৬১:১
ছাব্বাহা লিল্লাহি = আল্লাহর তাসবীহ/ পবিত্রতা প্রকাশ করছে। মা ফিছ ছামাওয়াতি = যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে। ওয়া মা ফিল আরদি = আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। ওয়া = আর। হুয়াল আযীযুল হাকীমু = তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আল্লাহর পবিত্রতা প্রকাশ করছে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। আর তিনি মহাশক্তিমান ও মহাবিজ্ঞ।
৬১:২
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ। লিমা = কেন। তাক্বূলূনা = তোমরা বল। মা = যা। লা তাফআলূনা = তোমরা কর না।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ, কেন তোমরা বল যা তোমরা কর না?
৬১:৩
কাবুরা মাক্বতান ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে বড়ই ক্রোধের বিষয়। আন = এই যে। তাক্বূলূ = তোমরা বল। মা = যা। লা তাফআলূনা = তোমরা কর না।
আল্লাহর কাছে বড়ই ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল যা তোমরা কর না।
৬১:৪
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউহিব্বুল্লাযীনা = তাদেরকে ভালবাসেন যারা। ইউক্বাতিলূনা ফী সাবীলিল্লাহি = কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে। সফফান = সফ/ সারি বেঁধে। কাআন্নাহুম = এমনভাবে যে, যেন তারা। বুনইয়ানুম মারসূসুন = বুনিয়ানুম মারসুস/ সীসাঢালা প্রাচীর।
নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন যারা আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে এমনভাবে যে, যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর।
৬১:৫
ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছিল। লিক্বাওমিহী = তার কওমকে। লিমা = কেন। তু’যূনানী = তোমরা আমাকে কষ্ট দাও। ওয়া = অথচ। ক্বাত তা’লামূনা = নিশ্চয় তোমরা জান। আন্নী = যে, আমি। রসূলুল্লাহি ইলাইকুম = তোমাদের প্রতি আল্লাহর রসূল। ফালাম্মা = তারপর যখন। যগূ = তারা বক্রতা অবলম্বন করেছে। আযাগাল্লাহু = তখন আল্লাহ বক্র করে দিয়েছেন। ক্বুলূবাহুম = তাদের কলবসমূহকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়াহদিল ক্বাওমিল ফাসিক্বীনা = হিদায়াত করেন না ফাসেক/ পাপাচারী কওমকে।
আর যখন মূসা বলেছিল তার কওমকে, ‘কেন তোমরা আমাকে কষ্ট দাও? অথচ নিশ্চয় তোমরা জান যে, আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রসূল’। তারপর যখন তারা বক্রতা অবলম্বন করেছে, তখন আল্লাহ বক্র করে দিয়েছেন তাদের অন্তরসমূহকে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না পাপাচারী কওমকে।
৬১:৬
ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বলা ঈসাবনু মারইয়ামা = ঈসা ইবনে মারিয়াম বলেছিল। ইয়া বানী ইসরাঈলা = হে বনী ইসরাইল। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। রসূলুল্লাহি ইলাইকুম = তোমাদের প্রতি আল্লাহর রসূল। মুসাদ্দিক্বাল লিমা বায়ানা ইয়াদায়আ = উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী যা আমার সামনে আছে। মিনাত তাওরাতি = তাওরাত থেকে। ওয়া = আর। মুবাশশিরাম বিরসূলিন = একজন রসূলের ব্যাপারে সুসংবাদদাতা। ইয়া’তী = যে আসবে। মিম বা’দীছমুহূ আহমাদু = আমার পরে, যার নাম হবে ‘আহমদ’। ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহুম = সে (আহমদ) তাদের কাছে এসেছিলো। বিল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। ক্বলূ = তখন তারা বলেছিলো। হাযা = ইহা (= বাইয়িনাত)। ছিহরুম মুবীনুন = স্পষ্ট যাদু।
আর যখন ঈসা ইবনে মারিয়াম বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল, নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রসূল, উহার সত্যতা প্রতিপাদনকারী যা আমার সামনে আছে তাওরাত থেকে আর একজন রসূলের ব্যাপারে সুসংবাদদাতা যে আসবে আমার পরে, যার নাম হবে আহমদ’। তারপর যখন সে (আহমদ) তাদের কাছে এসেছিলো স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে, তখন তারা বলেছিলো, ‘ইহা (= বাইয়িনাত) স্পষ্ট যাদু’।
৬১:৭
ওয়া মান আযলামু মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = আর তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করে। ওয়া = অথচ। হুয়া ইউদআ = তাকে আহবান করা হয়। ইলাল ইসলামি = ইসলামের দিকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়াহদিল ক্বাওমায যলিমীনা = হিদায়াত করেন না কোন যালিম কওমকে।
আর তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করে অথচ তাকে আহবান করা হয় ইসলামের দিকে? আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না কোন অত্যাচারী কওমকে।
৬১:৮
ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। লিইউত্বফিঊ নূরাল্লাহি = আল্লাহর নূরকে/ আলোকে নিভিয়ে দিতে। বিআফওয়াহিহিম = তাদের মুখের (ফুঁ) দ্বারা। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। মুতিম্মু নূরিহী = তাঁর নূরকে/ আলোকে পূর্ণত্ব দানকারী। ওয়া লাও = যদিও। কারিহাল কাফিরূনা = কাফিররা উহা অপছন্দ করে।
তারা ইচ্ছা করে আল্লাহর নূরকে/ আলোকে নিভিয়ে দিতে তাদের মুখের (ফুঁ) দ্বারা। আর আল্লাহ তাঁর নূরকে/ আলোকে পূর্ণত্ব দানকারী, যদিও কাফিররা উহা অপছন্দ করে।
৬১:৯
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আরছালা রসূলাহু = প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে। বিলহুদা = হিদায়াত সহকারে। ওয়া দ্বীনিল হাক্বক্বি = ও দ্বীনেল হক্ব/ সত্য জীবনব্যবস্থা সহকারে। লিইউযহিরাহূ = উহাকে বিজয়ী করার জন্য। আলা দ্দ্বীনি কুল্লিহী = প্রতিটি দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার উপরে। ওয়া লাও = যদিও। কারিহাল মুশরিকূনা = মুশরিকরা উহা অপছন্দ করে।
তিনিই সেই সত্তা যিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে হিদায়াত সহকারে ও দ্বীনেল হক্ব/ সত্য জীবনব্যবস্থা সহকারে, উহাকে বিজয়ী করার জন্য প্রতিটি দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার উপরে, যদিও মুশরিকরা উহা অপছন্দ করে।
৬১:১০
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ। হাল আদুল্লুকুম = আমি কি তোমাদেরকে সন্ধান দেব। আলা তিজারাতিন = এমন একটি তিজারাতের/ ব্যবসায়ের ব্যাপারে। তুনজীকুম মিন আযাবিন আলীমিন = যা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিবে আযাবে আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি থেকে?
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ, আমি কি তোমাদেরকে সন্ধান দেব এমন একটি তিজারাতের/ ব্যবসায়ের ব্যাপারে যা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিবে আযাবে আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি থেকে?
৬১:১১
তু’মিনূনা বিল্লাহি = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর আল্লাহর প্রতি। ওয়া রাসূলিহী = ও তাঁর রসূলের প্রতি। ওয়া তুজাহিদূনা ফী সাবীলিল্লাহি = আর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে। বিআমওয়ালিকুম ওয়া আনফুসিকুম = তোমাদের মালসম্পদ ও তোমাদের নিজ সত্তা/ জানপ্রাণ দ্বারা। যালিকুম = উহাই। খায়রুল লাকুম = তোমাদের জন্য উত্তম। ইন কুনতুম তা’লামূনা = যদি তোমরা জান।
তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি আর জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কর তোমাদের মালসম্পদ ও তোমাদের নিজ সত্তা/ জানপ্রাণ দ্বারা। উহাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জান।
৬১:১২
ইয়াগফির লাকুম যুনূবাকুম = তিনি ক্ষমা করবেন তোমাদের গুনাহসমূহ। ওয়া ইউদখিলকুম = আর তিনি তোমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়া মাছাকীনা তইয়িবাতান ফী জান্নাতি আদনিন = আর স্থায়ী জান্নাতে পবিত্র বাসগৃহসমূহ।
তিনি ক্ষমা করবেন তোমাদের গুনাহসমূহ আর তিনি তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ, আর স্থায়ী জান্নাতে পবিত্র বাসগৃহসমূহে।
৬১:১৩
ওয়া উখরা তুহিব্বূনাহা = আর অন্য যে বিষয়টি তোমরা পছন্দ কর। নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন ক্বারীবুন = আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়। ওয়া = আর। বাশশিরিল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।
আর অন্য যে বিষয়টি তোমরা পছন্দ কর, আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও নিকটবর্তী বিজয়।
৬১:১৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ। কূনূ আনসারুল্লাহি = তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও। কামা = যেমন। ক্বলা ঈসাবনু মারইয়ামা লিল হাওয়ারিয়্যীনা = ঈসা ইবনে মারিয়াম হাওয়ারীদেরকে বলেছিল। মান আনসারী ইলাল্লাহি = কে আল্লাহর দিকে আমার সাহায্যকারী হবে? ক্বলাল হাওয়ারিয়্যূনা = হাওয়ারিরা বলেছিল। নাহনু = আমরাই। আনসারুল্লাহি = আল্লাহর সাহায্যকারী। ফাআমানাত তয়িফাতুম মিম বানী ইসরাঈলা = তারপর বনী ইসরাইলের একদল ঈমান/ বিশ্বাস করেছিল। ওয়া কাফারাত তয়িফাতুন = আর একদল কুফর করেছিল। ফাআইয়াদনাল্লাযীনা = তারপর আমরা তাদেরকে সাহায্য করেছিলাম যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছিল। আলা আদুউয়িহিম = তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে। ফাআসবাহূ যহিরীনা = ফলে তারা বিজয়ী হয়েছিল।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ, তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও, যেমন ঈসা ইবনে মারিয়াম হাওয়ারীদেরকে বলেছিল, ‘কে আল্লাহর দিকে আমার সাহায্যকারী হবে?’ হাওয়ারীরা বলেছিল, ‘আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী’। তারপর বনী ইসরাইলের একদল ঈমান/ বিশ্বাস করেছিল আর একদল কুফর করেছিল। তারপর আমরা তাদেরকে সাহায্য করেছিলাম যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছিল, তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে, ফলে তারা বিজয়ী হয়েছিল।