কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

004. সূরা নিসা

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৪:১
ইয়া আইয়ুহান্নাছুততাক্বূ = হে মানুষ, তোমরা সচেতন থাকো। রব্বাকুমুল্লাযী = তোমাদের প্রতিপালকের বিষয়ে যিনি। খালাকাকুম = সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে। মিন নাফসিন ওয়াহিদাতিন = একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা (life-cell) থেকে। ওয়া = আর। খালাক্বা = সৃষ্টি করেছেন। মিনহা = তার থেকে। জাওজাহা = তার জোড়া। ওয়া = আর। বাচ্ছা = ছড়িয়ে দিয়েছেন। মিনহুমা = তাদের দুজন থেকে। রিজালান কাছীরান = অনেক পুরুষ। ওয়া = আর। নিছাআন = অনেক নারী। ওয়াত্তাকুল্লাহাল্লাযী তাছআলূনা বিহী = তোমরা তোমরা সচেতন থাকো আল্লাহর বিষয়ে, যাঁর (ব্যবস্থার) মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে (অধিকার) চেয়ে থাকো। ওয়াল আরহাম = আর (সচেতন থাকো) গর্ভসমূহের বিষয়ে (আরহাম/ দয়ার্দ্রতা প্রক্রিয়া প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক আধার)। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আলাইকুম রকীবা = তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক।

হে মানুষ, তোমরা সচেতন থাকো তোমাদের প্রতিপালকের বিষয়ে যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে নাফসিন ওয়াহিদাতিন/ একটি প্রাণকোষ/ জীবনসত্তা (life-cell) থেকে। আর উহা থেকে (ঐ একই উপাদান থেকে) সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া। আর ছড়িয়ে দিয়েছেন তাদের দুজন থেকে অনেক পুরুষ আর অনেক নারী। তোমরা সচেতন থাকো আল্লাহর বিষয়ে, যাঁর (ব্যবস্থার) মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে (অধিকার) চেয়ে থাকো আর (সচেতন থাকো) গর্ভসমূহের (আরহামের/ দয়ার্দ্রতা প্রক্রিয়ার প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক আধারের) (মর্যাদার) বিষয়ে, (যার সম্পর্কের সূত্র ধরে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার চেয়ে থাকো)। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক (= যিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন)।

৪:২
ওয়া = আর। আতুল ইয়াতামা = তোমরা দিয়ে দাও ইয়াতিম ছেলেমেয়েদেরকে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। ওয়া = আর। লা তাতাবাদ্দালুল খাবীসা বিত তাইয়িব = তোমরা তাদেরকে বদল করে দিও না খারাপ মালসমূহ তাদের ভাল মালসমূহের পরিবর্তে। ওয়া = আর। লা তা’কুলূ = তোমরা খেয়ো ফেলো না। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। ইলা আমওয়ালিকুম = তোমাদের মালসমূহের সাথে মিশিয়ে। ইন্নাহু = নিশ্চয় উহা (= ইয়াতিম ছেলেমেয়ের মাল আত্মসাৎ করা)। কানা হুবান কাবীরা = কবীরা গুনাহ/ মহাপাপ।

আর তোমরা দিয়ে দাও ইয়াতিম ছেলেমেয়েদেরকে তাদের মালসমূহ। আর তোমরা তাদেরকে বদল করে দিও না খারাপ মালসমূহ তাদের ভাল মালসমূহের পরিবর্তে। আর তোমরা খেয়ো ফেলো না তাদের মালসমূহ তোমাদের মালসমূহের সাথে মিশিয়ে। নিশ্চয় উহা (= ইয়াতিম ছেলেমেয়ের মাল আত্মসাৎ করা) কবীরা গুনাহ/ মহাপাপ।

৪:৩
ওয়া = আর। ইন = যদি। খিফতুম = তোমরা আশংকা করো। আল্লা তুক্বছিতূ = যে, তোমরা কিসত/ সুবিচার করতে পারবে না। ফিল ইয়াতামা = ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে। ফানকিহূ = তাহলে নিকাহ/ বিবাহ করো। মা তবা লাকুম = যারা তোমাদের পছন্দনীয় হয়। মিনান্নিছায়ী = ইয়াতিম ছেলে মেয়ে আছে এমন বিধবা নারীদের মধ্য থেকে (৪:১২৭)। মাছনা = দুই দুই। ওয়া ছুলাছা = তিন তিন। ওয়া রুবাআ = চারচার। ফাইন = কিন্তু যদি। খিফতুম = তোমরা আশংকা করো। আল্লা তা’দিলূ = যে, তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে আদল/ ইনসাফ/ সমান আচরণ করতে পারবে না। ফাওয়াহিদাতান = তাহলে একজনকে (= একজন মুহসনাতকে)। আও = অথবা। মা মালাকাত আইমানুকুম = ‘মা মালাকাত আইমানুকুমকে’/ ‘যে তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে’ এরূপ (একজন) নারীকে। যালিকা = উহাই। আদনা আল্লা তাঊলূ = অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা ঔদ্ধত্য/ সীমালংঘন করবে না (৪:১২৯)।

আর যদি তোমরা আশংকা করো যে, তোমরা কিসত/ সুবিচার করতে পারবে না ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে, তাহলে নিকাহ/ বিবাহ করো যারা তোমাদের পছন্দনীয় হয়, ইয়াতিম ছেলে মেয়ে আছে এমন বিধবা নারীদের মধ্য থেকে (৪:১২৭) দুই দুই, তিন তিন, চারচার। কিন্তু যদি তোমরা আশংকা করো যে, তোমরা স্ত্রীদের মধ্যে আদল/ ইনসাফ/ সমান আচরণ করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (= একজন মুহসনাতকে) অথবা ‘মা মালাকাত আইমানুকুমকে’/ ‘যে তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে’ এরূপ (একজন) নারীকে। উহাই অধিকতর নিকটবর্তী যে, তোমরা ঔদ্ধত্য/ সীমালংঘন করবে না (৪:১২৯)।

৪:৪
ওয়া = আর। আতুন্নিসাআ = (বিবাহকৃত) নারীদেরকে দাও। সদুকাতিহিন্না = তাদের সদুকাত/ দেনমোহর। নিহলাতান = খুশিমনে। ফাইন = তারপর যদি। তিবনা = তারা প্রত্যর্পন করে। লাকুম = তোমাদেরকে। আন সাইয়িন মিনহু = তা থেকে কিছু অংশ। নাফসান = স্বেচ্ছায়। ফাকুলূহু = তাহলে তোমরা তা খাও। হানীয়াম মারীয়ান = পরিতৃপ্তির সাথে ও স্বচ্ছন্দে।

আর (বিবাহকৃত) নারীদেরকে দাও তাদের সদুকাত/ দেনমোহর খুশিমনে। তারপর যদি তারা প্রত্যর্পন করে তোমাদেরকে তা থেকে কিছু অংশ স্বেচ্ছায়, তাহলে তোমরা তা খাও পরিতৃপ্তির সাথে ও স্বচ্ছন্দে।

৪:৫
ওয়া = আর। লা তু’তুছ ছুফাহাআ = তোমরা তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে। আমওয়ালাকুমুল্লাতি = তোমাদের মালসমূহ যাহা। জাআলাল্লাহু = আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। কিয়ামান = জীবনকে প্রতিষ্ঠিত রাখার উপকরন হিসাবে। ওয়ারযুক্বূহুম ফীহা = কিন্তু উহার মাধ্যমে তাদের রিযকের ব্যবস্থা করো। ওয়াকছূহুম = আর তাদের পোশাক পরানোর ব্যবস্থা করো। ওয়া = আর। কুলূ লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে বলো। ক্বাওলাম মা’রূফা = ন্যায়সঙ্গত কথা।

আর তোমরা তুলে দিও না নির্বোধদের হাতে তোমাদের (= মুসলিম উম্মাহর) মালসমূহ যাহা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য জীবনকে প্রতিষ্ঠিত রাখার উপকরন হিসাবে। কিন্তু উহার মাধ্যমে তোমরা (= উলিল আমর ৪:৫৯) তাদের রিযকের ব্যবস্থা করো আর তাদের পোশাক পরানোর ব্যবস্থা করো। আর তাদের উদ্দেশ্যে বলো ন্যায়সঙ্গত কথা।

৪:৬
ওয়াবতালুল ইয়াতামা = আর তোমরা পরীক্ষা করো ইয়াতিম ছেলেমেয়েকে। হাত্তা ইযা = যতক্ষণ না তারা। বালাগুন নিকাহা = নিকাহ/ বিবাহ করার বালেগ হয়/ যোগ্যতায় পৌঁছে যায়। ফাইন = তারপর যদি। আনাছতুম = তোমরা আঁচ করো। মিনহুম = তাদের মধ্যে। রুশদান = সংসার ব্যবস্থাপনার সঠিক যোগ্যতা। ফাদফাউ = তাহলে ফিরিয়ে দাও। ইলাইহিম = তাদেরকে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। ওয়া = আর। লা তা’কুলূহা = তোমরা উহা খেয়ে ফেলো না। ইছরাফান = অপচয় করে। ওয়া = আর। বিদারান = তাড়াতাড়ি করে। আইঁ ইয়াকবারূ = এ চিন্তায় যে, তারা বড় হয়ে যাবে। ওয়া = আর। মা কানা = যে (অভিভাবক)। গানিয়্যান = গনী/ ধনী। ফালইয়াছতা’ফিফ = সে যেন (নিজের প্রয়োজনে ইয়াতিম ছেলেমেয়ের মাল খরচ করা থেকে) বিরত থাকে। ওয়া = আর। মান কানা = যে (অভিভাবক)। ফাক্বীরান = ফকীর/ অভাবী। ফালইয়া’কুল বিল মা’রূফ = সে যেন খায় ন্যায়সঙ্গতভাবে। ফাইযা = তারপর যখন। দফা’তুম = তোমরা ফেরত দাও। ইলাইহিম = তাদেরকে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। ফাআশহিদূ = তখন তোমরা সাক্ষী রাখো। আলাইহিম = তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি হাছীবা = হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।

আর তোমরা (ছোট ছোট দায়িত্ব দিয়ে) পরীক্ষা করো ইয়াতিম ছেলেমেয়েকে যতক্ষণ না তারা নিকাহ/ বিবাহ করার বালেগ হয়/ যোগ্যতায় পৌঁছে যায়। তারপর যদি তোমরা আঁচ করো তাদের মধ্যে সংসার ব্যবস্থাপনার সঠিক যোগ্যতা, তাহলে ফিরিয়ে দাও তাদেরকে তাদের মালসমূহ। আর তোমরা উহা খেয়ে ফেলো না অপচয় করে আর তাড়াতাড়ি করে এ চিন্তায় যে, তারা বড় হয়ে যাবে। আর যে (অভিভাবক) গনী/ ধনী সে যেন (নিজের প্রয়োজনে ইয়াতিম ছেলেমেয়ের মাল খরচ করা থেকে) বিরত থাকে। আর যে (অভিভাবক) ফকীর/ অভাবী সে যেন খায় ন্যায়সঙ্গতভাবে। তারপর যখন তোমরা ফেরত দাও তাদেরকে তাদের মালসমূহ তখন তোমরা সাক্ষী রাখো তাদেরকে তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে। আর হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।

৪:৭
লিররিজালি নাসীবুন = পুরুষদের জন্য অংশ আছে। মিম্মা = সে সম্পদে যা। তারাকাল ওয়ালিদানি = ছেড়ে যায় পিতামাতা। ওয়াল আক্বরাবূনা = আর নিকটতম আত্মীয়গণ। ওয়া = আর। লিন্নিসায়ী নাসীবুন = নারীদের জন্য অংশ আছে। মিম্মা = সে সম্পদে যা। তারাকাল ওয়ালিদানি = ছেড়ে যায় পিতামাতা। ওয়াল আক্বরাবূনা = আর নিকটতম আত্মীয়গণ। মিম্মা ক্বাল্লা মিনহু = হোক তা কম। আও = বা। কাছুরা = বেশি। নাসীবাম মাফরূদা = নির্ধারিত অংশ।

পুরুষদের জন্য অংশ আছে সে সম্পদে যা ছেড়ে যায় পিতামাতা আর নিকটতম আত্মীয়গণ। আর নারীদের জন্য অংশ আছে সে সম্পদে যা ছেড়ে যায় পিতামাতা আর নিকটতম আত্মীয়গণ। হোক তা কম বা বেশি। নির্ধারিত অংশ।

৪:৮
ওয়া = আর। ইযা = যখন। হাদারাল কিছমাতা = হাজির/ উপস্থিত হয় সম্পদ বন্টনের সময়। উলুল ক্বুরবা = (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয় স্বজন। ওয়াল ইয়াতামা = আর ইয়াতিম ছেলেমেয়ে। ওয়াল মাছাকীনু = আর মিসকীন। ফারযুকূহুম মিনহু = তখন (প্রথমে) তাদেরকে তা থেকে কিছুটা দিয়ে দাও জীবিকা হিসাবে। ওয়া = আর। কুলূ লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে বলো। ক্বাওলাম মা’রূফা = ন্যায়সঙ্গত কথা।

আর যখন হাজির/ উপস্থিত হয় সম্পদ বন্টনের সময় (উত্তরাধিকারী নয় এমন) আত্মীয় স্বজন আর ইয়াতিম ছেলেমেয়ে আর মিসকীন, তখন (প্রথমে) তাদেরকে তা থেকে কিছুটা দিয়ে দাও জীবিকা হিসাবে। আর তাদের উদ্দেশ্যে বলো ন্যায়সঙ্গত কথা।

৪:৯
ওয়ালইয়াখশাল্লাযীনা = আর তারা ভয় করুক। লাও = যদি। তারাকূ = তারা ছেড়ে যেতো। মিন খালফিহিম = তাদের পিছনে। যুররিয়্যাতান দিআফান = দুর্বল/ অসহায় সন্তান সন্ততি। খাফূ = তাহলে তারা ভয় পেতো। আলাইহিম = তাদের (ভবিষ্যতের) ব্যাপারে। ফালইয়াত্তাকুল্লাহা = সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে। ওয়াল ইয়াকূলূ ক্বাওলান ছাদীদা = আর তারা যেন সঠিক কথা বলে।

আর তারা ভয় করুক যদি তারা (মৃত্যুর সময়) ছেড়ে যেতো তাদের পিছনে দুর্বল/ অসহায় সন্তান সন্ততি তাহলে তারা ভয় পেতো তাদের (ভবিষ্যতের) ব্যাপারে। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে। আর তারা যেন সঠিক কথা বলে।

৪:১০ আয়াতের শব্দার্থ: ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইয়া’কুলূনা আমওয়ালাল ইয়াতামা = ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের মালসমূহ খায়। যুলমান = যুলুম করে। ইন্নামা = মূলত:। ইয়া’কুলূনা = তারা ভরে। ফী বুতূনিহিম = তাদের পেটসমূহের মধ্যে। নারান = আগুন। ওয়া = আর। ছাইয়াছলাওনা = তারা শীঘ্রই নিক্ষিপ্ত হবে। ছায়ীরা = উত্তপ্ত আগুনে।

নিশ্চয় যারা ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের মালসমূহ খায় যুলুম করে, মূলত: তারা ভরে তাদের পেটসমূহের মধ্যে আগুন। আর তারা শীঘ্রই নিক্ষিপ্ত হবে উত্তপ্ত আগুনে।

৪:১১
ইউসীকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াসিয়্যাত করছেন। ফী আওলাদিকুম = তোমাদের (= পুরুষের/ মহিলার) সন্তানদের (মধ্যে মীরাস বন্টনের) ব্যাপারে। লিয যাকারি = এক পুরুষের (= পুত্রের) জন্য। মিছলু হাযলিল উনছাইয়াইনি = দুই নারীর (= কন্যার) আনুপাতিক অংশের সমান। ফাইন কুন্না নিছাআন = তারপর যদি তারা (= সন্তানরা) হয় নারী (অর্থাৎ পুত্র না থাকে)। ফাওক্বাছনাতাইনি = যাদের (= যে কন্যাদের) সংখ্যা দুইয়ের বেশি। ফালাহুন্না ছুলুছা = তাহলে তাদের (= ঐ কন্যাদের) জন্য (একত্রে) তিনভাগের দুইভাগ। মা তারাকা = মৃতব্যক্তির ছেড়ে যাওয়া সম্পদ থেকে। ওয়া ইন কানাত ওয়াহিদাতান = আর যদি সে (= কন্যা) একজন মাত্র হয় (যখন পুত্র সন্তান নেই)। ফালাহান্নিসফু = তাহলে তার (= ঐ কন্যার) জন্য অর্ধেক। ওয়া = আর। লিআবাওয়ায়হি লিকুল্লি ওয়াহিদিম মিনহুমা = মৃত ব্যক্তির পিতা মাতা উভয়ের মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য। আছ ছুদুছু = ছয়ভাগের একভাগ করে। মিম্মা তারাকা = মৃতব্যক্তির ছেড়ে যাওয়া সম্পদ থেকে। ইন = যদি। কানা লাহু = তার থাকে। ওয়ালাদুন = (এক বা একাধিক) সন্তান (= পুত্র বা কন্যা)। ফাইন = তারপর যদি। লাম ইয়াকুল্লাহু ওয়ালাদুন = মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান (= পুত্র বা কন্যা) না থাকে। ওয়া = আর। ওয়ারিছাহু = তার ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী হয়। আবাওয়াহু = তার পিতামাতা। ফালিউম্মিহিছ ছুলুছু = তাহলে তার মায়ের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ। ফাইন = তারপর যদি। কানা লাহু = মৃতব্যক্তির থাকে। ইখওয়াতুন = (এক বা একাধিক) ভাই বা বোন বা ভাইবোন। ফালিউম্মিহিছ ছুদুছু = তাহলে তার মায়ের জন্য ছয় ভাগের এক ভাগ। মিম বা’দি = এটা তারা শুধু তখনি পাবে, যখন। ওয়াসিয়্যাতিন ইউসী বিহা = মৃত ব্যক্তির ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করা হবে। আও = বা। দাইনিন = যখন তার যে সমস্ত ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা হবে। আবাউকুম = তোমাদের পিতামাতা। ওয়া = আর। আবনাউকুম = তোমাদের পুত্রকন্যা (এর বিষয়ে)। লা তাদরূনা = তোমরা জানো না। আইয়্যুহুম = তাদের মধ্যে কে। আক্বরাবু = অধিক নিকটবর্তী (= বেশি হকদার)। লাকুম = তোমাদের (জীবিতদের) জন্য। নাফআন = উপকার করার দিক থেকে। ফারীদাতাম মিনাল্লাহি = ইহা (= মীরাসের বন্টননীতি) আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ফরজ/ নির্ধারণ। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আলীমান হাকীমা = আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াসিয়াত করছেন তোমাদের আওলাদের/ ওয়ালাদগণের/ সন্তানদের (মধ্যে মিরাস/ উত্তরাধিকার বন্টন) বিষয়ে। এক পুরুষের (male) জন্য দুই নারীর (female) অংশের মতো। তারপর যদি তারা হয় নারীগণ (women/ female human), দুইয়ের উপরে (= দুইয়ের ঊর্ধ্বক্রমিক সংখ্যক), তাহলে তাদের জন্য ২/৩, যা সে তরক করেছে/ ছেড়ে গিয়েছে উহার। আর যদি সে (নারী) হয় একজন, তাহলে তার জন্য ১/২। আর তার পিতামাতার জন্য, তাদের দুইজনের মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য, ১/৬, যা সে তরক করেছে/ ছেড়ে গিয়েছে উহা থেকে, যদি তার ওয়ালাদ থাকে। তারপর যদি তার ওয়ালাদ না থাকে, আর তার ওয়ারিস হয় তার পিতামাতা, তাহলে তার মাতার জন্য ১/৩। তারপর যদি তার ইখওয়াত থাকে, তাহলে তার মাতার জন্য ১/৬। ওয়াসিয়াত পরিপূরণের পরবর্তী পর্যায়ে, যার মাধ্যমে (= যে ওয়াসিয়াতের মাধ্যমে) সে ওয়াসিয়াত করে অথবা/ এবং দাইন/ ঋণ (পরিশোধের পরে)। তোমাদের পিতাগণ এবং তোমাদের পুত্রগণ, তোমরা জানো না তাদের কে হবে আক্বরাব/ নিকটতম তোমাদের জন্য উপকারে। (অবলম্বন করো) আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজকে (= অত্যাবশ্যকীয়/ বাধ্যতামূলক নির্ধারণকে)। নিশ্চয় আল্লাহ আলীম/ জ্ঞানী ও হাকীম/ বিজ্ঞ।

৪:১২
ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য। নিসফু = অর্ধেক। মা তারাকা = ঐ সম্পদ থেকে যা মৃত্যুর সময় ছেড়ে গিয়েছে। আযওয়াজাকুম = তোমাদের স্ত্রীগণ। ইন = যদি। লাম ইয়াকুল্লাহুন্না ওয়ালাদুন = তাদের কোন সন্তান (= পুত্র বা কন্যা) না থাকে। ফাইন = তারপর যদি। কানা লাহুন্না = তাদের থাকে। ওয়ালাদুন = কোন (এক বা একাধিক) সন্তান (= পুত্র বা কন্যা)। ফালাকুমুর রুবুঊ = তাহলে তোমাদের জন্য চারভাগের একভাগ। মিম্মা তারাকনা = ঐ সম্পদ থেকে যা তারা মৃত্যুর সময় ছেড়ে গিয়েছে। মিম বা’দি = এটা তোমরা শুধু তখনি পাবে, যখন। ওয়াসিয়্যাতিন ইউসীনা বিহা = তাদের ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করা হবে। আও = বা। দাইনিন = যখন তাদের যে সমস্ত ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা হবে। ওয়া = আর। লাহুন্নার রুবুঊ = তাদের (= তোমাদের স্ত্রীদের) জন্য চারভাগের একভাগ। মিম্মা তারাকতুম = ঐ সম্পদ থেকে যা তোমরা মৃত্যুর সময় ছেড়ে গিয়েছো। ইন = যদি। লাম ইয়াকুল্লাকুম ওয়ালাদুন = তোমাদের কোন সন্তান (= পুত্র বা কন্যা) না থাকে। ফাইন = তারপর যদি। কানা লাকুম = তোমাদের থাকে। ওয়ালাদুন = কোন (এক বা একাধিক) সন্তান (= পুত্র বা কন্যা)। ফালাহুন্নাছ ছুমুছু = তাহলে তাদের (= তোমাদের স্ত্রীদের) জন্য আটভাগের একভাগ। মিম্মা তারাকতুম = ঐ সম্পদ থেকে যা তোমরা মৃত্যুর সময় ছেড়ে গিয়েছো। মিম বা’দি = এটা তারা শুধু তখনি পাবে, যখন। ওয়াসিয়্যাতিন তূসূনা বিহা = তোমাদের ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করা হবে। আও = বা। দাইনিন = যখন তোমাদের যে সমস্ত ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা হবে। ওয়া = আর। ইন = যদি। কানা = হয়। রজুলুন = কোন পুরুষ। ইউরাছু = যার মিরাস বন্টন করা হবে। কালালাতান = কালালাহ (=যার পিতামাতা জীবিত নেই এমন ব্যক্তি)। আওয়িমরাআতুন = অথবা কোন নারী (যদি অনুরূপ কালালাহ হয়)। ওয়া = আর। লাহু = তার থাকে। আখুন = একটি ভাই। আও = অথবা। উখতুন = একটি বোন। ফালিকুল্লি ওয়াহিদিম মিনহুমাছ ছুদুছু = উভয়ের মধ্য থেকে যে-ই থাকুক তার জন্য ছয়ভাগের একভাগ। ফাইন = তারপর যদি। কানূ আকছারা মিন যালিকা = তারা (= ভাইয়েরা বা বোনেরা বা ভাই বোন) সংখ্যায় এর অধিক (= একাধিক) হয়। ফাহুম = তাহলে তারা সবাই মিলে। শুরাকাউ = (সমানহারে) শরীক হবে। ফিছ ছুলুছি = তিনভাগের একভাগ সম্পদের মধ্যে। মিম বা’দি = এটা তারা শুধু তখনি পাবে, যখন। ওয়াসিয়্যাতিন ইউসী বিহা = মৃত ব্যক্তির ওয়াসিয়্যাত পূর্ণ করা হবে। আও = বা। দাইনিন = যখন তার যে সমস্ত ঋণ রয়েছে তা পরিশোধ করা হবে। গায়রা মুদাররিন = (বন্টন করতে হবে) কারো ক্ষতি না করে (= শুধু ভাগ ঠিক হলে চলবে না, মানও ঠিক হতে হবে)। ওয়াসিয়্যাতাম মিনাল্লাহি = ইহা (= মীরাসের বন্টননীতি) আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ওয়াসিয়্যাত/ চূড়ান্ত নির্দেশনা। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলীমুন হালীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী, হালীম/ সহনশীল।

আর তোমাদের জন্য ১/২, যা তরক করেছে/ ছেড়ে গিয়েছে তোমাদের আজওয়াজ/ স্ত্রীগণ উহার, যদি তাদের ওয়ালাদ না থাকে। তারপর যদি তাদের ওয়ালাদ থাকে, তাহলে তোমাদের জন্য ১/৪, তারা যা তরক করেছে/ ছেড়ে গিয়েছে উহা থেকে। ওয়াসিয়াত পরিপূরণের পরবর্তী পর্যায়ে, যার মাধ্যমে (= যে ওয়াসিয়াতের মাধ্যমে) তারা ওয়াসিয়াত করে অথবা/ এবং দাইন/ ঋণ (পরিশোধের পরে)। আর তাদের জন্য ১/৪, যা তোমরা তরক করেছো/ ছেড়ে গিয়েছো উহা থেকে, যদি তোমাদের ওয়ালাদ না থাকে। তারপর যদি তোমাদের ওয়ালাদ থাকে, তাহলে তাদের জন্য ১/৮, যা তোমরা তরক করেছো/ ছেড়ে গিয়েছো উহা থেকে। ওয়াসিয়াত পরিপূরণের পরবর্তী পর্যায়ে, যার মাধ্যমে (= যে ওয়াসিয়াতের মাধ্যমে) তোমরা ওয়াসিয়াত করো অথবা/ এবং দাইন/ ঋণ (পরিশোধের পরে)। আর যদি হয় কোন পুরুষ (male human), যার মিরাস বন্টন করা হবে, একজন কালালাহ, অথবা কোন নারী (female human); আর তার একজন ভাই থাকে অথবা/ এবং একজন বোন থাকে, তাহলে তাদের দুইজনের মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য (/ তাদের দুইজনের মধ্য থেকে যে-ই থাকুক তার জন্য) ১/৬। তারপর যদি তারা হয় উহার চেয়ে বেশি, তাহলে তারা হবে শরিক/ অংশীদার ১/৩ এ। ওয়াসিয়াত পরিপূরণের পরবর্তী পর্যায়ে যার মাধ্যমে (= যে ওয়াসিয়াতের মাধ্যমে) তা (= ওয়াসিয়াতকৃত সম্পত্তি) ওয়াসিয়াতকৃত হয় অথবা/ এবং দাইন/ ঋণ (পরিশোধের পরে)। (অবলম্বন করো) অক্ষতিকরকে/ অক্ষতিকর উপায়কে। (অবলম্বন করো) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াসিয়াতকে। আর আল্লাহ আলীম/ জ্ঞানী ও হালীম/ সহনশীল।

৪:১৩
তিলকা = এইগুলি। হুদূদুল্লাহি = হুদূদুল্লাহ/ আল্লাহপ্রদত্ত সীমাসমূহ। ওয়া = আর। মাইঁ ইউতিয়িল্লাহা ওয়া রাসূলুহু = যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের। ইউদখিলহু জান্নাতিন = তিনি তাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু = জারি/ প্রবাহিত হয় তার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। যালিকাল ফাওজুল আযীম = ইহাই মহাসাফল্য।

এইগুলি হুদূদুল্লাহ/ আল্লাহপ্রদত্ত সীমাসমূহ। আর যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের তিনি তাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর ইহাই মহাসাফল্য।

৪:১৪
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়া’সিল্লাহা ওয়া রাছূলাহু = যে অমান্য করে আল্লাহকে ও তাঁর রসূলকে। ওয়া = আর। ইয়াতাআদ্দা = লংঘন করে। হুদূদাহু = তাঁর হুদূদ/ সীমাসমূহ। ইয়ুদখিলহু নারান = তিনি তাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন (জাহান্নামের) আগুনে। খালিদান ফীহা = সে তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। লাহু = তার জন্য আছে। আযাবুম মুহীন = আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

আর যে অমান্য করে আল্লাহকে ও তাঁর রসূলকে। আর লংঘন করে তাঁর হুদূদ/ সীমাসমূহ, তিনি তাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন (জাহান্নামের) আগুনে। সে তাতে স্থায়ী হবে। আর তার জন্য আছে আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

৪:১৫
ওয়াল্লাতী = আর যেসব নারী। ইয়া’তীনাল ফাহিশাতি = অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়। মিন নিসায়ীকুম = তোমাদের নারীদের মধ্য থেকে। ফাছতাশহিদূ = তাহলে তোমরা সাক্ষী তলব করো। আলাইহিন্না = তাদের বিপক্ষে। আরবাআতাম মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে চারজনকে। ফাইন = তারপর যদি। সাহিদূ = (চারজন সাক্ষী) সাক্ষ্য দেয়। ফাআমছিকূহুন্না = তাহলে তাদেরকে (সীমাবদ্ধ) রাখ। ফী বুয়ুতী = তাদের ঘরসমূহে। হাত্তা = যতদিন না। ইয়াতাওয়াফ্ফানাল মাওতা = তাদের মৃত্যু হয় (অর্থাৎ তাদেরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গৃহবন্দি রাখো তথা তাদের সামাজিক চলাচল নিষিদ্ধ করে দাও)। আও = বা/ তথা। ইয়াজআলাল্লাহু = আল্লাহ উদ্ভব করেন। লাহুন্না = তাদের পক্ষে। ছাবীলা = কোন পরিস্থিতি।

আর যেসব নারী অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয় তোমাদের নারীদের মধ্য থেকে, তাহলে তোমরা সাক্ষী তলব করো তাদের বিপক্ষে তোমাদের মধ্য থেকে চারজনকে। তারপর যদি (চারজন সাক্ষী) সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তাদেরকে (সীমাবদ্ধ) রাখ তাদের ঘরসমূহে যতদিন না তাদের মৃত্যু হয় (অর্থাৎ তাদেরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গৃহবন্দি রাখো তথা তাদের সামাজিক চলাচল নিষিদ্ধ করে দাও)। বা/ তথা যতদিন না আল্লাহ উদ্ভব করেন তাদের পক্ষে কোন পরিস্থিতি।

৪:১৬
ওয়াল্লাযানী = আর যে দুজন (নারী-পুরুষ)। ইয়া’তিয়ানিহা = উহাতে (= অশ্লীল কাজে) লিপ্ত হয়। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ফাআযূহুমা = তাদের দুজনকে শাস্তি দাও। ফাইন = তারপর যদি। তাবা = তারা দুজন তাওবা করে। ওয়া = আর। আসলাহা = ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করে। ফাআ’রিদূ আনহুম = তাহলে তারপর তাদের দুজনকে আর মনোকষ্ট দিও না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা তাওয়াবার রাহীমা = তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, রহীম/ দয়াশীল।

আর যে দুজন (নারী-পুরুষ) উহাতে (= অশ্লীল কাজে) লিপ্ত হয় তোমাদের মধ্য থেকে, তাদের দুজনকে শাস্তি দাও। তারপর যদি তারা দুজন তাওবা করে আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করে, তাহলে তারপর তাদের দুজনকে আর মনোকষ্ট দিও না। নিশ্চয় আল্লাহ তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, রহীম/ দয়াশীল।

৪:১৭
ইন্নামাত তাওবাতু = নিশ্চয় সেই তাওবা যা। আলাল্লাহি = আল্লাহ কবুল করেন। লিল্লাযীনা = তাদের সাথেই সম্পর্কিত যারা। ইয়া’মালূনাছ ছূআ = মন্দকর্ম করে। বিজাহালাতিন = জাহিলিয়্যাতের প্রভাবে (১২: ৮৯)। ছুম্মা = তারপর। ইয়াতুবূনা = তাওবা করে। মিন ক্বারিবিন = অবিলম্বে। ফাউলায়িকা = তারাই এমন লোক। ইয়াতুবুল্লাহু আলাইহিম = যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। ওয়া = আর। কানাল্লাহু আলীমান হাকীমা = আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

নিশ্চয় সেই তাওবা যা আল্লাহ কবুল করেন তাদের সাথেই সম্পর্কিত যারা মন্দকর্ম করে বসে জাহিলিয়্যাতের প্রভাবে (১২: ৮৯), তারপর তাওবা করে অবিলম্বে, তারাই এমন লোক যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১৮
ওয়া = আর। লাইছাতিত তাওবাতু = তাওবা কবুল হবে না। লিল্লাযীনা = তাদের ক্ষেত্রে যারা। ইয়া’মালুনাছ ছাইয়িয়াত = মন্দ কাজ করতে থাকে। হাত্তা ইযা = যতক্ষণ না। হাদারা = হাযির হয়/ এসে যায়। আহাদাহুমুল মাওতু = তাদের কারো মৃত্যু। ক্বলা = তখন সে বলে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। তুবতুল আনা = এখন তাওবা করছি। ওয়া = আর। লাল্লাযীনা = তাদের তাওবাও কবুল হবে না যারা। ইয়ামূতূনা ওয়াহুম কুফফার = কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (= মৃত্যুর সময় ঈমানের ঘোষণা দেয় কিন্তু তা কবুল না হওয়ায় সে কাফিরই থেকে যায়। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। আ’তাদনা = আমরা তৈরি করে রেখেছি। লাহুম = যাদের জন্য। আযাবান আলীমা = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

আর তাওবা কবুল হবে না তাদের ক্ষেত্রে যারা মন্দ কাজ করতে থাকে যতক্ষণ না হাযির হয়/ এসে যায় তাদের কারো মৃত্যু। তখন সে বলে, ‘নিশ্চয় আমি এখন তাওবা করছি’। আর তাদের তাওবাও কবুল হবে না যারা কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে (= মৃত্যুর সময় ঈমানের ঘোষণা দেয় কিন্তু তা কবুল না হওয়ায় সে কাফিরই থেকে যায়, ৪০: ৮৪-৮৫)। তারাই এমন লোক, আমরা তৈরি করে রেখেছি যাদের জন্য আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪:১৯
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, লা ইয়াহিল্লু = হালাল নয়। লাকুম = তোমাদের জন্য। আন = এ ব্যাপারটা যে। তারিছুন্নিসাআ = তোমরা নারীদের ওয়ারিস হবে। কারহান = বলপ্রয়োগ করে। ওয়ালা তা’দুলূহুন্না = আর তোমরা তাদেরকে (সামাজিক কর্মকান্ডে) বাধা দিও না। লিতাযহাবূ বিবা’দিন মা = উহার কোন অংশ কেড়ে নেয়ার জন্য যা। আতাইতুমুহুন্না = তোমরা তাদেরকে দেনমোহরবাবদ দিয়েছো। ইল্লা = কিন্তু। আইঁ ইয়া’তীনা বিফাহিশাতিম মুবাইয়িনাতিন = তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় জড়িত হলে (বাধা দিতে ও দেনমোহরের অংশবিশেষ ফেরত নিয়ে তালাক দিতে পারবে)। ওয়া = আর। আশীরুহুন্না = তোমরা তাদের সাথে জীবন যাপন করো। বিল মা’রূফি = ন্যায়নীতি অনুযায়ী। ফাইন = যদি। কারীহতুমূহুন্না = তোমরা কোন কারণে তাদেরকে অপছন্দ কর। ফাতাআছা = তাহলে হতে পারে। আন = যে। তাকরাহূ = তোমরা অপছন্দ করছো। সাইয়াওঁ ওয়া ইয়াজআলাল্লাহু = এক সত্তাকে (= নিজের স্ত্রীকে) অথচ আল্লাহ রেখেছেন তার মধ্যে। খায়রান কাছীরান = অনেক কল্যাণ (= অর্থাৎ কোন স্ত্রীর একটি বিষয় অপছন্দের হলেও সামগ্রিকভাবে তার মধ্যে অনেক কল্যাণ থাকা সম্ভব)।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, হালাল নয় তোমাদের জন্য এ ব্যাপারটা যে তোমরা নারীদের ওয়ারিস হবে বলপ্রয়োগ করে। আর তোমরা তাদেরকে (সামাজিক কর্মকান্ডে) বাধা দিও না উহার কোন অংশ কেড়ে নেয়ার জন্য যা তোমরা তাদেরকে দেনমোহরবাবদ দিয়েছো। কিন্তু তারা স্পষ্ট অশ্লীলতায় জড়িত হলে (বাধা দিতে ও দেনমোহরের অংশবিশেষ ফেরত নিয়ে তালাক দিতে পারবে)। আর তোমরা তাদের সাথে জীবন যাপন করো ন্যায়নীতি অনুযায়ী। যদি তোমরা কোন কারণে তাদেরকে অপছন্দ কর, তাহলে হতে পারে যে, তোমরা অপছন্দ করছো এক সত্তাকে (= নিজের স্ত্রীকে) অথচ আল্লাহ রেখেছেন তার মধ্যে অনেক কল্যাণ (= অর্থাৎ কোন স্ত্রীর একটি বিষয় অপছন্দের হলেও সামগ্রিকভাবে তার মধ্যে অনেক কল্যাণ থাকা সম্ভব)।

৪:২০
ওয়া = আর। ইন = যদি। আরাততুমুছতিবদালা = তোমরা বদলস্বরূপ পেতে চাও। জাওজিন = নতুন স্ত্রী। মাকানা জাওজিন = আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে। ওয়া = সেক্ষেত্রে। আতাইতুম = তোমরা দিয়ে থাকলে। ইহদাহুন্না = তাদের একজনকে (= আগের স্ত্রীকে)। ক্বিনতারান = অঢ়েল সম্পদ। ফালা তা’খুজূ = তাহলেও তোমরা গ্রহণ করো না (= ফিরিয়ে নিও না)। মিনহু = উহা থেকে। সাইয়ান = কিছুই। আতা’খুজূনাহু = তোমরা কি উহা গ্রহণ করবে ( = ফিরিয়ে নিবে)। বুহতানান = অপবাদ দিয়ে। ওয়া = আর। ইছমাম মুবীনা = সুস্পষ্ট অন্যায় আচরণ করে?

আর যদি তোমরা বদলস্বরূপ পেতে চাও নতুন স্ত্রী আগের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে; সেক্ষেত্রে তোমরা দিয়ে থাকলে তাদের একজনকে (= আগের স্ত্রীকে) অঢ়েল সম্পদ তাহলেও তোমরা গ্রহণ করো না (= ফিরিয়ে নিও না) উহা থেকে কিছুই। তোমরা কি উহা গ্রহণ করবে ( = ফিরিয়ে নিবে) অপবাদ দিয়ে আর সুস্পষ্ট অন্যায় আচরণ করে?

৪:২১
ওয়া = আর। কাইফা = কিরূপে। তা’খুজূহু = তোমরা উহা (= দেনমোহরের অংশ) গ্রহণ করবে (= ফিরিয়ে নেবে)। ওয়া ক্বাদ = অথচ। আফদা বা’দুকুম ইলা বা’দিন = তোমরা একে অন্যের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছো। ওয়া = আর। আখাজনা = তারা (= স্ত্রী) গ্রহণ করেছে। মিনকুম = তোমাদের থেকে (= স্বামীর থেকে)। মিছাক্বান গালীযা = দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।

আর কিরূপে তোমরা উহা (= দেনমোহরের অংশ) গ্রহণ করবে (= ফিরিয়ে নেবে) অথচ তোমরা একে অন্যের সাথে একান্তে মিলিত হয়েছো (= তোমরা স্ত্রীর সাথে একান্তে মিলিত হওয়ার অধিকার লাভ করেছো দেনমোহরের পূর্বশর্ত পূরণ করে ৪:২৪, তাই তার বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ প্রমাণ হওয়া ব্যতীত তোমরা উহার কোন অংশ ফেরত পেতে পারো না); আর তারা (= স্ত্রী) গ্রহণ করেছে তোমাদের থেকে (= স্বামীর থেকে) মিছাক্বান গালীযা/ দৃঢ় প্রতিশ্রুতি?

৪:২২
ওয়া = আর। লা তানকিহূ মা = তোমরা তাদেরকে নিকাহ/ বিবাহ করো না যাদেরকে। নাকাহা = নিকাহ/ বিবাহ করেছে। আবাউকুম = তোমাদের পিতাগণ (= পিতা, দাদা, নানা)। মিনান্নিছায়ী = নারীদের মধ্য থেকে (= তোমাদের মা, নানী, দাদী, সৎমা, সৎমায়ের মা ইত্যাদিকে)। ইল্লা = কিন্তু। মা ক্বাদ খালাফা = যা অতীত হয়ে গেছে (তা দন্ডযোগ্য নয়)। ইন্নাহ = নিশ্চয় উহা (= পিতাগণের স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা)। কানা ফাহিশাতান = অশ্লীল। ওয়া = আর। মাক্বতান = ঘৃণার যোগ্য। ওয়া = আর। ছাআ ছাবীলা = নিকৃষ্ট পথ।

আর তোমরা তাদেরকে নিকাহ/ বিবাহ করো না যাদেরকে নিকাহ/ বিবাহ করেছে তোমাদের পিতাগণ (= পিতা, দাদা, নানা এভাবে ঊর্ধ্বদিকে) নারীদের মধ্য থেকে (= তোমাদের মা, নানী, দাদী, সৎমা, সৎমায়ের মা ইত্যাদিকে)। কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে (তা দন্ডযোগ্য নয়)। নিশ্চয় উহা (= পিতাগণের স্ত্রীদেরকে বিবাহ করা) অশ্লীল, ঘৃণার যোগ্য ও নিকৃষ্ট পথ।

৪:২৩
হুররিমাত = বিবাহ করা নিষিদ্ধ (হারাম) করা হলো। আলাইকুম = তোমাদের উপর। উম্মাহাতুকুম = (০১) তোমাদের মায়েদেরকে (= মা, নানী, দাদী এভাবে ঊর্ধ্বদিকে; আপন মা ও সৎমা ৪:২২)। ওয়া বানাতুকুম = (০২) তোমাদের কন্যাদেরকে (= কন্যা, পৌত্রী, দৌহিত্রী এভাবে নিম্নদিকে)। ওয়া আখাওয়াতুকুম = (০৩) তোমাদের বোনদেরকে (= আপন বোন, বৈপিত্রেয় বোন, বৈমাত্রেয় বোন)। ওয়া আম্মাতুকুম = (০৪) তোমাদের ফুফুদেরকে (= পিতার বোন, দাদার বোন, নানার বোন; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)। ওয়া খালাতুকুম = (০৫) তোমাদের খালাদেরকে (= মায়ের বোন, দাদীর বোন, নানীর বোন; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)। ওয়া বানাতুল আখি = (০৬) তোমাদের ভাইঝিদেরকে (= ভাইঝি, ভাইঝির কন্যা এভাবে নিম্নদিকে; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)। ওয়া বানাতুল উখতি = (০৭) তোমাদের বোনঝিদেরকে (= বোনঝি, বোনঝির কন্যা এভাবে নিম্নদিকে; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)। ওয়া উম্মাহাতুকুমুল্লাতি আরদা’নাকুম = (০৮) তোমাদের দুধমাতাদেরকে। ওয়া আখওয়াতুকুম মিনাররদাআতি = (০৯) তোমাদের দুধবোনদেরকে। ওয়া উম্মাহাতু নিছায়িকুম = (১০) তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে। ওয়া রবায়িবুকুমুল্লাতী = (১১) তোমাদের স্ত্রীদের পূর্বস্বামীর ঔরসজাত সেই কন্যাদেরকে যারা। ফী হুজূরিকুম = তোমাদের ঘরে পালিত হয়েছে। মিন নিসায়ীকুমুল্লাতী দাখালতুম বিহিন্না = তোমাদের সেই স্ত্রীর কন্যাদেরকে যে স্ত্রীর সাথে তোমরা সহবাস করেছো। ফাইল্লাম তাকূনূ দাখালতুম বিহিন্না = কিন্তু যদি কোন স্ত্রীর সাথে সহবাস না করে থাকো। ফালা জুনাহা আলাইকুম = তাহলে (তার পূর্বস্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ করাতে) তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই। ওয়া = তোমাদের জন্য আরো হারাম করা হয়েছে। হালায়িলু আবনায়িকুমুল্লাযীনা মিন আসলাবিকুম = (১২) তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের (= পুত্রের, পৌত্রের, দৌহিত্রের এভাবে নিম্নদিকে) স্ত্রীদেরকে। ওয়া = আরো হারাম করা হয়েছে। আন = যে। তাজমাঊ = (১৩) তোমরা (একই সাথে বা ভিন্ন ভিন্ন সময় বিবাহের মাধ্যমে সতীন হিসাবে) একত্র করবে। বায়ানাল উখতায়নি = দুইবোনকে (= স্ত্রী জীবিত থাকলে তাকে তালাক না দিয়ে শালীকে বিবাহ করা হারাম; কিন্তু স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে বা তাকে তালাক দিলে শালীকে বিবাহ করা যাবে, কারণ, তখন দুইবোনকে একত্র করা হয় না; স্ত্রী বর্তমান থাকতে শালীকে বিবাহ করলে শালীর সাথে বিবাহই হারাম সাব্যস্ত হবে ।)। ইল্লা মা ক্বাদ ছালাফা = কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে (তা দন্ডযোগ্য নয়)। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা গাফূরার রাহীমা = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

বিবাহ করা নিষিদ্ধ (হারাম) করা হলো তোমাদের উপর-
(০১) তোমাদের মায়েদেরকে (= মা, নানী, দাদী এভাবে ঊর্ধ্বদিকে; আপন মা ও সৎমা ৪:২২)।
(০২) তোমাদের কন্যাদেরকে (= কন্যা, পৌত্রী, দৌহিত্রী এভাবে নিম্নদিকে)।
(০৩) তোমাদের বোনদেরকে (= আপন বোন, বৈপিত্রেয় বোন, বৈমাত্রেয় বোন)।
(০৪) তোমাদের ফুফুদেরকে (= পিতার বোন, দাদার বোন, নানার বোন; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)।
(০৫) তোমাদের খালাদেরকে (= মায়ের বোন, দাদীর বোন, নানীর বোন; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)।
(০৬) তোমাদের ভাইঝিদেরকে (= ভাইঝি, ভাইঝির কন্যা এভাবে নিম্নদিকে; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)।
(০৭) তোমাদের বোনঝিদেরকে (= বোনঝি, বোনঝির কন্যা এভাবে নিম্নদিকে; আপন, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়)।
(০৮) তোমাদের দুধমাতাদেরকে।
(০৯) তোমাদের দুধবোনদেরকে।
(১০) তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে।
(১১) তোমাদের স্ত্রীদের পূর্বস্বামীর ঔরসজাত সেই কন্যাদেরকে যারা তোমাদের ঘরে পালিত হয়েছে, তোমাদের সেই স্ত্রীর কন্যাদেরকে যে স্ত্রীর সাথে তোমরা সহবাস করেছো; কিন্তু যদি কোন স্ত্রীর সাথে সহবাস না করে থাকো তাহলে (তার পূর্বস্বামীর ঔরসজাত কন্যাকে বিবাহ করাতে) তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই।
(১২) তোমাদের জন্য আরো হারাম করা হয়েছে তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের (= পুত্রের, পৌত্রের, দৌহিত্রের এভাবে নিম্নদিকে) স্ত্রীদেরকে।
(১৩) আরো হারাম করা হয়েছে যে, তোমরা (একই সাথে বা ভিন্ন ভিন্ন সময় বিবাহের মাধ্যমে সতীন হিসাবে) একত্র করবে দুইবোনকে (= স্ত্রী জীবিত থাকলে তাকে তালাক না দিয়ে শালীকে বিবাহ করা হারাম; কিন্তু স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলে বা তাকে তালাক দিলে শালীকে বিবাহ করা যাবে, কারণ, তখন দুইবোনকে একত্র করা হয় না; স্ত্রী বর্তমান থাকতে শালীকে বিবাহ করলে শালীর সাথে বিবাহই হারাম সাব্যস্ত হবে।)। কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে (তা দন্ডযোগ্য নয়)। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:২৪
ওয়াল মুহসানাতি মিনান্নিছায়ী = আর (১৪) নারীদের মধ্যকার মুহসানাতকে। ইল্লা মা মালাকাত আইমানুকুম = ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’ ছাড়া। কিতাবাল্লাহি আলাইকুম = ইহা তোমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব/ বিধিবদ্ধ আইন। ওয়া = আর। উহিল্লা = হালাল করা হয়েছে। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়ারাআ যালিকুম = এ তালিকার বাহিরের সকল নারীদেরকে। আন = এ শর্তে যে। তাবতাগূ = তোমরা তালাশ করবে। বিআমওয়ালিকুম = তোমাদের মালসম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে। মুহসিনীনা = মুহসিনীন (বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারী পুরুষ) হিসাবে। গায়রা মুছাফিহীনা = (অর্থের বিনিময়ে সাময়িক/ নিছক যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষ) হিসাবে নয়। ফামাছতামতা’তুম বিহী = সুতরাং তোমরা যা (যে অধিকার) লাভ করেছো। মিনহুন্না = তাদের নিকট থেকে। ফাআতূহুন্না = তার ফলে (আল্লাহর বিধান অনুসারে ৪:৪) তাদেরকে দিয়ে দাও। উজূরাহুন্না = তাদের উজূর/ চুক্তির দ্বারা সাব্যস্ত প্রাপ্য। ফারীদান = ফরজ হিসাবে। ওয়া = আর। লা জুনাহা আলাইকুম = তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই। ফীমা তারাদাইতুম ফীহা = ঐ অংশ কম করাতে তোমরা পরস্পর রাজি হও যে অংশ কম করার ক্ষেত্রে। মিম বা’দিল ফারীদাতি = দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে যাবার পর। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আলীমান হাকীমা = আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর (১৪) নারীদের মধ্যকার (সধবা তথা যে নারীর স্বামী জীবিত কিন্তু স্বামী তাকে তালাক দেয়নি অথবা সে নিজেও তার স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দেয়নি এরূপ) মুহসানাতকে (= বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারিনী নারীকে)। ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’/‘যারা তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে’ এরূপ নারী ছাড়া {= ‘যেসব নারী ইসলাম গ্রহণ করে তাদের কাফের স্বামীদেরকে ছেড়ে দারুল কুফর থেকে হিজরত করে দারুল ইসলামে চলে এসেছে তাদের মধ্য থেকে যারা স্বাধীনভাবে উপার্জনের যোগ্যতাসম্পন্ন না হওয়ায় উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের জন্য তাদেরকে মু’মিন নারী বা পুরুষের অভিভাবকত্বাধীনে দিয়ে দেয়া হয়েছে তারা’ (৬০: ১০) ছাড়া}। ইহা তোমাদের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব/ বিধিবদ্ধ আইন। আর হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য এ তালিকার বাহিরের সকল নারীদেরকে (যদি না তারা হয় মুশরিক বা যিনাকারিনী বা কাফির ০২: ২২১, ২৪:৩, ৬০: ১০)। এ শর্তে যে, তোমরা তালাশ করবে তোমাদের মালসম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে, মুহসিনীন (বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারী পুরুষ) হিসাবে, মুসাফিহীন (অর্থের বিনিময়ে সাময়িক/ নিছক যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষ) হিসাবে নয়। সুতরাং তোমরা যা (যে অধিকার) লাভ করেছো তাদের নিকট থেকে তার ফলে (আল্লাহর বিধান অনুসারে ৪:৪) তাদেরকে দিয়ে দাও তাদের উজূর/ চুক্তির দ্বারা সাব্যস্ত প্রাপ্য, ফরজ হিসাবে। আর তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই ঐ অংশ কম করাতে তোমরা পরস্পর রাজি হও যে অংশ কম করার ক্ষেত্রে দেনমোহর নির্ধারিত হয়ে যাবার পর। নিশ্চয় আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:২৫
ওয়া = আর। মাল্লাম ইয়াছতাতি’ মিনকুম তওলান = তোমাদের মধ্য থেকে যে সামর্থ রাখে না। আইঁ ইয়ানকিহাল মুহসানাতিল মু’মিনাতি = নিকাহ/ বিবাহ করতে মু’মিন মুহসানাতকে। ফামিম মা মালাকাত আইমানুকুম মিন ফাতাইয়াতিকুমুল মু’মিনাতি = তাহলে বিবাহ করবে মু’মিন যুবতীদের মধ্যকার ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’কে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আ’লামু = জানেন। বিঈমানিকুম = তোমাদের ঈমানের প্রকৃত অবস্থা। বা’দুকুম মিম বা’দিন = (ঈমান অবলম্বনের দিক থেকে) তোমাদের একে অন্যের সমপর্যায়ের। ফানকিহূহুন্না = সুতরাং তোমরা তাদেরকে নিকাহ করো। বিইযনি আহলিহিন্না = তাদের অভিভাবকের। ওয়া = আর। আতূহুন্না = তাদেরকে দিয়ে দাও। উজূরাহুন্না = তাদের দেনমোহর। বিল মা’রূফি = ন্যায়সঙ্গতভাবে। মুহসানাতিন = মুহসানাত/ বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারিনী নারী হিসাবে। গায়রা মুছাফিহাতিন = মুসাফিহাত/ অর্থের বিনিময়ে সাময়িক/ নিছক যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারিনী নারী হিসাবে নয়। ওয়া = আর। লা মুত্তাখিজাতি আখদানিন = উপপতি গ্রহণকারিনী (উপপত্নী/ গোপন প্রেমিকা) হিসাবে নয়। ফাইযা = তারপর যখন। উহসিন্না = মুহসনাত / বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারিনী হয় । ফাইন = তারপর যদি। আতাইনা বিফাহিশাতিন = তারা অশ্লীল কাজ করে। ফাআলাইহিন্না নিসফু = তাহলে তাদের উপর অর্ধেক। মা আলাল মুহসানাতি = মুহসানাতের তুলনায়। মিনাল আযাব = শাস্তি প্রযোজ্য হবে। যালিকা = উহা। লিমান = তার জন্য যে। খাশিয়াল আনাতা = ভয় করে আত্মসংযম হারানোর। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ওয়া = কিন্তু। আন = যদি। তাসবিরূ = তোমরা সবর করো। খায়রুল্লাকুম = তা-ই তোমাদের জন্য উত্তম। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

আর তোমাদের মধ্য থেকে যে সামর্থ রাখে না নিকাহ/ বিবাহ করতে মু’মিন মুহসানাতকে {= স্বনির্ভরভাবে বা নিজ পরিবারের মাধ্যমে চারিত্রিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দুর্গে অবস্থানকারিনী (কুমারী) নারীকে}, তাহলে সে বিবাহ করবে মু’মিন যুবতীদের মধ্যকার ‘মা মালাকাত আইমানুকুম’কে = তাদেরকে ‘যারা তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে’ {= ‘যেসব নারী (কাফিরদের কন্যা, স্ত্রী বা দাসী) ইসলাম গ্রহণ করে দারুল কুফর থেকে হিজরত করে দারুল ইসলামে চলে এসেছে তাদের মধ্য থেকে যারা স্বাধীনভাবে উপার্জনের যোগ্যতাসম্পন্ন না হওয়ায় উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানের জন্য তাদেরকে মু’মিন নারী বা পুরুষের অভিভাবকত্বাধীনে দিয়ে দেয়া হয়েছে এরূপ নারীকে’। (৬০: ১০, ৪:২৫, ২৪:৩৩)}। আর আল্লাহ জানেন তোমাদের ঈমানের প্রকৃত অবস্থা। (ঈমান অবলম্বনের দিক থেকে) তোমাদের একে অন্যের সমপর্যায়ের। সুতরাং তোমরা তাদেরকে নিকাহ করো তাদের অভিভাবকের অনুমতিক্রমে (= তাদের মধ্যকার যার তত্ত্বাবধান করার দায়িত্বে যে মু’মিন পুরুষ বা নারী আছে তার অনুমতিক্রমে ২৪:৩৩)। আর তাদেরকে দিয়ে দাও তাদের দেনমোহর ন্যায়সঙ্গতভাবে, মুহসানাত/ বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারিনী নারী হিসাবে, মুসাফিহাত/ অর্থের বিনিময়ে সাময়িক/ নিছক যৌনসম্পর্ক স্থাপনকারিনী নারী হিসাবে নয়, আর উপপতি গ্রহণকারিনী হিসাবে নয়। তারপর যখন তারা মুহসনাত/ বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র রক্ষার দুর্গে অবস্থানকারিনী হয়, তারপর যদি তারা অশ্লীল কাজ করে তাহলে তাদের উপর অর্ধেক (শাস্তি), মুহসানাতের/ (বিবাহিত ও অবিবাহিত সব ধরনের) স্বনির্ভরভাবে বা নিজ পরিবারের মাধ্যমে চারিত্রিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার দুর্গে অবস্থানকারিনী নারীর তুলনায় (তাদের) শাস্তি প্রযোজ্য হবে। উহা (= মুহসনাত বা ‘মা মালাকাত আইমান’ যাকে ইচ্ছা তাকে বিবাহ করার মতো সামর্থ অর্জনের আগে শুধু ‘মা মালাকাত আইমানকে’ বিবাহ করার সামর্থ থাকা অবস্থায় তাকে বিবাহ করার ব্যবস্থা) তার জন্য যে ভয় করে আত্মসংযম হারানোর; তোমাদের মধ্য থেকে। কিন্তু যদি তোমরা সবর করো, তা-ই তোমাদের জন্য উত্তম (২৪:৩৩)। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:২৬
ইউরীদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। লিইউবাইয়্যিনা = বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। ইয়াহদিয়াকুম = তোমাদেরকে হিদায়াত করতে। ছুনানাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগের লোকদের (জন্য আল্লাহর নির্ধারিত) সুন্নাতসমূহ/ নীতিমালা। ওয়া = আর। ইয়াতূবা আলাইকুম = তোমাদের তাওবা কবুল করতে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলীমুন হাকীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করতে তোমাদের জন্য আর তোমাদেরকে হিদায়াত করতে তোমাদের আগের লোকদের (জন্য আল্লাহর নির্ধারিত) সুন্নাতসমূহ/ নীতিমালা আর তোমাদের তাওবা কবুল করতে। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:২৭
ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউরীদু = এরাদা/ ইচ্ছা করেন। আইঁ ইয়াতূবা আলাইকুম = যে, তোমাদের তাওবা কবুল করবেন। ওয়া = আর। ইউরীদুল্লাযীনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে যারা। ইয়াত্তাবিঊনাশ শাহাওয়াতি = ইত্তেবা/ অনুসরণ করে পার্থিব প্রেমাকর্ষণের/ মোহের। আন = এই (ইচ্ছা) যে। তামিলূ = তোমরা পথচ্যুত হও। মাইলান আযীমা = মহাপথচ্যুতিতে।

আর আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন যে, তোমাদের তাওবা কবুল করবেন। আর তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে যারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে পার্থিব প্রেমাকর্ষণের/ মোহের, এই (ইচ্ছা) যে: তোমরা পথচ্যুত হও মহাপথচ্যুতিতে।

৪:২৮
ইউরীদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। আইঁ ইউখাফফিফা আনকুম = তোমাদের থেকে (পার্থিব প্রেমাকর্ষণের ০৩: ১৪) বোঝা হালকা করতে। ওয়া = আর। খুলিক্বাল ইনছানু = মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে। দয়ীফা = দুর্বল করে।

আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমাদের থেকে (পার্থিব প্রেমাকর্ষণের ০৩: ১৪) বোঝা হালকা করতে। আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বল করে।

৪:২৯
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তা’কুলূ = তোমরা (= মুসলিম উম্মাহ) খেয়ো না/ অধিগ্রহণ করো না। আমওয়ালাকুম = তোমাদের মালসমূহ (= মুসলিম উম্মাহর সম্পদ)। বায়নাকুম = তোমাদের মধ্যে (মুসলিম উম্মাহর মধ্যে)। বিল বাতিলি = বাতিল/ অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে। ইল্লা আন = এছাড়া যে। তাকূনা = তা অধিগ্রহণ করতে হবে। তিজারাতান = তিজারাত/ নগদ বিনিময়ের মাধ্যমে (= সম্পদের বিনিময়ে সম্পদ বা সম্পদের বিনিময়ে মুদ্রা)। আন তারাদিম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে। ওয়া = আর। লা তাক্বুতুলূ আনফুছাকুম = তোমরা আত্মহত্যা করো না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা বিকুম রহীমান = তোমাদের প্রতি দয়াশীল।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তোমরা (= মুসলিম উম্মাহ) খেয়ো না/ অধিগ্রহণ করো না তোমাদের মালসমূহ (= মুসলিম উম্মাহর সম্পদ) তোমাদের মধ্যে (= মুসলিম উম্মাহর মধ্যে) বাতিল/ অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে। এছাড়া যে, তা অধিগ্রহণ করতে হবে তিজারাত/ নগদ বিনিময়ের মাধ্যমে (= সম্পদের বিনিময়ে সম্পদ বা সম্পদের বিনিময়ে মুদ্রা) তোমাদের মধ্যকার পারস্পরিক সন্তুষ্টির ভিত্তিতে (দ্র: চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে বা ভুল তথ্য দ্বারা প্রতারিত হয়ে বা অন্যায় আসক্তিতে/ মোহে পড়ে ব্যক্ত করা সন্তুষ্টি প্রকৃত সন্তুষ্টি নয়)। আর তোমরা আত্মহত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল (= আল্লাহ দয়াশীল বলেই এ বিধান দেয়া হচ্ছে এবং এ বিধান লংঘন করলে তিনি সুবিচারের জন্য জালিমকে শাস্তি দেবেন)।

৪:৩০
ওয়া = আর। মাইঁইয়াফআল যালিকা = যে উহা করে। উদওয়ানান = সীমালংঘন করে। ওয়া = আর। যুলমান = যুলম করে। ফাছাওফা = তাহলে শীঘ্রই। নুসলিহী = আমরা তাকে জ্বালাবো। নারান = (জাহান্নামের) আগুনে। ওয়া = আর। কানা = তা হবে। আলাল্লাহি = আল্লাহর জন্য। ইয়াছীরা = অত্যন্ত সহজ কাজ।

আর যে উহা করে সীমালংঘন করে ও যুলম করে, তাহলে শীঘ্রই আমরা তাকে জ্বালাবো (জাহান্নামের) আগুনে। আর তা হবে আল্লাহর জন্য অত্যন্ত সহজ কাজ।

৪:৩১
ইন তাজতানিবূ = যদি তোমরা বর্জন করো। কাবায়িরা মা তুনহাওনা আনহু = উহা কবীরা গুনাহের স্তরে করাকে যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। নুকাফফির = তাহলে আমরা মোচন করে দেবো। আনকুম = তোমাদের থেকে। ছাইয়িআতিকুম = তোমাদের সগীরা গুনাহসমূহ। ওয়া = আর। নুদখিলকুম = আমরা তোমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো। মুদখালান কারীমা = সম্মানজনক প্রবেশ পথে।

যদি তোমরা বর্জন করো উহা কবীরা গুনাহের স্তরে করাকে যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে আমরা মোচন করে দেবো তোমাদের থেকে তোমাদের সগীরা গুনাহসমূহ। আর আমরা তোমাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো সম্মানজনক প্রবেশ পথে।

৪:৩২
ওয়া = আর। লা তাতামান্নাও = তোমরা তামান্না/ পাওয়ার জন্য আকাংখা করো না উহা। মা ফাদ্দালাল্লাহু বিহী = যা দ্বারা আল্লাহ বিশিষ্টতা দিয়েছেন। বা’দুকুম আলা বা’দিন = তোমাদের একজনকে অন্যজনের উপর। লির রিজালি নাসীবুম মিম্মাকতাছাবূ = পুরুষের জন্য ঐ অংশ যা সে উপার্জন করে (অর্থাৎ পুরুষের উপার্জনের আমানতদার মালিক পুরুষ)। ওয়া = আর। লিন্নিসায়ী নাসীবুম মিম্মাকতাছাবূ = নারীর জন্য ঐ অংশ যা সে উপার্জন করে (অর্থাৎ নারীর উপার্জনের আমানতদার মালিক নারী)। ওয়াছআলুল্লাহা = আর আল্লাহরই কাছে প্রার্থনা করো। মিন ফাদলিহী = তাঁর অনুগ্রহ থেকে পাওয়ার জন্য। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা বিকুল্লি সাইয়িন আলীমা = সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে জ্ঞানী।

আর তোমরা তামান্না/ পাওয়ার জন্য আকাংখা করো না উহা যা দ্বারা আল্লাহ বিশিষ্টতা দিয়েছেন তোমাদের একজনকে অন্যজনের উপর। পুরুষের জন্য ঐ অংশ যা সে উপার্জন করে (অর্থাৎ পুরুষের উপার্জনের আমানতদার মালিক পুরুষ)। আর নারীর জন্য ঐ অংশ যা সে উপার্জন করে (অর্থাৎ নারীর উপার্জনের আমানতদার মালিক নারী)। আর আল্লাহরই কাছে প্রার্থনা করো তাঁর অনুগ্রহ থেকে পাওয়ার জন্য। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ের ক্ষেত্রে জ্ঞানী।

৪:৩৩
ওয়া = আর। লিকুল্লি = প্রত্যেকটির জন্য (পুরুষ ও নারী উভয়কে)। জাআলনা = আমরা ঠিক করে দিয়েছি। মাওয়ালিয়া = মাওয়ালী/ ওয়ারিস। মিম্মা তারাকাল ওয়ালিদাইনি ওয়াল আক্বরাবূনা = সেই সম্পদ থেকে যা মৃত্যুর সময় ছেড়ে যায় পিতামাতা ও নিকটতম আত্মীয়গণ। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আক্বাদাত = চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। আইমানুকুম = তোমাদের অভিভাবকত্বের অধীনে। ফাআতূহুম = তাদেরকে দিয়ে দাও। নাসীবাকুম = (তাদেরকে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী) তাদের প্রাপ্য অংশ। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আলা কুল্লি সাইয়িন শাহীদা = প্রতিটি বিষয়ে সাক্ষী।

(ক) আর প্রত্যেকটির জন্য (পুরুষ ও নারী উভয়কে ৪:৭) আমরা ঠিক করে দিয়েছি মাওয়ালী/ ওয়ারিস সেই সম্পদ থেকে যা মৃত্যুর সময় ছেড়ে যায় পিতামাতা ও নিকটতম আত্মীয়গণ (৪:১১-১২, ১৭৬)। (খ) আর যারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তোমাদের অভিভাবকত্বের অধীনে (= সব ধরনের কর্মচারী) তাদেরকে দিয়ে দাও (তাদেরকে দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী) তাদের প্রাপ্য অংশ (= বেতনভাতা) {= চুক্তি অনুযায়ী যখনি তারা প্রাপ্য হবে তখনি অর্থাৎ সময়মতো তাদের বেতনভাতা তাদেরকে দিয়ে দাও, অযথা দেরি করো না}। নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিটি বিষয়ে সাক্ষী।

৪:৩৪
আর রিজালু = পুরুষ (= স্বামীগণ) হচ্ছে। ক্বাওয়ামূনা আলান্নিসায়ী = নারীগণের (= স্ত্রীগণের) ক্বাওয়াম/ সামগ্রিক দায়িত্বশীল । বিমা = উহার মাধ্যমে যা। ফাদ্দালাল্লাহু = আল্লাহ (একেক ক্ষেত্রে) বিশিষ্টতা দিয়েছেন। বা’দুহুম = তাদের কতককে (কিছু নারী পুরুষকে)। আলা বা’দিন = অপর কতকের উপর (অপর কিছু নারী পুরুষের উপর)। ওয়া = আর। বিমা = উহার মাধ্যমে যা। আনফাকূ = তারা ইনফাক/ ব্যয় করে। মিন আমওয়ালিহিম = তাদের মালসমূহ থেকে। ফাসসিলাহাতু = সুতরাং সালিহাত/ সৎকর্মশীলা নারীগণ হয়। ক্বানিতাতুন = ক্বানিতাত/ আল্লাহর প্রতি বিনয়ী। হাফিযাতুল্লিল গায়বি = গায়েবের/ অদৃশ্যে থাকা বিষয়ের (স্বীয় সতীত্ব ও সন্তানের পিতৃপরিচয়গত বিষয়ের) হাফিযাত/ সংরক্ষণকারিনী। বিমা হাফিযাল্লাহু = উহার মাধ্যমে যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। ওয়াল্লাতী = আর যাদের ব্যাপারে। তাখাফূনা = তোমরা ভয় করো। নুশূযাহুন্না = তাদের দাম্পত্য চুক্তি লংঘনের। ফাইযূহুন্না = তাহলে তাদেরকে উপদেশ দাও। ওয়াহজুরূহুন্না ফিল মাদাজিয়ি= আর তাদেরকে বিছানায় পরিত্যাগ করো। ওয়াদরিবূহুন্না = আর তাদেরকে সামনে উপস্থাপন কর। ফাইন = তারপর যদি। আতা’নাকুম = তারা (= স্ত্রীরা) তোমাদের (= স্বামীদের) ইতায়াত/ আনুগত্য করে। ফালা তাবতাগূ = তাহলে তোমরা তালাশ করো না। আলাইহিন্না = তাদের বিপক্ষে। ছাবীলা = কোন পথ (= অন্য কোন ব্যবস্থা)। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আলীয়্যান কাবীরান = আলীয়্যান/ সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত, কাবীরান/ সর্বশ্রেষ্ঠ।

পুরুষগণ (= স্বামীগণ) হচ্ছে নারীগণের (= স্ত্রীগণের) ক্বাওয়াম/ সামগ্রিক দায়িত্বশীল । উহার মাধ্যমে যা আল্লাহ (একেক ক্ষেত্রে) বিশিষ্টতা দিয়েছেন তাদের এককে অন্যের উপর; আর উহার মাধ্যমে যা তারা (পুরুষরা/ স্বামীরা) ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ থেকে। সুতরাং সালিহাত/ সৎকর্মশীলা নারীগণ হয় ক্বানিতাত/ আল্লাহর প্রতি বিনয়ী, গায়েবের/ অদৃশ্যে থাকা বিষয়ের (স্বীয় সতীত্ব ও সন্তানের পিতৃপরিচয়গত বিষয়ের) হাফিযাত/ সংরক্ষণকারিনী, উহার মাধ্যমে যা আল্লাহ হিফাযাত করেছেন। আর যাদের ব্যাপারে তোমরা ভয় করো তাদের দাম্পত্য চুক্তি লংঘনের তাহলে তাদেরকে উপদেশ দাও, আর তাদেরকে বিছানায় পরিত্যাগ করো, আর তাদেরকে (সমাধানে সম্পর্কিত হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের) সামনে উপস্থাপন কর। তারপর যদি তারা (= স্ত্রীরা) তোমাদের (= স্বামীদের) ইতায়াত/ আনুগত্য করে, তাহলে তোমরা তালাশ করো না তাদের বিপক্ষে কোন পথ (= অন্য কোন ব্যবস্থা)। নিশ্চয় আল্লাহ আলীয়্যান/ সর্বোচ্চে অধিষ্ঠিত, কাবীরান/ সর্বশ্রেষ্ঠ।

৪:৩৫
ওয়া = আর। ইন = যদি। খিফতুম = তোমরা (= মুসলিম উম্মাহ) ভয় করো। শিক্বাকা বায়নিহিমা = তাদের (অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর) দুজনের মধ্যে বিরোধের। ফাবআছূ = তাহলে তোমরা নিযুক্ত করো। হাকামাম মিন আহলিহী = তার (= স্বামীর) পরিবার পরিজন থেকে একজন বিচক্ষণ মীমাংসাকারী। ওয়া = আর। হাকামাম মিন আহলিহা = তার (= স্ত্রীর) পরিবার পরিজন থেকে একজন বিচক্ষণ মীমাংসাকারী। ইইঁ ইউরিদা = যদি তারা (স্বামী-স্ত্রী) দুজনই এরাদা/ ইচ্ছা করে। ইসলাহা = সংশোধনের। ইউওয়াফফিক্বিল্লাহু = তাহলে আল্লাহ তাওফিক দিবেন। বায়নাহুমা = তাদের দুজনের মধ্যে মিলমিশ তৈরি হওয়ার। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আলীমান খাবীরান = আলীম/(সকল বিষয় জানেন), খাবীর/(সকল খবর রাখেন)।

আর যদি তোমরা (= মুসলিম উম্মাহ) ভয় করো তাদের (অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর) দুজনের মধ্যে বিরোধের, তাহলে তোমরা নিযুক্ত করো তার (= স্বামীর) পরিবার পরিজন থেকে একজন বিচক্ষণ মীমাংসাকারী আর তার (= স্ত্রীর) পরিবার পরিজন থেকে একজন বিচক্ষণ মীমাংসাকারী। যদি তারা (স্বামী-স্ত্রী) দুজনই এরাদা/ ইচ্ছা করে সংশোধনের তাহলে আল্লাহ তাওফিক দিবেন তাদের দুজনের মধ্যে মিলমিশ তৈরি হওয়ার। নিশ্চয় আল্লাহ আলীম/(সকল বিষয় জানেন), খাবীর/(সকল খবর রাখেন)।

৪:৩৬
ওয়া’বুদুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো। ওয়া = আর। লা তুশরিকূ বিহী সাইয়ান = কাউকে তাঁর সাথে শিরক/ অংশীদার সাব্যস্ত করো না। ওয়া = আর। বিল ওয়ালিদাইনি ইহসানা = পিতামাতার প্রতি ইহসান/ উত্তম আচরণ করো। ওয়া বিযিল ক্বুরবা = আর আত্মীয়স্বজনের প্রতি। ওয়াল ইয়াতামা = আর ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের প্রতি। ওয়ালমাছাকীনি = আর মিসকীনদের প্রতি। ওয়াল জারি যিল ক্বুরবা = আর নিকটবর্তী প্রতিবেশির প্রতি। ওয়াল জারিল জুনুবি = আর দূরবর্তী প্রতিবেশির প্রতি। ওয়াসসাহিবি বিল জামবি = আর পাশাপাশি থাকা সাথী বা সহকর্মীর প্রতি। ওয়াবনাছ ছাবীল = আর ইবনে সাবীলের প্রতি/ পথে আটকে পড়া ব্যক্তির প্রতি/ ছিন্নমূলের প্রতি। ওয়া মা মালাকাত আইমানুকুম = আর ‘মা মালাকাত আইমানের’/ যারা তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে তাদের প্রতি। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বু মান = ভালবাসেন না তাকে যে। কানা মুখতালান ফাখূরানি = দাম্ভিক ও অহংকারী।

আর তোমরা আল্লাহর ইবাদাত/ দাসত্ব করো আর কাউকে তাঁর সাথে শিরক/ অংশীদার সাব্যস্ত করো না। আর পিতামাতার প্রতি ইহসান/ উত্তম আচরণ করো আর আত্মীয়স্বজনের প্রতি, আর ইয়াতিম ছেলেমেয়েদের প্রতি, আর মিসকীনদের প্রতি, আর নিকটবর্তী প্রতিবেশির প্রতি, আর দূরবর্তী প্রতিবেশির প্রতি, আর পাশাপাশি থাকা সাথী বা সহকর্মীর প্রতি, আর ইবনে সাবীলের প্রতি/ পথে আটকে পড়া ব্যক্তির প্রতি/ ছিন্নমূলের প্রতি, আর ‘মা মালাকাত আইমানের’/ যারা তোমাদের প্রভাবাধীনে থেকে তোমাদের দ্বারা তাদের রক্ষণাবেক্ষণলাভের প্রতিশ্রুতির আওতায় তোমাদের অধীনস্থ হয়েছে তাদের প্রতি। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন না তাকে যে দাম্ভিক ও অহংকারী।

৪:৩৭
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াবখালূনা = বখিলি/ কৃপনতা করে। ওয়া = আর। ইয়া’মুরূনান্নাছা = মানুষকে নির্দেশ দেয়। বিলবুখলি = বখিলির/ কৃপণতার জন্য। ওয়া = আর। ইয়াকতুমূনা মা = গোপন করে রাখে সেই সম্পদ যা। আতাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে। ওয়া = আর। আ’তাদনা = আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। আযাবাম মুহীনা = আযাবুম মুহীনা/ অপমানকর শাস্তি।

যারা বখিলি/ কৃপনতা করে আর মানুষকে নির্দেশ দেয় বখিলির/ কৃপণতার জন্য আর গোপন করে রাখে সেই সম্পদ যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে। আর আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

৪:৩৮
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইউনফিক্বূনা = ইনফাক/ ব্যয় করে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। রিআন্নাছা = মানুষকে দেখানোর জন্য। ওয়া = আর। লা ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। লা বিলইয়াওমিল আখিরি = ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতিও না। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াকুনিশ শায়তানু লাহু ক্বারীনান = শয়তান যার সহচর হয়। ফাছাআ ক্বারীনান = তার সহচর অত্যন্ত মন্দ।

আর যারা ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ মানুষকে দেখানোর জন্য আর ঈমান/ বিশ্বাস করে না আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতিও না। আর শয়তান যার সহচর হয় তার সহচর অত্যন্ত মন্দ।

৪:৩৯
ওয়া = আর। মা যা = কী হতো। আলাইহিম = তাদের উপর! লাও = যদি। আমানূ = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। ওয়া = আর। আনফাক্বূ = তারা ইনফাক/ ব্যয় করতো। মিম্মা = তা থেকে যা। রযাকাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে রিযকস্বরূপ দিয়েছেন। ওয়া = আর। কানাল্লাহু = আল্লাহ। বিহিম = তাদের সম্পর্কে। আলীম = আলীম/ জ্ঞানী।

আর কী হতো তাদের উপর! যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। আর তারা ইনফাক/ ব্যয় করতো তা থেকে যা আল্লাহ তাদেরকে রিযকস্বরূপ দিয়েছেন। আর আল্লাহ তাদের সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞানী।

৪:৪০
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াযলিমু = যুলম করেন না। মিছক্বালা যাররাতিন = পরমাণু পরিমাণও। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাকু হাছানাতান = কেউ কোন উত্তমকর্ম করে। ইউদাইফহা = আল্লাহ উহাকে দ্বিগুণ করেন। ওয়া = আর। ইউ’তি = তিনি দান করেন। মিল্লাদুনহু = তাঁর নিজের পক্ষ থেকে। আজরান আযীমা = মহাপুরস্কার।

নিশ্চয় আল্লাহ যুলম করেন না পরমাণু পরিমাণও। আর যদি কেউ কোন উত্তমকর্ম করে আল্লাহ উহাকে দ্বিগুণ করেন আর তিনি দান করেন তাঁর নিজের পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার।

৪:৪১
ফাকাইফা = সুতরাং কেমন হবে। ইযা = যখন। জি’না = আমরা উপস্থিত করবো। মিন কুল্লি উম্মাতিম বিশাহীদিওঁ = প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য থেকে শাহীদ/ সাক্ষী। ওয়া = আর। জি’না = আমরা উপস্থিত করবো। বিকা = তোমাকে (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে)। আলা হাউলায়ি = তাদের উপর (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর সমসাময়িক ব্যক্তিগণের উপর)। শাহীদা = শাহীদ/ সাক্ষীস্বরূপ।

সুতরাং কেমন হবে যখন আমরা উপস্থিত করবো প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য থেকে শাহীদ/ সাক্ষী আর আমরা উপস্থিত করবো তোমাকে (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহকে) তাদের উপর (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর সমসাময়িক ব্যক্তিগণের উপর) শাহীদ/ সাক্ষীস্বরূপ।

৪:৪২
ইয়াওমাইযিঁই = সেদিন। ইয়াওয়াদ্দুল্লাযীনা = কামনা করবে ঐ সমস্ত লোকেরা যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = আর। আসাউর রসূলা = অবাধ্যতা করেছে রসূলের। লাও = (এ কামনা যে) যদি। তুছাওওয়া = মিশিয়ে দেয়া হতো। বিহিমুল আরদা = তাদেরকে পৃথিবীতে। ওয়া = আর। লা ইয়াকতুমূনাল্লাহা = তারা গোপন করতে পারবে না আল্লাহর কাছে। হাদীসান = কোন হাদীস/ কথা।

সেদিন কামনা করবে ঐ সমস্ত লোকেরা যারা কুফর করেছে আর অবাধ্যতা করেছে রসূলের (এ কামনা যে): যদি মিশিয়ে দেয়া হতো তাদেরকে পৃথিবীতে। আর তারা গোপন করতে পারবে না আল্লাহর কাছে কোন হাদীস/ কথা।

৪:৪৩
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাক্বরাবুস সালাতা = তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আনতুম = তোমরা। ছুকারা = মাতাল। হাত্তা = যতক্ষণ না। তা’লামূ মা = তোমরা উহার জ্ঞান রাখো। মা তাক্বূলূনা = যা তোমরা বলো। ওয়া = আর। লা জুনূবা = জূনূব অবস্থায়ও নয় (= সহবাস, বীর্যপাত ও রজঃস্রাবজনিত অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়ও নয়)। ইল্লা = যদি না হও। আবিরী ছাবীলিন = আবিরে ছাবীল/ পথ অতিক্রমকারী। হাত্তা = যতক্ষণ না। তাগতাছিলূ = তোমরা গোসল/ স্নান করো। ওয়া = আর। ইন = যদি। কুনতুম মারদা = তোমরা অসুস্থ থাকো। আও = অথবা। আলা ছাফারিন = সফর অবস্থায় থাকো। আও = অথবা। জাআ = আসে। আহাদান মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে কেউ। মিনাল গায়িযি = পায়খানা থেকে। আও = অথবা। লামাছতুমুন্নিছাআ = তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো। ফালাম তাজিদূ মাআন = তারপর পানি না পাও। ফাতাইয়াম্মামু= তাহলে তোমরা তায়াম্মুম/ অনুসন্ধান করো। সায়ীদান তাইয়িবান = পবিত্র উচ্চভূমি। ফামছাহূ = তখন তোমরা মাসেহ করো/ মুছে নাও। বিউজূহিকুম = তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ। ওয়া = আর। আইদীকুম = তোমাদের হাতসমূহ। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আফুওওয়ান গাফূরা = আফুওওয়ান/ উদার, গাফূর/ ক্ষমাশীল।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না এ অবস্থায় যে, তোমরা মাতাল, যতক্ষণ না তোমরা উহার জ্ঞান রাখো যা তোমরা বলো। আর জূনূব অবস্থায়ও নয় (= সহবাস, বীর্যপাত ও রজঃস্রাবজনিত অপরিচ্ছন্ন অবস্থায়ও নয়) যদি না হও আবিরে ছাবীল/ পথ অতিক্রমকারী, যতক্ষণ না তোমরা গোসল/ স্নান করো। আর যদি তোমরা অসুস্থ থাকো অথবা সফর অবস্থায় থাকো অথবা আসে তোমাদের মধ্য থেকে কেউ পায়খানা থেকে অথবা তোমরা স্ত্রীদেরকে স্পর্শ করো তারপর পানি না পাও, তাহলে তোমরা তায়াম্মুম/ অনুসন্ধান করো পবিত্র উচ্চভূমি। তখন তোমরা মাসেহ করো/ মুছে নাও তোমাদের মুখমন্ডলসমূহ আর তোমাদের হাতসমূহ। নিশ্চয় আল্লাহ আফুওওয়ান/ উদার, গফূর/ ক্ষমাশীল।

৪:৪৪
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যাদেরকে। উতূ নাসীবাম মিনাল কিতাবি = (কুরআনের সাপেক্ষে আসমানী) কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে। ইয়াশতারূনাদ দলালাতা = তারা ক্রয় করে দলালাত/ পথভ্রষ্টতা। ওয়া = আর। ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। আন = যে। তাদিল্লুছ ছাবীলা = তোমরা যেন বিভ্রান্ত হয়ে যাও সঠিক পথ সম্পর্কে।

তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যাদেরকে (কুরআনের সাপেক্ষে আসমানী) কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে? (অর্থাৎ ইহুদী খৃস্টানদেরকে)। তারা ক্রয় করে দলালাত/ পথভ্রষ্টতা আর তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে যে, তোমরা যেন বিভ্রান্ত হয়ে যাও সঠিক পথ সম্পর্কে।

৪:৪৫
ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আ’লামু = জানেন। বিআ’দাইকুম = তোমাদের শত্রুদের সম্পকে। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি = আল্লাহই যথেষ্ট। ওয়ালিইয়্যান = ওয়ালী/ অভিভাবক হিসাবে। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি = আল্লাহই যথেষ্ট। নাসীরান = নাসীর/ সাহায্যকারী হিসাবে।

আর আল্লাহ জানেন তোমাদের শত্রুদের সম্পকে। আর আল্লাহই যথেষ্ট ওয়ালী/ অভিভাবক হিসাবে আর আল্লাহই যথেষ্ট নাসীর/ সাহায্যকারী হিসাবে।

৪:৪৬
মিনাল্লাযীনা হাদূ = যারা ইহুদী হয়েছে তাদের মধ্য থেকে কিছু আছে যারা। ইউহাররিফূনাল কালিমা = কালিমাকে/ বাক্যকে বিকৃত করে। আম মাওয়াদিয়িহি = তার স্থান থেকে। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = বলে। ছামি’না ওয়া আসাইনা = ছামি’না ওয়া আসাইনা/ আমরা শুনেছি ও অমান্য করেছি। ওয়াছমা’ গায়রা মুছমায়ি’ = এছমা’ গায়রা মুছমায়ি’/ শুনুন যা শুনা হয়নি বা শুনুন আপনি তো শুনতে প্রস্তুত নন বা শুনুন আপনি তো শুনার যোগ্যও নন। ওয়া রায়িনা = রায়িনা/ আমাদের রাখাল হউন। লাইয়্যাম বিআলছিনাতিহিম = তারা এসব বলে তাদের জিহবাকে বাঁকা করে। ওয়া = আর। ত’নান = তাচ্ছিল্য করে। ফিদ দীনি = দীনের/ ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিষয়ে। ওয়া = অথচ। লাও = যদি। আন্নাহুম = তারা। ক্বলূ = বলতো। ছামি’না ওয়া আতা’না = ছামি’না ওয়া আতা’না/ আমরা (প্রথমে মনোযোগ দিয়ে) শুনেছি আর (তারপর যথানিয়মে) ইতায়াত/ আনুগত্য করেছি। ওয়াছমা’ = এসমা/ শুনুন। ওয়ানযুরনা = ওয়ানযুরনা/ আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন। লাকানা = তাহলে তা-ই হতো। খায়রাল লাহুম = খায়ের/ কল্যাণকর তাদের জন্য। ওয়া = আর। আক্বওয়ামু = সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বিষয়। ওয়ালাকিল্লাআনাহুমুল্লাহু = কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। বিকুফরিহিম = তারা কুফর করার কারণে। ফালা ইউ’মিনূনা = তাই তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না। ইল্লা ক্বালীলা = অল্প কয়েকজন ছাড়া।

যারা ইহুদী হয়েছে তাদের মধ্য থেকে কিছু আছে যারা কালিমাকে/ বাক্যকে বিকৃত করে তার স্থান থেকে। আর বলে, (ক) ছামি’না ওয়া আসাইনা/ আমরা শুনেছি ও অমান্য করেছি; (খ) এছমা’ গায়রা মুছমায়ি’/ শুনুন যা শুনা হয়নি বা শুনুন আপনি তো শুনতে প্রস্তুত নন বা শুনুন আপনি তো শুনার যোগ্যও নন; (গ) রায়িনা/ আমাদের রাখাল হউন। তারা এসব বলে তাদের জিহবাকে বাঁকা করে আর তাচ্ছিল্য করে দীনের/ ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিষয়ে। অথচ যদি তারা বলতো, (ক) ছামি’না ওয়া আতা’না/ আমরা (প্রথমে মনোযোগ দিয়ে) শুনেছি আর (তারপর যথানিয়মে) ইতায়াত/ আনুগত্য করেছি, (খ) এসমা’/ শুনুন; (গ) উনযুরনা/ আমাদের দিকে লক্ষ্য করুন; তাহলে তা-ই হতো খায়ের/ কল্যাণকর তাদের জন্য আর সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বিষয়। কিন্তু তাদেরকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন তারা কুফর করার কারণে, তাই তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না, অল্প কয়েকজন ছাড়া।

৪:৪৭
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা উতুল কিতাবা = হে ঐসব লোক যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিমা নাযযালনা = উহার প্রতি যা আমরা নাযিল করেছি। মুসাদ্দিক্বাল লিমা মায়াকুম = উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে যা তোমাদের সাথে আছে। মিন ক্বাবলি আন = উহার আগেই যে অন্যথা। নাতমিছা = আমরা বিকৃত করে দেবো। উজূহান = চেহারাসমূহ। ফানারুদ্দাহা = তারপর আমরা উহাকে ফিরিয়ে দেবো। আলা আদবারিহা = উহার পিছনের দিকে। আও = অথবা। নালআনাহুম = আমরা তাদেরকে অভিশাপ দেবো। কামা লাআন্না = যেমন আমরা অভিশাপ দিয়েছি। আসহাবাছ ছাবতি = আসহাবে সাবতকে/ শনিবারের বিধান অমান্যকারীদেরকে। ওয়া = আর। কানা আমরুল্লাহি = আল্লাহর নির্দেশ। মাফঊলা = কার্যকর হয়েই থাকে।

হে ঐসব লোক যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, ‘তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো উহার প্রতি যা আমরা নাযিল করেছি উহার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারীরূপে যা তোমাদের সাথে আছে, উহার আগেই যে, অন্যথা আমরা বিকৃত করে দেবো চেহারাসমূহ, তারপর আমরা উহাকে ফিরিয়ে দেবো উহার পিছনের দিকে; অথবা আমরা তাদেরকে অভিশাপ দেবো যেমন আমরা অভিশাপ দিয়েছি আসহাবে সাবতকে/ শনিবারের বিধান অমান্যকারীদেরকে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়েই থাকে।

৪:৪৮
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াগফিরু = মাফ করেন না। আইঁ ইউশরাকা বিহী = তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহ। ওয়া = আর। ইয়াগফিরু = তিনি মাফ করেন। মা দূনা যালিকা = উহা ছাড়া অন্য গুনাহ। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইউশরিক বিল্লাহি = যে আল্লাহর সাথে শিরক করে। ফাক্বাদিফতারা = নিশ্চয় সে উহার মাধ্যমে রচনা করে। ইছমান আযীমা = মহাপাপ।

নিশ্চয় আল্লাহ মাফ করেন না তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহ আর তিনি মাফ করেন উহা ছাড়া অন্য গুনাহ যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শিরক করে নিশ্চয় সে উহার মাধ্যমে রচনা করে মহাপাপ (= সে মহাপাপে লিপ্ত হয়)।

৪:৪৯
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যারা। ইউযাক্কূনা = পরিশুদ্ধ বলে দাবি করে। আনফুছাহুম = তাদের নিজেদেরকে। বালিল্লাহু = বরং আল্লাহই। ইউযাক্কী = পবিত্র-পরিশুদ্ধ ও নৈতিকভাবে উন্নত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (পরিশুদ্ধ করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। লা ইউযলামূনা = তাদের প্রতি যুলম করা হয় না। ফাতীলা = বিন্দু পরিমাণও।

তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যারা পরিশুদ্ধ বলে দাবী করে তাদের নিজেদেরকে। বরং আল্লাহই পরিশুদ্ধ করেন যাকে তিনি (পরিশুদ্ধ করার) ইচ্ছা করেন। আর তাদের প্রতি যুলম করা হয় না বিন্দু পরিমাণও।

৪:৫০
উনযুর = নজর/ লক্ষ্য করো। কায়ফা = কিরূপে। ইয়াফতারূনা আলাল্লাহি কাযিবা = তারা রচনা করে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা কথা। ওয়া = আর। কাফা বিহী = উহাই যথেষ্ট। ইছমাম মুবীনা = সুস্পষ্ট গুনাহ হিসাবে।

নজর/ লক্ষ্য করো কিরূপে তারা রচনা করে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা কথা। আর উহাই যথেষ্ট সুস্পষ্ট গুনাহ হিসাবে।

৪:৫১
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যাদেরকে। উতূ নাসীবাম মিনাল কিতাবি = (কুরআনের সাপেক্ষে আসমানী) কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে। ইউ’মিনূনা = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল জিবতি = জিবতের প্রতি (= অযৌক্তিক বিষয় যেমন: মূর্তি, তাবিয তুমার, জাদুমন্ত্র, বানটোনা, ভাগ্য, ভাগ্য গণনা, হস্তরেখা, ভাগ্যের উপর নক্ষত্র ও পাথরের প্রভাব, ভালমন্দের লক্ষণনির্ণয়, কোন লোকের অলৌকিক বিষয় দেখার ও শুনার বা অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা, নজর লাগা, জ্বিনগ্রস্ততা, জ্বিনভুত তাড়ানো, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদির প্রতি)। ওয়াত তাগুতি = আর তাগুতের প্রতি (= যারা আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত ওহীপ্রসূত আসমানী সংবিধান আল কুরআন অনুসারে যারা বিচার ফায়সালা না করে তাদের হাওয়া প্রসূত জমিনী সংবিধান অনুসারে শাসন ও বিচার ফায়সালা করে তাদের প্রতি; মনে রাখতে হবে যে, মাটি বা পাথরের মূর্তি বিদ্রোহ করতে পারে না বিধায় ঐগুলি তাগুত হবে না, তাগুত ব্যক্তিসত্তা ৪:৬০)। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। লিল্লাযীনা = তাদের প্রসঙ্গে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। হাউলায়ি = (এ কথা যে), ‘উহারাই। আহদা = অধিক হিদায়াত পেয়েছে। মিনাল্লাযীনা = তাদের চেয়ে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ছাবীলা = সঠিক পথের বিষয়ে।

তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যাদেরকে (কুরআনের সাপেক্ষে আসমানী) কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে? তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে জিবতের প্রতি (= অযৌক্তিক বিষয় যেমন: মূর্তি, তাবিয তুমার, জাদুমন্ত্র, বানটোনা, ভাগ্য, ভাগ্য গণনা, হস্তরেখা, ভাগ্যের উপর নক্ষত্র ও পাথরের প্রভাব, ভালমন্দের লক্ষণনির্ণয়, কোন লোকের অলৌকিক বিষয় দেখার ও শুনার বা অলৌকিক কাজ করার ক্ষমতা, নজর লাগা, জ্বিনগ্রস্ততা, জ্বিনভুত তাড়ানো, ঝাড়ফুঁক ইত্যাদির প্রতি), আর তাগুতের প্রতি (= যারা আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত ওহীপ্রসূত আসমানী সংবিধান আল কুরআন অনুসারে বিচার ফায়সালা না করে তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তি প্রসূত জমিনী সংবিধান অনুসারে শাসন ও বিচার ফায়সালা করে তাদের প্রতি; মনে রাখতে হবে যে, মাটি বা পাথরের মূর্তি বিদ্রোহ করতে পারে না বিধায় ঐগুলি তাগুত হবে না, তাগুত ব্যক্তিসত্তা ৪:৬০)। আর তারা বলে তাদের প্রসঙ্গে যারা কুফর করেছে (এ কথা যে), ‘উহারাই অধিক হিদায়াত পেয়েছে তাদের চেয়ে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, সঠিক পথের বিষয়ে।

৪:৫২
উলায়িকাল্লাযীনা = উহারাই তারা। লাআনাহুমুল্লাহু = যাদেরকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়ালআনিল্লাহু = যাকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দেন। ফালান তাজিদা = তারপর কখনো তুমি পাবে না। লাহু = তার জন্য। নাসীরা = কোন সাহায্যকারী।

উহারাই তারা যাদেরকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। আর যাকে আল্লাহ লা’নত/ অভিশাপ দেন তারপর কখনো তুমি পাবে না তার জন্য কোন সাহায্যকারী।

৪:৫৩
আম লাহুম = তাদের জন্য আছে কি। নাসীবুম মিনাল মুলকি = আধিপত্যের কোন অংশ। ফাইযাল্লা ইউ’তূনান্নাছা = যদি থাকতো তাহলে তারা দিতো না মানুষকে। নাক্বীরা = খেজুর বীচির উপরের আবরণ পরিমাণ জিনিসও।

তাদের জন্য আছে কি আধিপত্যের কোন অংশ? যদি থাকতো তাহলে তারা দিতো না মানুষকে খেজুর বীচির উপরের আবরণ পরিমাণ জিনিসও।

৪:৫৪
আম = নাকি। ইয়াহছুদূনান্নাছা = তারা মানুষকে হিংসা করে। আলা মা = উহার উপর ভিত্তি করে যা। আতাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে। ফাক্বাদ = তাহলে তারা জেনে রাখুক নিশ্চয়। আতাইনা = আমরা দিয়েছি। আলা ইবরাহীমাল কিতাবা ওয়াল হিকামাতা = আলে ইবরাহীমকে/ ইবরাহীমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হিকমাত (দ্র: কিতাব ও হিকমাত আল কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়)। ওয়া = আর। আতাইনাহুম = আমরা তাদেরকে দিয়েছি। মুলকান আযীমা = মহাআধিপত্য।

নাকি তারা মানুষকে হিংসা করে উহার উপর ভিত্তি করে যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে? তাহলে তারা জেনে রাখুক নিশ্চয় ইতোপূর্বে আমরেই দিয়েছিলাম আলে ইবরাহীমকে/ ইবরাহীমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হিকমাত (দ্র: কিতাব ও হিকমাত আল কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়), আর আমরাই তাদেরকে দিয়েছিলাম মহাআধিপত্য।

৪:৫৫
ফামিনহুম = তারপর তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। আমানা বিহী = উহার প্রতি (= কিতাব ও হিকমাতের প্রতি, দ্র: কিতাব ও হিকমাত একই জিনিস হওয়ার কারণে একবচন ব্যবহৃত হয়েছে) ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ কেউ। সদ্দা = (মানুষকে) বাধা দেয়। আনহু = উহা থেকে। ওয়া = আর। কাফা = (তাদের জন্য) যথেষ্ট। বিজাহান্নামা ছায়ীরা = উত্তপ্ত আগুনবিশিষ্ট জাহান্নাম।

তারপর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ উহার প্রতি (= কিতাব ও হিকমাতের প্রতি, দ্র: কিতাব ও হিকমাত একই জিনিস হওয়ার কারণে একবচন ব্যবহৃত হয়েছে) ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ (মানুষকে) বাধা দেয় উহা থেকে। আর (তাদের জন্য) যথেষ্ট উত্তপ্ত আগুনবিশিষ্ট জাহান্নাম।

৪:৫৬
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি। ছাওফা = শীঘ্রই। নুসলীহিম = আমরা তাদেরকে নিক্ষেপ করবো। নারা = (জাহান্নামের) আগুনে। কুল্লামা = যখনই। নাদিজাত = পুড়ে যাবে। জুলূদুহুম = তাদের চামড়াসমূহ। বাদ্দালনাহুম = আমরা তাদেরকে বদলস্বরূপ দেবো। জুলূদান গায়রাহা = নতুন চামড়া। লিইয়াযূক্বুল আযাবা = যেন তারা আযাবের স্বাদ গ্রহণ করে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা আযীযান হাকীমা = আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে আমাদের আয়াতসমূহের প্রতি, শীঘ্রই আমরা তাদেরকে নিক্ষেপ করবো (জাহান্নামের) আগুনে। যখনই পুড়ে যাবে তাদের চামড়াসমূহ আমরা তাদেরকে বদলস্বরূপ দেবো নতুন চামড়া যেন তারা আযাবের স্বাদ গ্রহণ করে। নিশ্চয় আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:৫৭
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। ছানুদখিলুহুম = শীঘ্রই আমরা তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরি মিন তাহতিহা = যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয়। আল আনহারু = নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালীদিনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। আবাদান = চিরকাল। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফীহা = উহার মধ্যে। আযওয়াজুম মুতাহারাতুন = আযওয়াজুম মুতাহহারাতুন/ পবিত্র জোড়া (স্বামী/স্ত্রী)। ওয়া = আর। নুদখিলুহুম = আমরা তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো। যিল্লান যালীলা = ঘনছায়ায়।

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে, শীঘ্রই আমরা তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো জান্নাতে; যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে চিরকাল। তাদের জন্য আছে উহার মধ্যে আযওয়াজুম মুতাহহারাতুন/ পবিত্র জোড়া (স্বামী/স্ত্রী)। আর আমরা তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো ঘনছায়ায়।

৪:৫৮
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়া’মুরুকুম = তোমাদেরকে (= মুসলিমদেরকে) নির্দেশ দিচ্ছেন। আন = যে। তুয়াদ্দুল আমানাতা = তোমরা সমর্পণ করো (আল কুরআনের নির্বাহী দায়িত্ব তথা মুসলিম উম্মাহর সদস্যদের মধ্যকার আভ্যন্তরীন বিবাদ বিসম্বাদের বিচারভার, নেয়ামতের বন্টনভার ও মুসলিম উম্মাহকে পরিচালনার দায়িদায়িত্ব পালনের) আমানাত। ইলা আহলিহা = উহার প্রাপকের/ যোগ্য ব্যক্তির নিকট। ওয়া = আর। ইযা হাকামতুম = তোমরা (= যাদের নিকট কুরআনের নির্বাহী দায়িত্বপালনের আমানাত সমর্পণ করা হয়েছে) যখন বিচার ফায়সালা করবে। বায়নান্নাছি = মানুষের মধ্যে। আন = তখন যেন। তাহকুমূ = তোমরা বিচার ফায়সালা করো। বিল আদলি = আদল ইনসাফের/ ন্যায়বিচারের সাথে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। নিইম্মা ইয়ায়িযুকুম বিহী = তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা অত্যন্ত উত্তম। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। কানা ছামীয়াম বাসীরা = সামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা (= যিনি সব দেখেন)।

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে (= মুসলিমদেরকে) নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা সমর্পণ করো (আল কুরআনের নির্বাহী দায়িত্ব তথা মুসলিম উম্মাহর সদস্যদের মধ্যকার আভ্যন্তরীন বিবাদ বিসম্বাদের বিচারভার, নেয়ামতের বন্টনভার ও মুসলিম উম্মাহকে পরিচালনার দায়িদায়িত্ব পালনের) আমানাত উহার প্রাপকের/ যোগ্য ব্যক্তির নিকট। আর তোমরা (= যাদের নিকট কুরআনের নির্বাহী দায়িত্বপালনের আমানাত সমর্পণ করা হয়েছে) যখন বিচার ফায়সালা করবে মানুষের মধ্যে তখন যেন তোমরা বিচার ফায়সালা করো আদল ইনসাফের/ ন্যায়বিচারের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা অত্যন্ত উত্তম। নিশ্চয় আল্লাহ সামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা (= যিনি সব দেখেন)।

৪:৫৯
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আতিউল্লাহা = তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর। ওয়া = আর। আতিউর রাসূলা = ইতায়াত/ আনুগত্য করো রাসূলের। ওয়া = আর। উলিল আমরি মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার উলিল আমরের (= যারা কুরআনের নির্বাহী দায়িত্বের অধিকারী আমানাতদার)। ফাইন = তারপর যদি। তানাযা’তুম = তোমরা মতবিরোধ করো। ফী সাইয়িন = কোন বিষয়ে। ফারুদ্দূহু = তাহলে উহাকে প্রত্যার্পণ করো। ইলাল্লাহি ওয়া রাসূলি = আল্লাহর দিকে ও রাসূলের দিকে। ইন = যদি। কুনতুম তু’মিনূনা = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসের প্রতি। যালিকা = উহাই। খায়রুন = উত্তম। ওয়া = আর। আহসানু তা’বীলা = পরিণামে অধিক উত্তম।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর আর ইতায়াত/ আনুগত্য করো রাসূলের আর তোমাদের মধ্যকার উলিল আমরের (= যারা কুরআনের নির্বাহী দায়িত্বের অধিকারী আমানাতদার)। তারপর যদি তোমরা মতবিরোধ করো কোন বিষয়ে, তাহলে উহাকে প্রত্যার্পণ করো আল্লাহর দিকে ও রাসূলের দিকে। যদি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করে থাকো আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসের প্রতি। উহাই উত্তম আর পরিণামে অধিক উত্তম।

৪:৬০
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যারা। ইয়াযউমূনা = দাবী করে। আন্নাহুম = যে। আমানূ = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিমা উনযিলা ইলাইকা = উহার প্রতি যা তোমরা প্রতি নাযিল করা হয়েছে। ওয়া = আর। মা উনযিলা মিন ক্বাবলিকা = ঐসবের প্রতি যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছে। ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইয়াতাহাকামূ = যে, তারা বিচারপ্রার্থী হবে। ইলাত তাগূতি = তাগূতের কাছে {= যারা ওহীপ্রসূত আসমানী সংবিধান আল কুরআনের আলোকে বিচার না করে হাওয়াপ্রসূত/ প্রবৃত্তিপ্রসূত জমিনী সংবিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে তাদের কাছে)। ওয়া = অথচ। ক্বাদ উমিরূ = নিশ্চয় তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। আইঁ ইয়াকফুরূ বিহী = উহার প্রতি (= তাগুতের প্রতি) কুফর করতে/ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করতে (১৬: ৩৬)। ওয়া = আর। ইউরিদুশ শায়তানু = শয়তান এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইউদিল্লাহুম = তাদেরকে বিভ্রান্ত/ পথভ্রষ্ট করতে। দলালাম বায়িদা = দূরবর্তী বিভ্রান্তিতে।

তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যারা দাবী করে যে, তারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে উহার প্রতি যা তোমরা প্রতি নাযিল করা হয়েছে আর ঐসবের প্রতি যা তোমার আগে নাযিল করা হয়েছে? তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে যে, তারা বিচারপ্রার্থী হবে তাগূতের কাছে {= যে সব ব্যক্তিসত্তা ওহীপ্রসূত আসমানী সংবিধান আল কুরআন অনুসারে বিচার ফায়সালা না করে হাওয়াপ্রসূত/ প্রবৃত্তিপ্রসূত জমিনী সংবিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে তাদের কাছে)। অথচ নিশ্চয় তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো উহার প্রতি (= তাগুতের প্রতি) কুফর করতে/ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করতে (১৬: ৩৬)। আর শয়তান এরাদা/ ইচ্ছা করে তাদেরকে বিভ্রান্ত/ পথভ্রষ্ট করতে, দূরবর্তী বিভ্রান্তিতে।

৪:৬১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বীলা = বলা হয়। লাহুম = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে। তাআলাও = তোমরা আসো। ইলা মা আনযালাল্লাহু = উহার দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন (= কুরআনের দিকে)। ওয়া = আর। ইলার রাসূলি = রাসূলের দিকে। রআইতাল মুনাফিক্বীনা = তুমি মুনাফিকদেরকে দেখবে। ইয়াসুদ্দূনা আনকা সুদূদান = তারা তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে সম্পূর্ণ সরে যাচ্ছে।

আর যখন বলা হয় তাদেরকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা আসো উহার দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন (= কুরআনের দিকে), আর রাসূলের দিকে’। তখন তুমি মুনাফিকদেরকে দেখবে তারা তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে সম্পূর্ণ সরে যাচ্ছে।

৪:৬২
ফাকাইফা = তারপর কেমন হবে? ইযা = যখন। আসাবাতহুম মুসীবাতুন = তারা মুসিবতগ্রস্ত হবে। বিমা = উহার কারণে যা। ক্বাদ্দামাত = আগেই সম্পাদন করেছে। আইদীহিম = তাদের হাতসমূহ (= তাদের কৃতকর্মের কারণে)। ছুম্মা = তারপর। জাউকা = তারা তোমার কাছে আসবে। ইয়াহলিফূনা = তারা হলফ/ কসম করবে। বিল্লাহি = আল্লাহর নামে। ইন আরাদনা = (বলবে,) ‘আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করিনি। ইল্লা = এছাড়া যে তা হবে। ইহসানান = উত্তম আচরণ। ওয়া = আর। তাওফীক্বান = তাওফীক্ব/ সহাবস্থান তৈরি ও দূরত্ব লাঘবের উপাদানের যোগান।

তারপর কেমন হবে যখন তারা মুসিবতগ্রস্ত হবে উহার কারণে যা আগেই সম্পাদন করেছে তাদের হাতসমূহ (= তাদের কৃতকর্মের কারণে অর্থাৎ তাগুতের আনুগত্য ও তাগুতের কাছে বিচারভার অর্পণের কারণে)? তারপর তারা তোমার কাছে আসবে, তারা হলফ/ কসম করবে আল্লাহর নামে, (বলবে,) ‘আমরা এরাদা/ ইচ্ছা করিনি এছাড়া যে তা হবে উত্তম আচরণ আর তাওফীক্ব/ সহাবস্থান তৈরি ও দূরত্ব লাঘবের উপাদানের যোগান।

৪:৬৩
উলায়িকাল্লাযীনা = উহারা তো এমনই যাদের ব্যাপারে। ইয়া’লামুল্লাহু = আল্লাহ জানেন। মা ফী ক্বুলূবিহিম = কী আছে তাদের কলবসমূহে। ফাআ’রিদ আনহুম = সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করো। ওয়া = আর। ইযহুম = তাদেরকে ওয়াজ করো/ উপদেশ দাও। ওয়া = আর। ক্বুল লাহুম = তাদেরকে বলো। ফী আনফুসিহিম = যেন তাদের নফসসমূহের মধ্যে পৌঁছে যায়। ক্বাওলাম বালীগা = এমন মর্মস্পর্শী কথা।

উহারা তো এমনই যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জানেন কী আছে তাদের কলবসমূহে। সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করো আর তাদেরকে ওয়াজ করো/ উপদেশ দাও আর তাদেরকে বলো যেন তাদের নফসসমূহের মধ্যে পৌঁছে যায় এমন মর্মস্পর্শী কথা।

৪:৬৪
ওয়া = আর। মা আরছালনা = আমরা প্রেরণ করিনি। মির রসূলিন = কোন রসূল। ইল্লা লিউতআ = এ উদ্দেশ্য ছাড়া যে, যেন তার ইতায়াত/ আনুগত্য করা হয়। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্নাহুম = বাস্তবে তারা। ইয = যখন। যল্লামূ = যুলুম করেছে। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদের উপর। জাউকা = (তারপর অবিলম্বে) তারা তোমার কাছে আসতো। ফাছতাগফারুল্লাহা = তারপর আল্লাহর কাছে মাগফিরাত/ মাফ চাইতো। ওয়াছাতগফারা লাহুমুর রাছুলু = আর মাফ চাইতো তাদের জন্য রসূল নিজেও। লাওয়াজাদুল্লাহা = তাহলে নিশ্চয় তারা আল্লাহকে পেতো। তাওবার রহীমা = তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, রহীম/ দয়াশীল।

আর আমরা প্রেরণ করিনি কোন রসূল এ উদ্দেশ্য ছাড়া যে, যেন তার ইতায়াত/ আনুগত্য করা হয় আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর যদি বাস্তবে তারা যখন (তাগুতের আনুগত্য ও তাগুতের কাছে বিচারভার অর্পণের মাধ্যমে) যুলুম করেছে তাদের নিজেদের উপর (তারপর অবিলম্বে) তারা তোমার কাছে আসতো তারপর আল্লাহর কাছে মাগফিরাত/ মাফ চাইতো আর মাফ চাইতো তাদের জন্য রসূল নিজেও, তাহলে নিশ্চয় তারা আল্লাহকে পেতো তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, রহীম/ দয়াশীল।

৪:৬৫
ফালা = সুতরাং না। ওয়া রব্বিকা = তোমার রবের/ বিধানদাতার কসম। লা ইউ’মিনূনা = তারা মু’মিন হবে না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউহাক্কিমূকা = তারা তোমার নিকট বিচার মীমাংসার ভার অর্পণ করে। ফীমা সাজারা বায়নাহুম = তাদের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদের বিষয়ে। ছুম্মা = তারপর। লা ইয়াজিদূ = তারা না পায়। ফী আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের মধ্যে। হারাজাম মিম্মা ক্বাদাইতা = কোন সংকীর্ণতা/ সংকোচ, তোমার বিচারের/ সিদ্ধান্তের বিষয়ে। ওয়া = আর। ইউছাল্লিমূ তাছলীমা = তারা তাসলিম/ শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে।

সুতরাং না, তোমার রবের/ বিধানদাতার কসম, তারা মু’মিন হবে না যতক্ষণ না তারা তোমার নিকট বিচার মীমাংসার ভার অর্পণ করে তাদের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদের বিষয়ে, তারপর তারা না পায় তাদের নিজেদের মধ্যে কোন সংকীর্ণতা/ সংকোচ, তোমার বিচারের/ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আর তারা তাসলিম/ শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করে।

৪:৬৬
ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্না = নিশ্চয় আমরা। কাতাবনা আলাইহিম = তাদের উপর বিধিবদ্ধ করে দিতাম। আনিক্বতুলূ = যে, তোমরা কতল/ হত্যা করো। আনফুছাকুম = তোমাদের নিজেদেরকে। আওয়িখরুজূ = অথবা তোমরা বেরিয়ে যাও। মিন দিয়ারিকুম = তোমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে। মা ফাআলূহু = তাহলে তারা তা পালন করতো না। ইল্লা ক্বালিলুম মিনহুম = তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্নাহুম = বাস্তবে তারা। ফাআলূ = পালন করতো। মা ইউআযূনা বিহী = যা পালন করার জন্য তাদেরকে ওয়াজ করা/ উপদেশ দেয়া হয় (৪:৫৮-৬৫)। লাকানা খায়রাল্লাহুম = তাহলে নিশ্চয় উহা খায়ের/ কল্যাণকর হতো তাদের জন্য। ওয়া = আরো হতো। আশাদ্দা তাছবীতান = মনের স্থিরতায় দৃঢ়তর।

আর যদি নিশ্চয় আমরা তাদের উপর বিধিবদ্ধ করে দিতাম যে, তোমরা কতল/ হত্যা করো তোমাদের নিজেদেরকে অথবা তোমরা বেরিয়ে যাও তোমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে, তাহলে তারা তা পালন করতো না, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। আর যদি বাস্তবে তারা পালন করতো যা পালন করার জন্য তাদেরকে ওয়াজ করা/ উপদেশ দেয়া হয় (৪:৫৮-৬৫), তাহলে নিশ্চয় উহা খায়ের/ কল্যাণকর হতো তাদের জন্য, আরো হতো মনের স্থিরতায় দৃঢ়তর।

৪:৬৭
ওয়া = আর। ইযাল্লাআতাইনাহুম = তখন আমরা তাদেরকে দিতাম। মিল্লাদুন্না = আমাদের পক্ষ থেকে। আজরান আযীমা = মহাপুরস্কার।

আর তখন আমরা তাদেরকে দিতাম আমাদের পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার।

৪:৬৮
ওয়া = আর। হাদাইনাহুম = আমরা তাদেরকে হিদায়াত করতাম। সিরাতাম মুসতাক্বীমা = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ।

আর আমরা তাদেরকে হিদায়াত করতাম সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ।

৪:৬৯
ওয়া = আর। মাইঁ ইউতিইল্লাহা = যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর। ওয়ার রাসূলা = আর রাসূলের। ফাউলায়িকা = তারাই। মাআল্লাযীনা = তাদের সাথে থাকবে। আনআমাল্লাহু = আল্লাহ নিয়ামাত দিয়েছেন। আলাইহিম = যাদের উপর। মিনান্নাবিয়্যীনা = যেমন: নবীগণ। ওয়স সিদ্দিক্বীনা = আর সিদ্দিকগণ। ওয়া শুহাদাআ = আর শহীদগণ। ওয়াস সালিহীন = আর সালেহগণ। ওয়া = আর। হাছুনা = খুবই উত্তম। উলায়িকা = ঐসব। রফীকা = রফীক/ বন্ধু।

আর যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর আর রাসূলের, তারাই তাদের সাথে থাকবে আল্লাহ নিয়ামাত দিয়েছেন যাদের উপর, যেমন: নবীগণ আর সিদ্দিকগণ আর শহীদগণ আর সালেহগণ। আর খুবই উত্তম ঐসব রফীক/ বন্ধু।

৪:৭০
যালিকাল ফাদলু = উহা ফদল/ অনুগ্রহ। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহই = আল্লাহই যথেষ্ট। আলীমা = আলীম/ জ্ঞানী হিসাবে।

উহা ফদল/ অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহই যথেষ্ট আলীম/ জ্ঞানী হিসাবে।

৪:৭১
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। খুজূ = তোমরা অবলম্বন করো। হিযরাকুম = তোমাদের সতর্কতা। ফানফিরূ = তারপর তোমরা অভিযানে বের হও। ছুবাতান = গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনাকারী ছোট ছোট সেনাদলে। আওয়িনফিরূ = অথবা তোমরা অভিযানে বের হও। জামিআ = একত্রে।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা অবলম্বন করো তোমাদের সতর্কতা। তারপর তোমরা অভিযানে বের হও গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনাকারী ছোট ছোট সেনাদলে অথবা অভিযানে বের হও একত্রে।

৪:৭২
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। মিনকুম = তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে। লামাল্লাইউবাত্তিআন্না = যে পিছনে সরে যাবে। ফাইন = তারপর যদি। আসাবাতকুম মুসীবাতুন = তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হও। ক্বলা = সে বলবে। ক্বাদ = নিশ্চয়। আনআমাল্লাহু আলাইয়া = আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আলাইয়া = আমার উপর। ইয = তখন। লাম আকুম মাআহুম = আমি ছিলাম না তাদের সাথে। সাহীদা = (যুদ্ধক্ষেত্রে) উপস্থিত।

আর নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমনও আছে যে পিছনে সরে যাবে। তারপর যদি তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হও, সে বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন আমার উপর, তখন আমি ছিলাম না তাদের সাথে (যুদ্ধক্ষেত্রে) উপস্থিত’।

৪:৭৩
ওয়া = আর। লাইন = যদি। আসাবাকুম = তোমাদের কাছে পৌঁছে। ফাদলুম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফদল/ অনুগ্রহ। লাইয়াক্বূলান্না = তারা অবশ্যই বলবে। কাআন = এমনভাবে যেন। লাম তাকুম বায়নাকুম ওয়া বায়নাহু = ছিলো না তোমাদের ও তার মধ্যে। মাওয়াদ্দাতুন = কোন আন্তরিক সম্পর্ক। ইয়া লাইতানি = (তারা বলবে) হায়! আমার আফসোস। কুনতু = যদি আমি থাকতাম। মাআহুম = তাদের সাথে। ফাআফূজা = তাহলে আমি সফল হতাম। ফাওযান আযীমান = মহাসাফল্য লাভ করে।

আর যদি তোমাদের কাছে পৌঁছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ফদল/ অনুগ্রহ, তাহলে তারা অবশ্যই বলবে এমনভাবে যেন ছিলো না তোমাদের ও তার মধ্যে কোন আন্তরিক সম্পর্ক, (তারা বলবে,) ‘হায়! আমার আফসোস, যদি আমি থাকতাম তাদের সাথে, তাহলে আমি সফল হতাম মহাসাফল্য লাভ করে’।

৪:৭৪
ফাল ইউক্বাতিল ফী সাবীলিল্লাহিল্লাযীনা = সুতরাং তারা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করা উচিত যারা। ইয়াশরূনাল হায়াতাদ দুনইয়া = বিক্রয় করে হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে। বিল আখিরাতি = আখিরাতের বিনিময়ে। ওয়া = আর। মাইঁ ইউক্বাতিল ফী ছাবীলিল্লাহি = যে কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে। ফাইউক্বতাল = তারপর তাতে নিহত হয়। আও = অথবা। ইয়াগলিব = বিজয়ী হয়। ফাছাওফা = শীঘ্রই। নু’তীহি = আমরা তাকে দেবো। আজরান আযীমা = মহাপুরস্কার।

সুতরাং তারা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করা উচিত যারা বিক্রয় করে হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে আখিরাতের বিনিময়ে। আর যে কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে তারপর তাতে নিহত হয় অথবা বিজয়ী হয়, শীঘ্রই আমরা তাকে দেবো মহাপুরস্কার।

৪:৭৫
ওয়া = আর। মা লাকুম = তোমাদের কী হয়েছে যে। লা তুক্বাতিলূনা ফী সাবীলিল্লাহি = তোমরা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করছো না। ওয়াল মুছতাদআফীনা = অথচ মুসতাদআফীন/ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষ। মিনার রিজালি ওয়ান নিসায়ী ওয়াল ওয়িলদানি = পুরুষ, নারী ও শিশু। আল্লাযীনা = যারা। ইয়াক্বূলূনা = বলে। রব্বানা = আমাদের রব। আখরিজনা = আমাদেরকে বের করে নিন। মিন হাযিহিল ক্বারিয়াতিয যালিমি আহলুহা = এই জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা যালিম। ওয়াজআল = আর প্রতিস্থাপন করুন। লানা = আমাদের জন্য। মিল্লাদুনকা = আপনার পক্ষ থেকে। ওয়ালীয়্যান = ওয়ালী/ অভিভাবক। ওয়াজআল = আর প্রতিস্থাপন করুন। লানা = আমাদের জন্য। মিল্লাদুনকা = আপনার পক্ষ থেকে। নাসীরান = নাসীর/ সাহায্যকারী।

আর তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করছো না? অথচ মুসতাদআফীন/ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানুষ - পুরুষ, নারী ও শিশু, যারা বলে, ‘আমাদের রব, আমাদেরকে বের করে নিন এই জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা যালিম। আর প্রতিস্থাপন করুন আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে ওয়ালী/ অভিভাবক, আর প্রতিস্থাপন করুন আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে নাসীর/ সাহায্যকারী’।

৪:৭৬
আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ইউক্বাতিলূনা ফী সাবীলিল্লাহি = তারা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ইউক্বাতিলূনা ফী সাবীলিত তাগূতি =তারা কিতাল ফী সাবীলিত তাগুত/ তাগুতের পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে। ফাক্বাতিলূ = সুতরাং তোমরা কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো। আওলিআশ শায়তানি = শয়তানের আওলিয়ার/ বন্ধুদের বিরুদ্ধে। ইন্না = নিশ্চয়। কায়দাশ শায়তানি = শয়তানের কায়দা কৌশল। কানা দয়ীফা = অত্যন্ত দুর্বল।

যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে। আর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারা কিতাল ফী সাবীলিত তাগুত/ তাগুতের পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করে। সুতরাং তোমরা কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো শয়তানের আওলিয়ার/ বন্ধুদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয় শয়তানের কায়দা কৌশল অত্যন্ত দুর্বল।

৪:৭৭
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা। ক্বীলা লাহুম = যাদেরকে বলা হয়েছিলো। কুফফূ = তোমরা গুটিয়ে রাখো। আইদিয়াকুম = তোমাদের হাতসমূহ। ওয়া = আর। আকিমুস সালাতা = তোমরা সালাত কায়েম/প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া = আর। আতুয যাকাতা = তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। ফালাম্মা = তারপর যখন। কুতিবা = বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। আলাইহিমুল ক্বিতালু = তাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। ইযা = তখন। ফারীক্বাম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে একদল। ইয়াখশাওনান্নাছা = মানুষকে ভয় করেছে। কাখাশইয়াতিল্লাহি = যেমন ভয় করা উচিত আল্লাহকে। আও = অথবা। আশাদ্দা খাশইয়াতান = তার চেয়ে কঠিন ভয়। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। রব্বানা = আমাদের রব। লিমা = কেন। কাতাবনা = তুমি বিধিবদ্ধ করেছো। আলাইনাল কিতালা = আমাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। লাও = কেন। লা আখখারতানা = আমাদেরকে অবকাশ দাওনি। ইলা আজালিন ক্বারীব = নিকটবর্তী সময়সীমা পর্যন্ত (= আর মাত্র কয়েকটা দিন)। ক্বুল = বলো। মাতাউদ দুনইয়া = দুনিয়ার সামগ্রী। ক্বালীলুন = অত্যন্ত অল্প। ওয়াল আখিরাতু = আর আখিরাতই। খায়রুল্লিমানিত তাক্বা = তার জন্য উত্তম যে তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করে। ওয়ালা তুযলামূনা = আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না। ফাতীলা = বিন্দু পরিমাণও।

তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যাদেরকে বলা হয়েছিলো, ‘তোমরা গুটিয়ে রাখো তোমাদের হাতসমূহ আর তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো’। তারপর যখন বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম, তখন তাদের মধ্য থেকে একদল মানুষকে ভয় করেছে যেমন ভয় করা উচিত আল্লাহকে অথবা তার চেয়ে কঠিন ভয়। আর তারা বলেছে, ‘আমাদের রব, কেন তুমি বিধিবদ্ধ করেছো আমাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। কেন আমাদেরকে অবকাশ দাওনি নিকটবর্তী সময়সীমা পর্যন্ত (= আর মাত্র কয়েকটা দিন)?’ বলো, ‘দুনিয়ার সামগ্রী অত্যন্ত অল্প। আর আখিরাতই তার জন্য উত্তম যে তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করে। আর তোমাদেরকে যুলম করা হবে না বিন্দু পরিমাণও’।

৪:৭৮
আয়নামা = যেখানেই। তাকূনূ = তোমরা থাকো। ইউদরিক্কুম মাওতু = মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই। ওয়া লাও = যদিও। কুনতুম = তোমরা থাকো। ফী বুরূজিম মুশাইয়্যাদাতিন = সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুসিবহুম হাছানাতুন = তাদের কোন উত্তম অবস্থা হয়। ইয়াক্বুলূ = তখন তারা বলে। হাযিহি = ইহা। মিন ইনদিল্লাহ = আল্লাহর পক্ষ থেকে (আল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুসিবহুম ছাইয়্যিআতুন = তাদের কোন মন্দ অবস্থা হয়। ইয়াক্বুলূ = তখন তারা বলে। হাযিহি = ইহা। মিন ইনদিকা = তোমার পক্ষ থেকে (= রসূল কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)। ক্বুল = বলো। কুল্লু = (কল্যাণ-অকল্যাণ) সবকিছুই। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে (আল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)। ফামালি হাউলায়িল ক্বাওমি = তারপর এসব কাওমের কী হলো যে। লা ইয়াকাদূনা ইয়াফক্বাহূনা = তারা মোটেই ফিকহ/ উপলব্ধি করে না। হাদীসান = কোন হাদীস/ কথা।

যেখানেই তোমরা থাকো মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, যদিও তোমরা থাকো সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে। আর যদি তাদের কোন উত্তম অবস্থা হয় তখন তারা বলে, ‘ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে (আল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)’। আর যদি তাদের কোন মন্দ অবস্থা হয়, তখন তারা বলে, ‘ইহা তোমার পক্ষ থেকে (= রসূল কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)’। বলো, ‘(কল্যাণ-অকল্যাণ) সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে (আল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত হওয়া ফলাফলস্বরূপ)’। তারপর এসব কাওমের কী হলো যে, তারা মোটেই ফিকহ/ উপলব্ধি করে না কোন হাদীস/ কথা?

৪:৭৯
মা আসাবাকা মিন হাছানাতিন = তোমার যা কিছু উত্তম অবস্থা হয়। ফামিনাল্লাহ = তা আল্লাহর থেকে। ওয়া = আর। মা আসাবাকা মিন ছাইয়্যিআতিন = তোমার যা কিছু মন্দ অবস্থা হয়। ফামিন নাফছিকা = তা তোমার নিজের থেকে। ওয়া = আর। আরছালনাকা = আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। রাছূলান = রাসূল হিসাবে। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি = আল্লাহই যথেষ্ট। শাহীদা = সাক্ষী হিসাবে।

তোমার যা কিছু উত্তম অবস্থা হয় তা আল্লাহর থেকে। আর তোমার যা কিছু মন্দ অবস্থা হয় তা তোমার নিজের থেকে। আর আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি মানবজাতির জন্য রাসূল হিসাবে। আর আল্লাহই যথেষ্ট সাক্ষী হিসাবে।

৪:৮০
মাইঁ ইউতিয়ির রাসূলা = যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে রাসূলের। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাআল্লাহা = সে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর। ওয়া = আর। মান তাওয়াল্লা = যে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফামা আরছালনাকা = তাহলে আমি তোমাকে প্রেরণ করিনি। আলাইহিম = তাদের উপর। হাফীযা = হাফীয/ সংরক্ষণকারী হিসাবে।

যে ইতায়াত/ আনুগত্য করে রাসূলের নিশ্চয় সে ইতায়াত/ আনুগত্য করে আল্লাহর। আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আমি তোমাকে প্রেরণ করিনি তাদের উপর হাফীয/ সংরক্ষণকারী হিসাবে।

৪:৮১
ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। তআতুন = ইতায়াত/ আনুগত্য করি। ফাইযা = তারপর যখন। বারাজূ = তারা বের হয়ে যায়। মিন ইনদিকা = তোমার নিকট থেকে। বাইয়্যাতা = রাতের বেলা পরামর্শ করে। তয়িফাতুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার একদল। গায়রাল্লাযী = উহার বিপরীত যা। তাক্বূলু = তুমি বলো। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়াকতুবু = লিখে রাখেন। মা ইউবাইয়্যিতূনা = রাতের বেলা যা তারা পরামর্শ করে। ফাআ’রিদ আনহুম = সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করো। ওয়া = আর। তাওয়াক্কাল = তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি = আল্লাহই যথেষ্ট। ওয়াকীলা = উকিল/ কার্যনির্বাহক হিসাবে।

আর তারা বলে, ‘ইতায়াত/ আনুগত্য করি’। তারপর যখন তারা বের হয়ে যায় তোমার নিকট থেকে, তখন রাতের বেলা পরামর্শ করে তাদের মধ্যকার একদল উহার বিপরীত যা তুমি বলো। আর আল্লাহ তা লিখে রাখেন রাতের বেলা যা তারা পরামর্শ করে। সুতরাং তাদেরকে উপেক্ষা করো আর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো আল্লাহর উপর। আর আল্লাহই যথেষ্ট উকিল/ কার্যনির্বাহক হিসাবে।

৪:৮২
আফালা ইয়াতাদাব্বারূনাল কুরআনা = তবে কি তারা কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর/ গবেষণা করে না?। ওয়া = আর। লাও = যদি। কানা = কুরআন হতো। মিন ইনদি গায়রিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচিত। লাওয়াজাদূ = তাহলে তারা নিশ্চয় পেতো। ফীহি = উহার মধ্যে। ইখতিলাফান কাছীরান = অনেক পরস্পর বিপরীত বক্তব্য।

তবে কি তারা (= মুনাফিকরা) কুরআন নিয়ে তাদাব্বুর/ গবেষণা করে না? আর যদি কুরআন হতো আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো রচিত, তাহলে তারা নিশ্চয় পেতো উহার মধ্যে অনেক পরস্পর বিপরীত বক্তব্য।

৪:৮৩
ওয়া = আর। ইযা = যখন। জাআহুম = তাদের কাছে আসে। আমরুম মিনাল আমনি = কোন শান্তিপূর্ণ বিষয়। আওয়িল খাওফি = অথবা ভীতিপ্রদ বিষয়। আযাউ বিহী = তারা উহা সর্বত্র প্রচার করে। ওয়া = অথচ। লাও = যদি। রদ্দূহু = তারা উহা পৌঁছে দিতো। ইলার রাসূলি = রাসূলের কাছে। ওয়া = আর। ইলা উলিল আমরি মিনকুম = তাদের মধ্যকার উলিল আমরের কাছে। লাআলিমাহুল্লাযীনা = তাহলে নিশ্চয় তারা তা জানতো যারা। ইয়াছতামবিতূনাহু = উহার ইস্তিম্বাত/ যথার্থতা নির্ণয়ে তথ্যানুসন্ধান করতে পারতো। ওয়া = আর। লাও = যদি। লা ফাদলুল্লাহি = না থাকতো আল্লাহর ফদল/ অনুগ্রহ। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। রাহমাতুহু = (না থাকতো) তাঁর রহমত/ দয়া। লাত্তাবা’তুমুশ শায়তানা = নিশ্চয় তোমরা শয়তানের ইত্তেবা/ অনুসরণ করতে। ইল্লা ক্বালীলা = অল্প কয়েকজন ছাড়া।

আর যখন তাদের কাছে আসে কোন শান্তিপূর্ণ বিষয় অথবা ভীতিপ্রদ বিষয়, তারা উহা সর্বত্র প্রচার করে। অথচ যদি তারা উহা পৌঁছে দিতো রাসূলের কাছে আর তাদের মধ্যকার উলিল আমরের কাছে, তাহলে নিশ্চয় তারা তা জানতো যারা উহার ইস্তিম্বাত/ যথার্থতা নির্ণয়ে তথ্যানুসন্ধান করতে পারতো। আর যদি না থাকতো আল্লাহর ফদল/ অনুগ্রহ তোমাদের উপর আর (না থাকতো) তাঁর রহমত/ দয়া, তাহলে নিশ্চয় তোমরা শয়তানের ইত্তেবা/ অনুসরণ করতে, অল্প কয়েকজন ছাড়া।

৪:৮৪
ফাক্বাতিল ফী সাবীলিল্লাহি = সুতরাং তুমি ক্বিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। লা তুকাল্লাফু = তোমাকে দায়ী করা হবে না। ইল্লা নাফসুকা = তোমার নিজের ব্যাপারে ছাড়া। ওয়া = আর। হাররিদিল মু’মিনীন = মু’মিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো। আছাল্লাহু = হয়তো আল্লাহ। আইঁ ইয়াকুফফা = খর্ব করবেন। বা’ছাল্লাযীনা = তাদের দাপট যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আশাদ্দু বা’ছিন = দাপটে প্রবলতর। ওয়া = আর। আশাদ্দু তানকীলা = শাস্তিদানে কঠোর।

সুতরাং তুমি ক্বিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। তোমাকে দায়ী করা হবে না তোমার নিজের ব্যাপারে ছাড়া। আর মু’মিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করো। হয়তো আল্লাহ খর্ব করবেন তাদের দাপট যারা কুফর করেছে। আর আল্লাহ দাপটে প্রবলতর আর শাস্তিদানে কঠোর।

৪:৮৫
মাইঁ ইয়াশফা’ শাফাআতান হাছানাতান = যে উত্তম কাজের শাফায়াত/ সুপারিশ করে। ইয়াকুল্লাহু নাসীবুম মিনহা = তার জন্য থাকবে উহার একটি অংশ। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াশফা’ শাফায়াতান ছাইয়্যিআতান = যে মন্দ কাজের শাফায়াত/ সুপারিশ করে। ইয়াকুল্লাহু কিফলুম মিনহা = তার জন্য থাকবে উহার একটি অংশ। ওয়া = আর। কানাল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িম মুক্বীতা = আল্লাহ সকল বিষয়ের পর্যবেক্ষণকারী ও সকলের যাথাযথ প্রাপ্য বরাদ্দকারী।

যে উত্তম কাজের শাফায়াত/ সুপারিশ করে তার জন্য থাকবে উহার একটি অংশ। আর যে মন্দ কাজের শাফায়াত/ সুপারিশ করে তার জন্য থাকবে উহার একটি অংশ। আর আল্লাহ সকল বিষয়ের পর্যবেক্ষণকারী ও সকলের যথাযথ প্রাপ্য বরাদ্দকারী।

৪:৮৬
ওয়া = আর। ইযা = যখন। হুইয়ীতুম বিতাহিয়্যাতিন = কেউ তোমাদেরকে তাহিয়্যাত/ সালাম জানায়। ফাহাইয়্যু = তখন তোমরা তাকে তাহিয়্যাত/ সালাম জানাও। বিআহছানা মিনহু = উহার চেয়ে অধিক উত্তমভাবে। আও = অথবা। রুদ্দূহা = তার মতো করেই তাকে জবাব দাও। ইন্নাল্লাহা কানা আলা কুল্লি সাইয়িন হিসাবা = নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী।

আর যখন কেউ তোমাদেরকে তাহিয়্যাত/ সালাম জানায় তখন তোমরা তাকে তাহিয়্যাত/ সালাম জানাও উহার চেয়ে অধিক উত্তমভাবে অথবা তার মতো করেই তাকে জবাব দাও। নিশ্চয় আল্লাহ সকল বিষয়ের হিসাব গ্রহণকারী।

৪:৮৭
আল্লাহু = আল্লাহু। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। লাইয়াজমাআন্নাকুম = তিনি নিশ্চয় তোমাদেরকে একত্রিত করবেন। ইলা ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। লা রায়বা ফীহি = উহাতে কোন সন্দেহ নেই। ওয়া = আর। মান = কে। আসদাক্বু = বেশি সত্যবাদী। মিনাল্লাহী = আল্লাহর চেয়েও। হাদীসা = কে আল্লাহর চেয়েও। হাদীসান = হাদীস বর্ণনায়।

আল্লাহু, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি নিশ্চয় তোমাদেরকে একত্রিত করবেন ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। উহাতে কোন সন্দেহ নেই। আর কে বেশি সত্যবাদী আল্লাহর চেয়েও, হাদীস বর্ণনায়?

৪:৮৮
ফামা লাকুম = তোমাদের কী অধিকার আছে? ফিল মুনাফিক্বূনা = মুনাফিকদের ব্যাপারে। ফিআতাইনি = তোমরা দুই দল হয়ে যাবে? ওয়াল্লাহু = অথচ আল্লাহ। আরকাছাহুম = তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন। বিমা কাছাবূ = তাদের অন্যায় উপার্জনের কারণে। আতুরীদূনা = তোমরা কি এরাদা/ ইচ্ছা করো। আন = যে। তাহতাদূ = তোমরা তাদেরকে হিদায়াত করবে। মান = যাদেরকে। আদাল্লাল্লাহু = আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দেন। ফালান তাজিদা = তারপর তুমি পাবে না। লাহু = তার জন্য। ছাবীলা = কোন পথ।

তোমাদের কী অধিকার আছে যে, মুনাফিকদের ব্যাপারে তোমরা দুই দল হয়ে যাবে? অথচ আল্লাহ তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের অন্যায় উপার্জনের কারণে। তোমরা কি এরাদা/ ইচ্ছা করো যে, তোমরা তাদেরকে হিদায়াত করবে যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন? আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করে দেন তারপর তুমি পাবে না তার জন্য কোন পথ।

৪:৮৯
ওয়াদ্দূ = তারা কামনা করে। লাও = যদি। তাকফুরূনা = তোমরা কুফর করতে। কামা = যেমন। কাফারূ = তারা কুফর করেছে। ফাতাকূনূনা = তাহলে তোমরাও হয়ে যেতে। ছাওয়াআন = তাদের সমান। ফালা তাত্তাখিজূ = সুতরাং তোমরা গ্রহণ করো না। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে কাউকে। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউহাজিরূ ফী সাবীলিল্লাহি = তারা হিজরত ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে হিজরত করে (= যতক্ষণ না তারা তাগুতের সাথে আপোষ না করে দারুল ইসলামে চলে আসে)। ফাইন = তারপর যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাখুজূহুম = তাহলে, তোমরা তাদেরকে ধরো। ওয়াক্বতুলূহুম = আর তাদেরকে হত্যা করো। হাইছু = যেখানেই। ওয়াজাত্তুমূহুম = তোমরা তাদেরকে পাও। ওয়া = আর। লা তাত্তাখিজূ = তোমরা গ্রহণ করো না। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে কাউকেই। ওয়ালিয়্যান = ওয়ালি/ বন্ধু হিসাবে। ওয়া = আর। লা নাসীরান = নাসীর/ সাহায্যকারী হিসাবেও নয়।

তারা কামনা করে যদি তোমরা কুফর করতে! যেমন তারা কুফর করেছে; তাহলে তোমরাও হয়ে যেতে তাদের সমান। সুতরাং তোমরা গ্রহণ করো না তাদের মধ্য থেকে কাউকে আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে যতক্ষণ না তারা হিজরত ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে হিজরত করে (= যতক্ষণ না তারা তাগুতের সাথে আপোষ না করে বরং দারুল ইসলামে চলে আসে)। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তোমরা তাদেরকে ধরো আর তাদেরকে হত্যা করো যেখানেই তোমরা তাদেরকে পাও।{দ্র: ৪:৯০}আর তোমরা গ্রহণ করো না তাদের মধ্য থেকে কাউকেই ওয়ালি/ বন্ধু হিসাবে আর নাসীর/ সাহায্যকারী হিসাবেও নয়।

৪:৯০
ইল্লাল্লাযীনা = কিন্তু তাদেরকে নয় যারা। ইয়াসিলূনা = সংযুক্ত হয়। ইলা কাওমিম = এমন কোন কাওমের সাথে। বায়নাকুম ও বায়নাহুম = তোমাদের ও যাদের মধ্যে। মীছাক্বুন = মীছাক/ সন্ধিচুক্তি আছে। আও = অথবা। জাআকুম = যারা তোমাদের কাছে এমনভাবে আসে যে। হাসিরাত সুদূরুহুম = তাদের সদরসমূহ/ স্নায়ুকেন্দ্রসমূহ (মস্তিষ্ক) সংকুচিত/ বাধাগ্রস্ত হয়। আইঁ ইউক্বতিলূকুম = তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। আও = অথবা। ইউক্বাতিলূ ক্বাওমাহুম = তাদের কাওমের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে। ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাছাল্লাতাহুম = তাদেরকে ক্ষমতাবান করতেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ফালাক্বাতালূকুম = তাহলে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো। ফাইনি’তাযালূকুম = সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে সরে দাঁড়ায়। ফালাম ইউক্বাতিলূকুম = তাহলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না। ওয়া = আর। আলক্বাও = তারা প্রস্তাব করলে। ইলাইকুমুছ ছালামা = তোমাদের কাছে শান্তিচুক্তি। ফামা জাআলাল্লাহু = তাহলে আল্লাহ রাখেননি। লাকুম = তোমাদের জন্য। আলাইহিম = তাদের বিরুদ্ধে। ছাবীলা = (ব্যবস্থা গ্রহণের) কোন পথ।

কিন্তু তাদেরকে নয় যারা সংযুক্ত হয় এমন কোন কাওমের সাথে তোমাদের ও যাদের মধ্যে মীছাক/ সন্ধিচুক্তি আছে অথবা যারা (= যেসব মুনাফিকরা) তোমাদের কাছে এমনভাবে আসে যে তাদের সদরসমূহ/ স্নায়ুকেন্দ্রসমূহ (মস্তিষ্ক) সংকুচিত/বাধাগ্রস্ত হয় তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অথবা তাদের কাওমের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাদেরকে ক্ষমতাবান করতেন তোমাদের উপর, তাহলে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতো। সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে সরে দাঁড়ায় তাহলে তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো না। আর তারা প্রস্তাব করলে তোমাদের কাছে শান্তিচুক্তি তাহলে আল্লাহ রাখেননি তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে (ব্যবস্থা গ্রহণের) কোন পথ।

৪:৯১
ছাতাজিদূ = তোমরা শীঘ্রই পাবে। আখারীনা = অন্য কিছু (মুনাফিক)। ইউরীদূনা = তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইয়া’মানূকুম = তোমাদের থেকে নিরাপত্তা পেতে। ওয়া = আর। ইয়া’মানূ ক্বাওমাহুম = তাদের কাওমের থেকেও নিরাপত্তা পেতে। কুল্লামা = যখনই তারা সুযোগ পায়। রুদ্দূ = তারা ফিরে যায়। ইলাল ফিতনাতি = ফিতনার/ ন্যায়কাজে বিঘ্ন সৃষ্টির দিকে। উরকিছূ = তারা ঘুরে যায়। ফীহা = উহার মধ্যে (= ফিতনার মধ্যে)। ফাইল্লাম ইয়া’তাযিলূকুম = সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে সরে না যায়। ওয়া = আর। ইউলক্বূ = প্রস্তাব না করে। ইলাইকুমুছ ছালামা = তোমাদের কাছে শান্তিচুক্তি। ওয়া = আর। ইউকুফফূ = সংবরণ না করে। আইদিয়াহুম = তাদের হাতসমূহ। ফাখুজূহুম = তাহলে তোমরা তাদেরকে ধরো। ওয়াক্বতুলূহুম = আর তাদেরকে হত্যা করো। হাইছু = যেখানেই। ছাক্বিফতুমূহুম = তোমরা তাদেরকে পাও। ওয়া = আর। উলায়িকুম = তারাই ঐসব লোক। জাআলনা = আমরা দিয়েছি। লাকুম = তোমাদেরকে। আলাইহিম = যাদের উপর। ছুলতানাম মুবীনা = সুস্পষ্ট সনদ (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট)।

তোমরা শীঘ্রই পাবে অন্য কিছু (মুনাফিক) তারা এরাদা/ ইচ্ছা করে তোমাদের থেকে নিরাপত্তা পেতে আর তাদের কাওমের থেকেও নিরাপত্তা পেতে। যখনই তারা সুযোগ পায় তারা ফিরে যায় ফিতনার/ ন্যায়কাজে বিঘ্ন সৃষ্টির দিকে, তারা ঘুরে যায় উহার মধ্যে (= ফিতনার মধ্যে)। সুতরাং যদি তারা তোমাদের থেকে সরে না যায় আর প্রস্তাব না করে তোমাদের কাছে শান্তিচুক্তি আর সংবরণ না করে তাদের হাতসমূহ, তাহলে তোমরা তাদেরকে ধরো আর তাদেরকে হত্যা করো যেখানেই তোমরা তাদেরকে পাও। আর তারাই ঐসব লোক আমরা দিয়েছি তোমাদেরকে যাদের উপর চড়াও হওয়ার সুস্পষ্ট সনদ (ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট)।

৪:৯২
ওয়া = আর। মা কানা লিমু’মিনীন = মু’মিনদের দ্বারা সম্ভব নয়। আইঁ ইয়াক্বতুলা মু’মিনান = যে, সে হত্যা করবে কোন মু’মিনকে। ইল্লা খাতাআন = ভুলবশত: হত্যা করা ছাড়া। ওয়া = আর। মান = (০১) যে। ক্বাতালা = হত্যা করেছে। মু’মিনান = কোন মু’মিনকে। খাতাআন = ভুলবশত:। ফাতাহরীরু রকাবাতিন মু’মিনাতিন = তাহলে তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। ওয়া = আর। দিয়াতুন = দিয়াত/ রক্তপণ। মুছাল্লামাতুন = সমর্পণ করতে হবে। ইলা আহলিহী = মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট (তথা যারা মৃতব্যক্তির উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিলো তাদের নিকট)। ইল্লা আইঁ ইয়াসসদ্দাক্বূ = কিন্তু মৃতব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে রক্তপণকে সদকা করে দেয়া হলে (= মাফ করে দেয়া হলে) তা ভিন্ন ব্যাপার। ফাইন = (০২) তবে যদি। কানা মিন ক্বাওমিন আদুউইল্লাকুম = নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু ক্বাওমের অন্তর্ভুক্ত হয়। ওয়া = আর। হুয়া = সে (= নিহত ব্যক্তি)। মু’মিনুন = মু’মিন হয়। ফাতাহরীরু রকাবাতিন মু’মিনাতিন = তাহলে তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। ওয়া = আর। ইন = (০৩) যদি। কানা মিন ক্বাওমিন = নিহত মু’মিনটি হয় এমন কাওমের অন্তর্ভুক্ত। বায়নাকুম ওয়া বায়নাহুম = তোমাদের ও যাদের মধ্যে। মীছাকুন = মীছাক/ সন্ধিচুক্তি আছে। ফাদিয়াতুন = তাহলে, দিয়াত/ রক্তপণ। মুছাল্লামাতুন = সমর্পণ করতে হবে। ইলা আহলিহী = মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট (তথা যারা মৃতব্যক্তির উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিলো তাদের নিকট)। ওয়া = আর। তাহরীরু রকাবাতিন মু’মিনাতিন = তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। ফামাল্লাম ইয়াজিদ = তবে যে (দাস/ দাসী বা দাসী/ দাসীকে মুক্ত করার সামর্থ্য) পাবে না। ফাসিয়ামু = সে সিয়াম করবে (= রোযা রখবে)। শাহরাইনি = দুই মাস। মুতাতাবিআইনি = ক্রমাগত/ একটানা। তাওবাতাম মিনাল্লাহি = ইহা (তার ক্ষেত্রে) আল্লাহ প্রদত্ত তাওবা করার পদ্ধতি। ওয়া = আর। কানাল্লাহু আলীমান হাকীমান = আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর মু’মিনদের দ্বারা সম্ভব নয় যে, সে হত্যা করবে কোন মু’মিনকে ভুলবশত: হত্যা করা ছাড়া। আর (০১) যে হত্যা করেছে কোন মু’মিনকে ভুলবশত: তাহলে তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। আর (সেইসাথে) দিয়াত/ রক্তপণ সমর্পণ করতে হবে মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট (তথা যারা মৃতব্যক্তির উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিলো তাদের নিকট)। কিন্তু মৃতব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে রক্তপণকে সদকা করে দেয়া হলে (= মাফ করে দেয়া হলে) তা ভিন্ন ব্যাপার। (০২) তবে যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু ক্বাওমের অন্তর্ভুক্ত হয় আর সে (= নিহত ব্যক্তি) মু’মিন হয়, তাহলে তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। আর (০৩) যদি নিহত মু’মিনটি হয় এমন কাওমের অন্তর্ভুক্ত তোমাদের ও যাদের মধ্যে মীছাক/ সন্ধিচুক্তি আছে, তাহলে দিয়াত/ রক্তপণ সমর্পণ করতে হবে মৃত ব্যক্তির পরিবারের নিকট (তথা যারা মৃতব্যক্তির উপর অর্থনৈতিকভাবে নির্ভরশীল ছিলো তাদের নিকট)। আর তার করণীয় হচ্ছে একজন মু’মিন দাসকে/ দাসীকে মুক্ত করা। তবে যে (দাস/ দাসী বা দাসী/ দাসীকে মুক্ত করার সামর্থ্য) পাবে না সে সিয়াম করবে (= রোযা রখবে) দুই মাস ক্রমাগত/ একটানা। ইহা (তার ক্ষেত্রে) আল্লাহ প্রদত্ত তাওবা করার পদ্ধতি। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:৯৩
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াক্বতুল = যে হত্যা করে। মু’মিনান = কোন মু’মিনকে। মুতাআম্মিদান = ইচ্ছাকৃতভাবে। ফাজাযাউহু = তার প্রতিফল হবে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। খালিদান ফীহা = সে তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। গাদিবাল্লাহু = আল্লাহ গদব দিয়েছেন। আলাইহি = তার উপর। ওয়া = আর। লাআনাহু = তিনি লা’নত করেছেন তাকে। ওয়া = আর। আআদ্দা = তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন। লাহু = তার জন্য। আযাবান আযীমা = আযাবান আযীমা/ মহাশাস্তি।

আর যে হত্যা করে কোন মু’মিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে, তার প্রতিফল হবে জাহান্নাম। সে তাতে স্থায়ী হবে। আর আল্লাহ গদব দিয়েছেন তার উপর আর তিনি লা’নত করেছেন তাকে আর তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন তার জন্য আযাবান আযীম/ মহাশাস্তি।

৪:৯৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। দরাবতুম = তোমরা সফর করো। ফী সাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। ফাতাবাইয়্যানূ = তখন তোমরা (কে শত্রু কে মিত্র তার) সুস্পষ্টতা নির্ণয় করো/ যাচাই করে নাও। ওয়া = আর। লা তাক্বুলূ লিমান = তাকে বলো না যে। আলকা ইলাইকুমুস সালামা = তোমাদেরকে সালাম জানায়। লাছতা মু’মিনান = (এ কথা যে) ‘তুমি মু’মিন নও’। তাবতাগূ = তোমরা তালাশ কর। আরাদাল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের সম্পদ। ফাইনদাল্লাহি = তাহলে আল্লাহর নিকট আছে। মাগানিমু কাছীরাতান = অনেক গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ। কাযালিকা = ঐরূপই তো (দারুল কুফরে অবস্থানরত)। কুনতুম = তোমরা ছিলে। মিন ক্বাবলু = (দারুল ইসলামে আসার) আগে। ফামান্নাল্লাহু = তারপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ফাতাবাইয়্যানূ = সুতরাং তোমরা (কে শত্রু কে মিত্র তার) সুস্পষ্টতা নির্ণয় করো/ যাচাই করে নাও। ইন্নাল্লাহা কানা বিমা তা’মালূনা খাবীরা = নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা সফর করো সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, তখন তোমরা (কে শত্রু কে মিত্র তার) সুস্পষ্টতা নির্ণয় করো/ যাচাই করে নাও। আর তাকে বলো না যে তোমাদেরকে সালাম জানায় (এ কথা যে,) “তুমি মু’মিন নও”। তোমরা তালাশ কর হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের সম্পদ! তাহলে আল্লাহর নিকট আছে অনেক গণিমত/ যুদ্ধলভ্য সম্পদ। ঐরূপই তো (দারুল কুফরে অবস্থানরত) তোমরা ছিলে (দারুল ইসলামে আসার) আগে, তারপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন তোমাদের উপর। সুতরাং তোমরা (কে শত্রু কে মিত্র তার) সুস্পষ্টতা নির্ণয় করো/ যাচাই করে নাও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৪:৯৫
লা ইয়াছতাবিল ক্বায়িদূনা মিনাল মু’মিনীনা = সমান নয় বসে থাকা মু’মিনগণ (অর্থাৎ যারা বসে থাকবে মধ্যম ধরনের ওজরবশত: আর এ কারণে কাফির বা ফাসিক গণ্য না হয়ে মু’মিন বলেই গণ্য হবে)। গায়রু উলিদ দরারি = উলিদ দরার ছাড়া (অর্থাৎ উলিদ দরারের মর্যাদা বাড়া কমার প্রশ্ন নাই) {৪৮:১৭ অনুযায়ী অন্ধ, খোঁড়া ও রোগীগণই উলিদ দরার}। ওয়াল মুজাহিদীনা = আর যারা মুজাহিদ/ জিহাদকারী। ফী সাবীলিল্লাহি = আল্লাহর পথে। বিআমওয়ালিহিম ওয়া আনফুসিহিম = তাদের মাল ও জান দ্বারা। ফাদ্দালাল্লাহুল মুজাহিদীনা বিআমওয়ালিহিম ওয়া আনফুসিহিম = আল্লাহ ফদল/ বিশিষ্টতা দিয়েছেন নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদকারীদেরকে। আলাল ক্বায়িদীনা = বসে থাকা ব্যক্তিগণের তুলনায়। দারাজাতিন = উচ্চমাত্রার মর্যাদায়। ওয়া = আর। কুল্লাওঁ ওয়াআদাল্লাহুল হুসনা = প্রত্যেককেই আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন উত্তম উপকরণ দান করার। ওয়া = আর। ফাদ্দালাল্লাহুল মুজাহিদীনা = আল্লাহ ফদল/ বিশিষ্টতা দিয়েছেন মুজাহিদদেরকে। আলাল ক্বায়িদীনা = বসে থাকা ব্যক্তিদের উপর। আজরান আযীমা = মহাপুরস্কারের ব্যবস্থায়।

সমান নয় বসে থাকা মু’মিনগণ (অর্থাৎ যারা বসে থাকবে মধ্যম ধরনের ওজরবশত: আর এ কারণে কাফির বা ফাসিক গণ্য না হয়ে মু’মিন বলেই গণ্য হবে), উলিদ দরার ছাড়া (অর্থাৎ উলিদ দরারের মর্যাদা বাড়া কমার প্রশ্ন নাই) {৪৮:১৭ অনুযায়ী অন্ধ, খোঁড়া ও রোগীগণই উলিদ দরার}, আর (সমান নয় তাদের তুলনায়) যারা মুজাহিদ/ জিহাদকারী আল্লাহর পথে তাদের মাল ও জান দ্বারা। আল্লাহ ফদল/ বিশিষ্টতা দিয়েছেন নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদকারীদেরকে বসে থাকা ব্যক্তিগণের তুলনায় উচ্চমাত্রার মর্যাদায়। আর প্রত্যেককেই আল্লাহ ওয়াদা দিয়েছেন উত্তম উপকরণ দান করার। আর আল্লাহ ফদল/ বিশিষ্টতা দিয়েছেন মুজাহিদদেরকে বসে থাকা ব্যক্তিদের উপর মহাপুরস্কারের ব্যবস্থায়।

৪:৯৬
দারাজাতাম মিনহু = উচ্চমাত্রার মর্যাদা তাঁর পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। মাগফিরাতাওঁ ওয়া রাহমাতান = (আগে কৃত দোষত্রুটির ব্যাপারে) মাগফিরাত/ ক্ষমা ও রহমাত/ দয়া। ওয়া কানাল্লাহু গাফূরার রাহীমা = আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

উচ্চমাত্রার মর্যাদা তাঁর পক্ষ থেকে আর (আগে কৃত দোষত্রুটির ব্যাপারে) মাগফিরাত/ ক্ষমা ও রহমাত/ দয়া। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:৯৭
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা এমন যে। তাওয়াফফাহুমুল মালাইকাতু = তাদের (নফসের) ওফাত করে (= তাদের মৃত্যুর সময় তাদের প্রাণ নিয়ে যায়) মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। যলিমী আনফুসিহিম = তারা নিজেদের উপর যুলমকারী থাকা অবস্থায়। ক্বলূ = (তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ) বলে। ফীমা কুনতুম = তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? ক্বলূ = তারা বলে। কুন্না = আমরা ছিলাম। মুসতাদআফীনা ফিল আরদ = পৃথবীতে মুসতাদআফীন/ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিত অবস্থায়। ক্বলূ = (তখন ফেরেশতাগণ) বলে। আলাম তাকুন আরদুল্লাহি = আল্লাহর পৃথিবী কি ছিলো না। ওয়াছিআতান = প্রশস্ত। ফাতুহাজিরূ ফীহা = সুতরাং তোমরা উহাতে হিজরাত করতে। ফাউলায়িকা = সুতরাং তারা এমন লোক। মা’ওয়াহুম = যাদের আবাস। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর। ছাআত মাসীরা = তা খুবই মন্দ অবস্থান।

নিশ্চয় যারা এমন যে, তাদের (নফসের) ওফাত করে (= তাদের মৃত্যুর সময় তাদের প্রাণ নিয়ে যায়) মালাইকা/ ফেরেশতাগণ তারা নিজেদের উপর যুলমকারী থাকা অবস্থায়। (তাদেরক মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ) বলে, ‘তোমরা কী অবস্থায় ছিলে?’ তারা বলে, ‘আমরা ছিলাম পৃথবীতে মুসতাদআফীন/ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিত অবস্থায়’। (তখন ফেরেশতাগণ) বলে, ‘আল্লাহর পৃথিবী কি ছিলো না প্রশস্ত? সুতরাং তোমরা উহাতে হিজরাত করতে’। সুতরাং তারা এমন লোক যাদের আবাস জাহান্নাম। আর তা খুবই মন্দ অবস্থান।

৪:৯৮
ইল্লাল মুসতাদআফীনা = ঐ সব মুসতাদআফীন/ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিতরা ছাড়া। মিনার রিজালি ওয়ান নিসায়ী ওয়াল ওয়িলদানি = পুরুষ, নারী ও শিশুদের মধ্য থেকে। লা ইয়াছতাতিঊনা = যারা সক্ষম হয় না। হীলাতান = কোন উপায় অবলম্বনের। ওয়া = আর। লা ইয়াহতাদূনা ছাবীলা = তাদের পথও জানা নেই।

ঐ সব মুসতাদআফীন/ দুর্বল নির্যাতিত নিষ্পেষিতরা ছাড়া - পুরুষ, নারী ও শিশুদের মধ্য থেকে যারা সক্ষম হয় না কোন উপায় অবলম্বনের আর তাদের পথও জানা নেই।

৪:৯৯
উলায়িকা = তারাই এমন লোক যে। আছাল্লাহু = হয়তো আল্লাহ। আইঁ ইয়া’ফুআ আনহুম = তাদেরকে উদারতা প্রদর্শন করবেন। ওয়া কানাল্লাহু আফুওওয়ান গাফূরা = আর আল্লাহ আফুওওয়ান/ উদার, গফূর/ ক্ষমাশীল।

তারাই এমন লোক যে, হয়তো আল্লাহ তাদেরকে উদারতা প্রদর্শন করবেন। আর আল্লাহ আফুওওয়ান/ উদার, গফূর/ ক্ষমাশীল।

৪:১০০
ওয়া = আর। মান = যে। ইউহাজির ফী সাবীলিল্লাহি = হিজরত ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে হিজরত করবে (=তাগুতের সাথে আপোষ না করে বরং দারুল ইসলামে চলে আসবে)। ইয়াজিদ = সে পাবে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মুরাগামান কাছীরান = অনেক আশ্রয়স্থল। ওয়া = আর। ছাআতান = প্রাচুর্য। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াখরুজ = যে বের হবে। মিম বাইতিহী = তার ঘর থেকে। মুহাজিরান = মুহাজির হয়ে। ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকে। ওয়া রাসূলিহী = আর তাঁর রাসূলের দিকে। ছুম্মা = তারপর। ইউদরিকহুল মাওতু = (পথিমধ্যে) তার মৃত্যু হবে। ফাক্বাদ = তবে নিশ্চয়। ওয়াক্বাআ = বর্তাবে। আজরুহু = তার প্রতিফলদান। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। ওয়াকানাল্লাহু গাফূরার রহীমান = আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

আর যে হিজরত ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে হিজরত করবে (=তাগুতের সাথে আপোষ না করে বরং দারুল ইসলামে চলে আসবে), সে পাবে পৃথিবীতে অনেক আশ্রয়স্থল আর প্রাচুর্য। আর যে বের হবে তার ঘর থেকে মুহাজির হয়ে আল্লাহর দিকে আর তাঁর রাসূলের দিকে, তারপর (পথিমধ্যে) তার মৃত্যু হবে; তবে নিশ্চয় বর্তাবে তার প্রতিফলদান আল্লাহর উপর। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:১০১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। দরাবতুম = তোমরা সফর করো। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ফালাইছা আলাইকুম জুনাহুন = তখন তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই। আন তাক্বছুরূ মিনাস সালাতি = তোমরা সালাতকে কসর/ সংক্ষিপ্ত করলে। ইন = যদি। খিফতুম = তোমরা ভয় করো। আইঁ ইয়াফতিনাকুমুল্লাযীনা = যে, তারা তোমাদেরকে ফিতনায়/ বিপদে ফেলবে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ইন্নাল কাফিরীনা কানূ লাকুম আদুওয়াম মুবীনা = নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।

আর যখন তোমরা সফর করো পৃথিবীতে তখন তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই তোমরা সালাতকে কসর/ সংক্ষিপ্ত করলে যদি তোমরা ভয় করো যে, তারা তোমাদেরকে ফিতনায়/ বিপদে ফেলবে যারা কুফর করেছে। নিশ্চয় কাফিরগণ তোমাদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু।

৪:১০২
ওয়া ইযা = আর ‘(কাফিরদের কর্তৃক ফিতনায় পড়ার আশংকাগ্রস্ত অবস্থায়) যখন। কুনতা ফীহিম = তুমি (রাসূল) তাদের মধ্যে থাকো। ফাআকামতা = আর তুমি দাঁড়াও। লাহুমুস সালাতা = তাদের জন্য (= তাদের নেতৃত্বমূলক ভূমিকায় থেকে) সালাতে। ফালতাক্বুম = তখন যেন দাঁড়ায়। তয়িফাতুম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে একদল। মাআকা = তোমার সাথে। ওয়াল ইয়া’খুজূ আছলিহাতাহুম = আর তারা যেন তাদের অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র থাকে। ফাইযা সাজাদূ = তারপর যখন তারা সিজদা করবে। ফালইয়াকূনূ মিউঁ ওয়ারাইকুম = তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে থাকে। ওয়াল তা’তি = আর যেন আসে। তয়িফাতুন উখরা = অন্যদল। লাম ইউসল্লূ = যারা সালাত করেনি। ফাল ইউসল্লু = তখন তারা যেন সালাত করে। মাআকা = তোমার সাথে। ওয়াল ইয়া’খুজূ = আর তারা যেন গ্রহণ করে। হিযরাকুম = তাদের সতর্কতা। ওয়া = আর। আছলিহাতাহুম = তাদের অস্ত্র। ওয়াদ্দাল্লাযীনা = আর তারা কামনা করে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। লাও = যদি। তাগফুলূনা = তোমরা গাফেল হয়ে যাও। আন আছলিহাতিকুম = তোমাদের অস্ত্র থেকে। ওয়া = আর। আমতিআকুম = তোমাদের সরঞ্জামাদি থেকে। ফাইয়ামীলূনা = তাহলে তারা আক্রমণ করবে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। মাইলাতান ওয়াহিদাতান = একটাই চরম আক্রমণ। ওয়া = আর। লা জুনাহা = কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ইন কানা বিকুম আযান = যদি তোমাদের কষ্ট হয়। মিম মাতারিন = বৃষ্টির কারণে। আও = অথবা। কুনতুম = তোমরা হয়ে পড়ো। মারদা = অসুস্থ। আন তাদাঊ = সে অবস্থায় সরিয়ে রাখলে। আছলিহাতাকুম = তোমাদের অস্ত্র। ওয়া = আর। খুজূ = তোমরা অবলম্বন করো। হিজরাকুম = তোমাদের সতর্কতা। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আআদ্দা = প্রস্তুত করে রেখেছেন। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। আযাবাম মুহীনা = আযাবুম মুহীনা/ অপমানকর শাস্তি।

আর ‘(কাফিরদের কর্তৃক ফিতনায় পড়ার আশংকাগ্রস্ত অবস্থায়) যখন তুমি (রাসূল) তাদের মধ্যে থাকো, আর তুমি দাঁড়াও তাদের জন্য (= তাদের নেতৃত্বমূলক ভূমিকায় থেকে) সালাতে; তখন যেন দাঁড়ায় তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে। আর তারা যেন তাদের অস্ত্র নিয়ে সশস্ত্র থাকে। তারপর যখন তারা সিজদা করবে, তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে থাকে। আর যেন আসে অন্যদল যারা সালাত করেনি। তখন তারা যেন সালাত করে তোমার সাথে। আর তারা যেন গ্রহণ করে তাদের সতর্কতা আর তাদের অস্ত্র। আর তারা কামনা করে যারা কুফর করেছে, যদি তোমরা গাফেল হয়ে যাও তোমাদের অস্ত্র থেকে আর তোমাদের সরঞ্জামাদি থেকে! তাহলে তারা আক্রমণ করবে তোমাদের উপর একটাই চরম আক্রমণ। আর কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই তোমাদের উপর, যদি তোমাদের কষ্ট হয় বৃষ্টির কারণে অথবা তোমরা হয়ে পড়ো অসুস্থ, সে অবস্থায় সরিয়ে রাখলে তোমাদের অস্ত্র। আর তোমরা অবলম্বন করো তোমাদের সতর্কতা। নিশ্চয় আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন কাফিরদের জন্য আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

৪:১০৩
ফাইযা = তারপর যখন। ক্বাদাইতুমুস সালাতা = তোমরা সালাত কাযা/ যথানিয়মে সম্পাদন করো। ফাযকুরুল্লাহা = তখন আল্লাহকে যিকর/ স্মরণ করো। কিয়ামান = দাঁড়িয়ে। ওয়া ক্বুয়ুদান = আর বসে। ওয়া আলা জুনূবিকুম = আর কাত হয়ে শুয়ে। ফাইযাতমা’নানতুম = তারপর যখন তোমরা নিরাপদ হও। ফাআকিমুস সালাতা = তখন তোমরা সালাত কায়েম করো। ইন্নাস সালাতা কানাত আলাল মু’মিনীনা কিতাবাম মাওক্বূতা = নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের উপর ওয়াক্তগত কিতাব বা বিধান হিসাবে বিদ্যমান বা বিধিবদ্ধ।

তারপর যখন তোমরা সালাত কাযা/ যথানিয়মে সম্পাদন করো তখন আল্লাহকে যিকর/ স্মরণ করো দাঁড়িয়ে আর বসে আর কাত হয়ে শুয়ে। তারপর যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন তোমরা সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত মু’মিনদের উপর ওয়াক্তগত কিতাব বা বিধান হিসাবে বিদ্যমান বা বিধিবদ্ধ।

৪:১০৪
ওয়া = আর। লা তাহিনূ = তোমরা হতোদ্যম হয়ো না। ফিবতিগায়িল কাওমি = (তোমাদের প্রতি গেরিলা আক্রমণকারী) কাওমটির সন্ধানে। ইন = যদি। তাকূনূ তা’লামূনা = তোমরা কষ্ট পেয়ে থাকো। ফাইন্নাহুম = তাহলে নিশ্চয় তারাও তো। ইয়া’লামূনা = কষ্ট পাচ্ছে। ওয়া = অথচ। তারজূনা = তোমরা আরজ/ প্রত্যাশা করো। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু পেতে। মা লা ইয়ারজূন = যা তারা আরজ/ প্রত্যাশা করে না। ওয়া কানাল্লাহু আলীমান হাকীমান = আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর তোমরা হতোদ্যম হয়ো না (তোমাদের প্রতি গেরিলা আক্রমণকারী) কাওমটির সন্ধানে। যদি তোমরা কষ্ট পেয়ে থাকো তাহলে নিশ্চয় তারাও তো কষ্ট পাচ্ছে। অথচ তোমরা আরজ/ প্রত্যাশা করো আল্লাহর পক্ষ থেকে কিছু পেতে, যা তারা আরজ/ প্রত্যাশা করে না। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১০৫
ইন্না = নিশ্চয়। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। ইলাইকাল কিতাবা = তোমার প্রতি কিতাব। বিল হাক্কি = সত্যসহকারে। লিতাহকুমা = যেন তুমি বিচার ফায়সালা করো। বায়নান্নাছি = মানুষের মধ্যে। বিমা আরাকাল্লাহু = আল্লাহ তোমাকে যে বিচারপদ্ধতি দেখিয়েছেন/ জানিয়েছেন তার মাধ্যমে। ওয়া = আর। লা তাকুল লিল খায়িনীনা = তুমি হয়ো না খেয়ানতকারীদের পক্ষে। খাসীমা = বিতর্ককারী।

নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি কিতাব সত্যসহকারে। যেন তুমি বিচার ফায়সালা করো মানুষের মধ্যে আল্লাহ তোমাকে যে বিচারপদ্ধতি দেখিয়েছেন/ জানিয়েছেন তার মাধ্যমে। আর তুমি হয়ো না খেয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী।

৪:১০৬
ওয়াছতাগফিরিল্লাহা = আর তুমি আল্লাহর কাছে মাগফিরাত/ ক্ষমা চাও। ইন্নাল্লাহা কানা গাফূরার রাহীমান = নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

আর তুমি আল্লাহর কাছে মাগফিরাত/ ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:১০৭
ওয়া = আর। লা তুজাদিল = তোমরা বিতর্ক করো না। আনিল্লাযীনা = তাদের থেকে (অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য) যারা। ইয়াখতানূনা = খিয়ানত করে। আনফুছাহুম = তাদের নিজেদের প্রতি। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বু = ভালবাসেন না। মান = যে। কানা = হয়। খাওওয়ানান আছীমান = খিয়ানতকারী পাপী।

আর তোমরা বিতর্ক করো না তাদের থেকে (অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য) যারা খিয়ানত করে তাদের নিজেদের প্রতি। নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ভালবাসেন না যে হয় খিয়ানতকারী পাপী।

৪:১০৮
ইয়াছতাখফূনা = তারা গোপন করতে চায়। মিনান্নাছি = মানুষের নিকট থেকে। ওয়া = আর। লা ইয়াছতাখফূনা = তারা গোপন করতে চায় না। মিনাল্লাহি = আল্লাহর নিকট থেকে। {= তারা মানুষের ব্যাপারে সচেতন, আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন}। ওয়া = অথচ তিনি। মাআহুম = তাদের সাথেই থাকেন। ইয = যখন। ইউবাইয়্যিতূনা = রাতের বেলা তারা পরামর্শ করে। মা লা ইয়ারদা মিনাল ক্বাওলি = তিনি সন্তুষ্ট থাকেন না যে ধরনের কথাবার্তায়। ওয়া কানাল্লাহু বিমা ইয়া’মালূনা মুহীতা = আর আল্লাহ তাদের সকল কাজের পরিবেষ্টনকারী।

তারা গোপন করতে চায় মানুষের নিকট থেকে আর তারা গোপন করতে চায় না আল্লাহর নিকট থেকে। {= তারা মানুষের ব্যাপারে সচেতন, আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন}। অথচ তিনি তাদের সাথেই থাকেন যখন রাতের বেলা তারা পরামর্শ করে, তিনি সন্তুষ্ট থাকেন না যে ধরনের কথাবার্তায়। আর আল্লাহ তাদের সকল কাজের পরিবেষ্টনকারী।

৪:১০৯
হাআনতুম হাউলায়ি = তোমরাই তো তারা, যারা। জাদালতুম = বিতর্ক করেছো। আনহুম = তাদের থেকে (অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য)। ফিল হায়াতিদ দুনইয়া = হায়াতুদ দুনিয়ায়/ পার্থিব জীবনে। ফামাইঁ ইউজাদিলুল্লাহি = তারপর কে বিতর্ক করবে আল্লাহর সাথে। আনহুম = তাদের থেকে (অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য)। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আম = অথবা। মাইঁ ইয়াকূনু = কে হবে। আলাইহিম = তাদের পক্ষে। ওয়াকীলা = উকিল/ কার্যনির্বাহক।

তোমরাই তো তারা, যারা বিতর্ক করেছো তাদের থেকে (অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য) হায়াতুদ দুনিয়ায়/ পার্থিব জীবনে। তারপর কে বিতর্ক করবে আল্লাহর সাথে তাদের থেকে (অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য) ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে? অথবা কে হবে তাদের পক্ষে উকিল/ কার্যনির্বাহক?

৪:১১০
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়া’মাল ছূআন = যে মন্দ কাজ করে। আও = অথবা। ইয়াযলিম নাফসাহু = যুলুম করে তার নফসের/ জীবনসত্তার উপর। ছুম্মা = তারপর (অবিলম্বে ৪:১৭-১৮)। ইয়াছতাগফিরিল্লাহা = মাগফিরাত/ ক্ষমা চায় আল্লাহর কাছে। ইয়াজিদিল্লাহা = সে আল্লাহকে পাবে। গাফুরার রাহীমান = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

আর যে মন্দ কাজ করে অথবা যুলুম করে তার নফসের/ জীবনসত্তার উপর, তারপর (অবিলম্বে ৪:১৭-১৮) মাগফিরাত/ ক্ষমা চায় আল্লাহর কাছে; সে আল্লাহকে পাবে গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:১১১
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াকছিব = যে উপার্জন করে। ইছমান = পাপ। ফাইন্নামা = সে তো। ইয়াকছিবহু = উহা উপার্জন করে। আলা নাফসিহী = তার নিজের বিরুদ্ধে। ওয়া কানাল্লাহু আলীমান হাকীমান = আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর যে উপার্জন করে পাপ সে তো উহা উপার্জন করে তার নিজের বিরুদ্ধে। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১১২
ওয়ামাইঁ ইয়াকছিব খাতীয়াতান = আর যে কোন অন্যায় করে। আও ইছমান = বা পাপ করে। ছুম্মা = তারপর। ইয়ারমিযিহী = উহা চাপিয়ে দেয়। বারীআন = নির্দোষ ব্যক্তির উপর। ফাক্বাদিহতামালা = তাহলে নিশ্চয় সে বহন করে। বুহতানান = মিথ্যা অভিযোগ আরোপের দোষ। ওয়া = আর। ইছমাম মুবীনান = সুস্পষ্ট পাপ।

আর যে কোন অন্যায় করে বা পাপ করে, তারপর উহা চাপিয়ে দেয় নির্দোষ ব্যক্তির উপর; তাহলে নিশ্চয় সে বহন করে মিথ্যা অভিযোগ আরোপের দোষ আর সুস্পষ্ট পাপ।

৪:১১৩
ওয়া = আর। লাও লা = যদি না হতো। লা ফাদলুল্লাহি = আল্লাহর ফযল/ অনুগ্রহ। আলাইকা = তোমার উপর। ওয়া = আর। রাহমাতুহূ = (না হতো) তাঁর রহমত/ দয়া। লাহাম্মাত = তাহলে তো হিম্মত করেই ফেলেছিলো। তয়িফাতুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার একদল। আইঁ ইউদিল্লূকা = তোমাকে বিভ্রান্ত করতে। ওয়া = আর। মা ইউদিল্লূকা = তারা তো বিভ্রান্ত করবে না। ইল্লা আনফুছাহুম = তাদের নিজেদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে। ওয়া = আর। মা ইয়াদুররূনাকা = তারা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। মিন শাইয়িন = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। আনযালাল্লাহু = আল্লাহ নাযিল করেছেন। আলাইকাল কিতাবা = তোমার উপর কিতাব। ওয়াল হিকমাতা = ও হেকমত {কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশক নাম}। ওয়া = আর। আল্লামাকা = তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। মা লাম তাকুন তা’লাম = (এমন বিষয়) যা তুমি জানতে না। ওয়া কানা ফাদলুল্লাহি আলাইকা আযীমা = আর আল্লাহর ফযল/ অনুগ্রহ তোমার উপর অনেক বড়।

আর যদি না হতো আল্লাহর ফযল/ অনুগ্রহ তোমার উপর আর (না হতো) তাঁর রহমত/ দয়া. তাহলে তো হিম্মত করেই ফেলেছিলো তাদের মধ্যকার একদল তোমাকে বিভ্রান্ত করতে। আর তারা তো বিভ্রান্ত করবে না তাদের নিজেদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে। আর তারা তোমার ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর আল্লাহ নাযিল করেছেন তোমার উপর কিতাব ও হেকমত {কিতাব ও হেকমত কুরআনের দুটি বৈশিষ্ট্য প্রকাশক নাম}। আর (আল কুরআনের মাধ্যমে) তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন (এমন বিষয়) যা তুমি জানতে না। আর আল্লাহর ফযল/ অনুগ্রহ তোমার উপর অনেক বড়।

৪:১১৪
লা খায়রা = কল্যাণ নেই। ফী কাছীরিন = অধিকাংশের মধ্যে। মিন নাজওয়াহুম = তাদের গোপন পরামর্শে। ইল্লা = কিন্তু তাদের কথা ভিন্ন। মান = যে। আমারা = আদেশ দেয়। বিসদাকাতিন = সদাকাতের জন্য। আও = অথবা। মা’রূফিন = ন্যায়নীতির জন্য। আও = অথবা। ইসলাহিম বায়নান্নাছি = মানুষের মধ্যে বিবাদ বিষম্বাদের সংশোধন করে দেয়ার জন্য। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াফআল যালিকাবতিগায়ি মারদাতিল্লাহি = যে উহা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশের জন্য। ফাছাওফা = সেক্ষেত্রে শীঘ্রই। নু’তীহি = আমরা তাকে দেবো। আজরান আযীমা = মহাপুরস্কার।

কল্যাণ নেই অধিকাংশের মধ্যে তাদের গোপন পরামর্শে। কিন্তু তাদের কথা ভিন্ন যে আদেশ দেয় সদাকাতের জন্য অথবা ন্যায়নীতির জন্য অথবা মানুষের মধ্যে বিবাদ বিষম্বাদের সংশোধন করে দেয়ার জন্য। আর যে উহা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশের জন্য, সেক্ষেত্রে শীঘ্রই আমরা তাকে দেবো মহাপুরস্কার।

৪:১১৫
ওয়া = আর। মাইঁ ইউশাক্বিক্বির রসূলা = যে রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে। মিম বা’দি = এরপরও যে। মা তাবাইয়্যানা লাহুল হুদা = সুস্পষ্ট হয়ে গেছে তার কাছে হিদায়াত। ওয়া = আর। ইয়াত্তাবি’ = ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। গাইরা ছাবীলিল ম’মিনীনা = মু’মিনদের অনুসৃত পথ (= কুরআনের পথ) ছাড়া অন্য পথ। নুওয়াল্লীহি = আমরা তাকে সেদিকে ফিরিয়ে দেবো। মা তাওয়াল্লা = যেদিকে সে ফিরে গেছে। ওয়া = আর। নুসলিহী = আমরা তাকে জ্বালাবো। জাহান্নামা = জাহান্নামে। ওয়া = আর। ছাআত মাসীরা = তা অত্যন্ত মন্দ অবস্থান।

আর যে রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এরপরও যে, সুস্পষ্ট হয়ে গেছে তার কাছে হিদায়াত, আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করে মু’মিনদের অনুসৃত পথ (= কুরআনের পথ) ছাড়া অন্য পথ; আমরা তাকে সেদিকে ফিরিয়ে দেবো যেদিকে সে ফিরে গেছে। আর আমরা তাকে জ্বালাবো জাহান্নামে। আর তা অত্যন্ত মন্দ অবস্থান।

৪:১১৬
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইয়াগফিরু = মাফ করেন না। আইঁ ইউশরাকা বিহী = তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহ। ওয়া = আর। ইয়াগফিরু = তিনি মাফ করেন। মা দূনা যালিকা = উহা ছাড়া অন্য গুনাহ। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইউশরিক = যে শিরক করে। বিল্লাহি = আল্লাহর সাথে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লা = সে বিভ্রান্ত হয়। দলালাম বায়ীদা = বহুদূর বিভ্রান্তিতে।

নিশ্চয় আল্লাহ মাফ করেন না তাঁর সাথে শিরক করার গুনাহ আর তিনি মাফ করেন উহা ছাড়া অন্য গুনাহ যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করেন। আর যে শিরক করে আল্লাহর সাথে নিশ্চয় সে বিভ্রান্ত হয় বহুদূর বিভ্রান্তিতে।

৪:১১৭
ইইঁ ইয়াদঊনা = তারা দোয়া/ প্রার্থনা করে না। মিন দূনিহী = তাঁর কাছে বাদ দিয়ে। ইল্লা ইনাছান = দেবীদের কাছে ছাড়া। ওয়া = আর। ইইঁ ইয়াদঊনা = তারা দোয়া/ প্রার্থনা করে না। ইল্লা শায়তানাম মারীদা = বিদ্রোহী শয়তানের কাছে ছাড়া।

তারা দোয়া/ প্রার্থনা করে না তাঁর কাছে বাদ দিয়ে দেবীদের কাছে ছাড়া। আর তারা দোয়া/ প্রার্থনা করে না বিদ্রোহী শয়তানের কাছে ছাড়া।

৪:১১৮
লাআনাহুল্লাহু = আল্লাহ তাকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। ওয়া = আর। ক্বলা = সে (= শয়তান) বলেছিলো। লাআত্তাখিজান্না = নিশ্চয় আমি গ্রহণ করবো। মিন ইবাদিকা = তোমার দাসগণের থেকে। নাসীবাম মাফরূদা =একটি নির্দিষ্ট অংশ।

আল্লাহ তাকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। আর সে (= শয়তান) বলেছিলো, ‘নিশ্চয় আমি গ্রহণ করবো তোমার দাসগণের থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ’।

৪:১১৯
লাউদিল্লান্নাহুম = নিশ্চয় আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করবো। ওয়া = আর। লাউমান্নিআন্নাহুম = নিশ্চয় আমি তাদেরকে তামান্না/ আশা আকাংখা দিবো। ওয়া = আর। লাআমুরান্নাহুম = নিশ্চয় আমি তাদেরকে আদেশ দিবো। ফালইউবাত্তিকুন্না = সুতরাং তারা ছেদ করবে। আযানাল আনআমি = গবাদি পশুর কানসমূহ। ওয়া = আর। লাআমুরান্নাহুম = নিশ্চয় আমি তাদেরকে আদেশ দিবো। ফালইউগাইয়িরুন্না খালকাল্লাহি = সুতরাং তারা আল্লাহর সৃষ্টির সৃষ্টিগত প্রকৃতিকে বিকৃত করবে/ আল্লাহর সৃষ্টিকে তার সৃষ্টিপ্রকৃতির বিপরীতে ব্যবহার করবে। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াত্তাখিজিশ শয়তানা = যে গ্রহণ করে শয়তানকে। ওয়ালিয়্যান = ওয়ালি/ অভিভাবক হিসাবে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে {= যে আল্লাহকে অভিভাবক বানায় না, অভিভাবক বানায় শয়তানকে}। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। খাছিরা = সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খুছরানাম মুবীনা = সুস্পষ্ট ক্ষতিতে।

নিশ্চয় আমি তাদেরকে বিভ্রান্ত করবো আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে তামান্না/ আশা আকাংখা দিবো আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আদেশ দিবো সুতরাং তারা ছেদ করবে গবাদি পশুর কানসমূহ আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আদেশ দিবো সুতরাং তারা আল্লাহর সৃষ্টির সৃষ্টিগত প্রকৃতিকে বিকৃত করবে/ আল্লাহর সৃষ্টিকে তার সৃষ্টিপ্রকৃতির বিপরীতে ব্যবহার করবে। আর যে গ্রহণ করে শয়তানকে ওয়ালি/ অভিভাবক হিসাবে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে {= যে আল্লাহকে অভিভাবক বানায় না, অভিভাবক বানায় শয়তানকে}, নিশ্চয় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুস্পষ্ট ক্ষতিতে।

৪:১২০
ইয়ায়িদুহুম = সে (= শয়তান) তাদেরকে ওয়াদা দেয়। ওয়া = আর। ইউমান্নিহিম = তাদেরকে তামান্না/ আশা আকাংখা দেয়। ওয়া = আর। মা ইয়ায়িদুহুমুশ শায়তানু = শয়তান তাদেরকে ওয়াদা দেয় না। ইল্লা গুরুরা = প্রতারণা করা ছাড়া।
সে (= শয়তান) তাদেরকে ওয়াদা দেয় আর তাদেরকে তামান্না/ আশা আকাংখা দেয়। আর শয়তান তাদেরকে ওয়াদা দেয় না প্রতারণা করা ছাড়া।

৪:১২১
উলায়িকা = তারা এমন লোক। মা’ওয়াহুম = যাদের আবাস হবে। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর। লা ইয়াজিদূনা = তারা পাবে না। আনহা মাহীসান = তা থেকে পালানোর জায়গা/ নিষ্কৃতির উপায়।

তারা এমন লোক যাদের আবাস হবে জাহান্নাম। আর তারা পাবে না তা থেকে পালানোর জায়গা/ নিষ্কৃতির উপায়।

৪:১২২
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। ছানুদখিলুহুম = শীঘ্রই আমরা তাদেরকে দাখিল করাবো। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু = প্রবাহিত হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। আবাদান = চিরকাল। ও’দাল্লাহি হাক্বা = আল্লাহর ওয়াদা সঠিক। ওয়ামান = আর কে হতে পারে। আসদাকু মিনাল্লাহি ক্বীলান = আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী? (= আল্লাহই পরম সত্যবাদী)।

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে শীঘ্রই আমরা তাদেরকে দাখিল করাবো জান্নাতে, প্রবাহিত হয় যার নিচ অংশে নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে চিরকাল। আল্লাহর ওয়াদা সঠিক। আর কে হতে পারে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী? (= আল্লাহই পরম সত্যবাদী)।

৪:১২৩
লাইছা = (শেষ পরিণতি) হবে না। বিআমানিয়্যিকুম = তোমাদের আশা আকাংখা অনুযায়ী। ওয়া = আর। লা আমানিয়্যি আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের আশা আকাংখা অনুযায়ীও নয়। মাইঁ ইয়া’মাল ছূআন = যে-ই মন্দকাজ করে। ইউযযা বিহী = সে উহার প্রতিফল পাবে। ওয়া = আর। লা ইয়াযিদ = সে পাবে না। লাহু = তার জন্য। দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ওয়ালিয়্যান = ওয়ালী/ অভিভাবক। ওয়া = আর। লা নাসীরান = নাসীর/ সাহায্যকারীও পাবে না।

(শেষ পরিণতি) হবে না তোমাদের আশা আকাংখা অনুযায়ী আর আহলে কিতাবের আশা আকাংখা অনুযায়ীও নয়। যে-ই মন্দকাজ করে সে উহার প্রতিফল পাবে। আর সে পাবে না তার জন্য আল্লাহ ছাড়া ওয়ালী/ অভিভাবক আর নাসীর/ সাহায্যকারীও পাবে না।

৪:১২৪
ওয়া = আর। মাইঁ ইয়া’মাল মিনাস সালিহাতি = যে সালিহাত/ সৎকর্ম করে। মিন যাকারিন = পুরুষের মধ্য থেকে। আও = অথবা। উনছা = নারীর মধ্য থেকে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুয়া = সে। মু’মিনুন = মু’মিন। ফাউলায়িকা = এ ধরনের ব্যক্তিরাই। ইয়াদখুলূনাল জান্নাতা = দাখিল হবে জান্নাতে। ওয়া = আর। লা ইউযলামূনা = তাদেরকে যুলম করা হবে না। নাক্বীরা = খেজুর বীচির উপরের আবরণের সমপরিমাণও।

আর যে সালিহাত/ সৎকর্ম করে, পুরুষের মধ্য থেকে অথবা নারীর মধ্য থেকে, এ অবস্থায় যে, সে মু’মিন; এ ধরনের ব্যক্তিরাই দাখিল হবে জান্নাতে। আর তাদেরকে যুলম করা হবে না খেজুর বীচির উপরের আবরণের সমপরিমাণও।

৪:১২৫
ওয়া = আর। মান = কে। আহছানু = অধিক উত্তম। দীনান = দ্বীনের ক্ষেত্রে। মিম মান = তার চেয়ে যে। আছলামা = ইসলাম/ সমর্পণ করেছে। ওয়াজহাহু = তার সত্ত্বাকে। লিল্লাহি = আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুয়া = সে। মুহসিনুন = মুহসিন/ উত্তম আচরণকারী। ওয়াত্তাবাআ = আর সে অনুসরণ করেছে। মিল্লাতা ইবরাহীমা = মিল্লাতে ইবরাহীমকে/ ইবরাহীমের ইবাদাতের একত্ববাদী স্বরূপ ও প্রকৃতিকে। হানীফা = সত্যনিষ্ঠ হয়ে (/সে ছিলো সত্যনিষ্ঠ)। ওয়াত্তাখাজাল্লাহু = আর আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। ইবরাহীমা = ইবরাহীমকে। খালীলা = খলীল/ অত্যন্ত প্রিয় (বান্দা) হিসাবে।

আর কে অধিক উত্তম দ্বীনের ক্ষেত্রে তার চেয়ে যে ইসলাম/ সমর্পণ করেছে তার সত্ত্বাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ অবস্থায় যে, সে মুহসিন/ উত্তম আচরণকারী আর সে অনুসরণ করেছে মিল্লাতে ইবরাহীমকে/ ইবরাহীমের ইবাদাতের একত্ববাদী স্বরূপ ও প্রকৃতিকে সত্যনিষ্ঠ হয়ে (/সে ছিলো সত্যনিষ্ঠ)। আর আল্লাহ গ্রহণ করেছেন ইবরাহীমকে খলীল/ অত্যন্ত প্রিয় (বান্দা) হিসাবে।

৪:১২৬
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ফিল আরদি = জমিনে। ওয়া কানাল্লাহু = আর আল্লাহ। বিকুল্লি সাইয়িন = প্রত্যেক জিনিসকে। মুহীতান = পরিবেষ্টনকারী।

আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে। আর আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসকে পরিবেষ্টনকারী।

৪:১২৭
ইয়াছতাফতূনাকা = তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। ফিন নিসায়ী = (ইয়াতিম ছেলেমেয়ে আছে এমন) নারীদের ব্যাপারে। ক্বুলিল্লাহু ইউফতীকুম = বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন। ফীহিন্না = তাদের ব্যাপারে। ওয়া = আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন)। মা ইউতলা আলাইকুম = যা পাঠ করা হচ্ছে তোমাদের কাছে। ফিল কিতাবি = এই কিতাবে (৪:৩)। ফী ইয়াতামান্নিসায়ী = ঐ বিধবা নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়ের বিষয়ে। আল্লাতী লা তু’তূনাহুন্না = যাদেরকে (= ইয়াতিম ছেলেমেয়ের যে মায়েদেরকে) তোমরা তা দিচ্ছো না। মা কুতিবা লাহুন্না = যা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকার হিসাবে। ওয়া = অথচ। তারগাবূনা = তোমরা আগ্রহ করছো। আন তানকিহূহুন্না = তাদেরকে নিকাহ করতে। ওয়াল মুছতাদআফীনা মিনাল ওয়িলদানি = আর দুর্বল শিশুদের বিষয়ে (৪:৬,৮,৯)। ওয়া = আর। আন তাকূমূ লিল ইয়াতামা = তোমরা কার্যনির্বাহে প্রতিষ্ঠিত থাকো। লিল ইয়াতামা = ইয়াতিম ছেলেমেয়ের জন্য। বিল কিসতি = ন্যায়বিচারের সাথে। ওয়া = আর। মা তাফআলূ = যা তোমরা করো। মিন খায়রিন = কল্যাণকর কাজ থেকে। ফাইন্নাল্লাহা কানা বিহী আলীমা = নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত (= যিনি জানেন)।

তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায় (ইয়াতিম ছেলেমেয়ে আছে এমন) নারীদের ব্যাপারে। বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন তাদের ব্যাপারে (৪:১২৮-১৩০)। আর (স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন) যা পাঠ করা হচ্ছে তোমাদের কাছে এই কিতাবে (৪:৩) ঐ বিধবা নারীদের ইয়াতীম ছেলেমেয়ের বিষয়ে যাদেরকে (= ইয়াতিম ছেলেমেয়ের যে মায়েদেরকে) তোমরা তা দিচ্ছো না যা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের অধিকার হিসাবে অথচ তোমরা আগ্রহ করছো তাদেরকে নিকাহ করতে। আর দুর্বল শিশুদের বিষয়ে (৪:৬,৮,৯)। আর তোমরা কার্যনির্বাহে প্রতিষ্ঠিত থাকো ইয়াতিম ছেলেমেয়ের জন্য ন্যায়বিচারের সাথে। আর যা তোমরা করো কল্যাণকর কাজ থেকে নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত (= যিনি জানেন)।

৪:১২৮
ওয়া = আর। ইনিমরাআতুন = যদি কোন স্ত্রী। খাফাত = ভয় করে। মিন বা’লিহা = তার স্বামীর পক্ষ থেকে। নুশুযা = দাম্পত্য চুক্তি লংঘনের। আও = অথবা। ই’রাদান = উপেক্ষার। ফালা জুনাহা আলাইহিমা = তাহলে তাদের উভয়ের (=স্বামীস্ত্রীর) জুনাহ/ গুনাহ নেই। আইঁ ইউসলিহা বায়নাহুমা সুলহান = মীমাংসা করাতে তাদের (স্বামীস্ত্রী) দুজনের মধ্যে। ওয়াস সুলহু = আর মীমাংসাই। খায়রুন = উত্তম। ওয়া = আর। উহদিরাতিল আনফুছুশ শুহহা = নফসসমূহে হাযির/ উপস্থিত আছে সংকীর্ণমনতা। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুহসিনূ = তোমরা উত্তম কাজ করো। ওয়া = আর তাকওয়া অবলম্বন করো। ফাইন্নাল্লাহা কানা বিমা তা’মালুনা খাবীর = তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

আর যদি কোন স্ত্রী ভয় করে তার স্বামীর পক্ষ থেকে দাম্পত্য চুক্তি লংঘনের (অর্থাৎ ইনসাফপূর্ণ আচরণে ব্যত্যয় ঘটার) অথবা উপেক্ষার, তাহলে তাদের উভয়ের (=স্বামীস্ত্রীর) জুনাহ/ গুনাহ নেই মীমাংসা করাতে তাদের (স্বামীস্ত্রী) দুজনের মধ্যে। আর মীমাংসাই উত্তম। আর নফসসমূহে হাযির/ উপস্থিত আছে সংকীর্ণমনতা। আর যদি তোমরা উত্তম কাজ করো আর তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৪:১২৯
ওয়া = আর। লান তাছতাতিঊ = তোমরা কখনো পারবে না। আন তা’দিলূ = হুবহু আদল ইনসাফ করতে। বাইনান্নিসায়ী = স্ত্রীদের মধ্যে। ওয়া লাও = যদিও। হারাসতুম = তোমরা প্রয়াস পাও। ফালা তামিলূ কুল্লাল মাইলি = সুতরাং তোমরা সম্পূর্ণ পথচ্যুত হয়ে যেয়ো না (৪:২৭)। ফাতাযারূহা = যার ফলে তাকে (= স্ত্রীকে) রাখা হয়। কালমুআল্লাকাতি = ঝুলন্ত অবস্থার মতো। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুসলিহূ = তোমরা ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করো। ওয়া = আর। তাত্তাকূ = তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো। ফাইন্নাল্লাহা কানা গাফূরার রাহীমা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

আর তোমরা কখনো পারবে না হুবহু আদল ইনসাফ করতে স্ত্রীদের মধ্যে যদিও তোমরা প্রয়াস পাও। সুতরাং তোমরা সম্পূর্ণ পথচ্যুত হয়ে যেয়ো না (৪:২৭) যার ফলে তাকে (= স্ত্রীকে) রাখা হয় ঝুলন্ত অবস্থার মতো। আর যদি তোমরা ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করো আর তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন করো তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:১৩০
ওয়া = আর। ইন = যদি। ইয়াতাফাররাক্বা = স্বামী-স্ত্রী দুজন (তালাকের মাধ্যমে) পৃথক হয়ে যায়। ইউগনিল্লাহু = আল্লাহ অভাবমুক্ত করবেন। কুল্লান = (স্বামী-স্ত্রীর) প্রত্যেককে। মিন ছাআতিহী = তাঁর প্রাচুর্য থেকে। ওয়া কানাল্লাহু ওয়াছিআন হাকীমান = আর আল্লাহ ওয়াসি/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর যদি স্বামী-স্ত্রী দুজন (তালাকের মাধ্যমে) পৃথক হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ অভাবমুক্ত করবেন (স্বামী-স্ত্রীর) প্রত্যেককে তাঁর প্রাচুর্য থেকে। আর আল্লাহ ওয়াসি/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১৩১
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ফিল আরদি = জমিনে। ওয়া = আর। লাকাদ = নিশ্চয়। ওয়াসসায়নাল্লাযীনা = আমরা তাদেরকে ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশদান করেছি যাদেরকে। উতুল কিতাবা = কিতাব দেয়া হয়েছে। মিন কাবলিকুম = তোমাদের আগে। ওয়া = আর। ইয়্যাকুম = তোমাদেরকেও। আনিত্তাক্বুল্লাহা = এই নির্দেশ যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাকফুরূ = তোমরা কুফর করো। ফাইন্না = তবে নিশ্চয়। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ফিল আরদি = জমিনে। ওয়া কানাল্লাহু গানিয়্যান হামীদান = আর আল্লাহ গনী/ অমুখাপেক্ষী, হামীদ/ প্রশংসিত।

আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে। আর নিশ্চয় আমরা তাদেরকে ওয়াসিয়্যাত/ নির্দেশদান করেছি যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে আর তোমাদেরকেও, এই নির্দেশ যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর যদি তোমরা কুফর করো তবে নিশ্চয় আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে। আর আল্লাহ গনী/ অমুখাপেক্ষী, হামীদ/ প্রশংসিত।

৪:১৩২
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ফিল আরদি = জমিনে। ওয়া কাফা বিল্লাহি ওয়াকীলা = আর আল্লাহই যথেষ্ট উকিল/ কার্যনির্বাহক হিসাবে।

আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে। আর আল্লাহই যথেষ্ট উকিল/ কার্যনির্বাহক হিসাবে।

৪:১৩৩
ইইঁ ইয়াশা’ = যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ইউযহিবকুম = তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন। আইয়্যুহান্নাছু = হে মানুষ। ওয়া ইয়্যাতি = আর দিয়ে যাবেন। বিআখারীনা = অন্যদেরকে। ওয়া কানাল্লাহু আলা যালিকা ক্বাদীরা = আর তিনি উহার উপর ক্ষমতাবান।

যদি তিনি ইচ্ছা করেন তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন, হে মানুষ, আর দিয়ে যাবেন অন্যদেরকে। আর তিনি উহার উপর ক্ষমতাবান (বা, তিনি তা করতে সক্ষম ও শক্তিমান)।

৪:১৩৪
মান = যে। কানা ইউরীদু = এরাদা/ ইচ্ছা করে। ছাওয়াবাদ দুনইয়া = দুনিয়ার সওয়াব/ প্রতিফল। ফাইনদাল্লাহি = তার জানা উচিত যে, আল্লাহর কাছে আছে। ছাওয়াবুদ দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি = দুনিয়া ও আখিরাতের সওয়াব/ প্রতিফল। ওয়া কানাল্লাহু ছামীয়াম বাসীরা = আর আল্লাহ সামী’/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা (= যিনি সব দেখেন)।

যে এরাদা/ ইচ্ছা করে দুনিয়ার সওয়াব/ প্রতিফল পেতে, তার জানা উচিত যে, আল্লাহর কাছে আছে দুনিয়া ও আখিরাতের সওয়াব/ প্রতিফল। আর আল্লাহ সামী’/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা (= যিনি সব দেখেন)।

৪:১৩৫
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। কূনূ ক্বাওয়ামীনা = তোমরা প্রতিষ্ঠিত থাকো। বিল কিসতি = ন্যায়বিচারের প্রতি। সুহাদাআ লিল্লাহি = আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসাবে। ওয়া লাও = যদিও। আলা = তা বিরুদ্ধে যায়। আনফুসিকুম = তোমাদের নিজেদের। আওয়িল ওয়ালিদাইনি = অথবা তোমাদের পিতামাতার। ওয়াল আক্বরাবীনা = আর তোমাদের নিকটতম আত্মীয়গণের। ইইঁ ইয়াকুন = যদি তাদের কেউ হয়। গানিয়্যান = গনি/ ধনী। আও = অথবা। ফাক্বীরান = ফক্বীর/ দরিদ্র (তা বিবেচনার বিষয় নয়)। ফাল্লাহু = আল্লাহই। আওলা বিহিমা = (তোমাদের চেয়ে) অধিক হিতকামী তাদের (ধনী-দরিদ্র) উভয়ের প্রতি। ফালা তাত্তাবিউল হাওয়া = সুতরাং তোমরা হাওয়া/ প্রবৃত্তিতাড়িত হয়ো না। আন তা’দিলূ = যে তাড়নায় তোমরা পারো না আদল/ ন্যায়বিচার করতে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তালউ = তোমরা পেঁছালো কথা বলো। আও = অথবা। তু’রিদূ = তোমরা সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাও। ফাইন্নাল্লাহা কানা বিমা তা’মালূনা খাবীরা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা প্রতিষ্ঠিত থাকো ন্যায়বিচারের প্রতি আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যদাতা হিসাবে, যদিও তা বিরুদ্ধে যায় তোমাদের নিজেদের অথবা তোমাদের পিতামাতার আর তোমাদের নিকটতম আত্মীয়গণের। যদি তাদের কেউ হয় গনি/ ধনী অথবা ফক্বীর/ দরিদ্র (তা বিবেচনার বিষয় নয়)। আল্লাহই (তোমাদের চেয়ে) অধিক হিতকামী তাদের (ধনী-দরিদ্র) উভয়ের প্রতি। সুতরাং তোমরা হাওয়া/ প্রবৃত্তিতাড়িত হয়ো না যে তাড়নায় তোমরা পারো না আদল/ ন্যায়বিচার করতে। আর যদি তোমরা পেঁছালো কথা বলো অথবা তোমরা সত্যকে পাশ কাটিয়ে যাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।

৪:১৩৬
ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া রাসূলিহী = আর তাঁর রাসূলের প্রতি। ওয়াল কিতাবিল্লাযী = আর ঐ কিতাবের প্রতি যা। নাযযালা = তিনি নাযিল করেছেন। আলা রাসূলিহী = তাঁর রাসূলের প্রতি। ওয়াল কিতাবিল্লাযী = আর ঐ কিতাবের প্রতিও যা। আনযালা = তিনি নাযিল করেছেন। মিন কাবলু = (তোমাদের সময়ের) আগে। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াকফুর = যে কুফর করে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। মালাইকাতিহী = তাঁর মালাইকা/ ফেরেশতাগণের প্রতি। ওয়া = আর। কুতুবিহী = তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। রুছুলিহী = তাঁর রসূলগণের প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমুল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লা = সে বিভ্রান্ত হয়েছে। দলালাম বায়ীদা = বহুদূর বিভ্রান্তিতে।

হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি, আর তাঁর রাসূলের প্রতি, আর ঐ কিতাবের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর রাসূলের প্রতি, আর ঐ কিতাবের প্রতিও যা তিনি নাযিল করেছেন (তোমাদের সময়ের) আগে। আর যে কুফর করে আল্লাহর প্রতি আর তাঁর মালাইকা/ ফেরেশতাগণের প্রতি আর তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি আর তাঁর রসূলগণের প্রতি আর ইয়াওমুল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি, নিশ্চয় সে বিভ্রান্ত হয়েছে বহুদূর বিভ্রান্তিতে।

৪:১৩৭
ইন্নাল্লাযীনা আমানূ = নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ছুম্মা = তারপর। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ছুম্মা = তারপর। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ছুম্মা = তারপর। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ছুম্মাযদাদূ কুফরান = তারপর বাড়িয়ে নিয়েছে কুফর/ অবিশ্বাস। লাম ইয়াকুনিল্লাহু লিইয়াগফিরা লাহুম = আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন না। ওয়ালা লিইয়াহদিয়াহুম = আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন না। ছাবীলা = সঠিক পথ।

নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারপর কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারপর ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারপর কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারপর বাড়িয়ে নিয়েছে কুফর/ অবিশ্বাস, আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন না আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন না সঠিক পথ।

৪:১৩৮
বাশশিরিল মুনাফিকীনা = মুনাফিকদেরকে সংবাদ দাও। বিআন্না = যে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবান আলীমান = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

মুনাফিকদেরকে সংবাদ দাও যে, তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪:১৩৯
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াত্তাখিজূনাল কাফিরীনা = গ্রহণ করে কাফিরদেরকে। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। মিন দূনিল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে {= কাফিরদেরকে বন্ধু বানায়, মু’মিনদেরকে বন্ধু বানায় না}। আইয়াবতাগূনা = তারা কি তালাশ করে। ইনদাহুমুল ইযযাতা = তাদের কাছে (= কাফিরদের কাছে) ইজ্জত/ সম্মান? ফাইন্নাল ইযযাতা = তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, নিশ্চয় ইজ্জত/ সম্মান। লিল্লাহি জামিআ = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত সবটুকুই।

যারা গ্রহণ করে কাফিরদেরকে আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে {= কাফিরদেরকে বন্ধু বানায়, মু’মিনদেরকে বন্ধু বানায় না}, তারা কি তালাশ করে তাদের কাছে (= কাফিরদের কাছে) ইজ্জত/ সম্মান? তাহলে তাদের জেনে রাখা উচিত যে, নিশ্চয় ইজ্জত/ সম্মান আল্লাহরই অধিকারভুক্ত, সবটুকুই।

৪:১৪০
ওয়া = আর। লাকাদ = নিশ্চয়। নাযযালা = তিনি নাযিল করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের দায়দায়িত্ব। ফিল কিতাবি = কিতাবের মধ্যে। আন = তা এই যে। ইযা = যখন। ছামি’তুম = তোমরা শুনো। আয়াতিল্লাহি ইউকফারু বিহা = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি কুফর করা হচ্ছে। ওয়া = আর। ইউছতাহযাউ বিহা = উহার প্রতি উপহাস করা হচ্ছে। ফালা তাক্বউদূ = তখন তোমরা বসো না। মাআহুম = তাদের সাথে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াখূদূ = তারা রত হয়। ফী হাদীসিন গাইরিহী = অন্য কথায়। ইন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। ইযাম মিছলুহুম = (তাদের সাথে বসলে) তখন তাদের মতো হয়ে যাবে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। জামিউল মুনাফিক্বীনা = একত্র করবেন মুনাফিকদেরকে। ওয়াল কাফিরীনা = আর কাফিরদেরকে। ফী জাহান্নামা জামীআম = জাহান্নামের মধ্যে (তাদের) সকলকেই।

আর নিশ্চয় তিনি নাযিল করেছেন তোমাদের দায়দায়িত্ব কিতাবের মধ্যে, তা এই যে, যখন তোমরা শুনো আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি কুফর করা হচ্ছে আর উহার প্রতি উপহাস করা হচ্ছে; তখন তোমরা বসো না তাদের সাথে যতক্ষণ না তারা রত হয় অন্য কথায় (০৬: ৬৮)। নিশ্চয় তোমরা (তাদের সাথে বসলে) তখন তাদের মতো হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ একত্র করবেন মুনাফিকদেরকে আর কাফিরদেরকে জাহান্নামের মধ্যে (তাদের) সকলকেই।

৪:১৪১
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াতারাব্বাসূনা = অপেক্ষা করে। বিকুম = তোমাদের ব্যাপারে (কী ঘটে তা দেখার জন্য)। ফাইন = সুতরাং যদি। কানা লাকুম ফাতহুম মিনাল্লাহি = তোমাদের বিজয় হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। ক্বলূ = তখন তারা (মু’মিনদেরকে) বলে। আলাম নাকুম মাআকুম = আমরা কি ছিলাম না তোমাদেরই সাথে? ওয়া = আর। ইন = যদি। কানা লিল কাফিরীনা নাসীবুন = কাফিরদের আংশিক বিজয় হয়। ক্বলূ = তখন তারা (কাফিরদেরকে) বলে। আলাম নাছতাহওয়িজ = আমরা কি প্রবল ছিলাম না। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। নামনা’কুম = আমরাই তোমাদেরকে রক্ষা করেছি। মিনাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের (হাত) থেকে। ফাল্লাহু = সুতরাং আল্লাহ। ইয়াকুমু = ফায়সালা করে দেবেন। বায়নাকুম = তাদের মধ্যে। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামতে/ কিয়ামত দিবসে। ওয়া = আর। লাইঁ ইয়াজআলাল্লাহু = আল্লাহ রাখেননি। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। আলাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের উপর আধিপত্যলাভের। ছাবীলা = কোন পথ।

যারা অপেক্ষা করে তোমাদের ব্যাপারে (কী ঘটে তা দেখার জন্য)। সুতরাং যদি তোমাদের বিজয় হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে, তখন তারা (মু’মিনদেরকে) বলে, ‘আমরা কি ছিলাম না তোমাদেরই সাথে?’ আর যদি কাফিরদের আংশিক বিজয় হয়, তখন তারা (কাফিরদেরকে) বলে, ‘আমরা কি প্রবল ছিলাম না তোমাদের উপর? আর আমরাই তোমাদেরকে রক্ষা করেছি মু’মিনদের (হাত) থেকে’। সুতরাং আল্লাহ ফায়সালা করে দেবেন তাদের মধ্যে ইয়াওমুল কিয়ামতে/ কিয়ামত দিবসে। আর আল্লাহ রাখেননি কাফিরদের জন্য মু’মিনদের উপর আধিপত্যলাভের কোন পথ।

৪:১৪২
ইন্নাল মুনাফিকীনা = নিশ্চয় মুনাফিকগণ। ইউখাদিঊনাল্লাহা = আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়। ওয়া = অথচ। হুয়া = তিনিই। খাদিয়ীহুম = তাদেরকে ধোঁকায় রেখেছেন। ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বমূ = তারা দাঁড়ায়। ইলাস সালাতি = সালাতের জন্য। ক্বমূ = তারা দাঁড়ায়। কুছালা = অনাগ্রহের সাথে। ইউরাউনান্নাছা = মানুষকে দেখানোর জন্য। ওয়া = আর। লা ইয়াযকুরুনাল্লাহা ইল্লা ক্বালীলা = তারা আল্লাহকে অত্যন্ত অল্পই স্মরণ করে।

নিশ্চয় মুনাফিকগণ আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায় অথচ তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় রেখেছেন। আর যখন তারা দাঁড়ায় সালাতের জন্য, তারা দাঁড়ায় অনাগ্রহের সাথে, মানুষকে দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অত্যন্ত অল্পই স্মরণ করে।

৪:১৪৩
মুযাবযাবীনা বায়না যালিকা = তারা ঐ অবস্থার মধ্যেই দোদুল্যমান। লা ইলা হাউলায়ি = তারা এদের দিকেও না। ওয়া = আর। লা ইলা হাউলায়ি = তারা ওদের দিকেও না। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহি = যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন। ফালান তাজিদা = তুমি পাবে না। লাহু = তার জন্য। ছাবীলা = কোন পথ।

তারা ঐ অবস্থার মধ্যেই দোদুল্যমান, তারা এদের দিকেও না আর তারা ওদের দিকেও না। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তুমি পাবে না তার জন্য কোন পথ।

৪:১৪৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাত্তাখিজুল কাফিরীনা = গ্রহণ করো না কাফিরদেরকে। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে। মিন দূনিল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে (= কাফিরদেরকে বন্ধু বানাবে না, মু’মিনদেরকেই বন্ধু বানাবে)। আতুরীদূনা = তোমরা কি এরাদা/ ইচ্ছা করো। আন = যে। তাজআলূ = উপস্থাপন করবে। লিল্লাহি = আল্লাহর কাছে। আলাইকুম = তোমাদের বিপক্ষে। সুলতানাম মুবীনা = সুস্পষ্ট প্রমাণ।

হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো গ্রহণ করো না কাফিরদেরকে আওলিয়া/ বন্ধু হিসাবে মু’মিনদেরকে বাদ দিয়ে (= কাফিরদেরকে বন্ধু বানাবে না, মু’মিনদেরকেই বন্ধু বানাবে)। তোমরা কি এরাদা/ ইচ্ছা করো যে, উপস্থাপন করবে আল্লাহর কাছে তোমাদের বিপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ?

৪:১৪৫
ইন্নাল মুনাফিক্বীনা = নিশ্চয় মুনাফিকগণ। ফিদ দারকিল আছফালি মিনান্নারি = থাকবে (জাহান্নামের) আগুনের সবচেয়ে নিচের স্তরে। ওয়া = আর। লান তাজিদা = তুমি কখনো পাবে না। লাহুম = তাদের জন্য। নাসীরান = কোন সাহায্যকারী।

নিশ্চয় মুনাফিকগণ থাকবে (জাহান্নামের) আগুনের সবচেয়ে নিচের স্তরে। আর তুমি কখনো পাবে না তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী।

৪:১৪৬
ইল্লাল্লাযীনা = তারা ছাড়া যারা। তাবূ = তাওবা করেছে। ওয়া = আর। আসলাহা = ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করেছে। ওয়া’তাসামূ = আর আঁকড়ে ধরেছে। বিল্লাহি = আল্লাহকে। ওয়া = আর। আখলাসূ = খালেস/ খাঁটি করে নেয়। দীনাহুম = তাদের দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য। ফাউলায়িকা = তারা। মাআল মু’মিনীনা = মু’মিনদের সাথে থাকবে। ওয়া = আর। ছাওফা = শীঘ্রই। ইউ’তিল্লাহুল মু’মিনীনা = আল্লাহ দান করবেন মু’মিনদেরকে। আজরান আযীমা = মহাপুরস্কার।

তারা ছাড়া যারা তাওবা করেছে আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করেছে আর আঁকড়ে ধরেছে আল্লাহকে (কুরআনকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে) আর খালেস/ খাঁটি করে নেয় তাদের দ্বীনকে/ জীবনব্যবস্থাকে আল্লাহরই জন্য, তারা মু’মিনদের সাথে থাকবে। আর শীঘ্রই আল্লাহ দান করবেন মু’মিনদেরকে মহাপুরস্কার।

৪:১৪৭
মা ইয়াফআলু = আল্লাহ কী করবেন। বিআযাবিকুম = তোমাদেরকে আযাব দিয়ে। ইন = যদি। শাকারতুম = তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ওয়া = আর। আমানতুম = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। ওয়া কানাল্লাহু শাকীরান আলীমান = আর আল্লাহ শাকীর/ শোকরের মূল্যায়নকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।

আল্লাহ কী করবেন তোমাদেরকে আযাব দিয়ে যদি তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো আর তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো? আর আল্লাহ শাকীর/ শোকরের মূল্যায়নকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।

৪:১৪৮
লা ইউহিব্বুল্লাহুল জাহরা বিছ ছূয়ি মিনাল ক্বাওলি = আল্লাহ ভালবাসেন না মন্দ কথা প্রকাশ করাকে। ইল্লা মান যুলিমা = যাকে যুলম করা হয়েছে তার কথা ভিন্ন। ওয়া কানাল্লাহু ছামীআন আলীমান = আর আল্লাহ সামী’/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।

আল্লাহ ভালবাসেন না মন্দ কথা প্রকাশ করাকে, যাকে যুলম করা হয়েছে তার কথা ভিন্ন। আর আল্লাহ সামী’/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।

৪:১৪৯
ইন তুবদূ খায়রান = যদি তোমরা প্রকাশ্যে উত্তম কাজ করো। আও = অথবা। তুখফূহু = তোমরা তা গোপনে করো। আও = অথবা। তা’ফূ আন ছূইন = অন্যের দোষের ক্ষেত্রে উদারতার ভিত্তিতে ছোট দোষগুলো মাফ করে দাও। ফাইন্নাল্লাহা কানা আফুওয়ান ক্বাদীরা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ আফুওওয়ান/ উদার, ক্বাদীর/ প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

যদি তোমরা প্রকাশ্যে উত্তম কাজ করো অথবা তোমরা তা গোপনে করো অথবা অন্যের দোষের ক্ষেত্রে উদারতার ভিত্তিতে ছোট দোষগুলো মাফ করে দাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ আফুওওয়ান/ উদার, ক্বাদীর/ প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪:১৫০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইয়াকফুরূনা = কুফর করে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। রুসুলিহী = তাঁর রসূলগণের প্রতি। ওয়া = আর। ইউরীদূনা = এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইউফাররিক্বূ = (ঈমানের ক্ষেত্রে) পার্থক্য করতে। বায়নাল্লাহি ওয়া রুসুলিহী = আল্লাহর ও তাঁর রসূলগণের মধ্যে। ওয়া = আর। ইয়াক্বূলূনা = বলে। নু’মিনু = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করি। বিবা’দিন = তাঁদের কাউকে। ওয়া = আর। নাকফুরু = আমরা কুফর/ অবিশ্বাস করি। বিবা’দিন = তাঁদের কাউকে। ওয়া = আর। ইউরীদূনা = এরাদা/ ইচ্ছা করে। আইঁ ইয়াত্তাখিজূ = গ্রহণ করতে। বায়না যালিকা ছাবীলা = উহার মধ্যবর্তী একটি পথ।

নিশ্চয় যারা কুফর করে আল্লাহর প্রতি আর তাঁর রসূলগণের প্রতি আর এরাদা/ ইচ্ছা করে (ঈমানের ক্ষেত্রে) পার্থক্য করতে আল্লাহর ও তাঁর রসূলগণের মধ্যে আর বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করি তাঁদের কাউকে আর আমরা কুফর/ অবিশ্বাস করি তাঁদের কাউকে’, আর এরাদা/ ইচ্ছা করে গ্রহণ করতে উহার মধ্যবর্তী একটি পথ।

৪:১৫১
উলায়িকা হুমুল কাফিরূনা হাক্কান = তারাই হক্কানী/ পাক্কা কাফির। ওয়া = আর। আ’তাদনা = আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য। আযাবাম মুহীনা = আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

তারাই হক্কানী/ পাক্কা কাফির। আর আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি কাফিরদের জন্য আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।

৪:১৫২
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। রুসুলিহী = তাঁর রসূলগণের প্রতি। ওয়া = আর। লাম ইউফাররিক্বূ = (ঈমানের ক্ষেত্রে) পার্থক্য করেনি। বায়না আহাদিম মিনহুম = তাদের মধ্যকার কারো মধ্যে। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। ছাওফা = শীঘ্রই। ইউ’তীহুম = তিনি যাদেরকে দিবেন। উজূরাহুম = তাদের পুরস্কার। ওয়া কানাল্লাহু গাফূরার রহীমান = আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি আর তাঁর রসূলগণের প্রতি আর (ঈমানের ক্ষেত্রে) পার্থক্য করেনি তাদের মধ্যকার কারো মধ্যে, তারাই এমন লোক শীঘ্রই তিনি যাদেরকে দিবেন তাদের পুরস্কার। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।

৪:১৫৩
ইয়াছআলুকা = তোমার কাছে দাবী জানায়। আহলুল কিতাবি = আহলে কিতাব। আন = এই যে। তুনাযযিলা = তুমি নাযিল করাবে। আলাইহিম = তাদের সামনে। কিতাবাম মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে একটি কিতাব। ফাক্বাদ = তাহলে নিশ্চয়। ছাআলূ মূসা = তারা তো দাবী করেছিলো মূসার কাছে। আকবারা মিন যালিকা = উহার চেয়ে বড়। ফাক্বালূ = তখন তারা বলেছিলো। আরিনাল্লাহা = আমাদেরকে দেখাও আল্লাহকে। জাহরাতান = প্রকাশ্যে। ফাআখাযাতহুমুস সয়িক্বাতু = সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছে বজ্রপাত। বিযুলমিহিম = তাদের যুলমের কারণে। ছুম্মাত্তাখাজুল ইজলা = তারপর তারা (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করেছে গরুর বাছুরকে। মিম বা’দি মা = উহার পরও যে। জাআতহুমুল বাইয়্যিনাত = তাদের কাছে এসেছিলো বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ। ফাআফাওনা = তবু আমরা উদারনীতি অবলম্বন করেছি। আন যালিকা = ঐ ব্যাপারে শাস্তিদানের ক্ষেত্রে। ওয়া = আর। আতাইনা মূসা = আমরা দিয়েছি মূসাকে। ছুলতানাম মুবীনা = সুস্পষ্ট প্রমাণ।

তোমার কাছে দাবী জানায় আহলে কিতাব এই যে, তুমি নাযিল করাবে তাদের সামনে আকাশ থেকে একটি কিতাব। তাহলে নিশ্চয় তারা তো দাবী করেছিলো মূসার কাছে উহার চেয়ে বড়। তখন তারা বলেছিলো, ‘আমাদেরকে দেখাও আল্লাহকে প্রকাশ্যে’। সুতরাং তাদেরকে পাকড়াও করেছে বজ্রপাত, তাদের যুলমের কারণে। তারপর তারা (উপাস্য হিসাবে) গ্রহণ করেছে গরুর বাছুরকে উহার পরও যে, তাদের কাছে এসেছিলো বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ। তবু আমরা উদারনীতি অবলম্বন করেছি ঐ ব্যাপারে শাস্তিদানের ক্ষেত্রে আর আমরা দিয়েছি মূসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ।

৪:১৫৪
ওয়া = আর। রফা’না = আমরা তুলেছি। ফাওকাহুম = তাদের উপর (তাদের প্রতিরক্ষার্থে)। আত তূরা = তূর পাহাড়। বিমীছাক্বিহিম = তাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতির জন্য। ওয়া = আর। ক্বুলনা লাহুম = আমরা তাদেরকে বলেছি। উদখুলূল বাবা = দ্বার দিয়ে দাখিল হও/ প্রবেশ করো। ছুজজাদান = সিজদা করে। ওয়া = আর। ক্বুলনা লাহুম = আমরা তাদের বলেছি। লা তা’দূ = তোমরা সীমালংঘন করো না। ফিছ ছাবতি = সাবতের/ সপ্তমদিনের/ শনিবারের বিধানের বিষয়ে। ওয়া = আর। আখাযনা = আমরা গ্রহণ করেছি। মিনহুম = তাদের থেকে। মীছাক্বান গালীযান = দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।

আর আমরা তুলেছি তাদের উপর (তাদের প্রতিরক্ষার্থে) তূর পাহাড় তাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতির জন্য। আর আমরা তাদেরকে বলেছি, ‘দ্বার দিয়ে দাখিল হও/ প্রবেশ করো সিজদা করে’। আর আমরা তাদের বলেছি, ‘তোমরা সীমালংঘন করো না সাবতের/ সপ্তমদিনের/ শনিবারের বিধানের বিষয়ে’। আর আমরা গ্রহণ করেছি তাদের থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।

৪:১৫৫
ফাবিমা নাক্বদিয়িহিম মীছাক্বাহুম = তারপর (তারা লা’নতগ্রস্ত হয়েছে) (০১) তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে। ওয়া কুফরিহিম বিআয়াতিল্লাহি = (০২) আর আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি তাদের কুফরের কারণে। ওয়া ক্বাতলিহিমুল আম্বিয়ায়ি বিগাইরি হাক্কিন = (০৩) আর সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করার কারণে। ওয়া ক্বাওলিহিম ক্বুলূবুনা গুলফুন = (০৪) আর তাদের এ কথার জন্য যে, ‘আমাদের কলবসমূহ গিলাফে আচ্ছাদিত’। বাল = বরং। তবায়াল্লাহু = আল্লাহই মোহর এঁটে দিয়েছেন। আলাইহা = উহার উপর (= তাদের কলবের উপর)। বিকুফরিহিম = তাদের কুফরের কারণে। ফালা ইউ’মিনূনা = সুতরাং তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না। ইল্লা ক্বালীলা = অল্প কয়েকজন ছাড়া।

তারপর (তারা লা’নতগ্রস্ত হয়েছে) (০১) তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে (০২) আর আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি তাদের কুফরের কারণে (০৩) আর সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করার কারণে (০৪) আর তাদের এ কথার জন্য যে, ‘আমাদের কলবসমূহ গিলাফে আচ্ছাদিত’। বরং আল্লাহই মোহর এঁটে দিয়েছেন উহার উপর (= তাদের কলবের উপর) তাদের কুফরের কারণে। সুতরাং তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না, অল্প কয়েকজন ছাড়া।

৪:১৫৬
ওয়া বিকুফরিহিম = (০৫) আর তাদের কুফরের কারণে। ওয়া ক্বাওলিহিম আলা মারইয়ামা বুহতানান আযীমান = (০৬) আর মারইয়ামের উপর তাদের গুরুতর অপবাদ আরোপের কারণে।

(০৫) আর তাদের কুফরের কারণে (০৬) আর মারইয়ামের উপর তাদের গুরুতর অপবাদ আরোপের কারণে।

৪:১৫৭
ওয়া ক্বাওলিহিম ইন্না ক্বাতালনাল মাছীহা ঈসাবনা মারইয়ামা রাছূলাল্লাহি = (০৭) আর তাদের এ কথার কারণে যে, নিশ্চয় আমরা হত্যা করেছি মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, যে আল্লাহর রাসূল। ওয়া মা ক্বাতালূহু = অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি। ওয়া = আর। মা সলাবূহু = তারা তাকে শূলেও চড়ায়নি। ওয়ালাকিন = কিন্তু। সুব্বিহা লাহুম = তাদের জন্য একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ের অনুরূপ করে দেয়া হয়েছে। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাযীনাখতালাফূ ফীহা = নিশ্চয় যারা ঐ বিষয়ে ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে তারা। লাফী শাক্কিম মিনহু = ঐ বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে আছে। মা লাহুম মিন ইলমিন = তাদের ঐ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই। ইল্লা তিবাআয যন্না = অনুমানের ইত্তেবা/ অনুসরণ ছাড়া। ওয়া = আর। মা ক্বাতালুহূ ইয়াক্বীনা = তারা তাকে হত্যা করেনি (এটাই) ইয়াকীন/ নিশ্চিত তথ্য।

(০৭) আর তাদের এ কথার কারণে যে, নিশ্চয় আমরা হত্যা করেছি মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে, যে আল্লাহর রাসূল। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি আর তারা তাকে শূলেও চড়ায়নি। কিন্তু তাদের জন্য একটি বিষয়কে অন্য একটি বিষয়ের অনুরূপ করে দেয়া হয়েছে। আর নিশ্চয় যারা ঐ বিষয়ে ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে তারা ঐ বিষয়ে সংশয়ের মধ্যে আছে। তাদের ঐ বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই, অনুমানের ইত্তেবা/ অনুসরণ ছাড়া। আর তারা তাকে হত্যা করেনি (এটাই) ইয়াকীন/ নিশ্চিত তথ্য।

৪:১৫৮
বাল = বরং। রফাআহুল্লাহু ইলাইহি = তাকে (যথাসময়ে স্বাভাবিক মৃত্যুদানের মাধ্যমে) তাঁর দিকে (সমুন্নত মর্যাদায়) উঠিয়েছেন। ওয়া কানাল্লাহু আযীযান হাকীমান = আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

বরং (যথাসময়ে স্বাভাবিক মৃত্যুদানের মাধ্যমে ০৩: ৫৫) আল্লাহ তাকে তাঁর দিকে (সমুন্নত মর্যাদায়) উঠিয়েছেন। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১৫৯
ওয়া ইম মিন আহলিল কিতাবি = আর আহলে কিতাবের মধ্য থেকে কেউ কেউ নেই। ইল্লা লাইউ’মিনান্না = এছাড়া যে, সে অবশ্যই ঈমান/ বিশ্বাস করবে। বিহী = তার প্রতি। ক্বাবলা মাওতিহী = তার মৃত্যুর আগে। ওয়া = আর। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ইয়াকূনু = সে হবে। আলাইহিম = তাদের ব্যাপারে। শাহীদা = একজন স্বাক্ষী।

আর আহলে কিতাবের মধ্য থেকে কেউ কেউ নেই এছাড়া যে, সে অবশ্যই ঈমান/ বিশ্বাস করবে তার প্রতি তার (নিজের) মৃত্যুর আগে। আর ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে সে হবে তাদের ব্যাপারে একজন স্বাক্ষী।

৪:১৬০
ফাবিযুলমিম মিনাল্লাযীনা হাদূ = যারা ইহুদী হয়েছে তাদের যুলুমের কারণে। হাররামনা = আমরা হারাম করেছি। আলাইহিম = তাদের উপর। তইয়িবাতিন = তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্য। উহিল্লাত = প্রকৃতপক্ষে যা হালাল করা হয়েছিলো। লাহুম = তাদের জন্য। ওয়া = আর। বিসদ্দিহিম আন সাবীলিল্লাহি কাছীরান = তারা সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে অনেককে বাধা দেয়ার কারণে।

যারা ইহুদী হয়েছে তাদের যুলুমের কারণে আমরা হারাম করেছি তাদের উপর তইয়িবাত/ পবিত্র খাদ্য, প্রকৃতপক্ষে যা হালাল করা হয়েছিলো তাদের জন্য। আর তারা সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে অনেককে বাধা দেয়ার কারণে।

৪:১৬১
ওয়া = আর। আখযিহিমুর রিবা = তাদের সুদগ্রহণের কারণে। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। নুহু আনহু = তাদেরকে উহা থেকে নিষেধ করা হয়েছিলো। ওয়া = আর। আকলিহিম আমওয়ালান্নাছি বিল বাতিলি = তাদের কর্তৃক বাতিলপন্থায় মানুষের মালসমূহ খাওয়ার কারণে। ওয়া = আর। আ’তাদনা = আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি। লিল কাফিরীনা মিনহুম = তাদের মধ্যকার কাফিরদের জন্য। আযাবান আলীমা = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

আর তাদের সুদগ্রহণের কারণে। অথচ নিশ্চয় তাদেরকে উহা থেকে নিষেধ করা হয়েছিলো। আর তাদের কর্তৃক বাতিলপন্থায় মানুষের মালসমূহ খাওয়ার কারণে। আর আমরা প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের মধ্যকার কাফিরদের জন্য আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪:১৬২
লাকিনির রাছিখূনা ফিল ইলমি মিনহুম = কিন্তু তাদের মধ্য থেকে যারা ‘রাছিখূনা ফিল ইলম’/ জ্ঞানে সুগভীর। ওয়াল মু’মিনূনা = এবং মু’মিন। ইউ’মিনূনা = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিমা উনযিলা ইলাইকা = উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি। ওয়া = আর। মা উনযিলা মিন ক্বাবলিকা = যা নাযিল করা হয়েছে তোমার আগে। ওয়াল মুক্বীমীনাস সালাতা = আর সালাত কায়েমকারী/ প্রতিষ্ঠাকারী। ওয়াল মু’তূনায যাকাতা = আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদানকারী। ওয়াল মু’মিনূনা বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর আল্লাহর প্রতি ও ইয়াওমুল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি মু’মিন/ বিশ্বাসী। উলায়িকা ছানু’তীহিম আজরান আযীমা = তারাই এমন লোক শীঘ্রই আমরা যাদেরকে দেবো মহাপুরস্কার।

কিন্তু তাদের মধ্য থেকে যারা ‘রাছিখূনা ফিল ইলম’/ জ্ঞানে সুগভীর এবং মু’মিন তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি আর যা নাযিল করা হয়েছে তোমার আগে আর তারা সালাত কায়েমকারী/ প্রতিষ্ঠাকারী আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদানকারী আর আল্লাহর প্রতি ও ইয়াওমুল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি মু’মিন/ বিশ্বাসী। তারাই এমন লোক শীঘ্রই আমরা যাদেরকে দেবো মহাপুরস্কার।

৪:১৬৩
ইন্না আওহায়না = নিশ্চয় আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। কামা = যেমন। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা নূহিন = নূহের প্রতি। ওয়ান্নাবিয়্যীনা মিম বা’দিহী = আর তার পরের নবীগণের প্রতি। ওয়া = আর। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলা ইবরাহীমা = ইবরাহীমের প্রতি। ওয়া ইসমাইলা = আর ইসমাইলের প্রতি। ওয়া ইসহাকা = আর ইসহাকের প্রতি। ওয়া ইয়া’কূবা = আর ইয়াকুবের প্রতি। ওয়াল আছবাতা = আর তার বংশধারাসমূহের প্রতি। ওয়া = আর ঈসার প্রতি। ওয়া আইয়ুবা = আর আইয়ুবের প্রতি। ওয়া ইউনূসা = আর ইউনূসের প্রতি। ওয়া হারূনা = আর হারূনের প্রতি। ওয়া সুলাইমানা = আর সুলাইমানের প্রতি। ওয়া = আর। আতাইনা = আমরা দিয়েছি। দাঊদা = দাঊদকে। যাবূরা = যাবূর।

নিশ্চয় আমরা ওহী করেছি তোমার প্রতি যেমন আমরা ওহী করেছি নূহের প্রতি আর তার পরের নবীগণের প্রতি আর আমরা ওহী করেছি ইবরাহীমের প্রতি আর ইসমাইলের প্রতি আর ইসহাকের প্রতি আর ইয়াকুবের প্রতি আর তার বংশধারাসমূহের প্রতি আর ঈসার প্রতি আর আইয়ুবের প্রতি আর ইউনূসের প্রতি আর হারূনের প্রতি আর সুলাইমানের প্রতি। আর আমরা দিয়েছি দাঊদকে যাবূর।

৪:১৬৪
ওয়া = আর। রুসুলান = সেই রসূলগণকে। ক্বাদ = নিশ্চয়। কাসাসনাহুম = আমরা যাদের কাসাস/ কিসসা কাহিনী বর্ণনা করেছি। আলাইকা = তোমার কাছে। মিন ক্বাবলু = ইতোপূর্বে। ওয়া = আর। রুসুলান = সেই রসূলগণকে। লাম নাক্বসুসহুম = আমরা যাদের কাসাস/ কিসসা কাহিনী বর্ণনা করিনি। আলাইকা = তোমার কাছে। ওয়া = আর। কাল্লামাহু মূসা = আল্লাহ কথা বলেছেন মূসার সাথে। তাকলীমা = সরাসরি কথা।

আর সেই রসূলগণকে নিশ্চয় আমরা যাদের কাসাস/ কিসসা কাহিনী বর্ণনা করেছি তোমার কাছে ইতোপূর্বে আর সেই রসূলগণকে আমরা যাদের কাসাস/ কিসসা কাহিনী বর্ণনা করিনি তোমার কাছে। আর আল্লাহ কথা বলেছেন মূসার সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) সরাসরি কথা।

৪:১৬৫
রুসুলাম মুবাশিরীনা = রসূলগণ হচ্ছেন সুসংবাদদানকারী। ওয়া মুনযিরীনা = আর ভয়প্রদর্শনকারী। লিআল্লা ইয়াকূনা লিন্নাছি = যেন না থাকে মানুষের জন্য। আলাল্লাহি হুজ্জাতুন = আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ। বা’দার রুসুলি = রসূলগণের আগমনের পর। ওয়া কানাল্লাহু আযীযান হাকীমা = আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

রসূলগণ হচ্ছেন সুসংবাদদানকারী আর ভয়প্রদর্শনকারী যেন না থাকে মানুষের জন্য আল্লাহর ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ, রসূলগণের আগমনের পর। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১৬৬
লাকিনিল্লাহু = কিন্তু আল্লাহ। ইয়াশহাদু বিমা আনযালা = সাক্ষ্য দিচ্ছেন ঐ বিষয়ের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন। ইলাইকা = তোমার কাছে। আনযালাহু = তা তিনি নাযিল করেছেন। বিইলমিহি = তাঁর জ্ঞানের ভিত্তিতে। ওয়াল মালাইকাতু ইয়াশহাদূন = আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণও সাক্ষ্য দিচ্ছে। ওয়া = আর। কাফা বিল্লাহি সাহীদা = আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।

(যে যা-ই বলুক) কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন ঐ বিষয়ের প্রতি যা তিনি নাযিল করেছেন তোমার কাছে, তা তিনি নাযিল করেছেন তাঁর জ্ঞানের ভিত্তিতে। আর মালাইকা/ ফেরেশতাগণও সাক্ষ্য দিচ্ছে। আর আল্লাহর সাক্ষ্যই যথেষ্ট।

৪:১৬৭
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = আর। সদ্দূ = বাধা দিয়েছে। আন সাবীলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। ক্বাদ = নিশ্চয়। দল্লূ = তারা বিভ্রান্ত হয়েছে। দলালাম বায়ীদা = বহুদূর বিভ্রান্তিতে।

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে আর বাধা দিয়েছে সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে নিশ্চয় তারা বিভ্রান্ত হয়েছে বহুদূর বিভ্রান্তিতে।

৪:১৬৮
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = আর। যলামূ = যুলুম করেছে। লাম ইয়াকুনিল্লাহু লিইয়াগফিরা লাহুম = আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন না। ওয়া = আর। লা লিইয়াহদিয়াহুম তরীক্বান = তাদেরকে হিদায়াত করবেন না কোন তরিকা/ পথ।

নিশ্চয় যারা কুফর করেছে আর যুলুম করেছে আল্লাহ তাদেরকে মাফ করবেন না। আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন না কোন তরিকা/ পথ।

৪:১৬৯
ইল্লা তরীকা জাহান্নামা = জাহান্নামের তরিকা ছাড়া। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। আবাদান = চিরকাল। ওয়া কানা যালিকা আলাল্লাহি ইয়াছীরা = আর উহা আল্লাহর জন্য সহজ।

জাহান্নামের তরিকা ছাড়া। তারা তাতে স্থায়ী হবে চিরকাল। আর উহা আল্লাহর জন্য সহজ।

৪:১৭০
ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে মানুষ। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুমুর রসূলু = তোমাদের কাছে এসেছে রসূল। বিল হাক্কি = সত্যসহকারে। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। ফাআমিনূ = সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। খায়রাল্লাকুম = উহাই তোমাদের জন্য খায়ের/ কল্যাণকর। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাকফুরূ = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করো। ফাইন্না = তবে নিশ্চয়। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়াল আরদি = আর জমিনে। ওয়া কানাল্লাহু আলীমান হাকীমান = আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে রসূল সত্যসহকারে যা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো, উহাই তোমাদের জন্য খায়ের/ কল্যাণকর। আর যদি তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করো, তবে নিশ্চয় আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর জমিনে। আর আল্লাহ আলীম/ মহাজ্ঞানী, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪:১৭১
ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লা তাগলূ = তোমরা বাড়াবাড়ি করো না। ফী দীনিকুম = তোমাদের দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে। ওয়া = আর। লা তাক্বূলূ = তোমরা বলো না। আলাল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে। ইল্লাল হাক্ব = সত্য ছাড়া। ইন্নামাল মাছীহু ঈসাবনু মারইয়ামা = নিশ্চয় মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম হচ্ছে। রসূলুল্লাহি = রসূলুল্লাহ/ আল্লাহর রসূল। ওয়া = আর। কালিমাতুহু = তাঁর একটি কালিমা/ বাণী। আলক্বাহা = তিনি তা প্রেরণ করেছেন। ইলা মারইয়ামা = মারইয়ামের প্রতি। ওয়া = আর। রুহুম মিনহু = তাঁর পক্ষ থেকে একটি রুহ (৩২:৭-০৯)। ফাআমিনূ = সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। রুসুলিহী = তাঁর রসূলগণের প্রতি। ওয়া = আর। লা তাক্বূলূ = তোমরা বলো না। ছালাছাতুন = তিন ইলাহ। ইনতাহূ = তোমরা বিরত হও। খায়রাল্লাকুম = বিরত হওয়াই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। ইন্নামাল্লাহু = নিশ্চয় আল্লাহ। ইলাহুন ওয়াহিদাতুন = একক ইলাহ। ছুবহানাহু = তিনি পবিত্র। আইঁ ইয়াকূনা লাহু ওয়ালাদুন = এ থেকে যে, তাঁর সন্তান হতে পারে {= আল্লাহর সন্তান থাকার যে শিরক তিনি তা থেকে পবিত্র}। লাহু = তাঁরই অধিকারভুক্ত। মা = যা আছে। ফিস সামাওয়াতি = আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ফিল আরদি = জমিনে। ওয়া কাফা বিল্লাহি ওয়াকীলা = আর আল্লাহই যথেষ্ট ওয়াকীল/ কার্যনির্বাহক হিসাবে।

হে আহলে কিতাব, তোমরা বাড়াবাড়ি করো না তোমাদের দ্বীনের/ জীবনব্যবস্থার ব্যাপারে। আর তোমরা বলো না আল্লাহর ব্যাপারে সত্য ছাড়া। নিশ্চয় মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম হচ্ছে রসূলুল্লাহ/ আল্লাহর রসূল আর তাঁর একটি কালিমা/ বাণী, তিনি তা প্রেরণ করেছেন মারইয়ামের প্রতি; আর তাঁর পক্ষ থেকে একটি রুহ (৩২:৭-০৯)। সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি আর তাঁর রসূলগণের প্রতি। আর তোমরা বলো না ‘তিন ইলাহ’ (০৫: ১১৬-১১৭)। তোমরা বিরত হও। বিরত হওয়াই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। নিশ্চয় আল্লাহ একক ইলাহ। তিনি পবিত্র এ থেকে যে, তাঁর সন্তান হতে পারে {= আল্লাহর সন্তান থাকার যে শিরক তা থেকে তিনি পবিত্র}। তাঁরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে। আর আল্লাহই যথেষ্ট ওয়াকীল/ কার্যনির্বাহক হিসাবে।

৪:১৭২
লাইঁ ইয়াছতানকিফাল মাসীহু = মাসীহ লজ্জা পায়নি। আইঁ ইয়াকূনা আবদাল লিল্লাহি = আল্লাহর বান্দা হওয়াতে। ওয়া = আর। লাল মালায়িকাতুল মুক্বাররাবূন = নৈকট্যবর্তী ফেরেশতাগণও (তাঁর বান্দা হওয়াতে লজ্জা পান) না। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াছতানকিফ = যে লজ্জা পায়। আন ইবাদাতিহী = তাঁর ইবাদাত/ দাসত্ব করতে। ওয়া = আর। ইয়াছতাকবির = অহংকার করে। ফাছাইয়াহশুরুহুম = তার জানা উচিত যে, তিনি তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবেন। ইলাইহি = তাঁর নিজের দিকে। জামীআ = সম্মিলিতভাবে।

মসীহ লজ্জা পায়নি আল্লাহর বান্দা হওয়াতে। আর নৈকট্যবর্তী ফেরেশতাগণও (তাঁর বান্দা হওয়াতে লজ্জা পান) না। আর যে লজ্জা পায় তাঁর ইবাদাত/ দাসত্ব করতে আর অহংকার করে; তার জানা উচিত যে, তিনি তাদেরকে হাশর/ সমবেত করবেন তাঁর নিজের দিকে সম্মিলিতভাবে।

৪:১৭৩
ফাআম্মাল্লাযীনা = তখন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। ফাইউওয়াফফীহিম = তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ করে দেবেন। উজূরাহুম = তাদের পুরস্কার। ওয়া = আর। ইয়াযীদুহুম = তাদেরকে বাড়িয়ে দেবেন। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ। ওয়া আম্মাল্লাযীনাছতানকাফূ = আর যারা আল্লাহর ইবাদাত করতে লজ্জা পেয়েছে। ওয়াছতাকবারূ = আর অহংকার করেছে। ফাইউআযযিবুহুম = তখন তিনি তাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। আযাবান আলীমা = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। ওয়া = আর। লা ইয়াযিদূনা = তারা পাবে না। লাহুম = তাদের জন্য। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে ছাড়া। ওয়ালিয়্যাওঁ ওয়া লা নাসীরান = ওয়ালী/ অভিভাবক আর নাসীর/ সাহায্যকারীও নয়।

তখন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে তিনি তাদেরকে পরিপূর্ণ করে দেবেন তাদের পুরস্কার আর তাদেরকে বাড়িয়ে দেবেন তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ। আর যারা আল্লাহর ইবাদাত করতে লজ্জা পেয়েছে আর অহংকার করেছে, তখন তিনি তাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন, আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। আর তারা পাবে না তাদের জন্য আল্লাহকে ছাড়া ওয়ালী/ অভিভাবক আর নাসীর/ সাহায্যকারীও নয়।

৪:১৭৪
ইয়া আইয়ুহান্নাছু = হে মানুষ। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। বুরহানুম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বুরহান/ দলীল প্রমাণ। ওয়া = আর। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। ইলাইকুম = (রসূলের মাধ্যমে) তোমাদের প্রতি। নূরাম মুবীনা = সুস্পষ্ট আলো।

হে মানুষ, নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বুরহান/ দলীল প্রমাণ। আর আমরা নাযিল করেছি (রসূলের মাধ্যমে) তোমাদের প্রতি সুস্পষ্ট আলো।

৪:১৭৫
ফাআম্মাল্লাযীনা = তারপর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া’তাসামূ বিহী = আর (কুরআনকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে) তাঁকে (= আল্লাহকে) আঁকড়ে ধরেছে। ফাছাইউদখিলুহুম = শীঘ্রই তিনি তাদেরকে দাখিল করবেন। ফী রাহমাতিম মিনহু ওয়া ফাদলিন = তাঁর পক্ষ থেকে রহমতের ও অনুগ্রহের মধ্যে। ওয়া = আর। ইয়াহদীহিম = তাদেরকে হিদায়াত করবেন। ইলাইহি সীরাতাম মুসতাকীম = তাঁর দিকে তথা সীরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে।

তারপর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি আর (কুরআনকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে) তাঁকে (= আল্লাহকে) আঁকড়ে ধরেছে, শীঘ্রই তিনি তাদেরকে দাখিল করবেন তাঁর পক্ষ থেকে রহমতের ও অনুগ্রহের মধ্যে। আর তাদেরকে হিদায়াত করবেন তাঁর দিকে তথা সীরাতুল মুসতাকীমে/ সরল সঠিক পথে।

৪:১৭৬
ইয়াছতাফতূনাকা = তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায়। ক্বুলিল্লাহু = বলো, আল্লাহ। ইউফতীকুম = তোমাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছেন। ফিল কালালাতি = আল কালালাহের ব্যাপারে {= যার সন্তান তথা পুত্র কন্যা জীবিত নেই এমন ব্যক্তির ব্যাপারে}। ইনিমরুউন = যদি কোন পুরুষ। হালাকা = হালাক হয়/ মৃত্যুবরণ করে। লাইছা লাহু ওয়ালাদুন = যার কোন সন্তান (= পুত্র বা কন্যা) নাই। ওয়া লাহু = আর তার থাকে। উখতুন = একটি বোন। ফালাহা নিসফু মা তারাকা = তাহলে তার জন্য (= ঐ বোনটির জন্য) তার মৃত্যুর সময় ছেড়ে যাওয়া সম্পদ থেকে অর্ধেক। ওয়া হুয়া ইয়ারিছুহা = আর (অন্যদিকে) সে (= কোন ভাই) তার (= তার বোনের) উত্তরাধিকারী হবে। ইল্লাম ইয়াকুল্লাহা ওয়ালাদুন = যদি তার (= মৃত বোনটির) কোন সন্তান (= পুত্র বা কন্যা) না থাকে। ফাইন = তারপর যদি। কানাতাছনাতাইনি = তারা (= মৃত ব্যক্তির বোনেরা) দুইজন হয়। ফালাহুমাছ ছুলুছানি = তাহলে তাদের দুজনের জন্য (একত্রে) তিনভাগের দুইভাগ। মিম্মা তারাকা = তা থেকে যা মৃতব্যক্তি ছেড়ে গিয়েছে। ওয়া = আর। ইন কানূ = যদি তারা (= ওয়ারিসগণ) হয়। ইখওয়াতার রিজালাওঁ ওয়া নিসাআন = পারস্পরিক সম্পর্কে ভাই ও বোন উভয় থেকে। ফালিযযাকারি = তাহলে এক পুরুষের (= ভাইয়ের) জন্য। মিছলু হাযযিল উনছাইয়ায়নি = দুই নারীর (= বোনের) আনুপাতিক অংশের সমান। ইউবাইয়িনুল্লাহু লাকুম = আল্লাহ তোমাদের জন্য (তাঁর হুকুম) বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। আন = যেন না। তাদিল্লূ = তোমরা বিভ্রান্ত হও। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিকুল্লি সাইয়িন = সর্ববিষয়ে। আলীম = আলিম/ জ্ঞানী।

তারা তোমার কাছে ফতোয়া জানতে চায়, বলো, আল্লাহ তোমাদেরকে ফতোয়া জানাচ্ছেন, আল কালালাহর বিষয়ে। যদি কোন পুরুষ (male human) হালাক হয়/ মৃত্যুবরণ করে যার ওয়ালাদ নেই, আর তার একজন বোন থাকে, তাহলে তার জন্য ১/২, যা সে তরক করেছে/ ছেড়ে গিয়েছে উহার। আর সে তার ওয়ারিস হবে, যদি তার ওয়ালাদ না থাকে। তারপর যদি তারা হয় দুইজন, তাহলে তাদের দুইজনের জন্য ২/৩, যা সে তরক করেছে/ ছেড়ে গিয়েছে উহা থেকে। আর যদি তারা হয় ইখওয়াত/ ভাইবোন, পুরুষগণ (men/ male human) ও নারীগণ (women/ female human), তাহলে এক পুরুষের (male) জন্য দুই নারীর (female) অংশের মতো। আল্লাহ বয়ান/ স্পষ্টভাবে বিশদ বর্ণনা করছেন তোমাদের জন্য, পাছে তোমরা বিভ্রান্ত হবে। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে আলীম/ জ্ঞানী।