কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

047. সূরা মুহাম্মাদ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৪৭:১
আল্লাযীনা = যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = আর। সদ্দূ = বাধা দিয়েছে। আন সাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথ থেকে। আদল্লা = তিনি ব্যর্থ করে দিয়েছেন। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহকে।

যারা কুফর করেছে আর বাধা দিয়েছে আল্লাহর পথ থেকে, তিনি ব্যর্থ করে দিয়েছেন তাদের আমলসমূহকে।

৪৭:২
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। ওয়া = আর। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিমা নুযযিলা = উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে। আলা মুহাম্মাদিন = মুহাম্মাদের উপর। ওয়া = আর। হুয়াল হাক্বক্বু মির রব্বিহিম = উহা তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা সত্য। কাফফারা = তিনি ঢেকে দেবেন। আনহুম = তাদের থেকে। ছাইয়িআতিহিম = তাদের মন্দসমূহকে। ওয়া = আর। আসলাহা বালাহুম = সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থাকে।

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে ও আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে, আর ঈমান/ বিশ্বাস করেছে উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে মুহাম্মাদের উপর, আর উহা তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা সত্য, তিনি ঢেকে দেবেন তাদের থেকে তাদের মন্দসমূহকে আর সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থাকে।

৪৭:৩
যালিকা = উহা। বিআন্নাল্লাযীনা = এ কারণে যে, যারা। কাফারুত তাবাউল বাতিলা = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে বাতিলকে/ মিথ্যাকে। ওয়া = আর। আন্নাল্লাযীনা = তাদের ব্যাপার যারা। আমানুত্তবাউল হাক্বক্বা মির রব্বিহিম = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা সত্যকে। কাযালিকা = এভাবে। ইয়াদ্বরিবুল্লাহু = আল্লাহ পেশ করেন। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। আমছালাহুম = তাদের আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।

উহা এ কারণে যে, যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে বাতিলকে/ মিথ্যাকে। আর তাদের ব্যাপার যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তাদের রবের পক্ষ থেকে আসা সত্যকে। এভাবে আল্লাহ পেশ করেন মানুষের জন্য তাদের আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।

৪৭:৪
ফাইযা = সুতরাং যখন। লাক্বীতুমুল্লাযীনা = তোমরা তাদের মোকাবেলা কর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ফাদ্বরবার রিক্বাবি = তখন তোমরা আঘাত করো (তাদের) ঘাড়ে। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আছখানতুমূহুম = তোমরা তাদেরকে পর্যুদস্ত করবে। ফাশুদ্দুল ওয়াছাক্বা = তারপর তাদেরকে শক্ত করে বাঁধবে। ফাইম্মা = তারপর হয়তো। মান্নাম বা’দা = পরবর্তীতে অনুগ্রহ করবে। ওয়াইম্মা = নয়তো। ফিদাআন = ফিদিয়া/ মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিবে। হাত্তা = যতক্ষণ না। তাদ্বাআল হারবু আওযারাহা = যুদ্ধ-অস্ত্র নামিয়ে নেয় (অর্থাৎ যুদ্ধের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটে)। যালিকা = উহাই বিধান। ওয়া = আর। লাও = যদি। ইয়াশাউল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লানতাসারা মিনহুম = তাহলে আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন। ওয়ালাকিন = কিন্তু। লিইয়াবলুআ বা’দাকুম বিবা’দিন = (তিনি এ ব্যবস্থা করেছেন) যেন তোমাদের এক পক্ষকে দ্বারা অপর পক্ষকে পরীক্ষা করতে পারেন। ওয়াল্লাযীনা = আর যাদেরকে। ক্বুতিলূ = কতল/ হত্যা করা হয়েছে। ফী সাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথে থাকার কারণে। ফালাইঁ ইউদিল্লা আ’মালাহুম = তিনি কখনো ব্যর্থ করবেন না তাদের আমলসমূহকে।

সুতরাং যখন তোমরা তাদের মোকাবেলা কর যারা কুফর করেছে, তখন তোমরা আঘাত করো (তাদের) ঘাড়ে। শেষ পর্যন্ত যখন তোমরা তাদেরকে পর্যুদস্ত করবে, তারপর তাদেরকে শক্ত করে বাঁধবে। তারপর হয়তো পরবর্তীতে অনুগ্রহ করবে, নয়তো ফিদিয়া/ মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দিবে; (আঘাত করো) যতক্ষণ না যুদ্ধ-অস্ত্র নামিয়ে নেয় (অর্থাৎ অস্ত্র নামিয়ে নিলে বা আত্মসমর্পণ করলে তখন আঘাত করা যাবে না)। উহাই বিধান। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে আল্লাহ তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারতেন। কিন্তু (তিনি এ ব্যবস্থা করেছেন) যেন তোমাদের এক পক্ষকে দ্বারা অপর পক্ষকে পরীক্ষা করতে পারেন। আর যাদেরকে কতল/ হত্যা করা হয়েছে আল্লাহর পথে থাকার কারণে, তিনি কখনো ব্যর্থ করবেন না তাদের আমলসমূহকে।

৪৭:৫
ছাইয়াহদীহিম = তিনি তাদেরকে হিদায়াত করবেন। ওয়া = আর। ইউসলিহ বালাহুম = সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থা।

তিনি তাদেরকে হিদায়াত করবেন আর সংশোধন করে দেবেন তাদের অবস্থা।

৪৭:৬
ইউদখিলুহুমুল জান্নাতা = তিনি তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। আররাফাহা লাহুম = যা তিনি তাদেরকে চিনিয়ে দিয়েছেন।

তিনি তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যা তিনি তাদেরকে চিনিয়ে দিয়েছেন।

৪৭:৭
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইন = যদি। তানসুরুল্লাহা = তোমরা আল্লাহকে (তাঁর দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার বিষয়ে) সাহায্য কর। ইয়ানসুরুকুম = তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন। ওয়া = আর। ইউছাব্বিত = তিনি দৃঢ় করে দেবেন। আক্বদামাকুম = তোমাদের কদমসমূহকে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যদি তোমরা আল্লাহকে (তাঁর দ্বীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার বিষয়ে) সাহায্য কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, আর তিনি দৃঢ় করে দেবেন তোমাদের কদমসমূহকে।

৪৭:৮
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ফাতা’ছাল্লাহুম = তাদের জন্য দুর্গতি। ওয়া = আর। আদল্লা = তিনি ব্যর্থ করে দেবেন। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহ।

আর যারা কুফর করেছে তাদের জন্য দুর্গতি আর তিনি ব্যর্থ করে দেবেন তাদের আমলসমূহ।

৪৭:৯
যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এ কারণে যে, তারা। কারিহূ = অপছন্দ করেছে। মা আনযালাল্লাহু = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন উহাকে। ফাআহবাত্বা = তাই তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহকে।

উহা এ কারণে যে, তারা অপছন্দ করেছে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন উহাকে। তাই তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন তাদের আমলসমূহকে।

৪৭:১০
আফালাম ইয়াছীরূ = তারা কি ভ্রমণ করেনি। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ফাইয়ানযুরূ = তাহলে তারা লক্ষ্য করতো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিল। আক্বিবাতুল্লাযীনা = তাদের পরিণতি যারা ছিল। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে। দাম্মারাল্লাহু আলাইহিম = আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। ওয়া = আর। লিল কাফিরীনা আমছালুহা = কাফিরদের জন্য (নির্দিষ্ট হয়ে আছে) তাদের আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।

তারা কি ভ্রমণ করেনি পৃথিবীতে? তাহলে তারা লক্ষ্য করতো কিরূপ হয়েছিল তাদের পরিণতি যারা ছিল তাদের আগে। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন আর কাফিরদের জন্য (নির্দিষ্ট হয়ে আছে) তাদের আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।

৪৭:১১
যালিকা = উহা। বিআন্নাল্লাহা = এ কারণে যে, আল্লাহ। মাওলাল্লাযীনা = তাদের মাওলা/ অভিভাবক যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আন্নাল কাফিরীনা লা মাওলা লাহুম = কাফিরগণ এমনি যে, কোন মাওলা/ অভিভাবক নেই তাদের জন্য।

উহা এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের মাওলা/ অভিভাবক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর কাফিরগণ এমনি যে, কোন মাওলা/ অভিভাবক নেই তাদের জন্য।

৪৭:১২
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউদখিলুল্লাযীনা = তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। জান্নাতিন = (প্রবেশ করাবেন) জান্নাতে। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ইয়াতামাত্তাঊনা = তারা ভোগবিলাস করছে। ওয়া = ও। ইয়া’কুলূনা = তারা খাচ্ছে। কামা = যেমন। তা’কুলুল আনআমু = আনআম/ গবাদি পশু খায়। ওয়ান্নারু মাছওয়াল্লাহুম = আর (জাহান্নামের) আগুনই তাদের আবাস।

নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে ও আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে, (প্রবেশ করাবেন) জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। আর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, তারা ভোগবিলাস করছে ও তারা খাচ্ছে যেমন আনআম/ গবাদি পশু খায়। আর (জাহান্নামের) আগুনই তাদের আবাস।

৪৭:১৩
ওয়া = আর। কাআইয়িম মিন ক্বারইয়াতিন = কত যে জনপদ। হিয়া = যা ছিল। আশাদ্দু ক্বুওয়াতান = শক্তিতে অধিক মজবুত। মিন ক্বারইয়াতিকা = তোমার জনপদের চেয়েও। আল্লাতী = যা থেকে। আখরাজাতকা = তোমাকে বের করে দেয়া হয়েছে। আহলাকনাহুম = আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করেছি। ফালা নাসিরা লাহুম = সুতরাং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

আর কত যে জনপদ, যা ছিল শক্তিতে অধিক মজবুত তোমার জনপদের চেয়েও, যা থেকে তোমাকে বের করে দেয়া হয়েছে; আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করেছি। সুতরাং তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।

৪৭:১৪
আফামান = তবে কি যে। কানা = থাকে। আলা বাইয়িনাতিম মির রব্বিহী = তার রবের পক্ষ থেকে আসা বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের উপর। কামান = সে তার মত হতে পারে। যুইয়িনা = সুশোভিত করা হয়েছে। লাহু = যার জন্য। ছূউ আমালিহী = তার মন্দ কাজকে। ওয়াত্তাবাঊ = আর তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করছে। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তি প্রসূত মতবাদ ও সংবিধানের।

তবে কি যে থাকে তার রবের পক্ষ থেকে আসা বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের উপর, সে তার মত হতে পারে সুশোভিত করা হয়েছে যার জন্য তার মন্দ কাজকে, আর তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করছে তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তি প্রসূত মতবাদ ও সংবিধানের।

৪৭:১৫
মাছালুল জান্নাতিল্লাতী = জান্নাতের দৃষ্টান্ত যা। উয়িদাল মুত্তাক্বূনা = মুত্তাকীদেরকে/ আল্লাহভীরুদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে। ফীহা = উহাতে আছে। আনহারুম মিম মায়িন গায়রা আছিনিন = অপরিবর্তনীয় পানির নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়া = আর। আনহারুম মিনাল লাবিনিন = দুধের নহরসমূহ/ নদীসমূহ। লা ইয়াতাগাইয়ারু তা’মাহু = যার স্বাদ পরিবর্তিত হয় না। ওয়া = আর। আনহারুম মিন খামরিন = খামরের/ মদের নহরসমূহ/ নদীসমূহ। লাযযাতিল লিশ শারিবীনা = যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু। ওয়া = আর। আনহারুম মিন আছালিম মুসফফান = পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফীহা = উহাতে। মিন কুল্লিছ ছামারাতি = সব ধরনের ফলফলাদি। ওয়া = আর। মাগফিরাতুম মির রব্বিহিম = তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত/ ক্ষমা। কামান = (এসবের অধিকারী কি) তার মত (হতে পারে)। হুয়া = যে। খালিদুন ফিন্নারি = (জাহান্নামের) আগুনে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। ছুক্বূ = তাদেরকে পান করানো হবে। মাআন হামীমান = গরম পানি থেকে। ফাক্বত্তাআ = ফলে উহা কেটে দেবে। আমআআহুম = তাদের অন্ত্রসমূহকে।

জান্নাতের দৃষ্টান্ত যা মুত্তাকীদেরকে/ আল্লাহভীরুদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, উহাতে আছে অপরিবর্তনীয় পানির নহরসমূহ/ নদীসমূহ, আর দুধের নহরসমূহ/ নদীসমূহ, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয় না, আর খামরের/ মদের নহরসমূহ/ নদীসমূহ, যা পানকারীদের জন্য সুস্বাদু, আর পরিশোধিত মধুর নহরসমূহ/ নদীসমূহ। আর তাদের জন্য আছে উহাতে সব ধরনের ফলফলাদি আর তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত/ ক্ষমা। (এসবের অধিকারী কি) তার মত (হতে পারে) যে (জাহান্নামের) আগুনে স্থায়ী হবে, আর তাদেরকে পান করানো হবে গরম পানি থেকে, ফলে উহা কেটে দেবে তাদের অন্ত্রসমূহকে?

৪৭:১৬
ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্যে। মান = কেউ কেউ। ইয়াছতামিউ ইলাইকা = তোমার কথা শুনতে থাকে। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। খারাজূ = তারা বের হয়ে যায়। মিন ইনদিকা = তোমরা নিকট থেকে। ক্বলূ = তখন তারা বলে। লিল্লাযীনা = তাদের কাছে যাদেরকে। উতুল ইলমা = ইলম/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। মা যা = (বলে যে,) কী। ক্বলা = তিনি বলেছিলেন। আনিফান = এইমাত্র। উলায়িকাল্লাযীনা = তারা এমন লোক। তবাআল্লাহু = আল্লাহ মোহর করে দিয়েছেন। আলা ক্বলূবিহিম = যাদের কলবসমূহের উপর। ওয়াত্তাবাঊ = আর তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ ও সংবিধানের।

আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ তোমার কথা শুনতে থাকে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা বের হয়ে যায় তোমরা নিকট থেকে, তখন তারা বলে তাদের কাছে যাদেরকে ইলম/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছিল, (বলে যে,) ‘কী তিনি বলেছিলেন এইমাত্র?’ তারা এমন লোক আল্লাহ মোহর করে দিয়েছেন যাদের কলবসমূহের উপর, আর তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ ও সংবিধানের।

৪৭:১৭
ওয়াল্লাযীনাহতাদাও = আর যারা হিদায়াত পেয়েছে। যাদাহুম = তিনি তাদেরকে বাড়িয়ে দেন। হুদান = হুদা/ হিদায়াত। ওয়া = আর। আতাহুম = তিনি তাদেরকে দান করেন। তাক্বওয়াহুম = তাদের তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা।

আর যারা হিদায়াত পেয়েছে তিনি তাদেরকে বাড়িয়ে দেন হুদা/ হিদায়াত আর তিনি তাদেরকে দান করেন তাদের তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা।

৪৭:১৮
ফাহাল ইয়ানযুরূনা = তবে কি তারা অপেক্ষা করছে। ইল্লাছ ছায়াতা = সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত ছাড়া অন্য কিছুর জন্য? আন = ব্যাপার এই যে। তা’তিয়াহুম = উহা তাদের কাছে আসবে। বাগতাতান = হঠাৎ করে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআ = এসে গেছে। আশরাতুহা = উহার নিদর্শনাবলী। ফাআন্না = সুতরাং কিভাবে। লাহুম = তাদের জন্য (ফলপ্রসূ হবে)। ইযা জাআতহুম = যখন তাদের কাছে (উহা) এসে যাবে। যিকরাকুম = তখন তাদের কর্তৃক যিকির/ স্মরণিকা/ স্মরণীয় উপদেশ/ সংবিধানকে গ্রহণ করে নেয়া?

তবে কি তারা অপেক্ষা করছে সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত ছাড়া অন্য কিছুর জন্য? ব্যাপার এই যে, উহা তাদের কাছে আসবে হঠাৎ করে। নিশ্চয় এসে গেছে উহার নিদর্শনাবলী। সুতরাং কিভাবে তাদের জন্য (ফলপ্রসূ হবে), যখন তাদের কাছে (উহা) এসে যাবে, তখন তাদের কর্তৃক যিকির/ স্মরণিকা/ স্মরণীয় উপদেশ/ সংবিধানকে গ্রহণ করে নেয়া?

৪৭:১৯
ফা’লাম আন্নাহু = সুতরাং জেনে নাও যে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু = নেই কোন ইলাহ, আল্লাহ ছাড়া। ওয়াছতাগফির = আর তুমি ক্ষমা চাও। লিযামবিকা = তোমার গুনাহের জন্য। ওয়া = আর। লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি = মু’মিন পুরুষদের ও মু’মিন নারীদের জন্য। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। মুতাক্বাল্লাবাকুম = তোমাদের নড়াচড়া/ গতিবিধি। ওয়া = ও। মাছওয়াকুম = তোমাদের অবস্থান।

সুতরাং জেনে নাও যে, নেই কোন ইলাহ, আল্লাহ ছাড়া। আর তুমি ক্ষমা চাও তোমার গুনাহের জন্য আর মু’মিন পুরুষদের ও মু’মিন নারীদের জন্য। আর আল্লাহ জানেন তোমাদের নড়াচড়া/ গতিবিধি ও তোমাদের অবস্থান।

৪৭:২০
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলুল্লাযীনা = তারা বলেছিল যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। লাও = কেন। লা নুযযিলাত = নাযিল করা হল না। ছূরাতুন = (যুদ্ধের নির্দেশ সম্বলিত) একটি সূরা। ফাইযা = তারপর যখন। উনযিলাত = নাযিল করা হয়েছে। ছুরাতুম মুহকামাতুন = দ্ব্যর্থহীন হুকুম সম্বলিত একটি সূরা। ওয়া = আর। যুকিরা = উল্লেখ করা হয়েছে। ফীহাল ক্বিতালু = উহাতে ক্বিতালের/ সশস্ত্র সংগ্রামের নির্দেশ। রআয়তাল্লাযীনা = তুমি তাদেরকে দেখেছ। ফী ক্বুলূবিহিম = যাদের কলবসমূহের মধ্যে আছে। মারাদুন = রোগ। ইয়ানযুরূনা = তারা তাকাচ্ছে। ইলাইকা = তোমার দিকে। নাযারাল মাগশিয়্যি আলাইহি মিনাল মাওতি = এমন দৃষ্টিতে যাতে ছেয়ে গেছে মৃত্যুর ভয়। ফাআওলা = সুতরাং আফসোস। লাহুম = তাদের জন্য।

আর তারা বলেছিল যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, ‘কেন নাযিল করা হল না (যুদ্ধের নির্দেশ সম্বলিত) একটি সূরা?’ তারপর যখন নাযিল করা হয়েছে দ্ব্যর্থহীন হুকুম সম্বলিত একটি সূরা আর উল্লেখ করা হয়েছে উহাতে ক্বিতালের/ সশস্ত্র সংগ্রামের নির্দেশ, তখন তুমি তাদেরকে দেখেছ যাদের কলবসমূহের মধ্যে আছে রোগ, (দেখেছ যে,) তারা তাকাচ্ছে তোমার দিকে এমন দৃষ্টিতে যাতে ছেয়ে গেছে মৃত্যুর ভয়। সুতরাং আফসোস তাদের জন্য।

৪৭:২১
তয়াতুন ওয়া ক্বাওলুম মা’রূফাতুন = আনুগত্য ও ন্যায়সঙ্গত কথাই (যথার্থ)। ফাইযা = তারপর যখন। আযামাল আমরু = (যুদ্ধের) ব্যাপারটিতে সিদ্ধান্ত হবে। ফালাও = তখন যদি। সদাক্বুল্লাহা = তারা আল্লাহর কাছে (উহাকে) সত্য প্রমাণ করে। লাকানা খায়রাল্লাহুম = তাহলে উহাই তাদের জন্য উত্তম হবে।

আনুগত্য ও ন্যায়সঙ্গত কথাই (যথার্থ)। তারপর যখন (যুদ্ধের) ব্যাপারটিতে সিদ্ধান্ত হবে, তখন যদি তারা আল্লাহর কাছে (উহাকে) সত্য প্রমাণ করে, তাহলে উহাই তাদের জন্য উত্তম হবে।

৪৭:২২
ফাহাল আছাইতুম = তবে কি তোমাদের থেকে এ সম্ভাবনা আছে যে। ইন = যদি। তাওয়াল্লায়তুম = তোমরা ফিরে যাও। আন তুফসিদূ = তখন তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। তুক্বাত্তিঊ = তোমরা ছিন্ন করবে। আরহামাকুম = তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক।

তবে কি তোমাদের থেকে এ সম্ভাবনা আছে যে, যদি তোমরা ফিরে যাও, তখন তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে পৃথিবীতে, আর তোমরা ছিন্ন করবে তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক?

৪৭:২৩
উলায়িকাল্লাযীনা = তারা এমন লোক। লাআনাহুমুল্লাহু = যাদেরকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। ফাআসাম্মাহুম = তারপর তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন। ওয়া = আর। আ’মা আবসারুহুম = তাদের চোখসমূহকে অন্ধ করে দিয়েছেন।

তারা এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন, তারপর তাদেরকে বধির করে দিয়েছেন আর তাদের চোখসমূহকে অন্ধ করে দিয়েছেন।

৪৭:২৪
আফালা ইয়াতাদাব্বারূনাল ক্বুরআনা = তারা কি কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর/ গবেষণা করে না? আম = নাকি। আলা ক্বুলূবিন = তাদের কলবসমূহের উপর। আক্বফালুহা = তালা লেগে গেছে?

তারা কি কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর/ গবেষণা করে না? নাকি তাদের কলবসমূহের উপর তালা লেগে গেছে?

৪৭:২৫
ইন্নাল্লাযীনারতাদ্দূ = নিশ্চয় যারা ফিরে যায়। আলা আদবারিহিম = তাদের পিছনের দিকে। মিম বা’দি = উহার পরে। মা তাবাইয়ানা = যা স্পষ্ট হয়েছে। লাহুমুল হুদা = তাদের জন্য হুদা/ হিদায়াত স্বরূপ। আশ শায়তানু = শয়তান। ছাওয়ালা = (এ আচরণকে) শোভনীয় করেছে। লাহুম = তাদের জন্য। ওয়া = আর। আমলা = আশা আকাংখার ধারা দীর্ঘ করে দিয়েছে। লাহুম = তাদের জন্য।

নিশ্চয় যারা ফিরে যায় তাদের পিছনের দিকে উহার পরে যা স্পষ্ট হয়েছে তাদের জন্য হুদা/ হিদায়াত স্বরূপ, শয়তান (এ আচরণকে) শোভনীয় করেছে তাদের জন্য আর আশা আকাংখার ধারা দীর্ঘ করে দিয়েছে তাদের জন্য।

৪৭:২৬
যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এ কারণে যে, তারা। ক্বলূ লিল্লাযীনা = তাদেরকে বলে যারা। কারিহূ = অপছন্দ করে। মা = উহাকে যা। নাযযালাল্লাহু = আল্লাহ নাযিল করেছেন। ছানুত্বীউকুম = (তারা বলে,) ‘আমরা তোমাদের ইতায়াত/ আনুগত্য করবো। ফী বা’দিল আমরি = কিছু নির্দেশের ক্ষেত্রে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। ইসরারাহুম = তাদের গোপন শলাপরামর্শ সম্পর্কে।

উহা এ কারণে যে, তারা তাদেরকে বলে যারা অপছন্দ করে উহাকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন, (তারা বলে,) ‘আমরা তোমাদের ইতায়াত/ আনুগত্য করবো কিছু নির্দেশের ক্ষেত্রে’। আর আল্লাহ জানেন তাদের গোপন শলাপরামর্শ সম্পর্কে।

৪৭:২৭
ফাকায়ফা = সুতরাং কেমন হবে। ইযা = যখন। তাওয়াফফাতহুমুল মালাইকাতু = মালায়েকা/ ফেরেশতারা তাদের ওফাত/ জান কবজ করবে। ইয়াদরিবূনা উজূহাহুম ওয়া আদবারাহুম = তাদের মুখমন্ডলসমূহে ও পিঠসমূহে মারতে মারতে।

সুতরাং কেমন হবে যখন মালায়েকা/ ফেরেশতারা তাদের ওফাত/ জান কবজ করবে তাদের মুখমন্ডলসমূহে ও পিঠসমূহে মারতে মারতে?

৪৭:২৮
যালিকা = উহা। বিআন্নাহুমুত তাবাঊ = এ কারণে যে, তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে। মা আছখাতাল্লাহু = যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছে। ওয়া = আর। কারিহূ = তারা অপছন্দ করেছে। রিদওয়ানাহু = তাঁর সন্তুষ্টিকে (জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে)। ফাআহবাত্বা = তাই তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহকে।

উহা এ কারণে যে, তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছে আর তারা অপছন্দ করেছে তাঁর সন্তুষ্টিকে (জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে)। তাই তিনি নষ্ট করে দিয়েছেন তাদের আমলসমূহকে।

৪৭:২৯
আম = নাকি। হাছিবাল্লাযীনা = তারা হিসাব/ ধারণা করে নিয়েছে। ফী ক্বুলূবিহিম = যাদের কলবসমূহে আছে। মারাদুন = রোগ। আল্লইঁ ইউখরিজাল্লাহু = এ মর্মে যে, আল্লাহ কখনো (প্রকাশ্যে) বের করে দেবেন না। আদ্বগানাহুম = তাদের বিদ্বেষগুলোকে।

নাকি তারা হিসাব/ ধারণা করে নিয়েছে যাদের কলবসমূহে আছে রোগ, এ মর্মে যে, আল্লাহ কখনো (প্রকাশ্যে) বের করে দেবেন না তাদের বিদ্বেষগুলোকে?

৪৭:৩০
ওয়া = আর। লাও = যদি। নাশাউ = আমরা ইচ্ছা করি। লাআরায়নাকাহুম = তাহলে আমরা তোমাকে তাদেরকে দেখিয়ে দিতে পারি। ফালাআরাফতাহুম = তাহলে তখন তুমি তাদেরকে চিনতে পারতে। বিছীমাহুম = তাদের (চেহারার) লক্ষণসমূহের মাধ্যমে। ওয়ালাতা’রিফান্নাহুম = তবে তুমি অবশ্যই তাদেরকে চিনবে। ফী লাহনিল ক্বাওলি = কথা বলার ভঙ্গি অনুযায়ী। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। আ’মালাকুম = তোমাদের কাজসমূহকে।

আর যদি আমরা ইচ্ছা করি, তাহলে আমরা তোমাকে তাদেরকে দেখিয়ে দিতে পারি, তাহলে তখন তুমি তাদেরকে চিনতে পারতে তাদের (চেহারার) লক্ষণসমূহের মাধ্যমে। তবে তুমি অবশ্যই তাদেরকে চিনবে কথা বলার ভঙ্গি অনুযায়ী। আর আল্লাহ জানেন তোমাদের কাজসমূহকে।

৪৭:৩১
ওয়া = আর। লানাবলুআন্নাকুম = আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো। হাত্তা = যতক্ষণ না। না’লামাল মুজাহিদীনা মিনকুম = আমরা জেনে নেব তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদদেরকে/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকারীদেরকে। ওয়াস সবিরীনা = ও সবরকারীদেরকে/ ধৈর্যশীলদেরকে। ওয়া = আর। নাবলুওয়া আখবারাকুম = আমরা তোমাদের খবরসমূহ পরীক্ষা করব।

আর আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো,যতক্ষণ না আমরা জেনে নেব তোমাদের মধ্যকার মুজাহিদদেরকে/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টাকারীদেরকে ও সবরকারীদেরকে/ ধৈর্যশীলদেরকে,আর আমরা তোমাদের খবরসমূহ পরীক্ষা করব।

৪৭:৩২
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = ও। সদ্দূ = বাধা দিয়েছে। আন ছাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথ থেকে। ওয়া = আর। শাক্বক্বূর রসূলা = রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। মিম বা’দি = উহার পরেও। মা তাবাইয়ানা = যা স্পষ্ট হয়েছে। লাহুমুল হুদা = তাদের জন্য হুদা/ হিদায়াতস্বরূপ। লাইঁ ইয়াদুররুল্লাহা = তারা আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। শাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। ছাইউহবিত্বু = তিনি নষ্ট করে দেবেন। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহকে।

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে ও বাধা দিয়েছে আল্লাহর পথ থেকে আর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছে উহার পরেও যা স্পষ্ট হয়েছে তাদের জন্য হুদা/ হিদায়াতস্বরূপ, তারা আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না কিছুমাত্রও। আর তিনি নষ্ট করে দেবেন তাদের আমলসমূহকে।

৪৭:৩৩
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আতিউল্লাহা = তোমরা আল্লাহর ইতায়াত/ আনুগত্য কর। ওয়া = ও। আতিউর রসূলা = রসূলের ইতায়াত/ আনুগত্য কর। ওয়া = আর। লা তুবতিলূ = তোমরা বাতিল/ নষ্ট করো না। আ’মালাকুম = তোমাদের আমলসমূহকে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তোমরা আল্লাহর ইতায়াত/ আনুগত্য কর ও রসূলের ইতায়াত/ আনুগত্য কর, আর তোমরা বাতিল/ নষ্ট করো না তোমাদের আমলসমূহকে।

৪৭:৩৪
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = ও। সদ্দূ = বাধা দিয়েছে। আন ছাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথ থেকে। ছুম্মা মাতূ ওয়া হুম কুফফারু = তারপর কাফের থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। ফালাইঁ ইয়াগফিরাল্লাহু লাহুম = আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না।

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে ও বাধা দিয়েছে আল্লাহর পথ থেকে, তারপর কাফের থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে আল্লাহ তাদেরকে কখনো ক্ষমা করবেন না।

৪৭:৩৫
ফালা তাহিনূ = সুতরাং তোমরা সাহসহীন হয়ো না। ওয়া = আর। তাদউ = তোমরা আহবান করো না। ইলাছ ছালমি = চুক্তির জন্য। ওয়া = আর। আনতুমুল আ’লাওনা = তোমরাই বিজয়ী হবে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। মাআকুম = তোমাদের সাথে আছেন। ওয়া = আর। লাইঁ ইয়াতিরাকুম = তিনি কখনো নষ্ট করবেন না। আ’মালাকুম = তোমাদের আমলসমূহকে।

সুতরাং তোমরা সাহসহীন হয়ো না আর তোমরা আহবান করো না চুক্তির জন্য। আর তোমরাই বিজয়ী হবে। আর আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন। আর তিনি কখনো নষ্ট করবেন না তোমাদের আমলসমূহকে।

৪৭:৩৬
ইন্নামাল হায়াতুদ দুনইয়া = নিশ্চয় হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। লায়িবুন ওয়া লাহওয়ান = খেলা ও কৌতুক মাত্র। ওয়া = আর। ইন = যদি। তু’মিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর। ওয়া = ও। তাত্তাক্বূ = তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন কর। ইউ’তিকুম = তাহলে তিনি তোমাদেরকে দান করবেন। উজূরাকুম = তোমাদের মজুরি/ প্রতিফল। ওয়া = আর। লা ইয়াছআলকুম = তিনি তোমাদের কাছে চান না। আমওয়ালাকুম = তোমাদের মালসম্পদ (= তিনি তোমাদেরই কল্যাণের জন্য তোমাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতিমালা দিয়েছেন)।

নিশ্চয় হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন খেলা ও কৌতুক মাত্র। আর যদি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর ও তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে দান করবেন তোমাদের মজুরি/ প্রতিফল। আর তিনি তোমাদের কাছে চান না তোমাদের মালসম্পদ (= তিনি তোমাদেরই কল্যাণের জন্য তোমাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতিমালা দিয়েছেন)।

৪৭:৩৭
ইইঁ ইয়াছআলকুমূহা = যদি তিনি তোমাদের কাছ থেকে উহা চান। ফাইউহফিকুম = তারপর উহার জন্য চাপ দেন। তাবখালূ = তাহলে তোমরা বখিলি/ কৃপণতা করবে। ওয়া = আর। ইইখরিজ = তিনি (প্রকাশ্যে) বের করে আনবেন। আদগানাকুম = তোমাদের গোপন দোষ।

যদি তিনি তোমাদের কাছ থেকে উহা চান তারপর উহার জন্য চাপ দেন, তাহলে তোমরা বখিলি/ কৃপণতা করবে, আর তিনি (প্রকাশ্যে) বের করে আনবেন তোমাদের গোপন দোষ।

৪৭:৩৮
হাআনতুম হাউলায়ি = তোমরাই সেসব লোক যাদেরকে। তুদআউনা = আহবান করা হচ্ছে। লিতুনফিক্বূ = যেন তোমরা ইনফাক/ ব্যয় কর। ফী সাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথে। ফামিনকুম = কিন্তু তোমাদের মধ্য থেকে। মাইঁ ইয়াবখালু = কেউ কেউ বখিলি/ কৃপণতা করে। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াবখাল = যে বখিলি/ কৃপণতা করে। ফাইন্নামা = প্রকৃতপক্ষে। ইয়াবখালু = সে বখিলি/ কৃপণতা করে। আন নাফসিহী = তার নিজের সাথে। ওয়াল্লাহুল গানিয়্যু = আর আল্লাহ গণি/ অভাবমুক্ত। ওয়া = আর। আনতুমুল ফুক্বারাউ = তোমরা ফকির/ অভাবগ্রস্ত। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাতাওয়াল্লাও = তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। ইয়াছতাবদিল = তাহলে তিনি (তোমাদের) বদলস্বরূপ আনবেন। ক্বাওমান গায়রাকুম = তোমাদেরকে ছাড়া অন্য কওমকে/ সম্প্রদায়কে। ছুম্মা = তারপর। লা ইয়াকূনূ = তারা হবে না। আমছালাকুম = তোমাদের মত।

তোমরাই সেসব লোক যাদেরকে আহবান করা হচ্ছে যেন তোমরা ইনফাক/ ব্যয় কর আল্লাহর পথে, কিন্তু তোমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বখিলি/ কৃপণতা করে। আর যে বখিলি/ কৃপণতা করে, প্রকৃতপক্ষে সে বখিলি/ কৃপণতা করে তার নিজের সাথে। আর আল্লাহ গণি/ অভাবমুক্ত আর তোমরা ফকির/ অভাবগ্রস্ত। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে তিনি (তোমাদের) বদলস্বরূপ আনবেন তোমাদেরকে ছাড়া অন্য কওমকে/ সম্প্রদায়কে। তারপর তারা হবে না তোমাদের মত।