কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

048. সূরা ফাতহ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৪৮:১
ইন্না = নিশ্চয় আমরা। ফাতাহনা লাকা = তোমাকে ফাতহ/ বিজয় দিয়েছি। ফাতহাম মুবীনান = ফাতহুল মুবীন/ প্রকাশ্য ও স্পষ্ট বিজয়।

নিশ্চয় আমরা তোমাকে ফাতহ/ বিজয় দিয়েছি, ফাতহুল মুবীন/ প্রকাশ্য ও স্পষ্ট বিজয়।

৪৮:২
লিইয়াগফিরা লাকাল্লাহু = যেন আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেন। মা তাক্বাদ্দামা মিন যামবিকা = তুমি যে ত্রুটি আগে করেছিলে। ওয়া = আর। মা তাআখখারা = যা পরে করেছিলে। ওয়া = আর। ইউতিম্মা = যেন তিনি সম্পূর্ণ করে দেন। নি’মাতাহু = তাঁর নিয়ামত/ অনুগ্রহ। আলাইকা = তোমার উপর। ওয়া = আর। ইয়াহদিয়াকা = তিনি তোমাকে হিদায়াত করেন। সিরাতাম মুসতাক্বীমান = সিরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে।

যেন আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেন তুমি যে ত্রুটি আগে করেছিলে আর যা পরে করেছিলে, আর যেন তিনি সম্পূর্ণ করে দেন তাঁর নিয়ামত/ অনুগ্রহ তোমার উপর, আর তিনি তোমাকে হিদায়াত করেন সিরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে।

৪৮:৩
ওয়া = আর। ইয়ানসুরুকাল্লাহু = যেন আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করেন। নাসরান আযীযান = বলিষ্ঠ সাহায্য।

আর যেন আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করেন, বলিষ্ঠ সাহায্য।

৪৮:৪
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আনযালাছ ছাকীনাতা = নাযিল করেছেন ছাকীনা/ প্রশান্তি। ফী ক্বুলূবিল মু’মিনীনা = মু’মিনদের কলবসমূহে। লিইয়াযদাদূ = যেন তিনি বাড়িয়ে দেন। ঈমানান মাআ ঈমানিহিম = তাদের ঈমানের সাথে আরো (মজবুত) ঈমান। ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই আয়ত্তে। জুনূদুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৈন্যসমূহ। ওয়া কানাল্লাহি আলীমান হাকীমান = আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

তিনিই সেই সত্তা যিনি নাযিল করেছেন ছাকীনা/ প্রশান্তি মু’মিনদের কলবসমূহে, যেন তিনি বাড়িয়ে দেন তাদের ঈমানের সাথে আরো (মজবুত) ঈমান। আর আল্লাহরই আয়ত্তে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৈন্যসমূহ। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪৮:৫
লিইউদখিলাল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি = যেন তিনি দাখিল/ প্রবেশ করান মু’মিন পুরুষদেরকে ও মু’মিন নারীদেরকে। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। ইউকাফফিরা = তিনি ঢেকে দেবেন। আনহুম = তাদের থেকে। ছাইয়িআতিহিম = তাদের মন্দসমূহকে। ওয়া = আর। কানা যালিকা = উহা হল। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর নিকট। ফাওযান আযীমান = মহাসফলতা।

যেন তিনি দাখিল/ প্রবেশ করান মু’মিন পুরুষদেরকে ও মু’মিন নারীদেরকে জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর তিনি ঢেকে দেবেন তাদের থেকে তাদের মন্দসমূহকে। আর উহা হল আল্লাহর নিকট মহাসফলতা।

৪৮:৬
ওয়া = আর। ইউআযযিবাল মুনাফিক্বীনা = তিনি শাস্তি দেবেন মুনাফিক পুরুষদেরকে। ওয়াল মুনাফিক্বাতি = ও মুনাফিক নারীদেরকে। ওয়াল মুশরিকীনা = আর মুশরিক পুরুষদেরকে। ওয়াল মুশরিকাতিয যন্নীনা = ও মুশরিক নারীদেরকে, যারা অনুমান করে। বিল্লাহি = আল্লাহ সম্পর্কে। যন্নাছ ছাওয়ি = মন্দ অনুমান। আলাইহিম = তাদের উপর পড়েছে। দায়িরাতুছ ছাওয়ি = অমঙ্গলের প্রভাব। ওয়া = আর। গাদিবাল্লাহু = আল্লাহ রাগান্বিত হয়েছেন। আলাইহিম = তাদের উপর। ওয়া = আর। লাআনাহুম = তিনি তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। ওয়া = আর। আআদ্দা = প্রস্তুত করে রেখেছেন। লাহুম = তাদের জন্য। জাহান্নামা = জাহান্নাম। ওয়া = আর। ছাআত মাসীরান = উহা অত্যন্ত মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল/ ফিরে যাবার স্থান।

আর তিনি শাস্তি দেবেন মুনাফিক পুরুষদেরকে ও মুনাফিক নারীদেরকে আর মুশরিক পুরুষদেরকে ও মুশরিক নারীদেরকে, যারা অনুমান করে আল্লাহ সম্পর্কে, মন্দ অনুমান। তাদের উপর পড়েছে অমঙ্গলের প্রভাব, আর আল্লাহ রাগান্বিত হয়েছেন তাদের উপর, আর তিনি তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন, আর প্রস্তুত করে রেখেছেন তাদের জন্য জাহান্নাম। আর উহা অত্যন্ত মন্দ প্রত্যাবর্তনস্থল/ ফিরে যাবার স্থান।

৪৮:৭
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই আয়ত্তে। জুনূদুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৈন্যসমূহ। ওয়া কানাল্লাহু আযীযান হাকীমান = আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর আল্লাহরই আয়ত্তে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৈন্যসমূহ। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪৮:৮
ইন্না = নিশ্চয়। আরছালনাকা = আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি। শাহিদাওঁ ওয়া মুবাশশিরাওঁ ওয়া নাযীরান = শাহীদ/ সাক্ষী, মুবাশশির/ সুসংবাদদাতা ও নাযীর/ সতর্ককারী হিসাবে।

নিশ্চয় আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি শাহীদ/ সাক্ষী, মুবাশশির/ সুসংবাদদাতা ও নাযীর/ সতর্ককারী হিসাবে।

৪৮:৯
লিতু’মিনূ = যেন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = ও। রাসূলিহী = তাঁর রসূলের প্রতি। ওয়া = আর। তুওয়াযযিরূহু = তোমরা তাকে সাহায্য কর। ওয়া = আর। তুওয়াক্বক্বিরূহু = তোমরা তাকে সম্মান কর। ওয়া = আর। তুছাব্বিহূহু = তোমরা তাঁর (= আল্লাহর) তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা কর। বুকরাতান ওয়া আসীলান = বুকরাতানে/ সকালে ও আসীলায়/ বিকালে।

যেন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি আর তোমরা তাকে সাহায্য কর, আর তোমরা তাকে সম্মান কর, আর তোমরা তাঁর (= আল্লাহর) তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা কর বুকরাতানে/ সকালে ও আসীলায়/ বিকালে।

৪৮:১০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইউবায়িঊনাকা = তোমার কাছে বাইয়াত/ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি/ শপথ করে। ইন্নামা = প্রকৃতপক্ষে। ইউবায়িঊনাকাল্লাহা = তারা আল্লাহর কাছে বাইয়াত/ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি/ শপথ করে। ইয়াদুল্লাহি = আল্লাহর হাত থাকে। ফাওক্বা আয়দীহিম = তাদের হাতসমূহের উপরে। ফামান নাকাছা = তারপর যে (বাইয়াত) ভঙ্গ করে। ফাইন্নামা = আসলে। ইয়ানকুছু = সে ভঙ্গ করবে। আলা নাফসিহী = তার নিজেরই বিরুদ্ধে (= তার বাইয়াত ভঙ্গ করা তার নিজের বিরুদ্ধে যাবে)। ওয়া = আর। মান = যে। আওফা = পূর্ণ করবে। বিমা আহাদা আলাইহুল্লাহা = ঐ বিষয় যার ব্যাপারে সে তার নিজের উপর আল্লাহর সাথে আহদ/ প্রতিশ্রুতিদান করেছে। ফাছাইউ’তীহি = তিনি তাকে শীঘ্রই দিবেন। আজরান আযীমান = মহা প্রতিফল।

নিশ্চয় যারা তোমার কাছে বাইয়াত/ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি/ শপথ করে, প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছে বাইয়াত/ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি/ শপথ করে। আল্লাহর হাত থাকে তাদের হাতসমূহের উপরে। তারপর যে (বাইয়াত) ভঙ্গ করে, আসলে সে ভঙ্গ করবে তার নিজেরই বিরুদ্ধে (= তার বাইয়াত ভঙ্গ করা তার নিজের বিরুদ্ধে যাবে)। আর যে পূর্ণ করবে ঐ বিষয় যার ব্যাপারে সে তার নিজের উপর আল্লাহর সাথে আহদ/ প্রতিশ্রুতিদান করেছে, তিনি তাকে শীঘ্রই দিবেন মহা প্রতিফল।

৪৮:১১
ছাইয়াক্বূলু লাকাল মুখাল্লাফূনা মিনাল আ’রাবি = শীঘ্রই তোমাকে বলবে আ’রববাসীদের মধ্য থেকে পিছনে থেকে যাওয়া লোকেরা। ছাগালাতনা = আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছিল। আমওয়ালুনা = আমাদের মাল সম্পদ। ওয়া = আর। আহলূনা = আমাদের আহাল/ পরিবার-পরিজন। ফাছতাগফির = সুতরাং ক্ষমা প্রার্থনা করুন। লানা = আমাদের জন্য। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। বিআলছিনাতিহিম = তাদের জিহ্বাসমূহ দিয়ে এমন কথা। মা লাইছা ফী ক্বুলূবিহিম = যা তাদের কলবসমূহে নেই। ক্বুল = বলো। ফামাইঁ ইয়ামলিকু = তবে কে ক্ষমতা রাখে। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে। শাইয়ান = কিছুমাত্রও। ইন = যদি। আরাদা = তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন। বিকুম দররান = তোমাদেরকে ক্ষতি করতে। আও = অথবা। আরাদা = তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন। বিকুম নাফআন = তোমাদেরকে উপকার করতে। বাল = বরং। কানাল্লাহু বিমা তা’মালূনা = আল্লাহ যা কিছু কাজ তোমরা করছো উহা সম্পর্কে। খাবীরান = খাবীর/ অবহিত।

শীঘ্রই তোমাকে বলবে আ’রববাসীদের মধ্য থেকে পিছনে থেকে যাওয়া লোকেরা, ‘আমাদেরকে ব্যস্ত রেখেছিল আমাদের মাল সম্পদ আর আমাদের আহাল/ পরিবার-পরিজন। সুতরাং ক্ষমা প্রার্থনা করুন আমাদের জন্য’। তারা বলে তাদের জিহ্বাসমূহ দিয়ে এমন কথা যা তাদের কলবসমূহে নেই। বলো, ‘তবে কে ক্ষমতা রাখে তোমাদের জন্য আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে কিছুমাত্রও; যদি তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে ক্ষতি করতে। অথবা (যদি) তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে উপকার করতে (তবে কে তা রুখতে পারে?)। বরং আল্লাহ যা কিছু কাজ তোমরা করছো উহা সম্পর্কে খাবীর/ অবহিত’।

৪৮:১২
বাল = বরং। যনানতুম = তোমরা অনুমান করেছিলে। আল্লাইঁ ইয়ানক্বালিবার রসূলু = যে, ফিরে আসতে পারবে না রসূল। ওয়াল মু’মিনূনা = ও মু’মিনগণ। ইলা আহলীহিম = তাদের আহালের/ পরিবার পরিজনের কাছে। আবাদান = কখনোই। ওয়া = আর। যুইয়িনা যালিকা = উহা সুশোভিত করা হয়েছিল। ফী ক্বুলূবিকুম = তোমাদের কলবসমূহের মধ্যে। ওয়া = আর। যনানতুম = তোমরা অনুমান করেছিলে। যন্নাছ ছাওয়ি = অত্যন্ত মন্দ অনুমান। ওয়া = আর। কুনতুম = তোমরা ছিলে। ক্বাওমাম বূরান = অত্যন্ত খারাপ কওম/ সম্প্রদায়।

বরং তোমরা অনুমান করেছিলে যে, ফিরে আসতে পারবে না রসূল ও মু’মিনগণ তাদের আহালের/ পরিবার পরিজনের কাছে কখনোই। আর উহা সুশোভিত করা হয়েছিল তোমাদের কলবসমূহের মধ্যে আর তোমরা অনুমান করেছিলে, অত্যন্ত মন্দ অনুমান। আর তোমরা ছিলে অত্যন্ত খারাপ কওম/ সম্প্রদায়।

৪৮:১৩
ওয়া = আর। মাল্লাম ইউ’মিম বিল্লাহি ওয়া রাসূলিহী = যে ঈমান/ বিশ্বাস করেনি আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি। ফাইন্না = সেক্ষেত্রে নিশ্চয় আমরা। আ’তাদনা = প্রস্তুত করে রেখেছি। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। ছায়ীরা = সায়ীর/ জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড (= জাহান্নাম)।

আর যে ঈমান/ বিশ্বাস করেনি আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলের প্রতি, সেক্ষেত্রে নিশ্চয় আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য সায়ীর/ জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড (= জাহান্নাম)।

৪৮:১৪
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই আয়ত্তে। মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। ইয়াগফির = তিনি ক্ষমা করবেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করবেন। ওয়া = আর। ইউআযযিবু = তিনি শাস্তি দিবেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করবেন। ওয়া = আর। কানাল্লাহু গাফূরার রহীমান = আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

আর আল্লাহরই আয়ত্তে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। তিনি ক্ষমা করবেন যাকে তিনি ইচ্ছা করবেন। আর তিনি শাস্তি দিবেন যাকে তিনি ইচ্ছা করবেন। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৪৮:১৫
ছাইয়াক্বূলুল মুখাল্লাফূনা = শীঘ্রই বলবে পিছনে থেকে যাওয়া লোকেরা। ইযান তলাক্বতুম = যখন তোমরা চলবে। ইলা মাগানিমা = মাগানিমের/ গণিমতের/ যুদ্ধলভ্য সম্পদের দিকে, উহা (= মাগানিম/ গণিমত) গ্রহণ করার জন্য। যারূনা = (তখন তারা বলবে,) ‘আমাদেরকে যেতে দাও। নাত্তাবি’কুম = আমরা তোমাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো। ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইউবাদ্দিলূ = বদল/ পরিবর্তন করতে। কালামাল্লাহি = আল্লাহর কালামকে/ বাণীকে। ক্বুল = বল। লান তাত্তাবিঊনা = তোমরা কখনো আমাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে না। কাযালিকুম = এভাবেই। ক্বলাল্লাহু = আল্লাহ বলে দিয়েছেন। মিন ক্বাবলু = আগেই। ফাছাইয়াক্বূলূনা = তারপর শীঘ্রই তারা বলবে। বাল = বরং। তাহছুদূনানা = তোমরাই আমাদের হিংসা করছো। বাল = বরং। কানূ লা ইয়াফক্বাহূনা = তারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে না/ বুঝে না। ইল্লা ক্বালীলা = অল্প ছাড়া।

শীঘ্রই বলবে পিছনে থেকে যাওয়া লোকেরা যখন তোমরা চলবে মাগানিমের/ গণিমতের/ যুদ্ধলভ্য সম্পদের দিকে, উহা (= মাগানিম/ গণিমত) গ্রহণ করার জন্য, (তখন তারা বলবে,) ‘আমাদেরকে যেতে দাও। আমরা তোমাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো’। তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে বদল/ পরিবর্তন করতে আল্লাহর কালামকে/ বাণীকে। বল, ‘তোমরা কখনো আমাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে না। এভাবেই আল্লাহ বলে দিয়েছেন আগেই’। তারপর শীঘ্রই তারা বলবে, ‘বরং তোমরাই আমাদের হিংসা করছো’। বরং তারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে না/ বুঝে না, অল্প ছাড়া।

৪৮:১৬
ক্বুল = বল। লিল মুখাল্লাফীনা মিনাল আ’রাবি = আ’রববাসীদের মধ্য থেকে পিছনে থেকে যাওয়া লোকদেরকে। ছাতুদআউনা = শীঘ্রই তোমাদেরকে ডাকা হবে। ইলা ক্বাওমি উলী বা’ছিন শাদীদিন = এক উলিল বা’ছিন শাদীদ/ প্রবল শক্তিশালী কওমের বিরুদ্ধে। তুক্বাতিলূনাহুম = তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ যুদ্ধ করতে হবে। আও = অথবা। ইউছলিমূনা = তারা আত্মসমর্পণ করবে। ফাইন = তখন যদি। তুতিঊ = তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য কর। ইউ’তিকুমুল্লাহু = তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে দিবেন। আজরান হাছানান = উত্তম পুরস্কার। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাতাওয়াল্লাও = তোমরা পিছনে ফিরে যাও। কামা তাওয়াল্লায়তুম = যেমন তোমরা পিছনে ফিরে গিয়েছিলে। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বে। ইউআযযিবকুম = তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। আযাবান আলীমান = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

বল আ’রববাসীদের মধ্য থেকে পিছনে থেকে যাওয়া লোকদেরকে, ‘শীঘ্রই তোমাদেরকে ডাকা হবে এক উলিল বা’ছিন শাদীদ/ প্রবল শক্তিশালী কওমের বিরুদ্ধে। তোমাদেরকে তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ যুদ্ধ করতে হবে অথবা তারা আত্মসমর্পণ করবে। তখন যদি তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে দিবেন উত্তম পুরস্কার। আর যদি তোমরা পিছনে ফিরে যাও যেমন তোমরা পিছনে ফিরে গিয়েছিলে ইতিপূর্বে, তাহলে তিনি তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪৮:১৭
লাইছা আলাল আ’মা হারাজুন = অন্ধের জন্য কোন দোষ নেই। ওয়া লা আলাল আ’রাজি হারাজুন = আর পঙ্গুর জন্যও কোন দোষ নেই। ওয়া লা আলাল মারীদ্বি হারাজুন = আর রোগীর জন্যও কোন দোষ নেই। ওয়া = আর। মাইঁ ইউতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলাহূ = যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের। ইউদখিলহু = তিনি তাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াতাওয়াল্লা = যে পিঠ ফিরাবে। ইউআযযিবহু = তিনি তাকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। আযাবান আলীমান = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

অন্ধের জন্য কোন দোষ নেই আর পঙ্গুর জন্যও কোন দোষ নেই আর রোগীর জন্যও কোন দোষ নেই। আর যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের, তিনি তাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। আর যে পিঠ ফিরাবে, তিনি তাকে আযাব/ শাস্তি দিবেন, আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪৮:১৮
লাক্বাদ = নিশ্চয়। রদিআল্লাহু = আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন। আনিল মু’মিনীনা = মু’মিনদের প্রতি। ইয = যখন। ইউবায়ীঊনাকা = তারা তোমার কাছে বাইয়াত/ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি/ শপথ করেছে। তাহতাশ শাজারাতা = গাছের নিচে। ফাআলিমা = তখন তিনি জানতেন। মা ফী ক্বুলূবিহিম = যা ছিল তাদের কলবসমূহে। ফাআনযালাছ ছাকীনাতা = ফলে তিনি নাযিল করেছেন ছাকীনা/ প্রশান্তি। আলাইহিম = তাদের উপর। ওয়া = আর। আছাবাহুম = তাদেরকে প্রতিফল দিয়েছেন। ফাতহান ক্বারীবান = নিকটবর্তী বিজয়।

নিশ্চয় আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন মু’মিনদের প্রতি, যখন তারা তোমার কাছে বাইয়াত/ ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি/ শপথ করেছে গাছের নিচে। তখন তিনি জানতেন যা ছিল তাদের কলবসমূহে। ফলে তিনি নাযিল করেছেন ছাকীনা/ প্রশান্তি তাদের উপর, আর তাদেরকে প্রতিফল দিয়েছেন নিকটবর্তী বিজয়।

৪৮:১৯
ওয়া = আর। মাগানিমা কাছীরাতান = অনেক মাগানিম/ গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ। ইয়া’খুজূনাহা = তারা তা গ্রহণ করবে। ওয়া কানাল্লাহু আযীযান হাকীমান = আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর অনেক মাগানিম/ গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ, তারা তা গ্রহণ করবে। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪৮:২০
ওয়াদাকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন। মাগানিমা কাছীরান = অনেক মাগানিমের/ গণিমতের/ যুদ্ধলভ্য সম্পদের। তা’খুজূনাহা = তোমরা তা গ্রহণ করবে। ফাআজ্জালা = এখন তাড়াতাড়ি দিলেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। হাযিহী = ইহা (প্রশান্তি)। ওয়া = আর। কাফফা = তিনি বিরত রেখেছেন। আয়দিয়ান্নাছি = মানুষের হাতসমূহকে। আনকুম = তোমাদের থেকে। ওয়া = আর। লিতাকূনা = যেন উহা হয়। আয়াতাল লিল মু’মিনীনা = মু’মিনদের জন্য একটি আয়াত/ নিদর্শন। ওয়া = আর। ইয়াহদিয়াকুম = তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেন। সিরাতাম মুসতাক্বীমান = সিরাতুল মুসতাক্বীম/ সরল সঠিক পথ।

আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন অনেক মাগানিমের/ গণিমতের/ যুদ্ধলভ্য সম্পদের, তোমরা তা গ্রহণ করবে। এখন তাড়াতাড়ি দিলেন তোমাদের জন্য ইহা (প্রশান্তি)। আর তিনি বিরত রেখেছেন মানুষের হাতসমূহকে তোমাদের থেকে। আর যেন উহা হয় মু’মিনদের জন্য একটি আয়াত/ নিদর্শন। আর তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেন সিরাতুল মুসতাক্বীম/ সরল সঠিক পথ।

৪৮:২১
ওয়া = আর। উখরা = অন্যটি। লাম তাক্বদিরূ আলাইহা = যার উপর তোমরা এখনো সক্ষমতা লাভ করনি। ক্বাদ = নিশ্চয়। আহাত্বল্লাহু বিহা = আল্লাহ উহা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। ওয়া কানাল্লাহু আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীরান = আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আর অন্যটি, যার উপর তোমরা এখনো সক্ষমতা লাভ করনি, নিশ্চয় আল্লাহ উহা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪৮:২২
ওয়া = আর। লাও = যদি। ক্বাতালাকুমুল্লাযীনা = তারা কিতাল/ যুদ্ধ করতো তোমাদের সাথে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। লাওয়াল্লাউল আদবারা = তাহলে তারা পিঠ ফিরাত। ছুম্মা = তারপর। লা ইয়াজিদূনা ওয়ালিয়্যাওঁ ওয়া লা নাসীরান = তারা পেত না কোন ওলি/ অভিভাবক আর কোন নাসীর/ সাহায্যকারীও (পেতো) না।

আর যদি তারা কিতাল/ যুদ্ধ করতো তোমাদের সাথে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, তাহলে তারা পিঠ ফিরাত। তারপর তারা পেত না কোন ওলি/ অভিভাবক আর কোন নাসীর/ সাহায্যকারীও (পেতো) না।

৪৮:২৩
সুন্নাতাল্লাহিল্লাতী = ইহা আল্লাহর সুন্নাত/ রীতিনীতি যা। ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত মিন ক্বাবলু = আগে থেকে চলে আসছে। ওয়া = আর। লান তাজিদা = তুমি পাবে না। লিছুন্নাতিল্লাহি = আল্লাহর সুন্নাতে। তাবদীলা = কোন বদল/ পরিবর্তন।

ইহা আল্লাহর সুন্নাত/ রীতিনীতি যা নিশ্চয় আগে থেকে চলে আসছে। আর তুমি পাবে না আল্লাহর সুন্নাতে কোন বদল/ পরিবর্তন।

৪৮:২৪
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। কাফফা = বিরত রেখেছিলেন। আয়দিয়াহুম = তাদের হাতসমূহকে। আনকুম = তোমাদের থেকে। ওয়া = আর। আয়দিয়াকুম = তোমাদের হাতসমূহকে। আনহুম = তাদের থেকে। বিবাতনি মাক্কাতা = মাক্কার ভিতরে। মিম বা’দি = এরপরেও। আন = যে। আযফারাকুম = তিনি তোমাদেরকে সক্ষমতা দিয়েছিলেন। আলাইহিম = তাদের উপর (তাদেরকে পরাস্ত করতে)। ওয়া কানাল্লাহু বিমা তা’মালূনা বাসীরান = আর আল্লাহ যা কিছু আমল তোমরা কর তা সম্পর্কে বাসীর/ দৃষ্টিবান।

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি বিরত রেখেছিলেন তাদের হাতসমূহকে তোমাদের থেকে আর তোমাদের হাতসমূহকে তাদের থেকে মাক্কার ভিতরে এরপরেও যে, তিনি তোমাদেরকে সক্ষমতা দিয়েছিলেন তাদের উপর (তাদেরকে পরাস্ত করতে)। আর আল্লাহ যা কিছু আমল তোমরা কর তা সম্পর্কে বাসীর/ দৃষ্টিবান।

৪৮:২৫
হুমুল্লাযীনা কাফারূ = তারাই এমন লোক যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। সদ্দূকুম = আর তোমাদেরকে বাধা দিয়েছে। আনিল মাছজিদিল হারামি = আল মাসজিদুল হারাম থেকে। ওয়াল হাদইয়া মা’কূফান = আর আটকে দেয়া হয়েছে (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়া। আইঁ ইয়াবলুগা মাহিল্লাহু = উহার মাহিল্লাতে/ যথাস্থানে পৌঁছানো থেকে। ওয়া = আর। লাও লা = যদি না থাকতো। রিজালুন মু’মিনূনা = এমন মু’মিন পুরুষ। ওয়া = ও। নিছাউন মু’মিনাতুন = মু’মিন নারী। লাম তা’লামূহুম = যাদেরকে তোমরা (মু’মিন হিসাবে) জানতে না। আন তাতাঊহুম = তাই তোমরা তাদেরকে পর্যুদস্ত করতে। ফাতুসীবাকুম = তাই তোমাদের কাছে পৌঁছতো। মিনহুম মাআররাতুন = তাদের প্রেক্ষিতে কলংক। বিগায়রি ইলমিন = অজ্ঞতাবশত:। লিইউদখিলাল্লাহু = যেন আল্লাহ দাখিল/ প্রবেশ করান। ফী রহমাতিহী = তাঁর রহমতের মধ্যে। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। লাও = যদি। তাযাইয়ালূ = তারা পৃথক থাকতো। লাআযযাবনা = তাহলে আমরা আযাব/ শাস্তি দিতাম। আল্লাযীনা কাফারূ মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদেরকে। আযাবান আলীমান = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

তারাই এমন লোক যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আর তোমাদেরকে বাধা দিয়েছে আল মাসজিদুল হারাম থেকে, আর আটকে দেয়া হয়েছে (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়া, উহার মাহিল্লাতে/ যথাস্থানে পৌঁছানো থেকে। আর যদি না থাকতো এমন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারী, যাদেরকে তোমরা (মু’মিন হিসাবে) জানতে না, তাই তোমরা তাদেরকে পর্যুদস্ত করতে, তাই তোমাদের কাছে পৌঁছতো তাদের প্রেক্ষিতে কলংক, অজ্ঞতাবশত: (তাহলে তিনি বিরত রাখতেন না)। (তিনি বিরত রেখেছিলেন) যেন আল্লাহ দাখিল/ প্রবেশ করান তাঁর রহমতের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। যদি তারা পৃথক থাকতো, তাহলে (যুদ্ধ থেকে বিরত না রেখে) আমরা আযাব/ শাস্তি দিতাম তাদের মধ্য থেকে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদেরকে, আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪৮:২৬
ইয = যখন। জাআলাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর করেছিল তারা জাগিয়ে তুললো। ফী ক্বুলূবিহিমুল হামিয়্যাতা হামিয়্যাতাল জাহিলিয়্যাতি = তাদের কলবসমূহের মধ্যে উগ্রতা, জাহেলিয়াতের উগ্রতা। ফাআনযালাল্লাহু ছাকীনাতু = তখন আল্লাহ প্রশান্তি নাযিল করলেন। আলা রাসূলিহী = তাঁর রসূলের উপর। ওয়া = ও। আলাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের উপর। ওয়া = আর। আলযামাহুম = তিনি তাদের জন্য অপরিহার্যরূপে পালনীয় করে দিলেন। কালিমাতাত তাক্বওয়া = কালিমাতুত তাক্বওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বনের নির্দেশ বাণী। ওয়া = আর। কানূ আহাক্বক্বা বিহা ওয়া আহলাহা = তারা ছিল উহার অধিক হকদার ও উহার আহাল/ যোগ্য অধিকারী। ওয়া কানাল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলীমান = আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞানী।

যখন যারা কুফর করেছিল তারা জাগিয়ে তুললো তাদের কলবসমূহের মধ্যে উগ্রতা, জাহেলিয়াতের উগ্রতা, তখন আল্লাহ প্রশান্তি নাযিল করলেন তাঁর রসূলের উপর ও মু’মিনদের উপর। আর তিনি তাদের জন্য অপরিহার্যরূপে পালনীয় করে দিলেন কালিমাতুত তাক্বওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বনের নির্দেশ বাণীকে। আর তারা ছিল উহার অধিক হকদার ও উহার আহাল/ যোগ্য অধিকারী। আর আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞানী।

৪৮:২৭
লাক্বাদ = নিশ্চয়। সদাক্বাল্লাহু = আল্লাহ সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। রাসলাহুর রু’ইয়া = তাঁর রাসূলকে (তার দেখা) স্বপ্নকে। বিলহাক্বক্বি = সঠিকভাবে/ যথাযথভাবে। লাতাদখুলুন্নাল মাছজিদাল হারামা = অবশ্যই তোমরা দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে আল মাসজিদুল হারামে। ইন শাআল্লাহু = ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আমিনীনা = নিরাপদ অবস্থায়। মুহাল্লিক্বীনা রুঊছাকুম = তোমাদের মাথা মুণ্ডনকারী হয়ে। ওয়া মুক্বাসসিরীনা = ও চুল ছাঁটাইকারী হয়ে। লা তাখাফূনা = তোমরা ভয় পাবে না। ফাআলিমা = আসলে তিনি জানতেন। মা লাম তা’লামূ = যা তোমরা জানতে না। ফাজাআলা = তাই তিনি ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মিন দূনি যালিকা = উহা ছাড়াও। ফাতহান ক্বারীবান = একটি নিকটবর্তী বিজয়।

নিশ্চয় (এ বিরতির মাধ্যমে প্রকৃত প্রস্তাবে) আল্লাহ সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন তাঁর রাসূলকে (তার দেখা) স্বপ্নকে সঠিকভাবে/ যথাযথভাবে। অবশ্যই তোমরা দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে আল মাসজিদুল হারামে ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন নিরাপদ অবস্থায়, তোমাদের মুণ্ডনকারী হয়ে ও চুল ছাঁটাইকারী হয়ে। তোমরা ভয় পাবে না। আসলে তিনি তা জানতেন যা তোমরা জানতে না। তাই তিনি ব্যবস্থা করে দিয়েছেন উহা ছাড়াও (অর্থাৎ পরবর্তীতে নিরাপদে হজ্জ করার সুযোগ দান ছাড়াও) একটি নিকটবর্তী বিজয়।

৪৮:২৮
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আরছালা = প্রেরণ করেছেন। রাসূলাহু = তাঁর রসূলকে। বিল হুদা ওয়া দ্বীনিল হাক্বক্বি = হুদা/ হিদায়াত ও দ্বীনিল হাক্ব/ সত্য জীবনব্যবস্থা সহকারে। লিইউযহিরাহু = যেন তিনি উহাকে বিজয়ী করতে পারেন। আলাদ দ্বীনি কুল্লিহী = অন্য সব দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার উপর। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি শাহীদান = সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।

তিনিই সেই সত্তা যিনি প্রেরণ করেছেন তাঁর রসূলকে হুদা/ হিদায়াত ও দ্বীনিল হাক্ব/ সত্য জীবনব্যবস্থা সহকারে, যেন তিনি উহাকে বিজয়ী করতে পারেন অন্য সব দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার উপর। আর সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট।

৪৮:২৯
মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহি = মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ। ওয়াল্লাযীনা মাআহু = আর যারা তার সাথে আছে তারা। আশিদ্দাউ আলাল কুফফারি = কাফেরদের প্রতি কঠোর। রুহামাউ বায়নাহুম = আর তাদের নিজেদের মধ্যে রহমশীল। তারাহুম = তুমি তাদেরকে দেখবে। রুককায়ান সুজজাদান = রুকুকারী ও সিজদাকারী। ইয়াবতাগূনা = তারা তালাশ করে। ফাদলাম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে ফযল/ অনুগ্রহ (= হালাল জীবিকা)। ওয়া = ও। রিদওয়ানান = (তাঁর) রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। ছীমাহুম = তাদের লক্ষণ। ফী উজূহিহি = তাদের মুখমন্ডলে ফুটে থাকে। মিন আছারিছ ছুজূদি = সিজদার চিহ্ন থেকে (= সিজদার প্রভাবে)। যালিকা = উহাই। মাছালুহুম ফিত তাওরাতি = তাওরাতে তাদের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। ওয়া = আর। মাছালুহুম ফিল ইনজীলি = ইনজীলে তাদের মাছাল/ দৃষ্টান্ত হচ্ছে। কাযারয়িন = যেন একটি চারাগাছ। আখরাজা = যা বের করে। শাত্বআহু = তার অংকুর। ফাআযারাহু = তারপর উহাকে পুষ্টি যোগায়। ফাছতাগলাযা = তারপর উহা শক্ত হয়। ফাছতাওয়া আলা ছূক্বিহী = তারপর উহা তার কান্ডের উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়। ইউ’যিবুয যুররাআ = তখন উহা চাষীদেরকে আনন্দ দেয়। লিইয়াবগীযা বিহিমুল কুফফারা = (এভাবে আল্লাহ মু’মিনদেরকে মজবুতি দেন) যেন তাদের কারণে কাফেরদের গা জ্বালা করে। ওয়াদাল্লাহুল্লাযীনা = আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা করেছেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে যারা আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। মাগফিরাতাওঁ ওয়া আজরান আযীমা = (তাদেরকে) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার দেয়ার (ওয়াদা করেছেন)।

মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ আর যারা তার সাথে আছে তারা কাফেরদের প্রতি কঠোর আর তাদের নিজেদের মধ্যে রহমশীল। তুমি তাদেরকে দেখবে রুকুকারী ও সিজদাকারী। তারা তালাশ করে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফযল/ অনুগ্রহ (= হালাল জীবিকা) ও (তাঁর) রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমন্ডলে ফুটে থাকে সিজদার চিহ্ন থেকে (= সিজদার প্রভাবে)। উহাই তাওরাতে তাদের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। আর ইনজীলে তাদের মাছাল/ দৃষ্টান্ত হচ্ছে, যেন একটি চারাগাছ যা বের করে তার অংকুর, তারপর উহাকে পুষ্টি যোগায়, তারপর উহা শক্ত হয়, তারপর উহা তার কান্ডের উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়, তখন উহা চাষীদেরকে আনন্দ দেয়। (এভাবে আল্লাহ মু’মিনদেরকে মজবুতি দেন) যেন তাদের কারণে কাফেরদের গা জ্বালা করে। আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা করেছেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে ও তাদের মধ্য থেকে যারা আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে (তাদেরকে) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার দেয়ার (ওয়াদা করেছেন)।