২:১
আলিফ লাম মীম = আলিফ লাম মীম।
আলিফ লাম মীম।
২:২
যালিকা = ঐ। আল কিতাব = কিতাব (= বই, বিধিবদ্ধ বা লিখিত বিষয়)। লা রাইবা ফীহি = যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। হুদান = হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশ। লিল মুত্তাকীন = মুত্তাকীদের জন্য (= যারা হুঁশিয়ার বা সাবধান থাকে, সংযত থাকে, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতিতে ভীত থাকে তাদের জন্য।)।
ঐ কিতাব- যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই- হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশ মুত্তাকীদের জন্য (= যারা হুঁশিয়ার বা সাবধান ও সংযত থাকে তাদের জন্য)।
২:৩
আল্লাযীনা = যারা। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল গায়বি = গায়েবের/ অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি। ওয়া = আর। ইউকিমূনাস সালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া = আর। মিম্মা রযাকনাহুম = যা আমরা তাদেরকে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি তা থেকে। ইউনফিকুন = তারা ইনফাক/ ব্যয় করে।
যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে গায়েবের/ অদৃশ্য বিষয়ের প্রতি। আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে আর যা আমরা তাদেরকে রিযিক/ জীবিকা দিয়েছি তা থেকে ইনফাক/ ব্যয় করে।
২:৪
ওয়া = আর। আল্লাযীনা = যারা। ইউ’মিনূনা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিমা = ঐ বিষয়ের প্রতি যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া = আর। মা = যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। মিন কাবলিকা = তোমার আগে। ওয়া = আর। বিল আখিরাতি = আখিরাতের প্রতি (জীবনের মৃত্যু পরবর্তী অনিবার্য পরিণতির প্রতি)। হুম ইউকিনূন = তারা ইয়াকীন (ইলমুল ইয়াকীন/ জ্ঞানগত ইয়াকীন) রাখে।
আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে ঐ বিষয়ের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তোমার প্রতি আর যা নাযিল করা হয়েছে তোমার আগে। আর আখিরাতের প্রতি (= জীবনের মৃত্যু পরবর্তী অনিবার্য পরিণতির প্রতি) তারা ইয়াকীন (= ইলমুল ইয়াকীন/ জ্ঞানগত ইয়াকীন) রাখে।
২:৫
উলায়িকা = তারাই। আলা হুদান = হুদার/ হিদায়াতের উপর আছে। মির রব্বিহিম = (যা) তাদের রবের পক্ষ থেকে (এসেছে)। ওয়া = আর। উলায়িকা হুম = তারা। আল মুফলিহূন = ফালাহলাভকারীগণ/ সফলতালাভকারীগণ।
তারাই হুদার/ হিদায়াতের উপর আছে (যা) তাদের রবের পক্ষ থেকে (এসেছে)। আর তারাই মুফলিহূন/ ফালাহলাভকারী/ সফলতালাভকারী।
২:৬
ইন্না = নিশ্চয়। আল্লাযীনা = যারা। কাফারু = কুফর করে/ অবিশ্বাস করেছে। ছাওয়াউন আলাইহিম = তাদের উপর সমান অবস্থা (বিদ্যমান যে) । আআনযারতাহুম = তুমি কি তাদেরকে সতর্ক করেছো? আম = নাকি। লাম তুনযিরহুম = তুমি তাদেরকে সতর্ক করনি। লা ইয়ু’মিনুন = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না।
নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের উপর সমান অবস্থা (বিদ্যমান যে), তুমি কি তাদেরকে সতর্ক করেছো নাকি তুমি তাদেরকে সতর্ক করনি, তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না।
২:৭
খাতামাল্লাহু = আল্লাহ খাতাম করেছেন/ সিল মেরে দিয়েছেন। আলা কুলুবিহিম = তাদের কলবসমূহের উপর। ওয়া = আর। আলা ছাময়িহিম = তাদের শ্রবণশক্তির উপর। ওয়া = আর। আলা আবসারিহিম = তাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহের উপর। গিশাওয়াতুন = পর্দা, আবরন। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য। আযাবুন আযীম = মহাশাস্তি।
(তাদের কুফরের কারণে) আল্লাহ খাতাম করেছেন/ সিল মেরে দিয়েছেন তাদের কলবসমূহের উপর আর তাদের শ্রবণশক্তির উপর আর তাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহের উপর পর্দা/ আবরন পড়ে গেছে। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
২:৮
ওয়া = আর। মিনান্নাছি = মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এমন আছে। মান = যারা। ইয়াক্বুলু = বলে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। বিল ইয়াওমিল আখিরি = ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ওয়া = অথচ। মা হুম বিমু’মিনীন = তারা মু’মিনীন/ বিশ্বাসী নয়।
আর মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ এমন আছে যারা বলে ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি’। অথচ তারা মু’মিনীন নয়।
২:৯
ইউখাদিয়ুনাল্লাহা = (তাদের ধারণামতে) তারা ধোঁকা দেয় ও দিয়ে যাবে আল্লাহকে। ওয়া = আর। আল্লাযীনা = তাদেরকে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = অথচ। মা ইয়াখদায়ুনা = তারা ধোঁকা দেয় না। ইল্লা আনফুছাহুম = তাদের নিজেদেরকে ছাড়া। ওয়া = আর। মা ইয়াশউরুন = তারা (তা) অনুভব করে না।
(তাদের ধারণামতে) তারা ধোঁকা দেয় ও দিয়ে যাবে আল্লাহকে আর তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। অথচ তারা ধোঁকা দেয় না তাদের নিজেদেরকে ছাড়া। আর তারা তা অনুভব করে না।
২:১০
ফী কুলুবিহিম = তাদের কলবসমূহের মধ্যে। মারাদুন = ব্যাধি, রোগ। ফাযাদাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। মারাদান = ব্যাধি। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য। আযাবুন আলীম = কষ্টদায়ক শাস্তি। বিমা কানূ ইয়াকযিবূন = তারা যে মিথ্যা কথা বলতো তার কারণে।
তাদের কলবসমূহের মধ্যে আছে ব্যাধি/ রোগ। আল্লাহ তাদেরকে ঐ ব্যাধি/ রোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি। তারা যে মিথ্যা কথা বলতো তার কারণে।
২:১১
ওয়া = আর। ইযা কীলা = যখন বলা হয়। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। লা তুফসিদু = তোমরা ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি/ অশান্তি সৃষ্টি করো না। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ক্বলূ = তারা বলে। ইন্নামা = মূলত। নাহনু = আমরা। মুসলিহুন = ইসলাহকারী/ সংশোধনকারী/ শান্তিস্থাপনকারী।
আর যখন তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি/ অশান্তি সৃষ্টি করো না’। তারা বলে, ‘মূলত আমরা মুসলিহুন/ ইসলাহকারী/ সংশোধনকারী/ শান্তিস্থাপনকারী’।
২:১২
আলা = জেনে রাখো। ইন্নাহুম হুমুল = নিশ্চয় তারাই। মুফসিদুনা = ফাসাদকারী/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী/ অশান্তি সৃষ্টিকারী। ওলাকিন = কিন্তু। লা ইয়াশউরুন = তারা তা অনুভব করে না।
জেনে রাখো, নিশ্চয় তারাই মুফসিদুন/ ফাসাদকারী/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী/ অশান্তিসৃষ্টিকারী। কিন্তু তারা তা অনুভব করে না।
২:১৩
ওয়া = আর। ইযা কীলা = যখন বলা হয়। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস কর। কামা = যেভাবে। আমানান্নাছু = ঈমান করেছে (অন্য) মানুষেরা । কলূ = তারা বলে। আনু’মিনু = আমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করবো? কামা = যেভাবে। আমানাছ ছুফাহাউ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে বোকা লোকেরা। আলা = জেনে রাখো। ইন্নাহুম = নিশ্চয় তারা। হুমুস ছুফাহাউ = তারাই বোকা লোক। ওয়ালাকিন = কিন্তু। লা ইয়া’লামুন = তারা তা জানে না।
আর যখন তাদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, ‘তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো যেভাবে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে অন্য মানুষেরা’। তারা বলে, ‘আমরা কি ঈমান/ বিশ্বাস করবো যেভাবে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে বোকা লোকেরা?’ জেনে রাখো, তারাই বোকা লোক কিন্তু তারা তা জানে না।
২:১৪
ওয়া = আর। ইযা = যখন। লাকূল্লাযীনা = তারা সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে যারা ….। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। কলূ = তারা বলে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ওয়া = আর। ইযা = যখন। খালাও = তারা নিভৃতে যায়। ইলা শায়াতিনিহীম = তাদের শয়তানদের দিকে। কলূ = তারা বলে। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। মায়াকুম = তোমাদের সাথে (আছি)। ইন্নামা = মূলত। নাহনু = আমরা। মুছতাহযিয়ুন = (মু’মিনদের সাথে) উপহাসকারী।
আর যখন তারা সাক্ষাৎ করে তাদের সাথে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তখন তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি’। আর যখন তারা নিভৃতে যায় তাদের শয়তানদের দিকে তখন তারা বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথেই আছি, মূলত আমরা (মু’মিনদের সাথে) উপহাসকারী’।
২:১৫
আল্লাহু = আল্লাহ। ইয়াছতাহযিয়ূ = উপহাস করেন। বিহিম = তাদের প্রতি। ওয়া = আর। ইয়ামুদ্দুহুম = তাদেরকে ঢিল/ অবকাশ দিচ্ছেন। ফী তুগইয়ানিহিম = তাদের তুগইয়ানে/ বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে/ অবাধ্যতায়। ইয়া’মাহূন = তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরছে।
আল্লাহ উপহাস করছেন তাদের প্রতি আর তাদেরকে ঢিল/ অবকাশ দিচ্ছেন, তাদের তুগইয়ানে/ বিদ্রোহে/ সীমালংঘনে/ অবাধ্যতায় তারা উদ্ভ্রান্ত/ দিশাহারা হয়ে ঘুরছে।
২:১৬
উলায়িকা = তারাই (এমন লোক)। আল্লাযীনা = যারা। আশতারায়ু = ক্রয় করেছে। আদ দলালাতা = দলালাত/ বিভ্রান্তি। বিল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের পরিবর্তে। ফা = সুতরাং। মা রবিহাত = লাভজনক হয়নি। তিজারাতুহুম = তাদের তিজারাত/ ব্যবসায়। ওয়া = আর। মা কানূ = তারা ছিলো না। মুহতাদীন = মুহতাদীন/ হিদায়াতপ্রাপ্ত/ সঠিক পথে পরিচালিত।
তারাই এমন লোক যারা ক্রয় করেছে দলালাত/ বিভ্রান্তি হুদার/ হিদায়াতের পরিবর্তে। সুতরাং লাভজনক হয়নি তাদের তিজারাত/ ব্যবসায়। আর তারা ছিলো না মুহতাদীন/ হিদায়াতপ্রাপ্ত/ সঠিক পথে পরিচালিত।
২:১৭
মাছালুহুম = তাদের উপমাসমূহ। কামাছালিল্লাযী = ঐ ব্যক্তির (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মত যে…। ইছতাওকাদা নারান = আগুন জ্বালিয়েছে। ফালাম্মা = তারপর যখন। আদায়াত = আলোকিত করেছে। মা = যা। হাওলাহু = তার চারপাশে। যাহাবাল্লাহু = আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন। বিনূরিহিম = তাদের নূর/ আলো। ওয়া = আর। তারাকাহুম = তাদেরকে তরক করেছেন/ ছেড়ে দিয়েছেন। ফি যুলুমাতিন = যুলুমাতের/ অন্ধকারসমূহের মধ্যে। লা ইয়ুবসিরুন = তারা দেখতে পায় না।
তাদের উপমা ঐ ব্যক্তির (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো যে আগুন জ্বালিয়েছে। তারপর যখন (আগুন) আলোকিত করেছে যা তার চারপাশে আছে (সবকিছুকে) তখন আল্লাহ নিয়ে গিয়েছেন তাদের নূর/ আলো আর তাদেরকে তরক করেছেন/ ছেড়ে দিয়েছেন যুলুমাতের/ অন্ধকারসমূহের মধ্যে, তারা কিছুই দেখতে পায় না।
২:১৮
ছুম্মুন = বধির (যে কানে শুনে না)। বুকমুন = বোবা (যে মুখে কথা বলতে পারে না)। উমইয়ুন = অন্ধ (যে চোখে দেখে না)। ফা = সুতরাং। হুম = তারা। লা ইয়ারজিয়ুন = ফিরে আসে না/ আসবে না।
তারা বধির, বোবা, অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসে না/ আসবে না।
২:১৯
আও = অথবা (তাদের উদাহরণ)। কাসাইয়িবীন মিনাছ ছামায়ী = আকাশ থেকে বৃষ্টিপাতের (ঘটনার) মতো। ফীহি = তার মধ্যে (আছে)। যুলুমাতুন = অন্ধকারসমূহ। ওয়া = আর। রা’দুন = বজ্রধ্বনি। ওয়া = আর। বারকুন = বিদ্যুৎচমক। ইয়াজআলুনা = তারা স্থাপন করে। আসাবিয়াহুম = তাদের আঙ্গুলসমূহ। ফী আযানিহিম = তাদের কানসমূহে। মিনাস সাওয়ায়িক্বি = বজ্রপাতসমূহ থেকে (রক্ষা পেতে)। হাজারাল মাওত = মৃত্যুর ভয়ে। ওয়া = আর। আল্লাহু = আল্লাহ। মুহীতুন বিল কাফিরীন = কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী।
অথবা (তাদের উদাহরণ) আকাশ থেকে বৃষ্টিপাতের (ঘটনার) মতো, তার মধ্যে আছে অন্ধকারসমূহ আর বজ্রধ্বনি আর বিদ্যুৎচমক। তারা স্থাপন করে তাদের আঙ্গুলসমূহ তাদের কানসমূহে বজ্রপাতসমূহ থেকে (রক্ষা পেতে) মৃত্যুর ভয়ে। আর আল্লাহ কাফিরদেরকে পরিবেষ্টনকারী।
২:২০
ইয়াকাদু = যেন শীঘ্রই। আল বারকু = বিদ্যুৎচমক। ইয়াখতাফূ = কেড়ে নেবে। আবসারাহুম = তাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহকে। কুল্লামা = যখনি। আদাআ = আলোকিত করে। লাহুম = তাদের জন্য। মাশাও ফীহি = তারা তাতে চলতে থাকে। ওয়া = আর। ইযা আযলামা = যখন অন্ধকার হয়। আলাইহিম = তাদের উপর। ক্বমূ = তারা দাঁড়িয়ে যায়। ওয়া = আর। লাও শাআল্লাহু = যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাযাহাবা = (তবে) অবশ্যই নিয়ে যেতেন। বিছাময়িহিম = তাদের শ্রবণশক্তিকে। ওয়া = আর। আবসারিহিম = তাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহকে। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
যেন শীঘ্রই বিদ্যুৎচমক কেড়ে নেবে তাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহকে। যখনি (বিদ্যুৎ) আলোকিত করে তাদের জন্য (তাদের চলার পথ) তারা তাতে (= সেই আলোতে) চলতে থাকে। আর যখন অন্ধকার হয় তাদের উপর, তারা দাঁড়িয়ে যায়। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন (তাহলে) অবশ্যই নিয়ে যেতেন তাদের শ্রবণশক্তিকে আর তাদের দৃষ্টিশক্তিসমূহকে। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
২:২১
ইয়া আইয়ুহা = হে। আন নাছু = মানুষ। উ’বুদূ = তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো। রব্বাকুম = তোমাদের রবের। আল্লাযী = যিনি। খালাকাকুম = তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। ওয়া = আর। আল্লাযীনা = যারা। মিন কাবলিকুম = তোমাদের পূর্ববর্তী পর্যায়ের (তাদেরকে)। লায়াল্লাকুম = তাহলেই সম্ভব যে, তোমরা। তাততাকুন = মুত্তাকী/ সাবধানী হতে পারবে।
হে মানুষ, তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো তোমাদের রবের যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে আর যারা তোমাদের পূর্ববর্তী পর্যায়ের তাদেরকে, তাহলেই সম্ভব যে, তোমরা মুত্তাকী/ সাবধানী/ আল্লাহভীরু হতে পারবে।
২:২২
আল্লাযী = যিনি। জায়ালা = স্থাপন করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। আল আরদা = জমিনকে। ফিরাশান = বিছানাস্বরূপ। ওয়া = আর। আস ছামায়া = আকাশকে। বিনায়ান = সামিয়ানাস্বরূপ। ওয়া = আর। আনযালা = নাযিল করেছেন/ বর্ষন করেছেন। মিনাছ ছামায়ী = আকাশ থেকে। মায়ান = পানি। ফাআখরাজা = তারপর বের করেছেন। বিহী = উহা দ্বারা। মিন = থেকে। আছ ছামারাতি = ফল ফলাদি। রিযকাল্লাকুম = তোমাদের জন্য রিযকস্বরূপ। ফা = সুতরাং। লা তাজআলূ = স্থাপন করো না। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। আনদাদান = সমকক্ষ। ওয়া আনতুম তা’লামূন = এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (প্রকৃত বিষয়) জানো।
যিনি স্থাপন করেছেন তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানাস্বরূপ আর আকাশকে সামিয়ানাস্বরূপ। আর নাজিল/ বর্ষণ করেছেন আকাশ থেকে পানি। তারপর বের করেছেন উহা দ্বারা (= পানি দ্বারা) ফলফলাদি তোমাদের জন্য রিযকস্বরূপ। সুতরাং স্থাপন করো না আল্লাহর জন্য কোন সমকক্ষ, এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (প্রকৃত বিষয়) জানো।
২:২৩
ওয়া = আর। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা থাকো। ফী রাইবিন = সন্দেহের মধ্যে। মিম্মা = তার কোন বিষয়ে যা …….। নাযযালনা = আমরা নাযিল করেছি। আলা আবদিনা = আমাদের আবদের/ বান্দার উপর। ফা’তূ = তাহলে তোমরা আনো। বিসূরাতিন = একটি সূরা। মিন মিছলিহি = তার অনুরূপ। ওয়া = আর। ওয়াদউ = তোমরা দাওয়াত দাও/ আহবান করো/ ডাকো। সুহাদাউকুম = তোমাদের সুহাদাকে/ সহীদদেরকে/ সমর্থকদেরকে। মিন দুনিল্লাহি = আল্লাহকে বাদ দিয়ে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিকূন = সত্যবাদী/ সত্য ধারণা পোষণকারী।
আর যদি তোমরা থাকো সন্দেহের মধ্যে তার কোন বিষয়ে যা আমরা নাযিল করেছি আমাদের আবদের/ বান্দাহর উপর তাহলে তোমরা আনো একটি সূরা তার অনুরূপ। আর তোমরা দাওয়াত দাও/ আহবান করো/ ডাকো তোমাদের সুহাদাকে/ সহীদদেরকে/ সমর্থকদেরকে আল্লাহকে বাদ দিয়ে, যদি তোমরা হও সাদিকূন/ সত্যবাদী/ সত্য ধারণা পোষণকারী।
২:২৪
ফা ইন = কিন্তু যদি (অবস্থা এই হয় যে,)। লাম তাফয়ালূ = তোমরা তা করনি। ওয়া = আর। লান তাফয়ালূ = তোমরা কখনই তা করতে পারবে না। ফাত্তাকূন নারা = তাহলে ভয় কর (জাহান্নামের) আগুনকে। আল্লাতি = যা (এমন যে,) ওয়াকূদূহা = তার ইন্ধন/ জ্বালানী (হবে)। আন নাসু = মানুষ। ওয়া = আর। আল হিজারাতু = পাথরসমূহ। উয়িদ্দাত = (তা) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লিল কাফিরীন = কাফিরদের জন্য।
কিন্তু যদি (অবস্থা এই হয় যে,) তোমরা তা করনি আর (বাস্তবে) তোমরা কখনই তা করতে পারবে না, তাহলে ভয় কর (জাহান্নামের) আগুনকে যা এমন যে, তার ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথরসমূহ। তা (= জাহান্নামের আগুন) প্রস্তুত রাখা হয়েছে কাফিরদের জন্য।
২:২৫
ওয়া = আর। বাশশিরিল্লাযীনা = সংবাদ দাও তাদেরকে যারা …..। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি= সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। আন্না = যে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। জান্নাতিন = জান্নাত/ বাগান। তাজরি মিন তাহতিহা = যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয়। আল আনহার = নহরসমূহ/নদীসমূহ। কুল্লামা রুযিকা মিনহা = যখনি তা থেকে তাদেরকে রিযক দেয়া হবে। মিন ছামারাতিন = ফলফলাদি থেকে। রিযকা =রিযকস্বরূপ। ক্বলূ = তারা বলবে। হাযা = ইহা। আল্লাযী = তা-ই যা। রুযিকনা = আমাদেরকে রিযকস্বরূপ দেয়া হয়েছে। মিন কাবলূ = (মৃত্যুর) আগে। ওয়া = আর। উতূ = দেয়া হয়েছে। বিহী = তা দ্বারা। মুতাশাবিহা = একে অন্যের অনুরূপ। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য। ফীহা = তার মধ্যে। আযওয়াজুন মুতাহহারাতুন = পবিত্র জোড়া (স্বামী/স্ত্রী)। ওয়া = আর। হুম = তারা। ফীহা = তার মধ্যে। খালিদূন = স্থায়ী।
আর সংবাদ দাও তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে, এ সংবাদ যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত/ বাগান, যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ নদীসমূহ। যখনি তা থেকে তাদেরকে রিযক দেয়া হবে ফলফলাদি থেকে (তাদের জন্য) রিযকস্বরূপ, তারা বলবে, ইহা তা-ই যা আমাদেরকে রিযকস্বরূপ দেয়া হয়েছে (মৃত্যুর) আগে। আর (আসলে তাদেরকে) দেয়া হয়েছে তা দ্বারা (= মৃত্যুর আগের রিযক দ্বারা) এরি অনুরূপ। আর তাদের জন্য তার মধ্যে থাকবে আযওয়াজুন মুতাহহারাতুন/ পবিত্র জোড়া (স্বামী/স্ত্রী)। আর তারা তাতে স্থায়ী হবে।
২:২৬
ইন্না = নিশ্চয়। আল্লাহু = আল্লাহ। লা ইয়াছতাহয়ী = লজ্জাবোধ করেন না। আন ইয়াদরিবা = পেশ করতে। মাছালান = উপমা। মা = যা। বাউদাতান = মশা। ফা = সেই সাথে। মা = যা। ফাওকাহা = (ক্ষুদ্রতায়) তার চেয়ে বড় (ক্ষুদ্রতর)। ফাআম্মা = সুতরাং ব্যাপার এই যে। আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ফা = তখন। ইয়া’লামুনা = তারা জানে। আন্নাহু = নিশ্চয় তা। আল হাক্কু = সঠিক। মির রব্বিহিম = তাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়া আম্মা = আর ব্যাপার এই যে। আল্লাযীনা = যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ফা = তখন। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। মা যা = কি। আরাদা = এরাদা/ ইচ্ছা করেছেন। আল্লাহু = আল্লাহ। বি হাযা মাছালান = এই উপমা দ্বারা। ইউদিল্লু = তিনি বিভ্রান্ত করেন। বিহী = উহা দ্বারা (উপমা দ্বারা)। কাছীরান = অনেককে। ওয়া = আর। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত/ পথনির্দেশ করেন। বিহী = উহা দ্বারা (উপমা দ্বারা)। কাছীরান = অনেককে। ওয়া = আর। মা ইউদিল্লু = তিনি বিভ্রান্ত করেন না। বিহী = উহা দ্বারা। ইল্লাল ফাছিকীন = ফাছিকদেরকে/ সত্যত্যাগীদেরকে/ পাপীদেরকে/ দুষ্কার্যকারীদেরকে ছাড়া।
নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন না পেশ করতে (উহার) উপমা, যা মশা, সেই সাথে (উহার) উপমা যা (ক্ষুদ্রতায়) তার চেয়ে বড় (অর্থাৎ ক্ষুদ্রতর)। সুতরাং ব্যাপার এই যে, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তখন তারা জানে নিশ্চয় তা সঠিক তাদের রবের পক্ষ থেকে। আর ব্যাপার এই যে, যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তখন তারা বলে, কি এরাদা/ ইচ্ছা করেছেন আল্লাহ এই উপমা দ্বারা? তিনি বিভ্রান্ত করেন উহা দ্বারা (= উপমা দ্বারা) অনেককে আর তিনি হিদায়াত/ পথনির্দেশ করেন উহা দ্বারা (= উপমা দ্বারা) অনেককে। আর তিনি বিভ্রান্ত করেন না উহা দ্বারা ফাছিকদেরকে/ সত্যত্যাগীদেরকে/ পাপীদেরকে/ দুষ্কার্যকারীদেরকে ছাড়া অন্যদেরকে।
২:২৭
আল্লাযীনা = যারা। ইয়ানকুদুনা = ভঙ্গ করে। আহদাল্লাহি = আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি। মিন বা’দি মিছাক্বিহী = তাতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরে। । ওয়া = আর। ইয়াক্বতয়ূনা = ছিন্ন করে। মা আমারাল্লাহু বিহী আন ইয়ুসালা = আল্লাহ যা যুক্ত রাখার আদেশ দিয়েছেন। ওয়া = আর। ইয়ুফছিদূনা ফিল আরদি = পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করে । উলায়িকা হুমুল = তারাই। খাছিরুন = ক্ষতিগ্রস্ত।
যারা ভঙ্গ করে আল্লাহর আহদ (= আল্লাহর সাথে কৃত নৈতিক প্রতিশ্রুতি) তাতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরে, আর ছিন্ন করে (ঐ সম্পর্ক) আল্লাহ যা যুক্ত রাখার আদেশ দিয়েছেন, আর পৃথিবীতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি করে। তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
২:২৮
কাইফা = কিরূপে। তাকফুরুনা = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করবে। বিল্লাহি =আল্লাহর প্রতি। ওয়া = অথচ। কুনতুম = তোমরা ছিলে। আমওয়াতান = প্রাণহীন। ফা = তারপর। আহইয়াকুম = তিনি তোমাদের হায়াত/ জীবন দিয়েছেন। চুম্মা = তারপর। ইয়ুমিতুকুম = তোমাদেরকে মওত/ মৃত্যু ঘটাবেন। চুম্মা = তারপর। ইয়ুহঈকুম = তোমাদেরকে হায়াত/ জীবন দেবেন। চুম্মা = তারপর। ইলাইহি = তাঁর দিকে। তুরজায়ুন = তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
কিরূপে তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তারপর তিনি তোমাদেরকে হায়াত/ জীবন দিয়েছেন, তারপর তোমাদের মওত/ মৃত্যু ঘটাবেন তারপর তোমাদেরকে (আখিরাতে) হায়াত/ জীবন দেবেন। তারপর তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।
২:২৯
হুয়া = তিনিই (সেই সত্তা)। আল্লাযী = যিনি। খালাকা = সৃষ্টি করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মা = যা (আছে)। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। জামিয়া = (সেই) সবকিছু। চুম্মা = তারপর। ইছতাওয়া = তিনি মনোনিবেশ করেছেন। ইলাছ ছামায়ী = আকাশের দিকে। ফা = তখন। ছাওওয়াহুন্না = সেগুলোকে সুবিন্যস্ত করেছেন। ছাবআ ছামাওয়াত = সাত আকাশে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। বিকুল্লি সাইয়িন = প্রত্যেক বিষয়ে। আলীম = জ্ঞানী।
তিনিই সেই সত্তা, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা আছে পৃথিবীতে সেই সবকিছু। তারপর তিনি মনোনিবেশ করেছেন আকাশের দিকে। তখন সেগুলোকে সুবিন্যস্ত করেছেন সাত আকাশে। আর তিনি প্রত্যেক বিষয়ে আলীম/ জ্ঞানী।
২:৩০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা রব্বুকা লিল মালায়িকাতি = তোমার রব ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন। ইন্নী জায়িলুন ফিল আরদি খলীফা = নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত প্রতিস্থাপনকারী। ক্বলূ = তারা বলেছে। আতাজআলু ফীহা = আপনি কি উহাতে প্রতিস্থাপন করবেন (এমন প্রজাতি)। মান = যে। ইউফসিদু ফীহা = উহাতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি/ অশান্তি সৃষ্টি করবে। ওয়া = আর। ইয়াছফিকুদ দিমায়া = (একে অন্যের) রক্ত ঝরাবে। ওয়া = আর। নাহনু = আমরা। নুছাব্বিহু = তাসবীহ (পবিত্রতা ঘোষণা) করি। বিহামদিকা = আপনার হামদ/ প্রশংসার সাথে। ওয়া = আর। নুকাদ্দিসু = আমরা তাকদীস (পবিত্রতা ঘোষণা) করি। লাকা = আপনারই জন্য। ক্বলা = তিনি বলেছেন। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আ’লামু = জানি। মা = যা। লা তা’লামুন = তোমরা জানো না।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন তোমার রব ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি পৃথিবীতে খলিফা/ আধিপত্যে স্থলাভিষিক্ত প্রতিস্থাপনকারী’। তারা বলেছে, ‘আপনি কি উহাতে প্রতিস্থাপন করবেন (এমন প্রজাতি) যে উহাতে ফাসাদ/ বিপর্যয় সৃষ্টি/ অশান্তি সৃষ্টি করবে আর (একে অন্যের) রক্ত ঝরাবে? আর আমরা তাসবীহ (= পবিত্রতা ঘোষণা) করি আপনার হামদ/ প্রশংসার সাথে আর তাকদীস (= পবিত্রতা ঘোষণা) করি আপনারই জন্য’। তিনি বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জানো না’।
২:৩১
ওয়া = আর। আল্লামা = তিনি শিখিয়েছেন। আদামা = আদমকে। আল আছমাউ কুল্লাহা = সবকিছুর নামসমূহ। ছুম্মা = তারপর। আরাদাহুম = ঐগুলোকে পেশ করেছেন। আলাল মালায়িকাতি = ফেরেশতাদের সামনে। ফাক্বলা = তারপর বলেছেন। আনবিয়ুনী = আমার কাছে ব্যক্ত কর। বিআছমায়ি হা-উলায়ি = এসবের নামসমূহ। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিকীন = সত্যবাদী/ সত্য ধারণা পোষণকারী।
আর তিনি শিখিয়েছেন আদমকে সবকিছুর নামসমূহ তারপর ঐগুলোকে পেশ করেছেন ফেরেশতাদের সামনে তারপর বলেছেন, ‘আমার কাছে ব্যক্ত কর এসবের নামসমূহ যদি তোমরা হও সাদিকূন/ সত্যবাদী/ সত্য ধারণা পোষণকারী’।
২:৩২
ক্বলূ = তারা বলেছে। ছুবহানাকা = আপনি পবিত্র। লা ইলমা লানা = আমাদের জন্য কোন ইলম/ জ্ঞান নেই। ইল্লা মা আল্লামতানা = যা আপনি আমাদেরকে শিখয়েছেন তা ছাড়া। ইন্নাকা আনতা = নিশ্চয় আপনিই। আল আলীম = মহাজ্ঞানী। আল হাকীম = প্রজ্ঞাময়, বিচক্ষণ, মহাবিজ্ঞ।
তারা বলেছে, ‘আপনি পবিত্র। আমাদের জন্য কোন ইলম/ জ্ঞান নেই, যা আপনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন তা ছাড়া। নিশ্চয় আপনিই আল আলীম/ মহাজ্ঞানী, আল হাকীম/ প্রজ্ঞাময়, বিচক্ষণ, মহাবিজ্ঞ’।
২:৩৩
ক্বলা = তিনি বলেছেন। ইয়া আদামু = হে আদম। আনবি’হুম = তাদের কাছে ব্যক্ত কর। বিআছমায়িহিম = ঐগুলোর নামসমূহ। ফালাম্মা = তারপর যখন। আনবাআহুম = সে তাদের কাছে ব্যক্ত করেছে। বিআছমায়িহিম = ঐগুলোর নামসমূহ। ক্বলা = তিনি বলেছেন। আলাম আক্বুল = আমি কি বলিনি। লাকুম = তোমাদের উদ্দেশ্যে। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আ’লামু = জানি। গায়বা = গায়েব/ অদৃশ্য সত্য বিষয়। ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশসমূহ ও পৃথিবীর। ওয়া = আর। আ’লামু = আমি জানি। মা = যা। তুবদূনা = তোমরা প্রকাশ কর। ওয়া = আর। মা = যা। কুনতুম তাকতুমূন = তোমরা গোপন রাখ।
তিনি বলেছেন, ‘হে আদম, তাদের কাছে ব্যক্ত কর ঐগুলোর নামসমূহ। তরপর যখন সে তাদের কাছে ব্যক্ত করেছে ঐগুলোর নামসমূহ, তিনি বলেছেন, “আমি কি বলিনি তোমাদের উদ্দেশ্যে-‘নিশ্চয় আমি জানি গায়েব/ অদৃশ্য সত্য বিষয় আকাশসমূহ ও পৃথিবীর আর আমি জানি যা তোমরা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন রাখ’”।
২:৩৪
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। লিল মালায়িকাতি = ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে। উছজুদু লিআদামা = তোমরা আদমকে সিজদা করো। ফাছাজাদূ = সুতরাং তারা সিজদা করেছে। ইল্লা ইবলিস = কিন্তু ইবলিস (সিজদা করেনি)। (ইবলিস একটি জ্বিনের উপাধি, শব্দগত অর্থে চিরনিরাশ)। আবা = সে প্রত্যাখ্যান করেছে। ওয়াছতাকবারা = আর তাকাব্বরী/ অহংকার করেছে। ওয়া = আর। কানা = সে হয়ে গেছে। মিনাল কাফিরীন = কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
আর যখন আমরা বলেছি ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা আদমকে সিজদা করো’। সুতরাং তারা সিজদা করেছে। কিন্তু ইবলীস সিজদা করেনি। সে প্রত্যাখ্যান করেছে আর অহংকার করেছে। আর সে হয়ে গেছে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
২:৩৫
ওয়া = আর। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। ইয়া আদামু = হে আদম। উছকুন = বসবাস করো। আনতা = তুমি। ওয়া = আর। জাওজুকা = তোমার স্ত্রী। আল জান্নাতা = জান্নাতে/ বাগানে (জান্নাতুল মাওয়ায়)। ওয়া = আর। কুলা = তোমরা দুজনে খাও। মিনহা = তা থেকে। রগাদান = স্বাচ্ছন্দ্যে। হাইছু = যেখানে। শি’তুমা = তোমরা দুজনে (খেতে) ইচ্ছা করো। ওয়া = আর। লা তাক্বরাবা = নিকটে যেও না। হাযিহি = এই। আশ শাজারাত = গাছটির। ফাতাকুনা = তাহলে তোমরা দুজন হয়ে যাবে। মিনায যালিমীন = যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।
আর আমরা বলেছি, ‘হে আদম, বসবাস করো তুমি আর তোমার স্ত্রী জান্নাতে/ বাগানে। আর তোমরা দুজনে খাও তা থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে যেখানে তোমরা দুজনে (খেতে) ইচ্ছা করো। আর নিকটেও যেও না এই গাছটির। তাহলে (অর্থাৎ এই গাছটির নিকটে গেলে) তোমরা দুজনে হয়ে যাবে যালিমদের অন্তর্ভুক্ত’।
২:৩৬
ফা = তারপর। আযাল্লাহুমাশ শায়তানু = শয়তান তাদেরকে বিচ্যুত করেছ/ সরিয়ে দিয়েছে। আনহা = উহা থেকে। ফা = তারপর। আখরাজাহুমা = তাদের দুজনকে বের করে দিয়েছে। মিম মা কানা ফীহি = তা থেকে যে অবস্থায় তারা দুজন ছিল। ওয়া = আর। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। ইহবিতূ = তোমরা সবাই নেমে পড়/ ধাবিত হও/ চলে যাও। বা’দুকুম = তোমাদের একজন। লিবা’দিন = অন্যজনের জন্য। আদুউয়ুন = শত্রু। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মুছতাক্বাররুন = কিছু কালের অবস্থান। ওয়া = আর। মাতাউন = জীবিকা সামগ্রী। ইলা হীনিন = কিছুকাল পর্যন্ত।
তারপর শয়তান তাদেরকে বিচ্যুত করেছে/ সরিয়ে দিয়েছে তা থেকে (= আল্লাহর আদেশ পালন থেকে), তারপর তাদের দুজনকে বের করে দিয়েছে তা থেকে যে অবস্থায় তারা দুজন ছিল। আর আমরা বলেছি, ‘তোমরা সবাই চলে যাও (পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে)। তোমাদের একজন অন্যজনের শত্রু । আর তোমাদের জন্য আছে পৃথিবীতে কিছু কালের অবস্থান আর জীবিকা সামগ্রী কিছুকাল পর্যন্ত’।
২:৩৭
ফা = তারপর (নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পর)। তালাক্কা আদামু = আদম গ্রহণ করেছিল। মিন রব্বিহি = তার রবের নিকট থেকে। কালিমাতিন = কিছু বাক্য। ফা = তখন। তাবা আলাইহি = তিনি তার তাওবা কবুল করেছেন। ইন্নাহু হুয়া = নিশ্চয় তিনি। ৩আত তাওয়াব = তাওবা কবুলকারী। আর রহীম = অত্যন্ত দয়াশীল।
তারপর (নিষিদ্ধ গাছের ফল খাওয়ার পর) আদম গ্রহণ করেছিল তার রবের নিকট থেকে কিছু বাক্য। তখন তিনি তার তাওবা কবুল করেছেন। নিশ্চয় তিনিই আত তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, আর রহীম/ অত্যন্ত দয়াশীল।
২:৩৮
ক্বুলনা = আমরা বলেছি। ইহবিতূ = চলে যাও। মিনহা = উহা থেকে। জামিয়া = তোমরা সবাই। ফাইম্মা = তারপর যখন। ইয়া’তিয়ান্নাকুম = তোমাদের কাছে আসবে। মিন্নী = আমার পক্ষ থেকে। হুদান = হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশ। ফা =তখন। মান = যারা। তাবিয়া = ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে। হুদাইয়া = আমার হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশ। ফা = তাহলে। লা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহযানূন = দু:খিত হবে।
আমরা বলেছি, ‘চলে যাও উহা থেকে তোমরা সবাই। তারপর যখন তোমাদের কাছে আসবে আমার পক্ষ থেকে হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশ, তখন যারা ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে আমার হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশ তাহলে তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে।
২:৩৯
ওয়া = আর। আল্লাযীনা = যারা। কাফারু = কুফর/ অবিশ্বাস করবে। ওয়া = আর। কাযযাবু = মিথ্যা সাব্যস্ত করবে। বিআয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহকে। উলায়িকা = তারা। আসহাবুন নার = (জাহান্নামের) আগুনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ/ সত্তা, এখানে অর্থ – যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে, (৭৪: ৩১ আয়াতে এর অর্থ হবে যারা জাহান্নামে শাস্তি দেবে/ জাহান্নামের দায়িত্বশীল)। হুম = তারা। ফীহা = তাতে। খালিদূন = স্থায়ী।
আর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করবে আর মিথ্যা সাব্যস্ত করবে আমাদের আয়াতসমূহকে তারা আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে’।
২:৪০
ইয়া = হে। বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইল/ ইসরাইলের সন্তানগণ। উযকুরু = তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতিয়া = আমার নিয়ামাত/ অনুগ্রহ। আল্লাতী = যা। আনআমতু = আমি নিয়ামাত/ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়েছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। আওফু = তোমরা পূর্ণ করো। বিআহদি = আমার কাছে কৃত আহদ/ প্রতিশ্রুতি। উফী = আমি পূর্ণ করবো। বিআহদিকুম = তোমাদের কাছে কৃত আহদ/ প্রতিশ্রুতি। ওয়া = আর। ইয়্যাইয়া = শুধু আমাকেই। ফারহাবূন = তোমরা ভয় করো।
হে বানী ইসরাইল/ ইসরাইলের সন্তানগণ, তোমরা যিকর/ স্মরণ করো আমার নিয়ামাত/ অনুগ্রহ যা আমি নিয়ামাত/ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়েছি তোমাদের উপর। আর তোমরা পূর্ণ করো আমার কাছে কৃত আহদ/ প্রতিশ্রুতি, আমি পূর্ণ করবো তোমাদের কাছে কৃত আহদ/ প্রতিশ্রুতি। আর শুধু আমাকেই তোমরা ভয় করো।
২:৪১
ওয়া = আর। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিমা = ঐ বিষয়ের প্রতি যা …। আনযালতু = আমি নাযিল/ অবতরণ করেছি। মুসাদ্দিকান = সত্যতা প্রতিপাদনকারী। লিমা = উহার জন্য যা …। মায়াকুম = তোমাদের সাথে আছে। ওয়া = আর। লা তাকূনূ = তোমরা হয়ো না। আওয়ালা = প্রথম। কাফিরিন = কাফির/ অবিশ্বাসকারী। বিহি = উহার প্রতি। ওয়া = আর। লা তাশতারূ = তোমরা ক্রয় করো না। বিআয়াতি = আমার আয়াতের বিনিময়ে। ছামানান ক্বালীলা = তুচ্ছমূল্য। ওয়া = আর। ইয়্যাইয়া = শুধু আমাকেই। ফাত্তাকূন = তোমরা ভয় করো।
আর তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো ঐ বিষয়ের প্রতি যা আমি নাযিল/ অবতরণ করেছি মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী উহার জন্য যা তোমাদের সাথে আছে। আর তোমরা হয়ো না প্রথম কাফির/ অবিশ্বাসকারী উহার প্রতি। আর তোমরা ক্রয় করো না আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছমূল্য। আর শুধু আমাকেই তোমরা ভয় করো।
২:৪২
ওয়া = আর। লা তালবিছূল হাক্কা বিল বাতিল ওয়া তাকতুমুল হাক্কা = তোমরা লিবাস (পোশাক) পরিয়ে দিও না/ ঢেকে দিও না হক্বকে/ সঠিক তথ্যকে বাতিল/ বেঠিক তথ্য দ্বারা আর তোমরা গোপন রেখো না সঠিক তথ্যকে। ওয়া আনতুম তা’লামুন = এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (সঠিক তথ্যটি) জানো।
আর তোমরা লিবাস (পোশাক) পরিয়ে দিও না/ ঢেকে দিও না হক্বকে/ সঠিক তথ্যকে বাতিল/ বেঠিক তথ্য দ্বারা আর তোমরা গোপন রেখো না সঠিক তথ্যকে এ সত্ত্বেও যে, তোমরা (সঠিক তথ্যটি) জানো।
২:৪৩
ওয়া = আর। আকিমুস সালাত = তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া আতূয যাকাতা = আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। ওয়ারকায়ূ = আর তোমরা রুকু করো। মায়ার রাকিয়ীন = রুকুকারীদের সাথে।
আর তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো আর তোমরা রুকু করো রুকুকারীদের সাথে।
২:৪৪
আতা’মুরূ = তোমরা কি আদেশ দাও? আননাছা = মানবজাতিকে। বিল বিররি = পূণ্য কাজের প্রতি। ওয়া = আর। তানছাওনা = তোমরা ভুলে যাও। আনফুছাকুম = তোমাদের নিজেদেরকে। ওয়া = অথচ। আনতুম তাতলূনাল কিতাবা = তোমরা কিতাব তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করো। আফা লা তা’কিলূন = তাহলে কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না?
তোমরা কি আদেশ দাও মানবজাতিকে পূণ্য কাজের প্রতি আর তোমরা ভুলে যাও তোমাদের নিজেদেরকে? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন কর। তাহলে কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না?
২:৪৫
ওয়া = আর। ইছতায়িনূ বিস সবরি ওয়াস সালাতি = তোমরা ইসতিয়ান করো/ সাহায্য চাও সবরের ও সালাতের মাধ্যমে। ইন্নাহা = নিশ্চয় উহা (সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া)। লাকাবীরাতুন = অবশ্যই কবীরা/ বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয়। ইল্লা আলাল খাশিয়ীন = খাশেয়ীনের/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিতদের উপর ছাড়া।
আর তোমরা ইসতিয়ান করো/ সাহায্য চাও সবরের ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয় উহা (সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাওয়া) অবশ্যই কবীরা/ বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয়, খাশেয়ীনের/ (দায়বদ্ধতার অনুভূতিতে) অবনমিতদের উপর ছাড়া।
২:৪৬
আল্লাযীনা = যারা। ইয়াযুন্নূনা = যন্নুন/ ধারণা রাখে। আন্নাহুম = নিশ্চয় তারা (হবে)। মুলাকূ রব্বিহিম = তাদের রবের সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) মোলাকাতকারী। ওয়া = আর। আন্নাহুম = নিশ্চয়। ইলাইহি = তাঁর দিকে। রাজিয়ূন = প্রত্যাবর্তনকারী।
যারা যন্নুন/ ধারণা রাখে যে, নিশ্চয় তারা (হবে) তাদের রবের সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) মোলাকাতকারী। আর নিশ্চয় তারা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
২:৪৭
ইয়া = হে। বানী ইসরাইল = বানী ইসরাইল/ ইসরাইলের সন্তানগণ। উযকুরূ = তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতিয়া = আমার নিয়ামাত/ অনুগ্রহ। আল্লাতী = যা। আনআমতু = আমি নিয়ামাত/ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়েছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। আন্নী = আমি। ফাদ্দালতুকুম = তোমাদেরকে ফদল/ ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি। আলাল আলামীন = সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
হে বানী ইসরাইল/ ইসরাইলের সন্তানগণ, তোমরা যিকর/ স্মরণ করো আমার নিয়ামাত/ অনুগ্রহ যা আমি নিয়ামাত/ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়েছি তোমাদের উপর। আর (বিশেষভাবে স্মরণ করো যে,) আমি তোমাদেরকে ফদল/ ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
২:৪৮
ওয়া = আর। ইত্তাকূ = তোমার ভয় করো। ইয়াওমান = সেদিনকে যেদিন। লা তাযযী = প্রতিদান দেয়ার কাজে আসবে না। নাফসুন = কোন ব্যক্তিই। আন নাফসিন = অপর কোন ব্যক্তির ব্যাপারে। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। লা ইয়ুকবালু = কবুল করা হবে না। মিনহা = তার থেকে। শাফায়াতুন = শাফায়াত/ সুপারিশ। ওয়া = আর। লা ইয়ু’খাজু = গ্রহণ করা হবে না। মিনহা = তার থেকে। আদলুন = বিনিময়। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তাদেরকে। ইউনসরুন = সাহায্য করা হবে।
আর তোমরা ভয় করো সেদিনকে যেদিন প্রতিদান দেয়ার কাজে আসবে না কোন ব্যক্তিই অপর কোন ব্যক্তির ব্যাপারে, কিছুমাত্রও। আর কবুল করা হবে না তার থেকে শাফায়াত/ সুপারিশ আর গ্রহণ করা হবে না তার থেকে বিনিময়। আর না তাদেরকে সাহায্য করা হবে।
২:৪৯
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। নাজজাইনাকুম = আমরা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি। মিন আলে ফিরআউনা = আলে ফিরআউন থেকে/ ফিরআউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদের কবল থেকে। ইয়াছূমুনাকুম = তারা তোমাদেরকে নিপীড়ন ও অপমানিত করতো। ছুয়াল আযাবা = নিকৃষ্ট আযাবে/ শাস্তিতে। ইয়ুযাব্বিহুনা = তারা যবেহ করতো। আবনাআকুম = তোমাদের পুত্রদেরকে। ওয়া = আর। ইয়াছতাহিয়ুনা = তারা জীবিত থাকতে দিত। নিছাআকুম = নারীদেরকে। ওয়া = আর। ফী যালিকুম = এসবের মধ্যে। বালাউন = পরীক্ষা। মিন রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। আযীম = মহা।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা তোমাদেরকে নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি আলে ফিরআউন থেকে/ ফিরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীগণের কবল থেকে। তারা তোমাদেরকে নিপীড়ন ও অপমানিত করতো নিকৃষ্ট আযাব/ শাস্তি দিয়ে। তারা যবেহ করতো তোমাদের পুত্রদেরকে আর তারা জীবিত থাকতে দিতো তোমাদের নারীদেরকে। আর এসবের মধ্যে (তোমাদের জন্য) পরীক্ষা ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে, মহাপরীক্ষা।
২:৫০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ফারাকনা বিকুমুল বাহরা = আমরা তোমাদের খাতিরে জলাশয় বিশেষকে পৃথক করেছি। ফাআনজাইনাকুম = তদনুযায়ী আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তোমাদেরকে। ওয়া = আর। আগরাকনা = আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি। আলা ফিরআউনা = ফিরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদেরকে। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। তানযুরুন = দেখছিলে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা তোমাদের খাতিরে জলাশয় বিশেষকে পৃথক করেছি। তদনুযায়ী আমরা নাজাত/ মুক্তি দিয়েছি তোমাদেরকে। আর আমরা ডুবিয়ে দিয়েছি আলে ফিরআউনকে/ ফিরাউনের নির্বাহী পরিষদ ও অনুসারীদেরকে। আর তোমরা তা দেখছিলে।
২:৫১
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ওয়াআদনা = আমরা ওয়াদা দিয়েছি। মূসা = মূসাকে। আরবায়িনা = চল্লিশ। লাইলাতান = রাতের। চুম্মা = তারপর। আততাখাযতুম = তোমরা গ্রহণ করেছো। আল ইজলা = গরুর বাছুরকে। মিন বা’দিহি = তার পরবর্তী পর্যায়ে। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। যালিমূন = যালিম।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা ওয়াদা দিয়েছি মূসাকে চল্লিশ রাতের। তারপর তোমরা গ্রহণ করেছো গরুর বাছুরকে (উপাস্য রূপে) তার পরবর্তী পর্যায়ে। আর তোমরা ছিলে যালিম।
২:৫২
ছুম্মা = তারপর। আফাওনা আনকুম = আমরা তোমাদেরকে মাফ করে দিয়েছি। মিম বা’দি যালিকা = এরপরও। লাআল্লাকুম = যেন তোমরা। তাশকুরুন = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
তারপর আমরা তোমাদেরকে মাফ করে দিয়েছি এরপরও। যেন তোমরা (মাফ পাবার কারণে) শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।
২:৫৩
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আতাইনা মূসা = আমরা মূসাকে দিয়েছি। আল কিতাব = আল কিতাব। ওয়া = ও। আল ফুরকান = আল ফুরকান/ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। লায়াল্লাকুম = যেন তোমরা। তাহতাদূন = হিদায়াতপ্রাপ্ত হও/ সঠিক পথে পরিচালিত হও।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা মূসাকে দিয়েছি আল কিতাব ও আল ফুরকান/ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী (= তাওরাত) যেন তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও/ সঠিক পথে পরিচালিত হও।
২:৫৪
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিক্বাওমিহি = তার ক্বাওমের উদ্দেশ্যে। ইয়া ক্বাওমি = হে আমার ক্বাওম। ইন্নাকুম যলামতুম = নিশ্চয় তোমরা যুলুম করেছো। আনফুছাকুম = তোমাদের আনফুসের/ জীবনসত্তার উপর। বিত্তিখিজাকুমুল ইজলা = তোমাদের (কর্তৃক) গরুর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করার মাধ্যমে। ফাতূবূ = সুতরাং তোমরা তাওবা কর/ ফিরে এসো। ইলা বারিইকুম = তোমাদের বারি তায়ালার/ সৃষ্টিকর্তার দিকে। ফাক্বতুলূ আনফুছাকুম = সেই সাথে তোমরা তোমাদের নিজেদের (মধ্যকার বাড়াবাড়িকারীদের) কতল/ হত্যা কর। যালিকুম = উহাই। খাইরুল লাকুম = তোমাদের জন্য উত্তম। ইনদা বারিইকুম = তোমাদের বারি তায়ালার/ সৃষ্টিকর্তার কাছে। ফাতাবা আলাইকুম = তখন তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন। ইন্নাহু হুয়া = নিশ্চয় তিনি। আত তাওয়াব = তাওবা কবুলকারী। আর রাহীম = অত্যন্ত দয়াশীল।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মূসা বলেছে তার ক্বাওমের উদ্দেশ্যে, ‘হে আমার ক্বাওম, নিশ্চয় তোমরা যুলুম করেছো তোমাদের আনফুসের/ জীবনসত্তার উপর তোমাদের (কর্তৃক) গরুর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করার মাধ্যমে। সুতরাং তোমরা তাওবা কর/ ফিরে এসো তোমাদের বারি তায়ালার/ সৃষ্টিকর্তার দিকে। সেই সাথে তোমরা তোমাদের নিজেদের (মধ্যকার বাড়াবাড়িকারীদের) কতল/ হত্যা কর। উহাই তোমাদের জন্য উত্তম তোমাদের বারি তায়ালার/ সৃষ্টিকর্তার কাছে। তখন তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন। নিশ্চয় তিনিই আত তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, আর রাহীম/ অত্যন্ত দয়াশীল।
২:৫৫
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। কুলতুম = তোমরা বলেছো। ইয়া মূসা = হে মূসা। লান = কখনো না। নু’মিনা = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো। লাকা = তোমার জন্য। হাত্তা = যতক্ষণ না। নারাল্লাহা = আমরা আল্লাহকে দেখবো। জাহরাতান = প্রকাশ্যভাবে। ফাআখাজাতকুম = তখন তোমাদেরকে ধরেছে। আস সায়িক্বাতু = বিদ্যুৎপাত। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। তানযুরুন = (তা) দেখছিলে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন তোমরা বলেছো, ‘হে মূসা, কখনো না আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করবো তোমার জন্য যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে দেখবো প্রকাশ্যভাবে’। তখন তোমাদেরকে ধরেছে বিদ্যুৎপাত। আর তোমরা (তা) দেখছিলে।
২:৫৬
ছুম্মা = তারপর। বাআছনাকুম = আমরা তোমাদেরকে সমুত্থিত (পুনর্জীবিত) করেছি। মিম বা’দি মাওতিকুম = তোমাদের (জাতীয়) মওতের/ মৃত্যুর পরে। লাআল্লাকুম = যেন তোমরা। তাশকুরুন = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
তারপর আমরা তোমাদেরকে সমুত্থিত (= পুনর্জীবিত) করেছি তোমাদের (জাতীয়) মওতের/ মৃত্যুর পরে। যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
২:৫৭
ওয়া = আর। যল্লালনা = আমরা ছায়া দিয়েছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। আল গামামা = মেঘের (প্রাকৃতিক ছায়া)। ওয়া = আর। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। আল মান্না = ধনিয়ার দানার মতো ক্ষুদ্রাতিকৃতির খাদ্য যা গাছের পাতার উপর শিশিরের মতো জমে থাকে। ওয়া = আর। আস সালওয়া = ক্ষুদ্রাকৃতির কবুতরের মতো এক প্রকার পাখি। কুলূ = তোমরা খাও। মিন তইয়িবাতি = পবিত্র (খাদ্য) থেকে। মা = যা। রযাকনাকুম = আমরা তোমাদেরকে রিযক/ জীবনোপকরনস্বরূপ দিয়েছি। ওয়া = আর। মা যলামূনা = তারা (তাদের আচরণ দ্বারা) আমাদের উপর যুলুম করেনি। ওয়ালাকিন = কিন্তু। কানূ আনফুছাহুম ইয়াযলিমুন = তারা তাদের আনফুসের/ জীবনসত্তার উপরই যুলুম করতো।
আর আমরা ছায়া দিয়েছি তোমাদের উপর, মেঘের (প্রাকৃতিক ছায়া)। আর আমরা নাযিল করেছি তোমাদের উপর মান্না (= ধনিয়ার দানার মতো ক্ষুদ্রাতিকৃতির খাদ্য যা গাছের পাতার উপর শিশিরের মতো জমে থাকে) আর সালওয়া (= ক্ষুদ্রাকৃতির কবুতরের মতো এক প্রকার পাখি)। তোমরা খাও তইয়িবাত/ পবিত্র (খাদ্য) থেকে যা আমরা তোমাদেরকে রিযক/ জীবনোপকরনস্বরূপ দিয়েছি। আর তারা (তাদের আচরণ দ্বারা) আমাদের উপর যুলুম করেনি। কিন্তু (উহা দ্বারা) তারা তাদের আনফুসের/ জীবনসত্তার উপরই যুলুম করতো।
২:৫৮
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বুলনা = আমরা বলেছি। উদখুলূ = তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো। হাযিহিল কারইয়াতা = এই জনপদে। ফাকুলূ = তারপর তোমরা খাও। মিনহা = তা থেকে। হাইছু = যেখানেই। সি’তুম= তোমরা (খেতে) ইচ্ছা করো। রাগাদান = স্বাচ্ছন্দ্যে। ওয়া = আর। উদখুলূ = তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো। আল বাবা = দরজা দিয়ে। সুজজাদান = সিজদাকারী হয়ে। ওয়া = আর। ক্বুলূ = তোমরা বলো। হিত্তাতুন = হিত্তাতুন/ ক্ষমা করুন। নাগফির = আমরা ক্ষমা করে দেবো। লাকুম = তোমাদের জন্য। খাতাইয়াকুম = তোমাদের (গুনাহ) খাতা/ ত্রুটি বিচ্যুতি। ওয়া = আর। ছানাযীদু = শীঘ্রই আমরা (আমাদের অনুগ্রহ) বাড়িয়ে দেবো। আল মুহসিনীন = মুহসীনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা বলেছি, “তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো এই জনপদে। তারপর তোমরা খাও তা থেকে যেখানেই তোমরা (খেতে) ইচ্ছা করো স্বাচ্ছন্দ্যে। আর তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো দরজা দিয়ে সিজদাকারী হয়ে। আর তোমরা বলো, ‘হিত্তাতুন’/ ‘ক্ষমা করুন’। আমরা ক্ষমা করে দেবো তোমাদের জন্য তোমাদের (গুনাহ) খাতা/ ত্রুটি বিচ্যুতি। আর শীঘ্রই আমরা (আমাদের অনুগ্রহ) বাড়িয়ে দেবো মুহসীনদেরকে/ উত্তম আচরণকারীদেরকে’।
২:৫৯
ফাবাদ্দালাল্লাযীনা যলামূ = কিন্তু যারা জুলুম করেছে তারা বদল/ পরিবর্তন করে নিয়েছে। ক্বাওলান গাইরাল্লাযী ক্বীলা লাহুম = কথাকে, তাদের জন্য যা বলা হয়েছে তা ভিন্ন অন্য কথায়। ফাআনযালনা = তারপর আমরা নাযিল/ অবতীর্ণ করেছি। আলাল্লাযীনা = তাদের উপর যারা …..। যলামূ = জুলুম করেছে। রিযযাম মিনাছ ছামায়ি = আকাশ থেকে কলুষতাপূর্ণ শাস্তি। বিমা কানূ ইয়াফছুকূন = তারা যে ফিসক/ দুষ্কার্য করতো তার কারণে।
কিন্তু যারা জুলুম করেছে তারা বদল/ পরিবর্তন করে নিয়েছে কথাকে, তাদের জন্য যা বলা হয়েছে তা ভিন্ন অন্য কথায়। তারপর আমরা নাযিল/ অবতীর্ণ করেছি তাদের উপর যারা যুলুম করেছে (তাদের শাস্তিস্বরূপ) আকাশ থেকে কলুষতাপূর্ণ শাস্তি, তারা যে ফিসক/ দুষ্কার্য করতো তার কারণে।
২:৬০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ইছতাছক্বা মূসা = মূসা পানি প্রার্থনা করেছে। লিক্বাওমিহি = তার ক্বাওমের জন্য। ফাক্বুলনা = তখন আমরা বলেছি। ইদরিব = আঘাত কর। বিআসাকা = তোমার লাঠি দিয়ে। আল হাজারা = পাথরকে। ফানফাজারাত = তদনুযায়ী বের হয়েছে। মিনহু = তা থেকে। ইছনাতা আশারাতা = বারোটি। আইনা = ঝর্ণা। ক্বাদ আলিমা = নিশ্চয় জেনে নিয়েছে। কুল্লু = প্রত্যেক। উনাছিন = গোত্রের মানুষ। মাশরবাহুম = তাদের পানি পানের স্থান। কুলূ = তোমরা খাও। ওয়াশরাবূ = ও পান করো। মিন রিযকিল্লাহি = আল্লাহর দেয়া রিযক থেকে। ওয়া = আর। লা তাছআউ = তোমরা ঘুরে বেড়িয়ো না। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। মুফসিদীন = ফাসাদকারী/ বিপর্যয় সৃষ্টিকারী।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মূসা পানি প্রার্থনা করেছে তার ক্বাওমের জন্য। তখন আমরা বলেছি, ‘আঘাত করো তোমার লাঠি দিয়ে পাথরকে’। তদনুযায়ী বের হয়েছে তা থেকে বারোটি ঝর্ণা। নিশ্চয় জেনে নিয়েছে প্রত্যেক গোত্রের মানুষ তাদের পানি পানের স্থান।
২:৬১
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বুলতুম = তোমরা বলেছো। ইয়া মূসা = হে মূসা। লান নাসবিরা = আমরা সবর করবো না। আলা তয়ামিন ওয়াহিদিন = একই ধরনের খাদ্যের উপর। ফাদউ = সুতরাং তুমি দুআ/ প্রার্থনা করো। লানা = আমাদের জন্য। রব্বাকা = তোমার রবের কাছে। ইউখরিজ = যেন তিনি বের করেন। লানা = আমাদের জন্য। মিন মা = তা থেকে যা …। তুনবিতুল আরদু = ভূমি উৎপন্ন করে। মিন = অর্থাৎ। বাকলিহা = উহার শিম/ বরবটি। ওয়া = আর। ক্বিচ্চায়িহা = উহার শসা/ খিরা/ কাকড়। ওয়া = আর। ফূমিহা = উহার রসূন। ওয়া = আর। আদাছিহা = উহার মসুর ডাল। ওয়া = আর। বাসালিহা = উহার পেঁয়াজ। ক্বলা = সে বলেছে। আতাছতাবদিলূনা = তোমরা কি বদল/ পরিবর্তনস্বরূপ পেতে চাও? আল্লাযী = উহাকে। হুয়া = যা। আদনা = নগন্য। বিল্লাযী = উহার বিনিময়ে। হুয়া = যা। খায়রুন = উত্তম। ইহবিতূ = (তাহলে) তোমরা চলে যাও। মিসরান = মিসরে। ফাইন্না = তাহলে নিশ্চয়। লাকুম = তোমাদের জন্য (পাবে)। মা = যা। ছাআলতুম = তোমরা পেতে চেয়েছো। ওয়া = আর। দুরিবাত = আপতিত হয়েছে। আলাইহিম = তাদের উপর। আয যিল্লাতু = যিল্লাত/ অপমান। ওয়া = আর। আল মাছকানাতু = মিসকীনের অবস্থা/ নি:স্বতা। ওয়া = আর। বাঊ = তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে। বিগাদাবিম মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্ট গদবে/ গযবে/ ক্রোধে। যালিকা বিআন্নাহুম = উহা এ কারণে যে তারা…। কানূ ইয়াকফুরুনা = তারা কুফর/ অবিশ্বাস করতো। বিআয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি। ওয়া = আর। ইয়াক্বতুলূনান নাবিয়্যীনা = তারা ক্বতল/ হত্যা করতো নবীদেরকে। বিগাইরিল হাক্বক্বি = নাহক্বভাবে/ যার কোন অধিকারই তাদের ছিল না/ সম্পুর্ণ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে। যালিকা = উহা। বিমা = এ কারণে যে…। আসাও = তারা অবাধ্যতা করেছে। ওয়া = আর। কানূ ইয়া’তাদূনা = তারা সীমালংঘন করতো।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন তোমরা বলেছো, ‘হে মূসা, আমরা সবর করবো না একই ধরনের খাদ্যের উপর। সুতরাং তুমি দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে, যেন তিনি বের করেন আমাদের জন্য তা থেকে যা ভূমি উৎপন্ন করে অর্থাৎ উহার শিম/ বরবটি আর উহার শসা/ খিরা/ কাকড় আর উহার রসূন আর উহার মসুর ডাল আর উহার পেঁয়াজ’। সে বলেছে, ‘তোমরা কি বদল/ পরিবর্তনস্বরূপ পেতে চাও উহাকে যা নগন্য উহার বিনিময়ে যা উত্তম? (তাহলে) তোমরা চলে যাও মিসরে। তাহলে নিশ্চয় তোমাদের জন্য (পাবে) যা তোমরা পেতে চেয়েছো’। আর আপতিত হয়েছে তাদের উপর যিল্লাত/ অপমান আর মাছকানাত/ মিসকীনের অবস্থা/ নি:স্বতা। আর তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৃষ্ট গদবে/ গযবে/ ক্রোধে। উহা এ কারণে যে, তারা কুফর/ অবিশ্বাস করতো আল্লাহর আয়াতসমূহের প্রতি, আর তারা ক্বতল/ হত্যা করতো নবীদেরকে নাহক্বভাবে/ যার কোন অধিকারই তাদের ছিল না/ সম্পুর্ণ অনধিকার চর্চার মাধ্যমে। উহা এ কারণে যে, তারা অবাধ্যতা করেছে আর তারা সীমালংঘন করতো।
২:৬২
ইন্না = নিশ্চয়। আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আল্লাযীনা = যারা। হাদূ = ইহুদী হয়েছে। ওয়া = আর। আন নাসারা = নাসারা/ খৃস্টান। ওয়া = আর। আস সাবিয়ীন = সাবিয়ীন। মান = যে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করবে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া = আর। আল ইয়াওমিল আখিরি = ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ওয়া = আর। আমিলা সালিহান = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করবে। ফালাহুম = তাদের জন্য আছে। আযরুহুম = তাদের প্রতিফল। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। লা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহযানূন = দু:খিত হবে।
নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর যারা ইহুদী হয়েছে আর নাসারা (= খৃস্টান) আর সাবিয়ীন; যে-ই ঈমান/ বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি আর আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করবে তাদের জন্য আছে তাদের প্রতিফল তাদের রবের কাছে আর তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে।
২:৬৩
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আখাজনা = আমরা নিয়েছি। মীছাক্বাকুম = তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ওয়া = আর। রফা’না = আমরা তুলেছি। ফাওকাকুম = তোমাদের উপর (তোমাদের প্রতিরক্ষার্থে)। আত তূর = তূর পাহাড়। খুজূ = তোমরা গ্রহণ করো। মা = যা। আতাইনাকুম = আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি। বিক্বুওয়্যাতিন = শক্তির সাথে/ মজবুতভাবে। ওয়া = আর। উযকুরু = তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। মা ফীহি = যা উহার মধ্যে আছে। লায়াল্লাকুম তাত্তাকূন = যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করতে পারো।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা নিয়েছি তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি আর আমরা তুলেছি তোমাদের উপর (= তোমাদের প্রতিরক্ষার্থে) তূর পাহাড়। ‘তোমরা গ্রহণ করো যা আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি (অর্থাৎ তাওরাত) শক্তির সাথে/ মজবুতভাবে। আর তোমরা যিকর/ স্মরণ করো যা উহার মধ্যে আছে, যেন তোমরা তাকওয়া/ সাবধানতা/ আল্লাহভীতি অবলম্বন করতে পারো’।
২:৬৪
ছুম্মা = তারপর। তাওয়াল্লাইতুম = তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো। মিম বা’দি যালিকা = এরপরও। ফা = সুতরাং। লাও লা = যদি না হতো। ফাদলুল্লাহি = আল্লাহর ফদল/ ফযল/ অনুগ্রহ। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া রাহমাতুহু = আর (যদি না হতো) তাঁর রহমত/ দয়া (তোমাদের উপর)। লাকুনতুম = অবশ্যই তোমরা হতে। মিনাল খাছিরীন = খাছিরীন/ ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।
তারপর তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো এরপরও। সুতরাং যদি না হতো আল্লাহর ফদল/ ফযল/ অনুগ্রহ তোমাদের উপর আর (যদি না হতো) তাঁর রহমত/ দয়া (তোমাদের উপর), অবশ্যই তোমরা হতে খাছিরীন/ ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত।
২:৬৫
ওয়া = আর। লাকাদ = নিশ্চয়। আলিমতুমু = তোমরা জেনেছো। আল্লাযীনা = (তাদের ঘটনা) যারা। ই’তাদাউ = সীমালংঘন করেছে। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। ফিস সাবতি = সাবত/ সপ্তমদিন/ শনিবার সম্পর্কিত বিধানের বিষয়ে। ফাক্বুলনা = তখন আমরা বলেছি। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। কূনূ ক্বিরাদাতান খাছিয়ীনা = তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে থাকো/ বানরের স্বভাববিশিষ্ট ও লাঞ্চিত হয়ে থাকো।
আর নিশ্চয় তোমরা জেনেছো (তাদের ঘটনা) যারা সীমালংঘন করেছে তোমাদের মধ্য থেকে সাবত/ সপ্তমদিন/ শনিবার সম্পর্কিত বিধানের বিষয়ে। তখন আমরা বলেছি তাদের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা লাঞ্চিত বানর হয়ে থাকো/ বানরের স্বভাববিশিষ্ট ও লাঞ্চিত হয়ে থাকো’।
২:৬৬
ফাজাআলনাহা = তারপর আমরা উহাকে প্রতিস্থাপন করেছি। নাকালান = শিক্ষামূলক বিষয়রূপে। লিমা বায়না ইয়াদায়হা ওয়া মা খালফাহা = উহার সমসাময়িক ও পরবর্তী ব্যক্তিদের জন্য। ওয়া = আর। মাওয়িযাতান = ওয়াজ/ উপদেশ। লিল মুত্তাকীন = মুত্তাকীদের/ আল্লাহভীরুদের/ সাবধানীদের জন্য।
তারপর আমরা উহাকে প্রতিস্থাপন করেছি শিক্ষামূলক বিষয়রূপে উহার সমসাময়িক ও পরবর্তী ব্যক্তিদের জন্য। আর উহা ওয়াজ/ উপদেশ মুত্তাকীদের/ আল্লাহভীরুদের/ সাবধানীদের জন্য।
২:৬৭
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা মূসা = মূসা বলেছে। লিক্বাওমিহি = তার ক্বাওমের উদ্দেশ্যে। ইন্নাল্লাহা ইয়া’মুরুকুম = নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন। আন = যে। তাযবাহূ = তোমরা যবেহ করো। বাক্বারাতান = একটি গাভীকে। ক্বলূ = তারা বলেছে। আতাত্তাখিজুনা = তুমি কি আমাদেরকে গ্রহণ করেছো? হুযুওয়ান = ঠাট্টার পাত্ররূপে। ক্বলা = সে বলেছে। আউযুবিল্লাহি = আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে। আন আকূনা মিনাল জাহিলীন = জাহিলদের/ মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন মূসা বলেছে তার ক্বাওমের উদ্দেশ্যে, “নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের আদেশ দিচ্ছেন যে- ‘তোমরা যবেহ করো একটি গাভীকে’”। তারা বলেছে, ‘তুমি কি আমাদেরকে গ্রহণ করেছো ঠাট্টার পাত্ররূপে?’ সে বলেছে, ‘আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর কাছে জাহিলদের/ মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে’।
২:৬৮
ক্বলূ = তারা বলেছে। উদউ লানা রব্বাকা = দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে। ইয়ুবায়্যিন লানা = যেন আমাদের জন্য তিনি বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। মা হিয়া = উহা কেমন হবে? ক্বলা = সে বলেছে। ইন্নাহু ইয়াক্বুলু = নিশ্চয় তিনি বলেন। ইন্নাহা = নিশ্চয় উহা। বাক্বারাতুন = একটি গাভী। লা ফারিদুন = না বুড়ি। ওয়া = আর। লা বিকরুন = না নবযৌবনা। আওয়ানুন বায়না যালিকা = এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের। ফাফআলূ = সুতরাং তোমরা পালন করো। মা তু’মারুন = যা তোমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে।
তারা বলেছে, ‘দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে যেন আমাদের জন্য তিনি বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন উহা কেমন হবে?’ সে বলেছে, “নিশ্চয় তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় উহা (হতে হবে) একটি গাভী, না বুড়ি আর না নবযৌবনা, এ দুয়ের মাঝামাঝি বয়সের’। সুতরাং তোমরা পালন করো যা তোমাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে”।
২:৬৯
ক্বলূ = তারা বলেছে। উদউ লানা রব্বাকা = দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে। ইয়ুবায়্যিন লানা = যেন আমাদের জন্য তিনি বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। মা লাওনুহা = উহার রং কেমন হবে? ক্বলা = সে বলেছে। ইন্নাহু ইয়াক্বুলু = নিশ্চয় তিনি বলেন। ইন্নাহা = নিশ্চয় উহা। বাক্বারাতুন = একটি গাভী। সফরাউ ফাক্বিউন = গাঢ় হলুদ। লাওনুহা = তার রং। তাছুররুন নাযিরীন = দর্শকদেরকে আনন্দ দেয়।
তারা বলেছে, ‘দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে যেন আমাদের জন্য তিনি বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন উহার রং কেমন হবে’। সে বলেছে, “নিশ্চয় তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় উহা (হতে হবে) একটি গাভী গাঢ় হলুদ তার রং দর্শকদেরকে আনন্দ দেয়’”।
২:৭০
ক্বলূ = তারা বলেছে। উদউ লানা রব্বাকা = দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে। ইয়ুবায়্যিন লানা = যেন আমাদের জন্য তিনি বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। মা হিয়া = উহা কেমন হবে? ইন্নাল বাক্বারা = নিশ্চয় (নির্দিষ্ট ধরনের) গাভীটি। তাশাবাহা আলাইনা = আমাদের উপর (অন্যান্য গাভীর সাথে স্বীয়) সাদৃশ্যের অবতারণা করছে। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। ইনশাআল্লাহু = যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন। লামুহতাদূন = হিদায়াতপ্রাপ্ত হবো।
তারা বলেছে, ‘দুআ/ প্রার্থনা করো আমাদের জন্য তোমার রবের কাছে যেন আমাদের জন্য তিনি বয়ান/ স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন, উহা কেমন হবে? নিশ্চয় (নির্দিষ্ট ধরনের) গাভীটি আমাদের উপর (অন্যান্য গাভীর সাথে স্বীয়) সাদৃশ্যের অবতারণা করছে। আর নিশ্চয় আমরা ইনশাআল্লাহ/ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন হিদায়াতপ্রাপ্ত হবো’।
২:৭১
ক্বলা = সে বলেছে। ইন্নাহু ইয়াক্বুলু = নিশ্চয় তিনি বলেন। ইন্নাহা = নিশ্চয় উহা। বাকারাতুন = একটি গাভী। লা যালূনুন তুছিরুল আরদা = না জমি চাষে লাগানো হয়েছে। ওয়া = আর। লা তাছক্বিল হারছা = না কোন ক্ষেতে পানি সেচের কাজে লাগানো হয়েছে। মুছাল্লামাতুন = সম্পূর্ণ সুস্থ। লা শিয়াতা ফীহা = তাতে কোন খুঁত নেই। ক্বলূ = তারা বলেছে। আল আনা জি’তা বিল হাক্কি = এখন তুমি যথাযথ তথ্য নিয়ে এসেছো। ফাযাবাহূহা = তারপর তারা উহা যবেহ করেছে। ওয়া = অথচ। মা কাদূ ইয়াফআলূন = তারা তা করতে আগ্রহী ছিল না।
সে বলেছে, “নিশ্চয় তিনি বলেন, ‘নিশ্চয় উহা (হতে হবে) একটি গাভী, না জমি চাষে লাগানো হয়েছে আর না কোন ক্ষেতে পানি সেচের কাজে লাগানো হয়েছে, মুসাল্লামা/ সম্পূর্ণ সুস্থ, তাতে কোন খুঁত নেই’”। তারা বলেছে, ‘এখন তুমি যথাযথ তথ্য নিয়ে এসেছো’। তারপর তারা উহা যবেহ করেছে। অথচ তারা তা করতে আগ্রহী ছিল না।
২:৭২
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বাতালতুম = তোমরা কতল/ হত্যা করেছো। নাফসান = এক ব্যক্তিকে। ফাদ্দারা’তুম ফীহা = তারপর উহার (হত্যাকান্ডের) বিষয়ে তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করছিলে। ওয়া = আর। আল্লাহু মুখরিজুন = আল্লাহ (উহার) প্রকাশকারী। মা কুনতুম তাকতুমূন = যা তোমরা গোপন করছিলে।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন তোমরা কতল/ হত্যা করেছো এক ব্যক্তিকে। তারপর উহার (হত্যাকান্ডের) বিষয়ে তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করছিলে। আর আল্লাহই (উহার) প্রকাশকারী যা তোমরা গোপন করছিলে।
২:৭৩
ফাক্বুলনা = তারপর আমরা বলেছি। ইদরুবূহু = তাকে (= মূল হত্যাকারীকে) চিহ্নিত করো। বিবা’দিহা = উহার একেক অংশ সংযুক্ত করে (= ঘটনাটির বিষয়ে যার কাছে যতটুকু তথ্য/সাক্ষ্য/আলামত/ক্লু আছে তার সমন্বয় করার মাধ্যমে)। কাযালিকা = এভাবে (= এরূপ বিধানের মাধ্যমে)। ইয়ুহয়িল্লাহুল মাওতা = আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন (অর্থাৎ হত্যার ধারা রোধ করেন)। ওয়া = আর। ইউরীকুম = তিনি তোমাদেরকে দেখান। আয়াতিহি = তাঁর আয়াতসমূহ। লায়াল্লাকুম তা’ক্বিলূন = যেন তোমরা আকল/ বিবেক- বুদ্ধি প্রয়োগ করো।
তারপর আমরা বলেছি, তাকে (= মূল হত্যাকারীকে) চিহ্নিত করো উহার একেক অংশ সংযুক্ত করে (= ঘটনাটির বিষয়ে যার কাছে যতটুকু তথ্য/সাক্ষ্য/আলামত/ক্লু আছে তার সমন্বয় করার মাধ্যমে)। এভাবে (= এরূপ বিধানের মাধ্যমে) আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন (অর্থাৎ হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করেন) (দ্র: ০২: ১৭৯, ০৫: ৩২)। আর তিনি তোমাদেরকে দেখান তাঁর আয়াতসমূহ যেন তোমরা আকল/ বিবেক- বুদ্ধি প্রয়োগ করো।
২:৭৪
ছুম্মা = তারপর। ক্বাছাত = কঠিন হয়ে থাকলো। ক্বুলুবকুম = তোমাদের কলবসমূহ। মিম বা’দি যালিকা = এরপরও। ফাহিয়া = ফলত: তা হচ্ছে। কাল হিজারাতি = পাথরের মতো। আও = অথবা। আশাদ্দু ক্বাছওয়াতান = (পাথরের চেয়ে) অধিকতর কঠিন। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। মিনাল হিজারাতি = কিছু পাথর (এমনও আছে)। লামা ইয়াতাফাজ্জারু মিনহুল আনহার = অবশ্যই যা থেকে নহরসমূহ/ ঝর্ণাসমূহ বের হয়। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। মিনহা = উহার মধ্যে কিছু (এমনও আছে)। লামা ইয়াশশাক্বক্বাক্বু = অবশ্যই যা ফেটে যায়। ফাইয়াখরুজু = তারপর বের হয়। মিনহু = উহা থেকে। মাউ = পানি। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয়। মিনহা = উহার মধ্যে কিছু (এমনও আছে)। লামা ইয়াহবিতু = অবশ্যই যা খসে পড়ে। মিন খাশিয়াতিল্লাহি = আল্লাহর ভয়ে। ওয়া = আর। মাল্লাহু বিগাফিলিন আম্মা তা’মালুন = তোমাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন নন। ।
তারপর কঠিন হয়ে থাকলো তোমাদের কলবসমূহ এরপরও। ফলত: তা হচ্ছে পাথরের মতো অথবা (পাথরের চেয়ে) অধিকতর কঠিন। আর নিশ্চয় কিছু পাথর (এমনও আছে) অবশ্যই যা থেকে নহরসমূহ/ ঝর্ণাসমূহ বের হয়। আর নিশ্চয় উহার মধ্যে কিছু (এমনও আছে) অবশ্যই যা ফেটে যায় তারপর বের হয় উহা থেকে পানি। আর নিশ্চয় উহার মধ্যে কিছু (এমনও আছে) অবশ্যই যা খসে পড়ে আল্লাহর ভয়ে। আর তোমাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন নন।
২:৭৫
আফাতাতমাঊনা = তবে কি তোমরা আশা করো? আন = যে। ইউ’মিনূ = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে? লাকুম = তোমাদের (দাওয়াতের) খাতিরে। ওয়া = অথচ। ক্বাদ = নিশ্চয়। কানা ফারিক্বুম মিনহুম = তাদের মধ্যে এক ফেরকা ছিল। ইয়াছমাঊনা = (যারা) শুনতো। কালামাল্লাহি = আল্লাহর কালাম। ছুম্মা = তারপর। ইউহাররিফূনাহু = উহাকে বিকৃত করতো। মিম বা’দি মা আক্বালূহু = তারা আক্বলে/ বিবেক-বুদ্ধিতে সঠিক বক্তব্য ধারণ করার পরও। ওয়াহুম ইয়া’লামূন = আর তারা (তাদের এ বিকৃতির বিষয়ে) জানতো।
তবে কি তোমরা আশা করো যে, তারা ঈমান/ বিশ্বাস করবে তোমাদের (দাওয়াতের) খাতিরে? অথচ নিশ্চয় তাদের মধ্যে এক ফেরকা ছিল (যারা) শুনতো আল্লাহর কালাম, তারপর উহাকে বিকৃত করতো তারা আক্বলে/ বিবেক-বুদ্ধিতে সঠিক বক্তব্য ধারণ করার পরও, আর তারা (তাদের এ বিকৃতির বিষয়ে) জানতো।
২:৭৬
ওয়া = আর। ইযা = যখন। লাক্বূল্লাযীনা আমানূ = তারা তাদের সাথে মিলিত হয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ক্বলূ = তারা বলে। আমান্না = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। ওয়া = আর। ইযা = যখন। খালা = নিভৃতে যায়। বা’দুহুম ইলা বা’দিন = তাদের একে অপরের দিকে। ক্বলূ = তারা বলে। আতুহাদ্দিসূনাহুম = তোমরা কি তাদেরকে হাদীস বর্ণনা করো? বিমা = ঐ বিষয়ে যা…। ফাতাহাল্লাহু = আল্লাহ প্রকাশ করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের কাছে/ ব্যাপারে/ বিরুদ্ধে। লিউহাজ্জিঊম = যেন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করতে পারে। বিহী = উহা দ্বারা। ইনদা রব্বিকুম = তোমাদের রবের কাছে। আফা লা তা’ক্বিলূন = তাহলে কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না?
আর যখন তারা তাদের সাথে মিলিত হয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি’। আর যখন নিভৃতে যায় তাদের একে অপরের দিকে, তারা বলে, ‘তোমরা কি তাদেরকে হাদীস বর্ণনা করো ঐ বিষয়ে যা আল্লাহ প্রকাশ করেছেন তোমাদের কাছে/ ব্যাপারে/ বিরুদ্ধে। যেন তারা তোমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেশ করতে পারে উহা দ্বারা তোমাদের রবের কাছে। তাহলে কি তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করো না?’
২:৭৭
আওয়া লা ইয়া’লামূনা = তারা কি জানে না? আন্না = যে। আল্লাহা ইয়া’লামু = আল্লাহ জানেন। মা = যা। ইউছিররুনা = তারা গোপন করে। ওয়া = আর। ইউ’লিনূন = যা তারা প্রকাশ করে।
তারা কি জানে না যে, আল্লাহ জানেন যা তারা গোপন করে আর যা তারা প্রকাশ করে?
২:৭৮
ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্যে আছে। উম্মীয়্যুন = উম্মীয়্যুন। লা ইয়া’লামূনাল কিতাবা ইল্লা আমানিয়্যা = তারা নিছক আশা আকাংখা পোষন করা ছাড়া আসমানী কিতাবের জ্ঞান রাখে না। ওয়া = আর। ইনহুম ইল্লা ইয়াযুন্নূন = তারা অনুমান ছাড়া কিছুর উপর নির্ভর করে না।
আর তাদের মধ্যে আছে উম্মীয়্যুন, তারা নিছক আশা আকাংখা পোষন করা ছাড়া আসমানী কিতাবের জ্ঞান রাখে না। আর তারা অনুমান ছাড়া কিছুর উপর নির্ভর করে না।
২:৭৯
ফাওয়াইলুন = সুতরাং ধ্বংস। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। ইয়াকুতুবূনাল কিতাবা = কিতাব লেখে। বিআইদিহিম = তাদের (নিজস্ব চিন্তায় সক্রিয়) হাত দ্বারা। ছুম্মা = তারপর। ইয়াক্বুলূনা = তারা বলে। হাযা = ইহা (তাদের কিতাব/ হাদিসগ্রন্থ)। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর নিকট থেকে (এসেছে)। লিয়াশতারূ বিহী ছামানান ক্বালীলা = যেন উহা দ্বারা তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করতে পারে। ফাওয়ালুল্লাহুম = সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য। মিম্মা কাতাবাত আইদিহিম = তাদের হাত যা লেখেছে তার কারণে। ওয়া = আর। ওয়াইলুল্লাহুম = দুর্ভোগ তাদের জন্য। মিম্মা ইয়াকছিবূন = তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে।
সুতরাং ধ্বংস তাদের জন্য যারা কিতাব লেখে তাদের (নিজস্ব চিন্তায় সক্রিয়) হাত দ্বারা, তারপর তারা বলে, ‘ইহা (=তাদের কিতাব/ হাদিসগ্রন্থ) আল্লাহর নিকট থেকে (এসেছে)’, যেন উহা দ্বারা তুচ্ছ মূল্য ক্রয় করতে পারে। সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য তাদের হাত যা লেখেছে তার কারণে আর দুর্ভোগ তাদের জন্য তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে।
২:৮০
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। লান তামাছছানা = আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। আন নার = (জাহান্নামের) আগুন। ইল্লা আইয়ামাম মা’দুদাত = আইয়ামাম মা’দূদাত/ দুহাতের আঙ্গুলসংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ দিনসমূহ (তিন থেকে দশদিন) ব্যতীত। ক্বুল = বলো। আততাখাজতুম = তোমরা কি গ্রহণ করেছো? ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছ থেকে। আহদান = কোন আহদ/ প্রতিশ্রুতি। ফালান ইউখলিফাল্লাহু = সুতরাং কখনো আল্লাহ খেলাফ করবেন না। আহদাহু = তাঁর আহদ/ প্রতিশ্রুতি। আম = নাকি। তাক্বুলূনা = তোমরা বলছো। আলাল্লাহি = আল্লাহর সম্বন্ধে (এমন কথা)। মা = যা। লা তা’লামূন = (সঠিক কিনা তা) তোমরা জানো না।
আর তারা বলেছে, ‘আমাদেরকে স্পর্শ করবে না (জাহান্নামের) আগুন আইয়ামাম মা’দূদাত/ দুহাতের আঙ্গুলসংখ্যার মধ্যে সীমাবদ্ধ দিনসমূহ (তিন থেকে দশদিন) ব্যতীত’। বলো, ‘তোমরা কি গ্রহণ করেছো আল্লাহর কাছ থেকে কোন আহদ/ প্রতিশ্রুতি? সুতরাং কখনো আল্লাহ খেলাফ করবেন না তাঁর আহদ/ প্রতিশ্রুতি। নাকি তোমরা বলছো আল্লাহর সম্বন্ধে (এমন কথা) যা (সঠিক কিনা তা) তোমরা জানো না।
২:৮১
বালা = বরং। মান = যে-ই। কাছাবা = উপার্জন করেছে। ছাইয়্যিয়াতান = ছাইয়্যিয়াত/ নিকৃষ্ট কর্ম। ওয়া = আর। আহাতাত বিহী = তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে। খাতীয়াতুহু = তার গুনাহখাতা। ফাউলায়িকা = তারাই। আসহাবুন নার = আসহাবুন নার (জাহান্নামের আগুনে যারা শাস্তি পাবে)। হুম ফীহা খালিদূন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
বরং যে-ই উপার্জন করেছে ছাইয়্যিয়াত/ নিকৃষ্ট কর্ম আর তাকে পরিবেষ্টিত করে নিয়েছে তার গুনাহখাতা, তারাই আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
২:৮২
ওয়া = আর। আল্লাযীনা = যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাত = সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে। উলায়িকা = তারাই। আসহাবুল জান্নাত = (যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে)। হুম ফীহা খালিদূন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সৎকর্ম করেছে তারাই আসহাবুল জান্নাত (= যারা জান্নাতের পুরস্কার পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
২:৮৩
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আখাযনা = আমরা গ্রহণ করেছি। মীছাক্বা বানী ইসরাইলা = বানী ইসরাইলের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। লা তা’বুদূনা ইল্লাল্লাহা = তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত/ দাসত্ব করো না। ওয়া = আর। বিল ওয়ালিদাইনি = পিতামাতার প্রতি। ইহসানা = ইহসান/ উত্তম আচরণ করো। ওয়াল ইয়াতামা ওয়াল মিসকীনা = আর ইয়াতীমদের ও মীসকীনদের (প্রতিও ইহসান করো)। ওয়া ক্বুলূ লিন্নাছি হুসনা = আর তোমরা মানুষকে সুন্দর/ উত্তম কথা বলো। ওয়া = আর। আকিমুস সালাতা = তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া = আর। আতূয যাকাতা = তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। ছুম্মা = তারপর। তাওয়াল্লাইতুম = তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো। ইল্লা ক্বালীলা মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে অল্প কয়েকজন ছাড়া। ওয়া = আর। আনতুম মু’রিদূন = তোমরা তো বিমুখ।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা গ্রহণ করেছি বানী ইসরাইলের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত/ দাসত্ব করো না আর পিতামাতার প্রতি ইহসান/ উত্তম আচরণ করো। আর ইয়াতীমদের ও মীসকীনদের (প্রতিও ইহসান করো)। আর তোমরা মানুষকে সুন্দর/ উত্তম কথা বলো। আর তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান কর’। তারপর তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছো তোমাদের মধ্য থেকে অল্প কয়েকজন ছাড়া। আর তোমরা তো বিমুখ।
২:৮৪
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আখাযনা = আমরা গ্রহণ করেছি। মীছাক্বাকুম = তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। লা তাছফিকূনা = তোমরা ঝরাবে না। দিমাআকুম = তোমাদেরই রক্ত। ওয়া = আর। লা তুখরিজূনা = তোমরা খারিজ/ বের করে দেবে না। আনফুছাকুম = তোমাদের নিজেদেরকে। মিন দিয়ারিকুম = তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে। ছুম্মা = তারপর। আক্বরারতুম = তোমরা সম্মতি প্রকাশ করেছো। ওয়া = আর। আনতুম তাশহাদূন = তোমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছো।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা গ্রহণ করেছি তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ‘তোমরা ঝরাবে না তোমাদেরই রক্ত। আর তোমরা খারিজ/ বের করে দেবে না তোমাদের নিজেদেরকে তোমাদের ঘরবাড়ি থেকে’। তারপর তোমরা (এ বিষয়ে) সম্মতি প্রকাশ করেছো আর তোমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছো।
২:৮৫
ছুম্মা = আবার। আনতুম = তোমরাই। হাউলায়ি = ঐসব লোক যারা। তাক্বতুলূনা = কতল/ হত্যা করছো। আনফুছাকুম = তোমাদের নিজেদেরকে। ওয়া = আর। তুখরিজূনা = তোমরা খারিজ/ বের করে দিচ্ছো। ফারীক্বাম মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার এক পক্ষকে। মিন দিয়ারিহিম = তাদের ঘরবাড়ি থেকে। তাজাহারুনা = তোমরা নিজেদেরকে জাহির/ প্রকাশ করছো। আলাইহিম = তাদের বিরুদ্ধে। বিল ইছমি ওয়াল উদওয়ানি = অপরাধ ও বাড়াবাড়ির সাথে। ওয়া = আর। ইন = যদি। ইয়া’তুকুম = তারা তোমাদের কাছে আসে। উছারা = (শত্রুদের হাতে) বন্দী হয়ে। তুফাদূহুম = তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নাও। ওয়া হুয়া মুহাররামুন আলাইকুম ইখরাজুহুম = অথচ তাদেরকে বের করে দেয়াই তোমাদের উপর হারাম/ অবৈধ ছিল। আফাতু’মিনূনা = তাহলে কি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিবা’দিল কিতাবি = কিতাবের কোন অংশের প্রতি। ওয়া = আর। তাকফুরুনা = কুফর/ অবিশ্বাস করো। বিবা’দ = অপর কোন অংশের প্রতি। ফামা জাজাউ = তাহলে কি হতে পারে জাযা/ প্রতিফল। মান ইয়াফআলু যালিকা মিনকুম = তোমাদের মধ্যকার যে এরূপ করবে তার। ইল্লা = এছাড়া যে। খিজইয়ুন ফিল হায়াতিদ দুনিয়া = হায়াতিদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে লাঞ্চনা। ওয়া = আর। ইয়াওমিল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ইয়ুরাদ্দূনা = তারা নিক্ষিপ্ত হবে। ইলা আশাদ্দিল আযাব = কঠিন আযাবের/ শাস্তির দিকে। ওয়া মাল্লাহু বিগাফিলীন আম্মা তা’মালূন = আর তোমাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন নন।
আবার তোমরাই ঐসব লোক যারা কতল/ হত্যা করছো তোমাদের নিজেদেরকে আর তোমরা খারিজ/ বের করে দিচ্ছো তোমাদের মধ্যকার এক পক্ষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে। তোমরা নিজেদেরকে জাহির/ প্রকাশ করছো তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ও বাড়াবাড়ির সাথে। আর যদি তারা তোমাদের কাছে আসে (শত্রুদের হাতে) বন্দী হয়ে, তোমরা মুক্তিপণ দিয়ে তাদেরকে ছাড়িয়ে নাও। অথচ তাদেরকে বের করে দেয়াই তোমাদের উপর হারাম/ অবৈধ ছিল। তাহলে কি তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো কিতাবের কোন অংশের প্রতি আর কুফর/ অবিশ্বাস করো অপর কোন অংশের প্রতি? তাহলে কি হতে পারে জাযা/ প্রতিফল তোমাদের মধ্যকার যে এরূপ করবে তার? এছাড়া যে, হায়াতিদ দুনিয়াতে/ পার্থিব জীবনে লাঞ্চনা আর ইয়াওমুল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে তারা নিক্ষিপ্ত হবে কঠিন আযাবের/ শাস্তির দিকে। আর তোমাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন নন।
২:৮৬
উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক যারা। ইশতারাউল হায়াতাদ দুনিয়া = হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে কিনে নিয়েছে। বিল আখিরাত = আখিরাতের (সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের) বিনিময়ে। ফালা = সুতরাং না। ইয়ুখাফফাফু = কমানো হবে। আনহুমু = তাদের থেকে। আল আযাবু = আযাব/ শাস্তি। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়ুনসরুন = সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।
তারাই ঐসব লোক যারা হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে কিনে নিয়েছে আখিরাতের (সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের) বিনিময়ে। সুতরাং না কমানো হবে তাদের থেকে আযাব/ শাস্তি আর না তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে।
২:৮৭
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আতাইনা মূছাল কিতাবা = আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি। ওয়া = আর। ক্বাফফাইনা মিম বা’দিহী বির রুসুলি = আমরা পর্যায়ক্রমে পাঠিয়েছি তার পরে অনেক রসূল। ওয়া = আর। আতাইনা ঈসাবনা মারইয়ামা = আমরা দিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে। আল বাইয়িনাতি = আল বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ। ওয়া = আর। আইয়্যাদনাহু = আমরা তাকে সাহায্য করেছি। বিরুহিল ক্বুদুস = রুহুল কুদুস/ পবিত্র রুহের দ্বারা। আফাকুল্লামা = তাহলে কি যখনই। জাআকুম = তোমাদের কাছে এসেছে। রসূলুন = কোন রসূল। বিমা = তা নিয়ে যা। লা তাহওয়া আনফুসাকুম = তোমাদের নফস পছন্দ করে না। ইছতাকবারতুম = তোমরা অহংকার করেছো। ফাফারীক্বান = তারপর কতককে। কাযযাবতুম = তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছো। ওয়া = আর। ফারীক্বান = কতককে। তাক্বতুলূন = তোমরা কতল/ হত্যা করেছো।
আর নিশ্চয় আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি আর আমরা পর্যায়ক্রমে পাঠিয়েছি তার পরে অনেক রসূল। আর আমরা দিয়েছি ঈসা ইবনে মারইয়ামকে আল বাইয়্যিনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ আর আমরা তাকে সাহায্য করেছি রুহুল কুদুস/ পবিত্র রুহের (= জিবরীলের) দ্বারা। তাহলে কি যখনই তোমাদের কাছে এসেছে কোন রসূল তা নিয়ে যা তোমাদের নফস পছন্দ করে না, তোমরা অহংকার করেছো তারপর কতককে তোমরা মিথ্যা সাব্যস্ত করেছো আর কতককে তোমরা কতল/ হত্যা করেছো।
২:৮৮
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। ক্বুলূবুনা = আমাদের কলবসমূহ। গুলফুন = গিলাফ আচ্ছাদিত। বাল = বরং। লাআনাহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন। বিকুফরিহিম = তাদের কুফরের/ অবিশ্বাসের কারণে। ফাক্বালীলান = সুতরাং তাদের অল্পসংখ্যক লোকই (এমন)। মা ইয়ু’মিনুন = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে/ করবে।
আর তারা বলেছে, ‘আমাদের কলবসমূহ গিলাফে আচ্ছাদিত’। বরং আল্লাহ তাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দিয়েছেন তাদের কুফরের/ অবিশ্বাসের কারণে। সুতরাং তাদের অল্পসংখ্যক লোকই এমন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে/ করবে।
২:৮৯
ওয়া = আর। লাম্মা জাআহুম কিতাবুন = যখন তাদের কাছে কিতাব এসেছে। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর নিকট থেকে। মুসাদ্দিক্বাল লিমা মাআহুম = (যা) তাদের সাথে যে কিতাব আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। ওয়া = আর। কানূ মিন ক্বাবলূ ইয়াছতাফতিহূনা = তারা ইতিপূর্বে বিজয় প্রার্থনা করতো। আলাল্লাযীনা কাফারু = তাদের উপর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ফালাম্মা = তারপর যখন। জাআহুম = তাদের কাছে এসেছে। মা আরাফূ = যা তারা চিনতে পেরেছে। কাফারু বিহী = তারা উহার প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ফালা’নাতুল্লাহি আলাল কাফিরীন = সুতরাং কাফিরদের উপর আল্লাহর লা’নত/ অভিশাপ।
আর যখন তাদের কাছে কিতাব এসেছে আল্লাহর নিকট থেকে (যা) তাদের সাথে যে কিতাব আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। আর তারা ইতিপূর্বে বিজয় প্রার্থনা করতো তাদের উপর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। তারপর যখন তাদের কাছে উহা (= কিতাব) এসেছে যা তারা চিনতে পেরেছে তারা (নিজেরাই) উহার প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। সুতরাং কাফিরদের উপর আল্লাহর লা’নত/ অভিশাপ।
২:৯০
বি’ছামাশতারাও বিহী আনফুসাহুম = খুবই নিকৃষ্ট তা যার বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে বিক্রয় করেছে। আন = ব্যাপার এই যে। ইয়াকফুরু = তারা কুফর/ অবিশ্বাস করে। বিমা = ঐ বিষয়ের প্রতি যা। আনযালাল্লাহু = নাযিল করেছেন আল্লাহ। বাগইয়ান = বাগইয়ান/ জিদবশত। আন = এজন্য যে। ইউনাযযিলাল্লাহু = নাযিল করেছেন আল্লাহ। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফদল/ ফযল/ অনুগ্রহ। আলা মান ইয়াশাউ মিন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপর তিনি (তা নাযিল করার) ইচ্ছা করেছেন। ফাবাউ = সুতরাং তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে। বিগাদাবিন আলা গাদাবিন = গযবের উপর গযব দ্বারা/ ক্রোধের উপর ক্রোধ দ্বারা । ওয়া = আর। লিল কাফিরীনা = কাফিরদের জন্য আছে। আযাবুম মুহীন = অপমানকর শাস্তি।
খুবই নিকৃষ্ট তা যার বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে বিক্রয় করেছে। ব্যাপার এই যে, তারা কুফর/ অবিশ্বাস করে ঐ বিষয়ের প্রতি যা নাযিল করেছেন আল্লাহ, (তারা কুফর করে) বাগইয়ান/ জিদবশত। এজন্য যে, নাযিল করেছেন আল্লাহ তাঁর ফদল/ ফযল/ অনুগ্রহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপর তিনি (তা নাযিল করার) ইচ্ছা করেছেন। সুতরাং তারা পরিবেষ্টিত হয়েছে গযবের উপর গযব দ্বারা/ ক্রোধের উপর ক্রোধ দ্বারা । আর কাফিরদের জন্য আছে আযাবুম মুহীন/ অপমানকর শাস্তি।
২:৯১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বীলা = বলা হয়। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। আমিনূ = তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো। বিমা = ঐ বিষয়ের প্রতি যা। আনযালাল্লাহু = নাযিল করেছেন আল্লাহ। ক্বলূ = তারা বলে। নু’মিনু = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করি। বিমা = ঐ বিষয়ের প্রতি যা। উনযিলা = নাযিল করা হয়েছে। আলাইনা = আমাদের উপর। ওয়া = আর। ইয়াকফুরুনা = তারা কুফর/ অবিশ্বাস করে। বিমা ওয়ারাআহু = উহার বাহিরে যা আছে তার প্রতি। ওয়া = অথচ। হুয়াল হাক্কু = উহা সঠিক। মুসাদ্দিক্বাল লিমা মাআহুম = তাদের সাথে যে কিতাব আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। ক্বুল = বলো। ফালিমা = তাহলে কেন? তাক্বতুলূনা = তোমরা কতল/ হত্যা করতে। আম্বিয়াল্লাহি = আল্লাহর নবীদেরকে। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বে। ইন কুনতুম মু’মিনীন = যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো।
আর যখন বলা হয় তাদের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা ঈমান/ বিশ্বাস করো ঐ বিষয়ের প্রতি যা নাযিল করেছেন আল্লাহ’। তারা বলে, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করি ঐ বিষয়ের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের উপর’। আর তারা কুফর/ অবিশ্বাস করে উহার বাহিরে যা আছে তার প্রতি। অথচ উহা সঠিক, তাদের সাথে যে কিতাব আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। বলো, ‘তাহলে কেন তোমরা কতল/ হত্যা করতে আল্লাহর নবীদেরকে ইতিপূর্বে, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো?’।
২:৯২
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয় ইতোপূর্বে। জাআকুম মূসা = তোমাদের কাছে এসেছে মূসা। বিল বাইয়িনাতি = সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। ছুম্মা = তারপর। ইত্তাখাজতুম= তোমরা গ্রহণ করেছো। আল ইজলা = গরুর বাছুরকে (উপাস্যরূপে)। মিম বা’দিহী = এরপরও। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা তো। যালিমূন = যুলুমকারী।
আর নিশ্চয় ইতোপূর্বে তোমাদের কাছে এসেছে মূসা বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে। তারপর তোমরা গ্রহণ করেছো গরুর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) এরপরও। আর তোমরা তো যুলুমকারী।
২:৯৩
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। আখাজনা = আমরা নিয়েছি। মীছাক্বাকুম = তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি। ওয়া = আর। রফা’না = আমরা তুলেছি। ফাওকাকুম = তোমাদের উপর (তোমাদের প্রতিরক্ষার্থে)। আত তূর = তূর পাহাড়। খুজূ = তোমরা গ্রহণ করো। মা = যা। আতাইনাকুম = আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি। বিক্বুওয়্যাতিন = শক্তির সাথে/ মজবুতভাবে। ওয়াছমাঊ = আর তোমরা শুনো। ক্বলূ = তারা বলেছে। ছামি’না = আমরা শুনেছি। ওয়া = আর। আসাইনা = আমরা অমান্য করেছি। ওয়া = আর। উশরিবূ = সিঞ্চিত হয়েছে। ফী কুলুবিহিম = তাদের কলবসমূহের মধ্যে। আল ইজলা = গরুর বাছুর (পূজা)। বিকুফরিহিম = তাদের কুফরের মাধ্যমে। ক্বুল = বলো। বি’ছা = খুবই নিকৃষ্ট। মা ইয়া’মুরুকুম বিহী = উহা যার প্রতি নির্দেশ দেয়। ঈমানুকুম = তোমাদের ঈমান/ বিশ্বাস। ইন কুনতুম মু’মিনীন = যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা নিয়েছি তোমাদের মীছাক্ব/ প্রতিশ্রুতি আর আমরা তুলেছি তোমাদের উপর (তোমাদের প্রতিরক্ষার্থে) তূর পাহাড়। ‘তোমরা গ্রহণ করো যা আমরা তোমাদেরকে দিয়েছি (অর্থাৎ তাওরাত) শক্তির সাথে/ মজবুতভাবে। আর তোমরা (মনোযোগের সাথে) শুনো’। তারা বলেছে, ‘আমরা শুনেছি আর অমান্য করেছি’। আর সিঞ্চিত হয়েছে তাদের কলবসমূহের মধ্যে গরুর বাছুর (পূজা) তাদের কুফরের মাধ্যমে। বলো, ‘খুবই নিকৃষ্ট উহা যার প্রতি নির্দেশ দেয় তোমাদের ঈমান/ বিশ্বাস, যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাকো’।
২:৯৪
ক্বুল = বলো। ইন = যদি। কানাত লাকুম = তোমাদের জন্যই নির্দিষ্ট হয়ে থাকে। আদ দারুল আখিরাতু = দারুল আখিরাত/ আখিরাতের আবাস। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। খালিসাতান = খালিসভাবে/ খাঁটিভাবে। মিন দূনিন্নাছি = অন্যসব মানুষকে বাদ দিয়ে। ফাতামান্নাউল মাওতা = তাহলে তোমরা মওত/ মৃত্যু কামনা করো। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। সাদিকূন = সাদিকূন/ সত্যবাদী।
বলো, ‘যদি তোমাদের জন্যই নির্দিষ্ট হয়ে থাকে দারুল আখিরাত/ আখিরাতের আবাস আল্লাহর কাছে খালিসভাবে/ খাঁটিভাবে, অন্যসব মানুষকে বাদ দিয়ে; তাহলে তোমরা মওত/ মৃত্যু কামনা করো, যদি তোমরা হও সাদিকূন/ সত্যবাদী।
২:৯৫
ওয়া = অথচ। লান ইয়াতামান্নাওহু = তারা তা কামনা করবে না। আবাদান = কখনোই। বিমা ক্বাদ্দামাত আইদিহিম = তাদের কৃতকর্মের কারণে। ওয়া = আর। আল্লাহু আলীমুন বিয যালিমীন = আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
অথচ তারা তা কামনা করবে না কখনোই, তাদের কৃতকর্মের কারণে। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে জ্ঞাত (= যিনি জানেন) ।
২:৯৬
ওয়া = আর। লাতাজিদান্নাহুম = তোমরা তাদেরকে পাবে। আহরাছান নাছি আলাল হায়াত = বেঁচে থাকার ব্যাপারে মানবজাতির মধ্যে অত্যধিক লোভী। ওয়া মিনাল্লাযীনা আশরাকূ = আর যারা শিরক করেছে তাদের মধ্য থেকেও (বেঁচে থাকার ব্যাপারে অত্যধিক লোভী ব্যক্তি পাবে)। ইয়াওয়াদ্দু আহাদুহুম = তাদের প্রত্যেকে চায়। লাও = যদি। ইয়ুআম্মারু = তাদেরকে আয়ু দেয়া হতো। আলফা ছানাতিন = হাজার বছর। ওয়া = অথচ। মা হুয়া বিমুযাহযিহিহী = তা (= দীর্ঘায়ু) তাকে দূরে রাখতে পারবে না। মিনাল আযাবি = আযাব/ শাস্তি থেকে। আন ইয়ুআম্মারা = তাকে দীর্ঘায়ু দেয়া হলেও। ওয়া = আর। আল্লাহু বাসীরুন বিমা ইয়া’মালুন = আল্লাহ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তা সম্পর্কে যা কিছু তারা করে।
আর তোমরা তাদেরকে পাবে বেঁচে থাকার ব্যাপারে মানবজাতির মধ্যে অত্যধিক লোভী, আর যারা শিরক করেছে তাদের মধ্য থেকেও (বেঁচে থাকার ব্যাপারে অত্যধিক লোভী ব্যক্তি পাবে)। তাদের প্রত্যেকে চায় যদি তাদেরকে আয়ু দেয়া হতো হাজার বছর। অথচ তা (= দীর্ঘায়ু) তাকে দূরে রাখতে পারবে না আযাব/ শাস্তি থেকে, তাকে দীর্ঘায়ু দেয়া হলেও। আর আল্লাহ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তা সম্পর্কে যা কিছু তারা করে।
২:৯৭
ক্বুল = বলো। মান কানা = যে হয়। আদুওয়্যাল লি জিবরীলা = জীবরীলের শত্রু। ফাইন্নাহু = (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় সে (জিবরীল)। নাযযালাহু = উহা (কুরআন) নাযিল করেছে। আলা ক্বালবিকা = তোমার ক্বলবের উপর। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। মুসাদ্দিক্বাল লিমা বায়না ইয়াদাইহি = (যা) উহার সামনে থাকা সত্যের মুসাদ্দিক/ সত্যায়নকারী। ওয়া হুদা ওয়া বুশরা লিল মু’মিনীন = আর মু’মিনদের জন্য হুদা/ হিদায়াত ও বুশরা/ সুসংবাদ।
বলো, ‘যে হয় জীবরীলের শত্রু, (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় সে (= জিবরীল) উহা (= কুরআন) নাযিল করেছে তোমার ক্বলবের উপর আল্লাহর অনুমতিক্রমে (যা) উহার সামনে থাকা সত্যের মুসাদ্দিক/ সত্যায়নকারী (= যা তখন তাওরাত ও ইনজীলের যতটুকু অবিকৃত অবস্থায় ছিলো সেটুকুর সত্যতা প্রতিপাদনকারী) আর মু’মিনদের জন্য হুদা/ হিদায়াত ও বুশরা/ সুসংবাদ।
২:৯৮
মান কানা আদুওয়্যাল লিল্লাহি = যে শত্রু হয় আল্লাহর। ওয়া মালায়িকাতিহী = আর তাঁর ফেরেশতাদের। ওয়া রুসুলিহী = আর তাঁর রসূলদের। ওয়া জিবরীলা = আর জিবরীলের। ওয়া মীকালা = আর মীকালের। ফাইন্নাল্লাহা = (সে জেনে রাখুক যে,) নিশ্চয় আল্লাহ। আদুওয়্যুল লিল কাফিরীন = কাফিরদের শত্রু।
যে শত্রু হয় আল্লাহর আর তাঁর ফেরেশতাদের আর তাঁর রসূলদের আর জিবরীলের আর মীকালের, (সে জেনে রাখুক যে,) নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদের শত্রু।
২:৯৯
ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আনযালনা = আমরা নাযিল করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। আয়াতিন বাইয়িনাতিন = সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ। ওয়া মা ইয়াকফুরু বিহা = আর উহার প্রতি কেউ কুফর/ অবিশ্বাস করে না। ইল্লাল ফাছিক্বূন = ফাছিক্বগণ/ দুষ্কার্যকারীগণ ব্যতীত।
আর নিশ্চয় আমরা নাযিল করেছি তোমার প্রতি আয়াতিম বাইয়্যিনাতিন/ সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আর উহার প্রতি কেউ কুফর/ অবিশ্বাস করে না ফাছিক্বগণ/ দুষ্কার্যকারীগণ ব্যতীত।
২:১০০
আ ওয়া = এমন নয় কি যে। কুল্লামা = যখনই। আহাদূ আহদান = তারা কোন আহদে/ প্রতিশ্রুতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। নাবাযাহু = তা ছুঁড়ে ফেলেছে। ফারীক্বুম মিনহুম = তাদের মধ্যকার একটি ফেরকা/ দল। বাল = বরং। আকছারুহুম = তাদের অধিকাংশ। লা ইয়ু’মিনূন = ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না।
এমন নয় কি যে, যখনই তারা কোন আহদে/ প্রতিশ্রুতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে তা ছুঁড়ে ফেলেছে তাদের মধ্যকার একটি ফেরকা/ দল। বরং তাদের অধিকাংশ ঈমান/ বিশ্বাস করে না/ করবে না।
২:১০১
ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। জাআহুম = তাদের কাছে এসেছে। রসূলুন = একজন রসূল। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে। মুসাদ্দিক্বুল লিমা মাআহুম = তাদের সাথে যে কিতাব আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী। নাবাযা = ছুঁড়ে ফেলেছে। ফারীক্বুম মিনাল্লাযীনা উতুল কিতাবা = যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যকার একটি ফেরকা/ দল। কিতাবাল্লাহি = আল্লাহর কিতাবকে। ওয়ারাআ যুহুরিহিম = তাদের পিঠের পিছনে। কাআন্নাহুম = যেন তারা। লা ইয়া’লামূন = কিছুই জানে না।
আর যখন তাদের কাছে এসেছে একজন রসূল আল্লাহর পক্ষ থেকে, (যে রসূল) তাদের সাথে যে কিতাব আছে তার মুসাদ্দিক/ সত্যতা প্রতিপাদনকারী, তখন ছুঁড়ে ফেলেছে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যকার একটি ফেরকা/ দল আল্লাহর কিতাবকে তাদের পিঠের পিছনে, যেন তারা কিছুই জানে না।
২:১০২
ওয়াত্তাবায়ূ মা তাতলুশ শায়াতীনা = তারা উহার ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে যা শয়তানরা তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করতো। আলা মুলকি সুলাইমানা = সুলাইমানের রাজত্বের বিরুদ্ধে। ওয়া মা কাফারা সুলাইমানু = আর সুলাইমান কুফর করেনি। ওয়ালাকিন্নাশ শায়াতীনা কাফারু = কিন্তু শয়তানগুলি কুফর করেছে। ইউআল্লিমূনান নাছা ছিহরা = তারা লোকদেরকে যাদু শিক্ষা দিত। ওয়া মা উনযিলা = আর যা নাযিল করা হয়েছিল। আলা মালাকাইনি বিবাবিলা হারুতা ও মারুতা = বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের প্রতি। ওয়া মা ইউআল্লিমানি মিন আহাদিন = আর না তারা দুজন কাউকে শিক্ষা দিতো। হাত্তা ইয়াক্বূলা = যে পর্যন্ত তারা দুজন বলতো। ইন্নামা = নিশ্চয়। নাহনু = আমরা। ফিতনাতুন = পরীক্ষাস্বরূপ। ফালা তাকফুর = সুতরাং কুফর করো না। ফাইয়াতাআল্লামূনা = যেমতে তারা শিখতো। মিনহুমা = তাদের দুজন থেকে। মা ইউফাররিক্বূনা বিহী = ঐ বিদ্যা যা দ্বারা বিচ্ছেদ ঘটাতে পারতো। বায়নাল মারয়ি ওয়া জাওজিহী = স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। ওয়া = আর। মা = না। হুম = তারা। বিদররীনা = ক্ষতি করতে পারতো। বিহী = উহা দ্বারা। মিন আহাদিন = কোন ব্যক্তির। ইল্লা বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত। ওয়া = আর। ইয়াতাআল্লামূনা =তারা (উহাই) শিখে। মা = যা। ইয়াদুররুহুম = তাদের ক্ষতি করে। ওয়া = আর। লা ইয়ানফাউহুম = তাদের কোন উপকার করে না। ওয়া = আর। লাক্বাদ = নিশ্চয়। আলিমূ = তারা জেনেছে। লামানিশতারাহু = যে ব্যক্তি উহা (= যাদুবিদ্যা) ক্রয় করেছে। মা লাহু ফিল আখিরাতি মিন খালাক্ব = তার জন্য আখিরাতে কোন অংশ নাই। ওয়া = আর। লাবি’ছা = অবশ্যই উহা অতি নিকৃষ্ট। মা শারাও বিহী আনফুসাহুম = যার বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে বিক্রয় করে দিয়েছে। লাও কানূ ইয়া’লামূন = যদি তারা জানতো।
তারা উহার ইত্তেবা/ অনুসরণ করেছে যা শয়তানরা তিলাওয়াত/ আবৃত্তি করতো সুলাইমানের রাজত্বের বিরুদ্ধে। আর সুলাইমান কুফর করেনি কিন্তু শয়তানগুলি কুফর করেছে, তারা লোকদেরকে যাদু শিক্ষা দিত। আর যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের প্রতি। আর না তারা দুজন (= হারুত ও মারুত) কাউকে শিক্ষা দিতো যে পর্যন্ত তারা দুজন বলতো, ‘নিশ্চয় আমরা পরীক্ষাস্বরূপ, সুতরাং কুফর করো না’; যেমতে তারা শিখতো তাদের দুজন থেকে ঐ বিদ্যা যা দ্বারা বিচ্ছেদ ঘটাতে পারতো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। আর না তারা ক্ষতি করতে পারতো উহা দ্বারা কোন ব্যক্তির, আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত। আর তারা (উহাই) শিখে যা তাদের ক্ষতি করে আর তাদের কোন উপকার করে না। আর নিশ্চয় তারা জেনেছে, যে ব্যক্তি উহা (= যাদুবিদ্যা) ক্রয় করেছে তার জন্য আখিরাতে কোন অংশ নেই। আর অবশ্যই উহা অতি নিকৃষ্ট যার বিনিময়ে তারা নিজেদেরকে বিক্রয় করে দিয়েছে। যদি তারা জানতো!
২:১০৩
ওয়া = আর। লাও = যদি। আন্নাহুম = তারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করতো। ওয়াত্তাক্বাও = আর তাকওয়া অবলম্বন করতো। লামাছূবাতুন = তাহলে অবশ্যই সওয়াব/ প্রতিফল পেতো। মিন ইনদিল্লাহি = আল্লাহর নিকট থেকে। খাইরুন = উত্তম (প্রতিফল)। লাও কানূ ইয়া’লামূন = যদি তারা জানতো।
আর যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস করতো আর তাকওয়া অবলম্বন করতো তাহলে অবশ্যই সওয়াব/ প্রতিফল পেতো আল্লাহর নিকট থেকে, উত্তম (প্রতিফল)। যদি তারা জানতো!
২:১০৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তাক্বূলূ রায়িনা = তোমরা বলো না ‘রায়িনা’ (আমাদের রাখাল হউন) । ওয়া ক্বুলুনযুরনা = আর বলো ‘উনযুরনা’ (আমাদের প্রতি নযর/ দৃষ্টি দিন’। ওয়াছমাউ = আর তোমরা মনোযোগ দিয়ে শুনো। ওয়া লিল কাফিরীনা আযাবুন আলীম = আর কাফিরদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা বলো না ‘রায়িনা’ (আমাদের রাখাল হউন)। আর বলো, ‘উনযুরনা’ (= আমাদের প্রতি নযর/ দৃষ্টি দিন’)। আর তোমরা মনোযোগ দিয়ে শুনো। আর কাফিরদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
২:১০৫
মা ইয়াওয়াদ্দু = চায় না। আল্লাযীনা কাফারু মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কুফর করেছে তারা। ওয়া লাল মুশরিকীনা = আর মুশরিকগণও (চায় না)। আন = যে। ইউনাযযালা আলাইকুম = নাযিল হোক তোমাদের উপর। মিন খাইরিন = কোন কল্যাণ। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়াল্লাহু = অথচ আল্লাহ। ইয়াখতাসসু = খাস/ বিশিষ্ট করে নেন তাঁর রহমত দ্বারা যাকে তিনি (খাস/ বিশিষ্ট করে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু যুল ফাদলিল আযীম= আর আল্লাহ যুল ফাদলিল আযীম/ মহাঅনুগ্রহশীল।
আহলে কিতাবের মধ্যে যারা কুফর করেছে তারা আর মুশরিকগণ চায় না যে, নাযিল হোক তোমাদের উপর কোন কল্যাণ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। অথচ আল্লাহ খাস/ বিশিষ্ট করে নেন তাঁর রহমত দ্বারা যাকে তিনি (খাস/ বিশিষ্ট করে নেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ যুল ফাদলিল আযীম/ মহাঅনুগ্রহশীল।
২:১০৬
মা নানছাখ = আমরা মানছুখ/ রহিত করি না। মিন আয়াতিন = কোন আয়াত। আও নুনছিহা = অথবা আমরা উহা ভুলিয়েও দিই না। না’তি = আমরা প্রদান করি। বিখাইরিম মিনহা = উহার চেয়ে উত্তম। আও মিছলিহা = অথবা উহার অনুরূপ। আলাম তা’লাম = তুমি কি জানো না? আন্নাল্লাহ আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
আমরা মানছুখ/ রহিত করি না কোন আয়াত অথবা আমরা উহা ভুলিয়েও দিই না, (যতক্ষণ না) আমরা প্রদান করি উহার চেয়ে উত্তম অথবা উহার অনুরূপ (আয়াত)। তুমি কি জানো না যে, নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
২:১০৭
আলাম তা’লাম = তুমি কি জানো না? আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাহু = তাঁরই জন্য। মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। ওয়া = আর। মা লাকুম = নেই তোমাদের জন্য। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ব্যতীত। মিন ওয়ালিয়্যিন = কোন ওয়ালি/ অভিভাবক। ওয়া লা নাসির = আর নেই (আল্লাহ ব্যতীত) কোন সাহায্যকারী।
তুমি কি জানো না যে, নিশ্চয় আল্লাহ এমন যে, একমাত্র তাঁরই জন্য আকাশসমূহ ও জমিনের রাজত্ব? আর নেই তোমাদের জন্য আল্লাহ ব্যতীত কোন ওয়ালি/ অভিভাবক আর নেই (আল্লাহ ব্যতীত) কোন সাহায্যকারী।
২:১০৮
আম তুরীদূনা = তোমরা কি এরাদা/ ইচ্ছা করো যে। আন তাছআলূ = তোমরা প্রশ্ন করবে। রসূলাকুম = তোমাদের নিকট প্রেরিত রসূলকে। কামা = যেমন। ছুয়িলা মূসা = প্রশ্ন করা হয়েছে মূসাকে। মিন ক্বাবলু = ইতিপূর্বে। ওয়া = আর। মান = যে। ইয়াতাবাদ্দালিল কুফরি বিল ঈমান = ঈমানের বিনিময়ে কুফরকে বদলস্বরূপ গ্রহণ করেছে। ফাক্বাদ দল্লা ছাওয়াআস সাবিল = নিশ্চয় সে সরল পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে।
তোমরা কি এরাদা/ ইচ্ছা করো যে, তোমরা প্রশ্ন করবে তোমাদের নিকট প্রেরিত রসূলকে যেমন প্রশ্ন করা হয়েছে মূসাকে ইতিপূর্বে? আর যে ঈমানের বিনিময়ে কুফরকে বদলস্বরূপ গ্রহণ করেছে নিশ্চয় সে সরল পথ থেকে বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছে।
২:১০৯
ওয়াদ্দা কাছীরুম মিন আহলিল কিতাবি = আহলে কিতাবের মধ্য থেকে অনেকে চায়। লাও ইয়ারুদ্দূনাকুম = যদি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে পারতো। মিম বা’দি ঈমানিকুম = তোমাদের ঈমানের পরবর্তী পর্যায়ে। কুফফারা = কুফর করার দিকে। হাছাদান মিন ইনদি আনফুছিহিম = তাদের নিজেদের নিকট থেকে (তোমাদের প্রতি) হাসাদ/ হিংসাবশত:। মিম বা’দি মা তাবাইয়্যানা লাহুমুল হাক্কু = তাদের জন্য হক্ব/ সঠিক তথ্য বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পরে। ফা’ফূ = সুতরাং তোমরা তাদেরকে মাফ করো। ওয়াসফাহূ = আর উপেক্ষা করো। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়া’তিয়াল্লাহু বিআমরিহী = আল্লাহ তাঁর আমর/ সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
আহলে কিতাবের মধ্য থেকে অনেকে চায় যদি তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিতে পারতো তোমাদের ঈমানের পরবর্তী পর্যায়ে কুফর করার দিকে; তাদের নিজেদের নিকট থেকে (তোমাদের প্রতি) হাসাদ/ হিংসাবশত; তাদের জন্য হক্ব/ সঠিক তথ্য বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করার পরে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে মাফ করো আর উপেক্ষা করো যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর আমর/ সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
২:১১০
ওয়া আকিমুস সালাতা = আর তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া আতূয যাকাতা = আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। ওয়া = আর। মা = যা। তুকাদ্দিমু = তোমরা অগ্রবর্তী করবে। লিআনফুছিকুম = তোমাদের নিজেদের জন্য। মিন খাইরিন = কল্যাণকর কাজ থেকে। তাজিদূহু = তোমরা উহা পাবে। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে। ইন্নাল্লাহা বিমা তা’মালূনা বাছীর = নিশ্চয় আল্লাহ উহার দ্রষ্টা যা তোমরা করো।
আর তোমরা সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করো আর তোমরা যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করো। আর তোমাদের নিজেদের জন্য কল্যাণকর কাজ থেকে যা তোমরা অগ্রবর্তী করবে, তোমরা উহা আল্লাহর কাছে পাবে। নিশ্চয় আল্লাহ উহার দ্রষ্টা যা তোমরা করো।
২:১১১
ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। লান ইয়াদখুলাল জান্নাতা = (কেউ) জান্নাতে দাখিল হবে না/ প্রবেশ করবে না। ইল্লা মান কানা হুদান আও নাসারা = ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে ইহুদী বা নাসারা/ খৃস্টান হয়ে গেছে। তিলকা = ইহা। আমানিয়্যুহুম = তাদের আকাংখা। ক্বুল = বল। হাতূ = তোমরা নিয়ে এসো। বুরহানাকুম = তোমাদের বুরহান/ প্রমাণ। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হয়ে থাকো। সাদিক্বীন = সত্যবাদী।
আর তারা বলেছে, ‘(কেউ) জান্নাতে দাখিল হবে না/ প্রবেশ করবে না ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে ইহুদী বা নাসারা/ খৃস্টান হয়ে গেছে’। ইহা তাদের আকাংখা। বল, ‘তোমরা নিয়ে এসো তোমাদের বুরহান/ প্রমাণ, যদি তোমরা হয়ে থাকো সাদিক্বীন/ সত্যবাদী’।
২:১১২
বালা = বরং (প্রকৃত কথা হচ্ছে)। মান = যে। আছলামা = ইসলাম/ সমর্পণ করেছে। ওয়াজহাহু = তার ওয়াজহুন/ সমগ্র সত্তাকে। লিল্লাহি = আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ওয়া = আর। হুয়া = সে। মুহসিনুন = একজন মুহসিন/ উত্তম আচরণকারী। ফালাহু = সেক্ষেত্রে তার জন্য আছে। আজরুহু = তার প্রতিফল। ইনদা রব্বিহি = তার রবের কাছে। ওয়া লা খাওফুন আলাইহিম = আর তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া লা হুম ইয়াহযানূন = আর না তারা দু:খিত হবে।
বরং (প্রকৃত কথা হচ্ছে) যে ইসলাম/ সমর্পণ করেছে তার ওয়াজহুন/ সমগ্র সত্তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আর (সেই সাথে) সে একজন মুহসিন/ উত্তম আচরণকারী, সেক্ষেত্রে তার জন্য আছে তার প্রতিফল তার রবের কাছে আর তাদের কোন ভয় নেই আর না তারা দু:খিত হবে।
২:১১৩
ওয়া = আর। ক্বালাতিল ইয়াহূদু = আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীরা বলেছে। লাইছাতিল নাছারা = আল নাছারা/ চরমপন্থী খৃস্টানরা নেই। আলা সাইয়িন = কোন কিছুর উপর (প্রতিষ্ঠিত)। ওয়া = আর। ক্বলাতিন নাছারা = আল নাছারা/ চরমপন্থী খৃস্টানরা বলেছে। লাইছাতিল ইয়াহূদু = আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীরা নেই। আলা সাইয়িন = কোন কিছুর উপর (প্রতিষ্ঠিত)। ওয়া = অথচ। হুম = তারা। ইয়াতলূনাল কিতাবা = কিতাব তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করে। কাযালিকা = এভাবে। ক্বলাল্লাযীনা = তারাও বলেছে যারা। লা ইয়া’লামূনা = ইলম/ জ্ঞান রাখে না। মিছলা ক্বাওলিহিম = তাদের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্য। ফাল্লাহু ইয়াহকুমু = সুতরাং আল্লাহ মীমাংসা করবেন। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ফীমা কানূ ফীহি ইয়াখতালিফূন = সে বিষয়ে যাতে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করতো।
আর আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীরা বলেছে, ‘আল নাছারা/ চরমপন্থী খৃস্টানরা নেই কোন কিছুর উপর (প্রতিষ্ঠিত)’। আর আল নাছারা/ চরমপন্থী খৃস্টানরা বলেছে, ‘আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীরা নেই কোন কিছুর উপর (প্রতিষ্ঠিত)’। অথচ তারা কিতাব তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করে। এভাবে তারাও বলেছে যারা ইলম/ জ্ঞান রাখে না, তাদের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্য। সুতরাং আল্লাহ মীমাংসা করবেন তাদের মধ্যে ইয়াওমুল ক্বিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে সে বিষয়ে যাতে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করতো।
২:১১৪
ওয়া = আর। মান আযলামু মিম মান = তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে? মানাআ মাসাজিদাল্লাহি = যে আল্লাহর মাসজিদসমূহের ক্ষেত্রে মানা করে। আইঁয়াজকুরা ফীহাছমুহু = তাতে তাঁর নামের যিকর/ স্মরণ করতে। ওয়া = আর। ছাআ ফী খারাবিহা = উহার প্রকৃতিকে খারাব/ বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা করে। উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। মা কানা লাহুম = যাদের জন্য অবকাশ নেই। আন = যে। ইয়াদখুলুহা = তাতে দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে। ইল্লা খায়িফীনা = খায়েফীন/ শংকিত হয়ে থাকা ছাড়া। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফিদদুনিয়া = দুনিয়াতে। খিজয়ুন = লাঞ্চনা। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। ফিল আখিরাতে = আখিরাতে। আযাবুন আযীম = আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর মাসজিদসমূহের ক্ষেত্রে মানা করে তাতে তাঁর নামের যিকর/ স্মরণ করতে আর উহার প্রকৃতিকে খারাব/ বিনষ্ট করার প্রচেষ্টা করে। তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য অবকাশ নেই যে, তাতে দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে খায়েফীন/ শংকিত হয়ে থাকা ছাড়া। তাদের জন্য আছে দুনিয়াতে লাঞ্চনা আর তাদের জন্য আছে আখিরাতে আযাবুন আযীম/ মহাশাস্তি।
২:১১৫
ওয়া = আর। লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। আল মাশরিকু ওয়াল মাগরিবু = পূর্ব পশ্চিম (সকল দিক)। ফাআয়নামা = সুতরাং যে দিকেই। তুওয়াল্লূ = মুখ ফিরাও। ওয়াজহুল্লাহি = আল্লাহর সত্তা বিরাজমান। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ওয়াসিয়্যুন = ওয়াসি’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী। আলীমুন = আলীম/ মহাজ্ঞানী।
আর আল্লাহরই অধিকারভুক্ত পূর্ব পশ্চিম (সকল দিক)। সুতরাং যে দিকেই মুখ ফিরাও সেদিকেই আল্লাহর সত্তা বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ ওয়াসি’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
২:১১৬
ওয়া ক্বলূত তাখাজাল্লাহু ওয়ালাদান = আর তারা বলেছে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। সুবহানাহু = তিনি তো এসব থেকে পবিত্র। বাল = বরং। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তাঁরই অধিকারভুক্ত। কুল্লু = সকলেই। লাহু = তাঁর উদ্দেশ্যে। ক্বানিতূন = বিনয়ী।
আর তারা বলেছে, ‘আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন’। সুবহানাহু/ তিনি তো এসব থেকে পবিত্র। বরং আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে তা সবই তাঁরই অধিকারভুক্ত। সকলেই তাঁর উদ্দেশ্যে ক্বানিতূন/ বিনয়ী।
২:১১৭
বাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আসমানসমূহ ও জমিনের বাদি’/ স্রষ্টা/ উদ্ভাবক/ অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী ও নমুনা ছাড়া মূল থেকে সৃষ্টিকারী। ওয়া ইযা ক্বাদা আমরান = আর যখন তিনি ক্বাদা/ সিদ্ধান্ত করেন কোন আমর/ কার্য সম্পাদনের। ফাইন্নামা = তখন মূলত। ইয়াক্বুলু লাহু = উহার উদ্দেশ্যে বলেন। কুন = হও। ফাইয়াকুন = সুতরাং হয়।
তিনিই আসমানসমূহ ও জমিনের বাদি’/ স্রষ্টা/ উদ্ভাবক/ অস্তিত্বহীন অবস্থা থেকে অস্তিত্বে আনয়নকারী ও নমুনা ছাড়া মূল থেকে সৃষ্টিকারী। আর যখন তিনি ক্বাদা/ সিদ্ধান্ত করেন কোন আমর/ কার্য সম্পাদনের তখন মূলত উহার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘হও’ সুতরাং তা হয়।
২:১১৮
ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা লা ইয়া’লামূনা = যারা ইলম/ জ্ঞান রাখে না তারা বলেছে। লাও লা ইউকাল্লিমুনাল্লাহু = কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না? আও তা’তীনা আয়াতুন = অথবা আমাদেরকে কোন আয়াত দেন না? কাযালিকা = এভাবে। ক্বলাল্লাযীনা = তারাও বলেছে যারা। মিন ক্বাবলিহিম = তাদের আগে গত হয়েছে। মিছলা ক্বাওলিহিম = তাদের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্য। তাশাবাহাত ক্বুলূবুহুম = তাদের কলবসমূহ পরস্পরের অনুরূপ হয়ে গেছে। ক্বাদ = নিশ্চয়। বাইয়্যান্নাল আয়াতি = আমরা আয়াতসমূহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। লিক্বাওমি ইউক্বিনূন = ইয়াকীনকারী/ প্রত্যয়শীল কওমের জন্য।
আর যারা ইলম/ জ্ঞান রাখে না তারা বলেছে, ‘কেন আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন না অথবা আমাদেরকে কোন আয়াত দেন না?’ এভাবে তারাও বলেছে যারা তাদের আগে গত হয়েছে, তাদের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্য। তাদের কলবসমূহ পরস্পরের অনুরূপ হয়ে গেছে। নিশ্চয় আমরা আয়াতসমূহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি ইয়াকীনকারী/ প্রত্যয়শীল কওমের জন্য।
২:১১৯
ইন্না = নিশ্চয় আমরা। আরছালনাকা = তোমাকে প্রেরণ করেছি। বিল হাক্কি = সঠিক তথ্যসহ। বাশীরান = বাশীর/ সুসংবাদদাতারূপে। ওয়া = আর। নাযিরান = নাযির/ সতর্ককারীরূপে। ওয়া লা তুছআলু = আর তোমাকে প্রশ্ন করা হবে না। আন আসহাবিল জাহীম = আসহাবিল জাহীমের (যারা জাহীমে শাস্তি পাবে তাদের) ব্যাপারে।
নিশ্চয় আমরা তোমাকে প্রেরণ করেছি সঠিক তথ্যসহ বাশীর/ সুসংবাদদাতারূপে আর নাযির/ সতর্ককারীরূপে। আর তোমাকে প্রশ্ন করা হবে না আসহাবিল জাহীমের (= যারা জাহীমে শাস্তি পাবে তাদের) ব্যাপারে।
২:১২০
ওয়া লান তারদা = আর কখনো সন্তুষ্ট হবে না। আনকা = তোমার প্রতি। আল ইয়াহুদু = আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীগণ। ওয়া লান্নাছারা = আর না সন্তুষ্ট হবে আল নাসারা/ চরমপন্থী খৃস্টানগণ। হাত্তা = যতক্ষণ না। তাত্তাবিয়া = তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে। মিল্লাতাহুম = তাদের মিল্লাত (ইবাদাতের প্রকৃতি ও স্বরূপ)। ক্বুল = বলো। ইন্না হুদাল্লাহি = নিশ্চয় আল্লাহর হুদা/ হিদায়াত। হুয়াল হুদা = উহাই একমাত্র হুদা/ হিদায়াত। ওয়া লাইনিত তাবাআতা = আর যদি তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ। বা’দাল্লাযী = উহার পরও যা। জাআকা = তোমার কাছে এসেছে। মিনাল ইলমি = (আসমানী) ইলম/ জ্ঞান থেকে। মা লাকা = তাহলে না তোমার জন্য পাবে। মিনাল্লাহি = আল্লাহ থেকে (বাঁচাতে)। মিন ওয়ালিয়্যীন = কোন ওয়ালি/ অভিভাবক। ওয়া লা নাছিরিন = আর না কোন সাহায্যকারী।
আর কখনো সন্তুষ্ট হবে না তোমার প্রতি আল ইয়াহুদ/ চরমপন্থী ইহুদীগণ আর না সন্তুষ্ট হবে আল নাসারা/ চরমপন্থী খৃস্টানগণ, যতক্ষণ না তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে তাদের মিল্লাত (ইবাদাতের প্রকৃতি ও স্বরূপ)। বলো, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হুদা/ হিদায়াত, উহাই একমাত্র হুদা/ হিদায়াত’। আর যদি তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ উহার পরও যা তোমার কাছে এসেছে (আসমানী) ইলম/ জ্ঞান থেকে, তাহলে না তোমার জন্য পাবে আল্লাহ থেকে (বাঁচাতে) কোন ওয়ালি/ অভিভাবক আর না কোন সাহায্যকারী।
২:১২১
আল্লাযীনা আতাইনাহুমুল কিতাবা = যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি। ইয়াতলূনাহু = যারা তা তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করে। হাক্কা তিলাওয়াতিহী = উহাকে তিলাওয়াতের হক্ব আদায় করে। উলায়িকা = তারাই। ইউ’মিনূনা বিহী = উহার প্রতি (কিতাবের প্রতি) ঈমান রাখে। ওয়া মান ইয়াকফুর বিহী = আর যে উহার প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করে। ফাউলায়িকা হুমুল খাছিরূন = তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি (তাদের মধ্য থেকে) যারা তা তিলাওয়াত/ অধ্যয়ন করে উহাকে তিলাওয়াতের হক্ব আদায় করে, তারাই উহার প্রতি (= কিতাবের প্রতি) ঈমান রাখে। আর যে উহার প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত।
২:১২২
ইয়া বানী ইসরাইল = হে বানী ইসরাইল। উযকুরু = তোমরা যিকর/ স্মরণ করো। নি’মাতিয়া = আমার নিয়ামাত/ অনুগ্রহ। আল্লাতী = যা। আনআমতু = আমি নিয়ামাত/ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়েছি। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। আন্নী = আমি। ফাদ্দালতুকুম = তোমাদেরকে ফদল/ ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি। আলাল আলামীন = সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
হে বানী ইসরাইল/ ইসরাইলের সন্তানগণ, তোমরা যিকর/ স্মরণ করো আমার নিয়ামাত/ অনুগ্রহ যা আমি নিয়ামাত/ অনুগ্রহস্বরূপ দিয়েছি তোমাদের উপর। আর (বিশেষভাবে স্মরণ করো যে,) আমি তোমাদেরকে ফদল/ ফযল/ বিশিষ্টতা দিয়েছি সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
২:১২৩
ওয়াত্তাকূ = আর তোমরা ভয় করো। ইয়াওমান = সেদিনকে যেদিন। লা তাযযী = প্রতিদান দেয়ার কাজে আসবে না। নাফসুন = কোন ব্যক্তিই। আন নাফসুন = অপর কোন ব্যক্তির ব্যাপারে। সাইয়ান = কিছুমাত্রও। ওয়া = আর। লা ইয়াক্ববালু = কবুল করা হবে না। মিনহা = তার থেকে। আদলুন = বিনিময়। ওয়া = আর। লা তানফায়ুহা = তাকে উপকৃত করবে না। সাফায়াতুন = সাফায়াত/ সুপারিশ। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তাদেরকে। ইয়ুনসরুন = সাহায্য করা হবে।
আর তোমরা ভয় করো সেদিনকে যেদিন প্রতিদান দেয়ার কাজে আসবে না কোন ব্যক্তিই অপর কোন ব্যক্তির ব্যাপারে, কিছুমাত্রও। আর কবুল করা হবে না তার থেকে বিনিময় আর তাকে উপকৃত করবে না সাফায়াত/সুপারিশ। আর না তাদেরকে সাহায্য করা হবে।
২:১২৪
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। -ব্তালা ইবরাহীমা রব্বুহু = ইবরাহীমকে তার রব পরীক্ষা করেছেন। বিকালিমাতিন = কয়েকটি বাণী দ্বারা। ফাআতাম্মাহুন্না = তারপর সেগুলো সে পূর্ণ করেছে। ক্বলা = তিনি (আল্লাহ) বলেছেন। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। জায়িলুকা = তোমাকে প্রতিস্থাপনকারী। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। ইমামা = ইমাম/ অগ্রণী/ অগ্রগামী হিসাবে। ক্বলা = সে বলেছে। ওয়া মিন যুররিয়্যাতী = আমার বংশধর থেকেও (কি?) ক্বলা = তিনি (আল্লাহ) বলেছেন। লা ইয়ানালু আহদীয যালিমীন = আমার আহদ/ ইতিবাচক প্রতিজ্ঞা যালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নয় (= তাদের মধ্যে কেউ যালিম থাকলে তার প্রতি এ প্রতিজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না)।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইবরাহীমকে তার রব পরীক্ষা করেছেন কয়েকটি বাণী দ্বারা। তারপর সেগুলো সে পূর্ণ করেছে। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাকে প্রতিস্থাপনকারী মানবজাতির জন্য ইমাম/ অগ্রণী/ অগ্রগামী হিসাবে’। সে বলেছে, ‘আমার বংশধর থেকেও (কি?)’ তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘আমার আহদ/ ইতিবাচক প্রতিজ্ঞা জালিমদের প্রতি প্রযোজ্য নয় (= তাদের মধ্যে কেউ যালিম থাকলে তার প্রতি এ প্রতিজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না)।
২:১২৫
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। জায়ালনা = আমরা স্থাপন করেছি। আল বাইতা = আল বাইতকে (কা’বাঘরকে)। মাছাবাতাল লিন নাছ = মানবজাতির জন্য মাসাবাত/ সমাবর্তনস্থলরূপে। ওয়া আমনা = আর আমনা/ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে। ওয়াত্তাখিজূ = আর তোমরা গ্রহণ করো। মিম মাকামি ইবরাহীমা = মাকামে ইবরাহীমের/ ইবরাহীমের অবস্থান প্রতিষ্ঠার অঞ্চল থেকে কোন অংশকে। মুসল্লা = মুসল্লা/ সালাতের স্থানরূপে। ওয়া আহিদনা ইলা ইবরাহীমা ও ইসমাইলা = আর আমরা ইবরাহীমকে ও ইসমাইলকে আহদ/ ফরমান দিয়েছি। আন = যে। তহহিরা = তোমরা পবিত্র রাখো। বাইতিয়া = আমার ঘরকে। লিততায়িফীনা = তায়িফীনের/ তাওয়াফকারীদের জন্য। ওয়াল আকিফীনা = আর আকিফীনের/ এতেকাফকারীদের (= আত্মনিয়োজিতদের জন্য) জন্য। ওয়ার রুককায়ীস সুজুদ = আর রুককায়ীস সুজুদের জন্য/ রুকুকারীদের ও সিজদাকারীদের জন্য।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন আমরা স্থাপন করেছি আল বাইতকে (= কা’বাঘরকে) মানবজাতির জন্য মাসাবাত/ সমাবর্তনস্থলরূপে আর আমনা/ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে। আর তোমরা গ্রহণ করো মাকামে ইবরাহীমের/ ইবরাহীমের অবস্থান প্রতিষ্ঠার অঞ্চল থেকে কোন অংশকে মুসল্লা/ সালাতের স্থানরূপে। আর আমরা ইবরাহীমকে ও ইসমাইলকে আহদ/ ফরমান দিয়েছি যে, ‘তোমরা পবিত্র রাখো আমার ঘরকে তায়িফীনের/ তাওয়াফকারীদের (প্যারেডকারীদের) জন্য আর আকিফীনের/ এতেকাফকারীদের (= আত্মনিয়োজিতদের) জন্য আর রুককায়ীস সুজুদের/ রুকুকারীদের ও সিজদাকারীদের জন্য।
২:১২৬
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা ইবরাহীমু = ইবরাহীম বলেছে। রব্বিযআল হাযা বালাদান = আমার রব, এ ঘরকে বানিয়ে দিন। আমিনান = আমিনান/ শান্তিধাম। ওয়ারযুক্ব আহলাহু = আর উহার আহালকে (উহার বলয়ে থাকা লোকদেরকে/ অধিবাসীদেরকে) রিযকদান করুন। মিনাছ ছামারাতি = ফলফলাদি থেকে। মান আমানা মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে তাকে যে ঈমান/ বিশ্বাস করবে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ক্বলা = তিনি বলেছেন। ওয়া মান কাফারা = আর যে কুফর/ অবিশ্বাস করবে। ফাউমাত্তিয়ুহু = আমি তাকেও উপভোগ করতে দেবো। ক্বালীলা = (পার্থিব জীবনের) কিছুকাল। ছুম্মা = তারপর। আদতররুহু = আমি তাকে ঠেলে দেবো। ইলা আযাবিন নার = আযাবুন নার/ (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির দিকে। ওয়া বি’ছাল মাছীর = আর তা খুবই মন্দ অবস্থান।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইবরাহীম বলেছে, ‘আমার রব, এ ঘরকে বানিয়ে দিন আমিনান/ শান্তিধাম আর উহার আহালকে (= উহার বলয়ে থাকা লোকদেরকে/ অধিবাসীদেরকে) রিযকদান করুন ফলফলাদি থেকে, তাদের মধ্য থেকে তাকে যে ঈমান/ বিশ্বাস করবে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি’। তিনি বলেছেন, ‘আর যে কুফর/ অবিশ্বাস করবে আমি তাকেও উপভোগ করতে দেবো (পার্থিব জীবনের) কিছুকাল। তারপর আমি তাকে ঠেলে দেবো আযাবুন নার/ (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তির দিকে আর তা খুবই মন্দ অবস্থান’।
২:১২৭
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ইয়ারফাউ ইবরাহীমু ক্বাওয়ায়িদা মিনাল বাইতি ওয়া ইসমাইলু = ইবরাহীম ও ইসমাইল আল বাইতের (কা’বাঘরের) প্রাচীর (গাঁথিয়া) তুলছিল। রব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না = আমাদের রব, আমাদের কৃতকর্ম কবুল করুন। ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম = নিশ্চয় আপনি ছামী’/ সর্বশ্রোতা (যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইবরাহীম ও ইসমাইল আল বাইতের (= কা’বাঘরের) প্রাচীর (গাঁথিয়া) তুলছিল। ‘আমাদের রব, আমাদের কৃতকর্ম কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি ছামী’/ সর্বশ্রোতা (যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
২:১২৮
রব্বানা = আমাদের রব। ওয়াজআলনা = আমাদেরকে বানিয়ে দিন। মুসলিমাইনি লাকা = আপনার উদ্দেশ্যে দুজন মুসলিম/ আত্মসমর্পনকারী। ওয়া মিন জুররিয়াতিনা = আর আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে (বানিয়ে দিন)। উম্মাতাম মুসলিমাল লাকা = আপনার উদ্দেশ্যে উম্মাতান মুসলিমাতান/ আত্মসমর্পনকারী জাতি। ওয়া আরিনা = আর আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। মানাসিকানা = আমাদের মানাসিক (= )। ওয়া তুব আলাইনা = আর আমাদের তাওবা কবুল করুন। ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রহীম = নিশ্চয় আপনি আত তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, আর রহীম/ দয়াশীল।
আমাদের রব, আমাদেরকে বানিয়ে দিন আপনার উদ্দেশ্যে দুজন মুসলিম/ আত্মসমর্পনকারী। আর আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকে (বানিয়ে দিন) আপনার উদ্দেশ্যে উম্মাতান মুসলিমাতান/ আত্মসমর্পনকারী জাতি। আর আমাদেরকে দেখিয়ে দিন আমাদের মানাসিক (= )। আর আমাদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি আত তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, আর রহীম/ দয়াশীল।
২:১২৯
রব্বানা = আমাদের রব। ওয়াবআছ = সমুত্থিত (প্ররণ) করুন। ফীহিম = তাদের মধ্যে। রসূলান = একজন রসূল। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। ইয়াতলূ আলাইহিম আয়াতিকা = যে তিলাওয়াত করবে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ। ওয়া ইউআল্লিমুহুমুল কিতাবা ওয়াল হিকমাতা = আর তাদেরকে শিক্ষাদান করবে কিতাব ও হিকমাত (কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়)। ওয়া ইউযাক্কিহিম = আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। ইন্নাকা আনতাল আযীযুল হাকীম = নিশ্চয় আপনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আমাদের রব, সমুত্থিত (প্রেরণ) করুন তাদের মধ্যে একজন রসূল তাদের মধ্য থেকে যে তিলাওয়াত করবে তাদের সামনে আপনার আয়াতসমূহ আর তাদেরকে শিক্ষাদান করবে কিতাব ও হিকমাত (কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়), আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবে। নিশ্চয় আপনি আল আযীয/ মহাশক্তিমান, আল হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
২:১৩০
ওয়া = আর। মান = কে। ইয়ারগাবু আন মিল্লাতি ইবরাহীমা = মিল্লাতে ইবরাহীমের (= ইবরাহীমের ইবাদাতের শিরকমুক্ত প্রকৃতি ও স্বরূপের) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। ইল্লা মান ছাফিহা নাফসাহু = সে ব্যতীত যে তার নিজেকে বোকা বানিয়ে নিয়েছে। ওয়া = আর। লাক্বাদিছতফায়নাহু = নিশ্চয় আমরা তাকে মনোনীত করেছি। ফিদ দুনিয়া = দুনিয়াতে। ওয়া ইন্নাহু = আর নিশ্চয় সে (হবে)। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। লামিনাস সালিহীন = সালিহীন/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত।
আর কে মিল্লাতে ইবরাহীমের (= ইবরাহীমের ইবাদাতের শিরকমুক্ত প্রকৃতি ও স্বরূপের) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে সে ব্যতীত যে তার নিজেকে বোকা বানিয়ে নিয়েছে? আর নিশ্চয় আমরা তাকে মনোনীত করেছি দুনিয়াতে। আর নিশ্চয় সে (হবে) আখিরাতে সালিহীন/ সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত (হিসাবে স্বীকৃত)।
২:১৩১
ইয ক্বলা লাহু রব্বুহু = যখন তার রব তার উদ্দেশ্যে বলেছেন। আসলিম = ইসলাম/ আত্মসমর্পন কর। ক্বলা = সে বলেছে। আসলামতু লিরব্বিল আলামীন = আমি রব্বুল আলামীনের/ মহাবিশ্বের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ইসলাম/ আত্মসমর্পন করেছি।
যখন তার রব তার উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ইসলাম/ আত্মসমর্পন কর’। সে বলেছে, ‘আমি রব্বুল আলামীনের/ মহাবিশ্বের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ইসলাম/ আত্মসমর্পন করেছি’।
২:১৩২
ওয়া ওয়াসসা = আর ওয়াসিয়্যাত করেছে/ নির্দেশ দিয়েছে। বিহা = উহা সম্বন্ধে (= ঐ মিল্লাত সম্বন্ধে)। ইবরাহীমু বানীহি ওয়া ইয়াকুবু = ইবরাহীম তার নিজ পুত্রদেরকে আর ইয়াকুব তার নিজ পুত্রদেরকে। ইয়া বানীয়্যা = হে আমার পুত্রগণ। ইন্নাল্লাহাসতফা = নিশ্চয় আল্লাহ মনোনীত করেছেন। লাকুমুদ দ্বীনা = তোমাদের জন্য এই দ্বীন/ জীবনবিধান। ফালা তামূতুন্না = সুতরাং তোমরা মৃত্যুবরণ করো না। ইল্লা ওয়া আনতুম মুসলিমূন = মুসলিমূন/ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী না হয়ে।
আর ওয়াসিয়্যাত করেছে/ নির্দেশ দিয়েছে উহা সম্বন্ধে (= ঐ মিল্লাত সম্বন্ধে) ইবরাহীম তার নিজ পুত্রদেরকে আর ইয়াকুব তার নিজ পুত্রদেরকে, ‘হে আমার পুত্রগণ, নিশ্চয় আল্লাহ মনোনীত করেছেন তোমাদের জন্য এই দ্বীন/ জীবনবিধান। সুতরাং তোমরা মৃত্যুবরণ করো না মুসলিমূন/ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী না হয়ে।’।
২:১৩৩
আম = নাকি। কুনতুম সুহাদাআ = তোমরা সুহাদা (শহীদগণ/ সাক্ষীগণ) ছিলে। ইয হাদারা ইয়া’কুবাল মাওতু = যখন হাজির/ উপস্থিত হয়েছে ইয়াকুবের মৃত্যু। ইয ক্বলা লিবানীহি = যখন সে তার পুত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছে। মা তা’বুদূনা মিম বা’দী = আমার পরবর্তী পর্যায়ে তোমরা কার ইবাদাত/ দাসত্ব করবে? ক্বলূ = তারা বলেছে। না’বুদু = আমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করবো। ইলাহাকা = আপনার ইলাহর। ওয়া আবায়িকা ইবরাহীমা ওয়া ইসমাইলা ওয়া ইসহাকা = আর আপনার বাপদাদা ইবরাহীম, ইসমাইল ও ইসহাকের ইলাহর। ইলাহান ওয়াহিদান = যিনি একমাত্র ইলাহ। ওয়া নাহনু লাহু মুসলিমূন = আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে মুসলিমূন/ আত্মসমর্পণকারী।
নাকি তোমরা সুহাদা (শহীদগণ/ সাক্ষীগণ) ছিলে যখন হাজির/ উপস্থিত হয়েছে ইয়াকুবের মৃত্যু? যখন সে তার পুত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছে, ‘আমার পরবর্তী পর্যায়ে তোমরা কার ইবাদাত/ দাসত্ব করবে?’ তারা বলেছে, ‘আমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করবো আপনার ইলাহর আর আপনার বাপদাদা ইবরাহীম, ইসমাইল ও ইসহাকের ইলাহর যিনি একমাত্র ইলাহ, আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে মুসলিমূন/ আত্মসমর্পণকারী’।
২:১৩৪
তিলকা উম্মাতুন ক্বাদ খালাত = ঐ উম্মাত অতীত হয়ে গেছে। লাহা মা কাছাবাত = যা সে উপার্জন করেছে তা তার জন্য। ওয়া লাকুম মা কাছাবতুম = আর যা তোমরা উপার্জন করেছো তা তোমাদের জন্য। ওয়া লা তুছআলূনা = আর তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না। আম্মা কানু ইয়া’মালূন = তাদের আমলের বিষয়ে।
ঐ উম্মাত অতীত হয়ে গেছে। যা সে উপার্জন করেছে তা তার জন্য। আর যা তোমরা উপার্জন করেছো তা তোমাদের জন্য। আর তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না তাদের আমলের বিষয়ে।
২:১৩৫
ওয়া ক্বলূ = আর তারা বলেছে। কূনূ হুদান আও নাসারা = তোমরা হয়ে যাও হুদান (ইহুদী) বা নাসারা (খৃস্টান)। তাহতাদূ = তাহলেই তোমরা হিদায়াত পাবে। ক্বুল = বলো। বাল মিল্লাতা ইবরাহীমা = বরং (গ্রহণ করো) মিল্লাতা ইবরাহীম (ইবরাহীমের ইবাদাতের শিরকমুক্ত প্রকৃতি ও স্বরূপ)। হানীফান = হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ হয়ে (বা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ)। ওয়া মা কানা মিনাল মুশরিকীন = আর সে ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।
আর তারা বলেছে, ‘তোমরা হয়ে যাও হুদান (= ইহুদী) বা নাসারা (= খৃস্টান), তাহলেই তোমরা হিদায়াত পাবে’। বলো, ‘বরং (গ্রহণ করো) মিল্লাতা ইবরাহীম (= ইবরাহীমের ইবাদাতের শিরকমুক্ত প্রকৃতি ও স্বরূপ), হানীফ/ সত্যনিষ্ঠ হয়ে (বা, সে ছিল সত্যনিষ্ঠ)। আর সে ছিলো না মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত’।
২:১৩৬
ক্বূলূ = তোমরা বলো। আমান্না বিল্লাহি = আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি। ওয়া মা উনযিলা ইলাইনা = আর (বিশ্বাস করেছি উহার প্রতি) যা নাযিল করা হয়েছে আমাদের প্রতি। ওয়া মা উনযিলা ইলা ইবরাহীমা ওয়া ইসমাইলা ওয়া ইসহাকা ওয়া ইয়া’কূবা ওয়াল আসবাতি = আর যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক ও ইয়াকুব আর তার বংশধারাসমূহের প্রতি। ওয়া মা উতিয়া মূসা ওয়া ঈসা = আর যা দেয়া হয়েছে মূসাকে ও ঈসাকে। ওয়া মা উতিয়ান নাবিয়্যূনা মির রব্বিহিম = আর যা দেয়া হয়েছে অন্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে। লা নুফাররিকু বায়না আহাদিম মিনহুম = আমরা তাদের মধ্য হতে কারো মাঝে পার্থক্য করি না। ওয়া নাহনু লাহু মুসলিমূন = আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে (অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে) মুসলিমূন/ আত্মসমর্পনকারী।
তোমরা বলো, ‘আমরা ঈমান/ বিশ্বাস করেছি আল্লাহর প্রতি আর (বিশ্বাস করেছি উহার প্রতি) আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে আর যা নাযিল করা হয়েছে ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক ও ইয়াকুব আর তার বংশধারাসমূহের প্রতি আর যা দেয়া হয়েছে মূসাকে ও ঈসাকে আর যা দেয়া হয়েছে অন্য নবীদেরকে তাদের রবের পক্ষ থেকে। আমরা তাদের মধ্য হতে কারো মাঝে পার্থক্য করি না। আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে (অর্থাৎ আল্লাহর উদ্দেশ্যে) মুসলিমূন/ আত্মসমর্পনকারী’।
২:১৩৭
ফাইন আমানূ = তারপর যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিমিছলি মা আমানতুম বিহি = তোমাদের ঈমানের অনুরূপ (অর্থাৎ যদি তারাও নবীদের প্রতি তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছাড়াই বিশ্বাস করে)। ফাক্বাদিহতাদাউ = তাহলে তারা হিদায়াত পাবে। ওয়া ইন তাওয়াল্লাও = আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফাইন্নামা হুম ফী শিক্বাক্ব = তাহলে নিশ্চয় তারা বিরোধে লিপ্ত। ফাছাইয়াকফীকাহুমুল্লাহু = সুতরাং তাদের বিপক্ষে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ওয়া হুয়াছ ছামীয়ুল আলীম = আর তিনি ছামী’/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
তারপর যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে তোমাদের ঈমানের অনুরূপ (অর্থাৎ যদি তারাও নবীদের প্রতি তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য ছাড়াই বিশ্বাস করে), তাহলে তারা হিদায়াত পাবে। আর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে নিশ্চয় তারা বিরোধে লিপ্ত। সুতরাং তাদের বিপক্ষে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আর তিনি ছামী’/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
২:১৩৮
সিবগাতাল্লাহি = [তোমরা আরো বলো, ১৩৬ নং আয়াতের ধারাক্রমে] (গ্রহণ করো) সিবগাতুল্লাহ/ আল্লাহর রঙ। ওয়ামান আহসানু মিনাল্লাহি সিবগাতান = আর আল্লাহর রঙের চেয়ে আর কার রঙ উত্তম হতে পারে? ওয়া নাহনু লাহু আবিদূন = আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে দাসত্বকারী।
[তোমরা আরো বলো, ১৩৬ নং আয়াতের ধারাক্রমে] ‘(গ্রহণ করো) সিবগাতুল্লাহ/ আল্লাহর রঙ (কুরআনের রঙ গ্রহণ করার মাধ্যমে)। আর আল্লাহর রঙের চেয়ে আর কার রঙ উত্তম হতে পারে? আর আমরা তাঁরই উদ্দেশ্যে দাসত্বকারী’।
২:১৩৯
ক্বুল = বলো। আতুহাজ্জূনানা = তোমরা কি আমাদের সাথে হুজ্জত/ বিতর্ক করছো? ফীল্লাহ = আল্লাহর সম্বন্ধে। ওয়া হুয়া রব্বুনা ওয়া রব্বুকুম = অথচ তিনি আমাদেরও রব আর তোমাদেরও রব। ওয়া লানা আ’মালুনা = আর আমাদের জন্য আমাদের আমল। ওয়ালাকুম আ’মালুকুম = আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল। ওয়া নাহনু লাহু মুখলিসূন = আর আমরা তাঁরই জন্য খালেস/ খাঁটি (বান্দা)।
বলো, ‘তোমরা কি আমাদের সাথে হুজ্জত/ বিতর্ক করছো আল্লাহর সম্বন্ধে? অথচ তিনি আমাদেরও রব আর তোমাদেরও রব। আর আমাদের জন্য আমাদের আমল আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল। আর আমরা তাঁরই জন্য খালেস/ খাঁটি (বান্দা)।
২:১৪০
আম তাক্বূলূনা = নাকি তোমরা বলো। ইন্না ইবরাহীমা ওয়া ইসমাইলা ওয়া ইসহাকা ওয়া ইয়া’ক্বূবা ওয়াল আসবাতা কানূ হুদান আও নাসারা = নিশ্চয় ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব আর তার বংশধারাসমূহ ছিল হুদান (ইহুদী) বা নাসারা (খৃস্টান)? ক্বুল আআনতুম আ’লামু আমিল্লাহু = বলো, ‘তোমরা বেশি জানো নাকি আল্লাহ বেশি জানেন?’। ওয়া মান আযলামু মিম মান = আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যে। কাতামা শাহাদাতান ইনদাহু মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট থাকা সাক্ষ্য গোপন করে। ওয়া মাল্লাহু বিগাফিলিন আম্মা তা’মালূন = আর আল্লাহ গাফেল/ উদাসীন নন তোমাদের আমলের বিষয়ে।
‘নাকি তোমরা বলো- নিশ্চয় ইবরাহীম, ইসমাইল, ইসহাক, ইয়াকুব আর তার বংশধারাসমূহ ছিল হুদান (= ইহুদী) বা নাসারা (= খৃস্টান)?’ বলো, ‘তোমরা বেশি জানো নাকি আল্লাহ বেশি জানেন?’। আর তার চেয়ে বড় যালিম কে হতে পারে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট থাকা সাক্ষ্য গোপন করে? আর আল্লাহ গাফেল/ উদাসীন নন তোমাদের আমলের বিষয়ে।
২:১৪১
তিলকা উম্মাতুন ক্বাদ খালাত = ঐ উম্মাত অতীত হয়ে গেছে। লাহা মা কাছাবাত = যা সে উপার্জন করেছে তা তার জন্য। ওয়া লাকুম মা কাছাবতুম = আর যা তোমরা উপার্জন করেছো তা তোমাদের জন্য। ওয়া লা তুছআলূনা = আর তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না। আম্মা কানু ইয়া’মালূন = তাদের আমলের বিষয়ে।
ঐ উম্মাত অতীত হয়ে গেছে। যা সে উপার্জন করেছে তা তার জন্য। আর যা তোমরা উপার্জন করেছো তা তোমাদের জন্য। আর তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না তাদের আমলের বিষয়ে।
২:১৪২
ছাইয়াক্বূলুছ ছুফাহাউ মিনান্নাছি = শীঘ্রই বোকা লোকেরা বলবে। মা ওয়াল্লাহুম = কিসে তাদেরকে (= মুসলিমদেরকে) বিমুখ করেছে। আন কিবলাতিহিম = তাদের কিবলা থেকে। আল্লাতী কানূ আলাইহা = যার উপর তারা এতদিন ছিলো। ক্বুল লিল্লাহিল মাশরিকু ওয়াল মাগরিবু = বলো, আল্লাহরই অধিকারভুক্ত পূর্ব পশ্চিম (সকল দিক)। ইয়াহদী = তিনি হিদায়াত করেন। মান ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ইলা সিরাতিম মুসতাকীম = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথে।
শীঘ্রই বোকা লোকেরা বলবে, ‘কিসে তাদেরকে (= মুসলিমদেরকে) বিমুখ করেছে তাদের কিবলা থেকে যার উপর তারা এতদিন ছিলো?’ বলো, ‘আল্লাহরই অধিকারভুক্ত পূর্ব পশ্চিম (সকল দিক)। তিনি হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথে।
২:১৪৩
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। জাআলনাকুম = আমরা তোমাদেরকে প্রতিস্থাপন করেছি। উম্মাতান ওয়াসাতান = উম্মাতান ওয়াসাতান/ মধ্যবর্তী উম্মাহরূপে। লিতাকূনূ সুহাদাআ আলান্নাছি = যেন তোমরা স্বাক্ষী হও মানবজাতির উপর। ওয়া ইয়াকূনার রসূলু আলাইকুম সাহীদা = আর রসূল তোমাদের (অর্থাৎ তোমরা যারা তাঁর সমকালের ব্যক্তি তাদের) উপর স্বাক্ষী হয়। ওয়া মা জাআলনাল ক্বিবলাতাল্লাতী কুনতা আলাইহা = আর আমরা (অধ্যাদেশমূলক ওহীর মাধ্যমে) প্রতিস্থাপন করিনি ঐ কিবলাকে যার উপর তুমি ছিলে। ইল্লা = এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে যে। লিনা’লামা = যেন আমরা প্রকাশ করে দিতে পারি (তাকে)। মান = যে। ইয়াত্তাবিউর রসূলা = রসূলের ইত্তেবা/ অনুসরণ করে। মিম্মান = তার থেকে (পৃথক করে) যে। ইয়ানক্বালিবু আলা আক্বিবাইহি = তার দুগোড়ালীর উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। ওয়া = আর। ইন কানাত = যদিও তা ছিলো। লাকাবীরাতান = অবশ্যই কবীরা/ বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয়। ইল্লা আলাল্লাযীনা হাদাল্লাহু = কিন্তু আল্লাহ যাদেরকে হিদায়াত করেছেন তাদের উপর নয়। ওয়া মা কানাল্লাহু = আর আল্লাহ এমন নন যে। লিউদীআ ঈমানাকুম = তোমাদের ঈমানকে নষ্ট করবেন। ইন্নাল্লাহা বিন্নাছি লারউফুর রহীম = নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি রউফ/ স্নেহশীল, রহীম/ দয়াশীল।
আর এভাবে আমরা তোমাদেরকে প্রতিস্থাপন করেছি উম্মাতান ওয়াসাতান/ মধ্যবর্তী উম্মাহরূপে, যেন তোমরা স্বাক্ষী হও মানবজাতির উপর আর রসূল তোমাদের (অর্থাৎ তোমরা যারা তাঁর সমকালের ব্যক্তি তাদের) উপর স্বাক্ষী হয়। আর আমরা (অধ্যাদেশমূলক ওহীর মাধ্যমে) প্রতিস্থাপন করিনি ঐ কিবলাকে যার উপর তুমি ছিলে, এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে যে, যেন আমরা প্রকাশ করে দিতে পারি (তাকে) যে রসূলের ইত্তেবা/ অনুসরণ করে তার থেকে (পৃথক করে) যে তার দুগোড়ালীর উপর ভর দিয়ে অন্যদিকে ফিরে যায়। আর যদিও তা ছিলো অবশ্যই কবীরা/ বড় ধরনের (কষ্টকর) বিষয় কিন্তু আল্লাহ যাদেরকে হিদায়াত করেছেন তাদের উপর নয়। আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমানকে নষ্ট করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি রউফ/ স্নেহশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:১৪৪
ক্বাদ নারা = নিশ্চয় আমরা দেখেছি। তাক্বাল্লুবা ওয়াজহিকা ফিছ ছামায়ি = তোমার মুখকে আকাশের দিকে বারবার ফিরাতে। ফালানুওয়াল্লিয়ান্নাকা = সুতরাং আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দেবো (অর্থাৎ অধিনায়ক/ মুতাওয়াল্লী করে দেবো)। কিবলাতান তারদাহা = সেই কিবলাতে যা তুমি পছন্দ করবে। ফাওয়াল্লি ওয়াজহাকা সাতরাল মাসজিদিল হারামি = সুতরাং তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও। ওয়া হাইছু মা কুনতুম = আর যেখানেই তোমরা থাকো। ফাওয়াল্লু উজুহাকুম সাতরাহু = উহার দিকে মুখ ফিরাও । ওয়া ইন্নাল্লাযীনা উতুল কিতাবা = আর নিশ্চয় যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে। লাইয়া’লামূনা আন্নাহুল হাক্কু মির রব্বিহিম = তারা জানেই যে, উহাই তাদের রবের পক্ষ থেকে সঠিক। ওয়া মাল্লাহু বিগাফিলীন আম্মা ইয়া’মালুন = আর তাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন নন ।
নিশ্চয় আমরা দেখেছি তোমার মুখকে আকাশের দিকে বারবার ফিরাতে। সুতরাং আমরা তোমাকে ফিরিয়ে দেবো (অর্থাৎ অধিনায়ক/ মুতাওয়াল্লী করে দেবো) সেই কিবলাতে যা তুমি পছন্দ করবে। সুতরাং তুমি মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও। আর যেখানেই তোমরা থাকো উহার দিকে মুখ ফিরাও । আর নিশ্চয় যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তারা জানেই যে, উহাই (অর্থাৎ মসজিদুল হারামকে কিবলা নির্ধারণ) তাদের রবের পক্ষ থেকে সঠিক। আর তাদের আমলের বিষয়ে আল্লাহ গাফিল/ উদাসীন নন।
২:১৪৫
ওয়া লাইন = আর নিশ্চয় যদি। আতাইতা = তুমি এনে দাও। আল্লাযীনা উতুল কিতাবা = যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (তাদেরকে)। বিকুল্লি আয়াতিন = প্রত্যেক আয়াত/ নিদর্শন। মা তাবিউ কিবলাতাকা = তবুও তারা তোমার কিবলার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে না। ওয়া আনতা বিতাবিয়িন কিবলাতাহুম = আর তুমি তাদের কিবলার তাবেয়ী/ অনুসারী নও। ওয়া বা’দুহুম বিতাবিয়ীন কিবলাতা বা’দিন = আর তাদের কোন দলই অন্য দলের কিবলার তাবেয়ী/ অনুসারী নয়। ওয়া লাইনিত্তাবা’তা আহওয়াআহুম = আর নিশ্চয় যদি তুমি তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। মিম বা’দি মা জাআকা মিনাল ইলমি = উহার পরও যা তোমার কাছে এসেছে ইলম (আসমানী জ্ঞান) থেকে। ইন্নাকা ইযাল লামিনায যালিমীন = তাহলে নিশ্চয় তুমি তখন যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
আর নিশ্চয় যদি তুমি এনে দাও যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (তাদের নিকট) প্রত্যেক আয়াত/ নিদর্শন তবুও তারা তোমার কিবলার ইত্তেবা/ অনুসরণ করবে না। আর তুমি তাদের কিবলার তাবেয়ী/ অনুসারী নও। আর তাদের কোন দলই অন্য দলের কিবলার তাবেয়ী/ অনুসারী নয়। আর নিশ্চয় যদি তুমি তাদের হাওয়া/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদের ইত্তেবা/ অনুসরণ করো উহার পরও যা তোমার কাছে এসেছে ইলম (আসমানী জ্ঞান) থেকে, তাহলে নিশ্চয় তুমি তখন যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
২:১৪৬
আল্লাযীনা আতাইনাহুমুল কিতাবা = যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি তারা। ইয়া’রিফূনাহু = উহাকে চিনে। কামা ইয়া’রিফূনা আবনাআহুম = যেমন চিনে তাদের নিজেদের পুত্রদেরকে। ওয়া ইন্না ফারীক্বাম মিনহুম = আর নিশ্চয় তাদের মধ্যকার একটি দল। লাইয়াকতুমূনাল হাক্কা = হক্বকে/ সঠিক তথ্যকে গোপন করে/ গোপন রাখে। ওয়া হুম ইয়া’লামূন = এ সত্ত্বেও যে, তারা (সঠিক বিষয়টি) জানে।
যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি তারা উহাকে (অর্থাৎ মসজিদুল হারামকে, ০২:১৪৪, ০২:১৪৭, ০২:১৪৯) চিনে যেমন চিনে তাদের নিজেদের পুত্রদেরকে। আর নিশ্চয় তাদের মধ্যকার একটি দল হক্বকে/ সঠিক তথ্যকে গোপন করে/ গোপন রাখে এ সত্ত্বেও যে, তারা (সঠিক বিষয়টি) জানে।
২:১৪৭
আল হাক্কু মির রব্বিকা = (মাসজিদুল হারাম কিবলা হওয়ার বিষয়টি) তোমার রবের পক্ষ থেকে সঠিক। ফালা তাকূনান্না মিনাল মুমতারীন = সুতরাং তোমরা সন্দেহ পোষনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
(মাসজিদুল হারাম কিবলা হওয়ার বিষয়টি) তোমার রবের পক্ষ থেকে সঠিক। সুতরাং তোমরা সন্দেহ পোষনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
২:১৪৮
ওয়ালিকুল্লি বিযহাতুন/ ওয়াজহাতুন = আর প্রত্যেকের আছে একেকটি অভিমুখ। হুয়া মুওয়াল্লিহা = যেদিকে সে মুখ ফিরায়। ফাছতাবিক্বুল খায়রাত = সুতরাং তোমরা খায়রাতে/ কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো। আয়না মা তাকূনূ = তোমরা যেখানেই থাকো। ইয়া’তি বিকুমুল্লাহু জামিয়ান = আল্লাহ তোমাদের সকলকে জমায়েত করবেন। ইন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
আর প্রত্যেকের আছে একেকটি অভিমুখ যেদিকে সে মুখ ফিরায়। সুতরাং তোমরা খায়রাতে/ কল্যাণকর কাজে প্রতিযোগিতা করো। তোমরা যেখানেই থাকো আল্লাহ তোমাদের সকলকে জমায়েত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।
২:১৪৯
ওয়া মিন হাইছু খারাজতা = আর যেখান থেকেই তুমি বের হও। ফাওয়াল্লি ওয়াজহাকা সাতরাল মাসজিদিল হারামি = মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও। ওয়া ইন্নাহু লাল হাক্কু মির রব্বিকা = আর নিশ্চয় উহাই তোমার রবের পক্ষ থেকে সঠিক। ওয়া মাল্লাহু বিগাফিলিন আম্মা তা’মালূন = আর আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে গাফিল/ উদাসীন নন।
আর যেখান থেকেই তুমি বের হও মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও। আর নিশ্চয় উহাই (= মাসজিদুল হারাম কিবলা হওয়ার বিষয়টি) তোমার রবের পক্ষ থেকে সঠিক। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে গাফিল/ উদাসীন নন।
২:১৫০
ওয়া মিন হাইছু খারাজতা = আর যেখান থেকেই তুমি (মুহাম্মাদ) বের হও। ফাওয়াল্লি ওয়াজহাকা সাতরাল মাসজিদিল হারামি = মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও। ওয়া হাইছু মা কুনতুম = আর যেখানেই তোমরা থাকো। ফাওয়াল্লূ উজুহাকুম সাতরাহু = উহার দিকে মুখ ফিরাও। লিআল্লা ইয়াকূনা = যেন না থাকে। লিন্নাছি = মানুষের নিকট। আলাইকুম হুজ্জাতা = তোমাদের বিরুদ্ধে কোন হুজ্জাত/ বিতর্কের অবকাশ। ইল্লাল্লাযীনা যলামূ মিনহুম = কিন্তু তাদের মধ্যকার যারা যুলুম করেছে (তারা বিতর্ক করবেই)। ফালা তাখশাও হুম = সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না। ওয়াখশাওনী = (বরং) আমাকেই ভয় করো। ওয়া লিউতিম্মা নি’মাতী আলাইকুম = আর যেন আমি সম্পূর্ণ করি আমার নিয়ামত/ অনুগ্রহ তোমাদের উপর। ওয়া লাআল্লাকুম তাহতাদূন = আর যেন তোমরা হিদায়াত পাও।
আর যেখান থেকেই তুমি (= মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ) বের হও (= তোমার বর্তমান কার্যনির্বাহ যেখান থেকেই কর না কেন), মাসজিদুল হারামের দিকে তোমার মুখ ফিরাও (যেন তা তোমার অধিকারে আসে কারণ সেটাই সাংবিধানিক বিশ্বকেন্দ্র)। আর যেখানেই তোমরা থাকো উহার দিকে মুখ ফিরাও (মসজিদে হারামকে তোমাদের বাস্তব পরিচালনা কেন্দ্ররূপে কার্যকর করার জন্য)। যেন না থাকে মানুষের নিকট তোমাদের বিরুদ্ধে কোন হুজ্জাত/ বিতর্কের অবকাশ। কিন্তু তাদের মধ্যকার যারা যুলুম করেছে (তারা বিতর্ক করবেই)। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, (বরং) আমাকেই ভয় করো। আর যেন আমি সম্পূর্ণ করি আমার নিয়ামত/ অনুগ্রহ তোমাদের উপর। আর যেন তোমরা হিদায়াত পাও।
২:১৫১
কামা = যেমন। আরছালনা ফীকুম রসূলাম মিনকুম = আমি প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্যে একজন রসূল তোমাদের মধ্য থেকে। ইয়াতলূ আলাইকুম আয়াতিনা = যে তিলাওয়াত করে তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ। ওয়া ইউযাক্কিকুম = আর তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে। ওয়া ইউআল্লিমুকুমুল কিতাবা ওয়াল হিকমাতা = আর তোমাদেরকে শিক্ষাদান করে কিতাব ও হিকমাত (কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়)। ওয়া ইউআল্লিমুকুম মা লাম তাকূনু তা’লামূন = আর তোমাদেরকে শিক্ষাদান করে যা তোমরা জানতে না।
যেমন আমি প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্যে একজন রসূল তোমাদের মধ্য থেকে, যে তিলাওয়াত করে তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ। আর তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে। আর তোমাদেরকে শিক্ষাদান করে কিতাব ও হিকমাত (কিতাব ও হিকমাত কুরআনের দুটি বিশেষত্ব প্রকাশক পরিচয়)। আর তোমাদেরকে শিক্ষাদান করে যা তোমরা জানতে না।
২:১৫২
ফাযকুরুনী = তোমরা আমাকে যিকর/ স্মরণ করো। আযকুরুকুম = আমি তোমাদেরকে যিকর/ স্মরণ করবো। ওয়াশকুরুলি = আর তোমরা আমার জন্য শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ওয়া = আর। লা তাকফুরুন = তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না।
তোমরা আমাকে যিকর/ স্মরণ করো আমি তোমাদেরকে যিকর/ স্মরণ করবো। আর তোমরা আমার জন্য শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আর তোমরা কুফর/ অবিশ্বাস/ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো না।
২:১৫৩
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইছতায়িনূ বিস সবরি ওয়াস সালাতি = তোমরা ইসতিয়ান করো/ সাহায্য চাও সবরের ও সালাতের মাধ্যমে। ইন্নাল্লাহা মাআস সবিরীন = নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ইসতিয়ান করো/ সাহায্য চাও সবরের ও সালাতের মাধ্যমে। নিশ্চয় আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন।
২:১৫৪
ওয়া = আর। লা তাক্বূলূ = তোমরা বলো না। লিমাই ইউক্বতালু = তাদের প্রসঙ্গে যারা নিহত হয়েছে। ফী সাবীলিল্লাহি = সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। আমওয়াতান = (বলো না যে, তারা) মৃত। বাল আহইয়াউ = বরং তারা জীবিত। ওয়া লাকিল লা ইয়াশউরুন = কিন্তু তোমরা তা অনুভব করো না।
আর তোমরা বলো না তাদের প্রসঙ্গে যারা নিহত হয়েছে সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, (বলো না যে, তারা) মৃত। বরং তারা জীবিত কিন্তু তোমরা তা অনুভব করো না।
২:১৫৫
ওয়া = আর। লানাবলুওয়ান্নাকুম = অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো। বিসাইয়িন = কিছু বিষয় দ্বারা। মিন = যেমন। আল খাওফি = আশংকা। ওয়াল জুওঈ = আর ক্ষুধা। ওয়া নাক্বসিম = আর ক্ষয়ক্ষতি। মিনাল আমওয়ালি = মাল সামানার। ওয়াল আনফুসি = আর জীবনসমূহের। ওয়াছ ছামারাত = আর ফল ফলাদির। ওয়া বাশশিরীস সবিরীন = আর সবরকারীদেরকে সুসংবাদ দাও।
আর অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো (কাফিরদের কারণে উদ্ভুত) কিছু বিষয় দ্বারা যেমন আশংকা আর ক্ষুধা আর মালসামানা, জীবনসমূহ ও ফলফলাদির ক্ষয়ক্ষতি। আর সবরকারীদেরকে সুসংবাদ দাও।
২:১৫৬
আল্লাযীনা = যারা (এমন যে,)। ইযা আসাবাতহুম মুসীবাতুন = যখন তারা মুসীবতগ্রস্ত হয়। ক্বলূ = তারা বলে। ইন্না লিল্লাহি = নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য। ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন = আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাবো।
যারা (এমন যে,) যখন তারা মুসীবতগ্রস্ত হয়, তারা বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊন’ ‘(নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে ফিরে যাবো)’।
২:১৫৭
উলায়িকা = তারা (ঐসব লোক)। আলাইহিম = যাদের উপর। সালাওয়াতিম মির রব্বিহিম ওয়া রাহমাতু = তাদের রবের পক্ষ থেকে সালাওয়াত/ সালাতসমূহ (= অনুগ্রহ) করা হয় আর রহমত (= দয়া) করা হয়। ওয়া উলায়িকা হুমুল মুহতাদুন = আর তারা মুহতাদুন/ হিদায়াতপ্রাপ্ত।
তারা (ঐসব লোক) যাদের উপর তাদের রবের পক্ষ থেকে সালাওয়াত/ সালাতসমূহ (= অনুগ্রহ) করা হয় আর রহমত (= দয়া) করা হয়। আর তারা মুহতাদুন/ হিদায়াতপ্রাপ্ত।
২:১৫৮
ইন্নাস সাফা ওয়াল মারওয়া = নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া। মিন শায়ায়িরিল্লাহি = আল্লাহর (স্থাপিত) নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। ফামান হাজ্জাল বাইতা আবি’তামারা = সুতরাং যে আল বাইতের (কা’বাঘরের) হজ্জ (কনফারেন্সে অংশগ্রহণ) করে বা উমরা (হজ্জের পূর্ববর্তী কোন মাসে মাসজিদুল হারাম পরিদর্শনমূলক অনুষ্ঠান) করে। ফালা জুনাহা আলাইহি আইঁ ইয়াততাওয়াফা বিহিমা = তার কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই এ বিষয়ে যে, সে ঐ দুইটিতে তাওয়াফ (ঘোরাঘুরি) করবে। ওয়া মান তাতাওওয়া খাইরান = আর যে ইচ্ছাকৃতভাবে খায়ের/ কল্যাণকর কাজ (হজ্জের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন) করে। ফাইন্নাল্লাহা শাকীরুন আলীম = তবে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ শাকীর/ কৃতজ্ঞতার মূল্যায়নকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী/ সর্বজ্ঞ।
নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর (স্থাপিত) নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে আল বাইতের (= কা’বাঘরের) হজ্জ (= কনফারেন্সে অংশগ্রহণ) করে বা উমরা (হজ্জের পূর্ববর্তী কোন মাসে মাসজিদুল হারাম পরিদর্শনমূলক অনুষ্ঠান) করে তার কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই এ বিষয়ে যে, সে ঐ দুইটিতে তাওয়াফ (ঘোরাঘুরি) করবে। আর যে ইচ্ছাকৃতভাবে খায়ের/ কল্যাণকর কাজ (= হজ্জের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন) করে তবে (সে জেনে রাখুক) নিশ্চয় আল্লাহ শাকীর/ কৃতজ্ঞতার মূল্যায়নকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী/ সর্বজ্ঞ।
২:১৫৯
ইন্নাল্লাযীনা ইয়াকতুমূনা = নিশ্চয় যারা গোপন করে। মা আনযালনা = যা আমরা নাযিল করেছি। মিনাল বাইয়িনাতি ওয়াল হুদা = বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ আর হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশরূপে। মিম বা’দি = উহার পরেও। মা বাইয়্যান্নাহু = যা আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। ফিল কিতাবি = কিতাবের মধ্যে। উলায়িকা = তারা (ঐসব লোক)। ইয়ালআনুহুমুল্লাহু = যাদের লা’নত/ অভিশাপ দেন আল্লাহ। ওয়া ইয়ালআনুহুমুল্লায়িনূন = আর আর যাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দেয় লানতকারীগণ।
নিশ্চয় যারা গোপন করে যা আমরা নাযিল করেছি বাইয়িনাত/ স্পষ্ট প্রমাণ আর হুদা/ হিদায়াত/ পথনির্দেশরূপে, উহার পরেও যা আমরা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছি মানবজাতির জন্য কিতাবের মধ্যে। তারা (ঐসব লোক) যাদের লা’নত/ অভিশাপ দেন আল্লাহ আর আর যাদেরকে লা’নত/ অভিশাপ দেয় লানতকারীগণ।
২:১৬০
ইল্লাল্লাযীনা তাবূ = কিন্তু (লা’নত তাদের প্রতি নয়) যারা তাওবা করেছে। ওয়াসলাহূ = আর ইসলাহ করেছে (নিজেদের কর্মধারা সংশোধন করে নিয়েছে)। ওয়া বাইয়্যানূ = আর বয়ান/ স্পষ্টভাবে হুবহু বর্ণনা করেছে। ফাউলায়িকা = তারা (এমন লোক)। আতূবু আলাইহিম = যাদের তাওবা আমি কবুল করি। ওয়া আনতাত তাওয়াবুর রহীম = আর আমি তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, রহীম/ দয়াশীল।
কিন্তু (লা’নত তাদের প্রতি নয়) যারা তাওবা করেছে আর ইসলাহ করেছে (= নিজেদের কর্মধারা সংশোধন করে নিয়েছে) আর (অতীতে যা গোপন করেছে তা) বয়ান/ স্পষ্টভাবে হুবহু বর্ণনা করেছে। তারা (এমন লোক) যাদের তাওবা আমি কবুল করি। আর আমি তাওয়াব/ তাওবা কবুলকারী, রহীম/ দয়াশীল।
২:১৬১
ইন্নাল্লাযীনা কাফারু = নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ওয়া মাতূ = আর মৃত্যুবরণ করেছে। ওয়া হুম কুফফারুন = তারা কাফির থাকা অবস্থায়। উলায়িকা = তারা (এমন লোক)। আলাইহিম = যাদের উপর। লা’নাতুল্লাহি = আল্লাহর লা’নত। ওয়াল মালায়িকাতি = আর ফেরেশতাগণের। ওয়ান্নাছি আজমায়িন = আর সমগ্র মানবজাতির।
নিশ্চয় যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে আর মৃত্যুবরণ করেছে তারা কাফির থাকা অবস্থায় তারা (এমন লোক) যাদের উপর আল্লাহর লা’নত আর (লা’নত) ফেরেশতাগণের আর সমগ্র মানবজাতির।
২:১৬২
খালিদীনা ফীহা = তারা তাতে স্থায়ী হবে। লা ইউখাফফাফু = কমানো হবে না। আনহুমুল আযাব = তাদের থেকে আযাব/ শাস্তি। ওয়া লা হুম ইউনযারুন = আর তাদেরকে অবকাশও দেয়া হবে না।
তারা তাতে স্থায়ী হবে। না কমানো হবে তাদের থেকে আযাব/ শাস্তি আর না তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবে।
২:১৬৩
ওয়া = আর। ইলাহুকুম = তোমাদের ইলাহ। ইলাহুন ওয়াহিদুন = একমাত্র ইলাহ। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। আর রহমানুর রহীম = তিনি আর রহমান/পরম করুণাময়, আর রহীম/ অত্যন্ত দয়াশীল।
আর তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি আর রহমান/পরম করুণাময়, আর রহীম/ অত্যন্ত দয়াশীল।
২:১৬৪
ইন্না = নিশ্চয়। ফী খালকিছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে। ওয়াখতিলাফিল লাইলি ওয়ান নাহারি = রাত ও দিনের আবর্তনে। ওয়াল ফুলকি = আর নৌযানসমূহে। আল্লাতী = যা। তাজরী ফিল বাহরি = নদীসমুদ্রে চলে। বিমা ইয়ানফাউন নাছা = মানুষের জন্য উপকারী জিনিস নিয়ে। ওয়া = আর। মা আনযালাল্লাহু মিনাছ ছামায়ী মিম মায়িন = ঐ পানিতে যা আল্লাহ আকাশ থেকে নাযিল/ বর্ষণ করেন। ফাআহইয়াইয়া বিহিল আরদা বা’দা মাওতিহা = তারপর তা দ্বারা মরা (শুষ্ক) জমিনকে জীবিত (প্রাণবন্ত) করেন। ওয়া = আর। বাছছা ফীহা মিন কুল্লি দাব্বাতিন = তাতে সবরকম প্রাণীর বিস্তার সাধন করেন। ওয়া তাসরীফির রিয়াহি = আর বাতাসের প্রবাহে। ওয়াছ ছাহাবিল মুছাখখারি বায়নাছ ছামায়ী ওয়াল আরদি = আর আকাশ ও জমিনের মধ্যে নিয়োজিত মেঘমালাতে। লা আয়াতিল লি কাওমি ইয়া’ক্বিলূন = অবশ্যই আয়াত (বিশ্ব-আয়াত) আছে আকল/ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন কাওমের জন্য।
নিশ্চয় আকাশসমূহ ও জমিনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের আবর্তনে, আর নৌযানসমূহে যা নদীসমুদ্রে চলে মানুষের জন্য উপকারী জিনিস নিয়ে, আর ঐ পানিতে যা আল্লাহ আকাশ থেকে নাযিল/ বর্ষণ করেন তারপর তা দ্বারা মরা (= শুষ্ক) জমিনকে জীবিত (= প্রাণবন্ত) করেন আর তাতে সবরকম প্রাণীর বিস্তার সাধন করেন, আর বাতাসের প্রবাহে, আর আকাশ ও জমিনের মধ্যে নিয়োজিত মেঘমালাতে অবশ্যই আয়াত (= বিশ্ব-আয়াত) আছে আকলসম্পন্ন/ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন কাওমের জন্য।
২:১৬৫
ওয়া মিনান্নাছি = আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে। মাইঁ ইয়াত্তাখিজু = যে গ্রহণ করে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে (তাঁর)। আনদাদান = সমকক্ষরূপে। ইয়ুহিব্বুনাহুম = তাদেরকে ভালবাসে। কাহুব্বিল্লাহি = আল্লাহকে ভালবাসার মতো। ওয়াল্লাযীনা আমানূ = আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। আশাদ্দু হুব্বাল লিল্লাহি = তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। ওয়া = আর। লাও = যদি। ইয়ারাল্লাযীনা যলামূ = যারা যুলুম করেছে তারা দেখতো। ইয ইয়ারাওনাল আযাবা = যখন তারা আযাব দেখবে (তখনকার অবস্থা)। আন্নাল কুওয়্যাতা লিল্লাহি জামিয়া = নিশ্চয় সকল ক্ষমতা আল্লাহরই। ওয়া আন্নাল্লাহা শাদীদুল আযাব = আর আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর।
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে গ্রহণ করে আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে (তাঁর) সমকক্ষরূপে। তাদেরকে ভালবাসে আল্লাহকে ভালবাসার মতো। আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা আল্লাহর জন্য ভালবাসায় দৃঢ়তর। আর যদি যারা যুলুম করেছে তারা দেখতো যখন তারা আযাব দেখবে (তখনকার অবস্থা)। নিশ্চয় সকল ক্ষমতা আল্লাহরই আর আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর।
২:১৬৬
ইয = যখন। তাবাররাআল্লাযীনাত তুবিউ = যাদের অনুসরণ করা হয় তারা (অনুসৃতগণ) সম্পর্ক ছিন্ন করবে। মিনাল্লাযীনাত তাবাউ = যারা অনুসরণ করে তাদের (অনুসারীগণের) থেকে। ওয়ারাউল আযাবা = আর আযাব দেখবে। ওয়া তাক্বাততয়াত বিহিমুল আসবাব = আর তাদের থেকে সকল আসবাব/ উপায় উপকরণ বিচ্ছিন্ন হবে।
যখন যাদের অনুসরণ করা হয় তারা (= অনুসৃতগণ) সম্পর্ক ছিন্ন করবে যারা অনুসরণ করে তাদের (= অনুসারীগণের) থেকে আর আযাব দেখবে আর তাদের থেকে সকল আসবাব/ উপায় উপকরণ বিচ্ছিন্ন হবে।
২:১৬৭
ওয়া ক্বলাল্লাযীনাত তাবাউ = আর যারা অনুসরণ করতো (অনুসারীগণ) বলবে। লাও আন্না লানা কাররাতান = হায়! যদি আমাদের জন্য একবার (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার সুযোগ হতো। ফানাতাবাররআ মিনহুম = তাহলে আমরাও তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম। কামা তাবাররাউ মিন্না = যেমন আমাদের থেকে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। কাযালিকা = এভাবে। ইউরীহিমুল্লাহু = আল্লাহ তাদেরকে দেখাবেন। আ’মালাহুম = তাদের আমলসমূহ। হাছারাতিন আলাইহিম = তাদের সামনে পরিতাপরূপে। ওয়া = আর। মা হুম বিখারিজীনা = তারা বের হতে পারবে না। মিনান্নারি = (জাহান্নামের) আগুন থেকে।
আর যারা অনুসরণ করতো (= অনুসারীগণ) বলবে হায়! যদি আমাদের জন্য একবার (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার সুযোগ হতো তাহলে আমরাও তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম যেমন আমাদের থেকে তারা সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে দেখাবেন তাদের আমলসমূহ তাদের সামনে পরিতাপরূপে। আর তারা বের হতে পারবে না (জাহান্নামের) আগুন থেকে।
২:১৬৮
ইয়া আইয়ুহান্নাছি = হে মানুষ। কুলূ = তোমরা খাও। মিম্মা = তা থেকে যা আছে। ফিল আরদি = জমিনে। হালালান = বৈধ। তাইয়িবান = পবিত্র। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিউ = তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। খুতুওয়াতিশ শায়তান = শয়তানের পদাংক। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে (শয়তান)। লাকুম = তোমাদের জন্য। আদুউয়ুম মুবীন = সুস্পষ্ট শত্রু।
হে মানুষ, তোমরা খাও তা থেকে যা আছে জমিনে হালাল/ বৈধ, তাইয়েব/ পবিত্র। আর তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না শয়তানের পদাংক। নিশ্চয় সে (= শয়তান) তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু।
২:১৬৯
ইন্নামা = মূলত:। ইয়া’মুরুকুম = সে তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়। বিছ ছূয়ি = নিকৃষ্ট কাজের। ওয়াল ফাহশায়ি = আর অশ্লীল কাজের। ওয়া = আর। আন তাক্বূলূ আলাল্লাহি = আল্লাহর সম্বন্ধে (এমন কথা) বলতে। মা লা তা’লামূন = যা (সঠিক কিনা তা) তোমরা জানো না।
মূলত: সে (= শয়তান) তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় নিকৃষ্ট কাজের আর অশ্লীল কাজের আর আল্লাহর সম্বন্ধে (এমন কথা) বলতে যা (সঠিক কিনা তা) তোমরা জানো না।
২:১৭০
ওয়া ইযা ক্বীলা = যখন বলা হয়। লাহুমুত তাবিউ = তাদের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো। মা আনযালাল্লাহু = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা। ক্বলূ = তারা বলে। বাল = বরং। নাত্তাবিউ = আমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো। মা আলফায়না আলাইহি আবাআনা = যার উপর আমাদের বাপদাদাকে পেয়েছি তা। আওয়ালাও = তবুও কি যদি। কানা আবাউহুম লা ইয়া’ক্বিলূনা সাইয়ান = তাদের বাপদাদা কিছুমাত্রও আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ না করে থাকে। ওয়ালা ইয়াহতাদূন = আর হিদায়াতপ্রাপ্ত না হয়।
যখন বলা হয় তাদের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করো যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তা’। তারা বলে, ‘বরং আমরা ইত্তেবা/ অনুসরণ করবো যার উপর আমাদের বাপদাদাকে পেয়েছি তা’। তবুও কি, যদি তাদের বাপদাদা কিছুমাত্রও আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ না করে থাকে আর হিদায়াতপ্রাপ্ত না হয়?
২:১৭১
ওয়া = আর। মাছালুল্লাযীনা কাফারু = যারা কুফর করেছে তাদের উপমা। কামাছালিল্লাযী = তার উপমার মতো যে (রাখাল)। ইয়ানইক্বু = চিৎকার করে ডাকে। বিমা = উহা (ঐ কথা) দ্বারা যা। লা ইয়াছমাউ = (তার পশু) শুনে না। ইল্লা দুআআন ওয়া নিদাআন = তার হাঁক ডাক ব্যতীত। ছুম্মুন = বধির (যে কানে শুনে না)। বুকমুন = বোবা (যে চোখে দেখে না)। উমইয়ুন = অন্ধ (যে চোখে দেখে না)। ফা = সুতরাং। হুম = তারা। লা ইয়া’ক্বিলূন = আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে না/ করবে না।
আর যারা কুফর করেছে তাদের উপমা তার উপমার মতো যে (রাখাল) চিৎকার করে ডাকে উহা (ঐ কথা) দ্বারা যা (তার পশু) শুনে না, তার হাঁক ডাক ব্যতীত। তারা বধির, বোবা, অন্ধ। সুতরাং তারা আকল/ বিবেক- বুদ্ধি প্রয়োগ করে না/ করবে না।
২:১৭২
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। কুলূ = তোমরা খাও। মিন তাইয়িবাতি = তাইয়েবাত/ পবিত্র (খাবার) থেকে। মা রযাক্বনাকুম = যা আমরা তোমাদেরকে রিযক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছি। ওয়াশকুরূ = আর শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। লিল্লাহি = আল্লাহর জন্য। ইন কুনতুম = যদি তোমরা হও (এমন যে)। ইয়্যাহু = শুধু তাঁরই। তা’বুদূন = তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা খাও তাইয়েবাত/ পবিত্র (খাবার) থেকে, যা আমরা তোমাদেরকে রিযক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছি। আর শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো আল্লাহর জন্য। যদি তোমরা হও (এমন যে) শুধু তাঁরই তোমরা ইবাদাত/ দাসত্ব করো।
২:১৭৩
ইন্নামা = প্রকৃতপক্ষে। হাররামা = তিনি হারাম/ অবৈধ করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। আল মাইতাতু = মৃতজীব। ওয়াদ্দামা = আর রক্ত। ওয়া লাহমাল খিনজীর = আর শুকরের গোশত। ওয়া মা উহিল্লা বিহী লিগাইরিল্লাহি = আর যে খাদ্যের উপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে তা। ফামানিদ তুররা = কিন্তু যে নিরুপায় হয়। গায়রা বাগিন = বিদ্রোহী না হয়ে। ওয়া লা আদিন = আর প্রয়োজনের সীমালংঘন না করে। ফালা ইছমা আলাইহি = তাহলে তার উপর কোন পাপ বর্তায় না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফুরুর রহীমুন = গাফুর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
প্রকৃতপক্ষে তিনি হারাম/ অবৈধ করেছেন তোমাদের উপর মৃতজীব আর রক্ত আর শুকরের গোশত আর যে খাদ্যের উপর আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নেয়া হয়েছে তা। কিন্তু যে নিরুপায় হয় বিদ্রোহী না হয়ে আর প্রয়োজনের সীমালংঘন না করে তাহলে তার উপর কোন পাপ বর্তায় না। নিশ্চয় আল্লাহ গাফুর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:১৭৪
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইয়াকতুমূনা = গোপন করে/ গোপন রাখে। মা আনযালাল্লাহু মিনাল কিতাব= আল্লাহ (তাঁর) কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন তা। ওয়া = আর। ইয়াশতারুনা = ক্রয় করে। বিহি = তার বিনিময়ে। ছামানান ক্বালীলা = তুচ্ছ মূল্য। উলায়িকা = তারা। মা ইয়াকুলুনা = খায় না। ফী বুতূনিহিম = তাদের পেটে। ইল্লান্নারা = আগুন ব্যতীত। ওয়া = আর। লা ইয়ুকাল্লিমুহুমুল্লাহু = আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না। ইয়াওমাল কিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ওয়া = আর। লা ইউযাক্কিহিম = তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীম = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
নিশ্চয় যারা গোপন করে/ গোপন রাখে আল্লাহ (তাঁর) কিতাব থেকে যা নাযিল করেছেন তা, আর ক্রয় করে তার বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য; তারা খায় না তাদের পেটে আগুন ব্যতীত। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না। আর তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
২:১৭৫
উলায়িকা = তারা ঐসব লোক। আল্লাযীনাশতারাউদ দলালাতা = যারা ক্রয় করেছে দলালাত/ বিভ্রান্তিকে। বিল হুদা = হুদার/ হিদায়াতের পরিবর্তে। ওয়াল আযাবা = আর আযাবকে। বিল মাগফিরাতি = মাগফিরাতের পরিবর্তে। ফামা আসবারাহুম = তারপর তারা কতইনা ধৈর্যশীল। আলান্নার = আগুনের উপর/ আগুন সহ্য করতে।
তারা ঐসব লোক যারা ক্রয় করেছে দলালাত/ বিভ্রান্তিকে হুদার/ হিদায়াতের পরিবর্তে আর (ক্রয় করেছে) আযাবকে মাগফিরাতের পরিবর্তে। তারপর তারা কতইনা ধৈর্যশীল আগুনের উপর/ আগুন সহ্য করতে!
২:১৭৬
যালিকা = উহা। বিআন্নাল্লাহা = এজন্য যে আল্লাহ। নাযযালাল কিতাবা = কিতাব নাযিল করেছেন। বিল হাক্কি = সঠিক তথ্যসহ। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাযীনাখতালাফূ = নিশ্চয় যারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে। ফিল কিতাবি = কিতাবের বিষয়ে। লাফী শিকাকিম বায়ীদ = তারা বহুদূর বিরোধে লিপ্ত।
উহা এজন্য যে, আল্লাহ কিতাব নাযিল করেছেন সঠিক তথ্যসহ। আর নিশ্চয় যারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে কিতাবের বিষয়ে, তারা বহুদূর বিরোধে লিপ্ত।
২:১৭৭
লাইছাল বিররা আন = পূণ্য এ নয় যে। তুওয়াল্লূ উজুহাকুম = তোমরা তোমাদের মুখ ফিরাও। কিবালাল মাশরিক্বী ওয়াল মাগরিবী = পূর্বের ও পশ্চিমের কিবলার দিকে। ওয়ালাকিন্নাল বিররা = কিন্তু পূণ্য। মান = সেই অর্জন করে যে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি। ওয়াল মালায়িকাতি = আর মালায়েকার/ ফেরেশতাদের প্রতি। ওয়াল কিতাবি = আর কিতাবের প্রতি। ওয়ান নাবিয়্যূনা = আর নবীদের প্রতি। ওয়া = আর। আতাল মালা আলা হুব্বিহি = তাঁর মহব্বতে তার মহব্বতের মাল দান করে। যাবিল কুরবা = আত্মীয় স্বজনকে। ওয়াল ইয়াতামা = আর ইয়াতীম ছেলেমেয়েদেরকে। ওয়াল মিসকীনা = আর মিসকীনদেরকে। ওয়াবনাছ ছাবীলি = আর ইবনে সাবীলকে/ পথে আটকে পড়া ব্যক্তিকে/ ছিন্নমূলকে। ওয়াছ ছায়িলীনা = আর সাহায্য প্রার্থীদেরকে। ওয়া ফির রিক্বাবি = আর কারো ঘাড়কে (দাসত্ব থেকে) মুক্ত করার ক্ষেত্রে। ওয়া আকামাস সালাতা = আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে। ওয়া আতায যাকাতা = আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে। ওয়া মূফূনা বিআহদিহিম = আর (যারা) তাদের আহদ/ প্রতিজ্ঞা পরিপূরণকারী। ইযা আহাদূ = যখন আহদ/ প্রতিজ্ঞা করে। ওয়াস সবিরীনা = আর সবরকারী। ফিল বা’ছায়ি = অর্থ সংকটে। ওয়াদ দররায়ি= আর দু:খ-ক্লেষে। ওয়া হিয়ান বা’ছি = আর সংগ্রাম সংকটের সময়। উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। আল্লাযীনা সদাকূ = যারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী। ওয়া = আর। উলায়িকা হুমুল মুত্তাকূন = তারাই মুত্তাকী।
পূণ্য এ নয় যে, তোমরা তোমাদের মুখ ফিরাও পূর্বের ও পশ্চিমের কিবলার দিকে। কিন্তু পূণ্য সে-ই অর্জন করে যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরের/ আখিরাত দিবসের প্রতি আর মালায়েকার/ ফেরেশতাদের প্রতি আর কিতাবের প্রতি আর নবীদের প্রতি। আর তাঁর মহব্বতে তার মহব্বতের মাল দান করে আত্মীয় স্বজনকে আর ইয়াতীম ছেলেমেয়েদেরকে আর মিসকীনদেরকে আর ইবনে সাবীলকে/ পথে আটকে পড়া ব্যক্তিকে/ ছিন্নমূলকে আর সাহায্য প্রার্থীদেরকে আর কারো ঘাড়কে (দাসত্ব থেকে) মুক্ত করার ক্ষেত্রে। আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করে। আর (যারা) তাদের আহদ/ প্রতিজ্ঞা পরিপূরণকারী যখন আহদ/ প্রতিজ্ঞা করে। আর সবরকারী অর্থ সংকটে ও দু:খ-ক্লেষে ও সংগ্রাম সংকটের সময়। তারাই ঐসব লোক যারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী আর তারাই মুত্তাকী।
২:১৭৮
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। কুতিবা = বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলাইকুমুল কিসাস = তোমাদের উপর কিসাস (ফৌজদারি মামলায় অপরাধীকে সমানুপাতিক শাস্তিপ্রদান)। ফিল ক্বাতলা = হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে। আল হুররু বিল হুররি = হত্যাকারী স্বাধীন ব্যক্তি হলে তার বদলায় ঐ স্বাধীন ব্যক্তিকেই। ওয়াল আবদু বিল আবদি = আর হত্যাকারী দাস হলে তার বদলায় ঐ দাসকেই। ওয়াল উনছা বিল উনছা = আর হত্যাকারী নারী হলে তার বদলায় ঐ নারীকেই (হত্যা করতে হবে)। ফামান উফিয়া লাহু = তারপর যাকে মাফ করে দেয়া হবে। মিন আখিহি সাইয়ান = তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে কিছুটা। ফাততিবায়ুম বিল মা’রুফি = তাহলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করবে। ওয়া আদাউন ইলাইহি বিইহসান = আর উত্তমভাবে তাকে (দিয়াত/ রক্তপণ) আদায় করে দেবে। যালিকা = উহা। তাখফীফুম মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (শাস্তি) হ্রাসকরন। ওয়া রাহমাতুন = ও রহমত/ দয়া। ফামানি’তাদা = সুতরাং যে সীমালংঘন করবে। বা’দা যালিকা = এরপরও। ফালাহু = তার জন্য আছে। আযাবুন আলীম = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে তোমাদের উপর কিসাস (= ফৌজদারি মামলায় অপরাধীকে সমানুপাতিক শাস্তিপ্রদান), হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে। হত্যাকারী স্বাধীন ব্যক্তি হলে তার বদলায় ঐ স্বাধীন ব্যক্তিকেই আর হত্যাকারী দাস হলে তার বদলায় ঐ দাসকেই আর হত্যাকারী নারী হলে তার বদলায় ঐ নারীকেই (হত্যা করতে হবে)। তারপর যাকে মাফ করে দেয়া হবে তার ভাইয়ের (= নিহতের নিকটতম আত্মীয়দের) পক্ষ থেকে কিছুটা। তাহলে ন্যায়নীতির অনুসরণ করবে আর উত্তমভাবে তাকে (দিয়াত/ রক্তপণ) আদায় করে দেবে। উহা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে (শাস্তি) হ্রাসকরন ও রহমত/ দয়া। সুতরাং যে সীমালংঘন করবে এরপরও, তার জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।
২:১৭৯
ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য আছে। ফিল কিসাসি = কিসাসের মধ্যে। হায়াতুন = হায়াত/ জীবন/ আয়ু। ইয়া উলিল আলবাব = হে উলিল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ। লায়াল্লাকুম তাত্তাকূন = যেন তোমরা মুত্তাকী/ সাবধানী হতে পারো।
আর তোমাদের জন্য আছে কিসাসের মধ্যে হায়াত/ জীবন/ আয়ু, হে উলিল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ, যেন তোমরা মুত্তাকী/ সাবধানী হতে পারো।
২:১৮০
কুতিবা = বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ইযা হাদারা = যখন হাজির/ উপস্থিত হয়। আহাদুকুমুল মাওতা = তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু। ইন = যদি। তারাকা = সে তরক করে/ ছেড়ে যায়। খায়রান = সম্পদ। আল ওয়াসিয়্যাতু = সে ওয়াসিয়্যাত করবে। লিল ওয়ালিদাইনি = পিতামাতার জন্য। ওয়াল আক্বরাবীনা = আর নিকট আত্মীয়দের জন্য। বিল মা’রুফি = ন্যায়নীতির ভিত্তিতে। হাক্কান আলাল মুত্তাকীন = ইহা মুত্তাকীদের উপর দায়িত্ব।
বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে তোমাদের উপর যখন হাজির/ উপস্থিত হয় তোমাদের মধ্যে কারো মৃত্যু যদি সে তরক করে/ ছেড়ে যায় সম্পদ, সে ওয়াসিয়্যাত করবে পিতামাতার জন্য আর নিকট আত্মীয়দের জন্য ন্যায়নীতির ভিত্তিতে। ইহা মুত্তাকীদের উপর দায়িত্ব।
২:১৮১
ফামান = তারপর যে। বাদ্দালাহু = উহাকে বদল/ পরিবর্তন করবে। বা’দা মা ছামিয়াহু = উহা শুনার পর। ফাইন্নামা ইছমুহু = তবে মূলত: উহার পাপ বর্তাবে। আলাল্লাযীনা ইয়ুবাদ্দিলূনাহু = তাদের উপর যারা উহাকে বদল/ পরিবর্তন করবে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ছামীয়ুন আলীম = সবকিছু শুনেন, সবকিছু জানেন।
তারপর যে উহাকে বদল/ পরিবর্তন করবে উহা শুনার পর, তবে মূলত: উহার পাপ বর্তাবে তাদের উপর যারা উহাকে বদল/ পরিবর্তন করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সবকিছু শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সবকিছু জানেন)।
২:১৮২
ফামান খাফা = তবে যে আশংকা করে। মিম মূসিন = ওয়াসিয়্যাতকারীর পক্ষ থেকে। জানাফান = অবিচারের। আও ইছমান = অথবা অন্যায়ের। ফাআসলাহা বায়নাহুম = তারপর সে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বিষয়টি সংশোধন করে দেয়। ফালা ইছমা আলাইহি = তাহলে এতে তার উপর কোন পাপ বর্তাবে না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
তবে যে আশংকা করে ওয়াসিয়্যাতকারীর পক্ষ থেকে অবিচারের অথবা অন্যায়ের তারপর সে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে বিষয়টি সংশোধন করে দেয়, তাহলে এতে তার উপর কোন পাপ বর্তাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:১৮৩
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। কুতিবা = বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলাইকুমুস সিয়ামু = তোমাদের উপর সিয়াম/ আত্মসংযম। কামা = যেরূপে। কুতিবা = বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিকুম = তাদের উপর যারা তোমাদের আগে ছিলো। লাআল্লাকুম তাত্তাকূন = যেন তোমরা মুত্তাকী/ সাবধানী/ আল্লাহভীরু হতে পারো।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে তোমাদের উপর সিয়াম/ আত্মসংযম যেরূপে বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছিলো তাদের উপর যারা তোমাদের আগে ছিলো, যেন তোমরা মুত্তাকী/ সাবধানী/ আল্লাহভীরু হতে পারো।
২:১৮৪
আইয়ামাম মা’দূদাত = (সিয়াম) আইয়ামাম মা’দূদাতে/ গণনাকৃত কিছু দিন। ফামান কানা মিনকুম = তোমাদের মধ্যে যে হবে। মারীদান = অসুস্থ। আও = অথবা। আলা সাফারিন = থাকবে সফরে। ফাইদ্দাতুন = সে ইদ্দাত/ সংখ্যা (পূরণ করবে)। মিন আইয়ামিন উখারা = অন্য দিনসমূহে। ওয়া = আর। আলাল্লাযীনা = তাদের উপর কর্তব্য যারা। ইউতিক্বূনাহু ফিদইয়াতুন = (সক্ষমতার কারণে) ফিদইয়া দিতে বাধ্যতামূলকভাবে দায়বদ্ধ থাকে। তআমু মিসকীন = (ফিদইয়াস্বরূপ) মিসকীনকে খাওয়ানো। ফামান তাতাওয়াআন খায়রান = আর যে ইচ্ছাকৃতভাবে কল্যাণকর কাজ করে। ফাহুয়া খায়রুল লাহু = তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। ওয়া = আর। আন তাসূমূ = সিয়াম পালন করা। খায়রুল্লাকুম = তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর। ইন কুনতুম তা’লামূন = যদি তোমরা জানতে!
(সিয়াম) আইয়ামাম মা’দূদাতে/ গণনাকৃত কিছু দিন। তোমাদের মধ্যে যে হবে অসুস্থ অথবা থাকবে সফরে সে ইদ্দাত/ সংখ্যা (পূরণ করবে) অন্য দিনসমূহে। আর (সিয়াম পালন যাদের জন্য অধিক কষ্টসাধ্য তাদের মধ্য থেকে) তাদের উপর কর্তব্য যারা (সক্ষমতার কারণে) ফিদইয়া দিতে বাধ্যতামূলকভাবে দায়বদ্ধ থাকে, (ফিদইয়াস্বরূপ) মিসকীনকে খাওয়ানো। আর যে ইচ্ছাকৃতভাবে কল্যাণকর কাজ করে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর সিয়াম পালন করা তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণকর। যদি তোমরা জানতে!
২:১৮৫
শাহরু রমাদানাল্লাযী উনযিলা ফীহি = রমাদানের মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে। আল কুরআনু = আল কুরআন। হুদাল্লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য হুদা/ হিদায়াত। ওয়া বাইয়িনাতিম মিনাল হুদা = আর হুদার/ হিদায়াতের বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ। ওয়াল ফুরক্বানি = আর ফুরকান/ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। ফামান সাহিদা মিনকুমুস শাহরু = সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসকে প্রত্যক্ষ করবে। ফালইয়াসুমহু = সে যেন তাতে (মাসব্যাপী) সিয়াম/ আত্মসংযম পালন করে। ওয়া মান কানা = আর যে হবে। মারীদান = অসুস্থ। আও = অথবা। আলা সাফারিন = থাকবে সফরে। ফাইদ্দাতুন = সে ইদ্দাত/ সংখ্যা (পূরণ করবে)। মিন আইয়ামিন উখারা = অন্য দিনসমূহে। ইউরিদুল্লাহু = আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন। বিকুমুল ইউছরা = তোমাদের প্রতি সহজতা আরোপের। ওয়া লা ইউরিদু = আর এরাদা/ ইচ্ছা করেন না। বিকুমুল উছরা = তোমাদের প্রতি কঠোরতা আরোপের। ওয়া লি তুকমিলুল ইদ্দাতা = আর যেন তোমরা ইদ্দাত/ সংখ্যা পূর্ণ করো। ওয়ালি তুকাব্বিরুল্লাহা = আর যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো। আলা মা হাদাকুম = তাঁর হিদায়াত অনুযায়ী। ওয়া লাআল্লাকুম তাশকুরুন = আর যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
রমাদানের মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন যা মানবজাতির জন্য হুদা/ হিদায়াত আর হুদার/ হিদায়াতের বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ আর ফুরকান/ সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাসকে প্রত্যক্ষ করবে সে যেন তাতে (মাসব্যাপী) সিয়াম/ আত্মসংযম পালন করে। আর যে হবে অসুস্থ অথবা থাকবে সফরে সে ইদ্দাত/ সংখ্যা (পূরণ করবে) অন্য দিনসমূহে। আল্লাহ এরাদা/ ইচ্ছা করেন তোমাদের প্রতি সহজতা আরোপের আর এরাদা/ ইচ্ছা করেন না তোমাদের প্রতি কঠোরতা আরোপের। আর যেন তোমরা ইদ্দাত/ সংখ্যা পূর্ণ করো। আর যেন তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো তাঁর হিদায়াত অনুযায়ী। আর যেন তোমরা শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।
২:১৮৬
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ছাআলাকা = তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। ইবাদী = আমার দাসগণ। আন্নী = আমার সম্পর্কে। ফাইন্নী = (আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জিজ্ঞাসার জবাব হচ্ছে) নিশ্চয় আমি। ক্বারীবুন = নিকটেই আছি। উজিবু = আমি জবাব দিই। দাওয়াতাদ্দায়ী = দায়ীর দাওয়াতে/ প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায়। ইযা দাআনি = যখন সে আমাকে ডাকে। ফালইয়াছতাজিবূ = সুতরাং তারা জবাব দিক। লিই = আমার আহবানে। ওয়াল ইউ’মিনূ = আর তারা ঈমান/ বিশ্বাস করুক। বী = আমার প্রতি। লাআল্লাহুম ইয়ারশুদূন = যেন তারা সৎপথে চলতে পারে।
আর যখন তোমাকে জিজ্ঞাসা করে আমার দাসগণ আমার সম্পর্কে; (আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জিজ্ঞাসার জবাব হচ্ছে) নিশ্চয় আমি নিকটেই আছি। আমি জবাব দিই দায়ীর দাওয়াতে/ প্রার্থনাকারীর প্রার্থনায়, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা জবাব দিক আমার আহবানে আর তারা ঈমান/ বিশ্বাস করুক আমার প্রতি, যেন তারা সৎপথে চলতে পারে।
২:১৮৭
উহিল্লা = হালাল করা হয়েছে। লাকুম = তোমাদের জন্য। লাইলাতাছ ছিয়ামি = সিয়ামের রাতে। আর রাফাসু ইলা নিছায়িকুম = তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি আবেগ উদ্দীপক ঘনিষ্ঠতা। হুন্না = তারা। লিবাছুল লাকুম = তোমাদের লিবাস/ পোশাক। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। লিবাছুল্লাহুন্না = তাদের লিবাস/ পোশাক। আলিমাল্লাহু = আল্লাহ জানেন। আন্নাকুম কুনতুম তাখতানূনা = যে, তোমরা খিয়ানত করেছো। আনফুছাকুম = তোমাদের নিজেদের প্রতি। ফাতাবা আলাইকুম = সুতরাং তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন। ওয়া আফা আনকুম = আর তোমাদেরকে মাফ করেছেন। ফালআনা = সুতরাং এ পর্যায়ে। বাশীরুহুন্না = তোমরা তাদের সাথে বিশেষ খোশালাপ ও দাম্পত্য সুখকর মিলন (সহবাস) করো। ওয়াবতাগূ = আর তোমরা তালাশ করো। মা কাতাবাল্লাহু লাকুম = যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন। ওয়া কুলূ = আর তোমরা খাও। ওয়াশরাবূ = ও পান করো। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াতাবাইয়্যানা = সুস্পষ্ট হয়। লাকুম = তোমাদের জন্য। আল খাইতুল আবইয়াদু = সাদা আভা। মিনাল খাইতিল আছওয়াদি = কাল আভা থেকে। মিনাল ফাজরি = (যে সাদা আভা) ফজরের অন্তর্ভুক্ত। ছুম্মা = তারপর। আতিম্মুস সিয়ামা = তোমরা সিয়াম/ আত্মসংযম পূর্ণ করো। ইলাল লাইলি = রাত পর্যন্ত। ওয়ালা তুবাশিরূহুন্না = আর তোমরা তাদের সাথে বিশেষ খোশালাপ ও দাম্পত্য সুখকর মিলন (সহবাস) করো না। ওয়া আনতুম আকিফূনা ফিল মাছাজিদ = তোমরা মসজিদে আকিফুন/ এতেকাফরত (= আত্মনিয়োজিত থাকা) অবস্থায়। তিলকা = উহা। হুদুদুল্লাহি = হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ। ফা লা তাক্বরাবূহা = সুতরাং তোমরা উহার (লংঘনের) নিকটবর্তী হয়ো না। কাযালিকা = এভাবে। ইয়ুবাইয়্যিনুল্লাহি = আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহ। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। লাআল্লাহুম ইয়াত্তাকূন = যেন তারা মুত্তাকী/ সাবধানী হতে পারে।
হালাল করা হয়েছে তোমাদের জন্য সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের প্রতি আবেগ উদ্দীপক ঘনিষ্ঠতা। তারা তোমাদের লিবাস/ পোশাক আর তোমরা তাদের লিবাস/ পোশাক। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা খিয়ানত করেছো তোমাদের নিজেদের প্রতি। সুতরাং তিনি তোমাদের তাওবা কবুল করেছেন আর তোমাদেরকে মাফ করেছেন। সুতরাং এ পর্যায়ে তোমরা তাদের সাথে বিশেষ খোশালাপ ও দাম্পত্য সুখকর মিলন (সহবাস) করো করো আর তোমরা তালাশ করো যা আল্লাহ তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন। আর তোমরা খাও ও পান করো যতক্ষণ না সুস্পষ্ট হয় তোমাদের জন্য সাদা আভা কাল আভা থেকে (যে সাদা আভা) ফজরের অন্তর্ভুক্ত। তারপর তোমরা সিয়াম/ আত্মসংযম পূর্ণ করো রাত পর্যন্ত। আর তোমরা তাদের সাথে বিশেষ খোশালাপ ও দাম্পত্য সুখকর মিলন (সহবাস) করো না তোমরা মসজিদে আকিফুন/ এতেকাফরত (= আত্মনিয়োজিত থাকা) অবস্থায়। উহা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ, সুতরাং তোমরা উহার (লংঘনের) নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তাঁর আয়াতসমূহ মানবজাতির জন্য যেন তারা মুত্তাকী/ সাবধানী হতে পারে।
২:১৮৮
ওয়া লা তা’কুলূ = আর তোমরা খেয়ো না। আমওয়ালাকুম বায়নাকুম = তোমাদের নিজেদের মধ্যে একে অন্যের মালসমূহ। বিল বাতিলি = বাতিল পন্থায়/ অন্যায়ভাবে। ওয়া = আর। তুদলূবিহা = উহা পেশ করো না। ইলাল হুককামি = সিদ্ধান্তকারী কর্তৃপক্ষ ও বিচারকদের নিকট। লিতা’কুলূ = যেন তোমরা খেতে পারো। ফারীক্বাম মিন আমওয়ালিন্নাছি = মানুষের মালসম্পদের কিছু অংশ। বিল ইছমি = পাপাচারের মাধ্যমে। ওয়া আনতুম তা’লামুন = এ সত্ত্বেও যে, তোমরা জানো।
আর তোমরা খেয়ো না তোমাদের নিজেদের মধ্যে একে অন্যের মালসমূহ বাতিল পন্থায়/ অন্যায়ভাবে আর উহা পেশ করো না সিদ্ধান্তকারী কর্তৃপক্ষ ও বিচারকদের নিকট যেন তোমরা খেতে পারো মানুষের মালসম্পদের কিছু অংশ পাপাচারের মাধ্যমে এ সত্ত্বেও যে, তোমরা জানো।
২:১৮৯
ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিল আহিল্লাতি = আহিল্লা/ হেলালসমূহ/ সরু চাঁদসমূহ সম্পর্কে। ক্বুল = বলো। হিয়া = উহা। মাওয়াক্বিতু = মাওয়াকিত/ ওয়াক্ত নির্ধারণের উপায়মূলক তিথিসমূহ। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। ওয়াল হাজ্জি = আর হজ্জের জন্য। ওয়া লাইছাল বিররা বি আন = আর পূন্য কাজ এ নয় যে। তা’তুল বুয়ূতা = তোমরা ঘরসমূহে আসো। মিন যুহুরিহা = উহার পিছনদিক থেকে। ওয়ালাকিন্নাল বিররা = কিন্তু পূণ্য কাজ সে-ই করে। মানিত তাক্বা = যে তাকওয়া অবলম্বন করে। ওয়া = আর। উতূল বুয়ূতা = তোমরা এসো ঘরসমূহে। মিন আবওয়াবিহা = উহার দরজাসমূহ দিয়ে। ওয়াত তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। লাআল্লাকুম তুফলিহুন = যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে আহিল্লা/ হেলালসমূহ/ সরু চাঁদসমূহ সম্পর্কে (অর্থাৎ মাসের শুরুতে ও শেষে মাসসমূহ সরু হওয়ার কারণ সম্পর্কে)। বলো, উহা মাওয়াকিত/ ওয়াক্ত নির্ধারণের উপায়মূক তিথিসমূহ মানবজাতির জন্য আর হজ্জের জন্য। আর পূণ্য কাজ এ নয় যে, তোমরা ঘরসমূহে আসো উহার পিছনদিক থেকে কিন্তু পূণ্য কাজ সে-ই করে যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা এসো ঘরসমূহে উহার দরজাসমূহ দিয়ে আর আল্লাহকে ভয় করো, যেন তোমরা ফালাহ/ সফলতা লাভ করতে পারো।
২:১৯০
ওয়া ক্বাতিলূ ফী সাবিলিল্লাহি = আর তোমরা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। আল্লাযীনা ইউক্বতিলূনাকুম = তাদের বিরুদ্ধে যারা কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে তোমাদের বিরুদ্ধে। ওয়া লা তা’তাদূ = আর সীমালংঘন করো না। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল মু’তাদীন = ভালবাসেন না সীমালংঘনকারীদেরকে।
আর তোমরা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। তাদের বিরুদ্ধে যারা কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে তোমাদের বিরুদ্ধে। আর সীমালংঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন না সীমালংঘনকারীদেরকে।
২:১৯১
ওয়াক্বতুলূহুম = আর তাদেরকে কতল/ হত্যা করো। হাইছু = যেখানেই। ছাক্বিফতুমূহুম = তোমরা তাদের নাগাল পাও। ওয়া আখরিজূহুম = আর তোমরা তাদেরকে বের করে দাও। মিন হাইছু আখরাজূকুম = যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে। ওয়াল ফিতনাতু = আর ফিতনা (ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে নির্যাতন)। আশাদ্দু মিনাল কাতলি = কতলের/ হত্যার চেয়ে কঠিনতর (অপরাধ)। ওয়ালা তুক্বাতিলূহুম = আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো না। ইনদাল মাসজিদিল হারামি = আল মাসজিদুল হারামের কাছে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউক্বাতিলূকুম ফীহি = তারা উহাতে তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে। ফাইন ক্বাতালূকুম = সুতরাং যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে। ফাক্বতুলূহুম = তাহলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করো। কাযালিকা = এরূপই। জাযাউল কাফিরীন = কাফিরদের প্রতিফল।
আর (যুদ্ধ পরিস্থিতিতে) তাদেরকে কতল/ হত্যা করো (যুদ্ধক্ষেত্রের) যেখানেই তোমরা তাদের নাগাল পাও। আর তোমরা তাদেরকে বের করে দাও যেখান থেকে তারা তোমাদেরকে বের করে দিয়েছে। আর ফিতনা (= ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে নির্যাতন) কতলের/ হত্যার চেয়ে কঠিনতর/ গুরুতর (অপরাধ)। আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো না আল মাসজিদুল হারামের কাছে যতক্ষণ না তারা উহাতে তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে। সুতরাং যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করে তাহলে তোমরা তাদেরকে হত্যা করো। (অর্থাৎ তাদেরকে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিহত করো এবং আন্তর্জাতিক আদালত প্রতিষ্ঠা করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করো)। এরূপই কাফিরদের (যুদ্ধের নৈতিক বিধি প্রত্যাখ্যানকারীদের) প্রতিফল।
২:১৯২
ফাইনিন তাহাও = তারপর যদি তারা বিরত হয়। ফাইন্নাল্লাহ = তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ। গাফুরুর রহীম = গফুর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ গফুর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:১৯৩
ওয়া ক্বাতিলূহুম = আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো। হাত্তা = যতক্ষণ না। লা তাকূনা ফিতনাতুন = ফিতনার (= ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে করা নির্যাতনের) অবসান হয়। ওয়া ইয়াকূনাদ দীনু লিল্লাহি = আর দীন হয় শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য (= আল্লাহর প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অবকাশসম্পন্ন ও আল্লাহর প্রদত্ত ব্যবস্থার আওতায় নিয়ন্ত্রিত)। ফাইনিন তাহাও = তারপর যদি তারা বিরত হয়। ফালা উদওয়ানা = তাহলে আর কোন বাড়াবাড়ি নয়। ইল্লা আলায যলিমীন = যালিমদের উপর ছাড়া।
আর তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করো যতক্ষণ না ফিতনার (= ধর্মীয় স্বাধীনতা হরণ এবং ভিন্ন ধর্ম অবলম্বনের কারণে করা নির্যাতনের) অবসান হয় আর দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য (= আল্লাহর প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অবকাশসম্পন্ন ও আল্লাহর প্রদত্ত ব্যবস্থার আওতায় নিয়ন্ত্রিত) (০২:২৫৬, ২২:৪০)। তারপর যদি তারা বিরত হয় তাহলে আর কোন বাড়াবাড়ি নয়, যালিমদের উপর ছাড়া।
২:১৯৪
আশ শাহরুল হারামু বিশ শাহরিল হারামি = হারাম মাসের ক্ষেত্রে ঐ হারাম মাস (কোন হারাম মাসে বাড়াবাড়ি করা হলে ঐ হারাম মাসেই উহার জবাব দেয়া হবে)। ওয়াল হুরুমাতু কিসাসুন = আর সমস্ত হুরুমাত/ মর্যাদাপূর্ণ নিষিদ্ধ বিষয় (লংঘনের) কিসাস/ সমান বদলা রয়েছে। ফামানি’তাদা = সুতরাং যে বাড়াবাড়ি করে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ফা’তাদূ = তোমরাও বাড়াবাড়ি করো। আলাইহি = তার উপর। বিমিছলি মা’তাদা আলাইকুম = যেরূপ তারা বাড়াবাড়ি করেছে তোমাদের উপর। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া’লামূ = আর জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা মায়াল মুত্তাকীন = নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে থাকেন।
হারাম মাসের বদলায় ঐ হারাম মাস (= কোন হারাম মাসে বাড়াবাড়ি করা হলে ঐ হারাম মাসেই উহার জবাব দেয়া হবে)। আর সমস্ত হুরুমাত/ মর্যাদাপূর্ণ নিষিদ্ধ বিষয় (লংঘনের) কিসাস/ সমান বদলা রয়েছে। সুতরাং যে বাড়াবাড়ি করে তোমাদের উপর তোমরাও বাড়াবাড়ি করো তার উপর যেরূপ তারা বাড়াবাড়ি করেছে তোমাদের উপর। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে থাকেন।
২:১৯৫
ওয়া আনফিকূ ফী সাবিলিল্লাহি = আর তোমরা ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে ব্যয় করো। ওয়াল তুলক্বূ = আর তোমরা নিক্ষেপ করো না। বিআইদীকুম = তোমাদের নিজেদের হাতে। ইলাত তাহলুকাতি = হালাকের/ ধ্বংসের দিকে। ওয়া আহছিনূ = আর ইহসান/ উত্তম স্তরে কর্তব্য পালন করো। ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুহসিনীন = নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম স্তরে কর্তব্য পালনকারীদেরকে।
আর তোমরা ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে ব্যয় করো আর তোমরা নিক্ষেপ করো না (তোমাদের নিজেদেরকে) তোমাদের নিজেদের হাতে হালাকের/ ধ্বংসের দিকে। আর ইহসান/ উত্তম স্তরে কর্তব্য পালন করো/ উত্তম আচরণ করো। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন মুহসিনদেরকে/ উত্তম স্তরে কর্তব্য পালনকারীদেরকে।
২:১৯৬
ওয়া আতিম্মুল হাজ্জা ওয়াল উমরাতা = আর তোমরা পূর্ণ করো হজ্জ (কনফারেন্সে অংশগ্রহণ) ও উমরা (হজ্জের দিনগুলো ব্যতীত অন্য দিনে মাসজিদুল হারাম পরিদর্শন)। লিল্লাহি = আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই জন্য। ফাইন = তবে যদি। উহসিরতুম = তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও। ফামাছ তাইছারা মিনাল হাদয়ী = তাহলে (তোমাদের জন্য কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ু (হাদিয়া) হিসেবে যা-ই সহজ হয় (তা-ই যথেষ্ট)। ওয়া লা তাহলিক্বূ রুউছাকুম = আর তোমরা মাথামুণ্ডন করো না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াবলুগাল হাদইয়ু মাহিল্লাহু = হাদইয়ু (হাদিয়া) যথাস্থানে পৌঁছে। ফামান কানা মিনকুম = তোমাদের মধ্যে যে হয়। মারীদাতান = অসুস্থ। আও বিহী আযাম মির র’ছিহী = অথবা তার প্রতি (আরোপিত) হয় কোন কষ্ট তার মাথা থেকে। ফাফিদইয়াতুন = তাহলে তার ফিদইয়া হবে। মিন সিয়ামিন = সিয়াম পালন করা। আও সদাকাতিন = অথবা সদাকা দেয়া। আও নুসুকিন = অথবা নুসুক করা (= )। ফাইযা আমিনতুম = অন্যদিকে যখন তোমরা নিরাপদ থাক। ফামান = তখন যে। তামাত্তাআ = তামাত্তু করে/ ফায়দা নেয়। বিল উমরাতি = উমরার দ্বারা। ইলাল হাজ্জি = হজ্জ পর্যন্ত। ফামাছতাইছারা মিনাল হাদয়ী = তাহলে (তার জন্য কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ু (হাদিয়া) হিসেবে যা-ই সহজ হয় (তা-ই যথেষ্ট)। ফামাল লাম ইয়াজিদ = পক্ষান্তরে যে তা পায় না। ফাসিয়ামু = তাহলে (দায়িত্ব হচ্ছে) সিয়াম পালন করা। ছালাছাতি আইয়ামিন = তিনদিন। ফিল হাজ্জি = হজ্জের মধ্যে। ওয়া সাবাআতিন = আর সাতদিন। ইযা রজা’তুম = যখন তোমরা ফিরে যাবে তখন। তিলকা = (তার ক্ষেত্রে) এভাবেই হবে। আশারাতুন কামিলাতুন = পূর্ণ দশ। যালিকা লিমান = এ অবকাশ তার জন্য। লাম ইয়াকুন আহলুহু = যার পরিবার পরিজন নয়। হাদিরিল মাসজিদিল হারাম = মাসজিদুল হারামের উপস্থিতি (= হারাম এলাকার বাসিন্দা)। ওয়াত্তাকুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া’লামূ = আর জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। শাদীদুল ইকাব = শাস্তিদানে কঠোর।
আর তোমরা পূর্ণ করো হজ্জ (কনফারেন্সে অংশগ্রহণ) ও উমরা (হজ্জের দিনগুলো ব্যতীত অন্য দিনে মাসজিদুল হারাম পরিদর্শন) আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই। তবে যদি তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হও তাহলে (তোমাদের জন্য কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ু (হাদিয়া) হিসেবে যা-ই সহজ হয় (তা-ই যথেষ্ট)। আর তোমরা তাহলিক/ মাথা মুণ্ডন করো না যতক্ষণ না হাদইয়ু (হাদিয়া) যথাস্থানে পৌঁছে। তোমাদের মধ্যে যে হয় অসুস্থ অথবা তার প্রতি (আরোপিত) হয় কোন কষ্ট তার মাথা থেকে, তাহলে তার ফিদইয়া হবে সিয়াম পালন করা অথবা সদাকা দেয়া অথবা নুসুক করা (= সমাজ সংহতিমূলক অনুশীলনীয় রীতিনীতি পরিপালন করা)। অন্যদিকে যখন তোমরা নিরাপদ থাক, তখন যে তামাত্তু করে/ ফায়দা নেয় উমরার দ্বারা হজ্জ পর্যন্ত, তাহলে (তার জন্য কা’বায় পৌঁছানোর) হাদইয়ু (হাদিয়া) হিসেবে যা-ই সহজ হয় (তা-ই যথেষ্ট)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা পায় না (অর্থাৎ হাদিয়া পায় না বা হাদিয়াতে অংশগ্রহণের সামর্থ্য পায় না), তাহলে (দায়িত্ব হচ্ছে) সিয়াম পালন করা তিনদিন হজ্জের মধ্যে আর সাতদিন যখন তোমরা ফিরে যাবে তখন। (তার ক্ষেত্রে) এভাবেই হবে পূর্ণ দশ। এ অবকাশ তার জন্য যার পরিবার পরিজন নয় মাসজিদুল হারামের উপস্থিতি (= হারাম এলাকার বাসিন্দা)। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।
২:১৯৭
আল হাজ্জু আশহুরুম মা’লুমাতুন = হজ্জ সুপরিজ্ঞাত মাসসমূহে। ফামান ফারাদা ফীহিন্নাল হাজ্জা = সুতরাং যে ঐ মাসগুলোর মধ্যে (কোনো মাসে) হজ্জ করা স্থির করে। ফালা রফাছা = সে আবেগ উদ্দীপক দাম্পত্য ঘনিষ্ঠতা করবে না। ওয়া লা ফুছুকা = আর ফিসক/ বিধি লংঘন ও দুষ্কর্ম করবে না। ওয়া লা জিদালা = আর জিদাল/ তর্ক/ বাক-বিতণ্ডা করবে না। ফিল হাজ্জি = হজ্জের মধ্যে। ওয়া মা তাফআলূ মিন খাইরিন = আর তোমরা যা কিছু কল্যাণকর কাজ করো। ইয়া’লামহুল্লাহু = আল্লাহ তা জানেন। ওয়া তাযাওয়াদূ = আর তোমরা পাথেয় নাও। ফাইন্না = তবে নিশ্চয়। খায়রায যাদিত তাকওয়া = তাকওয়াই উত্তম পাথেয়। ওয়াত্তাকূনী = আর তোমরা আমাকেই ভয় করো। ইয়া উলিল আলবাব = হে উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ!
হজ্জ সুপরিজ্ঞাত মাসসমূহে। সুতরাং যে ঐ মাসগুলোর মধ্যে (কোনো মাসে) হজ্জ করা স্থির করে সে আবেগ উদ্দীপক দাম্পত্য ঘনিষ্ঠতা করবে না আর ফিসক/ বিধি লংঘন ও দুষ্কর্ম করবে না আর জিদাল/ তর্ক/ বাক-বিতণ্ডা করবে না হজ্জের মধ্যে। আর তোমরা যা কিছু কল্যাণকর কাজ করো আল্লাহ তা জানেন। আর তোমরা পাথেয় নাও। তবে নিশ্চয় তাকওয়াই উত্তম পাথেয়। আর তোমরা আমাকেই ভয় করো হে উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ!
২:১৯৮
লাইছা আলাইকুম জুনাহুন = তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই। আন = এ বিষয়ে যে। তাবতাগূ = তোমরা তালাশ করবে। ফাদলাম মিন রব্বিহিম = ফদল/ ফযল/ অনুগ্রহ তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে। ফাইযা আফাদতুম = তারপর যখন তোমরা যাত্রা কর। মিন আরাফাতিন = আরাফাত থেকে। ফাযকুরুল্লাহা = তখন আল্লাহর যিকর/ স্মরণ করো। ইনদাল মাশআরিল হারাম = আল মাশআরিল হারামের কাছে। ওয়াযকুরুহু = আর তাঁর যিকর/ স্মরণ করো। কামা হাদাকুম = যেভাবে তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেছেন। ওয়া ইন = যদিও। কুনতুম = তোমরা ছিলে। মিন ক্বাবলিহী = উহার পূর্বে (হিদায়াত করার পূর্বে)। লামিনাদ দল্লীন = দল্লীন/ বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত।
তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই এ বিষয়ে যে, তোমরা তালাশ করবে ফদল/ ফযল/ অনুগ্রহ তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে (অর্থাৎ হজ্জের সময় অর্থনৈতিক উপার্জনে গুনাহ নেই)। তারপর যখন তোমরা যাত্রা কর আরাফাত থেকে (আল মাসজিদুল হারামের দিকে) তখন আল্লাহর যিকর/ স্মরণ করো আল মাশআরিল হারামের কাছে। আর তাঁর যিকর/ স্মরণ করো যেভাবে তিনি তোমাদেরকে হিদায়াত করেছেন, যদিও তোমরা ছিলে উহার আগে (হিদায়াত করার আগে) দল্লীন/ বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত।
২:১৯৯
ছুম্মা = আবার উল্লেখ্য। আফিদূ = তোমরা যাত্রা কর। মিন হাইছু = সেখান থেকে, যেখান থেকে। আফাদান্নাছি = যাত্রা করে (হজ্জযাত্রী অন্য) মানুষেরা। ওয়াছতাগফিরুল্লাহা = আর আল্লাহর কাছ মাগফিরাত/ মাফ চাও। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
আবার উল্লেখ্য, তোমরা (আল মাসজিদুল হারামর দিকে) যাত্রা কর সেখান থেকে, যেখান থেকে যাত্রা করে (হজ্জযাত্রী অন্য) মানুষেরা (= তোমরা সর্বসাধারণ হজ্জকারীদের সাথে সংহতি বজায় রেখে আরাফাত থেকেই যাত্রা করো)। আর আল্লাহর কাছ মাগফিরাত/ মাফ চাও। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:২০০
ফাইযা = সুতরাং যখন। ক্বদাইতুম = তোমরা কাযা/ সমাপ্ত করবে। মানাছিকাকুম = তোমাদের মানাসিক (= )। ফাযকুরুল্লাহা = তখন আল্লাহর যিকর/ স্মরণ করো। কাযিকরাকুম আবাআকুম = তোমাদের বাপদাদার যিকর/ স্মরণ করার মতো। আও = অথবা। আশাদ্দু যিকরান = তার চেয়ে দৃঢ়তর যিকর/ স্মরণ। ফামিন্নাছি = আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে। মাইঁ ইয়াক্বুলু = যে বলে। রব্বানা = আমাদের প্রতিপালক। আতিনা = আমাদেরকে দাও। ফিদ দুনিয়া = দুনিয়াতেই। ওয়া = আর। মা লাহু = তার জন্য নেই। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। মিন খালাক = পুরস্কারের কোন অংশ।
সুতরাং যখন তোমরা কাযা/ সমাপ্ত করবে তোমাদের মানাসিক (= হজ্জ উপলক্ষ্যে পশু উৎসর্গসহ সংহতিমূলক রীতিনীতি), তখন (হজ্জের শেষ কর্মসূচী হিসেবে আল মাসজিদুল হারামের কাছে) আল্লাহর যিকর/ স্মরণ করো তোমাদের বাপদাদার যিকর/ স্মরণ করার মতো অথবা তার চেয়ে দৃঢ়তর যিকর/ স্মরণ। আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, “আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দাও দুনিয়াতেই”। আর তার জন্য নেই আখিরাতে পুরস্কারের কোন অংশ।
২:২০১
ওয়া মিনহুম = আর তাদের মধ্যে এমনও আছে। মাইঁ ইয়াক্বুলূ = যে বলে। রব্বানা = আমাদের প্রতিপালক। আতিনা = আমাদেরকে দাও। ফিদ দুনইয়া = দুনিয়াতে। হাছানাতান = উত্তম উপকরন। ওয়া = আর। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। হাছানাতান = উত্তম উপকরন। ওয়া = আর। ক্বিনা = আমাদেরকে বাঁচাও। আযাবান নার = আযাবুন নার/ (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি থেকে।
আর তাদের মধ্যে এমনও আছে যে বলে, “আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে দাও দুনিয়াতে, হাছানাত/ কল্যাণ আর আখিরাতে হাছানাত/ কল্যাণ আর আমাদেরকে বাঁচাও আযাবুন নার/ (জাহান্নামের) আগুনের শাস্তি থেকে”।
২:২০২
উলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। লাহুম = যাদের জন্য আছে। নাসীবুম মিম্মা কাছাবূ = যা (পূণ্য) তারা উপার্জন করেছে তার নসীব/ অংশ। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ছারীউল হিসাব = হিসাবকরনে দ্রুততম।
তারাই ঐসব লোক যাদের জন্য আছে যা (পূণ্য) তারা উপার্জন করেছে তার নসীব/ প্রাপ্য অংশ। আর আল্লাহ হিসাবকরনে দ্রুততম।
২:২০৩
ওয়াযকুরুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহর যিকর/ স্মরণ করো। ফী আইয়ামিম মা’দূদাতিন = আইয়ামাম মা’দূদাতে/ গণনাকৃত দিনসমূহে। ফামান তাআজ্জালা = তবে যে তাড়াতাড়ি করে (নিজ দেশে ফিরে যায়)। ফিল ইয়াওমাইনি = দুই দিনে। ফালা ইছমা আলাইহি = তার উপর কোন পাপ বর্তাবে না। ওয়া মান তাআখখারা = আর যে বিলম্ব করে। ফালা ইছমা আলাইহি = তার উপরও কোন পাপ বর্তাবে না। লিমানিত তাক্বা = এটা তার জন্য যে তাকওয়া অবলম্বন করে। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া’লামূ আন্নাকুম = আর জেনে রাখো যে, তোমাদেরকে। ইলাইহি তুহশারুন = তাঁর দিকেই হাশর/ সমবেত করা হবে।
আর (হজ্জের শেষ কর্মসূচী হিসেবে আল মাসজিদুল হারামের কাছে) তোমরা আল্লাহর যিকর/ স্মরণ করো আইয়ামাম মা’দূদাতে/ গণনাকৃত দিনসমূহে। তবে যে তাড়াতাড়ি করে (নিজ দেশে ফিরে যায়) দুই দিনে, তার উপর কোন পাপ বর্তাবে না আর যে বিলম্ব করে তার উপরও কোন পাপ বর্তাবে না, এটা তার জন্য যে তাকওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রাখো যে, তোমাদেরকে তাঁর দিকেই হাশর/ সমবেত করা হবে।
২:২০৪
ওয়া মিনান্নাছি = আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে। মাইঁ ইয়ু’জিবুকা = যে তোমাকে চমৎকৃত করে। ক্বাওলুহু = তার ক্বাওল/ বক্তব্যে। ফিল হায়াতিদ দুনিয়া = হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন সম্বন্ধে। ওয়া ইয়ুশহিদুল্লাহা = আর সে স্বাক্ষী রাখে আল্লাহকে। আলা মা ফী ক্বালবিহী = তার কলবে যা আছে তার উপর। ওয়া = অথচ। হুয়া = সে। আলাদ্দুল খিসাম = ভীষন বিরুদ্ধবাদী।
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে তোমাকে চমৎকৃত করে তার ক্বাওল/ বক্তব্যে হায়াতুদ দুনিয়া/ পার্থিব জীবন সম্বন্ধে। আর সে স্বাক্ষী রাখে আল্লাহকে তার কলবে যা আছে তার (নিষ্কলুষতা ও নিষ্ঠার) উপর। অথচ সে (সত্য, ন্যায় ও মানবতার প্রতি) ভীষণ বিরুদ্ধবাদী।
২:২০৫
ওয়া ইযা তাওয়াল্লা = আর যখন সে ফিরে যায় তখন। ছাআ ফিল আরদি = পৃথিবীতে প্রচেষ্টা চালায়। লিউফসিদু ফীহা = উহাতে (পৃথিবীতে) ফাসাদ করতে। ওয়া = আর। ইউহলিকাল হারছা = হালাক/ ধ্বংস করতে ফসলের ক্ষেত। ওয়ান্নাছলা = আর (মানুষের ও জীবজন্তুর) বংশ। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইউহিব্বুল ফাসাদ = ফাসাদ পছন্দ করেন না।
আর যখন সে (তার জন্য সুবিধাজনক অবস্থঅনে) ফিরে যায় তখন পৃথিবীতে প্রচেষ্টা চালায় (দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটপাট ও বিভিন্ন বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে) উহাতে (= পৃথিবীতে) ফাসাদ (নৈরাজ্য-বিশৃংখলা সৃষ্টি) করতে আর হালাক/ ধ্বংস করতে ফসলের ক্ষেত আর (মানুষের ও জীবজন্তুর) বংশ। আর আল্লাহ ফাসাদ পছন্দ করেন না।
২:২০৬
ওয়া = আর। ইযা = যখন। ক্বীলা লাহুত তাক্বিল্লাহা = তাকে বলা হয়, আল্লাহকে ভয় করো। আখাযাতহু = তখন তাকে ধরে। আল ইজ্জাতু = ইজ্জত (আত্মাভিমান)। বিল ইছমি = পাপ সহকারে। ফাহাছবুহু জাহান্নামা = সুতরাং তার জন্য যথেষ্ট জাহান্নাম। ওয়া লাবি’ছাল মিহাদ = আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থিতি।
আর যখন তাকে বলা হয়, ‘আল্লাহকে ভয় করো’। তখন তাকে ধরে ইজ্জত (= আত্মাভিমান) পাপ সহকারে (অর্থাৎ সে আরো অনাচারে লিপ্ত হয়)। সুতরাং তার জন্য যথেষ্ট জাহান্নাম। আর তা অত্যন্ত নিকৃষ্ট অবস্থিতি।
২:২০৭
ওয়া মিনান্নাছি = আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে। মাইঁ ইয়াশরী = যে বিক্রয় করে। নাফছাহুবতিগাআ মারদাতিল্লাহ = তার নিজ জীবনসত্তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশের জন্য। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। রউফুম = রউফ/ স্নেহশীল। বিল ইবাদ = (তাঁর এরূপ) দাসগণের প্রতি।
আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যে বিক্রয় করে তার নিজ জীবনসত্তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশের জন্য। আর আল্লাহ রউফ/ স্নেহশীল (তাঁর এরূপ) দাসগণের প্রতি।
২:২০৮
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। উদখুলু = তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো। ফিছ ছিলমি কাফফা = ছিলমে/ ইছলামে সামগ্রিকভাবে। ওয়া = আর। লা তাত্তাবিয়ূ = ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। খুতুওয়াতিশ শায়তান = শয়তানের পদাংক। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে (শয়তান)। লাকুম = তোমাদের জন্য। আদুওয়ুম মুবীন = স্পষ্ট শত্রু।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা দাখিল হও/ প্রবেশ করো ছিলমে/ ইছলামে সামগ্রিকভাবে। আর ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না শয়তানের পদাংক। নিশ্চয় সে (= শয়তান) তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।
২:২০৯
ফাইন = সুতরাং যদি। যালালতুম = তোমরা বিচ্যুত হও/ সরে যাও। মিম বা’দি = এরপরও যে। মা জাআতকুমুল বাইয়িনাত = তোমাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ। ফা’লামূ = তাহলে তোমরা জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আযীযুন হাকীম = আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
সুতরাং যদি তোমরা বিচ্যুত হও/ সরে যাও এরপরও যে, তোমাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ, তাহলে তোমরা জেনে রাখো নিশ্চয় আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
২:২১০
হাল ইয়ানযুরুনা = তারা কি অপেক্ষা করছে? ইল্লা আন = এছাড়া অন্য বিষয়ে যে। ইয়া’তিয়াহুমুল্লাহু = তাদের কাছে আসবেন আল্লাহ। ফী যুলালিম মিনাল গামামি = মেঘের ছায়ায়। ওয়াল মালাইকাতি = আর ফেরেশতারাও আসবে। ওয়া কুদিয়াল আমরু = আর সব কাজের (মীমাংসা) কাদা/ কাযা/ সম্পন্ন হবে। ওয়া = আর। ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকেই। তুরজায়ু = ফিরে যাবে। উমুর = সমস্ত বিষয়/ কার্যসমূহ।
তারা কি অপেক্ষা করছে এছাড়া অন্য বিষয়ে যে, তাদের কাছে আসবেন আল্লাহ মেঘের ছায়ায় আর ফেরেশতারাও আসবে আর সব কাজের (মীমাংসা) কাদা/ কাযা/ সম্পন্ন হবে? আর আল্লাহর দিকেই ফিরে যাবে সমস্ত বিষয়/ কার্যসমূহ।
২:২১১
ছাল বানী ইসরাইলা = জিজ্ঞাসা কর বানী ইসরাইলকে। কাম = কত বেশি। আতাইনাহুম = আমরা তাদেরকে দিয়েছি। মিন আয়াতিম বাইয়িনাতিন = আয়াতিম বাইয়িনাতিন/ সুস্পষ্ট আয়াত। ওয়া মান ইয়ুবাদ্দিল = আর যে বদল/ পরিবর্তন করে। নি’মাতিয়াল্লাহি = আল্লাহর নিয়ামতকে। মিম বা’দি মা জাআতহু = উহা আসার পর। ফাইন্নাল্লাহা = তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ। শাদীদুল ইকাব = শাস্তিদানে কঠোর।
জিজ্ঞাসা কর বানী ইসরাইলকে কত বেশি আমরা তাদেরকে দিয়েছি আয়াতিম বাইয়িনাতিন/ সুস্পষ্ট আয়াত। আর যে বদল/ পরিবর্তন করে আল্লাহর নিয়ামতকে উহা আসার পর, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।
২:২১২
যুইয়িনা = সুশোভিত করা হয়েছে। লিল্লাযীনা কাফারু = যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য। আল হায়াতাদ দুনিয়া = হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে। ওয়া ইয়াছখারুনা = আর তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। মিনাল্লাযীনা আমানূ = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাদেরকে। ওয়াল্লাযীনাত তাক্বাও = আর যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে। ফাওক্বাহুম = তাদেরকে ঊর্ধ্বে রাখা হবে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। ওয়াল্লাহু ইয়ারযুক্বু = আর আল্লাহ রিযক দেন। মাইঁ ইয়াশায়ু = যাকে তিনি (রিযক দেয়ার) ইচ্ছা করেন। বিগাইরি হিসাব = হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ উপায়ে রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।
সুশোভিত করা হয়েছে যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের জন্য হায়াতুদ দুনিয়াকে/ পার্থিব জীবনকে। আর তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাদেরকে। আর যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে তাদেরকে ঊর্ধ্বে রাখা হবে ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে। আর আল্লাহ রিযক দেন যাকে তিনি (রিযক দেয়ার) ইচ্ছা করেন, হিসাব ছাড়া (অর্থাৎ যেরূপ উপায়ে রিযক প্রাপ্তির হিসাব/ আশা সে করেনি ৬৫: ০৩)।
২:২১৩
কানান্নাছু = মানবজাতি ছিলো। উম্মাতান ওয়াহিদাতান = এক উম্মাত/ এক জাতি। ফাবাআছাল্লাহু = তারপর আল্লাহ সমুত্থিত করেছেন। আন্নাবীয়্যূনা = নবীদেরকে। মুবাশশিরীনা = সুসংবাদদাতারূপে। ওয়া মুনযিরীনা = আর সতর্ককারীরূপে। ওয়া = আর। আনযালা = নাযিল করেছেন। মাআহুমুল কিতাবা = তাদের সাথে কিতাব। বিল হাক্কি = সঠিক তথ্যসহ। লিইয়াহকুমা = যেন তারা মীমাংসা করে। বায়নান্নাছি = মানুষের মধ্যে। ফীমাখতালাফূ ফীহি = যে বিষয়ে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করে তাতে। ওয়া = আর। মাখতালাফা ফীহি = উহাতে ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেনি। ইল্লাল্লীযা উতূহু = তারা ছাড়া যাদেরকে উহা পৌঁছানো হয়েছে। মিম বা’দি = এরপরও যে। মা জাআতহুমুল বাইয়িনাতু = তাদের কাছে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। বাগইয়াম বাইনাহুম = তাদের একে অন্যের প্রতি বিরুদ্ধাচরণবশত:। ফাহাদাল্লাহু = তারপর আল্লাহ হিদায়াত করেছেন। আল্লাযীনা আমানূ = তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। লিমাখতালাফূ ফীহি মিনাল হাক্কি = উহার প্রসঙ্গে, তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে সঠিক তথ্য থেকে যে বিষয়ে। বিইযনিহী = তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়াহদী = হিদায়াত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। ইলা সিরাতিম মুসতাকীম = সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথে।
মানবজাতি ছিলো এক উম্মাত/ এক জাতি। তারপর আল্লাহ সমুত্থিত (= প্রেরণ) করেছেন নবীদেরকে সুসংবাদদাতারূপে আর সতর্ককারীরূপে আর নাযিল করেছেন তাদের সাথে কিতাব সঠিক তথ্যসহ যেন তারা মীমাংসা করে মানুষের মধ্যে যে বিষয়ে তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করে তাতে। আর উহাতে ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেনি তারা ছাড়া যাদেরকে উহা পৌঁছানো হয়েছে এরপরও যে, তাদের কাছে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে; তাদের একে অন্যের প্রতি বিরুদ্ধাচরণবশত:। তারপর আল্লাহ হিদায়াত করেছেন তাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে উহার প্রসঙ্গে, তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে সঠিক তথ্য থেকে যে বিষয়ে, তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন সিরাতুল মুসতাকীম/ সরল সঠিক পথে।
২:২১৪
আম হাসিবতুম আন = তোমরা কি হিসাব করে নিয়েছো যে? তাদখুলুল জান্নাতা = তোমরা দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে জান্নাতে? ওয়া = অথচ। লাম্মা ইয়া’তিকুম = এখনো তোমাদের উপর আসেনি। মাছালুল্লাযীনা = তাদের অবস্থা যারা। খালাও মিন ক্বাবলিকুম = তোমাদের আগে গত হয়েছে। মাছছাতহুমুল বা’ছায়ু = তাদেরকে স্পর্শ করেছে অর্থ সংকট। ওয়াদ দররায়ি = ও দু:খ-ক্লেষ। ওয়া যুলযিলূ = আর তাদেরকে কাঁপিয়ে তোলা হয়েছে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াক্বূলার রসূলু = বলে উঠেছে রসূল। ওয়াল্লাযীনা আমানূ মাআহু = আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাঁর সাথে-। মাতা নাসরুল্লাহি = কখন আসবে নাসরুল্লাহ/ আল্লাহর সাহায্য? আলা = জেনে রাখো। ইন্না = নিশ্চয়। নাসরুল্লাহি ক্বারীবুন = নাসরুল্লাহ/ আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।
তোমরা কি হিসাব করে নিয়েছো যে, তোমরা দাখিল হবে/ প্রবেশ করবে জান্নাতে? অথচ এখনো তোমাদের উপর আসেনি তাদের অবস্থা যারা তোমাদের আগে গত হয়েছে। তাদেরকে স্পর্শ করেছে অর্থ সংকট ও দু:খ-ক্লেষ আর তাদেরকে কাঁপিয়ে তোলা হয়েছে যতক্ষণ না বলে উঠেছে রসূল আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তাঁর সাথে- ‘কখন আসবে নাসরুল্লাহ/ আল্লাহর সাহায্য?’ জেনে রাখো, নিশ্চয় নাসরুল্লাহ/ আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।
২:২১৫
ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। মা যা ইউনফিক্বূন = তারা কী ইনফাক/ ব্যয় করবে? ক্বুল = বলো। মা আনফাক্বতুম = তোমরা যা-ই ব্যয় করো। মিন খায়রিন = সম্পদ থেকে। ফালিল ওয়ালিদাইনি = (তা ব্যয় করবে) পিতামাতার জন্য। ওয়াল আক্বরাবীনা = আর নিকটাত্মীয়ের জন্য। ওয়াল ইয়াতামা = আর ইয়াতীমদের জন্য। ওয়াল মাছাকীনা = আর মিসকীনদের জন্য। ওয়াবনাছ ছাবীলি = আর ইবনে ছাবীলের/ পথে আটকে পড়া ব্যক্তির/ ছিন্নমূলের জন্য। ওয়া = আর। মা তাফআলূ মিন খাইরিন = তোমরা যা কিছু কল্যাণকর কাজ করো। ফাইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিহী আলীমান = উহা সম্বন্ধে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে তারা কী ইনফাক/ ব্যয় করবে? বলো, ‘তোমরা যা-ই ব্যয় করো সম্পদ থেকে (তা ব্যয় করবে) পিতামাতার জন্য আর নিকটাত্মীয়ের জন্য আর ইয়াতীমদের জন্য আর মিসকীনদের জন্য আর ইবনে ছাবীলের/ পথে আটকে পড়া ব্যক্তির/ ছিন্নমূলের জন্য। আর তোমরা যা কিছু কল্যাণকর কাজ করো নিশ্চয় আল্লাহ উহা সম্বন্ধে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
২:২১৬
কুতিবা = বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। আলাইকুম = তোমাদের উপর। আল কিতালু = কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। ওয়া হুয়া কুরহুল্লাকুম = আর উহা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। ওয়া = আর। আছা = হতে পারে। আন = যে। তাকরাহু = তোমরা অপছন্দ করো। সাইয়ান = কোন বিষয়। ওয়া = অথচ। হুয়া = উহা। খাইরুল্লাকুম = তোমাদের জন্য কল্যাণকর। ওয়া = আবার। আছা = হতে পারে। আন = যে। তুহিব্বু = তোমরা পছন্দ করো। সাইয়ান = কোন বিষয়। ওয়া = অথচ। হুয়া = উহা। শাররুল্লাকুম = তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। লা তা’লামুন = জানো না।
বিধিবদ্ধ করে দেয়া হয়েছে তোমাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। আর উহা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। আর হতে পারে যে, তোমরা অপছন্দ করো কোন বিষয় অথচ উহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আবার হতে পারে যে, তোমরা পছন্দ করো কোন বিষয় অথচ উহা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।
২:২১৭
ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিশ শাহরিল হারামি = হারাম মাস/ নিষিদ্ধ মাস সম্পর্কে। ক্বিতালিন ফীহি = উহার মধ্যে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা প্রসঙ্গে। ক্বুল = বলো। ক্বিতালুন ফীহি কাবীরুন = উহার মধ্যে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা কাবীর/ বড় ধরনের (অন্যায়)। ওয়া = আর। সদ্দুন আন সাবিলিল্লাহি = সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে বাধাদান করা। ওয়া = আর। কুফরুম বিহী = কুফর/ তাঁর প্রতি অবিশ্বাস করা। ওয়াল মাসজিদিল হারামি = আর মাসজিদুল হারাম (থেকে বাধাদান করা)। ওয়া ইখরিজু = আর বের করে দেয়া। আহলুহু = উহার আহলকে/ লোকদেরকে। মিনহু = উহা থেকে। আকবারু = অধিক বড় ধরনের (অন্যায়)। ইনদাল্লাহি = আল্লাহর নিকট। ওয়াল ফিতনাতু = আর ফিতনা/ ন্যায়কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি। আকবারু মিনাল ক্বাতলি = ক্বতল/ হত্যার চেয়ে অধিক বড় ধরনের (অন্যায়)। ওয়া = আর। লা ইয়াযালূনা = তারা থামবে না। ইউক্বাতিলূনাকুম = তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা থেকে। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়ারুদ্দূকুম = তোমাদেরকে ফিরাতে/ মুরতাদ করতে পারবে। আন দ্বীনিকুম = তোমাদের অনুসৃত দ্বীন/ জীবনবিধান থেকে। ইনিছতাত্বাঊ= যদি তারা তা করতে পারে। ওয়া = আর। মান = যে। ইয়ারতাদিদ = ফিরে যায়/ মুরতাদ হয়। মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে। আন দ্বীনিহি = তার অনুসৃত দ্বীন/ জীবনবিধান থেকে। ফাইয়ামুত = তারপর সে মৃত্যুবরণ করে। ওয়া হুয়া কাফিরুন = এ অবস্থায় যে, সে কাফির। ফাউলায়িকা = তারাই ঐসব লোক। হাবিতাত = নিস্ফল হয়ে যাবে। আ’মালুহুম = যাদের আমলসমূহ। ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাতি = দুনিয়া ও আখিরাতে। ওয়া উলায়িকা = আর তারাই। আসহাবুন নার = আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম ফীহা খালিদূন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে হারাম মাস/ নিষিদ্ধ মাস সম্পর্কে উহার মধ্যে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা প্রসঙ্গে। বলো, ‘উহার মধ্যে (= যে কোন হারাম মাসের মধ্যে) কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা কাবীর/ বড় ধরনের (অন্যায়)। আর সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথ থেকে বাধাদান করা আর তাঁর প্রতি কুফর/ অবিশ্বাস করা আর মাসজিদুল হারাম (থেকে বাধাদান করা) আর বের করে দেয়া উহার আহলকে/ লোকদেরকে উহা থেকে, অধিক বড় ধরনের (অন্যায়) আল্লাহর নিকট। আর ফিতনা/ ন্যায়কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি ক্বতল/ হত্যার চেয়ে অধিক বড় ধরনের (অন্যায়)। আর তারা থামবে না, তোমাদের বিরুদ্ধে কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করা থেকে, যতক্ষণ না তোমাদেরকে ফিরাতে/ মুরতাদ করতে পারবে তোমাদের অনুসৃত দ্বীন/ জীবনবিধান থেকে যদি তারা তা করতে পারে। আর যে ফিরে যায়/ মুরতাদ হয় তোমাদের মধ্য থেকে তার অনুসৃত দ্বীন/ জীবনবিধান থেকে তারপর সে মৃত্যুবরণ করে এ অবস্থায় যে, সে কাফির; তারাই ঐসব লোক নিস্ফল হয়ে যাবে যাদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে। আর তারাই আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
২:২১৮
ইন্নাল্লাযীনা আমানূ = নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়াল্লাযীনা হাযারু = আর যারা হিযরত করেছে। ওয়া জাহাদূ ফী সাবিল্লাহি = আর জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। উলায়িকা = তারাই। ইয়ারজূনা = আরজ/ প্রত্যাশা করে। রহমাতাল্লাহি = রহমাতুল্লাহ/ আল্লাহর রহমত। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর যারা হিযরত করেছে আর জিহাদ/ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেছে সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, তারাই আরজ/ প্রত্যাশা করে রহমাতুল্লাহ/ আল্লাহর রহমত। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:২১৯
ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিল খামরি ওয়াল মাইছিরি = খামর (যা মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে যথা মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, আফিম ইত্যাদি) আর মাইছির (যা কোন কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ নয় বরং দুর্ঘটনাক্রমে পাওয়া যায় যেমন জুয়া, লটারি ইত্যাদি) সম্পর্কে। ক্বুল = বলো। ফীহিমা = এ দুটির মধ্যে আছে। ইছমুন কাবীরুন = বড় ধরনের অপকার। ওয়া মানাফিউ = আর (ছোট ধরনের) উপকার। লিন্নাছি = মানুষের জন্য। ওয়া ইছমুহুমা = আর এ দুটির অপকার। আকবারু = অধিক বড়। মিন নাফয়িহিমা = এ দুটির উপকারের চেয়ে। ওয়া ইয়াছআলূনাকা = আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। মা যা ইউনফিক্বুন = তারা কী ইনফাক/ ব্যয় করবে? ক্বুলিল আফওয়া = বলো, আফওয়া (উদারতা প্রকাশের মাধ্যমস্বরূপ ব্যয়যোগ্য সম্পদ/ যা নিজে ব্যবহার করা হয় না এরূপ সম্পদের উপযোগ, যেমন- কারো একাধিক গাড়ি থাকলে একটি গাড়ি থেকে অন্যকে সুবিধালাভের সুযোগ দেয়া)। কাযালিকা = এভাবে। ইউবাইয়িনুল্লাহু = আল্লাহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। লাকুমুল আয়াতি = তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম তাতাফাক্কারুন = যেন তোমরা তাফাক্কুর/ ফিকর/ চিন্তা গবেষণা করতে পারো।
তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে খামর (= যা মস্তিষ্ককে আচ্ছন্ন করে যথা মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেন্সিডিল, আফিম ইত্যাদি) আর মাইছির (= যা কোন কৃতিত্বের পুরস্কারস্বরূপ নয় বরং দুর্ঘটনাক্রমে পাওয়া যায় যেমন জুয়া, লটারি ইত্যাদি) সম্পর্কে। বলো, ‘এ দুটির মধ্যে আছে বড় ধরনের অপকার আর (ছোট ধরনের) উপকার মানুষের জন্য। আর এ দুটির অপকার অধিক বড় এ দুটির উপকারের চেয়ে। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে তারা কী ইনফাক/ ব্যয় করবে? বলো, ‘আফওয়া’ (= উদারতা প্রকাশের মাধ্যমস্বরূপ ব্যয়যোগ্য সম্পদ/ যা নিজে ব্যবহার করা হয় না এরূপ সম্পদের উপযোগ, যেমন- কারো একাধিক গাড়ি থাকলে একটি গাড়ি থেকে অন্যকে সুবিধালাভের সুযোগ দেয়া)। এভাবে আল্লাহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ, যেন তোমরা তাফাক্কুর/ ফিকর/ চিন্তা গবেষণা করতে পারো।
২:২২০
ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখিরাতি = দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে। ওয়া ইয়াছআলূনাকা = আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিল ইয়াতামা = ইয়াতিম ছেলেমেয়ে সম্পর্কে। ক্বুল = বলো। ইসলাহুল লাহুম = তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা। খায়রুন = কল্যাণকর কাজ। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুখালিতূহুম = (তোমাদের মালসামানা) তাদের মালসামানার সাথে মিশাও। ফাইখওয়ানিকুম = তাহলে তারা তো তোমাদের ভাই (তাই উহাতে গুনাহ হবে না)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়ালামুল মুফসিদা = মুফসিদকে/ ফাসাদকারীকে জানেন। মিনাল মুসলিহি = মুসলিহ/ ইসলাহকারী থেকে পৃথক করে। ওয়া = আর। লাও শাআল্লাহু = যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাআ’নাতাকুম = তোমাদেরকে ক্লেষকর ব্যবস্থা দিতে পারতেন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। আযীযুন হাকীম = আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে। আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে ইয়াতিম ছেলেমেয়ে সম্পর্কে। বলো, ‘তাদের জন্য সুব্যবস্থা করা কল্যাণকর কাজ’। আর যদি (তোমাদের মালসামানা) তাদের মালসামানার সাথে মিশাও তাহলে তারা তো তোমাদের ভাই (তাই উহাতে গুনাহ হবে না)’। আর আল্লাহ মুফসিদকে/ ফাসাদকারীকে জানেন মুসলিহ/ ইসলাহকারী থেকে পৃথক করে (/কী ধরনের কাজ সম্পাদনকারীরা ফাসাদকারী আর কী ধরনের কাজ সম্পাদনকারীরা ইসলাহকারী আল্লাহ তা ভালভাবেই জানেন)। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তোমাদেরকে কষ্টকর ব্যবস্থা দিতে পারতেন। নিশ্চয় আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
২:২২১
ওয়া = আর। লা তানকিহুল মুশরিকাতি = মুশরিক নারীদেরকে নিকাহ/ বিবাহ করো না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইউ’মিন্না = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। লাআমাতুম মু’মিনাতুন = মু’মিন দাসী। খায়রুন = উত্তম। মিন মুশরিকাতিন = (স্বাধীনা) মুশরিক নারীর চেয়ে। ওয়া লাও = যদিও। আ’যাবাতকুম = (স্বাধীনা মুশরিক নারী) তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। ওয়া = আর। লা তুনকিহূ = নিকাহ/ বিবাহ দিবে না। আল মুশরিকীনা = মুশরিক পুরুষদের সাথে। হাত্তা ইউমিনূ = যতক্ষণ না তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = আর। লাআবদুন মু’মিনুন = নিশ্চয় মু’মিন দাস। খায়রুম মিন মুশরিকিন = (স্বাধীন) মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম। ওয়া লাও = যদিও। আ’যাবুকুম = (স্বাধীন মুশরিক পুরুষ) তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। উলায়িকা = তারা। ইয়াদঊনা = ডাকে। ইলান্নারি = (জাহান্নামের) আগুনের দিকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়াদঊ = ডাকেন। ইলাল জান্নাতি = জান্নাতের দিকে। ওয়াল মাগফিরাতি = আর মাগফিরাতের/ ক্ষমার দিকে। বিইযনিহী = তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। ওয়া = আর। ইউবাইয়িনু = তিনি বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহ। লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য। লাআল্লাহুম ইয়াতাযাক্কারুন = যেন তারা যিকর করতে/ বুঝতে ও স্মরণ করতে পারে।
আর মুশরিক নারীদেরকে নিকাহ/ বিবাহ করো না যতক্ষণ না তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। আর মু’মিন দাসী উত্তম (স্বাধীনা) মুশরিক নারীর চেয়ে যদিও (স্বাধীনা মুশরিক নারী) তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। আর নিকাহ/ বিবাহ দিবে না (তোমাদের কন্যাদেরকে বা বোনদেরকে) মুশরিক পুরুষদের সাথে যতক্ষণ না তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। আর নিশ্চয় মু’মিন দাস (স্বাধীন) মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম যদিও (স্বাধীন মুশরিক পুরুষ) তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা ডাকে (জাহান্নামের) আগুনের দিকে। আর আল্লাহ ডাকেন জান্নাতের দিকে আর মাগফিরাতের/ ক্ষমার দিকে তাঁর অনুজ্ঞাক্রমে। আর তিনি বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তাঁর আয়াতসমূহ মানবজাতির জন্য, যেন তারা যিকর করতে/ বুঝতে ও স্মরণ করতে পারে।
২:২২২
ওয়া = আর। ইয়াছআলূনাকা = তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে। আনিল মাহীদি = মাহীদ/ হায়েজ সম্পর্কে। ক্বুল = বলো। হুয়া = উহা। আযান = কষ্টদায়ক অবস্থা। ফা’তাযিলুন্নিছাআ = সুতরাং স্ত্রীমিলন থেকে দূরে থাকো। ফিল মাহীদি = মাহীদে/ হায়েজকালে। ওয়া লা তাক্বরাবূহুন্না = আর তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াতহুরনা = তারা তাহারাত/ পবিত্র হয়। ফাইযা = তারপর যখন। তাতাহারনা = তারা তাহারাত/ পবিত্র হয়। ফা’তূহুন্না = তখন তাদের কাছে যাও। মিন হাইছু আমারাকুমুল্লাহ = যেখানে (যেতে) আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন সেখানে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইউহিব্বুত তাওয়াবীনা = ভালবাসেন তাওয়াবীনকে/ তাওবাকারীদেরকে। ওয়া = আর। ইউহিব্বুল মুতাতহহিরীন = ভালবাসেন মুতাতহহিরীনকে/ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে।
আর তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে মাহীদ/ হায়েজ সম্পর্কে। বলো, ‘উহা কষ্টদায়ক অবস্থা। সুতরাং স্ত্রীমিলন থেকে দূরে থাকো মাহীদে/ হায়েজকালে। আর তাদের নিকটবর্তী হয়ো না যতক্ষণ না তারা তাহারাত/ পবিত্র হয়। তারপর যখন তারা তাহারাত/ পবিত্র হয় তখন তাদের কাছে যাও যেখানে (যেতে) আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন সেখানে। নিশ্চয় আল্লাহ ভালবাসেন তাওয়াবীনকে/ তাওবাকারীদেরকে আর ভালবাসেন মুতাতহহিরীনকে/ পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকে।
২:২২৩
নিছাউকুম = তোমাদের স্ত্রীরা। হারছুল্লাকুম = তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ। ফা’তূ = সুতরাং তোমরা যাও। হারছুকুম = তোমাদের ক্ষেতেই। আন্না = যেভাবে। সি’তুম = তোমরা ইচ্ছা করো। ওয়া = আর। ক্বাদ্দিমূ = তোমরা আগেই কিছু করো। লিআনফুছিকুম = তোমাদের নিজেদেরই (ভবিষ্যতের) জন্য। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া’লামূ = আর জেনে রাখো। আন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। মূলাক্বূহু = তাঁর সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) মোলাকাতকারী। ওয়া = আর। বাশশিরীল মু’মিনীন = মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।
তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের ক্ষেতস্বরূপ। সুতরাং তোমরা যাও তোমাদের ক্ষেতেই যেভাবে তোমরা ইচ্ছা করো। আর তোমরা আগেই কিছু করো তোমাদের নিজেদেরই (ভবিষ্যতের) জন্য। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর জেনে রাখো নিশ্চয় তোমরা তাঁর সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) মোলাকাতকারী। আর মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও।
২:২২৪
ওয়া = আর। লা তাজআলুল্লাহা উরদাতান = আল্লাহকে ঢালস্বরূপ সাব্যস্ত করো না। লিআইমানিকুম = তোমাদের আইমানের/ শপথের জন্য। আন = যেন না। তাবাররু = তোমরা পূণ্যকাজ করো। ওয়া তাত্তাকূ = আর (না) আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া তুসলিহূ বাইনান্নাছি = আর (না) মানুষের মধ্যে ইসলাহ/ সংশোধন করে দাও। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ছামীউন আলীম = ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
আর আল্লাহকে ঢালস্বরূপ সাব্যস্ত করো না তোমাদের আইমানের/ শপথের জন্য যেন না তোমরা পূণ্যকাজ করো আর (না) আল্লাহকে ভয় করো আর (না) মানুষের মধ্যে ইসলাহ/ সংশোধন করে দাও। আর আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
২:২২৫
লা তুআখিজুকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না। বিল লাগভী ফী আইমানিকুম = তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। ইউআখিজুকুম = তিনি তোমাদেরকে ধরবেন। বিমা কাছাবাত কুলূবুকুম = তোমাদের কলবসমূহ যা উপার্জন করেছে তার জন্য (= তোমাদের ইচ্ছাকৃত ও গুরুত্ববহ শপথের জন্য)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গাফূরুন হালীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, হালীম/ সহনশীল।
আল্লাহ তোমাদেরকে ধরবেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্য। কিন্তু তিনি তোমাদেরকে ধরবেন তোমাদের কলবসমূহ যা উপার্জন করেছে তার জন্য (= তোমাদের ইচ্ছাকৃত ও গুরুত্ববহ শপথের জন্য)। আর আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, হালীম/ সহনশীল।
২:২২৬
লিল্লাযীনা = তাদের জন্য বিধান যারা। ইউলূনা মিনান্নিছায়ী = ইলা/ ‘স্ত্রীমিলনে বিরত থাকার শপথ’ করে। তারাব্বুসু = তারা অপেক্ষা করবে (= স্ত্রীমিলন করবে না)। আরবাবাআতি আশহুরিন = চারমাস। ফাইন ফাউ = তবে যদি তারা ফিরে আসে। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুর রহীম = গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
তাদের জন্য বিধান যারা ইলা/ ‘স্ত্রীমিলনে বিরত থাকার শপথ’ করে। তারা অপেক্ষা করবে (= স্ত্রীমিলন করবে না) চারমাস। তবে যদি তারা ফিরে আসে তবে নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, রহীম/ দয়াশীল।
২:২২৭
ওয়া = আর। ইন = যদি। আযামুততলাকা = তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফাইন্নাল্লাহা = তবে (জেনে রাখো) নিশ্চয় আল্লাহ। ছামীউন আলীম = ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
আর যদি তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তবে (জেনে রাখো) নিশ্চয় আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
২:২২৮
ওয়াল মুতাল্লাক্বাতু = আর যেসব নারীকে তালাক দেয়া হয়েছে তারা। ইয়াতারব্বাসনা বিআনফুসিহিন্না = তাদের নিজেদেরকে অপেক্ষায় রাখবে (= বিয়ে করবে না)। ছালাছাতা কুরূইন = তিন কুরু (= পরিবর্তনশীল অবস্থা = স্বাভাবিক অবস্থা (তুহর) এর বিপরীত অবস্থা = পূর্ণ সময়ান্ত হায়েজ)) পর্যন্ত। ওয়া = আর। লা ইয়াহিল্লু লাহুন্না = তাদের জন্য হালাল/ বৈধ নয়। আন = যে। ইয়াকতুমূনা = তারা গোপন করবে/ গোপন রাখবে। মা খালাকাল্লাহু = যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। ফী আরহামিহিন্না = তাদের গর্ভে। ইন = যদি। কুন্না ইউ’মিন্না = তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমুল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। ওয়া = আর। বুয়ূলাতুহুন্না = তাদের স্বামীগণ। আহাক্কু = অধিকতর হকদার। বিরদ্দিহিন্না = তাদেরকে (স্বাভাবিক দাম্পত্য সম্পর্কে) ফিরিয়ে নেবার। ফী যালিকা = উহার (= অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়সীমার/ ইদ্দাতের) মধ্যে। ইন = যদি। আরাদূ = তারা (তাদের স্বামীগণ) এরাদা/ ইচ্ছা করে। ইসলাহা = ইসলাহের/ সংশোধনের। ওয়া = আর। লাহুন্না = তাদের (= নারীদের) অধিকার রয়েছে। মিছলুল্লাযী আলাইহিন্না = যেমন তাদের উপর অধিকার/ তাদের দায়িত্ব রয়েছে। বিল মা’রুফ = ন্যায়সঙ্গতভাবে। ওয়া = আর। লিররিজালি আলাইহিন্না দারাজাতুন = স্বামীদের জন্য স্ত্রীদের উপর (বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকারের) একটি উচ্চমাত্রা রয়েছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আযীযুন হাকীম = আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আর যেসব নারীকে তালাক দেয়া হয়েছে তারা তাদের নিজেদেরকে অপেক্ষায় রাখবে (= বিয়ে করবে না) তিন কুরু (= পরিবর্তনশীল অবস্থা = স্বাভাবিক অবস্থা (তুহর) এর বিপরীত অবস্থা = পূর্ণ সময়ান্ত হায়েজ) পর্যন্ত। আর তাদের জন্য হালাল/ বৈধ নয় যে, তারা গোপন করবে/ গোপন রাখবে যা আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন তাদের গর্ভে, যদি তারা ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমুল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। আর তাদের স্বামীগণ অধিকতর হকদার তাদেরকে (স্বাভাবিক দাম্পত্য সম্পর্কে) ফিরিয়ে নেবার, উহার (= অপেক্ষার জন্য নির্ধারিত সময়সীমার/ ইদ্দাতের) মধ্যে, যদি তারা (= তাদের স্বামীগণ) এরাদা/ ইচ্ছা করে ইসলাহের/ সংশোধনের। আর তাদের (= নারীদের) অধিকার রয়েছে যেমন তাদের উপর অধিকার/ তাদের দায়িত্ব রয়েছে, ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর স্বামীদের জন্য স্ত্রীদের উপর (বিভিন্ন ক্ষেত্রে অধিকারের) একটি উচ্চমাত্রা রয়েছে (যেমন: ক. বিশেষ করে তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রীর ইদ্দতের মধ্যে/ অনতিবিলম্বে বিয়ে করার অধিকার, খ. আনুগত্য লাভ করার অধিকার; এসব অধিকারের পেছনে যৌক্তিক কারণ আছে)। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
২:২২৯
আত তালাকু মাররাতান = তালাক দুবার। ফাইমছাকুম বিমা’রুফিন = তারপর (এ দুবারের প্রত্যেক বারের পর তোমাদের জন্য সুযোগ আছে যে) তোমরা স্বীয় স্ত্রীদেরকে হয় রেখে দেবে ন্যায়পরায়নতার সাথে। আও তাছরীহুন বিইহছান = অথবা বিদায় দেবে উত্তম আচরণের মাধ্যমে। ওয়া = আর। লা ইয়াহিল্লু লাকুম = তোমাদের জন্য হালাল/ বৈধ নয়। আন = যে। তা’খুজূ = তোমরা গ্রহণ করবে। মিম্মা আতাইতুমূহুন্না সাইয়ান = তোমরা (দেনমোহরবাবদ) যাকিছু তাদেরকে দিয়েছো, তা থেকে কিছু। ইল্লা আন = কিন্তু এরূপ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে যে। ইয়াখাফা আল্লা ইউক্বীমা হুদুদাল্লাহি = স্বামী স্ত্রী উভয়ে এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে না। ফাইন খিফতুম আল্লা ইউক্বীমা হুদুদাল্লাহি = তখন যদি তোমরা (উলিল আমর ০৪: ৫৯) ভয় কর যে, তারা উভয়ে হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে না (একজনের দ্বারা সম্ভব হলেও যৌথভাবে সম্ভব হবে না)। ফালা জুনাহা আলাইহিমা ফীমাফতাদাত বিহী = তবে তাদের উভয়ের জুনাহ/ গুনাহ নেই স্ত্রী তার স্বামীকে দেনমোহরের কোন অংশ ফিদইয়াস্বরূপ দিলে ঐ অংশের লেনদেনে । তিলকা হুদুদুল্লাহি = উহা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ। ফালা তা’তাদূহা = সুতরাং উহা লংঘন করো না। ওয়া মাইঁ ইয়াতাআদ্দা = আর যে লংঘন করে। হুদুদাল্লাহি = হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ। ফাউলায়িকা হুমুয যালিমূন = তারাই যালিম।
তালাক দুবার। তারপর (এ দুবারের প্রত্যেক বারের পর তোমাদের জন্য সুযোগ আছে যে) তোমরা স্বীয় স্ত্রীদেরকে হয় রেখে দেবে ন্যায়পরায়নতার সাথে অথবা বিদায় দেবে উত্তম আচরণের মাধ্যমে। আর তোমাদের জন্য হালাল/ বৈধ নয় যে, তোমরা গ্রহণ করবে তোমরা (দেনমোহরবাবদ) যাকিছু তাদেরকে দিয়েছো, তা থেকে কিছু। কিন্তু এরূপ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে যে, স্বামী স্ত্রী উভয়ে এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে না। তখন যদি তোমরা (উলিল আমর ০৪: ৫৯) ভয় কর যে, তারা উভয়ে হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে না (= একজনের দ্বারা সম্ভব হলেও যৌথভাবে সম্ভব হবে না); তবে তাদের উভয়ের জুনাহ/ গুনাহ নেই স্ত্রী তার স্বামীকে দেনমোহরের কোন অংশ ফিদইয়াস্বরূপ দিলে, ঐ অংশের লেনদেনে। উহা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ, সুতরাং উহা লংঘন করো না। আর যে লংঘন করে হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ তারাই যালিম।
২:২৩০
ফাইন তল্লাক্বাহা = তারপর যদি সে (অর্থাৎ স্বামী) তাকে (অর্থাৎ স্ত্রীকে) তালাক দেয়। ফালা তাহিল্লু লাহু = তাহলে, সে নারী তার জন্য হালাল হবে না। মিম বা’দু = পরবর্তী পর্যায়ে (= তৃতীয়বার তালাক দিলে)। হাত্তা = যতক্ষণ না। তানকিহা জাওজান গায়রাহু = সে নারী বিবাহ করে অপর কোন স্বামীকে। ফাইন তল্লাক্বাহা = তারপর যদি সে (দ্বিতীয় স্বামী) তাকে (ঐ নারীকে) তালাক দেয়। ফালা জুনাহা আলাইহিমা আইঁ ইয়াতারাজা’ = তবে তাদের উভয়ের কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই তাদের বিয়ে বন্ধনে ফিরে যাওয়াতে (পুনরায় পরস্পরকে বিয়ে করাতে)। ইন = যদি। যন্না = তারা উভয়ে যন্নুন/ ধারণা করে। আন = যে। ইউক্বীমা হুদুদাল্লাহি = তারা উভয়ে হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে। ওয়া তিলকা হুদুদুল্লাহি = আর উহা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ। ইউবাইয়িনুহা = তিনি উহা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। লিক্বাওমি ইয়া’লামূন = জ্ঞানী কওমের জন্য।
তারপর, যদি সে (অর্থাৎ স্বামী) তাকে (অর্থাৎ স্ত্রীকে) তালাক দেয়, তাহলে সে নারী তার জন্য হালাল হবে না, পরবর্তী পর্যায়ে (= তৃতীয় তালাকের পরে), যতক্ষণ না সে নারী বিবাহ করে অপর কোন স্বামীকে, তারপর যদি সে (= দ্বিতীয় স্বামী) তাকে (= ঐ নারীকে) তালাক দেয়, তবে তাদের উভয়ের কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই তাদের বিয়ে বন্ধনে ফিরে যাওয়াতে (= পুনরায় পরস্পরকে বিয়ে করাতে) যদি তারা উভয়ে যন্নুন/ ধারণা করে যে, তারা উভয়ে হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ কায়েম/ প্রতিষ্ঠিত রাখতে পারবে। আর উহা হুদুদুল্লাহ/ আল্লাহর সীমাসমূহ। তিনি উহা বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী কওমের জন্য।
২:২৩১
ওয়া = আর। ইযা = যখন। তল্লাক্বতুমুন্নিছাআ = তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও। ফাবালাগনা আজালাহুন্না = তারপর তারা পৌঁছে তাদের আজালে/ ইদ্দাতের শেষসীমায়। ফাআমছিকূহুন্না বিমা’রূফিন = তখন হয় তাদেরকে রেখে দাও ন্যায়পরায়নতার সাথে। আও ছাররিহূহুন্না বিমা’রূফিন = না হয় তাদেরকে বিদায় দাও ন্যায়পরায়নতার সাথে। ওয়া লা তুমছিকূহুন্না দিরারান = আর তাদেরকে (ফিরিয়ে নিয়ে) আটকে রেখ না যাতনা দেয়ার উদ্দেশ্যে। লিতা’তাদূ = কেননা তাতে বাড়াবাড়ি করা হয়। ওয়া মাইঁ ইয়াফআল যালিকা = আর যে এরূপ করে। ফাক্বাদ যলামা নাফছাহু = সে অবশ্যই যুলুম/ অত্যাচার করে তার নিজের জীবনসত্তার প্রতি। ওয়া = আর। লা তাত্তাখিজূ = তোমরা গ্রহণ করো না। আয়াতিল্লাহি = আল্লাহর আয়াতসমূহকে। হুযুওয়ান = হাসি তামাশার বিষয় হিসাবে। ওয়াযকুরু = আর যিকর/ স্মরণ রাখো। নি’মাতাল্লাহি আলাইকুম = আল্লাহ তোমাদের উপর যে নিয়ামাত/ অনুগ্রহ করেছেন তা। ওয়া = আর (স্মরণ রাখ)। মা = যা। আনযালা = তিনি নাযিল করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। মিনাল কিতাবি ওয়াল হিকমাতি = (তাঁর) কিতাব ও হিকমাত থেকে। ইউয়িযুকুম বিহী = তিনি তোমাদেরকে ওয়াজ করেন/ উপদেশ দেন উহা দ্বারা। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। ওয়া’লামু = আর জেনে রাখো। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। বিকুল্লি সাইয়িন আলীম = সব বিষয়ে আলীম/ জ্ঞানী।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও (প্রথমবার বা দ্বিতীয়বার) তারপর তারা পৌঁছে তাদের আজালে/ ইদ্দাতের শেষসীমায়, তখন হয় তাদেরকে রেখে দাও ন্যায়পরায়নতার সাথে, না হয় তাদেরকে বিদায় দাও ন্যায়পরায়নতার সাথে। আর তাদেরকে (ফিরিয়ে নিয়ে) আটকে রেখ না যাতনা দেয়ার উদ্দেশ্যে, কেননা তাতে বাড়াবাড়ি করা হয়। আর যে এরূপ করে সে অবশ্যই যুলুম/ অত্যাচার করে তার নিজের জীবনসত্তার প্রতি। আর তোমরা গ্রহণ করো না আল্লাহর আয়াতসমূহকে হাসি তামাশার বিষয় হিসাবে। আর যিকর/ স্মরণ রাখো আল্লাহ তোমাদের উপর যে নিয়ামাত/ অনুগ্রহ করেছেন তা। আর (স্মরণ রাখ) যা তিনি নাযিল করেছেন তোমাদের উপর (তাঁর) কিতাব ও হিকমাত থেকে, তিনি তোমাদেরকে ওয়াজ করেন/ উপদেশ দেন উহা দ্বারা। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ সব বিষয়ে আলীম/ জ্ঞানী।
২:২৩২
ওয়া = আর। ইযা = যখন। তল্লাক্বতুমুন্নিছাআ = তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও। ফাবালাগনা আজালাহুন্না = তারপর তারা পৌঁছে তাদের আজালে/ ইদ্দাতের শেষসীমায়। ফালা তা’দুলূহুন্না = তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিও না। আইঁ ইয়ানকিহনা আযওয়াজাহুন্না = এ বিষয়ে যে, তারা নিকাহ/ বিবাহ করবে তাদের স্বামীদেরকে। ইযা তারাদাও = যখন তারা রাজি হয়। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে (সম্পর্ক স্থাপনে)। বিল মা’রুফ = ন্যায়নীতির ভিত্তিতে। যালিকা ইউআযু বিহী = এ উপদেশ দেয়া হচ্ছে (তাকে)। মান কানা মিনকুম = তোমাদের মধ্য থেকে যে। ইউমিনু বিল্লাহি = ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। যালিকুম = উহাই। আযকা লাকুম ওয়া আতহার = তোমাদের জন্য সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও সবচেয়ে পবিত্র নিয়ম। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। ওয়া = আর। আনতুম = তোমরা। লা তা’লামূন = জানো না।
আর যখন তোমরা স্ত্রীদেরকে তালাক দাও তারপর তারা পৌঁছে তাদের আজালে/ ইদ্দাতের শেষসীমায়, তখন তোমরা তাদেরকে বাধা দিও না এ বিষয়ে যে, তারা নিকাহ/ বিবাহ করবে তাদের (প্রস্তাবিত) স্বামীদেরকে, যখন তারা রাজি হয় তাদের মধ্যে (সম্পর্ক স্থাপনে) ন্যায়নীতির ভিত্তিতে। এ উপদেশ দেয়া হচ্ছে (তাকে) তোমাদের মধ্য থেকে যে ঈমান/ বিশ্বাস করে আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। উহাই তোমাদের জন্য সবচেয়ে পরিশুদ্ধ ও সবচেয়ে পবিত্র নিয়ম। আর আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।
২:২৩৩
ওয়াল ওয়ালিদাতু = আর মায়েরা। ইউরদি’না = দুধপান করাবে। আওলাদাহুন্না = তাদের (নিজেদের) সন্তানদেরকে। হাওলাইনি কামিলাইনি = পূর্ণ দুবছর। লিমান আরাদা আইঁ ইউতিম্মার রদাআতা = ঐ পিতার জন্য যে এরাদা/ ইচ্ছা করেছে যে, তার সন্তান রদাআতের/ দুধপানের পূর্ণ মেয়াদ দুধপান করুক। ওয়া = এ অবস্থায়। আলাল মাওলূদি লাহু = যে পুরুষের শিশু জন্ম নিয়েছে তার দায়িত্ব হচ্ছে। রিযকুহুন্না ওয়া কিছওয়াতুহুন্না = তাদেরকে (সন্তানদের মায়েদেরকে) রিযক/ জীবিকা ও পোষাকাদি দিতে থাকবে। বিল মা’রুফ = ন্যায়সঙ্গতভাবে। ওয়া = আর। তুকাল্লাফু নাফসুন = কারো প্রতি বোঝা চাপানো যাবে না। ইল্লা উছআহা = তার সামর্থ্য ব্যতীত। লা তুদাররা = ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। ওয়ালিদাতুন = মাকে। বিওয়ালিদাহা = এ জন্য যে, সন্তান তার। ওয়া লা মাওলূদুল লাহু = আর যে পুরুষের শিশু জন্ম নিয়েছে তাকে। বিওয়ালিদিহী = এ জন্য যে, সন্তান তার। ওয়া আলাল ওয়ারিসি মিছলু যালিকা = আর দুধদানকারী মায়ের এ অধিকার (= সন্তানকে দুধপান করানোর পূর্ণ মেয়াদ জীবিকা ও পোশাকাদি প্রাপ্তির অধিকার) যেমন সন্তানের পিতার উপর রয়েছে তেমনি (ইতোমধ্যে তার মৃত্যু ঘটলে) তার ওয়ারিসদের উপরও রয়েছে সমান পরিমাণে। ফাইন আরাদা ফিসালান = তারপর উভয়পক্ষ যদি (নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই) সন্তানকে দুধ ছাড়াতে এরাদা/ ইচ্ছা করে। আন তারাদিম মিনহুমা ওয়া তাশাভুরিন = উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে ও পরামর্শক্রমে। ফালা জুনাহা আলাইহিমা = তাহলে উভয়পক্ষের কারো জুনাহ/ গুনাহ নেই। ওয়া ইন আরাত্তুম আন = আর যদি তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করো যে। তাছতারদিউ = তোমরা রদাআত/ দুধপান করাবে (কোন সেবিকা মা দিয়ে)। আওলাদুকুম = তোমাদের সন্তানদেরকে। ফালা জুনাহা আলাইকুম = তাহলে তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই। ইযা = যখন। ছাল্লামতুম = তোমরা (সেই সন্তানের) নিরাপত্তা নিশ্চিত করো। মা আতাইতুম = যাকে (যে সন্তানকে) তোমরা (অন্যের হাতে) অর্পন করেছো। বিল মা’রুফ = ন্যায়সঙ্গতভাবে (খরচাদি দেয়ার মাধ্যমে)। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া’লামূ = আর জেনে রাখো যে। আন্নাল্লাহা বিমা তা’মালুনা বাছীর = নিশ্চয় আল্লাহ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তা সম্পর্কে যা কিছু তোমরা করো।
আর মায়েরা দুধপান করাবে তাদের (= নিজেদের) সন্তানদেরকে পূর্ণ দুবছর, ঐ পিতার জন্য যে এরাদা/ ইচ্ছা করেছে যে, তার সন্তান রদাআতের/ দুধপানের পূর্ণ মেয়াদ দুধপান করুক। এ অবস্থায় যে পুরুষের শিশু জন্ম নিয়েছে তার দায়িত্ব হচ্ছে তাদেরকে (= সন্তানদের মায়েদেরকে) রিযক/ জীবিকা ও পোষাকাদি দিতে থাকবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর কারো প্রতি বোঝা চাপানো যাবে না তার সামর্থ্য ব্যতীত। ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না মাকে এ জন্য যে, সন্তান তার আর যে পুরুষের শিশু জন্ম নিয়েছে তাকে এ জন্য যে, সন্তান তার। আর দুধদানকারী মায়ের এ অধিকার (= সন্তানকে দুধপান করানোর পূর্ণ মেয়াদ জীবিকা ও পোশাকাদি প্রাপ্তির অধিকার) যেমন সন্তানের পিতার উপর রয়েছে তেমনি (ইতোমধ্যে তার মৃত্যু ঘটলে) তার ওয়ারিসদের উপরও রয়েছে সমান পরিমাণে। তারপর উভয়পক্ষ যদি (নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই) সন্তানকে দুধ ছাড়াতে এরাদা/ ইচ্ছা করে উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে ও পরামর্শক্রমে, তাহলে উভয়পক্ষের কারো জুনাহ/ গুনাহ নেই। আর যদি তোমরা এরাদা/ ইচ্ছা করো যে, তোমরা রদাআত/ দুধপান করাবে (কোন সেবিকা মা দিয়ে) তোমাদের সন্তানদেরকে, তাহলে তোমাদের জুনাহ / গুনাহ নেই, যখন তোমরা (সেই সন্তানের) নিরাপত্তা নিশ্চিত করো যাকে (= যে সন্তানকে) তোমরা (অন্যের হাতে) অর্পন করেছো, ন্যায়সঙ্গতভাবে (খরচাদি দেয়ার মাধ্যমে)। আর আল্লাহকে ভয় করো আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন) তা সম্পর্কে যা কিছু তোমরা করো।
২:২৩৪
ওয়াল্লাযীনা ইউতাওফফাওনা মিনকুম = আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা ওফাত/ মৃত্যুবরণ করে। ওয়া ইয়াযারূনা আযওয়াজান = আর তাদের পর তাদের স্ত্রীগণ জীবিত থাকে। ইয়াতারব্বাসনা বিআনফুসিহিন্না = তারা (= স্ত্রীগণ) নিজেদেরকে অপেক্ষায় রাখবে (= বিবাহ করবে না)। আরবাআতা আশহুরিন ওয়া আশারান = চারমাস দশদিন। ফাইযা = তারপর যখন। বালাগনা আজালাহুন্না = তারা তাদের আজাল (= ইদ্দাতের শেষসীমা) পূর্ণ করে। ফালা জুনাহ আলাইকুম = তাহলে তোমাদের (= মুসলিম উম্মাহর) জুনাহ/ গুনাহ নেই। ফীমা ফাআলনা ফী আনফুসিহিন্না বিল মা’রূফ = সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিষয়ে যা (= যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন) করে ন্যায়সঙ্গতভাবে (উহার বিষয়ে)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। বিমা তা’মালূনা খাবীর = তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।
আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা ওফাত/ মৃত্যুবরণ করে আর তাদের পর তাদের স্ত্রীগণ জীবিত থাকে তারা (= স্ত্রীগণ) নিজেদেরকে অপেক্ষায় (= বিবাহ করবে না) রাখবে চারমাস দশদিন (যদি না তারা গর্ভবতী হয়)। তারপর যখন তারা তাদের আজাল (= ইদ্দাতের শেষসীমা) পূর্ণ করে, তাহলে তোমাদের (= মুসলিম উম্মাহর) জুনাহ/ গুনাহ নেই সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিষয়ে যা (= যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন) করে ন্যায়সঙ্গতভাবে (উহার বিষয়ে)। আর আল্লাহ তোমাদের আমলের বিষয়ে খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।
২:২৩৫
ওয়া লা জুনাহা আলাইকুম = আর তোমাদের উপর কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই। ফীমা আররাদতুম বিহী মিন খিতবাতিন নিছায়ি আও আকুনতুম ফী আনফুছিকুম = সেক্ষেত্রে তোমরা যা (তোমাদের কথাবার্তায়) প্রকাশ করো (বিধবা) নারীদের বিবাহের পর্যায়ে পড়ে এমন কিছু অথবা (এরূপ চিন্তা) গোপন রাখো তোমাদের মনের মধ্যে (উহার বিষয়ে)। আলিমাল্লাহু = আল্লাহ জানেন যে। আন্নাকুম = নিশ্চয় তোমরা। ছাতাযকুরূনাহুন্না = তোমাদের আলোচনায় তাদেরকে রাখবেই। ওয়াকিল লা তুওয়ায়িদূহুন্না ছিররান = কিন্তু তোমরা তাদেরকে (বিবাহ করার) ওয়াদা করো না গোপনে। ইল্লা আন তাক্বুলূ বিল মা’রূফ = কিন্তু এটা হতে পারে যে, তোমরা তাদের সাথে কথা বলবে ন্যায়নীতি বজায় রেখে। ওয়া লা তা’যিমূ উক্বদাতান নিকাহি = আর তোমরা সিদ্ধান্ত করো না বিবাহ বন্ধনের। হাত্তা = যতক্ষণ না। ইয়াবলুগাল কিতাবা আজালাহু = বিধিবদ্ধ বিষয় (অর্থাৎ ইদ্দাত) তার নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে। ওয়া’লামূ = আর জেনে রাখো যে। আন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়া’লামু = জানেন। মা ফী আনফুসিকুম = কী আছে তোমাদের মনে। ফাহযারুহু = সুতরাং তোমরা তাঁকে ভয় করো। ওয়াল্লামূ আন্না = আর জেনে রাখো যে। আল্লাহা গাফুরুন হালীম = আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, হালীম/ সহনশীল।
আর তোমাদের উপর কোন জুনাহ/ গুনাহ নেই সেক্ষেত্রে তোমরা যা (তোমাদের কথাবার্তায়) প্রকাশ করো (বিধবা) নারীদের বিবাহের পর্যায়ে পড়ে এমন কিছু অথবা (এরূপ চিন্তা) গোপন রাখো তোমাদের মনের মধ্যে (উহার বিষয়ে)। আল্লাহ জানেন যে, নিশ্চয় তোমরা তোমাদের আলোচনায় তাদেরকে রাখবেই। কিন্তু তোমরা তাদেরকে (বিবাহ করার) ওয়াদা করো না গোপনে। কিন্তু এটা হতে পারে যে, তোমরা তাদের সাথে কথা বলবে ন্যায়নীতি বজায় রেখে। আর তোমরা সিদ্ধান্ত করো না বিবাহ বন্ধনের যতক্ষণ না বিধিবদ্ধ বিষয় (অর্থাৎ ইদ্দাত) তার নির্ধারিত শেষ সীমায় পৌঁছে। আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন কী আছে তোমাদের মনে। সুতরাং তোমরা তাঁকে ভয় করো। আর জেনে রাখো যে, আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল, হালীম/ সহনশীল।
২:২৩৬
লা জুনাহা আলাইকুম = তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই। ইন তল্লাকতুমুন্নিছাআ = যদি (বিশেষ কোন কারণে) তোমরা তালাক দাও স্ত্রীদেরকে। মা লাম তামাছছুহুন্না = তাদেরকে তোমরা স্পর্শ করার আগেই। আও = অথবা। তাফরিদূহু লাহুন্না ফারীদাতান = দেনমোহর ধার্য করার আগে (উহার বিষয়ে অর্থাৎ এরূপ তালাক দেয়ায় বা এরূপ অবস্থায় তালাক দিলে দেনমোহর বাবদ কিছু না দেয়ায়)। ওয়া মাততিয়ূহুন্না = আর এ অবস্থায় তোমরা তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিতে হবে। আলাল মূছিয়ি কাদারুহু = সচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে। ওয়া আলা মুক্বতিরি ক্বাদারিহি = আর অসচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে। মাতাআম বিল মা’রূফ = ন্যায়সঙ্গত ভোগসামগ্রী। হাক্কান আলাল মুহসিনীন = এটা মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের উপর একটি দায়িত্ব।
তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই, যদি (বিশেষ কোন কারণে) তোমরা তালাক দাও স্ত্রীদেরকে তাদেরকে তোমরা স্পর্শ করার আগেই অথবা দেনমোহর ধার্য করার আগে (উহার বিষয়ে অর্থাৎ এরূপ তালাক দেয়ায় বা এরূপ অবস্থায় তালাক দিলে দেনমোহর বাবদ কিছু না দেয়ায়)। আর এ অবস্থায় তোমরা তাদেরকে ভোগসামগ্রী দিতে হবে। সচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে আর অসচ্ছল তার সক্ষমতা বা সাধ্যসীমা অনুসারে। ন্যায়সঙ্গত ভোগসামগ্রী। এটা মুহসিনদের/ উত্তম আচরণকারীদের উপর একটি দায়িত্ব।
২:২৩৭
ওয়া ইন তল্লাকতুমুহুন্না = আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও। মিন ক্বাবলি আন তামাচ্ছূহুন্না = তাদেরকে স্পর্শ করার আগে। ওয়া কাদ ফারাত্তুম লাহুন্না ফারীদাতান = আর তাদের জন্য দেনমোহর ধার্য করার পরে। ফানিসফু মা ফারদতুম = তাহলে ধার্যকৃত দেনমোহরের অর্ধেক তাদেরকে দিতে হবে। ইল্লা আইঁ ইয়া’ফূনা = কিন্তু যদি স্ত্রী অনুগ্রহ প্রকাশ করে (= কম নেয়)। আও = অথবা। ইয়া’ফুয়াল্লাযী বিআদিহী উকদাতুন নিকাহি = যার হাতে উকদাতুন নিকাহ/ বিবাহের বন্ধন (তথা তালাক বিভাগের নিযুক্ত কর্মকর্তা) অনুগ্রহ প্রকাশ করে। ওয়া আন তা’ফূ = অবশ্য তোমরা (= পুরুষরা) অনুগ্রহ প্রকাশ করলে (= পূর্ণ পরিমাণ দিলে) তা। আক্বরাবু লিত তাকওয়া = তাকওয়ার নিকটতর (= আল্লাহর বিধানের চাহিদার সাথে অধিক সাযুজ্যশীল)। ওয়া = আর। লা তানছাউল ফাদলা বায়নাকুম = তোমরা ভুলে যেও না অনুগ্রহপূর্ণ আচরণ করতে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে। ইন্নাল্লাহা বিমা তা’মালূনা বাছীর = নিশ্চয় আল্লাহ যা কিছু তোমরা করো তার দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)।
আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক দাও তাদেরকে স্পর্শ করার আগে আর তাদের জন্য দেনমোহর ধার্য করার পরে তাহলে ধার্যকৃত দেনমোহরের অর্ধেক তাদেরকে দিতে হবে। কিন্তু যদি স্ত্রী অনুগ্রহ প্রকাশ করে (= কম নেয়) অথবা যার হাতে উকদাতুন নিকাহ/ বিবাহের বন্ধন (তথা তালাক বিভাগের নিযুক্ত কর্মকর্তা) অনুগ্রহ প্রকাশ করে তা ভিন্ন কথা। অবশ্য তোমরা (= পুরুষরা) অনুগ্রহ প্রকাশ করলে (= পূর্ণ পরিমাণ দিলে) তা তাকওয়ার নিকটতর (= আল্লাহর বিধানের চাহিদার সাথে অধিক খাপ খায়)। আর তোমরা ভুলে যেও না অনুগ্রহপূর্ণ আচরণ করতে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে। নিশ্চয় আল্লাহ যা কিছু তোমরা করো তার দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)।
২:২৩৮
হাফিযূ = তোমরা হিফাযাতকারী হও। আলাস সালাওয়াতি = সালাওয়াতের/ সালাতসমূহের উপর। ওয়াস সালাতিল উসতা = আর (বিশেষ করে) আস সালাতিল উসতার/ মধ্যবর্তী সালাতের উপর। ওয়া = আর। ক্বূমূ = তোমরা দাঁড়াও। লিল্লাহি = আল্লাহর উদ্দেশ্যে। ক্বানিতীন = ক্বানিতীন/ বিনয়ী হয়ে।
তোমরা হিফাযাতকারী হও সালাওয়াতের/ সালাতসমূহের উপর আর (বিশেষ করে) ‘আস সালাতিল উসতার/ মধ্যবর্তী সালাতের উপর। আর তোমরা দাঁড়াও আল্লাহর উদ্দেশ্যে ক্বানিতীন/ বিনয়ী হয়ে।
২:২৩৯
ফাইন খিফতুম = তবে যদি তোমরা ভয় কর। ফারিজালান আও রুকবানান = তাহলে পদচারী হও বা আরোহী হও। ফাইযা আমিনতুম = তারপর যখন তোমরা নিরাপদ হও। ফাযকুরুল্লাহা = তখন আল্লাহকে স্মরণ কর। কামা = যেভাবে। আল্লামাকুম = তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। মা লাম তাকূনূ তা’লামূন = যা তোমরা জানতে না।
তবে যদি তোমরা ভয় কর তাহলে পদচারী হও বা আরোহী হও। তারপর যখন তোমরা নিরাপদ হও তখন আল্লাহকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না।
২:২৪০
ওয়াল্লাযীনা ইউতাওয়াফফাওনা মিনকুম = আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা ওফাত/ মৃত্যুবরণ করে। ওয়া ইয়াযারূনা আযওয়াজান = আর তাদের পর তাদের স্ত্রীগণ জীবিত থাকে। ওয়াসিয়্যাতাল লিআযওয়াজিহিম = তাহলে তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে (তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আল্লাহর) ওয়াসিয়্যাত হচ্ছে। মাতাআন ইল হাওলি = এক বছর পর্যন্ত (তাদের স্ত্রীদের) ভরণ পোষন দিতে হবে। গায়রা ইখরাজিন = এবং ঘর থেকে বের করে দেয়া যাবে না। ফাইন খারাজনা = তবে যদি তারা নিজেরাই বেরিয়ে যায়। ফালা জুনাহা আলাইকুম = তাহলে তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই। ফী মা ফাআলনা ফী আনফুছিহিন্না = সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিষয়ে যা (= যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন) করে। মিম মা’রূফ = ন্যায়সঙ্গতভাবে (সেই বিষয়ে)। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আযীযুন হাকীম = আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা ওফাত/ মৃত্যুবরণ করে আর তাদের পর তাদের স্ত্রীগণ জীবিত থাকে, তাহলে তাদের স্ত্রীদের বিষয়ে (তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি আল্লাহর) ওয়াসিয়্যাত হচ্ছে, এক বছর পর্যন্ত (তাদের স্ত্রীদের) ভরণ পোষন দিতে হবে এবং ঘর থেকে বের করে দেয়া যাবে না। তবে যদি তারা নিজেরাই বেরিয়ে যায় তাহলে তোমাদের উপর জুনাহ/ গুনাহ নেই সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের বিষয়ে যা (= যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন) করে ন্যায়সঙ্গতভাবে (সেই বিষয়ে)। আর আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
২:২৪১
ওয়া লিল মুতাল্লাক্বাতি মাতাউম বিল মা’রূফ = আর যে নারীকে তালাক দেয়া হয়েছে তাকে ন্যায়সঙ্গত (= যথাসাধ্য) ভোগসামগ্রী দিতে হবে। হাক্কান আলাল মুত্তাকীন = (ইহা) মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরু স্বামীদের) উপর দায়িত্ব।
আর যে নারীকে তালাক দেয়া হয়েছে তাকে ন্যায়সঙ্গত (= যথাসাধ্য) ভোগসামগ্রী দিতে হবে। (ইহা) মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরু স্বামীদের) উপর দায়িত্ব।
২:২৪২
কাযালিকা = এভাবে। ইউবাইয়িনুল্লাহু = আল্লাহ বয়ান/ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম তা’কিলূন = তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পারো।
এভাবেই আল্লাহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ, যাতে তোমরা আকল/ বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতে পার।
২:২৪৩
আলাম তারা ইলাল্লাযীনা = তুমি কি দেখনি তাদের পরিণতি যারা। খারাজূ মিন দিয়ারিহিম = বেরিয়ে গেছে তাদের ঘরবাড়ি থেকে। ওয়া হুম উলূফুন = অথচ তারা ছিলো সংখ্যায় হাজার হাজার। হাযারাল মাওতি = (তারা বেরিয়ে গেছে) মৃত্যুর ভয়ে। ফাক্বালা = তাই (তাদের এ কাপুরুষোচিত আচরণে রুষ্ট হয়ে) আল্লাহ বলেছেন। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। মূতূ = তোমরা মরে যাও। ছুম্মা = তারপর আবার। আহইয়াহুম = (তারা সাহসিকতার সাথে যালিমের মোকাবেলা করলে) তাদেরকে (জাতীয়) জীবনদান করেছেন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। লাযূ ফাদলিন আলান্নাছি = মানুষের উপর যূ ফাদলিন/ অনুগ্রহশীল। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। আকছারান্নাছি = অধিকাংশ মানুষ। লা ইয়াশকুরূন = শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
তুমি কি দেখনি তাদের পরিণতি যারা বেরিয়ে গেছে তাদের ঘরবাড়ি থেকে অথচ তারা ছিলো সংখ্যায় হাজার হাজার, (তারা বেরিয়ে গেছে) মৃত্যুর ভয়ে। তাই (তাদের এ কাপুরুষোচিত আচরণে রুষ্ট হয়ে) আল্লাহ বলেছেন তাদের উদ্দেশ্যে, ‘তোমরা মরে যাও’। তারপর আবার (তারা সাহসিকতার সাথে যালিমের মোকাবেলা করলে) তাদেরকে (জাতীয়) জীবনদান করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের উপর যূ ফাদলিন/ অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শোকর/ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
২:২৪৪
ওয়া = আর। ক্বাতিলূ ফী সাবিলিল্লাহি = তোমরা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। ওয়ালামূ আন্নাল্লাহা = আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ। ছামীউন আলীম = ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
আর তোমরা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করো। আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
২:২৪৫
মান যাল্লাযী = কে সে যে। ইউকরিদুল্লাহা = করয/ ঋণ দেবে আল্লাহকে। কারদান হাসানান = করযে হাসানা/ উত্তম ঋণ। ফাইউদ্বয়িফাহু লাহু = তাহলে তিনি তাকে উহা বাড়িয়ে (ফেরত) দেবেন। আদআফান কাছীরাতান = অনেক পরিমাণ বাড়িয়ে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহই। ইয়াক্ববিদু = সংকুচিত করেন (কমিয়ে আনেন)। ওয়া = আর। ইয়াবছুতু = সম্প্রসারিত করেন (বাড়িয়ে দেন)। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। তুরজাউন = তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
কে সে যে করয/ ঋণ দেবে আল্লাহকে, করযে হাসানা/ উত্তম ঋণ? তাহলে তিনি তাকে উহা বাড়িয়ে (ফেরত) দেবেন, অনেক পরিমাণ বাড়িয়ে। আর আল্লাহই সংকুচিত করেন ও সম্প্রসারিত করেন। আর তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।
২:২৪৬
আলাম তারা = তুমি কি দেখনি। ইলাল মালায়ি মিম বানী ইসরাইলা মিম বা’দী মূসা = মূসার পরের বানী ইসরাইলের প্রধানগণের অবস্থা। ইয ক্বলা = যখন তারা বলেছে। লিনাবিয়্যিল লাহুম = তাদের জন্য প্রেরিত নবীকে। -ব্আছ = (কাউকে) উঠিয়ে আনুন। লানা = আমাদের জন্য। মালিকান = (যুদ্ধের) অধিনায়ক/ সেনাপতিরূপে। নুক্বাতিল ফী সাবীলিল্লাহি = (তার নেতৃত্বে) আমরা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করবো। ক্বলা = সে বলেছে। হাল আছাইতুম = তোমরা এমন হবে কি? ইন = যদি। কুতিবা = বিধিবদ্ধ করা হয়। আলাইকুমুল কিতালু = তোমাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। আল্লা তুক্বাতিলূ = তখন তোমরা কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করবে না? ক্বলূ = তারা বলেছে। ওয়া মা লানা = আমাদের কী হয়েছে? আল্লা তুকাতিলা ফী সাবিলিল্লাহি = যে, আমরা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করবো না? ওয়া = অথচ। ক্বাদ উখরিজনা = আমাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে। মিন দিয়ারিনা = আমাদের ঘরবাড়ি থেকে? ওয়া আবনায়িনা = আর (আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে) আমাদের সন্তানসন্ততি থেকে। ফালাম্মা = তারপর যখন। কুতিবা = বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। আলাইহিমুল ক্বিতালু = তাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম। তাওয়াল্লাও = তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ইল্লা ক্বালীলাম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি ব্যতীত। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। আলীমুন বিয যালিমীন = যালিমদের সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
তুমি কি দেখনি মূসার পরের বানী ইসরাইলের প্রধানগণের অবস্থা? যখন তারা বলেছে তাদের জন্য প্রেরিত নবীকে, ‘(কাউকে) উঠিয়ে আনুন আমাদের জন্য (যুদ্ধের) অধিনায়ক/ সেনাপতিরূপে। (তার নেতৃত্বে) আমরা কিতাল ফী সাবীলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করবো’। সে বলেছে, ‘তোমরা এমন হবে কি, যদি বিধিবদ্ধ করা হয় তোমাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম, তখন তোমরা কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম করবে না?’ তারা বলেছে, আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা কিতাল ফী সাবিলিল্লাহ/ আল্লাহর পথে সশস্ত্র সংগ্রাম করবো না? অথচ আমাদেরকে বের করে দেয়া হয়েছে আমাদের ঘরবাড়ি থেকে, আর (আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে) আমাদের সন্তানসন্ততি থেকে’। তারপর যখন বিধিবদ্ধ করা হয়েছে তাদের উপর কিতাল/ সশস্ত্র সংগ্রাম, তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি ব্যতীত। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
২:২৪৭
ওয়া = আর। ক্বলা = বলেছে। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। নাবিয়্যুহুম = তাদের জন্য প্রেরিত নবী। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ক্বাদ বাআছা = সমুত্থিত করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। তালূতা = তালূতকে। মালিকান = (যুদ্ধের) অধিনায়ক/ সেনাপতিরূপে। ক্বলূ = তারা বলেছে। আন্না = কিরূপে। ইয়াকূনু = হবে। লাহুল মুলকু = তার জন্য অধিনায়কত্ব। আলাইনা = আমাদের উপরে? ওয়া = অথচ। নাহনু = আমরাই। আহাক্কু = অধিক হকদার। বিলমুলকি = অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে। মিনহু = তার তুলনায়। ওয়া = আর। লাম ইউ’তা = তাকে তো দেয়া হয়নি। ছাআতিম মিনাল মালি = মালসামানার প্রাচুর্য। ক্বলা = সে (নবী) বলেছে। ইন্নাল্লাহাসতফা = নিশ্চয় আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন। আলাইকুম = তোমাদের উপর। ওয়া = আর। যাদাহু = তাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাছতাতান ফিল ইলমি ওয়াল জিছমি = জ্ঞানগত ও দৈহিক সমৃদ্ধি। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউতি মুলকাহু = তাঁর (প্রতিনিধত্বমূলক) শাসন ক্ষমতার আধিপত্য দান করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (শাসন ক্ষমতার আধিপত্য দানের) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ওয়াছিউন = ওয়াছি’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
আর বলেছে তাদের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য প্রেরিত নবী, ‘নিশ্চয় আল্লাহ সমুত্থিত করেছেন তোমাদের জন্য তালূতকে (যুদ্ধের) অধিনায়ক/ সেনাপতিরূপে’। তারা বলেছে, ‘কিরূপে হবে তার জন্য অধিনায়কত্ব আমাদের উপরে? অথচ আমরাই অধিক হকদার অধিনায়কত্বের ক্ষেত্রে তার তুলনায়। আর তাকে তো দেয়া হয়নি মালসামানার প্রাচুর্য’। সে (নবী) বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন তোমাদের উপর। আর তাকে বাড়িয়ে দিয়েছেন জ্ঞানগত ও দৈহিক সমৃদ্ধি। আর আল্লাহ তাঁর (প্রতিনিধত্বমূলক) শাসন ক্ষমতার আধিপত্য দান করেন যাকে তিনি (শাসন ক্ষমতার আধিপত্য দানের) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ ওয়াছি’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
২:২৪৮
ওয়া = আর। ক্বলা = বলেছে। লাহুম = তাদের উদ্দেশ্যে। নাবিয়্যুহুম = তাদের জন্য প্রেরিত নবী। ইন্না = নিশ্চয়। আয়াতা মুলকিহী = তার অধিনায়কত্বের নিদর্শন। আন = এই যে। ইয়্যাতিয়াকুমুত তাবূতু = তোমাদের কাছে আসবে তাবূত/ সিন্ধুক। ফীহি = যাতে আছে। ছাকীনাতু = মনের প্রশান্তি। মির রব্বিকুম = তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। বাকীয়্যাতুন = বাকী/ অবশিষ্ট জিনিস। মিম্মা তারাকা = তা থেকে যা তরক করেছে/ ছেড়ে গেছে। আলু মূসা ওয়া আলু হারুনা = মূসার বংশধর ও হারুনের বংশধর। তাহমিলুহু মালাইকাতু = তা এখন বহন করছে ফেরেশতাগণ। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহার মধ্যে। লাআয়াতাল লাকুম = তোমাদের জন্য আয়াত/ নিদর্শন আছে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনীন = মু’মিনীন।
আর বলেছে তাদের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য প্রেরিত নবী, ‘নিশ্চয় তার অধিনায়কত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের কাছে আসবে তাবূত/ সিন্ধুক। যাতে আছে মনের প্রশান্তি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আর বাকী/ অবশিষ্ট জিনিস তা থেকে যা তরক করেছে/ ছেড়ে গেছে মূসার বংশধর ও হারুনের বংশধর। তা এখন বহন করছে ফেরেশতাগণ। নিশ্চয় উহার মধ্যে তোমাদের জন্য আয়াত/ নিদর্শন আছে যদি তোমরা হও মু’মিনীন।
২:২৪৯
ফালাম্মা = তারপর যখন। ফাসালা তালূতা = তালূত অভিযানে বের হয়েছে। বিল জুনুদি = সেনাবাহিনীসহ। ক্বলা = সে (তালূত) বলেছে। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। মুবতালীকুম = তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন। বিনাহারিন = একটি নদী/ ঝর্ণা দ্বারা। ফামান শারিবা = সুতরাং যে পান করবে। মিনহু = উহা থেকে। ফালাইছা মিন্নী = সে আমার নয়। ওয়া = আর। মাল্লাম ইয়াতআমহু = যে তার স্বাদ নেবে না। ফাইন্নাহু মিন্নী = নিশ্চয় সে-ই আমার। ইল্লা মানিগতারাফা = কিন্তু যে কোষে করে নেবে। গুরফাতাম বিইয়াদিহি = এক কোষ তার হাত দিয়ে তার কথা ভিন্ন (= তার দোষ হবে না)। ফাশারিবূ মিনহু = তারপর তারা পান করেছে উহা থেকে (তৃপ্তি সহকারে)। ইল্লা ক্বালীলাম মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি ব্যতীত। ফালাম্মা জাওযাহু = তারপর যখন উহা অতিক্রম করেছে। হুয়া = সে। ওয়া = আর। আল্লাযীনা আমানূ মাআহু = যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তার সাথে তারা। ক্বলূ = (যারা তৃপ্তিসহকারে পান করেছে) তারা বলেছে। লা তক্বাতা লানাল ইয়াওমু = (সক্ষমতা না থাকায়) আজ আমাদের বাধ্যতামূলক দায়বদ্ধতা নেই। বিজালূতা ও জুনূদিহী = জালুত ও তার সেনাবাহিনীর সাথে (যুদ্ধ করার)। ক্বলাল্লাযীনা ইয়াযুন্নূনা আন্নাহুম মুলাকুল্লাহি = যারা যন্নুন/ ধারণা রেখেছে যে, তারা হবে আল্লাহর সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) মোলাকাতকারী, তারা বলেছে। কাম = কত। মিন ফিআতিন ক্বালীলাতিন = ছোট ছোট দল। গালাবতা = গালিব/ বিজয়ী হয়েছে। ফিআতান কাছীরাতান = বড় বড় দলের উপর। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। মাআস সাবিরীন = সবরকারীদের সাথে থাকেন।
তারপর যখন তালূত অভিযানে বের হয়েছে সেনাবাহিনীসহ তখন সে (তালূত) বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন একটি নদী/ ঝর্ণা দ্বারা। সুতরাং যে পান করবে উহা থেকে সে আমার নয়। আর যে তার স্বাদ নেবে না নিশ্চয় সে-ই আমার। কিন্তু যে কোষে করে নেবে এক কোষ তার হাত দিয়ে তার কথা ভিন্ন (= তার দোষ হবে না)’। তারপর তারা পান করেছে উহা থেকে (তৃপ্তি সহকারে) তাদের মধ্য থেকে অল্পসংখ্যক ব্যক্তি ব্যতীত। তারপর যখন উহা অতিক্রম করেছে সে আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তার সাথে তারা, তখন (যারা তৃপ্তিসহকারে পান করেছে) তারা বলেছে, ‘(সক্ষমতা না থাকায়) আজ আমাদের বাধ্যতামূলক দায়বদ্ধতা নেই জালুত ও তার সেনাবাহিনীর সাথে (যুদ্ধ করার)’। যারা যন্নুন/ ধারণা রেখেছে যে, তারা হবে আল্লাহর সাথে (পর্দার অন্তরাল থেকে) মোলাকাতকারী, তারা বলেছে, ‘কত ছোট ছোট দল গালিব/ বিজয়ী হয়েছে বড় বড় দলের উপর আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর আল্লাহ সবরকারীদের সাথে থাকেন’।
২:২৫০
ওয়া = আর। লাম্মা = যখন। বারাযূ = তারা (তালূত ও তার সেনাবাহিনী) মুখোমুখী হলো। লিজালূতা ওয়া জুনূদিহী = জালুত ও তার সেনাবাহিনীর। ক্বলূ = তারা (তালুত ও তার সেনাবাহিনী) বলেছে। রব্বানা = আমাদের প্রতিপালক। আফরিগ = ঢেলে দিন। আলাইনা = আমাদের উপর। সবরান = সবর। ওয়া = আর। ছাব্বিত = মজবুত রাখুন। আকদামানা = আমাদের কদমসমূহ। ওয়ানসুরনা = আর আমাদেরকে সাহায্য করুন। আলাল কাওমিল কাফিরীন = কাফির কওমের উপর।
আর যখন তারা (তালূত ও তার সেনাবাহিনী) মুখোমুখী হলো জালুত ও তার সেনাবাহিনীর, তারা (তালুত ও তার সেনাবাহিনী) বলেছে, ‘আমাদের প্রতিপালক, ঢেলে দিন আমাদের উপর সবর আর মজবুত রাখুন আমাদের কদমসমূহ আর আমাদেরকে সাহায্য করুন কাফির কওমের উপর’।
২:২৫১
ফাহাযামূহুম = সুতরাং তারা (তালুত ও তার সেনাবাহিনী) তাদেরকে (জালুত ও তার সেনাবাহিনীকে) পরাজিত করেছে। বিইযনিল্লাহি = আল্লাহর অনুমতিক্রমে। ওয়া = আর। কাতালা = কাতল/ হত্যা করেছে। দাউদা জালূতা = দাউদ জালুতকে। ওয়া = আর। আতাহুল্লাহু = আল্লাহ তাকে (দাউদকে) দান করেছেন। আল মুলকু ওয়াল হিকমাতা = অধিনায়কত্ব ও হিকমাত/ বিজ্ঞতা। ওয়া = আর। আল্লামাহু = তাকে শিক্ষা দিয়েছেন। মিম মা ইয়াশাউ = যা (তাকে শিক্ষা দেয়ার) ইচ্ছা করেছেন। ওয়া = আর। লাও লা = যদি না করা হতো। দাফউল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিহত। আন্নাছা বা’দুহুম লিবা’দিন = মানুষের একটি দলকে অপর একটি দল দ্বারা। লাফাসাদাতিল আরদি = পৃথিবী ফাসাদগ্রস্ত/ বিপর্যস্ত হয়ে যেত। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। যূ ফাদলিন = যূ ফাদলিন/ অনুগ্রহশীল। আলাল আলামীন = সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
সুতরাং তারা (তালুত ও তার সেনাবাহিনী) তাদেরকে (জালুত ও তার সেনাবাহিনীকে) পরাজিত করেছে আল্লাহর অনুমতিক্রমে। আর কাতল/ হত্যা করেছে দাউদ জালুতকে। আর আল্লাহ তাকে (দাউদকে) দান করেছেন অধিনায়কত্ব ও হিকমাত/ বিজ্ঞতা। আর তাকে (দাউদকে) শিক্ষা দিয়েছেন যা (তাকে শিক্ষা দেয়ার) ইচ্ছা করেছেন। আর যদি না করা হতো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিহত মানুষের একটি দলকে অপর একটি দল দ্বারা, তাহলে পৃথিবী ফাসাদগ্রস্ত/ বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ যূ ফাদলিন/ অনুগ্রহশীল সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর।
২:২৫২
তিলকা আয়াতুল্লাহি = এগুলি আল্লাহর আয়াত। নাতলূহা = আমরা উহা তিলাওয়াত করছি। বিলহাক্কি = যথাযথভাবে/ সঠিক তথ্যসহ। ওয়া = আর। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লামিনাল মুরছালীন = রসূলদের অন্তর্ভুক্ত।
এগুলি আল্লাহর আয়াত। আমরা উহা তিলাওয়াত করছি যথাযথভাবে/ সঠিক তথ্যসহ। আর নিশ্চয় তুমি রসূলদের অন্তর্ভুক্ত।
২:২৫৩
তিলকার রুসুলু = ঐ রসূলগণ। ফাদদালনা = আমরা বিশিষ্টতা দিয়েছি। বা’দুহুম আলা বা’দিন = তাদের কাউকে কারো উপর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কারো সাথে। কাল্লামাল্লাহু = আল্লাহ কথা বলেছেন। ওয়া = আর। রফাআ = সমুন্নত করেছেন। বা’দুহুম = তাদের কাউকে। দরাজাতিন = মর্যাদায়। ওয়া = আর। আতাইনা = আমরা দিয়েছি। ঈসাবনা মারইয়ামা = মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে। আল বাইয়িনাতি = বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ। ওয়া আইয়াদনাহু = আর তার হাতকে মযবুত করেছি। বিরুহিল কুদুস = রুহুল কুদুস/ পবিত্র রুহ দ্বারা। ওয়া = আর। লাও শাআল্লাহু = যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। মাক্বতাতালা = তারা (পরস্পরে) কিতাল/ যুদ্ধ করতো না। আল্লাযীনা = যারা। মিম বা’দিহিম = তাদের (= ঐ রসূলদের) পরে ছিলো। মিম বা’দি মা জাআতহুমুল বাইয়িনাতু = এরপরও যে, তাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ। ওয়ালাকিনিখতালাফূ = কিন্তু তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে। ফামিনহুম = তারপর তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। মিনহুম = তাদের মধ্য থেকে। মান = কেউ। কাফারা = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। লাও শাআল্লাহু = যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। মাক্বতাতালূ = তারা (পরস্পরে) কিতাল/ যুদ্ধ করতো না। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। ইয়াফআলু = করেন। মা ইউরিদ = যা (করার) এরাদা/ ইচ্ছা করেন।
ঐ রসূলগণ - আমরা বিশিষ্টতা দিয়েছি তাদের কাউকে কারো উপর। তাদের মধ্য থেকে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। আর সমুন্নত করেছেন তাদের কাউকে মর্যাদায়। আর আমরা দিয়েছি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আর তার হাতকে মযবুত করেছি রুহুল কুদুস/ পবিত্র রুহ দ্বারা। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তারা (পরস্পরে) কিতাল/ যুদ্ধ করতো না, যারা তাদের (= ঐ রসূলদের) পরে ছিলো, এরপরও যে, তাদের কাছে এসেছে বাইয়িনাত/ সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ। কিন্তু তারা ইখতিলাফ/ মতপার্থক্য করেছে। তারপর তাদের মধ্য থেকে কেউ ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর তাদের মধ্য থেকে কেউ কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তারা (পরস্পরে) কিতাল/ যুদ্ধ করতো না। কিন্তু আল্লাহ করেন যা (করার) এরাদা/ ইচ্ছা করেন।
২:২৫৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আনফিকূ = তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিম্মা = তা থেকে যা। রযাক্বনাকুম = আমরা তোমাদেরকে রিযক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছি। মিন ক্বাবলি আন = এর পূর্বে যে। ইয়া’তিয়া = আসবে। ইয়াওমুল লা বাইয়ুন ফীহি = সেই দিন যেদিন কোন বাইয়ুন/ বেচাকেনা হবে না। ওয়া লা খুল্লাতুন = আর কোন খুল্লাত/ বন্ধুত্ব বজায় থাকবে না। ওয়া লা সাফায়াতুন = আর কোন শাফায়াত/ সুপারিশ চলবে না। ওয়াল কাফিরূনা হুমুয যালিমূন = আর কাফিরগণই যালিম।
হে ঐসব লোক, যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো তা থেকে যা আমরা তোমাদেরকে রিযক/ জীবিকাস্বরূপ দিয়েছি, এর পূর্বে যে, আসবে সেই দিন যেদিন কোন বাইয়ুন/ বেচাকেনা হবে না আর কোন খুল্লাত/ বন্ধুত্ব বজায় থাকবে না আর কোন শাফায়াত/ সুপারিশ চলবে না। আর কাফিরগণই যালিম।
২:২৫৫
আল্লাহু = আল্লাহু। লা ইলাহা ইল্লা হুয়া = কোন ইলাহ নেই, তিনি (= আল্লাহ) ছাড়া। আল হাইয়ুল কাইয়ুম = তিনি আল হাইয়ু/ চিরজীবন্ত, আল কাইয়ুম/ চিরপ্রতিষ্ঠিত। লা তা’খুজুহু = তাঁকে ধরে না। ছিনাতুন = তন্দ্রা। ওয়া লা নাউম = আর ধরে না নিদ্রা। লাহু = তাঁরই অধিকারে। মা ফিস সামাওয়াতি = যা আছে আকাশসমূহে। ওয়া মা ফিল আরদি = আর যা আছে জমিনে। মান যাল্লাযী = কে সে যে। ইয়াশফাউ = শাফায়াত/ সুপারিশ করবে? ইনদাহু = তাঁর কাছে। ইল্লা বিইযনিহী = তাঁর অনুমতি ছাড়া? ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা বায়না আয়দিহিম ওয়া মা খালফাহুম = যা আছে তাদের সামনে আর যা আছে তাদের পেছনে। ওয়া লা ইয়ুহিতূনা বিশাইয়িম মিন ইলমিহি = আর তারা আয়ত্ত করতে পারে না জ্ঞান থেকে কিছুই। ইল্লা বিমা শাআ = তিনি যা (= তাদেরকে যতটুকু জ্ঞান দেয়ার) ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। ওয়াছিআ কুরছিয়ুহুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = পরিব্যাপ্ত রয়েছে তাঁর কুরসি (= ক্ষমতার ব্যাপ্তি) আকাশসমূহ ও জমিনে। ওয়া লা ইউদুহু = আর তাঁকে ক্লান্ত করে না। হিফযুহুমা = এ উভয়ের (= আকাশসমূহ ও জমিনের) হিফাযাত করার কাজ। ওয়া = আর। হুয়াল আলীয়ুল আযীম = তিনি আল আলী/ সুমহান, আল আযীম/ সর্বশ্রেষ্ঠ।
আল্লাহু, কোন ইলাহ নেই, তিনি (= আল্লাহ) ছাড়া। তিনি আল হাইয়ু/ চিরজীবন্ত, আল কাইয়ুম/ চিরপ্রতিষ্ঠিত। তাঁকে ধরে না তন্দ্রা আর ধরে না নিদ্রা। তাঁরই অধিকারে যা আছে আকাশসমূহে আর যা আছে জমিনে। কে সে যে শাফায়াত/ সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে আর যা আছে তাদের পেছনে। আর তারা আয়ত্ত করতে পারে না জ্ঞান থেকে কিছুই তিনি যা (= তাদেরকে যতটুকু জ্ঞান দেয়ার) ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। পরিব্যাপ্ত রয়েছে তাঁর কুরসি (= ক্ষমতার ব্যাপ্তি) আকাশসমূহ ও জমিনে। আর তাঁকে ক্লান্ত করে না এ উভয়ের (= আকাশসমূহ ও জমিনের) হিফাযাত করার কাজ। তিনি আল আলী/ সুমহান, আল আযীম/ সর্বশ্রেষ্ঠ।
২:২৫৬
লা ইকরাহা ফিদ দ্বীন = দ্বীন/ জীবন বিধান গ্রহণের বিষয়ে বলপ্রয়োগ নেই। ক্বাদ তাবাইয়ানা = নিশ্চয় সুস্পষ্ট করা হয়েছে। আর রুশদু মিনাল গাইয়ি = সঠিক পথকে ভ্রান্ত পথ থেকে। ফামাইঁ ইয়াকফুর বিত তাগূত = সুতরাং যে কুফর/ মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাগুতকে। ওয়া ইয়ুমিম বিল্লাহি = আর ঈমান/ মেনে নিতে স্বীকার করেছে আল্লাহকে। ফাক্বাদিছতামছাকা = সে-ই ধারণ করেছে। বিল উরওয়াতিল উছকা = মজবুত হাতল। লান ফিসামা লাহা = যা কখনো ভেঙ্গে যাবে না। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ছামীয়ুন আলীম = ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
দ্বীন/ জীবন বিধান গ্রহণের বিষয়ে বলপ্রয়োগ নেই। নিশ্চয় সুস্পষ্ট করা হয়েছে সঠিক পথকে ভ্রান্ত পথ থেকে। সুতরাং যে কুফর/ মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তাগুতকে আর ঈমান/ মেনে নিতে স্বীকার করেছে আল্লাহকে, সে-ই ধারণ করেছে মজবুত হাতল যা কখনো ভেঙ্গে যাবে না। আর আল্লাহ ছামী/ সর্বশ্রোতা (= যিনি সব শুনেন), আলীম/ সর্বজ্ঞাতা (= যিনি সব জানেন)।
২:২৫৭
আল্লাহু ওয়ালিয়্যুল্লাযীনা = আল্লাহ তাদের ওয়ালী/ অভিভাবক, যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ইউখরিজুহুম = তিনি তাদেরকে বের করে আনেন। মিনায যুলুমাতি = যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে। ইলান নূর = নূর/ আলোর দিকে। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। কাফারূ = কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। আওলিয়াহুমুত তাগূত = তাদের আওলিয়া/ ওয়ালীগণ/ অভিভাবকগণ হচ্ছে তাগূত। ইয়ুখরিজুনাহুম = তারা তাদেরকে বের করে নেয়। মিনান নূরি = নুর/ আলোর থেকে। ইলায যুলুমাত = যুলুমাত/ অন্ধকারের দিকে। উলায়িকা = তারা। আসহাবুন নার = আসহাবুন নার (যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম ফীহা খালিদূন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
আল্লাহ তাদের ওয়ালী/ অভিভাবক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, তিনি তাদেরকে বের করে আনেন যুলুমাত/ অন্ধকার থেকে নূর/ আলোর দিকে। আর যারা কুফর/ অবিশ্বাস করেছে তাদের আওলিয়া/ ওয়ালীগণ/ অভিভাবকগণ হচ্ছে তাগূত। তারা তাদেরকে বের করে নেয় নুর/ আলোর থেকে যুলুমাত/ অন্ধকারের দিকে। তারা আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
২:২৫৮
আলাম তারা ইলাল্লাযী = তুমি কি দেখনি তার অবস্থা যে। হাজ্জাল ইবরাহীমা = ইবরাহীমের সাথে হুজ্জাত/ বিতর্ক করেছে। ফী রব্বিহী = তার রব/ প্রতিপালক সম্বন্ধে। আন = এজন্য যে। আতাহুল্লাহুল মুলকু = আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন আধিপত্য। ইয ক্বলা ইবরাহীমু = যখন ইবরাহীম বলেছে। রবিয়াল্লাযী = তিনিই আমার রব/ প্রতিপালক, যিনি। ইইহয়ি ওয়া ইয়ুমীতু = হায়াত/ জীবন দেন আর মওত/ মৃত্যু দেন। ক্বলা = সে বলেছে। আনা = আমিই। উহয়ী = জীবিত রাখি (= মৃত্যুদন্ড মাফ করে দিই)। ওয়া = আর। উমিতু = মেরে ফেলি (= মৃত্যুদন্ড দিই)। ক্বলা ইবরাহীমু = ইবরাহীম বলেছে। ফাইন্নাল্লাহা = তবে নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়া’তিয়া বিশ শামছি = সূর্যকে (দৃষ্টিতে) এনে দেন। মিনাল মাশরিকি = পূর্ব দিক থেকে। ফা’তি = তাহলে তুমি এনে দাও। বিহা = উহাকে। মিনাল মাগরিবি = পশ্চিম দিক থেকে। ফাবুহিতা = তখন সে হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। আল্লাযী কাফারা = যে কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়াহদি = হিদায়াত করেন না। আল ক্বাওমায যলিমীন = যালিম কাওমকে।
তুমি কি দেখনি তার অবস্থা যে ইবরাহীমের সাথে হুজ্জাত/ বিতর্ক করেছে তার রব/ প্রতিপালক সম্বন্ধে, এজন্য যে, আল্লাহ তাকে দিয়েছিলেন আধিপত্য? যখন ইবরাহীম বলেছে, ‘তিনিই আমার রব/ প্রতিপালক, যিনি হায়াত/ জীবন দেন আর মওত/ মৃত্যু দেন’। সে বলেছে, ‘আমিই জীবিত রাখি (= মৃত্যুদন্ড মাফ করে দিই) আর মেরে ফেলি (= মৃত্যুদন্ড দিই)’। ইবরাহীম বলেছে, ‘তবে নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে (দৃষ্টিতে) এনে দেন পূর্ব দিক থেকে। তাহলে তুমি এনে দাও উহাকে পশ্চিম দিক থেকে’। তখন সে হতবুদ্ধি হয়ে গেছে যে কুফর/ অবিশ্বাস করেছে। আর আল্লাহ হিদায়াত করেন না যালিম কাওমকে।
২:২৫৯
আও = অথবা। কাল্লাযী = (তুমি কি দেখনি) ঐ ব্যক্তির মতো কাউকে (কারো অবস্থা)। মাররা = যে অতিক্রম করেছে। আলা ক্বারইয়াতিন = একটি জনপদের উপর দিয়ে। ওয়া = আর। হিয়া = উহা (ঐ জনপদ)। খাবিয়াতু = ধ্বসে পড়েছে। আলা উরুশিহা = উহার ভিত্তির উপর। ক্বলা = সে বলেছে। আন্না = কিরূপে? ইউহয়ী হাযিহিল্লাহু = পুনর্জীবিত করবেন ইহাকে (= এ জনপদকে) আল্লাহ। বা’দা মাওতিহা = উহার মৃত্যুর পর?। ফাআমাতাহু = তখন আল্লাহ তাকে মৃত রাখলেন। মিআতা আমিন = একশত বছর। ছুম্মা = তারপর আবার। বায়াছাহু = তাকে অভ্যুত্থিত করিলেন। ক্বলা = তিনি (আল্লাহ) বলেছেন। কাম লাবিছতা = কতকাল তুমি অবস্থান করেছো? ক্বলা = সে বলেছে। লাবিছতু = আমি অবস্থান করেছি। ইয়াওমান = একদিন। আও = অথবা। বা’দা ইয়াওমিন = দিনের কিছু অংশ। ক্বলা = তিনি (আল্লাহ) বলেছেন। বাল = বরং। লাবিছতা = তুমি অবস্থান করেছো। মিআতা আমিন = একশত বছর। ফানযুর = সুতরাং লক্ষ্য করো। ইলা তআমিকা = তোমার খাদ্যের দিকে। ওয়া = আর। সারাবিকা = তোমার পানীয়ের দিকে। লাম ইয়াতাছান্না = তা বিকৃত হয়নি। ওয়ানযুর = আরো লক্ষ্য করো। ইলা হিমারিকা = তোমার গাধার দিকে। ওয়া লি নাজআলাকা = আর (তোমার উপর দিয়ে যা ঘটে গেলো তা এজন্য যে) যেন আমরা তোমাকে পরিণত করি। আয়াতাল্লিন্নাছি = মানবজাতির জন্য আয়াতরূপে (= ঘটনার আয়াত/ নিদর্শন)। ওয়ানযুর = আর লক্ষ্য কর। ইলাল ইযামি = হাড়গুলোর দিকে। কাইফা নুনসিজুহা = কিরূপে আমরা উহাকে সংযোজিত করি। ছুম্মা = তারপর। নানকুছুহা = আমরা উহাকে ঢেকে দিই। লাহমান = গোশত দিয়ে। ফালাম্মা = সুতরাং যখন। তাবাইয়্যানা লাহু = (বিষয়টি) তার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে। ক্বলা = সে বলেছে। আ’লামু = আমি জানি। আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।”
অথবা (তুমি কি দেখনি) ঐ ব্যক্তির মতো কাউকে (কারো অবস্থা), যে অতিক্রম করেছে একটি জনপদের উপর দিয়ে আর উহা (ঐ জনপদ) ধ্বসে পড়েছে উহার ভিত্তির উপর? সে বলেছে, কিরূপে পুনর্জীবিত করবেন ইহাকে (= এ জনপদকে) আল্লাহ উহার মৃত্যুর পর? তখন আল্লাহ তাকে মৃত রাখলেন একশত বছর। তারপর আবার তাকে অভ্যুত্থিত করিলেন। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, ‘কতকাল তুমি অবস্থান করেছো?’ সে বলেছে, ‘আমি অবস্থান করেছি একদিন অথবা দিনের কিছু অংশ’। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, ‘বরং তুমি অবস্থান করেছো একশত বছর। সুতরাং লক্ষ্য করো তোমার খাদ্যের দিকে আর তোমার পানীয়ের দিকে, তা বিকৃত হয়নি, আরো লক্ষ্য করো তোমার গাধার দিকে। আর (তোমার উপর দিয়ে যা ঘটে গেলো তা এজন্য যে,) যেন আমরা তোমাকে পরিণত করি মানবজাতির জন্য আয়াতরূপে (= ঘটনার আয়াত/ নিদর্শন)। আর লক্ষ্য কর হাড়গুলোর দিকে কিরূপে আমরা উহাকে সংযোজিত করি তারপর আমরা উহাকে ঢেকে দিই গোশত দিয়ে’। সুতরাং যখন (বিষয়টি) তার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে, সে বলেছে, ‘আমি জানি যে, নিশ্চয় আল্লাহ সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।”
২:২৬০
ওয়া ইয = আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন। ক্বলা ইবরাহীমু = ইবরাহীম বলেছে। রব্বী = আমার রব/ প্রতিপালক। কাইফা = কিরূপে/ কী পদ্ধতিতে। তুহয়িল মাওতা = তুমি হায়াত দেবে/ জীবিত করবে মৃতকে? ক্বলা = তিনি (আল্লাহ) বলেছেন। আওয়ালাম তু’মিন? = তুমি কি ঈমান/ বিশ্বাস করো না? ক্বলা = সে (ইবরাহীম) বলেছে। বালা = বিশ্বাস তো করি। ওয়ালাকিন = কিন্তু। লিউতমায়িন্না ক্বালবী = আমার কলবকে প্রশান্ত করার জন্য। ক্বলা = তিনি (আল্লাহ) বলেছেন। ফাখুজ আরবাআতাম মিনাত তইরি = তাহলে চারটি পাখি নাও। ফাসুরহুন্না = তারপর তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে পোষ মানাও। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ছুম্মাজআল = তারপর যেতে দাও। আলা কুল্লি জাবালিন = প্রত্যেক পাহাড়ের উপর। মিনহুন্না খুজুআন = সেগুলোর প্রত্যেকটিকে। ছুম্মাদউহুন্না = তারপর তাদেরকে ডাকো। ইয়া’তীনাকা সা’ইয়ান = তারা তোমার কাছে ছুটে আসবে। ওয়া’লামু আন্নাল্লাহা = আর জেনে রাখো যে, আল্লাহ। আযীযুন হাকীম = আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।
আর (সেই সময়ের কথা উল্লেখ্য) যখন ইবরাহীম বলেছে, ‘আমার রব/ প্রতিপালক, কিরূপে তুমি হায়াত দেবে/ জীবিত করবে মৃতকে?’ তিনি (= আল্লাহ) বলেছেন, ‘তুমি কি ঈমান/ বিশ্বাস করো না?’ সে (= ইবরাহীম) বলেছে, বিশ্বাস তো করি, কিন্তু আমার কলবকে প্রশান্ত করার জন্য’। তিনি (আল্লাহ) বলেছেন, ‘তাহলে চারটি পাখি নাও। তারপর তাদেরকে প্রশিক্ষিত করে পোষ মানাও তোমার প্রতি। তারপর যেতে দাও প্রত্যেক পাহাড়ের উপর সেগুলোর প্রত্যেকটিকে। তারপর তাদেরকে ডাকো। তারা তোমার কাছে ছুটে আসবে। আর জেনে রাখো যে, আল্লাহ আযীয/ মহাশক্তিমান, হাকীম/ মহাবিজ্ঞ। (দ্র: ০৮: ২৪, ৬২: ০২)
২:২৬১
মাছালুল্লাযীনা = তাদের দৃষ্টান্ত যারা। ইয়ুনফিক্বুনা = ইনফাক/ ব্যয় করে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। ফী সাবিলিল্লাহি = সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। কামাছালি হাব্বাতিন = একটি শস্যবীজের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো। আমবাতাত = যা উৎপন্ন করে। ছাবআ ছানাবিলা = সাতটি শীষ। ফী কুল্লি ছুমবুলাতিন = প্রত্যেকটি শীষে আছে। মিআতু হাব্বাতিন = একশত শস্যকণা। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইউদয়িফু = বাড়িয়ে দেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (বাড়িয়ে দেয়ার) ইচ্ছা করেন। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ওয়াছিউন আলীম = ওয়াছী’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
তাদের উপমা যারা ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, একটি শস্যবীজের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো, যা উৎপন্ন করে সাতটি শীষ। প্রত্যেকটি শীষে আছে একশত শস্যকণা। আর আল্লাহ বাড়িয়ে দেন যাকে তিনি (বাড়িয়ে দেয়ার) ইচ্ছা করেন। আর আল্লাহ ওয়াছী’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
২:২৬২
আল্লাযীনা = যারা। ইউনফিকূনা = ইনফাক/ ব্যয় করে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। ফী সাবিলিল্লাহি = সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে। ছুম্মা = তারপর। লা ইয়ুতবিয়ূনা মা আনফাক্বূ মান্নান = তারা অনুগ্রহস্বরূপ যা ইনফাক/ ব্যয় করে তার পেছনে খোঁটা দেয় না। ওয়া লা আযান = আর কোন কষ্টও দেয় না। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরুহুম = তাদের আজর/ প্রতিফল। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া লা খাওফুন আলাইহিম = আর তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া লাহুম ইয়াহযানূন = আর তারা দু:খিতও হবে না।
যারা ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ সাবীলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে, তারপর তারা অনুগ্রহস্বরূপ যা ইনফাক/ ব্যয় করে তার পেছনে খোঁটা দেয় না আর কোন কষ্টও দেয় না; তাদের জন্য আছে তাদের আজর/ প্রতিফল তাদের রবের কাছে। আর তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দু:খিতও হবে না।
২:২৬৩
ক্বাওলুম মা’রূফুন = ন্যায়সঙ্গত কথা। ওয়া মাগফিরাতুন = আর মাগফিরাত/ ক্ষমা। খায়রুন মিন সদাক্বাতিন = ঐরূপ সদাকাতের চেয়ে উত্তম। ইয়াতবাঊহা আযান = যার পর কষ্ট দেয়া হয়। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। গানিইয়ুন = গনী/ ধনী। হালীম = হালীম/ সহনশীল।
ন্যায়সঙ্গত কথা আর মাগফিরাত/ ক্ষমা ঐরূপ সদাকাতের চেয়ে উত্তম যার পর কষ্ট দেয়া হয়। আর আল্লাহ গনী/ ধনী, হালীম/ সহনশীল।
২:২৬৪
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। লা তুবতিলূ = তোমরা নষ্ট করো না। ছদাক্বাতিকুম = তোমাদের সদাকাত। বিল মান্নি ওয়াল আযা = অনুগ্রহের খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে। কাল্লাযী = ঐ ব্যক্তির মতো যে। ইউনফিক্বু = ইনফাক/ ব্যয় করে। মালাহু = তার মাল। রিয়াআন্নাছি = মানুষকে দেখানোর জন্য। ওয়া লা ইউ’মিনু = আর ঈমান/ বিশ্বাস করে না। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি = আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। ফামাছুলুহু = সুতরাং তার উপমা। কামাছালিল ছাফওয়ানি = একটি পাথরের চাতালের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো। আলাইহি তুরাব = যার উপর ছিলো মাটি। ফাআসাবাহু = তারপর তাতে বর্ষিত হয়েছে। ওয়াবিলুন = প্রবল বৃষ্টি। ফাতারাকাহু সলদান = ফলে উহাকে (ধুয়ে) ছাফ করে ছেড়েছে। লা ইয়াক্বুদিরুনা আলা সাইয়িন মিম্মা কাছাবূ = তারা লাভ করতে সক্ষম হবে না যা তারা উপার্জন করেছে তা থেকে (= শ্রমলব্ধ ফল থেকে) সামান্য কিছুও। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইয়াহদিল কাওমাল কাফিরীন = কাফির কাওমকে হিদায়াত করেন না।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা নষ্ট করো না তোমাদের সদাকাত অনুগ্রহের খোঁটা দেয়া ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে, ঐ ব্যক্তির মতো যে ইনফাক/ ব্যয় করে তার মাল মানুষকে দেখানোর জন্য আর ঈমান/ বিশ্বাস করে না আল্লাহর প্রতি আর ইয়াওমিল আখিরে/ আখিরাত দিবসে। সুতরাং তার উপমা একটি পাথরের চাতালের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো, যার উপর ছিলো মাটি, তারপর তাতে বর্ষিত হয়েছে প্রবল বৃষ্টি, ফলে উহাকে (ধুয়ে) ছাফ করে ছেড়েছে। তারা লাভ করতে সক্ষম হবে না যা তারা উপার্জন করেছে তা থেকে (= শ্রমলব্ধ ফল থেকে) সামান্য কিছুও। আর আল্লাহ কাফির কাওমকে হিদায়াত করেন না।
২:২৬৫
ওয়া = আর। মাছালুল্লাযীনা = তাদের উপমা যারা। ইউনফিক্বূনা = ইনফাক/ ব্যয় করে। আমওয়ালাহুমুব তিগাআ মারদাতিল্লাহ = তাদের মালসমূহ আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের তালাশে। ওয়া = আর। তাছবীতাম মিন আনফুছিহিম = তাদের আনফুসকে/ নফসসমূহকে সুদৃঢ় করতে। কামাছালি জান্নাতিম বিরাবওয়াতিন = উঁচু ভূমির একটি বাগানের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো। আসাবাহা = যাতে বর্ষিত হয়েছে। ওয়াবিলুন = প্রবল বৃষ্টি। ফাআতাত উকুলুহা দি’ফাইনি = ফলে (তা উহাতে) এনেছে উহাতে উৎপন্ন খাদ্যসামগ্রী দ্বিগুণ পরিমাণে। ফাইল্লাম ইউসিবহা ওয়াবিলুন = কিন্তু যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত না হয়। ফাতল্লু = তাহলে সামান্য বৃষ্টিই যথেষ্ট। ওয়াল্লাহু বিমা তা’মালূনা বাছীর = আর আল্লাহ যা কিছু তোমরা করো তার বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)।
আর তাদের উপমা যারা ইনফাক/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের তালাশে আর তাদের আনফুসকে/ নফসসমূহকে সুদৃঢ় করতে, উঁচু ভূমির একটি বাগানের (সাথে সম্পর্কিত) উপমার মতো, যাতে বর্ষিত হয়েছে প্রবল বৃষ্টি, ফলে (তা উহাতে) এনেছে উহাতে উৎপাদিত খাদ্যসামগ্রী দ্বিগুণ পরিমাণে। কিন্তু যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত না হয় তাহলে সামান্য বৃষ্টিই যথেষ্ট। আর আল্লাহ যা কিছু তোমরা করো তার বাছীর/ দ্রষ্টা (= যিনি দেখেন)।
২:২৬৬
আইয়াওয়াদ্দু আহাদুকুম = তোমাদের কেউ কি চায়? আন = যে। তাকূনা লাহু জান্নাতুন মিন নাখীলিন ও আ’নাবিন = তার জন্য থাকবে খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান। তাজরি মিন তাহতিহা = যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয়। আল আনহার = নহরসমূহ/ ঝর্ণাধারাসমূহ/ নদীসমূহ। লাহু = তার জন্য আছে। ফীহা = উহার (= ঐ বাগানের) মধ্যে। মিন কুল্লি ছামারাত = সব ধরনের ফলফলাদি। ওয়া = আর। আসাবাহুল কিবারু = তাকে আক্রান্ত করেছে বার্ধক্য। ওয়া = আর। লাহু যুররিয়াতুন = তার সন্তানসন্ততি (তখনো) দুর্বল রয়েছে। ফাআসাবাহা = তখন উহাকে (= বাগানটিকে) আক্রান্ত করেছে। ই’ছরুন = ঘূর্ণিঝড়। ফীহি নারুন = যাতে রয়েছে আগুন। ফাআহতারাক্বাত = ফলে তা পুড়ে গেছে। কাযালিকা = এভাবে। ইউবাইয়িনুল্লাহু = আল্লাহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন। লাকুমুল আয়াতু = তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ। লাআল্লাকুম তাতাফাক্কারুন = যাতে তোমরা তাফাক্কুর/ ফিকর/ চিন্তা গবেষণা করতে পারো।
তোমাদের কেউ কি চায় যে, তার জন্য থাকবে খেজুরের ও আঙ্গুরের একটি বাগান, যার নিচ অংশে জারি/ প্রবাহিত হয় নহরসমূহ/ ঝর্ণাধারাসমূহ/ নদীসমূহ, তার জন্য আছে উহার (= ঐ বাগানের) মধ্যে সব ধরনের ফলফলাদি (= মাল্টিপারপাস কাল্টিভেশন), আর তাকে আক্রান্ত করেছে বার্ধক্য, আর তার সন্তানসন্ততি (তখনো) দুর্বল রয়েছে, তখন উহাকে (= বাগানটিকে) আক্রান্ত করেছে ঘূর্ণিঝড়, যাতে রয়েছে আগুন, ফলে তা পুড়ে গেছে। এভাবে আল্লাহ বয়ান/ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ যাতে তোমরা তাফাক্কুর/ ফিকর/ চিন্তা গবেষণা করতে পারো।
২:২৬৭
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। আনফিক্বূ = তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিন তাইয়িবাতিন = তাইয়িবাত/ উৎকৃষ্ট জিনিস থেকে। মা কাছাবতুম = যা তোমরা উপার্জন করেছো। ওয়া = আর। মিম্মা = তা থেকে যা। আখরাজনা = আমরা বের/ উৎপাদন করেছি। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিনাল আরদি = জমিন থেকে। ওয়া = আর। লা তাইয়াম্মামুল খাবীসা মিনহু = তোমরা সংকল্প করো না, তা থেকে খাবীস/ নিকৃষ্ট জিনিসগুলোকে। তুনফিক্বূনা = ইনফাক/ ব্যয় করতে। ওয়া = অথচ। লাছতুম বিআখিযীহি = তোমরা নিজেরা তা গ্রহণ করো না। ইল্লা আন তুখমিদূ ফীহি = চোখ বন্ধ না করে। ওয়া’লামূ আন্নাল্লাহা = আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ। গানীইয়ুন হামীদ = গানী/ ধনী, হামীদ/ প্রশংসিত।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো তাইয়িবাত/ উৎকৃষ্ট জিনিস থেকে, যা তোমরা উপার্জন করেছো আর তা থেকে যা আমরা বের/ উৎপাদন করেছি তোমাদের জন্য জমিন থেকে (০৬:১৪১, ০৮:৪১)। আর তোমরা সংকল্প করো না, তা থেকে খাবীস/ নিকৃষ্ট জিনিসগুলোকে ইনফাক/ ব্যয় করতে, অথচ তোমরা নিজেরা তা গ্রহণ করো না চোখ বন্ধ না করে। আর জেনে রাখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ গনী/ ধনী, হামীদ/ প্রশংসিত।
২:২৬৮
আশ শায়তানু = শয়তান। ইয়ায়িদুকুমুল ফুক্বারা = তোমাদেরকে ভয় দেখায় দারিদ্রের। ওয়া ইয়া’মুরুকুম = আর তোমাদেরকে আদেশ দেয়। বিল ফাহশায়ি = অশ্লীলতার। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ইয়ায়িদুকুম = তোমাদেরকে ওয়াদা দেন। মাগফিরাতাম মিনহু = তার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের/ ক্ষমার। ওয়া = আর। ফাদলান = ফদলের/ ফযলের/ অনুগ্রহের। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। ওয়াছিউন = ওয়াসী’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী। আলীম = আলীম/ মহাজ্ঞানী।
শয়তান তোমাদেরকে ভয় দেখায় দারিদ্রের আর তোমাদেরকে আদেশ দেয় অশ্লীলতার। আর আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দেন তার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের/ ক্ষমার আর ফদলের/ ফযলের/ অনুগ্রহের। আর আল্লাহ ওয়াসী’/ ব্যাপকত্বের অধিকারী, আলীম/ মহাজ্ঞানী।
২:২৬৯
ইউ’তিল হিকমাতা = তিনি দান করেন হিকমাত/ বিজ্ঞতা/ প্রজ্ঞা। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (হিকমাতদানের) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়ুতাল হিকমাতা = যাকে হিকমাত দেয়া হয়েছে। ফাক্বাদ উতিয়া = নিশ্চয় তাকে দেয়া হয়েছে। খায়রান কাছীরান = অনেক কল্যাণকর একটি বিষয়। ওয়া = আর। মা ইয়াযযাক্কারু = কেউ যিকর/ বুঝলাভ ও স্মরণ করে না। ইল্লা উলুল আলবাব = উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ ছাড়া।
তিনি দান করেন হিকমাত/ বিজ্ঞতা/ প্রজ্ঞা যাকে তিনি (হিকমাতদানের) ইচ্ছা করেন। আর যাকে হিকমাত দেয়া হয়েছে নিশ্চয় তাকে দেয়া হয়েছে অনেক কল্যাণকর একটি বিষয়। আর কেউ যিকর/ বুঝলাভ ও স্মরণ করে না উলুল আলবাব/ চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ ছাড়া।
২:২৭০
ওয়া = আর। মা আনফাক্বতুম মিন নাফাকাতিন = যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। আও = অথবা। নাযারতুম মিন নাযারিন = যা তোমরা নযর/ মানত করো। ফাইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। ইয়া’লামুহু = উহা জানেন। ওয়া = আর। মা লিয যালিমীনা = যালিমদের জন্য নেই। মিন আনসার = কোন সাহায্যকারী।
আর যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো অথবা যা তোমরা নযর/ মানত করো, নিশ্চয় আল্লাহ উহা জানেন। আর যালিমদের জন্য নেই কোন সাহায্যকারী।
২:২৭১
ইন = যদি। তুবদুস সদাক্বাতি = তোমরা প্রকাশ্যে সদাকাত দাও। ফানিয়িম্মা হিয়া = তাহলে তা ভালো। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুখফূহা = তোমরা তা গোপনে দাও। ওয়া = এ অবস্থায় যে। তু’তূহাল ফুক্বারা = তোমরা তা ফকীরদেরকে/ দরিদ্রদেরকে দাও। ফাহুয়া = তাহলে তা। খায়রুল্লাকুম = তোমাদের জন্য উত্তম। ওয়া = আর। ইউকাফ্ফির = তিনি মোচন করবেন। আনকুম = তোমাদের থেকে। মিন ছাইয়িআতিকুম = তোমাদের কিছু পাপ। ওয়াল্লাহু বিমা তা’মালুনা খাবীর = আর তোমরা যা করো আল্লাহ তার খবর রাখেন।
যদি তোমরা প্রকাশ্যে সদাকাত দাও তাহলে তা ভালো। আর যদি তোমরা তা গোপনে দাও এ অবস্থায় যে, তোমরা তা ফকীরদেরকে/ দরিদ্রদেরকে দাও তাহলে তা তোমাদের জন্য উত্তম। আর তিনি মোচন করবেন তোমাদের থেকে তোমাদের কিছু পাপ। আর তোমরা যা করো তা সম্পর্কে আল্লাহ খাবীর (= যিনি খবর রাখেন)।
২:২৭২
লাইছা আলাইকা = তোমার উপর দায়বদ্ধতা নেই। হুদাকুম = তাদেরকে হিদায়াত করার। ওয়ালাকিন্নাল্লাহা = কিন্তু আল্লাহ। ইয়াহদী = হিদায়াত করেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। মা তুনফিক্বূ = যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিন খায়রিন = (বৈধ) সম্পদ থেকে। ফালিআনফুছিকুম = তা তোমাদের নিজেদের জন্যই। ওয়া = আর। মা তুনফিক্বূনা = তোমরা তো ইনফাক্ব/ ব্যয় করো না। ইল্লাবতিগাআ ওয়াজহিল্লাহি = আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করা ছাড়া (অন্য উদ্দেশ্য)। ওয়া = আর। মা তুনফিক্বূ = যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিন খায়রিন = (বৈধ) সম্পদ থেকে। তুওযাফ্ফা = তা পূর্ণ করে (ফেরত) দেয়া হবে। ইলাইকুম = তোমাদের দিকে। ওয়া = আর। আনতুম লা তুযলামুন = তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।
তোমার উপর দায়বদ্ধতা নেই তাদেরকে হিদায়াত করার। কিন্তু আল্লাহ হিদায়াত করেন যাকে তিনি (হিদায়াত করার) ইচ্ছা করেন। আর যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো (বৈধ) সম্পদ থেকে তা তোমাদের নিজেদের জন্যই। আর তোমরা তো ইনফাক্ব/ ব্যয় করো না আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করা ছাড়া (অন্য উদ্দেশ্য)। আর যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো (বৈধ) সম্পদ থেকে তা পূর্ণ করে (ফেরত) দেয়া হবে তোমাদের দিকে। আর তোমাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।
২:২৭৩
লিল ফুক্বারি = ঐসব অভাবগ্রস্তের জন্য। আল্লাযীনা = যারা। উহসিরূ ফী সাবিলিল্লাহি = সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে (ব্যস্ততাপূর্ণ দায়িত্বের কারণে) আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। লা ইয়াছতাতিউনা দরবান ফিল আরদি = তারা উপার্জনের জন্য জমিনে সফর করতে পারে না। ইয়াহছুবুহুমুল জাহিলূ আগনিয়ায়া = জাহিল/ মূর্খ লোকেরা তাদেরকে গনী/ ধনী বলে মনে করে। মিনাত্তাআফ্ফুফি = ব্যক্তিত্বের কারণে তারা কারো কাছে চাইতে না পারায়। তা’রিফুহুম = তুমি তাদেরকে চিনবে। বিছীমাহুম = তাদের লক্ষণ দ্বারা। লা ইয়াছআলূনান্নাছা = তারা চায় না মানুষের থেকে। ইলহাফান = নাছোড় হয়ে। ওয়া = আর। মা তানফিক্বূ = যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো। মিন খাইরিন = (বৈধ) সম্পদ থেকে। ফাইন্নাল্লাহা বিহী আলীম = নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
ঐসব অভাবগ্রস্তের জন্য যারা সাবিলিল্লাহে/ আল্লাহর পথে (ব্যস্ততাপূর্ণ দায়িত্বের কারণে) আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তারা উপার্জনের জন্য জমিনে সফর করতে পারে না। জাহিল/ মূর্খ লোকেরা তাদেরকে গনী/ ধনী বলে মনে করে ব্যক্তিত্বের কারণে তারা কারো কাছে চাইতে না পারায়। তুমি তাদেরকে চিনবে তাদের লক্ষণ দ্বারা। তারা চায় না মানুষের থেকে নাছোড় হয়ে। আর যা তোমরা ইনফাক/ ব্যয় করো (বৈধ) সম্পদ থেকে, নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
২:২৭৪
আল্লাযীনা = যারা। ইউনফিক্বূনা = ইনফাক্ব/ ব্যয় করে। আমওয়ালাহুম = তাদের মালসমূহ। বিল্লাইলি ওয়ান নাহারি = রাতে ও দিনে। ছিররান ওয়া আলানিয়াতান = গোপনে ও প্রকাশ্যে। ফালাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরুহুম = তাদের আজর/ পুরস্কার। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। লা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় নেই। ওয়া = আর। লা = না। হুম = তারা। ইয়াহজানূন = দু:খিত হবে।
যারা ইনফাক্ব/ ব্যয় করে তাদের মালসমূহ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের জন্য আছে তাদের আজর/ পুরস্কার তাদের রবের কাছে। আর তাদের কোন ভয় নেই। আর না তারা দু:খিত হবে।
২:২৭৫
আল্লাযীনা = যারা। ইয়া’কুলূনার রিবা = রিবা/ সুদ খায়। লা ইয়াক্বুমূনা = তারা দাঁড়ায় না। ইল্লা কামা ইয়াক্বুমূল্লাযী ইয়াতাখাব্বাতুহুশ শায়তনূ মিনাল মাছ্ছি = ঐরূপ ব্যক্তির মতো দাঁড়ানো ছাড়া যাকে মোহাবিষ্ট করেছে শয়তান তার (শয়তানী) স্পর্শ দ্বারা। যালিকা = উহা। বিআন্নাহুম = এজন্য যে। ক্বলূ = তারা বলেছে। ইন্নামা = মূলত:। আল বাইয়ু মিছলুর রিবা = বাইয়ুন/ ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে রিবার/ সুদের মতো। ওয়া = অথচ। আহাল্লাল্লাহুল বাইআ = আল্লাহ হালাল করেছেন বাইয়ুন/ ক্রয় বিক্রয়। ওয়া = আর। হাররামার রিবা = হারাম করেছেন রিবা/ সুদ। ফামান জাআহু = সুতরাং যার কাছে এসেছে। মাওয়িযাতুন = মাওয়িজা/ ওয়াজ/ উপদেশ। মির রব্বিহি = তার রবের পক্ষ থেকে। ফানতাহা = তাই সে তা থেকে বিরত হয়েছে। ফালাহু মা ছালাফা = তার জন্য (ইচ্ছাধীন) যা অতীত হয়ে গেছে। ওয়া = আর। আমরুহু = উহার ব্যাপার। ইলাল্লাহা = আল্লাহর হাওলায়। ওয়া = আর। মান = যে। আদা = পুনরাবৃত্তি করবে। ফাউলায়িকা = তারা। আসহাবুন নার = আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। হুম ফীহা খালিদূন = তারা তাতে স্থায়ী হবে।
যারা রিবা/ সুদ খায় তারা দাঁড়ায় না ঐরূপ ব্যক্তির মতো দাঁড়ানো ছাড়া যাকে মোহাবিষ্ট করেছে শয়তান তার (শয়তানী) স্পর্শ দ্বারা। উহা এজন্য যে, তারা বলেছে, ‘মূলত: বাইয়ুন/ ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে রিবার/ সুদের মতো’। অথচ আল্লাহ হালাল করেছেন বাইয়ুন/ ক্রয় বিক্রয় আর হারাম করেছেন রিবা/ সুদ। সুতরাং যার কাছে এসেছে মাওয়িজা/ ওয়াজ/ উপদেশ তার রবের পক্ষ থেকে, তাই সে তা থেকে বিরত হয়েছে, তার জন্য (ইচ্ছাধীন) যা অতীত হয়ে গেছে আর উহার ব্যাপার আল্লাহর হাওলায়। আর যে পুনরাবৃত্তি করবে, তারা আসহাবুন নার (= যারা জাহান্নামের আগুনে শাস্তি পাবে)। তারা তাতে স্থায়ী হবে।
২:২৭৬
ইয়ামহাক্বূল্লাহুর রিবা = আল্লাহ কমিয়ে দেন রিবাকে/ সুদকে। ওয়া = আর। ইউরবিস সদাকাত = বাড়িয়ে দেন সদাকাতকে/ দানকে। ওয়াল্লাহু = আর আল্লাহ। লা ইউহিব্বু = ভালবাসেন না। কুল্লু কাফফারিন আছীমিন = প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ পাপীকে।
আল্লাহ কমিয়ে দেন রিবাকে/ সুদকে আর বাড়িয়ে দেন সদাকাতকে/ দানকে। আর আল্লাহ ভালবাসেন না প্রত্যেক অকৃতজ্ঞ পাপীকে।
২:২৭৭
ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আমিলুস সালিহাতি = সালিহাত/ সংস্কার কাজ করেছে। ওয়া = আর। আকামুস সালাতা = সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করেছে। ওয়া = আর। আতাউয যাকাতা = যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করেছে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আজরুহুম = তাদের আজর/ পুরস্কার। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। লা খাওফুন আলাইহিম = তাদের কোন ভয় থাকবে না। ওয়া লা হুম ইয়াহযানূন = আর তারা দু:খিত হবে না।
নিশ্চয় যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর সালিহাত/ সংস্কার করেছে আর সালাত কায়েম/ প্রতিষ্ঠা করেছে আর যাকাত (= পরিশুদ্ধতামূলক প্রদেয়) প্রদান করেছে, তাদের জন্য আছে তাদের আজর/ পুরস্কার তাদের রবের কাছে। আর তাদের কোন ভয় থাকবে না আর তারা দু:খিত থাকবে না।
২:২৭৮
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইত্তাক্বুল্লাহা = তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া যারূ =আর তোমরা ছেড়ে দাও। মা বাক্বীয়া মিনার রিবা = রিবা/ সুদ থেকে যা বাকী আছে। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা হও। মু’মিনূন = মু’মিনূন।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আর তোমরা ছেড়ে দাও রিবা/ সুদ থেকে যা বাকী আছে, যদি তোমরা হও মু’মিনূন।
২:২৭৯
ফাইল্লাম তাফআলূ = তারপর যদি তোমরা তা না করো। ফা’যানূ বিহারবিম= তাহলে তোমরা যুদ্ধের ঘোষণা জেনে রাখো। মিনাল্লাহী ওয়া রাসূলিহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুবতুম = তোমরা তাওবা করো। ফালাকুম = তাহলে তোমাদের জন্য। রুউছু আমওয়ালিকুম = তোমাদের মূলধন। লা তুযলিমূনা = তোমরা অত্যাচার করো না। ওয়া = আর। লা তুযলামূন = তোমরা অত্যাচারিত হয়ো না।
তারপর যদি তোমরা তা না করো তাহলে তোমরা (তোমাদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধের ঘোষণা জেনে রাখো আল্লাহর পক্ষ থেকে ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে। আর যদি তোমরা তাওবা করো তাহলে তোমাদের জন্য তোমাদের মূলধন। তোমরা অত্যচার করো না আর তোমরা অত্যাচারিত হয়ো না।
২:২৮০
ওয়া = আর। ইন কানা উছরাতিন = যদি (ঋণগ্রহীতা) অভাবগ্রস্ত হয়। ফানাযিরাতুন = তাহলে তাকে অবকাশ দেবে। ইলা মাইছারাতিন = সচ্ছলতা পর্যন্ত। ওয়া = আর। আন = যদি। তাছাদ্দাকূ = তোমরা তা সদাকা করে দাও। খায়রুল লাকুম = তা তোমাদের জন্য উত্তম। ইন কুনতুম তা’লামূন = যদি তোমরা জানতে!
আর যদি (ঋণগ্রহীতা) অভাবগ্রস্ত হয় তাহলে তাকে অবকাশ দেবে সচ্ছলতা পর্যন্ত। আর যদি তোমরা তা সদাকা করে দাও তা তোমাদের জন্য উত্তম। যদি তোমরা জানতে!
২:২৮১
ওয়াত্তাকূ ইয়াওমান = তোমরা ভয় করো সেদিনকে। তুরজায়ূনা ফীহি = তোমরা ফিরে যাবে যেদিন। ইলাল্লাহি = আল্লাহর দিকে। ছুম্মা = তারপর। তুওয়াফ্ফা = পূর্ণভাবে দেয়া হবে। কুল্লু নাফসিন = প্রত্যেক ব্যক্তিকে। মা কাছাবাত = যা সে উপার্জন করেছে (= তার কর্মফল)। ওয়া = আর। হুম = তাদেরকে। লা ইউযলামূন = যুলুম করা হবে না।
তোমরা ভয় করো সেদিনকে তোমরা ফিরে যাবে যেদিন আল্লাহর দিকে। তারপর পূর্ণভাবে দেয়া হবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে যা সে উপার্জন করেছে (= তার কর্মফল) আর তাদেরকে যুলুম করা হবে না।
২:২৮২
ইয়া আইয়ুহাল্লাযীনা আমানূ = হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো। ইযা = যখন। তাদাইয়ানতুম বিদাইনিন = তোমরা ঋণের লেনদেন করো। ইলা আজালিম মুছাম্মা = সুনির্দিষ্ট শেষসীমা নির্ধারণ করে। ফাকতুবূহু = তখন তোমরা উহা লেখে রাখো। ওয়াল ইয়াকতুব = আর লেখবে। বাইনাকুম = তোমাদের মধ্যে। কাতিবুন = একজন লেখক। বিল আদলি = ন্যায্যভাবে। ওয়া = আর। লা ইয়া’বা কাতিবুন = লেখক অস্বীকার করবে না। আইঁ ইয়াকতুবা = লেখতে। কামা = যেভাবে। আল্লামাহুল্লাহু = আল্লাহ তাকে (লেখতে) শিখিয়েছেন। ফালইয়াকতুব = সুতরাং সে যেন লেখে। ওয়াল ইয়ুমলিলিল্লাযী = আর লেখার বিষয়বস্তু লেখাবে সেই ব্যক্তি। আলাইহিল হাক্কু = যার উপর ঋণপরিশোধের দায়িত্ব চাপছে (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা)। ওয়াল ইয়াত্তাক্বিল্লাহা = আর যেন আল্লাহকে ভয় করে। রব্বাহু = যিনি তার রব/ প্রতিপালক। ওয়া = আর। লা ইয়াবখাছ = কমবেশি করবে না। মিনহু = তা থেকে। শাইয়ান = কিছুই। ফাইন = তারপর যদি। কানাল্লাযী আলাইহিল হাক্কু = যার উপর ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব চাপছে (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা) হয়। ছাফিহান = বোকা। আও = বা। দয়ীফান = দুর্বল। আও = অথবা। লা ইয়াছতাতিউ আইউমিল্লা = লেখার বিষয়বস্তু লেখাতে না পারে। হুয়া = সে। ফালইউমলিল = তাহলে লেখার বিষয়বস্তু লেখাবে। ওয়ালিইয়্যুহু = তার ওয়ালি/ অভিভাবক। বিল আদলি = ন্যায্যভাবে। ওয়াছতাশহিদূ = আর তোমরা সাক্ষী রাখো। শাহিদাইনি = দুজন সাক্ষী। মির রিজালিকুম = তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে। ফাইন = কিন্তু যদি। লাম ইয়াকূনা রজুলাইনি = (সাক্ষ্য দেবার মতো) দুজন পুরুষ না থাকে। ফারজুলুন = তাহলে (সাক্ষী রাখবে) একজন পুরুষকে। ওয়ামরাআতানি = আর দুজন নারীকে। মিম্মান তারদাওনা মিনাশ শুহাদায়ি = যাদেরকে সাক্ষী রাখতে তোমরা রাজি থাকো (তাদেরকেই সাক্ষী রাখো)। আন = যদি। তাদিল্লা = ভুল দিকে চলে যায়। ইহদাহুমা = (নারী সাক্ষীদের) দুজনের একজন। ফাতুযাক্কিরা = তাহলে স্মরণ করিয়ে দেবে। ইহদাহুমাল উখরা = (নারী সাক্ষীদের) দুজনের একজন অন্যজনকে। ওয়া = আর। লা ইয়া’বাশ শুহাদাউ = সাক্ষীগণ (সাক্ষ্য দিতে) অস্বীকার করবে না। ইযা মা দুঊ = যখন তাদেরকে ডাকা হয়। ওয়া = আর। লা তাছমাঊ = তোমরা অবহেলা করো না। আইঁ ইয়াকতাবতূহু = তা লেখতে। ছাগীরানা = সগীরা/ ক্ষুদ্রঋণ হোক। আও = বা। কাবীরান = কবীরা/ বৃহৎঋণ হোক। ইলা আজালিহি = (তোমরা তা লেখবে) তার শেষসীমা নির্দিষ্ট করে। যালিকুম = উহাই। আক্বছাতু ইনদাল্লাহি = আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ন্যায়বিচারপূর্ণ পদ্ধতি। ওয়া = আর। আক্বওয়ামু লিশশাহাদাতি = সাক্ষ্য কায়েম হওয়ার সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি। ওয়া = আর। আদনা আল্লা তারতাবূ = তোমরা সন্দেহগ্রস্ত না হওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী পদ্ধতি। তিজারাতান হাদীরাতান = নগদ তিজারাত/ সাধারণ ব্যবসায়/ সাধারণ ক্রয় বিক্রয়। তুদীরুনাহা বাইনাকুম = যা তোমরা সম্পন্ন করো তোমাদের একে অপরের সাথে। ফালাইছা আলাইকুম জুনাহুন = সেক্ষেত্রে তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই। আল্লা তাকতুবূহা = যদি তা না লেখো। ওয়াশহিদূ = আর তোমরা সাক্ষী রাখো। ইযা তাবাইয়া’তুম = যখন তোমরা বাইয়ুন/ চুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়/ চুক্তিভিত্তিক ক্রয় বিক্রয় করো। ওয়া = আর। লা ইউদররা কাতিবুন = লেখককে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। ওয়া = আর। লা শাহিদুন = সাক্ষীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। ওয়া = আর। ইন = যদি। তাফআলূ = তোমরা তা করো। ফাইন্নাহু = তাহলে নিশ্চয় তা। ফুছূকুম বিকুম = তোমাদের নিজেদের সাথেই অনাচার। ওয়াত্তাক্বুল্লাহা = আর আল্লাহকে ভয় করো। ওয়া = আর। ইয়ুআল্লিকুমুল্লাহু = আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। ওয়াল্লাহু বিকুল্লি সাইয়িন আলীম = আর আল্লাহ সব বিষয়ে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
হে ঐসব লোক যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছো, যখন তোমরা ঋণের লেনদেন করো সুনির্দিষ্ট শেষসীমা নির্ধারণ করে, তখন তোমরা উহা লেখে রাখো। আর লেখবে তোমাদের মধ্যে একজন লেখক ন্যায্যভাবে। আর লেখক অস্বীকার করবে না লেখতে যেভাবে আল্লাহ তাকে (লেখতে) শিখিয়েছেন। সুতরাং সে যেন লেখে। আর লেখার বিষয়বস্তু লেখাবে সেই ব্যক্তি যার উপর ঋণপরিশোধের দায়িত্ব চাপছে (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা)। আর (প্রত্যেকে) যেন আল্লাহকে ভয় করে যিনি তার রব/ প্রতিপালক। আর (লেখতে বা লেখাতে) কমবেশি করবে না তা থেকে (= ঋণের শর্তসমূহ থেকে) কিছুই। তারপর যদি যার উপর ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব চাপছে (অর্থাৎ ঋণগ্রহীতা) হয় বোকা বা দুর্বল অথবা লেখার বিষয়বস্তু লেখাতে না পারে সে, তাহলে লেখার বিষয়বস্তু লেখাবে তার ওয়ালি/ অভিভাবক, ন্যায্যভাবে। আর তোমরা সাক্ষী রাখো, দুজন সাক্ষী তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে। কিন্তু যদি (সাক্ষ্য দেবার মতো) দুজন পুরুষ না থাকে, তাহলে (সাক্ষী রাখবে) একজন পুরুষকে আর দুজন নারীকে। যাদেরকে সাক্ষী রাখতে তোমরা রাজি থাকো (তাদেরকেই সাক্ষী রাখো)। যদি ভুল দিকে চলে যায় (নারী সাক্ষীদের) দুজনের একজন, তাহলে স্মরণ করিয়ে দেবে (নারী সাক্ষীদের) দুজনের একজন অন্যজনকে ( = যদি প্রথম নারী ভুল না করে তাহলে দ্বিতীয় নারীর সাক্ষ্য প্রয়োজন নেই; অর্থাৎ দুজন নারী সাক্ষী রাখলেও মূলত: সাক্ষ্য দেবে দুইজন; একজন পুরুষ, একজন নারী) । আর সাক্ষীগণ (সাক্ষ্য দিতে) অস্বীকার করবে না যখন তাদেরকে ডাকা হয়। আর তোমরা অবহেলা করো না তা লেখতে সগীরা/ ক্ষুদ্রঋণ হোক বা কবীরা/ বৃহৎঋণ হোক, (তোমরা তা লেখবে) তার শেষসীমা নির্দিষ্ট করে। উহাই আল্লাহর কাছে সবচেয়ে ন্যায়বিচারপূর্ণ পদ্ধতি আর সাক্ষ্য কায়েম হওয়ার সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি আর তোমরা সন্দেহগ্রস্ত না হওয়ার সবচেয়ে নিকটবর্তী পদ্ধতি। নগদ তিজারাত/ সাধারণ ব্যবসায়/ সাধারণ ক্রয় বিক্রয়, যা তোমরা সম্পন্ন করো তোমাদের একে অপরের সাথে, সেক্ষেত্রে তোমাদের জুনাহ/ গুনাহ নেই, যদি তা না লেখো। আর তোমরা সাক্ষী রাখো যখন তোমরা বাইয়ুন/ চুক্তিভিত্তিক ব্যবসায়/ চুক্তিভিত্তিক ক্রয় বিক্রয় করো। আর লেখককে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না আর সাক্ষীকেও ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না। আর যদি তোমরা তা করো (= যদি লেখক বা সাক্ষীকে ক্ষতিগ্রস্ত করো), তাহলে নিশ্চয় তা তোমাদের নিজেদের সাথেই অনাচার। আর আল্লাহকে ভয় করো। আর আল্লাহ তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। আর আল্লাহ সব বিষয়ে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
২:২৮৩
ওয়া = আর। ইন = যদি। কুনতুম = তোমরা থাকো। আলা ছাফারিন = সফরে। ওয়া = আর। লাম তাজিদূ = তোমরা না পাও। কাতিবান = কোন লেখক। ফারিহানুন মাক্ববূদাতান = তাহলে হস্তান্তরযোগ্য রেহান/ বন্ধক রাখবে। ফাইন = সুতরাং যদি। আমিনা = আস্থা রাখে। বা’দুকুম বা’দিন = তোমাদের একে অপরের উপর। ফালইয়ুআদ্দি = তাহলে যেন ফিরিয়ে দেয়। আল্লাযি’তুমিনা = যার উপর আস্থা রাখা হয়েছে সে। আমানাতাহু = (যে আস্থা রেখেছে) তার আমানত। ওয়াল ইয়াত্তাকিল্লাহা = আর সে যেন ভয় করে আল্লাহকে। রব্বাহু = যিনি তার রব। ওয়া = আর। লা তাকতুমুশ শাহাদাতা = তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না/ গোপন রেখো না। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াকতুমুহা = যে তা (= সাক্ষ্য) গোপন করে/ গোপন রাখে। ফাইন্নাহু আছীমুন ক্বালবুহু = নিশ্চয় তার কলব পাপী। ওয়া = আর। আল্লাহু বিমা তা’মালূনা আলীম = তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
আর যদি তোমরা থাকো সফরে আর তোমরা না পাও কোন লেখক তাহলে হস্তান্তরযোগ্য রেহান/ বন্ধক রাখবে। সুতরাং যদি আস্থা রাখে তোমাদের একে অপরের উপর তাহলে যেন ফিরিয়ে দেয় যার উপর আস্থা রাখা হয়েছে সে (যে আস্থা রেখেছে) তার আমানত (= বন্ধকী জিনিস)। আর সে যেন ভয় করে আল্লাহকে যিনি তার রব। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না/ গোপন রেখো না। আর যে তা (= সাক্ষ্য) গোপন করে/ গোপন রাখে নিশ্চয় তার কলব পাপী। আর তোমরা যা করো আল্লাহ তা সম্পর্কে আলীম/ জ্ঞাত (= যিনি জানেন)।
২:২৮৪
লিল্লাহি = আল্লাহরই অধিকারভুক্ত। মা ফিস সামাওয়াতি = যা আছে আসমানসমূহে। ওয়া = আর। মা ফিল আরদি = যা আছে জমিনে। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুবদূ = তোমরা প্রকাশ করো। মা ফী আনফুসিকুম = যা আছে তোমাদের মনে। আও = অথবা। তুখফূহু = তা গোপন রাখো। ইউহাছিবকুম বিহিল্লাহু = আল্লাহ তোমাদের থেকে তার হিসাব নেবেন। ফাইয়াগফির = তারপর তিনি মাফ করবেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করবেন। ওয়া = আর। ইউআযযিবু = তিনি আযাব/ শাস্তি দিবেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি (শাস্তি দেবার) ইচ্ছা করবেন। ওয়াল্লাহু আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীর = আর আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর ক্বাদীর/ সর্বশক্তিমান/ তাকদীর নির্ধারণকারী।
আল্লাহরই অধিকারভুক্ত যা আছে আসমানসমূহে আর যা আছে জমিনে। আর যদি তোমরা প্রকাশ করো যা আছে তোমাদের মনে অথবা তা গোপন রাখো, আল্লাহ তোমাদের থেকে তার হিসাব নেবেন। তারপর তিনি মাফ করবেন যাকে তিনি (মাফ করার) ইচ্ছা করবেন আর তিনি আযাব/ শাস্তি দিবেন যাকে তিনি (শাস্তি দেবার) ইচ্ছা করবেন। আর আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর ক্বাদীর/ সর্বশক্তিমান/ তাকদীর নির্ধারণকারী।
২:২৮৫
আমানার রসূলু = রসূল ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিমা উনযিলা ইলাইহি = ঐ বিষয়ে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি। মির রব্বিহি = তার রবের/ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। ওয়াল মু’মিনূনা = আর মু’মিনগণও ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। কুল্লু = তারা প্রত্যেকে। আমানা = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। বিল্লাহি = আল্লাহর প্রতি। ওয়া মালায়িকাতিহি = আর তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি। ওয়া কুতুবিহি = আর তাঁর কুতুবের/কিতাবসমূহের প্রতি। ওয়া রুসুলিহি = আর তাঁর রুসুলের/ রসূলগণের প্রতি। লা নুফাররিক্বু = (তারা বলেছে) আমরা পার্থক্য করি না। বাইনা আহাদিম মির রুসুলিহি = তাঁর রসুলগণের মধ্য থেকে কারো মধ্যে। ওয়া = আর। ক্বলূ = তারা বলেছে। ছামি’না ওয়া আতা’না = ছামি’না ওয়া আতা’না/ আমরা (প্রথমে ভালোভাবে) শুনেছি আর (তারপর) ইতায়াত/ আনুগত্য করেছি। গুফরানাকা = আমরা আপনার কাছে মাগফিরাত/ মাফ চাই। রব্বানা = (আপনিই) আমাদের রব। ওয়া ইলাইকাল মাছীর = আর আপনারই কাছে ফিরে যেতে হবে।
রসূল ঈমান/ বিশ্বাস করেছে ঐ বিষয়ে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি তার রবের/ প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। আর মু’মিনগণও ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। তারা প্রত্যেকে ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আল্লাহর প্রতি আর তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি আর তাঁর কুতুবের/কিতাবসমূহের প্রতি আর তাঁর রুসুলের/ রসূলগণের প্রতি। (তারা বলেছে-) ‘আমরা পার্থক্য করি না তাঁর রসুলগণের মধ্য থেকে কারো মধ্যে’। আর তারা বলেছে, ‘ছামি’না ওয়া আতা’না/ আমরা (প্রথমে ভালোভাবে) শুনেছি আর (তারপর) ইতায়াত/ আনুগত্য করেছি। (হে আল্লাহ) আমরা আপনার কাছে মাগফিরাত/ মাফ চাই। (আপনিই) আমাদের রব, আর আপনারই কাছে ফিরে যেতে হবে।
২:২৮৬
লা ইউকাল্লিফুল্লাহু নাফছান ইল্লা উছআহা = আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। লাহা মা কাছাবাত = (ভাল) যা সে উপার্জন করেছে তার ফল তার জন্যই। ওয়া আলাইহা মাকতাছাবাত = আর (মন্দ) যা সে উপার্জন করেছে তার পরিণামও তারই উপর। রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক। লা তুআখিজনা = আমাদেরকে ধরবেন না। ইন নাছীনা = যদি আমরা ভুলে যাই। আও = অথবা। আখত’না = যদি আমরা ত্রুটি করে ফেলি। রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক। ওয়া লা তাহমিল আলাইনা = আমাদেরকে বহন করতে দেবেন না। ইসরান = (এমন) বোঝা। কামা = যেমন। হামালতাহু = আপনি বহন করতে দিয়েছেন। আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা = তাদের উপর যারা ছিলো আমাদের আগে। রব্বানা = আমাদের রব/ প্রতিপালক। ওয়া লা তুহাম্মিলনা = আমাদেরকে বহন করতে দেবেন না। মা লা ত্বক্বাতা লানা বিহি = যার প্রতি আমাদের কষ্টসাধ্য সক্ষমতা নেই। ওয়া’ফু আন্না = আমাদের প্রতি উদারতা দেখান। ওয়াগফিরলানা = আর আমাদেরকে মাফ করে দিন। ওয়ারহামনা = আর আমাদেরকে দয়া করুন। আনতা = আপনিই। মাওলানা = মাওলানা/ আমাদের মাওলা (প্রভু)। ফানসুরনা = আমাদেরকে সাহায্য করুন। আলাল ক্বাওমাল কাফিরীন = কাফির কাওমের বিরুদ্ধে।
আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সাধ্যের চেয়ে বেশি দায়িত্বভার অর্পণ করেন না। (ভাল) যা সে উপার্জন করেছে তার ফল তারই জন্য। আর (মন্দ) যা সে উপার্জন করেছে তার পরিণামও তারই উপর। (মু’মিনদের দোয়া হয়-) ‘আমাদের রব/ প্রতিপালক আমাদেরকে ধরবেন না যদি আমরা ভুলে যাই অথবা যদি আমরা ত্রুটি করে ফেলি। আমাদের রব/ প্রতিপালক, আমাদেরকে বহন করতে দেবেন না (এমন) বোঝা, যেমন আপনি বহন করতে দিয়েছেন তাদের উপর যারা ছিলো আমাদের আগে। আমাদের রব/ প্রতিপালক, আমাদেরকে বহন করতে দেবেন না যার প্রতি আমাদের কষ্টসাধ্য সক্ষমতা নেই। আমাদের প্রতি উদারতা দেখান, আর আমাদেরকে মাফ করে দিন, আর আমাদেরকে দয়া করুন। আপনিই মাওলানা/ আমাদের মাওলা (প্রভু)। আমাদেরকে সাহায্য করুন কাফির কাওমের বিরুদ্ধে।