১৩:১
আলিফ লাম মীম রা = আলিফ লাম মীম রা। তিলকা = ইহা। আয়াতুল কিতাবি = (আসমানী) কিতাবের আয়াতসমূহ। ওয়াল্লাযী = আর যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। মির রব্বিকাল হাক্বক্বু = তোমার রবের পক্ষ থেকে, তা সত্য। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না।
আলিফ লাম মীম রা। ইহা (আসমানী) কিতাবের আয়াতসমূহ। আর যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না।
১৩:২
আল্লাহুল্লাযী = আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি। রফাআছ ছামাওয়াতি = সমুন্নত করেছেন আকাশমন্ডলী। বিগাইরি আমাদিন = এমন স্তম্ভ ছাড়াই। তারাওনাহা = যা তোমরা দেখছো। ছুম্মাছতাওয়া = তারপর সমাসীন হয়েছেন। আলাল আরশি = আরশের উপর। ওয়া = আর। ছাখখারাশ শামছা = তিনি নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে। ওয়াল কামারা = ও চন্দ্রকে। কুল্লুইঁ ইয়াজরী = প্রত্যেকটিই চলছে। লিআজালিম মুছাম্মা = আজালিম মুসাম্মা/ সুনির্ধারিত শেষ সময়সীমার দিকে। ইউদাব্বিরুল আমরা = তিনি পরিচালনা করেন আমর/ বিষয়সমূহ/ কার্যসমূহ। ইউফাসলিলুল আয়াতি = তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেন আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম = যেন তোমরা। বিলিক্বায়ি রব্বিকুম = তোমাদের রবের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের ব্যাপারে। তূক্বিনূনা = ইয়াকিন (জ্ঞানগত ধারণা অর্জন) করতে পারো।
আল্লাহই সেই সত্তা, যিনি সমুন্নত করেছেন আকাশমন্ডলী এমন স্তম্ভ ছাড়াই যা তোমরা দেখছো। তারপর সমাসীন হয়েছেন আরশের উপর। আর তিনি (একটি নিয়মের অধীনে) নিয়োজিত করেছেন সূর্যকে ও চন্দ্রকে। প্রত্যেকটিই চলছে আজালিম মুসাম্মা/ সুনির্ধারিত শেষ সময়সীমার দিকে। তিনি পরিচালনা করেন আমর/ বিষয়সমূহ/ কার্যসমূহ। তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেন আয়াতসমূহ যেন তোমরা তোমাদের রবের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের ব্যাপারে ইয়াকিন (জ্ঞানগত ধারণা অর্জন) করতে পারো।
১৩:৩
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। মাদ্দাল আরদা = বিস্তৃত করেছেন পৃথিবীকে। ওয়া = আর। জাআলা = স্থাপন করেছেন। ফীহা = উহার মধ্যে। রাওয়াছিয়া = পাহাড়-পর্বত। ওয়া = আর। আনহারান = নদনদী। ওয়া = আর। মিন কুল্লি ছামারাতিন = প্রত্যেক প্রকার ফলমূল। জাআলা ফীহা = তিনি সৃষ্টি করেছেন উহার মধ্যে। জাওজায়নিছনায়নি = দুই প্রকারের জোড়া। ইউগশিল্লাইলান্নাহারা = তিনি আচ্ছাদিত করেন রাত দিয়ে দিনকে। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে আছে। লাআয়াতিল লিক্বাওমিইঁ ইয়াতাফাক্কারূনা = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ সেই কওমের জন্য যারা তাফাক্কুর/ বৈজ্ঞানিক চিন্তা-গবেষণা করে।
আর তিনিই সেই সত্তা যিনি বিস্তৃত করেছেন পৃথিবীকে, আর স্থাপন করেছেন উহার মধ্যে পাহাড়-পর্বত আর নদনদী। আর (সৃষ্টি করেছেন) প্রত্যেক প্রকার ফলমূল, তিনি সৃষ্টি করেছেন উহার মধ্যে দুই প্রকারের জোড়া। তিনি আচ্ছাদিত করেন রাত দিয়ে দিনকে। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ সেই কওমের জন্য যারা তাফাক্কুর/ বৈজ্ঞানিক চিন্তা-গবেষণা করে।
১৩:৪
ওয়া = আর। ফিল আরদি = পৃথিবীতে আছে। ক্বিতউম মুতাজাভিরাতুন = পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড। ওয়া = আর। জান্নাতুম মিন আ’নাবিন = আংগুরের বাগান। ওয়া = আর। যারউন = শস্যক্ষেত। ওয়া = আর। নাখীলুন = খেজুর গাছ। সিনওয়ানুন = (যার কিছু) সমমূল। ওয়া = আর। গায়রা সিনওয়ানুন = (কিছু) অসমমূল। ইউছক্বা = (সেগুলোকে) ভিজানো হয়। বিমায়িন ওয়াহিদিন = একই পানি দিয়ে। ওয়া = আর। নুফাদ্দিলু = আমরা ফদল/ বিশিষ্টতা দিই। বা’দাহা = উহার কিছুকে। আলা বা’দিন = অন্য কিছুর উপর। ফিল উকলি = খাদ্য হিসাবে (স্বাদের তারতম্য দিয়ে)। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে আছে। লাআয়াতিল লিক্বাওমিইঁ ইয়া’ক্বিলূনা = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ সেই কওমের জন্য যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ common sense খাটায়/ প্রয়োগ করে।
আর পৃথিবীতে আছে পরস্পর সংলগ্ন ভূখন্ড আর আংগুরের বাগান আর শস্যক্ষেত আর খেজুর গাছ (যার কিছু) সমমূল আর (কিছু) অসমমূল, (সেগুলোকে) ভিজানো হয় একই পানি দিয়ে, আর আমরা ফদল/ বিশিষ্টতা দিই উহার কিছুকে অন্য কিছুর উপর খাদ্য হিসাবে (স্বাদের তারতম্য দিয়ে)। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ সেই কওমের জন্য যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি/ common sense খাটায়/ প্রয়োগ করে।
১৩:৫
ওয়া = আর। ইন = যদি। তা’জাব = তুমি আজববোধ করো। ফাআজাবুন = তাহলে আজবের ব্যাপার তো হচ্ছে। ক্বাওলুহুম = তাদের এই কওল/ বক্তব্য যে। আইযা = এটাই কি যে, যখন। কুন্না = আমরা হয়ে যাবো। তুরাবান = মাটি। আইন্না = নিশ্চয় কি আমরা। লাফী = (তারপর) পরিণত হবো। খালক্বিন জাদীদিন = নতুন সৃষ্টিতে? উলায়িকাল্লাযীনা = উহারাই সেসব লোক যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বিরব্বিহিম = তাদের রবের প্রতি। ওয়া = আর। উলায়িকাল আগলালু = ঐসব লোককে পরানো হবে শিকলসমূহ। ফী আ’নাক্বিহিম = তাদের ঘাড়সমূহে। ওয়া = আর। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুন্নারি = আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম = তারা। ফীহা = তাতে। খালিদূনা = স্থায়ী হবে।
আর যদি তুমি আজববোধ করো/ আশ্চর্যান্বিত হও তাহলে আজবের ব্যাপার তো হচ্ছে তাদের এই কওল/ বক্তব্য যে, ‘এটাই কি যে, যখন আমরা হয়ে যাবো মাটি, নিশ্চয় কি আমরা (তারপর) পরিণত হবো নতুন সৃষ্টিতে?’ উহারাই সেসব লোক যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের রবের প্রতি আর ঐসব লোককে পরানো হবে শিকলসমূহ তাদের ঘাড়সমূহে, আর তারাই আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে); তারা তাতে স্থায়ী হবে।
১৩:৬
ওয়া = আর। ইয়াছতা’জিলূনাকা = তারা তোমার কাছে দ্রুত পেতে চাচ্ছে। বিছ ছাইয়িয়াতি = মন্দ অবস্থাকে। ক্বাবলাল হাছানাতি = উত্তম অবস্থার আগে। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত = গত হয়েছে। মিন ক্বাবলিহিমুল মাছুলাতু = তাদের আগে শিক্ষামূলক দৃষ্টান্তসমূহ। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। লাযূ মাগফিরাতিল্লিন্নাছি = মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আলা যুলমিহিম = তাদের যুলুম সত্ত্বেও। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। লাশাদীদুল ইক্বাব = শাদীদুল ইক্বাব/ শাস্তিদানে কঠোর।
আর তারা তোমার কাছে দ্রুত পেতে চাচ্ছে মন্দ অবস্থাকে ভালোর/ উত্তম অবস্থার আগে। অথচ নিশ্চয় গত হয়েছে তাদের আগে শিক্ষামূলক দৃষ্টান্তসমূহ। আর নিশ্চয় তোমার রব মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, তাদের যুলুম সত্ত্বেও। আর নিশ্চয় তোমার রব শাদীদুল ইক্বাব/ শাস্তিদানে কঠোর।
১৩:৭
ওয়া = আর। ইয়াক্বুলুল্লাযীনা = তারা বলে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। লাও লা উনযিলা = কেন নাযিল করা হয়নি। আলাইহি = তার উপর। আয়াতুম মির রব্বিহি = কোন আয়াত/ নিদর্শন তার রবের পক্ষ থেকে। ইন্নামা = নিশ্চয়। আনতা = তুমি। মুনযিরুন = একজন সতর্ককারী। ওয়া = আর। লিকুল্লি ক্বাওমিন = প্রত্যেক কওমের জন্য ছিলো। হাদিন = একজন হাদি/ হেদায়াতকারী।
আর তারা বলে যারা কুফর করেছে, ‘কেন নাযিল করা হয়নি তার উপর কোন আয়াত/ নিদর্শন তার রবের পক্ষ থেকে?’ নিশ্চয় তুমি (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ) একজন সতর্ককারী। আর প্রত্যেক কওমের জন্য ছিলো একজন হাদি/ হেদায়াতকারী।
১৩:৮
আল্লাহু = আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। মা তাহমিল = যা গর্ভে ধারণ করে। কুল্লা = প্রত্যেক। উনছা = (গর্ভবতী) নারী। ওয়া = আর। মা তাগীদুল আরহামু = আর গর্ভসমূহে যা হ্রাস পায়। ওয়া = আর। মা তাযদাদূ = যা বৃদ্ধি পায়। ওয়া = আর। কুল্লা সাইয়িন = প্রত্যেক বিষয়ই। ইনদাহু = তাঁর কাছে (নির্ধারিত) আছে। বিমিক্বদারিন = প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত (সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ) পরিমাণ/ মাত্রা সহকারে।
আল্লাহ জানেন যা গর্ভে ধারণ করে প্রত্যেক (গর্ভবতী) নারী, আর আর গর্ভসমূহে যা হ্রাস পায় আর যা বৃদ্ধি পায়, আর প্রত্যেক বিষয়ই তাঁর কাছে (নির্ধারিত) আছে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত (সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ) পরিমাণ/ মাত্রা সহকারে।
১৩:৯
আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতিল কাবীরুল মুতাআল = তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান বিষয়সমূহ পরিজ্ঞাত, মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।
তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান বিষয়সমূহ পরিজ্ঞাত, মহান ও সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।
১৩:১০
ছাওয়াউন = তাঁর কাছে তারা উভয়ে সমান। মান = যে। আছাররাল ক্বাওলা = কথা গোপন করে। ওয়া = আর। মান = যে। জাহারা বিহী = উহা প্রকাশ করে। ওয়া = আর। মান হুয়া = যে। মুছতাখফিম বিল্লাইলি = লুকিয়ে থাকে রাতে। ওয়া = আর যে। ছারীবুম বিন্নাহারি = চলাফেরা করে দিনে।
তাঁর কাছে তারা উভয়ে সমান যে কথা গোপন করে আর যে উহা প্রকাশ করে, আর যে লুকিয়ে থাকে রাতে আর যে চলাফেরা করে দিনে।
১৩:১১
লাহু = তার জন্য আছে। মুআক্বক্বিবাতুন = প্রহরীগণ (= ফেরেশতা)। মিম বায়নি ইয়াদায়হি = তার আগে। ওয়া = আর। মিন খালফিহী = তার পিছে। ইয়াহফাযূনাহূ = তারা তাকে হেফাযত করে। মিন আমরিল্লাহি = আল্লাহর আদেশে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউগাইয়িরু = পরিবর্তন করেন না। মা বিক্বাওমিন = কোন কওমের অবস্থা। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউগাইয়িরু = তারা পরিবর্তন করে। মা বিআনফুসিহিম = তাদের নিজেদের অবস্থা/ গুণাবলী। ওয়া = আর। ইযা = যখন। আরাদাল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। বিক্বাওমিন = কোন কওমকে। ছূআন = মন্দ শাস্তি দিতে। ফালা মারাদ্দা লাহু = তখন তা ফেরানোর কেউ নেই। ওয়া = আর। লা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিন দূনিহী = তিনি ছাড়া। মিন ওয়ালিন = কোন ওয়ালি/ অভিভাবক।
তার জন্য আছে প্রহরীগণ (= ফেরেশতা) তার আগে আর তার পিছে, তারা তাকে (= ১৩:১০ আয়াতে বর্ণিত প্রত্যেক মানুষকে) হেফাযত করে আল্লাহর আদেশে (তার ভারসাম্য রক্ষার পরিবেশ সংরক্ষণ করে)। নিশ্চয় আল্লাহ পরিবর্তন করেন না কোন কওমের অবস্থা যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের অবস্থা/ গুণাবলী। আর যখন আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন কোন কওমকে মন্দ শাস্তি দিতে, তখন তা ফেরানোর কেউ নেই। আর তাদের জন্য নেই তিনি ছাড়া কোন ওয়ালি/ অভিভাবক।
১৩:১২
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইউরীকুমুল বারক্বা = তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুত। খাওফান = যাতে তোমাদের মনে ভয় জাগে। ওয়া = আর। তমাআন = আশা জাগে। ওয়া = আর। ইউনশিউছ ছাহাবাছ ছিক্বালা = তিনি গঠন করেন ভারী মেঘ।
তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুত যাতে তোমাদের মনে ভয় জাগে আর আশা জাগে। আর তিনি গঠন করেন ভারী মেঘ।
১৩:১৩
ওয়া = আর। ইউছাব্বিহুর রা’দু = মেঘের গর্জন (আল্লাহর) তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা করে। বিহামদিহী = তাঁর হামদের/ প্রশংসার সাথে। ওয়াল মালায়িকাতু = আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণও। মিন খীফাতিহী = তাঁর ভয়ে। ওয়া = আর। ইউরছিলুস সাওয়ায়িক্বা = তিনি প্রেরণ করেন গর্জনকারী বজ্রসমূহ। ফাইউসীবু বিহা = তারপর তিনি আঘাত করেন উহা দ্বারা। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। হুম = তারা। ইউজাদিলূনা = বিতর্ক করে। ফিল্লাহি = আল্লাহর সম্পর্কে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। শাদীদুল মিহালি = শাদীদুল মিহাল/ প্রবল শক্তিমান।
আর মেঘের গর্জন (আল্লাহর) তাসবীহ/ পবিত্রতা ঘোষণা করে তাঁর হামদের/ প্রশংসার সাথে, আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণও তাঁর ভয়ে। আর তিনি প্রেরণ করেন গর্জনকারী বজ্রসমূহ তারপর তিনি আঘাত করেন উহা দ্বারা যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তারা বিতর্ক করে আল্লাহর সম্পর্কে। আর তিনি শাদীদুল মিহাল/ প্রবল শক্তিমান।
১৩:১৪
লাহু দাওয়াতুল হাক্বক্বি = তাঁর জন্য আহবান/ তাঁর কাছে দোয়া করাই সত্য/ বাস্তবসঙ্গত/ যথাযথ। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইয়াদঊনা = দোয়া করে। মিন দূনিহি = তাঁকে ছাড়া অন্য কারো কাছে। লা ইয়াছতাজীবূনা = তারা সাড়া দিতে পারে না। লাহুম = তাদেরকে। বিশাইয়িন = কিছুমাত্রও। ইল্লা = (উহাতে কিছুই হয় না) এছাড়া যে। কাবাছিতি কাফফায়হি = যেমন কোন হস্তসম্প্রসারণকারী। কাফফায়হি = বাড়িয়ে দেয় তার দুই হাত। ইলাল মায়ি = পানির দিকে। লিয়াবলুগা = যেন উহা পৌঁছে যায়। ফাহু = তার মুখে। ওয়া = অথচ। মা হুয়া বিবালিগিহী = উহা তার কাছে পৌঁছবার নয়। ওয়া = আর। মা দুআউল কাফিরীনা = কাফিরদের দোয়া কিছুই হয় না। ইল্লা ফী দলালিন = বিভ্রান্তিতে/ ব্যর্থতায় পতিত হওয়া ছাড়া।
তাঁর জন্য আহবান/ তাঁর কাছে দোয়া করাই সত্য/ বাস্তবসঙ্গত/ যথাযথ। আর যারা দোয়া করে তাঁকে ছাড়া অন্য কারো কাছে, তারা সাড়া দিতে পারে না তাদেরকে কিছুমাত্রও; (উহাতে কিছুই হয় না) এছাড়া যে, যেমন কোন হস্তসম্প্রসারণকারী বাড়িয়ে দেয় তার দুই হাত পানির দিকে, যেন উহা পৌঁছে যায় তার মুখে, অথচ উহা তার কাছে পৌঁছবার নয়। আর কাফিরদের দোয়া কিছুই হয় না বিভ্রান্তিতে/ ব্যর্থতায় পতিত হওয়া ছাড়া।
১৩:১৫
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য। ইয়াছজুদু = সিজদা করে। মান = যা কিছু আছে। ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। তওয়ান = ইচ্ছাকৃতভাবে হোক। ওয়া = আর। কারহান = অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক। ওয়া = আর। যিলালুহুম = তাদের ছায়াগুলোও। বিল গুদুব্বি = সকালে। ওয়াল আসালি = ও বিকালে।
আর আল্লাহরই জন্য সিজদা করে যা কিছু আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে ইচ্ছাকৃতভাবে হোক আর অনিচ্ছাকৃতভাবে হোক, আর তাদের ছায়াগুলোও সকালে ও বিকালে।
১৩:১৬
ক্বুল = বলো। মার রব্বুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রব? ক্বুলিল্লাহু = বলো, ‘আল্লাহ’। ক্বুল = বলো। আফাত্তাখাজতুম = তবুও কি তোমরা গ্রহণ করেছো। মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ অভিভাবক হিসাবে। লা ইয়ামলিকূনা = তারা না সক্ষম হয়। লিআনফুসিহিম = তাদের নিজেদের জন্যও। নাফআন = কোন উপকার করতে। ওয়া = আর। লা দররান = না কোন অপকার করতে। ক্বুল = বলো। হাল ইয়াছতাভিল আ’মা ওয়াল বাসীরু = সমান হতে পারে কি অন্ধ ও চক্ষুষ্মান? আম = নাকি। হাল তাছতাভিয যুলুমাতু ওয়ান নূরু = সমান হতে পারে যুলুমাত/ অন্ধকার ও নূর/ আলো? আম = নাকি। জাআলূ = তারা স্থির করেছে। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। শুরাকাআ = (তাদের কল্পিত) শরিকদেরকে। খালাক্বূ = তারা কি সৃষ্টি করেছে। লাখালক্বিহী = তাঁর সৃষ্টির মতো? ফাতাশাবাহাল খালক্বু = যার ফলে ঐ সৃষ্টি সদৃশ মনে হয়েছে। আলাইহিম = তাদের কাছে। ক্বুলিল্লাহু = বলো, আল্লাহই। খালিক্বু কুল্লি সাইয়িন = সকল কিছুর স্রষ্টা। ওয়া = আর। হুয়াল ওয়াহিদুল কাহহারু = তিনি একাই একচ্ছত্র ক্ষমতাধর।
বলো, ‘কে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর রব?’ বলো, ‘আল্লাহ’। বলো, ‘তবুও কি তোমরা গ্রহণ করেছো তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে আওলিয়া/ অভিভাবক হিসাবে? তারা না সক্ষম হয় তাদের নিজেদের জন্যও কোন উপকার করতে আর না কোন অপকার করতে’। বলো, ‘সমান হতে পারে কি অন্ধ ও চক্ষুষ্মান? নাকি সমান হতে পারে যুলুমাত/ অন্ধকার ও নূর/ আলো?’ নাকি তারা স্থির করেছে আল্লাহর জন্য (তাদের কল্পিত) শরিকদেরকে? তারা কি সৃষ্টি করেছে কোন কিছু তাঁর সৃষ্টির মতো? যার ফলে ঐ সৃষ্টি সদৃশ মনে হয়েছে তাদের কাছে? বলো, ‘আল্লাহই সকল কিছুর স্রষ্টা। আর তিনি একাই একচ্ছত্র ক্ষমতাধর’।
১৩:১৭
আনযালা = তিনি নাযিল/ বর্ষণ করেন। মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে। মাআন = বৃষ্টির পানি। ফাছালাত = ফলে প্লাবিত হয়। আওদিয়াতুম বিক্বাদারিহা = উপত্যকাসমূহ তার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো। ফাহতামালাছ ছায়লু = তারপর বহন করে প্লাবন। যাবাদার রবীয়ান = (বহন করে) ফেনাকে, উপরিভাগে। ওয়া = আর। মিম্মা ইউক্বিদূনা আলাইহা = উহার উপরও (ফেনা হয়) যেসব ধাতুকে তারা প্রজ্জ্বলিত করে। ফিন নারিবতিগায়ি হিলইয়াতিন আও মাতায়িন যাবাদুম মিছলুহু = আগুনের মধ্যে, এ উদ্দেশ্যে যে তা দিয়ে বানাতে চায় অলংকার বা তার মতো কোন তৈজসপত্র। কাযালিকা = এভাবেই। ইয়াদরিবুল্লাহুল হাক্বক্বু ওয়াল বাতিলু = আল্লাহ দৃষ্টান্ত পেশ করেন হক ও বাতিলের/ সঠিক ও বেঠিকের/ যৌক্তিক ও অযৌক্তিকের। ফাআম্মায যাবাদু = তারপর ফেনা। ফাইয়াযহাবু = চলে যায়। জুফআন = অকেজো হয়ে। ওয়া আম্মা = আর। মা = যা। ইয়ানফাউন্নাছু = মানুষের জন্য উপকারী। ফাইয়ামকুছু = তা টিকে থাকে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। কাযালিকা = এভাবেই। ইয়াদরিবুল্লাহুল আমছালা = আল্লাহ পেশ করেন আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।
তিনি নাযিল/ বর্ষণ করেন আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি, ফলে প্লাবিত হয় উপত্যকাসমূহ তার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো। তারপর বহন করে প্লাবন, (বহন করে) ফেনাকে, উপরিভাগে। আর উহার উপরও (ফেনা হয়) যেসব ধাতুকে তারা প্রজ্জ্বলিত করে আগুনের মধ্যে, এ উদ্দেশ্যে যে তা দিয়ে বানাতে চায় অলংকার বা তার মতো কোন তৈজসপত্র। এভাবেই আল্লাহ দৃষ্টান্ত পেশ করেন হক ও বাতিলের/ সঠিক ও বেঠিকের/ যৌক্তিক ও অযৌক্তিকের। তারপর ফেনা চলে যায় অকেজো হয়ে। আর যা মানুষের জন্য উপকারী তা টিকে থাকে পৃথিবীতে। এভাবেই আল্লাহ পেশ করেন আমছাল/ দৃষ্টান্তসমূহ।
১৩:১৮
লিল্লাযিনাছতাজাবূ = তাদেরই জন্য যারা সাড়া দেয়। লিরব্বিহিমুল হুছনা = তাদের রবের কথায়, (তাদের জন্য আছে) উত্তম প্রতিফল। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। লাম ইয়াছতাজিবূ = সাড়া দেয়নি। লাহু = তাঁর কথায়। লাও = যদি। আন্না = হয়। লাহুম = তাদের জন্য। মা ফিল আরদি জামিআ = যা কিছু আছে পৃথিবীতে তার সমস্তই। ওয়া = আর। মিছলুহু মাআহু = তার সাথে তার অনুরূপ আরো। লাফতাদাও বিহী = তাহলে তারা অবশ্যই উহা দিয়ে মুক্তিপণ দিবে। উলায়িকা লাহুম = তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে। ছুউল হিসাবি = মন্দ হিসাব। ওয়া = আর। মা’ওয়াহুম = তাদের আবাস হবে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর। বি’ছাল মিহাদু = তা অত্যন্ত মন্দ আবাস।
তাদেরই জন্য যারা সাড়া দেয় তাদের রবের কথায়, (তাদের জন্য আছে) উত্তম প্রতিফল। আর যারা সাড়া দেয়নি তাঁর কথায় যদি হয় তাদের জন্য যা কিছু আছে পৃথিবীতে তার সমস্তই আর তার সাথে তার অনুরূপ আরো, তাহলে তারা অবশ্যই উহা দিয়ে মুক্তিপণ দিবে। তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে মন্দ হিসাব। আর তাদের আবাস হবে জাহান্নাম। আর তা অত্যন্ত মন্দ আবাস।
১৩:১৯
আফামান = তবে কি যে ব্যক্তি। ইয়ালামু = জানে। আন্নামা = যে, যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। মির রব্বিকাল হাক্বক্বু = তোমার রবের পক্ষ থেকে, তা সত্য। কামান = সে ঐ ব্যক্তির মতো হতে পারে যে। হুয়া আ’মা = অন্ধ। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইয়াতাযাক্কারু = যিকির/ স্মরণ রাখে। উলুল আলবাবি = উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ।
তবে কি যে ব্যক্তি জানে যে, যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে, তা সত্য; সে ঐ ব্যক্তির মতো হতে পারে যে অন্ধ? নিশ্চয় যিকির/ স্মরণ রাখে উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ।
১৩:২০
আল্লাযীনা = যারা। ইউফূনা = পূর্ণ করে। বিআহদিল্লাহি = আল্লাহর সাথে কৃত আহদ/ প্রতিজ্ঞা। ওয়া = আর। লা ইয়ানক্বুদূনাল মীছাক্বা = ভঙ্গ করে না মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি।
যারা পূর্ণ করে আল্লাহর সাথে কৃত আহদ/ প্রতিজ্ঞা আর ভঙ্গ করে না মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি।
১৩:২১
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইয়াসিলূনা = অক্ষুন্ন রাখে। মা আমারাল্লাহু বিহী = যার ব্যাপারে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন। আইঁ ইউসালা = তা অক্ষুন্ন রাখতে। ওয়া = আর। ইয়াখশাওনা = ভয় করে। রব্বাহুম = তাদের রবকে। ওয়া = আর। ইয়াখাফূনা = আশংকা করে। ছুআল হিসাবি = মন্দ হিসাব দেয়ার ব্যাপারে।
আর যারা অক্ষুন্ন রাখে ঐ সম্পর্ক যার ব্যাপারে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তা অক্ষুন্ন রাখতে। আর ভয় করে তাদের রবকে। আর আশংকা করে মন্দ হিসাব দেয়ার ব্যাপারে।
১৩:২২
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। সবারুবতিগাআ ওয়াজহি রব্বিহিম = সবর করে তাদের রবের সন্তুষ্টির অন্বেষণে। ওয়া = আর। আক্বামুস সালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া = আর। আনফাক্বূ = ইনফাক্ব/ ব্যয় করে। মিম্মা রযাক্বনাহুম = তা থেকে যা আমরা তাদেরকে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি। ছিররান = (ব্যয় করে) গোপনে। ওয়া = ও। আলানিয়াতান = প্রকাশ্যে। ওয়া = আর। ইয়াদরাউনা = দূর করে। বিল হাছানাতিছ ছাইয়িয়াতা = ভালো দিয়ে মন্দকে। উলায়িকা লাহুম = তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে। উক্ববাদ দারি = আখিরাতের উৎকৃষ্ট আবাস।
আর যারা সবর করে তাদের রবের সন্তুষ্টির অন্বেষণে। আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। আর ইনফাক্ব/ ব্যয় করে তা থেকে যা আমরা তাদেরকে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি, (ব্যয় করে) গোপনে ও প্রকাশ্যে। আর দূর করে ভালো দিয়ে মন্দকে। তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে আখিরাতের উৎকৃষ্ট আবাস।
১৩:২৩
জান্নাতু আদনিন = স্থায়ী জান্নাত। ইয়াদখুলূনাহা = তারা তাতে দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে। ওয়া = আর। মান সালাহা = (তারাও তাতে প্রবেশ করবে) যে সৎকর্ম করেছে। মিন আবায়িহিম = তাদের বাপদাদার মধ্য থেকে। ওয়া আযওয়াযিহিম = আর তাদের স্বামী/স্ত্রীর মধ্য থেকে। ওয়া যুররিয়াতিহিম = আর তাদের যুররিয়াত/ বংশধরদের মধ্য থেকে। ওয়াল মালায়িকাতি = আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। ইয়াদখুলূনা = দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে। আলাইহিম = তাদের কাছে। মিন কুল্লি বাবিন = প্রত্যেক দরজা দিয়ে।
স্থায়ী জান্নাত। তারা তাতে দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে। আর (তারাও তাতে প্রবেশ করবে) যে সৎকর্ম করেছে তাদের বাপদাদার মধ্য থেকে আর তাদের স্বামী/স্ত্রীর মধ্য থেকে আর তাদের যুররিয়াত/ বংশধরদের মধ্য থেকে, আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণ দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে তাদের কাছে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।
১৩:২৪
ছালামুন আলাইকুম = ছালামুন আলাইকুম (তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। বিমা সবারতুম = তোমরা যে সবর করেছো তার কারণে। ফানি’মা উক্ববাদ দারি = অত্যন্ত উত্তম আখিরাতের এই আবাস।
ছালামুন আলাইকুম (তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক), তোমরা যে সবর করেছো তার কারণে। অত্যন্ত উত্তম আখিরাতের এই আবাস।
১৩:২৫
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইয়ানক্বুদূনা = ভঙ্গ করে। আহদাল্লাহি = আল্লাহর সাথে কৃত আহদ/ প্রতিশ্রুতি। বা’দা মীছাক্বিহী = তাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবার পরও। ওয়া = আর। ইয়াক্বতঊনা = কেটে ফেলে। মা আমারাল্লাহু বিহী = যার ব্যাপারে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন। আইঁ ইউসালা = তা অক্ষুন্ন রাখতে। ওয়া = আর। ইউফসিদু = ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। উলায়িকা লাহুমুল্লা’নাতু = তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে লা’নত/ অভিশাপ। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ছূআদ দারি = নিকৃষ্ট আবাস।
আর যারা ভঙ্গ করে আল্লাহর সাথে কৃত আহদ/ প্রতিশ্রুতি, তাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হবার পরও; আর কেটে ফেলে ঐ সম্পর্ক যার ব্যাপারে আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন তা অক্ষুন্ন রাখতে, আর ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করে পৃথিবীতে। তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে লা’নত/ অভিশাপ আর তাদের জন্য আছে নিকৃষ্ট আবাস।
১৩:২৬
আল্লাহু = আল্লাহ। ইয়াবছুতুর রিযকা = প্রচুর করে দেন রিযিক। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াক্বদিরু = প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। ওয়া = আর। ফারিহূ = তারা আনন্দিত হয়েছে। বিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন নিয়ে। ওয়া = অথচ। মাল হায়াতুদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন কিছুই নয়। ফিল আখিরাতি = আখিরাতের তুলনায়। ইল্লা মাতাউন = ক্ষণস্থায়ী ভোগ সামগ্রী ছাড়া।
আল্লাহ প্রচুর করে দেন রিযিক যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। আর তারা আনন্দিত হয়েছে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন নিয়ে। অথচ হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন কিছুই নয় আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ সামগ্রী ছাড়া।
১৩:২৭
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলুল্লাযীনা = তারা বলে যার। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। লাও লা উনযিলা = কেন নাযিল করা হয়নি। আলাইহি = তার উপর। আয়াতুম মির রব্বিহী = কোন আয়াত/ নিদর্শন তার রবের পক্ষ থেকে। ক্বুল = বলো। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউদিল্লু = বিভ্রান্ত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত করেন। ইলাইহি = তাঁর নিজের দিকে। মান আনাবা = যে তাঁর দিকে ফিরে আসে তাকে।
আর তারা বলে যার কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, ‘কেন নাযিল করা হয়নি তার উপর কোন আয়াত/ নিদর্শন তার রবের পক্ষ থেকে?’ বলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি হিদায়াত করেন তাঁর নিজের দিকে যে তাঁর দিকে ফিরে আসে তাকে’।
১৩:২৮
আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। তাতমায়িন্নু = প্রশান্তি লাভ করে। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ। বিযিকরিল্লাহি = আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে। আলা = জেনে রাখো। বিযিকরিল্লাহি = আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমেই। তাতমায়িন্নুল ক্বুলূবা = প্রশান্তি লাভ করে কলবসমূহ।
যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর প্রশান্তি লাভ করে তাদের কলবসমূহ আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে। জেনে রাখো আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমেই প্রশান্তি লাভ করে কলবসমূহ।
১৩:২৯
আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। তূবা = কল্যাণসমূহ। লাহুম = তাদেরই জন্য। ওয়া = আর। হুছনা মাআবিন = উত্তম গন্তব্যও (তাদেরই জন্য)।
যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে কল্যাণসমূহ তাদেরই জন্য আর উত্তম গন্তব্যও (তাদেরই জন্য)।
১৩:৩০
কাযালিকা = এভাবেই। আরছালনাকা = আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি। ফী উম্মাতিন = একটি উম্মাতের কাছে। ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত = গত হয়েছে। মিন ক্বাবলিহা = উহার আগে। উমামুন = অনেক উম্মাত। লিতাতলুআ = তিলাওয়াত করার জন্য। আলাইহিমুল্লাযী = তাদের কাছে উহা যা। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার কাছে। ওয়া = আর। হুম = তারা। ইয়াকফুরূনা = কুফর/ অবিশ্বাস করছে। বিররহমানি = রহমানকে (= আল্লাহকে)। ক্বুল = বলো। হুয়া = তিনি। রব্বী = আমার রব। লা ইলাহা = কোন ইলাহ নেই। ইল্লা হুয়া = তিনি ছাড়া। আলাইহি = তাঁরই উপর। তাওয়াক্কালতু = আমি তাওয়াক্কুল/ ভরসা করি। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই কাছে। মাতাবি = আমার প্রত্যাবর্তন।
এভাবেই আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি একটি উম্মাতের কাছে। নিশ্চয় গত হয়েছে উহার আগে অনেক উম্মাত। তিলাওয়াত করার জন্য তাদের কাছে উহা যা আমরা ওহী করেছি তোমার কাছে। আর তারা কুফর/ অবিশ্বাস করছে রহমানকে (= আল্লাহকে)। বলো, “তিনি আমার রব। কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া। তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল/ ভরসা করি। আর তাঁরই কাছে আমার প্রত্যাবর্তন”।
১৩:৩১
ওয়া = আর। লাও আন্না = যদি এমন হতো যে। কুরআনান ছুইয়িরাত বিহিল জিবালু = কুরআন দিয়ে টলানো যেতো পাহাড়সমূহকে। আও = অথবা। ক্বুততিয়াত = খন্ড বিখন্ড করা যেত। বিহিল আরদু = উহা দিয়ে পৃথিবীকে। আও = অথবা। কুল্লিমা = কথা বলানো যেতো। বিহিল মাওতা = উহা দিয়ে মৃতকে (তবুও তারা বিশ্বাস করতো না)। বাল = বরং। লিল্লাহিল আমরু জামিয়া = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত সমস্ত বিষয়/ কাজ। আফালাম ইয়ায়আছিল্লাযীনা = তবে কি তারা নিরাশ হয়নি যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আন = এ কারণে যে। লাও = যদি। ইয়াশাউল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাহাদান্নাছা জামিয়া = তাহলে নিশ্চয় হিদায়াত করতেন সমস্ত মানুষকে। ওয়া = আর। লা ইয়াযালুল্লাযীনা = সর্বদাই যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। তুসীবুহুম = তাদের কাছে পৌঁছবে। বিমা = ঐ কারণে যা। সানাঊ = তারা করেছে। ক্বারিআতুন = (পৌঁছবে বিভিন্ন) বিপদাপদ। আও = অথবা। তাহুল্লু = তা নেমে আসবে। ক্বারিবাম মিন দারিহিম = তাদের বাড়িঘরের নিকটে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়া’তিয়া = আসবে। ওয়া’দুল্লাহি = আল্লাহর ওয়াদা। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউখলিফুল মীআদা = মিয়াদের/ প্রতিশ্রুতির খেলাফ/ ব্যতিক্রম করেন না।
আর যদি এমন হতো যে, কুরআন দিয়ে টলানো যেতো পাহাড়সমূহকে অথবা খন্ড বিখন্ড করা যেত উহা দিয়ে পৃথিবীকে অথবা কথা বলানো যেতো উহা দিয়ে মৃতকে (তবুও তারা বিশ্বাস করতো না)। বরং আল্লাহরই অধিকারভুক্ত সমস্ত বিষয়/ কাজ। তবে কি তারা নিরাশ হয়নি যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে এ কারণে যে, যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে নিশ্চয় হিদায়াত করতেন সমস্ত মানুষকে। আর সর্বদাই যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের কাছে পৌঁছবে ঐ কারণে যা তারা করেছে, (পৌঁছবে বিভিন্ন) বিপদাপদ অথবা তা নেমে আসবে তাদের বাড়িঘরের নিকটে, যতক্ষণ না আসবে আল্লাহর ওয়াদা/ প্রতিশ্রুতি। নিশ্চয় আল্লাহ মিয়াদের/ প্রতিশ্রুতির খেলাফ/ ব্যতিক্রম করেন না।
১৩:৩২
ওয়া = আর। লাক্বাদিছতুহযিয়া = নিশ্চয় ঠাট্টা বিদ্রূপ করা হয়েছে। বিরুসুলিন = রসূলদের সাথে। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগেও। ফাআমলায়তু = তারপর আমি ঢিল দিয়েছি। লিল্লাযীনা = তাদেরকে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ছুম্মা = তারপর। আখাযতুহুম = আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি। ফাকায়ফা = সুতরাং কেমন। কানা = ছিলো। ইক্বাবি = আমার শাস্তি!
আর নিশ্চয় ঠাট্টা বিদ্রূপ করা হয়েছে রসূলদের সাথে তোমার আগেও। তারপর আমি ঢিল দিয়েছি তাদেরকে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। তারপর আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি। সুতরাং কেমন ছিলো আমার শাস্তি!
১৩:৩৩
আফামান = তবে কি সেই সত্তা (সম্পর্কে ভেবে দেখোনি)। হুয়া = যিনি। ক্বায়িমুন = প্রতিষ্ঠিত আছেন। আলা কুল্লি নাফসিন = প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে। বিমা কাছাবাত = সে যা উপার্জন করেছে তার ফায়সালার জন্য। ওয়া = অথচ। জাআলূ = তারা স্থির করেছে। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। শুরাকাআ = (তাদের কল্পিত) শরিকগণকে। ক্বুল = বলো। ছাম্মূহুম = তাদের নাম বলো। আম = নাকি। তুনাব্বিঊনাহু = তোমরা তাঁকে সংবাদ জানাচ্ছো। বিমা = উহার সম্পর্কে যা। লা ইয়া’লামু = তিনি জানেন না। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। আও = অথবা। বিযহিরিম মিনাল ক্বাওলি = ইহা শুধুই (অর্থহীন) কথার বহির্প্রকাশ? বাল = বরং। যুইয়িনা = শোভনীয় করা হয়েছে। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। মাকরুহুম = তাদের কুটকৌশল। ওয়া = আর। সুদ্দূ = তাদেরকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। আনিছ ছাবীলি = সঠিক পথ থেকে। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = যাকে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন। ফামা লাহু = তার জন্য নেই। মিন = কোন। হাদিন = হাদি/ হিদায়াতকারী।
তবে কি সেই সত্তা (সম্পর্কে ভেবে দেখোনি) যিনি প্রতিষ্ঠিত আছেন প্রত্যেক ব্যক্তির ব্যাপারে সে যা উপার্জন করেছে তার ফায়সালার জন্য। অথচ তারা স্থির করেছে আল্লাহর জন্য (তাদের কল্পিত) শরিকগণকে। বলো, ‘তাদের নাম বলো। নাকি তোমরা তাঁকে সংবাদ জানাচ্ছো উহার সম্পর্কে যা তিনি জানেন না পৃথিবীতে? অথবা ইহা শুধুই (অর্থহীন) কথার বহির্প্রকাশ?’ বরং শোভনীয় করা হয়েছে তাদের জন্য যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের কুটকৌশল। আর তাদেরকে সরিয়ে রাখা হয়েছে সঠিক পথ থেকে। আর যাকে আল্লাহ বিভ্রান্ত করেন তার জন্য নেই কোন হাদি/ হিদায়াতকারী।
১৩:৩৪
লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন = আযাব/ শাস্তি। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। লাআযাবুল আখিরাতি = আখিরাতের আযাব/ শাস্তি। আশাক্বক্বু = আরো কঠোর। ওয়া = আর। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিনাল্লাহি = আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে। মিন = কোন। ওয়াক্বিন = রক্ষাকারী।
তাদের জন্য আছে আযাব/ শাস্তি হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। আর আখিরাতের আযাব/ শাস্তি আরো কঠোর। আর তাদের জন্য নেই আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে কোন রক্ষাকারী।
১৩:৩৫
মাছালুল জান্নাতিল্লাতী = ঐ জান্নাতের দৃষ্টান্ত যার ব্যাপারে। উয়িদা মুত্তাক্বূনা = ওয়াদা দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে। তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু = জারি/ প্রবাহিত হয় তার নিচ অংশে আনহার/ নদীসমূহ। উকুলুহা = তার খাদ্যসমূহ। দায়িমুন = স্থায়ী। ওয়া = আর। যিল্লুহা = তারা ছায়াও (স্থায়ী)। তিলকা = এসব। উকবাল্লাযীনাত তাক্বাও = তাদের পরিণতি যারা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। ওয়া = আর। উক্ববাল কাফিরীনান্নারি = কাফিরদের পরিণতি হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন।
ঐ জান্নাতের দৃষ্টান্ত যার ব্যাপারে ওয়াদা দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকেঃ- জারি/ প্রবাহিত হয় তার নিচ অংশে আনহার/ নদীসমূহ। তার খাদ্যসমূহ স্থায়ী আর তারা ছায়াও (স্থায়ী)। এসব তাদের পরিণতি যারা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। আর কাফিরদের পরিণতি হচ্ছে (জাহান্নামের) আগুন।
১৩:৩৬
ওয়াল্লাযীনা আতাইনাহুমুল কিতাবা = আর যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম। ইয়াফরাহূনা = তারা আনন্দিত হচ্ছে। বিমা উনযিলা ইলাইকা = উহার কারণে যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। ওয়া = আর। মিনাল আহযাবি = আহযাবের/ বিভিন্ন হিজবের বা দলের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। ইউনকিরু = এনকার/ অস্বীকার করে। বা’দাহু = উহার কিছু অংশ। ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। উমিরতু = আমি আদেশ পেয়েছি। আন = যেন। আ’বুদাল্লাহা = আমি আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করি। ওয়া = আর। লা উশরিকা = আমি শিরক না করি। বিহী = তাঁর সাথে। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। আদঊ = আমি ডাকি। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। মাআবি = আমার গন্তব্য/ প্রত্যাবর্তন।
আর যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম তারা আনন্দিত হচ্ছে উহার কারণে যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি আর আহযাবের/ বিভিন্ন হিজবের বা দলের মধ্য থেকে কেউ কেউ এনকার/ অস্বীকার করে উহার কিছু অংশ। বলো, ‘নিশ্চয় আমি আদেশ পেয়েছি যেন আমি আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করি। আর আমি শিরক না করি তাঁর সাথে। তাঁরই দিকে আমি ডাকি। আর তাঁরই দিকে আমার গন্তব্য/ প্রত্যাবর্তন’।
১৩:৩৭
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। আনযালনাহু = আমরা উহাকে নাযিল করেছি। হুকমান আরাবিয়্যান = আরবী হুকমান/ ফরমান হিসাবে। ওয়া = আর। লাইনিত তাবা’তা = অবশ্যই যদি তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিসমূহ। বা’দা = উহার পরও। মা = যা। জাআকা = এসেছে তোমার কাছে। মিনাল ইলমি = (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান থেকে। মা লাকা = তোমার জন্য থাকবে না। মিনাল্লাহি = আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে (বাঁচাতে)। মিওঁ ওয়ালিয়্যিওঁ ওয়া লা ওয়াক্বিন = কোন অভিভাবক ও রক্ষাকারী।
আর এভাবেই আমরা উহাকে নাযিল করেছি আরবী হুকমান/ ফরমান হিসাবে। আর অবশ্যই যদি তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিসমূহের, উহার পরও যা এসেছে তোমার কাছে (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান থেকে, তাহলে তোমার জন্য থাকবে না আল্লাহর (পাকড়াও) থেকে (বাঁচাতে) কোন অভিভাবক ও রক্ষাকারী।
১৩:৩৮
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। রুসুলাম = অনেক রসূল। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা দিয়েছি। লাহুম = তাদেরকে। আযওয়াজান = স্ত্রীবর্গ। ওয়া = আর। যুররিয়াতান = সন্তানসন্ততি। ওয়া = আর। মা কানা লিরসূলিন = কোন রসূলেরই সাধ্য নেই। আইঁ ইয়াতিয়া = যে, সে নিয়ে আসে। বিআয়াতিন = কোন আয়াত/ নিদর্শন। ইল্লা বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। লিকুল্লি আজালিন কিতাবুন = প্রত্যেক আজালের/ সময়সীমার জন্য (= ঘটনাক্রমের জন্য) আছে কিতাব/ লিখিত বিধান।
আর নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি অনেক রসূল তোমার আগে। আর আমরা দিয়েছি তাদেরকে স্ত্রীবর্গ আর সন্তানসন্ততি। আর কোন রসূলেরই সাধ্য নেই যে, সে নিয়ে আসে কোন আয়াত/ নিদর্শন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। প্রত্যেক আজালের/ সময়সীমার জন্য (= ঘটনাক্রমের জন্য) আছে কিতাব/ লিখিত বিধান (natural law)।
১৩:৩৯
ইয়ামহুল্লাহু = আল্লাহ নিশ্চিহ্ন করেন। মা ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইউছবিতু = তিনি সাবেত/ প্রতিষ্ঠিত রাখেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। ওয়া = আর। ইনদাহু = তাঁরই কাছে আছে। উম্মুল কিতাবি = উম্মুল কিতাব/ মূল কিতাব।
আল্লাহ নিশ্চিহ্ন করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন আর তিনি সাবেত/ প্রতিষ্ঠিত রাখেন (যাকে তিনি ইচ্ছা করেন)। আর তাঁরই কাছে আছে উম্মুল কিতাব/ মূল কিতাব।
১৩:৪০
ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। নুরিয়ান্নাকা = আমরা তোমাকে দেখিয়ে দিই। বা’দাল্লাযী = উহার কিছু অংশ যা। নায়িদুহুম = আমরা তাদেরকে ধমক দিয়েছি। আও = অথবা। নাতাওয়াফফাইয়ান্নাকা = আমরা তোমাকে ওফাত/ মৃত্যু দিই। ফাইন্নামা = তবে (উভয় অবস্থায়) নিশ্চয়। আলাইকাল বালাগু = তোমার দায়িত্ব হচ্ছে বালাগ/ প্রচার। ওয়া = আর। আলাইনাল হিসাবু = আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে হিসাব গ্রহণ।
আর যদি আমরা তোমাকে দেখিয়ে দিই উহার কিছু অংশ যা আমরা তাদেরকে ধমক দিয়েছি অথবা আমরা তোমাকে ওফাত/ মৃত্যু দিই; তবে (উভয় অবস্থায়) নিশ্চয় তোমার দায়িত্ব হচ্ছে বালাগ/ প্রচার আর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে হিসাব গ্রহণ।
১৩:৪১
আওয়ালাম ইয়ারাও = তারা কি দেখেনি। আন্না = যে, আমরা। না’তিল আরদা = পৃথিবীকে আনছি। নানক্বুদূহা = আমরা উহাকে সংকুচিত করে। মিন আতরফিহা = উহার অংশসমূহ থেকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়াহুকুমু = হুকুম দেন। লা মুআক্বক্বিবা লিহুকমিহী = তাঁর হুকুমের কোন রদকারী নেই। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। ছারিউল হিসাবি = হিসাবকরণে দ্রুততম।
তারা কি দেখেনি যে, আমরা পৃথিবীকে আনছি আমরা উহাকে সংকুচিত করে উহার অংশসমূহ থেকে। আর আল্লাহ হুকুম দেন। তাঁর হুকুমের কোন রদকারী নেই। আর তিনি হিসাবকরণে দ্রুততম।
১৩:৪২
ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। মাকারাল্লাযীনা = তারা কুটকৌশল করেছিলো যারা। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে ছিলো। ফালিল্লাহিল মাকরু জামিয়া = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত/ নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত কলাকৌশল। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা = যা। তাকছিবু = উপার্জন করে। কুল্লু = প্রত্যেক। নাফসিন = ব্যক্তি। ওয়া = আর। ছাইয়া’লামুল কুফফারু = শীঘ্রই জানবে কাফিরগণ। লিমান উক্ববাদ দারি = কার জন্য আছে আখিরাতের উত্তম আবাস।
আর নিশ্চয় তারা কুটকৌশল করেছিলো যারা তাদের আগে ছিলো। আল্লাহরই অধিকারভুক্ত/ নিয়ন্ত্রণাধীন সমস্ত কলাকৌশল। তিনি জানেন যা উপার্জন করে প্রত্যেক ব্যক্তি। আর শীঘ্রই জানবে কাফিরগণ কার জন্য আছে আখিরাতের উত্তম আবাস।
১৩:৪৩
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলুল্লাযীনা = তারা বলে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। লাছতা মুরছালান = তুমি রসূল নও। ক্বুল = বলো। কাফা বিল্লাহি শাহীদান = আল্লাহই যথেষ্ট সাক্ষী হিসাবে। বায়নী ওয়া বায়নাকুম = আমার ও তোমাদের মধ্যে। ওয়া = আর। মান ইনদাহু = সে যার কাছে আছে। ইলমুল কিতাবি = (আসমানী) কিতাবের ইলম/ জ্ঞান।
আর তারা বলে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, ‘তুমি রসূল নও’। বলো, ‘আল্লাহই যথেষ্ট সাক্ষী হিসাবে আমার ও তোমাদের মধ্যে, আর সে যার কাছে আছে (আসমানী) কিতাবের ইলম/ জ্ঞান’।