কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

018. সূরা কাহফ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

১৮:১
আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী = আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি। আনযালা = নাযিল করেছেন। আলা আবদিহিল কিতাবা = তাঁর বান্দার উপর (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর উপর) এই কিতাব। ওয়া = আর। লাম ইয়াজআল লাহু = উহাতে রাখেননি। ইওয়াজা = কোন বক্রতা।

আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি নাযিল করেছেন তাঁর বান্দার উপর (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর উপর) এই কিতাব, আর উহাতে রাখেননি কোন বক্রতা।

১৮:২
ক্বাইয়িমাল লিইউনযিরা = যা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, সতর্ক করার জন্য। বা’ছা শাদীদাম মিল্লাদুনহু = কঠিন শাস্তি সম্পর্কে, তাঁর পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। ইউবাশশিরাল মু’মিনীনাল্লাযীনা = মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য, যারা। ইয়া’মালূনাস সলিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করে। আন্না = এ মর্মে যে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরান হাছানান = উত্তম প্রতিফল।

যা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত, সতর্ক করার জন্য কঠিন শাস্তি সম্পর্কে, তাঁর পক্ষ থেকে; আর মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য, যারা সালিহাত/ সৎকর্ম করে; এ মর্মে যে, তাদের জন্য আছে উত্তম প্রতিফল।

১৮:৩
মাকিছীনা ফীহি = তারা তাতে বসবাসকারী হবে। আবাদান = চিরকাল।

তারা তাতে বসবাসকারী হবে চিরকাল।

১৮:৪
ওয়া = আর। ইউনযিরাল্লাযীনা = তাদেরকে সতর্ক করার জন্য, যারা। ক্বলুত্তাখাযাল্লাহু = বলে, ‘আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। ওয়ালাদান = সন্তান।

আর তাদেরকে সতর্ক করার জন্য, যারা বলে, ‘আল্লাহ গ্রহণ করেছেন সন্তান’।

১৮:৫
মা লাহুম বিহী ইলমিন = উহার ব্যাপারে (= আল্লাহর জন্য সন্তান আরোপ করা যেতে পারে কিনা সে ব্যাপারে) তাদেরও কোন জ্ঞান নেই। ওয়া = আর। লা লিআবায়িহিম = তাদের বাপদাদারও কোন জ্ঞান ছিলো না। কাবুরাত কালিমাতান = বড়ই অন্যায় কথা। তাখরুজু মিন আফওয়াহিহিম = যা বের হয় তাদের মুখ দিয়ে। ইইঁ ইয়াক্বুলূনা = (এ কথার মাধ্যমে) তারা বলে না। ইল্লা কাযিবান = মিথ্যা কথা ছাড়া (অন্য কিছু)।

উহার ব্যাপারে (= আল্লাহর জন্য সন্তান আরোপ করা যেতে পারে কিনা সে ব্যাপারে) তাদেরও কোন জ্ঞান নেই আর তাদের বাপদাদারও কোন জ্ঞান ছিলো না। বড়ই অন্যায় কথা, যা বের হয় তাদের মুখ দিয়ে। (এ কথার মাধ্যমে) তারা বলে না, মিথ্যা কথা ছাড়া (অন্য কিছু)।

১৮:৬
ফালাআল্লাকা = তাহলে তুমি যেন। বাখিউন = বিনাশকারী হয়ে যাবে। নাফসাকা = তোমার নফসকে/ নিজ জীবনসত্তাকে। আলা আছারিহিম = তাদের পেছনে। ইল্লাম ইউ’মিনূ = যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস না করে। বিহাযাল হাদীসি = এই হাদীসের (অর্থাৎ কুরআনের) প্রতি। আছাফান = তবে সেই দু:খে।

তাহলে তুমি যেন বিনাশকারী হয়ে যাবে তোমার নফসকে/ নিজ জীবনসত্তাকে তাদের পেছনে, যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস না করে এই হাদীসের (অর্থাৎ কুরআনের) প্রতি, তবে সেই দু:খে!

১৮:৭
ইন্না = নিশ্চয়। জাআলনা = আমরা বানিয়েছি। মা আলাল আরদি = যা কিছু আছে পৃথিবীতে। যীনাতাল্লাহা = উহার সৌন্দর্যস্বরূপ। লিনাবলুয়াহুম = তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে। আইয়ুহুম = তাদের মধ্যে কে। আহছানু আমালা = কাজে কর্মে অধিক উত্তম।

নিশ্চয় আমরা বানিয়েছি যা কিছু আছে পৃথিবীতে উহার সৌন্দর্যস্বরূপ, তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে তাদের মধ্যে কে কাজে কর্মে অধিক উত্তম?

১৮:৮
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লাজায়িলূনা = পরিণত করবো। মা আলাইহা = যা কিছু উহার উপরে (= পৃথিবীতে) আছে সেসবকিছুকে। সয়ীদান খুরুজান = সমতল প্রান্তরে।

আর নিশ্চয় আমরা পরিণত করবো যা কিছু উহার উপরে (= পৃথিবীতে) আছে সেসবকিছুকে সমতল প্রান্তরে।

১৮:৯
আম হাছিবতা = তুমি কি হিসাব করে নিয়েছো। আন্না = যে। আসহাবাল কাহাফি ওয়ার রক্বীমি = ‘আসহাবে কাহাফ ওয়ার রক্বীম’ (রকীম হচ্ছে অতীতের একটি প্রসিদ্ধ জনপদের নাম)। কানূ মিন আয়াতিনা আজাবান = ছিলো আমাদের আশ্চর্য আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত?

তুমি কি হিসাব করে নিয়েছো যে, ‘আসহাবে কাহাফ ওয়ার রক্বীম’ ছিলো আমাদের আশ্চর্য আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত?

১৮:১০
ইয = যখন। আওয়াল ফিতইয়াতু = আশ্রয় নিয়েছে কয়েকজন যুবক। ইলাল কাহফি = পর্বতগুহাটিতে। ফাক্বলূ = তখন তারা বলেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। আতিনা = আমাদেরকে দিন। মিল্লাদুনকা = আপনার পক্ষ থেকে। রহমাতান = রহমত/ দয়া। ওয়া = আর। হাইয়ি লানা = আমাদের জন্য করে দিন। মিন আমরিনা = আমাদের কাজকে। রশাদান = সঠিক দিকে পরিচালিত।

যখন আশ্রয় নিয়েছে কয়েকজন যুবক পর্বতগুহাটিতে, তখন তারা বলেছে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে দিন আপনার পক্ষ থেকে রহমত/ দয়া, আর আমাদের জন্য করে দিন আমাদের কাজকে (= একত্ববাদী আদর্শের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজকে) সঠিক দিকে পরিচালিত।

১৮:১১
ফাদরাবনা আলা আযানিহিম = সুতরাং আমরা কোলাহলশ্রবণ থেকে মুক্ত রেখেছি তাদের কানগুলোকে। ফিল কাহাফি = গুহাটির মধ্যে। ছিনীনা আদাদা = গণনাকৃত বছরসমূহে।

সুতরাং আমরা কোলাহলশ্রবণ থেকে মুক্ত রেখেছি তাদের কানগুলোকে গুহাটির মধ্যে গণনাকৃত বছরসমূহে।

১৮:১২
ছুম্মা = তারপর। বাআছনাহুম = আমরা তাদেরকে সমুত্থিত/ (আত্মপ্রকাশে) অনুপ্রাণিত করেছি। লিনা’লামা = যেন আমরা প্রকাশ করে দিই। আইয়ুল হিজবায়নি = (তারা ও তাদের বিরোধীপক্ষ এই) দুই দলের কোনটি। আহছা = অধিকতর ব্যাপকভাবে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে। লিমা লাবিছূ আমাদান = এই অবস্থানকালের কারণের সাথে সম্পর্কিত উদ্দেশ্যকে।

তারপর আমরা তাদেরকে সমুত্থিত/ (আত্মপ্রকাশে) অনুপ্রাণিত করেছি, যেন আমরা প্রকাশ করে দিই (তারা/ আসহাবে কাহাফ ও তাদের বিরোধীপক্ষ/ যারা একত্ববাদে বিশ্বাসী নয়, এই) দুই দলের কোনটি অধিকতর ব্যাপকভাবে আয়ত্ত করতে সক্ষম হয়েছে এই অবস্থানকালের কারণের সাথে সম্পর্কিত উদ্দেশ্যকে।

১৮:১৩
নাহনু = আমরা। নাক্বুসসু = বর্ণনা করছি। আলাইকা = তোমার কাছে। নাবাআহুম = তাদের সংবাদ। বিল হাক্বক্বি = সঠিকভাবে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা ছিলো। ফিতইয়াতুন = কয়েকজন যুবক। আমানূ = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিরব্বিহিম = তাদের রবের উপর। ওয়া = আর। যিদনাহুম = আমরা তাদেরকে বাড়িয়ে দিয়েছি। হুদান = হুদা/ হিদায়াত।

আমরা বর্ণনা করছি তোমার কাছে তাদের সংবাদ সঠিকভাবে। নিশ্চয় তারা ছিলো কয়েকজন যুবক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাদের রবের উপর, আর আমরা তাদেরকে বাড়িয়ে দিয়েছি হুদা/ হিদায়াত।

১৮:১৪
ওয়া = আর। রবাতনা = আমরা দৃঢ়তা দিয়েছি। আলা ক্বুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহে। ইয = যখন। ক্বমূ = তারা (তাওহীদের পক্ষে) দাঁড়িয়েছে। ফাক্বলূ = তখন তারা বলেছে। রব্বুনা = আমাদের রব হচ্ছেন। রব্বুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রব। লান নাদউআ = আমরা দোয়া করবো না। মিন দূনিহী = তাঁর কাছে ছাড়া। ইলাহান = অন্য কোন ইলাহর কাছে। লাক্বাদ = নিশ্চয়। ক্বুলনা = আমরা বলবো। ইযান = তাহলে তখন। শাতাতান = অসঙ্গত কথা।

আর আমরা দৃঢ়তা দিয়েছি তাদের কলবসমূহে, যখন তারা (তাওহীদের পক্ষে) দাঁড়িয়েছে, তখন তারা বলেছে, ‘আমাদের রব হচ্ছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রব। আমরা দোয়া করবো না তাঁর কাছে ছাড়া অন্য কোন ইলাহর কাছে। নিশ্চয় (তা করলে) আমরা বলবো তাহলে তখন অসঙ্গত কথা’।

১৮:১৫
হাউলায়ি = এই যে এরা। ক্বাওমুনাত্তাখাজূ = আমাদের কওম গ্রহণ করেছে। মিন দূনিহী = তাঁকে বাদ দিয়ে। আলিহাতান = অন্য ইলাহদেরকে। লাও = কেন। লা ইয়া’তূনা = তারা আনে না। আলাইহিম = তাদের (এ কাজের) উপর। বিছুলতানিম বাইয়িনিন = স্পষ্ট সুলতান/ প্রমাণ। ফামান আযলামু মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে।

এই যে এরা আমাদের কওম গ্রহণ করেছে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য ইলাহদেরকে। কেন তারা আনে না তাদের (এ কাজের) উপর স্পষ্ট সুলতান/ প্রমাণ? সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে?

১৮:১৬
ওয়া = আর। ইযি’তাযালতুমুহুম = যখন তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো তাদের থেকে। ওয়া = আর। মা ইয়া’বুদূনা ইল্লাল্লাহা = তাদের থেকেও যাদের ইবাদাত/ দাসত্ব তারা করে আল্লাহ ছাড়া। ফা’ঊ = সুতরাং আশ্রয় গ্রহণ করো। ইলাল কাহফি = গুহাটিতে। ইয়ানশুর = তাহলে, প্রশস্ত করে দিবেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। রব্বুকুম = তোমাদের রব। মির রহমাতিহী = তাঁর রহমতকে। ওয়া = আর। ইউহাইয়িউ = তিনি প্রস্তুত করে দিবেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিন আমরিকুম = তোমাদের কাজে। মিরফাক্বান = সফলতা লাভের উপকরণ।

আর যখন তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছো তাদের থেকে আর তাদের থেকেও যাদের ইবাদাত/ দাসত্ব তারা করে আল্লাহ ছাড়া; সুতরাং আশ্রয় গ্রহণ করো গুহাটিতে। তাহলে, প্রশস্ত করে দিবেন তোমাদের জন্য তোমাদের রব তাঁর রহমতকে আর তিনি প্রস্তুত করে দিবেন তোমাদের জন্য তোমাদের কাজে সফলতা লাভের উপকরণ’।

১৮:১৭
ওয়া = আর। তারাশশামসা = তুমি (যদি দেখতে পারতে তবে) দেখতে যে, সূর্য। ইযা = যখন। তলাআত = উদিত হতো। তাযাওয়ারু = তখন সরে যেতো। আন কাহফিহিম = তাদের গুহা থেকে। যাতাল ইয়ামীনি = ডান পাশ দিয়ে। ওয়া = আর। ইযা = যখন। গারাবাত = অস্ত যেতো। তাক্বরিদুহুম = তা তাদেরকে অতিক্রম করতো। যাতাশ শিমালি = বাম পাশ দিয়ে। ওয়া = আর। হুম = তারা অবস্থান করছিলো। ফী ফাজওয়াতিম মিনহু = গুহার প্রশস্ত চত্বরে। যালিকা = উহা। মিন আয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত (যে, তিনি তাঁর পথে সংগ্রামীদের জন্য এমনি ব্যবস্থা করে দেন)। মাইঁ ইয়াহদিল্লাহু = যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন। ফাহুয়াল মুহতাদি = সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিল = যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন। ফালান তাজিদা = তুমি পাবে না। লাহু = তার জন্য। ওয়ালিয়্যাম মুরশিদা = কোন ওলি/ অভিভাবক ও মুরশিদ/ পথপ্রদর্শক {= আল্লাহ ছাড়া কোন ওলি ও মুরশিদ নেই।}

আর তুমি (যদি দেখতে পারতে তবে) দেখতে যে, সূর্য যখন উদিত হতো, তখন সরে যেতো তাদের গুহা থেকে ডান পাশ দিয়ে, আর যখন অস্ত যেতো তখন তা তাদেরকে অতিক্রম করতো বাম পাশ দিয়ে; আর তারা অবস্থান করছিলো গুহার প্রশস্ত চত্বরে। উহা আল্লাহর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত (যে, তিনি তাঁর পথে সংগ্রামীদের জন্য এমনি ব্যবস্থা করে দেন)। যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন তুমি পাবে না তার জন্য কোন ওলি/ অভিভাবক ও মুরশিদ/ পথপ্রদর্শক {= আল্লাহ ছাড়া কোন ওলি ও মুরশিদ নেই।}

১৮:১৮
ওয়া = আর। তাহছাবুহুম = তুমি তাদেরকে (হঠাৎ করে দেখলে তখনও) মনে করতে যে। আয়ক্বাযান = তারা জাগ্রত। ওয়া হুম = এমনকি যখন তারা থাকতো। রুকুদূন = নিদ্রিত। ওয়া = আর। নুক্বাল্লিবুহুম = আমরা ঘন ঘন তাদেরকে পরিবর্তন করাতাম। যাতাল ইয়ামীনি ওয়া যাতাশ শিমালি = ডানে ও বামে। ওয়া = আর। কালবুহুম = তাদের কুকুর ছিলো। বাছিতুন = প্রসারিতকারী। যিরাআইনি = উহার দুটি বাহুকে। বিল ওয়াসিদি = পর্বতগুহার প্রবেশপথে। লাভিত্তলা’তা = যদি তুমি (হঠাৎ) উঁকি দিয়ে দেখতে। আলাইহিম = তাদেরকে। লাওয়াল্লায়তা = তাহলে তুমি মুখ ফিরিয়ে নিতে। মিনহুম = তাদের থেকে। ফিরারান = পালিয়ে যেতে। ওয়া = আর। লামুলি’তা = (তোমার মনের মধ্যে) সঞ্চার/ সৃষ্টি হতো। মিনহুম = তাদের পক্ষ থেকে। রু’বান = ভয়-ভীতি।

আর তুমি তাদেরকে (হঠাৎ করে দেখলে তখনও) মনে করতে যে, তারা জাগ্রত, এমনকি যখন তারা থাকতো নিদ্রিত। আর আমরা ঘন ঘন তাদেরকে পরিবর্তন করাতাম ডানে ও বামে। আর তাদের কুকুর ছিলো প্রসারিতকারী উহার দুটি বাহুকে পর্বতগুহার প্রবেশপথে। যদি তুমি (হঠাৎ) উঁকি দিয়ে দেখতে তাদেরকে, তাহলে তুমি মুখ ফিরিয়ে নিতে তাদের থেকে, পালিয়ে যেতে; আর (তোমার মনের মধ্যে) সঞ্চার/ সৃষ্টি হতো তাদের পক্ষ থেকে ভয়-ভীতি/ আশংকা।

১৮:১৯
ওয়া = আর। কাযালিকা = এরূপ অবস্থাতে। বাআছনাহুম = আমরা তাদেরকে সমুত্থিত/ (আত্মপ্রকাশে) অনুপ্রাণিত করেছি। লিইয়াতাছাআলূ বায়নাহুম = যাতে তারা একে অন্যকে (পরবর্তী কর্মসূচী সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করে। ক্বলা ক্বায়িলুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার একজন বক্তা বলেছে। কাম লাবিছতুম = তোমরা কতদিন অবস্থান করেছো? ক্বলূ = তারা (কয়েকজন) বলেছে। লাবিছনা = আমরা অবস্থান করেছি। ইয়াওমান আও বা’দা ইয়াওমিন = একদিন বা তার কিছু অংশ (২৩:১১১-১১৪, অর্থাৎ ভবিষ্যত স্বচ্ছন্দময় সময়ের তুলনায় খুবই সামান্য সময়)। ক্বলূ = (তারপর) তারা বলেছে। রব্বুকুম = তোমাদের রবই। আ’লামু = ভাল জানেন। বিমা লাবিছতুম = তোমাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে। ফাবআছু = সুতরাং পাঠাও। আহাদুকুম = তোমাদের কাউকে। বিওয়ারিক্বিকুম হাযিহি = তোমাদের এই মুদ্রাসহ। ইলাল মাদীনাতি = মদীনাতে/ শহরে। ফালইয়ানযুর = তারপর সে নজর/ লক্ষ্য করুক। আইয়ুহা = কোনটি। আযকা = সবচেয়ে বিশুদ্ধ/ পুষ্টিমানসম্পন্ন। তয়ামান = খাদ্য। ফালইয়া’তিকুম = তারপর সে তোমাদের কাছে নিয়ে আসুক। বিরিযক্বিম মিনহু = রিযিক/ জীবিকাস্বরূপ উহা থেকে। ওয়ালইয়াতালাত্তাফ = আর সে যেন সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে আচরণ করে। ওয়া = আর। লা ইউশইরান্না = টের পেতে না দেয়। বিকুম = তোমাদের সম্পর্কে। আহাদান = কাউকেই।

আর এরূপ অবস্থাতে আমরা তাদেরকে সমুত্থিত/ (আত্মপ্রকাশে) অনুপ্রাণিত করেছি। যাতে তারা একে অন্যকে (পরবর্তী কর্মসূচী সম্পর্কে) জিজ্ঞাসা করে। (এরূপ উদ্যোগের পর্যায়ে) তাদের মধ্যকার একজন বক্তা বলেছে, ‘তোমরা কতদিন অবস্থান করেছো?’ তারা (কয়েকজন) বলেছে, ‘আমরা অবস্থান করেছি একদিন বা তার কিছু অংশ’ (২৩:১১১-১১৪, অর্থাৎ ভবিষ্যত স্বচ্ছন্দময় সময়ের তুলনায় খুবই সামান্য সময়)। (তারপর) তারা বলেছে, ‘তোমাদের রবই ভাল জানেন তোমাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে। সুতরাং পাঠাও তোমাদের কাউকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ মদীনাতে/ শহরে। তারপর সে নজর/ লক্ষ্য করুক, কোনটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ/ পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য? তারপর সে তোমাদের কাছে নিয়ে আসুক রিযিক/ জীবিকাস্বরূপ উহা থেকে; আর সে যেন সূক্ষ্মদর্শিতার সাথে আচরণ করে এবং টের পেতে না দেয় তোমাদের সম্পর্কে কাউকেই।

১৮:২০
ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। ইইঁ ইয়াযহারূ = যদি বিজয় লাভ করে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ইয়ারজুমূকুম = তাহলে তারা তোমাদেরকে রজম/ পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবে। আও = অথবা। ইউয়ীদুকুম = তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিবে। ফী মিল্লাতিহিম = তাদের মিল্লাতে (= তাদের ইবাদাতের বহুত্ববাদী স্বরূপ ও প্রকৃতিতে)। ওয়া = আর। লান তুফলিহূ = তোমরা সফলতা লাভ করতে পারবে না। ইযান = তাহলে তখন। আবাদান = কখনোই।

(কারণ) নিশ্চয় তারা যদি বিজয় লাভ করে তোমাদের উপর, তাহলে তারা তোমাদেরকে রজম/ পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবে, অথবা তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিবে তাদের মিল্লাতে (= তাদের ইবাদাতের বহুত্ববাদী স্বরূপ ও প্রকৃতিতে)। আর তোমরা সফলতা লাভ করতে পারবে না তাহলে তখন কখনোই।

১৮:২১
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। আ’ছারনা = আমরা (মানুষকে) জানিয়ে দিয়েছি। আলাইহিম = তাদের ব্যাপারে। লিইয়া’লামূ = যেন তারা জানতে পারে। আন্না = যে। ওয়া’দাল্লাহি হাক্বক্বু = আল্লাহর ওয়াদা সত্য। ওয়া = আর। আন্নছ ছায়াতা = এও যে, ছায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত আসবেই। লা রয়বা ফীহি = উহাতে কোন সন্দেহ নেই । ইয = (স্মরণ করো) যখন। ইয়াতানাযাঊনা বায়নাহুম = তারা (= জনসাধারণ) পরস্পর বিবাদ করছিলো। আমরাহুম = তাদের কাজের বিষয়ে। ফাক্বালাবনূ = তখন তারা (কয়েকজন) বলেছে, ‘বানাও। আলাইহিম = তাদের উপর/ তাদের স্মরণার্থে। বুনইয়ানান = একটি স্মৃতিসৌধ। রব্বুহুম = তাদের রবই। আ’লামু = ভাল জানেন। বিহিম = তাদের (মর্যাদা) সম্পর্কে। ক্বলাল্লাযীনা = (কিন্তু) তারা বলেছে যারা। গালাবূ = বিজয়ী হয়েছে। আলা আমরিহিম = তাদের কার্যাবলীর বিষয়ে (সিদ্ধান্ত গ্রহণে)। লানাত্তাখিজান্না = অবশ্যই আমরা গ্রহণ/ নির্মাণ করবো। আলাইহিম = তাদের উপর/ তাদের স্মরণার্থে। মাছজিদান = একটি মসজিদ।

আর এভাবে আমরা (মানুষকে) জানিয়ে দিয়েছি তাদের ব্যাপারে। যেন তারা জানতে পারে যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য। আর এও যে, ছায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত আসবেই। উহাতে কোন সন্দেহ নেই {= ন্যায়পন্থীদের পুরস্কার ও অন্যায়পন্থীদের শাস্তি অবধারিত, আর এর চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য ছায়াত/ প্রলয় মুহুর্তের আগমন নিশ্চিত।}। (স্মরণ করো) যখন (আসহাবে কাহাফের মৃত্যুর পরবর্তীতে এ ঘটনার প্রকৃত শিক্ষা বিস্মৃত হয়ে) তারা (= জনসাধারণ) পরস্পর বিবাদ করছিলো তাদের কাজের বিষয়ে। তখন তারা (কয়েকজন) বলেছে, ‘বানাও তাদের উপর/ তাদের স্মরণার্থে একটি স্মৃতিসৌধ। তাদের রবই ভাল জানেন তাদের (মর্যাদা) সম্পর্কে’। (কিন্তু) তারা বলেছে যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের কার্যাবলীর বিষয়ে (সিদ্ধান্ত গ্রহণে), ‘অবশ্যই আমরা গ্রহণ/ নির্মাণ করবো তাদের উপর/ তাদের স্মরণার্থে একটি মসজিদ’।

১৮:২২
ছাইয়াক্বুলূনা = শীঘ্রই তারা (কিছু লোক) বলবে। ছালাছাতুন = ‘(তারা ছিলো) তিনজন। রবিউহুম = তাদের চতুর্থজন (ছিলো)। কালবুহুম = তাদের কুকুর। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা (কিছু লোক) বলবে। খামছাতুন = (তারা ছিলো) পাঁচজন। ছাদিছুহুম = তাদের ষষ্ঠজন (ছিলো)। কালবুহুম = তাদের কুকুর। রজমাম বিল গায়বি = গায়েবের/ অদেখা বিষয়ের ব্যাপারে অনুমাননির্ভর যত কথাবার্তা। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা (কিছু লোক) বলবে। ছাবআতুন = (তারা ছিলো) সাতজন। ওয়া = আর। ছামিনুহুম = অষ্টমজন (ছিলো)। কালবুহুম = তাদের কুকুর। ক্বুল = বলো। রব্বী = আমার রবই। আ’লামু = ভাল জানেন। বিইদ্দাতিহিম = তাদের সংখ্যা সম্পর্কে। মা ইয়া’লামুহুম = তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে না। ইল্লা ক্বালীলুন = অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া। ফালা তুমারি = সুতরাং তুমি বিতর্ক করো না। ফীহিম = তাদের ব্যাপারে। ইল্লা মিরাআন যহিরান = প্রকাশিত তথ্য উল্লেখ ছাড়া। ওয়া = আর। লা তাছতাফতি = ফতোয়া/ যথাযথ অভিমত জানতে চেয়ো না। ফীহিম = তাদের ব্যাপারে। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। আহাদান = কারো কাছে।

শীঘ্রই তারা (কিছু লোক) বলবে, ‘(তারা ছিলো) তিনজন। তাদের চতুর্থজন (ছিলো) তাদের কুকুর’। আর তারা (কিছু লোক) বলবে, ‘(তারা ছিলো) পাঁচজন। তাদের ষষ্ঠজন (ছিলো) তাদের কুকুর’। গায়েবের/ অদেখা বিষয়ের ব্যাপারে অনুমাননির্ভর যত কথাবার্তা। আর তারা (কিছু লোক) বলবে, ‘(তারা ছিলো) সাতজন। আর অষ্টমজন (ছিলো) তাদের কুকুর’। বলো, ‘আমার রবই ভাল জানেন তাদের সংখ্যা সম্পর্কে। তাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানে না, অল্পসংখ্যক লোক ছাড়া’। সুতরাং তুমি বিতর্ক করো না তাদের ব্যাপারে, প্রকাশিত তথ্য উল্লেখ ছাড়া। আর ফতোয়া/ যথাযথ অভিমত জানতে চেয়ো না তাদের ব্যাপারে তাদের মধ্য থেকে কারো কাছে।

১৮:২৩
ওয়া = আর। লা তাক্বূলান্না = কখনো বলো না। লিশাইয়িন = কোন ব্যাপারে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। ফায়িলুন যালিকা = উহা করবো। গাদান = আগামী কাল।

আর কখনো বলো না কোন ব্যাপারে, ‘নিশ্চয় আমি উহা করবো আগামী কাল’ (৩১:৩৪)।

১৮:২৪
ইল্লা আইঁ ইয়াশাআল্লাহু = (তুমি তা সম্পাদনকারী হতে পারো না) এছাড়া যে, আল্লাহ ইচ্ছা করেন। (// 'ইনশাআল্লাহ'/ 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন' বলা ছাড়া)। ওয়াযকুর = আর যিকির/ স্মরণ করো। রব্বাকা = তোমার রবকে। ইযা = যখন। নাছীতা = তুমি ভুলে যাও (এ নির্দেশ পালন করতে/ 'ইনশাআল্লাহ' বলতে)। ওয়া = আর। ক্বুল = বলো। আছা = আশা করা যায়। আইঁ ইয়াহদিয়ানি = যে, আমাকে হিদায়াত করবেন। রব্বী = আমার রব। লিআক্বরাবা মিন হাযা = উহার দিকে যা এই ব্যাপারে সবচেয়ে নিকটবর্তী। রাশাদা = সঠিক (বিষয়) হিসাবে।

(তুমি তা সম্পাদনকারী হতে পারো না) এছাড়া যে, আল্লাহ ইচ্ছা করেন। (// 'ইনশাআল্লাহ'/ 'যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন' বলা ছাড়া)। আর যিকির/ স্মরণ করোতোমার রবকে, যখন তুমি ভুলে যাও (এ নির্দেশ পালন করতে/ 'ইনশাআল্লাহ' বলতে)। আর বলো, "আশা করা যায় যে, আমাকে হিদায়াত করবেন আমার রব উহার দিকে যা এই ব্যাপারে সবচেয়ে নিকটবর্তী সঠিক (বিষয়) হিসাবে।

১৮:২৫
ওয়া = আর। লাবিছূ = তারা অবস্থান করেছে। ফিল কাহফি = গুহাটিতে। ছালাছা মিআতিন ছিনীনা = (সৌর বর্ষের হিসাবে) তিনশত বছর। ওয়াযদাদূ = আর তারা (= প্রশ্নকারীরা) (চান্দ্র বর্ষের হিসাবে) বৃদ্ধি করেছে। তিছআন = নয় (বছর)।

আর তারা অবস্থান করেছে গুহাটিতে (সৌর বর্ষের হিসাবে) তিনশত বছর, আর তারা (= প্রশ্নকারীরা) (চান্দ্র বর্ষের হিসাবে) বৃদ্ধি করেছে নয় (বছর)।

১৮:২৬
ক্বুলিল্লাহু = বলো, ‘আল্লাহ-ই। আ’লামু = ভাল জানেন। বিমা লাবিছূ = তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে। লাহু = তাঁরই (জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের) অধিকারভুক্ত। গায়বুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর গায়েব/ অদৃশ্য বিষয়সমূহ। আবসির বিহী = তিনি সবকিছু খুবই ভালভাবে দেখেন। ওয়া = আর। আছমি’ = তিনি সবকিছু খুবই ভালভাবে শুনেন। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিনি দূনিহী = তিনি ছাড়া। মিওঁ ওয়ালিয়্যিন = কোন ওলি/ অভিভাবক। ওয়া = আর। লা ইউশরিক = তিনি শরিক হিসাবে গ্রহণ করেন না। ফী হুকমিহী = তাঁর হুকুমের ব্যাপারে। আহাদান = কাউকেই।

বলো, ‘আল্লাহ-ই ভাল জানেন তাদের অবস্থানকাল সম্পর্কে। তাঁরই (জ্ঞান ও নিয়ন্ত্রণের) অধিকারভুক্ত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর গায়েব/ অদৃশ্য বিষয়সমূহ। তিনি সবকিছু খুবই ভালভাবে দেখেন আর তিনি সবকিছু খুবই ভালভাবে শুনেন। তাদের জন্য নেই তিনি ছাড়া কোন ওলি/ অভিভাবক। আর তিনি শরিক হিসাবে গ্রহণ করেন না তাঁর হুকুমের ব্যাপারে কাউকেই’।

১৮:২৭
ওয়াতলু = আর তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করো। মা ঊহিয়া = যা ওহি করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। মিন কিতাবি রব্বিকা = তোমার রবের কিতাব থেকে। লা মুবাদ্দিলা লিকালিমাতিহী = তাঁর বাণীর কোন বদলকারী/ পরিবর্তনকারী নেই। ওয়া = আর। লান তাজিদা = তুমি পাবে না। মিন দূনিহী = তাঁর কাছে ছাড়া। মুলতাহাদান = কোন আশ্রয়স্থান।

আর তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করো যা ওহি করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের কিতাব থেকে (= আল কুরআন)। তাঁর বাণীর কোন বদলকারী/ পরিবর্তনকারী নেই। আর তুমি পাবে না তাঁর কাছে ছাড়া কোন আশ্রয়স্থান।

১৮:২৮
ওয়াসবির নাফসাকা = আর ধৈর্যশীল রাখো তোমার নিজেকে। মাআল্লাযীনা = তাদের সাথে যারা। ইয়াদঊনা = ডাকে। রব্বাহুম = তাদের রবকে। বিলগাদাওয়াতি ওয়াল আশিয়্যি = সকালে ও ইশার সময়। ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। ওয়াজহাহু = তাঁর সন্তুষ্টি পেতে। ওয়া = আর। লা তা’দু = তুমি ফিরিয়ে নিও না। আয়নাকা = তোমার দুচোখ। আনহুম = তাদের থেকে। তুরীদু = তুমি কি এরাদা/ ইচ্ছা করো। যীনাতাল হায়াতাদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের যীনাত/ শোভা-সৌন্দর্য পেতে? ওয়া = আর। লা তুতি’ মান = তুমি তার ইতায়াত/ আনুগত্য করো না। আগলাফনা = আমরা গাফিল/ উদাসীন করে দিয়েছি। ক্বালবাহু = যার কলবকে। আন যিকরিনা = আমাদের যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ সংবিধান (= আল কুরআন) থেকে। ওয়াত্তাবায়া = আর যারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। হাওয়াহু = তাদের হাওয়ার/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের। ওয়া = আর। কানা = হয়ে থাকে। আমরুহু = যার কাজ। ফুরুতান = সীমালংঘনমূলক।

আর ধৈর্যশীল রাখো তোমার নিজেকে তাদের সাথে যারা ডাকে তাদের রবকে সকালে ও ইশার সময়। তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে তাঁর সন্তুষ্টি পেতে। আর তুমি ফিরিয়ে নিও না তোমার দুচোখ তাদের থেকে। তুমি কি এরাদা/ ইচ্ছা করো হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের যীনাত/ শোভা-সৌন্দর্য পেতে? আর তুমি তার ইতায়াত/ আনুগত্য করো না আমরা গাফিল/ উদাসীন করে দিয়েছি যার কলবকে আমাদের যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ সংবিধান (= আল কুরআন) থেকে, আর যারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তাদের হাওয়ার/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের আর হয়ে থাকে যার কাজ সীমালংঘনমূলক।

১৮:২৯
ওয়া = আর। ক্বুলিল হাক্বক্বু = বলো, ‘সত্য এসেছে। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ফামান = সুতরাং যে। শাআ = ইচ্ছা করে। ফালইউ’মিন = সে ঈমান/ বিশ্বাস করুক। ওয়া = আর। মান = যে। শাআ = ইচ্ছা করে। ফালইয়াকফুর = সে কুফর/ অবিশ্বাস করুক। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আ’তাদনা = প্রস্তুত করে রেখেছি। লিয যলিমীনা = যালিমদের জন্য। নারান = (জাহান্নামের) আগুন। আহাতা = পরিবেষ্টন করেছে। বিহিম = তাদেরকে। ছুরাদিক্বুহা = উহার লেলিহান শিখা। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়াছতাগিছূ = যদি তারা পানীয় চায়। ইউগাছূ = তাদেরকে পানীয় দেয়া হবে। বিমায়িন = এরূপ পানি। কালমুহলি = যেমন তেলের গাদ। ইয়াশভিল উজূহা = যা তাদের মুখমন্ডলকে ভেজে দেবে। বি’ছাশ শারাবু = নিকৃষ্ট শরাব/ পানীয়। ওয়া = আর। ছায়াত মুরতাফাক্বান = নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থান।

আর বলো, ‘সত্য এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে ঈমান/ বিশ্বাস করুক। আর যে ইচ্ছা করে সে কুফর/ অবিশ্বাস করুক’। নিশ্চয় আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি যালিমদের জন্য (জাহান্নামের) আগুন। পরিবেষ্টন করেছে তাদেরকে উহার লেলিহান শিখা। আর যদি তারা পানীয় চায় তখন তাদেরকে পানীয় দেয়া হবে এরূপ পানি যেমন তেলের গাদ, যা তাদের মুখমন্ডলকে ভেজে দেবে। নিকৃষ্ট শরাব/ পানীয় আর নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থান।

১৮:৩০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। লা নুদীউ = আমরা বিনষ্ট করি না। আজরা মান = তার প্রতিফল যে। আহছানা আমালা = উত্তম কাজ করে।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে, তবে আমরা বিনষ্ট করি না তার প্রতিফল যে উত্তম কাজ করে।

১৮:৩১
উলায়িকা লাহুম = তাদের জন্যই আছে। জান্নাতু আদনিন = স্থায়ী জান্নাতসমূহ। তাজরী = জারি/ প্রবাহিত হয়। মিন তাহতিহিমুল আনহারু = উহার নিচ অংশে নদীসমূহ। ইউহাল্লাওনা ফীহা = তাদেরকে উহাতে অলংকৃত করা হবে। মিন আছাভিরা মিন যাহাবিন = স্বর্ণের চুড়ি দ্বারা। ওয়া = আর। ইয়ালবাছূনা = তাদেরকে পরানো হবে। ছিয়াবান খুদরান = সবুজ বাড়তি পোশাক। মিন ছুনদুছিন = যার কিছু মিহি রেশমের তৈরি। ওয়া = আর। ইছতাবরাক্বিন = কিছু মোটা রেশমের তৈরি। মুত্তাকিয়ীনা = তারা ঠেস দিয়ে বসবে। ফীহা = সেখানে। আলাল আরায়িকি = সুসজ্জিত উচ্চাসনে। নি’মাছ ছাওয়াবু = অত্যন্ত নিয়ামাতপূর্ণ সওয়াব/ প্রতিফল। ওয়া = আর। হাছুনাত = উত্তম। মুরতাফাক্বান = আশ্রয়স্থান।

তাদের জন্যই আছে স্থায়ী জান্নাতসমূহ। জারি/ প্রবাহিত হয় উহার নিচ অংশে নদীসমূহ। তাদেরকে উহাতে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের চুড়ি দ্বারা। আর তাদেরকে পরানো হবে সবুজ বাড়তি পোশাক, যার কিছু মিহি রেশমের তৈরি আর কিছু মোটা রেশমের তৈরি। তারা ঠেস দিয়ে বসবে সেখানে সুসজ্জিত উচ্চাসনে। অত্যন্ত নিয়ামাতপূর্ণ সওয়াব/ প্রতিফল আর উত্তম আশ্রয়স্থান।

১৮:৩২
ওয়াদরিব = আর উপস্থাপন/ পেশ করো। লাহুম = তাদের কাছে। মাছালার রজুলাইনি = দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত। জাআলনা = আমরা দিয়েছি। লিআহাদিহিমা = তাদের দুজনের একজনকে। জান্নাতাইনি মিন আ’নাবিন = আঙ্গুরের দুটি বাগান। ওয়া = আর। হাফাফনাহুমা = আমরা দুটিকেই পরিবেষ্টিত করেছিলাম। বিনাখলিন = খেজুর গাছ দিয়ে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা স্থাপন করেছি। বায়নাহুমা = উভয়ের মধ্যে। যারআন = শস্যক্ষেত্র।

আর উপস্থাপন/ পেশ করো তাদের কাছে দুই ব্যক্তির দৃষ্টান্ত। আমরা দিয়েছি তাদের দুজনের একজনকে আঙ্গুরের দুটি বাগান আর আমরা দুটিকেই পরিবেষ্টিত করেছিলাম খেজুর গাছ দিয়ে। আর আমরা স্থাপন করেছি উভয়ের মধ্যে শস্যক্ষেত্র।

১৮:৩৩
কিলতাল জান্নাতায়নি = উভয় বাগান। আতাত = দিতো। উকুলাহা = তার খাদ্য/ ফলফলাদি। ওয়া = আর। লাম তাযলিম মিনহু শাইয়ান = উহাতে কোন ত্রুটি করতো না। ওয়া = আর। ফাজ্জারনা = আমরা উৎসারিত/ প্রবাহিত করেছি। খিলালাহুমা = উভয়ের ভিতর দিয়ে। নাহারান = একটি নদী।

উভয় বাগান দিতো তার খাদ্য/ ফলফলাদি আর উহাতে কোন ত্রুটি করতো না। আর আমরা উৎসারিত/ প্রবাহিত করেছি উভয়ের ভিতর দিয়ে একটি নদী।

১৮:৩৪
ওয়া = আর। কানা লাহু = তার ছিলো। ছামারুন = প্রচুর ফল-ফলাদি। ফাক্বলা = তখন সে বলেছে। লিসাহিবিহী = তার সঙ্গীকে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুয়া = সে। ইউহাভিরুহু = তার সাথে আলোচনা করছিলো। আনা = আমি। আকছারা = অধিক সমৃদ্ধ। মিনকা = তোমার চেয়ে। মালান = মাল-সম্পদে। ওয়া = আর। আআযযু = অধিক শক্তিশালী। নাফারান = জনশক্তিতে।

আর তার ছিলো প্রচুর ফল-ফলাদি। তখন সে বলেছে তার সঙ্গীকে এ অবস্থায় যে, সে তার সাথে আলোচনা করছিলো, ‘আমি অধিক সমৃদ্ধ তোমার চেয়ে মাল-সম্পদে আর অধিক শক্তিশালী জনশক্তিতে’।

১৮:৩৫
ওয়া = আর। দাখালা = সে দাখিল হয়েছে। জান্নাতাহু = তার বাগানে। ওয়া = আর। হুয়া = সে ছিলো। যলিমুন লিনাফসিহী = তার নফসের প্রতি যালিম/ অত্যাচারী। ক্বলা = সে বলেছে। মা আযুন্নু = আমি ধারণা করি না। আন = যে। তাবীদা = ধ্বংস হবে। হাযিহী = ইহা। আবাদান = কখনোই।

আর সে দাখিল হয়েছে তার বাগানে আর সে ছিলো তার নফসের প্রতি যালিম/ অত্যাচারী। সে বলেছে, ‘আমি ধারণা করি না যে, ধ্বংস হবে ইহা কখনোই’।

১৮:৩৬
ওয়া = আর। মা আযুন্নুছ ছায়াতা = আমি ধারণা করি না যে, ছায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত। ক্বায়িমাতুন = প্রতিষ্ঠিত হবে। ওয়া = আর। লায়ির রুদিত্তু = অবশ্য যদি আমি ফিরে যাই। ইলা রব্বী = আমার রবের কাছে। লাআজিদান্না = তাহলে আমিই পাবো। খায়রান = উত্তম জিনিস। মিনহা = উহার চেয়েও। মুনক্বালাবান = পরিবর্তিত (উন্নত) স্থান।

আর আমি ধারণা করি না যে, ছায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত প্রতিষ্ঠিত হবে। আর অবশ্য যদি আমি ফিরে যাই আমার রবের কাছে, তাহলে আমিই পাবো উত্তম জিনিস, (যা বর্তমানে আছে) উহার চেয়েও পরিবর্তিত (উন্নত) স্থান’।

১৮:৩৭
ক্বলা = তখন বলেছে। লাহু = তাকে। সাহিবুহু = তার সঙ্গী। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুয়া = সে। ইউহাভিরুহূ = তার সাথে আলোচনা করছিলো। আকফারতা = তুমি কি কুফর/ অস্বীকার করছো। বিল্লাযী = ঐ সত্তাকে যিনি। খালাক্বাকা = তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। মিন তুরাবিন = মাটি থেকে। ছুম্মা = তারপর শুক্র থেকে। ছুম্মা = তারপর। ছাওয়াকা = তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন। রজুলান = মানুষরূপে।

তখন বলেছে তাকে তার সঙ্গী এ অবস্থায় যে, সে তার সাথে আলোচনা করছিলো, ‘তুমি কি কুফর/ অস্বীকার করছো ঐ সত্তাকে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে, তারপর তোমাকে সুবিন্যস্ত করেছেন মানুষরূপে?

১৮:৩৮
লাকিন্না = কিন্তু। হুয়াল্লাহু = তিনিই আল্লাহ। রব্বী = আমার রব। ওয়া = আর। লা উশরিকু = আমি শিরক করি না। বিরব্বী = আমার রবের সাথে। আহাদান = কাউকেই।

কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি শিরক করি না আমার রবের সাথে কাউকেই।

১৮:৩৯
ওয়া = আর। লাও = কেন। লা = না। ইয = যখন। দাখালতা = তুমি দাখিল হয়েছো। জান্নাতাকা = তোমার বাগানে। ক্বুলতা = তুমি বললে। মা শা আল্লাহু = ‘মা শা আল্লাহু’/ ‘আল্লাহ যা চান তা-ই হয়’। লা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি = আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই। ইন = যদি। তারানি = তুমি আমাকে দেখে থাকো যে। আনা = আমি। আক্বাল্লা = স্বল্পতর। মিনকা = তোমার চেয়েও। মালাওঁ ওয়া ওয়ালাদান = সম্পদে ও সন্তানে।

আর কেন, যখন তুমি দাখিল হয়েছো তোমার বাগানে, তখন তুমি বললে না, ‘মা শা আল্লাহু লা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ/ ‘আল্লাহ যা চান তা-ই হয়, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই’। যদি তুমি আমাকে দেখে থাকো যে, আমি স্বল্পতর তোমার চেয়েও সম্পদে ও সন্তানে।

১৮:৪০
ফাআছা = তবে আশা করা যায়। রব্বী = আমার রব। আইঁ ইউ’তিয়ানি = আমাকে দান করবেন। খায়রাম মিন জান্নাতিকা = তোমার বাগানের চেয়েও উত্তম (বাগান)। ওয়া = আর। ইউরছিলা = তিনি প্রেরণ করবেন। আলাইহা = উহার উপর (= তোমার বাগানের উপর)। হুছবানান = বিপর্যয়। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। ফাতুসবিহা = তখন তা হয়ে যাবে। সয়ীদান যালাক্বান = উদ্ভিদশূন্য প্রান্তর।

তবে আশা করা যায় আমার রব আমাকে দান করবেন তোমার বাগানের চেয়েও উত্তম (বাগান), আর তিনি প্রেরণ করবেন উহার উপর (= তোমার বাগানের উপর) বিপর্যয়, আকাশ থেকে; তখন তা হয়ে যাবে উদ্ভিদশূন্য প্রান্তর।

১৮:৪১
আও = অথবা। ইউসবিহা = হয়ে যাবে। মাউহা = উহার পানি। গাওরান = ভূগর্ভে অন্তর্হিত। ফালান তাছতাতিআ = তখন কখনো তুমি সক্ষম হবে না। লাহু তলাবান = উহার সন্ধান লাভ করতে।

অথবা হয়ে যাবে উহার পানি ভূগর্ভে অন্তর্হিত। তখন কখনো তুমি সক্ষম হবে না উহার সন্ধান লাভ করতে।

১৮:৪২
ওয়া = আর। উহীতা = (শেষ পর্যন্ত বিপর্যয়ে) পরিবেষ্টিত হয়েছে। বিছামারিহী = তার ফলফলাদি। ফাআসবাহা ইউক্বাল্লিবু = তারপর সে (আক্ষেপবশত:) কচলাতে লাগলো। কাফফায়হি = তার দুহাত। আলা মা আনফাক্বা = উহার দরুন যা সে ব্যয় করেছে। ফীহা = উহার ক্ষেত্রে। ওয়া = আর। হিয়া = উহা। খাভিয়াতুন = ভুমিসাৎ হয়েছিলো। আলা উরুশিহা = উহার মাচানগুলোসহ। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলু = সে বলেছে। ইয়ালায়তানী = হায়! যদি। লাম উশরিক = আমি শিরক না করতাম। বিরব্বী = আমার রবের সাথে। আহাদান = কাউকেই।

আর (শেষ পর্যন্ত বিপর্যয়ে) পরিবেষ্টিত হয়েছে তার ফলফলাদি। তারপর সে (আক্ষেপবশত:) কচলাতে লাগলো তার দুহাত, উহার দরুন যা সে ব্যয় করেছে উহার ক্ষেত্রে। আর উহা ভুমিসাৎ হয়েছিলো উহার মাচানগুলোসহ। আর সে বলেছে, ‘হায়! যদি আমি শিরক না করতাম আমার রবের সাথে কাউকেই!’

১৮:৪৩
ওয়া = আর। লাম তাকুল্লাহু = তার জন্য হলো না। ফিআতুন = কোন বাহিনী। ইয়ানসুরূনাহু = যারা তাকে সাহায্য করবে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহর সাহায্য ছাড়া। ওয়া = আর। মা কানা = সে নিজেও হতে পারেনি। মুনতাসিরান = উহার প্রতিকারকারী।

আর তার জন্য হলো না কোন বাহিনী যারা তাকে সাহায্য করবে, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া; আর সে নিজেও হতে পারেনি উহার প্রতিকারকারী।

১৮:৪৪
হুনালিকাল ওয়ালাইয়াতু= এরূপ পরিস্থিতিতে (প্রতিপন্ন হয় যে), ক্ষমতা ও অভিভাবকত্ব। লিল্লাহিল হাক্বক্বি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত, ইহাই পরম সত্য। হুয়া = তিনিই। খায়রুন = উত্তম। ছাওয়াবান = প্রতিফল দানে। ওয়া = আর। খায়রুন = (তিনিই) উত্তম। উক্ববান = পরিণতি নির্ধারণে।

এরূপ পরিস্থিতিতে (প্রতিপন্ন হয় যে), ক্ষমতা ও অভিভাবকত্ব আল্লাহরই অধিকারভুক্ত, ইহাই পরম সত্য। তিনিই উত্তম প্রতিফল দানে আর (তিনিই) উত্তম পরিণতি নির্ধারণে।

১৮:৪৫
ওয়াদরিব = আর পেশ করো। লাহুম = তাদের জন্য। মাছালাল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। কামায়িন = যেমন, বৃষ্টির পানি। আনযালনাহু = আমরা উহাকে নাযিল/ বর্ষণ করি। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। ফাখতালাত্বা = তখন উদ্গত হয়। বিহী = উহা দ্বারা। নাবাতুল আরদু = পৃথিবীর উদ্ভিদ। ফাআসবাহা = তারপর তা পরিণত হয়। হাশীমান = শুকনো গুঁড়োতে। তাযরূহুর রীহু = বাতাস উহাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। ওয়া = আর। কানাল্লাহু = আল্লাহ হলেন। আলা কুল্লি সাইয়িম মুক্বতাদিরান = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আর পেশ করো তাদের জন্য হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। যেমন, বৃষ্টির পানি, আমরা উহাকে নাযিল/ বর্ষণ করি আকাশ থেকে। তখন উদ্গত হয় উহা দ্বারা পৃথিবীর উদ্ভিদ। তারপর তা পরিণত হয় শুকনো গুঁড়োতে, বাতাস উহাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ হলেন সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

১৮:৪৬
আল মালু = মালসম্পদ। ওয়াল বানূনা = আর সন্তানসন্ততি। যীনাতুল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের যীনাত/ শোভা-সৌন্দর্য। ওয়াল বাক্বীয়াতুস সলিহাতু = স্থায়ী সৎকর্মসমূহই। খায়রুন ইনদা রব্বিকা = তোমার রবের কাছে উত্তম। ছাওয়াবান = প্রতিফলের বিষয় হিসাবেও। ওয়া = আর। খায়রুন আমালান = উত্তম, আকাংখার বিষয় হিসাবেও।

মালসম্পদ আর সন্তানসন্ততি হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের যীনাত/ শোভা-সৌন্দর্য। স্থায়ী সৎকর্মসমূহই তোমার রবের কাছে উত্তম, প্রতিফলের বিষয় হিসাবেও আর উত্তম, আকাংখার বিষয় হিসাবেও।

১৮:৪৭
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। নুছাইয়িরুল জিবালা = আমরা সঞ্চালিত করবো পাহাড়সমূহকে। ওয়া = আর। তারাল আরদা = (তারপর হাশরের সময়) তুমি পৃথিবীকে দেখবে। বারিযাতান = উন্মুক্ত প্রান্তর। ওয়া = আর। হাশরনাহুম = আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো। ফালাম নুগাদির = তখন আমরা ছাড়বো না। মিনহুম = তাদের মধ্যকার। আহাদান = কাউকে (= সবাইকেই একত্র করবো)।

আর যেদিন আমরা সঞ্চালিত করবো পাহাড়সমূহকে আর (তারপর হাশরের সময়) তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত প্রান্তররূপে। আর আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো। তখন আমরা ছাড়বো না তাদের মধ্যকার কাউকে (= সবাইকেই একত্র করবো)।

১৮:৪৮
ওয়া = আর। উরীদু = তাদেরকে পেশ করা হবে। আলা রব্বিকা = তাদের রবের সামনে। সফফান = সারিবদ্ধভাবে। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জি’তুমূনা = তোমরা আমাদের কাছে এসেছো। কামা = যেভাবে। খালাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। আওয়ালা মাররাতিন = প্রথম বার। বাল = বরং। যাআমতুম = তোমরা ভেবেছিলে। আল্লান নাজআলা = যে, আমরা উদ্ভব করবো না। লাকুম = তোমাদের জন্য। মাওয়িদান = ওয়াদার সময়কে (= কিয়ামাতকে)।

আর তাদেরকে পেশ করা হবে তাদের রবের সামনে সারিবদ্ধভাবে। নিশ্চয় তোমরা আমাদের কাছে এসেছো যেভাবে আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি প্রথম বার। বরং তোমরা ভেবেছিলে যে, আমরা উদ্ভব করবো না তোমাদের জন্য ওয়াদার সময়কে (= কিয়ামাতকে)।

১৮:৪৯
ওয়া = আর। উদিয়াল কিতাবা = রাখা হবে কিতাব/ আমলনামা। ফাতারাল মুজরিমীনা = সুতরাং তুমি দেখবে অপরাধীদেরকে। মুশফিক্বীনা মিম্মা = উহার ব্যাপারে আতংকগ্রস্ত যা। ফীহি = উহাতে (= আমলনামাতে) আছে। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলবে। ইয়া ওয়াইলাতানা = হায়! আমাদের আফসোস। মালা হাযাল কিতাবি = কেমন এই কিতাব/ আমলনামা। লা ইউগাদিরু = উহা না ছেড়েছে। সগীরান = কোন ছোট বিষয়। ওয়া = আর। লা কাবীরান = না কোন বড় বিষয়। ইল্লা আহসাহা = তার হিসাব রাখা ছাড়া {= সব হিসাবই রেখেছে, কিছুই ছাড়েনি}।ওয়া = আর। ওয়াজাদূ = তারা পাবে। মা আমিলূ = যত কাজ তারা করেছিলো। হাদিরান = তার সবই উপস্থিত। ওয়া = আর। লা ইয়াযলিমু = যুলুম করেন না। রব্বুকা = তোমার রব। আহাদান = কারো প্রতিই।

আর রাখা হবে কিতাব/ আমলনামা। সুতরাং তুমি দেখবে অপরাধীদেরকে উহার ব্যাপারে আতংকগ্রস্ত যা উহাতে (= আমলনামাতে) আছে। আর তারা বলবে, ‘হায়! আমাদের আফসোস! কেমন এই কিতাব/ আমলনামা! উহা না ছেড়েছে কোন ছোট বিষয় আর না কোন বড় বিষয়, তার হিসাব রাখা ছাড়া’ {= সব হিসাবই রেখেছে, কিছুই ছাড়েনি}।আর তারা পাবে যত কাজ তারা করেছিলো তার সবই উপস্থিত। আর যুলুম করেন না তোমার রব কারো প্রতিই।

১৮:৫০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। লিলমালায়িকাতিছজুদূ = ফেরেশতাদেরকে, ‘তোমরা সিজদা করো। লিআদামা = আদমের প্রসঙ্গে। ফাছাজাদূ = সুতরাং তারা সিজদা করেছে। ইল্লা ইবলীসা = ইবলীস ছাড়া। কানা = সে ছিলো। মিনাল জিন্নি = জিনদের অন্তর্ভুক্ত। ফাফাছাক্বা = তখন সে ফিসক/ অবাধ্যতা করেছে। আন আমরি রব্বিহী = তার রবের আদেশের ব্যাপারে। আফাতাত্তাখিজূনাহু = তবে কি তোমরা কি গ্রহণ করছো তাকে। ওয়া = আর। যুররিয়াতাহূ = তার যুররিয়াতকে/ বংশধরদেরকে। আওলিয়াআ = ওলি আওলিয়া/ অভিভাবক হিসাবে। মিন দূনী = আমাকে বাদ দিয়ে। ওয়া = অথচ। হুম = তারা। লাকুম = তোমাদের জন্য। আদুউউন = শত্রু। বি’ছা লিযযালিমীনা বাদালান = যালিমদের এই বদল (= আল্লাহর বদলে শয়তান ও তার বংশধরদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ) অত্যন্ত নিকৃষ্ট।

আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা বলেছি ফেরেশতাদেরকে, ‘তোমরা সিজদা করো আদমের প্রসঙ্গে’। সুতরাং তারা সিজদা করেছে, ইবলীস ছাড়া। সে ছিলো জিনদের অন্তর্ভুক্ত। তখন সে ফিসক/ অবাধ্যতা করেছে তার রবের আদেশের ব্যাপারে। তবে কি তোমরা কি গ্রহণ করছো তাকে আর তার যুররিয়াতকে/ বংশধরদেরকে ওলি আওলিয়া/ অভিভাবক হিসাবে, আমাকে বাদ দিয়ে? অথচ তারা তোমাদের জন্য শত্রু। যালিমদের এই বদল (= আল্লাহর বদলে শয়তান ও তার বংশধরদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ) অত্যন্ত নিকৃষ্ট।

১৮:৫১
মা আশহাত্তুম = আমি না তাদেরকে স্বাক্ষী রেখেছি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে। ওয়া = আর। লা খালাক্বা আনফুসিহিম = না তাদের নিজেদের সৃষ্টিতে। ওয়া = আর। মা কুনতু মুত্তাখিজাল মুদিল্লীনা = আমি গ্রহণ করিনি এই বিভ্রান্তকারীদেরকে। আদুদান = সাহায্যকারীরূপে।

আমি না তাদেরকে স্বাক্ষী রেখেছি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে আর না তাদের নিজেদের সৃষ্টিতে। আর আমি গ্রহণ করিনি এই বিভ্রান্তকারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে।

১৮:৫২
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। ইয়াক্বূলু = তিনি বলবেন। নাদূ = তোমরা ডাকো। শুরাকায়িয়াল্লাযীনা = আমার সেই (কল্পিত) শরীকদেরকে যাদেরকে। যআমতুম = তোমরা (আমার শরিক হিসাবে) সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলে। ফাদাআওহুম = তখন তারা তাদেরকে ডাকবে। ফালাম ইয়াছতাজিবূ লাহুম = তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা রেখে দেবো। বায়নাহুম = তাদের (উভয়ের) মধ্যস্থলে। মাওবিক্বান = এক ধ্বংস-গহ্বর।

আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘তোমরা ডাকো আমার সেই (কল্পিত) শরীকদেরকে, যাদেরকে তোমরা (আমার শরিক হিসাবে) সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলে’। তখন তারা তাদেরকে ডাকবে। তখন তারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে না। আর আমরা রেখে দেবো তাদের (উভয়ের) মধ্যস্থলে এক ধ্বংস-গহ্বর।

১৮:৫৩
ওয়া = আর। রআল মুজরিমীনান নারু = অপরাধীরা দেখবে (জাহান্নামের) আগুন। ফাযন্নূ = তখন তারা ধারণা করবে। আন্নাহুম = যে, তারা। মুওয়াক্বিঊহা = উহাতে পতিত হতে যাচ্ছে। ওয়া = আর। লাম ইয়াজিদূ = তারা পাবে না। আনহা = উহা থেকে। মাসরিফান = কোন ফেরার স্থান।

আর অপরাধীরা দেখবে (জাহান্নামের) আগুন। তখন তারা ধারণা করবে যে, তারা উহাতে পতিত হতে যাচ্ছে। আর তারা পাবে না উহা থেকে কোন ফেরার স্থান।

১৮:৫৪
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। সররাফনা = আমরা তাসরীফ আকারে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। ফী হাযাল ক্বুরআনি = এই কুরআনে। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। মিন কুল্লি মাছালিন = প্রত্যেক প্রকারের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। ওয়া = আর। কানাল ইনছানু = ইনসান/ মানুষ হলো। আকছারা শাইয়িন = অধিকাংশ বিষয়ে। জাদালান = বিতর্ককারী।

আর নিশ্চয় আমরা তাসরীফ আকারে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি এই কুরআনে মানুষের জন্য প্রত্যেক প্রকারের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। আর ইনসান/ মানুষ হলো অধিকাংশ বিষয়ে বিতর্ককারী।

১৮:৫৫
ওয়া = আর। মা মানাআন নাছা = মানুষকে কিছুই বিরত রাখেনি। আইঁ ইউ’মিনূ = ঈমান/ বিশ্বাস করতে। ইয = যখন। জাআহুমুল হুদা = তাদের কাছে এসেছে হুদা/ হিদায়াত। ওয়া = আর। ইয়াছতাগফিরূ = তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে। রব্বাহুম = তাদের রবের কাছে। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। তা’তিয়াহুম = তাদের কাছে আসবে। সুন্নাতুল আওয়ালীনা = সুন্নাতুল আওয়ালীন/ পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর অবলম্বিত) সুন্নাত বা মূলনীতি। আও = অথবা (/তথা)। ইয়া’তিয়াহুমুল আযাবু ক্বুবুলান = তাদের কাছে আসবে সামনাসামনি আযাব/ শাস্তি।

আর মানুষকে কিছুই বিরত রাখেনি ঈমান/ বিশ্বাস করতে, যখন তাদের কাছে এসেছে হুদা/ হিদায়াত আর তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে তাদের রবের কাছে, এছাড়া যে, তাদের কাছে আসবে সুন্নাতুল আওয়ালীন/ পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর অবলম্বিত) সুন্নাত বা মূলনীতি অথবা (/তথা) তাদের কাছে আসবে সামনাসামনি আযাব/ শাস্তি।

১৮:৫৬
ওয়া = আর। মা নুরছিলুল মুরছালীনা = আমরা রসূলদেরকে প্রেরণ করি না। ইল্লা মুবাশশিরীনা ওয়া মুনযিরীনা = মুবাশশিরীন/ সুসংবাদদাতারূপে ও মুনযিরীন/ সতর্ককারীরূপে ছাড়া। ওয়া = আর। ইউজাদিলুল্লাযীনা = তারা বিতর্ক করে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বিলবাতিলি = বাতিলের/ অযৌক্তিক কথার মাধ্যমে। লিইউদহিদূ = যেন তারা ব্যর্থ করতে পারে। বিহিল হাক্বক্বা = উহার মাধ্যমে হক্বকে/ সত্যকে। ওয়াত্তাখাজূ = আর তারা গ্রহণ করেছে। আয়াতী = আমার আয়াতসমূহকে/ নিদর্শনসমূহকে। ওয়া = আর। মা উনযিরূ = যা দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে। হুযুওয়ান = ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয় হিসাবে।

আর আমরা রসূলদেরকে প্রেরণ করি না, মুবাশশিরীন/ সুসংবাদদাতারূপে ও মুনযিরীন/ সতর্ককারীরূপে ছাড়া। আর তারা বিতর্ক করে যারা কুফর করেছে বাতিলের/ অযৌক্তিক কথার মাধ্যমে, যেন তারা ব্যর্থ করতে পারে উহার মাধ্যমে হক্বকে/ সত্যকে, আর তারা গ্রহণ করেছে আমার আয়াতসমূহকে/ নিদর্শনসমূহকে আর যা দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে সেগুলোকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের বিষয় হিসাবে।

১৮:৫৭
ওয়া = আর। মান আযলামু মিম্মান = তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যাকে। যুক্কিরা = স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়/ উপদেশ দেয়া হয়। বিআয়াতি রব্বিহী = তার রবের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ দিয়ে। ফাআ’রাদা = তারপর সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আনহা = উহা থেকে। ওয়া = আর। নাছিআ = সে ভুলে থাকে। মা ক্বাদ্দামাত = ঐসব কাজের পরিণাম, যা আগেই পাঠিয়েছে। ইয়াদাহু = তার দুহাত (= তার অতীতের কর্মকান্ডের পরিণাম কী হতে পারে তা সে ভুলে থাকে)। ইন্না = নিশ্চয়। জাআলনা = আমরা স্থাপন করেছি। আলা ক্বুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহের উপর। আকিন্নাতান = আবরণ। আন = যেন না। ইয়াফক্বাহূহু = তারা উহা ফিকহ/ উপলব্ধি করতে পারে। ওয়া = আর। ফী আযানিহিম = তাদের কানসমূহে আছে। ওয়াক্বরান = বধিরতা। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাদউহুম = তুমি তাদেরকে ডাকো। ইলাল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের দিকে। ফালাইঁ ইয়াহতাদূ = তবুও তারা হিদায়াত পাবে না। ইযান = এখন আর। আবাদান = কখনোই।

আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়/ উপদেশ দেয়া হয় তার রবের আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ দিয়ে তারপর সে মুখ ফিরিয়ে নেয় উহা থেকে আর সে ভুলে থাকে ঐসব কাজের পরিণাম, যা আগেই পাঠিয়েছে তার দুহাত (= তার অতীতের কর্মকান্ডের পরিণাম কী হতে পারে তা সে ভুলে থাকে)? নিশ্চয় আমরা স্থাপন করেছি তাদের কলবসমূহের উপর আবরণ, যেন না তারা উহা ফিকহ/ উপলব্ধি করতে পারে, আর তাদের কানসমূহে আছে বধিরতা। আর যদি তুমি তাদেরকে ডাকো হুদার/ হিদায়াতের দিকে, তবুও তারা হিদায়াত পাবে না এখন আর কখনোই।

১৮:৫৮
ওয়া = আর। রব্বুকাল গাফূরু = তোমার রব গফূর/ ক্ষমাশীল। যুর রহমাতি = যুর রহমত/ দয়াশীল। লাও = যদি। ইউআখিজুহুম = তিনি (ক্ষমাশীল ও দয়াশীল না হয়ে) তাদেরকে পাকড়াও করতেন। বিমা কাছাবূ = তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে। লাআজ্জালা = তাহলে অবশ্যই ত্বরান্বিত করতেন। লাহুমুল আযাবা = তাদের জন্য আযাব/ শাস্তি। বাল = বরং (তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল হওয়ার কারণে)। লাহুম = তাদের জন্য আছে। মাওয়িদুল্লাইঁ ইয়াজিদূ = ওয়াদার একটি সময়, আর তারা পাবে না। মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়া। মাওয়িলান = কোন আশ্রয়।

আর তোমার রব গফূর/ ক্ষমাশীল এবং যুর রহমত/ দয়াশীল। যদি তিনি (ক্ষমাশীল ও দয়াশীল না হয়ে) তাদেরকে পাকড়াও করতেন তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে, তাহলে অবশ্যই ত্বরান্বিত করতেন তাদের জন্য আযাব/ শাস্তি। বরং (তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াশীল হওয়ার কারণে) তাদের জন্য আছে ওয়াদার একটি সময়, আর তারা পাবে না তাঁকে ছাড়া কোন আশ্রয়।

১৮:৫৯
ওয়া = আর। তিলকার ক্বুরা = এই যে (ধ্বংসপ্রাপ্ত) জনপদগুলো। আহলাকনাহুম = আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করেছি। লাম্মা = যখন। যলামূ = তারা যুলুম করেছে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা নির্ধারণ করেছিলাম। লিমাহলিকিহিম = তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করার জন্য। মাওয়িদান = ওয়াদার একটি সময়।

আর এই যে (ধ্বংসপ্রাপ্ত) জনপদগুলো, আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করেছি যখন তারা যুলুম করেছে। আর আমরা নির্ধারণ করেছিলাম তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করার জন্য ওয়াদার একটি সময়।

১৮:৬০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিফাতাহু = তার যুবক সঙ্গীকে। লা আবরাহু = আমি থামবো না। হাত্তা = যতক্ষণ না। আবলুগা = আমি পৌঁছবো। মাজমাআল বাহরাইনি = দুই সাগর পরস্পর মিলিত হওয়ার স্থানে। আও = অথবা। আমদিয়া = আমি চলতে থাকবো। হুক্ববান = বহু বছর ধরে।

আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মূসা বলেছে তার যুবক সঙ্গীকে, ‘আমি থামবো না যতক্ষণ না আমি পৌঁছবো দুই সাগর পরস্পর মিলিত হওয়ার স্থানে অথবা আমি চলতে থাকবো বহু বছর ধরে’।

১৮:৬১
ফালাম্মা = তারপর যখন। বালাগা = তারা দুজনে পোঁছে গেছে। মাজমাআ বায়নিহিমা = উভয় (সাগর) এর মিলিত হওয়ার স্থানে। নাছিয়া = তারা দুজনে ভুলে গেছে। হূতাহুমা = তাদের দুজনের মাছকে। ফাত্তাখাজা = তখন (মাছটি) ধরেছে। ছাবীলাহু = তার পথ। ফিল বাহরি = সাগরের মধ্যে। ছারাবান = নালার মতো করে (= ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে)।

তারপর যখন তারা দুজনে পোঁছে গেছে উভয় (সাগর) এর মিলিত হওয়ার স্থানে, তখন তারা দুজনে ভুলে গেছে তাদের দুজনের মাছকে। তখন (মাছটি) ধরেছে তার পথ সাগরের মধ্যে নালার মতো করে (= ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে)।

১৮:৬২
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাওয়াযা = তারা দুজন আরো কিছু পথ অতিক্রম করেছে। ক্বলা = তখন সে বলেছে। লিফাতাহু = তার যুবক সঙ্গীকে। আতিনা = আমাদেরকে দাও। গাদাআনা = আমাদের নাস্তা। লাক্বাদ = নিশ্চয়। লাক্বীনা = আমরা পেয়েছি। মিন ছাফারিনা = আমাদের সফর থেকে। হাযা = এই। নাসাবান = ক্লান্তি।

তারপর যখন তারা দুজন আরো কিছু পথ অতিক্রম করেছে, তখন সে (= মূসা) বলেছে তার যুবক সঙ্গীকে, আমাদেরকে দাও আমাদের নাস্তা। নিশ্চয় আমরা পেয়েছি আমাদের সফর থেকে এই ক্লান্তি’।

১৮:৬৩
ক্বলা = সে (= মূসার যুবক সঙ্গী) বলেছে। আরাআয়তা = তুমি কি দেখেছো। ইয = যখন (মাছটি পাশে রেখে)। আওয়ায়না = আমরা আশ্রয়/ বিশ্রাম নিয়েছি। ইলাস সখরাতি = পাথরটির কাছে। ফাইন্নী = তখন নিশ্চয়। নাছীতুল হূতা = আমি ভুলে গিয়েছি মাছের বিষয়টি। ওয়া = আর। মা আনছানীহু = আমাকে উহা ভুলিয়ে দেয়নি। ইল্লাশ শায়তানু = শয়তান ছাড়া কেউ। আন = এ ব্যাপারে যে। আযকুরাহু = আমি উহার বিষয়টি উল্লেখ করবো (তোমার কাছে, যা আমি লক্ষ্য করেছি)। ওয়াত্তাখাজা = আর (তা এই যে, মাছটি) ধরেছে। ছাবীলাহু = উহার পথ। ফিল বাহরি = সাগরের মধ্যে। আজাবান = আশ্চর্যভাবে (= নালার মতো করে ১৮:৬১)।

সে (= মূসার যুবক সঙ্গী) বলেছে, ‘তুমি কি দেখেছো যখন (মাছটি পাশে রেখে) আমরা আশ্রয়/ বিশ্রাম নিয়েছি পাথরটির কাছে। তখন নিশ্চয় আমি ভুলে গিয়েছি মাছের বিষয়টি আর আমাকে উহা ভুলিয়ে দেয়নি শয়তান ছাড়া কেউ, এ ব্যাপারে যে, আমি উহার বিষয়টি উল্লেখ করবো (তোমার কাছে, যা আমি লক্ষ্য করেছি), আর (তা এই যে, মাছটি) ধরেছে উহার পথ সাগরের মধ্যে আশ্চর্যভাবে (= নালার মতো করে ১৮:৬১)।

১৮:৬৪
ক্বলা = তখন সে (= মূসা) বলেছে। যালিকা = উহাই। মা কুন্না নাবগি = যা আমরা তালাশ করছিলাম (= দুই সাগর মিলিত হবার স্থান, ১৮:৬০)। ফারতাদ্দা = সুতরাং তারা ফিরে গিয়েছে। আলা আছারিহিমা ক্বাসাসান = তাদের পদচিহ্ন অনুসারে।

তখন সে (= মূসা) বলেছে, ‘উহাই যা আমরা তালাশ করছিলাম (= দুই সাগর মিলিত হবার স্থান, ১৮:৬০)। সুতরাং তারা ফিরে গিয়েছে তাদের পদচিহ্ন অনুসারে।

১৮:৬৫
ফাওয়াজাদা = তখন তারা (সেখানে) পেয়েছে। আবদাম মিন ইবাদিনা = আমাদের বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে। আতায়নাহু = তাকে আমরা দিয়েছি। রহমাতাম মিন ইনদীনা = আমাদের পক্ষ থেকে রহমত/ দয়া। ওয়া = আর। আল্লামনাহু = তাকে আমরা শিক্ষা দিয়েছি। মিল্লাদুন্না = আমাদের পক্ষ থেকে। ইলমান = ইলম/ জ্ঞান।

তখন তারা (সেখানে) পেয়েছে আমাদের বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে। তাকে আমরা দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে রহমত/ দয়া আর তাকে আমরা শিক্ষা দিয়েছি আমাদের পক্ষ থেকে ইলম/ জ্ঞান।

১৮:৬৬
ক্বলা লাহু মূসা = মূসা তাকে বলেছে। হাল আত্তাবিউকা = আমি কি আপনাকে ইত্তেবা/ অনুসরণ করতে পারি। আলা আন তুআল্লিমানি = যেন আপনি আমাকে শিক্ষা দিতে পারেন। মিম্মা = তা থেকে যা। উল্লিমতা = আপনাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। রুশদান = যা সঠিক/ যথার্থ।

মূসা তাকে বলেছে, ‘আমি কি আপনাকে ইত্তেবা/ অনুসরণ করতে পারি, যেন আপনি আমাকে শিক্ষা দিতে পারেন তা থেকে যা আপনাকে শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা সঠিক/ যথার্থ’।

১৮:৬৭
ক্বলা = সে বলেছে। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। লান তাছতাতিআ = কখনো পারবেন না। মায়িআ = আমার সাথে। সবরান = সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

সে বলেছে, ‘নিশ্চয় আপনি কখনো পারবেন না আমার সাথে সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

১৮:৬৮
ওয়া = আর। কায়ফা = কিরূপে। তাসবিরু = আপনি সবর করবেন/ ধৈর্য ধরবেন। আলা মা লাম তুহিত বিহী = সে বিষয়ের উপর যা আপনি আয়ত্ত করেননি। খুবরান = (আপনার) অভিজ্ঞতায়।

আর কিরূপে আপনি সবর করবেন/ ধৈর্য ধরবেন সে বিষয়ের উপর যা আপনি আয়ত্ত করেননি (আপনার) অভিজ্ঞতায়?’

১৮:৬৯
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ছাতাজিদুনী = আপনি আমাকে পাবেন। ইনশাআল্লাহু = ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। সবিরান = সবরকারীরূপে। ওয়া = আর। লা আ’সী = আমি অবাধ্যতা করবো না। লাকা আমরান = আপনার আদেশের।

সে (= মূসা) বলেছে, ‘আপনি আমাকে পাবেন, ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, সবরকারীরূপে। আর আমি অবাধ্যতা করবো না আপনার আদেশের’।

১৮:৭০
ক্বলা = সে বলেছে। ফাইনিত্তাবা’তানী = যদি আপনি আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করেন। ফালা তাছআলনী = তাহলে আমাকে প্রশ্ন করবেন না। আন শাইয়িন = কোন বিষয়ে। হাত্তা = যতক্ষণ না। উহদিছা লাকা = আমি হাদীস/ বর্ণনা করি আপনার কাছে। মিনহু = উহা থেকে (কোন বিষয়ে)। যিকরান = কোন আলোচনা।

সে বলেছে, ‘যদি আপনি আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করেন, তাহলে আমাকে প্রশ্ন করবেন না কোন বিষয়ে যতক্ষণ না আমি হাদীস/ বর্ণনা করি আপনার কাছে উহা থেকে (কোন বিষয়ে) কোন আলোচনা’।

১৮:৭১
ফানতলাক্বা = তারপর তারা দুজন চললো। হাত্তা = শেষপর্যন্ত। ইযা = যখন। রকিবা = তারা দুজন চড়লো। ফিছ ছাফীনাতি = একটি নৌকায়। খারাক্বাহা = তখন সে উহা বিদীর্ণ করে দিলো। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। আখারাক্বতাহা = আপনি কি উহা বিদীর্ণ করেছেন। লিতুগরিক্বা আহলাহা = উহার আহালকে/ আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য? লাক্বাদ = নিশ্চয়। জি’তা = আপনি করে এসেছেন। শাইয়ান ইমরান = একটা গুরুতর কিছু।

তারপর তারা দুজন চললো। শেষপর্যন্ত যখন তারা দুজন চড়লো একটি নৌকায়, তখন সে উহা বিদীর্ণ করে দিলো। সে (= মূসা) বলেছে, ‘আপনি কি উহা বিদীর্ণ করেছেন উহার আহালকে/ আরোহীদেরকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য? নিশ্চয় আপনি করে এসেছেন একটা গুরুতর কিছু’।

১৮:৭২
ক্বলা = সে বলেছে। আলাম আক্বুল = আমি কি বলিনি। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। লান তাছতাতিআ = পারবেন না। মায়িআ = আমার সাথে। সবরান = সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

সে বলেছে, ‘আমি কি বলিনি, নিশ্চয় আপনি পারবেন না আমার সাথে সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে?’

১৮:৭৩
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। লা তুআখিজনী = আমাকে ধরবেন না। বিমা = উহার কারণে যা। নাছীতু = আমি ভুলে গিয়েছি। ওয়া = আর। লা তুরহিক্বনী = আমার উপর আরোপ করবেন না। আমরী = আমার কাজে। উছরান = কোন কঠোরতা।

সে (= মূসা) বলেছে, ‘আমাকে ধরবেন না উহার কারণে যা আমি ভুলে গিয়েছি। আর আমার উপর আরোপ করবেন না আমার কাজে কোন কঠোরতা’।

১৮:৭৪
ফানতলাক্বা = তারপর তারা দুজন চললো। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। লাক্বিয়া = তারা দুজন সাক্ষাত পেলো। গুলামান = একটি বালকের। ফাক্বাতালাহু = তখন সে তাকে কতল/ হত্যা করে ফেললো। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। আক্বাতালতা = আপনি কি কতল/ হত্যা করেছেন। নাফসান যাকিয়্যাতান = একটি পরিশুদ্ধ প্রাণকে। বিগায়রি নাফসিন = সে কাউকে হত্যা না করা সত্ত্বেও। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জি’না = আপনি করে এসেছেন। শাইয়ান নুকরান = একটা ভীষণ অন্যায় কিছু।

তারপর তারা দুজন চললো। শেষ পর্যন্ত যখন তারা দুজন সাক্ষাত পেলো একটি বালকের, তখন সে তাকে (= বালকটিকে) কতল/ হত্যা করে ফেললো। সে (= মূসা) বলেছে, ‘আপনি কি কতল/ হত্যা করেছেন একটি পরিশুদ্ধ প্রাণকে, সে কাউকে হত্যা না করা সত্ত্বেও? নিশ্চয় আপনি করে এসেছেন একটা ভীষণ অন্যায় কিছু’।

১৮:৭৫
ক্বলা = সে বলেছে। আলাম আক্বুল লাকা = আমি কি আপনাকে বলিনি। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। লান তাছতাতিআ = পারবেন না। মায়িআ = আমার সাথে। সবরান = সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

সে বলেছে, ‘আমি কি আপনাকে বলিনি, নিশ্চয় আপনি পারবেন না আমার সাথে সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে’।

১৮:৭৬
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ইন = যদি। ছাআলতুকা = আমি আপনাকে প্রশ্ন করি। আন শাইয়িন = কোন কিছু সম্পর্কে। বা’দাহা = এরপর। ফালা তুসাহিবনী = তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। ক্বাদ = নিশ্চয়। বালাগতা = আপনি পেয়ে গেছেন। মিল্লাদুন্নী = আমার পক্ষ থেকে। উযরান = ওযর আপত্তি।

সে (= মূসা) বলেছে, যদি আমি আপনাকে প্রশ্ন করি কোন কিছু সম্পর্কে এরপর, তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না। নিশ্চয় আপনি পেয়ে গেছেন আমার পক্ষ থেকে ওযর আপত্তি’।

১৮:৭৭
ফানতলাক্বা = তারপর তারা দুজন চললো। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আতাইয়া = তারা দুজন আসলো। আহলা ক্বারইয়াতিনিছতাতআমা = একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে, তখন তারা দুজন খাদ্য পেতে চাইলো। আহলাহা = উহার অধিবাসীদের কাছে। ফাআবাও = কিন্তু তারা অস্বীকার করলো। আইঁ ইউদয়য়িফূহুমা = তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে। ফাওয়াজা = তারপর তারা দুজন পেলো। ফীহা = উহাতে (= ঐ জনপদে)। জিদারান = একটি দেয়াল। ইউরীদু আইঁ ইয়ানক্বাদ্দা = যা চাচ্ছিলো ভেঙ্গে পড়তে (= যা পড়পড় অবস্থায় ছিলো)। ফাআক্বামাহু = তখন সে উহাকে কায়েম/ দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত করে দিলো। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। লাও = যদি। শি’তা = আপনি ইচ্ছা করতেন। লাত্তাখাজতা = তাহলে আপনি গ্রহণ করতে পারতেন। আলাইহি = উহার ব্যাপারে/ বিনিময়ে। আজরান = (আপনার) মজুরি।

তারপর তারা দুজন চললো। শেষ পর্যন্ত যখন তারা দুজন আসলো একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে, তখন তারা দুজন খাদ্য পেতে চাইলো উহার অধিবাসীদের কাছে। কিন্তু তারা অস্বীকার করলো তাদের দুজনের মেহমানদারী করতে। তারপর তারা দুজন পেলো উহাতে (= ঐ জনপদে) একটি দেয়াল, যা চাচ্ছিলো ভেঙ্গে পড়তে (= যা পড়পড় অবস্থায় ছিলো)। তখন সে উহাকে কায়েম/ দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত করে দিলো। সে (= মূসা) বলেছে, ‘যদি আপনি ইচ্ছা করতেন তাহলে আপনি গ্রহণ করতে পারতেন উহার ব্যাপারে/ বিনিময়ে (আপনার) মজুরি’।

১৮:৭৮
ক্বলা = সে বলেছে। হাযা = এ-ই হচ্ছে। ফিরাক্বু = বিচ্ছেদ। বায়নী ওয়া বায়নিকা = আমার ও আপনার মধ্যে। ছাউনাব্বিউকা = কিন্তু শীঘ্রই আমি আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি। বিতা’ভীলি = ঐসবের তাবীল/ তাৎপর্য সম্পর্কে। মা লাম তাছতাতি’ = আপনি পারেননি। আলাইহি = যার ব্যাপারে। সবরান = সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

সে বলেছে, ‘এ-ই হচ্ছে বিচ্ছেদ, আমার ও আপনার মধ্যে। কিন্তু শীঘ্রই আমি আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি ঐসবের তাবীল/ তাৎপর্য সম্পর্কে, আপনি পারেননি যার ব্যাপারে সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

১৮:৭৯
আম্মাছ ছাফীনাতু = নৌকাটির ব্যাপার হচ্ছে। ফাকানাত = যেহেতু উহা ছিলো। লিমাছাকীনি = কয়েকজন মিসকিনের। ইয়া’মালূনা = তারা কাজ করতো। ফিল বাহরি = সাগরে। ফাআরাত্তু = সুতরাং আমি এরাদা/ ইচ্ছা করেছি। আন আয়ীবাহা = উহাতে আয়েব/ দোষ যুক্ত করতে। ওয়া = আর (তার কারণ হচ্ছে,)। কানা ওয়ারাআহুম = তাদের পিছনে ছিলো। মালিকুন = একজন মালিক/ রাষ্ট্রপতি। ইয়া’খুজু = (আজ) সে নিয়ে যেতো। কুল্লা = প্রত্যেক। ছাফীনাতিন = নৌকাকে। গাসবান = জোরপূর্বক।

নৌকাটির ব্যাপার হচ্ছেঃ- যেহেতু উহা ছিলো কয়েকজন মিসকিনের। তারা কাজ করতো সাগরে। সুতরাং আমি এরাদা/ ইচ্ছা করেছি উহাতে আয়েব/ দোষ যুক্ত করতে। আর (তার কারণ হচ্ছে,) তাদের পিছনে ছিলো একজন মালিক/ রাষ্ট্রপতি। (আজ) সে নিয়ে যেতো প্রত্যেক নৌকাকে জোরপূর্বক।

১৮:৮০
ওয়া = আর। আম্মাল গুলামা = বালকটির ব্যাপার হচ্ছে। ফাকানা = যেহেতু ছিলো। আবাওয়াহু = তার পিতামাতা। মু’মিনায়নি = দুজন মু’মিন ব্যক্তি। ফাখিশীনা = সুতরাং আমরা আশংকা করেছি (= সত্য আশংকা)। আইঁ ইউরহিক্বাহুমা = যে, সে তাদের দুজনকে কষ্ট দিবে। তুগইয়ানান ওয়া কুফরান = বিদ্রোহবশত: ও কুফরবশত:।

আর বালকটির ব্যাপার হচ্ছেঃ- যেহেতু ছিলো তার পিতামাতা দুজন মু’মিন ব্যক্তি। সুতরাং আমরা আশংকা করেছি (= সত্য আশংকা) যে, সে তাদের দুজনকে কষ্ট দিবে বিদ্রোহবশত: ও কুফরবশত:।

১৮:৮১
ফাআরাদনা = সুতরাং আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করেছি। আইঁ ইউবদিলাহুমা = যে, তাদের দুজনকে তার বদলে দিবেন। রব্বুহুমা = তাদের দুজনের রব। খায়রাম মিনহু যাকাতান = যাকাতের/ পরিশুদ্ধতার দিক থেকে তার চেয়ে উত্তম। ওয়া = আর। আক্বরাবা রুহমান = রহমের/ দয়ার দিক থেকে নিকটতর।

সুতরাং আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করেছি যে, তাদের দুজনকে তার বদলে দিবেন তাদের দুজনের রব (এমন এক সন্তান যে হবে) যাকাতের/ পরিশুদ্ধতার দিক থেকে তার চেয়ে উত্তম আর রহমের/ দয়ার দিক থেকে নিকটতর।

১৮:৮২
ওয়া = আর। আম্মাল জিদারু = দেয়ালটির ব্যাপার হচ্ছে। ফাকানা = যেহেতু উহা ছিলো। লিগুলামাইনি ইয়াতিমাইনি ফিল মাদীনাতি = মদীনার/ শহরের দুজন ইয়াতিম বালকের। ওয়া = আর। কানা তাহতাহু = উহার নিচে ছিলো। কানযুল্লাহুমা = তাদের দুজনের জন্য সঞ্চিত ধন। ওয়া = আর। কানা আবূহুমা = তাদের দুজনের পিতা ছিলো। সলিহান = সৎকর্মশীল (= তাদের পিতা নিজের সৎউপার্জন থেকে তাদের দুজনের জন্য উহা সঞ্চিত রেখেছিলো।) ফাআরাদা রব্বুকা = সুতরাং আপনার রব ইচ্ছা করেছেন। আইঁ ইয়াবলুগা = যে, তারা দুজন পৌঁছবে। আশুদ্দাহুমা = তাদের দুজনের যৌবনে। ওয়া = আর (তখন)। ইয়াছতাখরিজা = তারা দুজনে বের করবে। কানযা হুমা = তাদের দুজনের জন্য সঞ্চিত ধন (= সে বয়সে তাদের জন্য উহাতে স্বত্বাধিকার বজায় রাখা সহজ হবে)। রহমাতাম মির রব্বিকা = এটা রহমত/ অনুগ্রহ, আপনার রবের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর (যা কিছু আমি করেছি)। মা ফাআলতুহু = আমি উহা করিনি। আন আমরী = আমার নিজস্ব সিদ্ধান্তক্রমে। যালিকা = ইহাই। তা’ভীলু মা = উহার তাবীল/ তাৎপর্য। মা লাম তাছতি’ = আপনি পারেননি। আলাইহি = যার ব্যাপারে। সবরান = সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

আর দেয়ালটির ব্যাপার হচ্ছেঃ- যেহেতু উহা ছিলো মদীনার/ শহরের দুজন ইয়াতিম বালকের। আর উহার নিচে ছিলো তাদের দুজনের জন্য সঞ্চিত ধন। আর তাদের দুজনের পিতা ছিলো সৎকর্মশীল (= তাদের পিতা নিজের সৎউপার্জন থেকে তাদের দুজনের জন্য উহা সঞ্চিত রেখেছিলো।) সুতরাং আপনার রব ইচ্ছা করেছেন যে, তারা দুজন পৌঁছবে তাদের দুজনের যৌবনে। আর (তখন) তারা দুজনে বের করবে তাদের দুজনের জন্য সঞ্চিত ধন (= সে বয়সে তাদের জন্য উহাতে স্বত্বাধিকার বজায় রাখা সহজ হবে)। এটা রহমত/ অনুগ্রহ, আপনার রবের পক্ষ থেকে। আর (যা কিছু আমি করেছি) আমি উহা করিনি আমার নিজস্ব সিদ্ধান্তক্রমে (= অর্থাৎ আমি সবকিছু আল্লাহর আদেশেই করেছি)। ইহাই উহার তাবীল/ তাৎপর্য আপনি পারেননি যার ব্যাপারে সবর করতে/ ধৈর্য ধরতে।

১৮:৮৩
ওয়া = আর। ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আন যিল ক্বারনাইন = যুলকারনাইন সম্পর্কে। ক্বুল = বলো। ছাআতলূ = আমি শীঘ্রই তিলাওয়াত/ পাঠ করবো। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। মিনহু যিকরা = তার প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা।

আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে যুলকারনাইন সম্পর্কে। বলো, ‘আমি শীঘ্রই তিলাওয়াত/ পাঠ করবো তোমাদের কাছে তার প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা’।

১৮:৮৪
ইন্না = নিশ্চয়। মাক্কান্না লাহু = আমরা তাকে বসবাসের স্থান দিয়েছি/ প্রতিষ্ঠিত করেছি। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। আতাইনাহু = আমরা তাকে দিয়েছি। মিন কুল্লি ছাবাবান = সব ধরনের উপায়-উপকরণ।

নিশ্চয় আমরা তাকে বসবাসের স্থান দিয়েছি/ প্রতিষ্ঠিত করেছি পৃথিবীতে। আর আমরা তাকে দিয়েছি সব ধরনের উপায়-উপকরণ।

১৮:৮৫
ফাআতবাআ ছাবাবান = তারপর সে একটি পথের অনুসরণ করলো।

তারপর সে একটি পথের অনুসরণ করলো।

১৮:৮৬
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। বালাগা = সে পৌঁছেছে। মাগরিবাশ শামসি = সূর্যাস্তের স্থানে। ওয়াজাদাহা = সে উহাকে দেখতে পেলো। তাগরুবু = অস্ত যেতে। ফী আয়নিন হামিআতিন = কৃষ্ণ সাগরে। ওয়া = আর। ওয়াজাদা = সে পেলো। ইনদাহা = উহার কাছে। ক্বাওমান = একটি কওমকে। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। ইয়া যালক্বারনাইনি = হে যুলকারনাইন। ইম্মা = হয়তো। আন তুআযযিবা = তুমি শাস্তি দাও। ওয়া = আর। ইম্মা = নয়তো। আন তাত্তাখিজা = তুমি গ্রহণ করো। ফীহিম = তাদের ব্যাপারে। হুছনান = উত্তম আচরণ।

শেষ পর্যন্ত যখন সে পৌঁছেছে সূর্যাস্তের স্থানে, সে উহাকে (= সূর্যকে) দেখতে পেলো অস্ত যেতে কৃষ্ণ সাগরে। আর সে পেলো উহার কাছে একটি কওমকে। আমরা বলেছি, ‘হে যুলকারনাইন, হয়তো তুমি শাস্তি দাও আর নয়তো তুমি গ্রহণ করো তাদের ব্যাপারে উত্তম আচরণ’।

১৮:৮৭
ক্বলা = সে (= যুলকারনাইন) বলেছে। আম্মা মান = তার ব্যাপারে যে। যলামা = যুলুম করেছে। ফাছাওফা = শীঘ্রই। নুআযযিবুহু = আমরা তাদেরকে শাস্তি দেবো। ছুম্মা = তারপর। ইউরাদ্দু = তাকে ফিরিয়ে আনা হবে। ইলা রব্বিহী = তার রবের কাছে (= আল্লাহর কাছে)। ফাইউআযযিবুহু = তারপর তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন। আযাবান নুকরান = সাংঘাতিক শাস্তি।

সে (= যুলকারনাইন) বলেছে, ‘তার ব্যাপারে যে যুলুম করেছে, শীঘ্রই আমরা তাদেরকে শাস্তি দেবো। তারপর তাকে ফিরিয়ে আনা হবে তার রবের কাছে (= আল্লাহর কাছে)। তারপর তিনি তাদেরকে শাস্তি দিবেন, সাংঘাতিক শাস্তি।

১৮:৮৮
ওয়া = আর। আম্মা মান = তার ব্যাপারে যে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলা সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। ফালাহু = তবে তার জন্য আছে। জাযাআনিল হুছনা = উত্তম প্রতিফল। ওয়া = আর। ছানাক্বূলু লাহু = শীঘ্রই আমরা তাকে বলবো। মিন আমরিনা = আমাদের আদেশরূপে। ইউছরা = সহজ-সরল (কথা)।

আর তার ব্যাপারে যে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে, তবে তার জন্য আছে উত্তম প্রতিফল। আর শীঘ্রই আমরা তাকে বলবো আমাদের আদেশরূপে সহজ-সরল (কথা)।

১৮:৮৯
ছুম্মা = তারপর। আতবাআ ছাবাবান = সে (অন্য) একটি পথের অনুসরণ করলো।

তারপর সে (অন্য) একটি পথের অনুসরণ করলো।

১৮:৯০
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। বালাগা = সে পৌঁছেছে। মাতলিআশ শামসি = সূর্যোদয়ের স্থানে। ওয়াজাদাহা = সে উহাকে (= সূর্যকে) দেখতে পেলো। তাতলুআ = উদিত হতে। আলা ক্বাওমিন = এমন এক কওমের উপর। লাম নাজআল = আমরা ব্যবস্থা করিনি। লাহুম = যাদের জন্য। মিন দূনিহা = উহার নিচে। ছিতরান = কোন আচ্ছাদন। (= তারা সূর্যতাপ থেকে বাঁচার মত কোন গৃহ বা তাঁবু তাদের ছিলো না)।

শেষ পর্যন্ত যখন সে পৌঁছেছে সূর্যোদয়ের স্থানে। সে উহাকে (= সূর্যকে) দেখতে পেলো উদিত হতে এমন এক কওমের উপর আমরা ব্যবস্থা করিনি যাদের জন্য উহার নিচে কোন আচ্ছাদন। (= তারা সূর্যতাপ থেকে বাঁচার মত কোন গৃহ বা তাঁবু তাদের ছিলো না)।

১৮:৯১
কাযালিকা = ঐরূপই হয়েছিলো। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। আহাতনা = আমরা জানতাম। বিমা লাদায়হি খুবরান = যা কিছু তার কাছে ছিলো তার সমস্ত খবর।

ঐরূপই হয়েছিলো। আর নিশ্চয় আমরা জানতাম যা কিছু তার কাছে ছিলো তার সমস্ত খবর।

১৮:৯২
ছুম্মা = তারপর। আতবাআ ছাবাবান = সে (অন্য) একটি পথের অনুসরণ করলো।

তারপর সে (অন্য) একটি পথের অনুসরণ করলো।

১৮:৯৩
হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। বালাগা = সে পৌঁছেছে। বায়নাছ ছাদ্দায়নি = দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলে। ওয়াজাদা = সে (সেখানে) পেয়েছে। মিন দূনিহিমা = (পূর্বোক্ত) তাদের দুই (কওমের) চেয়ে ভিন্ন। ক্বাওমান = একটি কওমকে। লা ইয়াকাদূনা ইয়াফক্বাহূনা ক্বাওলান = যারা বুঝতো না (তার) কোন কথা-ই।

শেষ পর্যন্ত যখন সে পৌঁছেছে দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলে। সে (সেখানে) পেয়েছে (পূর্বোক্ত) তাদের দুই (কওমের) চেয়ে ভিন্ন একটি কওমকে, যারা বুঝতো না (তার) কোন কথা-ই।

১৮:৯৪
ক্বলূ = তারা (দোভাষীর মাধ্যমে) বলেছে। ইয়া যালকারনাইনি = হে যুলকারনাইন। ইন্না = নিশ্চয়। ইয়া’জূজা ওয়া মা’জূজা = ইয়া’জূজ-মা’জূজ (দুটি পরস্পরবিরুদ্ধ আগ্রাসনবাদী দস্যুদল)। মুফসিদূনা ফিল আরদি = পৃথিবীতে ফাসাদকারী/ বিপর্যয়সৃষ্টিকারী। ফাহাল নাজআলু লাকা = সুতরাং আমরা কি আপনাকে দিবো। খারজান = খরজ/ খরচ। আলা আন তাজআলা = এ ব্যাপারে যে আপনি বানিয়ে দিবেন। বায়নানা ওয়া বায়নাহুম = আমাদের ও তাদের মধ্যে। ছাদ্দান = একটি প্রাচীর।

তারা (দোভাষীর মাধ্যমে) বলেছে, “হে যুলকারনাইন, নিশ্চয় ইয়া’জূজ-মা’জূজ (দুটি পরস্পরবিরুদ্ধ আগ্রাসনবাদী দস্যুদল), পৃথিবীতে ফাসাদকারী/ বিপর্যয়সৃষ্টিকারী। সুতরাং আমরা কি আপনাকে দিবো খরজ/ খরচ, এ ব্যাপারে যে, আপনি বানিয়ে দিবেন আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর?”

১৮:৯৫
ক্বলা = সে (= যুলকারনাইন) বলেছে। মা মাক্কান্নী ফীহি = যার মাধ্যমে আমাকে আবাস/ প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। রব্বী = আমার রব। খায়রুন = উহাই উত্তম। ফাআয়ীনূনী = সুতরাং তোমরা আমাকে সাহায্য করো। বিক্বুওয়্যাতিন = শ্রমশক্তি দিয়ে। আজআল = আমি বানিয়ে দেবো। বায়নাকুম ওয়া বায়নাহুম = তোমাদের ও তাদের মধ্যে। রাদমান = দুর্ভেদ্য প্রাচীর।

সে (= যুলকারনাইন) বলেছে, ‘যার মাধ্যমে আমাকে আবাস/ প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন আমার রব উহাই উত্তম। সুতরাং তোমরা আমাকে সাহায্য করো শ্রমশক্তি দিয়ে। আমি বানিয়ে দেবো তোমাদের ও তাদের মধ্যে দুর্ভেদ্য প্রাচীর।

১৮:৯৬
আতূনী = আমাকে এনে দাও। যুবারাল হাদীদি = লোহার পাতসমূহ। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। ছাওয়া = সমান করে দিয়েছে। বায়নাস সদাফায়নি = দুই পাহাড়ের মধ্যস্থল। ক্বলানফুখূ = তখন সে (= যুলকারনাইন) বলেছে, ‘তোমরা হাফরে ফুঁ দাও। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। জাআলাহু = উহাকে পরিণত করেছে। নারান = অগ্নিকুন্ডে। ক্বলা = তখন সে (= যুলকারনাইন) বলেছে, ‘তোমরা আমাকে এনে দাও। উফরিগ = (আর) আমি ঢেলে দিই। আলাইহি = উহার উপর। ক্বিতরান = গলিত তামা।

আমাকে এনে দাও লোহার পাতসমূহ। শেষ পর্যন্ত যখন সমান করে দিয়েছে দুই পাহাড়ের মধ্যস্থল, তখন সে (= যুলকারনাইন) বলেছে, ‘তোমরা হাফরে ফুঁ দাও। শেষ পর্যন্ত যখন উহাকে পরিণত করেছে অগ্নিকুন্ডে, তখন সে (= যুলকারনাইন) বলেছে, ‘তোমরা আমাকে এনে দাও (আর) আমি ঢেলে দিই উহার উপর গলিত তামা।

১৮:৯৭
ফামাছতাতাঊ = তারপর তারা সক্ষম হয় নি। আইঁ ইয়াযহারূহু = উহাকে টপকাতে। ওয়া = আর। মাছতাতাঊ = তারা সক্ষম হয় নি। লাহু = উহাকে। নাক্ববান = ছিদ্র করতে।

তারপর তারা সক্ষম হয় নি উহাকে টপকাতে আর তারা সক্ষম হয় নি উহাকে ছিদ্র করতে।

১৮:৯৮
ক্বলা = সে (= যুলকারনাইন) বলেছিল। হাযা = ইহা। রহমাতুম মির রব্বী = রহমত/ দয়া, আমার রবের পক্ষ থেকে। ফাইযা = তারপর যখন। জাআ = আসবে। ওয়া’দু রব্বী = আমার রবের ওয়াদা/ প্রতিশ্রুতি/ প্রতিশ্রুত সময় (= আমার রবের তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুসারে উহার ধ্বংস হওয়ার অবধারিত সময়)। জাআলাহু = তখন তিনি উহাকে করে দিবেন। দাক্কাআন = মাটির সমান। ওয়া = আর। কানা ওয়াদু রব্বী = আমার রবের ওয়াদা/ প্রতিশ্রুতি/ প্রতিশ্রুত সময় (= প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সময়কালের আবির্ভাব এবং পার্থিব জগতের চূড়ান্তস্তরে কিয়ামাতের আবির্ভাব)। হাক্বক্বান = সত্য।

সে (= যুলকারনাইন) বলেছিল, ‘ইহা রহমত/ দয়া, আমার রবের পক্ষ থেকে। তারপর যখন আসবে আমার রবের ওয়াদা/ প্রতিশ্রুতি/ প্রতিশ্রুত সময় (= আমার রবের তৈরি প্রাকৃতিক আইন অনুসারে উহার ধ্বংস হওয়ার অবধারিত সময়), তখন তিনি উহাকে করে দিবেন মাটির সমান। আর আমার রবের ওয়াদা/ প্রতিশ্রুতি/ প্রতিশ্রুত সময় (= প্রতিটি বিষয়ের জন্য নির্ধারিত সময়কালের আবির্ভাব এবং পার্থিব জগতের চূড়ান্তস্তরে কিয়ামাতের আবির্ভাব) সত্য’।

১৮:৯৯
ওয়া = আর। তারাকনা = আমরা তরক করবো/ ছেড়ে দেবো। বা’দাহুম = তাদের কতক। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। ইয়ামূজু = তরঙ্গের/ ঢেউয়ের মতো পড়বে। ফী বা’দিন = অন্য কতকের মধ্যে। ওয়া = আর। নুফিখা ফিস সূরি = শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। ফাজামআনাহুম জামআন = তখন আমরা তাদেরকে একত্রিত করবো।

আর আমরা তরক করবো/ ছেড়ে দেবো তাদের কতক সেদিন তরঙ্গের/ ঢেউয়ের মতো পড়বে অন্য কতকের মধ্যে। আর শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে। তখন আমরা তাদেরকে একত্রিত করবো।

১৮:১০০
ওয়া = আর। আরাদনা = আমরা পেশ করবো। জাহান্নামা = জাহান্নামকে। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। লিলকাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। আরদান = যথাযথ উপস্থাপনে।

আর আমরা পেশ করবো জাহান্নামকে সেদিন কাফিরদের জন্য, যথাযথ উপস্থাপনে।

১৮:১০১
আল্লাযীনা = যাদের। কানাত আ’ইউনুহুম = চোখগুলো ছিলো। ফী গিযায়িন = পর্দায় ঢাকা। আন যিকরী = আমার যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ সংবিধান (= আল কুরআন) থেকে। ওয়া = আর। কানূ লা ইয়াছতাতিঊনা = যারা সক্ষম ছিলো না। ছামআন = শুনতে।

যাদের চোখগুলো ছিলো পর্দায় ঢাকা, আমার যিকির/ স্মরণ/ স্মরণিকা/ সংবিধান (= আল কুরআন) থেকে। আর যারা সক্ষম ছিলো না শুনতে।

১৮:১০২
আফাহাছিবাল্লাযীনা = তবে কি তারা হিসাব করে নিয়েছে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। আইঁ ইয়াত্তাখিজূ =(এ হিসাব) যে, তারা গ্রহণ করবে। ইবাদী = আমার বান্দাদেরকে। মিন দূনী = আমাকে বাদ দিয়ে। আওলিয়াআ = ওলি-আওলিয়া/ অভিভাবক হিসাবে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আ’তাদনা = প্রস্তুত করে রেখেছি। জাহান্নামা = জাহান্নামকে। লিলকাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। নুযুলান = অবতারিত বিষয় হিসাবে।

তবে কি তারা হিসাব করে নিয়েছে যারা কুফর করেছে, (এ হিসাব) যে, তারা গ্রহণ করবে আমার বান্দাদেরকে, আমাকে বাদ দিয়ে, ওলি-আওলিয়া/ অভিভাবক হিসাবে? নিশ্চয় আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য অবতারিত বিষয় হিসাবে।

১৮:১০৩
ক্বুল = বলো। হাল নুনাব্বিউকুম = আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ জানাবো। বিল আখছারীনা আ’মালান = আমলে/ কাজে কর্মে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্কে?

বলো, ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ জানাবো আমলে/ কাজে কর্মে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্কে?’

১৮:১০৪
আল্লাযীনা = তারা হচ্ছে। দল্লা ছা’ইউহুম = যাদের প্রচেষ্টা বিভ্রান্তিতে পতিত হয়ে গেছে। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। হুম = তারা। ইয়াহছাবূনা = হিসাব করে নেয়/ মনে করে। আন্নাহুম = যে, তারা। ইউহসিনূনা সুনআন = উত্তম কাজই করছে।

তারা হচ্ছে যাদের প্রচেষ্টা বিভ্রান্তিতে পতিত হয়ে গেছে হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে আর তারা হিসাব করে নেয়/ মনে করে যে, তারা উত্তম কাজই করছে।

১৮:১০৫
উলায়িকাল্লাযীনা = তারাই ঐসব লোক যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বিআয়াতি রব্বিহিম = তাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। লিক্বায়িহী = তাঁর সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের প্রতি। ফাহাবিতাত = সুতরাং নিষ্ফল হয়ে গেছে। আ’মালুহুম = তাদের আমলসমূহ/ কাজসমূহ। ফালা নুক্বীমু = সুতরাং আমরা কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত করবো না। লাহুম = তাদের জন্য। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ওয়াযনা = কোন ওজন/ মূল্যমান (= তাদের আমলসমূহকে কোন মূল্যই দেয়া হবে না, তাই তারা জান্নাতে যেতে পারবে না)।

তারাই ঐসব লোক যারা কুফর করেছে তাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি আর তাঁর সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের প্রতি (= আল্লাহর কাছে জবাবদিহির সম্মুখীন হবার প্রতি)। সুতরাং নিষ্ফল হয়ে গেছে তাদের আমলসমূহ/ কাজসমূহ। সুতরাং আমরা কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত করবো না তাদের জন্য ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে কোন ওজন/ মূল্যমান (= তাদের আমলসমূহকে কোন মূল্যই দেয়া হবে না, তাই তারা জান্নাতে যেতে পারবে না)।

১৮:১০৬
যালিকা = উহাই হবে। জাযাউহুম = তাদের প্রতিফল। জাহান্নামু = জাহান্নাম। বিমা কাফারূ = এ কারণে যে, তারা কুফর করেছে। ওয়াত্তাখাজূ = আর তারা গ্রহণ করেছে। আয়াতী = আমার আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। রুসুলী = আমার রসূলদেরকে। হুযুআন = ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হিসাবে।

উহাই হবে। তাদের প্রতিফল জাহান্নাম। এ কারণে যে, তারা কুফর করেছে আর তারা গ্রহণ করেছে আমার আয়াতসমূহকে আর আমার রসূলদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপের পাত্র হিসাবে।

১৮:১০৭
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। কানাত লাহুম = তাদের জন্য আছে। জান্নাতুল ফিরদাওসি = জান্নাতুল ফিরদাউস। নুযুলান = অবতারিত বিষয় হিসাবে।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস, অবতারিত বিষয় হিসাবে।

১৮:১০৮
খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। লা ইয়াবগূনা = তারা তালাশ করবে না। আনহা = উহা থেকে। হিওয়ালান = কোন স্থানান্তর।

তারা তাতে স্থায়ী হবে। তারা তালাশ করবে না উহা থেকে কোন স্থানান্তর।

১৮:১০৯
ক্বুল = বলো। লাও = যদি। কানাল বাহরু = সাগর হতো। মিদাদান = কালি। লিকালিমাতি রব্বী = আমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ লেখার জন্য। লানাফিদাল বাহরু = তাহলে অবশ্যই শেষ হয়ে যেতো সাগর। ক্বাবলা আন তানফাদা কালিমাতু রব্বী = আমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ লেখা শেষ হওয়ার আগেই। ওয়া লাও = যদিও। জি’না = আমরা এনে দিতাম। বিমিছলিহী = উহার মতো আরো সাগর। মাদাদান = মদদ/ সাহায্য হিসাবে।

বলো, ‘যদি সাগর হতো কালি, আমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ লেখার জন্য। তাহলে অবশ্যই শেষ হয়ে যেতো সাগর, আমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ লেখা শেষ হওয়ার আগেই। যদিও আমরা এনে দিতাম উহার মতো আরো সাগর মদদ/ সাহায্য হিসাবে। (৩১:২৭)

১৮:১১০
ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। আনা = আমি। বাশারুম মিছলুকুম = একজন মানুষই, তোমাদের মতো। ইউহা = কিন্তু ওহী করা হয়। ইলাইয়া = আমার প্রতি। আন্নামা = যে। ইলাহুকুম = তোমাদের ইলাহ। ইলাহুন ওয়াহিদুন = একমাত্র/ অদ্বিতীয় ইলাহ। ফামান = সুতরাং যে। কানা ইয়ারজূ = কামনা করে। লিক্বাআ রব্বিহী = তার রবের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাত করতে। ফালইয়া’মাল = সে করুক। আমালান সলিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম। ওয়া = আর। লা ইউশরিক = সে যেন শিরক না করে। লিইবাদাতি রব্বিহী = তার রবের ইবাদাতে। আহাদান = অন্য কাউকে।

বলো, “নিশ্চয় আমি একজন মানুষই, তোমাদের মতো। কিন্তু ওহী করা হয় আমার প্রতি, এই যে, ‘তোমাদের ইলাহ একমাত্র/ অদ্বিতীয় ইলাহ। সুতরাং যে কামনা করে তার রবের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাত করতে, সে করুক আমলে সালেহ/ সৎকর্ম, আর সে যেন শিরক না করে তার রবের ইবাদাতে অন্য কাউকে’”।