মৃত্যুপারের অনন্ত জীবনে যখন প্রতিটি আত্মা তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে, সেদিন অপরাধীদের আক্ষেপ আর অনুশোচনার শেষ থাকবে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সেই ভয়াবহ দিনের করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন, যখন পাপাচারীরা বারবার বলতে থাকবে-
১. হায়! যদি কিছু করতাম
দুনিয়াতে যারা পরকালকে অস্বীকার করতো, তারা সেদিন পরকালের জন্য নেক আমল করতে না পারার জন্য আক্ষেপ করবে- یٰلَیۡتَنِیۡ قَدَّمۡتُ لِحَیَاتِیۡ ‘হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু আগে পাঠাতাম!’ (সুরা ফাজর: ২৪)
২. হায়! যদি মাটি হয়ে যেতাম
মৃত্যুর পর নিজেদের আমলনামা দেখে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যরা ভয় পেয়ে যাবে। আর আজাব থেকে বাঁচতে আকাঙ্ক্ষা করবে- یٰلَیۡتَنِیۡ كُنۡتُ تُرٰبًا ‘হায়, আফসোস! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।’ (সুরা নাবা: ৪০)
৩. হায়! যদি ওমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম
অবিশ্বাসীরা পরকালের ভয়াবহ পরিণতি দেখে আফসোস করে বলবে- আমরা কেন দুনিয়াতে নবুয়তের স্বীকৃতি দেইনি? রাসুলকে বাদ দিয়ে আমরা যদি অন্যকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম তবে আমাদের এ করুণ পরিণতি হতো না। তারা বলবে- يَا وَيْلَتَى لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا হায়, আমার দূর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম।’ (সুরা ফুরকান: ২৭-২৮)
৪. হায়! আমাকে যদি আমলনামা না দেওয়া হতো
নেককার মুমিনরা সেদিন আমলনামা ডান হাতে পাবে, কিন্তু অপরাধী অবিশ্বাসী লোকেরা পরকালে বাম হাতে আমলনামা পেয়ে আকাঙ্ক্ষা করবে আমলনামা না পাওয়ার, এমনকি পরকালে যেন তারা মৃত অবস্থায় থাকে। সে বলবে- یٰلَیۡتَنِیۡ لَمۡ اُوۡتَ كِتٰبِیَهۡ وَ لَمۡ اَدۡرِ مَا حِسَابِیَهۡ یٰلَیۡتَهَا كَانَتِ الۡقَاضِیَۃَ ‘হায় আমায় যদি আমার আমলনামা না দেয়া হতো। আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায়, আমার মৃত্যুই যদি শেষ হত।’ (সুরা হাককাহ: ২৫-২৭)
৫. ধন-সম্পদ কাজে এলো না, ক্ষমতা বরবাদ হয়ে গেলো
সেদিন অপরাধীরা জাহান্নামে যাওয়ার আগে বলতে থাকবে- مَاۤ اَغۡنٰی عَنِّیۡ مَالِیَهۡ هَلَكَ عَنِّیۡ سُلۡطٰنِیَهۡ ‘আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো উপকারে এলো না। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল।’ (সুরা হাক্কাহ: ২৮-২৯)
৬. হায়! যদি আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্য করতাম
যেদিন আগুনে তাদের মুখমণ্ডল ওলট-পালট করা হবে; সেদিন তারা বলবে- یٰلَیۡتَنَاۤ اَطَعۡنَا اللّٰهَ وَ اَطَعۡنَا الرَّسُوۡلَا ‘হায়। আমরা যদি আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রসূলের আনুগত্য করতাম।’ (সুরা আহজাব: ৬৬)
৭. নেতারা আমদের পথভ্রষ্ট করেছিল
সেদিন এসব অবিশ্বাসীরা আল্লাহর কাছে তাদের পথভ্রষ্টকারী নেতাদের ব্যাপারে অভিযোগ করবে আর তাদের দ্বিগুণ শাস্তির আবেদন করবে। তারা বলবে- رَبَّنَا إِنَّا أَطَعْنَا سَادَتَنَا وَكُبَرَاءنَا فَأَضَلُّونَا السَّبِيلَا - رَبَّنَا آتِهِمْ ضِعْفَيْنِ مِنَ الْعَذَابِ وَالْعَنْهُمْ لَعْنًا كَبِيرًا ‘হে আমাদের পালনকর্তা,! আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের মহা অভিসম্পাত করুন।’ (সুরা আহজাব: ৬৭-৬৮)
৮. যদি রাসুলেরপথ অবলম্বন করতাম
অবিশ্বাসীরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অনুসরণের পরিবর্তে তাদের নেতাদের অনুসরণ করার কারণে পরকালে আফসোস করবে। আর নিজেদের হাত কামড়াতে কামড়াতে বলবে- يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا ‘হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম।’ (সুরা ফুরকান: ২৭)
৯. হায়! যদি তাদের (মুমিনদের) সঙ্গে থাকতাম
দুনিয়াতে মুমিনরা বিপদাপদে পড়লেই কিছু অবিশ্বাসী বলে বেড়াতো যে, আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন, আমরা বিপদে পড়িনি। অথচ তারা সঠিক পথের অনুসারী ছিল না। তারাই পরকালে সফলতা লাভের আকাঙ্ক্ষায় আফসোস করে বলবে- یّٰلَیۡتَنِیۡ كُنۡتُ مَعَهُمۡ فَاَفُوۡزَ فَوۡزًا عَظِیۡمًا ‘হায়, আমি যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম; তাহলে আমি ও যে সফলতা লাভ করতাম।’ (সুরা নিসা: ৭৩)
১০. হায়! যদি আমার রবের সঙ্গে কাউকে শরিক না করতাম
যারা দুনিয়াতে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরিক করতো, তারা পরকালে দুনিয়ায় শিরক করার বিষয়টি স্মরণ করে বলতে থাকবে- يَا لَيْتَنِي لَمْ أُشْرِكْ بِرَبِّي أَحَدًا ‘হায়, আমি যদি কাউকে আমার পালনকর্তার সাথে শরিক না করতাম।’ (সুরা কাহাফ: ৪২)
১১. হায়! যদি ফিরে যেতে পারতাম
পরকালের ভয়াবহ বিপদাপদ দেখে অবিশ্বাসীরা বারবার তাদেরকে দুনিয়া পাঠানোর আবেদন করবে। যাতে তারা দুনিয়াতে এসে ভালো কাজ করে পরকালে সফলতা লাভ করতে পারে। সে কথা তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা বলেন- وَلَوْ تَرَىَ إِذْ وُقِفُواْ عَلَى النَّارِ فَقَالُواْ يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلاَ نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ ‘আর আপনি যদি দেখেন, যখন তাদের জাহান্নামের উপর দাঁড় করানো হবে! তারা বলবে- কতই না ভাল হত! যদি আমাদের পুনরায় (দুনিয়া) পাঠানো হতো; তাহলে আমরা স্বীয় পালনকর্তার নিদর্শনসমূহে মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।’ (সুরা আনআম: ২৭)
কোরআনের এই বর্ণনাগুলো আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। দুনিয়ার এই স্বল্প সময়েই পরকালের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। নইলে সেই আক্ষেপের কোনো শেষ থাকবে না, যখন কোনো অনুশোচনাই কাজে আসবে না।
Source Dhaka Mail
Photo Credit: Danie Franco on Unsplash