কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

023. সূরা মু'মিনূন

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

২৩:১
ক্বাদ = নিশ্চয়। আফলাহাল মু’মিনূনা = সফল হয়েছে মু’মিনগণ।

নিশ্চয় সফল হয়েছে মু’মিনগণ।

২৩:২
আল্লাযীনা হুম = যারা। ফী সালাতিহিম = তাদের সালাতের ক্ষেত্রে। খাশিয়ূনা = খাশিয়ূন/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত।

যারা তাদের সালাতের ক্ষেত্রে খাশিয়ূন/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত।

২৩:৩
ওয়াল্লাযীনা হম = আর যারা। আনিল লাগভি = বাজে কথা ও কাজ থেকে। মু’রিদূনা = বিমুখ থাকে।

আর যারা বাজে কথা ও কাজ থেকে বিমুখ থাকে।

২৩:৪
ওয়াল্লাযীনা হুম = আর যারা। লিযযাকাতি = যাকাতের জন্য (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়ের জন্য)। ফায়িলূনা = সক্রিয় থাকে।

আর যারা যাকাতের জন্য (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়ের জন্য) সক্রিয় থাকে।

২৩:৫
ওয়াল্লাযীনা হুম = আর যারা। লিফুরূজিহিম = তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে। হাফিযূনা = হেফাযতকারী হয়।

আর যারা তাদের লজ্জাস্থানসমূহকে হেফাযতকারী হয়।

২৩:৬
ইল্লা আলা আযওয়াযিহিম = তাদের আযওয়াজের/ স্ত্রীর (তথা যে স্বাধীন নারীকে সে বিবাহ করেছে সেই নারীর) ব্যাপারে ছাড়া। আও = অথবা। মা মালাকাত আইমানুহুম = ‘মা মালাকাত আইমানুহুমের’/ ‘যারা তাদের প্রভাবাধীনে থেকে তাদের দ্বারা স্বীয় রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তাদের অধীনস্থ হয়েছে’ তাদের অন্তর্ভুক্ত (যাকে সে বিবাহ করেছে সেই) নারীর ব্যাপারে ছাড়া।
ফাইন্নাহুম = নিশ্চয় সেক্ষেত্রে তারা। গায়রা মালূমীনা = নিন্দনীয় নয়।

তাদের আযওয়াজের/ স্ত্রীর (তথা যে স্বাধীন নারীকে সে বিবাহ করেছে সেই নারীর) ব্যাপারে ছাড়া। অথবা ‘মা মালাকাত আইমানুহুমের’/ ‘যারা তাদের প্রভাবাধীনে থেকে তাদের দ্বারা স্বীয় রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তাদের অধীনস্থ হয়েছে’ তাদের অন্তর্ভুক্ত (যাকে সে বিবাহ করেছে সেই) নারীর ব্যাপারে ছাড়া। নিশ্চয় সেক্ষেত্রে তারা নিন্দনীয় নয়।

২৩:৭
ফামানিবতাগা = সুতরাং যে তালাশ করে। ওরাআ যালিকা = উহার বাইরে কিছু। ফাউলায়িকা হুমুল আদূনা = সেক্ষেত্রে তারাই সীমালংঘনকারী।

সুতরাং যে তালাশ করে উহার বাইরে কিছু, সেক্ষেত্রে তারাই সীমালংঘনকারী।

২৩:৮
ওয়াল্লাযীনা হুম = আর যারা। লিআমানাতিহিম = তাদের আমানতসমূহকে। ওয়া = আর। আহদিহিম = তাদের আহদকে/ প্রতিশ্রুতিকে। রঊন = তদারককারী (শাব্দিক অর্থ: রাখাল)।

আর যারা তাদের আমানতসমূহকে আর তাদের আহদকে/ প্রতিশ্রুতিকে তদারককারী (শাব্দিক অর্থ: রাখাল)।

২৩:৯
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আলা সালাওয়াতিহিম = তাদের সালাওয়াতের/ সালাতসমূহের উপর। ইউহাফিযূনা = হেফাযতকারী হয়।

আর যারা তাদের সালাওয়াতের/ সালাতসমূহের উপর হেফাযতকারী হয়।

২৩:১০
উলায়িকা হুমুল ওয়ারিসূনা = তারাই ওয়ারিস।

তারাই ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী।

২৩:১১
আল্লাযীনা = যারা। ইয়ারিছূনাল ফিরদাউসা = ওয়ারিস হয়েছে/ হবে ফিরদাউসের। হুম ফীহা খালিদূনা = তারা তাতে স্থায়ী হবে।

যারা ওয়ারিস হয়েছে/ হবে ফিরদাউসের। তারা তাতে স্থায়ী হবে।

২৩:১২
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। খালাক্বনাল ইনছানা = আমরা সৃষ্টি করি ইনসানকে/ মানুষকে। মিন ছুলালাতিম মিন তীনিন = মাটির উপাদান/ নির্যাস থেকে।

আর নিশ্চয় আমরা সৃষ্টি করি ইনসানকে/ মানুষকে মাটির উপাদান/ নির্যাস থেকে।

২৩:১৩
ছুম্মা = তারপর। জাআলনাহু = তাকে স্থাপন করি। নুতফাতান ফী ক্বারারিম মাকীনিন = নুতফা/ ফোঁটার আকৃতিসদৃশ শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ স্থানে।

তারপর তাকে স্থাপন করি নুতফা/ ফোঁটার আকৃতিসদৃশ শুক্রবিন্দুরূপে এক নিরাপদ স্থানে।

২৩:১৪
ছুম্মা = তারপর। খালাক্বনান্নুতফাতা = আমরা পরিণত করি নুতফাকে/ ফোঁটার আকৃতিসদৃশ শুক্রবিন্দুকে। আলাক্বাতান = আলাক্বাতে/ শক্ত করে ঝুলে থাকা আকৃতিসদৃশ ভ্রুণে। ফাখালাক্বনাল আলাক্বাতা = তারপর পরিণত করি আলাক্বাকে/ শক্ত করে ঝুলে থাকা আকৃতিসদৃশ ভ্রুণকে। মুদগাতান = মুদগাতে/ দুপাটির দাঁতের ছাপথাকাসদৃশ গোশতপিন্ডে। ফাখালাক্বনাল মুদগাতা = তারপর পরিণত করি মুদগাকে/ দুপাটির দাঁতের ছাপথাকাসদৃশ গোশতপিন্ডকে। ইযামা = ইযামে/ অস্থিতে। ফাকাছাওনাল ইযামা = তারপর আমরা ঢেকে দিই ইযামকে/ অস্থিকে। লাহমান = লাহমে/ গোশতপিন্ডে। ছুম্মা = তারপর। আনশা’নাহু = আমরা তাকে গড়ে তুলি। খালক্বান আখারা = অন্য এক সৃষ্টিরূপে। ফাতাবারাকাল্লাহু = অতএব আল্লাহ অতীব বরকতময় সত্তা। আহছানাল খালিক্বীনা = আহছানাল খালিক্বীন/ অধিক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।

তারপর আমরা পরিণত করি নুতফাকে/ ফোঁটার আকৃতিসদৃশ শুক্রবিন্দুকে আলাক্বাতে/ শক্ত করে ঝুলে থাকা আকৃতিসদৃশ ভ্রুণে। তারপর পরিণত করি আলাক্বাকে/ শক্ত করে ঝুলে থাকা আকৃতিসদৃশ ভ্রুণকে মুদগাতে/ দুপাটির দাঁতের ছাপথাকাসদৃশ গোশতপিন্ডে। তারপর পরিণত করি মুদগাকে/ দুপাটির দাঁতের ছাপথাকাসদৃশ গোশতপিন্ডকে ইযামে/ অস্থিতে। তারপর আমরা ঢেকে দিই ইযামকে/ অস্থিকে লাহমে/ গোশতপিন্ডে। তারপর আমরা তাকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টিরূপে। অতএব আল্লাহ অতীব বরকতময় সত্তা যিনি আহছানাল খালিক্বীন/ অধিক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।

২৩:১৫
ছুম্মা = তারপর। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। বা’দা যালিকা = উহার পর। লামাইয়িতূনা = মৃত্যুবরণ করবে।

তারপর নিশ্চয় তোমরা উহার পর মৃত্যুবরণ করবে।

২৩:১৬
ছুম্মা = তারপর। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। তুবআছূনা = পুনরুত্থিত করা হবে।

তারপর নিশ্চয় তোমরা ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে পুনরুত্থিত করা হবে।

২৩:১৭
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। খালাক্বনা = আমরা সৃষ্টি করেছি। ফাওক্বাকুম = তোমাদের উপরে। ছাবআ তরায়িক্বি = সাতস্তর (আকাশমন্ডলী)। ওয়া = আর। মা কুন্না = আমরা নই। আনিল খালক্বি = সৃষ্টি সম্পর্কে। গাফিলীনা = গাফিল/ উদাসীন।

আর নিশ্চয় আমরা সৃষ্টি করেছি তোমাদের উপরে সাতস্তর (আকাশমন্ডলী)। আর আমরা নই সৃষ্টি সম্পর্কে গাফিল/ উদাসীন।

২৩:১৮
ওয়া = আর। আনযালনা = আমরা নাযিল/ বর্ষণ করেছি। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। মাআন = (বৃষ্টির) পানি। বিক্বাদারিন = নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী।। ফাআছকান্নাহু = তারপর আমরা তা সংরক্ষণ করি। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আলা যাহাবিম বিহী = উহাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে। লাক্বাদিরূনা = অবশ্যই সক্ষম।

আর আমরা নাযিল/ বর্ষণ করেছি আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি, নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী। তারপর আমরা তা সংরক্ষণ করি পৃথিবীতে। আর নিশ্চয় আমরা উহাকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সক্ষম।

২৩:১৯
ফাআনশা’না = তারপর আমরা সৃষ্টি করি। লাকুম = তোমাদের জন্য। বিহী = উহা দ্বারা। জান্নাতিম মিন নাখীলিও ওয়া আ’নাবিন = খেজুরের বাগান ও আঙ্গুরের বাগান। লাকুম = তোমাদের জন্য। ফীহা = উহাতে আছে। ফাওয়াকীহু কাছীরাতুন = প্রচুর ফলমূল। ওয়া = আর। মিনহা = উহা থেকে। তা’কুলূনা = তোমরা খাও।

তারপর আমরা সৃষ্টি করি তোমাদের জন্য উহা দ্বারা খেজুরের বাগান ও আঙ্গুরের বাগান। তোমাদের জন্য উহাতে আছে প্রচুর ফলমূল, আর উহা থেকে তোমরা খাও।

২৩:২০
ওয়া = আর। শাজারাতান = আর সেই গাছও। নাখরুজু মিন তূরি ছায়নাই = যা ‘তূরে সায়না’ পাহাড় থেকে বের হয়। তাম্বুতু বিদদুহনি = উহা তেল নিয়েও উৎপন্ন হয়। ওয়া = আর। সিবগিল্লিল আকিলীনা = খাদ্যগ্রহণকারীদের জন্য আহার্য নিয়েও উৎপন্ন হয়।

আর আর সেই গাছও (= যায়তুন) যা ‘তূরে সায়না’ পাহাড় থেকে বের হয়। উহা তেল নিয়েও উৎপন্ন হয় আর খাদ্যগ্রহণকারীদের জন্য আহার্য নিয়েও উৎপন্ন হয়।

২৩:২১
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। ফিল আনআমি = আনআমের/ গবাদি পশুর মধ্যে। লাইবরাতান = ইবরাত/ শিক্ষা। নুছক্বীকুম = আমি তোমাদেরকে পান করাই। মিম্মা = উহা থেকে যা আছে। ফী বুতূনিহা = উহাদের পেটে (= দুধ)। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। ফীহা = উহাতে (= গবাদি পশুতে)। মানাফিউ কাছীরাতুন = প্রচুর কল্যাণসমূহ। ওয়া = আর। মিনহা = উহা থেকে (= গবাদি পশু থেকে)। তা’কুলূনা = তোমরা খেয়ে থাকো (= উহার গোশত)।

আর নিশ্চয় তোমাদের জন্য আছে আনআমের/ গবাদি পশুর মধ্যে ইবরাত/ শিক্ষা। আমি তোমাদেরকে পান করাই উহা থেকে যা আছে উহাদের পেটে (= দুধ)। আর তোমাদের জন্য আছে উহাতে (= গবাদি পশুতে) প্রচুর কল্যাণসমূহ, আর উহা থেকে (= গবাদি পশু থেকে) তোমরা খেয়ে থাকো (= উহার গোশত)।

২৩:২২
ওয়া = আর। আলাইহা = উহার উপর (= গবাদি পশুর উপর)। ওয়া = আর। আলাল ফুলকি = নৌযানের উপর। তুহমালূনা = তোমাদেরকে চড়ানো হয়।

আর উহার উপর (= গবাদি পশুর উপর) ও নৌযানের উপর তোমাদেরকে চড়ানো হয়।

২৩:২৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। নূহান = নূহকে। ইলা ক্বাওমিহী = তার কওমের কাছে। ফাক্বলা = তখন সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি’বুদুল্লাহা = হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মা লাকুম = তোমাদের জন্য নেই। মিন ইলাহিন গায়রুহু = কোন ইলাহ তিনি ছাড়া। আফালা তাত্তাক্বূনা = তোমরা কি তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো না?

আর নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি নূহকে তার কওমের কাছে। তখন সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। তোমাদের জন্য নেই কোন ইলাহ, তিনি ছাড়া। তোমরা কি তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো না?

২৩:২৪
ফাক্বলাল মালাউল্লাযীনা = তখন বলেছে তাদের মালায়ে/ প্রশাসনিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। মিন ক্বাওমিহী = তার কওমের মধ্য থেকে। মা হাযা = এ ব্যক্তি তো নয়। ইল্লা বাশারুম মিছলুকুম = তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। ইউরীদু = সে এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইয়াতাফাদ্দলা আলাইকুম = যে, শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে তোমাদের উপর। ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাআনযালা = তাহলে অবশ্যই নাযিল করতেন। মালাইকাতান = মালাইকা/ ফেরেশতাদেরকে। মা ছামি’না = আমরা শুনিনি। বিহাযা = এ ধরনের কথা। ফী আবায়িনাল আওয়ালীনা = আমাদের আগেকার বাপদাদার মধ্যে।

তখন বলেছে তাদের মালায়ে/ প্রশাসনিক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যারা কুফর করেছে তার কওমের মধ্য থেকে, (তারা বলেছে,) ‘এ ব্যক্তি তো নয় তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। সে এরাদা/ ইচ্ছা করে যে, শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে তোমাদের উপর। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন (কাউকে প্রেরণ করার জন্য), তাহলে অবশ্যই নাযিল করতেন মালাইকা/ ফেরেশতাদেরকে। আমরা শুনিনি এ ধরনের কথা আমাদের আগেকার বাপদাদার মধ্যে।

২৩:২৫
ইন হুয়া = সে নয়। ইল্লা রজুলুম বিহী জিন্নাতুন = এমন একজন পুরুষ মানুষ ছাড়া অন্য কিছু, যার সাথে আছে কোন জ্বিন। ফাতারব্বাসূ = সুতরাং অপেক্ষা করো। বিহী = তার সম্পর্কে। হাত্তা হীনিন = কিছুদিন পর্যন্ত।

সে নয় এমন একজন পুরুষ মানুষ ছাড়া অন্য কিছু, যার সাথে আছে কোন জ্বিন। সুতরাং অপেক্ষা করো তার সম্পর্কে কিছুদিন পর্যন্ত।

২৩:২৬
ক্বলা = সে (= নূহ) বলেছে। রব্বিনসুরনী = হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন। বিমা কাযযাবূনি = এ কারণে যে, তারা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

সে (= নূহ) বলেছে, ‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন এ কারণে যে, তারা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে’।

২৩:২৭
ফাআওহায়না = তারপর আমরা ওহী করেছি। ইলাইহি = তার প্রতি। আনিসনায়িল ফুলকা = এ মর্মে যে, নির্মাণ করো একটি নৌযান। বিআ’ইউনিনা = আমাদের চোখের সামনে (= আমাদের তত্ত্বাবধানে)। ওয়া = আর। ওয়াহয়িনা = আমাদের ওহীর ভিত্তিতে। ফাইযা = তারপর যখন। জাআ আমরুনা = এসে যাবে আমাদের আদেশ। ওয়া = আর। ফারাত তান্নূরা = উথলে উঠবে চুলা। ফাছলুক ফীহা = তখন উহাতে উঠিয়ে নেবে। মিন কুল্লি যাওযায়নিছনাইনি = প্রত্যেক ধরনের দুটি করে জোড়া। ওয়া = আর। আহলাকা = তোমার আহালকে/ পরিবারকে। ইল্লা মান ছাবাক্বা আলাইহিল ক্বাওলু মিনহুম = তাকে ছাড়া আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে যার ব্যাপারে আমাদের (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী, তাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। লা তুখাতিবনী = আমাকে কিছু বলো না। ফিল্লাযীনা = তাদের ব্যাপারে যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। মুগরাক্বূনা = নিমজ্জিত হবেই।

তারপর আমরা ওহী করেছি তার প্রতি এ মর্মে যে, “নির্মাণ করো একটি নৌযান আমাদের চোখের সামনে (= আমাদের তত্ত্বাবধানে) আর আমাদের ওহীর ভিত্তিতে। তারপর যখন এসে যাবে আমাদের আদেশ আর উথলে উঠবে চুলা, তখন উহাতে উঠিয়ে নেবে প্রত্যেক ধরনের দুটি করে জোড়া আর তোমার আহালকে/ পরিবারকে। তাকে ছাড়া আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে যার ব্যাপারে আমাদের (শাস্তি সম্পর্কিত) বাণী, তাদের মধ্য থেকে। আর আমাকে কিছু বলো না তাদের ব্যাপারে যারা যুলুম করেছে। নিশ্চয় তারা নিমজ্জিত হবেই”।

২৩:২৮
ফাইযাছতাওয়ায়তা = তারপর যখন আরোহন করবে। আনতা = তুমি। ওয়া = আর। মাম্মাআকা = যারা তোমার সাথে আছে তারা। আলাল ফুলকি = নৌযানের উপর। ফাক্বুলিল হামদু লিল্লাহিল্লাযী = তখন বলো, ‘আল হামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি। নাজ্জানা = আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছেন। মিনাল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিম কওমের থেকে।

তারপর যখন আরোহন করবে তুমি আর যারা তোমার সাথে আছে তারা নৌযানের উপর; তখন বলো, ‘আল হামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছেন যালিম কওমের থেকে।

২৩:২৯
ওয়া = আর। ক্বুর রব্বি = বলো, ‘হে আমার রব। আনযিলনী = আমাকে নাযিল/ অবতরণ করান। মুনযালাম মুবারাকান = বরকতময় অবতরণস্থানে। ওয়া = আর। আনতা = আপনিই। খায়রুল মুনযিলীনা = খায়রুল মুনযিলীন/ উত্তম অবতরনকারী।

আর বলো, ‘হে আমার রব, আমাকে নাযিল/ অবতরণ করান বরকতময় অবতরণস্থানে। আর আপনিই খায়রুল মুনযিলীন/ উত্তম অবতরনকারী’।

২৩:৩০
ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিন = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। ওয়া = আর। ইন কুন্না = আমরা কি নই। লামুবতালীনা = পরীক্ষাকারী?

নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। আর আমরা কি নই পরীক্ষাকারী?

২৩:৩১
ছুম্মা = তারপর। আনশা’না = আমরা সৃষ্টি করেছি। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। ক্বারনান আখিরীনা = পরবর্তী প্রজন্মকে।

তারপর আমরা সৃষ্টি করেছি তাদের পরে পরবর্তী প্রজন্মকে।

২৩:৩২
ফাআরছালনা = তারপর আমরা প্রেরণ করেছি। ফীহিম = তাদের মধ্যে। রাসূলাম মিনহুম = একজন রসূলকে, তাদের মধ্য থেকে। আনি’বুদু্ল্লাহা = (তার আহবান ছিলো) এ মর্মে যে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মা লাকুম = তোমাদের জন্য নেই। মিন ইলাহিন = কোন ইলাহ। গায়রুহু = তিনি ছাড়া। আফালা তাত্তাক্বূনা = তোমরা কি তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না?

তারপর আমরা প্রেরণ করেছি তাদের মধ্যে একজন রসূলকে, তাদের মধ্য থেকে। (তার আহবান ছিলো) এ মর্মে যে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। তোমাদের জন্য নেই কোন ইলাহ তিনি ছাড়া। তোমরা কি তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না?’

২৩:৩৩
ওয়া = আর। ক্বলাল মালাউ মিন ক্বাওমিহিল্লাযীনা = তখন বলেছে তার কওমের মালায়ে/ প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী যারা কুফর করেছে। ওয়া = আর। কাযযাবূ = মিথ্যা আরোপ করেছে। বিলিক্বায়িল আখিরাতি = আখিরাতের মোলাক্বাতকে। ওয়া = আর। আতরাফনাহুম ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = যাদেরকে আমরা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দিয়েছি হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। মা হাযা = এ ব্যক্তি তো নয়। ইল্লা বাশারুম মিছলুকুম = তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। ইয়া’কুলু মিম্মা তা’কুলূনা মিনহু = তোমরা যা খাও সেও তা-ই খায়। ওয়া = আর। ইয়াশরাবু মিম্মা তাশরাবূনা = তোমরা যা পান করো সেও তা-ই পান করে।

আর তখন বলেছে তার কওমের মালায়ে/ প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী যারা কুফর করেছে আর মিথ্যা আরোপ করেছে আখিরাতের মোলাক্বাতকে আর যাদেরকে আমরা অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা দিয়েছি হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে, (তারা বলেছে,) ‘এ ব্যক্তি তো নয় তোমাদের মতো একজন মানুষ ছাড়া অন্য কিছু। তোমরা যা খাও সেও তা-ই খায় আর তোমরা যা পান করো সেও তা-ই পান করে’।

২৩:৩৪
ওয়া = আর। লাইন = যদি। আতা’তুম = তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো। বাশারাম মিছলুকুম = তোমাদেরই মতো একজন মানুষকে। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। ইযা = তাহলে তখন হবে। লাখাছিরূনা = ক্ষতিগ্রস্ত।

আর যদি তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো তোমাদেরই মতো একজন মানুষকে, নিশ্চয় তোমরা তাহলে তখন হবে ক্ষতিগ্রস্ত।

২৩:৩৫
আইয়ায়িদুকুম = সেকি তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়। আন্নাকুম = যে, তোমরা। ইয = যখন। মিত্তুম = মৃত্যুবরণ করবে। ওয়া = আর। কুনতুম = তোমরা হয়ে যাবে। তুরাবান = মাটি। ওয়া = ও। ইযামান = হাড়। আন্নাকুম = তখনও নিশ্চয় তোমরা। মুখরাজূনা = (কবর থেকে) বের হবে।

সেকি তোমাদেরকে ওয়াদা দেয় যে, তোমরা যখন মৃত্যুবরণ করবে আর তোমরা হয়ে যাবে মাটি ও হাড়, তখনও নিশ্চয় তোমরা (কবর থেকে) বের হবে।

২৩:৩৬
হায়হাতা হায়হাতা = দূরে বহুদূরে/ অসম্ভব অবাস্তব। লিমা তূআদূনা = যে ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে।

দূরে বহুদূরে/ অসম্ভব অবাস্তব, যে ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হচ্ছে।

২৩:৩৭
ইন হিয়া ইল্লা হায়াতুনাদ দুনইয়া = এ (জীবন) কিছুই নয়, পার্থিব জীবন ছাড়া। নামূতু = (এখানেই) আমরা মরি। ওয়া = আর। নাহইয়া = (এখানেই) আমরা বাঁচি। ওয়া = আর। মা নাহনু বিমাবউছীনা = আমরা কখনো পুনরুত্থিত হবো না।

এ (জীবন) কিছুই নয়, পার্থিব জীবন ছাড়া, (এখানেই) আমরা মরি আর (এখানেই) আমরা বাঁচি আর আমরা কখনো পুনরুত্থিত হবো না।

২৩:৩৮
ইন হুয়া ইল্লা রজুলুনিফতারা আলাল্লাহি কাযিবান = সে নয় এমন একজন পুরুষ ছাড়া কেউ যে আল্লাহর নাম নিয়ে মিথ্যা রচনা করে। ওয়া = আর। মা নাহনু লাহু বিমু’মিনীনা = আমরা তার প্রতি মু’মিন/ বিশ্বাসী নয়।

সে নয় এমন একজন পুরুষ ছাড়া কেউ যে আল্লাহর নাম নিয়ে মিথ্যা রচনা করে। আর আমরা তার প্রতি মু’মিন/ বিশ্বাসী নয়।

২৩:৩৯
ক্বলা = সে (= রসূল) বলেছে। রব্বিনসুরনী = ‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন। বিমা কাযযাবূনি = এ কারণে যে, তারা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে।

সে (= রসূল) বলেছে, ‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন, এ কারণে যে, তারা আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করছে’।

২৩:৪০
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। আম্মা = এ ব্যাপারে। ক্বালীলিন = অল্প সময়ের মধ্যেই। লাইউসবিহুন্না = তারা হবে। নাদিমীনা = দারুন অনুতপ্ত।

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘এ ব্যাপারে অল্প সময়ের মধ্যেই তারা হবে দারুন অনুতপ্ত’।

২৩:৪১
ফাআখাযাতহুমুস সয়হাতু = সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছে এক বিকট শব্দ। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। ফাজাআলনাহুম = তারপর আমরা তাদেরকে পরিণত করেছি। গুছাআন = আবর্জনায়। ফাবু’দাল্লিল ক্বাওমিয যালিমূনা = সুতরাং দূর হোক যালিম কওম।

সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছে এক বিকট শব্দ, সত্য সহকারে। তারপর আমরা তাদেরকে পরিণত করেছি আবর্জনায়। সুতরাং দূর হোক যালিম কওম।

২৩:৪২
ছুম্মা = তারপর। আনশা’না = আমরা দাঁড় করিয়েছি। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। ক্বুরূনান আখিরীনা = তাদের পরবর্তীতে অনেক প্রজন্ম।

তারপর আমরা দাঁড় করিয়েছি তাদের পরে তাদের পরবর্তীতে অনেক প্রজন্ম।

২৩:৪৩
মা তাছবিক্বু = ত্বরান্বিত করতে পারে না। মিন উম্মাতিন = কোন উম্মাত। আজালাহা = তার আজালকে/ নির্ধারিত শেষ সময়সীমাকে। ওয়া = আর। মা ইয়াছতা’খিরূনা = বিলম্বিতও করতে পারে না।

ত্বরান্বিত করতে পারে না কোন উম্মাত তার আজালকে/ নির্ধারিত শেষ সময়সীমাকে আর বিলম্বিতও করতে পারে না।

২৩:৪৪
ছুম্মা = তারপর। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। রুছুলানা = আমাদের রসূলদেরকে। তাতরা = ক্রমাগতভাবে। কুল্লামা = যখনই। জাআ = এসেছে। উম্মাতার রসূলাহা = কোন উম্মাতের কাছে তার (জন্য প্রেরিত) রাসূল। কাযযাবূহু = তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। ফাআতবা’না = তারপর আমরা অনুসরণ করিয়েছি (= শাস্তি প্রেরণ করতে থেকেছি)। বা’দাহুম বা’দান = তাদের এক উম্মাতকে অন্য উম্মাতের (= পরপর উম্মাতসমূহকে ধ্বংস করেছি)। ওয়া = আর। জাআলনাহুম = আমরা তাদেরকে পরিণত করেছি। আহাদীছু = আহাদীসে/ ইতিহাসে। ফাবু’দাল লিক্বওমিল লা ইউ’মিনূনা = সুতরাং দূর হোক এমন কওম, যে ঈমান/ বিশ্বাস করে না।

তারপর আমরা প্রেরণ করেছি আমাদের রসূলদেরকে ক্রমাগতভাবে। যখনই এসেছে কোন উম্মাতের কাছে তার (জন্য প্রেরিত) রাসূল, তখন তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। তারপর আমরা অনুসরণ করিয়েছি (= শাস্তি প্রেরণ করতে থেকেছি) তাদের এক উম্মাতকে অন্য উম্মাতের (= পরপর উম্মাতসমূহকে ধ্বংস করেছি)। আর আমরা তাদেরকে পরিণত করেছি আহাদীসে/ ইতিহাসে। সুতরাং দূর হোক এমন কওম, যে ঈমান/ বিশ্বাস করে না।

২৩:৪৫
ছুম্মা = তারপর। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। মূসা ওয়া আখাহু হারূনা = মূসাকে ও তার ভাই হারুনকে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে। ওয়া = ও। সুলাতানাম মুবীনিন = প্রকাশ্য সুলতান/ সনদ/ প্রমাণ সহকারে।

তারপর আমরা প্রেরণ করেছি মূসাকে ও তার ভাই হারুনকে আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে ও প্রকাশ্য সুলতান/ সনদ/ প্রমাণ সহকারে।

২৩:৪৬
ইলা ফিরআওনা ওয়া মালায়েহী = ফেরাউন ও মালায়েহীর কাছে/ ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদের কাছে। ফাছতাকবারূ = কিন্তু তারা (= ফেরাউন ও মালায়েহী) বড়াই/ অহংকার করেছে। ওয়া = আর। কানূ = তারা ছিলো। ক্বাওমান আলীনা = উদ্ধত কওম।

ফেরাউন ও মালায়েহীর কাছে/ ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদের কাছে। কিন্তু তারা (= ফেরাউন ও মালায়েহী) বড়াই/ অহংকার করেছে আর তারা ছিলো উদ্ধত কওম।

২৩:৪৭
ফাক্বলূ = সুতরাং তারা (= ফেরাউন ও মালায়েহী) বলেছে। আনু’মিনু = তোমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করবে। লিবাশারায়নি মিছলিনা = আমাদেরই মতো দুজন মানুষের প্রতি। ওয়া = অথচ। ক্বাওমুহুমা = তাদের দুজনের কওম। লানা আবিদূনা = আমাদের দাস।

সুতরাং তারা (= ফেরাউন ও মালায়েহী) বলেছে, ‘তোমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করবে আমাদেরই মতো দুজন মানুষের প্রতি? অথচ তাদের দুজনের কওম আমাদের দাস।

২৩:৪৮
ফাকাযযাবুহুমা = তখন তারা তাদের দুজনকেই (= মূসা ও হারূনকে) মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। ফাকানূ = সুতরাং তারা হয়ে গেছে। মিনাল মুহলাকীনা = হালাক/ ধ্বংস হয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত।

তখন তারা তাদের দুজনকেই (= মূসা ও হারূনকে) মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং তারা হয়ে গেছে হালাক/ ধ্বংস হয়ে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত।

২৩:৪৯
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতায়নাল মূসাল কিতাবা = আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি। লাআল্লাহুম = যেন তারা। ইয়াহতাদূনা = হিদায়াত পেতে পারে।

আর নিশ্চয় আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি যেন তারা হিদায়াত পেতে পারে।

২৩:৫০
ওয়া = আর। জাআলনাবনা মারইয়াবনা = আমরা করেছি ইবনে মারইয়ামকে (= ঈসাকে)। ওয়া = আর। উম্মাহু = তার মাকে (= মারইয়ামকে)। আয়াতান = আয়াত/ নিদর্শন (যে, ইহুদীরা তাদের বদনাম করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন)। ওয়া = আর। আওয়ায়নাহুমা = আমরা তাদের উভয়কে আশ্রয় দিয়েছি। ইলা রবওয়াতিন = উচ্চভূমিতে। যাতা ক্বারারিন = যা ছিলো অবস্থানের উপযোগী। ওয়া = ও। মায়ীনিন = তাতে ছিলো প্রবহমান (ঝর্ণাধারা)।

আর আমরা করেছি ইবনে মারইয়ামকে (= ঈসাকে) আর তার মাকে (= মারইয়ামকে) আয়াত/ নিদর্শন (যে, ইহুদীরা তাদের বদনাম করা সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন)। আর আমরা তাদের উভয়কে আশ্রয় দিয়েছি উচ্চভূমিতে, যা ছিলো অবস্থানের উপযোগী ও তাতে ছিলো প্রবহমান (ঝর্ণাধারা)।

২৩:৫১
ইয়া আইয়ুহার রুসুলু = হে রসূলগণ। কুলূ = তোমরা খাও। মিনাত তইয়িবাতি = তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিস থেকে। ওয়া’মালূ সলিহান = আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। বিমা তা’মালূনা আলীমুন = তোমাদের আমল/ কর্মকান্ড সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।

হে রসূলগণ, তোমরা খাও তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিস থেকে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করো। নিশ্চয় আমি (= আল্লাহ) তোমাদের আমল/ কর্মকান্ড সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।

২৩:৫২
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। হাযিহী উম্মাতুকুম = তোমাদের এই উম্মাত। উম্মাতাওঁ ওয়াহিদাতান = একই উম্মাত। ওয়া = আর। আনা = আমিই। রব্বুকুম = তোমাদের রব। ফাত্তাক্বূনি = সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো।

আর নিশ্চয় তোমাদের এই উম্মাত (= তোমরা/ রসূলগণ ও তোমাদের সঙ্গের লোকজন) একই উম্মাত (= মুসলিম উম্মাত)। আর আমিই তোমাদের রব, সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় করো।

২৩:৫৩
ফাতাক্বাত্তাঊ = কিন্তু (লোকেরা) ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন/ বিভক্ত করেছে। আমরাহুম = তাদের কর্মকান্ডকে। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। যুবুরান = টুকরো টুকরো করে। কুল্লু = প্রত্যেক। হিযবিম বিমা লাদায়হিম ফারিহূনা = দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়েই আনন্দিত।

কিন্তু (লোকেরা) ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন/ বিভক্ত করেছে তাদের কর্মকান্ডকে তাদের মধ্যে টুকরো টুকরো করে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়েই আনন্দিত।

২৩:৫৪
ফাযারহুম = সুতরাং তাদেরকে ছেড়ে দাও। ফী গামরাতিহিম = তাদের গোমরাহীর মধ্যে। হাত্তা হীনিন = কিছুদিনের জন্য।

সুতরাং তাদেরকে ছেড়ে দাও তাদের গোমরাহীর মধ্যে কিছুদিনের জন্য।

২৩:৫৫
আইয়াহছাবূনা = তারা কি হিসাব করে নিয়েছে যে। আন্নামা = যে। নুমিদ্দুহুম বিহী = আমরা তাদেরকে উহা দ্বারা মদদ/ সাহায্য করছি। মিনাল মালিওঁ ওয়া বানীনা = মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে।

তারা কি হিসাব করে নিয়েছে যে, আমরা তাদেরকে উহা দ্বারা মদদ/ সাহায্য করছি মাল-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে?

২৩:৫৬
নুছারিউ লাহুম = আমরা তাদেরকে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছি। ফিল খায়রাতি = তাদের কল্যাণের দিকে? বাল = বরং। লা ইয়াশঊরূনা = তারা অনুভব করে না।

আমরা তাদেরকে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছি তাদের কল্যাণের দিকে? বরং তারা অনুভব করে না।

২৩:৫৭
ইন্নাল্লাযীনা হুম = নিশ্চয় যারা। মিন খাশইয়াতি রব্বিহিম = তাদের রবের ভয়ে। মুশফিক্বূনা = ভীত থাকে।

নিশ্চয় যারা তাদের রবের ভয়ে ভীত থাকে।

২৩:৫৮
ওয়াল্লাযীনা হুম = আর যারা। বিআয়াতি রব্বিহিম = তাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে।

আর যারা তাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে।

২৩:৫৯
ওয়াল্লাযীনা হুম = আর যারা। বিরব্বিহিম = তাদের রবের সাথে। লা ইউশরিকূনা = শিরক করে না।

আর যারা তাদের রবের সাথে শিরক করে না।

২৩:৬০
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইউ’তূনা = যখন দান করে। মা আতাও = যা-ই দান করুক। ওয়া ক্বুলূবুহুম = তা এ অবস্থায় করে যে, তাদের কলবসমূহ। ওয়াজিলাতুন = কম্পিত থাকে। আন্নাহুম = এজন্য যে, তারা। ইলা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। রাজিঊনা = ফিরে যাবেই।

আর যারা যখন দান করে, যা-ই দান করুক, তা এ অবস্থায় করে যে, তাদের কলবসমূহ কম্পিত থাকে; এজন্য যে, তারা তাদের রবের কাছে ফিরে যাবেই।

২৩:৬১
উলায়িকা = তারাই। ইউছারিঊনা = দ্রুত ধাবিত হয়। ফিল খায়রাতি = খায়রাতের/ কল্যাণকর কাজের মধ্যে। ওয়া = আর। হুম = তারাই। লাহা = উহাতে। ছাবিক্বূনা = অগ্রগামী হয়ে থাকে।

তারাই দ্রুত ধাবিত হয় খায়রাতের/ কল্যাণকর কাজের মধ্যে। আর তারাই উহাতে অগ্রগামী হয়ে থাকে।

২৩:৬২
ওয়া = আর। লা নুকাল্লিফু = আমরা দায়িত্বভার অর্পণ করি না। নাফসান = কোন ব্যক্তিকে। ইল্লা উছআহা = তার সাধ্যের বাহিরে। ওয়া = আর। লাদায়না = আমাদের কাছে আছে। কিতাবুন = এক কিতাব। ইয়ানতিক্বু = যা বিবৃত করে। বিলহাক্বক্বি = যথাযথভাবে। ওয়া = আর। হুম লা ইউযলামূনা = তাদেরকে যুলুম করা হবে না।

আর আমরা দায়িত্বভার অর্পণ করি না কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের বাহিরে। আর আমাদের কাছে আছে এক কিতাব, যা বিবৃত করে যথাযথভাবে। আর তাদেরকে যুলুম করা হবে না।

২৩:৬৩
বাল = বরং। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ। ফী গামরাতিন = গোমরাহীর মধ্যে আছে। মিন হাযা = ইহা থেকে। ওয়া = আর। লাহুম আ’মালুম মিন দূনি যালিকা = তাদের আমলসমূহ হচ্ছে উহা থেকে ভিন্ন (= ৫৭-৬১ আয়াতে বর্ণিত আমল থেকে ভিন্ন)। হুম লাহা আমিলূনা = তারা যে ধরনের আমলকারী/ কার্যসম্পাদনকারী।

বরং তাদের কলবসমূহ গোমরাহীর মধ্যে আছে ইহা থেকে। আর তাদের আমলসমূহ হচ্ছে উহা থেকে ভিন্ন (= ৫৭-৬১ আয়াতে বর্ণিত আমল থেকে ভিন্ন), তারা যে ধরনের আমলকারী/ কার্যসম্পাদনকারী।

২৩:৬৪
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আখাযনা = আমরা পাকড়াও করি। মুতরাফীনা = মুতরাফীনকে/ অন্যের শ্রমে অর্জিত ধন আত্মসাৎকারী পুঁজিপতিদেরকে। বিলআযাবি = শাস্তি দিয়ে। ইযা = তখন। হুম = তারা। ইয়াযআরূনা = আর্তনাদ করে উঠে।

শেষ পর্যন্ত যখন আমরা পাকড়াও করি মুতরাফীনকে/ অন্যের শ্রমে অর্জিত ধন আত্মসাৎকারী পুঁজিপতিদেরকে শাস্তি দিয়ে, তখন তারা আর্তনাদ করে উঠে।

২৩:৬৫
লা তাযআরুল ইয়াওমা = আজ তোমরা আর্তনাদ করো না। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমাদেরকে। মিন্না = আমাদের পক্ষ থেকে। লা তুনসারূনা = সাহায্য করা হবে না।

আজ তোমরা আর্তনাদ করো না। নিশ্চয় তোমাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হবে না।

২৩:৬৬
ক্বাদ = নিশ্চয়। কানাত আয়াতী তুতলা আলায়কুম = আমাদের আয়াত তিলাওয়াত করা হতো তোমাদের কাছে। ফাকুনতুম = তখন তোমরা। আলা আ’ক্বাবিকুম = তোমাদের গোড়ালির উপর ভর দিয়ে। তানকিসূনা = পিছনে ফিরে যেতে।

নিশ্চয় আমাদের আয়াত তিলাওয়াত করা হতো তোমাদের কাছে, তখন তোমরা তোমাদের গোড়ালির উপর ভর দিয়ে পিছনে ফিরে যেতে।

২৩:৬৭
মুছতাকবিরীনা বিহী = উহার ব্যাপারে অহংকার প্রদর্শন করে। ছামিরান তাহজুরূনা = তোমরা গল্পে মেতে থাকতে অর্থহীন কথাবার্তার মাধ্যমে।

উহার ব্যাপারে অহংকার প্রদর্শন করে তোমরা গল্পে মেতে থাকতে অর্থহীন কথাবার্তার মাধ্যমে।

২৩:৬৮
আফালাম ইয়াদ্দাব্বারুল ক্বাওলা = তারা কি এই বাণী (= কুরআন) সম্পর্কে তাদাব্বুর/ চিন্তা-গবেষণা করেনি। আম = নাকি। জাআহুম = সে (= রসূল) তাদের কাছে এসেছে। মা লাম ইয়া’তি = এমন কিছু নিয়ে যা আসেনি। আবাআহুমুল আওয়ালীনা = তাদের আগের বাপদাদার কাছে।

তারা কি এই বাণী (= কুরআন) সম্পর্কে তাদাব্বুর/ চিন্তা-গবেষণা করেনি? নাকি সে (= রসূল) তাদের কাছে এসেছে এমন কিছু নিয়ে যা আসেনি তাদের আগের বাপদাদার কাছে?

২৩:৬৯
আম = নাকি। লাম ইয়া’রিফূ = তারা চিনেনি। রাসূলাহুম = তাদের (কাছে প্রেরিত) রাসূলকে। ফাহুম লাহু মুনকিরূনা = যার ফলে তারা উহাকে অস্বীকারকারী হয়েছে?

নাকি তারা চিনেনি তাদের (কাছে প্রেরিত) রাসূলকে, যার ফলে তারা উহাকে অস্বীকারকারী হয়েছে?

২৩:৭০
আম = নাকি। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। বিহী = তার সাথে আছে। জিন্নাতুন = কোন জ্বিন। বাল = বরং। জাআহুম = সে এসেছে তাদের কাছে। বিল হাক্বক্বি = সত্যসহকারে। ওয়া = আর। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশই। লিল হাক্বক্বি = সত্যকে। কারিহূনা = অপছন্দকারী।

নাকি তারা বলে, ‘তার সাথে আছে কোন জ্বিন’? বরং সে এসেছে তাদের কাছে সত্যসহকারে। আর তাদের অধিকাংশই সত্যকে অপছন্দকারী।

২৩:৭১
ওয়া = আর। লাভিত তাবায়াল হাক্বক্বু = যদি ইত্তেবা/ অনুসরণ করতো সত্য। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়াকে/ প্রবৃত্তিকে। লাফাছাদাতিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা ওয়া মান ফীহিন্না = তাহলে বিপর্যস্ত হয়ে যেতো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী আর যারা উহাদের মধ্যে আছে। বাল = বরং। আতায়নাহুম = আমরা তাদেরকে দিয়েছি। বিযিকরিহিম = তাদের যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান। ফাহুম = তবে কি তারা। আন যিকরিহিম = তাদের যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান থেকে। মু’রিদূনা = বিমুখ হয়ে থাকবে?

আর যদি ইত্তেবা/ অনুসরণ করতো সত্য, তাদের হাওয়াকে/ প্রবৃত্তিকে, তাহলে বিপর্যস্ত হয়ে যেতো আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী আর যারা উহাদের মধ্যে আছে তারা। বরং আমরা তাদেরকে দিয়েছি তাদের যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান। তবে কি তারা তাদের যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান থেকে বিমুখ হয়ে থাকবে?

২৩:৭২
আম = নাকি। তাছআলুহুম = তুমি তাদের কাছে চাচ্ছো। খারজান = কোন খরজ/ খরচ। ফাখারাজু রব্বিকা = তোমার রবের দেয়া খারাজ/ খরচই তো। খায়রুন = উত্তম। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। খায়রুর রাযিক্বীনা = খায়রুর রাযিক্বীন/ উত্তম রিযিকদাতা।

নাকি তুমি তাদের কাছে চাচ্ছো কোন খরজ/ খরচ? তোমার রবের দেয়া খারাজ/ খরচই তো উত্তম। আর তিনিই খায়রুর রাযিক্বীন/ উত্তম রিযিকদাতা।

২৩:৭৩
ওয়া = আর। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লাতাদঊহুম = তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করছো। ইলা সিরাতিম মুসতাক্বীমা = সিরাতুল মুসতাক্বীমের/ সরল-সঠিক পথের দিকে।

আর নিশ্চয় তুমি তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করছো সিরাতুল মুসতাক্বীমের/ সরল-সঠিক পথের দিকে।

২৩:৭৪
ওয়া = আর। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। আনিস সিরাতি = তারা তো সঠিক পথ থেকে। লানাকিবূনা = বিচ্যুত/ সরে আছে।

আর নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, তারা তো সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত/ সরে আছে।

২৩:৭৫
ওয়া = আর। লাও = যদি। রহিমনাহুম = আমরা তাদেরকে রহমত/ দয়া করি। ওয়া = আর। কাশাফনা = আমরা দূর করে দিই। মা বিহিম মিন দুররিন = তাদের দু:খ-কষ্ট। লালাজ্জূ = তাহলেও তারা লেগে থাকবে। ফী তুগইয়ানিহিম = তাদের তুগইয়ানে/ অবাধ্যতায়। ইয়া’মাহূনা = তারা দিশেহারা হয়ে ঘুরবে।

আর যদি আমরা তাদেরকে রহমত/ দয়া করি আর আমরা দূর করে দিই তাদের দু:খ-কষ্ট, তাহলেও তারা লেগে থাকবে তাদের তুগইয়ানে/ অবাধ্যতায়, তারা দিশেহারা হয়ে ঘুরবে।

২৩:৭৬
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আখাযনাহুম = আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি। বিল আযাবি = আযাব/ শাস্তি দিয়ে। ফামাছতাকানূ = তবুও তারা বিনত হলো না। লিরব্বিহিম = তাদের রবের উদ্দেশ্যে। ওয়া = আর। মা ইয়াতাদররাঊনা = তারা কাতর প্রার্থনাও করলো না।

আর নিশ্চয় আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি আযাব/ শাস্তি দিয়ে, তবুও তারা বিনত হলো না তাদের রবের উদ্দেশ্যে আর তারা কাতর প্রার্থনাও করলো না।

২৩:৭৭
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। ফাতাহনা = আমরা খুলে দেবো। আলাইহিম = তাদের উপর। বাবান যা আযাবিন = কঠিন শাস্তির দ্বার/ দুয়ার। ইযা = তখন। হুম = তারা। ফীহি = উহাতে। মুবলিছূনা = নিরাশ হয়ে পড়বে।

শেষ পর্যন্ত যখন আমরা খুলে দেবো তাদের উপর কঠিন শাস্তির দ্বার/ দুয়ার, তখন তারা উহাতে নিরাশ হয়ে পড়বে।

২৩:৭৮
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা, যিনি। আনশাআ = সৃষ্টি করেছেন। লাকুমুছ ছামআ = তোমাদের জন্য (শ্রবণশক্তির) কান। ওয়াল আবসারা = ও (দর্শনশক্তির) চোখ। ওয়াল আফয়িদাতা = আর (চিন্তাশক্তির) ফুয়াদ/ অন্তর। ক্বালীলাম মা তাশকুরূনা = তোমরা অত্যন্ত অল্পই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।

আর তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য (শ্রবণশক্তির) কান, ও (দর্শনশক্তির) চোখ আর (চিন্তাশক্তির) ফুয়াদ/ অন্তর। তোমরা অত্যন্ত অল্পই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাক।

২৩:৭৯
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই। যারাআকুম = তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই কাছে। তুহশারূনা = তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।

আর তিনিই তোমাদেরকে ছড়িয়ে দিয়েছেন পৃথিবীতে। আর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।

২৩:৮০
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই। ইউহঈ = জীবন দেন। ওয়া = ও। ইউমীতু = মৃত্যু দেন। ওয়া = আর। লাহুখতিলাফুল্লায়লি ওয়ান নাহারি = তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে রাত ও দিনের ইখতিলাফ/ আবর্তন। আফালা তা’ক্বিলূনা = তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ common sense প্রয়োগ করো না?

আর তিনিই জীবন দেন ও মৃত্যু দেন আর তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে রাত ও দিনের ইখতিলাফ/ আবর্তন। তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ common sense প্রয়োগ করো না?

২৩:৮১
বাল = বরং। ক্বলূ = তারা বলে। মিছলা মা ক্বালাল আওয়ালূনা = উহার মতো যা আগের লোকেরাও বলেছিলো।

বরং তারা বলে উহার মতো, যা আগের লোকেরাও বলেছিলো।

২৩:৮২
ক্বলূ = তারা বলে। আ ইযা = তবে কি যখন। মিতনা = আমরা মরে যাবো। ওয়া = আর। কুন্না = আমরা হয়ে যাবো। তুরাবান = মাটি। ওয়া = ও। ইযামান = হাড়। আইন্না = তখনও কি নিশ্চয়। লামাবউছূনা = আমরা পুনরুত্থিত হবোই?

তারা বলে, ‘তবে কি যখন আমরা মরে যাবো আর আমরা হয়ে যাবো মাটি ও হাড়, তখনও কি নিশ্চয় আমরা পুনরুত্থিত হবোই?

২৩:৮৩
লাক্বাদ = নিশ্চয়। উয়িদনা = ওয়াদা দেয়া হয়েছে। নাহনু = আমাদেরকে। ওয়া = আর। আবাউনা = আমাদের বাপদাদাকে। হাযা = ইহাই। মিন ক্বাবলু = আগেও। ইন হাযা = ইহা তো নয়। ইল্লা আছাতীরুল আওয়ালীনা = আগের কালের উপকথা ছাড়া কিছু।

নিশ্চয় ওয়াদা দেয়া হয়েছে আমাদেরকে আর আমাদের বাপদাদাকে ইহাই আগেও। ইহা তো নয় আগের কালের উপকথা ছাড়া কিছু।

২৩:৮৪
ক্বুল = বলো। লিমানির আরদু = কার কর্তৃত্বাধীন এই পৃথিবী। ওয়া = আর। মান ফীহা = যারা উহাতে আছে তারা। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। তা’লামূনা = জেনে থাকো।

বলো, ‘কার কর্তৃত্বাধীন এই পৃথিবী আর যারা উহাতে আছে তারা? যদি তোমরা জেনে থাকো।

২৩:৮৫
ছাইয়াক্বূলূনা = তারা বলবে। লিল্লাহি = আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন। ক্বুল = বলো। আফালা তাযাক্কারূনা = তবুও কি তোমরা যিকির/ উপদেশগ্রহণ করবে না?

তারা বলবে, ‘আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন’। বলো, ‘তবুও কি তোমরা যিকির/ উপদেশগ্রহণ করবে না?’

২৩:৮৬
ক্বুল = বলো। মার রব্বুস সামাওয়াতিস সাবয়ি = কে সাত আকাশের রব? ওয়া = আর। রব্বুল আরশিল আযীমি = মহান আরশের রব?

বলো, ‘কে সাত আকাশের রব? আর মহান আরশের রব?

২৩:৮৭
ছাইয়াক্বূলূনা = তারা বলবে। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য (ঐসবের রবুবিয়াত)। ক্বুল = বলো। আফালা তাত্তাক্বূনা = তবুও কি তোমরা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না?

তারা বলবে, ‘আল্লাহরই জন্য (ঐসবের রবুবিয়াত)’। বলো, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না?’

২৩:৮৮
ক্বুল = বলো। মাম বিয়াদিহী = কার হাতে। মালাকূতু কুল্লু সাইয়িন = সবকিছুর মালাকূত/ আধিপত্য? ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। ইউজীরু = আশ্রয় দেন। ওয়া = আর। লা ইউজারু আলাইহি = তাঁর কোন আশ্রয়দানকারী প্রয়োজন নেই। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। তা’লামূনা = জানো।

বলো, ‘কার হাতে সবকিছুর মালাকূত/ আধিপত্য? আর তিনিই আশ্রয় দেন আর তাঁর কোন আশ্রয়দানকারী প্রয়োজন নেই। যদি তোমরা জানো।

২৩:৮৯
ছাইয়াক্বূলূনা = তারা বলবে। লিল্লাহি = (সবকিছু আছে) আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীনে। ক্বুল = বলো। ফাআন্না = তবুও কোথা থেকে। তুছহারূনা = তোমাদেরকে (কথার) যাদুতে মোহিত করা হচ্ছে?

তারা বলবে, ‘(সবকিছু আছে) আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীনে’। বলো, ‘তবুও কোথা থেকে তোমাদেরকে (কথার) যাদুতে মোহিত করা হচ্ছে?’

২৩:৯০
বাল = বরং। আতাইনাহুম = আমরা তাদের কাছে নিয়ে এসেছি। বিলহাক্বক্বি = সত্য। ওয়া = আর। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। লাকাযিবূনা = মিথ্যাবাদী।

বরং আমরা তাদের কাছে নিয়ে এসেছি সত্য (= কুরআন)। আর (= যখন তারা এর বিপরীতে কথা বলে তখন) নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী।

২৩:৯১
মাত্তাখাজাল্লাহু = আল্লাহ গ্রহণ করেননি। মিওঁ ওয়ালাদিন = কোন সন্তান। ওয়া = আর। মা কানা মাআহু = তাঁর সাথে নেই। মিন ইলাহিন = কোন ইলাহ। ইযাল লাযাহাবা = যদি থাকতো তবে অবশ্যই নিয়ে যেতো। কুল্লু = প্রত্যেক। ইলাহুন = ইলাহ। বিমা খালাক্বা = নিজ নিজ সৃষ্টি। ওয়া = আর। লাআলা = প্রাধান্য বিস্তার করতো। বা’দুহুম আলা বা’দিন = তাদের প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপর। ছুবহানাল্লাহি = ছুবহানাল্লাহ/ আল্লাহ পবিত্র। আম্মা ইয়াসিফূন = উহা থেকে যা তারা রচনা করে।

আল্লাহ গ্রহণ করেননি কোন সন্তান। আর তাঁর সাথে নেই কোন ইলাহ। যদি থাকতো তবে অবশ্যই নিয়ে যেতো প্রত্যেক ইলাহ নিজ নিজ সৃষ্টি আর প্রাধান্য বিস্তার করতো তাদের প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপর। ছুবহানাল্লাহ/ আল্লাহ পবিত্র, উহা থেকে যা তারা রচনা করে।

২৩:৯২
আলিমিল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি = তিনি গায়েবের/ অদৃশ্য জিনিসসমূহের এবং শাহাদাতের/ দৃশ্যমান জিনিসসমূহের ব্যাপারে জ্ঞানী। ফাতাআলা = তিনি মহান। আম্মা ইউশরিকূনা = তা থেকে যে শিরক তারা করছে।

তিনি গায়েবের/ অদৃশ্য জিনিসসমূহের এবং শাহাদাতের/ দৃশ্যমান জিনিসসমূহের ব্যাপারে জ্ঞানী। তিনি মহান, তা থেকে যে শিরক তারা করছে।

২৩:৯৩
ক্বুর রব্বি = বলো, ‘হে আমার রব। ইম্মা = যদি। তুরিয়ান্নী = আমাকে দেখিয়ে থাকেন। মা = যা। ইউআদূনা = তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে (= শাস্তি)।

বলো, ‘হে আমার রব, যদি আমাকে দেখিয়ে থাকেন যা তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে (= শাস্তি)’।

২৩:৯৪
রব্বি = (তাহলে) হে আমার রব। ফালা তাজআলনী = আমাকে করবেন না। ফিল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিমদের কওমের অন্তর্ভুক্ত।

(তাহলে) হে আমার রব, আমাকে করবেন না যালিমদের কওমের অন্তর্ভুক্ত’।

২৩:৯৫
ওয়া = আর। ইন্না = আমরা। আলা আন নুরিয়াকা মা নুয়িদুহুম লাক্বাদিরূনা = তোমাকে দেখাতে যা তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে (= তাদের শাস্তি) অবশ্যই সক্ষম।

আর আমরা তোমাকে দেখাতে যা তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে (= তাদের শাস্তি) অবশ্যই সক্ষম।

২৩:৯৬
ইদফা’ = তোমরা প্রতিরোধ করো। বিল্লাতি হিয়া আহছানুছ ছাইয়িয়াতা = ভালো দিয়ে মন্দকে। নাহনু = আমরা। আ’লামু = জানি। বিমা ইয়াসিফূনা = ঐ বিষয় যা তারা রচনা করে।

তোমরা প্রতিরোধ করো ভালো দিয়ে মন্দকে। আমরা জানি ঐ বিষয় যা তারা রচনা করে।

২৩:৯৭
ওয়া = আর। ক্বুর রব্বি = বলো, ‘হে আমার রব। আউযুবিকা = আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই। মিনা হামাযাতিশ শায়াতীনি = শয়তানদের নিন্দা থেকে।

আর বলো, ‘হে আমার রব, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানদের নিন্দা থেকে।

২৩:৯৮
ওয়া = আর। আউযুবিকা = আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই। রব্বি = হে আমার রব। আইঁ ইয়াহদুরূনি = আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকেও।

আর আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই, হে আমার রব, আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকেও’।

২৩:৯৯
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। জাআ = এসে যায়। আহাদাহুমুল মাওতু = তাদের কারো মৃত্যু। ক্বলা = তখন সে বলে। রব্বিরজিঊনি = হে আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠান।

শেষ পর্যন্ত যখন এসে যায় তাদের কারো মৃত্যু, তখন সে বলে, ‘হে আমার রব, আমাকে ফেরত পাঠান।

২৩:১০০
লাআল্লী = যেন আমি। আ’মালু সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে আসতে পারি। ফীমা তারাকতু = যা আমি তরক করে/ ছেড়ে এসেছি। কাল্লা = কখনো না। ইন্নাহা = নিশ্চয় উহা। কালিমাতুন = একটি কালেমা/ কথামাত্র। হুয়া = সে। ক্বায়িলুহা = যার উক্তিকারী। ওয়া = আর। মিওঁ ওয়ারায়িহিম = তাদের পিছনে আছে। বারযাখুন = একটি বারযাখ/ অন্তরাল। ইলা ইয়াওমি ইউবআছূনা = ইয়াওমু ইউবআছূন/ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।

যেন আমি আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে আসতে পারি যা আমি তরক করে/ ছেড়ে এসেছি। কখনো না, নিশ্চয় উহা একটি কালেমা/ কথামাত্র, সে যার উক্তিকারী। আর তাদের পিছনে আছে একটি বারযাখ/ অন্তরাল, ইয়াওমু ইউবআছূন/ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।

২৩:১০১
ফাইযা = তারপর যখন। নুফিখা = ফুঁ দেয়া হবে। ফিস সূরি = শিঙ্গায়। ফালা আনছাবা = থাকবে না কোন আত্মীয়তার বন্ধন। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। ওয়া = আর। লা ইয়াতাছাআলূনা = তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না।

তারপর যখন ফুঁ দেয়া হবে শিঙ্গায়, থাকবে না কোন আত্মীয়তার বন্ধন তাদের মধ্যে সেদিন আর তারা পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদও করবে না।

২৩:১০২
ফামান ছাক্বুলাত মাওয়াযিনুহু = সুতরাং যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান বেশি হবে)। ফাউলায়িকা হুমুল মুফলিহুন = তারাই মুফলিহূন/ সফলতা লাভকারী।

সুতরাং যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান বেশি হবে), তারাই মুফলিহূন/ সফলতা লাভকারী।

২৩:১০৩
ওয়া = আর। মান খাফফাত মাওয়াযিনূহু = যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান শূন্য বা তার চেয়ে কম হবে)। ফাউলায়িকাল্লাযীনা খাছিরূ আনফুসাহুম = তারাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে নিজেদেরকে। ফী জাহান্নামা খালিদূনা = তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।

আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান শূন্য বা তার চেয়ে কম হবে), তারাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে নিজেদেরকে। তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।

২৩:১০৪
তালফাহু = দগ্ধ করবে। উজূহাহুমুন্নারু = তাদের মুখমন্ডলকে আগুন। ওয়া = আর। হুম = তারা। ফীহা = তার মধ্যে। কালিহূনা = বীভৎস চেহারার হবে।

দগ্ধ করবে তাদের মুখমন্ডলকে আগুন। আর তারা তার মধ্যে বীভৎস চেহারার হবে।

২৩:১০৫
আলাম = এটাই নয়কি যে। তাকুন আয়াতী তুতলা = যখন আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হতো। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। ফাকুনতুমম = তখন তোমরা। বিহা = উহাকে। তুকাযযিবূনা = মিথ্যা সাব্যস্ত করতে।

এটাই নয়কি যে, যখন আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হতো তোমাদের কাছে, তখন তোমরা উহাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে?

২৩:১০৬
ক্বলূ = তারা বলবে। রব্বানা = হে আমাদের রব। গালাবাত আলাইনা = আমাদেরকে পরাজিত করেছে। শিক্বওয়াতিনা = আমাদের মানসিক বিকারগ্রস্ততা। ওয়া = আর। কুন্না = আমরা ছিলাম। ক্বাওমান দল্লীনা = বিভ্রান্ত কওম।

তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরাজিত করেছে আমাদের মানসিক বিকারগ্রস্ততা, আর আমরা ছিলাম বিভ্রান্ত কওম।

২৩:১০৭
রব্বানা = হে আমাদের রব। আখরিজনা = আমাদেরকে খারিজ/ বের করুন। মিনহা = উহা থেকে। ফাইন = তারপর যদি। উদনা = আমরা আবার আগের মতো করি। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয় আমরা। যালিমূনা = যালিম (প্রমাণিত হবো)।

হে আমাদের রব, আমাদেরকে খারিজ/ বের করুন উহা থেকে। তারপর যদি আমরা আবার আগের মতো করি, তাহলে নিশ্চয় আমরা যালিম (প্রমাণিত হবো)।

২৩:১০৮
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। আখছাঊ = তোমরা হীন অবস্থায় পড়ে থাকো। ফীহা = উহার মধ্যেই। ওয়া = আর। লা তুকাল্লিমূনি = তোমরা আমার সাথে কথা বলবে না।

তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমরা হীন অবস্থায় পড়ে থাকো উহার মধ্যেই। আর তোমরা আমার সাথে কথা বলবে না’।

২৩:১০৯
ইন্নাহু = নিশ্চয়। কানা = ছিলো। ফারীক্বুম মিন ইবাদী = আমার বান্দাদের মধ্যে একদল। ইয়াক্বূলূনা = যারা বলতো। রব্বানা = হে আমাদের রব। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ফাগফিরলানা = সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। ওয়ারহামনা = আর আমাদেরকে রহমত করুন। ওয়া = আর। আনতা = আপনিই। খায়রুর রাহিমীনা = খায়রুর রাহিমীন/ উত্তম রহমতকারী।

নিশ্চয় ছিলো আমার বান্দাদের মধ্যে একদল, যারা বলতো, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি; সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর আমাদেরকে রহমত করুন। আর আপনিই খায়রুর রাহিমীন/ উত্তম রহমতকারী’।

২৩:১১০
ফাত্তাখাজতুমূহুম = তখন তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছিলে। ছিখরিয়্যান = ঠাট্টার পাত্ররূপে। হাত্তা = এমনকি তা। আনছাওকুম = তোমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছিলো। যিকরী = আমার যিকির/ স্মরণ। ওয়া = আর। কুনতুম মিনহুম তাদহাকূনা = তোমরা তাদেরকে ঠাট্টা করে রস পেতে।

তখন তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছিলে ঠাট্টার পাত্ররূপে। এমনকি তা তোমাদেরকে ভুলিয়ে দিয়েছিলো আমার যিকির/ স্মরণ। আর তোমরা তাদেরকে ঠাট্টা করে রস পেতে।

২৩:১১১
ইন্নী = নিশ্চয় আমি। জাযায়তুহুমুল ইয়াওমা = তাদেরকে পুরস্কার দিয়েছি আজ। বিমা সবারূ = তাদের সবরের কারণে। আন্নাহুম = ব্যাপার এই যে। হুমুল ফায়িযূনা = তারাই সফলকাম।

নিশ্চয় আমি তাদেরকে পুরস্কার দিয়েছি আজ, তাদের সবরের কারণে। ব্যাপার এই যে, তারাই সফলকাম।

২৩:১১২
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। কাম লাবিছতুম = তোমরা কতসময় অবস্থান করেছিলে? ফিল আরদি = পৃথিবীতে। আদাদা ছিনীনা = বছরের হিসাবে।

তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমরা কতসময় অবস্থান করেছিলে পৃথিবীতে, বছরের হিসাবে?’

২৩:১১৩
ক্বলূ = তারা বলবে। লাবিছনা = আমরা অবস্থান করেছি। ইয়াওমান = একদিন। আও = অথবা। বা’দা ইয়াওমিন = একদিনের কিছু অংশ। ফাছআলিল আদ্দীনা = সুতরাং আপনি জিজ্ঞাসা করুন গণনাকারীদেরকে।

তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছি একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ। সুতরাং আপনি জিজ্ঞাসা করুন গণনাকারীদেরকে’।

২৩:১১৪
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। ইল্লাবিছতুম = তোমরা অবস্থান করোনি। ইল্লা ক্বালীলান = অল্পক্ষণ ছাড়া। লাও = যদি। আন্নাকুম কুনতুম তা’লামূনা = তোমরা জানতে।

তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমরা অবস্থান করোনি অল্পক্ষণ ছাড়া। যদি তোমরা জানতে’।

২৩:১১৫
আফাহাছিবতুম = তোমরা কি হিসাব/ ধারণা করে নিয়েছো যে। আন্নামা = প্রকৃতপক্ষে। খালাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। আবাছান = অনর্থক। ওয়া = আর। আন্নাকুম = এও যে, তোমরা। ইলাইনা = আমাদের কাছে। লা তুরজাঊনা = ফিরে আসবে না।

তোমরা কি হিসাব/ ধারণা করে নিয়েছো যে, প্রকৃতপক্ষে আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি অনর্থক; আর এও যে, তোমরা আমাদের কাছে ফিরে আসবে না?

২৩:১১৬
ফাতাআলাল্লাহুল মালিকুল হাক্ব = মহান আল্লাহ মালিকুল হাক্ব/ প্রকৃত অধিপতি। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। রব্বুল আরশিল কারীমি = তিনি মর্যাদাশীল আরশের রব।

মহান আল্লাহ মালিকুল হক্ব/ প্রকৃত অধিপতি। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনি মর্যাদাশীল আরশের রব।

২৩:১১৭
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াদউ = যে কেউ আহবান করবে। মায়াল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ইলাহান আখারা = অন্য ইলাহকে। লা বুরহানা লাহু বিহী = তার জন্য উহার ব্যাপারে কোন বুরহান/ প্রমাণ নেই। ফাইন্নামা = প্রকৃতপক্ষে। হিসাবুহু = তার হিসাব হবে। ইনদা রব্বিহী = তার রবের কাছে। ইন্নাহু = নিশ্চয়। লা ইউফলিহুল কাফিরূনা = ফালাহ/ সফলতা লাভ করে না কাফিরগণ।

আর যে কেউ আহবান করবে আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে, তার জন্য উহার ব্যাপারে কোন বুরহান/ প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে তার হিসাব হবে তার রবের কাছে। নিশ্চয় ফালাহ/ সফলতা লাভ করে না কাফিরগণ।

২৩:১১৮
ওয়া = আর। ক্বুর রব্বিগফির ওয়ারহাম = বলো, ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। ওয়া = আর। আনতা = আপনিই। খায়রুর রাহিহীনা = খায়রুর রাহিমীন/ উত্তম দয়াশীল।

আর, ‘বলো, ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। আর আপনিই খায়রুর রাহিমীন/ উত্তম দয়াশীল’।