কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

032. সূরা সাজদাহ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৩২:১
আলিফ লাম মীম = আলিফ লাম মীম।

আলিফ লাম মীম।

৩২:২
তানযীলুল কিতাবি = নাযিল হয়েছে এই কিতাব। লা রইবা ফীহি = উহাতে কোন সন্দেহ নেই। মির রব্বিল আলামীনা = রব্বুল আলামীনের/ জগতসমূহের প্রতিপালক-বিধাতার পক্ষ থেকে।

নাযিল হয়েছে এই কিতাব, তাতে কোন সন্দেহ নেই, জগতসমূহের প্রতিপালক-বিধাতার পক্ষ থেকে।

৩২:৩
আম = নাকি। ইয়াক্বূলূনাফতারাহু = তারা বলে যে, ‘সে উহা রচনা করেছে। বাল = বরং। হুয়াল হাক্বক্বু = উহা হক্ব/ সত্য। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। লিতুনযিরা = যেন তুমি সতর্ক করো। ক্বাওমাম মা আতাহুম = এমন এক কওমকে যাদের কাছে আসেনি। মিন নাযীরিম মিন ক্বাবলিকা = কোন সতর্ককারী তোমার আগে। লাআল্লাহুম ইয়াহতাদূনা = যেন তারা হিদায়াত পেতে পারে।

নাকি তারা বলে যে, ‘সে উহা রচনা করেছে। বরং উহা সত্য তোমার রবের পক্ষ থেকে, যেন তুমি সতর্ক করো এমন এক কওমকে যাদের কাছে আসেনি কোন সতর্ককারী তোমার আগে, যেন তারা হিদায়াত পেতে পারে।

৩২:৪
আল্লাহুল্লাযী = আল্লাহ সেই সত্তা যিনি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী। ওয়া = আর। মা বায়নাহুমা = যা কিছু এ উভয়ের মধ্যে আছে সেসবকিছু। ফী ছিত্তাতিন আইয়ামিন = ছয় দিনে। ছুম্মাছতাওয়া আলাল আরশি = তারপর (সপ্তমদিনে) তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। মা লাকুম = তোমাদের জন্য নেই। মিন দূনিহী = তিনি ছাড়া। মিওঁ ওয়ালিইওঁ ওয়া লা শাফীইন = কোন ওলি/ অভিভাবক ও শফী’/ শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারী। আফালা তাতাযাক্কারূনা = তোমরা কি তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করবে না?

আল্লাহ সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী আর যা কিছু এ উভয়ের মধ্যে আছে সেসবকিছু ছয় দিনে, তারপর (সপ্তমদিনে) তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন। তোমাদের জন্য নেই তিনি ছাড়া কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী। তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?

৩২:৫
ইউদাব্বিরুল আমরা = তিনিই সমস্ত বিষয়ের/ কাজের ব্যবস্থাপনা করেন। মিনাছ ছামায়ি ইলাল আরদি = আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত। ছুম্মা = তারপর। ইয়া’রুজু ইলাইহি = তাঁর দিকে উত্থিত হয়। ফী ইয়াওমিন = এমন এক দিনে। কানা মিক্বদারুহূ = যার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ। আলফা ছানাতিম মিম্মা তাউদ্দূনা = তোমাদের গণনায় এক হাজার বছর। ।

তিনিই সমস্ত বিষয়ের/ কাজের ব্যবস্থাপনা করেন আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত। তারপর তাঁর দিকে উত্থিত হয় এমন এক দিনে যার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণ তোমাদের গণনায় এক হাজার বছর।

৩২:৬
যালিকা = তিনিই। আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি = গায়েবের/ অদৃশ্যের ও শাহাদাতের/ দৃশ্যের জ্ঞানী। আল আযীযির রহীমু = আযীয/ মহাশক্তিমান ও রহীম/ মহাদয়াশীল।

তিনিই অদৃশ্যের ও দৃশ্যের জ্ঞানী, মহাশক্তিমান ও মহাদয়াশীল।

৩২:৭
আল্লাযী = যিনি। আহছানা = সুন্দর ও উত্তম করেছেন। কুল্লু সাইয়িন = সবকিছুকে। খালাক্বাহু = যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। ওয়া = আর। বাদাআ খালক্বাল ইনছানা = মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন। মিন ত্বীনিন = মাটি থেকে।

যিনি সুন্দর ও উত্তম করেছেন সবকিছুকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন। আর মানুষ সৃষ্টির সূচনা করেছেন মাটি থেকে।

৩২:৮
ছুম্মা = তারপর। জাআলা নাছলাহু = তার বংশ উৎপন্ন করেছেন। মিন ছুলালাতিম মিম মায়িম মাহীনিন = তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।

তারপর তার বংশ উৎপন্ন করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে।

৩২:৯
ছুম্মা = তারপর। ছাওয়াহু = তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন। ওয়া = আর। নাফাখা = ফুঁকে দিয়েছেন। ফীহি = তার মধ্যে। মির রূহিহী = তাঁর রুহ থেকে। ওয়া = আর। জায়ালা লাকুমুছ ছামআ = তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি। ওয়াল আবসারা = ও দৃষ্টিশক্তি। ওয়াল আফয়িদাতা = এবং ফুয়াদ/ অন্তর। ক্বালীলাম মা তাশকুরূনা = তোমরা অল্পই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

তারপর তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন আর ফুঁকে দিয়েছেন তার মধ্যে তাঁর রুহ থেকে আর তোমাদেরকে দিয়েছেন শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি এবং অন্তর। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।

৩২:১০
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। আ-ইযা দলালনা = তবে কি যখন আমরা মাটিতে মিশে যাব। আইন্না = তখনো কি নিশ্চয়। লাফী খালক্বিন জাদীদিন = নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হবো? বাল = বরং। লিক্বিয়ায়ি রব্বিহিম = তাদের রবের মোলাকাতের প্রতি (= তাদের কর্মফল লাভের জন্য পর্দার অন্তরাল থেকে তাদের রবের সম্মুখীন হওয়ার প্রতি)। কাফিরূনা = কাফের/ অবিশ্বাসী।

আর তারা বলে, ‘তবে কি যখন আমরা মাটিতে মিশে যাব, তখনো কি নিশ্চয় নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হবো? বরং তাদের রবের মোলাকাতের প্রতি (= তাদের কর্মফল লাভের জন্য পর্দার অন্তরাল থেকে তাদের রবের সম্মুখীন হওয়ার প্রতি) সত্য অস্বীকারকারী।

৩২:১১
ক্বুল = বলো। ইয়াতাওয়াফফাকুম মালাকুল মাওতিল্লাযী = তোমাদের প্রাণ হরণ করবে মালাকুল মওত/ মৃত্যুর ফেরেশতা, যাকে। ওয়াক্কিলা বিকুম = নিয়োগ করা হয়েছে তোমাদের প্রতি। ছুম্মা = তারপর। ইলা রব্বিকুম = তোমাদের রবের প্রতি। তুরজাঊনা = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

বলো, ‘তোমাদের প্রাণ হরণ করবে মৃত্যুর ফেরেশতা, যাকে নিয়োগ করা হয়েছে তোমাদের প্রতি। তারপর তোমাদের রবের প্রতি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

৩২:১২
ওয়া = আর। লাও তারা = যদি তুমি দেখতে। ইযিল মুজরিমূনা = যখন অপরাধীগণ। নাকিছূ রুঊছিহিম = তাদের মাথা নত করে দাঁড়াবে। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। রব্বানা = (তারা বলবে,) ‘হে আমাদের রব। আবসুরনা = আমরা দেখলাম। ওয়া = আর। ছামি’না = আমরা শুনলাম। ফারজি’না = সুতরাং আমাদেরকে ফেরত পাঠান। না’মালু সলিহান = আমরা আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করবো। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। মূক্বিনূনা = ইয়াকীনকারী/ নিশ্চিত ধারণালাভকারী।

আর যদি তুমি দেখতে যখন অপরাধীগণ তাদের মাথা নত করে দাঁড়াবে তাদের রবের কাছে! (তারা বলবে,) ‘হে আমাদের রব, আমরা দেখলাম আর আমরা শুনলাম। সুতরাং আমাদেরকে ফেরত পাঠান। আমরা সৎকর্ম করবো। নিশ্চয় আমরা নিশ্চিত ধারণালাভকারী’।

৩২:১৩
ওয়া = আর। লাও শি’না = যদি আমরা ইচ্ছা করতাম। লাআতাইনা = তাহলে আমরা দিতাম। কুল্লু নাফসিন = প্রত্যেক ব্যক্তিকে। হুদাহা = তার হুদা/ হিদায়াত। ওয়ালাকিন = কিন্তু। হাক্বক্বাল ক্বাওলু = (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে। মিন্নী = আমার পক্ষ থেকে। লাআমলাআন্না = যে, অবশ্যই আমি পূর্ণ করবো। জাহান্নামা = জাহান্নামকে। মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্নাছি আজমাঈনা = জ্বিন ও মানুষকে দিয়ে একত্রে।

আর যদি আমরা ইচ্ছা করতাম তাহলে আমরা দিতাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার সঠিক পথ। কিন্তু (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী বাস্তবায়িত হয়েছে আমার পক্ষ থেকে যে, ‘অবশ্যই আমি পূর্ণ করবো জাহান্নামকে জ্বিন ও মানুষকে দিয়ে একত্রে’।

৩২:১৪
ফাযূক্বূ = সুতরাং তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো। বিমা নাছীতুম = এ কারণে যে, তোমরা ভুলে গিয়েছিলে। লিক্বাআ ইয়াওমিকুম হাযা = তোমাদের এ দিনের মোলাকাতের (= এ দিনের সম্মুখীন হওয়ার) বিষয়ে। ইন্না = নিশ্চয়। নাছীনাকুম = আমরাও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম (= তোমাদেরকে উপেক্ষা করলাম)। ওয়া = আর। যূক্বূ = তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো। আযাবাল খুলদি = স্থায়ী শাস্তির। বিমা কুনতুম তা’মালূনা = তোমরা যা আমল/ কাজ করতে তার কারণে।

সুতরাং তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো এ কারণে যে, তোমরা ভুলে গিয়েছিলে তোমাদের এ দিনের মোলাকাতের (= এ দিনের সম্মুখীন হওয়ার) বিষয়ে। নিশ্চয় আমরাও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম (= তোমাদেরকে উপেক্ষা করলাম)। আর তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো স্থায়ী শাস্তির, তোমরা যা কাজ করতে তার কারণে।

৩২:১৫
ইন্নামা = নিশ্চয়। ইউ’মিনু = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি। আল্লাযীনা = তারাই, যারা এমন যে। ইযা = যখন। যুকিরূ = তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়/ উপদেশ দেয়া হয়। বিহা = উহার মাধ্যমে। খাররূ = তখন তারা ঝুঁকে পড়ে। ছুজজাদান = সিজদায়। ওয়া = আর। ছাব্বাহু বিহামদি রব্বিহিম = তাদের রবের হামদসহ/ প্রশংসাসহ তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে। ওয়া = আর। হুম = তারা। লা ইয়াছতাকবিরূনা = অহংকার করে না।

নিশ্চয় বিশ্বাস করে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি তারাই, যারা এমন যে, যখন তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়/ উপদেশ দেয়া হয় উহার মাধ্যমে, তখন তারা ঝুঁকে পড়ে সিজদায়, আর তাদের রবের প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করে, আর তারা অহংকার করে না।

৩২:১৬
তাতাজাফা = (প্রায়ই) আলাদা থাকে। জুনূবুহুম = তাদের পিঠসমূহ। আনিল মাদাজিয়ি = তাদের শয্যাসমূহ থেকে। ইয়াদঊনা = তারা ডাকে। রব্বাহুম = তাদের রবকে। খাওফান ওয়া তমাআন = ভয় ও আশার সাথে। ওয়া = আর। মিম্মা রযাক্বনাহুম ইউনফিক্বূনা = যা আমরা তাদেরকে রিযক/ জীবনোপকরন দিয়েছি তা থেকে তারা ইনফাক/ ব্যয় করে।

(প্রায়ই) আলাদা থাকে তাদের পিঠসমূহ তাদের শয্যাসমূহ থেকে। তারা ডাকে তাদের রবকে ভয় ও আশার সাথে। আর যা আমরা তাদেরকে জীবনোপকরন দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

৩২:১৭
ফালা তা’লামু নাফসুন = তারপর কোন ব্যক্তিই জানে না। মা উখফিয়া = কী গোপন রাখা হয়েছে। লাহুম = তাদের জন্য। মিন ক্বুররাতিন আ’ইউনিন = চোখ শীতল করা জিনিসসমূহ থেকে। জাযাউম বিমা কানূ ইয়া’মালূনা = তারা যা আমল/ কাজ করতো তার প্রতিফলস্বরূপ।

তারপর কোন ব্যক্তিই জানে না কী গোপন রাখা হয়েছে তাদের জন্য চোখ শীতল করা জিনিসসমূহ থেকে, তারা যা কাজ করতো তার প্রতিফলস্বরূপ।

৩২:১৮
আফামান কানা মু’মিনান = তবে কি যে মু’মিন/ বিশ্বাসী। কামান কানা ফাসিকান = সে তার মতো হতে পারে যে ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী? লা ইয়াছতাভূনা = তারা সমান নয়।

তবে কি যে বিশ্বাসী সে তার মতো হতে পারে যে সত্যত্যাগী/ দুষ্কৃতিকারী? তারা সমান নয়।

৩২:১৯
আম্মাল্লাযীনা আমানূ = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। ফালাহুম = তাদের জন্য আছে। জান্নাতুল মা’ওয়া = জান্নাতুল মা’ওয়া/ বসবাসের জান্নাত। নুযুলাম বিমা কানূ ইয়া’মালূনা = মেহমানদারি হিসাবে, তারা যা আমল/ কাজ করতো তার কারণে।

যারা বিশ্বাস করেছে আর সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য আছে বসবাসের জান্নাত, মেহমানদারি হিসাবে, তারা যা কাজ করতো তার কারণে।

৩২:২০
ওয়া = আর। আম্মাল্লাযীনা ফাসাক্বূ = যারা ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করেছে। ফামা’ওয়াহুমুন্নারু = তাদের মা’ওয়া/ আবাস হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন। কুল্লামা = যখনই। আরাদূ = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করবে। আইঁ ইয়াখরুজূ = যে, তারা বের হবে। মিনহা = উহা থেকে। উয়ীদূ = তখন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে। ফীহা = উহাতে। ওয়া = আর। ক্বীলা লাহুম = তাদেরকে বলা হবে। যূক্বূ = তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো। আযাবান্নারিল্লাযী কুনতুম বিহী তুকাযযিবূনা = (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির, যাকে তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করতে।

আর যারা সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করেছে তাদের আবাস হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন। যখনই তারা ইচ্ছা করবে যে, তারা বের হবে উহা থেকে, তখন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হবে উহাতে। আর তাদেরকে বলা হবে, ‘তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির, যাকে তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করতে’।

৩২:২১
ওয়া = আর। লানুযীক্বান্নাহুম = আমরা তাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করাবো। মিনাল আযাবিল আদনা = দুনিয়ার আযাব থেকে। দূনাল আযাবিল আকবারি = (আখিরাতের) সবচেয়ে বড় আযাবের আগে। লাআল্লাহুম ইয়ারজিঊনা = যেন তারা ফিরে আসতে পারে।

আর আমরা তাদেরকে স্বাদ আস্বাদন করাবো দুনিয়ার আযাব থেকে (আখিরাতের) সবচেয়ে বড় আযাবের আগে, যেন তারা ফিরে আসতে পারে।

৩২:২২
ওয়া = আর। মান আযলামু মিম্মান যুকিরা = তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়/ উপদেশ দেয়া হয়। বিআয়াতি রব্বিহী = তার রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে। ছুম্মা = তারপর। আ’রাদা = সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আনহা = উহা থেকে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। মিনাল মুজরিমীনা = অপরাধীদের থেকে। মুনতাক্বিমূনা = প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়/ উপদেশ দেয়া হয় তার রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে, তারপর সে মুখ ফিরিয়ে নেয় উহা থেকে? নিশ্চয় আমরা অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

৩২:২৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনা = আমরা দিয়েছিলাম। মূসাল কিতাবা = মূসাকে আল কিতাব। ফালা তাকুন ফী মিরইয়াতিম মিল্লিক্বায়িহী = সুতরাং তুমি থেকো না সন্দেহের মধ্যে, উহার সম্মুখীন হওয়ার (= আল কিতাব লাভ করার) ব্যাপারে। ওয়া = আর। জাআলনাহু = আমরা উহাকে করেছিলাম। হুদাল্লি বানী ইসরাঈলা = বনী ইসরাইলের জন্য হুদা/ হিদায়াত।

আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে আল কিতাব। সুতরাং তুমি থেকো না সন্দেহের মধ্যে, উহার সম্মুখীন হওয়ার (= আল কিতাব লাভ করার) ব্যাপারে। আর আমরা উহাকে করেছিলাম বনী ইসরাইলের জন্য হিদায়াত।

৩২:২৪
ওয়া = আর। জাআলনা মিনহুম = আমরা তাদের মধ্য থেকে করেছিলাম। আয়িম্মাতান = অনেক ইমাম/ অগ্রগামী। ইয়াহদূনা = যারা হিদায়াত করতো। বিআমরিনা = আমাদের আদেশক্রমে। লাম্মা = যখন। সবারূ = তারা সবর করেছিলো/ ধৈর্য ধরেছিলো। ওয়া = আর। কানূ বিআয়াতিনা ইঊক্বিনূনা = তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ইয়াকীন/ নিশ্চিত ধারণা রাখতো।

আর আমরা তাদের মধ্য থেকে করেছিলাম অনেক অগ্রগামী, যারা হিদায়াত করতো আমাদের আদেশক্রমে, যখন তারা ধৈর্য ধরেছিলো আর তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি নিশ্চিত ধারণা রাখতো।

৩২:২৫
ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। হুয়া ইয়াফসিলু = ফায়সালা করে দিবেন। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = কিয়ামাত দিবসে। ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূনা = ঐ বিষয়ে যাতে তারা ইখতেলাফ/ মতভেদ করতো।

নিশ্চয় তোমার রব ফায়সালা করে দিবেন তাদের মধ্যে কিয়ামাত দিবসে ঐ বিষয়ে যাতে তারা মতভেদ করতো।

৩২:২৬
আওয়ালাম ইয়াদি লাহুম = তাদেরকে কি (এ ব্যাপারটি) হিদায়াত করেনি যে। কাম = কত যে। আহলাকনা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছিলাম। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে। মিনাল ক্বুরূনি = যুগ যুগান্তরের লোকদের মধ্য থেকে। ইয়ামশূনা = তারা বিচরণ করে। ফী মাছাকিনিহিম = যাদের আবাসভূমিসমূহের মধ্য দিয়ে। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিন = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। আফালা ইয়াছমাউনা = তারা কি শুনবে না?

তাদেরকে কি (এ ব্যাপারটি) হিদায়াত করেনি যে, কত যে আমরা ধ্বংস করেছিলাম তাদের আগে যুগ যুগান্তরের লোকদের মধ্য থেকে, তারা বিচরণ করে যাদের আবাসভূমিসমূহের মধ্য দিয়ে। নিশ্চয় উহাতে আছে নিদর্শনসমূহ তারা কি শুনবে না?

৩২:২৭
আওলাম ইয়ারাও = তারা কি দেখেনি। আন্না = যে, আমরা। নাছূক্বুল মাআ = প্রবাহিত করি পানি। ইলাল আরদিল জুরুযি = শুকনো ভূমিতে। ফানুখরিজু = তারপর আমরা বের করি। বিহী = উহার মাধ্যমে। যারআন = শস্য। তা’কুল মিনহু = উহা থেকে খায়। আনআমুহুম = তাদের আনআম/ গবাদি পশু। ওয়া = আর। আনফুসুহুম = তারা নিজেরাও (খায়)। আফালা ইউবসিরূনা = তারা কি দেখবে না?

তারা কি দেখেনি যে, আমরা প্রবাহিত করি পানি শুকনো ভূমিতে, তারপর আমরা বের করি উহার মাধ্যমে শস্য, উহা থেকে খায় তাদের গবাদি পশু আর তারা নিজেরাও (খায়)। তারা কি দেখবে না?

৩২:২৮
ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। মাতা হাযাল ফাতহু = কখন ঘটবে এ বিজয়/ ফায়সালা? ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সাদেকীন/ সত্যবাদী।

আর তারা বলে, ‘কখন ঘটবে এ বিজয়/ ফায়সালা? যদি তোমরা হও সত্যবাদী। {= আল্লাহর সাহায্যে মু’মিনদের বিজয় ও কাফিরদের পরাজয় কখন ঘটবে?}

৩২:২৯
ক্বুল = বলো। ইয়াওমাল ফাতহি = বিজয় দিবসে/ ফায়সালা দিবসে। লা ইয়ানফাউল্লাযীনা = তাদেরকে কোন উপকার দেবে না যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ঈমানুহুম = (উপকার দেবে না) তাদের ঈমান/ বিশ্বাস। ওয়া = আর। লা হুম ইউনযারূনা = তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।

বলো, ‘বিজয় দিবসে তাদেরকে কোন উপকার দেবে না যারা কুফর করেছে (উপকার দেবে না) তাদের বিশ্বাস। আর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।

৩২:৩০
ফাআ’রিদ = সুতরাং তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও। আনহুম = তাদের থেকে। ওয়ানতাযির = আর অপেক্ষা করো। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারাও। মুনতাযিরূনা = অপেক্ষাকারী।

সুতরাং তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও তাদের থেকে। আর অপেক্ষা করো, নিশ্চয় তারাও অপেক্ষাকারী।