কুরআনান আ'জাবান

বিস্ময়কর কুরআন

শব্দার্থ ভিত্তিক বাংলা অনুবাদ, তৈয়াবুর রহমান গোপালগঞ্জী

Quranan Ajaban Cover

042. সূরা শূরা

হে আমার প্রভু, আপনার কাছে আশ্রয় চাই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে, আশ্রয় চাই এর উপস্থিতি থেকে। পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু সর্বশক্তিমানের নামে।

৪২:১
হা মীম = হা মীম।

হা মীম।

৪২:২
আইন সীন ক্বফ = আইন সীন ক্বফ।

আইন সীন ক্বফ।

৪২:৩
কাযালিকা = এভাবে। ইউহী = ওহী করেন। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া = আর। ইলাল্লাযীনা = তাদের প্রতি যারা ছিলো। মিন ক্বাবলিকা = তোমার আগে। আল্লাহুল আযীযুল হাকীমু = (ওহী করেন) আল্লাহ যিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

এভাবে ওহী করেন তোমার প্রতি আর তাদের প্রতি যারা ছিলো তোমার আগে, (ওহী করেন) আল্লাহ, যিনি আযীয/ মহাশক্তিমান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪২:৪
লাহু = তাঁরই কর্তৃত্বাধীন। মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদি = যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে। ওয়া = আর। হুয়াল আলিয়্যুল আযীমু = তিনি আলী/ সমুচ্চ ও আযীম/ মহান।

তাঁরই কর্তৃত্বাধীন যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে। আর তিনি আলী/ সমুচ্চ ও আযীম/ মহান।

৪২:৫
তাকাদুছ ছামাওয়াতু = (তাঁর সাথে শিরক করার কারণে) উপক্রম হয় আকাশমন্ডলী। ইয়াতাফত্তরনা মিন ফাওক্বিহিন্না = উহার উপর থেকে ভেঙ্গে পড়ার। ওয়াল মালাইকাতু = আর ফেরেশতাগণ। ইউছাব্বিহূনা = তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে। বিহামদি রব্বিহিম = তাদের রবের হামদ/ প্রশংসা সহকারে। ওয়া = আর। ইয়াছতাগফিরূনা = তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। লিমান ফিল আরদি = তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে আছে। আলা = জেনে রাখো। ইন্নাল্লাহা হুয়াল গাফূরুর রহীমু = নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

(তাঁর সাথে শিরক করার কারণে) উপক্রম হয় আকাশমন্ডলী উহার উপর থেকে ভেঙ্গে পড়ার, আর ফেরেশতাগণ তাসবীহ/ পবিত্রতা বর্ণনা করে তাদের রবের হামদ/ প্রশংসা সহকারে, আর তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে তাদের জন্য যারা পৃথিবীতে আছে। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও রহীম/ দয়াশীল।

৪২:৬
ওয়াল্লাযীনাত তাখাযূ = আর যারা গ্রহণ করেছে। মিন দূনিহী = তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে। আওলিয়াআল্লাহু হাফীযুন আলাইহিম = আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে, আল্লাহই তাদের ব্যাপারে হাফিয/ সংরক্ষক। ওয়া = আর। মা আনতা আলাইহিম = তুমি নও তাদের ব্যাপারে। বিওয়াকীলি = উকিল/ কর্মবিধায়ক।

আর যারা গ্রহণ করেছে তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে, আল্লাহই তাদের ব্যাপারে হাফিয/ সংরক্ষক, আর তুমি নও তাদের ব্যাপারে উকিল/ কর্মবিধায়ক।

৪২:৭
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ক্বুরআনান আরাবিয়্যান = আরবী ভাষার কুরআন। লিতুনযিরা = যেন তুমি সতর্ক করো। উম্মাল ক্বুরা = উম্মুল কুরা/ জনপদসমূহের জননী (= বাক্কা মুবারাকা)। ওয়া = আর। মান হাওলাহা = উহার চারিদিকে যারা আছে তাদেরকে। ওয়া = আর। তানযিরা = যেন তুমি সতর্ক করো। ইয়াওমাল জাময়ি = ইয়াওমুল জাময়ি/ একত্রিতকরনের দিন সম্পর্কে। লা রয়বা ফীহি = যাতে কোন সন্দেহ নেই। ফারীক্বুন ফিল জান্নাতি = (সেদিন) একদল যাবে জান্নাতে। ওয়া = আর। ফারীক্বুন ফিস সায়ীরি = একদল যাবে সায়ীরে (= জাহান্নামে)।

আর এভাবে আমরা ওহী করেছি তোমার প্রতি আরবী ভাষার কুরআন, যেন তুমি সতর্ক করো উম্মুল কুরা/ জনপদসমূহের জননী (= বাক্কা মুবারাকা) আর উহার চারিদিকে যারা আছে তাদেরকে। আর যেন তুমি সতর্ক করো ইয়াওমুল জাময়ি/ একত্রিতকরনের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। (সেদিন) একদল যাবে জান্নাতে আর একদল যাবে সায়ীরে (= জাহান্নামে)।

৪২:৮
ওয়া = আর। লাও = যদি। শাআল্লাহু = আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। লাজাআলাহুম = তাহলে অবশ্যই তাদেরকে করতে পারতেন। উম্মাতান ওয়াহিদাতান = একটিমাত্র উম্মাহ। ওয়ালাকিন্না = কিন্তু। ইউদখিলু = তিনি দাখিল/ প্রবেশ করান। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ফী রহমাতিহী = তাঁর রহমতের মধ্যে। ওয়ায যলিমূনা = আর যালিমদের অবস্থা এই যে। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিওঁ ওয়ালিয়্যিইঁও ওয়া লা নাসীরিন = কোন ওলি/ অভিভাবক আর কোন নাসীর/ সাহায্যকারীও নেই।

আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে অবশ্যই তাদেরকে করতে পারতেন একটিমাত্র উম্মাহ। কিন্তু তিনি দাখিল/ প্রবেশ করান যাকে তিনি ইচ্ছা করেন তাঁর রহমতের মধ্যে। আর যালিমদের অবস্থা এই যে, তাদের জন্য নেই কোন ওলি/ অভিভাবক আর কোন নাসীর/ সাহায্যকারীও নেই।

৪২:৯
আমিত্তাখাযূ = নাকি তারা গ্রহণ করেছে। মিন দূনিহী = তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে। আওলিয়াআ = আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে। ফাল্লাহু = অথচ আল্লাহ। হুয়াল ওয়ালিয়্যু = তিনিই ওলি/ অভিভাবক। ওয়া = আর। হুয়া = তিনিই। ইউহিল মাওতা = মৃতকে জীবিত করেন। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আলা কুল্লি সাইয়িন ক্বাদীরুন = সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

নাকি তারা গ্রহণ করেছে তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যদেরকে আওলিয়া/ অভিভাবকরূপে? অথচ আল্লাহ, তিনিই ওলি/ অভিভাবক আর তিনিই মৃতকে জীবিত করেন, আর তিনি সকল সত্তা ও বিষয়ের উপর প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪২:১০
ওয়া = আর। মাখতালাফতুম ফীহি মিন শাইয়িন = যে ব্যাপারে তোমরা ইখতিলাফ/ মতভেদ করো। ফাহুকমুহু = তবে তার হুকুম/ বিচার-ফায়সালা। ইলাল্লাহি = আল্লাহর কাছে (= আল কুরআন দ্বারা করতে হবে)। যালিকুমুল্লাহু = সেই আল্লাহই। রব্বী = আমার রব। আলাইহি = তাঁরই উপর। তাওয়াক্কালতু = আমি তাওয়াক্কুল/ ভরসা করছি। ওয়া = আর। ইলাইহি = তাঁরই দিকে। উনীবু = আমি অভিমুখী হয়েছি।

আর যে ব্যাপারে তোমরা ইখতিলাফ/ মতভেদ করো, তবে তার হুকুম/ বিচার-ফায়সালা আল্লাহর কাছে (= আল কুরআন দ্বারা করতে হবে)। সেই আল্লাহই আমার রব। তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল/ ভরসা করছি আর তাঁরই দিকে আমি অভিমুখী হয়েছি।

৪২:১১
ফাতিরুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। জাআলা = তিনি সৃষ্টি করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিন আনফুসিকুম = তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে। আযওয়াজান = জোড়া। ওয়া = আর। মিন আনআমি = আনআমের/ গবাদি পশুগুলোর মধ্য থেকেও। আযওয়াজান = জোড়া (সৃষ্টি করেছেন)। ইয়াযরাউকুম ফীহি = তিনি উহার মাধ্যমে তোমাদের বংশ বিস্তার ঘটান। লাইছা কামিছলিহী শাইয়ুন = তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। ওয়া = আর। হুয়াছ ছামীউল বাসীরু = তিনি সামী’/ সর্বশ্রোতা ও বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা।

তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা। তিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে জোড়া, আর আনআমের/ গবাদি পশুগুলোর মধ্য থেকেও জোড়া (সৃষ্টি করেছেন), তিনি উহার মাধ্যমে তোমাদের বংশ বিস্তার ঘটান। তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। আর তিনি সামী’/ সর্বশ্রোতা ও বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা।

৪২:১২
লাহু মাক্বালিলুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ। ইয়াবছুতুর রিযক্বা = তিনি প্রশস্ত করে দেন রিযিক। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াক্বদিরু = তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। বিকুল্লি শাইয়িন আলীমুন = সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞানী।

তাঁরই নিয়ন্ত্রণাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর চাবিসমূহ। তিনি প্রশস্ত করে দেন রিযিক, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন, আর তিনি প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী নির্ধারিত পরিমাণমতো করে দেন (যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন)। নিশ্চয় তিনি সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞানী।

৪২:১৩
শারাআ = তিনি বিধিবদ্ধ করেছেন। লাকুম = তোমাদের জন্য। মিনাদ্দ্বীনি = দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা/ সংবিধান থেকে। মা ওয়াসসা বিহী = উহাকেই যার প্রতি তিনি ওসিয়ত/ নির্দেশদান করেছিলেন। নূহান = নূহকে। ওয়াল্লাযী = আর যা। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার প্রতি। ওয়া = আর। মা ওয়াসসয়না বিহী = যার প্রতি আমরা ওসিয়ত/ নির্দেশদান করেছিলাম। ইবরাহীমা ওয়া মূসা ওয়া ঈসা = ইবরাহীমকে, মূসাকে ও ঈসাকে। আন = এ মর্মে যে। আক্বিমুদ দ্বীনা = দ্বীন কায়েম কর/ আসমানী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করো। ওয়া = আর। লা তাতাফাররাক্বূ ফীহি = উহার ক্ষেত্রে নানা দলে বিভক্ত হয়ে যেয়ো না। কাবুরা = বড়ই বেদনাদায়ক হয়েছে। আলাল মুশরিকীনা = মুশরিকদের উপর। মা তাদঊ হুম ইলাইহি = ঐ বিষয় যার দিকে তুমি তাদেরকে আহবান করছো। আল্লাহু = আল্লাহ। ইয়াজতাবী ইলাইহি = তাঁর দিকে বেছে নেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। ইয়াহদী ইলাইহি = তাঁর দিকে হিদায়াত করেন। মাইঁ ইউনীবু = যে (তাঁর) অভিমুখী হয়।

তিনি বিধিবদ্ধ করেছেন তোমাদের জন্য দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা/ সংবিধান থেকে উহাকেই যার প্রতি তিনি ওসিয়ত/ নির্দেশদান করেছিলেন নূহকে, আর যা আমরা ওহী করেছি তোমার প্রতি, আর যার প্রতি আমরা ওসিয়ত/ নির্দেশদান করেছিলাম ইবরাহীমকে, মূসাকে ও ঈসাকে; এ মর্মে যে ‘দ্বীন কায়েম কর/ আসমানী জীবনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করো। আর উহার ক্ষেত্রে নানা দলে বিভক্ত হয়ে যেয়ো না’। বড়ই বেদনাদায়ক হয়েছে মুশরিকদের উপর ঐ বিষয় যার দিকে তুমি তাদেরকে আহবান করছো। আল্লাহ তাঁর দিকে বেছে নেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, আর (তিনি তাকে) তাঁর দিকে হিদায়াত করেন যে (তাঁর) অভিমুখী হয়।

৪২:১৪
ওয়া = আর। মা তাফাররাক্বূ = তারা দলাদলি করেনি। ইল্লা মিম বা’দি মা জাআতহুমুল ইলমু = তাদের কাছে জ্ঞান আসা সত্ত্বেও (দলাদলি করা) ছাড়া। বাগইয়াম বায়নাহুম = তাদের নিজেদের মধ্যে একে অপরের উপর বাড়াবাড়ি করার জন্যই (তারা দলাদলি করেছে)। ওয়া = আর। লাও = যদি। লা = না। কালিমাতুন ছাবাক্বাত = একটি বাণী নির্ধারিত থাকতো। মির রব্বিকা = তোমার রবের পক্ষ থেকে। ইলা আজালিম মুসাম্মা = (তাদেরকে) আজালিম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমা পর্যন্ত (অবকাশ দেয়ার ব্যাপারে)। লাক্বুদিয়া = তাহলে অবশ্যই ফায়সালা করে দেয়া হতো। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ওয়া = আর। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ঊরিছুল কিতাবা = কিতাবের ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী হয়েছে। মিম বা’দিহিম = তাদের পরে। লাফী শাক্কিম মিনহু মুরীবি = তারা বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে আছে।

আর তারা দলাদলি করেনি তাদের কাছে জ্ঞান আসা সত্ত্বেও (দলাদলি করা) ছাড়া, তাদের নিজেদের মধ্যে একে অপরের উপর বাড়াবাড়ি করার জন্যই (তারা দলাদলি করেছে)। আর যদি না একটি বাণী নির্ধারিত থাকতো তোমার রবের পক্ষ থেকে (তাদেরকে) আজালিম মুসাম্মা/ নির্দিষ্ট শেষ সময়সীমা পর্যন্ত (অবকাশ দেয়ার ব্যাপারে), তাহলে অবশ্যই ফায়সালা করে দেয়া হতো তাদের মধ্যে। আর নিশ্চয় যারা কিতাবের ওয়ারিস/ উত্তরাধিকারী হয়েছে তাদের পরে, তারা বিভ্রান্তিকর সন্দেহের মধ্যে আছে।

৪২:১৫
ফালিযালিকা = সুতরাং উহার জন্য (= দ্বীনের দিকে)। ফাদঊ = তুমি আহবান করো। ওয়াছতাক্বিম = আর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকো। কামা = যেরূপে। উমিরতা = তুমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছো। ওয়া = আর। লা তাত্তাবি’ = তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না। আহওয়াআহুম = তাদের হাওয়ার/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ ও সংবিধানের। ওয়া = আর। ক্বুল = বলো। আমানতু = আমি ঈমান/ বিশ্বাস করেছি। বিমা আনযালাল্লাহু মিনাল কিতাবিন = যা আল্লাহ নাযিল করেছেন সেই কিতাবের প্রতি। ওয়া = আর। উমিরতু = আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি। লিআ’দিলা = আদল/ ন্যায়বিচার করতে। বায়নাকুম = তোমাদের মধ্যে। আল্লাহু = আল্লাহ। রব্বুনা = আমাদের রব। ওয়া = আর। রব্বুকুম = তোমাদেরও রব। লানা = আমাদের জন্য। আ’মালুনা = আমাদের আমল/ কাজ। ওয়া = আর। লাকুম = তোমাদের জন্য। আ’মালুকুম = তোমাদের আমল/ কাজ। লা হুজ্জাতা = কোন তর্ক নেই। বায়নানা ওয়া বায়নাকুম = আমাদের ও তোমাদের মধ্যে। আল্লাহু = আল্লাহ। ইয়াজমাউ বায়নানা = একত্রিত করবেন আমাদেরকে। ওয়া = আর। ইলাইহিল মাসীরু = তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনস্থল।

সুতরাং উহার জন্য (= দ্বীনের দিকে) তুমি আহবান করো। আর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকো যেরূপে তুমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছো। আর তুমি ইত্তেবা/ অনুসরণ করো না তাদের হাওয়ার/ প্রবৃত্তিপ্রসূত মতবাদ ও সংবিধানের। আর বলো, ‘আমি ঈমান/ বিশ্বাস করেছি যা আল্লাহ নাযিল করেছেন সেই কিতাবের প্রতি আর আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি আদল/ ন্যায়বিচার করতে তোমাদের মধ্যে। আল্লাহ আমাদের রব আর তোমাদেরও রব। আমাদের জন্য আমাদের আমল/ কাজ আর তোমাদের জন্য তোমাদের আমল/ কাজ। কোন তর্ক নেই আমাদের ও তোমাদের মধ্যে। আল্লাহ একত্রিত করবেন আমাদেরকে, আর তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনস্থল’।

৪২:১৬
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইউহাজ্জূনা = তর্ক করে। ফিল্লাহি = আল্লাহর ব্যাপারে। মিম বা’দি মাছতুজীবা লাহু = তাঁর ডাকে সাড়া দেয়ার (অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন গ্রহণের) পরেও। হুজ্জাতুহুম = তাদের তর্ক। দাহিদ্বাতুন = বাতিল। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। ওয়া = আর। আলাইহিম = তাদের উপর। গাদাবুন = গজব। ওয়া = আর। লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন শাদীদুন = কঠোর শাস্তি।

আর যারা তর্ক করে আল্লাহর ব্যাপারে তাঁর ডাকে সাড়া দেয়ার (অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীন গ্রহণের) পরেও, তাদের তর্ক বাতিল, তাদের রবের কাছে। আর তাদের উপর গজব। আর তাদের জন্য আছে কঠোর শাস্তি।

৪২:১৭
আল্লাহুল্লাযী = তিনিই আল্লাহ যিনি। আনযালাল কিতাবা = নাযিল করেছেন এ কিতাব। বিল হাক্বক্বি = সত্য সহকারে। ওয়াল মীযানা = আর (নাযিল করেছেন এ) মিজান/ দাড়িপাল্লা/ (সত্যের) মাপকাঠি। ওয়া = আর। মা ইউদরীকা = তুমি কি জান যে। লাআল্লাছ ছায়াতা = সম্ভবত সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত। ক্বারীবুন = নিকটবর্তী।

তিনিই আল্লাহ যিনি নাযিল করেছেন এ কিতাব সত্য সহকারে আর (নাযিল করেছেন এ) মিজান/ দাড়িপাল্লা/ (সত্যের) মাপকাঠি। আর তুমি কি জান যে, সম্ভবত সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত নিকটবর্তী?

৪২:১৮
ইয়াছতা’জিলু বিহাল্লাযীনা = তারাই উহা সম্পর্কে তাড়াহুড়া করছে যারা। লা ইউ’মিনূনা বিহা = উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে না। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। মুশফিক্বূনা মিনহা = তারা উহাকে ভয় করে। ওয়া = আর। ইয়া’লামূনা = তারা জানে। আন্নাহা = যে, উহা। আল হাক্বক্বু = হক্ব/ সত্য। আলা = জেনে রাখ। ইন্নাল্লাযীনা = নিশ্চয় যারা। ইউমারূনা = সন্দেহ সৃষ্টি করে। ফিস সায়াতি = সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত সম্পর্কে। লাফী দলালিম বায়ীদিন = তারা আছে সুদূর পথভ্রষ্টতার মধ্যে।

তারাই উহা সম্পর্কে তাড়াহুড়া করছে যারা উহার প্রতি ঈমান/ বিশ্বাস করে না। আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে তারা উহাকে ভয় করে, আর তারা জানে যে, উহা হক্ব/ সত্য। জেনে রাখ, নিশ্চয় যারা সন্দেহ সৃষ্টি করে সায়াত/ প্রলয়-মুহুর্ত সম্পর্কে, তারা আছে সুদূর পথভ্রষ্টতার মধ্যে।

৪২:১৯
আল্লাহু = আল্লাহ। লাত্বীফুন বিইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের প্রতি লতিফ/ দয়াময়। ইয়ারযুক্বু = তিনি রিযিক দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ওয়া = আর। হুয়াল ক্বাভিয়্যুল আযীযু = তিনি ক্বাভী/ মহাশক্তিমান ও আযীয/ মহাপরাক্রমশালী।

আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি লতিফ/ দয়াময়। তিনি রিযিক দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আর তিনি ক্বাভী/ মহাশক্তিমান ও আযীয/ মহাপরাক্রমশালী।

৪২:২০
মান = যে। কানা ইউরীদু = এরাদা/ পেতে ইচ্ছা করে। হারছুল আখিরাতি = আখিরাতের ফসল। নাযিদ লাহু = আমরা তাকে বাড়িয়ে দিই। ফী হারছিহী = তার ফসলের মধ্যে। ওয়া = আর। মান = যে। কান ইউরীদু = এরাদা/ পেতে ইচ্ছা করে। হারছুদ দুনইয়া = দুনিয়ার ফসল। নু’তিহী মিনহা = আমরা তাকে দান করি উহা থেকে (= দুনিয়া থেকে)। ওয়া = আর। মা লাহু = তার জন্য নেই। ফিল আখিরাতি = আখিরাতে। মিন নাসীবিন = কোন অংশ।

যে এরাদা/ পেতে ইচ্ছা করে আখিরাতের ফসল, আমরা তাকে বাড়িয়ে দিই তার ফসলের মধ্যে। আর যে এরাদা/ পেতে ইচ্ছা করে দুনিয়ার ফসল, আমরা তাকে দান করি উহা থেকে (= দুনিয়া থেকে)। আর তার জন্য নেই আখিরাতে কোন অংশ।

৪২:২১
আম = নাকি। লাহুম = তাদের জন্য আছে। শুরাকাউ = অনেক শরিক। শারাউ = যারা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছে। লাহুম = তাদের জন্য। মিনাদ দ্বীনি = কোনরূপ দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা/ সংবিধান। মা লাম ইয়া’যাম বিহিল্লাহু = যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন অনুমতি দেননি। ওয়া = আর। লাও লা = যদি না (নির্ধারিত থাকতো)। কালিমাতুল ফাসলি = ফায়সালার বাণী। লাক্বুদিয়া = তাহলে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করে দেয়া হতো। বায়নাহুম = তাদের মধ্যে। ওয়া = আর। ইন্নায যলিমীনা লাহুম = নিশ্চয় যালিমদের জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

নাকি তাদের জন্য আছে অনেক শরিক, যারা বিধিবদ্ধ করে দিয়েছে তাদের জন্য কোনরূপ দ্বীন/ জীবনব্যবস্থা/ সংবিধান, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন অনুমতি দেননি? আর যদি না (নির্ধারিত থাকতো) ফায়সালার বাণী, তাহলে ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করে দেয়া হতো তাদের মধ্যে। আর নিশ্চয় যালিমদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪২:২২
তারায যলিমীনা = তুমি যালিমদেরকে দেখবে। মুশফিক্বীনা = ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায়। মিম্মা কাছাবূ = ঐ ব্যাপারে যা তারা উপার্জন করেছে। ওয়া = আর। হুয়া = উহা। ওয়াক্বিউম বিহিম = তাদের উপর পড়বেই। ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। ফী রওদাতিল জান্নাতি = তারা জান্নাতের রওজায়/ বাগিচায় থাকবে। লাহুম = তাদের জন্য আছে। মা ইয়াশাউনা = যা তারা ইচ্ছা করবে। ইনদা রব্বিহিম = তাদের রবের কাছে। যালিকা হুয়াল ফাদলুল কাবীরু = উহাই বড় অনুগ্রহ।

তুমি যালিমদেরকে দেখবে ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ঐ ব্যাপারে যা তারা উপার্জন করেছে। আর উহা তাদের উপর পড়বেই। আর যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে ও আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে তারা জান্নাতের রওজায়/ বাগিচায় থাকবে। তাদের জন্য আছে যা তারা ইচ্ছা করবে তাদের রবের কাছে। উহাই বড় অনুগ্রহ।

৪২:২৩
যালিকাল্লাযী = উহাই তা যার ব্যাপারে। ইউবাশশিরুল্লাহু = আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন। ইবাদাহুল্লাযীনা = তাঁর সেই বান্দাদেরকে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। ক্বুল = বলো। লা আছআলুকুম = আমি তোমাদের কাছে চাই না। আলাইহি = উহার ব্যাপারে। আজরান = কোন মজুরি/ পারিশ্রমিক/ প্রতিদান। ইল্লাল মাওয়াদ্দাতা ফিল ক্বুরবা = আত্মীয়তার সৌহার্দ্যতা ছাড়া। ওয়া = আর। মাইঁ ইয়াক্বতারিফ হাছানাতান = যে উপার্জন করবে উত্তম কাজ। নাযিদ লাহু = আমরা তাকে বাড়িয়ে দেবো। ফীহা = উহার মধ্যে। হুসনা = উত্তম উপকরন। ইন্নাল্লাহা = নিশ্চয় আল্লাহ। গাফূরুন শাকূরুন = গফূর/ ক্ষমাশীল ও শাকূর/ কৃতজ্ঞতার মূল্যায়নকারী।

উহাই তা যার ব্যাপারে আল্লাহ সুসংবাদ দিয়েছেন তাঁর সেই বান্দাদেরকে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে ও আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করেছে। বলো, ‘আমি তোমাদের কাছে চাই না উহার ব্যাপারে (= দ্বীন প্রচারের ব্যাপারে) কোন মজুরি/ পারিশ্রমিক/ প্রতিদান, আত্মীয়তার সৌহার্দ্যতা ছাড়া’। আর যে উপার্জন করবে উত্তম কাজ আমরা তাকে বাড়িয়ে দেবো উহার মধ্যে উত্তম উপকরন। নিশ্চয় আল্লাহ গফূর/ ক্ষমাশীল ও শাকূর/ কৃতজ্ঞতার মূল্যায়নকারী।

৪২:২৪
আম = নাকি। ইয়াক্বূলূনাফতারা আলাল্লাহি কাযিবা = তারা বলে যে, ‘সে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করেছে’? ফাইইঁ ইয়াশায়িল্লাহু = তবে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে। ইয়াখতিম = মোহর মেরে দিতেন। আলা ক্বালবিকা = তোমার কলবের উপরেও। ওয়া = আর। ইয়ামহুল্লাহুল বাতিলা = আল্লাহ বাতিলকে নির্মূল করেন। ওয়া = আর। ইউহিক্বক্বুল হাক্বক্বা = সত্যকে সত্য প্রমাণিত করেন। বিকালিমাতিহী = তাঁর কালেমা/ বাণী দিয়ে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আলীমুম বিযাতিস সুদূরি = সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের ভাবধারা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।

নাকি তারা বলে যে, ‘সে আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যা রচনা করেছে’? তবে যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে মোহর মেরে দিতেন তোমার কলবের উপরেও। আর আল্লাহ বাতিলকে নির্মূল করেন আর সত্যকে সত্য প্রমাণিত করেন তাঁর কালেমা/ বাণী দিয়ে। নিশ্চয় তিনি সদরসমূহের/ মস্তিষ্কসমূহের ভাবধারা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত।

৪২:২৫
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইয়াক্ববালুত তাওবাতা = তাওবা কবুল করেন। আন ইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের থেকে। ওয়া = আর। ইয়া’ফূ = তিনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন। আনিছ ছাইয়িআতি = (ছোটখাট) মন্দসমূহ। ওয়া = আর। ইয়া’লামু = তিনি জানেন। মা তাফআলূনা = যা কিছু তোমরা করছো।

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি তাওবা কবুল করেন তাঁর বান্দাদের থেকে, আর তিনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন (ছোটখাট) মন্দসমূহ। আর তিনি জানেন যা কিছু তোমরা করছো।

৪২:২৬
ওয়া = আর। ইয়াছতাজীবুল্লাযীনা = তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করে। ওয়া = ও। আমিলুস সলিহাতি = আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে। ওয়া = আর। ইয়াযীদুহুম = তাদেরকে বাড়িয়ে দেন। মিন ফাদলিহী = তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ থেকে। ওয়াল কাফিরূনা লাহুম = আর কাফিরদের জন্য আছে। আযাবুন শাদীদুন = আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি।

আর তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন যারা ঈমান/ বিশ্বাস করে ও আমলে সালেহ/ সৎকর্ম করে, আর তাদেরকে বাড়িয়ে দেন তাঁর ফযল/ অনুগ্রহ থেকে। আর কাফিরদের জন্য আছে আযাবুন শাদীদ/ কঠোর শাস্তি।

৪২:২৭
ওয়া = আর। লাও = যদি। বাছাত্বাল্লাহুর রিযক্বা = আল্লাহ প্রচুর পরিমাণে রিযিক দিতেন। লিইবাদিহী = তাঁর সব বান্দাদেরকে। লাবাগাও = তাহলে তারা বিদ্রোহ করতো। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। ওয়ালাকিন = কিন্তু। ইউনাযযিলু = তিনি নাযিল করেন। বিক্বাদারিম = নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী। মা ইয়াশাউ = যা তিনি ইচ্ছা করেন। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। বিইবাদিহী = তাঁর বান্দাদের প্রতি। খাবীরুম বাসীরুন = খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দৃষ্টি রাখেন)।

আর যদি আল্লাহ প্রচুর পরিমাণে রিযিক দিতেন তাঁর সব বান্দাদেরকে, তাহলে তারা বিদ্রোহ করতো পৃথিবীতে। কিন্তু তিনি নাযিল করেন নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন (natural law) অনুযায়ী, যা তিনি ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি খাবীর (= যিনি খবর রাখেন) ও বাসীর (= যিনি দৃষ্টি রাখেন)।

৪২:২৮
ওয়া = আর। হুয়াল্লাযী = তিনিই সেই সত্তা যিনি। ইউনাযযিলুল গায়ছা = বৃষ্টি নাযিল/ বর্ষণ করেন। মিম বা’দি মা ক্বানাত্বূ = লোকেরা নিরাশ হওয়ার পরে। ওয়া = আর। ইয়ানশুরু = তিনি বিস্তার করেন। রহমাতুহূ = তাঁর রহমত। ওয়া = আর। হুয়াল ওয়ালিয়্যুল হামীদু = তিনিই ওলি/ অভিভাবক ও হামীদ/ প্রশংসিত।

আর তিনিই সেই সত্তা যিনি বৃষ্টি নাযিল/ বর্ষণ করেন লোকেরা নিরাশ হওয়ার পরে। আর তিনি বিস্তার করেন তাঁর রহমত। আর তিনিই ওলি/ অভিভাবক ও হামীদ/ প্রশংসিত।

৪২:২৯
ওয়া = আর। মিন আয়াতিহী = তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে। খালক্বুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি। ওয়া = আর। মা = যা কিছু। বাছছা = তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন। ফীহিমা = এ উভয়ের মধ্যে। মিন দাব্বাতিন = দাব্বাত/ জীবজন্তু থেকে। ওয়া = আর। হুয়া = তিনি। আলা জাময়িহিম = তাদেরকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে। ইযা ইয়াশাউ ক্বাদীরুন = যখনি তিনি ইচ্ছা করবেন তখনি সক্ষম।

আর তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি, আর যা কিছু তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন এ উভয়ের মধ্যে দাব্বাত/ জীবজন্তু থেকে। আর তিনি তাদেরকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে যখনি তিনি ইচ্ছা করবেন তখনি সক্ষম।

৪২:৩০
ওয়া = আর। মা আসাবুকুম = যা কিছু তোমাদের কাছে পৌঁছেছে। মিম মুসীবাতিন = কোন মুসিবত/ বিপদরূপে। ফাবিমা কাছাবাত আয়দীকুম = তা তো এজন্যই হয়েছে যে, তোমাদের হাত উহা উপার্জন করেছে। ওয়া = আর। ইয়া’ফূ আন কাছীরিন = অনেক (বিপদ) তিনি নিজের থেকে মার্জনা করেছেন (= তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এমন অনেক বিপদ হওয়ার ছিলো যা তিনি হতে দেননি)।

আর যা কিছু তোমাদের কাছে পৌঁছেছে কোন মুসিবত/ বিপদরূপে, তা তো এজন্যই হয়েছে যে, তোমাদের হাত উহা উপার্জন করেছে। আর অনেক (বিপদ) তিনি নিজের থেকে মার্জনা করেছেন (= তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এমন অনেক বিপদ হওয়ার ছিলো যা তিনি হতে দেননি)।

৪২:৩১
ওয়া = আর। মা আনতুম বিম’জিযীনা ফিল আরদি = তোমরা (আল্লাহকে) পৃথিবীতে অক্ষমকারী হতে পারো না। ওয়া = আর। মা লাকুম = তোমাদের জন্য নেই। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। মিওঁ ওয়ালিয়্যিওঁ ওয়া লা নাসীরিন = কোন ওলি/ অভিভাবক আর কোন নাসীর/ সাহায্যকারীও নেই।

আর তোমরা (আল্লাহকে) পৃথিবীতে অক্ষমকারী হতে পারো না, আর তোমাদের জন্য নেই আল্লাহ ছাড়া কোন ওলি/ অভিভাবক আর কোন নাসীর/ সাহায্যকারীও নেই।

৪২:৩২
ওয়া = আর। মিন আয়াতিহিল জাওয়ারি ফিল বাহরি কাল আ’লামি = তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে নৌযানসমূহ, যা সাগরের মধ্যে পর্বতসদৃশ (দেখা যায়)।

আর তাঁর আয়াতসমূহের/ নিদর্শনসমূহের মধ্যে আছে নৌযানসমূহ, যা সাগরের মধ্যে পর্বতসদৃশ (দেখা যায়)।

৪২:৩৩
ইইঁ ইয়াশা’ = যদি তিনি ইচ্ছা করেন। ইউছকিনির রীহা = তাহলে বাতাসকে ধরে রাখবেন/ থামিয়ে দিবেন। ফাইয়াযলালনা রওয়াক্বিদা = ফলে সেগুলো (= নৌযানগুলো) স্থির হয়ে যাবে। আলা যহরিহী = উহার পিঠের উপর (= সমুদ্রপৃষ্ঠে)। ইন্না = নিশ্চয়। ফী যালিকা = উহাতে আছে। লাআয়াতিল্লিকুল্লি সব্বারিন শাকূরিন = আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ, প্রত্যেকে সবরকারী ও শোকরকারীর জন্য।

যদি তিনি ইচ্ছা করেন তাহলে বাতাসকে ধরে রাখবেন/ থামিয়ে দিবেন, ফলে সেগুলো (= নৌযানগুলো/ যে যানবাহন পানিতে চলে) স্থির হয়ে যাবে উহার পিঠের উপর (= সমুদ্রপৃষ্ঠে)। নিশ্চয় উহাতে আছে আয়াতসমূহ/ নিদর্শনসমূহ, প্রত্যেকে সবরকারী ও শোকরকারীর জন্য।

৪২:৩৪
আও = অথবা। ইউবিক্বহুন্না = সেগুলো (ডুবিয়ে দিয়ে) ধ্বংস করে দিতে পারেন। বিমা কাছাবূ = তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে। ওয়া = ও সত্ত্বেও যে। ইয়া’ফু = তিনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন। আন কাছীরিন = অনেক অপরাধ থেকে।

অথবা সেগুলো (ডুবিয়ে দিয়ে) ধ্বংস করে দিতে পারেন তারা যা উপার্জন করেছে তার কারণে, ও সত্ত্বেও যে, তিনি উদারভাবে ক্ষমা করে দেন অনেক অপরাধ থেকে।

৪২:৩৫
ওয়া = আর। ইয়া’লামাল্লাযীনা = তারা জানতে পারবে যারা। ইউজাদিলূনা = বিতর্ক করে। ফী আয়াতিনা = আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে। মা লাহুম = তাদের জন্য নেই। মিম মাহীসিন = কোন পলায়ন স্থান।

আর তারা জানতে পারবে যারা বিতর্ক করে আমাদের আয়াতসমূহের ব্যাপারে, তাদের জন্য নেই কোন পলায়ন স্থান।

৪২:৩৬
ফামা ঊতীতুম = তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে। মিন শাইয়িন = কোন কিছু থেকে। ফামাতাউল হায়াতিদ দুনইয়া = উহা তো হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী। ওয়া = আর। মা ইনদাল্লাহি = যা কিছু আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে। খায়রুন = উহাই উত্তম। ওয়া = ও। আবক্বা = বাকি/ যা অবশিষ্ট থেকে যায়। লিল্লাযীনা = তাদের জন্য যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ওয়া = আর। আলা রব্বিহিম = তাদের রবের উপর। ইয়াতাওয়াক্কালূনা = তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে।

তোমাদেরকে যা দেয়া হয়েছে কোন কিছু থেকে, উহা তো হায়াতুদ দুনিয়ার/ পার্থিব জীবনের ভোগসামগ্রী। আর যা কিছু আল্লাহর কাছে সংরক্ষিত আছে উহাই উত্তম ও বাকি/ যা অবশিষ্ট থেকে যায়, তাদের জন্য যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে আর তাদের রবের উপর তাওয়াক্কুল/ ভরসা করে।

৪২:৩৭
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা। ইয়াজতানিবূনা = বিরত থাকে। কাবায়িরাল ইছমি = কবিরা গুনাহসমূহ থেকে। ওয়াল ফাওয়াহিশা = ও অশ্লীল কাজসমূহ থেকে। ওয়া = আর। ইযা মা গাদিবূ = যখন তারা রাগান্বিত হয়। হুম = তখন তারা। ইয়াগফিরূনা = মাফ করে দেয়।

আর যারা বিরত থাকে কবিরা গুনাহসমূহ থেকে ও অশ্লীল কাজসমূহ থেকে, আর যখন তারা রাগান্বিত হয়, তখন তারা মাফ করে দেয়।

৪২:৩৮
ওয়াল্লাযীনাছতাজাবূ = আর যারা সাড়া দেয়। লিরব্বিহিম = তাদের রবের ডাকে। ওয়া = আর। আক্বামুস সলাতা = সালাত কায়েম করে। ওয়া = আর। আমরুহুম = তাদের আমর/ কাজ/ নির্বাহী সিদ্ধান্ত সম্পন্ন করে। শূরা বায়নাহুম = তাদের মধ্যে শূরার/ পরামর্শের মাধ্যমে। ওয়া = আর। মিম্মা রযাক্বনাহুম = যা আমরা তাদের রিযিক দিয়েছি তা থেকে। ইউনফিক্বূনা = তারা ইনফাক/ ব্যয় করে।

আর যারা সাড়া দেয় তাদের রবের ডাকে, আর সালাত কায়েম করে, আর তাদের আমর/ কাজ/ নির্বাহী সিদ্ধান্ত সম্পন্ন করে তাদের মধ্যে শূরার/ পরামর্শের মাধ্যমে, আর যা আমরা তাদের রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ইনফাক/ ব্যয় করে।

৪২:৩৯
ওয়াল্লাযীনা = আর যারা এমন যে। ইযা = যখন। আসাবাহুমুল বাগইউ = তাদের উপর বাড়াবাড়ি (নির্যাতন) করা হয়। হুম = তখন তারা। ইয়ানতাসিরূনা = প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

যারা এমন যে, যখন তাদের উপর বাড়াবাড়ি (নির্যাতন) করা হয়, তখন তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

৪২:৪০
ওয়া = আর। জাযাউ ছাইয়িয়াতি = মন্দের প্রতিফল। ছাইয়িয়াতুম মিছলুহা = উহার অনুরূপ মন্দ। ফামান আফা = তবে যে উদারতা প্রদর্শন করে। ওয়া = ও। আসলাহা = ইসলাহ/ সংশোধনের কাজ করে। ফাআজরুহু = তবে তার পুরস্কার। আলাল্লাহি = আল্লাহর দায়িত্বে রইল। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। লা ইউহিব্বুয যলিমীনা = ভালবাসেন না যালিমদেরকে।

আর মন্দের প্রতিফল উহার অনুরূপ মন্দ। তবে যে উদারতা প্রদর্শন করে ও ইসলাহ/ সংশোধনের কাজ করে, তবে তার পুরস্কার আল্লাহর দায়িত্বে রইল। নিশ্চয় তিনি ভালবাসেন না যালিমদেরকে।

৪২:৪১
ওয়া = আর। লামানিনতাসারা = যে প্রতিশোধ নেয়। বা’দা যুলমিহী = তার উপর যুলুম/ নির্যাতন করার পরে। ফাউলায়িকা মা আলাইহিম = তবে তাদের উপর নেই। মিন ছাবীলিন = অভিযোগের কোন পথ/ ব্যবস্থা।

আর যে প্রতিশোধ নেয় তার উপর যুলুম/ নির্যাতন করার পরে, তবে তাদের উপর নেই অভিযোগের কোন পথ/ ব্যবস্থা।

৪২:৪২
ইন্নামাছ ছাবীলু = বস্তুত পথ অবলম্বন/ ব্যবস্থা গ্রহণ। আলাল্লাযীনা = তাদেরই বিরুদ্ধে যারা। ইয়াযলিমূনান্নাছা = যুলুম/ নির্যাতন করে মানুষের উপর। ওয়া = আর। ইয়াবগূনা = বিদ্রোহ করে। ফিল আরদি = পৃথিবীতে। বিগায়রিল হাক্বক্বি = কোন হক্ব/ অধিকার ছাড়াই। উলায়িকা লাহুম = তাদের জন্য আছে। আযাবুন আলীমুন = আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

বস্তুত পথ অবলম্বন/ ব্যবস্থা গ্রহণ তাদেরই বিরুদ্ধে যারা যুলুম/ নির্যাতন করে মানুষের উপর আর বিদ্রোহ করে পৃথিবীতে কোন হক্ব/ অধিকার ছাড়াই। তাদের জন্য আছে আযাবুন আলীম/ কষ্টদায়ক শাস্তি।

৪২:৪৩
ওয়া = আর। লামান = যে। সবারা = সবর করে। ওয়া = ও। গাফারা = ক্ষমা করে। ইন্না = নিশ্চয়। যালিকা = উহা। লামিন আযমিল উমূরি = দৃঢ় সংকল্পের কাজসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

আর যে সবর করে ও ক্ষমা করে, নিশ্চয় উহা দৃঢ় সংকল্পের কাজসমূহের অন্তর্ভুক্ত।

৪২:৪৪
ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। ফামা লাহু = তার জন্য নেই। মিওঁ ওয়ালিয়্যিইঁম মিম বা’দিহী = কোন ওলি/ অভিভাবক তাঁর পরে। ওয়া = আর। তারায যলিমীনা = তুমি দেখবে যালিমদেরকে। লাম্মা = যখন। রওয়াউল আযাবা = তারা আযাব দেখবে। ইয়াক্বূলূনা = তখন তারা বলবে। হাল ইলা মারাদ্দিম মিন ছাবীলিন = ফিরে যাওয়ার কোন পথ/ উপায় আছে কি?

আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য নেই কোন ওলি/ অভিভাবক তাঁর পরে। আর তুমি দেখবে যালিমদেরকে, যখন তারা আযাব দেখবে, তখন তারা বলবে, ‘ফিরে যাওয়ার কোন পথ/ উপায় আছে কি?’

৪২:৪৫
ওয়া = আর। তারাহুম = তুমি তাদেরকে দেখবে। ইউ’রদ্বূনা = তাদেরকে উপস্থিত করা হচ্ছে। আলাইহা = উহার কাছে (= জাহান্নামের কাছে)। খাশিয়ীনা মিনায যুল্লি = তারা অপমানে অবনমিত হয়ে থাকবে। ইয়ানযুরূনা = তারা দেখবে। মিন তরফিন খাফিয়্যিন = গোপন পলক দিয়ে। ওয়া = আর। ক্বলাল্লাযীনা = তারা বলবে যারা। আমানূ = ঈমান/ বিশ্বাস করেছে। ইন্নাল খাছিরীনাল্লাযীনা = নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা। খাছিরূ = ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আনফুসাহুম = তাদের নিজেদেরকে। ওয়া = ও। আহলীহিম = তাদের আহালকে/ পরিবার-পরিজনকে। ইয়াওমাল ক্বিয়ামাতি = ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে (তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে)। আলা = জেনে রাখ। ইন্নায যলিমীনা = নিশ্চয় যালিমগণ। ফী আযাবিম মুক্বীমিন = প্রতিষ্ঠিত থাকা/ স্থায়ী আযাবে থাকবে।

আর তুমি তাদেরকে দেখবে যে, তাদেরকে উপস্থিত করা হচ্ছে উহার কাছে (= জাহান্নামের কাছে), তারা অপমানে অবনমিত হয়ে থাকবে। তারা দেখবে গোপন পলক দিয়ে। আর তারা বলবে যারা ঈমান/ বিশ্বাস করেছে, ‘নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাদের নিজেদেরকে ও তাদের আহালকে/ পরিবার-পরিজনকে, ইয়াওমুল কিয়ামাতে/ কিয়ামাত দিবসে (তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে)। জেনে রাখ, নিশ্চয় যালিমগণ প্রতিষ্ঠিত থাকা/ স্থায়ী আযাবে থাকবে।

৪২:৪৬
ওয়া = আর। মা কানা লাহুম = তাদের জন্য থাকবে না। মিন আওলিয়াআ = কোন আওলিয়া/ অভিভাবক। ইয়ানসুরূনাহুম = তাদেরকে সাহায্য করতে। মিন দূনিল্লাহি = আল্লাহ ছাড়া। ওয়া = আর। মাইঁ ইউদলিলিল্লাহু = যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন। ফামা লাহু = তার জন্য নেই। মিন ছাবীলিন = কোন পথ।

আর তাদের জন্য থাকবে না কোন আওলিয়া/ অভিভাবক তাদেরকে সাহায্য করতে, আল্লাহ ছাড়া। আর যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য নেই কোন পথ।

৪২:৪৭
ইছতাজিবূ = তোমরা সাড়া দাও। লিরব্বিকুম = তোমাদের রবের ডাকে। মিন ক্বাবলি = উহার পূর্বে। আইঁ ইয়া’তী ইয়াওমুন = যে, একদিন আসবে। লা মারাদ্দা লাহু = যাকে প্রতিরোধ করা হবে না। মিনাল্লাহি = আল্লাহর পক্ষ থেকে। মা লাকুম = তোমাদের জন্য থাকবে না। মিম মালজায়িন = কোন আশ্রয়স্থল। ইয়াওমায়িযিন = সেইদিন। ওয়া = আর। মা লাকুম = তোমাদের জন্য নেই। মিন নাকীরিন = কোন চেষ্টাকারী।

তোমরা সাড়া দাও তোমাদের রবের ডাকে উহার পূর্বে যে, একদিন আসবে যাকে প্রতিরোধ করা হবে না আল্লাহর পক্ষ থেকে। তোমাদের জন্য থাকবে না কোন আশ্রয়স্থল সেইদিন, আর তোমাদের জন্য নেই কোন চেষ্টাকারী।

৪২:৪৮
ফাইন = সুতরাং যদি। আ’রাদূ = তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফামা আরছালনাকা = তবে আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি। আলাইহিম = তাদের উপর। হাফীযান = হাফেয/ রক্ষক হিসাবে। ইন আলাইকা = তোমার উপর দায়িত্ব নেই। ইল্লাল বালাগু = বালাগ/ পৌঁছে দেয়া/ প্রচার ছাড়া। ওয়া = আর। ইন্না = নিশ্চয় আমরা। ইযা = যখন। আযাক্বনাল ইনছানা = স্বাদ আস্বাদন করাই ইনসানকে/ মানুষকে। মিন্না = আমাদের পক্ষ থেকে। রহমাতান = রহমতের (স্বাদ)। ফারিহা বিহা = তখন সে উহা দ্বারা আনন্দিত হয়। ওয়া = আর। ইন = যদি। তুসিবহুম = তাদের কাছে পৌঁছে। ছাইয়িয়াতুন = কোন মন্দ। বিমা ক্বাদ্দামাত আইদীহিম = যা তাদের হাতগুলো আগেই সম্পন্ন করেছে তার কারণে (= তাদের কৃতকর্মের কারণে)। ফাইন্নাল ইনছানা = তখন নিশ্চয় ইনসান/ মানুষ। কাফূরুন = কাফের/ অকৃতজ্ঞ হয়।

সুতরাং যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আমরা তোমাকে প্রেরণ করিনি তাদের উপর হাফেয/ রক্ষক হিসাবে। তোমার উপর দায়িত্ব নেই বালাগ/ পৌঁছে দেয়া/ প্রচার ছাড়া। আর নিশ্চয় আমরা যখন স্বাদ আস্বাদন করাই ইনসানকে/ মানুষকে আমাদের পক্ষ থেকে রহমতের (স্বাদ), তখন সে উহা দ্বারা আনন্দিত হয়। আর যদি তাদের কাছে পৌঁছে কোন মন্দ, যা তাদের হাতগুলো আগেই সম্পন্ন করেছে তার কারণে (= তাদের কৃতকর্মের কারণে), তখন নিশ্চয় ইনসান/ মানুষ কাফের/ অকৃতজ্ঞ হয়।

৪২:৪৯
লিল্লাহি = আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন। মুলকুছ ছামাওয়াতি ওয়াল আরদি = আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। ইয়াখলুক্বু = তিনি সৃষ্টি করেন। মা ইয়াশাউ = যা তিনি ইচ্ছা করেন। ইয়াহাবু = তিনি দান করেন। লিমাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। ইনাছান = কন্যা সন্তান। ওয়া = আর। ইয়াহাবু = তিনি দান করেন। লিমাইঁ ইয়াশাউয যুকূরা = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন পুত্র সন্তান।

আল্লাহরই কর্তৃত্বাধীন আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুলক/ আধিপত্য। তিনি সৃষ্টি করেন যা তিনি ইচ্ছা করেন। তিনি দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন কন্যা সন্তান। আর তিনি দান করেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন পুত্র সন্তান।

৪২:৫০
আও = অথবা। ইউযাওভিযুহুম = তাদেরকে মিলিয়ে দেন। যুকরানান = পুত্র সন্তান। ওয়া = ও। ইনাছান = কন্যাসন্তান। ওয়া = আর। ইয়াজআলু = তিনি করে দেন। মাইঁ ইয়াশাউ = যাকে তিনি ইচ্ছা করেন। আক্বিমান = বন্ধ্যা। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আলীমুন ক্বাদীরুন = আলীম/ সর্বজ্ঞানী ও ক্বাদীর/ প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

অথবা তাদেরকে মিলিয়ে দেন পুত্র সন্তান ও কন্যাসন্তান। আর তিনি করে দেন যাকে তিনি ইচ্ছা করেন বন্ধ্যা। নিশ্চয় তিনি আলীম/ সর্বজ্ঞানী ও ক্বাদীর/ প্রাকৃতিক আইন নির্ধারণকারী ও সর্বশক্তিমান নিয়ন্ত্রণকারী।

৪২:৫১
ওয়া = আর। মা কানা লিবাশারিন = কোন মানুষের জন্য ব্যবস্থা নেই। আইঁ ইউকাল্লিমাহুল্লাহু = যে, তার সাথে আল্লাহ কথা বলবেন। ইল্লা ওয়াইয়ান = ওহী ছাড়া। আও = অথবা। মিওঁ ওয়ারায়ি হিজাবিন = পর্দার আড়াল থেকে ছাড়া। আও = অথবা। ইউরছিলা রাসূলান = তার কাছে রসূল প্রেরণ ছাড়া। ফাইউহিয়া = যে (রসূল) তার কাছে ওহী করে। বিইযনিহী = তাঁর অনুমতিক্রমে। মা ইয়াশাউ = যা তিনি ইচ্ছা করেন। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। আলিয়্যুল হাকীমু = আলী/ মহান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

আর কোন মানুষের জন্য ব্যবস্থা নেই যে, তার সাথে আল্লাহ কথা বলবেন ওহী ছাড়া, অথবা পর্দার আড়াল থেকে ছাড়া, অথবা তার কাছে রসূল প্রেরণ ছাড়া যে (রসূল) তার কাছে ওহী করে তাঁর অনুমতিক্রমে, যা তিনি ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় তিনি আলী/ মহান ও হাকীম/ মহাবিজ্ঞ।

৪২:৫২
ওয়া = আর। কাযালিকা = এভাবে। আওহায়না = আমরা ওহী করেছি। ইলাইকা = তোমার কাছে। রূহান = রুহকে (= আল কুরআনকে)। মিন আমরিনা = আমাদের আদেশক্রমে। মা কুনতা তাদরী = তুমি জানতে না। মাল কিতাবু = কিতাব কী? ওয়া = আর। লাল ঈমানু = ঈমান কী তাও জানতে না। ওয়ালাকিন = কিন্তু। জাআলনাহু = আমরা উহাকে (= রুহকে/ আল কুরআনকে) করেছি। নূরান = নূর/ আলো। নাহদী বিহী = আমরা উহা দ্বারা (= রুহ/ আল কুরআন দ্বারা) হিদায়াত করি। মান নাশাউ = যাকে আমরা ইচ্ছা করি। মিন ইবাদিনা = আমাদের বান্দাদের মধ্য থেকে। ওয়া = আর। ইন্নাকা = নিশ্চয় তুমি। লাতাহদী = হিদায়াত করছো। ইলা সিরাতিম মুসতাক্বীমা = সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের দিকে।

আর এভাবে আমরা ওহী করেছি তোমার কাছে রুহকে (= আল কুরআনকে) আমাদের আদেশক্রমে। তুমি জানতে না কিতাব কী? আর ঈমান কী তাও জানতে না। কিন্তু আমরা উহাকে (= রুহকে/ আল কুরআনকে) করেছি নূর/ আলো। আমরা উহা দ্বারা (= রুহ/ আল কুরআন দ্বারা) হিদায়াত করি যাকে আমরা ইচ্ছা করি আমাদের বান্দাদের মধ্য থেকে। আর নিশ্চয় তুমি হিদায়াত করছো সিরাতুল মুসতাকীমের/ সরল সঠিক পথের দিকে।

৪২:৫৩
সিরাতিল্লাহিল্লাযী = আল্লাহর পথ, যিনি এমন যে। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদি = তাঁর কর্তৃত্বাধীন যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে। আলা = জেনে রাখ। ইলাল্লাহি = আল্লাহরই দিকে। তাসীরুল উমূরু = ফিরে যায় সমস্ত ব্যাপার।

আল্লাহর পথ, যিনি এমন যে, তাঁর কর্তৃত্বাধীন যা কিছু আছে আকাশমন্ডলীতে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে। জেনে রাখ আল্লাহরই দিকে ফিরে যায় সমস্ত ব্যাপার।