৩:১
আলিফ লাম মীম = আলিফ লাম মীম।
আলিফ লাম মীম।
৩:২
আল্লাহু = আল্লাহু। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি (= আল্লাহ) ছাড়া। আল হাইয়ুল কাইয়ুম = তিনি আল হাইয়ু/ চিরজীবন্ত, আল কাইয়ুম/ চিরপ্রতিষ্ঠিত।
আল্লাহু, কোন ইলাহ নেই, তিনি (= আল্লাহ) ছাড়া। তিনি আল হাইয়ু/ চিরজীবন্ত, আল কাইয়ুম/ চিরপ্রতিষ্ঠিত।
৩:৩
নাযযালা = তিনি নাযিল করেছেন। আলাইকাল কিতাবা = তোমার উপর কিতাব। বিল হাক্কি = সঠিক তথ্যসহ। মুসাদ্দিকাল্লিমা বায়না ইদায়হি = যা উহার সামনে থাকা সত্যের মুসাদ্দিক/ সত্যায়নকারী। ওয়া = আর। আনযালাত তাওরাতা = তিনি নাযিল করেছেন তাওরাত। ওয়াল ইনজীলা = আর ইনজীল।
তিনি নাযিল করেছেন তোমার উপর কিতাব সঠিক তথ্যসহ, যা উহার সামনে থাকা সত্যের মুসাদ্দিক/ সত্যায়নকারী। আর তিনি নাযিল করেছেন তাওরাত আর ইনজীল।
৩:৪
মিন ক্বাবলূ = এর আগে। হুদাল্লিন্নাছ = মানবজাতির জন্য হুদা/ হিদায়াতস্বরূপ। ওয়া আনযালাল ফুরকানা = আর (এসব কিতাবের মাধ্যমে) নাযিল করেছেন ফুরকান/ সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বিআয়াতিল্লাহি = আয়াতিল্লাহ/ আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন শাদীদ = আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আযীযুন যুনতিক্বাম = আযীয/ মহাশক্তিমান, যুনতিক্বাম/ কঠোর দন্ডদাতা।
এর আগে মানবজাতির জন্য হুদা/ হিদায়াতস্বরূপ। আর (এসব কিতাবের মাধ্যমে) নাযিল করেছেন ফুরকান/ সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী। নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আয়াতিল্লাহ/ আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি, তাদের জন্য আছে আযাবুন শাদীদ/ কঠিন শাস্তি। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, যুনতিক্বাম/ কঠোর দন্ডদাতা।
৩:৫
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ এমন সত্তা। লা = না। ইয়াখফা = গোপন থাকে। আলাইহি = তাঁর কাছে। সাইয়ুন = কোন কিছু। ফিল আরদি = জমিনের। ওয়া = আর। লা = না। ফিছ ছামায়ি = আসমানের।
নিশ্চয় আল্লাহ (এমন সত্তা), না গোপন থাকে তাঁর কাছে কোন কিছু জমিনের আর না আসমানের।
৩:৬
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইউছাওয়িরুকুম = তোমাদেরকে আকৃতি দেন। ফিল আরহামি = আরহামে/ মাতৃগর্ভসমূহে। কাইফা ইয়াশাউ = যেরূপ (আকৃতি দেয়ার) তিনি ইচ্ছা করেন। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। আল আযীযুল হাকীম = তিনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে আকৃতি দেন আরহামে/ মাতৃগর্ভসমূহে যেরূপ (আকৃতি দেয়ার) তিনি ইচ্ছা করেন। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
৩:৭
হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। আনযালা = নাযিল করেছেন। আলাইকাল কিতাবা = তোমার উপর আল কিতাব। মিনহু আয়াতুম মুহকামাত = তার মধ্য থেকে কিছু আয়াত আছে মুহকামাত/ সিদ্ধান্তপূর্ণ/ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বক্তব্য সম্বলিত। ওয়া = আর। উখারু = অন্যগুলো। মুতাশাবিহাত = মুতাশাবিহাত/ সাদৃশাত্মক/ অনাক্ষরিক/ অতীন্দ্রীয় বক্তব্য সম্বলিত। [দ্র: মুহকামাত শব্দের দুটি অর্থ হয় (ক) একার্থবোধক বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বক্তব্য (খ) বাস্তবায়নপদ্ধতির ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে মূল হুকুমবিশিষ্ট বক্তব্য। মুতাশাবিহাত শব্দেরও দুটি অর্থ হয় (ক) দ্ব্যর্থবোধক বা অতীন্দ্রীয় বক্তব্য অথবা দৃষ্টিবিভ্রম ও শ্রুতিবিভ্রমমূলক বিষয় (খ) একটি বক্তব্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি বক্তব্য বা একটি বিষয়ের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি বিষয়। কুরআনে এই সকল অর্থে এ শব্দ দুটির ব্যবহার হয়েছে। তবে কোন আয়াতে কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আয়াতের পূর্বাপর বক্তব্য থেকে সহজেই বুঝা যায়]। হুন্না উম্মুল কিতাব = উহা উম্মুল কিতাব/ কিতাবের মূল বা কেন্দ্রীয় বক্তব্য। ফাআম্মাল্লাযীনা ফী ক্বুলূবিহিম জায়গুন = সুতরাং যাদের কলবে আছে বক্রতা। ফাইয়াত্তাবাউনা = তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। মা তাশাবাহা মিনহু = তা থেকে যা সাদৃশাত্মকতা সম্পন্ন হয় (মুতাশাবিহাত আয়াতগুলোর)। ইবতিগাআল ফিতনাতা = ফিতনা/ নীতিগত অস্থিতিশীলতা/ দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টির অন্বেষণে। ওয়াবতিগাআ তা’বীলীহী = আর (মুহকামাতের বিবেচনা বাদ দিয়ে) উহার তা’বীল/ পরম পরিণতিরূপ স্বরূপ/ নিগূঢ় অর্থের অন্বেষণে। ওয়া = অথচ। মা ইয়া’লামু তা’বীলাহু = উহার তা’বীল/ পরম পরিণতিরূপ স্বরূপ/ নিগূঢ় অর্থ জানে না। ইল্লাল্লাহু = আল্লাহ ছাড়া কেউ। ওয়ার রাছিখূনা ফিল ইলমি = আর রাছিখূনা ফিল ইলম (= যারা মুহকামাত আয়াতের জ্ঞানে সুগভীর তারা)। ইয়াক্বুলূনা = (তারা) বলে। আমান্না বিহি = আমরা উহার প্রতি ঈমান/ যুক্তিযুক্ত কারণে বিশ্বাস রাখি। কুল্লু = প্রত্যেকটি (উভয় প্রকার আয়াতই)। মিন ইনদি রব্বিনা = আমাদের রবের পক্ষ থেকে এসেছে। ওয়া = আর। মা ইয়াযযাক্কারু = তাযাক্কুর (যথাযথ অনুধাবনসহ পুন:পুন: স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ) করে না। ইল্লা উলুল আলবাব = উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ ছাড়া অন্যরা।
তিনিই সেই সত্তা যিনি নাযিল করেছেন তোমার উপর আল কিতাব। তার মধ্য থেকে কিছু আয়াত আছে মুহকামাত/ সিদ্ধান্তপূর্ণ/ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বক্তব্য সম্বলিত। উহা উম্মুল কিতাব/ কিতাবের মূল/ কেন্দ্রীয় বক্তব্য। আর অন্যগুলো মুতাশাবিহাত/ সাদৃশাত্মক/ অনাক্ষরিক/ অতীন্দ্রীয় বক্তব্য সম্বলিত। সুতরাং যাদের কলবে আছে বক্রতা, তারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তা থেকে যা সাদৃশাত্মকতা সম্পন্ন হয় (মুতাশাবিহাত আয়াতগুলোর), ফিতনা/ নীতিগত অস্থিতিশীলতা/ দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টির অন্বেষণে আর (মুহকামাতের বিবেচনা বাদ দিয়ে) উহার তা’বীল/ পরম পরিণতিরূপ স্বরূপ/ নিগূঢ় অর্থের অন্বেষণে। অথচ উহার তা’বীল/ পরম পরিণতিরূপ স্বরূপ/ নিগূঢ় অর্থ জানে না আল্লাহ ছাড়া কেউ। আর রাছিখূনা ফিল ইলম (= যারা মুহকামাত আয়াতের জ্ঞানে সুগভীর তারা) বলে, ‘আমরা উহার প্রতি ঈমান/ যুক্তিযুক্ত কারণে বিশ্বাস রাখি। প্রত্যেকটি (উভয় প্রকার আয়াতই) আমাদের রবের পক্ষ থেকে এসেছে’। আর তাযাক্কুর (যথাযথ অনুধাবনসহ পুন:পুন: স্মরণীয় উপদেশ গ্রহণ) করে না উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ ছাড়া অন্যরা।
৩:৮
রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক। লা তুযিগ কুলুবুনা = আমাদের কলবসমূহকে বাঁকা করবেন না। বা’দা ইয হাদাইনা = যখন আপনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন তারপর। ওয়া = আর। হাবলানা = আমাদেরকে দান করুন। মিল্লাদুনকা = আপনার পক্ষ থেকে। রহমাতান = রহমাত/ দয়া। ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব = নিশ্চয় আপনি ওয়াহহাব/ মহাদাতা।
আমাদের রব/ প্রতিপালক, আমাদের কলবসমূহকে বাঁকা করবেন না যখন আপনি আমাদেরকে হিদায়াত করেছেন তারপর। আর আমাদেরকে দান করুন আপনার পক্ষ থেকে রহমাত/ দয়া। নিশ্চয় আপনি ওয়াহহাব/ মহাদাতা।
৩:৯
রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। জামিউন নাছি = মানবজাতিকে জমায়েতকারী। লিইয়াওমি = সেইদিন। লা রাইবা ফীহি = যেদিনের বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইখলিফুল মিয়াদ = মিয়াদ/ ওয়াদা খেলাফ করেন না।
আমাদের রব/ প্রতিপালক, নিশ্চয় আপনি মানবজাতিকে জমায়েতকারী সেইদিন যেদিনের বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ মিয়াদ/ ওয়াদা খেলাফ করেন না।
৩:১০
ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ = নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। লান তুগনিয়া আনহুম = না তাদেরকে উপকার দেবে। আমওয়ালুহুম = তাদের মালসমূহ। ওয়া লা আওলাদুহুম = আর না তাদের আওলাদ/ সন্তান সন্ততি। মিনাল্লাহি = আল্লাহর (শাস্তি) থেকে (বাঁচাতে)। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। উলায়িকা হুম = তারা। ওয়াক্বুদুন নার = (জাহান্নামের) আগুনের জ্বালানী।
নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে না তাদেরকে উপকার দেবে তাদের মালসমূহ আর না তাদের আওলাদ/ সন্তান সন্ততি, আল্লাহর (শাস্তি) থেকে (বাঁচাতে), কিছুমাত্রও। আর তারা (জাহান্নামের) আগুনের জ্বালানী।
৩:১১
কাদা’বি আলি ফিরআওনা = যেমন পরিণতি হয়েছে আলে ফিরআওনের (= ফিরাওনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীগণের)। ওয়াল্লাযীনা মিন ক্বাবলিহিম = আর তাদের আগের লোকদের। কাযযাবূ বিআয়াতিনা = তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। ফাআখাযা হুমুল্লাহু = তাই আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। বিযুনূবিহিম = তাদের পাপের কারণে। ওয়াল্লাহু শাদীদুল ইক্বাব = আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
যেমন পরিণতি হয়েছে আলে ফিরআওনের (= ফিরাওনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীগণের) আর তাদের আগের লোকদের। তারা আমাদের আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে। তাই আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন তাদের পাপের কারণে। আর আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
৩:১২
ক্বূল = বলো। লিল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের উদ্দেশ্যে। ছাতুগলাবূনা = শীঘ্রই তোমরা পরাজিত হবে। ওয়া = আর। তুহশারুনা ইলা জাহান্নামা = তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে জাহান্নামের দিকে। ওয়া = আর। বি’ছাল মিহাদ = তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট আশ্রম/ আবাস।
বলো যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের উদ্দেশ্যে, ‘শীঘ্রই তোমরা পরাজিত হবে আর তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে জাহান্নামের দিকে। আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট আশ্রম/ আবাস’।
৩:১৩
ক্বাদ কানা লাকুম আয়াতুন = নিশ্চয় তোমাদের জন্য আয়াত (= ঘটনাসম্পর্কিত আয়াত) আছে। ফী ফিআতাইনিল তাক্বাতা = দুটি দলের মধ্যে যারা পরস্পর মুখোমুখি হয়েছে। ফিআতুন তুক্বাতিল ফী সাবিলিল্লাহ = এক দল ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। ওয়া উখরা কাফিরাতুন = আর অন্যটি ছিলো কাফির। ইয়ারাওনাহুম মিছলাইহিম = (যুদ্ধের সময়) তারা (= মু’মিনগণ) তাদেরকে (= কাফিরদেরকে) দেখেছে তাদের (= মু’মিনদের) দ্বিগুণ। র’ইয়াল আইনি = চোখের দেখায়। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউআইয়িদু = শক্তিশালী করেন। বিনাসরিহী = তাঁর সাহায্য দ্বারা। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (শক্তিশালী করার) ইচ্ছা করেন। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লা ইবরাতুন = শিক্ষা। লি উলিল আবসার = উলিল আবসারের/ পর্যবেক্ষণকারী বিজ্ঞানীদের জন্য।
নিশ্চয় তোমাদের জন্য আয়াত (= ঘটনাসম্পর্কিত আয়াত) আছে দুটি দলের মধ্যে যারা পরস্পর মুখোমুখি হয়েছে। এক দল ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে আর অন্যটি ছিলো কাফির। (যুদ্ধের সময়) তারা (= মু’মিনগণ) তাদেরকে (= কাফিরদেরকে) দেখেছে তাদের (= মু’মিনদের) দ্বিগুণ, চোখের দেখায়। আর আল্লাহ শক্তিশালী করেন তাঁর সাহায্য দ্বারা যাকে তিনি (শক্তিশালী করার) ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় উহাতে আছে শিক্ষা উলিল আবসারের/ পর্যবেক্ষণকারী বিজ্ঞানীদের জন্য।
৩:১৪
যুইয়িনা = সুশোভিত করা হয়েছে। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। হুব্বিশ শাহাওয়াতি = প্রবৃত্তির ভালবাসা- । মিনান্নিছায়ি = নারী। ওয়াল বানীনা = সন্তানসন্ততি। ওয়াল ক্বানাতীরিল মুক্বানতরাতি মিনায যাহাবি ওয়াল ফিদ্দাতি = রাশি রাশি সোনা রুপা। ওয়াল খায়লিল মুছাওওয়ামাতি = চিহ্নিত ঘোড়া। ওয়াল আনআমি = গবাদিপশু। ওয়াল হারছি = শস্যক্ষেত। যালিকা = এগুলো। মাতাউল হায়াতিদ দুনিয়া = হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইনদাহু = তাঁরই কাছে আছে। হুছনুল মাআব = উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
সুশোভিত করা হয়েছে মানুষের জন্য প্রবৃত্তির ভালবাসা- নারী, সন্তানসন্ততি, রাশি রাশি সোনা রুপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদিপশু, শস্যক্ষেত। এগুলো হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী। আর আল্লাহ, তাঁরই কাছে আছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।
৩:১৫
ক্বুল = বলো। আউনাব্বিউকুম = আমি কি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করবো? বিখাইরিম মিন যালিকুম = এগুলোর চেয়ে উত্তম বিষয়। লিল্লাযীনাত্তাক্বাও = যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে আছে। জান্নাতুন = জান্নাত। তাজরী = জারি/ প্রবাহিত হয়। মিন তাহতিহাল আনহার = তার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া আযওয়াজুম মুতাহহারাতুন = আর (আছে) আযওয়াযুম মুতাহহারাতুন/ পবিত্র জোড়া (স্বামী/ স্ত্রী)। ওয়া রিদওয়ানুম মিনাল্লাহ = আর আল্লাহর পক্ষ থেকে রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। ওয়াল্লাহু বাছীরুম বিল ইবাদ = আর আল্লাহ বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তাঁর দাসগণ সম্পর্কে।
বলো, ‘আমি কি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করবো এগুলোর চেয়ে উত্তম বিষয়? যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে আছে জান্নাত, জারি/ প্রবাহিত হয় তার নিচ অংশে নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর (আছে) আযওয়াযুম মুতাহহারাতুন/ পবিত্র জোড়া (স্বামী/ স্ত্রী)। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে রিদওয়ান/ সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তাঁর দাসগণ সম্পর্কে।
৩:১৬
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াক্বুলূনা = বলে। রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক। ইন্নানা = নিশ্চয় আমরা। আমান্না = ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ফাগফিরলানা = সুতরাং আমাদের জন্য মাগফিরাত/ মাফ করো। যুনুবানা = আমাদের অপরাধসমূহ। ওয়াক্বিনা = আর আমাদেরকে বাঁচাও। আযাবান নার = (জাহান্নামের) আগুনের আযাব/ শাস্তি থেকে।
যারা বলে, ‘আমাদের রব/ প্রতিপালক, নিশ্চয় আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি, সুতরাং আমাদের জন্য মাগফিরাত/ মাফ করো আমাদের অপরাধসমূহ। আর আমাদেরকে বাঁচাও (জাহান্নামের) আগুনের আযাব/ শাস্তি থেকে’।
৩:১৭
আস সাবিরীনা = তারা সাবিরীন/ সবরকারী। ওয়াস সাদিকীনা = আর সাদিকীন/ সত্যবাদী। ওয়াল ক্বানিতীনা = আর ক্বানিতীন/ বিনয়ী। ওয়াল মুনফিক্বীন = আর মুনফিক্বীন/ (আল্লাহর পথে) ব্যয়কারী। ওয়াল মুছতাগফিরীনা বিল আছহার = আর রাতের শেষ সাহারসমূহে মুছতাগফিরীন/ ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।
তারা সাবিরীন/ সবরকারী আর সাদিকীন/ সত্যবাদী আর ক্বানিতীন/ বিনয়ী আর মুনফিক্বীন/ (আল্লাহর পথে) ব্যয়কারী আর রাতের শেষ সাহারসমূহে মুছতাগফিরীন/ ক্ষমাপ্রার্থনাকারী।
৩:১৮
সাহিদাল্লাহু = সাহাদাত/ সাক্ষ্য দিচ্ছেন আল্লাহ। আন্নাহু = নিশ্চয় তিনি (এমন যে)। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। ওয়াল মালাইকাতু = আর (সাক্ষ্য দিচ্ছে) মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। ওয়া = আর (সাক্ষ্য দিচ্ছে)। উলুল ইলমি = সেই উলুল ইলম/ জ্ঞানীগণ। ক্বায়িমাম বিল ক্বিছতি = যারা ন্যায়নীতিতে কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত থাকে। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। আল আযীযুল হাকীম = আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
সাহাদাত/ সাক্ষ্য দিচ্ছেন আল্লাহ, নিশ্চয় তিনি (এমন যে), কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। আর (সাক্ষ্য দিচ্ছে) মালাইকা/ ফেরেশতাগণ। আর (সাক্ষ্য দিচ্ছে) সেই উলুল ইলম/ জ্ঞানীগণ যারা ন্যায়নীতিতে কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত থাকে। কোন ইলাহ নেই, তিনি ছাড়া। তিনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
৩:১৯
ইন্নাদ্দিনা = নিশ্চয় দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা হিসাবে। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য। আল ইসলাম = একমাত্র ইসলাম। ওয়া = আর। মাখতালাফা = ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেনি। আল্লাযীনা উতুল কিতাবা = যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা। ইল্লা মিম বা’দী মা জাআহুমুল ইলমু = তাদের কাছে যে জ্ঞান এসেছে তা আসার পরে ছাড়া। বাগইয়াম বাইনাহুম = তাদের একে অন্যের প্রতি বিদ্রোহবশত। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াকফুর = যে কুফর/ অবিশ্বাস করবে। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। ছারীয়ুল হিসাব = হিসাবকরনে দ্রুততম।
নিশ্চয় দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা হিসাবে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য একমাত্র ইসলাম। আর ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেনি যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা তাদের কাছে যে জ্ঞান এসেছে তা আসার পরে ছাড়া। (তারা মতপার্থক্য করেছে শুধু) তাদের একে অন্যের প্রতি বিদ্রোহবশত। আর যে কুফর/ অবিশ্বাস করবে আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি, তবে নিশ্চয় আল্লাহ হিসাবকরনে দ্রুততম।
৩:২০
ফাইন = সুতরাং যদি। হাজ্জূকা = তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে। ফাক্বুল = তাহলে তুমি বলো। আছলামতু = আমি ইসলাম/ সমর্পণ করেছি। ওয়াজহিয়া = আমার সত্তাকে। লিল্লাহি = আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ওয়া = আর। মানিত্তাবায়ানী = যারা আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তারাও (আত্মসমর্পণ করেছে/ মুসলিম হয়েছে)। ওয়া = আর। ক্বুল লিল্লাযীনা উতুল কিতাবা ওয়াল উম্মীয়্যীনা = বলো যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে ও উম্মীদেরকে (= যাদের আসমানী কিতাবের জ্ঞান নেই তাদেরকে)। আআছলামতুম = তোমরা কি ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছো? (= মুসলিম হয়েছো?)। ফাইন আছলামূ = তারপর যদি তারা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করে (= মুসলিম হয়)। ফাক্বাদিহতাদাও = তাহলেই তারা হিদায়াত পাবে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাইন্নামা = তাহলে মূলত:। আলাইকাল বালাগ = বালাগ/ যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়াই তোমার দায়িত্ব। ওয়াল্লাহু বাছীরুম বিল ইবাদ = আর আল্লাহ বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তাঁর দাসগণ সম্পর্কে।
সুতরাং যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তাহলে তুমি বলো, ‘আমি ইসলাম/ সমর্পণ করেছি আমার সত্তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। আর যারা আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তারাও (আত্মসমর্পণ করেছে/ মুসলিম হয়েছে)’। আর বলো যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে ও উম্মীদেরকে (= যাদের আসমানী কিতাবের জ্ঞান নেই তাদেরকে), ‘তোমরা কি ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছো? (= মুসলিম হয়েছো?)’। তারপর যদি তারা ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করে (= মুসলিম হয়) তাহলেই তারা হিদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে মূলত: বালাগ/ যথাযথভাবে পৌঁছে দেয়াই তোমার দায়িত্ব। আর আল্লাহ বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তাঁর দাসগণ সম্পর্কে।
৩:২১
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইয়াকফুরুনা = কুফর/ অবিশ্বাস করে। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। ইয়াক্বতুলূনান্নাবিয়্যূনা = কতল/ হত্যা করে নবীদেরকে। বিগাইরি হাক্কি = অন্যায়ভাবে/ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে/ যার কোন অধিকারই তাদের নেই। ওয়া = আর। ইয়াক্বতুলূনা = কতল/ হত্যা করে। আল্লাযীনা = তাদেরকে যারা। ইয়া’মুরুনা = আদেশ দেয়। বিল ক্বিছতি = ন্যায়নীতির ভিত্তিতে। মিনান্নাছি = মানবজাতির মধ্য থেকে। ফাবাশশিরহুম = তাদেরকে সংবাদ দাও। বিআযাবিন আলীম = আযাবিন আলীমের/ কষ্টদায়ক শাস্তির।
নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করে আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি আর কতল/ হত্যা করে নবীদেরকে, অন্যায়ভাবে/ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে/ যার কোন অধিকারই তাদের নেই, আর কতল/ হত্যা করে তাদেরকে যারা আদেশ দেয় ন্যায়নীতির ভিত্তিতে মানবজাতির মধ্য থেকে; তাদেরকে সংবাদ দাও আযাবিন আলীমের/ কষ্টদায়ক শাস্তির।
৩:২২
উলায়িকাল্লাযীনা = তারাই ঐসব লোক। হাবিতাত আ’মালুহুম = যাদের আমলসমূহ/ কাজসমূহ নিষ্ফল হবে। ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাত = দুনিয়া ও আখিরাতে। ওয়া = আর। মা = নেই। লাহুম = তাদের জন্য। মিন নাছিরীন = কোন সাহায্যকারী।
তারাই ঐসব লোক যাদের আমলসমূহ/ কাজসমূহ নিষ্ফল হবে দুনিয়া ও আখিরাতে। আর নেই তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী।
৩:২৩
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যাদেরকে। উতূ নাসীবাম মিনাল কিতাবি = (কুরআনের সাপেক্ষে আসমানী) কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে। ইউদআউনা = তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করা হয়। ইলা কিতাবিল্লাহি = কিতাবুল্লাহ/ আল্লাহর কিতাবের প্রতি (= কুরআনের প্রতি)। লিআহকুমা বাইনাহুম = তাদের মধ্যে (= তাদের মতভেদের বিষয়ে) মীমাংসা করার জন্য। ছুম্মা = তারপর। ইয়াতাওয়াল্লা = মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফারীক্বুম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে এক ফেরকা/ দল। ওয়া = আর। হুম = তারা তো। মু’রিদূন = বিমুখ (হয়েই আছে)।
তুমি কি দেখনি তাদের অবস্থা যাদেরকে (কুরআনের সাপেক্ষে আসমানী) কিতাবের অংশবিশেষ দেয়া হয়েছে (অর্থাৎ ইহুদী খৃস্টানদেরকে)? তাদেরকে দাওয়াত/ আহবান করা হয় কিতাবুল্লাহ/ আল্লাহর কিতাবের প্রতি (= কুরআনের প্রতি) তাদের মধ্যে (= তাদের মতভেদের বিষয়ে) মীমাংসা করার জন্য। তারপর মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের মধ্য থেকে এক ফেরকা/ দল। আর তারা তো বিমুখ (হয়েই আছে)।
৩:২৪
যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এ জন্য যে তারা। ক্বালূ = তারা বলেছে। লান তামাছছানা = আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। আন নার = (জাহান্নামের) আগুন। ইল্লা আইয়ামাম মা’দুদাত = আইয়ামাম মা’দূদাত/ দুহাতের আঙ্গুলসংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ দিনসমূহ (তিন থেকে দশদিন) ছাড়া। ওয়া = আর। গাররা = ধোঁকা দিয়েছে। হুম = তাদেরকে। ফী দীনিহিম = তাদের দ্বীনের বিষয়ে। মা কানূ ইয়াফতারুন = তারা যা উদ্ভাবন/ তৈরি করেছে তা।
তারা বলেছে, ‘আমাদেরকে স্পর্শ করবে না (জাহান্নামের) আগুন আইয়ামাম মা’দূদাত/ দুহাতের আঙ্গুলসংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ দিনসমূহ (তিন থেকে দশদিন) ছাড়া’। আর ধোঁকা দিয়েছে তাদেরকে তাদের দ্বীনের বিষয়ে তারা যা উদ্ভাবন/ তৈরি করেছে তা।
৩:২৫
ফাকাইফা = তখন কেমন হবে? ইযা = যখন। জামআনাহুম = আমরা তাদেরকে জমায়েত করবো। লিইয়াওমিন = সেদিন। লা রইবা ফীহি = যেদিনের সম্মুখীন হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই। ওয়া = আর। উফফিয়াত = পূর্ণ করে দেয়া হবে। কুল্লু নাফসিন = সকল ব্যক্তিকে। মা কাছাবাত = যা সে উপার্জন করেছে তার প্রতিফল। ওয়া = আর। হুম = তাদেরকে। লা ইয়ুজলামুন = জুলুম করা হবে না।
তখন কেমন হবে যখন আমরা তাদেরকে জমায়েত করবো সেদিন যেদিনের সম্মুখীন হওয়া সম্পর্কে কোন সন্দেহ নেই আর পূর্ণ করে দেয়া হবে সকল ব্যক্তিকে যা সে উপার্জন করেছে তার প্রতিফল? আর তাদেরকে জুলুম করা হবে না।
৩:২৬
ক্বুলিল্লাহুম্মা = বলো, হে আল্লাহ। মালিকাল মুলকি = সমস্ত আধিপত্যের অধিপতি। তু’তিল মুলকা = আপনি আধিপত্য দান করেন। মান তাশাউ = যাকে আপনি (আধিপত্য দানের) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। তানযিউল মুলকা = আপনি আধিপত্য কেড়ে নেন। মিম্মান তাশাউ = যার থেকে আপনি (আধিপত্য কেড়ে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। তুয়িযযু = আপনি সম্মানিত করেন। মান তাশাউ = যাকে আপনি (সম্মানিত করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। তুযিললু = আপনি অপমানিত করেন। মান তাশাউ = যাকে আপনি (অপমানিত করার) ইচ্ছা করেন। বিইয়াদিকাল খায়ের = আপনার হাতেই সমস্ত কল্যাণ। ইন্নাকা আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আপনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
বলো, ‘হে আল্লাহ, সমস্ত আধিপত্যের অধিপতি। আপনি আধিপত্য দান করেন যাকে আপনি (আধিপত্য দানের) ইচ্ছা করেন। আর আপনি আধিপত্য কেড়ে নেন যার থেকে আপনি (আধিপত্য কেড়ে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি সম্মানিত করেন যাকে আপনি (সম্মানিত করার) ইচ্ছা করেন। আর আপনি অপমানিত করেন যাকে আপনি (অপমানিত করার) ইচ্ছা করেন। আপনার হাতেই সমস্ত কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
৩:২৭
তূলিযুল লাইলা = আপনি (কোন ঋতুতে) প্রবেশ করান রাতকে। ফিন নাহারি = দিনের মধ্যে (এভাবে দিনকে বর্ধিত করে দেন)। ওয়া = আর। তূলিযুন নাহারা = আপনি (কোন ঋতুতে) প্রবেশ করান দিনকে। ফিল লাইলি = রাতের মধ্যে (এভাবে রাতকে বর্ধিত করে দেন)। ওয়া = আর। তুখরিজুল হাইয়া = আপনি বের করেন জীবিতকে। মিনাল মাইয়িতি = মৃত থেকে। ওয়া = আর। তুখরিজুল মাইয়িতা = আপনি বের করেন মৃতকে। মিনাল হাইয়ি = জীবিত থেকে। ওয়া = আর। তারযুক্বু = আপনি রিযক দেন। মান তাশাউ = যাকে আপনি (রিযক দেয়ার) ইচ্ছা করেন। বিগাইরি হিসাব = হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ উপায়ে রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।
আপনি (কোন ঋতুতে) প্রবেশ করান রাতকে দিনের মধ্যে (এভাবে দিনকে বর্ধিত করে দেন)। আর আপনি (কোন ঋতুতে) প্রবেশ করান দিনকে রাতের মধ্যে (এভাবে রাতকে বর্ধিত করে দেন)। আর আপনি বের করেন জীবিতকে মৃত থেকে। আর আপনি বের করেন মৃতকে জীবিত থেকে। আর আপনি রিযক দেন যাকে আপনি (রিযক দেয়ার) ইচ্ছা করেন, হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যে উপায়ে রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।
৩:২৮
লা ইয়াত্তাখিজিল মু’মিনীনাল কাফিরীনা আওলিয়াআ = গ্রহণ করবে না মু’মিনগণ কাফিরগণকে আওলিয়া/ বন্ধুরূপে। মিন দূনিল মু’মিনীন = মু’মিনগণকে ছাড়া (অর্থাৎ মু’মিনগণ শুধু মু’মিনগণকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে)। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াফআলু যালিকা = যে উহা করে (অর্থাৎ কাফিরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে)। ফালাইছা মিনাল্লাহি ফী সাইয়িন = আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। ইল্লা = কিন্তু এ বিষয় ভিন্ন। আন = যে। তাত্তাকূ মিনহুম তুক্বাতান = তোমরা তাদের থেকে আত্মরক্ষা করলে। ওয়া = আর। ইউহাযযিরুকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে সাবধান করেছেন। নাফসাহু = তাঁর নফসের (= তাঁর নিজের) সম্পর্কে। ওয়া = আর। ইলাল্লাহিল মাসীর = আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
গ্রহণ করবে না মু’মিনগণ কাফিরগণকে আওলিয়া/ বন্ধুরূপে মু’মিনগণকে ছাড়া (অর্থাৎ মু’মিনগণ শুধু মু’মিনগণকেই বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে)। আর যে উহা করে (অর্থাৎ কাফিরগণকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে) আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ বিষয় ভিন্ন যে, তোমরা তাদের থেকে আত্মরক্ষা করলে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে সাবধান করেছেন তাঁর নফসের (= তাঁর নিজের) সম্পর্কে। আর আল্লাহরই দিকে ফিরে যেতে হবে।
৩:২৯
ক্বুল = বলো। ইন = যদি। তুখফূ = তোমরা গোপন রাখো। মা ফী সুদুরিকুম = যা আছে তোমাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে। আও = অথবা। তুবদূহু = তোমরা উহা প্রকাশ করো। ইয়া’লামহুল্লাহু = আল্লাহ তা জানেন। ওয়া = আর। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদি = যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে (তার সবকিছুই)। ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
বলো, ‘যদি তোমরা গোপন রাখো যা আছে তোমাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে অথবা তোমরা উহা প্রকাশ করো (উভয় অবস্থায়ই) আল্লাহ তা জানেন। আর তিনি জানেন যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে (তার সবকিছুই)। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
৩:৩০
ইয়াওমা = যেদিন। তাজিদু = পাবে। কুল্লু নাফসিন = সকল ব্যক্তি। মা আমিলাত মিন খাইরিন = যা কিছু ভালকাজ সে করেছে। মুহদারান = উপস্থিত। ওয়া = আর। মা আমিলাত মিন ছূয়িন = যা কিছু মন্দ কাজ সে করেছে (তাও তার সামনে উপস্থিত)। তাওয়াদ্দু = সে কামনা করবে। লাও আন্না = যদি এমন হতো যে। বায়নাহা ওয়া বায়নাহু = তার কাজ ও তার নিজের মধ্যে। আমাদান বায়িদান = সূদূর ব্যবধান রয়েছে। ওয়া = আর। ইউহাযযিরুকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে সাবধান করেছেন। নাফসাহু = তাঁর নফসের (= তাঁর নিজের) সম্পর্কে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। রউফুম বিল ইবাদ = তাঁর দাসগণের প্রতি অনুগ্রহশীল।
যেদিন পাবে সকল ব্যক্তি যা কিছু ভালকাজ সে করেছে (তা তার সামনে) উপস্থিত। আর যা কিছু মন্দ কাজ সে করেছে (তাও তার সামনে উপস্থিত)। (সেদিন) সে কামনা করবে, যদি এমন হতো যে, তার কাজ ও তার নিজের মধ্যে সূদূর ব্যবধান রয়েছে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে সাবধান করেছেন তাঁর নফসের (= তাঁর নিজের) সম্পর্কে। আর আল্লাহ তাঁর দাসগণের প্রতি অনুগ্রহশীল।
৩:৩১
ক্বুল = বলো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। তুহিব্বুনাল্লাহা = আল্লাহকে ভালবেসে থাকো। ফাত্তাবিউনী = তাহলে আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। ইউহবিবকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন। ওয়া = আর। ইয়াগফির = মাফ করবেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। জুনুবাকুম = তোমাদের পাপসমূহ। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুর রাহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
বলো, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাকো তাহলে আমার (= রসূলের) ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন আর মাফ করবেন তোমাদের জন্য তোমাদের পাপসমূহ। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল’।
৩:৩২
ক্বুল = বলো। আতিউল্লাহা = ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর। ওয়ার রাসূলা = আর রাসূলের। ফাইন = তারপর যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাইন্নাল্লাহা = তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল কাফিরীনা = ভালবাসেন না কাফিরগণকে ।
বলো, ‘ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর আর রাসূলের। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন না কাফিরগণকে’।
৩:৩৩
ইন্নাল্লাহাসতফা = নিশ্চয় আল্লাহ মনোনীত করেছেন। আদামা = আদমকে। ওয়া = আর। নূহান = নূহকে। ওয়া = আর। আলা ইবরাহীমা = ইবরাহীমের বংশধরদেরকে। ওয়া = আর। আলা ইমরানা = ইমরানের বংশধরদেরকে। আলাল আলামীন = সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
নিশ্চয় আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদমকে আর নূহকে আর ইবরাহীমের বংশধরদেরকে আর ইমরানের বংশধরদেরকে সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
৩:৩৪
যুররিয়াতান বা’দুহা মিম বা’দি = তাদের পরের জন আগের জনের (= নূহ আদমের, ইবরাহীম নূহের, ইমরান ইবরাহীমের) বংশধর। ওয়াল্লাহু ছামিয়ুন আলীম = আর আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
তাদের পরের জন আগের জনের (= নূহ আদমের, ইবরাহীম নূহের, ইমরান ইবরাহীমের) বংশধর। আর আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
৩:৩৫
ইয = (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলাতিমরাআতু ইমরানা = ইমরানের স্ত্রী বলেছে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। নাযারতু = নযর/ মানত করেছি। লাকা = আপনার উদ্দেশ্যে। মা ফী বাতনী = আমার পেটে যে (বাচ্চা) আছে তাকে। মুহাররারান = সংসার থেকে মুক্ত করে দিয়ে সমর্পণ করতে। ফাতাক্বাব্বাল মিন্নী = সুতরাং আমার থেকে তা কবুল করুন। ইন্নাকা আনতাছ ছামীয়ুল আলীম = নিশ্চয় আপনি ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইমরানের স্ত্রী বলেছে, ‘নিশ্চয় আমি নযর/ মানত করেছি আপনার উদ্দেশ্যে আমার পেটে যে (বাচ্চা) আছে তাকে সংসার থেকে মুক্ত করে দিয়ে সমর্পণ করতে। সুতরাং আমার থেকে তা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)’।
৩:৩৬
ফালাম্মা = তারপর যখন। ওয়াদাআতহা = সে তাকে (= তার পেটের বাচ্চাকে) প্রসব করেছে। ক্বলাত = তখন সে বলেছে। রব্বি = আমার রব/ প্রতিপালক। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। ওয়াদা’তুহা = তাকে (= পেটের বাচ্চাটিকে) প্রসব করেছি। উনছা = মেয়েরূপে। ওয়াল্লাহু = অথচ আল্লাহ। আ’লামু = জানেন। বিমা ওয়াদাআত = সে যা প্রসব করেছে তার সম্পর্কে। ওয়া = আর। লাইছায যাকারু = ছেলে নয়। কাল উনছা = মেয়ের মতো। ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। ছাম্মায়তুহা = তার নাম রেখেছি। মারইয়ামা = মারইয়াম। ওয়া = আর। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। উয়িযুহা = তাকে (= মারইয়ামকে) আশ্রয়ে দিচ্ছি। বিকা = আপনার কাছে। ওয়া = আর। যুররিয়াতাহা = (আপনার কাছে আশ্রয়ে দিচ্ছি) তার (= মারইয়ামের) সন্তান সন্ততিদিগকে। মিনাশ শায়তানির রাজীম = বিতাড়িত শয়তানের (অনিষ্ট) থেকে।
তারপর যখন সে তাকে (= তার পেটের বাচ্চাকে) প্রসব করেছে তখন সে বলেছে, ‘আমার রব/ প্রতিপালক, নিশ্চয় আমি তাকে (= পেটের বাচ্চাটিকে) প্রসব করেছি মেয়েরূপে’। অথচ আল্লাহ জানেন সে যা প্রসব করেছে তার সম্পর্কে। আর ছেলে নয় মেয়ের মতো। “আর নিশ্চয় আমি তার নাম রেখেছি মারইয়াম। আর নিশ্চয় আমি তাকে (= মারইয়ামকে) আশ্রয়ে দিচ্ছি আপনার কাছে আর (আপনার কাছে আশ্রয়ে দিচ্ছি) তার (= মারইয়ামের) সন্তান সন্ততিদিগকে, বিতাড়িত শয়তানের (অনিষ্ট) থেকে’। (দ্র: ০৬: ৮৫-৮৭, ১৩: ৩৮, ৩:৪৫)।]
৩:৩৭
ফাতাক্বাব্বালহা = তারপর তাকে (= মারইয়ামকে) কবুল করেছেন। রব্বুহা = তার রব/ প্রতিপালক (= আল্লাহ)। বিক্বাবুলিন হাছানান = উত্তম কবুলরূপে। ওয়া = আর। আমবাতাহা = তাকে গড়ে নিয়েছেন। নাবাতান হাছানান = উত্তম গড়নে। ওয়া = আর। কাফফালাহা = তার জন্য তত্ত্বাবধায়ক করে দিয়েছেন। যাকারিয়্যা = যাকারিয়্যাকে (৩:৪৪)। কুল্লামা = যখনই। দাখালা = দাখিল/ প্রবেশ করতো। আলাইহা = তার কাছে। যাকারিয়্যা = যাকারিয়্যা। আল মিহরাবা = মিহরাবে/ অস্ত্রাদি সংরক্ষিত রাখার কক্ষে। ওয়াজাদা ইনদাহা রিযকান = তখন সে পেতো তার কাছ বিভিন্ন রিযক/ জীবনোপকরন। ক্বলা = সে (= যাকারিয়া) বলেছে। ইয়া মারইয়ামু = হে মারইয়াম। আন্না = কোথা থেকে আসে। লাকি = তোমার জন্য। হাযা = এসব রিযক। ক্বলাত = সে (= মারইয়াম) বলেছে। হুয়া = তা আসে। মিন ইনদিল্লাহ = আল্লাহর পক্ষ থেকে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়ারযুক্বু = রিযক দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (রিযক দেয়ার) ইচ্ছা করেন। বিগাইরি হিসাব = হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ উপায়ে রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।
তারপর তাকে (= মারইয়ামকে) কবুল করেছেন তার রব/ প্রতিপালক (= আল্লাহ) উত্তম কবুলরূপে। আর তাকে গড়ে নিয়েছেন উত্তম গড়নে। আর তার জন্য তত্ত্বাবধায়ক করে দিয়েছেন যাকারিয়্যাকে (৩:৪৪)। যখনই দাখিল/ প্রবেশ করতো তার কাছে যাকারিয়্যা মিহরাবে/ অস্ত্রাদি সংরক্ষিত রাখার কক্ষে, তখন সে পেতো তার কাছ বিভিন্ন রিযক/ জীবনোপকরন। (একদা) সে (= যাকারিয়া) বলেছে, ‘হে মারইয়াম, কোথা থেকে আসে তোমার জন্য এসব রিযক?’। (তখন) সে (= মারইয়াম) বলেছে, ‘তা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ রিযক দেন যাকে তিনি (রিযক দেয়ার) ইচ্ছা করেন, হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ উপায়ে রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।
৩:৩৮
হুনালিকা = সে সময় সেখানে। দাআ যাকারিয়্যা = দোয়া করেছে যাকারিয়্যা। রব্বাহু = তার রবের কাছে। ক্বলা = সে বলেছে। রব্বি = আমার রব/ প্রতিপালক। হাবলী = আমাকে দান করুন। মিল্লাদুনকা = আপনার পক্ষ থেকে। যুররিয়াতান তইয়িবাতান = পবিত্র বংশধর। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। ছামীয়ুদ দুআয়ি = দোয়া/ প্রার্থনা শ্রবণকারী।
সে সময় সেখানে দোয়া করেছে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে। সে বলেছে, ‘আমার রব/ প্রতিপালক, আমাকে দান করুন আপনার পক্ষ থেকে পবিত্র বংশধর। নিশ্চয় আপনি দোয়া/ প্রার্থনা শ্রবণকারী’।
৩:৩৯
ফানাদাতহুল মালাইকাতু = তারপর মালায়েকা/ ফেরেশতারা তাকে ডাক দিয়েছে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুয়া = সে। ক্বায়িমুন ইউসল্লি = সালাত করতে দাঁড়িয়েছিল। ফিল মিহরাবি = মেহরাবে/ ব্যক্তিগত কক্ষে। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউবাশমিরুকা = তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন। বিইয়াহইয়া = ইয়াহইয়ার বিষয়ে। মুসাদ্দিক্বাম বিকালিমাতিম মিনাল্লাহি = (যে হবে) আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কালিমার/ বাণীর সত্যতাপ্রতিপাদনকারী। ওয়া = আর। সাইয়িদান = নেতা। ওয়া = আর। হাসূরান = আত্মসংবরণকারী/ব্রতচারী/সন্ন্যাসী/জিতেন্দ্রিয়/স্ত্রী-সংস্রব-আসক্তি থেকে আত্মনিবারিত/(আল্লাহর পথে) নিজেকে আবদ্ধ রাখা ব্যক্তি। ওয়া = আর। নাবিয়্যাম মিনাস সালিহীন = সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী (অর্থাৎ নবীদেরকে সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকেই মনোনীত করা হয়)।
তারপর মালায়েকা/ ফেরেশতারা তাকে ডাক দিয়েছে এ অবস্থায় যে, সে সালাত করতে দাঁড়িয়েছিল মেহরাবে/ ব্যক্তিগত কক্ষে, (তারা বলেছে,) ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ইয়াহইয়ার বিষয়ে, (যে হবে) আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কালিমার/ বাণীর সত্যতাপ্রতিপাদনকারী আর নেতা আর আত্মসংবরণকারী/ ব্রতচারী/ সন্ন্যাসী/ জিতেন্দ্রিয়/ স্ত্রী-সংস্রব-আসক্তি থেকে আত্মনিবারিত/ (আল্লাহর পথে) নিজেকে আবদ্ধ রাখা ব্যক্তি (২:২৭৩) আর সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকে একজন নবী (অর্থাৎ নবীদেরকে সৎকর্মশীলদের মধ্য থেকেই মনোনীত করা হয়)।
৩:৪০
ক্বলা = সে বলে উঠেছে। রব্বী = আমার রব/ প্রতিপালক। আন্না = কিরূপে। ইয়াকূনু লী গুলামুন = আমার ছেলে হবে? ওয়া = অথচ। ক্বাদ বালাগানীয়াল কিবারু = নিশ্চয় আমার কাছে পৌঁছে গেছে বার্ধক্য। ওয়ামরাআতী = আর আমার স্ত্রী। আক্বিরুন = বন্ধ্যা। ক্বলা = তিনি বলেছেন। কাযালিকা = এভাবেই হবে। আল্লাহু ইয়ুফআলু = আল্লাহ করেন। মা ইয়াশাউ = যা করার তিনি ইচ্ছা করেন।
সে বলে উঠেছে, ‘আমার রব/ প্রতিপালক, কিরূপে আমার ছেলে হবে? অথচ নিশ্চয় আমার কাছে পৌঁছে গেছে বার্ধক্য আর আমার স্ত্রী বন্ধ্যা’। তিনি বলেছেন, ‘এভাবেই হবে, আল্লাহ করেন যা করার তিনি ইচ্ছা করেন (= আল্লাহ তাঁর অতাৎক্ষণিক ইচ্ছা তথা তাঁর তৈরি করে রাখা প্রাকৃতিক আইন প্রয়োগ করে কাজ করেন। আর আল্লাহ তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক আইনে বন্ধ্যাত্ব ও বন্ধ্যাত্বের প্রতিকার উভয়ের ব্যবস্থা রেখেছেন। সুতরাং তিনি যাকারিয়্যার স্ত্রীর বন্ধ্যাত্বের প্রতিকার করে তাকে সন্তান গর্ভধারনের উপযোগী করেছেন ২১: ৯০)।
৩:৪১
ক্বলা = সে বলেছে। রব্বিজআল = আমার রব/ প্রতিপালক, ঠিক করে দিন। লী = আমার জন্য। আয়াতান = কোন আয়াত/ নিদর্শন। ক্বলা = তিনি বলেছেন। আয়াতুকা = তোমার আয়াত/ নিদর্শন হবে। আল্লা তুকাল্লিমান্নাছা = এই যে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলবে না। ছালাছাতা আইয়ামিন = তিন দিন (দিবারাত্র ১৯: ১০)। ইল্লা রমজান = ইংগিতে কথা বলা ব্যতীত (অর্থাৎ সিয়াম মানত করার বা মানতের সিয়াম পালনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পাবে ১৯: ২৬)। ওয়াযকুর = আর (নির্দেশ পাবে ১৯: ১১) যিকর/ স্মরণ করো। রব্বাকা = তোমার রবকে/ প্রতিপালককে। কাছীরান = বেশি বেশি। ওয়া = আর। ছাব্বিহ = তাঁর তাসবীহ করো। বিল আশিয়্যী ওয়াল ইবকার = রাতের প্রথমাংশে ও দিনের প্রথমাংশে।
সে বলেছে, ‘আমার রব/ প্রতিপালক, ঠিক করে দিন আমার জন্য কোন আয়াত/ নিদর্শন’। তিনি বলেছেন, ‘তোমার আয়াত/ নিদর্শন হবে এই যে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলবে না তিন দিন (দিবারাত্র ১৯: ১০) ইংগিতে কথা বলা ব্যতীত (অর্থাৎ সিয়াম মানত করার বা মানতের সিয়াম পালনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ পাবে ১৯: ২৬)। আর (নির্দেশ পাবে ১৯: ১১) যিকর/ স্মরণ করো তোমার রবকে/ প্রতিপালককে বেশি বেশি আর তাঁর তাসবীহ করো ইশার সময়/ রাতের প্রথমাংশে ও ইবকারে/ দিনের প্রথমাংশে।
৩:৪২
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলাতিল মালাইকাতু = মালাইকা/ ফেরেশতাগণ বলেছে। ইয়া মারইয়ামু = হে মারইয়াম। ইন্নাল্লাহাসতফাকি = নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন। ওয়া = আর। তহহারাকি = তোমাকে পবিত্র করেছেন। ওয়াসতফাকি আলান নিছায়িল আলামীন = আর তোমাকে মনোনীত করেছেন সমগ্র বিশ্বের নারীগণের উপর।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মালাইকা/ ফেরেশতাগণ বলেছে, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন আর তোমাকে পবিত্র করেছেন আর তোমাকে মনোনীত করেছেন সমগ্র বিশ্বের নারীগণের উপর’।
৩:৪৩
ইয়া মারইয়ামুক্বনুতী = হে মারইয়াম, বিনয়ী হও। লি রব্বিকি = তোমার রবের উদ্দেশ্যে। ওয়াছজুদী = আর সিজদা করো। ওয়ারকায়ী মায়ার রাকিয়ীন = আর রুকু করো যারা রুকু করে তাদের সাথে (সহযোগী হয়ে)।
‘হে মারইয়াম, বিনয়ী হও তোমার রবের উদ্দেশ্যে আর সিজদা করো আর রুকু করো যারা রুকু করে তাদের সাথে (সহযোগী হয়ে)।
৩:৪৪
যালিকা = উহা। মিন আমবায়িল গাইবি = গায়েবের/ অদৃশ্য ঘটনার সংবাদসমূহ। নূহীহি ইলাইকা = তা আমরা তোমার প্রতি ওহী করছি। ওয়া = আর। মা কুনতা লাদাইহিম = তুমি তাদের কাছে ছিলে না। ইয = যখন। ইয়ুলক্বূনা = তারা নিক্ষেপ করেছে। আক্বলামাহুম = তাদের কলমসমূহ। আইয়্যুহুম = (এটা ঠিক করার জন্য যে,) তাদের মধ্যে কে। ইয়াকফুলু মারইয়ামা = মারইয়ামের তত্ত্বাবধান/ দেখাশুনা করবে। ওয়া = আর। মা কুনতা লাদাইহিম = তুমি তখনো তাদের কাছে ছিলে না। ইয ইয়াখতাসিমূনা =যখন (কলম নিক্ষেপের আগে এ বিষয়ে ) তারা বাদানুবাদ করছিলো।
উহা গায়েবের/ অদৃশ্য ঘটনার সংবাদসমূহ, তা আমরা তোমার প্রতি ওহী করছি। আর তুমি তাদের কাছে ছিলে না যখন তারা নিক্ষেপ করেছে তাদের কলমসমূহ (এটা ঠিক করার জন্য যে,) তাদের মধ্যে কে মারইয়ামের তত্ত্বাবধান/ দেখাশুনা করবে। আর তুমি তাদের কাছে ছিলে না যখন (কলম নিক্ষেপের আগে এ বিষয়ে ) তারা বাদানুবাদ করছিলো।
৩:৪৫
ইয = (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলাতিল মালাইকাতু = মালাইকা/ ফেরেশতাগণ বলেছে। ইয়া মারইয়ামু = হে মারইয়াম। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়ুবাশশিরুকি = তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন। বিকালিমাতিম মিনহু = তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালিমার/ কথার। ইছমুহুল মাছীহু ঈসা ইবনে মারইয়ামা = তার নাম হবে মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম। ওয়া জিহান = আর সে সম্মানিত হবে। ফিদ দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি = দুনিয়াতে ও আখিরাতে। ওয়া মিনাল মুক্বাররাবীন = আর সে (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মালাইকা/ ফেরেশতাগণ বলেছে, ‘হে মারইয়াম নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালিমার/ কথার। তার নাম হবে মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম, আর সে সম্মানিত হবে দুনিয়াতে ও আখিরাতে। আর সে (আল্লাহর) নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩:৪৬
ওয়া = আর। ইয়ুকাল্লিমুন নাছা = সে মানুষের সাথে যথাযথভাবে কথা বলবে। ফিল মাহদী ওয়াল কাহলান = দোলনায় চড়া বাল্যবয়সে এবং পরিণত প্রৌঢ় বয়সে। ওয়া মিনাছ ছালিহীন = আর সে ছালিহীনদের/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আর সে মানুষের সাথে যথাযথভাবে কথা বলবে দোলনায় চড়া বাল্যবয়সে এবং পরিণত প্রৌঢ় বয়সে। আর সে ছালিহীনদের/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩:৪৭
ক্বলাতি = সে (= মারইয়াম) বলেছে। রব্বি = আমার রব/ প্রতিপালক। আন্না = কিরূপে। ইয়াকূনু লী ওয়ালাদুন = আমার সন্তান হবে? ওয়া = অথচ। লাম ইয়ামছাছনী = আমাকে স্পর্শ করেনি। বাশারুন = কোন মানুষ। ক্বলা = তিনি বলেছেন। কাযালিকি = ঐভাবেই। আল্লাহু ইয়াখলুক্বু = আল্লাহ সৃষ্টি করেন। মা ইয়াশাউ = যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। ইযা = যখন। ক্বদা আমরান = তিনি কোন কাজের সিদ্ধান্ত করেন। ফাইন্নামা ইয়াক্বুলু লাহু = তখন তিনি উহার উদ্দেশ্যে বলেন। কুন = হও। ফাইয়াকূন = সুতরাং (তা) হয়।
সে (= মারইয়াম) বলেছে, ‘আমার রব/ প্রতিপালক, কিরূপে আমার সন্তান হবে, অথচ আমাকে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ?’। তিনি বলেছেন, ‘ঐভাবেই। আল্লাহ সৃষ্টি করেন যা তিনি (সৃষ্টি করার) ইচ্ছা করেন। যখন তিনি কোন কাজের সিদ্ধান্ত করেন তখন তিনি উহার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হও’, সুতরাং (তা) হয়।
৩:৪৮
ওয়া = আর। ইয়ুআল্লিমুহুমুল কিতাবা = তাকে শিক্ষা দিবেন কিতাব। ওয়াল হিকমাতা = ও হিকমাত। ওয়াত তাওরাতা = আর তাওরাত। ওয়াল ইনজীলা = ও ইনজীল।
আর তাকে শিক্ষা দিবেন কিতাব ও হিকমাত, আর তাওরাত ও ইনজীল।
৩:৪৯
ওয়া = আর (সে হবে)। রাছূলান = একজন রসূল। ইলা বানী ইছরাইলা = বানী ইসরাইলের প্রতি। আন্নী = (ঈসা বানী ইসরাইলের নিকট রসূল হিসাবে উপস্থিত হওয়ার পর বলেছে) আমি। ক্বাদ = নিশ্চয়। জি’তুকুম = তোমাদের কাছে এসেছি। বিআয়াতিম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত আয়াতসহ। আন্নী = আমি। আখলুক্বু = গঠন করবো। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিনাত তীনি = কাদামাটি থেকে। কাহাইয়াতিত তয়রি = পাখির কাঠামোসদৃশ। ফাআনফুখু ফীহি = তারপর উহার মধ্যে ফুঁকে দেবো। ফাইয়াকূনু তয়রান = সুতরাং উহা হয়ে যাবে পাখি। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। উবরিয়ু = আমি সুস্থ করবো। আল আকমাহা ওয়াল আবরাসা = অন্ধকে ও কুষ্ঠ রোগগ্রস্তকে। ওয়া = আর। উহয়িল মাওতা = আমি মৃতকে জীবিত করবো। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। উনাব্বিউকুম = আমি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করবো। বিমা তা’কুলূনা = কী পরিমানে তোমরা খাবে। ওয়া = আর। মা তাদ্দাখিরূনা = কী পরিমাণে তোমরা মজুদ রাখবে। ফী বুয়ুতিকুম = তোমাদের ঘরসমূহে। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে আছে। লাআয়াতাল লাকুম = তোমাদের জন্য আয়াত/ নিদর্শন। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীন = মু’মিনীন/ বিশ্বাসী।
আর (সে হবে) একজন রসূল, বানী ইসরাইলের প্রতি। (ঈসা বানী ইসরাইলের নিকট রসূল হিসাবে উপস্থিত হওয়ার পর বলেছে) আমি নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত আয়াতসহ। আমি গঠন করবো তোমাদের জন্য কাদামাটি থেকে পাখির কাঠামোসদৃশ, তারপর উহার মধ্যে ফুঁকে দেবো, সুতরাং উহা হয়ে যাবে পাখি, আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর আমি সুস্থ করবো অন্ধকে ও কুষ্ঠ রোগগ্রস্তকে, আর আমি মৃতকে জীবিত করবো, আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর আমি তোমাদের কাছে ব্যক্ত করবো কী পরিমানে তোমরা খাবে আর কী পরিমাণে তোমরা মজুদ রাখবে তোমাদের ঘরসমূহে। নিশ্চয় উহার মধ্যে আছে তোমাদের জন্য আয়াত/ নিদর্শন, যদি তোমরা হও মু’মিনীন/ বিশ্বাসী।
৩:৫০
ওয়া = আর। মুসাদ্দিক্বাল লিমা বাইনা ইয়াদাইয়া মিনাত তাওরাতি = আমি আমার সামনে তাওরাত থেকে থাকা সত্যের মুসাদ্দিক/ সত্যায়নকারী। ওয়া = আর। লিউহিল্লা লাকুম = (আমি এসেছি) তোমাদের জন্য হালাল/ বৈধ করতে। বা’দা = এমন কিছু। আল্লাযী = যা। হুররিমা আলাইকুম = তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে। ওয়া = আর। জি’তুকুম = আমি তোমাদের কাছে এসেছি। বিআয়াতিম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত আয়াতসহ। ফাত্তাক্বুল্লাহা = সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া = আর। আতীঊনি = আমার ইতায়াত/ আনুগত্য করো।
আর আমি আমার সামনে তাওরাত থেকে থাকা সত্যের মুসাদ্দিক/ সত্যায়নকারী। আর (আমি এসেছি) তোমাদের জন্য হালাল/ বৈধ করতে এমন কিছু যা তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে আর আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত আয়াতসহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর আমার ইতায়াত/ আনুগত্য করো।
৩:৫১
ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। রব্বী = আমারও রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি)। ওয়া রব্বুকুম = আর তোমাদেরও রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি)। ফা’বুদূহু = সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। হাযা = ইহাই। সিরাতুম মুসতাকীম = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ।
নিশ্চয় আল্লাহ আমারও রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি) আর তোমাদেরও রব (= সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি)। সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদাত/ দাসত্ব করো। ইহাই সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথ’।
৩:৫২
ফালাম্মা = তারপর যখন। আহাচ্ছা ঈসা মিনহুমুল কুফরা = ঈসা তাদের থেকে কুফর আঁচ/ অনুভব করেছে। ক্বলা = তখন সে বলেছে। মান = কে আছো। আনসারী ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকে (= আল্লাহর বিধান প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) আমার সাহায্যকারী। ক্বলাল হাওয়ারিয়্যুনা = হাওয়ারিগণ (= সাধারণ ধোপাগণ) বলেছে। নাহনু = আমরা। আনসারুল্লাহি = আল্লাহর সাহায্যকারী। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াশহাদ = আর আপনি সাক্ষী থাকুন। বিআন্না = যে, আমরা। মুসলিমূন = মুসলিমূন (= আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী)।
তারপর যখন ঈসা তাদের থেকে কুফর আঁচ/ অনুভব করেছে, তখন সে বলেছে, ‘কে আছো আল্লাহর দিকে (= আল্লাহর বিধান প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে) আমার সাহায্যকারী?’ হাওয়ারিগণ (=সাধারণ ধোপাগণ) বলেছে, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা মুসলিমূন (= আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণকারী)’।
৩:৫৩
রব্বানা = আমাদের রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি)। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিমা আনযালতা = যা আপনি নাযিল করেছেন তার প্রতি। ওয়াত্তাবা’নার রাসূলা = আর আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। ফাকতুবনা = সুতরাং আপনি আমাদের (নাম) লেখুন। মাআস সাহিদীন = সাহিদীনের/ সত্যের সাক্ষ্যদাতাদের সাথে।
আমাদের রব (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিযকদাতা, প্রার্থনা শ্রবণকর্তা, বিধানদাতা ইত্যাদি), আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি যা আপনি নাযিল করেছেন তার প্রতি। আর আমরা রাসূলের অনুসরণ করেছি। সুতরাং আপনি আমাদের (নাম) লেখুন সাহিদীনের/ সত্যের সাক্ষ্যদাতাদের সাথে।
৩:৫৪
ওয়া = আর। মাকারূ = তারা কৌশল করেছে। ওয়া = আর। মাকারাল্লাহু = আল্লাহও কৌশল করেছেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। খায়রুল মাকিরীন = উত্তম কৌশলী।
আর তারা (= ঈসার বিরোধিতাকারী বানী ইসরাইল) কৌশল করেছে আর আল্লাহও কৌশল করেছেন। আর আল্লাহ উত্তম কৌশলী।
৩:৫৫
ইয = যখন। ক্বলাল্লাহু = আল্লাহ বলেছেন। ইয়া ঈসা = হে ঈসা। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। মুতাওয়াফফীকা = তোমাকে ওফাত/ (স্বাভাবিক) মৃত্যু দেবো। ওয়া = আর রফিউকা ইলাইয়্যা = (এভাবে) তোমাকে আমার দিকে (সমুন্নত মর্যাদায়) উঠাবো। ওয়া = আর। মুতাহহিরুকা মিনাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর করেছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র করে দেবো। ওয়া = আর। জায়িলুল্লাযীনাত তাবাউকা = মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবো যারা তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তাদেরকে। ফাওক্বাল্লাযীনা কাফারূ = যারা কুফর করেছে তাদের উপর। ইলা ইয়াওমিল কিয়ামাতি = ইয়াওমিল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত।। ছুম্মা = তারপর। ইলাইয়্যা = আমারই দিকে। মারজিউকুম = তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। ফাআহকুমু = তারপর আমি মীমাংসা করে দেবো। বাইনাকুম = তোমাদের মধ্যে। ফীমা = ঐ বিষয়ে। কুনতুম ফীহি তাখতালিফূন = যাতে তোমরা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করছো।
যখন আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈসা, নিশ্চয় আমি তোমাকে ওফাত/ (স্বাভাবিক) মৃত্যু দেবো আর (এভাবে) তোমাকে আমার দিকে (সমুন্নত মর্যাদায়) উঠাবো। আর যারা কুফর করেছে তাদের থেকে তোমাকে পবিত্র করে দেবো {= যারা কুফর করেছে তাদের দেয়া অভিযোগ থেকে তোমাকে পবিত্র করবো}। আর মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবো যারা তোমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তাদেরকে যারা কুফর করেছে তাদের উপর ইয়াওমিল কিয়ামাত/ কিয়ামাত দিবস পর্যন্ত। তারপর আমারই দিকে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। তারপর আমি মীমাংসা করে দেবো তোমাদের মধ্যে ঐ বিষয়ে যাতে তোমরা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করছো।
৩:৫৬
ফাআম্মা = ফলত:। আল্লাযীনা = যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ফাউআযযিবুহুম = আমি তাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেবো। আযাবান শাদীদান = আযাবান শাদীদান/ কঠোর শাস্তি। ফিদ দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি = দুনিয়াতে ও আখিরাতে। ওয়া = আর। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিন নাছিরীন = কোন সাহায্যকারী।
ফলত: যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আমি তাদেরকে আযাব/ শাস্তি দেবো, আযাবান শাদীদান/ কঠোর শাস্তি দুনিয়াতে ও আখিরাতে। আর তাদের জন্য নেই কোন সাহায্যকারী।
৩:৫৭
ওয়া আম্মাল্লাযীনা = আর যারা। আমিনূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। ফাইয়ুওয়াফফীহিম = তিনি তাদেরকে পূর্ণ করে দেবেন। উজূরাহুম = তাদের প্রতিফল। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইউহিব্বুয যালিমীনা = ভালবাসেন না যালিমদেরকে ।
আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে তিনি তাদেরকে পূর্ণ করে দেবেন তাদের প্রতিফল। আর আল্লাহ ভালবাসেন না যালিমদেরকে।
৩:৫৮
যালিকা = উহা। নাতলুহু = যা আমি তিলাওয়াত/ পাঠ করছি। আলাইকা = তোমার কাছে। মিনাল আয়াতি = আয়াতসমূহের থেকে। ওয়ায যিকরিল হাকীম = আর যিকরিল হাকীম/ বিজ্ঞতাপূর্ণ স্মরণিকা/ সংবিধান।
উহা যা আমি তিলাওয়াত/ পাঠ করছি তোমার কাছে আয়াতসমূহের থেকে আর যিকরিল হাকীম/ বিজ্ঞতাপূর্ণ স্মরণিকা/ সংবিধান।
৩:৫৯
ইন্না = নিশ্চয়। মাছালা ঈসা = ঈসার দৃষ্টান্ত। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। কামাছালি আদামা = আদমের দৃষ্টান্তের মতো। খালাক্বাহু = (আর তা হচ্ছে) আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। মিন তুরাবিন = মাটি থেকে (= মাটির মৌলিক উপাদানসমৃদ্ধ করে)। ছুম্মা = তারপর। ক্বলা লাহু = তার উদ্দেশ্যে বলেছেন। কুন = হও। ফাইয়াকুন = সুতরাং সে হয়। [১৮: ৩৭, ২২: ০৫, ৩০: ২০, ৩৫: ১১, ৪০: ৬৭]
নিশ্চয় ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর কাছে আদমের দৃষ্টান্তের মতো। (আর তা হচ্ছে) আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে (= মাটির মৌলিক উপাদানসমৃদ্ধ করে)। তারপর তার উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘হও’। সুতরাং সে হয়।
৩:৬০
আল হাক্বু মির রব্বিকা = সঠিক তথ্য তোমার রবের পক্ষ থেকে। ফালা তাকুম মিনাল মুমতারীনা = সুতরাং তুমি হয়ো না সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
সঠিক তথ্য তোমার রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং তুমি হয়ো না সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
৩:৬১
ফামান = তারপর যে। হাজ্জাকা = তোমার সাথে বিতর্ক করে। ফীহি = ঐ বিষয়ে। মিম বা’দি মা জাআকা মিনাল ইলমি = উহার পরও যা তোমার কাছে এসেছে ইলম (আসমানী জ্ঞান) থেকে। ফাক্বুল = তাহলে তাদেরকে বলো। তাআলাও = তোমরা আসো। নাদউ = আমরা ডাকি। আবনাআনা = আমাদের পুত্রদেরকে। ওয়া আবনাআকুম = আর তোমাদের পুত্রদেরকে। ওয়া নিছাআনা = আর আমাদের নারীদেরকে। ওয়া নিছাআকুম = আর তোমাদের নারীদেরকে। ওয়া আনফুছানা = আর আমাদের নিজেদেরকে। ওয়া আনফুছাকুম = আর তোমাদের নিজেদেরকে। ছুম্মা = তারপর। নাবতাহিল = আমরা পরস্পরকে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতির উপর ছেড়ে দিই। ফানাজআল = ফলত: আমরা স্থাপন করি। লা’নাতাল্লাহি = আল্লাহর লা’নত/ অভিশাপ। আলাল কাযিবীন = মিথ্যাবাদীদের উপর (০৬: ১৩৫, ৫: ১৩, ১৫: ৮৫, ৭৩: ১০)।
তারপর যে তোমার সাথে বিতর্ক করে ঐ বিষয়ে, উহার পরও যা তোমার কাছে এসেছে ইলম (আসমানী জ্ঞান) থেকে, তাহলে তাদেরকে বলো, ‘তোমরা আসো, আমরা ডাকি আমাদের পুত্রদেরকে আর তোমাদের পুত্রদেরকে আর আমাদের নারীদেরকে আর তোমাদের নারীদেরকে আর আমাদের নিজেদেরকে আর তোমাদের নিজেদেরকে। তারপর আমরা পরস্পরকে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মনীতির উপর ছেড়ে দিই। ফলত: আমরা স্থাপন করি আল্লাহর লা’নত/ অভিশাপ মিথ্যাবাদীদের উপর। (০৬: ১৩৫, ৫: ১৩, ১৫: ৮৫, ৭৩: ১০)।
৩:৬২
ইন্না = নিশ্চয়। হাযা লাহুয়া = ইহাই। আল কাসাসুল হাক্ব = কাসাসুল হাক্ব/ সঠিক কিসসা/ কাহিনী। ওয়া = আর। মা মিন ইলাহিন = কোন ইলাহ নেই। ইল্লাল্লাহু = আল্লাহ ছাড়া। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাহুয়াল আযীযুল হাকীম = তিনিই আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
নিশ্চয় ইহাই কাসাসুল হাক্ব/ সঠিক কিসসা/ কাহিনী। আর কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ ছাড়া। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
৩:৬৩
ফাইন = সুতরাং যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। আলীমুন বিলমুফসিদীন = আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন) ফাসাদকারীদের সম্পর্কে।
সুতরাং যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে নিশ্চয় আল্লাহ আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন) ফাসাদকারীদের সম্পর্কে।
৩:৬৪
ক্বুল = বলো। ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। তাআলাও = তোমরা আসো। ইলা কালিমাতিন = একটি কথার দিকে। ছাওয়ায়িম বাইনানা ওয়া বাইনাকুম = যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই। আল্লা না’বুদা = তা এই যে, আমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করবো না। ইল্লাল্লাহা = আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো। ওয়া = আর। লা নুশরিকা = আমরা শিরক/ অংশীদার সাব্যস্ত করবো না। বিহী = তাঁর সাথে। সাইয়ান = কাউকেই। ওয়া = আর। লা ইয়াত্তাখিজা = গ্রহণ করবে না। বা’দুনা = আমাদের কেউ। বা’দান = কাউকে। আরবাবাম মিন দূনিল্লাহি = রব/ বিধানদাতা হিসাবে, আল্লাহকে ছাড়া (অর্থাৎ আমরা একমাত্র আল্লাহকেই রব/ বিধানদাতা হিসাবে গ্রহণ করবো)। ফাইন = তারপর যদি। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাক্বূলুশহাদূ = তাহলে তোমরা বলো, ‘তোমরা সাক্ষী থাকো। বিআন্না = যে, আমরা। মুসলিমূন = মুসলিমূন (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী)।
বলো, ‘হে আহলে কিতাব, তোমরা আসো একটি কথার দিকে যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই। তা এই যে, আমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করবো না আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো। আর আমরা শিরক/ অংশীদার সাব্যস্ত করবো না তাঁর সাথে কাউকেই। আর গ্রহণ করবে না আমাদের কেউ কাউকে রব/ বিধানদাতা হিসাবে, আল্লাহকে ছাড়া (অর্থাৎ আমরা একমাত্র আল্লাহকেই রব/ বিধানদাতা হিসাবে গ্রহণ করবো)’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তোমরা বলো, ‘তোমরা সাক্ষী থাকো যে, আমরা মুসলিমূন (আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী)’।
৩:৬৫
ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লিমা = কেন। তুহাজ্জূনা = তোমরা বিতর্ক করো। ফী ইবরাহীমা = ইবরাহীমের বিষয়ে। ওয়া = অথচ। মা উনযিলাতিত তাওরাতু = নাযিল হয়নি তাওরাত। ওয়াল ইনজীলু = আর ইনজীল। ইল্লা মিম বা’দিহী = তার পরবর্তীতে ছাড়া। আফালা তা’ক্বিলূনা = তবে কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না?
হে আহলে কিতাব, কেন তোমরা বিতর্ক করো ইবরাহীমের বিষয়ে? অথচ নাযিল হয়নি তাওরাত আর ইনজীল তার পরবর্তীতে ছাড়া। তবে কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না?
৩:৬৬
হাআনতুম = তোমরাই। হাউলায়ি = ঐসব লোক যারা। হাজাজতুম = বিতর্ক করেছো। ফীমা = ঐ বিষয়ে। লাকুম = তোমাদের জন্য। বিহী = যে সম্পর্কে। ইলমুন = সামান্য জ্ঞান ছিলো। ফালিমা = তবে কেন। তুহাজ্জূনা = তোমরা বিতর্ক করো। ফীমা = ঐ বিষয়ে। লাইছা লাকুম = তোমাদের জন্য নেই। বিহী = যে সম্পর্কে। ইলমুন = কোন জ্ঞান। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। লা ত’লামূনা = জানো না।
তোমরাই ঐসব লোক যারা বিতর্ক করেছো ঐ বিষয়ে, তোমাদের জন্য যে সম্পর্কে সামান্য জ্ঞান ছিলো। তবে কেন তোমরা বিতর্ক করো ঐ বিষয়ে, তোমাদের জন্য নেই যে সম্পর্কে কোন জ্ঞান? আর আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।
৩:৬৭
মা কানা ইবরাহীমা = ইবরাহীম না ছিলো। ইয়াহুদিয়্যা = ইয়াহুদি। ওয়া লা নাসরানিয়্যা = আর না খৃস্টান। ওয়ালাকিন = কিন্তু। কানা = সে ছিলো। হানীফাম মুসলিমান = হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ, মুসলিম/ আত্মসমর্পনকারী। ওয়া = আর। মা কানা = সে ছিলো না। মিনাল মুশরিকীন = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।
ইবরাহীম না ছিলো না ইয়াহুদি আর না খৃস্টান। কিন্তু সে ছিলো হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ, মুসলিম/ আত্মসমর্পনকারী। আর সে ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।
৩:৬৮
ইন্না = নিশ্চয়। আওলান্নাছি = মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ। বিইবরাহীমা = ইবরাহীমের সাথে (সম্পর্কের ক্ষেত্রে)। লাল্লাযীনাত তাবাউহু = যারা তাকে (= ইবরাহীমকে) ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তারা। ওয়া = আর। হাযান্নাবীয়্যু = এই নবী। ওয়াল্লাযীনা আমানূ = আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ওয়ালিয়্যুল মু’মিনীন = মু’মিনদের ওয়ালি/ অভিভাবক।
নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ইবরাহীমের সাথে (সম্পর্কের ক্ষেত্রে) যারা তাকে (= ইবরাহীমকে) ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে তারা আর এই নবী আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আর আল্লাহ মু’মিনদের ওয়ালি/ অভিভাবক।
৩:৬৯
ওয়াদ্দাত = কামনা করে। তয়িফাতুম মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্য থেকে একদল। লাও = যদি। ইউদিল্লূনাকুম = তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারতো! ওয়া = আর। মা ইউদিল্লূনা = তারা বিভ্রান্ত করে না। ইল্লা আনফুছাহুম = তাদের নিজেদেরকে ছাড়া। ওয়া = আর। মা ইয়াশউরুন = তারা তা অনুভব করে না।
কামনা করে আহলে কিতাবের মধ্য থেকে একদল, যদি তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে পারতো! আর তারা বিভ্রান্ত করে না তাদের নিজেদেরকে ছাড়া। আর তারা তা অনুভব করে না।
৩:৭০
ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লিমা = কেন। তাকফুরূনা = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করো। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতের প্রতি। ওয়া = অথচ। আনতুম = তোমরা। তাশহাদূন = (উহার) সাক্ষ্য দাও।
হে আহলে কিতাব, কেন তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করো আল্লাহর আয়াতের প্রতি? অথচ তোমরা (উহার) সাক্ষ্য দাও।
৩:৭১
ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লিমা = কেন। তালবিছূনাল হাক্বা = তোমরা লিবাস (পোশাক) পরিয়ে দাও/ ঢেকে দাও হক্বকে/ সঠিক তথ্যকে। বিল বাতিলা = বাতিল/ বেঠিক তথ্য দ্বারা। ওয়া = আর। তাকতুমূনাল হাক্কা = তোমরা গোপন রাখো সঠিক তথ্যকে। ওয়া আনতুম তা’লামুন = এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (সঠিক বিষয়টি) জানো।
হে আহলে কিতাব, কেন তোমরা লিবাস (পোশাক) পরিয়ে দাও/ ঢেকে দাও হক্বকে/ সঠিক তথ্যকে বাতিল/ বেঠিক তথ্য দ্বারা আর তোমরা গোপন রাখো সঠিক তথ্যকে এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (সঠিক বিষয়টি) জানো?
৩:৭২
ওয়া = আর। ক্বলাত = বলেছে। তয়িফাতুম মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্য থেকে একটি দল। আমিনূ = তোমরা (বাহ্যত) ঈমান/ বিশ্বাস প্রকাশ করো। বিল্লাযী = উহার প্রতি যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। আলাল্লাযীনা আমানূ = তাদের উপর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে (= কুরআনের প্রতি নিজেদের বিশ্বাসের কথা প্রচার করো)। ওয়াজহান নাহারি = দিনের শুরুতে। ওয়াকফুরূ = আর কুফর/ অবিশ্বাস প্রকাশ করো। আখিরাহু = উহার শেষে (= দিনের শেষে)। লাআল্লাহুম = যেন তারা। ইয়ারজিউন = ফিরে যায়।
আর বলেছে আহলে কিতাবের মধ্য থেকে একটি দল, ‘তোমরা (বাহ্যত) ঈমান/ বিশ্বাস প্রকাশ করো উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাদের উপর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে (= কুরআনের প্রতি নিজেদের বিশ্বাসের কথা প্রচার করো) দিনের শুরুতে আর কুফর/ অবিশ্বাস প্রকাশ করো উহার শেষে (= দিনের শেষে) যেন তারা ফিরে যায়।
৩:৭৩
ওয়া = আর। লা তু’মিনূ = তোমরা ঈমান/ আস্থা রেখো না। ইল্লা লিমান = তাদেরকে ছাড়া যারা। তাবিআ দীনাকুম = তোমাদের দ্বীনের অনুসরণ করে। ক্বুল = (হে নবী, তুমি তাদেরকে) বলো। ইন্নাল হুদা = নিশ্চয় একমাত্র হুদা/ হিদায়াত হচ্ছে। হুদাল্লাহি = হুদাল্লাহ/ আল্লাহর হিদায়াত। আইঁ ইউ’তা = (বিশ্বাস করো না) এই ব্যাপারে যে, দেয়া হবে। আহাদুম মিছলা মা ঊতীতুম = কাউকে উহার অনুরূপ জিনিস যা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিলো। আও = অথবা। ইউহাজ্জিকুম = তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ করবে। ইনদা রব্বিকুম = তোমাদের রবের কাছে। ক্বুল = বলো। ইন্নাল ফাদলা = নিশ্চয় ফদল/ অনুগ্রহ/ বিশিষ্টতা। বিইয়াদিল্লাহি = আল্লাহর হাতে। ইউ’তিহি = তিনি উহা দান করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে (উহা দান করার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ওয়াছিউন = ওয়াছি/ ব্যাপকত্বের অধিকারী। আলীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী।
আর তোমরা ঈমান/ আস্থা রেখো না তাদেরকে ছাড়া যারা তোমাদের দ্বীনের অনুসরণ করে’। (হে নবী, তুমি তাদেরকে) বলো, ‘নিশ্চয় একমাত্র হুদা/ হিদায়াত হচ্ছে হুদাল্লাহ/ আল্লাহর হিদায়াত। (বিশ্বাস করো না) এই ব্যাপারে যে, দেয়া হবে কাউকে উহার অনুরূপ জিনিস যা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিলো অথবা তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুক্তি পেশ করবে তোমাদের রবের কাছে’। বলো, ‘নিশ্চয় ফদল/ অনুগ্রহ/ বিশিষ্টতা আল্লাহর হাতে। তিনি উহা দান করেন যাকে (উহা দান করার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ ওয়াছি/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
৩:৭৪
ইয়াখতাসসু = তিনি খাস/ নির্দিষ্ট করে নেন। বিরাহমাতিহী = তাঁর রহমতের দ্বারা। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (খাস করে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। যুল ফাদলিল আযীম = মহাঅনুগ্রহশীল।
তিনি খাস/ নির্দিষ্ট করে নেন তাঁর রহমতের দ্বারা যাকে তিনি (খাস করে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ মহাঅনুগ্রহশীল।
৩:৭৫
ওয়া = আর। মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্য থেকে কেউ কেউ আছে। মান = যে এমন যে,। ইন = যদি। তা’মানহু = তার কাছে আমানত রাখো। বিক্বিনতারিন = ধনভান্ডার। ইউআদদিহী = সে তা ফেরত দেবে। ইলাইকা = তোমার কাছে (= আমানতদাতার কাছে)। ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আছে। মান = যে এমন যে,। ইন = যদি। তা’মানহু = তার কাছে আমানত রাখো। বিদীনারিন = একটি দীনার/ স্বর্ণমুদ্রা। লা ইউআদ্দিহী = সে তা ফেরত দেবে না। ইলাইকা = তোমার কাছে (= আমানতদাতার কাছে)। ইল্লা মা = এ ছাড়া যে। দুমতা = তুমি চড়াও হবে। আলাইহি = তার উপর। ক্বায়িমান = মজবুতভাবে দাঁড়িয়ে। যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এজন্য যে, তারা। ক্বলূ = বলে। লাইছা = নেই। আলাইনা = আমাদের উপর। ফিল উম্মিয়্যীনা = উম্মীদের ব্যাপারে (= যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান নেই তাদের ব্যাপারে)। ছাবীলা = কোন ছাবীল/ (দায়িত্বের) মাত্রা। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা আলাল্লাহি কাযিবা = তারা আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা। ইয়া’লামূন = প্রকৃত বিষয়টি জানে।
আর আহলে কিতাবের মধ্য থেকে কেউ কেউ আছে যে এমন যে, যদি তার কাছে আমানত রাখো ধনভান্ডার, সে তা ফেরত দেবে তোমার কাছে (= আমানতদাতার কাছে)। আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ আছে যে এমন যে, যদি তার কাছে আমানত রাখো (মাত্র) একটি দীনার/ স্বর্ণমুদ্রা, সে তা ফেরত দেবে না তোমার কাছে (= আমানতদাতার কাছে), এ ছাড়া যে, তুমি চড়াও হবে তার উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়ে। উহা এজন্য যে, তারা বলে, ‘নেই আমাদের উপর উম্মীদের ব্যাপারে (= যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান নেই তাদের ব্যাপারে) কোন ছাবীল/ (দায়িত্বের) মাত্রা’। আর তারা আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে এ অবস্থায় যে, তারা প্রকৃত বিষয়টি জানে (/তারা জেনে বুঝে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে)।
৩:৭৬
বালা = বরং। মান = যে। আওফা = পূর্ণ করে। বিআহদিহী = তাঁর আহদ/ তাঁর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি। ওয়াত্তাক্বা = আর তাকওয়া অবলম্বন করে। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। ইউহিব্বুল মুত্তাক্বীন = ভালবাসেন মুত্তাকীদেরকে।
বরং যে পূর্ণ করে তাঁর আহদ/ তাঁর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি আর তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন মুত্তাকীদেরকে।
৩:৭৭
ইন্না = নিশ্চয়। আল্লাযীনা = যারা। ইয়াশতারূনা = বিক্রয় করে। বিআহদিল্লাহি = আল্লাহর আহদ/ আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি। ওয়া = আর। আইমানিহিম = আর তাদের আইমান (= প্রভাবাধীন কারো প্রতিরক্ষা করার প্রতিশ্রুতি)। ছামানান ক্বালীলা = তুচ্ছ মূল্যে। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। লা খালাক্বা = কোন অংশ নেই। লাহুম = যাদের জন্য। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। ওয়া = আর। লা ইউকাল্লিমুহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না। ওয়া = আর। লা ইয়ানযুরু = দৃষ্টি দেবেন না। ইলাইহিম = তাদের দিকে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ওয়া = আর। লা ইউযাক্কীহিম = তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীম = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
নিশ্চয় যারা বিক্রয় করে আল্লাহর আহদ (= আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি) আর আর তাদের আইমান (= প্রভাবাধীন কারো প্রতিরক্ষা করার প্রতিশ্রুতি) তুচ্ছ মূল্যে, তারাই এমন লোক কোন অংশ নেই যাদের জন্য আখিরাতে। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না আর দৃষ্টি দেবেন না তাদের দিকে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
৩:৭৮
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। লাফারিক্বান = একটি দল আছে। ইয়ালঊনা = যারা মুড়াতে থাকে। আল ছিনাতাহুম = তাদের জিহবাগুলোকে। বিল কিতাবি = কিতাব পাঠের বেলায়। লিতাহছাবূহু = যেন তোমরা উহাকে (= বিকৃত উচ্চারণকে) হিসাব করো। মিনাল কিতাবি = কিতাবের অন্তর্ভুক্ত। ওয়া = অথচ। মা হুয়া মিনাল কিতাবি = উহা কিতাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। হুয়া = উহা। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে। ওয়া = অথচ। মা হুয়া মিন ইনদিল্লাহি = উহা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। ওয়া = আর। ইয়াক্বুলূনা আলাল্লাহি কাযিবা = তারা আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা। ইয়া’লামূন = প্রকৃত বিষয়টি জানে।
আর নিশ্চয় তাদের মধ্য থেকে একটি দল আছে যারা মুড়াতে থাকে তাদের জিহবাগুলোকে কিতাব পাঠের বেলায় যেন তোমরা উহাকে (= বিকৃত উচ্চারণকে) হিসাব করো কিতাবের অন্তর্ভুক্ত, অথচ উহা কিতাবের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর তারা বলে, ‘উহা আল্লাহর পক্ষ থেকে’। অথচ উহা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। আর তারা আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে এ অবস্থায় যে, তারা প্রকৃত বিষয়টি জানে (/তারা জেনে বুঝে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলে)।
৩:৭৯
মা কানা লিবাশারিন = কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয়। আন = যে। ইউ’তিয়াহুল্লাহুল কিতাবা = আল্লাহ তাকে দেন কিতাব। ওয়াল হুকমা = হুকুম। ওয়ান্নবুয়্যাত = এবং নবুয়্যাত। ছুম্মা = তারপর। ইয়াক্বূলা লিন্নাছি = সে বলে মানুষের উদ্দেশ্যে। কূনূ = তোমরা হয়ে যাও। ইবাদাল্লী = আমার ইবাদাতকারী। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহর ইবাদাতকারী হওয়ার পরিবর্তে। ওয়ালাকিন = কিন্তু তার কথা তো হবে এই যে। কূনূ = তোমরা হয়ে যাও। রব্বানিয়্যীনা = রব্বানী/ রবের বিধান বাস্তবায়নকারী। বিমা কুনতুম তুআল্লিমূনাল কিতাব = উহার মাধ্যমে যা তোমরা কিতাব শিক্ষাদান করো। ওয়া = আর। বিমা কুনতুম তাদরুছূন = উহার মাধ্যমে যা তোমরা (কিতাবের) দারস/ অধ্যয়ন/ শিক্ষা রপ্ত করো।
কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তাকে দেন কিতাব, হুকুম এবং নবুয়্যাত, তারপর সে বলে মানুষের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা হয়ে যাও আমার ইবাদাতকারী আল্লাহর ইবাদাতকারী হওয়ার পরিবর্তে’ (কারণ, আল্লাহ তো তার যোগ্যতা ও চরিত্র বুঝেই তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন)। কিন্তু তার কথা তো হবে এই যে, ‘তোমরা হয়ে যাও রব্বানী/ রবের বিধান বাস্তবায়নকারী, উহার মাধ্যমে যা তোমরা কিতাব শিক্ষাদান করো আর উহার মাধ্যমে যা তোমরা (কিতাবের) দারস/ অধ্যয়ন/ শিক্ষা রপ্ত করো’।
৩:৮০
ওয়া = আর। লা ইয়া’মুরাকুম = সে তোমাদেরকে নির্দেশ দেবে না। আন = যে। তাত্তাখিজুল মালাইকাতা = ‘তোমরা গ্রহণ করবে মালাইকা/ ফেরেশতাদেরকে। ওয়ান্নাবিয়্যীনা = ও নবীদেরকে। আরবাবান = রব/ বিধানদাতা হিসাবে। আইয়া’মুরুকুম = সে কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিবে? বিল কুফরি = কুফর করার প্রতি। বা’দা = এরপরও। ইয = যখন। আনতুম = তোমরা। মুসলিমূন = মুসলিমূন (= আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী)।
আর (হে ঐসব লোক, যারা ইতিমধ্যে মুসলিম হয়েছো), সে তোমাদেরকে নির্দেশ দেবে না যে, ‘তোমরা গ্রহণ করবে মালাইকা/ ফেরেশতাদেরকে ও নবীদেরকে রব/ বিধানদাতা হিসাবে’। সে কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিবে কুফর করার প্রতি এরপরও, যখন তোমরা মুসলিমূন (= আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী)? (= যখন তোমরাই মুসলিম, অথচ একজন নবীই তোমাদেরকে কুফর করার নির্দেশ দিবে, তা অসম্ভব)।
৩:৮১
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আখাজাল্লাহু = আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। মীছাক্বান্নাবিয়্যীনা = নবীদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। লামা আতাইতুকুম = যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি। মিন কিতাবিওঁ ওয়া হিকমাতিন = কিতাব ও হিকমাত থেকে। ছুম্মা = তারপর (যখন)। জাআকুম = তোমাদের কাছে আসবে। রসূলুন = কোন রসূল (০৫: ১২)/ (শেষপর্যায়ে) একজন রসূল (= মুহাম্মাদ/ আহমাদ ০৭: ১৫৭, ৬১: ০৬, ০২: ১০১)। মুসাদ্দিক্বাল লিমা মাআকুম = তোমাদের সাথে যা আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। লাতু’মিনুন্না বিহী = (তখন) তোমরা (যারা তখন থাকবে) অবশ্যই তার প্রতি ঈমান রাখবে। ওয়া = আর। লাতানছুরান্নাহু = তাকে সাহায্য করবে। ক্বলা = তিনি বলেছেন। আআক্বরারতুম = তোমরা কি সম্মতি প্রকাশ করলে? ওয়া = আর। আখাজতুম = তোমরা কি গ্রহণ করলে। আলা যালিকুম = এ সম্পর্কে। ইসরী = আমার দেয়া দায়িত্বভার? ক্বলূ = তারা বলেছে। আক্বরারনা = আমরা সম্মতি প্রকাশ করলাম। ক্বলা = তিনি বলেছেন। ফাশহাদূ = তোমরা সাক্ষী থাকো। ওয়া = আর। আনা = আমিও। মাআকুম = তোমাদের সাথে। মিনাশ শাহিদীন = সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আল্লাহ গ্রহণ করেছেন নবীদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ‘যা আমি তোমাদেরকে দিয়েছি কিতাব ও হিকমাত থেকে তারপর (যখন) তোমাদের কাছে আসবে কোন রসূল (০৫: ১২)/ (শেষপর্যায়ে) একজন রসূল (= মুহাম্মাদ/ আহমাদ ০৭: ১৫৭, ৬১: ০৬, ০২: ১০১) তোমাদের সাথে যা আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী (তখন) তোমরা (যারা তখন থাকবে) অবশ্যই তার প্রতি ঈমান রাখবে আর তাকে সাহায্য করবে’। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, ‘তোমরা কি সম্মতি প্রকাশ করলে? আর তোমরা কি গ্রহণ করলে এ সম্পর্কে আমার দেয়া দায়িত্বভার?’ তারা বলেছে, ‘আমরা সম্মতি প্রকাশ করলাম’। তিনি বলেছেন, ‘তোমরা সাক্ষী থাকো। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত।
৩:৮২
ফামান = তারপর। মান = যে। তাওয়াল্লা = মুখ ফিরিয়ে নিবে। বা’দা যালিকা = এরপরও। ফাউলায়িকা হুমুল ফাছিক্বূন = তবে তারাই হবে ফাছিক্ব/ সত্যত্যাগী।
তারপর যে মুখ ফিরিয়ে নিবে এরপরও, তবে তারাই হবে ফাছিক্ব/ সত্যত্যাগী।
৩:৮৩
আফা = তবে কি? গাইরা দ্বীনিল্লাহি = আল্লাহর দ্বীন/ আল্লাহপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোন দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা। ইয়াবগূনা = তারা তালাশ করছে? ওয়া = অথচ। লাহু = তাঁরই উদ্দেশ্যে। আছলামা = ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছে। মান = যা কিছু আছে। ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহে ও জমিনে। তওয়াওঁ ওয়া কারহাও = ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। ইয়ুরজাঊনা = তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
তবে কি আল্লাহর দ্বীন/ আল্লাহপ্রদত্ত জীবনব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোন দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা তারা তালাশ করছে? অথচ তাঁরই উদ্দেশ্যে ইসলাম/ আত্মসমর্পণ করেছে যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও জমিনে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে। আর তাঁরই দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
৩:৮৪
ক্বুল = বলো। আমান্না বিল্লাহি = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি। ওয়া মা উনযিলা আলাইনা = আর (বিশ্বাস করেছি উহার প্রতি) যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর। ওয়া মা উনযিলা আলা ইবরাহীমা ওয়া ইসমাইলা ওয়া ইসহাকা ওয়া ইয়া’কূবা ওয়াল আসবাতি = আর যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক ও ইয়াকুব আর তার বংশধারাসমূহের উপর। ওয়া মা উতিয়া মূসা ওয়া ঈসা = আর যা দেয়া হয়েছে মূসাকে ও ঈসাকে। ওয়ান নাবিয়্যূনা মির রব্বিহিম = আর অন্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে। লা নুফাররিকু বায়না আহাদিম মিনহুম = আমরা তাদের মধ্য হতে কারো মাঝে পার্থক্য করি না। ওয়া নাহনু লাহু মুসলিমূন = আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে (অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে) মুসলিমূন/ আত্মসমর্পনকারী।
বলো, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি আর (বিশ্বাস করেছি উহার প্রতি) যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর আর যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক ও ইয়াকুব আর তার বংশধারাসমূহের উপর আর যা দেয়া হয়েছে মূসাকে ও ঈসাকে আর অন্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে। আমরা তাদের মধ্য হতে কারো মাঝে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে (অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে) মুসলিমূন/ আত্মসমর্পনকারী’।
৩:৮৫
ওয়া = আর। মান = যে। ইয়াবতাগি = তালাশ করে। গাইরাল ইসলামি = ইসলাম ছাড়া। দ্বীনান = (অন্য) কোন দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা। ফালাইঁ ইউক্ববালা মিনহু = তবে তার কাছ থেকে তা কখনো কবুল করা হবে না। ওয়া = আর। হুয়া = সে হবে। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। মিনাল খাছিরীন = ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
আর যে তালাশ করে ইসলাম ছাড়া (অন্য) কোন দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা তবে তার কাছ থেকে তা কখনো কবুল করা হবে না। আর সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।
৩:৮৬
কায়ফা = কিরূপে। ইয়াহদিল্লাহু = আল্লাহ হিদায়াত করবেন। ক্বাওমান = কোন সম্প্রদায়কে। কাফারূ = যারা কুফরি করেছে। বা’দা ঈমানিহিম = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করার পর। ওয়া = অথচ। শাহিদূ = তারা সাক্ষ্য দিয়েছিলো। আন্নার রসূলু = যে, এই রসূল। হাক্কুন = সঠিক। ওয়া = আর। জাআহুমুল বাইয়্যিনাতু = তাদের কাছে এসেছে বাইয়্যিনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়াহদিল কাওমায যালিমীন = হিদায়াত করেন না যালিম সম্প্রদায়কে।
কিরূপে আল্লাহ হিদায়াত করবেন (এরূপ) কোন সম্প্রদায়কে যারা কুফরি করেছে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করার পর, অথচ তারা সাক্ষ্য দিয়েছিলো যে, এই রসূল সঠিক। আর তাদের কাছে এসেছে বাইয়্যিনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম সম্প্রদায়কে।
৩:৮৭
উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। জাযাউহুম = যাদের প্রতিফল। আন্না = এই যে। আলাইহিম = তাদের উপর। লা’নাতাল্লাহি = আল্লাহর অভিশাপ। ওয়াল মালাইকাতি = আর (অভিশাপ) মালাইকার/ ফেরেশতাগণের। ওয়ান্নাছি আজমাঈন = আর সকল মানুষের।
তারাই ঐসব লোক যাদের প্রতিফল এই যে, তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ আর (অভিশাপ) মালাইকার/ ফেরেশতাগণের আর সকল মানুষের।
৩:৮৮
খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। লা = না। ইয়ুখাফফাফু = কমানো হবে। আনহুমু = তাদের থেকে। আল আযাবু = আযাব/ শাস্তি। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়ুনযরুন = অবকাশপ্রাপ্ত হবে।
তারা তাতে স্থায়ী হবে। না কমানো হবে তাদের থেকে আযাব/ শাস্তি আর না তারা অবকাশপ্রাপ্ত হবে।
৩:৮৯
ইল্লাল্লাযীনা = কিন্তু তারা ছাড়া যারা। তাবূ = তাওবা করেছে। মিম বা’দি যালিকা = উহার পর (= কুফরের পর)। ওয়া = আর। আসলাহু = ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করেছে। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। গফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
কিন্তু তারা ছাড়া যারা তাওবা করেছে উহার পর (= কুফরের পর) আর ইসলাহ/ আত্মসংশোধন করেছে। তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
৩:৯০
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। বা’দা ঈমানিহিম = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করার পর। ছুম্মাযদাদূ = তারপর বাড়িয়ে নিয়েছে। কুফরান = কুফর/ অবিশ্বাস। লান তুক্বাব্বালা = কখনো কবুল করা হবে না। তাওবাতুহুম = তাদের তাওবা। ওয়া = আর। উলায়িকা হুমুদ দল্লূন = তারাই দল্লূন/ বিভ্রান্ত।
নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তারা ঈমান/ বিশ্বাস করার পর, তারপর বাড়িয়ে নিয়েছে কুফর/ অবিশ্বাস, কখনো কবুল করা হবে না তাদের তাওবা। আর তারাই দল্লূন/ বিভ্রান্ত।
৩:৯১
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ওয়া = আর। মাতূ = মৃত্যুবরন করেছে। ওয়া = এ অবস্থায় যে। হুম = তারা। কুফফারুন = কাফির ছিলো। ফালাইঁ ইয়ুক্ববালা = কবুল করা হবে না। মিন আহাদিহিম = তাদের কারো থেকেই। মিলউল আরদি = (যদি হয়) পৃথিবীভরা। যাহাবান = স্বর্ণ। ওয়া = আর। লাওউয়িফতাদা = যদি ফিদইয়া দেয়। বিহী = উহা দ্বারা (তবুও)। উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। ওয়া = আর। মা = নেই। লাহুম = তাদের জন্য। মিন = কোন। নাসিরীন = সাহায্যকারী।
নিশ্চয় যারা কুফর করেছে আর মৃত্যুবরন করেছে এ অবস্থায় যে, তারা কাফির ছিলো, কবুল করা হবে না তাদের কারো থেকেই (যদি হয়) পৃথিবীভরা স্বর্ণ আর যদি ফিদইয়া দেয় উহা দ্বারা (তবুও)। তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। আর নেই তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী।
৩:৯২
লান তানালূল বিররা = তোমরা কখনো পুরস্কার পাবে না কোন ভাল কাজের। হাত্তা = যতক্ষণ না। তুনফিক্বূ = তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিম্মা = তা থেকে যা। তুহিব্বূনা = তোমরা (সবচেয়ে) ভালবাসো। ওয়া = আর। মা = যা। তুনফিক্বূ = তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিন সাইয়িন = যে কোন জিনিস থেকে। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। বিহী = তা সম্পর্কে। আলীমুন = আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
তোমরা কখনো পুরস্কার পাবে না কোন ভাল কাজের, যতক্ষণ না তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো তা থেকে যা তোমরা (সবচেয়ে) ভালবাসো। আর যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো যে কোন জিনিস থেকে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
৩:৯৩
কুল্লুত তআমি = সকল (পবিত্র) খাদ্য। কানা হিল্লান = হালাল/ বৈধ ছিলো। লিবানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলের জন্য। ইল্লা = উহা ছাড়া। মা = যা। হাররামা = হারাম করেছে। ইসরাইলু = ইসরাইল। আলা নাফসিহী = তার নিজের উপর। মিন ক্বাবলি আন তুনাযযিলাত তাওরাতু = তাওরাত নাযিল হওয়ার আগে। ক্বুল = বলো। ফা’তূ = তোমরা নিয়ে আসো। বিততাওরাতি = তাওরাত। ফাতলূহা = তারপর তা তিলাওয়াত/ পাঠ করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিকীন = সত্যবাদী।
সকল (পবিত্র) খাদ্য হালাল/ বৈধ ছিলো বানী ইসরাইলের জন্য উহা ছাড়া যা হারাম করেছে ইসরাইল তার নিজের উপর তাওরাত নাযিল হওয়ার আগে। বলো, ‘তোমরা নিয়ে আসো তাওরাত, তারপর তা তিলাওয়াত/ পাঠ করো, যদি তোমরা হও সত্যবাদী’। (০৪: ১৬০, ০৬: ১৪৬, ১৬: ১১৮, ০৭: ১৫৭)
৩:৯৪
ফামানিফতারা = সুতরাং যারা রচনা করে। আলাল্লাহি = আল্লাহর সম্পর্কে। কাযিবা = মিথ্যা কথা। মিম বা’দি যালিকা = এরপরও। ফাউলায়িকা হুমুয যালিমূন = তারাই যালিম/ অত্যাচারী।
সুতরাং যারা রচনা করে আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা কথা এরপরও (= আল্লাহর কিতাবের অনুসরণের দাবীদার হওয়ার পরও), তারাই যালিম/ অত্যাচারী।
৩:৯৫
ক্বুল = বলো। সদাক্বাল্লাহু = আল্লাহ সত্য বলেছেন। ফাত্তাবিঊ = তোমরা অনুসরণ করো। মিল্লাতা ইবরাহীমা = মিল্লাতে ইবরাহীম (= ইবরাহীমের ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতি)। হানীফান = সত্যনিষ্ঠ হয়ে (/সে ছিলো সত্যনিষ্ঠ)। ওয়া = আর। মা কানা = সে ছিলো না। মিনাল মুশরিকীন = মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।
বলো, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন। তোমরা অনুসরণ করো মিল্লাতে ইবরাহীম (= ইবরাহীমের ইবাদাতের স্বরূপ ও প্রকৃতি) সত্যনিষ্ঠ হয়ে (/সে ছিলো সত্যনিষ্ঠ)। আর সে ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত’।
৩:৯৬
ইন্না = নিশ্চয়। আওয়ালা বাইতিন = আওয়ালা বাইত/ আদিগৃহ/প্রথম প্রতিষ্ঠান। উদিয়া = (যা) তৈরি করা হয়েছে। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। লাল্লাযী = তা। বিবাক্কাতা = বাক্কাতে অবস্থিত। মুবারাকা = বরকতময়/সমৃদ্ধ হিসেবে। ওয়া = আর। হুদাল্লিল আলামীন = হিদায়াত হিসেবে, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য।
নিশ্চয় আওয়ালা বাইত/ আদিগৃহ/প্রথম প্রতিষ্ঠান (যা) তৈরি করা হয়েছে মানবজাতির জন্য তা বাক্কাতে অবস্থিত, বরকতময়/ সমৃদ্ধ হিসাবে। আর হিদায়াত হিসেবে। সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য।
৩:৯৭
ফীহি = উহার ক্ষেত্রে (= আদিগৃহের ক্ষেত্রে) আছে। আয়াতুন বাইয়িনাতুন = আয়াতুন বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণবহ আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ। মাক্বামু ইবরাহীমু = মাকামে ইবরাহীম/ ইবরাহীমের অবস্থান প্রতিষ্ঠার অঞ্চল। ওয়া = আর। মান = যে। দাখালাহু = উহাতে (= আদিগৃহে) দাখিল/ প্রবেশ করবে। কানা = সে হবে। আমিনান = আমিনান/ নিরাপদ। ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যে। আলান্নাছি = মানুষের উপর দায়িত্ব হচ্ছে। হিজ্জুল বাইতু = এ ঘরের হজ্জ (= কনফারেন্সে/ সম্মেলনে অংশগ্রহণ) করা। মানিছতাতাআ = যে সামর্থ রাখে। ইলাইহি = উহার কাছে পৌঁছার। ছাবীলা = পথের (যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজন পূরণের)/ উপায়-উপকরণের। ওয়া = আর। মান = যে। কাফারা = কুফর/ অবিশ্বাস করে। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। গানিইউন আনিল আলামীন = সমগ্র বিশ্ববাসীর থেকে অমুখাপেক্ষী।
উহার ক্ষেত্রে (= আদিগৃহের ক্ষেত্রে) আছে আয়াতুন বাইয়্যিনাতুন/ সুস্পষ্ট প্রমাণবহ আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ, (যেমন) মাকামে ইবরাহীম/ ইবরাহীমের অবস্থান প্রতিষ্ঠার অঞ্চল। আর যে উহাতে (= আদিগৃহে) দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে সে হবে আমিনান/ নিরাপদ। আর আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেেশ্যে মানুষের উপর দায়িত্ব হচ্ছে, এ ঘরের হজ্জ (= কনফারেন্সে/ সম্মেলনে অংশগ্রহণ) করা, যে সামর্থ রাখে উহার কাছে পৌঁছার পথের (যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজন পূরণের)/ উপায়-উপকরণের। আর যে কুফর/ অবিশ্বাস করে তবে নিশ্চয় আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসীর থেকে অমুখাপেক্ষী।
৩:৯৮
ক্বুল = বলো। ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লিমা = কেন। তাকফুরূনা = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করো। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমুহের প্রতি। ওয়াল্লাহু শাহীদুন আলা মা তা’মালূন = আল্লাহ সাক্ষী থাকেন তোমরা যে আমল/ কাজ করো তা সম্পর্কে।
বলো, ‘হে আহলে কিতাব, কেন তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করো আল্লাহর আয়াতসমুহের প্রতি? আল্লাহ সাক্ষী থাকেন তোমরা যে আমল/ কাজ করো তা সম্পর্কে’।
৩:৯৯
ক্বুল = বলো। ইয়া আহলাল কিতাবি = হে আহলে কিতাব। লিমা = কেন। তাসুদ্দূনা = তোমরা বাধা দাও। আন ছাবীলিল্লাহি = ছাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে। মান = ঐ ব্যক্তিকে যে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। তাবগূনাহা = (তোমরা বাধা দিতে চাচ্ছো) উহাতে (= ঐ পথে) তালাশ করে। ইওয়াজা = বক্রতা। ওয়া = অথচ। আনতুম = তোমরা। শুহাদাআ = সাক্ষী আছো (যে, উহাতে কোন বক্রতা নেই)। ওয়া মাল্লাহু বিগাফিলিন আম্মা তা’মালূন = আর আল্লাহ গাফেল/ উদাসীন নন তোমাদের আমলের বিষয়ে।
বলো, ‘হে আহলে কিতাব, কেন তোমরা বাধা দাও ছাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে ঐ ব্যক্তিকে যে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে? (তোমরা বাধা দিতে চাচ্ছো) উহাতে (= ঐ পথে) তালাশ করে বক্রতা। অথচ তোমরা সাক্ষী আছো (যে, উহাতে কোন বক্রতা নেই)। আর আল্লাহ গাফেল/ উদাসীন নন তোমাদের আমলের বিষয়ে।
৩:১০০
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইন = যদি। তুতীঊ = তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো। ফারীক্বাম মিনাল্লাযীনা উতুল কিতাবা = যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যকার কোন দলের। ইয়ারুদ্দূকুম = (তবে) তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে/ মুরতাদ করে দেবে। বা’দা ঈমানিকুম = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করার পরে। কাফিরীন = কাফির হিসাবে।
হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যদি তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যকার কোন দলের, তবে তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে/ মুরতাদ করে দেবে তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করার পরে কাফির হিসাবে।
৩:১০১
ওয়া = আর। কাইফা = কিরূপে। তাকফুরূনা = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করবে। ওয়া = অথচ। তুতলা আলাইকুম = তোমাদের কাছে তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয়। আয়াতুল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহ। ওয়া = আর। ফীকুম = তোমাদের মধ্যে অবস্থান করছে। রাসূলুহু = তাঁর রাসূল। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াতাসিম বিল্লাহি = যে আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধরে। ফাক্বাদ = তবে নিশ্চয়। হুদিয়া = তাকে হিদায়াত করা হয়। ইলা সিরাতিম মুছতাক্বীম = সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের দিকে।
আর কিরূপে তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করবে, অথচ তোমাদের কাছে তিলাওয়াত/ পাঠ করা হয় আল্লাহর আয়াতসমূহ আর তোমাদের মধ্যে অবস্থান করছে তাঁর রাসূল? আর যে (কুরআন আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে) আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধরে তবে নিশ্চয় তাকে হিদায়াত করা হয় সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের দিকে।
৩:১০২
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানুত তাক্বুল্লাহা = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। হাক্কা তুক্বাতিহী = যেমন তাঁকে ভয় করা উচিত। ওয়া = আর। লা তামূতুন্না = তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমূন = মুসলিমূন/ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী না হয়ে।
হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেমন তাঁকে ভয় করা উচিত। আর তোমরা মৃত্যুবরণ করো না মুসলিমূন/ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী না হয়ে।
৩:১০৩
ওয়া’তাসিমূ = আর তোমরা আঁকড়ে ধরো। বিহাবলিল্লাহি = আল্লাহর রজ্জুকে/ দড়িকে। জামীআ = সবাই একত্র হয়ে। ওয়া = আর। লা তাফাররাক্বূ = তোমরা বিভিন্ন ফেরকায়/ দলে দলে ভাগ হয়ো না। ওয়াযকুরূ = আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতাল্লাহি আলাইকুম = তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত। ইয = যখন। কুনতুম = তোমরা ছিলে। আ’দাআন = (একজন অন্যজনের) শত্রু। ফাআল্লাফা = তারপর তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন। বায়না ক্বুলূবুকুম = তোমাদের কলবসমূহের মধ্যে (গভীর সম্পর্ক)। ফাআসবাহতুম = তাই তোমাদের (জাতীয় জীবনের) প্রভাত হয়েছে। বিনি’মাতিহী = তাঁর নিয়ামতের দ্বারা। ইখওয়ানান = ভাই ভাই রূপে। ওয়া = আর। কুনতুম = তোমরা ছিলে। আলা শাফা হুফরাতিম মিনান নারি = আগুনের চুল্লীর/ চুলার কিনারার উপর। ফাআনক্বাযাকুম = তারপর তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে এনেছেন। মিনহা = তা থেকে। কাযালিকা = এভাবেই। ইউবাইয়্যিনুল্লাহু = আল্লাহ বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। আয়াতিহি = তাঁর আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম তাহতাদূন = যেন তোমরা হিদায়াত পেতে পার।
আর তোমরা আঁকড়ে ধরো আল্লাহর রজ্জুকে/ দড়িকে সবাই একত্র হয়ে। আর তোমরা বিভিন্ন ফেরকায়/ দলে দলে ভাগ হয়ো না। আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো তোমাদের উপর আল্লাহর নিয়ামত, যখন তোমরা ছিলে (একজন অন্যজনের) শত্রু, তারপর তিনি মিলিয়ে দিয়েছেন তোমাদের কলবসমূহের মধ্যে (গভীর সম্পর্ক), তাই তোমাদের (জাতীয় জীবনের) প্রভাত হয়েছে তাঁর নিয়ামতের দ্বারা ভাই ভাই রূপে। আর তোমরা ছিলে আগুনের চুল্লীর/ চুলার কিনারার উপর তারপর তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে এনেছেন তা থেকে। এভাবেই আল্লাহ বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ যেন তোমরা হিদায়াত পেতে পার।
৩:১০৪
ওয়ালতাকুম = আর থাকতে হবে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে (= মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকে)। উম্মাতুন = একটি উম্মাহ। ইয়াদঊনা ইলাল খায়ের = যারা (তাদের উপর অর্পিত নির্বাহী দায়িত্ব পালনার্থে) (১) খায়ের/ উত্তম বিষয়ের (= কুরআনের) দিকে ডাকবে। ওয়া ইয়া’মুরূনা বিল মা’রূফি = আর (২) ন্যায়ের আদেশ দেবে/ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবে। ওয়া ইয়ানহাওনা আনিল মুনকারি = আর (৩) অন্যায় থেকে বিরত রাখবে/ অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করবে। ওয়া = আর। উলায়িকা হুমুল মুফলিহূনা = এরূপ লোকেরাই মুফলিহূন/ সফলতালাভকারী।
আর থাকতে হবে তোমাদের মধ্য থেকে (= মুসলিম উম্মাহর মধ্য থেকে) একটি উম্মাহ। যারা (তাদের উপর অর্পিত নির্বাহী দায়িত্ব পালনার্থে) (১) খায়ের/ উত্তম বিষয়ের (= কুরআনের) দিকে ডাকবে। আর (২) ন্যায়ের আদেশ দেবে/ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবে। আর (৩) অন্যায় থেকে বিরত রাখবে/ অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করবে। আর এরূপ লোকেরাই মুফলিহূন/ সফলতালাভকারী।
৩:১০৫
ওয়া = আর। লা তাকূনূ = তোমরা হয়ো না। কাল্লাযীনা = তাদের মতো যারা। তাফাররাক্বূ = বিভিন্ন ফেরকায়/ দলে দলে ভাগ হয়েছে। ওয়াখতালাফূ = আর মতপার্থক্য করেছে। মিম বা’দি মা জাআহুমুল বাইয়্যিনাতু = উহার পরও যা তাদের কাছে এসেছে বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসাবে। ওয়া = আর। উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। আযাবুন আযীম = আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
আর তোমরা হয়ো না তাদের মতো যারা বিভিন্ন ফেরকায়/ দলে দলে ভাগ হয়েছে আর মতপার্থক্য করেছে উহার পরেও যা তাদের কাছে এসেছে বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ হিসাবে (= তারা সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও তা গ্রহণ না করে দলে দলে ভাগ হয়েছে ও মতপার্থক্য করেছে)। আর তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
৩:১০৬
ইয়াওমা = সেদিন। তাবইয়াদ্দু = সাদা/ উজ্জল হবে। উজুহুন = অনেক মুখমন্ডল। ওয়া = আর। তাছওয়াদ্দু = কালো/ মলিন হবে। উজূহুন = অনেক মুখমন্ডল। ফাআম্মাল্লাযীনাছওয়াদ্দাত উজূহুহুম = তারপর যাদের মুখমন্ডল কালো/ মলিন হবে। আকাফারতুম = (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি কুফর/ অবিশ্বাস করেছো? বা’দা ঈমানিকুম = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করার পরও। ফাযুক্বূল আযাবা = সুতরাং তোমরা আযাবের/ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো। বিমা = কারণ। কুনতুম তাকফুরুন = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করতে।
সেদিন সাদা/ উজ্জল হবে অনেক মুখমন্ডল আর কালো/ মলিন হবে অনেক মুখমন্ডল। তারপর যাদের মুখমন্ডল কালো/ মলিন হবে (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা কি কুফর/ অবিশ্বাস করেছো তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করার পরও? সুতরাং তোমরা আযাবের/ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করো; কারণ, তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করতে’।
৩:১০৭
ওয়া আম্মাল্লাযীনাবইয়াদ্দাত উজূহুহুম = আর যাদের মুখমন্ডল সাদা/ উজ্জল হবে। ফাফী রহমাতিল্লাহি = তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। হুম ফীহা খালিদূন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
আর যাদের মুখমন্ডল সাদা/ উজ্জল হবে তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
৩:১০৮
তিলকা = উহা। আয়াতুল্লাহি = আল্লাহর আয়াত। নাতলূহা = তা আমরা তিলাওয়াত/ পাঠ করছি। আলাইকা = তোমার কাছে। বিল হাক্কি = যথাযথভাবে। ওয়া মাল্লাহু ইইরিদু = আর আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন না। যুলমাল লিল আলামীন = যুলম করতে বিশ্ববাসীদের প্রতি।
উহা আল্লাহর আয়াত, তা আমরা তিলাওয়াত/ পাঠ করছি তোমার কাছে যথাযথভাবে। আর আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন না যুলম করতে বিশ্ববাসীদের প্রতি।
৩:১০৯
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা ফিছ ছামাওয়াতি = যা কিছু আছে আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা ফিল আরদি = যা কিছু আছে জমিনে। ওয়া = আর। ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকেই। তুরজাউল উমূর = ফিরিয়ে নেয়া হয় সকল বিষয়।
আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা কিছু আছে আসমানসমূহে আর যা কিছু আছে জমিনে। আর আল্লাহর দিকেই ফিরিয়ে নেয়া হয় সকল বিষয়।
৩:১১০
কুনতুম = তোমরাই। খায়রা উম্মাতিন = খায়রা উম্মাহ/ উত্তম জাতি। উখরিজাত = তোমাদেরকে বের করা হয়েছে/ তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। লিন্নাছি = মানুষের কল্যাণের জন্য। তা’মুরূনা বিল মা’রূফি = (১) তোমরা ন্যায়ের আদেশ দেবে/ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবে। ওয়া তানহাওনা আনিল মুনকারি = আর (২) তোমরা অন্যায় থেকে বিরত রাখবে/ অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করবে। ওয়া তু’মিনূনা বিল্লাহি = আর (৩) তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস রাখবে আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। লাও = যদি। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস রাখতো। আহলাল কিতাবি = আহলে কিতাব। লাকানা = অবশ্যই তা হতো। খায়রাল্লাহুম = তাদের জন্য উত্তম বিষয়। মিনহুমুল মু’মিনূনা = তাদের মধ্য থেকে কিছু আছে মু’মিন। ওয়া = আর। আকছারুহুমুল ফাছিক্বূন = তাদের অধিকাংশই ফাছিক্ব/ সত্যত্যাগী।
তোমরাই খায়রা উম্মাহ/ উত্তম জাতি, তোমাদেরকে বের করা হয়েছে/ তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। (১) তোমরা ন্যায়ের আদেশ দেবে/ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করবে। আর (২) তোমরা অন্যায় থেকে বিরত রাখবে/ অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করবে। আর (৩) তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস রাখবে আল্লাহর প্রতি। আর যদি ঈমান/ বিশ্বাস রাখতো আহলে কিতাব, অবশ্যই তা হতো তাদের জন্য উত্তম বিষয়। তাদের মধ্য থেকে কিছু আছে মু’মিন আর তাদের অধিকাংশই ফাছিক্ব/ সত্যত্যাগী।
৩:১১১
লাইঁ ইয়াদুররূকুম = তারা কখনো তোমাদের (গুরুতর) ক্ষতি করতে পারবে না। ইল্লা আযান = (সামান্য) কষ্ট দেয়া ছাড়া। ওয়া = আর। ইন = যদি। ইউক্বাতিলূকুম = তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে। ইউওয়াল্লূকুম আদবারা = তাহলে তারা তোমাদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে পালিয়ে যাবে। ছুম্মা = তারপর। লা ইউনসরূনা = তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।
তারা কখনো তোমাদের (গুরুতর) ক্ষতি করতে পারবে না, (সামান্য) কষ্ট দেয়া ছাড়া (= সামান্য কষ্ট দিতে পারবে, গুরুতর ক্ষতি করতে পারবে না)। আর যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে, তাহলে তারা তোমাদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে পালিয়ে যাবে। তারপর তাদেরকে সাহায্যও করা হবে না।
৩:১১২
দুরিবাত = আপতিত হয়েছে। আলাইহিম = তাদের উপর। আয যিল্লাতু = যিল্লাত/ অপমান। আয়না মা = যেখানেই। ছুক্বিফূ = তাদেরকে পাওয়া গেছে। ইল্লা বিহাবলিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া রজ্জু (আঁকড়ে ধরা) ছাড়া। ওয়া = আর। হাবলিম মিনান্নাছি = মানুষের পক্ষ থেকে পাওয়া রজ্জু (আঁকড়ে ধরা) ছাড়া। ওয়া = আর। বাঊ = তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে। বিগাদাবিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্ট গদবে/ গযবে/ ক্রোধে। ওয়া = আর। দুরিবাত = আপতিত হয়েছে। আলাইহিম = তাদের উপর। আল মাছকানাতু = মিসকীনের অবস্থা/ নি:স্বতা। যালিকা বিআন্নাহুম = উহা এ কারণে যে তারা…। কানূ ইয়াকফুরুনা = তারা কুফর/ অবিশ্বাস করতো। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। ইয়াক্বতুলূনাল আম্বিয়াআ = তারা ক্বতল/ হত্যা করতো নবীদেরকে। বিগাইরিল হাক্বক্বি = অন্যায়ভাবে/ যার কোন অধিকারই তাদের ছিল না/ সম্পুর্ণ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে। যালিকা = উহা। বিমা = এ কারণে যে…। আসাও = তারা অবাধ্যতা করেছে। ওয়া = আর। কানূ ইয়া’তাদূনা = তারা সীমালংঘন করতো।
আপতিত হয়েছে তাদের উপর যিল্লাত/ অপমান যেখানেই তাদেরকে পাওয়া গেছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া রজ্জু (আঁকড়ে ধরা) ছাড়া আর মানুষের পক্ষ থেকে পাওয়া রজ্জু (আঁকড়ে ধরা) ছাড়া। আর তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্ট গদবে/ গযবে/ ক্রোধে। আর আপতিত হয়েছে তাদের উপর মিসকীনের অবস্থা/ নি:স্বতা। উহা এ কারণে যে, তারা কুফর/ অবিশ্বাস করতো আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি আর তারা ক্বতল/ হত্যা করতো নবীদেরকে অন্যায়ভাবে/ যার কোন অধিকারই তাদের ছিল না/ সম্পুর্ণ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে। উহা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছে আর তারা সীমালংঘন করতো।
৩:১১৩
লাইছূ ছাওয়াউন = তারা সকলে সমান নয়। মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্য থেকে আছে। উম্মাতুন ক্বায়িমাতুন = উম্মাতুন ক্বায়িমাতুন/ (ন্যায়ের উপর) প্রতিষ্ঠিত উম্মাহ। ইয়াতলূনা আয়াতিল্লাহি = তারা তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করে আল্লাহর আয়াতসমূহ। আনাআল লাইরি = রাতের বেলায়। ওয়া = আর। হুম = তারা। ইয়াছজুদূন = (আল্লাহকে) সিজদা করে।
তারা সকলে সমান নয়। আহলে কিতাবের মধ্য থেকে আছে উম্মাতুন ক্বায়িমাতুন/ (ন্যায়ের উপর) প্রতিষ্ঠিত উম্মাহ। তারা তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করে আল্লাহর আয়াতসমূহ রাতের বেলায়। আর তারা (আল্লাহকে) সিজদা করে।
৩:১১৪
ইউ’মিনূনা = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ওয়া ইয়া’মুরূনা বিল মা’রূফি = আর ন্যায়ের আদেশ দেয়/ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া ইয়ানহাওনা আনিল মুনকারি = আর অন্যায় থেকে বিরত রাখে/ অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে। ওয়া ইউছারিঊনা ফিল খায়রাত = আর তারা দ্রুত ধাবিত হয় খায়রাত/ কল্যাণকর কাজে। ওয়া = আর। উলায়িকা = তারা। মিনাস সালিহীন = সালিহীন/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসের প্রতি। আর ন্যায়ের আদেশ দেয়/ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করে আর অন্যায় থেকে বিরত রাখে/ অন্যায়ের প্রতিরোধ ও প্রতিকার করে। আর তারা দ্রুত ধাবিত হয় খায়রাত/ কল্যাণকর কাজে আর তারা সালিহীন/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
৩:১১৫
ওয়া = আর। মা = যা। ইয়াফআলূ = তারা করে। মিন খায়রিন = খায়ের/ কল্যাণকর কাজ থেকে। ফালাইঁ ইয়াকফারূহু = কখনো তা অস্বীকার করা হবে না। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলীমুম বিল মুত্তাকীন = মুত্তাকীদের সম্পর্কে জানেন।
আর যা তারা করে খায়ের/ কল্যাণকর কাজ থেকে, কখনো তা অস্বীকার করা হবে না। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের সম্পর্কে জানেন।
৩:১১৬
ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ = নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। লান তুগনিয়া আনহুম = না তাদেরকে উপকার দেবে। আমওয়ালুহুম = তাদের মালসমূহ। ওয়া লা আওলাদুহুম = আর না তাদের আওলাদ/ সন্তান সন্ততি। মিনাল্লাহি = আল্লাহর (শাস্তি) থেকে (বাঁচাতে)। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুন নারি = আসহাবুন নার (= জাহান্নামের আগুনে যারা শাস্তি পাবে)। হুম ফীহা খালিদীন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে না তাদেরকে উপকার দেবে তাদের মালসমূহ আর না তাদের আওলাদ/ সন্তান সন্ততি, আল্লাহর (শাস্তি) থেকে (বাঁচাতে), কিছুমাত্রও। আর তারাই আসহাবুন নার (= জাহান্নামের আগুনে যারা শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
৩:১১৭
মাছালু = উহার উপমা (দেয়া হচ্ছে)। মা ইউনফিক্বূনা = যা তারা ইনফাক্ব/ ব্যয় করে। ফী হাযিহিল দুনইয়া = এই দুনিয়াতে। কামাছালি রীহিন = বায়ুর (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো। ফীহি = যার মধ্যে আছে। সিররুন = ভীষণ ঠান্ডা। আসাবাত হারছা ক্বাওমিন = উহা প্রবাহিত হয় ঐ ক্বাওমের ক্ষেতে। যলামূ = যারা যুলম করেছে। আনফুছাহুম = তাদের নিজেদের উপর। ফাআহলাকাতহু = তারপর তাকে হালাক/ ধ্বংস করে দেয়। ওয়া = আর। মা যলামাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদের উপর যুলম করেননি। ওয়ালাকিন = কিন্তু। আনফুছাহুম = তারা তাদের নিজেদের উপর। ইয়াযলিমূন = যুলম করতো।
উহার উপমা (দেয়া হচ্ছে) যা তারা ইনফাক্ব/ ব্যয় করে এই দুনিয়াতে, (আর তা হচ্ছে) বায়ুর (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো যার মধ্যে আছে ভীষণ ঠান্ডা, উহা প্রবাহিত হয় ঐ ক্বাওমের ক্ষেতে যারা যুলম করেছে তাদের নিজেদের উপর, তারপর তাকে হালাক/ ধ্বংস করে দেয়। আর আল্লাহ তাদের উপর যুলম করেননি। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের উপর যুলম করতো।
৩:১১৮
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাত্তাখিজূ = তোমরা গ্রহণ করো না। বিতনাতান = অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে। মিন দূনিকুম = তোমাদের নিজেদেরকে ছাড়া (অর্থাৎ শুধু মু’মিনদেরকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে)। লা ইয়া’লূনাকুম খাবালান = তারা তোমাদেরকে বিপন্ন করার কোন সুযোগ ছাড়ে না। ওয়াদ্দূ = তারা তা-ই কামনা করে। মা আনিত্তুম = যা দ্বারা তোমরা দু:খ কষ্টে পড়ো। ক্বাদ = নিশ্চয়। বাদাতিল বাগদাউ = প্রকাশ পেয়েছে তাদের বিদ্বেষ। মিন আফওয়াহিহিম = তাদের মুখগুলো থেকে। ওয়া = আর। মা তুখফী = যা তারা গোপন রাখে। ছুদূরুহুম = তাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে। আকবারু = তা অনেক বড় ধরনের (বিদ্বেষপূর্ণ) বিষয়। ক্বাদ = নিশ্চয়। বাইয়্যান্না = আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। লাকুমুল আয়াতি = তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা। তা’ক্বিলূন = আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা গ্রহণ করো না অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে তোমাদের নিজেদেরকে ছাড়া (অর্থাৎ শুধু মু’মিনদেরকেই অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা যাবে)। তারা তোমাদেরকে বিপন্ন করার কোন সুযোগ ছাড়ে না। তারা তা-ই কামনা করে যা দ্বারা তোমরা দু:খ কষ্টে পড়ো। নিশ্চয় প্রকাশ পেয়েছে তাদের বিদ্বেষ তাদের মুখগুলো থেকে। আর যা তারা গোপন রাখে তাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে তা অনেক বড় ধরনের (বিদ্বেষপূর্ণ) বিষয়। নিশ্চয় আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ যদি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো।
৩:১১৯
হাআনতুম হাউলায়ি = তোমরাই তো ঐসব লোক যারা। তুহিব্বূনাহুম = তাদেরকে ভালোবাসো। ওয়া = অথচ। লা ইউহিব্বূনাকুম = তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। ওয়া = অথচ। তু’মিনূনা = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিল কিতাবি কুল্লিহী = সকল (আসমানী) কিতাবের প্রতি। ওয়া = আর। ইযা = যখন। লাক্বূকুম = তারা তোমাদের সাথে মোলাকাত করে। ক্বলূ = তারা বলে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করি। ওয়া = আর। ইযা = যখন। খালাও = (তারা নিজেরা) গোপনে মিলিত হয়। আসসূ = তারা কামড়ায়। আলাইকুমুল আনামিলা = তোমাদের বিরুদ্ধে (নিজেদের) আঙ্গুলকে। মিনাল গাইযি = রাগবশত:। ক্বুল = বলো। মূতূ = তোমরা মরো। বিগাইযিকুম = তোমাদের রাগের দ্বারা। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আলীমুম বিযাতিস সুদূর = আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন) সদরসমূহ/ মস্তিষ্কসমূহ দখলকারী ভাবধারা সম্পর্কে।
তোমরাই তো ঐসব লোক যারা তাদেরকে ভালোবাসো অথচ তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। অথচ তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো সকল (আসমানী) কিতাবের প্রতি। আর যখন তারা তোমাদের সাথে মোলাকাত করে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করি’। আর যখন (তারা নিজেরা) গোপনে মিলিত হয় তারা কামড়ায় তোমাদের বিরুদ্ধে (নিজেদের) আঙ্গুলকে, রাগবশত:। বলো, ‘তোমরা মরো তোমাদের রাগের দ্বারা। নিশ্চয় আল্লাহ আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন) সদরসমূহ/ মস্তিষ্কসমূহ দখলকারী ভাবধারা সম্পর্কে’।
৩:১২০
ইন = যদি। তামছাছকুম = তোমাদেরকে স্পর্শ করে। হাছানাতুন = কোন উত্তম অবস্থা। তাছু’হুম = তাদের খারাপ লাগে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুসিবকুম = তোমাদেরকে আহত করে। ছাইয়্যিআতুন = কোন মন্দ অবস্থা। ইয়াফরাহূ বিহা = তারা উহা দ্বারা আনন্দিত হয়। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাসবিরূ = তোমরা সবর (= ধৈর্য ও অধ্যবসায় অবলম্বন) করো। ওয়া তাত্তাক্বূ = আর তাকওয়া অবলম্বন করো। লা ইয়াদুররুকুম = তাহলে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। কায়দাহুম = তাদের কায়দা কৌশল। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিমা ইয়া’মালূনা = তারা যে আমল করে তা। মুহীত = পরিবেষ্টনকারী।
যদি তোমাদেরকে স্পর্শ করে কোন উত্তম অবস্থা তাদের খারাপ লাগে। আর যদি তোমাদেরকে আহত করে কোন মন্দ অবস্থা তারা উহা দ্বারা আনন্দিত হয়। আর যদি তোমরা সবর (= ধৈর্য ও অধ্যবসায় অবলম্বন) করো আর তাকওয়া (= সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন) করো তাহলে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না তাদের কায়দা কৌশল, কিছুমাত্রও। নিশ্চয় আল্লাহ তারা যে আমল করে তা পরিবেষ্টনকারী।
৩: ১২১
ওয়া ইয = আর (স্মরণ করো) যখন। গাদাওতা = তুমি সকালে বের হয়েছো। মিন আহলিকা = তোমার পরিবার পরিজন থেকে। তুবাওউয়িউল মু’মিনূনা = তুমি বিন্যস্ত করছিলে মু’মিনদেরকে। মাক্বায়িদা = ঘাঁটিসমূহে। লিল ক্বিতালি = কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ছামীউন আলীমুন = ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
আর (স্মরণ করো) যখন তুমি সকালে বের হয়েছো তোমার পরিবার পরিজন থেকে। তুমি বিন্যস্ত করছিলে মু’মিনদেরকে ঘাঁটিসমূহে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। আর আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
৩:১২২
ইয = যখন। হাম্মাত = হিম্মত/ সাহস করেছে। তয়িফাতানি মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে দুটি দল। আন = এ ব্যাপারে যে। তাফসালা = তারা উভয়ে পিছু হটে যাবে। ওয়াল্লাহু = অথচ আল্লাহ। ওয়ালিয়্যুহুম = তাদের উভয়ের ওয়ালি/ অভিভাবক। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু’মিনীন = মু’মিনরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা রাখা উচিত।
যখন হিম্মত/ সাহস করেছে তোমাদের মধ্য থেকে দুটি দল, এ ব্যাপারে যে, তারা উভয়ে পিছু হটে যাবে (= যখন তোমাদের মধ্যকার দুটি দল সাহস হারিয়েছে)। অথচ আল্লাহ তাদের উভয়ের ওয়ালি/ অভিভাবক। আর আল্লাহরই উপর মু’মিনরা তাওয়াক্কুল/ ভরসা রাখা উচিত।
৩:১২৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয় ইতিপূর্বে। নাসারাকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন। বিবাদরিন = বদরে। ওয়া = অথচ। আনতুম = তোমরা ছিলে। আযিল্লাতুন = শোচনীয় অবস্থায়। ফাত্তাক্বুল্লাহ = সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো। লাআল্লাকুম তাশকুরূন = যেন তোমরা (তাঁর সাহায্য পেয়ে) শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
আর নিশ্চয় ইতিপূর্বে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বদরে, অথচ তোমরা ছিলে শোচনীয় অবস্থায়। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো যেন তোমরা (তাঁর সাহায্য পেয়ে) শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
৩:১২৪
ইয = যখন। তাক্বূলু = তুমি বলেছো। লিল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে উদ্দেশ্য করে। আলাইঁ ইয়াকফিয়াকুম = তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয়। আইঁ ইয়ামিদ্দাকুম = যে, তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করবেন। রব্বুকুম = তোমাদের রব/ প্রতিপালক। বিছালাছাতিন আলাফিম মিনাল মালায়িকাতি = তিন হাজার মালাইকা/ ফেরেশতা দিয়ে। মুনযালীন = যাদেরকে নাযিল/ অবতীর্ণ করা হবে।
(সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন তুমি বলেছো মু’মিনদেরকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, (এবারের সংগ্রামে) তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করবেন তোমাদের রব/ প্রতিপালক, তিন হাজার মালাইকা/ ফেরেশতা দিয়ে, যাদেরকে নাযিল/ অবতীর্ণ করা হবে?’
৩:১২৫
বালা = বরং। ইন = যদি। তাসবিরূ = তোমরা সবর (= ধৈর্য ও অধ্যবসায় অবলম্বন) করো। ওয়া = আর। তাত্তাক্বূ = তাকওয়া (= সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন) করো। ওয়া = আর। ইয়া’তূকুম = তারা (ভবিষ্যতে) তোমাদেরকে হামলা করতে আসে। মিন ফাওরিহিম = তড়িঘড়ি করে। হাযা = এরূপ প্রচন্ডতার সাথে। ইউমদিদকুম = তাহলে তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করবেন। রব্বুকুম = তোমাদের রব/ প্রতিপালক। বিখামছাতিন আলাফিম মিনাল মালায়িকাতি = পাঁচ হাজার ফেরেশতা দিয়ে। মুছাওয়িমীন = যারা চিহ্নিত আছে (= রিজার্ভ ফোর্স)।
বরং যদি (এখন থেকে) তোমরা সবর (= ধৈর্য ও অধ্যবসায় অবলম্বন) করো আর তাকওয়া (= সাবধানতা/ আল্লাহভীরুতা অবলম্বন) করো, আর (ভবিষ্যতে) তারা তোমাদেরকে হামলা করতে আসে তড়িঘড়ি করে এরূপ প্রচন্ডতার সাথে, তাহলে তোমাদেরকে মদদ/ সাহায্য করবেন তোমাদের রব/ প্রতিপালক, পাঁচ হাজার মালাইকা/ ফেরেশতা দিয়ে যারা চিহ্নিত আছে (= রিজার্ভ ফোর্স)।
৩:১২৬
ওয়া = আর। মা জায়ালাহুল্লাহু = আল্লাহ উহার (= ফেরেশতা প্রেরণের) ব্যবস্থা করেননি। ইল্লা = এছাড়া যে। বুশরা = তা হবে সুসংবাদ। লাকুম = তোমাদের জন্য। ওয়া = আর। লিতাতমায়িন্না = প্রশান্তি দেয়ার জন্য। ক্বূলূবুকুম = তোমাদের কলবসমূহে। বিহী = উহা (= ঐ ব্যবস্থা) দ্বারা। ওয়া = আর। মান্নাছরু = সাহায্য আসে না। ইল্লা মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া। আল আযীযিল হাকীম = যিনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আর আল্লাহ উহার (= ফেরেশতা প্রেরণের) ব্যবস্থা করেননি এছাড়া যে, তা হবে সুসংবাদ তোমাদের জন্য আর (তা করেছেন) প্রশান্তি দেয়ার জন্য তোমাদের কলবসমূহে উহা (= ঐ ব্যবস্থা) দ্বারা। আর সাহায্য আসে না আল্লাহর পক্ষ থেকে ছাড়া, যিনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
৩:১২৭
লিআক্বতআ = কেটে/ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য। তরাফাম মিনাল্লাযীনা = তাদের একটি তরফকে/ অংশকে/ ভাগকে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। আও = বা। ইয়াকবিতাহুম = তাদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য। ফাইয়ানক্বালিবূ = ফলে তারা পাল্টে যাবে। খায়িবীন = পরাজিত অবস্থায়।
কেটে/ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়ার জন্য তাদের একটি তরফকে/ অংশকে/ ভাগকে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে বা তাদেরকে লাঞ্চিত করার জন্য, ফলে তারা পাল্টে যাবে পরাজিত অবস্থায়।
৩:১২৮
লাইছা লাকা = তোমার অধিকার নেই (ব্যক্তিগতভাবে)। মিনাল আমরি = সিদ্ধান্ত গ্রহণের। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। আও = হয়তো। ইয়াতূবা আলাইহিম = তিনি তাদের তাওবা কবুল করবেন। আও = নয়তো। ইউআযযিবাহুম = তিনি তাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। ফাইন্নাহুম = তবে নিশ্চয় তারা। যালিমূন = যালিম/ অত্যাচারী। [অর্থাৎ তারা এখন পর্যন্ত যালিম হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে অনতিবিলম্বে তাওবা করা (০৪: ১৭-১৮) বা আযাবের জন্য প্রস্তুত থাকার দুটি পথের একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেবেন]।
তোমার অধিকার নেই (ব্যক্তিগতভাবে) সিদ্ধান্ত গ্রহণের, কিছুমাত্রও। হয়তো তিনি তাদের তাওবা কবুল করবেন নয়তো তিনি তাদেরকে আযাব/ শাস্তি দিবেন। তবে নিশ্চয় তারা যালিম/ অত্যাচারী। [অর্থাৎ তারা এখন পর্যন্ত যালিম হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে অনতিবিলম্বে তাওবা করা (০৪: ১৭-১৮) বা আযাবের জন্য প্রস্তুত থাকার দুটি পথের একটিকে বেছে নেয়ার সুযোগ দেবেন]।
৩:১২৯
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা ফিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদ = যা আছে আসমানসমূহে ও যা আছে জমিনে। ইয়াগফিরু = তিনি ক্ষমা করেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (ক্ষমা করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইউআযযিবু = তিনি আযাব/ শাস্তি দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুর রহীমুন = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে ও যা আছে জমিনে। তিনি ক্ষমা করেন যাকে তিনি (ক্ষমা করার) ইচ্ছা করেন। আর তিনি আযাব/ শাস্তি দেন যাকে তিনি (শাস্তি দেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
৩:১৩০
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তা’কুলুর রিবা = তোমরা খেয়ো না রিবা/ সুদ। আদআফাম মুদআফাতান = যা বহুগুণ হয়ে যায় ও ক্রমবর্ধমান থাকে। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। লাআল্লাকুম তুফলিহূন = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।
হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা খেয়ো না রিবা/ সুদ, যা বহুগুণ হয়ে যায় ও ক্রমবর্ধমান থাকে (০২: ২৭৫-২৮১, সর্বপ্রকার সুদ হারাম)। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।
৩:১৩১
ওয়াত্তাকুন্নারা = আর তোমরা বাঁচো (জাহান্নামের) আগুন থেকে। আল্লাতী = যা। উয়িদ্দাত = প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। লিল কাফিরীন = কাফিরদের জন্য।
আর তোমরা বাঁচো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য।
৩:১৩২
ওয়া = আর। আতিউল্লাহা = ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর। ওয়া রাসূলা = আর রাসূলের। লাআল্লাকুম তাত্তাক্বূনা = যেন তোমাদেরকে রহম/ অনুগ্রহ করা হয়।
আর ইতায়াত/ আনুগত্য করো আল্লাহর আর রাসূলের, যেন তোমাদেরকে রহম/ অনুগ্রহ করা হয়।
৩:১৩৩
ওয়া = আর। ছারিঊ = দ্রুত ধাবিত হও। ইলা মাগফিরাতিম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের/ প্রতিপালকের মাগফিরাতের/ ক্ষমার দিকে। ওয়া জান্নাতিন = আর জান্নাতের দিকে। আরদুহাছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = যে জান্নাতের বিশালতা আসমানসমূহ ও পৃথিবী (অর্থাৎ আসমানসমূহ ও পৃথিবীর বিশালতা এবং জান্নাতের বিশালতা সমান, ৫৭: ২১)। উয়িদ্দাত = যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লিল মুত্তাকীন = মুত্তাকীদের/ আল্লাহভীরুদের জন্য।
আর দ্রুত ধাবিত হও তোমাদের রবের/ প্রতিপালকের মাগফিরাতের/ ক্ষমার দিকে আর জান্নাতের দিকে, যে জান্নাতের বিশালতা আসমানসমূহ ও পৃথিবী (অর্থাৎ আসমানসমূহ ও পৃথিবীর বিশালতা এবং জান্নাতের বিশালতা সমান, ৫৭: ২১)। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের/ আল্লাহভীরুদের জন্য।
৩:১৩৪
আল্লাযীনা = যারা। ইউনফিক্বূনা = ইনফাক্ব/ ব্যয় করে। ফিছ ছাররায়ি = সুখে থাকা অবস্থায়/ সচ্ছল অবস্থায়। ওয়াদ দররায়ি = আর কষ্টে থাকা অবস্থায়/ অসচ্ছল অবস্থায়। ওয়াল কাযিমীনা গাইযা = আর তারা নিজের রাগ দমন করে। ওয়াল আফীনা আনিন্নাছি = আর মানুষকে ক্ষমা করে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউহিব্বুল মুহসিনীন = ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।
যারা ইনফাক্ব/ ব্যয় করে সুখে থাকা অবস্থায়/ সচ্ছল অবস্থায় আর কষ্টে থাকা অবস্থায়/ অসচ্ছল অবস্থায়। আর তারা নিজের রাগ দমন করে আর মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।
৩:১৩৫
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইযা = যখন। ফাআলূ ফাহিশাতান = অশ্লীল কাজ করে। আও = অথবা। যলামূ আনফুছাহুম = যুলম করে তাদের নিজেদের উপর। যাকারুল্লাহা = তখনি (অনতিবিলম্বে দ্র: ০৪: ১৭-১৮) আল্লাহকে স্মরণ করে। ফাছতাগফারূ = তারপর আল্লাহর কাছে মাগফিরাত/ মাফ চায়। বিযুনূবিহিম = তাদের পাপের বিষয়ে। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াগফিরুয যুনূবা = কে মাফ করবে পাপ। ইল্লাল্লাহা = আল্লাহ ছাড়া? ওয়া = আর। লাম ইউসিররূ আলা মা ফাআলূ = তারা পুনরাবৃত্তি করে না যা তারা করে ফেলেছে তার ব্যাপারে। ওয়াহুম ইয়া’লামূন = এ অবস্থায় যে, তারা তা জানে (= তারা জেনে বুঝে বারবার পাপ করে না)।
আর যারা যখন অশ্লীল কাজ করে অথবা যুলম করে তাদের নিজেদের উপর, তখনি (অনতিবিলম্বে দ্র: ০৪: ১৭-১৮) আল্লাহকে স্মরণ করে, তারপর আল্লাহর কাছে মাগফিরাত/ মাফ চায় তাদের পাপের বিষয়ে। আর কে মাফ করবে পাপ, আল্লাহ ছাড়া? আর তারা পুনরাবৃত্তি করে না যা তারা করে ফেলেছে তার ব্যাপারে; এ অবস্থায় যে, তারা তা জানে (= তারা জেনে বুঝে বারবার পাপ করে না)।
৩:১৩৬
উলায়িকা = তারাই এমন লোক। জাযাউহুম = যাদের প্রতিফল হিসাবে আছে। মাগফিরাতুম মির রব্বিহিম = তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। ওয়া = আর। জান্নাতুন = জান্নাত/ বাগান। তাজরি মিন তাহতিহা = যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয়। আল আনহারু = নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। ওয়া = আর। নি’মা = (কত যে) নিয়ামতপূর্ণ। আজরুল আমিলীনা = সৎকর্মশীলদের প্রতিফল।
তারাই এমন লোক যাদের প্রতিফল হিসাবে আছে তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা আর জান্নাত/ বাগান, যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আর (কত যে) নিয়ামতপূর্ণ সৎকর্মশীলদের প্রতিফল!
৩:১৩৭
ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত = গত হয়েছে। মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগে। ছুনানুন = অনেক সুন্নাত (= আগের কওমসমূহের প্রতি আল্লাহর অবলম্বিত নীতিসমূহ, ৩৫: ৪৩)। ফাছিরূ = সুতরাং ভ্রমণ করো। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ফানযুরূ = সেই সাথে নজর/ লক্ষ্য করো। কাইফা = কেমন। কানা = হয়েছিলো। আকিবাতুল মুকাযযিবীন = মিথ্যাবাদীদের পরিণাম।
নিশ্চয় গত হয়েছে তোমাদের আগে অনেক সুন্নাত (= আগের কওমসমূহের প্রতি আল্লাহর অবলম্বিত নীতিসমূহ, ৩৫: ৪৩)। সুতরাং ভ্রমণ করো পৃথিবীতে, সেই সাথে নজর/ লক্ষ্য করো, কেমন হয়েছিলো মিথ্যাবাদীদের পরিণাম?
৩:১৩৮
হাযা = ইহা (= কুরআন)। বায়ানুন = বয়ান/ স্পষ্ট বর্ণনা। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। ওয়া = আর। হুদান = হুদা/ হিদায়াত। ওয়া = আর। মাওয়িযাতুন = মাওয়িজাত/ ওয়াজ। লিল মুত্তাকীন = মুত্তাকীদের জন্য।
ইহা (= কুরআন) বয়ান/ স্পষ্ট বর্ণনা মানবজাতির জন্য আর হুদা/ হিদায়াত আর মাওয়িজাত/ ওয়াজ মুত্তাকীদের জন্য।
৩:১৩৯
ওয়া = আর। লা তাহিনূ = তোমরা মনভাঙ্গা হয়ো না। ওয়া = আর। লা তাহযানূ = তোমরা দু:খিত থেকো না। ওয়া = আর। আনতুমুল আ’লাওনা = তোমরাই বিজয়ী হবে। ইন = যদি। কুনতুম মু’মিনীন = তোমরা হও মু’মিনীন।
আর তোমরা মনভাঙ্গা হয়ো না। আর তোমরা দু:খিত থেকো না। আর তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা হও মু’মিনীন।
৩:১৪০
ইইঁ ইয়ামছাছকুম = যদি তোমাদেরকে স্পর্শ করে। ক্বারহুন = কোন আঘাত। ফাক্বাদ = তবে নিশ্চয়। মাছছাল কাওমা = স্পর্শ করেছে ঐ কওমকে। ক্বারহুম মিছলুহূ = উহার (= তোমাদেরকে স্পর্শ করা আঘাতের) অনুরূপ আঘাত। ওয়া = আর। তিলকাল আইয়ামু = এই দিনসমূহ। নুদাউয়িহা = উহাকে আমরা আবর্তিত করি। বায়নান্নাছি = মানুষের মধ্যে। ওয়া = আর। লিইয়া’লামাল্লাহুল্লাযীনা = এজন্য যে, আল্লাহ তাদেরকে প্রকাশ করে দেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। ইয়াত্তাখিজা = তিনি গ্রহণ করেন। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে। সুহাদাআ = শহীদ (= চূড়ান্ত সাক্ষ্যদাতা) হিসাবে (যারা আল্লাহর পথে জীবন বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতাসহ ঈমান রাখে তারাই শহীদ, ৩:১৪০, ৫৭: ১৯)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইউহিব্বুয যালিমীন = ভালোবাসেন না যালিমদেরকে।
যদি তোমাদেরকে স্পর্শ করে কোন আঘাত তবে নিশ্চয় স্পর্শ করেছে ঐ কওমকে উহার (= তোমাদেরকে স্পর্শ করা আঘাতের) অনুরূপ আঘাত। আর এই দিনসমূহ; উহাকে আমরা পর্যায়ক্রমে অদল-বদল করি মানুষের মধ্যে (অর্থাৎ জাতীয় বা ব্যক্তিগত জীবনে জয়-পরাজয় বা আনন্দ-বিষাদ ইত্যাদির দিনসমূহ মানুষের মধ্যে অদল-বদল করা হয়)। আর তা এজন্য যে, আল্লাহ তাদেরকে প্রকাশ করে দেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর তিনি গ্রহণ করেন তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ (= চূড়ান্ত সাক্ষ্যদাতা) হিসাবে। (যারা আল্লাহর পথে জীবন বিলিয়ে দেয়ার মানসিকতাসহ ঈমান রাখে তারাই শহীদ, ৩:১৪০, ৫৭: ১৯)। আর আল্লাহ ভালোবাসেন না যালিমদেরকে।
৩:১৪১
ওয়া = আর। লিইইমাহহিসাল্লাহুল্লাযীনা = তা এজন্য যে, আল্লাহ তাদের থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে খাঁটি-অখাঁটি বাছাই করেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। ইয়ামহাক্বা = তিনি নিরাশ করেন। আল কাফিরীনা = কাফিরদেরকে।
আর তা এজন্য যে, আল্লাহ তাদের থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে খাঁটি-অখাঁটি বাছাই করেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আর তিনি নিরাশ করেন কাফিরদেরকে।
৩:১৪২
আম হাছিবতুম = তোমরা কি হিসাব করে ফেলেছো? আন = যে। তাদখুলুল জান্নাতা = তোমরা জান্নাতে দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে। ওয়া = অথচ। লাম্মা ইয়া’লামিল্লাহুল্লাযীনা = আল্লাহ এখনো প্রকাশ করেননি তাদেরকে যারা। জাহাদূ = জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। ইয়ালামাছ সবিরীন = প্রকাশ করেননি সবরকারীদেরকে (= ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ীদেরকে)।
তোমরা কি হিসাব করে ফেলেছো যে, তোমরা জান্নাতে দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে? অথচ আল্লাহ এখনো প্রকাশ করেননি তাদেরকে যারা জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে তোমাদের মধ্য থেকে আর প্রকাশ করেননি সবরকারীদেরকে (= ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ীদেরকে)।
৩:১৪৩
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। তামান্নাওনাল মাওতা = তোমরা তামান্না/ কামনা করেছো মৃত্যু। মিন ক্বাবলি = ইহার আগে। আন = যেন। তালক্বাওহু = তোমরা উহার সাথে (= মৃত্যুর সাথে) মোলাকাত করতে পারো। ফাক্বাদ = তারপর নিশ্চয়। রআয়তুমূহু = তোমরা উহাকে দেখেছো (= মৃত্যুকে দেখেছো)। ওয়া = এ অবস্থায় যে। আনতুম = তোমরা। তানযুরূন = নজর/ লক্ষ্য করছিলে। (০৪: ৭৭, ০২: ২৪৬)।
আর নিশ্চয় তোমরা তামান্না/ কামনা করেছো মৃত্যু ইহার আগে যেন তোমরা উহার সাথে (= মৃত্যুর সাথে) মোলাকাত করতে পারো। তারপর নিশ্চয় তোমরা উহাকে দেখেছো (= মৃত্যুকে/ মৃত্যুর ফ্যাক্টরকে বা অনুঘটককে দেখেছো) এ অবস্থায় যে, তোমরা নজর/ লক্ষ্য করছিলে। (০৪: ৭৭, ০২: ২৪৬)।
৩:১৪৪
ওয়া = আর। মা মুহাম্মাদুন ইল্লা রসূলুন = মুহাম্মাদ একজন রসূল মাত্র। ক্বাদ = নিশ্চয়। খালাত = (মৃত্যুবরণের বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছে। ক্বাবলিহির রুসুলু = তার আগে রসূলগণ। আফা’ = তবে কি। ইন = যদি। মাওতা = সে মৃত্যুবরণ করে। আও = অথবা। ক্বুতিলান ক্বালাবতুম আলা আ’ক্বাবিকুম = নিহত হয়, তখন তোমরা তোমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যাবে? ওয়া = আর। মাইঁ ইয়ানক্বালিব আলা আক্বিবাইহি = যে তার গোড়ালীর উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। ফালাইঁ ইয়াদুররাল্লাহা = সে আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। ছাইয়াযযিল্লাহুশ শাকিরীন = আল্লাহ শীঘ্রই প্রতিফল দেবেন শাকিরীন/ কৃতজ্ঞদেরকে।
আর মুহাম্মাদ একজন রসূল মাত্র। নিশ্চয় (মৃত্যুবরণের বা নিহত হওয়ার মাধ্যমে) গত হয়েছে তার আগে রসূলগণ। তবে কি যদি সে মৃত্যুবরণ করে অথবা নিহত হয়, তখন তোমরা তোমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যাবে? আর যে তার গোড়ালীর উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়, সে আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর আল্লাহ শীঘ্রই প্রতিফল দেবেন শাকিরীন/ কৃতজ্ঞদেরকে।
৩:১৪৫
ওয়া মা কানা = আর সম্ভব নয়। লিনাফসিন = কোন নফসের/ জীবনসত্তার জন্য। আন = যে। তামূতা = সে মৃত্যুবরণ করে। ইল্লা বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। কিতাবাম মুআজ্জালান = (ঐ অনুমতি হচ্ছে) আজল/ আয়ুর শেষসীমা সম্পর্কিত কিতাব/ (আল্লাহর তৈরি) প্রাকৃতিক বিধান (৩৫: ১১)। ওয়া = আর। মাইঁ ইরিদ = যে এরাদা/ ইচ্ছা করে। ছাওয়াবাদ দুনইয়া = দুনিয়ার সওয়াব/ প্রতিফল পেতে। নু’তিহী = আমরা তাকে দিই। মিনহা = তা থেকে (= দুনিয়া থেকে)। ওয়া = আর। মাইঁ ইউরিদ = যে এরাদা/ ইচ্ছা করে। ছাওয়াবাল আখিরাতি = আখিরাতের সওয়াব/ প্রতিফল পেতে। নু’তিহী = আমরা তাকেও দিই। মিনহা = তা থেকে (= আখিরাতের পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়া থেকে, ৩:১৪৮, ১৭; ১৮-২০, ২৪: ৫৫, ২৮: ৭৭, ০২: ২০১, ০৭: ৩২)। ওয়া ছানাজযিশ শাকিরীন = আর আমরা শীঘ্রই প্রতিফল দেব শাকিরীন/ কৃতজ্ঞদেরকে।
আর সম্ভব নয় কোন নফসের/ জীবনসত্তার জন্য যে, সে মৃত্যুবরণ করে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। (ঐ অনুমতি হচ্ছে) আজল/ আয়ুর শেষসীমা সম্পর্কিত কিতাব/ (আল্লাহর তৈরি) প্রাকৃতিক বিধান (৩৫: ১১)। আর যে এরাদা/ ইচ্ছা করে দুনিয়ার সওয়াব/ প্রতিফল পেতে আমরা তাকে দিই তা থেকে (= দুনিয়া থেকে)। আর যে এরাদা/ ইচ্ছা করে আখিরাতের সওয়াব/ প্রতিফল পেতে আমরা তাকেও দিই তা থেকে (= আখিরাতের পুরস্কারের পাশাপাশি দুনিয়া থেকে, ৩:১৪৮, ১৭; ১৮-২০, ২৪: ৫৫, ২৮: ৭৭, ০২: ২০১, ০৭: ৩২)। আর আমরা শীঘ্রই প্রতিফল দেব শাকিরীন/ কৃতজ্ঞদেরকে।
৩:১৪৬
ওয়া = আর। ক্বাইয়িন মিনান্নাবিয়্যি = কত নবী ছিলো। ক্বাতালা = যারা ক্বিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। মাআহু = তার সাথে ছিলো। রিব্বীয়্যুনা কাছীরা = অনেক রিব্বুয়্যু/ রব্বানী/ রবের বিধান বাস্তবায়নকারী। ফামা ওয়াহানূ = তখন তারা মনভাঙ্গা হয়নি। লিমা আসাবাহুম = এজন্য যে, কখনো কখনো কোন মুসিবত তাদের ওপর ঘটে গেছে (অর্থাৎ যদিও তারা কখনো কখনো মুসিবতে পড়েছে তবুও তারা মনভাঙ্গা হয়নি)। ওয়া = আর। লা দয়িফূ = তারা দুর্বলতা দেখায়নি। ওয়া = আর। মাছতাকানূ = তারা মাথানত করেনি। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউহিব্বুস সাবিরীন = ভালোবাসেন সাবিরীনকে/ ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ীদেরকে।
আর কত নবী ছিলো যারা ক্বিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে, তার সাথে ছিলো অনেক রিব্বুয়্যু/ রব্বানী/ রবের বিধান বাস্তবায়নকারী। তখন তারা মনভাঙ্গা হয়নি এজন্য যে, কখনো কখনো কোন মুসিবত তাদের ওপর ঘটে গেছে (অর্থাৎ যদিও তারা কখনো কখনো মুসিবতে পড়েছে তবুও তারা মনভাঙ্গা হয়নি)। আর তারা দুর্বলতা দেখায়নি আর তারা মাথানত করেনি। আর আল্লাহ ভালোবাসেন সাবিরীনকে/ ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ীদেরকে।
৩:১৪৭
ওয়া = আর। মা কানা ক্বাওলুহুম = তাদের কোন কথা ছিলো না। ইল্লা = এছাড়া। আন = যে। ক্বলূ = তারা বলেছে। রব্বানাগফিরলানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক, আমাদেরকে মাফ করুন। যুনূবানা = আমাদের পাপসমূহ। ওয়া = আর। ইছরাফানা = আপনার দেয়া সীমা যেটুকু লংঘন হয়ে গেছে। ফী আমরিনা = আমাদের কাজের ব্যাপারে। ওয়া = আর। ছাব্বিত = দৃঢ় করুন। আক্বদামানা = আমাদের কদমসমূহ/ পাগুলোকে। ওয়ানসুরনা = আর আমাদেরকে সাহায্য করুন। আলাল ক্বাওমাল কাফিরীন = কাফির কাওমের বিরুদ্ধে।
আর তাদের কোন কথা ছিলো না এছাড়া যে, তারা বলেছে, ‘আমাদের রব/ প্রতিপালক, আমাদেরকে মাফ করুন আমাদের পাপসমূহ আর আপনার দেয়া সীমা যেটুকু লংঘন হয়ে গেছে আমাদের কাজের ব্যাপারে। আর দৃঢ় করুন আমাদের কদমসমূহ/ পাগুলোকে। আর আমাদেরকে সাহায্য করুন কাফির কাওমের বিরুদ্ধে’।
৩:১৪৮
ফাআতাহুমুল্লাহু = তারপর আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন। ছাওয়াবাদ দুনইয়া = দুনিয়ার সওয়াব/ প্রতিফল। ওয়া = আর। হুছনা = আরো উত্তম যা দেবেন। ছাওয়াবিল আখিরাতি = তা হচ্ছে আখিরাতের সওয়াব/ প্রতিফল। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউহিব্বুল মুহসিনীন = ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।
তারপর আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন দুনিয়ার সওয়াব/ প্রতিফল আর আরো উত্তম যা দেবেন তা হচ্ছে আখিরাতের সওয়াব/ প্রতিফল। আর আল্লাহ ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।
৩:১৪৯
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইন = যদি। তুতিঊল্লাযীনা = তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো তাদেরকে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ইয়ারুদ্দূকুম = তাহলে তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে/ মুরতাদ বানিয়ে দেবে। আলা আ’কাবিকুম = তোমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর করিয়ে ঘুরিয়ে। ফাতানক্বালিবূ = সুতরাং তখন তোমরা পাল্টে যেয়ে হয়ে যাবে। খাছিরীন = ক্ষতিগ্রস্ত।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যদি তোমরা ইতায়াত/ আনুগত্য করো তাদেরকে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, তাহলে (অর্থাৎ তোমরা তাদের আনুগত্য করলে) তারা তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেবে/ মুরতাদ বানিয়ে দেবে তোমাদের গোড়ালীসমূহের উপর ভর করিয়ে ঘুরিয়ে। সুতরাং তখন তোমরা পাল্টে যেয়ে হয়ে যাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
৩:১৫০
বালিল্লাহু = বরং আল্লাহ। মাওলাকুম = তোমাদের মাওলা/ অভিভাবক। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। খায়রুন নাসিরীন = উত্তম সাহায্যকারী।
বরং আল্লাহ তোমাদের মাওলা/ অভিভাবক। আর তিনি উত্তম সাহায্যকারী।
৩:১৫১
ছানুলক্বী = শীঘ্রই আমরা ইলকা/ সঞ্চার করবো। ফী ক্বুলুবিল্লাযীনা = তাদের কলবসমূহে যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। রু’বা = ভীতির সঞ্চার। বিমা = কারণ। আশরাকূ = তারা শিরক/ অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর সাথে। মা লাম ইউনাযযিল বিহী = তিনি (আল্লাহ) নাযিল/ অবতরণ করেননি তা সম্পর্কে (= শিরকের পক্ষে)। সুলতানান = কোন সুলতান/ সনদ/ প্রমাণ। ওয়া = আর। মা’ওয়াহুমুন্নার = তাদের (= কাফির ও মুশরিকদের) মা’ওয়া/ আবাস (জাহান্নামের) আগুন। ওয়া = আর। বি’ছা = খুবই নিকৃষ্ট। মাছওয়ায যালিমীন = যালিমদের ঠিকানা।
শীঘ্রই আমরা ইলকা/ সঞ্চার করবো তাদের কলবসমূহে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে, ভীতির সঞ্চার। কারণ তারা শিরক/ অংশীদার সাব্যস্ত করেছে আল্লাহর সাথে। তিনি (আল্লাহ) নাযিল/ অবতরণ করেননি তা সম্পর্কে (= শিরকের পক্ষে) কোন সুলতান/ সনদ/ প্রমাণ। আর তাদের (= কাফির ও মুশরিকদের) মা’ওয়া/ আবাস (জাহান্নামের) আগুন। আর খুবই নিকৃষ্ট যালিমদের ঠিকানা।
৩:১৫২
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। ছদাক্বাকুমুল্লাহু = আল্লাহ সত্যে পরিণত করেছেন। ওয়া’দাহু = তাঁর ওয়াদা। ইয = যখন। তাহুছ্ছূনাহুম = তোমরা তাদেরকে বিনাশ করছিলে। হাত্তা ইযা = যতক্ষণ না। ফাসিলতুম = তোমরা ফিসলাইয়া গেছো/ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছো/ নড়বড়ে হয়ে গেছো। ওয়া = আর। তানাযা’তুম = তোমরা মতবিরোধ করেছো। ফিল আমরি = তোমাদের কাজের ব্যাপারে। ওয়া = আর। আসাইতুম = তোমরা অবাধ্যতা করেছো। মিম বা’দি মা = উহার পর যা। আরাকুম = তিনি তোমাদেরকে দেখিয়েছেন। মা তুহিব্বূন = যা তোমরা ভালোবাসো। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক আছে। মান = যারা। ইউরীদূদ দুনইয়া = এরাদা/ ইচ্ছা করে দুনিয়া পেতে। ওয়া = আর। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক আছে। মান = যারা। ইউরীদুল আখিরাতা =এরাদ/ ইচ্ছা করে আখিরাত পেতে। ছুম্মা = তারপর। সরাফাকুম = তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন। আনহুম = তাদের (প্রতিরোধ করা) থেকে। লিইয়াবতালিয়াকুম = তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয় শেষ পর্যন্ত। আফা = তিনি উদারতা দেখিয়েছেন। আনকুম = তোমাদের প্রতি। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। যুল ফাদলি আলাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের উপর যুল-ফদল/ অনুগ্রহশীল।
আর নিশ্চয় আল্লাহ সত্যে পরিণত করেছেন তাঁর ওয়াদা যখন তোমরা তাদেরকে বিনাশ করছিলে যতক্ষণ না তোমরা ফিসলাইয়া গেছো/ ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছো/ নড়বড়ে হয়ে গেছো আর তোমরা মতবিরোধ করেছো (ঐ পরিস্থিতিতে) তোমাদের কাজের ব্যাপারে আর তোমরা অবাধ্যতা করেছো উহার পর যা তিনি তোমাদেরকে দেখিয়েছেন যা তোমরা ভালোবাসো। তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক আছে যারা এরাদা/ ইচ্ছা করে দুনিয়া পেতে আর তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোক আছে যারা এরাদা/ ইচ্ছা করে আখিরাত পেতে। তারপর তিনি তোমাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন তাদের (প্রতিরোধ করা) থেকে, তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য। আর (তোমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারায়) নিশ্চয় শেষ পর্যন্ত তিনি উদারতা দেখিয়েছেন তোমাদের প্রতি। আর আল্লাহ মু’মিনদের উপর যুল-ফদল/ অনুগ্রহশীল ।
৩:১৫৩
ইয = যখন। তুসঈদূনা = তোমরা ঊর্ধ্বমুখে পালিয়ে যাচ্ছিলে। ওয়া = আর। লা তালঊনা = তোমরা দৃষ্টি ফিরাচ্ছিলে না। আলা আহাদিন = কারো উপর। ওয়ার রসূলা = অথচ রসূল। ইয়াদঊকুম = তোমাদেরকে ডাকছিলো। ফী উখরাকুম = তোমাদের পিছন থেকে। ফাআছাবাকুম = সুতরাং তিনি তোমাদেরকে প্রতিফল দিয়েছেন। গাম্মাম বিগাম্মিম = তোমাদের (ভবিষ্যত) বিষাদ প্রতিরোধের জন্য (তাৎক্ষণিক) বিষাদ। লিকায়লা তাহযানূ = তোমরা দু:খিত না হওয়ার জন্য। আলা মা = উহার উপর যা। ফাতাকুম = তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। ওয়া = আর। লা মা আসাবাকুম = তোমাদের যে মুসিবত ঘটে গেছে তার উপরও দু:খিত না হও। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। খাবীরুম বিমা তা’মালূন = খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) তোমাদের কাজের সম্পর্কে।
যখন তোমরা ঊর্ধ্বমুখে পালিয়ে যাচ্ছিলে আর তোমরা দৃষ্টি ফিরাচ্ছিলে না কারো উপর অথচ রসূল তোমাদেরকে ডাকছিলো তোমাদের পিছন থেকে। সুতরাং তিনি (= আল্লাহ) তোমাদেরকে প্রতিফল দিয়েছেন তোমাদের (ভবিষ্যত) বিষাদ/ দু:খ প্রতিরোধের জন্য (তাৎক্ষণিক) বিষাদ/ দু:খ। তোমরা দু:খিত না হওয়ার জন্য উহার উপর যা তোমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। আর যেন তোমাদের যে মুসিবত ঘটে গেছে তার উপরও দু:খিত না হও। আর আল্লাহ খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) তোমাদের কাজের সম্পর্কে।
৩:১৫৪
ছুম্মা = তারপর। আনযালা = তিনি নাযিল করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। মিম বা’দিল গাম্মি = এই বিষাদের/ দু:খের পর। আমানাতান = নিরাপত্তাবোধ। নুআছান = তন্দ্রারূপে। ইয়াগশা = যা আচ্ছন্ন করে। তয়িফাতাম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার একটি দলকে। ওয়া = আর। তয়িফাতুন = একটি দল। ক্বাদ = নিশ্চয়। আহাম্মাত = (তাদের নিজেদেরকে) উদ্বিগ্ন করেছে। আনফুছাকুম = তাদের নিজেদের জীবনসত্তা রক্ষার ভাবনায়। ইয়াযুন্নূনা = তারা ধারণা করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর সম্পর্কে। গাইরাল হাক্কি = অযৌক্তিকভাবে। যন্নাল জাহিলিয়্যাত = জাহিলিয়াতের ধারণা। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। হাল লানা = আমাদের কি কোন ভূমিকা আছে । মিনাল আমরি = (এরূপ যুদ্ধের) বিষয়ে? ক্বুল = বলো। ইন্নাল আমরা কুল্লুহু = সকল বিষয়ে স্বাধীন ভূমিকা। লিল্লাহি = একমাত্র আল্লাহর। ইউখফূনা = তারা গোপন রাখে। ফী আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের মধ্যে। মা = যে মনোভাব। লা ইউবদূনা = তারা প্রকাশ করে না। লাকা = তোমার কাছে। ইয়াক্বূলূনা = তারা বলে। লাও = যদি। কানা = থাকতো। লানা = আমাদের ভূমিকা। মিনাল আমরি = (এরূপ যুদ্ধের) বিষয়ে। মা ক্বুতিলনা = আমরা নিহত হতাম না (অর্থাৎ আমাদের মধ্য থেকে যারা নিহত হয়েছে তারা নিহত হতো না)। হাহুনা = এখানে। ক্বুল = বলো। লাও = যদি এমন হতো যে। কুনতুম = (যুদ্ধের সময় নিহত হওয়ার ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে না এসে) তোমরা থেকেছো। ফী বুয়ূতিকুম = তোমাদের ঘরসমূহে। লাবারাযা আল্লাযীনা = তাহলেও এমন হতো যে, তারা অবশ্যই বেরিয়েছে (স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়)। কুতিবা আলাইহিমুল ক্বাতলু = যাদের উপর লিখে দেয়া হয়েছে (অস্ত্রের আঘাতে) নিহত হওয়া (অর্থাৎ যারা নিহত হওয়া অবধারিত অস্ত্রের এমন আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে)। ইলা মাদাজিয়িহিম = তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে। ওয়ালিইয়াবতালিয়াল্লাহু = আর উহা ঘটিয়েছেন আল্লাহ পরীক্ষা করার জন্য। মা ফী সুদূরিকুম = কী আছে তোমাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে। ওয়া = আর। লিইউমাহহিসা = সেই ত্রুটি দূর করার জন্য। মা = যা আছে। ফী ক্বুলূবুকুম = তোমাদের কলবসমূহে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলীমুম বিযাতিস সুদূর = সদরসমূহ/ মস্তিষ্কসমূহ দখলকারী ভাবধারা সম্পর্কে জানেন।
তারপর তিনি নাযিল করেছেন তোমাদের উপর এই বিষাদের/ দু:খের পর নিরাপত্তাবোধ তন্দ্রারূপে, যা আচ্ছন্ন করে তোমাদের মধ্যকার একটি দলকে। আর একটি দল, নিশ্চয় (তাদের নিজেদেরকে) উদ্বিগ্ন করেছে তাদের নিজেদের জীবনসত্তা রক্ষার ভাবনায়। তারা ধারণা করেছে আল্লাহর সম্পর্কে অযৌক্তিকভাবে, জাহিলিয়াতের ধারণা। তারা বলে, ‘আমাদের কি কোন ভূমিকা আছে (এরূপ যুদ্ধের) বিষয়ে?’ {অর্থাৎ তারা তাদের ত্রুটির স্বীকৃতি না দিয়ে বরং আল্লাহ তো বলেছেন আমরা বিজয়ী হবো, তাহলে হইনি কেনো? এরূপ ধারণা করে আল্লাহর ওয়াদা সম্পর্কেই সন্দিহান হয়ে পড়েছে। ৩:১৫২ আয়াতেই তাদের সন্দেহের জবাব এসে গেছে}। বলো, ‘সকল বিষয়ে স্বাধীন ভূমিকা একমাত্র আল্লাহর’। {অর্থাৎ কোন বিষয়েই তোমাদের কোন স্বাধীন ভূমিকা নেই বরং সকল বিষয়ে স্বাধীন ভূমিকা একমাত্র আল্লাহর। তিনি যে বিষয়ে যে নিয়ম করে দিয়েছেন তা লংঘন করে তোমরা সে বিষয়ে কৃতকার্য হতে পারবে না। তোমরা কোন বিষয়ে কৃতকার্য হতে হলে তোমাদেরকে স্বীয় ভূমিকা পালন করতে হবে আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরণের মাধ্যমে, তা লংঘন করে নয়। মানুষ (ইতিবাচক বা নেতিবাচক/ সাফল্য বা ব্যর্থতার পথ ধরে) যা করে সে অনুযায়ীই তার প্রাপ্য ঠিক হয় (৫৩: ৩৯)}। তারা গোপন রাখে তাদের নিজেদের মধ্যে যে মনোভাব তারা প্রকাশ করে না তোমার কাছে। তারা বলে, ‘যদি থাকতো আমাদের ভূমিকা (এরূপ যুদ্ধের) বিষয়ে তাহলে আমরা নিহত হতাম না (অর্থাৎ আমাদের মধ্য থেকে যারা নিহত হয়েছে তারা নিহত হতো না) এখানে’। বলো, ‘যদি এমন হতো যে (যুদ্ধের সময় নিহত হওয়ার ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে না এসে) তোমরা থেকেছো তোমাদের ঘরসমূহে, তাহলেও এমন হতো যে, তারা অবশ্যই বেরিয়েছে (স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায়), যাদের উপর লিখে দেয়া হয়েছে (অস্ত্রের আঘাতে) নিহত হওয়া (অর্থাৎ যারা নিহত হওয়া অবধারিত অস্ত্রের এমন আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে), তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে। আর উহা ঘটিয়েছেন আল্লাহ পরীক্ষা করার জন্য কী আছে তোমাদের সদরসমূহে/ মস্তিষ্কসমূহে। আর সেই ত্রুটি দূর করার জন্য যা আছে তোমাদের কলবসমূহে। আর আল্লাহ সদরসমূহ/ মস্তিষ্কসমূহ দখলকারী ভাবধারা সম্পর্কে জানেন।
৩:১৫৫
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। তাওয়াল্লাও = পিছনে ফিরে গিয়েছে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ইয়াওমাল তাক্বাল জামআনি = দুই সেনাবাহিনীর মোকাবেলার দিন। ইন্নামাছ তাযাল্লাহুমুশ শায়তানু = মূলত শয়তান তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছে। বিবা’দি = এমন কিছুর সূত্র ধরে। মা = যা। কাছাবূ = তারা উপার্জন করেছে (অর্থাৎ তাদের কিছু কৃতকর্মের ফলে)। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আফাল্লাহু = আল্লাহ উদারতা দেখিয়েছেন। আনহুম = তাদের প্রতি। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
নিশ্চয় যারা পিছনে ফিরে গিয়েছে তোমাদের মধ্য থেকে দুই সেনাবাহিনীর মোকাবেলার দিন, মূলত শয়তান তাদের পদস্খলন ঘটিয়েছে (= তাদেরকে তাদের যুদ্ধনীতি থেকে বিচ্যুত করেছে) এমন কিছুর সূত্র ধরে যা তারা উপার্জন করেছে (অর্থাৎ তাদের কিছু কৃতকর্মের ফলে)। আর নিশ্চয় আল্লাহ উদারতা দেখিয়েছেন তাদের প্রতি। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
৩:১৫৬
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাকূনূ = তোমরা হয়ো না। কাল্লাযীনা = তাদের মতো যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। ক্বলূ = বলেছে। লিইখওয়ানিহিম = তাদের ভাইদের প্রসঙ্গে। ইযা = যখন। দরাবূ = তারা ভ্রমণ করেছে। ফিল আরদি = জমিনে (আর সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে)। আও = অথবা। কানূ = তারা হয়েছে। গুযযান = গাযওয়া/ যুদ্ধে যোগদানকারী গাজী/ যোদ্ধা (আর সেখানে নিহত হয়েছে)। লাও = (তখন কাফেররা বলে) যদি। কানূ = তারা থাকতো। ইনদিনা = আমাদের কাছে। মা মাতূ = তাহলে তারা মৃত্যুবরণ করতো না। ওয়া = আর। মা কুতিলূ = তারা নিহত হতো না। লিআজআলাল্লাহু = যেন আল্লাহ পরিণত করে দেন। যালিকা = উহাকে। হাছরাতান = আক্ষেপে। ফী ক্বলূবিহিম = তাদের কলবসমূহে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহই। ইউহয়ি = হায়াত/ জীবন দান করেন। ওয়া = আর। ইউমীতু = মওত/ মৃত্যু ঘটান। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা বাছীর = তোমাদের আমলের সম্পর্কে বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা হয়ো না তাদের মতো যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আর বলেছে তাদের ভাইদের প্রসঙ্গে যখন তারা (= তাদের ভাইগণ) ভ্রমণ করেছে জমিনে (আর সেখানে মৃত্যুবরণ করেছে) অথবা তারা হয়েছে গাযওয়া/ যুদ্ধে যোগদানকারী গাজী/ যোদ্ধা (আর সেখানে নিহত হয়েছে), (তখন কাফেররা বলে,) ‘যদি তারা থাকতো আমাদের কাছে তাহলে তারা মৃত্যুবরণ করতো না আর তারা নিহত হতো না’। যেন আল্লাহ পরিণত করে দেন উহাকে আক্ষেপে তাদের কলবসমূহে (অর্থাৎ এরূপ কথার মাধ্যমে কাফিররা জীবন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে না বুঝে হাহুতাশ করতে থাকে)। আর আল্লাহই হায়াত/ জীবন দান করেন আর মওত/ মৃত্যু ঘটান (তাঁর তৈরি প্রাকৃতিক আইন প্রয়োগ করে এবং মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য ৩৫: ১১, ৬৭: ০২)। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের সম্পর্কে বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)।
৩:১৫৭
ওয়া = আর। লাইন = অবশ্যই যদি। ক্বুতিলতুম = তোমরা নিহত হও। ফী সাবিলিল্লাহি = সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। আও = অথবা। মুত্তুম = তোমরা (আল্লাহর পথে থেকে) মৃত্যুবরণ করো। লামাগফিরাতুম মিনাল্লাহি = তবে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া মাগফিরাত/ ক্ষমা। ওয়া = আর। রহমাতুন = রহমাত/ দয়া। খায়রুম মিম্মা = তা থেকে খায়ের/ উত্তম যা। ইয়াজমাঊন = তারা জমা করে।
আর অবশ্যই যদি তোমরা নিহত হও সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে অথবা তোমরা (আল্লাহর পথে থেকে) মৃত্যুবরণ করো, তবে অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া মাগফিরাত/ ক্ষমা আর রহমাত/ দয়া তা থেকে খায়ের/ উত্তম যা তারা জমা করে।
৩:১৫৮
ওয়া = আর। লাইন = যদি। মুত্তুম = তোমরা মৃত্যুবরণ করো। আও = অথবা। ক্বুতিলতুম = তোমরা নিহত হও। লাইলাল্লাহি = নিশ্চয় (উভয় অবস্থায়) আল্লাহরই দিকে। তুহশারূনা = তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।
আর যদি তোমরা মৃত্যুবরণ করো অথবা তোমরা নিহত হও, নিশ্চয় (উভয় অবস্থায়) আল্লাহর দিকেই তোমাদেরকে হাশর/ সমবেত করা হবে।
৩:১৫৯
ফাবিমা রহমাতিম মিনাল্লাহি = মূলত আল্লাহর রহমতের ফলে। লিনতা = তুমি কোমল হয়েছো। লাহুম = তাদের জন্য। ওয়া = আর। লাও = যদি। কুনতা = তুমি হতে। ফাযযান = রুক্ষ মেজাজের। গালীযাল ক্বালবি = আচরণে কঠোর মনের অধিকারী। লান ফাদ্দূ =তাহলে অবশ্যই তারা সরে থাকতো। মিন হাওলিকা = তোমার চারপাশ থেকে। ফা’ফূ আনহুম = সুতরাং তাদেরকে উদারতা দেখাও। ওয়াছতাগফির = আর মাগফিরাত/ ক্ষমা চাও। লাহুম = তাদের জন্য। ওয়া = আর। শাউয়িরহুম = তাদের সাথে শূরা/ পরামর্শ করো। ফিল আমরি = নির্বাহী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। ফাইযা = তারপর যখন। আযামতা = তুমি সিদ্ধান্ত কর। ফাতাওয়াক্কাল = তখন তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো। আলাল্লাহি = আল্লাহর উপর। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউহিব্বুল মুতাওয়াক্কিলীন = ভালবাসেন তাঁর মুতাওয়াক্কীলীনকে/ তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে।
মূলত আল্লাহর রহমতের ফলে তুমি কোমল হয়েছো তাদের জন্য। আর যদি তুমি হতে রুক্ষ মেজাজের, আচরণে কঠোর মনের অধিকারী; তাহলে অবশ্যই তারা সরে থাকতো তোমার চারপাশ থেকে। সুতরাং তাদেরকে উদারতা দেখাও আর মাগফিরাত/ ক্ষমা চাও তাদের জন্য। আর তাদের সাথে শূরা/ পরামর্শ করো নির্বাহী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। তারপর যখন তুমি সিদ্ধান্ত কর তখন তাওয়াক্কুল/ ভরসা করো আল্লাহর উপর। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন তাঁর মুতাওয়াক্কীলীনকে/ তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে।
৩:১৬০
ইন = যদি। ইয়ানসুরকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন। ফালা = তাহলে কেউ হবে না। গালিবা = গালিব/ বিজয়ী। লাকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। ইন = যদি। ইয়াখযুলকুম = তিনি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন। ফামান = তাহলে কে। যাল্লাযী = এমন ক্ষমতার অধিকারী যে। ইয়ানসুরুকুম = তোমাদেরকে সাহায্য করবে। মিম বা’দিহী = তাঁর পর। ওয়া = আর। আলাল্লাহি = আল্লাহরই উপর। ফালইয়াতাওয়াক্কালিল মু’মিনীন = তাওয়াক্কুল/ ভরসা করুক মু’মিনগণ।
যদি আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেন তাহলে কেউ হবে না গালিব/ বিজয়ী তোমাদের উপর। আর যদি তিনি তোমাদেরকে পরিত্যাগ করেন, তাহলে কে এমন ক্ষমতার অধিকারী যে তোমাদেরকে সাহায্য করবে তাঁর পর? আর আল্লাহরই উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করুক মু’মিনগণ।
৩:১৬১
ওয়া = আর। কানা লিনাবিয়্যীন = নবীর দ্বারা হতে পারে না। আন = যে। ইয়াগুল্লা = সে সততাহীন কাজ করবে। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াগলুল = যে সততাহীন কাজ করে। ইয়া’তি = সে হিসাব দিতে হবে। বিমা গাল্লা = সে যে সততাহীন কাজ করেছে তার কারণে। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাতের দিন। ছুম্মা = তারপর। তুওয়াফফা = পূর্ণ করে দেয়া হবে। কুল্লু নাফসিন = সকল ব্যক্তিকে। মা কাছাবাত = যা সে উপার্জন করেছে তার প্রতিফল। ওয়া = আর। হুম = তাদেরকে। লা ইউযলামূন = যুলম করা হবে না।
আর নবীর দ্বারা হতে পারে না যে, সে সততাহীন কাজ করবে। আর যে সততাহীন কাজ করে, সে হিসাব দিতে হবে সে যে সততাহীন কাজ করেছে তার কারণে ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাতের দিন। তারপর পূর্ণ করে দেয়া হবে সকল ব্যক্তিকে যা সে উপার্জন করেছে তার প্রতিফল। আর তাদেরকে যুলম করা হবে না।
৩:১৬২
আফামানিত তাবায়া = তবে কি যে ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে। রিদওয়ানাল্লাহি = রিদওয়ানাল্লাহ/ আল্লাহর সন্তুষ্টিকে। কামাম বাআ = তার কাজ হতে পারে তার মতো যে ঘেরাও হয়ে আছে। বিছাখাতিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর অসন্তুষ্টি দ্বারা। ওয়া = আর। মা’ওয়াহু = তার আবাস। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর। বি’ছা = তা খুবই নিকৃষ্ট। মাছীর = ঠিকানা।
তবে কি যে ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে রিদওয়ানাল্লাহ/ আল্লাহর সন্তুষ্টিকে তার কাজ হতে পারে তার মতো যে ঘেরাও হয়ে আছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি দ্বারা আর তার আবাস জাহান্নাম? আর তা (= জাহান্নাম) খুবই নিকৃষ্ট ঠিকানা।
৩:১৬৩
হুম = তারা। দারাজাতুন ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে বিভিন্ন মর্যাদার। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বাছীরুম বিমা ইয়ামালূনা = বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তাদের আমল সম্পর্কে।
তারা আল্লাহর কাছে বিভিন্ন মর্যাদার। আর আল্লাহ বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তাদের আমল সম্পর্কে।
৩:১৬৪
লাক্বাদ = নিশ্চয়। মান্নাল্লাহা = আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। আলাল মু’মিনীনা = মু’মিনদের উপর। ইয = যখন। বাআছা = তিনি সমুত্থিত (প্রেরণ) করেছেন। ফীহিম = তাদের মধ্যে। রসূলান = একজন রসূল। মিন আনফুসিহিম = তাদের নিজেদের মধ্য থেকে। ইয়াতলূ আলাইহিম আয়াতিহী = যে তিলাওয়াত করে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ। ওয়া ইউযাক্কিহিম = আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে। ওয়া ইউআল্লিমুহুমুল কিতাবা ওয়াল হিকমাতা = আর তাদেরকে শিক্ষাদান করে কিতাব ও হিকমাত (কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়)। ওয়া ইন = যদিও। কানূ = তারা ছিলো। মিন ক্বাবলু = এর আগে। লাফী দলালিম মুবীন = প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে।
নিশ্চয় আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন মু’মিনদের উপর যখন তিনি সমুত্থিত (প্রেরণ) করেছেন তাদের মধ্যে একজন রসূল তাদের নিজেদের মধ্য থেকে। যে তিলাওয়াত করে তাদের সামনে তাঁর আয়াতসমূহ, আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে, আর তাদেরকে শিক্ষাদান করে কিতাব ও হিকমাত (কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়)। যদিও তারা ছিলো এর আগে প্রকাশ্য বিভ্রান্তির মধ্যে।
৩:১৬৫
আওয়ালাম্মা = কি হলো যখন। আসাবাতকুম মুসীবাতুন = তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হয়েছো। ক্বাদ = (অথচ) নিশ্চয় (আগের যুদ্ধে)। আসাবতুম = তোমরা তাদের উপর ঘটিয়েছিলে। মিছলাইহা = উহার দ্বিগুণ মুসিবত। ক্বুলতুম = তোমরা বলেছো। আন্না হাযা = এটা কোথা থেকে এলো? ক্বুল = বলো। হুয়া = উহা। মিন ইনদি আনফুছিকুম = তোমাদের নিজেদের নিকট থেকে (= তোমাদের কার্যকলাপের কারণে)। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
কি হলো যখন তোমরা মুসিবতগ্রস্ত হয়েছো, (অথচ) নিশ্চয় (আগের যুদ্ধে) তোমরা তাদের উপর ঘটিয়েছিলে উহার দ্বিগুণ মুসিবত, (তবুও) তোমরা বলেছো, ‘এটা কোথা থেকে এলো?’ বলো, ‘উহা তোমাদের নিজেদের নিকট থেকে (= তোমাদের কার্যকলাপের কারণে)। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
৩:১৬৬
ওয়া = আর। মা আসাবাকুম = তোমাদের উপর যা ঘটেছে। ইয়াওমাল তাক্বার জামআনি = দুটি সেনাবাহিনীর মোকাবেলার দিন। ফাবিইযনিল্লাহি = তা আল্লাহর অনুমতিক্রমে ঘটেছে। ওয়া = আর। লিইয়া’লামাল মু’মিনীনা = যেন তিনি প্রকাশ করে দেন মু’মিনদেরকে।
আর তোমাদের উপর যা ঘটেছে দুটি সেনাবাহিনীর মোকাবেলার দিন তা আল্লাহর অনুমতিক্রমে ঘটেছে। আর তা এজন্য যেন তিনি প্রকাশ করে দেন মু’মিনদেরকে।
৩:১৬৭
ওয়া = আর। লিইয়া’লামাল্লাযীনা নাফাক্বূ = যেন তিনি প্রকাশ করে দেন তাদেরকে যারা নিফাক/ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বীলা = বলা হয়েছে। লাহুম = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে। তাআলাও = তোমরা আসো। ক্বাতিলূ ফী ছাবীলিল্লাহি = ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। আওয়িদফাঊ = বা তোমরা প্রতিরক্ষার কাজ করো। ক্বলূ = (তখন) তারা বলেছে। লাও = যদি। না’লামু = আমরা জানতাম যে। ক্বিতালান = ক্বিতাল/ যুদ্ধ হবে। লাততাবা’নাকুম = তাহলে আমরা তোমাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করতাম। হুম = তারা। লিলকুফরি = কুফরের ক্ষেত্রে। ইয়াওমাইযিন = সেদিন। আক্বরাবু = বেশি কাছাকাছি পৌঁছেছিলো। মিনহুম লিলঈমান = তাদের ঈমানের তুলনায়। ইয়াক্বূলূনা বিআফওয়াহিহিম = তারা তাদের মুখে বলে। মা = যা। লাইছা = নেই। ফী ক্বুলূবিহিম = তাদের কলবসমূহে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আ’লামু = জানেন। বিমা = ঐ বিষয়, যা। ইয়াকতুমূন = তারা গোপন রেখেছে।
আর যেন তিনি প্রকাশ করে দেন তাদেরকে যারা নিফাক/ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আর যখন বলা হয়েছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে, ‘তোমরা আসো, ক্বিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো বা তোমরা (অন্তত) প্রতিরক্ষার কাজ করো’। (তখন) তারা বলেছে, ‘যদি আমরা জানতাম যে, ক্বিতাল/ যুদ্ধ হবে তাহলে আমরা তোমাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করতাম’। তারা কুফরের ক্ষেত্রে সেদিন বেশি কাছাকাছি পৌঁছেছিলো তাদের ঈমানের তুলনায়। তারা তাদের মুখে বলে যা নেই তাদের কলবসমূহে (= তারা মনে রাখে এক কথা, মুখে বলে আরেক কথা)। আর আল্লাহ জানেন ঐ বিষয়, যা তারা গোপন রেখেছে।
৩:১৬৮
আল্লাযীনা = যারা। ক্বলূ = বলেছে। লিইখওয়ানিহিম = তাদের ভাইদের প্রসঙ্গে। ওয়া ক্বআদূ = তারা (নিজেরা ঘরে) বসে থেকে। লাও = যদি। আত্বঊনা = তারা আমাদের ইতায়াত/ আনুগত্য করতো। মা ক্বুতিলূ = তাহলে তারা নিহত হতো না। ক্বুল = বলো। ফাদরঊ = তাহলে তোমরা দূরে রাখো। আন আনফুসিকুমুল মাওতা = তোমাদের নিজেদের মৃত্যুকে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিকীন = সাদিকীন/ সত্যবাদী।
যারা বলেছে তাদের ভাইদের প্রসঙ্গে, তারা (নিজেরা ঘরে) বসে থেকে, ‘যদি তারা আমাদের ইতায়াত/ আনুগত্য করতো তাহলে তারা নিহত হতো না’। বলো, ‘তাহলে তোমরা দূরে রাখো তোমাদের নিজেদের মৃত্যুকে যদি তোমরা হও সাদিকীন/ সত্যবাদী’।
৩:১৬৯
ওয়া = আর। লা তাহছাবান্নাল্লাযীনা = হিসাব/ ধারণা করো না তাদেরকে যারা। ক্বুতিলূ ফী ছাবীলিল্লাহি = নিহত হয়েছে সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। আমওয়াতান = (এ হিসাবে যে, তারা) মৃত। বাল আহইয়াউ = বরং তারা জীবিত। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ইউরযাক্বূনা = তাদেরকে রিযক দেয়া হয়।
আর হিসাব/ ধারণা করো না তাদেরকে যারা নিহত হয়েছে সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। (এ হিসাবে যে, তারা) মৃত। বরং তারা জীবিত তাদের রবের কাছে। তাদেরকে রিযক দেয়া হয়।
৩:১৭০
ফারিহীনা = তারা খুশি হয়েছে। বিমা = তার কারণে যা। আতাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে। ওয়া = আর। ইয়াছতাবশিরূনা = তারা সুসংবাদ পাচ্ছে। বিল্লাযীনা = তাদের ব্যাপারে যারা। লাম ইয়ালহাক্বূবিহিম = এখনো (শহীদ হয়ে) তাদের সাথে মিলিত হয়নি। মিন খালফিহিম = তাদের খালাফ/ পরবর্তী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে। আল্লা খাওফুন আলাইহিম = এ সুসংবাদ যে, (শহীদ হয়ে এলে) তাদের জন্যও কোন ভয় থাকবে না। ওয়া লা হুম ইয়াহযানূন = আর তারা দু:খিতও হবে না।
তারা খুশি হয়েছে তার কারণে যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে। আর তারা সুসংবাদ পাচ্ছে তাদের ব্যাপারে যারা এখনো (শহীদ হয়ে) তাদের সাথে মিলিত হয়নি তাদের খালাফ/ পরবর্তী ব্যক্তিদের মধ্য থেকে; এ সুসংবাদ যে, (শহীদ হয়ে এলে) তাদের জন্যও কোন ভয় থাকবে না আর তারা দু:খিতও হবে না।
৩:১৭১
ইয়াছতাবশিরূনা = তারা সুসংবাদ পাচ্ছে। বিনি’মাতিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে (আরো) নিয়ামত/ অনুগ্রহ লাভের বিষয়ে। ওয়া ফাদলিন = আর (আরো) ফদল/ বিশিষ্টতা লাভের বিষয়ে (=জান্নাতে তাদের স্পিরিচুয়াল ডেভেলপমেন্ট/ আধ্যাত্মিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে)। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = এও যে, আল্লাহ। লা ইউদীউ = নষ্ট করেন না। আজরাল মু’মিনীন = মু’মিনদের কর্মফল।
তারা সুসংবাদ পাচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে (আরো) নিয়ামত/ অনুগ্রহ লাভের বিষয়ে। আর (আরো) ফদল/ বিশিষ্টতা লাভের বিষয়ে (= জান্নাতে তাদের স্পিরিচুয়াল ডেভেলপমেন্ট/ আধ্যাত্মিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে)। আর এও যে, ‘আল্লাহ নষ্ট করেন না মু’মিনদের কর্মফল’।
৩:১৭২
আল্লাযীনাছতাজাবূ = যারা সাড়া দিয়েছে। লিল্লাহি ওয়া রসূলিহী = আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে। মিম বা’দি = এরপরও যে। আসাবাহুমুল ক্বারহু = তারা যখম হয়েছে। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। আহছানূ = উত্তম কাজ করেছে। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। ওয়াত্তাক্বাও = আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করেছে। আজরুন আযীমা = মহাপুরস্কার রয়েছে।
যারা সাড়া দিয়েছে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে এরপরও যে, তারা যখম হয়েছে; তাদের জন্য (পুরস্কার) আছে যারা উত্তম কাজ করেছে তাদের মধ্য থেকে আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করেছে, (তাদের জন্য আছে) মহাপুরস্কার। {= যারা যখম হওয়ার পরও আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দিয়েছে তাদের মধ্য থেকে যারা ইহসান ও তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করেছে তাদের জন্য মহাপুরস্কার আছে।}
৩:১৭৩
আল্লাযীনা = যারা এমন যে। ক্বলা = (যখন) বলেছে। লাহুমুন্নাছু = তাদেরকে উদ্দেশ্য করে (অন্য) লোকেরা। ইন্নান্নাছা = নিশ্চয় লোকেরা। ক্বাদ জামায়ু = জমায়েত হয়েছে। লাকুম = তোমাদেরকে হামলা করার উদ্দেশ্যে। ফাখশাওহুম = সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো। ফাযাদাহুম = এর ফলে তাদের মধ্যে বেড়ে গেছে। ঈমানান = ঈমান/ প্রত্যয় (ঈমানের ভিত্তিতে কাজ করার সংকল্প ও সাহস)। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। হাছবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল = ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’ (আল্লাহই আমাদের যথেষ্ট আর তিনিই উত্তম উকিল/ কর্মবিধায়ক)।
যারা এমন যে (যখন) বলেছে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে (অন্য) লোকেরা, ‘নিশ্চয় লোকেরা জমায়েত হয়েছে তোমাদেরকে হামলা করার উদ্দেশ্যে, সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো’। এর ফলে/ এ কথা শুনে তাদের মধ্যে বেড়ে গেছে ঈমান/ প্রত্যয় (ঈমানের ভিত্তিতে কাজ করার সংকল্প ও সাহস)। আর তারা বলেছে, ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’ (= আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট আর তিনিই উত্তম উকিল/ কর্মবিধায়ক)।
৩:১৭৪
ফানক্বালাবূ = সুতরাং তারা ইনকিলাব/ বিপ্লব করে এসেছে। বিনি’মাতিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর নিয়ামাত/ অনুগ্রহের দ্বারা। ওয়া ফাদলিন = আর তাঁর প্রদত্ত ফদল/ বিশিষ্টতার ফলে। লাম ইয়ামছাছহুম = তাদেরকে স্পর্শ করেনি। ছূআন = কোন মন্দ আঘাত। ওয়াত্তাবাঊ = আর তারা অনুসরণ করেছে। রিদওয়ানাল্লাহি = রিদওয়ানুল্লাহ/ আল্লাহর সন্তুষ্টি। ওয়াল্লহু = আর আল্লাহ। যূ ফাদলিন আযীম = যূ ফাদলিন আযীম/ মহাঅনুগ্রহশীল।
সুতরাং তারা ইনকিলাব/ বিপ্লব করে এসেছে আল্লাহর নিয়ামাত/ অনুগ্রহের দ্বারা আর তাঁর প্রদত্ত ফদল/ বিশিষ্টতার ফলে। তাদেরকে স্পর্শ করেনি কোন মন্দ আঘাত। আর তারা অনুসরণ করেছে রিদওয়ানুল্লাহ/ আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ যূ ফাদলিন আযীম/ মহাঅনুগ্রহশীল।
৩:১৭৫
ইন্নামা = নিশ্চয়। যালিকুমুশ শায়তানু = উহারা শয়তান। ইউখাওয়িফু = যে ভয় দেখায়। আওলিয়াহু = তার আওলিয়ার/ ওলিদের/ বন্ধুদের ব্যাপারে। ফালা তাখাফূহুম = সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। ওয়া = আর। খাফূনি = আমাকেই ভয় করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীন = মু’মিনীন।
নিশ্চয় উহারা শয়তান যে ভয় দেখায় তার আওলিয়ার/ ওলিদের/ বন্ধুদের ব্যাপারে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে (= শয়তানের ওলিদেরকে) ভয় করো না আর আমাকেই ভয় করো যদি তোমরা হও মু’মিনীন।
৩:১৭৬
ওয়া = আর। লা ইয়াহযুনকাল্লাযীনা = তারা যেন তোমাকে বিমর্ষ না রাখে যারা। ইউছারিঊনা = দ্রুত ধাবিত হয়। ফিল কুফরি = কুফরের মধ্যে। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। লাইঁ ইয়াদুররুল্লাহা = কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ইরীদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। আল্লা ইয়াজআলা লাহুম = যে, তাদের জন্য রাখবেন না। হাযযান ফিল আখিরাতি = আখিরাতে কোন অংশ। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আযীম = আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
আর তারা যেন তোমাকে বিমর্ষ না রাখে যারা দ্রুত ধাবিত হয় কুফরের মধ্যে। নিশ্চয় তারা কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন যে, তাদের জন্য রাখবেন না আখিরাতে কোন অংশ। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
৩:১৭৭
ইন্নাল্লাযীনাশতারাউল কুফরা = নিশ্চয় যারা ক্রয় করেছে কুফরকে। বিল ঈমান = ঈমানের বিনিময়ে। লাইঁইয়াদুররুল্লাহা = তারা কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীম = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
নিশ্চয় যারা ক্রয় করেছে কুফরকে ঈমানের বিনিময়ে তারা কখনো আল্লাহর ক্ষতি করতে পারবে না, কিছুমাত্রও। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
৩:১৭৮
ওয়া = আর। লা ইয়াহছাবান্নাল্লাযীনা = তারা যেন হিসাব করে না রাখে যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। আন্নামা = এই যে। নুমলী = আমরা ঢিল দিই। লাহুম = তাদের জন্য উহাকে। খাইরুল লিআনফুসিহিম = তাদের নিজেদের কল্যাণের বিষয় হিসাবে। ইন্নামা = নিশ্চয়। নুমলী = আমরা ঢিল দিই। লাহুম = তাদের জন্য। লিইয়াযদাদূ ইছমান = যেন (সংশোধিত না হলে) তারা বাড়িয়ে নেয় তাদের পাপ। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুম মুহীন = আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।
আর তারা যেন হিসাব করে না রাখে যারা কুফর করেছে, এই যে আমরা ঢিল দিই তাদের জন্য, উহাকে তাদের নিজেদের কল্যাণের বিষয় হিসাবে (যদি না তারা কুফর ত্যাগ করে)। নিশ্চয় আমরা ঢিল দিই তাদের জন্য যেন (সংশোধিত না হলে) তারা বাড়িয়ে নেয় তাদের পাপ। আর তাদের জন্য আছে আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।
৩:১৭৯
মা কানাল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছুক হতে পারেন না। লিইয়াযারাল মু’মিনীনা = মু’মিনদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। আলা মা আনতুম আলাইহি = সেই অবস্থার উপর এখন তোমরা আছো যে অবস্থার উপর। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াবিযাল খাবীছা = তিনি পৃথক করবেন খাবীসকে/ অপবিত্রকে। মিনাত তইয়িবি = তইয়িব/ পবিত্র হতে। ওয়া = আর। মা কানাল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছুক হতে পারেন না। লিইউতলিয়াকুম = তোমাদেরকে উদিত করার জন্য। আলাল গায়েব = গায়েবের উপর (= সূর্য উদিত হলে যেমন অন্ধকার দূর হয়ে সব পরিস্কার দেখা যায়, তেমনি তোমাদের সকলকে গায়েবি তথ্য জানিয়ে দিয়ে কারো নিকট থেকে তার মুনাফিকী প্রকাশ পাওয়ার আগে তাকে মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ করে দেয়া আল্লাহর ইচ্ছা নয়)। ওয়ালকিন্না = কিন্তু আল্লাহ। ইয়াজতাবী = (গায়েব জানাবার জন্য) বাছাই করেন। মির রসূলিহি = তাঁর রসূলদের মধ্য থেকে। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (এজন্য বাছাই করার) ইচ্ছা করেন। ফাআমিনূ = সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। রুসুলিহি = তাঁর রসূলদের প্রতি। ওয়া = আর। ইন = যদি। তু’মিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। ওয়া = আর। তাত্তাকূ = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করো। ফালাকুম = তাহলে তোমাদের জন্য আছে। আজরুন আযীম = মহাপুরস্কার।
আল্লাহ ইচ্ছুক হতে পারেন না মু’মিনদেরকে ছেড়ে দেয়ার জন্য সেই অবস্থার উপর এখন তোমরা আছো যে অবস্থার উপর, যতক্ষণ না তিনি পৃথক করবেন খাবীসকে/ অপবিত্রকে তইয়িব/ পবিত্র হতে। আর আল্লাহ ইচ্ছুক হতে পারেন না তোমাদেরকে উদিত করার জন্য গায়েবের উপর (= সূর্য উদিত হলে যেমন অন্ধকার দূর হয়ে সব পরিস্কার দেখা যায়, তেমনি তোমাদের সকলকে গায়েবি তথ্য জানিয়ে দিয়ে কারো নিকট থেকে তার মুনাফিকী প্রকাশ পাওয়ার আগেই তাকে মুনাফিক হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ করে দেয়া আল্লাহর ইচ্ছা নয়)। কিন্তু আল্লাহ (গায়েব জানাবার জন্য) বাছাই করেন তাঁর রসূলদের মধ্য থেকে যাকে তিনি (এজন্য বাছাই করার) ইচ্ছা করেন (৭২: ২৬-২৭)। সুতরাং তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আল্লাহর প্রতি আর তাঁর রসূলদের প্রতি। আর যদি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করো তাহলে তোমাদের জন্য আছে মহাপুরস্কার।
৩:১৮০
ওয়া = আর। লা ইয়াহছাবান্নাল্লাযীনা = তারা যেন হিসাব করে না রাখে যারা। ইয়াবখালূনা = বখিলি/ কৃপণতা করে। বিমা আতাহুমুল্লাহু = উহার (ব্যয় করার) ব্যাপারে যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন। মিন ফাদলিহি = তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে। হুয়া খায়রুল্লাহুম = (এ হিসাব যে,) উহা (= কৃপণতা) তাদের জন্য কল্যাণকর (অর্থাৎ কৃপণতাকে কল্যাণকর মনে করা যাবে না)। বাল = বরং। হুয়া = তা। শাররুল্লাহুম = তাদের জন্য অকল্যাণকর। ছাইউতওওয়াক্বূনা = শীঘ্রই তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে দায়বদ্ধ করা হবে। মা = যে সম্পদে। বাখিলূ = তারা কৃপণতা করেছে। বিহী = উহার বিনিময়ে (= তাদের মজুদকৃত সম্পদ তাদের জন্য সুখের কারণ না হয়ে বরং শাস্তির কারণ হবে)। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়ামুল ক্বিয়ামাতে/ ক্বিয়ামাত দিবসে। ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই জন্য। মীরাছু = মীরাস/ স্বত্বাধিকার। আছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও জমিনের। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা খাবীর = তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।
আর তারা যেন হিসাব করে না রাখে যারা বখিলি/ কৃপণতা করে উহার (ব্যয় করার) ব্যাপারে যা আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন তাঁর ফদল/ অনুগ্রহ থেকে (এ হিসাবে যে,) উহা (= কৃপণতা) তাদের জন্য কল্যাণকর (অর্থাৎ কৃপণতাকে কল্যাণকর মনে করা যাবে না)। বরং উহা তাদের জন্য অকল্যাণকর। শীঘ্রই তাদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে দায়বদ্ধ করা হবে যে সম্পদে তারা কৃপণতা করেছে উহার বিনিময়ে (= তাদের মজুদকৃত সম্পদ তাদের জন্য সুখের কারণ না হয়ে বরং শাস্তির কারণ হবে) ইয়ামুল ক্বিয়ামাতে/ ক্বিয়ামাত দিবসে। আর আল্লাহরই জন্য মীরাস/ স্বত্বাধিকার আসমানসমূহ ও জমিনের। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।
৩:১৮১
লাক্বাদ = নিশ্চয়। ছামিআল্লাহু = আল্লাহ শুনেছেন। ক্বাওলাল্লাযীনা = তাদের কথা যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ফাক্বীরুন = ফকীর/ দরিদ্র। ওয়া = আর। নাহনু = আমরা। আগনিয়াউ = গণি/ ধনী। ছানাকতুবু = শীঘ্রই আমরা লিখে নেবো/ টুকে রাখবো। মা ক্বলূ = যা তারা বলেছে তা। ওয়া = আরো (লিখে রাখবো)। ক্বাতলাহুমুল আম্বিয়াআ বিগাইরিল হাক্কি = তাদের কর্তৃক সম্পূর্ণ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে নবীদেরকে ক্বতল/ হত্যা করার বিষয়টি। ওয়া = আর। নাক্বূলূ = আমরা বলবো। যূক্বূ = ভোগ করো। আযাবাল হারীক্ব = আযাবুল হারীক্ব/ জ্বালাপোড়ার শাস্তি।
নিশ্চয় আল্লাহ শুনেছেন তাদের কথা যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ ফকীর/ দরিদ্র আর আমরা গণি/ ধনী’। শীঘ্রই আমরা লিখে নেবো/ টুকে রাখবো যা তারা বলেছে তা, আরো (লিখে রাখবো) তাদের কর্তৃক সম্পূর্ণ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে নবীদেরকে ক্বতল/ হত্যা করার বিষয়টি। আর আমরা বলবো, ‘ভোগ করো আযাবুল হারীক্ব/ জ্বালাপোড়ার শাস্তি’।
৩:১৮২
যালিকা = ইহা। বিমা = ঐ কারণে যা। ক্বাদ্দামাত = আগেই করেছে। আইদীকুম = তোমাদের হাতসমূহ (অর্থাৎ এটা তোমাদের কৃতকর্মের ফল)। ওয়া = আর। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাইছা বিযল্লামীল্লিল আবীদ = তাঁর দাসগণের প্রতি যালিম নন।
ইহা ঐ কারণে যা আগেই করেছে তোমাদের হাতসমূহ (অর্থাৎ এটা তোমাদের কৃতকর্মের ফল)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দাসগণের প্রতি যালিম নন।
৩:১৮৩
আল্লাযীনা = যারা। ক্বলূ = বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আহিদা = আহদ/ বিশেষ নির্দেশদান করেছেন। ইলাইনা = আমাদের প্রতি। আল্লা নু’মিনা = এই যে। আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না। লিরসূলিন = কোন রসূলের প্রতি। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়া’তিয়ানা = সে আমাদের কাছে আসবে। বিক্বুরবানিন = সেই কুরবান/ আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা নিয়ে। তা’কুলুহুন্নারু = আগুন যেটিকে খেয়ে ফেলবে। ক্বুল = বলো। ক্বাদ = নিশ্চয়। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছিলো। রুসুলুন = অনেক রসূল। মিন ক্বাবলী = আমার আগে। বিলবাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। ওয়া = আর। বিল্লাযী = তা নিয়ে যা। ক্বুলতুম = তোমরা বলেছো। ফালিমা = তাহলে কেন। ক্বাতালতুমূ = তোমরা হত্যা করেছো। হুম = তাদেরকে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিক্বীন = সাদিকীন/ সত্যবাদী।
যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ আহদ/ বিশেষ নির্দেশদান করেছেন আমাদের প্রতি এই যে, আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো না কোন রসূলের প্রতি যতক্ষণ না সে আমাদের কাছে আসবে সেই কুরবান (= ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমস্বরূপ অবলম্বিত উপস্থাপনা’) নিয়ে, আগুন যেটিকে খেয়ে ফেলবে। বলো, ‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে এসেছিলো অনেক রসূল আমার আগে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আর তা নিয়ে যা তোমরা বলেছো (= তারা অগ্নিদগ্ধ কুরবানের রীতি পালন করতো।)। তাহলে কেন তোমরা হত্যা করেছো তাদেরকে, যদি তোমরা হও সাদিকীন/ সত্যবাদী?’
৩:১৮৪
ফাইন = সুতরাং যদি। কাযযাবূকা = তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে। ফাক্বাদ = তাহলে (এতে আশ্বর্যের কিছু নেই কারণ) তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো। রুসুলুমমিন কাবলিকা = তোমার আগের রসূলদেরকে। জাঊ = যারা এসেছিলো। বিলবাইয়্যিনাতি = বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। ওয়ায যুবুরি = আর যাবূরসমূহ/ পুস্তিকাসমূহ নিয়ে। ওয়াল কিতাবিল মুনীর = আর কিতাবুল মুনীর/ আলোদানকারী গ্রন্থ নিয়ে।
সুতরাং যদি তারা তোমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাহলে (এতে আশ্বর্যের কিছু নেই, কারণ) তারা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো তোমার আগের রসূলদেরকে যারা এসেছিলো বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আর যাবূরসমূহ/ পুস্তিকাসমূহ নিয়ে আর কিতাবুল মুনীর/ আলোদানকারী গ্রন্থ নিয়ে।
৩:১৮৫
কুল্লু = সকল। নাফসিন = জীবনসত্তাই। যায়িক্বাতুল মাওত = আস্বাদন করবে মৃত্যুর স্বাদ (= জন্মিলে মরিতে হবে)। ওয়া = আর। ইন্নামা = নিশ্চয়। তুওয়াফফাওনা = তোমাদেরকে পূর্ণ করে দেয়া হবে। উজূরাকুম = তোমাদের কর্মফল। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়ামুল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ফামান = তখন যাকে। জুহজিহা = দূরে রাখা হবে। আনিন্নারি = (জাহান্নামের) আগুন থেকে। ওয়া = আর। উদখিলাল জান্নাতা = জান্নাতে দাখিল/ প্রবেশ করানো হবে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। ফাযা = সে-ই ফয়েজ/ সফলতা পাবে। ওয়া = আর। মাল হায়াতুদ দুনইয়া = (আখিরাতের বিবেচনা বাদ দিলে) হায়াতুদ দুনিয়া/ দুনিয়ার জীবন কিছু নয়। ইল্লা মাতাউল গুরুরি = প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া।
সকল জীবনসত্তাই আস্বাদন করবে মৃত্যুর স্বাদ (= জন্মিলে মরিতে হবে)। আর নিশ্চয় তোমাদেরকে পূর্ণ করে দেয়া হবে তোমাদের কর্মফল ইয়ামুল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। তখন যাকে দূরে রাখা হবে (জাহান্নামের) আগুন থেকে আর জান্নাতে দাখিল/ প্রবেশ করানো হবে নিশ্চয় সে-ই ফয়েজ/ সফলতা পাবে। আর (আখিরাতের বিবেচনা বাদ দিলে) হায়াতুদ দুনিয়া/ দুনিয়ার জীবন কিছু নয় প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া।
৩:১৮৬
লাতুবলাউন্না = অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে। ফী আমওয়ালিহিম = তোমাদের মালের ব্যাপারে। ওয়া = আর। আনফুসিহিম = তোমাদের জানের ব্যাপারে। ওয়া = আর। লাতাছমাউন্না = অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে। মিনাল্লাযীনা = তাদের পক্ষ থেকে যাদেরকে। উতুল কিতাবা = কিতাব দেয়া হয়েছে। মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগে। ওয়া = আর। মিনাল্লাযীনা = তাদের পক্ষ থেকেও যারা। আশরাকূ = শিরক করেছে/ আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করেছে। আযান কাছীরা = (তোমরা তাদের থেকে শুনবে) অনেক কষ্টদায়ক কথা। ওয়া = আর এ অবস্থায়। ইন = যদি। তাসবিরূ = তোমরা সবর করো/ ধৈর্য ধরো। ওয়া = আর। তাত্তাকূ = তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করো। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয়। যালিকা = উহাই হবে। মিন আযমিল উমূর = যথাযথ সিদ্ধান্তকর কাজ।
অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা নেয়া হবে তোমাদের মালের ব্যাপারে আর তোমাদের জানের ব্যাপারে। আর অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে তাদের পক্ষ থেকে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের আগে আর তাদের পক্ষ থেকেও যারা শিরক করেছে/ আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করেছে (তোমরা তাদের থেকে শুনবে) অনেক কষ্টদায়ক কথা। আর এ অবস্থায় যদি তোমরা সবর করো/ ধৈর্য ধরো আর তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করো তাহলে নিশ্চয় উহাই হবে যথাযথ সিদ্ধান্তকর কাজ।
৩:১৮৭
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আখাজাল্লাহু = আল্লাহ গ্রহণ করেছেন। মীছাক্বল্লাযীনা = তাদের মীছাক/ প্রতিশ্রুতি যাদেরকে। উতুল কিতাবা = কিতাব দেয়া হয়েছে। লাতুবাইয়্যিনুন্নাহু = অবশ্যই তোমরা উহাকে বয়ান/ হুবহু সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। ওয়া = আর। লা তাকতুমূনাহু = তোমরা উহাকে গোপন করবে না/ গোপন রাখবে না। ফানাবাযূহু = তারপর তারা উহাকে ফেলে রেখেছে। ওরাআ যুহূরিহিম = তাদের পিঠসমূহের পিছনে। ওয়াশতারূ = আর তারা ক্রয় করেছে। বিহী = উহার বিনিময়ে। ছামানান ক্বালীলান = তুচ্ছমূল্য। ফাবি’ছা = সুতরাং খুবই নিকৃষ্ট। মা ইশতারূন = যা তারা ক্রয় করেছে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আল্লাহ গ্রহণ করেছেন তাদের মীছাক/ প্রতিশ্রুতি যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমরা উহাকে বয়ান/ হুবহু সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করবে মানবজাতির জন্য আর তোমরা উহাকে গোপন করবে না/ গোপন রাখবে না’। তারপর তারা উহাকে ফেলে রেখেছে তাদের পিঠসমূহের পিছনে আর তারা ক্রয় করেছে উহার বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য। সুতরাং খুবই নিকৃষ্ট যা তারা ক্রয় করেছে।
৩:১৮৮
লা তাহছাবান্নাল্লাযীনা = তুমি তাদেরকে হিসাব/ ধারণা করো না যারা। ইয়াফরাহূনা = আনন্দ করে। বিমা = ঐ বিষয়ে যা। আতাও = তারা পেশ করেছে। ওয়া = আর। ইউহিব্বূনা = পছন্দ করে। আইঁ ইউহমাদূ = যে, তাদেরকে প্রশংসা করা হোক। বিমা = ঐ কাজের দ্বারা যা। লাম ইয়াফআলূ = আসলে তারা নিজেরা করেই নাই। ফালা তাহছাবান্নাহুম = সুতরাং তাদেরকে হিসাব করো না যে,। বিমাফাযাতিন মিনাল আযাব = তারা আযাব/ শাস্তি থেকে নিরাপদস্থানে থাকবে। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
তুমি তাদেরকে হিসাব/ ধারণা করো না যারা আনন্দ করে ঐ বিষয়ে যা তারা পেশ করেছে আর পছন্দ করে যে, তাদেরকে প্রশংসা করা হোক ঐ কাজের দ্বারা যা আসলে তারা নিজেরা করেই নাই {= কোন কাজ না করেও তা করেছে হিসাবে এবং অন্যের করা কাজ নিজে করেছে হিসাবে প্রশংসা পেতে চায়}। সুতরাং তাদেরকে হিসাব/ ধারণা করো না যে, তারা আযাব/ শাস্তি থেকে নিরাপদস্থানে থাকবে। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
৩:১৮৯
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও জমিনের আধিপত্য। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত আসমানসমূহ ও জমিনের আধিপত্য। আর আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
৩:১৯০
ইন্না = নিশ্চয়। ফী খালক্বিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে। ওয়াখতিলাফিল লাইলি ওয়ান নাহারি = রাত ও দিনের আবর্তনে। লা আয়াতিল লি উলিল আলবাব = অবশ্যই আয়াত (বিশ্ব-আয়াত) আছে উলিল আলবাবের/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণের জন্য।
নিশ্চয় আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে আর রাত ও দিনের আবর্তনে অবশ্যই আয়াত (বিশ্ব-আয়াত) আছে উলিল আলবাবের/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণের জন্য।
৩:১৯১
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াযকুরূনাল্লাহা = আল্লাহকে যিকর/ স্মরণ করে। ক্বিয়ামান = দাঁড়ানো অবস্থায়। ওয়া ক্বুঊদান = আর বসে থাকা অবস্থায়। ওয়া আলা জুনূবিহিম = আর তাদের কাত হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। ওয়া = আর। ইয়াতাফাক্কারূনা = তারা ফিকর/ চিন্তা-গবেষণা করে। ফী খালকিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে। রব্বানা = (তারা বলে) ‘আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা। মা খালাকতা = আপনি সৃষ্টি করেননি। হাযা = ইহাকে। বাতিলান = উদ্দেশ্যহীনভাবে/ অপরিকল্পিতভাবে/ অসঙ্গতভাবে। ছুবহানাকা = আপনি পবিত্র। ফাকিনা আযাবান নার = আমাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
যারা আল্লাহকে যিকর/ স্মরণ করে (আল্লাহর বিধানের প্রতি লক্ষ্য রাখে) দাঁড়ানো অবস্থায় আর বসে থাকা অবস্থায় আর তাদের কাত হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায়। আর তারা ফিকর/ চিন্তা-গবেষণা করে আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি (গঠন) সম্পর্কে। (তারা বলে) ‘আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা, আপনি সৃষ্টি করেননি ইহাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে/ অপরিকল্পিতভাবে/ অসঙ্গতভাবে। (অসঙ্গতভাবে কিছু সৃষ্টি করা থেকে) আপনি পবিত্র। আমাদেরকে (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
৩:১৯২
রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। মান = যাকে। তুদখিলিন্নারা = দাখিল/ প্রবেশ করাবেন (জাহান্নামের) আগুনে। ফাক্বাদ = নিশ্চয়। আখযায়তাহু = তাকে লাঞ্চিত করবেন। ওয়া = আর। মা লিযযালিমীনা = যালিমদের জন্য নেই। মিন = কোন। আনসার = আনসার/ সাহায্যকারী।
আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা, নিশ্চয় আপনি যাকে দাখিল/ প্রবেশ করাবেন (জাহান্নামের) আগুনে, নিশ্চয় তাকে লাঞ্চিত করবেন। আর যালিমদের জন্য নেই কোন আনসার/ সাহায্যকারী।
৩:১৯৩
রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা। ইন্নানা = নিশ্চয় আমরা। ছামি’না = শুনেছি। মুনাদিয়্যান = একজন আহবানকারীকে। ইউনাদী = আহবান করতে। লিলঈমান = ঈমানের দিকে। আন = এ বলে যে। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিরব্বিকুম = তোমাদের রবের/ প্রতিপালকের/ বিধানদাতার প্রতি। ফাআমান্না = সুতরাং আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। রব্বানা = আমাদের রব/ বিধানদাতা। ফাগফিরলানা = আমাদেরকে মাফ করুন। যুনূবানা = আমাদের পাপসমূহের বিষয়ে। ওয়াকাফফির = আর মোচন করে দিন। আন্না = আমাদের থেকে। ছাইয়্যিআতিনা = আমাদের অতীতের মন্দ সমূহ। ওয়া = আর। তাওয়াফফানা = আমাদেরকে ওফাত/ মৃত্যু দান করুন। মাআল আবরার = সৎকর্মশীলদের সাথে।
আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা, নিশ্চয় আমরা শুনেছি একজন আহবানকারীকে আহবান করতে ঈমানের দিকে এ বলে যে, ‘তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো তোমাদের রবের/ প্রতিপালকের/ বিধানদাতার প্রতি’। সুতরাং আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। আমাদের রব/ বিধানদাতা, আমাদেরকে মাফ করুন আমাদের পাপসমূহের বিষয়ে আর মোচন করে দিন আমাদের থেকে আমাদের অতীতের মন্দসমূহ, আর আমাদেরকে ওফাত/ মৃত্যু দান করুন সৎকর্মশীলদের সাথে।
৩:১৯৪
রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা। ওয়া আতিনা = আমাদেরকে দান করুন। মা = যা। ওয়াততানা = আপনি ওয়াদা দিয়েছেন। আলার রসূলিকা = আপনার রসূলের কাছে। ওয়া = আর। লা তুখযিনা = আমাদেরকে লাঞ্চিত করবেন না। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ইন্নাকা = নিশ্চয় আপনি। লা তুখলিফুল মিয়াদ = ওয়াদা খেলাফ করেন না (অর্থাৎ আমাদের প্রার্থনার কারণ, আপনার ওয়াদা যাদের উপর প্রযোজ্য আপনি আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবার যোগ্যতা দান করুন)।
আমাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা, আমাদেরকে দান করুন যা আপনি ওয়াদা দিয়েছেন আপনার রসূলের কাছে। আর আমাদেরকে লাঞ্চিত করবেন না ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। নিশ্চয় আপনি ওয়াদা খেলাফ করেন না (অর্থাৎ আমাদের প্রার্থনা হচ্ছে, আপনার ওয়াদা যাদের উপর প্রযোজ্য আপনি আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবার যোগ্যতা দান করুন)’।
৩:১৯৫
ফাছতাজাবা = সুতরাং জবাব দিয়েছেন। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। রব্বুহুম = তাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা। আন্নী = আমি। লা উদীউ = নষ্ট করবো না। আমালা = কোন আমল। আমিলিম মিনকুম = কোন আমলকারীর তোমাদের মধ্য থেকে। মিন যাকারিন = পুরুষের মধ্য থেকে হোক। আও = অথবা। উনছা = নারীর মধ্য থেকে হোক। বা’দুকুম মিন বা’দিন = (এ ক্ষেত্রে) তোমাদের একে অন্যের সমস্তরের। ফাল্লাযীনা = সুতরাং যারা হিজরত করেছে। ওয়া = আর। উখরিজূ = যাদেরকে খারিজ/ বের করে দেয়া হয়েছে। মিন দিয়ারিহিম = তাদের বাড়িঘর থেকে। ওয়া = আর। উজূ = যারা নির্যাতিত হয়েছে। ফী সাবিলী = আমার পথে। ওয়া = আর। ক্বাতালূ = ক্বিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে। ওয়া = আর। ক্বুতিলূ = নিহত হয়েছে। লাউকাফফিরান্না = আমি অবশ্যই মোচন করে দেব। আনহুম = তাদের থেকে। ছাইয়্যিআতিহিম = তাদের অতীতের মন্দসমূহ। ওয়ালিউদখিলান্নাহুম = আর অবশ্যই তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো। জান্নাতিন = জান্নাতে। তাজরি মিন তাহতিহা = যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয়। আল আনহারু = নহরসমূহ/ নদীসমূহ। ছাওয়াবাম মিন ইনদিল্লাহি = সওয়াব/ প্রতিফল আল্লাহর পক্ষ থেকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ এমন যে। ইনদাহু = তাঁরই কাছে আছে। হুছনুছ ছাওয়াব = উত্তম প্রতিফল।
সুতরাং জবাব দিয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে তাদের রব/ প্রতিপালক/ বিধানদাতা, ‘আমি নষ্ট করবো না কোন আমল কোন আমলকারীর তোমাদের মধ্য থেকে, সে পুরুষের মধ্য থেকে হোক অথবা নারীর মধ্য থেকে হোক। (এ ক্ষেত্রে) তোমাদের একে অন্যের সমস্তরের। সুতরাং যারা হিজরত করেছে আর যাদেরকে খারিজ/ বের করে দেয়া হয়েছে তাদের বাড়িঘর থেকে আর যারা নির্যাতিত হয়েছে আমার পথে আর ক্বিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে আর নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই মোচন করে দেব তাদের থেকে তাদের অতীতের মন্দসমূহ আর অবশ্যই তাদেরকে দাখিল/ প্রবেশ করাবো জান্নাতে যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ নদীসমূহ। সওয়াব/ প্রতিফল আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আল্লাহ এমন যে, তাঁরই কাছে আছে উত্তম প্রতিফল।
৩:১৯৬
লা ইয়াগুররান্নাকা = তোমাকে যেন প্রতারিত না করে। তাক্বাল্লুবুল্লাযীনা = তাদের দাপটের সাথে চলাফেরা যারা। কাফারূ = কুফর করেছে। ফিলবিলাদ = দেশে দেশে।
তোমাকে যেন প্রতারিত না করে তাদের দাপটের সাথে চলাফেরা যারা কুফর করেছে দেশে দেশে।
৩:১৯৭
মাতাউন ক্বালীলুন = এসব অল্প উপভোগের সামগ্রী। ছুম্মা = তারপর। মা’ওয়াহুম = তাদের আবাস। জাহান্নামু = জাহান্নাম। ওয়া = আর তা। বি’ছাল মিহাদ = খুবই নিকৃষ্ট আবাস।
এসব অল্প উপভোগের সামগ্রী। তারপর তাদের আবাস জাহান্নাম। আর তা খুবই নিকৃষ্ট আবাস।
৩:১৯৮
লাকিন্নাল্লাযীনাত্তাক্বাও = কিন্তু যারা ভয় করে। রব্বাহুম = তাদের রবকে/ প্রতিপালককে/ বিধানদাতাকে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। জান্নাতুন = জান্নাত। তাজরি মিন তাহতিহা = যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয়। । আল আনহারু = নহরসমূহ/ নদীসমূহ। খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। নুযুলাম মিন ইনদিল্লাহি = ইহা মেহমানদারি, আল্লাহর পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। মা = যা আছে। ইনদিল্লাহি = আল্লাহর কাছে। খায়রুল লিল আবরার = তা-ই উত্তম, সৎকর্মশীলদের জন্য।
কিন্তু যারা ভয় করে তাদের রবকে/ প্রতিপালককে/ বিধানদাতাকে, তাদের জন্য আছে জান্নাত যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ নদীসমূহ। তারা তাতে স্থায়ী হবে। ইহা মেহমানদারি, আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যা আছে আল্লাহর কাছে তা-ই উত্তম, সৎকর্মশীলদের জন্য।
৩:১৯৯
ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে। লামাইঁ ইউ’মিনু = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া মা = আর উহার প্রতি যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকুম = তোমাদের কাছে। ওয়া মা = আর উহার প্রতি যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইহিম = তাদের কাছে। খাশিয়ীনা লিল্লাহি = তারা আল্লাহর জন্য খাশেয়ীন/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত। লা ইয়াশতারূনা = তারা ক্রয় করে না। বিআয়াতিল্লাহি = আয়াতিল্লাহ/ আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে। ছামানান ক্বালীলা = তুচ্ছ মূল্য। উলায়িকা = তারাই এমন লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। আজরুহুম = তাদের প্রতিফল। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের/ প্রতিপালকের/ বিধানদাতার কাছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছারীউল হিসাব = হিসাবকরনে দ্রুততম।
আর নিশ্চয় আহলে কিতাবের মধ্যে কিছু লোক এমনও আছে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি আর উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তোমাদের কাছে আর উহার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তাদের কাছে। তারা আল্লাহর জন্য খাশেয়ীন/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিত। তারা ক্রয় করে না আয়াতিল্লাহ/ আল্লাহর আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য। তারাই এমন লোক যাদের জন্য আছে তাদের প্রতিফল তাদের রবের/ প্রতিপালকের/ বিধানদাতার কাছে। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাবকরনে দ্রুততম।
৩:২০০
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা = হে ঐসব লোক যারা। আমানূসবিরূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা সবর করো। ওয়া = আর। সাবিরূ = সবরের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের তুলনায় অধিক দৃঢ়তা দেখাও। ওয়া = আর। রাবিতূ = যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকো। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। লাআল্লাকুম তুফলিহূন = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা সবর করো, আর সবরের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের তুলনায় অধিক দৃঢ়তা দেখাও আর যুদ্ধের সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত থাকো, আর আল্লাহকে ভয় করো; যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।