৩৪:১
আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী = আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সেই সত্তা। লাহু = যাঁর অধিকারভুক্ত। মা ফিস সামাওয়াতি = যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে। ওয়া মা ফিল আরদি = আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। ওয়া = আর। লাহুল হামদু = তাঁরই জন্য হামদ/ প্রশংসা। ফিল আখিরাতি = আখিরাতেও। ওয়া = আর। হুয়াল হাকীমুল খাবীরু = তিনি হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও খাবীর (= যিনি সবকিছুর খবর রাখেন)।
আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সেই সত্তা যাঁর অধিকারভুক্ত যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে; আর তাঁরই জন্য হামদ/ প্রশংসা আখিরাতেও। আর তিনি হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও খাবীর (= যিনি সবকিছুর খবর রাখেন)।
৩৪:২
ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা = যা কিছু। ইয়ালিজু ফিল আরদি = পৃথিবীতে প্রবেশ করে। ওয়া = আর। মা ইয়াখরুজু মিনহা = যা কিছু উহা থেকে বের হয়। ওয়া = আর। মা ইয়ানযিলু মিনাছ ছামায়ি = যা কিছু আকাশ থেকে নাযিল হয়। ওয়া = আর। মা ইয়া’রিজু ফীহা = যা কিছু উহাতে উত্থিত হয়। ওয়া = আর। হুয়ার রহীমুল গাফূরু = তিনি রহীম/ দয়াশীল ও গফূর/ ক্ষমাশীল।
তিনি জানেন যা কিছু পৃথিবীতে প্রবেশ করে আর যা কিছু উহা থেকে বের হয়, আর যা কিছু আকাশ থেকে নাযিল হয় আর যাকিছু উহাতে উত্থিত হয়। আর তিনি রহীম/ দয়াশীল ও গফূর/ ক্ষমাশীল।
৩৪:৩
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারা বলে। লা তা’তীনাছ ছায়াতি = আমাদের কাছে সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত আসবে না। ক্বুল = বলো। বালা = কেন নয়? ওয়া রব্বী = আমার সেই রবের কসম। লাতা’তিয়ান্নাকুম = উহা তোমাদের কাছে আসবেই। আলিমিল গায়বি = যিনি আলিমুল গায়েব/ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞানী। লা ইয়া’যুবু আনহু = তাঁর থেকে লুকায়িত নেই। মিছক্বালু যাররাতিন ফিছ ছামাওয়াতি ওয়া লা আরদি = অণু পরিমাণ জিনিসও, আকাশমন্ডলীতে (লুকায়িত নেই) আর পৃথবীতেও (লুকায়িত) নেই। ওয়া = আর। লা আসগারু মিন যালিকা = উহার চেয়ে ছোট জিনিসও নেই। ওয়া লা আকবারু = আর (উহার চেয়ে) বড় জিনিসও নেই। ফী কিতাবিম মুবীনিন = কিতাবুম মুবীন/ স্পষ্ট কিতাবের মধ্যে (লিপিবদ্ধ) থাকা ছাড়া।
আর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘আমাদের কাছে সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত আসবে না’। বলো, ‘কেন নয়? আমার সেই রবের কসম, উহা তোমাদের কাছে আসবেই, যিনি আলিমুল গায়েব/ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞানী। তাঁর থেকে লুকায়িত নেই অণু পরিমাণ জিনিসও, আকাশমন্ডলীতে (লুকায়িত নেই), আর পৃথবীতেও (লুকায়িত) নেই। আর উহার চেয়ে ছোট জিনিসও নেই, আর (উহার চেয়ে) বড় জিনিসও নেই, কিতাবুম মুবীন/ স্পষ্ট কিতাবের মধ্যে (লিপিবদ্ধ) থাকা ছাড়া।
৩৪:৪
লিইয়াযযিয়াল্লাযীনা আমানূ = যেন তিনি তাদেরকে (ভালো) প্রতিফল দেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। মাগফিরাতুওঁ ওয়া রিযক্বুন কারীমুন = মাগফিরাত/ ক্ষমা ও রিযক্বুন কারীম/ সম্মানজনক জীবিকা।
যেন তিনি তাদেরকে (ভালো) প্রতিফল দেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে, তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে মাগফিরাত/ ক্ষমা ও রিযক্বুন কারীম/ সম্মানজনক জীবিকা।
৩৪:৫
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ছাআও = চেষ্টা করে। ফী আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে। মুআজিযীনা = ব্যর্থকারী হতে। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। আযাবুম মিন রিযযিম আলীমুন = কষ্টদায়ক কলুষতাপূর্ণ শাস্তি।
আর যারা চেষ্টা করে আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে ব্যর্থকারী হতে (= যারা আমাদের আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করতে চেষ্টা করে), তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে কষ্টদায়ক কলুষতাপূর্ণ শাস্তি।
৩৪:৬
ওয়া = আর। ইয়ারাল্লাযীনা উতুল ইলমা = যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা দেখে যে। আল্লাযী = যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। হুয়াল হাক্বক্বু = উহা সত্য। ওয়া = আর। ইয়াহদী = উহা হিদায়াত করে। ইলা সিরাতিল আযীযিল হামীদি = মহাশক্তিমান মহাপ্রশংসিত সত্তার পথের দিকে।
আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা দেখে যে, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে, উহা সত্য। আর উহা হিদায়াত করে মহাশক্তিমান মহাপ্রশংসিত সত্তার পথের দিকে।
৩৪:৭
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযী কাফারূ = যারা কুফর করেছে তারা বলে। হাল নাদুল্লুকুম = আমরা কি তোমাদেরকে সন্ধান দেবো। আলা রজুলিইঁ ইউনাব্বিউকুম = এমন এক পুরুষের, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে। ইযা = যখন। মুযযিক্বতুম = তোমাদেরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হবে। কুল্লা মুমাযযিক্বান = প্রত্যেক (অণুকণিকায়) ছিন্নবিচ্ছন্ন করে। ইন্নাকুম = তখনো নিশ্চয় তোমরা হবে। লাফী খালক্বিন জাদীদিন = নতুন সৃষ্টিরূপে (পুনর্গঠিত)।
আর যারা কুফর করেছে তারা বলে, ‘আমরা কি তোমাদেরকে সন্ধান দেবো এমন এক পুরুষের, যে তোমাদেরকে সংবাদ দেয় যে, ‘যখন তোমাদেরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হবে, প্রত্যেক (অণুকণিকায়) ছিন্নবিচ্ছন্ন করে; তখনো নিশ্চয় তোমরা হবে নতুন সৃষ্টিরূপে (পুনর্গঠিত)’।
৩৪:৮
আফতারা = সে কি রচনা করেছে। আলাল্লাহি কাযিবান = আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা। আও = নাকি। বিহী = তার সাথে আছে। জিন্নাতিন = কোন জ্বিন? বালিল্লাযীনা = বরং যারা। লা ইউ’মিনূনা বিল আখিরাতি = ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি। ফিল আযাবি = তারা আযাবের মধ্যেই আছে। ওয়াদ দলালিল বায়ীদি = আর তারা দূরবর্তী বিভ্রান্তির মধ্যে আছে।
‘সে কি রচনা করেছে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা, নাকি তার সাথে আছে কোন জ্বিন?’ বরং যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, তারা আযাবের মধ্যেই আছে আর তারা দূরবর্তী বিভ্রান্তির মধ্যে আছে।
৩৪:৯
আফালাম ইয়ারাও = তবে কি তারা দেখেনি। ইলা মা বায়না আয়দীহিম ওয়া মা খালফাহুম = যা কিছু আছে তাদের সামনে আর যা কিছু আছে তাদের পিছনে। মিনাছ ছামায়ি ওয়াল আরদি = আকাশ ও পৃথিবী থেকে। ইন নাশা’ নাখছিফ বিহিমুল আরদা = যদি আমরা ইচ্ছা করি, তবে তাদেরকে ধ্বসিয়ে দেবো জমিনে। আও = অথবা। নুছক্বিত আলাইহিম = আমরা ফেলে দেবো তাদের উপর। কিছাফাম মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে কোন টুকরো। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতাল্লিকুল্লি আবদিম মুনীবিন = আয়াত/ নিদর্শন, প্রত্যেক এমন বান্দার জন্য যারা (আল্লাহর) অভিমুখী।
তবে কি তারা দেখেনি যা কিছু আছে তাদের সামনে আর যা কিছু আছে তাদের পিছনে, আকাশ ও পৃথিবী থেকে? যদি আমরা ইচ্ছা করি, তবে তাদেরকে ধ্বসিয়ে দেবো জমিনে অথবা আমরা ফেলে দেবো তাদের উপর আকাশ থেকে কোন টুকরো। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াত/ নিদর্শন, প্রত্যেক এমন বান্দার জন্য যারা (আল্লাহর) অভিমুখী।
৩৪:১০
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনা = আমরা দিয়েছিলাম। দাউদা = দাউদকে। মিন্না = আমাদের পক্ষ থেকে। ফাদলান = ফযল/ অনুগ্রহ। ইয়া জিবালু = হে পাহাড়। আওয়িবী = আনুকূল্য করো। মাআহু = তার সাথে। ওয়াত তয়রা = আর পাখিও (উহা করতো)। ওয়া = আর। আলান্না = আমরা নরম করে দিয়েছিলাম। লাহুল হাদীদা = তার জন্য লোহাকে।
আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম দাউদকে আমাদের পক্ষ থেকে ফযল/ অনুগ্রহ। ‘হে পাহাড় আনুকূল্য করো তার সাথে’। আর পাখিও (উহা করতো)। আর আমরা নরম করে দিয়েছিলাম তার জন্য লোহাকে।
৩৪:১১
আনি’মাল ছাবিগাতিন = (তার প্রতি এ নির্দেশসহ যে,) তুমি পূর্ণমাপের বর্মসমূহ নির্মাণ করো। ওয়া = আর। ক্বাদ্দির ফিছ ছাহরি = কড়াগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ রক্ষা করো। ওয়া’মালূ সলিহান = আর তোমরা আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। বিমা তা’মালূনা বাসীরুন = তোমরা যা আমল করো উহার প্রতি বাসীর/ দৃষ্টিবান।
(তার প্রতি এ নির্দেশসহ যে,) ‘তুমি পূর্ণমাপের বর্মসমূহ নির্মাণ করো, আর কড়াগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ রক্ষা করো’। ‘আর তোমরা আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করো। নিশ্চয় আমি তোমরা যা আমল করো উহার প্রতি বাসীর/ দৃষ্টিবান’।
৩৪:১২
ওয়া = আর। লিছুলাইমানার রীহা = সুলাইমানের জন্য (নিয়োজিত করেছিলাম) বাতাসকে। গুদুউউহা শাহরুন = তার এক সকাল হতো (অন্যদের) এক মাস (= সে এক মাসের পথ এক সকালে অতিক্রম করতো)। ওয়া = আর। রওয়াহুহা শাহরুন = তার এক সন্ধ্যা হতো (অন্যদের) এক মাস (= সে এক মাসের পথ এক সন্ধ্যায় অতিক্রম করতো)। ওয়া = আর। আছালনা = আমরা প্রবাহিত করেছিলাম। লাহু = তার জন্য। আয়নাল ক্বিতরি = গলিত তামার প্রস্রবণ/ নালা। ওয়া = আর। মিনাল জিন্নি = কোন কোন জ্বিন ছিলো। মাইঁ ইয়া’মালু = যে কাজ করতো। বায়না ইয়াদায়হি = তার সামনে। বিইযনি রব্বিহী = তার রবের (= আল্লাহর) অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াযিগ মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে যে বিচ্যুত হতো। আন আমরিনা = আমাদের আদেশ থেকে। নুযিক্বহু মিন আযাবিছ ছায়ীরি = আমরা তাকে উত্তপ্ত আগুণের স্বাদ আস্বাদন করাতাম।
আর সুলাইমানের জন্য (নিয়োজিত করেছিলাম) বাতাসকে। তার এক সকাল হতো (অন্যদের) এক মাস (= সে এক মাসের পথ এক সকালে অতিক্রম করতো), আর তার এক সন্ধ্যা হতো (অন্যদের) এক মাস (= সে এক মাসের পথ এক সন্ধ্যায় অতিক্রম করতো)। আর আমরা প্রবাহিত করেছিলাম তার জন্য গলিত তামার প্রস্রবণ/ নালা। আর কোন কোন জ্বিন ছিলো, যে কাজ করতো তার সামনে, তার রবের (= আল্লাহর) অনুমতিক্রমে। আর তাদের মধ্য থেকে যে বিচ্যুত হতো আমাদের আদেশ থেকে, আমরা তাকে উত্তপ্ত আগুণের স্বাদ আস্বাদন করাতাম।
৩৪:১৩
ইয়া’মালূনা = তারা (নির্মাণের) কাজ করতো। লাহু = তার জন্য। মা ইয়াশাউ = যা সে ইচ্ছা করতো। মিম মাহরীবা = (তারা নির্মাণ করতো) মেহরাবসমূহ/ অস্ত্রাগারসমূহ। ওয়া = আর। তামাছীলা = প্রতিকৃতিসমূহ/ প্রতিমূর্তিসমূহ/ ভাস্কর্যসমূহ। ওয়া = আর। জিফানিন কালজাওয়াবি = পুকুরসদৃশ বড় বড় পেয়ালাসমূহ। ওয়া = আর। ক্বুদূরির রছিয়াতিন = অনড় বড় বড় ডেগসমূহ। ই’মালূ = (আমি বলেছিলাম,) ‘তোমরা কাজ করো। আলা দাউদা = হে দাউদের বংশধরেরা। শুকরান = শুকরান/ কৃতজ্ঞতা (সহকারে)। ওয়া = আর। ক্বালীলুম মিন ইবাদিয়াশ শাকূরু = আমার বান্দাদের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যকই শোকরকারী/ কৃতজ্ঞতাপ্রকাশকারী।
তারা (নির্মাণের) কাজ করতো তার জন্য, যা সে ইচ্ছা করতো, (তারা নির্মাণ করতো) মেহরাবসমূহ/ অস্ত্রাগারসমূহ আর প্রতিকৃতিসমূহ/ প্রতিমূর্তিসমূহ/ ভাস্কর্যসমূহ আর পুকুরসদৃশ বড় বড় পেয়ালাসমূহ আর অনড় বড় বড় ডেগসমূহ। (আমি বলেছিলাম,) ‘তোমরা কাজ করো, হে দাউদের বংশধরেরা, শুকরান/ কৃতজ্ঞতা (সহকারে)। আর আমার বান্দাদের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যকই শোকরকারী/ কৃতজ্ঞতাপ্রকাশকারী’।
৩৪:১৪
ফালাম্মা = তারপর যখন। ক্বাদাইনা আলাইহিল মাওতা = আমরা তার উপর মৃত্যুর ফায়সালা করেছিলাম। মা দাল্লাহুম আলা মাওতিহী = তাদেরকে তার মৃত্যুর ব্যাপারে (সর্বপ্রথম) কেউ সংবাদ দেয়নি। ইল্লা দাব্বাতুল আরদি = দাব্বাতুল আরদ/ জমিনের জানোয়ার (বস্তুবাদী অসৎ লোক) ছাড়া। তা’কুলু = যে খাচ্ছিলো/ বিনষ্ট করছিলো। মিনছাআতাহু = তার রাজদন্ডকে। ফালাম্মা = তারপর যখন। খাররা = সে পড়ে গেলো/ তার মৃত্যু হলো (= সুলাইমানের মৃত্যুর পর যোগ্য শাসকের অবর্তমানে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লো),। তাবাইয়ানাতিল জিন্না = তখন জ্বিনরা স্পষ্ট হয়ে গেলো। আল্লাও কানূ ইয়া’লামূনাল গায়বা = যে, যদি তারা গায়েব জানতো। মা লাবিছূ ফিল আযাবিল মুহীনি = তাহলে তাদেরকে অপমানকর শাস্তির মধ্যে অবস্থান করতে হতো না।
তারপর যখন আমরা তার উপর মৃত্যুর ফায়সালা করেছিলাম, তখন তাদেরকে তার মৃত্যুর ব্যাপারে (সর্বপ্রথম) কেউ সংবাদ দেয়নি, দাব্বাতুল আরদ/ জমিনের জানোয়ার (বস্তুবাদী অসৎ লোক) ছাড়া। যে খাচ্ছিলো/ বিনষ্ট করছিলো তার রাজদন্ডকে। তারপর যখন সে পড়ে গেলো/ তার মৃত্যু হলো (= সুলাইমানের মৃত্যুর পর যোগ্য শাসকের অবর্তমানে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লো), তখন জ্বিনরা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, যদি তারা গায়েব জানতো, তাহলে তাদেরকে অপমানকর শাস্তির মধ্যে অবস্থান করতে হতো না।
৩৪:১৫
লাক্বাদ = নিশ্চয়। কানা লিছাবায়িন = সাবার জন্য (= সাবাবাসীদের জন্য) ছিলো। ফী মাছাকিনিহিম = তাদের বাসভূমিতে। আয়াতুন = আয়াত/ নিদর্শন। জান্নাতানি আইঁ ইয়ামালি ওয়া শিমালিন = দুটি জান্নাত, ডানে ও বামে। কুলূ = তোমরা খাও। মির রিযক্বি রব্বিকুম = তোমাদের রবের রিযিক থেকে। ওয়াশকুরূ লাহু = আর তাঁরই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। বালদাতুন তইয়িবাতুন = এটি পবিত্র দেশ। ওয়া রব্বুন গাফূরুন = আর রব (= আল্লাহ) গফূর/ ক্ষমাশীল।
নিশ্চয় সাবার জন্য (= সাবাবাসীদের জন্য) ছিলো তাদের বাসভূমিতে আয়াত/ নিদর্শন; দুটি জান্নাত, ডানে ও বামে। (আমি বলেছিলাম,) ‘তোমরা খাও তোমাদের রবের রিযিক থেকে, আর তাঁরই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। এটি পবিত্র দেশ আর রব (= আল্লাহ) গফূর/ ক্ষমাশীল’।
৩৪:১৬
ফাআ’রাদ্বূ = তবুও তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। ফাআরছালনা = তারপর আমরা পাঠিয়েছিলাম। আলাইহিম = তাদের উপর। ছায়লাল আরিমি = বাঁধভাঙ্গা বন্যা। ওয়া = আর। বাদ্দালনাহুম = আমরা উহাকে বদলে দিয়েছিলাম। বিজান্নাতায়হিম = তাদের দুটি বাগানের পরিবর্তে। জান্নাতায়নি = এমন দুটি বাগানে। যাওয়াতায় উকুলিন খামতিন = যা ছিলো বিস্বাদ খাদ্যসম্পন্ন। ওয়া = আর। আছলিন = (যাতে ছিলো) ঝাউগাছ। ওয়া = আর (ছিলো)। মিন ছিদরিন ক্বালীলিন = অল্প সংখ্যক বরইগাছ/ কুলগাছ।
তবুও তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। তারপর আমরা পাঠিয়েছিলাম তাদের উপর বাঁধভাঙ্গা বন্যা। আর আমরা উহাকে বদলে দিয়েছিলাম, তাদের দুটি বাগানের পরিবর্তে এমন দুটি বাগানে, যা ছিলো বিস্বাদ খাদ্যসম্পন্ন আর (যাতে ছিলো) ঝাউগাছ আর (ছিলো) অল্প সংখ্যক বরইগাছ/ কুলগাছ।
৩৪:১৭
যালিকা = উহা। জাযায়নাহুম = আমরা তাদেরকে প্রতিফলস্বরূপ দিয়েছিলাম। বিমা কাফারূ = তারা যে কুফর করেছিলো তার কারণে। ওয়া = আর। হাল নুজাযী = আমরা এরূপ প্রতিফল দিই না। ইল্লাল কাফূরা = কাফেরদেরকে ছাড়া।
উহা আমরা তাদেরকে প্রতিফলস্বরূপ দিয়েছিলাম তারা যে কুফর করেছিলো তার কারণে। আর আমরা এরূপ প্রতিফল দিই না, কাফেরদেরকে ছাড়া।
৩৪:১৮
ওয়া = আর (উহার আগে)। জাআলনা = আমরা স্থাপন করেছিলাম। বায়নাহুম ওয়া বায়নাল ক্বুরা = তাদের ও ঐ জনপদের মধ্যে। আল্লাতী বারাকনা ফীহা = যাতে আমরা বরকত দিয়েছিলাম। ক্বুরান যহীরাতান = (স্থাপন করেছিলাম) দৃশ্যমান জনপদসমূহ। ওয়া = আর। ক্বাদ্দারনা ফীহাছ ছায়রা = আমরা উহাতে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম ভ্রমণ দূরত্ব। ছীরূ ফীহা = (আমি বলেছিলাম,) তোমরা উহাতে ভ্রমণ করো। লাইয়ালিয়া = রাতসমূহে। ওয়া = আর। আইয়ামান = দিনসমূহে। আমিনীনা = নিরাপত্তাসহকারে।
আর (উহার আগে) আমরা স্থাপন করেছিলাম তাদের ও ঐ জনপদের মধ্যে, যাতে আমরা বরকত দিয়েছিলাম (০৩:৯৬), (স্থাপন করেছিলাম) দৃশ্যমান জনপদসমূহ, আর আমরা উহাতে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম ভ্রমণ দূরত্ব। (আমি বলেছিলাম,) ‘তোমরা উহাতে ভ্রমণ করো রাতসমূহে আর দিনসমূহে, নিরাপত্তাসহকারে’।
৩৪:১৯
ফাক্বলূ = তারপর তারা বলেছিলো। রব্বানা = হে আমাদের রব। বায়িদ = দূরত্ব বাড়িয়ে দিন। আছফারিনা = আমাদের সফরের ক্ষেত্রে। ওয়া = আর। যলামূ = তারা যুলুম করেছিলো। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদের উপর। ফাজাআলনাহুম = তারপর আমরা তাদেরকে পরিণত করলাম। আহাদীসা = হাদীসে/ ইতিহাসের কাহিনীতে। ওয়া = আর। মাযযাক্বনাহুম = আমরা তাদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিলাম। কুল্লা মুমাযযাক্বিন = প্রত্যেক বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিন = আয়াত/ নিদর্শন। লিকুল্লি সববারিন শাকূরিন = প্রত্যেক সবরকারী ও শোকরকারীর জন্য।
তারপর তারা বলেছিলো, ‘হে আমাদের রব, দূরত্ব বাড়িয়ে দিন আমাদের সফরের ক্ষেত্রে’। আর তারা যুলুম করেছিলো তাদের নিজেদের উপর। তারপর আমরা তাদেরকে পরিণত করলাম হাদীসে/ ইতিহাসের কাহিনীতে। আর আমরা তাদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে দিয়েছিলাম, প্রত্যেক বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াত/ নিদর্শন, প্রত্যেক সবরকারী ও শোকরকারীর জন্য।
৩৪:২০
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। সদ্দাক্বা = সত্য পেয়েছে। আলাইহিম = তাদের ব্যাপারে। ইবলীসু = ইবলীস। যন্নাহু = তার অনুমানকে। ফাত্তাবাঊহু = তারপর তারা তার ইত্তেবা/ অনুসরণ করলো। ইল্লা ফারীক্বাম মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের একটি দল ছাড়া।
আর নিশ্চয় সত্য পেয়েছে তাদের ব্যাপারে ইবলীস তার অনুমানকে। তারপর তারা তার ইত্তেবা/ অনুসরণ করলো, মু’মিনদের একটি দল ছাড়া।
৩৪:২১
ওয়া = আর। মা কানা লাহু = তার জন্য ছিলো না। আলাইহিম = তাদের ব্যাপারে। মিন সুলতানিম = কোন সুলতান/ প্রমাণপত্র। ইল্লা = এছাড়া যে। লিনা’লামা = যেন আমরা তাকে জানতে পারি। মাইঁ ইউ’মিনু = যে ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। মিম্মান হুয়া মিনহা ফী শাক্কিন = তার থেকে পৃথক করে যে উহাতে সন্দেহের মধ্যে আছে (সেজন্য তাদেরকে অন্যায় করার সামর্থ দেয়া হয়েছিলো)। ওয়া = আর। রব্বুকা = তোমার রব। আলা কুল্লি শাইয়িন = সবকিছুর ব্যাপারে। হাফীয = হাফিজ/ সংরক্ষক।
আর তার জন্য ছিলো না তাদের ব্যাপারে কোন সুলতান/ প্রমাণপত্র। এছাড়া যে, যেন আমরা তাকে জানতে পারি যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আখিরাতের প্রতি, তার থেকে পৃথক করে যে উহাতে সন্দেহের মধ্যে আছে (সেজন্য তাদেরকে অন্যায় করার সামর্থ দেয়া হয়েছিলো)। আর তোমার রব সবকিছুর ব্যাপারে হাফিজ/ সংরক্ষক।
৩৪:২২
ক্বুলিদউল্লাযীনা = বলো, ‘তোমরা তাদেরকে ডাকো যাদেরকে। যআমতুম মিন দূনিল্লাহি = তোমরা ইলাহ বলে মনে করো, আল্লাহ ছাড়া। লা ইয়ামলিকূনা = তারা আধিপত্য রাখে না। মিছক্বালা জাররাতিন = অণু পরিমাণও। ফিস সামাওয়াতি ওয়া লা ফিল আরদি = আকাশমন্ডলীতে আর পৃথিবীতেও (আধিপত্য) রাখে না। ওয়া = আর। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। ফীহিমা = এ দুয়ের মধ্যে। মিন শিরকিন = কোন শিরক/ অংশ। ওয়া = আর। মা লাহু = তাঁর জন্য নেই। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মিন যহীরিন = কোন সাহায্যকারী।
বলো, ‘তোমরা তাদেরকে ডাকো যাদেরকে তোমরা ইলাহ বলে মনে করো, আল্লাহ ছাড়া। তারা আধিপত্য রাখে না অণু পরিমাণও আকাশমন্ডলীতে আর পৃথিবীতেও (আধিপত্য) রাখে না। আর তাদের জন্য নেই এ দুয়ের মধ্যে কোন শিরক/ অংশ। আর তাঁর জন্য নেই তাদের মধ্য থেকে কোন সাহায্যকারী।
৩৪:২৩
ওয়া = আর। লা তানফাউশ শাফায়াতা ইনদাহু = কোন উপকারে আসবে না কোন শাফায়াত/ সুপারিশ তাঁর কাছে (= আল্লাহর কাছে)। ইল্লা লিমান আযিনা লাহু = তার জন্য করা শাফায়াত ছাড়া, যার জন্য তিনি অনুমতি দিবেন। হাত্তা = এমনকি যখন। ফুযিআ = ভয় দূর হয়ে যাবে। আন ক্বূলূবিহিম = তাদের কলবসমূহ থেকে। ক্বলূ = তখন তারা (= যাদের জন্য সুপারিশ করা হবে তারা) বলবে। মা যা ক্বলা রব্বুকুম = তোমাদের রব কী বলেছেন। ক্বলূ = তারা (= সুপারিশকারীরা) বলবে, ‘(যা) হক্ব/ সত্য (তা-ই বলেছেন)’। ওয়া = আর। হুয়াল আলিয়্যুল ক্বাবীরু = তিনি আলী/ মহান ও কবীর/ শ্রেষ্ঠ।
আর কোন উপকারে আসবে না কোন শাফায়াত/ সুপারিশ তাঁর কাছে (= আল্লাহর কাছে), তার জন্য করা শাফায়াত ছাড়া, যার জন্য তিনি অনুমতি দিবেন। এমনকি যখন ভয় দূর হয়ে যাবে তাদের কলবসমূহ থেকে, তখন তারা (= যাদের জন্য সুপারিশ করা হবে তারা) বলবে, ‘তোমাদের রব কী বলেছেন? তারা (= সুপারিশকারীরা) বলবে, ‘(যা) হক্ব/ সত্য (তা-ই বলেছেন)’। আর তিনি আলী/ মহান ও কবীর/ শ্রেষ্ঠ।
৩৪:২৪
ক্বুল = বলো। মাইঁ ইয়ারযুক্বুকুম = কে তোমাদেরকে রিযিক দেন। মিনাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী থেকে? ক্বুলিল্লাহু = বলো, ‘আল্লাহ’। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আও = অথবা। ইয়্যাকুম = তোমরা। লাআলা হুদান = হিদায়াতের উপর থাকা হচ্ছে। আও = অথবা। ফী দলালিম মুবীনিন = প্রকাশ্য/ স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে থাকা হচ্ছে।
বলো, ‘কে তোমাদেরকে রিযিক দেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী থেকে?’ বলো, ‘আল্লাহ’। (আরো বলো,) ‘আর নিশ্চয় আমরা অথবা তোমরা হিদায়াতের উপর থাকা হচ্ছে অথবা প্রকাশ্য/ স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে থাকা হচ্ছে’।
৩৪:২৫
ক্বুল = বলো। লা তুছআলূনা = তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে না। আম্মা আজরামনা = ঐ বিষয়ে যা আমরা অপরাধ করেছি। ওয়া = আর। লা নুছআলু = আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। আম্মা তা’মালূনা = ঐ বিষয়ে যা তোমরা আমল/ কাজ করেছো।
বলো, ‘তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে না ঐ বিষয়ে যা আমরা অপরাধ করেছি। আর আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না ঐ বিষয়ে যা তোমরা আমল/ কাজ করেছো’।
৩৪:২৬
ক্বুল = বলো। ইয়াজমাউ বায়নানা রব্বুনা = একত্রিত করবেন আমাদেরকে আমাদের রব। ছুম্মা = তারপর। ইয়াফতাহু = তিনি ফায়সালা করে দেবেন। বায়নানা = আমাদের মধ্যে। বিল হাক্বক্বি = হক্বের/ সত্যের ভিত্তিতে। ওয়া = আর। হুয়াল ফাত্তাহুল আলীমু = তিনি ফাত্তাহ/ ফায়সালাকারী ও আলীম/ মহাজ্ঞানী।
বলো, ‘একত্রিত করবেন আমাদেরকে আমাদের রব। তারপর তিনি ফায়সালা করে দেবেন আমাদের মধ্যে হক্বের/ সত্যের ভিত্তিতে। আর তিনি ফাত্তাহ/ ফায়সালাকারী ও আলীম/ মহাজ্ঞানী।
৩৪:২৭
ক্বুল = বলো। আরুনিয়াল্লাযীনা = তোমরা আমাকে দেখাও দেখি তাদেরকে, যাদেরকে। আলহাক্বতুম = তোমরা সংযুক্ত করেছো। বিহী = তাঁর সাথে। শুরাকাআ = শরিক হিসাবে। কাল্লা = কখনো না। বাল হুয়াল্লাহুল আযীযুল হাকীমু = বরং তিনিই আল্লাহ, আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
বলো, ‘তোমরা আমাকে দেখাও দেখি তাদেরকে, যাদেরকে তোমরা সংযুক্ত করেছো তাঁর সাথে শরিক হিসাবে। কখনো না। বরং তিনিই আল্লাহ, আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
৩৪:২৮
ওয়া = আর। মা আরছালনাকা = আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি। ইল্লা কাফফাতাল্লিন্নাছি = সমগ্র মানবজাতির জন্য ছাড়া (= আমরা তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছি)। বাশীরান ওয়া নাযীরান = বাশীর/ সুসংবাদদাতা ও নাযীর/ সতর্ককারী হিসাবে। ওয়ালাকিন = কিন্তু। আকছারান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। লা ইয়া’লামূনা = ইলম (= আসমানী কিতাবের জ্ঞান) রাখে না।
আর আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি সমগ্র মানবজাতির জন্য ছাড়া (= আমরা তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছি), বাশীর/ সুসংবাদদাতা ও নাযীর/ সতর্ককারী হিসাবে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ইলম (= আসমানী কিতাবের জ্ঞান) রাখে না।
৩৪:২৯
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। মাতা = কখন পূর্ণ হবে। হাযাল ওয়া’দু = এই ওয়াদা। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সাদেকীন/ সত্যবাদী?
আর তারা বলে, ‘কখন পূর্ণ হবে এই ওয়াদা, যদি তোমরা হও সাদেক্বীন/ সত্যবাদী?’
৩৪:৩০
ক্বুল = বলো। লাকুম মিয়াদুন = তোমাদের জন্য মেয়াদ/ নির্ধারিত কাল হচ্ছে। ইয়াওমিল্লা তাছতা’খিরূনা আনহু ছাআতান = এমন একদিন যার আসাকে তোমরা বিলম্বিত করতে পারবে না এক মুহুর্তও। ওয়া = আর। লা তাছতাক্বদিমূনা = উহাকে ত্বরান্বিতও করতে পারবে না।
বলো, ‘তোমাদের জন্য মেয়াদ/ নির্ধারিত কাল হচ্ছে এমন একদিন যার আসাকে তোমরা বিলম্বিত করতে পারবে না এক মুহুর্তও, আর উহাকে ত্বরান্বিতও করতে পারবে না।
৩৪:৩১
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর করেছে তারা বলে। লান নু’মিনা = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না। বিহাযাল ক্বুরআনি = এই আল কুরআনের প্রতি। ওয়া = আর। লা বিল্লাযী বায়না ইয়াদায়হু = যা উহার সামনে আছে (= যা উহার আগে নাযিল হয়েছিলো) সেসবের প্রতিও (বিশ্বাস করবো) না। ওয়া = আর। লাও তারা = যদি তুমি দেখতে। ইযিয যলিমীনা = যখন যালেমদেরকে। মাওক্বুফূনা = দাঁড় করানো হবে। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ইয়ারজিউ = (তখন) ফিরিয়ে দেবে। বা’দুহুম ইলা বা’দিল ক্বওলু = তাদের একে অপরের দিকে (তার) কথাকে (= তারা বাদানুবাদ করবে)। ইয়াক্বূলুল্লাযীনছ তুদয়িফূ = যাদেরকে মুসতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো তারা বলবে। লিল্লাযীনাছতাকবারূ = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো। লাও লা আনতুম = যদি তোমরা না থাকতে। লাকুন্না মু’মিনীনা = তাহলে আমরা মু’মিনীন/ বিশ্বাসী হতাম।
আর যারা কুফর করেছে তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না এই আল কুরআনের প্রতি আর যা উহার সামনে আছে (= যা উহার আগে নাযিল হয়েছিলো) সেসবের প্রতিও (বিশ্বাস করবো) না’। আর যদি তুমি দেখতে যখন যালেমদেরকে দাঁড় করানো হবে তাদের রবের কাছে! তখন ফিরিয়ে দেবে তাদের একে অপরের দিকে (তার) কথাকে (= তারা বাদানুবাদ করবে)। যাদেরকে মুসতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো তারা বলবে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো, ‘যদি তোমরা না থাকতে তাহলে আমরা মু’মিনীন/ বিশ্বাসী হতাম’।
৩৪:৩২
ক্বলাল্লাযীনাছতাকবারূ = যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো তারা বলবে। লিল্লাযীনাছতুদ্বয়িফূ = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যাদেরকে মুছতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো। আনাহনু = আমরা কি। সদাদনাকুম = তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম। আনিল হুদা = হুদা/ হিদায়াত গ্রহণ থেকে। বা’দা ইয জাআকুম = উহার পরও যখন তা তোমাদের কাছে এসেছিলো। বাল = বরং। কুনতুম = তোমরাই তো ছিলে। মুজরিমীনা = অপরাধী।
যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো তারা বলবে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যাদেরকে মুছতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, ‘আমরা কি তোমাদেরকে বাধা দিয়েছিলাম হুদা/ হিদায়াত গ্রহণ থেকে উহার পরও যখন তা তোমাদের কাছে এসেছিলো? বরং তোমরাই তো ছিলে অপরাধী (তোমরা স্বেচ্ছায় অন্যায়কে পছন্দ করে নিয়েছিলে)’।
৩৪:৩৩
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনাছতুদয়িফূ = যাদেরকে মুছতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো তারা বলবে। লিল্লাযীনাছতাকবারূ = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো। বাল = বরং। মাকরুল্লাইলি ওয়ান্নাহারি = (তোমাদের পক্ষ থেকে) রাত দিনের কৌশল ছিলো। ইয = যখন। তা’মুরূনানা = তোমরা আমাদেরকে আদেশ দিতে। আন = যেন। নাকফুরা = আমরা কুফর/ অবিশ্বাস করি। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। নাজআলা = যেন আমরা সাব্যস্ত করি। লাহু আনদাদান = তাঁর সমকক্ষ। ওয়া = আর। আছাররুন্নাদামাতা = তারা গোপন করবে (তাদের) অনুতাপ (= তারা মনে মনে অনুতপ্ত হবে)। লাম্মা = যখন। রআউল আযাবা = তারা আযাব দেখবে। ওয়া = আর। জাআলনাল আগলালা ফী আ’নাক্বিল্লাযীনা কাফারূ = আমরা ফাঁস/ শিকল লাগিয়ে দেবো তাদের গলায় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছিলো। হাল ইউজযাওনা = প্রতিফল দেয়া হবে কি। ইল্লা মা কানূ ইয়া’মালূনা = উহা অনুযায়ী ছাড়া যা তারা আমল/ কাজ করতো।
আর যাদেরকে মুছতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো তারা বলবে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা অহংকার করতো/ বড় বনে ছিলো, ‘বরং (তোমাদের পক্ষ থেকে) রাত দিনের কৌশল ছিলো, যখন তোমরা আমাদেরকে আদেশ দিতে যেন আমরা কুফর/ অবিশ্বাস করি আল্লাহর প্রতি আর যেন আমরা সাব্যস্ত করি তাঁর সমকক্ষ’ (তাহলে কিভাবে তোমরা দায় এড়াতে পারো?)। আর তারা গোপন করবে (তাদের) অনুতাপ (= তারা মনে মনে অনুতপ্ত হবে), যখন তারা আযাব দেখবে। আর আমরা ফাঁস/ শিকল লাগিয়ে দেবো তাদের গলায় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছিলো। প্রতিফল দেয়া হবে কি উহা অনুযায়ী ছাড়া যা তারা আমল/ কাজ করতো?
৩৪:৩৪
ওয়া = আর। মা আরছালনা = আমরা প্রেরণ করিনি। ফী ক্বারইয়াতিন = কোন জনপদে। মিন নাযীরিন = কোন নাযীর/ সতর্ককারী। ইল্লা = এছাড়া যে। ক্বলা মুতরাফূনা = মুতরাফূন/ অন্যের শ্রমে অর্জিত ধন আত্মসাৎকারী পুঁজিপতিরা বলেছিলো। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। বিমা উরছিলতুম বিহী = যাসহ তোমরা প্রেরিত হয়েছো উহার প্রতি। কাফিরূনা = কাফির/ অবিশ্বাসী।
আর আমরা প্রেরণ করিনি কোন জনপদে কোন নাযীর/ সতর্ককারী, এছাড়া যে, মুতরাফূন/ অন্যের শ্রমে অর্জিত ধন আত্মসাৎকারী পুঁজিপতিরা বলেছিলো, ‘নিশ্চয় আমরা যাসহ তোমরা প্রেরিত হয়েছো উহার প্রতি কাফির/ অবিশ্বাসী।
৩৪:৩৫
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছিলো। নাহনু = আমরা। আকছারু আমওয়ালান ওয়া আওলাদান = সম্পদে ও সন্তানে তোমাদের তুলনায় অধিক সমৃদ্ধ। ওয়া = আর। মা নাহনু বিআযযাবীনা = আমরা শাস্তিপ্রাপ্ত হবো না।
আর তারা বলেছিলো, ‘আমরা সম্পদে ও সন্তানে তোমাদের তুলনায় অধিক সমৃদ্ধ। আর আমরা শাস্তিপ্রাপ্ত হবো না’।
৩৪:৩৬
ক্বুল = বলো। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বী = আমার রব। ইয়াবছুতুর রিযক্বা = প্রশস্ত করে দেন রিযিককে। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াক্বদিরু = তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য ইচ্ছা করেন)। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। লা ইয়া’লামূনা = ইলম (= আসমানী কিতাবের জ্ঞান) রাখে না।
বলো, ‘নিশ্চয় আমার রব প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য ইচ্ছা করেন)। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ইলম (= আসমানী কিতাবের জ্ঞান) রাখে না’।
৩৪:৩৭
ওয়া = আর। মা আমওয়ালুকুম = না তোমাদের মালসম্পদ। ওয়া = আর। লা আওলাদুকুম = না তোমাদের আওলাদ/ বংশধরগণ। বিল্লাতী = এরূপ যে তা। তুক্বাররিবুকুম = তোমাদেরকে নিকটবর্তী করে দেবে। ইনদানা = আমাদের কাছে। যুলফা = নিকটবর্তী সত্তা হিসাবে। ইল্লা মান আমানা = তার ক্ষেত্রে ছাড়া যে ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ফাউলায়িকা লাহুম = তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে। জাযাউদ দিউফু = দ্বিগুণ প্রতিফল। বিমা আমিলূ = তাদের আমলের/ কাজের কারণে। ওয়া = আর। হুম = তারা। ফিল গুরফাতি আমিনূনা = নিরাপদ প্রাসাদসমূহের মধ্যে থাকবে।
আর না তোমাদের মালসম্পদ আর না তোমাদের আওলাদ/ বংশধরগণ এরূপ যে, তা তোমাদেরকে নিকটবর্তী করে দেবে আমাদের কাছে, নিকটবর্তী সত্তা হিসাবে; তার ক্ষেত্রে ছাড়া যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে দ্বিগুণ প্রতিফল তাদের আমলের/ কাজের কারণে, আর তারা নিরাপদ প্রাসাদসমূহের মধ্যে থাকবে।
৩৪:৩৮
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইয়াছআওনা = চেষ্টা করে। ফী আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ক্ষেত্রে। মুআযিযীনা = ব্যর্থকারী হতে। উলায়িকা = উহাদেরকেই। ফিল আযাবি মুহদ্বারূনা = শাস্তির মধ্যে উপস্থিত করা হবে।
আর যারা চেষ্টা করে আমাদের আয়াতসমূহের ক্ষেত্রে ব্যর্থকারী হতে (= যারা আমাদের আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করতে চেষ্টা করে), উহাদেরকেই শাস্তির মধ্যে উপস্থিত করা হবে।
৩৪:৩৯
ক্বুল = বলো। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বী = আমার রব। ইয়াবছুতুর রিযক্বা = প্রশস্ত করে দেন রিযিককে। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন। মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর (কখনো)। ইয়াক্বদিরু লাহু = তিনি তার জন্য উহাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন। ওয়া = আর। মা আনফাক্বতুম = যা তোমরা ইনফাক্ব/ ব্যয় করো। মিন শাইয়িন = কোন কিছু থেকে। ফাহুয়া = তখন তিনিই। ইউখলিফহু = উহার স্থলে আরো দেন। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। খায়রুর রযিক্বীনা = খায়রুর রযিক্বীন/ উত্তম রিযিকদাতা।
বলো, নিশ্চয় আমার রব প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে; আর (কখনো) তিনি তার জন্য উহাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন। আর যা তোমরা ইনফাক্ব/ ব্যয় করো কোন কিছু থেকে, তখন তিনিই উহার স্থলে আরো দেন। আর তিনি খায়রুর রাযেক্বীন/ উত্তম রিযিকদাতা।
৩৪:৪০
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। ইয়াহশুরুহুম = তিনি তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবেন। জামিয়ান = একত্রে। ছুম্মা = তারপর। ইয়াক্বূলু লিল মালাইকাতি = তিনি ফেরেশতাদেরকে বলবেন। আহাউলায়ি = এরা কি। ইয়্যাকুম = তোমাদের। কানূ ইয়া’বুদূনা = ইবাদাত/ উপাসনা করতো?
আর যেদিন তিনি তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবেন একত্রে। তারপর তিনি ফেরেশতাদেরকে বলবেন, ‘এরা কি তোমাদের ইবাদাত/ উপাসনা করতো?
৩৪:৪১
ক্বলূ = তারা বলবে। ছুবহানাকা = সুবহানাকা/ আপনি পবিত্র। আনতা = আপনি। ওয়ালিয়্যুনা = আমাদের ওলি/ অভিভাবক। মিন দূনিহিম = তারা নয়। বাল = বরং। কানূ ইয়া’বুদূনাল জিন্না = তারা জিনদের ইবাদাত/ উপাসনা করতো। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশই। বিহিম = তাদের প্রতি। মু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী ছিলো।
তারা বলবে, ‘সুবহানাকা/ আপনি পবিত্র। আপনি আমাদের ওলি/ অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জিনদের ইবাদাত/ উপাসনা করতো। তাদের অধিকাংশই তাদের প্রতি মু’মিনীন/ বিশ্বাসী ছিলো।
৩৪:৪২
ফালইয়াওমা = সুতরাং আজ। লা ইয়ামলিকু = সক্ষম হবে না। বা’দুকুম = তোমাদের কেউ। লিবা’দিন = কারো জন্য। নাফআন = উপকার করতে। ওয়া = আর। লা দররান = ক্ষতি করতেও (সক্ষম হবে) না। ওয়া = আর। নাক্বূলু লিল্লাযীনা যলামূ = আমরা তাদেরকে বলবো যারা যুলুম করতো। যূক্বূ = তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো। আযাবান্নারিল্লাতী কুনতুম বিহা = (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির, যে বিষয়ের প্রতি তোমরা। তুকাযযিবূনা = মিথ্যা সাব্যস্ত করতে।
সুতরাং আজ সক্ষম হবে না তোমাদের কেউ কারো জন্য উপকার করতে আর ক্ষতি করতেও (সক্ষম হবে) না। আর আমরা তাদেরকে বলবো যারা যুলুম করতো, ‘তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির, যে বিষয়ের প্রতি তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করতে।
৩৪:৪৩
ওয়া = আর। ইযা = যখন। তুতলা = তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করা হয়। আলাইহিম = তাদের কাছে। আয়াতুনা বাইয়িনাতিন = আয়াতুন বাইয়িনাতুন/ স্পষ্ট আয়াতসমূহ। ক্বলূ = তারা বলে। মা হাযা = এ ব্যক্তি নয়। ইল্লা রজুলুন = এমন একজন পুরুষ ছাড়া কেউ। ইউরীদু = যে এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইয়াসুদ্দাকুম = যে, তোমাদেরকে বাধা দেবে। আম্মা = তাদের থেকে যাদের। কানা ইয়া’বুদু = ইবাদাত/ দাসত্ব করতো। আবাউকুম = তোমাদের বাপদাদা। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। মা হাযা = ইহা কিছু নয়। ইল্লা ইফকুম মুফতারান = মনগড়া রচনা ছাড়া। ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর করেছে তারা বলে। লিল হাক্বক্বি = এ আল হক্ব/ সত্য (= আল কুরআন) এর ব্যাপারে। লাম্মা = যখন। জাআহু = উহা এসেছে। ইন হাযা = ইহা কিছু নয়। ইল্লা ছিহরুম মুবীনুন = প্রকাশ্য/ স্পষ্ট যাদু ছাড়া।
আর যখন তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করা হয় তাদের কাছে আয়াতুন বাইয়িনাতুন/ স্পষ্ট আয়াতসমূহ, তখন তারা বলে, ‘এ ব্যক্তি নয় এমন একজন পুরুষ ছাড়া কেউ, যে এরাদা/ ইচ্ছা করে যে, তোমাদেরকে বাধা দেবে তাদের থেকে যাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতো তোমাদের বাপদাদা’। আর তারা বলে, ‘ইহা কিছু নয় মনগড়া রচনা ছাড়া’। আর যারা কুফর করেছে তারা বলে এ আল হক্ব/ সত্য (= আল কুরআন) এর ব্যাপারে, যখন উহা এসেছে, ‘ইহা কিছু নয় প্রকাশ্য/ স্পষ্ট যাদু (= কথার যাদু) ছাড়া’।
৩৪:৪৪
ওয়া = আর। মা আতাইনাহুম = আমরা তাদেরকে দিইনি। মিন কুতুবিন = কোন কিতাব। ইয়াদরুসূনাহা = যা তারা দরস/ অধ্যয়ন/ পাঠ করতো। ওয়া = আর। মা আরছালনা = আমরা প্রেরণ করিনি। ইলাইহিম = তাদের প্রতি। ক্বাবলাকা = তোমার আগে। মিন নাযীরিন = কোন নাযীর/ সতর্ককারী।
আর আমরা তাদেরকে দিইনি কোন কিতাব, যা তারা দরস/ অধ্যয়ন/ পাঠ করতো। আর আমরা প্রেরণ করিনি তাদের প্রতি তোমার আগে কোন নাযীর/ সতর্ককারী।
৩৪:৪৫
ওয়া = আর। কাযযাবাল্লাযীনা = তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যারা। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে ছিলো। ওয়া = আর। মা বালাগূ = এদের কাছে পৌঁছেনি। মি’শারা = উহার এক দশমাংশও। মা আতাইনাহুম = যা আমরা তাদেরকে দিয়েছিলাম। ফাকাযযাবূ রুসুলী = তারপর তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো আমার রসূলদেরকে। ফাকায়ফা = তারপর কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। নাকীরি = আমার দেয়া শাস্তি!
আর তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যারা তাদের আগে ছিলো। আর এদের কাছে পৌঁছেনি উহার এক দশমাংশও যা আমরা তাদেরকে দিয়েছিলাম। তারপর তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো আমার রসূলদেরকে। তারপর কিরূপ হয়েছিলো আমার দেয়া শাস্তি!
৩৪:৪৬
ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। আয়িযুকুম = আমি তোমাদেরকে ওয়াজ করছি/ উপদেশ দিচ্ছি। বিওয়াহিদাতিন = একটি বিষয়ের জন্য। আন = উহা এই যে। তাক্বূমূ লিল্লাহি = তোমরা দাঁড়াও আল্লাহর উদ্দেশ্যে। মাছনা = দুই দুই জন। ওয়া = আর। ফুরাদানি = এক এক জন। ছুম্মা = তারপর। তাতাফাক্কারূ = তোমরা ফিকির/ গভীর চিন্তা করো। মা বিসাহিবিকুম = তোমাদের সাহেবের/ সাথীর মধ্যে আছে কি। মিন জিন্নাতিন = কোন জ্বিন? ইন হুয়া = সে তো নয়। ইল্লা নাযীরুল্লাকুম = তোমাদের জন্য একজন নাযীর/ সতর্ককারী ছাড়া অন্য কিছু। বায়না ইয়াদায় = তোমাদের সামনে আছে। আযাবিন শাদীদিন = আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি।
বলো, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে ওয়াজ করছি/ উপদেশ দিচ্ছি একটি বিষয়ের জন্য। উহা এই যে, তোমরা দাঁড়াও আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই দুই জন, আর এক এক জন। তারপর তোমরা ফিকির/ গভীর চিন্তা করো, তোমাদের সাহেবের/ সাথীর মধ্যে আছে কি কোন জ্বিন? সে তো নয় তোমাদের জন্য একজন নাযীর/ সতর্ককারী ছাড়া অন্য কিছু। তোমাদের সামনে আছে আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি।
৩৪:৪৭
ক্বুল = বলো। মা ছাআলতুকুম = যদি আমি তোমাদের কাছে চেয়ে থাকি। মিন আজরিন = কোন প্রতিফল/ পারিশ্রমিক। ফাহুয়া = তবে উহা। লাকুম = তোমাদের জন্যই থাক। ইন আজরিয়া = আমার প্রতিফল নেই। ইল্লা আলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে ছাড়া। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আলা কুল্লি শাইয়িন শাহীদুন = সবকিছুর উপর শহীদ/ সাক্ষী।
বলো, ‘যদি আমি তোমাদের কাছে চেয়ে থাকি কোন প্রতিফল/ পারিশ্রমিক, তবে উহা তোমাদের জন্যই থাক। আমার প্রতিফল নেই আল্লাহর কাছে ছাড়া। আর তিনি সবকিছুর উপর শহীদ/ সাক্ষী।
৩৪:৪৮
ক্বুল = বলো। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বী = আমার রব। ইয়াক্বযিফু = আঘাত করেন। বিল হাক্বক্বি = সত্য দিয়ে। আল্লামাল গুয়ূবি = তিনি আল্লামুল গুয়ূব/ অদৃশ্যের জ্ঞানী।
বলো, ‘নিশ্চয় আমার রব আঘাত করেন সত্য দিয়ে। তিনি আল্লামুল গুয়ূব/ অদৃশ্যের জ্ঞানী।
৩৪:৪৯
ক্বুল = বলো। জাআল হাক্বক্বু = হক্ব/ সত্য এসেছে। ওয়া = আর। মা ইউবদিউল বাতিলু = বাতিল/ মিথ্যা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। ওয়া = আর। মা ইউয়ীদু = সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি করতেও পারে না।
বলো, ‘হক্ব/ সত্য এসেছে আর বাতিল/ মিথ্যা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না আর সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি করতেও পারে না।
৩৪:৫০
ক্বুল = বলো। ইন = যদি। দলালতু = আমি বিভ্রান্ত হয়ে থাকি। ফাইন্নামা = তাহলে নিশ্চয়। আদিল্লু = আমি বিভ্রান্ত হয়েছি। আলা নাফসী = আমার নিজ দায়িত্বে। ওয়া = আর। ইনিহতাদায়তু = যদি আমি হিদায়াত পেয়ে থাকি। ফাবিমা ইউহী ইলাইয়া রব্বী = তাহলে উহার কারণ ওহী করেন আমার প্রতি আমার রব। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। ছামীউন ক্বারীবুন = সামী’/ সর্বশ্রোতা ও ক্বারীব/ সবচেয়ে নিকটবর্তী।
বলো, ‘যদি আমি বিভ্রান্ত হয়ে থাকি তাহলে নিশ্চয় আমি বিভ্রান্ত হয়েছি আমার নিজ দায়িত্বে। আর যদি আমি হিদায়াত পেয়ে থাকি, তাহলে উহার কারণ ওহী করেন আমার প্রতি আমার রব। নিশ্চয় তিনি সামী’/ সর্বশ্রোতা ও ক্বারীব/ সবচেয়ে নিকটবর্তী’।
৩৪:৫১
ওয়া = আর। লাও = যদি। তারা = তুমি দেখতে। ইয = যখন। ফাযিঊ = তারা ভীতি বিহ্বল হবে। ফালা ফাওতা = কিন্তু তারা পালাতে পারবে না। ওয়া = আর। উখিযূ = তাদেরকে পাকড়াও করা হবে। মিম মাকানিন ক্বারীবিন = নিকটবর্তী স্থান থেকে।
আর যদি তুমি দেখতে যখন তারা ভীতি বিহ্বল হবে, কিন্তু তারা পালাতে পারবে না আর তাদেরকে পাকড়াও করা হবে নিকটবর্তী স্থান থেকে!
৩৪:৫২
ওয়া = আর। ক্বলূ = তখন তারা বলবে। আমান্না বিহী = আমরা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করলাম। ওয়া = অথচ। আন্না = কোথায়। লাহুমুত তানাউশু = তাদের জন্য (ঈমানের) নাগাল পাওয়া। মিম মাকানিম বায়ীদিন = এত দূরবর্তী স্থান থেকে।
আর তখন তারা বলবে, ‘আমরা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করলাম’। অথচ কোথায় তাদের জন্য (ঈমানের) নাগাল পাওয়া এত দূরবর্তী স্থান থেকে?
৩৪:৫৩
ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। কাফারূ = তারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছিলো। বিহী = উহার প্রতি। মিন ক্বাবলু = এর আগে। ওয়া = আর। ইয়াক্বযিফূনা বিল গায়বি = তারা গায়েবের/ অদৃশ্যের প্রতি (কথা) ছুঁড়ে মারতো। মিম মাকানিম বায়ীদিন = অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে (= তারা গায়েবের বিষয়ে আন্দাজে নানান মন্তব্য করতো)।
আর নিশ্চয় তারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছিলো উহার প্রতি এর আগে। আর তারা গায়েবের/ অদৃশ্যের প্রতি (কথা) ছুঁড়ে মারতো অনেক দূরবর্তী স্থান থেকে (= তারা গায়েবের বিষয়ে আন্দাজে নানান মন্তব্য করতো)।
৩৪:৫৪
ওয়া = আর। হীলা = আড়াল/ অন্তরাল দেয়া হবে। বায়নাহুম ওয়া বায়না মা ইয়াশতাহূনা = তাদের ও যা তারা বাসনা করবে উহার মধ্যে। কামা = যেমন। ফুয়িলা = করা হয়েছিলো। বিআশইয়ায়িহিম = তাদের সমমনা শিয়াগুলোর/ দলগুলোর মধ্যে। মিন ক্বাবলু = এর আগে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। কানূ = ছিলো। ফী শাক্কিম মুরীবিন = বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে।
আর আড়াল/ অন্তরাল দেয়া হবে তাদের ও যা তারা বাসনা করবে উহার মধ্যে, যেমন করা হয়েছিলো তাদের সমমনা শিয়াগুলোর/ দলগুলোর মধ্যে এর আগে। নিশ্চয় তারা ছিলো বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে।