কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

027. সূরা নামল

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

২৭:১
তোয়া সীন = তোয়া সীন। তিলকা = এগুলো। আয়াতুল ক্বুরআনি = আল কুরআনের আয়াতসমূহ। ওয়া = ও। কিতাবিম মুবীনিন = স্পষ্ট/ প্রকাশ্য কিতাবের (আয়াতসমূহ)।

তোয়া সীন। এগুলো কুরআনের আয়াতসমূহ ও স্পষ্ট/ প্রকাশ্য কিতাবের (আয়াতসমূহ)।

২৭:২
হুদাওঁ ওয়া বুশরা লিল মু’মিনীনা = হুদা/ হিদায়াত ও বুশরা/ সুসংবাদ, মুত্তাকীদের জন্য।

হুদা/ হিদায়াত ও বুশরা/ সুসংবাদ, মুত্তাকীদের জন্য।

২৭:৩
আল্লাযীনা = যারা। ইউক্বিমূনাস সলাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া = আর। ইউ’তূনায যাকাতা = যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। ইউক্বিনূনা = ইয়াকীন/ জ্ঞানগত নিশ্চয়তার ধারণা রাখে।

যারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে এবং যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে এ অবস্থায় যে, তারা আখিরাতের প্রতি ইয়াকীন/ জ্ঞানগত নিশ্চয়তার ধারণা রাখে।

২৭:৪
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। যাইইয়ান্না = আমরা সুশোভন করেছি। লাহুম = তাদের জন্য। আ’মালাহুম= তাদের আমলসমূহ। ফাহুম = সুতরাং তারা। ইয়া’মাহূনা = বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, আমরা সুশোভন করেছি তাদের জন্য তাদের আমলসমূহ। সুতরাং তারা বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

২৭:৫
উলায়িকাল্লাযীনা = তারাই এমন লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। ছূউল আযাবি = অত্যন্ত মন্দ শাস্তি। ওয়া = আর। হুম = তারা। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। হুমুল খাছিরূনা = সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তারাই এমন লোক, যাদের জন্য আছে অত্যন্ত মন্দ শাস্তি। আর তারা আখিরাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

২৭:৬
ওয়া = আর। ইন্নাকা = নিশ্চয় তোমাকে। লাতুলাক্বক্বাল ক্বুরআনা = আল কুরআন দেয়া হইতেছে। মিল্লাদুন হাকীমিন আলীমিন = হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও আলীম/ মহাজ্ঞানী সত্তার (= আল্লাহর) নিকট থেকে।

আর নিশ্চয় তোমাকে আল কুরআন দেয়া হইতেছে হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও আলীম/ মহাজ্ঞানী সত্তার (= আল্লাহর) নিকট থেকে।

২৭:৭
ইয = যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছিলো। লিআহলিহী = তার আহালকে/ পরিবারকে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আনাছতু নারান = আগুন দেখেছি। ছাআতীকুম = সুতরাং আমি তোমাদেরকে এনে দেবো। মিনহা = উহা থেকে। বিখাবারিন = কোন খবর/ তথ্য। আও = অথবা। আতীকুম = আমি তোমাদেরকে এনে দেবো। বিশিহাবিন ক্বাবাছিন = জ্বলন্ত অঙ্গার। লাআল্লাকুম = যেন তোমরা। তাছতলূনা = আগুন পোহাতে পারো।

(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মূসা বলেছিলো তার আহালকে/ পরিবারকে, ‘নিশ্চয় আমি আগুন দেখেছি। সুতরাং আমি তোমাদেরকে এনে দেবো উহা থেকে কোন খবর/ তথ্য অথবা আমি তোমাদেরকে এনে দেবো জ্বলন্ত অঙ্গার, যেন তোমরা আগুন পোহাতে পারো।

২৭:৮
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহা = সে সেখানে আসলো। নূদিয়া = তখন তাকে ডেকে বলা হলো। আম বূরিকা = যে, ‘সে বরকতময়। মান = যে আছে। ফিন নারি = এ আগুনের মধ্যে (= মূসা)। ওয়া = আর। মান = (তারাও বরকতময়) যারা আছে। হাওলাহা = উহার চারপাশে (= মূসার পরিবার)। ওয়া = আর। সুবহানাল্লাহি রব্বিল আলামীনা = আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র সত্তা।

তারপর যখন সে সেখানে আসলো, তখন তাকে ডেকে বলা হলো যে, ‘সে বরকতময়, যে আছে এ আগুনের মধ্যে (= মূসা), আর (তারাও বরকতময়) যারা আছে উহার চারপাশে (= মূসার পরিবার)। আর আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র সত্তা।

২৭:৯
ইয়া মূসা = হে মূসা। ইন্নাহু = নিশ্চয়। আনাল্লাহুল আযীযূল হাকীমু = আমি আল্লাহ, আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

হে মূসা, নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

২৭:১০
ওয়া = আর। আলক্বি = তুমি নিক্ষেপ করো। আসাকা = তোমার লাঠি। ফালাম্মা = তারপর যখন। রআহা = সে উহাকে দেখলো যে। তাহতাযযু = উহা গড়াচ্ছে। কাহান্নাহা = যেন উহা। জান্নুন = সাপ। ওয়াল্লা মুদবিরান = তখন সে পিছু ফিরে যাচ্ছিলো। ওয়া = আর। লাম ইউআক্বক্বিব = মুখ ফিরিয়ে দেখছিলো না। ইয়া মূসা = হে মূসা। লা তাখাফ = ভয় পেয়ো না। ইন্নী = নিশ্চয় আমি এমন যে। লা ইয়াখাফু = ভয় পায় না। লাদাইয়াল মুরছালূনা = আমার সান্নিধ্যে (আমার) রসূলগণ।

আর তুমি নিক্ষেপ করো তোমার লাঠি। তারপর যখন সে উহাকে দেখলো যে, উহা গড়াচ্ছে যেন উহা সাপ, তখন সে পিছু ফিরে যাচ্ছিলো, আর মুখ ফিরিয়ে দেখছিলো না। ‘হে মূসা, ভয় পেয়ো না। নিশ্চয় আমি এমন যে, ভয় পায় না আমার সান্নিধ্যে (আমার) রসূলগণ।

২৭:১১
ইল্লা মান যলামা = যে যুলুম করে সে ছাড়া (কারোরই ভয়ের কারণ নেই)। ছু্ম্মা = তারপর। বাদ্দালা হুসনাম বা’দা ছূয়িন = যে তার মন্দ কাজ পরিহার করে তার বদলে উত্তম কাজ করে। ফাইন্নী = তাহলে নিশ্চয় আমি। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

যে যুলুম করে সে ছাড়া (কারোরই ভয়ের কারণ নেই)। তারপর যে তার মন্দ কাজ পরিহার করে তার বদলে উত্তম কাজ করে, তাহলে নিশ্চয় আমি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

২৭:১২
ওয়া = আর। আদখিল ইয়াদাকা = তোমার হাতকে প্রবেশ করাও। ফী জায়বিকা = তোমার জেবের/ বগলের মধ্যে। তাখরুজু বায়দাআ = উহা বের হবে শুভ্র সমুজ্জল হয়ে। মিন গায়রি ছূয়িন = কোনরূপ মন্দ অবস্থা ছাড়াই। ফী তিছয়ি আয়াতিন = নয়টি আয়াতের মধ্যে (এটিও একটি)। ইলা ফিরআউনা ওয়া ক্বাওমিহী = (ইহা নিয়ে) ফেরাউন ও তার কওমের কাছে (যাও)। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। কানূ = হলো। ক্বাওমান ফাছিক্বীনা = ফাসেক কওম।

আর তোমার হাতকে প্রবেশ করাও তোমার জেবের/ বগলের মধ্যে। উহা বের হবে শুভ্র সমুজ্জল হয়ে, কোনরূপ মন্দ অবস্থা ছাড়াই। নয়টি আয়াতের মধ্যে (এটিও একটি)। (ইহা নিয়ে) ফেরাউন ও তার কওমের কাছে (যাও)। নিশ্চয় তারা হলো ফাসেক কওম।

২৭:১৩
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআতহুম = তাদের কাছে আসলো। আয়াতুনা = আমাদের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। মুবসিরাতান = উজ্জল হয়ে। ক্বলূ = তারা বললো। হাযা = ইহা। ছিহরুম মুবীনুন = প্রকাশ্য (কথার) যাদু।

তারপর যখন তাদের কাছে আসলো আমাদের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ উজ্জল হয়ে, তারা বললো, ‘ইহা প্রকাশ্য (কথার) যাদু’।

২৭:১৪
ওয়া = আর। জাহাদূ বিহা = তারা উহাকে প্রত্যাখ্যান করলো। ওয়াছতাইক্বানাতহা = অথচ উহাতে ইয়াকিন/ নিশ্চয়তার ধারণালাভ করেছিলো। আনফুসুহুম = তাদের নফসসমূহ। যুলমান = (তবুও তারা উহা প্রত্যাখ্যান করেছিলো) যুলুমবশত:। ওয়া = ও। উলুওওয়ান = অহংকারবশত:। ফানযুর = সুতরাং লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের পরিণাম।

আর তারা উহাকে প্রত্যাখ্যান করলো, অথচ উহাতে ইয়াকিন/ নিশ্চয়তার ধারণালাভ করেছিলো তাদের নফসসমূহ; (তবুও তারা উহা প্রত্যাখ্যান করেছিলো) যুলুমবশত: ও অহংকারবশত:। সুতরাং লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো ফাসাদকারীদের পরিণাম।

২৭:১৫
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনা দাউদা ওয়া সুলাইমানা = আমরা দিয়েছিলাম দাউদকে ও সুলাইমানকে। ইলমান = ইলম/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান। ওয়া = আর। ক্বলাল হামদু লিল্লাহিল্লাযী = তারা দুজনে বলেছিলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ প্রশংসা আল্লাহর, যিনি। ফাদ্দালনা = আমাদেরকে বিশিষ্টতা দিয়েছেন। আলা কাছীরিম মিন ইবাদিহিল মু’মিনীনা = তাঁর অনেক মু’মিন বান্দাদের উপর।

আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছিলাম দাউদকে ও সুলাইমানকে ইলম/ (আসমানী কিতাবের) জ্ঞান। আর তারা দুজনে বলেছিলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদেরকে বিশিষ্টতা দিয়েছেন তাঁর অনেক মু’মিন বান্দাদের উপর।

২৭:১৬
ওয়া = আর (এ জ্ঞানগত যোগ্যতার ভিত্তিতে)। ওয়ারিসা সুলাইমানা দাউদা = ওয়ারিস হয়েছিলো সুলাইমান দাউদের (আধিপত্যের/ ক্ষমতার)। ওয়া = আর। ক্বলা = সে (= সুলাইমান) বলেছিলো। ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে জনতা। উল্লিমনা = আমাদেরকে শিখানো হয়েছে। মানতিক্বাত তয়রি = পাখির ভাষা। ওয়া = আর। ঊতীনা = আমাদেরকে দেয়া হয়েছে। মিন কুল্লি সাইয়িন = (আধিপত্যের উপযোগী) সবকিছু থেকে। ইন্না = নিশ্চয়। হাযা = ইহা। লাহুয়াল ফাদলুল মুবীনু = সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।

আর (এ জ্ঞানগত যোগ্যতার ভিত্তিতে) ওয়ারিস হয়েছিলো সুলাইমান দাউদের (আধিপত্যের/ ক্ষমতার)। আর সে (= সুলাইমান) বলেছিলো, ‘হে জনতা, আমাদেরকে শিখানো হয়েছে পাখির ভাষা। আর আমাদেরকে দেয়া হয়েছে (আধিপত্যের উপযোগী) সবকিছু থেকে। নিশ্চয় ইহা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।

২৭:১৭
ওয়া = আর। হুশিরা = সমবেত করা হয়েছিলো। লিসুলাইমানা = সুলাইমানের জন্য। জুনূদুহু = তার সেনাবাহিনী। মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনছি ওয়াত তয়রি = জিন, ইনস/ মানুষ ও তয়রান/ পাখিদের মধ্য থেকে। ফাহুম = তারপর তাদেরকে। ইউযাঊনা = বিন্যস্ত করা হয়েছিলো।

আর সমবেত করা হয়েছিলো সুলাইমানের জন্য তার সেনাবাহিনী; জিন, ইনস/ মানুষ ও তয়রান/ পাখিদের মধ্য থেকে। তারপর তাদেরকে বিন্যস্ত করা হয়েছিলো।

২৭:১৮
হাত্তা = (এক যাত্রায়) শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আতাও = তারা পৌঁছলো। আলা ওয়াদিল নামলি = নামল গোত্রের উপত্যকায়। ক্বলাত নামলাতুন = তখন নামলদের রানী বললো। ইয়া আইয়ুহান্নামলুদখুলূ = হে নামলগণ/ নামল গোত্রের লোকেরা, তোমরা প্রবেশ করো। মাছাকিনাকুম = তোমাদের বাসগৃহে। লা ইয়াহতিমান্নাকুম = যেন না তোমাদেরকে পিষে ফেলে। ছুলাইমানু ওয়া জুনূদুহু = সুলাইমান ও তার সেনাবাহিনী। ওয়া হুম = এ অবস্থায় যে, তারা। লা ইয়াশউরূনা = অনুভব করবে না (যে, আমরা তাদের শত্রুপক্ষ নই)।

(এক যাত্রায়) শেষ পর্যন্ত যখন তারা পৌঁছলো নামল গোত্রের উপত্যকায়; তখন নামলদের রানী বললো, ‘হে নামলগণ/ নামল গোত্রের লোকেরা, তোমরা প্রবেশ করো তোমাদের বাসগৃহে, যেন না তোমাদেরকে পিষে ফেলে সুলাইমান ও তার সেনাবাহিনী, এ অবস্থায় যে, তারা অনুভব করবে না (যে, আমরা তাদের শত্রুপক্ষ নই)।

২৭:১৯
ফাতাবাছছামা দহিকান = তখন সে (= সুলাইমান) মৃদু হাসলো। মিন ক্বাওলিহা = তার কথায়। ওয়া = আর। ক্বলা = বললো। রব্বী = হে আমার রব। আওযি’নী = আমাকে সামর্থ দিন। আন = যেন। আশকুরা = আমি শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি। নি’মাতাকাল্লাতী = আপনার নেয়ামতের যা। আনআমতা আলাইয়া = আপনি নেয়ামত দিয়েছেন আমার উপর। ওয়া = আর। ওয়ালিদাইয়া = আমার পিতামাতার উপর। ওয়া = আর। আন = যেন। আ’মালা সলিহান = আমি আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করি। তারদহু = যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। ওয়া = আর। আদখিলনী = আমাকে প্রবেশ করান। বিরহমাতিকা = আপনার রহমতের মাধ্যমে। ফী ইবাদিকাস সলিহীনা = আপনার সালেহ/ সৎকর্মশীল বান্দাদের মধ্যে।

তখন সে (= সুলাইমান) মৃদু হাসলো তার কথায়। আর বললো, ‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ দিন, যেন আমি শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আপনার নেয়ামতের যা আপনি নেয়ামত দিয়েছেন আমার উপর আর আমার পিতামাতার উপর। আর যেন আমি আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করি, যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন। আর আমাকে প্রবেশ করান আপনার রহমতের মাধ্যমে আপনার সালেহ/ সৎকর্মশীল বান্দাদের মধ্যে।

২৭:২০
ওয়া = আর (একবার)। তাফাক্বাদাত তয়রা = সে অনুসন্ধান করেছিলো/ খোঁজ খবর নিচ্ছিলো পাখিদের ব্যাপারে। ফাক্বলা = তখন সে বললো। মা লিয়া লা আরাল হুদহুদা = কি ব্যাপার, আমি হুদহুদকে দেখছি না কেন? আম = নাকি। কানা মিনাল গায়িবীনা = সে অনুপস্থিতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত?

আর (একবার) সে অনুসন্ধান করেছিলো/ খোঁজখবর নিচ্ছিলো পাখিদের ব্যাপারে। তখন সে বললো, ‘কি ব্যাপার, আমি হুদহুদকে (= পাখিদের তত্ত্বাবধায়ককে) দেখছি না কেন? নাকি সে অনুপস্থিতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত?

২৭:২১
লাউআযযিবান্নাহু = আমি তাকে শাস্তি দেবো। আযাবান শাদীদান = কঠিন শাস্তি। আও = অথবা। লাআযবাহান্নাহু = আমি তাকে জবেহ করবো। আও = অথবা। লাইয়া’তিয়ান্নী = তাকে আমার কাছে আসতে হবে। বিসুলতানিম মুবীনিন = স্পষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণসহ।

আমি তাকে শাস্তি দেবো, কঠিন শাস্তি; অথবা আমি তাকে জবেহ করবো; অথবা তাকে আমার কাছে আসতে হবে স্পষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণসহ।

২৭:২২
ফামাকাছা = এরপর সে (= হুদহুদ) অতিবাহিত করলো। গায়রা বায়ীদিন = সামান্য সময়। ফাক্বলা = তারপর সে বললো। আহাত্তু বিমা লাম তুহিত বিহী = আমি অবগত হয়েছি যা আপনি অবগত হননি। ওয়া = আর। জি’তুকা = আমি এখন আপনার কাছে এসেছি। মিন ছাবায়িমি বিনাবায়িন ইয়াক্বীনি = সাবা থেকে কিছু ইয়াকীন/ নিশ্চিত তথ্যসহ।

এরপর সে (= হুদহুদ) অতিবাহিত করলো সামান্য সময়। তারপর সে বললো, ‘আমি অবগত হয়েছি যা আপনি অবগত হননি। আর আমি এখন আপনার কাছে এসেছি সাবা থেকে কিছু ইয়াকীন/ নিশ্চিত তথ্যসহ।

২৭:২৩
ইন্নী = নিশ্চয় আমি। ওয়াজাত্তুমরআতান = আমি দেখেছি একজন নারীকে। তামলিকুহুম = যে তাদেরকে শাসন করে। ওয়া = আর। ঊতিয়াত = তাকে দেয়া হয়েছে। মিন কুল্লি সাইয়িন = (আধিপত্যের উপযোগী) সবকিছু থেকে। ওয়া = আর। লাহা = তার জন্য আছে। আরশুন আযীমুন = এক মহা সিংহাসন।

নিশ্চয় আমি দেখেছি একজন নারীকে যে তাদেরকে শাসন করে। আর তাকে দেয়া হয়েছে (আধিপত্যের উপযোগী) সবকিছু থেকে। আর তার জন্য আছে এক মহা সিংহাসন।

২৭:২৪
ওয়াজাত্তুহা = আর আমি পেয়েছি তাকে। ওয়া ক্বাওমুহা = আর তার কওমকে। ইয়াছজুদূনা = (এরূপ যে), তারা সিজদা করে। লিশ শামসি = সূর্যকে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে সিজদা করার পরিবর্তে। ওয়া = আর। যাইয়ানা = সুশোভিত করেছে। লাহুমুশ শায়তানু = তাদের জন্য শয়তান। আ’মালুহুম = তাদের আমলসমূহকে। ফাসদ্দাহুম = আর তাদেরকে বিরত রেখেছে। আনিছ ছাবীলি = সঠিক পথ থেকে। ফাহুম = তাই। লা ইয়াহতাদূনা = তারা হিদায়াত পায় না।

আর আমি পেয়েছি তাকে ও তার কওমকে (এরূপ যে), তারা সিজদা করে সূর্যকে, আল্লাহকে সিজদা করার পরিবর্তে। আর সুশোভিত করেছে তাদের জন্য শয়তান তাদের আমলসমূহকে। আর তাদেরকে বিরত রেখেছে সঠিক পথ থেকে। তাই তারা হিদায়াত পায় না।

২৭:২৫
আল্লা ইয়াছজুদূ লিল্লাহিল্লাযী = (শয়তান তাদেরকে বিরত রেখেছে) যেন না তারা আল্লাহকে সিজদা করে, যিনি। ইউখরিজুল খাবআ = বের করেন যা লুকায়িত আছে। ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। ওয়া = আর। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা তুখফূনা = যা তোমরা গোপন করো। ওয়া = আর। মা তু’লিনূনা = যা তোমরা প্রকাশ করো।

(শয়তান তাদেরকে বিরত রেখেছে) যেন না তারা আল্লাহকে সিজদা করে, যিনি বের করেন যা লুকায়িত আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। আর তিনি জানেন যা তোমরা গোপন করো ও যা তোমরা প্রকাশ করো।

২৭:২৬
আল্লাহু = আল্লাহ এমন যে। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। রব্বুল আরশিল আযীমি = তিনি মহান আরশের রব।

আল্লাহ এমন যে, কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনি মহান আরশের রব।

২৭:২৭
ক্বলা = সে (= সুলাইমান) বললো। ছানানযুরু = শীঘ্রই আমরা লক্ষ্য করবো। আসাদক্বতা = তুমি কি সত্য বলেছো? আম = নাকি। কুনতা = তুমি হলে। মিনাল কাযিবীনা = মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত।

সে (= সুলাইমান) বললো, ‘শীঘ্রই আমরা লক্ষ্য করবো যে, তুমি কি সত্য বলেছো নাকি তুমি হলে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত?

২৭:২৮
ইযহাব = তুমি যাও। বিকিতাবী = আমার কিতাব/ চিঠি নিয়ে। হাযা = ইহা। ফাআলক্বিহ = তুমি উপস্থাপন করো। ইলাইহিম = তাদের কাছে। ছুম্মা = তারপর। তাওয়াল্লা = সরে দাঁড়াব্বে। আনহুম = তাদের থেকে। ফানযুর = তারপর লক্ষ্য করবে। মা যা ইয়ারজিঊনা = তারা কি প্রতিক্রিযা ব্যক্ত করে?

তুমি যাও আমার কিতাব/ চিঠি নিয়ে। ইহা তুমি উপস্থাপন করো তাদের কাছে। তারপর সরে দাঁড়াবে তাদের থেকে। তারপর লক্ষ্য করবে তারা কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে?

২৭:২৯
ক্বলাত = সে (= সাবার রানী) বলেছিলো। ইয়া আইয়ুহাল মালাউ = হে নির্বাহী পারিষদ। ইন্নী উলক্বিয়া ইলাইয়া = নিশ্চয় আমার প্রতি উপস্থাপন করা হয়েছে। কিতাবুন কারীমুন = একটি সম্মানিত কিতাব/ চিঠি।

সে (= সাবার রানী) বলেছিলো, ‘হে নির্বাহী পারিষদ, নিশ্চয় আমার প্রতি উপস্থাপন করা হয়েছে একটি সম্মানিত কিতাব/ চিঠি।

২৭:৩০
ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। মিন সুলাইমানা = সুলাইমানের পক্ষ থেকে (পাঠানো হয়েছে)। ওয়া = আর। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। বিছমিল্লাহির রহমানির রহীমি = ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম/ পরম দয়াময় দয়াশীল আল্লাহর নামে’ (লিখে শুরু করা হয়েছে)।

নিশ্চয় উহা সুলাইমানের পক্ষ থেকে (পাঠানো হয়েছে)। আর নিশ্চয উহা ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম/ পরম দয়াময় দয়াশীল আল্লাহর নামে’ (লিখে শুরু করা হয়েছে)।

২৭:৩১
আল্লা তা’লূ = উহার বক্তব্য এই যে, তোমরা বিদ্রোহ করো না। আলাইয়া = আমার বিরুদ্ধে। ওয়া’তূনী = আর আমার কাছে আসো। মুছলিমীনা = মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী হয়ে।

উহার বক্তব্য এই যে, ‘তোমরা বিদ্রোহ করো না আমার বিরুদ্ধে। আর আমার কাছে আসো মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী হয়ে।

২৭:৩২
ক্বলাত = সে (= সাবার রানী) বললো। ইয়া আইয়ুহাল মালাউ = হে নির্বাহী পারিষদ। আফতূনী = তোমরা আমাকে ফতোয়া/ যথাযথ অভিমত দাও। ফী আমরী = আমার নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে। মা কুনতু = আমি তো নই। ক্বাতিয়াতান আমরা = কোন নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। হাত্তা = যতক্ষণ না। তাশহাদূনা = তোমরা উহার সঠিকত্বের সাক্ষ্য দাও।

সে (= সাবার রানী) বললো, ‘হে নির্বাহী পারিষদ, তোমরা আমাকে ফতোয়া/ যথাযথ অভিমত দাও আমার নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে। আমি তো নই কোন নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী, যতক্ষণ না তোমরা উহার সঠিকত্বের সাক্ষ্য দাও।

২৭:৩৩
ক্বলূ = তারা বললো। নাহনু = আমরা। উলু ক্বুওয়াতিন = শক্তিশালী। ওয়া = ও। উলু বা’ছিন শাদীদিন = কঠোর যোদ্ধা। ওয়াল আমরু ইলাইকা = আর নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটা আপনার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হলো। ফানযুরী = সুতরাং আপনি লক্ষ্য করুন। মা যা তা’মুরীনা = আপনি কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

তারা বললো, ‘আমরা শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা। আর নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারটা আপনার দিকে ফিরিয়ে দেয়া হলো। সুতরাং আপনি লক্ষ্য করুন আপনি কী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন’।

২৭:৩৪
ক্বলাত = সে (= সাবার রানী) বললো। ইন্নাল মুলূকা = নিশ্চয় রাষ্ট্রপতিরা এমন যে। ইযা = যখন। দাখালূ = তারা প্রবেশ করে। ক্বারইয়াতান = কোন জনপদে। আফসাদূহা = তখন উহাতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ওয়া = আর। জাআলূ = তারা বানিয়ে দেয়। আয়িযযাতা আহলিহা = উহার মর্যাদাবান অধিবাসীদেরকে। আযিল্লাতান = অপমানগ্রস্ত। ওয়া = আর। কাযালিকা = এরূপই। ইয়াফআলূনা = তারা করে।

সে (= সাবার রানী) বললো, ‘নিশ্চয় রাষ্ট্রপতিরা এমন যে, যখন তারা প্রবেশ করে কোন জনপদে, তখন উহাতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করে, আর তারা বানিয়ে দেয় উহার মর্যাদাবান অধিবাসীদেরকে অপমানগ্রস্ত। আর এরূপই তারা করে।

২৭:৩৫
ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মুরছিলাতুন ইলাইহিম = তাদের কাছে প্রেরণ করছি। বিহাদিয়্যাতিন = হাদিয়া/ উপঢৌকন। ফানাযিরাতুন = তারপর আমি লক্ষ্য করবো। বিমা ইয়ারজিউ = কী নিয়ে ফিরে আসে। মুরছালূনা = আমাদের দূতগণ।

আর নিশ্চয় আমি তাদের কাছে প্রেরণ করছি হাদিয়া/ উপঢৌকন। তারপর আমি লক্ষ্য করবো কী নিয়ে ফিরে আসে আমাদের দূতগণ।

২৭:৩৬
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআ সুলাইমানা = (দূতেরা) সুলাইমানের কাছে আসলো। ক্বলা = সে (= সুলাইমান) বললো। আতুমিদ্দূনানি = তোমরা কি আমাকে সাহায্য করতে এসেছো? বিমালিন = মালসম্পদ দিয়ে। ফামা আতানিয়াল্লাহু = অথচ আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন। খায়রুম মিম্মা আতাকুম = উহা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন উহার চেয়ে উত্তম। বাল = বরং। আনতুম = তোমরা। বিহাদিয়্যাতিকুম = তোমাদের হাদিয়া/ উপঢৌকন নিয়ে। তাফরাহূনা = আনন্দ করো।

তারপর যখন (দূতেরা) সুলাইমানের কাছে আসলো। সে (= সুলাইমান) বললো, ‘তোমরা কি আমাকে সাহায্য করতে এসেছো, মালসম্পদ দিয়ে? অথচ আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন উহা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন উহার চেয়ে উত্তম। বরং তোমরা তোমাদের হাদিয়া/ উপঢৌকন নিয়ে আনন্দ করো।

২৭:৩৭
ইরজা’ = (হে দূতেরা) তুমি ফিরে যাও। ইলাইহিম = তাদের কাছে। ফালানা’তিয়ান্নাহুম = তারপর আমরা তাদের কাছে আসবো। বিজুনূদিল্লা ক্বিবালা লাহুম বিহা = এমন সেনাবাহিনী নিয়ে যার মোকাবেলা করার সাধ্য তাদের নেই। ওয়ালানুখরিজান্নাহুম = আর আমরা তাদেরকে বের করে দেবো। মিনহা = উহা থেকে। আযিল্লাতান = অপমানিত অবস্থায়। ওয়া = আর। হুম = তারা। সগিরূনা = ক্ষুদ্রশক্তিসম্পন্ন হয়ে যাবে।

(হে দূতেরা) তুমি ফিরে যাও তাদের কাছে। তারপর আমরা তাদের কাছে আসবো এমন সেনাবাহিনী নিয়ে যার মোকাবেলা করার সাধ্য তাদের নেই। আর আমরা তাদেরকে বের করে দেবো উহা থেকে অপমানিত অবস্থায়। আর তারা ক্ষুদ্রশক্তিসম্পন্ন হয়ে যাবে।

২৭:৩৮
ক্বলা = (তারপর) সে (= সুলাইমান) বললো। ইয়া আইয়ুহাল মালাউ = হে পারিষদ। আইয়ুকুম = তোমাদের মধ্যে কে। ইয়া’তিয়ানী = আমাকে এনে দেবে। বিআরশিহা = তার (= সাবার রানীর) সিংহাসন। ক্বাবলা আইঁ ইয়া’তূনী মুসলিমীনা = তারা (ব্যাপক যুদ্ধ বিগ্রহ করে পরাজিত হয়ে তারপর) মুসলিম/ আত্মসমর্পনকারী হয়ে আমার কাছে এসে যাওয়ার আগেই।

(তারপর) সে (= সুলাইমান) বললো, ‘হে পারিষদ, তোমাদের মধ্যে কে আমাকে এনে দেবে তার (সাবার রানীর) সিংহাসন, তারা (ব্যাপক যুদ্ধ বিগ্রহ করে পরাজিত হয়ে তারপর) মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী হয়ে আমার কাছে এসে যাওয়ার আগেই?

২৭:৩৯
ক্বলা ইফরীতুম মিনাল জিন্নি = এক বিরাটকায় শক্তিশালী জিন বললো। আনা আতীকা বিহী = আমি উহা আপনাকে এনে দেবো। ক্বাবলা আন তাক্বূমা মিম মাক্বামিকা = আপনি আপনার মাক্বাম থেকে (দ্বিতীয় কোন কর্মসূচী নিয়ে) দাঁড়ানোর আগেই। ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আলাইহি = উহার ব্যাপারে। লাক্বাভিয়্যুন আমীনুন = বিশ্বস্ত শক্তিশালী।

এক বিরাটকায় শক্তিশালী জিন বললো, ‘আমি উহা আপনাকে এনে দেবো আপনি আপনার মাক্বাম থেকে (দ্বিতীয় কোন কর্মসূচী নিয়ে) দাঁড়ানোর আগেই। আর নিশ্চয় আমি উহার ব্যাপারে বিশ্বস্ত শক্তিশালী।

২৭:৪০
ক্বলাল্লাযী ইনদাহু ইলমুম মিনাল কিতাবি = যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিলো (= যে সাবার রানীর কাছে সুলাইমানের প্রেরিত চিঠির বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত ছিলো) এমন এক ব্যক্তি বললো। আনা আতীকা বিহী = আমি আপনাকে উহা এনে দেবো। ক্বাবলা আইঁ ইয়ারতাদ্দা ইলাইকা তরফুকা = আপনার চোখের স্থির পলক আপনার দিকে ফিরে আসার আগেই (= আপনি এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার আগেই)। ফালাম্মা = তারপর যখন। রআহু = সে (= সুলাইমান) উহাকে (= সাবার রানীর সিংহাসনকে) দেখলো। মুছতাক্বিররান ইনদাহু = তার নিকটে (= সুলাইমানের নিকটে) রাখা হয়েছে। ক্বলা = তখন সে বললো। হাযা = ইহা। মিন ফাদলি রব্বী = আমার রবের অনুগ্রহ। লিইয়াবলুআনী = আমাকে পরীক্ষা করার জন্য যে। আআশকুরু = আমি কি শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আম = নাকি। আকফুরু = আমি কুফর/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। ওয়া = আর। মান = যে। শাকারা = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফাইন্নামা = তবে নিশ্চয় সে। ইয়াশকুরু = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। লিনাফসিহী = তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। ওয়া = আর। মান = যে। কাফারা = কুফর/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফাইন্না = তবে নিশ্চয়। রব্বী = আমার রব। গানিয়্যুন কারীমুন = গনি/ ধনী ও করীম/ সম্মানিত।

যার কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিলো (= যে সাবার রানীর কাছে সুলাইমানের প্রেরিত চিঠির বিষয়ে যথাযথভাবে অবহিত ছিলো) এমন এক ব্যক্তি বললো, ‘আমি আপনাকে উহা এনে দেবো আপনার চোখের স্থির পলক আপনার দিকে ফিরে আসার আগেই (= আপনি এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করার আগেই)। তারপর যখন সে (= সুলাইমান) উহাকে (= সাবার রানীর সিংহাসনকে) দেখলো তার নিকটে (= সুলাইমানের নিকটে) রাখা হয়েছে; তখন সে বললো, ‘ইহা আমার রবের অনুগ্রহ, আমাকে পরীক্ষা করার জন্য যে, আমি কি শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, নাকি আমি কুফর/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি?’ আর যে শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তবে নিশ্চয় সে শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে কুফর/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তবে নিশ্চয় আমার রব গনি/ ধনী ও করীম/ সম্মানিত।

২৭:৪১
ক্বলা = সে (= সুলাইমান) বললো। নাককিরূ = অপরিচিত করে দাও। লাহা = তার জন্য। আরশাহা = তার সিংহাসনকে/ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুকে। নানযুর = আমরা লক্ষ্য করবো। আতাহতাদী = সে কি হিদায়াত পায় (= সে কি তার করণীয় বুঝতে পারে)। আম = নাকি। তাকূনু = সে হয়। মিনাল্লাযীনা = তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা। লা ইয়াহতাদূনা = হিদায়াত পায় না (= করণীয় সম্পর্কে বুঝে না)।

সে (= সুলাইমান) বললো, ‘অপরিচিত করে দাও তার জন্য তার সিংহাসনকে/ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুকে। আমরা লক্ষ্য করবো যে, সে কি হিদায়াত পায় (= সে কি তার করণীয় বুঝতে পারে), নাকি সে হয় তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা হিদায়াত পায় না (= করণীয় সম্পর্কে বুঝে না)?’

২৭:৪২
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআত = সে (= সাবার রানী) আসলো। ক্বীলা = তখন তাকে (= সাবার রানীকে) বলা হলো। আহাকাযা আরশুকা = এরূপই কি তোমার সিংহাসন? ক্বলাত = সে (= সাবার রানী) বললো। কাআন্নাহু হুয়া = উহা যেন উহাই। ওয়া = আর। ঊতীনাল ইলমু মিন ক্বাবলিহা = উহার আগেই (উহাকে আপনি পুন:সজ্জিত করার আগেই) আমাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান দেয়া হলো (= আমরা বুঝতে পারলাম যে, সত্য আপনার পক্ষে)। ওয়া = আর। কুন্না = আমরা হয়ে গেলাম। মুসলিমীনা = মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী।

তারপর যখন সে (= সাবার রানী) আসলো, তখন তাকে (= সাবার রানীকে) বলা হলো, ‘এরূপই কি তোমার সিংহাসন?’ সে (= সাবার রানী) বললো, ‘উহা যেন উহাই। আর উহার আগেই (উহাকে আপনি পুন:সজ্জিত করার আগেই) আমাদেরকে প্রকৃত জ্ঞান দেয়া হলো (= আমরা বুঝতে পারলাম যে, সত্য আপনার পক্ষে)। আর আমরা হয়ে গেলাম মুসলিম/ আত্মসমর্পণকারী।

২৭:৪৩
ওয়া = আর। সদ্দাহা = (আগে) তাকে (= সাবার রানীকে) বিরত রেখেছিলো। মা কানাত তা’বুদু মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহর পরিবর্তে সে যার ইবাদাত/ দাসত্ব করতো তা (= তার প্রতি ভরসা যে, যুদ্ধে তা তাকে রক্ষা করবে)। ইন্নাহা = নিশ্চয় সে (= সাবার রানী)। কানাত = (তখন) ছিলো। মিন ক্বাওমিন কাফিরীনা = কাফির কওমের অন্তর্ভুক্ত।

আর (আগে) তাকে (= সাবার রানীকে) বিরত রেখেছিলো আল্লাহর পরিবর্তে সে যার ইবাদাত/ দাসত্ব করতো তা (= তার প্রতি ভরসা যে, যুদ্ধে তা তাকে রক্ষা করবে)। নিশ্চয় সে (= সাবার রানী তখন) ছিলো কাফির কওমের অন্তর্ভুক্ত।

২৭:৪৪
ক্বীলা লাহাদখুলিস সরহা = তাকে (= সাবার রানীকে) বলা হলো, ‘প্রবেশ করো এ প্রাসাদের মেঝেতে’। ফালাম্মা = তারপর যখন। রআতহু = সে উহা দেখলো। হাছিবাতহু = সে উহাকে ধারণা করলো। লুজ্জাতাওঁ ওয়া কাশাফাত = পানির হাউজ আর সে কাপড় উঠালো। আন ছাক্বাইহা = তার দুই পায়ের গোড়ালীর উপরে। ক্বলা = সে (= সুলাইমান) বললো। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। সরহুম মুমারাদুম মিন ক্বাওয়ারীরা = প্রাসাদের মেঝে, যা স্বচ্চ কাঁচ দিয়ে নির্মিত। ক্বলাত = সে (= সাবার রানী) বললো। রব্বী = হে আমার রব। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। যলামতু = যুলুম করেছি। নাফসী = আমার নফসের উপর। ওয় = আর। আসলামতু = আমি আত্মসমর্পণ করলাম। মাআ সুলাইমানা = সুলাইমানের সাথে। লিল্লাহি রব্বিল আলামীনা = আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে।

তাকে (= সাবার রানীকে) বলা হলো, ‘প্রবেশ করো এ প্রাসাদের মেঝেতে’। তারপর যখন সে (= সাবার রানী) উহা দেখলো সে উহাকে ধারণা করলো পানির হাউজ আর (তাই) সে কাপড় উঠালো তার দুই পায়ের গোড়ালীর উপরে। (তখন) সে (= সুলাইমান) বললো, ‘নিশ্চয় উহা প্রাসাদের মেঝে, যা স্বচ্চ কাঁচ দিয়ে নির্মিত’। সে (= সাবার রানী) বললো, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি যুলুম করেছি আমার নফসের উপর। আর আমি আত্মসমর্পণ করলাম সুলাইমানের সাথে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে’।

২৭:৪৫
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছিলাম। ইলা সামূদা = সামূদ সম্প্রদায়ের কাছে। আখাহুম = তাদের ভাই। সলিহান = সালেহকে। আনি’বুদুল্লাহা = (এ বার্তাসহ) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। ফাইযা = তারপর তখন। হুম = তারা। ফারীক্বানি = দুই দলে (= সালেহের পক্ষ সমর্থনকারী ও বিপক্ষদল)। ইয়াখতাসিমূনা = বিতর্ক করেছিলো।

আর নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছিলাম সামূদ সম্প্রদায়ের কাছে তাদের ভাই সালেহকে, (এ বার্তাসহ) যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো’। তারপর তখন তারা দুই দলে (= সালেহের পক্ষ সমর্থনকারী ও বিপক্ষদল) বিতর্ক করেছিলো।

২৭:৪৬
ক্বলা = সে (= সালেহ) বললো। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। লিমা = কেন। তাছতা’জিলূনা = ত্বরান্বিত করতে/ তাড়াতাড়ি পেতে চাচ্ছো। বিছ ছাইয়িয়াতি = মন্দ অবস্থাকে। ক্বাবলাল হাছানাতি = উত্তম অবস্থার আগে। লাও = কেন। লা তাছতাগফিরূনাল্লাহা = তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছো না। লাআল্লাকুম = যেন তোমাদেরকে। তুরহামূনা = রহমত করা হয়।

সে (= সালেহ) বললো, ‘হে আমার কওম, কেন তোমরা ত্বরান্বিত করতে/ তাড়াতাড়ি পেতে চাচ্ছো মন্দ অবস্থাকে উত্তম অবস্থার আগে। কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছো না, যেন তোমাদরকে রহমত করা হয়।

২৭:৪৭
ক্বলুত তইয়ারনা বিকা = তারা বললো, ‘আমরা অলক্ষুণে মনে করছি তোমাকে। ওয়া = ও। বিমাম মায়াকা = যারা তোমার সাথে আছে তাদেরকে। ক্বলা = সে (= সালেহ) বললো। তয়িরুকুম = তোমাদের অলক্ষণ। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। বাল = বরং। আনতুম = তোমরা হচ্ছো। ক্বাওমুন তুফতানূনা = এমন কওম, যাকে ফিতনায়/ পরীক্ষায় নিক্ষেপ করা হয়েছে।

তারা বললো, ‘আমরা অলক্ষূণে মনে করছি তোমাকে ও যারা তোমার সাথে আছে তাদেরকে। সে (= সালেহ) বললো, ‘তোমাদের অলক্ষণ আল্লাহর কাছে। বরং তোমরা হচ্ছো এমন কওম যাদেরকে ফিতনায়/ পরীক্ষায় নিক্ষেপ করা হয়েছে’।

২৭:৪৮
ওয়া = আর। কানা ফিল মাদীনাতি = মদীনাতে/ শহরে ছিলো। তিছআতু = নয়জন। রহতিন = দলপতি। ইউফসিদূনা ফিল আরদি = তারা পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করতো। ওয়া = আর। লা ইউসলিহূনা = ইসলাহ/ সংশোধনের কাজ/ সৎকর্ম করতো না।

আর মদীনাতে/ শহরে ছিলো নয়জন দলপতি। তারা পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করতো আর ইসলাহ/ সংশোধনের কাজ/ সৎকর্ম করতো না।

২৭:৪৯
ক্বলূ = তারা বলেছিলো। তাক্বাছামূ বিল্লাহি = তোমরা পরস্পরে আল্লাহর নামে কসম করো যে। লানুবাইয়িতান্নাহু = তোমরা অবশ্যই রাতের বেলায় আক্রমণ করবে তাকে। ওয়া = ও। আহলাহু = তার আহালকে/ পরিবারকে। ছুম্মা = তারপর। লানাক্বূলান্না লিওয়ালিয়্যিহী = আমরা অবশ্যই তার ওলীকে/ অভিভাবককে (= গোত্রপ্রধানকে) বলবো। মা শাহিদনা = আমরা উপস্থিত ছিলাম না। মাহলিকা আহলিহী = তার আহালের হালাক হওয়ার সময়। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লাসদিক্বূনা = সত্যবাদী।

তারা বলেছিলো, ‘তোমরা পরস্পরে আল্লাহর নামে কসম করো যে, তোমরা অবশ্যই রাতের বেলায় আক্রমণ করবে তাকে (= সালেহকে) ও তার আহালকে/ পরিবারকে। তারপর আমরা অবশ্যই তার ওলীকে/ অভিভাবককে (= গোত্রপ্রধানকে) বলবো, ‘আমরা উপস্থিত ছিলাম না তার আহালের হালাক হওয়ার সময়। আর নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী’।

২৭:৫০
ওয়া = আর। মাকারূ = তারা এক কৌশল করেছিলো। ওয়া = আর। মাকারনা মাকরান = আমরাও এক কৌশল করেছিলাম। ওয়া = আর। হুম = তারা। লা ইয়াশউরূনা = (তখন) তা টেরও পায়নি।

আর তারা এক কৌশল করেছিলো আর আমরাও এক কৌশল করেছিলাম। আর তারা তা টেরও পায়নি।

২৭:৫১
ফানযুর = সুতরাং লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতু মাকরিহিম = তাদের কৌশলের পরিণাম। আন্না = নিশ্চয় আমরা। দাম্মারনাহুম = ধ্বংস করেছিলাম তাদেরকে। ওয়া = ও। ক্বাওমাহুম আজমাইনা = তাদের কওমের সবাইকে।

সুতরাং লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো তাদের কৌশলের পরিণাম? নিশ্চয় আমরা ধ্বংস করেছিলাম তাদেরকে ও তাদের কওমের সবাইকে।

২৭:৫২
ফাতিলকা = এসবতো। বুয়ূতুহুম = তাদের ঘরবাড়ি। খাভিয়াতাম বিমা যলামূ = শূন্য হয়ে পড়ে আছে তাদের যুলুমের কারণে। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতান = আয়াত/ নিদর্শন। লিক্বাওমি ইয়া’লামূনা = সেই কওমের জন্য যারা জ্ঞান রাখে।

এসবতো তাদের ঘরবাড়ি, শূন্য হয়ে পড়ে আছে তাদের যুলুমের কারণে। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াত/ নিদর্শন সেই কওমের জন্য যারা জ্ঞান রাখে।

২৭:৫৩
ওয়া = আর। আনজায়নাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছিলো। ওয়া = আর। কানূ ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো।

আর আমরা তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছিলো আর তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো।

২৭:৫৪
ওয়া = আর। লূতুন = লূতকেও (নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম)। ইয = যখন। ক্বলা = সে বলেছিলো। লিক্বাওমিহী = তার কওমকে। আতা’তূনাল ফাহিশাতা = তোমরা কি ফাহেশা/ অশ্লীল কাজ করছো। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আনতুম = তোমরা। তুবসিরূনা = উহা প্রত্যক্ষ করছো?

আর লূতকেও (নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম)। যখন সে বলেছিলো তার কওমকে, ‘তোমরা কি ফাহেশা/ অশ্লীল কাজ করছো এ অবস্থায় যে, তোমরা উহা প্রত্যক্ষ করছো?

২৭:৫৫
আইন্নাকুম = তোমরা কি নিশ্চয়। লাতা’তূনার রিজালা = পুরুষের নিকট গমন করো। শাহওয়াতাম মিন দূনিন নিসায়ি = কামবশত: নারীদেরকে বাদ দিয়ে। বাল = বরং। আনতুম = তোমরা। ক্বাওমুন তাজহালূনা = জাহেল কওম।

তোমরা কি নিশ্চয় পুরুষের নিকট গমন করো কামবশত: নারীদেরকে বাদ দিয়ে? বরং তোমরা জাহেল কওম।

২৭:৫৬
ফামা কানা জাওয়াবা ক্বাওমিহী = তার কওমের কোন জবাব ছিলো না। ইল্লা আন = এছাড়া যে। ক্বলূ = তারা বলেছিলো। আখরিজূ = তোমরা বের করে দাও। আলা লূতিম মিন ক্বারইয়াতিকুম = আলে লূতকে/ লূতের বংশধরদেরকে, তোমাদের জনপদ থেকে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। উনাছুইঁ ইয়াতাত্বহহারূনা = এমন মানুষ যারা বড়ই পবিত্রতা অবলম্বন করছে।

তার কওমের কোন জবাব ছিলো না এছাড়া যে, তারা বলেছিলো, ‘তোমরা বের করে দাও আলে লূতকে/ লূতের বংশধরদেরকে, তোমাদের জনপদ থেকে। নিশ্চয় তারা এমন মানুষ, যারা বড়ই পবিত্রতা অবলম্বন করছে।

২৭:৫৭
ফাআনজায়নাহু = তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম করেছিলাম তাকে। ওয়া = ও। আহলাহু = তার আহালকে/ পরিবারকে। ইল্লামরআতাহু = তার স্ত্রীকে ছাড়া। ক্বাদ্দারনাহা = আমরা তাকে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম। মিনাল গাবিরীনা = পিছনে সরে থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে।

তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছিলাম তাকে ও তার আহালকে/ পরিবারকে, তার স্ত্রীকে ছাড়া। আমরা তাকে (= তার স্ত্রীকে) প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছিলাম পিছনে সরে থাকা লোকদের অন্তর্ভুক্ত হিসাবে।

২৭:৫৮
ওয়া = আর। আমতরনা = আমরা বর্ষণ করেছিলাম। আলাইহিম = তাদের উপর। মাতরান = অতিবর্ষণ। ফাছাআ = অত্যন্ত নিকৃষ্ট। মাতরুল মুনযারীনা = সেই বর্ষণ, তাদের জন্য যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিলো (অথচ তারা কর্ণপাত করেনি)।

আর আমরা বর্ষণ করেছিলাম তাদের উপর অতিবর্ষণ। অত্যন্ত নিকৃষ্ট সেই বর্ষণ, তাদের জন্য যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিলো (অথচ তারা কর্ণপাত করেনি)।

২৭:৫৯
ক্বুলিল হামদুলিল্লাহি = বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ওয়া = আর। সালামুন আলা ইবাদিহিল্লাযীনাসতফা = সালাম তাঁর সেই বান্দাদের উপর যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন। আল্লাহু = আল্লাহ। খায়রুন আম্মা ইউশরিকূনা = উত্তম নাকি তারা যাদেরকে তারা তাঁর শরিক সাব্যস্ত করে?

বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আর সালাম তাঁর সেই বান্দাদের উপর যাদেরকে তিনি মনোনীত করেছেন’। আল্লাহ উত্তম নাকি তারা যাদেরকে তারা তাঁর শরিক সাব্যস্ত করে?

২৭:৬০
আম্মান = অথবা তিনি কে। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে? ওয়া = আর। আনযালা = নাযিল/ বর্ষণ করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। মাআন = (বৃষ্টির) পানি। ফাআমবাতনা বিহী = তারপর আমরা উৎপন্ন করেছি উহা দ্বারা। হাদায়িক্বা = বাগিচাসমূহ। যাতা বাহজাতিন = যা শোভামন্ডিত। মা কানা লাকুম = তোমাদের জন্য সম্ভব নয়। আন = যে। তুমবিতূ = তোমরা উদ্গত করবে। শাজারাহা = উহার গাছ-পালা। আইলাহুম মায়াল্লাহি = আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? বাল = বরং। হুম = তারা। ক্বাওমুইঁ ইয়া’দিলূনা = এমন কওম যারা সত্যবিচ্যুত হচ্ছে?

অথবা তিনি কে যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে? আর নাযিল/ বর্ষণ করেছেন তোমাদের জন্য আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি। তারপর আমরা উৎপন্ন করেছি উহা দ্বারা বাগিচাসমূহ, যা শোভামন্ডিত। তোমাদের জন্য সম্ভব নয় যে, তোমরা উদ্গত করবে উহার গাছ-পালা। আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? বরং তারা এমন কওম যারা সত্যবিচ্যুত হচ্ছে?

২৭:৬১
আম্মান = অথবা তিনি কে। জাআলাল আরদা ক্বারারান = যিনি পৃথিবীকে করেছেন অবস্থানের উপযোগী। ওয়া = আর। জায়ালা = সৃষ্টি করেছেন। খিলালাহা = উহার মধ্যে। আনহারান = নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়া = আর। জাআলা লাহা = সৃষ্টি করেছেন উহার জন্য। রাওয়াছিয়া = পর্বতসমূহ। ওয়া = আর। জাআলা বায়নাল বাহরাইনি = সৃষ্টি করেছেন দুই সাগরের মধ্যে। হাজিজান = আড়াল। আইলাহুম মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? বাল = বরং। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = জ্ঞান রাখে না।

অথবা তিনি কে, যিনি পৃথিবীকে করেছেন অবস্থানের উপযোগী আর সৃষ্টি করেছেন উহার মধ্যে নহরসমূহ/ নদীসমূহ আর সৃষ্টি করেছেন উহার জন্য পর্বতসমূহ। আর সৃষ্টি করেছেন দুই সাগরের মধ্যে আড়াল। আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।

২৭:৬২
আম্মাইঁ ইজীবুল মুদতররা = অথবা তিনি কে, যিনি জবাব/ সাড়া দেন আর্তের আহবানে। ইযা = যখন। দাআহু = সে আহবান করে। ওয়া = আর। ইয়াকশিফুছ ছূআ = তিনিই কষ্ট দূর করেন। ওয়া = আর। ইয়াজআলুকুম = তোমাদেরকে করেছেন। খুলাফাআল আরদি = পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। আইলাহুমু মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? ক্বালীলাম মা তাযাক্কারূনা = তাদের সংখ্যা অত্যন্ত কম যারা তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করে।

অথবা তিনি কে, যিনি জবাব/ সাড়া দেন আর্তের আহবানে যখন সে আহবান করে? আর তিনিই কষ্ট দূর করেন। আর তোমাদেরকে করেছেন পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? তাদের সংখ্যা অত্যন্ত কম যারা তাযাক্কুর/ উপদেশ গ্রহণ করে।

২৭:৬৩
আম্মাই ইয়াহদীকুম = অথবা তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেন/ পথের দিশা দেন। ফী যুলুমাতিল বাররি ওয়া বাহরি = স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকারের মধ্যে। ওয়া = আর। মাইঁ ইউরছিলুর রীহা = যিনি বাতাসকে প্রেরণ করেন। বুশরাম বায়না ইয়াদায় রহমাতিহী = সুসংবাদস্বরূপ, তাঁর রহমতের আগে। আইলাহুম মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? তাআলাল্লাহু আম্মা ইউশরিকূনা = আল্লাহ উহার অতি ঊর্ধ্বে, যে শিরক তারা করে।

অথবা তিনি কে, যিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেন/ পথের দিশা দেন স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকারের মধ্যে, আর যিনি বাতাসকে প্রেরণ করেন সুসংবাদস্বরূপ, তাঁর রহমতের আগে? আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? আল্লাহ উহার অতি ঊর্ধ্বে, যে শিরক তারা করে।

২৭:৬৪
আইঁ ইয়াবদাআল খালক্বা = অথবা তিনি কে, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন। ছুম্মা = তারপর। ইউঈদুহু = উহার পুনরাবৃত্তি ঘটান। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়ারযুক্বুকুম = কে তোমাদেরকে রিযিক দেন। মিনাছ ছামায়ি ওয়াল আরদি = আকাশ ও পৃথিবী থেকে। আইলাহুম মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? ক্বুল = বলো। হাতূ = নিয়ে আসো। বুরহানাকুম = তোমাদের বুরহান/ প্রমাণ। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সত্যবাদী।

অথবা তিনি কে, যিনি সৃষ্টির সূচনা করেন, তারপর উহার পুনরাবৃত্তি ঘটান; আর কে তোমাদেরকে রিযিক দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ আছে কি? বলো, ‘নিয়ে আসো তোমাদের বুরহান/ প্রমাণ, যদি তোমরা হও সত্যবাদী’।

২৭:৬৫
ক্বুল = বলো। লা ইয়া’লামু = কেউ জানে না। মান ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদিল গায়বা = যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে, গায়েব/ অদৃশ্য সম্পর্কে। ইল্লাল্লাহু = আল্লাহ ছাড়া। ওয়া = আর। মা ইয়াশউরূনা = তারা অনুভবও করতে পারে না। আইয়ানা ইউবআছূনা = কখন তারা পুনরুত্থিত হবে?

বলো, ‘কেউ জানে না যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে, গায়েব/ অদৃশ্য সম্পর্কে, আল্লাহ ছাড়া। আর তারা অনুভবও করতে পারে না যে, কখন তারা পুনরুত্থিত হবে?’

২৭:৬৬
বালিদ দারাকা = বরং বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ইলমুহুম = তাদের জ্ঞান। ফিল আখিরাতি = আখিরাতের বিষয়ে। বাল = বরং। হুম = তারা। ফী শাককিম মিনহা = উহার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে আছে। বাল = বরং। হুম = তারা। মিনহা = উহা থেকে। উমূনা = অন্ধ।

বরং বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের জ্ঞান আখিরাতের বিষয়ে। বরং তারা উহার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে আছে। বরং তারা উহা থেকে অন্ধ।

২৭:৬৭
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর করেছে তারা বলে। আইযা = তবে কি যখন। কুন্না = আমরা হয়ে যাবো মাটি। ওয়া = আর। আবাউনা = আমাদের বাপদাদাও। আইন্না = আমরা কি নিশ্চয় (তখনো)। লামুখরাজূনা = (উহা থেকে) বহির্গত হবো?

আর যারা কুফর করেছে তারা বলে, ‘তবে কি যখন আমরা হয়ে যাবো মাটি আর আমাদের বাপদাদাও, আমরা কি নিশ্চয় (তখনো উহা থেকে) বহির্গত হবো?

২৭:৬৮
লাক্বাদ = নিশ্চয়। উয়িদনা হাযা = আমাদেরকে এই ওয়াদা দেয়া হয়েছে। নাহনু = আমরাও (এ ওয়াদা পেয়েছি)। ওয়া = আর। আবাউনা = আমাদের বাপ-দাদাও (এ ওয়াদা পেয়েছিলো)। মিন ক্বাবলূ = ইতিপূর্বে। ইন হাযা = ইহা তো নয়। ইল্লা আছাতীরুল আওয়ালীনা = আগের কালের লোকদের উপকথা ছাড়া অন্য কিছু।

নিশ্চয় আমাদেরকে এই ওয়াদা দেয়া হয়েছে। আমরাও (এ ওয়াদা পেয়েছি) আর আমাদের বাপদাদাও (এ ওয়াদা পেয়েছিলো) ইতিপূর্বে। ইহা তো নয় আগের কালের লোকদের উপকথা ছাড়া অন্য কিছু।

২৭:৬৯
ক্বুল = বলো। ছীরূ ফিল আরদি = পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। ফানযুর = তারপর লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুজরিমীনা = অপরাধীদের পরিণাম।

বলো, ‘পৃথিবীতে ভ্রমণ করো। তারপর লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো অপরাধীদের পরিণাম?’

২৭:৭০
ওয়া = আর। লা তাহযান = দু:খিত হয়ো না। আলাইহিম = তাদের ব্যাপারে। ওয়া = আর। লা তাকুন ফী দয়ক্বিন = মানসিক সংকীণতা অনুভবকারী হয়ো না। মিম্মা ইয়ামকুরূনা = তাদের কৌশলের কারণে।

আর দু:খিত হয়ো না তাদের ব্যাপারে। আর মানসিক সংকীর্ণতা অনুভবকারী হয়ো না তাদের কৌশলের কারণে।

২৭:৭১
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলু = তারা বলে। মাতা = কখন কার্যকর হবে। হাযাল ওয়া’দু = (শাস্তি আসার) এই ওয়াদা। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সত্যবাদী।

আর তারা বলে, ‘কখন কার্যকর হবে (শাস্তি আসার) এই ওয়াদা, যদি তোমরা হও সত্যবাদী?’

২৭:৭২
ক্বুল = বলো। আছা = সম্ভবত। আইঁ ইয়াকূনা রাদিফা = ব্যাপার এই যে, নিকটবর্তী হয়ে গেছে। লাকুম = তোমাদের জন্য। বা’দুল্লাযী = উহার কোন অংশ, যা। তাছতা’জিলূনা = তোমরা ত্বরান্বিত করতে/ তাড়াতাড়ি পেতে চাচ্ছো।

বলো, ‘সম্ভবত ব্যাপার এই যে, নিকটবর্তী হয়ে গেছে তোমাদের জন্য উহার কোন অংশ যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে/ তাড়াতাড়ি পেতে চাচ্ছো।

২৭:৭৩
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। লাযূ ফাদলিন আলান্নাছি = মানুষের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়াশকুরূনা = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

আর নিশ্চয় তোমার রব মানুষের উপর বড়ই অনুগ্রহশীল কিন্তু তাদের অধিকাংশই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

২৭:৭৪
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। লাইয়া’লামু = জানেন। মা = যা। তুকিন্না সুদূরুহুম = গোপন রাখে তাদের সদরসমূহ/ মস্তিষ্কসমূহ। ওয়া = আর। মা = যা। ইউ’লিনূনা = প্রকাশ করে।

আর নিশ্চয় তোমার রব জানেন যা গোপন রাখে তাদের সদরসমূহ/ মস্তিষ্কসমূহ আর যা প্রকাশ করে।

২৭:৭৫
ওয়া = আর। মা মিন গায়িবাতিন = কোন গায়েব/ অদৃশ্য বিষয়/ গোপন রহস্য নেই। ফিছ ছামায়ি ওয়াল আরদি = আকাশে ও পৃথিবীতে। ইল্লা ফী কিতাবিম মুবীনি = উহা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ থাকা ছাড়া।

আর কোন গায়েব/ অদৃশ্য বিষয়/ গোপন রহস্য নেই আকাশে ও পৃথিবীতে, উহা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ থাকা ছাড়া।

২৭:৭৬
ইন্না = নিশ্চয়। হাযাল ক্বুরআনু = এই কুরআন। ইয়াক্বুসসু = বর্ণনা করে। আলা বানী ইসরাইলা = বনী ইসরাইলের কাছে। আকছারাল্লাযী = এমন অনেক কিছু যা এমন যে। হুম = তারা। ফীহি = উহাতে। ইয়াখতালিফূনা = ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করে থাকে; (কুরআন ঐ মতপার্থক্যের সমাধান পেশ করে)।

নিশ্চয় এই কুরআন বর্ণনা করে বনী ইসরাইলের কাছে এমন অনেক কিছু যা এমন যে, তারা উহাতে ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করে থাকে; (কুরআন ঐ মতপার্থক্যের সমাধান পেশ করে)।

২৭:৭৭
ওয়া = আর। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। লাহুদাওঁ ওয়া রহমাতুল্লিল মু’মিনীনা = হুদা/ হিদায়াত ও রহমত/ দয়া মু’মিনদের জন্য।

আর নিশ্চয় উহা হুদা/ হিদায়াত ও রহমত/ দয়া, মু’মিনদের জন্য।

২৭:৭৮
ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। ইয়াক্বদী = ফায়সালা করে দেবেন। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। বিহুকমিহী = তাঁর হুকুম অনুযায়ী। ওয়া = আর। হুয়াল আযীযুল আলীমু = তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও আলীম/ মহাজ্ঞানী।

নিশ্চয় তোমার রব ফায়সালা করে দেবেন তাদের মধ্যে তাঁর হুকুম (= আল কুরআন) অনুযায়ী। আর তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও আলীম/ মহাজ্ঞানী।

২৭:৭৯
ফাতাওয়াক্কাল আলাল্লাহি = সুতরাং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। ইন্নাকা = নিশ্চয় তিনি। আলাল হাক্বক্বিল মুবীনি = স্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

সুতরাং আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। নিশ্চয় তিনি (= আল্লাহ) স্পষ্ট সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত।

২৭:৮০
ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লা তুছমিউল মাওতা = শুনাতে পারবে না মৃতকে। ওয়া = আর। লা তুছমিউস সুমমাদ দুয়াআ = শুনাতে পারবে না বধিরকে কোন আহবান। ইযা = যখন। ওয়াল্লাও মুদবিরীনা = তারা পিঠ ফিরায় (উল্টোদিকে ঘুরে যায়)।

নিশ্চয় তুমি শুনাতে পারবে না মৃতকে আর শুনাতে পারবে না বধিরকে কোন আহবান যখন তারা পিঠ ফিরায় (= উল্টোদিকে ঘুরে যায়)।

২৭:৮১
ওয়া = আর। মা আনতা বিহাদিল উময়ি = তুমি অন্ধদের হাদি/ পথপ্রদর্শনকারী হতে পারবে না। আন দলালাতিহিম = তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে। ইন তুছমিউ = তুমি কাউকে শুনাতে পারবে না। ইল্লা মাইঁ ইউ’মিনু = তাকে ছাড়া যে ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি। ফাহুম মুছলিমূনা = এ অবস্থায় যে, তারা মুসলিমূন/ আত্মসমর্পনকারী।

আর তুমি অন্ধদের হাদি/ পথপ্রদর্শনকারী হতে পারবে না তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে। তুমি কাউকে শুনাতে পারবে না তাকে ছাড়া যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি এ অবস্থায় যে, তারা মুসলিমূন/ আত্মসমর্পনকারী।

২৭:৮২
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ওয়াক্বাআল ক্বাওলু = (শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্তমূলক) বাণী (কার্যকর হওয়ার সময়) ঘনিয়ে আসে। আলাইহিম = তাদের উপর। আখরাজনা = তখন আমরা বের করি। লাহুম = তাদের জন্য। দাব্বাতাম মিনাল আরদি = ‘দাব্বাতাম মিনাল আরদ’/ ‘জমিন (জমিনী চিন্তাধারা) থেকে উদ্ভূত জন্তু’ (= বস্তুবাদী)। তুকাল্লিমুহুম = যে তাদেরকে বলে (= তাদের কাছে অপপ্রচার করে)। আন্নান্নাছা = যে, মানুষ। কানূ বিআয়াতিনা লা ইউক্বিনূনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ইয়াকীন/ নিশ্চয়তার ধারণা রেখে আসছে না (= ধর্মের যুগ শেষ হয়ে গেছে)।

আর যখন (শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্তমূলক) বাণী (কার্যকর হওয়ার সময়) ঘনিয়ে আসে তাদের উপর, তখন আমরা বের করি তাদের জন্য ‘দাব্বাতাম মিনাল আরদ’/ ‘জমিন (জমিনী চিন্তাধারা) থেকে উদ্ভূত জন্তু’ (= বস্তুবাদী), যে তাদেরকে বলে (= তাদের কাছে অপপ্রচার করে) যে, মানুষ আমাদের আয়াতসমূহের (= আল্লাহর আয়াতসমূহের) প্রতি ইয়াকীন/ নিশ্চয়তার ধারণা রেখে আসছে না (= ধর্মের যুগ শেষ হয়ে গেছে)।

২৭:৮৩
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। নাহশুরু = আমরা হাশর/ সমবেত করবো। মিন কুল্লি উম্মাতিন = প্রত্যেক উম্মাত থেকে। ফাওজান = একেক ফওজকে/ দলকে। মিম্মান ইউকাযযিবু = তাদের মধ্য থেকে যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করতো। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ফাহুম = তারপর তাদেরকে। ইউযাঊনা = (প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে) বিন্যস্ত করা হবে।

আর যেদিন আমরা হাশর/ সমবেত করবো প্রত্যেক উম্মাত থেকে একেক ফওজকে/ দলকে, তাদের মধ্য থেকে যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করতো আমাদের আয়াতসমূহকে। তারপর তাদেরকে (প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরে) বিন্যস্ত করা হবে।

২৭:৮৪
হাত্তা ইযা = শেষ পর্যন্ত যখন। জাউ = (সব দল) এসে যাবে। ক্বলা = তখন তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। আকাযযাবতুম = তোমরা কি মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে। বিআয়াতী = আমার আয়াতসমূহকে। ওয়া = অথচ। লাম তুহীতূ বিহা ইলমান = তোমরা উহা জ্ঞানগতভাবে আয়ত্ত করোনি (= কোনরূপ জ্ঞানগত পর্যালোচনা ছাড়াই তারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো)। আম্মা যা কুনতুম তা’লামূনা = (জ্ঞান প্রয়োগ না করে) তবে তোমরা আর কী করছিলে?

শেষ পর্যন্ত যখন (সব দল) এসে যাবে তখন তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমরা কি মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলে আমার আয়াতসমূহকে অথচ তোমরা উহা জ্ঞানগতভাবে আয়ত্ত করোনি (= কোনরূপ জ্ঞানগত পর্যালোচনা ছাড়াই তারা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো)। (জ্ঞান প্রয়োগ না করে) তবে তোমরা আর কী করছিলে?

২৭:৮৫
ওয়া = আর। ওয়াক্বাআল ক্বাওলু = (শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্তমূলক) বাণী এসে পড়বে। আলাইহিম = তাদের উপর। বিমা = তাদের যুলুমের কারণে। ফাহুম = সুতরাং তারা। লা ইয়ানতিক্বূনা = (উহার প্রতিবাদে) কোন কথা বলতে পারবে না।

আর (শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্তমূলক) বাণী এসে পড়বে তাদের উপর তাদের যুলুমের কারণে। সুতরাং তারা (উহার প্রতিবাদে) কোন কথা বলতে পারবে না।

২৭:৮৬
আলাম ইয়ারাও = তারা কি ভেবে দেখেনি। আন্না = যে, আমরা। জাআলনাল্লাইলা = রাতকে বানিয়েছি। লিইয়াছকুনূ = যেন তারা প্রশান্তি লাভ করে। ওয়ান্নাহারা = আর দিনকে বানিয়েছি। মুবসিরান = সবকিছু চাক্ষুস দেখার উপযোগী।

তারা কি ভেবে দেখেনি যে, আমরা রাতকে বানিয়েছি যেন তারা প্রশান্তি লাভ করে আর দিনকে বানিয়েছি সবকিছু চাক্ষুস দেখার উপযোগী।

২৭:৮৭
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। ইউনফাখু ফিস সূরি = শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফাফাযিআ = তখন অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। মান ফিস সামাওয়াতি = যারা আছে আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মান ফিল আরদি = যারা আছে পৃথিবীতে। ইল্লা মান শাআল্লাহু = যাদেরকে আল্লাহ (ভীত হওয়া থেকে বাঁচানোর) ইচ্ছা করবেন তারা ছাড়া। ওয়া = আর। কুল্লু = প্রত্যেকেই। আতাওহু = তাঁর কাছে আসবে। দাখিরীনা = বিনীত অবস্থায়।

আর যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, তখন অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে যারা আছে আকাশমন্ডলীতে আর যারা আছে পৃথিবীতে, যাদেরকে আল্লাহ (ভীত হওয়া থেকে বাঁচানোর) ইচ্ছা করবেন তারা ছাড়া। আর প্রত্যেকেই তাঁর কাছে আসবে বিনীত অবস্থায়।

২৮:৮৮
ওয়া = আর। তারাল জিবালা = এখন তুমি পর্বতসমূহকে দেখছো। তাহছাবুহা = তুমি উহাকে হিসাব/ ধারণা করছো যে উহা। জামিদাতান = দৃঢ়মূল। ওয়া = অথচ (সেদিন)। হিয়া = উহা। তামুররু = চলতে থাকবে। মাররাছ ছাহাবি = যেভাবে চলতে থাকে মেঘমালা। সুনআল্লাহি = ইহা আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য। আল্লাযী = যিনি। আতক্বানা = সুষম করেছেন। কুল্লা শাইয়িন = সবকিছুকে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। খাবীরুম বিমা তাফআলূনা = উহার খবর রাখেন যা তোমরা করো।

আর এখন তুমি পর্বতসমূহকে দেখছো। তুমি উহাকে হিসাব/ ধারণা করছো যে, উহা দৃঢ়মূ,ল অথচ (সেদিন) উহা চলতে থাকবে যেভাবে চলতে থাকে মেঘমালা। ইহা আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য, যিনি সুষম করেছেন সবকিছুকে। নিশ্চয় তিনি উহার খবর রাখেন যা তোমরা করো।

২৭:৮৯
মান = যে। জাআ = (সেদিন) আসবে। বিল হাছানাতি = উত্তম কাজ নিয়ে। ফালাহু = তাহলে তার জন্য থাকবে। খায়রুম মিনহা = উহার চেয়ে উত্তম প্রতিফল। ওয়া = আর। হুম = তারা। মিন ফাযাইঁ ইয়াওমায়িযিন = ভীতি থেকে সেদিন। আমিনূনা = নিরাপদ থাকবে।

যে (সেদিন) আসবে উত্তম কাজ নিয়ে তাহলে তার জন্য থাকবে উহার চেয়ে উত্তম প্রতিফল। আর তারা ভীতি থেকে সেদিন নিরাপদ থাকবে।

২৭:৯০
ওয়া = আর। মান = যে। জাআ (সেদিন) আসবে। বিছ ছাইয়িয়াতি = মন্দকর্ম নিয়ে। ফাকুব্বাত = তাহলে নিক্ষেপ করা হবে। উজূহুহুম = তাদের মুখমন্ডলকে। ফিন্নারি = (জাহান্নামের) আগুনে। হাল তুযজাওনা = তোমাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে। ইল্লা মা কুনতুম তা’মালূনা = তোমরা যেরূপ আমল করছিলে সেরূপ ছাড়া।

আর যে (সেদিন) আসবে মন্দকর্ম নিয়ে তাহলে নিক্ষেপ করা হবে তাদের মুখমন্ডলকে (জাহান্নামের) আগুনে। তোমাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে তোমরা যেরূপ আমল করছিলে সেরূপ ছাড়া (= কর্ম যেমন হবে ফলও তেমন হবে)।

২৭:৯১
ইন্নামা = নিশ্চয়। উমিরতু = আমি আদেশ পেয়েছি। আন = যেন। আ’বুদু = আমি ইবাদাত/ দাসত্ব করি। রব্বা হাযিহিল বালদাতিল্লাযী = এ নগরীর রবের যিনি। হাররামাহা = উহাকে হারাম/ নিষিদ্ধ করেছেন। ওয়া = আর। লাহু = তাঁর অধিকারভুক্ত/ নিয়ন্ত্রণাধীন। কুল্লু শাইয়িন = সবকিছু। ওয়া = আর। উমিরতু = আমি আদেশ পেয়েছি। আন = যেন। আকূনা = আমি হই। মিনাল মুসলিমীনা = মুসলিমীনের/ (আল্লাহর কাছে) আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

নিশ্চয় আমি আদেশ পেয়েছি যেন আমি ইবাদাত/ দাসত্ব করি এ নগরীর রবের যিনি উহাকে হারাম/ নিষিদ্ধ করেছেন আর তাঁরই অধিকারভুক্ত/ নিয়ন্ত্রণাধীন সবকিছু। আর আমি আদেশ পেয়েছি যেন আমি হই মুসলিমীনের/ (আল্লাহর কাছে) আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

২৭:৯২
ওয়া = আর। আন = যেন। আতলুওয়াল ক্বুরআনা = আমি কুরআন তিলাওয়াত করি। ফামানিহতাদা = তারপর যে হিদায়াত গ্রহণ করবে। ফাইন্নামা = তাহলে নিশ্চয়। ইয়াহতাদী = সে হিদায়াত গ্রহণ করবে। লিনাফসিহী = তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। ওয়া = আর। মান = যে। দল্লা = বিভ্রান্তি গ্রহণ করবে। ফাক্বুল = তাহলে বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। আনা = আমি তো। মিনাল মুনযিরীনা = সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত।

আর যেন আমি কুরআন তিলাওয়াত করি। তারপর যে হিদায়াত গ্রহণ করবে, তাহলে নিশ্চয় সে হিদায়াত গ্রহণ করবে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে বিভ্রান্তি গ্রহণ করবে, তাহলে বলো, ‘নিশ্চয় আমি তো সতর্ককারীদের অন্তর্ভুক্ত’।

২৭:৯৩
ওয়া = আর। ক্বুলিল হামদুলিল্লাহি = বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। ছাইউরীকুম = শীঘ্রই তিনি তোমাদেরকে দেখাবেন। আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। ফাতা’রিফূনাহা = তখন তোমরা উহাকে (= আল কুরআনকে) চিনতে পারবে। ওয়া = আর। মা রব্বাকা গাফিলিন = তোমার রব গাফেল/ উদাসীন নন। আম্মা তা’মালূনা = উহার ব্যাপারে যে আমল তোমরা করছো।

আর বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর’। শীঘ্রই তিনি তোমাদেরকে দেখাবেন তাঁর আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। তখন তোমরা উহাকে (= আল কুরআনকে) চিনতে পারবে। আর তোমার রব গাফেল/ উদাসীন নন উহার ব্যাপারে যে আমল তোমরা করছো।