কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

010. সুরা ইউনুস

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

১০:১
আলিফ লাম রা = আলিফ লাম রা। তিলকা = ইহা। আয়াতুল কিতাবিল হাকীমি = কিতাবুল হাকীমের/ বিজ্ঞতাপূর্ণ কিতাবের আয়াতসমূহ।

আলিফ লাম রা। ইহা কিতাবুল হাকীমের/ বিজ্ঞতাপূর্ণ কিতাবের আয়াতসমূহ।

১০:২
আকানা লিন্নাছি আজাবান = লোকদের জন্য কি আশ্চর্যজনক হয়েছে? আন = এ ব্যাপারটি যে। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা রজুলুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার একজন পুরুষের কাছে। আন = এ নির্দেশ দিয়ে যে। আনযিরিন্নাছি = মানুষকে সতর্ক করো। ওয়া = আর। বাশশিরিল্লাযীনা = তাদেরকে সুসংবাদ দাও যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আন্না = এ সুসংবাদ যে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ক্বাদামা সিদক্বিন = সত্যিকার পদমর্যাদা। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ক্বলাল কাফিরূনা = কাফিরগণ বলেছে। ইন্না = নিশ্চয়। হাযা = এই ব্যক্তি। লাছাহিরুম মুবীনুন = প্রকাশ্য যাদুকর/ ভেল্কীবাজ।

লোকদের জন্য কি আশ্চর্যজনক হয়েছে, এ ব্যাপারটি যে, আমরা ওহী করেছি তাদের মধ্যকার একজন পুরুষের কাছে, এ নির্দেশ দিয়ে যে, মানুষকে সতর্ক করো আর তাদেরকে সুসংবাদ দাও যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, এ সুসংবাদ যে, তাদের জন্য আছে সত্যিকার পদমর্যাদা, তাদের রবের কাছে? কাফিরগণ বলেছে, ‘নিশ্চয় এই ব্যক্তি প্রকাশ্য যাদুকর/ ভেল্কীবাজ’।

১০:৩
ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকুমুল্লাহুল্লাযী = তোমাদের রব হচ্ছেন আল্লাহ যিনি। খালাক্বাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী। ফী সিত্তাতি আইয়ামিন = ছয়দিবসে (= ছয় মহাকালে)। ছুম্মাছতাওয়া আলাল আরশি = তারপর (= সপ্তম দিবসে/ সপ্তম মহাকালে) আরশে সমাসীন হয়েছেন। ইউদাব্বিরুল আমরি = আর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। মা মিন শাফিয়িন = কোন শাফায়াতকারী নেই। ইল্লা মিম বা’দি ইযনিহি = তাঁর অনুমতি পাওয়ার পরবর্তীতে ছাড়া। যালিকুমুল্লাহু = এ-ই হচ্ছেন আল্লাহ। রব্বুকুম = তোমাদের রব। ফা’বুদূহু = সুতরাং তাঁরই ইবাদাত/ বন্দেগী করো। আফালা তাযাক্কারূনা = তোমরা কি (তাঁর) যিকির/ স্মরণ করবে না?

নিশ্চয় তোমাদের রব হচ্ছেন আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী, ছয়দিবসে (= ছয় মহাকালে), তারপর (= সপ্তম দিবসে/ সপ্তম মহাকালে) আরশে সমাসীন হয়েছেন। আর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করছেন। কোন শাফায়াতকারী নেই, তাঁর অনুমতি পাওয়ার পরবর্তীতে ছাড়া। এ-ই হচ্ছেন আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তাঁরই ইবাদাত/ বন্দেগী করো। তোমরা কি (তাঁর) যিকির/ স্মরণ করবে না?

১০:৪
ইলাইহি = তাঁরই কাছে। মারজিউকুম জামীয়া = তোমাদের সবার ফিরে যাবার স্থান। ওয়া’দাল্লাহি হাক্বক্বা = আল্লাহর ওয়াদা সত্য। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। ইয়াবদাউল খালক্বা = সৃষ্টিকে প্রথম অস্তিত্বে আনেন। ছুম্মা = তারপর। ইউয়ীদুহু = তাকে পুনরাবর্তিত করবেন। লিইয়াজযিয়াল্লাযীনা = তাদেরকে প্রতিফল দেয়ার জন্য যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। বিল ক্বিসতি = ন্যায়বিচারের সাথে। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। শারাবুম মিন হামীমিন = ফুটন্ত পানীয়। ওয়া = আর। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। বিমা কানূ ইয়াকফারূনা = কারণ তারা কুফর করতো।

তাঁরই কাছে তোমাদের সবার ফিরে যাবার স্থান। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। নিশ্চয় তিনি সৃষ্টিকে প্রথম অস্তিত্বে আনেন তারপর তাকে পুনরাবর্তিত করবেন, তাদেরকে প্রতিফল দেয়ার জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে, ন্যায়বিচারের সাথে; আর যারা কুফর করেছে তাদের জন্য আছে ফুটন্ত পানীয় আর আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি; কারণ তারা কুফর করতো।

১০:৫
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা, যিনি। জাআলাশ শামছা = সূর্যকে করেছেন। দিয়াআন = তেজস্বী আলোকময়। ওয়াল ক্বামারা = আর চাঁদকে করেছেন। নূরান = স্নিগ্ধ আলোকময়। ওয়া = আর। ক্বাদ্দারাহু = উহার জন্য প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন। মানাযিলা = মনজিলসমূহ। লিতা’লামূ = যেন তোমরা জানতে পারো। আদাদাছ ছিনীনা = বছরসমূহের গণনা। ওয়াল হিসাবা = আর (তারিখের) হিসাব। মা খালাক্বাল্লাহু = আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। যালিকা = এসবকিছু। ইল্লা বিল হাক্বক্বি = উদ্দেশ্যহীনভাবে। ইউফাসসিলুল আয়াতি = তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেন আয়াতসমূহকে। লি ক্বাওমি ইয়া’লামূনা = এমন কওমের জন্য, যারা জ্ঞান রাখে।

তিনিই সেই সত্তা, যিনি সূর্যকে করেছেন দিয়াউন/ তেজস্বী আলোকময়, আর চাঁদকে করেছেন নূর/ স্নিগ্ধ আলোকময়। আর উহার জন্য প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারণ করেছেন মনজিলসমূহ। যেন তোমরা জানতে পারো বছরসমূহের গণনা আর (তারিখের) হিসাব। আল্লাহ সৃষ্টি করেননি এসবকিছু উদ্দেশ্যহীনভাবে। তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেন আয়াতসমূহকে এমন কওমের জন্য, যারা জ্ঞান রাখে।

১০:৬
ইন্না = নিশ্চয়। ফিখতিলাফিল লাইলি ওয়ান নাহারি = রাত ও দিনের আবর্তনে। ওয়া = আর। মা খালাক্বাল্লাহু = যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে উহাতে। লাআয়াতিল লিক্বাওমিইঁ ইয়াত্তাক্বূনা = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ আছে সেই কওমের জন্য যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে।

নিশ্চয় রাত ও দিনের আবর্তনে আর যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে উহাতে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ আছে সেই কওমের জন্য যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে।

১০:৭
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। লা ইয়ারজূনা = আশা করে না। লিক্বাআনা = আমাদের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের বিষয়ে। ওয়া = আর। রদূ = সন্তুষ্ট হয়ে গেছে। বিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের প্রতি। ওয়াতমাআন্নূ = আর নিশ্চিন্ত হয়েছে। বিহা = উহাতে। ওয়াল্লাযীনা হুম = তারাই। আন আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ থেকে। গাফিলূনা = গাফিল/ উদাসীন।

নিশ্চয় যারা আশা করে না আমাদের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের বিষয়ে আর সন্তুষ্ট হয়ে গেছে হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের প্রতি আর নিশ্চিন্ত হয়েছে উহাতে, তারাই আমাদের আয়াতসমূহ থেকে গাফিল/ উদাসীন।

১০:৮
উলায়িকা = তারাই এমন লোক। মা’ওয়াহুমুন্নারু = যাদের ঠিকানা (জাহান্নামের) আগুন। বিমা কানূ ইয়াকছিবূনা = তারা যে পাপ উপার্জন করতো তার কারণে।

তারাই এমন লোক যাদের ঠিকানা (জাহান্নামের) আগুন, তারা যে পাপ উপার্জন করতো তার কারণে।

১০:৯
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সলিহাতি = সালেহাত/ সৎকর্ম করেছে। ইয়াহদীহিম = তাদেরকে হিদায়াত করবেন। রব্বুহুম = তাদের রব। বিঈমানিহিম = তাদের ঈমানের কারণে। তাজরী মিন তাহতিহিমুল আনহারু = প্রবাহিত হবে তাদের পাদদেশে নদীসমূহ। ফী জান্নাতিন নায়ীমি = জান্নাতুন নায়ীমে/ নিয়ামাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালেহাত/ সৎকর্ম করেছে তাদেরকে হিদায়াত করবেন তাদের রব তাদের ঈমানের কারণে। প্রবাহিত হবে তাদের পাদদেশে নদীসমূহ, জান্নাতুন নায়ীমে/ নিয়ামাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে।

১০:১০
দা’ওয়াহুম = তাদের দোয়া হবে। ফীহা = সেখানে। সুবহানাকাল্লাহুম্মা = ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা’/ ‘আপনি পবিত্র হে আল্লাহ’। ওয়া = আর। তাহিয়্যাতুহুম = তাদের তাহিয়্যাত/ (পরস্পরের) হায়াতের জন্য শুভ কামনা/ অভিবাদন/ সম্ভাষণ হবে। ফীহা = সেখানে। ‘সালামুন’ = ‘সালামুন’। ওয়া = আর। আখিরু দা’ওয়াহুম = তাদের আখেরি দোয়া হবে। আনিল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীনা = এই যে, ‘আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’/ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র মহাবিশ্বের রব’।

তাদের দোয়া হবে সেখানে ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা’/ ‘আপনি পবিত্র, হে আল্লাহ’। আর তাদের তাহিয়্যাত/ (পরস্পরের) হায়াতের জন্য শুভ কামনা/ অভিবাদন/ সম্ভাষণ হবে সেখানে, ‘সালামুন’। আর তাদের আখেরি দোয়া হবে এই যে, ‘আল হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন’/ ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র মহাবিশ্বের রব’।

১০:১১
ওয়া = আর। লাও = যদি। ইউআযযিলুল্লাহু = আল্লাহ তাড়াতাড়ি করতেন। লিন্নাছিশ শাররাছতি’যালাহুম = মানুষের জন্য অকল্যাণ দেয়ার ব্যাপারে যেমন তাড়াতাড়ি তারা চায়। বিল খায়রি = কল্যাণ পেতে। লাক্বুদিয়া = তাহলে সম্পন্ন হয়ে যেতো। ইলাইহিম = তাদের ক্ষেত্রে। আজালুহুম = তাদের আজাল/ অবকাশের সময়সীমা। ফানাযারুল্লাযীনা = সুতরাং আমরা তাদেরকে ছাড় দিয়েছি যারা। লা ইয়ারজূনা = আশা রাখে না। লিক্বাআনা = আমাদের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের বিষয়ে। ফী তুগনিয়াহিমি = তারা তাদের বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে। ইয়া’মাহূনা = উদ্ভ্রান্ত/ দিশেহারা হয়ে ঘুরছে।

আর যদি আল্লাহ তাড়াতাড়ি করতেন মানুষের জন্য অকল্যাণ দেয়ার ব্যাপারে যেমন তাড়াতাড়ি তারা চায় কল্যাণ পেতে; তাহলে সম্পন্ন হয়ে যেতো তাদের ক্ষেত্রে তাদের আজাল/ অবকাশের সময়সীমা। সুতরাং আমরা তাদেরকে ছাড় দিয়েছি যারা আশা রাখে না আমাদের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের বিষয়ে। তারা তাদের বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে উদ্ভ্রান্ত/ দিশেহারা হয়ে ঘুরছে।

১০:১২
ওয়া = আর। ইযা = যখন। মাছছাল ইনছানাদ দুররু = মানুষকে স্পর্শ করে দু:খ-দুর্দশা। দাআনা = তখন সে আমাদের কাছে দোয়া করে। লিজামবিহী = তার শুয়ে থাকা অবস্থায়। আও = অথবা। ক্বায়িদান = বসে থাকা অবস্থায়। আও = অথবা। ক্বায়িমান = দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। ফালাম্মা = তারপর যখন। কাশাফনা = আমরা দূর করি। আনহু = তার থেকে। দুররাহু = তার দু:খ-দুর্দশা। মাররা = তখন সে এমনভাবে চলে। কাআল্লাম ইয়াদউনা = যেন সে আমাদের কাছে দোয়া করেনি। ইলা দুররি মাছছাহু = যখন তাকে দু:খ-দুর্দশা স্পর্শ করেছিলো। কাযালিকা = এভাবেই। যুইয়িনা = সুশোভিত করা হয়েছে। লিল মুছরিফীনা = সীমালংঘনকারীদের জন্য। মা কানূ ইয়া’মালূনা = সেসব আমল যা তারা করতো।

আর যখন মানুষকে স্পর্শ করে দু:খ-দুর্দশা, তখন সে আমাদের কাছে দোয়া করে তার শুয়ে থাকা অবস্থায় অথবা বসে থাকা অবস্থায় অথবা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। তারপর যখন আমরা দূর করি তার থেকে তার দু:খ-দুর্দশা, তখন সে এমনভাবে চলে যেন সে ঐ অবস্থায় আমাদের কাছে দোয়া করেনি, যখন তাকে দু:খ-দুর্দশা স্পর্শ করেছিলো। এভাবেই সুশোভিত করা হয়েছে সীমালংঘনকারীদের জন্য সেসব আমল যা তারা করতো।

১০:১৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আহলাকনাল কুরূনা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি অনেক সমুন্নত জাতিকে। মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগেও। লাম্মা = যখন। যলামূ = তারা যুলূম করেছে। ওয়া = আর। জাআতহুম = তাদের কাছে এসেছিলো। রুসুলুহুম = তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ। বিল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। ওয়া = আর। মা কানূ লিইউ’মিনূনা = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করার ছিলো না। কাযালিকা = এভাবেই। নাজযিল ক্বাওমাল মুজরিমীনা = আমরা প্রতিফল দিই অপরাধী কওমকে।

আর নিশ্চয় আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি অনেক সমুন্নত জাতিকে তোমাদের আগেও, যখন তারা যুলূম করেছে। আর তাদের কাছে এসেছিলো তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে আর তারা ঈমান/ বিশ্বাস করার ছিলো না। এভাবেই আমরা প্রতিফল দিই অপরাধী কওমকে।

১০:১৪
ছুম্মা = তারপর। জাআলনাকুম = আমরা তোমাদেরকে বানিয়েছি। খালায়িফা ফিল আরদি = পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। মিম বা’দিহিম = তাদের পরবর্তী পর্যায়ে। লিনানযুরা = যেন আমরা দেখি। কায়ফা তা’মালূনা = কেমন কাজ তোমরা কর।

তারপর আমরা তোমাদেরকে বানিয়েছি পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত, তাদের পরবর্তী পর্যায়ে, যেন আমরা দেখি কেমন কাজ তোমরা কর।

১০:১৫
ওয়া = আর। ইযা = যখন। তুতলা = তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয়। আলাইহিম = তাদের কাছে। আয়াতুনা বাইয়িনাতুন = আমাদের স্পষ্ট আয়াতসমূহ। ক্বলাল্লাযীনা = তখন তারা বলে যারা। লা ইয়ারজূনা = আশা রাখে না। লিক্বাআনা’তি = আমাদের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাত করার ব্যাপারে, (তারা বলে,)’নিয়ে আসো। বিক্বুরআনিন গায়রা হাযা = এ কুরআন ছাড়া অন্য কুরআন। আও = অথবা। বাদ্দিলাহু = ইহাকে বদলে দাও/ ইহাতে পরিবর্তন করে নাও। ক্বুল = বলো। মা ইয়াকূনু লী = আমার জন্য সঙ্গত নয়। আন = যে। উবাদ্দিলাহু = আমি উহাকে বদলে দেব। মিন তিলক্বায়ি নাফসী = আমার নিজের পক্ষ থেকে। ইন আত্তাবিউ = আমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করি না। ইল্লা মা ইউহা = উহা ছাড়া যা ওহী করা হয়। ইলাইয়া = আমার প্রতি। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফু = ভয় করি। ইন = যদি। আসাইতু = আমি অবাধ্যতা করি। রব্বী = আমার রবের। আযাবা ইয়াওমিন আযীমিন = তাহলে (ভয় করি) ইয়াওমুন আযীমের/ মহাদিবসের শাস্তির।

আর যখন তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয় তাদের কাছে আমাদের স্পষ্ট আয়াতসমূহ, তখন তারা বলে যারা আশা রাখে না আমাদের সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাত করার ব্যাপারে, (তারা বলে,)’নিয়ে আসো এ কুরআন ছাড়া অন্য কুরআন অথবা ইহাকে বদলে দাও/ ইহাতে পরিবর্তন করে নাও’। বলো, ‘আমার জন্য সঙ্গত নয় যে, ‘আমি উহাকে বদলে দেব আমার নিজের পক্ষ থেকে। আমি কোন কিছুর ইত্তেবা/ অনুসরণ করি না, উহা ছাড়া যা ওহী করা হয় আমার প্রতি। নিশ্চয় আমি ভয় করি, যদি আমি অবাধ্যতা করি আমার রবের, তাহলে (ভয় করি) ইয়াওমুন আযীমের/ মহাদিবসের শাস্তির’।

১০:১৬
ক্বুল = বলো। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। মা তালাওতুহু = তাহলে আমি উহা তিলাওয়াত/ পাঠ করতাম না। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। ওয়া = আর। লা আদরাকুম বিহী = তিনি তোমাদেরকে উহা জানাতেন না। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। লাবিছতু = আমি অবস্থান করেছি। ফীকুম = তোমাদের মধ্যে। উমুরান = একটা দীর্ঘ বয়স। মিন ক্বাবলিহী = উহার আগেই। আফালা তা’ক্বিলূনা = তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ কর না?

বলো, ‘যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে আমি উহা তিলাওয়াত/ পাঠ করতাম না তোমাদের কাছে। আর তিনি তোমাদেরকে উহা জানাতেন না। নিশ্চয় আমি অবস্থান করেছি তোমাদের মধ্যে একটা দীর্ঘ বয়স উহার আগেই। তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ কর না?’ {= তোমরা কি ভেবে দেখো না যে, আমি কি এমন ব্যক্তি যে, ব্যক্তিগত স্বার্থে তোমাদেরকে কিছু বলতে পারি বা তোমাদের কথানুসারে কোন সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করতে পারি?’}

১০:১৭
ফামান আযলামা মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে? আও = অথবা। কাযযাবা বিআয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে? ইন্নাহু = নিশ্চয়। লা ইউলিহুল মুজরিমূনা = অপরাধীরা সফলতা লাভ করে না।

সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে? নিশ্চয় অপরাধীরা সফলতা লাভ করে না।

১০:‌১৮
ওয়া = আর। ইয়া’বুদূনা = তারা ইবাদাত/ দাসত্ব করে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। মা লা ইয়াদুররুহুম = এমন সত্তার যারা তাদের অপকারও করতে পারে না। ওয়া = আর। রা ইয়ানফাঊনা = উপকারও করতে পারে না। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। হাউলায়ি = এরা। শুফাআউনা ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারী। ক্বুল = বলো। আতুনাব্বিউনাল্লাহা বিমা = তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছো যা সম্পর্কে। লা ইয়া’লামু = তিনি জানেন না। ফিস সামাওয়াতি ওয়া লা ফিল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। সুবহানাহু = সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। ওয়া = আর। তায়ালা আম্মা ইউশরিকূনা = তিনি উহার বহু ঊর্ধ্বে যে শিরক তারা করছে।

আর তারা ইবাদাত/ দাসত্ব করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন সত্তার যারা তাদের অপকারও করতে পারে না আর উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারী’। বলো, ‘তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছো যা সম্পর্কে তিনি জানেন না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে?’ সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। আর তিনি উহার বহু ঊর্ধ্বে যে শিরক তারা করছে।

১০:১৯
ওয়া = আর। মা কানান্নাছু = মানবজাতি ছিলো না। ইল্লা উম্মাতান ওয়াহিদাতান = এক উম্মাহ (= তাওহীদপন্থী উম্মাহ) ছাড়া। ফাখতালাফূ = তারপর তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে। ওয়া = আর। লাও লা কালিমাতুন = যদি না একটি কালেমা। ছাবাক্বাত = আগেই ঘোষিত হতো। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। লাক্বুদিয়া = তাহলে নিশ্চয় ফায়সালা সম্পন্ন হয়ে যেতো। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ফীমা = ঐ ব্যাপারে। ফীহি = যার ক্ষেত্রে। ইয়াখতালিফূনা = তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করছে।

আর মানবজাতি ছিলো না এক উম্মাহ (= তাওহীদপন্থী উম্মাহ) ছাড়া। তারপর তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে। আর যদি না একটি কালেমা আগেই ঘোষিত হতো তোমার রবের পক্ষ থেকে, তাহলে নিশ্চয় ফায়সালা সম্পন্ন হয়ে যেতো তাদের মধ্যে ঐ ব্যাপারে যার ক্ষেত্রে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করছে।

১০:২০
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। লাও = কেন। লা উনযিলা = নাযিল করা হয়নি। আলাইহি = তার উপর। আয়াতুন = কোন আয়াত। মির রব্বিহী = তার রবের পক্ষ থেকে। ফাক্বুল = সুতরাং বলো। ইন্নামাল গায়বু লিল্লাহি = নিশ্চয় গায়েবের ব্যাপার আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। ফানতাযিরূ = সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মাআকুম = তোমাদের সাথে। মিনাল মুনতাযিরীনা = অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলাম।

আর তারা বলে, ‘কেন নাযিল করা হয়নি তার উপর কোন আয়াত তার রবের পক্ষ থেকে?’ সুতরাং বলো, ‘নিশ্চয় গায়েবের ব্যাপার আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলাম’।

১০:২১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। আযাক্বনান্নাছা = আমরা মানুষকে আস্বাদন করাই। রহমাতাম মিম বা’দি দররাআ = রহমত, ঐ দু:খ-দুর্দশার পর। মাছছাতহুম = যা তাদেরকে স্পর্শ করেছিলো। ইযা = তখন। লাহুম = তারা লেগে যায়। মাকারুন = চালবাজিতে। ফী আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে। ক্বুলিল্লাহু = বলো, আল্লাহই। আছরাউ মাকরান = চাল দেয়ার ক্ষেত্রে দ্রুততম। ইন্না = নিশ্চয়। রুসুলুনা = আমাদের রসূলগণ/ ফেরেশতাগণ। ইয়াকতুবূনা = লিখে রাখছে। মা তামকুরূনা = সেসব চালবাজি যা তোমরা করছো।

আর যখন আমরা মানুষকে আস্বাদন করাই রহমত, ঐ দু:খ-দুর্দশার পর যা তাদেরকে স্পর্শ করেছিলো, তখন তারা লেগে যায় চালবাজিতে আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে। বলো, ‘আল্লাহই চাল দেয়ার ক্ষেত্রে দ্রুততম’। নিশ্চয় আমাদের রসূলগণ/ ফেরেশতাগণ লিখে রাখছে সেসব চালবাজি যা তোমরা করছো।

১০:২২
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইউছাইয়িরুকুম = তোমাদেরকে ভ্রমণ করান। ফিল বাররি ওয়াল বাহরি = স্থলভাগে ও জলভাগে। হাত্তা = এমন কি। ইযা = যখন। কুনতুম = তোমরা থাকো। ফিল ফুলকি = নৌযানে। ওয়া = আর। জারায়না = সেগুলো চলে। বিহিম = তাদেরকে নিয়ে। বিরীহিন তইয়িবাতিন = অনুকূল বাতাসে। ওয়া = আর। ফারিহূ = তারা আনন্দিত হয়। বিহা = সে কারণে। জাআতহা = তারপর যখন আসে। রীহু আসিফুন = ঝড়ো বাতাস। ওয়া = আর। জাআহুমুল মাওজু মিন কুল্লি মাকানিন = তাদের উপর আসে সব জায়গা থেকে উত্তাল ঢেউ। ওয়া = আর। যন্নূ = তারা ধারণা করে। আন্নাহুম = যে, তারা। উহীতা বিহিম = পরিবেষ্টিত হয়ে গেছে সেগুলো দ্বারা (= উত্তাল ঢেউয়ে)। দাআউল্লাহা = তখন তারা আল্লাহকে ডাকে। মুখলিসীনা লাহুদ দ্বীনা = তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে নিয়ে। লাইন = (তখন তারা বলে,) ‘নিশ্চয় যদি। আনজায়তানা = আপনি আমাদেরকে নাজাত দেন/ উদ্ধার করেন। মিন হাযিহি = ইহা (= এই বিপদ) থেকে। লানাকূনান্না = তাহলে নিশ্চয় আমরা থাকবো। মিনাশ শাকিরীনা = শোকরকারীদের/ কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত’।

তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে ভ্রমণ করান স্থলভাগে ও জলভাগে। এমন কি যখন তোমরা থাকো নৌযানে আর সেগুলো চলে তাদেরকে নিয়ে অনুকূল বাতাসে আর তারা আনন্দিত হয় সে কারণে, তারপর যখন আসে ঝড়ো বাতাস আর তাদের উপর আসে সব জায়গা থেকে উত্তাল ঢেউ আর তারা ধারণা করে যে, তারা পরিবেষ্টিত হয়ে গেছে সেগুলো দ্বারা (= উত্তাল ঢেউয়ে), তখন তারা আল্লাহকে ডাকে তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে নিয়ে। (তখন তারা বলে,) ‘নিশ্চয় যদি আপনি আমাদেরকে নাজাত দেন/ উদ্ধার করেন ইহা (= এই বিপদ) থেকে, তাহলে নিশ্চয় আমরা থাকবো শোকরকারীদের/ কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত’।

১০:২৩
ফালাম্মা = তারপর যখন। আনজাহুম = তিনি তাদেরকে নাজাত দেন/ উদ্ধার করেন। ইযা = তখন। হুম = তারা। ইয়াবগূনা = বিদ্রোহ করে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। বিগাইরিল হাক্বক্বি = অন্যায়ভাবে। ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে মানুষ। ইন্নামা = নিশ্চয়। বাগইয়াকুম = তোমাদের বিদ্রোহ। আলা আনফুসাহুম = তোমাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে। মাতাআল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী ভোগ করে নাও। ছুম্মা = তারপর। ইলাইনা = আমাদেরই কাছে। মারজিউককুম = তোমাদের ফিরে আসার স্থান। ফানুনাব্বিউকুম = তখন আমরা তোমাদেরকে সংবাদ জানাবো। বিমা = ঐ ব্যাপারে যা। কুনতুম তা’মালূনা = তোমরা করতে।

তারপর যখন তিনি তাদেরকে নাজাত দেন/ উদ্ধার করেন তখন তারা বিদ্রোহ করে পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে। হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের বিদ্রোহ তোমাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে। হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী ভোগ করে নাও। তারপর আমাদেরই কাছে তোমাদের ফিরে আসার স্থান। তখন আমরা তোমাদেরকে সংবাদ জানাবো ঐ ব্যাপারে যা তোমরা করতে।

১০:২৪
ইন্নামা = নিশ্চয়। মাছালুল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের উদাহরণ হচ্ছে। কামায়িন = পানির সাথে সম্পর্কিত ঘটনার মতো। আনযালনাহু = যা আমরা নাযিল করি। মিনাছ ছামায়ী = আকাশ থেকে। ফাখতালাতা বিহী = তারপর উহা দ্বারা সংমিশ্রিত হয়ে উদ্গত হয়। নাবাতুল আরদি = পৃথিবীর উদ্ভিদ। মিম্মা = উহা থেকে। ইয়া’কুলুন্নাছু = খায় মানুষ। ওয়াল আনআমু = আর গবাদি পশু। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আখাযাতিল আরদু = পৃথিবী ধারণ করেছে। যুখরুফাহা = উহার ভূষণ। ওয়ায যাইয়ানাত = আর চাকচিক্যময় হয়েছে। ওয়া = আর। যন্না = ধারণা করেছে। আহলুহা = উহার অধিবাসীরা। আন্নাহুম = যে, তারা। ক্বাদিরূনা আলাইহা = উহা ভোগ করতে সক্ষম হবে। আতাহা = তখন উহার উপর এসে গেছে। আমরুনা = আমাদের চূড়ান্ত নির্দেশ। লাইলান = রাতে। আও = অথবা। নাহারান = দিনে। ফাজাআলনাহা = তখন আমরা উহাকে বানিয়ে দিয়েছি। হাসিদান = কর্তিত ফসল। কাআল্লাম তাগনা = যেন সেখানে কিছুই ছিলো না। বিল আমছি = গতকাল। কাযালিকা = এভাবেই। নুফাসসিলুল আয়াতি = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে। লিক্বাওমিইঁ ইয়াফাক্কারূনা = সেই কওমের জন্য যারা ফিকির/ চিন্তা গবেষণা করে।

নিশ্চয় হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের উদাহরণ হচ্ছে ঐ পানির সাথে সম্পর্কিত ঘটনার মতো, যা আমরা নাযিল করি আকাশ থেকে, তারপর উহা দ্বারা সংমিশ্রিত হয়ে উদ্গত হয় পৃথিবীর উদ্ভিদ, উহা থেকে খায় মানুষ আর গবাদি পশু, শেষ পর্যন্ত যখন পৃথিবী ধারণ করেছে উহার ভূষণ আর চাকচিক্যময় হয়েছে আর ধারণা করেছে উহার অধিবাসীরা যে, তারা উহা ভোগ করতে সক্ষম হবে, তখন উহার উপর এসে গেছে আমাদের চূড়ান্ত নির্দেশ রাতে অথবা দিনে। তখন আমরা উহাকে বানিয়ে দিয়েছি কর্তিত ফসল, যেন সেখানে কিছুই ছিলো না গতকাল। এভাবেই আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে সেই কওমের জন্য যারা ফিকির/ চিন্তা গবেষণা করে।

১০:২৫
ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়াদঊ = আহবান করেন। ইলা দারিস সালাম = ‘দারুস সালামের’/ শান্তি নিকেতনের দিকে। ওয়া = আর। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ইলা সিরাতিম মুসতাক্বীমিন = সিরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে।

আর আল্লাহ আহবান করেন ‘দারুস সালামের’/ শান্তি নিকেতনের দিকে আর তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন সিরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে।

১০:২৬
লিল্লাযীনা আহসানুল হুসনা = যারা উত্তম কাজ করে তাদের জন্য আছে উত্তম প্রতিফল। ওয়া = আর। যীয়াদাতুন = অনুগ্রহের প্রবৃদ্ধি। ওয়া = আর। লা ইয়ারহাক্বু = আচ্ছন্ন করবে না। উজূহাহুম = তাদের মুখমন্ডলসমূহকে। ক্বাতারুন = কোন কালিমা। ওয়া = আর। লা যিল্লাতুন = কোন যিল্লাত/ অপমানও আচ্ছন্ন করবে না। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুল জান্নাতি = আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে)। হুম = তারা। ফীহা = তাতে। খালিদূনা = স্থায়ী হবে।

যারা উত্তম কাজ করে তাদের জন্য আছে উত্তম প্রতিফল আর অনুগ্রহের প্রবৃদ্ধি। আর আচ্ছন্ন করবে না তাদের মুখমন্ডলসমূহকে কোন কালিমা আর কোন যিল্লাত/ অপমানও আচ্ছন্ন করবে না। তারাই আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।

১০:২৭
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাছাবুছ ছাইয়িয়াতি = উপার্জন করেছে মন্দ কাজ। জাযাউ ছাইয়িয়াতিন = তারা তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল পাবে। বিমিছলিহা = ঐ মন্দ কাজের অনুরূপ। ওয়া = আর। তারহাক্বুহুম = তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। যিল্লাতুন = যিল্লাত/ অপমান। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে। মিন আসিমিন = কোন ত্রাণকর্তা। কাআন্নামা = যেন। উগশিয়াত = ঢেকে ফেলেছে। উজূহাহুম = তাদের মুখমন্ডলসমূহ। ক্বিতাআম মিনাল লাইলি মুজলিমান = রাতের অন্ধকারের কোন টুকরা। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুন নারি = ‘আসহাবুন নার’ (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম = তারা। ফীহা = তাতে। খালিদূনা = স্থায়ী হবে।

আর যারা উপার্জন করেছে মন্দ কাজ তারা তাদের মন্দ কাজের প্রতিফল পাবে ঐ মন্দ কাজের অনুরূপ। আর তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে যিল্লাত/ অপমান। তাদের জন্য নেই আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচাতে কোন ত্রাণকর্তা। যেন ঢেকে ফেলেছে তাদের মুখমন্ডলসমূহ রাতের অন্ধকারের কোন টুকরা। তারাই ‘আসহাবুন নার’ (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।

১০:২৮
ওয়া = আর। ইয়াওমা = সেদিন। নাহশুরাহুম = আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো। জামীআ = সবাইকে একত্রে। ছুম্মা = তারপর। নাক্বূলু = আমরা বলবো। লিল্লাযীনা = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা। আশরাকূ = শিরক করেছে। মাকানাকুম = তোমরা অবস্থান করো তোমাদের স্থানে। আনতুম = তোমরা। ওয়া = আর। শুরাকাউকুম = তোমাদের করা শরিকরা। ফাযাইয়ালনা = তারপর আমরা সরিয়ে দেবো। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে অপরিচিতির আবরণ। ওয়া = আর। ক্বলা শুরাকাউহুম = তাদের করা শরিকগণ বলবে। মা কুনতুম ইয়্যানা তা’বুদূনা = তোমরা আমাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতে না।

আর সেদিন আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো সবাইকে একত্রে। তারপর আমরা বলবো তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা শিরক করেছে, ‘তোমরা অবস্থান করো তোমাদের স্থানে; তোমরা আর তোমাদের করা শরিকরা’। তারপর আমরা সরিয়ে দেবো তাদের মধ্যে অপরিচিতির আবরণ আর তাদের করা শরিকগণ বলবে, ‘তোমরা আমাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতে না।

১০:২৯
ফাকাফা বিল্লাহি = আল্লাহই যথেষ্ট। সাহীদান = সাক্ষী হিসাবে। বায়নানা ও বায়নাকুম = আমাদের ও তোমাদের মধ্যে। ইন কুন্না = আমরা কি ছিলাম না। আন ইবাদাতিকুম = তোমাদের ইবাদাত/ দাসত্ব সম্পর্কে। লাগাফিলূনা = গাফেল/ অনবহিত।

আল্লাহই যথেষ্ট সাক্ষী হিসাবে আমাদের ও তোমাদের মধ্যে। আমরা কি ছিলাম না তোমাদের ইবাদাত/ দাসত্ব সম্পর্কে গাফেল/ অনবহিত?’

১০:৩০
হুনালিকা = সেখানে। তাবলূ = যাচাই করে নিতে পারবে। কুল্লু নাফসিন = প্রত্যেক ব্যক্তি। মা আছলাফাত = যা সে অতীতে করেছে। ওয়া = আর। রদ্দূ = তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকে। মাওলাহুমুল হাক্বক্বি = যিনি তাদের প্রকৃত মাওলা/ অভিভাবক। ওয়া = আর। দল্লা = উধাও হয়ে যাবে। আনহুম = তাদের থেকে। মা কানূ ইয়াফতারূনা = যা তারা রচনা করতো।

সেখানে যাচাই করে নিতে পারবে প্রত্যেক ব্যক্তি যা সে অতীতে করেছে। আর তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে আল্লাহর দিকে, যিনি তাদের প্রকৃত মাওলা/ অভিভাবক। আর উধাও হয়ে যাবে তাদের থেকে যা তারা রচনা করতো (= তাদের কল্পিত দেব-দেবতা)।

১০:৩১
ক্বুল = বলো। মাইঁ ইয়ারযুক্বুকুম = কে তোমাদেরকে রিযিক দেন। মিনাছ ছামায়ী ওয়াল আরদি = আকাশ ও পৃথিবী থেকে। আম্মান = অথবা কে। ইয়ামলিকুছ ছামআ = আধিপত্য রাখেন শ্রবণশক্তির উপর। ওয়াল আবসারা = আর দৃষ্টিশক্তির উপর। ওয়া = আর। মাইঁ ইউখরিজুল হাইয়া = কে বের করেন জীবিতকে। মিনাল মাইয়িতি = মৃত থেকে। ওয়া = আর। ইউরিজুল মাইয়িতা = বের করেন মৃতকে। মিনাল হাইয়ি = জীবিত থেকে। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদাব্বিরুল আমরা = কে (বিশ্বব্যবস্থার) ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করছেন। ফাছাইয়াক্বূলূনাল্লাহু = তাহলে, তারা শীঘ্রই বলবে, ‘আল্লাহ’। ফাক্বুল = তারপর বলো। আফালা তাত্তাক্বূনা = তবুও কি তোমরা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না?

বলো, ‘কে তোমাদেরকে রিযিক দেন আকাশ ও পৃথিবী থেকে? অথবা কে আধিপত্য রাখেন শ্রবণশক্তির উপর আর দৃষ্টিশক্তির উপর? আর কে বের করেন জীবিতকে মৃত থেকে আর বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে? আর কে (বিশ্বব্যবস্থার) ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করছেন?’ তাহলে, তারা শীঘ্রই বলবে, ‘আল্লাহ’। তারপর বলো, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না?’

১০:৩২
ফাযালিকুমুল্লাহু = এ-ই হচ্ছেন আল্লাহ। রব্বুকুমুল হাক্বক্বু = তোমাদের প্রকৃত রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা ও বিধানদাতা)। ফামাযা = সুতরাং কী থাকতে পারে। বা’দাল হাক্বক্বি = সত্যের পরে। ইল্লাদ দলালুন = বিভ্রান্তি ছাড়া। ফাআন্না = সুতরাং কোন উল্টোদিকে। তুসরাফূনা = তোমরা পরিচালিত হচ্ছো?

এ-ই হচ্ছেন আল্লাহ, তোমাদের প্রকৃত রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা ও বিধানদাতা)। সুতরাং কী থাকতে পারে সত্যের পরে বিভ্রান্তি ছাড়া? সুতরাং কোন উল্টোদিকে তোমরা পরিচালিত হচ্ছো?

১০:৩৩
কাযালিকা = এভাবে। হাক্বক্বাত = সত্য প্রমাণিত হলো। কালিমাতু রব্বিকা = তোমার রবের কালেমা/ বাণী। আলাল্লাযীনা = তাদের ব্যাপারে যারা। ফাছাক্বূ = ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করেছে। আন্নাহুম = এই (বাণী) যে, তারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করবে না।

এভাবে সত্য প্রমাণিত হলো তোমার রবের কালেমা/ বাণী তাদের ব্যাপারে যারা ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করেছে, এই (বাণী) যে, ‘তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে না’।

১০:৩৪
ক্বুল = বলো। হাল = আছে কি। মিনা শুরাকাইকুম = তোমাদের করা শরিকদের মধ্য থেকে কেউ এমন। মান = যে। ইয়াবদাউল খালক্বা = সৃষ্টির সূচনা করবে। ছুম্মা = তারপর। ইউঈদুহু = উহার পুনরাবর্তন ঘটাবে? ক্বুলিল্লাহু = বলো, ‘আল্লাহই। ইয়াবদাউল খালক্বা = সৃষ্টির সূচনা করেন। ছুম্মা = তারপর। ইউঈদুহু = উহার পুনরাবর্তন ঘটাবেন। ফাআন্না = সুতরাং কোন উল্টোদিকে। তু’ফাকূনা = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?

বলো, ‘আছে কি তোমাদের করা শরিকদের মধ্য থেকে কেউ এমন, যে সৃষ্টির সূচনা করবে তারপর উহার পুনরাবর্তন ঘটাবে?’ বলো, ‘আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর উহার পুনরাবর্তন ঘটাবেন। সুতরাং কোন উল্টোদিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে?’

১০:৩৫
ক্বুল = বলো। হাল = আছে কি? মিন শুরাকায়িকুম = তোমাদের করা শরিকদের মধ্য থেকে কেউ এমন। মান = যে। ইয়াহদী = হিদায়াত করে। ইলাল হাক্বক্বি = সত্যের দিকে। ক্বুলিল্লাহু = বলো, ‘আল্লাহই। ইয়াহদী = হিদায়াত করেন। লিল হাক্বক্বি = সত্যের দিকে। আফামাইঁ ইয়াহদী = তবে কি যে হিদায়াত করে। ইলাল হাক্বক্বি = সত্যের দিকে। আহাক্বক্বু = সে-ই অধিক হকদার। আইঁ ইউত্তাবাআ = এ ব্যাপারে যে, তার ইত্তেবা/ অনুসরণ করা হবে। আম্মান = নাকি সে। লা ইয়াহিদ্দী = যে হিদায়াত পায় না। ইল্লা আইঁ ইউহদা = এছাড়া যে, তাকে হিদায়াত করা হয়। ফামা লাকুম = সুতরাং তোমাদের কী হয়েছে? কায়ফা তাহকুমূনা = তোমরা কিরূপ সিদ্ধান্ত করছো?

বলো, ‘আছে কি তোমাদের করা শরিকদের মধ্য থেকে কেউ এমন, যে হিদায়াত করে সত্যের দিকে?’ বলো, ‘আল্লাহই হিদায়াত করেন সত্যের দিকে’। তবে কি যে হিদায়াত করে সত্যের দিকে সে-ই অধিক হকদার এ ব্যাপারে যে, তার ইত্তেবা/ অনুসরণ করা হবে, নাকি সে যে হিদায়াত পায় না এছাড়া যে, তাকে হিদায়াত করা হয়? সুতরাং তোমাদের কী হয়েছে? তোমরা কিরূপ সিদ্ধান্ত করছো?

১০:৩৬
ওয়া = আর। মা ইয়াত্তাবিউ = ইত্তেবা/ অনুসরণ করে না। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশ। ইল্লা যন্না = অনুমান ছাড়া অন্য কিছু। ইন্নায যন্না = নিশ্চয় অনুমান। লা ইউগনী = ফলপ্রসূ হয় না। মিনাল হাক্বক্বি = সত্যের বিপরীতে। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আলীমুম বিমা ইয়াফআলূনা = সে ব্যাপারে পরিজ্ঞাত আছেন যা তারা করে।

আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করে না তাদের অধিকাংশ অনুমান ছাড়া অন্য কিছু। নিশ্চয় অনুমান ফলপ্রসূ হয় না সত্যের বিপরীতে, কিছুমাত্রও। নিশ্চয় আল্লাহ সে ব্যাপারে পরিজ্ঞাত আছেন যা তারা করে।

১০:৩৭
ওয়া = আর। মা কানা = সম্ভব নয়। হাযাল কুরআনু = এই কুরআন। আইঁ ইউফতারা = রচনা করা। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। তাসদীক্বাল্লাযী বায়না ইয়াদাইহি = ইহা তাসদীক/ সত্যতা প্রতিপাদন করে তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের। ওয়া = আর। তাফসীলাল কিতাবি = ইহা আল কিতাবের তফসীল/ বিস্তারিত বর্ণনা। লা রাইবা ফীহি = ইহাতে কোন সন্দেহ নেই। মির রব্বিল আলামীনা = ইহা রব্বুল আলামীনের তথা সমগ্র মহাবিশ্বের রবের পক্ষ থেকে (নাযিলকৃত)।

আর সম্ভব নয় এই কুরআন রচনা করা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো দ্বারা। কিন্তু ইহা তাসদীক/ সত্যতা প্রতিপাদন করে তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের। আর ইহা আল কিতাবের তফসীল/ বিস্তারিত বর্ণনা। ইহাতে কোন সন্দেহ নেই। ইহা রব্বুল আলামীনের তথা সমগ্র মহাবিশ্বের রবের পক্ষ থেকে (নাযিলকৃত)।

১০:৩৮
আম = নাকি। ইয়াক্বূলূনাফতারাহু = তারা বলে যে, সে-ই (= মুহাম্মাদই) ইহা রচনা করেছে। ক্বুল = বলো। ফা’তূ = তাহলে তোমরা আনো। বিসূরাতিন = একটি সূরা। মিছলিহী = উহার অনুরূপ। ওয়াদঊ = আর এজন্য তোমরা আহবান করো। মানিছতাতা’তুম = যাদেরকে তোমরা (আহবান করতে) পার। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সত্যবাদী।

নাকি তারা বলে যে, সে-ই (= মুহাম্মাদই) ইহা রচনা করেছে। বলো, ‘তাহলে তোমরা আনো একটি সূরা উহার অনুরূপ। আর এজন্য তোমরা আহবান করো যাদেরকে তোমরা (আহবান করতে) পার আল্লাহকে বাদ দিয়ে। যদি তোমরা হও সত্যবাদী’।

১০:৩৯
বাল = বরং। কাযযাবূ = তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিমা = ঐ ব্যাপারে যা। লাম ইউহীতূ = তারা আয়ত্ত করতে পারেনি। বিইলমিহী = তাদের নিজ জ্ঞানে। ওয়া = আর। লাম্মা = এখন পর্যন্ত। ইয়া’তিহিম = তাদের কাছে আসেনি। তা’ভিলুহু = যার তাভীল/ সূক্ষ্ম তাৎপর্য ও পরিণতি। কাযালিকা = এভাবেই। কাযযাবাল্লাযীনা = তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যারা। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে ছিলো। ফানযুর = সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুয যালিমীনা = যালিমদের পরিণতি।

বরং তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে ঐ ব্যাপারে যা তারা আয়ত্ত করতে পারেনি তাদের নিজ জ্ঞানে আর এখন পর্যন্ত তাদের কাছে আসেনি যার তাভীল/ সূক্ষ্ম তাৎপর্য ও পরিণতি। এভাবেই তারাও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যারা তাদের আগে ছিলো। সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো যালিমদের পরিণতি।

১০:৪০
ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। ইউ’মিনু বিহী = ঈমান/ বিশ্বাস করবে উহার প্রতি। ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। লা ইউ’মিনু বিহী = ঈমান/ বিশ্বাস করবে না উহার প্রতি। ওয়া = আর। রব্বুকা = তোমার রব। আ’লামু বিল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের ব্যাপারে জানেন।

আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ঈমান/ বিশ্বাস করবে উহার প্রতি। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ঈমান/ বিশ্বাস করবে না উহার প্রতি। আর তোমার রব ফাসাদকারীদের ব্যাপারে জানেন।

১০:৪১
ওয়া = আর। ইন = যদি। কাযযাবূকা = তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। ফাক্বুল = তাহলে বলো। লী = আমার জন্য। আমালী = আমার আমল/ কাজ। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য। আমালাকুম = তোমাদের আমল/ কাজ। আনতুম = তোমরা। বারীঊনা = দায়মুক্ত। মিম্মা = তা থেকে যা। আ’মালু = আমি আমল করি। ওয়া = আর। আনা = আমি। বারীউন = দায়মুক্ত। মিম্মা = তা থেকে যা। তা’মালূনা = তোমরা আমল করো।

আর যদি তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তাহলে বলো, ‘আমার জন্য আমার আমল/ কাজ। আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল/ কাজ। তোমরা দায়মুক্ত তা থেকে যা আমি আমল করি। আর আমি দায়মুক্ত তা থেকে যা তোমরা আমল করো।

১০:৪২
ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। ইয়াছতামিঊনা = কান পেতে রাখে। ইলাইকা = তোমার দিকে। আফাআনতা = তবে কি তুমি। তুছমিউস সুম্মু = বধিরদেরকে শুনাবে। ওয়ালাও = যদিও। কানূ লা ইয়া’ক্বিলূনা = তারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ না করে?

আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ কান পেতে রাখে তোমার দিকে। তবে কি তুমি বধিরদেরকে শুনাবে যদিও তারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ না করে?

১০:৪৩
ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। ইয়ানযুরু = নজর/ লক্ষ্য করে। ইলাইকা = তোমার দিকে। আফাআনতা = তবে কি তুমি। তাহদিল উমইয়া = অন্ধদেরকে পথ দেখাবে। ওয়ালাও = যদিও। কানূ লা ইউবসিরূনা = তারা না দেখে?

আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ নজর/ লক্ষ্য করে তোমার দিকে। তবে কি তুমি অন্ধদেরকে পথ দেখাবে যদিও তারা না দেখে?

১০:৪৪
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াযলিমুন্নাছা = মানুষকে যুলুম করেন না। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়ালাকিন্নান্নাছা = কিন্তু মানুষই। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদের উপর। ইয়াযলিমূনা = যুলুম করে।

নিশ্চয় আল্লাহ মানুষকে যুলুম করেন না, কিছুমাত্রও। কিন্তু মানুষই তাদের নিজেদের উপর যুলুম করে।

১০:৪৫
ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন। ইয়াহশুরুহুম = তাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে। কাআন = সেদিন তারা ভাববে যেন। লাম ইয়ালবাছূ = তারা অবস্থান করেনি। ইল্লা ছাআতিন মিনান্নাহারি = দিনের মধ্যকার মাত্র একঘন্টা ছাড়া। ইয়াতাআরাফূনা বায়নাহুম = তারা তাদের মধ্যকার একজনকে অন্যজন চিনতে পারবে। ক্বাদ = নিশ্চয়। খাছিরাল্লাযীনা = তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিলিক্বায়িল্লাহি = আল্লাহর সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের ব্যাপারটি। ওয়া = আর। মা কানূ মুহতাদীনা = তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিলো না।

আর যেদিন তাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে, সেদিন তারা ভাববে যেন তারা অবস্থান করেনি দিনের মধ্যকার মাত্র একঘন্টা ছাড়া। তারা তাদের মধ্যকার একজনকে অন্যজন চিনতে পারবে। নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আল্লাহর সাথে (পর্দার আড়াল থেকে) মোলাকাতের ব্যাপারটি। আর তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত ছিলো না।

১০:৪৬
ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। নুরিয়ান্নাকা = আমরা তোমাকে দেখাই। বা’দাল্লাযী = উহার কিছু অংশ যার ক্ষেত্রে। নায়িদুহুম = আমরা তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছি। আও = অথবা। নাতাওয়াফফাইয়ান্নাকা = (তার আগেই) আমরা তোমাকে ওফাত/ মৃত্যু দিই। ফাইলাইনা = তবুও আমাদেরই দিকে। মারজিউহুম = তাদের ফিরে আসার স্থান। ছুম্মাল্লাহু = তাছাড়া আল্লাহই। সাহীদুন = সাক্ষী আছেন। আলা মা ইয়াফআলূনা = তারা যা করে তার ব্যাপারে।

আর যদি আমরা তোমাকে দেখাই উহার কিছু অংশ যার ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছি অথবা (তার আগেই) আমরা তোমাকে ওফাত/ মৃত্যু দিই। তবুও আমাদেরই দিকে তাদের ফিরে আসার স্থান। তাছাড়া আল্লাহই সাক্ষী আছেন তারা যা করে তার ব্যাপারে।

১০:৪৭
ওয়ালিকুল্লি উম্মাতিন = আর প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই আছে। রসূলুন = একজন রসূল। ফাইযা = তারপর যখন। জাআ = এসেছে। রসূলুহুম = তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূল। ক্বুদিয়া = তখন ফায়সালা করে দেয়া হয়েছে। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। বিলক্বিসতি = ন্যায়বিচারের সাথে। ওয়া = আর। হুম = তাদের উপর। লা ইউযলামূনা = কোন জুলুম করা হয়নি।

আর প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই আছে একজন রসূল। তারপর যখন এসেছে তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূল, তখন ফায়সালা করে দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচারের সাথে। আর তাদের উপর কোন জুলুম করা হয়নি।

১০:৪৮
ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। মাতা = কবে বাস্তবায়িত হবে। হাযাল ওয়া’দু = এই ধমক। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সত্যবাদী।

আর তারা বলে, ‘কবে বাস্তবায়িত হবে এই ধমক, যদি তোমরা হও সত্যবাদী?’

১০:৪৯
ক্বুল = বলো। লা আমলিকু = না আমি ক্ষমতা রাখি। লিনাফসী = আমার নিজের ব্যাপারেও। দররান = কোন অপকার করার। ওয়া = আর। লা নাফআন = না কোন উপকার করার। ইল্লা মা শাআল্লাহু = আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। লিকুল্লি উম্মাতিন আজালুন = প্রত্যেক উম্মাতের জন্য আছে আজাল/ অবকাশের শেষ সময়সীমা। ইযা = যখন। জাআ = এসে যায়। আজালুহুম = তাদের আজাল/ অবকাশের শেষ সময়সীমা। ফালা ইয়াছতা’খিরূনা ছাআতান = তখন তারা উহা বিলম্বিত করতে পারে না এক মুহুর্তও। ওয়া লা ইয়াছতাক্বদিমূনা = আর তারা উহাকে ত্বরান্বিতও করতে পারে না।

বলো, ‘না আমি ক্ষমতা রাখি আমার নিজের ব্যাপারেও কোন অপকার করার আর না কোন উপকার করার, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। প্রত্যেক উম্মাতের জন্য আছে আজাল/ অবকাশের শেষ সময়সীমা। যখন এসে যায় তাদের আজাল/ অবকাশের শেষ সময়সীমা, তখন তারা উহা বিলম্বিত করতে পারে না এক মুহুর্তও। আর তারা উহাকে ত্বরান্বিতও করতে পারে না’।

১০:৫০
ক্বুল = বলো। আরাআইতুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। ইন = যদি। আতাকুম = তোমাদের উপর আসে। আযাবুহু = তাঁর আযাব/ শাস্তি। বায়াতান = রাতে। আও = অথবা। নাহারান = দিনে। মা যা = তবে কী ব্যাপার যে। ইয়াছতা’যিলু = তাড়াহুড়া করতে চায়। মিনহুল মুজরিমূনা = উহার ক্ষেত্রে অপরাধীরা?

বলো, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো (কেমন হবে) যদি তোমাদের উপর আসে তাঁর আযাব/ শাস্তি রাতে অথবা দিনে?’ তবে কী ব্যাপার যে, তাড়াহুড়া করতে চায় উহার ক্ষেত্রে অপরাধীরা?

১০:৫১
আছুম্মা = তবে কি পরে। ইযা = যখন। মা = তা। ওয়াক্বাআ = আপতিত হবে। আমানতুম = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবে। বিহী = উহার প্রতি? আলআনা = এখন? ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। কুনতুম বিহী তাছতা’জিলূনা = তোমরা উহাকে ত্বরান্বিত করতে চাইতে।

তবে কি পরে যখন তা আপতিত হবে তখন তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবে উহার প্রতি? এখন? অথচ নিশ্চয় তোমরা উহাকে ত্বরান্বিত করতে চাইতে।

১০:৫২
ছুম্মা = তারপর (হাশর দিবসে)। ক্বীলাল্লাযীনা = তাদেরকে বলা হবে যারা। যলামূ = যুলুম করেছিলো। যূক্বূ = তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো। আযাবাল খুলদি = আযাবুল খুলদের/ স্থায়ী শাস্তির। হাল তুজযাওনা = তোমাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে। ইল্লা বিমা = ঐরূপ ছাড়া। কুনতুম তাছতাকছিবূনা = যেরূপ কর্মফল তোমরা উপার্জন করছিলে।

তারপর (হাশর দিবসে) তাদেরকে বলা হবে যারা যুলুম করেছিলো, ‘তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো আযাবুল খুলদের/ স্থায়ী শাস্তির। তোমাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে ঐরূপ ছাড়া যেরূপ কর্মফল তোমরা উপার্জন করছিলে?

১০:৫৩
ওয়া = আর। ইয়াছতামবিঊনাকা = তারা তোমার কাছে জানতে চায়। আহাক্বক্বুন হুয়া = উহা কি সত্য? ক্বুল = বলো। ঈ = হ্যাঁ। ওয়া রব্বী = আমার রবের কসম। ইন্নাহু লাহাক্বক্বু = নিশ্চয় উহা সত্য। ওয়া = আর। মা আনতুম বিমু’জিযীনা = তোমরা উহাকে ঠেকাতে পারবে না।

আর তারা তোমার কাছে জানতে চায়, ‘উহা কি সত্য?’ বলো, ‘হ্যাঁ। আমার রবের কসম, নিশ্চয় উহা সত্য। আর তোমরা উহাকে ঠেকাতে পারবে না’।

১০:৫৪
ওয়া = আর। লাও আন্না = যদি হতো। লিকুল্লি নাফসিন যলামাত = প্রত্যেক যুলুমকারী ব্যক্তির জন্য। মা ফিল আরদি = যা আছে পৃথিবীতে তার সবই। লাফতাদাত বিহী = তবে নিশ্চয় সে উহা ফিদইয়াস্বরূপ/ মুক্তিপণস্বরূপ দিয়ে দিতো। ওয়া = আর। আছাররুন নাদামাতা = তারা গোপনে করতে থাকবে অনুতাপ। লাম্মা = যখন। রআহুল আযাবা = তারা দেখবে আযাব/ শাস্তি। ওয়া = আর। ক্বুদিয়া = ফায়সালা করে দেয়া হবে। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। বিল ক্বিসতি = ন্যায়বিচারের সাথে। ওয়া = আর। হুম = তাদের উপর। লা ইউযলামূনা = কোন যুলুম করা হবে না।

আর যদি হতো প্রত্যেক যুলুমকারী ব্যক্তির জন্য যা আছে পৃথিবীতে তার সবই, তবে নিশ্চয় সে উহা ফিদইয়াস্বরূপ/ মুক্তিপণস্বরূপ দিয়ে দিতো। আর তারা গোপনে করতে থাকবে অনুতাপ যখন তারা দেখবে আযাব/ শাস্তি। আর ফায়সালা করে দেয়া হবে তাদের মধ্যে ন্যায়বিচারের সাথে। আর তাদের উপর কোন যুলুম করা হবে না।

১০:৫৫
আলা = জেনে রাখো। ইন্না = নিশ্চয়। ওয়া’দাল্লাহি = আল্লাহর ওয়াদা। হাক্বক্বুন = সত্য। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = জ্ঞান রাখে না।

জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জ্ঞান রাখে না।

১০:৫৬
হুয়া = তিনিই। ইউহঈ = জীবন দেন। ওয়া = আর। ইউমীতু = মৃত্যু দেন। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই কাছে। তুরজাঊনা = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

তিনিই জীবন দেন আর মৃত্যু দেন আর তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

১০:৫৭
ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে মানুষ। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআতকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। মাওয়িযাতুন = মাওয়িজা/ ওয়াজ/ উপদেশ। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। শিফাউল লিমা ফিস সুদূরি = উহার শিফা/ আরোগ্য যা তোমাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে আছে। ওয়া = আর। হুদান = হুদা/ হিদায়াত। ওয়া = আর। রহমাতাল্লিল মুত্তাকীনা = রহমত/ দয়া, মুত্তাকীদের জন্য।

হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে মাওয়িজা/ ওয়াজ/ উপদেশ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, আর উহার শিফা/ আরোগ্য যা তোমাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে আছে, আর হুদা/ হিদায়াত আর রহমত/ দয়া, মুত্তাকীদের জন্য।

১০:৫৮
ক্বুল = বলো। বিফাদলিল্লাহি = (ইহা এসেছে) আল্লাহর ফযলে/ অনুগ্রহে। ওয়া = আর। বিরহমাতিহী = তাঁর রহমতে/ দয়ায়। ফাবিযালিকা = সুতরাং উহার জন্য। ফালইয়াফরাহূ = তারা আনন্দিত হওয়া উচিত। হুয়া = উহা। খায়রুম মিম্মা ইয়াজমাঊনা = তার চেয়ে কল্যাণকর যা তারা জমা করে।

বলো, ‘(ইহা এসেছে) আল্লাহর ফযলে/ অনুগ্রহে আর তাঁর রহমতে/ দয়ায়’। সুতরাং উহার জন্য তারা আনন্দিত হওয়া উচিত। উহা তার চেয়ে কল্যাণকর যা তারা জমা করে।

১০:৫৯
ক্বুল = বলো। আরাআইতুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। মা আনযালাল্লাহু = উহার ব্যাপারে যা নাযিল/ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ। লাকুম = তোমাদের জন্য। মির রিজকিন = রিজিকস্বরূপ। ফাজাআলতুম = তারপর তোমরা বানিয়েছো। মিনহু = তার মধ্য থেকে। হারামান = কিছুকে হারাম/ অবৈধ। ওয়া = আর। হালালান = কিছুকে হালাল/ বৈধ। ক্বুল = বলো। আল্লাহু = আল্লাহ কি। আযিনা = অনুমতি দিয়েছেন। লাকুম = তোমাদেরকে। আম = নাকি। আলাল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে। তাফতারূনা = তোমরা মিথ্যা রচনা করছো?

বলো, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো উহার ব্যাপারে যা নাযিল/ সৃষ্টি করেছেন আল্লাহ তোমাদের জন্য রিজিকস্বরূপ। তারপর তোমরা বানিয়েছো তার মধ্য থেকে কিছুকে হারাম/ অবৈধ আর কিছুকে হালাল/ বৈধ?’ বলো, ‘আল্লাহ কি অনুমতি দিয়েছেন তোমাদেরকে নাকি আল্লাহর ব্যাপারে তোমরা মিথ্যা রচনা করছো?’

১০:৬০
ওয়া = আর। মা যন্নুল্লাযীনা = তারা কী ধারণা করে যারা। ইয়াফতারূনা আলাল্লাহি কাযিবা = আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = কিয়ামাতের দিবস সম্পর্কে (তাদের ধারণা কী?) ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাযূফাদলিন আলান্নাছি = মানুষের উপর অনুগ্রহশীল। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়াশকুরূনা = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

আর তারা কী ধারণা করে যারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা আরোপ করে কিয়ামাতের দিবস সম্পর্কে (তাদের ধারণা কী?) নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের উপর অনুগ্রহশীল। কিন্তু তাদের অধিকাংশই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

১০:৬১
ওয়া = আর। মা তাকূনু = তুমি থাকো না। ফী শা’নিন = কোন অবস্থায়। ওয়া = আর। মা তাতলূ = তুমি তিলাওয়াত/ পাঠ করো না। মিনহু মিন ক্বুরআনিন = কুরআন থেকে কোন কিছু। ওয়া = আর। লা তা’লামূ মিন আমালিন = তোমরা কোন কাজ করো না। ইল্লা = এছাড়া যে। কুন্না = আমরা থাকি। আলাইকুম = তোমাদের ব্যাপারে। সুহূদান = সাক্ষী। ইয = যখন। তুফীদূনা ফীহি = তোমরা উহাতে প্রবৃত্ত হও। ওয়া = আর। মা ইয়া’যুবু = না গোপন থাকে। আর রব্বিকা = তোমার রবের থেকে। মিম মিছক্বালি যাররাতিন = পরমাণু পরিমাণ বিষয়ও। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া লা ফিস সামাওয়াতি = আর না আকাশে। ওয়া লা আসগারা মিন যালিকা = আর না আছে উহার চেয়ে ছোট বিষয়। ওয়া লা আকবারা = আর না আছে বড় বিষয়। ইল্লা ফী কিতাবিম মুবীন = এছাড়া যে, তা আছে ‘কিতাবুম মুবীনে’/ ‘সুস্পষ্ট কিতাবে’ লিপিবদ্ধ।

আর তুমি থাকো না কোন অবস্থায় আর তুমি তিলাওয়াত/ পাঠ করো না কুরআন থেকে কোন কিছু আর তোমরা কোন কাজ করো না, এছাড়া যে, আমরা থাকি তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষী, যখন তোমরা উহাতে প্রবৃত্ত হও (= তুমি যে অবস্থায় থাক আর কুরআন থেকে যা পাঠ কর আর তোমরা যা কিছু কর এ সব ব্যাপারে আমরা সাক্ষী থাকি)। আর না গোপন থাকে তোমার রবের থেকে পরমাণু পরিমাণ বিষয়ও পৃথিবীতে আর না আকাশে। আর না আছে উহার চেয়ে ছোট বিষয় আর না আছে বড় বিষয়, এছাড়া যে, তা আছে ‘কিতাবুম মুবীনে’/ ‘সুস্পষ্ট কিতাবে’ লিপিবদ্ধ।

১০:৬২ এর
আলা = জেনে রাখো। ইন্না = নিশ্চয়। আওলিয়াআল্লাহি = যারা আল্লাহর আওলিয়া/ প্রিয় বান্দা। লা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহযানূনা = দু:খিত হবে।

জেনে রাখো নিশ্চয় যারা আল্লাহর আওলিয়া/ প্রিয় বান্দা, তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে।

১০:৬৩
আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। কানূ ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে।

যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর তাকওয়া/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে।

১০:৬৪
লাহুমুল বুশরা = তাদের জন্যই সুসংবাদ। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। লা তাবদীলা লিকালিমাতিল্লাহি = আল্লাহর কালেমাতের/ বাণীসমূহের পরিবর্তন নেই। যালিকা হুয়াল ফাওযুল আযীমু = উহাই মহাসফলতা।

তাদের জন্যই সুসংবাদ হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে আর আখিরাতে। আল্লাহর কালেমাতের/ বাণীসমূহের পরিবর্তন নেই। উহাই মহাসফলতা।

১০:৬৫
ওয়া = আর। লা ইয়াহযুনকা = তোমাকে যেন দু:খ না দেয়। ক্বাওলুহুম = তাদের কওল/ কথাবার্তা/ বক্তব্য। ইন্নাল ইযযাতা লিল্লাহি জামীয়া = নিশ্চয় সমস্ত ইজ্জত/ সম্মান আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। হুয়াছ ছামীউল আলীমু = তিনিই ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা।

আর তোমাকে যেন দু:খ না দেয় তাদের কওল/ কথাবার্তা/ বক্তব্য। নিশ্চয় সমস্ত ইজ্জত/ সম্মান আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। তিনিই ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা।

১০:৬৬
আলা = জেনে রাখো। ইন্না = নিশ্চয়। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মান = যারা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মান = যারা আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। মা ইয়াত্তাবিউল্লাযীনা = তারা কার বা কিসের ইত্তেবা/ অনুসরণ করে? যারা। ইয়াদঊনা মিন দূনিল্লাহি শুরাকাআ = দোয়া করে আল্লাহর কাছে বাদ দিয়ে (তাদের কল্পিত) শরিকদেরকে। ইইঁ ইয়াত্তাবিঊনা = তারা কিছুরই ইত্তেবা/ অনুসরণ করে না। ইল্লায যন্না = অনুমানের ছাড়া। ওয়া = আর। ইন হুম = তারা কিছুই করে না। ইল্লা ইয়াখরুসূনা = জল্পনা কল্পনা করা ছাড়া।

জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যারা আছে আকাশমন্ডলীতে আর যারা আছে পৃথিবীতে। আর তারা কার বা কিসের ইত্তেবা/ অনুসরণ করে যারা দোয়া করে আল্লাহর কাছে বাদ দিয়ে (তাদের কল্পিত) শরিকদেরকে? তারা কিছুরই ইত্তেবা/ অনুসরণ করে না অনুমানের ছাড়া। আর তারা কিছুই করে না জল্পনা কল্পনা করা ছাড়া।

১০:৬৭
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। জাআলা = বানিয়েছেন। লাকুমুল্লায়লা = তোমাদের জন্য রাতকে। লিতাছকুনূ ফীহি = যেন তোমরা শান্তি পাও উহাতে। ওয়ান্নাহারা = আর দিনকে। মুবসিরান = দেখার যোগ্য। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিল লি ক্বাওমি ইয়াছমাঊনা = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ, সেই কওমের জন্য যারা শুনে।

তিনিই সেই সত্তা যিনি বানিয়েছেন তোমাদের জন্য রাতকে যেন তোমরা শান্তি পাও উহাতে আর দিনকে (বানিয়েছেন) দেখার যোগ্য। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ, সেই কওমের জন্য যারা শুনে।

১০:৬৮
ক্বলুত্তাখাজাল্লাহু ওয়ালাদান = তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। ছুবহানাহু = সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। হুয়াল গানিয়্যু = তিনি গনি/অভাবমুক্ত। লাহু = তাঁরই অধিকারভুক্ত। মা = যা কিছু আছে। ফিস সামাওয়াতি = আকাশমন্ডলীতে। ওয়া = আর। মা = যা কিছু আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ইন ইনদাকুম = তোমাদের কাছে নেই। মিন ছুলতানিন = কোন সুলতান/ প্রমাণ। বিহাযা = (তোমাদের) এই দাবীর ব্যাপারে (= ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’ দাবীর পক্ষে)। আতাক্বূলূনা = তোমরা কি বলছো। আলাল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে। মা লা তা’লামূনা = যা (সত্য কিনা তা) তোমরা জানো না।

তারা বলে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। তিনি গনি/অভাবমুক্ত। তাঁরই অধিকারভুক্ত যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে আর যা কিছু আছে পৃথিবীতে। তোমাদের কাছে নেই কোন সুলতান/ প্রমাণ, (তোমাদের) এই দাবীর ব্যাপারে (= ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’ দাবীর পক্ষে)। তোমরা কি বলছো আল্লাহর ব্যাপারে (এমন কথা) যা (সত্য কিনা তা) তোমরা জানো না?

১০:৬৯
ক্বুল = বলো। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইয়াফতারূনা আলাল্লাহিল কাযিবা = আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে। লা ইউফলিহূনা = তারা সফলতা লাভ করবে না।

বলো, ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, তারা সফলতা লাভ করবে না।

১০:৭০
মাতাউন ফিদ দুনইয়া = (তাদের জন্য আছে) দুনিয়ার ভোগ সামগ্রী। ছুম্মা = তারপর। ইলাইনা = আমাদেরই কাছে। মারজিউহুম = তাদের ফিরে আসার স্থান। ছুম্মা = তারপর। নুযীক্বুহুমুল আযাবাশ শাদীদা = আমরা তাদেরকে আস্বাদন করাবো আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি। বিমা কানূ ইয়াকফূরূনা = তারা যে কুফর করতো তার কারণে।

(তাদের জন্য আছে) দুনিয়ার ভোগ সামগ্রী। তারপর আমাদেরই কাছে তাদের ফিরে আসার স্থান। তারপর আমরা তাদেরকে আস্বাদন করাবো আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি তারা যে কুফর করতো তার কারণে।

১০:৭১
ওয়াতলূ = আর তিলাওয়াত/ পাঠ করো। আলাইহিম = তাদের কাছে। নাবাআ নূহিন = নূহের সংবাদ। ইয = যখন। ক্বলা = সে বলেছে। লিক্বাওমিহী = তার কওমকে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। ইন = যদি। কানা = হয়ে থাকে। কাবুরা = বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয়। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। মাক্বামী = আমার অবস্থান। ওয়া = আর। তাযকীরী বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের দ্বারা আমার কর্তৃক তোমাদেরকে স্মরণ করানোর কাজ। ফাআলাল্লাহি = তাহলে আল্লাহরই উপর। তাওয়াক্কালতু = আমি তাওয়াক্কুল/ ভরসা করি। ফাআজমিঊ = সুতরাং তোমরা সবাই মিলে সম্পন্ন করো। আমরাকুম = তোমাদের কাজ। ওয়া = আর। শুরাকাআকুম = তোমাদের শরিকদেরকেও সাথে নাও। ছুম্মা = তারপর। লা ইয়াকুন = যেন না হয়। আমরুকুম = তোমাদের কাজ। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। গুম্মাতান = সংশয়পূর্ণ। ছুম্মাক্বদূ = তারপর তোমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো। ইলাইয়া = আমার ব্যাপারে। ওয়া = আর। লা তুনযারূনা = তোমরা আমাকে কোন অবকাশ দিও না।

আর তিলাওয়াত/ পাঠ করো তাদের কাছে নূহের সংবাদ। যখন সে বলেছে তার কওমকে, ‘হে আমার কওম, যদি হয়ে থাকে বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয় তোমাদের কাছে আমার অবস্থান আর আল্লাহর আয়াতসমূহের দ্বারা আমার কর্তৃক তোমাদেরকে স্মরণ করানোর কাজ, তাহলে আল্লাহরই উপর আমি তাওয়াক্কুল/ ভরসা করি। সুতরাং তোমরা সবাই মিলে সম্পন্ন করো তোমাদের কাজ আর তোমাদের শরিকদেরকেও সাথে নাও। তারপর যেন না হয় তোমাদের কাজ তোমাদের কাছে সংশয়পূর্ণ। তারপর তোমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো আমার ব্যাপারে আর তোমরা আমাকে কোন অবকাশ দিও না’।

১০:৭২
ফাইন = তারপরও যদি। তাওয়াল্লায়তুম = তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। ফামা ছাআলতুকুম = তাহলে, আমি তো চাই না তোমাদের কাছে। মিন আজরিন = কোন প্রতিদান/ পারিশ্রমিক। ইন আজরী = আমার প্রতিফল/ পারিশ্রমিক নেই। ইল্লা আলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে। ওয়া = আর। উমিরতু = আমি আদেশ পেয়েছি। আন = যে। আকূনা = আমি হতে হবে। মিনাল মুছলিমীনা = মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপরও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে আমি তো চাই না তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান/ পারিশ্রমিক। আমার প্রতিফল/ পারিশ্রমিক নেই আল্লাহর কাছে ছাড়া অন্য কারো কাছে। আর আমি আদেশ পেয়েছি যে, আমি হতে হবে মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।

১০:৭৩
ফাকাযযাবূহু = তারপর তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। ফানাযযায়নাহু = তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে। ওয়া মাম মাআহু = আর তাদেরকে যারা তার সাথে ছিলো। ফিল ফুলকি = নৌযানে। ওয়া = আর। জাআলনাহুম = আমরা তাদেরকে বানিয়েছি। খালায়িফা = খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। ওয়া = আর। আগরাক্বনাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি যারা। কাযযাবূ বিআয়াতিনা = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে। ফানযুর = সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুনযারীনা = যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিলো (অথচ তারা মানেনি) তাদের অবস্থা।

তারপর তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে আর তাদেরকে যারা তার সাথে ছিলো নৌযানে। আর আমরা তাদেরকে বানিয়েছি খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। আর আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে। সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো যাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিলো (অথচ তারা মানেনি) তাদের অবস্থা।

১০:৭৪
ছুম্মা = তারপর। বাআছনা = আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি। মিম বা’দিহী = তার পরবর্তীতে। রুসুলান = অনেক রসূল। ইলা ক্বাওমিহিম = তাদের কওমসমূহের কাছে। ফাজাআহুম = তখন তারা তাদের কাছে এসেছে। বিল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। ফামা কানূ = কিন্তু তারা ছিলো না। লিইউ’মিনূ = ঈমান/ বিশ্বাস করার। বিমা = ঐ বিষয়ের প্রতি। কাযযাবূ = তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো। বিহী = যার ক্ষেত্রে। মিন কাবলূ = তার আগেই। কাযালিকা = এভাবে। নাতবাউ = আমরা মোহর লাগিয়ে দিই। আলা ক্বুলূবিল মু’তাদীনা = সীমালংঘনকারীদের কলবসমূহের উপর।

তারপর আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি তার পরবর্তীতে অনেক রসূল তাদের কওমসমূহের কাছে। তখন তারা তাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। কিন্তু তারা ছিলো না ঈমান/ বিশ্বাস করার ঐ বিষয়ের প্রতি তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো যার ক্ষেত্রে তার আগেই। এভাবে আমরা মোহর লাগিয়ে দিই সীমালংঘনকারীদের কলবসমূহের উপর।

১০:৭৫
ছুম্মা = তারপর। বাআছনা = আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। মূসা ওয়া হারূনা = মূসাকে ও হারূনকে। ইলা ফিরআওনা ওয়া মালায়িহী = ‘ফেরাউন ও মালায়েহী’র কাছে/ ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদের কাছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে। ফাছতাকবারূ = কিন্তু তারা অহংকার করেছে। ওয়া = আর। কানূ = তারা ছিলো। ক্বাওমাম মুজরিমীনা = অপরাধী কওম।

তারপর আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি তাদের পরে মূসাকে ও হারূনকে ‘ফেরাউন ও মালায়েহী’র কাছে/ ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে। কিন্তু তারা অহংকার করেছে আর তারা ছিলো অপরাধী কওম।

১০:৭৬
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহুমুল হাক্বক্বু = তাদের কাছে এসেছে সত্য। মিন ইনদিনা = আমাদের পক্ষ থেকে। ক্বলূ = তখন তারা বলেছে। ইন্না = নিশ্চয়। হাযা = ইহা। লাছিহরুম মুবীনুন = প্রকাশ্য জাদু/ ভেল্কীবাজি।

তারপর যখন তাদের কাছে এসেছে সত্য আমাদের পক্ষ থেকে, তখন তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় ইহা প্রকাশ্য জাদু/ ভেল্কীবাজি’।

১০:৭৭
ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। আতাক্বূলূনা = তোমরা কি এরূপ কথা বলছো। লিলহাক্বক্বি = সত্যের প্রসঙ্গে? লাম্মা = যখন। জাআকুম = তা তোমাদের কাছে এসে গেছে। আছিহরুন হাযা = ইহা কি যাদু/ ভেল্কিবাজি? ওয়া = অথচ। লা ইউফলিহুছ ছাহিরূনা = যাদুকরগণ/ ভেল্কিবাজগণ সফলতা লাভ করে না।

মূসা বলেছে, ‘তোমরা কি এরূপ কথা বলছো সত্যের প্রসঙ্গে? যখন তা তোমাদের কাছে এসে গেছে? ইহা কি যাদু/ ভেল্কিবাজি? অথচ যাদুকরগণ/ ভেল্কিবাজগণ সফলতা লাভ করে না।

১০:৭৮
ক্বলূ = তারা বলেছে। আজি’তানা = তুমি কি আমাদের কাছে এসেছো। লিতালফিতানা = আমাদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য। আম্মা ওয়াজাদনা আলাইহি = তা থেকে আমরা পেয়েছি যার উপর। আবাআনা = আমাদের বাপদাদাকে। ওয়া = আর। তাকূনা = যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। লাকুমাল কিবরিয়াউ = তোমাদের দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব। ফিল আরদি = এই পৃথিবীতে। ওয়া = আর। মা নাহনু = আমরা নই। লাকুমা = তোমাদের দুজনের প্রতি। বিমু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী।

তারা বলেছে, ‘তুমি কি আমাদের কাছে এসেছো আমাদেরকে সরিয়ে দেয়ার জন্য তা থেকে আমরা পেয়েছি যার উপর আমাদের বাপদাদাকে? আর যেন প্রতিষ্ঠিত হয় তোমাদের দুজনের শ্রেষ্ঠত্ব এই পৃথিবীতে? আর আমরা নই তোমাদের দুজনের প্রতি মু’মিনীন/ বিশ্বাসী’।

১০:৭৯
ওয়া = আর। ক্বলা ফিরআওনু’তূনী = ফেরাউন বলেছে, ‘আমার কাছে নিয়ে এসো। বিকুল্লি ছাহিরিন আলীমিন = প্রত্যেক জ্ঞানী ছাহেরকে/ যাদুকরকে/ ভেল্কিবাজকে।

আর ফেরাউন বলেছে, ‘আমার কাছে নিয়ে এসো প্রত্যেক জ্ঞানী ছাহেরকে/ যাদুকরকে/ ভেল্কিবাজকে’।

১০:৮০
ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআছ ছাহারাতু = ছাহেরগণ/ যাদুকরগণ/ ভেল্কিবাজগণ এসেছে। ক্বলা লাহুম মূসা = তাদের উদ্দেশ্যে মূসা বলেছে। আলক্বূ = তোমরা উপস্থাপন করো। মা = যা। আনতুম = তোমরা। মুলক্বূনা = উপস্থাপন করার মতো আছে।

তারপর যখন ছাহেরগণ/ যাদুকরগণ/ ভেল্কিবাজগণ এসেছে, তাদের উদ্দেশ্যে মূসা বলেছে, ‘তোমরা উপস্থাপন করো যা তোমরা উপস্থাপন করার মতো আছে’।

১০:৮১
ফালাম্মা = তারপর যখন। আলক্বাও = তারা উপস্থাপন করেছে। ক্বলা মূসা = তখন মূসা বলেছে। মা জি’তুম বিহিছ ছিহরুন = যা তোমরা নিয়ে এসেছো তা যাদু/ ভেল্কিবাজি। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছাইউবতিলুহু = শীঘ্রই উহাকে বাতিল করে দিবেন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউসলিহু = সংশোধিত করেন না। আমালাল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের কাজকে।

তারপর যখন তারা উপস্থাপন করেছে, তখন মূসা বলেছে, ‘যা তোমরা নিয়ে এসেছো তা যাদু/ ভেল্কিবাজি। নিশ্চয় আল্লাহ শীঘ্রই উহাকে বাতিল করে দিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সংশোধিত করেন না ফাসাদকারীদের কাজকে’।

১০:৮২
ওয়া = আর। হিক্বক্বুল্লাহুল হাক্বক্বা = আল্লাহ সত্যকে সত্য হিসাবে প্রমাণিত করেন। বিকালিমাতিহী = তাঁর কালেমাত/ বাণীসমূহ দ্বারা। ওয়ালাও = যদিও। কারিহাল মুজরিমূনা = অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।

আর আল্লাহ সত্যকে সত্য হিসাবে প্রমাণিত করেন তাঁর কালেমাত/ বাণীসমূহ দ্বারা, যদিও অপরাধীরা তা অপছন্দ করে।

১০:৮৩
ফামা আমানা = তারপরও ঈমান/ বিশ্বাস করেনি। লিমূসা = মূসার প্রতি। ইল্লা যুররিয়াতাম মিন ক্বাওমিহী = তার কওমের কিছু যুররিয়াত/ তরুণ প্রজন্ম (young generation) ছাড়া। আলা জাওফিম মিন ফিরআউনা ওয়া মালায়িহিম = ফেরাউন ও মালায়েহিমদের/ ফেরাউন ও তাদের নির্বাহী পরিষদের ভয়ে। আইঁ ইয়াফতিনাহুম = তারা ফেতনা/ নির্যাতন করবে বলে। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। ফিরআউনা = ফেরাউন ছিলো। লাআলিন ফিল আরদি = পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী। ওয়া = আর। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে ছিলো। লামিনাল মুছরিফীনা = সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপরও ঈমান/ বিশ্বাস করেনি মূসার প্রতি তার কওমের কিছু যুররিয়াত/ তরুণ প্রজন্ম (young generation) ছাড়া ফেরাউন ও মালায়েহিমদের/ ফেরাউন ও তাদের নির্বাহী পরিষদের ভয়ে, তারা ফেতনা/ নির্যাতন করবে বলে। আর নিশ্চয় ফেরাউন ছিলো পৃথিবীতে স্বেচ্ছাচারী। আর নিশ্চয় সে ছিলো সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

১০:৮৪
ওয়া = আর। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। আমানতুম = ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ফাআলাইহি = তাহলে তাঁরই উপর। তাওয়াক্কালূ = তোমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মুসলিমীনা = মুসলিমীন।

আর মূসা বলেছে, ‘হে আমার কওম, যদি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো আল্লাহর প্রতি, তাহলে তাঁরই উপর তোমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো, যদি তোমরা হও মুসলিমীন’।

১০:৮৫
ফাক্বলূ = তখন তারা (new generation) বলেছে। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। তাওয়াক্কালনা = আমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করছি। রব্বানা = আমাদের রব। লা তাজআলনা = আমাদেরকে বানাবেন না। ফিতনাতুন = ফিতনা/ পরীক্ষার মাধ্যম/ নির্যাতনের পাত্র। লিল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিম কওমের।

তখন তারা (new generation) বলেছে, ‘আল্লাহরই উপর আমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করছি। আমাদের রব, আমাদেরকে বানাবেন না ফিতনা/ পরীক্ষার মাধ্যম/ নির্যাতনের পাত্র, যালিম কওমের।

১০:৮৬ আয়াতের শব্দার্থ : ওয়া = আর। নাজজিনা = আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিন। বিরাহমাতিকা = আপনার রহমতে। মিনাল ক্বাওমিল কাফিরীনা = কাফির কওমের (নির্যাতন) থেকে।

আর আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিন আপনার রহমতে, কাফির কওমের (নির্যাতন) থেকে’।

১০:৮৭
ওয়া = আর। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা মূসা ওয়া আখীহি = মূসাকে ও তার ভাইকে। আন = এই যে। তাবাওয়াআ = তোমরা দুজনে স্থাপন করো। লিক্বাওমিকুমা = তোমাদের দুজনের কওমের জন্য। বিমিসরা = মিশরে। বুয়ুতান = কয়েকটি ঘর। ওয়াজআলূ = আর তোমরা বানাও। বুয়ূতাকুম = তোমাদের ঘরসমূহকে। ক্বিবলাতান = কেবলা/ (উপ)রাজধানী। ওয়া = আর। আক্বিমুস সালাতা = তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া = আর। বাশশিরিল মু’মিনীনা = সুসংবাদ দাও মু’মিনদেরকে।

আর আমরা ওহী করেছি মূসাকে ও তার ভাইকে এই যে, ‘তোমরা দুজনে স্থাপন করো তোমাদের দুজনের কওমের জন্য মিশরে কয়েকটি ঘর। আর তোমরা বানাও তোমাদের ঘরসমূহকে কেবলা/ (উপ)রাজধানী। আর তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। আর সুসংবাদ দাও মু’মিনদেরকে’।

১০:৮৮
ওয়া = আর। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। আতাইতা = দিয়েছেন। ফিরআউনা ওয়া মালাআহূ = ফেরাউন ও মালায়েহীকে/ ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদকে। যীনাতান = চাকচিক্য। ওয়া = আর। আমওয়ালান = মালসম্পদ। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। রব্বানা = হে আমদের রব। লিইউদিল্লূ = (তা কি) এজন্য যে, তারা বিভ্রান্ত করবে। আন ছাবীলিকা = আপনার পথ থেকে। রব্বানাতমিছ = হে আমাদের রব, বিনষ্ট করুন। আলা আমওয়ালিহিম = তাদের মালসম্পদকে। ওয়াশদুদ = আর কঠিন করুন (মোহর লাগিয়ে দিন)। ক্বুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহকে। ফালা ইউ’মিনূ = যেন না তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়ারাউল আযাবাল আলীমা = তারা দেখে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

আর মূসা বলেছে, ‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আপনি দিয়েছেন ফেরাউন ও মালায়েহীকে/ ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদকে চাকচিক্য আর মালসম্পদ হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। হে আমদের রব, (তা কি) এজন্য যে, তারা বিভ্রান্ত করবে আপনার পথ থেকে? হে আমাদের রব, বিনষ্ট করুন তাদের মালসম্পদকে আর কঠিন করুন (মোহর লাগিয়ে দিন) তাদের কলবসমূহকে যেন না তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে যতক্ষণ না তারা দেখে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি’।

১০:৮৯
ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। ক্বাদ = নিশ্চয়। উজীবাত = কবুল করা হয়েছে। দা’ওয়াতুকুমা = তোমাদের দুজনের দোয়া। ফাছতাক্বীমা = সুতরাং তোমরা দুজন কায়েম/ সুপ্রতিষ্ঠিত থাকো। ওয়ালা তাত্তাবিয়ান্নি = আর তোমরা দুজন ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। ছাবীলাল্লাযীনা = তাদের পথ যারা। লা ইয়া’লামূনা = (আসমানী কিতাবের) এলেম/ জ্ঞান রাখে না।

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কবুল করা হয়েছে তোমাদের দুজনের দোয়া। সুতরাং তোমরা দুজন কায়েম/ সুপ্রতিষ্ঠিত থাকো। আর তোমরা দুজন ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না তাদের পথ যারা (আসমানী কিতাবের) এলেম/ জ্ঞান রাখে না’।

১০:৯০
ওয়া = আর। জাওয়াযনা = আমরা পার করিয়েছি। বিবানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলকে। আল বাহরা = জলাশয়টি। ফাআতবাআহুম = তখন তাদেরকে পশ্চাদ্ধাবন করেছে। ফিরআউনু ওয়া জুনূদুহু = ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী। বাগইয়ান ওয়া আদওয়ান = সীমালংঘন ও শত্রুতাবশত। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আদরাকাহুল গারাক্বু = সে ডুবে যাচ্ছিলো। ক্বলা = তখন সে বললো। আমানতু = আমি ঈমান/ বিশ্বাস করলাম। আন্নাহু = এই যে। লা ইলাহা = কোন ইলাহ নেই। ইল্লাল্লাযীনা আমানাত বিহী = তিনি ছাড়া যাঁর প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বানূ ইসরাঈলা = বানী ইসরাইল। ওয়া = আর। আনা = আমি। মিনাল মুসলিমীনা = মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।

আর আমরা পার করিয়েছি বানী ইসরাইলকে জলাশয়টি। তখন তাদেরকে পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, সীমালংঘন ও শত্রুতাবশত। শেষ পর্যন্ত যখন সে ডুবে যাচ্ছিলো, তখন সে বললো, ‘আমি ঈমান/ বিশ্বাস করলাম এই যে, কোন ইলাহ নেই তিনি ছাড়া যাঁর প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করেছে বানী ইসরাইল, আর আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।

১০:৯১
আলআনা = এখন? ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। আসাইতা ক্বাবলু = আগে তুমি অমান্য করেছো। ওয়া = আর। কুনতা = তুমি ছিলে। মিনাল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

এখন? অথচ নিশ্চয় আগে তুমি অমান্য করেছো আর তুমি ছিলে ফাসাদকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

১০:৯২
ফালইয়াওমা = সুতরাং আজ। নুনাজজীকা বিবাদানিকা = আমরা তোমার বদনকে/ শরীরকে/ লাশকে রক্ষা করবো। লিতাকূনা = যেন তুমি হও। লিমান খালফাকা = তোমার পরবর্তীদের জন্য। আয়াতান = একটি আয়াত/ নিদর্শন। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। কাছীরাম মিনান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। আন আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে। লাগাফিলূনা = গাফেল/ উদাসীন।

সুতরাং আজ আমরা তোমার বদনকে/ শরীরকে/ লাশকে রক্ষা করবো, যেন তুমি হও তোমার পরবর্তীদের জন্য একটি আয়াত/ নিদর্শন। আর নিশ্চয় অধিকাংশ মানুষ আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে গাফেল/ উদাসীন।

১০:৯৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। বাওয়া’না = আমরা বসবাস করিয়েছি। বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলকে। মুবাওয়াআ সিদক্বিন = উত্তম আবাসভূমিতে। ওয়া = আর। রযাক্বনাহুম = আমরা তাদের রিযিক দিয়েছি। মিনাত তইয়িবাতি = তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে। ফামাখতালাফূ = তাছাড়া তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেনি। হাত্তা = যতক্ষণ না। জাআহুমুল ইলমু = তাদের কাছে (আসমানী কিতাবের) এলেম/ জ্ঞান এসেছে (= তাদের মতপার্থক্য অজ্ঞতাবশত ছিলো না)। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। ইয়াক্বদী = ফায়সালা করে দেবেন। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ফীমা = ঐ বিষয়ে। কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূনা = যার ক্ষেত্রে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করতো।

আর নিশ্চয় আমরা বসবাস করিয়েছি বানী ইসরাইলকে উত্তম আবাসভূমিতে আর আমরা তাদের রিযিক দিয়েছি তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহ থেকে। তাছাড়া তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেনি যতক্ষণ না তাদের কাছে (আসমানী কিতাবের) এলেম/ জ্ঞান এসেছে (= তাদের মতপার্থক্য অজ্ঞতাবশত ছিলো না)। নিশ্চয় তোমার রব ফায়সালা করে দেবেন তাদের মধ্যে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে ঐ বিষয়ে, যার ক্ষেত্রে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করতো।

১০:৯৪
ফাইন = তারপর যদি। কুনতা = তুমি থাকো। ফী শাককিন = সন্দেহের মধ্যে। মিম্মা = সে ব্যাপারে যা। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ফাছআলিল্লাযীনা = তাহলে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো যারা। ইয়াক্বরাউনাল কিতাবা = কিতাব পাঠ করে। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগে। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকাল হাক্বক্বু = তোমার কাছে এসেছে সত্য। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। ফালা তাকূনান্না = সুতরাং তুমি হয়ো না। মিনাল মুমতারীনা = সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপর যদি তুমি থাকো সন্দেহের মধ্যে সে ব্যাপারে যা আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি, তাহলে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো যারা কিতাব পাঠ করে তোমার আগে (= কিতাব বহনকারী ফেরেশতা অথবা আহলে কিতাব)। নিশ্চয় তোমার কাছে এসেছে সত্য, তোমার রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং তুমি হয়ো না সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

১০:৯৫
ওয়া = আর। লা তাকূনান্না = তুমি হয়ো না। মিনাল্লাযীনা = তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা। কাযযাবূ বিআয়াতিল্লাহি = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আল্লাহর আয়াতসমূহকে। ফাতাকূনা = তা করলে তুমি হয়ে যাবে। মিনাল খাছিরীনা = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
আর তুমি হয়ো না তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আল্লাহর আয়াতসমূহকে। তা করলে তুমি হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

১০:৯৬
ইন্নাল্লাযীনা আলাইহিম = নিশ্চয় যাদের বিপক্ষে। হাক্বক্বাত = যথানিয়মে সত্য হয়েছে। কালিমাতু রব্বিকা = তোমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ/ নির্ধারিত সূত্রসমূহ। লা ইই’মিনূনা = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে না।

নিশ্চয় যাদের বিপক্ষে যথানিয়মে সত্য হয়েছে তোমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ/ নির্ধারিত সূত্রসমূহ, তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে না।

১০:৯৭
ওয়া লাও = যদিও। জাআতহুম = তাদের কাছে আসে। কুল্লু আয়াতিন = সকল আয়াত/ নিদর্শন। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়ারাউল আযাবাল আলীমা = তারা দেখবে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

যদিও তাদের কাছে আসে সকল আয়াত/ নিদর্শন, যতক্ষণ না তারা দেখবে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

১০:৯৮
ফালাও লা কানাত ক্বারইয়াতুন = সুতরাং কেন হলো না কোন জনপদবাসী এমন যে। আমানাত = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো। ফানাফাআহা = তারপর তাদের জন্য উপকারী হতো। ঈমানুহা = তাদের ঈমান। ইল্লা ক্বাওমা ইউনুসা = ইউনুসের কওম ছাড়া। লাম্মা = যখন। আমানূ = তারা (= ইউনুসের কওম) ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। কাশাফনা = আমরা সরিয়ে দিয়েছি। আনহুম = তাদের থেকে। আযাবাল খিযয়ি = অপমানজনক আযাব/ শাস্তি। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। ওয়া = আর। মাত্তা’নাহুম = আমরা তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিয়েছি। ইলা হীনিন = কিছুকাল পর্যন্ত।

সুতরাং কেন হলো না কোন জনপদবাসী এমন যে, তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো তারপর তাদের জন্য উপকারী হতো তাদের ঈমান; ইউনুসের কওম ছাড়া? যখন তারা (= ইউনুসের কওম) ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, তখন আমরা সরিয়ে দিয়েছি তাদের থেকে অপমানজনক আযাব/ শাস্তি হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে; আর আমরা তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিয়েছি কিছুকাল পর্যন্ত।

১০:৯৯
ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআ = ইচ্ছা করতেন। রব্বুকা = তোমার রব। লাআমানা = তাহলে নিশ্চয় ঈমান/ বিশ্বাস করতো। মান = যারা আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। কুল্লুহুম জামীআ = তাদের সকলেই। আফাআনতা = তবে কি তুমি। তুকরিহুন্নাছা = মানুষকে বলপ্রয়োগ করবে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াকূনূ = তারা হয়। মু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী।

আর যদি ইচ্ছা করতেন তোমার রব, তাহলে নিশ্চয় ঈমান/ বিশ্বাস করতো যারা আছে পৃথিবীতে তাদের সকলেই। তবে কি তুমি মানুষকে বলপ্রয়োগ করবে যতক্ষণ না তারা হয় মু’মিনীন/ বিশ্বাসী?

১০:১০০
ওয়া = আর। মা কানা = সম্ভব নয়। লিনাফসিন = কোন ব্যক্তির জন্য। আন তু’মিনা = সে ঈমান/ বিশ্বাস করা। ইল্লা বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর (অতাৎক্ষণিক) অনুমতি (= আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ) ছাড়া। ওয়া = আর। ইয়াজআলুর রিজছা = তিনি চাপিয়ে দেন কলুষতা/ অকল্যাণ। আলাল্লাযীনা = তাদের উপর যারা। লা ইয়া’ক্বিলূনা = আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করে না।

আর সম্ভব নয় কোন ব্যক্তির জন্য সে ঈমান/ বিশ্বাস করা আল্লাহর (অতাৎক্ষণিক) অনুমতি (= আল্লাহর নির্ধারিত নিয়ম অনুসরণ) ছাড়া। আর তিনি চাপিয়ে দেন কলুষতা/ অকল্যাণ তাদের উপর যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করে না।

১০:১০১
ক্বুলিনযুরূ = বলো, ‘তোমরা নজর/ লক্ষ্য করো। মা যা = যা কিছু আছে। ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। ওয়া = আর। মা তুগনিল আয়াতু = ফলপ্রসূ হয় না আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। ওয়ান্নুযুরু = আর সতর্কীকরন। আন ক্বাওমিল লা ইউ’মিনূনা = সেই কওমের ব্যাপারে যারা (আয়াত দেখা ও সতর্কীকরন সত্ত্বেও) ঈমান/ বিশ্বাস করে না।

বলো, ‘তোমরা নজর/ লক্ষ্য করো যা কিছু আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। আর ফলপ্রসূ হয় না আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ আর সতর্কীকরন, সেই কওমের ব্যাপারে যারা (আয়াত দেখা ও সতর্কীকরন সত্ত্বেও) ঈমান/ বিশ্বাস করে না।

১০:১০২
ফাহাল ইয়ানতাযিরূনা = তবে কি তারা অপেক্ষা করছে। ইল্লা মিছলা আইয়ামিল্লাযীনা = এছাড়া যে, (তাদের উপর আসবে) তাদের দিনগুলোর অনুরূপ (খারাপ দিনগুলো) যারা। খালাও = গত হয়ে গেছে। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে। ক্বুল = বলো। ফানতাযিরূ = তোমরা অপেক্ষা করো। ইন্নী = নিশ্চয় আমিও। মাআকুম = তোমাদের সাথে। মিনাল মুনতাযিরীনা = অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলাম।

তবে কি তারা অপেক্ষা করছে এছাড়া যে, (তাদের উপর আসবে) তাদের দিনগুলোর অনুরূপ (খারাপ দিনগুলো) যারা গত হয়ে গেছে তাদের আগে? বলো, ‘তোমরা অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলাম’।

১০:১০৩
ছুম্মা = তারপর। নুনাজযী = আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি। রুসুলানা = আমাদের রসূলদেরকে। ওয়াল্লাযীনা = আর তাদেরকে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। কাযালিকা = এভাবেই। হাক্বক্বান আলাইনা = দায়িত্ব হিসাবে আছে আমাদের উপর। নুনযিল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেয়া।

তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি আমাদের রসূলদেরকে আর তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, এভাবেই। দায়িত্ব হিসাবে আছে আমাদের উপর মু’মিনদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেয়া।

১০:১০৪
ক্বুল = বলো। ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে মানুষ। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা থাকো। ফী শাককিন = সন্দেহের মধ্যে। মিন দ্বীনী = আমার দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে। ফালা আ’বুদুল্লাযীনা = তাহলে জেনে রাখো আমি তাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করি না যাদের। তা’বুদূনা = ইবাদাত/ দাসত্ব তোমরা করো। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ওয়ালাকিন = কিন্তু। আ’বুদুল্লাহা = আমি আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করি। আল্লাযী = যিনি। ইয়াতাওয়াফফাকুম = তোমাদেরকে ওফাত/ মৃত্যু দেন। ওয়া = আর। উমিরতু = আমি আদেশ পেয়েছি। আন = যে। আকূনা = আমি হতে হবে। মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত।

বলো, ‘হে মানুষ, যদি তোমরা থাকো সন্দেহের মধ্যে আমার দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে, তাহলে জেনে রাখো, আমি তাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করি না যাদের ইবাদাত/ দাসত্ব তোমরা করো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে; কিন্তু আমি আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করি, যিনি তোমাদেরকে ওফাত/ মৃত্যু দেন। আর আমি আদেশ পেয়েছি যে, আমি হতে হবে মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত’।

১০:১০৫
ওয়া = আর। আন = এও যে। আক্বিম = কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখো। ওয়াজহাকা = তোমার সত্তাকে। লিদ দ্বীনি হানীফান = দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার (যথাযথ পরিপালনের) জন্য, হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ হয়ে। ওয়া = আর। লা তাকূনান্না = তোমরা হয়ো না। মিনাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।

আর এও যে, ‘কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখো তোমার সত্তাকে দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার (যথাযথ পরিপালনের) জন্য, হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ হয়ে। আর তোমরা হয়ো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত’।

১০:১০৬
ওয়া = আর। লা তাদউ = ডেকো না। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে। মা লা ইয়ানফাউকা = যে তোমার কোন উপকারও করতে পারে না। ওয়া = আর। লা ইয়াদুররুকা = তোমার কোন অপকারও করতে পারে না। ফাইন = সুতরাং যদি। ফাআলতা = তুমি উহা করো। ফাইন্নাকা = তাহলে নিশ্চয় তুমি। ইযাম মিনায যলিমীনা = তখন হবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।

আর ডেকো না আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে, যে তোমার কোন উপকারও করতে পারে না আর তোমার কোন অপকারও করতে পারে না। সুতরাং যদি তুমি উহা করো তাহলে নিশ্চয় তুমি তখন হবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।

১০:১০৭
ওয়া = আর। ইইঁ ইয়ামছাছকাল্লাহু = যদি আল্লাহ তোমাকে স্পর্শ করেন। বিদুররিন = কোন কষ্ট দিয়ে। ফালা কাশিফা লাহু = তাহলে কেউ নেই উহা মোচনকারী। ইল্লা হুয়া = তিনি ছাড়া। ওয়া = আর। ইইঁ ইউরিদকা = যদি তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমার জন্য। বিখায়রিন = কোন কল্যাণ। ফালা রদ্দা লিফাদলিহী = তাহলে কেউ নেই তাঁর ফযল/ অনুগ্রহকে রোধকারী। ইউসীবু বিহী = তিনি উহা পৌঁছান। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। হুয়াল গাফূরুর রহীমু = তিনিই গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

আর যদি আল্লাহ তোমাকে স্পর্শ করেন কোন কষ্ট দিয়ে তাহলে কেউ নেই উহা মোচনকারী, তিনি ছাড়া। আর যদি তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমার জন্য কোন কল্যাণ তাহলে কেউ নেই তাঁর ফযল/ অনুগ্রহকে রোধকারী। তিনি উহা পৌঁছান যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে। আর তিনিই গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

১০:১০৮
ক্বুল = বলো। ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে মানুষ। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুমুল হাক্বক্বু = তোমাদের কাছে এসেছে সত্য। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ফামানিহতাদা = সুতরাং যে হিদায়াত পেলো। ফাইন্নামা = তবে নিশ্চয়। ইয়াহতাদী = সে হিদায়াত পায়। লিনাফসী = তার নিজেরই জন্য। ওয়া = আর। মান = যে। দল্লা = বিভ্রান্ত হলো। ফাইন্নামা = তবে নিশ্চয়। ইয়াদিল্লু = সে বিভ্রান্ত হয়। আলাইহা = তার নিজেরই বিরুদ্ধে। ওয়া = আর। মা আনা = আমি নই। আলাইকুম = তোমাদের ব্যাপারে। বিওয়াকীলা = উকিল/ কর্মবিধায়ক।

বলো, “হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে হিদায়াত পেলো তবে নিশ্চয় সে হিদায়াত পায় তার নিজেরই জন্য। আর যে বিভ্রান্ত হলো তবে নিশ্চয় সে বিভ্রান্ত হয় তার নিজেরই বিরুদ্ধে। আর আমি নই তোমাদের ব্যাপারে উকিল/ কর্মবিধায়ক”।

১০:১০৯
ওয়াত্তাবি’ = আর তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। মা = যা। ইউহা = ওহী করা হয়। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়াসবির = আর সবর করো (ধৈর্যের সাথে ন্যায়ানুগ পন্থায় অধ্যবসায়ী হও)। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াহকুমাল্লাহু = আল্লাহ হুকুম/ বিচারিক নির্দেশ দেন। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। খায়রুল হাকিমীনা = সর্বোত্তম হাকিম/ আইনদাতা ও বিচারক।

আর তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো যা ওহী করা হয় তোমার প্রতি। আর সবর করো (ধৈর্যের সাথে ন্যায়ানুগ পন্থায় অধ্যবসায়ী হও) যতক্ষণ না আল্লাহ হুকুম/ বিচারিক নির্দেশ দেন। আর তিনি সর্বোত্তম সর্বোত্তম হাকিম/ আইনদাতা ও বিচারক।