কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

005. সূরা মায়িদাহ

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৫:১
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আওফূ বিল উকূদ = তোমরা (সব ধরনের প্রতিশ্রুতির) বন্ধনসমূহ পূর্ণ করো। উহিল্লাত = হালাল করা হয়েছে। লাকুম = তোমাদের জন্য। বাহীমাতুল আনআমি = বাহীমাতুল আনআম/ গবাদি পশু প্রকৃতির বিচরণশীল চতুষ্পদ পশুসমূহ। ইল্লা মা ইউতলা আলাইকুম = তোমাদের কাছে যেগুলোর (হারাম হওয়ার ব্যাপারে) তিলাওয়াত করা হচ্ছে সেগুলো ছাড়া। গায়রু মুহিল্লিস সয়দি ওয়া আনতুম হুরুমুন = (স্থলভাগের) শিকারকারী হওয়া যাবে না, তোমরা হুরুমুন (ইহরামরত) থাকা অবস্থায় (৫:৯৪-৯৬)। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়াহকুমু = হুকুম দেন। মা ইউরীদু = যা তিনি (হুকুম দেয়ার) এরাদা/ ইচ্ছা করেন।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা (সব ধরনের প্রতিশ্রুতির) বন্ধনসমূহ পূর্ণ করো। হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য বাহীমাতুল আনআম/ গবাদি পশু প্রকৃতির বিচরণশীল চতুষ্পদ পশুসমূহ, তোমাদের কাছে যেগুলোর (হারাম হওয়ার ব্যাপারে) তিলাওয়াত করা হচ্ছে সেগুলো ছাড়া (৫:৩)। (স্থলভাগের) শিকারকারী হওয়া যাবে না, তোমরা হুরুমুন (ইহরামরত) থাকা অবস্থায় (৫:৯৪-৯৬)। নিশ্চয় আল্লাহ হুকুম দেন যা তিনি (হুকুম দেয়ার) এরাদা/ ইচ্ছা করেন।

৫:২
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তুহিল্লূ = তোমরা অবমাননা করো না। শাআয়িরাল্লাহি = আল্লাহর (উদ্দেশ্যে নির্ধারিত) নিদর্শনসমূহকে। ওয়ালাশ শাহরাল হারামা = আর হারাম মাসসমূহকে (০২: ২১৭, ০২: ১৯৪)। ওয়ালাল হাদইয়া = আর হাদইয়ুকে (হাদিয়াকে)। ওয়ালাল ক্বালায়িদা = আর কালায়িদাকে/ গলায় মালা পরানো মানতের পশুগুলোকে। ওয়ালাল আম্মীনাল বাইতাল হারামা = আর আল বাইতুল হারামের অভিযাত্রীদেরকে। ইয়াবতাগূনা = যারা তালাশ করে। ফাদলাম মির রব্বিহিম ওয়া রিদওয়ানান = তাদের রবের ফদল/ অনুগ্রহ ও রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। ওয়া = আর। ইযা = যখন। হালালতুম = তোমরা হালাল অবস্থায় পৌঁছবে/ ইহরাম থেকে মুক্ত হবে। ফাসতদূ = তখন শিকার করতে পারো। ওয়া লা ইয়াজরিমান্নাকুম = আর তোমাদেরকে যেন অপরাধপ্রবণ না করে। সানাআনু ক্বাওমিন = কোন কওমের সাথে শত্রুতা। আন = এ কারণে যে। সদ্দূকুম = তারা তোমাদেরকে বাধা দিয়েছে। আনিল মাসজিদিল হারাম = আল মাসজিদুল হারামে গমন থেকে। আন তা’তাদূ = এ বিষয়ে যে, এখন তোমরাই বাড়াবাড়ি/ সীমালংঘন করে ফেলো। ওয়া = আর। তাআওয়ানূ = তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো। আলাল বিররি ওয়াত তাকওয়া = সৎকর্ম ও তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতার কাজে। ওয়া = আর। লা তাআওয়ানূ = তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো না। আলাল ইছমি ওয়াল উদওয়ান = পাপ ও সীমালংঘনের কাজে। ওয়াততাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহ সচেতন হও। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। শাদীদুল ইক্বাব = শাস্তিদানে কঠোর।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা অবমাননা করো না আল্লাহর (উদ্দেশ্যে নির্ধারিত) নিদর্শনসমূহকে, আর হারাম মাসসমূহকে (০২: ২১৭, ০২: ১৯৪), আর (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ুকে (হাদিয়াকে), আর কালায়িদাতে (গলায় মালা পরানো মানতের পশুগুলোকে), আর আল বাইতুল হারামের অভিযাত্রীদেরকে, যারা তালাশ করে তাদের রবের ফদল/ অনুগ্রহ ও রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। আর যখন তোমরা হালাল অবস্থায় পৌঁছবে/ইহরাম থেকে মুক্ত হবে, তখন শিকার করকে পারো। আর তোমাদেরকে যেন অপরাধপ্রবণ না করে কোন কওমের সাথে শত্রুতা এ কারণে যে, তারা তোমাদেরকে বাধা দিয়েছে আল মাসজিদুল হারামে গমন থেকে, (অপরাধপ্রবণ না করে) এ বিষয়ে যে, এখন তোমরাই বাড়াবাড়ি/ সীমালংঘন করে ফেলো। আর তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো সৎকর্ম ও তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতার কাজে। আর তোমরা পরস্পরকে সাহায্য করো না পাপ ও সীমালংঘনের কাজে। আর তোমরা আল্লাহ সচেতন হও। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।

৫:৩
হুররিমাত = হারাম করা হয়েছে। আলাইকুমুল মাইতাতু = তোমাদের জন্য (০১) [জবেহ বা শিকার ছাড়া] মৃত জীব। ওয়াদ্দামু = (০২) রক্ত। ওয়া লাহমুল খিনজীর = (০৩) শুকরের গোশত। ওয়া মা উহিল্লা লিগাইরিল্লাহি বিহী = (০৪) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা খাদ্য। ওয়াল মুনখানিক্বাতু = (০৫) শ্বাসরোধে মৃত। ওয়াল মাওক্বূযাতু = (০৬) আঘাতে মৃত। ওয়াল মুতারাদ্দিয়াতু = (০৭) উঁচু থেকে পড়ে মৃত। ওয়ান নাতিহাতু = (০৮) অন্য প্রাণীর শিং এর আঘাতে মৃত। ওয়া মা আকালাছ ছাবউ = (০৯) হিংস্র প্রাণী কর্তৃক (কিছু অংশ) খাওয়ায় মৃত। ইল্লা মা যাককাইতুম = (এ পাঁচ প্রকারে আহত প্রাণী থেকে) যেটিকে তোমরা (যবেহের মাধ্যমে) যাকাত/ পরিশুদ্ধ করেছো সেটি ছাড়া। ওয়া মা যুবিহা আলান্নুসুবি = (১০) যা পূজার বেদীসমূহে যবেহ করা হয়েছে। ওয়া আন তাছতাক্বছিমূল আযলামি= (১১) যা ভাগ্য নির্ণায়ক তীরের মাধ্যমে বন্টন করা হয়েছে। যালিকুম ফিছকুন = এসব ফাসেকী কাজ। আল ইয়াওমা = আজ। ইয়ায়িছাল্লাযীনা কাফারূ = তারা নিরাশ হয়ে গেছে যারা কুফর করেছে। মিন দীনিকুম = তোমাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে। ফালা তাখশাওহুম = সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। ওয়াখশাওনি = আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। আলইয়াওমা = আজ। আকমালতু = আমি পরিপূর্ণ করে দিয়েছি। লাকুম = তোমাদের জন্য। দীনাকুম = তোমাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা। ওয়া = আর। আতমামতু = আমি সম্পূর্ণ করেছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। নি’মাতী = আমার নিয়ামত। ওয়া = আর। রাদীতু = আমি পছন্দ করেছি। লাকুমুল ইসলামা = তোমাদের জন্য ইসলামকে। দীনান = দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা হিসাবে। ফামানিদতুররা = তারপর যে বাধ্য হয়। ফিল মাখমাসাতিন = ক্ষুধার কারণে। গায়রা মুতাজানিফিল্লি ইছমিন = পাপের প্রবণতা ছাড়া। ফাইন্নাল্লাহা গাফূরুর রাহীম = তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

হারাম করা হয়েছে তোমাদের জন্য (০১) [জবেহ বা শিকার ছাড়া] মৃত জীব, (০২) রক্ত, (০৩) শুকরের গোশত, (০৪) আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা খাদ্য, (০৫) শ্বাসরোধে মৃত, (০৬) আঘাতে মৃত, (০৭) উঁচু থেকে পড়ে মৃত, (০৮) অন্য প্রাণীর শিং এর আঘাতে মৃত, (০৯) হিংস্র প্রাণী কর্তৃক (কিছু অংশ) খাওয়ায় মৃত। (এ পাঁচ প্রকারে আহত প্রাণী থেকে) যেটিকে তোমরা (যবেহের মাধ্যমে) যাকাত/ পরিশুদ্ধ করেছো সেটি ছাড়া। (১০) যা পূজার বেদীসমূহে যবেহ করা হয়েছে। (১১) যা ভাগ্য নির্ণায়ক তীরের মাধ্যমে বন্টন করা হয়েছে। এসব ফাসেকী কাজ। আজ তারা নিরাশ হয়ে গেছে যারা কুফর করেছে তোমাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা সম্পর্কে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। আজ আমি পরিপূর্ণ করে দিয়েছি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা। আর আমি সম্পূর্ণ করেছি তোমাদের উপর আমার নিয়ামত। আর আমি পছন্দ করেছি তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা হিসাবে। তারপর যে বাধ্য হয় ক্ষুধার কারণে, পাপের প্রবণতা ছাড়া, তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৫:৪
ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। মা যা উহিল্লা লাহুম = কী কী হালাল করা হয়েছে তাদের জন্য? ক্বূল = বলো। উহিল্লা লাকুমুত তইয়িবাতু = হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্যসমূহ। ওয়া মা আল্লামতুম = আর যেগুলোকে তোমরা শিক্ষা দিয়েছো। মিনাল জাওয়ারিহিল মুকাল্লিবীনা = শিকারী কুকুরগুলোর মধ্য থেকে। তুআল্লিমূনাহুন্না = সেগুলোকে তোমরা শিক্ষা দিয়েছো। মিম্মা আল্লামাকুমুল্লাহু = তা থেকে যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। ফাকুলূ = সুতরাং তোমরা খাও। মিম্মা = তা থেকে যা। আমছাকনা = সেগুলো (= শিকারী কুকুরগুলো) ধরে আনে। আলাইকুম = তোমাদের জন্য। ওয়াযকুরুছমাল্লাহি আলাইহি = আর (শিকারী কুকুরকে ছাড়ার সময়) তোমরা স্মরণ করো আল্লাহর নাম উহার উপর (= শিকারের উপর)। ওয়াত্তাকুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ইন্নাল্লাহা ছারীউল হিসাব = নিশ্চয় আল্লাহ হিসাবকরনে দ্রুততম।

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, কী কী হালাল করা হয়েছে তাদের জন্য? বলো, ‘হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্যসমূহ’। আর যেগুলোকে তোমরা শিক্ষা দিয়েছো শিকারী কুকুরগুলোর মধ্য থেকে সেগুলোকে তোমরা শিক্ষা দিয়েছো তা থেকে যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা খাও তা থেকে যা সেগুলো (= শিকারী কুকুরগুলো) ধরে আনে তোমাদের জন্য, আর (শিকারী কুকুরকে ছাড়ার সময়) তোমরা স্মরণ করো আল্লাহর নাম উহার উপর (= শিকারের উপর)। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাবকরনে দ্রুততম।

৫:৫
আল ইয়াওমা = আজ। উহিল্লা = হালাল করা হলো। লাকুমুত তইয়িবাতু = তোমাদের জন্য তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্যসমূহ। ওয়া = আর। তআমুল্লাযীনা উতুল কিতাবা = যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের (জবেহকৃত ও পাকানো পবিত্র) খাদ্য। হিল্লুল লাকুম = তোমাদের জন্য হালাল। ওয়া = আর। তআমুকুম = তোমাদের (জবেহকৃত ও পাকানো পবিত্র) খাদ্য। হিল্লুল লাহুম = তাদের জন্য হালাল। ওয়াল মুহসানাতু মিনাল মু’মিনীনা = আর (বিবাহের জন্য হালাল করা হলো) মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত মুহসানাতকে/ মজবুত ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারীদেরকে। ওয়াল মুহসানাতু মিনালল্লাযীনা উতুল কিতবি মিন ক্বাবলিকুম = আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে তাদের অন্তর্ভুক্ত মুহসানাতকে/ মজবুত ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারীদেরকে। ইযা = যখন। আতাইতুমূহুন্না = তোমরা দিয়ে দাও। উজূরাহুন্না = তাদের উজূর/ প্রাপ্য দেনমোহর। মুহসীনীনা = বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ পুরুষ হিসাবে। গায়রা মুছাফিহীনা = ব্যাভিচারী হিসাবে নয়। ওয়া লা মুত্তাখিজী আখদানিন = আর উপপত্নী গ্রহণকারী হিসাবে নয়। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াকফুর বিল ঈমানি = যে ঈমানের প্রতি কুফর করে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। হাবিতা = ব্যর্থ হবে। আমালুহু = তার আমল/ কাজ। ওয়া = আর। হুয়া = সে। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। মিনাল খাছিরীন = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

আজ হালাল করা হলো তোমাদের জন্য তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্যসমূহ। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের (জবেহকৃত ও পাকানো পবিত্র) খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল। আর তোমাদের (জবেহকৃত ও পাকানো পবিত্র) খাদ্য তাদের জন্য হালাল। আর (বিবাহের জন্য হালাল করা হলো) মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত মুহসানাতকে/ মজবুত ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারীদেরকে। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে তাদের অন্তর্ভুক্ত মুহসানাতকে/ মজবুত ব্যক্তিত্বসম্পন্না নারীদেরকে। যখন তোমরা দিয়ে দাও তাদের উজূর/ প্রাপ্য দেনমোহর, বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ পুরুষ হিসাবে, ব্যাভিচারী হিসাবে নয়, আর উপপত্নী গ্রহণকারী হিসাবে নয়। আর যে ঈমানের প্রতি কুফর করে, নিশ্চয় ব্যর্থ হবে তার আমল/ কাজ। আর সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

৫:৬
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। কুমতুম ইলাস সালাতি = তোমরা দাঁড়াও সালাতের জন্য। ফাগছিলূ = তখন তোমরা গোসল/ ধৌত করো। উজূহাকুম = তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ। ওয়া আইদিয়াকুম ইলাল মারাফিক্বী = আর তোমাদের হাতসমূহ কনুইসমূহ পর্যন্ত। ওয়ামছাহূ = আর তোমরা মাসেহ করো/ মুছে নাও। বিরুঊছিকুম = তোমাদের সমগ্র মাথাসমূহ। ওয়া আরজুলাকুম ইলাল কা’বাইনি = আর তোমাদের পাসমূহ টাখনুসমূহ পর্যন্ত। ওয়া = আর। ইন = যদি। কুনতুম জুনুবান = তোমরা জূনূব অবস্থায় থাক (= সহবাস, বীর্যপাত ও রজঃস্রাবজনিত অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাক)। ফাত্তাহহারূ = তাহলে তোমরা তাহারাত/ পবিত্রতা হাসিল করো। ওয়া = আর। ইন = যদি। কুনতুম মারদা = তোমরা অসুস্থ থাকো। আও = অথবা। আলা ছাফারিন = সফর অবস্থায় থাকো। আও = অথবা। জাআ = আসে। আহাদুম মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে কেউ। মিনাল গায়িতি = পায়খানা থেকে। আও = অথবা। লামাছতুমুন্নিছাআ = তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো। ফালাম তাজিদূ মাআন = তারপর পানি না পাও। ফাতাইয়াম্মামূ = তাহলে তোমরা তায়াম্মুম/ অনুসন্ধান করো। সায়ীদান তাইয়িবান = পবিত্র উচ্চভূমি। ফামছাহূ = তখন তোমরা মাসেহ করো/ মুছে নাও। বিউজূহিকুম = তোমাদের মুখমন্ডল। ওয়া আইদীকুম = আর তোমাদের হাতসমূহ। মিনহু = উহা থেকে। মা ইউরীদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন না। লিআজআলা আলাইকুম হারাজুন = তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখতে। ওয়ালাকিন = কিন্তু। ইউরীদু = তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন। লিইউতহহিরাকুম = তোমাদেরকে পবিত্র করতে। ওয়া লিইউতিম্মা = আর সম্পূর্ণ করতে। নি’মাতাহু = তাঁর নিয়ামত। আলাইকুম = তোমাদের উপর। লাআল্লাকুম তাশকুরূন = যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা দাঁড়াও সালাতের জন্য, তখন তোমরা গোসল/ ধৌত করো তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ, আর তোমাদের হাতসমূহ কনুইসমূহ পর্যন্ত, আর তোমরা মাসেহ করো/ মুছে নাও তোমাদের সমগ্র মাথাসমূহ আর (ধৌত করো) তোমাদের পাসমূহ টাখনুসমূহ পর্যন্ত। আর যদি তোমরা জূনূব অবস্থায় থাক (= সহবাস, বীর্যপাত ও রজঃস্রাবজনিত অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় থাক), তাহলে তোমরা তাহারাত/ পবিত্রতা হাসিল করো। আর যদি তোমরা অসুস্থ থাকো অথবা সফর অবস্থায় থাকো অথবা আসে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ পায়খানা থেকে অথবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো তারপর পানি না পাও, তাহলে তোমরা তায়াম্মুম/ অনুসন্ধান করো পবিত্র উচ্চভূমি, তখন তোমরা মাসেহ করো/ মুছে নাও তোমাদের মুখমন্ডল আর তোমাদের হাতসমূহ উহা থেকে। আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন না তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখতে। কিন্তু তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে পবিত্র করতে, আর সম্পূর্ণ করতে তাঁর নিয়ামত তোমাদের উপর। যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

৫:৭
ওয়াযকুরু = আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতাল্লাহি আলাইকুম = তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে। ওয়া = আর। মীছাক্বাহু = তাঁর গৃহীত মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। আল্লাযী ওয়াছাকাকুম বিহী = যে মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি তিনি তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছেন। ইয ক্বুলতুম = এ কথার মাধ্যমে যে, তোমরা বলেছো। ছামি’না ওয়া আতা’না = আমরা শুনেছি ও ইতায়াত/ আনুগত্য করেছি। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। ইন্নাল্লাহা আলীমুম বিযাতিস সুদূর = নিশ্চয় আল্লাহ জ্ঞাত (= যিনি জানেন) মস্তিষ্কসমূহের চিন্তাধারা সম্পর্কে।

আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামতকে। আর তাঁর গৃহীত মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি, যে মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি তিনি তোমাদের থেকে গ্রহণ করেছেন এ কথার মাধ্যমে যে, তোমরা বলেছো, ‘আমরা শুনেছি ও ইতায়াত/ আনুগত্য করেছি’। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ জ্ঞাত (= যিনি জানেন) মস্তিষ্কসমূহের চিন্তাধারা সম্পর্কে।

৫:৮
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। কূনূ ক্বাওয়ামীনা = তোমরা প্রতিষ্ঠিত থাকো। লিল্লাহি সুহাদাআ = আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসাবে। বিল কিসতি = ন্যায়বিচারের প্রতি। ওয়া লা ইয়াজরিমান্নাকুম = আর তোমাদেরকে যেন অপরাধপ্রবণ না করে। সানাআনু ক্বাওমিন = কোন কওমের সাথে শত্রুতা। আলা আল্লা তা’দিলূ = এ বিষয়ে যে, তোমরা আদল/ ন্যায়বিচার করতে পারো না। ই’দিলূ = আদল/ ন্যায়বিচার করো। হুয়া আক্বরাবু লিত তাক্বওয়া = উহাই তাকওয়ার নিকটতম। ইন্নাল্লাহা খাবীরুম বিমা তা’মালূন = নিশ্চয় আল্লাহ খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) তোমাদের আমলের বিষয়ে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা প্রতিষ্ঠিত থাকো আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসাবে ন্যায়বিচারের প্রতি। আর তোমাদেরকে যেন অপরাধপ্রবণ না করে কোন কওমের সাথে শত্রুতা এ বিষয়ে যে, তোমরা আদল/ ন্যায়বিচার করতে পারো না। আদল/ ন্যায়বিচার করো। উহাই তাকওয়ার নিকটতম। নিশ্চয় আল্লাহ খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) তোমাদের আমলের বিষয়ে।

৫:৯
ওয়াদাল্লাহুল্লাযীনা = আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। মাগফিরাতুন = মাগফিরাত/ ক্ষমা। ওয়া = আর। আজরুন আযীম = মহাপুরস্কার।

আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য আছে মাগফিরাত/ ক্ষমা আর মহাপুরস্কার।

৫:১০
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = আর। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুল জাহীম = আসহাবুল জাহীম (= যারা জাহান্নামের শাস্তি পাবে)।

আর যারা কুফর করেছে ও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, তারাই আসহাবুল জাহীম (= যারা জাহান্নামের শাস্তি পাবে)।

৫:১১
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। উযকুরূ = তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতাল্লাহি আলাইকুম = তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত। ইয = যখন। হাম্মা = হিম্মত করেছে। কাওমুন = একটি কওম। আইঁ ইয়াবছুতূ = প্রসারিত করতে। ইলাইকুম = তোমাদের দিকে। আইদিয়াহুম = তাদের হাতগুলো। ফাকাফফা = তখন তিনি ব্যাহত/ প্রতিহত/ নিবৃত্ত করেছেন। আইদিয়াহুম = তাদের হাতগুলোকে। আনকুম = তোমাদের থেকে। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু’মিনূনা = মু’মিনগণ ভরসা করা উচিত।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা যিকর/ স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত। যখন হিম্মত করেছে একটি কওম প্রসারিত করতে তোমাদের দিকে তাদের হাতগুলো, তখন তিনি ব্যাহত/ প্রতিহত/ নিবৃত্ত করেছেন তাদের হাতগুলোকে তোমাদের থেকে। আর আল্লাহকে ভয় করো। আর আল্লাহরই উপর মু’মিনগণ ভরসা করা উচিত।

৫:১২
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আখাযাল্লাহু = আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। মীছাক্বা বানী ইসরাইল = বানী ইসরাইলের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ওয়া = আর। বাআছনা = আমরা সমুত্থিত করেছি। মিনহুমুছনাই আশারা = তাদের মধ্য থেকে বারোজন। নাক্বীবা = নকীব/ অধিনায়ক। ওয়া = আর। ক্বলাল্লাহু = আল্লাহ বলেছেন। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মাআকুম = তোমাদের সাথে আছি। লাইন = যদি। আক্বামতুমুস সালাতা = তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া = আর। আতাইতুমুয যাকাতা = তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। ওয়া = আর। আমানতুম বিরুসূলী = তোমরা আমার রসূলগণের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করো। ওয়া = আর। আযযারতুমূহুম = তোমরা তাদের শক্তি যোগাও। ওয়া আক্বরাদতুমুল্লাহা ক্বারদান হাসানান = আর তোমরা আল্লাহকে করযে হাসানা/ উত্তম ঋণ দাও। লাউকাফফিরান্না = তাহলে নিশ্চয় আমি মোচন করবো। আনকুম = তোমাদের থেকে। ছাইয়িআতিকুম = তোমাদের মন্দ কাজগুলো। ওয়া = আর। লাউদখিলান্নাকুম = নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ফামান = অন্যদিকে যে। কাফারা = কুফর করেছে। বা’দা যালিকা = উহার পরও (= প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পরও)। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লা = সে পথভ্রষ্ট হয়েছে। ছাওয়াআছ ছাবীলা = ছাওয়াউস সাবীল/ সরল পথ থেকে।

আর নিশ্চয় আল্লাহ গ্রহণ করেছেন বানী ইসরাইলের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। আর আমরা সমুত্থিত করেছি তাদের মধ্য থেকে বারোজন নকীব/ অধিনায়ক। আর আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের সাথে আছি, যদি তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো আর তোমরা আমার রসূলগণের প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করো আর তোমরা তাদের শক্তি যোগাও আর তোমরা আল্লাহকে করযে হাসানা/ উত্তম ঋণ দাও। তাহলে নিশ্চয় আমি মোচন করবো তোমাদের থেকে তোমাদের মন্দ কাজগুলো আর নিশ্চয় আমি তোমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো জান্নাতে, জারি হয় যার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। অন্যদিকে যে কুফর করেছে উহার পরও (= প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার পরও) তোমাদের মধ্য থেকে, নিশ্চয় সে পথভ্রষ্ট হয়েছে ছাওয়াউস সাবীল/ সরল পথ থেকে।

৫:১৩
ফাবিমা নাক্বদিহিম মীছাক্বাহুম = সুতরাং তাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে। লাআন্নাহুম = আমরা তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছি। ওয়া = আর। জাআলনা ক্বুলূবাহুম = আমরা তাদের কলবসমূহকে করেছি। ক্বাছিয়াতান = কঠিন। ইউহাররিফূনাল কালিমা = তারা (তাওরাত/ ইনজীলের) কলেমাকে/ বাক্যকে বিকৃত করে। আন মাওয়াদিয়িহী = তার স্থান থেকে। ওয়া = আর। নাছূ = তারা ভুলে গেছে। হাযযাম মিম্মা যুককিরূ বিহী = তা থেকে একটি (বড়) অংশ যা তাদেরকে যিকর/ স্মারক/ সংবিধান হিসাবে দেয়া হয়েছে। ওয়া = আর। লা তাযালূ = তুমি সবসময়। তাত্তালিউ = উদিত/ অবগত হবে। আলা খায়িনাতিম মিনহুম = তাদের খেয়ানতের/ বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়ে। ইল্লা ক্বালীলাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অল্প কয়েকজনের ব্যাপারে ছাড়া। ফা’ফু আনহুম = সুতরাং তুমি তাদেরকে (= ঐ অল্পসংখ্যক লোককে, যারা খেয়ানতকারী নয় তবে তাদের কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে) উদারতা দেখাও। ওয়াসফাহ = আর তাদের (ছোট খাট ত্রুটি বিচ্যুতি) উপেক্ষা করো। ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুহসীনীন = নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন মুহসীনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।

সুতরাং তাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে আমরা তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছি আর আমরা তাদের কলবসমূহকে করেছি কঠিন। তারা (তাওরাত/ ইনজীলের) কলেমাকে/ বাক্যকে বিকৃত করে তার স্থান থেকে। আর তারা ভুলে গেছে তা থেকে একটি (বড়) অংশ যা তাদেরকে যিকর/ স্মারক/ সংবিধান হিসাবে দেয়া হয়েছে। আর তুমি সবসময় উদিত/ অবগত হবে তাদের খেয়ানতের/ বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়ে, তাদের মধ্যকার অল্প কয়েকজনের ব্যাপারে ছাড়া। সুতরাং তুমি তাদেরকে (= ঐ অল্পসংখ্যক লোককে, যারা খেয়ানতকারী নয় তবে তাদের কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে) উদারতা দেখাও আর তাদের (ছোট খাট ত্রুটি বিচ্যুতি) উপেক্ষা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন মুহসীনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।

৫:১৪
ওয়া = আর। মিনাল্লাযীনা = তাদের থেকে যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। নাসারা = নাসারা। আখাযনা মীছাক্বাহুম = আমরা গ্রহণ করেছি তাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ফানাছূ = তারপর তারা ভুলে গেছে। হাযযাম মিম্মা যুককিরূ বিহী = তা থেকে একটি (বড়) অংশ যা তাদেরকে যিকর/ স্মারক/ সংবিধান হিসাবে দেয়া হয়েছে। ফাআগরাইনা = সুতরাং আমরা বদ্ধমূল করে দিয়েছি। বায়নাহুমুল আদাওয়াতা = তাদের মধ্যে শত্রুতা। ওয়াল বাগদায়ি = ও বিদ্বেষ। ইলাল ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। ওয়া = আর। ছাওফা = শীঘ্রই। ইউনাব্বিউহুমুল্লাহু = আল্লাহ ব্যক্ত করবেন। বিমা কানূ ইয়াসনাউন = তাদের বানোয়াট বিষয় সম্পর্কে।

আর তাদের থেকে যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা নাসারা’, আমরা গ্রহণ করেছি তাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। তারপর তারা ভুলে গেছে তা থেকে একটি (বড়) অংশ যা তাদেরকে যিকর/ স্মারক/ সংবিধান হিসাবে দেয়া হয়েছে। সুতরাং আমরা বদ্ধমূল করে দিয়েছি তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ, ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। আর শীঘ্রই আল্লাহ ব্যক্ত করবেন তাদের বানোয়াট বিষয় সম্পর্কে।

৫:১৫
ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। রসূলুনা = আমাদের রসূল। ইউবাইয়িনু = সে বয়ান/ হুবহু স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। লাকুম = তোমাদের জন্য। কাছীরাম মিম্মা কুনতুম তুখফূনা = এমন অনেক বিষয় যা তোমরা গোপন করো। মিনাল কিতাবি = কিতাব থেকে। ওয়া = আর। ইয়া’ফু = সে উদারতা দেখায় । আন কাছীরিন = অনেক বিষয়ে। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে। নুরুন ওয়া কিতাবুম মুবীন = নূর/ আলো ও কিতাবুম মুবীন/ স্পষ্ট কিতাব (নূর ও কিতাবুম মুবীন হচ্ছে কুরআনের দুটি নাম)।

হে আহলে কিতাব, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে আমাদের রসূল। সে বয়ান/ হুবহু স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে তোমাদের জন্য এমন অনেক বিষয় যা তোমরা গোপন করো কিতাব থেকে (যা প্রকাশ করা অপরিহার্য)। আর সে উদারতা দেখায় অনেক বিষয়ে (যা অপ্রাসঙ্গিক বিধায় তা স্বত:ই বিলুপ্ত হয়ে যাবে)। নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে নূর/ আলো ও কিতাবুম মুবীন/ স্পষ্ট কিতাব (নূর ও কিতাবুম মুবীন হচ্ছে কুরআনের দুটি নাম)।

৫:১৬
ইয়াদী বিহিল্লাহু = উহা দ্বারা (= নূর ও কিতাবুম মুবীন দ্বারা, এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, নূর ও কিতাবুম মুবীন একই জিনিস) আল্লাহ হিদায়াত করেন। মানিত্তাবাআ = তাকে যে অনুসরণ করে। রিদওয়ানাহু = তাঁর সন্তুষ্টি। সুবুলুস সালামি = (হিদায়াত করেন) সুবুলুস সালাম/ শান্তির পথ। ওয়া = আর। ইউখরিজুহুম = তিনি তাদেরকে খারিজ/ বের করে আনেন। মিনায যুলুমাতি = যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে। ইলান নূরি = নূরের/ আলোর দিকে। বিইযনিহী = তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। ওয়া = আর। ইয়াহদীহিম = তিনি তাদেরকে হিদায়াত করেন। ইলা সিরাতিম মুসতাকীমা = সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের দিকে।

উহা দ্বারা (= নূর ও কিতাবুম মুবীন দ্বারা, এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, নূর ও কিতাবুম মুবীন একই জিনিস) আল্লাহ হিদায়াত করেন তাকে যে অনুসরণ করে তাঁর সন্তুষ্টি, (হিদায়াত করেন) সুবুলুস সালাম/ শান্তির পথ। আর তিনি তাদেরকে খারিজ/ বের করে আনেন যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে নূরের/ আলোর দিকে, তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। আর তিনি তাদেরকে হিদায়াত করেন সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের দিকে।

৫:১৭
লাক্বাদ = নিশ্চয়। কাফারাল্লাযীনা = তারা কুফর করেছে যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। হুয়াল মাছীহুবনু মারইয়ামা = তিনিই মাসীহ ইবনে মারইয়াম। ক্বুল = বলো। ফামাইঁ ইয়ামলিকু = তবে কে সক্ষম হবে। মিনাল্লাহি = আল্লাহর থেকে বাঁচাতে। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ইন = যদি। আরাদা = তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন। আইঁ ইউহলিকা = হালাক/ ধ্বংস করতে। আল মাসীহাবনা মারইয়ামা = মাসীহ ইবনে মারইয়ামকে। ওয়া = এবং। উম্মাহু = তার মাকে। ওয়া = এবং। মান = যারা আছে। ফিল আরদি = পৃথবীতে। জামীআ = তাদের সবাইকে? ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য। মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মা বায়নাহুমা = আসমানসমূহ ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মাঝে যাকিছু আছে সবার আধিপত্য। ইয়াখলুক্বু = তিনি সৃষ্টি করেন। মা ইয়াশাউ = যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

নিশ্চয় তারা কুফর করেছে যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই মাসীহ ইবনে মারইয়াম’। বলো, ‘তবে কে সক্ষম হবে আল্লাহর থেকে বাঁচাতে, কিছুমাত্রও; যদি তিনি এরাদা/ ইচ্ছা করেন হালাক/ ধ্বংস করতে মাসীহ ইবনে মারইয়ামকে এবং তার মাকে এবং যারা আছে পৃথবীতে তাদের সবাইকে?’ আর আল্লাহরই জন্য আসমানসমূহ ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মাঝে যাকিছু আছে সবার আধিপত্য। তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:১৮
ওয়া = আর। ক্বলাতিল ইয়াহুদু ওয়ান নাসারা = আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীগণ ও আল নাসারা/ চরমপন্থী খৃস্টানগণ বলেছে। নাহনু = আমরা। আবনাউল্লাহি = আল্লাহর পুত্র। ওয়া আহিব্বাউহু = আর তাঁর প্রিয়পাত্র। ক্বুল = বলো। ফালিমা = তাহলে কেন। ইউআযযিবুকুম = তিনি তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেন। বিযুনূবিকুম = তোমাদের পাপের কারণে। বাল = বরং। আনতুম = তোমরা। বাশারুম মিম্মান = তাদেরই মতো মানুষ যাদেরকে। খালাকা = তিনি সৃষ্টি করেছেন। ইয়াগফিরু = তিনি মাফ করেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইউআযযিবু = তিনি আযাব/ শাস্তি দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য। মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মা বায়নাহুমা = আসমানসমূহ ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মাঝে যাকিছু আছে সবার আধিপত্য। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। মাসীর = ফিরে যেতে হবে।

আর আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীগণ ও আল নাসারা/ চরমপন্থী খৃস্টানগণ বলেছে, ‘আমরা আল্লাহর পুত্র আর তাঁর প্রিয়পাত্র’। বলো, ‘তাহলে কেন তিনি তোমাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেন তোমাদের পাপের কারণে? বরং তোমরা তাদেরই মতো মানুষ যাদেরকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। তিনি মাফ করেন যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন আর তিনি আযাব/ শাস্তি দেন যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহরই জন্য আসমানসমূহ ও পৃথিবী এবং এ উভয়ের মাঝে যাকিছু আছে সবার আধিপত্য। আর তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।

৫:১৯
ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। রাসূলুনা = আমাদের রসূল। ইউবাইয়িনু = সে বয়ান/ হুবহু স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে। লাকুম = তোমাদের জন্য। আলা ফাতরাতিম মিনার রুসুলি = রসূলগণের প্রেরণে বিরতির পর। আন = যেন না। তাক্বুলূ = তোমরা বলতে পারো। মা জাআনা = না আমাদের কাছে এসেছে। মিন বাশীরিন = কোন সুসংবাদদাতা। ওয়া লা নাযীরিন = আর না কোন সাবধানকারী। ফাক্বাদ = সুতরাং নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বাশীরুন ওয়া নাযীরুন = সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী। ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

হে আহলে কিতাব, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে আমাদের রসূল। সে বয়ান/ হুবহু স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে তোমাদের জন্য, (সে এসেছে) রসূলগণের প্রেরণে বিরতির পর (= পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের শিক্ষা ম্লান হবার শেষ পর্বে); যেন না তোমরা বলতে পারো, ‘না আমাদের কাছে এসেছে কোন সুসংবাদদাতা আর না কোন সাবধানকারী’। সুতরাং নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে সুসংবাদদাতা ও সাবধানকারী। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:২০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিক্বাওমিহী = তার কওমকে উদ্দেশ্য করে। ইয়া ক্বওমিযকুরূ = হে আমার কওম, তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতাল্লাহি আলাইকুম = তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত। ইয = যখন। জাআলা = তিনি বানিয়েছেন। ফীকুম = তোমাদের মধ্যে। আম্বিয়াআ = অনেক নবী। ওয়া = আর। জাআলাকুম = তোমাদেরকে বানিয়েছেন। মুলূকান = শাসন ক্ষমতার অধিপতি। ওয়া = আর। আতাকুম = তোমাদের (এমন অনেক কিছু) দিয়েছেন। মা লাম ইউ’তি = যা তিনি দেননি। আহাদাম মিনাল আলামীন = বিশ্ববাসীদের মধ্য থেকে অন্য কাউকে।

আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মূসা বলেছে তার কওমকে উদ্দেশ্য করে, ‘হে আমার কওম, তোমরা যিকর/ স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত; যখন তিনি বানিয়েছেন তোমাদের মধ্যে অনেক নবী আর তোমাদেরকে বানিয়েছেন শাসন ক্ষমতার অধিপতি, আর তোমাদের (এমন অনেক কিছু) দিয়েছেন যা তিনি দেননি বিশ্ববাসীদের মধ্য থেকে অন্য কাউকে’।

৫:২১
ইয়া ক্বাওমিদখুলুল আরদাল মুক্বাদাছাতা = হে আমার কওম, তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো ‘আরদুল মুকাদ্দাসা’তে/ পবিত্র ভূমিতে। আল্লাতী = যা। কাতাবাল্লাহু = আল্লাহ লিখে দিয়েছেন/ বৈধ করে দিয়েছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। লা তারতাদ্দূ = তোমরা ফিরে যেও না/ মুরতাদ হয়ো না। আলা আদবারিকুম = তোমাদের পিছনের দিকে। ফাতানক্বালিবূ খাছিরীন = তাহলে তোমরা পাল্টে গিয়ে হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

হে আমার কওম, তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো ‘আরদুল মুকাদ্দাসা’তে/ পবিত্র ভূমিতে, যা আল্লাহ লিখে দিয়েছেন/ বৈধ করে দিয়েছেন তোমাদের জন্য। আর তোমরা মুরতাদ হয়ো না/ ফিরে যেও না তোমাদের পিছনের দিকে, তাহলে তোমরা পাল্টে গিয়ে হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

৫:২২
ক্বলূ = তারা বলেছে। ইয়া মূসা = হে মূসা। ইন্না = নিশ্চয়। ফীহা = উহাতে আছে। কাওমান জাব্বারীনা = প্রবল শক্তিধর এক কওম। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লান নাদখুলাহা = কখনো উহাতে প্রবেশ করবো না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াখরুজূ = তারা বেরিয়ে যাবে। মিনহা = উহা থেকে। ফাইন = সুতরাং যদি। ইয়াখরুজূ = তারা বেরিয়ে যায়। মিনহা = উহা থেকে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয় আমরা। দাখিলূন = প্রবেশকারী হবো।

তারা বলেছে, ‘হে মূসা নিশ্চয় উহাতে আছে প্রবল শক্তিধর এক কওম। আর নিশ্চয় আমরা কখনো উহাতে প্রবেশ করবো না, যতক্ষণ না তারা বেরিয়ে যাবে উহা থেকে। সুতরাং যদি তারা বেরিয়ে যায় উহা থেকে, তাহলে নিশ্চয় আমরা প্রবেশকারী হবো।

৫:২৩
ক্বলা = (তখন) বলেছে। রজূলানি মিনাল্লাযীনা ইয়াখাফূনা = ঐ ভীরু লোকদের মধ্য থেকে দুই ব্যক্তি। আনআমাল্লাহু = আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আলাইহিমা = যে দুজনের উপর। উদখুলূ আলাইহিমুল বাবা = তোমরা প্রবেশ করো তাদের সাথে মোকাবেলা করে সদর দরজা দিয়ে। ফাইযা = তাহলে যখন। দাখালতুমুহু = তোমরা উহাতে প্রবেশ করবে। ফাইন্নাকুম = তখন নিশ্চয় তোমরা। গালিবুন = বিজয়ী হবে। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফাতাওয়াক্কালূ = তোমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীনা = মু’মিনীন।

(তখন) বলেছে ঐ ভীরু লোকদের মধ্য থেকে দুই ব্যক্তি, আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন যে দুজনের উপর: ‘তোমরা প্রবেশ করো তাদের সাথে মোকাবেলা করে সদর দরজা দিয়ে। তাহলে যখন তোমরা উহাতে প্রবেশ করবে তখন নিশ্চয় তোমরা বিজয়ী হবে। আর আল্লাহরই উপর তোমরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো, যদি তোমরা হও মু’মিনীন’।

৫:২৪
ক্বলূ = তারা বলেছে। ইয়া মূসা = হে মূসা। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। লান নাদখুলাহা = উহাতে প্রবেশ করবো না। আবাদান = কখনোই। মা = যতক্ষণ। দামূ = তারা দায়েম/ অধিষ্ঠিত থাকবে। ফীহা = উহাতে। ফাযহাব = সুতরাং যাও। আনতা = তুমি। ওয়া = আর। রব্বুকা = তোমার রব। ফাক্বাতিলা = তারপর তোমরা উভয়ে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। হাহুনা = এখানে। ক্বায়িদূনা = বসে থাকবো।

তারা বলেছে, ‘হে মূসা, নিশ্চয় আমরা উহাতে প্রবেশ করবো না কখনোই, যতক্ষণ তারা দায়েম/ অধিষ্ঠিত থাকবে উহাতে। সুতরাং যাও তুমি আর তোমার রব, তারপর তোমরা উভয়ে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো। নিশ্চয় আমরা এখানে বসে থাকবো’।

৫:২৫
ক্বলা = মূসা বলেছে। রব্বি = আমার রব। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। লা আমলিকু = ক্ষমতা রাখি না। ইল্লা নাফসী ওয়া আখী = আমার ও আমার ভাইয়ের উপর ছাড়া অন্য কারো উপর। ফাফরুক্ব = সুতরাং আপনি বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে দিন। বায়নানা ও বায়নাল ক্বাওমিল ফাছিক্বীন = আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে’।

মূসা বলেছে, ‘আমার রব, নিশ্চয় আমি ক্ষমতা রাখি না আমার ও আমার ভাইয়ের উপর ছাড়া অন্য কারো উপর। সুতরাং আপনি বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে দিন আমাদের ও ফাসিক কওমের মধ্যে’।

৫:২৬
ক্বলা = আল্লাহ বলেছেন। ফাইন্নাহা = তাহলে নিশ্চয় উহা। মুহাররমাতুন = হারাম/ নিষিদ্ধ করা হলো। আলাইহিম = তাদের উপর। আরবায়িনা ছানাতিন = চল্লিশ বছর পর্যন্ত। ইয়াতিহূনা = তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরবে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ফালা তা’ছা = সুতরাং তুমি দু:খ করো না। আলাল কওমিল ফাছিক্বীন = ফাসিক কওমের ব্যাপারে।

আল্লাহ বলেছেন, ‘তাহলে নিশ্চয় উহা হারাম/ নিষিদ্ধ করা হলো তাদের উপর চল্লিশ বছর পর্যন্ত। তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরবে পৃথিবীতে। সুতরাং তুমি দু:খ করো না ফাসিক কওমের ব্যাপারে।

৫:২৭
ওয়াতলু = তিলাওয়াত/ পাঠ করো। আলাইহিম = তাদের কাছে। নাবাআবনাই আদামা = আদমের দুই পুত্রের সংবাদ। বিল হাক্কি = যথাযথভাবে। ইয = যখন। ক্বাররাবা ক্বুরবানান = তারা দুজন কুরবান (আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা) পেশ করেছে। ফাতুক্বুব্বিলা = তখন কবুল করা হয়েছে। মিন আহাদিহিমা = তাদের দুজনের একজন থেকে। ওয়া = আর। লাম ইউতাক্বাব্বাল = কবুল করা হয়নি। মিনাল আখারি = অন্যজন থেকে। ক্বলা = (যার কুরবান কবুল করা হয়নি) সে বলেছে। লাআক্বতুলান্নাকা = নিশ্চয় আমি তোমাকে হত্যা করবো। ক্বলা = (যার কুরবান কবুল করা হয়েছে) সে বলেছে। ইন্নামা = নিশ্চয়। ইয়াতাক্বাব্বালুল্লাহু = আল্লাহ কবুল করেন। মিনাল মুত্তাক্বীন = মুত্তাকীদের থেকে।

তিলাওয়াত/ পাঠ করো তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের সংবাদ যথাযথভাবে। যখন তারা দুজন কুরবান (আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা) পেশ করেছে, তখন কবুল করা হয়েছে তাদের দুজনের একজন থেকে আর কবুল করা হয়নি অন্যজন থেকে। (যার কুরবান কবুল করা হয়নি) সে বলেছে, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে হত্যা করবো’। (যার কুরবান কবুল করা হয়েছে) সে বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ কবুল করেন মুত্তাকীদের থেকে।

৫:২৮
লাইম বাছাত্তা = যদি তুমি প্রসারিত করো। ইলাইয়া = আমার দিকে। ইয়াদাকা = তোমার হাত। লিতাক্বতুলানী = আমাকে হত্যা করার জন্য। মা আনা বিবাছিতিন ইয়াদিয়া = আমি হবো না আমার হাতের সম্প্রসারণকারী। ইলাইকা = তোমার দিকে। লিআক্বতুলাকা = তোমাকে হত্যা করার জন্য। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফুল্লাহু = ভয় করি আল্লাহকে। রব্বাল আলামীনা = যিনি মহাবিশ্বের রব।

যদি তুমি প্রসারিত করো আমার দিকে তোমার হাত আমাকে হত্যা করার জন্য, তবু (তোমার এ অপতৎপরতা দেখেই) আমি হবো না আমার হাতের সম্প্রসারণকারী তোমার দিকে তোমাকে হত্যা করার জন্য {= তুমি আমাকে আক্রমণ করতে যাচ্ছো দেখেও আমি প্রথম আক্রমণকারী হবো না}। নিশ্চয় আমি ভয় করি আল্লাহকে যিনি মহাবিশ্বের রব’।

৫:২৯
ইন্নী = নিশ্চয় আমি। উরীদু = এরাদা/ ইচ্ছা করি। আন = যে। তাবুআ = তুমিই ফিরে যাও। বিইছমী = আমার পাপ নিয়ে (আমার আত্মরক্ষার চেষ্টাজনিত ক্ষয়ক্ষতির গুনাহ নিয়ে)। ওয়া ইছমিকা = আর তোমার পাপ নিয়ে (তোমার অন্যায় হত্যা প্রচেষ্টার গুনাহ নিয়ে)। ফাতাকূনা = তারপর তুমি হয়ে যাও। মিন আসহাবিন নারি = আসহাবুন নারের (যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদের) অন্তর্ভুক্ত। ওয়া = আর। যালিকা = উহাই। জাযাউয যলিমীন = যালিমদের কর্মফল।

নিশ্চয় আমি এরাদা/ ইচ্ছা করি যে, (যদি তুমি বিরত না হও তবে) তুমিই ফিরে যাও আমার পাপ নিয়ে (আমার আত্মরক্ষার চেষ্টাজনিত ক্ষয়ক্ষতির গুনাহ নিয়ে) আর তোমার পাপ নিয়ে (তোমার অন্যায় হত্যা প্রচেষ্টার গুনাহ নিয়ে)। তারপর তুমি হয়ে যাও আসহাবুন নারের (যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে তাদের) অন্তর্ভুক্ত। আর উহাই যালিমদের কর্মফল।

৫:৩০
ফাতওয়্যাআত লাহু = তারপর তার জন্য অনুগত হয়েছে। নাফসাহু = তার নফস। ক্বাতলা আখিহী = তার ভাইকে হত্যা করতে। ফাক্বাতালাহু = তাই সে তাকে হত্যা করেছে। ফাআসবাহা = সুতরাং সে হয়ে গেছে। মিনাল খাছিরীন = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপর তার জন্য অনুগত হয়েছে তার নফস তার ভাইকে হত্যা করতে। তাই সে তাকে হত্যা করেছে। সুতরাং সে হয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।

৫:৩১
ফাবাআছাল্লাহু = তারপর আল্লাহ পাঠিয়েছেন। গুরাবান = একটি কাক। ইয়াবহাছু ফিল আরদি = যা ভূমির মধ্যে খোঁচাখোঁচি করতে লাগলো। লিইউরিয়াহু = তাকে দেখানোর জন্য। কায়ফা = কিভাবে। ইউওয়ারী = ঢেকে রাখবে। ছাওআতা আখীহি = তার ভাইয়ের (মৃত) দেহ। ক্বলা = সে বলেছে। ইয়াওয়ালাতী = হায়! আমার আফসোস! আআজাযতু = আমি কি অক্ষম হইনি? আন = এ ব্যাপারে যে। আকূনা = আমি হবো। মিছলা হাযাল গুরাবি = এই কাকটির মতো। ফাউওয়ারিয়া = যেন আমি ঢেকে রাখতে পারি। ছাওআতা আখী = আমার ভাইয়ের (মৃত) দেহ। ফাআসবাহা = সুতরাং সে হয়ে গেছে। মিনান নাদিমীন = অনুতাপকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপর আল্লাহ পাঠিয়েছেন একটি কাক যা ভূমির মধ্যে খোঁচাখোঁচি করতে লাগলো, তাকে দেখানোর জন্য কিভাবে ঢেকে রাখবে তার ভাইয়ের (মৃত) দেহ। সে বলেছে, ‘হায়! আমার আফসোস! আমি কি অক্ষম হইনি এ ব্যাপারে যে, আমি হবো এই কাকটির মতো, যেন আমি ঢেকে রাখতে পারি আমার ভাইয়ের (মৃত) দেহ? সুতরাং সে হয়ে গেছে অনুতাপকারীদের অন্তর্ভুক্ত।

৫:৩২
মিন আজলি যালিকা = এই কারণেই (= মানুষের মধ্যে এই দুই ধরনের স্বভাব প্রকৃতির মানুষ থাকার কারণেই)। কাতাবনা = আমরা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি। আলা বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলের উপর। আন্নাহু = এই (চিরন্তন আইন) যে। মান = যে। ক্বাতালা = হত্যা করেছে। নাফসান = কোন ব্যক্তিকে। বিগায়রি নাফসিন = সে অন্য কোন ব্যক্তির হত্যাকারী না হওয়া সত্ত্বেও। আও ফাসাদিন ফিল আরদি = অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিশৃংখলাসৃষ্টি না করা সত্ত্বেও। ফাকাআন্নামা = তাহলে সে যেন। ক্বাতালান্নাছা জামীআ = হত্যা করেছে সমগ্র মানবজাতিকে। ওয়া = আর। মান = যে। আহইয়াহা = তাকে (= কোন ব্যক্তিকে) বাঁচিয়েছে। ফাকাআন্নামা = সে যেন। আহইয়ান্নাছা জামীআ = বাঁচিয়েছে সমগ্র মানবজাতিকে। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। জাআতুহুম = তাদের কাছে এসেছে। রুসুলুনা = আমাদের রসূলগণ। বিল বাইয়িনাতি = স্পষ্ট প্রমাণসহ। ছুম্মা = তারপর। ইন্না = নিশ্চয়। কাছীরাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেকে। বা’দা যালিকা = উহার পরও। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। লামুছরিফূন = সীমালংঘনকারী হয়ে আছে।

এই কারণেই (= মানুষের মধ্যে এই দুই ধরনের স্বভাব প্রকৃতির মানুষ থাকার কারণেই) আমরা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি বানী ইসরাইলের উপর এই (চিরন্তন আইন) যে, যে হত্যা করেছে কোন ব্যক্তিকে সে অন্য কোন ব্যক্তির হত্যাকারী না হওয়া সত্ত্বেও অথবা পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিশৃংখলাসৃষ্টি না করা সত্ত্বেও; তাহলে সে যেন হত্যা করেছে সমগ্র মানবজাতিকে। আর যে তাকে (= কোন ব্যক্তিকে) বাঁচিয়েছে সে যেন বাঁচিয়েছে সমগ্র মানবজাতিকে। আর নিশ্চয় তাদের কাছে এসেছে আমাদের রসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণসহ। তারপর নিশ্চয় তাদের মধ্যকার অনেকে উহার পরও পৃথিবীতে সীমালংঘনকারী হয়ে আছে।

৫:৩৩
ইন্নামা = নিশ্চয়। জাযাউল্লাযীনা = তাদের প্রতিফল যারা। ইউহারিবূনাল্লাহা ওয়া রাসূলাহু = আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে (= আল্লাহর প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী রসূলের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা উৎখাতের জন্য যুদ্ধ করে)। ওয়া = আর। ইয়াছআও = প্রচেষ্টা চালায়। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ফাসাদান = ফাসাদ/ বিশৃংখলা করার। আইঁ ইউক্বাত্তালূ = (তাদের প্রতিফল) এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে। আও = অথবা। ইউসল্লাবূ = তাদেরকে শূলে চড়ানো বা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে। আও = অথবা। তুক্বাত্তআ আইদীহিম ওয়া আরজুলাহুম মিন খিলাফিন = তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। আও = অথবা। ইউনফাও মিনাল আরদি = তাদেরকে দেশ থেকে অপসারিত করা হবে। যালিকা = উহা। লাহুম = তাদের জন্য। খিজইউন ফিদ দুনইয়া = দুনিয়ার জীবনের লাঞ্চনা। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য। ফিল আখিরাতি = আখিরাতের জীবনে আছে। আযাবুন আযীম = আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।

নিশ্চয় তাদের প্রতিফল যারা আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে (=আল্লাহর প্রদত্ত বিধান অনুযায়ী রসূলের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা উৎখাতের জন্য যুদ্ধ করে), আর প্রচেষ্টা চালায় পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিশৃংখলা করার (তাদের প্রতিফল) এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে। অথবা তাদেরকে শূলে চড়ানো বা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে। অথবা তাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে। অথবা তাদেরকে দেশ থেকে অপসারিত করা হবে। উহা তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনের লাঞ্চনা। আর তাদের জন্য আখিরাতের জীবনে আছে আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।

৫:৩৪
ইল্লাল্লাযীনা = তারা ছাড়া যারা তাওবা করেছে। মিন ক্বাবলি = এর আগে। আন = যে। তাক্বদিরূ আলাইহিম = তোমরা তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছো। ফা’লামূ = তাহলে জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

তারা ছাড়া যারা তাওবা করেছে এর আগে যে, তোমরা তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছো। তাহলে জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৫:৩৫
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানুত্তাক্বুল্লাহা = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওয়াছীলাতা = আর তোমরা তালাশ করো তাঁর দিকে নৈকট্যের উপায়/ ওসিলা। ওয়া জাহিদূ ফী সাবীলিহী = আর তোমরা জিহাদ ফী সাবীলিহী/ তাঁর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করো। লাআল্লাকুম তুফলিহূন = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর তোমরা তালাশ করো তাঁর দিকে নৈকট্যের উপায়/ ওসিলা (১৭:৫৭)। আর তোমরা জিহাদ ফী সাবীলিহী/ তাঁর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করো। যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।

৫:৩৬
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। লাও = যদি। আন্না লাহুম = তাদের করায়ত্ত হয়। মা ফিল আরদি জামীআ = যা কিছু আছে পৃথিবীতে তার সবকিছু। ওয়া = আর। মিছলাহু = তার সমপরিমাণ। মাআহু = তার সাথে যোগ হয়। লিইয়াফতাদূ বিহী = উহার দ্বারা তাদের মুক্তিপণ দেয়ার জন্য। মিন আযাবি ইয়াওমিল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতের/ কিয়ামাত দিবসের আযাবের থেকে বাঁচার জন্য। মা তুক্ববিলা মিনহুম = তা কবুল করা হবে না তাদের থেকে। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীম = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে যদি তাদের করায়ত্ত হয় যা কিছু আছে পৃথিবীতে তার সবকিছু আর তার সমপরিমাণ তার সাথে যোগ হয় উহার দ্বারা তাদের মুক্তিপণ দেয়ার জন্য। ইয়াওমুল কিয়ামাতের/ কিয়ামাত দিবসের আযাবের থেকে বাঁচার জন্য; তা কবুল করা হবে না তাদের থেকে। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৫:৩৭
ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করবে। আইঁ ইয়াখরাজূ = তারা বের হতে। মিনান্নারি = (জাহান্নামের) আগুন থেকে। ওয়া = অথচ। মা হুম বিখারিজীনা মিনহা = তারা তা থেকে বের হতে পারবে না। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুম মুক্বীম = আযাবুম মুকীম/ স্থায়ী শাস্তি।

তারা এরাদা/ ইচ্ছা করবে তারা বের হতে (জাহান্নামের) আগুন থেকে। অথচ তারা তা থেকে বের হতে পারবে না। আর তাদের জন্য আছে আযাবুম মুকীম/ স্থায়ী শাস্তি।

৫:৩৮
ওয়াছ ছারীক্বু = পুরুষ চোর। ওয়াছ ছারীক্বাতু = আর নারী চোর। ফাক্বতাঊ আইদিয়াহুমা = তোমরা কেটে দাও (বিচ্ছিন্ন না করে) উভয়ের হাতসমূহ। জাযাআম বিমা কাছাবা = উহার প্রতিফলস্বরূপ যা তারা উপার্জন করেছে (= তাদের অপরাধের শাস্তিস্বরূপ)। নাকালাম মিনাল্লাহি = ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষামূলক শাস্তি। ওয়াল্লাহু আযীযুন হাকীমুন = আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

পুরুষ চোর আর নারী চোর, তোমরা কেটে দাও (বিচ্ছিন্ন না করে) উভয়ের হাতসমূহ; উহার প্রতিফলস্বরূপ যা তারা উপার্জন করেছে (= তাদের অপরাধের শাস্তিস্বরূপ)। ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষামূলক শাস্তি। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৫:৩৯
ফামান = তারপর যে। তাবা = (চুরির সমস্ত সম্পদ ফিরত দিয়ে) তাওবা করবে। মিম বা’দি যুলমিহী = সে যুলুম/ চুরি করার পর। ওয়া = আর। আসলাহা = ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করবে। ফাইন্নাল্লাহা = তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়াতূবু আলাইহি = তার তাওবা কবুল করবেন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

তারপর যে (চুরির সমস্ত সম্পদ ফেরত দিয়ে) তাওবা করবে সে যুলুম/ চুরি করার পর, আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করবে, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৫:৪০
আলাম তা’লাম = তুমি কি জানো না। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ এমন যে। লাহু মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = তাঁরই অধিকারভুক্ত আসমানসমূহ ও যমিনের আধিপত্য। ইউআযযিবু = তিনি আযাব/ শাস্তি দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াগফিরু = তিনি মাগফিরাত/ ক্ষমা করেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (ক্ষমা করার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

তুমি কি জানো না, নিশ্চয় আল্লাহ এমন যে, তাঁরই অধিকারভুক্ত আসমানসমূহ ও যমিনের আধিপত্য? তিনি আযাব/ শাস্তি দেন যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর তিনি মাগফিরাত/ ক্ষমা করেন যাকে তিনি (ক্ষমা করার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৫:৪১
ইয়া আইয়ুহার রসূলু = হে রসূল। লা ইয়াহযুনকাল্লাযীনা = তাদের কার্যক্রম তোমাকে যেন বিষন্ন না করে যারা। ইউছারিঊনা = দ্রুত ধাবিত হয়। ফিল কুফরি = কুফরের মধ্যে। মিনাল্লাযীনা = তাদের মধ্য থেকে যারা। ক্বলূ = বলেছে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিআফওয়াহিহিম = তাদের মুখে। ওয়া = অথচ। লাম তু’মিন = ঈমান/ বিশ্বাস করেনি। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ। ওয়া = আর। মিনাল্লাযীনা = তাদের মধ্য থেকে যারা। হাদূ = ইহুদী হয়েছে। ছাম্মাঊনা = তারা শুনতে আগ্রহী থাকে। লিলকাযিবি = মিথ্যা কথার জন্য। ছাম্মাঊনা = শুনতে আগ্রহী থাকে। লিক্বাওমিন আখারীনা = অন্যান্য ক্বওমের জন্য যারা। লাম ইয়া’তূকা = তোমার কাছে আসেনি। ইউহাররিফূনাল কালিমা = তারা কালেমাকে/ বাক্যকে বিকৃত করে। মিম বা’দি মাওয়াদিয়িহি = উহার স্থান স্পষ্ট থাকার পরও। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। ইন = যদি। ঊতীতুম = তোমাদেরকে দেয়া হয়। হাযা = এই আদেশ। ফাখুজূহু = তাহলে তোমরা তা গ্রহণ করো। ওয়া = আর। ইল্লাম তু’তাওহু = যদি তা না দেয়া হয়। ফাহযারূ = তাহলে তোমরা তা বর্জন করো। ওয়া = আর। মাইঁ ইউরিদিল্লাহু ফিতনাতু = যাকে আল্লাহ ফিতনায়/ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলতে এরাদা/ ইচ্ছা করেন। ফালান তামলিকা লাহু = তুমি সক্ষম হবে না তাকে। মিনাল্লাহি সাইয়ান = আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে, কিছুমাত্রও। উলায়িকাল্লাযীনা = তারাই ঐসব লোক যাদের ক্ষেত্রে। লাম ইউরিদিল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেননি। আইঁ ইউতহহিরা = পবিত্র করতে। ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহকে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফিদ দুনইয়া = দুনিয়াতে। খিজইউন = লাঞ্চনা। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। আযাবুন আযীমুন = আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।

হে রসূল, তাদের কার্যক্রম তোমাকে যেন বিষন্ন না করে যারা দ্রুত ধাবিত হয় কুফরের মধ্যে; তাদের মধ্য থেকে যারা বলেছে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি’ তাদের মুখে, অথচ ঈমান/ বিশ্বাস করেনি তাদের কলবসমূহ; আর তাদের মধ্য থেকে যারা ইহুদী হয়েছে। তারা শুনতে আগ্রহী থাকে মিথ্যা কথার জন্য, শুনতে আগ্রহী থাকে অন্যান্য ক্বওমের জন্য যারা তোমার কাছে আসেনি। তারা কালেমাকে/ বাক্যকে বিকৃত করে উহার স্থান স্পষ্ট থাকার পরও। তারা বলে, ‘যদি তোমাদেরকে দেয়া হয় এই আদেশ, তাহলে তোমরা তা গ্রহণ করো, আর যদি তা না দেয়া হয়, তাহলে তোমরা তা বর্জন করো’। আর যাকে আল্লাহ ফিতনায়/ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলতে এরাদা/ ইচ্ছা করেন, তুমি সক্ষম হবে না তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে বাঁচাতে, কিছুমাত্রও। তারাই ঐসব লোক যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেননি পবিত্র করতে তাদের কলবসমূহকে। তাদের জন্য আছে দুনিয়াতে লাঞ্চনা আর তাদের জন্য আছে আখিরাতে আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।

৫:৪২
ছাম্মাঊনা = তারা শুনতে আগ্রহী থাকে। লিল কাযিবি = মিথ্যা কথার জন্য। আক্কালূনা লিছ ছুহতি = তারা অবৈধ মাল অধিক ভক্ষণকারী। ফাইন = যদি। জাঊকা = তারা তোমার কাছে আসে। ফাহকুম বায়নাহুম = তাহলে তুমি তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করে দাও। আও = অথবা। আ’রিদ আনহুম = তাদের (আভ্যন্তরীন বিবাদ বিষম্বাদের বিচার মীমাংসা করা) থেকে বিরত থাকো (তাদের বিচার তারাই করুক)। ওয়া = আর। ইন = যদি। তু’রিদ আনহুম = তুমি তাদের (আভ্যন্তরীন বিবাদ বিষম্বাদের বিচার মীমাংসা করা) থেকে বিরত থাকো। ফালাইঁ ইয়াদুররূকা = তাহলে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। ইন = যদি। হাকামতা = তুমি বিচার ফায়সালা করো। ফাহকুম বায়নাহুম = তাহলে তুমি তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করো। বিলক্বিছতি = ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউহিব্বুল মুক্বছিতীন = ভালবাসেন ন্যায়বিচারকারীদেরকে।

তারা শুনতে আগ্রহী থাকে মিথ্যা কথার জন্য। তারা অবৈধ মাল অধিক ভক্ষণকারী। যদি তারা তোমার কাছে আসে তাহলে তুমি তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করে দাও অথবা তাদের (আভ্যন্তরীন বিবাদ বিষম্বাদের বিচার মীমাংসা করা) থেকে বিরত থাকো (তাদের বিচার তারাই করুক)। আর যদি তুমি তাদের (আভ্যন্তরীন বিবাদ বিষম্বাদের বিচার মীমাংসা করা) থেকে বিরত থাকো, তাহলে তারা তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর যদি তুমি বিচার ফায়সালা করো, তাহলে তুমি তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করো ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন ন্যায়বিচারকারীদেরকে।

৫:৪৩
ওয়া = আর। কাইফা = কিরূপে। ইউহাক্কিমূনাকা = তারা তোমাকে বিচারক মানবে। ওয়া = অথচ। ইনদাহুমুত তাওরাতু = তাদের কাছে আছে তাওরাত। ফীহা = উহাতে আছে। হুকমুল্লাহি = আল্লাহর হুকুম। ছুম্মা = তারপর। ইয়াতাওয়াল্লাওনা = তারা মুখ ফিরিয়ে থাকে। মিম বা’দি যালিকা = উহার পরও। ওয়া = আর। মা উলায়িকা বিল মু’মিনীন = তারা মু’মিন নয়।

আর কিরূপে তারা তোমাকে বিচারক মানবে, অথচ তাদের কাছে আছে তাওরাত, উহাতে আছে আল্লাহর হুকুম। তারপর তারা মুখ ফিরিয়ে থাকে, উহার পরও। আর তারা মু’মিন নয়।

৫:৪৪
ইন্না আনযালনাত তাওরাতা = নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তাওরাত। ফীহা = উহার মধ্যে আছে। হুদাওঁ ওয়া নূরুন = হুদা/ হিদায়াত এবং নূর/ আলো। ইয়াকুমু বিহান্নাবিয়্যূনাল্লাযীনা আসলামূ = উহা দ্বারা বিচার ফায়সালা করতো নবীগণ, (আর নবীগণের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) তারা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছিলো। লিল্লাযীনা হাদূ = (বিচার ফায়সালা করতো) তাদের জন্য যারা (পরবর্তীতে) ইহুদী হয়ে গেছে। ওয়ার রব্বানিয়্যূনা = আর (বিচার ফায়সালা করতো) রব্বানীগণ/ রবের বিধান বাস্তবায়নকারীগণ। ওয়াল আহবারু = আর আহবার/ আলেমগণ। বিমাছতুহফিজূ = কারণ তাদেরকে হেফাযতকারী বানানো হয়েছিলো। মিন কিতাবিল্লাহি = আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে। ওয়া = আর। কানূ = তারা ছিলো। আলাইহি = তার ব্যাপারে। সুহাদাআ = সাক্ষ্যদাতা। ফালা তাখশাউন্নাছা = সুতরাং (তাদেরকে বলা হয়েছিলো) তোমরা মানুষকে ভয় করো না। ওয়াখশাওনি = আমাকেই ভয় করো। ওয়া = আর। লা তাশতারূ = তোমরা ক্রয় করো না। বিআয়াতী = আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে। ছামানান ক্বালীলান = তুচ্ছমূল্য। ওয়া = আর। মাল্লাম ইয়াহকুম = যারা বিচার ফায়সালা করে না। বিমা আনযালাল্লাহু = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা। ফাউলায়িকা হুমুল কাফিরূন = তারাই কাফির।

নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তাওরাত, উহার মধ্যে আছে হুদা/ হিদায়াত এবং নূর/ আলো। উহা দ্বারা বিচার ফায়সালা করতো নবীগণ, (আর নবীগণের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) তারা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছিলো, (বিচার ফায়সালা করতো) তাদের জন্য যারা (পরবর্তীতে) ইহুদী হয়ে গেছে, আর (বিচার ফায়সালা করতো) রব্বানীগণ/ রবের বিধান বাস্তবায়নকারীগণ আর আহবার/ আলেমগণ। কারণ তাদেরকে হেফাযতকারী বানানো হয়েছিলো আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে, আর তারা ছিলো তার ব্যাপারে সাক্ষ্যদাতা। সুতরাং (তাদেরকে বলা হয়েছিলো) তোমরা মানুষকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় করো। আর তোমরা ক্রয় করো না আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য (= পার্থিব সম্পদ)। আর যারা বিচার ফায়সালা করে না যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা, তারাই কাফির।

৫:৪৫
ওয়া = আর। কাতাবনা আলাইহিম ফীহা = আমরা উহাতে তাদের উপর বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি। আন্নান্নাফছু বিন নাফসি = যে, প্রাণের বদলে প্রাণ। ওয়াল আয়না বিল আয়নি = চোখের বদলে চোখ। ওয়াল আনফা বিল আনফি = নাকের বদলে নাক। ওয়াল উযুনা বিল উযুনি = কানের বদলে কান। ওয়াছ ছিন্না বিছ ছিন্নি = দাঁতের বদলে দাঁত। ওয়াল জুরুহা ক্বিসাসুন = যখমের বদলে সমান যখম। ফামান তাসাদ্দাকা বিহী = কিন্তু যে আহত ব্যক্তি কিসাস সদকা করে দেয়/ ক্ষমা করে দেয়। ফাহুয়া কাফফারাতুল্লাহু = উহা তার কাফফারা/ গুনাহ মাফের উপায় হবে। ওয়া = আর। মাল্লাম ইয়াহকুম = যারা বিচার ফায়সালা করে না। বিমা আনযালাল্লাহু = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা। ফাউলায়িকা হুমুয যালিমূন = তারাই যালিম।

আর আমরা উহাতে তাদের উপর বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত আর যখমের বদলে সমান যখম। কিন্তু যে আহত ব্যক্তি কিসাস সদকা করে দেয়/ ক্ষমা করে দেয়, উহা তার নিজের কাফফারা/ গুনাহ মাফের উপায় হবে। আর যারা বিচার ফায়সালা করে না যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা, তারাই যালিম।

৫:৪৬
ওয়া = আর। ক্বাফফাইনা আলা আসারিহিম = আমরা ঐ নবীগণের পরে পাঠিয়েছি। বিঈসাবনি মারইয়ামা = ঈসা ইবনে মারইয়ামকে। মুসাদ্দিক্বাল্লিমা বায়না ইয়াদায়হি মিনাত তাওরাতি = উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে যা তার সামনে অবশিষ্ট ছিলো তাওরাত থেকে। ওয়া = আর। আতাইনাহুল ইনজীলা = আমরা তাকে দিয়েছি ইনজীল। ফীহি = উহাতে আছে। হুদাওঁ ওয়া নূরুন = হুদা/ হিদায়াত এবং নূর/ আলো। ওয়া = আর। মুসাদ্দিক্বাল্লিমা বায়না ইয়াদায়হি মিনাত তাওরাতি = তা উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী যা তার সামনে অবশিষ্ট ছিলো তাওরাত থেকে। ওয়া = আর। হুদাওঁ ওয়া মাওয়িযাতাল্লিল মুত্তাক্বীনা = হুদা/ হিদায়াত এবং মাওয়িযা/ ওয়াজ/ উপদেশ, মুত্তাকীদের জন্য।

আর আমরা ঐ নবীগণের পরে পাঠিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে যা তার সামনে অবশিষ্ট ছিলো তাওরাত থেকে। আর আমরা তাকে দিয়েছি ইনজীল, উহাতে আছে হুদা/ হিদায়াত এবং নূর/ আলো। আর তা উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী যা তার সামনে অবশিষ্ট ছিলো তাওরাত থেকে, আর হুদা/ হিদায়াত এবং মাওয়িযা/ ওয়াজ/ উপদেশ, মুত্তাকীদের জন্য।

৫:৪৭
ওয়াল ইয়াহকুম আহলুল ইনজীলি = যেন বিচার ফায়সালা করে আহলুল ইনজীল/ ইনজীলের অনুসারীগণ। বিমা আনযালাল্লাহু ফীহি = আল্লাহ উহাতে যা নাযিল করেছেন তা দ্বারা। ওয়া = আর। মাল্লাম ইয়াহকুম = যারা বিচার ফায়সালা করে না। বিমা আনযালাল্লাহু = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা। ফাউলায়িকা হুমুল ফাসিকূন = তারাই ফাসিক।

যেন বিচার ফায়সালা করে আহলুল ইনজীল/ ইনজীলের অনুসারীগণ, আল্লাহ উহাতে যা নাযিল করেছেন তা দ্বারা। আর যারা বিচার ফায়সালা করে না যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা দ্বারা, তারাই ফাসিক।

৫:৪৮
ওয়া = আর। আনযালনা ইলাইকাল কিতাবা বিল হাক্কি = আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি কিতাব, সত্যসহকারে। মুসাদ্দিক্বাল্লিমা বায়না ইয়াদায়হি মিনাল কিতাবি = পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। ওয়া = এবং। মুহায়মিনান আলাইহি = মুহায়মিন/ সংরক্ষক। ফাহকুম বায়নাহুম = সুতরাং তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করো। বিমা আনযালাল্লাহু = আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দ্বারা। ওয়া = আর। লা তাত্তাবি’ = ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত বিধান। আম্মা জাআকা মিনাল হাক্কি = তোমার কাছে আসা সত্যকে (= কুরআনকে) ছেড়ে। লিকুল্লি জাআলনা মিনকুম = তাদের মধ্যকার প্রত্যেক (উম্মাত) এর জন্য (আমরা ঠিক করে দিয়েছি)। শিরআতান ওয়া মিনহাজান = শিরআতান/ শরীয়াত/ আইন এবং মিনহাজান/ শিষ্টাচারের নিয়মনীতি। ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাজাআলাকুম উম্মাতান ওয়াহিদাতান = তাহলে তোমাদেরকে এক উম্মাতে পরিণত করতে পারতেন। ওয়ালাকিল্লিইয়াবলুআকুম = কিন্তু তা করেননি, যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন। ফী মা আতাকুম = তোমাদেরকে যা দিয়েছেন সেই ব্যাপারে। ফাছতাবিকুল খায়রাত = সুতরাং তোমরা খায়রাত/ কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো। ইলাল্লাহি মারজিউকুম জামীআ = আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে। ফাইউনাব্বিউকুম = তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। বিমা কুনতুম ফীহি তাখতালিফূনা = সেই বিষয়ে যাতে তোমরা ইখতিলাফ/ মতভেদ করতে।

আর আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি কিতাব, সত্যসহকারে, যা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী এবং মুহায়মিন/ সংরক্ষক। সুতরাং তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করো আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দ্বারা। আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত বিধানের, তোমার কাছে আসা সত্যকে (= কুরআনকে) ছেড়ে। তাদের মধ্যকার প্রত্যেক (উম্মাত) এর জন্য (আমরা ঠিক করে দিয়েছি) শিরআতান/ শরীয়াত/ আইন এবং মিনহাজান/ শিষ্টাচারের নিয়মনীতি। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তোমাদেরকে এক উম্মাতে পরিণত করতে পারতেন। কিন্তু তা করেননি, যেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন তোমাদেরকে যা দিয়েছেন সেই ব্যাপারে। সুতরাং তোমরা খায়রাত/ কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো। আল্লাহর দিকেই ফিরে যেতে হবে তোমাদের সবাইকে। তখন তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন সেই বিষয়ে যাতে তোমরা ইখতিলাফ/ মতভেদ করতে।

৫:৪৯
ওয়া = আর। আনিহকুম বায়নাহুম = তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করো। বিমা আনযালাল্লাহু = আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দ্বারা। ওয়া = আর। লা তাত্তাবি’ আহওয়াআহুম = ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত বিধানের। ওয়াহযারহুম = আর তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকো। আইঁ ইয়াফতিনূকা = যেন না তারা তোমাকে ফেতনায়/ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে। আন বা’দি মা আনযালাল্লাহু ইলাইকা = আল্লাহ তোমার কাছে যা নাযিল করেছেন তার কোনটি প্রয়োগের ব্যাপারে। ফাইন = তারপর যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফা’লাম = তবে জেনে রাখো। আন্নামা = নিশ্চয়। ইউরীদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। আইঁ ইউসীবাহুম বিবা’দি যুনূবিহিম = যে, তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণে শাস্তি প্রদান করবেন। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। কাছীরাম মিনান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। লাফাছিকীন = ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী।

আর তাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করো আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা দ্বারা। আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত বিধানের। আর তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকো যেন না তারা তোমাকে ফেতনায়/ দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে আল্লাহ তোমার কাছে যা নাযিল করেছেন তার কোনটি প্রয়োগের ব্যাপারে। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন যে, তাদেরকে তাদের কিছু পাপের কারণে শাস্তি প্রদান করবেন। আর নিশ্চয় অধিকাংশ মানুষ ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী।

৫:৫০
আফাহুকমাল জাহিলিয়্যাতি ইয়াবগূনা = তাহলে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান তালাশ করে? ওয়া = আর। মান = কে। আহসানু = অধিক উত্তম। মিনাল্লাহি = আল্লাহর চেয়ে। হুকমাললিক্বাওমি ইউক্বীনুনা = হুকুম/ বিধান দেয়ার যোগ্যতায়, ইয়াকীনকারী/ প্রত্যয়শীল কওমের জন্য?

তাহলে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান তালাশ করে? আর কে অধিক উত্তম আল্লাহর চেয়ে, হুকুম/ বিধান দেয়ার যোগ্যতায়, ইয়াকীনকারী/ প্রত্যয়শীল কওমের জন্য?

৫:৫১
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাত্তাখিজুল ইয়াহুদা ওয়ান নাসারা আওলিয়াআ = তোমরা গ্রহণ করো না আল ইয়াহুদকে/ চরমপন্থী ইহুদীগণকে ও আল নাসারাকে/ চরমপন্থী খৃস্টানগণকে আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। বা’দুহুম আওলিয়াউ বা’দিন = তাদের একে অপরের বন্ধু। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াতাওয়াল্লাহুম মিনকুম = তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে ওলি/ বন্ধু বানাবে। ফাইন্নাহু মিনহুম = সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াহদিল কাওমায যালিমীনা = হিদায়াত করেন না যালিম কওমকে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা গ্রহণ করো না আল ইয়াহুদকে/ চরমপন্থী ইহুদীগণকে ও আল নাসারাকে/ চরমপন্থী খৃস্টানগণকে আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। তাদের একে অপরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে ওলি/ বন্ধু বানাবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম কওমকে।

৫:৫২
ফাতারাল্লাযীনা = তুমি তাদেরকে দেখবে। ফী ক্বুলূবিহিম = যাদের কলবসমূহে আছে। মারাদুন = রোগ/ ব্যাধি। ইউছারিঊনা = তারা দ্রুত ধাবিত হয়। ফীহিম = তাদের মধ্যে। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। তাখশা = আমরা ভয় করি। আন = যে। তুসীবানা = আমাদেরকে আক্রান্ত করবে। দায়িরাতুন = কোন বিপদ। ফাআছাল্লাহু = সুতরাং আশা করা যায় যে, আল্লাহ। আইঁ ইয়া’তিয়া বিলফাতহি = তোমাদেরকে বিজয় দেবেন। আও = অথবা। আমরিম মিন ইনদিহি = তাঁর পক্ষ থেকে (বিজয়ের ইঙ্গিতবহ) কোন বিষয়। ফাইউসবিহূ আলা মা আছাররূ ফী আনফুসিহিম নাদিমীন = তখন তারা হবে তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা মুনাফিকীর জন্য অনুতাপকারী।

তুমি তাদেরকে দেখবে যাদের কলবসমূহে আছে রোগ/ ব্যাধি। তারা দ্রুত ধাবিত হয় তাদের মধ্যে। তারা বলে, ‘আমরা ভয় করি যে, আমাদেরকে আক্রান্ত করবে কোন বিপদ’। সুতরাং আশা করা যায় যে, আল্লাহ তোমাদেরকে বিজয় দেবেন অথবা তাঁর পক্ষ থেকে (বিজয়ের ইঙ্গিতবহ) কোন বিষয়। তখন তারা হবে তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখা মুনাফিকীর জন্য অনুতাপকারী।

৫:৫৩
ওয়া = আর। ইয়াকুলুল্লাযীনা আমানূ = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা বলবে। আহাউলায়িল্লাযীনা = এই লোকেরাই কি তারা যারা। আক্বছামু বিল্লাহি = কসম করতো আল্লাহর নামে। জাহদা আইমানিহিম = তাদের শপথসমূহ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায়। ইন্নাহুম লামাআকুম = নিশ্চয় তারা তোমাদের সাথে আছে। হাবিতাত = ব্যর্থ হয়ে গেছে। আ’মালুহুম = তাদের আমলসমূহ। ফাআসবাহূ খাছিরীন = সুতরাং তারা হয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত।

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা বলবে, ‘এই লোকেরাই কি তারা যারা কসম করতো আল্লাহর নামে তাদের শপথসমূহ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায়: নিশ্চয় তারা তোমাদের সাথে আছে’। ব্যর্থ হয়ে গেছে তাদের আমলসমূহ, সুতরাং তারা হয়ে গেছে ক্ষতিগ্রস্ত।

৫:৫৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। মাইঁ ইয়ারতাদ্দা মিনকুম = যে ফিরে যাবে/ মুরতাদ হবে তোমাদের মধ্য থেকে। আন দীনিহি = তার দীন থেকে। ফাছাওফা = শীঘ্রই। ইয়া’তিল্লাহু = আল্লাহ নিয়ে আসবেন। বিক্বাওমিইঁ ইউহিব্বুহুম = এমন এক কওম, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন। ওয়া = আর। ইউহিব্বূনাহু = তারা তাঁকে ভালবাসবে। আযিল্লাতিন আলাল মু’মিনীনা = তারা মু’মিনদের প্রতি হবে কোমল। আয়িযাযাতিন আলাল কাফিরীনা = আর কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর। ইউজাহিদূনা ফী সাবীলিল্লাহি = তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে। ওয়া = আর। লা ইয়াখাফূনা লাওমাতা লায়িমিন = ভয় করবে না কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে। যালিকা = উহাই। ফাদলুল্লাহি = আল্লাহর ফদল/ অনুগ্রহ। ইউ’তীহি = তিনি তা দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (তা দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ওয়াছিউন আলীমুন = ওয়াসি/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যে ফিরে যাবে/ মুরতাদ হবে তোমাদের মধ্য থেকে তার দীন থেকে, শীঘ্রই আল্লাহ (তাদের পরিবর্তে) নিয়ে আসবেন এমন এক কওম, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন আর তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মু’মিনদের প্রতি হবে কোমল আর কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবে। আর ভয় করবে না কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে। উহাই আল্লাহর ফদল/ অনুগ্রহ, তিনি তা দেন যাকে তিনি (তা দেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ ওয়াসি/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।

৫:৫৫
ইন্নামা = নিশ্চয়। ওয়ালিয়্যিকুমুল্লাহু = তোমাদের ওয়ালি/ পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আল্লাহ। ওয়া রাসূলুহু = আর তাঁর রসূল। ওয়াল্লাযীনা আমানূল্লাযীনা = আর তারা যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, যারা। ইউক্বীমুনাছ ছালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করেছে। ওয়া = আর। ইউ’তূনায যাকাতা = যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করেছে। ওয়া = এবং (সেইসাথে)। হুম = তারা। রাকিয়ীন = রাকিয়ীন/ রুকুকারী।

নিশ্চয় তোমাদের ওয়ালি/ পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আল্লাহ আর তাঁর রসূল আর তারা যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, যারা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করেছে আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করেছে; এবং (সেইসাথে) তারা রাকিয়ীন/ রুকুকারী।

৫:৫৬
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াতাওয়াল্লাল্লাহু = যারা ওয়ালি/ পৃষ্ঠপোষক বানাবে আল্লাহকে। ওয়া রাসূলাহু = আর তাঁর রসূলকে। ওয়াল্লাযীনা আমানূ = আর তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয়। হিযবাল্লাহি হুমুল গালিবূন = হিজবুল্লাহ/ আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।

আর যারা ওয়ালি/ পৃষ্ঠপোষক বানাবে আল্লাহকে আর তাঁর রসূলকে আর তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। তাহলে নিশ্চয় হিজবুল্লাহ/ আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।

৫:৫৭
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাত্তাখিজুল্লাযীনাত্তাখাজূ = তোমরা গ্রহণ করো না তাদেরকে যারা গ্রহণ করেছে। দীনাকুম = তোমাদের দ্বীনকে। হুযুওয়াওঁ ওয়া লায়িবান = উপহাস ও খেলতামাশারূপে। মিনাল্লাযীনা উতুল কিতাবা = তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে। মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগে। ওয়াল কুফফারা = আর কাফিরগণকে। আওলিয়াআ = (গ্রহণ করো না) আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীন = মু’মিনীন।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা গ্রহণ করো না তাদেরকে যারা গ্রহণ করেছে তোমাদের দ্বীনকে উপহাস ও খেলতামাশারূপে তাদের মধ্য থেকে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে আর কাফিরগণকে, (গ্রহণ করো না) আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে; আর আল্লাহকে ভয় করো; যদি তোমরা হও মু’মিনীন।

৫:৫৮
ওয়া = আর। ইযা = যখন। নাদাইতুম = তোমাদেরকে ডাকা হয়। ইলাস সলাতিত্তাখাজূহা = সালাতের দিকে, তখন তারা উহাকে গ্রহণ করে। হুযুওয়াওঁ ওয়া লায়িবান = উপহাস ও খেলতামাশারূপে। যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এ কারণে যে তারা। ক্বাওমুল লা ইয়া’কিলূন = এমন কওম যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে না।

আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হয় সালাতের দিকে, তখন তারা উহাকে গ্রহণ করে উপহাস ও খেলতামাশারূপে। উহা এ কারণে যে, তারা এমন কওম যারা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে না।

৫:৫৯
ক্বুল = বলো। ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। হাল তানক্বিমূনা মিন্না = তোমরা কি আমাদেরকে দোষারোপ করছো। ইল্লা আন = এছাড়া অন্য কারণে যে। আমান্না বিল্লাহি = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া মা উনযিলা ইলাইনা = আর উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের প্রতি। ওয়া মা উনযিলা মিন ক্বাবলু = আর উহার প্রতিও যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের আগে। ওয়া আন্না = আর আসলে। আকছারাকুম = তোমাদের অধিকাংশ। ফাছিক্বূন = ফাসিক।

বলো, ‘হে আহলে কিতাব, তোমরা কি আমাদেরকে দোষারোপ করছো এছাড়া অন্য কারণে যে, আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি আর উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের প্রতি আর উহার প্রতিও যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের আগে? আর আসলে তোমাদের অধিকাংশ ফাসিক’।

৫:৬০
ক্বুল = বলো। হাল উনাব্বিউকুম = আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেবো। বিশাররিম মিন যালিকা মাছুবাতান ইনদাল্লাহি = উহার চেয়ে মন্দ প্রতিফলের সংবাদ যা আল্লাহর নিকট আছে? মান = যাকে। লা’নাতাল্লাহু = আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। ওয়া = আর। গাদিবা আলাইহি = তার উপর গযব দিয়েছেন। ওয়া = আর। জাআলা = বানিয়ে দিয়েছেন। মিনহুমুল কিরাদাতা ওয়াল খানাজীরা = তাদের মধ্য থেকে বানর ও শুকর। ওয়া = আর। আবাদাত তাগুত = যে ইবাদাত/ দাসত্ব করেছে তাগুতের (= যারা আল্লাহর আইনের বিপরীত আইন প্রতিষ্ঠিত রাখে তাদের)। উলায়িকা = উহারাই। শাররুম মাকানান = অত্যন্ত মন্দ তাদের অবস্থানে। ওয়া = আর। আদল্লু = অধিক বিভ্রান্ত। আন ছাওয়াইস সাবীলি = সাওয়াউস সাবীল/ সরল পথ থেকে।

বলো, ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেবো উহার চেয়ে মন্দ প্রতিফলের সংবাদ যা আল্লাহর নিকট আছে? যাকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন আর তার উপর গযব দিয়েছেন আর বানিয়ে দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে বানর ও শুকর (অর্থাৎ বানর ও শুকর প্রকৃতির মানুষ)। আর যে ইবাদাত/ দাসত্ব করেছে তাগুতের (= যারা আল্লাহর আইনের বিপরীত আইন প্রতিষ্ঠিত রাখে তাদের); উহারাই অত্যন্ত মন্দ তাদের অবস্থানে আর অধিক বিভ্রান্ত সাওয়াউস সাবীল/ সরল পথ থেকে।

৫:৬১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। জাউকুম = তারা তোমাদের কাছে আসে। ক্বলূ = তারা বলে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। দাখালূ = তারা দাখিল হয়েছে/ প্রবেশ করেছে। বিল কুফরি = কুফর নিয়ে। ওয়া = আর। হুম = তারা। ক্বাদ = নিশ্চয়। খারাজূ = খারিজ/ বাহির হয়ে গেছে। বিহী = উহা নিয়ে (= কুফর নিয়ে)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আ’লামু = জানেন। বিমা কানূ ইয়াকতুমূন = যা তারা গোপন রেখেছিলো।

আর যখন তারা তোমাদের কাছে আসে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি’। অথচ নিশ্চয় তারা দাখিল হয়েছে/ প্রবেশ করেছে কুফর নিয়ে। আর তারা নিশ্চয় খারিজ/ বাহির হয়ে গেছে উহা নিয়ে (= কুফর নিয়ে)। আর আল্লাহ জানেন যা তারা গোপন রেখেছিলো।

৫:৬২
ওয়া = আর। তারা = তুমি দেখবে। কাছীরাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেককে। ইউছারিঊনা = তারা দ্রুত ধাবিত হয়। ফিল ইছমি = পাপে। ওয়াল উদওয়ানি = ও সীমালংঘনে। ওয়া = এবং। আকলিহিমুছ ছুহতা = অবৈধ মাল ভক্ষণে। লাবি’ছা = খুবই মন্দ। মা কানূ ইয়া’মালূন = যা তারা করে।

আর তুমি দেখবে তাদের মধ্যকার অনেককে, তারা দ্রুত ধাবিত হয় পাপে ও সীমালংঘনে এবং অবৈধ মাল ভক্ষণে। খুবই মন্দ যা তারা করে।

৫:৬৩
লাও = কেন। লা ইয়ানহাহুমুর রব্বানিয়্যূনা = বিরত রাখে না রব্বানীগণ। ওয়াল আহবারু = এবং আহবার/ আলেমগণ। আন ক্বাওলিহিমুল ইছমা = তাদেরকে পাপ কথা বলা থেকে। ওয়া = আর। আকলিহিমুছ ছুহতা = অবৈধ মাল ভক্ষণ করা থেকে। লাবি’ছা = খুবই মন্দ। মা কানূ ইয়াসনাঊনা = যা তারা করে।

কেন বিরত রাখে না রব্বানীগণ এবং আহবার/ আলেমগণ তাদেরকে পাপ কথা বলা থেকে আর অবৈধ মাল ভক্ষণ করা থেকে। খুবই মন্দ যা তারা করে।

৫:৬৪
ওয়া = আর। ক্বলাতিল ইয়াহুদু = আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীগণ বলেছে। ইয়াদুল্লাহি = আল্লাহর হাত। মাগলূলাতুন = আবদ্ধ। গুল্লাত আইদীহিম = (বরং) তাদের (= চরমপন্থী ইহুদীদের) হাতগুলোই আবদ্ধ হয়ে আছে। ওয়া = আর। লুয়িনূ = তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দেয়া হয়েছে। বিমা ক্বলূ = তারা যা বলেছে তার কারণে। বাল = বরং। ইয়াদাহু = তাঁর (= আল্লাহর) দুই হাতই। মাবছূততানি = উন্মুক্ত। ইউনফিক্বু = তিনি ইনফাক/ ব্যয় করেন। কায়ফা = যেভাবে। ইয়াশাউ = তিনি (ব্যয় করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। লাইয়াযিদান্না = বাড়িয়ে দেবে। কাছীরাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেকের ক্ষেত্রে। মা উনযিলা ইলাইকা = যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। তুগইয়ানান = (তা বাড়িয়ে দেবে তাদের) তুগইয়ান/ সীমালংঘন। ওয়া = ও। কুফরান = কুফর। ওয়া = আর। আলক্বাইনা = আমরা সঞ্চার করেছি। বায়নাহুমুল আদাওয়াতা = তাদের মধ্যে শত্রুতা। ওয়াল বাগদাআ = ও বিদ্বেষ। ইলা ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। কুল্লামা = যখনই। আওক্বাদূ = তারা জ্বালিয়েছে। নারাল্লিল হারবি = যুদ্ধের আগুন। আতফাআহাল্লাহু = আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। ওয়া = আর। ইয়াছআওনা = তারা চেষ্টা করে। ফিল আরদি ফাসাদান = পৃথিবীতে ফাসাদ করার। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়ুহিব্বুল মুফসিদীনা = ভালবাসেন না ফাসাদকারীদেরকে।

আর আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীগণ বলেছে, ‘আল্লাহর হাত আবদ্ধ’। (বরং) তাদের (= চরমপন্থী ইহুদীদের) হাতগুলোই আবদ্ধ হয়ে আছে। আর তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দেয়া হয়েছে তারা যা বলেছে তার কারণে। বরং তাঁর (= আল্লাহর) দুই হাতই উন্মুক্ত। তিনি ইনফাক/ ব্যয় করেন যেভাবে তিনি (ব্যয় করার) ইচ্ছা করেন। আর বাড়িয়ে দেবে তাদের মধ্যকার অনেকের ক্ষেত্রে যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে, (তা বাড়িয়ে দেবে তাদের) তুগইয়ান/ সীমালংঘন ও কুফর। আর আমরা সঞ্চার করেছি তাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ, ইয়াওমুল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। যখনই তারা জ্বালিয়েছে যুদ্ধের আগুন, আল্লাহ তা নিভিয়ে দিয়েছেন। আর তারা চেষ্টা করে পৃথিবীতে ফাসাদ/ ধ্বংসাত্মক কাজ করার। আর আল্লাহ ভালবাসেন না ফাসাদকারীদেরকে।

৫:৬৫
ওয়া লাও আন্না আহলাল কিতাবি আমানূ = আর যদি আহলে কিতাব ঈমান/ বিশ্বাস করতো। ওয়াত্তাক্বাও = আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো। লাকাফফারনা = তাহলে আমরা মুছে দিতাম। আনহুম = তাদের থেকে। ছাইয়িআতিহিম = তাদের মন্দ কাজগুলো। ওয়া = আর। লাআদখালনাহুম = (আখিরাতে) তাদেরকে প্রবেশ করাতাম। জান্নাতিন নায়ীমি = জান্নাতুন নায়ীমে/ নিয়ামাতপূর্ণ জান্নাতে।

আর যদি আহলে কিতাব ঈমান/ বিশ্বাস করতো আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করতো, তাহলে আমরা মুছে দিতাম তাদের থেকে তাদের মন্দ কাজগুলো আর (আখিরাতে) তাদেরকে প্রবেশ করাতাম জান্নাতুন নায়ীমে/ নিয়ামাতপূর্ণ জান্নাতে।

৫:৬৬
ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্নাহুম = তারা। আক্বামুত তাওরাতা ওয়াল ইনজীলা = কায়েম/ প্রতিষ্ঠা রাখতো তাওরাত ও ইনজীল। ওয়া মা উনযিলা ইলাইহিম মির রব্বিহিম = আর যা নাযিল করা হয়েছে তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে। লাআকালূ = তাহলে তারা খাদ্য পেতো। মিন ফাওক্বিহিম = তাদের উপর থেকে (= আসমান থেকে)। ওয়া = আর। মিন তাহতি আরজুলিহিম = তাদের পায়ের নিচ থেকে (= যমিন থেকে)। মিনহুম = তাদের মধ্যে আছে। উম্মাতুন মুক্বতাসিদাতুন = উম্মাতুন মুক্বতাসিদাতুন/ মিতাচারী উম্মাত (যারা আচার আচরণে ভালো)। ওয়া = আর। কাছীরুম মিনহুম = তাদের অধিকাংশই। ছাআ মা ইয়া’মালূন = মন্দ কাজ করে।

আর যদি তারা কায়েম/ প্রতিষ্ঠা রাখতো তাওরাত ও ইনজীল আর যা নাযিল করা হয়েছে তাদের প্রতি তাদের রবের পক্ষ থেকে, তাহলে তারা খাদ্য পেতো তাদের উপর থেকে (= আসমান থেকে) আর তাদের পায়ের নিচ থেকে (= যমিন থেকে)। তাদের মধ্যে আছে উম্মাতুন মুক্বতাসিদাতুন/ মিতাচারী উম্মাত (যারা আচার আচরণে ভালো)। আর তাদের অধিকাংশই মন্দ কাজ করে।

৫:৬৭
ইয়া আইয়ুহার রাসূলু = হে রসূল। বাল্লিগ = তাবলীগ করো/ পৌঁছে দাও। মা উনযিলা ইলাইকা মির রব্বিকা = যা নাযিল করা হয়েছে তোমার রবের পক্ষ থেকে (= কুরআন)। ওয়া = আর। ইল্লাম তাফআল = যদি তুমি তা না করো। ফামা বাল্লাগতা = তাহলে তুমি তাবলীগ করলে না/ পৌঁছে দিলে না। রিসালাতাহু = তাঁর রিসালাত/ বার্তা (= কুরআন)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’সিমুকা = তোমাকে রক্ষা করবেন। মিনান্নাছি = মানুষের কবল থেকে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াহদিল কাওমাল কাফিরীনা = হিদায়াত করেন না কাফির কওমকে।

হে রসূল, তাবলীগ করো/ পৌঁছে দাও যা নাযিল করা হয়েছে তোমার রবের পক্ষ থেকে (= কুরআন)। আর যদি তুমি তা না করো তাহলে তুমি তাবলীগ করলে না/ পৌঁছে দিলে না তাঁর রিসালাত/ বার্তা (= কুরআন)। আর আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন মানুষের কবল থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ হিদায়াত করেন না কাফির কওমকে।

৫:৬৮
ক্বুল = বলো। ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লাছতুম = তোমরা প্রতিষ্ঠিত নও। আলা সাইয়িন = কোন ভিত্তির উপর। হাত্তা = যতক্ষণ না। তুক্বীমুত তাওরাতা = তোমরা কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত করো তাওরাত। ওয়াল ইনজীলা = ও ইনজীল। ওয়া = আর। মা উনযিলা ইলাইকুম = যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। লাইয়াযিদান্না = বাড়িয়ে দেবে। কাছীরাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেকের ক্ষেত্রে। মা উনযিলা ইলাইকা = যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। তুগইয়ানান = (তা বাড়িয়ে দেবে তাদের) তুগইয়ান/ সীমালংঘন। ওয়া = ও। কুফরান = কুফর। ফালা তা’ছা = সুতরাং আফসোস করো না। আলাল কাওমিল কাফিরীনা = কাফির কওমের পরিণতির ব্যাপারে।

বলো, ‘হে আহলে কিতাব, তোমরা প্রতিষ্ঠিত নও কোন ভিত্তির উপর, যতক্ষণ না তোমরা কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত করো তাওরাত ও ইনজীল আর যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বাড়িয়ে দেবে তাদের মধ্যকার অনেকের ক্ষেত্রে যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি তোমার রবের পক্ষ থেকে (তা বাড়িয়ে দেবে তাদের) তুগইয়ান/ সীমালংঘন ও কুফর। সুতরাং আফসোস করো না কাফির কওমের পরিণতির ব্যাপারে।

৫:৬৯
ইন্না = নিশ্চয়। আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আল্লাযীনা = যারা। হাদূ = ইহুদী হয়েছে। ওয়া = আর। আস সাবিয়ূনা = সাবিয়ীন। ওয়া = আর। আন নাসারা = নাসারা/ খৃস্টান। মান = যে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করবে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। আল ইয়াওমিল আখিরি = ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ওয়া = আর। আমিলা সালিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করবে। ফালা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহযানূন = দু:খিত হবে।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর যারা ইহুদী হয়েছে আর সাবিয়ীন আর নাসারা/ খৃস্টান, যে-ই ঈমান/ বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করবে, তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে।

৫:৭০
লাক্বাদ = নিশ্চয়। আখাযনা = আমরা গ্রহণ করেছি। মীছাক্বা বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলের মীছাক/ প্রতিশ্রুতি। ওয়া = আর। আরছালনা = আমরা প্রেরণ করেছি। ইলাইহিম = তাদের কাছে। রুসুলান = অনেক রসূল। কুল্লামা = যখনই। জাআহুম = তাদের কাছে এসেছে। রাসূলুম বিমা লা তাহওয়া আনফুছুহুম = তা নিয়ে যা পছন্দ করে না তাদের নফসসমূহ। ফারীক্বান = কতজনকে। কাযযাবূ = তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। ওয়া = আর। ফারীক্বান = কতজনকে। ইয়াক্বতুলূনা = তারা কতল/ হত্যা করেছে।

নিশ্চয় আমরা গ্রহণ করেছি বানী ইসরাইলের মীছাক/ প্রতিশ্রুতি। আর আমরা প্রেরণ করেছি তাদের কাছে অনেক রসূল। যখনই তাদের কাছে এসেছে কোন রসূল তা নিয়ে যা পছন্দ করে না তাদের নফসসমূহ, কতজনকে তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আর কতজনকে তারা কতল/ হত্যা করেছে।

৫:৭১
ওয়া = আর। হাছিবূ = তারা হিসাব করেছিলো। আল্লা তাকূনা ফিতনাতুন = যে, কোন ফিতনা/ শাস্তি দেয়া হবে না। ফাআমূ = ফলে তারা অন্ধ হয়ে থাকলো। ওয়া = আর। সম্মূ = তারা বধির হয়ে থাকলো। ছুম্মা = তারপর। তাবাল্লাহু আলাইহিম = আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেছেন। ছুম্মা = তারপর আবার। আমূ = অন্ধ হয়ে গেলো। ওয়া = আর। সম্মূ = বধির হয়ে গেলো। কাছীরুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেকেই। ওয়াল্লাহু বাসীরুম বিমা ইয়া’মালূনা = আর আল্লাহ বাসীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) ঐ বিষয়ে যা তারা করে।

আর তারা হিসাব করেছিলো যে, কোন ফিতনা/ শাস্তি দেয়া হবে না। ফলে তারা অন্ধ হয়ে থাকলো আর তারা বধির হয়ে থাকলো। তারপর আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেছেন। তারপর আবার অন্ধ হয়ে গেলো আর বধির হয়ে গেলো তাদের মধ্যকার অনেকেই। আর আল্লাহ বাসীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) ঐ বিষয়ে যা তারা করে।

৫:৭২
লাক্বাদ = নিশ্চয়। কাফারাল্লাযীনা = তারা কুফর করেছে যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। হুয়াল মাসীহুবনু মারইয়ামা = তিনিই মাসীহ ইবনে মারইয়াম। ওয়া = অথচ। ক্বলাল মাসীহু = মাসীহ বলেছে। ইয়া বানী ইসরাইলা = হে বানী ইসরাইল। উ’বুদুল্লাহা = ইবাদাত/ দাসত্ব করো আল্লাহর। রব্বী ওয়া রব্বাকুম = যিনি আমারও রব, তোমাদেরও রব। ইন্নাহু = নিশ্চয়। মাইঁ ইউশরিক = যে শিরক করে। বিল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়ই। হাররামাল্লাহু = আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। আলাইহিল জান্নাতা = তার উপর জান্নাত। ওয়া = আর। মা’ওয়াহুন নারু = তার আবাস হবে (জাহান্নামের) আগুন। ওয়া = আর। মা লিয যালিমীনা = জালিমদের জন্য নেই। মিন = কোন। আনসারিন = আনসার/ সাহায্যকারী।

নিশ্চয় তারা কুফর করেছে যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই মাসীহ ইবনে মারইয়াম’। অথচ মাসীহ বলেছে, ‘হে বানী ইসরাইল, ইবাদাত/ দাসত্ব করো আল্লাহর, যিনি আমারও রব, তোমাদেরও রব। নিশ্চয় যে শিরক করে আল্লাহর সাথে, নিশ্চয়ই আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন তার উপর জান্নাত, আর তার আবাস হবে (জাহান্নামের) আগুন। আর জালিমদের জন্য নেই কোন আনসার/ সাহায্যকারী’।

৫:৭৩
লাক্বাদ = নিশ্চয়। কাফারাল্লাযীনা = তারা কুফর করেছে যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছালিছু ছালাছাতিন = তিনজনের একজন। ওয়া = অথচ। মিন ইলাহিন = কোন ইলাহ নেই। ইল্লা ইলাহুন ওয়াহিদুন = ইলাহুন ওয়াহিদুন/ একক ইলাহ ছাড়া। ওয়া = আর। ইল্লাম ইয়ানতাহূ = যদি তারা বিরত না হয়। আম্মা ইয়াক্বূলূনা = তা থেকে যা তারা বলে। লাইয়ামাচ্ছান্নাল্লাযীনা = তাহলে তাদেরকে স্পর্শ করবে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। আযাবুন আলীম = (স্পর্শ করবে) আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

নিশ্চয় তারা কুফর করেছে যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিনজনের একজন’। অথচ কোন ইলাহ নেই ইলাহুন ওয়াহিদুন/ একক ইলাহ ছাড়া। আর যদি তারা বিরত না হয় তা থেকে যা তারা বলে, তাহলে তাদেরকে স্পর্শ করবে যারা কুফর করেছে তাদের মধ্য থেকে, (স্পর্শ করবে) আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৫:৭৪
আফালা ইয়াতূবূনা ইলাল্লাহি = তবে কি তারা আল্লাহর দিকে তাওবা করবে না। ওয়া = আর। ইয়াছতাগফিরূনাহু = তাঁর কাছে মাগফিরাত/ ক্ষমা চাইবে না? ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

তবে কি তারা আল্লাহর দিকে তাওবা করবে না? আর তাঁর কাছে মাগফিরাত/ ক্ষমা চাইবে না? আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৫:৭৫
মাল মাছীহুবনু মারইয়ামা = মাসীহ ইবনে মারইয়াম ছিলো না। ইল্লা রসূলুন = রসূল ছাড়া আর কিছু। ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত = (মৃত্যু বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছিলো। মিন ক্বাবলিহির রুসুলু = তার আগে অনেক রসূল। ওয়া = আর। উম্মুহু = তার মা (মারইয়াম) ছিলো। সিদ্দীক্বাতুন = সিদ্দীকা/ সত্যনিষ্ঠা। কানা ইয়া’কুলানিত তআমা = তারা (মা ছেলে) দুজনই খাদ্য খেতো। উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। নুবাইয়্যিনু = আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি। লাহুমুল আয়াতি = তাদের জন্য আয়াতসমূহ। ছুম্মানযুর = তা সত্ত্বেও নজর/ লক্ষ্য করো। আন্না = কোথায়। ইউ’ফাকূনা = তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

মাসীহ ইবনে মারইয়াম ছিলো না রসূল ছাড়া আর কিছু। নিশ্চয় (মৃত্যু বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছিলো তার আগে অনেক রসূল। আর তার মা (মারইয়াম) ছিলো সিদ্দীকা/ সত্যনিষ্ঠা। তারা (মা ছেলে) দুজনই খাদ্য খেতো। নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপে আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করি তাদের জন্য আয়াতসমূহ। তা সত্ত্বেও নজর/ লক্ষ্য করো, কোথায় তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

৫:৭৬
ক্বুল = বলো। আতা’বুদূনা = তোমরা কি ইবাদাত/ দাসত্ব করো। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর। মা ইয়ামলিকু = যা আধিপত্য রাখে না। লাকুম দররান = তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি করার। ওয়া = আর। লা নাফআন = কোন উপকার করারও না। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। হুয়াছ ছামীউল আলীমু = তিনিই, ছামী/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা।

বলো, ‘তোমরা কি ইবাদাত/ দাসত্ব করো আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কিছুর, যা আধিপত্য রাখে না তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি করার আর কোন উপকার করারও না? আর আল্লাহ, তিনিই ছামী/ সর্বশ্রোতা, আলীম/ সর্বজ্ঞাতা।

৫:৭৭
ক্বুল = বলো। ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লা তাগলূ = তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। ফী দীনিকুম = তোমাদের দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে। গায়রাল হাক্বক্বি = অন্যায়ভাবে। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিঊ = তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। আহওয়াআ ক্বাওমিন = এমন কোনো কওমের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের/ বিধানের। ক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লূ = তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। মিন ক্বাবলু = ইতোপূর্বে। ওয়া আদল্লূ = আর বিভ্রান্ত করেছিলো। কাছীরান = অনেককে। ওয়া দল্লূ = আর তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। আন ছাওয়ায়িস সাবীলি = সাওয়াউস সাবীল/ সরল পথ থেকে।

বলো, ‘হে আহলে কিতাব, তোমরা বাড়াবাড়ি করো না তোমাদের দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে অন্যায়ভাবে। আর তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না এমন কোনো কওমের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের/ বিধানের, যারা বিভ্রান্ত হয়েছে ইতোপূর্বে এবং বিভ্রান্ত করেছে অনেককে এবং বিভ্রান্ত হয়েছে সাওয়াউস সাবীল/ সরল পথ থেকে।

৫:৭৮
লুয়িনাল্লাযীনা = তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দেয়া হয়েছে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। মিন বানী ইসরাঈলা = বানী ইসরাইলের মধ্য থেকে। আলা লিছানি দাউদা ওয়া ঈসাবনি মারইয়ামা = দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের ভাষায়। যালিকা = উহা। বিমা আসাও = এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে। ওয়া = আর। কানূ ইয়া’তাদূনা = তারা সীমালংঘন করতো।

তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দেয়া হয়েছে যারা কুফর করেছে বানী ইসরাইলের মধ্য থেকে, দাউদ ও ঈসা ইবনে মারইয়ামের ভাষায়। উহা এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে আর তারা সীমালংঘন করতো।

৫:৭৯
কানূ লা ইয়াতানাহাওনা = তারা পরস্পরকে নিষেধ করতো না। আম মুনকারিন = ঐ অন্যায় কাজ থেকে। ফাআলূহু = যা তারা করতো। লাবি’ছা = খুবই মন্দ। মা কানূ ইয়াফআলূনা = যা তারা করতো।

তারা পরস্পরকে নিষেধ করতো না ঐ অন্যায় কাজ থেকে যা তারা করতো। খুবই মন্দ যা তারা করতো।

৫:৮০
তারা = তুমি দেখেছো। কাছীরাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেককে। ইয়াতাওয়াল্লাওনাল্লাযীনা = তারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে যারা। কাফারূ = কুফর করে। লাবি’ছা = খুবই মন্দ। মা ক্বাদ্দামাত = যা আগে সম্পাদন করে রেখেছে। লাহুম = তাদের জন্য। আনফুছুহুম = তাদের নফসসমূহ। আন = এজন্য। ছাখিতাল্লাহু = আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আলাইহিম = তাদের উপর। ওয়া = আর। ফিল আযাবি = আযাবের মধ্যে। হুম = তারা। খালিদূনা = স্থায়ী হবে।

তুমি দেখেছো তাদের মধ্যকার অনেককে তারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে যারা কুফর করে। খুবই মন্দ যা আগে সম্পাদন করে রেখেছে তাদের জন্য তাদের নফসসমূহ। এজন্য আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়েছেন তাদের উপর। আর আযাবের মধ্যে তারা স্থায়ী হবে।

৫:৮১
ওয়া = আর। লাও = যদি। কানূ ইউ’মিনূনা = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়ান্নাবিয়্যি = আর নবীর প্রতি। ওয়া মা উনযিলা ইলাইহি = আর উহার প্রতি যা তার প্রতি নাযিল করা হয়েছে। মাত্তাখাজূহুম = তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করতো না। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। কাছীরাম মিনহুম = তাদের মধ্যকার অনেকেই। ফাছিক্বূন = ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী।

আর যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো আল্লাহর প্রতি আর নবীর প্রতি আর উহার প্রতি যা তার প্রতি নাযিল করা হয়েছে, তাহলে তাদেরকে গ্রহণ করতো না আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। কিন্তু তাদের মধ্যকার অনেকেই ফাসিক/ সত্যত্যাগী/ দুষ্কার্যকারী।

৫:৮২
লাতাজিদান্না = নিশ্চয় তুমি পাবে। আশাদ্দান্নাছা = মানুষের মধ্যে সর্বাধিক কঠিন/ উগ্র। আদাওয়াতাল্লিল্লাযীনা = তাদের প্রতি শত্রুতায় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আল ইয়াহূদা ওয়াল্লাযীনা আশরাকূ = আল ইয়াহুদকে/ চরমপন্থী ইহুদীদেরকে এবং তাদেরকে যারা শিরক করেছে। ওয়া = আর। লাতাজিদান্না = নিশ্চয় তুমি পাবে। আক্বরাবাহুম = তাদেরকে সবচেয়ে নিকটবর্তী। মাওয়াদ্দাতাল্লিল্লাযীনা = তাদের প্রতি বন্ধুত্বে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আল্লাযীনা = (নিকটবর্তী পাবে তাদেরকে) যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্না নাসারা = নিশ্চয় আমরা নাসারা। যালিকা = উহা। বিআন্না = এজন্য যে। মিনহুম = তাদের মধ্যে আছে। ক্বিছছিছীনা = অনেক পন্ডিত। ওয়া = আর। রুহবানান = অনেক রুহবান/ সাধু। ওয়া = আর। আন্নাহুম = তারা। লা ইয়াছতাকবিরূনা = অহংকার করে না।

নিশ্চয় তুমি পাবে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক কঠিন/ উগ্র তাদের প্রতি শত্রুতায় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আল ইয়াহুদকে/ চরমপন্থী ইহুদীদেরকে এবং তাদেরকে যারা শিরক করেছে। আর নিশ্চয় তুমি পাবে তাদেরকে সবচেয়ে নিকটবর্তী তাদের প্রতি বন্ধুত্বে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে (নিকটবর্তী পাবে তাদেরকে) যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা নাসারা’। উহা এজন্য যে, তাদের মধ্যে আছে অনেক পন্ডিত আর অনেক রুহবান/ সাধু, আর তারা অহংকার করে না।

৫:৮৩
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ছামিউ = তারা শুনবে। মা উনযিলা ইলার রসূলি = যা নাযিল করা হয়েছে রসূলের প্রতি। তারা = তুমি দেখবে। আ’ইউনাহুম = তাদের চোখগুলোকে। তাক্বিদু মিনাদ্দাময়ি = অশ্রুসিক্ত। মিম্মা আরাফূ মিনাল হাক্কি = এ কারণে যে, তারা চিনে যাবে মহাসত্যকে (= কুরআনকে)। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলবে। রব্বানা = আমাদের রব। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ফাকতুবনা = সুতরাং আমাদের নাম লিখে নিন। মাআশ শাহিদীন = শহীদদের/ সাক্ষ্যদাতাদের সাথে।

আর যখন তারা শুনবে যা নাযিল করা হয়েছে রসূলের প্রতি, তুমি দেখবে তাদের চোখগুলোকে অশ্রুসিক্ত, এ কারণে যে, তারা চিনে যাবে মহাসত্যকে (= কুরআনকে)। তারা বলবে, ‘আমাদের রব, আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। সুতরাং আমাদের নাম লিখে নিন শহীদদের/ সাক্ষ্যদাতাদের সাথে’।

৫:৮৪
ওয়া = আর। মা লানা = আমাদের কী হয়েছে যে,। লা নু’মিনু = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। মা জাআনা = উহার প্রতি যা আমাদের কাছে এসেছে। মিনাল হাক্কি = সত্য থেকে (= কুরআনের প্রতি)। ওয়া = আর। নাতমাউ = আমরা আশা করি। আইঁ ইউদখিলানা = যে, আমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন। রব্বুনা = আমাদের রব। মাআল ক্বাওমিস সালিহীনা = সালেহ/ সৎকর্মশীল কওমের সাথে।

আর আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না আল্লাহর প্রতি আর উহার প্রতি যা আমাদের কাছে এসেছে সত্য থেকে (= কুরআনের প্রতি)। আর আমরা আশা করি যে, আমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন আমাদের রব সালেহ/ সৎকর্মশীল কওমের সাথে’।

৫:৮৫
ফাআছাবাহুমুল্লাহু = সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে প্রতিফল দিবেন। বিমা ক্বলূ = তাদের এ কথার কারণে। জান্নাতিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু = জান্নাত, জারি হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। যালিকা = উহাই। জাযাউল মুহসিনীনা = মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের প্রতিফল।

সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে প্রতিফল দিবেন তাদের এ কথার কারণে জান্নাত, জারি হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর উহাই মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের প্রতিফল।

৫:৮৬
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = ও। কাযযাবূ = মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। উলায়িকা = উহারাই। আসহাবুল জাহীম = আসহাবুল জাহীম (= যারা জাহান্নামে শাস্তি পাবে)।

আর যারা কুফর করেছে ও মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে আমাদের আয়াতসমূহকে, উহারাই আসহাবুল জাহীম (= যারা জাহান্নামে শাস্তি পাবে)।

৫:৮৭
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তুহাররিমূ = তোমরা হারাম করো না। তইয়িবাতি = পবিত্র জিনিসসমূহকে। মা আহাল্লাল্লাহু = যা আল্লাহ হালাল করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। লা তা’তাদূ = তোমরা সীমালংঘন করো না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল মু’তাদীনা = ভালবাসেন না সীমালংঘনকারীদেরকে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা হারাম করো না পবিত্র জিনিসসমূহকে যা আল্লাহ হালাল করেছেন তোমাদের জন্য। আর তোমরা সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন না সীমালংঘনকারীদেরকে।

৫:৮৮
ওয়া = আর। কুলূ = তোমরা খাও। মিম্মা = তা থেকে যা। রযাক্বাকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে রিযকস্বরূপ দিয়েছেন। হালালান তইয়িবান = বৈধ, পবিত্র। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাযী আনতুম বিহী মু’মিনূনা = তোমরা যাঁর প্রতি মু’মিনূন/ বিশ্বাসী।

আর তোমরা খাও তা থেকে যা আল্লাহ তোমাদেরকে রিযকস্বরূপ দিয়েছেন, হালাল/ বৈধ, পবিত্র। আর আল্লাহকে ভয় করো, তোমরা যাঁর প্রতি মু’মিনূন/ বিশ্বাসী।

৫:৮৯
লা ইউআখিজুকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না। বিল্লাগভী ফী আইমানিকুম = তোমাদের অর্থহীন শপথের জন্য। ওয়ালাকিইঁ ইউআখিজুকুম = কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ধরবেন। বিমা আক্বক্বাত্তুমুল আইমানা = তোমাদের দৃঢ় শপথের জন্য। ফাকাফফারাতুহু = এরূপ শপথ ভঙ্গ করলে তার কাফফারা হচ্ছে। ইতআমু আশারাতিন মাছাকীনা = দশজন মিসকীনকে খাওয়ানো। মিন আওছাতি = মধ্যম মানের খাবার। মা তুতয়িমূনা = যা তোমরা খাওয়াও। আহলীকুম = তোমাদের পরিবারকে। আও = অথবা। কিছওয়াতুহুম = তাদেরকে বস্ত্রদান করা। আও = অথবা। তাহরীরু রক্বাবাতিন = একজন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। ফামাল্লাম ইয়াজিদ = তবে যে তার সামর্থ্য পাবে না। ফাসিয়ামু সালাসাতি আইয়ামিন = তাহলে সে তিনদিন সিয়াম পালন করবে। যালিকা = উহাই। কাফফারাতু আইমানিকুম ইযা হালাফতুম = তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা হলফ করে/ নিশ্চয়তার সাথে তা করো। ওয়া = আর। আহফাযূ = তোমরা রক্ষা করো। আইমানুকুম = তোমাদের শপথসমূহ। কাযালিকা = এভাবে। ইউবাইয়্যিনুল্লাহু = আল্লাহ বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম = যেন তোমরা। তাশকুরূনা = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না তোমাদের অর্থহীন (কথার কথা ধরনের) শপথের জন্য। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ধরবেন তোমাদের দৃঢ় বন্ধনযুক্ত শপথের জন্য। এরূপ শপথ ভঙ্গ করলে তার কাফফারা (দায়মোচন) হচ্ছে, দশজন মিসকীনকে খাওয়ানো মধ্যম মানের খাবার, যা তোমরা খাওয়াও তোমাদের পরিবারকে, অথবা তাদেরকে বস্ত্রদান করা, অথবা একজন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা, তবে যে তার সামর্থ্য পাবে না, তাহলে সে তিনদিন সিয়াম পালন করবে। উহাই তোমাদের শপথের কাফফারা যখন তোমরা হলফ করে/ নিশ্চয়তার সাথে তা করো। আর তোমরা রক্ষা করো তোমাদের শপথসমূহ। এভাবে আল্লাহ বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ, যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।

৫:৯০
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইন্নামাল খামরু = নিশ্চয় খামরু/ নেশাদ্রব্য (যেমন, মদ, আফিম, হেরোইন, ফেনসিডিল ইত্যাদি)। ওয়াল মাইছিরু = ও মাইসির/ জুয়া, লটারি ইত্যাদি যাতে কোন কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ না হয়ে দুর্ঘটনাক্রমে অন্যের সম্পদ হস্তগত হয়। ওয়াল আনসাবু = ও আনসাব/ পূজার বেদী ও মূর্তি। ওয়াল আযলামু = ও আযলাম/ ভাগ্যনির্ণায়ক তীরসমূহ। রিজছুম মিন আমালিশ শায়তানি = এসব হচ্ছে শয়তানের কাজের অন্তর্ভুক্ত অপবিত্রতা। ফাজতানিবূহু = সুতরাং উহা পরিহার করো। লাআল্লাকুম তুফলিহূনা = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, নিশ্চয় খামরু/ নেশাদ্রব্য (যেমন, মদ, আফিম, হেরোইন, ফেনসিডিল ইত্যাদি) ও মাইসির/ জুয়া, লটারি ইত্যাদি যাতে কোন কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ না হয়ে দুর্ঘটনাক্রমে অন্যের সম্পদ হস্তগত হয় ও আনসাব/ পূজার বেদী ও মূর্তি ও আযলাম/ ভাগ্যনির্ণায়ক তীরসমূহ; এসব হচ্ছে শয়তানের কাজের অন্তর্ভুক্ত অপবিত্রতা। সুতরাং উহা পরিহার করো, যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।

৫:৯১
ইন্নামা = নিশ্চয়। ইউরীদুশ শায়তানু = শয়তান এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইউক্বিয়া = যে, ঘটাবে। বায়নাকুমুল আদাওয়াতা ওয়াল বাগদাআ = তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ। ফিল খামরি ওয়াল মাইসিরি = মদ ও জুয়ার মাধ্যমে। ওয়া = আর। ইয়াসুদ্দাকুম = তোমাদেরকে বাধা দেবে। আন যিকরিল্লাহি = আল্লাহর যিকর/ স্মরণ থেকে। ওয়া = আর। আনিস সালাতি = সালাত থেকে। ফাহাল = তবুও কি। আনতুম = তোমরা। মুনতাহূনা = বিরত হবে না?

নিশ্চয় শয়তান এরাদা/ ইচ্ছা করে যে, ঘটাবে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ মদ ও জুয়ার মাধ্যমে। আর তোমাদেরকে বাধা দেবে আল্লাহর যিকর/ স্মরণ থেকে আর সালাত থেকে। তবুও কি তোমরা বিরত হবে না?

৫:৯২
ওয়া আতিউল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহর ইতায়াত/ আনুগত্য করো। ওয়া আতিউর রসূলা = আর তোমরা রসূলের ইতায়াত/ আনুগত্য করো। ওয়াহযারূ = আর তোমরা সাবধান থাকো। ফাইন = তারপর যদি। তাওয়াল্লায়তুম = তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। ফা’লামূ = তাহলে জেনে রাখো। আন্নামা = যে। আলা রাসূলিনাল বালাগুল মুবীনু = রসূলের উপর দায়িত্ব হচ্ছে বালাগুল মুবীন/ প্রকাশ্য প্রচার।

আর তোমরা আল্লাহর ইতায়াত/ আনুগত্য করো। আর তোমরা রসূলের ইতায়াত/ আনুগত্য করো। আর তোমরা সাবধান থাকো। তারপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রাখো যে, রসূলের উপর দায়িত্ব হচ্ছে বালাগুল মুবীন/ প্রকাশ্য প্রচার।

৫:৯৩
লাইছা = নেই। আলাল্লাযীনা = তাদের উপর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। জুনাহুন = জুনাহ/ গুনাহ। ফীমা = ঐ ক্ষেত্রে যা। তয়িমূ = তারা আগে খেয়েছে। ইযা মাত্তাক্বাও = যখন তারা তাকওয়া অবলম্বন করছে। ওয়া = আর। আমানূ = ঈমান করছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করছে। ছুম্মাত্তাক্বাও = আবার তাকওয়া অবলম্বন করছে। ওয়া = আর। আমানূ = ঈমান করছে। ছুম্মাত্তাক্বাও = আবার তাকওয়া অবলম্বন করছে। ওয়া = আর। আহছানূ = উত্তম কাজ করছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউহিব্বুল মুহসিনীনা = ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।

নেই তাদের উপর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে জুনাহ/ গুনাহ, ঐ ক্ষেত্রে যা তারা আগে খেয়েছে; যখন তারা তাকওয়া অবলম্বন করছে আর ঈমান করছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করছে, আবার তাকওয়া অবলম্বন করছে আর ঈমান করছে, আবার তাকওয়া অবলম্বন করছে আর উত্তম কাজ করছে। আর আল্লাহ ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।

৫:৯৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লাইয়াবলুয়ান্নাকুমুল্লাহু = নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। বিসাইয়িম মিনাস সয়দি = কিছু শিকারের বিষয়ে। তানালুহু = যার নাগাল পায়। আইদীকুম ওয়া রিমাহুকুম = তোমাদের হাতসমূহ ও তোমাদের বর্শাসমূহ। লিআ’লামাল্লাহু = যেন আল্লাহ স্পষ্ট করতে পারেন। মাইঁ ইয়াখাফুহু = কে তাঁকে ভয় করে। বিল গায়বি = না দেখা সত্ত্বেও। ফামানি’তাদা = সুতরাং যে সীমালংঘন করবে। বা’দা যালিকা = উহার পর। ফালাহু = তার জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন (ইহরাম অবস্থায় স্থলভাগের) কিছু শিকারের বিষয়ে। যার নাগাল পায় তোমাদের হাতসমূহ ও তোমাদের বর্শাসমূহ, যেন আল্লাহ স্পষ্ট করতে পারেন কে তাঁকে ভয় করে না দেখা সত্ত্বেও। সুতরাং যে সীমালংঘন করবে উহার পরও (অর্থাৎ স্পষ্টভাবে জানানোর পরেও), তার জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৫:৯৫
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাক্বতুলুস সয়দু = তোমরা শিকারকে হত্যা করো না। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আনতুম = তোমরা আছো। হুরুমুন = হুরুমুন/ ইহরামরত অবস্থায়। ওয়া = আর। মান = যে। ক্বাতালাহু = উহাকে হত্যা করবে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। মুতাআম্মিদান = ইচ্ছাকৃতভাবে। ফাজাযাউম মিছলু মা = তার জরিমানা হচ্ছে উহার অনুরূপ যা। ক্বাতালা = সে হত্যা করেছে। মিনান্নায়ামি = নায়াম/ আনআমের/ গবাদি পশুর মধ্য থেকে। ইয়াহকুম বিহী = ঐ (পশু নির্ধারণের) ব্যাপারে নির্বাহী সিদ্ধান্ত দেবে। যাওয়া আদলিম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার ‘যাওয়া আদল’/ দুজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি। হাদইয়াম বালিগাল কা’বাতি = (উহাকে) হাদইয়ু (হাদিয়) হিসাবে পৌঁছাতে হবে কা’বায়। আও = অথবা। কাফফারাতুন = তার কাফফারা (ক্ষতিপূরণ) হবে। তয়ামু মাছাকীনা = কয়েকজন মিসকীনকে খাওয়ানো। আও = অথবা। আদলু যালিকা সিয়ামান = মিসকীন সংখ্যার সমানুপাতে সিয়াম পালন করা। লিইয়াযূক্বা = যেন সে স্বাদ আস্বাদন করে। ওয়াবালা আমরিহী = তার কাজের পরিণামের। আফাল্লাহু = আল্লাহ উদারনীতি দেখিয়েছেন। আম্মা ছালাফা = (এ বিধান নাযিলের) আগে যা হয়ে গিয়েছিলো সে ব্যাপারে। ওয়া = আর। মান = যে। আদা = পুনরাবৃত্তি করবে। ফাইয়ানতাক্বিমুল্লাহু মিনহু = আল্লাহ তাকে দন্ড দিবেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আযীযুন যুনতিক্বাম = আযীয/ মহাশক্তিমান, যুনতিক্বাম/ দন্ডদাতা।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা (স্থলভাগের) শিকারকে হত্যা করো না এ অবস্থায় যে, তোমরা আছো হুরুমুন/ ইহরামরত অবস্থায়। আর যে উহাকে হত্যা করবে তোমাদের মধ্য থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে, তার জরিমানা হচ্ছে উহার অনুরূপ যা সে হত্যা করেছে, (যা দিতে হবে) নায়াম/ আনআমের/ গবাদি পশু ধরনের। ঐ (ধরনের গবাদি পশু নির্ধারণের) ব্যাপারে নির্বাহী সিদ্ধান্ত দেবে তোমাদের মধ্যকার ‘যাওয়া আদল’/ দুজন ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তি। (উহাকে) হাদইয়ু (হাদিয়া) হিসাবে পৌঁছাতে হবে কা’বায়। অথবা তার কাফফারা (ক্ষতিপূরণ) হবে (সমমূল্য দ্বারা যতজনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো যেতে পারে ততজন) মিসকীনকে খাওয়ানো অথবা মিসকীন সংখ্যার সমানুপাতে সিয়াম পালন করা। (এটা এজন্য যে,) যেন সে স্বাদ আস্বাদন করে তার কাজের পরিণামের। আল্লাহ উদারনীতি দেখিয়েছেন (এ বিধান নাযিলের) আগে যা হয়ে গিয়েছিলো সে ব্যাপারে। আর যে পুনরাবৃত্তি করবে, আল্লাহ তাকে দন্ড দিবেন। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, যুনতিক্বাম/ মহাদন্ডদাতা/ মহাশাস্তিদাতা।

৫:৯৬
উহিল্লা = হালাল করা হয়েছে। লাকুম = তোমাদের জন্য। সয়দুল বাহরি = সমুদ্রের শিকার করা। ওয়া = ও। তয়ামুহু = তা খাওয়া (= জলচর প্রাণী হালাল)। মাতাআল্লাকুম ওয়া লিছছাইয়্যারাতি = তোমাদের (আবাসে) ভোগের জন্য ও কাফেলার ভোগের জন্য (= শুটকি মাছ হালাল)। ওয়া = আর। হুররিমা = হারাম করা হয়েছে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। সয়দুল বাররি = স্থলভাগের শিকার। মা = যতক্ষণ। দুমতুম = তোমরা থাকো। হুরুমান = হুরুমান/ ইহরামরত অবস্থায়। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাযী ইলাইহি = যাঁর দিকে। তুহশারূনা = তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।

হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার করা ও তা খাওয়া (= জলচর প্রাণী হালাল)। তোমাদের (আবাসে) ভোগের জন্য ও কাফেলার ভোগের জন্য (= শুটকি মাছ হালাল)। আর হারাম করা হয়েছে তোমাদের উপর স্থলভাগের শিকার, যতক্ষণ তোমরা থাকো হুরুমান/ ইহরামরত অবস্থায়। আর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর দিকে তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।

৫:৯৭
জায়ালাল্লাহুল কা’বাতাল বায়তাল হারামা = আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন আল বায়তুল হারাম আল কা’বাকে। ক্বিয়ামাল্লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য কিয়াম/ (কল্যাণ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। ওয়াশ শাহরাল হারামি = আর (সেই সাথে প্রত্যেক) হারাম মাসকে। ওয়াল হাদইয়া = আর (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ুকে (হাদিয়াকে)। ওয়াল কালায়িদা = আর কালায়িদা/ গলায় মালা পরানো মানতের পশুগুলোকে। যালিকা = উহা (এ কারণে যে)। লিতা’লামূ = যেন তোমরা জানতে পারো। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ফিল আরদি = যমিনে। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিকুল্লি সাইয়িন আলীমুন = সকল বিষয়ে জ্ঞানী।

আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন আল বায়তুল হারাম আল কা’বাকে মানবজাতির জন্য কিয়াম/ (কল্যাণ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। আর (সেই সাথে প্রত্যেক) হারাম মাসকে (= বিধিবদ্ধ যুদ্ধ বিরতির মাসকে), আর (কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ুকে (হাদিয়াকে) আর কালায়িদা/ গলায় মালা পরানো মানতের পশুগুলোকে। উহা (এ কারণে যে) যেন তোমরা জানতে পারো, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে যমিনে। আর নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ে জ্ঞানী।

৫:৯৮
ই’লামূ = তোমরা জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। শাদীদুল ইক্বাবি = শাস্তিদানে কঠোর। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফুরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

তোমরা জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর আর নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৫:৯৯
মা আলার রসূলি ইল্লাল বালাগু = রসূলের উপর কোন দায়িত্ব নেই বালাগ/ যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। মা = যা। তুবদূনা = তোমরা প্রকাশ করো। ওয়া = আর। মা = যা। তাকতুমূনা = তোমরা গোপন করো বা গোপন রাখো।

রসূলের উপর কোন দায়িত্ব নেই বালাগ/ যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া। আর আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ করো আর যা তোমরা গোপন করো বা গোপন রাখো।

৫:১০০
ক্বুল = বলো। লা ইয়াছতাভিল খাবীছু = সমান নয় খবীস/ অপবিত্র। ওয়াত তইয়্যিবু = আর তইয়িব/ পবিত্র। ওয়ালাও = যদিও। আ’জাবাকা = তোমাকে আশ্চর্যান্বিত/ চমৎকৃত/ মুগ্ধ/ আকৃষ্ট করে। কাছরাতুল খাবীসি = অপবিত্র সম্পদের প্রাচুর্য। ফাত্তাক্বুল্লাহা = সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো। ইয়া উলিল আলবাবি = হে উলিল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ। লাআল্লাকুম তুফলিহূনা = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।

বলো, ‘সমান নয় খবীস/ অপবিত্র আর তইয়িব/ পবিত্র। যদিও তোমাকে আশ্চর্যান্বিত/ চমৎকৃত/ মুগ্ধ/ আকৃষ্ট করে অপবিত্র সম্পদের প্রাচুর্য (= সুদ, ঘুষ, জুয়া, চুরি, ছিনতাই, আত্মসাৎ প্রভৃতি অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদের স্তুপ)। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো, হে উলিল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ, যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।

৫:১০১
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাছআলূ = তোমরা জিজ্ঞাসা করো না। আন আশইয়াআ = এমন বিষয় জানার জন্য। ইন = যদি। তুবদা লাকুম = প্রকাশ করা হয় তোমাদের কাছে। তাছু’কুম = তা তোমাদের জন্য খারাপ/ কষ্টকর হবে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাছআলূ = তোমরা জিজ্ঞাসা করো। আনহা = ঐরূপ বিষয় সম্পর্কে। হীনা ইউনাযযিলুল ক্বুরআনু = কুরআন নাযিল করার সময়। তুবদা লাকুম = তা প্রকাশ করা হবে তোমাদের কাছে। আফাল্লাহু আনহা = (আগে যা হয়েছে) সে ব্যাপারে আল্লাহ উদারনীতি অবলম্বন করেছেন। ওয়াল্লাহু গাফূরুন হালীমুন = আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, হালীম/ সহনশীল।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা জিজ্ঞাসা করো না এমন বিষয় জানার জন্য, যদি প্রকাশ করা হয় তোমাদের কাছে তা তোমাদের জন্য খারাপ/ কষ্টকর হবে। আর যদি তোমরা জিজ্ঞাসা করো ঐরূপ বিষয় সম্পর্কে কুরআন নাযিল করার সময়, তা প্রকাশ করা হবে তোমাদের কাছে। (আগে যা হয়েছে) সে ব্যাপারে আল্লাহ উদারনীতি অবলম্বন করেছেন। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, হালীম/ সহনশীল।

৫:১০২
ক্বাদ = নিশ্চয়। ছাআলাহা = ঐ ধরনের জিজ্ঞাসা করেছিলো। ক্বাওমুম মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগের এক কওম। ছুম্মা = তারপর। আসবাহূ = তারা হয়ে গিয়েছিলো। বিহা = উহা সম্পর্কে/ উহা পালন করার ব্যাপারে। কাফিরীনা = কাফির/ প্রত্যাখ্যানকারী।

নিশ্চয় ঐ ধরনের জিজ্ঞাসা করেছিলো তোমাদের আগের এক কওম, তারপর তারা হয়ে গিয়েছিলো উহা সম্পর্কে/ উহা পালন করার ব্যাপারে কাফির/ প্রত্যাখ্যানকারী।

৫:১০৩
মা জায়ালাল্লাহু = আল্লাহ নির্ধারণ করেননি। মিম বাহীরাতিন = কোন বাহীরা। ওয়া লা ছায়িবাতিন = সায়েবা। ওয়া লা ওয়াসীলাতিন = ওয়াসিলা। ওয়া লা হামিন = হাম। ওয়ালাকিন্নাল্লাযীনা = কিন্তু যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ইয়াফতারূনা = তারা আরোপ করে। আলাল্লাহিল কাযিবা = আল্লাহর উপর মিথ্যা কথা। ওয়া = আর। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশ। লা ইয়া’ক্বিলূনা = আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে না।

আল্লাহ নির্ধারণ করেননি কোন বাহীরা, সায়েবা, ওয়াসিলা এবং হাম (দ্র:৬: ১৩৮-১৩৯)। কিন্তু যারা কুফর করেছে তারা আরোপ করে আল্লাহর উপর মিথ্যা কথা। আর তাদের অধিকাংশ আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে না।

৫:১০৪
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বীলা লাহুম = তাদেরকে বলা হয়। তাআলাও = তোমরা এসো। ইলা মা আনযালাল্লাহু = আল্লাহ যা নাযিল করেছেন উহার দিকে (= কুরআনের দিকে)। ওয়া ইলার রসূলি = আর রসূলের দিকে। ক্বলূ = তখন তারা বলে। হাছবুনা = আমাদের জন্য উহাই যথেষ্ট। মা ওয়াজাদনা আলাইহি আবাআনা = যার উপর আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাকে। আওয়ালাও = তবুও কি যদিও। কানা আবাউহুম লা ইয়া’লামূনা সাইয়ান = তাদের বাপদাদা (আসমানী কিতাবের) ইলম রাখতো না কিছুমাত্রও। ওয়া লা ইয়াহতাদূনা = আর তারা হিদায়াতপ্রাপ্তও ছিলো না?

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা এসো আল্লাহ যা নাযিল করেছেন উহার দিকে (= কুরআনের দিকে) আর রসূলের দিকে’। তখন তারা বলে, ‘আমাদের জন্য উহাই যথেষ্ট যার উপর আমরা পেয়েছি আমাদের বাপদাদাকে। তবুও কি, যদিও তাদের বাপদাদা (আসমানী কিতাবের) ইলম রাখতো না কিছুমাত্রও, আর তারা হিদায়াতপ্রাপ্তও ছিলো না?

৫:১০৫
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আলাইকুম = তোমাদের উপর দায়িত্ব। আনফুসাকুম = তোমাদের নিজেদের। লা ইয়াদুররুকুম = তোমাদেরকে ক্ষতি করতে পারবে না। মান = যে। দল্লা = বিভ্রান্ত হয়েছে সে। ইযাহতাদায়তুম = যখন তোমরা হিদায়াতের উপর (= কুরআনের উপর) থাকবে। ইলাল্লাহি = আল্লাহরই দিকে। মারজিউকুম জামীআন = ফিরে যেতে হবে তোমাদের সকলকে। ফাইউনাব্বিউকুম = তারপর তিনি জানিয়ে দিবেন তোমাদেরকে। বিমা = ঐ বিষয়ে যা। কুনতুম = তোমরা। তা’মালূনা = করতে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমাদের উপর দায়িত্ব তোমাদের নিজেদের। তোমাদেরকে ক্ষতি করতে পারবে না যে বিভ্রান্ত হয়েছে সে, যখন তোমরা হিদায়াতের উপর (= কুরআনের উপর) থাকবে। আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে তোমাদের সকলকে। তারপর তিনি জানিয়ে দিবেন তোমাদেরকে ঐ বিষয়ে যা তোমরা করতে।

৫:১০৬
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। শাহাদাতু = সাক্ষী রাখো। বায়নিকুম = তোমাদের মধ্যে। ইযা = যখন। হাদারা = হাযির/ উপস্থিত হয়। আহাদাকুমুল মাওতু = তোমাদের কারো মৃত্যু। হীনাল ওয়াসিয়্যাতিছনানি = ওয়াসিয়্যাতের সময় দুজনকে। যাও আদলিম মিনকুম = যারা তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি। আও = অথবা (তোমাদের মধ্য থেকে এরূপ ব্যক্তি না পেলে)। আখারানি = অন্য দুজনকে। মিন গাইরিকুম = যারা তোমাদের বাহিরের (= অন্য অঞ্চলের)। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। দরাবতুম ফিল আরদি = দূরদেশে ভ্রমণ করো। ফাআসাবাতকুম মুসীবাতুল মাওতু = এমতাবস্থায় তোমাদের কাছে পৌঁছে মৃত্যুর মুসিবত। তাহবিছূনাহুমা = তাদের দুজনকে অপেক্ষমান রাখবে। মিম বা’দিস সালাতি = সালাতের পরে। ফাইউক্বছিমানি বিল্লাহি = তারা উভয়ে আল্লাহর নামে কসম করবে। ইনিরতাবতুম = যদি তোমরা সন্দেহ করো। লা নাশতারী বিহী = আমরা উহা (= সাক্ষ্য) বিক্রয় করবো না। ছামানান = কোন মূল্যেই। ওয়ালাও = যদিও। কানা = (উপকারভোগী) হয়। যা ক্বুরবা = (আমাদের) আত্মীয়। ওয়া = আর। লা নাকতুম = আমরা গোপন করবো না। শাহাদাতাল্লাহি = আল্লাহর সাক্ষ্য। ইন্না = নিশ্চয়। ইযা = (তা গোপন করলে) তখন। লামিনাল আছিমীনা = আমরা হবো পাপীদের অন্তর্ভুক্ত।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, সাক্ষী রাখো তোমাদের মধ্যে যখন হাযির/ উপস্থিত হয় তোমাদের কারো মৃত্যু, ওয়াসিয়্যাতের সময় দুজনকে, যারা তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ন ব্যক্তি; অথবা (তোমাদের মধ্য থেকে এরূপ ব্যক্তি না পেলে) অন্য দুজনকে যারা তোমাদের বাহিরের (= অন্য অঞ্চলের), যদি তোমরা দূরদেশে ভ্রমণ করো এমতাবস্থায় তোমাদের কাছে পৌঁছে মৃত্যুর মুসিবত। তাদের দুজনকে অপেক্ষমান রাখবে সালাতের পরে, তারা উভয়ে আল্লাহর নামে কসম করবে, যদি তোমরা সন্দেহ করো; (তারা বলবে,) ‘আমরা উহা (= সাক্ষ্য) বিক্রয় করবো না কোন মূল্যেই, যদিও (উপকারভোগী) হয় (আমাদের) আত্মীয়, আর আমরা গোপন করবো না আল্লাহর সাক্ষ্য। নিশ্চয় (তা গোপন করলে) তখন আমরা হবো পাপীদের অন্তর্ভুক্ত’।

৫:১০৭
ফাইন = তারপর যদি। উছিরা = প্রকাশ পায়। আলা আনহুমাছতাহাক্কা ইছমান = তারা দুজন পাপে জড়িত হয়েছে। ফাআখারানি = তাহলে অন্য দুজন। ইয়াক্বূমানি = দাঁড়াবে। মাক্বামাহুমা = তাদের দুজনের জায়গায়। মিনাল্লাযীনাছতাহাক্কা = তাদের মধ্য থেকে যারা অধিকার দাবী করে। আলাইহিমুল আওলাইয়ানি = তাদের (সাক্ষ্যের) বিপক্ষে, যে দুজন (সাক্ষ্যদানের) অধিক যোগ্য (= যাদের স্বার্থহানি ঘটেছে)। ফাইয়াক্বছিমানি বিল্লাহি = তারপর তারা কসম করবে আল্লাহর নামে। লাশাহাদাতুনা = (তারা বলবে,) আমাদের সাক্ষ্য। আহাক্বক্বু = অধিক সত্য। মিন শাহাদাতিহিমা = তাদের দুজনের সাক্ষ্যের চেয়ে। ওয়া = আর। মা’তাদাইনা = আমরা সীমালংঘন করিনি। ইন্না = নিশ্চয়। ইযা = (সীমালংঘন করলে) তখন। লামিনায যালিমীনা = আমরা হবো যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।

তারপর যদি প্রকাশ পায় তারা দুজন পাপে জড়িত হয়েছে, তাহলে অন্য দুজন দাঁড়াবে তাদের দুজনের জায়গায়, তাদের মধ্য থেকে যারা অধিকার দাবী করে তাদের (সাক্ষ্যের) বিপক্ষে, যে দুজন (সাক্ষ্যদানের) অধিক যোগ্য (= যাদের স্বার্থহানি ঘটেছে)। তারপর তারা কসম করবে আল্লাহর নামে, (তারা বলবে,) ‘আমাদের সাক্ষ্য অধিক সত্য তাদের দুজনের সাক্ষ্যের চেয়ে। আর আমরা সীমালংঘন করিনি। নিশ্চয় (সীমালংঘন করলে) তখন আমরা হবো যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’।

৫:১০৮
যালিকা = উহাই। আদনা = নিকটতর। আইঁ ইয়া’তূ বিশ শাহাদাতি আলা ওয়াজহিহা = যে, তারা সঠিক সাক্ষ্য দেবে। আও = অথবা। ইয়াখাফূ = তারা ভয় করবে। আন = যে। তুরাদ্দা = ফিরিয়ে দেয়া হবে। আইমানুন = তাদের শপথকে। বা’দা আইমানিহিম = তাদের শপথের পরে। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়াছমাঊ = আর তোমরা শুনো। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়াহদিল ক্বাওমাল ফাছিক্বীনা = হিদায়াত করেন না ফাসিক কওমকে।

উহাই নিকটতর যে, তারা সঠিক সাক্ষ্য দেবে অথবা তারা ভয় করবে যে, ফিরিয়ে দেয়া হবে তাদের শপথকে (= প্রথম দুজনের শপথকে), তাদের শপথের পরে (= পরের দুজনের সাক্ষ্যের পরে)। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর তোমরা শুনো। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না ফাসিক কওমকে।

৫:১০৯
ইয়াওমা = যেদিন। ইয়াজমাউল্লাহুর রুসুলা = আল্লাহ একত্রিত করবেন রসূলদেরকে। ফাইয়াক্বূলু = তারপর তাদেরকে বলবেন। মা যা উজিবতুম = তোমাদেরকে কী জবাব দেয়া হয়েছিলো? ক্বলূ = (সেদিন) তারা বলবে। লা ইলমা লানা = এ বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। ইন্নাকা আনতা = নিশ্চয় আপনিই। আল্লামুল গুয়ুবি = জানেন অদৃশ্য বিষয়সমূহ।

যেদিন আল্লাহ একত্রিত করবেন রসূলদেরকে তারপর তাদেরকে বলবেন, ‘তোমাদেরকে কী জবাব দেয়া হয়েছিলো?’ (সেদিন) তারা বলবে, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনিই জানেন অদৃশ্য বিষয়সমূহ’।

৫:১১০
ইয = যখন। ক্বলাল্লাহু = আল্লাহ বলবেন। ইয়া ঈসাবনা মারইয়ামা = হে ঈসা ইবনে মারইয়াম। উযকুরূ নি’মাতী আলাইকা = যিকর/ স্মরণ করো আমার নিয়ামত যা আমি তোমার উপর করেছি। ওয়া আলা ওয়ালিদাতিকা = আর তোমার মায়ের উপর করেছি। ইয = যখন। আইয়াত্তুকা = তোমাকে সাহায্য করেছি। বিরূহিল কুদুস = রুহুল কুদুস/ পবিত্র আত্মা (= জিবরীল) এর মাধ্যমে। তুকাল্লিমুন্নাছা = তুমি মানুষের সাথে যথাযথভাবে কথা বলেছো। ফিল মাহদি ওয়াল কাহলান = দোলনায় চড়া বাল্যবয়সে এবং পরিণত প্রৌঢ় বয়সে। ওয়া = আর। ইয = যখন। আল্লামতুকাল কিতাবা ওয়াল হিকমাতা = তোমাকে শিক্ষা দিয়েছি কিতাব ও হিকমাত। ওয়াত্তাওরাতা ওয়াল ইনজীলা = আর তাওরাত ও ইনজীল। ওয়া = আর। ইয = যখন। তাখলুক্বু = তুমি গঠন করতে। মিনাত তীনি = কাদামাটি থেকে। কাহায়আতিত তয়রি = পাখির কাঠামোসদৃশ। বিইযনী = আমার অনুমতিক্রমে। ফাতানফুখু ফীহা = তারপর উহার মধ্যে ফুঁকে দিতে। ফাতাকূনু তয়রান = যার ফলে উহা হয়ে যেতো পাখি। বিইযনী = আমার অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। তুবরিয়ু = তুমি সুস্থ করতে। আল আকমাহা ওয়াল আবরাসা = অন্ধকে ও কুষ্ঠ রোগগ্রস্তকে। বিইযনী = আমার অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। ইয = যখন। তুখরিজুল মাওতা = তুমি মৃতকে (জীবিত করে) বের করতে। বিইযনী = আমার অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। ইয = যখন। কাফাফতু = আমি নিবৃত্ত করেছি। বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলকে। আনকা = তোমার (ক্ষতি করা) থেকে। ইয = যখন। জি’তাহুম = তুমি তাদের কাছে পৌঁছেছো। বিল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণসমূহসহ। ফাক্বালাল্লাযীনা কাফারূ মিনহুম = তখন তাদের মধ্যকার যারা কুফর করেছে তারা বলেছে। ইন হাযা = ইহা কিছু নয়। ইল্লা সিহরুম মুবীন = প্রকাশ্য যাদু ছাড়া।

যখন আল্লাহ বলবেন, ‘হে ঈসা ইবনে মারইয়াম, যিকর/ স্মরণ করো আমার নিয়ামত যা আমি তোমার উপর করেছি আর তোমার মায়ের উপর করেছি। যখন তোমাকে সাহায্য করেছি রুহুল কুদুস/ পবিত্র আত্মা (= জিবরীল) এর মাধ্যমে। তুমি মানুষের সাথে যথাযথভাবে কথা বলেছো দোলনায় চড়া বাল্যবয়সে এবং পরিণত প্রৌঢ় বয়সে। আর যখন তোমাকে শিক্ষা দিয়েছি কিতাব ও হিকমাত, আর তাওরাত ও ইনজীল। আর যখন তুমি গঠন করতে কাদামাটি থেকে পাখির কাঠামোসদৃশ আমার অনুমতিক্রমে। তারপর উহার মধ্যে ফুঁকে দিতে, যার ফলে উহা হয়ে যেতো পাখি আমার অনুমতিক্রমে। তুমি সুস্থ করতে অন্ধকে ও কুষ্ঠ রোগগ্রস্তকে আমার অনুমতিক্রমে। আর যখন তুমি মৃতকে (জীবিত করে) বের করতে আমার অনুমতিক্রমে। আর যখন আমি নিবৃত্ত করেছি বানী ইসরাইলকে তোমার (ক্ষতি করা) থেকে, যখন তুমি তাদের কাছে পৌঁছেছো বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণসমূহসহ। তখন তাদের মধ্যকার যারা কুফর করেছে তারা বলেছে, ‘ইহা কিছু নয় প্রকাশ্য যাদু ছাড়া’।

৫:১১১
ওয়া = আর। ইয = যখন। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাল হাওয়ারিয়্যীনা = হাওয়ারিয়্যীনদেরকে। আন = এই যে। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বী = আমার প্রতি। ওয়া = আর। বিরসূলী = আমার রসূলের প্রতি। ক্বলূ = তারা বলেছে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ওয়াশহাদ = আর আপনি সাক্ষী থাকুন। বিআন্নানা মুসলিমূনা = যে, আমরা মুসলিমূন।

আর যখন আমরা ওহী করেছি হাওয়ারিয়্যীনদেরকে এই যে, ‘তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আমার প্রতি আর আমার রসূলের প্রতি (= ঈসার প্রতি)’। তারা বলেছে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিমূন’।

৫:১১২
ইয = যখন। ক্বলাল হাওয়ারিয়্যূনা = হাওয়ারিগণ বলেছে। ইয়া ঈসাবনা মারইয়ামা = হে ঈসা ইবনে মারইয়াম। হাল ইয়াছতাতিউ রব্বুকা = আপনার রব কি পারেন। আইঁ ইউনাযযিলা আলাইনা = নাযিল করতে আমাদের উপর। মায়িদাতাম মিনাছ ছামায়ি = মায়েদা/ খাদ্যপূর্ণ পাত্র, আসমান থেকে। ক্বলাত্তাক্বুল্লাহা = সে বলেছে, আল্লাহকে ভয় করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীন = মু’মিনূন/ বিশ্বাসী।

যখন হাওয়ারিগণ বলেছে, ‘হে ঈসা ইবনে মারইয়াম, আপনার রব কি পারেন নাযিল করতে আমাদের উপর মায়েদা/ খাদ্যপূর্ণ পাত্র, আসমান থেকে? সে বলেছে, ‘আল্লাহকে ভয় করো, যদি তোমরা হও মু’মিনূন/ বিশ্বাসী’।

৫:১১৩
ক্বলূ = তারা বলেছে। নুরীদু = আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করি। আন = যে। না’কুলা = আমরা খাবো। মিনহা = উহা থেকে। ওয়া = আর। তাতমায়িন্না = প্রশান্তি লাভ করবে। ক্বুলূবুনা = আমাদের কলবসমূহ। ওয়া = আর। না’লামা = আমরা জানবো। আন = যে। ক্বাদ = নিশ্চয়। সদাক্বতানা = আপনি আমাদেরকে সত্য বলছেন। ওয়া = আর। নাকূনা = আমরা হবো। আলাইহা = উহার উপর। মিনাশ শাহিদীনা = সাক্ষ্যদাতাদের অন্তর্ভুক্ত।

তারা বলেছে, ‘আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করি যে, আমরা খাবো উহা থেকে আর প্রশান্তি লাভ করবে আমাদের কলবসমূহ আর আমরা জানবো যে, নিশ্চয় আপনি আমাদেরকে সত্য বলছেন আর আমরা হবো উহার উপর সাক্ষ্যদাতাদের অন্তর্ভুক্ত’।

৫:১১৪
ক্বলা ঈসাবনু মারইয়ামাল্লাহুম্মা = ঈসা ইবনে মারইয়াম বলেছে, আল্লাহুম্মা/ হে আল্লাহ। রব্বানা = আমাদের রব। আনযিল = নাযিল করুন। আলাইনা = আমাদের উপর। মায়িদাতাম মিনাছ ছামায়ি = মায়েদা/ খাদ্যপূর্ণ পাত্র, আসমান থেকে। তাকূনা = উহা হবে। লানা = আমাদের জন্য। ঈদাল্লি আওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা = ঈদ/ আনন্দ, আমাদের আওয়াল/ পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের আখির/ পরবর্তীদের জন্য। ওয়া = আর। আয়াতাম মিনকা = একটি আয়াত/ নিদর্শন, আপনার পক্ষ থেকে। ওয়ারযুক্বনা = আর আমাদেরকে রিযক দিন। ওয়া = আর। আনতা = আপনি। খায়রুর রাযিক্বীনা = উত্তম রিযকদাতা।

ঈসা ইবনে মারইয়াম বলেছে, ‘আল্লাহুম্মা/ হে আল্লাহ, আমাদের রব, নাযিল করুন আমাদের উপর মায়েদা/ খাদ্যপূর্ণ পাত্র, আসমান থেকে। উহা হবে আমাদের জন্য ঈদ/ আনন্দ, আমাদের আওয়াল/ পূর্ববর্তীদের জন্য ও আমাদের আখির/ পরবর্তীদের জন্য; আর একটি আয়াত/ নিদর্শন, আপনার পক্ষ থেকে। আর আমাদেরকে রিযক দিন। আর আপনি উত্তম রিযকদাতা’।

৫:১১৫
ক্বলাল্লাহু = আল্লাহ বলেছেন। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মুনাযযিলুহা আলাইকুম = তোমাদের উপর উহার নাযিলকারী হবো। ফামান = তবে যে। ইয়াকফুর বা’দু = কুফর করবে এরপরও। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ফাইন্নী = তবে নিশ্চয় আমি। উআযযিবুহু = তাকে আযাব/ শাস্তি দেবো। আযাবাল্লা উআযযিবুহু = এমন আযাব যে আযাব দিইনি। আহাদাম মিনাল আলামীনা = মহাবিশ্বের মধ্যে কাউকেই।

আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর উহার নাযিলকারী হবো। তবে যে কুফর করবে এরপরও, তোমাদের মধ্য থেকে; তবে নিশ্চয় আমি তাকে আযাব/ শাস্তি দেবো এমন আযাব, যে আযাব দিইনি মহাবিশ্বের মধ্যে কাউকেই’।

৫:১১৬
ওয়া = আর। ইয = যখন। ক্বলাল্লাহু = আল্লাহ বলবেন। ইয়া ঈসাবনা মারইয়ামা = হে ঈসা ইবনে মারইয়াম। আআনতা ক্বুলতা = তুমি কি বলেছো। লিন্নাছিত্তাখিজূনী = মানবজাতিকে, তোমরা গ্রহণ করো আমাকে। ওয়া = আর। উম্মিয়া = আমার মাকে। ইলাহাইনি = দুইজন ইলাহ হিসাবে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে ছাড়াও। ক্বলা = সে বলবে। ছুবহানাকা = সুবহানাকা/ আপনি পবিত্র। মা ইয়াকূনু লী = আমার জন্য সঙ্গত নয়। আন = যে। আক্বূলা = আমি বলবো। মা = যা বলার। লাইছা লী বিহাক্বক্বিন = আমার কোন অধিকার নেই। ইন = যদি। কুনতু ক্বুলতুহু = আমি তা বলতাম। ফাক্বাদ = তাহলে নিশ্চয়। আলিমতাহু = আপনি তা জানতেন। তা’লামু = আপনি জানেন। মা = কী আছে। ফী নাফসী = আমার নফসে। ওয়া = আর। লা আ’লামু = আমি জানি না। মা = কী আছে। ফী নাফসিকা = আপনার নফসে। ইন্নাকা আনতা = নিশ্চয় আপনি। আল্লামুল গুয়ুবি = জানেন অদৃশ্য বিষয়সমূহ।

আর যখন আল্লাহ বলবেন, “হে ঈসা ইবনে মারইয়াম, তুমি কি বলেছো মানবজাতিকে, ‘তোমরা গ্রহণ করো আমাকে আর আমার মাকে দুইজন ইলাহ হিসাবে আল্লাহকে ছাড়াও’?”। সে বলবে, “সুবহানাকা/ আপনি পবিত্র। আমার জন্য সঙ্গত নয় যে, আমি বলবো যা বলার আমার কোন অধিকার নেই। যদি আমি তা বলতাম তাহলে নিশ্চয় আপনি তা জানতেন। আপনি জানেন, কী আছে আমার নফসে। আর আমি জানি না, কী আছে আপনার নফসে। নিশ্চয় আপনি জানেন অদৃশ্য বিষয়সমূহ।

৫:১১৭
মা ক্বুলতু লাহুম = আমি তাদেরকে বলিনি। ইল্লা মা = উহা ছাড়া যা। আমারতানী বিহী = আপনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন। আনি’বুদুল্লাহা = তা এই যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। রব্বী = যিনি আমারও রব। ওয়া = আর। রব্বাকুম = তোমাদেরও রব। ওয়া = আর। কুনতু = আমি ছিলাম। আলাইহিম = তাদের উপর। সাহীদা = সাক্ষী। মা = যতদিন। দুমতু = আমি ছিলাম। ফীহিম = তাদের মধ্যে। ফালাম্মা = তারপর যখন। তাওয়াফফাইতানী = আপনি আমাকে ওফাত/ মৃত্যু দিলেন। কুনতা আনতার রক্বীবা = আপনিই ছিলেন রাকীব/ পরিদর্শনকারী। আলাইহিম = তাদের উপর। ওয়া = আর। আনতা = আপনি। আলা কুল্লি সাইয়িন = সকল বিষয়েই। সাহীদুন = সাক্ষী।

আমি তাদেরকে বলিনি উহা ছাড়া যা আপনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন। তা এই যে, ‘তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো, যিনি আমারও রব আর তোমাদেরও রব’। আর আমি ছিলাম তাদের উপর সাক্ষী, যতদিন আমি ছিলাম তাদের মধ্যে। তারপর যখন আপনি আমাকে ওফাত/ মৃত্যু দিলেন, তখন আপনিই ছিলেন রাকীব/ পরিদর্শনকারী তাদের উপর। আর আপনি সকল বিষয়েই সাক্ষী।

৫:১১৮
ইন = যদি। তুআযযিবহুম = আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন। ফাইন্নাহুম = তবে নিশ্চয় তারা। ইবাদুকা = আপনার বান্দা। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাগফির লাহুম = আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন। ফাইন্নাকা আনতাল আযীযুল হাকীমু = তবে নিশ্চয় আপনিই আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

যদি আপনি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে নিশ্চয় তারা আপনার বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করেন তবে নিশ্চয় আপনিই আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ”।

৫:১১৯
ক্বলাল্লাহু = তখন আল্লাহ বলবেন। হাযা ইয়াওমু = আজ সেই দিন যেদিন। ইয়ানফাউস সদিক্বীনা = উপকার দেবে সত্যবাদীদেরকে। সিদক্বুহুম = তাদের সত্যবাদিতা। লাহুম = তাদের জন্য আছে। জান্নাতুন = জান্নাত। তাজরী = জারি হয়। মিন তাহতিহাল আনহারু = যার নিচ অংশে নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। আবাদান = চিরকাল। রদিআল্লাহু আনহুম = আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট। ওয়া = আর। রদূ আনহু = তারা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। যালিকাল ফাউযুল আযীমু = উহাই মহাসাফল্য।

তখন আল্লাহ বলবেন, ‘আজ সেই দিন যেদিন উপকার দেবে সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা। তাদের জন্য আছে জান্নাত, জারি হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে চিরকাল। আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট আর তারা তাঁর উপর সন্তুষ্ট। উহাই মহাসাফল্য’।

৫:১২০
লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মা ফীহিন্না = আসমানসমূহ ও যমিনের এবং যা আছে উহাদের মধ্যে সেই সবকিছুর আধিপত্য। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

আল্লাহরই অধিকারভুক্ত আসমানসমূহ ও যমিনের এবং যা আছে উহাদের মধ্যে সেই সবকিছুর আধিপত্য। আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।