কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

041. সূরা হা মীম

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৪১:১
হা মীম = হা মীম।

হা মীম।

৪১:২
তানযীলুম মির রহমানির রহীমি = ইহা (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে রহমানুর রহীম/ দয়াময় দয়াশীল সত্তার (আল্লাহর) পক্ষ থেকে।

ইহা (কুরআন) নাযিল করা হয়েছে রহমানুর রহীম/ দয়াময় দয়াশীল সত্তার (আল্লাহর) পক্ষ থেকে।

৪১:৩
কিতাবুন ফুসসিলাত আয়াতুহু = ইহা এমন একটি কিতাব তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহকারে বিবৃত হয়েছে যার আয়াতসমূহ। কুরআনান আরাবিয়্যান = আরবী ভাষার কুরআন। লিক্বাওমি ইয়া’লামূনা = সেই কওমের জন্য যারা ইলম/ জ্ঞান রাখে।

ইহা এমন একটি কিতাব তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যা সহকারে বিবৃত হয়েছে যার আয়াতসমূহ, আরবী ভাষার কুরআন, সেই কওমের জন্য যারা ইলম/ জ্ঞান রাখে।

৪১:৪
বাশীরান ওয়া নাযীরান = বাশীর/ সুসংবাদদানকারী ও নাযীর/ সতর্ককারী। ফাআ’রাদা = কিন্তু বিমুখ হয়েছে। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশ। ফাহুম = সুতরাং তারা। লা ইয়াছমাঊনা = শুনে না/ শুনবে না।

বাশীর/ সুসংবাদদানকারী ও নাযীর/ সতর্ককারী। কিন্তু বিমুখ হয়েছে তাদের অধিকাংশ। সুতরাং তারা শুনে না/ শুনবে না।

৪১:৫
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। ক্বুলূবুনা = আমাদের কলবসমূহ। ফী আকিন্নাতিন = পর্দাসমূহের মধ্যে আছে। মিম্মা তাদঊনা ইলাইহি = যেদিকে তোমরা আমাদেরকে ডাকছো তা থেকে। ওয়া = আর। ফী আযানিনা = আমাদের কানসমূহে আছে। ওয়াক্বরুন = বধিরতা। ওয়া = আর। মিন বায়নিনা ওয়া বায়নিকা = আমাদের ও তোমার মধ্যে আছে। হিজাবুন = হিজাব/ অন্তরাল/ পর্দা। ফা’মাল = সুতরাং তুমি তোমার কাজ করো। ইন্নানা = নিশ্চয় আমরাও। আমিলূনা = আমাদের কার্যসম্পন্নকারী।

আর তারা বলে আমাদের কলবসমূহ পর্দাসমূহের মধ্যে আছে, যেদিকে তোমরা আমাদেরকে ডাকছো তা থেকে। আর আমাদের কানসমূহে আছে বধিরতা। আর আমাদের ও তোমার মধ্যে আছে হিজাব/ অন্তরাল/ পর্দা। সুতরাং তুমি তোমার কাজ করো। নিশ্চয় আমরাও আমাদের কার্যসম্পন্নকারী।

৪১:৬
ক্বুল = বলো। ইন্নামা = বস্তুত। আনা = আমি। বাশারুম মিছলুকুম = তোমাদের মত মানুষ। ইউহা = ওহী করা হয়। ইলাইয়া = আমার প্রতি। আন্নামা = এই যে,। ইলাহুকুম = তোমাদের ইলাহ। ইলাহুন ওয়াহিদুন = একজনমাত্র ইলাহ। ফাছতাক্বিমূ = সুতরাং তোমরা দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকো। ইলাইহি = তাঁর দিকে। ওয়াছতাগফিরূহু = আর তাঁরই কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। ওয়া = আর। ওয়ায়লুল লিল মুশরিকীনা = মুশরিকদের জন্য দুর্ভোগ।

বলো, ‘বস্তুত আমি তোমাদের মত মানুষ। ওহী করা হয় আমার প্রতি এই যে, তোমাদের ইলাহ একজনমাত্র ইলাহ। সুতরাং তোমরা দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকো তাঁর দিকে। আর তাঁরই কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো। আর মুশরিকদের জন্য দুর্ভোগ।

৪১:৭
আল্লাযীনা = যারা। লা ইউ’তূনায যাকাতা = যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে না। ওয়া = আর। হুম = তারা। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। হুম কাফিরূনা = কাফির/ অবিশ্বাসী।

যারা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে না। আর তারা আখিরাতের প্রতিও কাফির/ অবিশ্বাসী।

৪১:৮
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরুন = এরূপ মজুরি/ প্রতিফল যা। গায়রু মামনূনা = ফুরিয়ে যাবে না।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে ও আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে তাদের জন্য আছে এরূপ মজুরি/ প্রতিফল যা ফুরিয়ে যাবে না।

৪১:৯
ক্বুল = বলো। আয়িন্নাকুম = তোমর কি নিশ্চয়। লাতাকফুরূনা = কুফর/ অবিশ্বাস/ অস্বীকার করছো। বিল্লাযী = তাঁকে যিনি। খালাক্বাল আরদা = সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী। ফী ইয়াওমায়নি = দুইদিনে। ওয়া = আর। তাজআলূনা = তোমরা সাব্যস্ত করছো। লাহু = তাঁর জন্য। আনদাদান = সমকক্ষ। যালিকা = তিনিই। রব্বুল আলামীনা = রব্বুল আলামীন/ সমগ্র মহাবিশ্বের রব।

বলো, ‘তোমরা কি নিশ্চয় কুফর/ অবিশ্বাস/ অস্বীকার করছো তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী দুইদিনে। আর তোমরা কি সাব্যস্ত করছো তাঁর জন্য সমকক্ষ? তিনিই রব্বুল আলামীন/ সমগ্র মহাবিশ্বের রব।

৪১:১০
ওয়া = আর। জাআলা = স্থাপন করেছেন। ফীহা = উহাতে। রওয়াছিয়া = পর্বতমালা। মিন ফাওয়াক্বিহা = উহার উপরে। ওয়া = আর। বারাকা = বরকত দিয়েছেন। ফীহা = উহাতে। ওয়া = আর। ক্বাদ্দারা = প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন। ফীহা = উহাতে। আক্বওয়াতাহা = উহার খাদ্যসম্ভার। ফী আরবায়াতি আইয়ামিন = চারদিনে। ছাওয়াআল লিছ ছায়িলীনা = প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনের সমপরিমাণে।

আর স্থাপন করেছেন উহাতে পর্বতমালা উহার উপরে আর বরকত দিয়েছেন উহাতে আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন উহাতে উহার খাদ্যসম্ভার চারদিনে, প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজনের সমপরিমাণে।

৪১:১১
ছুম্মাছতাওয়া = সেই সাথে তিনি আকাশমন্ডলীর দিকে লক্ষ্য আরোপ করেছেন। ওয়া = আর। হিয়া = উহা ছিলো। দুখানুন = ধোঁয়া। ফাক্বলা লাহা = তখন তিনি বলেছিলেন উহাকে। ওয়া লিল আরদি’তিয়া = ও পৃথিবীকে, ‘তোমরা উভয়ে আস। তওয়ান = ইচ্ছাকৃতভাবে। আও = অথবা। কারহান = অনিচ্ছাকৃতভাবে। ক্বলাতা = তারা উভয়ে বলেছিলো। আতায়না = আমরা আসলাম। তয়িয়ীনা = ইচ্ছাকৃতভাবে।

সেই সাথে তিনি আকাশমন্ডলীর দিকে লক্ষ্য আরোপ করেছেন আর উহা ছিলো ধোঁয়া। তখন তিনি বলেছিলেন উহাকে ও পৃথিবীকে, ‘তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছাকৃতভাবে অথবা অনিচ্ছাকৃতভাবে। তারা উভয়ে বলেছিলো, ‘আমরা আসলাম ইচ্ছাকৃতভাবে’।

৪১:১২
ফাক্বদাহুন্না = তারপর সেগুলোকে পরিণত করেছেন। ছাবআ ছামাওয়াতিন = সাত আকাশে। ফী ইয়াওমায়নি = দুইদিনে। ওয়া = আর। আওহা = ওহী করেছেন। ফী কুল্লি ছামায়িন = প্রত্যেক আকাশে। আমরাহা = উহার জন্য প্রযোজ্য বিধি-ব্যবস্থা। ওয়া = আর। যাইয়ান্নাছা ছামাআদ দুনইয়া = আমরা সুসজ্জিত করেছি দুনিয়ার আকাশকে। বিমাসাবীহা = প্রদীপমালা (= তারকারাজি) দিয়ে। ওয়া = আর। হিফযান = সুসংরক্ষিত করে। যালিকা = উহা। তাক্বদীরুল আযীযিল আলীমি = আযীয/ মহাশক্তিমান ও আলীম/ মহাজ্ঞানী সত্তার (= আল্লাহর) নির্ধারিত প্রাকৃতিক ব্যবস্থা।

তারপর সেগুলোকে পরিণত করেছেন সাত আকাশে দুইদিনে। আর ওহী করেছেন প্রত্যেক আকাশে উহার জন্য প্রযোজ্য বিধি-ব্যবস্থা। আর আমরা সুসজ্জিত করেছি দুনিয়ার আকাশকে প্রদীপমালা (= তারকারাজি) দিয়ে। আর সুসংরক্ষিত করে। উহা আযীয/ মহাশক্তিমান ও আলীম/ মহাজ্ঞানী সত্তার (= আল্লাহর) নির্ধারিত প্রাকৃতিক ব্যবস্থা।

৪১:১৩
ফাইন = সুতরাং যদি। আ’রাদূ = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাক্বুল = তাহলে বলো। আনযারতুকুম = আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছি। সয়িক্বাতাম মিসলা সয়িক্বাতি আদিন ওয়া সামূদা = এক বজ্রের শাস্তির ব্যাপারে যেরূপ বজ্র পড়েছিলো আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের উপর।

সুতরাং যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে বলো, ‘আমি তোমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছি এক বজ্রের শাস্তির ব্যাপারে যেরূপ বজ্র পড়েছিলো আদ ও সামুদ সম্প্রদায়ের উপর।

৪১:১৪
ইয = যখন। জাআতহুমুর রুসুলু = তাদের কাছে এসেছিলো তাদের রসূলগণ। মিন বায়নি আয়দীহিম = তাদের সামনে থেকে। ওয়া = আর। মিন খালফিহিম = তাদের পিছন থেকে। আল্লা তা’বুদূ = এ মর্মে যে, ‘তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো না। ইল্লাল্লাহা = আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো। ক্বলূ = তখন তারা বলেছিলো। লাও = যদি। শাআ রব্বুনা = আমাদের রব ইচ্ছা করতেন। লাআনযালা মালাইকাতান = তাহলে অবশ্যই তিনি নাযিল করতেন মালায়েকা/ ফেরেশতাদেরকে। ফাইন্না = সুতরাং নিশ্চয় আমরা। বিমা উরছিলতুম বিহী = যা নিয়ে তোমরা প্রেরিত হয়েছো উহার প্রতি। কাফিরূনা = কাফের/ অবিশ্বাসী।

যখন তাদের কাছে এসেছিলো তাদের রসূলগণ তাদের সামনে থেকে আর তাদের পিছন থেকে, এ মর্মে যে, ‘তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো না আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো’। তখন তারা বলেছিলো, ‘যদি আমাদের রব ইচ্ছা করতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি নাযিল করতেন মালায়েকা/ ফেরেশতাদেরকে। সুতরাং নিশ্চয় আমরা যা নিয়ে তোমরা প্রেরিত হয়েছো উহার প্রতি কাফের/ অবিশ্বাসী’।

৪১:১৫
ফাআম্মা আদুন = আর আদের অবস্থা ছিলো এই যে। ফাছতাকবারূ = তারা অহংকার করেছিলো। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। বিগায়রিল হাক্বক্বি = কোন হক্ব/ অধিকার ছাড়াই। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছিলো। মান = কে। আশাদ্দু = অধিক প্রবল। মিন্না = আমাদের চেয়ে। ক্বুওআতান = শক্তিতে। আওয়ালাম ইয়াও = তারা কি ভেবে দেখেনি। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। আল্লাযী = যিনি। খালাক্বাহুম = তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। হুয়া = তিনিই। আশাদ্দু = অধিক প্রবল। মিনহুম = তাদের চেয়েও। ক্বুওআতান = শক্তিতে। ওয়া = আর। কানূ বিআয়াতিনা ইয়াজহাদূনা = তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো।

আর আদের অবস্থা ছিলো এই যে, তারা অহংকার করেছিলো পৃথিবীতে কোন হক্ব/ অধিকার ছাড়াই। আর তারা বলেছিলো, ‘কে অধিক প্রবল আমাদের চেয়ে শক্তিতে? তারা কি ভেবে দেখেনি যে, আল্লাহ, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই অধিক প্রবল তাদের চেয়েও শক্তিতে। আর তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো।

৪১:১৬
ফাআরছালনা = তারপর আমরা প্রেরণ করেছিলাম। আলাইহিম = তাদের উপর। রীহান সরসরান = ঝড়ো হাওয়া। ফী আইয়ামিন নাহিছাতিন = অশুভ দিনসমূহে। লিনুযীক্বাহুম = যেন আমরা তাদের স্বাদ আস্বাদন করাই। আযাবাল খিযয়ি = লাঞ্চনাকর আযাবের। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। লাআযাবুল আখিরাতি = আখিরাতের আযাব। আখযা = অধিক লাঞ্চনাদায়ক। ওয়া = আর। হুম = তারা। লা ইউনসরূনা = সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।

তারপর আমরা প্রেরণ করেছিলাম তাদের উপর ঝড়ো হাওয়া অশুভ দিনসমূহে। যেন আমরা তাদের স্বাদ আস্বাদন করাই লাঞ্চনাকর আযাবের, হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। আর আখিরাতের আযাব অধিক লাঞ্চনাদায়ক। আর তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না।

৪১‌:১৭
ওয়া = আর। আম্মা ছামূদা = সামুদের অবস্থা ছিলো এই যে। ফাহাদায়নাহুম = তারপর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করেছিলাম। ফাছতাহাব্বুল আমা = কিন্তু তারপর তারা পছন্দ করেছিলো অন্ধ হয়ে থাকতে। আলাল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের তুলনায়। ফাআখাযহুম সয়িক্বাতুল আযাবিল হূনি = সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছিলো অপমানকর আযাবের বজ্র। বিমা কানূ ইয়াকছিবূনা = তারা যা (= যে পাপ) উপার্জন করেছিলো তার কারণে।

আর সামুদের অবস্থা ছিলো এই যে, তারপর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করেছিলাম। কিন্তু তারপর তারা পছন্দ করেছিলো অন্ধ হয়ে থাকতে হুদার/ হিদায়াতের তুলনায়। সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছিলো অপমানকর আযাবের বজ্র, তারা যা (= যে পাপ) উপার্জন করেছিলো তার কারণে।

৪১:১৮
ওয়া = আর। নাজ্জায়নাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছিলো। ওয়া = আর। কানূ ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো।

আর আমরা তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছিলো আর তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো।

৪১:১৯
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। ইউহশারু = হাশর/ সমবেত করা হবে। আ’দাউল্লাহি = আল্লাহর শত্রুদেরকে। ইলান্নারি = (জাহান্নামের) আগুনের দিকে। ফাহুম ইউযাঊনা = তখন তাদেরকে থামিয়ে রাখা হবে।

আর যেদিন হাশর/ সমবেত করা হবে আল্লাহর শত্রুদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের দিকে, তখন তাদেরকে থামিয়ে রাখা হবে।

৪১:২০
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। মা জাউহা = তারা (সবাই) উহাতে আসবে। শাহিদা = তখন সাক্ষ্য দেবে। আলাইহিম = তাদের ব্যাপারে। ছামউহুম = তাদের কান। ওয়া = ও। আবসারুহুম = তাদের চোখসমূহ। ওয়া = আর। জুলূদাহুম = তাদের চামড়াসমূহ। বিমা কানূ ইয়া’মালূনা = তারা যেসব কাজ করতো তার কারণে।

শেষ পর্যন্ত যখন তারা (সবাই) উহাতে আসবে, তখন সাক্ষ্য দেবে তাদের ব্যাপারে তাদের কান ও তাদের চোখসমূহ আর তাদের চামড়াসমূহ, তারা যেসব কাজ করতো তার কারণে।

৪১:২১
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলবে। লিজুলূদিহিম = তাদের চামড়াসমূহকে। লিমা = কেন। শাহিত্তুম = তোমরা সাক্ষ্য দিচ্ছো। আলাইনা = আমাদের ব্যাপারে? ক্বলূ = সেগুলো বলবে। আনতক্বানাল্লাহুল্লাযী = আমাদেরকে বাকশক্তি দিয়েছেন আল্লাহ যিনি। আনত্বকা = বাকশক্তি দিয়েছেন। কুল্লা শাইয়িন = সবকিছুকে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। খালাক্বাকুম = তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আওয়ালা মাররাতিন = প্রথমবার। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। তুরজাঊনা = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

আর তারা বলবে তাদের চামড়াসমূহকে, ‘কেন তোমরা সাক্ষ্য দিচ্ছো আমাদের ব্যাপারে?’ সেগুলো বলবে, ‘আমাদেরকে বাকশক্তি দিয়েছেন আল্লাহ যিনি বাকশক্তি দিয়েছেন সবকিছুকে’। আর তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন প্রথমবার আর তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

৪১:২২
ওয়া = আর। মা কুনতুম তাছতাতিরূনা = যখন তোমরা (অপরাধ) লুকাচ্ছিলে। আইঁ ইয়াশহাদা = (তখন তোমরা জানতে না) যে, সাক্ষ্য দেবে। আলাইকুম = তোমাদের ব্যাপারে। ছামউকুম = তোমাদের কান। ওয়া = আর। লা আবসারুকুম = না (জানতে যে, সাক্ষ্য দেবে) তোমাদের চোখসমূহ। ওয়া = আর। লা জুলূদুকুম = না (জানতে যে, সাক্ষ্য দেবে) তোমাদের চামড়াসমূহ। ওয়ালাকিন = কিন্তু। যনানতুম = তোমরা অনুমান করেছিলে। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। লা ইয়া’লামু কাছীরান = জানেন না অধিকাংশই। মিম্মা = ঐসব বিষয় থেকে যেসব। তা’মালূনা = কাজ তোমরা করতে।

আর যখন তোমরা (অপরাধ) লুকাচ্ছিলে, (তখন তোমরা জানতে না) যে, সাক্ষ্য দেবে তোমাদের ব্যাপারে তোমাদের কান, আর না (জানতে যে, সাক্ষ্য দেবে) তোমাদের চোখসমূহ, আর না (জানতে যে, সাক্ষ্য দেবে) তোমাদের চামড়াসমূহ। কিন্তু তোমরা অনুমান করেছিলে যে, আল্লাহ জানেন না অধিকাংশই, ঐসব বিষয় থেকে যেসব কাজ তোমরা করতে।

৪১:২৩
ওয়া = আর। যালিকুম = উহা ছিলো। যন্নুকুমুল্লাযী = তোমাদের অনুমান, যা। যনানতুম = তোমরা অনুমান করেছিলে। বিরব্বিকুম = তোমাদের রবের সম্পর্কে। আরদাকুম = উহাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছিলো। ফাআসবাহতুম = তারপর তোমরা হয়ে গেলে। মিনাল খাছিরীনা = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

আর উহা ছিলো তোমাদের অনুমান, যা তোমরা অনুমান করেছিলে তোমাদের রবের সম্পর্কে। উহাই তোমাদেরকে ধ্বংস করেছিলো। তারপর তোমরা হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

৪১:২৪
ফাইইঁ ইয়াসবিরূ = সুতরাং যদি তারা সবর করো/ ধৈর্য ধরে। ফাআন্নারু = তবুও (জাহান্নামের) আগুনই। মাছওয়াল্লাহুম = তাদের আবাস। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়াছতা’তিবূ = যদি তারা সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়। ফামা হুম = তবুও তারা হবে না। মিনাল মু’তাবীনা = সন্তুষ্টি অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

সুতরাং যদি তারা সবর করে/ ধৈর্য ধরে তবুও (জাহান্নামের) আগুনই তাদের আবাস। আর যদি তারা সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় তবুও তারা হবে না সন্তুষ্টি অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

৪১:২৫
ওয়া = আর। ক্বাইয়াদনা = আমরা নির্ধারণ করেছি। লাহুম = তাদের জন্য। ক্বুরানাআ = (পথভ্রষ্ট) সহচরদেরকে। ফাযাইয়ানূ = তারপর তারা শোভনীয় করে দেখায়। লাহুম = তাদেরকে। মা বায়না আয়দীহিম = যা তাদের সামনে আছে। ওয়া = আর। মা খালফাহুম = যা তাদের পিছনে আছে। ওয়া = আর। হাক্বক্বা = বাস্তবায়িত হলো। আলাইহিমুল ক্বাওলু = তাদের উপর (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী। ফী উমামিন = উম্মাতসমূহের ক্ষেত্রে (যা)। ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত = অতীত থেকে চলে আসছে। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগের। মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনসি = জিনের ও ইনসের/ মানুষের মধ্য থেকে (অপরাধী ব্যক্তিদের প্রতি)। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। কানূ = হয়েছিলো। খাছিরীনা = ক্ষতিগ্রস্ত।

আর আমরা নির্ধারণ করেছি তাদের জন্য (পথভ্রষ্ট) সহচরদেরকে। তারপর তারা শোভনীয় করে দেখায় তাদেরকে যা তাদের সামনে আছে আর যা তাদের পিছনে আছে। আর বাস্তবায়িত হলো তাদের উপর (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী উম্মাতসমূহের ক্ষেত্রে (যা) নিশ্চয় অতীত থেকে চলে আসছে তাদের আগের জিনের ও ইনসের/ মানুষের মধ্য থেকে (অপরাধী ব্যক্তিদের প্রতি)। নিশ্চয় তারা হয়েছিলো ক্ষতিগ্রস্ত।

৪১:২৬
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা কাফারূ = তারা বলে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। লা তাছমাঊ = তোমরা শুনো না। লিহাযাল ক্বুরআনি = এই কুরআন। ওয়ালগাও = আর তোমরা গন্ডগোল করো। ফীহি = উহার ক্ষেত্রে। লাআল্লাকুম তাগলিবূনা = যেন তোমরা জয়ী হতে পারো।

আর তারা বলে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, ‘তোমরা শুনো না এই কুরআন আর তোমরা গন্ডগোল করো উহার ক্ষেত্রে, যেন তোমরা জয়ী হতে পারো’।

৪১:২৭
ফালানুযীক্বান্নাল্লাযীনা কাফারূ = সুতরাং আমরা তাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করাবো যারা কুফর করেছে। আযাবান শাদীদান = কঠোর আযাবের। ওয়া = আর। লানাজযিয়ান্নাহুম = আমরা তাদেরকে প্রতিফল দেবো। আছওয়াআল্লাযী কানূ ইয়া’মালূনা = সে নিকৃষ্টতম (কাজ) অনুযায়ী যা তারা কাজ করে।

সুতরাং আমরা তাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করাবো যারা কুফর করেছে কঠোর আযাবের (স্বাদ)। আর আমরা তাদেরকে প্রতিফল দেবো সে নিকৃষ্টতম (কাজ) অনুযায়ী যা তারা কাজ করে।

৪১:২৮
যালিকা = উহাই। জাযাউ আ’দায়িল্লাহিন্নারু = আল্লাহর শত্রুদের প্রতিফল (জাহান্নামের) আগুন। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফীহা = উহাতে। দারুল খুলদি = স্থায়ী আবাস। জাযাআম বিমা কানূ বিআয়াতিনা ইয়াজহাদূনা = এ প্রতিফল এ কারণে যে, তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো।

উহাই আল্লাহর শত্রুদের প্রতিফল (জাহান্নামের) আগুন। তাদের জন্য আছে উহাতে স্থায়ী আবাস। এ প্রতিফল এ কারণে যে, তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো।

৪১:২৯
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা = তারা বলবে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। আরিনাল্লাযায়নি = আমাদেরকে দেখিয়ে দিন সেই দুই প্রজাতির লোকদেরকে যারা। আদল্লানা = আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনসি = জিন ও ইনস/ মানুষের মধ্য থেকে। নাজআলহুমা = আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করবো। তাহতা আক্বদামিনা = আমাদের পায়ের নিচে ফেলে। লিইয়াকূনা = যেন তারা উভয়ে হয়। মিনাল আছফালীনা = অপমানিতদের অন্তর্ভুক্ত।

আর তারা বলবে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে দেখিয়ে দিন সেই দুই প্রজাতির লোকদেরকে যারা আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে জিন ও ইনস/ মানুষের মধ্য থেকে। আমরা তাদের উভয়কে পদদলিত করবো আমাদের পায়ের নিচে ফেলে, যেন তারা উভয়ে হয় অপমানিতদের অন্তর্ভুক্ত।

৪১:৩০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ক্বলূ = বলে। রব্বুনাল্লাহু = রব্বুনাল্লাহ/ আল্লাহ আমাদের রব। ছুম্মাছতাক্বামূ = তারপর উহার উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকে। তাতানাযযালু = নাযিল হয়। আলাইহিমুল মালাইকাতু = তাদের উপর ফেরেশতারা। আল্লা তাখাফূ = এ মর্মে যে, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না। ওয়া = আর। লা তাহযানূ = তোমরা দু:খিত হয়ো না। ওয়া = আর। আবশিরূ = তোমরা সুসংবাদে আনন্দিত হও। বিল জান্নাতিল্লাতী = সেই জান্নাতের প্রতি, যা। কুনতুম তূআদূনা = তোমাদের প্রতি ওয়াদা করা হয়েছে।

নিশ্চয় যারা বলে, ‘রব্বুনাল্লাহ/ আল্লাহ আমাদের রব’, তারপর উহার উপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকে, নাযিল হয় তাদের উপর ফেরেশতারা এ মর্মে যে, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না আর তোমরা দু:খিত হয়ো না। আর তোমরা সুসংবাদে আনন্দিত হও সেই জান্নাতের প্রতি, যা তোমাদের প্রতি ওয়াদা করা হয়েছে।

৪১:৩১
নাহনু = আমরা। আওলিয়াউকুম = তোমাদের আওলিয়া/ বন্ধু। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। ফীহা = উহাতে। মা তাশতাহী = যা পেতে ইচ্ছা পোষণ করবে। আনফুছুকুম = তোমাদের নিজ সত্তা। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। ফীহা = উহাতে। মা তাদ্দাঊনা = যা পেতে তোমরা দোয়া করবে।

আমরা তোমাদের আওলিয়া/ বন্ধু হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে আর আখিরাতে। আর তোমাদের জন্য আছে উহাতে যা পেতে ইচ্ছা পোষণ করবে তোমাদের নিজ সত্তা আর তোমাদের জন্য আছে উহাতে যা পেতে তোমরা দোয়া করবে।

৪১:৩২
নুযুলাম মিন গাফূরির রহীমিন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল সত্তার (= আল্লাহর) পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।

গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল সত্তার (= আল্লাহর) পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।

৪১:৩৩
ওয়া = আর। মান আহছানু ক্বাওলাম মিম্মান = কথায় কে অধিক উত্তম তার চেয়ে যে। দাআ = আহবান করে। ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকে। ওয়া = আর। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ওয়া = আর। ক্বলা = বলে। ইন্নানী = নিশ্চয় আমি। মিনাল মুসলিমীনা = মুসলিমীনের/ (আল্লাহর প্রতি) আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

আর কথায় কে অধিক উত্তম তার চেয়ে যে আহবান করে আল্লাহর দিকে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে আর বলে, ‘নিশ্চয় আমি মুসলিমীনের/ (আল্লাহর প্রতি) আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’।

৪১:৩৪
ওয়া = আর। লা তাছতাভিল হাছানাতু ওয়া লাছ ছাইয়িআতু = ভাল ও মন্দ সমান নয়। ইদফা’ = (মন্দকে) প্রতিহত করো। বিল্লাতী হিয়া আহছানু = ভাল দ্বারা। ফাইযাল্লাযী = তাহলে (দেখবে) যে,। বায়নাকা ওয়া বায়নাহু = তোমার ও যার মধ্যে। আদাওয়াতুন = শত্রুতা আছে। কাআন্নাহু = যেন সে হয়ে গেছে। ওয়ালিইয়ুন হামীমুন = অন্তরঙ্গ বন্ধু।

আর ভাল ও মন্দ সমান নয়। (মন্দকে) প্রতিহত করো ভাল দ্বারা। তাহলে (দেখবে) যে, তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, যেন সে হয়ে গেছে অন্তরঙ্গ বন্ধু।

৪১:৩৫
ওয়া = আর। মা ইউলাক্বক্বাহা = উহা লাভ করে না। ইল্লাল্লাযীনা = তারা ছাড়া যারা। সবারূ = সবর করে/ ধৈর্য ধরে। ওয়া = আর। মা ইউলাক্বক্বাহা = উহা লাভ করে না। ইল্লা যূহাযযিন আযীমিন = তারা ছাড়া যারা মহাভাগ্যবান।

আর উহা লাভ করে না তারা ছাড়া যারা সবর করে/ ধৈর্য ধরে আর উহা লাভ করে না তারা ছাড়া যারা মহাভাগ্যবান।

৪১:৩৬
ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। ইয়ানযাগান্নাকা = তোমাকে প্ররোচনা দেয়া হয়। মিনাশ শায়তানি = শয়তানের পক্ষ থেকে। নাযগুন = কোন প্ররোচনা। ফাছতায়িয বিল্লাহি = তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। ইন্নাহু হুয়াছ ছামীউল আলীমু = নিশ্চয় তিনি সামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা।

আর যদি তোমাকে প্ররোচনা দেয়া হয় শয়তানের পক্ষ থেকে কোন প্ররোচনা, তাহলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। নিশ্চয় তিনি সামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা।

৪১:৩৭
ওয়া = আর। মিন আয়াতিহিল্লাইলু = তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে রাত। ওয়ান্নাহারু = ও দিন। ওয়াশ শামসু = এবং সূর্য। ওয়াল ক্বামারু = ও চন্দ্র। লা তাছজুদূ = তোমরা সিজদা করো না। লিশ শামছি = সূর্যের উদ্দেশ্যে। ওয়া = আর। লা লিল ক্বামারি = চন্দ্রের উদ্দেশ্যেও নয়। ওয়াছজুদূ = আর তোমরা সিজদা করো। লিল্লাহিল্লাযী = আল্লাহর উদ্দেশ্যে যিনি। খালাক্বাহুন্না = সেসবকে সৃষ্টি করেছেন। ইন = যদি। কুনতুম ইয়্যাহু তা’বুদূনা = তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদাত/ দাসত্ব করে থাকো।

আর তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে রাত ও দিন, এবং সূর্য ও চন্দ্র। তোমরা সিজদা করো না সূর্যের উদ্দেশ্যে আর চন্দ্রের উদ্দেশ্যেও নয়। আর তোমরা সিজদা করো আল্লাহর উদ্দেশ্যে যিনি সেসবকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদাত/ দাসত্ব করে থাকো।

৪১:৩৮
ফাইনিছতাকবারূ = তারপর যদি তোমরা অহংকার করো (তাতে কোন পরোয়া নেই)। ফাল্লাযীনা = তবে যারা। ইনদা রব্বিকা = তোমার রবের কাছে আছে। ইউছাব্বিহূনা লাহু = তারা তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে। বিল্লাইলি = রাতে। ওয়ান্নাহারি = ও দিনে। ওয়া = আর। হুম = তারা। লা ইয়াছআমূনা = ক্লান্ত হয় না।

তারপর যদি তোমরা অহংকার করো (তাতে কোন পরোয়া নেই)। তবে যারা তোমার রবের কাছে আছে তারা তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে রাতে ও দিনে, আর তারা ক্লান্ত হয় না।

৪১:৩৯
ওয়া = আর। মিন আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে। আন্নাকা তারাল আরদা = এও যে, তুমি ভূমিকে দেখ। খাশিয়াতান = অবনমিত। ফাইযা = তারপর যখন। আনযালনা = আমরা নাযিল/ বর্ষণ করি। আলাইহাল মাআ’হতাযযাত = উহার উপর (বৃষ্টির) পানি, তখন উহা উথলিয়ে উঠে। ওয়া = ও। রবাত = স্ফীত হয় (শস্য জন্মে)। ইন্নাল্লাযী = নিশ্চয় যিনি। আহইয়াহা = উহাকে জীবন্ত করেন। লামুহয়িল মাওতা = তিনিই মৃতকে জীবিত করবেন। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীরুন = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আর তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে এও যে, তুমি ভূমিকে দেখ অবনমিত। তারপর যখন আমরা নাযিল/ বর্ষণ করি উহার উপর (বৃষ্টির) পানি, তখন উহা উথলিয়ে উঠে ও স্ফীত হয় (শস্য জন্মে)। নিশ্চয় যিনি উহাকে জীবন্ত করেন, তিনিই মৃতকে জীবিত করবেন। নিশ্চয় তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪১:৪০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইউলহিদূনা = অর্থ বিকৃত করে। ফী আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ক্ষেত্রে। লা ইয়াখফাওনা = তারা গোপন নয়। আলাইনা = আমাদের কাছে। আফামাইঁ ইউলক্বা = তবে কি যাকে নিক্ষেপ করা হবে। ফিন্নারি = (জাহান্নামের) আগুনের মধ্যে। খায়রুন = সে উত্তম। আম্মান = নাকি সে যে। ইয়’তী = আসবে। আমিনান = নিরাপদ অবস্থায়। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ই’মালূ = তোমরা কাজ করো। মা শি’তুম = যেরূপ কাজ করতে তোমরা ইচ্ছা করো। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। বিমা তা’মালূনা = তোমরা যা কর তার ব্যাপারে। বাসীরুন = বাসীর/ দৃষ্টিবান।

নিশ্চয় যারা অর্থ বিকৃত করে আমাদের আয়াতসমূহের ক্ষেত্রে তারা গোপন নয় আমাদের কাছে। তবে কি যাকে নিক্ষেপ করা হবে (জাহান্নামের) আগুনের মধ্যে সে উত্তম, নাকি সে যে আসবে নিরাপদ অবস্থায় ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে? তোমরা কাজ করো যেরূপ কাজ করতে তোমরা ইচ্ছা করো। নিশ্চয় তিনি তোমরা যা কর তার ব্যাপারে বাসীর/ দৃষ্টিবান।

৪১:৪১
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বিয যিকরি = যিকিরের/ স্মরণিকার/ স্মরণীয় উপদেশের/ সংবিধানের প্রতি। লাম্মা জাআহুম = যখন উহা তাদের কাছে এসেছে। ওয়া = অথচ। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। লাকিতাবুন আযীযুন = শক্তিশালী/ মহিমান্বিত কিতাব।

নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে যিকিরের/ স্মরণিকার/ স্মরণীয় উপদেশের/ সংবিধানের প্রতি যখন উহা তাদের কাছে এসেছে, অথচ নিশ্চয় উহা শক্তিশালী/ মহিমান্বিত কিতাব।

৪১:৪২
লা ইয়া’তীহিল বাতিলু = বাতিল উহার কাছে আসতে পারে না। মিম বায়নি ইয়াদায়হি = উহার সামনে থেকেও না। ওয়া = আর। লা মিন খালফিহী = উহার পিছন থেকেও না। তানযীলুম মিন হাকীমিন হামীদিন = উহা নাযিল করা হয়েছে হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও হামীদ/ মহাপ্রশংসিত সত্তার (= আল্লাহর) পক্ষ থেকে।

৪১:৪২ :: তাতে (কুরআনে) না সেটার সামনে থেকে (প্রত্যক্ষভাবে বা সমকালে) আর না পেছন থেকে (ষড়যন্তের মাধ্যমে, পরোক্ষভাবে বা পরবর্তীকালে) কোনো বাতিল (মিথ্যা) অনুপ্রবেশ করতে পারবে। [বাতিল কোনো দিক থেকে উহাকে প্রতিহত করতে আসতে পারবে না]। তা (কুরআন) মহাবিজ্ঞ মহাপ্রশংসিত সত্তার (আল্লাহর) পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।

৪১:৪৩
মা ইউক্বলু লাকা = তোমাকে বলা হচ্ছে না কোন বিষয়। ইল্লা মা = উহা ছাড়া যা। ক্বাদ = নিশ্চয়। ক্বীলা লির রুসুলি = রসূলদেরকে বলা হয়েছিলো। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। লাযূ মাগফিরাতিন = ক্ষমাশীল। ওয়া = আর। যূ ইক্বাবিন আলীমিন = কষ্টদায়ক শাস্তিদাতা।

তোমাকে বলা হচ্ছে না কোন বিষয় উহা ছাড়া যা নিশ্চয় রসূলদেরকে বলা হয়েছিলো তোমার আগে। নিশ্চয় তোমার রব ক্ষমাশীল আর কষ্টদায়ক শাস্তিদাতা।

৪১:৪৪
ওয়া = আর। লাও = যদি। জাআলনাহু = আমরা উহাকে করতাম। ক্বুরআনান আ’যামিয়্যান = আ’যমী/ অনারবী (ভাষার) কুরআন। লাক্বলূ = তাহলে তারা বলতো। লাও = কেন। লা ফুসসিলাত = তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যারূপে বিবৃত হয়নি। আয়াতুহু = উহার আয়াতসমূহ। আআ’যামিয়্যুন = (এটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, কুরআন হচ্ছে) আ’যমী/ অনারবী। ওয়া আরাবিয়্যুন = আর (রসূল হচ্ছে) আ’রবী। ক্বুল = বলো। হুয়া = উহা। লিল্লাযীনা আমানূ = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাদের জন্য। হুদাওঁ ওয়া শিফাউন = হুদা/ হিদায়াত ও শিফা/ রোগ নিরাময়কারী। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। ফী আযানিহিম = তাদের কানগুলোর মধ্যে আছে। ওয়াক্বরুন = বধিরতা। ওয়া হুয়া = আর। আলাইহিম = তাদের উপর আছে। আমান = অন্ধত্ব। উলায়িকা = ঐসব লোককে। ইউনাদাউনা = যেন ডাকা হচ্ছে। মিম মাকানিম বায়ীদিন = কোন দূরবর্তী স্থান থেকে।

আর যদি আমরা উহাকে করতাম আ’যমী/ অনারবী (ভাষার) কুরআন, তাহলে তারা বলতো, ‘কেন তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যারূপে বিবৃত হয়নি উহার আয়াতসমূহ? (এটা আশ্চর্যের ব্যাপার যে, কুরআন হচ্ছে) আ’যমী/ অনারবী আর (রসূল হচ্ছে) আ’রবী’। বলো, ‘উহা যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাদের জন্য হুদা/ হিদায়াত ও শিফা/ (মনের) রোগ নিরাময়কারী’। আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না, তাদের কানগুলোর মধ্যে আছে বধিরতা, আর তাদের উপর আছে অন্ধত্ব। ঐসব লোককে যেন ডাকা হচ্ছে কোন দূরবর্তী স্থান থেকে।

৪১:৪৫
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনাল মূসাল কিতাবা = আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে আল কিতাব। ফাখতুলাফা ফীহি = তারপর ইখতিলাফ/ মতভেদ করা হয়েছিলো উহার ক্ষেত্রেও। ওয়া = আর। লাও লা কালিমাতুন ছাবাক্বাতুন = যদি না একটি বাণী পূর্ব নির্ধারিত হতো। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। লাক্বুদিয়া বায়নাহুম = তাহলে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়া হতো। ওয়া = আর। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। লাফী শাক্কিম মিনহু মুরীবিন = উহার ব্যপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে আছে।

আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে আল কিতাব। তারপর ইখতিলাফ/ মতভেদ করা হয়েছিলো উহার ক্ষেত্রেও। আর যদি না একটি বাণী পূর্ব নির্ধারিত হতো তোমার রবের পক্ষ থেকে, তাহলে তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেয়া হতো। আর নিশ্চয় তারা উহার ব্যপারে বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে আছে।

৪১:৪৬
মান = যে। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ফালিনাফসিহী = সে তা তার নিজের কল্যাণের জন্যই করে। ওয়া = আর। মান = যে। আছাআ = মন্দকর্ম করে। ফাআলাইহা = তাহলে তাও তার নিজের বিরুদ্ধে যায়। ওয়া = আর। মা রব্বুকা বিযল্লামিল্লিআবীদি = তোমার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি যালেম/ অত্যাচারী নন।

যে আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে সে তা তার নিজের কল্যাণের জন্যই করে, আর যে মন্দকর্ম করে, তাহলে তাও তার নিজের বিরুদ্ধে যায়। আর তোমার রব তাঁর বান্দাদের প্রতি যালেম/ অত্যাচারী নন।

৪১:৪৭
ইলাইহি = তাঁরই কাছে। ইউরদ্দু ইলমুছ ছায়াতি = সায়াতের/ প্রলয়-মুহুর্তের জ্ঞান সংরক্ষিত। ওয়া = আর। মা তাখরুজু = বের হয় না। মিন ছামারাতিন = কোন ফলফলাদি। মিন আকমামিহা = তার মুকুলসমূহ থেকে। ওয়া = আর। মা তাহমিলু = গর্ভধারণ করে না। মিন উনসা = কোন নারী। ওয়া = আর। লা তাদ্বউ = সে (= কোন নারী) প্রসব করে না। ইল্লা বিইলমিহী = তাঁর জ্ঞানে তা থাকা ছাড়া। ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। ইউনাদিহিম = তিনি তাদেরকে ডেকে বলবেন। আয়না = কোথায়। শুরাকায়ি = আমার শরিকরা (= যাদেরকে তোমরা আমার শরিক মনে করতে তারা)? ক্বলূ = তারা বলবে। আযান্নাকা = আমরা আপনাকে নিবেদন করছি। মা মিন্না = (আজ) আমাদের মধ্য থেকে নেই। মিন শাহীদিন = কোন শাহীদ/ সাক্ষী।

তাঁরই কাছে সায়াতের/ প্রলয়-মুহুর্তের জ্ঞান সংরক্ষিত। আর বের হয় না কোন ফলফলাদি তার মুকুলসমূহ থেকে আর গর্ভধারণ করে না কোন নারী আর সে (= কোন নারী) প্রসব করে না, তাঁর জ্ঞানে তা থাকা ছাড়া। আর যেদিন তিনি তাদেরকে ডেকে বলবেন, ‘কোথায় আমার শরিকরা (= যাদেরকে তোমরা আমার শরিক মনে করতে তারা)?’ তারা বলবে, ‘আমরা আপনাকে নিবেদন করছি (আজ) আমাদের মধ্য থেকে নেই কোন শাহীদ/ সাক্ষী’।

৪১:৪৮
ওয়া = আর। দল্লা = হারিয়ে যাবে। আনহুম = তাদের থেকে। মা কানূ ইয়াদঊনা = যাদেরকে তারা ডাকতো। মিন ক্বাবলূ = ইতিপূর্বে। ওয়া = আর। যন্নূ = তারা ভাববে। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিম মাহীসিন = কোন পলায়নস্থান।

আর হারিয়ে যাবে তাদের থেকে যাদেরকে তারা ডাকতো ইতিপূর্বে। আর তারা ভাববে তাদের জন্য নেই কোন পলায়নস্থান।

৪১:৪৯
লা ইয়াছআমুল ইনছানু = ইনসান/ মানুষ ক্লান্ত হয় না। মিন দুআয়িল খায়রি = কল্যাণের দোয়া করার ক্ষেত্রে। ওয়া = আর। ইম মাছছাহুশ শাররু = যদি তাকে স্পর্শ করে কোন দু:খকষ্ট। ফাইয়াঊছুন ক্বানূতুন = তাহলে তখন সে নিরাশ হয়।

ইনসান/ মানুষ ক্লান্ত হয় না কল্যাণের দোয়া করার ক্ষেত্রে। আর যদি তাকে স্পর্শ করে কোন দু:খকষ্ট, তাহলে তখন সে নিরাশ হয়।

৪১:৫০
ওয়া = আর। লায়িন = অবশ্য যদি। আযাক্বনাহু = আমরা তাকে স্বাদ আস্বাদন করাই। রহমাতাম্মিন্না = আমাদের পক্ষ থেকে রহমতের (স্বাদ)। বা’দি দররাআ = ঐ বিপদাপদের পরে। মাছছাতহু = যা তাকে স্পর্শ করেছিলো। লাইয়াক্বূলান্না = তাহলে সে বলে। হাযা = ইহা। লী = আমারই প্রাপ্য। ওয়া = আর। মা আযন্নুছ ছায়াতা ক্বায়িমাতান = আমি অনুমান করি না যে, সায়াত/ প্রলয় কায়েম/ সংঘটিত হবে। ওয়া = আর। লায়ির রুজি’তু = যদি আমি ফিরেই যাই। ইলা রব্বী = আমার রবের দিকে। ইন্না = তাহলেও নিশ্চয়। লী = আমার জন্য থাকবে। লাল হুসনা = উত্তম প্রতিফল। ফালানুনাব্বিয়ান্নাল্লাযীনা = অথচ আমরা তাদেরকে সংবাদরূপে জানিয়ে দেবো যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বিমা আমিলূ = ঐ বিষয়ে যা তারা আমল করেছিলো। ওয়া = আর। লানুযীক্বান্নাহুম = অবশ্যই আমরা তাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করাবো। মিন আযাবিন গালীযিন = কঠিন শাস্তির (স্বাদ)।

আর অবশ্য যদি আমরা তাকে স্বাদ আস্বাদন করাই আমাদের পক্ষ থেকে রহমতের (স্বাদ), ঐ বিপদাপদের পরে যা তাকে স্পর্শ করেছিলো; তাহলে সে বলে, ‘ইহা আমারই প্রাপ্য। আর আমি অনুমান করি না যে, সায়াত/ প্রলয় কায়েম/ সংঘটিত হবে। আর যদি আমি ফিরেই যাই আমার রবের দিকে, তাহলেও নিশ্চয় আমার জন্য থাকবে উত্তম প্রতিফল’। অথচ আমরা তাদেরকে সংবাদরূপে জানিয়ে দেবো যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, ঐ বিষয়ে যা তারা আমল করেছিলো। আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করাবো কঠিন শাস্তির (স্বাদ)।

৪১:৫১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। আনআমনা = আমরা নেয়ামত/ অনুগ্রহ করি। আলাল ইনছানি = ইনসানের/ মানুষের উপর। আ’রাদা = তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ওয়া = আর। নাআ বিজানিবিহী = তার পাশ কেটে যায়/ এড়িয়ে চলে। ওয়া = আর। ইযা = যখন। মাছছাহুশ শাররু = তাকে স্পর্শ করে দু:খকষ্ট। ফাযূ দুআয়িন আরীদিন = তখন লম্বা চওড়া দোয়ায় রত হয়।

আর যখন আমরা নেয়ামত/ অনুগ্রহ করি ইনসানের/ মানুষের উপর, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় আর তার পাশ কেটে যায়/ এড়িয়ে চলে। আর যখন তাকে স্পর্শ করে দু:খকষ্ট, তখন লম্বা চওড়া দোয়ায় রত হয়।

৪১:৫২
ক্বুল = বলো। আরাআয়তুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। ইন = যদি। কানা = (এ কুরআন) হয়। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর নিকট থেকে। ছুম্মা = তারপর। কাফারতুম বিহী = তোমরা উহার প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করে থাকো। মান = তাহলে কে। আদাল্লু মিম্মান = তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট হতে পারে। হুয়া = যে। ফী শিক্বাক্বিম বায়ীদিন = বিরোধিতায় বহুদূর চলে গেছে।

বলো, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যদি (এ কুরআন) হয় আল্লাহর নিকট থেকে, তারপর তোমরা উহার প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করে থাকো; তাহলে কে তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট হতে পারে যে বিরোধিতায় বহুদূর চলে গেছে?

৪১:৫৩
ছানূরীহিম = আমরা শীঘ্রই তাদেরকে দেখাবো। আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। ফিল আফাকি ওয়া ফী আনফুসিহিম = আফাকে/ বিশ্বপ্রকৃতিতে ও তাদের আনফুসে/ নিজ সত্তায় (= মানবপ্রকৃতিতে)। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াতাবাইয়ানা = স্পষ্ট হয়ে যায়। লাহুম = তাদের জন্য। আন্নাহুল হাক্বক্বু = এ বিষয়টি যে, নিশ্চয় উহা (= আল কুরআন) সত্য। আওয়ালাম ইয়াকফি = ইহা কি যথেষ্ট নয় যে। বিরব্বিকা = তোমার রব। আন্নাহু আলা কুল্লি শাইয়িন শাহীদুন = সবকিছুর ব্যাপারে সাক্ষী।

আমরা শীঘ্রই তাদেরকে দেখাবো আমাদের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ আফাকে/ বিশ্বপ্রকৃতিতে ও তাদের আনফুসে/ নিজ সত্তায় (= মানবপ্রকৃতিতে), যতক্ষণ না স্পষ্ট হয়ে যায় তাদের জন্য এ বিষয়টি যে, নিশ্চয় উহা (= আল কুরআন) সত্য। ইহা কি যথেষ্ট নয় যে, তোমার রব সবকিছুর ব্যাপারে সাক্ষী?

৪১:৫৪
আলা = জেনে রাখ। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। ফী মিরইয়াতিন = সন্দেহের মধ্যে আছে। মিন লিক্বায়ি রব্বিহিম = তাদের রবের সাথে মোলাকাতের ব্যাপারে (= তাদের রবের কাছে জবাবদিহিতার জন্য সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপারে)। আলা = জেনে রাখ। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। বিকুল্লি শাইয়িম মুহীতুন = সবকিছুকে পরিবেষ্টনকারী।

জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা সন্দেহের মধ্যে আছে তাদের রবের সাথে মোলাকাতের ব্যাপারে (= তাদের রবের কাছে জবাবদিহিতার জন্য সম্মুখীন হওয়ার ব্যাপারে)। জেনে রাখ, নিশ্চয় তিনি সবকিছুকে পরিবেষ্টনকারী।