১৭:১
ছুবহানাল্লাযী = পবিত্র সেই সত্তা যিনি। আছরা = ইসরা করিয়েছেন/ ভ্রমণে নিয়েছেন/ বাহির করেছেন। বিআবদিহী = তাঁর বান্দাকে (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে)। লাইলাম মিনাল মাছজিদিল হারামি = একটি রাতে, ‘মসজিদুল হারাম’ থেকে। ইলাল মাছজিদিল আক্বছা = ‘মসজিদুল আকসা’র দিকে। আল্লাযী বারাকনা হাওলাহু = যার চারপাশকে বরকতময় করা হয়েছে। লিনুরিয়াহু = যেন আমরা তাকে দেখাই। মিন আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের থেকে। ইন্নাহু = নিশ্চয়। হুয়াছ ছামীয়ুল বাসীরু = তিনি সামি’/ সর্বশ্রোতা ও বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা।
পবিত্র সেই সত্তা যিনি ইসরা করিয়েছেন/ ভ্রমণে নিয়েছেন/ বাহির করেছেন তাঁর বান্দাকে (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে) একটি রাতে, ‘মসজিদুল হারাম’ থেকে ‘মসজিদুল আকসা’র দিকে, যার চারপাশকে বরকতময় করা হয়েছে, যেন আমরা তাকে দেখাই আমাদের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের থেকে। নিশ্চয় তিনি সামি’/ সর্বশ্রোতা ও বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা।
১৭:২
ওয়া = আর। আতাইনাল মুসাল কিতাবা = আমরা মূসাকে দিয়েছি কিতাব। ওয়া = আর। জাআলনাহু = আমরা উহাকে (= কিতাবকে) করেছি। হুদাল লি বানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলের জন্য হুদা/ হিদায়াত। আল্লা তাত্তাখিজূ = এ মর্মে যে, ‘তোমরা গ্রহণ করো না। মিন দূনী = আমাকে ছাড়া। ওয়াকিলান = কোন উকিল/ কর্মবিধায়ক।
আর আমরা মূসাকে দিয়েছি কিতাব, আর আমরা উহাকে (= কিতাবকে) করেছি বানী ইসরাইলের জন্য হুদা/ হিদায়াত, এ মর্মে যে, ‘তোমরা গ্রহণ করো না আমাকে ছাড়া কোন উকিল/ কর্মবিধায়ক’।
১৭:৩
যুররিয়াতা মান হামালনা = তোমরা তাদের উত্তরসূরী/ তারা তোমাদের পূর্বসূরী (৩৬:৪১), যাদেরকে আমরা আরোহন করিয়েছি। মাআ নূহিন = নূহের সাথে। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে (= নূহ)। কানা = ছিলো। আবদান শাকূরান = কৃতজ্ঞ বান্দা।
তোমরা তাদের উত্তরসূরী/ তারা তোমাদের পূর্বসূরী (৩৬:৪১), যাদেরকে আমরা আরোহন করিয়েছি নূহের সাথে। নিশ্চয় সে (= নূহ) ছিলো কৃতজ্ঞ বান্দা।
১৭:৪
ওয়া = আর। ক্বাদাইনা = আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি। ইলা বানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলের প্রতি। ফিল কিতাবি = কিতাবের মধ্যে। লাতুছফিদুন্না = অবশ্যই তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে (= নিজ ইচ্ছায়, ১৭:৮)। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মাররাতাইনি = দুইবার। ওয়া = আর। লাতা’লুন্না = অবশ্যই তোমরা বিদ্রোহ করবে। উলুওওয়ান কাবীরান = বড় ধরনের বিদ্রোহ।
আর আমরা নির্ধারণ করে দিয়েছি বানী ইসরাইলের প্রতি কিতাবের মধ্যে, ‘অবশ্যই তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে (= নিজ ইচ্ছায়, ১৭:৮) পৃথিবীতে দুইবার, আর অবশ্যই তোমরা বিদ্রোহ করবে, বড় ধরনের বিদ্রোহ।
১৭:৫
ফাইযা = তারপর যখন। জাআ = এসেছে। ওয়া’দু উলাহুমা = দুটি ওয়াদার প্রথমটি। বাআছনা = তখন আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ইবাদাল্লানা = আমাদের বান্দাদেরকে। ঊলী বা’ছিন শাদীদিন = যারা ছিলো অত্যন্ত শক্তিমান। ফাজাছূ = তারপর তারা কঠোর হয়েছে। খিলালাদ দিয়ারি = (তোমাদের) ঘরবাড়ির অভ্যন্তরে। ওয়া = আর। কানা = হয়েছিলো। ওয়াদাম মাফউলা = (শাস্তির) ওয়াদা সুসম্পন্ন/ কার্যকর/ বাস্তবায়িত।
তারপর যখন এসেছে দুটি ওয়াদার প্রথমটি, তখন আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি তোমাদের উপর আমাদের বান্দাদেরকে, যারা ছিলো অত্যন্ত শক্তিমান, তারপর তারা কঠোর হয়েছে (তোমাদের) ঘরবাড়ির অভ্যন্তরে, আর হয়েছিলো (শাস্তির) ওয়াদা সুসম্পন্ন/ কার্যকর/ বাস্তবায়িত।
১৭:৬
ছুম্মা = তারপর। রদাদনা = আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। লাকুমুল কাররাতা = তোমাদের (বিজয়ের) পালা। আলাইহিম = তাদের উপর। ওয়া = আর। আমদাদনাকুম = আমরা তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করেছি। বিআমওয়ালিন = মালসম্পদ দিয়ে। ওয়া = আর। বানীনা = সন্তানসন্ততি দিয়ে। ওয়া = আর। জাআলনাকুম = আমরা তোমাদেরকে পরিণত করেছি। আকছারা নাফীরা = প্রচুর সংখ্যক সদস্যবিশিষ্ট বাহিনীতে।
তারপর আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি তোমাদের (বিজয়ের) পালা তাদের উপর। আর আমরা তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করেছি মালসম্পদ দিয়ে আর সন্তানসন্ততি দিয়ে, আর আমরা তোমাদেরকে পরিণত করেছি প্রচুর সংখ্যক সদস্যবিশিষ্ট বাহিনীতে।
১৭:৭
ইন = যদি। আহছানতুম = তোমরা উত্তম কাজ করে থাকো। আহছানতুম = তাহলে তোমরা উত্তম কাজ করেছো। লিআনফুসিকুম = তোমাদের নিজেদের জন্য। ওয়া = আর। ইন = যদি। আছা’তুম = তোমরা মন্দকাজ করে থাকো। ফালাহা = তাহলে উহাও (করেছো তোমাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে)। ফাইযা = তারপর যখন। জাআ = এসেছে। ওয়া’দুল আখিরাতি = দ্বিতীয় ওয়াদার সময় (তখন আমরা আমাদের বান্দাদেরকে প্রেরণ করেছি)। লিইয়াছূউ = তারা কালিমাময় করার জন্য। উজূহাকুম = তোমাদের মুখমন্ডলকে/ চেহারাকে। ওয়া = আর। লিইয়াদখুলুল মাছজিদা = তারা মসজিদে দাখিল হওয়ার জন্য। কামা = যেমনভাবে। দাখালুহূ = উহাতে (= মসজিদে) দাখিল হয়েছে। আওয়ালা মাররাতিন = প্রথম বারে (পাঠানো বান্দাগণ)। ওয়া = আর। লিইউতাব্বিরূ = তারা ধ্বংস করার জন্য। মা আলাও = যা-ই তাদের আয়ত্তে আসে। তাতবীরান = (যথাযথভাবে) ধ্বংস।
যদি তোমরা উত্তম কাজ করে থাকো, তাহলে তোমরা উত্তম কাজ করেছো তোমাদের নিজেদের জন্য। আর যদি তোমরা মন্দকাজ করে থাকো, তাহলে উহাও (করেছো তোমাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে)। তারপর যখন এসেছে দ্বিতীয় ওয়াদার সময় (তখন আমরা আমাদের বান্দাদেরকে প্রেরণ করেছি ১৭:৫), তারা কালিমাময় করার জন্য তোমাদের মুখমন্ডলকে/ চেহারাকে, আর তারা মসজিদে দাখিল হওয়ার জন্য যেমনভাবে উহাতে (= মসজিদে) দাখিল হয়েছে প্রথম বারে (পাঠানো বান্দাগণ); আর তারা ধ্বংস করার জন্য যা-ই তাদের আয়ত্তে আসে, (যথাযথভাবে) ধ্বংস। (১৭:১০৪)
১৭:৮
আছা = আশা করা যায়। রব্বুকুম = তোমাদের রব। আইঁ ইয়ারহামাকুম = তোমাদেরকে রহমত করবেন। ওয়া = আর। ইন = যদি। উত্তুম = তোমরা আবার অনুরূপ (ফাসাদ) করো। উদনা = তাহলে আমরা আবার অনুরূপ (শাস্তিদান) করবো। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা বানিয়েছি। জাহান্নামা = জাহান্নামকে। লিলকাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। হাসীরান = অবরোধের স্থান।
আশা করা যায় তোমাদের রব তোমাদেরকে রহমত করবেন। আর যদি তোমরা আবার অনুরূপ (ফাসাদ) করো, তাহলে আমরা আবার অনুরূপ (শাস্তিদান) করবো। আর আমরা বানিয়েছি জাহান্নামকে কাফিরদের জন্য অবরোধের স্থান।
১৭:৯
ইন্না = নিশ্চয়। হাযাল ক্বুরআনা = এই কুরআন। ইয়াহদী = হিদায়াত করে/ পথের দিশা দেয়। লিল্লাতী = সেই দিকে। হিয়া = যা। আক্বওয়ামু = সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত। ওয়া = আর। ইউবাশশিরুল মু’মিনূনা = সুসংবাদ দেয় মু’মিনদেরকে। আল্লাযীনা = যারা। ইয়া’মালূনাস সলিহাতি = সালেহাত/ সৎকর্ম করে। আন্না = এ মর্মে যে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরান কাবীরান = বড় ধরনের পুরস্কার।
নিশ্চয় এই কুরআন হিদায়াত করে/ পথের দিশা দেয়, সেই (পথের) দিকে যা সবচেয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত, আর সুসংবাদ দেয় মু’মিনদেরকে, যারা সালেহাত/ সৎকর্ম করে, এ মর্মে যে, তাদের জন্য আছে বড় ধরনের পুরস্কার।
১৭:১০
ওয়া = আর। আন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। আ’তাদনা = আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। লাহুম = তাদের জন্য। আযাবান আলীমান = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
আর নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্য আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
১৭:১১
ওয়া = আর। ইয়াদউল ইনসানা বিশাররিন = ইনসান/ মানুষ অকল্যাণ কামনা করে। দুআউ বিল খায়রি = যেভাবে কল্যাণ কামনা করা উচিত। ওয়া = আর। কানাল ইনসানা = ইনসান/ মানুষ হলো। আজূলান = তাড়াহুড়াকারী।
আর ইনসান/ মানুষ অকল্যাণ কামনা করে, যেভাবে কল্যাণ কামনা করা উচিত। আর ইনসান/ মানুষ হলো তাড়াহুড়াকারী।
১৭:১২
ওয়া = আর। জাআলনাল লাইলা ওয়ান নাহারা = আমরা করেছি রাতকে ও দিনকে। আয়াতায়নি = দুটি আয়াত/ নিদর্শন। ফামাহাওনা = তারপর আমরা নিষ্প্রভ করেছি। আয়াতাল লাইলি = রাতের আয়াতকে/ নিদর্শনকে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা করেছি। আয়াতান নাহারি = দিনের আয়াতকে/ নিদর্শনকে। মুবসিরাতান = চাক্ষুস উজ্জল। লিতাবতাগূ = যেন তোমরা তালাশ করতে পারো। ফাদলাম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে থাকা ফদল/ অনুগ্রহ। ওয়া = আর। লিতা’লামূ = তোমরা জানতে পারো। আদাদাছ ছিনীনা = বছরসমূহের গণনা। ওয়াল হিসাবা = ও হিসাব। ওয়া = আর। কুল্লা শাইয়িন = সবকিছুকে। ফাসসালনাহু তাফসীলা = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
আর আমরা করেছি রাতকে ও দিনকে দুটি আয়াত/ নিদর্শন। তারপর আমরা নিষ্প্রভ করেছি রাতের আয়াতকে/ নিদর্শনকে। আর আমরা করেছি দিনের আয়াতকে/ নিদর্শনকে চাক্ষুস উজ্জল। যেন তোমরা তালাশ করতে পারো তোমাদের রবের পক্ষ থেকে থাকা ফদল/ অনুগ্রহ আর তোমরা জানতে পারো বছরসমূহের গণনা ও হিসাব। আর সবকিছুকে আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি।
১৭:১৩
ওয়া = আর। কুল্লা = প্রত্যেক। ইনসানিন = ইনসান/ মানুষ (এমন যে)। আলযামনাহু = আমরা তাকে পরিয়েছি। তয়িরাহু = তার তয়িরকে/ শুভাশুভ লক্ষণ বা কার্যকারণকে। ফী উকুক্বিহী = তার গলায়। ওয়া = আর। নুখরিজু = আমরা বের করবো। লাহু = তার জন্য। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। কিতাবান = একটি কিতাব/ আমলনামা। ইয়ালক্বাহু = সে উহাকে পাবে। মানশূরান = উন্মুক্ত অবস্থায়।
আর প্রত্যেক ইনসান/ মানুষ এমন যে, আমরা তাকে পরিয়েছি তার তয়িরকে/ শুভাশুভ লক্ষণ বা কার্যকারণকে তার গলায়। আর আমরা বের করবো তার জন্য ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে একটি কিতাব/ আমলনামা, সে উহাকে পাবে উন্মুক্ত অবস্থায়।
১৭:১৪
ইক্বরা’ = পাঠ করো। কিতাবাকা = তোমার কিতাব/ আমলনামা। কাফা বিনাফসিকা = তুমি নিজেই যথেষ্ট। আল ইয়াওমা = আজ। আলাইকা = তোমার উপর। হাছীবান = হিসাবকারী হিসাবে।
পাঠ করো তোমার কিতাব/ আমলনামা। তুমি নিজেই যথেষ্ট আজ তোমার উপর হিসাবকারী হিসাবে।
১৭:১৫
মানিহতাদা = যে সঠিক পথে চলে। ফাইন্নামা = তাহলে নিশ্চয় সে সঠিক পথে চলে। লিনাফসিহী = তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। ওয়া = আর। মান = যে। দল্লা = ভ্রান্ত পথে চলে। ফাইন্নামা = তাহলে নিশ্চয় সে ভ্রান্ত পথে চলে। আলাইহা = তার নিজেরই অকল্যাণের জন্য। ওয়া = আর। লা তাযিরু = কোন বোঝা বহন করবে না। ওয়াযিরাতুন = কোন বোঝা বহনকারী। ভিজরা উখরা = অন্যের বোঝা। ওয়া = আর। মা কুন্না মুআযযিবীনা = আমরা শাস্তিদানকারী নই। হাত্তা = যতক্ষণ না। নাবআছা = আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করি। রসূলান = কোন রসূল।
যে সঠিক পথে চলে, তাহলে নিশ্চয় সে সঠিক পথে চলে তার নিজেরই কল্যাণের জন্য। আর যে ভ্রান্ত পথে চলে, তাহলে নিশ্চয় সে ভ্রান্ত পথে চলে তার নিজেরই অকল্যাণের জন্য। আর কোন বোঝা বহন করবে না কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা। আর আমরা শাস্তিদানকারী নই যতক্ষণ না আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করি কোন রসূল।
১৭:১৬
ওয়া = আর। ইযা = যখন। আরাদনা = আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করি। আন = যে। নুহলিকা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করবো। ক্বারইয়াতান = কোন জনপদকে। আমারনা = আমরা আদেশ দিই। মুতরাফীহা = উহার মুতরাফীনকে/ অন্যের শ্রমে অর্জিত ধন আত্মসাৎকারী পুঁজিপতিদেরকে। ফাফাছাক্বূ = সুতরাং তারা ফাসেকি/ দুষ্কার্য করে। ফীহা = উহাতে। ফাহাক্বা আলাইহাল ক্বাওলু = তখন তারা নিজেদের উপর আমার (শাস্তির) বাণীর হক্বদার হয়ে যায়। ফাদামমারনাহা = তখন আমরা উহাকে ধ্বংস করে দিই। তাদমীরা = (যথাযথভাবে) ধ্বংস।
আর যখন আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করি যে, আমরা হালাক/ ধ্বংস করবো কোন জনপদকে, তখন আমরা আদেশ দিই উহার মুতরাফীনকে/ অন্যের শ্রমে অর্জিত ধন আত্মসাৎকারী পুঁজিপতিদেরকে; সুতরাং তারা ফাসেকি/ দুষ্কার্য করে উহাতে। তখন তারা নিজেদের উপর আমার (শাস্তির) বাণীর হক্বদার হয়ে যায়। তখন আমরা উহাকে ধ্বংস করে দিই, (যথাযথভাবে) ধ্বংস।
১৭:১৭
ওয়া = আর। কাম = কতটিকে। আহলাকনা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি। মিনাল ক্বুরূনি = জনপদসমূহের মধ্য থেকে। মিম বা’দি নূহিন = নূহের পরে। ওয়া = আর। কাফা বিরব্বিকা = তোমার রবই যথেষ্ট। বিযুনূবি ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের পাপসমূহের ব্যাপারে। খাবীরান = খাবীর হিসাবে (= যিনি খবর রাখেন সেরূপ সত্তা হিসাবে)। বাসীরান = এবং বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা হিসাবে।
আর কতটিকে আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি জনপদসমূহের মধ্য থেকে নূহের পরে। আর তোমার রবই যথেষ্ট তাঁর বান্দাদের পাপসমূহের ব্যাপারে খাবীর হিসাবে (= যিনি খবর রাখেন সেরূপ সত্তা হিসাবে) এবং বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা হিসাবে।
১৭:১৮
মান = যে। কানা ইউরীদুল আজিলাতা = এরাদা/ ইচ্ছা করে (সব সুখ-সম্পদ) তাড়াতাড়ি (= পার্থিব জীবনেই) পেতে। আজ্জালনা = আমরা তাড়াতাড়ি দিই। লাহু = তার জন্য। ফীহা = উহাতে (= পৃথিবীতে)। মা নাশাউ = যা আমরা ইচ্ছা করি। লিমান নুরীদু = যাকে আমরা (দেয়ার) এরাদা/ ইচ্ছা করি। ছুম্মা = তারপর। জাআলনা = আমরা নির্ধারণ করি। লাহু = তার জন্য। জাহান্নামা = জাহান্নাম। ইয়াসলাহা = সে উহাতে জ্বলবে। মাযমূমাম মাদহূরান = নিন্দিত অবস্থায় ও রহমত থেকে বঞ্চিত অবস্থায়।
যে এরাদা/ ইচ্ছা করে (সব সুখ-সম্পদ) তাড়াতাড়ি (= পার্থিব জীবনেই) পেতে, আমরা তাড়াতাড়ি দিই তার জন্য উহাতে (= পৃথিবীতে) যা আমরা ইচ্ছা করি, যাকে আমরা (দেয়ার) এরাদা/ ইচ্ছা করি। তারপর আমরা নির্ধারণ করি তার জন্য জাহান্নাম। সে উহাতে জ্বলবে নিন্দিত অবস্থায় ও রহমত থেকে বঞ্চিত অবস্থায়।
১৭:১৯
ওয়া = আর। মান = যে। আরাদাল আখিরাতা = এরাদা/ ইচ্ছা করে আখিরাত পেতে। ওয়া = আর। ছাআ = প্রচেষ্টা চালায় (= কাজ করে)। লাহা = তার জন্য (= তার উপযোগী)। ছা’ইয়াহা = তার (যথাযথ) চেষ্টার মাধ্যমে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুয়া = সে। মু’মিনুন = একজন মু’মিন। ফাউলায়িকা = তারাই এমন লোক। কানা ছ’ইউহুম = যাদের প্রচেষ্টা হয়। মাশকূরান = (আল্লাহর কাছে) স্বীকৃত/ গৃহীত।
আর যে এরাদা/ ইচ্ছা করে আখিরাত পেতে আর প্রচেষ্টা চালায় (= কাজ করে) তার জন্য (= তার উপযোগী) তার (যথাযথ) চেষ্টার মাধ্যমে, এ অবস্থায় যে, সে একজন মু’মিন, তারাই এমন লোক যাদের প্রচেষ্টা হয় (আল্লাহর কাছে) স্বীকৃত/ গৃহীত।
১৭:২০
কুল্লান নুমিদ্দু = প্রত্যেককেই আমরা মদদ/ সাহায্য করি। হাউলায়ি ওয়া হাউলায়ি = এদেরকেও এবং ওদেরকেও। মিন আতায়ি রব্বিকা = তোমার রবের দান থেকে। ওয়া = আর। মা কানা = হয় না। আতাউ রব্বিকা = তোমার রবের দান। মাহযূরান = বন্ধ-অবরুদ্ধ।
(পার্থিব জীবনে) প্রত্যেককেই আমরা মদদ/ সাহায্য করি, এদেরকেও এবং ওদেরকেও, তোমার রবের দান থেকে। আর হয় না তোমার রবের দান বন্ধ-অবরুদ্ধ।
১৭:২১
উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। ফাদ্দালনা = আমরা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। বা’দুহুম = তাদের কাউকে। আলা বা’দিন = অন্য কারো উপর। ওয়া = আর। লালআখিরাতু = অবশ্যই আখিরাত। আকবারু = আরো বড়। দারাজাতিন = মর্যাদার মাত্রাসমূহে। ওয়া = এবং। আকবারু = আরো বড়। তাফদীলান = ফজিলতে/ অনুগ্রহে।
নজর/ লক্ষ্য করো, কিরূপে আমরা শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি তাদের কাউকে অন্য কারো উপর। আর অবশ্যই (তাদের জন্য) আখিরাত আরো বড় মর্যাদার মাত্রাসমূহে এবং আরো বড় ফজিলতে/ অনুগ্রহে।
১৭:২২
লা তাজআল = তোমরা নির্ধারণ করো না। মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ইলাহান আখারা = অন্য ইলাহ। ফাতাক্বউদা = তাহলে বসে পড়বে। মাযমূমাম মাখযূলান = নিন্দিত অবস্থায় ও অসহায় অবস্থায়।
তোমরা নির্ধারণ করো না আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ। তাহলে বসে পড়বে নিন্দিত অবস্থায় ও অসহায় অবস্থায়।
১৭:২৩
ওয়া = আর। ক্বাদা = ফায়সালা করে দিয়েছেন। তোমার রব্বুক = তোমার রব। আল্লা তা’বুদূ = এ মর্মে যে, ‘তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো না। ইল্লা ইয়্যাহু = তাঁর ছাড়া অন্য কারো। ওয়া = আর। বিলওয়ালিদাইনি = পিতা-মাতার প্রতি। ইহসানা = ইহসান/ উত্তম আচরণ করবে। ইম্মা = যদি। ইয়াবলুগান্না = তারা পৌঁছে। ইনদাকাল কিবারা = তোমার কাছে বার্ধক্য অবস্থায়। আহাদুহুমা = তাদের দুজনের একজন। আও = অথবা। কিলাহুমা = তাদের উভয়ে। ফালা তাক্বুল = তাহলে বলো না। লাহুমা = তাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে। উফফিন = ‘উফ/ উহ’ শব্দটুকুও। ওয়া = আর। লা তানহারহুমা = তাদের দুজনকে ধমকও দিও না। ওয়া = আর। ক্বুল = বলো। লাহুমা = তাদের দুজনকে। ক্বাওলান কারীমা = সম্মানজনক কথা।
আর ফায়সালা করে দিয়েছেন তোমার রব এ মর্মে যে, ‘তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো না তাঁর ছাড়া অন্য কারো। আর পিতা-মাতার প্রতি ইহসান/ উত্তম আচরণ করবে। যদি তারা পৌঁছে তোমার কাছে বার্ধক্য অবস্থায়, তাদের দুজনের একজন অথবা তাদের উভয়ে, তাহলে বলো না তাদের দুজনকে উদ্দেশ্য করে ‘উফ/ উহ’ শব্দটুকুও, আর তাদের দুজনকে ধমকও দিও না, আর বলো তাদের দুজনকে সম্মানজনক কথা।
১৭:২৪
ওয়াখফিদ = আর অবনত করে দাও। লাহুমা = তাদের দুজনের জন্য। জানাহায যুল্লি = নম্রতার বাহু। মিনার রহমাতি = মমতাবশত:। ওয়া = আর। ক্বুল = বলো। রব্বিরহামহুমা কামা রব্বায়ানি সগীরা = ‘রব্বিরহামহুমা কামা রব্বায়ানি সগীরা’/ হে আমার রব, তুমি তাদের দুজনকে রহমত করো যেমন তারা দুজন আমাকে লালন-পালন করেছে আমার শৈশবে’।
আর অবনত করে দাও তাদের দুজনের জন্য নম্রতার বাহু মমতাবশত:। আর বলো, ‘রব্বিরহামহুমা কামা রব্বায়ানি সগীরা’/ হে আমার রব, তুমি তাদের দুজনকে রহমত করো যেমন তারা দুজন আমাকে লালন-পালন করেছে আমার শৈশবে’।
১৭:২৫
রব্বুকুম = তোমাদের রব। আ’লামু বিমা = ঐ বিষয়ে জানেন যা। ফী নুফূসিকুম = তোমাদের নফসসমূহের মধ্যে আছে। ইন = যদি। তাকূনূ = তোমরা হও। সলিহীনা = সালেহীন/ সৎকর্মশীল। ফাইন্নাহু = তাহলে নিশ্চয় তিনি। কানা = হচ্ছেন। লিল আওয়াবীনা = তাঁর অভিমুখীদের জন্য। গাফূরান = গফূর/ ক্ষমাশীল।
তোমাদের রব ঐ বিষয়ে জানেন যা তোমাদের নফসসমূহের মধ্যে আছে। যদি তোমরা হও সালেহীন/ সৎকর্মশীল, তাহলে নিশ্চয় তিনি হচ্ছেন তাঁর অভিমুখীদের জন্য গফূর/ ক্ষমাশীল।
১৭:২৬
ওয়া = আর। আতি = দিয়ে দাও। যাল ক্বুরবা = আত্মীয়-স্বজনকে। হাক্বাহু = তার হক্ব/ প্রাপ্য/ অধিকার। ওয়াল মিসকীনা = আর মিসকীনদেরকেও। ওয়াবনাছ ছাবীলি = আর ইবনে সাবীলকেও/ ছিন্নমূলদেরকেও। ওয়া = আর। লা তুবাযযির তাবযীরা = তাবযীর/ অপব্যয় করো না।
আর দিয়ে দাও আত্মীয়-স্বজনকে তার হক্ব/ প্রাপ্য/ অধিকার আর মিসকীনদেরকেও আর ইবনে সাবীলকেও/ ছিন্নমূলদেরকেও। আর তাবযীর/ অপব্যয় করো না।
১৭:২৭
ইন্নাল মুবাযযিরীনা = নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা। কানূ ইখওয়ানাশ শায়াতীনি = শয়তানদের ভাই। ওয়া = আর। কানাশ শায়তানু = শয়তান হলো। লিরব্বিহ = তার রবের প্রতি। কাফূরান = কুফরকারী/ অকৃতজ্ঞ।
নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানদের ভাই। আর শয়তান হলো তার রবের প্রতি কুফরকারী/ অকৃতজ্ঞ।
১৭:২৮
ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। তু’রিদান্না = তোমরা পাশ কাটিয়ে থাকতে চাও। আনহুমুবতিগায়া রহমাতিম মির রব্বিকা = তাদের থেকে (= আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও ইবনে সাবীলকে দান করা থেকে) এখনো তুমি তোমার রবের রহমত/ অনুগ্রহ (= স্বচ্ছলতা) তালাশ করতে থাকা অবস্থায় আছো বলে। তারজূহা = যা তোমরা আশা করছো। ফাক্কুল = তাহলে তাদেরকে বলো। ক্বাওলাম মাইছূরা = সহজ/ কোমল/ বিনয়সূচক কথা।
আর যদি তোমরা পাশ কাটিয়ে থাকতে চাও তাদের থেকে (= আত্মীয়-স্বজন, মিসকীন ও ইবনে সাবীলকে দান করা থেকে) এখনো তুমি তোমার রবের রহমত/ অনুগ্রহ (= স্বচ্ছলতা) তালাশ করতে থাকা অবস্থায় আছো বলে, যা তোমরা আশা করছো; তাহলে তাদেরকে বলো সহজ/ কোমল/ বিনয়সূচক কথা।
১৭:২৯
ওয়া = আর। লা তাজআল = তুমি রেখো না। ইয়াদাকা = তোমার হাতকে। মাগলূলাতান ইলা উনুক্বিকা = তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে (= দান করার ক্ষেত্রে কৃপণতা করো না)। ওয়া = আর। লা তাবছুতহা = উহাকে প্রসারিত করো না। কুল্লাল বাছতি = সম্পূর্ণ প্রসারিত (= দান করার ক্ষেত্রে যা আছে সবই দিয়ে দিও না)। ফাতাক্বউদা = কারণ তাহলে তুমি বসে পড়বে। মালূমাম মাহছূরান = নিন্দিত অবস্থায় ও অক্ষম অবস্থায়।
আর তুমি রেখো না তোমার হাতকে তোমার ঘাড়ে আবদ্ধ করে (= দান করার ক্ষেত্রে কৃপণতা করো না) আর উহাকে প্রসারিত করো না, সম্পূর্ণ প্রসারিত (= দান করার ক্ষেত্রে যা আছে সবই দিয়ে দিও না)। কারণ তাহলে তুমি বসে পড়বে নিন্দিত অবস্থায় ও অক্ষম অবস্থায়।
১৭:৩০
ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। ইয়াবছুতুর রিযক্বা = প্রশস্ত করে দেন রিযিককে। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াক্বদিরু = তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। ইন্নাহু = নিশ্চয়। কানা = তিনি হলেন। বিইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে। খাবীরান বাসীরান = খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দেখেন)।
নিশ্চয় তোমার রব প্রশস্ত করে দেন রিযিককে, যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তিনি হলেন তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দেখেন)।
১৭:৩১
লা তাক্বতুলূ = তোমরা কতল/ হত্যা করো না। আওলাদুকুম = তোমাদের আওলাদকে/ সন্তানদেরকে। খাশইয়াতা ইমলাক্বি = দরিদ্রতার ভয়ে। নাহনু = আমরা। নারযুক্বুহুম = তাদেরকেও রিযিক দেবো। ওয়া = আর। ইয়্যাকুম = তোমাদেরকেও (রিযিক দেবো)। ইন্না = নিশ্চয়। ক্বাতলাহুম = তাদেরকে কতল/ হত্যা করা। কানা = হলো। খিতআন কাবীরান = কবীরা গুনাহ/ মহাপাপ।
তোমরা কতল/ হত্যা করো না তোমাদের আওলাদকে/ সন্তানদেরকে, দরিদ্রতার ভয়ে। আমরা তাদেরকেও রিযিক দেবো আর তোমাদেরকেও (রিযিক দেবো)। নিশ্চয় তাদেরকে কতল/ হত্যা করা হলো কবীরা গুনাহ/ মহাপাপ।
১৭:৩২
ওয়া = আর। লা তাক্বরাবুয যিনা = যিনার নিকটেও যেও না। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। কানা = হলো। ফাহিশাতান = ফাহেশা/ অশ্লীল কাজ। ওয়া = এবং। ছাআ ছাবীলা = নিকৃষ্ট পথ।
আর যিনার/ ব্যভিচারের নিকটেও যেও না। নিশ্চয় উহা হলো ফাহেশা/ অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।
১৭:৩৩
ওয়া = আর। লা তাক্বতুলুন্নাফছা = তোমরা কতল/ হত্যা করো না কোন নফসকে/ প্রাণকে। আল্লাতী = যাকে। হাররামাল্লাহু = আল্লাহ হারাম/ অবৈধ করেছেন। ইল্লা বিল হাক্বক্বি = হক্ব/ ন্যায়সঙ্গত কারণে বা পদ্ধতিতে ছাড়া (হত্যা করাকে)। ওয়া = আর। মান = যে। ক্বুতিলা = নিহত হয়েছে। মাযলূমান = মজলুম/ অত্যাচারিত হয়ে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআলনা = আমরা দিয়েছি। লিওয়ালিয়্যিহী = তার ওলিকে/ উত্তরাধিকারীদেরকে। ছুলতানান = সুলতান/ (কেসাস দাবীর) অধিকার। ফালা ইউছরিফ = সুতরাং কেউ যেন সীমালংঘন না করে। ফিল ক্বাতলি = ক্বাতলের/ হত্যার ব্যাপারে। ইন্নাহু = তাহলেই নিশ্চয় সে। কানা = হবে। মানসূরান = (ইসলামী আইনে) সাহায্যপ্রাপ্ত।
আর তোমরা কতল/ হত্যা করো না কোন নফসকে/ প্রাণকে, যাকে আল্লাহ হারাম/ অবৈধ করেছেন, হক্ব/ ন্যায়সঙ্গত কারণে বা পদ্ধতিতে ছাড়া (হত্যা করাকে)। আর যে নিহত হয়েছে মজলুম/ অত্যাচারিত হয়ে; নিশ্চয় আমরা দিয়েছি তার ওলিকে/ উত্তরাধিকারীদেরকে সুলতান/ (কেসাস দাবীর) অধিকার। সুতরাং কেউ যেন সীমালংঘন না করে ক্বাতলের/ হত্যার ব্যাপারে। তাহলেই নিশ্চয় সে হবে (ইসলামী আইনে) সাহায্যপ্রাপ্ত।
১৭:৩৪
ওয়া = আর। লা তাক্বারাবূ মালাল ইয়াতীমি = তোমরা ইয়াতিম ছেলে/মেয়ের মালের নিকটেও যেও না। ইল্লা বিল্লাতী = ঐ পদ্ধতি ছাড়া। হিয়া = যা। আহছানু = অধিক উত্তম। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াবলুগা = সে (= ইয়াতিম) পৌঁছে। আশুদ্দাহু = তার যৌবনে। ওয়া = আর। আওফু = তোমরা পূর্ণ করো। বিলআহদি = আহদ/ প্রতিশ্রুতি। ইন্নাল আহদা = নিশ্চয় আহদ/ প্রতিশ্রুতি। কানা = হলো। মাছঊলা = এমন বিষয় যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
আর তোমরা ইয়াতিম ছেলে/মেয়ের মালের নিকটেও যেও না ঐ পদ্ধতি ছাড়া যা অধিক উত্তম, যতক্ষণ না সে (= ইয়াতিম ছেলে/মেয়ে) পৌঁছে তার যৌবনে। আর তোমরা পূর্ণ করো আহদ/ প্রতিশ্রুতি। নিশ্চয় আহদ/ প্রতিশ্রুতি হলো এমন বিষয় যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
১৭:৩৫
ওয়া = আর। আওফুল কায়লা = তোমরা পূর্ণ করো পরিমাপ। ইযা = যখন। কিলতুম = তোমরা মেপে দাও। ওয়া = আর। যীনু = তোমরা ওজন করবে। বিলক্বিছতাছিল মুছতাক্বীমি = সঠিক দাঁড়িপাল্লা দিয়ে। যালিকা = ইহা। খায়রুন = উত্তম নীতি। ওয়া = আর। আহছানু তা’ভীলা = পরিণামেও অধিক উত্তম।
আর তোমরা পূর্ণ করো পরিমাপ, যখন তোমরা মেপে দাও আর তোমরা ওজন করো সঠিক দাঁড়িপাল্লা দিয়ে। ইহা উত্তম নীতি আর পরিণামেও অধিক উত্তম।
১৭:৩৬
ওয়া = আর। লা তাক্বফু = উহার পিছনে লেগে যেও না। মা লাইছা লাকা বিহী ইলমুন = যা সম্পর্কে তোমার কোন ইলম/ জ্ঞান নেই। ইন্নাছ ছামআ = নিশ্চয় কান। ওয়াল বাসারা = ও চোখ। ওয়াল ফুয়াদা = এবং ফুয়াদ/ অন্তর। কুল্লা উলায়িকা কানা আনহু মাছঊলান = ঐসবগুলো হলো এমন বিষয় যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
আর উহার পিছনে লেগে যেও না (= উহার অনুসরণ করো না) যা সম্পর্কে তোমার কোন ইলম/ জ্ঞান নেই। নিশ্চয় কান ও চোখ এবং ফুয়াদ/ অন্তর, ঐসবগুলো হলো এমন বিষয় যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।
১৭:৩৭
ওয়া = আর। লা তামশী = চলাফেরা করো না। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মারাহান = দম্ভভরে। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লান তাখরিক্বাল আরদা = দীর্ণ করতে পারবে না পৃথিবীকে। ওয়া = আর। লান লান তাবলুগাল জিবালা তূলান = তুমি পৌঁছতে পারবে না পাহাড়সমূহের সমান উচ্চতায় (= তুমি এত লম্বা হবে না যে, পাহাড়ের সমান হয়ে গেছো)।
আর চলাফেরা করো না পৃথিবীতে দম্ভভরে। নিশ্চয় তুমি দীর্ণ করতে পারবে না পৃথিবীকে। আর তুমি পৌঁছতে পারবে না পাহাড়সমূহের সমান উচ্চতায় (= তুমি এত লম্বা হবে না যে, পাহাড়ের সমান হয়ে গেছো)।
১৭:৩৮
কুল্লু যালিকা = উহার (= উপরে বর্ণিত বিষয়ের) প্রত্যেকটি। কানা = হলো। ছাইয়িআতুহু = তার খারাপ দিকে। ইনদা রব্বিকা = (যা) তোমার রবের কাছে। মাকরূহান = মাকরুহ/ অপছন্দনীয়।
উহার (= উপরে বর্ণিত বিষয়ের) প্রত্যেকটি হলো তার খারাপ দিক, (যা) তোমার রবের কাছে মাকরুহ/ অপছন্দনীয়।
১৭:৩৯
যালিকা = ইহা (= এই আদেশ-নিষেধগুলি) হচ্ছে। মিম্মা = উহার অন্তর্ভুক্ত যা। আওহা = ওহী করেছেন। ইলাইকা = তোমার প্রতি। রব্বুকা = তোমার রব। মিনাল হিকমাতা = হিকমাতের/ বিজ্ঞতাপূর্ণ বাণীর বা বিধানের (= কুরআনের) মধ্য থেকে। ওয়া = আর। লা তাজআল = নির্ধারণ করো না। মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ইলাহান আখারা = অন্য ইলাহ। ফাতুলক্বা = কারণ তা করলে, নিক্ষিপ্ত হবে। ফী জাহান্নামা = জাহান্নামে। মালূমাম মাদহূরান = নিন্দিত অবস্থায় ও রহমত থেকে বঞ্চিত অবস্থায়।
ইহা (= এই আদেশ-নিষেধগুলি) হচ্ছে উহার অন্তর্ভুক্ত যা ওহী করেছেন তোমার প্রতি তোমার রব হিকমাতের/ বিজ্ঞতাপূর্ণ বাণীর বা বিধানের (= কুরআনের) মধ্য থেকে। আর নির্ধারণ করো না আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ। কারণ তা করলে, নিক্ষিপ্ত হবে জাহান্নামে নিন্দিত অবস্থায় ও রহমত থেকে বঞ্চিত অবস্থায়।
১৭:৪০
আফাআসফাকুম = তবে কি তোমাদেরকে ধন্য করেছেন। রব্বুকুম = তোমাদের রব। বিল বানীনা = পুত্র সন্তানদেরকে দিয়ে। ওয়াত্তাখাজা = আর গ্রহণ করেছেন। মিনাল মালায়িকাতি = মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে। ইনাছান = কন্যারূপে। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। লাতাক্বূলূনা = বলছো। ক্বাওলান আযীমান = মহা (অন্যায়) কথা।
তবে কি তোমাদেরকে ধন্য করেছেন তোমাদের রব পুত্র সন্তানদেরকে দিয়ে আর গ্রহণ করেছেন মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে কন্যারূপে? নিশ্চয় তোমরা বলছো মহা (অন্যায়) কথা।
১৭:৪১
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। সররাফনা = আমরা তাসরীফ আকারে বিশদভাবে তথ্যগুলো বর্ণনা করেছি। ফী হাযাল ক্বুরআনা = এই কুরআনে। লিইয়াযযাক্কারূ = যেন তারা যিকির/ শিক্ষাগ্রহণ/ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। ওয়া = অথচ। মা ইয়াযীদুহুম = উহাতে তাদের কিছুই বাড়ে না। ইল্লা নুফূরান = পলায়নী মনোবৃত্তি ছাড়া।
আর নিশ্চয় আমরা তাসরীফ আকারে বিশদভাবে তথ্যগুলো বর্ণনা করেছি এই কুরআনে, যেন তারা যিকির/ শিক্ষাগ্রহণ/ উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। অথচ উহাতে তাদের কিছুই বাড়ে না, পলায়নী মনোবৃত্তি ছাড়া।
১৭:৪২
ক্বুল = বলো। লাও = যদি। কানা = থাকতো। মাআহু = তাঁর সাথে। আলিহাতুন = কোন ইলাহ। কামা = যেমন। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। ইযাল লাবতাগাও = তাহলে তখন তারা তালাশ করতো। ইলা যিল আরশি ছাবীলান = আরশে সমাসীন হওয়ার/ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পন্থা।
বলো, ‘যদি থাকতো তাঁর সাথে কোন ইলাহ যেমন তারা বলে, তাহলে তখন তারা (= সেই ইলাহগণ) তালাশ করতো আরশে সমাসীন হওয়ার/ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পন্থা।
১৭:৪৩
ছুবহানাহু = সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। ওয়া = আর। তাআলা = তিনি মহিমান্বিত। আম্মা ইয়াক্বূলূনা = তারা যা বলে তা থেকে। উলুওওয়ান কাবীরান = ঊর্ধ্বে ও মহান।
সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। আর তিনি মহিমান্বিত, তারা যা বলে তা থেকে ঊর্ধ্বে ও মহান।
১৭:৪৪
নুছাব্বিহু = তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা করছে। লাহুছ ছামাওয়াতুছ ছাবউ = তাঁর জন্য সাত আকাশ। ওয়াল আরদু = ও পৃথিবী। ওয়া = আর। মান = যারা আছে। ফীহিন্না = তাদের মধ্যে। ওয়া = আর। ইম মিন শাইয়িন = কোন কিছু নেই। ইল্লা = এছাড়া যে। ইউছাব্বিহু বিহামদিহী = তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা করছে তাঁর হামদ/ প্রশংসার সাথে। ওয়ালাকিন = কিন্তু। লা তাফক্বাহূনা = তোমরা ফিকহ/ উপলব্ধি করো না। তাছবীহাহুম = তাদের তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। কানা = হলেন। হালীমান গাফূরান = হালীম/ সহনশীল ও গফূর/ ক্ষমাশীল।
তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা করছে তাঁর জন্য সাত আকাশ ও পৃথিবী আর যারা আছে তাদের মধ্যে। আর কোন কিছু নেই, এছাড়া যে, তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা করছে তাঁর হামদ/ প্রশংসার সাথে। কিন্তু তোমরা ফিকহ/ উপলব্ধি করো না তাদের তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা। নিশ্চয় তিনি হলেন হালীম/ সহনশীল ও গফূর/ ক্ষমাশীল।
১৭:৪৫
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বারা’তাল ক্বুরআনা = তুমি পাঠ করো আল কুরআন। জাআলনা = তখন আমরা স্থাপন করি। বায়নাকা ওয়া বায়াল্লাযীনা = তোমার ও তাদের মধ্যে যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। হিজাবাম মাছতূরান = (তোমার ও তাদের মধ্যে স্থাপন করি) পর্দার আড়াল।
আর যখন তুমি পাঠ করো আল কুরআন, তখন আমরা স্থাপন করি তোমার ও তাদের মধ্যে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, (তোমার ও তাদের মধ্যে স্থাপন করি) পর্দার আড়াল।
১৭:৪৬
ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা স্থাপন করি। আলা ক্বুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহের উপর। আকিন্নাতান = আবরণ। আইঁ ইয়াফক্বাহূহু = যেন না তারা উহা (= আল কুরআন) ফিকহ/ উপলব্ধি করে। ওয়া = আর। ফী আযানিহিম = তাদের কানসমূহে আছে। ওয়াক্বরান = বধিরতা। ওয়া = আর। ইযা = যখন। যাকারতা = তুমি যিকির/ স্মরণ করো। রব্বাকা = তোমার রবকে। ফিল ক্বুরআনি = কুরআনের মধ্যে। ওয়াহদাহু = তাঁর একত্ববাদের বিষয়ে। ওয়াল্লাও = তারা ফিরে যায়। আলা আদবারিহিম = তাদের পিঠের দিকে। নুফূরান = অবজ্ঞাভরে।
আর আমরা স্থাপন করি তাদের কলবসমূহের উপর আবরণ, যেন না তারা উহা (= আল কুরআন) ফিকহ/ উপলব্ধি করে; আর তাদের কানসমূহে আছে বধিরতা। আর যখন তুমি যিকির/ স্মরণ করো তোমার রবকে কুরআনের মধ্যে তাঁর একত্ববাদের বিষয়ে, তখন তারা ফিরে যায় তাদের পিঠের দিকে, অবজ্ঞাভরে।
১৭:৪৭
নাহনু = আমরা। আ’লামু = জানি। বিমা ইয়াছতামিঊনা বিহী = ঐ বিষয়ে যা তারা শুনে। ইয = যখন। ইয়াছতামিঊনাকা = তারা কান লাগিয়ে থাকে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া = আর। ইয = যখন। হুম = তারা। নাজওয়া = গোপনে আলোচনা করে। ইয = তখন। ইয়াক্বূলুয যলিমূনা = যালিমরা বলে। ইন তাত্তাবিঊনা = তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করছো না। ইল্লা রজুলাম মাছহূরান = একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির ছাড়া।
আমরা জানি ঐ বিষয়ে যা তারা শুনে, যখন তারা কান লাগিয়ে থাকে তোমার প্রতি, আর যখন তারা গোপনে আলোচনা করে, তখন যালিমরা বলে তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করছো না, একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির ছাড়া।
১৭:৪৮
উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। দরাবূ লাকাল আমছালা = তারা উপস্থাপন করে তোমার জন্য আমছাল/ দৃষ্টান্ত। ফাদল্লূ = তাই তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। ফালা ইয়াছতাতিঊনা ছাবীলান = সুতরাং তারা সঠিক পথ পেতে পারে না।
নজর/ লক্ষ্য করো, কিরূপে তারা উপস্থাপন করে তোমার জন্য আমছাল/ দৃষ্টান্ত, তাই তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, সুতরাং তারা সঠিক পথ পেতে পারে না।
১৭:৪৯
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। আইযা = তবে কি যখন। কুন্না = আমরা পরিণত হবো। ইযামান = হাড়ে। ওয়া = ও। রুফাতান = চূর্ণবিচূর্ণ মাটিতে। আইন্না = নিশ্চয় কি আমরা। লামাবঊছূনা = তখন পুনরুত্থিত হবো। খালক্বান জাদীদান = নতুন সৃষ্টিরূপে।
আর তারা বলে, ‘তবে কি যখন আমরা পরিণত হবো হাড়ে ও চূর্ণবিচূর্ণ মাটিতে, নিশ্চয় কি আমরা তখন পুনরুত্থিত হবো নতুন সৃষ্টিরূপে?’
১৭:৫০
ক্বুল = বলো। কূনূ = তোমরা হয়ে গেলে। হিজারাতান = পাথর। আও = অথবা। হাদীদান = লোহা।
বলো, ‘তোমরা হয়ে গেলে পাথর অথবা লোহা।
১৭:৫১
আও = অথবা। খালক্বান = এমন সৃষ্টি। মিম্মা = যা থেকে। ইয়াকবুরু = (জীবন লাভ করা) বড় ধরনের কঠিন বিষয় হবে। ফী সুদূরিকুম = তোমাদের সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের ধ্যাণ-ধারণা অনুসারে, (তবুও তোমরা পুনরুত্থিত হবেই)। ফাছাইয়াক্বূলূনা = তারপর শীঘ্রই তারা বলবে। মাইঁ ইউয়ীদুনা = কে আমাদেরকে ফিরিয়ে আনবে। ক্বুল্লাযী = বলো, ‘(তিনিই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন) যিনি। ফাতরাকুম = তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আওয়ালা মাররাতিন = প্রথম বার। ফাছাইউনগিদূনা = তারপর শীঘ্রই তারা নাড়বে। ইলাইকা = তোমার দিকে। রুঊছাহুম = তাদের মাথাগুলোকে। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলবে। মাতা = কখন হবে। হুয়া = উহা। ক্বুল = বলো। আছা = হতে পারে। আইঁ ইয়াকূনূ = যে, তা হবে। ক্বারীবান = নিকটবর্তী সময়ে।
অথবা এমন সৃষ্টি যা থেকে (জীবন লাভ করা) বড় ধরনের কঠিন বিষয় হবে তোমাদের সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের ধ্যাণ-ধারণা অনুসারে, (তবুও তোমরা পুনরুত্থিত হবেই)। তারপর শীঘ্রই তারা বলবে, ‘কে আমাদেরকে ফিরিয়ে আনবে?’ বলো, ‘(তিনিই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন) যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন প্রথম বার’। তারপর শীঘ্রই তারা নাড়বে তোমার দিকে তাদের মাথাগুলোকে, আর তারা বলবে, ‘কখন হবে উহা?’ বলো, ‘হতে পারে যে, তা হবে নিকটবর্তী সময়ে’।
১৭:৫২
ইয়াওমা = সেদিন। ইয়াদঊকুম = তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন। ফাতাছতাজীবূনা = তখন তোমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিবে। বিহামদিহী = তাঁর হামদ/ প্রশংসার সাথে। ওয়া = আর। তাযুন্নূনা = তোমরা ধারণা করবে। ইল্লাবিছতুম = তোমরা (পার্থিব জীবনে/ কবরে) অবস্থান করনি। ইল্লা ক্বালীলান = অল্প কিছু সময় ছাড়া।
সেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন, তখন তোমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিবে তাঁর হামদ/ প্রশংসার সাথে। আর তোমরা ধারণা করবে, তোমরা (পার্থিব জীবনে/ কবরে) অবস্থান করনি অল্প কিছু সময় ছাড়া।
১৭:৫৩
ওয়া = আর। ক্বুল = বলো। লিইবাদী = আমার বান্দাদেরকে। ইয়াক্বূলুল্লাতী = যেন তারা বলে, ঐ কথা। হিয়া = যা। আহছানু = অধিক উত্তম। ইন্নাশ শায়তানা = নিশ্চয় শয়তান। ইয়ানযাগু = উস্কানী দেয়। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ইন্নাশ শায়তানা = নিশ্চয় শয়তান। লিল ইনছানি = ইনসানের/ মানুষের জন্য। আদুওওয়াম মুবীনান = স্পষ্ট শত্রু।
আর বলো আমার বান্দাদেরকে যেন তারা বলে, ঐ কথা যা অধিক উত্তম। নিশ্চয় শয়তান উস্কানী দেয় তাদের মধ্যে। নিশ্চয় শয়তান ইনসানের/ মানুষের জন্য স্পষ্ট শত্রু।
১৭:৫৪
রব্বুকুম = তোমাদের রব। আ’লামু = জানেন। বিকুম = তোমাদের সম্পর্কে। ইইঁ ইয়াশা’ = যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ইয়ারহামকুম = তোমাদেরকে রহমত/ দয়া করবেন। আও = অথবা। ইইঁ ইয়াশা’ = যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ইউআযযিবকুম = তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। ওয়া = আর। মা আরছালনাকা = আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি। আলাইহিম = তাদের উপর। ওয়াকীলান = উকিল/ কর্মবিধায়ক করে।
তোমাদের রব জানেন তোমাদের সম্পর্কে। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে রহমত/ দয়া করবেন অথবা যদি তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। আর আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি তাদের উপর উকিল/ কর্মবিধায়ক করে।
১৭:৫৫
ওয়া = আর। রব্বুকা = তোমার রব। আ’লামু = জানেন। বিমান = তাদের সম্পর্কে যারা আছে। ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। ফাদ্দালনা = আমরা ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি। বা’দান্নাবিয়্যীনা আলা বা’দিন = কোন নবীকে অন্য কোন নবীর উপর। ওয়া = আর। আতাইনা = আমরা দিয়েছি। দাউদা = দাউদকে। যাবূরান = যাবূর।
আর তোমার রব জানেন তাদের সম্পর্কে যারা আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। আর নিশ্চয় আমরা ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি কোন নবীকে অন্য কোন নবীর উপর। আর আমরা দিয়েছি দাউদকে যাবূর।
১৭:৫৬
ক্বুলিদউল্লাযীনা = বলো, ‘তোমরা ডাকো তাদেরকে, যাদেরকে। যআমতুম = তোমরা ধারণা করো। মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়াও (অন্য ইলাহ হিসাবে)। ফালা ইয়ামলিকূনা = তারা তো ক্ষমতা রাখে না। কাশফাদ দুররি = লাঘব করতে কোন দু:খ-দুর্দশা। আনকুম = তোমাদের থেকে। ওয়া = আর। লা তাহভীলান = তা পরিবর্তনও করতে পারে না।
বলো, ‘তোমরা ডাকো তাদেরকে, যাদেরকে তোমরা ধারণা করো তাঁকে ছাড়াও (অন্য ইলাহ হিসাবে), তারা তো ক্ষমতা রাখে না লাঘব করতে কোন দু:খ-দুর্দশা তোমাদের থেকে। আর তা পরিবর্তনও করতে পারে না।
১৭:৫৭
উলায়িকাল্লাযীনা = ঐসব লোক যাদেরকে। ইয়াদঊনা = ডাকে। ইয়াবতাগূনা = তারা নিজেরাই তালাশ করে। ইলা রব্বিহিমুল ওয়াছীলাতা = তাদের রবের দিকে নৈকট্যের উপায়/ ওসিলা। আইয়ুহুম = যে, তাদের মধ্যে কে। আক্বরাবু = তাঁর অধিক নিকটবর্তী হতে পারবে। ওয়া = আর। ইয়ারজূনা = তারা প্রত্যাশা করে। রহমাতাহু = তাঁর রহমত/ দয়া। ওয়া = আর। ইয়াখাফূনা = তারা ভয় করে। আযাবাহু = তাঁর আযাবকে/ শাস্তিকে। ইন্না = নিশ্চয়। আযাবা রব্বিকা = তোমার রবের আযাব/ শাস্তি। কানা মাহযূরান = ভয় করার মতো।
ঐসব লোক যাদেরকে ডাকে তারা নিজেরাই তালাশ করে তাদের রবের দিকে নৈকট্যের উপায়/ ওসিলা যে, তাদের মধ্যে কে তাঁর অধিক নিকটবর্তী হতে পারবে; আর তারা প্রত্যাশা করে তাঁর রহমত/ দয়া আর তারা ভয় করে তাঁর আযাবকে/ শাস্তিকে। নিশ্চয় তোমার রবের আযাব/ শাস্তি ভয় করার মতো।
১৭:৫৮
ওয়া = আর। ইম মিন ক্বারইয়াতিন = কোন জনপদ নেই। ইল্লা = এছাড়া যে। নাহনু = আমরা। মুহলিকূহা = উহাকে হালাককারী/ ধ্বংসকারী হবো। ক্বাবলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতের/ কিয়ামাত দিবসের আগে। আও = অথবা। মুআযযিবূহা = উহাকে শাস্তিদানকারী হবো। আযাবান শাদীদান = আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি দ্বারা। কানা যালিকা = উহা হলো। ফিল কিতাবি মাছতূরান = (আল্লাহর) কিতাবের মধ্যে লিপিবদ্ধ।
আর কোন জনপদ নেই এছাড়া যে, আমরা উহাকে হালাককারী/ ধ্বংসকারী হবো ইয়াওমুল কিয়ামাতের/ কিয়ামাত দিবসের আগে অথবা উহাকে শাস্তিদানকারী হবো আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি দ্বারা। উহা হলো (আল্লাহর) কিতাবের মধ্যে লিপিবদ্ধ।
১৭:৫৯
ওয়া = আর। মা মানাআনা = কিছু আমাদেরকে মানা করেনি। আন নুরছিলা = আমরা প্রেরণ করতে। বিল আয়াতি = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ (= আমি প্রয়োজনমতো আয়াতসমূহ নাযিল করেছিলাম)। ইল্লা আন = এছাড়া যে। কাযযাবা = মিথ্যারোপ করেছিলো। বিহাল আওয়ালীনা = উহার প্রতি (= আমার আয়াতের/ নিদর্শনের প্রতি) পূর্ববর্তীরা। ওয়া = আর। আতাইনা = আমরা দিয়েছি। ছামূদান্নাক্বাতা মুবসিরাতান = সামুদকে একটি চাক্ষুস দৃশ্যমান উটনী। ফাযলামূ বিহা = তারপর তারা উহার প্রতি যুলুম/ অত্যাচার করেছে। ওয়া = আর। মা নুরছিলা = আমরা পাঠাই না। বিল আয়াতি = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। ইল্লা তাখভীফান = ভয় প্রদর্শনস্বরূপ ছাড়া।
আর কিছু আমাদেরকে মানা করেনি আমরা প্রেরণ করতে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ (= আমি প্রয়োজনমতো আয়াতসমূহ নাযিল করেছিলাম)। এছাড়া যে, মিথ্যারোপ করেছিলো উহার প্রতি (= আমার আয়াতের/ নিদর্শনের প্রতি) পূর্ববর্তীরা। আর আমরা দিয়েছি সামুদকে একটি চাক্ষুস দৃশ্যমান উটনী, তারপর তারা উহার প্রতি যুলুম/ অত্যাচার করেছে। আর আমরা পাঠাই না আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ ভয় প্রদর্শনস্বরূপ ছাড়া।
১৭:৬০
ওয়া ইয = আর (স্মরণ করো) যখন। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। লাকা = তোমাকে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। আহাত্বা বিন্নাছি = ঘিরে রেখেছেন মানুষকে। ওয়া = আর। মা জাআলনার রুইয়াল্লাতী = আমরা নির্ধারণ করিনি সেই স্বপ্নকে যা। আরাইনাকা = আমরা তোমাকে দেখিয়েছি। ইল্লা ফিতনাতাল্লিন্নাছি = লোকদের জন্য ফিতনা/ পরীক্ষাস্বরূপ ছাড়া। ওয়াশ শাজারাতাল মালঊনাতা ফিল ক্বুরআনি = আর কুরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত গাছও (= যাক্কুম গাছ) (মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ) {= রসূলের স্বপ্ন এবং যাক্কুম গাছ মানুষকে সতর্ক করার মাধ্যমে পরীক্ষা করার দুটি উপকরণ ছিলো}। ওয়া = আর। নুখাওভিফুহুম = আমরা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি। ফামা ইয়াযীদুহুম = কিন্তু উহা তাদেরকে বাড়িয়ে দেয় না। ইল্লা তুগইয়ানান কাবীরান = বড়/ ঘোর বিদ্রোহ ছাড়া।
আর (স্মরণ করো) যখন আমরা বলেছি তোমাকে, ‘নিশ্চয় তোমার রব ঘিরে রেখেছেন মানুষকে (সুতরাং যথাসময়ে তারা ধরাশায়ী হবে)। আর আমরা নির্ধারণ করিনি সেই স্বপ্নকে যা আমরা তোমাকে দেখিয়েছি (৪৮:২৭), লোকদের জন্য ফিতনা/ পরীক্ষাস্বরূপ ছাড়া; আর কুরআনে উল্লেখিত অভিশপ্ত গাছও (= যাক্কুম গাছ) (মানুষের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ) {= রসূলের স্বপ্ন এবং যাক্কুম গাছ মানুষকে সতর্ক করার মাধ্যমে পরীক্ষা করার দুটি উপকরণ ছিলো}। আর আমরা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করি। কিন্তু উহা তাদেরকে বাড়িয়ে দেয় না, বড়/ ঘোর বিদ্রোহ ছাড়া।
১৭:৬১
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। লিলমালায়িকাতিছজুদূ = মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে, ‘তোমরা সিজদা করো। লিআদামা = আদমের প্রসঙ্গে। ফাছাজাদূ = সুতরাং তারা সিজদা করেছে। ইল্লা ইবলীছা = কিন্তু (একই আদেশ যখন ইবলিসের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছিলো তখন) ইবলিস (সিজদা করেনি)। ক্বলা = সে (= ইবলিস) বলেছে। আআছজুদু = আমি কি সিজদা করবো। লিমান = তার প্রসঙ্গে যাকে। খালাক্বতা = আপনি সৃষ্টি করেছেন। ত্বীনান = কাদা মাটি থেকে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা বলেছি, ‘মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে, ‘তোমরা সিজদা করো আদমের প্রসঙ্গে’। সুতরাং তারা সিজদা করেছে কিন্তু (একই আদেশ যখন ইবলিসের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছিলো তখন) ইবলিস (সিজদা করেনি)। সে (= ইবলিস) বলেছে, ‘আমি কি সিজদা করবো তার প্রসঙ্গে যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে?’
১৭:৬২
ক্বলা = সে বলেছে। আরাইতাকা = আপনি দেখুন তো। হাযাল্লাযী = এই যাকে আপনি সম্মানিত করেছেন। আলাইয়া = আমার উপরে। লাইন = যদি। আখখারতানি = আপনি আমাকে অবকাশ দেন। ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। লাআহতানিকান্না = তাহলে আমি সমূলে নস্যাৎ/ উৎখাত করবো। যুররিয়াতাহু = তার যুররিয়াতকে/ বংশধরদেরকে। ইল্লা ক্বালীলান = অল্প সংখ্যক ছাড়।
সে বলেছে, ‘আপনি দেখুন তো এই যাকে আপনি সম্মানিত করেছেন আমার উপরে, যদি আপনি আমাকে অবকাশ দেন ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত, তাহলে আমি সমূলে নস্যাৎ/ উৎখাত করবো তার যুররিয়াতকে/ বংশধরদেরকে, অল্প সংখ্যক ছাড়া।
১৭:৬৩
ক্বলাযহাব = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তুমি যাও। ফামান তাবিয়াকা = তারপর যে তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয়। জাহান্নামা = জাহান্নাম হবে। জাযাউহুম = তোমাদের প্রতিফল। জাযাআম মাওফূরা = পুর্ণমাত্রার প্রতিফল।
তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তুমি যাও। তারপর যে তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে তাদের মধ্য থেকে, তাহলে নিশ্চয় জাহান্নাম হবে তোমাদের প্রতিফল, পুর্ণমাত্রার প্রতিফল।
১৭:৬৪
ওয়াছতাফযির = আর তুমি পদস্খলিত করো। মানিছতাতা’তা = যাকে তুমি (পদস্খলিত করতে) পার। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। বিসওতিকা = তোমার আওয়াজ/ শ্লোগান দ্বারা। ওয়া = আর। আজলিব = তুমি চড়াও করো। আলাইহিম = তাদের উপর। বিখায়লিকা = তোমার অশ্বারোহী বাহিনীকে। ওয়া = আর। রজিলিকা = তোমার পদাতিক বাহিনীকে। ওয়া = আর। শারিকহুম = তুমি তাদের শরিক হয়ে যাও। ফিল আমওয়ালি = তাদের মালসমূহের ক্ষেত্রে। ওয়াল আওলাদি = আর তাদের আওলাদের/ সন্তানসন্ততিদের ক্ষেত্রে। ওয়া = আর। ইদহুম = তুমি তাদেরকে ওয়াদা দাও। ওয়া = আর। মা ইয়াইদুহুমুশ শয়তানু = শয়তান তাদেরকে ওয়াদা দেয় না। ইল্লা গুরূরা = প্রতারণা করা ছাড়া।
আর তুমি পদস্খলিত করো যাকে তুমি (পদস্খলিত করতে) পার তাদের মধ্য থেকে তোমার আওয়াজ/ শ্লোগান দ্বারা। আর তুমি চড়াও করো তাদের উপর তোমার অশ্বারোহী বাহিনীকে আর তোমার পদাতিক বাহিনীকে। আর তুমি তাদের শরিক হয়ে যাও তাদের মালসমূহের ক্ষেত্রে আর তাদের আওলাদের/ সন্তানসন্ততিদের ক্ষেত্রে। আর তুমি তাদেরকে ওয়াদা দাও’। আর শয়তান তাদেরকে ওয়াদা দেয় না, প্রতারণা করা ছাড়া।
১৭:৬৫
ইন্না = নিশ্চয়। ইবাদী = যারা আমার বান্দা। লাইছা লাকা আলাইহিম = তোমার জন্য নেই তাদের উপর। ছুলতানুন = কোন সুলতান/ ক্ষমতা। ওয়া = আর। কাফা বিরব্বিকা = তোমার রবই যথেষ্ট। ওয়াকীলান = উকিল/ কর্মবিধায়ক হিসাবে।
‘নিশ্চয় যারা আমার বান্দা তোমার জন্য নেই তাদের উপর কোন সুলতান/ ক্ষমতা’। আর তোমার রবই যথেষ্ট উকিল/ কর্মবিধায়ক হিসাবে।
১৭:৬৬
রব্বুকুমুল্লাযী = তিনিই তোমাদের রব যিনি। ইউযজী লাকুমুল ফুলকা = চালনা করেন তোমাদের জন্য নৌযান। ফিল বাহরি = সাগরে। লিতাবতাগূ = যেন তোমরা তালাশ করতে পারো। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ থেকে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। কানা = হলেন। বিকুম = তোমাদের প্রতি। রহীমান = রহীম/ দয়াশীল।
তিনিই তোমাদের রব যিনি চালনা করেন তোমাদের জন্য নৌযান সাগরে, যেন তোমরা তালাশ করতে পারো তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ থেকে। নিশ্চয় তিনি হলেন তোমাদের প্রতি রহীম/ দয়াশীল।
১৭:৬৭
ওয়া = আর। ইযা = যখন। মাছছাকুমুদ দুররু = তোমাদেরকে স্পর্শ করে কোন বিপদ। ফিল বাহরি = সাগরের মধ্যে। দল্লা = তখন হারিয়ে যায়। মান তাদঊনা = যাদেরকে তোমরা ডাকো। ইল্লা ইয়্যাহু = শুধু তিনি ছাড়া। ফালাম্মা = তারপর যখন। নাজ্জাকুমু = তিনি তোমাদের নাজাত দেন/ উদ্ধার করেন। ইলাল বাররি = স্থলভাগের দিকে। আ’রাদতুম = তখন তোমরা (তাঁর বিধান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও। ওয়া = আর। কানাল ইনসানু = ইনসান/ মানুষ হলো। কাফূরান = কাফির/ অকৃতজ্ঞ।
আর যখন তোমাদেরকে স্পর্শ করে কোন বিপদ সাগরের মধ্যে, তখন তারা হারিয়ে যায় যাদেরকে তোমরা ডাকো শুধু তিনি ছাড়া। তারপর যখন তিনি তোমাদের নাজাত দেন/ উদ্ধার করেন স্থলভাগের দিকে, তখন তোমরা (তাঁর বিধান থেকে) মুখ ফিরিয়ে নাও। আর ইনসান/ মানুষ হলো কাফির/ অকৃতজ্ঞ।
১৭:৬৮
আফাআমিনতুম = তাহলে কি তোমরা নিরাপদবোধ করছো। আইঁ ইয়াখছিফা = যে, তিনি ধ্বসিয়ে দিবেন না। বিকুম = তোমাদেরকে। জানিবাল বাররি = স্থলভাগের পাশে। আও = অথবা। ইউরছিলা = পাঠাবেন না। আলাইকুম = তোমাদের উপর। হাসিবান = কংকর/ পাথরটুকরা বর্ষণকারী ঝড়ো হাওয়া। ছুম্মা = তারপর। লা তাজিদূ = তোমরা পাবে না। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়াকীলান = কোন উকিল/ কর্মবিধায়ক।
তাহলে কি তোমরা নিরাপদবোধ করছো যে, তিনি ধ্বসিয়ে দিবেন না তোমাদেরকে স্থলভাগের পাশে? অথবা পাঠাবেন না তোমাদের উপর কংকর/ পাথরটুকরা বর্ষণকারী ঝড়ো হাওয়া? তারপর তোমরা পাবে না তোমাদের জন্য কোন উকিল/ কর্মবিধায়ক।
১৭:৬৯
আম = নাকি। আমিনতুম = তোমরা নিরাপদবোধ করছো। আইঁ ইউঈদাকুম = যে, তিনি তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবেন না। ফীহি = উহার মধ্যে (= সাগরে)। তারাতান উখরা = অন্য একবার। ফাইউরছিলা = তারপর প্রেরণ করবেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ক্বাসিফাম মিনার রীহি = প্রচন্ড ঝটিকা বাতাস। ফাইউগরিক্বাকুম = তারপর তোমাদেরকে ডুবিয়ে দিবেন। বিমা কাফারতুম = তোমাদের কুফরের কারণে। ছুম্মা = তারপর। লা তাজিদূ = তোমরা পাবে না। লাকুম = তোমাদের জন্য। আলাইনা = আমাদের বিরুদ্ধে। বিহী = উহার ব্যাপারে। তাবীয়ান = কোন প্রতিরোধকারী।
নাকি তোমরা নিরাপদবোধ করছো যে, তিনি তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিবেন না উহার মধ্যে (= সাগরে) অন্য একবার, তারপর প্রেরণ করবেন তোমাদের উপর প্রচন্ড ঝটিকা বাতাস, তারপর তোমাদেরকে ডুবিয়ে দিবেন তোমাদের কুফরের কারণে? তারপর তোমরা পাবে না তোমাদের জন্য আমাদের বিরুদ্ধে উহার ব্যাপারে কোন প্রতিরোধকারী।
১৭:৭০
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। কাররামনা = আমরা সম্মানিত করেছি। বানী আদামা = বনী আদমকে। ওয়া = আর। হামালনাহুম = আমরা তাদেরকে বাহন দিয়েছি। ফিল বাররি = স্থলভাগের মধ্যে। ওয়াল বাহরি = ও জলভাগের মধ্যে। ওয়া = আর। রযাক্বনাহুম = আমরা তাদেরকে রিযিক দিয়েছি। মিনাত তইয়িবাতি = তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে। ওয়া = আর। ফাদ্দালনাহুম = আমরা তাদেরকে ফযল/ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। আলা কাছীরিম মিম মান খালাক্বনা = অনেকের উপর তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি। তাফদ্বীলা = যথাযথ ফযল/ শ্রেষ্ঠত্ব।
আর নিশ্চয় আমরা সম্মানিত করেছি বনী আদমকে। আর আমরা তাদেরকে বাহন দিয়েছি স্থলভাগের মধ্যে ও জলভাগের মধ্যে। আর আমরা তাদেরকে রিযিক দিয়েছি তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে। আর আমরা তাদেরকে ফযল/ শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি অনেকের উপর তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি, যথাযথ ফযল/ শ্রেষ্ঠত্ব।
১৭:৭১
ইয়াওমা = সেদিন। নাদউ = আমরা ডাকবো। কুল্লা = প্রত্যেক। উনাছিম বিইমামিহিম = মানব দলকে তাদের ইমামসহ। ফামান = তারপর যাকে। ঊফিয়া = দেয়া হবে। কিতাবাহু = তার কিতাব/ আমলনামা। বিইয়ামীনিহী = তার ডান হাতে। ফাউলায়িকা ইয়াক্বরাঊনা = তারা (সানন্দে) পাঠ করবে। কিতাবাহুম = তাদের কিতাব। ওয়া = আর। লা ইউযলামূনা = তাদেরকে যুলুম করা হবে না। ফাতীলান = বিন্দু পরিমাণও।
সেদিন আমরা ডাকবো প্রত্যেক মানব দলকে তাদের ইমামসহ/ অনুসৃত অগ্রগামীসহ (পরিচালক, উপদেষ্টা ও পরামর্শদাতাসহ), তারপর যাকে দেয়া হবে তার কিতাব/ আমলনামা তার ডান হাতে, তারা (সানন্দে) পাঠ করবে তাদের কিতাব। আর তাদেরকে যুলুম করা হবে না বিন্দু পরিমাণও।
১৭:৭২
ওয়া = আর। মান = যারা। কানা = হলো। ফী হাযিহি = ইহার (= এ দুনিয়ার) মধ্যে। আ’মা = অন্ধ। ফাহুয়া = তারপর সে হবে। ফিল আখিরাতি = আখিরাতেও। আ’মা = অন্ধ। ওয়া = আর। আদল্লা ছাবীলা = অধিক মাত্রায় ব্যর্থকাম।
আর যে হলো ইহার (= এ দুনিয়ার) মধ্যে অন্ধ, তারপর সে হবে আখিরাতেও অন্ধ, আর অধিক মাত্রায় ব্যর্থকাম।
১৭:৭৩
ওয়া = আর। ইন = যদিও। কাদূ = তারা উপক্রম হয়েছিলো। লাইয়াফতিনূনাকা = তোমাকে ফিতনায় ফেলতে। আনিল্লাযী = উহার ব্যাপারে যা। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। লিতাফতারিয়া = যেন তুমি রচনা করো। আলাইনা = আমাদের নামে। গায়রাহু = উহা ছাড়া অন্য কিছু। ওয়া = আর। ইযাল্লাত্তাখাজূকা = তাহলে তখন তারা তোমাকে গ্রহণ করতো। খালীলান = খলীল/ সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুরূপে।
আর যদিও তারা উপক্রম হয়েছিলো তোমাকে ফিতনায় ফেলতে উহার ব্যাপারে যা আমরা ওহী করেছি তোমার প্রতি, যেন তুমি রচনা করো আমাদের নামে উহা ছাড়া অন্য কিছু। আর তাহলে তখন তারা তোমাকে গ্রহণ করতো খলীল/ সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুরূপে।
১৭:৭৪
ওয়া = আর। লাও = যদি। লা আন ছাব্বাতনাকা = আমরা তোমাকে সাবেত/ সুদৃঢ় না রাখতাম। লাক্বাদ = তাহলে নিশ্চয়। কিত্তা তারকানু = তুমি তো প্রায় ঝুঁকে পড়ছিলে। ইলাইহিম = তাদের দিকে। শাইয়ান ক্বালীলা = সামান্য কিছুটা হলেও।
আর যদি আমরা তোমাকে সাবেত/ সুদৃঢ় না রাখতাম, তাহলে নিশ্চয় তুমি তো প্রায় ঝুঁকে পড়ছিলে তাদের দিকে সামান্য কিছুটা হলেও।
১৭:৭৫
ইযাল্লাআযাক্বনাকা = কিন্তু তুমি যদি এরূপ করতে তাহলে তখন আমরা তোমাকে শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতাম। দি’ফাল হায়াতি = এই জীবনে দ্বিগুণ। ওয়া = আর। দি’ফাল মামাতি = মৃত্যুর (পরবর্তী জীবনে) দ্বিগুণ। ছুম্মা = তারপর। লা তাজিদু = তুমি পেতে না। লাকা = তোমার জন্য। আলাইনা = আমাদের বিরুদ্ধে। নাসীরান = কোন সাহায্যকারী।
কিন্তু তুমি যদি এরূপ করতে তাহলে তখন আমরা তোমাকে শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতাম এই জীবনে দ্বিগুণ আর মৃত্যুর (পরবর্তী জীবনে) দ্বিগুণ। তারপর তুমি পেতে না তোমার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে কোন সাহায্যকারী।
১৭:৭৬
ওয়া = আর। ইন = যদিও। কাদূ = তারা উপক্রম হয়েছিলো। লাইয়াছতাফিযযূনাকা = তোমাকে উচ্ছেদ করতে। মিনাল আরদি = এ দেশ থেকে। লিইউখরিজূকা মিনহা = (তথা) তোমাকে উহা থেকে বের করে দেয়ার জন্য। ওয়া = আর। ইযাল্লা ইয়ালবাছূনা = তাহলে তখন তারাও টিকে থাকতো না। খিলাফাকা = তোমার পরে। ইল্লা ক্বালীলান = স্বল্পকাল ছাড়া।
আর যদিও তারা উপক্রম হয়েছিলো তোমাকে উচ্ছেদ করতে এ দেশ থেকে (তথা) তোমাকে উহা থেকে (= ইয়াসরিব থেকে) বের করে দেয়ার জন্য। আর তাহলে তখন তারাও (উহাতে) টিকে থাকতো না তোমার পরে, স্বল্পকাল ছাড়া।
১৭:৭৭
ছুন্নাতা = এটাই আল্লাহর সুন্নাত/ কর্মনীতি। মান = তাদের ক্ষেত্রেও ছিলো যাদেরকে। ক্বাদ = ইতোপূর্বে। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। ক্বাবলাকা = তোমার আগে। মির রুসুলিনা = আমাদের রসূল হিসাবে। ওয়া = আর। লা তাজিদু = তুমি পাবে না। লিছুন্নাতিনা = আমাদের সুন্নাতে/ কর্মনীতিতে। তাহভীলা = কোন পরিবর্তন/ ব্যতিক্রম।
এটাই আল্লাহর সুন্নাত/ কর্মনীতি, তাদের ক্ষেত্রেও ছিলো যাদেরকে ইতোপূর্বে আমরা প্রেরণ করেছি তোমার আগে আমাদের রসূল হিসাবে। আর তুমি পাবে না আমাদের সুন্নাতে/ কর্মনীতিতে কোন পরিবর্তন/ ব্যতিক্রম।
১৭:৭৮
আক্বিমিস সালাতা = একটি সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। লিদুলুকিশ শামসি ইলা গাছাক্বিল লাইলি = দুলুকে শামস/ সূর্য (অস্তাচলে) ঢলে পড়ার মুহুর্ত থেকে গাছাক্বিল লাইল/ রাতের ঘন অন্ধকার আসার মুহুর্ত পর্যন্ত সময়ের পরিসরে। ওয়া = আর। ক্বুরআনাল ফাজরি = ফজরে কুরআন পাঠ করো। ইন্নাল ক্বুরআনাল ফাজির = নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ। কানা মাশহূদা = হল এমন কাজ যার সাক্ষী রাখা হয়।
একটি সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো দুলুকে শামস/ সূর্য (অস্তাচলে) ঢলে পড়ার মুহুর্ত থেকে গাছাক্বিল লাইল/ রাতের ঘন অন্ধকার আসার মুহুর্ত পর্যন্ত সময়ের পরিসরে। আর ফজরে কুরআন পাঠ করো। নিশ্চয় ফজরের কুরআন পাঠ হল এমন কাজ যার সাক্ষী রাখা হয়।
১৭:৭৯
ওয়া = আর। মিনাল্লাইলি = রাতের কিছু সময়। ফাতাহাজ্জাদ বিহী = উহাসহ (= কুরআনসহ) তাহাজ্জুদ/ রাত্রি জাগরণ করো (= সালাতের/ কুরআন পাঠের/ কুরআন গবেষণার/ নির্বাহী দায়িত্বপালনের জন্য)। নাফিলাতাল্লাকা = ইহা তোমার জন্য নফল/ অতিরিক্ত দায়িত্ব। আছা = আশা করা যায়। আইঁ ইয়াবআছাকা = যে, তোমাকে সমুত্থিত করবেন/ পৌঁছে দেবেন। রব্বুকা = তোমার রব। মাক্বামাম মাহমূদা = মাকামে মাহমুদে/ প্রশংসিত অবস্থানে।
আর রাতের কিছু সময় উহাসহ (= কুরআনসহ) তাহাজ্জুদ/ রাত্রি জাগরণ করো (= সালাতের/ কুরআন পাঠের/ কুরআন গবেষণার/ নির্বাহী দায়িত্বপালনের জন্য)। ইহা তোমার জন্য নফল/ অতিরিক্ত দায়িত্ব। আশা করা যায় যে, তোমাকে সমুত্থিত করবেন/ পৌঁছে দেবেন তোমার রব মাকামে মাহমুদে/ প্রশংসিত অবস্থানে।
১৭:৮০
ওয়া = আর। ক্বুর রব্বি = বলো, ‘হে আমার রব। আদখিলনী মুদখালা সিদক্বিন = আমাকে যেখানেই প্রবেশ করান সত্য সহকারেই প্রবেশ করান। ওয়া = আর। আখরিজনী মুখরাজা সিদক্বিন = আমাকে যেখান থেকেই বের করেন সত্য সহকারেই বের করেন। ওয়াজআল্লী = আর আমার জন্য নির্ধারণ করুন। মিল্লাদুনকা = আপনার পক্ষ থেকে। ছুলতানান নাসীরা = সাহায্যকারী সুলতান/ ক্ষমতা।
আর বলো, ‘হে আমার রব, আমাকে যেখানেই প্রবেশ করান সত্য সহকারেই প্রবেশ করান, আর আমাকে যেখান থেকেই বের করেন সত্য সহকারেই বের করেন। আর আমার জন্য নির্ধারণ করুন আপনার পক্ষ থেকে সাহায্যকারী সুলতান/ ক্ষমতা’।
১৭:৮১
ওয়া = আর। ক্বুল = বলো। জাআল হাক্বক্বু = হক্ব/ সত্য এসেছে। ওয়া = আর। যাহাক্বাল বাতিলু = বাতিল/ মিথ্যা অপসারিত হয়েছে। ইন্নাল বাতিলা = নিশ্চয় বাতিল/ মিথ্যা। কানা যাহূক্বা = অপসারিত হওয়ারই যোগ্য।
আর বলো, ‘হক্ব/ সত্য এসেছে আর বাতিল/ মিথ্যা অপসারিত হয়েছে। নিশ্চয় বাতিল/ মিথ্যা অপসারিত হওয়ারই যোগ্য’।
১৭:৮২
ওয়া = আর। নুনাযযিলু = আমরা নাযিল করেছি। মিনাল ক্বুরআনি = আল কুরআন। মা হুয়া = যা এমন যে তা। শিফাউওঁ ওয়া রহমাতুল লিলমু’মিনীনা = শেফা/ আরোগ্য ও রহমাত/ দয়া, মুত্তাকীদের জন্য। ওয়া = আর। লা ইয়াযীদুয যলিমীনা = উহা কিছু বাড়িয়ে দেয় না যালিমদেরকে। ইল্লা খাছারান = ক্ষতি ছাড়া।
আর আমরা নাযিল করেছি আল কুরআন যা এমন যে তা শেফা/ আরোগ্য ও রহমাত/ দয়া, মুত্তাকীদের জন্য। আর উহা কিছু বাড়িয়ে দেয় না যালিমদেরকে, ক্ষতি ছাড়া।
১৭:৮৩
ওয়া = আর। ইযা = যখন। আনআমনা = আমরা নিয়ামাতদান করি। আলাল ইনছানি = ইনসানকে/ মানুষকে। আ’রাদা = তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ওয়া = আর। নাআ বিজানিবিহী = সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে/ অহংকারে দূরে সরে যায়। ওয়া = আর। ইযা = যখন। মাছছাহুশ শাররু = তাকে স্পর্শ করে কোন অনিষ্ট। কানা ইয়াঊছান = তখন সে হতাশ হয়ে যায়।
আর যখন আমরা নিয়ামাতদান করি ইনসানকে/ মানুষকে, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর সে পার্শ্ব পরিবর্তন করে/ অহংকারে দূরে সরে যায়। আর যখন তাকে স্পর্শ করে কোন অনিষ্ট, তখন সে হতাশ হয়ে যায়।
১৭:৮৪
ক্বুল = বলো। কুল্লুইঁ ইয়া’মালু = প্রত্যেকেই কাজ করে যায়। আলা শাকিলাতিহী = নিজ নিজ বাছাইকৃত নিয়ম-রীতি/পন্থার উপর (যেহেতু মানুষকে freedom of will and choice/ ইচ্ছা ও নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে)। ফারব্বুকুম = (যদিও সবাই নিজের অনুসৃত নিয়মরীতিকেই সঠিক মনে করে) কিন্তু তোমাদের রবই। আ’লামু = জানেন। বিমান হুয়া = কে। আহদা ছাবীলা = সঠিক পথের হিদায়াত পেয়েছে/ সঠিক পথে পরিচালিত।
বলো, প্রত্যেকেই কাজ করে যায় নিজ নিজ বাছাইকৃত নিয়ম-রীতি/পন্থার উপর (যেহেতু মানুষকে freedom of will and choice/ ইচ্ছা ও নির্বাচনের স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে)। (যদিও সবাই নিজের অনুসৃত নিয়মরীতিকেই সঠিক মনে করে) কিন্তু তোমাদের রবই জানেন কে সঠিক পথের হিদায়াত পেয়েছে/ সঠিক পথে পরিচালিত?
১৭:৮৫
ওয়া = আর। ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনির রূহি = ‘রুহ’ সম্পর্কে। ক্বুলির রূহি = বলো, ‘রুহ। মিন আমরি রব্বী = আমার রবের আমর/ আদেশ অনুযায়ী আসে। ওয়া = আর। মা উতীতুম = তোমাদেরকে দেয়া হয়নি। মিনাল ইলমি = ইলমের/ জ্ঞানের মধ্য থেকে। ইল্লা ক্বালীলা = সামান্য অংশ ছাড়া।
আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে ‘রুহ’ সম্পর্কে (রুহ = কুরআন/ জিবরীল/ মানুষকে দেয়া বিশেষ আধ্যাত্মিক যোগ্যতা যার কারণে সে অন্য সৃষ্টির চেয়ে সেরা)। বলো, ‘রুহ আমার রবের আমর/ আদেশ অনুযায়ী আসে। আর তোমাদেরকে দেয়া হয়নি ইলমের/ জ্ঞানের মধ্য থেকে সামান্য অংশ ছাড়া’।
১৭:৮৬
ওয়া = আর। লাইন = নিশ্চয় যদি। শি’না = আমরা ইচ্ছা করতাম। লানাযহাবান্না = তাহলে আমরা নিয়ে যেতাম। বিল্লাযী = ঐ জিনিস যা। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ছুম্মা = তারপর। লা তাজিদু = তুমি পেতে না। লাকা = তোমার জন্য। বিহী = উহার ব্যাপারে। আলাইনা = আমাদের বিরুদ্ধে। ওয়াকীলান = কোন উকিল/ কর্মবিধায়ক।
আর নিশ্চয় যদি আমরা ইচ্ছা করতাম, তাহলে আমরা নিয়ে যেতাম ঐ জিনিস যা আমরা ওহী করেছি তোমার প্রতি (= আল কুরআন)। তারপর তুমি পেতে না তোমার জন্য উহার ব্যাপারে আমাদের বিরুদ্ধে কোন উকিল/ কর্মবিধায়ক।
১৭:৮৭
ইল্লা রহমাতাম মির রব্বিকা = (তুমি যা পেয়েছো তার কিছুই পেতে না) তোমার রবের রহমত ছাড়া। ইন্না = নিশ্চয়। ফাদলাহু = তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ। কানা আলাইকা = তোমার উপর। কাবীরা = অনেক বড়।
(তুমি যা পেয়েছো তার কিছুই পেতে না) তোমার রবের রহমত ছাড়া। নিশ্চয় তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ তোমার উপর অনেক বড়।
১৭:৮৮
ক্বুল = বলো। লাইনিজতামাআতিল ইনছু ওয়াল জিন্নু = যদি জমায়েত/ একত্রিত হয় ইনস/ মানবজাতি ও জিন/ দানবজাতি। আলা আইঁ ইয়াতূ = এ বিষয়ের উপর যে, তারা আনবে। বিমিছলি হাযাল ক্বুরআনি = এই কুরআনের অনুরূপ কিছু। লা ইয়া’তূনা = তবুও তারা আনতে পারবে না। বিমিছলিহী = উহার অনুরূপ কিছু। ওয়ালাও = যদিও। কানা = হয়। বা’দুহুম = তাদের একে। লিবা’দিন = অন্যের জন্য। যহীরান = সাহায্যকারী।
বলো, ‘যদি জমায়েত/ একত্রিত হয় ইনস/ মানবজাতি ও জিন/ দানবজাতি এ বিষয়ের উপর যে, তারা আনবে এই কুরআনের অনুরূপ কিছু, তবুও তারা আনতে পারবে না উহার অনুরূপ কিছু; যদিও হয় তাদের একে অন্যের জন্য সাহায্যকারী।
১৭:৮৯
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। সররাফনা = আমরা তাসরীফ আকারে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। ফী হাযাল ক্বুরআনি = এই কুরআনের মধ্যে। মিন কুল্লি মাছালিন = প্রত্যেক প্রকারের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। ফাআবা = তবুও প্রত্যাখ্যান করেছে। আকছারুন্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। ইল্লা কাফূরান = কুফর করাকে ছাড়া।
আর নিশ্চয় আমরা তাসরীফ আকারে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি মানুষের জন্য এই কুরআনের মধ্যে প্রত্যেক প্রকারের মাছাল/ দৃষ্টান্ত। তবুও প্রত্যাখ্যান করেছে অধিকাংশ মানুষ কুফর করাকে ছাড়া।
১৭:৯০
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। লান নু’মিনা = আমরা কখনো ঈমান/ বিশ্বাস করবো। লাকা = তোমার জন্য। হাত্তা = যতক্ষণ না। তাফজুরা = তুমি উৎসারিত করবে। লানা = আমাদের জন্য। মিনাল আরদি = ভূমি থেকে। ইয়ামবূআন = একটি ঝর্ণা।
আর তারা বলে, ‘আমরা কখনো ঈমান/ বিশ্বাস করবো তোমার জন্য যতক্ষণ না তুমি উৎসারিত করবে আমাদের জন্য ভূমি থেকে একটি ঝর্ণা।
১৭:৯১
আও = অথবা। তাকূনা = হবে। লাকা = তোমার জন্য। জান্নাতুম মিন নাখীলিন ওয়া ইনাবিন = একটি জান্নাত/ বাগান খেজুরের ও আংগুরের। ফাতুফাজ্জিরাল আনহারা = তারপর তুমি প্রবাহিত করবে ঝর্ণাসমূহ। খিলালাহা = উহার (= ঐ বাগানের) ভিতর দিয়ে। তাফজীরান = যা বয়ে যাবে।
অথবা হবে তোমার জন্য একটি জান্নাত/ বাগান খেজুরের ও আংগুরের। তারপর তুমি প্রবাহিত করবে ঝর্ণাসমূহ উহার (= ঐ বাগানের) ভিতর দিয়ে যা বয়ে যাবে।
১৭:৯২
আও = অথবা। তুছক্বিতাছ ছামাআ = তুমি ফেলবে আকাশকে। কামা = যেমন। যাআমতা = তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছো (৩৪:০৯)। আলাইনা = আমাদের উপর। কিছাফান = খন্ড-বিখন্ড করে। আও = অথবা। তা’তিয়া = তুমি নিয়ে আসবে। বিল্লাহি = আল্লাহকে। ওয়াল মালায়িকাতি = ও মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে। ক্বাবীলান = সামনাসামনি।
অথবা তুমি ফেলবে আকাশকে যেমন তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছো (৩৪:০৯) আমাদের উপর, খন্ড-বিখন্ড করে। অথবা তুমি নিয়ে আসবে আল্লাহকে ও মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে সামনাসামনি।
১৭:৯৩
আও = অথবা। ইয়াকূনা = হবে। লাকা = তোমার জন্য। বায়তুম মিন যুখরুফিন = স্বর্ণনির্মিত ঘর। আও = অথবা। তারক্বা = তুমি আরোহন করবে। ফিছ ছামায়ি = আকাশে। ওয়া = আর। লান নু’মিনা = আমরা কখনো ঈমান/ বিশ্বাস করবো না। লিরুক্বিইয়্যিকা = তোমার আরোহনকে। হাত্তা = যতক্ষণ না। তুনাযযিলা = তুমি নাযিল করবে। আলাইনা = আমাদের উপর। কিতাবান = একটি কিতাব। নাক্বরুউহু = যা আমরা পাঠ করবো। ক্বুল = বলো। ছুবহানা রব্বী = ‘ছুবহানা রব্বী/ পবিত্র আমার রব। হাল কুনতু = আমি কি কিছু হই। ইল্লা বাশারার রসূলান = মানুষ রসূল ছাড়া?
অথবা হবে তোমার জন্য স্বর্ণনির্মিত ঘর অথবা তুমি আরোহন করবে আকাশে; আর আমরা কখনো ঈমান/ বিশ্বাস করবো না তোমার আরোহনকে, যতক্ষণ না তুমি নাযিল করবে আমাদের উপর একটি কিতাব, যা আমরা পাঠ করবো। বলো, ‘ছুবহানা রব্বী/ পবিত্র আমার রব। আমি কি কিছু হই মানুষ রসূল ছাড়া?’
১৭:৯৪
ওয়া = আর। মা মানাআন্নাছা = মানুষকে বিরত রাখেনি। আন নু’মিনূ = ঈমান/ বিশ্বাস করতে। ইয = যখন। জাআহুমুল হুদা = তাদের কাছে এসেছে হুদা/ হিদায়াত। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। ক্বলূ = তারা বলেছে। আবাআছাল্লাহু = আল্লাহ কি সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছেন। বাশারার রাসূলা = মানুষ রসূল?
আর মানুষকে বিরত রাখেনি ঈমান/ বিশ্বাস করতে যখন তাদের কাছে এসেছে হুদা/ হিদায়াত, এছাড়া যে, তারা বলেছে, ‘আল্লাহ কি সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছেন মানুষ রসূল?’
১৭:৯৫
ক্বুল = বলো। লাও = যদি। কানা = এমন হতো যে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মালাইকাতুইঁ ইয়ামশূনা = মালাইকা/ ফেরেশতারা চলাফেরা করছে। মুতমায়িন্নীনা = নিশ্চিন্তে। লানাযযালনা = তাহলে আমরা নাযিল করতাম। আলাইহিম = তাদের উপর। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। মালাকার রাছূলান = ফেরেশতা রসূল।
বলো, ‘যদি এমন হতো যে, পৃথিবীতে মালাইকা/ ফেরেশতারা চলাফেরা করছে নিশ্চিন্তে, তাহলে আমরা নাযিল করতাম তাদের উপর আকাশ থেকে ফেরেশতা রসূল’।
১৭:৯৬
ক্বুল = বলো। কাফা বিল্লাহি = আল্লাহই যথেষ্ট। শাহীদান = স্বাক্ষী হিসাবে। বায়নী ওয়া বায়নাকুম = আমার ও তোমাদের মধ্যে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। কানা = হলেন। বিইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে। খাবীরাম বাসীরান = খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দেখেন)।
বলো, ‘আল্লাহই যথেষ্ট স্বাক্ষী হিসাবে আমার ও তোমাদের মধ্যে। নিশ্চয় তিনি হলেন তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দেখেন)’।
১৭:৯৭
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াহদিল্লাহু = যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন। ফাহুয়াল মুহতাদি = সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিল = যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন। ফালান তাজিদা = তুমি পাবে না। লাহুম = তাদের জন্য। আওলিয়াআ = কোন ওলি আওলিয়া/ অভিভাবক। মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়া। ওয়া = আর। নাহশুরুহুম = আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আলা উজূহিহিম = তাদের মুখমন্ডলের উপর/ তাদেরকে নিচু-মুখ করে/ উপুড় করে (টেনে এনে)। উমইয়ান = অন্ধ অবস্থায়। ওয়া = আর। বুকমান = বোবা অবস্থায়। ওয়া = আর। সুম্মান = বধির অবস্থায়। মা’ওয়াহুম = তাদের আবাস হবে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। কুল্লামা = যখনই। খাবাত = স্তিমিত হবে। যিদনাহুম = আমরা তাদেরকে বাড়িয়ে দেবো। ছায়ীরা = ছায়ীর/ আগুন।
আর যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন, তুমি পাবে না তাদের জন্য কোন ওলি আওলিয়া/ অভিভাবক, তাঁকে ছাড়া। আর আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে তাদের মুখমন্ডলের উপর/ তাদেরকে নিচু-মুখ করে/ উপুড় করে (টেনে এনে), অন্ধ, বোবা আর বধির অবস্থায়। তাদের আবাস হবে জাহান্নাম। যখনই স্তিমিত হবে, আমরা তাদেরকে বাড়িয়ে দেবো ছায়ীর/ আগুন।
১৭:৯৮
যালিকা = উহাই। জাযাউহুম = তাদের প্রতিফল। বিআন্নাহুম = এ কারণে যে, তারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। আয়িযা কুন্না = তবে কি যখন আমরা হবো। ইযামান = হাড্ডিসার। ওয়া = আর। রুফাতান = চূর্ণ-বিচূর্ণ। আয়িন্না = নিশ্চয় কি আমরা। লামাবউছূনা = পুনরুত্থিত হবোই। খালক্বান জাদীদান = নতুন সৃষ্টিরূপে।
উহাই তাদের প্রতিফল এ কারণে যে, তারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, আর তারা বলেছে, ‘তবে কি যখন আমরা হবো হাড্ডিসার আর চূর্ণ-বিচূর্ণ, নিশ্চয় কি আমরা এরপরও পুনরুত্থিত হবোই (= আমাদেরকে কি আবার উঠানো হবে) নতুন সৃষ্টিরূপে?’
১৭:৯৯
আওয়ালাম ইয়ারাও = তারা কি ভেবে দেখে না। আন্নাল্লাহাল্লাযী = যে, আল্লাহ সেই সত্তা যিনি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী। ক্বাদিরুন = তিনি অবশ্যই সক্ষম। আলা আইঁ ইয়াখলুক্বা = সৃষ্টি করতে। মিছলাহুম = উহাদের অনুরূপ। ওয়া = আর। জাআলা = তিনি নির্ধারণ করেছেন। লাহুম = তাদের জন্য। আজালান = আজাল/ শেষ বিচারের সময়সীমা। লা রয়বা ফীহি = উহাতে কোন সন্দেহ নেই। ফাআবায যলিমীনা = তবুও যালিমগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। ইল্লা কুফূরান = কুফর করাকে ছাড়া।
তারা কি ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, তিনি অবশ্যই সক্ষম সৃষ্টি করতে উহাদের অনুরূপ? আর তিনি নির্ধারণ করেছেন তাদের জন্য আজাল/ শেষ বিচারের সময়সীমা, উহাতে কোন সন্দেহ নেই। তবুও যালিমগণ প্রত্যাখ্যান করেছে, কুফর করাকে ছাড়া।
১৭:১০০
ক্বুল = বলো। লাও = যদি। আনতুম = তোমরা। তামলিকূনা = ক্ষমতাপ্রাপ্ত হতে। খাযায়িনা রহমাতি রব্বী = আমার রবের রহমতের ভান্ডারসমূহের। ইযাল লাআমছাকতুম = তাহলে তখন তোমরা উহা ধরে রাখতে। খাশইয়াতাল ইনফাক্বি = ব্যয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে। ওয়া = আর। কানাল ইনসানু = ইনসান/ মানুষ হলো। ক্বাতূরান = সংকীর্ণমনা/ কৃপণ।
বলো, ‘যদি তোমরা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হতে আমার রবের রহমতের ভান্ডারসমূহের, তাহলে তখন তোমরা উহা ধরে রাখতে ব্যয় হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আর ইনসান/ মানুষ হলো সংকীর্ণমনা/ কৃপণ’।
১৭:১০১
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনা = আমরা দিয়েছি। মূসা = মূসাকে। তিছআ আয়াতিম বাইয়িনাতিন = নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন। ফাছআল = সুতরাং জিজ্ঞাসা করো। বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলকে। ইয = যখন। জাআহুম = (উহা) তাদের কাছে এসেছিলো। ফাক্বলা = তখন বলেছিলো। লাহু = তাকে (= মূসাকে)। ফিরআউনা = ফেরাউন। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লাআযুন্নুকা = তোমাকে মনে করি। ইয়া মূসা = হে মূসা। মাছহূরান = যাদুগ্রস্ত।
আর নিশ্চয় আমরা দিয়েছি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন। সুতরাং জিজ্ঞাসা করো বানী ইসরাইলকে, যখন (উহা) তাদের কাছে এসেছিলো, তখন বলেছিলো তাকে (= মূসাকে) ফেরাউন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে মনে করি, হে মূসা, (তুমি) যাদুগ্রস্ত’।
১৭:১০২
ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আলিমতা = তুমি জেনেছো। মা আনযালা = কেউ নাযিল করেনি। হাউলায়ি = এসব নিদর্শন। ইল্লা রব্বুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রব ছাড়া। বাসায়িরা = যা চাক্ষুস প্রমাণবহ। ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লাআযুন্নুকা = তোমাকে মনে করি। ইয়া ফিরআউনা = হে ফেরাউন। মাছবূরান = ধ্বংসাভিমুখী (হয়ে আছো)।
সে (= মূসা) বলেছে, ‘নিশ্চয় তুমি জেনেছো কেউ নাযিল করেনি এসব নিদর্শন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রব ছাড়া, যা চাক্ষুস প্রমাণবহ। আর নিশ্চয় আমি তোমাকে মনে করি, হে ফেরাউন, (তুমি) ধ্বংসাভিমুখী (হয়ে আছো)’।
১৭:১০৩
ফাআরাদা = তারপর সে (= ফেরাউন) এরাদা/ ইচ্ছা করেছিলো। আইঁ = যে, তাদেরকে উচ্ছেদ করবে। মিনাল আরদি = সে দেশ থেকে। ফাআগরাক্বনাহু = তারপর আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি তাকে (= ফেরাউনকে)। ওয়া = আর। মাম মাআহু = যারা তার সাথে ছিলো। জামিআন = তাদের সকলকে।
তারপর সে (= ফেরাউন) এরাদা/ ইচ্ছা করেছিলো যে, তাদেরকে উচ্ছেদ করবে সে দেশ থেকে। তারপর আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি তাকে (= ফেরাউনকে) আর যারা তার সাথে ছিলো তাদের সকলকে।
১৭:১০৪
ওয়া = আর। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। মিম বা’দিহী = তার পরে। লিবানী ইসরাঈলাছকুনুল আরদা = বানী ইসরাইলকে, ‘তোমরা বসবাস করো পৃথিবীতে। ফাইযা = তারপর যখন। জাআ = আসবে। ওয়া’দুল আখিরাতি = আখিরাতের ওয়াদা। জি’না বিকুম = আমরা আনবো তোমাদেরকে। লাফীফান = সমবেত করে।
আর আমরা বলেছি তার পরে বানী ইসরাইলকে, ‘তোমরা বসবাস করো পৃথিবীতে; তারপর যখন আসবে আখিরাতের ওয়াদা, তখন আমরা আনবো তোমাদেরকে সমবেত করে’।
১৭:১০৫
ওয়া = আর। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। আনযালনাহু = আমরা উহা (= আল কুরআন) নাযিল করেছি। ওয়া = আর। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। নাযালা = উহা (= আল কুরআন) নাযিল হয়েছে। ওয়া = আর। মা আরছালনাকা = আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি। ইল্লা মুবাশশিরান = মুবাশশির/ সুসংবাদদাতা হিসাবে ছাড়া। ওয়া নাযীরান = ও নাযীর/ সতর্ককারী হিসাবে ছাড়া।
আর সত্য সহকারে আমরা উহা (= আল কুরআন) নাযিল করেছি আর সত্য সহকারে উহা (= আল কুরআন) নাযিল হয়েছে। আর আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি মুবাশশির/ সুসংবাদদাতা ও নাযীর/ সতর্ককারী হিসাবে ছাড়া।
১৭:১০৬
ওয়া = আর। ক্বুরআনান = ক্বুরআনকে। ফারাক্বনাহু = আমরা পৃথক পৃথক করে নাযিল করেছি। লিতাক্বরআহু = যেন তুমি উহা পাঠ করো। আলান্নাছি = মানুষের কাছে। আলা মুকছিন = থেমে থেমে। ওয়া = আর। নাযযালনাহু = আমরা উহাকে নাযিল করেছি। তানযীলান = ক্রমশ: অবতরণ পদ্ধতিতে।
আর ক্বুরআনকে আমরা পৃথক পৃথক করে নাযিল করেছি, যেন তুমি উহা পাঠ করো মানুষের কাছে থেমে থেমে, আর আমরা উহাকে নাযিল করেছি ক্রমশ: অবতরণ পদ্ধতিতে।
১৭:১০৭
ক্বুল = বলো। আমিনূ বিহী = তোমরা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করো। আও = অথবা। লা তু’মিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস না করো। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যাদেরকে। উতুল ইলমা = (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান দেয়া হয়েছে। মিন ক্বাবলিহী = তোমাদের আগে। ইযা = যখন। ইউতলা = তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয়। আলাইহিম = তাদের কাছে। ইয়াখিররূনা = তারা ঝুঁকে পড়ে। লিল আযক্বানি = চিবুকসমূহের জন্য। ছুজজাদান = সিজদায়।
বলো, ‘তোমরা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করো অথবা তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস না করো, নিশ্চয় যাদেরকে (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে; যখন উহা তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয় তাদের কাছে, তারা ঝুঁকে পড়ে চিবুকসমূহের (অবনমনের) জন্য সিজদায়।
১৭:১০৮
ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা (সিজদায়) বলে। ছুবহানা রব্বিনা ইন কানা ওয়া’দু রব্বিনা লামাফউলা = ‘ছুবহানা রব্বিনা, ইন কানা ওয়া’দু রব্বিনা লামাফঊলা’/ ‘আমাদের রব পবিত্র, যদি থাকে আমাদের রবের কোন ওয়াদা তাহলে তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হয়ই’।
আর তারা (সিজদায়) বলে, ‘ছুবহানা রব্বিনা, ইন কানা ওয়া’দু রব্বিনা লামাফঊলা’/ ‘আমাদের রব পবিত্র, যদি থাকে আমাদের রবের কোন ওয়াদা তাহলে তা অবশ্যই বাস্তবায়িত হয়ই’।
১৭:১০৯
ওয়া = আর। ইয়াখিররূনা = তারা ঝুঁকে পড়ে। লিল আযক্বানি = চিবুকসমূহের জন্য। ইয়াবকূনা = তারা ফোঁফায়ে কাঁদতে থাকে। ওয়া = আর। ইয়াযীদুহুম = উহা তাদেরকে বাড়িয়ে দেয়। খুশূআন = খুশূ/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত হওয়াকে।
আর তারা ঝুঁকে পড়ে চিবুকসমূহের (অবনমনের) জন্য। তারা ফোঁফায়ে কাঁদতে থাকে আর উহা তাদেরকে বাড়িয়ে দেয় খুশূ/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত হওয়াকে।
১৭:১১০
ক্বুলিদউল্লাহা = বলো, ‘আল্লাহ নামে ডাকো। আওভিদউর রহমানা = অথবা রহমান/দয়াময় নামে ডাকো’। আইয়ামান তাদঊ = যে নামেই ডেকে থাকো। ফালাহুল আছমাউল হুসনা = তাঁরই জন্য আসমাউল হুসনা/ সুন্দর নামসমূহ (তাই সে সুন্দর নামসমূহ দ্বারা তাঁকে ডাকো)। ওয়া = আর। লা তাজহার বিসলাতিকা = অতি উচ্চমাত্রার প্রকাশে/ উচ্চস্বরেও করো না তোমার সালাত। ওয়া = আর। লা তুখাফিত বিহা = অতি নিম্নমাত্রায়ও নয়/ নিম্নস্বরেও করো না তা। ওয়াবতাগি = আর অবলম্বন করো। বায়না যালিকা ছাবিলা = উহার মধ্যম মাত্রা।
বলো, ‘আল্লাহ নামে ডাকো অথবা রহমান/দয়াময় নামে ডাকো’, যে নামেই ডেকে থাকো; তাঁরই জন্য আসমাউল হুসনা/ সুন্দর নামসমূহ (তাই সে সুন্দর নামসমূহ দ্বারা তাঁকে ডাকো)’। আর অতি উচ্চ মাত্রার প্রকাশে/ উচ্চস্বরেও করো না তোমার সালাত, আর অতি নিম্নমাত্রায়ও নয়/ নিম্নস্বরেও করো না তা, আর অবলম্বন করো উহার মধ্যম মাত্রা। {= বেশি আওয়াজেও নামাজ পড়ো না, কম আওয়াজেও নামাজ পড়ো না, মধ্যম আওয়াজে নামাজ পড়ো।}
১৭:১১১
ওয়া = আর। ক্বুলিলহামদুলিল্লাহিল্লাযী = বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি। লাম ইয়াত্তাখিজ = গ্রহণ করেননি। ওয়ালাদান = কোন সন্তান। ওয়া = আর। লাম ইয়াকুল্লাহু = তাঁর নেই। শারীকুন = কোন শরীক/ অংশীদার। ফিল মুলকি = আধিপত্যে। ওয়া = আর। লাম ইয়াকুল্লাহু = তাঁর প্রয়োজন নেই। ওয়ালিইয়ুম মিনাল যুল্লি = কোন ওলি/ বন্ধু ও অভিভাবক, কারণ, তাঁর কোন দুর্বলতা নেই। ওয়া = আর। কাব্বিরহু তাকবীরান = তাঁর তাকবীর/ শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো।
আর বলো, ‘আলহামদুলিল্লাহ/ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি গ্রহণ করেননি কোন সন্তান। আর তাঁর নেই কোন শরীক/ অংশীদার, আধিপত্যে (= আধিপত্য বিস্তার ও সংরক্ষণে)। আর তাঁর প্রয়োজন নেই কোন ওলি/ বন্ধু ও অভিভাবক, কারণ, তাঁর কোন দুর্বলতা নেই। আর তাঁর তাকবীর/ শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো।
[১৭:১১১ এর আনুষঙ্গিক আলোচনাঃ এ আয়াতে আল্লাহর ব্যাপারে তিনটি অপবাদকে অস্বীকার/ খন্ডন/ অপনোদন করে চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, (১) আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি (২) আল্লাহর কোন শরিক নেই (৩) আল্লাহর কোন অভিভাবক বা তার কোন প্রয়োজন নেই। আরো দেখুন ০৩:২৬-২৭]