কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

058. সূরা মুজাদালা

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৫৮:১
ক্বাদ = নিশ্চয়। ছামিআল্লাহু = আল্লাহ শুনেছেন। ক্বাওলাল্লাতী = সে নারীর কথা যে। তুজাদিলুকা = তোমার সাথে বিতর্ক করেছে। ফী জাওজিহা = তার স্বামীর ব্যাপারে। ওয়া = আর। তাশতাকী = ফরিয়াদ করেছে। ইলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়াছমাউ = শুনেছেন। তাহাভুরাকুম = তোমাদের দুজনের কথোপকথন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছামীউন বাসীরুন = ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা।

নিশ্চয় আল্লাহ শুনেছেন সে নারীর কথা যে তোমার সাথে বিতর্ক করেছে তার স্বামীর ব্যাপারে আর ফরিয়াদ করেছে আল্লাহর কাছে। আর আল্লাহ শুনেছেন তোমাদের দুজনের কথোপকথন। নিশ্চয় আল্লাহ ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা।

৫৮:২
আল্লাযীনা = যারা। ইউযহিরূনা = যিহার (= মায়ের মতো হিসাবে প্রকাশ) করে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। নিছায়িহিম = তাদের স্ত্রীদেরকে। মা হুন্না = তারা হয় না। উম্মাহাতিহিম = তাদের মা। ইন উম্মাহাতুহুম = তাদের মা নয়। ইল্লাল্লায়ী = তারা ছাড়া কেউ যারা। ওয়ালাদনাহুম = তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। ওয়া = আর। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। লাইয়াক্বূলূনা = বলে থাকে। মুনকারান মিনাল ক্বাওলি = অপছন্দনীয় কথা। ওয়া = ও। যূরান = মিথ্যা (কথা)। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাআফুওউন গাফূরুন = উদার ক্ষমাশীল।

যারা যিহার (= মায়ের মতো হিসাবে প্রকাশ) করে তোমাদের মধ্য থেকে তাদের স্ত্রীদেরকে, তারা হয় না তাদের মা। তাদের মা নয় তারা ছাড়া কেউ যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর নিশ্চয় তারা বলে থাকে অপছন্দনীয় কথা ও মিথ্যা (কথা)। আর নিশ্চয় আল্লাহ উদার ক্ষমাশীল।

৫৮:৩
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইউযহিরূনা = যিহার (= মায়ের মতো হিসাবে প্রকাশ) করে। মিন নিছায়িহিম = তাদের স্ত্রীদেরকে। ছুম্মা = তারপর। ইয়াঊদূনা = তারা ফিরে যায়। লিমা ক্বলূ = যা তারা বলেছিল তা থেকে। ফাতাহরীরু = তারা মুক্ত করতে হবে। রক্বাবাতিন = একজন দাসকে। মিন ক্বাবলি আইঁ ইয়াতামাছছা = যৌন মিলনের আগে। যালিকুম = এসব। তূআযূনা বিহী = তোমাদেরকে ওয়াজ করা/ উপদেশ দেয়া হচ্ছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা খাবীরুন = তোমাদের আমলের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

আর যারা যিহার (= মায়ের মতো হিসাবে প্রকাশ) করে তাদের স্ত্রীদেরকে, তারপর তারা ফিরে যায় যা তারা বলেছিল তা থেকে, তারা মুক্ত করতে হবে একজন দাসকে, যৌন মিলনের আগে। এসব তোমাদের ওয়াজ করা/ উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৫৮:৪
ফামাল্লাম ইয়াজিদ = কিন্তু যে (উহা করার সামর্থ) পায় না। ফাসিয়ামু = তবে সে সিয়াম পালন করবে। শাহারাইনি = দুই মাস। মুতাতাবিআয়নি = ধারাবাহিকভাবে। মিন ক্বাবলি আইঁ ইয়াতামাচ্ছা = যৌন মিলনের আগে। ফামাল্লাম ইয়াছতাতি’ = কিন্তু যে উহা পারবে না। ফাইতআমু = তবে সে আহার করাবে। ছিত্তীনা মিসকীনান = ষাটজন মিসকীনকে। যালিকা = উহাই বিধান। লিতু’মিনূ বিল্লাহি ওয়া রসূলিহী = যেন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি। ওয়া = আর। তিলকা = ইহা। হুদূদুল্লাহি = হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহ। ওয়া = আর। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

কিন্তু যে (উহা করার সামর্থ) পায় না তবে সে সিয়াম পালন করবে দুই মাস ধারাবাহিকভাবে, যৌন মিলনের আগে। কিন্তু যে উহা পারবে না তবে সে আহার করাবে ষাটজন মিসকীনকে। উহাই বিধান, যেন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি। আর ইহা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর দেয়া সীমাসমূহ। আর কাফিরদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৫৮:৫
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইউহাদ্দূনাল্লাহা ওয়া রাসূলাহু = আল্লাহর ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে। কুবিতূ = তাদেরকে লাঞ্চিত করা হবে। কামা কুবিতাল্লাযীনা = যেমন তাদেরকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল যারা ছিল। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। আনযালনা = আমরা নাযিল/ অবতরণ করেছি। আয়াতিম বাইয়িনাতিন = আয়াতিম বাইয়িনাত/ স্পষ্ট আয়াতসমূহ। ওয়া = আর। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য আছে। আযাবুম মুহীনুন = আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

নিশ্চয় যারা আল্লাহর ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তাদেরকে লাঞ্চিত করা হবে যেমন তাদেরকে লাঞ্চিত করা হয়েছিল যারা ছিল তাদের আগে। আর নিশ্চয় আমরা নাযিল/ অবতরণ করেছি আয়াতিম বাইয়িনাত/ স্পষ্ট আয়াতসমূহ। আর কাফিরদের জন্য আছে আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

৫৮:৬
ইয়াওমা = যেদিন। ইয়াবআছুহুমুল্লাহু জামীয়ান = আল্লাহ তাদের সকলকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন। ফাইউনাব্বিউহুম = তখন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। বিমা আমিলূ = তাদের আমল সম্পর্কে। আহসহুল্লাহু = আল্লাহ তা গুণে রেখেছেন। ওয়া = আর। নাছূহু = তারা তা ভুলে গেছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলা কুল্লি শাইয়িন = সবকিছুর উপর। শাহীদুন = শহীদ/ সাক্ষী।

যেদিন আল্লাহ তাদের সকলকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন, তখন তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন তাদের আমল সম্পর্কে। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর শহীদ/ সাক্ষী।

৫৮:৭
আলাম তারা = তুমি কি ভেবে দেখনি। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। মা ফিস সামাওয়াতি = যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মা ফিল আরদি = যা কিছু আছে পৃথিবীতে। মা ইয়াকূনু = হতে পারে না। মিন নাজওয়া = কোন গোপন পরামর্শ। ছালাছাতিন = তিনজনের মধ্যে। ইল্লা হুয়া রবিউহুম = তিনি তাদের সাথে চতুর্থজন হওয়া ছাড়া। ওয়া = আর। লা খামছাতিন = না পাঁচজনের মধ্যে। ইল্লা হুয়া ছাদিছুহুম = তিনি তাদের সাথে ষষ্ঠজন হওয়া ছাড়া। ওয়া লা আদনা মিন যালিকা = আর উহার চেয়ে কম জনের মধ্যেও না। ওয়া লা আকছারা = আর উহার চেয়ে বেশি জনের মধ্যেও না। ইল্লা হুয়া মাআহুম = তিনি তাদের সাথে থাকা ছাড়া। আয়না মা কানূ = যেখানেই তারা থাকুক। ছুম্মা = তারপর। ইউনাব্বিউহুম = তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন। বিমা আমিলূ = তাদের আমলের বিষয়ে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিকুল্লি শাইয়িন = সবকিছু সম্পর্কে। আলীমুন = জ্ঞাত।

তুমি কি ভেবে দেখনি যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। হতে পারে না কোন গোপন পরামর্শ তিনজনের মধ্যে তিনি তাদের সাথে চতুর্থজন হওয়া ছাড়া, আর না পাঁচজনের মধ্যে তিনি তাদের সাথে ষষ্ঠজন হওয়া ছাড়া, আর উহার চেয়ে কম জনের মধ্যেও না আর উহার চেয়ে বেশি জনের মধ্যেও না তিনি তাদের সাথে থাকা ছাড়া, যেখানেই তারা থাকুক। তারপর তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন তাদের আমলের বিষয়ে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত।

৫৮:৮
আলাম তারা ইলাল্লাযীনা = তুমি কি তাদের অবস্থা দেখনি যাদেরকে। নুহূ আনিন্নাজওয়অ = নিষেধ করা হয়েছিল গোপন পরামর্শ করতে। ছুম্মা = তারপর। ইয়াঊদূনা = তারা পুনরাবৃত্তি করে। লিমা নূহূ আনহু = যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে তা। ওয়া = আর। ইয়াতানাজাওনা = তারা গোপন পরামর্শ করে। বিল ইছমি ওয়াল উদওয়ানি ওয়া মা’সিয়াতির রসূলি = পাপ, বাড়াবাড়ি ও রসূলকে অমান্য করার জন্য। ওয়া = আর। ইযা = যখন। জাঊকা = তারা তোমার কাছে আসে। হাইয়ূকা = তখন তারা তোমাকে অভিবাদন করে। বিমা লাম ইউহাইয়িকা বিহিল্লাহু = যেভাবে আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেন না। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। ফী আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের মধ্যে। লাও লা ইউআযযিবুনাল্লাহু = কেন আল্লাহ আমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেন না। বিমা নাক্বূলূ = যা আমরা বলি তার কারণে। হাছবুহুম জাহান্নামু = তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। ইয়াসলাওনাহা = তারা উহাতে পুড়বে। ফাবি’ছাল মাসীরু = উহা অত্যন্ত নিকৃষ্ট আবাসস্থল।

তুমি কি তাদের অবস্থা দেখনি যাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল গোপন পরামর্শ করতে? তারপর তারা পুনরাবৃত্তি করে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল আর তারা গোপন পরামর্শ করে পাপ, বাড়াবাড়ি ও রসূলকে অমান্য করার জন্য। আর যখন তারা তোমার কাছে আসে তখন তারা তোমাকে অভিবাদন করে যেভাবে আল্লাহ তোমাকে অভিবাদন করেন না। আর তারা বলে তাদের নিজেদের মধ্যে, ‘কেন আল্লাহ আমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেন না, যা আমরা বলি তার কারণে?’ তাদের জন্য জাহান্নামই যথেষ্ট। তারা উহাতে পুড়বে। উহা অত্যন্ত নিকৃষ্ট আবাসস্থল।

৫৮:৯
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোকেরা যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। তানাজায়তুম = তোমরা গোপন পরামর্শ কর। ফালা তানাজাও = তখন তোমরা গোপন পরামর্শ করো না। বিল ইছমি ওয়াল উদওয়ানি ওয়া মা’সিয়াতির রসূলি = পাপ, বাড়াবাড়ি ও রসূলকে অমান্য করার জন্য। ওয়া = আর। তানাযাও = তোমরা গোপন পরামর্শ কর। বিল বিররি ওয়াত্তাক্বওয়া = পূণ্য ও তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতার জন্য। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাযী ইলাইহি তুহশারূনা = যাঁর কাছে তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।

হে ঐসব লোকেরা যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা গোপন পরামর্শ কর তখন তোমরা গোপন পরামর্শ করো না পাপ, বাড়াবাড়ি ও রসূলকে অমান্য করার জন্য। আর তোমরা গোপন পরামর্শ করো পূণ্য ও তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতার জন্য। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর কাছে তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।

৫৮:১০
ইন্নামান্নাজওয়া = বস্তুত গোপন পরামর্শ করা হয়। মিনাশ শায়তানি = শয়তানের পক্ষ থেকে। লিইয়াহযুনাল্লাযীনা = তাদেরকে চিন্তিত করার জন্য যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। লাইছা বিদররিহিম = সে তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। শাইয়ান = কিছুমাত্রও। ইল্লা বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু’মিনূনা = মু’মিনগণ তাওয়াক্কুল/ ভরসা করা উচিত।

বস্তুত গোপন পরামর্শ করা হয় শয়তানের পক্ষ থেকে তাদেরকে চিন্তিত করার জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আর সে তাদের ক্ষতি করতে পারবে না কিছুমাত্রও, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর আল্লাহরই উপর মু’মিনগণ তাওয়াক্কুল/ ভরসা করা উচিত।

৫৮:১১
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। ক্বীলা লাকুম = তোমাদেরকে বলা হয়। তাফাছছাহূ ফিল মাজালিছি = মজলিশের মধ্যে তোমরা (আরেকজনের জন্য) স্থান করে দাও। ফাফছাহূ = তখন তোমরা স্থান করে দিও। ইয়াফছাহিল্লাহু লাকুম = তাহলে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বীলানশুযূ = তোমাদেরকে বলা হয় ‘উঠে যাও’। ফানশুযূ = তখন তোমরা উঠে যেয়ো। ইয়ারফায়িল্লাহুল্লাযীনা = আল্লাহ তাদেরকে সমুন্নত করবেন যারা। আমানূ মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়াল্লাযীনা = আর যাদেরকে। উতুল ইলমা = জ্ঞান দেয়া হয়েছে। দারাজাতিন = (সমুন্নত করবেন) মর্যাদার মাত্রাসমূহে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা খাবীরুন = তোমাদের আমলের সম্পর্কে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘মজলিশের মধ্যে তোমরা (আরেকজনের জন্য) স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দিও। তাহলে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যেয়ো। আল্লাহ তাদেরকে সমুন্নত করবেন যারা তোমাদের মধ্য থেকে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, (সমুন্নত করবেন) মর্যাদার মাত্রাসমূহে। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের সম্পর্কে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৫৮:১২
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। নাজায়তুমুর রাসূলা = তোমরা (সবার থেকে আলাদা করে) একান্তে কথা বলবে রসূলের সাথে। ফাক্বাদ্দিমূ = তখন তোমরা পেশ করবে। বায়না ইয়াদায় নাজওয়াকুম = তোমাদের একান্তে কথা বলার আগে। সদাক্বাতান = সদাকা। যালিকা = উহাই। খায়রুল্লাকুম = তোমাদের জন্য উত্তম। ওয়া আতহার = ও পবিত্রতর। ফাইল্লাম তাজিদূ = কিন্তু যদি তোমরা (উহার সামর্থ) না পাও। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা (সবার থেকে আলাদা করে) একান্তে কথা বলবে রসূলের সাথে, তখন তোমরা পেশ করবে তোমাদের একান্তে কথা বলার আগে সদাকা। উহাই তোমাদের জন্য উত্তম ও পবিত্রতর। কিন্তু যদি তোমরা (উহার সামর্থ) না পাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৫৮:১৩
আআশফাক্বতুম = তোমরা কি উদ্বিগ্নতা অনুভব কর। আন = এ ব্যাপারে যে। তুক্বাদ্দিমূ = তোমরা দিবে। বায়না ইয়াদায় নাজওয়াকুম = তোমাদের (সবার থেকে আলাদা করে) একান্তে কথা বলার আগে। সদাক্বাতিন = সদাকাত। ফাইয লাম তাফআলূ = তারপর যখন তোমরা তা পালন করনি। ওয়া = আর। তাবাল্লাহু আলাইকুম = আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন । ফাআক্বিমূস সলাতা = সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা কর। ওয়া = আর। আতুয যাকাতা = তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান কর। ওয়া = আর। আতিউল্লাহা ওয়া রাসূলাহু = আল্লাহর ও তাঁর রসূলের ইতায়াত/ আনুগত্য কর। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। খাবীরুম বিমা তা’মালূনা = তোমাদের আমলের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

তোমরা কি উদ্বিগ্নতা অনুভব কর এ ব্যাপারে যে, তোমরা দিবে তোমাদের (সবার থেকে আলাদা করে) একান্তে কথা বলার আগে সদাকাত? তারপর যখন তোমরা তা পালন করনি আর আল্লাহ (পূর্বে জানানো ঘোষণার আওতায়) তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন, সুতরাং তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা কর আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান কর আর আল্লাহর ও তাঁর রসূলের ইতায়াত/ আনুগত্য কর। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৫৮:১৪
আলাম তারা = তুমি কি ভেবে দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যারা। তাওয়াল্লাও = বন্ধু বানায়। ক্বাওমান = সেই কওমকে। গাদিবাল্লাহু আলাইহিম = যাদের উপর আল্লাহ গযব দিয়েছেন। মা হুম মিনকুম = তারা তোমাদেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। ওয়া লা মিনহুম = আর তারা তাদেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। ওয়া = আর। ইয়াহফূনা = তারা হলফ/ কসম করে। আলাল কাযিবি = মিথ্যা কথার জন্য। ওয়া হুম ইয়া’লামূনা = এ অবস্থায় যে, তারা জানে।

তুমি কি ভেবে দেখনি তাদের অবস্থা যারা বন্ধু বানায় সেই কওমকে যাদের উপর আল্লাহ গযব দিয়েছেন? তারা তোমাদেরও অন্তর্ভুক্ত নয় আর তারা তাদেরও অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা হলফ/ কসম করে মিথ্যা কথার জন্য এ অবস্থায় যে, তারা জানে।

৫৮:১৫
আআদ্দাল্লাহু = আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন। লাহুম = তাদের জন্য। আযাবান শাদীদান = আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি। ইন্নাহুম ছাআ মা কানূ ইয়া’মালূনা = নিশ্চয় অত্যন্ত মন্দ যা তারা করতো।

আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন তাদের জন্য আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি। নিশ্চয় অত্যন্ত মন্দ যা তারা করতো।

৫৮:১৬
ইত্তাখাযূ = তারা গ্রহণ করে। আইমানুহুম = তাদের আইমানকে/ শপথসমূহকে। জুন্নাতান = ঢালস্বরূপ। ফসদ্দূ = তারপর তারা বাধা দেয়। আন ছাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ফালাহুম = সুতরাং তাদের জন্য আছে। আযাবুম মুহীনুন = আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

তারা গ্রহণ করে তাদের আইমানকে/ শপথসমূহকে ঢালস্বরূপ। তারপর তারা বাধা দেয় সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। সুতরাং তাদের জন্য আছে আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

৫৮:১৭
লান তুগনিয়া = কখনো ফলপ্রসূ হবে না/ কাজে লাগবে না। আনহুম = তাদের ব্যাপারে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসম্পদ। ওয়া = আর। লা আওলাদাহুম = তাদের সন্তানসন্ততিও না। মিনাল্লাহি = আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে। শাইয়ান = কিছুমাত্রও। উলায়িকা = উহারা। আসহাবুন নারি = আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম ফীহা খালিদূনা = তারা তাতে স্থায়ী হবে।

কখনো ফলপ্রসূ হবে না/ কাজে লাগবে না তাদের ব্যাপারে তাদের মালসম্পদ আর তাদের সন্তানসন্ততিও না, আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে কিছুমাত্রও। উহারা আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।

৫৮:১৮
ইয়াওমা = যেদিন। ইয়াবআছুহুমুল্লাহু জামীআন = আল্লাহ তাদের সবাইকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন। ফাইয়াহলিফূনা = তখন হলফ/ কসম করবে। লাহু = তাঁর কাছে। কামা = যেমন। ইয়াহলিফূনা = তারা হলফ/ কসম করে। লাকুম = তোমাদের কাছে। ওয়া = আর। ইয়াহছাবূনা = তারা হিসাব/ ধারণা করে। আন্নাহুম = যে, তারা। আলা শাইয়িন = কোন (সঠিক) কিছুর উপর আছে। আলা = জেনে রাখ। ইন্নাহুম হুমুল কাযিবূনা = নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।

যেদিন আল্লাহ তাদের সবাইকে একত্রে পুনরুত্থিত করবেন তখন তারা হলফ/ কসম করবে তাঁর কাছে যেমন তারা হলফ/ কসম করে তোমাদের কাছে। আর তারা হিসাব/ ধারণা করে যে, তারা কোন (সঠিক) কিছুর উপর আছে। জেনে রাখ, নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।

৫৮:১৯
ইছতাহওয়াযা = প্রভাব বিস্তার করেছে। আলাইহিমুশ শাইতানু = তাদের উপর শয়তান। ফাআনছাহুম = তারপর তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে। যিকরাল্লাহি = আল্লাহর যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ স্মরণীয় উপদেশ/ সংবিধান। উলায়িকা = উহারা। হিযবুশ শায়তানি = হিযবুশ শয়তান/ শয়তানের দল। আলা = জেনে রাখ। ইন্না = নিশ্চয়। হিযবাশ শায়তানি হুমুল খাছিরূনা = হিযবুশ শয়তান/ শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।

প্রভাব বিস্তার করেছে তাদের উপর শয়তান। তারপর তাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছে আল্লাহর যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ স্মরণীয় উপদেশ/ সংবিধান। উহারা হিযবুশ শয়তান/ শয়তানের দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় হিযবুশ শয়তান/ শয়তানের দলই ক্ষতিগ্রস্ত।

৫৮:২০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইউহাদ্দূনাল্লাহা = বিরোধিতা করে আল্লাহর। ওয়া রাসূলাহু = ও তাঁর রসূলের। উলায়িকা = উহারা। ফিল আযাল্লীনা = অধিক লাঞ্চিতদের মধ্যে থাকবে।

নিশ্চয় যারা বিরোধিতা করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের, উহারা অধিক লাঞ্চিতদের মধ্যে থাকবে।

৫৮:২১
কাতাবাল্লাহু = আল্লাহ লিখে রেখেছেন। লাআগলিবান্না = অবশ্যই বিজয়ী হব। আনা ওয়া রুসুলী = আমি ও আমার রসূলগণ। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ক্বাভিয়্যুন আযীযুন = ক্বাভী/ মহাশক্তিমান ও আযীয/ মহাপরাক্রমশালী।

আল্লাহ লিখে রেখেছেন, ‘অবশ্যই বিজয়ী হব আমি ও আমার রসূলগণ’। নিশ্চয় আল্লাহ ক্বাভী/ মহাশক্তিমান ও আযীয/ মহাপরাক্রমশালী।

৫৮:২২
লা তাজিদু = তুমি পাবে না। ক্বাওমান = কোন কওমকে এমন যে। ইউ’মিনূনা বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি ও ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ইউওয়াদ্দূনা = আবার তারা বন্ধুত্বও করে। মান হাদ্দাল্লাহা ওয়া রাসূলাহু = তাদের সাথে যারা বিরোধিতা করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের। ওয়া লাও কানূ = যদিও তারা হয়। আবাআহুম = তাদের পিতাগণ। আও আবনাআহুম = বা তাদের পুত্রগণ। আও ইখওয়ানাহুম = বা তাদের ভাইগণ। আও আশীরাতাহুম = তাদের গোত্রীয় লোকজন। উলায়িকা = উহারা এমন লোক। কাতাবা ফী ক্বুলুবিহিমুল ঈমানা = তিনি (= আল্লাহ) লিখে দিয়েছেন যাদের কলবসমূহে ঈমান/ বিশ্বাস। ওয়া = আর। আইয়াদাহুম = তিনি তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। বিরূহিম মিনহু = তাঁর পক্ষ থেকে রুহের মাধ্যমে। ওয়া = আর। ইউদখিলুহুম = তিনি তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু = জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। রদিআল্লাহু আনহুম = রদিআল্লাহু আনহুম/ আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন তাদের উপর। ওয়া রদূ আনহু = আর তারাও সন্তুষ্ট হয়েছে তাঁর উপর। উলায়িকা = উহারা। হিযবুল্লাহি = হিযবুল্লাহ/ আল্লাহর দল। আলা = জেনে রাখ। ইন্না = নিশ্চয়। হিযবাল্লাহি হুমুল মুফলিহূনা = হিযবুল্লাহ/ আল্লাহর দলই সফল হবে।

তুমি পাবে না কোন কওমকে এমন যে, তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি ও ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি, আবার তারা বন্ধুত্বও করে তাদের সাথে যারা বিরোধিতা করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের, যদিও তারা হয় তাদের পিতাগণ বা তাদের পুত্রগণ বা তাদের ভাইগণ বা তাদের গোত্রীয় লোকজন। উহারা এমন লোক তিনি (= আল্লাহ) লিখে দিয়েছেন যাদের কলবসমূহে ঈমান/ বিশ্বাস। আর তিনি তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রুহের মাধ্যমে। আর তিনি তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। রদিআল্লাহু আনহুম/ আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন তাদের উপর, আর তারাও সন্তুষ্ট হয়েছে তাঁর উপর। উহারা হিযবুল্লাহ/ আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় হিযবুল্লাহ/ আল্লাহর দলই সফল হবে।