২০:১
তোয়া হা = তোয়া হা।
তোয়া হা।
২০:২
মা আনযালনা = আমরা নাযিল করিনি। আলাইকাল ক্বুরআনু = তোমার উপর আল কুরআন। লিতাশক্বা = এজন্য যে, তুমি কষ্ট পাবে।
আমরা নাযিল করিনি তোমার উপর আল কুরআন এজন্য যে, তুমি কষ্ট পাবে।
২০:৩
ইল্লা তাযকিরাতাল লিমা ইয়াখশা = যে (আল্লাহকে) ভয় করে তার জন্য তাযকিরা/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ সংবিধান হিসাবে ছাড়া।
যে (আল্লাহকে) ভয় করে তার জন্য তাযকিরা/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ সংবিধান হিসাবে ছাড়া।
২০:৪
তানযীলাম মিম্মান = তাঁর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত যিনি। খালাক্বাল আরদি ওয়াছ ছামাওয়াতিল উলা = সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমন্ডলী।
তাঁর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত যিনি সৃষ্টি করেছেন পৃথিবী ও সমুচ্চ আকাশমন্ডলী।
২০:৫
আর রহমানু = তিনিই রহমান/ দয়াময়। আলাল আরশিছতাওয়া = আরশে সমাসীন হয়েছেন।
তিনিই রহমান/ দয়াময়, আরশে সমাসীন হয়েছেন।
২০:৬
লাহু = তাঁরই অধিকারভুক্ত। মা ফিছ ছামাওয়াতি = যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মা ফিল আরদি = যা কিছু আছে পৃথিবীতে। ওয়া = আর। মা বায়নাহুমা = যা কিছু আছে এ দুয়ের মধ্যে। ওয়া = আর। মা তাহতাছ ছারা = যা কিছু আছে ভিজা মাটির নিচে (= মাটির গভীরে)।
তাঁরই অধিকারভুক্ত যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে আর যা কিছু আছে এ দুয়ের মধ্যে আর যা কিছু আছে ভিজা মাটির নিচে (= মাটির গভীরে)।
২০:৭
ওয়া = আর। ইন = যদি। তাজহার বিল ক্বাওলি = তুমি উচ্চস্বরে কথা বলো। ফাইন্নাহু = তবে নিশ্চয় তিনি তো। ইয়া’লামুছ ছিররা = গোপন বিষয়ও জানেন। ওয়া = আর। আখফা = নি:শব্দ কথাও শুনেন।
আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বলো, তবে নিশ্চয় তিনি তো গোপন বিষয়ও জানেন আর নি:শব্দ কথাও শুনেন।
২০:৮
আল্লাহু = আল্লাহু। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। লাহুল আছমাউল হুছনা = তাঁর আছে আসমাউল হুসনা/ সুন্দর নামসমূহ।
আল্লাহু; কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তাঁর আছে আসমাউল হুসনা/ সুন্দর নামসমূহ।
২০:৯
ওয়া = আর। হাল আতাকা = তোমার কাছে কি এসেছে। হাদীসু মূসা = মূসার হাদীস/ বৃত্তান্ত/ কাহিনী?
আর তোমার কাছে কি এসেছে মূসার হাদীস/ বৃত্তান্ত/ কাহিনী?
২০:১০
ইয = যখন। রআ = সে দেখেছে। নারান = আগুন। ফাক্বলা = তখন সে বলেছে। লিআহলিহিমকুছূ = তার পরিবারকে, ‘তোমরা থাকো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আনাছতু = দেখেছি। নারান = আগুন। লাআল্লী = সম্ভবত। আতীকুম = আমি তোমাদের কাছে আনবো। মিনহা = উহা থেকে। বিক্বাবাছিন = কিছু অঙ্গার। আও = অথবা। আজিদু = আমি পাবো। আলান্নারি = আগুনের পাশে। হুদান = হুদা/ হিদায়াত/ পথের সন্ধান।
যখন সে দেখেছে আগুন; তখন সে বলেছে তার পরিবারকে, ‘তোমরা থাকো। নিশ্চয় আমি দেখেছি আগুন। সম্ভবত আমি তোমাদের কাছে আনবো উহা থেকে কিছু অঙ্গার। অথবা আমি পাবো আগুনের পাশে হুদা/ হিদায়াত/ পথের সন্ধান’।
২০:১১
ফালাম্মা = তারপর যখন। আতাহা = সে উহার (= আগুনের) কাছে এসেছে। নূদিয়া = তাকে ডাকা হয়েছে। ইয়া মূসা = হে মূসা।
তারপর যখন সে উহার (= আগুনের) কাছে এসেছে, তখন তাকে ডাকা হয়েছে, ‘হে মূসা।
২০:১২
ইন্নী = নিশ্চয়। আনা = আমি। রব্বুকা = তোমার রব। ফাখলা’ = সুতরাং তুমি খুলে ফেলো। না’লায়কা = তোমার জুতা দুটি। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি আছো। বিল ওয়াদিল মুক্বাদ্দাসি তুয়ান = পবিত্র তুয়া উপত্যকায়।
নিশ্চয় আমি তোমার রব। সুতরাং তুমি খুলে ফেলো তোমার জুতা দুটি। নিশ্চয় তুমি আছো পবিত্র তুয়া উপত্যকায়।
২০:১৩
ওয়া = আর। আনাখতারতুকা = আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি। ফাছতামি’ = সুতরাং তুমি (মনোযোগের সাথে) শুনো। লিমা ইউহা = যা ওহী করা হয়।
আর আমি তোমাকে বেছে নিয়েছি। সুতরাং তুমি (মনোযোগের সাথে) শুনো, যা ওহী করা হয়।
২০:১৪
ইন্নানী আনাল্লাহু = নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লা আনা = কোন ইলাহ নেই, আমি ছাড়া। ফা’বুদুনী = সুতরাং আমার ইবাদাত/ দাসত্ব করো। ওয়া = আর। আক্বিমিস সলাতী = সালাত কায়েম করো। লিযিকরী = আমার যিকিরের/ স্মরণের জন্য।
নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। কোন ইলাহ নেই, আমি ছাড়া। সুতরাং আমার ইবাদাত/ দাসত্ব করো। আর সালাত কায়েম করো আমার যিকিরের/ স্মরণের জন্য।
২০:১৫
ইন্নাছ ছায়াতা = নিশ্চয় সায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত। আতিয়াতুন = আসবেই। আকাদু উখফীহা = আমি উহা গোপন রাখতে চাই। লিতুজযা = যেন প্রতিফল পায়। কুল্লু = প্রত্যেক। নাফসিন = ব্যক্তি। বিমা তাছআ = তার প্রচেষ্টার কারণে।
নিশ্চয় সায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত আসবেই। আমি উহা গোপন রাখতে চাই, যেন প্রতিফল পায় প্রত্যেক ব্যক্তি তার প্রচেষ্টার কারণে।
২০:১৬
ফালা ইয়াসুদ্দান্নাকা = সুতরাং তোমাকে যেন বাধা দিতে না পারে। আনহা = উহা থেকে (= উহার জন্য প্রস্তুত থাকা থেকে)। মাল্লা ইউ’মিনু বিহা = সেই ব্যক্তি যে উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে না। ওয়াত্তাবায়া = আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। হাওয়াহু = তার নিজের হাওয়ার/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের। ফাতারদা = (কারণ) তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
সুতরাং তোমাকে যেন বাধা দিতে না পারে উহা থেকে (= উহার জন্য প্রস্তুত থাকা থেকে) সেই ব্যক্তি যে উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে না, আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তার নিজের হাওয়ার/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের। (কারণ) তাহলে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।
২০:১৭
ওয়া = আর। মা তিলকা = উহা কী। বিইয়ামীনিকা = তোমার ডান হাতে। ইয়া মূসা = হে মূসা।
আর উহা কী তোমার ডান হাতে (= তোমার মিশনের ক্ষেত্রে শক্তির উপকরন কী), হে মূসা?
২০:১৮
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। হিয়া = উহা। আসাইয়া = আমার লাঠি। আতাওয়াক্কাউ আলাইহা = আমি উহার উপর ভর দিই। ওয়া = আর। আহুশশু বিহা আলা গানামী = আমি উহা দ্বারা পাতা ঝাড়ি আমার মেষপালের জন্য। ওয়া = আর। লিইয়া = আমার জন্য আছে। ফীহা = উহার মধ্যে। মাআরিবু উখরা = অন্য আরো প্রয়োজন/ প্রায়োগিক গুরুত্ব।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘উহা আমার লাঠি। আমি উহার উপর ভর দিই। আর আমি উহা দ্বারা পাতা ঝাড়ি আমার মেষপালের জন্য আর আমার জন্য আছে উহার মধ্যে অন্য আরো প্রয়োজন/ প্রায়োগিক গুরুত্ব।
২০:১৯
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। আলক্বিহা = উহাকে নিক্ষেপ করো। ইয়া মূসা = হে মূসা।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন ‘উহাকে নিক্ষেপ করো, হে মূসা’।
২০:২০
ফাআলক্বাহা = তারপর সে তা নিক্ষেপ করেছে। ফাইযা = তখনি। হিয়া = উহা হয়েছে। হাইয়াতুন = প্রাণবন্ত। তাছআ = উহা ছুটোছুটি করেছে/ স্পন্দিত হয়েছে।
তারপর সে তা নিক্ষেপ করেছে। তখনি উহা হয়েছে প্রাণবন্ত। উহা ছুটোছুটি করেছে/ স্পন্দিত হয়েছে।
২০:২১
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। খুজহা = উহাকে ধরো। ওয়া = আর। লা তাখফা = তুমি ভীত হয়ো না। ছানুয়ীদুহা = শীঘ্রই আমি উহাকে ফিরিয়ে দেবো। ছীরাতাহাল উলা = উহার পূর্বের অবস্থায়।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘উহাকে ধরো। আর তুমি ভীত হয়ো না। শীঘ্রই আমি উহাকে ফিরিয়ে দেবো উহার পূর্বের অবস্থায়।
২০:২২
ওয়াদমুম ইয়াদাকা ইলা জানাহিকা = আর চেপে ধরো তোমার হাতকে তোমার বাহুমূলের/ বগলের দিকে (= মনে সাহস সঞ্চয় করো)। তাখরুজ বায়দাআ = উহা বের হবে (আত্মবিশ্বাসের আভায়) শুভ্র সমুজ্জল হয়ে। মিন গায়রি ছূয়িন = কোনরূপ মন্দ অবস্থা ছাড়াই। আয়াতান উখরা = উহা হবে আরেকটি আয়াত/ নিদর্শন।
আর চেপে ধরো তোমার হাতকে তোমার বাহুমূলের/ বগলের দিকে (= মনে সাহস সঞ্চয় করো)। উহা বের হবে (আত্মবিশ্বাসের আভায়) শুভ্র সমুজ্জল হয়ে, কোনরূপ মন্দ অবস্থা ছাড়াই। উহা হবে আরেকটি আয়াত/ নিদর্শন।
২০:২৩
লিনুরিয়াকা = যেন আমরা তোমাকে দেখাই। মিন আয়াতিনাল কুবরা = আমাদের কিছু বড় আয়াত/ নিদর্শন।
যেন আমরা তোমাকে দেখাই আমাদের কিছু বড় আয়াত/ নিদর্শন।
২০:২৪
ইযহাব = তুমি যাও। ইলাল ফিরআউনা = ফেরাউনের কাছে। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। তগা = (কুফরির) সীমালংঘন করেছে/ তাগুত হয়েছে।
তুমি যাও ফেরাউনের কাছে। নিশ্চয় সে (কুফরির) সীমালংঘন করেছে/ তাগুত হয়েছে।
২০:২৫
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। রব্বিশরাহলী = হে আমার রব, উন্মুক্ত করে দিন আমার জন্য। সদরী = আমার সদর/ মস্তিষ্ক (=আমার কাজে সফলতার জন্য আমার মস্তিষ্ককে সকল বাস্তব পরিস্থিতি সম্যক ও সঠিকভাবে উপলব্ধি করা এবং তা মোকাবেলা করার উপযোগী করে দিন)।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘হে আমার রব, উন্মুক্ত করে দিন আমার জন্য আমার সদর/ মস্তিষ্ক (= আমার কাজে সফলতার জন্য আমার মস্তিষ্ককে সকল বাস্তব পরিস্থিতি সম্যক ও সঠিকভাবে উপলব্ধি করা এবং তা মোকাবেলা করার উপযোগী করে দিন)।
২০:২৬
ওয়া = আর। ইয়াছছিরলী = সহজ করে দিন আমার জন্য। আমরী = আমার কাজ/ দায়-দায়িত্ব।
আর সহজ করে দিন আমার জন্য আমার কাজ/ দায়-দায়িত্ব।
২০:২৭
ওয়াহলুল = আর খুলে দিন। উক্বদাতাম মিল্লিসানী = আমার জিহবার গিরা/ দূর করে দিন আমার ভাষার অস্পষ্টতা ও জড়তা।
আর খুলে দিন আমার জিহবার গিরা/ দূর করে দিন আমার ভাষার অস্পষ্টতা ও জড়তা।
২০:২৮
ইয়াফক্বাহূ = যেন তারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে। ক্বাওলী = আমার বক্তব্য।
যেন তারা উপলব্ধি করে আমার বক্তব্য।
২০:২৯
ওয়াজআল্লী = আর করে দিন আমার জন্য। ওয়াযীরাম মিন আহলী = উজির/ সহযোগী, আমার আহল/ পরিবার থেকে।
আর করে দিন আমার জন্য উজির/ সহযোগী আমার আহল/ পরিবার থেকে।
২০:৩০
হারূনা আখী = আমার ভাই হারূনকে।
আমার ভাই হারূনকে।
২০:৩১
_শদুদ = মজবুত করে দিন। বিহী = তার দ্বারা। আযরী = আমার শক্তি।
মজবুত করে দিন তার দ্বারা আমার শক্তি।
২০:৩২
ওয়া = আর। আশরিকহু = তাকে শরিক করে দিন। ফী আমরী = আমার কাজের ক্ষেত্রে।
আর তাকে শরিক করে দিন আমার কাজের ক্ষেত্রে।
২০:৩৩
কায় = যেন। নুছাব্বিহাকা = আমরা আপনার তাসবীহ/ পবিত্রতা প্রকাশ করতে পারি। কাছীরান = অধিক পরিমাণে।
যেন আমরা আপনার তাসবীহ/ পবিত্রতা প্রকাশ করতে পারি অধিক পরিমাণে।
২০:৩৪
ওয়া = আর। নাযকুরাকা = আমরা আপনার যিকির/ স্মরণ করতে পারি। কাছীরান = অধিক পরিমাণে।
আর আমরা আপনার যিকির/ স্মরণ করতে পারি অধিক পরিমাণে।
২০:৩৫
ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। কুনতা = আছেন। বিনা = আমাদের প্রতি। বাসীরান = দৃষ্টিবান রূপে।
নিশ্চয় আপনি আছেন আমাদের প্রতি দৃষ্টিবান রূপে।
২০:৩৬
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। ক্বাদ = নিশ্চয়। উতীকা = তোমাকে দেয়া হলো। ছু’লাকা = তোমার প্রার্থিত বিষয়। ইয়া মূসা = হে মূসা।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তোমাকে দেয়া হলো তোমার প্রার্থিত বিষয়, হে মূসা।
২০:৩৭
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। মানান্না = আমরা অনুগ্রহ করেছি। আলাইকা = তোমার উপর। মাররাতান উখরা = আরেকবার।
আর নিশ্চয় আমরা অনুগ্রহ করেছি তোমার উপর আরেকবার।
২০:৩৮
ইয = (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আওহায়না = আমরা ওহী করেছিলাম। ইলা উম্মিকা = তোমার মায়ের কাছে। মা ইউহা = যা ওহী করার ছিলো।
(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা ওহী করেছিলাম তোমার মায়ের কাছে, যা ওহী করার ছিলো।
২০:৩৯
আনিক্বযিফীহি = তাকে রেখে দাও। ফিত তাবূতি = সিন্ধুকের মধ্যে। ফাক্বযিফীহি = তারপর তাকে ভাসিয়ে দাও। ফিল ইয়াম্মি = উপনদীতে। ফালইউলক্বিহিল ইয়াম্মু = তাহলে নদী তাকে ঠেলে দেবে। বিছছাহিলি = নদীতীরে। ইয়া’খুজহু = তাকে তুলে নেবে। আদুউউল্লী = আমার শত্রু। ওয়া = ও। আদুউউল্লাহু = তার শত্রু। ওয়া = আর। আলক্বায়তু = আমি ঢেলে দিয়েছি। আলাইকা = তোমার উপর। মাহাব্বাতাম মিন্নী = আমার পক্ষ থেকে ভালবাসা। ওয়া = আর। লিতুসনাআ = যেন তুমি প্রতিপালিত হও। আলা আয়নী = আমার চোখের সামনে।
‘তাকে (= তোমার শিশুকে/ মূসাকে) রেখে দাও সিন্ধুকের মধ্যে। তারপর তাকে ভাসিয়ে দাও উপনদীতে। তাহলে নদী তাকে ঠেলে দেবে নদীতীরে। তাকে তুলে নেবে আমার শত্রু ও তার শত্রু’। আর আমি ঢেলে দিয়েছি তোমার উপর আমার পক্ষ থেকে ভালবাসা আর যেন তুমি প্রতিপালিত হও আমার চোখের সামনে।
২০:৪০
ইয = (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। তামশী = চলছিলো। উখতুকা = তোমার বোন। ফাতাক্বূলু = তারপর সে বলেছে। হাল আদুল্লুকুম = আমি কি তোমাদের সন্ধান দেবো। আলা মাইঁ ইয়াকফুলুহু = এ বিষয়ে যে, কে তাকে লালন-পালনের ভার নিতে পারে। ফারাজা’নাকা = তখন আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। ইলা উম্মিকা = তোমার মায়ের কাছে। কায় = যেন। তাক্বাররা আয়নুহা = তার চোখ শীতল হয়। ওয়া = আর। লা তাহযানা = সে দু:খিত না হয়। ওয়া = আর (স্মরণ করো যে,)। ক্বাতালতা = তুমি কতল/ হত্যা করেছো। নাফসান = এক ব্যক্তিকে। ফানাজ্জায়নাকা = তারপর আমরা তোমাকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি। মিনাল গামমি = দুশ্চিন্তা থেকে। ওয়া = আর। ফাতান্নাকা = আমরা তোমাকে পরীক্ষা করেছি। ফুতূনান = যথাযথ পরীক্ষা। ফালাবিছতা = তারপর তুমি অবস্থান করেছো। ছিনীনা = কয়েক বছর। ফী আহলি মাদইয়ানা = আহলে মাদিয়ানে/ মাদিয়ানবাসীদের মধ্যে। ছুম্মা = তারপর। জি’তা = তুমি এসেছো। আলা ক্বাদারিন = প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত যথোপযোগী সময়ে। ইয়া মূসা = হে মূসা।
(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন চলছিলো তোমার বোন। তারপর সে বলেছে, ‘আমি কি তোমাদের সন্ধান দেবো এ বিষয়ে যে, কে তাকে লালন-পালনের ভার নিতে পারে?’। তখন আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছি তোমার মায়ের কাছে; যেন তার চোখ শীতল হয় আর সে দু:খিত না হয়। আর (স্মরণ করো যে,) তুমি কতল/ হত্যা করেছো এক ব্যক্তিকে। তারপর আমরা তোমাকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি দুশ্চিন্তা থেকে। আর আমরা তোমাকে পরীক্ষা করেছি, যথাযথ পরীক্ষা। তারপর তুমি অবস্থান করেছো কয়েক বছর আহলে মাদিয়ানে/ মাদিয়ানবাসীদের মধ্যে। তারপর তুমি এসেছো প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত যথোপযোগী সময়ে, হে মূসা।
২০:৪১
ওয়াসতনা’তুকা = আর আমি তোমাকে প্রস্তুত করেছি। লিনাফসী = আমার নিজের জন্য (= আমার রিসালাত প্রদানের জন্য)।
আর আমি তোমাকে প্রস্তুত করেছি আমার নিজের জন্য (= আমার রিসালাত প্রদানের জন্য)।
২০:৪২
ইযহাব = যাও। আনতা = তুমি। ওয়া = আর। আখূকা = তোমার ভাই। বিআয়াতী = আমার আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ নিয়ে। ওয়া = আর। লা তানিয়া = তোমরা দুজনে শিথিলতা প্রদর্শন করো না। ফী যিকরী = আমার যিকিরের/ স্মরণের ক্ষেত্রে।
যাও তুমি আর তোমার ভাই আমার আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ নিয়ে। আর তোমরা দুজনে শিথিলতা প্রদর্শন করো না আমার যিকিরের/ স্মরণের ক্ষেত্রে।
২০:৪৩
ইযহাবা = তোমরা দুজনে যাও। ইলা ফিরআউনা = ফেরাউনের কাছে। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। তগা = (কুফরির) সীমালংঘন করেছে/ তাগুত হয়েছে।
তোমরা দুজনে যাও ফেরাউনের কাছে। নিশ্চয় সে (কুফরির) সীমালংঘন করেছে/ তাগুত হয়েছে।
২০:৪৪
ফাক্বূলা = তারপর তোমরা দুজনে বলো। লাহু = তাকে উদ্দেশ্য করে। ক্বাওলাল লাইয়িনান = নম্র ভাষায় কথা। লাআল্লাহু = যাতে সে। ইয়াতাযাক্কারু = সে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। আও = অথবা। ইয়াখশা = ভয় করতে পারে।
তারপর তোমরা দুজনে বলো তাকে উদ্দেশ্য করে নম্র ভাষায় কথা, যাতে সে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে অথবা ভয় করতে পারে।
২০:৪৫
ক্বলা = তারা দুজনে বলেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। ইন্নানা = নিশ্চয় আমরা। নাখাফু = আশংকা করি। আইঁ ইয়াফরুতা = যে, সে দুর্ব্যবহার করবে। আলাইনা = আমাদের উপর। আও = বা। আইঁ ইয়াতগা = অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করবে।
তারা দুজনে বলেছে, ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা আশংকা করি যে, সে দুর্ব্যবহার করবে আমাদের উপর বা অন্যায় আচরণে সীমালংঘন করবে।
২০:৪৬
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। লা তাখাফা = তোমরা দুজন ভয় করো না। ইন্নানী = নিশ্চয় আমি। মাআকুমা = তোমাদের দুজনের সাথে আছি। আছমাউ = আমি সব শুনি। ওয়া = আর। আরা = আমি সব দেখি।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা দুজন ভয় করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের দুজনের সাথে আছি। আমি সব শুনি আর আমি সব দেখি।
২০:৪৭
ফা’তিয়াহু = সুতরাং তোমরা দুজন তার কাছে যাও। ফাক্বূলা = তারপর তোমরা দুজন বলো। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। রাসূলা রব্বিকা = তোমার রবের দুজন রসূল। ফাআরছিল = সুতরাং তুমি পাঠিয়ে দাও। মাআনা = আমাদের সাথে। বানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলকে। ওয়া = আর। লা তুআযযিবুহুম = তাদেরকে আযাব দিও না/ নির্যাতন করো না। ক্বাদ = নিশ্চয়। জি’নাকা = আমরা তোমার কাছে এসেছি। বিআয়াতিম মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে আয়াতসহ/ নিদর্শনসহ। ওয়াছ ছালামু আলা মানিত্তাবায়িল হুদা = আর ‘আস সালামু আলা মানিত্তাবায়িল হুদা’/ ‘শান্তি তার উপর যে হিদায়াতের অনুসরণ করে’।
সুতরাং তোমরা দুজন তার কাছে যাও। তারপর তোমরা দুজন বলো, “নিশ্চয় আমরা তোমার রবের দুজন রসূল। সুতরাং তুমি পাঠিয়ে দাও আমাদের সাথে বানী ইসরাইলকে, আর তাদেরকে আযাব দিও না/ নির্যাতন করো না। নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে এসেছি তোমার রবের পক্ষ থেকে আয়াতসহ/ নিদর্শনসহ। আর ‘আস সালামু আলা মানিত্তাবায়িল হুদা’/ ‘শান্তি তার উপর যে হিদায়াতের অনুসরণ করে’।
২০:৪৮
ইন্না ক্বাদ = নিশ্চয়। উহিয়া ইলাইনা = ওহী করা হয়েছে আমাদের কাছে। আন্নাল আযাবা = এ মর্মে যে, আযাব/ শাস্তি নির্ধারিত আছে। আলা মান = তার উপর যে। কাযযাবা = মিথ্যা আরোপ করে। ওয়া = আর। তাওয়াল্লা = মুখ ফিরিয়ে নেয়।
নিশ্চয় ওহী করা হয়েছে আমাদের কাছে এ মর্মে যে, আযাব/ শাস্তি নির্ধারিত আছে তার উপর যে মিথ্যা আরোপ করে আর মুখ ফিরিয়ে নেয়।
২০:৪৯
ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। ফামার রব্বুকুমা = তাহলে কে তোমাদের দুজনের রব। ইয়া মূসা = হে মূসা।
সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘তাহলে কে তোমাদের দুজনের রব, হে মূসা?
২০:৫০
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। রব্বুনাল্লাযী = তিনিই আমাদের রব যিনি। আ’তা = দিয়েছেন। কুল্লা শাইয়িন = প্রত্যেক জিনিসকে। খালক্বাহু = উহার সৃষ্টি কাঠামো। ছুম্মা = তারপর। হাদা = তাকে তার হাদা/ হিদায়াত/ চলার পথ/ গুণাগুণ/ স্বভাব-প্রকৃতি দিয়েছেন।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘তিনিই আমাদের রব যিনি দিয়েছেন প্রত্যেক জিনিসকে উহার সৃষ্টি কাঠামো তারপর তাকে তার হাদা/ হিদায়াত/ চলার পথ/ গুণাগুণ/ স্বভাব-প্রকৃতি দিয়েছেন’।
২০:৫১
ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। ফামা বালুল ক্বুরূনিল ঊলা = তাহলে পূর্ববর্তী জনপদবাসীদের অবস্থা কী?
সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘তাহলে পূর্ববর্তী জনপদবাসীদের অবস্থা কী?
২০:৫২
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ইলমুহা = উহার ইলম/ জ্ঞান। ইনদা রব্বী = আমার রবের কাছে আছে। ফী কিতাবিন = কিতাবে লিপিবদ্ধ অবস্থায়। লা ইয়াদিল্লু রব্বী = আমার রব ভুল করেন না। ওয়া = আর। লা ইয়ানছা = তিনি ভুলেও যান না।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘উহার ইলম/ জ্ঞান আমার রবের কাছে আছে কিতাবে লিপিবদ্ধ অবস্থায়। আমার রব ভুল করেন না আর তিনি ভুলেও যান না’।
২০:৫৩
আল্লাযী = যিনি। জাআলা = সৃষ্টি করেছেন। লাকুমুল আরদা = তোমাদের জন্য পৃথিবীকে। মাহদান = বিছানারূপে। ওয়া = আর। ছালাকা = বানিয়ে দিয়েছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। ফীহা = উহার মধ্যে। ছুবুলান = পথসমূহ। ওয়া = আর। আনযালা = নাযিল/ বর্ষণ করেছেন। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। মাআন = (বৃষ্টির) পানি। ফাআখরাজনা = তারপর আমরা বের করেছি। বিহী = উহা দ্বারা। আজওয়াজাম মিন্নবাতিন সাত্তা = বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের জোড়াসমূহ।
যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানারূপে আর বানিয়ে দিয়েছেন তোমাদের জন্য উহার মধ্যে পথসমূহ। আর নাযিল/ বর্ষণ করেছেন আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি। তারপর আমরা বের করেছি উহা দ্বারা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের জোড়াসমূহ।
২০:৫৪
কুলূ = তোমরা খাও। ওয়ারআও = আর তোমরা চরাও। আনআমাকুম = তোমাদের আনআমকে/ গবাদি পশুকে (= গরু, উট, ছাগল ও ভেড়াকে)। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে আছে। লাআয়াতিল্লি উলিন নুহা = উলিন নুহার জন্য/ সত্য উপলব্ধি-সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ।
তোমরা খাও আর তোমরা চরাও তোমাদের আনআমকে/ গবাদি পশুকে (= গরু, উট, ছাগল ও ভেড়াকে)। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে উলিন নুহার জন্য/ সত্য উপলব্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ।
২০:৫৫
মিনহা = উহা থেকে (= পৃথিবীর মাটি থেকে)। খালাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। ওয়া = আর। ফীহা = উহার মধ্যে। নুয়ীদুকুম = আমরা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিই। ওয়া = আর। মিনহা = উহা থেকে। নুখরিজুকুম = আমরা তোমাদেরকে বের করবো। তারাতান উখরা = আরেকবার।
উহা থেকে (= পৃথিবীর মাটি থেকে) আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। আর উহার মধ্যে আমরা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিই। আর উহা থেকে আমরা তোমাদেরকে বের করবো আরেকবার।
২০:৫৬
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরায়নাহু = আমরা তাকে (= ফেরাউনকে) দেখিয়েছি। আয়াতিনা কুল্লাহা = আমাদের সকল আয়াত/ নিদর্শন। ফাকাযযাবা = তবুও সে মিথ্যা আরোপ করেছে। ওয়া = আর। আবা = প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর নিশ্চয় আমরা তাকে (= ফেরাউনকে) দেখিয়েছি আমাদের সকল আয়াত/ নিদর্শন। তবুও সে মিথ্যা আরোপ করেছে আর প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০:৫৭
ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। আজি’তানা = তুমি কি আমাদের কাছে এসেছো। লিতুখরিজানা = আমাদেরকে বের করে দিতে। মিন আরদিনা = আমাদের দেশ থেকে। বিছুহরিকা = তোমার (কথার) যাদুর দ্বারা। ইয়া মূসা = হে মূসা।
সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘তুমি কি আমাদের কাছে এসেছো আমাদেরকে বের করে দিতে আমাদের দেশ থেকে তোমার (কথার) যাদুর দ্বারা, হে মূসা?’
২০:৫৮
ফালানা’তিয়ান্নাকা = সুতরাং নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে আনবো। বিছিহরিম মিছলিহী = উহার অনুরূপ যাদু। ফাজআল = সুতরাং স্থির করো। বায়নানা ওয়া বায়নাকা = আমাদের ও তোমার মধ্যে। মাওয়িদান = ওয়াদাকৃত সময়। লা নুখলিফুহু = উহার খেলাফ/ ব্যতিক্রম করবো না। নাহনু = আমরা। ওয়া = আর। লা আনতা = তুমিও (উহার ব্যতিক্রম করবে) না। মাকানান ছুওয়ান = (ঐ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে) সমতল প্রান্তরে।
সুতরাং নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে আনবো উহার অনুরূপ যাদু। সুতরাং স্থির করো আমাদের ও তোমার মধ্যে ওয়াদাকৃত সময়। উহার খেলাফ/ ব্যতিক্রম করবো না আমরা আর তুমিও (উহার ব্যতিক্রম করবে) না। (ঐ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে) সমতল প্রান্তরে।
২০:৫৯
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। মাওয়িদুকুম = তোমাদের ওয়াদাকৃত সময়। ইয়াওমুয যীনাতি = মেলার দিন। ওয়া = আর। আইঁ ইউহশারান্নাছু দুহান = এও যে, লোকজন সমবেত হবে যুহাতে/ পূর্ণ সূর্য দীপ্ত সময়ে।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘তোমাদের ওয়াদাকৃত সময় মেলার দিন। আর এও যে, লোকজন সমবেত হবে যুহাতে/ পূর্ণ সূর্য দীপ্ত সময়ে’।
২০:৬০
ফাতাওয়াল্লা ফিরআউনা = তারপর ফেরাউন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফাজামাআ = তারপর জমা করেছে। কায়দাহু = তার কায়দা-কৌশল। ছুম্মা = তারপর। আতা = (মোকাবেলার জন্য) এসেছে।
তারপর ফেরাউন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারপর জমা করেছে তার কায়দা-কৌশল। তারপর (মোকাবেলার জন্য) এসেছে।
২০:৬১
ক্বলা লাহুম মূসা = মূসা তাদেরকে বলেছে। ওয়ায়লাকুম = তোমাদের জন্য দুর্ভোগ। লা তাফতারূ আলাল্লাহি কাযিবা = আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করো না। ফাইউছহিতাকুম বিআযাবিন = তাহলে তিনি তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন আযাব/ শাস্তি দিয়ে। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। খাবা = ব্যর্থ হয়েছে সে। মানিফতারা = যে মিথ্যা রচনা করেছে।
মূসা তাদেরকে বলেছে, ‘তোমাদের জন্য দুর্ভোগ। আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করো না। তাহলে তিনি তোমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন আযাব/ শাস্তি দিয়ে। আর নিশ্চয় ব্যর্থ হয়েছে সে, যে মিথ্যা রচনা করেছে’।
২০:৬২
ফাতানাযাঊ = তারপর তারা (= যাদুকররা) মতবিরোধ করেছে। আমরাহুম = তাদের কাজের ক্ষেত্রে। বায়নাহুম = তাদের পরস্পরের মধ্যে। ওয়া = আর। আছাররুন নাজওয়া = তারা গোপনই রেখেছে তাদের গোপন শলা-পরামর্শ।
তারপর তারা (= যাদুকররা) মতবিরোধ করেছে তাদের কাজের ক্ষেত্রে তাদের পরস্পরের মধ্যে। আর তারা গোপনই রেখেছে তাদের গোপন শলা-পরামর্শ।
২০:৬৩
ক্বলূ = (ফেরাউনের সভাসদের) কিছু লোক বলেছে। ইন হাযানি = এ দুজনকি নয়। লাছাহিরানি = দুজন যাদুকর। ইউরীদানি = তারা দুজন এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইউখরিজাকুম = তারা দুজনে তোমাদেরকে বের করে দিতে। মিন আরদিকুম = তোমাদের দেশ থেকে। বিছিহরিহিমা = তাদের দুজনের যাদুর দ্বারা। ওয়া = আর। ইয়াযহাবা = তারা দুজনে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। বিতরীক্বাকুমুল মুছলা = তোমাদের আদর্শ তরীকা/ জীবনব্যবস্থা।
(ফেরাউনের সভাসদের) কিছু লোক বলেছে, ‘এ দুজনকি নয় দুজন যাদুকর (= কথার যাদুকর)! তারা দুজন এরাদা/ ইচ্ছা করে তারা দুজনে তোমাদেরকে বের করে দিতে তোমাদের দেশ থেকে তাদের দুজনের (কথার) যাদুর দ্বারা। আর তারা দুজনে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে তোমাদের আদর্শ তরীকা/ জীবনব্যবস্থা।
২০:৬৪
ফাআজমিঊ = সুতরাং তোমরা জড়ো করো। কায়দাহুম = তোমাদের কায়দা-কৌশল। ছুম্মা’তূ = তারপর তোমরা আসো। সফফান = সারিবদ্ধভাবে। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। আফলাহাল ইয়াওমা = আজ সে-ই সফল হবে। মানিছতা’লা = যে উপরে থাকবে।
সুতরাং তোমরা জড়ো করো তোমাদের কায়দা-কৌশল। তারপর তোমরা আসো সারিবদ্ধভাবে। আর নিশ্চয় আজ সে-ই সফল হবে যে উপরে থাকবে।
২০:৬৫
ক্বলূ = তারা বলেছে। ইয়া মূসা = হে মূসা। ইম্মা = হয়তো। আন তুলক্বিয়া = তুমি নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করবে। ওয়া = আর। ইম্মা = নয়তো। আন্নাকূনা = আমরা হবো। আওয়ালা মান আলক্বা = প্রথম নিক্ষেপকারী/ উপস্থাপনকারী।
তারা বলেছে, ‘হে মূসা, হয়তো তুমি নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করবে। আর নয়তো আমরা হবো প্রথম নিক্ষেপকারী/ উপস্থাপনকারী’।
২০:৬৬
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। বাল = বরং। আলক্বূ = তোমরাই নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করো। ফাইযা = তারপর যখন। হিবালুহুম ওয়া ইসিয়্যুহুম = তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো। ইউখাইয়ালু ইলাইহি = তার কাছে মনে হলো। মিন ছিহরিহিম = তাদের যাদু/ ভেলকিবাজি উপস্থাপনার ফলে। আন্নাহা = এমন যে, তা। তাছআ = ছুটোছুটি করছে/ (মানুষের মনে) স্পন্দিত হচ্ছে (= মানুষকে প্রভাবিত করছে)।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করো’। তারপর যখন তাদের রশিগুলো ও লাঠিগুলো, তার কাছে মনে হলো তাদের যাদু/ ভেলকিবাজি উপস্থাপনার ফলে এমন যে, তা ছুটোছুটি করছে/ (মানুষের মনে) স্পন্দিত হচ্ছে (= মানুষকে প্রভাবিত করছে)।
২০:৬৭
ফাআওজাছা ফী নাফসীহি খীফাতান মূসা = সুতরাং মূসা স্বীয় নফসে ভয় অনুভব করেছে (যে, লোকজন বিগড়ে যায় কিনা)।
সুতরাং মূসা স্বীয় নফসে ভয় অনুভব করেছে (যে, লোকজন বিগড়ে যায় কিনা)।
২০:৬৮
ক্বুলনা = আমরা বলেছি। লা তাখাফ = তুমি ভয় পেয়ো না। ইন্নাকা আনতাল আ’লা = নিশ্চয় তুমিই উপরে থাকবে।
আমরা বলেছি, ‘তুমি ভয় পেয়ো না, নিশ্চয় তুমিই উপরে থাকবে/ বিজয়ী হবে’।
২০:৬৯
ওয়া = আর। আলক্বি = তুমি নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করো। মা ফী ইয়ামীনিকা = যা তোমার ডান হাতে আছে। তালক্বাফ = উহা গ্রাস করবে। মা সনাউ = যা তারা রচনা করেছে তার সবকিছুকে। ইন্নামা = নিশ্চয়। সনাউ = তারা রচনা করেছে। কায়দু ছাহিরিন = ছাহেরের/ যাদুকরের কায়দা-কৌশল। ওয়া = আর। লা ইউফলিহুছ ছাহিরু = সফল হবে না ছাহের/ যাদুকর। হাইছু = যেখান থেকেই। আতা = সে আসুক।
আর তুমি নিক্ষেপ/ উপস্থাপন করো যা তোমার ডান হাতে আছে; উহা গ্রাস করবে যা তারা রচনা করেছে তার সবকিছুকে। নিশ্চয় তারা রচনা করেছে ছাহেরের/ যাদুকরের কায়দা-কৌশল। আর সফল হবে না ছাহের/ যাদুকর, যেখান থেকেই সে আসুক।
২০:৭০
ফাউলক্বিয়াছ ছাহারাতু = তারপর (মূসার উপস্থাপনের পর) নত হয়ে গেছে ছাহারাত/ যাদুকরগণ। ছুজজাদান = সিজদায়। ক্বলূ = তারা বলেছে। আমান্না = আমার ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিরব্বি হারূনা ওয়া মূসা = হারূন ও মূসার রবের প্রতি।
তারপর (মূসার উপস্থাপনের পর) নত হয়ে গেছে ছাহারাত/ যাদুকরগণ সিজদায়। তারা বলেছে, ‘আমার ঈমান/ বিশ্বাস করেছি হারূন ও মূসার রবের প্রতি’।
২০:৭১
ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। আমানতুম = তোমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লাহু = তার প্রতি। ক্বাবলু আন আযানা লাকুম = আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে (= মূসা)। লাকাবীরুকুম = তোমাদের কবীর/ বড় (গুরু)। আল্লাযী = যে। আল্লামাকুমুছ ছিহরা = তোমাদেরকে যাদু/ ভেলকিবাজি/ উদ্ভট যুক্তিতর্ক শিখিয়েছে। ফালাক্বাত্তিআন্না = সুতরাং আমি কেটে দেবো। আয়দিয়াকুম = তোমাদের হাতসমূহ। ওয়া = আর। আরজুলাকুম = তোমাদের পাসমূহ। মিন খিলাফিন = বিপরীত দিক থেকে (= ডান হাত বাম পা অথবা বাম হাত ডান পা)। ওয়া = আর। লাউসাল্লিবান্নাকুম = আমি তোমাদেরকে শুলবিদ্ধ/ ক্রুশবিদ্ধ করবো। ফী খুজূয়িন্নাখলি = খেজুর গাছের কান্ডে। ওয়া = আর। লাতা’লামুন্না = তোমরা অবশ্যই জানবে। আইয়ুনা = আমাদের মধ্যে কে। আশাদ্দু আযাবান = শাস্তিদানে কঠোরতর। ওয়া = আর। আবক্বা = অধিক স্থায়ী।
সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘তোমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তার প্রতি আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই? নিশ্চয় সে (= মূসা) তোমাদের কবীর/ বড় (গুরু), যে তোমাদেরকে যাদু/ ভেলকিবাজি/ উদ্ভট যুক্তিতর্ক শিখিয়েছে। সুতরাং আমি কেটে দেবো তোমাদের হাতসমূহ আর তোমাদের পাসমূহ বিপরীত দিক থেকে (= ডান হাত বাম পা অথবা বাম হাত ডান পা)। আর আমি তোমাদেরকে শুলবিদ্ধ/ ক্রুশবিদ্ধ করবো খেজুর গাছের কান্ডে। আর তোমরা অবশ্যই জানবে, আমাদের মধ্যে কে শাস্তিদানে কঠোরতর আর অধিক স্থায়ী।
২০:৭২
ক্বলূ = তারা বলেছে। লান নু’ছিরাকা = আমরা কখনোই তোমাকে প্রাধান্য দেবো না। আলা মা জাআনা = উহার উপর যা আমাদের কাছে এসেছে। মিনাল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ। ওয়াল্লাযী ফাতারানা = আর (তাঁর উপর) যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। ফাক্বদি = সুতরাং তুমি ফায়সালা করো। মা আনতা ক্বাদিন = তুমি যেরূপ ফায়সালাকারী। ইন্নামা = নিশ্চয়। তাক্বদী = তুমি তো ফায়সালা করতে পারো। হাযিহিল হায়াতিদ দুনইয়া = এই হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে।
তারা বলেছে, ‘আমরা কখনোই তোমাকে প্রাধান্য দেবো না উহার উপর যা আমাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণস্বরূপ, আর (তাঁর উপর) যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং তুমি ফায়সালা করো, তুমি যেরূপ ফায়সালাকারী। নিশ্চয় তুমি তো ফায়সালা করতে পারো এই হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে।
২০:৭৩
ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আমান্না = ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিরব্বিনা = আমাদের রবের প্রতি। লিইয়াগফিরা লানা = যেন তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন। খাতাইয়াতানা = আমাদের গুনাহ-খাতা। ওয়া = আর। মা আকরাহতানা আলাইহি মিনাছ ছিহরি = তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছো যে যাদুগিরী/ ভেলকিবাজি প্রদর্শন করতে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহই। খায়রুওঁ ওয়া আবক্বা = সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী সত্তা।
নিশ্চয় আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আমাদের রবের প্রতি, যেন তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন আমাদের গুনাহ-খাতা আর তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছো যে যাদুগিরী/ ভেলকিবাজি প্রদর্শন করতে। আর আল্লাহই সর্বোত্তম এবং চিরস্থায়ী সত্তা।
২০:৭৪
ইন্নাহু = নিশ্চয়। মাইঁ ইয়া’তি = যে আসবে। রব্বাহু = তার রবের কাছে। মুজরিমান = অপরাধী হয়ে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয়। লাহু = তার জন্য আছে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। লা ইয়ামূতু ফীহা = সে তাতে মরবেও না। ওয়া = আবার। লা ইয়াহইয়া = সে বাঁচবেও না।
নিশ্চয় যে আসবে তার রবের কাছে অপরাধী হয়ে, তাহলে নিশ্চয় তার জন্য আছে জাহান্নাম। সে তাতে মরবেও না আবার সে বাঁচবেও না।
২০:৭৫
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়া’তিহী = যে তাঁর কাছে আসবে। মু’মিনান = মু’মিন হয়ে। ক্বাদ = নিশ্চয়। আমিলাস সলিহাতি = যে আমলে সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। ফাউলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। লাহুমুদ দারাজাতুল উলা = যাদের জন্য আছে সমুচ্চ দারাজাত/ মর্যাদার মাত্রাসমূহ।
আর যে তাঁর কাছে আসবে মু’মিন হয়ে, নিশ্চয় যে আমলে সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে; তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে সমুচ্চ দারাজাত/ মর্যাদার মাত্রাসমূহ।
২০:৭৬
জান্নাতু আদনিন = জান্নাতু আদন/ স্থায়ী জান্নাত। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = উহার নিচ অংশে আনহার/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। যালিকা = উহাই। জাযাউ মান তাযাক্কা = তার প্রতিফল যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।
জান্নাতু আদন/ স্থায়ী জান্নাত। জারি হয় উহার নিচ অংশে আনহার/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর উহাই তার প্রতিফল যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে।
২০:৭৭
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা মূসা = মূসার প্রতি। আন আছরি = (রাতে) যাত্রা করো। বিইবাদী = আমার বান্দাদেরকে নিয়ে। ফাদরিব = অবলম্বন করো। লাহুম = তাদের জন্য। তরীক্বান ফিল বাহরি ইয়াবাছান = জলাশয়ের মধ্যকার শুষ্ক পথ। লা তাখাফু দারাকান = ধরা পড়ার আশংকা করো না। ওয়া লা তাখশা = আর ভয় করো না।
আর নিশ্চয় আমরা ওহী করেছি মূসার প্রতি, “(রাতেই) যাত্রা করো আমার বান্দাদেরকে নিয়ে। অবলম্বন করো তাদের জন্য জলাশয়ের মধ্যকার শুষ্ক পথ। ধরা পড়ার আশংকা করো না আর ভয় করো না”।
২০:৭৮
ফাআতবাআহুম ফিরআউনু = ফিরাউন তাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ/ পশ্চাদ্ধাবন করেছে। বিজুনূদিহী = তার সেনাবাহিনীসহ। ফাগাশিয়াহুম = তারপর তাদেরকে আচ্ছাদিত করেছে। মিনাল ইয়াম্মি = দরিয়া থেকে। মা গাশিয়াহুম = যা তাদেরকে আচ্ছাদিত করার ছিলো।
ফিরাউন তাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ/ পশ্চাদ্ধাবন করেছে তার সেনাবাহিনীসহ। তারপর তাদেরকে আচ্ছাদিত করেছে দরিয়া থেকে যা তাদেরকে আচ্ছাদিত করার ছিলো।
২০:৭৯
ওয়া = আর। আদাল্লা ফিরআউনু = ফেরাউন পথভ্রষ্ট করেছে। ক্বাওমাহু = তার কওমকে। ওয়া = আর। মা হাদা = হিদায়াত করেনি।
আর ফেরাউন পথভ্রষ্ট করেছে তার কওমকে আর হিদায়াত করেনি।
২০:৮০
ইয়া বানী ইসরাইলা = হে বানী ইসরাইল। ক্বাদ = নিশ্চয়। আনজায়নাকুম = আমরা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি। মিন আদুউয়িকুম ওয়া আদনাকুম = তোমাদের ও আমার শত্রুর কবল থেকে। জানিবাত তূরিল আয়মানি = ডানদিকের তূর পাহাড়ের পাশে। ওয়া = আর। নাযযালনা = আমরা নাযিল/ অবতীর্ণ করেছি। আলাইকুমুল মান্না ওয়াস সালওয়া = তোমাদের উপর মান্না ও সালওয়া।
হে বানী ইসরাইল, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তোমাদের ও আমার শত্রুর কবল থেকে ডানদিকের তূর পাহাড়ের পাশে। আর আমরা নাযিল/ অবতীর্ণ করেছি তোমাদের উপর মান্না ও সালওয়া।
২০:৮১
কুলূ = তোমরা খাও। মিন তইয়িবাতি = তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্য থেকে। মা রযাক্বনাকুম = যা আমরা তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছি। ওয়া = আর। লা তাতগাও ফীহি = উহার ক্ষেত্রে সীমালংঘন করো না। ফাইয়াহিল্লা = (কারণ) তাহলে পড়বে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। গাদাবী = আমার গযব/ ক্রোধ। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াহলিল আলাইহি = যার উপর পড়ে। গাদাবী = আমার গযব/ ক্রোধ। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। হাওয়া = সে ধ্বংস হয়ে যায়।
তোমরা খাও তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্য থেকে যা আমরা তোমাদেরকে রিযিকস্বরূপ দিয়েছি। আর উহার ক্ষেত্রে সীমালংঘন করো না। (কারণ) তাহলে পড়বে তোমাদের উপর আমার গযব/ ক্রোধ। আর যার উপর পড়ে আমার গযব/ ক্রোধ, নিশ্চয় সে ধ্বংস হয়ে যায়।
২০:৮২
ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লাগাফফারুল্লিমান তাবা = গাফফার/ ক্ষমাশীল তার জন্য যে তাওবা করে। ওয়া = আর। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ছুম্মাহতাদা = তারপর হিদায়াতের পথে চলে।
আর নিশ্চয় আমি গাফফার/ ক্ষমাশীল তার জন্য যে তাওবা করে আর ঈমান/ বিশ্বাস করে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে তারপর হিদায়াতের পথে চলে।
২০:৮৩
ওয়া = আর। মা আ’জালাকা = কিসে তোমাকে ত্বরান্বিত করেছে/ তাড়াতাড়ি নিয়ে এসেছে। আন ক্বাওমিকা = তোমার কওম থেকে। ইয়া মূসা = হে মূসা।
আর কিসে তোমাকে ত্বরান্বিত করেছে/ তাড়াতাড়ি নিয়ে এসেছে তোমার কওম থেকে, হে মূসা?
২০:৮৪
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। হুম উলায়ি = তারা তো। আলা আছারী = আমার শিক্ষার উপর। ওয়া = আর। আজিলতু = আমি তাড়াতাড়ি করেছি। ইলাইকা = আপনার কাছে আসতে। রব্বি = হে আমার রব। লিতারদা = যেন আপনি রাজি/ সন্তুষ্ট হয়ে যান।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘তারা তো আছে আমার শিক্ষার উপর। আর আমি তাড়াতাড়ি করেছি আপনার কাছে আসতে, হে আমার রব, যেন আপনি রাজি/ সন্তুষ্ট হয়ে যান।
২০:৮৫
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। ফাইন্নানা = নিশ্চয় আমরা। ক্বাদ ফাতান্না = ফিতনায়/ পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছি। ক্বাওমাকা = তোমার কওমকে। মিম বা’দিকা = তোমার (প্রস্থানের) পর। ওয়া = আর। আদাল্লাহুমুস সামেরিইয়্যু = তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে সামেরি।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমরা ফিতনায়/ পরীক্ষায় ফেলে দিয়েছি তোমার কওমকে তোমার (প্রস্থানের) পর। আর তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে সামেরি।
২০:৮৬
ফারাজাআ মূসা = তারপর মূসা ফিরে গিয়েছে। ইলা ক্বাওমিহী = তার কওমের কাছে। গাদবানা আছিফান = রাগান্বিত ও অনুতপ্ত অবস্থায়। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। আলাম ইয়ায়িদকুম = তোমাদেরকে কি ওয়াদা দেননি। রব্বুকুম = তোমাদের রব। ওয়া’দান হাসানান = উত্তম ওয়াদা। আফাত্বলা = দীর্ঘ মনে হয়েছে কি। আলাইকুমুল আহদা = তোমাদের কাছে আহদ/ প্রতিশ্রুত সময়। আম = নাকি। আরাত্তুম = তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করেছো। আইঁ ইয়াহিল্লা = যে, পড়ুক। আলাইকুম = তোমাদের উপর। গাদাবুম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে গযব/ ক্রোধ। ফাআখলাফতুম = আর তাই তোমরা খেলাফ/ ভঙ্গ করেছো। মাওয়িদী = আমার সাথে কৃত ওয়াদা।
তারপর মূসা ফিরে গিয়েছে তার কওমের কাছে রাগান্বিত ও অনুতপ্ত অবস্থায়। সে (= মূসা) বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমাদেরকে কি ওয়াদা দেননি তোমাদের রব, উত্তম ওয়াদা? দীর্ঘ মনে হয়েছে কি তোমাদের কাছে আহদ/ প্রতিশ্রুত সময় নাকি তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করেছো যে, পড়ুক তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে গযব/ ক্রোধ, আর তাই তোমরা খেলাফ/ ভঙ্গ করেছো আমার সাথে কৃত ওয়াদা?
২০:৮৭
ক্বলূ = তারা বলেছে। মা আখলাফনা = আমরা খেলাফ/ ভঙ্গ করিনি। মাওয়িদাকা = তোমার সাথে কৃত ওয়াদা। বিমালকিনা = আমাদের ইচ্ছা ও ইখতিয়ারে। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। হুম্মিলনা = আমরা ভারাক্রান্ত হয়েছি। আওযারাম মিন যীনাতিল ক্বাওমি = কওমের অলংকারের বোঝাসমূহে। ফাক্বাযাফনাহা = সুতরাং আমরা তা নিক্ষেপ করেছি। ফাকাযালিকা = তারপর এভাবে। আলক্বাছ ছামিরিয়্যু = নিক্ষেপ করেছে সামেরি।
তারা বলেছে, ‘আমরা খেলাফ/ ভঙ্গ করিনি তোমার সাথে কৃত ওয়াদা আমাদের ইচ্ছা ও ইখতিয়ারে। কিন্তু আমরা ভারাক্রান্ত হয়েছি কওমের অলংকারের বোঝাসমূহে। সুতরাং আমরা তা নিক্ষেপ করেছি। তারপর এভাবে নিক্ষেপ করেছে সামেরি।
২০:৮৮
ফাআখরাজা = তারপর সে বের করেছে। লাহুম = তাদের জন্য। ইজলান জাছাদান = একটি বাছরের অবয়ব। লাহু খুয়ারুন = উহার থেকে বের হতো হাম্বা রব। ফাক্বলূ = তারপর তারা বলেছে। হাযা = ইহা। ইলাহুকুম ওয়া ইলাহু মূসা = তোমাদের ও মূসার ইলাহ। ফানাছিয়া = কিন্তু সে ভুলে গেছে।
তারপর সে বের করেছে তাদের জন্য একটি বাছরের অবয়ব। উহার থেকে বের হতো হাম্বা রব। তারপর তারা বলেছে, ‘ইহা তোমাদের ও মূসার ইলাহ। কিন্তু সে ভুলে গেছে’।
২০:৮৯
আফালা ইয়ারাওনা = তারা কি ভেবে দেখে না। আল্লা ইয়ারজিউ ইলাইহিম ক্বাওলান = যে, উহা তাদেরকে কোন কথার জবাব দেয় না। ওয়া = আর। লা ইয়ামলিকু = উহা না ক্ষমতা রাখে। লাহুম = তাদের। দররান = কোন ক্ষতি করার। ওয়া = আর। লা নাফআন = না কোন উপকার করার।
তারা কি ভেবে দেখে না যে, উহা তাদেরকে কোন কথার জবাব দেয় না? আর উহা না ক্ষমতা রাখে তাদের কোন ক্ষতি করার আর না কোন উপকার করার।
২০:৯০
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। ক্বলা লাহুম হারূনু = হারুন তাদেরকে বলেছিলো। মিন ক্বাবলু = (মূসা আসার) আগেই। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। ইন্নামা = নিশ্চয়। ফুতিনতুম বিহী = উহা দ্বারা তোমাদেরকে ফিতনায়/ পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাককুমুর রহমানু = তোমাদের রব হচ্ছেন রহমান/ দয়াময় (আল্লাহ)। ফাত্তাবিউনী = সুতরাং তোমরা আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। ওয়া = আর। আতিঊ আমরী = আমার আদেশের ইতায়াত/ আনুগত্য করো।
আর নিশ্চয় হারুন তাদেরকে বলেছিলো (মূসা আসার) আগে, ‘হে আমার কওম, নিশ্চয় উহা দ্বারা তোমাদেরকে ফিতনায়/ পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। আর নিশ্চয় তোমাদের রব হচ্ছেন রহমান/ দয়াময় (আল্লাহ)। সুতরাং তোমরা আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো আর আমার আদেশের ইতায়াত/ আনুগত্য করো।
২০:৯১
ক্বলূ = তারা বলেছে। লান নাবরাহা = আমরা বিরত হবো না। আলাইহি আকিফীনা = উহার ব্যাপারে এতেকাফরত/ আত্মনিয়োজিত থাকা থেকে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়ারজিআ = ফিরে আসবে। ইলাইনা = আমাদের কাছে। মূসা = মূসা।
তারা বলেছে, ‘আমরা বিরত হবো না উহার ব্যাপারে এতেকাফরত/ আত্মনিয়োজিত থাকা থেকে, যতক্ষণ না ফিরে আসবে আমাদের কাছে মূসা’।
২০:৯২
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ইয়া হারূনা = হে হারূন। মা মানাআকা = কিসে তোমাকে মানা করেছে/ বিরত রেখেছে। ইয = যখন। রআয়তাহুম = তুমি তাদেরকে দেখেছো। দল্লূ = বিভ্রান্ত হয়ে যেতে?
সে (= মূসা) বলেছে, ‘হে হারূন, কিসে তোমাকে মানা করেছে/ বিরত রেখেছে যখন তুমি তাদেরকে দেখেছো বিভ্রান্ত হয়ে যেতে?’
২০:৯৩
আল্লা তাত্তাবিআনি = যে, আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করলে না। আফাআসায়তা আমরী = তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করেছো?
যে, আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করলে না? তবে কি তুমি আমার আদেশ অমান্য করেছো?
২০:৯৪
ক্বলা = সে (= হারূন) বলেছে। ইয়াবনাউম্মা = হে আমার মায়ের পুত্র। লা তা’খুয = ধরো না। বিলিহইয়াতী = আমার দাড়ি। ওয়া = আর। লা বিরা’ছী = আমার মাথাও (মাথার চুলও) ধরো না। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। খাশীতু = আশংকা করেছি। আন = যে। তাক্বূলা = তুমি বলবে। ফাররাক্বতা = তুমি বিভেদ সৃষ্টি করেছো। বায়না বানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলের মধ্যে। ওয়া = আর। লাম তারক্বুব = তুমি মূল্য দাওনি। ক্বাওলী = আমার কথাকে।
সে (= হারূন) বলেছে, “হে আমার মায়ের পুত্র, ধরো না আমার দাড়ি আর আমার মাথাও (মাথার চুলও) ধরো না। নিশ্চয় আমি আশংকা করেছি যে, ‘তুমি বলবে, তুমি বিভেদ সৃষ্টি করেছো বানী ইসরাইলের মধ্যে, আর তুমি মূল্য দাওনি আমার কথাকে (০৭:১৪২, ০৭:১৫০, ২০:৯০)”।
২০:৯৫
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ফামা খাতবুকা = তবে তোমার ব্যাপারটা কী। ইয়া ছামেরিয়্যু = হে সামেরি।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘তবে তোমার ব্যাপারটা কী, হে সামেরি?’
২০:৯৬
ক্বলা = সে (= সামেরী) বলেছে। ইয়াবসুরতু = আমি দেখেছি (= উপলব্ধি করেছি)। বিমা = ঐ বিষয়ে যা (= বস্তুর যে অন্তর্নিহিত শক্তি)। লাম ইয়াবসুরূ বিহী = তারা দেখেনি (= উপলব্ধি করেনি, অর্থাৎ আমি প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছি।)। ফাক্বাবাদতু = তারপর আমি অংশত গ্রহণ করেছি। ক্বাবদাতাম মিন আছারির রসূলি = রসূলের (= হারূনের) শিক্ষার একটি অংশ। ফানাবাযতুহা = তারপর উহাকে (= রসূলের শিক্ষাকে) পরিত্যাগ করেছি। ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। ছাওয়ালাত = উদ্বুদ্ধ করেছে। লী = আমাকে। নাফসী = আমার নফস।
সে (= সামেরী) বলেছে, ‘আমি দেখেছি (= উপলব্ধি করেছি) ঐ বিষয়ে যা (= বস্তুর যে অন্তর্নিহিত শক্তি) তারা দেখেনি (= উপলব্ধি করেনি, অর্থাৎ আমি প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছি)। তারপর আমি অংশত গ্রহণ করেছি রসূলের (= হারূনের) শিক্ষার একটি অংশ। তারপর উহাকে (= রসূলের শিক্ষাকে) পরিত্যাগ করেছি। আর এভাবেই উদ্বুদ্ধ করেছে আমাকে আমার নফস’।
২০:৯৭
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ফাযহাব = চলে যাও/ দূর হও। ফাইন্না লাকা = নিশ্চয় তোমার জন্য। ফিল হায়াতি = (পার্থিব) জীবনের মধ্যে। আন তাক্বূলা = শাস্তি এই যে, তুমি বলবে। লা মিছাছা = স্পর্শকরন নয় (নো টাচিং) (= না আমি তোমাদের কাউকে স্পর্শ করবো আর না তোমরা কেউ আমাকে স্পর্শ করবে)। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। লাকা = তোমার জন্য আছে। মাওয়িদাল্লান তুখলাফাহু = (আখিরাতের শাস্তির) ওয়াদাকৃত সময় যার ব্যতিক্রম করা হবে না। ওয়ানযুর = আর নজর/ লক্ষ্য করো। ইলা ইলাহিকা = তোমার ইলাহর/ উপাস্যের দিকে। আল্লাযী যলতা আলাইহি আকিফান = তুমি যার ব্যাপারে এতেকাফরত/ আত্মনিয়োজিত হয়েছিলে। লানুহাররিক্বান্নাহু = অবশ্যই আমরা উহাকে জ্বালিয়ে দেবো। ছুম্মা = তারপর। লানানছিফান্নাহু = আমরা উহাকে ছড়িয়ে দেবো। ফিল ইয়াম্মি = নদীর মধ্যে। নাছফান = বিক্ষিপ্তভাবে।
সে (= মূসা) বলেছে, “চলে যাও/ দূর হও। নিশ্চয় তোমার জন্য (পার্থিব) জীবনের মধ্যে শাস্তি এই যে, তুমি বলবে, স্পর্শকরন নয় (নো টাচিং) (= না আমি তোমাদের কাউকে স্পর্শ করবো আর না তোমরা কেউ আমাকে স্পর্শ করবে)। আর নিশ্চয় তোমার জন্য আছে (আখিরাতের শাস্তির) ওয়াদাকৃত সময় যার ব্যতিক্রম করা হবে না। আর নজর/ লক্ষ্য করো তোমার ইলাহর/ উপাস্যের দিকে, তুমি যার ব্যাপারে এতেকাফরত/ আত্মনিয়োজিত হয়েছিলে। অবশ্যই আমরা উহাকে জ্বালিয়ে দেবো, তারপর আমরা উহাকে ছড়িয়ে দেবো নদীর মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে।
২০:৯৮
ইন্নামা = নিশ্চয়। ইলাহুকুমুল্লাহু = তোমাদের ইলাহ হচ্ছেন আল্লাহ। আল্লাযী = যিনি এমন যে। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া। ওয়াছিআ = তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন। কুল্লা সাইয়িন = সবকিছুকে। ইলমান = তাঁর জ্ঞান দ্বারা।
নিশ্চয় তোমাদের ইলাহ হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি এমন যে, কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া। তিনি পরিবেষ্টন করে আছেন সবকিছুকে তাঁর জ্ঞান দ্বারা।
২০:৯৯
কাযালিকা = এভাবে। নাক্বুসসু = আমরা বর্ণনা করছি। আলাইকা = তোমার কাছে। মিন আম্বায়ি = উহার সংবাদসমূহ থেকে। মা ক্বাদ ছাবাক্বা = যা আগে চলে গেছে। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনাকা = আমরা তোমাকে দিয়েছি। মিল্লাদুন্না = আমাদের পক্ষ থেকে। যিকরান = যিকরা/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ সংবিধান।
এভাবে আমরা বর্ণনা করছি তোমার কাছে উহার সংবাদসমূহ থেকে, যা আগে চলে গেছে। আর নিশ্চয় আমরা তোমাকে দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে যিকরা/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ সংবিধান।
২০:১০০
মান = যে। আ’রাদা = বিমুখ হয়। আনহু = উহার থেকে। ফাইন্নাহু = তাহলে নিশ্চয় সে। ইয়াহমিলু = বহন করবে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ভিযরান = (গুনাহের) বোঝা।
যে বিমুখ হয় উহার থেকে, তাহলে নিশ্চয় সে বহন করবে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে (গুনাহের) বোঝা।
২০:১০১
খালিদীনা ফীহি = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। ছাআ = অত্যন্ত নিকৃষ্ট হবে। লাহুম = তাদের জন্য। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। হিমলান = ঐ বোঝা।
তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর অত্যন্ত নিকৃষ্ট হবে তাদের জন্য ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে ঐ বোঝা।
২০:১০২
ইয়াওমা = সেদিন। ইউনফাখু = ফুঁ দেয়া হবে। ফিস সূরি = শিঙ্গায়। ওয়া = আর। নাহশুরুল মুজরিমীনা = আমরা হাশর/ সমবেত করবো অপরাধীদেরকে। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। যুরক্বান = ঝাপসা/ ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন অবস্থায়।
সেদিন ফুঁ দেয়া হবে শিঙ্গায়। আর আমরা হাশর/ সমবেত করবো অপরাধীদেরকে সেদিন ঝাপসা/ ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন অবস্থায়।
২০:১০৩
ইয়াতাখাফাতূনা বায়নাহুম = তারা পরস্পরে চুপে চুপে বলবে। ইল্লাবিছতুম = তোমরা অবস্থান করোনি। ইল্লা আশরান = দশদিন ছাড়া।
তারা পরস্পরে চুপে চুপে বলবে, ‘তোমরা অবস্থান করোনি (সর্বোচ্চ) দশদিন ছাড়া।
২০:১০৪
নাহনু = আমরা। আ’লামু = জানি। বিমা ইয়াক্বুলূনা = যা তারা বলবে। ইয = যখন। ইয়াক্বূলু আমছালুহুম তরীক্বাতান = বুদ্ধিমত্তায় তাদের মধ্যকার অপেক্ষাকৃত উত্তম ব্যক্তি বলবে। ইল্লাবিছতুম = তোমরা অবস্থান করোনি। ইল্লা ইয়াওমান = একদিন ছাড়া।
আমরা জানি যা তারা বলবে। যখন বুদ্ধিমত্তায় তাদের মধ্যকার অপেক্ষাকৃত উত্তম ব্যক্তি বলবে, ‘তোমরা অবস্থান করোনি একদিন ছাড়া’।
২০:১০৫
ওয়া = আর। ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিল জিবালি = পাহাড়সমূহ সম্পর্কে। ফাক্বুল = তুমি বলো। ইয়ানছিফুহা = উহাকে ছড়িয়ে দিবেন। রব্বী = আমার রব। নাছফান = বিক্ষিপ্তভাবে।
আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে পাহাড়সমূহ সম্পর্কে। তুমি বলো, ‘উহাকে ছড়িয়ে দিবেন আমার রব বিক্ষিপ্তভাবে’।
২০:১০৬
ফাইয়াযারুহা = তারপর উহাকে পরিণত করবেন। ক্বআন সফসফান = সমতল ও ধূসর প্রান্তরে।
তারপর উহাকে পরিণত করবেন সমতল ও ধূসর প্রান্তরে।
২০:১০৭
লা তারা ফীহা = তুমি উহাতে দেখবে না। ইওয়াজান = কোন বক্রতা। ওয়া = আর। লা আমতান = কোন সংকোচনও (দেখবে) না।
তুমি উহাতে দেখবে না কোন বক্রতা আর কোন সংকোচনও (দেখবে) না।
২০:১০৮
ইয়াওমায়িযিইঁ ইয়াত্তাবিঊনান্ন দায়িআ = সেদিন তারা অনুসরণ করবে এক আহবানকারীকে। লা ইওয়াজা লাহু = তার কোন বক্রতা থাকবে না। ওয়া = আর। খাশাআতিল আসওয়াতু = আওয়াজসমূহ অবনমিত হবে। লির রহমানি = রহমানের/ দয়াময়ের সামনে। ফালা তাছমাউ = সুতরাং তুমি শুনবে না। ইল্লা হামছান = মৃদু খসখস শব্দ ছাড়া।
সেদিন তারা অনুসরণ করবে এক আহবানকারীকে। তার কোন বক্রতা থাকবে না। আর আওয়াজসমূহ অবনমিত হবে রহমানের/ দয়াময়ের সামনে। সুতরাং তুমি শুনবে না মৃদু খসখস শব্দ ছাড়া।
২০:১০৯
ইয়াওমায়িযিল লা তানফাউশ শাফায়াতা = সেদিন ফলপ্রসূ হবে না শাফায়াত। ইল্লা মান = তার ক্ষেত্রে ছাড়া যাকে। আযিনালাহুর রহমানু = রহমান/ দয়াময় (আল্লাহ) অনুমতি দিবেন। ওয়া = আর। রাদিয়া লাহু ক্বাওলান = যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন।
সেদিন ফলপ্রসূ হবে না শাফায়াত তার ক্ষেত্রে ছাড়া যাকে রহমান/ দয়াময় (আল্লাহ) অনুমতি দিবেন আর যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন।
২০:১১০
ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা বায়না আয়দীহিম = যা তাদের সামনে আছে। ওয়া = আর। মা খালফিহিম = যা তাদের পিছনে আছে। ওয়া = আর। লা ইউহীতূনা বিহী ইলমান = তারা তাঁকে/ উহাকে স্বীয় জ্ঞানে পূর্ণ আয়ত্ত করতে পারে না।
তিনি জানেন যা তাদের সামনে আছে আর যা তাদের পিছনে আছে। আর তারা তাঁকে/ উহাকে স্বীয় জ্ঞানে পূর্ণ আয়ত্ত করতে পারে না।
২০:১১১
ওয়া = আর। আনাতিল উজূহু = অবনমিত হবে মুখমন্ডলসমূহ। লিল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম = হাইয়ুল কাইয়ুম/ চিরজীবন্ত চিরস্থায়ী সত্তার সামনে। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। খাবা = সে ব্যর্থ হবে। মান = যে। হামালা যুলমান = যুলুমের বোঝা বহন করবে।
আর অবনমিত হবে মুখমন্ডলসমূহ হাইয়ুল কাইয়ুম/ চিরজীবন্ত চিরস্থায়ী সত্তার সামনে। আর নিশ্চয় সে ব্যর্থ হবে যে যুলুমের বোঝা বহন করবে।
২০:১১২
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়া’মাল মিনাস সলিহাতি = যে আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ওয়া = আর। হুয়া মু’মিন = সেই সাথে সে একজন মু’মিন হয়। ফালা ইয়াখাফু যুলমান = তাহলে সে কোন অত্যাচারের ভয় করবে না। ওয়া = আর। লা হাদমান = অবিচারের ভয়ও করবে না।
আর যে আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে আর সেই সাথে সে একজন মু’মিন হয়, তাহলে সে কোন অত্যাচারের ভয় করবে না আর অবিচারের ভয়ও করবে না।
২০:১১৩
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। আনযালনাহু = আমরা নাযিল করেছি। ক্বুরআনান আরাবিয়্যান = আরবী ভাষার কুরআন। ওয়া = আর। সররাফনা ফীহি = আমরা উহাতে তাসরীফ আকারে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। মিনাল ওয়ায়ীদি = সতর্কবাণী। লাআল্লাহুম ইয়াত্তাক্বূনা = যেন তারা তাকওয়া অবলম্বন করে। আও = বা। ইউহদিছু লাহুম যিকরান = তা হবে তাদের জন্য এমন বাণী হবে যা যিকরা/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ সংবিধান।
আর এভাবে আমরা নাযিল করেছি আরবী ভাষার কুরআন। আর আমরা উহাতে তাসরীফ আকারে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি সতর্কবাণী, যেন তারা তাকওয়া অবলম্বন করে বা তা হবে তাদের জন্য এমন বাণী হবে যা যিকরা/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ সংবিধান।
২০:১১৪
ফাতাআলাল্লাহুল মালিকুল হাক্বক্বু = মহান আল্লাহ মালিকুল হক/ হক্কানী মালিক/ (সব কিছুর) প্রকৃত অধিপতি। ওয়া = আর। লা তা’জাল = তাড়াহুড়া করো না। বিলক্বুরআনি = কুরআন পাঠে। মিন ক্বাবলি আইঁ ইউক্বদা = সম্পন্ন হওয়ার আগে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া’হইউহু = তাঁর ওহী (= ওহীকে আয়ত্ত না করে/ না বুঝে তাড়াতাড়ি কুরআন পড়ো না)। ওয়া = আর। ক্বুর রব্বি যিদনী ইলমান = বলো, ‘রব্বি যিদনী ইলমা/ হে আমার রব, আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন’।
মহান আল্লাহ মালিকুল হক/ হক্কানী মালিক/ (সব কিছুর) প্রকৃত অধিপতি। আর তাড়াহুড়া করো না কুরআন পাঠে, সম্পন্ন হওয়ার আগে তোমার প্রতি তাঁর ওহী (= ওহীকে আয়ত্ত না করে/ না বুঝে তাড়াতাড়ি কুরআন পড়ো না)। আর বলো, “রব্বি যিদনী ইলমা/ হে আমার রব, আমার জ্ঞান বাড়িয়ে দিন”।
২০:১১৫
ওয়া = আর। লাক্বাদ =- নিশ্চয়। আহিদনা = আমরা আহদ/ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ইলা আদামা = আদমকে। মিন ক্বাবলু = ইতিপুর্বে। ফানাছিয়া = তারপর সে তা ভুলে গিয়েছিলো। ওয়া = আর। লাম নাজিদ লাহু = আমরা তার কাছে পাইনি। আযমান = সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা।
আর নিশ্চয় আমরা আহদ/ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম আদমকে ইতিপুর্বে। তারপর সে তা ভুলে গিয়েছিলো। আর আমরা তার কাছে পাইনি সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা।
২০:১১৬
ওয়া = আর। ইয = (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। লিল মালাইকাতিছজুদূ = মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা সিজদা করো। লিআদামা = আদমের প্রসঙ্গে। ফাছাজাদূ = তখন তারা সিজদা করেছে। ইল্লা ইবলীসা = ইবলিস ছাড়া। আবা = সে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা বলেছি মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা সিজদা করো আদমের প্রসঙ্গে’। তখন তারা সিজদা করেছে। ইবলিস ছাড়া। সে প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০:১১৭
ফাক্বুলনা = তারপর আমরা বলেছি। ইয়া আদামু = হে আদম। ইন্না = নিশ্চয়। হাযা = এ হচ্ছে। আদুউউল্লাকা ওয়া লিজাওযিকা = তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। ফালা ইউখরিজান্নাকুমা = সুতরাং সে যেন তোমাদের দুজনকে বের করে না দেয়। মিনাল জান্নাতি = জান্নাত থেকে। ফাতাশক্বা = (কারণ) তাহলে তুমি কষ্ট পাবে।
তারপর আমরা বলেছি, ‘হে আদম, নিশ্চয় এ হচ্ছে তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু। সুতরাং সে যেন তোমাদের দুজনকে বের করে না দেয় জান্নাত থেকে। (কারণ) তাহলে তুমি কষ্ট পাবে।
২০:১১৮
ইন্না = নিশ্চয়। লাকা = তোমার জন্য (এ ব্যবস্থা আছে)। আল্লা তাজূআ ফীহা = যে, তুমি উহাতে (= জান্নাতে) ক্ষুধার্তও থাকো না। ওয়া = আর। লা তা’রা = তুমি উলঙ্গও থাকো না।
নিশ্চয় তোমার জন্য (এ ব্যবস্থা আছে) যে, তুমি উহাতে (= জান্নাতে) ক্ষুধার্তও থাকো না আর তুমি উলঙ্গও থাকো না।
২০:১১৯
ওয়া = আর। আন্নাকা = এও যে, তুমি। লা তাযমাউ ফীহা = উহাতে পিপাসার্তও থাকো না। ওয়া = আর। লা তাদহা = তুমি রৌদ্রতপ্তও থাকো না।
আর এও যে, তুমি উহাতে পিপাসার্তও থাকো না আর তুমি রৌদ্রতপ্তও থাকো না।
২০:১২০
ফাওয়াছওয়াছা ইলাইহিশ শায়তানু = তারপর তাকে ওয়াসওয়াসা/ প্ররোচনা দিয়েছে শয়তান। ক্বলা = সে (= শয়তান) বলেছে। ইয়া আদামু = হে আদম। হাল আদুল্লুকা = আমি কি তোমাকে সন্ধান দেবো। আলা শাজারাতিল খুলদি = স্থায়ীত্ব লাভের গাছের। ওয়া = আর। মুলকিল লা ইয়াবলা = (যে গাছের দ্বারা লাভ করা যাবে) সেই আধিপত্য যার ক্ষয় হবে না।
তারপর তাকে ওয়াসওয়াসা/ প্ররোচনা দিয়েছে শয়তান। সে (= শয়তান) বলেছে, ‘হে আদম, আমি কি তোমাকে সন্ধান দেবো স্থায়ীত্ব লাভের গাছের আর (যে গাছের দ্বারা লাভ করা যাবে) সেই আধিপত্য যার ক্ষয় হবে না?
২০:১২১
ফাআকালা = তারপর তারা দুজনে (= আদম ও তার স্ত্রী) খেয়েছে। মিনহা = উহা থেকে (= নিষিদ্ধ গাছের ফল)। ফাবাদাত = তারপর প্রকাশ পেয়েছে। লাহুমা = তাদের উভয়ের কাছে। ছাওয়াতুহুমা = তাদের উভয়ের দেহ। ওয়া = আর। তফিক্বা = তারা উভয়ে শুরু করেছে। ইয়াখসিফানি আলাইহিমা = তাদের উভয়ের উপর আচ্ছাদিত করতে। মিওঁ ওয়ারাক্বিল জান্নাতি = জান্নাতের পাতা থেকে (তৈরি পোশাক দ্বারা)। ওয়া = আর। আসা = অমান্য করেছিলো। আদামু = আদম। রব্বাহু = তার রবকে। ফাগাওয়া = সুতরাং সে বিভ্রান্ত হয়েছিলো।
তারপর তারা দুজনে (= আদম ও তার স্ত্রী) খেয়েছে উহা থেকে (= নিষিদ্ধ গাছের ফল)। তারপর প্রকাশ পেয়েছে তাদের উভয়ের কাছে তাদের উভয়ের দেহ। আর তারা উভয়ে শুরু করেছে তাদের উভয়ের উপর আচ্ছাদিত করতে জান্নাতের পাতা থেকে (তৈরি পোশাক দ্বারা)। আর অমান্য করেছিলো আদম তার রবকে। সুতরাং সে বিভ্রান্ত হয়েছিলো।
২০:১২২
ছুম্মাজতাবাহু = তারপর তাকে বাছাই করেছেন। রব্বুহু = তার রব। ফাতাবা আলাইহি = আর তার তাওবা কবুল করেছেন। ওয়া = আর। হাদা = তাকে হিদায়াত দিয়েছেন।
তারপর তাকে বাছাই করেছেন তার রব। আর তার তাওবা কবুল করেছেন। আর তাকে হিদায়াত দিয়েছেন।
২০:১২৩
ক্বলাহবিতা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা উভয়ে চলে যাও। মিনহা = উহা থেকে। জামিআন = এক সঙ্গে। বা’দুহুম লিবা’দিন আদুউউন = তোমাদের একে অপরের শত্রু। ফাইম্মা = তারপর যখন। ইয়া’তিয়ান্নাকুম = তোমাদের কাছে পৌঁছবে। মিন্নী = আমার পক্ষ থেকে। হুদান = হুদা/ হিদায়াত। ফামানিত্তাবায়া = তখন যে ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে। হুদাইয়া = আমার হুদা/ হিদায়াতকে। ফালা ইয়াদিল্লু = সে বিভ্রান্ত হবে না। ওয়া = আর। লা ইয়াশক্বা = কষ্টে পড়বে না।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা উভয়ে চলে যাও উহা থেকে এক সঙ্গে। তোমাদের একে অপরের শত্রু। তারপর যখন তোমাদের কাছে পৌঁছবে আমার পক্ষ থেকে হুদা/ হিদায়াত, তখন যে ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে আমার হুদা/ হিদায়াতকে, সে বিভ্রান্ত হবে না আর কষ্টে পড়বে না।
২০:১২৪
ওয়া = আর। মান = যে। আ’রাদা = বিমুখ হবে। আন যিকরী = আমার যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ প্রণীত সংবিধান থেকে। ফাইন্না = তবে নিশ্চয়। লাহু মায়ীশাতান = তার জীবনযাপন হবে। দনকান = সংকুচিত/ অস্বস্তিকর। ওয়া = আর। নাহশুরুহু = আমরা তাকে হাশর/ সমবেত করবো। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আ’মা = অন্ধ অবস্থায়।
আর যে বিমুখ হবে আমার যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ উপদেশ/ প্রণীত সংবিধান থেকে, তবে নিশ্চয় তার জীবনযাপন হবে সংকুচিত/ অস্বস্তিকর। আর আমরা তাকে হাশর/ সমবেত করব ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে অন্ধ অবস্থায়।
২০:১২৫
ক্বলা = সে বলবে। রব্বী = হে আমার রব। লিমা = কেন। হাশারতানী = আপনি আমাকে হাশর/ সমবেত করেছেন। আ’মা = অন্ধ অবস্থায়। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। কুনতু = আমি ছিলাম। বাসীরান = দৃষ্টিবান।
সে বলবে, ‘হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে হাশর/ সমবেত করেছেন অন্ধ অবস্থায় অথচ নিশ্চয় আমি ছিলাম দৃষ্টিবান?’
২০:১২৬
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। কাযালিকা = এভাবে। আতাতকা = তোমার কাছে পৌঁছেছিলো। আয়াতুনা = আমাদের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। ফানছীতাহা = তখন তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। ওয়া = আর। কাযালিকাল ইয়াওমা = এভাবে আজ। তুনছা = তোমাকেও ভুলে যাওয়া/ উপেক্ষা করা হচ্ছে।
তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘এভাবে তোমার কাছে পৌঁছেছিলো আমাদের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। তখন তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আর এভাবে আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া/ উপেক্ষা করা হচ্ছে’।
২০:১২৭
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। নাজযী = আমরা তাকে প্রতিফল দেবো। মান = যে। আছরাফা = সীমালংঘন করে/ (সময়, সম্পদ ও যোগ্যতার) অপচয় করে। ওয়া = আর। লাম ইউ’মিম বিআয়াতি রব্বিহী = তার রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে না। ওয়া = আর। লাআযাবুল আখিরাতি = আখিরাতের আযাব। আশাদ্দু = কঠোরতর। ওয়া = ও। আবক্বা = স্থায়ী।
আর এভাবে আমরা তাকে প্রতিফল দেবো যে সীমালংঘন করে/ (সময়, সম্পদ ও যোগ্যতার) অপচয় করে আর তার রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে না। আর আখিরাতের আযাব কঠোরতর ও স্থায়ী।
২০:১২৮
আফালাম ইয়াহদি লাহুম = তাদেরকে কি হিদায়াত করেনি (ইতিহাসের/ ঘটনাপ্রবাহের এ শিক্ষা যে,)। কাম = কত যে। আহলাকনা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করে দিয়েছি। ক্বাবলাহুম = তাদের আগে। মিনাল ক্বুরূনি = জনপদসমূহের মধ্য থেকে। ইয়ামশূনা = (এখন) তারা চলছে। ফী মাছাকিনিহিম = তাদের বাসস্থানসমূহের মধ্য দিয়ে। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে আছে। লাআয়াতিল লিউলিন নূহা = উলিন নূহার জন্য/ সত্য উপলব্ধি-সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ।
তাদেরকে কি হিদায়াত করেনি (ইতিহাসের/ ঘটনাপ্রবাহের এ আয়াত/শিক্ষা যে,) কত যে আমরা হালাক/ ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের আগে জনপদসমূহের মধ্য থেকে। (এখন) তারা চলছে তাদের বাসস্থানসমূহের মধ্য দিয়ে। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে উলিন নূহার জন্য/ সত্য উপলব্ধি-সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ।
২০:১২৯
ওয়া = আর। লাও লা = যদি না। কালিমাতুন = কালিমাত/ (অপরাধীকে অবকাশ প্রদানের) বাণী। ছাবাক্বাত = আগে থেকে নির্ধারিত থাকতো। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। লাকানা লিযামান = তাহলে অবশ্যই (অপরাধের সাথে সাথেই শাস্তি) অনিবার্য হয়ে যেতো। ওয়া = আর। আজালুম মুসাম্মা = (যদি না থাকতো) আজালুম মুসাম্মা/ নির্ধারিত শেষ সময়সীমা।
আর যদি না কালিমাত/ (অপরাধীকে অবকাশ প্রদানের) বাণী আগে থেকে নির্ধারিত থাকতো তোমার রবের পক্ষ থেকে, তাহলে অবশ্যই (অপরাধের সাথে সাথেই শাস্তি) অনিবার্য হয়ে যেতো, আর (যদি না থাকতো) আজালুম মুসাম্মা/ নির্ধারিত শেষ সময়সীমা।
২০:১৩০
ফাসবির = সুতরাং তুমি সবর করো/ ধৈর্য ধরো। আলা মা ইয়াক্বুলূনা = তারা যা বলে তার মোকাবেলায়। ওয়া = আর। ছাব্বিহ বিহামদি রব্বিকা = তোমার রবের হামদ/প্রশংসা সহ তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করো। ক্বাবলা তুলুয়িশ শামসি = সূর্য উদিত হওয়ার আগে। ওয়া = আর। ক্বাবলা গুরূবিহা = উহা অস্ত যাওয়ার আগে। ওয়া = আর। মিন আনায়িল্লাইলি = রাতের কিছু অংশে। ফাসাব্বিহ = তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করো। ওয়া = আর। আতরাফান্নাহারি = দিনের তরফসমূহে/ ভাগসমূহে। লাআল্লাকা = যেন তুমি। তারদা = সন্তুষ্ট হতে পারো।
সুতরাং তুমি সবর করো/ ধৈর্য ধরো তারা যা বলে তার মোকাবেলায়। আর তোমার রবের হামদ/প্রশংসা সহ তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করো সূর্য উদিত হওয়ার আগে আর উহা অস্ত যাওয়ার আগে। আর রাতের কিছু অংশে তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করো আর দিনের তরফসমূহে/ ভাগসমূহে। যেন তুমি সন্তুষ্ট হতে পারো।
২০:১৩১
লা তামুদ্দান্না = প্রসারিত করো না। আয়নায়কা = তোমার দুচোখ। ইলা মা মাত্তা’না বিহী = উহার দিকে যা দিয়ে আমরা তাদেরকে ভোগবিলাস দিয়েছি। আযওয়াজাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার বিভিন্ন শ্রেণীকে। যাহবাতাল হায়াতিদ দুনইয়া = উহা তো হায়াতুদ দুনিয়ার জাঁকজমক। লিনাফতিনাহুম ফীহি = উহা তাদেরকে দিয়েছি যেন তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। ওয়া = আর। রিযক্বু রব্বিকা = তোমার রবের রিযিক। খায়রুন ওয়া আবক্বা = উত্তম ও অধিক স্থায়ী।
প্রসারিত করো না তোমার দুচোখ উহার দিকে যা দিয়ে আমরা তাদেরকে ভোগবিলাস দিয়েছি তাদের মধ্যকার বিভিন্ন শ্রেণীকে। উহা তো হায়াতুদ দুনিয়ার জাঁকজমক। উহা তাদেরকে দিয়েছি যেন তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর তোমার রবের রিযিক উত্তম ও অধিক স্থায়ী।
২০:১৩২
ওয়া’মুর = আর আদেশ দাও। আহলাকা = তোমার আহলকে/ পরিবার-পরিজনকে/ প্রভাব বলয়ে থাকা লোকদেরকে। বিস সালাতি = সালাতের জন্য। ওয়াসতবির আলাইহা = আর উহার উপর দৃঢ় থাকো। লা তাছআলুকা = আমরা তোমার কাছে চাই না। রিযক্বান = কোন রিযিক। নাহনু = আমরাই। নারযুক্বুকা = তোমাকে রিযিক দিই। ওয়াল আক্বিবাতু = আর শুভ পরিণতি। লিত তাক্বওয়া = তাকওয়ার/ (আল্লাহর প্রতি) ভয়ের জন্য।
আর আদেশ দাও তোমার আহলকে/ পরিবার-পরিজনকে/ প্রভাব বলয়ে থাকা লোকদেরকে সালাতের জন্য। আর উহার উপর দৃঢ় থাকো। আমরা তোমার কাছে চাই না কোন রিযিক। আমরাই তোমাকে রিযিক দিই। আর শুভ পরিণতি তাকওয়ার/ (আল্লাহর প্রতি) ভয়ের জন্য।
২০:১৩৩
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। লাও লা ইয়া’তীনা = কেন সে আমাদের কাছে আনে না। বিআয়াতিম মির রব্বী = তার রবের পক্ষ থেকে কোন আয়াত/ নিদর্শন। আওয়া লাম তা’তিহিম = তাদের কাছে কি আসেনি। বাইয়িনাতু = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ। মা = যা আছে। ফিস সুহুফিল উলা = আগের সহীফাসমূহে।
আর তারা বলে, ‘কেন সে আমাদের কাছে আনে না তার রবের পক্ষ থেকে কোন আয়াত/ নিদর্শন?’ তাদের কাছে কি আসেনি বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, যা আছে আগের সহীফাসমূহে?
২০:১৩৪
ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্না = এমন হতো যে, আমরা। আহলাকনাহুম = তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দিতাম। বিআযাবিম মিন ক্বাবলিহী = আযাব দিয়ে তাকে প্রেরণের আগে। লাক্বালূ = তাহলে তারা বলতো। রব্বানা = হে আমাদের রব। লাও = কেন। লা আরছালতা = আপনি প্রেরণ করেননি। ইলাইনা = আমাদের কাছে। রাসূলান = কোন রসূল। ফানাত্তাবিআ = যার ফলে আমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করতে পারতাম। আয়াতিকা = আপনার আয়াতসমূহ। মিন ক্বাবলি আন নাযিল্লা ওয়া নাখযা = আমরা অপমানিত ও লজ্জিত হওয়ার আগে।
আর যদি এমন হতো যে, আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দিতাম আযাব দিয়ে তাকে প্রেরণের আগে। তাহলে তারা বলতো, ‘হে আমাদের রব, কেন আপনি প্রেরণ করেননি আমাদের কাছে কোন রসূল, যার ফলে আমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করতে পারতাম আপনার আয়াতসমূহ, আমরা অপমানিত ও লজ্জিত হওয়ার আগে।
২০:১৩৫
ক্বুল = বলো। কুল্লুম মুতারাব্বিসুন = প্রত্যেকেই অপেক্ষাকারী। ফাতারাব্বাসূ = সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। ফাছাতা’লামূনা = শীঘ্রই তোমরা জানবে। মান = কারা। আসহাবুস সিরাতিছ ছাবিয়্যি = সরল সঠিক পথের অনুসারী। ওয়া = ও। মানিহতাদা = কে হিদায়াতপ্রাপ্ত।
বলো, ‘প্রত্যেকেই অপেক্ষাকারী। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। শীঘ্রই তোমরা জানবে, কারা সরল সঠিক পথের অনুসারী ও কে হিদায়াতপ্রাপ্ত’।