১৪:১
আলিফ লাম রা = আলিফ লাম রা। কিতাবুন = এই কিতাব। আনযালনাহু = উহা আমরা নাযিল করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। লিতুখরিজান্নাছা = মানুষকে বের করার জন্য। মিনায যুলুমাতি = যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে। ইলান্নূরি = নূরের/ আলোর দিকে। বিইযনি রব্বিহিম = তাদের রবের অনুমতিক্রমে। ইলা সিরাতিল আযীযিল হামীদি = আযীয/ মহাশক্তিমান ও হামীদ/ মহাপ্রশংসিত সত্তার পথের দিকে।
আলিফ লাম রা। এই কিতাব, উহা আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি, মানুষকে বের করার জন্য যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে নূরের/ আলোর দিকে, তাদের রবের অনুমতিক্রমে, আযীয/ মহাশক্তিমান ও হামীদ/ মহাপ্রশংসিত সত্তার (= আল্লাহর) পথের দিকে।
১৪:২
আল্লাহিল্লাযী = আল্লাহই সেই সত্তা। লাহু = যাঁর অধিকারভুক্ত। মা = যা কিছু আছে। ফিছ ছামাওয়াতি = আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মা = যা কিছু আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। ওয়ালুল্লিল কাফিরীনা = দুর্ভোগ কাফিরদের জন্য। মিন আযাবিন শাদীদিন = কঠোর শাস্তি সমেত।
আল্লাহই সেই সত্তা যাঁর অধিকারভুক্ত যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। আর দুর্ভোগ কাফিরদের জন্য কঠোর শাস্তি সমেত।
১৪:৩
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াছতাহিব্বূনাল হায়াতাদ দুনইয়া = অধিক ভালবাসে হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে। আলাল আখিরাতি = আখিরাতের তুলনায়। ওয়া = আর। ইয়াসুদ্দূনা = বাধা দেয়। আন সাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ওয়া = আর। ইয়াবগূনাহা = উহাতে তালাশ করে। ইওয়াজা = বক্রতা। উলায়িকা = তারাই আছে। ফী দলালিম বায়ীদিন = দূরবর্তী বিভ্রান্তির মধ্যে।
যারা অধিক ভালবাসে হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে আখিরাতের তুলনায়। আর বাধা দেয় সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে আর উহাতে তালাশ করে বক্রতা। তারাই আছে দূরবর্তী বিভ্রান্তির মধ্যে।
১৪:৪
ওয়া = আর। মা আরছালনা = আমরা প্রেরণ করি না। মির রসূলিন = কোন রসূলকে। ইল্লা বিলিছানি ক্বাওমিহী = তার কওমের ভাষায় ছাড়া। লিইউবাইয়্যিনা লাহুম = যেন তিনি তাদের কাছে বয়ান/ হুবহু স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। ফাইউদিল্লুল্লাহু = তারপর আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। হুয়াল আযীযুল হাকীমু = তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আর আমরা প্রেরণ করি না কোন রসূলকে তার কওমের ভাষায় ছাড়া। যেন তিনি তাদের কাছে বয়ান/ হুবহু স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। তারপর আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
১৪:৫
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। মূছা = মূসাকে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে। আন = যে। আখরিজ = বের করো। ক্বাওমাকা = তোমার কওমকে। মিনায যুলুমাতি = যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে। ইলান্নূরি = নূরের/ আলোর দিকে। ওয়া = আর। যাক্কিরহুম = তাদেরকে যিকির/ স্মরণ করিয়ে দাও। বিআইয়ামিল্লাহি = আল্লাহর দিনসমূহের মাধ্যমে (= যে সমস্ত দিনে আল্লাহর আসমানী বিধানে মানুষ পরিচালিত হয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবন যাপন করেছে সে দিনসমূহে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ অবস্থার বর্ণনা করে এবং আল্লাহর বিধান অমান্য করার কারণে যে সমস্ত দিনে আল্লাহর গযব নেমে এসেছে সে দিনসমূহের বর্ণনা করে)। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে আছে। লাআয়াতিল লিকুল্লি সব্বারিন শাকূরিন = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ প্রত্যেক সবরকারী ও শোকরকারী ব্যক্তির জন্য।
আর নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি মূসাকে আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে যে, বের করো তোমার কওমকে যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে নূরের/ আলোর দিকে। আর তাদেরকে যিকির/ স্মরণ করিয়ে দাও আল্লাহর দিনসমূহের মাধ্যমে (= যে সমস্ত দিনে আল্লাহর আসমানী বিধানে মানুষ পরিচালিত হয়ে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবন যাপন করেছে সে দিনসমূহে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ অবস্থার বর্ণনা করে এবং আল্লাহর বিধান অমান্য করার কারণে যে সমস্ত দিনে আল্লাহর গযব নেমে এসেছে সে দিনসমূহের বর্ণনা করে)। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ প্রত্যেক সবরকারী ও শোকরকারী ব্যক্তির জন্য।
১৪:৬
ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিক্বাওমিহিযকুরূ = তার কওমকে, ‘তোমরা যিকির/ স্মরণ করো। নি’মাতাল্লাহি = আল্লাহর নিয়ামাত/ অনুগ্রহ। আলাইকুম = (যা তিনি করেছেন) তোমাদের উপর। ইয = যখন। আনজাকুম = তিনি তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছেন। মিন আলি ফিরআউনা = আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদের কবল থেকে। ইয়াছূমূনাকুম = তারা তোমাদেরকে শাস্তি দিতো। ছূআল আযাবি = মন্দ শাস্তি। ওয়া = আর। ইউযাব্বিহূনা = তারা জবেহ করতো। আবনাআকুম = তোমাদের পুত্রদেরকে। ওয়া = আর। ইয়াছতাহইয়ূনা = তারা জীবিত থাকতে দিতো। নিছাআকুম = তোমাদের নারীদেরকে। ওয়া = আর। ফী যালিকুম = উহার মধ্যে ছিলো। বালাউম মির রব্বিকুম = পরীক্ষা, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। আযীমুন = মহা (পরীক্ষা)।
আর যখন মূসা বলেছে তার কওমকে, ‘তোমরা যিকির/ স্মরণ করো আল্লাহর নিয়ামাত/ অনুগ্রহ (যা তিনি করেছেন) তোমাদের উপর, যখন তিনি তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছেন আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদের কবল থেকে। তারা তোমাদেরকে শাস্তি দিতো, মন্দ শাস্তি। আর তারা জবেহ করতো তোমাদের পুত্রদেরকে আর তারা জীবিত থাকতে দিতো তোমাদের নারীদেরকে। আর উহার মধ্যে ছিলো পরীক্ষা, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, মহা (পরীক্ষা)।
১৪:৭
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। তাআযযানা = ঘোষণা করেছেন। রব্বুকুম = তোমাদের রব। লাইন = অবশ্যই যদি। শাকারতুম = তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। লাআযীদান্নাকুম = তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে (আমার অনুগ্রহ) বাড়িয়ে দেবো। ওয়া = আর। লাইন = অবশ্যই যদি। কাফারতুম = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ইন্না = তাহলে নিশ্চয়। আযাবী = আমার আযাব/ শাস্তি। লাশাদীদুন = অত্যন্ত কঠিন।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ঘোষণা করেছেন তোমাদের রব, ‘অবশ্যই যদি তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে (আমার অনুগ্রহ) বাড়িয়ে দেবো। আর অবশ্যই যদি তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো তাহলে নিশ্চয় আমার আযাব/ শাস্তি অত্যন্ত কঠিন’।
১৪:৮
ওয়া = আর। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। ইন = যদি। তাকফুরূ = কুফর/ অবিশ্বাস করো। আনতুম = তোমরা। ওয়া = আর (কুফর করে)। মান = যারা আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। জামিয়া = তাদের সবাই। ফাইন্নাল্লাহা = তবুও নিশ্চয় আল্লাহ। লাগানিইয়্যুন হামীদুন = গণি/ অভাবহীন ও হামিদ/ স্বপ্রশংসিত।
আর মূসা বলেছে, ‘যদি কুফর/ অবিশ্বাস করো তোমরা আর (কুফর করে) যারা আছে পৃথিবীতে তাদের সবাই, তবুও নিশ্চয় আল্লাহ গণি/ অভাবহীন ও হামিদ/ স্বপ্রশংসিত’।
১৪:৯
আলাম ইয়া’তিকুম = তোমাদের কাছে কি আসেনি? নাবাউল্লাযীনা = তাদের সংবাদ, যারা। মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগে ছিলো। ক্বাওমি নূহিন = (যেমন) নূহের কওম। ওয়া = আর। আদিন = আদ। ওয়া = আর। সামূদা = সামূদ। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে এসেছে। লা ইয়া’লামুহুম = তাদেরকে কেউ জানে না। ইল্লাল্লাহু = আল্লাহ ছাড়া। জাআতহুম = তাদের কাছে এসেছে। রুসুলুহুম = তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ। বিলবাইয়্যিনাতি = বাইয়্যিনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। ফারদ্দূ = তারপর তারা ফিরিয়ে নিয়েছে। আইদিয়াহুম = তাদের হাতগুলো। ফী আফওয়াহিহিম = তাদের মুখগুলোর মধ্যে (অর্থাৎ তারা রসূলদের কথাকে গুরুত্ব দেয়নি)। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। কাফারনা = কুফর/ অবিশ্বাস করছি। বিমা উরছিলতুম বিহী = তোমরা যা নিয়ে এসেছো তার প্রতি। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লাফী শাক্কিন = সংশয়ের মধ্যে আছি। মিম্মা = উহার ব্যাপারে। তাদঊনা = তোমরা আমাদেরকে ডাকছো। ইলাইহি = যার দিকে। মুরীবিন = যা সন্দেহপূর্ণ।
তোমাদের কাছে কি আসেনি তাদের সংবাদ, যারা তোমাদের আগে ছিলো, (যেমন) নূহের কওম আর আদ আর সামূদ আর যারা তাদের পরে এসেছে, তাদেরকে কেউ জানে না আল্লাহ ছাড়া। তাদের কাছে এসেছে তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বাইয়্যিনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। তারপর তারা ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের হাতগুলো তাদের মুখগুলোর মধ্যে (অর্থাৎ তারা রসূলদের কথাকে গুরুত্ব দেয়নি)। আর তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা কুফর/ অবিশ্বাস করছি তোমরা যা নিয়ে এসেছো তার প্রতি। আর নিশ্চয় আমরা সংশয়ের মধ্যে আছি উহার ব্যাপারে তোমরা আমাদেরকে ডাকছো যার দিকে, যা সন্দেহপূর্ণ’।
১৪:১০
ক্বলাত রুসুলুহুম = তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বলেছে। আফিল্লাহি শাক্কুন = আছে কি আল্লাহর ব্যাপারে কোন সন্দেহ। ফাতিরিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। ইয়াদঊকুম = তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন। লিইয়াগফিরা লাকুম = ক্ষমা করার জন্য তোমাদের থেকে। মিন যুনূবিকুম = তোমাদের পাপসমূহ। ওয়া = আর। ইউআখখিরাকুম = তোমাদের অবকাশ দেয়ার জন্য। ইলা আজালিম মুসাম্মা = আজালিম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমা পর্যন্ত। ক্বলূ = তারা বলেছে। ইন আনতুম = তোমরা নও। ইল্লা বাশারুম মিছলুনা = আমাদের মতো মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। তুরীদূনা = তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করছো। আন = যে। তাসুদ্দূনা = তোমরা আমাদেরকে বাধা দিবে। আম্মা = উহার থেকে যার। কানা ইয়া’বুদু = ইবাদাত/ দাসত্ব করে আসছে। আবাউনা = আমাদের বাপদাদা। ফা’তূনা = সুতরাং আমাদের কাছে নিয়ে এসো। বিসুলতানিম মুবীনিন = সুলতানুম মুবীন/ স্পষ্ট প্রমাণ।
তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বলেছে, ‘আছে কি আল্লাহর ব্যাপারে কোন সন্দেহ? যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি তোমাদেরকে ডাকছেন ক্ষমা করার জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ। আর তোমাদের অবকাশ দেয়ার জন্য আজালিম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমা পর্যন্ত’। তারা বলেছে, ‘তোমরা নও আমাদের মতো মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করছো যে, তোমরা আমাদেরকে বাধা দিবে উহার থেকে যার ইবাদাত/ দাসত্ব করে আসছে আমাদের বাপদাদা। সুতরাং আমাদের কাছে নিয়ে এসো সুলতানুম মুবীন/ স্পষ্ট প্রমাণ’।
১৪:১১
ক্বলাত লাহুম রুসুলুহুম = তাদেরকে তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বলেছে। ইন নাহনু = আমরা কিছু নই। ইল্লা বাশারুম মিছলুকুম = তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। ইয়ামুন্নু = অনুগ্রহ দান করেন। আলা মাইঁ ইয়াশাউ = যার উপর তিনি ইচ্ছা করেন। মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। মা কানা লানা = আমাদের দ্বারা সম্ভব নয়। আন = যে। না’তিয়াকুম = তোমাদের কাছে নিয়ে আসবো। বিসুলতানিন = কোন প্রমাণ। ইল্লা বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু’মিনীনা = তাওয়াক্কুল/ ভরসা করা উচিত মু’মিনগণ।
তাদেরকে তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বলেছে, ‘আমরা কিছু নই তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া। কিন্তু আল্লাহ অনুগ্রহ দান করেন যার উপর তিনি ইচ্ছা করেন, তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে। আর আমাদের দ্বারা সম্ভব নয় যে, তোমাদের কাছে নিয়ে আসবো কোন প্রমাণ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর আল্লাহরই উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করা উচিত মু’মিনগণ’।
১৪:১২
ওয়া = আর। মা লানা = আমাদের কী হয়েছে। আল্লা নাতাওয়াক্কালা = যে, আমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করবো না। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। হাদানা = তিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন। ছুবুলানা = আমাদের পথসমূহে। ওয়া = আর। লানাসবিরান্না = অবশ্যই আমরা সবর করবো। আলা মা আযাইতুমূনা = তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছো উহার ব্যাপারে। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মুতাওয়াক্কিলূনা = তাওয়াক্কুল/ ভরসা করা উচিত ভরসাকারীগণ।
‘আর আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করবো না আল্লাহর উপর? অথচ নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন আমাদের পথসমূহে। আর অবশ্যই আমরা সবর করবো তোমরা আমাদেরকে যে কষ্ট দিচ্ছো উহার ব্যাপারে। আর আল্লাহরই উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করা উচিত ভরসাকারীগণ’।
১৪:১৩
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা = তারা বলেছে যারা। কাফারু = কুফর করেছে। লিরুসুলিহিম = তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণকে (উদ্দেশ্য করে)। লানুখরিজান্নাকুম = অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে বহিষ্কার করবো। মিন আরদিনা = আমাদের দেশ থেকে। আও = অথবা। লাতাঊদুন্না = অবশ্যই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। ফী মিল্লাতিনা = আমাদের মিল্লাতে (= ইবাদাতের বহুত্ববাদী প্রকৃতি ও স্বরূপে)। ফাআওহা = তারপর ওহী করেছেন। ইলাইহিম = তাদের প্রতি (= রসূলদের প্রতি)। রব্বুহুম = তাদের রব। লানুহলিকান্নায যালিমীনা = অবশ্যই আমরা হালাক/ ধ্বংস করবো যালিমদেরকে।
আর তারা বলেছে যারা কুফর করেছে, তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণকে (উদ্দেশ্য করে), “অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে বহিষ্কার করবো আমাদের দেশ থেকে অথবা অবশ্যই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে আমাদের মিল্লাতে (= ইবাদাতের বহুত্ববাদী প্রকৃতি ও স্বরূপে)”। তারপর ওহী করেছেন তাদের প্রতি (= রসূলদের প্রতি) তাদের রব, “অবশ্যই আমরা হালাক/ ধ্বংস করবো যালিমদেরকে”।
১৪:১৪
ওয়া = আর। লানুছকিনান্নাকুমুল আরদা = অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করবো পৃথিবীতে। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। যালিকা = উহা। লিমান = তার জন্য যে। খাফা = ভয় করে। মাক্বামী = আমার সামনে দাঁড়াতে। ওয়া = আর। খাফা = ভয় করে। ওয়াঈদি = আমার শাস্তিকে।
‘আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করবো পৃথিবীতে তাদের পরে। উহা তার জন্য যে ভয় করে আমার সামনে দাঁড়াতে আর ভয় করে আমার শাস্তিকে’।
১৪:১৫
ওয়াছতাফতাহূ = আর তারা বিজয় কামনা করেছে। ওয়া = আর। খাবা = ব্যর্থ হয়েছে। কুল্লু = প্রত্যেক। জাব্বারিন আনীদিন = স্বেচ্ছাচারী, হঠকারী।
আর তারা বিজয় কামনা করেছে আর ব্যর্থ হয়েছে প্রত্যেক স্বেচ্ছাচারী, হঠকারী।
১৪:১৬
মিওঁ ওয়ারায়িহী = উহার আড়ালে আছে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর। ইউছক্বা = তাদেরকে পান করানো হবে। মিম মায়িন সাদীদিন = বিরক্তিকর পানি থেকে।
উহার আড়ালে আছে জাহান্নাম। আর তাদেরকে পান করানো হবে বিরক্তিকর পানি থেকে।
১৪:১৭
ইয়াতাজাররাউহু = সে উহা পানের জন্য ঢোক গিলবে। ওয়া = অথচ। লা ইয়াকাদু = প্রায় অসম্ভব হবে। ইউছীগুহু = উহা গলাধ:করণ করা। ওয়া = আর। ইয়া’তীহিল মাওতু = তার কাছে ধেয়ে আসবে মৃত্যু। মিন কুল্লি মাকানিন = প্রত্যেক মাকান/ অবস্থান থেকে। ওয়া = অথচ। মা হুয়া = সে হবে না। বিমাইয়্যিতিন = মৃত্যুবরণকারী। ওয়া = আর। মিওঁ ওয়ারিয়িহী = তার পিছনে থাকবে। আযাবুন গালীযূন = আযাবুন গালীয/ কঠোর শাস্তি।
সে উহা পানের জন্য ঢোক গিলবে অথচ প্রায় অসম্ভব হবে উহা গলাধ:করণ করা। আর তার কাছে ধেয়ে আসবে মৃত্যু প্রত্যেক মাকান/ অবস্থান থেকে অথচ সে হবে না মৃত্যুবরণকারী। আর তার পিছনে থাকবে আযাবুন গালীয/ কঠোর শাস্তি।
১৪:১৮
মাছালুল্লাযীনা = তাদের দৃষ্টান্ত যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বিরব্বিহিম = তাদের রবের প্রতি। আ’মালুহুম = তাদের কাজসমূহ। কারামাদিনিশতাদ্দাত বিহির রীহু = যেন ভষ্ম, যাকে উড়িয়ে দিয়েছে বায়ুপ্রবাহ। ফী ইয়াওমিন আসীফিন = এক ঝটিকাপূর্ণ দিনে। লা ইয়াক্বদিরূনা = তারা (ইচ্ছানুরূপ প্রভাব বিস্তারমূলকভাবে) নিয়ামকে পরিণত করতে পারবে না। মিম্মা কাছাবূ = যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুকে। আলা শাইয়িন = কোনো ক্ষেত্রের উপর। যালিকা হুয়াদ দলালুল বায়ীদু = উহাই দূরবর্তী বিভ্রান্তি।
তাদের দৃষ্টান্ত (দেয়া হচ্ছে) যারা কুফর করেছে তাদের রবের প্রতি। তাদের কাজসমূহ যেন ভষ্ম, যাকে উড়িয়ে দিয়েছে বায়ুপ্রবাহ, এক ঝটিকাপূর্ণ দিনে। তারা (ইচ্ছানুরূপ প্রভাব বিস্তারমূলকভাবে) নিয়ামকে পরিণত করতে পারবে না যা তারা উপার্জন করেছে তার কিছুকে কোনো ক্ষেত্রের উপর। উহাই দূরবর্তী বিভ্রান্তি।
১৪:১৯
আলাম তারা = তুমি কি দেখোনি। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে/ যথাযথভাবে/ উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে। ইইঁ ইয়াশা’ = যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ইউযহিবকুম = তাহলে তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন। ওয়া = আর। ইয়া’তি = নিয়ে আসবেন। বিখালক্বিন জাদীদিন = নতুন সৃষ্টি।
তুমি কি দেখোনি যে, আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সত্য সহকারে/ যথাযথভাবে/ উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তাহলে তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন আর নিয়ে আসবেন নতুন সৃষ্টি।
১৪:২০
ওয়া = আর। মা যালিকা = উহা নয়। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। বিআযীযিন = কঠিন।
আর উহা নয় আল্লাহর উপর কঠিন (কাজ)।
১৪:২১
ওয়া = আর। বারাযূ = বের হয়ে আসবে। লিল্লাহি = আল্লাহর কাছে। জামীয়ান = সকলে। ফাক্বালাদ দুআফাউ = তারপর বলবে দুর্বল/ নির্যাতিত নিষ্পেষিতগণ। লিল্লাযীনাছতাকবারূ = তাদেরকে (উদ্দেশ্য করে) যারা অহংকার করতো। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। কুন্না = ছিলাম। লাকুম = তোমাদের। তাবাআন = অধীনস্থ। ফাহাল = সুতরাং হবে কি। আনতুম = তোমরা। মুগনূনা = উপকারী। আন্না = আমাদের ব্যাপারে। মিন আযাবিল্লাহি = আল্লাহর আযাব/ শাস্তি থেকে (আমাদেরকে বাঁচাতে)। মিন শাইয়িন = কিছুমাত্রও। ক্বলূ = তারা বলবে। লাও = যদি। হাদানাল্লাহু = আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত করতেন। লাহাদায়নাকুম = তাহলে আমরা তোমাদেরকে হিদায়াত করতাম। ছাওয়াউন আলাইনা = আমাদের উপর সমান। আজাজি’না = আমরা ধৈর্যচ্যুত হই। আম = অথবা। সবারনা = আমরা ধৈর্যশীল হই। মা লানা = আমাদের জন্য নেই। মিম মাহীসিন = কোন পালানোর জায়গা।
আর বের হয়ে আসবে আল্লাহর কাছে সকলে। তারপর বলবে দুর্বল/ নির্যাতিত নিষ্পেষিতগণ, তাদেরকে (উদ্দেশ্য করে) যারা অহংকার করতো, ‘নিশ্চয় আমরা ছিলাম তোমাদের অধীনস্থ। সুতরাং হবে কি তোমরা উপকারী আমাদের ব্যাপারে, আল্লাহর আযাব/ শাস্তি থেকে (আমাদেরকে বাঁচাতে), কিছুমাত্রও?’ তারা বলবে, ‘যদি আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত করতেন, তাহলে আমরা তোমাদেরকে হিদায়াত করতাম। আমাদের উপর সমান আমরা ধৈর্যচ্যুত হই অথবা আমরা ধৈর্যশীল হই। আমাদের জন্য নেই কোন পালানোর জায়গা’।
১৪:২২
ওয়া = আর। ক্বলাশ শায়তানু = শয়তান বলবে। লাম্মা = যখন। ক্বুদিয়াল আমরু = বিষয়াদির ফায়সালা হবে তখন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ওয়াদাকুম = তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন। ওয়াদাল হাক্বক্বু = সত্য ওয়াদা। ওয়া = আর। আত্তুকুম = আমিও তোমাদের ওয়াদা দিয়েছি। ফাআখলাফাতকুম = কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া ওয়াদা খেলাফ করেছি। ওয়া = আর। মা কানা লী = আমার তো ছিলো না। আলাইকুম = তোমাদের উপর। মিন সুলতানিন = কোন সুলতান/ প্রমাণ/ বৈধ অধিকার/ ক্ষমতা। ইল্লা = (ব্যাপারটি কিছুই ছিলো না) এছাড়া। আন = যে। দাআওতুকুম = আমি তোমাদেরকে ডেকেছি। ফাছতাজাবতুম লী = তারপর তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছো। ফালা তালূমূনী = সুতরাং তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না। ওয়া = আর। লূমূ = তোমরা তিরস্কার করো। আনফুসাকুম = তোমাদের নিজেদেরকে। মা আনা = আমি নই। বিমুসরিখাকুম = তোমাদের ফরিয়াদে সাড়াদানকারী। ওয়া = আর। মা আনতুম = তোমরা নও। বিমুসরিখিইয়্যা = আমার ফরিয়াদে সাড়াদানকারী। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। কাফারতু = কুফর/ অস্বীকার করছি। বিমা আশরাকতুমূনি = তোমরা যে আমাকে শরিক করেছো তার দায়ভার। মিন ক্বাবলূ = (যা তোমরা) ইতিপূর্বে (করেছো)। ইন্নায যলিমীনা লাহুম = নিশ্চয় যালিমদের জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
আর শয়তান বলবে, যখন বিষয়াদির ফায়সালা হবে তখন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন, সত্য ওয়াদা। আর আমিও তোমাদের ওয়াদা দিয়েছি, কিন্তু আমি তোমাদেরকে দেয়া ওয়াদা খেলাফ করেছি। আর আমার তো ছিলো না তোমাদের উপর কোন সুলতান/ প্রমাণ/ বৈধ অধিকার/ ক্ষমতা। (ব্যাপারটি কিছুই ছিলো না) এছাড়া যে, আমি তোমাদেরকে ডেকেছি, তারপর তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছো। সুতরাং তোমরা আমাকে তিরস্কার করো না। আর তোমরা তিরস্কার করো তোমাদের নিজেদেরকে। আমি নই তোমাদের ফরিয়াদে সাড়াদানকারী। আর তোমরা নও আমার ফরিয়াদে সাড়াদানকারী। নিশ্চয় আমি কুফর/ অস্বীকার করছি তোমরা যে আমাকে শরিক করেছো তার দায়ভার, (যা তোমরা) ইতিপূর্বে (করেছো)। নিশ্চয় যালিমদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি’।
১৪:২৩
ওয়া = আর। উদখিলাল্লাযীনা = তাদের দাখিল করানো হবে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। জান্নাতিন = (দাখিল করানো হবে) জান্নাতে। তাজরী = জারি/ প্রবাহিত হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = উহার নিচ অংশে আনহার/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। বিইযনি রব্বিহিম = তাদের রবের অনুমতিক্রমে। তাহিয়্যাতুহুম ফীহা = তাতে তাদের তাহিয়্যাত/ শুভেচ্ছা হবে। ছালামুন = ‘ছালামুন’/ ‘শান্তি’।
আর তাদের দাখিল করানো হবে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে, (দাখিল করানো হবে) জান্নাতে। জারি/ প্রবাহিত হয় উহার নিচ অংশে আনহার/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। তাতে তাদের তাহিয়্যাত/ শুভেচ্ছা হবে ‘ছালামুন’/ ‘শান্তি’।
১৪:২৪
আলাম তারা = তুমি কি ভেবে দেখোনি। কায়ফা = কিরূপে। দরাবাল্লাহু = আল্লাহ উপস্থাপন করেন। মাছালান কালিমাতান তইয়িবাতান = কালেমা তাইয়েবার/ পবিত্র বাক্যের উপমা। কাশাজারাতিন তইয়িবাতিন = তা হচ্ছে একটি পবিত্র গাছের মতো। আসলুহা সাবিতুন = তার আসল/ মূল সাবেত/ সুদৃঢ়। ওয়া = আর। ফারউহা = তার শাখাগুলো। ফিস সামায়ি = আকাশের দিকে সমুচ্চ।
তুমি কি ভেবে দেখোনি, কিরূপে আল্লাহ উপস্থাপন করেন কালেমা তাইয়েবার/ পবিত্র বাক্যের উপমা? তা হচ্ছে একটি পবিত্র গাছের মতো। তার আসল/ মূল সাবেত/ সুদৃঢ়। আর তার শাখাগুলো আকাশের দিকে (সমুচ্চ)।
১৪:২৫
তু’তী = তা দান করে। উকুলাহা = তার খাদ্য/ ফলফলাদি। কুল্লা = প্রত্যেক। হীনিন = সময়ে। বিইযনি রব্বিহা = তার রবের অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। ইয়াদরিবুল্লাহুল আমছালু = আল্লাহ উপস্থাপন করেন আমছাল/ উপমাসমূহ। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। লাআল্লাহুম = যেন তারা। ইয়াতাযাক্কারূনা = যিকির/ স্মরণ/ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
তা দান করে তার খাদ্য/ ফলফলাদি প্রত্যেক সময়ে তার রবের অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ উপস্থাপন করেন আমছাল/ উপমাসমূহ, মানুষের জন্য, যেন তারা যিকির/ স্মরণ/ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
১৪:২৬
ওয়া = আর। মাছালু কালিমাতিন খাবিসাতিন = কালেমা খবিসার/ অপবিত্র বাক্যের উপমা হচ্ছে। কাশাজারিত খাবিসাতিনিজতুছছাত = তা একটি নোংরা গাছের মতো, যা উপড়ে নেয়া যায়। মিন ফাওক্বিল আরদি = ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে। মা লাহা = উহার জন্য নেই। মিন = কোন। ক্বারারিন = স্থিতি।
আর কালেমা খবিসার/ অপবিত্র বাক্যের উপমা হচ্ছে, তা একটি নোংরা গাছের মতো, যা উপড়ে নেয়া যায় ভূপৃষ্ঠের উপর থেকে। উহার জন্য নেই কোন স্থিতি।
১৪:২৭
ইউছাব্বিতুল্লাহুল্লাযীনা = আল্লাহ তাদেরকে ছাবেত/ প্রতিষ্ঠিত করেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিল ক্বাওলছ ছাবীতি = কওলুস সাবেত/ দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত কথার মাধ্যমে। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = ও। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। ওয়া = আর। ইউদিল্লুল্লাহুয যালিমীনা = আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন যালিমদেরকে। ওয়া = আর। ইয়াফআলুল্লাহু = আল্লাহ করেন। মা ইয়াশাউ = যা তিনি ইচ্ছা করেন।
আল্লাহ তাদেরকে ছাবেত/ প্রতিষ্ঠিত করেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে কওলুস সাবেত/ দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত কথার মাধ্যমে হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে ও আখিরাতে। আর আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন যালিমদেরকে। আর আল্লাহ করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন।
১৪:২৮
আলাম তারা = তুমি কি ভেবে দেখোনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যারা। বাদ্দালূ = বদলে দিয়েছে। নি’মাতাল্লাহি = আল্লাহর নেয়ামতকে। কুফরান = কুফরে/ অকৃতজ্ঞতায়। ওয়া = আর। আহাল্লু = নিক্ষেপ করেছে। ক্বাওমাহুম = তাদের কওমকে। দারাল বাওয়ারি = ধ্বংসযজ্ঞের ঘরে।
তুমি কি ভেবে দেখোনি তাদের অবস্থা যারা বদলে দিয়েছে আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে/ অকৃতজ্ঞতায় আর নিক্ষেপ করেছে তাদের কওমকে ধ্বংসযজ্ঞের ঘরে?
১৪:২৯
জাহান্নামা = জাহান্নামে। ইয়াসলাওনাহা = তারা তাতে জ্বলবে। ওয়া = আর। বি’ছাল ক্বারারু = তা অত্যন্ত মন্দ অবস্থানস্থল।
জাহান্নামে, তারা তাতে জ্বলবে। আর তা অত্যন্ত মন্দ অবস্থানস্থল।
১৪:৩০
ওয়া = আর। জাআলূ = তারা স্থির করেছে। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। আনদাদান = সমকক্ষ। লিইউদিল্লূ = যেন তারা বিভ্রান্ত করতে পারে। আন ছাবীলিহী = তাঁর পথ থেকে। ক্বুল = বলো। তামাত্তাঊ = তোমরা ভোগ করো। ফাইন্না = তারপর নিশ্চয়। মাসীরাকুম = তোমাদের ফিরে যাবার স্থান। ইলান্নারি = (জাহান্নামের) আগুন।
আর তারা স্থির করেছে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ, যেন তারা বিভ্রান্ত করতে পারে তাঁর পথ থেকে। বলো, ‘তোমরা ভোগ করো, তারপর নিশ্চয় তোমাদের ফিরে যাবার স্থান (জাহান্নামের) আগুন’।
১৪:৩১
ক্বুল = বলো। লিইবাদিয়াল্লাযীনা = আমার সেই বান্দাদেরকে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ইউক্বীমুস সালাতা = যেন তারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া = আর। ইউনফিক্বূ = যেন তারা ইনফাক/ ব্যয় করে। মিম্মা = তা থেকে যা। রযাক্বনাহুম = আমরা তাদেরকে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি। ছিররান = (যেন ব্যয় করে) গোপনে। ওয়া =ও। আলানিয়াতান = প্রকাশ্যে। মিন ক্বাবলু = উহার আগেই। আইঁ ইয়া’তিয়া = যে, এসে যাবে। ইয়াওমুন = সেই দিন। লা বাইয়ুন ফীহি = যাতে কোন বেচাকেনা চলবে না। ওয়া = আর। লা খিলালুন = কোন বন্ধুত্বও চলবে না।
বলো, আমার সেই বান্দাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, ‘যেন তারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে আর যেন তারা ইনফাক/ ব্যয় করে তা থেকে যা আমরা তাদেরকে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি, (যেন ব্যয় করে) গোপনে ও প্রকাশ্যে, উহার আগেই যে, এসে যাবে সেই দিন যাতে কোন বেচাকেনা চলবে না আর কোন বন্ধুত্বও চলবে না’।
১৪:৩২
আল্লাহুল্লাযী = তিনিই আল্লাহ যিনি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী। ওয়া = আর। আনযালা = নাযিল করেছেন। মিনাছ ছামায়ী = আকাশ থেকে। মায়িন = বৃষ্টির পানি। ফাআখরাজা বিহী = তারপর বের করেছেন উহা দ্বারা। মিনাছ ছামারাতি = ফলফলাদি। রিযক্বাল্লাকুম = তোমাদের জন্য রিযিকস্বরূপ। ওয়া = আর। ছাখখারা = নিয়োজিত করেছেন। লাকুমুল ফুলকা = তোমাদের জন্য নৌযান। লিতাজরিয়া = যেন উহা জারি হয়/ প্রবাহিত হয়/ চলাচল করে। ফিল বাহরি = সাগরে। বিআমরিহী = তাঁর আদেশক্রমে। ওয়া = আর। ছাখখারা = নিয়োজিত করেছেন। লাকুমুল আনহারু = তোমাদের জন্য আনহার/ নদনদী।
তিনিই আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, আর নাযিল করেছেন আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি, তারপর বের করেছেন উহা দ্বারা ফলফলাদি তোমাদের জন্য রিযিকস্বরূপ, আর নিয়োজিত করেছেন তোমাদের জন্য নৌযান, যেন উহা জারি হয়/ প্রবাহিত হয়/ চলাচল করে সাগরে তাঁর আদেশক্রমে, আর নিয়োজিত করেছেন তোমাদের জন্য আনহার/ নদনদী।
১৪:৩৩
ওয়া = আর। ছাখখারা = নিয়োজিত করেছেন। লাকুমুশ শামছা = তোমাদের জন্য সূর্যকে। ওয়াল ক্বামারা = আর চন্দ্রকে। দায়িবায়নিঁ = উভয়কে অবিরাম চলমান করে দিয়ে। ওয়া = আর। ছাখখারা = নিয়োজিত করেছেন। লাকুমুল্লাইলা = তোমাদের জন্য রাতকে। ওয়ান্নাহারি = ও দিনকে।
আর নিয়োজিত করেছেন তোমাদের জন্য সূর্যকে আর চন্দ্রকে, উভয়কে অবিরাম চলমান করে দিয়ে। আর নিয়োজিত করেছেন তোমাদের জন্য রাতকে ও দিনকে।
১৪:৩৪
ওয়া = আর। আতাকুম = তোমাদেরকে দিয়েছেন। মিন কুল্লি = সকল কিছু। মা ছাআলতুমূহু = যার চাহিদা তোমাদের ছিলো। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাউদ্দূ = তোমরা গণনা করো। নি’মাতাল্লাহি = আল্লাহর নিয়ামত। লা তুহসূহা = তোমরা তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। ইন্নাল ইনছানা = নিশ্চয় মানুষ। লাযালূমুন কাফফারুন = যালিম/ অত্যাচারী ও কাফির/ অবিশ্বাসী।
আর তোমাদেরকে দিয়েছেন সকল কিছু যার চাহিদা তোমাদের ছিলো। আর যদি তোমরা গণনা করো আল্লাহর নিয়ামত, তাহলে তোমরা তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ যালিম/ অত্যাচারী ও কাফির/ অবিশ্বাসী।
১৪:৩৫
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা ইবরাহীমু = ইবরাহীম বলেছে। রব্বিজআল = হে আমার রব, বানিয়ে দিন। হাযাল বালাদা = এই নগরীকে। আমিনান = নিরাপদ। ওয়াজনুবনী = আর দূরে রাখুন আমাকে। ওয়া = আর। বানিয়্যা = আমার সন্তানদেরকে। আন না’বুদুল আসনামা = আমরা মূর্তিসমূহের ইবাদাত/ দাসত্ব করা থেকে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইবরাহীম বলেছে, ‘হে আমার রব, বানিয়ে দিন এই নগরীকে নিরাপদ। আর দূরে রাখুন আমাকে আর আমার সন্তানদেরকে আমরা মূর্তিসমূহের ইবাদাত/ দাসত্ব করা থেকে’।
১৪:৩৬
রব্বি = হে আমার রব। ইন্নাহুন্না = নিশ্চয় তারা। আদলালনা = বিভ্রান্ত করেছে। কাছীরাম মিনান্নাছি = মানুষের মধ্য থেকে অধিকাংশকে। ফামান = সুতরাং যে। তাবিয়ানী = আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে। ফাইন্নাহু = নিশ্চয় সে হবে। মিন্নী = আমার অন্তর্ভুক্ত। ওয়া = আর। মান = যে। আসানী = আমার অবাধ্য হবে। ফাইন্নাকা = তাহলে নিশ্চয় আপনি। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল (অর্থাৎ আপনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন)।
হে আমার রব, নিশ্চয় তারা বিভ্রান্ত করেছে মানুষের মধ্য থেকে অধিকাংশকে। সুতরাং যে আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে, নিশ্চয় সে হবে আমার অন্তর্ভুক্ত। আর যে আমার অবাধ্য হবে, তাহলে নিশ্চয় আপনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল (অর্থাৎ আপনি ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন)।
১৪:৩৭
রব্বানা = হে আমাদের রব। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আছকানতু = আবাসনে রেখেছি। মিন যুররিয়াতী = আমার যুররিয়াত/ উত্তরসূরী থেকে কয়েকজনকে। বিওয়াদিন = একটি উপত্যকায়। গায়রা যী যারয়িন = যা চাষাবাদযোগ্য নয়। ইনদা বায়তিকাল মুহাররামি = যা তোমার বায়তুল মুহাররমের/ নিষিদ্ধ ঘরের কাছে অবস্থিত। রব্বানা = হে আমাদের রব। লিইউক্বীমুস সালাতা = এজন্য যে, যেন তারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ফাজআল = সুতরাং বানিয়ে দিন। আফয়িদাতাম মিনান্নাছি = মানুষের ফুয়াদসমূহকে/ অন্তরসমূহকে। তাহভী = এমন যেন তারা অনুরাগপূর্ণ হয়। ইলাইহিম = তাদের দিকে। ওয়ারযুক্বূ = আর তাদেরকে রিযিক দান করুন। মিনাছ ছামারাতি = ফলফলাদি থেকে। লাআল্লাহুম ইয়াশকুরূনা = যেন তারা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
হে আমাদের রব, ‘নিশ্চয় আমি আবাসনে রেখেছি আমার যুররিয়াত/ উত্তরসূরী থেকে কয়েকজনকে, একটি উপত্যকায় যা চাষাবাদযোগ্য নয়, যা তোমার বায়তুল মুহাররমের/ নিষিদ্ধ ঘরের কাছে অবস্থিত। হে আমাদের রব, এজন্য যে, যেন তারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। সুতরাং বানিয়ে দিন মানুষের ফুয়াদসমূহকে/ অন্তরসমূহকে এমন যেন তারা অনুরাগপূর্ণ হয় তাদের দিকে। আর তাদেরকে রিযিক দান করুন ফলফলাদি থেকে, যেন তারা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
১৪:৩৮
রব্বানা = হে আমাদের রব। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। তা’লামু = জানেন। মা নুখফী = যা আমরা গোপন রাখি। ওয়া = আর। মা তু’লিন = যা আমরা প্রকাশ করি। ওয়া = আর। মা ইয়াখফা = না গোপন থাকে। আলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। মিন শাইয়িন = কোন কিছুই। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। লা ফিছ ছামায়ি = না আকাশে।
হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি জানেন যা আমরা গোপন রাখি আর যা আমরা প্রকাশ করি। আর না গোপন থাকে আল্লাহর কাছে কোন কিছুই পৃথিবীতে আর না আকাশে।
১৪:৩৯
আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী = সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি। ওয়াহাবা = দান করেছেন। লী = আমাকে। আলাল কিবারি = বার্ধক্য সত্ত্বেও। ইছমাঈলা ওয়া ইসহাকা = ইসমাইলকে ও ইসহাককে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বী = আমার রব। লাছামীউদ দুয়ায়ি = দোয়া/ প্রার্থনা শ্রবণকারী।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য যিনি দান করেছেন আমাকে বার্ধক্য সত্ত্বেও ইসমাইলকে ও ইসহাককে। নিশ্চয় আমার রব দোয়া/ প্রার্থনা শ্রবণকারী।
১৪:৪০
রব্বিজআলনী = হে আমার রব, আমাকে বানিয়ে দিন। মুক্বীমাস সলাতি = সালাত কায়েমকারী/ প্রতিষ্ঠাকারী। ওয়া = আর। মিন যুররিয়াতী = আমার যুররিয়াত/ উত্তরসূরীদের থেকেও (সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন)। রব্বানা = হে আমাদের রব। ওয়াতাক্বাব্বাল দুয়ায়ি = আমার দোয়া কবুল করুন।
হে আমার রব, আমাকে বানিয়ে দিন সালাত কায়েমকারী/ প্রতিষ্ঠাকারী, আর আমার যুররিয়াত/ উত্তরসূরীদের থেকেও (সালাত প্রতিষ্ঠাকারী বানিয়ে দিন)। হে আমাদের রব, আমার দোয়া কবুল করুন।
১৪:৪১
রব্বানাগফিরলী = হে আমাদের রব, ক্ষমা করুন আমাকে। ওয়ালিওয়ালিদাইয়া = আর আমার পিতামাতাকে। ওয়া = আর। লিলমু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে। ইয়াওমা ইয়াক্বূমুল হিসাবু = হিসাব কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত/ কার্যকর হবার দিন।
হে আমাদের রব, ক্ষমা করুন আমাকে আর আমার পিতামাতাকে আর মু’মিনদেরকে, হিসাব কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত/ কার্যকর হবার দিন।
১৪:৪২
ওয়া = আর। লা তাহছাবান্নাল্লাহা = হিসাব করে নিও না যে, আল্লাহ। গাফিলান = গাফিল/ উদাসীন। আম্মা = উহার ব্যাপারে যা। ইয়া’মালুয যলিমীনা = করছে যালিমগণ। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইউআখখিরুহুম = তিনি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন। লিইয়াওমিন = সেই দিনের জন্য। তাশখাসু ফীহিল আবসারু = যাতে স্থির হয়ে যাবে দৃষ্টিসমূহ।
আর হিসাব করে নিও না যে, আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন উহার ব্যাপারে যা করছে যালিমগণ। নিশ্চয় তিনি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন সেই দিনের জন্য যাতে স্থির হয়ে যাবে দৃষ্টিসমূহ।
১৪:৪৩
মুহত্বিয়ীনা = তারা দৌড়াতে থাকবে। মুক্বনিয়ী রুঊছিহিম = তাদের মাথাগুলো উঠিয়ে। লা ইয়ারতাদ্দু = ফিরে যাবে না। ইলাইহিম = তাদের দিকে। তরফুহুম = তাদের চোখের পলক। ওয়া = আর। আফইদাতুহুম = তাদের ফূয়াদসমূহ/ অন্তরসমূহ হবে। হাওয়াউন = আশাশূন্য/ নিরাশ।
তারা দৌড়াতে থাকবে তাদের মাথাগুলো উঠিয়ে। ফিরে যাবে না তাদের দিকে তাদের চোখের পলক। আর তাদের ফূয়াদসমূহ/ অন্তরসমূহ হবে আশাশূন্য/ নিরাশ।
১৪:৪৪
ওয়া = আর। আনযিরিন্নাছা = মানুষকে সতর্ক করো। ইয়াওমা = সেদিনের ব্যাপারে যেদিন। ইয়া’তিহিমুল আযাবু = তাদের কাছে এসে যাবে আযাব/ শাস্তি। ফাইয়াক্বূলুল্লাযীনা = তখন তারা বলবে যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। আখখিরনা = আমাদেরকে অবকাশ দিন। ইলা আজালিন ক্বারীবিন = নিকটবর্তী একটি আজাল/ সময়সীমা পর্যন্ত। নুজিব = তাহলে আমরা সাড়া দেবো। দাওয়াতাকা = আপনার ডাকে। ওয়া = আর। নাত্তাবিয়ির রুসুলা = আমরা রসূলদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো। আওয়া লাম তাকূনূ আক্বছামতুম = তোমরা কি কসম করে বলতে না। মিন ক্বাবলু = ইতোপুর্বে। মা লাকুম = আমাদের জন্য নেই। মিন = কোন। যাওয়ালিন = পতন।
আর মানুষকে সতর্ক করো সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের কাছে এসে যাবে আযাব/ শাস্তি। তখন তারা বলবে যারা যুলুম করেছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে অবকাশ দিন নিকটবর্তী একটি আজাল/ সময়সীমা পর্যন্ত। তাহলে আমরা সাড়া দেবো আপনার ডাকে আর আমরা রসূলদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো’। তোমরা কি কসম করে বলতে না ইতোপুর্বে, ‘আমাদের জন্য নেই কোন পতন’?
১৪:৪৫
ওয়া = আর। ছাকানতুম = তোমরা বসবাস করেছো। ফী মাছাকিনিল্লাযীনা = তাদের বাসভূমিসমূহে যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদের উপর। ওয়া = আর। তাবাইয়ানা = স্পষ্ট হয়েছিলো। লাকুম = তোমাদের জন্য। কায়ফা = কিরূপ। ফায়ালনা = করেছিলাম আমরা। বিহিম = তাদের সাথে। ওয়া = আর। দরাবনা = আমরা উপস্থাপন করেছি। লাকুমুল আমছালু = তোমাদের জন্য আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।
আর তোমরা বসবাস করেছো তাদের বাসভূমিসমূহে যারা যুলুম করেছে তাদের নিজেদের উপর; আর স্পষ্ট হয়েছিলো তোমাদের জন্য, কিরূপ করেছিলাম আমরা তাদের সাথে; আর আমরা উপস্থাপন করেছি তোমাদের জন্য আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।
১৪:৪৬
ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। মাকারূ মাকরুহুম = তারা তাদের কলা কৌশল করেছিলো। ওয়া = আর। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে (নিয়ন্ত্রণাধীন) ছিলো। মাকরুহুম = তাদের কলাকৌশল। ওয়া ইন = যদিও। কানা মাকরুহুম = তাদের কলা কৌশল ছিলো। লিতাযূলা = এমন যেন টলে যেতে পারে। মিনহুল জিবালু = তার ফলে পাহাড়সমূহ।
আর নিশ্চয় তারা তাদের কলা কৌশল করেছিলো। আর আল্লাহর কাছে (নিয়ন্ত্রণাধীন) ছিলো তাদের কলাকৌশল। যদিও তাদের কলা কৌশল ছিলো এমন যেন টলে যেতে পারে তার ফলে পাহাড়সমূহ।
১৪:৪৭
ফালা তাহছাবান্নাল্লাহা = সুতরাং হিসাব করে নিও না আল্লাহকে। মুখলিফা ওয়া’দিহি = তাঁর ওয়াদা খেলাফকারীরূপে। রুসুলাহু = (যা তিনি দিয়েছেন) তাঁর রসূলদের কাছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আযীযুন যুনতিক্বাম = আযীয/ মহাশক্তিমান ও যুনতিক্বাম/ কঠোর শাস্তিদাতা।
সুতরাং হিসাব করে নিও না আল্লাহকে তাঁর ওয়াদা খেলাফকারীরূপে (যা তিনি দিয়েছেন) তাঁর রসূলদের কাছে। নিশ্চয় আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও যুনতিক্বাম/ কঠোর শাস্তিদাতা।
১৪: ৪৮
ইয়াওমা = সেদিন। তুবাদ্দালুল আরদু = বদলে দেয়া হবে পৃথিবীকে। গায়রাল আরদি = ভিন্ন পৃথিবীতে। ওয়াছ ছামাওয়াতু = আর আকাশমন্ডলীকেও। ওয়া = আর। বারাযূ = তারা বের হয়ে আসবে। লিল্লাহিল ওয়াহিদিল ক্বাহহারি = আল্লাহর কাছে যিনি একাই একচ্ছত্র ক্ষমতাধর।
সেদিন বদলে দেয়া হবে পৃথিবীকে ভিন্ন পৃথিবীতে, আর আকাশমন্ডলীকেও। আর তারা বের হয়ে আসবে আল্লাহর কাছে যিনি একাই একচ্ছত্র ক্ষমতাধর।
১৪:৪৯
ওয়া = আর। তারাল মুজরিমীনা = তুমি দেখবে অপরাধীদেরকে। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। মুক্বাররনীনা = আবদ্ধ হয়ে আছে। ফিল আসফাদি = শিকলসমূহে।
আর তুমি দেখবে অপরাধীদেরকে সেদিন আবদ্ধ হয়ে আছে শিকলসমূহে।
১৪:৫০
ছারাবীলুহুম = তাদের পোশাক হবে। মিন ক্বিতরানিন = আলকাতরার তৈরি (কালো পোশাক)। ওয়া = আর। তাগশা = আচ্ছন্ন করবে। উজূহাহুমুন্নারু = তাদের মুখমন্ডলসমূহকে আগুন।
তাদের পোশাক হবে আলকাতরার তৈরি (কালো পোশাক)। আর আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডলসমূহকে আগুন।
১৪:৫১
লিইয়াজযিয়াল্লাহু = যেন আল্লাহ প্রতিফল দেন। কুল্লা = প্রত্যেক। নাফসিন = ব্যক্তিকে। মা কাছাবাত = যা সে উপার্জন করেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছারীউল হিসাবি = হিসাবকরনে দ্রুততম।
যেন আল্লাহ প্রতিফল দেন প্রত্যেক ব্যক্তিকে যা সে উপার্জন করেছে। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাবকরনে দ্রুততম।
১৪:৫২
হাযা = ইহা (= আল কুরআন)। বালাগুল লিন্নাছি = মানুষের জন্য বালাগ/ পয়গাম/ প্রচারপত্র। ওয়া = আর। লিইউনযারূ = যেন সতর্ক করা হয়। বিহী = উহা দ্বারা। ওয়া = আর। লিইয়া’লামূ = যেন তারা জানে। আন্নামা = যে। হুয়া = তিনিই। ইলাহুন ওয়াহিদুন = একমাত্র ইলাহ। ওয়া = আর। লিইয়াযযাক্কারা = যেন যিকির/ স্মরণ/ শিক্ষাগ্রহণ করে। উলুল আলবাবি = উলুল আলবাব/ চিণ্তাশীল ব্যক্তিগণ।
ইহা (= আল কুরআন) মানুষের জন্য বালাগ/ পয়গাম/ প্রচারপত্র, আর যেন সতর্ক করা হয় উহা দ্বারা, আর যেন তারা জানে যে, তিনিই একমাত্র ইলাহ, আর যেন যিকির/ স্মরণ/ শিক্ষাগ্রহণ করে উলুল আলবাব/ চিণ্তাশীল ব্যক্তিগণ।