কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

008. সূরা আনফাল

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৮:১ 

ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিল আনফালি = আনফাল (= নাগরিক পর্যায়ে বণ্টনের অতিরিক্ত সম্পদ) সম্পর্কে। ক্বুলিল আনফালু = বলো, আনফাল হচ্ছে। লিল্লাহি ওয়ার রসূলিহী = আল্লাহর জন্য ও রসূলের জন্য। ফাত্তাক্বুল্লাহা = সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া = আর। আসলিহূ = ইসলাহ/ সংশোধন করো। যাতা বায়নিকুম = তোমাদের মধ্যকার অবস্থা। ওয়া = আর। আতিউল্লাহা ওয়া রসূলাহু = ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রসূলের। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে আনফাল (= নাগরিক পর্যায়ে বণ্টনের অতিরিক্ত সম্পদ) সম্পর্কে। বলো, আনফাল হচ্ছে আল্লাহর জন্য ও রসূলের জন্য (= আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাদির জন্য এবং মুসলিম উম্মাহর রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের জন্য)। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো আর ইসলাহ/ সংশোধন করো তোমাদের মধ্যকার অবস্থা, আর ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রসূলের, যদি তোমরা হও মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

৮:২ 

ইন্নামাল মু’মিনূনাল্লাযীনা = নিশ্চয় মু’মিন তো তারাই যারা এমন যে। ইযা = যখন। যুকিরাল্লাহু = আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করা হয়। ওয়াজিলাত ক্বুলূবুহুম = তখন তাদের কলবসমূহ কেঁপে উঠে। ওয়া = আর। ইযা = যখন। তুলিয়াত = তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয়। আলাইহিম = তাদের কাছে। আয়াতুহু = তাঁর আয়াতসমূহ। যাদাতহুম ঈমানান = তখন তাদের ঈমান/ বিশ্বাস বেড়ে যায়। ওয়া = আর। আলা রব্বিহিম = তাদের রবের উপরই। ইয়াতাওয়াক্কালূনা = তারা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে। 

নিশ্চয় মু’মিন তো তারাই যারা এমন যে, যখন আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করা হয়, তখন তাদের কলবসমূহ কেঁপে উঠে। আর যখন তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয় তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ, তখন তাদের ঈমান/ বিশ্বাস বেড়ে যায়। আর তাদের রবের উপরই তারা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে। 

৮:৩ 

আল্লাযীনা = যারা। ইউক্বীমূনাস সালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া = আর। মিম্মা রযাক্বনাহুম ইউনফিক্বূনা= আমরা তাদেরকে যে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি তা থেকে তারা ইনফাক/ ব্যয় করে। 

যারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি তা থেকে তারা ইনফাক/ ব্যয় করে। 

৮:৪ 

উলায়িকা = তারাই। হুমুল মু’মিনূনা হাক্বক্বান = হক্কানী মু’মিন/ যথাযথ মু’মিন। লাহুম = তাদের জন্য আছে। দারাজাতুন = মর্যাদার মাত্রাসমূহ। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। মাগফিরাতুন = মাগফিরাত/ ক্ষমা। ওয়া = আর। রিযক্বুন কারীমুন = সম্মানজনক রিযিক/ জীবনোপকরন। 

তারাই হক্কানী মু’মিন/ যথাযথ মু’মিন। তাদের জন্য আছে মর্যাদার মাত্রাসমূহ, তাদের রবের কাছে। আর মাগফিরাত/ ক্ষমা আর সম্মানজনক রিযিক/ জীবনোপকরন। 

৮:৫ 

কামা = যেভাবে। আখরাজাকা = তোমাকে বের করেছেন। রব্বুকা = তোমার রব। মিম বায়তিকা = তোমার ঘর থেকে। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। ওয়া = অথচ। ইন্না = নিশ্চয়। ফারীক্বাম মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের একটি অংশ ছিলো। লাকারিহূনা = উহা অপছন্দকারী। 

যেভাবে তোমাকে বের করেছেন তোমার রব তোমার ঘর থেকে, সত্য সহকারে। অথচ নিশ্চয় মু’মিনদের একটি অংশ ছিলো উহা অপছন্দকারী। 

৮:৬ 

ইউজাদিলূনাকা = তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে। ফিল হাক্বক্বি = সত্যের ব্যাপারে। বা’দা মা তাবাইয়্যানা = তা সুস্পষ্ট হওয়ার পরও। কাআন্নামা = যেন। ইউছাক্বূনা = তাদেরকে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইলাল মাওতি = মওতের দিকে। ওয়া = এ অবস্থায় যে, যেন। হুম = তারা। ইয়ানযুরূনা = তারা তা লক্ষ্য করছে। 

তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে সত্যের ব্যাপারে, তা সুস্পষ্ট হওয়ার পরও; যেন তাদেরকে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে মওতের দিকে এ অবস্থায় যে, যেন তারা তারা তা লক্ষ্য করছে। 

৮:৭ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। ইয়ায়িদুকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন। ইহদাত্তয়িফাতাইনি আন্নাহা = দুই দলের মধ্যে একটি। লাকুম = তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। ওয়া = আর। তাওয়াদ্দূনা = তোমরা চেয়েছো। আন্না = যে। গায়রা যাতিশ শাওকাতি তাকূনু লাকুম = অস্ত্রহীন দলটিই তোমাদের আওতাধীন হোক। ওয়া = অথচ। ইউরীদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। আইঁ ইউহিক্বক্বাল হাক্বক্বা = সত্যকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। বিকালিমাতিহী = তাঁর কালেমাসমূহ/ বাণীসমূহ দ্বারা। ওয়া = আর। ইয়াক্বতাআ = তিনি কেটে দেবেন। দাবিরাল কাফিরীনা = কাফিরদের মূল। 

আর যখন আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন দুই দলের মধ্যে একটির ব্যাপারে যে, উহা তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। আর তোমরা চেয়েছো যে, অস্ত্রহীন দলটিই তোমাদের আওতাধীন হোক। অথচ আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন সত্যকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন তাঁর কালেমাসমূহ/ বাণীসমূহ দ্বারা আর তিনি কেটে দেবেন কাফিরদের মূল। 

৮:৮ 

লিইউহিক্বক্বাল হাক্বক্বা = সত্যকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য। ওয়া = আর। ইউবতিলাল বাতিলা = বাতিলকে বাতিল বলে সাব্যস্ত করার জন্য। ওয়া লাও = যদিও তা। কারিহাল মুজরিমূনা = অপরাধীরা অপছন্দ করে। 

সত্যকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য আর বাতিলকে বাতিল বলে সাব্যস্ত করার জন্য, যদিও তা অপরাধীরা অপছন্দ করে। 

৮:৯ 

ইয = যখন। তাছতাগীছূনা = তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করেছো। রব্বাকুম = তোমাদের রবের কাছে। ফাছতাজাবা লাকুম = তখন তিনি তোমাদেরকে জওয়াব দিয়েছেন। আন্নী = যে, আমি। মুমিদ্দুকুম = তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করবো। বিআলফিম মিনাল মালায়িকাতি মুরদিফীনা = এক হাজার শ্রেণীবদ্ধ ফেরেশতা দিয়ে। 

যখন তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করেছো তোমাদের রবের কাছে তখন তিনি তোমাদেরকে জওয়াব দিয়েছেন যে, ‘আমি তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করবো এক হাজার শ্রেণীবদ্ধ ফেরেশতা দিয়ে’। 

৮:১০ 

ওয়া = আর। মা জায়ালাহুল্লাহু = আল্লাহ উহার (= ফেরেশতা প্রেরণের) ব্যবস্থা করেননি। ইল্লা = এছাড়া যে। বুশরা = তা হবে সুসংবাদ। ওয়া = আর। লিতাতমায়িন্না = প্রশান্তি দেয়ার জন্য। বিহী = উহা (= ঐ ব্যবস্থা) দ্বারা। ক্বূলূবুকুম = তোমাদের কলবসমূহে। ওয়া = আর। মান্নাছরু = সাহায্য আসে না। ইল্লা মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আযীযুন হাকীমুন = আল আযীয/ মহাশক্তিমান ও আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।  

আর আল্লাহ উহার (= ফেরেশতা প্রেরণের) ব্যবস্থা করেননি এছাড়া যে, তা হবে সুসংবাদ আর (তিনি তা করেছেন) প্রশান্তি দেয়ার জন্য উহা (= ঐ ব্যবস্থা) দ্বারা তোমাদের কলবসমূহে। আর সাহায্য আসে না আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া। নিশ্চয় আল্লাহ আল আযীয/ মহাশক্তিমান ও আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।  

৮:১১ 

ইয = (স্মরণ করো) যখন। ইউগাশশীকুমুন্নুআছা = তিনি তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন। আমানাতাম মিনহু = তাঁর পক্ষ থেকে স্বস্তিস্বরূপ। ওয়া = আর। ইউনাযযিলু = তিনি নাযিল/ বর্ষণ করেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। মিনাছ ছামায়ী = আকাশ থেকে। মায়িন = (বৃষ্টির) পানি। লিইউতহহিরাকুম = তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য। বিহী = উহার দ্বারা। ওয়া = আর। ইউযহিবা = দূর করার জন্য। আনকুম = তোমাদের থেকে। রিযজাশ শায়তানি = শয়তানের অপরিচ্ছন্নতা (= দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা)। ওয়া = আর। লিইয়ারবিতা = দৃঢ় করার জন্য। ক্বুলূবিকুম = তোমাদের কলবসমূহকে। ওয়া = আর। ইউছাব্বিতা = অটল করার জন্য। বিহিল আক্বদামা = উহার দ্বারা তোমাদের কদমসমূহকে। 

(স্মরণ করো) যখন তিনি তোমাদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করেন তাঁর পক্ষ থেকে স্বস্তিস্বরূপ। আর তিনি নাযিল/ বর্ষণ করেন তোমাদের উপর আকাশ থেকে (বৃষ্টির) পানি, তোমাদেরকে পবিত্র করার জন্য উহার দ্বারা, আর দূর করার জন্য তোমাদের থেকে শয়তানের অপরিচ্ছন্নতা (= দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও হতাশা), আর দৃঢ় করার জন্য তোমাদের কলবসমূহকে, আর অটল করার জন্য উহার দ্বারা তোমাদের কদমসমূহকে/ পাসমূহকে। 

৮:১২ 

ইয = (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ইউহী = ওহী করেছেন। রব্বুকা = তোমার রব। ইলাল মালাইকাতি = মালায়েকার/ ফেরেশতাগণের প্রতি। আন্নী = যে, আমি। মাআকুম = তোমাদের সাথে আছি। ফাছাব্বিতূল্লাযীনা = সুতরাং তোমরা তাদেরকে অটল রাখো যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ছাউলক্বী = অচিরেই আমি নিক্ষেপ করবো। ফী ক্বুলূবিল্লাযীনা = তাদের কলবসমূহে যারা। কাফারূররু’বা = কুফর করেছে, (নিক্ষেপ করবো) ভীতি। ফাদরিবূ = সুতরাং তোমরা আঘাত করো। ফাওক্বাল আ’নাক্বি = তাদের ঘাড়সমূহের উপর। ওয়াদরিবূ = আর আঘাত করো। মিনহুম = তাদের। কুল্লা = প্রত্যেক। বানানিন = গিরায় গিরায়/ আঙ্গুলের অগ্রভাগে। 

(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ওহী করেছেন তোমার রব মালায়েকার/ ফেরেশতাগণের প্রতি যে, ‘আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং তোমরা তাদেরকে অটল রাখো যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে’। অচিরেই আমি নিক্ষেপ করবো তাদের কলবসমূহে যারা কুফর করেছে, (নিক্ষেপ করবো) ভীতি। সুতরাং তোমরা আঘাত করো তাদের ঘাড়সমূহের উপর, আর আঘাত করো তাদের প্রত্যেক গিরায় গিরায়/ আঙ্গুলের অগ্রভাগে। 

৮:১৩ 

যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এজন্য যে, তারা। শাক্বক্বুল্লাহা ওয় রাসূলাহু = বিরোধিতা করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের। ফাইন্নাল্লাহা = সেক্ষেত্রে নিশ্চয় আল্লাহ। শাদীদুল ইক্বাবি = শাদীদুল ইক্বাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

উহা এজন্য যে, তারা বিরোধিতা করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের। সেক্ষেত্রে নিশ্চয় আল্লাহ শাদীদুল ইক্বাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

৮:১৪ 

যালিকুম = এটাই তোমাদের (= কাফেরদের) প্রাপ্য। ফাযূক্বূহু = সুতরাং তোমরা উহার স্বাদ আস্বাদন করো। ওয়া = আর। আন্না = নিশ্চয়। লিলকাফিরীনা = কাফিরদের জন্য আছে। আযাবান নারি = আযাবুন নার/ (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি। 

এটাই তোমাদের (= কাফেরদের) প্রাপ্য। সুতরাং তোমরা উহার স্বাদ আস্বাদন করো। আর নিশ্চয় কাফিরদের জন্য আছে আযাবুন নার/ (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি। 

৮:১৫ 

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। লাক্বীতুমুল্লাযীনা = তোমরা মুখোমুখি হও তাদের সাথে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। যাহফান = এক সৈন্যবাহিনী হিসাবে। ফালা তুওয়াল্লূহুমুল আদবারা = তখন তোমরা তাদেরকে পিঠ দেখাবে না (= পিছু হটে আসবে না)। 

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা মুখোমুখি হও তাদের সাথে যারা কুফর করেছে, (মুখোমুখি হও) এক সৈন্যবাহিনী হিসাবে, তখন তোমরা তাদেরকে পিঠ দেখাবে না (= পিছু হটে আসবে না)। 

৮:১৬ 

ওয়া = আর। মাইঁ ইউওয়াল্লিহিম = যে তাদের থেকে পিছু হটে আসবে। ইয়াওমায়িযিন = সেইদিন (= যুদ্ধের দিন)। দুবুরাহু = তার পিঠ দেখিয়ে। ইল্লা মুতাহাররিফাল লিক্বিতালি = যুদ্ধের কৌশল হিসাবে ছাড়া। আও = অথবা। মুতাহাইয়িযান ইলা ফিআতিন = নিজেদের অন্য প্লাটুনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ছাড়া। ফাক্বাদ বাআ = সে পরিবেষ্টিত হবে। বিগাদাবিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে গযবে। ওয়া = আর। মা’ওয়াহু = তার আবাস হবে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর। বি’ছাল মাসীরু = তা অত্যন্ত মন্দ ঠিকানা। 

আর যে তাদের থেকে পিছু হটে আসবে সেইদিন (= যুদ্ধের দিন) তার পিঠ দেখিয়ে, যুদ্ধের কৌশল হিসাবে ছাড়া অথবা নিজেদের অন্য প্লাটুনের সাথে মিলিত হওয়ার জন্য ছাড়া, সে পরিবেষ্টিত হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে গযবে, আর তার আবাস হবে জাহান্নাম। আর তা অত্যন্ত মন্দ ঠিকানা। 

৮:১৭ 

ফালাম তাক্বতুলূহুম = আসলে তোমরা তাদেরকে কতল/ হত্যা করোনি। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহই। ক্বাতালাহুম = (তোমাদের মাধ্যমে) তাদেরকে কতল/ হত্যা করেছেন। ওয়া = আর। মা রমাইতা = তুমি নিক্ষেপ করোনি। ইয = যখন। রমাইতা = তুমি নিক্ষেপ করেছো। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহই। রমা = (তোমার মাধ্যমে) নিক্ষেপ করেছেন। ওয়া = আর। লিইউবলিয়াল মু’মিনীনা = (তিনি এ ব্যবস্থা রেখেছেন) মু’মিনদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। মিনহু = ঐ পরিস্থিতির মধ্য থেকে (উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে)। বালাআন হাছানান = উত্তম পরীক্ষা। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছামীউন আলীমুন = ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

আসলে তোমরা তাদেরকে কতল/ হত্যা করোনি কিন্তু আল্লাহই (তোমাদের মাধ্যমে) তাদেরকে কতল/ হত্যা করেছেন। আর তুমি নিক্ষেপ করোনি যখন তুমি নিক্ষেপ করেছো, কিন্তু আল্লাহই (তোমার মাধ্যমে) নিক্ষেপ করেছেন। আর (তিনি এ ব্যবস্থা রেখেছেন) মু’মিনদেরকে পরীক্ষা করার জন্য ঐ পরিস্থিতির মধ্য থেকে (উত্তীর্ণ হওয়ার ব্যাপারে), উত্তম পরীক্ষা। নিশ্চয় আল্লাহ ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

৮:১৮ 

যালিকুম = ইহাই তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। মূহিনু কায়দিল কাফিরীনা = কাফিরদের কায়দা-কৌশলকে দুর্বলকারী। 

ইহাই তোমাদের জন্য। আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের কায়দা-কৌশলকে দুর্বলকারী। 

৮:১৯ 

ইন = যদি। তাছতাফতিহূ = তোমরা (= কাফিরগণ) ফায়সালা চাও। ফাক্বাদ = তাহলে নিশ্চয়। জাআকুমুল ফাতহু = তোমাদের কাছে ফায়সালা এসে গেছে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তানতাহূ = তোমরা বিরত হও। খায়রুল্লাকুম = তাহলে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাঊদূ = তোমরা পুনরাবৃত্তি করো। নাউদু = তাহলে আমরাও পুনরাবৃত্তি করবো। ওয়া = আর। লান তুগনিয়া = কোন কাজে আসবে না। আনকুম = তোমাদের ব্যাপারে। ফিআতুকুম = তোমাদের দলবল। সাইআন = কিছুমাত্রই। ওয়া লাও = যদিও তা হয়। কাছুরাত = অনেক বেশি। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। মাআল মু’মিনীনা = মু’মিনদের সাথে থাকেন। 

যদি তোমরা (= কাফিরগণ) ফায়সালা চাও তাহলে নিশ্চয় তোমাদের কাছে ফায়সালা এসে গেছে। আর যদি তোমরা বিরত হও তাহলে তা-ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর যদি তোমরা পুনরাবৃত্তি করো তাহলে আমরাও পুনরাবৃত্তি করবো। আর কোন কাজে আসবে না তোমাদের ব্যাপারে তোমাদের দলবল, কিছুমাত্রই; যদিও তা হয় অনেক বেশি। আর নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের সাথে থাকেন। 

৮:২০ 

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আতিঊল্লাহা ওয়া রাসূলাহু = ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর আর তাঁর রাসূলের। ওয়া = আর। লা তাওয়াল্লাও = মুখ ফিরিয়ে নিও না। আনহু = উহা থেকে (= আনুগত্য থেকে)। ওয়া = এ সত্ত্বেও যে। আনতুম = তোমরা। তাছমাঊনা = শুনতে পাচ্ছো। 

হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর আর তাঁর রাসূলের। আর মুখ ফিরিয়ে নিও না উহা থেকে (= আনুগত্য থেকে), এ সত্ত্বেও যে, তোমরা শুনতে পাচ্ছো। 

৮:২১ 

ওয়া = আর। লা তাকূনূ কাল্লাযীনা = তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা। ক্বলূ = বলে। ছামি’না = আমরা শুনেছি। ওয়া = অথচ। লা ইয়াছমাঊনা = তারা শুনে না। 

আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না যারা বলে, ‘আমরা শুনেছি’; অথচ তারা শুনে না। 

৮:২২ 

ইন্না = নিশ্চয়। শাররাদ দাওয়াব্বি ইনদাল্লাহিস সুম্মুল বুকমুল্লাযীনা = আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে সেই বধির বোবা লোকগুলো যারা। লা ইয়া’ক্বিলূনা = আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করে না। 

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে সেই বধির বোবা লোকগুলো যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি (common sense) প্রয়োগ করে না। 

৮:২৩ 

ওয়া = আর। লাও = যদি। আলিমাল্লাহু ফীহিম খায়রান = আল্লাহ জানতেন যে, তাদের মধ্যে কোন কল্যাণ আছে। লাআছমাআহুম = তাহলে তিনি তাদেরকে শুনাতেন। ওয়া = আর। লাও = যদি। আছমাআহুম = তিনি তাদেরকে শুনাতেন। লাতাওয়াল্লাও = তাহলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিতো। ওয়া = আর। হুম = তারা তো। মু’রিদূনা = বিমুখ হয়েই আছে। 

আর যদি আল্লাহ জানতেন যে, তাদের মধ্যে কোন কল্যাণ আছে তাহলে তিনি তাদেরকে শুনাতেন। আর যদি তিনি তাদেরকে শুনাতেন তাহলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিতো। আর তারা তো বিমুখ হয়েই আছে। 

৮:২৪ 

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূছতাজিবূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা সাড়া দাও। লিল্লাহি ওয়া লিররসূলি = আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আহবানে। ইযা = যখন। দাআকুম = তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন। লিমা ইউহঈকুম = উহার জন্য যা তোমাদেরকে (আধ্যাত্মিক ও জাতীয়) জীবনদান করে। ওয়া’লামূ = আর জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। ইয়াহূলু = আড় হয়ে থাকেন। বায়নাল মার ই ওয়া ক্বালবিহী = ব্যক্তি ও তার কলবের মধ্যে (= কলবের প্রভাব ব্যক্তির উপর এবং ব্যক্তির প্রভাব কলবের উপর পড়ার আগেই আল্লাহ তা জানেন)। ওয়া = আর। আন্নাহু = এও যে। ইলাইহি = তাঁরই কাছে। তুহশারূনা = তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে। 

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা সাড়া দাও আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আহবানে যখন তিনি তোমাদেরকে আহবান করেন উহার জন্য যা তোমাদেরকে (আধ্যাত্মিক ও জাতীয়) জীবনদান করে। আর জেনে রাখো যে, আল্লাহ আড় হয়ে থাকেন ব্যক্তি ও তার কলবের মধ্যে (= কলবের প্রভাব ব্যক্তির উপর এবং ব্যক্তির প্রভাব কলবের উপর পড়ার আগেই আল্লাহ তা জানেন)। আর এও যে, তাঁরই কাছে তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে। 

৮:২৫ 

ওয়াত্তাক্বূ = আর তোমরা বেঁচে থাকো। ফিতনাতান = সেই ফিতনা/ অনাচার থেকে। লা তুসীবান্নাল্লাযীনা = যা শুধু তাদেরকেই আক্রান্ত করবে না যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। খাসসাতান = খাস করে/ বিশেষভাবে। ওয়া’লামূ = আর তোমরা জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। শাদীদুল ইক্বাবি = শাদীদুল ইকাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

আর তোমরা বেঁচে থাকো সেই ফিতনা/ অনাচার থেকে যা শুধু তাদেরকেই আক্রান্ত করবে না যারা যুলুম করেছে, তোমাদের মধ্য থেকে, খাস করে/ বিশেষভাবে। আর তোমরা জেনে রাখো যে, আল্লাহ শাদীদুল ইকাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

৮:২৬ 

ওয়াযকুরূ = আর যিকির/ স্মরণ করো। ইয = যখন। আনতুম = তোমরা ছিলে। ক্বালীলুম মুছতাদআফূনা ফিল আরদি = স্বল্পসংখ্যক, তোমাদেরকে পৃথিবীতে মুসতাদআফীন/ দুর্বল মনে করা হতো। তাখাফূনা = তোমরা ভয় করতে। আইঁ ইয়াতাখাত্তাফাকুমুন্নাছু = যে, লোকেরা তোমাদেরকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। ফাআওয়াকুম = তারপর তিনিই তোমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। ওয়া = আর। আইয়্যাদাকুম = তোমাদের হাতকে শক্তিশালী করেছেন। বিনাসরিহী = তাঁর সাহায্য দিয়ে। ওয়া = আর। রাযাক্বাকুম = তিনি তোমাদেরকে রিযিক/ জীবনোপকরণ দিয়েছেন। মিনাত তইয়িবাতি = তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিস থেকে। লাআল্লাকুম তাশকুরূনা = যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। 

আর যিকির/ স্মরণ করো যখন তোমরা ছিলে স্বল্পসংখ্যক, তোমাদেরকে পৃথিবীতে মুসতাদআফীন/ দুর্বল মনে করা হতো, তোমরা ভয় করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে। তারপর তিনিই তোমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, আর তোমাদের হাতকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্য দিয়ে, আর তিনি তোমাদেরকে রিযিক/ জীবনোপকরণ দিয়েছেন তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিস থেকে, যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। 

৮:২৭ 

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাখূনুল্লাহা ওয়া রাসূলুহু = তোমরা খেয়ানত/ বিশ্বাসঘাতকতা করো না আল্লাহর সাথে ও তাঁর রসূলের সাথে। ওয়া তাখূনূ আমানাতিকুম = আর তোমরা খেয়ানত করো না তোমাদের আমানাতসমূহের ব্যাপারে। ওয়া = এ সত্ত্বেও যে। আনতুম = তোমরা। তা’লামূনা = জানো। 

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা খেয়ানত/ বিশ্বাসঘাতকতা করো না আল্লাহর সাথে ও তাঁর রসূলের সাথে, আর তোমরা খেয়ানত করো না তোমাদের আমানাতসমূহের ব্যাপারে, এ সত্ত্বেও যে তোমরা জানো। 

৮:২৮ 

ওয়া’লামূ = আর তোমরা জেনে রাখো। আন্নামা = নিশ্চয়। আমওয়ালুকুম = তোমাদের মালসমূহ। ওয়া = আর। আওলাদুকুম = তোমাদের সন্তানগণ। ফিতনাতুন = ফিতনা/ পরীক্ষাস্বরূপ। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ এমন সত্তা যে। ইনদাহু = তাঁরই কাছে আছে। আজরুন আযীমুন = মহাপুরস্কার। 

আর তোমরা জেনে রাখো নিশ্চয় তোমাদের মালসমূহ আর তোমাদের সন্তানগণ ফিতনা/ পরীক্ষাস্বরূপ। আর নিশ্চয় আল্লাহ এমন সত্তা যে, তাঁরই কাছে আছে মহাপুরস্কার। 

৮:২৯ 

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইন = যদি। তাত্তাক্বুল্লাহা = তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ইয়াজআল লাকুম = তাহলে তিনি তোমাদেরকে দেবেন। ফুরক্বানান = ফুরক্বান/ সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী বোধশক্তি (= কুরআন বুঝার যোগ্যতা)। ওয়া = আর। ইউকাফফির = মুছে দেবেন। আনকুম = তোমাদের থেকে। ছাইয়িআতিকুম = তোমাদের মন্দকর্মসমূহ। ওয়া = আর। ইয়াগফির লাকুম = তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। যুলফাদলিল আযীমি = যুল ফাদলিল আযীম/ মহাঅনুগ্রহশীল। 

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো (= কুরআন অনুসারে চলার প্রচেষ্টা করো), তাহলে তিনি তোমাদেরকে দেবেন ফুরক্বান/ সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী বোধশক্তি (= কুরআন বুঝার যোগ্যতা, ০২:১৮৫), আর মুছে দেবেন তোমাদের থেকে তোমাদের (অতীতের) মন্দকর্মসমূহ আর তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ যুল ফাদলিল আযীম/ মহাঅনুগ্রহশীল। 

৮:৩০ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। ইয়ামকুরুবিকাল্লাযীনা = তারা তোমার বিরুদ্ধে কৌশল করেছিলো যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। লিইউছবিতূকা = তোমাকে বন্দী করার জন্য। আও = অথবা। ইয়াক্বতুলূকা = তোমাকে কতল/ হত্যা করার জন্য। আও = অথবা। ইউখরিজূকা = তোমাকে বের করে দেয়ার জন্য। ওয়া = আর। ইয়ামকুরূনা = তারা কৌশল করে। ওয়া = আর। ইয়ামকুরুল্লাহু = আল্লাহও কৌশল করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। খায়রুল মাকিরীনা = উত্তম কৌশলকারী। 

আর যখন তারা তোমার বিরুদ্ধে কৌশল করেছিলো যারা কুফর করেছে, তোমাকে বন্দী করার জন্য অথবা তোমাকে কতল/ হত্যা করার জন্য অথবা (তোমার স্বদেশ থেকে) তোমাকে বের করে দেয়ার জন্য। আর তারা কৌশল করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আর আল্লাহ উত্তম কৌশলকারী। 

৮:৩১ 

ওয়া = আর। ইযা = যখন। তুতলা = তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয়। আলাইহিম = তাদের কাছে। আয়াতুনা = আমাদের আয়াতসমূহ। ক্বলূ = তখন তারা বলে। ক্বাদ = নিশ্চয়। ছামি’না = আমরা শুনেছি। লাও = যদি। নাশাউ = আমরা ইচ্ছা করি। লাক্বুলনা = তাহলে আমরা বলতে পারি। মিছলা হাযা = ইহার অনুরূপ। ইন হাযা = ইহা নয়। ইল্লা আছাতীরুল আওয়ালীনা = আগের লোকদের উপকথা ছাড়া অন্য কিছু। 

আর যখন তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয় তাদের কাছে আমাদের আয়াতসমূহ, তখন তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা শুনেছি। যদি আমরা ইচ্ছা করি তাহলে আমরাও বলতে পারি ইহার অনুরূপ। ইহা নয় আগের লোকদের উপকথা ছাড়া অন্য কিছু’। 

৮:৩২ 

ওয়া = আর। ইয = (স্মরণ করো) যখন। ক্বলুল্লাহুম্মা = তারা বলেছে, ‘হে আল্লাহ। ইন = যদি। কানা হাযা হুয়াল হাক্বক্বু = ইহা সত্য হয়ে থাকে। মিন ইনদিকা = তোমার পক্ষ থেকে। ফাআমতির = তাহলে বর্ষণ করো। আলাইনা = আমাদের উপর। হিজারাতাম মিনাছ ছামায়ী = আকাশ থেকে পাথর। আওয়ি’তিনা = অথবা আমাদের উপর আনো। বিআযাবিন আযাবিন আলীমিন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। 

আর (স্মরণ করো) যখন তারা বলেছে, ‘হে আল্লাহ, যদি ইহা সত্য হয়ে থাকে তোমার পক্ষ থেকে, তাহলে বর্ষণ করো আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর, অথবা আমাদের উপর আনো আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি’। 

৮:৩৩ 

ওয়া = আর। মা কানাল্লাহু = আল্লাহ এমন নন যে। লিইউআযযিবাহুম = তিনি তাদেরকে আযাব দেবেন। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আনতা = তুমি আছো। ফীহিম = তাদের মধ্যে অবস্থানরত। ওয়া = আর। মা কানাল্লাহু = আল্লাহ এমনও নন যে। মুআযযিবাহুম = তিনি তাদেরকে আযাব দেবেন। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা। ইয়াছতাগফিরূনা = মাগফিরাত/ ক্ষমা চাচ্ছে (এমন একদলও তাদের মধ্যে অবস্থানরত)। 

আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদেরকে আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি আছো তাদের মধ্যে অবস্থানরত। আর আল্লাহ এমনও নন যে, তিনি তাদেরকে আযাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তারা মাগফিরাত/ ক্ষমা চাচ্ছে (এমন একদলও তাদের মধ্যে অবস্থানরত)। 

৮:৩৪ 

ওয়া = তবে এখন। মা লাহুম = তাদের কী অধিকার আছে। আল্লা ইউআযযিবাহুম = যে, তিনি তাদেরকে আযাব দিবেন না। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা। ইয়াসুদ্দূনা = বাধা দিচ্ছে। আনিল মাছজিদিল হারামি = মাসজিদুল হারাম থেকে। ওয়া = অথচ। মা কানূ আওলিয়াহু = তারা উহার আওলিয়া/ তত্ত্বাবধায়ক নয়। ইন আওলিয়াউহু = কেউই উহার আওলিয়া/ তত্ত্বাবধায়ক নয়। ইল্লাল মুত্তাক্বূনা = মুত্তাকীগণ/ আল্লাহভীরুগণ ছাড়া। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = (আসমানী কিতাবের) কোন ইলম/ জ্ঞান রাখে না। 

তবে এখন তাদের কী অধিকার আছে যে, তিনি তাদেরকে আযাব দিবেন না এ অবস্থায় যে, তারা বাধা দিচ্ছে মাসজিদুল হারাম থেকে? অথচ তারা উহার আওলিয়া/ তত্ত্বাবধায়ক নয়। কেউই উহার আওলিয়া/ তত্ত্বাবধায়ক নয়, মুত্তাকীগণ/ আল্লাহভীরুগণ ছাড়া। কিন্তু তাদের অধিকাংশই (আসমানী কিতাবের) কোন ইলম/ জ্ঞান রাখে না। 

৮:৩৫ 

ওয়া = আর। মা কানা সালাতুহুম = তাদের সালাত কিছুই নয়। ইনদাল বাইতি = আল বাইতের/ কা’বাঘরের কাছে। ইল্লা মুকাআন ওয়া তাসদিয়াতান = শিস দেয়া ও অযথা ব্যস্ততা ছাড়া। ফাযুক্বূল আযাবা = সুতরাং তোমরা আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো। বিমা কুনতুম তাকফুরূনা = তোমরা যে কুফর করতে তার কারণে। 

আর তাদের সালাত কিছুই নয় আল বাইতের/ কা’বাঘরের কাছে, শিস দেয়া ও অযথা ব্যস্ততা ছাড়া। সুতরাং তোমরা আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো তোমরা যে কুফর করতে তার কারণে। 

৮:৩৬ 

ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ইউনফিক্বূনা = তারা ইনফাক/ ব্যয় করে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। লিইয়াসুদ্দূ = বাধা দেয়ার জন্য। আন ছাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ফাছাইউনফিক্বূনাহা = তারা তো ইনফাক/ ব্যয় করতে থাকবে। ছুম্মা = তারপর। তাকূনু = উহা হবে। আলাইহিম = তাদের নিজেদের উপর। হাছরাতান = আফসোসের কারণ। ছুম্মা = তারপর। ইউগলাবূনা = তারা পরাজিত হবে। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ইলা জাহান্নামা ইউহশারূনা = তাদেরকে জাহান্নামে হাশর/ সমবেত করা হবে। 

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে তারা ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ, বাধা দেয়ার জন্য সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে, তারা তো ইনফাক/ ব্যয় করতে থাকবে, তারপর উহা হবে তাদের নিজেদের উপর আফসোসের কারণ, তারপর তারা পরাজিত হবে। আর যারা কুফর করেছে তাদেরকে তো জাহান্নামেই হাশর/ সমবেত করা হবে। 

৮:৩৭ 

লিইয়ামীযাল্লাহুল খাবীছা = যেন পৃথক করে নেন আল্লাহ খবিসকে/ অপবিত্রকে। মিনাত তইয়িবি = তইয়িব/ পবিত্র থেকে। ওয়া = আর। ইয়াজআলাল খাবীছা = তিনি রাখবেন খবিসকে/ অপবিত্র লোকদেরকে। বা’দাহু আলা বা’দিন = একটার উপর অন্যটাকে। ফাইয়ারকুমাহু = তারপর তিনি একত্র করবেন। জামীআ = সবগুলোকে। ফাইয়াজআলাহু = তারপর উহাকে রাখবেন। ফী জাহান্নামা = জাহান্নামে। উলায়িকা হুমুল খাছিরূনা = উহারাই ক্ষতিগ্রস্ত। 

যেন পৃথক করে নেন আল্লাহ খবিসকে/ অপবিত্রকে তইয়িব/ পবিত্র থেকে। আর তিনি রাখবেন খবিসকে/ অপবিত্র লোকদেরকে একটার উপর অন্যটাকে। তারপর তিনি একত্র করবেন সবগুলোকে। তারপর উহাকে রাখবেন জাহান্নামে। উহারাই ক্ষতিগ্রস্ত। 

৮:৩৮ 

ক্বুল = বলো। লিল্লাযীনা কাফারূ = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা কুফর করেছে। ইইঁ ইয়ানতাহূ = যদি তারা বিরত হয়। ইউগফার লাহুম = তাহলে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। মা ক্বাদ ছালাফা = তাদের যে কুফর অতীত হয়ে গেছে সে ব্যাপারে। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়াউদূ = যদি তারা পুনরাবৃত্তি করে। ফাক্বাদ = তাহলে নিশ্চয়। মাদাত = গত হয়েছে। সুন্নাতুল আওয়ালীনা = সুন্নাতুল আওয়ালীন/ আগের জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে আল্লাহর সুন্নাত বা অবলম্বিত কর্মনীতি (এদের ব্যাপারটাও অনুরূপ হবে)। 

বলো তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা কুফর করেছে, ‘যদি তারা বিরত হয় তাহলে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে, তাদের যে কুফর অতীত হয়ে গেছে সে ব্যাপারে। আর যদি তারা পুনরাবৃত্তি করে, তাহলে নিশ্চয় গত হয়েছে সুন্নাতুল আওয়ালীন/ আগের জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে আল্লাহর সুন্নাত বা অবলম্বিত কর্মনীতি (এদের ব্যাপারটাও অনুরূপ হবে)’। 

৮:৩৯ 

ওয়া ক্বাতিলূহুম = আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো। হাত্তা = যতক্ষণ না। লা তাকূনা ফিতনাতুন = ফিতনার/ ন্যায় কাজে বাধা বিঘ্নের অবসান হয়। ওয়া ইয়াকূনাদ দীনু কুল্লুহু লিল্লাহি = আর দীন/ জীবনব্যবস্থা (শুধুমাত্র) আল্লাহর জন্য (আল্লাহর বিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠিত) হয়। ফাইনিন তাহাও = তারপর যদি তারা বিরত হয়। ফাইন্নাল্লাহা = তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ। বিমা ইয়া’মালূনা বাসীরুন = তাদের আমলের ব্যাপারে বাসীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)। 

আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো যতক্ষণ না ফিতনার/ ন্যায় কাজে বাধা বিঘ্নের অবসান হয় আর দীন/ জীবনব্যবস্থা (শুধুমাত্র) আল্লাহর জন্য (আল্লাহর বিধানের আওতায় প্রতিষ্ঠিত) হয় (০২:২৫৬, ২২:৪০)। তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তাদের আমলের ব্যাপারে বাসীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)। 

৮:৪০ 

ওয়া = আর। ইন = যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফা’লামূ = তাহলে জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। মাওলাকুম = তোমাদের মাওলা/ অভিভাবক। নি’মাল মাওলা = কত উত্তম মাওলা/ অভিভাবক। ওয়া = আর। নি’মান্নাসীরু = কত উত্তম নাসীর/ সাহায্যকারী। 

আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে জেনে রাখো যে, আল্লাহ তোমাদের মাওলা/ অভিভাবক। কত উত্তম মাওলা/ অভিভাবক আর কত উত্তম নাসীর/ সাহায্যকারী! 

৮:৪১ 

ওয়া’লামূ = আর তোমরা জেনে রাখো। আন্নামা = নিশ্চয়। গানিমতুম = তোমরা মাগানিম/গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ হিসাবে যা লাভ করেছো। মিন শাইয়িন = যে কোন কিছু থেকে। ফাআন্না = নিশ্চয় উহাতে। লিল্লাহি খুমুসান = পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহর জন্য (= আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাদির জন্য)। ওয়া লির রসূলি = আর রসূলের জন্য (= মুসলিম উম্মাহর রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের জন্য)। ওয়া লিযিল ক্বুরবা = আর যিল কুরবা/ (শহীদদের) আত্মীয় স্বজনদের জন্য। ওয়াল ইয়াতামা = আর ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের জন্য। ওয়াল মাছাকীনা = আর মিসকিনদের জন্য। ওয়াবনিছ ছাবীলি = আর ইবনে সাবীলের/ ছিন্নমূলদের জন্য। ইন = যদি। কুনতুম আমানতুম = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। মা আনযালনা = তাহাতে যাহা আমরা নাযিল করেছি। আলা আবদিনা = আমাদের এক বান্দার প্রতি (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর প্রতি)। ইয়াওমাল ফুরক্বানি = ইয়াওমুল ফুরক্বানে/ সত্যমিথ্যা পার্থক্য করে দেয়ার দিনে। ইয়াওমাল তাক্বাল জামআনি = যেদিন দুটি সেনাবাহিনীর পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আর তোমরা জেনে রাখো নিশ্চয় তোমরা মাগানিম/গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ হিসাবে যা লাভ করেছো যে কোন কিছু থেকে; নিশ্চয় উহাতে পাঁচ ভাগের একভাগ আল্লাহর জন্য (= আল্লাহ প্রদত্ত সংবিধান বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রীয় কার্যাদির জন্য), আর রসূলের জন্য (= মুসলিম উম্মাহর রাজস্ব বাজেটে ব্যয়ের জন্য), আর যিল কুরবা/ (শহীদদের) আত্মীয় স্বজনদের জন্য, আর ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের জন্য, আর মিসকিনদের জন্য, আর ইবনে সাবীলের/ ছিন্নমূলদের জন্য। যদি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো আল্লাহর প্রতি আর তাহাতে (= কুরআনে) যাহা (= কুরআন) আমরা নাযিল করেছি আমাদের এক বান্দার প্রতি (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর প্রতি) ইয়াওমুল ফুরক্বানে/ সত্যমিথ্যা পার্থক্য করে দেয়ার দিনে, যেদিন দুটি সেনাবাহিনী পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৮:৪২ 

ইয = (স্মরণ করো) যখন। আনতুম = তোমরা ছিলে। বিল উদওয়াতিদ দুনইয়া = নিকটতর প্রান্তে। ওয়া = আর। হুম = তারা ছিলো। বিল উদওয়াতিল ক্বুসওয়া = দূরবর্তী প্রান্তে। ওয়ার রাকবু = আর কাফেলা ছিলো। আছফালা মিনকুম = তোমাদের চেয়ে নিম্নভূমিতে। ওয়া = আর। লাও = যদি। তাওয়াআত্তুম = তোমরা পারস্পরিক ওয়াদাক্রমে (= পরামর্শক্রমে) এটি নির্ধারণ করতে। লাখতালাফতুম = তাহলে নিশ্চয় তোমরা ইখতিলাফ/ মতানৈক্য করতে। ফিল মীয়াদ = এ মীয়াদের/ ওয়াদার (= সময় নির্ধারণের) ব্যাপারে {= পরামর্শের ভিত্তিতে পূর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে রণকৌশল নির্ধারণ করলে তোমরা এখনই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না।} ওয়ালাকিন = কিন্তু তা ঘটেছে। লিইয়াক্বদিয়াল্লাহু = এজন্য যে, যেন আল্লাহ ফায়সালা করেন। আমরান = এমন একটি ব্যাপারে। কানা মাফঊলা = যা কার্যকর হয়েছে। লিইয়ালিকা = (আর তা হচ্ছে) যেন হালাক/ ধ্বংস হয়ে যায়। মান হালাকা = যে হালাক/ ধ্বংস হওয়ার যোগ্য। আম বাইয়্যিনাতি = বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে। ওয়া = আর। ইয়াহইয়া = যেন জীবিত থাকে। মান হাইয়া = যে জীবিত থাকার যোগ্য। আম বাইয়িনাতি = বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাছামীউন আলীমুন = ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

(স্মরণ করো) যখন তোমরা ছিলে নিকটতর প্রান্তে আর তারা ছিলো দূরবর্তী প্রান্তে। আর (তাদের) কাফেলা ছিলো তোমাদের চেয়ে নিম্নভূমিতে। আর যদি তোমরা পারস্পরিক ওয়াদাক্রমে (= পরামর্শক্রমে) এটি নির্ধারণ করতে, তাহলে নিশ্চয় তোমরা ইখতিলাফ/ মতানৈক্য করতে এ মীয়াদের/ ওয়াদার (= সময় নির্ধারণের) ব্যাপারে {= পরামর্শের ভিত্তিতে পূর্ব পরিকল্পনার মাধ্যমে রণকৌশল নির্ধারণ করলে তোমরা এখনই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না।} কিন্তু তা ঘটেছে এজন্য যে, যেন আল্লাহ ফায়সালা করেন এমন একটি ব্যাপারে যা কার্যকর হয়েছে। (আর তা হচ্ছে) যেন হালাক/ ধ্বংস হয়ে যায় যে হালাক/ ধ্বংস হওয়ার যোগ্য বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে, আর যেন জীবিত থাকে যে জীবিত থাকার যোগ্য বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে। আর নিশ্চয় আল্লাহ ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

৮:৪৩ 

ইয = (স্মরণ করো) যখন। ইউরীকাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। ফিল মানামিকা = তোমার স্বপ্নের মধ্যে। ক্বালীলান = (তাদের) অল্পজনশক্তি। ওয়া = আর। লাও = যদি। আরাকাহুম = তিনি তোমাকে দেখাতেন তাদের জনশক্তি। কাছীরান = বেশি। লাফাসিলতুম = তাহলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে। ওয়া = আর। লাতানাযা’তুম = তোমরা মতবিরোধ করতে। ফিল আমরি = নির্বাহী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। ছাল্লামা = (এর মাধ্যমে তোমাদেরকে) সুষ্ঠু (সংগঠনভুক্ত) রেখেছেন। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আলীমুম বিযাতিস সুদূরি = সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের চিন্তাধারা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত। 

(স্মরণ করো) যখন আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন তোমার স্বপ্নের মধ্যে (তাদের) অল্পজনশক্তি (= তাদের বিজয়ের জন্য যা প্রয়োজন তার চেয়ে কম জনশক্তি)। আর যদি তিনি তোমাকে দেখাতেন তাদের জনশক্তি বেশি (= তোমাদের তুলনায় তাদের জনশক্তি যত বেশি হলে তারা বিজয়ী হতে পারে তত বেশি), তাহলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে। আর তোমরা মতবিরোধ করতে নির্বাহী সিদ্ধান্তের ব্যাপারে। কিন্তু আল্লাহ (এর মাধ্যমে তোমাদেরকে) সুষ্ঠু (সংগঠনভুক্ত) রেখেছেন। নিশ্চয় তিনি সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের চিন্তাধারা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত। 

৮:৪৪ 

ওয়া = আর। ইয = (স্মরণ করো) যখন। ইউরীকুমূহুম = তিনি তোমাদেরকে দেখিয়েছেন তাদের জনশক্তি। ইযিল তাক্বাইতুম = তোমাদের মুখোমুখি হবার তাৎক্ষণিক সময়ে। ফী আ’ইউনিকুম = তোমাদের চোখে। ক্বালীলান = (তারা ছিলো) অল্প। ওয়া = আর। ইউক্বাল্লিলুকুম = তোমাদের জনশক্তি অল্প হিসাবে দেখিয়েছেন। ফী আ’ইউনিহিম = তাদের চোখে। লিইয়াক্বদিয়াল্লাহু = এজন্য যে, যেন আল্লাহ ফায়সালা করেন। আমরান = এমন একটি ব্যাপারে। কানা মাফঊলা = যা কার্যকর হয়েছে। ওয়া = আর। ইলাল্লাহি = আল্লাহরই কাছে। তুরজাউল উমূরু = ফিরে যাবে সকল বিষয়। 

আর (স্মরণ করো) যখন তিনি তোমাদেরকে দেখিয়েছেন তাদের জনশক্তি, তোমাদের মুখোমুখি হবার তাৎক্ষণিক সময়ে, তোমাদের চোখে (তারা ছিলো) অল্প; আর তোমাদের জনশক্তি অল্প হিসাবে দেখিয়েছেন তাদের চোখে। এজন্য যে, যেন আল্লাহ ফায়সালা করেন এমন একটি ব্যাপারে যা কার্যকর হয়েছে। আর আল্লাহরই কাছে ফিরে যাবে সকল বিষয়। 

৮:৪৫ 

ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। লাক্বীতুম = তোমরা মুখোমুখি হও। ফিআতান = কোন সেনাদলের। ফাছবুতূ = তখন তোমরা দৃঢ় থেকো। ওয়াযকুরুল্লাহা কাছীরান = আর আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করো বেশি করে। লাআল্লাকুম তুফলিহূনা = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো। 

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা মুখোমুখি হও কোন সেনাদলের তখন তোমরা দৃঢ় থেকো, আর আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করো বেশি করে, যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো। 

৮:৪৬ 

ওয়া = আর। আতিউল্লাহা ওয়া রাসূলাহু = ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের। ওয়া = আর। লা তানাযা’তুম = তোমরা নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করো না। ফাতাফশালূ = অন্যথা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে। ওয়া = আর। তাযহাবা রীহুকুম = হারিয়ে যাবে তোমাদের শক্তি। ওয়াসবিরূ = আর তোমরা সবর করো। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। মাআস সাবিরীনা = সবরকারীদের সাথে থাকেন। 

আর ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের। আর তোমরা নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ করো না। অন্যথা তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে আর হারিয়ে যাবে তোমাদের শক্তি। আর তোমরা সবর করো। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন। 

৮:৪৭ 

ওয়া = আর। লা তাকূনূ কাল্লাযীনা = তোমরা হয়ো না তাদের মতো যারা। খারাজূ = বের হয়েছে। মিন দিয়ারিহিম = তাদের বাড়িঘর থেকে। বাতারান = দম্ভভরে। ওয়া = আর। রিআআন্নাছি = মানুষকে দেখানোর জন্য। ওয়া = আর। ইয়াসুদ্দূনা = বাধা দেয়। আন সাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা ইয়া’মালূনা = তাদের আমলসমূহে। মুহীতুন = পরিবেষ্টনকারী। 

আর তোমরা হয়ো না তাদের মতো যারা বের হয়েছে তাদের বাড়িঘর থেকে দম্ভভরে আর মানুষকে দেখানোর জন্য আর বাধা দেয় সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। আর আল্লাহ তাদের আমলসমূহকে পরিবেষ্টনকারী। 

৮:৪৮ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। যাইয়ানা = চাকচিক্যময় করেছে। লাহুমুশ শায়তানু = তাদের জন্য শয়তান। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহকে। ওয়া = আর। ক্বলা = সে বলেছে। লা গালিবা = কেউ বিজয়ী হবে না। লাকুমুল ইয়াওমা = তোমাদের উপর আজকের দিন। মিনান্নাছি = মানুষের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। জারুল্লাকুম = তোমাদের প্রতিবেশী। ফালাম্মা = তারপর যখন। তারাআতিল ফিআতানি = (যুদ্ধের ময়দানে) পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলো দুটি সেনাদলের। নাকাসা = সে সরে পড়েছে। আলা আকিবাইহি = তার দুই গোড়ালীর উপর ভর দিয়ে (= শয়তান পিছু হটে গিয়েছে)। ওয়া = আর। ক্বলা = সে (= শয়তান) বলেছে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। বারীউম মিনকুম = সম্পর্কছিন্নকারী তোমাদের থেকে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আরা = দেখছি। মা = যা। লা তারাওনা = তোমরা দেখছো না। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফুল্লাহা = আল্লাহকে ভয় করি। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। শাদীদুল ইক্বাবি = শাদীদুল ইক্বাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

আর যখন চাকচিক্যময় করেছে তাদের জন্য শয়তান তাদের আমলসমূহকে। আর সে বলেছে, ‘কেউ বিজয়ী হবে না তোমাদের উপর আজকের দিন মানুষের মধ্য থেকে আর নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতিবেশী (হিসাবে পাশে থাকবো)’। তারপর যখন (যুদ্ধের ময়দানে) পরস্পরের সাথে সাক্ষাত হলো দুটি সেনাদলের, তখন সে সরে পড়েছে তার দুই গোড়ালীর উপর ভর দিয়ে (= শয়তান পিছু হটে গিয়েছে)। আর সে (= শয়তান) বলেছে, ‘নিশ্চয় আমি সম্পর্কছিন্নকারী তোমাদের থেকে। নিশ্চয় আমি দেখছি যা তোমরা দেখছো না। নিশ্চয় আমি আল্লাহকে ভয় করি’। আর আল্লাহ শাদীদুল ইক্বাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

৮:৪৯ 

ইয = (স্মরণ করো) যখন। ইয়াক্বূলুল মুনাফিক্বূনা = বলেছে মুনাফিকগণ। ওয়াল্লাযীনা = আর তারা। ফী ক্বুলূবিহিম = যাদের কলবসমূহে আছে। মারাদুন = রোগ/ ব্যাধি। গাররা = ধোঁকা দিয়েছে। হাইলায়ি = এ লোকদেরকে (= মু’মিনদেরকে)। দীনুহুম = তাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা। ওয়া = অথচ। মাইঁ ইয়াতাওয়াক্কাল = যে তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। আযীযুন হাকীমুন = আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

(স্মরণ করো) যখন বলেছে মুনাফিকগণ আর তারা যাদের কলবসমূহে আছে রোগ/ ব্যাধি, ‘ধোঁকা দিয়েছে এ লোকদেরকে (= মু’মিনদেরকে) তাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা’। অথচ যে তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে আল্লাহর উপর, তবে নিশ্চয় আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

৮:৫০ 

ওয়া = আর। লাও = যদি। তারা = তুমি দেখতে। ইয = যখন। ইয়াতাওয়াফফাল্লাযীনা = ওফাত ঘটায়/ প্রাণ নিয়ে যায় তাদের যারা। কাফারূল মালাইকাতু = কুফর করেছে, (জান কবয করে) মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। ইয়াদরিবূনা = তখন (জান কবযের পূর্বে) ফেরেশতাগণ আঘাত করে। উজূহাহুম = তাদের মুখমন্ডলসমূহে। ওয়া = আর। আদবারাহুম = তদের পিঠসমূহে। ওয়া = আর (তাদেরকেই বলা হবে)। যুক্বূ = তোমরা আস্বাদন করো। আযাবাল হারীক্বি = আযাবুল হারীক/ দহন যন্ত্রণা। 

আর যদি তুমি দেখতে যখন ওফাত ঘটায়/ প্রাণ নিয়ে যায় তাদের যারা কুফর করেছে, (জান কবয করে) মালাইকা/ ফেরেশতাগণ, তখন (জান কবযের পূর্বে) ফেরেশতাগণ আঘাত করে তাদের মুখমন্ডলসমূহে আর তদের পিঠসমূহে। আর (তাদেরকেই বলা হবে), ‘তোমরা আস্বাদন করো আযাবুল হারীক/ দহন যন্ত্রণা’। 

৮:৫১ 

যালিকা = ইহা। বিমা ক্বাদ্দামাত আইদীকুম = তোমরা আগেই যে কাজ করে এসেছো তার কারণে। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাইছা বিযল্লামিল লিলআবিদি = তাঁর বান্দাদের প্রতি যুলুমকারী নন। 

ইহা তোমরা আগেই যে কাজ করে এসেছো তার কারণে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি যুলুমকারী নন। 

৮:৫২ 

কাদা’বি = যেমন আচরণ ছিলো। আলি ফিরআউনা = আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের অনুসারীদের। ওয়াল্লাযীনা = আর তাদের যারা ছিলো। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের পূর্বসূরী। কাফারূ = তারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। ফাআখাযাহুমুল্লাহু = সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছেন আল্লাহ। বিযুনূবিহিম = তাদের পাপের কারণে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ক্বাভীয়্যুন শাদীদুল ইক্বাবি = কাভী/ শক্তিমান ও শাদীদুল ইকাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

যেমন আচরণ ছিলো আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের অনুসারীদের আর তাদের যারা ছিলো তাদের পূর্বসূরী। তারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছেন আল্লাহ, তাদের পাপের কারণে। নিশ্চয় আল্লাহ কাভী/ শক্তিমান ও শাদীদুল ইকাব/ কঠিন শাস্তিদাতা। 

৮:৫৩ 

যালিকা = ইহা। বিআন্নাল্লাহা = এজন্য যে, আল্লাহ। লাম ইয়াকু মুগাইয়্যিরান = পরিবর্তনকারী ছিলেন না। নি’মাতান = কোন নিয়ামাতের। আনআমাহা = যা তিনি নিয়ামাত হিসাবে দিয়েছেন। আলা ক্বাওমিন = কোন কওমকে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউগাইয়্যিরু = তারা পরিবর্তন করে। মা বিআনফুসিহিম = তাদের নিজেদের নৈতিক অবস্থা। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছামীউন আলীমুন = ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

ইহা এজন্য যে, আল্লাহ পরিবর্তনকারী ছিলেন না কোন নিয়ামাতের যা তিনি নিয়ামাত হিসাবে দিয়েছেন কোন কওমকে, যতক্ষণ না তারা পরিবর্তন করে তাদের নিজেদের নৈতিক অবস্থা। আর নিশ্চয় আল্লাহ ছামী’/ সর্বশ্রোতা ও আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

৮:৫৪ 

কাদা’বি = যেমন আচরণ ছিলো। আলি ফিরআউনা = আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের অনুসারীদের। ওয়াল্লাযীনা = আর তাদের যারা ছিলো। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের পূর্বসূরী। কাযযাবূ = তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতি রব্বিহিম = তাদের রবের আয়াতসমূহকে। ফাআহলাকনাহুম = সুতরাং আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করেছি। বিযুনূবিহিম = তাদের পাপের কারণে। ওয়া = আর। আগরাক্বনা = আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি। আলা ফিরআউনা = আলে ফেরাউনকে/ ফেরাউনের অনুসারীদেরকে। ওয়া = আর। কুল্লুন কানূ যলিমীনা = তারা সবাই ছিলো যালিম। 

যেমন আচরণ ছিলো আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের অনুসারীদের আর তাদের যারা ছিলো তাদের পূর্বসূরী। তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে তাদের রবের আয়াতসমূহকে। সুতরাং আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করেছি তাদের পাপের কারণে। আর আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি আলে ফেরাউনকে/ ফেরাউনের অনুসারীদেরকে। আর তারা সবাই ছিলো যালিম। 

৮:৫৫ 

ইন্না = নিশ্চয়। শাররাদ দাওয়াব্বি ইনদাল্লাহিল্লাযীনা = আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে সেই লোকগুলো যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ফাহুম = তারপর তারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে সেই লোকগুলো যারা কুফর করেছে, তারপর তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

৮:৫৬ 

আল্লাযীনা = যাদের সাথে। আহাত্তা = তুমি আহদ/ চুক্তি করেছো। মিনহুম = তাদের মধ্য হতে। ছুম্মা = তারপর। ইয়ানক্বুদূনা = তারা ভঙ্গ করে। আহদাহুম = তাদের আহদ/ চুক্তি। ফী কুল্লি মাররাতিন = প্রত্যেক বার। ওয়া = আর। লা ইয়াত্তাক্বূনা = তারা (আল্লাহকে) ভয় করে না। 

যাদের সাথে তুমি আহদ/ চুক্তি করেছো তাদের মধ্য হতে, তারপর তারা ভঙ্গ করে তাদের আহদ/ চুক্তি প্রত্যেক বার, আর তারা (আল্লাহকে) ভয় করে না। 

৮:৫৭ 

ফাইম্মা = তাদের ক্ষেত্রে যদি। তাছক্বাফান্নাহুম = তুমি তাদেরকে আয়ত্তে পেয়ে যাও। ফিল হারবি = যুদ্ধের মধ্যে। ফাসাররিদবিহিম = তাহলে তুমি তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দাও। মান = যারা। খালফাহুম = তাদের পিছনে আছে। লাআল্লাহুম ইয়াযযাক্কারূনা = যনে তারা স্মরণ রাখতে (শিক্ষা পেতে) পারে। 

তাদের ক্ষেত্রে যদি তুমি তাদেরকে আয়ত্তে পেয়ে যাও যুদ্ধের মধ্যে, তাহলে তুমি তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দাও যারা তাদের পিছনে আছে, যেন তারা স্মরণ রাখতে (শিক্ষা পেতে) পারে। 

৮:৫৮ 

ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। তাখাফান্না = তোমরা ভয় করো। মিন ক্বাওমিন = কোন কওমের পক্ষ থেকে। খিয়ানাতান = খিয়ানাতের/ বিশ্বাসঘাতকতার। ফামবিয = তাহলে (প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে) চুক্তিকে নিক্ষেপ করো। ইলাইহিম = তাদের দিকে। আলা ছাওয়ায়িন = সমানভাবে/সরাসরি। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল খায়িনীনা = ভালোবাসেন না খিয়ানাতকারীদেরকে। 

আর যদি তোমরা ভয় করো কোন কওমের পক্ষ থেকে খিয়ানাতের/ বিশ্বাসঘাতকতার, তাহলে (প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে) চুক্তিকে নিক্ষেপ/প্রতিনিক্ষেপ করো তাদের দিকে সমানভাবে/সরাসরি। নিশ্চয় আল্লাহ ভালোবাসেন না খিয়ানাতকারীদেরকে। 

৮:৫৯ 

ওয়া = আর। লা ইয়াহছাবান্নাল্লাযীনা = তারা যেন হিসাব করে না নেয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ছাবাক্বূ = (এ হিসাব যে,) তারা সাবেক/ অগ্রবর্তী/ প্রতাপশালী হয়ে গেছে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। লা ইউ’জিজূনা = (মু’মিনদেরকে) অক্ষম করতে পারবে না। 

আর তারা যেন হিসাব করে না নেয় যারা কুফর করেছে, (এ হিসাব যে,) তারা সাবেক/ অগ্রবর্তী/ প্রতাপশালী হয়ে গেছে। নিশ্চয় তারা (মু’মিনদেরকে) অক্ষম করতে পারবে না। 

৮:৬০ 

ওয়া = আর। আয়িদ্দূ = তোমরা প্রস্তুত রাখো। লাহুম = তাদের জন্য। মাছতাতা’তুম = তোমাদের যথাসাধ্য। মিন ক্বুওয়্যাতিন = বস্তুগত শক্তি। ওয়া = আর। মির রিবাতিল খায়লি = সদাসজ্জিত অশ্বারোহী বাহিনী। তুরহিবূনা = তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে। বিহী = উহা দ্বারা। আদুওয়্যাল্লাহি = আল্লাহর শত্রুদেরকে। ওয়া = আর। আদুওয়্যাকুম = তোমাদের শত্রুদেরকে। ওয়া = আর। আখারীনা মিন দূনিহিম = তারা ছাড়াও অন্য এমন শত্রুদেরকে। লা তা’লামূনাহুম = যাদেরকে তোমরা শত্রু হিসাবে জানো না। আল্লাহু ইয়া’লামুহুম = আল্লাহ তাদেরকে (তোমাদের শত্রু হিসাবে) জানেন। ওয়া = আর। মা = যা। তুনফিক্বূ = তোমরা ইনফাক্ব/ ব্যয় করো। মিন শাইয়িন = যে কোন কিছু থেকে। ফী সাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। ইউওয়াফফা = উহার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। ইলাইকুম = তোমাদেরকে। ওয়া = আর। আনতুম = তোমাদেরকে। লা তুযলামূনা = যুলুম করা হবে না। 

আর তোমরা প্রস্তুত রাখো তাদের জন্য তোমাদের যথাসাধ্য বস্তুগত শক্তি {= (ক) অর্থনৈতিক শক্তি (খ) সামরিক বস্তুগত শক্তি তথা রাইফেল, কামান, মিসাইল, ট্যাংক, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন, সাধারণ বোমা, আণবিক বোমা ইত্যাদি (গ) প্রচার শক্তি/ ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া (ঘ) চিকিৎসাসহ অন্যান্য বৈজ্ঞানিক শক্তি}; আর সদাসজ্জিত অশ্বারোহী বাহিনী তথা সজ্জিত সামরিক বাহিনী। তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করবে উহা দ্বারা আল্লাহর শত্রুদেরকে আর তোমাদের শত্রুদেরকে আর তারা ছাড়াও অন্য এমন শত্রুদেরকে যাদেরকে তোমরা শত্রু  হিসাবে জানো না, আল্লাহ তাদেরকে (তোমাদের শত্রু হিসাবে) জানেন। আর যা তোমরা ইনফাক্ব/ ব্যয় করো যে কোন কিছু থেকে সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, উহার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে তোমাদেরকে। আর তোমাদেরকে যুলুম করা হবে না। 

৮:৬১ 

ওয়া = আর। ইন = যদি। জানাহূ = তারা বাহু (বাড়িয়ে) দেয়। লিছছালমি = শান্তিচুক্তির জন্য। ফাজনাহ = তাহলে তুমিও বাহু (বাড়িয়ে) দাও। লাহা = উহার জন্য। ওয়া = আর। তাওয়াক্কাল আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। ইন্নাহু হুয়াছ ছামীউল আলীমু = নিশ্চয় তিনিই ছামী’/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

আর যদি তারা বাহু (বাড়িয়ে) দেয় শান্তিচুক্তির জন্য, তাহলে তুমিও বাহু (বাড়িয়ে) দাও উহার জন্য। আর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। নিশ্চয় তিনিই ছামী’/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

৮:৬২ 

ওয়া = আর। ইইঁ ইয়ারিদূ = যদি তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইয়াখদাঊকা = যে, তোমাকে ধোঁকা দেবে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয়। হাছবাকাল্লাহু = তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আইয়াদাকা বিনাসরিহী = তোমার হাতকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্যের মাধ্যমে। ওয়া বিলমু’মিনীনা = আর মু’মিনদের মাধ্যমে। 

আর যদি তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে যে, তোমাকে ধোঁকা দেবে; তাহলে নিশ্চয় তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমার হাতকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর সাহায্যের মাধ্যমে আর মু’মিনদের মাধ্যমে। 

৮:৬৩ 

ওয়া = আর। আল্লাফা = তিনি জুড়ে দিয়েছেন। বায়না ক্বুলূবিহিম = তাদের (= মু’মিনদের) কলবসমূহকে। লাও = যদি। আনফাক্বতা = তুমি ইনফাক/ ব্যয় করতে। মা = যা আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। জামীআ = তার সবই। মা আল্লাফতা = তবুও তুমি জুড়ে দিতে পারতে না। বায়না ক্বূলূবিহিম = তাদের কলবসমূহকে। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। আল্লাফা বায়নাহুম = জুড়ে দিয়েছেন তাদেরকে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আযীযুন হাকীমুন = আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

আর তিনি জুড়ে দিয়েছেন তাদের (= মু’মিনদের) কলবসমূহকে। যদি তুমি ইনফাক/ ব্যয় করতে যা আছে পৃথিবীতে তার সবই, তবুও তুমি জুড়ে দিতে পারতে না তাদের কলবসমূহকে। কিন্তু আল্লাহ জুড়ে দিয়েছেন তাদেরকে। নিশ্চয় তিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

৮:৬৪ 

ইয়া আইয়ুহান্নাবীয়্যু = হে নবী। হাছবুকাল্লাহু = আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট। ওয়া = আর। মানিত্তাবায়াকা = তাদের জন্যও যারা তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের মধ্য থেকে। 

হে নবী, আল্লাহই তোমার জন্য যথেষ্ট আর তাদের জন্যও যারা তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করে, মু’মিনদের মধ্য থেকে। 

৮:৬৫ 

ইয়া আইয়ুহান্নাবীয়্যু = হে নবী। হাররিসিল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো। আলাল ক্বিতালি = কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। ইইঁ ইয়াকুম মিনকুম = যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয়। ইশরূনা = বিশজন। সবিরূনা = সবরকারী। ইয়াগলিবূ = তারা বিজয়ী হবে। মিআতাইনি = দুইশতজনের উপর। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়াকুম মিনকুম = যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয়। মিআতুন = একশত জন। ইয়াগলিবূ = তারা বিজয়ী হবে। আলফান = এক হাজার জনের উপর। মিনাল্লাযীনা কাফারূ = তাদের সাথে সংঘাতে যারা কুফর করেছে। বিআন্নাহুম = এ কারণে যে, তারা। ক্বাওমাল লা ইয়াফক্বাহূনা = এমন এক কওম, যারা ফিকহ/ সত্য উপলব্ধি করে না। 

হে নবী, মু’মিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয় বিশজন সবরকারী, তারা বিজয়ী হবে দুইশতজনের উপর। আর যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয় একশত জন, তারা বিজয়ী হবে এক হাজার জনের উপর; তাদের সাথে সংঘাতে যারা কুফর করেছে।  এ কারণে যে, তারা এমন এক কওম, যারা ফিকহ/ সত্য উপলব্ধি করে না। 

৮:৬৬ 

আলআনা = বর্তমানে। খাফফাফাল্লাহু = আল্লাহ বোঝা হালকা করে রেখেছেন। আনকুম = তোমাদের থেকে। ওয়া = আর। আলিমা = তিনি তো জানেন। আন্না = যে। ফীকুম = এখনো তোমাদের মধ্যে আছে। দ’ফান = দুর্বলতা। ফাইইঁ ইয়াকুম মিনকুম = সুতরাং এখন যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয়। মিআতুন = একশতজন। সবিরাতুন = সবরকারী। ইয়াগলিবূ = তারা বিজয়ী হবে। মিআতাইনি = দুইশতজনের উপর। ওয়া = আর। ইয়াকুম মিনকুম = যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয়। আলফুন = এক হাজার জন। ইয়াগলিবূ = তারা বিজয়ী হবে। আলফাইনি = দুই হাজার জনের উপর। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। মাআস সবিরীনা = সবরকারীদের সাথে থাকেন। 

বর্তমানে আল্লাহ বোঝা হালকা করে রেখেছেন তোমাদের থেকে। আর তিনি তো জানেন যে, এখনো তোমাদের মধ্যে আছে দুর্বলতা। সুতরাং এখন যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয় একশতজন সবরকারী, তারা বিজয়ী হবে দুইশতজনের উপর; আর যদি তোমাদের মধ্য থেকে হয় এক হাজার জন, তারা বিজয়ী হবে দুই হাজার জনের উপর; আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন। 

৮:৬৭ 

মা কানা লিনাবিয়্যিন = নবীর জন্য সঙ্গত নয়। আইঁ ইয়াকূনা লাহু আছরা = যে, তার কাছে থাকবে কোন যুদ্ধবন্দী (= সে যুদ্ধে শত্রুকে বন্দী করা শুরু করবে)। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউছখিনা = সে (শত্রুদেরকে) আচ্ছামতো ধোলাই দেবে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। তুরীদূনা = তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করো। আরাদাদ্দুনইয়া = দুনিয়ার সম্পদ পেতে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউরীদুল আখিরাতা = এরাদা/ ইচ্ছা করেন আখিরাত দিতে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আযীযুন হাকীমুন = আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

নবীর জন্য সঙ্গত নয় যে, তার কাছে থাকবে কোন যুদ্ধবন্দী (= সে যুদ্ধে শত্রুকে বন্দী করা শুরু করবে), যতক্ষণ না সে (শত্রুদেরকে) আচ্ছামতো ধোলাই দেবে, পৃথিবীতে (= রণাঙ্গনে/ যুদ্ধের ময়দানে)। তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করো দুনিয়ার সম্পদ পেতে (তথা মুক্তিপণ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা)। আর আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন আখিরাত দিতে। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

৮:৬৮ 

লাও = যদি। লা কিতাবুম মিনাল্লাহি = আল্লাহর বিধান না থাকতো। ছাবাক্বা = পূর্ব থেকে। লামাছছামাকুম = তাহলে তোমাদেরকে স্পর্শ করতো। ফীমা = সেই ব্যাপারে যা। আখাযতুম = তোমরা নিয়েছো। আযাবুন আযীম = (স্পর্শ করতো) আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি। 

যদি আল্লাহর বিধান না থাকতো পূর্ব থেকে {= ৪৭:৪ মুক্তিপণের বিধান), তাহলে তোমাদেরকে স্পর্শ করতো সেই ব্যাপারে যা তোমরা নিয়েছো, (স্পর্শ করতো) আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।

৮:৬৯ 

ফাকুলূ = সুতরাং তোমরা খাও। মিম্মা গানিমতুম = তোমরা মাগানিম/গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ থেকে যা পেয়েছো তা। হালালান তাইয়্যিবান = হালালান তাইয়িবান/ বৈধ ও পবিত্র হিসাবে। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

সুতরাং তোমরা খাও তোমরা মাগানিম/গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ থেকে যা পেয়েছো তা; হালালান তাইয়িবান/ বৈধ ও পবিত্র হিসাবে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

৮:৭০ 

ইয়া আইয়ুহান্নাবিয়্যু = হে নবী। ক্বুল = বলো। লিমান = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা। ফী আইদীকুম = তোমাদের করায়ত্ত আছে। মিনাল আছরা = যুদ্ধবন্দী হিসাবে। ইইঁ ইয়া’লামিল্লাহু = যদি আল্লাহ জেনে থাকেন। ফী ক্বুলূবিকুম = তোমাদের কলবসমূহের ব্যাপারে। খায়রান = কোন কল্যাণ। ইউ’তিকুম = তাহলে তিনি তোমাদেরকে দিবেন। খায়রান = আরো উত্তম। মিম্মা = তা থেকেও যা। উখিযা = নেয়া হয়েছে। মিনকুম = তোমাদের থেকে। ওয়া = আর। ইয়াগফির লাকুম = তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফুরুর রহীমুন = গফুর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

হে নবী, বলো তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা তোমাদের করায়ত্ত আছে যুদ্ধবন্দী হিসাবে, ‘যদি আল্লাহ জেনে থাকেন তোমাদের কলবসমূহের ব্যাপারে, (তাতে আছে) কোন কল্যাণ, তাহলে তিনি তোমাদেরকে দিবেন আরো উত্তম তা থেকেও যা নেয়া হয়েছে তোমাদের থেকে, আর তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ গফুর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল’। 

৮:৭১ 

ওয়া = আর। ইইঁ ইউরীদূ = যদি তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। খিয়ানাতাকা = তোমার সাথে খিয়ানাত/ বিশ্বাসঘাতকতা করতে। ফাক্বাদ = তাহলে (তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ) নিশ্চয়। খানূল্লাহ = তারা তো খিয়ানাত/ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আল্লাহর সাথে। মিন ক্বাবলু = এর আগেই। ফাআমকানা = তাই তিনি তোমাদেরকে শক্তিশালী করে দিয়েছেন। মিনহুম = তাদের উপর। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলীমুন হাকীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

আর যদি তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে তোমার সাথে খিয়ানাত/ বিশ্বাসঘাতকতা করতে, তাহলে (তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই, কারণ) নিশ্চয় তারা তো খিয়ানাত/ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আল্লাহর সাথে এর আগেই। তাই তিনি তোমাদেরকে শক্তিশালী করে দিয়েছেন তাদের উপর। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। 

৮:৭২ 

ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। হাজারূ = হিজরত করেছে। ওয়া = আর। জাহাদূ = জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে। বিআমওয়ালিহিম ওয়া আনফুসিহিম = তাদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে। ফী সাবিলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আওয়াও = তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। ওয়া = আর। নাসারূ = তাদেরকে সাহায্য করেছে। উলায়িকা = তারাই। বা’দুহুম আওলিয়াউ বা’দিন = একে অপরের আওলিয়া/ বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = কিন্তু। লাম ইউহাজারূ = (হিজরতের সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও কোন কারণে) হিজরত করেনি। মা লাকুম = তোমাদের উপর নেই। মিওঁ ওয়ালাইয়াতিহিম = তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব। মিন শাইয়িন = কোন কিছুতেই। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউহাজিরূ = তারা হিজরাত করে। ওয়া = তবে। ইনিছতানসরূকুম = যদি তারা তোমাদের কাছে সাহায্য চায়। ফিদ দ্বীনি = দ্বীন পালনের ব্যাপারে। ফাআলাকুমুন্নাছরু = তাহলে তোমাদের উপর দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে সাহায্য করা। ইল্লা আলা ক্বাওমিন = এমন কওমের বিরুদ্ধে ছাড়া। বায়নাকুম ওয়া বায়নাহুম = তোমাদের ও যাদের মধ্যে আছে। মীছাক্ব = মীছাক/ চুক্তি। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা বাসীরুন = তোমাদের আমলের প্রতি বাসীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)। 

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর হিজরত করেছে আর জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে তাদের সম্পদ ও জীবন দিয়ে সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, আর যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে আর তাদেরকে সাহায্য করেছে; তারাই একে অপরের আওলিয়া/ বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক। আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে কিন্তু (হিজরতের সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও কোন কারণে) হিজরত করেনি, তোমাদের উপর নেই তাদের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব, কোন কিছুতেই; যতক্ষণ না তারা হিজরাত করে। তবে যদি তারা তোমাদের কাছে সাহায্য চায় দ্বীন পালনের ব্যাপারে, তাহলে তোমাদের উপর দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে সাহায্য করা; এমন কওমের বিরুদ্ধে ছাড়া তোমাদের ও যাদের মধ্যে আছে মীছাক/ চুক্তি। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের প্রতি বাসীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)। 

৮:৭৩ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বা’দুহুম আওলিয়াআ বা’দুন = তারা একে অপরের আওলিয়া/ বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক। ইল্লা তাফআলূহু = তোমরা উহা (= মু’মিনদের মধ্যকার পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা স্থাপন) করা ছাড়া। তাকুন ফিতনাতু = ফিতনা/ অনাচার সৃষ্টি হবে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর (সৃষ্টি হবে)। ফাসাদুন কাবীরুন = বড় ধরনের ফাসাদ/ বিপর্যয়। 

আর যারা কুফর করেছে তারা একে অপরের আওলিয়া/ বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষক। তোমরা উহা (= মু’মিনদের মধ্যকার পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা স্থাপন) করা ছাড়া, ফিতনা/ অনাচার সৃষ্টি হবে পৃথিবীতে, আর (সৃষ্টি হবে) বড় ধরনের ফাসাদ/ বিপর্যয়। 

৮:৭৪ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। হাজারূ = হিজরাত করেছে। ওয়া = আর। জাহাদূ = জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে। ফী সাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আওয়াও = তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে। ওয়া = আর। নাসারূ = তাদেরকে সাহায্য করেছে। উলায়িকা হুমুল মু’মিনূনা হাক্বক্বান = তারাই হক্কানী মু’মিন/ যথাযথ মু’মিন। লাহুম = তাদের জন্য আছে। মাগফিরাতুন = ক্ষমা। ওয়া = আর। রিযক্বুন কারীমুন = সম্মানজনক রিযিক/ জীবিকা। 

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর হিজরাত করেছে আর জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, আর যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে আর তাদেরকে সাহায্য করেছে; তারাই হক্কানী মু’মিন/ যথাযথ মু’মিন। তাদের জন্য আছে ক্ষমা আর সম্মানজনক রিযিক/ জীবিকা। 

৮:৭৫ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। মিম বা’দু = পরবর্তীতে। ওয়া = আর। হাজারূ = হিজরাত করেছে। ওয়া = আর। জাহাদূ = জিহাদ করেছে। মাআকুম = তোমাদের সাথে। ফাউলায়িকা মিনকুম = তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। ওয়া = আর। উলুল আরহামি = (যারা) গর্ভ সম্পর্কিত আত্মীয়/ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়। বা’দুহুম আওলা বিবা’দিন = তারাই একে অপরের প্রতি অধিক সংশ্লিষ্ট। ফী কিতাবিল্লাহি = আল্লাহর কিতাব অনুসারে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিকুল্লি সাইয়িন = প্রত্যেক বিষয়ের ক্ষেত্রে। আলীমুন = আলীম/ জ্ঞানী। 

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে পরবর্তীতে, আর হিজরাত করেছে, আর জিহাদ করেছে তোমাদের সাথে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আর (যারা) গর্ভ সম্পর্কিত আত্মীয়/ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়, তারাই একে অপরের প্রতি আওলা (অধিক সংশ্লিষ্ট); আল্লাহর কিতাব অনুসারে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ের ক্ষেত্রে আলীম/ জ্ঞানী। 

সমাপ্ত