কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

057. সূরা হাদীদ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৫৭:১
ছাব্বাহা লিল্লাহি = আল্লাহর তাসবীহ/ পবিত্রতা প্রকাশ করছে। মা ফিছ ছামাওয়াতি = যা কিছু আছে পৃথিবীতে। ওয়াল আরদি = আর পৃথিবীতে। ওয়া = আর। হুয়াল আযীযুল হাকীমু = তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আল্লাহর তাসবীহ/ পবিত্রতা প্রকাশ করছে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর পৃথিবীতে। আর তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৫৭:২
লাহু = তাঁরই আয়ত্তে। মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। ইউহয়ী ওয়া ইউমীতু = তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীরুন = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

তাঁরই আয়ত্তে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫৭:৩
হুয়াল আওয়ালু = তিনিই আওয়াল/ প্রথম। ওয়াল আখিরু = ও আখির/ শেষ। ওয়ায যাহিরু = আর যাহের/ প্রকাশ্য। ওয়াল বাতিনু = ও বাতেন/ গুপ্ত। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। বিকুল্লি শাইয়িন = সবকিছু সম্পর্কে। আলীমুন = আলীম/ জ্ঞানী।

তিনিই আওয়াল/ প্রথম ও আখির/ শেষ, আর যাহের/ প্রকাশ্য ও বাতেন/ গুপ্ত। আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞানী।

৫৭:৪
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে। ফী ছিত্তাতিন আইয়ামিন = ছয় দিনে। ছুম্মাছতাওয়া = তারপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। আলাল আরশি = আরশের উপর। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা ইয়ালিজু = যা প্রবেশ করে। ফিল আরদি = ভূমির মধ্যে। ওয়া = আর। মা ইয়াখরুজু = যা বের হয়। মিনহা = উহা থেকে। ওয়া = আর। মা ইয়ানযিলু = যা নাযিল/ অবতীর্ণ হয়। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। ওয়া = আর। মা ইয়া’রুজু = যা উত্থিত হয়। ফীহা = উহার মধ্যে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি আছেন। মাআকুম = তোমাদের সাথে। আয়না মা কুনতুম = যেখানেই তোমরা থাক। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা বাসীরান = তোমাদের আমলের প্রতি দৃষ্টিবান।

তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে ছয় দিনে। তারপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন আরশের উপর। তিনি জানেন যা প্রবেশ করে ভূমির মধ্যে আর যা বের হয় উহা থেকে আর যা নাযিল/ অবতীর্ণ হয় আকাশ থেকে আর যা উত্থিত হয় উহার মধ্যে। আর তিনি আছেন তোমাদের সাথে যেখানেই তোমরা থাক। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের প্রতি দৃষ্টিবান।

৫৭:৫
লাহু = তাঁরই আয়ত্তে। মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। ওয়া = আর। ইলাল্লাহি = আল্লাহরই দিকে। তুরজাউল উমূরু = ফিরিয়ে নেয়া হয় সমস্ত ব্যাপার।

তাঁরই আয়ত্তে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। আর আল্লাহরই দিকে ফিরিয়ে নেয়া হয় সমস্ত ব্যাপার।

৫৭:৬
ইউলিজুল লাইলা = তিনিই প্রবেশ করান রাতকে। ফিন্নাহারি = দিনের মধ্যে। ওয়া = আর। ইউলিজুন্নাহারা = তিনিই প্রবেশ করান দিনকে। ফিল্লাইলি = রাতের মধ্যে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। আলীমুম বিযাতিস সুদূরি = সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের চিন্তা চেতনা সম্পর্কে জ্ঞাত।

তিনিই প্রবেশ করান রাতকে দিনের মধ্যে আর তিনিই প্রবেশ করান দিনকে রাতের মধ্যে। আর তিনিই সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের চিন্তা চেতনা সম্পর্কে জ্ঞাত।

৫৭:৭
আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী = আল্লাহর ও তাঁর রসূলের প্রতি। ওয়া = আর। আনফিক্বূ = তোমরা ইনফাক/ ব্যয় কর। মিম্মা জাআলাকুম মুছতাখলাফীনা ফীহি = তা থেকে যার মধ্যে তিনি তোমাদেরকে খলিফা/ স্থলাভিষিক্ত করেছেন। ফাল্লাযীনা = সুতরাং যারা। আমানূ মিনকুম = ঈমান/ বিশ্বাস করে তোমাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। আনফাক্বূ = ইনফাক/ ব্যয় করে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরুন কাবীরুন = বড় প্রতিফল।

তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আল্লাহর ও তাঁর রসূলের প্রতি আর তোমরা ইনফাক/ ব্যয় কর তা থেকে যার মধ্যে তিনি তোমাদেরকে খলিফা/ স্থলাভিষিক্ত করেছেন। সুতরাং যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে তোমাদের মধ্য থেকে আর ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের জন্য আছে বড় প্রতিফল।

৫৭:৮
ওয়া = আর। মা লাকুম = তোমাদের কী হয়েছে যে। লা তু’মিনূনা বিল্লাহি = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর না আল্লাহর প্রতি। ওয়ার রাসূলু = অথচ রসূল। ইয়াদঊকুম = তোমাদেরকে ডাকছেন। লিতু’মিনূ বিরব্বিকুম = যেন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর তোমাদের রবের প্রতি। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। আখাযা = তিনি গ্রহণ করেছেন। মীছাক্বাকুম = তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী।

আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর না আল্লাহর প্রতি? অথচ রসূল তোমাদেরকে ডাকছেন যেন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর তোমাদের রবের প্রতি। আর নিশ্চয় তিনি গ্রহণ করেছেন তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি, যদি তোমরা হও মু’মিনীন/ বিশ্বাসী।

৫৭:৯
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইউনাযযিলু = নাযিল করেছেন। আলা আবদিহী = তাঁর এক বান্দার উপর। আয়াতিম বাইয়িনাতিন = আয়াতিম বাইয়িনাত/ স্পষ্ট আয়াতসমূহ। লিইউখরিজাকুম = তোমাদেরকে বের করার জন্য। মিনায যুলুমাতি = যুলুমাত/ অন্ধকারসমূহ থেকে। ইলান্নূরি = নূরের/ আলোর দিকে। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিকুম = তোমাদের প্রতি। লারউফুর রহীমুন = রউফ/ স্নেহশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

তিনিই সেই সত্তা যিনি নাযিল করেছেন তাঁর এক বান্দার উপর আয়াতিম বাইয়িনাত/ স্পষ্ট আয়াতসমূহ, তোমাদেরকে বের করার জন্য যুলুমাত/ অন্ধকারসমূহ থেকে নূরের/ আলোর দিকে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি রউফ/ স্নেহশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৫৭:১০
ওয়া = আর। মা লাকুম = তোমাদের কী হয়েছে যে, আল্লা তুনফিক্বূ ফী সাবীলিল্লাহি = তোমরা ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে ব্যয় করছো না। ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য। মীরাছুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মীরাস/ উত্তরাধিকার। লা ইয়াছতাভী = সমান নয়। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। মান আনফাক্বা = যে ইনফাক/ ব্যয় করেছে। মিন ক্বাবলিল ফাতহি = বিজয়ের আগে। ওয়া = আর। ক্বাতালা = কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে (বিজয়ের আগে)। উলায়িকা আ’যামু = উহারাই শ্রেষ্ঠতর। দারাজাতিন = মর্যাদার মাত্রাসমূহে। মিনাল্লাযীনা = তাদের চেয়ে যারা। আনফাক্বূ = ইনফাক/ ব্যয় করেছে। মিম বা’দু = (বিজয়ের) পরে। ওয়া = আর। ক্বাতালূ = কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে (বিজয়ের পরে)। ওয়া = আর। কুল্লাওঁ ওয়াদাল্লাহুল হুসনা = আল্লাহর প্রত্যেক ওয়াদা উত্তম। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা খাবীরুন = তোমাদের আমলের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে ব্যয় করছো না? আর আল্লাহরই জন্য আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মীরাস/ উত্তরাধিকার। সমান নয় তোমাদের মধ্য থেকে যে ইনফাক/ ব্যয় করেছে বিজয়ের আগে আর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে (বিজয়ের আগে); উহারাই শ্রেষ্ঠতর মর্যাদার মাত্রাসমূহে তাদের চেয়ে যারা ইনফাক/ ব্যয় করেছে (বিজয়ের) পরে আর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে (বিজয়ের পরে)। আর আল্লাহর প্রত্যেক ওয়াদা উত্তম। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৫৭:১১
মান যাল্লাযী = এমন কেউ আছো কি যে। ইউক্বরিদুল্লাহা = আল্লাহকে করজ দেবে। ক্বারদান হাসানান = করজে হাসানা/ উত্তম ঋণ। ফাইউদ্বইফাহু লাহু = যেন তিনি তাকে তা বহুগুণে বাড়িয়ে ফেরত দেন। ওয়া লাহু = আর (যেন) তার জন্য (থাকে)। আজরুন কারীমুন = সম্মানজনক প্রতিফল।

এমন কেউ আছো কি যে আল্লাহকে করজ দেবে, করজে হাসানা/ উত্তম ঋণ? যেন তিনি তাকে তা বহুগুণে বাড়িয়ে ফেরত দেন আর (যেন) তার জন্য (থাকে) সম্মানজনক প্রতিফল?

৫৭:১২
ইয়াওমা = সেদিন। তারাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি = তুমি দেখবে মু’মিন পুরুষদেরকে ও মু’মিন নারীদেরকে। ইয়াছআ নূরুহুম = দৌড়াবে তাদের নূর/ আলো। বায়না আয়দীহিম ওয়া বিআয়মানিহিম = তাদের সামনে ও তাদের ডানে। বুশরাকুমুল ইয়াওমা জান্নাতুন = (তাদেরকে বলা হবে,) ‘আজ তোমাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = উহার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তোমরা তাতে স্থায়ী হবে। যালিকা হুয়াল ফাওযুল আযীমু = উহাই মহাসফলতা।

সেদিন তুমি দেখবে মু’মিন পুরুষদেরকে ও মু’মিন নারীদেরকে, দৌড়াবে তাদের নূর/ আলো তাদের সামনে ও তাদের ডানে। (তাদেরকে বলা হবে,) ‘আজ তোমাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ। জারি হয় উহার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তোমরা তাতে স্থায়ী হবে। উহাই মহাসফলতা’।

৫৭:১৩
ইয়াওমা = সেদিন। ইয়াক্বূলুল মুনাফিক্বূনা ওয়াল মুনাফিক্বাতু = বলবে মুনাফিক পুরুষরা ও মুনাফিক নারীরা। লিল্লাযীনা = তাদের উদ্দেশ্যে যারা। আমানুনযুরূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, (বলবে,) ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করো। নাক্বতাবিছ মিন নূরিকুম = যেন আমরা উপকৃত হতে পারি তোমাদের নূর/ আলো থেকে। ক্বীলারজিঊ = তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা ফিরে যাও। ওয়ারাআকুম = তোমাদের পিছনে। ফালিতামিছূ = তারপর তোমরা সন্ধান কর। নূরান = নূর/ আলো। ফাদুরিবা বায়নাহুম = তারপর স্থাপন করা হবে তাদের মধ্যে। বিছূরিন = একটি প্রাচীর। লাহু বাবুন = উহাতে থাকবে একটি দরজা। বাতিনূহু ফীহির রহমাতু = উহার ভিতরে থাকবে রহমত। ওয়া যহিরুহু মিন ক্বিবালিহীল আযাব = আর উহার সামনের দিকে বাহির অংশে থাকবে আযাব।

সেদিন বলবে মুনাফিক পুরুষরা ও মুনাফিক নারীরা তাদের উদ্দেশ্যে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, (বলবে,) ‘আমাদের দিকে লক্ষ্য করো, যেন আমরা উপকৃত হতে পারি তোমাদের নূর/ আলো থেকে’। তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা ফিরে যাও তোমাদের পিছনে। তারপর তোমরা সন্ধান কর নূর/ আলো’। তারপর স্থাপন করা হবে তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর। উহাতে থাকবে একটি দরজা। উহার ভিতরে থাকবে রহমত আর উহার সামনের দিকে বাহির অংশে থাকবে আযাব।

৫৭:১৪
ইউনাদুনাহুম = তারা তাদেকে ডেকে বলবে। আলাম নাকুম মাআকুম = আমরা কি ছিলাম না তোমাদের সাথে। ক্বলূ = তারা বলবে। বালা = কেন নয়?। ওয়ালাকিন্নাকুম = কিন্তু তোমরা। ফাতানতুম = ফিতনায় ফেলেছিলে। আনফুসাকুম = তোমাদের নিজেদেরকে। ওয়া = আর। তারাব্বাসতুম = তোমরা অপেক্ষা করছিলে। ওয়ারতাবতুম = আর তোমরা সন্দেহ করছিলে। ওয়া = আর। গাররাতকুমুল আমানিয়্যু = তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করেছিল তোমাদের আশা আকাংখা। হাত্তা = যতক্ষণ না। জাআ = এসেছিল। আমরুল্লাহি = আল্লাহর আদেশ। ওয়া = আর। গাররাকুম = তোমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছিল। বিল্লাহিল গারূরু = আল্লাহ সম্পর্কে কোন ধোঁকাবাজ।

তারা তাদেরকে ডেকে বলবে, ‘আমরা কি ছিলাম না তোমাদের সাথে?’ তারা বলবে, ‘কেন নয়? কিন্তু তোমরা ফিতনায় ফেলেছিলে তোমাদের নিজেদেরকে। আর তোমরা অপেক্ষা করছিলে। আর তোমরা সন্দেহ করছিলে। আর তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করেছিল তোমাদের আশা আকাংখা, যতক্ষণ না এসেছিল আল্লাহর আদেশ। আর তোমাদেরকে ধোঁকা দিয়েছিল আল্লাহ সম্পর্কে কোন ধোঁকাবাজ।

৫৭:১৫
ফালইয়াওমা = সুতরাং আজ। লা ইউ’খাজু = গ্রহণ করা হবে না। মিনকুম = তোমাদের থেকে। ফিদইয়াতুন = কোন ফিদিয়া/ বিনিময়। ওয়া = আর। লা মিনাল্লাযীনা কাফারূ = তাদের থেকেও না যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। মা’ওয়াকুমুন্নারূ = তোমাদের মাওয়া/ আবাস হবে (জাহান্নামের) আগুন। হিয়া মাওলাকুম = উহা তোমাদের মাওলা/ আশ্রয়। ওয়া = আর। বি’ছাল মাছীরু = অত্যন্ত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।

সুতরাং আজ গ্রহণ করা হবে না তোমাদের থেকে কোন ফিদিয়া/ বিনিময়, আর তাদের থেকেও না যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। তোমাদের মাওয়া/ আবাস হবে (জাহান্নামের) আগুন। উহা তোমাদের মাওলা/ আশ্রয় আর অত্যন্ত নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।

৫৭:১৬
আলাম ইয়া’নি = এখনো কি সময় আসেনি। লিল্লাযীনা আমানূ = তাদের জন্য যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আন তাখশাআ ক্বুলূবুহুম = এ ব্যাপারে যে, তাদের কলবসমূহ অবনমিত হবে। লিযিকরিল্লাহি = আল্লাহর যিকিরের/ স্মরণের/ স্মরণিকার/ স্মরণীয় উপদেশের/ সংবিধানের জন্য। ওয়া = আর। মা নাযালা মিনাল হাক্বক্বি = যা নাযিল হয়েছে সত্য থেকে। ওয়া = আর। লা ইয়াকূনূ = তারা হবে না। কাল্লাযীনা = তাদের মত যাদেরকে। উতুল কিতাবা = কিতাব দেয়া হয়েছিল। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বে। ফাত্বলা = তারপর অতিবাহিত হয়ে গেছে। আলাইহিমুল আমাদু = তাদের উপর বহুকাল। ফাক্বাসাত = ফলে শক্ত হয়ে গেছে। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ। ওয়া = আর। কাছীরুম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে অধিকাংশই। ফাছিক্বূনা = ফাসেক/ পাপাচারী।

এখনো কি সময় আসেনি তাদের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে এ ব্যাপারে যে, তাদের কলবসমূহ অবনমিত হবে আল্লাহর যিকিরের/ স্মরণের/ স্মরণিকার/ স্মরণীয় উপদেশের/ সংবিধানের জন্য, আর উহার জন্য যা নাযিল হয়েছে সত্য থেকে। আর তারা হবে না তাদের মত যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল ইতিপূর্বে? তারপর অতিবাহিত হয়ে গেছে তাদের উপর বহুকাল। ফলে শক্ত হয়ে গেছে তাদের কলবসমূহ। আর তাদের মধ্য থেকে অধিকাংশই ফাসেক/ পাপাচারী।

৫৭:১৭
ই’লামূ = তোমরা জেনে রাখ। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। ইউহয়িল আরদা = জীবিত করেন ভূমিকে। বা’দা মাওতিহা = উহার মৃত্যুর/ শুষ্কতার পর। ক্বাদ = নিশ্চয়। বাইয়ান্না = আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছি। লাকুমু আয়াতি = তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম তা’ক্বিলূনা = যেন তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করতে পার।

তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ জীবিত করেন ভূমিকে উহার মৃত্যুর/ শুষ্কতার পর। নিশ্চয় আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ, যেন তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করতে পার।

৫৭:১৮
ইন্নাল মুসসাদ্দিক্বীনা = নিশ্চয় সদকাকারী পুরুষরা। ওয়াল মুসসদ্দিক্বাতি = আর সদকাকারী নারীরা। ওয়া = আর। আক্বরদুল্লাহা = যারা আল্লাহকে করজ দিয়েছে। ক্বারদান হাছানান = করজে হাছানা/ উত্তম ঋণ। ইউদ্বআফু লাহুম = উহা তাদেরকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হবে। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য থাকবে। আজরুন কারীমুন = সম্মানজনক প্রতিফল।

নিশ্চয় সদকাকারী পুরুষরা আর সদকাকারী নারীরা আর যারা আল্লাহকে করজ দিয়েছে, করজে হাসানা/ উত্তম ঋণ; উহা তাদেরকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়া হবে। আর তাদের জন্য থাকবে সম্মানজনক প্রতিফল।

৫৭:১৯
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া রুসুলিহী = ও তাঁর রসূলদের প্রতি। উলায়িকা হুমুস সিদ্দিক্বূনা = উহারাই সিদ্দিক/ সত্যবাদী। ওয়াশ শুহাদাউ = ও শহীদ। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। লাহুম = তাদের জন্য থাকবে। আজরুহুম = তাদের প্রতিফল। ওয়া = ও। নূরুহুম = তাদের নূর/ আলো। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। উলায়িকা = উহারাই। আসহাবুল জাহীমি = আসহাবুল জাহীম (= যারা জাহান্নামের শাস্তি পাবে)।

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলদের প্রতি উহারাই সিদ্দিক/ সত্যবাদী ও শহীদ, তাদের রবের কাছে। তাদের জন্য থাকবে তাদের প্রতিফল ও তাদের নূর/ আলো। আর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আর মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, উহারাই আসহাবুল জাহীম (= যারা জাহান্নামের শাস্তি পাবে)।

৫৭:২০
ই’লামূ = তোমরা জেনে রাখ। আন্নামাল হায়াতুদ দুনইয়া = বস্তুত হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। লায়িবুওঁ ওয়া লাহউওঁ ওয়া যীনাতুওঁ তাফাখুরুম বায়নাকুম = খেলা, কৌতুক, যীনাত/ সৌন্দর্য ও তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক অহংকার। ওয়া = আর। তাকাছুরুন ফিল আমওয়ালি ওয়াল আওলাদি = মাল সম্পদ ও সন্তানসন্ততির ক্ষেত্রে অধিক পাওয়ার প্রতিযোগিতা। কামাছালি গায়ছিন = ইহার দৃষ্টান্ত হচ্ছে যেমন বৃষ্টি। আ’জাবাল কুফফারা = চমৎকৃত করে কৃষকদেরকে। নাবাতুহু = উহার উদ্ভিদরাজি। ছুম্মা = তারপর। বাহীজু = শুকিয়ে যায়। ফাতারাহু = তারপর তুমি উহাকে দেখ। মুসফাররান = হলুদবর্ণ। ছুম্মা = তারপর। ইয়াকূনু = উহা হয়ে যায়। হুতামান = খড়কুটা। ওয়া = আর। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে আছে। আযাবুন শাদীদুন = (কারো জন্য) আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি। ওয়া = আর (কারো জন্য)। মাগফিরাতুম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত/ ক্ষমা। ওয়া = ও। রিদওয়ানুন = রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। ওয়া = আর। মাল হায়াতুদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন কিছুই নয়। ইল্লা মাতাউল গুরূরি = ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া।

তোমরা জেনে রাখ বস্তুত হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন খেলা, কৌতুক, যীনাত/ সৌন্দর্য ও তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক অহংকার আর মাল সম্পদ ও সন্তানসন্ততির ক্ষেত্রে অধিক পাওয়ার প্রতিযোগিতা। ইহার দৃষ্টান্ত যেমন বৃষ্টি, চমৎকৃত করে কৃষকদেরকে উহার উদ্ভিদরাজি, তারপর শুকিয়ে যায়, তারপর তুমি উহাকে দেখ হলুদবর্ণ, তারপর উহা হয়ে যায় খড়কুটা। আর আখিরাতে আছে (কারো জন্য) আযাবুন শাদীদুন/ কঠোর শাস্তি আর (কারো জন্য) আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাত/ ক্ষমা ও রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। আর হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন কিছুই নয় ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া।

৫৭:২১
ছাবিক্বূ = অগ্রণী হও। ইলা মাগফিরাতিম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাতের/ ক্ষমার দিকে। ওয়া জান্নাতিন = ও জান্নাতের দিকে। আরদুহা = যার প্রশস্ততা। কাআরদিছ ছামায়ি ওয়াল আরদি = আকাশের ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত। উয়িদ্দাত = উহা প্রস্তুত করা হয়েছে। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া রুসুলিহী = ও তাঁর রসূলগণের প্রতি। যালিকা = উহা। ফাদলুল্লাহি = আল্লাহর ফযল/ অনুগ্রহ। ইউ’তীহি = তিনি উহা দান করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। যুল ফাদলিল আযীমি = মহা অনুগ্রহশীল।

অগ্রণী হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাতের/ ক্ষমার দিকে ও জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশের ও পৃথিবীর প্রশস্ততার মত। উহা প্রস্তুত করা হয়েছে তাদের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলগণের প্রতি। উহা আল্লাহর ফযল/ অনুগ্রহ। তিনি উহা দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।

৫৭:২২
মা আসাবা মিম মুসীবাতিন = তোমাদের কাছে পৌঁছে না কোন মুসিবত। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। লা ফী আনফুসিকুম = তোমাদের নিজেদের মধ্যেও না। ইল্লা ফী কিতাবিম = কিতাবে লিখিত থাকা ছাড়া। মিন ক্বাবলি আননাবরাআহা = আমরা উহা (ঐ মুসিবত) সৃষ্টি করার পূর্ব থেকে। ইন্না = নিশ্চয়। যালিকা = উহা। আলাল্লাহি = আল্লাহর জন্য। ইয়াছীরুন = সহজ।

তোমাদের কাছে পৌঁছে না কোনো মুসিবত পৃথিবীতে আর তোমাদের নিজেদের মধ্যেও না, (উহার কার্যকারণ বা প্রাকৃতিক আইন) কিতাবে লিখিত থাকা ছাড়া, আমরা উহা (ঐ মুসিবত) সৃষ্টি করার পূর্ব থেকে (তা লিখিত রয়েছে)। নিশ্চয় উহা (সব ধরনের মুসিবতের সব ধরনের কার্যকারণ প্রণয়ন করা) আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।

৫৭:২৩
লিকায়লা = যেন না। তা’ছাও = তোমরা আক্ষেপ কর। আলা মা ফাতাকুম = যা তোমরা হারাও তার ব্যাপারে। ওয়া = আর। লা তাফরাহূ = যেন না তোমরা খুশি হও। বিমা আতাকুম = উহার কারণে যা তিনি তোমাদেরকে দান করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইউহিব্বু = ভালবাসেন না। কুল্লা মুখতালিন ফাখূরিন = কোন উদ্ধত অহংকারীকে।

যেন না তোমরা আক্ষেপ কর যা তোমরা হারাও তার ব্যাপারে। আর যেন না তোমরা খুশি হও উহার কারণে যা তিনি তোমাদেরকে দান করেন। আর আল্লাহ ভালবাসেন না কোন উদ্ধত অহংকারীকে।

৫৭:২৪
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াবখালূনা = বখিলি/ কৃপণতা করে। ওয়া = আর। ইয়া’মারূনান্নাছা = মানুষকে আদেশ দেয়। বিল বুখলি = বখিলি/ কৃপণতা করার জন্য। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াতাওয়াল্লা = যে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। হুয়াল গানিয়্যুল হামীদু = গণি/ অভাবমুক্ত ও হামীদ/ প্রশংসিত।

যারা বখিলি/ কৃপণতা করে আর মানুষকে আদেশ দেয় বখিলি/ কৃপণতা করার জন্য। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ গণি/ অভাবমুক্ত ও হামীদ/ প্রশংসিত।

৫৭:২৫
লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। রুসুলানা = আমাদের রসূলদেরকে। বিল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। ওয়া = আর। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। মাআহুমুল কিতাবা = তাদের সাথে কিতাব। ওয়াল মীযানা = ও মীযান/ দাড়িপাল্লা/ মানদন্ড। লিইয়াক্বূমান্নাছু বিল ক্বিসতি = যেন মানুষ ন্যায়বিচার কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ওয়া = আর। আনযালনাল হাদীদা = তিনি নাযিল করেছেন হাদীদ/ লোহা/ রাজদন্ড। ফীহি = উহার মধ্যে আছে। বা’ছুন শাদীদুন = প্রচন্ড শক্তি। ওয়া = আর। মানাফিউ = ব্যাপক উপকারিতা। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। ওয়া = আর। লিইয়া’লামা = যেন আল্লাহ প্রকাশ করেন। মাইঁ ইয়ানসুরুহু ওয়া রুসুলুহু = কে সাহায্য করে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে। বিল গায়বি = (তাঁকে) না দেখা সত্ত্বেও। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ক্বাভিয়্যুন আযীযুন = ক্বাভী/ মহাশক্তিমান ও আযীয/ মহাপরাক্রমশালী।

নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি আমাদের রসূলদেরকে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে আর আমরা নাযিল করেছি তাদের সাথে কিতাব ও মীযান/ দাড়িপাল্লা/ মানদন্ড, যেন মানুষ ন্যায়বিচার কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আর তিনি নাযিল করেছেন হাদীদ/ লোহা/ রাজদন্ড, উহার মধ্যে আছে প্রচন্ড শক্তি আর ব্যাপক উপকারিতা মানবজাতির জন্য। আর যেন আল্লাহ প্রকাশ করেন কে সাহায্য করে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে, (তাঁকে) না দেখা সত্ত্বেও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্বাভী/ মহাশক্তিমান ও আযীয/ মহাপরাক্রমশালী।

৫৭:২৬
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছিলাম। নূহাওঁ ওয়া ইবরাহীমা = নূহকে ও ইবরাহীমকে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা স্থাপন করেছিলাম। ফী যুররিয়াতিহিমা = তাদের উভয়ের যুররিয়াতের/ বংশধরের মধ্যে। আন নবুওয়াতা ওয়াল কিতাবা = নবুয়াত ও কিতাব। ফামিনহুম = তারপর তাদের মধ্য থেকে কিছু। মুহতাদিন = হিদায়াতপ্রাপ্ত। ওয়া = আর। কাছীরুম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে অধিকাংশ। ফাছিক্বূনা = ফাসেক/ পাপাচারী।

আর নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছিলাম নূহকে ও ইবরাহীমকে। আর আমরা স্থাপন করেছিলাম তাদের উভয়ের যুররিয়াতের/ বংশধরের মধ্যে নবুয়াত ও কিতাব। তারপর তাদের মধ্য থেকে কিছু হিদায়াতপ্রাপ্ত আর তাদের মধ্য থেকে অধিকাংশ ফাসেক/ পাপাচারী।

৫৭:২৭
ছুম্মা = তারপর। ক্বাফফায়না = আমরা অনুগামী করেছিলাম। আলা আছারিহিম = তাদের আছারের/ শিক্ষার উপর। বিরুসুলিনা = আমাদের রসূলদেরকে। ওয়া = আর। ক্বাফফায়না = আমরা অনুগামী করেছিলাম। বিঈসাবনি মারইয়ামা = ঈসা ইবনে মারিয়ামকে। ওয়া = আর। আতাইনাহু = আমরা তাকে দিয়েছিলাম। আল ইনজীলা = ইনজীল। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা দিয়েছিলাম। ফী ক্বূলূবিল্লাযীনাত তাবাঊহু = তাদের কলবসমূহের মধ্যে যারা তাকে ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছিল। র’ফাতওঁ ওয়া রহমাতান = স্নেহ ও দয়া। ওয়া = আর। রাহবানিয়্যাতানিবতাদাঊহা = রাহবানিয়াত/ বৈরাগ্যবাদ তারা নিজেরাই বিদআতরূপে প্রবর্তন করেছিল। মা কাতাবনাহা আলাইহিম = আমরা উহা তাদের উপর বিধানরূপে দিইনি। ইল্লাবতিগাআ রিদওয়ানিল্লাহি = কিন্তু তারা তা করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। ফামা রআওহা হাক্বক্বা রিআইয়াতিহা = তারপর তারা তা সেভাবে পালনও করেনি যেভাবে তা পালন করার ছিল। ফাআতাইনাল্লাযীনা আমানূ মিনহুম = তারপর আমরা তাদেরকে দিয়েছিলাম যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছিল তাদের মধ্য থেকে। আজরাহুম = (দিয়েছিলাম) তাদের প্রতিফল। ওয়া = আর। কাছীরুম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে অধিকাংশই ছিল। ফাছিক্বূনা = ফাসেক/ পাপাচারী।

তারপর আমরা অনুগামী করেছিলাম তাদের আছারের/ শিক্ষার উপর আমাদের রসূলদেরকে। আর আমরা অনুগামী করেছিলাম ঈসা ইবনে মারিয়ামকে। আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম ইনজীল। আর আমরা দিয়েছিলাম তাদের কলবসমূহের মধ্যে যারা তাকে ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছিল স্নেহ ও দয়া। আর রাহবানিয়াত/ বৈরাগ্যবাদ তারা নিজেরাই বিদআতরূপে প্রবর্তন করেছিল। আমরা উহা তাদের উপর বিধানরূপে দিইনি। কিন্তু তারা তা করেছে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়। তারপর তারা তা সেভাবে পালনও করেনি যেভাবে তা পালন করার ছিল। তারপর আমরা তাদেরকে দিয়েছিলাম যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছিল তাদের মধ্য থেকে, (দিয়েছিলাম) তাদের প্রতিফল। আর তাদের মধ্য থেকে অধিকাংশই ছিল ফাসেক/ পাপাচারী।

৫৭:২৮
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা = হে ঐসব লোক যারা। আমানুত্তাক্বুল্লাহা = ঈমান/ বিশ্বাস করেছ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। ওয়া = আর। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর। বিরসূলিহী = তাঁর রসূলের প্রতি। ইই’তিকুম = তিনি তোমাদেরকে দিবেন। কিফলাইনি মির রহমাতিহী = তাঁর রহমতের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে। ওয়া = আর। ইয়াজআল লাকুম = তিনি তোমাদেরকে দিবেন। নূরান = নূর/ আলো। তামশূনা বিহা = উহা দ্বারা তোমরা পথ চলবে। ওয়া = আর। ইয়াগফির লাকুম = তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর তাঁর রসূলের প্রতি। তিনি তোমাদেরকে দিবেন তাঁর রহমতের থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে, আর তিনি তোমাদেরকে দিবেন নূর/ আলো, উহা দ্বারা তোমরা পথ চলবে, আর তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৫৭:২৯
লিআল্লা ইয়া’লাম = যেন জানতে পারে। আহলাল কিতাবি = আহলে কিতাব। আল্লা ইয়াক্বুদিরূনা = যে, তারা ক্ষমতা রাখে না। আলা শাইয়িন = কোন কিছুর উপর। মিন ফাদলিল্লাহি = আল্লাহর ফযলের/ অনুগ্রহের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। আন্নাল ফাদলা = নিশ্চয় সমস্ত ফযল/ অনুগ্রহ। বিইয়াদিল্লাহি = আল্লাহরই হাতে। ইউ’তীহি = তিনি উহা দান করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। যুল ফাদলিল আযীমি = মহা অনুগ্রহশীল।

যেন জানতে পারে আহলে কিতাব যে, তারা ক্ষমতা রাখে না কোন কিছুর উপর আল্লাহর ফযলের/ অনুগ্রহের মধ্য থেকে। আর নিশ্চয় সমস্ত ফযল/ অনুগ্রহ আল্লাহরই হাতে। তিনি উহা দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।