কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

007. সূরা আরাফ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৭:১ 

আলিফ লাম মীম সদ = আলিফ লাম মীম সদ। 

আলিফ লাম মীম সদ। 

৭:২ 

কিতাবুন = এই কিতাব। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ফালা ইয়াকুন = সুতরাং যেন না হয়। ফী সদরিকা = তোমার সদরে/ মস্তিষ্কে। হারাজুম মিনহু = উহার বিষয়ে কোন কুণ্ঠা-সংকোচ (দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ভয়-ভীতি)। লিতুনযিরা বিহী = তা দিয়ে সতর্ক করতে। ওয়া = আর ইহা। যিকরা লিল মু’মিনীনা = যিকরা লিল মু’মিনীন/ মু’মিনদের জন্য যিকর, স্মরণিকা, সংবিধান। 

এই কিতাব নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। সুতরাং যেন না হয় তোমার সদরে/ মস্তিষ্কে উহার বিষয়ে কোন কুণ্ঠা-সংকোচ (দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ভয়-ভীতি), তা দিয়ে সতর্ক করতে। আর ইহা (= আল কুরআন) যিকরা লিল মু’মিনীন (মু’মিনদের জন্য যিকির, স্মরণিকা, সংবিধান)। 

৭:৩ 

ইত্তাবিউ = তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। মা = যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকুম = তোমাদের প্রতি। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিঊ = তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। মিন দূনিহি = উহা ছাড়া। আওলিয়াআ = আওলিয়াকে/ ওলিদেরকে। ক্বালীলাম মা তাযাক্কারূনা = কিন্তু তোমরা অল্পই যিকর/ স্মরণ রেখে থাকো। 

তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (= আল কুরআন)। আর তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না উহা ছাড়া আওলিয়াকে/ ওলিদেরকে। কিন্তু তোমরা অল্পই যিকর/ স্মরণ রেখে থাকো। 

৭:৪ 

ওয়া = আর। কাম = কত যে। মিন ক্বারইয়াতিন = জনপদ। আহলাকনাহা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি। ফাজাআহা = উহার উপর এসেছে। বা’ছুনা = আমাদের শাস্তি। বায়াতান = রাতের বেলায়। আও = অথবা। হুম = যখন তারা ছিলো। ক্বায়িলূনা = দিনের বেলায় বিশ্রাম গ্রহণকারী। 

আর কত যে জনপদ আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি, উহার উপর এসেছে আমাদের শাস্তি রাতের বেলায় অথবা যখন তারা ছিলো দিনের বেলায় বিশ্রাম গ্রহণকারী। 

৭:৫ 

ফামা কানা দা’ওয়াহুম = তখন তাদের আর্তনাদ ছিলো না। ইয = যখন। জাআহুম = তাদের কাছে এসেছে। বা’ছুনা = আমাদের শাস্তি। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। ক্বলূ = তারা বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। কুন্না যালিমূনা = যালিম ছিলাম। 

তখন তাদের আর্তনাদ ছিলো না, যখন তাদের কাছে এসেছে আমাদের শাস্তি, এছাড়া যে, তারা বলেছে নিশ্চয় আমরা যালিম ছিলাম। 

৭:৬ 

ফালানাছআলান্নাল্লাযীনা = সুতরাং নিশ্চয় আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো। উরছিলা = রসূল প্রেরণ করা হয়েছে। ইলাইহিম = যাদের প্রতি। ওয়া = আর। লানাছআলান্নাল মুরছালীনা = নিশ্চয় আমরা জিজ্ঞাসা করবো রসূলদেরকেও। 

 সুতরাং নিশ্চয় আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করবো রসূল প্রেরণ করা হয়েছে যাদের প্রতি। আর নিশ্চয় আমরা জিজ্ঞাসা করবো রসূলদেরকেও। 

৭:৭ 

ফালানাক্বুসসান্না = তারপর আমরা ঘটনাসমূহ বর্ণনা করবো। আলাইহিম = তাদের কাছে। বিইলমিন = পূর্ণজ্ঞানের ভিত্তিতে। ওয়া = আর। মা কুন্না = আমরা ছিলাম না। গায়িবীনা = গায়েব/ অনুপস্থিত। 

তারপর আমরা ঘটনাসমূহ বর্ণনা করবো তাদের কাছে পূর্ণজ্ঞানের ভিত্তিতে। আর আমরা ছিলাম না গায়েব/ অনুপস্থিত। 

৭:৮ 

ওয়াল ওয়াজনু ইয়াওমায়িযিনিল হাক্বক্বু = আর সেদিনের ওজন/ মূল্যমান নিরূপণ/ পরিমাপ হবে যথাযথ পদ্ধতিতে। ফামান ছাক্বুলাত মাওয়াযিনুহু = সুতরাং যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান বেশি হবে)। ফাউলায়িকা হুমুল মুফলিহুন = তারাই মুফলিহূন/ সফলতা লাভকারী। 

 আর সেদিনের ওজন/ মূল্যমান নিরূপণ/ পরিমাপ হবে যথাযথ পদ্ধতিতে (= গুরুত্বের ভিত্তিতে)। সুতরাং যার পাল্লাসমূহ ভারী হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান বেশি হবে), তারাই মুফলিহূন/ সফলতা লাভকারী। 

৭:৯ 

ওয়া = আর। মান খাফফাত মাওয়াযিনূহু = যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান শূন্য বা তার চেয়ে কম হবে)। ফাউলায়িকাল্লাযীনা খাছিরূ আনফুসাহুম = তারাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে নিজেদেরকে। বিমা কানূ বিআয়াতিনা ইয়াযলিমূনা = কারণ তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি যুলুম করতো। 

আর যার পাল্লাসমূহ হালকা হবে (= কর্মসমূহের মূল্যমান শূন্য বা তার চেয়ে কম হবে), তারাই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে নিজেদেরকে, কারণ তারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি যুলুম করতো (= আয়াতসমূহকে অমান্য করতো)।  

৭:১০ 

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। মাক্কান্নাকুম ফিল আরদি = আমরা তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি/ বসবাসের স্থান দিয়েছি। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা সৃষ্টি করেছি। লাকুম = তোমাদের জন্য। ফীহা = উহাতে। মাআয়িশা = জীবিকা নির্বাহের উপায়সমূহ। ক্বালীলাম মা তাশকুরূনা = কিন্তু তোমরা অল্পই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। 

আর নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছি/ বসবাসের স্থান দিয়েছি, আর আমরা সৃষ্টি করেছি তোমাদের জন্য উহাতে জীবিকা নির্বাহের উপায়সমূহ। কিন্তু তোমরা অল্পই শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো। 

৭:১১ 

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। খালাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। ছুম্মা = তারপর। ছওয়ারনাকুম = আমরা তোমাদেরকে (মানুষের) আকৃতিদান করেছি। ছুম্মা = তারপর (এক পর্যায়ে)। ক্বুলনা লিলমালায়িকাতিছজুদূ লিআদামা = আমরা মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে বলেছি, ‘আদমের প্রসঙ্গে সিজদা করো’। ফাছাজাদূ = তখন তারা সকলে সিজদা করেছে। ইল্লা ইবলিস = কিন্তু ইবলিস। লাম ইয়াকুম মিনাস সাজিদীনা = সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়নি (যখন জ্বিনদের প্রতিও ঐ আদেশ কার্যকর হয়েছিলো)। 

আর নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। তারপর আমরা তোমাদেরকে (মানুষের) আকৃতিদান করেছি। তারপর (এক পর্যায়ে)। আমরা মালাইকাকে/ ফেরেশতাদেরকে বলেছি, ‘আদমের প্রসঙ্গে সিজদা করো’। তখন তারা সকলে সিজদা করেছে। কিন্তু ইবলিস সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়নি (যখন জ্বিনদের প্রতিও ঐ আদেশ কার্যকর হয়েছিলো)। 

৭:১২ 

ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। মা মানাআকা = কিসে তোমাকে মানা করেছে। আল্লা তাছজুদা = যে, তুমি সিজদা করনি। ইয = যখন। আমারতুকা = আমিই তোমাকে আদেশ দিয়েছি। ক্বলা = সে বলেছে। আনা খায়রুম মিনহু = আমি তার চেয়ে উত্তম। খালাক্বতানী = আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। মিন নারিন = আগুন থেকে। ওয়া = আর। খালাক্বতাহু = আপনি তাকে সৃষ্টি করেছেন। মিন তীনিন = মাটি থেকে। 

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘কিসে তোমাকে মানা করেছে যে, তুমি সিজদা করনি, যখন আমিই তোমাকে আদেশ দিয়েছি? সে বলেছে, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে। আর আপনি তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে’।  

৭:১৩ 

ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। ফাহবিত মিনহা = তাহলে তুমি উহা থেকে চলে যাও। ফামা ইয়াকূনা লাকা = তোমার কোন অধিকার নেই। আন = যে। তাতাকাব্বারা ফীহা = তুমি উহার ব্যাপারে অহংকার করবে। ফাখরুজ = সুতরাং তুমি বেরিয়ে যাও। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। মিনাস সগিরীনা = অধমদের অন্তর্ভুক্ত। 

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তাহলে তুমি উহা থেকে (= জান্নাত থেকে) চলে যাও। তোমার কোন অধিকার নেই যে, তুমি উহার ব্যাপারে অহংকার করবে। সুতরাং তুমি বেরিয়ে যাও। নিশ্চয় তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:১৪ 

ক্বলা = সে বলেছে। আনযিরনী = আমাকে অবকাশ দিন। ইলা ইয়াওমিল ইউবআছূনা = ইয়াওমুল ইউবআছূন/ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। 

সে বলেছে, ‘আমাকে অবকাশ দিন ইয়াওমুল ইউবআছূন/ পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত’। 

৭:১৫ 

ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। মিনাল মুনযারীনা = অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। 

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:১৬ 

ক্বলা = সে বলেছে। ফাবিমা = যেহেতু। আগওয়াতানী = আপনি আমাকে প্রবঞ্চিত করেছেন। লাআ’ক্বুদান্না = সেহেতু আমি বসে থাকবো। লাহুম = তাদের জন্য (= তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য)। সিরাতাকাল মুসতাকীমা = আপনার সিরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে। 

সে বলেছে, ‘যেহেতু আপনি আমাকে প্রবঞ্চিত করেছেন, সেহেতু আমি বসে থাকবো তাদের জন্য (= তাদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য) আপনার সিরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে’। 

৭:১৭ 

ছুম্মা = তারপর। লাআতিয়ান্নাহুম = আমি তাদের কাছে আসবো। মিন বায়নি আয়দীহিম = তাদের সামনে থেকে। ওয়া মিন খালফিহিম = আর তাদের পিছন থেকে। ওয়া আন আইমানিহিম = আর তাদের ডানদিক থেকে। ওয়া আন শামায়িলিহিম = আর তাদের বামদিক থেকে। ওয়া = আর। লা তাজিদু = আপনি পাবেন না। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশকে। শাকিরীনা = শোকরকারী/ কৃতজ্ঞ হিসাবে। 

তারপর আমি তাদের কাছে আসবো তাদের সামনে থেকে আর তাদের পিছন থেকে আর তাদের ডানদিক থেকে আর তাদের বামদিক থেকে। আর আপনি পাবেন না তাদের অধিকাংশকে শোকরকারী/ কৃতজ্ঞ হিসাবে। 

৭:১৮ 

ক্বলাখরুজু = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘বেরিয়ে যাও। মিনহা = উহা থেকে। মাযঊমান = ধিকৃতরূপে/ লাঞ্চিতরূপে। মাদহূরান = ও বিতাড়িতরূপে। লামান = নিশ্চয় যে। তাবিয়াকা = তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। লাআমলাআন্না = নিশ্চয় আমি পুর্ণ করবো। জাহান্নামা = জাহান্নামকে। মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার। আজমাঈনা = সকলকে দিয়ে। 

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘বেরিয়ে যাও। উহা থেকে (= জান্নাত থেকে) ধিকৃতরূপে/ লাঞ্চিতরূপে ও বিতাড়িতরূপে। নিশ্চয় যে তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে তাদের মধ্য থেকে, নিশ্চয় আমি পুর্ণ করবো জাহান্নামকে তোমাদের মধ্যকার সকলকে দিয়ে’। 

৭:১৯ 

ওয়া = আর। ইয়া আদামুছকুন = হে আদম, বসবাস করো। আনতা = তুমি। ওয়া = আর। যাওজুকাল জান্নাতা = তোমার স্ত্রী জান্নাতে। ফাকুলা = সেই সাথে তোমরা দুজন খাও। মিন হাইছু = যেখান থেকে। সি’তুমা = তোমরা দুজন খেতে ইচ্ছা করো। ওয়া = কিন্তু। লা তাক্বরুবা = তোমরা দুজনে নিকটেও যেও না। হাযিহিশ শাজারাতা = এই গাছটির। ফাতাকূনা = গেলে তোমরা দুজনে হয়ে যাবে। মিনায যলিমীনা = যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। 

‘আর হে আদম, বসবাস করো তুমি আর তোমার স্ত্রী জান্নাতে। সেই সাথে তোমরা দুজন খাও যেখান থেকে তোমরা দুজন খেতে ইচ্ছা করো। কিন্তু তোমরা দুজনে নিকটেও যেও না এই গাছটির, গেলে তোমরা দুজনে হয়ে যাবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:২০ 

ফাওয়াছওয়াছা = তারপর ওয়াসওয়াসা/ প্ররোচনা দিয়েছে। লাহুমাশ শায়তানু = তাদের দুজনকে, (প্ররোচনা দিয়েছে) শয়তান। লিইউবদিয়া = প্রকাশ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে। লাহুমা = তাদের দুজনের। মা উরিয়া = যা গোপন রাখা হয়েছিলো। আনহুমা = তাদের দুজনের থেকে। ছাওআতিহিমা = (অর্থাৎ) তাদের দুজনের দেহ। ওয়া = আর। ক্বলা = সে (= শয়তান) বলেছে। মা নাহাকুমা = তোমাদের দুজনকে নিষেধ করেননি। রব্বুকুমা = তোমাদের দুজনের রব। আন হাযিরিহিশ শাজারাতি = এই গাছটির ব্যাপারে। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। তাকুনা = তোমরা দুজন হয়ে যাবে। মালাকাইনি = দুইজন মালাক/ ফেরেশতা। আও = অথবা। তাকূনা = তোমরা দুজন হয়ে যাবে। মিনাল খালিদীনা = স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত। 

তারপর ওয়াসওয়াসা/ প্ররোচনা দিয়েছে তাদের দুজনকে, (প্ররোচনা দিয়েছে) শয়তান; প্রকাশ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের দুজনের যা গোপন রাখা হয়েছিলো তাদের দুজনের থেকে, (অর্থাৎ) তাদের দুজনের দেহ। আর সে (= শয়তান) বলেছে, ‘তোমাদের দুজনকে নিষেধ করেননি তোমাদের দুজনের রব এই গাছটির ব্যাপারে, এছাড়া যে, তোমরা দুজন হয়ে যাবে দুইজন মালাক/ ফেরেশতা, অথবা তোমরা দুজন হয়ে যাবে স্থায়ীদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:২১ 

ওয়া = আর। ক্বাছামাহুমা = সে তাদের দুজনের কাছে কসম করে বলেছে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লাকুমা = তোমাদের দুজনের জন্য। লামিনাছ নাছিহীনা = কল্যাণকামীদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর সে তাদের দুজনের কাছে কসম করে বলেছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের দুজনের জন্য কল্যাণকামীদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:২২ এর অন্তর্ভুক্ত: ফাদাল্লাহুমা = তারপর সে তাদের দুজনকে অধ:পতিত করে ফেলেছে। বিগুরূরিন = ধোঁকাবাজির মাধ্যমে। ফালাম্মা = তারপর যখন। যাক্বাশ শাজারাতা = তারা দুজন গাছটির স্বাদ আস্বাদন করেছে। বাদাত = তখন প্রকাশ পেয়ে গেছে। লাহুমা = তাদের দুজনের কাছে। ছাওআতুহুমা = তাদের দুজনের দেহ। ওয়া = আর। তফিক্বা ইয়াখসিফানি = তারা দুজনে আবৃত করতে শুরু করেছে। আলাইহিমা = তাদের দুজনের উপর। মিওঁ ওয়ারিক্বিল জান্নাতি = জান্নাতের পাতা। ওয়া = আর। নাদাহুমা = তাদের দুজনকে ডাক দিয়ে বলেছেন। রব্বুহুমা = তাদের দুজনের রব। আলাম আনহাকুমা = আমি কি তোমাদের দুজনকে নিষেধ করিনি। আন তিলকুমাশ শাজারাতি = এই গাছটির ব্যাপারে। ওয়া = আর। আক্বুল লাকুমা = আমি কি তোমাদের দুজনকে বলিনি। ইন্নাশ শায়তানা = নিশ্চয় শয়তান। লাকুমা = তোমাদের দুজনের জন্য। আদুউউম মুবীনুন = প্রকাশ্য শত্রু। 

তারপর সে তাদের দুজনকে অধ:পতিত করে ফেলেছে ধোঁকাবাজির মাধ্যমে। তারপর যখন তারা দুজন গাছটির স্বাদ আস্বাদন করেছে তখন প্রকাশ পেয়ে গেছে তাদের দুজনের কাছে তাদের দুজনের দেহ। আর তারা দুজনে আবৃত করতে শুরু করেছে তাদের দুজনের উপর জান্নাতের পাতা। আর তাদের দুজনকে ডাক দিয়ে বলেছেন তাদের দুজনের রব, “আমি কি তোমাদের দুজনকে নিষেধ করিনি এই গাছটির ব্যাপারে আর আমি কি তোমাদের দুজনকে বলিনি, ‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের দুজনের জন্য প্রকাশ্য শত্রু’”?  

৭:২৩ 

ক্বলা = তারা দুজনে বলেছে। রব্বানা = হে আমাদের রব। যলামনা = আমরা যুলুম করেছি। আনফুছানা = আমাদের নিজেদের উপর। ওয়া = আর। ইল্লাম তাগফিরলানা = যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন। ওয়া = আর। তারহামনা = আমাদেরকে দয়া না করেন। লানাকূনান্না = তাহলে আমরা হয়ে যাবো। মিনাল খাছিরীনা = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। 

তারা দুজনে বলেছে, ‘হে আমাদের রব, আমরা যুলুম করেছি আমাদের নিজেদের উপর। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন আর আমাদেরকে দয়া না করেন, তাহলে আমরা হয়ে যাবো ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:২৪ 

ক্বলাহবিতূ = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, তোমরা চলে যাও। বা’দুকুম লিবা’দিন আদুউউন = তোমাদের একে অপরের শত্রু। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য থাকবে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মুছতাক্বাররুন = কিছু কালের অবস্থান। ওয়া = আর। মাতাউন ইলা হীনিন = জীবিকা সামগ্রী কিছুকাল পর্যন্ত। 

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা চলে যাও। তোমাদের একে অপরের শত্রু। আর তোমাদের জন্য থাকবে পৃথিবীতে কিছু কালের অবস্থান আর জীবিকা সামগ্রী কিছুকাল পর্যন্ত’। 

৭:২৫ 

ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) আরো বলেছেন। ফীহা = উহাতে। তাহইয়াওনা = তোমরা জীবন যাপন করবে। ওয়া = আর। ফীহা = উহাতে। তামূতূনা = তোমরা মৃত্যুবরণ করবে। ওয়া = আর। মিনহা = উহা থেকেই। তুখরাজূনা = তোমাদেরকে বাহির করা হবে। 

তিনি (= আল্লাহ) আরো বলেছেন, ‘উহাতে তোমরা জীবন যাপন করবে আর উহাতে তোমরা মৃত্যুবরণ করবে আর উহা থেকেই তোমাদেরকে বাহির করা হবে’।

৭:২৬ 

ইয়া বানী আদামা = হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান। ক্বাদ = নিশ্চয়। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। লিবাছাইঁ ইউওয়ারী ছাওআতিকুম = পোশাক, তোমাদের দেহ (বিশেষত লজ্জাস্থান) ঢাকতে। ওয়া রীশান = আর আবহাওয়া উপযোগী শোভাবর্ধকরূপে। ওয়া লিবাসুত তাকওয়া = আর তাকওয়ার পোশাক (= তাকওয়া অনুশীলনের পোশাক)। যালিকা খায়রুন = উহাই উত্তম। যালিকা = উহা (= পোশাক)। মিন আয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত। লাআল্লাহুম ইয়াযযাক্কারূনা = যেন তোমরা যিকির/ স্মরণ করতে পারো। 

হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান, নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তোমাদের উপর পোশাক, তোমাদের দেহ (বিশেষত লজ্জাস্থান) ঢাকতে আর আবহাওয়া উপযোগী শোভাবর্ধকরূপে। আর তাকওয়ার পোশাক (= তাকওয়া অনুশীলনের পোশাক), উহাই উত্তম। উহা (= পোশাক) আল্লাহর আয়াতসমূহের অন্তর্ভুক্ত, যেন তোমরা যিকির/ স্মরণ করতে পারো। 

৭:২৭ 

ইয়া বানী আদামা = হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান। লা ইয়াফতিনান্নাকুম = শয়তান তোমাদেরকে যেন ফিতনায়/ দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ফেলে। কামা = যেমনভাবে। আখরাজা = সে বের করেছিলো। আবাওয়ায়কুম = তোমাদের পিতামাতাকে। মিনাল জান্নাতি = জান্নাত থেকে। ইয়ানযিঊ = খুলে ফেলার মাধ্যমে। আনহুমা = তাদের দুজনের থেকে। লিবাছাহুমা = তাদের দুজনের পোশাক। লিইউরিয়াহুমা = তাদের দুজনকে দেখানোর জন্য। ছাওআতিহিমা = তাদের দুজনের দেহ (= একজনকে আরেকজনের দেহ দেখানোর জন্য)। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। ইয়ারাকুম = তোমাদেরকে দেখে। হুয়া = সে নিজে। ওয়া = আর। ক্বাবীলুহু = তার কবীলা/ দলবল। মিন হাইছু = (এমন জায়গা থেকে) যেখান থেকে। লা তারাওনাহুম = তোমরা তাদেরকে দেখো না। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। জাআলনাশ শায়াতীনা = শয়তানদেরকে বানিয়েছি। আওলিয়াআ লিল্লাযীনা = তাদের জন্য আওলিয়া/ অভিভাবক যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান, শয়তান তোমাদেরকে যেন ফিতনায়/ দ্বিধাদ্বন্দ্বে না ফেলে, যেমনভাবে সে বের করেছিলো তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে, খুলে ফেলার মাধ্যমে তাদের দুজনের থেকে তাদের দুজনের পোশাক, তাদের দুজনকে দেখানোর জন্য তাদের দুজনের দেহ (= একজনকে আরেকজনের দেহ দেখানোর জন্য)। নিশ্চয় সে তোমাদেরকে দেখে, সে নিজে আর তার কবীলা/ দলবল, (এমন জায়গা থেকে) যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখো না। নিশ্চয় আমরা শয়তানদেরকে বানিয়েছি তাদের জন্য আওলিয়া/ অভিভাবক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

৭:২৮ 

ওয়া = আর। ফাআলূ ফাহিশাতান = যখন তারা কোন ফাহেশা/ অশ্লীল কাজ করে। ক্বলূ = তখন তারা বলে। ওয়াজাদনা = আমরা পেয়েছি। আলাইহা = উহার উপর। আবাআনা = আমাদের বাপদাদাকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আমারানা বিহা = আমাদেরকে উহার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। ক্বুল = বলো। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়া’মুরু = নির্দেশ দেন না। বিল ফাহশায়ি = ফাহেশা/ অশ্লীল কাজের জন্য। আতাক্বূলূনা = তোমরা কি বলছো। আলাল্লাহি = আল্লাহর সম্বন্ধে। মা লা ত’লামূনা = (এমন কথা) যা (আল্লাহ বলেছেন কিনা তা) তোমরা জানো না। 

আর যখন তারা কোন ফাহেশা/ অশ্লীল কাজ করে, তখন তারা বলে, ‘আমরা পেয়েছি উহার উপর আমাদের বাপদাদাকে। আর আল্লাহ আমাদেরকে উহার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন’। বলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ নির্দেশ দেন না ফাহেশা/ অশ্লীল কাজের জন্য’। তোমরা কি বলছো আল্লাহর সম্বন্ধে (এমন কথা) যা (আল্লাহ বলেছেন কিনা তা) তোমরা জানো না।

৭:২৯ 

ক্বুল = বলো। আমারা রব্বী = আমার রব আদেশ করেছেন। বিল ক্বিছতি = ন্যায়বিচার করার জন্য। ওয়া = আর। আক্বিমূ = তোমরা কায়েম/ স্থির রাখো। উজূহাকুম = তোমাদের লক্ষ্য। ইনদা কুল্লি মাসজিদিন = প্রত্যেক মাসজিদের অনুকূলে। ওয়াদউহু = আর তাঁকে (= আল্লাহকে) ডাকো। মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা = তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে নিয়ে। কামা = যেভাবে। বাদাআকুম = তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাউদূনা = সেভাবে তোমরা ফিরে আসবে। 

বলো, ‘আমার রব আদেশ করেছেন ন্যায়বিচার করার জন্য’। আর তোমরা কায়েম/ স্থির রাখো তোমাদের লক্ষ্য প্রত্যেক মাসজিদের অনুকূলে। আর তাঁকে (= আল্লাহকে) ডাকো তাঁরই জন্য দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খালেস/ খাঁটি করে নিয়ে। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে তোমরা ফিরে আসবে। 

৭:৩০ 

ফারীক্বান = একদলকে। হাদা = তিনি হিদায়াত করেছেন। ওয়া = আর। ফারীক্বান = একদল। হাক্কা আলাইহিমুদ দলাদাতু = হকদার হয়েছে তাদের উপর দলালাত/ বিভ্রান্তি চাপিয়ে নেয়ার। ইন্নাহুমুত তাখাযুশ শায়াতীনা = (কারণ) তারা গ্রহণ করেছে শয়তানদেরকে। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ওয়া = আর। ইয়াহছাবূনা = তারা হিসাব করে নিয়েছে। আন্নাহুম = যে, তারা। মুহতাদূনা = হিদায়াতপ্রাপ্ত। 

একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন আর একদল হকদার হয়েছে তাদের উপর দলালাত/ বিভ্রান্তি চাপিয়ে নেয়ার। (কারণ) তারা গ্রহণ করেছে শয়তানদেরকে আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে আল্লাহকে বাদ দিয়ে। আর তারা হিসাব করে নিয়েছে যে, তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত। 

৭:৩১ 

ইয়া বানী আদামা = হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান। খুজূ = তোমরা গ্রহণ করো। যীনাতাকুম = তোমাদের যীনাত/ সৌন্দর্য। ইনদা কুল্লি মাসজিদ = প্রত্যেক মাসজিদের অনুকূলে। ওয়া কুলূ ওয়াশরাবূ = আর খাও ও পান করো। ওয়া লা তুছরিফূ = আর অপচয় করো না। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। লা ইউহিব্বুল মুছরিফীনা = ভালবাসেন না অপচয়কারীদেরকে। 

হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান, তোমরা গ্রহণ করো তোমাদের যীনাত/ সৌন্দর্য, প্রত্যেক মাসজিদের অনুকূলে। আর খাও ও পান করো, আর অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি ভালবাসেন না অপচয়কারীদেরকে। 

৭:৩২ 

ক্বুল = বলো। মান = কে। হাররামা = হারাম/ অবৈধ করেছে। যীনাতাল্লাহিল্লাতী = আল্লাহ প্রদত্ত যীনাত/ শোভা সৌন্দর্যের জিনিসসমূহকে যা। আখরাজা = তিনি বাহির করেছেন। লিইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের জন্য। ওয়াত তইয়িবাতি মিনার রিযকি = আর রিযক/ জীবনোপকরনস্বরূপ তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহকে। ক্বুল = বলো। হিয়া = ইহা (= সৌন্দর্যের ও জীবিকার উপকরণসমূহ)। লিল্লাযীনা আমানূ = তাদের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে। খালিসাতান = খালেস/ খাঁটিভাবে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। কাযালিকা = এভাবে। নুফাসসিলুল আয়াতি = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে। লিক্বাওমি ইয়া’লামূনা = সেই কাওমের জন্য যারা জ্ঞান অজর্ন করে। 

বলো, কে হারাম/ অবৈধ করেছে আল্লাহ প্রদত্ত যীনাত/ শোভা সৌন্দর্যের জিনিসসমূহকে যা তিনি বাহির করেছেন তাঁর বান্দাদের জন্য, আর রিযিক/ জীবনোপকরনস্বরূপ তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহকে?’ বলো, ‘ইহা (= সৌন্দর্যের ও জীবিকার উপকরণসমূহ) তাদের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে হায়াতুদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে, খালেস/ খাঁটিভাবে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। এভাবে আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে, সেই কাওমের জন্য যারা জ্ঞান অজর্ন করে। 

৭:৩৩ 

ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। হাররামা রব্বিয়াল ফাওয়াহিশা মা যহারা মিনহা ওয়া মা বাতানা = = আমার রব হারাম/ অবৈধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা। ওয়াল ইছমা = আর পাপ। ওয়াল বাগইয়া বিগাইরিল হাক্বক্বি = আর অসঙ্গত বিদ্রোহ/ যুক্তির সীমালংঘন। ওয়া আন = আর। তুশরিকূ বিল্লাহি = আল্লাহর সাথে শরিক করা। মা লাম ইউনাযযিল বিহী সুলতানান = তিনি নাযিল করেননি যার সপক্ষে কোন সুলতান/ প্রমাণ। ওয়া আন = আর। তাক্বূলূ আলাল্লাহি = আল্লাহর নামে এমন কথা বলা। মা লা তা’লামূনা = যা (তিনি বলেছেন কিনা তা) তোমরা জানো না। 

বলো. ‘নিশ্চয় আমার রব হারাম/ অবৈধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, আর পাপ, আর অসঙ্গত বিদ্রোহ/ যুক্তির সীমালংঘন আর আল্লাহর সাথে শরিক করা তিনি নাযিল করেননি যার সপক্ষে কোন সুলতান/ প্রমাণ আর আল্লাহর নামে এমন কথা বলা যা (তিনি বলেছেন কিনা তা) তোমরা জানো না। 

৭:৩৪ 

ওয়া = আর। লিকুল্লি উম্মাতিন আজালুন = প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই আছে আজাল/ (অবকাশের) নির্দিষ্ট শেষ সময়। ফাইযা = তারপর যখন। জাআ = এসে যায়। আজালুহুম = (অবকাশের) নির্দিষ্ট শেষ সময়। লা ইয়াছতা’খিরূনা ছাআতান = তখন তারা বিলম্বিত করতে পারবে না এক মুহুর্তও। ওয়া লা ইয়াছতাক্বদিমূনা = আর তা ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। 

আর প্রত্যেক উম্মাতের জন্যই আছে আজাল/ (অবকাশের) নির্দিষ্ট শেষ সময়। তারপর যখন এসে যায় (অবকাশের) নির্দিষ্ট শেষ সময়, তখন তারা বিলম্বিত করতে পারবে না এক মুহুর্তও আর তা ত্বরান্বিতও করতে পারবে না। 

৭:৩৫ 

ইয়া বানী আদামা = (আল্লাহ আদমের মাধ্যমে পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছেন) ‘হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান। ইম্মা = যদি। ইয়াতিয়ান্নাকুম = তোমাদের কাছে আসে। রুসুলুম মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে রসূলগণ। ইয়াক্বুসসূনা আলাইকুম = তোমাদের কাছে বর্ণনা করে। আয়াতী = আমার আয়াতসমূহ। ফামানিত তাক্বা = তখন যে তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরূতা অবলম্বন করবে। ওয়া আসলাহা = আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করবে। ফালা খাওফুন আলাইহিম = তাহলে তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহযানূনা = দু:খিত হবে। 

(আল্লাহ আদমের মাধ্যমে পূর্বেই জানিয়ে দিয়েছেন) ‘হে বানী আদম/ হে আদম সন্তান, যদি তোমাদের কাছে আসে তোমাদের মধ্য থেকে রসূলগণ, তোমাদের কাছে বর্ণনা করে আমার আয়াতসমূহ; তখন যে তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরূতা অবলম্বন করবে আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করবে তাহলে তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে। 

৭:৩৬ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাযযাবূ বিআয়াতিনা = মিথ্যা সাব্যস্ত করবে আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়াছতাকবারূ আনহা = আর অহংকার করবে উহার ব্যাপারে। উলায়িকা আসহাবুন নার = তারা আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম = তারা। ফীহা = তাতে। খালিদূনা = স্থায়ী হবে। 

আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করবে আমাদের আয়াতসমূহকে আর অহংকার করবে উহার ব্যাপারে, তারা আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে। 

৭:৩৭ 

ফামান আযলামু মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে। আও = অথবা। কাযযাবা = মিথ্যা সাব্যস্ত করে। বিআয়াতিহী = তাঁর আয়াতের প্রতি। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। ইয়ানালুহুম = যাদের কাছে পৌঁছবে। নাসীবুহুম = তাদের নসীব/ অংশ। মিনাল কিতাবি = কিতাব/ প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। জাআতহুম = তাদের কাছে আসবে। রুসুলুনা = আমাদের রসূলগণ/ ফেরেশতাগণ। ইয়াতাওয়াফফাওনাহুম = তাদের ওফাত ঘটানোর জন্য। ক্বলূ = তারা (= ফেরেশতাগণ) বলবে। আয়না = কোথায় তারা। মা = যাদেরকে। কুনতুম তাদঊনা = তোমরা ডাকতে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ক্বলূ = তখন তারা বলবে। দল্লূ = তারা উধাও হয়ে গেছে। আন্না = আমাদের থেকে। ওয়া = আর। শাহিদূ = তারা সাক্ষ্য দেবে। আলা আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের বিপক্ষে। আন্নাহুম = যে, তারা। কানূ = ছিলো। কাফিরূনা = কাফির/ অবিশ্বাসী। 

তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাঁর আয়াতের প্রতি? তারাই এমন লোক যাদের কাছে তো পৌঁছবে তাদের নসীব/ অংশ কিতাব/ প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যখন তাদের কাছে আসবে আমাদের রসূলগণ/ ফেরেশতাগণ তাদের ওফাত ঘটানোর জন্য; তখন তারা (= ফেরেশতাগণ) বলবে, ‘কোথায় তারা যাদেরকে তোমরা ডাকতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে?’ তখন তারা বলবে, ‘তারা উধাও হয়ে গেছে আমাদের থেকে’। আর তারা সাক্ষ্য দেবে তাদের নিজেদের বিপক্ষে যে, তারা ছিলো কাফির/ অবিশ্বাসী। 

৭:৩৮ 

ক্বলাদখুলূ = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো। ফী উমামিন = সেই উম্মাতসমূহের মধ্যে। ক্বাদ = ইতোমধ্যেই। খালাত = যারা (মৃত্যু বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছে। মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগে। মিনাল জিন্নি ওয়াল ইনসি = জ্বিন ও ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে। ফিন নারি = (জাহান্নামের) আগুনে (দাখিল হও)। কুল্লামা = যখনই। দাখালাত = দাখিল হবে। উম্মাতুন = কোন উম্মাত। লাআনাত উখতাহা = তার পূর্ববর্তী উম্মাতকে লা’নত করতে থাকবে। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযাদ দারাকূ ফীহা = যখন উহাতে পেয়ে যাবে। জামীআ = সকলকে। ক্বলাত = তখন বলবে। উখরাহুম = তাদের পরবর্তী উম্মাতগুলো। লিউলাহুম = তাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর প্রসঙ্গে। রব্বানা = হে আমাদের রব। হাউলায়ি = এরাই। আদল্লূনা = আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। ফাআতিহিম = সুতরাং তাদেরকে দিন। আযাবান দি’ফান মিনান্নারি = (জাহান্নামের) আগুনের দ্বিগুণ আযাব। ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। লিকুল্লিন = প্রত্যেকের জন্যই আছে। দি’ফুন = দ্বিগুণ শাস্তি। ওয়ালাকিল্লা তা’লামূনা = কিন্তু তোমরা কোন জ্ঞানই রাখো না। 

তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো সেই উম্মাতসমূহের মধ্যে ইতোমধ্যেই যারা (মৃত্যু বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছে তোমাদের আগে, জ্বিন ও ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে, (জাহান্নামের) আগুনে (দাখিল হও)’। যখনই দাখিল হবে কোন উম্মাত তখন তারা তার পূর্ববর্তী উম্মাতকে লা’নত করতে থাকবে। শেষ পর্যন্ত যখন উহাতে পেয়ে যাবে সকলকে, তখন বলবে তাদের পরবর্তী উম্মাতগুলো তাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর প্রসঙ্গে, ‘হে আমাদের রব, এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং তাদেরকে দিন (জাহান্নামের) আগুনের দ্বিগুণ আযাব’। তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্যই আছে দ্বিগুণ শাস্তি। কিন্তু তোমরা কোন জ্ঞানই রাখো না’। 

৭:৩৯ 

ওয়া = আর। ক্বলাত উলাহুম = তাদের পূর্ববর্তীগণ বলবে। লিউখরাহুম = তাদের পরবর্তীগণকে উদ্দেশ্য করে। ফামা কানা লাকুম আলাইনা = তোমাদের জন্য ছিলো না আমাদের উপর। মিন ফাদলিন = কোন শ্রেষ্ঠত্ব (= তোমরা তো আমাদের চেয়ে ভালো লোক ছিলে না)। ফাযুক্বুল আযাবা = সুতরাং আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো। বিমা কুনতুম তাকছিবূনা = তোমরা যে পাপ উপার্জন করেছো তার কারণে। 

আর তাদের পূর্ববর্তীগণ বলবে তাদের পরবর্তীগণকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমাদের জন্য ছিলো না আমাদের উপর কোন শ্রেষ্ঠত্ব (= তোমরা তো আমাদের চেয়ে ভালো লোক ছিলে না)। সুতরাং আযাবের স্বাদ আস্বাদন করো তোমরা যে পাপ উপার্জন করেছো তার কারণে’। 

৭:৪০ 

ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়াছতাকবারূ আনহা = আর উহার ব্যাপারে অহংকার করেছে। লা তুফাত্তাহু লাহুম = তাদের জন্য খোলা হবে না। আবওয়াবুছ ছামায়ি = আসমানের দরজাসমূহ (= কল্যাণ ও সমৃদ্ধি)। ওয়া লা ইয়াদখুলূনাল জান্নাতা = আর তারা জান্নাতে দাখিল হবে না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়ালিজাল জামালি = উট অতিক্রম করবে। ফী ছাম্মিল খিয়াতি = সূঁচের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে (= সূঁচের ছিদ্রের ভিতর উটের প্রবেশ যেমন অসম্ভব তাদের জান্নাতে প্রবেশ তেমনি অসম্ভব)। ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। নাজযিল মুজরিমীনা = আমরা প্রতিফল দিই অপরাধীদেরকে। 

নিশ্চয় যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে আর উহার ব্যাপারে অহংকার করেছে তাদের জন্য খোলা হবে না আসমানের দরজাসমূহ (= কল্যাণ ও সমৃদ্ধি, ৭:৯৬)। আর তারা জান্নাতে দাখিল হবে না যতক্ষণ না উট অতিক্রম করবে সূঁচের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে (= সূঁচের ছিদ্রের ভিতর উটের প্রবেশ যেমন অসম্ভব তাদের জান্নাতে প্রবেশ তেমনি অসম্ভব)। আর এভাবেই আমরা প্রতিফল দিই অপরাধীদেরকে। 

৭:৪১ 

লাহুম = তাদের জন্য থাকবে। মিন জাহান্নাম = জাহান্নামের। মিহাদুন = বিছানা। ওয়া = আর। মিন ফাওক্বিহিম = তাদের উপরে থাকবে। গাওয়াশিন = আচ্ছাদন। ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। নাজযিয যালিমীনা = আমরা প্রতিফল দিই যালিমদেরকে। 

তাদের জন্য থাকবে জাহান্নামের বিছানা আর তাদের উপরে থাকবে (আগুনের) আচ্ছাদন। আর এভাবেই আমরা প্রতিফল দিই যালিমদেরকে। 

৭:৪২ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। লা নুকাল্লিফু নুকাল্লিফু নাফসান ইল্লা উছআহা = আমরা কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করি না। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুল জান্নাতি = আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে)। হুম = তারা। ফীহা = তাতে। খালিদূনা = স্থায়ী হবে। 

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। আমরা কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করি না। তারাই আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে। 

৭:৪৩ 

ওয়া = আর আমরা দূর করে দিয়েছি। মা ফী সুদূরিহিম মিন গিল্লিন = তাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে থাকা ঈর্ষা। তাজরী = প্রবাহিত হয়। মিন তাহতিহাল আনহার = উহার (= জান্নাতের) নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ওয়া = আর। ক্বলুল হামদু লিল্লাহিল্লাযী হাদানা লিহাযা = তারা বলবে, সমস্ত হামদ/ প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন এই পথ। ওয়া = আর। মা কুন্না = আমরা তো এমন ছিলাম না। লিনাহতাদিয়া = যেন আমরা নিজেরাই হিদায়াত পেতে পারতাম। লাও লা = যদি না। আন হাদানাল্লাহু = হিদায়াত করতেন আল্লাহ। (= আল্লাহ হিদায়াত না করলে আমরা হিদায়াত পেতাম না)। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআত = আমাদের কাছে এসেছে। রুসুলু রব্বিনা = আমাদের রবের রসূলগণ। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। নূদূ = তাদেরকে ডেকে বলা হবে। আন = যে। তিলকুমুল জান্নাতু = এই-ই জান্নাত। ঊরিছতুমূ হা = তোমাদেরকে উহার ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করা হয়েছে। বিমা কুনতুম তা’মালূনা = তোমরা যা করতে তার কারণে। 

আর আমরা দূর করে দিয়েছি তাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে থাকা ঈর্ষা। প্রবাহিত হয় উহার (= জান্নাতের) নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। আর তারা বলবে, ‘সমস্ত হামদ/ প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন এই পথ। আর আমরা তো এমন ছিলাম না যেন আমরা নিজেরাই হিদায়াত পেতে পারতাম যদি না হিদায়াত করতেন আল্লাহ (= আল্লাহ হিদায়াত না করলে আমরা হিদায়াত পেতাম না)। নিশ্চয় আমাদের কাছে এসেছে আমাদের রবের রসূলগণ সত্য সহকারে’। তাদেরকে ডেকে বলা হবে যে, ‘এই-ই জান্নাত, তোমাদেরকে উহার ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করা হয়েছে, তোমরা যা করতে তার কারণে। 

৭:৪৪ 

ওয়া = আর। নাদা আসহাবুল জান্নাতি = আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে তারা) ডেকে বলবে। আসহাবুন নারি = আসহাবুন নারকে (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদেরকে)। আন ক্বাদ = নিশ্চয়ই। ওয়াজাদনা = আমরা পেয়েছি। মা ওয়াআদানা = যা আমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন। রব্বুনা = আমাদের রব। হাক্বক্বান = (আমরা তা পেয়েছি) সত্য হিসাবেই। ফাহাল ওয়াজাত্তুম = তোমরা কি পেয়েছো? মা ওয়াদা রব্বুকুম = যা ওয়াদা দিয়েছেন তোমাদের রব। হাক্বক্বান = (তোমরা কি তা পেয়েছো) সত্য হিসাবে। ক্বলূ = তারা বলবে। নাআম = হ্যাঁ। ফাআযযানা = তারপর ঘোষণা করবে। মুআযযিনুম বায়নাহুম = একজন মুয়াজ্জিন/ ঘোষক তাদের মধ্যে। আন = (ঘোষণা করবে) যে। লা’নাতুল্লাহি = আল্লাহর লা’নত/ অভিশাপ। আলায যালিমীনা = যালিমদের উপর। 

আর আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে তারা) ডেকে বলবে, আসহাবুন নারকে (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদেরকে), ‘নিশ্চয়ই আমরা পেয়েছি যা আমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন আমাদের রব, (আমরা তা পেয়েছি) সত্য হিসাবেই। তোমরা কি পেয়েছো যা ওয়াদা দিয়েছেন তোমাদের রব, (তোমরা কি তা পেয়েছো) সত্য হিসাবে? তারা বলবে, ‘হ্যাঁ (পেয়েছি)’। তারপর ঘোষণা করবে একজন মুয়াজ্জিন/ ঘোষক তাদের মধ্যে (ঘোষণা করবে) যে, আল্লাহর লা’নত/ অভিশাপ যালিমদের উপর। 

৭:৪৫ 

আল্লাযীনা = যারা। ইয়াসুদ্দূনা = বাধা দিতো। আন ছাবীলিল্লাহি = ছাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ওয়া = আর। ইয়াবগূনাহা = উহাতে তালাশ করতো। ইওয়াজা = বক্রতা। ওয়া = বস্তুত। হুম = তারা ছিলো। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। কাফিরূনা = কাফির/ অবিশ্বাসী। 

যারা বাধা দিতো ছাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে, আর উহাতে তালাশ করতো বক্রতা, বস্তুত তারা ছিলো আখিরাতের প্রতি কাফির/ অবিশ্বাসী। 

৭:৪৬ 

ওয়া = আর। বায়নাহুমা = তাদের মধ্যস্থলে থাকবে। হিজাবুন = অন্তরাল (৫৭: ১৩)। ওয়া = আর। আলাল আ’রাফি = আ’রাফে/ যোগ্যতার উচ্চস্থানে/ সনাক্তকরনের জন্য সুবিধাজনক উচ্চস্থানে থাকবে। রিজালুইঁ ইয়া’রাফূনা = কিছু লোক (৫৬: ১০-১১, ০২: ১৪৩, ০৪: ৪১), যারা চিনতে পারবে। কুল্লাম বিছীমাহুম = প্রত্যেককে তাদের চিহ্নসমূহের মাধ্যমে। ওয়া = আর। নাদাও = তারা ডেকে বলবে। আসহাবুল জান্নাতি = আসহাবুল জান্নাতকে (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে তাদেরকে)। সালামুন আলাইকুম = ‘সালামুন আলাইকুম’/ ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক’। লাম ইয়াদখুলূহা = তারা (= আসহাবুল জান্নাত) তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি। ওয়া = কিন্তু। হুম = তারা। ইয়াতমাঊনা = উহার আকাংখা করে। 

আর তাদের মধ্যস্থলে থাকবে অন্তরাল (৫৭: ১৩)। আর আ’রাফে/ যোগ্যতার উচ্চস্থানে/ সনাক্তকরনের জন্য সুবিধাজনক উচ্চস্থানে থাকবে কিছু লোক (৫৬: ১০-১১, ০২: ১৪৩, ০৪: ৪১), যারা চিনতে পারবে প্রত্যেককে তাদের চিহ্নসমূহের মাধ্যমে। আর তারা ডেকে বলবে আসহাবুল জান্নাতকে (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে তাদেরকে), ‘সালামুন আলাইকুম’/ ‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক’ - তারা (= আসহাবুল জান্নাত) তখনো জান্নাতে প্রবেশ করেনি কিন্তু তারা উহার আকাংখা করে। 

৭:৪৭ 

ওয়া = আর। ইযা = যখন। সুরিফাত = ফিরানো হবে। আবসারুহুম = তাদের দৃষ্টিসমূহকে। তিলক্বাআ আসহাবিন্নারি = আসহাবুন নারের (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদের) দিকে। ক্বুলূ = তখন তারা বলবে। রব্বানা = হে আমাদের রব। লা তাজআলনা = আমাদেরকে শামিল করবেন না। মাআল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিম ক্বাওমের সাথে। 

আর যখন ফিরানো হবে তাদের দৃষ্টিসমূহকে আসহাবুন নারের (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদের) দিকে। তখন তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে শামিল করবেন না যালিম ক্বাওমের সাথে’। 

৭:৪৮ 

ওয়া = আর। নাদা আসহাবুল আ’রাফি = আসহাবুল আ’রাফ (= যারা যোগ্যতার উচ্চস্থানে বা সনাক্তকরনের জন্য সুবিধাজনক উচ্চস্থানে থাকবে তারা) ডাক দিবে। রিজালাইঁ ইয়ারিফূনাহুম = কিছু লোককে যাদেরকে তারা চিনতে পারবে। বিছীমাহুম = তাদের চিহ্নসমূহের ম্রাধ্যমে। ক্বলূ = (এবং) বলবে। মা আগনা আনকুম = কোনই কাজে এলো না তোমাদের জন্য। জামআকুম = তোমাদের ধনবল ও জনবল। ওয়া মা কুনতুম তাছতাকবিরূনা = আর তোমরা যে অহংকার করতে তা। 

আর আসহাবুল আ’রাফ (= যারা যোগ্যতার উচ্চস্থানে বা সনাক্তকরনের জন্য সুবিধাজনক উচ্চস্থানে থাকবে তারা) ডাক দিবে কিছু লোককে, যাদেরকে তারা চিনতে পারবে তাদের চিহ্নসমূহের মাধ্যমে; (এবং) বলবে, ‘কোনই কাজে এলো না তোমাদের জন্য তোমাদের ধনবল ও জনবল আর তোমরা যে অহংকার করতে তা’। 

৭:৪৯ 

আহাউলায়িল্লাযীনা = এরাই কি তারা নয়? যাদের সম্পর্কে। আক্বছামতুম = তোমরা কসম করে বলতে। লা ইয়ানালুহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন না। বিরহমাতিন = তাঁর রহমত/ অনুগ্রহ দ্বারা। উদখুলুল জান্নাতা = (অথচ আজ তাদেরকেই বলা হচ্ছে), ‘তোমরা দাখিল হও জান্নাতে। লা খাওফুন আলাইকুম = তোমাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। আনতুম = তোমরা। তাহযানূনা = দু:খিত হবে। 

এরাই কি তারা নয়, যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম করে বলতে, ‘আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন না তাঁর রহমত/ অনুগ্রহ দ্বারা’? (অথচ আজ তাদেরকেই বলা হচ্ছে), ‘তোমরা দাখিল হও জান্নাতে। তোমাদের কোন ভয় নেই আর না তোমরা দু:খিত হবে’। 

৭:৫০ 

ওয়া = আর। নাদা আসহাবুন নারি = ‘আসহাবুন নার’ (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তারা) ডেকে বলবে। আসহাবুল জান্নাতি = ‘আসহাবুল জান্নাতকে’ (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে তাদেরকে)। আন আফিদূ = তোমরা ঢেলে দাও। আলাইনা = আমাদের উপর। মিনাল মায়ি = কিছু পরিমাণ পানি। আও = অথবা। মিম্মা রযাক্বাকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে কিছু। ক্বলূ = (জবাবে) তারা বলবে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। হাররামাহুমা = এ উভয়কে হারাম/ অবৈধ করেছেন। আলাল কাফিরীনা = কাফিরদের উপর। 

আর ‘আসহাবুন নার’ (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তারা) ডেকে বলবে ‘আসহাবুল জান্নাতকে’ (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে তাদেরকে), ‘তোমরা ঢেলে দাও আমাদের উপর কিছু পরিমাণ পানি অথবা আল্লাহ তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছেন তা থেকে কিছু’। (জবাবে) তারা বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ এ উভয়কে হারাম/ অবৈধ করেছেন কাফিরদের উপর’। 

৭:৫১ 

আল্লাযীনাত্তাখাজূ = যারা গ্রহণ করেছে। দ্বীনাহুম = তাদের দ্বীনকে। লাহওয়ান ওয়া লায়ীবান = কৌতুক ও খেলারূপে। ওয়া = আর। গাররাতহুমুল হায়াতুদ দুনইয়া = যাদেরকে প্রতারিত করেছে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। ফালইয়াওমা = সুতরাং আজ। নানছাহুম = আমরা তাদেরকে ভুলে গেলাম। কামা = যেমন। নাছূ = তারা ভুলে গিয়েছিলো। লিক্বাআ ইয়াওমাহিম হাযা = এই দিবসে তাদের মোলাকাতকে। ওয়া = আর। মা কানূ বিআয়াতিনা ইয়াজহাদূনা = যেভাবে তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো। 

যারা গ্রহণ করেছে তাদের দ্বীনকে কৌতুক ও খেলারূপে। আর যাদেরকে প্রতারিত করেছে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। সুতরাং আজ আমরা তাদেরকে ভুলে গেলাম যেমন তারা ভুলে গিয়েছিলো এই দিবসে তাদের মোলাকাতকে। আর যেভাবে তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো। 

৭:৫২ 

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জি’নাহুম = আমরা তাদেরকে এনে দিয়েছি। বিকিতাবিন = একটি কিতাব। ফাসসালনাহু = আমরা উহাকে তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। আলা ইলমিন = জ্ঞানের ভিত্তিতে। হুদাওঁ ওয়া রহমাতাল লিক্বাওমি ইউ’মিনূনা = হুদা/ হিদায়াত ও রহমত/ দয়াস্বরূপ এমন কাওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

আর নিশ্চয় আমরা তাদেরকে এনে দিয়েছি একটি কিতাব। আমরা উহাকে তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি জ্ঞানের ভিত্তিতে হুদা/ হিদায়াত ও রহমত/ দয়াস্বরূপ এমন কাওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

৭:৫৩ 

হাল ইয়ানযুরূনা = তারা কি অপেক্ষা করছে। ইল্লা তা’ভীলাহু = উহাতে বর্ণিত পরিণতি ছাড়া অন্য কিছুর জন্য? ইয়াওমা = যেদিন। ইয়া’তি = এসে যাবে। তা’ভিলাহু = উহাতে বর্ণিত পরিণতি। ইয়াক্বূলুল্লাযীনা = তখন তারা বলবে যারা। নাছূহু = উহাকে ভুলে গিয়েছিলো। মিন ক্বাবলু = পূর্ববর্তী পর্যায়ে। ক্বাদ = (তারা বলবে), ‘নিশ্চয়। জাআত রসুলু রব্বিনা = এসেছিলেন আমাদের রবের রসূলগণ। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। ফাহাল লানা = এখন কি আমাদের জন্য হবে। মিন শুফাআআ = কোন শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারী? ফাইয়াশফাঊ লানা = যাতে আমাদের জন্য শাফায়াত/ সুপারিশ করে। আও = অথবা। নুরাদ্দু = আমাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে কি। ফানা’লামা = তাহলে আমরা কাজ করতাম। গায়ল্লাযী কুন্না তা’মালূনা = আগে আমরা যে ধরনের কাজ করতাম তার চেয়ে ভিন্নরূপ কাজ (অর্থাৎ ভালো কাজ)। ক্বাদ = নিশ্চয়। খাছিরূ = তারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আনফুছাহুম = তাদের নিজেদেরকে। ওয়া = আর। দল্লা = উধাও হয়ে গেছে। আনহুম = তাদের থেকে। মা কানূ ইয়াফতারূনা = যা তারা রচনা করতো। 

তারা কি অপেক্ষা করছে উহাতে বর্ণিত পরিণতি ছাড়া অন্য কিছুর জন্য? যেদিন এসে যাবে উহাতে বর্ণিত পরিণতি, তখন তারা বলবে যারা উহাকে ভুলে গিয়েছিলো পূর্ববর্তী পর্যায়ে, (তারা বলবে), ‘নিশ্চয় এসেছিলেন আমাদের রবের রসূলগণ সত্য সহকারে। এখন কি আমাদের জন্য হবে কোন শাফায়াতকারী/ সুপারিশকারী, যাতে আমাদের জন্য শাফায়াত/ সুপারিশ করে? অথবা আমাদেরকে ফেরত পাঠানো হবে কি তাহলে আমরা কাজ করতাম আগে আমরা যে ধরনের কাজ করতাম তার চেয়ে ভিন্নরূপ কাজ (অর্থাৎ ভালো কাজ)?’ নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের নিজেদেরকে আর উধাও হয়ে গেছে তাদের থেকে যা তারা রচনা করতো। 

৭:৫৪ 

ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকুমুল্লাহুল্লাযী = তোমাদের রব হচ্ছেন আল্লাহ যিনি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও জমিন। ফী ছিত্তাতি আইয়ামিন = ছয় দিনে। ছুম্মাছতাওয়া = তারপর (সপ্তমদিন) সমাসীন হয়েছেন। আলাল আরশি = আরশে (ক্ষমতার কেন্দ্রে)। ইউগশিল্লাইলান্নাহারা = তিনি আচ্ছাদিত করেছেন রাতকে দিনের উপর। ইয়াতলুবুহু = উহা (= দিন) উহাকে (= রাতকে) অনুসরণ করে। হাছীছান = দ্রুত গতিতে। ওয়াশ শামছা ওয়াল ক্বামারা ওয়ান নুজুমা = আর সূর্য, চাঁদ ও তারকাগুলোকে। মুছাখখারাতিম বিল আমরি = তাঁর নির্দেশের অধীনস্থ করেছেন। আলা = জেনে রাখো। লাহুল খালক্বু = সৃষ্টি তাঁর। ওয়াল আমরু = আদেশও তাঁর/ কার্যক্রম পরিচালনাও তাঁর/ চূড়ান্ত নির্বাহী ক্ষমতাও তাঁর। তাবারাকাল্লাহু = বড়ই বরকতময় আল্লাহ। রব্বুল আলামীনা = রব্বুল আলামীন। 

নিশ্চয় তোমাদের রব হচ্ছেন আল্লাহ যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও জমিন ছয় দিনে। তারপর (= সপ্তমদিন) সমাসীন হয়েছেন আরশে (= ক্ষমতার কেন্দ্রে)। তিনি আচ্ছাদিত করেছেন রাতকে দিনের উপর। উহা (= দিন) উহাকে (= রাতকে) অনুসরণ করে দ্রুত গতিতে। আর সূর্য, চাঁদ ও তারকাগুলোকে তাঁর নির্দেশের অধীনস্থ করেছেন। জেনে রাখো, ‘সৃষ্টি তাঁর, আদেশও তাঁর/ কার্যক্রম পরিচালনাও তাঁর/ চূড়ান্ত নির্বাহী ক্ষমতাও তাঁর’। বড়ই বরকতময় আল্লাহ রব্বুল আলামীন। 

৭:৫৫ 

উদঊ = তোমরা ডাকো। রব্বাকুম = তোমাদের রবকে। তাদাররুআওঁ ওয়া খুফইয়াতান = কাতরভাবে ও গোপনে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। লা ইউহিব্বুল মু’তাদীনা = ভালোবাসেন না সীমালংঘনকারীদেরকে। 

তোমরা ডাকো তোমাদের রবকে কাতরভাবে ও গোপনে। নিশ্চয় তিনি ভালোবাসেন না সীমালংঘনকারীদেরকে। 

৭:৫৬ 

ওয়া = আর। লা তুফসিদূ ফিল আরদি = পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করো না। বা’দাল ইসলাহিহা = উহাতে ইসলাহ/ সংস্কার সংশোধনের পর। ওয়াদউহু = আর তোমরা তাঁকে (= আল্লাহকে) ডাকো। খাওফান ও তমাআন = ভয়ের সাথে ও আশার সাথে। ইন্না = নিশ্চয়। রহমাতাল্লাহি = আল্লাহর রহমত। ক্বারীবুম মিনাল মুহসিনীনা = মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের অত্যন্ত নিকটবর্তী। 

আর পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করো না উহাতে ইসলাহ/ সংস্কার সংশোধনের পর। আর তোমরা তাঁকে (= আল্লাহকে) ডাকো ভয়ের সাথে ও আশার সাথে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের অত্যন্ত নিকটবর্তী। 

৭:৫৭ 

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইউরছিলুর রিয়াহা = প্রেরণ করেন বায়ু/ বাতাস। বুশরাম বায়না ইয়াদায় রহমাতিহী = সুসংবাদ হিসাবে তাঁর রহমতের আগে। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। আক্বাল্লাত = তা বহন করে। ছাহাবান ছিক্বালান = ভারী মেঘমালা। ছুক্বনাহু = আমরা উহাকে চালিয়ে দিই। লিবালাদিম মাইয়িতিন = মৃত/ শুষ্ক ভূখন্ডের দিকে। ফাআনযালনা বিহিল মাআ = তারপর আমরা নাযিল করি উহা দ্বারা বৃষ্টির পানি। ফাআখরাজনা বিহী = তারপর আমরা উৎপাদন করি উহা দ্বারা। মিন কুল্লিছ ছামারাতি = প্রত্যেক প্রকারের ফলফলাদি। কাযালিকা = এভাবেই। নুখরিজুল মাওতা = আমরা মৃতদেরকে বের করবো। লাআল্লাকুম তাযাক্কারূনা = হয়তো তোমরা যিকর/ স্মরণ করবে। 

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি প্রেরণ করেন বায়ু/ বাতাস সুসংবাদ হিসাবে তাঁর রহমতের আগে। শেষ পর্যন্ত যখন তা বহন করে ভারী মেঘমালা, আমরা উহাকে চালিয়ে দিই মৃত/ শুষ্ক ভূখন্ডের দিকে। তারপর আমরা নাযিল করি উহা দ্বারা বৃষ্টির পানি। তারপর আমরা উৎপাদন করি উহা দ্বারা প্রত্যেক প্রকারের ফলফলাদি। এভাবেই আমরা মৃতদেরকে বের করবো। হয়তো তোমরা যিকর/ স্মরণ করবে। 

৭:৫৮ 

ওয়াল বালাদুত তইয়িবু = আর উৎকৃষ্ট ভূখন্ড। ইয়াখরুজু = বের করে। নাবাতুহু = তার ফসল। বিইযনি রব্বিহী = তার রবের অনুমতিক্রমে। ওয়াল্লাযী খাবছা = আর যা (= যে ভূখন্ড) নিকৃষ্ট। লা ইয়াখরুজু = তা বের করে না। ইল্লা নাকিদান = নিকৃষ্ট ফসল ছাড়া। কাযালিকা = এভাবেই। নুসাররিফুল আয়াতি = আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি। লিক্বাওমি ইয়াশকুরূনা = সেই কাওমের জন্য যারা শোকর/ কৃতজ্ঞতা করে। 

আর উৎকৃষ্ট ভূখন্ড বের করে তার ফসল তার রবের অনুমতিক্রমে। আর যা (= যে ভূখন্ড) নিকৃষ্ট তা বের করে না নিকৃষ্ট ফসল ছাড়া। এভাবেই আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি সেই কাওমের জন্য যারা শোকর/ কৃতজ্ঞতা করে। 

৭:৫৯ 

লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। নূহান = নূহকে। ইলা ক্বাওমিহী = তার কাওমের প্রতি। ফাক্বালা = তখন সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি’বুদুল্লাহা = হে আমার কাওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মা লাকুম মিন ইলাহিন গায়রুহু = তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফূ = ভয় করি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। আযাবা = আযাব/ শাস্তি আপতিত হওয়ার। ইয়াওমিন আযীমিন = ইয়াওমুন আযীমে/ এক মহাদিবসে। 

নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি নূহকে তার কওমের প্রতি। তখন সে বলেছে, হে আমার কাওম, ‘তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। নিশ্চয় আমি ভয় করি তোমাদের উপর আযাব/ শাস্তি আপতিত হওয়ার, ইয়াওমুন আযীমে/ এক মহাদিবসে। 

৭:৬০ 

ক্বলাল মালাউ মিন ক্বাওমিহী = (জবাবে) তার কওমের মধ্যকার প্রধানগণ বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লানারাকা = তোমাকে দেখছি। ফী দলালিম মুবীনিন = প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে। 

(জবাবে) তার কওমের মধ্যকার প্রধানগণ বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে দেখছি প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে’। 

৭:৬১ 

ক্বলা = সে (= নূহ) বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। লাইছা বী দলালাতুন = আমার মধ্যে কোন বিভ্রান্তি নেই। ওয়ালাকিন্নী = বরং আমি। রসূলুম মির রব্বিল আলামীনা = রব্বুল আলামীনের রসূল। 

সে (= নূহ) বলেছে, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোন বিভ্রান্তি নেই। বরং আমি রব্বুল আলামীনের রসূল। 

৭:৬২ 

উবাল্লিগুকুম = আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করি/ পৌঁছে দিই। রিসালাতি রব্বী = আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। ওয়া = আর। আনসাহু = আমি নসিহত/ কল্যাণ কামনা করি। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। আ’লামু = আমি জানি। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু (= ওহীর জ্ঞান)। মা লা তা’লামূনা = যা তোমরা জানো না। 

আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করি/ পৌঁছে দিই আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। আর আমি নসিহত/ কল্যাণ কামনা করি তোমাদের জন্য। আর আমি জানি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন কিছু (= ওহীর জ্ঞান), যা তোমরা জানো না। 

৭:৬৩ 

আওয়া আজিবতুম = তোমরা কি আজববোধ করছো। আন = যে। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। যিকরুম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান। আলা রজুলিম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার একজন পুরুষের কাছে। লিইউনযিরাকুম = তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য। ওয়া = আর। লিতাত্তাক্বূ = যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো। ওয়া = আর। লাআল্লাকুম তুরহামূনা = যেন তোমরা রহমত পেতে পারো। 

তোমরা কি আজববোধ করছো যে, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান তোমাদের মধ্যকার একজন পুরুষের কাছে, তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য আর যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো আর যেন তোমরা রহমত পেতে পারো। 

৭:৬৪ 

ফাকাযযাবূহু = তারপর তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। ফাআনজাইনাহু = তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে। ওয়াল্লাযীনা মাআহু = আর যারা তার সাথে ছিলো তাদেরকে। ফিল ফুলকি = নৌযানের/ জাহাজের মাধ্যমে। ওয়া = আর। আগরাক্বনাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি যারা। কাযযাবূ বিআয়াতিনা = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। কানূ = ছিলো। ক্বাওমান আমীনিন = বড়ই অন্ধ কওম। 

তারপর তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে আর যারা তার সাথে ছিলো তাদেরকে, নৌযানের/ জাহাজের মাধ্যমে। আর আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে। নিশ্চয় তারা ছিলো বড়ই অন্ধ কওম। 

৭:৬৫ 

ওয়া = আর। ইলা আদিন = আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি। আখাহুম হূদান = তাদের ভাই হূদকে। ক্বলা = সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি’বুদুল্লাহা = হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মা লাকুম মিন ইলাহিন গায়রুহু = তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। আফালা তাত্তাক্বূনা = তোমরা কি তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না? 

আর আদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই হূদকে। সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তোমরা কি তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে না? 

৭:৬৬ 

ক্বলাল মালাউল্লাযীনা কাফারূ মিন ক্বাওমিহি = (জবাবে) তার কওমের মধ্যকার যারা কুফর করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে।  ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লানারাকা = তোমাকে দেখছি। ফী ছাফাহাতিন = বোকামির মধ্যে নিপতিত। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লানাযুন্নুকা = তোমাকে মনে করি। মিনাল কাযিবীনা = মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। 

(জবাবে) তার কওমের মধ্যকার যারা কুফর করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে দেখছি বোকামির মধ্যে নিপতিত। আর নিশ্চয় আমরা তোমাকে মনে করি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:৬৭ 

ক্বলা = সে (= হূদ) বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। লাইছা বী ছাফাহাতুন = আমার মধ্যে কোন বোকামী নেই। ওয়ালাকিন্নী = বরং আমি। রছূলুম মির রব্বিল আলামীনা = রব্বুল আলামীনের রসূল। 

সে (= হূদ) বলেছে, ‘হে আমার কওম আমার মধ্যে কোন বোকামী নেই। বরং আমি রব্বুল আলামীনের রসূল’। 

৭:৬৮ 

উবাল্লিগুকুম = আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করি/ পৌঁছে দিই। রিছালাতি রব্বী = আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। ওয়া = আর। আনা = আমি। লাকুম = তোমাদের জন্য। নাসীহুন আমীনুন = বিশ্বস্ত নসিহতকারী/ কল্যাণকামী। 

আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করি/ পৌঁছে দিই আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। আর আমি তোমাদের জন্য বিশ্বস্ত নসিহতকারী/ কল্যাণকামী। 

৭:৬৯ 

আওয়া আজিবতুম = তোমরা কি আজববোধ করছো। আন = যে। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। যিকরুম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান। আলা রজুলিম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার একজন পুরুষের কাছে। লিইউনযিরাকুম = তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য। ওয়াযকুরূ = আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। ইয = যখন। জাআলাকুম = তিনি তোমাদেরকে বানিয়েছেন। খুলাফাআ = খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। মিম বা’দি ক্বাওমি নূহিন = নূহের কওমের পরে। ওয়া = আর। যাদাকুম = তিনি তোমাদেরকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফিল খালক্বি = গঠন অবয়বে। বাছতাতান = শক্তিমত্তা। ফাযকুরূ = সুতরাং তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। আলাআল্লাহি = আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ। লাআল্লাকুম তুফলিহূনা = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো। 

‘তোমরা কি আজববোধ করছো যে তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যিকির/ স্মরণিকা/ সংবিধান তোমাদের মধ্যকার একজন পুরুষের কাছে, তোমাদেরকে সতর্ক করার জন্য? আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো যখন তিনি তোমাদেরকে বানিয়েছেন খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত, নূহের কওমের পরে, আর তিনি তোমাদেরকে বাড়িয়ে দিয়েছেন গঠন অবয়বে শক্তিমত্তা। সুতরাং তোমরা যিকির/ স্মরণ করো আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ, যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো’। 

৭:৭০ 

ক্বলূ = তারা বলেছে। আজি’তানা = তুমি কি আমাদের কাছে এসেছো। লিনা’বুদাল্লাহা ওয়াহদাহু = যেন আমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করি, শুধু তাঁর একারই? ওয়া = আর। নাযারা = যেন আমরা তাদেরকে ত্যাগ করি। মা কানা ইয়াবুদূ = যাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতো। আবাউনা = আমাদের বাপদাদা। ফা’তিনা = তাহলে তুমি আমাদের কাছে নিয়ে আসো। তায়িদুনা = তুমি আমাদেরকে যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছো তা। ইন = যদি। কুনতা = তুমি হও। মিনাস সদিক্বীনা = সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। 

তারা বলেছে, ‘তুমি কি আমাদের কাছে এসেছো যেন আমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করি, শুধু তাঁর একারই? আর যেন আমরা তাদেরকে ত্যাগ করি যাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করতো আমাদের বাপদাদা? তাহলে তুমি আমাদের কাছে নিয়ে আসো তুমি আমাদেরকে যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছো তা, যদি তুমি হও সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত। 

৭:৭১ 

ক্বলা = সে (= হূদ) বলেছে। ক্বাদ = নিশ্চয়। ওয়াক্বাআ আলাইকুম = তোমাদের উপর নিকটবর্তী হয়ে গেছে। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। রিজছুওঁ ওয়া গাদাবুন = অপবিত্রতা/ কলুষতা ও গযব/ অভিশাপ। আতুজাদিলূনানী = তোমরা কি আমার সাথে বিতর্ক করছো? ফী আছমায়িন = ঐ নামগুলির ব্যাপারে। ছাম্মায়তুমূহা = যাদের নাম দিয়েছো। আনতুম = তোমরা। ওয়া = আর। আবাউকুম = তোমাদের বাপদাদা। মা নাযযালাল্লাহু = আল্লাহ নাযিল করেননি। বিহী = যা সম্বন্ধে। মিন সুলতানিন = কোন সুলতান/ প্রমাণ। ফানতাযিরূ = সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মাআকুম = তোমাদের সাথে। মিনাল মুনতাযিরীনা = অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম। 

সে (= হূদ) বলেছে, ‘নিশ্চয় তোমাদের উপর নিকটবর্তী হয়ে গেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অপবিত্রতা/ কলুষতা ও গযব/ অভিশাপ। তোমরা কি আমার সাথে বিতর্ক করছো ঐ নামগুলির ব্যাপারে যাদের নাম দিয়েছো তোমরা আর তোমাদের বাপদাদা? আল্লাহ নাযিল করেননি যা সম্বন্ধে কোন সুলতান/ প্রমাণ? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে অপেক্ষাকারীদের অন্তর্ভুক্ত রইলাম’। 

৭:৭২ 

ফাআনজাইনাহু = তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে। ওয়াল্লাযীনা মাআহু = আর যারা তার সাথে ছিলো তাদেরকে। বিরহমাতিম মিন্না = আমাদের পক্ষ থেকে রহমত/ অনুগ্রহের মাধ্যমে। ওয়া = আর। ক্বাতা’না = আমরা কেটে দিয়েছি। দাবিরাল্লাযীনা কাযযাবূ = তাদের মূল যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। মা কানূ মু’মিনীনা = তারা মু’মিন ছিলো না। 

তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে আর যারা তার সাথে ছিলো তাদেরকে আমাদের পক্ষ থেকে রহমত/ অনুগ্রহের মাধ্যমে। আর আমরা কেটে দিয়েছি তাদের মূল যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে। আর তারা মু’মিন ছিলো না। 

৭:৭৩ 

ওয়া = আর। ইলা সামূদা = সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি। আখাহুম সলিহান = তাদের ভাই সালেহকে। ক্বলা = সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি’বুদুল্লাহা = হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মা লাকুম মিন ইলাহিন গায়রুহু = তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআতকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বাইয়িনাতুম মির রব্বিকুম = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। হাযিহি = এটি। নাক্বাতুল্লাহি = আল্লাহর (পক্ষ থেকে নির্ধারিত) উটনী। লাকুম = তোমাদের জন্য। আয়াতান = একটি আয়াত/ নিদর্শন। ফাযারূহা = সুতরাং তোমরা উহাকে ছেড়ে দাও। তা’কুল = উহা খাবে। ফী আরদিল্লাহি = আল্লাহর জমিনে। ওয়া = আর। লা তামাচ্ছূহা = তোমরা উহাকে স্পর্শ করো না। বিছূয়িন = মন্দভাবে। ফাইয়া’খুজাকুম = তাহলে তোমাদেরকে ধরবে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। 

আর সামুদ সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই সালেহকে। সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। এটি আল্লাহর (পক্ষ থেকে নির্ধারিত) উটনী, তোমাদের জন্য, একটি আয়াত/ নিদর্শন, সুতরাং তোমরা উহাকে ছেড়ে দাও, উহা খাবে আল্লাহর জমিনে, আর তোমরা উহাকে স্পর্শ করো না মন্দভাবে, তাহলে তোমাদেরকে ধরবে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি’। 

৭:৭৪ 

ওয়াযকুরূ = আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। ইয = যখন। জাআলাকুম = তিনি তোমাদেরকে বানিয়েছেন। খুলাফাআ = খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত। মিম বা’দি ক্বাওমি আদিন = আদ সম্প্রদায়ের পরে। ওয়া = আর। বাওওয়াকুম = তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। তাত্তাখিজূনা = তোমরা নির্মাণ করছো। মিন ছুহূলিহিমা = উহার সমতল ভূমিতে। ক্বুসূরান = প্রাসাদসমূহ। ওয়া = আর। তানহিতূনাল জিবালা = তোমরা খোদাই করে নির্মাণ করছো পাহাড়সমূহে। বুয়ূতান = বাসগৃহসমূহ। ফাযকুরূ = সুতরাং তোমরা যিকির/ স্মরণ করো। আলাআল্লাহি = আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ। ওয়া = আর। লা তা’ছাও = তোমরা বিচরণ করো না। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মুফসিদীনা = ফাসাদকারী/ বিপর্যয়সৃষ্টিকারী হয়ে। 

‘আর তোমরা যিকির/ স্মরণ করো যখন তিনি তোমাদেরকে বানিয়েছেন খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত, আদ সম্প্রদায়ের পরে, আর তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন পৃথিবীতে; তোমরা নির্মাণ করছো উহার সমতল ভূমিতে প্রাসাদসমূহ আর তোমরা খোদাই করে নির্মাণ করছো পাহাড়সমূহে বাসগৃহসমূহ। সুতরাং তোমরা যিকির/ স্মরণ করো আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ। আর তোমরা বিচরণ করো না পৃথিবীতে ফাসাদকারী/ বিপর্যয়সৃষ্টিকারী হয়ে’। 

৭:৭৫ 

ক্বলাল মালাউল্লাযীনাছতাকবারূ মিন ক্বাওমিহী = (জবাবে) তার কওমের যারা অহংকার করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে। লিল্লাযীনাছতুয়িফূ = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যাদেরকে মুসতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো। লিমান আমানা মিনহুম = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা ঈমান এনেছিলো তাদের (= মুসতাদআফীনদের) মধ্য থেকে। আন্না = বলেছে য়ে। সলিহান = সালেহ কি। মুরছালুম মির রব্বিহী = একজন মুরছাল/ রসূল, তার রবের পক্ষ থেকে? ক্বলূ = তারা (= মু’মিন মুসতাদআফীনগণ) বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। বিমা উরছিলা বিহী = যা দিয়ে তাকে প্রেরণ করা হয়েছে উহার প্রতি। মু’মিনূনা = মু’মিনূন/ বিশ্বাসী। 

(জবাবে) তার কওমের যারা অহংকার করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যাদেরকে মুসতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে যারা ঈমান এনেছিলো তাদের (= মুসতাদআফীনদের) মধ্য থেকে, বলেছে য়ে, ‘সালেহ কি একজন মুরছাল/ রসূল, তার রবের পক্ষ থেকে? তারা (= মু’মিন মুসতাদআফীনগণ) বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা যা দিয়ে তাকে প্রেরণ করা হয়েছে উহার প্রতি মু’মিনূন/ বিশ্বাসী’। 

৭:৭৬ 

ক্বলাল্লাযীনাছতাকবারূ = যারা অহংকার করেছে তারা বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। বিল্লাযী আমানতুম বিহী = তোমরা যে বিষয়ের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তার প্রতি। কাফিরূনা = কাফির/ অবিশ্বাসী। 

যারা অহংকার করেছে তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা তো তোমরা যে বিষয়ের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তার প্রতি কাফির/ অবিশ্বাসী’। 

৭:৭৭ 

ফাআক্বারূন্নাক্বাতা = তারপর তারা উটনীটিকে হত্যা করে ফেলেছে। ওয়া = আর। আতাও = তারা সীমালংঘন করেছে। আন আমরি রব্বিহিম = তাদের রবের আদেশ থেকে। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। ইয়া সলিহু’তিনা = হে সালেহ, আমাদেরকে এনে দাও। বিমা তায়িদুনা = ঐ শাস্তি তুমি যার ভয় দেখাও। ইন = যদি। কুনতা = তুমি হও। মিনাল মুরছালীনা = রসূলদের অন্তর্ভুক্ত। 

তারপর তারা উটনীটিকে হত্যা করে ফেলেছে আর তারা সীমালংঘন করেছে তাদের রবের আদেশ থেকে। আর তারা বলেছে, ‘হে সালেহ, আমাদেরকে এনে দাও ঐ শাস্তি তুমি যার ভয় দেখাও, যদি তুমি হও রসূলদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:৭৮ 

ফাআখাযাতহুমুর রজফাতু = সুতরাং তাদেরকে ধরেছে ভূমিকম্প। ফাআসবাহূ = ফলে তাদের প্রভাত হয়েছে। ফী দারিহিম = তাদের ঘরবাড়িতে। খাছিমীনা = অধ:মুখে পতিত হয়ে মৃত অবস্থায়। 

সুতরাং তাদেরকে ধরেছে ভূমিকম্প, ফলে তাদের প্রভাত হয়েছে তাদের ঘরবাড়িতে অধ:মুখে পতিত হয়ে মৃত অবস্থায়। 

৭:৭৯  

ফাতাওয়াল্লা = অন্যদিকে সে (= সালেহ) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। আনহুম = তাদের থেকে। ওয়া = আর। ক্বলা = সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আবলাগতুকুম = আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করেছি/ পৌঁছে দিয়েছি। রিসালাতা রব্বী = আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। ওয়া = আর। নাসাহতু = আমি নসিহত/ কল্যাণ কামনা করেছি। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়ালাকিন = কিন্তু। লা তুহিব্বূনান নাসিহীনা = তোমরা ভালোবাসো না নসিহতকারীদেরকে/ কল্যাণকামীদেরকে। 

অন্যদিকে সে (= সালেহ) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তাদের থেকে। আর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করেছি/ পৌঁছে দিয়েছি আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। আর আমি নসিহত/ কল্যাণ কামনা করেছি তোমাদের জন্য, কিন্তু তোমরা ভালোবাসো না নসিহতকারীদেরকে/ কল্যাণকামীদেরকে’। 

৭:৮০ 

ওয়া = আরো প্রেরণ করেছি। লূতান = লূতকে। ইয = যখন। ক্বলা = সে বলেছে। লিক্বাওমিহী = তার কওমকে। আতা’তূনাল ফাহিশাতা = তোমরা কি আসো এমন ফাহেশা/ অশ্লীল কাজে। মা ছাবাক্বাকুম বিহা = যা তোমাদের আগে করেনি। মিন আহাদিন মিনাল আলামীনা = সমগ্র বিশ্ববাসীদের মধ্য থেকে কেউই। 

আরো প্রেরণ করেছি লূতকে যখন সে বলেছে তার কওমকে, ‘তোমরা কি আসো এমন ফাহেশা/ অশ্লীল কাজে যা তোমাদের আগে করেনি সমগ্র বিশ্ববাসীদের মধ্য থেকে কেউই?’ 

৭:৮১ 

ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা তো। লাতা’তূনার রিজালা = পুরুষদের উপর উপগত হও। শাহওয়াতুম মিন দূনিন্নিসায়ী = কামবশত:, নারীদেরকে বাদ দিয়ে। বাল = সত্যিই। আনতুম = তোমরা। ক্বাওমুম মুছরিফূনা = সীমালংঘনকারী কওম। 

নিশ্চয় তোমরা তো পুরুষদের উপর উপগত হও কামবশত:, নারীদেরকে বাদ দিয়ে। সত্যিই তোমরা সীমালংঘনকারী কওম’। 

৭:৮২ 

ওয়া = আর। মা কানা জাওয়াবা ক্বাওমিহী = তার কওমের কোন জওয়াব ছিলো না। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। ক্বলূ = তারা বলেছে। আখরিজূহুম = তাদেরকে বের করে দাও। মিন ক্বারইয়াতিকুম = তোমাদের জনপদ থেকে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। উনাছুইঁ ইয়াতাতাহহারূনা = এমন ব্যক্তি যারা অতি পবিত্র থাকতে চায়। 

আর তার কওমের কোন জওয়াব ছিলো না, এছাড়া যে।, তারা বলেছে, ‘তাদেরকে বের করে দাও তোমাদের জনপদ থেকে। নিশ্চয় তারা এমন ব্যক্তি যারা অতি পবিত্র থাকতে চায়’। 

৭:৮৩ 

ফাআনজাইনাহু = তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে। ওয়া = আর। আহলাহু = তার পরিবারকে। ইল্লামরআতাহু = তার স্ত্রীকে ছাড়া। কানাত = সে (= লূতের স্ত্রী) ছিলো। মিনাল গাবিরীনা = পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

তারপর আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তাকে আর তার পরিবারকে, তার স্ত্রীকে ছাড়া। সে (= লূতের স্ত্রী) ছিলো পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

৭:৮৪ 

ওয়া = আর। আমতরনা = আমরা বর্ষণ করেছি। আলাইহিম = তাদের উপর। মাতারান = পাথর বৃষ্টি। ফানযুর = সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুজরিমীনা = অপরাধীদের পরিণতি। 

আর আমরা বর্ষণ করেছি তাদের উপর পাথর বৃষ্টি। সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো অপরাধীদের পরিণতি। 

৭:৮৫ 

ওয়া = আর। ইলা মাদইয়ানা = মাদইয়ানবাসীর কাছে প্রেরণ করেছি। আখাহুম শুআইবা = তাদের ভাই শুআইবকে। ক্বলা = সে বলেছে। ইয়া কাওমি’বুদুল্লাহা = হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মা লাকুম মিন ইলাহিন গায়রুহূ = তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআতকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বাইয়িনাতুম মির রব্বিকুম = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ফাআওফুল কায়লা = সুতরাং তোমরা পরিপূর্ণ করো পরিমাপে। ওয়াল মীযানা = ও দাঁড়িপাল্লায়/ মাপযন্ত্রে। ওয়া = আর। লা তাবখাছুন্নাছা = তোমরা কম দিও না মানুষকে। আশইয়াআহুম = তাদের প্রাপ্য দ্রব্যে। ওয়া = আর। লা তুফসিদূ ফিল আরদি = তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করো না পৃথিবীতে। বা’দা ইসলাহিহা = উহাতে ইসলাহ/ সংস্কার সংশোধনের পর। যালিকুম = ইহাই। খায়রুল্লাকুম = তোমাদের জন্য খায়ের/ কল্যাণকর। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

আর মাদইয়ানবাসীর কাছে প্রেরণ করেছি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে। সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো, তোমাদের কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং তোমরা পরিপূর্ণ করো পরিমাপে ও দাঁড়িপাল্লায়/ মাপযন্ত্রে, আর তোমরা কম দিও না মানুষকে তাদের প্রাপ্য দ্রব্যে। আর তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করো না পৃথিবীতে, উহাতে ইসলাহ/ সংস্কার সংশোধনের পরও। ইহাই তোমাদের জন্য খায়ের/ কল্যাণকর, যদি তোমরা হও মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

৭:৮৬ 

ওয়া = আর। লা তাক্বউদূ = তোমরা ওঁৎ পেতে বসো না। বিকুল্লি সিরাতিন = প্রত্যেক রাস্তায়। তূয়িদূনা = তোমরা মানুষকে ধমক দিও না। ওয়া = আর। তাসুদ্দূনা = তোমরা মানুষকে বাধা দিও না। আন ছাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথ থেকে। মান = যে। আমানা বিহী = ঈমান/ বিশ্বাস করে তাঁর প্রতি। ওয়া = আর। তাবতাগূনাহা = উহাতে তালাশ করো না। ইওয়াজা = বক্রতা। ওয়াযকুরূ = যিকির/ স্মরণ করো। ইয = যখন। কুনতুম = তোমরা ছিলে। ক্বালীলান = সংখ্যালঘু। ফাকাছছারাকুম = তারপর তিনি তোমাদেরকে করেছেন সংখ্যাগুরু। ওয়ানযুর = আর নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি। 

আর তোমরা ওঁৎ পেতে বসো না প্রত্যেক রাস্তায়। তোমরা মানুষকে ধমক দিও না আর তোমরা মানুষকে বাধা দিও না আল্লাহর পথ থেকে, যে ঈমান/ বিশ্বাস করে তাঁর প্রতি আর উহাতে তালাশ করো না বক্রতা। যিকির/ স্মরণ করো যখন তোমরা ছিলে সংখ্যালঘু, তারপর তিনি তোমাদেরকে করেছেন সংখ্যাগুরু। আর নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো ফাসাদকারীদের/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি। 

৭:৮৭ 

ওয়া = আর। ইন = যদি। কানা = এমন হয়। তয়িফাতুম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার একদল। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল্লাযী উরছিলতু বিহী = আমি প্রেরিত হয়েছি যা নিয়ে উহার উপর। ওয়া = আর। তয়িফাতুম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার অন্যদল। লাম ইউ’মিনূ = ঈমান/ বিশ্বাস না করে। ফাসবিরূ = তাহলে তোমরা সবর করো। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াহকুমাল্লাহু = আল্লাহ ফায়সালা করেন। বায়নানা = আমাদের মধ্যে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। খায়রুল হাকীমীনা = শেষ্ঠ বিচারক। 

‘আর যদি এমন হয়, তোমাদের মধ্যকার একদল ঈমান/ বিশ্বাস করে আমি প্রেরিত হয়েছি যা নিয়ে উহার উপর, আর তোমাদের মধ্যকার অন্যদল ঈমান/ বিশ্বাস না করে; তাহলে তোমরা সবর করো যতক্ষণ না আল্লাহ ফায়সালা করেন আমাদের মধ্যে। আর তিনিই শেষ্ঠ বিচারক’। 

৭:৮৮ 

ক্বলাল মালাউল্লাযীনাছতাকবারূ মিন ক্বাওমিহী = তার কওমের মধ্যকার যারা অহংকার করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে। লানুখরিজান্নাকা = নিশ্চয় আমরা তোমাকে বের করে দেবো। ইয়া শুআইবু = হে শোয়ায়েব। ওয়াল্লাযীনা = আর তাদেরকে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। মাআকা = তোমার সাথে। মিন ক্বারইয়াতানা = আমাদের জনপদ থেকে। আও = অথবা। লাতাঊদুন্না = তোমরা ফিরে আসতে হবে। ফী মিল্লাতিনা = আমাদের মিল্লাতে/ ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতিতে। ক্বলা = সে (= শোয়ায়েব) বলেছে। আওয়া লাও = এ সত্ত্বেও কি যদি। কুন্না = আমরা থাকি। কারিহূনা = (তোমাদের মিল্লাতকে) অপছন্দকারী। 

তার কওমের মধ্যকার যারা অহংকার করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে বের করে দেবো, হে শোয়ায়েব, আর তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তোমার সাথে, আমাদের জনপদ থেকে; অথবা তোমরা ফিরে আসতে হবে আমাদের মিল্লাতে/ ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতিতে’ (= শিরকযুক্ত মিল্লাত বা ইবাদাত পদ্ধতিতে)। সে (= শোয়ায়েব) বলেছে, ‘এ সত্ত্বেও কি যদি আমরা থাকি (তোমাদের মিল্লাতকে) অপছন্দকারী?’ 

৭:৮৯ 

ক্বাদিফতারাইনা আলাল্লাহি কাযিবান = তাহলে নিশ্চয় আমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করলাম। ইন = যদি। উদনা = আমরা ফিরে যাই। ফী মিল্লাতিকুম = তোমাদের মিল্লাতে/ ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতিতে। বা’দা = এরপরও। ইয = যখন। নাজ্জানাল্লাহু মিনহা = আল্লাহ আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছেন উহা (= শিরকযুক্ত মিল্লাত) থেকে। ওয়া = আর। মা ইয়াকূনু লানা = আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আন = যে। নাঊদা ফীহা = আমরা ফিরে যাবো উহাতে। ইল্লা আইঁ ইয়াশাআল্লাহু = আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। রব্বুনা = যিনি আমাদের রব। ওয়াছিআ = পরিবেষ্টন করে আছেন। রব্বুনা = আমাদের রব। কুল্লি সাইয়িন ইলমান = সবকিছুকেই ইলম/ জ্ঞান দ্বারা। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। তাওয়াক্কালনা = আমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করেছি। রব্বানাফতাহ = হে আমাদের রব, ফায়সালা করে দিন। বায়নানা ওয়া বায়না ক্বাওমিনা = আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে। বিল হাক্বক্বি = সত্যের দ্বারা। ওয়া = আর। আনতা = আপনিই। খায়রুল ফাতিহীনা = উত্তম ফায়সালাকারী। 

তাহলে নিশ্চয় আমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করলাম যদি আমরা ফিরে যাই তোমাদের মিল্লাতে/ ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতিতে এরপরও যখন আল্লাহ আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছেন উহা (= শিরকযুক্ত মিল্লাত) থেকে। আর আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় যে আমরা ফিরে যাবো উহাতে, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া, যিনি আমাদের রব। পরিবেষ্টন করে আছেন আমাদের রব সবকিছুকেই ইলম/ জ্ঞান দ্বারা। আল্লাহরই উপর আমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করেছি। ‘হে আমাদের রব, ফায়সালা করে দিন আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে সত্যের দ্বারা। আর আপনিই উত্তম ফায়সালাকারী’। 

৭:৯০ 

ওয়া = আর। ক্বলাল মালাউল্লাযীনা কাফারূ মিন ক্বাওমিহী = তার কওমের মধ্যকার যারা কুফর করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে। লাইনিত্তাবা’তুম শুআইবান = যদি তোমরা শোয়ায়েবের ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। ইন্নাকুম = তাহলে নিশ্চয় তোমরা। ইযাল্লাখাছিরূনা = তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

আর তার কওমের মধ্যকার যারা কুফর করেছে তাদের প্রধানগণ বলেছে, ‘যদি তোমরা শোয়ায়েবের ইত্তেবা/ অনুসরণ করো, তাহলে নিশ্চয় তোমরা তখন ক্ষতিগ্রস্ত হবে’। 

৭:৯১ 

ফাআখাযাতহুমুর রজফাতু = সুতরাং তাদেরকে ধরেছে ভূমিকম্প। ফাআসবাহূ = ফলে তাদের প্রভাত হয়েছে। ফী দারিহিম = তাদের ঘরবাড়িতে। খাছিমীনা = অধ:মুখে পতিত হয়ে মৃত অবস্থায়। 

সুতরাং তাদেরকে ধরেছে ভূমিকম্প। ফলে তাদের প্রভাত হয়েছে তাদের ঘরবাড়িতে অধ:মুখে পতিত হয়ে মৃত অবস্থায়। 

৭:৯২ 

আল্লাযীনা = যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। শুআইবান = শোয়ায়েবকে। কাআল্লাম ইয়াগনাও ফীহা = তারা এমন হয়ে গেলো যেন তারা উহাতে বসবাসই করেনি। আল্লাযীনা = যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। শুআইবান = শোয়ায়েবকে। কানূ হুমুল খাছিরূনা = তারাই হয়ে গেলো ক্ষতিগ্রস্ত। 

যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে শোয়ায়েবকে, তারা এমন হয়ে গেলো যেন তারা উহাতে বসবাসই করেনি। যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে শোয়ায়েবকে তারাই হয়ে গেলো ক্ষতিগ্রস্ত। 

৭:৯৩ 

ফাতাওয়াল্লা = অন্যদিকে সে (= শোয়ায়েব) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো। আনহুম = তাদের থেকে। ওয়া = আর। ক্বলা = সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কওম। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আবলাগতুম = আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করেছি/ পৌঁছে দিয়েছি। রিসালাতি রব্বী = আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। ওয়া = আর। নাসাহতু লাকুম = আমি তোমাদের নসিহত/ কল্যাণ কামনা করেছি। ফাকাইফা = সুতরাং কিরূপে। আছা = আমি আক্ষেপ করবো। আলা ক্বাওমিন কাফিরীনা = কাফির কওমের ব্যাপারে। 

অন্যদিকে সে (= শোয়ায়েব) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো তাদের থেকে। আর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে তাবলীগ করেছি/ পৌঁছে দিয়েছি আমার রবের রিসালাত/ বার্তা। আর আমি তোমাদের নসিহত/ কল্যাণ কামনা করেছি। সুতরাং কিরূপে আমি আক্ষেপ করবো কাফির কওমের ব্যাপারে? 

৭:৯৪ 

ওয়া = আর। মা আরছালনা = আমরা প্রেরণ করিনি। ফী ক্বারইয়াতিন = কোন জনপদে। মিন নাবিয়্যীন = কোন নবী। ইল্লা = এছাড়া যে। আখাযনা = আমরা পাকড়াও করেছি। আহলাহা = উহার অধিবাসীদেরকে। বিল বা’ছায়ি = অর্থসংকট দিয়ে। ওয়াদ দররায়ি = ও দু:খকষ্ট দিয়ে। লাআল্লাহুম ইয়াদ্দররাঊনা = যেন তারা কাকুতি মিনতি করে। 

আর আমরা প্রেরণ করিনি কোন জনপদে কোন নবী এছাড়া যে, আমরা পাকড়াও করেছি উহার অধিবাসীদেরকে অর্থসংকট দিয়ে ও দু:খকষ্ট দিয়ে যেন তারা কাকুতি মিনতি করে। 

৭:৯৫ 

ছুম্মা = তারপর আবার (= নবীদের উপদেশকে প্রত্যাখ্যানের পর)। বাদ্দালনা = আমরা বদলস্বরূপ এনেছি। মাকানাছ ছাইয়িআতিল হাছানাতা = মন্দের অবস্থানে (= মন্দকে দূর করে) উত্তমকে। হাত্তা = যতক্ষণ না। আফাও = তারা প্রাচুর্য লাভ করোছে। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। ক্বাদ = নিশ্চয়। মাছছা = স্পর্শ করেছিলো। আবাআনাদ দররাউ ওয়াছ ছররাউ = আমাদের বাপদাদাকেও দু:খ-কষ্ট ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ। ফাআখাযনাহুম = তারপর আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি। বাগতাতান = হঠাৎ করে। ওয়া = অথচ। হুম = তারা। লা ইয়াশউরূনা = টেরও পায়নি। 

তারপর আবার (= নবীদের উপদেশকে প্রত্যাখ্যানের পর) আমরা বদলস্বরূপ এনেছি মন্দের অবস্থানে (= মন্দকে দূর করে) উত্তমকে, যতক্ষণ না তারা প্রাচুর্য লাভ করোছে আর তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় স্পর্শ করেছিলো আমাদের বাপদাদাকেও দু:খ-কষ্ট ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ’। তারপর আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি হঠাৎ করে, অথচ তারা টেরও পায়নি। 

৭:৯৬ 

ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্না আহলাল ক্বুরা = এসব জনপদের অধিবাসীরা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করতো। ওয়াত্তাক্বাও = আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো। লাফাতাহনা = তাহলে আমরা খুলে দিতাম। আলাইহিম = তাদের উপর। বারাকাতিম মিনাছ ছামায়ী = বারাকাত/ বরকতসমূহ, আসমান থেকে। ওয়াল আরদি = আর জমিন থেকে। ওয়ালাকিন = কিন্তু। কাযযাবূ = তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। ফাআখাযনাহুম = সুতরাং আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি। বিমা কানূ ইয়াকছিবূনা = তারা যে পাপ উপার্জন করেছে তার কারণে। 

আর যদি এসব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান/ বিশ্বাস করতো আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো, তাহলে আমরা খুলে দিতাম তাদের উপর বারাকাত/ বরকতসমূহ, আসমান থেকে আর জমিন থেকে। কিন্তু তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। সুতরাং আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি তারা যে পাপ উপার্জন করেছে তার কারণে। 

৭:৯৭ 

আফাআমিনা আহলাল ক্বুরা = তবে কি নিরাপদবোধ করছে জনপদের অধিবাসীরা। আন ইয়াতিয়াহুম বা’ছুনা = তাদের উপর আমাদের শাস্তি আসা থেকে। বায়াতান = রাতের বেলায়। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা থাকবে। নায়িমূনা = ঘুমন্ত। 

তবে কি নিরাপদবোধ করছে জনপদের অধিবাসীরা আমাদের শাস্তি আসা থেকে, রাতের বেলায় এ অবস্থায় যে, তারা থাকবে ঘুমন্ত?  

৭:৯৮ 

আওয়া আমিনা আহলাল ক্বুরা = অথবা নিরাপদবোধ করছে কি জনপদের অধিবাসীরা। আইঁ ইয়া’তিয়াহুম বা’ছুনা = তাদের উপর আমাদের শাস্তি আসা থেকে। দুহান = সূর্যদীপ্ত দিনের বেলায়। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা তখন। ইয়ালআবূনা = খেলতামাসায় রত থাকবে। 

অথবা নিরাপদবোধ করছে কি জনপদের অধিবাসীরা তাদের উপর আমাদের শাস্তি আসা থেকে, সূর্যদীপ্ত দিনের বেলায় এ অবস্থায় যে, তারা তখন খেলতামাসায় রত থাকবে? 

৭:৯৯ 

আফাআমিনু = তবে কি তারা নিরাপদবোধ করছে। মাকরাল্লাহি = আল্লাহর কৌশল থেকে। ফালা ইয়া’মানু মাকরাল্লাহি = অথচ কেউ নিরাপদবোধ করে না আল্লাহর কৌশল থেকে। ইল্লাল ক্বাওমুল খাছিরূনা = ক্ষতিগ্রস্ত কওম ছাড়া। 

তবে কি তারা নিরাপদবোধ করছে আল্লাহর কৌশল থেকে? অথচ কেউ নিরাপদবোধ করে না আল্লাহর কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কওম ছাড়া। 

৭:১০০ 

আওয়া লাম ইয়াহদি = তাদেরকে কি হিদায়াত করেনি। লিল্লাযীনা ইয়ারিছূনাল আরদা = তাদেরকে যাদের ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করা হয়েছে পৃথিবীতে। মিন বা’দি আহলিহা = উহার পূর্ববর্তী অধিবাসীদের মধ্য থেকে। আন = (ইহার সাথে সম্পর্কিত) এ হিদায়াত যে। লাও = যদি। নাশাউ = আমরা ইচ্ছা করি। আসাবনাহুম = তাহলে আমরা তাদেরকে শাস্তি দেবো। বিযুনূবিহিম = তাদের পাপসমূহের কারণে। ওয়া = আর। নাতবাউ = আমরা মোহর লাগিয়ে দেবো। আলা ক্বুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহের উপর। ফাহুম = সুতরাং তারা। লা ইয়াছমাঊনা = (সত্যভাষণ) শুনবে না। 

তাদেরকে কি হিদায়াত করেনি তাদেরকে যাদের ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করা হয়েছে পৃথিবীতে, উহার পূর্ববর্তী অধিবাসীদের মধ্য থেকে, (ইহার সাথে সম্পর্কিত) এ হিদায়াত যে, যদি আমরা ইচ্ছা করি তাহলে আমরা তাদেরকে শাস্তি দেবো তাদের পাপসমূহের কারণে, আর আমরা মোহর লাগিয়ে দেবো তাদের কলবসমূহের উপর, সুতরাং তারা (সত্যভাষণ) শুনবে না। 

৭:১০১ 

তিলক্বাল ক্বুরা = এই হচ্ছে জনপদসমূহ। নাক্বুসসু = আমরা বর্ণনা করেছি। আলাইকা = তোমার কাছে। মিন আমবায়িহা = উহার সংবাদসমূহের কিছু। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআতহুম= তাদের কাছে এসেছিলো। রুসুলুহুম = তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ। বিল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। ফামা কানূ লিইউ’মিনূ = কিন্তু তারা প্রস্তুত ছিলো না ঈমান/ বিশ্বাস করার জন্য। বিমা কাযযাবূ = উহার প্রতি যা তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো। মিন ক্বাবলু = আগেই। কাযালিকা = এভাবেই। ইয়াতবাউল্লাহু = আল্লাহ মোহর লাগিয়ে দেন। আলা ক্বুলূবিল কাফিরীনা = কাফিরদের কলবসমূহের উপর। 

এই হচ্ছে জনপদসমূহ, আমরা বর্ণনা করেছি তোমার কাছে উহার সংবাদসমূহের কিছু। আর নিশ্চয় তাদের কাছে এসেছিলো তাদের (জন্য প্রেরিত) রসূলগণ বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ সহকারে। কিন্তু তারা প্রস্তুত ছিলো না ঈমান/ বিশ্বাস করার জন্য উহার প্রতি যা তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো আগেই। এভাবেই আল্লাহ মোহর লাগিয়ে দেন কাফিরদের কলবসমূহের উপর। 

৭:১০২ 

ওয়া = আর। মা ওয়াজাদনা = আমরা পাইনি। লিআকছারিহিম = তাদের অধিকাংশকে। মিন আহদিন = প্রতিশ্রুতি পালনকারীরূপে। ওয়া = আর। ইন ওয়াজাদনা = আমরা কি পাইনি। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশকে। লাফাছিক্বীনা = ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী? 

আর আমরা পাইনি তাদের অধিকাংশকে প্রতিশ্রুতি পালনকারীরূপে। আর আমরা কি পাইনি তাদের অধিকাংশকে ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী? 

৭:১০৩ 

ছুম্মা = তারপর। বাআছনা = আমরা সমুত্থিত করেছি। মিম বা;দিহিম = তাদের পরে। মুছা = মুসাকে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে। ইলা ফিরআউনা ওয়া মালায়িহী = ফেরাউন ওয়া মালায়িহীর (= ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদের) কাছে। ফাযলামূ বিহা = কিন্তু তারা উহার প্রতি যুলুম করেছে (= উহাকে অমান্য করেছে)। ফানযুর = সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপ। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুফছিদীনা = ফাসাদকারীদের/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি? 

তারপর আমরা সমুত্থিত/ প্রেরণ করেছি তাদের পরে মুসাকে আমাদের আয়াতসমূহ সহকারে, ফেরাউন ওয়া মালায়িহীর (= ফেরাউন ও তার নির্বাহী পরিষদের) কাছে। কিন্তু তারা উহার প্রতি যুলুম করেছে (= উহাকে অমান্য করেছে)। সুতরাং নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপ হয়েছিলো ফাসাদকারীদের/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি? 

৭:১০৪ 

ওয়া = আর। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। ইয়া ফিরআউনা = হে ফেরাউন। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। রসুলুম মির রব্বিল আলামীনা = রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে একজন রসূল। 

আর মূসা বলেছে, ‘হে ফেরাউন, নিশ্চয় আমি রব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে একজন রসূল। 

৭:১০৫ 

হাক্বীকুন আলা = আমার পদমর্যাদা। আন = এই যে। লা ক্বুলা আলাল্লাহি ইল্লাল হাক্বক্বা = আমি আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া কোন কথা বলি না। ক্বাদ = নিশ্চয়। জি’তুকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বিবাইয়িনাতিম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ। ফাআরছিলু = সুতরাং তুমি পাঠিয়ে দাও। মায়িআ = আমার সাথে। বানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলকে। 

আমার পদমর্যাদা এই যে, আমি আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া কোন কথা বলি না। নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ। সুতরাং তুমি পাঠিয়ে দাও আমার সাথে বানী ইসরাইলকে’। 

৭:১০৬ 

ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। ইন = যদি। কুনতা জি’তা = তুমি এসে থাকো। বিআয়াতিন = কোন আয়াতসহ/ নিদর্শনসহ। ফা’তি বিহা = তাহলে উহা পেশ করো। ইন = যদি। কুনতা = তুমি হও। মিনাস সদিক্বীনা = সত্যবাদীদের অন্তুর্ভুক্ত। 

সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘যদি তুমি এসে থাকো কোন আয়াতসহ/ নিদর্শনসহ, তাহলে উহা পেশ করো, যদি তুমি হও সত্যবাদীদের অন্তুর্ভুক্ত’। 

৭:১০৭ 

ফাআলক্বা = সুতরাং সে (= মূসা) নিক্ষেপ করেছে। আসাহু = তার লাঠি। ফাইযা = তারপর তখন। হিয়া = উহা (হলো)। ছু’বানুম মুবীনুন = স্পষ্ট অজগর। 

সুতরাং সে (= মূসা) নিক্ষেপ করেছে তার লাঠি। সুতরাং তখন উহা (হলো) স্পষ্ট অজগর।  

৭:১০৮ 

ওয়া = আর। নাযাআ ইয়াদাহু = সে (= মূসা) টেনে বের করেছে তার হাত। ফাইযা = তারপর তখন। হিয়া = উহা হয়েছে। বায়দাউ = ধবধবে সাদা। লিন্নাযিরীনা = দর্শকদের জন্র। 

আর সে (= মূসা) টেনে বের করেছে তার হাত। তারপর তখন উহা হয়েছে ধবধবে সাদা, দর্শকদের জন্য। 

৭:১০৯ এর শব্দার্থ; ক্বলাল মালাউ মিন ক্বাওমি ফিরআউনা = ফেরাউনের কওমের প্রধানগণ বলেছে। ইন্না হাযা = নিশ্চয় এই ব্যক্তি। লাছাহিরুন আলীমুন = একজন জ্ঞানী যাদুকর। 

ফেরাউনের কওমের প্রধানগণ বলেছে, ‘নিশ্চয় এই ব্যক্তি একজন জ্ঞানী যাদুকর। 

৭:১১০ 

ইউরীদু = সে এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইউখরিজাকুম = তোমাদেরকে বের করে দিতে। মিন আরদিকুম = তোমাদের দেশ থেকে। ফামাযা তা’মুরূনা = সুতরাং তোমরা কী সিদ্ধান্ত দেবে? 

সে এরাদা/ ইচ্ছা করে তোমাদেরকে বের করে দিতে তোমাদের দেশ থেকে। সুতরাং তোমরা কী সিদ্ধান্ত দেবে?’ 

৭:১১১ 

ক্বলূ = তারা বলেছে। আরজিহু = ঢিল দিন তাকে। ওয়া = আর। আখাহু = তার ভাইকে। ওয়া = আর ইতোমধ্যে। আরছিল = প্রেরণ করুন। ফিল মাদাইনি = মদীনাগুলোতে/ শহরগুলোতে। খাশিরীনা = সংগ্রহকারীদেরকে। 

তারা (= উপস্থিত সাধারণ লোকেরা) বলেছে, ‘ঢিল দিন তাকে আর তার ভাইকে। আর ইতোমধ্যে প্রেরণ করুন মদীনাগুলোতে/ শহরগুলোতে সংগ্রহকারীদেরকে। 

৭:১১২ 

ইয়া’তূকা = তারা আপনার কাছে আসবে। বিকুল্লি ছাহিরিন আলীমিন = প্রত্যেক জ্ঞানী যাদুকরকে নিয়ে। 

তারা আপনার কাছে আসবে প্রত্যেক জ্ঞানী যাদুকরকে নিয়ে। 

৭:১১৩ 

ওয়া = আর। জাআছ ছাহারাতু ফিরআউনা = যাদুকররা এসেছে ফেরাউনের কাছে। ক্বলূ = তারা বলেছে। ইন্না = নিশ্চিত তো। লানা = আমাদের জন্য। লাআজরানা = আমাদের পুরস্কার। ইন = যদি। কুন্না নাহনুল গালিবীনা = আমরা হই বিজয়ী। 

আর যাদুকররা এসেছে ফেরাউনের কাছে। তারা বলেছে, ‘নিশ্চিত তো আমাদের জন্য আমাদের পুরস্কার, যদি আমরা হই বিজয়ী?’ 

৭:১১৪ 

ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। নাআম = হ্যাঁ। ওয়া = আর। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা হবে। লামিনাল মুক্বাররবীনা = (আমার) নিকটবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত। 

সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘হ্যাঁ। আর নিশ্চয় তোমরা হবে (আমার) নিকটবর্তীদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:১১৫ 

ক্বলূ = তারা বলেছে। ইয়া মূসা = হে মূসা। ইম্মা = হয়তো। আন তুলক্বিয়া = তুমিই প্রথম উপস্থাপন করবে। ওয়া = আর। ইম্মা = নয়তো। আন নাকূনা নাহনুল মুলক্বীনা = আমরা হবো প্রথম উপস্থাপনকারী। 

তারা বলেছে, ‘হে মূসা হয়তো তুমিই প্রথম উপস্থাপন করবে। আর নয়তো আমরা হবো প্রথম উপস্থাপনকারী’। 

৭:১১৬ 

ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। আলক্বূ = তোমরা উপস্থাপন করো। ফালাম্মা = তারপর যখন। আলক্বাও = তারা উপস্থাপন করেছে। ছাহারূ আ’ইউনান্নাছা = তারা মানুষের চোখসমূহকে ধাঁধিয়ে দিয়েছে/ সম্মোহিত করে ফেলেছে। ওয়াছতারহাবূহুম = আর তাদেরকে ভীতি বিহ্বল করে ফেলেছে। ওয়া = আর। জাঊ = তারা এসেছিলো। বিছিহরিন আযীম = মহা যাদু নিয়ে। 

সে (= মূসা) বলেছে, ‘তোমরা উপস্থাপন করো। তারপর যখন তারা উপস্থাপন করেছে, তারা মানুষের চোখসমূহকে ধাঁধিয়ে দিয়েছে/ সম্মোহিত করে ফেলেছে আর তাদেরকে ভীতি বিহ্বল করে ফেলেছে, আর তারা এসেছিলো মহা যাদু নিয়ে। 

৭:১১৭ 

ওয়া = আর। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা মূসা = মূসার প্রতি। আন = যে। আলক্বি = তুমি নিক্ষেপ করো। আসাকা = তোমার লাঠি। ফাইযা = সুতরাং তখন। হিয়া = উহা (= মূসার লাঠি)। তালক্বাফু মা ইয়া’ফিকূনা = তাদের ধাপ্পাবাজিকে নস্যাত করে দিয়েছে। 

আর আমরা ওহী করেছি মূসার প্রতি যে, ‘তুমি নিক্ষেপ করো তোমার লাঠি’। সুতরাং তখন উহা (= মূসার লাঠি) তাদের ধাপ্পাবাজিকে নস্যাত করে দিয়েছে। 

৭:১১৮ 

ফাওয়াক্বাআল হাক্বক্বু = সুতরাং সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। ওয়া = আর। বাতালা মা কানূ ইয়া’মালূনা = তাদের কার্যক্রম মিথ্যা প্রমাণিত হলো। 

সুতরাং সত্য প্রতিষ্ঠিত হলো আর তাদের কার্যক্রম মিথ্যা প্রমাণিত হলো। 

৭:১১৯ 

ফাগুলিবূ = সুতরাং তারা (= ফেরাউন ওয়া মালায়েহী) পরাজিত হলো। হুনালিকা = সেখানেই। ওয়ানক্বালাবূ = আর তারা পাল্টে গেলো। সগিরীনা = হেয় অবস্থায়। 

সুতরাং তারা (= ফেরাউন ওয়া মালায়েহী) পরাজিত হলো সেখানেই। আর তারা পাল্টে গেলো হেয় অবস্থায়। 

৭:১২০ 

ওয়া = আর। উলক্বিয়াছ ছাহারাতু = ঐ ঘটনা নোয়ায়ে দিয়েছে যাদুকরদেরকে। ছাজিদীনা = আল্লাহর প্রতি সিজদাকারী হিসাবে। 

আর ঐ ঘটনা নোয়ায়ে দিয়েছে যাদুকরদেরকে আল্লাহর প্রতি সিজদাকারী হিসাবে। 

৭:১২১ 

ক্বলূ = তারা বলেছে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করলাম। বিরব্বিল আলামীনা = রব্বুল আলামীনের প্রতি। 

তারা বলেছে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করলাম রব্বুল আলামীনের প্রতি’। 

৭:১২২ 

রব্বি মূসা ও হারূনা = যিনি মূসা ও হারূনের রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি)। 

যিনি মূসা ও হারূনের রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি)। 

৭:১২৩ 

ক্বলা ফিরআউনা = ফেরাউন বলেছে। আমানতুম বিহী = তোমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তাঁর প্রতি। ক্বাবলা আন আযানা লাকুম = আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই। ইন্না = নিশ্চয়। হাযা = ইহা। লামাকারুম মাকারতুমূহু = একটা কৌশল, ঐ কৌশল তোমরা করেছো। ফিল মাদীনাতি = মদীনাতে/ শহরে বসে। লিতুখরিজূ = যেন তোমরা বের করে দিতে পারো। মিনহা = উহা থেকে। আহলাহা = উহার অধিবাসীদেরকে। ফাছাওফা = সুতরাং শীঘ্রই। তা’লামূনা = তোমরা (এর পরিণতি) জানতে পারবে। 

ফেরাউন বলেছে, ‘তোমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তাঁর প্রতি, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই? নিশ্চয় ইহাএকটা কৌশল, ঐ কৌশল তোমরা করেছো মদীনাতে/ শহরে বসে, যেন তোমরা বের করে দিতে পারো উহা থেকে উহার অধিবাসীদেরকে। সুতরাং শীঘ্রই তোমরা (এর পরিণতি) জানতে পারবে। 

৭:১২৪ 

লাউক্বাত্তিআন্না = নিশ্চয় আমি কেটে ফেলবো। আইদিয়াকুম = তোমাদের হাতসমূহ। ওয়া = আর। আরজুলাকুম = তোমাদের পাসমূহ। মিন খিলাফিন = বিপরীত দিক থেকে (= ডান হাত বাম পা অথবা বাম হাত ডান পা)। ছুম্মা = তারপর। লাউসাল্লিবান্নাকুম আজমাঈনা = নিশ্চয় আমি তোমাদেরে সবাইকে ক্রুশবিদ্ধ করবো/ শূলে চড়াবো। 

নিশ্চয় আমি কেটে ফেলবো তোমাদের হাতসমূহ আর তোমাদের পাসমূহ বিপরীত দিক থেকে (= ডান হাত বাম পা অথবা বাম হাত ডান পা)। তারপর নিশ্চয় আমি তোমাদেরে সবাইকে ক্রুশবিদ্ধ করবো/ শূলে চড়াবো। 

৭:১২৫ 

ক্বলূ = (জবাবে) তারা বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। ইলা রব্বিনা = আমাদের রবের দিকেই তো। মুনক্বালিবূনা = প্রত্যাবর্তনকারী। 

(জবাবে) তারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের দিকেই তো প্রত্যাবর্তনকারী’। 

৭:১২৬ 

ওয়া = আর। মা তানক্বিমু মিন্না = তুমি তো প্রতিশোধ নিচ্ছো না আমাদের থেকে। ইল্লা = এছাড়া। আন = অন্য কারণে যে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিআয়াতি রব্বিনা = আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি। লাম্মা = যখন। জাআতনা = উহা আমাদের কাছে এসেছে। রব্বানা = (সেই সাথে তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছে এই বলে যে,) ‘হে আমাদের রব। আফরিগ আলাইনা সবরান = আমাদেরকে সবর করার শক্তি দিন। ওয়া = আর। তাওয়াফফানা = আমাদেরকে ওফাত/ মৃত্যু দিন। মুসলিমীনা = মুসলিম হিসাবে। 

আর তুমি তো প্রতিশোধ নিচ্ছো না আমাদের থেকে এছাড়া অন্য কারণে যে, আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি, যখন উহা আমাদের কাছে এসেছে। (সেই সাথে তারা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানিয়েছে এই বলে যে,) ‘হে আমাদের রব, আমাদেরকে সবর করার শক্তি দিন। আর আমাদেরকে ওফাত/ মৃত্যু দিন মুসলিম হিসাবে’। 

৭:১২৭ 

ওয়া = আর। ক্বলাল মালাউ মিন ক্বাওমি ফিরআউনা = ফেরাউনের কওমের প্রধানগণ বলেছে। আতাযারূ মূসা = আপনি কি ছেড়ে দেবেন মূসাকে। ওয়া ক্বাওমাহু = আর তার কওমকে। লিইউফসিদূ ফিল আরদি = পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য। ওয়া = আর। ইয়াযারাকা = যেন পরিত্যাগ করে আপনাকে। ওয়া = আর। আলিহাতাকা = আপনার ইলাহদেরকে/ উপাস্যদেরকে। ক্বলা = সে (= ফেরাউন) বলেছে। ছানুক্বাত্তিলা = শীঘ্রই আমরা কতল/ হত্যা করবো। আবনাআহুম = তাদের পুত্রদেরকে। ওয়া = আর। নাছতাহয়ী = আমরা জীবিত রাখবো। নিছাআহুম = তাদের নারীদেরকে। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। ফাওক্বাহুম = তাদের উপর। ক্বাহিরূনা = একচ্ছত্র ক্ষমতাধর। 

আর ফেরাউনের কওমের প্রধানগণ বলেছে, ‘আপনি কি ছেড়ে দেবেন মূসাকে আর তার কওমকে পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করার জন্য আর যেন পরিত্যাগ করে আপনাকে আর আপনার ইলাহদেরকে/ উপাস্যদেরকে?’ সে (= ফেরাউন) বলেছে, ‘শীঘ্রই আমরা কতল/ হত্যা করবো তাদের পুত্রদেরকে আর আমরা জীবিত রাখবো তাদের নারীদেরকে। আর নিশ্চয় আমরা তাদের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতাধর’। 

৭:১২৮ 

ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিক্বাওমিহিছতায়িনূ = তার কওমকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। বিল্লাহি = আল্লাহর কাছে। ওয়াসবির = আর সবর করো। ইন্নাল আরদা লিল্লাহি = নিশ্চয় জমিন আল্লাহর। ইউরিছূহা = তিনি উহাতে ওয়ারিস করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (ওয়ারিস করার) ইচ্ছা করেন। মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাগণের মধ্য থেকে। ওয়াল আক্বিবাতু = আর উত্তম পরিণাম। লিল মুত্তাক্বীনা = মুত্তাকীদের/ সাবধানীদের/ আল্লাহভীরুদের জন্য। 

মূসা বলেছে তার কওমকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো আল্লাহর কাছে, আর সবর করো। নিশ্চয় জমিন আল্লাহর। তিনি উহাতে ওয়ারিস করেন যাকে তিনি (ওয়ারিস করার) ইচ্ছা করেন, তাঁর বান্দাগণের মধ্য থেকে। আর উত্তম পরিণাম মুত্তাকীদের/ সাবধানীদের/ আল্লাহভীরুদের জন্য’। 

৭:১২৯ 

ক্বলূ = তারা (= মূসার কওম) বলেছে। ঊযিনা = আমরা নির্যাতিত হয়েছি। মিন ক্বাবলি আন তা’তিয়ানা = তুমি আমাদের কাছে আসার আগেও। ওয়া মিম বা’দি মা জি’তানা = আর তুমি আমাদের কাছে আসার পরেও। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। আছা = আশা করা যায়। রব্বুকুম = তোমাদের রব। আইঁ ইউহলিকা = হালাক/ ধ্বংস করে দেবেন। আদুউউকুম = তোমাদের শত্রুকে। ওয়া = আর। ইয়াছতাখলিফাকুম ফিল আরদি = তোমাদেরকে  পৃথিবীতে খিলাফত/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্তি প্রদান করবেন। ফাইয়ানযুরা = তারপর তিনি দেখবেন। কায়ফা তা’মালূনা = তোমরা কিরূপ কাজ করো? 

তারা (= মূসার কওম) বলেছে, ‘আমরা নির্যাতিত হয়েছি তুমি আমাদের কাছে আসার আগেও আর তুমি আমাদের কাছে আসার পরেও’। সে (= মূসা) বলেছে, ‘আশা করা যায় তোমাদের রব হালাক/ ধ্বংস করে দেবেন তোমাদের শত্রুকে আর তোমাদেরকে  পৃথিবীতে খিলাফত/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্তি প্রদান করবেন। তারপর তিনি দেখবেন তোমরা কিরূপ কাজ করো?’ 

৭:১৩০ 

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয় আমরা। আখাযনা = পাকড়াও করেছি। আলা ফিরআউনা = আলে ফেরাউনকে/ ফেরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদেরকে। বিছ ছিনীনা ওয়া নাক্বসিম মিনাছ ছামারাতি = দুর্ভিক্ষ ও ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির দ্বারা। লাআল্লাহুম ইয়াযযাককারূনা = যেন তারা যিকির/ স্মরণ করে। 

আর নিশ্চয় আমরা পাকড়াও করেছি আলে ফেরাউনকে/ ফেরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদেরকে, দুর্ভিক্ষ ও ফল ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির দ্বারা, যেন তারা যিকির/ স্মরণ করে। 

৭:১৩১ 

ফাইযা = তারপর যখন। জাআতহুমুল হাছানাতু = তাদের কাছে আসতো কোন উত্তম অবস্থা। ক্বলূ = তারা বলতো। লানা হাযিহী = এরূপ হওয়াই আমাদের অধিকার। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুসিবহুম = তাদের কাছে পৌঁছতো। ছাইয়িআতুন = কোন মন্দ অবস্থা। ইয়াত্তাইয়ারূ = তারা অলক্ষুণে বলতো। বিমূসা = মূসাকে। ওয়া = আর। মাম্মাআহু = যারা তার সাথে ছিলো তাদেরকে। আলা = জেনে রাখো। ইন্নামা = নিশ্চয়। তয়িরুহুম = তাদের ভাগ্য। ইনদাল্লাহি = আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে ছিলো। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = (প্রকৃত বিষয়টি) জানতো না। 

তারপর যখন তাদের কাছে আসতো কোন উত্তম অবস্থা, তখন তারা বলতো, ‘এরূপ হওয়াই আমাদের অধিকার’। আর যদি তাদের কাছে পৌঁছতো কোন মন্দ অবস্থা, তখন তারা অলক্ষুণে বলতো মূসাকে আর যারা তার সাথে ছিলো তাদেরকে। জেনে রাখো, নিশ্চয় তাদের ভাগ্য আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণে ছিলো। কিন্তু তাদের অধিকাংশই (প্রকৃত বিষয়টি) জানতো না।

৭:১৩২ 

ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। মাহমা তা’তিনা বিহী = তুমি যা কিছুই নিয়ে আসো না কেন। মিন আয়াতিন লিতাছহারানা বিহা = যে আয়াতই/ যে নিদর্শনই আমাদেরকে সম্মোহিত/ বিমোহিত করার জন্য (নিয়ে আসো না কেন)। ফামা নাহনু = কিছুতেই আমরা হবো না। লাকা = তোমার উপস্থাপিত বিষয়ে। বিমু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

আর তারা বলেছে, ‘তুমি যা কিছুই নিয়ে আসো না কেন, যে আয়াতই/ যে নিদর্শনই আমাদেরকে সম্মোহিত/ বিমোহিত করার জন্য (নিয়ে আসো না কেন), কিছুতেই আমরা হবো না তোমার উপস্থাপিত বিষয়ে মু’মিনীন/ বিশ্বাসী’। 

৭:১৩৩ 

ফাআরছালনা = তারপর আমরা প্রেরণ করেছি। আলাইহিম = তাদের উপর। তূফানা = ঝড়তুফান। ওয়াল জারাদা = পঙ্গপাল। ওয়াল ক্বুম্মালা = উকুন। ওয়াস সফারিআ = ব্যাঙ। ওয়াদ্দাম = আর রক্ত। আয়াতিম মুফাসসালাতিন = একের পর এক আয়াত/ নিদর্শন রূপে। ফাছতাকবারূ = তবুও তারা অহংকার করেছে। ওয়া = আর। কানূ = তারা ছিলো। ক্বাওমাম মুজরিমীনা = এক অপরাধী কওম। 

তারপর আমরা প্রেরণ করেছি তাদের উপর ঝড়তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ আর রক্ত; একের পর এক আয়াত/ নিদর্শন রূপে। তবুও তারা অহংকার করেছে। আর তারা ছিলো এক অপরাধী কওম। 

৭:১৩৪ 

ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। ওয়াক্বাআ = আপতিত হতো। আলাইহিমুর রিজযু = তাদের উপর কোন কলুষতাপূর্ণ শাস্তি। ক্বলূ = তারা বলতো। ইয়া মূসা = হে মূসা। দুউ = তুমি দোয়া করো। লানা = আমাদের জন্য। রব্বাকা = তোমার রবের কাছে। বিমা = ঐ বিষয়ে যা। আহিদা = তিনি শর্তারোপ করেছেন। ইনদাকা = তোমার কাছে। লাইন = নিশ্চয় যদি। কাশাফতা = তুমি সরিয়ে দাও। আন্নার রিজযা = আমাদের থেকে এই কলুষতাপূর্ণ শাস্তি। লানু’মিনুন্না = তাহলে আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো। লাকা = তোমার উপস্থাপিত বিষয়ে। ওয়া = আর। লানুরছিলান্না = আমরা প্রেরণ করবো। মাআকা = তোমার সাথে। বানী ইসরাঈলা = বনী ইসরাইলকে। 

আর যখন আপতিত হতো তাদের উপর কোন কলুষতাপূর্ণ শাস্তি, তখন তারা বলতো, ‘হে মূসা, তুমি দোয়া করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে ঐ বিষয়ে যা তিনি শর্তারোপ করেছেন তোমার কাছে। নিশ্চয় যদি তুমি সরিয়ে দাও আমাদের থেকে এই কলুষতাপূর্ণ শাস্তি, তাহলে আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো তোমার উপস্থাপিত বিষয়ে, আর আমরা প্রেরণ করবো তোমার সাথে বনী ইসরাইলকে। 

৭:১৩৫ 

ফালাম্মা = কিন্তু যখনই। কাশাফনা = আমরা সরিয়ে দিতাম। আনহুমুর রিজযা = তাদের থেকে সেই কলুষতাপূর্ণ শাস্তি। ইলা আজালিন = একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত। হুম বালিগূহু = তারা যাতে পৌঁছার ছিলো। ইযা = তখন। হুম = তারা। ইয়ানকুছূনা = প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতো। 

কিন্তু যখনই আমরা সরিয়ে দিতাম তাদের থেকে সেই কলুষতাপূর্ণ শাস্তি একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত, তারা যাতে পৌঁছার ছিলো; তখন তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতো। 

৭:১৩৬ 

ফানতাক্বামনা মিনহুম = সুতরাং আমরা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি। ফাআগরাক্বনাহুম = অর্থাৎ আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি। ফিল ইয়াম্মি = জলাকীর্ণ হ্রদে। বিআন্নাহুম = কারণ নিশ্চয় তারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। কানূ = তারা ছিলো। আনহা = উহা থেকে। গাফিলূনা = গাফেল/ উদাসীন। 

সুতরাং আমরা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি অর্থাৎ আমরা তাদেরকে ডুবিয়ে দিয়েছি জলাকীর্ণ হ্রদে। কারণ নিশ্চয় তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে আর তারা ছিলো উহা থেকে গাফেল/ উদাসীন। 

৭:১৩৭ 

ওয়া = আর। আওরাছনাল ক্বাওমাল্লাযীনা = আমরা ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করে দিয়েছি সেই কওমকে যাদেরকে। কানূ ইউছতাদআফূনা = মুসতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো। মাশারিবাল আরদি = সেই ভূখন্ডের পূর্বদিকসমূহে। ওয়া মাগারিবাহাল্লাতী বারাকনা ফীহা = আর উহার পশ্চিম দিকসমূহে, যাতে আমরা বরকত দিয়েছি। ওয়া = আর। তাম্মাত = পূর্ণ হয়েছে। কালিমাতু রব্বিকাল হুছনা = তোমার রবের উত্তম (ওয়াদার) বাণীসমূহ। আলা বানী ইসরাঈলু = বানী ইসরাইলের উপর। বিমা সবারূ = এ কারণে যে, তারা সবর করেছিলো। ওয়া = আর। দাম্মারনা = আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। মা কানূ ইয়ানাউ = যা রচনা করছিলো। ফিরআউনু ওয়া ক্বাওমুহু = ফেরাউন ও তার কওম। ওয়া = আর। মা কানূ ইয়ারিশূনা = তারা যেসব আসনে সমাসীন হতো (= তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে)।  

আর আমরা ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী করে দিয়েছি সেই কওমকে যাদেরকে মুসতাদআফীন/ দুর্বল করে রাখা হয়েছিলো, সেই ভূখন্ডের পূর্বদিকসমূহে আর উহার পশ্চিম দিকসমূহে, যাতে আমরা বরকত দিয়েছি (তথা বরকতময় দেশটির সমগ্র অঞ্চলে)। আর পূর্ণ হয়েছে তোমার রবের উত্তম (ওয়াদার) বাণীসমূহ বানী ইসরাইলের উপর, এ কারণে যে, তারা সবর করেছিলো। আর আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি যা রচনা করছিলো ফেরাউন ও তার কওম আর তারা যেসব আসনে সমাসীন হতো (= তাদের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে)।  

৭:১৩৮ 

ওয়া = আর (তা এভাবে যে)। জাওয়াযনা = আমরা পার করে দিয়েছি। বিবানী ইসরাঈলার বাহরা = বানী ইসরাইলকে ঐ জলাশয়টি (= যে জলাশয়ে/ জলাকীর্ণ হ্রদে পরবর্তীতে আলে ফেরাউনকে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে)। ফাআতাও = তারপর তারা এসেছিলো। আলা ক্বাওমিইঁ ইয়াকুফূনা = এমন কওমের কাছে যারা পূজায় রত ছিলো। আলা আসনামিল্লাহুম = তাদের নির্মিত কতিপয় মূর্তির। ক্বলূ = তখন তারা (= বানী ইসরাইল) বলেছে। ইয়া মূসাজআল লানা = হে মূসা, বানিয়ে দাও আমাদের জন্য। ইলাহান কামা লাহুম আলিহাতুন = একটি প্রতিমা ইলাহ যেমন তাদের আছে অনেকগুলি প্রতিমা ইলাহ। ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। ক্বাওমুন তাজহালূনা = এমন কওম যারা (এ কথার মাধ্যমে) জাহেলিয়্যাত অবলম্বন করছো। 

আর (তা এভাবে যে) আমরা পার করে দিয়েছি বানী ইসরাইলকে ঐ জলাশয়টি (= যে জলাশয়ে/ জলাকীর্ণ হ্রদে পরবর্তীতে আলে ফেরাউনকে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে)। তারপর তারা এসেছিলো এমন কওমের কাছে যারা পূজায় রত ছিলো তাদের নির্মিত কতিপয় মূর্তির। তখন তারা (= বানী ইসরাইল) বলেছে, ‘হে মূসা, বানিয়ে দাও আমাদের জন্য একটি প্রতিমা ইলাহ যেমন তাদের আছে অনেকগুলি প্রতিমা ইলাহ’। সে (= মূসা) বলেছে, ‘নিশ্চয় তোমরা এমন কওম যারা (এ কথার মাধ্যমে) জাহেলিয়্যাত অবলম্বন করছো। 

৭:১৩৯ 

ইন্না = নিশ্চয়। হাউলায়ি = এসবকিছু। মুতাব্বারুন = নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। মা হুম ফীহি = যাতে তারা রত আছে। ওয়া = আর। বাতিলুন = উহা বাতিল। মা কানূ ইয়া’মালূনা = যা তারা করে। 

নিশ্চয় এসবকিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যাতে তারা রত আছে। আর উহা বাতিল যা তারা করে। 

৭:১৪০ 

ক্বলা = সে (= মূসা) আরো বলেছে। আগাইরাল্লাহি = আল্লাহকে ছাড়া কি। আবগীকুম = আমি তোমাদের জন্য তালাশ করবো। ইলাহাওঁ ওয়া = কোন ইলাহ, অথচ। হুয়া = তিনি। ফাদ্দালাকুম = তোমাদেরকে ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছেন। আলাল আলামীনা = সমগ্র বিশ্ববাসীদের উপর। 

সে (= মূসা) আরো বলেছে, ‘আল্লাহকে ছাড়া কি আমি তোমাদের জন্য তালাশ করবো কোন ইলাহ, অথচ তিনি তোমাদেরকে ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছেন সমগ্র বিশ্ববাসীদের উপর?’

৭:১৪১ 

ওয়া = আর। ইয = স্মরণ করো যখন। আনজাইনাকুম = আমরা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি। মিন আলি ফিরআউনা = আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদের কবল থেকে। ইয়াছূমূনাকুম = তারা তোমাদেরকে নির্যাতন করতো। ছূআল আযাবা = নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি দিয়ে। ইউক্বাত্তিলূনা = তারা কতল/ হত্যা করতো। আবনাআকুম = তোমাদের পুত্রদেরকে। ওয়া = আর। ইয়াছতাহইঊনা = তারা জীবিত থাকতে দিতো। নিছাআকুম = তোমাদের নারীদেরকে। ওয়া = আর। ফী যালিকুম = উহাতে ছিলো। বালাউম মির রব্বিকুম = পরীক্ষা, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। আযীমুন = মহাপরীক্ষা। 

আর স্মরণ করো যখন আমরা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি আলে ফেরাউনের/ ফেরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদের কবল থেকে। তারা তোমাদেরকে নির্যাতন করতো নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি দিয়ে। তারা কতল/ হত্যা করতো তোমাদের পুত্রদেরকে আর তারা জীবিত থাকতে দিতো তোমাদের নারীদেরকে। আর উহাতে ছিলো পরীক্ষা, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, মহাপরীক্ষা। 

৭:১৪২ 

ওয়া = আর। ওয়াআদনা = আমরা ওয়াদা দিয়েছি। মূসা = মূসাকে। ছালাছীনা লাইলাতান = ত্রিশ রাতের। ওয়া = আর। আতমামনাহা = উহাকে পূর্ণ করেছি। বিআশরিন = দশ রাত যোগ করে। ফাতাম্মা = সুতরাং পুর্ণ হলো। মীক্বাতু রব্বিহী = তার রবের মীকাত/ নির্ধারিত সময়কাল। আরবায়িনা লাইলাতান = চল্লিশ রাতে। ওয়া = আর। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিআখীহি হারূনাখলুফনী = তার ভাই হারূনকে উদ্দেশ্য করে, ‘তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করো। ফী ক্বাওমী = আমার কওমের মধ্যে। ওয়া = আর। আসলিহ = ভালো কাজ করো। ওয়া = আর। লা তাত্তাবি’ ছাবীলাল মুফসিদীনা = ফাসাদকারীদের/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথের ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। 

আর আমরা ওয়াদা দিয়েছি মূসাকে ত্রিশ রাতের, আর উহাকে পূর্ণ করেছি দশ রাত যোগ করে, সুতরাং পূর্ণ হলো তার রবের মীকাত/ নির্ধারিত সময়কাল চল্লিশ রাতে। আর মূসা বলেছে তার ভাই হারূনকে উদ্দেশ্য করে, ‘তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করো আমার কওমের মধ্যে আর ভালো কাজ করো আর ফাসাদকারীদের/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথের ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না’। 

৭:১৪৩ 

ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। জাআ মূসা = মূসা উপনীত হয়েছে। লিমীক্বাতিনা = আমাদের নির্ধারিত সময়কালে। ওয়া = আর। কাল্লামাহু রব্বুহু = তার সাথে কথা বলেছেন তার রব। ক্বলা = সে বলেছে। রব্বি = হে আমার রব। আরিনী = আমাকে দেখা দাও। আনযুর ইলাইকা = যেন আমি তোমাকে দেখি। ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। লান তারানী = তুমি কখনই (= দুনিয়া ও আখিরাতে) আমাকে দেখবে না। ওয়ালাকিনিনযুর = কিন্তু তুমি নজর/ লক্ষ্য করো। ইলাল জাবালি = পাহাড়টির দিকে। ফইনিছতাক্বাররা = যদি তা স্থির থাকে। মাকানাহু = তার মাকানে/ স্থানে। ফাছাওফা = তাহলেই। তারানী = তুমি আমাকে দেখবে। ফালাম্মা = তারপর যখন। তাজাল্লা রব্বুহু = নূরের তাজাল্লী প্রকাশ করেছেন তার রব। লিল জাবালি = পাহাড়টিতে। দাক্কান = ফলে তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে। ওয়া = আর। খাররা মূসা = পড়ে গেছে মূসা। সয়িক্বান = বেহুঁশ হয়ে। ফালাম্মা = তারপর যখন। আফাক্বা = সে চেতনা ফিরে পেয়েছে। ক্বলা = তখন সে বলেছে। সুবহানাকা = সুবহানাকা/ আপনি পবিত্র। তুবতু ইলাইকা = আমি তাওবা করছি আপনার কাছে। ওয়া = আর। আনা = আমিই। আওয়ালুল মু’মিনীনা = প্রথম মু’মিন। 

আর যখন মূসা উপনীত হয়েছে আমাদের নির্ধারিত সময়কালে, আর তার সাথে কথা বলেছেন তার রব। সে বলেছে, ‘হে আমার রব, আমাকে দেখা দাও, যেন আমি তোমাকে দেখি’। তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তুমি কখনই (= দুনিয়া ও আখিরাতে) আমাকে দেখবে না, কিন্তু তুমি নজর/ লক্ষ্য করো পাহাড়টির দিকে, যদি তা স্থির থাকে তার মাকানে/ স্থানে, তাহলেই তুমি আমাকে দেখবে’। তারপর যখন নূরের তাজাল্লী প্রকাশ করেছেন তার রব পাহাড়টিতে, ফলে তা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে, আর পড়ে গেছে মূসা বেহুঁশ হয়ে। তারপর যখন সে চেতনা ফিরে পেয়েছে, তখন সে বলেছে, ‘সুবহানাকা/ আপনি পবিত্র। আমি তাওবা করছি আপনার কাছে। আর আমিই প্রথম মু’মিন’। 

৭:১৪৪ 

ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। ইয়া মূসা = হে মূসা। ইন্নিসতফায়নাতুকা = নিশ্চয় আমি তোমাকে মনোনীত করেছি। আলান্নাছি = মানবজাতির উপর। বিরিসালিতী = আমার রিসালাতের জন্য। ওয়া = আর। বিকালামী = আমার কালামের/ কথার জন্য। ফাখুজ = সুতরাং গ্রহণ করো। মা = যা। আতাইতুকা = আমি তোমাকে দিয়েছি। ওয়া = আর। কুন মিনাশ শাকিরীনা = শোকরকারীদের/ কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। 

তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘হে মূসা, নিশ্চয় আমি তোমাকে মনোনীত করেছি মানবজাতির উপর, আমার রিসালাতের জন্য, আর আমার কালামের/ কথার জন্য। , সুতরাং গ্রহণ করো যা আমি তোমাকে দিয়েছি। আর শোকরকারীদের/ কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও’। 

৭:১৪৫ 

ওয়া = আর। কাতাবনা লাহু = আমরা তাকে লিখে দিয়েছি। ফিল আলওয়াহি = ফলকসমূহের মধ্যে। মিন কুল্লি সাইয়িম মাওয়িযাতান = প্রত্যেক বিষয়ের ওয়াজ/ উপদেশ। ওয়া = আর। তাফসীলাল লিকুল্লি সাইয়িন = প্রত্যেক বিষয়ের তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যা। ফাখুজূহা = সুতরাং উহাকে ধারণ করো। বিক্বুওওয়াতিওঁ ওয়া’মুর = মজবুতভাবে আর আদেশ দাও। ক্বাওমাকা = তোমার কওমকে। ইয়া’খুজূ = যেন তারা গ্রহণ করে। বিআহছানিহা = উহার অধিক উত্তম বিষয়গুলো। ছাউরীকুম = আমি শীঘ্রই তোমাদেরকে দেখাবো। দারাল ফাছিক্বীনা = ফাসিকদের বাসস্থান। 

আর আমরা তাকে লিখে দিয়েছি ফলকসমূহের মধ্যে প্রত্যেক বিষয়ের ওয়াজ/ উপদেশ আর প্রত্যেক বিষয়ের তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যা। সুতরাং উহাকে ধারণ করো মজবুতভাবে আর আদেশ দাও তোমার কওমকে যেন তারা গ্রহণ করে উহার অধিক উত্তম বিষয়গুলো। আমি শীঘ্রই তোমাদেরকে দেখাবো ফাসিকদের বাসস্থান। 

৭:১৪৬ 

ছাআসরিফু = শীঘ্রই আমি তাদের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দেবো। আন আয়াতিয়াল্লাযীনা = আমার আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ থেকে যারা। ইয়াতাকাব্বারূনা ফিল আরদি = পৃথিবীতে অহংকার করে। বিগাইরি হাক্বক্বি = যা একান্তই অন্যায়। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়ারাও = যদি তারা দেখেও। কুল্লা আয়াতিল্লা ইউ’মিনূ বিহা = প্রত্যেক আয়াত/ নিদর্শন, তবু তারা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করবে না। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়ারাও = যদি তারা দেখে। ছাবীলার রুশদি = সঠিক পথ। লা ইয়াত্তাখিজূহু = তারা উহাকে গ্রহণ করবে না। ছাবীলান = পথ হিসাবে। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়ারাও = যদি তারা দেখে। ছাবীলাল গাইয়ি = ভ্রান্ত পথ। ইয়াত্তাখিজূহু = তারা উহাকে গ্রহণ করবে। ছাবীলান = পথ হিসাবে। যালিকা = ইহা। বিআন্নাহুম = এজন্য যে তারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। কানূ = তারা ছিলো। আনহা = উহা থেকে। গাফিলীনা = গাফেল/ উদাসীন। 

শীঘ্রই আমি তাদের দৃষ্টিকে ফিরিয়ে দেবো আমার আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ থেকে, যারা পৃথিবীতে অহংকার করে যা একান্তই অন্যায়। আর যদি তারা দেখেও প্রত্যেক আয়াত/ নিদর্শন, তবু তারা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করবে না। আর যদি তারা দেখে সঠিক পথ, তারা উহাকে গ্রহণ করবে না পথ হিসাবে। আর যদি তারা দেখে ভ্রান্ত পথ, তারা উহাকে গ্রহণ করবে পথ হিসাবে। ইহা এজন্য যে, তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি, আর তারা ছিলো উহা থেকে গাফেল/ উদাসীন। 

৭:১৪৭ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। লিক্বায়িল আখিরাতি = আখিরাতের মোলাকাতকে। হাবিতাত আ’মালুহুম = ব্যর্থ হয়ে গেছে তাদের আমলসমূহ। হাল ইউজযাওনা = তাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে। ইল্লা মা কানূ ইয়া’মালূনা = তারা যে আমল করেছে তা ছাড়া অন্য কিছুর? 

আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে আর আখিরাতের মোলাকাতকে, ব্যর্থ হয়ে গেছে তাদের আমলসমূহ। তাদেরকে কি প্রতিফল দেয়া হবে তারা যে আমল করেছে তা ছাড়া অন্য কিছুর? 

৭:১৪৮ 

ওয়াত্তাখাজা = আর গ্রহণ করেছে। ক্বাওমুম মূসা = মূসার কওম। মিম বা’দিহী = তার অনুপস্থিতিতে। মিন হুল্লীহিম = তাদের অলংকারসমূহ দ্বারা নির্মিত। ইজলান জাছাদান = বাছুরের পুতুলকে (উপাস্যরূপে)। লাহু খুওয়ারুন = যা ‘হাম্বা’ আওয়াজ দিতো। আলাম ইয়ারাও = তারা কি দেখেনি। আন্নাহু = যে, উহা। লা ইউকাল্লিহুম = তাদের সাথে কথা বলে না। ওয়া = আর। লা ইয়াহদীহিম ছাবীলান = তাদেরকে পথের হিদায়াত/ দিকনির্দেশ করে না। ইত্তাখাজূহু = তারা উহাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে। ওয়া = আর বস্তুতই। কানূ = তারা ছিলো। যলিমূনা = জালেম। 

আর গ্রহণ করেছে মূসার কওম তার অনুপস্থিতিতে তাদের অলংকারসমূহ দ্বারা নির্মিত বাছুরের পুতুলকে (উপাস্যরূপে), যা ‘হাম্বা’ আওয়াজ দিতো। তারা কি দেখেনি যে, উহা তাদের সাথে কথা বলে না আর তাদেরকে পথের হিদায়াত/ দিকনির্দেশ করে না। তবুও তারা উহাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে আর বস্তুতই তারা ছিলো জালেম। 

৭:১৪৯ 

ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। ছুক্বিতা ফী আয়দীহিম = তাদের ভুল ভেঙ্গেছে। ওয়া = আর। রআও = তারা দেখেছে। আন্নাহুম = যে, তারা। ক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লূ = বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে। ক্বলূ = তখন তারা বলেছে। লাইল্লাম ইয়ারহামনা = যদি আমাদেরকে দয়া না করেন। রব্বুনা = আমাদের রব। ওয়া = আর। ইয়াগফিরলানা = আমাদেরকে ক্ষমা না করেন। লানাকূনান্না = তাহলে নিশ্চয় আমরা হয়ে যাবো। মিনাল খাছিরীনা = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর যখন তাদের ভুল ভেঙ্গেছে আর তারা দেখেছে যে, তারা নিশ্চয় বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে, তখন তারা বলেছে, ‘যদি আমাদেরকে দয়া না করেন আমাদের রব, আর আমাদেরকে ক্ষমা না করেন, তাহলে নিশ্চয় আমরা হয়ে যাবো ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত’। 

 ওয়া = আর (এর আগে)। লাম্মা = যখন। রজাআ = ফিরে গিয়েছে। মূসা = মূসা। ইলা ক্বাওমিহী = তার কওমের কাছে। গাদবানা আছিফান = রাগ ও দু:খে ভারাক্রান্ত হয়ে। ক্বলা = তখন সে (= মূসা) বলেছে। বি’ছা মা খালাফতুমূনী = অত্যন্ত নিকৃষ্ট তোমরা আমার যে খেলাফত/ প্রতিনিধিত্ব করেছো। মিম বা’দী = আমার অনুপস্থিতিতে। আআজিলতুম = তোমরা কি তরান্বিত করেছো। আমরা রব্বিকুম = তোমাদের রবের আদেশকে? {= তোমরা কি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে উপাসনা পদ্ধতির আদেশ পাওয়ার আগে নিজেদের কল্পনা অনুসারে একটা বাছুরকে তাঁর অবতার ধরে নিয়ে পূজা করা শুরু করেছো, যে ব্যাপারে তিনি কোন সনদ নাযিল করেননি?’}। ওয়া = আর। আলক্বাল আলওয়াহা = সে ফলকগুলো (মেঝেতে) ফেলে দিলো। ওয়া = আর। আখাযা বিরা’ছি আখিহী = তার ভাইয়ের (= হারূনের) মাথা ধরলো। ইয়াজুররুহূ ইলাইহি = তাকে টান দিলো তার নিজের (= মূসার) দিকে। ক্বলাবনা উম্মা = সে (= হারূন) বলেছে, ‘হে আমার মায়ের পুত্র। ইন্নাল ক্বাওমাছতাদআফূনী = নিশ্চয় এ কওম আমাকে দুর্বল ভেবে অগ্রাহ্য করেছে। ওয়া = আর। ক্বাদূ = তারা উদ্যত হয়েছে। ইয়াক্বতুলূনানী = আমাকে কতল/ হত্যা করার জন্য। ফালা তুশমিত = সুতরাং তুমি হাসতে দিও না। বিয়াল আ’দাআ = আমার ব্যাপারে শত্রুদেরকে। ওয়া = আর। লা তাজআলনী = আমাকে গণ্য করো না। মাআল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিম কওমের সাথে সহযোগী হিসাবে। 

আর (এর আগে) যখন ফিরে গিয়েছে মূসা তার কওমের কাছে রাগ ও দু:খে ভারাক্রান্ত হয়ে, তখন সে (= মূসা) বলেছে, ‘অত্যন্ত নিকৃষ্ট তোমরা আমার যে খেলাফত/ প্রতিনিধিত্ব করেছো আমার অনুপস্থিতিতে। তোমরা কি তরান্বিত করেছ তোমাদের রবের আদেশকে? {= তোমরা কি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে উপাসনা পদ্ধতির আদেশ পাওয়ার আগে নিজেদের কল্পনা অনুসারে একটা বাছুরকে তাঁর অবতার ধরে নিয়ে পূজা করা শুরু করেছো, যে ব্যাপারে তিনি কোন সনদ নাযিল করেননি?’}। আর সে ফলকগুলো (মেঝেতে) ফেলে দিলো আর তার ভাইয়ের (= হারূনের) মাথা ধরলো, তাকে টান দিলো তার নিজের (= মূসার) দিকে। সে (= হারূন) বলেছে, ‘হে আমার মায়ের পুত্র, নিশ্চয় এ কওম আমাকে দুর্বল ভেবে অগ্রাহ্য করেছে আর তারা উদ্যত হয়েছে আমাকে কতল/ হত্যা করার জন্য। সুতরাং তুমি হাসতে দিও না আমার ব্যাপারে শত্রুদেরকে। আর আমাকে গণ্য করো না যালিম কওমের সাথে সহযোগী হিসাবে’। 

৭:১৫১ 

ক্বলা = সে (= মূসা) বলেছে। রব্বিগফিরলী = হে আমার রব, ক্ষমা করুন আমাকে। ওয়া লিআখী = আর আমার ভাইকে। ওয়া = আর। আদখিলনা = আমাদেরকে দাখিল করান। ফী রহমাতিকা = আপনার রহমতের মধ্যে। ওয়া = আর। আনতা = আপনি। আরহামুর রহীমীনা = আরহামুর রহিমীন/ সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াশীল। 

সে (= মূসা) বলেছে, ‘হে আমার রব, ক্ষমা করুন আমাকে আর আমার ভাইকে। আর আমাদেরকে দাখিল করান আপনার রহমতের মধ্যে। আর আপনি আরহামুর রহিমীন/ সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াশীল’। 

৭:১৫২ 

ইন্নাল্লাযীনাত তাখাজুল ইজলা = নিশ্চয় যারা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছে। ছাইয়ানালুহুম = শীঘ্রই তাদের উপর পড়বে। গাদাবুম মির রব্বিহিম = তাদের রবের পক্ষ থেকে গযব/ ক্রোধ। ওয়া = ও। যিল্লাতুন ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = পার্থিব জীবনের যিল্লত/ লাঞ্চনা। ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। নাজযিল মুফতারীনা = আমরা প্রতিফল দিই মিথ্যা রচনাকারীদেরকে। 

নিশ্চয় যারা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছে শীঘ্রই তাদের উপর পড়বে তাদের রবের পক্ষ থেকে গযব/ ক্রোধ ও পার্থিব জীবনের যিল্লত/ লাঞ্চনা। আর এভাবেই আমরা প্রতিফল দিই মিথ্যা রচনাকারীদেরকে। 

৭:১৫৩ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমিলুস সাইয়্যিয়াতি = মন্দ কাজ করে। ছুম্মা = তারপর। তাবূ =তাওবা করে। মিম বা’দিহা = উহার পর। ওয়া = আর। আমিনূ = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। মিম বা’দিহা = উহার পর (= তাওবা ও ঈমান করার পর)। লাগাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

আর যারা মন্দ কাজ করে তারপর তাওবা করে উহার পর আর ঈমান/ বিশ্বাস করে, নিশ্চয় তোমার রব উহার পর (= তাওবা ও ঈমান করার পর) গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

৭:১৫৪ 

ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। ছাকাতা = দমে গিয়েছে। আম্মূসাল গাদাবা = মূসার ক্রোধ। আখাযাল আলওয়াহা = সে তুলে নিয়েছে ফলকগুলো। ওয়া = আর। ফী নুছখাতিহা = উহার শিলালিপিতে ছিল। হুদাওঁ ওয়া রহমাতুল লিল্লাযীনা = হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া তাদের জন্য যারা। লিরব্বিহিম ইয়ারহাবূনা = তাদের রবকে ভয় করে। 

আর যখন দমে গিয়েছে মূসার ক্রোধ, তখন সে তুলে নিয়েছে ফলকগুলো। আর উহার শিলালিপিতে ছিল হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া তাদের জন্য যারা তাদের রবকে ভয় করে। 

৭:১৫৫ 

ওয়াখতারা = আর বাছাই করে নিয়েছে। মুসা = মূসা। ক্বাওমাহু = তার কওমের। ছাবয়ীনা = সত্তরজন। রজুলাল্লিমীকাতিনা = পুরুষকে, আমাদের মীকাতে/ নির্ধারিত স্থানে (নিয়ে যাওয়ার জন্য)। ফালাম্মা = তারপর যখন সেখানে। আখাযাতহুমুর রজপাতা = তাদেরকে পাকড়াও করেছে ভূমিকম্প। ক্বলা = তখন সে বলেছে। রব্বি = হে আমার রব। লাও = যদি। শি’তা = আপনি ইচ্ছা করতেন। আহলাকতাহুম = তাহলে হালাক/ ধ্বংস করে দিতে পারতেন তাদেরকে। মিন ক্বাবলু = আগেই। ওয়া ইয়্যাইয়া = আর আমাকেও। আতুহলিকুনা = আপনি কি আমাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দিবেন। বিমা = উহার কারণে যা। ফাআলাছ ছুফাহাউ মিন্না = করেছে আমাদের মধ্যকার কিছু বোকা লোক। ইন হিয়া = উহা কিছু নয়। ইল্লা ফিতনাতুকা = আপনার পক্ষ থেকে পরীক্ষা ছাড়া। তুদিল্লু বিহা = আপনি বিভ্রান্ত করেন উহা দ্বারা (= পরীক্ষা দ্বারা)। মান তাশাউ = যাকে আপনি (বিভ্রান্ত করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। তাহদী = আপনি হিদায়াত করেন। মান তাশাউ = যাকে আপনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আনতা = আপনি। ওয়ালিয়্যুনা = আমাদের ওলি/ অভিভাবক। ফাগফিরলানা = সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। ওয়ারহামনা = আর আমাদেরকে দয়া করুন। ওয়া = আর। আনতা = আপনিই। খায়রুল গাফিরীনা = সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল। 

আর বাছাই করে নিয়েছে মূসা তার কওমের সত্তরজন পুরুষকে, আমাদের মীকাতে/ নির্ধারিত স্থানে (নিয়ে যাওয়ার জন্য)। তারপর যখন সেখানে তাদেরকে পাকড়াও করেছে ভূমিকম্প, তখন সে বলেছে, ‘হে আমার রব, যদি। আপনি ইচ্ছা করতেন তাহলে হালাক/ ধ্বংস করে দিতে পারতেন তাদেরকে আগেই আর আমাকেও। আপনি কি আমাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দিবেন উহার কারণে যা করেছে আমাদের মধ্যকার কিছু বোকা লোক। উহা কিছু নয় আপনার পক্ষ থেকে পরীক্ষা ছাড়া। আপনি বিভ্রান্ত করেন উহা দ্বারা (= পরীক্ষা দ্বারা) যাকে আপনি (বিভ্রান্ত করার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি হিদায়াত করেন যাকে আপনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আপনি আমাদের ওলি/ অভিভাবক। সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন আর আমাদেরকে দয়া করুন। আর আপনিই সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমাশীল’। 

৭:১৫৬ 

ওয়াকতুব = আর লিখে দিন। লানা = আমাদের জন্য। ফী হাযিহিদ দুনইয়া = এই দুনিয়ায়। হাছানাতুন = উত্তম উপকরন। ওয়া = আর। ফিল আখিরাতি = আখিরাতেও। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। হুদনা = হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছি। ইলাইকা = আপনারই কাছে। ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন। আযাবী = আমার আযাব/ শাস্তি। উসীবূ বিহী = আমি দিয়ে থাকি। মান আশাউ = যাকে আমি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করি। ওয়া = আর। রহমাতী = আমার রহমত/ দয়া। ওয়াছিআত = পরিবেষ্টন করে আছে। কুল্লা সাইয়িন = সকল কিছুকেই। ফাছাআকতুবুহা = তারপর শীঘ্রই আমি উহা লিখে দেবো। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। ওয়া = আর। ইউ’তূনায যাকাতা = যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে। ওয়াল্লাযীনা হুম = আর যারা। বিআয়াতিনা ইউ’মিনূনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

আর লিখে দিন আমাদের জন্য এই দুনিয়ায় উত্তম উপকরন, আর আখিরাতেও। নিশ্চয় আমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছি আপনারই কাছে’। তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘আমার আযাব/ শাস্তি আমি দিয়ে থাকি যাকে আমি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করি। আর আমার রহমত/ দয়া পরিবেষ্টন করে আছে সকল কিছুকেই। তারপর শীঘ্রই আমি উহা লিখে দেবো তাদের জন্য যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে আর যারা আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

৭:১৫৭ 

আল্লাযীনা = যারা। ইয়াত্তাবিঊনার রসূলান নাবীয়্যাল উম্মীয়্যাল্লাযী ইয়াজীদূনাহু = ইত্তেবা/ অনুসরণ করে এই রসূলান নবীর যিনি উম্মী (= আহলে কিতাব থেকে ভিন্ন), তারা যার উল্লেখ পায়। মাকতূবান = লিখিত অবস্থায়। ইনদাহুম = তাদের কাছে। ফিত তাওরাতি ওয়াল ইনজীলি = তাওরাত ও ইনজীলের মধ্যে। ইয়া’মুরুহুম বিল মা’রূফি = সে তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ দেয়। ওয়া = আর। ইয়ানহাহুম আনিল মুনকারি = তাদেরকে অন্যায় থেকে নিষেধ করে। ওয়া = আর। ইউহিল্লু = হালাল করে (= হালাল হিসাবে কার্যকর করে)। লাহুমুত তইয়্যিবাতি = তাদের জন্য তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহকে। ওয়া = আর। ইউহাররিমু = হারাম করে (= হারাম হিসাবে কার্যকর করে)। আলাইহিমুল খাবায়িছা = তাদের উপর খাবায়েছ/ অপবিত্র জিনিসসমূহকে। ওয়া = আর। ইয়াদাউ = নামিয়ে দেয়। আনহুম = তাদের থেকে। ইসরাহুম = তাদের বোঝা। ওয়ার আগলালাল্লাতী = আর শৃংখলসমূহ যা। আলাইহিম = তাদের উপর ছিলো। ফাল্লাযীনা = সুতরাং যারা। আমানূ বিহী = তার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। আযযারূহু ওয়া নাসারূহু = তাকে সম্মান ও সাহায্য করে। ওয়াত্তাবাউন নুরাল্লাযী উনযিলা মাআহু = আর ইত্তেবা করে ঐ নুরের যা নাযিল করা হয়েছে তার সাথে (= আল কুরআন)। উলায়িকা হুমুল মুফলিহূনা = তারাই ফালাহ/ সফলতা লাভকারী। 

যারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে এই রসূলান নবীর যিনি উম্মী (= আহলে কিতাব থেকে ভিন্ন), তারা যার উল্লেখ পায় লিখিত অবস্থায় তাদের কাছে তাওরাত ও ইনজীলের মধ্যে। সে তাদেরকে ন্যায়ের আদেশ দেয় আর তাদেরকে অন্যায় থেকে নিষেধ করে, আর হালাল করে (= হালাল হিসাবে কার্যকর করে) তাদের জন্য তইয়িবাত/ পবিত্র জিনিসসমূহকে, আর হারাম করে (= হারাম হিসাবে কার্যকর করে) তাদের উপর খাবায়েছ/ অপবিত্র জিনিসসমূহকে। আর নামিয়ে দেয় তাদের থেকে তাদের বোঝা আর শৃংখলসমূহ যা তাদের উপর ছিলো। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে আর তাকে সম্মান ও সাহায্য করে আর ইত্তেবা করে ঐ নুরের যা নাযিল করা হয়েছে তার সাথে (= আল কুরআন); তারাই ফালাহ/ সফলতা লাভকারী। 

৭:১৫৮ 

ক্বুল = বলো। ইয়া আইয়ুহান্নাছি = হে মানুষ। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। রসূলুল্লাহি = আল্লাহর রসূল। ইলাইকুম জামীআনিল্লাযী = তোমাদের সকলের জন্য, (আমি আল্লাহর রসূল) যিনি সেই সত্তা। লাহু মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = যাঁর ইখতিয়ারভুক্ত আসমানসমূহ ও জমিনের আধিপত্য। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। ইউহঈ = তিনিই জীবন দেন। ওয়া = আর। ইউমীতু = তিনিই মৃত্যু দেন। ফাআমিনূ = সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = ও। রসূলিহিন্নাবীয়্যী উম্মীয়্যিল্লাযী = তাঁর রসূলান নবীর প্রতি যিনি উম্মী, যিনি। ইউ’মিনু = ঈমান/ বিশ্বাস করেন। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = ও। কালিমাতিহী = তাঁর কালেমার/ বাণীর প্রতি। ওয়াত্তাবিঊ = তোমরা তাঁকে অনুসরণ করো। লাআল্লাকুম তাহতাদূনা = যেন তোমরা হিদায়াত পেতে পারো। 

বলো, “হে মানুষ, নিশ্চয় আমি আল্লাহর রসূল তোমাদের সকলের জন্য, (আমি আল্লাহর রসূল) যিনি সেই সত্তা, যাঁর ইখতিয়ারভুক্ত আসমানসমূহ ও জমিনের আধিপত্য। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনিই জীবন দেন আর তিনিই মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রসূলান নবীর প্রতি যিনি উম্মী, যিনি ঈমান/ বিশ্বাস করেন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর কালেমার/ বাণীর প্রতি। তোমরা তাঁকে (= রসূলকে) অনুসরণ করো যেন তোমরা হিদায়াত পেতে পারো। 

৭:১৫৯ 

ওয়া = আর। মিন ক্বাওমি মূসা = মূসার কওমের মধ্যে আছে। উম্মাতুইঁ ইয়াহদূনা = একটি উম্মাত, যারা হিদায়াত করে। বিল হাক্বক্বি = সত্যের দ্বারা। ওয়া = আর। বিহী = উহা দ্বারা (= সত্য দ্বারা)। ইয়া’দিলূনা = তারা আদল/ ন্যায়বিচার করে। 

আর মূসার কওমের মধ্যে আছে একটি উম্মত, যারা হিদায়াত করে সত্যের দ্বারা আর উহা দ্বারা (= সত্য দ্বারা) তারা আদল/ ন্যায়বিচার করে। 

৭:১৬০ 

ওয়া = আর। ক্বাত্তা’নাহুমুছনাতাই আশরাতা = আমরা তাদেরকে বিভক্ত করেছি বারোটি। আছবাতান উমামান = গোত্রবদ্ধ উম্মাতে (= ১২ টি ইউনিটে)। ওয়া = আর। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা মূসা = মূসার প্রতি। ইযিছতাছক্বাহু = যখন তার কাছে পানি চাইলো। ক্বাওমাহু = তার কওম। আনিদরিব বিআসাকাল হাজারা =  (আমরা ওহী করেছি) এই যে, ‘আঘাত করো তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে’। ফামবাজাছাত মিনহুছনাতা আশারাতা আইনান = তদনুযায়ী বের হয়েছে তা থেকে বারোটি ঝর্ণা। ক্বাদ আলিমা কুল্লু উনাছিম মাশরাবাহুম = নিশ্চয় জেনে নিয়েছে প্রত্যেক গোত্রের মানুষ তাদের পানি পানের স্থান। ওয়া = আর। যল্লালনা = আমরা ছায়া দিয়েছি। আলাইহিমুল গামামা = তাদের উপর, মেঘের (প্রাকৃতিক ছায়া)। ওয়া = আর। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। আলাইহিমুল মান্না ওয়াস সালওয়া = তাদের উপর মান্না (= ধনিয়ার দানার মতো ক্ষুদ্রাতিকৃতির খাদ্য যা গাছের পাতার উপর শিশিরের মতো জমে থাকে) আর সালওয়া (= ক্ষুদ্রাকৃতির কবুতরের মতো এক প্রকার পাখি)। কুলূ = তোমরা খাও। মিন তইয়িবাতি = তইয়িবাত/ পবিত্র (খাদ্য) থেকে। মা = যা। রযাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে রিযিক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছি। ওয়া = আর। মা যলামূনা = তারা (তাদের আচরণ দ্বারা) আমাদের উপর যুলুম করেনি। ওয়ালাকিন = কিন্তু। কানূ আনফুছাহুম ইয়াযলিমূনা = (উহা দ্বারা) তারা তাদের আনফুসের/ জীবনসত্তার উপরই যুলুম করতো। 

আর আমরা তাদেরকে বিভক্ত করেছি বারোটি গোত্রবদ্ধ উম্মাতে (= ১২ টি ইউনিটে)। আর আমরা ওহী করেছি মূসার প্রতি যখন তার কাছে পানি চাইলো তার কওম, (আমরা ওহী করেছি) এই যে, ‘আঘাত করো তোমার লাঠি দিয়ে পাথরে’। তদনুযায়ী বের হয়েছে তা থেকে বারোটি ঝর্ণা। নিশ্চয় জেনে নিয়েছে প্রত্যেক গোত্রের মানুষ তাদের পানি পানের স্থান। আর আমরা ছায়া দিয়েছি তাদের উপর, মেঘের (প্রাকৃতিক ছায়া)। আর আমরা নাযিল করেছি তাদের উপর মান্না (= ধনিয়ার দানার মতো ক্ষুদ্রাতিকৃতির খাদ্য যা গাছের পাতার উপর শিশিরের মতো জমে থাকে) আর সালওয়া (= ক্ষুদ্রাকৃতির কবুতরের মতো এক প্রকার পাখি)। (আমরা বলেছি,) ‘তোমরা খাও তইয়িবাত/ পবিত্র (খাদ্য) থেকে, যা আমরা তোমাদেরকে রিযিক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছি’। আর তারা (তাদের আচরণ দ্বারা) আমাদের উপর যুলুম করেনি, কিন্তু (উহা দ্বারা) তারা তাদের আনফুসের/ জীবনসত্তার উপরই যুলুম করতো। 

৭:১৬১ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বীলা লাহুমুছকুনূ = তাদেরকে বলা হয়েছে, ‘তোমরা বাস করো। হাযিহিল ক্বারইয়াতা = এই জনপদে। ওয়া = আর। কুলূ = তোমরা খাও। মিনহা = উহা থেকে। হাইছু = যেখানেই। শি’তুমা = তোমরা (খেতে) ইচ্ছা করো। ওয়া = আর। ক্বুলূ = তোমরা বলো। হিত্তাতুন = ‘হিত্তাতুন’/ ‘ক্ষমা করুন’। ওয়াদখুলুল বাবা = আর তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো দরজা দিয়ে। সুজ্জাদান = সিজদা করে। নাগফির = আমরা ক্ষমা করে দেবো। লাকুম = তোমাদের জন্য। খাতীআতিকুম = তোমাদের (গুনাহ) খাতা/ ত্রুটি বিচ্যুতি। ছানাযীদুল মুহসিনীনা = শীঘ্রই আমরা (আমাদের অনুগ্রহ) বাড়িয়ে দেবো মুহসীনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে। 

আর যখন তাদেরকে বলা হয়েছে, ‘তোমরা বাস করো এই জনপদে। আর তোমরা খাও উহা থেকে যেখানেই তোমরা (খেতে) ইচ্ছা করো। আর তোমরা বলো, ‘হিত্তাতুন’/ ‘ক্ষমা করুন’; আর তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো দরজা দিয়ে সিজদা করে। আমরা ক্ষমা করে দেবো তোমাদের জন্য তোমাদের (গুনাহ) খাতা/ ত্রুটি বিচ্যুতি। শীঘ্রই আমরা (আমাদের অনুগ্রহ) বাড়িয়ে দেবো মুহসীনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে’। 

৭:১৬২ 

ফাবাদ্দালাল্লাযীনা যলামূ মিনহুম = কিন্তু তাদের মধ্যকার যারা জুলুম করেছে তারা বদল/ পরিবর্তন করে নিয়েছে। ক্বাওলান গাইরাল্লাযী ক্বীলা লাহুম = কথাকে, তাদের জন্য যা বলা হয়েছে তা ভিন্ন অন্য কথায়। ফাআরছালনা = তারপর আমরা প্রেরণ করেছি। আলাইহিম = তাদের উপর। রিযযাম মিনাছ ছামায়ি = আসমান থেকে কলুষতাপূর্ণ শাস্তি। বিমা কানূ ইয়াযলিমূনা = তারা যে যুলুম করতো তার কারণে। 

কিন্তু তাদের মধ্যকার যারা জুলুম করেছে তারা বদল/ পরিবর্তন করে নিয়েছে কথাকে, তাদের জন্য যা বলা হয়েছে তা ভিন্ন অন্য কথায়। তারপর আমরা প্রেরণ করেছি তাদের উপর আসমান থেকে কলুষতাপূর্ণ শাস্তি, তারা যে যুলুম করতো তার কারণে। 

৭:১৬৩ 

ওয়াছআলহুম = আর তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করো। আনিল ক্বারইয়াতিল্লাতী কানাত হাদীরাতাল বাহরি = নদীতীরবর্তী জনপদটি সম্পর্কে। ইয = যখন। ইয়া’দূনা ফিস সাবতি = তারা সাবতের (শনিবার পালনের) বিষয়ে সীমালংঘন করতে লাগল। ইয = যখন (অর্থাৎ এ কারণে যে)। তা’তীহিম = তাদের সামনে ভেসে আসতো। হীতানুহুম = তাদের মাছগুলো। ইয়াওমা ছাবতিহিম = তাদের শনিবারগুলোতে। শুররাআন = প্রকাশ্যে উপরিভাগে। ওয়া = আর। ইয়াওমা লা ইয়াছবিতূনা = যেদিন শনিবার হতো না। লা তা’তীহিম = সেদিন (মাছগুলো) আসতো না। কাযালিকা = এভাবে। নাবলূহুম = আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। বিমা কানূ ইয়াফছুক্বূনা = কারণ তারা ফাসেকী করেছে। 

আর তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করো নদীতীরবর্তী জনপদটি সম্পর্কে যখন তারা সাবতের (শনিবার পালনের) বিষয়ে সীমালংঘন করতে লাগল, যখন (অর্থাৎ এ কারণে যে) তাদের সামনে ভেসে আসতো তাদের মাছগুলো তাদের শনিবারগুলোতে প্রকাশ্যে উপরিভাগে। আর যেদিন শনিবার হতো না সেদিন (মাছগুলো) আসতো না। এভাবে আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। কারণ তারা ফাসেকী করেছে। 

৭:১৬৪ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বলাত উম্মাতুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার একটি উম্মাত (আরেকটি উম্মাতকে) বলেছে। লিমা = কেন। তায়িযূনা = তোমরা ওয়াজ কর/ উপদেশ দাও। ক্বাওমাল্লাহু মুহলিকুহুম = সেই কওমকে যাদেরকে আল্লাহ হালাক/ ধ্বংস করে দেবেন (তাদের আমলের কারণে)। আও = অথবা। মুআযযিবুহুম = যাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। আযাবান শাদীদান = আযাবান শাদীদ/ কঠিন শাস্তি। ক্বলূ = (জবাবে) তারা বলেছে। মা’যিরাতান = ওজর (দায়মুক্তির প্রমাণ) পেশ করার জন্য। ইলা রব্বিকুম = তোমাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। লাআল্লাহুম ইয়াত্তাক্বূনা = এজন্য যে, হয়তো তারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে। 

আর যখন তাদের মধ্যকার একটি উম্মাত (আরেকটি উম্মাতকে) বলেছে, ‘কেন তোমরা ওয়াজ কর/ উপদেশ দাও সেই কওমকে যাদেরকে আল্লাহ হালাক/ ধ্বংস করে দেবেন (তাদের আমলের কারণে), অথবা যাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন, আযাবান শাদীদ/ কঠিন শাস্তি?’ (জবাবে) তারা বলেছে, ‘ওজর (দায়মুক্তির প্রমাণ) পেশ করার জন্য তোমাদের রবের কাছে আর এজন্য যে, হয়তো তারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করবে’। 

৭:১৬৫ 

ফালাম্মা = তারপর যখন। নাছূ = তারা ভুলে গিয়েছে। মা যুককিরূ বিহী = যা তাদেরকে যিকির/ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো। আনজাইনাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি যারা। ইয়ানহাওনা আনিছ ছূয়ি = মন্দকাজ থেকে নিষেধ করেছে। ওয়া = আর। আখাযনাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। বিআযাবিন বায়িছিন = আযাবিন বায়িছিন/ মন্দ শাস্তি দিয়ে। বিমা কানূ ইয়াফছুক্বূনা = কারণ তারা ফাসেকী/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করতো। 

তারপর যখন তারা ভুলে গিয়েছে যা তাদেরকে যিকির/ স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো, আমরা তাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি যারা মন্দকাজ থেকে নিষেধ করেছে; আর আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি যারা যুলুম করেছে, আযাবিন বায়িছিন/ মন্দ শাস্তি দিয়ে, কারণ তারা ফাসেকী/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করতো। 

৭:১৬৬ 

ফালাম্মা = তারপর যখন। আতাও = তারা ঔদ্ধত্যের সাথে ঐ কাজই করতে লাগলো। আম্মা নুহূ আনহু = যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। ক্বুলনা লাহুম = তখন আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলেছি। কূনূ ক্বিরাদাতান খাছিয়ীনা = তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে থাকো/ বানরের স্বভাববিশিষ্ট ও লাঞ্চিত হয়ে থাকো।  

তারপর যখন তারা ঔদ্ধত্যের সাথে ঐ কাজই করতে লাগলো যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তখন আমরা তাদের উদ্দেশ্যে বলেছি, ‘তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে থাকো/ বানরের স্বভাববিশিষ্ট ও লাঞ্চিত হয়ে থাকো’। 

৭:১৬৭ 

ওয়া = আর। ইয = (সেই সময়ের উল্লেখ্য) যখন। তাআযযানা = আযান/ ঘোষণা দিয়েছেন। রব্বুকা = তোমার রব। লাইয়াবআছান্না = নিশ্চয় তিনি সমুত্থিত করবেন। আলাইহিম = তাদের উপর। ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। মাইঁ ইউছূমুহুম = এমন লোকদেরকে যারা তাদেরকে কষ্ট দেবে। ছুআল আযাবা = নিকৃষ্ট শাস্তি দিয়ে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। লাছারীউল ইক্বাবি = ছারীউল ইক্বাব/ শাস্তিদানে তৎপর। ওয়া = আর। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। লাগাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

আর (সেই সময়ের উল্লেখ্য) যখন আযান/ ঘোষণা দিয়েছেন তোমার রব, নিশ্চয় তিনি সমুত্থিত করবেন তাদের উপর ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত এমন লোকদেরকে যারা তাদেরকে কষ্ট দেবে নিকৃষ্ট শাস্তি দিয়ে। নিশ্চয় তোমার রব ছারীউল ইক্বাব/ শাস্তিদানে তৎপর। আর নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

৭:১৬৮ 

ওয়া = আর। ক্বাত্তা’নাহুম = আমরা তাদেরকে বিভক্ত করেছি। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। উমামান = অনেক উম্মাতে। মিনহুমুস সলিহূনা = তাদের মধ্য থেকে কেউ আছে সলিহূন/ সৎকর্মশীল। ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্যে কেউ আছে। দূনা যালিকা = উহা থেকে ভিন্ন (= অসৎকর্মশীল)। ওয়া = আর। বালাওনাহূম = আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করছি। বিল হাছানাতি = উত্তম অবস্থা দিয়ে। ওয়াছ ছাইয়্যিয়াতি = আর মন্দ অবস্থা দিয়ে। লাআল্লাহুম ইয়ারজিঊনা = যেন তারা ফিরে আসতে পারে। 

আর আমরা তাদেরকে বিভক্ত করেছি পৃথিবীতে অনেক উম্মাতে। তাদের মধ্য থেকে কেউ আছে সলিহূন/ সৎকর্মশীল, আর তাদের মধ্যে কেউ আছে উহা থেকে ভিন্ন (= অসৎকর্মশীল)। আর আমরা তাদেরকে পরীক্ষা করছি উত্তম অবস্থা দিয়ে আর মন্দ অবস্থা দিয়ে, যেন তারা ফিরে আসতে পারে। 

৭:১৬৯ 

ফাখালাফা = তারপর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। খালফুওঁ ওযারিছুল কিতাবা = এমন প্রতিনিধিগণ/ স্থলাভিষিক্তগণ যারা কিতাবের ওয়ারিস হয়েছে। ইয়া’খুজূনা = (অথচ) তারা গ্রহণ করে। আরাদা হাযাল আদনা = এই দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থকে। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = বলে। ছাইউগফারুলানা = আমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়া’তিহিম = আবারও যদি তাদের কাছে আসে। আরাদুম মিছলুহু = উহার অনুরূপ বৈষয়িক স্বার্থ। ইয়া’খুজূহু = তারা উহা গ্রহণ করে। আলাম ইউ’খাজু আলাইহিম = তাদের থেকে কি গ্রহণ করা হয়নি। মীছাক্বুল কিতাবি = কিতাবের মীছাক/ প্রতিশ্রুতি। আন = যে। লা ইয়াক্বূলু = তারা বলবে না। আলাল্লাহি = আল্লাহর সম্পর্কে। ইল্লাল হাক্বক্বি = সত্য ছাড়া (অন্য কথা)। ওয়া = আর। দারাছূ = তারা দারস/ শিক্ষা লাভ করেছে। মা ফীহি = যা উহাতে (= কিতাবে) আছে। ওয়াদ দারুল আখিরাতু = আর আখিরাতের আবাসই। খায়রুল্লিল্লাযীনা = তাদের জন্য উত্তম যারা। ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। আফালা তা’ক্বিলূনা = তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না। 

তারপর স্থলাভিষিক্ত হয়েছে তাদের পরে এমন প্রতিনিধিগণ/ স্থলাভিষিক্তগণ যারা কিতাবের ওয়ারিস হয়েছে অথচ তারা গ্রহণ করে এই দুনিয়ার বৈষয়িক স্বার্থকে আর বলে, ‘আমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে’। আর আবারও যদি তাদের কাছে আসে উহার অনুরূপ বৈষয়িক স্বার্থ, তারা উহা গ্রহণ করে। তাদের থেকে কি গ্রহণ করা হয়নি কিতাবের মীছাক/ প্রতিশ্রুতি যে, তারা বলবে না আল্লাহর সম্পর্কে সত্য ছাড়া (অন্য কথা)? আর তারা দারস/ শিক্ষা লাভ করেছে যা উহাতে (= কিতাবে) আছে। আর আখিরাতের আবাসই তাদের জন্য উত্তম যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না? 

৭:১৭০ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইউমাছছিকূনা বিল কিতাবি = কিতাবকে আঁকড়ে ধরে। ওয়া = আর। আক্বামুস সালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ইন্না = (তারা জেনে রাখুক যে,) নিশ্চয়। লা নুদীউ = আমরা নষ্ট করি না। আজরাল মুসলিহীনা = সংস্কারকারীদের পুরস্কার। 

আর যারা কিতাবকে আঁকড়ে ধরে আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে; (তারা জেনে রাখুক যে,) নিশ্চয় আমরা নষ্ট করি না সৎকর্মশীলদের পুরস্কার। 

৭:১৭১ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। নাতাক্বনাল জাবালা = আমরা পাহাড়টিকে প্রকম্পিত করেছি (ভূমিকম্পের মাধ্যমে অথবা পর্বতের পাদদেশে থাকা অবস্থায় তাদের অন্তরে পর্বতকম্পনের অনুভূতির উদয়ের মাধ্যমে) । ফাওক্বাহুম = তাদের উপর (= তারা ছিলো পাহাড়ের পাদদেশে)। কাআন্নাহু যুল্লাতুন = যা ছিলো ছায়াদানকারীর ন্যায় (= তারা পর্বতের পাদদেশে থাকায় তাদের উপর স্বাভাবিকভাবে পর্বতের ছায়া পড়েছিলো।)। ওয়া = আর। যন্নূ = (পর্বতের কম্পনের অনুভূতির ফলে) তারা ধারণা করেছিলো। ওয়াক্বিউম বিহিম = উহা তাদের প্রতি আপতিত হতে পারে। খুজূ = (এরূপ অবস্থায় আমরা বলেছি,) ‘ধারণ করো। মা = যা। আতাইনাকুম = আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি। বিক্বুওয়্যাতিন = মজবুতভাবে। ওয়াযকুরূ = আর যিকির/ স্মরণ করো। মা = যা। ফীহি = উহাতে আছে। লাআল্লাকুম তাত্তাক্বূনা = যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। 

আর যখন আমরা পাহাড়টিকে প্রকম্পিত করেছি (ভূমিকম্পের মাধ্যমে অথবা পর্বতের পাদদেশে থাকা অবস্থায় তাদের অন্তরে পর্বতকম্পনের অনুভূতির উদয়ের মাধ্যমে) তাদের উপর (= তারা ছিলো পাহাড়ের পাদদেশে), যা ছিলো ছায়াদানকারীর ন্যায় (= তারা পর্বতের পাদদেশে থাকায় তাদের উপর স্বাভাবিকভাবে পর্বতের ছায়া পড়েছিলো); আর (পর্বতের কম্পনের অনুভূতির ফলে) তারা ধারণা করেছিলো উহা তাদের প্রতি আপতিত হতে পারে। (এরূপ অবস্থায় আমরা বলেছি,) ‘ধারণ করো যা আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি মজবুতভাবে, আর যিকির/ স্মরণ করো যা উহাতে আছে, যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। 

৭:১৭২ 

ওয়া = আর। ইয = যখন। আখাযা = বের করেছেন। রব্বুকা = তোমার রব। মিম বানী আদামা = বানী আদমের/ আদম সন্তানদের থেকে। মিন যুহূরিহিম = তাদের পিঠসমূহ থেকে। যুররিয়্যাতাহুম = তাদের যুররিয়্যাতকে/ বংশধরদেরকে। ওয়া = আর। আশহাদাহুম = তাদেরকে সাক্ষী বানিয়েছেন। আলা আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের ব্যাপারে। আলাছতা বিরব্বিকুম = (আল্লাহ বলেছেন,) ‘আমি কি তোমাদের রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা) নই? ক্বলূ = (জবাবে) তারা বলেছে। বালা = কেন নয়? (= নিশ্চয় আপনিই আমাদের রব)। শাহিদনা = আমরা এ কথার সাক্ষী রইলাম। আন = (এ সাক্ষ্য আদায়) এজন্য যে, যেন না। তাক্বূলূ = তোমরা বলো। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। কুন্না = ছিলাম। আন হাযা = ইহা থেকে। গাফিলীনা = গাফেল/ উদাসীন। 

আর যখন বের করেছেন তোমার রব বানী আদমের/ আদম সন্তানদের থেকে, তাদের পিঠসমূহ থেকে, তাদের যুররিয়্যাতকে/ বংশধরদেরকে। আর তাদেরকে সাক্ষী বানিয়েছেন তাদের নিজেদের ব্যাপারে (নবীদের মাধ্যমে আল্লাহর রবুবিয়াতের স্বীকারোক্তি গ্রহণের মাধ্যমে)। (আল্লাহ বলেছেন,) ‘আমি কি তোমাদের রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা) নই? (জবাবে) তারা বলেছে, ‘কেন নয়? (= নিশ্চয় আপনিই আমাদের রব)। আমরা এ কথার সাক্ষী রইলাম’। (এ সাক্ষ্য আদায়) এজন্য যে, যেন না তোমরা বলো ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে, ‘নিশ্চয় আমরা ছিলাম ইহা থেকে (= আসমানী হিদায়াত থেকে) গাফেল/ উদাসীন’। 

৭:১৭৩ 

আও = অথবা। তাক্বূলূ = তোমরা যেন না বলতে পারো। ইন্নামা = নিশ্চয়। আশরাকা = শিরক করেছিলো। আবাউনা = আমাদের বাপদাদা। মিন ক্বাবলু = আমাদের আগে। ওয়া = আর। কুন্না = আমরা ছিলাম। যুররিয়াতাম মিম বা’দিহিম = তাদের পরবর্তী বংশধর। আফাতুহলিকুনা = তবে কি আপনি আমাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করবেন। বিমা ফাআলাল মুবতিলূনা = বাতিলপন্থীরা যা করেছিলো তার কারণে? 

অথবা তোমরা যেন না বলতে পারো, ‘নিশ্চয় শিরক করেছিলো আমাদের বাপদাদা আমাদের আগে আর আমরা ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর। তবে কি আপনি আমাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করবেন বাতিলপন্থীরা যা করেছিলো তার কারণে? 

৭:১৭৪ 

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। নুফাসসিলুল আয়াতি = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে। ওয়া লাআল্লাহুম ইয়ারজিঊনা = যেন তারা ফিরে আসে। 

আর এভাবে আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে, যেন তারা ফিরে আসে। 

৭:১৭৫ 

ওয়াতলু = আর তুমি তিলাওয়াত/ পাঠ করো। আলাইহিম = তাদের কাছে। নাবাআল্লাযী আতাইনা = ঐ ব্যক্তির সংবাদ, যাকে আমরা দিয়েছি। আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের জ্ঞান। ফানছালাখা = তারপর সে বিচ্যুত হয়। মিনহা = উহা থেকে। ফাআতবাআহুশ শয়তানু = সুতরাং তার পেছনে লেগে যায় শয়তান। ফাকানা মিনাল গাভীনা = সুতরাং সে হয় পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর তুমি তিলাওয়াত/ পাঠ করো তাদের কাছে ঐ ব্যক্তির সংবাদ, যাকে আমরা দিয়েছি আমাদের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের জ্ঞান। তারপর সে বিচ্যুত হয় উহা থেকে। সুতরাং তার পেছনে লেগে যায় শয়তান। সুতরাং সে হয় পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত। 

৭:১৭৬ 

ওয়া লাও = যদিও। শি’না = আমরা চেয়েছিলাম। লারাফা’নাহু = তাকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে। বিহা = উহার (= আয়াতের জ্ঞানের) মাধ্যমে। ওয়ালাকিন্নাহু = কিন্তু সে। আখলাদা ইলাল আরদি = ঝুঁকে গিয়েছে পৃথিবীর দিকে (= পার্থিব স্বার্থের দিকে)। ওয়াত্তাবাআ = আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে। হাওয়াহু = তার হাওয়ার/ প্রবৃত্তির। ফামাছালুহু = সুতরাং তার দৃষ্টান্ত। কামাছালিল কালবি = কুকুরের দৃষ্টান্তের মতো। ইন = যদি। তাহমিল আলাইহি = তুমি তার উপর কিছু চাপিয়ে দাও। ইয়ালহাছ = তাহলেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপায়। আও = অথবা। তাতরুকহু = (যদি) তুমি তাকে ছেড়ে দাও। ইয়ালহাছ = তাহলেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপায়। যালিকা = ইহাই। মাছালুল ক্বাওমিল্লাযীনা = ঐ কওমের দৃষ্টান্ত যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ফাক্বসুসিল ক্বাসাসা = সুতরাং তুমি বর্ণনা করো এই কাসাস/ কিসসা/ কাহিনী। লাআল্লাহুম ইয়াতাফাক্কারূনা = যেন তারা ফিকির/ চিন্তা গবেষণা করতে পারে। 

যদিও আমরা চেয়েছিলাম তাকে মর্যাদায় সমুন্নত করতে উহার (= আয়াতের জ্ঞানের) মাধ্যমে। কিন্তু সে ঝুঁকে গিয়েছে পৃথিবীর দিকে (= পার্থিব স্বার্থের দিকে), আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তার হাওয়ার/ প্রবৃত্তির। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত কুকুরের দৃষ্টান্তের মতো। যদি তুমি তার উপর কিছু চাপিয়ে দাও তাহলেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপায়। অথবা যদি তুমি তাকে ছেড়ে দাও তাহলেও সে জিহ্বা বের করে হাঁপায়। ইহাই ঐ কওমের দৃষ্টান্ত যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করে আমাদের আয়াতসমূহকে। সুতরাং তুমি বর্ণনা করো এই কাসাস/ কিসসা/ কাহিনী, যেন তারা ফিকির/ চিন্তা গবেষণা করতে পারে। 

৭:১৭৭ 

ছাআ = খুবই নিকৃষ্ট। মাছালানিল ক্বাওমুল্লাযীনা = ঐ কওমের দৃষ্টান্ত যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ওয়া = আর। আনফুছাহুম কানূ ইয়াযলিমূনা = তাদের নিজেদের উপর যুলুম করছে। 

খুবই নিকৃষ্ট ঐ কওমের দৃষ্টান্ত যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে আর তাদের নিজেদের উপর যুলুম করছে। 

৭:১৭৮ 

মাইঁ ইয়াহদিল্লাহু = যাকে হিদায়াত করেন আল্লাহ। ফাহুয়াল মুহতাদী = সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিল = যাদেরকে তিনি বিভ্রান্ত করেন। ফাউলায়িকা হুমুল খাছিরূনা = তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। 

যাকে হিদায়াত করেন আল্লাহ, সে-ই হিদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাদেরকে তিনি বিভ্রান্ত করেন, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। 

৭:১৭৯ 

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। যারা’না = আমরা উপযোগী করেছি। লিজাহান্নামা = জাহান্নামের জন্য। কাছীরাম মিনাল জিন্নি = অনেককে, জ্বিনদের মধ্য থেকে। ওয়াল ইনছি = আর ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে। লাহুম = তাদের আছে। ক্বুলূবুন = কলবসমূহ। লা ইয়াফক্বহূনা বিহা = কিন্তু তারা উহা দ্বারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে না। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের আছে। আ’ইউনুন = চোখসমূহ। লা ইউবসিরূনা বিহা = কিন্তু তারা উহা দ্বারা দেখে না। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের আছে। আযানুন = কানসমূহ। লা ইয়াছমাঊনা বিহা = কিন্তু তারা উহা দ্বারা শুনে না। উলায়িকা = তারা। কালআনআমি = গবাদি পশুর মতো। বাল = বরং। হুম = তারা। আদাল্লু = অত্যধিক বিভ্রান্ত। উলায়িকা হুমুল গাফিলূনা = তারাই গাফেল/ উদাসীন। 

আর নিশ্চয় আমরা উপযোগী করেছি জাহান্নামের জন্য অনেককে, জ্বিনদের মধ্য থেকে আর ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে। তাদের আছে কলবসমূহ কিন্তু তারা উহা দ্বারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে না, আর তাদের আছে চোখসমূহ কিন্তু তারা উহা দ্বারা দেখে না, আর তাদের আছে কানসমূহ কিন্তু তারা উহা দ্বারা শুনে না। তারা গবাদি পশুর মতো বরং তারা অত্যধিক বিভ্রান্ত। তারাই গাফেল/ উদাসীন। 

৭:১৮০ 

ওয়া = আর। লিল্লাহিল আসমাউল হুসনা = আল্লাহর আছে ‘আসমাউল হুসনা’/ ‘সুন্দর সুন্দর নামসমূহ’। ফাদঊহু বিহা = তোমরা তাঁকে সেই নামসমূহ দ্বারা (= কুরআনে উল্লেখিত নামে বা মাতৃভাষায় উহার সমার্থবোধক নামে) ডাকো। ওয়া = আর। যারুল্লাযীনা = তোমরা তাদেরকে বর্জন করো যারা। ইউলহিদূনা ফী আসমায়িহী = তাঁর নামসমূহকে বিকৃত করে। ছাইউজযাওনা = আমরা শীঘ্রই উহার প্রতিফল দেবো। মা কানূ ইয়া’মালূনা = যা তারা করতো। 

আর আল্লাহর আছে ‘আসমাউল হুসনা’/ ‘সুন্দর সুন্দর নামসমূহ’। তোমরা তাঁকে সেই নামসমূহ দ্বারা (= কুরআনে উল্লেখিত নামে বা মাতৃভাষায় উহার সমার্থবোধক নামে) ডাকো। আর তোমরা তাদেরকে বর্জন করো যারা তাঁর নামসমূহকে বিকৃত করে। আমরা শীঘ্রই উহার প্রতিফল দেবো যা তারা করতো। 

৭:১৮১ 

ওয়া = আর। মিম্মান = তাদের মধ্যে (= জ্বিন ও ইনসানের মধ্যে)। খালাক্বনা = আমরা সৃষ্টি করেছি। উম্মাতুইঁ ইয়াহদূনা = একটি উম্মাত যারা হিদায়াত/ পথপ্রদর্শন করে। বিল হাক্বক্বি = সত্যের দ্বারা। ওয়া = আর। বিহী = উহা দ্বারা (= সত্য দ্বারা)। ইয়া’দিলূনা = তারা আদল/ ন্যায়বিচার করে। 

আর তাদের মধ্যে (= জ্বিন ও ইনসানের মধ্যে) আমরা সৃষ্টি করেছি একটি উম্মাত যারা হিদায়াত/ পথপ্রদর্শন করে সত্যের দ্বারা (= কুরআন দ্বারা) আর উহা দ্বারা (= সত্য দ্বারা/ কুরআন দ্বারা) তারা আদল/ ন্যায়বিচার করে। 

৭:১৮২ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ছানাছতাদরিজুহুম = আমরা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো। মিন হাইছু = যেখান থেকে (= যে অবস্থানে থেকে)। লা ইয়া’লামূনা = তারা জানতে পারবে না। 

আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, আমরা তাদেরকে ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবো, যেখান থেকে (= যে অবস্থানে থেকে) তারা জানতে পারবে না। 

৭:১৮৩ 

ওয়া = আর। উমলী লাহুম = আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। ইন্না = নিশ্চয়। কায়দী = আমার কায়দা-কৌশল। মাতীনুন = অত্যন্ত বলিষ্ঠ। 

আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কায়দা-কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ। 

৭:১৮৪ 

আওয়ালাম ইয়াতাফাক্কারূনা = তারা কি তাফাক্কুর/ চিন্তা-গবেষণা করে না? মা বিসাহিবিহিম মিন জিন্নাতিন = তাদের সঙ্গীর সাথে কোন জ্বিন নেই। ইন হুয়া = সে তো নয়। ইল্লা নাজিরুম মুবীনুন = নাজিরুম মুবীন/ প্রকাশ্য সতর্ককারী ছাড়া (অন্য ধরনের ব্যক্তি)। 

তারা কি তাফাক্কুর/ চিন্তা-গবেষণা করে না? তাদের সঙ্গীর সাথে (তাদের কল্পিত) কোন জ্বিন নেই। সে তো নয় নাজিরুম মুবীন/ প্রকাশ্য সতর্ককারী ছাড়া (অন্য ধরনের ব্যক্তি)। 

৭:১৮৫ 

আওয়ালাম ইয়ানযুরূ = তারা কি নজর/ লক্ষ্য করে না। ফী মালাকূওতিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মালাকূত/ আধিপত্য। ওয়া = আর। মা খালাকাল্লাহু = যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। মিন শাইয়িন = সেই সবকিছু। ওয়া = আর। আন আছা আইঁ ইয়াকূনা = এ ব্যাপারটা যে, হতে পারে। ক্বাদিক্বতারাবা = নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আজালুহুম = তাদের আজাল/ অবকাশের শেষ সীমা। ফাবিআইয়ি হাদীসিম বা’দাহু ইউ’মিনূনা = সুতরাং উহার পর (= কুরআনের পর) কোন হাদীসে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে? 

তারা কি নজর/ লক্ষ্য করে না আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মালাকূত/ আধিপত্য, আর যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন সেই সবকিছু, আর এ ব্যাপারটা যে, হতে পারে নিকটবর্তী হয়ে গেছে তাদের আজাল/ অবকাশের শেষ সীমা? সুতরাং উহার পর (= কুরআনের পর) কোন হাদীসে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে? 

৭:১৮৬ 

মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন। ফালা হাদিয়া লাহু = তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই। ওয়া = আর। ইয়াযারুহুম = তিনি তাদেরকে ছেড়ে দেন। ফী তুগইয়ানিহিম = তাদের বিদ্রোহের মধ্যে। ইয়া’মাহূনা = তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকে। 

আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই। আর তিনি তাদেরকে ছেড়ে দেন তাদের বিদ্রোহের মধ্যে তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশেহারা হয়ে ঘুরতে থাকে। 

৭:১৮৭ 

ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিছ ছাআতি = সায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত সম্পর্কে। আইয়্যানা = কখন। মুরছাহা = উহা ঘটবে? ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইলমুহা = উহার ইলম/ জ্ঞান। ইনদা রব্বী = আমার রবের কাছেই আছে। লা ইউজাল্লীহা = কেউ উহা প্রকাশ করতে পারবে না। লিওয়াক্বতিহা = উহার যথাসময়ে। ইল্লা হুয়া = শুধু তিনিই উহা প্রকাশ করবেন। ছাক্বুলাত ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি = উহা ভারী হবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। লা তা’তীকুম = উহা তোমাদের কাছে আসবে না। ইল্লা বাগতাতান = হঠাৎ করে আসা ছাড়া। ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে। কান্নাকা = যেন তুমি। হাফীয়্যুন আনহা = উহা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আছো। ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইলমুহা = উহার ইলম/ জ্ঞান তো। ইনদাল্লাহি = আল্লাহরই কাছে আছে। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। লা ইয়া’লামূনা = কোন ইলম/ জ্ঞানই রাখে না (= ছাআতের জ্ঞান যে আল্লাহ কারো কাছে প্রকাশ করার মতো ব্যাপার নয় অধিকাংশ মানুষ সে জ্ঞান রাখে না।)। 

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে সায়াত/ প্রলয় মুহুর্ত সম্পর্কে, ‘কখন উহা ঘটবে?’ বলো নিশ্চয় উহার ইলম/ জ্ঞান আমার রবের কাছেই আছে। কেউ উহা প্রকাশ করতে পারবে না, উহার যথাসময়ে শুধু তিনিই উহা প্রকাশ করবেন। উহা ভারী হবে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে। উহা তোমাদের কাছে আসবে না, হঠাৎ করে আসা ছাড়া। তারা তোমার কাছে জিজ্ঞাসা করে যেন তুমি উহা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আছো। বলো, ‘নিশ্চয় উহার ইলম/ জ্ঞান তো আল্লাহরই কাছে আছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ কোন ইলম/ জ্ঞানই রাখে না (= ছাআতের জ্ঞান যে আল্লাহ কারো কাছে প্রকাশ করার মতো ব্যাপার নয়, অধিকাংশ মানুষ সে জ্ঞান রাখে না।)। 

৭:১৮৮ 

ক্বুল = বলো। লা আমলিকু = আমি না ক্ষমতা রাখি। লিনাফসী = আমার নিজের জন্যও। নাফআন = কোন উপকার করার। ওয়া = আর। লা দররান = না অপকার করার। ইল্লা মা শা আল্লাহ = (কিছুই হয় না) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। ওয়া = আর। লাও = যদি। কুনতু আ’লামুল গায়বা = আমি গায়েব জানতাম। লাছতাকছারতু = তাহলে আমি গ্রহণ করতাম অনেক। মিনাল খায়ের = কল্যাণ। ওয়া = আর। মা মাছছানিয়াছ ছূআ = আমাকে কোন অকল্যাণ স্পর্শ করতো না। ইন আনা = আমি নই। ইল্লা নাযীরুন ওয়া বাশীরুন = নাজির ও বাশির/ সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া অন্য কিছু। লিক্বাওমি ইউ’মিনূনা = সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে।  

বলো, ‘আমি না ক্ষমতা রাখি আমার নিজের জন্যও কোন উপকার করার আর না অপকার করার। (কিছুই হয় না) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। আর যদি আমি গায়েব জানতাম, তাহলে আমি গ্রহণ করতাম অনেক কল্যাণ, আর আমাকে কোন অকল্যাণ স্পর্শ করতো না। আমি নই নাজির ও বাশির/ সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছাড়া অন্য কিছু, সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

৭:১৮৯ 

হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। খালাক্বাকুম = সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে। মিন নাফসিন ওয়াহিদাতিন = ‘নাফসিন ওয়াহিদাতিন’/ একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা  (life-cell) থেকে। ওয়া = আর। জাআলা = তিনি বানিয়েছেন। মিনহা = তার থেকে। জাওজাহা = তার জোড়া। লিইয়াছকুনা ইলাইহা = যেন সে তার কাছে শান্তি পায়। ফালাম্মা = তারপর যখন। তাগাশশাহা = সে (= স্বামী) তাকে (= স্ত্রীকে) ঢেকে নেয়। হামালাত = তখন সে (= স্ত্রী) গর্ভধারণ করে। হামালান খাফীফান = হাল্কা গর্ভ। ফামাররাত বিহী = সুতরাং সে সহজেই চলাফেরা করে তা নিয়ে। ফালাম্মা = তারপর যখন। আছক্বালাত = গর্ভ ভারী হয়। দাওয়াআল্লাহা = তখন তারা দুজনেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে। রব্বুহুমা = যিনি তাদের উভয়ের রব। লাইন = নিশ্চয় যদি। আতাইতানা = আপনি আমাদেরকে দেন। সলিহান =  ভালো সন্তান। লানাকূনান্না = তাহলে নিশ্চয় আমরা হবো সে ব্যাপারে। মিনাশ শাকিরীনা = শোকরকারীদেরই অন্তর্ভুক্ত। 

তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে ‘নাফসিন ওয়াহিদাতিন’/ একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা  (life-cell) থেকে। আর তিনি বানিয়েছেন তার থেকে তার জোড়া যেন সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে (= স্বামী) তাকে (= স্ত্রীকে) ঢেকে নেয়, তখন সে (= স্ত্রী) গর্ভধারণ করে, হাল্কা গর্ভ। সুতরাং সে সহজেই চলাফেরা করে তা নিয়ে। তারপর যখন গর্ভ ভারী হয় (কিছু দম্পতি এমনও আছে যে,) তখন তারা দুজনেই আল্লাহর কাছে দোয়া করে, যিনি তাদের উভয়ের রব, ‘নিশ্চয় যদি আপনি আমাদেরকে দেন ভালো সন্তান, তাহলে নিশ্চয় আমরা হবো সে ব্যাপারে শোকরকারীদেরই অন্তর্ভুক্ত’। 

৭:১৯০ 

ফালাম্মা = তারপর যখন। আতাহুমা = তিনি তাদের দুজনকে দেন। সলিহান = ভালো সন্তান। জাআলা = তারা উদ্ভাবন করে। লাহু = তাঁর জন্য। শুরাকাআ = অনেক শরিক। ফীমা আতাহুমা = যা তিনি তাদের দুজনকে দান করেন তার (দানের) ব্যাপারে। ফাতাআলাল্লাহু = আল্লাহ অতি ঊর্ধ্বে। আম্মা ইউশরিকূনা = তাদের কৃত শিরক থেকে। 

তারপর যখন তিনি তাদের দুজনকে দেন ভালো সন্তান। তারা উদ্ভাবন করে তাঁর জন্য অনেক শরিক, যা তিনি তাদের দুজনকে দান করেন তার (দানের) ব্যাপারে। আল্লাহ অতি ঊর্ধ্বে তাদের কৃত শিরক থেকে। 

৭:১৯১ 

আইউশরিকূনা = তারা কি আল্লাহর শরিক করে এমন কাউকে। মা লা ইয়াখলুক্বু = যারা সৃষ্টি করতে পারে না। সাইয়ান = কোন কিছুই। ওয়া = আর। হুম = তাদেরকেই। ইয়াখলাক্বূনা = সৃষ্টি করা হয়। 

তারা কি আল্লাহর শরিক করে এমন কাউকে যারা সৃষ্টি করতে পারে না কোন কিছুই, আর তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়? 

৭:১৯২ 

ওয়া = আর। লা ইয়াছতাতীঊনা লাহুম নাসরান = তারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারে না। ওয়া = আর। লা আনফুসাহুম ইয়ানসুরূনা = তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। 

আর তারা তাদেরকে সাহায্য করতে পারে না। আর তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। 

৭:১৯৩ 

ওয়া = আর। ইন = যদি। তাদঊহুম = তোমরা তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করো। ইলাল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের দিকে। লা ইয়াত্তাবিঊকুম = তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। ছাওয়াউন আলাইকুম = তোমাদের জন্য সমান যে। আদাআওতুমূহুম = তোমরা কি তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করো। আম = নাকি। আনতুম = তোমরা। সমিতূনা = নীরবতা অবলম্বনকারী হয়ে থাকো। 

আর যদি তোমরা তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করো হুদার/ হিদায়াতের দিকে, তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তোমাদের জন্য সমান যে, তোমরা কি তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করো নাকি তোমরা নীরবতা অবলম্বনকারী হয়ে থাকো। 

৭:১৯৪ 

ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যাদের কাছে। তাদঊনা = তোমরা দোয়া করো। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ইবাদুন আমছালুকুম = তারা তো বান্দা, তোমাদেরই মতো। ফাদঊহুম = সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডেকে দেখো। ফালইয়াছতাজিবূ = তখন তারা সাড়া দিক। লাকুম = তোমাদের জন্য। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সত্যবাদী। 

নিশ্চয় যাদের কাছে তোমরা দোয়া করো আল্লাহকে বাদ দিয়ে, তারা তো বান্দা, তোমাদেরই মতো। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডেকে দেখো তখন তারা সাড়া দিক তোমাদের জন্য, যদি তোমরা হও সত্যবাদী। 

৭:১৯৫ 

আলাহুম = তাদের কি আছে। আরজুলুন = পাসমূহ। ইয়ামশূনা বিহা = যা দ্বারা তারা চলে। আম = নাকি। লাহুম = তাদের আছে। আইদীন = হাতসমূহ। ইয়াবতিশূনা বিহা = যা দ্বারা তারা ধরে। আম = নাকি। লাহুম = তাদের আছে। আ’ইউনুন = চোখসমূহ। ইউবসিরূনা বিহী = যা দ্বারা তারা দেখে। আম = নাকি। লাহুম = তাদের আছে। আযানুন = কানসমূহ। ইয়াছমাঊনা বিহা = যা দ্বারা তারা শুনে। ক্বুলিদঊ = বলো, তোমরা আহবান করো। শুরাকাআকুম = তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর সাথে) শরিক করো তাদেরকে। ছুম্মা = তারপর। কীদুনী = আমার বিরুদ্ধে কায়দা-কৌশল অবলম্বন করো। ফালা তুনযিরূনা = তদনুযায়ী আমাকে কোন অবকাশ দিও না। 

তাদের কি আছে পাসমূহ যা দ্বারা তারা চলে? নাকি তাদের আছে হাতসমূহ যা দ্বারা তারা ধরে? নাকি তাদের আছে চোখসমূহ যা দ্বারা তারা দেখে? নাকি তাদের আছে কানসমূহ যা দ্বারা তারা শুনে? বলো, ‘তোমরা আহবান করো তোমরা যাদেরকে (আল্লাহর সাথে) শরিক করো তাদেরকে। তারপর আমার বিরুদ্ধে কায়দা-কৌশল অবলম্বন করো। তদনুযায়ী আমাকে কোন অবকাশ দিও না। 

৭:১৯৬ 

ইন্না = নিশ্চয়। ওয়ালিয়্যিল্লাহুল্লাযী = আমার ওলি/ অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি। নাযযালাল কিতাবা = নাযিল করেছেন আল কিতাব (= কুরআন)। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। ইয়াতাওয়াল্লাস সলিহীনা = সালেহীনদের/ সৎকর্মশীলদের অভিভাবকত্ব করেন। 

নিশ্চয় আমার ওলি/ অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি নাযিল করেছেন আল কিতাব (= কুরআন)। আর তিনিই সালেহীনদের/ সৎকর্মশীলদের অভিভাবকত্ব করেন’। 

৭:১৯৭ 

ওয়াল্লাযীনা = আর যাদেরকে। তাদঊনা = তোমরা ডাকো। মিন দূনিহী = তাঁকে বাদ দিয়ে। লা ইয়াছতাতীঊনা নাসরাকুম = তারা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না। ওয়া = আর। লা আনফুসাহুম ইয়ানসুরূনা = তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। 

আর যাদেরকে তোমরা ডাকো তাঁকে বাদ দিয়ে তারা তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না। আর তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। 

৭:১৯৮ 

ওয়া = আর। ইন = যদি। তাদঊহুম = তোমরা তাদেরকে (= মুশরিকদেরকে) দাওয়াত/ আহবান করো। ইলাল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের দিকে। লা ইয়াছমাঊ = তারা তা শুনে না। ওয়া = আর। তারাহুম = তুমি তাদেরকে দেখ। ইয়ানযুরূনা = তারা তাকাচ্ছে। ইলাইকা = তোমার দিকে। ওয়া = অথচ। হুম = তারা। লা ইউবসিরূনা = দেখতে পায় না। 

আর যদি তোমরা তাদেরকে (= মুশরিকদেরকে) দাওয়াত/ আহবান করো হুদার/ হিদায়াতের দিকে, তারা তা শুনে না। আর তুমি তাদেরকে দেখ তারা তাকাচ্ছে তোমার দিকে, অথচ তারা দেখতে পায় না। 

৭:১৯৯ 

খুযিল আফওয়া = তুমি (মু’মিনদের থেকে) আফওয়া (= উদারতা প্রকাশের মাধ্যমস্বরূপ ব্যয়কৃত সম্পদ/ যা নিজে ব্যবহার করা হয় না এরূপ সম্পদের উপযোগ, যেমন- কারো একাধিক গাড়ি থাকলে একটি গাড়ি থেকে অন্যকে সুবিধালাভের সুযোগ দেয়া) গ্রহণ করো। ওয়া’মুর বিল মা’রূফি = আর আমর বিল মা’রূফ করো/ ন্যায়ের আদেশ দাও/ ন্যায়ের বাস্তবায়ন করো। ওয়া = আর। আ’রিদ আনিল জাহিলীনা = জাহেলদেরকে উপেক্ষা করো। 

তুমি (মু’মিনদের থেকে) আফওয়া (= উদারতা প্রকাশের মাধ্যমস্বরূপ ব্যয়কৃত সম্পদ/ যা নিজে ব্যবহার করা হয় না এরূপ সম্পদের উপযোগ, যেমন- কারো একাধিক গাড়ি থাকলে একটি গাড়ি থেকে অন্যকে সুবিধালাভের সুযোগ দেয়া) গ্রহণ করো (০২:২১৯, ০৯:১০৩)। আর আমর বিল মা’রূফ করো/ ন্যায়ের আদেশ দাও/ ন্যায়ের বাস্তবায়ন করো। আর জাহেলদেরকে উপেক্ষা করো। 

৭:২০০ 

ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। ইয়ানযাগান্নাকা = কেউ তোমাকে উস্কানী দেয়। মিনাশ শায়তানি = শয়তানের পক্ষ থেকে। নাযগুন = কোন উস্কানী। ফাছতায়িয বিল্লাহি = তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো (= আউযুবিল্লাহ পড়ো)। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। ছামীউন আলীমুন = ছামী’/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

আর যদি কেউ তোমাকে উস্কানী দেয়, শয়তানের পক্ষ থেকে কোন উস্কানী, তখন আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো (= আউযুবিল্লাহ পড়ো)। নিশ্চয় তিনি ছামী’/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

৭:২০১ 

ইন্নাল্লাযীনাত্তাক্বাও = নিশ্চয় যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। ইযা = যখন। মাছছাহুম = তাদেরকে স্পর্শ করে। তয়িফুম মিনাশ শায়তানি = শয়তানের পক্ষ থেকে কোন খারাপ চিন্তা। তাযাক্কারূ = তখনি তারা আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করে। ফাইযা = সুতরাং তখন। হুম = তারা। মুবসিরূনা = সঠিক পথ দেখতে পায়। 

নিশ্চয় যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে, যখন তাদেরকে স্পর্শ করে শয়তানের পক্ষ থেকে কোন খারাপ চিন্তা, তখনি তারা আল্লাহর যিকির/ স্মরণ করে; সুতরাং তখন তারা সঠিক পথ দেখতে পায়। 

৭:২০২ 

ওয়া = অন্যথা। ইখওয়ানুহুম = তাদের (বিভ্রান্ত) ভাইয়েরা। ইয়ামুদ্দূনাহুম = তাদেরকে টেনে নেয়। ফিল গাইয়ি = বিভ্রান্তির মধ্যে। ছুম্মা = তারপর। লা ইউক্বছিরূনা = তারা (তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখতে) চেষ্টার কমতি করে না। 

অন্যথা তাদের (বিভ্রান্ত) ভাইয়েরা তাদেরকে টেনে নেয় বিভ্রান্তির মধ্যে, তারপর তারা (তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখতে) চেষ্টার কমতি করে না। 

৭:২০৩ 

ওয়া = আর। ইযা = যখন। লাম তা’তিহিম = তুমি তাদের কাছে পেশ করো না। বিআয়াতিন = কোন আয়াত/ নিদর্শন। ক্বলূ = তখন তারা বলে। লাও = কেন। লাজতাবায়তাহা = তুমি নিজেই কোনটি বাছাই করে নাওনি? ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। আত্তাবি’ = আমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করি। মা = যা। ইউহা = ওহী করা হয়। ইলাইয়্যা = আমার প্রতি। মির রব্বী = আমার রবের পক্ষ থেকে। হাযা = ইহা (= কুরআন)। বাসায়িরুম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বাসায়ের/ চাক্ষুস প্রমাণ। ওয়া = আর। হুদাওঁ ওয়া রহমাতুন = হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া। লিক্বাওমিইঁ ইউ’মিনূনা = সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

আর যখন তুমি তাদের কাছে পেশ করো না কোন আয়াত/ নিদর্শন, তখন তারা বলে, ‘কেন তুমি নিজেই কোনটি বাছাই করে নাওনি?’ বলো, ‘নিশ্চয় আমি উহারই ইত্তেবা/ অনুসরণ করি যা ওহী করা হয় আমার প্রতি আমার রবের পক্ষ থেকে। ইহা (= কুরআন) তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বাসায়ের/ চাক্ষুস প্রমাণ, আর হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া, সেই কওমের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে’। 

৭:২০৪ 

ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বুরিআল কুরআনা = কেরাআত/ পাঠ করা হয় আল কোরআন। ফাছতামিঊ লাহু = তখন তোমরা উহা মনোযোগ সহকারে শুনো। ওয়া = আর। আনসিতূ = তোমরা চুপ থাকো। লাআল্লাকুম তুরহামূনা = যেন তোমরা রহমত পেতে পারো। 

আর যখন কেরাআত/ পাঠ করা হয় আল কোরআন, তখন তোমরা উহা মনোযোগ সহকারে শুনো আর তোমরা চুপ থাকো, যেন তোমরা রহমত পেতে পারো। 

৭:২০৫ 

ওয়াযকুর = আর তুমি যিকির/ স্মরণ করো। রব্বাকা = তোমার রবকে। ফী নাফসিকা = তোমার মনের মধ্যে (= ধ্যানমগ্ন হয়ে)। তাদাররুআন = বিনীত ও কাতরভাবে। ওয়া = আর। খীফাতান = ভয়ের সাথে। ওয়া = আর। দূনাল জাহরি মিনাল ক্বাওলি = উচ্চ আওয়াজের কথা/ বক্তব্য ছাড়া (= মধ্যম আওয়াজের কথা/ বক্তব্যের সাথে)। বিল গুদুব্বি ওয়াল আসালি = সকালে ও বিকালে। ওয়া = আর। লা তাকুম মিনাল গাফিলীনা = গাফেলদের/ উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। 

আর তুমি যিকির/ স্মরণ করো তোমার রবকে, তোমার মনের মধ্যে (= ধ্যানমগ্ন হয়ে), বিনীত ও কাতরভাবে, আর ভয়ের সাথে আর উচ্চ আওয়াজের কথা/ বক্তব্য ছাড়া (= আওয়াজ ছাড়া বা মধ্যম আওয়াজের কথা/ বক্তব্যের সাথে); সকালে ও বিকালে। আর গাফেলদের/ উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। 

৭:২০৬ 

ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইনদা রব্বিকা = তোমার রবের নিকট আছে তারা (= ফেরেশতাগণ)। লা ইয়াছতাকবিরূনা = অহংকার করে না। আন ইবাদাতিহী = তাঁর ইবাদাত করার ব্যাপারে। ওয়া = আর। ইউছাব্বিহূনাহু = তারা তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে। ওয়া = আর। লাহু = তাঁরই উদ্দেশ্যে। ইয়াছজুদূনা = তারা সিজদা করে। 

নিশ্চয় যারা তোমার রবের নিকট আছে তারা (= ফেরেশতাগণ) অহংকার করে না তাঁর ইবাদাত করার ব্যাপারে। আর তারা তাঁর তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে আর তাঁরই উদ্দেশ্যে তারা সিজদা করে। 

সমাপ্ত