কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

028. সূরা ক্বাসাস

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

২৮:১
ত্ব সীন মীম = ত্ব সীন মীম।

ত্ব সীন মীম।

২৮:২
তিলকা = এগুলো। আয়াতুল কিতাবিল মুবীনু = স্পষ্ট/ প্রকাশ্য কিতাবের আয়াতসমূহ।

এগুলো স্পষ্ট/ প্রকাশ্য কিতাবের আয়াতসমূহ।

২৮:৩
নাতলূ = আমরা তিলাওয়াত/ পাঠ করছি। আলাইকা = তোমার কাছে। মিন নাবায়ি মূসা ও ফিরআউনা = মূসা ও ফেরাউনের কিছু সংবাদ। বিল হাক্বক্বি = যথাযথভাবে। লিক্বাওমিইঁ ইউ’মিনূনা = সেই কওমের জন্য, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।

আমরা তিলাওয়াত/ পাঠ করছি তোমার কাছে মূসা ও ফেরাউনের কিছু সংবাদ, যথাযথভাবে, সেই কওমের জন্য, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।

২৮:৪
ইন্না = নিশ্চয়। ফিরআউনা = ফেরাউন। আলা ফিল আরদি = পৃথিবীতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হয়েছিলো। ওয়া = আর। জাআলা আহলাহা শিয়াআন = উহার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শিয়ায়/ দলে/ শ্রেণীতে বিভক্ত করে রেখেছিলো। ইয়াছতাদয়িফু তয়িফাতাম মিনকুম = সে তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে দুর্বল করে (মুস্তাদআফীন করে) রাখতো। ইউযাব্বিহু আবনাআহুম = তাদের পুত্রদেরকে জবেহ করতো। ওয়া = আর। ইয়াছতাহয়ী নিছাআহুম = তাদের নারীদেরকে জীবিত থাকতে দিতো। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। কানা = ছিলো। মিনাল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

নিশ্চয় ফেরাউন পৃথিবীতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হয়েছিলো আর উহার অধিবাসীদেরকে বিভিন্ন শিয়ায়/ দলে/ শ্রেণীতে বিভক্ত করে রেখেছিলো। সে তাদের মধ্য থেকে একটি দলকে দুর্বল করে (মুস্তাদআফীন করে) রাখতো। তাদের পুত্রদেরকে জবেহ করতো আর তাদের নারীদেরকে জীবিত থাকতে দিতো। নিশ্চয় সে ছিলো ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৫
ওয়া = আর। নুরীদু = আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করি। আন = যে। নামুন্না আলাল্লাযীনাছতুয়িফূ ফিল আরদি = আমরা তাদেরকে অনুগ্রহ করবো যাদেরকে পৃথিবীতে দুর্বল করে রাখা হয়েছে। ওয়া = আর। নাজআলুহুম আয়িম্মাতান = তাদেরকে অগ্রণী/ অগ্রগামী বানিয়ে দিতে। ওয়া = আর। নাজআলুহুমুল ওয়ারিসীনা = তাদেরকে ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিতে।

আর আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করি যে, আমরা তাদেরকে অনুগ্রহ করবো যাদেরকে পৃথিবীতে দুর্বল করে রাখা হয়েছে (= মুস্তাদআফীন) আর তাদেরকে অগ্রণী/ অগ্রগামী বানিয়ে দিতে আর তাদেরকে ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিতে।

২৮:৬
ওয়া = আর। নুমাক্কিনা লাহুম = আমরা আবাসনের ব্যবস্থা করবো তাদের জন্য। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। নুরিয়া = আমরা দেখাবো। ফিরআউনা ওয়া হামানা = ফেরাউনকে ও হামানকে। ওয়া = আর। জুনূদাহুমা = তাদের উভয়ের সেনাদলকে। মিনহুম মা = তাদের থেকে (= বনী ইসরাইল থেকে) যা। কানূ ইয়াহযারূনা = তারা (= ফেরাউন ও হামানরা) আশংকা করতো (= বনী ইসরাইলের জাতীয় উত্থান ঘটবে)।

আর আমরা আবাসনের ব্যবস্থা করবো তাদের জন্য পৃথিবীতে আর আমরা দেখাবো ফেরাউনকে ও হামানকে আর তাদের উভয়ের সেনাদলকে তাদের থেকে (= বনী ইসরাইল থেকে) যা তারা (= ফেরাউন ও হামানরা) আশংকা করতো (= বনী ইসরাইলের জাতীয় উত্থান ঘটবে)।

২৮:৭
ওয়া = আর। আওহায়না = আমরা ওহী করেছিলাম। ইলা উম্মী মূসা = মূসার মায়ের কাছে। আন = এই যে। আরদয়ীহি = তাকে (= মূসাকে) দুধপান করাও। ফাইযা = তারপর যখন। খিফতি = তুমি আশংকা করবে। আলাইহি = তার ব্যাপারে। ফাআলক্বীহি = তখন তাকে ভাসিয়ে দিবে। ফিল ইয়াম্মি = উপনদীতে। ওয়া = আর। লা তাখাফী = তুমি ভয় করো না। ওয়া = আর। লা তাহযানী = তুমি দু:খিত হয়ো না। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। রদ্দূহু = তাকে ফিরিয়ে দেবো। ইলাইকা = তোমার কাছে। ওয়া = আর। জায়িলূহু = তাকে বানাবো। মিনাল মুরছালীনা = রসূলদের অন্তর্ভুক্ত।

আর আমরা ওহী করেছিলাম মূসার মায়ের কাছে এই যে, “তাকে (= মূসাকে) দুধপান করাও। তারপর যখন তুমি আশংকা করবে তার ব্যাপারে, তখন তাকে ভাসিয়ে দিবে উপনদীতে। আর তুমি ভয় করো না আর তুমি দু:খিত হয়ো না। নিশ্চয় আমরা তাকে ফিরিয়ে দেবো তোমার কাছে আর তাকে বানাবো রসূলদের অন্তর্ভুক্ত”।

২৮:৮
ফালতাক্বাত্বহু = তারপর তাকে তুলে নিয়েছিলো। আলু ফিরআউনা = ফেরাউনের লোকজন। লিয়াকূনা = যেন সে হয়। লাহুম = তাদের জন্য। আদুওওয়াওঁ ওয়া হাযানান = শত্রু ও দু:শ্চিন্তাস্বরূপ। ইন্না = নিশ্চয়। ফিরআউনা ওয়া হামানা ওয়া জুনূদাহুমা = ফেরাউন ও হামান এবং তাদের উভয়ের সেনাবাহিনী। কানূ = ছিলো। খাতিয়ীনা = অপরাধী।

তারপর তাকে তুলে নিয়েছিলো ফেরাউনের লোকজন, যেন সে হয় তাদের জন্য শত্রু ও দু:শ্চিন্তাস্বরূপ। নিশ্চয় ফেরাউন ও হামান এবং তাদের উভয়ের সেনাবাহিনী ছিলো অপরাধী।

২৮:৯
ওয়া = আর। ক্বালাতিমরআতু ফিরআউনা = ফেরাউনের স্ত্রী বলেছিলো। ক্বুররাতু আইনিন = (এ শিশু) চোখের শীতলতা। লী ওয়া লাকা = আমার জন্য ও তোমার জন্য। লা তাক্বতুলূহু = তাকে কতল/ হত্যা করো না। আছা = আশা করা যায়। আইঁ ইয়ানফাআনা = যে, সে আমাদের উপকারে আসবে। আও = অথবা। নাত্তাখিজানা = আমরা তাকে গ্রহণ করবো। ওয়ালাদান = পুত্র হিসাবে। ওয়া = আর। হুম = তারা। লা ইয়াশউরূনা = অনুভব করেনি (যে, এর পরিণাম কী হবে)।

আর ফেরাউনের স্ত্রী বলেছিলো, ‘(এ শিশু) চোখের শীতলতা আমার জন্য ও তোমার জন্য। তাকে কতল/ হত্যা করো না। আশা করা যায় যে, সে আমাদের উপকারে আসবে, অথবা আমরা তাকে গ্রহণ করবো পুত্র হিসাবে। আর তারা অনুভব করেনি (যে, এর পরিণাম কী হবে)।

২৮:১০
ওয়া = আর। আসবাহা ফুআদু উম্মি মূসা ফারিগান = মূসার মায়ের ফুয়াদ/ অন্তর বিচলিত/ অস্থির হয়ে পড়েছিলো। ইন কাদাত = সে কি উপক্রম হয়নি যে। লাতুবদী বিহী = সে উহা প্রকাশ করে ফেলতো। লাও লা = যদি না। আর রবাতনা আলা ক্বালবিহা = আমরা তার কলবকে/ মনকে মজবুত করে দিতাম। লিতাকূনা মিনাল মু’মিনীনা = যেন সে আমাদের (ওয়াদার ব্যাপারে) মু’মিনীন/ বিশ্বাসী হয়।

আর মূসার মায়ের ফুয়াদ/ অন্তর বিচলিত/ অস্থির হয়ে পড়েছিলো, সে কি উপক্রম হয়নি যে, সে উহা প্রকাশ করে ফেলতো; যদি না আমরা তার কলবকে/ মনকে মজবুত করে দিতাম, যেন সে আমাদের (ওয়াদার ব্যাপারে) মু’মিনীন/ বিশ্বাসী হয়?

২৮:১১
ওয়া = আর। ক্বলাত = সে (= মূসার মা) বলেছিলো। লিউখতিহী = তার বোনকে (= মূসার বোনকে)। ক্বুসসীহি = তার পেছনে পেছনে যাও। ক্বাবসুরাত = তারপর সে (= মূসার বোন) দেখছিলো। বিহী = তাকে (= মূসাকে)। আন জুনুবিন = দূর থেকে। ওয়া = আর। হুম = তারা (= শত্রুরা)। লা ইয়াশউরূনা = তা টেরও পায়নি।

আর সে (= মূসার মা) বলেছিলো তার বোনকে (= মূসার বোনকে), ‘তার পেছনে পেছনে যাও। তারপর সে (= মূসার বোন) দেখছিলো তাকে (= মূসাকে) দূর থেকে। আর তারা (= শত্রুরা) তা টেরও পায়নি।

২৮:১২
ওয়া = আর। হাররামনা = আমরা হারাম/ নিষিদ্ধ করেছিলাম। আলাইহিল মারাদিআ = তার জন্য স্তন্যদানকারিনীদেরকে। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বেই। ফাক্বালাত = তারপর সে (= মূসার বোন) বললো। হাল আদুল্লুকুম = আমি কি তোমাদেরকে সন্ধান দেবো। আলা আহলি বাইতিন = আহলে বাইতের/ একটি গৃহবাসীদের ব্যাপারে। ইয়াকফুলূনাহু = যারা তাকে লালন পালন করবে। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। হুম = তারা হবে। লাহু = তার জন্য। নাসিহূনা = কল্যাণকামী।

আর আমরা হারাম/ নিষিদ্ধ করেছিলাম তার জন্য স্তন্যদানকারিনীদেরকে, ইতিপূর্বেই। তারপর সে (= মূসার বোন) বললো, ‘আমি কি তোমাদেরকে সন্ধান দেবো আহলে বাইতের/ একটি গৃহবাসীদের ব্যাপারে, যারা তাকে লালন পালন করবে তোমাদের জন্য। আর তারা হবে তার জন্য কল্যাণকামী।

২৮:১৩
ফারাদাদনাহু = তারপর আমরা তাকে ফিরিয়ে দিলাম। ইলা উম্মিহী = তার মায়ের কাছে। কায় = যেন। তাক্বাররা আয়নুহা = তার চোখ শীতল হয়। ওয়া = আর। লা তাহযানা = সে দুশ্চিন্তা না করে। ওয়ালিতা’লামা = আর যেন জানতে পারে। আন্না = যে। ওয়া’দাল্লাহি হাক্বক্বুন = আল্লাহর ওয়াদা সত্য। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = জ্ঞান রাখে না।

তারপর আমরা তাকে ফিরিয়ে দিলাম তার মায়ের কাছে যেন তার চোখ শীতল হয় আর সে দুশ্চিন্তা না করে আর যেন জানতে পারে যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।

২৮:১৪
ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। বালাগা আশুদ্দাহু = সে তার যৌবনে পৌঁছলো। ওয়াছতাওয়া = আর পরিণত বয়স্ক হলো। আতাইনাহু = তখন আমরা তাকে দিয়েছিলাম। হুকমান ওয়া ইলমান = হুকমা/ বিচার-ক্ষমতা ও ইলমা/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান। ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। নাজযিল মুহসিনীনা = আমরা মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে প্রতিফল দিই।

আর যখন সে তার যৌবনে পৌঁছলো আর পরিণত বয়স্ক হলো, তখন আমরা তাকে দিয়েছিলাম হুকমা/ বিচার-ক্ষমতা ও ইলমা/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান। আর এভাবে আমরা মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে প্রতিফল দিই।

২৮:১৫
ওয়া = আর। দাখালাল মাদীনাতা = (একদা) সে মদীনাতে/ শহরে প্রবেশ করলো। আলা হীনা গাফলাতিম মিন আহলিহা = উহার অধিবাসীরা গাফেল/ অসচেতন/ অসতর্ক থাকা অবস্থায়। ফাওয়াজাদা = তারপর সে পেলো। ফীহা = উহাতে। রজুলাইনি = দুজন পুরুষকে। ইয়াক্বতাতিলানি = তারা মারামারি/ দ্বন্দ্ব-সংঘাত করছিলো। হাযা = এ একজন। মিন শীআতিহী = তার শিয়ার/ দলের। ওয়া = আর। হাযা = এ আরেকজন। মিন আদুভ্যিহী = তার শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। ফাছতাগাছাহুল্লাযী = সে তার নিকট (= মূসার নিকট) সাহায্য চাইলো যে ছিলো। মিন শীআতিহী = তার শীয়ার/ দলের অন্তর্ভুক্ত। আলাল্লাযী = তার বিরুদ্ধে যে ছিলো। মিন আদুভ্যিহী = তার শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। ফাওয়াকাযাহু মূসা = তখন মূসা তাকে এক ঘুষি মারলো। ফাক্বাদা আলাইহি = তার ফলে তার ব্যাপার চুকে গেলো (= সে মরে গেলো)। ক্বলা = তখনি সে (= মূসা) বলেছিলো। হাযা = ইহা তো। মিন আমালিশ শায়তানি = শয়তানের আমলের অন্তর্ভুক্ত। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। আদুউউম মুদিল্লুম মুবীনুন = স্পষ্ট বিভ্রান্তকারী শত্রু।

আর (একদা) সে মদীনাতে/ শহরে প্রবেশ করলো উহার অধিবাসীরা গাফেল/ অসচেতন/ অসতর্ক থাকা অবস্থায়। তারপর সে পেলো উহাতে দুজন পুরুষকে; তারা মারামারি/ দ্বন্দ্ব-সংঘাত করছিলো। এ একজন তার শিয়ার/ দলের, আর এ আরেকজন তার শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার নিকট (= মূসার নিকট) সাহায্য চাইলো যে ছিলো তার শীয়ার/ দলের অন্তর্ভুক্ত, (সাহায্য চাইলো) তার বিরুদ্ধে যে ছিলো তার শত্রুদের অন্তর্ভুক্ত। তখন মূসা তাকে এক ঘুষি মারলো। তার ফলে তার ব্যাপার চুকে গেলো (= সে মরে গেলো)। তখনি সে (= মূসা) বলেছিলো, ‘ইহা তো শয়তানের আমলের অন্তর্ভুক্ত। নিশ্চয় সে স্পষ্ট বিভ্রান্তকারী শত্রু।

২৮:১৬
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছিলো। রব্বি = হে আমার রব। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। যলামতু = যুলুম করেছি। নাফসী = আমার নফসের উপর। ফাগফিরলী = সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। ফাগাফারা লাহু = তখন তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। ইন্নাহু হুয়াল গাফূরুর রহীমু = নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

সে (= মূসা) বলেছিলো, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি যুলুম করেছি আমার নফসের উপর। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন’। তখন তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

২৮:১৭
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছিলো। রব্বী = হে আমার রব। বিমা আনআমতা আলাইয়া = আপনি আমার উপর যা কিছু নিয়ামত/ অনুগ্রহদান করেছেন। ফালান আকূনা যহীরাল্লিল মুজরিমীনা = তার ফলে আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না।

সে (= মূসা) বলেছিলো, ‘হে আমার রব, আপনি আমার উপর যা কিছু নিয়ামত/ অনুগ্রহদান করেছেন, তার ফলে আমি কখনো অপরাধীদের সাহায্যকারী হবো না।

২৮:১৮
ফাআসবাহা ফিল মাদীনাতি = তারপর (পরেরদিন) সে (= মূসা) সকালে গেলো মদীনাতে/ শহরে। খায়িফাইঁ ইয়াতারাক্বক্বাবু = ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় সতর্ক হয়ে। ফাইযাল্লাযিছতানসারাহু = তারপর তখন তাকে পেলো যে তার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো। বিলআমছি = গতকাল। ইয়াছতাসরিখুহু = সে তাকে (= মূসাকে) চিৎকার করে ডাকছে। ক্বলা লাহু মূসা = তখন মূসা তাকে বললো। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লাগাভিয়্যুম মূবীনুন = স্পষ্ট/ প্রকাশ্য বিভ্রান্ত ব্যক্তি।

তারপর (পরেরদিন) সে (= মূসা) সকালে গেলো মদীনাতে/ শহরে, ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় সতর্ক হয়ে। তারপর তখন তাকে পেলো যে তার কাছে সাহায্য চেয়েছিলো গতকাল, সে তাকে (= মূসাকে) চিৎকার করে ডাকছে। তখন মূসা তাকে বললো, ‘নিশ্চয় তুমি স্পষ্ট/ প্রকাশ্য বিভ্রান্ত ব্যক্তি।

২৮:১৯
ফালাম্মা = তারপর যখন। আন আরাদা আইঁ ইয়াবতিশা বিল্লাযী = এই হলো যে, সে ইচ্ছা করলো যে, সে তাকে শায়েস্তা করবে। হুয়া = যে (ছিলো)। আদুউউম লাহূমা = তাদের উভয়ের শত্রু। ক্বলা = তখন সে (= বনী ইসরাইলের লোকটি) বললো। ইয়া মূসা = হে মূসা। আতুরীদু = তুমি কি এরাদা/ ইচ্ছা করেছো। আন = যে। তাক্বতুলানী = আমাকে কতল/ হত্যা করবে। কামা = যেমন। ক্বাতালতা = তুমি কতল/ হত্যা করেছো। নাফছাম বিলআমছিন = এক ব্যক্তিকে গতকাল। ইন তুরীদূ = তুমি তো এরাদা/ ইচ্ছা করো না। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। তাকূনা = তুমি হবে। জাব্বারান ফিল আরদি = পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী। ওয়া = আর। মা তুরীদু = তুমি এরাদা/ ইচ্ছা কর না। আন = যে। তাকূনা = তুমি হবে। মিনাল মুসলিহীনা = সংশোধনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপর যখন এই হলো যে, সে ইচ্ছা করলো যে, সে তাকে শায়েস্তা করবে, যে (ছিলো) তাদের উভয়ের শত্রু; তখন সে (= বনী ইসরাইলের লোকটি) বললো, ‘হে মূসা, তুমি কি এরাদা/ ইচ্ছা করেছো যে আমাকে কতল/ হত্যা করবে, যেমন তুমি কতল/ হত্যা করেছো এক ব্যক্তিকে গতকাল। তুমি তো এরাদা/ ইচ্ছা করো না এছাড়া যে, তুমি হবে পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী। আর তুমি এরাদা/ ইচ্ছা কর না যে, তুমি হবে সংশোধনকারীদের অন্তর্ভুক্ত’।

২৮:২০
ওয়া = আর। জাআ রজুলুম মিন আক্বসাল মাদীনাতি ইয়াছআ = মদীনার/ শহরের এক প্রান্ত থেকে একজন পুরুষ দৌড়ে এসেছিলো। ক্বলা = সে বলেছিলো। ইয়া মূসা = হে মূসা। ইন্নাল মালাআ = নিশ্চয় নির্বাহী পারিষদ। ইয়া’তামিরূনা বিকা = তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। লিইয়াক্বতুলূকা = তোমাকে কতল/ হত্যা করার জন্য। ফাখরুজ = সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লাকা = তোমার জন্য। মিনান্নাসিহীনা = নসিহতকারীদের/ কল্যাণকামীদের অন্তর্ভুক্ত।

আর মদীনার/ শহরের এক প্রান্ত থেকে একজন পুরুষ দৌড়ে এসেছিলো। সে বলেছিলো, ‘হে মূসা, নিশ্চয় (ফেরাউনের) নির্বাহী পারিষদ তোমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে তোমাকে কতল/ হত্যা করার জন্য। সুতরাং তুমি বের হয়ে যাও। নিশ্চয় আমি তোমার জন্য নসিহতকারীদের/ কল্যাণকামীদের অন্তর্ভুক্ত’।

২৮:২১
ফাখারাজা = সুতরাং সে বেরিয়ে গিয়েছিলো। মিনহা = উহা থেকে। খায়িফাইঁ ইয়াতারক্বক্বাবু = ভীত অবস্থায় সতর্ক হয়ে। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছিলো। রব্বি = হে আমার রব। নাজজিনী = আমাকে নাজাত/ মুক্তি দিন। মিনাল ক্বাওমিয যলিমীনা = যালিমদের কওমের থেকে।

সুতরাং সে বেরিয়ে গিয়েছিলো উহা থেকে ভীত অবস্থায় সতর্ক হয়ে। সে (= মূসা) বলেছিলো, ‘হে আমার রব, আমাকে নাজাত/ মুক্তি দিন যালিমদের কওমের থেকে।

২৮:২২
ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। তাওয়াজ্জাহা = সে অভিমুখী হলো/ রওনা করলো। তিলক্বাআ মাদইয়ানা = মাদিয়ানের অভিমুখে। ক্বলা = তখন সে বলেছিলো। আছা = আশা করি। রব্বী = আমার রব। আইঁ ইয়াহদিয়ানী = আমাকে হিদায়াত করবেন। ছাওয়াআছ ছাবীলা = সরল সঠিক পথ।

আর যখন সে অভিমুখী হলো/ রওনা করলো মাদিয়ানের অভিমুখে, তখন সে বলেছিলো, ‘আশা করি আমার রব আমাকে হিদায়াত করবেন সরল সঠিক পথ।

২৮:২৩
ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। ওয়ারাদা = পৌঁছলো। মাআ মাদইয়ানা = মাদিয়ানের পানির (কুপের) নিকট। ওয়াজাদা আলাইহি = তখন সে পেলো উহার কাছে। উম্মাতুম মিনান্নাছি = মানুষের একটি উম্মাহকে/ দলকে। ইয়াছক্বূনা = তারা (নিজেদের পশুগুলোকে) পানি পান করাচ্ছে। ওয়া = আর। ওয়াজাদা = সে পেলো। মিন দূনিহিমুমরআতাইনি = তাদেরকে ছাড়াও দুজন মহিলাকে। তাযূদানি = তারা দুজন (তাদের পশুগুলোকে) আটকে রেখেছে। ক্বলা = সে (= মূসা) বললো। মা খাতবুকুমা = তোমাদের দুজনের ব্যাপারটা কী? ক্বলাতা = তারা দুজন বললো। লা নাছক্বী = আমরা (আমাদের পশুগুলোকে) পানি পান করাই না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউসদিরার রিআহু = সরে যায় রাখালেরা। ওয়া = আর। আবূনা = আমাদের পিতা। শায়খুন কাবীরুন = বড়ই বৃদ্ধ।

আর যখন পৌঁছলো মাদিয়ানের পানির (কুপের) নিকট, তখন সে পেলো উহার কাছে মানুষের একটি উম্মাহকে/ দলকে, তারা (নিজেদের পশুগুলোকে) পানি পান করাচ্ছে, আর সে পেলো তাদেরকে ছাড়াও দুজন মহিলাকে, তারা দুজন (তাদের পশুগুলোকে) আটকে রেখেছে। সে (= মূসা) বললো, ‘তোমাদের দুজনের ব্যাপারটা কী?’ তারা দুজন বললো, ‘আমরা (আমাদের পশুগুলোকে) পানি পান করাই না, যতক্ষণ না সরে যায় রাখালেরা। আর আমাদের পিতা বড়ই বৃদ্ধ’।

২৮:২৪
ফাছাক্বা = তখন সে (= মূসা) পানি পান করিয়ে দিলো। লাহুমা = তাদের দুজনের পক্ষে (তাদের পশুগুলোকে)। ছুম্মা = তারপর। তাওয়াল্লা = সে ফিরে গেলো। ইলায যিল্লি = ছায়ার দিকে। ফাক্বলা = তারপর সে বললো। রব্বি = হে আমার রব। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লিমা আনযালতা ইলাইয়া মিন খায়রিন ফাক্বীরুন = আপনি আমার প্রতি যা-ই নাযিল/ অবতারণা করবেন তা যে কল্যাণই হোক উহারই মুখাপেক্ষী।

তখন সে (= মূসা) পানি পান করিয়ে দিলো তাদের দুজনের পক্ষে (তাদের পশুগুলোকে)। তারপর সে ফিরে গেলো ছায়ার দিকে। তারপর সে বললো, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আপনি আমার প্রতি যা-ই নাযিল/ অবতারণা করবেন, তা যে কল্যাণই হোক, উহারই মুখাপেক্ষী’।

২৮:২৫
ফাজাআতহু = তারপর তার কাছে এসেছিলো। ইহদাহুমা = তাদের দুজনের একজন (= সেই দুই মেয়ের একটি)। তামশী আলাছতিহইয়ায়িন = হায়া/ লজ্জাশীলতার সাথে হেঁটে। ক্বলাত = সে (= মেয়েটি) বললো। ইন্না = নিশ্চয়। আবী = আমার পিতা। ইয়াদঊকা = তোমাকে ডাকছেন। লিইয়াজযিয়াকা আজরা = তোমাকে প্রতিদান দেয়ার জন্য। মা ছাক্বাইতা লানা = তুমি আমাদের পক্ষে (আমাদের পশুগুলোকে) যে পানি পান করিয়ে দিলে উহার (প্রতিদানে)। ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহু = সে (= মূসা) তার কাছে (= মেয়ে দুটির পিতার কাছে) আসলো। ওয়া = আর। ক্বাসসা = বর্ণনা করলো। আলাইহিল ক্বাসাস = তার কাছে সব বৃত্তান্ত। ক্বলা = তখন সে (= মেয়ে দুটির পিতা) বললো। লা তাখাফ = তুমি ভয় করো না। নাজাওতা = তুমি নাজাত/ মুক্তি পেয়ে গেছো। মিনাল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিমদের কওমের থেকে।

তারপর তার কাছে এসেছিলো তাদের দুজনের একজন (= সেই দুই মেয়ের একটি), হায়া/ লজ্জাশীলতার সাথে হেঁটে। সে (= মেয়েটি) বললো, ‘নিশ্চয় আমার পিতা তোমাকে ডাকছেন, তোমাকে প্রতিদান দেয়ার জন্য, তুমি আমাদের পক্ষে (আমাদের পশুগুলোকে) যে পানি পান করিয়ে দিলে উহার (প্রতিদানে)’। তারপর যখন সে (= মূসা) তার কাছে (= মেয়ে দুটির পিতার কাছে) আসলো আর বর্ণনা করলো তার কাছে সব বৃত্তান্ত, তখন সে (= মেয়ে দুটির পিতা) বললো, ‘তুমি ভয় করো না। তুমি নাজাত/ মুক্তি পেয়ে গেছো যালিমদের কওমের থেকে।

২৮:২৬
ক্বলাত ইহদাহুমা = দুজনের একজন (= সেই দুটি মেয়ের একটি) বললো। ইয়া আবাতিছতা’জিরহু = হে আমার আব্বা, তাকে চাকরি দিন। ইন্না = নিশ্চয়। খায়রা মানিছতা’জারতাল ক্বাভিয়্যুল আমীনু = সে এ ব্যাপারে উত্তম যে তাকে আপনি চাকরি দিবেন যে শক্তিশালী/ যোগ্যতাসম্পন্ন ও বিশ্বস্ত।

দুজনের একজন (= সেই দুটি মেয়ের একটি) বললো, ‘হে আমার আব্বা, তাকে চাকরি দিন। নিশ্চয় সে এ ব্যাপারে উত্তম যে, তাকে আপনি চাকরি দিবেন, যে শক্তিশালী/ যোগ্যতাসম্পন্ন ও বিশ্বস্ত।

২৮:২৭
ক্বলা = সে (= মেয়ে দুটির পিতা) বললো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। উরীদু = এরাদা/ ইচ্ছা করি। আন = যে। উনকিহাকা = তোমার সাথে আমি নিকাহ/ বিবাহ দেবো। ইহদাবনাতাইয়া হাতাইনি = আমার এ দুই কন্যার একজনকে। আলা = এ শর্তে। আন = যে। তা’জুরনী = তুমি আমার চাকরি করবে। ছামানিয়া হিজাজিন = আট হিজাজ/ হজ্জ মওসুম/ চান্দ্রবর্ষ। ফাইন = তারপর যদি। আতমামতা = তুমি পূর্ণ করো। আশরান = দশবছর। ফামিন ইনদিকা = তবে তা হবে তোমার পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। মা উরীদু = আমি এরাদা/ ইচ্ছা করি না। আন = যে। আশুক্বক্বা আলাইহি = আমি তোমাকে কষ্ট দিবো। ছাতাজিদুনী = তুমি আমাকে পাবে। ইনশাআল্লাহু = ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। মিনাস সলিহীনা = সালেহীনের/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।

সে (= মেয়ে দুটির পিতা) বললো, “নিশ্চয় আমি এরাদা/ ইচ্ছা করি যে, তোমার সাথে আমি নিকাহ/ বিবাহ দেবো আমার এ দুই কন্যার একজনকে, এ শর্তে যে, তুমি আমার চাকরি করবে আট হিজাজ/ হজ্জ মওসুম/ চান্দ্রবর্ষ। তারপর যদি তুমি পূর্ণ করো দশবছর, তবে তা হবে তোমার পক্ষ থেকে। আর আমি এরাদা/ ইচ্ছা করি না যে, আমি তোমাকে কষ্ট দিবো। তুমি আমাকে পাবে ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন সালেহীনের/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত”।

২৮:২৮
ক্বলা = সে (= মূসা) বললো। যালিকা = উহাই (চুক্তি হলো)। বায়নী ওয়া বায়নাকা = আমার ও আপনার মধ্যে। আইয়ামাল আজালাইনি = দুই মেয়াদের যেটিই। ক্বাসাইতু = আমি পূর্ণ করবো। ফালা উদওয়ানা = তারপর বাড়াবাড়ি করা হবে না। আলাইয়া = আমার উপর। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলা মা নাক্বূলু = আমরা যা বলছি উহার উপর। ওয়াকীলুন = উকিল/ কর্মবিধায়ক।

সে (= মূসা) বললো, ‘উহাই (চুক্তি হলো) আমার ও আপনার মধ্যে। দুই মেয়াদের যেটিই আমি পূর্ণ করবো, তারপর বাড়াবাড়ি করা হবে না আমার উপর। আর আল্লাহ আমরা যা বলছি উহার উপর উকিল/ কর্মবিধায়ক’।

২৮:২৯
ফালাম্মা = তারপর যখন। ক্বাদাল মূসাল আজালা = মূসা মেয়াদ পূর্ণ করলো। ওয়া = আর। ছারা = যাত্রা করলো। বিআহলিহী = তার আহালসহ/ পরিবারসহ। আনাছা = তখন (পথিমধ্যে) সে দেখলো। মিন জানিবিত তূরি = তূর পাহাড়ের দিক থেকে। নারান = আগুন। ক্বলা লিআহলিহিমকুছূ = সে তার পরিবারকে বললো, ‘তোমরা অপেক্ষা করো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আনাছতু নারান = আগুন দেখেছি। লাআল্লী = সম্ভবত। আতীকুম = আমি তোমাদের কাছে আনবো। মিনহা = উহা/ সেখান থেকে। বিখাবারিন = কোন খবর/ তথ্য। আও = অথবা। জাযওয়াতিম মিনান্নারি = আগুনের কোন অঙ্গার। লাআল্লাকুম = যাতে তোমরা। তাসতলূনা = আগুন পোহাতে পারো।

তারপর যখন মূসা মেয়াদ পূর্ণ করলো আর যাত্রা করলো তার আহালসহ/ পরিবারসহ, তখন (পথিমধ্যে) সে দেখলো তূর পাহাড়ের দিক থেকে আগুন। সে তার পরিবারকে বললো, ‘তোমরা অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের কাছে আনবো উহা/ সেখান থেকে কোন খবর/ তথ্য অথবা আগুনের কোন অঙ্গার যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পারো’।

২৮:৩০
ফালাম্মা = তারপর যখন। আতাহা = সে উহাতে/ সেখানে আসলো। নূদিয়া = তখন তাকে ডাকা হলো। মিন শাতিয়িলওয়াদিল আইমানি ফিল বুক্বআতিল মুবারাকাতি = বরকতময় ভূখন্ডের (মূসার অবস্থান সাপেক্ষে) ডানদিকের উপত্যকার প্রান্ত থেকে। মিনাশ শাজারাতি = একটি গাছ থেকে। আইঁ ইয়া মূসা = এ মর্মে যে, ‘হে মূসা। ইন্নী আনাল্লাহু = নিশ্চয় আমি আল্লাহ। রব্বুল আলামীনা = রব্বুল আলামীন/ সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক বিধাতা।

তারপর যখন সে উহাতে/ সেখানে আসলো, তখন তাকে ডাকা হলো বরকতময় ভূখন্ডের (মূসার অবস্থান সাপেক্ষে) ডানদিকের উপত্যকার প্রান্ত থেকে, একটি গাছ থেকে এ মর্মে যে, ‘হে মূসা, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, রব্বুল আলামীন/ সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক বিধাতা।

২৮:৩১
ওয়া = আর। আন আলক্বি = তুমি নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করো। আসাকা = তোমার দৃঢ় প্রত্যয়ের লাঠি। ফালাম্মা = তারপর যখন। রআহা = সে উহাকে দেখলো যে। তাহতাযযু = উহা গড়াচ্ছে। কাহান্নাহা = যেন উহা। জান্নুন = সাপ। ওয়াল্লা মুদবিরান = তখন সে পিছু ফিরে যাচ্ছিলো। ওয়া = আর। লাম ইউআক্বক্বিব = মুখ ফিরিয়ে দেখছিলো না। {= উহা উপস্থাপন করার সময় মূসাকে দেয়া দায়িত্বের অনুভূতিতে উহাকে হাতের মধ্যে একটি জীবন্ত নড়াচড়াকারী সাপকে ধরে রাখার ন্যায় মারাত্মক কাজের মতো মনে হওয়ায় তিনি ভয় পেয়েছেন}। ইয়া মূসা = হে মূসা। আক্ববিল = (এ দায়িত্ব) কবুল করো। লা তাখাফ = ভয় পেয়ো না। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। মিনাল আমিনীনা = নিরাপদদের অন্তর্ভুক্ত।

আর তুমি নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করো তোমার দৃঢ় প্রত্যয়ের লাঠি। তারপর যখন সে উহাকে দেখলো যে, উহা গড়াচ্ছে যেন উহা সাপ, তখন সে পিছু ফিরে যাচ্ছিলো আর মুখ ফিরিয়ে দেখছিলো না। {= উহা উপস্থাপন করার সময় মূসাকে দেয়া দায়িত্বের অনুভূতিতে উহাকে হাতের মধ্যে একটি জীবন্ত নড়াচড়াকারী সাপকে ধরে রাখার ন্যায় মারাত্মক কাজের মতো মনে হওয়ায় তিনি ভয় পেয়েছেন}। ‘হে মূসা, (এ দায়িত্ব) কবুল করো। ভয় পেয়ো না। নিশ্চয় তুমি নিরাপদদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৩২
উছলুক ইয়াদাকা = তোমার হাতকে প্রবেশ করাও। ফী জায়বিকা = তোমার জেবের/ বগলের মধ্যে (= মনে সাহস সঞ্চয় করো)। তাখরুজু বায়দাআ = উহা বের হবে (আত্মবিশ্বাসের আভায়) শুভ্র সমুজ্জল হয়ে। মিন গায়রি ছূয়িন = কোনরূপ মন্দ অবস্থা ছাড়াই। ওয়াদমুম ইলাইকা জানাহাকা মিনার রাহবি = আর চেপে ধরো তোমার (বুকের) দিকে তোমার বাহুকে, ভয় থেকে বাঁচতে। ফাযানিকা বুরহানানি মির রব্বিকা = এ দুটি হচ্ছে দুটি বুরহান/ প্রমাণ, তোমার রবের পক্ষ থেকে। ইলা ফিরআউনা ওয়া মালায়েহী = (ইহা নিয়ে) ফেরাউন ও তার নির্বাহী পারিষদের কাছে (যাও)। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। কানূ = হলো। ক্বাওমান ফাছিক্বীনা = ফাসেক কওম।

তোমার হাতকে প্রবেশ করাও তোমার জেবের/ বগলের মধ্যে (= মনে সাহস সঞ্চয় করো)। উহা বের হবে (আত্মবিশ্বাসের আভায়) শুভ্র সমুজ্জল হয়ে, কোনরূপ মন্দ অবস্থা ছাড়াই। আর চেপে ধরো তোমার (বুকের) দিকে তোমার বাহুকে, ভয় থেকে বাঁচতে। এ দুটি হচ্ছে দুটি বুরহান/ প্রমাণ, তোমার রবের পক্ষ থেকে। (ইহা নিয়ে) ফেরাউন ও তার নির্বাহী পারিষদের কাছে (যাও)। নিশ্চয় তারা হলো ফাসেক কওম।

২৮:৩৩
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছিলো। রব্বি = হে আমার রব। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। ক্বাতালতু = কতল/ হত্যা করেছিলাম। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। নাফসান = এক ব্যক্তিকে। ফাআখাফু = সুতরাং আমি ভয় করি। আইঁ ইয়াক্বতুলূনি = যে, তারা আমাকে কতল/ হত্যা করবে।

সে (= মূসা) বলেছিলো, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি কতল/ হত্যা করেছিলাম তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে। সুতরাং আমি ভয় করি যে, তারা আমাকে কতল/ হত্যা করবে।

২৮:৩৪
ওয়া = আর। আখী = আমার ভাই। হারূনা = হারূন। হুয়া = সে। আফসাহু = অধিক সাবলীল। মিন্নী = আমার চেয়েও। লিছানান = ভাষার প্রয়োগে (বক্তব্যদানে)। ফাআরছিলহু = সুতরাং তাকে প্রেরণ করুন। মায়িআ = আমার সাথে। রিদআইঁ ইউসদ্দিক্বুনী = সহযোগী হিসাবে, সে আমার সত্যতা প্রতিপাদন করবে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফু = ভয় করি। আইঁ ইউকাযযিবূনা = যে, তারা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে।

আর আমার ভাই হারূন, সে অধিক সাবলীল আমার চেয়েও, ভাষার প্রয়োগে (বক্তব্যদানে)। সুতরাং তাকে প্রেরণ করুন আমার সাথে সহযোগী হিসাবে, সে আমার সত্যতা প্রতিপাদন করবে। নিশ্চয় আমি ভয় করি যে, তারা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে।

২৮:৩৫
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছিলেন। ছানাশুদ্দা = আমরা মজবুত করবো। আদুদাকা = তোমার হাতকে। বিআখীকা = তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে। ওয়া = আর। নাজআলু = আমরা দেবো। লাকুমা = তোমাদের দুজনের জন্য। ছুলতানান = সুলতান/ প্রমাণ। ফালা ইয়াসিলূনা = সুতরাং তারা পৌঁছতে পারবে না। ইলাইকুমা = তোমাদের দুজনের কাছে। বিআয়াতিনা = (তোমাদেরকে প্রমাণ সরবরাহ করবো) আমাদের আয়াতসমূহের মাধ্যমে। আনতুমা = তোমরা দুজন। ওয়া = আর। মানিত্তাবাআকুমাল গালিবূনা = যে যে তোমাদের দুজনের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে তারা বিজয়ী থাকবে।

তিনি (= আল্লাহ) বলেছিলেন, ‘আমরা মজবুত করবো তোমার হাতকে তোমার ভাইয়ের মাধ্যমে। আর আমরা দেবো তোমাদের দুজনের জন্য সুলতান/ প্রমাণ। সুতরাং তারা পৌঁছতে পারবে না তোমাদের দুজনের কাছে। (তোমাদেরকে প্রমাণ সরবরাহ করবো) আমাদের আয়াতসমূহের মাধ্যমে। তোমরা দুজন আর যে যে তোমাদের দুজনের ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে তারা বিজয়ী থাকবে।

২৮:৩৬
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহুম = তাদের কাছে এসেছিলো। মূসা বিআয়াতিনা বাইয়িনাতিন = মূসা আমাদের স্পষ্ট আয়াতসমূহসহ। ক্বলূ = তারা বলেছিলো। মা হাযা = ইহা নয়। ইল্লা ছিহরুম মুফতারান = তৈরিকৃত যাদু ছাড়া কিছু। ওয়া = আর। মা ছামি’না = আমরা শুনিনি। বিহাযা = এ ধরনের কথা। ফী আবায়িনাল আওয়ালীনা = আমাদের পূর্বেকার বাপদাদার কাছে।

তারপর যখন তাদের কাছে এসেছিলো মূসা আমাদের স্পষ্ট আয়াতসমূহসহ। তারা বলেছিলো, ‘ইহা নয় তৈরিকৃত যাদু ছাড়া কিছু। আর আমরা শুনিনি এ ধরনের কথা আমাদের পূর্বেকার বাপদাদার কাছে।

২৮:৩৭
ওয়া = আর। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছিলো। রব্বী = আমার রব। আ’লামু = জানেন। বিমান জাআ = তার সম্পর্কে যে এসেছে। বিলহুদা = হিদায়াতসহ। মিন ইনদিহী = তাঁর নিকট থেকে। ওয়া = আর। মান তাকূনু লাহু = কার জন্য। আক্বিবাতুদ দারি = (শুভ হবে) শেষ পরিণাম। ইন্নাহু = নিশ্চয়। লা ইউফলিহুয যলিমূনা = যালিমরা সফল হয় না।

আর মূসা বলেছিলো, ‘আমার রব জানেন তার সম্পর্কে যে এসেছে হিদায়াতসহ তাঁর নিকট থেকে আর কার জন্য (শুভ হবে) শেষ পরিণাম। নিশ্চয় যালিমরা সফল হয় না’।

২৮:৩৮
ওয়া = আর। ক্বলা ফিরআউনা = ফেরাউন বলেছিলো। ইয়া আইয়ুহাল মালাউ = হে নির্বাহী পরিষদ। মা আলিমতু = আমি তো জানি না যে। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। মিন ইলাহিন = কোন ইলাহ। গায়রী = আমি ছাড়া। ফাআওক্বিদ = সুতরাং আগুন জ্বালাও। লী = আমার জন্য। ইয়া হামানু = হে হামান। আলাত ত্বীনি = মাটির উপর (অর্থাৎ ইট তৈরি করো)। ফাজআল = তারপর বানাও। লী = আমার জন্য। সরহান = সুউচ্চ প্রাসাদ। লাআল্লী = যেন আমি। আত্তলিউ = তাতে আরোহন করে দেখতে পারি। ইলা ইলাহি মূসা = মূসার ইলাহকে। ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লাআযুন্নুহু = তাকে (= মূসাকে) মনে করি। মিনাল কাযিবীনা = মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

আর ফেরাউন বলেছিলো, ‘হে নির্বাহী পরিষদ, আমি তো জানি না যে, তোমাদের জন্য আছে কোন ইলাহ, আমি ছাড়া। সুতরাং আগুন জ্বালাও আমার জন্য, হে হামান, মাটির উপর (অর্থাৎ ইট তৈরি করো)। তারপর বানাও আমার জন্য সুউচ্চ প্রাসাদ, যেন আমি তাতে আরোহন করে দেখতে পারি মূসার ইলাহকে। আর নিশ্চয় আমি তাকে (= মূসাকে) মনে করি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৩৯
ওয়াছতাকবারা = আর অহংকার করেছিলো। হুয়া = সে। ওয়া = আর। জুনূদুহু = তার সেনাবাহিনী। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। বিগাইরিল হাক্বক্বি = কোন হক/ অধিকার ছাড়াই। ওয়া = আর। যন্নূ = তারা মনে করেছিলো। আন্নাহুম = যে, তারা। ইলাইনা = আমাদের কাছে। লা ইউরজাঊনা = ফিরে আসবে না।

আর অহংকার করেছিলো সে আর তার সেনাবাহিনী পৃথিবীতে, কোন হক/ অধিকার ছাড়াই। আর তারা মনে করেছিলো যে, তারা আমাদের কাছে ফিরে আসবে না।

২৮:৪০
ফাআখাযনাহু = তারপর আমরা পাকড়াও করেছিলাম তাকে। ওয়া = ও। জুনূদাহু = তার সেনাবাহিনীকে। ফানাবাযনাহুম = তারপর আমরা তাদেরকে নিক্ষেপ করেছিলাম। ফিল ইয়াম্মি = সমুদ্রের মধ্যে। ফানযুর = সুতরাং লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুয যলিমীনা = যালিমদের পরিণাম।

তারপর আমরা পাকড়াও করেছিলাম তাকে ও তার সেনাবাহিনীকে। তারপর আমরা তাদেরকে নিক্ষেপ করেছিলাম সমুদ্রের মধ্যে। সুতরাং লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো যালিমদের পরিণাম।

২৮:৪১
ওয়া = আর। জাআলনাহুম = আমরা তাদেরকে বানিয়েছিলাম। আয়িম্মাতান = ইমাম/ অগ্রগামী। ইয়াদঊনা = (এ ব্যাপারে যে,) তারা (লোকদেরকে) ডাকে। ইলান্নারি = (জাহান্নামের) আগুনের দিকে। ওয়া = আর। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। লা ইউনসরূনা = তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

আর আমরা তাদেরকে বানিয়েছিলাম ইমাম/ অগ্রগামী (এ ব্যাপারে যে,) তারা (লোকদেরকে) ডাকে (জাহান্নামের) আগুনের দিকে আর ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে তাদেরকে সাহায্য করা হবে না।

২৮:৪২
ওয়া = আর। আতবা’নাহুম = আমরা তাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করিয়েছিলাম। ফী হাযিহিদ দুনইয়া = এই দুনিয়ার মধ্যে। লা’নাতান = লা’নত/ অভিশাপকে। ওয়া = আর। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। হুম = তারা হবে। মিনাল মাক্ববূহীনা = দুর্দশাগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

আর আমরা তাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করিয়েছিলাম এই দুনিয়ার মধ্যে লা’নত/ অভিশাপকে (= আমরা তাদেরকে অভিশপ্ত করেছি)। আর ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে তারা হবে দুর্দশাগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৪৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনা = আমরা দিয়েছিলাম। মূসাল কিতাবা = মূসাকে (আসমানী) কিতাব। মিম বা’দি মা আহলাকনাল ক্বুরূনাল ঊলা = আগের যুগের লোকদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দেয়ার পর। বাসায়িরা লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য বাসায়ের/ চাক্ষুস প্রমাণস্বরূপ। ওয়া = ও। হুদাওঁ ওয়া রহমাতাল লাআল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারূনা = হুদা/ হিদায়াত ও রহমত/ দয়াস্বরূপ যেন তারা তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম মূসাকে (আসমানী) কিতাব আগের যুগের লোকদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দেয়ার পর, মানবজাতির জন্য বাসায়ের/ চাক্ষুস প্রমাণস্বরূপ ও হুদা/ হিদায়াত ও রহমত/ দয়াস্বরূপ যেন তারা তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

২৮:৪৪
ওয়া = আর। মা কুনতা = তুমি তো ছিলে না। বিজানিবিল গারবিয়্যি = (তূর পাহাড়ের) পশ্চিম কিনারে। ইয = যখন। ক্বাদাইনা = আমরা ক্বাযা/ সম্পন্ন করেছিলাম। ইলা মূসাল আমরা = মূসার প্রতি আমর/ আদেশদান। ওয়া = আর। মা কুনতা = তুমি তো ছিলে না। মিনাশ শাহিদীনা = (এ ব্যাপারে) সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত।

আর তুমি তো ছিলে না (তূর পাহাড়ের) পশ্চিম কিনারে যখন আমরা ক্বাযা/ সম্পন্ন করেছিলাম মূসার প্রতি আমর/ আদেশদান। আর তুমি তো ছিলে না (এ ব্যাপারে) সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৪৫
ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আনশা’না = আমরা সমুত্থিত করেছিলাম। ক্বুরূনা = বহু যুগ যুগান্তরের লোকসমষ্টি। ফাতাত্বওলা = তারপর অতিবাহিত হয়েছে। আলাইহিমুল উমুরু = তাদের উপর বহু যুগ। ওয়া = আর। মা কুনতা ছাভিয়্যান = তুমি তো বর্তমান ছিলে না। ফী আহলি মাদইয়ানা = আহলে মাদিয়ানে/ মাদিয়ানবাসীদের মধ্যে। তাতলূ আলাইহিম আয়াতিনা = তিলাওয়াত করার জন্য তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। কুন্না = আমরাই ছিলাম। মুরসিলীনা = রসূল প্রেরণকারী।

কিন্তু আমরা সমুত্থিত করেছিলাম বহু যুগ যুগান্তরের লোকসমষ্টি। তারপর অতিবাহিত হয়েছে তাদের উপর বহু যুগ। আর তুমি তো বর্তমান ছিলে না আহলে মাদিয়ানে/ মাদিয়ানবাসীদের মধ্যে তিলাওয়াত করার জন্য তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ। কিন্তু আমরাই ছিলাম রসূল প্রেরণকারী।

২৮:৪৬
ওয়া = আর। মা কুনতা = তুমি ছিলে না। বিজানিবিত তূরি = তূর পাহাড়ের কিনারে। ইয = যখন। নাদাইনা = আমরা (মূসাকে) আহবান করেছিলাম। ওয়ালাকির রহমাতাম মির রব্বিকা = কিন্তু (ইহা) তোমার রবের রহমত/ দয়া (যে, তোমাকে এসব জানানো হচ্ছে)। লিতুনযিরা = যেন তুমি সতর্ক করতে পারো। ক্বাওমাম মা আতাহুম = এমন এক কওমকে যাদের কাছে (নিকট অতীতে) আসেনি। মিন নাযীরিন = কোন সতর্ককারী। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগে। লাআল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারূনা = যাতে তারা তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

আর তুমি ছিলে না তূর পাহাড়ের কিনারে, যখন আমরা (মূসাকে) আহবান করেছিলাম। কিন্তু (ইহা) তোমার রবের রহমত/ দয়া (যে, তোমাকে এসব জানানো হচ্ছে), যেন তুমি সতর্ক করতে পারো এমন এক কওমকে যাদের কাছে (নিকট অতীতে) আসেনি কোন সতর্ককারী তোমার আগে, যাতে তারা তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

২৮:৪৭
ওয়া = আর। লাও লা = যদি না। আন = এমন হতো যে। তুসীবাহুম মুসীবাতুন = তাদের উপর পড়তো কোন মুসিবত। বিমা ক্বাদ্দামাত আয়দীহিম = উহার কারণে যা আগেই পাঠিয়েছে তাদের হাতগুলো (= তাদের কৃতকর্মের কারণে)। ফাইয়াক্বূলূ = তার ফলে তারা বলতো। রব্বানা = হে আমাদের রব। লাও লা আরছালতা = কেন আপনি পাঠাননি। ইলাইনা = আমাদের প্রতি। রাসূলান = কোন রসূলকে। ফানাত্তাবিয়া = যার ফলে আমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করতাম। আয়াতিকা = আপনার আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। নাকূনা = আমরা হতাম। মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনীনের/ বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত (তবে আমাদেরকে এ ব্যবস্থা করতে হতো না)।

আর যদি না এমন হতো যে, তাদের উপর পড়তো কোন মুসিবত উহার কারণে যা আগেই পাঠিয়েছে তাদের হাতগুলো (= তাদের কৃতকর্মের কারণে), তার ফলে তারা বলতো, ‘হে আমাদের রব, কেন আপনি পাঠাননি আমাদের প্রতি কোন রসূলকে যার ফলে আমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করতাম আপনার আয়াতসমূহকে; আর আমরা হতাম মু’মিনীনের/ বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত (তবে আমাদেরকে এ ব্যবস্থা করতে হতো না)।

২৮:৪৮
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহুমুল হাক্বক্বু = তাদের কাছে সত্য এলো। মিন ইনদিনা = আমাদের পক্ষ থেকে। ক্বলূ = তখন তারা বললো। লাও লা উতিয়া = কেন তাকে দেয়া হয়নি। মিছলা মা উতিয়া মূসা = যেমন দেয়া হয়েছিলো মূসাকে। আওয়ালাম ইয়াকফুরূ = তারা কি কুফর/ অবিশ্বাস করেনি। বিমা উতিয়া = উহার প্রতি, যা দেয়া হয়েছিলো। মূসা = মূসাকে। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বে। ক্বলূ = তারা বলেছিলো। ছিহরানি তাযাহারা = এরা (কথার) যাদুগর যুগল (= মূসা ও হারূন) একজন অন্যজনকে সাহায্য করে। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছিলো। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। বিকুল্লিন = এদের প্রত্যেকের প্রতি। কাফিরূনা = কাফিরূন/ অবিশ্বাসী।

তারপর যখন তাদের কাছে সত্য এলো আমাদের পক্ষ থেকে, তখন তারা বললো, ‘কেন তাকে দেয়া হয়নি যেমন দেয়া হয়েছিলো মূসাকে?’ তারা কি কুফর/ অবিশ্বাস করেনি উহার প্রতি, যা দেয়া হয়েছিলো মূসাকে ইতিপূর্বে? তারা বলেছিলো, ‘এরা (কথার) যাদুগর যুগল (= মূসা ও হারূন), একজন অন্যজনকে সাহায্য করে’। আর তারা বলেছিলো, ‘নিশ্চয় আমরা এদের প্রত্যেকের প্রতি কাফিরূন/ অবিশ্বাসী’।

২৮:৪৯
ক্বুল = বলো। ফা’তূ = তাহলে তোমরা আনো। বিকিতাবিম মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব। হুয়া = যা। আহদা মিনহুমা = ঐ দুটির চেয়ে (তাওরাত ও কুরআনের চেয়ে) বেশি হিদায়াতদানকারী। আত্তাবি’হু = আমিই উহা ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সাদেকীন/ সত্যবাদী।

বলো, ‘তাহলে তোমরা আনো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন কিতাব, যা ঐ দুটির চেয়ে (তাওরাত ও কুরআনের চেয়ে) বেশি হিদায়াতদানকারী। আমিই উহা ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো, যদি তোমরা হও সাদেকীন/ সত্যবাদী।

২৮:৫০
ফাইল্লাম ইয়াছতাজিবূ = তারপর যদি তারা সাড়া না দেয়। লাকা = তোমার ডাকে। ফা’লাম = তাহলে জেনে রাখো। আন্নামা = নিশ্চয়। ইয়াত্তাবিঊনা = তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করছে। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের। ওয়া = আর। মান আদাল্লু মিম্মানিত তাবায়া = তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত কে হতে পারে যে ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। হাওয়াহু = তার হাওয়ার/ প্রবৃত্তি প্রসূত মতবাদের। বিগায়রি হুদাম মিনাল্লাহ = আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন হুদা/ হিদায়াত ছাড়া। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াহদিল ক্বাওমায যলিমীনা = হিদায়াত করেন না যালিমদের কওমকে।

তারপর যদি তারা সাড়া না দেয় তোমার ডাকে, তাহলে জেনে রাখো, নিশ্চয় তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করছে তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের। আর তার চেয়ে অধিক বিভ্রান্ত কে হতে পারে যে ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তার হাওয়ার/ প্রবৃত্তি প্রসূত মতবাদের, আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন হুদা/ হিদায়াত ছাড়া? নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিমদের কওমকে।

২৮:৫১
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। ওয়াসসলনা = আমরা উপর্যুপরি পাঠিয়েছি। লাহুমুল ক্বাওলা = তাদের জন্য কওল/ বাণী। লাআল্লাহুম = যাতে তারা। ইয়াতাযাক্কারূনা = তাযাক্কুর/ উপদেশগ্রহণ করতে পারে।

আর নিশ্চয় আমরা উপর্যুপরি পাঠিয়েছি তাদের জন্য কওল/ বাণী, যাতে তারা তাযাক্কুর/ উপদেশগ্রহণ করতে পারে।

২৮:৫২
আল্লাযীনা আতাইনাহুমুল কিতাবা = যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম। মিন ক্বাবলিহী = উহার আগে (= কুরআনের আগে)। হুম = তারা (= আহলে কিতাব)। বিহী = উহার প্রতি (= কুরআনের প্রতি)। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে।

যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম উহার আগে (= কুরআনের আগে), তারা (= আহলে কিতাব) উহার প্রতি (= কুরআনের প্রতি) ঈমান/ বিশ্বাস করে।

২৮:৫৩
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ইউতলা = তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করা হয়। আলাইহিম = তাদের কাছে। ক্বলূ = তারা বলে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস রাখি। বিহী = উহার প্রতি। ইন্নাহুল হাক্বক্বু = নিশ্চয় উহা সত্য। মির রব্বিনা = আমাদের রবের পক্ষ থেকে। ইন্না কুন্না = নিশ্চয় আমরা ছিলাম। মিন ক্বাবলিহী = উহার আগেও। মুসলিমীনা = মুসলিমীন/ (আল্লাহর প্রতি) আত্মসমর্পনকারী।

আর যখন তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করা হয় তাদের কাছে, তখন তারা বলে আমরা ঈমান/ বিশ্বাস রাখি উহার প্রতি। নিশ্চয় উহা সত্য, আমাদের রবের পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আমরা ছিলাম উহার আগেও মুসলিমীন/ (আল্লাহর প্রতি) আত্মসমর্পনকারী।

২৮:৫৪
উলায়িকা = ঐসব লোককে। ইউ’তাওনা = দেয়া হবে। আজরুহুম = তাদের প্রতিফল। মাররাতাইনি = দুইবার। বিমা সবারূ = এ কারণে যে, তারা সবর করেছে। ওয়া = আর। ইয়াদরাঊনা = তারা দূর করে। বিল হাছানাতিছ ছাইয়িয়াতি = ভালো দিয়ে মন্দকে। ওয়া = আর। মিম্মা রযাক্বনাহুম ইউনফিক্বূনা = যা আমরা তাদেরকে রিযক/ জীবনোপকরন দিয়েছি তা থেকে ইনফাক/ ব্যয় করে।

ঐসব লোককে দেয়া হবে তাদের প্রতিফল দুইবার। এ কারণে যে, তারা সবর করেছে আর তারা দূর করে ভালো দিয়ে মন্দকে আর যা আমরা তাদেরকে রিযক/ জীবনোপকরন দিয়েছি তা থেকে ইনফাক/ ব্যয় করে।

২৮:৫৫
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ছামিউল লাগওয়া = তারা শুনে কোন অনর্থক কথাবার্তা। আ’রাদূ আনহু = তারা উহা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। লানা = আমাদের জন্য। আ’মালুনা = আমাদের আমল/ কাজ। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য। আ’মালুকুম = তোমাদের আমল/ কাজ। ছালামুন আলাইকুম = ছালামুন আলাইকুম/ তোমাদের উপর শান্তি। লা নাবতাগিল জাহিলীনা = আমরা জাহেলদেরকে তালাশ করি না।

আর যখন তারা শুনে কোন অনর্থক কথাবার্তা, তখন তারা উহা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর তারা বলে, ‘আমাদের জন্য আমাদের আমল/ কাজ আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল/ কাজ। ছালামুন আলাইকুম/ তোমাদের উপর শান্তি। আমরা জাহেলদেরকে তালাশ করি না’।

২৮:৫৬
ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লা তাহদী = হিদায়াত দিতে পারো না। মান আহবাবতা = যাকে তুমি ভালবাস। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। ইয়াহদী = হিদায়াত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আ’লামু = জানেন। বিল মুহতাদীনা = হিদায়াতগ্রহণকারীদেরকে।

নিশ্চয় তুমি হিদায়াত দিতে পারো না যাকে তুমি ভালবাস। কিন্তু আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আর তিনি জানেন হিদায়াতগ্রহণকারীদেরকে।

২৮:৫৭
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। ইন = যদি। নাত্তাবিয়িল হুদা = আমরা হুদার/ হিদায়াতের ইত্তেবা/ অনুসরণ করি। মাআকা = তোমার সাথে। নুতাখাত্তাফ = তাহলে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে। মিন আরদিনা = আমাদের স্বদেশ থেকে। আওয়ালাম নুমাক্কিল্লাহুম = আমরা কি বসবাসের ব্যবস্থা করিনি তাদের জন্য। হারামান আমিনাইঁ ইউজবা = নিরাপদ হারামে (নিষিদ্ধ/ সংরক্ষিত এলাকায়), আনা হয়। ইলাইহি = যার দিকে। ছামারাতু কুল্লি শাইয়ির রিযক্বাম মিল্লাদুন্না = প্রত্যেক প্রকারের ফলফলাদি, আমাদের পক্ষ থেকে রিযিকস্বরূপ। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = জ্ঞান রাখে না।

আর তারা বলে, ‘যদি আমরা হুদার/ হিদায়াতের ইত্তেবা/ অনুসরণ করি তোমার সাথে, তাহলে আমাদেরকে উচ্ছেদ করা হবে আমাদের স্বদেশ থেকে’। আমরা কি বসবাসের ব্যবস্থা করিনি তাদের জন্য নিরাপদ হারামে (নিষিদ্ধ/ সংরক্ষিত এলাকায়), আনা হয় যার দিকে প্রত্যেক প্রকারের ফল ফলাদি,আমাদের পক্ষ থেকে রিযিকস্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।

২৮:৫৮
ওয়া = আর। কাম আহলাকনা মিন ক্বারইয়াতিম বাতিরাত মায়ীশাতাহা = কত যে জনপদবাসীকে আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি যারা তাদের জীবন যাপনের উপায় উপকরনের অহংকার করতো। ফাতিলকা = তারপর এই। মাছাকিনুহুম = তাদের বাসগৃহসমূহ। লাম তুছকাম মিম বা’দিহিম = উহাতে বসবাস করেনি তাদের পরে। ইল্লা ক্বালীলান = অল্পসংখ্যক ছাড়া। ওয়া = আর। কুন্না নাহনুল ওয়ারিসীনা = আমরাই হলাম ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী।

আর কত যে জনপদবাসীকে আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি যারা তাদের জীবন যাপনের উপায় উপকরনের অহংকার করতো। তারপর এই তাদের বাসগৃহসমূহ। উহাতে বসবাস করেনি তাদের পরে, অল্পসংখ্যক ছাড়া। আর আমরাই হলাম ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী।

২৮:৫৯
ওয়া = আর। মা কানা রব্বুকা = তোমার রব ছিলেন না। মুহলিকাল ক্বুরা = কোন জনপদকে হালাককারী। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াবআছা = তিনি সমুত্থিত/ প্রেরণ করেন। ফী উম্মিহা = উহার কেন্দ্রে। রসূলাইঁ ইয়াতলূ = একজন রসূল যে তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করে। আলাইহিম = তাদের কাছে। আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ। ওয়া = আর। মা কুন্না = আমরা ছিলাম না। মুহলিকিল ক্বুরা = কোন জনপদকে হালাককারী। ইল্লা = এছাড়া যে। ওয়া আহলুহা = উহার আহাল/ অধিবাসীগণ ছিলো। যলিমূনা = যালিম।

আর তোমার রব ছিলেন না কোন জনপদকে হালাককারী, যতক্ষণ না তিনি সমুত্থিত/ প্রেরণ করেন উহার কেন্দ্রে একজন রসূল, যে তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করে তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ। আর আমরা ছিলাম না কোন জনপদকে হালাককারী, এছাড়া যে, উহার আহাল/ অধিবাসীগণ ছিলো যালিম।

২৮:৬০
ওয়া = আর। মা উতীতুম = যা কিছু তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে। মিন শাইয়িন = যে কোন কিছু থেকে। ফামাতাউল হায়াতুদ দুনইয়া = উহা হলো হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী। ওয়া = আর। যীনাতুহা = উহার যীনাত/ সৌন্দর্য। ওয়া = আর। মা ইনদাল্লাহি = যা কিছু আছে আল্লাহর কাছে। খায়রুন ওয়া আবক্বা = উহাই উত্তম ও অধিক স্থায়ী। আফালা তা’ক্বিলূনা = তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ সাধারণ জ্ঞান (common sense) প্রয়োগ করো না?

আর যা কিছু তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে যে কোন কিছু থেকে, উহা হলো হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী আর উহার যীনাত/ সৌন্দর্য। আর যা কিছু আছে আল্লাহর কাছে (অর্থাৎ আল্লাহর বিধান মেনে যা পাওয়া যায়), উহাই উত্তম ও অধিক স্থায়ী। তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ সাধারণ জ্ঞান (common sense) প্রয়োগ করো না?

২৮:৬১
আফামাইঁ ওয়াআদনাহু = তবে কি সে যাকে আমরা ওয়াদা দিয়েছি। ওয়া’দান হাছানান = উত্তম ওয়াদা। ফাহুয়া = তারপর সে। লাআক্বীহি = উহা লাভ করবে। কামান = (সে কি) তার মতো যে। মাত্তা’নাহু = যাকে আমরা ভোগসামগ্রী দিয়েছি। মাতাআল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী। ছুম্মা = তারপর। হুয়া = সে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। মিনাল মুহদারীনা = (অপরাধী হিসাবে) উপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

তবে কি সে যাকে আমরা ওয়াদা দিয়েছি, উত্তম ওয়াদা, তারপর সে উহা লাভ করবে; (সে কি) তার মতো যাকে আমরা ভোগসামগ্রী দিয়েছি, হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগ সামগ্রী, তারপর সে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে (অপরাধী হিসাবে) উপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে?

২৮:৬২
ওয়া = আর। ইয়াওমা = সেদিন। ইউনাদীহিম = তিনি তাদেরকে ডাকবেন। ফাইয়াক্বূলু = তারপর বলবেন। আয়না = কোথায়। শুরাকায়িয়াল্লাযীনা = আমার সেই শরীকরা যাদেরকে। কুনতুম তাযউমূনা = তোমরা (আমার শরীক হিসাবে) ধারণা করতে।

আর সেদিন তিনি তাদেরকে ডাকবেন, তারপর বলবেন, ‘কোথায় আমার সেই শরীকরা যাদেরকে তোমরা (আমার শরীক হিসাবে) ধারণা করতে?

২৮:৬৩
ক্বলাল্লাযীনা হাক্বক্বু আলাইহিমুল ক্বাওলু = তারা বলবে যারা তাদের উপর কওল/ (শাস্তিনীতি সম্পর্কিত) বাণীর হক্বদার হয়ে গেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। হাউলায়িল্লাযীনা = এরাই তারা যাদেরকে। আগওয়ায়না = আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম। আগওয়ায়নাহুম = আমরা তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম। কামা = যেমন। গাওয়ায়না = আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। তাবারর’না = আমরা দায়মুক্ত হচ্ছি। ইলাইকা = আপনার কাছে। মা কানা ইয়্যানা ইয়া’বুদূনা = তারা একমাত্র আমাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতো না।

তারা বলবে যারা তাদের উপর কওল/ (শাস্তিনীতি সম্পর্কিত) বাণীর হক্বদার হয়ে গেছে, ‘হে আমাদের রব, এরাই তারা যাদেরকে আমরা বিভ্রান্ত করেছিলাম। আমরা তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলাম যেমন আমরা বিভ্রান্ত হয়েছিলাম। আমরা দায়মুক্ত হচ্ছি আপনার কাছে’। তারা একমাত্র আমাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতো না।

২৮:৬৪
ওয়া = আর। ক্বীলাদউ = তাদেরকে বলা হবে, ‘ডাকো। শুরাকাআকুম = তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে। ফাদাআওহুম = তখন তাদেরকে ডাকা হবে। ফালাম ইয়াছতাজিবূ = কিন্তু তারা সাড়া দেবে না। লাহুম = তাদের জন্য। ওয়া = আর। রাআউল আযাবা = তারা আযাব/ শাস্তি দেখবে। লাও = যদি। আন্নাহুম = তারা। কানূ ইয়াহতাদূনা = হিদায়াত গ্রহণ করতো!

আর তাদেরকে বলা হবে, ‘ডাকো তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে’। তখন তাদেরকে ডাকা হবে। কিন্তু তারা সাড়া দেবে না তাদের জন্য। আর তারা আযাব/ শাস্তি দেখবে। যদি তারা হিদায়াত গ্রহণ করতো!

২৮:৬৫
ওয়া = আর। ইয়াওমা = সেদিন। ইউনাদীহিম = তিনি তাদেরকে ডাকবেন। ফাইয়াক্বূলু = তারপর তিনি বলবেন। মা যা আজাবতুমুল মুরছালীনা = তোমরা কী জবাব দিয়েছিলে রসূলদেরকে?

আর সেদিন তিনি তাদেরকে ডাকবেন। তারপর তিনি বলবেন, ‘তোমরা কী জবাব দিয়েছিলে রসূলদেরকে?’

২৮:৬৬
ফাআমিয়াত = তখন বিলুপ্ত হবে। আলাইহিমুল আম্বাউ = তাদের থেকে তথ্যাদি। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। ফাহুম = সুতরাং তারা। লা ইয়াতাছাআলূনা = একে অপরকে জিজ্ঞাসাও করবে না।

তখন বিলুপ্ত হবে তাদের থেকে তথ্যাদি সেদিন। সুতরাং তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসাও করবে না।

২৮:
ফাআম্মা = তারপর তার ব্যাপার। মান = যে। তাবা = তাওবা করে। ওয়া = আর। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ফাআছা = সেক্ষেত্রে আশা করা যায়। আইঁ ইয়াকূনা = যে, সে হবে। মিনাল মুফলিহীনা = মুফলেহীনের/ সফলদের/ কল্যাণলাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপর তার ব্যাপার যে তাওবা করে আর ঈমান/ বিশ্বাস করে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে, সেক্ষেত্রে আশা করা যায় যে, সে হবে মুফলেহীনের/ সফলদের/ কল্যাণলাভকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৬৮
ওয়া = আর। রব্বুকা = তোমার রব। ইয়াখলুক্বু = সৃষ্টি করেন। মা ইয়াশাউ = যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াখতারু = তিনি মনোনীত করেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। মা কানা লাহুমুল খীরাতু = (এসব কাজে) তাদের কোন ইখতিয়ার নেই। সুবহানাল্লাহি ওয়া তায়ালা = সুবহানাল্লাহি ওয়া তাআলা/ আল্লাহ পবিত্র ও বহু ঊর্ধ্বে। আম্মা ইউশরিকূনা = (তিনি পবিত্র ও ঊর্ধ্বে) তা থেকে, যে শিরক তারা করে।

আর তোমার রব সৃষ্টি করেন যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন, আর তিনি মনোনীত করেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। (এসব কাজে) তাদের কোন ইখতিয়ার নেই। সুবহানাল্লাহি ওয়া তাআলা/ আল্লাহ পবিত্র ও বহু ঊর্ধ্বে। (তিনি পবিত্র ও ঊর্ধ্বে) তা থেকে, যে শিরক তারা করে।

২৮:৬৯
ওয়া = আর। রব্বুকা = তোমার রব। ইয়া’লামু = জানেন। মা তুকিন্নু = যা তারা গোপন রাখে। সুদূরুহুম = তাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা। ইউ’লিনূনা = তারা প্রকাশ করে।

আর তোমার রব জানেন যা তারা গোপন রাখে তাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে আর যা তারা প্রকাশ করে।

২৮:৭০
ওয়া = আর। হুয়াল্লাহু = তিনিই আল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। লাহুল হামদু = তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। ফি ঊলা ওয়াল আখিরাতি = আগের ও পরের (দুনিয়ার ও আখিরাতের)। ওয়া = আর। লাহুল হুকমু = তাঁরই জন্য হুকুম/ আইন প্রণয়নের অধিকার/ বিচারক্ষমতা। ওয়া = আর। ইলাইহি তুরজাঊনা = তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।

আর তিনিই আল্লাহ। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তাঁরই জন্য সমস্ত প্রশংসা আগের ও পরের (দুনিয়ার ও আখিরাতের)। আর তাঁরই জন্য হুকুম/ আইন প্রণয়নের অধিকার/ বিচারক্ষমতা। আর তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।

২৮:৭১
ক্বুল = বলো। আরাআইতুম = তোমরা কি (ভেবে) দেখেছো। ইন = যদি। জাআলাল্লাহু = আল্লাহ করে দেন। আলাইকুমুল্লাইলা = তোমাদের উপর রাতকে। ছারমাদান = সুদীর্ঘ। ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। মান ইলাহুন = কে আছে ইলাহ। গায়রুল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ইয়া’তীকুম = যে তোমাদেরকে এনে দেবে। বিদিয়াইন = আলোক। আফালা তাছমাঊনা = তোমরা কি শুনো না?

বলো, ‘তোমরা কি (ভেবে) দেখেছো, যদি আল্লাহ করে দেন তোমাদের উপর রাতকে সুদীর্ঘ, ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত; কে আছে ইলাহ আল্লাহ ছাড়া, যে তোমাদেরকে এনে দেবে আলোক? তোমরা কি শুনো না?’

২৮:৭২
ক্বুল = বলো। আরাআইতুম = তোমরা কি (ভেবে) দেখেছো। ইন = যদি। জাআলাল্লাহু = আল্লাহ করে দেন। আলাইকুমুন্নাহারা = তোমাদের উপর দিনকে। ছারমাদান = সুদীর্ঘ। ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। মান ইলাহুন = কে আছে ইলাহ। গায়রুল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ইয়া’তীকুম = যে তোমাদেরকে এনে দেবে। বিলায়লিন = রাত। তাছকুনূনা ফীহি = যেন তোমরা উহাতে প্রশান্তি পেতে পারো। আফালা তুবসিরূনা = তোমরা কি দেখ না?

বলো, ‘তোমরা কি (ভেবে) দেখেছো, যদি আল্লাহ করে দেন তোমাদের উপর দিনকে সুদীর্ঘ, ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত; কে আছে ইলাহ আল্লাহ ছাড়া, যে তোমাদেরকে এনে দেবে রাত, যেন তোমরা উহাতে প্রশান্তি পেতে পারো। তোমরা কি দেখ না?’

২৮:৭৩
ওয়া = আর। মির রহমতিহী = তাঁর রহমত থেকেই। জাআলা = তিনি ব্যবস্থা করেছেন। লাকুমুল্লাইলা ওয়ান নাহারা = তোমাদের জন্য রাত ও দিন। লিতাছকুনূ ফীহি = যেন তোমরা উহাতে প্রশান্তি লাভ করো। ওয়া = আর। লিতাবতাগূ মিন ফাদলিহী = যেন তোমরা তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ (= হালাল জীবিকা) তালাশ করো। ওয়া = আর। লাআল্লাকুম = যেন তোমরা। তাশকুরূনা = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

আর তাঁর রহমত থেকেই তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য রাত ও দিন, যেন তোমরা উহাতে প্রশান্তি লাভ করো আর যেন তোমরা তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ (= হালাল জীবিকা) তালাশ করো, আর যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

২৮:৭৪
ওয়া = আর। ইয়াওমা = সেদিন। ইউনাদীহিম = তিনি তাদেরকে ডাকবেন। ফাইয়াক্বূলু = তারপর তিনি বলবেন। আয়না = কোথায়। শুরাকায়িয়াল্লাযীনা = আমার সেই শরীকরা, যাদেরকে। কুনতুম তাযঊমূনা = তোমরা (আমার শরিক হিসাবে) ধারণা করতে।

আর সেদিন তিনি তাদেরকে ডাকবেন। তারপর তিনি বলবেন, ‘কোথায় আমার সেই শরীকরা, যাদেরকে তোমরা (আমার শরিক হিসাবে) ধারণা করতে?’

২৮:৭৫
ওয়া = আর। নাযা’না = আমরা বের করে আনবো। মিন কুল্লি উম্মাতিন = প্রত্যেক উম্মাত থেকে। শাহীদান = একজন করে সাক্ষী। ফাক্বুলনা = তারপর আমরা বলবো। হাতূ = তোমরা দাও। বুরহানাকুম = তোমাদের বুরহান/ প্রমাণ। ফাআলিমূ = তখন তারা জানবে। আন্নাল হাক্বক্বা = যে, সমস্ত হক্ব/ অধিকার। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। ওয়া = আর। দল্লা = উধাও হয়ে গেছে। আনহুম = তাদের থেকে। মা কানূ ইয়াফতারূনা = যা তারা রচনা করতো।

আর আমরা বের করে আনবো প্রত্যেক উম্মাত থেকে একজন করে সাক্ষী। তারপর আমরা বলবো, ‘তোমরা দাও তোমাদের বুরহান/ প্রমাণ’। তখন তারা জানবে যে, সমস্ত হক্ব/ অধিকার আল্লাহর জন্য। আর উধাও হয়ে গেছে তাদের থেকে যা তারা রচনা করতো।

২৮:৭৬
ইন্না = নিশ্চয়। ক্বারূনা = কারূন। কানা মিন ক্বাওমি মূসা = মূসার কওমের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ফাবাগা = তারপর সে বিদ্রোহ করেছিলো। আলাইহিম = তাদের বিরুদ্ধে (= তার কওমের বিরুদ্ধে)। ওয়া = আর। আতাইনাহু = আমরা তাকে দিয়েছিলাম। মিনাল কুনূযি = ধনভান্ডারসমূহ। মা = যা এমন ছিলো যে। ইন্না = নিশ্চয়। মাফাতিহাহু = তার (ধনকক্ষসমূহের) চাবিসমূহ। লাতানূউ = অবশ্যই নুয়ে দিতো। বিল উসবাতি = একটি শক্তিশালী দলকে। উলিল ক্বুওয়াতি = (যারা ছিলো) উলিল ক্বুওয়ত/ অত্যন্ত শক্তিসম্পন্ন। ইয = (স্মরণ করো) যখন। ক্বলা লাহু = তাকে বলেছিলো। ক্বাওমাহু = তার কওম। লা তাফরিহ = আনন্দে আত্মহারা হয়ো না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল ফারিহূনা = আনন্দে আত্মহারাদেরকে ভালবাসেন না।

নিশ্চয় কারূন মূসার কওমের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তারপর সে বিদ্রোহ করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে (= তার কওমের বিরুদ্ধে)। আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম ধনভান্ডারসমূহ যা এমন ছিলো যে, নিশ্চয় তার (ধনকক্ষসমূহের) চাবিসমূহ অবশ্যই নুয়ে দিতো একটি শক্তিশালী দলকে, (যারা ছিলো) উলিল ক্বুওয়ত/ অত্যন্ত শক্তিসম্পন্ন। (স্মরণ করো) যখন তাকে বলেছিলো তার কওম, ‘আনন্দে আত্মহারা হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ আনন্দে আত্মহারাদেরকে ভালবাসেন না’।

২৮:৭৭
ওয়াবতাগি = আর তুমি তালাশ করো। ফীমা = উহার মাধ্যমে যা। আতাকাল্লাহুদ দারাল আখিরাতা = আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন, (তালাশ করো) আখিরাতের ঘর। ওয়ালা তানছা = আর ভুলে যেও না। নাসীবাকা = তোমার অংশ নিতে। মিনাদ দুনইয়া = দুনিয়া থেকে। ওয়া = আর। আহসিন = উত্তম কাজ করো। কামা = যেমন। আহছানাল্লাহু = আল্লাহ উত্তম আচরণ করেছেন। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া = আর। লা তাবগিল ফাসাদা ফিল আরদি = (সুযোগ) তালাশ করো না পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদেরকে ভালবাসেন না।

আর তুমি তালাশ করো উহার মাধ্যমে যা আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন, (তালাশ করো) আখিরাতের ঘর। আর ভুলে যেও না তোমার অংশ নিতে দুনিয়া থেকে। আর উত্তম কাজ করো, যেমন আল্লাহ উত্তম আচরণ করেছেন তোমার প্রতি। আর (সুযোগ) তালাশ করো না পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদেরকে ভালবাসেন না।

২৮:৭৮
ক্বলা = সে (= কারূন) বলেছিলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। উতীতুহু = উহা আমাকে দেয়া হয়েছে। আলা ইলমিন ইনদী = আমার নিকট থাকা জ্ঞানের কারণে। আওয়ালাম ইয়া’লাম = সে কি জানে না। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। ক্বাদ = নিশ্চয়। আহলাকা = হালাক/ ধ্বংস করেছেন। মিন ক্বাবলিহী = তার আগেও। মিনাল ক্বুরূনি = বহু যুগের জনগোষ্ঠীকে। মান হুয়া = যে ছিলো। আশাদ্দু মিনহু ক্বুওয়াতান = তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী। ওয়া = আর। আকছারু জামআন = সংঘবদ্ধ জনবলেও (তার চেয়ে) অনেক বেশি। ওয়া = আর (হালাক করার আগে)। লা ইউছআলু = জিজ্ঞাসা করা হয় না। আন যুনূবিহিমুল মুজরিমূনা = অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধসমূহ সম্পর্কে।

সে (= কারূন) বলেছিলো, ‘নিশ্চয় উহা আমাকে দেয়া হয়েছে আমার নিকট থাকা জ্ঞানের কারণে’। সে কি জানে না যে, আল্লাহ নিশ্চয় হালাক/ ধ্বংস করেছেন তার আগেও বহু যুগের জনগোষ্ঠীকে, যে ছিলো তার চেয়ে অধিক শক্তিশালী আর সংঘবদ্ধ জনবলেও (তার চেয়ে) অনেক বেশি? আর (হালাক করার আগে) জিজ্ঞাসা করা হয় না অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধসমূহ সম্পর্কে?

২৮:৭৯
ফাখারাজা = তারপর সে (= কারূন) বের হয়েছিলো। আলা ক্বাওমিহী = তার কওমের কাছে। ফী যীনাতিহী = তার যীনাতের/ সৌন্দর্যের (= সৌন্দর্যপূর্ণ উপকরনের) মধ্যে সুসজ্জিত অবস্থায়। ক্বলাল্লাযীনা = তখন তারা বলেছিলো যারা। ইউরীদূনাল হায়াতাদ দুনইয়া = এরাদা/ ইচ্ছা করে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন (সমৃদ্ধ রূপে) পেতে। ইয়া লায়তা = হায়! আফসোস! লানা = আমাদের জন্যও (যদি) হতো। মিছলা মা = উহার অনুরূপ যা। উতিয়া = দেয়া হয়েছে। ক্বারূনা = কারূনকে। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। লাযূ হাযযিন আযীমিন = বড় ভাগ্যবান।

তারপর সে (= কারূন) বের হয়েছিলো তার কওমের কাছে তার যীনাতের/ সৌন্দর্যের (= সৌন্দর্যপূর্ণ উপকরনের) মধ্যে সুসজ্জিত অবস্থায়। তখন তারা বলেছিলো যারা এরাদা/ ইচ্ছা করে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন (সমৃদ্ধ রূপে) পেতে, ‘হায়! আফসোস! আমাদের জন্যও (যদি) হতো উহার অনুরূপ যা দেয়া হয়েছে কারূনকে। নিশ্চয় সে বড় ভাগ্যবান’।

২৮:৮০
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা = তারা বলেছিলো যাদেরকে। উতুল ইলমা = জ্ঞান দেয়া হয়েছে। ওয়ালাকুম = তোমাদের জন্য দুর্ভোগ। ছাওয়াবুল্লাহি = আল্লাহ প্রদত্ত সওয়াব/ প্রতিফলই। খায়রুল লিমান আমানা = তার জন্য উত্তম যে ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ওয়া = আর। লা ইউলাক্বক্বাহা = উহা কেউ পায় না। ইল্লাস সবিরূনা = সবরকারীগণ ছাড়া।

আর তারা বলেছিলো যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য দুর্ভোগ! আল্লাহ প্রদত্ত সওয়াব/ প্রতিফলই তার জন্য উত্তম যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। আর উহা কেউ পায় না সবরকারীগণ ছাড়া’।

২৮:৮১
ফাখাছাফনা = তারপর আমরা পুঁতে ফেললাম। বিহী ওয়া বিদারিহিল আরদা = তাকে ও তার ঘরকে, (পুঁতে ফেললাম) ভূমিতে/ জমিনের মধ্যে। ফামা কানা লাহু = তখন তার জন্য ছিলো না। মিন ফিআতিইঁ ইয়ানসুরূনাহু = কোন দল যে তাকে সাহায্য করবে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া (কেউই সাহায্যকারী নেই)। ওয়া = আর। মা কানা মিনাল মুনতাসিরীনা = সে আত্মরক্ষায় সক্ষমদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলো না (= আল্লাহ শাস্তি দিলে তা থেকে আত্মরক্ষা করা যায় না)।

তারপর আমরা পুঁতে ফেললাম তাকে ও তার ঘরকে, (পুঁতে ফেললাম) ভূমিতে/ জমিনের মধ্যে। তখন তার জন্য ছিলো না কোন দল যে তাকে সাহায্য করবে, আল্লাহ ছাড়া (কেউই সাহায্যকারী নেই)। আর সে আত্মরক্ষায় সক্ষমদেরও অন্তর্ভুক্ত ছিলো না (= আল্লাহ শাস্তি দিলে তা থেকে আত্মরক্ষা করা যায় না)।

২৮:৮২
ওয়া = আর। আসবাহাল্লাযীনা = তারা (নিজেদের) প্রভাত করলো যারা। তামান্নাও = তামান্না/ কামনা করেছিলো। মাকানাহু = তার মাকান/ অবস্থান (সমমর্যাদা)। বিল আমছি = গতকালও। ইয়াক্বূলূনা = তারা (এ কথা) বলতে বলতে (যে,)। ওয়াকাআন্নাল্লাহা = বড়ই আফসোস, আল্লাহ। ইয়াবসুতুর রিযক্বা = রিযিককে সম্প্রসারিত করে দেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। ইয়াক্বদিরু = তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। লাও লা = যদি না। আম্মান্নাল্লাহু = আল্লাহ অনুগ্রহ করতেন। আলাইনা = আমাদের উপর। লাখাছাফা = তাহলে তিনি ধ্বসিয়ে দিতেন। বিনা = আমাদেরকেও। ওয়ায়কাআন্নাহু = আর উহার ব্যাপারে বড়ই আফসোস (যা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে,)। লা ইউফলিহুল কাফিরূনা = কাফেররা সফল হয় না।

আর তারা (নিজেদের) প্রভাত করলো যারা তামান্না/ কামনা করেছিলো তার মাকান/ অবস্থান (সমমর্যাদা) গতকালও, তারা (এ কথা) বলতে বলতে (যে,) ‘বড়ই আফসোস, আল্লাহ রিযিককে সম্প্রসারিত করে দেন যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। যদি না আল্লাহ অনুগ্রহ করতেন আমাদের উপর, তাহলে তিনি ধ্বসিয়ে দিতেন আমাদেরকেও। আর উহার ব্যাপারে বড়ই আফসোস (যা আমরা ভুলে গিয়েছিলাম যে,) কাফেররা সফল হয় না’।

২৮:৮৩
তিলকাদ দারুল আখিরাতু = ঐ আখিরাতের ঘর। নাজআলূহা = তা আমরা রেখেছি। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। লা ইউরীদূনা = এরাদা/ ইচ্ছা করে না। উলুওওয়ান ফিল আরদি = পৃথিবীতে সবার উপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে (= আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বান্দায় পরিণত করতে)। ওয়া = আর। লা ফাসাদান = ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করতেও (চায়) না। ওয়াল আক্বিবাতু লিল মুত্তাক্বীনা = আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্যই।

ঐ আখিরাতের ঘর তা আমরা রেখেছি তাদের জন্য যারা এরাদা/ ইচ্ছা করে না পৃথিবীতে সবার উপর প্রভুত্ব বিস্তার করতে (= আল্লাহর বান্দাদেরকে নিজের বান্দায় পরিণত করতে) আর ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করতেও (চায়) না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্যই।

২৮:৮৪
মান = যে। জাআ = আসবে। বিল হাছানাতি = উত্তম কাজ করে। ফালাহু = তাহলে তার জন্য আছে। খায়রুম মিনহা = উহার চেয়ে উত্তম। ওয়া = আর। মান = যে। জাআ = আসবে। বিছ ছাইয়িয়াতি = মন্দ কাজ করে। ফালা ইউজযাল্লাযীনা = তাহলে তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে না যারা। আমিলুস ছাইয়িআতি = মন্দ কাজ করে। ইল্লা = উহার অনুরূপ ছাড়া। মা = যা। কানূ ইয়া’মালূনা = তারা করতো।

যে আসবে উত্তম কাজ করে, তাহলে তার জন্য আছে উহার চেয়ে উত্তম। আর যে আসবে মন্দ কাজ করে, তাহলে তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে না যারা মন্দ কাজ করে, উহার অনুরূপ ছাড়া যা তারা করতো।

২৮:৮৫
ইন্নাল্লাযী = নিশ্চয় যিনি। ফারাদা = ফরজ/ নির্ধারিত/ অবশ্য পালনীয় করেছেন। আলাইকাল ক্বুরআনু = তোমার উপর আল কুরআন। লারদ্দুকা = তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে নিবেন। ইলা মাআদিন = চূড়ান্ত অবস্থানে। ক্বুর রব্বী = বলো, ‘আমার রব। আ’লামু = জানেন। মান = কে। জাআ = এসেছে। বিল হুদা = হুদা/ হিদায়াত নিয়ে। ওয়া = আর। মান হুয়া = কে আছে। ফী দলালিম মুবীনিন = প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে?

নিশ্চয় যিনি ফরজ/ নির্ধারিত/ অবশ্য পালনীয় করেছেন তোমার উপর আল কুরআন, তিনি তোমাকে অবশ্যই ফিরিয়ে নিবেন চূড়ান্ত অবস্থানে। বলো, ‘আমার রব জানেন কে এসেছে হুদা/ হিদায়াত নিয়ে আর কে আছে প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে?

২৮:৮৬
ওয়া = আর। মা কুনতু তারজূ = তুমি তো আশা করতে না। আইঁ ইউলক্বা = যে, দেয়া হবে। ইলাইকাল কিতাবু = তোমার প্রতি এই কিতাব। ইল্লা রহমাতাম মির রব্বিকা = (ইহা তো নয়) তোমার রবের রহমত ছাড়া (অন্য কিছু)। ফালা তাকূনান্না যহীরাল লিল কাফিরীনা = সুতরাং তুমি হয়ো না কাফিরদের সাহায্যকারী।

আর তুমি তো আশা করতে না যে, দেয়া হবে তোমার প্রতি এই কিতাব। (ইহা তো নয়) তোমার রবের রহমত ছাড়া (অন্য কিছু)। সুতরাং তুমি হয়ো না কাফিরদের সাহায্যকারী।

২৮:৮৭
ওয়া = আর। লা ইয়াসুদ্দুন্নাকা = তোমাকে যেন ঠেকিয়ে না রাখে। আন আয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহ থেকে। বা’দা ইয = উহার পর যখন। উনযিলাত ইলাইকা = (উহা) নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। ওয়াদউ = আর দাওয়াত/ আহবান করো। ইলা রব্বিকা = তোমার রবের দিকে। ওয়া = আর। লা তাকূনান্না = তুমি হয়ো না। মিনাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।

আর তোমাকে যেন ঠেকিয়ে না রাখে আল্লাহর আয়াতসমূহ থেকে উহার পর যখন (উহা) নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। আর দাওয়াত/ আহবান করো তোমার রবের দিকে। আর তুমি হয়ো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।

২৮:৮৮
ওয়া = আর। লা তাদউ = তুমি ডেকো না। মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ইলাহান আখারা = অন্য কোন ইলাহকে। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। কুল্লু সাইয়িন = সকল কিছু। হালিকুন = ধ্বংসশীল। ইল্লা ওয়াজহাহু = তাঁর সত্তা ছাড়া। লাহুল হুকমু = তাঁরই জন্য হুকুম/ আইন প্রণয়নের অধিকার/ বিচারক্ষমতা। ওয়া = আর। ইলাইহি তুরজাঊনা = তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।

আর তুমি ডেকো না আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। সকল কিছু ধ্বংসশীল, তাঁর সত্তা ছাড়া। তাঁরই জন্য হুকুম/ আইন প্রণয়নের অধিকার/ বিচারক্ষমতা, আর তাঁরই দিকে তোমরা ফিরে যাবে।