কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

006. সূরা আনয়াম

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৬:১ 

আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী = সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি = সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ। ওয়াল আরদা = ও জমিন। ওয়া = আর। জাআলায যুলুমাতি = আবির্ভাব/ প্রকাশ ঘটিয়েছেন যুলুমাত/ অন্ধকার। ওয়ান নূরা = ও নূর/ আলো। ছুম্মাল্লাযীনা = তারপর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বিরব্বিহিম = তাদের রবের প্রতি। ইয়া’দিলূনা = তারা তাঁর সমকক্ষ/ শরিক দাঁড় করায়। 

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও জমিন আর প্রকাশ ঘটিয়েছেন আধাঁর ও আলোর। তারপর যারা অকৃতজ্ঞ হয়েছে তাদের রবের প্রতি, তারা তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করায়। 

৬:২ 

হুয়াল্লাযী = তিনিই। খালাক্বাকুম = তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। মিন তীনিন = মাটি থেকে। ছুম্মা = তারপর তিনি ক্বাদা/ ফয়সালা/ নির্ধারন করেছেন। আজালান = আজাল/ জীবনের এক ধরনের মেয়াদ (যা বিভিন্ন ফ্যাক্টর বা অনুঘটকের দ্বারা পরিবর্তনশীল) । ওয়া = আর। আজালুম মুছাম্মান ইনদাহু = আজালুম মুছাম্মা/ জীবনের একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ তাঁর কাছে ঠিক করা আছে। ছুম্মা = তারপরও। আনতুম = তোমরা। তামতারূনা = সন্দেহ করছো? 

তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে। তারপর তিনি নির্ধারন করেছেন মেয়াদ। আর জীবনের একটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদ তাঁর কাছে ঠিক করা আছে। তারপরও তোমরা সন্দেহ করছো? 

৬:৩ 

ওয়া = আর। হুয়াল্লাহু = তিনিই আল্লাহ। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। ফিল আরদি = জমিনে। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। ছিররাকুম = তোমাদের গোপন বিষয়। ওয়া = আর। জাহরাকুম = তোমাদের প্রকাশ্য বিষয়। ওয়া = আর। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা = যা। তাকছিবূনা = তোমরা উপার্জন করো। 

আর তিনিই আল্লাহ, আসমানসমূহেও আর জমিনেও। তিনি জানেন তোমাদের গোপন বিষয় ও তোমাদের প্রকাশ্য বিষয়। আর তিনি জানেন যা তোমরা উপার্জন করো। 

৬:৪

ওয়া = আর। মা তা’তীহিম = তাদের কাছে আসেনি। মিন আয়াতিম মিন আয়াতি রব্বিহিম = এমন কোন আয়াত তাদের রবের আয়াতসমূহের মধ্য থেকে। ইল্লা কানূ = তারা ছিলো না। আনহা = যা থেকে। মু’রিদীনা = বিমুখ। 

আর তাদের কাছে আসেনি এমন কোন আয়াত তাদের রবের আয়াতসমূহের মধ্য থেকে তারা ছিলো না যা থেকে বিমুখ। 

৬:৫

ফাক্বাদ = নিশ্চয়। কাযযাবূ = তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিল হাক্বক্বি = সত্যকে। লাম্মা = যখনই। জাআহুম = তা তাদের কাছে এসেছে। ফাছাওফা = সুতরাং শীঘ্রই। ইয়া’তীহিম = তাদের কাছে আসবে। আমবাউ মা কানূ বিহী = ঐ বিষয়ের সংবাদ তারা যা নিয়ে। ইয়াছতাহযিঊনা = ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো। 

নিশ্চয় তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে সত্যকে, যখনই তা তাদের কাছে এসেছে। সুতরাং শীঘ্রই তাদের কাছে আসবে ঐ বিষয়ের সংবাদ তারা যা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো। 

৬:৬

আলাম ইয়ারাও = তারা কি দেখেনি। কাম = কতসংখ্যক। আহলাকনা = আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগের। মিন ক্বারনিন = জনগোষ্ঠী। মাক্কান্নাহুম = তাদেরকে আমরা অধিষ্ঠিত করেছিলাম। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মা = যেমনভাবে। লাম নুমাক্কিন = আমরা অধিষ্ঠিত করিনি। লাকুম = তোমাদেরকে। ওয়া = আর। আরছালনাছছামায়া = আমরা প্রেরণ করেছিলাম আসমান থেকে। আলাইহিম = তাদের উপর। মিদরারান = মুষলধারে বৃষ্টি। ওয়া = আর। জায়ালনাল আনহারা = আমরা করেছিলাম নদীগুলোকে। তাজরী = প্রবাহিত। মিন তাহতীহিম = তাদের নিম্নভূমিতে। ফাআহলাকনাহুম = শেষ পর্যন্ত আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দিয়েছি। বিযুনূবিহিম = তাদের পাপসমূহের কারণে। ওয়া = আর। আনশা’না = অভিষিক্ত করেছি। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। ক্বারনান আখারীনা = অন্যান্য জনগোষ্ঠিকে। 

তারা কি দেখেনি কতসংখ্যক আমরা হালাক/ ধ্বংস করেছি তাদের আগের জনগোষ্ঠী। তাদেরকে আমরা অধিষ্ঠিত করেছিলাম পৃথিবীতে যেমনভাবে আমরা অধিষ্ঠিত করিনি তোমাদেরকে, আর আমরা প্রেরণ করেছিলাম আসমান থেকে তাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি, আর আমরা করেছিলাম নদীগুলোকে প্রবাহিত তাদের নিম্নভূমিতে। শেষ পর্যন্ত আমরা তাদেরকে হালাক/ ধ্বংস করে দিয়েছি তাদের পাপসমূহের কারণে, আর অভিষিক্ত করেছি (= নিয়ে এসেছি) তাদের পরে অন্যান্য জনগোষ্ঠিকে। 

৬:৭

ওয়া = আর। লাও = যদি। নাযযালনা = আমরা নাযিল করতাম। আলাইকা = তোমার উপর। কিতাবান ফি ক্বিরতাছিন = কাগজে লেখা কিতাব। ফালামাছূহু = তারপর তারা তা স্পর্শ করতো। বিআইদীহিম = তাদের হাতসমূহ দ্বারা। লাক্বালাল্লাযীনা = তবুও তারা বলতো যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ইন = কিছুই নয়। হাযা = ইহা। ইল্লা ছিহরুম মুবীন = প্রকাশ্য যাদু ছাড়া। 

আর যদি আমরা নাযিল করতাম তোমার উপর কাগজে লেখা কিতাব, তারপর তারা তা স্পর্শ করতো তাদের হাতসমূহ দ্বারা, তবুও তারা বলতো যারা কুফর করেছে, ‘কিছুই নয় ইহা, প্রকাশ্য যাদু ছাড়া’। 

৬:৮

ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। লাও = কেন। লা উনযিলা = নাযিল করা হয় না। আলাইহি = তার উপর। মালাকুন = মালাক/ ফেরেশতা। ওয়া = আর। লাও = যদি। আনযালনা = আমরা নাযিল করতাম। মালাকান = মালাক/ ফেরেশতা। লাক্বুদিয়াল আমরু = তাহলে সিদ্ধান্ত হয়ে যেতো। ছুম্মা = তারপর। লা ইউনযারূনা = তাদেরকে অবকাশ দেয়া হতো না। 

আর তারা বলেছে, ‘কেন নাযিল করা হয়নি তার উপর মালাক/ ফেরেশতা?’ আর যদি আমরা নাযিল করতাম মালাক/ ফেরেশতা, তাহলে সিদ্ধান্ত হয়ে যেতো; তারপর তাদেরকে অবকাশ দেয়া হতো না। 

৬:৯

ওয়া = আর। লাও = যদি। জাআলনাহু মালাকান = আমরা ফেরেশতা প্রেরণ করতাম। লাজাআলনাহু = তাহলেও আমরা তাকে (= ফেরেশতাকে) প্রেরণ করতাম। রজুলান = পুরুষ মানুষরূপে। ওয়া = আর। লালাবাছনা আলাইহিম = আমরা তাদেরকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিতাম। মা ইয়ালবিছূনা = যেমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে এখন তারা পড়ে রয়েছে। 

আর যদি আমরা ফেরেশতা প্রেরণ করতাম, তাহলেও আমরা তাকে (= ফেরেশতাকে) প্রেরণ করতাম পুরুষ মানুষরূপে; আর আমরা তাদেরকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিতাম যেমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে এখন তারা পড়ে রয়েছে। 

৬:১০

ওয়া = আর। লাক্বাদিছতুহযিয়া = নিশ্চয় ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছে। বিরুসুলিম মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগের রসূলদেরকেও। ফাহাক্বা = তারপর হকদার হয়ে গেছে। বিল্লাযীনা = উহারা যারা। ছাখিরূ মিনহুম = ঠাট্টা করেছে তাদের মধ্য থেকে। মা কানূ বিহী ইয়াছতাহযিঊনা = ঐ বিষয়ের যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো (অর্থাৎ আযাব)। 

আর নিশ্চয় ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছে তোমার আগের রসূলদেরকেও। তারপর হকদার হয়ে গেছে উহারা যারা ঠাট্টা করেছে তাদের মধ্য থেকে, ঐ বিষয়ের যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতো (অর্থাৎ আযাব)। 

৬:১১

ক্বুল = বলো। ছীরূ = তোমরা ভ্রমণ করো। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ছুম্মানযুরূ = তারপর নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কেমন। কানা = হয়েছিলো। আক্বিবাতুল মুকাযযিবীনা = মিথ্যাবাদীদের পরিণতি। 

বলো, ‘তোমরা ভ্রমণ করো পৃথিবীতে। তারপর নজর/ লক্ষ্য করো কেমন হয়েছিলো মিথ্যাবাদীদের পরিণতি’। 

৬:১২

ক্বুল = বলো। লিমান = কার অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়াল আরদি = ও জমিনে। ক্বুল = বলো। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। কাতাবা = তিনি লিখে নিয়েছেন। আলা নাফসিহি = তাঁর নিজের উপর (সুন্নাত/ মূলনীতি হিসাবে)। আর রহমাতা = রহমাত/ দয়া প্রকাশ করাকে। লাইয়াজমাআন্নাকুম = নিশ্চয় তিনি তোমাদেরকে একত্রিত করবেন। ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। লা রইবা ফীহি = যাহাতে (= কিয়ামাতে) কোন সন্দেহ নেই। আল্লাযীনা = যারা। খাছিরূ = ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আনফুসাকুম = তাদের নিজেদেরকে। ফাহুম = তারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

বলো, ‘কার অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে ও জমিনে?’ বলো, ‘আল্লাহরই অধিকারভুক্ত’। তিনি লিখে নিয়েছেন তাঁর নিজের উপর (সুন্নাত/ মূলনীতি হিসাবে), রহমাত/ দয়া প্রকাশ করাকে। নিশ্চয় তিনি তোমাদেরকে একত্রিত করবেন ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে, যাহাতে (= কিয়ামাতে) কোন সন্দেহ নেই। যারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের নিজেদেরকে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

৬:১৩

ওয়া = আর। লাহু = তাঁরই অধিকারভুক্ত। মা = যা কিছু। ছাকানা = থাকে। ফিল লাইলি = রাতে। ওয়ান্নাহারি = ও দিনে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আছ ছামীউল আলীমু = ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)। 

আর তাঁরই অধিকারভুক্ত যা কিছু থাকে রাতে ও দিনে। আর তিনি ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)। 

৬:১৪

ক্বুল = বলো। আগাইরাল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া কি। আত্তাখিজু = আমি গ্রহণ করবো। ওয়ালিয়্যান = কোন ওয়ালী/ অভিভাবক? ফাতিরিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = (সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে) যিনিই স্রষ্টা আসমানসমূহের ও যমিনের? ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। ইউতইমু = খাওয়ান। ওয়া = কিন্তু। লা ইউতআমু = খান না। ক্বুল = বলো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। উমিরতু = আদেশ পেয়েছি। আন = যেন। আকূনা = আমি হই। আওয়ালা মান আছলামা = তাদের মধ্যে প্রথম, যারা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছে (= প্রথম মুসলিম)। ওয়া = আর। লা তাকূনান্না = (আমাকে আরো আদেশ দেয়া হয়েছে,) তুমি হয়ো না। মিনাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। 

বলো, ‘আল্লাহ ছাড়া কি আমি গ্রহণ করবো কোন ওয়ালী/ অভিভাবক? (সেই আল্লাহকে বাদ দিয়ে) যিনিই স্রষ্টা আসমানসমূহের ও যমিনের? আর তিনি খাওয়ান কিন্তু খান না’। বলো, “নিশ্চয় আমি আদেশ পেয়েছি যেন আমি হই তাদের মধ্যে প্রথম, যারা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছে (= প্রথম মুসলিম)। আর (আমাকে আরো আদেশ দেয়া হয়েছে,) ‘তুমি হয়ো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত’”। 

৬:১৫

ক্বুল = বলো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফূ = ভয় করি। ইন = যদি। আসাইতু = আমি অবাধ্য হই। রব্বী = আমার রবের। আযাবা ইয়াওমিন আযীমিন = তবে ইয়াওমুন আযীমের/ মহাদিবসের শাস্তির। 

বলো, ‘নিশ্চয় আমি ভয় করি যদি আমি অবাধ্য হই আমার রবের, তবে ইয়াওমুন আযীমের/ মহাদিবসের শাস্তির। 

৬:১৬ 

মাইঁ ইউসরাফু = যে রক্ষা পেলো। আনহু = তা থেকে। ইয়াওমায়িযিন = সেদিন। ফাক্বাদা = তাহলে নিশ্চয়। রহিমাহু = তাকে তো তিনি রহমাত/ দয়া করলেন। ওয়া = আর। যালিকা = উহাই। ফাওযুল মুবীন = প্রকাশ্য সফলতা। 

যে রক্ষা পেলো তা থেকে সেদিন, তাহলে নিশ্চয় তাকে তো তিনি রহমাত/ দয়া করলেন। আর উহাই প্রকাশ্য সফলতা। 

৬:১৭ 

ওয়া = আর। ইইঁ ইয়ামছাছকাল্লাহু বিদুররিন = যদি আল্লাহ তোমার ক্ষতিসাধন করেন। ফালা কাশিফা লাহু = তাহলে কেউ নেই উহার অপসারণকারী। ইল্লা হুয়া = তিনি নিজে ছাড়া। ওয়া = আর। ইই ইয়ামছাছকা বিখাইরিন = যদি তিনি তোমার কল্যাণসাধন করেন। ফাহুয়া = তবে তিনিই। আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আর যদি আল্লাহ তোমার ক্ষতিসাধন করেন, তাহলে কেউ নেই উহার অপসারণকারী তিনি নিজে ছাড়া। আর যদি তিনি তোমার কল্যাণসাধন করেন, তবে তিনিই সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৬:১৮ 

ওয়া = আর। হুয়াল ক্বাহিরু = তিনি ক্বাহের/ একচ্ছত্র ক্ষমতাধর। ফাওক্বা ইবাদিহি = তাঁর বান্দাদের উপর। ওয়া = আর। হুয়াল হাকীমুল খাবীরু = তিনি হাকীম (= যিনি প্রজ্ঞা রাখেন), খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)। 

আর তিনি ক্বাহের/ একচ্ছত্র ক্ষমতাধর তাঁর বান্দাদের উপর। আর তিনি হাকীম (= যিনি প্রজ্ঞা রাখেন), খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)। 

৬:১৯ 

ক্বুল = বলো। আইয়ু = কোন। সাইয়িন = সত্তা। আকবারু = সর্বশ্রেষ্ঠ। শাহাদাতু = সাক্ষ্যদানে। ক্বুলিল্লাহু = বলো, আল্লাহ। শাহীদুম বাইনী ওয়া বায়নাকুম = তিনিই সাক্ষী আমার ও তোমাদের মধ্যে। ওয়া = আর। উহিয়া = ওহী করা হয়েছে। ইলাইয়া = আমাকে। হাযাল কুরআনু = এই কুরআন। লিউনযিরাকুম = সতর্ক করার জন্য তোমাদেরকে। বিহী = উহা দ্বারা। ওয়া = আর। মাম বালাগা = তাদেরকেও যাদের কাছে এটি পৌঁছে যায়। আয়িন্নাকুম = তোমরা কি নিশ্চয়। লাতাশহাদূনা = সাক্ষ্য দিচ্ছো। আন্না = যে। মাআল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ইলাহাতান উখরা = অন্য কোন ইলাহ আছে? ক্বুল = বলো। লা আশহাদু = আমি তা সাক্ষ্য দিই না। ক্বুল = বলো। ইন্নামা = নিশ্চয়। হুয়া = তিনিই। ইলাহুন ওয়াহিদুন = একক ইলাহ। ওয়া = আর। ইন্নানী = নিশ্চয় আমি। বারীউন = সম্পর্কছিন্নকারী ও দায়মুক্ত। মিম্মা তুশরিকূনা = তোমাদের শিরক থেকে। 

বলো, ‘কোন সত্তা সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষ্যদানে?’ বলো, ‘আল্লাহই (সর্বশ্রেষ্ঠ সাক্ষী)। তিনিই সাক্ষী আমার ও তোমাদের মধ্যে। আর ওহী করা হয়েছে আমাকে এই কুরআন, সতর্ক করার জন্য তোমাদেরকে উহা দ্বারা (= কুরআন দ্বারা) আর তাদেরকেও যাদের কাছে এটি পৌঁছে যায়। তোমরা কি নিশ্চয় সাক্ষ্য দিচ্ছো যে, আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহ আছে?’ বলো, ‘আমি তা সাক্ষ্য দিই না’। বলো, ‘নিশ্চয় তিনিই একক ইলাহ। আর নিশ্চয় আমি সম্পর্কছিন্নকারী ও দায়মুক্ত তোমাদের শিরক থেকে’। 

৬:২০

আল্লাযীনা আতাইনাহুমুল কিতাবা = যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি। ইয়া’রিফূনাহু = তারা উহাকে (= কুরআনকে) চিনে। কামা = যেমন। ইয়া’রিফূনা = তারা চিনে। আবনাআহুম = তাদের সন্তানদেরকে। আল্লাযীনা = যারা। খাছিরূ = ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদেরকে। ফাহুম = তারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি তারা উহাকে (= কুরআনকে) চিনে যেমন তারা চিনে তাদের সন্তানদেরকে। যারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের নিজেদেরকে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

৬:২১

ওয়া = আর। মান আযলামা মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যে, আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে। আও = অথবা। কাযযাবা বিআয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। ইন্নাহু = নিশ্চয়। লা ইউফলাহুয যালিমূনা = যালিমগণ ফালাহ/ সফলতা লাভ করে না। 

আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে? নিশ্চয় যালিমগণ ফালাহ/ সফলতা লাভ করে না। 

৬:২২

ওয়া = আর। ইয়াওমা = সেদিন। নাহশুরুহুম = আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো। জামীয়া = একত্রে। ছুম্মা = তারপর। নাক্বূলা = আমরা বলবো। লিল্লাযীনা = তাদেরকে যারা। আশরাকূ = শিরক করেছে। আয়না = কোথায়। শুরাকাউকুম = তোমাদের শরীকরা। আল্লাযীনা = যাদেরকে। কুনতুম তাযউমূনা = তোমরা শরিক বলে মনে করতে। 

আর সেদিন আমরা তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবো একত্রে। তারপর আমরা বলবো তাদেরকে যারা শিরক করেছে, ‘কোথায় তোমাদের শরীকরা যাদেরকে তোমরা শরিক বলে মনে করতে? 

৬:২৩ 

ছুম্মা = তখন। লাম তাকুন ফিতনাতুহুম = সেদিন তাদের ফিতনা/ বাহানা থাকবে না। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। ক্বলূ = তারা বলবে। ওয়াল্লাহু রব্বিনা = আমাদের রব আল্লাহর কসম। মা কুন্না মুশরিকীনা = আমরা মুশরিক ছিলাম না। 

তখন সেদিন তাদের ফিতনা/ বাহানা থাকবে না এছাড়া যে, তারা বলবে, ‘আমাদের রব আল্লাহর কসম, আমরা মুশরিক ছিলাম না’। 

৬:২৪ 

উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। কাযাবূ = তারা মিথ্যা কথা বলবে। আলা আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের ব্যাপারে। ওয়া = আর। দল্লা = উধাও হয়ে যাবে। আনহুম = তাদের থেকে। মা কানূ ইয়াফতারূনা = যে মিথ্যা তারা রচনা করতো। 

নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপে তারা মিথ্যা কথা বলবে তাদের নিজেদের ব্যাপারে। আর উধাও হয়ে যাবে তাদের থেকে যে মিথ্যা তারা রচনা করতো তা। 

৬:২৫

ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্যে এমন লোক আছে। মাইঁ ইয়াছতামিউ = যারা কান পেতে রাখে। ইলাইকা = তোমার দিকে। ওয়া = আর। জাআলনা = আমরা দিয়ে রেখেছি। আলা কুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহের উপর। আকিন্নাতান = আবরণ। আন = যেন না। ইয়াফক্বাহূহু = তারা উপলব্ধি করতে পারে। ওয়া = আর। ফী আযানিহিম = তাদের কানসমূহে আছে। ওয়াক্বরান = বধিরতা। ওয়া= আর। ইইঁ ইয়ারাও = যদি তারা দেখে। কুল্লা = প্রত্যেক। আয়াতিন = নিদর্শন। লা ইউ’মিনূ বিহা = তবুও তারা তাতে ঈমান/ বিশ্বাস করবে না। হাত্তা = এমনকি। ইযা = যখন। জাঊকা = তারা তোমার কাছে আসে। ইউজাদিলূনাকা = তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে। ইয়াক্বূলুল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফরি করেছে তারা তখন বলে। ইন = কিছুই নয়। হাযা = ইহা। ইল্লা আছাতীরুল আওয়ালীন = পূর্ববর্তীদের উপকথা ছাড়া। 

আর তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যারা কান পেতে রাখে তোমার দিকে। আর আমরা দিয়ে রেখেছি তাদের কলবসমূহের উপর আবরণ যেন না তারা উপলব্ধি করতে পারে, আর তাদের কানসমূহে আছে বধিরতা (= তারা শুনতে পারে না)। আর যদি তারা দেখে প্রত্যেক নিদর্শন, তবুও তারা তাতে ঈমান/ বিশ্বাস করবে না। এমনকি যখন তারা তোমার কাছে আসে, তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, যারা কুফরি করেছে তারা তখন বলে, ‘কিছুই নয় ইহা (= কুরআন) পূর্ববর্তীদের উপকথা ছাড়া। 

৬:২৬

ওয়া = আর। হুম = তারা। ইয়ানহাওনা = লোকদেরকে নিষেধ করে/ বিরত রাখে। আনহু = উহা থেকে (= কুরআন থেকে)। ওয়া = আর। ইয়ানআওনা = নিজেরাও দূরে থাকে। আনহু = উহা থেকে (= কুরআন থেকে)। ওয়া = অথচ। ইইঁ ইউহলিকূনা = তারা হালাক/ ধ্বংস করে না। ইল্লা আনফুসাহুম = তাদের নিজেদেরকে ছাড়া। ওয়া = আর। মা ইয়াশউরূনা = তারা তা অনুভবও করতে পারে না। 

আর তারা লোকদেরকে নিষেধ করে/ বিরত রাখে উহা থেকে (= কুরআন থেকে), আর নিজেরাও দূরে থাকে উহা থেকে (= কুরআন থেকে)। অথচ তারা হালাক/ ধ্বংস করে না তাদের নিজেদেরকে ছাড়া আর তারা তা অনুভবও করতে পারে না। 

৬:২৭

ওয়া = আর। লাও = যদি। তারা = তুমি দেখতে। ইয = যখন। উক্বিফূ = তাদেরকে দাঁড় করানো হবে। আলান্নারি = (জাহান্নামের) আগুনের কাছে। ফাক্বলূ = তখন তারা বলবে। ইয়া লায়তানা = হায়, আমাদের আফসোস। নুরাদ্দু = (যদি পৃথিবীতে) আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হতো। ওয়া = আর। লা নুকাযযিবু = আমরা (সেখানে ফিরে গিয়ে) মিথ্যা সাব্যস্ত না করতাম। বিআয়াতি রব্বিনা = আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। নাকূনা = আমরা হতাম। মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর যদি তুমি দেখতে যখন তাদেরকে দাঁড় করানো হবে (জাহান্নামের) আগুনের কাছে, তখন তারা বলবে, ‘হায়, আমাদের আফসোস, (যদি পৃথিবীতে) আমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হতো আর আমরা (সেখানে ফিরে গিয়ে) মিথ্যা সাব্যস্ত না করতাম আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি আর আমরা হতাম মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত! 

৬:২৮

বাল = বরং। বাদা = প্রকাশ পাবে। লাহুম = তাদের জন্য। মা কানূ ইউখফূনা = যা তারা গোপন করছিলো। মিন ক্বাবলু  = ইতিপূর্বে। ওয়া = আর। লাও = যদি। রুদ্দূ = তাদেরকে ফিরিয়েও দেয়া হয়। লাআদূ = তাহলেও তারা উহাই আবার করবে। লিমা নুহূ আনহু = যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। ওয়া = আর। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। লাকাযিবূনা = মিথ্যাবাদী। 

বরং প্রকাশ পাবে তাদের জন্য যা তারা গোপন করছিলো ইতিপূর্বে। আর যদি তাদেরকে ফিরিয়েও দেয়া হয় তাহলেও তারা উহাই আবার করবে যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। আর নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। 

৬:২৯

ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। ইন হিয়া = উহা (= আখিরাত) নেই। ইল্লা হায়াতুনাদ দুনইয়া = আছে শুধু আমাদের হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। ওয়া = আর। মা নাহনু = আমরা হবো না। বিমাবউছীনা = মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত। 

আর তারা বলে, ‘উহা (= আখিরাত) নেই, আছে শুধু আমাদের হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। আর আমরা হবো না মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত’। 

৬:৩০

ওয়া = আর। লাও = যদি। তারা = তুমি দেখতে। ইয = যখন। উক্বিফূ = তাদেরকে দাঁড় করানো হবে। আলা রব্বিহিম = তাদের রবের সামনে। ক্বলা = (তখন) তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। আলাইছা হাযা = ইহা কি নয়। বিল হাক্বক্বি = সত্য সঠিক? ক্বলূ = তারা বলবে। বালা = কেন নয়। ওয়া রব্বিনা = আমাদের রবের কসম, (ইহা সত্য)। ক্বলা = তিনি (= আল্লাহ) বলবেন। ফাযুক্বুল আযাবা = সুতরাং আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো। বিমা কুনতুম তাকফুরূনা = এ কারণে যে তোমরা কুফর করতে। 

আর যদি তুমি দেখতে যখন তাদেরকে দাঁড় করানো হবে তাদের রবের সামনে, তখন তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘ইহা কি নয় সত্য সঠিক?’ তারা বলবে, ‘কেন নয়। আমাদের রবের কসম, (ইহা সত্য)’। তিনি (= আল্লাহ) বলবেন, ‘সুতরাং আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো এ কারণে যে তোমরা কুফর করতে’। 

৬:৩১

ক্বাদ = নিশ্চয়। খাছিরাল্লাযীনা = তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যারা। কাযযাবু = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিলিক্বায়িল্লাহি = (পর্দার অন্তরাল থেকে) আল্লাহর সাথে মোলাকাত হওয়াকে। হাত্তা = এমনকি। ইযা = যখন। জাআতহুমুছ ছাআতু = তাদের কাছে আসবে ছাআত/ প্রলয় মুহুর্ত। বাগতাতান = হঠাৎ করে। ক্বলূ = তখন তারা বলবে। ইয়া হাছরাতানা = হায়, আমাদের আক্ষেপ। আলা মা ফাররাতনা = উহার কারণে যে ত্রুটি আমরা করেছি। ফীহা = উহার ব্যাপারে (= ছাআতের ব্যাপারে)। ওয়া = আর। হুম = তারা। ইয়াহমিলূনা = বহন করবে। আওযারাহুম = তাদের (পাপের) বোঝাসমূহ। আলা যুহূরিহিম = তাদের পিঠগুলোর উপর। আলা = জেনে রাখো। ছাআ = উহা খুবই মন্দ। মা ইয়াযিরূনা = যা তারা বহন করবে। 

নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে (পর্দার অন্তরাল থেকে) আল্লাহর সাথে মোলাকাত হওয়াকে। এমনকি যখন তাদের কাছে আসবে ছাআত/ প্রলয় মুহুর্ত হঠাৎ করে, তখন তারা বলবে, ‘হায়, আমাদের আক্ষেপ উহার কারণে যে ত্রুটি আমরা করেছি উহার ব্যাপারে (= ছাআতের ব্যাপারে)’। আর তারা বহন করবে তাদের (পাপের) বোঝাসমূহ তাদের পিঠগুলোর উপর। জেনে রাখো উহা খুবই মন্দ যা তারা বহন করবে। 

৬:৩২

ওয়া = আর (আখিরাতের বিবেচনা বাদ দিলে)। মাল হায়াতাদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন কিছুই নয়। ইল্লা লায়িবুন ওয়াল লাহউন = খেলা ও কৌতুক ছাড়া। ওয়া = আর। লাদ্দারুল আখিরাতু = নিশ্চয় আখিরাতের আবাসই। খায়রুল্লিল্লাযীনা = তাদের জন্য উত্তম যারা। ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। আফালা তা’ক্বিলূনা = তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করবে না? 

আর (আখিরাতের বিবেচনা বাদ দিলে) হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন কিছুই নয় খেলা ও কৌতুক ছাড়া। আর নিশ্চয় আখিরাতের আবাসই তাদের জন্য উত্তম যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। তোমরা কি আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করবে না? 

৬:৩৩

ক্বাদ = নিশ্চয়। না’লামু = আমরা জানি। আন্নাহু = নিশ্চয় তা। লাইয়াহযুনুকা = তোমাকে বিষন্ন করে। আল্লাযী = যা। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। ফাইন্নাহুম = তাহলে নিশ্চয় তারা তো। লা ইউকাযযিবূনাকা = তোমাকেই মিথ্যা সাব্যস্ত করে না। ওয়ালাকিন্নাযযালিমীনা = কিন্তু যালিমগণ। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহকেই। ইয়াজহাদূনা = অস্বীকার করে। 

নিশ্চয় আমরা জানি নিশ্চয় তা তোমাকে বিষন্ন করে যা তারা বলে। তাহলে নিশ্চয় তারা তো তোমাকেই মিথ্যা সাব্যস্ত করে না, কিন্তু যালিমগণ আল্লাহর আয়াতসমূহকেই অস্বীকার করে। 

৬:৩৪

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। কুযযিবাত = মিথ্যা সাব্যস্ত করা হয়েছে। রুসুলুম মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগের রসূলদেরকেও। ফাসাবারূ = তখন তারা সবর করেছে। আলা মা কুযযিবূ = তাদেরকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার ব্যাপারে। ওয়া = আর। উযূ = তাদেরকে যে কষ্ট দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে। হাত্তা = যতক্ষণ না। আতাহুম = তাদের কাছে এসেছে। নাসরুনা = আমাদের সাহায্য। ওয়া = আর। লা মুবাদ্দিলা = কোন বদলকারী/ পরিবর্তনকারী নেই। লিকালিমাতিল্লাহি = আল্লাহর কালেমাতের/ বাণীসমূহের ব্যাপারে। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকা = তোমার কাছে এসেছে। মিন নাবায়িল মুরছালীনা = রসূলদের সম্পর্কে কিছু সংবাদ। 

আর নিশ্চয় মিথ্যা সাব্যস্ত করা হয়েছে তোমার আগের রসূলদেরকেও। তখন তারা সবর করেছে তাদেরকে মিথ্যা সাব্যস্ত করার ব্যাপারে আর তাদেরকে যে কষ্ট দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে, যতক্ষণ না তাদের কাছে এসেছে আমাদের সাহায্য। আর কোন বদলকারী/ পরিবর্তনকারী নেই আল্লাহর কালেমাতের/ বাণীসমূহের ব্যাপারে। আর নিশ্চয় তোমার কাছে এসেছে রসূলদের সম্পর্কে কিছু সংবাদ। 

৬:৩৫

ওয়া = আর। ইন = যদি। কানা কাবুরা আলাইকা = তোমার উপর বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয় হয়। ই’রাদুহুম = তাদের কর্তৃক তোমাকে উপেক্ষা করা। ফাইনিছতাতা’তা = তাহলে যদি তুমি পার। আন তাবতাগিয়া = তবে তালাশ করো। নাফাক্বান ফিল আরদি = পৃথিবীতে কোন সুড়ঙ্গ। আও = অথবা। ছুল্লামান ফিস সামায়ি = আসমানে উঠার কোন সিঁড়ি। ফাতা’তিয়াহুম = তারপর তাদেরকে এনে দাও। বিআয়াতিন = কোন আয়াত/ নিদর্শন। ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাজামাআহুম = তাহলে তাদেরকে একত্র করতেন। আলাল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের উপর। ফালা তাকূনুন্না = সুতরাং তুমি হয়ো না। মিনাল জাহিলীনা = জাহিলদের/ মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর যদি তোমার উপর বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয় হয় তাদের কর্তৃক তোমাকে উপেক্ষা করা, তাহলে যদি তুমি পার তবে তালাশ করো পৃথিবীতে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আসমানে উঠার কোন সিঁড়ি, তারপর তাদেরকে এনে দাও কোন আয়াত/ নিদর্শন। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তাদেরকে একত্র করতেন হুদার/ হিদায়াতের উপর। সুতরাং তুমি হয়ো না জাহিলদের/ মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:৩৬

ইন্নামা = নিশ্চয়। ইয়াছতাজীবুল্লাযীনা = তারাই সাড়া দেয় যারা। ইয়াছমাঊনা = (মনোযোগের সাথে) শুনে। ওয়াল মাওতা = আর যারা মৃত। ইয়াবআছুহুমুল্লাহু = আল্লাহই তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন। ছুম্মা = তারপর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। ইউরজাঊনা = তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। 

নিশ্চয় তারাই সাড়া দেয় যারা (মনোযোগের সাথে) শুনে। আর যারা মৃত আল্লাহই তাদেরকে পুনরুত্থিত করবেন তারপর তাঁরই দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। 

৬:৩৭

ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। লাও = কেন। লা নুযযিলা = নাযিল করা হয় না। আলাইহি = তার উপর। আয়াতুন = কোন আয়াত/ নিদর্শন। মির রব্বিহী = তার রবের পক্ষ থেকে। ক্বুল = বলো। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ক্বাদীরুন = সক্ষম। আলা আইঁয়ুনাযযিলা আয়াতান = আয়াত/ নিদর্শন নাযিল করতে। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশই। লা ইয়া’লামূনা = (আসমানী কিতাবের) ইলম রাখে না। 

আর তারা বলে, ‘কেন নাযিল করা হয় না তার উপর কোন আয়াত/ নিদর্শন তার রবের পক্ষ থেকে?’ বলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সক্ষম আয়াত/ নিদর্শন নাযিল করতে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই (আসমানী কিতাবের) ইলম রাখে না’। 

৬:৩৮

ওয়া = আর। মা মিন দাব্বাতিন = কোন বিচরণশীল প্রাণী নেই। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়া = আর। তয়িরিইঁ ইয়াতীরু বিজানাহাইহি = কোন পাখি যা উড়ে তার দুই ডানা দ্বারা। ইল্লা = এছাড়া যে, উহারাও। উমামুন = উম্মাতসমূহ/ জাতিসমূহ (উমামুন হচ্ছে উম্মাতের বহুবচন)। আমছালুকুম = তোমাদের মতো। মা ফাররাতনা = আমরা বাদ দিইনি। ফিল কিতাবি = কিতাবের মধ্যে (= উম্মুল কিতাব ও কুরআনের মধ্যে)। মিন শাইয়িন = কোন কিছুই। ছুম্মা = তারপর। ইলা রব্বিহিম = তাদের রবের নিকট। তুহশারূনা = তাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে। 

আর কোন বিচরণশীল প্রাণী নেই পৃথিবীতে আর কোন পাখি যা উড়ে তার দুই ডানা দ্বারা, এছাড়া যে, উহারাও উম্মাতসমূহ/ জাতিসমূহ তোমাদের মতো। আমরা বাদ দিইনি কিতাবের মধ্যে (= উম্মুল কিতাব ও কুরআনের মধ্যে) কোন কিছুই। তারপর তাদের রবের নিকট তাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে। 

৬:৩৯

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ছুম্মুন = তারা বধির। ওয়া = ও। বুকমুন = বোবা। ফিয যুলুমাতি = (তারা আছে) যুলুমাতের/ অন্ধকারের মধ্যে। মাইঁ ইয়াশায়িল্লাহু = আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন। ইউদলিলহু = তাকে বিভ্রান্ত করেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াশা’ = তিনি যাকে ইচ্ছা করেন। ইয়াজআলহু = তাকে রাখেন। আলা সিরাতিম মুসতাক্বীমা = সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের উপর। 

আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, তারা বধির ও বোবা, (তারা আছে) যুলুমাতের/ অন্ধকারের মধ্যে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে বিভ্রান্ত করেন আর তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে রাখেন সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের উপর। 

৬:৪০

ক্বুল = বলো। আরাআইতাকুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। ইন = যদি। আতাকুম = তোমাদের কাছে আসে। আযাবুল্লাহি = আল্লাহর আযাব। আও = অথবা। আতাতকুমুছ ছাআতু = তোমাদের কাছে আসে ছাআত/ প্রলয় মুহুর্ত। আগাইরাল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া কি। তাদঊনা = তোমরা (অন্য কাউকে) ডাকবে? ইন = (জবাব দাও) যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সদিক্বীন/ সত্যবাদী। 

বলো, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছো যদি তোমাদের কাছে আসে আল্লাহর আযাব অথবা তোমাদের কাছে আসে ছাআত/ প্রলয় মুহুর্ত, আল্লাহ ছাড়া কি তোমরা (অন্য কাউকে) ডাকবে? (জবাব দাও) যদি তোমরা হও সদিক্বীন/ সত্যবাদী’। 

৬:৪১  বাল = বরং এমন অবস্থায়। ইয়্যাহু = শুধু তাঁকেই। তাদঊনা = তোমরা ডাকো। ফাইয়াকশিফু = তখন তিনি দূর করে দেন। মা তাদঊনা ইলাইহি = যা দূর করার জন্য তোমরা প্রার্থনা করো তাঁর কাছে। ইন = যদি। শাআ = তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর (বিপদের সময়)। তানছাওনা = তোমরা তাদেরকে ভুলে যাও। মা তুশরিকূনা = যাদেরকে তোমরা শরিক করো। 

বরং এমন অবস্থায় শুধু তাঁকেই তোমরা ডাকো, তখন তিনি দূর করে দেন যা দূর করার জন্য তোমরা প্রার্থনা করো তাঁর কাছে, যদি তিনি ইচ্ছা করেন। আর (বিপদের সময়) তোমরা তাদেরকে ভুলে যাও যাদেরকে তোমরা শরিক করো। 

৬:৪২

ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। ইলা উমামিন মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগের উম্মাতসমূহের প্রতিও (উমামুন হচ্ছে উম্মাতের বহুবচন)। ফাআখাজনাহুম = তখন আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি। বিল বা’ছায়ি = বিপদ/ অর্থসংকট দিয়ে। ওয়াদ দররায়ি = ও দু:খ কষ্ট দিয়ে। লাআল্লাহুম = যেন তারা। ইয়াতাসররাঊনা = বিনীত হতে পারে। 

আর নিশ্চয় আমরা প্রেরণ করেছি তোমার আগের উম্মাতসমূহের প্রতিও (অনেক রসূল)। তখন আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি বিপদ/ অর্থসংকট দিয়ে ও দু:খ কষ্ট দিয়ে, যেন তারা বিনীত হতে পারে। 

৬:৪৩  ফালাও = তবে কেন। লা = না। ইয = যখন। জাআহুম = তাদের কাছে এসেছে। বা’ছুনা = আমাদের শাস্তি। তাদাররাঊ = তখন তারা বিনীত হলো। ওয়ালাকিন = কিন্তু। ক্বাছাত = শক্ত হয়ে গিয়েছিলো। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ। ওয়া = আর। যাইয়্যানা = সুশোভিত করেছিলো। লাহুমুশ শায়তানু = তাদের জন্য শয়তান। মা কানূ ইয়া’মালূনা = উহাকে যা তারা করছিলো। 

তবে কেন না যখন তাদের কাছে এসেছে আমাদের শাস্তি তখন তারা বিনীত হলো? কিন্তু শক্ত হয়ে গিয়েছিলো তাদের কলবসমূহ আর সুশোভিত করেছিলো তাদের জন্য শয়তান উহাকে যা তারা করছিলো। 

৬:৪৪  

ফালাম্মা = তারপর যখন। নাছূ = তারা উহা ভুলে গেছে। মা যুককিরূ বিহী = তাদেরকে যে যিকর/ স্মরণিকা দ্বারা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো। ফাতাহনা = তখন আমরা খুলে দিলাম। আবওয়াবা কুল্লি সাইয়িন = সবকিছুর দরজাসমূহ। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। ফারিহূ = তারা উল্লাস করছিলো। বিমা উতূ = উহা নিয়ে যা তাদেরকে দেয়া হয়েছে। আখাযনাহুম = আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি। বাগতাতান = হঠাৎ করে। ফাইযা = ফলে তখন। হুম = তারা। মুবলিছূন = হতাশ ও নিরাশ হয়ে গেলো। 

তারপর যখন তারা উহা ভুলে গেছে তাদেরকে যে যিকর/ স্মরণিকা দ্বারা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছিলো, তখন আমরা খুলে দিলাম সবকিছুর দরজাসমূহ। শেষ পর্যন্ত যখন তারা উল্লাস করছিলো উহা নিয়ে যা তাদেরকে দেয়া হয়েছে, আমরা তাদেরকে পাকড়াও করেছি হঠাৎ করে, ফলে তখন তারা হতাশ ও নিরাশ হয়ে গেলো। 

৬:৪৫

ফাক্বুতিআ = তারপর কেটে দেয়া হয়েছে। দাবিরুল কাওমি = ঐ ধরনের কাওমের মূল/ গোড়া। আল্লাযীনা = যারা। যলামূ = যুলুম করেছে। ওয়ালহামদু = আর সমস্ত প্রশংসা। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। রব্বিল আলামীনা = যিনি রব্বুল আলামীন/ জগতসমূহের রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা ও বিধানদাতা)। 

তারপর কেটে দেয়া হয়েছে ঐ ধরনের কাওমের মূল/ গোড়া যারা যুলুম করেছে। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি রব্বুল আলামীন/ জগতসমূহের রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা ও বিধানদাতা)। 

৬:৪৬

ক্বুল = বলো। আরাআইতুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। ইন = যদি। আখাজাল্লাহু = আল্লাহ কেড়ে নেন। ছামআকুম = তোমাদের শ্রবণশক্তি। ওয়া = আর। আবসারাকুম = তোমাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহ। ওয়া = আর। খাতামা = খাতাম করে/ সিল মেরে দেন। আলা ক্বুলুবিকুম = তোমাদের কলবসমূহের উপর। মান ইলাহুন = কোন ইলাহ আছে। গায়রুল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ইয়া’তীকুম বিহী = যে উহা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে? উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। নুসাররিফুল আয়াতি = আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি। ছুম্মা = তারপরও। হুম = তারা। ইয়াসদিফূনা = বিমুখ হচ্ছে। 

বলো তোমরা কি ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ কেড়ে নেন তোমাদের শ্রবণশক্তি আর তোমাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহ আর খাতাম করে/ সিল মেরে দেন তোমাদের কলবসমূহের উপর, তাহলে কোন্ ইলাহ আছে আল্লাহ ছাড়া যে উহা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে? নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপে আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি, তারপরও তারা বিমুখ হচ্ছে। 

৬:৪৭

ক্বুল = বলো। আরাআইতাকুম = তোমরা কি ভেবে দেখেছো। ইন = যদি। আতাকুম = তোমাদের কাছে আসে। আযাবুল্লাহি = আল্লাহর আযাব। বাগতাতান = হঠাৎ করে। আও = বা। জাহরাতান = প্রকাশ্যভাবে। হাল ইউহলাকু = তবে কি ধ্বংস করা হবে। ইল্লাল ক্বাওমুয যালিমূনা = একটা যালিম কাওমকে ছাড়া অন্য কাওমকে? 

বলো তোমরা কি ভেবে দেখেছো যদি তোমাদের কাছে আসে আল্লাহর আযাব হঠাৎ করে বা প্রকাশ্যভাবে, তবে কি ধ্বংস করা হবে একটা যালিম কাওমকে ছাড়া অন্য কাওমকে? 

৬:৪৮

ওয়া = আর। মা নুরসিলুল মুরছালীনা = আমরা প্রেরণ করি না রসূলদেরকে। ইল্লা মুবাশশিরীনা ওয়া মুনযিরীনা = সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে ছাড়া। ফামান = সুতরাং যে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। আসলাহা = ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করে। ফালা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহযানূনা = তারা দু:খিত হবে। 

আর আমরা প্রেরণ করি না রসূলদেরকে সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে ছাড়া। সুতরাং যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করে, তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা তারা দু:খিত হবে। 

৬:৪৯

ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। ইয়ামাছছুহুমুল আযাবা = তাদেরকে আযাব স্পর্শ করবে। বিমা কানূ ইয়াফছুক্বূনা = কারণ, তারা ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করতো। 

আর যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, তাদেরকে আযাব স্পর্শ করবে; কারণ, তারা ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য করতো। 

৬:৫০

ক্বুল = বলো। লা আক্বূলু = আমি বলি না। লাকুম = তোমাদেরকে। ইনদী = আমার কাছে আছে। খাযায়িনুল্লাহি = আল্লাহর খাযায়েন/ ধনভান্ডারসমূহ। ওয়া = আর। লা আ’লামুল গায়বা = আমি গায়েব জানি না। ওয়া = আর। লা আক্বূলা = আমি বলি না। লাকুম = তোমাদেরকে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মালাকুন = মালাক/ ফেরেশতা। ইন আত্তাবিউ = আমি কিছুই ইত্তেবা/ অনুসরণ করি না। ইল্লা মা ইউহা ইলাইয়্যা = উহা ছাড়া যা ওহী করা হয় আমার কাছে। ক্বুল = বলো। হাল ইয়াছতাভিল আ’মা = সমান হতে পারে কি অন্ধ। ওয়াল আবসার = ও চক্ষুষ্মান/ দৃষ্টিবান। আফালা তাতাফাক্কারূনা = তোমরা কি ফিকর/ চিন্তা গবেষণা করো না? 

বলো, “আমি বলি না তোমাদেরকে, ‘আমার কাছে আছে আল্লাহর খাযায়েন/ ধনভান্ডারসমূহ’। আর আমি গায়েব জানি না। আর আমি বলি না তোমাদেরকে, ‘নিশ্চয় আমি মালাক/ ফেরেশতা’। আমি কিছুই ইত্তেবা/ অনুসরণ করি না উহা ছাড়া যা ওহী করা হয় আমার কাছে (= আমি শুধু কুরআনের অনুসরণ করি)”। বলো, ‘সমান হতে পারে কি অন্ধ ও চক্ষুষ্মান/ দৃষ্টিবান? তোমরা কি ফিকর/ চিন্তা গবেষণা করো না?’ 

৬:৫১

ওয়া = আর। আনযির = তুমি সতর্ক করো। বিহিল্লাযীনা = উহা দ্বারা (= কুরআন দ্বারা) তাদেরকে যারা। ইয়াখাফূনা = ভয় করে। আইঁ ইউহসারূ = যে, তাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে। ইলা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। লাইছা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিন দূনিহি = তিনি ছাড়া। ওয়ালিইয়্যুন = কোন ওয়ালি/ অভিভাবক। ওয়া = আর। শাফীউন = কোন শাফী/ সুপারিশকারী। লাআল্লাহুম = যেন তারা। ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। 

আর তুমি সতর্ক করো উহা দ্বারা (= কুরআন দ্বারা) তাদেরকে যারা ভয় করে যে, তাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে তাদের রবের কাছে। তাদের জন্য নেই তিনি ছাড়া কোন ওয়ালি/ অভিভাবক আর কোন শাফী/ সুপারিশকারী, যেন তারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। 

৬:৫২

ওয়া = আর। লা তাতরুদিল্লাযীনা = তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিও না যারা। ইয়াদঊনা রব্বাহুম = দোয়া/ প্রার্থনা করে তাদের রবের কাছে। বিল গাদাওয়াতি ওয়াল আশিয়্যি = সকালে ও আশিয়্যে/ ইশার সময়। ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। ওয়াজহাহু = তাঁর সন্তুষ্টি পেতে। মা আলাইকা = তোমার উপর নেই। মিন হিসাবিহিম = তাদের হিসাব দেয়ার দায়িত্ব। মিন সাইয়িন = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। মিন হিসাবিকা = তোমার হিসাব দেয়ার দায়িত্ব নেই। আলাইহিম = তাদের উপর। মিন সাইয়িন = কিছুমাত্রও। ফাতাতরদুহুম = সুতরাং যদি তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও। ফাতাকূনা = তাহলে তুমি হবে। মিনায যালিমীনা = যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিও না যারা দোয়া/ প্রার্থনা করে তাদের রবের কাছে সকালে ও আশিয়্যে/ ইশার সময়। তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে তাঁর সন্তুষ্টি পেতে। তোমার উপর নেই তাদের হিসাব দেয়ার দায়িত্ব, কিছুমাত্রও। আর তোমার হিসাব দেয়ার দায়িত্ব নেই তাদের উপর, কিছুমাত্রও। সুতরাং যদি তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও তাহলে তুমি হবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:৫৩

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। ফাতান্না = আমি পরীক্ষা করেছি। বা’দুহুম  বিবা’দিহিম = তাদের কাউকে অপর কারো দ্বারা। লিইয়াক্বুলূ = যেন তারা বলে। আহাউলায়ি = এরাই কি সেসব লোক। মান্নাল্লাহু = আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আলাইহিম = যাদের উপর। মিম বাইনিনা = আমাদের মধ্য থেকে। আলাইছাল্লাহু = আল্লাহ কি নন। বিআ’লামা = অধিক জ্ঞানী। বিশশাকিরীনা = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের ব্যাপারে। 

আর এভাবে আমি পরীক্ষা করেছি তাদের কাউকে অপর কারো দ্বারা, যেন তারা বলে, ‘এরাই কি সেসব লোক আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন যাদের উপর আমাদের মধ্য থেকে? (তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো,) ‘আল্লাহ কি নন অধিক জ্ঞানী, শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের ব্যাপারে?’ 

৬:৫৪  

ওয়া = আর। ইযা = যখন। জাআকাল্লাযীনা = তোমার কাছে তারা আসে যারা। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি। ফাক্বুল = তখন তুমি বলো। ছালামুন আলাইকুম = ‘ছালামুন আলাইকুম’ (আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। কাতাবা = লিখে নিয়েছেন। রব্বুকুম = তোমাদের রব। আলা নাফসিহি = নিজের উপর (একটি সুন্নাত/ মূলনীতি হিসাবে)। আর রহমাতা = রহমাত/ দয়া করাকে। আন্নাহু = তা এমন যে। মান = যে। আমিলা মিনকুম ছূআন = করে বসে তোমাদের মধ্য থেকে কোন মন্দ কাজ। বিজাহালাতিন = জাহালতবশত:। ছুম্মা = তারপর। তাবা = তাওবা করে। মিম বা’দিহি = উহার পর। ওয়া = আর। আসলাহা = ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করে। ফাআন্নাহু = তাহলে নিশ্চয় তিনি। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল। 

আর যখন তোমার কাছে তারা আসে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি, তখন তুমি বলো, ‘ছালামুন আলাইকুম’ (আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। লিখে নিয়েছেন তোমাদের রব নিজের উপর (একটি সুন্নাত/ মূলনীতি হিসাবে) রহমাত/ দয়া করাকে। তা এমন যে, যে করে বসে তোমাদের মধ্য থেকে কোন মন্দ কাজ জাহালতবশত: তারপর তাওবা করে উহার পর (অবিলম্বে) আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করে, তাহলে নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল। 

৬:৫৫

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। নুফাসসিলাল আয়াতি = আমরা তফসীল/ বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে। ওয়ালিতাছতাবীনা = যেন বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়। ছাবীলুল মুজরিমীনা = অপরাধীদের পথ। 

আর এভাবেই আমরা তফসীল/ বিস্তারিত বর্ণনা করি আয়াতসমূহকে, যেন বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয় অপরাধীদের পথ। 

৬:৫৬

ক্বুল = বলো। ইন্নী নুহীতে = নিশ্চয় আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। আন = যেন না। আ’বুদাল্লাযীনা = আমি তাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করি যাদেরকে। তাদঊনা = তোমরা ডাকো। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ক্বুল = বলো। লা আত্তাবিউ = আমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করি না। আহওয়াআকুম = তোমাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের বা সংবিধানের। ক্বাদ = নিশ্চয়। দলালতু = আমি বিভ্রান্ত হবো। ইযা = (তা করলে) তখনি। ওয়া = আর। মা আনা = তাহলে আমি থাকবো না। মিনাল মুহতাদীনা = হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। 

বলো, ‘নিশ্চয় আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যেন না আমি তাদের ইবাদাত/ দাসত্ব করি যাদেরকে তোমরা ডাকো আল্লাহ ছাড়া’। বলো, ‘আমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করি না তোমাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের বা সংবিধানের। নিশ্চয় আমি বিভ্রান্ত হবো (তা করলে) তখনি, আর তাহলে আমি থাকবো না হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। 

৬:৫৭

ক্বুল = বলো। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আলা বাইয়িনাতিম মির রব্বী = আমার রবের পক্ষ থেকে আসা বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত (= কুরআনের উপর প্রতিষ্ঠিত)। ওয়া = অথচ। কাযযাবতুম বিহী = তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছো উহাকে (= কুরআনকে)। মা ইনদী = আমার কাছে নেই। মা তাছতা’জিলূনা বিহী = যা তোমরা শীঘ্রই পেতে চাচ্ছো তা (= আযাব)। ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহি = কারো অধিকার নেই হুকুম/ আইন দেয়ার শুধু আল্লাহর ছাড়া। ইয়াক্বুসসুল হাক্বক্বা = তিনি বর্ণনা করেন সত্য সঠিক। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। খাইরুল ফাসিলীনা = সর্বশ্রেষ্ঠ ফায়সালাকারী। 

বলো, ‘নিশ্চয় আমি আমার রবের পক্ষ থেকে আসা বাইয়িনাতের/ স্পষ্ট প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত (= কুরআনের উপর প্রতিষ্ঠিত)। অথচ তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছো উহাকে (= কুরআনকে)। আমার কাছে নেই যা তোমরা শীঘ্রই পেতে চাচ্ছো তা (= আযাব)। কারো অধিকার নেই হুকুম/ আইন দেয়ার শুধু আল্লাহর ছাড়া {= বিচার শুধুমাত্র আল্লাহর আইন অনুযায়ী করতে হবে}। তিনি বর্ণনা করেন সত্য সঠিক। আর তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ ফায়সালাকারী। 

৬:৫৮

ক্বুল = বলো। লাও = যদি। আন্না = তা হতো। ইনদী = আমার কাছে। মা তাছতা’জিলূনা বিহী = যা তোমরা শীঘ্রই পেতে চাচ্ছো (= আযাব)। লাক্বুদিয়াল আমরা = তাহলে ব্যাপারটির ফায়সালা হয়েই যেতো। বায়নী ওয়া বায়নাকুম = আমার ও তোমাদের মধ্যে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আ’লামু = ভালভাবেই পরিজ্ঞাত। বিযযালিমীনা = যালিমদের সম্পর্কে। 

বলো, ‘যদি তা হতো আমার কাছে যা তোমরা শীঘ্রই পেতে চাচ্ছো (= আযাব), তাহলে ব্যাপারটির ফায়সালা হয়েই যেতো আমার ও তোমাদের মধ্যে। আর আল্লাহ ভালভাবেই পরিজ্ঞাত যালিমদের সম্পর্কে। 

৬:৫৯

ওয়া = আর। ইনদাহু = তাঁরই কাছে আছে। মাফাতিহুল গায়বি = গায়েবের চাবিসমূহ। লা ইয়া’লামুহা = কেউ উহা (= গায়েব) জানে না। ইল্লা হুয়া = তিনি ছাড়া। ওয়া = আর। ইয়া’লামু = তিনিই জানেন। মা = যা আছে। ফিল বাররি = স্থলভাগে। ওয়াল বাহরি = আর জলভাগে। ওয়া = আর। মা তাছক্বুতু = পড়ে না। মিন = কোন। ওয়ারাক্বাতিন = পাতা। ইল্লা ইয়া’লামুহা = তিনি উহা জানা ছাড়া। ওয়া = আর। লা হাব্বাতিন = না কোন শস্যদানা আছে। ফী যুলুমাতিল আরদি = জমিনের যুলুমাত/ অন্ধকারসমূহের মধ্যে। ওয়া = আর। লা রতবিন = না আছে কোন ভিজা জিনিস। ওয়া = আর। লা ইয়াবিছিন = না আছে কোন শুকনো জিনিস। ইল্লা ফী কিতাবিম মুবীন = তা সুস্পষ্ট কিতাবে (= উম্মুল কিতাবে) লিখিত থাকা ছাড়া। 

আর তাঁরই কাছে (= আল্লাহর কাছে) আছে গায়েবের চাবিসমূহ। কেউ উহা (= গায়েব) জানে না তিনি (= আল্লাহ) ছাড়া। আর তিনিই জানেন যা আছে স্থলভাগে আর জলভাগে। আর পড়ে না কোন পাতা তিনি উহা জানা ছাড়া। আর না কোন শস্যদানা আছে জমিনের যুলুমাত/ অন্ধকারসমূহের মধ্যে আর না আছে কোন ভিজা জিনিস আর না আছে কোন শুকনো জিনিস, তা (তার সময় ও স্থানগত পরিমান-পরিমাপ ও তার কার্যকারণ) সুস্পষ্ট কিতাবে (= লাওহে মাহফুজে থাকা উম্মুল কিতাবে) লিখিত থাকা ছাড়া। 

৬:৬০

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা, যিনি। ইয়াতাওয়াফফাকুম = তোমাদের মৃত্যু ঘটান। বিল লাইলি = রাতে। ওয়া = আর। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা = যা। জারাহতুম = তোমরা করো। বিন্নাহারি = দিনে। ছুম্মা = তখন। ইয়াবআছুকুম = তিনি তোমাদেরকে সমুত্থিত/ জাগ্রত করেন। ফীহি = উহাতে (= দিনে)। লিইউক্বদা = যেন সম্পন্ন হয়। আজালুম মুছাম্মা = আজালুম মুছাম্মা/ জীবনের সুনির্দিষ্ট মেয়াদ। ছুম্মা = তারপর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। মারজিউকুম = তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। ছুম্মা = তারপর। ইউনাব্বিউকুম = তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। বিমা = ঐ বিষয়ে যা। কুনতুম তা’লামূনা = তোমরা করতে। 

আর তিনিই সেই সত্তা, যিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটান রাতে (= ঘুম একপ্রকার মৃত্যু) আর তিনি জানেন যা তোমরা করো দিনে। তখন তিনি তোমাদেরকে সমুত্থিত/ জাগ্রত করেন উহাতে (= দিনে), যেন সম্পন্ন হয় আজালুম মুছাম্মা/ জীবনের সুনির্দিষ্ট মেয়াদ। তারপর তাঁরই দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন ঐ বিষয়ে যা তোমরা করতে। 

৬:৬১

ওয়া = আর। হুয়াল ক্বাহিরু = তিনি ক্বাহের/ একচ্ছত্র ক্ষমতাধর। ফাওক্বা ইবাদিহী = তাঁর বান্দাগণের উপর। ওয়া = আর। ইউরছিলু = তিনি প্রেরণ করেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। হাফাযাতান = হেফাযতকারী ফেরেশতা। হাত্তা = শেষ পর্যন্ত। ইযা = যখন। জাআ = আসে। আহাদাকুমুল মাওতা = তোমাদের কারো মৃত্যু। তাওয়াফফাতহু = তার ওফাত ঘটায়/ নফস নিয়ে যায়। রুসুলুনা = আমাদের প্রেরিত ফেরেশতাগণ। ওয়া = আর। হুম = তারা। লা ইউফাররিতূনা = কোন ত্রুটি করে না। 

আর তিনি ক্বাহের/ একচ্ছত্র ক্ষমতাধর তাঁর বান্দাগণের উপর। আর তিনি প্রেরণ করেন তোমাদের উপর হেফাযতকারী ফেরেশতা। শেষ পর্যন্ত যখন আসে তোমাদের কারো মৃত্যু, তার ওফাত ঘটায়/ নফস নিয়ে যায় আমাদের প্রেরিত ফেরেশতাগণ, আর তারা কোন ত্রুটি করে না। 

৬:৬২

ছুম্মা = তারপর। রুদ্দূ = তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হয়। ইলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। মাওলাহুমুল হাক্বক্বি = যিনি তাদের হক্বক্বানি মাওলা/ প্রকৃত প্রভু। আলা = জেনে রাখো। লাহুল হুকমু = শুধু তাঁরই অধিকার আছে হুকুম/ আইন দেয়ার। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। আছরাউল হাছিবীনা = হিসাবকারীদের মধ্যে দ্রুততম। 

তারপর তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হয় আল্লাহর কাছে, যিনি তাদের হক্বক্বানি মাওলা/ প্রকৃত প্রভু। জেনে রাখো, শুধু তাঁরই অধিকার আছে হুকুম/ আইন দেয়ার। আর তিনিই হিসাবকারীদের মধ্যে দ্রুততম। 

৬:৬৩

ক্বুল = বলো। মাইঁ ইউনাযযীকুম = কে তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেন। মিন যুলুমাতিল বাররি ওয়াল বাহরি = স্থলভাগের ও জলভাগের যুলুমাত/ অন্ধকারসমূহ থেকে। তাদঊনাহু = যখন তোমরা তাঁকে ডাকো। তাদাররুআন = কাতরভাবে। ওয়া = আর। খুফইয়াতান = গোপনে। লাইন = (যখন বলো) ‘যদি। আনজানা = তিনি আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেন। মিন হাযিহি = এই বিপদ থেকে। লানাকূনান্না = তাহলে আমরা হবো। মিনাশ শাকিরীনা = শোকরকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

বলো, “কে তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেন স্থলভাগের ও জলভাগের যুলুমাত/ অন্ধকারসমূহ থেকে, যখন তোমরা তাঁকে ডাকো কাতরভাবে আর গোপনে? (যখন বলো,) ‘যদি তিনি আমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেন এই বিপদ থেকে তাহলে আমরা হবো শোকরকারীদের অন্তর্ভুক্ত’”। 

৬:৬৪

ক্বুলিল্লাহু = বলো, ‘আল্লাহই। ইউনাজজীকুম = তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেন। মিনহা = উহা থেকে। ওয়া = আর। মিন কুল্লি কারবিন = সকল বিপদ থেকে। ছুম্মা = তারপরও। আনতুম = তোমরা। তুশরিকূনা = শিরক করছো। 

বলো, ‘আল্লাহই তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দেন উহা থেকে, আর সকল বিপদ থেকে। তারপরও তোমরা শিরক করছো’। 

৬:৬৫

ক্বুল = বলো। হুয়াল ক্বাদীরু = তিনি সক্ষম। আলা আইঁ ইয়াবআছা = পাঠাতে। আলাইকুমুল আযাবা = তোমাদের উপর আযাব। মিন ফাওক্বিহিম = তোমাদের উপর থেকে (= আসমান থেকে)। আও = অথবা। মিন তাহতি আরজুলিকুম = তোমাদের পায়ের নিচ থেকে (= জমিন থেকে)। আও = অথবা। ইয়ালবিছাকুম = তোমাদেরকে বিভক্ত করতে। শিয়াআন = বিভিন্ন শিয়া/ দলে। ওয়া = আর। ইউযীক্বা = আস্বাদন করাতে। বা’দুকুম বা’ছি বা’দিন = তোমাদের কতিপয়কে কতিপয়ের শক্তিমত্তার ফল। উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। নুসাররিফুল আয়াতি = আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি। লাআল্লাহুম ইয়াফক্বাহূনা = যেন তারা ফিকহ/ উপলব্ধি করতে পারে। 

বলো, ‘তিনি সক্ষম পাঠাতে তোমাদের উপর আযাব তোমাদের উপর থেকে (= আসমান থেকে) অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে (= জমিন থেকে) অথবা তোমাদেরকে বিভক্ত করতে বিভিন্ন শিয়া/ দলে আর আস্বাদন করাতে তোমাদের কতিপয়কে কতিপয়ের শক্তিমত্তার ফল’। নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপে আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি যেন তারা ফিকহ/ উপলব্ধি করতে পারে। 

৬:৬৬

ওয়া = আর। কাযযাবা = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিহী = উহার প্রতি (= কুরআনের প্রতি)। ক্বাওমুকা = তোমার কাওম। ওয়া = অথচ। হুয়াল হাক্বক্বু = উহা হক্ব (সত্য, সঠিক, যৌক্তিক)। ক্বুল = বলো। লাছতু = আমি নই। আলাইকুম = তোমাদের উপর। বিওয়াকীলিন = উকিল/ কর্মবিধায়ক। 

আর মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে উহার প্রতি (= কুরআনের প্রতি) তোমার কাওম। অথচ উহা হক্ব (সত্য, সঠিক, যৌক্তিক)। বলো, ‘আমি নই তোমাদের উপর উকিল/ কর্মবিধায়ক’। 

৬:৬৭

লিকুল্লি নাবাইন = প্রত্যেক সংবাদের/ ঘটনার জন্য আছে। মুছতাক্বাররুন = নির্দিষ্ট (সময়গত) অবস্থান। ওয়া = আর। ছাওফা = শীঘ্রই। তা’লামূনা = তোমরা তা জানতে পারবে। 

প্রত্যেক সংবাদের/ ঘটনার জন্য আছে নির্দিষ্ট (সময়গত) অবস্থান। আর শীঘ্রই তোমরা তা জানতে পারবে। 

৬:৬৮

ওয়া = আর। ইযা = যখন। রআইতা = তুমি দেখো। আল্লাযীনা = তাদেরকে যারা। ইয়াখূদূনা = সমালোচনা করছে। ফী আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে। ফাআরিদ = তখন তুমি সরে যাও। আনহুম = তাদের থেকে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াখূদূ = তারা সমালোচনা করে। ফী হাদীসিন গায়রিহী = উহা ছাড়া অন্য হাদীসের ব্যাপারে। ওয়া = আর। ইম্মা = যদি। ইউনছিয়ান্নাকাশ শায়তানু = তোমাকে ভুলিয়ে দেয় শয়তান। ফালা তাক্বউদ = তাহলে বসে থেকো না। বা’দায যিকরা = স্মরণ হওয়ার পরে। মাআল ক্বাওমিয যালিমীনা = যালিম ক্বাওমের সাথে। 

আর যখন তুমি দেখো তাদেরকে যারা সমালোচনা করছে আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে, তখন তুমি সরে যাও তাদের থেকে যতক্ষণ না তারা সমালোচনা করে উহা ছাড়া অন্য হাদীসের ব্যাপারে। আর যদি তোমাকে ভুলিয়ে দেয় শয়তান, তাহলে বসে থেকো না স্মরণ হওয়ার পরে যালিম ক্বাওমের সাথে। 

৬:৬৯

ওয়া = আর। মা আলাল্লাযীনা ইয়াত্তাক্বূনা = তাদের উপর দায়িত্ব নেই যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে। মিন হিসাবিহিম = তাদের (= যালিম কাওমের) হিসাব দেয়ার। মিন সাইয়িন = কিছুমাত্রও। ওয়ালাকিন = কিন্তু। যিকরা = যিকর/ স্মরণ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আছে। লাআল্লাহুম = যেন তারা। ইয়াত্তাক্বূনা = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। 

আর তাদের উপর দায়িত্ব নেই যারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করে তাদের (= যালিম কাওমের) হিসাব দেয়ার, কিছুমাত্রও। কিন্তু যিকর/ স্মরণ করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব আছে, যেন তারা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারে। 

৬:৭০

ওয়া = আর। যারিল্লাযীনাত্তাখাযূ = ছেড়ে দাও তাদেরকে যারা গ্রহণ করেছে। দীনাহুম = তাদের দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে। লায়িবান ওয়া লাহওয়ান = খেলা ও কৌতুক হিসাবে। ওয়া = আর। গাররাতহুমুল হায়াতুদ দুনইয়া = তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। ওয়া = আর। যাক্কির = তাদেরকে যিকর/ স্মরণ করিয়ে দাও। বিহী = উহা দিয়ে (= কুরআন দিয়ে)। আন = যেন না। তুবছালা = ধ্বংসে নিক্ষিপ্ত হয়। নাফসুম বিমা কাছাবাত = কোন ব্যক্তি উহার কারণে যা সে উপার্জন করেছে (= যেন কোন ব্যক্তির কাজ মন্দ না হয়)। লাইছা লাহা = তার জন্য নেই (= কোন ব্যক্তির জন্য নেই)। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ওয়ালিয়্যুন = কোন ওয়ালি/ অভিভাবক। ওয়া = আর। লা শাফীউন = কোন (স্বাধীন) সুপারিশকারীও নেই। 

আর ছেড়ে দাও তাদেরকে যারা গ্রহণ করেছে তাদের দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে খেলা ও কৌতুক হিসাবে, আর তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। আর তাদেরকে যিকর/ স্মরণ করিয়ে দাও উহা দিয়ে (= কুরআন দিয়ে) যেন না ধ্বংসে নিক্ষিপ্ত হয় কোন ব্যক্তি উহার কারণে যা সে উপার্জন করেছে (= যেন কোন ব্যক্তির কাজ মন্দ না হয়)। তার জন্য নেই (= কোন ব্যক্তির জন্য নেই) আল্লাহ ছাড়া কোন ওয়ালি/ অভিভাবক আর (আল্লাহ ছাড়া) কোন (স্বাধীন) সুপারিশকারীও নেই। 

৬:৭১

ক্বুল = বলো। আনাদঊ = আমরা কি ডাকবো। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে। মা = যারা। লা ইয়ানফাউনা = আমাদের কোন উপকার করতে পারে না। ওয়া = আর। লা ইয়াদুররুনা = আমাদের কোন অপকারও করতে পারে না। ওয়া = আর। নুরাদ্দু = আমরা কি উল্টোদিকে ফিরে যাবো। আলা আ’ক্বাবিনা = আমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর দিয়ে। বা’দা = এরপরও। ইয = যখন। হাদানাল্লাহু = আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন। কাল্লাযিছতাহওয়াতহুশ শায়াতীনু = (আমরা কি ফিরে যাবো) তার মতো যাকে বিভ্রমে ফেলে দিয়েছে শয়তান। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। হায়রানা = সে হয়রান/ দিশেহারা হয়ে ঘুরছে। লাহু আসহাবুন = তার আসহাব/ সাথীগণ। ইয়াদঊনাহু = তাকে দাওয়াত/ আহবান করছে। ইলাল হুদা’তিনা = হিদায়াতের দিকে, এই বলে যে, এসো আমাদের কাছে। ক্বুল = বলো। ইন্নাল হুদাল্লাহি = নিশ্চয় আল্লাহর হুদা/ হিদায়াত। হুয়াল হুদা = উহাই হুদা/ হিদায়াত। ওয়া = আর। উমিরনা = আমরা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। লিনুছলিমা = যেন আমরা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করি (= মুসলিম হই)। লিরব্বিল আলামীনা = রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে। 

বলো, ‘আমরা কি ডাকবো আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে, যারা আমাদের কোন উপকার করতে পারে না আর আমাদের কোন অপকারও করতে পারে না? আর আমরা কি উল্টোদিকে ফিরে যাবো আমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর দিয়ে এরপরও যখন আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন, (আমরা কি ফিরে যাবো) তার মতো যাকে বিভ্রমে ফেলে দিয়েছে শয়তান, পৃথিবীতে সে হয়রান/ দিশেহারা হয়ে ঘুরছে? তার আসহাব/ সাথীগণ তাকে দাওয়াত/ আহবান করছে হিদায়াতের দিকে, এই বলে যে, এসো আমাদের কাছে। বলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হুদা/ হিদায়াত, উহাই একমাত্র হুদা/ হিদায়াত। আর আমরা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যেন আমরা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করি (= মুসলিম হই) রব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে’। 

৬:৭২  ওয়া = আর। আন আক্বিমুস সালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। ওয়াত্তাক্বূহু = আর তাঁকে (= আল্লাহকে) ভয় করো। ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী ইলাইহি = তিনিই সেই সত্তা যাঁর কাছে। তুহশারূনা = তোমাদের হাশর/ সমবেত করা হবে। 

আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো আর তাঁকে (= আল্লাহকে) ভয় করো। আর তিনিই সেই সত্তা, যাঁর কাছে তোমাদের হাশর/ সমবেত করা হবে। 

৬:৭৩

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই। খালাক্বাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও যমিন। বিল হাক্বক্বি = যথাযথভাবে ও উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে। ওয়া = আর। ইয়াওমা = যেদিন (কিয়ামাতের ব্যাপারে)। ইয়াক্বূলু = তিনি বলবেন। কুন ফাইয়াকূনু = ‘হও’, সুতরাং (সেদিনই) তা ‘হবে’। ক্বাওলুহুল হাক্বক্বু = তাঁর কথা সত্য সঠিক। ওয়ালাহুল মুলকু ইয়াওমা = আর তাঁরই জন্য সেদিনের আধিপত্য যেদিন। ইউনফাখু ফিস সূরি = শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। আলিমুল গায়বি ওয়াশ শাহাদাতি = তিনিই পরিজ্ঞাত গায়েব/ অদৃশ্য বিষয় এবং শাহাদাত/ দৃশ্যমান বিষয়। ওয়া = আর। হুয়াল হাকীমুল খাবীর = তিনিই হাকীম (= যিনি প্রজ্ঞা রাখেন) ও খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)। 

আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও যমিন যথাযথভাবে ও উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে। আর যেদিন (কিয়ামাতের ব্যাপারে) তিনি বলবেন ‘হও’, সুতরাং (সেদিনই) তা ‘হবে’। তাঁর কথা সত্য সঠিক। আর তাঁরই জন্য সেদিনের আধিপত্য যেদিন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। তিনিই পরিজ্ঞাত গায়েব/ অদৃশ্য বিষয় এবং শাহাদাত/ দৃশ্যমান বিষয়। আর তিনিই হাকীম (= যিনি প্রজ্ঞা রাখেন) ও খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)। 

৬:৭৪

ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বলা = বলেছিলো। ইবরাহীমু = ইবরাহীম। লিআবীহি আযারা = তার পিতা আযারকে। আতাত্তাখিজূ = আপনারা কি গ্রহণ করেছেন। আসনামান = মূর্তিগুলোকে। আলিহাতান = ইলাহ হিসাবে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আরাকা = দেখছি আপনাকে। ওয়া = আর। ক্বাওমাকা = আপনার ক্বাওমকে। ফী দলালিম মুবীনা = প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে। 

আর যখন বলেছিলো ইবরাহীম তার পিতা আযারকে, ‘আপনারা কি গ্রহণ করেছেন মূর্তিগুলোকে ইলাহ হিসাবে? নিশ্চয় আমি দেখছি আপনাকে আর আপনার ক্বাওমকে প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে’। 

৬:৭৫ 

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে (এ কথার সূত্র ধরে এরপর ৬:৭৬-৭৯ আয়াতে বর্ণিত ঘটনাক্রমে)। নুরী = আমরা দেখাই। ইবরাহীমা = ইবরাহীমকে। মালাকূতাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও যমিনের মালাকূত/ আধিপত্য। ওয়া লিইয়াকূনা = যেন সে হয়। মিনাল মূক্বিনীনা = মূক্বিনদের/ ইয়াকীনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

আর এভাবে (এ কথার সূত্র ধরে এরপর ৬:৭৬-৭৯ আয়াতে বর্ণিত ঘটনাক্রমে) আমরা দেখাই ইবরাহীমকে আসমানসমূহ ও যমিনের মালাকূত/ আধিপত্য, যেন সে হয় মূক্বিনদের/ ইয়াকীনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:৭৬ 

ফালাম্মা = তারপর যখন। জান্না = আচ্ছন্ন হয়েছে। আলাইহিল্লাইলু = তার উপর রাত। রআ = তখন সে (= ইবরাহীম) দেখেছে। কাওকাবান = একটি কাওকাব/ গ্রহ (শুকতারা)। ক্বলা = সে বলেছে। হাযা = ইহাই। রব্বী = আমার রব। ফালাম্মা = তারপর যখন। আফালা = উহা অস্তমিত হয়ে গেছে। ক্বলা = তখন সে বলেছে। লা উহিব্বুল আফিলীনা = আমি ভালোবাসি না অস্তগামীদেরকে। 

তারপর যখন আচ্ছন্ন হয়েছে তার উপর রাত, তখন সে (= ইবরাহীম) দেখেছে একটি কাওকাব/ গ্রহ (শুকতারা)। সে বলেছে, ‘ইহাই আমার রব’। তারপর যখন উহা অস্তমিত হয়ে গেছে তখন সে বলেছে, ‘আমি ভালোবাসি না অস্তগামীদেরকে’। 

৬:৭৭

ফালাম্মা = তারপর যখন (আরেক রাতে)। রআল ক্বামারা = সে দেখেছে চাঁদ। বাযিগান = উজ্জলরূপে উদীয়মান। ক্বলা = তখন সে বলেছে। হাযা = ইহাই। রব্বী = আমার রব। ফালাম্মা = তারপর যখন। আফালা = উহা অস্তমিত হয়ে গেছে। ক্বলা = তখন সে বলেছে। লাইন = নিশ্চয় যদি। লাম ইয়াহদিনী = আমাকে হিদায়াত না করেন। রব্বী = আমার রব। লাআকূনান্না = তাহলে আমি হবো। মিনাল ক্বাওমিদ দল্লীনা = বিভ্রান্ত কাওমের অন্তর্ভুক্ত। 

তারপর যখন (আরেক রাতে) সে দেখেছে চাঁদ উজ্জলরূপে উদীয়মান, তখন সে বলেছে, ‘ইহাই আমার রব’। তারপর যখন উহা অস্তমিত হয়ে গেছে তখন সে বলেছে, ‘নিশ্চয় যদি আমাকে হিদায়াত না করেন আমার রব, তাহলে আমি হবো বিভ্রান্ত কাওমের অন্তর্ভুক্ত’। 

৬:৭৮

ফালাম্মা = তারপর যখন। রআশ শামছা = সে দেখেছে সূর্য। বাযিগান = উজ্জলরূপে উদীয়মান। ক্বলা = তখন সে বলেছে। হাযা = ইহা। রব্বী = আমার রব। হাযা = ইহাই। আকবারু = সবচেয়ে বড়ো। ফালাম্মা = তারপর যখন। আফালাত = উহা অস্তমিত হয়ে গেছে। ক্বলা = তখন সে বলেছে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার কাওম। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। বারীউন = সম্পর্ক ছিন্নকারী। মিম্মা তুশরিকূনা = তাদের থেকে যাদেরকে তোমরা (আল্লাহর সাথে) শরিক করো। 

তারপর যখন সে দেখেছে সূর্য উজ্জলরূপে উদীয়মান, তখন সে বলেছে, ‘ইহাই আমার রব। ইহা সবচেয়ে বড়ো’। তারপর যখন উহা অস্তমিত হয়ে গেছে তখন সে বলেছে, ‘হে আমার কাওম, নিশ্চয় আমি সম্পর্ক ছিন্নকারী তাদের থেকে যাদেরকে তোমরা (আল্লাহর সাথে) শরিক করো’। 

৬:৭৯

ইন্নী = নিশ্চয় আমি। ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া = আমার মুখমন্ডল ফিরাচ্ছি। লিল্লাযী = তাঁর উদ্দেশ্যে যিনি। ফাতারাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদা = সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও জমিন। হানীফান = (আমি মুখ ফিরাচ্ছি) হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ হয়ে। ওয়া = আর। মা আনা = আমি নই। মিনাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। 

নিশ্চয় আমি আমার মুখমন্ডল ফিরাচ্ছি তাঁর উদ্দেশ্যে যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমানসমূহ ও জমিন, (আমি মুখ ফিরাচ্ছি) হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ হয়ে। আর আমি নই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:৮০

ওয়া = আর। হাজ্জাহু = তার সাথে বিতর্ক করেছে। ক্বাওমাহু = তার কাওম। ক্বলা = সে বলেছে। আতুহাজ্জূন্নী = তোমরা কি আমার সাথে বিতর্ক করছো। ফিল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। হাদানী = তিনি আমাকে হিদায়াত করেছেন। ওয়া = আর। লা আখাফু মা = আমি তাদেরকে ভয় করি না যাদেরকে। তুশরিকূনা = তোমরা শরিক করো। বিহী = তাঁর সাথে (= আল্লাহর সাথে)। ইল্লা = এছাড়া। আইঁ ইয়াশাআ = যে, ইচ্ছা করেন। রব্বী = আমার রব। সাইয়ান = কোন বিষয়। {= আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটতে পারে না, তাই আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি ভয় করি না।}। ওয়াছিয়া = পরিব্যাপ্ত করেছেন। রব্বী = আমার রব। কুল্লা সাইয়িন = সবকিছুকে। ইলমান = জ্ঞানে {= আমার রবের জ্ঞান সকল কিছুর উপর পরিব্যাপ্ত।}। আফালা তাতাযাক্কারূনা = তোমরা কি তাঁকে যিকর/ স্মরণ করবে না? 

আর তার সাথে বিতর্ক করেছে তার কাওম। সে বলেছে, ‘তোমরা কি আমার সাথে বিতর্ক করছো আল্লাহর ব্যাপারে? অথচ নিশ্চয় তিনি আমাকে হিদায়াত করেছেন। আর আমি তাদেরকে ভয় করি না যাদেরকে তোমরা শরিক করো তাঁর সাথে (= আল্লাহর সাথে)। এছাড়া যে, ইচ্ছা করেন আমার রব কোন বিষয়{= আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই ঘটতে পারে না, তাই আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি ভয় করি না।}। পরিব্যাপ্ত করেছেন আমার রব সবকিছুকে, জ্ঞানে {= আমার রবের জ্ঞান সকল কিছুর উপর পরিব্যাপ্ত।}। তোমরা কি তাঁকে যিকর/ স্মরণ করবে না? 

৬:৮১

ওয়া = আর। কাইফা = কিরূপে। আখাফু মা = আমি তাদেরকে ভয় করবো যাদেরকে। আশরাকতুম = তোমরা (আল্লাহর সাথে) শরিক করেছো। ওয়া = অথচ। লা তাখাফূনা = তোমরা ভয় করছো না। আন্নাকুম = যে তোমরা। আশরাকতুম = শরিক করছো। বিল্লাহি = আল্লাহর সাথে। মা = এমন কিছুকে। লাম ইউনাযযিলু = তিনি নাযিল করেননি। বিহী = যা সম্বন্ধে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। সুলতানান = কোন সুলতান/ প্রমাণ। ফাআইয়্যুল ফারীক্বাইনি = সুতরাং (আমার ও তোমাদের) দুই পক্ষের মধ্যে কোন পক্ষ। আহাক্বক্বু = অধিক হকদার। বিলআমনি = নিরাপত্তা লাভ করার ব্যাপারে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। তা’লামূনা = জানতে! 

আর কিরূপে আমি তাদেরকে ভয় করবো যাদেরকে তোমরা (আল্লাহর সাথে) শরিক করেছো অথচ তোমরা ভয় করছো না যে, তোমরা শরিক করছো আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে তিনি নাযিল করেননি যা সম্বন্ধে তোমাদের উপর কোন সুলতান/ প্রমাণ? সুতরাং (আমার ও তোমাদের) দুই পক্ষের মধ্যে কোন পক্ষ অধিক হকদার নিরাপত্তা লাভ করার ব্যাপারে? যদি তোমরা জানতে! 

৬:৮২

আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। লাম ইয়ালবিছূ = মিশায়নি। ঈমানাহুম = তাদের ঈমানকে। বিযুলমিন = যুলুমের সাথে (= ঈমানের পরিপন্থী বিভিন্ন চিন্তাচেতনা ও মতবাদ যেমন কুফর, শিরক, নিফাক ও ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির সাথে)। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। লাহুমুল আমনু = যাদের জন্য আছে নিরাপত্তা। ওয়া = আর। হুম = তারাই। মুহতাদূনা = হিদায়াতপ্রাপ্ত। 

যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর মিশায়নি তাদের ঈমানকে যুলুমের সাথে (=ঈমানের পরিপন্থী বিভিন্ন চিন্তাচেতনা ও মতবাদ যেমন কুফর, শিরক, নিফাক ও ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির সাথে)। তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে নিরাপত্তা আর তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। 

৬:৮৩

ওয়া = আর। তিলকা = ইহা। হুজ্জাতুনা = আমাদের হুজ্জাত/ যুক্তিপ্রমাণ। আতাইনাহা = আমরা উহা দিয়েছি। ইবরাহীমা = ইবরাহীমকে। আলা ক্বাওমিহী = তার কাওমের বিপক্ষে। নারফাআ = আমরা সমুন্নত করি। দারাজাতিন = মর্যাদার মাত্রাসমূহে। মান = যাকে। নাশাউ = আমরা (মর্যাদায় সমুন্নত করার) ইচ্ছা করি। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। হাকীমুন = হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। আলীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী। 

আর ইহা আমাদের হুজ্জাত/ যুক্তিপ্রমাণ। আমরা উহা দিয়েছি ইবরাহীমকে তার কাওমের বিপক্ষে। আমরা সমুন্নত করি মর্যাদার মাত্রাসমূহে, যাকে আমরা (মর্যাদায় সমুন্নত করার) ইচ্ছা করি। নিশ্চয় তোমার রব হাকীম/ মহাবিজ্ঞ, আলীম/ মহাজ্ঞানী। 

৬:৮৪  

ওয়া = আর। হাবনা লাহু = আমরা তাকে দিয়েছি। ইসহাক্বা ওয়া ইয়াক্বুবা = ইসহাককে ও ইয়াক্বুবকে। কুল্লান = তাদের সকলকে। হাদায়না = আমরা হিদায়াত দিয়েছি। ওয়া = আর। নূহান = নূহকেও। হাদায়না = আমরা হিদায়াত দিয়েছি। মিন ক্বাবলু = তার আগে (= ইবরাহীমের আগে)। ওয়া = আর। মিন যুররিয়াতিহী = তার যুররিয়াত/ বংশধরদের (= ইবরাহীমের বংশধরদের) মধ্য থেকে। দাউদা = দাউদকে। ওয়া সুলাইমানা = সুলাইমানকে। ওয়া আইয়ুবা = আইয়ুবকে। ওয়া ইউসুফা = ইউসুফকে। ওয়া মূসা = মূসাকে। ওয়া হারূনা = হারূনকে। ওয়া কাযালিকা = আর এভাবে। নাজজিল মুহসিনীনা = আমরা পুরস্কার দিই মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে। 

আর আমরা তাকে দিয়েছি ইসহাককে ও ইয়াকুবকে (পুত্র ও পৌত্র রূপে)। তাদের সকলকে আমরা হিদায়াত দিয়েছি। আর নূহকেও আমরা হিদায়াত দিয়েছি তার আগে (= ইবরাহীমের আগে)। আর তার যুররিয়াত/ বংশধরদের (= ইবরাহীমের বংশধরদের) মধ্য থেকে দাউদকে, সুলাইমানকে, আইয়ুবকে, ইউসুফকে, মূসাকে, হারূনকে। আর এভাবে আমরা পুরস্কার দিই মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে। 

৬:৮৫

ওয়া যাকারিয়্যা = যাকারিয়্যাকে। ওয়া ইয়াহইয়া = ইয়াহইয়াকে। ওয়া ঈসা = ঈসাকে। ওয়া ইলইয়াসা = ইলিয়াসকে। কুল্লুম মিনাছ ছলেহীনা = তারা সকলে সালেহীনদের/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। 

যাকারিয়্যাকে, ইয়াহইয়াকে, ঈসাকে, ইলিয়াসকে। তারা সকলে সালেহীনদের/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:৮৬

ওয়া ইসমাইলা = ইসমাইলকে। ওয়াল ইয়াসায়া = আল ইয়াসায়াকে। ওয়া ইউনূছা = ইউনুসকে। ওয়া লূতান = লূতকে। ওয়া কুল্লান = আর তাদের সকলকে। ফাদ্দালনা = আমরা ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি। আলাল আলামীনা = সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর। 

ইসমাইলকে, আল ইয়াসায়াকে, ইউনুসকে, লূতকে। আর তাদের সকলকে আমরা ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর। 

৬:৮৭

ওয়া = আর। মিন আবায়িহিম = তাদের (= ইবরাহীমের বংশধরদের) পিতাদের মধ্য থেকে। ওয়া যুররিয়াতিহিম = যুররিয়াত/ বংশধরদের মধ্য থেকে। ওয়া ইখওয়ানিহিম = আর ভাইদের মধ্য থেকে। ওয়াজতাবাইনাহুম = আর আমরা তাদেরকে বাছাই করেছি। ওয়া হাদাইনাহুম = আর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করেছি। ইলা সিরাতিম মুছতাক্বীমিন = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথে। 

আর তাদের (= ইবরাহীমের বংশধরদের) পিতাদের মধ্য থেকে, যুররিয়াত/ বংশধরদের মধ্য থেকে আর ভাইদের মধ্য থেকে। আর আমরা তাদেরকে বাছাই করেছি আর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করেছি সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথে। 

৬:৮৮ 

যালিকা = উহা। হুদাল্লাহি = হুদাল্লাহ/ আল্লাহর হিদায়াত। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত করেন। বিহী = উহা দ্বারা। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাগণের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। লাও = যদি। আশরাকূ = তারা (আল্লাহর সাথে কাউকে) শরিক করতো। লাহাবিতা = তাহলে বিলীন হয়ে যেতো। আনহুম = তাদের থেকে। মা কানূ ইয়া’মালূনা = সেসব আমল যা তারা করতো। 

উহা হুদাল্লাহ/ আল্লাহর হিদায়াত, তিনি হিদায়াত করেন উহা দ্বারা, যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন, তাঁর বান্দাগণের মধ্য থেকে। আর যদি তারা (আল্লাহর সাথে কাউকে) শরিক করতো তাহলে বিলীন হয়ে যেতো তাদের থেকে সেসব আমল যা তারা করতো। 

৬:৮৯  

উলায়িকাল্লাযীনা = তারাই এমন লোক। আতাইনাহুমুল কিতাবা = যাদেরকে আমরা দিয়েছি কিতাব। ওয়াল হুকমা = আর হুকুম/ আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা। ওয়ান্নবুয়্যাতা = আর নবুয়্যাত। ফাইইঁ ইয়াকফুর = সুতরাং যদি কুফর করে। বিহা = উহার প্রতি। হাউলায়ি = এ লোকেরা। ফাক্বাদ = তাহলে নিশ্চয়। ওয়াক্কালনা বিহা = আমরা উহার ভার অর্পণ করেছি। ক্বাওমান = এমন এক কাওমকে। লাইছূ বিহা বিকাফিরীন = যারা উহার প্রতি কাফির/ অবিশ্বাসকারী নয়।  

তারাই এমন লোক যাদেরকে আমরা দিয়েছি কিতাব আর হুকুম/ আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা আর নবুয়্যাত। সুতরাং যদি কুফর করে উহার প্রতি এ লোকেরা, তাহলে নিশ্চয় আমরা উহার ভার অর্পণ করেছি এমন এক কাওমকে যারা উহার প্রতি কাফির/ অবিশ্বাসকারী নয়।

৬:৯০ 

উলায়িকাল্লাযীনা = তারাই এমন লোক যাদেরকে। হাদাল্লাহু = আল্লাহ হিদায়াত করেছেন। ফাবিহুদাহুমুক্বতাদিহ = সুতরাং তুমি তাদের (অনুসৃত) হিদায়াতের এক্বতেদা/ অনুসরণ করো। ক্বুল = বলো। লা আছআলুকুম = আমি তোমাদের কাছে চাই না। আলাইহি = উহার জন্য (= কুরআন প্রচারের জন্য)। আজরান = কোন পারিশ্রমিক। ইন হুয়া = উহা (= কুরআন) নয়। ইল্লা যিকরা লিল আলামীনা = যিকরুল্লিল আলামীন/ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য যিকির বা স্মরণিকা বা সংবিধান ছাড়া (ঐচ্ছিক) কিছু। 

তারাই এমন লোক যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন, সুতরাং তুমি তাদের (অনুসৃত) হিদায়াতের এক্বতেদা/ অনুসরণ করো। বলো, ‘আমি তোমাদের কাছে চাই না উহার জন্য (= কুরআন প্রচারের জন্য) কোন পারিশ্রমিক। উহা (= কুরআন) নয় যিকরুল্লিল আলামীন/ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য যিকির বা স্মরণিকা বা সংবিধান ছাড়া (ঐচ্ছিক) কিছু {অর্থাৎ জীবনের সর্বক্ষেত্রেই কুরআনের অনুসরণ বাধ্যতামূলক}। 

৬:৯১  ওয়া = আর। মা ক্বাদারুল্লাহা = তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয়নি। হাক্বক্বা ক্বাদরিহী = যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত। ইয = যখন। ক্বলূ = তারা বলেছে। মা আনযালাল্লাহু = আল্লাহ নাযিল করেননি। আলা বাশারিন = কোন মানুষের উপর। মিন শাইয়িন = কোন কিছু। ক্বুল = বলো। মান = কে। আনযালাল কিতাবাল্লাযী জাআ বিহী = নাযিল করেছেন কিতাব যা নিয়ে এসেছিলো। মূসা = মূসা। নূরান ওয়া হুদাল্লিন্নাছি = নূর/ আলোস্বরূপ ও হুদাল্লিন্নাছ/ মানবজাতির জন্য হিদায়াতস্বরূপ। তাজআলূহু = তোমরা উহা রেখে থাকো। ক্বারিতীছা = তোমাদের কাগজসমূহে। তুবদূনাহা = তোমরা উহার কিছু প্রকাশ করে থাকো। ওয়া = আর। তুখফূনা কাছীরান = অনেক কিছু গোপন করে রাখো। ওয়া = আর। উল্লিমতুম = তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো। মা = যা। লাম তা’লামূ = না জানতে। আনতুম = তোমরা। ওয়া = আর। লা আবাউকুম = না জানতো তোমাদের বাপদাদা। ক্বুলিল্লাহু = বলো, আল্লাহই (নাযিল করেছেন)। ছুম্মা = তারপর। যারহুম = তাদেরকে ছেড়ে দাও। ফী খাওদিহিম = তাদের অর্থহীন আলোচনার মধ্যে। ইয়ালআবূনা = তারা খেলতে থাকুক। 

আর তারা আল্লাহকে মর্যাদা দেয়নি যেমনভাবে তাঁকে মর্যাদা দেয়া উচিত (বা তিনি যেরূপ মর্যাদার হক্বদার বা তাঁকে মর্যাদা দেয়ার হক্ব আদায় করে যথাযথভাবে)। যখন তারা বলেছে, ‘আল্লাহ নাযিল করেননি কোন মানুষের উপর কোন কিছু’। বলো, ‘কে নাযিল করেছেন কিতাব যা নিয়ে এসেছিলো মূসা নূর/ আলোস্বরূপ ও হুদাল্লিন্নাছ/ মানবজাতির জন্য হিদায়াতস্বরূপ? তোমরা উহা রেখে থাকো তোমাদের কাগজসমূহে, তোমরা উহার কিছু প্রকাশ করে থাকো আর অনেক কিছু গোপন করে রাখো। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়েছিলো যা না জানতে তোমরা আর না জানতো তোমাদের বাপদাদা। বলো, ‘আল্লাহই (নাযিল করেছেন)’। তারপর তাদেরকে ছেড়ে দাও তাদের অর্থহীন আলোচনার মধ্যে তারা খেলতে থাকুক। 

৬:৯২

ওয়া = আর। হাযা = এই। কিতাবুন = কিতাব। আনযালনাহু = আমরা উহা নাযিল করেছি। মুবারাকুন = মুবারাক/ বরকতময়রূপে। মুসাদ্দিক্বুল্লাযী বায়না ইয়াদায়হি = উহার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের মুসাদ্দিক্ব/ সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে। ওয়া = আর। লিতুনযিরা = এজন্য যে, যেন তুমি সতর্ক করে দাও। উম্মাল ক্বুরা ওয়া মান হাওলাহা = উম্মুল কুরা/ জনপদ জননী ও উহার চারপাশের সকলকে (= সমগ্র বিশ্ববাসীকে)। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। ইউ’মিনূনা বিহী = তারাই ঈমান/ বিশ্বাস করে উহার প্রতি (= কুরআনের প্রতি)। ওয়া = আর। হুম = তারা। আলা সলাতিহিম ইউহাফিযূনা = তাদের সালাতের উপর হিফাযাতকারী হয়। 

আর এই কিতাব, আমরা উহা নাযিল করেছি মুবারাক/ বরকতময়রূপে, উহার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের মুসাদ্দিক্ব/ সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে আর এজন্য যে, যেন তুমি সতর্ক করে দাও উম্মুল কুরা/ জনপদ জননী ও উহার চারপাশের সকলকে (= সমগ্র বিশ্ববাসীকে)। আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আখিরাতের প্রতি তারাই ঈমান/ বিশ্বাস করে উহার প্রতি (= কুরআনের প্রতি)। আর তারা তাদের সালাতের উপর হিফাযাতকারী হয়। 

৬:৯৩ 

ওয়া = আর। মান আযলামু মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবান = তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে। আও = অথবা। ক্বলা = বলে। ঊহিয়া = ওহী করা হয়েছে। ইলাইয়্যা = আমার প্রতি। ওয়া = এ সত্ত্বেও যে। লাম ইঊহা ইলাইহি সাইউন = ওহী করা হয়নি তার প্রতি কিছুই। ওয়া = আর। মান = যে। ক্বলা = বলে। ছাউনযিলু = শীঘ্রই আমিও নাযিল/ রচনা করবো। মিছলা মা আনযালাল্লাহু = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার অনুরূপ। ওয়া = আর। লাও = যদি। তারা = তুমি দেখতে। ইযিয যালিমূনা = যখন যালিমগণ থাকে। ফী গামারাতিল মাওতি = মৃত্যু যন্ত্রণায়। ওয়াল মালায়িকাতু = আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। বাছিতূ = প্রসারিত করে। আইদীহিম = তাদের হাতসমূহ। আখরিজূ = তোমরা বের করো। আনফুছাকুম = তোমাদের প্রাণসমূহ। আল ইয়াওমা = আজ। তুযযাওনা = তোমাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। আযাবুল হূনি = (মৃত্যুকালীন) অপমানকর আযাব। বিমা কুনতুম তাক্বুলূনা = এ কারণে যে, তোমরা বলতে। আলাল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে। গাইরাল হাক্বক্বি = অসত্য কথা। ওয়া = আর। কুনতুম = তোমরা। আন আয়াতিহী = তাঁর আয়াতের ব্যাপারে। তাছতাকবিরূনা = অহংকার করতে। 

আর তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, অথবা বলে, ‘ওহী করা হয়েছে আমার প্রতি’ এ সত্ত্বেও যে, ওহী করা হয়নি তার প্রতি কিছুই; আর যে বলে, ‘শীঘ্রই আমিও নাযিল/ রচনা করবো যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার অনুরূপ’। আর যদি তুমি দেখতে যখন যালিমগণ থাকে মৃত্যু যন্ত্রণায় আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণ প্রসারিত করে/ বাড়িয়ে দেয় তাদের হাতসমূহ; (এবং বলে,) ‘তোমরা বের করো তোমাদের প্রাণসমূহ। আজ তোমাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে (মৃত্যুকালীন) অপমানকর আযাব এ কারণে যে, তোমরা বলতে আল্লাহর ব্যাপারে অসত্য কথা, আর তোমরা তাঁর আয়াতের ব্যাপারে অহংকার করতে’। 

৬:৯৪

ওয়া = আর। লাক্বাদ = (আল্লাহ বলবেন,) ‘নিশ্চয়। জি’তুমূনা = তোমরা আমাদের কাছে এসেছো। ফুরাদা = একাকী। কামা = যেমন। খালাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি। আওয়ালা মাররাতিন = প্রথমবার (সে নিয়মে)। ওয়া = আর। তারাকতুম = তোমরা ছেড়ে এসেছো। মা = যা। খাওয়ালনাকুম = আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি। ওয়ারাআ যুহুরিকুম = তোমাদের পিছনে। ওয়া = আর। মা নারা = আমরা দেখছি না। মাআকুম = তোমাদের সাথে। শুফাআআকুমুল্লাযীনা = তোমাদের সেই শাফায়াতকারীদেরকে যাদেরকে। যআমতুম = তোমরা ধারণা করতে। আন্নাহুম = যে, তারা। ফীকুম = তোমাদের ব্যাপারে। শুরাকাউ = (ফায়সালা করার ক্ষেত্রে আল্লাহর) শরিক হবে। লাক্বাত্তাক্বাত্তয়া = নিশ্চয়ই সম্পর্ক কেটে গেছে। বায়নাকুম = তোমাদের মধ্যে। ওয়া = আর। দল্লা = উধাও হয়ে গেছে। আনকুম = তোমাদের থেকে। মা = যা। কুনতুম = তোমরা। তাযউমূনা = ধারণা করতে। 

 আর (আল্লাহ বলবেন,) ‘নিশ্চয় তোমরা আমাদের কাছে এসেছো একাকী যেমন আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি প্রথমবার (সে নিয়মে)। আর তোমরা ছেড়ে এসেছো যা আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি তা তোমাদের পিছনে। আর আমরা দেখছি না তোমাদের সাথে তোমাদের সেই (কল্পিত) শাফায়াতকারীদেরকে যাদেরকে তোমরা ধারণা করতে যে, তারা তোমাদের ব্যাপারে (ফায়সালা করার ক্ষেত্রে আল্লাহর) শরিক হবে। নিশ্চয়ই সম্পর্ক কেটে গেছে তোমাদের মধ্যে। আর উধাও হয়ে গেছে তোমাদের থেকে যা তোমরা ধারণা করতে। 

৬:৯৫ 

ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ফালিক্বুল হাজ্জি ওয়ান্নাওয়া = শস্যদানা ও আঁটি বিদীর্ণকারী। ইউখরিজুল হাইয়া মিনাল মাইয়িতি = তিনি মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন। ওয়া = আর। মুখরিজুল মাইয়িতা মিনাল হাইয়ি = তিনি জীবন্ত থেকে মৃতকে নির্গতকারী। যালিকুমুল্লাহু = এই হচ্ছেন আল্লাহ। ফাআন্না = সুতরাং কোন উল্টোদিকে। তু’ফাকূনা = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? 

নিশ্চয় আল্লাহ শস্যদানা ও আঁটি বিদীর্ণকারী, তিনি মৃত থেকে জীবন্তকে বের করেন আর তিনি জীবন্ত থেকে মৃতকে নির্গতকারী। এই হচ্ছেন আল্লাহ। সুতরাং কোন উল্টোদিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে? 

৬:৯৬

ফালিক্বুল ইসবাহি = তিনিই প্রভাতের উদ্ভাবক/ উন্মেষক। ওয়া = আর। জাআলাল্লাইলি = তিনি রাতকে বানিয়েছেন। ছাকানান = বিশ্রামের সময়। ওয়াশ শামছা ওয়াল ক্বামারা হুছবানান = আর সূর্য ও চাঁদকে করেছেন হিসাবের উপায়। যালিকা = উহা। তাক্বদীরুল আযীযুল আলীমি = আযীযুল আলীম/ মহাশক্তিমান মহাজ্ঞানীর (= আল্লাহর) নির্ধারিত তাকদীর/ প্রাকৃতিক আইন (natural law)। 

তিনিই প্রভাতের উদ্ভাবক/ উন্মেষক/ বাহির করনেওয়ালা। আর তিনি রাতকে বানিয়েছেন বিশ্রামের সময় আর সূর্য ও চাঁদকে করেছেন হিসাবের উপায়। উহা আযীযুল আলীম/ মহাশক্তিমান মহাজ্ঞানীর (= আল্লাহর) নির্ধারিত তাকদীর/ প্রাকৃতিক আইন (natural law)। 

৬:৯৭  ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। জাআলা = স্থাপন করেছেন। লাকুমুন্নুজুমা = তোমাদের জন্য নক্ষত্রকে। লিতাহতাদূ = যেন তোমরা পথের দিশা পাও। বিহা = উহার দ্বারা। ফী যুলুমাতিল বাররি ওয়াল বাহরি = স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকারসমূহের মধ্যে। ক্বাদ = নিশ্চয়। ফাসসালনার আয়াতি = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আমাদের আয়াতসমূহকে। লিক্বাওমি ইয়া’লামূনা = সেই কওমের জন্য যারা জ্ঞান অর্জন করে। 

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য নক্ষত্রকে, যেন তোমরা পথের দিশা পাও উহার দ্বারা, স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকারসমূহের মধ্যে। নিশ্চয় আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আমাদের আয়াতসমূহকে সেই কওমের জন্য যারা জ্ঞান অর্জন করে। 

৬:৯৮

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আনশাআকুম = তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। মিন নাফসিন ওয়াহিদাতিন = একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা (life-cell) থেকে। ফামুছতাক্বাররুন = তারপর রয়েছে চূড়ান্ত অবস্থান। ওয়া = আর। মুছতাওদাউন = অচূড়ান্ত অবস্থান। ক্বাদ = নিশ্চয়। ফাসসালনাল আয়াতি = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আয়াতসমূহকে। লিক্বাওমি ইয়াফক্বাহূনা = সেই কওমের জন্য যারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে। 

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন নাফসিন ওয়াহিদাতিন/ একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা (life-cell) থেকে। তারপর রয়েছে চূড়ান্ত অবস্থান আর অচূড়ান্ত অবস্থান। নিশ্চয় আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আয়াতসমূহকে সেই কওমের জন্য যারা ফিকহ/ উপলব্ধি করে। 

৬:৯৯

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আনযালা = নাযিল/ বর্ষণ করেন। মিনাছ ছামায়ী = আসমান থেকে। মাআন = পানি। ফাআখরাজনা = তারপর আমরা বের করেছি। বিহী = উহার দ্বারা। নাবাতা কুল্লি সাইয়িন = সব ধরনের উদ্ভিদ। ফাআখরাজনা = তারপর আমরা বের করেছি। মিনহু = উহা থেকে। খাদিরান = সবুজ ক্ষেত ও বৃক্ষ। নুখরিজু = আমরা বের করি। মিনহু = উহা থেকে। হাব্বাম মুতারাকিবান = বিভিন্ন কোষসম্পন্ন শস্যদানা। ওয়া মিনান্নাখলি মিন তলয়িহা = আর খেজুর গাছের মাথি থেকে (বের করি)। ক্বিনওয়ানুন = খেজুর থোকা। দানিয়াতুন = যা নুয়ে থাকে। ওয়া জান্নাতিম = আর (বের করি) জান্নাতসমূহ/ বাগানসমূহ। মিন আ’নাবিন = আংগুরের। ওয়ায যায়তূনা = যায়তূনের/ জলপাইয়ের। ওয়ার রুম্মানা = ও আনারের/ ডালিমের। মুতাশাবিহান = যা একে অন্যের সদৃশও হয়। ওয়া গায়রা মুতাশাবিহিন = আবার একে অন্যের বিসদৃশও হয়। উনযুরূ = নজর/ লক্ষ্য করো। ইলা ছামারিহী = উহার ফলের প্রতি। ইযা = যখন। আছমারা = ফলবান হয়। ওয়া = আর। ইয়ানইহী = উহা পরিপক্ক হয়। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকুম = এসবের মধ্যে। লাআয়াতিল্লিক্বাওমিইঁ ইউ’মিনূনা = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ আছে সেই কাওমের জন্য (নিদর্শন দেখলে) যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি নাযিল/ বর্ষণ করেন আসমান থেকে পানি, তারপর আমরা বের করেছি উহার দ্বারা সব ধরনের উদ্ভিদ, তারপর আমরা বের করেছি উহা থেকে সবুজ ক্ষেত ও বৃক্ষ, আমরা বের করি উহা থেকে বিভিন্ন কোষসম্পন্ন শস্যদানা, আর খেজুর গাছের মাথি থেকে (বের করি) খেজুর থোকা যা নুয়ে থাকে, আর (বের করি) জান্নাতসমূহ/ বাগানসমূহ আংগুরের, যায়তূনের/ জলপাইয়ের ও আনারের/ ডালিমের; যা একে অন্যের সদৃশও হয়, আবার একে অন্যের বিসদৃশও হয়। নজর/ লক্ষ্য করো উহার ফলের প্রতি যখন ফলবান হয় আর উহা পরিপক্ক হয়, নিশ্চয় এসবের মধ্যে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ আছে সেই কাওমের জন্য (নিদর্শন দেখলে) যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। 

৬:১০০

ওয়া = আর। জাআলু = তারা বানিয়ে নিয়েছে। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। শুরাকাআল জিন্না = অনেক শরিক, জ্বিনদেরকে। ওয়া = অথচ। খালাক্বাহুম = তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। ওয়া = আর। খারাক্বূ = তারা আরোপ করেছে। লাহু = তাঁর জন্য। বানীনা ওয়া বানাতিন = পুত্রকন্যা। বিগাইরি ইলম = জ্ঞান না থাকার দরুন। সুবহানাহু = সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র। ওয়া = ও। তায়ালা = উহার ঊর্ধ্বে। আম্মা ইয়াসিফূনা = যা তারা রচনা করে। 

আর তারা বানিয়ে নিয়েছে আল্লাহর জন্য অনেক শরিক, জ্বিনদেরকে। অথচ তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। আর তারা আরোপ করেছে তাঁর জন্য পুত্রকন্যা, জ্ঞান না থাকার দরুন। সুবহানাহু/ তিনি পবিত্র ও উহার ঊর্ধ্বে যা তারা রচনা করে। 

৬:১০১  বাদীউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি = তিনিই আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। আন্না = কিরূপে। ইয়াকূনা = হবে। লাহু ওয়ালাদুন = তাঁর কোন সন্তান। ওয়া = আর। লাম তাকুল্লাহু সাহিবাতুন = তাঁর তো সঙ্গিনীও নেই। ওয়া = আর। খালাক্বা = তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কুল্লা = সকল। সাইয়িন = কিছু। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। বিকুল্লি সাইয়িন আলীমুন = সকল বিষয়ে জ্ঞানী। 

তিনিই আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা। কিরূপে হবে তাঁর কোন সন্তান? আর তাঁর তো সঙ্গিনীও নেই! আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন সকল কিছু। আর তিনি সকল বিষয়ে জ্ঞানী। 

৬:১০২  যালিকুমুল্লাহু = এই হচ্ছেন আল্লাহ। রব্বুকুম = তোমাদের রব। লা ইলাহা = কোন ইলাহ নেই। ইল্লা হুয়া = তিনি ছাড়া। খালিক্বু কুল্লি সাইয়িন = তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা। ফা’বুদূহু = সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। আলা কুল্লি সাইয়িন = সকল কিছুর উপর। ওয়াকীলুন = উকিল/ কর্মবিধায়ক। 

এই হচ্ছেন আল্লাহ, তোমাদের রব/ সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযিকদাতা, বিধদানদাতা ইত্যাদি। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। আর তিনিই সকল কিছুর উপর উকিল/ কর্মবিধায়ক। 

৬:১০৩

লা তুদরিকুহুল আবসারু = তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না দৃষ্টিসমূহ। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। ইউদরিকুল আবসারা = আয়ত্ত করে আছেন দৃষ্টিসমূহকে। ওয়া = আর। হুয়াল্লাতীফুল খাবীরু = তিনি লতীফ (= যিনি সূক্ষ্ম জিনিসও দেখেন) ও খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)। 

তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না দৃষ্টিসমূহ আর তিনি আয়ত্ত করে আছেন দৃষ্টিসমূহকে। আর তিনি লতীফ (= যিনি সূক্ষ্ম জিনিসও দেখেন) ও খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)। 

৬:১০৪

ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বাসায়িরু = বাসায়ির/ চাক্ষুস প্রমাণ (= কুরআন)। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ফামান = সুতরাং যে। আবসারা = দেখবে। ফালিনাফসিহী = তাহলে তা তার নিজের জন্যই (উপকারী) হবে। ওয়া = আর। মান = যে। আমিআ = নিজেকে অন্ধ করে রাখবে। ফাআলাইহা = উহা তার নিজেরই বিপক্ষে যাবে। ওয়া = আর। মা আনা = আমি নই। আলাইকুম = তোমাদের উপর। বিহাফীযিন = হাফীয/ হেফাযতকারী। 

নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে বাসায়ির/ চাক্ষুস প্রমাণ (= কুরআন), তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে দেখবে, তাহলে তা তার নিজের জন্যই (উপকারী) হবে আর যে নিজেকে অন্ধ করে রাখবে, উহা তার নিজেরই বিপক্ষে যাবে। আর আমি নই তোমাদের উপর হাফীয/ হেফাযতকারী। 

৬:১০৫  ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। নুসাররিফুল আয়াতি = আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি। ওয়া = আর। লিইয়াক্বূলু দারাছতা = তা এজন্য যে, তারা বলবে, ‘তুমি (কারো থেকে) দারস নিয়ে/ শিখে এসেছো। ওয়া = আর। লিনুবায়্যিনাহু = যেন আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি। লিক্বাওমি ইয়া’লামূনা = সেই কাওমের জন্য যারা জ্ঞান অর্জন করে। 

আর এভাবেই আমরা আয়াতসমূহকে তাসরীফ আকারে বিভিন্ন স্থানে ব্যাখ্যা করি। আর তা এজন্য যে, তারা বলবে, ‘তুমি (কারো থেকে) দারস নিয়ে/ শিখে এসেছো, আর যেন আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি সেই কাওমের জন্য যারা জ্ঞান অর্জন করে। 

৬:১০৬  ইত্তাবি’ = ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। মা = যা। উহিয়া = ওহী করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। লা ইলাহা = কোন ইলাই নেই। ইল্লা হুয়া = তিনি ছাড়া। ওয়া = আর। আ’রিদ = তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও। আনিল মুশরিকীনা = মুশরিকদের থেকে। 

ইত্তেবা/ অনুসরণ করো যা ওহী করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে। কোন ইলাই নেই তিনি ছাড়া। আর তুমি মুখ ফিরিয়ে নাও মুশরিকদের থেকে। 

৬:১০৭  ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। মা আশরাকূ = তাহলে তারা শিরক করতো না। ওয়া = আর। মা জাআলনাকা = আমরা তোমাকে বানাইনি। আলাইহিম = তাদের উপর। হাফীযান = হাফিয/ হেফাযতকারী। ওয়া = আর। মা আনতা = তুমি নও। আলাইহিম = তাদের উপর। বিওয়াকীলিন = উকিল/ কর্মবিধায়ক। 

আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তারা শিরক করতো না। আর আমরা তোমাকে বানাইনি তাদের উপর হাফিয/ হেফাযতকারী। আর তুমি নও তাদের উপর উকিল/ কর্মবিধায়ক। 

৬:১০৮

ওয়া = আর। লা তাছুব্বুল্লাযীনা = তোমরা তাদেরকে গালি দিও না যাদেরকে। ইয়াদঊনা = তারা ডাকে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে ডাকা বাদ দিয়ে। ফাইয়াছুব্বুল্লাহা = তাহলে তারা আল্লাহকে গালি দিবে। আদওয়াম বিগাইরি ইলমিন = সীমালংঘন করে, জ্ঞান না থাকার দরুন। কাযালিকা = এভাবে। যাইয়্যান্না = আমরা সুশোভিত করেছি। লিকুল্লি উম্মাতিন = প্রত্যেক উম্মাতের জন্য। আমালাহুম = তাদের কাজকে। ছুম্মা = তারপর। ইলা রব্বিহিম = তাদের রবেরই কাছে হবে। মারজিউহুম = তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। ফাইউনাব্বিউহুম = তারপর তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। বিমা কানূ ইয়া’মালূনা = উহার সম্বন্ধে যা তারা করতো। 

আর তোমরা তাদেরকে গালি দিও না যাদেরকে তারা ডাকে আল্লাহকে ডাকা বাদ দিয়ে। তাহলে তারা আল্লাহকে গালি দিবে সীমালংঘন করে, জ্ঞান না থাকার দরুন। এভাবে আমরা সুশোভিত করেছি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য তাদের কাজকে। তারপর তাদের রবেরই কাছে হবে তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। তারপর তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন উহার সম্বন্ধে যা তারা করতো। 

৬:১০৯

ওয়া = আর। আক্বছামূ = তারা কসম করবে। বিল্লাহি = আল্লাহর নামে। জাহদা আইমানিহিম = (সঠিক বলে প্রমাণ করার) সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাপূর্ণ তাদের শপথসমূহ। লাইন = তারা বলবে যে যদি। জাআতহুম = তাদের কাছে আসে। আয়াতুন = কোন আয়াত/ নিদর্শন। লাইউ’মিনুন্না = তাহলে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে। বিহা = উহার প্রতি। ক্বুল = বলো। ইন্নামাল আয়াতু = নিশ্চয় আয়াত। ইনদাল্লাহি = আল্লাহরই কাছে আছে। ওয়া = আর। মা = কিসে। ইউশইরুকুম = তোমাদেরকে অনুভব করাবে। আন্নাহা = যে, উহা। ইযা = যখন। জাআত = আসবে। লা ইউ’মিনূনা = তখন তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে না। 

আর তারা কসম করবে আল্লাহর নামে, (সঠিক বলে প্রমাণ করার) সর্বোচ্চ প্রচেষ্টাপূর্ণ তাদের শপথসমূহ। তারা বলবে যে, ‘যদি তাদের কাছে আসে কোন আয়াত/ নিদর্শন, তাহলে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে উহার প্রতি। বলো, ‘নিশ্চয় আয়াত আল্লাহরই কাছে আছে’। আর কিসে তোমাদেরকে অনুভব করাবে যে, উহা যখন আসবে, তখন তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে না? 

৬:১১০

ওয়া = আর। নুক্বাল্লিবু = আমরা পাল্টে দেবো। আফয়িদাতাহুম = তাদের ফুয়াদসমূহকে/ অন্তরসমূহকে। ওয়া = আর। আবসারাহুম = তাদের দৃষ্টিসমূহকে। কামা = যেমন। লাম ইউমিনূ = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করেনি। বিহী = উহার প্রতি। আওয়ালা মাররাতিন = প্রথমবার। ওয়া = আর। নাযারুহুম = আমরা তাদেরকে ছেড়ে দেবো। ফী তুগইয়ানিহিম = তাদের তুগইয়ানে/ বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে। ইয়া’মাহূনা = তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরবে। 

আর আমরা পাল্টে দেবো তাদের ফুয়াদসমূহকে/ অন্তরসমূহকে আর তাদের দৃষ্টিসমূহকে যেমন তারা ঈমান/ বিশ্বাস করেনি উহার প্রতি প্রথমবার। আর আমরা তাদেরকে ছেড়ে দেবো তাদের তুগইয়ানে/ বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরবে। 

৬:১১১

ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্নানা = আমরা। নাযযালনা = নাযিল করতাম। ইলাইহিমুল মালাইকাতা = তাদের প্রতি মালাইকা/ ফেরেশতাদেরকেও। ওয়া = আর। কাল্লামাহুমুল মাওতা = তাদের সাথে কথা বলতো মৃতরাও। ওয়া = আর। হাশারনা = আমরা হাশর/ সমবেত করতাম। আলাইহিম = তাদের উপর। কুল্লা সাইয়িন = সবকিছু। ক্বুবুলান = সামনাসামনি। মা কানূ লিইউ’মিনূনা = তবুও তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো না। ইল্লা আইঁ ইয়াশাআল্লাহু = আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারাহুম = তাদের অধিকাংশই। ইয়াজহালূনা = জাহেলিয়াত অবলম্বন করে। 

আর যদি আমরা নাযিল করতাম তাদের প্রতি মালাইকা/ ফেরেশতাদেরকেও, আর তাদের সাথে কথা বলতো মৃতরাও, আর আমরা হাশর/ সমবেত করতাম তাদের উপর সবকিছু সামনাসামনি; তবুও তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো না, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জাহেলিয়াত অবলম্বন করে। 

৬:১১২

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবেই। জাআলনা = আমরা বানিয়ে দিয়েছি। লিকুল্লি নাবিয়্যিন = প্রত্যেক নবীর জন্য। আদুওয়্যান শায়াতীনাল ইনছু ওয়াল জিন্নি = শয়তানদেরকে শত্রু, ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে ও জ্বিনের মধ্য থেকে। ইউহী = ওহী করে/ অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে। বা’দুহুম = তাদের এক অংশ। ইলা বা’দুহুম = তাদের অপর অংশের প্রতি। যুখরুফাল ক্বাওলি = কথার চাকচিক্য দ্বারা। গুরুরান = গুরুর/ ধোঁকাবাজিতার উদ্দেশ্যে। ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআ রব্বুকা = তোমার রব ইচ্ছা করতেন। মা ফাআলূহু = তাহলে তারা এরূপ করতো না। ফাযারহুম = সুতরাং ছেড়ে দাও তাদেরকে। ওয়া = ও। মা ইয়াফতারূনা = উহাকে যা তারা রচনা করে। 

আর এভাবেই আমরা বানিয়ে দিয়েছি প্রত্যেক নবীর জন্য শয়তানদেরকে শত্রু, ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে ও জ্বিনের মধ্য থেকে। ওহী করে/ অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে তাদের এক অংশ তাদের অপর অংশের প্রতি কথার চাকচিক্য দ্বারা গুরুর/ ধোঁকাবাজিতার উদ্দেশ্যে। আর যদি তোমার রব ইচ্ছা করতেন তাহলে তারা এরূপ করতো না। সুতরাং ছেড়ে দাও তাদেরকে ও উহাকে যা তারা রচনা করে। 

৬:১১৩

ওয়া = আর। লিতাসগা = তা এজন্য যে, যেন আকৃষ্ট হয়। ইলাইহি = উহার প্রতি (= চাকচিক্যপূর্ণ কথার প্রতি)। আফইদাতুল্লাযীনা = তাদের ফুয়াদসমূহ/ অন্তরসমূহ যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। ওয়া = আর। লিইয়ারদাওহু = যেন তারা তাতে পরিতুষ্ট থাকে। ওয়া = আর। লিইয়াক্বতারিফূ মা হুম মুক্বতারিফূনা = যেন তারা ঐ অপকর্ম করতে থাকে যা তারা করছে। 

আর তা এজন্য যে, যেন আকৃষ্ট হয় উহার প্রতি (= চাকচিক্যপূর্ণ কথার প্রতি) তাদের ফুয়াদসমূহ/ অন্তরসমূহ যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি, আর যেন তারা তাতে পরিতুষ্ট থাকে আর যেন তারা ঐ অপকর্ম করতে থাকে যা তারা করছে। 

৬:১১৪

আফাগাইরাল্লাহি = তবে কি আল্লাহকে ছাড়া। আবতাগী = আমি তালাশ করবো। হাকামান = কোন হাকাম/ বিচারক। ওয়া = অথচ। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আনযালা = নাযিল করেছেন। ইলাইকুমুল কিতাবা মুফাসসালা = তোমাদের প্রতি ‘কিতাবে মুফাসসাল’/ ‘বিস্তারিত তফসীল বা ব্যাখ্যাপূর্ণ কিতাব’। ওয়াল্লাযীনা আতাইনাহুমুল কিতাবা = আর যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম। ইয়া’লামূনা = তারা জানে। আন্নাহু = যে, নিশ্চয় উহা (= কুরআন)। মুনাযযালুম মির রব্বিকা বিল হাক্বক্বি = তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য সহকারে নাযিলকৃত। ফালা তাকূনুন্না = সুতরাং তুমি হয়ো না। মিনাল মুমতারীনা = সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

তবে কি আল্লাহকে ছাড়া আমি তালাশ করবো কোন হাকাম/ বিচারক? অথচ তিনিই সেই সত্তা যিনি নাযিল করেছেন তোমাদের প্রতি ‘কিতাবে মুফাসসাল’/ ‘বিস্তারিত তফসীল বা ব্যাখ্যাপূর্ণ কিতাব’? আর যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছিলাম তারা জানে যে, নিশ্চয় উহা (= কুরআন) তোমার রবের পক্ষ থেকে সত্য সহকারে নাযিলকৃত। সুতরাং তুমি হয়ো না সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:১১৫

ওয়া = আর। তাম্মাত = (কুরআনে) সমাপ্ত হয়েছে। কালিমাতু রব্বিকা = তোমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ। সিদক্বাওঁ ওয়া আদলান = সত্য ও সুবিচারে/ সত্যবিধান বা সূত্রে ও ন্যায়বিচার বা ফলাফলে। লা মুবাদ্দিলা = কোন বদলকারী/ পরিবর্তনকারী নেই। লিকালিমাতিহী = তাঁর কালেমাতের/ বাণীসমূহের ব্যাপারে। ওয়া = আর। হুয়াছ ছামীউল আলীমু = তিনিই ছামী/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

আর (কুরআনে) সমাপ্ত হয়েছে তোমার রবের কালেমাত/ বাণীসমূহ সত্য ও সুবিচারে/ সত্যবিধান নামক সূত্র বা ফর্মুলায় ও ন্যায়বিচার নামক ফলাফল বা রেজাল্টে। কোন বদলকারী/ পরিবর্তনকারী নেই তাঁর কালেমাতের/ বাণীসমূহের ব্যাপারে। আর তিনিই ছামী/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা। 

৬:১১৬

ওয়া = আর। ইন = যদি। তুতি’ = তুমি ইতায়াত/ আনুগত্য করো। আকছারা মান ফিল আরদি = পৃথিবীবাসীদের অধিকাংশের। ইউদিল্লূকা = তারা তোমাকে বিভ্রান্ত করবে। আন ছাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ইইঁ ইয়াত্তাবিঊনা = তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে না। ইল্লায যন্না = অনুমান ছাড়া অন্য কিছু। ওয়া = আর। ইন হুম ইল্লা ইয়াখরুসূনা = তারা যৌক্তিক কিছু করে না । ইল্লা ইয়াখরুসূনা = জল্পনা কল্পনা করা ছাড়া। 

আর যদি তুমি ইতায়াত/ আনুগত্য করো পৃথিবীবাসীদের অধিকাংশের, তারা তোমাকে বিভ্রান্ত করবে সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে না অনুমান ছাড়া অন্য কিছু। আর তারা যৌক্তিক কিছু করে না জল্পনা কল্পনা করা ছাড়া। 

৬:১১৭

ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা হুয়া আ’লামু = তোমার রব পরিজ্ঞাত। মাইঁ ইউদিল্লু = কে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে। আন সাবীলিহী = তাঁর পথ থেকে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আ’লামু = পরিজ্ঞাত। বিলমুহতাদীনা = হিদায়াতপ্রাপ্তদের সম্বন্ধে। 

নিশ্চয় তোমার রব পরিজ্ঞাত কে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে তাঁর পথ থেকে? আর তিনি পরিজ্ঞাত হিদায়াতপ্রাপ্তদের সম্বন্ধে। 

৬:১১৮

ফাকুলূ = সুতরাং তোমরা খাও। মিম্মা = সেই খাদ্য থেকে। যুকিরাছমুল্লাহি = আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে। আলাইহি = যার উপর। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। বিআয়াতিহী = তাঁর আয়াতের প্রতি। মু’মিনীনা = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

সুতরাং তোমরা খাও সেই খাদ্য থেকে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে যার উপর, যদি তোমরা হও তাঁর আয়াতের প্রতি মু’মিনীন/ বিশ্বাসী। 

৬:১১৯

ওয়া = আর। মা লাকুম = তোমাদের কী হয়েছে। আল্লা তা’কুলূ = যে, তোমরা খাবে না। মিম্মা = সেই খাদ্য থেকে। যুকিরাছমুল্লাহি = আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে। আলাইহি = যার উপর। ওয়া = আর। ক্বাদ = নিশ্চয়। ফাসসালা = তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মা = যা। হাররামা = তিনি হারাম করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ইল্লা মাদতুরিরতুম ইলাইহি = তোমরা নিরুপায় হয়ে তা খেতে বাধ্য হওয়া ছাড়া। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। কাছীরান = অধিকাংশ লোক। লাইউদিল্লূনা = অন্যকে বিভ্রান্ত করে। বিআহওয়ায়িহিম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ ও সংবিধান দ্বারা। বিগাইরি ইলমি = (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান না থাকার কারণে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা হুয়া আ’লামু = তোমার রব পরিজ্ঞাত। বিল মু’তাদীনা = সীমালংঘনকারীদের সম্বন্ধে। 

আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা খাবে না সেই খাদ্য থেকে আল্লাহর নাম নেয়া হয়েছে যার উপর। আর নিশ্চয় তিনি তফসীল আকারে বিস্তারিত জানিয়ে দিয়েছেন তোমাদের জন্য, যা তিনি হারাম করেছেন তোমাদের উপর, তোমরা নিরুপায় হয়ে তা খেতে বাধ্য হওয়া ছাড়া। আর নিশ্চয় অধিকাংশ লোক অন্যকে বিভ্রান্ত করে তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ ও সংবিধান দ্বারা, (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান না থাকার কারণে। নিশ্চয় তোমার রব পরিজ্ঞাত সীমালংঘনকারীদের সম্বন্ধে। 

৬:১২০

ওয়া = আর। যারূ = তোমরা বর্জন করো। যহিরাল ইছমি = প্রকাশ্য পাপ। ওয়া = আর। বাতিনাহু = গোপন পাপও (বর্জন করো)। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইয়াকছিবূনাল ইছমা = পাপ উপার্জন করে। ছাইউযযাওনা = শীঘ্রই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে। বিমা কানূ ইয়াক্বতারিফূনা = তাদের অপকর্মের কারণে। 

আর তোমরা বর্জন করো প্রকাশ্য পাপ আর গোপন পাপও (বর্জন করো)। নিশ্চয় যারা পাপ উপার্জন করে শীঘ্রই তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে তাদের অপকর্মের কারণে। 

৬:১২১

ওয়া = আর। লা তা’কুলূ = তোমরা খেয়ো না। মিম্মা = সেই খাদ্য থেকে। লাম ইউযকারিছমুল্লাহি = আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি। আলাইহি = যার উপর। ওয়া = আর। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা। লাফিছক্বুন = ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য/ পাপ। ওয়া = আর। ইন্নাশ শায়াতীনা = নিশ্চয় শয়তানরা। লাইউহূনা = ওহী করে/ অনুপ্রেরণা দেয়। ইলা আওলিয়াহিম = তার আওলিয়ার/ বন্ধুদের প্রতি। লিইউজাদিলূকুম = তোমাদের সাথে বিতর্ক করার জন্য। ওয়া = আর। ইন = যদি। আতা’তুমূহুম = তোমরা তাদের ইতায়াত/ আনুগত্য করো। ইন্নাকুম = তাহলে নিশ্চয় তোমরা। লামুশরিকূনা = মুশরিক। 

আর তোমরা খেয়ো না সেই খাদ্য থেকে আল্লাহর নাম নেয়া হয়নি যার উপর। আর নিশ্চয় উহা ফিসক/ সত্যত্যাগ/ দুষ্কার্য/ পাপ। আর নিশ্চয় শয়তানরা ওহী করে/ অনুপ্রেরণা দেয় তার আওলিয়ার/ বন্ধুদের প্রতি তোমাদের সাথে বিতর্ক করার জন্য। আর যদি তোমরা তাদের ইতায়াত/ আনুগত্য করো, তাহলে নিশ্চয় তোমরা মুশরিক। 

৬:১২২

আওয়া মান = সে কি যে। কানা = ছিলো। মায়তান = মৃত। ফাআহইয়ায়নাহু = তারপর আমরা তাকে জীবিত করেছি। ওয়া = আর। জাআলা লাহু = তাকে দিয়েছি। নূরা = নূর/ আলো (= কুরআন)। ইয়ামশী = সে চলে। বিহী = উহার দ্বারা। ফিন্নাছি = মানবজাতির মধ্যে। কামান = সেই ব্যক্তির মতো হতে পারে। মাছালুহু = যার উদাহরণ এমন যে। ফিয যুলুমাতি = সে আছে যুলুমাতের/ অন্ধকারসমূহের মধ্যে। লাইছা বিখারিজিম মিনহা = কোন ক্রমেই বহির্গত হয় না উহা থেকে (অন্ধকার থেকে)। কাযালিকা = এভাবে। যুইয়িনা = সুশোভিত করা হয়েছে। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। মা কানূ ইয়া’মালূনা = যা তারা করে। 

সে কি - যে ছিলো মৃত তারপর আমরা তাকে জীবিত করেছি আর তাকে দিয়েছি নূর/ আলো (= কুরআন), সে চলে উহার দ্বারা মানবজাতির মধ্যে; সেই ব্যক্তির মতো হতে পারে যার উদাহরণ এমন যে, সে আছে যুলুমাতের/ অন্ধকারসমূহের মধ্যে, কোন ক্রমেই বহির্গত হয় না উহা থেকে (= অন্ধকার থেকে)? এভাবে সুশোভিত করা হয়েছে কাফিরদের জন্য যা তারা করে। 

৬:১২৩

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। জাআলনা = আমরা অবকাশ দিয়েছি। ফী কুল্লি ক্বারইয়াতিন = প্রত্যেক জনপদে। আকাবিরা মুজরিমীহা = উহার অপরাধীদের আকাবেরকে/ প্রধানদেরকে। লিইয়ামকুরু = যেন তারা কৌশল খাটায়। ফীহা = উহাতে। ওয়া = আর। মা ইয়ামকুরূনা = তারা কৌশল খাটায় না। ইল্লা বিআনফুসিহিম = তাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে ছাড়া। ওয়া = অথচ। মা ইয়াশউরূনা = তারা তা অনুভব করে না। 

আর এভাবে আমরা অবকাশ দিয়েছি প্রত্যেক জনপদে উহার অপরাধীদের আকাবেরকে/ প্রধানদেরকে, যেন তারা কৌশল খাটায় উহাতে। আর তারা কৌশল খাটায় না তাদের নিজেদেরই বিরুদ্ধে ছাড়া, অথচ তারা তা অনুভব করে না। 

৬:১২৪

ওয়া = আর। ইযা = যখন। জাআতহুম = তাদের কাছে আসে। আয়াতুন = কোন আয়াত/ নিদর্শন। ক্বলূ = তারা বলে। লান নু’মিনা = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না। হাত্তা = যতক্ষণ না। নু’তা = আমাদেরকে দেয়া হবে। মিছলা মা = উহার অনুরূপ যা। ঊতিয়া = দেয়া হয়েছে। রুসুলুল্লাহি = আল্লাহর রসূলদেরকে। আল্লাহু = আল্লাহ। আ’লামু = পরিজ্ঞাত। হাইছু = কোনখানে। ইয়াজআলু = তিনি রাখবেন। রিসালাতাহু = তাঁর রিসালাত। ছাইউসীবুল্লাযীনা = শীঘ্রই তাদের উপর পৌঁছবে যারা। আজরামূ = অপরাধ করেছে। সগারুন = লাঞ্চনা। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছ থেকে। ওয়া = আর। আযাবুন শাদীদুন = আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি। বিমা কানূ ইয়ামকুরূনা = তারা (সত্যের বিরুদ্ধে) যে কৌশল করতো তার কারণে। 

আর যখন তাদের কাছে আসে কোন আয়াত/ নিদর্শন, তখন তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না যতক্ষণ না আমাদেরকে দেয়া হবে উহার অনুরূপ যা দেয়া হয়েছে আল্লাহর রসূলদেরকে’। আল্লাহ পরিজ্ঞাত আছেন কোনখানে তিনি রাখবেন তাঁর রিসালাত। শীঘ্রই তাদের উপর পৌঁছবে যারা অপরাধ করেছে, লাঞ্চনা আল্লাহর কাছ থেকে আর আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি, তারা (সত্যের বিরুদ্ধে) যে কৌশল করতো তার কারণে। 

৬:১২৫

ফামাইঁ ইউরিদিল্লাহু = সুতরাং যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন। আইঁ ইয়াহদিয়াহু = যে, তাকে হিদায়াত করবেন। ইয়াশরাহু = প্রশস্ত করে দেন। সদরাহু = তার সদর/ মস্তিষ্ক। লিল ইসলামি = ইসলামের জন্য। ওয়া = আর। মাইঁ ইউরিদ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আইঁ ইউদিল্লাহু = যে, তাকে বিভ্রান্ত করবেন। ইয়াজআল = বানিয়ে দেন। সদরাহু = তার সদর/ মস্তিষ্ককে। দয়য়িক্বান হারাজান = অত্যন্ত সংকীর্ণ। কাআন্নামা = যেন (সে ইসলামের অনুসরণ করার অর্থ হলো)। ইয়াসস’আদা = সে অতি কষ্টে আরোহন করতে হচ্ছে। ফিস সামায়ি = আকাশের দিকে। কাযালিকা = এভাবে। ইয়াজআলুল্লাহুর রিজছা = আল্লাহ চাপিয়ে দেন অপবিত্রতা/ কলুষতা। আলাল্লাযীনা = তাদের উপর যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

সুতরাং যাকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন যে, তাকে হিদায়াত করবেন, প্রশস্ত করে দেন তার সদর/ মস্তিষ্ক ইসলামের জন্য। আর যাকে তিনি ইচ্ছা করেন যে, তাকে বিভ্রান্ত করবেন, বানিয়ে দেন তার সদর/ মস্তিষ্ককে অত্যন্ত সংকীর্ণ, যেন (সে ইসলামের অনুসরণ করার অর্থ হলো) সে অতি কষ্টে আরোহন করতে হচ্ছে আকাশের দিকে। এভাবে আল্লাহ চাপিয়ে দেন অপবিত্রতা/ কলুষতা তাদের উপর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না। 

৬:১২৬

ওয়া = আর। হাযা = ইহা (= কুরআন)। সিরাতু রব্বিকা মুসতাকীমান = তোমার রবের সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ। ক্বাদ = নিশ্চয়। ফাসসালনাল আয়াতি = আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আয়াতসমূহকে। লিক্বাওমি = সেই কাওমের জন্য যারা। ইয়াযযাক্কারূনা = যিকর/ স্মরণ করে। 

আর ইহা (= কুরআন) তোমার রবের সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ। নিশ্চয় আমরা তফসীল আকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি আয়াতসমূহকে সেই কাওমের জন্য যারা যিকর/ স্মরণ করে। 

৬:১২৭

লাহুম = তাদের জন্যই আছে। দারুস সালামি = দারুস সালাম/ শান্তি নিকেতন। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। ওয়ালিয়্যুহুম = তাদের ওয়ালি/ অভিভাবক। বিমা কানূ ইয়া’মালূনা = তাদের (সৎ) কর্মের কারণে। 

তাদের জন্যই আছে দারুস সালাম/ শান্তি নিকেতন, তাদের রবের কাছে। আর তিনিই তাদের ওয়ালি/ অভিভাবক তাদের (সৎ) কর্মের কারণে। 

৬:১২৮

ওয়া = আর। ইয়াওমা = সেদিন। ইয়াহশুরুহুম = তিনি তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবেন। জামীআন = একত্রে। ইয়া মা’শারাল জিন্নি = হে জ্বিন সমাজ। ক্বাদিছতাকছারতুম = নিশ্চয় তোমরা অনেককে তোমাদের অনুগামী করেছো। মিনাল ইনছি = ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। ক্বলা আওলিআহুম মিনাল ইনসি = তখন ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে যারা তাদের আওলিয়া/ বন্ধু ছিলো তারা বলবে। রব্বানাছতামতাআ = আমাদের রব, বেশ ভোগ করেছে। বা’দুনা বিবা’দিন = আমাদের এক পক্ষ অন্য পক্ষের দ্বারা। ওয়া = আর। বালাগনা = আমরা পৌঁছে গেছি। আজালানাল্লাযী = আমাদের আজালে/ নির্ধারিত সময়ে যা। আজ্জালতা = আপনি নির্ধারিত করেছেন। লানা = আমাদের জন্য। ক্বলান্নারি = তখন আল্লাহ বলবেন, (জাহান্নামের) আগুনই। মাছওয়াকুম = তোমাদের বাসস্থান। খালিদীনা ফীহা = তোমরা তাতে স্থায়ী হবে। ইল্লা মা শাআল্লাহু = (কিছুই তো হয় না) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। হাকীমুন আলীমুন = হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও আলীম/ মহাজ্ঞানী। 

আর সেদিন তিনি তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবেন একত্রে। (তিনি বলবেন,) ‘হে জ্বিন সমাজ, নিশ্চয় তোমরা অনেককে তোমাদের অনুগামী করেছো ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে’। আর তখন ইনসান/ মানুষের মধ্য থেকে যারা তাদের আওলিয়া/ বন্ধু ছিলো তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, বেশ ভোগ করেছে আমাদের এক পক্ষ অন্য পক্ষের দ্বারা, আর আমরা পৌঁছে গেছি আমাদের আজালে/ নির্ধারিত সময়ে যা আপনি নির্ধারিত করেছেন আমাদের জন্য’। তখন আল্লাহ বলবেন, ‘(জাহান্নামের) আগুনই তোমাদের বাসস্থান তোমরা তাতে স্থায়ী হবে। (কিছুই তো হয় না) আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া’। নিশ্চয় তোমার রব হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও আলীম/ মহাজ্ঞানী। 

৬:১২৯

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। নুওয়াল্লী = আমরা সঙ্গী বানিয়ে দেবো। বা’দায যালিমীনা বা’দান = যালিমদের এক পক্ষকে অন্য পক্ষের দ্বারা। বিমা কানূ ইয়াকছিবূনা = যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছে তার কারণে। 

আর এভাবে আমরা সঙ্গী বানিয়ে দেবো যালিমদের এক পক্ষকে অন্য পক্ষের দ্বারা, যা (যে পাপ) তারা উপার্জন করেছে তার কারণে। 

৬:১৩০

ইয়া মা’শারাল জিন্নি ওয়াল ইনসি = হে জিন ও ইনসান/ দানব ও মানব সমাজ। আলাম ইয়া’তিকুম = তোমাদের কাছে কি আসেনি। রুসুলুম মিনকুম = রসূলগণ তোমাদেরই মধ্য থেকে। ইয়াক্বুসসূনা = যারা বর্ণনা করতো। আলাইকুম = তোমাদের কাছে। আয়াতী = আমার আয়াতসমূহ। ওয়া = আর। ইউনযিরূনাকুম = তোমাদেরকে সতর্ক করতো। লিক্বাআ ইয়াওমিকুম হাযা = এই দিবসে তোমাদের মোলাকাতের বিষয়ে। ক্বলূ = তখন তারা বলবে। সাহিদনা = আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি। আলা আনফুসিনা = আমাদের নিজেদের বিপক্ষে। ওয়া = অথচ। গাররাতহুমুল হায়াতুদ দুনইয়া = (অতীতে) তাদেরকে প্রতারিত করেছিলো হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। ওয়া = আর। সাহিদূ = তখন তারা সাক্ষী হবে। আলা আনফুসিহিম = তাদের নিজেদেরই বিপক্ষে। আন্নাহুম = যে, তারা। কানূ = ছিলো। কাফিরীনা = কাফির। 

হে জিন ও ইনসান/ দানব ও মানব সমাজ, তোমাদের কাছে কি আসেনি রসূলগণ তোমাদেরই মধ্য থেকে, যারা বর্ণনা করতো তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ আর তোমাদেরকে সতর্ক করতো এই দিবসে তোমাদের মোলাকাতের বিষয়ে? তখন তারা বলবে, ‘আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আমাদের নিজেদের বিপক্ষে’। অথচ (অতীতে) তাদেরকে প্রতারিত করেছিলো হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন। আর তখন তারা সাক্ষী হবে তাদের নিজেদেরই বিপক্ষে যে, তারা ছিলো কাফির। 

৬:১৩১

যালিকা = উহা। আন = এজন্য যে। লাম ইয়াকুর রব্বাকা = তোমার রব ছিলেন না। মুহলিকাল ক্বুরা = কোন জনপদকে হালাককারী/ ধ্বংসকারী। বিযুলমিন = যুলুমের দ্বারা। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আহলুহা = তার আহল/ অধিবাসী ছিলো। গাফিলূনা = গাফিল/ সত্য সম্পর্কে অনবহিত। 

উহা এজন্য যে, তোমার রব ছিলেন না কোন জনপদকে হালাককারী/ ধ্বংসকারী যুলুমের দ্বারা এ অবস্থায় যে, তার আহল/ অধিবাসী ছিলো গাফিল/ সত্য সম্পর্কে অনবহিত। 

৬:১৩২

ওয়ালিকুল্লি = আর সকলের জন্য আছে। দারাজাতুন = দারাজাত/ মর্যাদার মাত্রা। মিম্মা = তা অনুযায়ী যা। আমিলূ = তারা করেছে। ওয়া = আর। মা রব্বাকা = তোমার রব নন। বিগাফিলিন = গাফিল/ উদাসীন। আম্মা = তা থেকে যা। তা’মালুনা = তারা করে। 

আর সকলের জন্য আছে দারাজাত/ মর্যাদার মাত্রা তা অনুযায়ী যা তারা করেছে। আর তোমার রব নন গাফিল/ উদাসীন তা থেকে যা তারা করে। 

৬:১৩৩

ওয়া = আর। রব্বুকাল গানিয়্যু = তোমার রব গনী/ ধনী। যুর রহমাতি = যুর রহমাত/ দয়াশীল। ইইঁ ইয়াশা’ = যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ইউযহিবকুম = তোমাদেরকে নিয়ে যেতে পারেন। ওয়া = আর। ইয়াছতাখলিফ = খিলাফত দিতে/ স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন। মিম বা’দিকুম = তোমাদের পরে। মা = যাদেরকে। ইয়াশাউ = তিনি (খিলাফত দেয়ার) ইচ্ছা করবেন। কামা = যেমন। আনশা’কুম = তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। মিন যুররিয়াতি ক্বাওমি আখারীনা = অন্যান্য কাওমের যুররিয়াতের/ বংশধরদের থেকে। 

আর তোমার রব গনী/ ধনী ও যুর রহমাত/ দয়াশীল। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে নিয়ে যেতে পারেন আর খিলাফত দিতে/ স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন তোমাদের পরে যাদেরকে তিনি (খিলাফত দেয়ার) ইচ্ছা করবেন, যেমন তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন অন্যান্য কাওমের যুররিয়াতের/ বংশধরদের থেকে। 

৬:১৩৪

ইন্না = নিশ্চয়। মা = যা। তূআদূনা = তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে। লাআতি = তা আসবেই। ওয়া = আর। মা আনতুম = তোমরা সমর্থ হবে না। বিমু’জিজীনা = তা ঠেকিয়ে রাখতে।  

নিশ্চয় যা তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে তা আসবেই। আর তোমরা সমর্থ হবে না তা ঠেকিয়ে রাখতে।  

৬:১৩৫

ক্বুল = বলো। ইয়া ক্বাওমি’মালূ = হে আমার কাওম, তোমরা কাজ করো। আলা মাকানাতিকুম = তোমাদের মাকানে/ স্থানে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি (আমার স্থানে)। আমিলুন = কার্যসম্পাদনকারী। ফাছাওফা = তারপর শীঘ্রই। তা’লামূনা = তোমরা জানবে। মান = কে। তাকূনু = এমন হবে যে। লাহু = তার জন্য থাকবে। আক্বিবাতুদ দারি = পরিণামে কল্যাণকর আবাসস্থল। ইন্নাহু = নিশ্চয়। লা ইউফলিহুয যলিমূনা = ফালাহ/ সফলতা লাভ করে না যালিমগণ। 

বলো, ‘হে আমার কাওম, তোমরা কাজ করো তোমাদের মাকানে/ স্থানে। নিশ্চয় আমি (আমার স্থানে) কার্যসম্পাদনকারী। তারপর শীঘ্রই তোমরা জানবে কে এমন হবে যে, তার জন্য থাকবে পরিণামে কল্যাণকর আবাসস্থল, নিশ্চয় ফালাহ/ সফলতা লাভ করে না যালিমগণ’। 

৬:১৩৬

ওয়া = আর। জাআলূ = তারা নির্দিষ্ট করেছে। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। মিম্মা = তা থেকে যা। যারা = তিনি সৃষ্টি করেছেন। মিনাল হারছি = ক্ষেত থেকে। ওয়াল আনআমি = আর আনআম/ গবাদি পশু থেকে (= গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট)। নাসীবান = একটি নসীব/ অংশ। ফাক্বালূ = তারপর বলে। হাযা = ইহা। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। বিযা’মিহিম = তাদের ধারণা অনুযায়ী। ওয়া = আর। হাযা = ইহা। লিশুরাকাইনা = আমাদের শরিকদের জন্য। ফামা = তারপর যা। কানা = হয়। লিশুরাকাইহিম = তাদের শরিকদের জন্য। ফালা ইয়াসিলু = তা পৌঁছে না। ইলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। ওয়া = অথচ। মা = যা। কানা = হয়। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। ফাহুয়া = উহা। ইয়াসিলু = পৌঁছে যায়। ইলা শুরাকায়িহিম = তাদের শরিকদের কাছে। ছাআ = খুবই মন্দ। মা = যা। ইয়াহকুমূনা = তারা ফায়সালা করে। 

আর তারা নির্দিষ্ট করেছে আল্লাহর জন্য তা থেকে যা তিনি সৃষ্টি করেছেন ক্ষেত থেকে আর আনআম/ গবাদি পশু থেকে (= গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট) একটি নসীব/ অংশ। তারপর বলে, ‘ইহা আল্লাহর জন্য’, তাদের ধারণা অনুযায়ী, ‘আর ইহা আমাদের শরিকদের জন্য’। তারপর যা হয় তাদের শরিকদের জন্য তা পৌঁছে না আল্লাহর কাছে, অথচ যা হয় আল্লাহর জন্য উহা পৌঁছে যায় তাদের শরিকদের কাছে। খুবই মন্দ যা তারা ফায়সালা করে। 

৬:১৩৭

ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। যাইয়ানা = সুশোভিত করেছে। লিকাছীরিম মিনাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের মধ্য থেকে অনেকের জন্য। ক্বাতলাল আওলাদিহিম = তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করাকে। শুরাকাউহুম = (সুশোভিত করেছে) তাদের শরীকরা। লিইউরদূহুম = যেন তারা তাদেরকে ধ্বংস করে। ওয়া = আর। লিইয়ালবিছূ = যেন তারা দুর্বোধ্য করে। আলাইহিম = তাদের উপর। দ্বীনাহুম = তাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থাকে। ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। মা ফাআলূহু = তাহলে তারা উহা করতো না। ফাযারহুম = সুতরাং ছেড়ে দাও তাদেরকে। ওয়া মা = আর উহাকে যা। ইয়াফতারূনা = তারা রচনা করে। 

আর এভাবে সুশোভিত করেছে মুশরিকদের মধ্য থেকে অনেকের জন্য তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করাকে, (সুশোভিত করেছে) তাদের শরীকরা। যেন তারা তাদেরকে ধ্বংস করে আর যেন তারা দুর্বোধ্য করে তাদের উপর তাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থাকে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তারা উহা করতো না। সুতরাং ছেড়ে দাও তাদেরকে আর উহাকে যা তারা রচনা করে। 

৬:১৩৮

ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। হাযিহি = (ক) এই। আনআমুন = আনআম/ গবাদি পশুগুলো। ওয়া = আর। হারছুন হিজরুন = রক্ষিত ক্ষেত। লা ইয়াতমাঊহা = কেউ তা থেকে খাবে না। ইল্লা মান নাশাউ = আমরা (= মানতকারীরা) যাদেরকে ইচ্ছা করি তারা ছাড়া। বিযা’মিহিম = তাদের ধারণা অনুযায়ী। ওয়া = আর (বলে,)। আনআমু = (খ) কিছু আনআম/ গবাদি পশু। হুররিমাত = হারাম করা হয়েছে। যুহূরিহা = উহার পিঠগুলোতে (আরোহন করা বা করানো)। ওয়া = আর (বলে,)। আনআমুন = (গ) কিছু আনআম/ গবাদি পশু। লা তাযকুরূনাছমাল্লাহি = আল্লাহর নাম নেয়া হবে না। আলাইহাফতিরাআন আলাইহি = উহার উপর (= উহা জবেহ করা বা খাওয়া হবে না), তারা (মিথ্যা) রচনা করে নিয়েছে উহার উপর। ছাইয়াজজীহিম = শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রতিফল দিবেন। বিমা কানূ ইয়াফতারূনা = তারা যে (মিথ্যা) রচনা করে তার কারণে। 

আর তারা বলে, (ক) ‘এই আনআম/ গবাদি পশুগুলো আর রক্ষিত ক্ষেত, কেউ তা থেকে খাবে না, আমরা (= মানতকারীরা) যাদেরকে ইচ্ছা করি তারা ছাড়া’। তাদের ধারণা অনুযায়ী। আর (বলে,) (খ) ‘কিছু আনআম/ গবাদি পশু, হারাম করা হয়েছে উহার পিঠগুলোতে (আরোহন করা বা করানো)’। আর (বলে,) (গ) ‘কিছু আনআম/ গবাদি পশু, আল্লাহর নাম নেয়া হবে না উহার উপর (= উহা জবেহ করা বা খাওয়া হবে না)’। তারা (মিথ্যা) রচনা করে নিয়েছে উহার উপর। শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রতিফল দিবেন তারা যে (মিথ্যা) রচনা করে তার কারণে। 

৬:১৩৯

ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলে। মা = (ঘ) যে বাচ্চা আছে। ফী বুতূনি হাযিহিল আনআমি = এই আনআম/ গবাদি পশুগুলোর পেটের মধ্যে। খালিসাতুন = তা খালেস/ খাঁটি। লিযুকূরিনা = আমাদের পুরুষদের জন্য। ওয়া = আর। মুহাররামুন = তা হারাম/ নিষিদ্ধ। আলা আযওয়াযিনা = আমাদের স্ত্রীদের জন্য। ওয়া = আর। ইয়াকুম মাইতাতান = যদি হয় মৃত। ফাহুম = তবে তারা। ফীহি = উহাতে। শুরাকাউ = (খাওয়ার) শরিক হবে। ছাইয়াজজীহিম = শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রতিফল দিবেন। ওয়াসফাহুম = তাদের এরূপ বিশ্লেষণের। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। হাকীমুন = হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। আলীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী। 

আর তারা বলে, (ঘ) ‘যে বাচ্চা আছে এই আনআম/ গবাদি পশুগুলোর পেটের মধ্যে, তা খালেস/ খাঁটি আমাদের পুরুষদের জন্য, আর তা হারাম/ নিষিদ্ধ আমাদের স্ত্রীদের জন্য; আর যদি হয় মৃত তবে তারা উহাতে (খাওয়ার) শরিক হবে’। শীঘ্রই তিনি তাদেরকে প্রতিফল দিবেন তাদের এরূপ বিশ্লেষণের জন্য। নিশ্চয় তিনি হাকীম/ মহাবিজ্ঞ ও আলীম/ মহাজ্ঞানী। 

৬:১৪০

ক্বাদ = নিশ্চয়। খাছিরাল্লাযীনা = তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা। ক্বাতালূ = হত্যা করেছে। আওলাদাহুম = তাদের সন্তানদেরকে। ছাফহাম বিগাইরি ইলমিন = বোকামীবশত: (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান না থাকার কারণে। ওয়া = আর। হাররামূ = হারাম/ নিষিদ্ধ করেছে। মা = যা। রযাক্বাহুমুল্লাহুফতিরাআন = আল্লাহ তাদেরকে রিযক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছেন, মিথ্যা আরোপ করে। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। ক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লূ = তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। ওয়া = আর। মা কানূ = তারা ছিলো না। মুহতাদীনা = হিদায়াতপ্রাপ্ত। 

নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা হত্যা করেছে তাদের সন্তানদেরকে বোকামীবশত: (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান না থাকার কারণে; আর হারাম/ নিষিদ্ধ করেছে যা আল্লাহ তাদেরকে রিযক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছেন, মিথ্যা আরোপ করে আল্লাহর উপর। নিশ্চয় তারা বিভ্রান্ত হয়েছে আর তারা ছিলো না হিদায়াতপ্রাপ্ত। 

৬:১৪১

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আনশাআ = সৃষ্টি করেছেন। জান্নাতিম মা’রূশাতিন = জান্নাতসমূহ/ এমন গাছের বাগানসমূহ যা মাচার উপর চড়ানো (অর্থাৎ লতাজাতীয়)। ওয়া গায়রা মা’রূশাতিন = আর যা মাচার উপর চড়ানো নয় (অর্থাৎ কান্ডজাতীয়)। ওয়ান নাখলা = আর (সৃষ্টি করেছেন) খেজুর গাছ। ওয়ায যারআ = আর ক্ষেতের ফসল। মুখতালিফান উকুলুহু = যা থেকে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য যোগাড় হয়। ওয়ায যায়তূনা = আর (সৃষ্টি করেছেন) যায়তূন/ জলপাই। ওয়ার রুম্মানা = আর আনার/ ডালিম। মুতাশাবিহান = যা একে অন্যের সদৃশও হয়। ওয়া গায়রা মুতাশাবিহিন = আবার একে অন্যের বিসদৃশও হয়। কুলূ = খাও। মিন ছামারিহী = উহার ফল। ইযা = যখন। আছমারা = ফলবান হয়। ওয়া = আর। আতূ = দিয়ে দাও। হাক্বক্বাহু = উহার হক্ব/ উহার উপর আল্লাহর ঘোষিত হক্বদারদের হক্ব (= গণিমতের খুমুস ০৮:৪১)। ইয়াওমা হাসাদিহী = তা আহরণ বা কাটার দিন। {= প্রত্যেকে তার আয়প্রাপ্তির দিন}। ওয়া = আর। লা তুছরিফূ = তোমরা অপচয় করো না। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। লা ইউহিব্বুল মুছরিফীনা = ভালবাসেন না অপচয়কারীদেরকে। 

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি সৃষ্টি করেছেন জান্নাতসমূহ/ এমন গাছের বাগানসমূহ যা মাচার উপর চড়ানো (অর্থাৎ লতাজাতীয়), আর যা মাচার উপর চড়ানো নয় (অর্থাৎ কান্ডজাতীয়)। আর (সৃষ্টি করেছেন) খেজুর গাছ আর ক্ষেতের ফসল, যা থেকে বিভিন্ন প্রকার খাদ্য যোগাড় হয়। আর (সৃষ্টি করেছেন) যায়তূন/ জলপাই আর আনার/ ডালিম; যা একে অন্যের সদৃশও হয়, আবার একে অন্যের বিসদৃশও হয়। খাও উহার ফল যখন ফলবান হয়। আর দিয়ে দাও উহার হক্ব/ উহার উপর আল্লাহর ঘোষিত হক্বদারদের হক্ব, ফল-ফসল আহরণের দিন {= প্রত্যেকে তার আয়প্রাপ্তির দিন}। আর তোমরা অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি ভালবাসেন না অপচয়কারীদেরকে। 

৬:১৪২

ওয়া = আর (সৃষ্টি করেছেন)। মিনাল আনআমি = আনআমের/ গবাদি পশুর মধ্য থেকে। হামূলাতান = ভারবাহী পশু (উট ও গরু)। ওয়া ফারশান = আর ক্ষুদ্রাকার পশু (ভেড়া ও ছাগল)। কুলূ = খাও। মিম্মা = তা থেকে যা। রযাক্বাকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে রিযিক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছেন। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিঊ = ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। খুতুওয়াতিশ শায়তানি = শয়তানের পদাংকসমূহ (= কুরআনবিরুদ্ধ মতবাদ, সিলেবাস, অজিফা ও বিধানসমূহ)। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে (= শয়তান)। লাকুম = তোমাদের জন্য। আদুউউম মুবীনুন = প্রকাশ্য শত্রু। 

আর (সৃষ্টি করেছেন) আনআমের/ গবাদি পশুর মধ্য থেকে ভারবাহী পশু (উট ও গরু) আর ক্ষুদ্রাকার পশু (ভেড়া ও ছাগল)। খাও তা থেকে যা আল্লাহ তোমাদেরকে রিযিক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছেন। আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না শয়তানের পদাংকসমূহ (= কুরআনবিরুদ্ধ মতবাদ, সিলেবাস, অজিফা ও বিধানসমূহ)। নিশ্চয় সে (= শয়তান) তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু। 

৬:১৪৩

ছামানিয়াতা আযওয়াজিন = (আনআম হচ্ছে নর ও মাদী মিলে) আটটি জোড়া। মিনাদ দ’নিছনাইনি = মেষ শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। ওয়া মিনাল মা’যিছনাইনি = আর ছাগল শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। ক্বুল = বলো। আযযাকারাইনি = নর দুটিকেই কি। হাররামা = তিনি হারাম/ নিষিদ্ধ করেছেন। আমিল উনছাইয়ায়নি = নাকি মাদী দুটিকে। আম্মাশতামালাত আলাইহি আরহামুল উনছাইয়ায়নি = নাকি উহাকে যা মাদী দুটির গর্ভে রয়েছে? নাব্বিঊনী = আমাকে জানাও। বিইলমিন = (আসমানী কিতাবের) ইলমের/ জ্ঞানের ভিত্তিতে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সদিক্বীনা = সত্যবাদী। 

(আনআম হচ্ছে নর ও মাদী মিলে) আটটি জোড়া। মেষ শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া আর ছাগল শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। বলো, ‘নর দুটিকেই কি তিনি হারাম/ নিষিদ্ধ করেছেন নাকি মাদী দুটিকে নাকি উহাকে যা মাদী দুটির গর্ভে রয়েছে? আমাকে জানাও (আসমানী কিতাবের) ইলমের/ জ্ঞানের ভিত্তিতে। যদি তোমরা হও সত্যবাদী’। 

৬:১৪৪

ওয়া = আর। মিনাল ইবিলিছনাইনি = উট শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। ওয়া = আর। মিনাল বাক্বারিছনাইনি = গরু শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। ক্বুল = বলো। আযযাকারাইনি = নর দুটিকেই কি। হাররামা = তিনি হারাম/ নিষিদ্ধ করেছেন। আমিল উনছাইয়ায়নি = নাকি মাদী দুটিকে। আম্মাশতামালাত আলাইহি আরহামুল উনছাইয়ায়নি = নাকি উহাকে যা মাদী দুটির গর্ভে রয়েছে? আম = নাকি। কুনতুম = তোমরা ছিলে। শুহাদাআ = স্বাক্ষী। ইয = যখন। ওয়াসসাকুমুল্লাহু = আল্লাহ ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশ দিয়েছেন। বিহাযা = উহার সম্পর্কে। ফামান আযলামা মিম্মানিফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে। লিইদিল্লান্নাছা = মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য। বিগাইরি ইলমি = (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান না থাকার দরুন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াহদিল ক্বাওমায যালিমীনা = হিদায়াত করেন না যালিম কাওমকে। 

আর উট শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া আর গরু শ্রেণী থেকে দুইটি জোড়া। বলো নর দুটিকেই কি তিনি হারাম/ নিষিদ্ধ করেছেন নাকি মাদী দুটিকে নাকি উহাকে যা মাদী দুটির গর্ভে রয়েছে? নাকি তোমরা ছিলে স্বাক্ষী, যখন আল্লাহ ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশ দিয়েছেন উহার সম্পর্কে? সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য (আসমানী কিতাবের) ইলম/ জ্ঞান না থাকার দরুন? নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম কাওমকে। 

৬:১৪৫

ক্বুল = বলো। লা আজিদু = আমি পাই না। ফী মা = উহার মধ্যে যা। উহিয়া = ওহী করা হয়েছে। ইলাইয়্যা = আমার প্রতি। মুহাররামান = হারাম হিসাবে। আলা তয়িমিন = কোন খাদ্যগ্রহণকারীর উপর। ইয়াতআমুহু = যা সে খায়। ইল্লা = এছাড়া। আইঁ ইয়াকূনা = যে, যদি তা হয়। মাইতাতান = মৃতজীব। আও = অথবা। দামাম মাছফূহান = প্রবাহিত রক্ত। আও = অথবা। লাহমা খিনজীরিন = শুকরের গোশত। ফাইন্নাহু = কেননা, নিশ্চয় তা। রিজছুন = অপরিচ্ছন্ন। আও = অথবা। ফিসকুন = যা ফিসক/ সত্যত্যাগজনিত কারণে হারাম। উহিল্লা লিগাইরিল্লাহি বিহী = তা হচ্ছে যার উপর নাম নেয়া হয়েছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো। ফামানিদতুররা = কিন্তু যে নিরুপায় হয়। গায়রা বাগিন = বিদ্রোহী না হয়ে। ওয়া লা আদিন = আর প্রয়োজনের সীমালংঘন না করে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয় তোমার রব। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল। 

বলো, ‘আমি পাই না উহার মধ্যে যা ওহী করা হয়েছে আমার প্রতি হারাম হিসাবে কোন খাদ্যগ্রহণকারীর উপর (আনআমের সাথে সম্পর্কিত) যা সে খায়, এছাড়া যে, যদি তা হয় মৃতজীব অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের গোশত। কেননা, নিশ্চয় তা অপরিচ্ছন্ন। অথবা যা ফিসক/ সত্যত্যাগজনিত কারণে হারাম, তা হচ্ছে যার উপর নাম নেয়া হয়েছে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো। কিন্তু যে নিরুপায় হয়, বিদ্রোহী না হয়ে আর প্রয়োজনের সীমালংঘন না করে; তাহলে নিশ্চয় তোমার রব গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল। 

৬:১৪৬

ওয়া = আর। আলাল্লাযীনা হাদূ = যারা ইহুদী হয়েছে তাদের উপর। হাররামনা = আমরা হারাম করেছিলাম। কুল্লা = সকল। যিল যুখরিন = নখরবিশিষ্ট প্রাণী। ওয়া = আর। মিনাল বাক্বারি ওয়াল গানামি = গরুর ও মেষের মধ্য থেকে। হাররামনা = আমরা হারাম করেছিলাম। আলাইহিম = তাদের উপর। শুহূমাহুমা = উভয়ের চর্বিসমূহ। ইল্লা মা = উহা ছাড়া যা। হামালাত = লেগে থাকে। যুহূরুহুমা = উভয়ের পিঠে। আওয়িল হাওয়াইয়া = বা অন্ত্রগুলোতে। আও = অথবা। মাখতালাতা = যা যুক্ত থাকে। বিআযমিন = হাড়ের সাথে। যালিকা = উহাই। জাযাইনাহুম = আমরা প্রতিফল দিয়েছি। বিবাগয়িহিম = তাদের অবাধ্যতার কারণে। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লাসাদিক্বূনা = সত্যবাদী। 

আর যারা ইহুদী হয়েছে তাদের উপর আমরা হারাম করেছিলাম সকল নখরবিশিষ্ট প্রাণী। আর গরুর ও মেষের মধ্য থেকে আমরা হারাম করেছিলাম তাদের উপর উভয়ের চর্বিসমূহ, উহা ছাড়া যা লেগে থাকে উভয়ের পিঠে বা অন্ত্রগুলোতে অথবা যা যুক্ত থাকে হাড়ের সাথে। উহাই আমরা তাদেরকে প্রতিফল দিয়েছি তাদের অবাধ্যতার কারণে। আর নিশ্চয় আমরা সত্যবাদী। 

৬:১৪৭ 

ফাইন = তারপর যদি। কাযযাবূকা = তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। ফাক্বুল = তাহলে বলো। রব্বুকুম = তোমাদের রব। যূ রহমাতিওঁ ওয়াছিআতিন = ব্যাপক রহমাতের অধিকারী। ওয়া = কিন্তু। লা ইউরদ্দু = ফিরানো যায় না। বাছুহূ = তাঁর শাস্তি। আনিল ক্বাওমিল মুজরিমীনা = অপরাধী কাওমের থেকে। 

তারপর যদি তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, তাহলে বলো, ‘তোমাদের রব ব্যাপক রহমাতের অধিকারী কিন্তু ফিরানো যায় না তাঁর শাস্তি অপরাধী কাওমের থেকে’। 

৬:১৪৮

ছাইয়াক্বূলুল্লাযীনা = শীঘ্রই তারা বলবে যারা। আশরাকূ = শিরক করেছে। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। মা আশরাকনা = তাহলে আমরা শিরক করতাম না। ওয়া = আর। আবাআনা = আমাদের বাপদাদাও না। ওয়া = আর। লা হাররামনা = আমরা হারাম করতাম না। মিন শাইয়িন = কোন কিছুই। কাযালিকা = এভাবেই। কাযযাবাল্লাযীনা = তারাও চরম মিথ্যা কথা বলেছে। মিন ক্বাবলিহিম = যারা তাদের আগেকার লোক। হাত্তা = যতক্ষণ না। যাক্বূ = তারা স্বাদ আস্বাদন করেছে। বা’ছানা = আমাদের শাস্তির। ক্বুল = বলো। হাল ইনদাকুম = তোমাদের কাছে কি আছে। মিন ইলমিন = (আসমানী কিতাবের) কোন ইলম/ জ্ঞান। ফাতুখরিজূহু লানা = থাকলে তা নিয়ে আসো আমাদের কাছে। ইন তাত্তাবিঊ = তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ কর না। ইল্লায যন্না = অনুমান ছাড়া অন্য কিছুর। ওয়া = আর। ইন কুনতুম = তোমরা যৌক্তিক কিছু করো না। ইল্লা তাখরুসূনা = জল্পনা কল্পনা করা ছাড়া। 

শীঘ্রই তারা বলবে যারা শিরক করেছে, ‘যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে আমরা শিরক করতাম না আর আমাদের বাপদাদাও না, আর আমরা হারাম করতাম না কোন কিছুই’। এভাবেই তারাও চরম মিথ্যা কথা বলেছে যারা তাদের আগেকার লোক, যতক্ষণ না তারা স্বাদ আস্বাদন করেছে আমাদের শাস্তির। বলো, ‘তোমাদের কাছে কি আছে (আসমানী কিতাবের) কোন ইলম/ জ্ঞান? থাকলে তা নিয়ে আসো আমাদের কাছে। তোমরা তো ইত্তেবা/ অনুসরণ কর না অনুমান ছাড়া অন্য কিছুর। আর তোমরা যৌক্তিক কিছু করো না জল্পনা কল্পনা করা ছাড়া। 

৬:১৪৯

ক্বুল = বলো। ফালিল্লাহিল হুজ্জাতাল বালিগাতু = আল্লাহরই কাছে চূড়ান্ত যুক্তিপ্রমাণ। ফালাও = সুতরাং যদি। শাআ = তিনি ইচ্ছা করতেন। লাহাদাকুম আজমাঈনা = তাহলে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন। 

বলো, ‘আল্লাহরই কাছে চূড়ান্ত যুক্তিপ্রমাণ। সুতরাং যদি তিনি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের সকলকে হিদায়াত করতেন। 

৬:১৫০

ক্বুল = বলো। হালুম্মা = উপস্থিত করো। শুহাদাআকুমুল্লাযীনা = তোমাদের সাক্ষীদেরকে যারা। ইয়াশহাদূনা = সাক্ষ্য দেবে। আন্নাল্লাহা = যে, আল্লাহ। হাররামা = হারাম করেছেন। হাযা = এইগুলোকে। ফাইন = তারপর যদি। শাহিদূ = তারা সাক্ষ্য দেয়। ফালা তাশহাদ = তবু তুমি সাক্ষ্য দিও না। মাআহুম = তাদের সাথে। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিউ = তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। আহওয়াআল্লাযীনা = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তি প্রসূত মতবাদ ও বিধানের যারা। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি। ওয়া = আর। হুম = তারা। বিরব্বিহিম = তাদের রবের সাথে। ইয়া’দিলূনা = সমতুল্য/ শরিক সাব্যস্ত করে। 

বলো, ‘উপস্থিত করো তোমাদের সাক্ষীদেরকে যারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ হারাম করেছেন এইগুলোকে’। তারপর যদি তারা সাক্ষ্য দেয় তবু তুমি সাক্ষ্য দিও না তাদের সাথে। আর তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তি প্রসূত মতবাদ ও বিধানের, যারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না আখিরাতের প্রতি। আর তারা তাদের রবের সাথে সমতুল্য/ শরিক সাব্যস্ত করে। 

৬:১৫১

ক্বুল = বলো। তাআলাও = তোমরা আসো। আতলু = আমি তিলাওয়াত/ পাঠ করবো। মা = কী। হাররামা = হারাম করেছেন। রব্বুকুম = তোমাদের রব। আলাইকুম = তোমাদের উপর। আল্লা তুশরিকূ = তাহচ্ছে, তোমরা শরিক করো না। বিহী = তাঁর সাথে। সাইয়ান = কাউকেই। ওয়া = আর। বিল ওয়ালিদাইনি = পিতামাতার প্রতি। ইহসানান = ইহসান/ উত্তম আচরণ করো। ওয়া = আর। লা তাক্বতুলূ = তোমরা কতল/ হত্যা করো না। আওলাদুকুম = তোমাদের সন্তানদেরকে। মিন ইমলাক্বিন = দরিদ্রতার ভয়ে। নাহনু = আমরাই। নারযুক্বুকুম = তোমাদেরকে রিযক দিয়ে থাকি। ওয়া = আর। ইয়্যাহুম = তাদেরকেও দেবো। লা তাক্বরাবুল ফাওয়াহিশা = তোমরা কাছেও যাবে না ফাহেশা/ অশ্লীল কাজের। মা যহারা মিনহা = উহা প্রকাশ্য হোক। ওয়া = আর। মা বাতানা = গোপন হোক। ওয়া = আর। লা তাক্বতুলুন্নাফছাল্লাতী = সেই নাফসকে কতল/ হত্যা করো না যা। হাররামাল্লাহু = আল্লাহ হারাম করেছেন। ইল্লা বিল হাক্বক্বি = সত্য/ বৈধতা ছাড়া। যালিকুম ওসসাকুম বিহী = তিনি তোমাদেরকে এই ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশ দিচ্ছেন। লাআল্লাকুম তা’ক্বিলূনা = যেন তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারো। 

বলো, ‘তোমরা আসো আমি তিলাওয়াত/ পাঠ করবো, কী হারাম করেছেন তোমাদের রব তোমাদের উপর। তাহচ্ছে, তোমরা শরিক করো না তাঁর সাথে কাউকেই, আর পিতামাতার প্রতি ইহসান/ উত্তম আচরণ করো, আর তোমরা কতল/ হত্যা করো না তোমাদের সন্তানদেরকে দরিদ্রতার ভয়ে। আমরাই তোমাদেরকে রিযক দিয়ে থাকি আর তাদেরকেও দেবো। তোমরা কাছেও যাবে না ফাহেশা/ অশ্লীল কাজের, উহা প্রকাশ্য হোক আর গোপন হোক। আর সেই নাফসকে কতল/ হত্যা করো না যা আল্লাহ হারাম করেছেন, সত্য/ বৈধতা ছাড়া। তিনি তোমাদেরকে এই ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারো। 

৬:১৫২

ওয়া = আর। লা তাক্বরাবূ = তোমরা কাছেও যেও না। মালাল ইয়াতীমি = ইয়াতিম ছেলেমেয়ের মালসম্পদের। ইল্লা বিল্লাতী হিয়া আহছানু = অধিক উত্তম পন্থায় ছাড়া (যে পন্থা কুরআনে ০৪: ০২ ও ০৪: ০৬ এ বলা হয়েছে)। হাত্তা ইয়াবলুগু আশুদ্দাহু = (তোমরা কোন ইয়াতিমের মালসম্পদের তত্তাবধান করবে) যতক্ষণ না সে পৌঁছে যায় তার শক্তিসামর্থের বয়সে। ওয়া = আর। আওফুল কায়লা ওয়াল মীযানা = তোমরা পরিপূর্ণ করো পরিমাপ ও দাড়িপাল্লা। বিল ক্বিছতি = কিসতের/ ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে। লা নুকাল্লিফু নাফসান ইল্লা উছআহা = আমরা কাউকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করি না। ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বুলতুম = তোমরা কথা বল। ফা’দিলূ = তখন ন্যায্য কথা বলো। ওয়া লাও = যদিও। কানা = সে হয়। যা ক্বুরবা = নিকটাত্মীয়। ওয়া = আর। বিআহদিল্লাহি = আল্লাহর আহদ/ আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি। আওফূ = পূর্ণ করো। যালিকুম ওয়াসসাকুম বিহী = ইহাই তোমাদেরকে তিনি ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশদান করেছেন। লাআল্লাকুম তাযাক্কারূনা = যেন তোমরা যিকর/ স্মরণ রাখতে পারো। 

আর তোমরা কাছেও যেও না ইয়াতিম ছেলেমেয়ের মালসম্পদের, অধিক উত্তম পন্থায় ছাড়া (যে পন্থা কুরআনে ০৪: ০২ ও ০৪: ০৬ এ বলা হয়েছে)। (তোমরা কোন ইয়াতিমের মালসম্পদের তত্তাবধান করবে) যতক্ষণ না সে পৌঁছে যায় তার শক্তিসামর্থের বয়সে। আর তোমরা পরিপূর্ণ করো পরিমাপ ও দাড়িপাল্লা, কিসতের/ ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করি না। আর যখন তোমরা কথা বল, তখন ন্যায্য কথা বলো, যদিও সে হয় নিকটাত্মীয়। আর আল্লাহর আহদ/ আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করো। ইহাই তোমাদেরকে তিনি ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশদান করেছেন, যেন তোমরা যিকর/ স্মরণ রাখতে পারো। 

৬:১৫৩

ওয়া আন্না = আর। হাযা = ইহা (= আল কুরআন)। সিরাতী মুছতাক্বীমান = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ। ফাত্তাবিঊহু = তোমরা উহার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিআছ ছুবুলা = অন্য পথগুলোর ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। ফাতাফাররাক্বা বিকুম = কারণ সেগুলো তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করবে। আন ছাবীলিহী = তাঁর পথ থেকে। যালিকুম ওয়াসসাকুম বিহী = ইহাই তোমাদেরকে তিনি ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশদান করেছেন। লাআল্লাকুম তাত্তাক্বূনা = যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। 

আর ইহা (= আল কুরআন) সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ, তোমরা উহার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। আর অন্য পথগুলোর ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না, কারণ সেগুলো তোমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করবে তাঁর পথ থেকে। ইহাই তোমাদেরকে তিনি ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশদান করেছেন, যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। 

৬:১৫৪

ছুম্মা = তাছাড়া। আতাইনা মূছাল কিতাবা = আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছি। তামামান আলাল্লাযী = যা স্বয়ংসম্পূর্ণ তার জন্য যে। আহছানা = উত্তম কাজ করে। ওয়া = আর তা। তাফসীলাল্লিকুল্লি সাইয়িন = প্রত্যেক বিষয়ের তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যা। ওয়া = আর। হুদাওঁ ওয়া রহমাতাল্লাআল্লাহুম = হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া যেন তারা। বিলিক্বায়ি রব্বিহিম = (পর্দার অন্তরাল থেকে) তাদের রবের সাথে মোলাকাতের প্রতি। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করতে পারে। 

তাছাড়া আমরা মুসাকে কিতাব দিয়েছি, যা স্বয়ংসম্পূর্ণ তার জন্য যে উত্তম কাজ করে, আর তা প্রত্যেক বিষয়ের তফসীল/ বিস্তারিত ব্যাখ্যা আর হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া, যেন তারা (পর্দার অন্তরাল থেকে) তাদের রবের সাথে মোলাকাতের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করতে পারে। 

৬:১৫৫

ওয়া = আর। হাযা কিতাবুন = এই কিতাব (= কুরআন)। আনযালনাহু = আমরা উহা নাযিল করেছি। মুবারাকুন = যা মুবারাক/ বরকতময়। ফাত্তাবিঊহু = সুতরাং উহার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। ওয়াত্তাক্বূ = আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো। লাআল্লাকুম তুরহামুনা = যেন তোমাদের প্রতি রহমাত/ দয়া করা যেতে পারে। 

আর এই কিতাব (= কুরআন), আমরা উহা নাযিল করেছি যা মোবারক/ বরকতময়। সুতরাং উহার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো, যেন তোমাদের প্রতি রহমাত/ দয়া করা যেতে পারে। 

৬:১৫৬

আন = যেন না। তাক্বূলূ = তোমরা বল। ইন্নামা = নিশ্চয়। উনযিলাল কিতাবু = কিতাব তো নাযিল করা হয়েছিলো। আলা তয়িফাতাইনি মিন ক্বাবলিনা = আমাদের আগের দুই সম্প্রদায়ের উপর (= ইহুদী ও নাসারার উপর)। ওয়া = আর। ইন কুন্না = আমরা কি ছিলাম না। আন দিরাছাতিহিম = সেগুলোর দারস/ শিক্ষা থেকে। লাগাফিলূনা = গাফেল/ অনবহিত। 

যেন না তোমরা বল, ‘নিশ্চয় কিতাব তো নাযিল করা হয়েছিলো আমাদের আগের দুই সম্প্রদায়ের উপর (= ইহুদী ও নাসারার উপর)। আর আমরা কি ছিলাম না সেগুলোর দারস/ শিক্ষা থেকে গাফেল/ অনবহিত?’। 

৬:১৫৭ 

আও = অথবা। তাক্বূলূ = তোমরা বলতে পারো। লাও = যদি। আন্না = বাস্তবিক। উনযিলা = নাযিল করা হতো। আলাইনাল কিতাবু = আমাদের উপর কিতাব। লাকুন্না = তাহলে আমরা হতাম। আহদা মিনহুম = তাদের তুলনায় অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত। ফাক্বাদ = সুতরাং এখন নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বাইয়্যিনাতুম মির রব্বিকুম = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। হুদাওঁ ওয়া রহমাতুন = হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া। ফামান আযলামু মিম্মান = সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে। কাযযাবা = মিথ্যা সাব্যস্ত করে। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমুহের প্রতি। ওয়া = আর। সদাফা = মুখ ফিরিয়ে থাকে। আনহা = উহা থেকে। ছানাজযিল্লাযীনা = শীঘ্রই আমরা তাদেরকে প্রতিফল দেবো যারা। ইয়াসদিফূনা = মুখ ফিরিয়ে থাকে। আন আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহ থেকে। ছূআল আযাবা = নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি। বিমা কানূ ইয়াসদিফূনা = তারা মুখ ফিরিয়ে রাখার কারণে। 

অথবা তোমরা বলতে পারো, ‘যদি বাস্তবিক নাযিল করা হতো আমাদের উপর কিতাব, তাহলে আমরা হতাম তাদের তুলনায় অধিক হিদায়াতপ্রাপ্ত। সুতরাং এখন নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, আর হুদা/ হিদায়াত ও রহমাত/ দয়া। সুতরাং তার চেয়ে বড় জালিম কে হতে পারে, যে মিথ্যা সাব্যস্ত করে আল্লাহর আয়াতসমুহের প্রতি আর মুখ ফিরিয়ে থাকে উহা থেকে? শীঘ্রই আমরা তাদেরকে প্রতিফল দেবো যারা মুখ ফিরিয়ে থাকে আমাদের আয়াতসমূহ থেকে, নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি, তারা মুখ ফিরিয়ে রাখার কারণে। 

৬:১৫৮

হাল ইয়ানযুরূনা = তারা কি অপেক্ষা করছে। ইল্লা আন = এছাড়া অন্য কিছুর যে। তা’তিয়াহুমুল মালায়িকাতু = তাদের কাছে এসে যাবে মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। আও = অথবা। ইয়া’তিয়া = এসে যাবেন। রব্বুকা = তোমার রব। আও = অথবা। ইয়া’তিয়া = এসে যাবে। বা’দা আয়াতি রব্বিকা = তোমার রবের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের কিছু। ইয়াওমা = যেদিন। ইয়া’তি = এসে যাবে। বা’দু আয়াতি রব্বিকা = তোমার রবের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের কিছু। লা ইয়ানফাউ = উহা উপকার দেবে না। নাফসান = কোন ব্যক্তিকে। ঈমানুহা = (তা দেখার ভিত্তিতে) তার ঈমান গ্রহণের ক্ষেত্রে। লাম তাকুন আমানাত = কারণ সে তো ঈমান/ বিশ্বাস করেনি। মিন ক্বাবলু = উহার আগে। আও কাছাবাত = অথবা সে উপার্জনও করেনি। ফী ঈমানিহা = তার ঈমানের মাধ্যমে। খায়রান = কোন কল্যাণকর কাজ। ক্বুলিনতাযিরূ = বলো, ‘তোমরা অপেক্ষা করো। ইন্না = নিশ্চয় আমরাও। মুনতাযিরূনা = অপেক্ষাকারী। 

তারা কি অপেক্ষা করছে এছাড়া অন্য কিছুর যে, তাদের কাছে এসে যাবে মালাইকা/ ফেরেশতাগণ অথবা এসে যাবেন তোমার রব অথবা এসে যাবে তোমার রবের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের কিছু? যেদিন এসে যাবে তোমার রবের আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের কিছু, উহা উপকার দেবে না কোন ব্যক্তিকে (তা দেখার ভিত্তিতে) তার ঈমান গ্রহণের ক্ষেত্রে। কারণ সে তো ঈমান/ বিশ্বাস করেনি উহার আগে অথবা সে উপার্জনও করেনি তার ঈমানের মাধ্যমে কোন কল্যাণকর কাজ। বলো, ‘তোমরা অপেক্ষা করো। নিশ্চয় আমরাও অপেক্ষাকারী’। 

৬:১৫৯

ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ফাররাক্বূ = খন্ড বিখন্ড করেছে। দীনাহুম = তাদের দ্বীনকে। ওয়া = আর। কানু = বিভক্ত হয়েছে। শিয়াআন = বিভিন্ন শিয়াতে/ দলে। লাছতা = তুমি নও। মিনহুম = তাদের অন্তর্ভুক্ত। ফী সাইয়িন = কোনক্রমেই। ইন্নামা = নিশ্চয়। আমরুহুম = তাদের ব্যাপারটি। ইলাল্লাহি = আল্লাহরই কাছে (সোপর্দ করার ব্যাপার)। ছুম্মা = তারপর। ইউনাব্বিউহুম = তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন। বিমা কানূ ইয়াফআলূনা = ঐ বিষয়ে যা তারা করতো। 

নিশ্চয় যারা খন্ড বিখন্ড করেছে তাদের দ্বীনকে আর বিভক্ত হয়েছে বিভিন্ন শিয়াতে/ দলে, তুমি নও তাদের অন্তর্ভুক্ত কোনক্রমেই। নিশ্চয় তাদের ব্যাপারটি আল্লাহরই কাছে (সোপর্দ করার ব্যাপার)। তারপর তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন ঐ বিষয়ে যা তারা করতো। 

৬:১৬০

মান = যে। জাআ = উপস্থিত হবে। বিল হাছানাতি = উত্তম কাজ সহকারে। ফালাহু = তার জন্য আছে। আশারু আমছালিহা = উহার প্রতিফলের দশগুণ। ওয়া = আর। মান = যে। জাআ = উপস্থিত হবে। বিছ ছাইয়িআতি = মন্দ কাজ সহকারে। ফালা ইউজযা = তাকে প্রতিফল দেয়া হবে না। ইল্লা মিছলুহা = উহার সমপরিমাণ ছাড়া (= মন্দের ফল এক গুণ)। ওয়া = আর। হুম = তাদেরকে। লা ইউযলামূনা = যুলুম করা হবে না। 

যে উপস্থিত হবে উত্তম কাজ সহকারে তার জন্য আছে উহার প্রতিফলের দশগুণ। আর যে উপস্থিত হবে মন্দ কাজ সহকারে তাকে প্রতিফল দেয়া হবে না উহার সমপরিমাণ ছাড়া (= মন্দের ফল এক গুণ)। আর তাদেরকে যুলুম করা হবে না। 

৬:১৬১

ক্বুল = বলো। ইন্নানী = নিশ্চয় আমাকে। হাদানী = হিদায়াত করেছেন। রব্বী = আমার রব। ইলা সিরাতিম মুসতাক্বীমা = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ। দ্বীনান ক্বিয়ামান = প্রতিষ্ঠিত দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা। মিল্লাতা ইবরাহীমা হানীফান = সত্যনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত/ ইবাদাতের একত্ববাদী স্বরূপ ও প্রকৃতি। ওয়া = আর। মা কানা = সে (= ইবরাহীম) ছিলো না। মিনাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। 

বলো, ‘নিশ্চয় আমাকে হিদায়াত করেছেন আমার রব. (হিদায়াত করেছেন) সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ, প্রতিষ্ঠিত দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা, মিল্লাতে ইবরাহীমা হানীফা/ সত্যনিষ্ঠ ইবরাহীমের মিল্লাত/ ইবাদাতের একত্ববাদী স্বরূপ ও প্রকৃতি। আর সে (= ইবরাহীম) ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। 

৬:১৬২

ক্বুল = বলো। ইন্না = নিশ্চয়। সলাতী = আমার সালাত। ওয়া নুসুকী = আর আমার নুসুক (=   )। ওয়া মাহইয়াইয়া = আর আমার জীবন/ হায়াতে জিন্দেগী। ওয়া মামাতী = আর আমার মরণ/ মৃত্যু ও তার পরবর্তী জীবন। লিল্লাহি রব্বিল আলামীন = আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য উৎসর্গীকৃত। 

বলো, ‘নিশ্চয় আমার সালাত আর আমার নুসুক (=   ), আর আমার জীবন/ হায়াতে জিন্দেগী, আর আমার মরণ সবই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্য। 

৬:১৬৩

লা শারীকা লাহু = তাঁর কোন শরিক নেই। ওয়া = আর। বিযালিকা = ইহার প্রতিই। উমিরতু = আমি আদিষ্ট হয়েছি। ওয়া = আর। আনা = আমিই। আওয়ালুল মুসলিমীনা = প্রথম মুসলিম। 

তাঁর কোন শরিক নেই। আর ইহার প্রতিই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আর আমিই প্রথম মুসলিম। 

৬:১৬৪

ক্বুল = বলো। আগাইরাল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া কি। আবগী রব্বান = আমি তালাশ করবো কোন রব/ বিধানদাতা। ওয়া = অথচ। হুয়া = তিনিই। রব্বু কুল্লি সাইয়িন = সবার ও সবকিছুর রব/ বিধানদাতা। ওয়া = আর। লা তাকছিবু = উপার্জন করে না। কুল্লু = প্রত্যেক। নাফসুন = ব্যক্তি। ইল্লা = এছাড়া যে তা। আলাইহা = তারই উপর বর্তাবে। ওয়া = আর। লা তাযিরূ = বোঝা বহন করবে না। ওয়াযিরাতুন = কোন বোঝা বহনকারী। ওয়িযরাল উখরা = অন্য কারো বোঝা। ছুম্মা = তারপর। ইলা রব্বিকুম = তোমাদের রবেরই কাছে হবে। মারজিউকুম = তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। ফাইউনাব্বিউকুম = তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। বিমা কুনতুম ফীহি = ঐ বিষয় যাতে তোমরা। তাখতালিফূনা = মতবিরোধ করতে। 

বলো, ‘আল্লাহ ছাড়া কি আমি তালাশ করবো কোন রব/ বিধানদাতা? অথচ তিনিই সবার ও সবকিছুর রব/ বিধানদাতা। আর উপার্জন করে না প্রত্যেক ব্যক্তি এছাড়া যে, তা তারই উপর বর্তাবে {= প্রত্যেকেই তার নিজের কৃতকর্মের জন্য দায়ী}। আর বহন করবে না কোন বোঝা বহনকারী অন্য কারো বোঝা। তারপর তোমাদের রবেরই কাছে হবে তোমাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন ঐ বিষয় যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। 

৬:১৬৫

ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। জাআলাকুম খালায়িফাল আরদি = তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত করেছেন। ওয়া = আর। রফাআ = সমুন্নত করেছেন। বা’দুকুম = তোমাদের কাউকে। ফাওকা বা’দিন = অন্য কারো উপর। দারাজাতিন = যোগ্যতা ও সুযোগ সুবিধার বিভিন্ন মাত্রায়। লিইয়াবলুআকুম = যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন। ফী মা আতাকুম = তোমাদেরকে যা (কম বা বেশি) দিয়েছেন তা যথাযথভাবে বিবেচনা করে। ইন্না = নিশ্চয়। রব্বাকা = তোমার রব। ছারীউল ইক্বাবি = অপরাধীর শাস্তিদানে তৎপর। ওয়া = আর। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। লাগাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত করেছেন। আর সমুন্নত করেছেন তোমাদের কাউকে অন্য কারো উপর যোগ্যতা ও সুযোগ সুবিধার বিভিন্ন মাত্রায়। যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন তোমাদেরকে যা (কম বা বেশি) দিয়েছেন তা যথাযথভাবে বিবেচনা করে। নিশ্চয় তোমার রব অপরাধীর শাস্তিদানে তৎপর। আর নিশ্চয় তিনি গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল। 

সমাপ্ত