।
১৭. মৃত ব্যক্তির পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে কিন্তু পিতা-মাতা না থাকলে, একাধিক ভাই, অথবা একাধিক বোন, অথবা ভাই-বোন সম্মিলিতভাবে পাবে ১/৩ । এই ১/৩ অংশ তাদের মধ্যে সমানুপাতে (পরস্পর সমান অনুপাতে) বণ্টন হবে।
দাদা-দাদীর ও নানা-নানীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ
১৮. দাদা-দাদী হচ্ছে পিতা-মাতাতুল্য, তবে পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় দাদা-দাদী স্তরগত পার্থক্যের কারণে ‘আক্বরাবূন’ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না। পিতা জীবিত না থাকলে, পিতার অংশ দাদা-দাদীর মধ্যে বণ্টিত হবে। এমতাবস্থায় ঐ অংশটি দাদা-দাদীর মধ্যে সেভাবে বণ্টিত হবে পিতার অংশটি মাতার সাথে যে আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হয়েছে সে অনুসারে দাদার আনুপাতিক অংশ হবে পিতার অনুরূপ এবং দাদীর আনুপাতিক অংশ হবে মাতার অনুরূপ।
১৯. নানা-নানী হচ্ছে পিতা-মাতাতুল্য, তবে মাতা জীবিত থাকা অবস্থায় নানা-নানী স্তরগত পার্থক্যের কারণে ‘আক্বরাবূন’ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না। মাতা জীবিত না থাকলে, মাতার অংশ নানা-নানীর মধ্যে বণ্টিত হবে। এমতাবস্থায় ঐ অংশটি নানা-নানীর মধ্যে সেভাবে বণ্টিত হবে মাতার অংশটি পিতার সাথে যে আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হয়েছে সে অনুসারে নানীর আনুপাতিক অংশ হবে মাতার অনুরূপ এবং নানার আনুপাতিক অংশ হবে পিতার অনুরূপ।
২০. দাদা-দাদী ও নানা-নানী হচ্ছে পিতা-মাতাতুল্য, তবে পিতা-মাতা জীবিত থাকা অবস্থায় দাদা-দাদী ও নানা-নানী স্তরগত পার্থক্যের কারণে ‘আক্বরাবূন’ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না। পিতা-মাতা জীবিত না থাকলে, পিতা-মাতার অংশ দাদা-দাদী ও নানা-নানীর মধ্যে বণ্টিত হবে। এমতাবস্থায় ঐ অংশটি দাদা-দাদী ও নানা-নানীর মধ্যে এভাবে বণ্টিত হবে যে, পিতার আনুপাতিক অংশ লাভ করবে দাদা-দাদী, কারণ তাঁরা পিতার সম্পর্কসূত্রে মৃতের সাথে সম্পর্কিত। আর মাতার আনুপাতিক অংশ লাভ করবেন নানা-নানী, কারণ তাঁরা মাতার মাধ্যমে মৃতের সাথে সম্পর্কিত। তারপর আবার দাদা-দাদীর পারস্পরিক অংশের অনুপাত হবে পিতা-মাতার পারস্পরিক অনুপাতের অনুরূপ। আর নানা-নানীর পারস্পরিক অংশের অনুপাত হবে পিতা-মাতার পারস্পরিক অনুপাতের অনুরূপ।
পৌত্র-পৌত্রী এবং দৌহিত্র-দৌহিত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ
* পৌত্র = পুত্রের পুত্র, পৌত্রী = পুত্রের কন্যা, দৌহিত্র = কন্যার পুত্র, দৌহিত্রী = কন্যার কন্যা।
২১. পৌত্র-পৌত্রী হচ্ছে পুত্র-কন্যাতুল্য, তবে কোনো পুত্র জীবিত থাকা অবস্থায় ঐ পুত্রের সূত্রে থাকা পৌত্র-পৌত্রী স্তরগত পার্থক্যের কারণে ‘আক্বরাবূন’ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না। কোনো পুত্র জীবিত না থাকলে, তার অংশ তার সূত্রে থাকা পৌত্র-পৌত্রীর মধ্যে বণ্টিত হবে। এমতাবস্থায় ঐ অংশটি ঐ পৌত্র-পৌত্রীর মধ্যে সেভাবে বণ্টিত হবে পুত্র-কন্যার মধ্যে যেভাবে বণ্টিত হয়ে থাকে। কিন্তু যদি পৌত্র না থাকা অবস্থায় শুধু পৌত্রী থাকে তবে সে একাই ঐ অংশটি লাভ করবে। অনুরূপভাবে যদি পৌত্রী না থাকা অবস্থায় শুধু পৌত্র থাকে, তবে সে একাই ঐ অংশটি লাভ করবে। যদি পৌত্র না থাকা অবস্থায় একাধিক পৌত্রী থাকে, তারা পরস্পর সমানুপাতে ঐ অংশটি লাভ করবে। অনুরূপভাবে যদি পৌত্রী না থাকা অবস্থায় একাধিক পৌত্র থাকে, তারা পরস্পর সমানুপাতে ঐ অংশটি লাভ করবে।
২২. দৌহিত্র-দৌহিত্রী হচ্ছে পুত্র-কন্যাতুল্য, তবে কোনো কন্যা জীবিত থাকা অবস্থায় ঐ কন্যার সূত্রে থাকা দৌহিত্র-দৌহিত্রী স্তরগত পার্থক্যের কারণে ‘আক্বরাবূন’ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না। কোনো কন্যা জীবিত না থাকলে, তার অংশ তার সূত্রে থাকা দৌহিত্র-দৌহিত্রীর মধ্যে বণ্টিত হবে। এমতাবস্থায় ঐ অংশটি ঐ দৌহিত্র-দৌহিত্রীর মধ্যে সেভাবে বণ্টিত হবে পুত্র-কন্যার মধ্যে যেভাবে বণ্টিত হয়ে থাকে। কিন্তু যদি দৌহিত্র না থাকা অবস্থায় শুধু দৌহিত্রী থাকে তবে সে একাই ঐ অংশটি লাভ করবে। অনুরূপভাবে যদি দৌহিত্রী না থাকা অবস্থায় শুধু দৌহিত্র থাকে, তবে সে একাই ঐ অংশটি লাভ করবে। যদি দৌহিত্র না থাকা অবস্থায় একাধিক দৌহিত্রী থাকে, তারা পরস্পর সমানুপাতে ঐ অংশটি লাভ করবে। অনুরূপভাবে যদি দৌহিত্রী না থাকা অবস্থায় একাধিক দৌহিত্র থাকে, তারা পরস্পর সমানুপাতে ঐ অংশটি লাভ করবে।
২৩. পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রী হচ্ছে পুত্র-কন্যাতুল্য, তবে কোনো পুত্র-কন্যা জীবিত থাকা অবস্থায় ঐ পুত্র-কন্যার সূত্রে থাকা পৌত্র-পৌত্রী ও দৌহিত্র-দৌহিত্রী স্তরগত পার্থক্যের কারণে ‘আক্বরাবূন’ হিসেবে সাব্যস্ত হয় না। কোনো পুত্র-কন্যা জীবিত না থাকলে, তাদের অংশ তাদের সূত্রে থাকা পৌত্র-পৌত্রীর ও দৌহিত্র-দৌহিত্রীর মধ্যে বণ্টিত হবে। এমতাবস্থায় ঐ অংশটি ঐ পৌত্র-পৌত্রীর ও দৌহিত্র-দৌহিত্রীর মধ্যে এভাবে বণ্টিত হবে যে, পুত্রের আনুপাতিক অংশ পাবে পৌত্র-পৌত্রী এবং কন্যার আনুপাতিক অংশ পাবে দৌহিত্র-দৌহিত্রী। আবার এক পৌত্র পাবে দুই পৌত্রীর অনুরূপ এবং এক দৌহিত্র পাবে দুই দৌহিত্রীর অনুরূপ।
২৪. এক পুত্রের সূত্রে দুই পৌত্র এবং অন্য পুত্রের সূত্রে এক পৌত্র ওয়ারিস হলে, প্রথম পুত্রের সূত্রে দুই পৌত্র যা পাবে, দ্বিতীয় পুত্রের সূত্রে এক পৌত্র একাই তা পাবে। অর্থাৎ পৌত্ররা নিজ নিজ পিতার অংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে।
২৫. কোনো পুত্রের সূত্রে একটি পৌত্রী এবং কোনো কন্যার সূত্রে একটি দৌহিত্র ওয়ারিস হলে, পৌত্রীটি পুত্রের আনুপাতিক অংশ এবং দৌহিত্রটি কন্যার আনুপাতিক অংশ পাবে। কারণ মৃত ব্যক্তির সাথে পৌত্রীর সম্পর্কসূত্র মৃত ব্যক্তির পুত্রের মাধ্যমে এবং দৌহিত্রের সম্পর্কসূত্র মৃত ব্যক্তির কন্যার মাধ্যমে। তাই মৃত ব্যক্তির পুত্রের অংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে পুত্রের কন্যা এবং মৃত ব্যক্তির কন্যার অংশের স্থলাভিষিক্ত প্রাপক হবে কন্যার পুত্র।
বৈপিত্রেয় (মাতৃশরিক) ও বৈমাত্রেয় (পিতৃশরিক) ভাই-বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ
২৬. মৃত ব্যক্তির কোনো সন্তান না থাকলে, বৈপিত্রেয় (মাতৃশরিক) ও বৈমাত্রেয় (পিতৃশরিক) ভাই/বোন/ভাই-বোন সেভাবেই উত্তরাধিকার লাভ করবে যেভাবে পূর্ণ আপন (পিতৃ-মাতৃ উভশরিক) ভাই/বোন/ভাই-বোন উত্তরাধিকার লাভ করে থাকে।
২৭. মৃত ব্যক্তির পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে এবং পিতা থাকলে (কিন্তু মাতা না থাকলে) পূর্ণ আপন ভাই-বোন এবং বৈমাত্রেয় (পিতৃশরিক) ভাই-বোন উত্তরাধিকার পাবে না, কারণ এ অবস্থায় তারা মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন হলেও মৃত ব্যক্তির কালালাহ অবস্থানের সাপেক্ষে ভাই-বোন নয়। এমতাবস্থায় বৈপিত্রেয় (মাতৃশরিক) ভাই/বোন/ভাই-বোন ৪:১২ আয়াতে বর্ণিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ অনুসারে উত্তরাধিকার পাবে।
২৮. মৃত ব্যক্তির পুত্র/কন্যা/পুত্র-কন্যা থাকলে এবং মাতা থাকলে (কিন্তু পিতা না থাকলে) পূর্ণ আপন ভাই-বোন এবং বৈপিত্রেয় (মাতৃশরিক) ভাই-বোন উত্তরাধিকার পাবে না, কারণ এ অবস্থায় তারা মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন হলেও মৃত ব্যক্তির কালালাহ অবস্থানের সাপেক্ষে ভাই-বোন নয়। এমতাবস্থায় বৈমাত্রেয় (মাতৃশরিক) ভাই/বোন/ভাই-বোন ৪:১২ আয়াতে বর্ণিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ অনুসারে উত্তরাধিকার পাবে।
১। মৃত ব্যক্তির ১ জন কন্যা, মাতা এবং ২ জন পূর্ণ আপন ভাই আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: ১ জন কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /২
মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
২ জন পূর্ণ আপন ভাইয়ের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ০
২। মৃত ব্যক্তির ২ জন পুত্র, ১ জন কন্যা, স্ত্রী এবং মাতা আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: পুত্র-কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২ /৩
(এতে ১ পুত্র : ১ কন্যা = ২ : ১)
স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৮
মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
৩। মৃত ব্যক্তির পিতা, মাতা, স্ত্রী এবং ১ জন ভাই আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৪
১ জন ভাইয়ের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২ /৩
৪। মৃত ব্যক্তির পিতা, স্ত্রী ও ৩ জন বোন আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৪
৩ জন বোনের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২ /৩
৫। মৃত ব্যক্তির পিতা, মাতা ও ২ জন স্ত্রী আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২ /৩
মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৩
২ জন স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৪
(এতে ১ স্ত্রী : ১ স্ত্রী = ১ : ১)
৬। মৃত ব্যক্তির দাদী, নানা, পৌত্রী (পুত্রের কন্যা) ও দৌহিত্র (কন্যার পুত্র) আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: (পিতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে)
দাদীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
(মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে)
নানার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
পৌত্রী ও দৌহিত্রের সম্মিলিত আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২ /৩
(এতে পৌত্রী : দৌহিত্র = ২ : ১,
কারণ- পৌত্রী হলো পুত্রের আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত
এবং দৌহিত্র হলো কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশের স্থলাভিষিক্ত)
৭। মৃত ব্যক্তির ১ জন পুত্র, মাতা, স্ত্রী, ১ জন পূর্ণ আপন ভাই, ১ জন বৈপিত্রেয় ভাই ও ১ জন বৈমাত্রেয় ভাই আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: পুত্রের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ২ /৩
স্ত্রীর আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৮
মাতার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
১ জন পূর্ণ আপন ভাইয়ের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ০
১ জন বৈপিত্রেয় ভাইয়ের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ০
১ জন বৈমাত্রেয় ভাইয়ের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৬
৮। মৃত ব্যক্তির ১ জন কন্যা, ১ জন পূর্ণ আপন বোন, ১ জন বৈপিত্রেয় বোন ও ১ জন বৈমাত্রেয় বোন আছে। তাদের মধ্যে উত্তরাধিকার সম্পত্তির বণ্টন কীরূপ হবে?
উত্তর: ১ জন কন্যার আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /২
বোনদের আনুপাতিক ভগ্নাংশ = ১ /৩
(পূর্ণ আপন বোন : বৈপিত্রেয় বোন : বৈমাত্রেয় বোন = ১ : ১ : ১)
উত্তরাধিকার বণ্টনকালে উপস্থিত (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনের জন্য করণীয় সম্পর্কে ৪:৮ আয়াতে নিম্নরূপ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে:
৪:৮ :: আর যদি (উত্তরাধিকার) বন্টনের সময় আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তরা উপস্থিত হয়, তবে তাদেরকে তা থেকে (বণ্টিত সম্পদ থেকে) কিছু দিবে এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে কথা বলবে।
আয়াতটিতে আত্মীয়-স্বজন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত শব্দটি হলো ‘উলুল ক্বুরবা’। উলুল ক্বুরবা শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো ‘নৈকট্যের অধিকারী’। কিন্তু এর প্রায়োগিক অর্থ হলো ‘যারা আক্বরাবূন (সবচেয়ে নিকটতম আত্মীয়) নয় বা যারা উত্তরাধিকারের নির্ধারিত অংশের প্রাপক নয় এমন আত্মীয়-স্বজন’।
এখানে যে আত্মীয়দের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে দুই ধরনের আত্মীয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
(১) যারা কখনো উত্তরাধিকারের নির্ধারিত অংশের প্রাপক নয়, যেমন চাচা, মামা, ফুফু, খালা, ভাতিজা, ভাতিজি, ভাগিনা, ভাগিনি, চাচাতো ভাই-বোন, ফুফাতো ভাই-বোন, মামাতো ভাই-বোন, খালাতো ভাই-বোন, চাচী, মামী, খালু, ফুফা, শ^শুর, শ^াশুড়ি, শ্যালক, শ্যালিকা ইত্যাদি।
(২) উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে যেসব শর্তাধীন আক্বরাবূন শর্ত পূরণ না হওয়ায় উত্তরাধিকারের প্রাপক হয়নি, যেমন পিতা-মাতা ও পুত্র-কন্যা জীবিত থাকা অবস্থায় ভাই-বোন; পিতা-মাতা জীবিত থাকা অবস্থায় দাদা-দাদী, নানা-নানী; পুত্র-কন্যা জীবিত থাকা অবস্থায় পৌত্র-পৌত্রী, দৌহিত্র-দৌহিত্রী।
আয়াতটিতে দ্বিতীয় যে শ্রেণির উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলো ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে। যদি কোনো ইয়াতীম ছেলে-মেয়ে আত্মীয় হয়, তাহলে সে একইসাথে আত্মীয় হিসেবে একটি মানবিক অধিকার রাখে এবং ইয়াতীম হিসেবেও একটি মানবিক অধিকার রাখে।
আয়াতটিতে তৃতীয় যে শ্রেণির উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলো অভাবগ্রস্তরা। উপস্থিত অভাবগ্রস্ত যদি আত্মীয় ও ইয়াতীম হয়, তাহলে সে তিনটি ক্যাটাগরির আওতায় মানবিক অধিকার রাখে।
আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের মধ্য থেকে যারা কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় উপস্থিত হবে তাদের সাথে সদ্ভাবে কথা বলতে হবে। যেহেতু অনুপস্থিত আত্মীয়-স্বজনের বিষয়ে বাধ্য-বাধকতা আরোপ করা হয়নি, তাই সমস্যাগ্রস্ত আত্মীয়-স্বজনরা উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইতস্তত করা উচিত নয়। কারণ এতে তাদের সম্মান/ আত্মমর্যাদাবোধ ক্ষুন্ন হওয়ার কোনো ন্যায়সঙ্গত কারণ নেই।
উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় যেসব আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীন উপস্থিত হয় তাদেরকে তা থেকে কিছু দেয়ার নির্দেশ থেকে স্পষ্ট হয় যে, উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় জনসাধারণের পরিজ্ঞাত হতে হবে। অর্থাৎ এটি গোপনীয়ভাবে হতে পারবে না।
এছাড়া উত্তরাধিকার বণ্টন করতে হবে ওয়াসিয়্যাতের দাবি পূরণ ও ঋণ পরিশোধের পরে (৪:১১-১২)। আর ওয়াসিয়্যাতের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে সালাতের পরে (৫:১০৬)। এ বিষয়টি থেকেও বুঝা যায় যে, উত্তরাধিকার বণ্টন করতে হবে পূর্বনির্ধারিত দিনে এবং সালাত পরবর্তী সময়ে।
ওয়াসিয়্যাত ও ঋণ পরিশোধের পরে উত্তরাধিকার বণ্টন করতে হবে। উত্তরাধিকারে প্রত্যেক ওয়ারিস নির্ধারিত হারে উত্তরাধিকার পাবে তথা নিজ নিজ আনুপাতিক ভগ্নাংশ লাভ করবে এবং তাদের মধ্যে সম্পূর্ণ উত্তরাধিকার বণ্টিত হবে। সুতরাং বণ্টনকালে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদেরকে বণ্টিত সম্পদ থেকে কিছু দিতে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা বাস্তবায়নের পদ্ধতি হলো: ওয়ারিসদের মধ্যে বণ্টিত হওয়ার অব্যবহিত পরে তাদের প্রাপ্ত সম্পদ থেকে তাদেরকে কিছু দিতে হবে। এক্ষেত্রে ওয়ারিসদের মধ্য থেকে কে কতটুকু অংশগ্রহণ করবে তা তাদের সামগ্রিক সামর্থ্যরে ভিত্তিতে বিবেচনা করতে পারবে। কারণ এটা কুরআনের বর্ণিত একটি সাধারণ মূলনীতি। অথবা যদি ওয়ারিসরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে উত্তরাধিকারের সম্পত্তি থেকে কিছু দিতে সম্মত হয় সেক্ষেত্রে উত্তরাধিকার বণ্টনের অব্যবহিত পূর্বেও পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদেরকে দেয়া যেতে পারে।
এ বিধানের প্রয়োগ সম্পর্কে দুটি প্রচলিত দাবি হলো, উত্তরাধিকার বণ্টনের পরে কিছু অবশিষ্ট থাকলে এ বিধান কার্যকর হবে এবং আরেকটি প্রচলিত মত হলো, এ আয়াতের বিধান রহিত হয়ে গেছে। অথচ আনুপাতিক বণ্টন পদ্ধতি অনুসারে কিছু অবশিষ্ট থাকার ধারণা গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া ‘উত্তরাধিকার বন্টনের পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে এ আয়াত কার্যকর হবে, অন্যথায় নয়’- কথাটির মাধ্যমে আয়াতের নির্দেশকে গুরুত্ব না দেয়ার মনোভাব প্রকাশ পায়। আর এ আয়াতের বিধান রহিত হওয়ার দাবিরও কোনো ভিত্তি নেই।
আত্মীয় স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদেরকে ন্যুনতম কী দিতে হবে এবং প্রত্যেক ধরনের সম্পদ থেকে দিতে হবে কিনা এর কোনো বাধ্যবাধকতা ও সুনির্দিষ্টতা নেই। তাদেরকে কিছু দেয়া বাধ্যতামূলক তবে কে কতটুকু দিবে তা উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের অবস্থা এবং কোনো উত্তরাধিকারী তার সামর্থ্য অনুসারে কী দিতে পারবে বা কী দেয়ার মাধ্যমে এই নৈতিক দায়িত্ব পালন করবে তার উপর নির্ভর করে।
সাধারণত মনে করা হয় যে, মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত অর্থসম্পদ থেকে উপস্থিত আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদেরকে এক বেলা খাইয়ে দিলে এ আয়াতের দাবি পূরণ হয়ে যাবে। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন যে, দায়সারা কাজে দায় সারে না। তাই বাস্তব পরিস্থিতি সাপেক্ষে তাদেরকে কিছু দেয়ার ক্ষেত্রে মনের সংকীর্ণতা পরিহার করে নৈতিক বিবেচনা-বোধ দ্বারা উজ্জীবিত হতে হবে। উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে ওয়ারিসরা নিজেদের খরচে এক বেলা খাওয়ানোর আয়োজন করলে তা একটি সামাজিক শিষ্টাচারমূলক রীতি হিসেবে সাব্যস্ত হতে পারে। কিন্তু ৪:৮ আয়াতটির নির্দেশকে এক বেলা আহার করানোর অর্থে সীমিত মনে করা সঙ্গত নয়।