কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

039. সূরা যুমার

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৩৯:১
তানযীলুল কিতাবি = নাযিল করা হয়েছে এ কিতাব। মিনাল্লাহিল আযীযিল হাকীমি = আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

নাযিল করা হয়েছে এ কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে যিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৩৯:২
ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আনযালনা = নাযিল করেছি। ইলাইকাল কিতাবা = তোমার প্রতি এ কিতাব। বিল হাক্বক্বি = সত্যসহকারে। ফা’বুদিল্লাহা = সুতরাং আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করো। মুখলিসাল্লাহুদ্দ্বীনি = তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে।

নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি এ কিতাব সত্যসহকারে। সুতরাং আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করো তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে।

৩৯:৩
আলা = জেনে রাখো। লিল্লাহিদ দ্বীনুল খালিসু = খালেস/ খাঁটি দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। ওয়াল্লাযীনাত্তাখাযূ = আর যারা গ্রহণ করেছে। মিন দূনিহী = তাঁকে বাদ দিয়ে। আওলিয়াআ = অন্য আওলিয়াকে/ ওলিদেরকে/ অভিভাবকদেরকে। মা না’বুদুহুম = (আর বলে) ‘আমরা তাদের ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি না। ইল্লা লিইউক্বাররিবূনা = এজন্য ছাড়া যে, তারা আমাদেরকে নিকটবর্তী করে দেবে। ইলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। যুলফা = নিকটবর্তী সত্তা হিসাবে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়াহকুমু = ফায়সালা করে দেবেন। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ফীমা হুম ফীহি ইয়াখতালিফূনা = ঐ বিষয়ে যাতে তারা ইখতেলাফ/ মতভেদ করছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াহদি = হিদায়াত করেন না। মান = তাকে। হুয়া = যে। কাযিবুন কাফফারুন = মিথ্যাবাদী ও কাফের/ অবিশ্বাসী/ অস্বীকারকারী।

জেনে রাখো, খালেস/ খাঁটি দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। আর যারা গ্রহণ করেছে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য আওলিয়াকে/ ওলিদেরকে/ অভিভাবকদেরকে, (আর বলে) ‘আমরা তাদের ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি না এজন্য ছাড়া যে, তারা আমাদেরকে নিকটবর্তী করে দেবে আল্লাহর কাছে, নিকটবর্তী সত্তা হিসাবে’। নিশ্চয় আল্লাহ ফায়সালা করে দেবেন তাদের মধ্যে ঐ বিষয়ে যাতে তারা ইখতেলাফ/ মতভেদ করছে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না তাকে যে মিথ্যাবাদী ও কাফের/ অবিশ্বাসী/ অস্বীকারকারী।

৩৯:৪
লাও = যদি। আরাদাল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করতেন। আইঁ ইয়াত্তাখিযা ওয়ালাদান = যে, তিনি গ্রহণ করবেন সন্তান। লাসতফা = তাহলে তিনি মনোনীত করতেন। মিম্মা ইয়াখলুক্বু = তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। মা ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করতেন। ছুবহানাহু = সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। হুয়াল্লাহুল ওয়াহিদুল ক্বাহহারু = তিনিই আল্লাহ, ওয়াহিদ/ একজনই ও কাহহার/ একচ্ছত্র ক্ষমতাধর।

যদি আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করতেন যে, তিনি গ্রহণ করবেন সন্তান, তাহলে তিনি মনোনীত করতেন তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন যাকে তিনি ইচ্ছা করতেন। সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, ওয়াহিদ/ একজনই ও কাহহার/ একচ্ছত্র ক্ষমতাধর।

৩৯:৫
খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি বিল হাক্বক্বি = তিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সত্যসহকারে/ যথাযথভাবে। ইউকাভভিরুল লাইলা = তিনি রাতকে জড়িয়ে দেন। আলান্নাহারি = দিনের উপর। ওয়া = আর। ইউকাভভিরুন্নাহারা = তিনি দিনকে জড়িয়ে দেন। আলাল্লাইলি = রাতের উপর। ওয়া = আর। ছাখখারাশ শামছা = তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে। ওয়াল ক্বামারা = ও চন্দ্রকে। কুল্লুইঁ ইয়াজরী = প্রত্যেকেই চলছে। লিআজালিম মুছাম্মা = আজালুম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার (= প্রলয়-মুহুর্তের) দিকে। আলা হুয়াল আযীযুল গাফফারু = জেনে রাখো, তিনিই আযীয/ মহাশক্তিমান ও গাফফার/ ক্ষমাশীল।

তিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সত্যসহকারে/ যথাযথভাবে। তিনি রাতকে জড়িয়ে দেন দিনের উপর। আর তিনি দিনকে জড়িয়ে দেন রাতের উপর। আর তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকেই চলছে আজালুম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার (= প্রলয়-মুহুর্তের) দিকে। জেনে রাখো, তিনিই আযীয/ মহাশক্তিমান ও গাফফার/ ক্ষমাশীল।

৩৯:৬
খালাকাকুম = তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে। মিন নাফসিন ওয়াহিদাতিন = একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা (life-cell) থেকে। ছুম্মা = তারপর। জাআলা = সৃষ্টি করেছেন। মিনহা = তার থেকে। জাওজাহা = তার জোড়া। ওয়া = আর। আনযালা = তিনি নাযিল/ সৃষ্টি করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিনাল আনআমি = আনআম/ গবাদি পশু থেকে। ছামানিয়াতা আযওয়াযিন = আট জোড়া (০৬:১৪৩-১৪৪)। ইয়াখলুক্বুকুম = তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। ফী বুতূনি উম্মাহাতিকুম = তোমাদের মায়েদের পেটের মধ্যে। খালক্বাম মিম বা’দি খালক্বিন = এক গঠনের পর অন্য গঠনে বিকশিত করে। ফী যুলুমাকতিন ছালাছিন = তিনটি অন্ধকার (আবরনের) মধ্যে (= পেট, গর্ভাশয় ও ঝিল্লি; ত্রিস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা)। যালিকুমুল্লাহু = তিনিই তোমাদের আল্লাহ। রব্বুকুম = তোমাদের রব। লাহুল মুলকু = তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে সমস্ত আধিপত্য। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। ফাআন্না = সুতরাং কোথায়। তুসরাফূনা = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?

তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা (life-cell) থেকে। তারপর সৃষ্টি করেছেন তার থেকে তার জোড়া। আর তিনি নাযিল/ সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য আনআম/ গবাদি পশু থেকে আট জোড়া (০৬:১৪৩-১৪৪)। তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মায়েদের পেটের মধ্যে এক গঠনের পর অন্য গঠনে বিকশিত করে, তিনটি অন্ধকার (আবরনের) মধ্যে (= পেট, গর্ভাশয় ও ঝিল্লি; ত্রিস্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা)। তিনিই তোমাদের আল্লাহ, তোমাদের রব। তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে সমস্ত আধিপত্য। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। সুতরাং কোথায় তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?

৩৯:৭
ইন = যদি। তাকফুরূ = তোমরা কুফর করো। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। গানিইয়্যুন আনকুম = তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী। ওয়া = আর। লা ইয়ারদা = তিনি পছন্দ করেন না। লিইবাদিহিল কুফরা = তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরকে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাশকুরূ = তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ইয়ারদাহু = তিনি উহাকে (= শোকরকে) পছন্দ করেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। লা তাযিরু = বহন করবে না। ওয়াযিরাতুন = কোন বোঝা বহনকারী। ভিজরান উখরা = অন্যের বোঝা। ছুম্মা = তারপর। ইলা রব্বিকুম = তোমাদের রবের দিকে। মারজিউকুম = তোমাদের ফিরে যাবার স্থান। ফাইউনাব্বিউকুম = তারপর তিনি তোমাদেরকে সংবাদ দেবেন। বিমা কুনতুম তা’মালূনা = তোমরা যে আমল/ কাজ করতে তা সম্পর্কে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আলীমুম বিযাতিস সুদূরি = সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের চিন্তাধারা সম্পর্কে জানেন।

যদি তোমরা কুফর করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের থেকে অমুখাপেক্ষী। আর তিনি পছন্দ করেন না তাঁর বান্দাদের জন্য কুফরকে। আর যদি তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, তিনি উহাকে (= শোকরকে) পছন্দ করেন তোমাদের জন্য। আর বহন করবে না কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা। তারপর তোমাদের রবের দিকে তোমাদের ফিরে যাবার স্থান। তারপর তিনি তোমাদেরকে সংবাদ দেবেন তোমরা যে আমল/ কাজ করতে তা সম্পর্কে। নিশ্চয় তিনি সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের চিন্তাধারা সম্পর্কে জানেন।

৩৯:৮
ওয়া = আর। ইযা = যখন। মাছছাল ইনছানা = স্পর্শ করে মানুষকে। দুররুন = কোন বিপদ। দাআ = তখন সে ডাকে। রব্বাহু = তার রবকে। মুনীবান ইলাইহি = তাঁর দিকে অভিমুখী হয়ে। ছুম্মা = তারপর। ইযা = যখন। খাওয়ালাহু = তিনি তাকে দান করেন। নি’মাতাম মিনহু = তাঁর পক্ষ থেকে নেয়ামত/ অনুগ্রহ। নাছিআ = তখন সে ভুলে যায়। মা কানা ইয়াদঊ ইলাইহি = সে বিপদকে যার জন্য সে তাঁকে ডেকেছিল। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বে। ওয়া = আর। জাআলা = সে সাব্যস্ত করে। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। আনদাদান = সমকক্ষ। লিইউদিল্লা আন ছাবীলিহী = তাঁর পথ থেকে লোকদেরকে বিভ্রান্ত করতে। ক্বুল = বলো। তামাত্তা’ = তুমি উপভোগ করো। বিকুফরিকা = তোমার কুফরের স্বাদ। ক্বালীলান = স্বল্পকাল। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। মিন আসহাবিন্নারি = আসহাবুন নারের (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদের) অন্তর্ভুক্ত।

আর যখন স্পর্শ করে মানুষকে কোন বিপদ, তখন সে ডাকে তার রবকে তাঁর দিকে অভিমুখী হয়ে। তারপর যখন তিনি তাকে দান করেন তাঁর পক্ষ থেকে নেয়ামত/ অনুগ্রহ, তখন সে ভুলে যায় সে বিপদকে যার জন্য সে তাঁকে ডেকেছিল ইতিপূর্বে। আর সে সাব্যস্ত করে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ, তাঁর পথ থেকে লোকদেরকে বিভ্রান্ত করতে। বলো, ‘তুমি উপভোগ করো তোমার কুফরের স্বাদ স্বল্পকাল। নিশ্চয় তুমি আসহাবুন নারের (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদের) অন্তর্ভুক্ত’।

৩৯:৯
আম্মান = নাকি সে (তার মতো হতে পারে)। হুয়া = যে। ক্বানিতুন = কানিতুন/ বিনয়ী। আনাআল্লাইলি = রাতের কিছু অংশে। ছাজিদান = সিজদাকারী। ওয়া = ও। ক্বায়িমান = কিয়ামকারী। ইয়াহযারুল আখিরাতা = যে আখিরাতকে ভয় করে। ওয়া = আর। ইয়ারজূ রহমাতা রব্বিহী = যে তার রবের রহমতের আশা করে। ক্বুল = বলো। হাল ইয়াছতাভিল্লাযীনা = তারা কি সমান হতে পারে যারা। ইয়া’লামূনা ওয়াল্লাযীনা লা ইয়া’লামূনা = জানে আর যারা জানে না। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইয়াতাযাক্কারু = তাযাক্কুর/ উপদেশ স্মরণ রাখে। উলুল আলবাবি = উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ।

নাকি সে (তার মতো হতে পারে) যে কানিতুন/ বিনয়ী, রাতের কিছু অংশে সিজদাকারী ও কিয়ামকারী, যে আখিরাতকে ভয় করে, আর যে তার রবের রহমতের আশা করে? বলো, ‘তারা কি সমান হতে পারে যারা জানে আর যারা জানে না? নিশ্চয় তাযাক্কুর/ উপদেশ স্মরণ রাখে উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ।

৩৯:১০
ক্বুল = বলো (তথা প্রচার করো আল্লাহর এ বাণী)। ইয়া ইবাদিল্লাযীনা = হে আমার বান্দাগণ, যারা। আমানুত্তাক্বূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ভয় করো। রব্বাকুম = তোমাদের রবকে। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য আছে যারা। আহছানূ = উত্তম কাজ করে। ফী হাযিহিদ দুনইয়া = এ দুনিয়ায়। হাছানাতুন = উত্তম উপকরন। ওয়াল আরদু লিল্লাহি ওয়াছিয়াতুন = আর আল্লাহর জমীন প্রশস্ত। ইন্নামা = বস্তুত। ইউওয়াফফাস সবিরূনা = পূর্ণ করে দেয়া হবে সবরকারীদেরকে। আজরাহুম = তাদের মজুরি। বিগাইরি হিসাবি = হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।

বলো (তথা প্রচার করো আল্লাহর এ বাণী), ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ভয় করো তোমাদের রবকে। তাদের জন্য আছে যারা উত্তম কাজ করে এ দুনিয়ায় উত্তম উপকরন। আর আল্লাহর জমীন প্রশস্ত। বস্তুত পূর্ণ করে দেয়া হবে সবরকারীদেরকে তাদের মজুরি, হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।

৩৯:১১
ক্বুল = বলো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। উমিরতু = আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। আন = যেন। আ’বুদাল্লাহা = আমি আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি। মুখলিসাল লাহুদ দ্বীনা = তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে।

বলো, ‘নিশ্চয় আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি, তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে’।

৩৯:১২
ওয়া = উমিরতু = আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। লিআন = যেন। আকূনা = আমি হই। আওয়ালাল মুসলিমীনা = প্রথম মুসলিম।

আর আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যেন আমি হই প্রথম মুসলিম।

৩৯:১৩
ক্বুল = বলো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফু = ভয় করি যে। ইন = যদি। আসাইতু = আমি অবাধ্য হই। রব্বী = আমার রবের। আযাবা ইয়াওমিন আযীমিন = তবে মহাদিবসের শাস্তির।

বলো, ‘নিশ্চয় আমি ভয় করি যে, যদি আমি অবাধ্য হই আমার রবের তবে (ভয় করি) মহাদিবসের শাস্তির।

৩৯:১৪
ক্বুলিল্লাহা = বলো, ‘আল্লাহরই। আ’বুদু = আমি ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি। মুখলিসাল্লাহুদ্দ্বীনী = তাঁরই জন্য খালেস/ খাঁটি করে আমার দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে।

বলো, ‘আল্লাহরই আমি ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি। তাঁরই জন্য খালেস/ খাঁটি করে আমার দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে।

৩৯:১৫
ফা’বুদূ = তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করো। মা শি’তুম = যাকে তোমরা ইচ্ছা করো। মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়া। ক্বুল = বলো। ইন্নাল খাছিরীনাল্লাযীনা = নিশ্চয় তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যারা। খাছিরূ = ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদেরকে। ওয়া = আর। আহলীহিম = তাদের আহালকে/ পরিবার পরিজনকে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আলা = জেনে রাখ। যালিকা হুয়াল খুছরানুল মুবীনু = উহাই স্পষ্ট ক্ষতি।

তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করো যাকে তোমরা ইচ্ছা করো তাঁকে ছাড়া। বলো, ‘নিশ্চয় তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের নিজেদেরকে আর তাদের আহালকে/ পরিবার পরিজনকে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। জেনে রাখ, উহাই স্পষ্ট ক্ষতি।

৩৯:১৬
লাহুম = তাদের জন্য আছে। মিন ফাওক্বিহিম = তাদের উপর থেকে। যুলালুম মিনান্নারি = আগুনের ছায়া। ওয়া = আর। মিন তাহতিহিম = আর তাদের নিচ থেকেও। যুলালুন = ছায়া থাকবে। যালিকা = উহাই। ইউখাওভিফুল্লাহু বিহী = আল্লাহ ভয় দেখান উহা দ্বারা। ইবাদাহু = তাঁর বান্দাদেরকে। ইয়া ইবাদি = হে আমার বান্দাগণ। ফাত্তাক্বূনি = আমাকে ভয় করো।

তাদের জন্য আছে তাদের উপর থেকে আগুনের ছায়া আর আর তাদের নিচ থেকেও ছায়া থাকবে। উহাই, আল্লাহ ভয় দেখান উহা দ্বারা তাঁর বান্দাদেরকে। ‘হে আমার বান্দাগণ, আমাকে ভয় করো’।

৩৯:১৭
ওয়াল্লাযীনাজতানাবুত্তগূতা = আর যারা তাগুতকে বর্জন করে। আইঁ ইয়াবুদূহা = তার ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করা থেকে। ওয়া = আর। আনাবূ ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকে অভিমুখী হয়। লাহুমুল বুশরা = তাদের জন্য সুসংবাদ আছে। ফাবাশশির ইবাদি = সুতরাং সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে।

আর যারা তাগুতকে বর্জন করে তার ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করা থেকে, আর আল্লাহর দিকে অভিমুখী হয়, তাদের জন্য সুসংবাদ আছে। সুতরাং সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে।

৩৯:১৮
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াছতামিঊনাল ক্বাওলা = মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে। ফাইয়াত্তাবিঊনা আহছানাহু = তারপর উহার অধিক উত্তমরূপের ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। উলায়িকাল্লাযীনা হাদাহুমুল্লাহু = তারাই এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন। ওয়া = আর। উলায়িকা হুম = তারাই। উলুল আলবাবি = উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তি।

যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শুনে তারপর উহার অধিক উত্তমরূপের ইত্তেবা/ অনুসরণ করে, তারাই এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন আর তারাই উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তি।

৩৯:১৯
আফামান হাক্বক্বা আলাইহি = তবে তার ব্যাপারটা কী যে হক্বদার হয়েছে তার উপর। কালিমাতুল আযাবি = আযাবের বাণী কার্যকর হওয়ার। আফাআনতা = তবে তুমি কি। তুনক্বিযু মান = তাকে উদ্ধার করতে পারবে যাকে। ফিন নারি = আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তবে তার ব্যাপারটা কী যে হক্বদার হয়েছে তার উপর আযাবের বাণী কার্যকর হওয়ার? তবে তুমি কি তাকে উদ্ধার করতে পারবে যাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে?

৩৯:২০
লাকিনিল্লাযীনাত্তাক্বাও = কিন্তু যারা ভয় করে। রব্বাহুম = তাদের রবকে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। গুরাফুম মিন ফাওক্বিহা গুরাফুম মাবনিয়্যাতুন = বহুতল নির্মিত প্রাসাদ। তাজরী = প্রবাহিত হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = তার নিচ অংশে নহরসমূহ/নদীসমূহ। ওয়া’দাল্লাহি = ইহা আল্লাহর ওয়াদা। লা ইইখলিফুল্লাহুল মিয়াদা = আল্লাহ খেলাফ/ ভঙ্গ করেন না মিয়াদ/ ওয়াদা।

কিন্তু যারা ভয় করে তাদের রবকে, তাদের জন্য আছে বহুতল নির্মিত প্রাসাদ। প্রবাহিত হয় তার নিচ অংশে নহরসমূহ/নদীসমূহ। ইহা আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহ খেলাফ/ ভঙ্গ করেন না মিয়াদ/ ওয়াদা।

৩৯:২১
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। আনযালা = নাযিল করেছেন। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। মাআন = (বৃষ্টির) পানি। ফাছালাকাহু = তারপর তিনি তা প্রবেশ করান। ইয়ানাবীআ ফিল আরদি = পৃথিবীর/ ভূমির জলাধারে। ছুম্মা = তারপর। ইউখরিজু = তিনি বের করেন। বিহী = উহা দ্বারা। যারআন = ফসল। মুখতালিফান = বিভিন্ন প্রকার হয়। আলওয়ানুহু = যার রংসমূহ। ছুম্মা = তারপর। ইয়াহীজু = (যখন উহা) শুকিয়ে যায়। ফাতারাহু = তখন তুমি উহাকে দেখ। মুসফাররান = হলুদ বর্ণ। ছুম্মা = তারপর। ইয়াজআলুহু = তিনি উহাকে পরিণত করেন। হুতামান = খড়কুটায়। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাযিকরা = যিকির/ স্মরণীয় উপদেশ। লিউলিল আলবাবি = উলিল আলবাবের/ চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।

তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ নাযিল করেছেন আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি। তারপর তিনি তা প্রবেশ করান পৃথিবীর/ ভূমির জলাধারে। তারপর তিনি বের করেন উহা দ্বারা ফসল, বিভিন্ন প্রকার হয় যার রংসমূহ। তারপর (যখন উহা) শুকিয়ে যায়, তখন তুমি উহাকে দেখ হলুদ বর্ণ। তারপর তিনি উহাকে পরিণত করেন খড়কুটায়। নিশ্চয় উহাতে আছে যিকির/ স্মরণীয় উপদেশ উলিল আলবাবের/ চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।

৩৯:২২
আফামান = তবে কি সে (অন্যদের মতো হতে পারে)। শারাহাল্লাহু = আল্লাহ খুলে দিয়েছেন। সদরাহু = যার সদরকে/ মস্তিষ্ককে। লিলইসলামি = ইসলামের জন্য। ফাহুয়া = তারপর সে। আলা নূরিম মির রব্বিহী = তার রবের পক্ষ থেকে আসা আলোর উপর প্রতিষ্ঠিত। ফাওয়ালুল্লিল ক্বাছিয়াতি = সুতরাং তাদের জন্য দুর্ভোগ শক্ত হয়ে গেছে। ক্বুলূবুহুম = যাদের কলবসমূহ। মিন যিকরিল্লাহি = আল্লাহর যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ স্মরণীয় উপদেশ/ সংবিধান থেকে। উলায়িকা = তারাই। ফী দলালিম মুবীনিন = প্রকাশ্য/ স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে।

তবে কি সে (অন্যদের মতো হতে পারে) আল্লাহ খুলে দিয়েছেন যার সদরকে/ মস্তিষ্ককে ইসলামের জন্য, তারপর সে তার রবের পক্ষ থেকে আসা আলোর উপর প্রতিষ্ঠিত? সুতরাং তাদের জন্য দুর্ভোগ শক্ত হয়ে গেছে যাদের কলবসমূহ আল্লাহর যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ স্মরণীয় উপদেশ/ সংবিধান থেকে। তারাই প্রকাশ্য/ স্পষ্ট পথভ্রষ্টতার মধ্যে আছে।

৩৯:২৩
আল্লাহু = আল্লাহ। নাযযালা = নাযিল করেছেন। আহসানাল হাদীসি = আহসানাল হাদীস/ অধিক উত্তম বাণী। কিতাবাম মুতাশাবিহাম মাছানিয়া = সাদৃশ্যপূর্ণ বক্তব্যসমষ্টির কিতাব, যা বারবার আবৃত্তি করার যোগ্য। তাক্বশায়িররু মিনহু জুলূদুল্লাযীনা = তাদের চর্ম শিহরিত হয় উহা থেকে (= উহা পাঠ করে ও শ্রবণ করে) যারা। ইয়াখশাওনা = ভয় করে। রব্বাহুম = তাদের রবকে। ছুম্মা = তারপর। তালীনু = নরম হয়। জুলূদুহুম = তাদের চর্ম। ওয়া = আর। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলব। ইলা যিকরিল্লাহি = আল্লাহর যিকিরের/ স্মরণের/ স্মরণিকার/ স্মরণীয় উপদেশের/ সংবিধানের প্রতি। যালিকা = উহাই। হুদাল্লাহি = আল্লাহর হুদা/ হিদায়াত। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত করেন। বিহী = উহা দ্বারা। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন। ফামা লাহু = তারপর তার জন্য নেই। মিন হাদিন = কোন হিদায়াতকারী।

আল্লাহ নাযিল করেছেন আহসানাল হাদীস/ অধিক উত্তম বাণী সাদৃশ্যপূর্ণ বক্তব্যসমষ্টির কিতাব, যা বারবার আবৃত্তি করার যোগ্য। তাদের চর্ম শিহরিত হয় উহা থেকে (= উহা পাঠ করে ও শ্রবণ করে) যারা ভয় করে তাদের রবকে। তারপর নরম হয় তাদের চর্ম আর তাদের কলব আল্লাহর যিকিরের/ স্মরণের/ স্মরণিকার/ স্মরণীয় উপদেশের/ সংবিধানের প্রতি। উহাই আল্লাহর হুদা/ হিদায়াত। তিনি হিদায়াত করেন উহা দ্বারা যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর যাকে তিনি পথভ্রষ্ট করেন, তারপর তার জন্য নেই কোন হিদায়াতকারী।

৩৯:২৪
আফামাইঁ = তবে কি যে। ইয়াত্তাক্বী = ঠেকাতে চাইবে। বিওয়াজহিহী = তার মুখমন্ডল দিয়ে। ছূআল আযাবা = নিকৃষ্ট আযাবকে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে (তার এখন আত্মতৃপ্ত হওয়া শোভা পায়?)। ওয়া = আর। ক্বীলা লিয যলিমীনা = যালিমদেরকে বলা হবে। যূক্বূ = তোমরা উহার স্বাদ আস্বাদন করো। মা কুনতুম তাকছিবূনা = যা (যে পাপ) তোমরা উপার্জন করছিলে।

তবে কি যে ঠেকাতে চাইবে তার মুখমন্ডল দিয়ে নিকৃষ্ট আযাবকে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে (তার এখন আত্মতৃপ্ত হওয়া শোভা পায়?) আর যালিমদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা উহার স্বাদ আস্বাদন করো যা (যে পাপ) তোমরা উপার্জন করছিলে’।

৩৯:২৫
কাযযাবাল্লাযীনা = তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যারা ছিলো। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে। ফাআতাহুমুল আযাবু = তারপর তাদের উপর এসেছিলো আযাব/ শাস্তি। মিন হায়ছু = যেখান থেকে। লা ইয়াশঊরূনা = (আযাব আসবে বলে) তারা টেরও পায়নি।

তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যারা ছিলো তাদের আগে। তারপর তাদের উপর এসেছিলো আযাব/ শাস্তি যেখান থেকে (আযাব আসবে বলে) তারা টেরও পায়নি।

৩৯:২৬
ফাআযাক্বাহুমুল্লাহুল খিযইয়া = তখন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্চনার স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। আযাবুল আখিরাতু = আখিরাতের আযাব। আকবারু = সবচেয়ে বড় (আযাব)। লাও = যদি। কানূ ইয়া’লামূনা = তারা জানতো।

তখন আল্লাহ তাদেরকে লাঞ্চনার স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। আর আখিরাতের আযাব সবচেয়ে বড় (আযাব)। যদি তারা জানতো!

৩৯:২৭
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। দরাবনা = আমরা পেশ করেছি। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। ফী হাযাল ক্বুরআনি = এই আল কুরআনে। মিন কুল্লি মাছালিন = প্রত্যেক প্রকার দৃষ্টান্ত। লাআল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারূনা = যেন তারা তাযাক্কুর/ উপদেশ স্মরণ করতে পারে।

আর নিশ্চয় আমরা পেশ করেছি মানুষের জন্য এই আল কুরআনে প্রত্যেক প্রকার দৃষ্টান্ত, যেন তারা তাযাক্কুর/ উপদেশ স্মরণ করতে পারে।

৩৯:২৮
ক্বুরআনান আরাবিয়্যান = আরবী ভাষার কুরআন। গায়রা যীইওয়াযিন = যাতে কোন বক্রতা নেই। লাআল্লাহুম ইয়াত্তাক্বূনা = যেন তারা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে।

আরবী ভাষার কুরআন, যাতে কোন বক্রতা নেই, যেন তারা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে।

৩৯:২৯
দরাবাল্লাহুল মাছালান = আল্লাহ পেশ করেন একটি দৃষ্টান্ত। রজুলান ফীহি শুরাকাউ = এক ব্যক্তির যার (মনিব হিসাবে) আছে অনেক শরিক। মুতাশাকিছূনা = যারা বাঁকা স্বভাবের। ওয়া = আর। রজুলান = অন্য এক ব্যক্তির। ছালামাল লিরজুলিন = যে একজনমাত্র ব্যক্তির প্রতি আত্মসমর্পণকারী। হাল ইয়াছতাভীয়ানি মাছালান = তারা দুজন কি সমান? আলহামদুলিল্লাহি = আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বাল = বরং। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = ইলম/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান রাখে না।

আল্লাহ পেশ করেন একটি দৃষ্টান্ত এক ব্যক্তির যার (মনিব হিসাবে) আছে অনেক শরিক, যারা বাঁকা স্বভাবের; আর অন্য এক ব্যক্তির, যে একজনমাত্র ব্যক্তির প্রতি আত্মসমর্পণকারী। তারা দুজন কি সমান? আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। বরং তাদের অধিকাংশই ইলম/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান রাখে না।

৩৯:৩০
ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমিও। মাইয়িতুন = মরবে। ওয়া = আর। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারাও। মাইয়িতূনা = মরবে।

নিশ্চয় তুমিও মরবে আর নিশ্চয় তারাও মরবে।

৩৯:৩১
ছুম্মা = তারপর। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ইনদা রব্বিকুম = তোমাদের রবের কাছে। তাখতাসিমূনা = পরস্পর বাদানুবাদ করবে।

তারপর নিশ্চয় তোমরা ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে তোমাদের রবের কাছে পরস্পর বাদানুবাদ করবে।

৩৯:৩২
ফামান আযলামু মিম্মান কাযাবা আলাল্লাহি = তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলে? ওয়া = আর। কাযযাবা বিস সিদক্বি = সত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। ইয = যখন। জাআহু = উহা তার কাছে এসেছে। আলাইছা ফী জাহান্নামা = জাহান্নামের মধ্যেই কি নয়। মাছওয়াল্লিল কাফিরীনা = কাফিরদের আবাসস্থল।

তার চেয়ে বড় যালেম আর কে হতে পারে যে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা বলে? আর সত্যকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, যখন উহা তার কাছে এসেছে? জাহান্নামের মধ্যেই কি নয় কাফিরদের আবাসস্থল?

৩৯:৩৩
ওয়াল্লাযী = আর যে। জাআ বিস সিদক্বি = সত্যসহকারে এসেছে। ওয়া = আর। সদ্দাক্বা বিহী = উহাকে (= সত্যকে) সত্য বলেছে। উলায়িকা হুমুল মুত্তাক্বূনা = তারাই মুত্তাকী/ আল্লাহভীরু।

আর যে সত্যসহকারে এসেছে ও উহাকে (= সত্যকে) সত্য বলেছে, তারাই মুত্তাকী/ আল্লাহভীরু।

৩৯:৩৪
লাহুম = তাদের জন্য থাকবে। মা ইয়াশাঊনা = যা তারা (পেতে) ইচ্ছা করবে। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। যালিকা = উহাই। জাযাউল মুহসিনীনা = মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের প্রতিফল।

তাদের জন্য থাকবে যা তারা (পেতে) ইচ্ছা করবে তাদের রবের কাছে। উহাই মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের প্রতিফল।

৩৯:৩৫
লিইউকাফফিরাল্লাহু = যেন আল্লাহ মুচে দেন। আনহুম = তাদের থেকে। আছওয়াল্লাযী আমিলূ = তারা (অতীতে) যেসব মন্দ আমল করেছিলো তা। ওয়া = আর। ইয়াজযিয়াহুম = (যেন) তিনি তাদেরকে প্রতিফল দেন। আজরাহুম = তাদের মজুরিরূপে। বিআহসানিল্লাযী কানূ ইয়া’মালূনা = তারা অধিক উত্তম যে কাজ করেছিলো উহা অনুযায়ী।

যেন আল্লাহ মুচে দেন তাদের থেকে তারা (অতীতে) যেসব মন্দ আমল করেছিলো তা আর (যেন) তিনি তাদেরকে প্রতিফল দেন তাদের মজুরিরূপে তারা অধিক উত্তম যে কাজ করেছিলো উহা অনুযায়ী।

৩৯:৩৬
আলাইছাল্লাহি বিকাফিন আবদাহু = আল্লাহ কি যথেষ্ট নন তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে? ওয়া = আর। খাভভিফূনাকা = তারা তোমাকে ভয় দেখায়। বিল্লাযী মিন দূনিহী = তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের (ভয়)। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দেন। ফামা লাহু মিন হাদিন = তারপর তার জন্য নেই কোন হিদায়াতকারী।

আল্লাহ কি যথেষ্ট নন তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে? আর তারা তোমাকে ভয় দেখায়, তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদের (ভয়)। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দেন, তারপর তার জন্য নেই কোন হিদায়াতকারী।

৩৯:৩৭
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াহদিল্লাহু = যাকে আল্লাহ হিদায়াত/ পথনির্দেশ করেন। ফামা লাহু মিম মুদিল্লিন = তার জন্য নেই কোন পথভ্রষ্টকারী। আলাইছাল্লাহু বিআযীযিন যিনতিক্বামি = আল্লাহ কি নন আযীয/ মহাশক্তিমান ও যিনতিক্বাম/ প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

আর যাকে আল্লাহ হিদায়াত/ পথনির্দেশ করেন তার জন্য নেই কোন পথভ্রষ্টকারী। আল্লাহ কি নন আযীয/ মহাশক্তিমান ও যিনতিক্বাম/ প্রতিশোধ গ্রহণকারী?

৩৯:৩৮
ওয়া = আর। লায়িন ছাআলতাহুম = যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো। মান = কে। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী। লাইয়াক্বূলুন্নাল্লাহু = তাহলে অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ’। ক্বুল = বলো। আফারআইতুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। মা তাদঊনা মিন দূনিল্লাহি = তাদের ব্যাপারে যাদেরকে তোমরা ডাকো আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ইন = যদি। আরাদানিয়াল্লাহু = আল্লাহ আমার ব্যাপারে এরাদা/ ইচ্ছা করেন। বিদুররিন = কোন ক্ষতি করতে। হাল হুন্না কাশিফাতু = তারা কি রক্ষাকারী হতে পারবে। দুররিহী = তাঁর করা ক্ষতি থেকে? আও = অথবা। আরাদানী = তিনি আমার ব্যাপারে এরাদা/ ইচ্ছা করেন। বিরহমাতিন = রহমত/ দয়া করতে। হাল হুন্না মুমছিকাতুন = তারা কি বন্ধকারী হতে পারবে। রহমাতিহী = তাঁর রহমতকে? ক্বুল = বলো। হাছবিয়াল্লাহু = আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। আলাইহি ইয়াতাওয়াক্কালুল মুতাওয়াক্কিলূনা = তাঁরই উপর ভরসা করে ভরসাকারীরা।

আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো, ‘কে সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী?’ তাহলে অবশ্যই তারা বলবে, ‘আল্লাহ’। বলো, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো তাদের ব্যাপারে যাদেরকে তোমরা ডাকো আল্লাহকে বাদ দিয়ে? যদি আল্লাহ আমার ব্যাপারে এরাদা/ ইচ্ছা করেন কোন ক্ষতি করতে, তারা কি রক্ষাকারী হতে পারবে তাঁর করা ক্ষতি থেকে? অথবা তিনি আমার ব্যাপারে এরাদা/ ইচ্ছা করেন রহমত/ দয়া করতে, তারা কি বন্ধকারী হতে পারবে তাঁর রহমতকে?’ বলো, ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তাঁরই উপর ভরসা করে ভরসাকারীরা’।

৩৯:৩৯
ক্বুল = বলো। ইয়া ক্বাওমি’মালূ = হে আমার কওম, তোমরা আমল/ কাজ করো। আলা মাকানাতিকুম = তোমাদের নিজেদের অবস্থানে। ইন্নী = নিশ্চয় আমিও। আমিলুন = (আমার নিজ অবস্থানে) কর্মসম্পাদনকারী। ফাছাওফা = শীঘ্রই। তা’লামূনা = তোমরা জানবে।

বলো, ‘হে আমার কওম, তোমরা আমল/ কাজ করো তোমাদের নিজেদের অবস্থানে। নিশ্চয় আমিও (আমার নিজ অবস্থানে) কর্মসম্পাদনকারী। শীঘ্রই তোমরা জানবে।

৩৯:৪০
মাইঁ ইয়াতীহি আযাবুন = কার উপর আযাব/ শাস্তি আসবে। ইউখযীহি = যা তাকে লাঞ্চিত করবে। ওয়া = আর। ইয়াহিল্লু আলাইহি = তার উপর আপতিত হবে। আযাবুম মুক্বীমুন = প্রতিষ্ঠিত/ স্থায়ী আযাব।

কার উপর আযাব/ শাস্তি আসবে যা তাকে লাঞ্চিত করবে আর তার উপর আপতিত হবে প্রতিষ্ঠিত/ স্থায়ী আযাব।

৩৯:৪১
ইন্না = নিশ্চয়। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। আলাইকাল কিতাবা = তোমার উপর এ কিতাব। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। বিল হাক্বক্বি = সত্যসহকারে। ফামানিহতাদা = সুতরাং যে হিদায়াত/ পথনির্দেশ গ্রহণ করে। ফালিনাফসিহী = সে তা গ্রহণ করে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। ওয়া = আর। মান = যে। দল্লা = পথভ্রষ্ট হয়। ফাইন্নামা = তবে বস্তুত। ইয়াদিল্লু = সে পথভ্রষ্ট হয়। আলাইহা = তার নিজেরই বিরুদ্ধে। ওয়া = আর। মা আনতা = তুমি নও। আলাইহিম = তাদের উপর। বিওয়াকীলিন = উকিল/ কর্মবিধায়ক।

নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তোমার উপর এ কিতাব মানবজাতির জন্য সত্যসহকারে। সুতরাং যে হিদায়াত/ পথনির্দেশ গ্রহণ করে সে তা গ্রহণ করে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হয় তবে বস্তুত সে পথভ্রষ্ট হয় তার নিজেরই বিরুদ্ধে। আর তুমি নও তাদের উপর উকিল/ কর্মবিধায়ক।

৩৯:৪২
আল্লাহু = আল্লাহ। ইয়াতাওয়াফফাল আনফুসা = নফসসমূহকে/ আত্মাসমূহকে নিয়ে যান। হীনা মাওতিহা = তার মৃত্যুর সময়। ওয়াল্লাতী লাম তামুত = আর যে মরেনি তার ক্ষেত্রে। ফী মানামিহা = তার ঘুমের মধ্যে। ফাইউমছিকুল্লাতী = তারপর উহাকে আটকে রাখেন। ক্বদা আলাইহাল মাওতু = যার উপর মৃত্যুর ফায়সালা হয়ে গেছে। ওয়া = আর। ইউরছিলুল উখরা = তিনি ফেরত পাঠান অন্যগুলোকে। ইলা আজালিম মুসাম্মা = আজালুম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিন = আয়াত/ নিদর্শন। লিক্বাওমি ইয়াতাফাক্কারূনা = সেই কওমের জন্য যারা তাফাক্কুর/ চিন্তাগবেষণা করে।

আল্লাহ নফসসমূহকে/ আত্মাসমূহকে নিয়ে যান তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরেনি তার ক্ষেত্রে তার ঘুমের মধ্যে; তারপর উহাকে আটকে রাখেন যার উপর মৃত্যুর ফায়সালা হয়ে গেছে, আর তিনি ফেরত পাঠান অন্যগুলোকে আজালুম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াত/ নিদর্শন সেই কওমের জন্য যারা তাফাক্কুর/ চিন্তাগবেষণা করে।

৩৯:৪৩
আমিত্তাখাযূ = নাকি তারা গ্রহণ করেছে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। শুফাআআ = অন্যদেরকে শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারীরূপে। ক্বুল = বলো। আওয়ালাও = তবুও কি যদিও। কানূ লা ইয়ামলিকূনা শাইয়ান = তারা ক্ষমতা রাখে না কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। লা ইয়া’ক্বিলূনা = তারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ সাধারণ জ্ঞান/ common sense প্রয়োগ করে না?

নাকি তারা গ্রহণ করেছে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারীরূপে? বলো তবুও কি যদিও তারা ক্ষমতা রাখে না কিছুমাত্রও আর তারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ সাধারণ জ্ঞান/ common sense প্রয়োগ করে না?

৩৯:৪৪
ক্বুল = বলো। লিল্লাহি = আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন। শাফায়াতু জামীআ = সমস্ত শাফায়াত/ সুপারিশ। লাহু মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = তাঁরই নিয়ন্ত্রণে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য। ছুম্মা = তারপর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। তুরজাঊনা = তোমরা ফিরে যাবে।

বলো, ‘আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন সমস্ত শাফায়াত/ সুপারিশ। তাঁরই নিয়ন্ত্রণে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আধিপত্য। তারপর তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।

৩৯:৪৫
ওয়া = আর। ইযা = যখন। যুকিরাল্লাহু ওয়াহদাহুশতামাআযযাত = এককভাবে আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করা হয় তখন সংকুচিত হয়ে যায়। ক্বুলূবুল্লাযীনা = তাদের কলবসমূহ যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। ওয়া = আর। ইযা = যখন। যুকিরাল্লাযীনা মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়া অন্যদের যিকির/ স্মরণ করা হয়। ইযা = তখন। হুম = তারা। ইযাছতাবশিরূনা = আনন্দিত হয়।

আর যখন এককভাবে আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করা হয় তখন সংকুচিত হয়ে যায় তাদের কলবসমূহ যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি; আর যখন তাঁকে ছাড়া অন্যদের যিকির/ স্মরণ করা হয় তখন তারা আনন্দিত হয়।

৩৯:৪৬
ক্বুলিল্লাহুম্মা = বলো, ‘হে আল্লাহ। ফাত্বিরাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা। আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি = গায়েবের/ অদৃশ্যের ও শাহাদাতের/ দৃশ্যের জ্ঞানী। আনতা তাহকুমু = আপনিই ফায়সালা করে দিবেন। বায়না ইবাদিকা = আপনার বান্দাদের মধ্যে। ফী মা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূনা = তারা যেসব বিষয়ে ইখতিলাফ/ মতভেদ করতো সেসব বিষয়ে।

বলো, ‘হে আল্লাহ, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর স্রষ্টা, গায়েবের/ অদৃশ্যের ও শাহাদাতের/ দৃশ্যের জ্ঞানী, আপনিই ফায়সালা করে দিবেন আপনার বান্দাদের মধ্যে তারা যেসব বিষয়ে ইখতিলাফ/ মতভেদ করতো সেসব বিষয়ে’।

৩৯:৪৭
ওয়া লাও আন্না = যদি এমনও হয় যে। লিল্লাযীনা যলামূ = তাদেরকে দেয়া হয় যারা যুলুম করেছে। মা ফিল আরদি জামীআ = যা কিছু পৃথিবীতে আছে তার সবকিছু। ওয়া = আর। মিছলুহু মাআহু = তার অনুরূপ আরো। লাফতাদাও বিহী = তবুও তারা উহা ফিদিয়া/ মুক্তিপণ হিসাবে দিয়ে দিবে। মিন ছূয়িল আযাবি = নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি থেকে বাঁচতে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ওয়া = আর। বাদালাহুম = তাদের জন্য এমন (শাস্তি) প্রকাশিত হবে। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে। মা লাম ইয়াকূনু ইয়াহতাছিবূনা = যা তারা ধারণাও করেনি।

যদি এমনও হয় যে, তাদেরকে দেয়া হয় যারা যুলুম করেছে যা কিছু পৃথিবীতে আছে তার সবকিছু আর তার অনুরূপ আরো, তবুও তারা উহা ফিদিয়া/ মুক্তিপণ হিসাবে দিয়ে দিবে নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি থেকে বাঁচতে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আর তাদের জন্য এমন (শাস্তি) প্রকাশিত হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে যা তারা ধারণাও করেনি।

৩৯:৪৮
ওয়া = আর। বাদা = প্রকাশিত হবে। ছাইয়িআতু = মন্দকাজসমূহ। মা কাছাবূ = যা তারা উপার্জন (= সম্পাদন) করেছে। ওয়া = আর। হাক্বা বিহিম = তাদেরকে পরিবেষ্টিত করবে। মা কানূ বিহী ইয়াছতাহযিঊনা = উহাই যে ব্যাপারে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।

আর প্রকাশিত হবে মন্দকাজসমূহ, যা তারা উপার্জন (= সম্পাদন) করেছে। আর তাদেরকে পরিবেষ্টিত করবে উহাই (= কর্মফলের আইন), যে ব্যাপারে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।

৩৯:৪৯
ফাইযা = বস্তুত যখন। মাছছাল ইনছানা = ইনসানকে/ মানুষকে স্পর্শ করে। দুররুন = কোন বিপদআপদ। দাআনা = তখন সে আমাদেরকে ডাকে। ছুম্মা = তারপর। ইযা = যখন। খাওয়ালনাহূ = আমরা তাকে দান করি। নি’মাতাম মিন্না = আমাদের পক্ষ থেকে নেয়ামত/ অনুগ্রহ। ক্বলা = তখন সে বলে। ইন্নামা = বস্তুত। উতীতুহূ = উহা আমাকে দেয়া হয়েছে। আলা ইলমিন = আমার ইলমের/ জ্ঞানের কারণে। বাল = বরং। হিয়া = উহা। ফিতনাতুন = ফিতনা/ পরীক্ষা। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = প্রকৃত ইলম/ জ্ঞান রাখে না।

বস্তুত যখন ইনসানকে/ মানুষকে স্পর্শ করে কোন বিপদআপদ, তখন সে আমাদেরকে ডাকে। তারপর যখন আমরা তাকে দান করি আমাদের পক্ষ থেকে নেয়ামত/ অনুগ্রহ, তখন সে বলে, ‘বস্তুত উহা আমাকে দেয়া হয়েছে আমার ইলমের/ জ্ঞানের কারণে’। বরং উহা ফিতনা/ পরীক্ষা। কিন্তু তাদের অধিকাংশই প্রকৃত ইলম/ জ্ঞান রাখে না।

৩৯:৫০
ক্বাদ = নিশ্চয়। ক্বালাহাল্লাযীনা = তারাও উহা বলেছিলো যারা ছিলো। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে। ফামা আগনা = তারপর ফলপ্রসূ হয়নি। আনহুম = তাদের জন্য। মা কানূ ইয়াকছিবূনা = যা তারা উপার্জন করছিলো।

নিশ্চয় তারাও উহা বলেছিলো যারা ছিলো তাদের আগে।। তারপর ফলপ্রসূ হয়নি তাদের জন্য যা তারা উপার্জন করেছিলো।

৩৯:৫১
ফাআসাবাহুম = তারপর তাদের উপর পড়েছিলো। ছাইয়িআতু = উহার মন্দ পরিণতি। মা কাছাবূ = যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছিলো। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। মিন হাউলায়ি = এদের মধ্য থেকে। ছাইউসীবুহুম = শীঘ্রই তাদের উপরও এসে পড়বে। ছাইয়িআতু = উহার মন্দ পরিণতি। মা কাছাবূ = যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছিলো। ওয়া = আর। মা হুম = তারা হতে পারবে না। বিমু’জিযীনা = উহার প্রতিরোধকারী।

তারপর তাদের উপর পড়েছিলো উহার মন্দ পরিণতি যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছিলো। আর যারা যুলুম করেছে এদের মধ্য থেকে, শীঘ্রই তাদের উপরও এসে পড়বে উহার মন্দ পরিণতি যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছিলো। আর তারা হতে পারবে না উহার প্রতিরোধকারী।

৩৯:৫২
আওয়াহাম ইয়া’লামূ = তারা কি জানেনি। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। ইয়াবছুতুর রিযক্বা = প্রশস্ত করে দেন রিযিককে। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াক্বদিরু = প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি নিয়ন্ত্রিত করে দেয়ার ইচ্ছা করেন)। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিল্লিক্বাওমিইঁ ইউ’মিনূনা = আয়াত/ নিদর্শন সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।

তারা কি জানেনি যে, আল্লাহ প্রশস্ত করে দেন রিযিককে যার জন্য তিনি (প্রশস্ত করে দেয়ার) ইচ্ছা করেন, আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াত/ নিদর্শন সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।

৩৯:৫৩
ক্বুল = বলো (তথা প্রচার করো আল্লাহর এ বাণী)। ইয়া ইবাদিয়াল্লাযীনা = হে আমার বান্দাগণ যারা। আছরাফূ আলা আনফুসাহুম = বাড়াবাড়ি করেছো নিজেদের উপর। লা তাক্বনাতূ = তোমরা নিরাশ হয়ো না। মির রহমাতিল্লাহি = আল্লাহর রহমত/ দয়া থেকে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়াগফিরুয যুনূবা জামীয়া = ক্ষমা করবেন সকল পাপ। ইন্নাহু হুয়াল গাফূরুর রহীমু = নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

বলো (তথা প্রচার করো আল্লাহর এ বাণী), ‘হে আমার বান্দাগণ যারা বাড়াবাড়ি করেছো নিজেদের উপর, তোমরা নিরাশ হয়ো না আল্লাহর রহমত/ দয়া থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করবেন সকল পাপ। নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৩৯:৫৪
ওয়া = আর। আনিবূ = তোমরা ফিরে এসো। ইলা রব্বিকুম = তোমাদের রবের দিকে। ওয়া = আর। আছলামূ = তোমরা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করো। লাহু = তাঁর কাছে। মিন ক্বাবলি আইঁ ইয়াতিয়াকুমুল আযাবা = তোমাদের উপর আযাব/ শাস্তি আসার আগেই। ছুম্মা = তারপর (= শাস্তি এসে গেলে পরে)। লা তুনসরূনা = তোমাদেরকে আর সাহায্য করা হবে না।

আর তোমরা ফিরে এসো তোমাদের রবের দিকে আর তোমরা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করো তাঁর কাছে, তোমাদের উপর আযাব/ শাস্তি আসার আগেই। তারপর (= শাস্তি এসে গেলে পরে) তোমাদেরকে আর সাহায্য করা হবে না।

৩৯:৫৫
ওয়াত্তাবিঊ = আর তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। আহছানা মা উনযিলা ইলাইকুম = অধিক উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (= আল কুরআন)। মিন ক্বাবলি আইঁইয়া’তিয়াকুমুল আযাবু বাগতাতান = এর আগেই যে, তোমাদের উপর হঠাৎ আযাব/ শাস্তি আসবে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আনতুম = তোমরা। লা তাশউরূনা = টের পাবে না।

আর তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো অধিক উত্তম যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (= আল কুরআন), এর আগেই যে, তোমাদের উপর হঠাৎ আযাব/ শাস্তি আসবে, এ অবস্থায় যে, তোমরা টের পাবে না।

৩৯:৫৬
আন তাক্বূলা নাফসুন = যেন না বলতে হয় কোন ব্যক্তিকে। ইয়া হাছরাতা = হায়! আমার আফসোস! আলা মা ফাররাত্তু = এ কারণে যে, আমি ত্রুটি করেছি। ফী জাম্বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে। ওয়া = আর। ইন কুনতু = আমি কি ছিলাম না। লামিনাছ ছাখিরীনা = ঠাট্টাবিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত?

যেন না বলতে হয় কোন ব্যক্তিকে, ‘হায়! আমার আফসোস! এ কারণে যে, আমি ত্রুটি করেছি আল্লাহর প্রতি কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে। আর আমি কি ছিলাম না ঠাট্টাবিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত?’

৩৯:৫৭
আও = অথবা। তাক্বূলা = বলবে। লাও আন্নাল্লাহা = যদি এমন হতো যে, আল্লাহ। হাদানী = আমাকে হিদায়াত/ পথনির্দেশ করতেন। লাকুনতু মিনাল মুত্তাক্বীনা = তাহলে আমি হতাম মুত্তাকীদের/ আল্লাহভীরুদের অন্তর্ভুক্ত।

অথবা বলবে, ‘যদি এমন হতো যে, আল্লাহ আমাকে হিদায়াত করতেন তাহলে আমি হতাম মুত্তাকীদের/ আল্লাহভীরুদের অন্তর্ভুক্ত’।

৩৯:৫৮
আও = অথবা। তাক্বূলা হীনা তারাল আযাবা = আযাব/ শাস্তি দেখার সময় বলবে। লাও আন্না লী = যদি আমার জন্য হতো। কাররাতান = একবার ফিরে যাবার সুযোগ। ফাআকূনা = তাহলে আমি হতাম। মিনাল মুহসিনীনা = মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

অথবা আযাব/ শাস্তি দেখার সময় বলবে, ‘যদি আমার জন্য হতো একবার ফিরে যাবার সুযোগ, তাহলে আমি হতাম মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’।

৩৯:৫৯
বালা = বরং। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআতকা = তোমার কাছে এসেছিলো। আয়াতী = আমার আয়াতসমূহ। ফাকাযযাবতা বিহা = তখন তুমি মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে উহার প্রতি। ওয়াছতাকবারতা = আর তুমি অহংকার করেছিলে। ওয়া = আর। কুনতা = তুমি ছিলে। মিনাল কাফিরীনা = কাফিরদের/ অবিশ্বাসীদের/ অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

বরং নিশ্চয় তোমার কাছে এসেছিলো আমার আয়াতসমূহ, তখন তুমি মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে উহার প্রতি, আর তুমি অহংকার করেছিলে, আর তুমি ছিলে কাফিরদের/ অবিশ্বাসীদের/ অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

৩৯:৬০
ওয়া = আর। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। তারাল্লাযীনা = তুমি তাদেরকে দেখবে যারা। কাযাবূ আলাল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছিলো। উজূহুহুম মুছওয়াদ্দাতুন = তাদের মুখমন্ডলসমূহ কালো হয়ে গেছে। আলাইছা ফী জাহান্নামা = জাহান্নামেই কি নয়। মাছওয়াল্লিল মুতাকাব্বিরীনা = অহংকারীদের জন্য আবাসস্থল?

আর ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে তুমি তাদেরকে দেখবে যারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলেছিলো, তাদের মুখমন্ডলসমূহ কালো হয়ে গেছে। জাহান্নামেই কি নয় অহংকারীদের জন্য আবাসস্থল?

৩৯:৬১
ওয়া = আর। ইউনাযযিল্লাহুল্লাযীনাত্তাক্বাও = আল্লাহ তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেবেন যারা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করেছিলো। বিমাফাযাতিহিম = তাদের সফলতার কারণে। লা ইয়ামাছছুহুমুছ ছূআ = তাদেরকে স্পর্শ করবে না কোন মন্দ। ওয়া = আর। লা হুম ইয়াহযানূনা = তারা দু:খিতও হবে না।

আর আল্লাহ তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেবেন যারা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করেছিলো, তাদের সফলতার কারণে। তাদেরকে স্পর্শ করবে না কোন মন্দ আর তারা দু:খিতও হবে না।

৩৯:৬২
আল্লাহু = আল্লাহ। খালিক্বু কুল্লি শাইয়িন = সবকিছুর স্রষ্টা। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আলা কুল্লি শাইয়িওঁ ওয়াকীলুন = সব বিষয়ের উকিল/ কর্মবিধায়ক।

আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা। আর তিনি সব বিষয়ের উকিল/ কর্মবিধায়ক।

৩৯:৬৩
লাহু মাক্বালীদুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। উলায়িকা হুমুল খাছিরূনা = তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ। আর যারা কুফর করেছে আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।

৩৯:৬৪
ক্বুল = বলো। আফাগায়রাল্লাহি = তবে কি আল্লাহকে ছেড়ে। তা’মুরূনী = আমাকে তোমরা আদেশ দিচ্ছো যে। আ’বুদু = যেন আমি অন্যদের ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি। আইয়ুহাল জাহিলূনা = হে জাহেলগণ/ মূর্খ লোকেরা।

বলো, ‘তবে কি আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে তোমরা আদেশ দিচ্ছো যে, যেন আমি অন্যদের ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করি, হে জাহেলগণ/ মূর্খ লোকেরা!

৩৯:৬৫
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। ঊহিয়া = ওহী করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া = আর। ইলাল্লাযীনা = তাদের প্রতি যারা ছিলো। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগে। লাইন = যদি। আশরাকতা = তুমি শিরক করো। লাইয়াবাত্বান্না = তাহলে নষ্ট হয়ে যাবে। আমালুকা = তোমার আমল/ কাজ। ওয়া = আর। লাতাকূনান্না = অবশ্যই তুমি হয়ে যাবে। মিনাল খাছিরীনা = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

আর নিশ্চয় ওহী করা হয়েছে তোমার প্রতি আর তাদের প্রতি যারা ছিলো তোমার আগে, ‘যদি তুমি শিরক করো, তাহলে নষ্ট হয়ে যাবে তোমার আমল/ কাজ, আর অবশ্যই তুমি হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’।

৩৯:৬৬
বালিল্লাহা = বরং আল্লাহরই। ফা’বুদু = তুমি ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করো। ওয়া = আর। কুম মিনাশ শাকিরীনা = শোকরকারীদের/ কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।

বরং আল্লাহরই তুমি ইবাদাত/ দাসত্ব/ উপাসনা করো, আর শোকরকারীদের/ কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও।

৩৯:৬৭
ওয়া = আর। মা কাদারুল্লাহা = তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয় নি। হাক্বক্বা ক্বাদরিহী = যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত। ওয়াল আরদি জামিআন = আর সমস্ত পৃথিবী। ক্বাবদাতুহু = তাঁর মুঠিতে থাকবে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ওয়াছ ছামাওয়াতু = আর আকাশমন্ডলী। মুত্বাভিয়্যাতুম বিইয়ামীনিহী = পেঁচানো অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতের দ্বারা। ছুবহানাহু = সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। ওয়া = আর। তাআলা আম্মা ইউশরিকূনা = তিনি উহার অনেক ঊর্ধ্বে যে শিরক তারা করে।

আর তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয় নি যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত (বা তিনি যেরূপ মর্যাদার হক্বদার বা তাঁকে মর্যাদা দেয়ার হক্ব আদায় করে যথাযথভাবে)। আর সমস্ত পৃথিবী তাঁর মুঠিতে থাকবে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে, আর আকাশমন্ডলী পেঁচানো অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতের দ্বারা। সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। আর তিনি উহার অনেক ঊর্ধ্বে যে শিরক তারা করে।

৩৯:৬৮
ওয়া = আর। নুফিখা = ফুঁ দেয়া হবে। ফিস সূরি = শিঙ্গায়। ফাসয়িক্বা = তখন মুর্ছিত হবে। মান ফিস সামাওয়াতি = যারা আছে আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মান ফিল আরদি = যারা আছে পৃথিবীতে। ইল্লা মাইঁ ইয়াশাআল্লাহু = তারা ছাড়া, যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন। ছুম্মা = তারপর। নুফিখা ফীহি = উহাতে ফুঁ দেয়া হবে। উখরা = পরবর্তীবার। ফাইযা = ফলে তখন। হুম = তারা। ক্বিয়ামুইঁ ইয়ানযুরূনা = দন্ডায়মান হবে ও দেখতে থাকবে।

আর ফুঁ দেয়া হবে শিঙ্গায়, তখন মুর্ছিত হবে যারা আছে আকাশমন্ডলীতে আর যারা আছে পৃথিবীতে; তারা ছাড়া যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন। তারপর উহাতে ফুঁ দেয়া হবে পরবর্তীবার, ফলে তখন তারা দন্ডায়মান হবে ও দেখতে থাকবে।

৩৯:৬৯
ওয়া = আর। আশরাক্বাতিল আরদু = উদ্ভাসিত হবে পৃথিবী। বিনূরি রব্বিহা = তার রবের নূরে/ আলোতে। ওয়া = আর। উদিয়াল ক্বিতাবু = রাখা হবে কিতাব/ আমলনামা। ওয়া = আর। জীআ = উপস্থিত করা হবে। বিন্নাবিয়্যীনা = নবীদেরকে। ওয়াশ শুহাদাই = আর শহীদদেরকে/ সাক্ষীদেরকে। ওয়া = আর। ক্বুদিয়া = ফায়সালা করে দেয়া হবে। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। বিলহাক্বক্বি = হক্বের/ সত্যের ভিত্তিতে। ওয়া = আর। হুম = তাদেরকে। লা ইউযলামূনা = কোন যুলুম করা হবে না।

আর উদ্ভাসিত হবে পৃথিবী তার রবের নূরে/ আলোতে। আর রাখা হবে কিতাব/ আমলনামা। আর উপস্থিত করা হবে নবীদেরকে আর শহীদদেরকে/ সাক্ষীদেরকে। আর ফায়সালা করে দেয়া হবে তাদের মধ্যে হক্বের/ সত্যের ভিত্তিতে। আর তাদেরকে কোন যুলুম করা হবে না।

৩৯:৭০
ওয়া = আর। উফফিয়াত = পূর্ণ করে দেয়া হবে। কুল্লু নাফসিন = প্রত্যেক ব্যক্তিকে। মা আমিলাত = যা সে আমল/ কাজ করেছে তার প্রতিফল। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আ’লামু = জানেন। বিমা ইয়াফআলূনা = যা তারা করছে তা সম্পর্কে।

আর পূর্ণ করে দেয়া হবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে যা সে আমল/ কাজ করেছে তার প্রতিফল। আর তিনি জানেন যা তারা করছে তা সম্পর্কে।

৩৯:৭১
ওয়া = আর। ছীক্বাল্লাযীনা = তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ইলা জাহান্নামা = জাহান্নামের দিকে। যুমারা = দলে দলে। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। জাউহা = তারা উহার কাছে আসবে। ফুতিহাত = তখন খুলে দেয়া হবে। আবওয়াবুহা = উহার দরজাসমূহ। ওয়া = আর। ক্বলা লাহুম = তাদেরকে বলবে। খাযানাতুহা = উহার রক্ষীরা। আলাম ইয়া’তিকুম = তোমাদের কাছে কি আসেনি। রুসুলুম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার রসূলগণ। ইয়াতলূনা = যারা তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করতো। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। আয়াতি রব্বিকুম = তোমাদের রবের আয়াতসমূহ। ওয়া = আর। ইউনযিরূনাকুম = তোমাদেরকে সতর্ক করতো। লিক্বাআ ইয়াওমিকুম হাযা = তোমাদের এ দিনের মোলাকাতের (= জবাবদিহিতার জন্য এ দিনের সম্মুখীন হওয়ার) বিষয়ে। ক্বলূ = তারা বলবে। বালা = হ্যাঁ, এসেছিলো। ওয়ালাকিন = কিন্তু। হাক্বক্বাত = বাস্তবায়িত হয়েছে। কালিমাতুল আযাবি = শাস্তিসম্পর্কিত বাণী। আলাল কাফিরীনা = কাফিরদের উপর।

আর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে যারা কুফর করেছে জাহান্নামের দিকে দলে দলে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা উহার কাছে আসবে, তখন খুলে দেয়া হবে উহার দরজাসমূহ। আর তাদেরকে বলবে উহার রক্ষীরা, ‘তোমাদের কাছে কি আসেনি তোমাদের মধ্যকার রসূলগণ, যারা তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করতো তোমাদের কাছে তোমাদের রবের আয়াতসমূহ আর তোমাদেরকে সতর্ক করতো তোমাদের এ দিনের মোলাকাতের (= জবাবদিহিতার জন্য এ দিনের সম্মুখীন হওয়ার) বিষয়ে? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ, এসেছিলো। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়েছে শাস্তিসম্পর্কিত বাণী কাফিরদের উপর’।

৩৯:৭২
ক্বীলাদখুলূ = বলা হবে, ‘তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো। আবওয়াবা জাহান্নামা = জাহান্নামের দরজাসমূহে। খালিদীনা ফীহা = তোমরা তাতে স্থায়ী হবে। ফাবি’ছা মাছওয়াল মুতাকাব্বিরীনা = কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।

বলা হবে, ‘তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো জাহান্নামের দরজাসমূহে। তোমরা তাতে স্থায়ী হবে। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল’।

৩৯:৭৩
ওয়া = আর। ছীক্বাল্লাযীনাত্তাক্বাও রব্বাহুম = তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে যারা তাদের রবকে ভয় করেছে। ইলাল জান্নাতি = জান্নাতের দিকে। যুমারা = দলে দলে। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। জাউহা = তারা উহার কাছে আসবে। ওয়া = ও। ফুতিহাত = খুলে দেয়া হবে। আবওয়াবুহা = উহার দরজাসমূহ। ওয়া = আর। ক্বলা লাহুম = তাদেরকে বলবে। খাযানাতুহা = উহার রক্ষীরা। ছালামুন আলাইকুম তিবতুম = ‘সালামুন আলাইকুম তিবতুম’/ ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা সুখী হও’। ফাদখুলূহা = তোমরা উহাতে দাখিল হও/ প্রবেশ করো। খালিদীনা = তোমরা তাতে স্থায়ী হবে।

আর তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হবে যারা তাদের রবকে ভয় করেছে জান্নাতের দিকে দলে দলে। শেষ পর্যন্ত যখন তারা উহার কাছে আসবে ও খুলে দেয়া হবে উহার দরজাসমূহ। আর তাদেরকে বলবে উহার রক্ষীরা, ‘‘সালামুন আলাইকুম তিবতুম’/ ‘তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা সুখী হও’; ‘তোমরা উহাতে দাখিল হও/ প্রবেশ করো। তোমরা তাতে স্থায়ী হবে’।

৩৯:৭৪
ওয়া = আর। ক্বলুলহামদুলিল্লাহিল্লাযী = তারা বলবে, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি। সদাক্বানা ওয়া’দাহু = আমাদের প্রতি সত্যে পরিণত করেছেন তাঁর ওয়াদাকে। ওয়া = আর। আওরাছনাল আরদা = আমাদেরকে পৃথিবীর ওয়ারিস করেছেন। নাতাবাওয়াউ = আমরা আবাস বানিয়ে নিতে পারবো। মিনাল জান্নাতি = জান্নাতে। হাইছু নাশাউ = যেখানে আমরা ইচ্ছা করবো। ফানি’মা = অতি উত্তম/ নেয়ামতপূর্ণ। আজরুল আমিলীনা = সৎকর্মশীলদের প্রতিফল।

আর তারা বলবে, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের প্রতি সত্যে পরিণত করেছেন তাঁর ওয়াদাকে। আর আমাদেরকে পৃথিবীর ওয়ারিস করেছেন। আমরা আবাস বানিয়ে নিতে পারবো জান্নাতে, যেখানে আমরা ইচ্ছা করবো। অতি উত্তম/ নেয়ামতপূর্ণ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল’।

৩৯:৭৫
ওয়া = আর। তারাল মালাইকাতু = তুমি দেখবে মালায়েকাকে/ ফেরেশতাদেরকে। হাফফীনা = ঘিরে অবস্থান করতে। মিন হাওলিল আরশি = (আল্লাহর) আরশের চারপাশে। ইউছাব্বিহূনা বিহামদি রব্বিহিম = তারা তাদের রবের হামদ/ প্রশংসা সহকারে তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকবে। ওয়া = আর। ক্বুদিয়া = ফায়সালা করে দেয়া হবে। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। বিল হাক্বক্বি = হক্ব/ সত্য সহকারে। ওয়া = আর। ক্বীলাল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীনা = বলা হবে, ‘আল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন’/ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র মহাবিশ্বের রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা ও বিধানদাতা)’।

আর তুমি দেখবে মালায়েকাকে/ ফেরেশতাদেরকে ঘিরে অবস্থান করতে (আল্লাহর) আরশের চারপাশে। তারা তাদের রবের হামদ/ প্রশংসা সহকারে তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করতে থাকবে। আর ফায়সালা করে দেয়া হবে তাদের মধ্যে হক্ব/ সত্য সহকারে। আর বলা হবে, ‘আল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন’/ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র মহাবিশ্বের রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা ও বিধানদাতা)’।